পোস্টগুলি

যে হাদিসের অপব্যাখ্যা করে মুনিফক মুয়াবিয়াকে বিখ্যাত সাহাবী বানানো হয় এবং সরলমনা মুসলমান দেরকে ধোঁকা দেওয়া হয়ঃ= ♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকে বলেন, নবী মুহাস্মাদ সঃ বলেন, "তোমরা আমার সাহাবীদের সমালোচনা কর না। আমার সাহাবীরা আকাশের নক্ষত্র তুল্য।" এবার আসুন জেনে নিই সাহাবী কাকে বলে? আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা, যারা নবী সাঃ কে সরাসরি দেখেছে এবং ইসলাম ধর্ম কবুল করছে তাদেরকে সাহাবী বলে। মূলত এই কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়, ভিত্তিহিন তথ্য। সাহাবী মানে অনুসারি, সঙ্গী, Follower, Comrade. যারা নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর অনুসারি ছিলেন, তাঁকে দেখেছেন, অনুসরন করেছেন,নবী সাঃ এর নেতৃত্বে সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছেন তারা নবী সাঃ এর সাহাবী । এই সুত্রে যারা নবী ইব্রাহীম আঃ এর সঙ্গী ছিলেন তারা নবী ইব্রাহীম আঃ এর সাহাবী ছিলেন । নবীজি সাঃ এর সাহাবী বলতে যারা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত নবী সঃ এবং তার আহলে বায়াতের উপর পূর্ণ আস্থার সহিত দাসত্ব করছেন, মূলত তারাই হলো নবীজি সাঃ এর সাহাবী। যিনি নবী সঃ এবং তাঁর আহলে বায়াত অর্থাৎ মাওলা আলী আঃ , মা ফাতেমা রাঃ এবং মাওলা ইমাম হাসান রাঃ ও হোসাইন রাঃ কে জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবেসছেন এবং তাঁদের কদমে নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করছেন তাঁরাই হলো সাহাবী। সাহাবীর সংজ্ঞা মূলত ব্যাপক, লিখতে গেলে একটি বড় আকারের কিতাব হয়ে যাবে। হযরত আবু বকর যখন খলিফা ছিলেন, তখন একশ্রেণীর নামদারী সাহাবীরা যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন আবু বকর এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বহু নামদারী সাহাবীকে হত্যা করে। তারপর হযরত ওমর ও উসমান যখন খলিফা হয়, তখন বিভিন্ন নামদারী সাহাবীকে অপরাধের জন্য শাস্তি ও হত্যা করে। কেউ চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করে, এরা কিন্তু সবাই নামধারী সাহাবী ছিল। নবী সঃ যখন মদীনার বাদশাহ ছিলেন, তখনও বিভিন্ন সাহাবী অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করত। একবার নবী সঃ গণিমতের মাল বন্টন করার সময়, এক সাহাবী বলে ওঠে হে নবী ! আমার প্রতি ইনসাফ করুন এবং আমাকে ঠকাবেন না। তখন নবী সঃ তাকে ধিক্কার জানিয়েছিল। আবু বকর, ওমর ও উসমান যখন নামদারী সাহাবীদেরকে হত্যা করেছে, তখন আমরা সমস্বরে চিৎকার করে বলি ঠিক কাজ করেছে। কারণ কতগুলো মুনাফেক সাহাবীকে হত্যা করেছে। আচ্ছা মেনে নিলাম,খুবই যুক্তি সঙ্গত কথা। মাওলা আলী আঃ এর হত্যাকারী মুলজিম ছিল একজন কুরআনের হাফেজ নামদারী বিশ্বাস ঘাতক সাহাবী নামের ভন্ড । এখন আমি কি তাকেও সাহাবী হিসাবে মেনে নিয়ে আকাশের নক্ষত্র তুল্য মনে করব? নাকি তাকে বেইমান মুনাফেক সাহাবী মনে করব? অথচ নবী সঃ মাওলা আলী আঃ সম্বন্ধে বলছেন, " আমি যার মাওলা আলী তাঁর মাওলা। মুমিন ব্যক্তি আলী আঃ এর বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং মুনাফেক কখনো আলী আঃ কে ভালোবাসবে না। যে ব্যক্তি আলী আঃ কে ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসে এবং যে আলী আঃ এর সাথে শক্রতা করে, সে আমার শক্র।" এইরকম আরো অসংখ্য হাদিস রয়েছে। এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। অথচ মুনাফেক মুয়াবিয়া লাঃ সিফফিনের যুদ্ধে সরাসরি মাওলা আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীকে হত্যা করে। তারমধ্যে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী পাগলা রহঃ সিফফিনের যুদ্ধে শহীদ হন। মূলত মুনাফিক মুয়াবিয়া মাওলা আলী আঃ কে কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই যুদ্ধ করে। আচ্ছা মাওলা আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করার নাম কি শক্রতা? নাকি বন্ধুত্ব করা? যদি বলেন বন্ধুত্ব করা, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আর যদি বলেন শক্রতা করা, তাহলে বলব মুয়াবিয়া লাঃ মুনাফেক নিশ্চয়ই । নবী সঃ বলেন, যে আলী আঃ এর শক্র সে আমার শক্র। এখন বলুন নবী সঃ এর শক্র কিভাবে সাহাবী হতে পারে? এই অমোঘ সত্য কথাটি আপনাদের হৃদয়ে কবে নাড়া দিবে, আমি তা জানি না। শুধু এইটুকুই জানি, আপনারা আহলে বায়াতের দুশমন ভন্ড পীরের খপ্পরে পড়ে অন্ধ বিবেকহীন হয়ে গেছেন। হৃদয়ের উপলব্ধি আপনাদের শুকনো মরুভূমি হয়ে গেছে। আবার দেখুন পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা নিসা আয়াত নং ৪ঃ৯৩ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ বলেন, " যে একজন মুমিন বান্দাকে হত্যা করে, সে চির জাহান্নামী এবং অভিশপ্ত।" এখন আপনার কি মনে হয়, মাওলা আলী আঃ এর পক্ষের হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবী তারা কেউ মুমিন ছিল না? যাদেরকে মুনাফিক মুয়াবিয়া লাঃ সিফফিনের যুদ্ধে হত্যা করেছিল। আচ্ছা দাদা ভাই, সাহাবী হত্যাকারীর নাম কি সাহাবী হতে পারে? একটু হৃদয় দিয়ে বিশ্লেষণ করুন, তাহলে উত্তর আপনার শুদ্ধ বিবেক ঠিকই দিয়ে দিবে। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, শুধু তর্কে জিতার জন্য এবং ভন্ড পীরের খপ্পরে পড়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদিস অনায়াসে অস্বীকার করছেন। আর আহলে বায়াতের চরম দুশমনে পরিণত হচ্ছেন। এখনো কিন্তু সময় ফুরিয়ে যায়নি আপনার। একবার তওবা করে ফিরে আসুন আহলে বায়াতের পথে। গোলক ধাঁধাঁয় আর কতকাল পড়ে থাকবেন, এবার একটু সত্যের সন্ধান করুন। আমরা অবশ্যই সাহাবীদেরকে সম্মান করি এবং ভালোবাসি।