পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আ’শারাহ মুবাশশারাহ" আল হাদিস নাকি জাল হাদিস?হাদিস “আ’শারাহ মুবাশশারাহর”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন সাহাবী বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন) ব্যাপারে আলোচনাআহলে সুন্নাতের রাবীগনের(হাদিস বর্ননাকারীগন) মধ্যে বিশেষ করে আহমাদ ইবনে আ’উফের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছে যে,নবী(সাঃ) বলেছেনঃএই ১০জন হচ্ছেন বেহেস্তবাসীঃ ১/আবুবকর ২/ওমর ৩/আলী(আঃ) ৪/উসমান। ৫/তালহা। ৬/যুবাইর ৭/আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ৮/সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্ক ৯/সাঈদ বিন যাইদ ১০/আবু উবাদাহ ইবনে জাররাহ (তিরমিজী,খন্ড-১৩,পাতা-১৮২;সুনানে আবি📖📖 দাউদ,খন্ড-২,পাতা-২৬৪।)এই হাদিসটি সাঈদ ইবনে যাইদের উদ্বৃতিতে সামান্য পার্থক্য সহকারে উল্লেখ হয়েছে,সুত্রঃ আল-গাদীর,খন্ড,পাতা-১১৮)।📖📖এটি হচ্ছে একটি জাল হাদিস।আহলে সুন্নাত এই জাল হাদিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।আর এই ১০ জনের নাম সমুহকে “আশারাহ মুবাশশারাহ”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন।) পবিত্র মসজিদে নববীর দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল।আর তাদের এই বিষয়টি সাধারন মানুষের মধ্যেও বিশেষ প্রসিদ্ব।একজন আহলে বাইতি আলেম বলেনঃমদীনায় একটি কাজের জন্য আ’মিরিন বে মারুফের দফতরে গিয়েছিলাম।ঐ দফতরের প্রধানের সাথে আলোচনা করতে করতে আশারাহ মুবাশশারাহর প্রসঙ্গে কথা ঊঠলো।বললামঃ আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে।প্রধানঃ বলুন।আহলে বাইতি শিয়া আলেমঃ এটা কিভাবে সম্ভব যে, ২ জন বেহেস্তবাসী একে অপরের সাথে যুদ্ব করে?তালহা ও যুবাইর যারা ঐ ১০জনের মধ্যে আছেন তারা হযরত আয়েশার ছত্রছায়ায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের(আঃ) বিরুদ্বে (তিনিও হচ্ছেন বেহেস্তবাসী) বসরায় জঙ্গে জামালের সুচনা করে এবং যে কারনে বহু লোক নিহত হয়েছিল?যখন কোরান বলছে যে, “যদি কেউ কোন মু’মিনকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তবে তার শাস্তি হচ্ছে দোযখ আর সে চিরদিনের জন্য সেখানে থাকবে” ( সুরা হাক্কঃ৪৪)।📖📖📖এই আয়াতের আলোকে যারা সেদিন মু’মিনদের বিরুদ্বে যুদ্ব করেছিল তারা অবশ্যই দোযখে যাবে।কেননা তাদের কারনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।অতএব, বিচক্ষনতার দৃষ্টিতে বিচার করলে বুঝা যায় উক্ত “আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস।প্রধানঃ যারা সেদিন যুদ্ব করেছিল তারা হচ্ছে মুজতাহিদ।তাই তারা ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় দিয়েছিল।সেই কারনে তারা উপায়হীন ছিল।আহলে বাইতি আলেমঃ রাসুলের(সাঃ) হাদিসের বিরুদ্বে( এবং কোরানের বিরুদ্বে) ইজতিহাদ করা জায়েজ নয়।আর যেহেতু তিনি বলেছেন,যা সকল মুসলমান গ্রহন করে থাকেঃ-“ হে আলী!তোমার সাথে যুদ্ব করা মানেই আমার সাথে যুদ্ব করা আর তোমার সাথে সন্দ্বি করা মানেই আমার সাথে সন্দ্বি করা( মানাকিবে ইবনে মাগাযিলি,পাতা-৫০;মানাকিবে খাওয়ারিযমী,পাতা-৭৬, ও ২৪)।📖📖📖রাসুল(সাঃ) আরো বলেনঃ “ যে আলীকে আনুগত্য করবে সে যেন আমার আনুগত্য করলো আর যে আলীর সাথে বিরোধীতা করবে সে যেন আমার সাথে বিরোধীতা করলো(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস📖📖 সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।📖📖📖“ আলী সত্যের সাথে এবং সত্য তার সাথে।যেখানেই আলী থাকবে সত্যও সেখানেই থাকবে “(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল-📖📖 ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।📖📖সুতরাং ফলাফল দাড়াল এই, ঐ যুদ্বের এক পক্ষ হচ্ছে সত্যের পক্ষে আর তিনি হচ্ছেন আলী(আঃ) এবং অন্য পক্ষ হচ্ছে বাতিল।অতএব,“আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস কেননা বাতিল পক্ষকে কখনো বেহেস্তবাসী বলা যায় না।আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই হাদিসের রাবী হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আ’ঊফ আর সেও ঐ ১০ জনের একজন।সে এমন এক ব্যক্তি যে ওমরের ইন্তেকালের পর তার তৈরীকৃত শুরার আলোচনায় আলীর(আঃ) উপর চড়াও হয়ে বলেছিল যে, বাইয়াত কর তা না হলে হত্যা করা হবে।আর এই আব্দুর রহমানই উসমানের সাথে বিরোধীতা করেছে।আর উসমান তাকে মুনাফিক বলেছিল।তাহলে কি এমন পরিস্তিতিতে উক্ত রেওয়ায়েত সঠিক বলে মনে হয়?আবুবকর ও ওমরকে কি বেহেস্তবাসী হবার সু-সংবাদ দেয়া হয়েছিল?কেননা তারা তো বেহেস্তের নারী নেত্রী হযরত ফাতিমা (সা আ) ওফাতের কারন।আর এ কারনে হযরত ফাতিমা(সা আ) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলেননি।ওমর কি হযরত আলীকে(আঃ) আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করার জন্য ভয় দেখায় নি? সে কি বলে নি যে,যদি বাইয়াত না কর তবে হত্যা করা হবে?আর তালহা ও যুবাইর উসমানকে হত্যা করার জন্য কি পীড়াপীড়ি করে নি? তারা কি ইমাম আলী(আঃ)এর আনুগত্য করা থেকে বের হয়ে যাননি? তারা কি জঙ্গে জামালের যুদ্বে আমিরুল মু’মিনিন ইমাম হযরত আলীর(আঃ) বিরুদ্বে তলোয়ার হাতে তুলে নেয় নি?!ওই ১০জনের আরো একজন হচ্ছে সা’দ বিন ওয়াক্কাস। সে এই হাদিসটিকে সত্য বলেছে।কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,উসমানকে কে হত্যা করেছে? তখন উত্তরে সে বলেছিলঃআয়েশা যে তলোয়ার উন্মুক্ত করেছে এবং তালহা যে তলোয়ারকে ধার দিয়েছে,সেই তলোয়ার দিয়ে উসমানকে হত্যা করেছে।উক্ত ১০ জনের একে অপরের সাথে শত্রুতা ছিল।তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, তারা সকলেই বেহেশতো বাসী?অবশ্যই বলা যায় না।এপর্যন্ত আলোচনা থেকে পরিস্কার যে,উক্ত হাদিসটি মিথ্যা।আরো একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার এই যে,যে ২জনকে উক্ত হাদিসের রাবী হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ,যার উল্লেখিত হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা সম্পৃক্ত নয়।আর সে কারনেই তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।অন্যজন হচ্ছে সাঈদ ইবনে যাইদ,সে মুয়াবিয়ার খেলাফতের সময় হাদিস বর্ননা করতো।সুতরাং এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এই হাদিসে মুয়াবিয়ার পাপী হাতের স্পর্শ আছে।অতএব,আশারাহ মুবাশশারাহ হাদিসটি সনদের দিক থেকে একেবারেই ভিত্তিহীন ও অনির্ভরযোগ্য(আল-গাদীর কিতাবের ব্যাখ্যা নামক গ্রন্থ,খন্ড-১০,পাতা-১২২ থেকে ১২৮ নেয়া)।📖📖নিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার মিথ্যা হাদিস রচনাকারীর অপর রোজ কেয়ামত তাক বেশুমার লানত বর্ষিত হোকআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

সর্বকালের সেরা নারী হযরত ফাতিমা আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকজান্নাতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমার ‎( ‏আ.) ‏শাহাদাতকোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী ১৩ ই জমাদিউল আউয়াল শাহাদাত বরণ করেছিলেন সর্বকালের সেরা নারী নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরা ‎(সালামুল্লাহি আলাইহা)। এ উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।ইসলাম ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম, ‏আল্লাহর নবী-রাসূলরা কেমন ছিলেন ও কেন এবং কিভাবে তাঁদের মেনে চলব ‎?-এসব প্রশ্নে উত্তর জানা খুবই জরুরি। আমরা অনেকেই ইসলামের মূল নেতৃত্বের স্বরূপ ও ধারাবাহিকতার বিষয়েও মাথা ঘামাই না। তাই রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏কিংবা হযরত ফাতিমাকে যেভাবে জানা উচিত সেভাবে তাঁদেরকে জানতে পারিনি। আমরা বলি হযরত ফাতিমা মহানবীর মেয়ে। কিন্তু এর চেয়ে বড় ও আসল পরিচয় হল তিনি বেহেশতের নারীদের নেত্রী। আমরা জানি, ‏কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেই যে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি তারা নবী-রাসূলগণের স্ত্রী-সন্তানও হয় তবুও না। হযরত নূহ ‎(আ.)-এর স্ত্রী-সন্তান এবং হযরত লূত ‎(আ.)-এর স্ত্রী জাহান্নামবাসী হয়েছে, ‏এটি পবিত্র কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহর বিরোধিতা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এমনকি কেউ যদি রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর স্ত্রী-সন্তান হন, ‏তবুও তাঁরা কেবল এ সম্পর্কের ভিত্তিতে বেহেশতে যেতে পারবেন না। যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আহযাবের ৩০ নং আয়াতে ‎: ‘হে নবীপত্নিগণ! ‏তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল আচরণ করবে তার শাস্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’ ‏হযরত ফাতিমা মাত্র ১৮ বা ২০ কিংবা সর্বোচ্চ ৩০ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏তাঁকে ‎‘বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী’ ‏বলে সম্মান দিলেন। এটা স্পষ্ট, ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏নিজের খেয়াল-খুশিমতো তাঁকে এ উপাধি দেননি। কারণ, ‏কুরআনের ভাষায় তিনি প্রবৃত্তির খেয়ালে কোন কথা বলেন না। তাই আমরা বলতে পারি, ‏হযরত ফাতিমা ‎(আ.) ‏ইসলামের জন্য অসাধারণ বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন বলেই আল্লাহর রাসূল ‎(সা.) ‏তাঁকে এত বেশি ভালবাসতেন এবং তাঁকে অনুসরণ করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে উদাসীন থেকেছি। ইসলামের মহানবীর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। এ কারণে কাফের বা পথভ্রষ্টরা মহানবীকে নিয়ে উপহাস করে বলত যে নবী নির্বংশ হয়ে যাবেন। তাদের সে মশকরার জবাব হিসেবে সুরা কাউসার নাজিল হয়। কাউসার মানে অফুরন্ত নেয়ামত। তফসিরকারকদের মতে, ‏কাউসার বলতে নবী কন্যা ফাতিমাকে ইংগিত করা হয়েছে। আল্লাহর বাণীর সেই সীমাহীন মহিমায় পৃথিবী আজও আওলাদে রাসুল বা নবী বংশের সন্তানদের পদচারণায় মুখর। অন্যদিকে এককালের সেই গর্বিত পুরুষ ও অন্ধকারের উপাসক ও মহানবীর প্রাণের শত্রু খল নায়কদের বংশ বিলীন হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে নির্বংশ হয়ে গেছে আবু লাহাবের মতো গোত্রপতিরা। আর নবী বংশের জ্যোতিধারা রক্ষা পেয়েছে ফাতিমার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে।মহানবীর আহলে বাইত বা পবিত্র বংশ হিসেবে রসুলে খোদার বংশধরকে যে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে থাকে তার উৎসধারা ফাতিমা। যে যুগে নারীকে ভোগের পণ্য মনে করা হতো ও কন্যা সন্তানকে হত্যা করে পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করা যায় বলে মনে করা হতো সে যুগে হজরত ফাতিমার(সা) ‏মাধ্যমে বংশ রক্ষার এই ঘোষণা এক অনন্য সমাজ বিপ্লবেরই ধ্বনি হয়ে ওঠে।নবী নন্দিনী ফাতিমাকে ঘিরে এমন আরো অসাধারণ ঘটনা রয়েছে। নবী নিজ কন্যাকে ‎‘উম্মে আবিহা’ ‏বলে সম্মান দেখাতেন। এর অর্থ ‎‘বাবার মাতা'। ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক দিনগুলোতে নবী মোস্তফাকে অশেষ কষ্ট ও লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে। কাফিররা মহানবীকে বারবার আঘাত হেনেছে। ইবাদত মগ্ন রসুলে খোদার দেহে নোংরা এবং ময়লা পদার্থ ঢেলে দিত তারা। এই দিনগুলোতে হযরত ফাতিমা ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ছিলেন মহানবীর দুঃসাহসী সহযোগী ও মাতৃতুল্য সেবিকা। হজরত ফাতিমা সব যুগের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সম্মানিত। হুজুরে পাক বলেছেন, ‏ঈসার মাতা মরিয়ম নিজ যুগের সম্মানিতা মহিলা। কিন্তু আমার কন্যা ফাতিমা সকল যুগের শ্রেষ্ঠ নারী। তিনি আরো বলেছেন, ‏ফাতিমা আমার দেহের একটি অংশ, ‏যে জিনিসে সে দুঃখ পায় তাতে আমিও দুঃখ পাই। ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশে করবে। অন্যদিকে ফাতিমার অনুসারীদের স্পর্শ করবে না আগুন। হযরত ফাতিমা কাছে এলে দ্বীনের নবী নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নিজের পাশে বসতে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় ফাতিমাকে সম্মান দেখানোর পেছনে রয়েছে ঐশীলোকের সুস্পষ্ট ইংগিত । ফাতিমার স্বামী আলী(আ)কে খোদ নবী নিজের জ্ঞান-নগরীর দরজা বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর দুই সন্তান ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে বেহেশতে যুবকদের নেতা বলেছেন মহানবী। অথচ ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই এই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। হজরত আলীকে ‎(আ) ‏মসজিদে তরবারির আঘাতে ও ইমাম হাসান(আ)কে বিষ দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। আর ইমাম হুসাইনকে কি মর্মস্পর্শী পরিস্থিতিতে কারবালায় আত্মত্যাগ করেতে হয়েছে তা সবাই জানে। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তার বংশধররা এ ভাবেই ইতিহাসকে অতিক্রম করে গেছেন। এ সবই হলো ফাতিমার শিক্ষা, ‏ত্যাগ এবং মহিমার শ্রোতধারার ফসল। তাদের সে আত্মত্যাগের গাঁথা আজও মানুষকে অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রেরণা যোগায়। সত্যকে জানতে হলে, ‏স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ । হজরত ফাতিমা(সা) ‏কেবল নবী দুলালি বা নারীদের আদর্শ নন তিনি এক কথায় আদর্শ মানবাত্মার প্রতীক । কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী একটি মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমা ‎(সা)-কে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমার ওসিয়ত অনুযায়ী গোপনীয়তা বজায় রাখতে তাঁর দাফনেও অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মাত্র কয়েকজন অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে। মুসলমানদের মধ্য থেকে বিশ্বনবীর আহলে বাইতের অতি ঘনিষ্ঠ ওই কয়েকজন ব্যক্তি দাফনে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ফাতিমা ‎(সা) ‏জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হাসান ও হুসাইন ‎(আ.) ‏কিভাবে মারা যাবেন সেই তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন ‎(আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা ‎(সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, ‏খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে। বিশ্বনবী ‎(সা.) ‏বলেছেন, ‏মহান আল্লাহ আলী, ‏তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।'মাসহাফই ফাতিমা' ‏নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা ‎(সা. ‏আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী ‎(আ.)। এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা যা ঘটবে তার বর্ণনা ও সব শাসকদের নাম লেখা আছে বলে মনে করা হয়।নবী-নন্দিনী ‎(সা:) ‏বলেছেন, ‏পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, ‏রাসূলে খোদা ‎(সা.)র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা ‎(সা. ‏আ.) ‏রাসূল ‎(সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: ‏আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, ‏আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন।হযরত ফাতিমা ‎(সা:) ‏বলেছেন, ‏আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, ‏মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, ‏তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।বিশ্বনবী ‎(সা.) ‏ও তাঁর পবিত্র বংশধর ও বিশেষ করে ফাতিমা ‎(সা)’র প্রতি অশেষ দরুদ ও সালাম পাঠানোর পাশাপাশি সবাইকে আবারও শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি আজকের এই গভীর শোকের দিনে। হযরত ফাতিমা জাহরা ‎(সা. ‏আ.)’র একটি বক্তব্য ও দোয়া তুলে ধরে শেষ করব আজকের এই আলোচনা। তিনি বলেছেন, ‏নারীদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় হচ্ছে, ‏তারা যেন কোনো অচেনা পুরুষকে না দেখে এবং কোনো অচেনা পুরুষও তাদের না দেখে।জান্নাতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমার ‎( ‏আ.) ‏দু'আ ‎:اَللّٰهُمَّ ذَلِّلْ نَفْسِيْ فِيْ نَفْسِيْ وَ عَظِّمْشَأْنَكَ فِيْ نَفْسِيْ وَ أَلْهِمْنِيْ طَاعَتَكَوَالْعَمَلَ بِمَا يُرْضِيْكَ وَ التَّجَنُّبَ لِمَايُسْخِطُكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَহে আল্লাহ ‎, ‏আমার নফসের ‎( ‏সত্ত্বা বা অন্তর ‎) ‏কাছে আমার নফসকেই হীন ‎- ‏নীচ ‎( ‏ছোট ‎, ‏ক্ষুদ্র ও অপদস্ত অর্থাৎ যলীল ‎) ‏করে দিন ‎; ‏আর আপনার শা'ন ‎( ‏মাকাম ও মর্যাদা ‎) ‏আমার অন্তরে বড় ও মহান ‎( ‏আযীম্ ‎) ‏করে দিন ‎; ‏আমাকে আপনার আনুগত্য করা ‎, ‏যা আপনাকে সন্তুষ্ট করে তা আঞ্জাম দেওয়া এবং যা আপনাকে অসন্তুষ্ট করে তা থেকে বিরত ও দূরে থাকার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিন ‎, ‏হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ‎( ‏ইয়া আরহামার রাহিমীন ‎) ‏।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমনিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার

