পোস্টগুলি

জুন, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

‘হাদি’ মুয়াবিয়া শরিয়াতের উত্তরাধিকারী নিয়ম পাল্টায় ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ও আন নিহায়া’ খণ্ড ৮ পাতা ১৪১ এ লিখেছেঃ “সুন্না হচ্ছে কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার হতে পারবে না, আর না মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হতে পারবে, যিনি প্রথম প্রথম এটা চালূ করেন যে মুসলিম কাফিরের থেকে উত্তরাধিকার পাবে, কিন্তু কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার পাবে না তিনি হলেন মুয়াবিয়া, বানী উমায়া একই নিয়ম চালু রেখেছিল, উমার বিন আব্দুল আযিযের সময় তিনি সুন্নাকে ফিরিয়ে আনেন, কিন্তু হিশাম আবার মুয়াবিয়া ও বানী উমাইয়াদের নিয়মে ফিরে যান”। এখন দেখুন সাহিহ বুখারি এর হাদিস খণ্ড ৮ হাদিস নং ৭৫৬ “রসুল আল্লাহ সাঃ বলেছেন ‘একজন মুসলিম কাফেরের উত্তরাধিকারি হতে পারবে না, আর না একজন কাফের মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারবে”। প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা হাসীনে কাবা ইয়া রওনকে কাবা মাওলা হায়দার – মারহাবা মারহাবা সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা ইতিহাস চমকান বিরল তারিফে বিলাদত প্রকাশ ক্বাবা শরীফে যীনাতুল আরেফিন – মারহাবা প্রথম দীদারে নূরে হাবীবী আদবী তাবাসসুমে দেন সালামী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালনে – মারহাবা ইমামে আউয়াল মিন আলে রছূল ধন্য লাভে তিনি প্রিতমা বতুল বাবুল ইলম মাওলা – মারহাবা যাহির বাতিনী ইলমী গৌরব ছড়ান জান্নাতী ফুলদ্বয়ের সৌরভ শাফীউল উম্মাহ আক্বা মারহাবা সীমাহীন বিরত্বে উচ্চে যুলফিকার তাগুত মিটায়ে করেন উদ্ধার উম্মাহ্’র রাহগীর আসাদুল্লাহ মারহাবা

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চেনে না প্রাণের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে পর্ব শেষ গাদীরে খুম নামক স্থানে আয়াতগুলো নাজিল হওয়া মাত্র নবী করিম (স.) থমকে দাড়িয়ে গেলেন এবং যারা বিভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিলেন সবাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোক পাঠালেন। সব লোক জমায়েত হওয়ার পর হামদ ও সালাত সম্পন্ন করলেন। উটের উপর যে গদি ছিলো তার উপর আরো গদি স্থাপন করেলেন যেনো উচু হয়। এরপর শিষ্যবর্গকে বললেন- মুসলমানগন তোমরা কি জনো না যে আমি মোমিনদের নিকট প্রত্যেকের নিজ নিজ আত্মা অপেক্ষাও তোমাদের হিতৈষী বন্ধু। শিষ্যগন বললেন- হে আল্লাহর হাবিব, আমাদের আত্মা অপেক্ষা অধিক প্রিয় সুহৃদ। অতঃপর তিনি তাদের বললেন- হে মুসলমানগন আল্লাহ আমাকে আহ্বান করেছেন, আমিও তার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তোমরা জানিও যে আমি তোমাদের মধ্যে দুটো সমপরিমান ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি এ দুটোকে আকড়ে ধরে থাকো তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবেনা। যদি একটিকে ছাড়ো তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার আহলে বায়াত (আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন) এ দুটো কখনোই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবেনা যতক্ষন না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখো তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরন করবে এটা আমি দেখবো। (সিরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী নোমানী/বোখারী/মুসলিম/তিরমিজি মসনদে হাম্বল/তফসিরে কবির/হিলায়তুল আউলিয়া (১ম খন্ড) তফসিরে দোররে মনসুর/উসদুল গাবা। মোল্লাগন এই গুরুত্বপূনূ হাদিসটিকে বলে থাকেন এভাবে- একটি আল্লাহর কিতাব আরেকটি রাসুলের হাদিস। তারা তারা রাসুলের বংশধর তথা পাক পাঞ্জাতন বলতে চান না। রাসুল পাক আরো বললেন- তোমরা জেনে রাখবে খোদাতায়ালা আমার প্রভু আর আমি বিশ্ববাসীর প্রভু। পরে তিনি আলীর হস্ত ধারন করে বলতে লাগলেন- মান কুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলাউন মাওলাহু। আমি যার মওলা আলীও তার মওলা। হে আল্লাহ যে ব্যক্তি তাকে বন্ধু বানায় তুমিও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো এবং যে ব্যক্তি আলীর সাথে শক্রতা করে তুমিও তার সঙ্গে শত্রুতা করো। অতপর উমর (রা.) আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন ও অভিনন্দন জানালেন এবং বললেন- স্বাগতম, স্বাগতম হে আবু তালিব সন্তান, প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মওলা হিসেবে অভিনন্দিত হয়ে তুমি সকাল করবে, সন্ধ্যা করবে। (মেশতাত ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৫৪৮) ফজলুল করিম/সুসনদে আহম্মদ/তফসীরে দুররে মনসুর/জালাল উদ্দিন সিউতি ২য় খন্ড মিসর/মুসলিম/মোস্তাদরাক হাকিম। এক নরুল ইসলাম ফারুকী শহীদ হয়েছেন আরো লক্ষ লক্ষ ফারুকী মওজুদ আছে এবং থাকবে ইনশা আল্লাহ। ক্ষমতার অপব্যাবহার করে আজ এত বড় অন্যায় কাজ হাতে নিচ্ছো ইজিদি সৌদি সরকার এর পরিনাম ভয়াবহ যেনো রেখো

নিভে আসছে জীবন প্রদীপ… আর বুঝি হলোনা বেশিদিন এ ধরায় থাকা…! খুব বেশি সময় হয়তো চাহেনা মোরে নিঠুর এ ধরা…!! এ দেহ ভুবন নিস্তেজ হয়ে আসছে…হারিয়ে মনোবল…। নিষ্ঠুর এ ধরার নিষ্ঠুর সব মানুষ গুলোর নীরব ঘাত-প্রতিঘাতে…! আর কতো করবো অভিনয় খুব বেশি ভালো থাকার…?? ভেবেছিলাম প্রদীপ হয়ে দীপ্তি ছড়াবো…সৃজন করবো স্রস্টা হয়ে… মিশে রবো প্রকৃতিতে সৃষ্টির উচ্ছ্বাসে…। তা আর বুঝি তেমন হবেনা…যেমন একসময় চেয়েছিলাম। জ্বলেই গেলাম দিবা নিশি…দিবসে রবি নিশিতে হয়ে শশী..! দীপ্ততায় কতটুকু ছড়ালো তা হলোনা হিসেব নিকেশ…। এই বুঝি ফুরালো বেলা খেলা বুঝি হলো মোর শেষ…

হযরত আবু তালিব আঃ এয় সাম্প্রতিক কিছু তথ্য ইসলামে বিভ্রান্তির অন্ত নেই। যতই দিন যাচ্ছে এর শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটছে। তেমনি একটি বিভ্রান্তি আছে আমাদের সমাজের একটি অংশের ভিতর রাসূল (সাঃ) এর সম্মানিত চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) সম্পর্কে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধবাদীরা বিশেষ করে উমাইয়া শাসকদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অনিবার্য ফল এই বিষয়টি। কুচক্রী মহল অতি সুক্ষ্মভাবে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর বিরুদ্ধে নানা প্রকার বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং নিজেদের মনগড়া হাদীস রচনা করে তাতে ইসলামের লেবাস পরিধান করে ব্যাপকভাবে। যা আজ বিভিন্ন হাদীস হিসাবে পরিচিত দেখতে পাই। মুসলমানরা আজ তারই দুঃখজনক শিকার। যারা বলেন হযরত আবু তালিব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন নাই, তাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের সংজ্ঞা কি অথবা কাদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় তারা বিশ্বাসী তা তলিয়ে দেখা দরকার। খতিয়ে দেখা দরকার তাদের গুরুদের ইতিহাস। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, হযরত আবু তালিব তাঁর আশি বছরের জীবনের এক মুহূর্তের জন্যও মুর্তি পূজায় অংশ নেননি। কিংবা তুচ্ছতম কোন মন্দ বা গর্হিত কাজের প্রতি তাঁর মৌন সমর্থন বা অংশগ্রহণ এর একটি উদাহরণ কেউ পেশ করতে পারবে না। বরং তাঁর জীবনেতিহাস হচ্ছে মানব কল্যাণে আত্মনিবেদিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ভদ্রতা, নম্রতা, পরোপকারিতা, অতিথিপরায়ণতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলী তাঁর মধ্যে ছিল পুর্বপুরুষদের ন্যায় বিদ্যমান। তাঁর চারিত্রিক সদগুণাবলী, দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয়, বলিষ্ঠ মনোবল, অনন্য যোগ্যতা ইত্যাদি গুণ বৈশিষ্ট্যই তাঁকে সম্মানের সু উচ্চাসনে সমাসীন রেখেছিল। পক্ষান্তরে, মহানবী (সাঃ) আবির্ভূত হওয়ার পূর্বেও তিনি ছিলেন তৌহিদবাদের বিশ্বাসী একজন খাঁটি মু’মিন মুসলমান এবং পিতা আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর পর তিনি খানায়ে কা’বার মুতাওয়াল্লী বা তত্ত্বাবধায়ক মনোনিত হন। এ জন্যই মক্কাবাসীদের নিকট তিনি ছিলেন সবচাইতে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। হযরত আবুতালিব (রাঃ) এর স্ত্রী অর্থাৎ হযরত আলী (আঃ) এর মাতার নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ)। হযরত আবু তালিব (রাঃ) ধার্মিক লোক ছিলেন এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ধর্মের অনুসারী একেশ্বরবাদী ছিলেন। তিনি মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে কখনও বিশ্বাস করতেন না। (কাশফ আল জুম্মাহ, খঃ ১, পৃঃ ৬০) তিনি বিবাহের জন্য ধার্মিক মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। আবু তালিব তার চাচা আসাদ এর বাড়ী গিয়ে তার কন্যা ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চাচা প্রস্তাবে রাজী হন। হযরত আবু তালিব এবং ফাতিমা ছিলেন হাশেমী গোত্রের প্রথম যুগল যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ফাতিমাও স্বামীর ন্যায় একেশ্বরবাদী। মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে তিনি কখনও বিশ্বাস করতেন না। (আল ফুসুল আল মহিম্মাহ, পৃঃ ১৭২) এই বিবাহে যে শিগা পড়া হয় তা ছিল তাওহীদ বা স্রষ্টার একত্ববাদের বিস্তারিত স্বীকৃতি। যার বিস্তারিত উল্লেখ আছে বিহারুল আনোয়ার এর ৩৫ খণ্ড পৃঃ ৯৮তে। তাঁর ছেলেমেয়েরা হল হযরত আলী (আঃ), হযরত জাফর (রাঃ), হযরত আকিল (রাঃ), জুমানাহ এবং ফাখতাহ (উম্মে হানী, মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী)। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ২২, পৃঃ ২৬) ফাতিমা বিনতে আসাদ আলী (আঃ) ইবনে আবিতালিব এর জন্ম কাবার অভ্যন্তরেই দিয়েছিলেন। (আল মুসতাদারক, খঃ ৩, পৃঃ ৪৮৩) ফাতিমা বিনতে আসাদ ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী একাদশতম ব্যক্তি। আবার হযরত খাদিজা (রাঃ) এর পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। (ইবনে আবী আল হাদিদ,শারহ নাহজুল বালাগাহ, খঃ ১ পৃঃ ১৪) হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর এক পুত্র হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) মু’তার যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসাবে অসীম বীরত্বের দৃষ্টান্ট স্থাপন করে শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর শাহাদাতের পর মহানবী (সাঃ) দীর্ঘদিন ধরে শোকাভিভূত ও বিমর্য ছিলেন। আর তাঁর দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। অবশেষে হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ)কে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহপাক জাফরকে তাঁর দু’টো কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্ত রাঙ্গা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এজন্য তাঁকে বলা হয় “জাফর-এ-তৈয়ার” বা দু’পাখার অধিকারী জাফর। ফাতিমা বিনতে আসাদ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বেঁচে ছিলেন। হিজরতের তৃতীয় বছরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি ইনতেকাল করলে রাসুল (সাঃ) তাঁর নিজের একটি কাপড় দ্বারা ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) এর শরীর আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিজে কবর খনন করে তাকে শায়িত করলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন। (আল ফুসুল আল মুহিম্মাহ, পৃঃ ১৭৭)। হযরত মহানবী (সাঃ) এর বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর অভিভাবক ও পিতামহ হযরত আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করেন। দাদার মৃত্যুবরণ মহানবী (সাঃ) এর কোমল আত্মার ওপর এতটা গভীর দাগ কেটেছিল যে, দাদা আব্দুল মুত্তালিব যেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিন তিনি সমাধিস্থলে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা পর্যন্ত অশ্রুপাত করেছিলেন এবং তিনি কখনই পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবকে ভুলেননি। (তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭) দাদার মৃত্যুর পর তাঁর চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হযরত আবু তালিব ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর পিতা হযরত আব্দুল্লাহর সহোদর। আবদুল্লাহ ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে। আব্দুল্লাহ, যুবায়র ও আবু তালিব এই তিনজন ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আমর এর গর্ভজাত সন্তান। হযরত হামযা (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ) অন্য স্ত্রীর সন্তান। (সীরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, ইফাবা, প্রথম খঃ পৃঃ ১৫১) হযরত আবু তালিব (রাঃ) দানশীল, পরোপকার ও জনহিতকর কাজে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ কারণেই হযরত আব্দুল মুত্তালিব তাঁর অনাথ নাতির লালন পালন করার জন্য আবু তালিব (রাঃ)কে মনোনীত করেছিলেন। এ সম্পর্কে ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) বলেন, “আবু তালিব মুহাম্মাদ (সাঃ)কে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসলেন। আমি তার সেবায় আত্মনিয়োগ করলাম এবং সে আমাকে ‘মা’ বলে ডাকত।” (বিহার আল আনওয়ার,খঃ ৩৫, পৃঃ ৮৩) দাদার ন্যায় মহানবী (সাঃ) সর্বদা চাচা আবু তালিব এর সাথে থাকতেন। একবার চাচা আবু তালিব কুরাইশদের শামদেশে (সিরিয়া) বাৎসরিক বাণিজ্যিক সফরে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মহানবী (সাঃ)কে মক্কায় রেখে যাওয়ার এবং কতিপয় ব্যক্তিকে তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কাফেলা রওনার পূর্বমুহূর্তে মহানবী (সাঃ) এর চোখ অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে গেল এবং চাচা আবু তালিব এর কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও এ বিচ্ছেদ তাঁর কাছে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে হলো। মহানবী (সাঃ) এর দুঃখভারাক্রান্ত মুখমণ্ডল চাচা আবু তালিব এর অন্তরে আবেগ অনুভূতির প্রলয়ঙ্কর তুফানের সৃষ্টি করল। তিনি অবশেষে কষ্ট সংবরণ করে হলেও মহানবী (সাঃ) কে নিজের সাথে নিলেন। এই সময় মহানবী (সাঃ) এর বয়স ছিল বার বছর। (দীওয়ানে আবু তালিব, পৃঃ ৩৩) কুরাইশ নেতৃবর্গের একটি উচ্চ পর্যায়ের পরিষদবর্গ এক অঙ্গীকার পত্র বা চুক্তিনামা স্বাক্ষর করে তা কাবাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখেন এবং মহানবী (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে অর্থনৈতিক, ক্রয় বিক্রয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বৈবাহিকসহ সকল সম্পর্ক বয়কটের ঘোষণা করেন। মহানবী (সাঃ) এর একমাত্র সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক তাঁর পিতৃব্য হযরত আবু তালিব (রাঃ) তাঁর সকল আত্মীয়, স্বজন ও বনি হাশিম বংশের প্রতি মহানবী (সাঃ)কে সাহায্য করার আহ্বান জানান। তিনি বনি হাশিমের সবাইকে পবিত্র মক্কা নগরীর বাইরে একটি পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে তাঁরা সবাই সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই উপত্যকাটি ‘শোবে আবুতালিব’ বা আবু তালিবের উপত্যকা নামে প্রসিদ্ধ। সেখানে তাঁদের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে, অনাহারে ও অর্ধাহারে। এমনকি অনেক সময় পাহাড়ী গাছ গাছড়ার ফলমূল, পত্র ও পল্লব ইত্যাদি আহার করে জীবন ধারণ করতে হয়েছে, তাও বাধামুক্ত ছিলনা। যিনি ছিলেন আরবের অবিসংবাদিত নেতা, খানায়ে কা’বার কর্তৃত্ব ছিল যাঁর হাতে; সব হারিয়ে সমাজচ্যুত হলেন ইসলামের জন্য। মহানবী (সাঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) ও হযরত খাদিজা (রাঃ) অবরোধ চলাকালীন সময়ে তাঁদের সকল সম্পদ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। এই বয়কট সময়কালীন সময়ে কোরাইশদের কিছু ব্যক্তি বনি হাশিম বংশের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে অতিগোপনে শোবে আবুতালিবে অবস্থানকারী মুসলমানদেরকে খাদ্যসহ কিনা কাটার