তবে কোন আহলে বায়াতের দুশমন মুনাফেক সাহাবীকে নয়। আহলে বায়াতের দুশমনকে আমরা নর্দমার কীটের চেয়েও নিকৃষ্ট জানি। আর সাহাবী তো দুরের কথা। সাহাবীরা অবশ্যই আকাশের নক্ষত্র তুল্য। যেমন ছিলেন সালমান ফারসি, আবু জর গিফরী ও আব্বাস রাঃ ইত্যাদি সাহাবী। যারা আমার আহলে বায়াতকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন এবং জীবন যৌবন আহলে বায়াতের কদমে উৎসর্গ করেছিলেন। এদেরকে আমরা শুধু আকাশের নক্ষত্র তুল্য নয় বরং আমাদের মাথার তাজ মনে করি এবং হৃদয়ের মনি কুঠায় স্থান দিয়েছি। সাহাবীদেরকে সমালোচনা করব, এমন সাধ্য আমাদের নাই। কিন্তু মুনাফিক মুয়াবিয়া লাঃ দের মত ছদ্মবেশি বেইমানদের কেমনে সাহাবা বলি? সাহাবা হিসেবে স্বীকৃতি দিই? তার চরিত্রের নোংরামি বিশ্লেষন করলে, তুলে ধরলে যদি সমালোচনা হয় তবে আমরা কি করবো? কুরআনের নির্দেশ দ্বীরের ক্ষেত্রে সত্যটি জানিয়ে দেয়া, পৌঁছিয়ে দেয়া দায়িত্বঃ ১৬ঃ৮২/ ৩ঃ২০/ ৫ঃ৯২/৯৯/১৩ঃ৪০/২৪ঃ৫৪/ ২৯ঃ১৮/ ৩৬ঃ১৭/ ৪২ঃ৪৮/৬৪ঃ১২/৭২ঃ২৮/৮০ঃ১-১১।কারবালা প্রান্তরে খুনি এজিদ লাঃ সরাসরি যুদ্ধ করেননি, শুধু হুকুম দিয়েছিল মাওলা ইমাম হোসাইন রাঃ কে হত্যা করতে। আর মুয়াবিয়া লাঃ সরাসরি মাওলা আলী আঃ এর বিপক্ষে সিফফিনের যুদ্ধ করেছিল। আচ্ছা সেদিন সিফফিনের যুদ্ধে যদি মাওলা আলী আঃ শহীদ হতেন, তাহলে মুয়াবিয়াকে কি বলতেন? তারপরও কি মুয়াবিয়াকে সাহাবী বলতেন? আচ্ছা আপনি যদি সিফফিনের যুদ্ধে থাকতেন, তাহলে সেদিন আপনি কার পক্ষে যুদ্ধ করতেন? মাওলা আলী আঃ এর পক্ষে! নাকি মুয়াবিয়া লাঃ এর পক্ষে! যদি বলেন মাওলা আলী আঃ এর পক্ষে হয়ে মুয়াবিয়া লাঃ এর বিপক্ষে যুদ্ধ করতেন, তাহলে আজ কেনো মুয়াবিয়া লাঃ এর পক্ষে সাফাই গাইছেন? তারা কারা? তাদের পরিচয় কি হবে? আর যদি বলেন, মুয়াবিয়া লাঃ এর পক্ষ নিয়ে মাওলা আলী আঃ এর বিপক্ষে যুদ্ধ করতেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আজ যারা মুয়াবিয়া লাঃ এর পক্ষে সাফাই গাইছেন আপনারা নিশ্চিত থাকুন, সেদিন আপনারা সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলী আঃ এর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন। ইস! সেদিন কারবালা প্রান্তরে মাওলা ইমাম হোসাইন রাঃ যদি শহীদ না হতো, তাহলে আজ আপনারা এজিদ লাঃ এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন। তখন সেই মুয়াবিয়া লাঃ এর মতো একই ফতোয়া দিতেন। এই যে শুনছেন,আমি কিন্তু ওহাবী ও আহলে হাদিসের লোকজনকে বলছি না। আমি কথাগুলো নামদারী সুফিবাদের অনুসারীদেরকে বলছি। আপনাদেরকে দোহাই দিয়ে বলছি, আর আহলে বায়াতের নাম বিক্রি করে পাক পাঞ্জাতনকে অপমান করবেন না। আপনাদের চেয়ে ওহাবী এবং আহলে হাদিসের লোকজন শতগুণ মন্দের ভালো। কারণ তারা সরাসরি পাক পাঞ্জাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু আপনাদের মতো পাক পাঞ্জাতনের নাম বিক্রি করে খায় না। তারা যদি কাফের হয়, তাহলে আপনারা মুনাফেক। তাই বলি কাফেরের চেয়ে মুনাফেক জঘন্য। শুনুন মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন, আপনাদের ভন্ডামি পীরগিরী সবাই ধরে ফেলবে। কারণ সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেওয়া যায় না। আজ হোক কাল হোক মানুষ আপনাদেরকে ধিক্কার জানাবেই। এখনো সময় আছে আহলে বায়াতকে ভালোবেসে সঠিক সুফিবাদে ফিরে আসুন। কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করবেন। জয় পাক পাঞ্জাতনের জয়। মাওলা আলী আঃ আপনার কদমে ঠাঁই চায় অধমে। ০৭--০৯--২০২০ খ্রীঃ।

🐕🐕🐕🐕🐕🐕মুয়াবিয়া মুনাফিক ছিল তার প্রমাণ ‎حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، ح وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، – وَاللَّفْظُ لَهُ – أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرٍّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَىَّ أَنْ لاَ يُحِبَّنِي إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضَنِي إِلاَّ مُنَافِقٌ ‏.‏১৪৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ‎(রহঃ) ‏আলী ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণনা করেন যে, ‏তিনি বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, ‏যিনি বীজ থেকে অংকুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, ‏নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ‏মুমিন ব্যাক্তই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যাক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।🦮🦮🦮🦮🦮🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺সাহিহ মুসলিম ই ফা হাদিস নং ‎( ‏অন লাইন) ‏১৪৪🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺সাহাবীরা বলেন ‎“আমরা আলী এর প্রতি ঘৃনা দেখে মুনাফেকদেরকে চিনতাম”*ফাযাইলে সাহাবা ‎, ‏ইমাম হাম্বাল হাদিস নং ১০৮৬*রিয়াদ আন নাদারা ‎, ‏মুহিবুদ্দিন তাবারি, ‏খণ্ড ৩ পাতা ২৪২🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺মনের মধ্যে শুধু ঘৃনা রাখলে মুনাফেক হয়ে যায় হাদিস অনুজাই আর যে ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ করবে সেট মস্ত বড় মুনাফেক ও ইসলামের শত্রু। মুয়াবিয়া ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছিল সিফফিনের যুদ্ধ।🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺যে ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করে সে রসুল পাক সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেযে ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করে সে রসুল পাক সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে। ‎#রাসুল সাঃ এর সাথে যুদ্ধকারী মুনাফেক, ‏ইসলামের শত্রু মানবতার শত্রু।حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ الْبَغْدَادِيُّ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ نَصْرٍ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ السُّدِّيِّ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَليٍّ وَفَاطِمَةَ وَالْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبْتُمْ وَسِلْمٌ لِمَنْ سَالَمْتُمْ“যায়েদ বিন আরকম রাঃ বলেছেন ‎‘ ‏আল্লাহর রসুল সাঃ আলী, ‏ফাতেমা, ‏হাসান ও হুসাইনদের সমদ্ধে বলেছেন আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, ‏আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত হই যারা এদের সাথে যুদ্ধ করে”।