ফাতেমার আ. ‏মৃত্যু ও নানাবিধ গোপণ রহস্যপ্রশ্ন: ‏উৎসুক হৃদয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এমন হতে পারে যে, ‏কী কারণে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা নবী স. ‏এর ওফাতের মাত্র তিন মাসের মধ্যে মারা যান? ‏তবে কি তিনি কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, ‏নাকি তাঁর সাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। যদি সাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে, ‏তবে কেন আমরা সুন্নি আলেম ওলামাদের মুখ থেকে তার কারণ সম্পর্কে কিছু শুনতে পাই না?উত্তর: ‏এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আর ভূমিকাটি হল আমার জীবনের বাস্তক একটি ঘটনা। ঘটনাটি এরূপ:ভূমিকানবীর স. ‏আহলে বাইতকে ভালবাসার কারণে অনেক বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। একদিন আমার বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে বলল যে, ‏তুই যে মাযহাবের অনুসরণ করিস, ‏আলেম ওলামারা কেন তার বিরোধিতা করে? ‏আমি বললাম ‎: ‏ভাই জান! ‏যে আলেম ওলামারা আমার মাযহাবের বিরেধিতা করে, ‏তাদেরকে প্রশ্ন করো যে, ‏হযরত ফাতেমা জাহরা কত বছর বয়সে মারা গিয়েছেন? ‏তাঁর মৃত্যুর কোন কারণ ছিল কি? ‏নাকি তিনি সাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যদি তুমি আমার এসব প্রশ্নের উত্তর এনে দিতে পার, ‏তবে আমি তোমাকে বলব যে, ‏এসব আলেমরা কেন আমাদের বিরোধিতা করে।আমার সেই ভাই ১৮ মাস হল মারা গেছেন, ‏কিন্তু তিনি আমাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেন নি; ‏হয়তো আলেমদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন উত্তর পান নি। তবে এ কথা সত্য যে, ‏তারপর থেকে আমার ভাই কখনো আমার সাথে বিরোধিতা করেন নি। আমি নিজেও যখন উপরোক্ত প্রশ্নাদির উত্তর জানতে পেরেছি, ‏তখন থেকেই আমি আহলে বাইতকে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং আমি মনে করি: ‏যেকোন বিবেকবান মুসলমানই এসব প্রশ্নের উত্তর জানলে নবীর আহলে বাইতকে আগের চেয়ে আরো বেশি ভাল বাসবে।যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে ভূমিকা টেনে পাঠকবর্গকে বিরক্ত করেছি, ‏তাই এ পর্যায়ে উপরোক্ত প্রশ্নাদির জবাব সংক্ষেপে উল্লেখ করব তার পর সম্ভব হলে প্রতিটি প্রশ্নে জবাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।সংক্ষিপ্ত উত্তরঠিক যেভাবে প্রশ্নে উল্লেখ করেছি যে, ‏নবী স. ‏এর ওফাতের তিনমাসের মধ্যেই ফাতেমা জাহরা মুত্যু বরণ করেছিলেন, ‏তার এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। রাসূল স. ‏এর ওফাতের পর হযরত আলীকে জোর করে বাইয়াত করানোর জন্য তাকে যখন বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আসা হয়, ‏তখন হযরত ফাতেমা সা. ‏বাধা দেন এবং আগন্তক লোকদের সামনে তিনি যান। যাতে তারা আলীকে নিতে না পারে। কিন্তু এই বাধাই অবশেষে ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হয়ে যায়। এ জন্য বলা যায় যে, ‏নবী স. ‏এর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া বেলায়াতের রক্ষক হিসেবে প্রথম শহীদ হল হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা।অথচ সুন্নি আলেম ওলামারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেন না। হয়তো কেউ কেউ তার কারণ জানেন না, ‏অথবা জেনে বুঝেও তা বলেন না। কারণ তখন হয়তো সুন্নি মতাদর্শ প্রশ্নের সম্মুখিন হবে!ফাতেমার আ. ‏মৃত্যুর মূল রহস্যপ্রশ্ন ৩ ‎: ‏ফাতেমা আ. ‏এর মৃত্যুর মূল রহস্য কী?উত্তর ‎: ‏এ পশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে তার দৈহিক আঘাতের কারনাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।ফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহ নিম্নরূপ:১- ‏নবীর মৃত্যুতে গভীর শোক, ‏সবেদনা ও কান্না।২- ‏নবীর ওসি অর্থাৎ হযরত আলীর মজদুরিয়াত ও নিঃসঙ্গতার কারণে আত্মিক শোক ও প্রতিরক্ষা ছিল দৈহিক আঘাতের দ্বিতীয় কারণ।ইবনে শাহর অশুব ‎(মৃ: ‏৫৯৯ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:“উম্মে সালমা ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করে বলল ‎: ‏ওহে নবী কন্যা! ‏কিভাবে রাত কাটালেন।ফাতেমা বললেন ‎: ‏শোক ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে রাত কাটিয়েছি। শোক এই কারণে যে, ‏প্রিয় নবীকে হারিয়েছি ও দুঃখ এই জন্য যে, ‏তাঁর স্থলাভিষিক্তের উপর আরোপিত জুলুম। আল্লাহর কসম করে বলছি: ‏এতে নবীর উত্তরসূরীর প্রতি অবমাননা হয়েছে ‎(মানাকিবু অলে আবি তালিব, ‏২/২০৫।)।[1]৩- ‏ফাতেমা সা. ‏এর পবিত্র পদ ও মর্যাদার অবমাননা ছিল তৃতীয় কারণ ‎(নাহজুল বালাগার শারহ, ‏ইবনে আবিল হাদিদ, ‏১৬/২১৪) ‏।আল্লামা তাবারসি ‎(মৃ: ‏ষষ্ট হিজরি) ‏বর্ণনা করেছিন:[ফাদাকের খোৎবা সমাপ্তির পর ফাতেমা বলেছিলেন ‎:لَیتَنِی مِتُّ قَبلَ هینَـتِی وَ دُونَ ذِلَّتِی...হায়, ‏যদি এমন জুলুমের স্বীকার হবার পূর্বে মারা যেতাম! (এহতিজাজ, ‏খন্ড ১, ‏পৃ ১০৭)।অতএব, ‏বলা যায় যে, ‏ফাতেমার শোকের কারণ শুধু পিতার মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার সাথে আরে দু’টি ব্যাথা যোগ হয়েছিল।৪- ‏ফাতেমার বাড়িতে হামলার সময় তাঁর দেহে মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছিল। অন্য ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‎: ‏তার পিতার বিরহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে তাকে এমন আঘাত করা হয়েছিল, ‏যার ফলে তিনি ধরাশায়ি হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।কাজি নোমানি মাগরিবি বর্ণনা করেছেন ‎:[عَن أبِی عَبدِاللهِ جَعفَرِبنِ مُحَمَّدٍ الصادِقِ‌علیه‌السّلام عَن ‌أبِیهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]إنَّ رَسُولَ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله أسَرَّ إلی فاطِمَة‌َعلیهاالسّلام أنَّها أولی(أوَّلُ) مَن یَلحَقُ بِهِ مِن أهلِ بَـیتِهِ فَلَمّا قُبِضَ وَ نالَها مِن القَومِ ما نالَها لَزِمَت الفِراشَ وَ نَحَلَ جِسمُها وَ ذابَ لَحمُها وَ صارَت کَالخَیالِ. *ইমাম জাফর সাদিক আ. ‏তাঁর পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন ‎: ‏রাসূল স. ‏ফাতেমাকে চুপিসারে বললেন ‎: ‏তাঁর ওফাতের পর তার আহলে বাইতের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম যে তাঁর সাথে গিয়ে মিলিত হবে, ‏সে হল ফাতেমা আ.। অতঃপর যখন নবী স. ‏মৃত্যু বরণ করলেন এবং তার ঘরে হামলা করে তাকে আহত করা হল, ‏তখন তিনি শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন, ‏ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়লেন ও এমন ভাবে শুকিয়ে গেলেন যেন মনে হয়েছিল শুকনো কাঠি হয়ে গেছেন ‎(দায়ায়িমুল ইসলাম, ‏১/২৩২)।শেখ তুসি বর্ণনা করেন ‎:وَ المَشهُورُ الَّذِی لاخِلافَ فِیهِ بَـینَ الشِیعَةِ أنَّ عُمَرَ ضَرَبَ عَلی بَطنِها حَتّی أسـقَطَت...শিয়া সুন্নি মধ্যে এ বিষয়ে প্রসিদ্ধি রয়েছে ও কোনরূপ মতপার্থক্য নেই যে, ‏ফাতেমার পেটে ওমর এমন আঘাত হেনেছিল যে কারণে গর্ভের সন্তান পড়ে যায় ‎(তালখিছুশ শাফি, ‏৩/১৫৬)।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:فَلَمّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله وَ جَری ما جَری فِی یَومِ دُخُولِ القَومِ عَلَیها دارَها وَ إخراجِ ابنِ عَمِّها اَمِیرِالمُؤمِنِینَ ‌علیه‌السّلام وَ ما لَحِقَها مِن الرَجُلِ أسـقَطَت بِهِ وَلَداً تَماماً وَ کانَ ذلِکَ أصلَ مَرَضِها وَ وَفاتِها. ‏নবী স. ‏যখন মারা গেলেন, ‏তারপর যেদিন ফাতেমার ঘরে হামলার ঘটনা ঘটল, ‏আমিরুল মুমিনিনকে জোরপূর্বক বের করে আনা হল এবং ঐ পুরুষের দ্বারা যে বালা ফাতেমার উপর আসল, ‏যে কারণে তাঁর গর্ভের পূর্ণ ছেলে-সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। আর এটাই ছিল তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুর মূল কারণ ‎(দালায়েল উল ইমামাহ/২৭)।আল্লামা হিল্লি ‎(মৃ: ‏৭২৬ হি.) ‏বর্ণনা করেন,وَ ضُرِبَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام فَألقَت جَنِیناً اسمُهُ مُحسِنٌ... ‏ফাতেমাকে আ. ‏এমন আঘাত হানা হল, ‏যে কারণে তার গর্ভের সন্তান ‎‘মোহসেন’ ‏পড়ে গেল ‎... (শারহুত তাজরিদ/৩৭৬)।অতএব, ‏উপরোক্ত কারণাদি পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে, ‏ফাতেমা জাহরা সা. ‏আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে আত্মিক ও দৈহিক ভাবে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন। আর তাই ছিল তাঁর মৃত্যু ও অসুস্থতার মূল কারণ। যে আঘাত খলিফার দরবারি লোকদের পক্ষ থেকে ফাতেমার ঘরে হানা হয়েছিল।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:[عَن أبِی‌بَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً...ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন ‎: ‏ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‎‘কুনফুয’ ‏তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত হেনেছিল, ‏যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. ‏মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।কাফয়ামি ‎(মৃ: ‏৯০৫ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:إنَّ سَبَبَ وَفاتِهاعلیهاالسّلام هُوَ أنَّها ضُرِبَت وَ أسـقَطَت.নিশ্চয় ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হল: ‏তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন ও তাতে গর্ভপাত হল ‎(মেসবাহ/৫২২)।প্রিয় পাঠকবর্গ! ‏উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে সত্যই কি বলা যায় না যে, ‏ফাতেমা জাহরার মৃত্যু ছিল শাহাদাতের মৃত্যু?তাবারসি বর্ণনা করেন ‎:وَ حالَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم ‌تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه ...হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, ‏তখন ‎‘কুনফুয’ ‏ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, ‏তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! ‏তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, ‏তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। অতঃপর দীর্ঘ শহ্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন ‎…(এহতেজাজ, ‏১/৮৩)।[1]। হাদিসের আরবী পাঠ এরূপ ‎:دَخَلَت اُمُّ سَلَمَةَ عَلی فاطِمَةَ‌علیهاالسّلام فَقالَت لَها:کیفَ أصبَحتِ عَن لَیلَتِکِ یا بِنتَ رَسُولِ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله؟ قالَت:أصبَحتُ بَینَ کَمدٍ وَ کَربٍ، فَقدِ النَبِیِّ وَ ظُلمِ الوَصِیِّ. هُتِکَ ـ وَاللهِ ـ حِجابُهُ...বেশুমার লানত বর্ষিত হোক সেই সকল ইবলিশ শয়তান মারদুদের উপরআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমনিবেদন মোঃ শামসীর হায়দার

হজরত আলী ‎(আঃ) ‏এঁর সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা হলো কুফুরী ‎★১. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃعَلِيٌّ الصِّدِّيقُ الْاَكْبَرُ، وَ فَارُوقُ هَذِهِ الْاُمَّةِ، وَ يَعْسُوبُ الْمُؤْمِنِينَ.আলী ‎(আঃ) ‏ঈমানে সর্বাপেক্ষা দৃঢ়পদ, ‏উম্মতের মধ্যে হক ও বাতিলে পার্থক্যকারী আর মুমিনদের কর্তা। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬১৬/৩২৯৯০*(খ.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানীঃ ৬:২৬৯/৬১৮৪মহানবী ‎(ﷺ) ‏বলেছেন,“আলী ‎(আঃ) ‏ঈমানে সর্বাপেক্ষা দৃঢ়পদ, ‏উম্মতের মধ্যে হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী এবং মুমিনদের অভিভাবক। ‎[কানযুল উম্মাল,১১তম খন্ড,পৃঃ ৬১৬]★২. ‏আলী ‎(আঃ) ‏এঁর পথই সত্যের পথঃيَا عَمَّارُ، إِنْ رَأَيْتَ عَلِيّاً قَدْ سَلَكَ وَادِياً وَ سَلَكَ النَّاسُ وَادِياً غَيْرَهُ، فَاسْلُكْ مَعَ عَلِيٍّ و دَعِ النَّاسَ، إِنَّهُ لَنْ يَدُلَّكَ عَلَي رَدَيً، وَ لَنْ يُخْرِجَكَ مِنَ الْهُدَي.হে আম্মার! ‏যদি দেখতে পাও যে আলী ‎(আঃ) ‏একপথে চলেছে আর লোকেরা অন্যপথে,তাহলে তুমি আলী ‎(আঃ)র সাথে চলবে এবং লোকদেরকে ত্যাগ করবে।কারণ,আলী ‎(আঃ) ‏কখনো তোমাকে বক্রপথে পরিচালিত করবে না এবং তোমাকে হেদায়েতের পথ থেকে বাইরে নিয়ে যাবে না। 📖📖📖📖 ‎*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬১৩/৩২৯৭২*(খ.) ‏তারীখে বাগদাদঃ ১৩:১৮৭✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃمَنْ فَارَقَ عَلِيّاً فَقَدْ فَارَقَنِي وَ مَنْ فَارَقَنِي فَقَدْ فَارَقَ اللهَ عَزَّوَجَلَّ.যে ব্যক্তি আলী ‎(আঃ) ‏থেকে পৃথক হয় সে আমা থেকে পৃথক হলো আর যে আমা থেকে পৃথক হলো সে মহান আল্লাহ থেকে পৃথক হয়ে গেল। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী: ‏২৪০/২৮৭*(খ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১২৪*(গ.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানীঃ ১২:৩২৩/১৩৫৫৯★৩. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃيَا عَلِيُّ! إِنِّي اُحِبُّ لَكَ مَا اُحِبُّ لِنَفْسِي، وَ أَكْرَهُ لَكَ مَا أَكْرَهُ لِنَفْسِي.হে আলী ‎(আঃ)! ‏আঁমি নিজের জন্যে যা পছন্দ করি তোমার জন্য সেটাই পছন্দ করি।আর আঁমার চোখে যা অপছন্দনীয় তোমার জন্যও সেটা অপছন্দ করি 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মুসনাদে আহমাদঃ ১:১৪৬*(খ.) ‏সুনানে তিরমিযীঃ ২:৭২/২৮২*(গ.) ‏আল মুনাতাখাবু মিন মুসনাদে আব্দু ইবনে হামীদ: ‏৫২/৬৭★৪. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃعَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ.আলী ‎(আঃ) ‏সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয় 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১২৯*(খ.