সহযোগিতা করতেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইতিহাস সাক্ষী এই সময়ে ‘শোবে আবুতালিব’ এ অবস্থানকারী মুসলমানদের জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর (রাঃ) এর কোন ভূমিকা ছিল বলে জানা যায় না। তখন তাদের কি ভূমিকা ছিল? কোথায় তাদের অবস্থান ছিল এবং অনাহার মুসলমানদের এই অসহায় ও দূর্যোগমুহূর্তে কতিপয় কোরাইশদের ন্যায় খাদ্য বা অন্যকোন সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কিনা? ইতিহাসে তাও জানা যায় না। এই সময়ে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের ভূমিকা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) এর নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসের মাঝামাঝিতে এ অবরোধের অবসান হয়। এ অবরোধ পুরো তিন বছর স্থায়ী হয়েছিলো। হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালঃ হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে, আশি বছর বয়সে হযরত আবু তালিব (রা) মক্কা নগরীতে ইনতেকাল করেন। এই দিন মহানবী (সাঃ) তাঁর একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিরক্ষা বিধায়ককে হারান। যিনি তাঁকে ৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকতা দান ও রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পতঙ্গের মতো তাঁর অস্তিত্বে প্রদীপের চারপাশে ঘুরেছে। মহানবী (সাঃ) এর আয় উপার্জনের সক্ষম হওয়া পর্যন্ত তিনি মহানবী (সাঃ) এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেছেন এবং তাঁকে তাঁর নিজ সন্তানের উপরও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। রাসুল (সাঃ) এবং হযরত আলী (আঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর মৃতদেহের গোসল দান, কাফন পরানো, জানাযার নামায পড়ানো, দাফন করা ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে ইসলামী নিয়মে সুসম্পন্ন করেছেন। দাফন কাজ সমাধা করে মহানবী (সাঃ) মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন তা হলো, “হে আল্লাহ! আমার চাচা আবু তালিবের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। যিনি আমাকে লালন পালন করেছেন। শক্রর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সর্বদা আমাকে ছায়াদান করেছেন। এখন আর আমার এমন সাহায্যকারী অভিভাবক নেই। এখন যার যেমন ইচ্ছা আমার সাথে আচরণ করবে। হে আল্লাহ! তোমার কাছে জানাই আমার দূর্বলতা ও অক্ষমতার ফরিয়াদ। আমার প্রতি বর্ষন করো তোমার করুনা কৃপা।” (তারীখুল খামীস, পৃঃ ৩০১, সীরাতুল হালবিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৭) চাচা আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালের পর থেকে প্রায়ই মহানবী (সাঃ) কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা যেতো। প্রায়শঃই তিনি বলতেন, “যত দিন আমার চাচা আবু তালিব জীবিত ছিলেন তত দিন কেউ আমাকে উত্ত্যক্ত করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যু আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, প্রঃ ১২ ইঃ ফাঃ ঢাকা) মৃত্যুকালে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর অসিয়ত ছিল, “হে আমার আত্মীয়স্বজনগণ! মুহম্মদের দলের বন্ধু ও সমর্থক হয়ে যাও। মহান আল্লাহর শপথ, যে কেউ তাঁর অনুসরণ করবে, তাঁর পথে চলবে, সে সুপথপ্রাপ্ত ও সৌভাগ্যমন্ডিত হবে। আমার জীবন যদি অবশিষ্ট থাকত এবং আমার মৃত্যু যদি পিছিয়ে যেত তাহলে আমি তাঁর নিকট থেকে সব ধরনের বিপদাপদ ও তিক্ত ঘটনা প্রতিহত করতাম এবং তাঁকে রক্ষা করতাম।” (সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯০, তারিখে খামীস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯) “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও। কারণ তুমি সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী, তোমার দলই অত্যন্ত সম্মানিত দল। তুমি সম্মানিত পিতার সন্তান। মহান আল্লাহর শপথ, যখন তোমাকে কোন কন্ঠ কষ্ট দেবে তখন অত্যন্ত ধারালো কন্ঠসমূহ তোমার পক্ষাবলম্বন করে সেই কন্ঠকেই আঘাতে জর্জরিত করে দেবে এবং ধারালো তরবারিগুলো তাদেরকে বধ করবে। মহান আল্লাহর শপথ, পশুপালকের কাছে পশুগুলো যেভাবে নত হয় ঠিক সেভাবে আরবগণ তোমার কাছে নতজানু হবে ও বশ্যতা স্বীকার করবে।” (সাইয়্যেদ ইবনে তাউস প্রণীত, আত তারায়েফ, পৃঃ ৮৫)#আল-হাসানাইন প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ) সুরা নিসা,আয়াত# ৬৯ “ এবং যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে,সুতরাং তারা সেই লোকদের সাথী হবে নবীগন,সত্যবাদীগন,শহীদ্গন এবং সতকর্মপরায়নদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাদের নিয়ামত দান করেছেন।আর তারা কতই না উত্তম সাথী!(১)” মুলঃমাওলানা ফরমান আলীর উর্দু তাফসীর অনুবাদঃ মাওলানা শেখ সাবের রেজা সম্পাদনা ও পুনর্লিখনঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনোয়ারুল কবির আরিফ(ষ্টুডেন্ট অফ পি এইচ ডি,ইরান) প্রকাশকঃঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে,নুরুস সাকলায়েন জনকল্যান সংস্থা,বেগম বাজার,ঢাকা। সঠিক তাফসীর(১)ঃ এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,নবীগন অর্থে মহানবী(সাঃ),সত্যবাদীগন অর্থে হজরত আলী(আঃ),শহীদগন বলতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন(আঃ),সতকর্ম্পরায়ন অর্থে অবশিষ্ট ইমামগণকে বুঝান হয়েছে।আর এটা অনুমতির অনেক নিকটবর্তীও বটে।কেননা,’নাবিয়্যিন’এর উদ্দেশ্য যে মহানবী(সাঃ) তা ষ্পষ্ট,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।‘সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ)।কেননা ‘সিদ্দিক’ শব্দের অর্থ যদি সত্যায়নকারী ধরা হয় তবে ইতিহাসসমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে,রাসুল(সাঃ)এর নবুওতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী তিনিই।আর যদি সত্যবাদী অর্থ গ্রহন করা হয় তবুও তিনি ছাড়া অপর কেউ তাঁর দাবীদার হতে পারে না।কারন,অন্য কোন সাহাবীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট ছিল না।কারন,তারা ২৮ থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত মুর্তির সামনে মাথা নত করেছেন ও শিরক করেছেন।পক্ষান্তরে হজরত আলী(আঃ) কখনও মুর্তির সামনে মাথা নত করেননি এবং সবসময় আল্লাহর একত্বের ঘোষনায় সত্যবাদী ছিলেন।আর ইমাম ২ ভাই ( ইমাম হসান ও ইমাম হুসাইন)আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াও ষ্পষ্ট এবং ‘সালেহীন’ বলতে অবশিষ্ট ইমামগন উদ্দেশ্য হওয়াতে কোন মুসলমান সন্দেহ করতে পারে না।কেননা সালেহীন বলতে সৎ কর্মের ক্ষেত্রে পুর্নতম ব্যাক্তিদেরকে বুঝান হয়।আর ে বিষয়টি ষ্পষ্ট যে,প্রতি যুগে নবী বংশের পবিত্র ইমামগন সতকর্ম,পরহেজগারিতা ও অন্য বৈশিষ্টে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ট ছিলেন। প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ মোঃ আবু তুরাব বিধি তুমার ধর্ম কি সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টি কর্তা মোঃ জাহিদ হুসাইন

রাসুল (সা:) ইন্তেকালের পরপরই রাসুল (সা:) এর রেখে যাওয়া শূন্য আসনে খলীফা হয়ে টুপ করে বসে পড়লেন হযরত আবু বকর । উল্লেখ্য যে , রাসুল (সা:) ইন্তেকালের সংবাদ জানা সত্বেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও হযরত আবু বকর , হযরত ওমর , হযরত ওসমান সহ বহু সংখ্যক নামকরা মোহাজের , আনসার সাহাবী রাসুল (সা:) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহন করে নাই । ওনারা তখন বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ বাটোয়ারা করে খলীফা নির্বাচন করলেন । এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে , হযরত আবু বকর প্রথম খলীফা হলেন - এই ঘটনাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:)এর অনুমোদন আছে কি ? এই বিষয়টির স্বপক্ষে সহীহ সিত্তাহ হাদিস , বিখ্যাত কোন তাফসীর গ্রন্থ থেকে কোন রেফারেন্স দেখাতে পারবেন কি ? যে কোন জাল বানোয়াট হাদিস হলেও চলবে !