• ‏সুনান তিরমিযি ‎(বাব/ ‏অধ্যায় ফাযাইলে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ) • ‏মুস্তাদ্রক আলা সাহিহাইন, ‏হাকিম নিশাবুরি। ‎(অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল সাঃ) * ‏সুনান ইবনে মাজা, ‏অধ্যায় ফাযাইলে হাসান ও হুসাইন।عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : نظر النبي صلى الله عليه و سلم إلى علي و فاطمة و الحسن و الحسين فقال : أنا حرب لمن حاربكم و سلم لمن سالمكم هذا حديث حسن من حديث أبي عبد الله أحمد بن حنبل عن تليد بن سليمان فإني لم أجد له رواية غيرها و له شاهد عن زيد بن أرقم“ ‏আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন ‎“ ‏রাসুল সাঃ আলী, ‏ফাতেমা, ‏হাসান আঃ হুসাইনের দিক দৃস্টিপাত করলেন এবং বললেন ‎‘আমি তাদের যাথে যুদ্ধরত থাকি যারা এদের সাথে যুদ্ধরত হয়, ‏আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে”।* ‏ফাদাইলে সাহাবা, ‏খন্ড ২ হাদিস নং ‎1350, ‏ইমাম হাম্বাল* ‏মুস্তাদ্রাক ‎‘আলা সাহিহাইন, ‏হাকিম নিশাবুরি। ‎(অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল সাঃ)মোঃ জাহিদ হুসাইন

মাওলা হযরত মুহাম্মদ রাসুল আল্লাহ (সা.)'এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (পঞ্চম পর্ব)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ঈসা (আ.)-এর একজন হাওয়ারীর বংশধর শামউন (রা.) মহানবী (সা.)-কে অনেক জটিল বিষয়ে প্রশ্ন করে সেসবের জবাব পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন।এক পর্যায়ে তিনি রাসূল (সা.)-কে বলেন: আমাকে সংবাদ দিন সত্যবাদী, মুমিন, ধৈর্যশীল, তওবাকারী, কৃতজ্ঞ, বিনয়ী, সৎকর্মশীল, উপদেশদাতা, ইয়াকীন বা বদ্ধমূল বিশ্বাসের অধিকারী, নিষ্ঠাবান, দুনিয়াত্যাগী, পুণ্যবান, পরহিজগার, জাহিরকারী, অত্যাচারী, লোক দেখানো আমলকারী, মুনাফিক, হিংসুক, অপচয়কারী, গাফেল লোক, বিশ্বাসঘাতক, অলস, মিথ্যুক এবং ফাসিকের চি‎হ্নগুলো কী কী?তখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন : সত্যবাদীর চি‎হ্ন চারটি : ১. নিজে সত্য কথা বলে, ২. আল্লাহর পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি এবং শাস্তির অঙ্গীকারগুলোকে সত্য বলে জানে, ৩. নিজের করা ওয়াদা বা অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং ৪. প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করে না।আর মুমিনের চি‎হ্ন হলো, সে দয়াশীল হয়, অনুধাবন করে এবং লজ্জাশীল হয়।আর ধৈর্যশীলের চি‎হ্ন চারটি : ১. অপছন্দনীয় বিষয়ে ধৈর্যধারণ, ২. ভালো কাজের সংকল্প, ৩. বিনয় এবং ৪. সহিষ্ণুতা।মাওলা মোহাম্মদ (সা.)শামউনের প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, আর তওবাকারীর চি‎হ্ন চারটি : ১. শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা, ২. মিথ্যা বা বাতিলকে ত্যাগ করা, ৩. সত্যের ওপর অবিচল থাকা এবং ৪. ভালো কাজের প্রতি লোভ বা গভীর আগ্রহ।আর কৃতজ্ঞের চি‎হ্ন চারটি : ১. নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা, ২. বিপদের জন্যেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, ৩. আল্লাহর বরাদ্দে তুষ্ট থাকা, ৪. আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের প্রশংসা ও মহিমা জ্ঞাপন না করা।আর বিনয়ীর চি‎হ্ন চারটি : ১. প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহকে ভয় করা, ২. ভালো ও সুন্দর ধারণা করা, ৩. পরকালের চিন্তা ও ৪. আল্লাহর কাছে মোনাজাত।সৎকর্মশীলের চি‎হ্ন চারটি : ১. নিজ অন্তরকে পবিত্র করবে ২. তার কাজকে ভালো করবে, ৩. উপার্জনকে পরিশুদ্ধ করবে এবং ৪. তার সকল বিষয়কে সঠিকভাবে সম্পাদন করবে।উপদেশদাতার চি‎হ্ন চারটি : ১. ন্যায়-বিচার করবে, ২. নিজের পক্ষ থেকে অন্যদের অধিকার প্রদান করবে, ৩. মানুষের জন্য সেটাই পছন্দ করবে যা নিজের জন্য পছন্দ করবে, ৪. কারো প্রতি সীমা অতিক্রম করবে না।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, বদ্ধমূল ধর্ম-বিশ্বাস বা ইয়াকীনের অধিকারীর চি‎হ্ন ছয়টি : ১. আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস অর্জন এবং এর ভিত্তিতেই তাঁর প্রতি ঈমান আনা ২. ইয়াকীন রাখা যে, মৃত্যু নিশ্চিত এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। ৩. ইয়াকীন রাখা যে, কিয়ামত সত্য এবং সেদিনের লাঞ্ছনাকে ভয় করা, ৪. ইয়াকীন রাখা যে, বেহেশত সত্য ও এতে আসক্ত থাকা, ৫. ইয়াকীন রাখা যে, জাহান্নাম সত্য এবং তা থেকে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা, এবং ৬. ইয়াকীন রাখা যে, হিসাব-নিকাশ সত্য, কাজেই নিজেই নিজের হিসাব-নিকাশ করা।নিষ্ঠাবানের নিদর্শন চারটি : ১. তার অন্তর বিশুদ্ধ, ২. তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাপাচার থেকে বিরত থাকে, ৩. তার মঙ্গল বা সেবা অন্যরা লাভ করে, ৪. অন্যরা তার অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, দুনিয়াত্যাগীর চি‎হ্ন দশটি : ১. হারামগুলোর প্রতি নিষ্পৃহ, ২. নিজ প্রবৃত্তিকে সংযত রাখে, ৩. তার প্রতিপালকের তথা আল্লাহর নির্ধারিত ফরজগুলো পালন করে, ৪. যদি ক্রীতদাস হয়, তা হলে সে মালিকের অনুগত থাকে, আর যদি মালিক হয়, তা হলে ভালো একজন মনিব, ৫. গোঁড়া ও বর্ণবাদী নয়, ৬. বিদ্বেষী নয়, ৭. খারাপ আচরণকারীর সঙ্গে ভালো বা সুন্দর আচরণ করে, ৮. যে তার ক্ষতি করে, তার সে কল্যাণ করে, ৯. তার ওপর যে অত্যাচার করে, তাকে ক্ষমা করে, এবং ১০. আল্লাহর অধিকার পালনে বিনত থাকে।