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬০২/৩২৯০৯*(গ.) ‏আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকাঃ ১২৫*(ঘ.) ‏আল ইমাম আলী ‎(رضي الله عنه)-ইবনে আসাকিরঃ ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫★৫. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃحُبُّ عَلِيٍّ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ.আলী ‎(আঃ)র প্রতি ভালোবাসা আগুন থেকে মুক্তির কারণ।[আল ফেরদৌসঃ ২:১৪২/২৭২৩]✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃحُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ يَأْكُلُ الذُّنُوبَ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ.আলী ‎(আঃ) ‏এর ভালোবাসা পাপসমূহকে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে 📖📖📖📖 ‎*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আর রিয়াদুন্ নাদরাহঃ ৩: ‏১৯০*(খ.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬২১/৩৩০২১*(গ.) ‏আল ফেরদৌসঃ ২:১৪২/২৭২৩পুণ্যবানদের ইমাম ‎(নেতা) ‏ও পাপাচারীদের নিশ্চিহ্নকারী হলেন আলী। ‎[কাঞ্জুল উম্মালঃ ১২তম খন্ড,পৃ: ‏২০৩, ‏হাদিস নং ১১৪৯]রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃعَلِيٌّ خَيْرُ الْبَشَرِ، مَنْ أَبَي فَقَدْ كَفَرَ.আলী ‎(আঃ) ‏সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ,যে তা মানবে না সে নিঃসন্দেহে কাফের। 📖📖📖📖*******দলিল*******📖📖📖📖*(ক.) ‏সিয়ারু আ’লামুন নুবালাঃ ৮:২৫০*(খ.) ‏ইমাম আলী ‎(رضي الله عنه)-ইবনে আসাকিরঃ ২:৪৪৪/৯৬২-৯৬৬*(গ.) ‏তারীখে বাগদাদঃ ৭:৪২১★৬. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃمَنْ آذَي عَلِيّاً فَقَدْ آذَانِي.যে ব্যক্তি আলী ‎(আঃ)কে কষ্ট দেয় সে আঁমাকে কষ্ট দেয় 📖📖📖📖 ‎*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মুসনাদে আহমাদঃ ৩:৪৮৩*(খ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১২২*(গ.) ‏দালায়িলুন নব্যুওয়াতঃ ৫:৩৯৫*(ঘ.) ‏আল ইহ্সান-ইবনে হিববানঃ ৯:৩৯/৬৮৮৪★৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃلَاتَسُبُّوا عَلِيّاً، فَإِنَّهُ مَمْسُوسٌ فِي ذَاتِ اللهِ.তোমরা আলী ‎(আঃ)কে গালমন্দ করো না।সে আল্লাহর সত্তায় ফানা গেছে্। অর্থাৎ, ‏আল্লাহর ভালবাসায় বিলীন হয়ে গেছে 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানীঃ ১৯:১৪৮/৩২৪*(খ.) ‏হিল্লিয়াতুল আউলিয়াঃ ১:৬৮ ‎*(ঘ.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬২১/৩৩০১৭✌হযরত উম্মে সালমা ‎(রাঃ) ‏বলেন, ‏রাসুল ‎ﷺ ‏বলেছেন,”যে ব্যক্তি আলী ‎(আঃ) ‏কে গালি দিল,সে যেন আঁমাকেই গালি দিল।” (আর যে নবী ‎ﷺ ‏গালি দিল, ‏সে এবং তার সঙ্গীরা নিশ্চিত জাহান্নামী, ‏যা আমরা পবিত্র আল কোরআনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি বা পড়েছি)। 📖📖📖📖 ‎*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মেশকাত,১১তম খন্ড,হাদিস ৫৮৪২*(খ.) ‏সুনানে নাসাঈ,৫ম খন্ড,পৃঃ ১৩৩*(গ.) ‏মুসনাদে হাম্বাল,৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ৩২৩ ‎*(ঘ.)মুস্তাদারাকে হাকেম,৩য় খণ্ড,পৃঃ১৩০ ‎*(ঙ.) ‏মুয়াদ্দাতুল কুরবাঃ পৃঃ ৪৪✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃمَنْ سَبَّ عَلِيّاً فَقَدْ سَبَّنِي.যে ব্যক্তি আলী ‎(আঃ)কে গালমন্দ করে সে যেন আঁমাকেই গালি দিল। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক-ইবনে মাঞ্জুরঃ ১৭:৩৬৬*(খ.) ‏ফাযায়েলুস সাহাবাঃ ২:৫৯৪/১০১১*(গ.) ‏খাসায়েসে নাসায়ীঃ ২৪*(ঘ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১২১*(ঙ.) ‏মানাকিবে খারেযমীঃ ৮২উম্মে সালামাহ্ রাসূল ‎(ﷺ) ‏হতে বর্ণনা করেছেন,“যে কেউ আলীকে মন্দ নামে সম্বোধন করলো সে যেন আঁমাকেই মন্দ নামে সম্বোধন করলো।” ★হাকিম তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলেছেন।★যাহাবীও তাঁর ‎‘তালখিস’ ‏গ্রন্থে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করেছেন।★আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর ‎‘মুসনাদ’ ‏গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩২৩ পৃষ্ঠায় এবং নাসায়ী তাঁর ‎‘খাসায়েসুল আলাভীয়া’ ‏গ্রন্থের ১৭ পৃষ্ঠায় উম্মে সালামাহ্ হতে এবং অন্যান্য হাদীসবিদগণও এটি বর্ণনা করেছেন।এরূপ অপর একটি হাদীস যা আমর ইবনে শাশ নবী ‎(ﷺ) ‏হতে বর্ণনা করেছেন তা হলো: ‏যে কেউ আলীকে কষ্ট দিল সে আঁমাকেই কষ্ট দিল। ‎★৮. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃ ‎“যে আলীকে দোষারোপ করল,সে আঁমাকে ‎(রাসুল) ‏দোষারোপ করল,আর যে আঁমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল।আল্লাহ তাকে মুখ নীচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏সহিহ বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড*(খ.) ‏সহিহ মুসলিম-দ্বিতীয় খণ্ড*(গ.) ‏সহিহ তিরমিজি,৫ম খণ্ড★৯. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃلَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ.যদি মানুষ আলী ‎(আঃ) ‏এঁর ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আল ফেরদৌসঃ ৩:৩৭৩/১৩৫*(খ.) ‏আল মানাকিব-খারেযমীঃ ৬৭/৩৯*(গ.) ‏মাকতালুল হুসাইন ‎(رضي الله عنه)- ‏খারেযমীঃ ১:৩৮★১০. ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(ﷺ) ‏বলেছেন,“যে আঁমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো,আর যে আঁমার বিরোধিতা করলো সে আল্লাহরই বিরোধিতা করলো।আর যে আলীর আনুগত্য করেছে সে যেন আঁমারই আনুগত্য করেছে,আর যে তাঁর বিরোধিতা করেছে সে আঁমারই বিরোধিতা করেছে।”★হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবী তাঁর ‎‘তালখিসে মুসতাদরাক’-এ হাদীসটি এনে বলেছেন যে,বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ। ‎★১১. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃأَيُّهَا النَّاسُ، لَا تَشْكُوا عَلِيّاً، فَو اللهِ إِنَّهُ لَأَخْشَنُ فِيذَاتِاللهِ، أَوْ فِي سَبِيلِ اللهِ.হে লোকসকল! ‏আলী ‎(আঃ)র বিরুদ্ধে নালিশ করতে যেও না। সে আল্লাহর কারণে অথবা তাঁর সন্তুষ্টির জন্যেই কঠোর হয়। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মুসনাদে আহমাদঃ ৩:৮৬*(খ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১৩৪★১২. ‏হযরত আবু মুসা হামিদীর বর্ণনা, ‏আমি আরাফার মধ্যে রাসুল ‎(ﷺ) ‏এঁর সঙ্গে ছিলাম।হযরত আবু বকর,হযরত ওসমান এবং অন্যান্য আসহাবও সঙ্গে ছিলেন।নবী ‎(ﷺ) ‏আবু বকরকে সন্মোধন করে বললেন” ‏হে আবু বকর।এই ব্যাক্তি যাঁকে তুমি দেখছো আলী ইবনে আবু তালেব,উর্ধাকাশে সে আঁমার উত্তরসুরী, ‏পৃথিবীতেও আঁমার উত্তরসুরী।যদি তুমি আল্লাহ্‌র সন্তষ্টির সাথে আল্লাহ্‌র সামনে হাজির হতে চাও,তবে আলীর সন্তোষ কামনা কর,তাঁর সন্তোষ্টি আল্লাহ্‌র সন্তোষ্টি,আর আলীর অসন্তষ্টি বা গজব, ‏আল্লাহ্‌রই অসন্তষ্টি বা গজব।” ‏📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏মুয়াদ্দাতুল কুরবাঃ পৃঃ ৬৩*(খ.) ‏ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত,পৃঃ ৪০৩★১৩. ‏রাসূল ‎(ﷺ) ‏আলী ‎(আঃ)-এঁর কাঁধে হাত রেখে বলেছেন ‎: هذا إمام البررة قاتل الفجرة منصور من نصره,مخذول من خذله “এই আলী সৎ কর্মশীলদের ইমাম, ‏অন্যায়কারীদের হন্তা,যে তাঁকে সাহায্য করবে সে সাফল্য লাভ করবে ‎(সাহায্য প্রাপ্ত হবে) ‏এবং যে তাঁকে হীন করার চেষ্টা করবে সে নিজেই হীন হবে।” ★হাদীসটি হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী হতে বর্ণনা করেছেন।তিঁনি বলেছেন,“এই হাদীসটি সহীহ।এঁর সনদও সহিহ।★১৪. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃاَللّهُمَّ انْصُرْ مَنْ نَصَرَ عَلِيّاً، اَللَّهُمَّ أَكْرِمْ مَنْ أَكْرَمَ عَلِيّاً ، اَللَّهُمَّ أخْذُلْ مَنْ خَذَلَ عَلِيّاً.হে আল্লাহ! ‏যে ব্যক্তি আলী ‎(আঃ)কে সাহায্য করে তুমি তাঁকে সাহায্য করো,যে ব্যক্তি তাঁকে সম্মান করে তুমি তাঁকে সম্মান করো আর যে তাঁকে লাঞ্ছিত করে তুমি তাঁকে লাঞ্ছিত করো। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬২৩/৩৩০৩৩*(খ.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানীঃ ১৭: ‏৩৯,৮২★১৫. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃلَا يُحِبُّ عَلِيّاً مُنَافِقٌ، وَ لاَ يُبْغِضُهُ مُؤمِنٌ.মুনাফিকরা আলী ‎(আঃ)কে ভালোবাসে না,আর মুমিন তাঁকে ঘৃণা করে না। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏সুনানে তিরমিযীঃ ৫:৬৩৫/৩৭১৭*(খ.) ‏আর রিয়াদুন নাদ্রাহঃ ৩:১৮৯★১৬. ‏অপর একখানা হাদিসে রাসূল ‎ﷺ ‏ফরমাইয়াছেনঃ ‎“আলী ‎(আঃ)-কে মুহব্বত করা ঈমান,আর আলী ‎(আঃ)-র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকী।”[সহিহ মুসলিম,১ম খন্ড,পৃ ৪৮]রাসূল ‎ﷺ ‏এঁর এইরূপ মন্তব্যের কারনে অনেক সাহাবায়ে কেরামগণই বলিয়া থাকিতেন যেঃ ‎“আমরা আলী ‎(আঃ) ‏এঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখিয়া নির্ধারন করিতাম যে,কে ঈমানদার ও কে মুনাফিক।”হযরত আবু জর গিফারী ‎(রাঃ), ‏হযরত আবু সাইদ খুদরী ‎(রাঃ),হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ ‎(রাঃ),হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী ‎(রাঃ) ‏হতে বর্ণীত হয়েছে যে,”আমরা সাহাবাগন হযরত আলীর প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফেক ‎(সাহাবা) ‏খুঁজে বের করতাম। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏সহীহ মুসলিম,১ম খন্ড,হাদিস-১৪৪ ‎(ই:ফা:বা:)*(খ.) ‏আশারা মোবাশশারাঃ পৃঃ ১৯৭ ‎(এমদাদিয়া লাইঃ)*(গ.) ‏কাতেবীনে ওহী,পৃঃ ২১২ ‎( ‏ইসঃ ফাঃ বাঃ)*(ঘ.) ‏জামে আত তিরমিজি,৬ষ্ঠ খণ্ড, ‏হাদিস-৩৬৫৫,৩৬৫৪ ‎(ইসলামিক সেন্টার ‎)*(ঙ.) ‏মিশকাত,১১ম খণ্ড,হাদিস-৫৮৪১ ‎(এমদাদিয়া লাইঃ)*(চ.) ‏হযরত আলী,পৃঃ ১৪,(এমদাদিয়া লাইঃ)⏹রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏আলী ‎(আঃ) ‏কে বলেনঃلَوْلَاكَ مَا عُرِفَ الْمُؤمِنُونَ مِنْ بَعْدِي.যদি তুমি না থাকতে তাহলে আঁমার পরে মুমিনদের শনাক্ত করা যেত না। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আর রিয়াদুন নাদ্রাহঃ ৩:১৭৩*(খ.) ‏আল মানাকিব-ইবনুল মাগাযেলী:৭০/১০১*(গ.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১৩:১৫২/৩৬৪৭৭★১৭. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃيا عَلِيّ، طُوبَي لِمَنْ أَحَبَّكَ وَ صَدَّقَ فِيكَ وَ وَيْلٌ لِمَنْ أَبْغَضَكَ وَ كَذَّبَ فِيكَ.হে আলী ‎(আঃ)! ‏সুসংবাদ তার প্রতি যে তোঁমাকে ভালোবাসে এবং তোঁমাকে সত্য বলে জানে।আর দুর্ভাগ্য তাদের প্রতি যারা তোঁমার সাথে শত্রুতা করে এবং তোঁমার ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏তারীখে বাগদাদঃ ৯:৭২*(খ.) ‏ওয়াসীলাতুল মুতাআবেবদীনঃ ৫ম খন্ড*(গ.) ‏আল কিস্মঃ ২:১৬১*(ঘ.) ‏উসুদুল গবাহঃ ৪:২৩✌নবী ‎(ﷺ) ‏বলেছেন,“হে আলী! ‏সৌভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোঁমাকে ভালবাসে ও তোঁমার বিষয়ে সত্য বলে এবং দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোঁমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে ও তোঁমার নামে মিথ্যা ছড়ায়।” ★হাকিম তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন হাদীসটি সহীহ।সনদও সহিহ।★১৮. ‏নবী ‎(ﷺ) ‏বলেছেন,“যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসে সে যেন আঁমাকেই ভালবেসেছে,আর যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে সে আঁমার সঙ্গেই শত্রুতা পোষণ করেছে।” ★হাকিম তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখাররী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলেছেন।★যাহাবীও তাঁর ‎‘তালখিস’ ‏গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে বিশুদ্ধ বলেছেন। আলী নিজেও বলেছেন,“সেই সত্তার শপথ,যিঁনি বীজ অঙ্কুরিত এবং মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করেন,উম্মী নবী ‎(ﷺ) ‏এই কথা বলেছেন যে,মুমিন ব্যতীত আঁমাকে ‎(আলীকে) ‏কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ আঁমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে না।”★১৯. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃمَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ، اَللَّهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ وَعَاِد مَنْ عَادَاهُ.আঁমি যার মাওলা আলী ‎(আঃ)ও তার মাওলা।হে আল্লাহ! ‏যে আলী ‎(رضي الله عنه) ‏কে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস আর যে আলী ‎(رضي الله عنه)র সাথে শত্রুতা করে তুমি তার সাথে শত্রুতা করো 📖📖📖📖*******দলিল*******📖📖📖📖*(ক.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬০৯/৩২৯৫০*(খ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১০৯*(গ.) ‏মাজমাউয যাওয়ায়েদঃ ৯:১০৪*(ঘ.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানীঃ ৪:১৭৩/৪০৫৩*(ঙ.) ‏তিরমিযীঃ ৫:৬৩৩/৩৭১৩*(চ.) ‏মুসনাদে আহমাদঃ ১:৮৪,৮৮,১১৯, ‏১৫২,৩৩১ ও ৪:২৮১,৩৬৮,৩৭০,৩৭২ ও ৫:৩৪৭,৩৫৮,৩৬১,৩৬৬,৪১৯।✌রাসূল ‎ﷺ ‏ইরশাদ করিয়াছেন যেঃ ‎“আঁমি যাহার মাওলা ‎(অভিবাভক), ‏আলীও তাহার মাওলা ‎(অভিবাভক)।হে আল্লাহ! ‏যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তাহার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ,যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তাহার সঙ্গে শত্রুতা রাখ।” *******দলিল********(ক.) ‏সহিহ মুসলিম-২য় খন্ড,৩৬২ পৃঃ*(খ.) ‏মুসনাদে ইমাম হাম্বল-৪র্থ খন্ড,পৃঃ ২৮১★২০. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏হযরত আলী ‎(আঃ) ‏কে বলেনঃمَنْ أَحَبَّكَ حُفَّ بِالاَمْنِ وَ الْإِيمَانِ، وَ مَنْ أَبْغَضَكَ أَمَاتَهُ اللهُ مِيْتَةَ الْجَاهِلِيَّةِ.যে ব্যক্তি তোঁমাকে ভালোবাসবে, ‏নিরাপত্তা ও ঈমান তাকে আবিষ্ট করবে। আর যে তোঁমার প্রতি শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে জাহেলিয়াতের মৃত্যু দান করবেন। 📖📖📖📖*******দলিল*******📖📖📖📖*(ক.) ‏কানযুল উম্মালঃ ১১:৬০৭/৩২৯৩৫*(খ.) ‏আল মু’জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৬৩/১১০৯২✌দারে কুতনী তাঁর ‎‘কিতাবুল আফরাদ’ ‏গ্রন্থে ইবনে আব্বাস সূত্রে রাসূল হতে বর্ণনা করেছেন,“আলী ইবনে আবি তালিব ক্ষমার দ্বার। যে কেউ এ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে সে মুমিন,আর কেউ তা হতে বের হয়ে গেলে সে কাফের।” ★২১. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃيَا عَلِيُّ، أَنْتَ سَيِّدٌ فِي الدُُّنْيَا وَ سَيِّدٌ فِي الْآخِرَةِ، حَبِيبُكَ حَبِيبِي وَ حَبِيبِي حَبِيبُ اللهِ، وَ عَدُوُّكَ عَدُوِّي وَ عَدُوِّي عَدُوُّ اللهِ وَ الْوَيْلُ لِمَنْ أَبْغَضَكَ بَعْدِي.হে আলী ‎(আঃ)! ‏তুমি দুনিয়া ও আখেরাতের সরদার বা নেতা।তোমার বন্ধু আমারও বন্ধু,আর আঁমার বন্ধু আল্লাহরও বন্ধু।তোমার শত্রু আঁমারও শত্রু,আর আমার শত্রু আল্লাহরও শত্রু। অভিসম্পাত বা ধ্বংস তার ওপর যে আঁমার পরে তোমার সাথে শত্রুতা করবে। 📖📖📖📖*****দলিল******📖📖📖📖*(ক.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১২৮*(খ.) ‏আর রিয়াদুন নাদ্রাহঃ ৩:১২৪*(গ.) ‏আল ফেরদৌসঃ ৫:৩২৪/৮৩২৫★হাকিম তাঁর ‎‘মুসতাদরাক’ ‏গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ বলেছেন____________ ‏নিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৬/১২/২০