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ইসলামের চরম শত্রু আবু লাহাব ও উতবা প্রশ্ন: আবু লাহাব কে ? উত্তর: আবু লাহাব ছিল রাসূল (সা)-এর চাচা এবং মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় নেতা। প্রশ্ন: আবু লাহাবের স্ত্রী কে ছিল ? উত্তর: তার স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আওরায়া বিনতে হারব। তার উপনাম ছিল উম্মে জামীল। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর সাথে তার ব্যবহার কিরুপ ছিলো ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর চাচা হওয়া সত্ত্বেও সে ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু। মুসলিমদের উপর নির্যাতন তীব্রতর করার প্রস্তাব সেই রেখেছিলো। প্রশ্ন: তার স্ত্রী উম্মে জামীল (রা) রাসূল (সা)-এর সাথে কেমন আচরণ করতো ? উত্তর: স্বামীর মতো সেও রাসূল (সা) এর সাথে ঘৃণা ও শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করতো। রাসূল (সা)-কে কষ্ট দেয়ার জন্য সে রাসূল (সা)-এর বাড়ির সামনে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা ও কাটা বিছিয়ে রাখতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা) সম্পর্কে মানুষের কাছে আবু লাহাব কী বলত ? উত্তর: ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন আবু লাহাব প্রকাশ্যে বলত, “ হে মানুষেরা! তোমরা তার কথা শুনবে না কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী ও ধর্মত্যাগী”। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে আবু লাহাব কী করল? উত্তর: রাসূল (সা)কে অপমান করার জন্য সে কৌশল বের করল। সে রাসূল (সা)-কে পাথর ছুড়ে মারল, তার দুই ছেলে উতবা ও উতাইবাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে তালাক প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি রাসূল (সা)-এর দ্বিতীয় ছেলে ইন্তিকালে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল এবং রাসূল (সা)-কে নির্ব্বংশ বলে বেড়াতে লাগলো। প্রশ্ন: তার ছেলে উতাইবা রাসূল (সা)-এর সাথে কীরূপ ব্যবহা করেছিল ? উত্তর: একদিন উতাইবা রাসূল (সা)-এর কাছে এগিয়ে আসলো এবং কর্কশভাবে চিত্কার করে বলতে লাগলো, “আমি আপনার শিক্ষায় বিশ্বাসী নই। এরপর সে রাসূল (সা)-এর উপর হিংস্র হাত উঠাল এবং তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো। কিন্তু রাসূল (সা)-এর পবিত্র মুখে থুথু পড়েনি। তার এমন আচরণে রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! তোমার কুকুরদের মধ্য থেকে একটি কুকুর তার উপর নাযিল কর”। প্রশ্ন: উতাইবার কী পরিণতি হয়েছিলো? উত্তর: একবার উতাইবা তার দেশের কিছু লোকের সাথে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং ‘যারাকা’ নামাক স্থানে যাত্রা বিরতি করল। হঠাত একটি সিংগ তাদের কাছে এসে তাদের মাঝখান থেকে উতাইবাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল এবং তার মাথা ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়েছিল। প্রশ্ন: উকবা বিন আবি মুয়িত কে? উত্তর : সেও মক্কার একজন নেতা যে রাসূল (সা) ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতো। প্রশ্ন: সে রাসূল (সা)-এর সাথে কী আচরণ করতো ? উত্তর: সে উটনীর নাড়ি-ভূড়ির ময়লা-আবর্জনা এনে রাসূল (সা)-এর উপর রাখত। এ নিকৃষ্ট কাজে কাফিরদের মধ্যে হাসির বন্যা বয়ে যেত। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর পিঠ থেকে নোংরা আবর্জনাগুলো কে পরিস্কার করতো ? উত্তর : ফাতিমা (রা) এসে তার বাবার পিঠ থেকে এ নোংরা আবর্জনাগুলো পরিস্কার করতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এরপর কী করতেন ? উত্তর: তিনি উকবার উপর আল্লাহর গযবের বা আযাবের প্রার্থনা করতেন। প্রশ্ন: সালাত পড়ার সময় রাসূল (সা)-এর সাতে কী করতো ? উত্তর: একবার রাসূল (সা) সালাত পড়ছিলেন এমন সময় উকবা এসে তার গলায় পা রাখল এবং তার চোখগুলো সামনের দিকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ধরে রাখল। প্রশ্ন: পরবর্তীতে রাসূল (সা) যখন সালাতের সেজদায় যেতেন তখন উকবা তার মাথায় কী নিক্ষেপ করতো ? উত্তর: সে ভেড়ার নাড়ি-ভূড়ি এনে রাসূল (সা)-এর মাথায় নিক্ষেপ করত। প্রশ্ন: কে রাসূল (সা)-এর মাথা থেকে এগুলো পরিষ্কার করতেন ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর মেয়ে ফাতিমা (রা)। প্রশ্ন: উকবার কি রাসূল (সা)-কে মারার চেষ্টা করেছিলো ? উত্তর : হ্যাঁ, সে রাসূল (সা)-এর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেছিলো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে বাঁচানোর জন্য কে এগিয়ে এসেছিলো ? উত্তর: আবু বকর (রা) রাসূলকে বাঁচাতে এলেন। তিনি উকবাকে শক্তভাবে ধরে ধাক্বা মেরে রাসূল (সা) থেকে তাকে আলাদা করে দিলেন। প্রশ্ন : আবু বকর (রা) তাকে কি বললেন ? উত্তর: তিনি বললেন, “তুমি কি এ কারণে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে, যে বলে তার শাসনকর্তা আল্লাহ”। প্রশ্ন: উকবার কি পরিণতি হয়েছিলো ? উত্তর: বদর যুদ্ধে তাকে বন্দী করা হয়। পরে রাসূল (সা)-এর নির্দেশে সাফরা নামক স্থানে আলী বিন আবি তালিব আঃ তাকে হত্যা করে

ইমাম আলী আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা বিশ্বজগত ও ইমাম আলীর (আঃ) দৃষ্টিভঙ্গি নাহজুল বালাগা একটি সমুদ্রের মতো। সেখান থেকে যতোই নেওয়া হোক না কেন, কমবে না। আমরা বিশাল এই সমুদ্র থেকে বিন্দুর মতো খানিকটা আহরণের চেষ্টা করবো। সুন্দর এই বিশ্বজগত আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামতে পূর্ণ। মানুষ এইসব নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়। আমরা যদি একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে,এই বিশ্বকে ঘিরে মানুষের রয়েছে বিচিত্র আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া এককথায় ব্যাপক আকর্ষণ। মানুষের ব্যাপক গবেষণার ফলে বিশ্বের সূক্ষ্ম অণূ-পরমাণু আবিস্কৃত হয়েছে। এইসব গবেষণায় পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে যে অবিশ্বাস্যরকম শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে বিশ্ব নিরর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। আর মানুষকেও খামোখাই পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি। আলী (আঃ) বিশ্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আল্লাহর নিদর্শন বলে মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব কিছুই মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষের উচিত প্রকৃতির যথার্থ ব্যবহার করা। আল্লাহর অলি-আউলিয়া বা ধর্মীয় মনীষীগণও প্রাকৃতিক সম্পত তথা আল্লাহর নিয়ামতগুলোকে সৎ ও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। হযরত আলী (আঃ) চেষ্টা করেছেন পুকুর থেকে পানি তুলে খেজুর বাগান তৈরি করতে যাতে মানুষ সেগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। পৃথিবীর সাথে মানুষের সম্পর্ককে আলী (আঃ) তুলনা করেছেন একজন ব্যবসায়ীর সাথে বাজারের সম্পর্ক কিংবা একজন কৃষক এবং কৃষিক্ষেতের সম্পর্কের সাথে। একইভাবে যে ব্যক্তি এই পৃথিবীতে কাজ করবে আখেরাতে তার ফল সে পাবে। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীটা ঈমানদারদের জন্যে একটি উত্তম স্থান। তিনি মনে করেন দুনিয়া মানুষের জন্যে স্থায়ী কোনো বাসস্থান নয় বরং এটা মানুষের জন্যে একটা ক্রসিং-পয়েন্ট এবং পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে লাফ দেওয়ার মঞ্চ। নাহজুল বালাগায় আলী (আঃ) এর এই দৃষ্টিভঙ্গি কথোপকথনের ভঙ্গিতে এসেছে। সেখানে এক ব্যক্তি দুনিয়াকে ধিক্কার দেয় আর আলী (আঃ) তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়। কবি আত্তার এই বিষয়টিকে মুসিবাৎ নমেহ-তে কবিতার মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেঃ آن يكي در پيش شير دادگر ذم دنيا كرد بسياري مگر حيدرش گفتا كه دنيا نيست بد بد تويي-زيرا كه دوري از خرد ন্যায়পরায়ন সিংহ আলীর সামনে সে পৃথিবীকে দিয়েছে ধিক্কার প্রচুর, তবে তার হায়দার বলেন পৃথিবী নয় মন্দ মন্দ তো তুমি, জ্ঞান থেকে দূরে অন্ধ হযরত আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে ব্যক্তির ঈমান নেই তার জন্যে এই পৃথিবী ভয়াবহ এক নরক যা কেবল তার জন্যে ধ্বংসেরই দ্বার খুলে দেয়। এই সমস্যা এমন সময় দেখা দেয় যখন মানুষ পার্থিব এই জগতের মোহে পড়ে যায়। মানুষ যদি নিজের ব্যাপারে সতর্ক না হয় এবং এই বিশ্বজগত সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নেবে এবং ক্ষণিকের পথ চলার অঙ্গন এই বিশ্ব তার সামনে ভিন্ন লক্ষ্য তৈরি করবে। এরকম অবস্থায় একজন মানুষ পৃথিবীর মোহজালে আটকা পড়ে যায়। এই মোহ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। একেই বলে দুনিয়াপূজা, যার বিরুদ্ধে ইসলাম সংগ্রাম করতে বলে পরকালীন পাথেয়। আলী (আঃ) ও মানুষকে এ ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন। আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীর নেতিবাচক দিকটি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো আলী (আঃ) পৃথিবীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, উপরে ওঠার সিঁড়ি হলো পবিত্রতা, সততা ইত্যাদি গুণাবলি। কিন্তু যখনই তিনি পৃথিবীর অসুন্দর রূপ নিয়ে কথা বলেছেন তখনই মনে হয়েছে তিনি যেন এমন কোনো ঘৃণিত শত্রু সম্পর্কে কথা বলছেন যে কিনা মানুষকে সবসময় ধোকা দেয়। তিনি পৃথিবীকে এমন এক সাপের সাথে তুলনা দেন, যে সাপ দেখতে বেশ সুন্দর এবং নাদুস নুদুস অথচ তার দাঁতের নিচে আছে মারাত্মক বিষ। অন্যত্র তিনি বলেছেন-পৃথিবী তাঁর কাছে এমন একটা পাতার মতো অর্থহীন যার মুখে বসে আছে আস্ত এক ফড়িং কিংবা ছাগলের নাকের পানির মতোই তুচ্ছ ময়লা। ঘৃণিত এই পৃথিবী এমন এক জগত, যে আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং মানবিকতাকে ধ্বংস করে দেয়। আলী (আঃ) এর মতে মানুষ যদি পৃথিবীর মোহে পড়ে যায় তাহলে সে তার উন্নত সকল মূল্যবোধকে হারাতে বসে। এ কারণেই তিনি পৃথিবীর নশ্বরতা নিয়ে বারবার কথা বলেছেন। হযরত আলী (আঃ) পৃথিবীকে কঠিন ঝড়ের সাথে তুলনা করেন, যেই ঝড় সমুদ্রের বুকের নৌকায় বসবাসকারীদেরকে মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়, আবার কাউকে কাউকে সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে মারে, কেউবা ঢেউয়ের বুকে ডুবতে ডুবতে বেঁচে যায় এবং ভবঘুরে বানিয়ে ছেড়ে দেয়। পৃথিবী সম্পর্কে মানুষকে এভাবে ভীতি প্রদর্শন করানোর পর ইমাম আলী (আঃ) আল্লাহর সকল বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তারা যেন সুস্বাস্থ্য এবং সময়-সুযোগকে অমূল্য রতন ভাবে এবং মৃত্যুর বাস্তবতাকে যথার্থভাবে মেনে নিয়ে অতীতের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন-হে আল্লাহর বান্দাগণ! সাবধান হও! তোমার মুখে ভাষা থাকতে থাকতে, তোমার শরীর সুস্থ থাকতে থাকতে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো খেদমতের জন্যে প্রস্তুত থাকতে থাকতে এবং ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত থাকতে থাকতে সাবধান হও! সুযোগ এবং সামর্থ হারাবার আগেভাগেই হুশিয়ার হও! অনিবার্য মৃত্যুর দূত তোমার দরোজায় টোকা দেওয়ার আগে ভাগেই হুশিয়ার হও! ইমাম আলী (আঃ) বোঝাতে চেয়েছেন যে শারিরীক সামর্থ থাকতে থাকতেই আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগি বেশি বেশি করে নাও! যে-কোনো সময় মৃত্যু এসে যেতে পারে কিংবা বার্ধক্যের সময় ইচ্ছা থাকলেও ইবাদাত বন্দেগি যৌবনকালের মতো করা সম্ভব হয় না। দুনিয়ার চাকচিক্য এমন যে এই মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্যে একটা শক্তির প্রয়োজন হয় যে শক্তি মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে। সেইসাথে এই শক্তি পৃথিবীকে নশ্বর হিসেবে সবসময় সামনে তুলে ধরে আর অবিনশ্বর পারলৌকিক জীবনের দিকে নিয়ে যায় এবং এভাবে নিজের সত্যিকারের সৌভাগ্য নিশ্চিত করে। ইমাম আলী (আঃ) পরহেজগারী এবং খোদাভীতিকেই এই শক্তি তথা মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা বলে বোঝাতে চেয়েছেন। যারা নিজেদেরকে আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে রজ্জুবদ্ধ করেছে এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টিজগতের বাস্তবতার দিকে অগ্রসর হয়েছে তাদের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরকালের শেষ বিচারের দিন কঠিন মুসবতের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হবেন।

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ওহাবীরা জানে মদিনার রাসুল, চিনেনা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.)-কে পর্ব ১ এজিদের বীজ থেকে ওহাবীদের জন্ম। আসুন ভাই মুসলমানগন আপনাদেকে বলি এজিদ কে এবং ওহাবী কারা? তারা কি সত্যিই নবী প্রেমিক মুসলমান (?) সৌদি সরকার ওহাবী, মুয়াবিয়া বীজের বংশ তারা। সুতরাং আজ তারা প্রিয় নবীর রওজা পাক সরিয়ে নেয়ার যে জঘন্য কাজে এগিয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ এই বংশের লোকেরা এর আগেও করে গেছেন যা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে। আসুন আমরা চিনে নেই এই সৌদি রাজ বংশ আসলে কারা। আরবের বড় বড় কাফের আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ছিলো প্রিয় নবীর ঘোর শত্রু। এদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ছিলো নবী পাক (স.)-এর জঘন্যতম শত্রু। আরেকজন ঘোরতর শত্রুর নাম ছিলো ওতবা। ওই ওতবার মেয়ের নাম ছিলো হিন্দা। পাপিষ্ঠা রাক্ষসী হিন্দা ওহুদের যুদ্ধে প্রিয় নবী (স.)-এর চাচা হামজার পেট চিরে কলিজা বের করে চিবিয়ে খায় এবং হাত ও নাক কেটে নেয় গলার অলংকার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। ওই কলিজা ভক্ষনকারীর ছেলের নাম মুয়াবিয়া। মুয়াবিয়ার পিতার নাম আবু সুফিয়ান। মহানবীর ঘোর দুশমন আবু সুফিয়ান আর হিন্দার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম পরবর্তী জীবন ব্যবস্থায় গনিমতের মাল ভক্ষন ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা ছাড়া ইসলামের প্রতি ত্যাগ ও মোহাব্বতের একটি দৃষ্টান্তও কেউ দেখাতে পারবেন না। ঈমান (মৌখিক ঈমান) আনার পরও মহানবীর প্রতিষ্ঠিত মহান আদর্শগুলোকে একে একে হত্যা করেছে আর প্রিয় নবীর পবিত্র বংশধররা সে আদর্শ বাচিয়ে রাখার জন্য অকাতরে জীবন কোরবানি দিয়েছেন। মুয়াবিয়ার কুলাঙ্গার পুত্র ইয়াজিদ। আরেকটু জেনে রাখুন- ইতিহাসের কালপ্রবাহে বনি কুরাইশ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায় একটি ইমাইয়া আরেকটি হাশেমী। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর আদি পুরুষ হাশিম থেকেই এদুটি গোত্রের মধ্যে জ্ঞাতি বিদ্বেষের বিষাক্ত ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব, যোগ্যতা ও প্রতিপত্তির কারনে তৎকালীন কুরাইশে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছিলেন। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ও যোগ্যতা তার ভ্রাতুষ্পুত্র আবদে শামসের পুত্র উমাইয়া কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সবসময় কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতো ক্ষমতা লোভি উমাইয়া। আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী এই শত্রুতা চলতে থাকে বংশানুক্রমিক ভাবে। হযরত উসমান (রা.) খেলাফতপ্রাপ্ত হলে উমাইয়া নেতারা একে একে খলিফার ঘরে অভ্যর্থনা জানাতে আসছিলেন। আবু সুফিয়ান তখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পথে তিনি সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের মধ্যে বনি উমাইয়া ছাড়া অ্ন্য কেউ নেই তো? হ্যাঁ সূচক উত্তর পাওয়ার পর আবু সুফিয়ান সঙ্গীদের বললেন- দেখো, বহু কষ্ট আর সাধনার পর ক্ষমতা আমাদের হাতে এসেছে। এটাকে বলের ন্যায় বনি উমাউয়ার এক হাত থেকে অন্য হাতে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটা (খেলাফত) যেনো আর কোনোদিন বনি হাশিমীদের ঘরে ফিরে না যায় (রউফুল হেজাব) আবু সুফিয়ানের পুত্র আমির মুয়াবিয়া ক্ষমতা, মসনদ, ব্যক্তিস্বার্থ ও গোত্রীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। আজ চৌদ্দ শো বছর পর আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে ইসলামের ঘোর শত্রুদল। তারা নামে মুসলমান। তারা লম্বা জামা পরে। কপালে নামাজের কালো দাগ। মুখে দাড়ি আছে, মাথায় টুপি। আসলে তারা নকল মুসলমান। আজ শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয় নবীর পাক রওজাতে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত। তারা প্রায় ১০০ বছর আগে জান্নাতুল বাকীতে অবস্থিত প্রিয় নবীর আহলে বায়াতের নাম নিশানা মিটিয়ে দিয়েছে সেখানে অবস্থিত সমস্ত রওজাগুলিকে ধ্বংশের মাধ্যমে। তারা এবার প্রিয় নবীর পবিত্র রওজা শরীফের দিকে এগিয়ে আসছে বোলডেজার নিয়ে। ভাই মুসলমান, শুনে রাখুন- যাদের অন্তরে প্রিয় নবীর প্রেম মহাব্বত নেই, যারা সকলের চেয়ে প্রিয় নবীকে বেশি ভাল না বাসবে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- একটি শুচের ছিদ্র দিয়ে যদিও একটি উট প্রবেশ করতে সক্ষম হয় কিন্তু তাদের দ্বারা বেহেস্তে প্রবেশ করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় যাদের অন্তরে প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (স.)-এর প্রেম ভক্তি সকল বস্তুর চেয়ে বেশি না হবে। এখন চিন্তা করে দেখুন সৌদিরা আদৌ মহানবীকে ভালবাসেন কিনা। ভালোই যদি বাসতেন তাহলে তারা শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয়নবীর রওজা মোবারকে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত হতো না। নবীর প্রতি মুসলমানদের প্রেম-ভক্তি-ভালবাসা সৌদিদের কাছে শিরক। তাহলে তারা কোন আল্লাহর ইবাদত করে একটু ভেবে দেখুন তো? যে আল্লাহ বলছেন- মুহাম্মদকে সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?)

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ পৃথিবীতে মানুষের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো অব্যাহত কর্মচাঞ্চল্য, এটা মানুষের ব্যক্তিজীবনের অবশ্যম্ভাবী একটি প্রয়োজনীয়তা। ইমাম আলী (আঃ) মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ সম্পর্কে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখেন। এক্ষেত্রে তিনি আরেকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করেন। সেটা হলো মানুষেরজীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা। যেই শৃঙ্খলা তাকে উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়। হযরত আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার সময়ের একটা অংশ জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে ব্যয় করা এবং আরেকটি অংশ ব্যয় করা উচিত মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে। ইমাম আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার জীবনের একটা সময় জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যে ব্যয় করা এবং অপর একটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করার জন্যে। আর এ প্রশান্তির ব্যাপারটি একমাত্র ইবাদাত-বন্দেগী বা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হয়। মানুষের সময়ের তৃতীয় অংশটি তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি লালনের জন্যে ব্যয় করা উচিত যাতে তার জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শক্তি লাভ করতে পারে। হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেন,মুমিন জীবনের কর্মপরিকল্পনায় তিনটি সময়সুনির্দিষ্ট আছে। একটা হলো তার স্রষ্টার ইবাদাত-বন্দেগির সময়। দ্বিতীয় সময়টা হলো যখন সে তার জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় আর তৃতীয় সময়টা হলো তার সৎ আনন্দগুলো আস্বাদনের সময়। আজকের আলোচনায় আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর বক্তব্যের তৃতীয় অংশটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবো-যেখানে তিনি জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ ও সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ দৈনন্দিন জীবন সমস্যায় এতো বেশি জর্জরিত যে,নিজের দিকে তাকাবার সময় খুব কমই মেলে। যার ফলে আমরা লক্ষ্য করবো যে মানুষ তার নিজের সম্পর্কে মানুষ উদাসীনতায় ভোগে। আমরা লক্ষ্য করবো যে, এই উদাসীনতার পরিণতিতে ব্যক্তির মাঝে অশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এগুলো থেকেমুক্তির জন্যে সে ভুল চিত্তবিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে-যা তার চিন্তা-চেতনায় ডেকে আনছে নিরন্তর অবক্ষয়। আলী (আঃ) মানুষের এই চিন্তা-চেতনাগত অবক্ষয় রোধকল্পে আভ্যন্তরীণ বা আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন সুস্থ বিনোদনের জন্যে বই পড়া যেতে পারে যে বই মানুষের মনের খোরাক দেয়,আত্মিক এবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে। তিনি বলেছেন,জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় এবং নতুন অভিনতুন বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নিজেদের অন্তরগুলোকে বিনোদিত করো,কেননা মনও শরীরের মতো ক্লান্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত হলো,মানুষের জন্যে একঘেঁয়ে কাজ বা একঘেঁয়ে জীবন বিরক্তিকর এবং তা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যেই মানুষের উচিত হলো স্বাভাবিক ও একঘেঁয়ে জীবনের ছন্দে মাঝে মাঝে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য আনা। যেমন মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপর পড়ালেখা করা। এগুলো অন্তরকে প্রশান্ত করে,সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটি বিনোদন-মাধ্যম। ইসলামে খেলাধুলার ব্যাপারে বলা হয়েছে খেলাধুলা শারীরিক শক্তি-সামর্থবৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দেরও একটি মাধ্যম। ইসলামে মানুষের সুস্থতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই লক্ষ্য করা যাবে ঐশী শিক্ষা মানুষের জন্যে প্রাণদায়ী। যেমন রোযা অসুস্থ ব্যক্তির ওপর হারাম। একইভাবে মাদক যেহেতু মানুষের শরীর মনের জন্যে খুবই ক্ষতিকর এবং জীবন চলার পথকে স্থবির কিংবা একবারে বন্ধই করে দেয় সেজন্যে ইসলাম মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে তিরষ্কৃত এমনকি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ইমাম আলী (আঃ) ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, বিমর্ষ বা মাতাল ব্যক্তিদের ওপর আস্থা রেখো না। তিনি মুমিনদেরকে সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হবার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছেন! আলী (আঃ) নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তির বাইরেও সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী। নবীজীর যে-কোনো আদেশ পালনের জন্যে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।  নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সংকলিত হয়েছে সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনীষীদের দৃষ্টিতে যুগ যুগ ধরে সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়-বিচার এবং স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিরাপত্তা জীবনের মৌলিক দিকগুলোর একটি এবং সামজিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর মানব উন্নয়ন ও বিকাশের অনিবার্য ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী। এ কারণেই মানুষের একটি পবিত্রতম প্রত্যাশা হলো এই নিরাপত্তা। আল্লাহর পক্ষ থেকে পূণ্যবানদের সমাজের জন্যে সুসংবাদ হিসেবে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে আল্লাহ তাদের এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে,পৃথিবীতে তিনি তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত দান করবেনই যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন। তিনি তাদের জন্যে তাঁর মনোনীত দ্বীনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেবেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে শান্তি আরনিরাপত্তামূলক অবস্থায় পরিবর্তিত করে দেবেন।" মানুষের এই প্রাচীন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ নিরাপত্তা তার অস্তিত্বের সাথেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। জীবন যাপনের প্রয়োজনে মানুষ পরস্পরের সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে এবং এভাবেই একটি সমাজবিনির্মাণ করে। তাদের এই সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি হলো ন্যায় ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করাহযরত আলী (আঃ) নাহজুল বালাগা'য় বলেছেন ইতিহাসের কাল-পরিক্রমায় রাষ্ট্র গঠন কিংবা সরকার গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। একথা সর্বজন বিদিত যে ইমাম আলী (আঃ) ক্ষমতার মসনদ বা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেশাসনকার্য পরিচালনা করেন নি, বরং তিনি এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন যার ছত্রছায়ায় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়,অপরের অধিকার নষ্ট করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়,জনগণ নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে শত্রুদেরমোকাবেলার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালায় হযরত আলী (আঃ) অবশ্য এই বক্তব্যটি রেখেছিলেন খারজিদের কথা মাথায় রেখে-যারা হযরত আলী (আঃ) এর হুকুমাতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। নাহজুল বালাগায় তিনি বলেছেন-"তারা বলে হুকুমাত,বিচার বা শাসন-কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ কথা সত্য। আরো সত্য যে মানুষ-চাই শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ-শাসকের মুখাপেক্ষী। মুমিন ব্যক্তিগণ হুকুমাতেরছায়ায় নিজেদের কাজে মশহুল হয় আর অমুসলিমরা তা থেকে উপকৃত হয়। হুকুমাতের কল্যাণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে হুকুমাতের মাধ্যমেই বায়তুল মাল আদায় হয়,শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হয়,রাস্তাঘাট সুরক্ষিত হয়,সবলের হাত থেকে দুর্বল তারঅধিকার রক্ষা করতে পারে। আর এগুলো সম্ভব হয় তখন যখন পুণ্যবানরা শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে জীবনযাপন করতে পারে এবং বাজে লোকদের হাত থেকে নিরাপদ থাকে। হযরত আলী (আঃ) এ কারণেই নিরাপত্ত প্রতিষ্ঠা করাকে সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকে একটি নিয়ামত হিসেবে গণ্য করতেন। তাঁর দৃষ্টিতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার মৌলিক শক্তি হলো আল্লাহ এবং ইসলামের প্রতিঈমান। নাহজুল বালাগায় এসেছে-সকল প্রশংসা আল্লাহর,যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সহজ পথের নির্দেশনা দিয়েছেন ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হবার জন্যে। তিনি ইসলামের স্তম্ভ করেছেন সুদৃঢ় যাতে কেউ একে ধ্বংস করতে না পারে। যারা ইসলামকে অবলম্বন করেছে তাদের জন্যে মহান আল্লাহ ইসলামকে করেছেন শান্তির উৎস। যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় তাদের অন্তরে দিয়েছেন বিশ্বস্ততা,যারা ইসলামের ওপর নির্ভর করতে চায় তাদের জন্যে দিয়েছেন আনন্দ। যে বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে চায় ইসলামকে তার জন্যে করেছেনঢালস্বরূপ। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে একটি দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করা উচিত যেখানে কোনো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়।তার মানে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দেশের সরকারের মৌলিক একটি দায়িত্ব। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে হযরত আলী (আঃ) বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে আমরানাহজুল বালাগা থেকে একটি ছোট্ট উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ইমাম বলেছেন-চেষ্টা করো সততা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার। প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ত থেকো। সৎ পথ অনুসরণ করো। অহমিকা থেকে দূরে থেকো। আগ্রাসন বা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থেকো ইত্যাদি মুসলমানদের এই মহান নেতা মানুষের জান-মালের হেফাজত করা এবং সম্মান রক্ষা করাকেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অংশ বলে মনে করেন। সেজন্যে তিনি তাঁর বক্তব্যে কিংবা উপদেশে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালে যখন শুনতে পেলেন যে একদল লোক মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে এবং তাঁরই শাসিত এলাকার ভেতর ইহুদি এক মহিলা লাঞ্ছিত হয়েছে,তিনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন-এই ঘটনায় শোকে-দুঃখেকেউ যদি মরেও যায়,তাহলে তাকে তিরষ্কৃত করা হবে না।

আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা খুৎবা তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন সব কিছুকেই। কোন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ এবং কোন পরামর্শ দাতার পরামর্শ বা কোন সাহায্যকারীর সাহায্য ছাড়াই। (খুতবা:১৫৫) পৃথিবী তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীকে। তা আবার ঝুলিয়েও রেখেছেন। তা ধরে রেখেছেন কোন অবলম্বন ছাড়াই। এমনভাবে তৈরী করেছেন যা পা ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তা উঁচু করে রেখেছেন কোন খুঁটি ছাড়াই। (খুতবা:১৮৫) বাতাস তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তাঁর স্বীয় ক্ষমতায়। আর আসমান ও জমিনের মধ্যে বাতাসকে প্রবাহীত করেছেন সহানুভূতির সাথে। (খুতবা:১) চাঁদ তিনি (আল্লাহ), সজ্জিত করেছেন আসমানকে উজ্জল নক্ষত্র ও উল্কার আলোকচ্ছটা দিয়ে। এর সাথে স্থাপন করেছেন দীপ্তশালী সূর্যকে। আর স্থাপন করেছেন উজ্জল চাঁদকে, যা স্বীয় কক্ষ পথের চতুর্দিকে আবর্তন করছে। (খুতবা:১) রাত তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য। যখন রাত্র পতিত হয় ও অন্ধকার নেমে আসে। আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁর জন্যেই। যখন নক্ষত্ররাজী ঝিকিমিকি করে এবং তা