পুণ্যবানের চি‎হ্ন দশটি : ১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, ২. আল্লাহর জন্য শত্রুতা করে, ৩. আল্লাহর জন্য কারো সহযোগী হয়, ৪. আল্লাহর জন্য কারো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, ৫. আল্লাহর জন্য রাগান্বিত হয়, ৬. আল্লাহর জন্য খুশী হয়, ৭. আল্লাহর জন্য কাজ করে, ৮. আল্লাহর সন্ধান করে, ৯. আল্লাহর প্রতি বিনয়ী থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়, পবিত্র, নিষ্ঠাবান, লজ্জিত ও সতর্ক এবং ১০. আল্লাহর জন্য সদাচার করে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, পরহিজগারের চি‎হ্ন ছয়টি : ১. আল্লাহকে ভয় করে, ২. তাঁর ক্রোধ সম্পর্কে সতর্ক থাকে, ৩ ও ৪. সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে অতিবাহিত করে যেন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখছে, ৫. দুনিয়াকে গুরুত্ব দেয় না, ৬. দুনিয়ার কোনো কিছুই তার কাছে বড় নয়, যদিও ওইসব বিষয় বা বস্তুর বৈশিষ্ট্য অথবা আচরণ মোহনীয় বা চাকচিক্যময় হয়ে থাকে।জাহিরকারীর চি‎হ্ন চারটি : ১. অনর্থক ঝগড়া বা তর্ক করে, ২. তার ঊর্ধ্বনতনদের সাথে ঝগড়া করে, ৩. যা কিছু লাভ করতে পারে না তার পেছনেই ছুটে, ৪. যা কিছু তাকে মুক্তি দেয় না তার পেছনেই সকল চেষ্টা চালায়।অত্যাচারীর চি‎হ্ন চারটি : ১. তার ঊর্ধ্বতনের প্রতি অবাধ্যতাবশত অত্যাচার করে, ২. তার অধস্তন বা অধীনস্থদের ওপর চড়াও হয়, ৩. সত্য ও ন্যায়ের সঙ্গে শত্রুতা করে, ৪. প্রকাশ্যে অত্যাচার করে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, লোক দেখানোআমলকারীর চি‎হ্ন চারটি : ১. অন্যদের সামনে অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়, ২. নির্জনে অলসতা করে, ৩. প্রত্যেক কাজেই প্রশংসার প্রত্যাশী, ৪. বাহ্যিকভাবে নিজেকে ভাল দেখাতে তৎপর।মুনাফিকের চি‎হ্ন চারটি : ১. তার স্বভাব নষ্ট, ২. তার জিহ্বা তথা মুখের কথা তার অন্তরের বিপরীত, ৩. তার কথা এবং কাজ আলাদা, ৪. তার গোপন অবস্থা আর প্রকাশ্য অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। মুনাফিক! জাহান্নামের আগুন থেকে অসহায় বা হতভাগ্য।আর হিংসুকের চি‎হ্ন চারটি : ১. পরনিন্দা, ২. তোষামোদি, ৩. বিপদে গালি-গালাজ (মূল সূত্রেই চতুর্থটি বাদ পড়েছে)।সীমালঙ্ঘনকারীর চি‎হ্ন চারটি : ১. বাতিল বিষয়ে গর্ব করে, ২. তার উপযুক্ত নয় এমন খাদ্য আহার করে, ৩. ভালো কাজের প্রতি নিষ্পৃহ, ৪. যার থেকে সে কোন কল্যাণ লাভ করতে পারেনি তাকে অস্বীকার করে।উদাসীন লোকের চি‎হ্ন চারটি : ১. অন্ধত্ব, ২. ভুল, ৩. অহেতুক কাজ, ৪. বিস্মৃতি।প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

🕌🕌আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম🕌🕌চতুর্থ পর্বমাওলা মোহাম্মদ(সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖 মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলছিলেন, "বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ হল লজ্জা। আর লজ্জা থেকে উৎসারিত হয় : নমনীয়তা, দয়াশীলতা, প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর পাহারার প্রতি মনোযোগ, (দৈহিক ও মানসিক) সুস্থতা, মন্দ থেকে দূরে থাকা, সমৃদ্ধি, দানশীলতা, বিজয় এবং মানুষের মাঝে সুনামের সাথে স্মরণ। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার লজ্জা থেকে অর্জন করে। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নসিহত গ্রহণ করে এবং তাঁর অপমানকে ভয় করে।"🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে উৎসারিত হয় (সংখ্যাগুলো কথায় বলুন) : ১. দয়া, ২. পরিণামদর্শিতা, ৩. আমানত রক্ষা, ৪. খেয়ানত বর্জন, ৫. সত্যবাদিতা, ৬. লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা, ৭. সম্পদের পরিশুদ্ধি, ৮. শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি, ৯. অসঙ্গত কাজ করতে নিষেধ করা, ১০. বোকামি বর্জন। বিবেকবানরা এসব বিষয় ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে পেয়ে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্তের অধিকারী হয় এবং যার মধ্যে লঘুচিত্ততা আর মূর্খতা থাকে না এবং যে ক্ষমাশীল হয় ও মার্জনা করে।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹 মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলছিলেন, আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া থেকে লাভ হয় : ১. অশ্লীল কথাবার্তা বর্জন, ২. মনের উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকা, ৩. সতর্কতা অবলম্বন ৪. ইয়াকীন তথা অবিচল বিশ্বাস, ৫. মুক্তি-প্রিয়তা, ৬. আল্লাহর আনুগত্য, ৭. কুরআনের প্রতি সম্মান, ৮. শয়তান থেকে দূরে সরে যাওয়া, ৯. ন্যায়কে মেনে নেয়া এবং ১০. হক ও ন্যায্য কথা। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি ভালো কাজে অবিচ্ছিন্নভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার ফলে লাভ করে থাকে। ধন্য সেই ব্যক্তি যে নিজ ভবিষ্যতের চিন্তায় এবং নিজ পরকালের চিন্তায় থাকে। আর দুনিয়ার ধ্বংস থেকে শিক্ষা নেয়।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹আর বুদ্ধিবৃত্তি বা আকলের অন্যতম কল্যাণ মন্দকে ঘৃণা করা থেকে লাভ হয় : ১. ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা, ২. সহিষ্ণুতা, ৩. উপকার করা, ৪. পরিকল্পনার ওপর স্থির থাকা, ৫. সঠিক পথকে আগলে রাখা, ৬. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ৭. প্রাচুর্য, ৮. নিষ্ঠা, ৯. সব অনর্থক কাজ বর্জন এবং ১০. যা কিছু তার জন্য উপকারী তা বজায় রাখা। এগুলো বিবেকবানেরা মন্দকে ঘৃণার মাধ্যমে অর্জন করে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর হক পথে পদক্ষেপ নেয়, আর তাঁর পথেই চলে।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹মাওলা মোহাম্মদ (সা.)