___❤️হযরত ঈসা (আ)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী❤️___হযরত ঈসা (আ) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আপনাদের প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। ২৫ ডিসেম্বর হচ্ছে সহৃদয় ও প্রশান্তির নবী হযরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিন।হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের ইতিহাস আল্লাহর মহান কুদরতের ক্ষুদ্র একটি নিদর্শন। তাঁর মা ছিলেন হযরত মারিয়াম (আ)। হযরত মারিয়াম ছিলেন হযরত ইমরান (আ.) এর মেয়ে। তিনি তাঁর প্রতিটা মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে কাটাতেন। হযরত মরিয়ম আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানে এত মশগুল থাকতেন যে,নিজের খাবারের কথাও ভুলে যেতেন। স্বামীহীন এই মহিয়সী নারীর গর্ভজাত সন্তান ছিলেন হযরত ঈসা (আ)। পবিত্র কুরআনে তাঁকে "রুহুল্লাহ" নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর শুভ জন্মদিনে আবারও জানাচ্ছি অনেক অনেক শুভ কামনা ও অভিনন্দন। মারিয়াম (সা.)র অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হযরত যাকারিয়া (আ.)। তিনি যখনই তাঁর কক্ষে যেতেন,তখনই সেখানে বেহেশতি খাবার দেখতে পেতেন। তিনি এত মর্যাদার অধিকারী ছিলেন যে,নবী-রাসূল না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথা পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাঁর ইবাদাত কবুল করেছেন এবং আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন বলে মনে করতেন। মহিয়সী এই নারীর গর্ভেই জন্ম নেন হযরত ঈসা (আ)।ঈসা (আ) এর কোনো পিতা ছিল না। সে কারণে তাঁর মায়ের প্রতি সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টি ছিল তৎকালীন সমাজপতি আর ধর্মপতিদের।কলঙ্কের ওই অভিশাপ মোচন করতে জন্মের পরপরই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত ঈসা (আ.) কে কথা বলার অলৌকিক শক্তি দিয়েছিলেন। একেবারে জন্মের পর থেকেই কথা বলতে শুরু করেছিলেন হযরত ঈসা (আ.)। পবিত্র কুরআনে ঈসা (আ) সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলোই আমাদের কাছে প্রামাণ্য তথ্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে। সূরা মারিয়ামের ১৬ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন:"হে মুহাম্মদ! এই কিতাবে মারিয়ামের অবস্থা বর্ণনা করুন,যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল এবং তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে পর্দা করল। এ অবস্থায় আমি তার কাছে নিজের রুহ অর্থাৎ ফেরেশতাকে পাঠালাম এবং সে তার সামনে একটি পূর্ণ মানবাকৃতিতে নিয়ে হাজির হলো। মারিয়াম অকস্মাৎ বলে উঠলো, "তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাক তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি।"মারিয়াম এ কথা বলে আল্লাহর দূতের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সাথে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এ অবস্থা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আল্লাহর দূত কথা বলে উঠলেন- 'আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এসেছি।'এ কথা শুনে মারিয়ামের অন্তর প্রশান্ত হলো। কিন্তু তারপরই ফেরেশতা বলল- 'আমি এসেছি তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করতে।' এ কথা শুনে মারিয়াম অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো-'তা কী করে সম্ভব! এখন পর্যন্ত কোনো পুরুষ মানুষ আমাকে স্পর্শ করে নি কিংবা আমি অসতী মেয়েও নই!'আল্লাহর দূত বলল-'তার মানে হলো,তোমার আল্লাহ বলেছেন,'এটা আমার জন্যে খুবই সহজসাধ্য একটি ব্যাপার। আর এই ঘটনাটাকে আমরা জনগণের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে এটি হবে একটা রহমত। এটা একটা অবশ্যম্ভাবী এবং স্থিরীকৃত ব্যাপার।'মারিয়াম অবশেষে সন্তান সম্ভবা হলেন। যখন প্রসব বেদনা উঠল তখন তিনি উষর জনহীন এক প্রান্তরে একটি শুকনো খুরমা গাছের নীচে গেলেন। বেদনায় আনমনে বললেন-'যদি এর আগে আমার মৃত্যু হতো এবং সবকিছু ভুলে যেতাম।'অতিরিক্ত কষ্টের মুখে তিনি যখন এসব বলেছিলেন তখন হঠাৎ অলৌকিক শব্দ তাঁর কানে ভেসে এল-'দুশ্চিন্তা করো না! ভালো করে দেখো,তোমার রব তোমার পায়ের নীচে থেকে একটি ঝর্ণাধারা জারি করেছেন। আর তোমার মাথার ওপরে তাকাও। দেখো শুকনো খুরমা গাছে কী সুন্দর খেজুর পেকে আছে। ওই গাছে নাড়া দাও যাতে তরতাজা পাকা খেজুর ঝরে পড়ে। এই সুস্বাদু খেজুর খাও আর ওই নহরের পানি পান করো এবং নবজাতককে দেখে চক্ষু জুড়াও। যখন যেখানেই কোনো মানুষ তোমার কাছে এই সন্তান সম্পর্কে জানতে চাইবে, তুমি কেবল ইশারায় বোঝাবে যে,'আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোযা রেখেছি,নীরবতার রোযা,তাই কারো সাথে কথা বলব না।'আল্লাহর কুদরতে হযরত মারিয়াম মা হলেন। সন্তানের মুখ দেখে মা খুশি হলেন ঠিকই কিন্তু মনে সংশয়-না জানি কে,কী ভাবে! আল্লাহ সেজন্যই তাঁকে জানিয়ে দিলেন, তিনি যেন কারো সাথে কথা না বলেন। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মারিয়াম (সা.) পুত্রকে কোলে নিয়ে শহরের দিকে যেতে লাগলেন। মানুষ যখন তাঁর কোলে সন্তান দেখতে পেল,আশ্চর্য হলো। এতদিন যারা মারিয়ামকে একজন পবিত্র ও সচ্চরিত্রবতী এবং তাকওয়াসম্পন্ন বলে মনে করতো,তারা খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।কেউ কেউ আবার তিরস্কারের সুরে বলতে লাগল: "ছি,ছি! এতো তাকওয়া, এতো পূত-পবিত্রতা। অভিজাত বংশের মুখে চুনকালি পড়ল।" তারা বলল, "হে মরিয়ম! একটা আশ্চর্যময় এবং বাজে কাজ করেছো।"মারিয়াম আল্লাহর আদেশক্রমে চুপ করে রইলেন। কেবল কোলের সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। এমন সময় হযরত ঈসা (আ) কথা বলে উঠলেন :"আমি আল্লাহর বান্দা! তিনি আমাকে ঐশীগ্রন্থ দান করেছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন আল্লাহ আমাকে তাঁর বরকতপূর্ণ ও মঙ্গলময় করেছেন। যতোদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন তিনি আমার প্রতি নামায ও যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মায়ের প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। আমাকে তিনি প্রতিহিংসা পরায়ণ বা অনমনীয় হবার মতো হতভাগ্য বানাননি।"আমার ওপরে আল্লাহর শান্তি বা সালাম,যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমি মরে যাবো,আবার যেদিন আমি জীবিতাবস্থায় জাগ্রত হবো।"ঈসা (আ) ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে লাগলেন। সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর ওপর দায়িত্ব বর্তিত হয়েছিল বনী ইসরাঈলকে এক আল্লাহর ইবাদাত বা তৌহিদের পথে আহ্বান জানানোর। তিনি তাঁর নবুয়্যতের প্রমাণ স্বরূপ বহু মোজেযা দেখিয়েছেন। তিনি ভাস্কর্য তৈরীর কাদামাটি দিয়ে পাখি তৈরী করেন এবং তার ভেতর ফুঁ দিলে আল্লাহর আদেশে পাখিটার ভেতর প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রাণিত হবার পর মাটি দিয়ে তৈরী পাখিটা উড়ে যায়। তিনি জন্মান্ধ এবং বধিরদেরকে আল্লাহর দেওয়া মোজেযার সাহায্যে সুস্থ করে দিতেন। কুষ্ঠ রোগীরাও তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সুস্থ হয়ে যেত। এমনকি মৃতদেরকেও তিনি আল্লাহর দেয়া অলৌকিক শক্তি বলে জীবিত করে দেন।মহান আল্লাহ তাঁকে তাওরাত,ইঞ্জিল ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে বনী ইসরাইলীদের কাছে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সূরা আলে ইমরানের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, "ঈসা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের জন্য নিদর্শন এনেছি। আমি কাদা দিয়ে একটি পাখির মূর্তি তৈরী করে,তাতে ফুঁ দেব। ফলে তা আল্লাহর ইচ্ছায় পাখী হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করব এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করব। তোমরা তোমাদের ঘরে যা খাও এবং জমা কর আমি তাও তোমাদের বলে দেব। তোমরা যদি বিশ্বাসী হও তবে সত্য মেনে নেয়ার ব্যাপারে এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"আল্লাহপাক মানব জাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি,জুলুম নির্যাতন ও জানমালের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হযরত ঈসাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকেও ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক দুঃখ-কষ্ট ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে।হযরত ঈসা (আ.) একাধারে ৩০ বছর আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করেন। কিন্তু বনী ইসরাইলের আলেমদের শত্রুতার কারণে জনগণ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা থেকে বিরত ছিল। স্বল্পসংখ্যক লোকজন যারা তাঁর কথায় ঈমান এনেছিল,তাদের অনেককেই শিষ্য হিসেবে মনোনীত করলেন যাতে তারা আল্লাহর পথে বা সত্য দ্বীনের পথে দাওয়াতি কাজে তাঁর সহযোগী হয়। কিন্তু ইহুদিরা ঈসা (আ.) এর সাথে এতো বেশি শত্রুতা করতে লাগলো যে শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপর তারা আক্রমণই করে বসে। তারা চেয়েছিল হযরত ঈসা (আ) কে মেরে ফেলতে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শত্রুদের অত্যাচার থেকে ঈসা (আ.) কে রক্ষা করলেন। তাঁকে সশরীরে জীবন্ত আসমানে উঠিয়ে নিলেন।আমাদের এই আলোচনার সকল তথ্যসূত্রই আল-কুরআন। যদিও ঈসা (আ) এর ওপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু সেই কিতাবের বস্তুনিষ্ঠতা এখন প্রশ্নাতীত নয়। সে কারণে আমাদের খ্রিষ্টান ভাই-বোনদের বিশ্বাসে কুরআনের তথ্য অনুযায়ী খানিকটা ব্যতিক্রম রয়েছে।তাদের অনেকেই বিশ্বাস করে ঈসা (আ) মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু ইসলামের আদর্শ ও বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আ) বেঁচে আছেন এবং শেষ যামানায় হযরত মাহদি (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন তাঁরও আগমন ঘটবে। শুধু তাই নয়,তিনি ইমাম মাহদি (আ)র ইমামতিতে নামাজ পড়বেন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁকে সহযোগিতা করবেন।বর্তমান বিশ্বে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন,সহিংসতা, বর্ণ-বৈষম্য, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে,এখন সময় এসেছে ধর্মের প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করার। আধিপত্যকামী,সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করলেও তারাই আবার নিজেদেরকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করছে। অথচ আজ যদি যিশু খ্রিস্ট বা হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে থাকতেন তাহলে তিনি বিশ্বের বলদর্পী ও আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতেন এমনকি এক মুহূর্তও অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতেন না। আজ যারা নিজেদেরকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে দাবি করছে তাদের উচিত ফিলিস্তিন,ইরাক,সিরিয়া,ইয়েমেন,বাহরাইন,আফগানিস্তানসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনা। আর তাহলেই হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মদিন পালন সার্থক হবে। #___ মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৫:১২:২০

__সালাম হো যায়নাব বিনতে আলী ও ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ__ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহিলা, সৈয়দা জয়নব (সা) জীবনী , কারণ তার ভূমিকা এবং ইসলাম রক্ষায় তার ত্যাগের তদুপরি, অসংখ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, তার সম্পর্কে খুব কম প্রকৃত রেকর্ডকৃত historicalতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি তার জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ বা সন্তানের সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তারিখও পুরো আত্মবিশ্বাসের সাথে নির্ধারণ করা যায় না।তাঁর শুদ্ধতা এবং কারবালায় তার অবদানের কৌশলগত গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য তাঁর জীবনের যতগুলি তথ্য বা সংস্করণ পাওয়া যায় তা খনন করার প্রয়োজন নেই। তিনি নিপীড়কের বিরুদ্ধে নিপীড়িতদের অপমান, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়ের রূপক is কারবালা, কুফা এবং শামে (আধুনিক সিরিয়া) তার বিচারের অসাধারণ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই তিনি সহ্য করেছিলেন যে আমরা তাঁর সাহস, অধ্যবসায়, ধৈর্য ও আল্লাহর আদেশের বশবর্তী হয়ে অগণিত গভীরতার ঝলক পেয়েছি। ।ইমাম আলী (আ।) ও সৈয়দা ফাতিমা জাহরা (সা।) - এর কন্যা সাইয়্যেদা জয়নব (সা।) হযরত মুহাম্মদ (সা।) - এর একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা ইতিহাসের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। নবীর স্ত্রী সৈয়দা খাদিজা (সা।) , একনিষ্ঠ মহিলা ছিলেন তাঁর মাতামহী নানী, এবং তাঁর পিতামহী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা।) - কে অভিভাবক ও লালন-পালনকারী আসাদের ফাতেমা কন্যা ছিলেন। সৈয়দা জয়নব (সা।) - এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে মতামতের ভিন্নতা রয়েছে; কারও কারও মতে এটি ইসলামী ক্যালেন্ডারের জামাদি আল-আওয়াল মাসে 5 তম ছিল এবং আবার কেউ কেউ বলে ba ষ্ঠ হিজড়া 6২২ খ্রিস্টাব্দে শাবান মাসে এটি প্রথম ছিল ।সাইয়্যেদা জয়নব (সাঃ) যখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ইমাম হুসেন (আ।), যিনি তখন প্রায় তিন বছর বয়সী ছিলেন, তাকে দেখলেন, তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন, “হে বাবা, আল্লাহ আমাকে একটি বোন দিয়েছেন।” এই কথাগুলি শুনে ইমাম আলী (আ।) কাঁদতে লাগলেন, এবং ইমাম হুসেন (আ।) কেন এমন কান্নাকাটি করছেন জানতে চাইলে তার পিতা উত্তর দিয়েছিলেন যে শিগগিরই তিনি জানতে পারবেন। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর নাম রাখতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যখন ফেরেশতা জিবরা'ল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসেছিলেন এবং এই বার্তা দিয়েছিলেন যে, “হে আল্লাহর নবী, প্রথম থেকেই এই মেয়েটি জড়িয়ে থাকবে। এই পৃথিবীতে দুর্দশা এবং পরীক্ষায়। প্রথমে তিনি আপনার বিচ্ছেদ (কে এই পৃথিবী থেকে) কেঁদে ফেলবেন; এরপরে সে তার মা, তার বাবা এবং তার পরে তার ভাই হাসানের ক্ষতিতে শোক করবে। এত কিছুর পরেও তিনি কারবালার ভূমির বিচার এবং সেই একাকী প্রান্তরের দুর্দশার মুখোমুখি হবেন,যার ফলস্বরূপ তার চুল ধূসর হয়ে যাবে এবং তার পিছনে বাঁকানো হবে। পরিবারের সদস্যরা যখন এই ভবিষ্যদ্বাণীটি শুনেছিল তখন তারা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। ইমাম হুসেন (আ।) এখন বুঝতে পেরেছিলেন যে এর আগে তাঁর পিতাও কেঁদেছিলেন।