আবার ডুবেও যায়। (খুতবা:৪৮) সূর্য লক্ষ্য কর: সূর্য ও চাঁদের দিকে, ঘাষ, লতা-পাতা ও বৃহদাকার গাছগুলোর দিকে, পানি ও পাথরের দিকে, সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের দিকে, বিশাল বিশাল পর্বতশৃঙ্গ ও তার উচ্চতার দিকে। লক্ষ্য কর: ভাষার পার্থক্য ও তার বৈচিত্রতার দিকে। আরো লক্ষ্য কর রাতের পর দিন ও দিনের পরে রাতে পালাবদলের দিকে। (খুতবা:১৮৫) পিপড়া তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন পিপড়াকে। লক্ষ কর এই পিপড়ার ছোট্ট সুন্দর দেহটার দিকে। চেয়ে দেখ কেমন করে সে জমিনের উপর বুক দিকে হেটে চলে এবং কিভাবে সে জীবিকা সংগ্রহ করে, কিভাবে শষ্যদানা বহন করে নিজের ঘরে এনে সেগুলোকে আবার গুদামজাত করে। সে গরমকালে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে শীতকালের জন্য এবং শক্তি সঞ্চয় করে রাখে ওই সময়ের জন্য যখন সে দূর্বল হয়ে পড়বে। (খুতবা:১৮৫) পদতল তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যই। তিনি পিপড়া ও মাছির পদতল দিয়েছেন, আবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন পিপড়া ও মাছির থেকেও বড় কিছু, আর তা হচ্ছে তিমিমাছ ও হাতি। (খুতব:১৬৫) কীট-পতঙ্গ যদি তুমি চাও, তাহলে আমি তোমাকে ওই কীট-পতঙ্গ সমন্ধে বলবো। আল্লাহ তাকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন, যা অনুরূপ চাঁদের মত। তাকে ছোট্ট দুটি কান দিয়েছেন, যা তার মুখমণ্ডল উপযোগী। তাকে সুতিক্ষ্ম ইন্দ্রীয় দিয়েছন ও মুখের অগ্রভাগে দুটি ধারালো দাঁত, যা দিয়ে সে বিভিন্ন কিছু কাটতে পারে। তাকে কাস্তের মত দুটি পালক দিয়েছেন, যা অনুরূপ পায়ের মত, যার সাহায্যে সে শক্তভাবে দড়াঁতে পারে। (খুতবা:১৮৫) পাঁখি পাঁখিরা আল্লাহর নির্দিশের আজ্ঞাবহ। তিনি জানেন তাদের পালকের সংখ্যা এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হিসাব। আর পানি ও মাটির উপর দাড়াঁনোর জন্য তাদের পাগুলোতে শক্তি দিয়েছেন। আর তিনি জানেন তাদের সব প্রজাতির ব্যাপারে, যেমন: কাক, ঘুঘু, ঈগল ও উট পাখি। (খুতবা:১৮৫) ময়ূর তাঁর (আল্লাহর), সৃষ্টিত সব পাখির মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর হচ্ছে এই ময়ূর। যাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন অধিক সুন্দর সমতান, সূর লালিত্য দিয়ে। আর তাকে সাজিয়েছেন সুন্দর রং, বর্ণ ও রূপ দিয়ে, যা অধিক সুন্দর্জিত। তার ডানাগুলো এবং বিভিন্ন রংয়ে রঙ্গিন লম্বা লেজটি যেন একত্র নরম হাতে নিখুতভাবে বাধানো। (খুতবা:১৬৫) বাদুড় বাদুড় হচ্ছে তাঁর সুন্দর সৃষ্টির একটি দৃষ্টান্ত। এটি একটি অলৌকিক বিষয় তাঁর সৃষ্টিতে, একটি রহস্যময় নমুনা তাঁর বিজ্ঞতার। এগুলোর সবই আমরা একটি বাদুড়ের মধ্যে দেখতে পাই। যা সংকুচিত হয়ে যায় সূর্যের আলোয়। যদিও সূর্যের আলো সব কিছুকেই ততপর করে তোলে তাদের প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু সে একবিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করে না। সে ততপর হয়ে ওঠে রাত্রে। যদিও রাতের অন্ধকার থামিয়ে অন্য সকল প্রকার জীবন্ত প্রাণীর ততপরতাকে। আল্লাহর অস্তিত্বের জীবন্ত প্রমাণ হচ্ছে এটাই। (খুতবা:১৫৫) মাছ তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন মাছকে। তিনি অবগত আছেন গভীর জঙ্গলের মধ্যে পশুদের দলনেতা, গভীর সমুদ্রের তলদেশে মাছদের ঘোরা ফেরা, মানুষের নিতান্ত গোপন পাপগুলো সমন্ধে এবং আরো অবগত আছেন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের মাটির বুকে আছড়ে পড়ার শব্দ সমন্ধে। (খুতবা:১৯৮) জীবিকা তিনি (আল্লহ), একমাত্র জীবিকা দানকারী। সব কিছুই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করে আছে। তাঁর কারণেই সব কিছুর অস্তিত্ব বিরাজমান। তিনি তো সকল অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন, সম্মানদাতা বিনয়ীদের, শক্তিদাতা শক্তিহীনদের, সান্তনাদাতা দু:খিদের। তিনি প্রতিটি বক্তার সব কথাই শ্রবণ করেন। তিনি ওই সকল ব্যক্তির গোপন চিন্তা সমন্ধে জানেন যারা নি:শ্চুপ অবস্থায় বসে আছে। তিনিই তো জীবিকা দান করেন প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীকে। আর সব কিছুই প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছে মৃত্যুর মাধ্যমে। (খুতবা:১০৯) দাউদ (আ.) তিনি ছিলেন একজন ধর্মসঙ্গীতের গ্রন্থকার (অর্থাৎ বেহেশ্তের দাওয়াত প্রদানকারী)। আর ছিলেন আবৃত্তিকারক রাজ প্রাসাদের বাসিন্দাদের (অর্থাৎ নিয়ামত আনায়নকারী সঠিক পথ গ্রহণকারীদের জন্য)। তিনি খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ঝুড়ি বুনতেন এবং খুলে যাওয়া ঝুড়ির তলাগুলো নিজের হাতে ঠিক করতেন। তিনি একদিন তার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি বললেন: “কে আছো তোমাদের মধ্যে আমাকে সাহায্য করতে পার, এই ঝুড়িগুলো বিক্রয়ের জন্য”? তিনি যবের আটার রুটি খেয়ে জীবন-ধারণ করেছিলেন, যা ঝুড়ি বিক্রিত টাকা দিয়ে কিনতো।(খুতবা:১৬০) লতা-পাতা মুসা (আ.) বললেন: “হে আমার আল্লাহ নি:সন্দেহে তুমি যা কিছু আমার জন্য পাঠাও আমি সেগুলোর মুখাপেক্ষি”। আল্লাহর কসম, তিনি আল্লাহর কাছে শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য রুটি ছাড়া অন্য কিছুই চান নি। কেননা, তিনি খাদ্য হিসেবে মাটিতে উৎপাদিত লতা-পাতাই ব্যবহার করতেন। একারণেই শেষ পর্যায়ে লতা-পাতার সবুজ রং তার পেটের চামড়ায় প্রতিয়মান হয়ে ছিল। যার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। (খুতবা:১৬০) শীতকাল আমি তোমাদেরকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে বলবো: তিনি মারইয়াম (সা. আ.)-এর সন্তান, তার ছিল একটি পথরের বালিশ, তিনি পরিধান করতো মোটা বস্ত্র এবং মোটামুটি খাবার খেত। অন্ধকার রাতে চাঁদই ছিল তার একমাত্র আলোর উৎস। শীতকালে পৃথিবীর পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত এই বিস্তীর্ন আকাশ ছিল তার ঘরের ছাদ। মরুভূমিতে গবাদি পশুর জন্য কিছু উৎপন্ন করাই ছিল তার পছন্দের বিষয়। (খুতবা:১৬০) সুসংবাদ অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠালেন (আল্লাহ্ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন)। আল্লাহর সাক্ষী অনুযায়ী, নবী (সা.) একজন সুসংবাদের দুত এবং ভয় প্রদর্শন ও সতর্ককারী। তিনি শ্রেষ্ট সৃষ্টি হিসেবে একটি নি:ষ্পাপ শিশুর মত এবং মানবজাতির মধ্যে পবিত্রতম ব্যক্তি পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে। সব কিছু পরিচালনার জন্য এমনকি সব বিষয়ে তিনি ছিলেন নি:স্কলংকের নি:স্কলংক এবং সর্বাধিক উদার ছিলেন তাদের জন্য যারা স্বীয় উদারতাকে প্রকাশ করত। (খুতবা:১০৫) আরবের অধিবাসী আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে (আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষন করুন) পাঠিয়েছেন পৃথিবীর মানুষদেরকে সতর্ককারী ও স্বীয় সত্য দ্বীন প্রকাশের তত্বাবধায়ক হিসেবে। সে সময় তোমরা ওহে আরবের অধিবাসী! কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের অনুসারী ছিলে আর তোমাদের এলাকাটি তখন অতি খারাপ জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। তোমরা বসবাস করতে পাহাড়ের গুহার মধ্যে, যার আসে পাশে থাকতো বিষাক্ত সাপ। তোমরা পান করতে কর্দমাক্ত ঘোলা পানি এবং খেতে নিম্নমাণের খাবার। তোমরা একে অপরের রক্ত ঝরাতে এবং নষ্ট করতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক। মুর্তিগুলো তোমাদের মনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। আর পাপগুলো তোমাদের চেপে ধরেছিল যখন তোমরা মুর্তিগুলোর দাসত্য করতে। (খুতবা:২৬ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।