শামউনের প্রশ্নের জবাবে আরো বলছিলেন, বুদ্ধিবৃত্তির অন্যতম কল্যাণ হিসেবে উপদেশদাতার অনুসরণ থেকে লাভ হয় : ১. বুদ্ধির বিকাশ, ২. আত্মিক পূর্ণতা সাধন, ৩. ভালো পরিণাম, ৪. ভর্ৎসনার হাত থেকে মুক্তি, ৫. গ্রহণীয় হওয়া, ৬. বন্ধুত্ব, ৭. অন্তরের প্রসারতা, ৮. ন্যায়বিচার বা ইনসাফ, ৯. কাজে-কর্মে উন্নতি, এবং ১০. আল্লাহর আনুগত্যের শক্তি সঞ্চার। ধন্য সেই ব্যক্তি যে নাফসের দ্বারা পরাস্ত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকে। এগুলো হলো সেই বৈশিষ্ট্য যা আকল থেকে উৎপত্তি লাভ করে।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹এ পর্যায়ে শামউন মাওলা মোহাম্মদ (সা.)-কে বলেন : মূর্খদের চি‎হ্নগুলো আমাকে বলুন।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : যদি তার সাথে তথা মূর্খের সঙ্গে মেশ, সে তোমাকে কষ্ট দেবে। যদি তার থেকে দূরে সরে যাও, তোমার বদনাম করবে। যদি তোমাকে দান করে, তাহলে তোমার ওপর করুণার গর্ব করবে। আর তুমি যদি তাকে দান করো, তা হলে অকৃতজ্ঞ হবে। যদি কোনো গোপন কথা তার সাথে বল, সে খেয়ানত করবে। আর তোমাকে যদি কোনো গোপন কথা সোপর্দ করে, তা হলে তোমার প্রতি অভিযোগ করবে। মূর্খ যদি ক্ষমতাবান হয়, তা হলে অরাজকতা করে এবং রূঢ় ও নিষ্ঠুর হয়। যদি নিঃস্ব হয়, তা হলে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে। যদি আনন্দিত হয় তা হলে সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং অবাধ্য হয়, আর যদি দুঃখিত হয়, তা হলে নিরাশ হয়ে পড়ে। মূর্খ যদি হাসে তা হলে অট্টহাসি দেয়, আর যদি কাঁদে, তা হলে পশুর মতো গর্জন করে। মূর্খ ব্যক্তি সৎ লোকদের সাথে ঝগড়া করে। আল্লাহকে ভালোবাসে না এবং তাঁকে মান্য করে না। তাঁর থেকে লজ্জা করে না এবং তাঁকে স্মরণ করে না। তুমি যদি তাকে খুশী করো, তা হলে তোমার এমন গুণের প্রশংসা করবে যা তোমার মধ্যে নেই। আর যদি তোমার ওপর অসন্তুষ্ট হয় , তা হলে তোমার প্রশংসাকে বিনষ্ট করে। আর মিথ্যা প্রচারে তোমার বদনাম ছড়ায়। এগুলো মূর্খদের পন্থা।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹এরপর পাদ্রি শামউন রাসূল (সা.)কে প্রশ্ন করেন, ইসলামের নিদর্শন কী, আমাকে বলুন।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : বিশ্বাস, জ্ঞান এবং কর্ম।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹পাদ্রি শামউন প্রশ্ন করেন : ঈমানের , জ্ঞানের ও কর্মের চি‎হ্ন কী?🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : ঈমানের চি‎হ্ন চারটি : আল্লাহর একত্বের স্বীকারোক্তি, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস আর তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖📖আর জ্ঞানের চি‎হ্ন চারটি : আল্লাহকে চেনা, তাঁর বন্ধুদের পরিচয় জানা, তাঁর ফরযগুলোকে জানা এবং সেগুলোর সংরক্ষণ করা যাতে সেসব সঠিকভাবে সম্পাদিত হয়।🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹আর কর্মের চি‎হ্ন হলো নামায, রোযা, যাকাত এবং নিষ্ঠা তথা ইবাদতকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করাপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমহযরত ইমাম জয়নুল আবেদ্বীন (আ)-এর শাহাদাতকাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের কাছে হাজিদের প্রচণ্ড ভিড়। উমাইয়া শাসক আবদুল মালিক কালো পাথরের কাছে যাবার জন্যে অনেক কষ্ট করেও ভিড় ঠেলে তেমন একটা এগুতে পারছিলেন না। অথচ দেখা গেল সৌম্য ও নুরানি চেহারার এক ব্যক্তিকে মানুষ প্রাণঢালা সম্মান জানিয়ে পথ ছেড়ে দেয়ায় ঐ ব্যক্তি সহজেই পৌঁছে গেলেন কালো পাথরের কাছে। হিশাম ওই ব্যক্তিকে চিনেও না চেনার ভান করে বিরক্ত চেহারা নিয়ে জানতে চাইলেন কে এই ব্যক্তি!? সেখানে উপস্থিত কবি ফারাজদাক খলিফার প্রশ্নের উত্তর দিলেন কাব্যিক ভাষায়:এতো তিনি প্রতিটি ধূলিকণার কাছে যাঁর পদক্ষেপ পরিচিতযিনি অতি আপন এই কাবা ঘরের কাছে যে ঘর সর্বজন-নন্দিতইনি তো তাঁর সন্তান যিনি খোদার রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমআর ইনি তো নিজেই শ্রেষ্ঠ ইবাদতে ও তাসবীহ তাহলিলে,নির্মল নিষ্কলুষ, নিশানবরদার ইসলামের, পূত-পবিত্র, সততায় দীপ্ত… ….ইনি তো সন্তান মা ফাতেমার,যদি না জেনে থাকো তুমি পরিচয় তাঁরজেনে রাখো এঁর প্রপিতামহের মাঝেই সমাপ্তি নবুয়্যত ধারার… খোদাকে যে চিনেছে সে-ই তো জানে ইনিই তো মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে আগে সবার যেহেতু সারা বিশ্বে পৌঁছেছে ধর্মের বাণী এঁরই রক্তধারার উসিলাতেহ্যাঁ, আজ আমরা এমন এক মহাপুরুষের কথা বলছি যাঁর রক্তধারা পৃথিবীর বুকে প্রকৃত ইসলামকে টিকিয়ে রেখেছে। ইসলামকে বিলীন করে দেয়ার উমাইয়া ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে শহীদগণের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালার যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন সে বিপ্লবের বাণী ও প্রকৃত ঘটনা যিনি পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষিত করেছিলেন তিনিই হলেন আমাদের আজকের আলোচ্য মহাপুরুষ হযরত আলী বিন হুসাইন তথা জাইনুল আবেদীন (আ.)। তাঁর পবিত্র শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।ইমাম হুসাইন (আ.)’র পুত্র ইমাম জাইনুল আবেদীন ৩৮ হিজরির ৫ শাবান বা মতান্তরে ১৫ জমাদিউল আউয়াল মাসে তথা খৃষ্টীয় ৬৫৮ সালে মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আলী। তাঁর মা ছিলেন শেষ ইরানি রাজার কন্যা শাহরবানু।আল্লাহর অত্যধিক ইবাদত বন্দেগীর কারণে বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য এই মহান ইমাম জাইনুল আবেদীন বা ইবাদতকারীদের অলংকার উপাধি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ ও সিজদায় রত থাকতেন বলে তিনি সাজ্জাদ নামেও পরিচিত ছিলেন। ইমাম সাজ্জাদ কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দশই মহরমের সেই ভয়াবহ ঘটনার দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিন জিহাদে যোগ দিতে পারেন নি। ইয়াজিদের সেনারা তাকে হত্যা করতে গিয়েও তাঁর ফুফু জাইনাব (সা.)’