জয়নব (সা) এর প্রথম থেকেই তার ভাই ইমাম হুসেন (আ।) - এর সাথে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গড়ে তোলেন। মায়ের বাহুতে শিশু যখন তাকে শান্ত করা যায় না এবং কান্নাকাটি বন্ধ করতে না পারে, তখন সে তার ভাইকে ধরে রেখে চুপ করে থাকত, এবং সেখানে সে চুপচাপ তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকত। একদিন সৈয়দা ফাতিমা (সা।) ইমাম হুসেন (আ।) - এর প্রতি তাঁর কন্যার ভালবাসার তীব্রতার কথা রাসূল (সা।) - কে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এবং আর্দ্র চোখে বললেন, “ আমার প্রিয় সন্তান child আমার জয়নবের এই শিশুটি এক হাজার এক দুর্যোগের মুখোমুখি হবে এবং কারবালায় গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হবে। ”জয়নব (আ।) তাঁর ভাই ও বোনদের সাথে তাঁর দাদা হিসাবে, মহানবী (সা।), তাঁর মা সৈয়দা ফাতিমা (আ।), নবী কন্যা হিসাবে এ জাতীয় উদাহরণগুলি দেখার এবং শেখার অসাধারণ অবস্থানের কথা জানালেন। এবং তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ।), নবীজির চাচাত ভাই। বিশুদ্ধ পরিবেশ যা তাকে ছড়িয়ে দিয়েছিল, তিনি তাঁর দাদা যে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং তাঁর পরে তাঁর বাবা তাঁর ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তার মায়ের কাছ থেকেও, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিবারের সমস্ত দক্ষতা অর্জন করতে শিখেছিলেন। তার শারীরিক চেহারা সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়; তবে কারবালার ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটেছিল এবং জয়নব (সা।) অনাবৃত হয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এরপরেই কিছু লোক মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি একটি " জ্বলজ্বল সূর্য " এবং " চাঁদের টুকরা " হিসাবে উপস্থিত হয়েছেন ।অল্প বয়সী মেয়ে হিসাবে তিনি তার বাবার বাড়ির পরিচালনার জন্য পুরোপুরি যত্ন নিতে এবং দায়বদ্ধ হতে পেরেছিলেন। তিনি তার ভাই ও বোনদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য যতটা যত্ন নিয়েছিলেন, নিজের ইচ্ছাতেই তিনি দরিদ্র, গৃহহীন ও পিতৃহীনদের প্রতি সাথী এবং নির্বিঘ্নভাবে উদার ছিলেন। তার বিয়ের পরে তার স্বামীকে এই কথা শোনা গিয়েছিল, "জয়নব সেরা গৃহিনী।" বিয়ের সময় এলে তিনি তার প্রথম চাচাত ভাই আবদুল্লাহ ইবনে জাফর তাইয়ার (আ।) - এর সাথে একটি সাধারণ অনুষ্ঠানে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরত আবদুল্লাহ (আ।) - কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লালন-পালন করেছিলেন; তাঁর মৃত্যুর পরে ইমাম আলী (আ।) বয়সের আগ পর্যন্ত হযরত আবদুল্লাহ (আ।) এর সমর্থক ও অভিভাবক হয়েছিলেন। তিনি সুদর্শন যুবক হয়ে উঠলেন আনন্দিত আচরণের সাথে এবং তিনি তার সাহসীতা, অতিথির প্রতি আন্তরিক আতিথেয়তা এবং দরিদ্র ও দরিদ্রদের নিঃস্বার্থ উদারতার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।তার চরিত্রে তিনি তাদের উত্থাপনকারীদের সেরা গুণাবলী প্রতিফলিত করেছিলেন। সংযত ও নির্মলতার সাথে তিনি তাঁর দাদী উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (আ।) এর সাথে তুলনা করেছিলেন; তার মা বিবি ফাতিমা জহরা (সা।) - এর প্রতি সতীত্ব ও বিনয়ের সাথে; তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ।) - এর কাছে স্পষ্ট ভাষায়; তার ভাই ইমাম হাসান (আ।) - এর প্রতি সহনশীলতা ও ধৈর্য সহকারে; এবং ইমাম হুসেন (আ।) - এর প্রতি হৃদয়ের সাহসিকতা ও প্রশান্তিতে। তার মুখ তার বাবার বিস্ময় এবং তাঁর দাদার শ্রদ্ধা প্রতিফলিত করে।মদীনায় মহিলাদের জন্য নিয়মিত সভা করার বিবি জয়নব (সা।) অনুশীলন করেছিলেন যাতে তিনি তাঁর জ্ঞান ভাগ করে নেন এবং পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ইসলাম ধর্মের বিধিগুলি তাদের শিখিয়েছিলেন। তার সমাবেশগুলি ভাল এবং নিয়মিত উপস্থিত ছিল। তিনি এ জাতীয় স্পষ্টতা ও স্পষ্টতা সহ শিক্ষাগ্রহণের পক্ষে সক্ষম হয়েছিলেন যে তিনি ফসিহাহ (দক্ষ দক্ষতার সাথে সাবলীল) এবং বালিঘা (তীব্রভাবে বুদ্ধিমান) হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। পঁচাত্তর বছর হিজরিতে (হিজরতের পরে) ইমাম আলী (আ।) অবশেষে খলিফা হিসাবে তার যথাযথ অবস্থান গ্রহণের জন্য কুফায় চলে এসেছিলেন, তখন তিনি তাঁর মেয়ে জয়নব (আ।) এবং তাঁর স্বামীকে সাথে নিয়ে যান। এমনকি কুফায় মহিলাদের মধ্যে একজন অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষক হিসাবে তার খ্যাতি তার আগেও ছিল। সেখানেও মহিলারা তাঁর প্রতিদিনের সভায় একত্রিত হতেন যেখানে তারা সকলেই কুরআনের বর্ণনায় তাঁর বুদ্ধি, প্রজ্ঞা এবং বৃত্তি থেকে উপকৃত হয়েছিল।তার জ্ঞানের গভীরতা এবং নিশ্চিততা তাকে তার ভাগ্নে ইমাম আলী জয়ন উল-আবিদীন (আ।) - এর দেওয়া নামটি অর্জন করেছিল।আলিমাহ গায়র মুআল্লামাহ , অর্থ, তিনি যাকে শিক্ষা না দিয়ে জ্ঞান রয়েছে।পিতা ইমাম আলী (আ।) এবং তার ভাই ইমাম হাসান (আ।) - এর দু'জনের মৃত্যুর পরে ক্ষুধার্ত বনী উমাইয়ার হাত ধরে বিবি জয়নব (সা।) দুঃখ ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন, তবে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন তার divineশ্বরিক অবিচলতা এবং ধৈর্য। হিজরতের ষোড়শ বছর পরে রজব মাসে ইমাম হুসেন (আ।) কুফার নাগরিকদের অনুরোধে মদীনা ত্যাগ এবং কুফায় যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যে ইমাম হুসেনকে (আ।) নেতৃত্ব দিয়েছিল যে তারা যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক হবে বনি উমাইয়ের অত্যাচারী শাসন। যখন জয়নব (আ।) তার ভাইয়ের প্রস্তাবিত কুফায় যাত্রা সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি তার স্বামীর কাছে তার ভাইয়ের সাথে ছুটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আবদুল্লাহ নিজে ইমামের সাথে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যেহেতু তিনি অসুস্থতায় দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তাই তিনি তাকে এই নির্ধারিত যাত্রায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন; তার সাথে তিনি তাদের দুই ছেলে অউন ও মুহাম্মদকে প্রেরণ করলেন।জয়নব (আ।) তাঁর এবং তাঁর ভাইয়ের জন্য যা লেখা হয়েছিল তার জন্য সারা জীবন প্রস্তুত ছিলেন। তিনি কারবালার বিচারের মুখোমুখি হওয়া তাঁর চেয়ে আলাদা হওয়ার চেয়ে বেশি পছন্দ করেছেন।কারবালায় জয়নব সাহসী ও অবিচল থেকেছিলেন কারণ একের পর এক ইমাম হুসেনের পুত্র, আত্মীয়স্বজন এবং সমর্থকরা যুদ্ধের ময়দানে নিহত হয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক দিনটি পরেছিল। হুসেন (আ।) বহুবার আহত হয়েছিলেন অবশেষে তিনি তার ঘোড়া থেকে পড়ে যান। তাঁর শত্রুরা তাকে ঘিরে রেখেছে এবং তরোয়াল ও বর্শা দিয়ে তার উপর আক্রমণ করেছিল। বিবি জয়নব (আ।) তার তাঁবুর দরজা থেকে এ সব দেখেছিলেন। লড়াই শেষ হয়ে গেলে, বাহাত্তর জন সাহসী পুরুষ চার হাজারের মুখোমুখি হয়েছিল এবং রক্তাক্ত সংঘর্ষের পরে ইমামের সমর্থকরা কেউই জীবিত ছিল না। শত্রুদের ঘোড়া দ্বারা ইমামের দেহ পদদলিত হয়েছিল, তাঁর মাথা কেটে ফেলা হয়েছে, এমনকি যে বিচ্ছুরিত কাপড় দিয়ে তিনি নিজের বিনয় রক্ষা করবেন বলে আশা করেছিলেন, তাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। শিবিরগুলিতে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে তারা যা করতে পারে তা লুট করে তাবুতে আগুন ধরিয়ে দেয়।তারা তাদের তরোয়াল দিয়ে মহিলাদের মারধর করে এবং তাদের পর্দা ছিনিয়ে নেয়। ইমাম জয়ন উল আবিদীনের বিছানা তাঁর নীচ থেকে ছিঁড়ে গিয়েছিল, তিনি দুর্বল, দুর্বল এবং চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন।জয়নব (সা) মিশনের একটি বড় অংশ শুরু হয়েছিল যখন কারবালা ট্র্যাজেডির স্পষ্টতই ইমাম হুসেন (সা।) - এর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল। সাইয়্যেদা জয়নবের (সা) জীবনের এই অধ্যায়টি আশুরার বার্তা পৌঁছে দিয়ে শুরু হয়েছিল যেখানে তিনি বীরত্বের সাথে পরিবারের অধিকার রক্ষা করেছিলেন এবং শত্রুদের কারবালা ট্র্যাজেডির সুযোগ নিতে দেননি। 11 তমমহররমের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের সদস্যদের বন্দী করে কুফায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমন এক শহর যেখানে একবার জয়নব (আ।) এবং উম্মে কুলথুম একসময় শ্রদ্ধা ও ভালবাসতেন। বন্দী হিসাবে তাদের স্মৃতিতে এখন তারা এই শহরে এসেছিল। তারা প্রবেশের সাথে সাথে লোকেরা উল্লাসিত হয়ে জয়ের আনন্দ প্রকাশ করছিল। কিন্তু সৈয়দা জয়নব (সা।) এর খুতবা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি বিজয়ের গৌরবময় অনুষ্ঠানকে একটি শোকের অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করে, যেখানে গভর্নর ইবনে যিয়াদের দুষ্টতা প্রকাশিত হয়েছিল। খুতবা খুশির মুখের জন্য খুতবা করায় খুতবা এবং অনেকে কাঁদতে লাগলেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য এমনকি রাজ্যপালের প্রতি লোকদের ক্ষোভকে বাড়িয়ে তোলে। বিবি জয়নব (ছাঃ) কুফার লোকদেরকে ক্রোধের ভাষায় সম্বোধন করেছিলেন:আল্লাহর প্রশংসা করুন এবং মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর আল্লাহর নেয়ামত বর্ষিত হোক। হে কুফার সম্প্রদায়, তোমরা মুনাফিক ও প্রতারণাপূর্ণ। আপনি আমার ভাই এবং তার সঙ্গীদের মৃত্যুর জন্য দুঃখিত হওয়ার শোক প্রকাশ করেছেন। আপনি সর্বদা অশ্রু বর্ষণ করুন। চাটুতা, দুষ্ট কাজ এবং চিন্তাভাবনা, অহংকার এবং তীব্র ইচ্ছা ও অসুস্থ ইচ্ছার বাইরে আমি কিছুই পাই না। আল্লাহর কসম! আপনি আনন্দের পরিবর্তে স্থায়ী দুঃখের দাবিদার। আপনাকে লজ্জা, আপনার হাত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রক্তে নিমগ্ন, যিনি প্রতিকূলতার ক্ষেত্রে আপনার একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলেন। আপনার কৃপণতা ও অসাধুতার দ্বারা আপনি আল্লাহর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। আফসোস! আপনার জন্য কেউই আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে না।”তার উগ্র কথাবার্তা ইমাম হুসেনের শাহাদাতের প্রতিশোধ নিতে কুফার লোকদের উস্কে দেয়। এটি উবায়দুল্লাহ ইবনে জায়েদ এবং তার নিষ্ঠুর এজেন্টদের ভীত করে। তিনি খলিফার দরবারে একটি উগ্র ধর্ম প্রচার করেছিলেন যা তার কর্তৃত্ব এবং স্বৈরাচারী শাসনকে ক্ষীণ মনে করেছিল। তিনি বললেনঃ আমি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কাউকে ভয় করি না। আপনি যা কিছু মন্দ চক্রান্ত করতে পারেন তা করুন। ব্লেজ পরকালে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি আপনার অত্যাচারের জন্য তিনি আল্লাহ তায়ালাকে জবাবদিহি করবেন। ”নবী (সাঃ) এর সদস্যদের দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং ছাগলের মতো একত্রে রাখে। কেউ যদি হোঁচট খায় তবে তাদের বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। শহরের রাস্তাগুলি সাজানো ছিল এবং গানের শব্দ বাতাসে ভরে উঠেছে। লোকেরা উৎসবমুখর পোশাক পরিধান করে বেরিয়ে আসে এবং শহীদদের মাথার বরাবরের মতো মিছিলটি দেখে আনন্দিত হয়েছিল। নিজেকে মর্যাদা এবং আত্ম-সম্মানের সাথে বহন করে, কয়েদীদের দামেস্কের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এভাবে ইয়াজিদের প্রাসাদে পৌঁছালে অপহরণকারীদের বিকেল পর্যন্ত প্যারেড করা হয়েছিল। সেখানে তিনি তাঁর সিংহাসনে বসেছিলেন এবং চুয়াল্লিশটি বন্দীদশা আগত দেখে তিনি খুব খুশী হন। তারপরে হুসেনের মাথাটি তাঁর কাছে সোনার ট্রেতে আনা হয়েছিল। তিনি লাঠি দিয়ে ইমামের দাঁত মারলেন এবং বললেন: “হে হুসেন! আপনি আপনার বিদ্রোহের মূল্য প্রদান করেছেন। ”জয়নব (সা) যখন ইয়াজিদের কাছ থেকে এই অহংকারের অনুষ্ঠানটি দেখেছিলেন, তখন তিনি নিজেকে টেনে নিয়ে যান এবং সাহসের সাথে ইয়াজিদের প্রাসাদে সকলকে সম্বোধন করেছিলেন। সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার ছেলে ইয়াজিদের সমাবেশে সৈয়দা জয়নব (সা) যে খুতবা দিয়েছিলেন তার একটি অংশ নিম্নরূপ:আজ আপনি যাকে যুদ্ধের জিনিস হিসাবে বিবেচনা করছেন তা আগামীকাল আপনার জন্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে এবং সেদিন আপনি পূর্ব থেকে যা পাঠিয়েছেন তা পেয়ে যাবেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের উপর অত্যাচার করেন না। আমি আমার অভিযোগ কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রকাশ করি এবং তাঁর প্রতি আস্থা রাখি। অতএব আপনি যে কোনও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন, আপনার সমস্ত প্রচেষ্টা করুন এবং আপনার যা যা সম্ভব চেষ্টা করুন। আল্লাহ তায়ালার কসম, আপনি আমাদের (মানুষের) মন থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না এবং আপনি আমাদের বাণীকেও বিবর্ণ করতে পারবেন না। আপনি কখনই আমাদের গৌরব অর্জন করতে পারবেন না এবং কখনও এই অপরাধের দাগ আপনার হাত থেকে ধুতে পারবেন না। আপনার সিদ্ধান্তগুলি স্থিতিশীল থাকবে না, আপনার শাসনের সময়কাল ছোট হবে এবং আপনার জনসংখ্যা ছড়িয়ে যাবে। সেদিন একটি কণ্ঠস্বর চিত্কার করবে: "নিঃসন্দেহে আল্লাহর অভিশাপ জালিমদের উপর পড়ুক ... "সৈয়দা জয়নব (সাঃ) এর সাহসী ও নির্ভীক বক্তৃতাগুলির মাধ্যমে এবং তাদের এই যাত্রার ফলে যে শব্দটি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই থেকে লোকেরা কারবালার ঘটনা জানতে পেরে তাদের অন্তরে আলোড়িত হয়েছিল। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের অব্যাহত বন্দীদশা ও অবমাননা তাদের কারণকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষের নজরে আনছিল। কথাটি ইয়াজিদের কাছে এসেছিল যে রাজত্বকালে অশান্তি ও অশান্তি রয়েছে এবং ইয়াজিদের সৎ উদ্দেশ্যগুলির মায়া দূর করা হচ্ছে। এটি ছিল বিদ্রোহের ভয় যা ইয়াজিদকে মহানবী (সা।) - এর পরিবারের সদস্যদের মুক্তি দেয়।কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে সৈয়দা জয়নব (সা) ইমাম হোসেইন (আ।) - এর পুত্র ইমাম জয়ন আল-আবিদিন (আ।) - কে ইয়াজিদকে একটি বাড়ি খালি করতে এবং তাদের জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিতে বলে শহীদদের মাথা দিয়ে। । তিনি সাত দিন বাড়িতে ছিলেন এবং কারাবন্দী হওয়া অন্যান্য মহিলা এবং দামেস্কের মহিলাদের সাথে শহীদদের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন। তিনিই প্রথম তাঁর পিতার শাহাদাত নিয়ে চতুর্থ ইমাম জয়ন উল আবিদীন (আ।) এর প্রতি সমবেদনা জানান। এরপরে তিনি কারবালায় যান এবং ইমাম হুসেন (আ।) এবং শুহদা-ই কারবালা (আ।) [কারবালার শহীদ] এর সমাধিতে শোক প্রকাশ করেছেন । এটাই যয়নব (সা।), যিনি ইমাম হুসেনের (আ।) শোকের (মাজালিস-ই-আযা) ভিত্তির দায়িত্বে ছিলেন।এই traditionতিহ্য যা আজ অবধি লক্ষ লক্ষ মুসলমানের স্মৃতি ও হৃদয়ে বাস করে, ইমাম হুসেন (আ।) এর আত্মত্যাগকে বাঁচিয়ে রেখেছে, এবং পৃথিবীর অনাচার দূর করার লক্ষ্যে প্রতিটি আন্দোলনে গতিশীলতা এনেছে।ইমাম হুসেন (আ।) এবং মহানবী (সা।) - এর পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ ইসলামের পক্ষে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা বিশ্বব্যাপী প্রচার করা সৈয়দা জয়নবের (সা) নিয়তি ছিল। তিনি সাহস ও নির্ভীকতার সাথে ইবনে জায়েদ ও ইয়াজিদের অপকর্মগুলি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ধৈর্য সহকারে শারীরিক যন্ত্রণা ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করেছিলেন এবং তার চারপাশের শক্তির উত্স ছিলেন এবং একবারও তিনি আল্লাহর নির্দেশিত নিয়তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি। তার জমা দেওয়ার শক্তি ছিল divineশিক, তবুও তাঁর বিলাপ বিনীতভাবে মানব ছিল। দাবি করা হয় যে তিনি Syria২ হিজরিতে 57 বছর বয়সে সিরিয়ায় ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর পবিত্র মাজার জয়নবীয়া বর্তমান সিরিয়ার দেশটিতে অবস্থিত, অথবা কেউ কেউ মিশরে বিশ্বাস করেন এবং আজকাল অনেক শিয়া এতে সফর করেন।