র প্রতিরোধের মুখে এই মহান ইমামকে জীবিত রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালেও আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান । আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন।কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন ও তাঁর বোন হযরত জয়নাব (সা.) যদি জীবিত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো। উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোসকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম সাজ্জাদ ও জয়নাব (সা.) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে কারবালায় প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক মাত্র।পিতা ইমাম হুসাইন (আ.)’র পর নতুন ইমাম হিসেবে তিনি কুফা ও দামেস্কে জালিম শাসকদের দরবারে বীরত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়ে তাদের আতঙ্কিত করে তুলেন। ফলে গণ-বিদ্রোহের ভয়ে আতঙ্কিত জালিম ইয়াজিদ কারবালা থেকে বন্দী করে আনা নবী-পরিবার ও ইমামের সঙ্গীদেরকে মুক্তি দিতে এবং তাঁদেরকে সসম্মানে মদীনায় পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।কারবালা বিপ্লবের প্রকৃত ঘটনা ও শিক্ষা প্রচারের পাশাপাশি ইসলাম বিরোধী নানা চিন্তাধারার মোকাবিলায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতেন ইমাম সাজ্জাদ।ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও চেতনা রক্ষা ইমাম জাইনুল আবেদিনের ইসলামী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কাছে চির-ঋণী।‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া’ নামে তাঁর দোয়া ও মুনাজাতের অমর গ্রন্থটি আত্মিক পরিশুদ্ধি ছাড়াও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের নানা দিক-নির্দেশনায় সমৃদ্ধ। ইমামের রেখে যাওয়া ‘রিসালাতাল হুক্বুক্ব’ শীর্ষক অধিকার সংক্রান্ত নির্দেশনা মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার চেয়েও বিস্তারিত ও আধ্যাত্মিক ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর।কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে জাইনুল আবেদীনের তেজোদৃপ্ত ও সাহসী ভাষণ জনগণের মধ্যে এমন জাগরণ সৃষ্টি করে যে পরবর্তীকালে সে জাগরণেরই চূড়ান্ত পর্যায়ের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাগুতি উমাইয়া শাসকদের তাখতে তাউস। উল্লেখ্য, কারবালার মহা-ট্র্যাজেডির ৩৪ বছর পর ৯৫ হিজরির এই দিনে তথা ১২ মহররম ৫৭ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেছিলেন হযরত ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ)। জনগণের মধ্যে ইমাম সাজ্জাদের প্রভাব বাড়তে থাকায় ষষ্ঠ উমাইয়া শাসক আবদুল মালিক বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।কারবালার ঘটনার পর তিনি যখনই পানি দেখতেন বাবাসহ কারবালার শহীদদের চরম পিপাসার কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন এই পশুকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আমার (তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত) বাবাকে পানি না দিয়েই জীবন্ত অবস্থায় জবাই করেছিল ইয়াজিদ-সেনারা। ইমাম সাজ্জাদ (আ) সব সময় রোজা রাখতেন। ইফতারির সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতেন: রাসূল (সা.)’র সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়।ইমাম সাজ্জাদ সব সময় দিনে রোজা রাখতেন ও পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন। রোজা ভাঙ্গার সময় তিনি বাবার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে এত বেশি কাঁদতেন যে অশ্রুতে খাবার ভিজে যেত। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল তাঁর।একদিন তাঁর খাদেম ইমামের কান্নারত অবস্থায় তাঁকে বলেন: আপনার দুঃখ ও আহাজারি শেষ হয়নি?উত্তরে তিনি বলেন: তোমার জন্য আক্ষেপ! ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। তাঁর ১২ জন সন্তান ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর এক পুত্র ইউসুফকে চোখের আড়ালে রাখায় শোকে, দুঃখে ও অতিরিক্ত কান্নায় তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েন, চুল পেকে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। সন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর এ অবস্থা হয়েছিল। আর আমি আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে ও শহীদ হতে দেখেছি; তাই কিভাবে আমার দুঃখ ও অশ্রু থামতে পারে?ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) ছিলেন অসম্ভব দয়ালু। জনগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করার ব্যাপারে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের কারণে রাতে যাদের চোখে ঘুম আসতো না, তিনি তাঁর আত্মপরিচয় গোপন রেখে তাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতেন।দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নেমে আসলেই তিনি মদীনার অভাবগ্রস্তদের ঘরে ঘরে খাবার নিয়ে হাজির হতেন। তাঁর এই বদান্যতা ইতিহাসখ্যাত। ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) এর সমসাময়িক একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন যাহরি। তিনি বলেন, বৃষ্টি-শীতল এক রাতে ইমাম সাজ্জাদ (আঃ)কে অন্ধকারে দেখতে পেলাম পিঠের পরে বস্তা নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন। বললাম হে রাসূলে খোদার সন্তান! তোমার পিঠে এটা কিসের বোঝা? তিনি বললেন সফরে বেরুতে চাচ্ছি তো তাই কিছু পাথেয় নিয়েছি। বললাম-আমার গোলাম তো এখানেই আছে,সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। ইমাম বললেন- না,আমি নিজেই বোঝাটা বহন করতে চাই। যাহরি বলেন- এই ঘটনার পর কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু ইমাম সফরে গেলেন না। ইমামের সাথে দেখা হলে বললাম- সফরে যে যেতে চাইলেন যান নি? ইমাম বললেন-হে যাহরি! সফর বলতে তুমি যা ভেবেছো আসলে এই সফর সেই সফর নয়। বরং আমি সফর বলতে আখেরাতের সফর বুঝিয়েছি। এই সফরের জন্যে প্রস্তুতি নাও। এই সফরের প্রস্তুতি হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং সৎ কাজ করা। ততোক্ষণে যাহরি বুঝলো যে ইমামের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং ইমাম ঐ যে বোঝাটি বহন করছিলেন,তা ছিল অভুক্তদের জন্যে খাবারের বোঝা।সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্বসহ মানুষের বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় স্থান পাওয়া ইমামের দোয়াগুলো খুবই কার্যকর। বাবা-মা সম্পর্কে তাঁর দোয়ার একাংশে বলা হয়েছে: “ হে আল্লাহ! আমার কণ্ঠ যেন বাবা মায়ের সামনে নীচ বা অনুচ্চ থাকে। আমার বক্তব্য যেন তাদের জন্য হয় সন্তোষজনক। আমার আচরণ যেন তাঁদের সামনে বিনম্র থাকে; তাদের জন্য আমার অন্তরকে দয়ার্দ্র কর। আমি যেন তাঁদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেই এবং আমাকে তাঁদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল করুন।”“রিসালাতুল হুকুক” ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.)’র আরেকটি অনন্য অবদান। এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। এসবের মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরের নানা অঙ্গের অধিকার, নানা ধরণের ইবাদতের অধিকার; বাবা, মা, শিক্ষক, ছাত্র, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাই, উপকারকারী, সহচর, প্রতিবেশী, বন্ধু, অংশীদার, অর্থ,ঋণ-প্রার্থী, শত্রু, খারাপ লোক, ভিক্ষুক, দ্বীনী ভাই, একসাথে বসবাসকারী অধিকার এবং ইসলামের আশ্রয়ে থাকা কাফেরদের অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। যেমন, পেটের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: পেটকে হারাম খাবারে পূর্ণ করো না এবং উদর ভর্তি করে খেও না।ইমাম সাজ্জাদ (আ) বলেছেন,* আমি তাদের ব্যাপারে বিস্মিত যারা ক্ষতির কারণে বিভিন্ন ধরনের খাবার বর্জন করে অথচ তারা কদর্যতার কারণে পাপ বর্জন করে না।* তোমরা বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান লাভের চেষ্টা করবে। তোমরা মনে রেখো যারা অপর ভাইয়ের প্রয়োজন মেটায় এবং দীন-দুঃখীদের সাহায্য করেন কেবল তাদেরকেই বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়ে থাকে।ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.)’র জীবনে বহু মু’জেজা বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে।যেমন, অসুস্থ ব্যক্তিকে অলৌকিকভাবে সুস্থ করা, অদৃশ্যের খবর বলে দেয়া বা জানা, বন্দী অবস্থায় আবদুল্লাহ বিন মারোয়ানের প্রহরীদের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।১. আবু খালিদ কাবুলি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র সান্নিধ্যে এসেছিলেন দুই বার। তিনি অন্য কাউকে ইমাম মনে করতেন। দ্বিতীয় সাক্ষাতের সময় ইমাম (আ.) তাকে বলেন: যদি তুমি চাও তাহলে বেহেশতে আমার অবস্থান এখনই তোমাকে দেখাব।এরপর ইমাম তাঁর হাত মুবারক আবু খালিদের চোখের ওপর বুলালেন। আবু খালিদ নিজেকে বেহেশতে দেখতে পেল এবং সেখানে নানা প্রাসাদ ও নদ-নদী দেখতে পেল। এরপর ইমাম আবারও খালিদের চোখে হাত বুলান, আর সঙ্গে সঙ্গে খালিদ নিজেকে আবারও ইমামের সামনে দেখতে পেল।২.কুখ্যাত জালিম ও রক্তপিপাসু হাজ্জাজ বিন ইউসুফ উমাইয়া শাসক আবদুল মালিককে লিখেছিল: আপনি যদি আপনার রাজত্বের ভিত্তিকে মজবুত করতে চান তাহলে আলী বিন হুসাইনকে হত্যা করুন।জবাবে আবদুল মালিককে গোপন চিঠিতে লিখে পাঠান: ‘বনি হাশিমের রক্তপাত কোরো না। কারণ, বনি হাশিমের লোকদের হত্যা করে আবু সুফিয়ানের বংশধরদের রাজত্বকে তেমন টেকসই বা স্থায়ী করা যাবে না।’কিন্তু এর কয়েকদিন পরই আবদুল মালিক ইমামের কাছ থেকে একটি চিঠি পান। ওই চিঠিতে লেখা ছিল: ‘তুমি যেই চিঠিতে বনি হাশিমের রক্ত রক্ষার কথা হাজ্জাজকে লিখেছ সে সম্পর্কে আমি জানাতে পেরেছি।….’ আবদুল মালিক এই চিঠির তারিখের সঙ্গে নিজের সেই গোপন চিঠির তারিখেরও মিল খুঁজে পান।৩.একবার ইমাম যখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মাধ্যমে বাগদাদে বন্দী ছিলেন তখন তার সঙ্গে থাকা এক বন্দী নিজ সন্তানদের কথা ভেবে খুবই কাঁদছিল। ইমাম তখন তাকে প্রস্তাব দেন যে, তুমি কি তোমার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিজের ঘরে দেখা-সাক্ষাৎ করতে চাও? ওই বন্দী এই প্রস্তাব শুনে আরো বেশি কেঁদে ওঠে। এরপর ইমাম তাঁর হাতের ওপর ওই ব্যক্তিকে হাত রাখতে বলেন এবং চোখ বন্ধ করতে বলেন। সে তা করলে কয়েক মুহূর্ত পরই ইমাম বললেন: এবার চোখ খোল। চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেকে নিজের ঘরে দেখতে পেল। ইমাম বললেন: যাও পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ-খবর নাও। সে তাই করল খুশি মনে। তার পরিবার তাকে ইমাম জাইনুল আবেদিনের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে তাঁর অবস্থা বর্ণনা করায় সবাই কাঁদতে থাকে। এ অবস্থায় লোকটি আবার ইমামের কাছে ফিরে এলে তিনি তাকে আবারও একই পদ্ধতিতে কারাগারে ফিরিয়ে আনেন।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