তথ্যসূত্র:http://www.al-islam.org/victory/http://www.ezsoftech.com/stories/syeda.zainab.asphttp://www.ezsoftech.com/islamic/zainab1.asphttp://www.almujtaba.com/en/index.php/left-menu-articles/57-sedaeda-zainab-as/http://www.aimislam.com/resources/24-history/1167-sermon-of-lady-zaynab-a-in-the-court-of-yazid.htmlhttp://www.al-islam.org/nafasul-mahmum/34.htmhttp://www.ziaraat.org/zainab.php

মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি শেষ পর্ব-২০)সাদ ইবনে মায়ায (রা.)'র মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রাসূল (সা.) সাহাবাদেরকে নিয়ে সেখানে গেলেন এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে মায়াযকে গোসল দেয়া হল। গোসল ও কাফন শেষে তাকে খাটিয়ায় রেখে কবরস্থানের দিকে নেয়ার সময় রাসূল (সা.) খালি পায়ে হাঁটছিলেন এবং কখনো খাটিয়ার ডানে আবার কখনো বায়ে ধরছিলেন। কবরে পৌঁছে রাসূল (সা.) নিজেই কবরের মধ্যে নেমে নিজের হাতে সুন্দরভাবে দাফন সম্পন্ন করেন। সাদের মা কবরের কাছে এসে বলল,“ সাদ তুমি বেহেশতে সুখে থাকো !”রাসূল (সা.) বললেন, “সাদের মাতা! চুপ কর। এত দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে কথা বল না। এখন কবরে সাদের উপর আযাব হচ্ছে এবং সে কষ্ট পাচ্ছে।” অতঃপর কবরস্থান থেকে ফিরে এলেন।সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি সাদের জানাজার নামাজ পড়ালেন, নিজ হাতে কবরে শোয়ালেন এবং নিজেই তার কবর বানালেন; তার পরও বলছেন কবরে তার ওপর আযাব হচ্ছে?” রাসূল (সা.) বললেন, “হ্যাঁ! সাদ তার পরিবারের (স্ত্রীর) সাথে খারাপ আচরণ করত এবং একারণেই কবরে তার উপর আযাব হচ্ছে।”এক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর কাছে এসে দেখল তিনি একটি পুরাতন পোশাক পরে আছেন। লোকটি কাজ সেরে যাওয়ার সময় রাসূলকে (সা.) অনুরোধ করে বলল, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি এই বার দেরহাম হাদিয়া হিসাবে গ্রহণ করে একটি নতুন পোশাক কিনুন” রাসুল (সা.) আলীকে (আ.)বললেন,“ টাকাটা নিয়ে আমার জন্য একটা জামা কিনে নিয়ে এস।”আলী (আ.) বলেন,“ আমি টাকাটা নিয়ে বাজারে গিয়ে বার দেরহাম দিয়ে একটা জামা কিনে আনলাম।” রাসূল (সা.) জামাটা দেখে বললেন,“আমার এটা পছন্দ হচ্ছে না একটা কম দামী জামা নিয়ে এস।”আলী (আ.) বলেন, “আমি দোকানে গিয়ে জামাটা ফিরিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে রাসূল (সাঃ) এর কাছে এলাম। অতঃপর জামা কেনার জন্য রাসূল (সাঃ) এর সাথে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলাম।” পথে রাসূল (সা.) একজন দাসীকে কাঁদতে দেখলেন। রাসূল (সা.) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,“কাঁদছ কেন?” দাসী বলল, “মনিব বাজার করার জন্য আমাকে চার দেরহাম দিয়েছিল কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি এখন বাসায় ফিরতে ভয় পাচ্ছি।”রাসূল (সা.) বার দেরহাম থেকে চার দেরহাম দাসীটিকে দিয়ে বললেন, “যা কেনার কিনে নিয়ে বাসায় যাও। আমরাও বাজারে গেলাম রাসূল (সা.) চার দেরহাম দিয়ে একটি জামা কিনে পরলেন।”ফিরে আসার সময় রাসূল (সা.) একটি লোককে দেখলেন যার জামা ছিল না। রাসূল (সা.) জামাটি খুলে লোকটিকে দিয়ে আবার বাজারে গিয়ে বাকি চার দেরহাম দিয়ে আরো একটি জামা কিনে পরে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে আবার সেই দাসীটিকে দেখলেন ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বসে আছে। এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় দাসীটি বলল,“হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার দেরী হয়ে গেছে তাই ভয় করছে, বাসায় গেলে আমাকে মারধর করবে।” রাসূল (সা.) তার জন্য সুপারিশ করার প্রতিশ্রুতি দেন। রাসূল (সা.) দাসীসহ বাড়ির মালিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে সালাম করলেন কিন্তু জবাব এল না। তৃতীয়বার সালামের পর জবাব শোনা গেল- ওয়া আলাইকুম আসসালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)। রাসূল (সা.) বললেন, “কেন প্রথমে জবাব দিলে না?” বাড়ির কর্তা বলল,“আপনার সালামকে বারবার শোনার জন্য।” রাসূল (সাঃ) বললেন,“ তোমার দাসী দেরি করেছে আমি তাকে সাথে নিয়ে এসেছি তুমি তাকে কিছু বল না।” বাড়ির কর্তা বলল,“ হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনার জন্যে এই দাসীকে মুক্ত করে দিলাম।” এরপর রাসূল (সা.) নিজে নিজে বললেন,“এই বার দেরহাম খুবই বরকতময় ছিল। যার বিনিময়ে দুইজন জামা পরিধান করল এবং একজন দাসী মুক্তি পেল।” এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, “আমাকে কিছু উপদেশ দান করুন।” হযরত তাকে এভাবে উপদেশ দিলেন, “আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যদি তোমাকে কেউ নির্যাতন করে এমনকি যদি তোমাকে আগুনেও পোড়ায় তার পরও তুমি শিরক কোরো না। বাবা-মাকে কষ্ট দিও না এবং তাদের সাথে ভাল আচরণ করো তাদের জীবিত অবস্থায় ও মৃত্যুর পর। তাদের আদেশ মেনে চল। যদি বলে যে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও, তাই কর। কারণ তা হচ্ছে ঈমানের নিদর্শন। কিছু অবশিষ্ট থাকলে তোমার মোমিন ভাইকে দান কর। দ্বীনি ভাইদের সাথে হাসি মুখে ভাল আচরণ কর। মানুষকে হেয় কর না, তাদের প্রতি দয়ালু হও। কোন মুসলমানকে দেখলে সালাম করবে। মানুষকে সঠিক ইসলামের পথে আহবান কর। জেনে রাখ, কারও উপকার করলে একজন গোলাম মুক্ত করার সমান সওয়াব পাবে ! জেনে রাখ, মদসহ সব নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম।একবার রাসূল (সা.) সাথীদেরকে নিয়ে বসেছিলেন। হঠাৎ করে হেসে উঠলেন। সাহাবারা রাসূল (সা.) এর হাসির কারণ জানতে চাইলে রাসূল (সা.) বললেন,“আমার উম্মতের দুই ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে একজন আর একজনকে দেখিয়ে বলবে: হে আল্লাহ আমার অধিকারকে ওর কাছ থেকে আদায় করে দিন!” আল্লাহ বলবেন, “তোমার ভাইয়ের অধিকার দিয়ে দাও !” সে বলবে, “হে আল্লাহ আমার ভালো আমল বলতে কিছুই নেই আর পার্থিব সম্পদও আমার নেই।” তখন হকদার বলবে, “হে আল্লাহ এমতাবস্থায় আমার গোনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দিন !” এ পর্যন্ত বলার পর রাসূল (সা.) এর চোখ মোবারক থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি বললেন, “সেদিন মানুষ তার গোনাহ'র বোঝা বহনের জন্য অন্যের সাহায্য চাইবে। সেদিন যে ব্যক্তি তার অধিকার চাইবে আল্লাহ তাকে বলবেন, “চোখ ফিরাও এবং বেহেশতের দিকে তাকাও, কি দেখছ? তখন সে বেহেশতের অফুরন্ত নেয়ামত দেখে অবাক হয়ে বলবে,“হে আল্লাহ এসব কাদের জন্য?”আল্লাহ বলবেন, “বেহেশতের এইসব অফুরন্ত নেয়ামত তার জন্য যে তার মূল্য আমাকে দিতে পারবে?”সে বলবে, “কে পারবে তার মূল্য দিতে?”আল্লাহ বলবেন, “তুমি।”সে বলবে, “হে আল্লাহ কিভাবে তা সম্ভব?” আল্লাহ বলবেন, “যদি তুমি তোমার দ্বীনি ভাইকে ক্ষমা কর।”সে বলবে, “হে আল্লাহ আমি তাকে ক্ষমা করলাম।”অতঃপর আল্লাহ বলবেন, “তোমার দ্বীনি ভাইয়ের হাত ধরে বেহেশতে প্রবেশ কর।” এরপর রাসূল (সা.) বললেন, “তাকওয়া অর্জন কর এবং নিজেদের সমস্যাগুলোর সমাধান কর !” মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এইসব অমূল্য বাণী মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন। [সুত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার : "তুহাফুল উকুল আন আলের রাসূল (সা.)","আলে রাসূল (সা.) থেকে বুদ্ধিমানদের জন্য উপহার"। মূল: শেখ আবি মুহাম্মাদ আল হাসান ইবনে আলী ইবনেল হুসাইন ইবনে শুবাত আল-হাররানি (রহ.), হিজরী চতুর্থ শতকের প্রখ্যাত পণ্ডিত। বঙ্গানুবাদ: আব্দুল কুদ্দুস বাদশা, সম্পাদনা : এ কে এম আনোয়ারুল কবির। শেষের দিকে (উনিশতম পর্বের কয়েকটি ঘটনা ও বিশতম পর্বের সবগুলো ঘটনা) উল্লেখিত মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র জীবনের কয়েকটি ঘটনা নেয়া হয়েছে আল্লামা মাজলিসি (র.)'র "বিহারুল আনওয়ার কাহিনী সম্ভার" শীর্ষক বই থেকে। বইটির অনুবাদক মোহাম্মাদ আলী মোর্তজা, সম্পাদনা : এ কে এম আনোয়ারুল কবির__________________________নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইনআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম ওয়া বিলা ফাশাল

মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পর্ব-১৯)📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি হালাল পথে জীবিকা আয় করতে লজ্জা পায় না, সে নিজেকে লাভবান করে ও তার খরচ হালকা হয়ে যায়। তার অহংকারও থাকে না। যে আল্লাহর দেয়া কম রুজিতে তুষ্ট থাকে আল্লাহ্ তার থেকে কম আমলেই সন্তুষ্ট হন।📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖আর আল্লাহ দুনিয়া-প্রেমিকের আশা প্রলম্বিত করেন ও দুনিয়া-প্রেমের অনুপাতে তার অন্তরকে অন্ধ করেন। আর যে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত থাকে ও দুনিয়াবি আশাকে খাটো করে আল্লাহ্ তাকে তার অনর্জিত জ্ঞানগুলো শিক্ষা দান করেন এবং কোনো পথ নির্দেশক ছাড়াই তাকে সুপথ দেখান। আর তার অন্তরের অন্ধত্বকে দূর করেন ও তাকে দৃষ্টিবান করেন। জেনে রাখ, আমার পরে এমন লোকেরা থাকবে যারা শাসন-কর্তৃত্ব ও রাষ্ট্র চালাতে পারবে না হত্যাকাণ্ড ও স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া। তাদের ধন-সম্পদে প্রাচুর্য হবে না কৃপণতা ছাড়া; তারা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হবে না রিপু ও কামনার দাসত্ব এবং ধর্মে অবহেলা প্রদর্শন করা ছাড়া। তাই যে এমন যুগ দেখবে সে যেন অভাবে, অখ্যাতিতে ও মানুষের ঘৃণায় ধৈর্য ধারণ করে যদিও ধনী, খ্যাতিমান ও জনপ্রিয় হওয়ার সামর্থ্য সে রাখে। আর এ কাজে তার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহ্ তাকে পরকালে পঞ্চাশ জন সিদ্দিকের বা সত্যবাদীর পুরস্কার দান করবেন। 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖মহানবী (সা.) বলেছেন : তোমরা মুনাফিকের মত বিনয় প্রদর্শন করবে না; আর সেটা হলো যখন শরীর বিনয়ী হয় কিন্তু অন্তরে বিনয় নেই।তিনি বলেছেন : নিন্দিত সৎকর্মশীল ব্যক্তি অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয়। 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖তিনি আরো বলেন : অনুগ্রহকে গ্রহণ করো। আরো সর্বোৎকৃষ্ট অনুগ্রহ হলো সুগন্ধি যা সহজে বহনীয় এবং সুঘ্রাণযুক্ত। 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖মাওলা মোহাম্মদ (সা.)বলেছেন : ধার্মিক অথবা সম্ভ্রান্তকে অবশ্যই সদাচার করতে হবে। আর অক্ষমদের জিহাদ হলো হজ্ব। আর স্ত্রীর জিহাদ হলো খুব ভালোভাবে স্বামীর সেবা করা। আর দয়াশীলতা হলো ধর্ম বা দীনের অর্ধেক। আর যে ব্যক্তি হিসাব মতো খরচ করে চলে সে কখনো নিঃস্ব হয় না। আর সাদাকাহ্ দেয়ার মাধ্যমে রিজিক নামিয়ে আনো।📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖মহান আল্লাহর রাসূল বলেছেন : কোনো বান্দাই মুত্তাকীনদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারবে না যতক্ষণ না এমন সব হালালকেও পরিহার করবে যাতে দূষণীয় ও হারাম বিষয়ে পতিত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে।📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖রাসূলে খোদা (সা.)'এর মুচকি হাসি 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖একদিন রাসূল (সা.) আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। এক ব্যক্তি হযরতকে বললেন,“ ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার হাসির কারণ কি?” রাসূল (সা.) বললেন,“ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুইজন ফেরেশতা প্রতিদিন আল্লাহর ইবাদতকারী এক ব্যক্তির পুরষ্কার দিতে পৃথিবীতে এসেছেন। কিন্তু তারা দেখল সেই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ফেরেশতারা আল্লাহকে বলল,“ আমরা প্রতিদিনের মত ঐ ঈমানদার ব্যক্তির ইবাদতের স্থানে আজও গিয়েছিলাম, কিন্তু তাকে আজ সেখানে পেলাম না কেননা সে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।” আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বললেন,“ সে যতদিন অসুস্থ থাকে তার সওয়াবকে আগের মতই লিখতে থাক। তার অসুস্থতা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত তার নেক আমলের পুরষ্কার দেয়া আমার কর্তব্য।”📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖(পালাক্রম মেনে চলো) 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖একদিন রাসূল (সা.) যখন বিশ্রাম করছিলেন এ অবস্থায় শিশু ইমাম হাসান (আ.) তাঁর কাছে পানি চাইলেন। রাসূল (সাঃ) এক পেয়ালা দুধ নিয়ে ইমাম হাসানের দিকে বাড়িয়ে দিলেন, তখন শিশু ইমাম হুসাইনও পেয়ালাটি নেয়ার জন্য এগিয়ে এলেন কিন্তু রাসূল (সাঃ) দুধের পেয়ালাটি হুসাইনকে না দিয়ে হাসানকেই দিলেন। হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (আ.) বিষয়টি দেখে রাসূল (সা.)এর কাছে প্রশ্ন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ(সা.) আপনি কি হাসানকে বেশী ভালবাসেন?” রাসূল (সা.) বললেন, “এমনটি নয় আমি তাদের দুজনকেই সমান ভালবাসি; তবে হাসান যেহেতু আগে চেয়েছে তাই তাকে আগে দেওয়াটাই কর্তব্য।”📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖(রাসূল (সা.)'র ক্রন্দন)📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖এক রাত্রে রাসূল (সা.) নিজের স্ত্রী উম্মে সালামা (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র ঘরে ছিলেন। মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) মধ্য রাতে উঠে ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে দোয়া করছিলেন এবং কাঁদছিলেন।📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖উম্মে সালামা শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন রাসূল (সা.) ঘরের এক কোণে দাড়িয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে কাঁদছেন এবং বলছেন,“ হে আল্লাহ, যেসব নেয়ামত আমাকে দিয়েছেন তা আমার থেকে উঠিয়ে নিবেন না!”📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖হে আল্লাহ, আমাকে দুশমনদের তিরষ্কার থেকে রক্ষা করুন এবং যারা আমাকে হিংসা করে তাদেরকে আমার উপর আধিপত্য দিবেন না ! হে আল্লাহ, যেসব গোনাহ থেকে আমাকে মুক্ত রেখেছেন কখনোই আমাকে সে গোনাহে পতিত করবেন না !হে আল্লাহ কখনোই আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিবেন না এবং আপনিই আমাকে সকল দুর্বিপাক হতে রক্ষা করুন ! 📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖উম্মে সালামা রাসূল (সা.) এর এ দোয়া শুনে কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় ফিরে গেলেন। রাসূল (সা.)বললেন,“ কাঁদছ কেন উম্মে সালামা?” উম্মে সালামা বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, কিভাবে না কেঁদে পারি! আপনি এত বেশী মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্তেও যেভাবে আল্লাহর দরবারে রোনাজারী করছেন এবং তাঁর কাছে চাইছেন যে যেন তিনি আপনাকে এক মুহূর্তের জন্যেও আপনার নিজের উপর ছেড়ে না দেন। তাহলে আমাদের অবস্থাতো খুবই শোচনীয়!”📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖রাসূল (সা.) বললেন,“ কেন ভয় করব না, কেন কাঁদব না, কেনইবা আমার শেষ পরিণতি সম্পর্কে চিন্তিত থাকব না আর কিভাবেই বা আমার মর্যাদা ও সম্মানের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকব?! আল্লাহপাক হযরত ইউনুসকে এক মুহূর্তের জন্যে এই নবীর নিজের ওপর ছেড়ে দেয়ায় কি কঠিন বিপদই না তার উপর নেমে এসেছিল📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖১৭-১২-২০২০____________________নিবেদকমোঃ জাহিদ হুসাইনআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন (চতুর্থ পর্ব)ও শেষ সুফিবাদের মর্মকথা: "হৃদয়ে তোমার চলে যেন আলিফের (আল্লাহ) খেলা। পবিত্র দৃষ্টি দিয়ে যদি তুমি জীবনকে দেখতে শেখো, তুমি জানবে আল্লাহর নামই যথেষ্ট " -------আল্লাহ প্রেমময় ও সৌন্দর্যময়। তিনি অনন্ত, অবিনশ্বর ও সর্বত্র বিরাজমান। প্রেম ও ভক্তির পথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। আল্লাহতে অনুগত বা লীন হওয়া সুফি সাধকের চরম লক্ষ্য।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন "তুমি যেখানে তিনিও (আল্লাহ) সেখানে আছেন (সুরায় হাদিদ ৪ নং আয়াত)" যদি মনে আসে আল্লাহ আমার সঙ্গেই আছেন বা আমার সাথী হয়ে আমার সাথেই আছেন তবে কি খুব ভুল বলা হবে? না ভুল হবেনা উক্ত আয়াত মতে। তবে অপর আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন ‘বরং মহান আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে তুলেছেন এবং সেটাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করেছেন তোমাদের হৃদয়ের গহীনে।” [সূরা আল-হুজুরাত ৪৯:৭]স্রষ্টা সৃষ্টির মাঝে প্রবেশ করেন না এবং স্রষ্টাকে ধারণ করার মত এত বিশাল কোনো সৃষ্টিও নেই। বর্তমান পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের কোটি কোটি কলব বা অন্তর রয়েছে। প্রতি কলবে আল্লাহ থাকলে আল্লাহর সংখ্যা কত হবে? যদি বলা হয় সত্যকামী সাধকের কলব আয়নার মত। তাহলে বলব, আয়নায় তো ব্যক্তি থাকে না, ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি থাকে। সুতরাং সত্যকামী মানবের কলবে মহান আল্লাহর প্রতি গভীর ভালবাসা আর আনুগত্য থাকে। সেই ভালবসা থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মির মাঝেই স্রস্টা বিরাজমান। ক্বলব কিক্বলব হোল মানব দেহের মুল অংশ, যার মাধ্যমে রূহ দেহের সাথে সংযুক্ত হয়। কলবের সংজ্ঞা প্রসংগে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : নিশ্চয়ই মানুষের দেহে এক টুকরা গোশত আছে, যখন তা পবিত্র হয় তখন সমস্ত দেহই পবিত্র হয়ে যায়, আর যখন তা অপবিত্র হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহই অপবিত্র হয়ে যায়, আর জেনে রাখ তা হল ক্বলব। (বুখারী ও মুসলিম) ক্বলব মানব শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাদিস শরিফে ক্বলব কে "মুদগাহ" অর্থাৎ স্পর্শযোগ্য বস্তু বলা হয়েছে, যদি জানতে চাই ‘ক্বলব’ শরীরের কোথায় অবস্থিত? ১) যদি বলি--- এটা হলো রুহ (আত্মা, প্রাণ বা জীবন), কিন্তু এটা সঠিক হতে পারে না। কারণ রুহের কোনো নির্ধারিত আকার নেই এবং শরীরের মধ্যে তার কোন সুনির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থানও নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যদি আপনাকে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, আপনি বলুন, রুহ আমার রবের নির্দেশ হতে; আর তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল : ৮৫)। ২) আবার যদি বলি--- এটা হলো নাফছ (রিপুগুলো), কিন্তু আমার মতে এটাও সঠিক না। কেননা নাফছেরও কোনো নির্ধারিত আকার নেই এবং শরীরের মধ্যে তার কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থানও নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর আমি আমার নাফছকে নির্দোষ বলি না, নিশ্চয় নাফছ (রিপুগুলো কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা ও ঘৃণা) অবশ্যই মন্দ কাজের প্রতি নির্দেশ করে, আমার রব যাকে রহমত করেন তাকে ছাড়া; নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা ইউছুফ : ৮৫)। ৩). আরও বলতে পারি--- এটা হলো আকল (জ্ঞান, বিবেক বা বুদ্ধি), । কিন্তু আমরা জানি জ্ঞান, বিবেক বা বুদ্ধি স্পর্শযোগ্য বস্তু নয়, আকলেরও কোনো নির্ধারিত আকার নেই, যদিও শরীরের মধ্যে তার নির্দিষ্ট স্থান বা অবস্থান রয়েছে। সুতরাং মস্তিষ্ক বা মগজ যেখানে জ্ঞান, বিবেক বা বুদ্ধি থাকে তাকেই কলব বলা উচিত হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বধির, বোবা ও অন্ধ, সুতরাং তারা বিবেচনা করে না।’ (সূরা বাকারা : ১৮)। যেহেতু হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘মুদগা’ ও ‘কলব’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে ১২৬টি আয়াত রয়েছে, যেসব আয়াতে কলবের কর্মকান্ড - সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।যেমন- ‘তাদের কলবগুলোতে রোগ আছে।’ (সূরা বাকারা : ১০)। ‘তাদের কলব আছে কিন্তু তারা তদ্বারা বুঝে না।’ (সূরা আরাফ : ১৭৯)। ‘তবে যদি তাদের কলব থাকত যা দ্বারা তারা বিবেচনা করবে।‘(সূরা হজ : ৪৬)। হাদিস শরিফে এসেছে, জেনে রাখ! মানবদেহে এমন একটি ‘মুদগা’ রয়েছে, যা সুষ্ঠু হলে সমগ্র দেহ সুষ্ঠু হয়; আর তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমগ্র দেহই ক্ষতিগ্রস্ত হয়; জেনে রাখ! তা হলো ‘কলব’। (সহিহ বোখারি)। আপন চেতনার আলোতে নিজেই নিজের অন্তরের মানুষটি হয়ে ওঠার একটি পথ হয় সুফিজম এটা আমার নিজস্ব ধারনা থেকে বলছি। যদি জানতে চান চেতনার আলোই বা কি? চেতনা মনের একটি ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য যেমন,আত্বমাত্রিকতা,আত্বচেতনা,অনুভূতিশীলতা । 'চেতনা' শব্দটির আভিধানিক অর্থ : চৈতন্য, সংজ্ঞা, হুঁশ; জ্ঞান, অনুভূতি; সজ্ঞান বা জাগ্রত অবস্থা; প্রাণ, জীবন। যদি বলি নিজের অনুভূতিশীলতাকে উত্তম জ্ঞান আর প্রজ্ঞার মাধ্যমে জাগিয়ে তোলার নামই চেতনার আলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ ষড় রিপুর কাছে পরাজিত হয়ে আত্ম অহংকারের-কাছে বলি হয়ে নিজের চেতনার আলোতে পৌঁছতে পারেনা । নিজেই নিজের অন্তরের মানুষটি হয়ে ওঠতে পারেনা। ষড় রিপু দমনের মাধ্যমে ক্বলব বিশুদ্ধ করা যায়। বিশুদ্ধ ক্বলব নিজেকে শুদ্ধ আমিতে পৌঁছে দিতে পারে। রুহ কি --- রুহ হল আরবি শব্দ।এর বাংলা অর্থ হল আত্মা।এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক বিশেষ কুদরত।সম্পুর্ন শূন্যতা বা অস্তিত্বহীন থেকে শক্তির মাধ্যমে তিনি যেভাবে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনেন, তেমনি অতিরিক্ত আরেকটি শক্তির মাধ্যমে নিষ্প্রাণ পদার্থে তিনি প্রাণের উন্মেষ ঘটান।সে অতিরিক্ত শক্তিই হল রুহ বা আত্মা বা জীবনী শক্তি । রূহ ও নফসের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোন পার্থক্য নেই। যদিও পারিভাষিক অর্থে পার্থক্য আছে। যেমন প্রাণীকে ‘নফস’ বলা হয়। কিন্তু ‘রূহ’ বা আত্মা বলা হয় না। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে(আলে ইমরান ১৮৫)। এতে বুঝা যায় যে, দেহ ও আত্মার মিলিত সত্ত্বাকে ‘নফস’ বলা হয়। আর শুধুমাত্র আত্মাকে ‘রূহ’ বলা হয়।ঘুম যদি টেম্পোরারি ডেথ হয় তাহলে আবার রূহ কিভাবে জীবনী শক্তি হয়? আসলে এটা এমন কিছু যা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অতি অল্প। মানুষ যখন সৃষ্টি হলো তখন ছিলো শুধুই মাটির একটি মূর্তি। সেখানে রুহ সেট করার সাথে সাথেই মানুষ সচল হলো। আবার মৃত্যুর পর মানুষ অচল।পৃথিবীতে এত এত মানুষ সবার জন্য পৃথক রুহ। রুহ হলো প্রাণ শক্তি কিন্তু মানুষের মগজ হলো সেই সিস্টেম যা মানুষকে পাপ পূণ্যের পথে পরিচালনা করে থাকে। আল্লাহ রুহকে পবিত্র বলেছেন কারণ এই প্রাণ শক্তি যা আল্লাহর হুকুমে মানুষকে সচল রাখে। বাকি সব মানুষের ব্রেন নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই ব্রেন সচল থাকে চালিকা শক্তি রুহের মাধ্যমে। শুধু মাত্র হজরত আদম আঃ আর হযরত ঈসা আঃ এর সৃষ্টির কথা যখন এসেছে তখনই রূহ এর কথা এসেছে !!

সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন (৩য় পর্ব)সুফিজমে বহুল প্রচলিত চর্চা হোল মিস্টিসিজম। এর বাংলা অর্থ মরমি সাধক বা মরমিয়া, সুফি, মুর্শিদ, দরবেশ, সাধু, সন্ন্যাসী, গুরু ইত্যাদি। ইংরেজি Mysticism এসেছে গ্রিক শব্দ mystes থেকে যার অর্থ চোখ বন্ধ করা। মরমি সাধকেরা চোখ বন্ধ করে অন্তর্দৃষ্টি ও গভীর চিন্তা-তন্ময়তার মাধ্যমে সত্য ও সুন্দরকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পান। এই প্রয়াসে মনীষা ও ভাবাবেগের এক প্রকার সংমিশ্রণ ঘটে। এই মিশ্রণের বিচিত্র অনুভূতির প্রকাশ রূপক ও উপমা ছাড়া সম্ভব নয়। সুফিবাদেরও মর্মকথা: ‘হৃদয়ে তোমার চলে যেন আলিফের (আল্লাহ) খেলা। পবিত্র দৃষ্টি দিয়ে যদি তুমি জীবনকে দেখতে শেখো, তুমি জানবে আল্লাহর নামই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রেমময় ও সৌন্দর্যময়। তিনি অনন্ত, অবিনশ্বর ও সর্বত্র বিরাজমান। প্রেম ও ভক্তির পথে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই তাঁকে পাওয়া যায়। আল্লাহতে অনুগত বা লীন হওয়া সুফি সাধকের চরম লক্ষ্য।উয়ায়েস কারনী (রাঃ --- হযরত মোহাম্মদ (সেঃ) বলেন বিশ্বাসী আল্লাহর নুরকে খোজ করবে, এবং কেউ তা অন্তরচক্ষুদ্বারা দেখবে , যা চর্ম চক্ষু দ্বারা পাওয়া যাবে না। এবং জ্ঞ্যান হলো আলো বা নূর যা আল্লাহ যাকে খুশি দান করেন। শারীরিকভাবে কাছাকাছি না থাকলেও সিদ্ধি লাভ হয়। হযরত উয়ায়েস কারনী তারই উদাহরণ। যেহেতু তিনি কখনোই নবিজী (সাঃ) কে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখেন নাই কিন্তু তার পরেও তাঁর সকল শিক্ষাই তিনি পেয়েছিলেন। উয়ায়েস কারনী (রাঃ)ছিলেন ইয়েমেনের কারান নামক স্থানের একজন সুফি, ও দার্শনিক যা এখন সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এর সমসাময়িক কালের ব্যাক্তি ছিলেন।তাই নবীজি (সাঃ) তাঁকে সাহাবী হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যদিও রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় নবিজী (সাঃ) এর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয় নাই। আল্লাহর প্রেরিত রাসুলকে দেখার আন্তরিক আকুলতার কারণে তাঁর নাম সাহাবী (রাঃ) দের তালিকায় স্থান পায়।ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, উয়াইস করনি সিফফিনের যুদ্ধে আলি ইবনে আবি তালিবের পক্ষে লড়াই করে মারা যান । অন্তর দিয়ে তিনি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর খুবই কাছাকাছি ছিলেন যার কারণে তিনি হযরতের ব্যাথা নিজেও অনুধাবন করতে চেয়েছেন। জাহেরী এবং বাতেনী জ্ঞ্যানের দ্বারাই তিনি হযরতের দাঁত হারানোর বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। এটা সরাসরি হযরত মোহাম্দ (সাঃ) এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্বাসীগন আল্লাহর নূরকে খুজতে থাকে। এটা ততক্ষন অবধারণ করা যায় না যতক্ষন অন্তরদ্বারা তা অনুধাবন করা না যায়।তিনি খুবই সাধারণ এবং একাকী জীবন যাপন করতেন। স্বল্প আহার, রোজা ও অন্ধ 'মা'-এর সর্বপ্রকার সেবা-সুস্রশাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি ছিলেন মাতৃ ভক্ত । মায়ের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন।শুধু তাই নয় তিনি যেখানেই যেতেন মাকে ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন।এক মুহূর্তের জন্য তাহার মাকে মাটিতে পা ফেলতে দিতেন না। আলি ইবনে আবি তালিব এবং উমর ইবনে আল-খাত্তাবের সাথে সাক্ষাতের পর তাঁর কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং উৎসুক জনতা তাঁকে এক নজর দেখার জন্য তাঁর আবাসস্থলে গমন করতে থাকে। এতে উয়াইস করনির ধর্ম সাধনায় ব্যঘাত সৃষ্টি হয় এবং নির্বিঘ্ন সাধনার জন্য উয়াইস করনের উদ্দেশ্যে কুফা ত্যাগ করেন। তাঁর সময়ে তাঁকে আলির একজন অনুসারী বলে ধরা হত। তিনি উট পালন করে অর্থ উপার্জন করতেন।উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে ওয়ায়েস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছেন এবং তাঁর শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করে।(তথা আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য সুপারিশ করে)।(মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ৬২৬০ ইফা)।ওয়াস করনির সংক্ষিপ্ত জীবনিঃ- ওয়াস করনির পিতা আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন মস্ত বড় ইহুদি ধর্মের আলেম।এলাকায় তার খুব নাম যশ ছিল। ওয়াস করনির বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখন তাহার পিতা হঠাৎ মারা যাওয়ায় সংসারের সকল দায়িত্ব তার ওপর আরোপিত হয়। পিতার মৃত্যুতে তাদের আর্থিক অভাব অনটনে দিন অতিবাহিত হতে থাকে।কখনও এমনও দিন গেছে যে শুধু পানি খেয়ে দিন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি বছরের অধিকাংশ দিনই রোযা রাখতেন।দিনের শেষে শুধু একটি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।যেদিন বেশি খেজুর ক্রয় করতেন সেদিন দুইটা একটা খেজুর রেখে বাকি সবই ফকির মিসকিনদের বিলিয়ে দিতেন। শত অভাবে তিনি কারো কাছে হাত পাততে না।ওয়াস করনির বহু আমির ভক্ত ছিল যারা দামি দামি কাপড়, টাকা পয়সা দিয়ে ওয়াস করনিকে সাহায্য করতে চাইত,কিন্তু ওয়াস করনি তা ফিরিয়ে দিয়ে শুধু বলতেন "আমার দয়াল নবী (স) ই যখন উম্মতের জন্য সকল আরাম আয়েশ ছেড়ে দিলেন, তখন আমি তার গোলাম হয়ে কিভাবে আরাম আয়েশ করতে পারি ???"। ক্রমেই যখন ওয়াস করনি খ্যাতি বাড়তে থাকে তখন তিনি তার মাকে নিয়ে জঙ্গলে আত্ম গোপন করেন,যাতে মানুষের কারনে তার ইবাদত করতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। মুহাম্মদ (সা) এর জীবদ্দশায় তিনি জীবিত ছিলেন তবে তাদের কখনো দেখা হয়নি। কারণ উয়াইস ধর্ম সাধনায় নিয়ত রত থাকতেন এবং তাঁর অন্ধ মায়ের দেখাশোনা করতেন। লোকে হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ)কে পাগল বলিত এবং পাথর ছুড়িয়া মারিত। তখন তিনি তাহাদেরকে ছোট ছোট পাথর মারতে বলতেন যাতে ইবাদাতের অসুবিধা না হয়। অন্ধ 'মা'-এর সুস্রশার ব্যাঘাত হবার ভয়ে সর্বকালের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আশেক হযরত ওয়াইজ কারনী (রঃ), হযরত রসুলপাকের (দঃ) সাথে সাক্ষাত লাভ সম্ভব হয় নাই। "মা'-এর অনুমতির বাহিরে তিনি কোনও কাজ কোনও দিন করেন নাই। উল্লেখ্য যে হযরত উয়ায়েস এঁর মাতা মারা যাওয়ার পরে তিনি হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য বের হন এবং সিফ্ফিনের যুদ্ধে শাহদাৎ বরন করেন।ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন " আমার লোকেদের মাঝে এমন একজন আছে যে শেষ বিচারের দিনে সকল বিশ্বাসীদেরকে হেফাজতের ক্ষমতা রাখে"।সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন " কে সেই ব্যক্তি?" তিনি বল্লেন "সে আল্লাহর বান্দা।" তাঁরা প্রত্যুত্তরে বল্লেন "আমরা সবাই আল্লার বান্দা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পয়দা করেছেন।" তাঁরা প্রশ্ন করলেন " তাঁর নাম কি?" রাসুলে পাক (সাঃ) বল্লেন "উয়ায়েস!" সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন,"তিনি কোথায়?" তিনি বলেন "ইয়েমেন"। সাহাবা (রা) গণ জিজ্ঞাসা করলেন, "সে যদি আপনাকে ভালোবাসে, তাহলে কেন আপনার খেদমতে হাজির হয় না?" রাসুলে পাক (সাঃ) জবাবে বল্লেন, "সে আমার পথ গ্রহণ করেছে এবং সে একজন বিশ্বাসীর অন্তর্ভুক্ত; শারিরীক ভাবে তাঁর এখানে উপস্থিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। অধিকন্তু তাঁর পরিস্থিতি তাঁকে এখানে আসতে সহায়তা করে না এবং সে তার অচল-অন্ধ মায়ের সেবা করে।সে দিনের বেলা উট চরায়। সেই আয় থেকে নিজে ও তাঁর মায়ের ভরণ পোষন করে। সাহাবা (রাঃ) গন প্রশ্ন করলেন আমরা কি তাঁকে দেখতে পাব?" রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন," আবু বকর নয়, তবে ওমর এবং আলী পারবে। তোমরা তাঁকে পাবে ইয়ামেনের একটি গ্রাম শারানীতে এবং তাঁর হাতের তালুতে এবং বুকের পাজরের কাছে সাদা দাগ দেখে তোমরা তাঁকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে।। যখন তোমাদের সাথে তাঁর দেখা হবে, তাঁকে আমার শুভেচ্ছা দেবে আর আর আমার উম্মতদের জন্য দোআ করতে বলবে। ওয়াস করনি প্রাথমিক জীবনে হযরত মুসা (আঃ)এর অনুসারি অর্থাৎ ইহুদি ছিলেন।পরবর্তীতে আসমানি কিতাবে শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ (স) এর আগমনের খবর পেয়ে এক মুসলমান আউলিয়ার কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং সেই সাথে তাহার মাতাকে ও ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন।এভাবে সারা জীবন আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রেমে নিজেকে উজার করে দিয়ে অবশেষে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন

সুফিবাদ বা সুফী দর্শন একটি ইসলামি আধ্যাত্মিক দর্শন (দ্বিতীয় পর্ব)মুরাকাবা বা ধ্যান কি? ইসলাম হল সাধনা, আত্মশুদ্ধি ও সেবার ধর্ম। ইসলামের চিরায়ত ঐতিহ্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হল মুরাকাবা বা ধ্যান। মুরাকাবা বা ধ্যান কি? যুগে যুগে ধ্যানের ধরন বা প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে তবে ধ্যান হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অশান্ত ক্বালব বা মনকে স্থির ও প্রশান্ত করা হয়। ধ্যান হোল মনকে দিয়ে বড় কিছু করানোর প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া। ধ্যান মনকে নফস বা প্রবৃত্তির শৃংখল মুক্ত হতে সাহায্য করে এবং তাকওয়াবান হতে সহায়তা করে। ঠান্ডা মাথায় অবচেতন মনের শক্তিকে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করে নিজের ও পরের কল্যাণ করা যায়। ধ্যান মনকে প্রশান্ত করে, উপলব্ধি দান করে এবং ধ্যান-দোয়ায় একাকার হয়ে বহুমত্রিক প্রাপ্তি ঘটে। মোরাকাবা, ধ্যান, মেডিটেশন এটা ইসলামের উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি। যেমন,নামাজ মুসলমানদের দৈনন্দি এই ফরজ ইবাদতটি আসলে ধ্যান ও যোগাাসনের একটি যুগপৎ উপযোগিতা। আমরা যখন নামাজ পড়ি, দুনিয়ার সকল কোলাহল থেকে দূরে সরে গিয়ে নিবিষ্ঠচিত্তে স্রষ্ট্রার কাছে আত্মনিবেদন করি। হয়তো স্রষ্ট্রাকে দেখছি না শুনছি না কিন্তু তিনি আমাকে দেখছেন, আমাকে শুনছেন এই যে, নিবিষ্ঠচিত্তে কল্পনা, একাগ্রচিত্ততা এটাইতো ধ্যান । রাসুল (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববীর বারান্দায় সাহাবাদের জন্য ধ্যান বা মোরাকাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে বসে হজ্ব ও ওমরায় আসা নবীর আশেকরা কুরআন পাঠ, নফল নামাজ, ধ্যান বা মোরাকাবা, দরুদ ও মিলাদ শরীফ পড়ে থাকেন। নবীজি সাহাবাদেরকে ৪টি বিদ্যা শিক্ষা দিতেন শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের কালিমা বিদুরিত হয়, হৃদয় আলোকিত হয়। মোরাকাবার নিয়ম হল প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে ও রাত্রির তৃতীয় অংশে (রহমতের সময়) জেগে বা অন্য যে কোন সময় আল্লার ধ্যনে মগ্ন থাকা নিজের জীবনের ভুল, বেয়াদবী জন্য মহান আল্লাহর কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা । এভাবে অধিককাল মোরাকাবা করলে দিলের চোখ খুলে যায়। আর ঐ চোখেই কেবল মো'মেন বান্দার নামাযের মেরাজ হয়ে থাকে। মোরাকাবা হল নফল ইবাদত। নফল ইবাদত হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম পন্থা। তাই মোরাকাবা সাধকের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সাহাবায়ে কেরামগণ প্রথমে মোরাকাবা করেছেন। পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত নির্দেশিত হয়েছে। ধ্যানের বহুমুখী গুরত্বের তাগিদে মহাপুরুষ, অলি-আওলিয়াগণ ধ্যানে নিমগ্ন হয়েছেন। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এ ধ্যান-চর্চার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হযরত মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি (রহঃ) যিনি বিশেষ পদ্ধতির মোরাকাবার উদ্ভাবক। একদা তিনি গোলাপ বাগানে ধ্যানমগ্ন ছিলেন। নব্যবিবাহিত এক দম্পতি বৃদ্ধ সাধককে বাগানে দেখে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, এ বৃদ্ধ বাগানে চোখ বন্ধ করে কি করছে?। মাওলানা রুমি বলেন, আমি চোখ বন্ধ করে যা দেখি,যদি তোমরা তা দেখতে আমি তো মাঝে মাঝে চোখ খুলি,তোমরা তাও খুলতে না। হযরত আলী (রা) কি গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে নামাজ পড়তেন তা একটি ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হয়। একদা হযরত আলী (রা)-র পায়ে তীর বিধলো। প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কয়েকজন সাহাবী তীর খুলতে উদ্যত হলেন। কিন্তু তীরে হাত দিলেই আলী (রা) চিৎকার করে উঠেন ব্যাথায়। সবাই রসূল (স) এর কাছে গেলে, তিনি বলেন আলী (রা) যখন নামাজে সেজদায় থাকবে তখন তীরটা খুলে নিও। কারণ নামাজে সে এত নিমগ্ন্ থাকবে যে, সে ব্যাথা কিছুই টের পাবে না। তা-ই হলো। আলী (রা) নামাজে দাঁড়ালেন। তীর খুলে ফেললেন সাহাবীরা তিনি টেরই পেলেন না। যুগে যুগে নবী-রসূল, অলি-বুযুর্গ ও সাধকগণ এই ধ্যান-মোরাকাবায় নিমগ্ন হয়েছেন। হয়রত ইব্রাহীম (আঃ) এর মনে যখন প্রশ্ন জাগল কে আমার স্রষ্ট্রা তখন তিনি ধ্যানে মগ্ন হলেন অবশেষে তিনি আল্লাহ পরিচয় লাভ করলেন। রাসূলুল্লাহ (স) হেরা গুহায় ১৫ বছর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। ধ্যানরত অবস্থায় জিব্রাইল (আ.) তার কাছে ওহী নিয়ে আসেন। হযরত মুসা (আ.) সিনাই উপত্যাকায় ধ্যানরত থাকতেন। ধ্যান-মুরাকাবার গুরত্ব সম্পর্কে সূরা আলে-ইমরানের ১৯০-১৯১ আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, “নিশ্চই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাত্রীর আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নির্দেশন রয়েছে। তারা দাড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহ স্মরণ করে,তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে ধ্যানে(তাফাক্কুর) নিমগ্ন হন এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালন! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি কর নি”। উক্ত আয়াতে “তাফাক্কুর” মানে হল গভীর ধ্যান,ইংরেজীতে মেডিটেশন বা কনটেমপ্লেশন। জীব-জগৎ ও মুক্তির পথ অনুসন্ধান লাভের জন্য এই গভীর মনোনিবেশ এই আত্মনিমগ্নতার নির্দেশ আল্লাহপাক কোরআনের একাধিক জায়গায় দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “কেন তোমরা ধ্যান বা গভীর মনোনিবেশ সহকারে চন্তিা-ভাবনা কর না?”,এমনকি নবীজী (স) কে আল্লাহপাক বলেছেন, “অতএব (তুমি দৃঢ়তার সাথে কাজ কর আর) যখনই অবসর পাও প্রতিপালকের কাছে একান্ত ভাবে নিমগ্ন হও” (কোরআন,সূরাঃ ইনশিরাহঃ ৭-৮) রাসূলুল্লাহ (স.) কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেন নি। ধ্যানের গুরত্ব সম্পর্কে বলেন, (হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত) নবীজী (স) বলেন, “সৃষ্টি সম্পর্কে এক ঘন্টার ধ্যান ৭০ বছর নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম” (মেশকাত শরীফ)। হয়রত ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত, নবীজী (স) বলেন, ''এক ঘন্টার ধ্যান (তাফাক্কুর) সারা বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম''। আত্মশুদ্ধি পথে বাধা-সমূহ হোল প্রথমত,ক্বালব বা মনের বিষ যেমনঃ রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈষা, হিংসা, অহং, আমনতহীনতা, গীবত বা পরর্চ্চা, মিথ্যা, হতাশা, অপবাদ, কু-চিন্তা ইত্যাদি অপরটি মনের বাঘ, যেমনঃ না শুকরিয়া বা নেতিবাচকতা ও অমূলক ভয়-ভীতি বা তাকওয়াহীনতা। মুরাকাবা বা ধ্যানের মাধ্যমে এসকল বাধা সমূহ দূরীভূত হয়ে আল্লাহর সাথে বিলিন হয়ে যাওয়া যায়। হিজরি প্রথম শতকের শেষ দিকে সুফি সাধকগণের মধ্যে অনেকের আবির্ভাব হয়, যারা শুধু নিরব সাধনায় সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নি। সাধনার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ধ্যানানুশীলনেও আত্মনিয়োগ করেন এবং ধ্যানের মাধ্যমে ক্বলব জারি করে আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেন। এতে চরম আনন্দের সন্ধানই তাদের পথ হয়ে দাঁড়ায়। সংসার ত্যাগ ও স্বেচ্ছাদরিদ্রতাকে ইতিপূর্বে সওয়াবের কাজ মনে করা হলেও তাদের ধারণা সৃষ্টি হয় যে, রাত-দিন আল্লাহ তাআলার পথে আত্মসমর্পণের বাহ্যিক রূপই হচ্ছে বৈরাগ্য ও দরিদ্রতা অবলম্বন করা। সেকালে সকল সুফি সাধকগণই কঠোর শরিয়তের পাবন্দ ছিলেন। ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অনুসরণে নামাজ, রোজা প্রভৃতি ধর্মীয় এবাদত তাঁরা গভীর নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করতেন। হযরত ওয়াইস আল-করনী (রহ.), হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহ.), হযরত ফুজায়েল বিন আয়াছ (রহ.), হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.), হযরত আবু সোলাইমানুদ্ধারানি (রহ.), হযরত ইবনে আরবি (রহ.), হযরত যুন্নন মিসরী (রহ.), হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.), হযরত মনসুর হাল্লাজ (রহ.) সেকালে বিখ্যাত বিখ্যাত সাধকপুরুষগণের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। সুফিতত্ত্বের মধ্যে কবিত্বের দিক দিয়ে হযরত শেখ সাদী (রহ.), হযরত হাফিজ (রহ.), হযরত জামি (রহ.), হযরত মাহমুদ সাবিস্তারী (রহ.), হযরত জালালুদ্দিন রুমি (রহ.), হযরত ফরিদুদ্দিন আত্তার (রহ.) অন্যতম ছিলেন। অপরদিকে, আল্লাহর অস্তিত্ব সত্তার বাস্তব অনুভূতি নিজের ব্যক্তিসত্তাকে পরম সত্তার মধ্যে বিলীন করে “ফানা” প্রাপ্তি এবং অবশেষে “বাকা” বা অমৃত আহরণই সুফি সাধনার মূলকথা। কাজেই কোন অবলম্বন ব্যতীত নিছক শূন্যের মধ্যে ফানায় পৌঁছা সহজতর নয়।সেকালে মনীষীগণ “ফানা”-কে ২ ভাগে ভাগ করেছেন, এক. “ফানাফিল্লাহ” দুই. “ফানাফির রাসুল (স.)”। আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে প্রকৃত পরিচয় পেতে হলে আগে “হাকিকতে মুহাম্মদী (স.)” বা “নূরে মুহাম্মদী (স.)” সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আহরণ করতে হবে। সুফি সাধকগণ এরূপ বিশ্বাসই পোষণ করে থাকেন। তাঁরা আরও বিশ্বাস করে থাকেন সৃষ্টির প্রথমেই ছিল শুধু আল্লাহর নূর। সে নূর থেকেই আল্লাহ পাক সর্বপ্রথমে সৃষ্টি করেছেন “নূরে মুহাম্মদী (স.)” অতপর এ “নূরে মুহাম্মদী (স.)” থেকেই সৃজিত হয়েছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মা- এবং তার মধ্যস্থ সবকিছু। বহুল প্রচলিত এ ধারণা সুফি বিশ্বাসের এক প্রধান অঙ্গ। সকল সুফি সাধকই মনে করে থাকেন যে, আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে “নূরে মুহাম্মদী (স.)” সম্পর্কে অবশ্যই পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে হবে।নবী পাক (স.) সম্পর্কে এ রূপ সুউচ্চ ধারণা পোষণ করেন বলেই সুফি দরবেশগণ “হাকিকতে মুহাম্মদী (স.)” বা নূরে মুহাম্মদী (স.) সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে সে জ্ঞানের মাধ্যমেই আল্লাহ পাকের মহান সত্তার সত্যিকার অনুভূতি নিজেদের অন্তর্লোকে জাগ্রত করার প্রয়াস পেয়ে এসেছেন। ইসলামী যুহদ (কৃচ্ছব্রত) প্রথম হিজরী শতকে বিকশিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন তরীকায় পরিণত হয়েছিল; এ সব তরীকার ভিত্তি ছিল কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা এবং এগুলো প্রচার করতেন যাহেদ উলামায়ে কেরাম যাঁরা পরবর্তীকালে সূফী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রথম চার ইমাম, যথা-ইমাম মালেক (রঃ), ইমাম আবু হানিফা (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ), ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ); আরও রয়েছেন ইমাম আবি আব্দাল্লাহ্ মোহাম্মদ আল্ বুখারী (রঃ), আবু হুসাইন মুসলিম বিন আল্ হাজ্জাজ (রঃ), আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) প্রমুখ। অতঃপর যাঁরা আগমন করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম হাসান আল্ বসরী, ইমাম আওযাঈঁ (রঃ)। এঁদের পরে এসেছেন আত্ তাবারানী (রঃ), ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রঃ), ইবনে হাজর আল্ হায়তামী (রঃ), আল্ জর্দানী, আল্ জওযী, ইমাম মহিউদ্দীন বিন শারফ বিন মারী বিন হাসান বিন হুসাইন বিন হাযম বিন নববী (রঃ), সৈয়দ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী (রঃ) প্রমুখ। এসব যাহেদ আলেম তাঁদের আনুগত্য, নিষ্ঠা ও অন্তরের পরিশুদ্ধির কারণে সূফী হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন এবং তাঁদের চেষ্টার ফলেই মুসলমান বিশ্ব আজকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ভ্রমণ করা যখন সবচেয়ে কঠিন ছিল এমনি এক সময়ে ইসলাম ধর্ম সূফী পর্যটকদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টায় দ্রুত প্রসার লাভ করে; এই সূফীবৃন্দ এতো বড় মহান কাজের জন্যেই আল্লাহর পছন্দকৃত বান্দা হবার শর্ত যুহদ আদ্ দুনইয়া (কৃচ্ছব্রত)-তে সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠেছিলেন। তাঁদের জীবনই ছিল দাওয়া, আর তাঁদের খাদ্য ছিল রুটি ও পানি। তাঁদের এই সংযম দ্বারা ইসলামের আশীর্বাদে তাঁরা পশ্চিম থেকে দূর প্রাচ্যে পৌঁছেছিলেন।হাসান বসরী (র.)---- সুফি তত্ত্বের উন্মেষযুগের শ্রেষ্ঠতম সাধক হচ্ছেন হাসান বসরী (র.)। ইরাকের দক্ষিণে শাতিল আরবের নিকটে বসরা নগরে তিনি বাস করতেন বলেই তাঁর নামের শেষে বসরী বিশেষণটি যুক্ত হয়েছে। নবী পাক (স.)-এর অন্যতম বিবি হযরত উম্মে সালমা (র.)-র এক পরিচারিকার গর্ভে হযরত হাসান বসরী (র.) এর জন্ম হয়। হযরত রাবেয়া বসরী (র.) তাঁর সমসাময়িক মহিয়সী ছিলেন। হযরত হাসান বসরী (র.) ১৩০ জন সাহাবার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ লাভ করেন। আধ্যাত্মিক শিক্ষায় তিনি ছিলেন হযরত আলী (ক.) এর অন্যতম প্রধান শিষ্য। সম্ভবত এ জন্যই সুফি তরিক্বায় আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (ক.)-এর নামের পরেই তাঁর নামটি স্থান লাভ করে।কাদেরিয়া, চিস্তিয়া ও সোহরওয়ারদিয়া এ তিন প্রধান সুফি ত্বরিক্বার সাধকগণ আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (ক.) এর পরেই হযরত হাসান বসরী (র.)-কে তাদের পথ প্রদর্শক বলে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সুফিজম নারীবাদের সমর্থক, কেননা সুফিবাদে মহিলা সুফিদেরও সন্ধান পাওয়া যায়। তেমনি এক মহিয়সী নারী হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)। তিনি ৭১৯ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ইরাকের বসরা নগরীতে এক দরিদ্র পল্লীতে জন্ম গ্রহন করেন ধর্মভীরু এই তাপসী নারী। দরিদ্র ছিলেন বটে তবে পরম ধর্মিক ও আল্লাহভক্ত ছিলেন। রাবেয়া বসরী ছিলেন ভদ্র, নম্র ও সংযমী। সেই সাথে প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারিনী ছিলেন তিনি। সব সময় গভীর চিন্তায় ধ্যানমগ্ন হয়ে যেতেন। রাগ, হিংসা, অহংকার তার চরিত্রকে কখনো কলুষিত করতে পারেনি। মোট কথা আল্লাহর একজন প্রকৃত ওলী হবার জন্য যা যা গুনাবলি থাকা প্রয়োজন সকল গুণের অধিকারিনী ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (রহ.)। হযরত রাবেয়অ বসরী (রহ.) সকল বিপদ-আপদকে আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতেন। (চলবে)