কারবালা বিপ্লবের সংরক্ষক হযরত ইমাম সাজ্জাদের (আ) শাহাদাতবার্ষিকীকাবা ঘরের হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরের কাছে হাজিদের প্রচণ্ড ভিড়। উমাইয়া শাসক আবদুল মালিক কালো পাথরের কাছে যাবার জন্যে অনেক কষ্ট করেও ভিড় ঠেলে তেমন একটা এগুতে পারছিলেন না।অথচ দেখা গেল সৌম্য ও নুরানি চেহারার এক ব্যক্তিকে মানুষ প্রাণঢালা সম্মান জানিয়ে পথ ছেড়ে দেয়ায় ঐ ব্যক্তি সহজেই পৌঁছে গেলেন কালো পাথরের কাছে। হিশাম ওই ব্যক্তিকে চিনেও না চেনার ভান করে বিরক্ত চেহারা নিয়ে জানতে চাইলেন কে এই ব্যক্তি!? সেখানে উপস্থিত কবি ফারাজদাক খলিফার প্রশ্নের উত্তর দিলেন কাব্যিক ভাষায়:এতো তিনি প্রতিটি ধূলিকণার কাছে যাঁর পদক্ষেপ পরিচিতযিনি অতি আপন এই কাবা ঘরের কাছে যে ঘর সর্বজন-নন্দিতইনি তো তাঁর সন্তান যিনি খোদার রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমআর ইনি তো নিজেই শ্রেষ্ঠ ইবাদতে ও তাসবীহ তাহলিলে,নির্মল নিষ্কলুষ, নিশানবরদার ইসলামের, পূত-পবিত্র, সততায় দীপ্ত... ..ইনি তো সন্তান মা ফাতিমার,যদি না জেনে থাকো তুমি পরিচয় তাঁরজেনে রাখো এঁর প্রপিতামহের মাঝেই সমাপ্তি নবুয়্যত ধারারখোদাকে যে চিনেছে সে-ই তো জানে ইনিই তো মর্যাদায় ও শ্রেষ্ঠত্বে আগে সবারযেহেতু সারা বিশ্বে পৌঁছেছে ধর্মের বাণী এঁরই রক্তধারার উসিলাতেহ্যাঁ, আজ আমরা এমন এক মহাপুরুষের কথা বলছি যাঁর রক্তধারা পৃথিবীর বুকে প্রকৃত ইসলামকে টিকিয়ে রেখেছে। ইসলামকে বিলীন করে দেয়ার উমাইয়া ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে শহীদগণের নেতা ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালার যে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন সে বিপ্লবের বাণী ও প্রকৃত ঘটনা যিনি পরবর্তী যুগের মুসলমানদের জন্যে সংরক্ষিত করেছিলেন তিনিই হলেন আমাদের আজকের আলোচ্য মহাপুরুষ হযরত আলী বিন হুসাইন তথা জাইনুল আবেদীন (আ.)। তাঁর পবিত্র শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।ইমাম হুসাইন (আ.)’র পুত্র ইমাম জাইনুল আবেদীন ৩৮ হিজরির ৫ শাবান বা মতান্তরে ১৫ জমাদিউল আউয়াল মাসে তথা খ্রিষ্টীয় ৬৫৮ সালে মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আলী। তাঁর মা ছিলেন শেষ ইরানি রাজার কন্যা শাহরবানু।আল্লাহর অত্যধিক ইবাদত বন্দেগীর কারণে বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য এই মহান ইমাম জাইনুল আবেদীন বা ইবাদতকারীদের অলংকার উপাধি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে নামাজ ও সিজদায় রত থাকতেন বলে তিনি সাজ্জাদ নামেও পরিচিত ছিলেন। ইমাম সাজ্জাদ কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দশই মহরমের সেই ভয়াবহ ঘটনার দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিনি জিহাদে যোগ দিতে পারেন নি। ইয়াজিদের সেনারা তাকে হত্যা করতে গিয়েও তাঁর ফুফু জাইনাব (সা.)'র প্রতিরোধের মুখে এই মহান ইমামকে জীবিত রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালেও আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন।কারবালার ঘটনার পর ইমাম জাইনুল আবেদীন ও তাঁর বোন হযরত জাইনাব (সা.) যদি জীবিত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো। উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোষকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম সাজ্জাদ ও জাইনাব (সা.) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে কারবালায় প্রকৃতপক্ষে কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক মাত্র।পিতা ইমাম হুসাইন (আ.)'র পর নতুন ইমাম হিসেবে তিনি কুফা ও দামেস্কে জালিম শাসকদের দরবারে বীরত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়ে তাদের আতঙ্কিত করে তুলেন। ফলে গণ-বিদ্রোহের ভয়ে আতঙ্কিত জালিম ইয়াজিদ কারবালা থেকে বন্দী করে আনা নবী-পরিবার ও ইমামের সঙ্গীদেরকে মুক্তি দিতে এবং তাঁদেরকে সসম্মানে মদীনায় পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।কারবালা বিপ্লবের প্রকৃত ঘটনা ও শিক্ষা প্রচারের পাশাপাশি ইসলাম বিরোধী নানা চিন্তাধারার মোকাবিলায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করতেন ইমাম সাজ্জাদ।ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও চেতনা রক্ষা ইমাম জাইনুল আবেদীনের ইসলামী সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কাছে চির-ঋণী।'সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া' নামে তাঁর দোয়া ও মুনাজাতের অমর গ্রন্থটি আত্মিক পরিশুদ্ধি ছাড়াও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের নানা দিক-নির্দেশনায় সমৃদ্ধ। ইমামের রেখে যাওয়া 'রিসালাতাল হুক্বুক্ব' শীর্ষক অধিকার সংক্রান্ত নির্দেশনা মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণার চেয়েও বিস্তারিত ও আধ্যাত্মিক ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর।কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে জাইনুল আবেদীনের তেজোদৃপ্ত ও সাহসী ভাষণ জনগণের মধ্যে এমন জাগরণ সৃষ্টি করে যে পরবর্তীকালে সে জাগরণেরই চূড়ান্ত পর্যায়ের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাগুতি উমাইয়া শাসকদের তাখতে তাউস।উল্লেখ্য, কারবালার মহা-ট্র্যাজেডির ৩৪ বছর পর ৯৫ হিজরির ১২ মহররম ৫৭ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেছিলেন হযরত ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ)। জনগণের মধ্যে ইমাম সাজ্জাদের প্রভাব বাড়তে থাকায় ষষ্ঠ উমাইয়া শাসক আবদুল মালিক বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।কারবালার ঘটনার পর তিনি যখনই পানি দেখতেন বাবাসহ কারবালার শহীদদের চরম পিপাসার কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। কোনো ভেড়া বা দুম্বা জবাই করার দৃশ্য দেখলেও কেঁদে আকুল হতেন। তিনি প্রশ্ন করতেন এই পশুকে জবাইর আগে পানি পান করানো হয়েছে কিনা। পানি দেয়া হয়েছে একথা শোনার পর তিনি বলতেন, কিন্তু আমার (তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত) বাবাকে পানি না দিয়েই জীবন্ত অবস্থায় জবাই করেছিল ইয়াজিদ-সেনারা। ইমাম সাজ্জাদ (আ) সব সময় রোজা রাখতেন। ইফতারির সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতেন: রাসূল (সা.)’র সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থায়।ইমাম সাজ্জাদ সব সময় দিনে রোজা রাখতেন ও পুরো রাত জেগে ইবাদত করতেন। রোজা ভাঙ্গার সময় তিনি বাবার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত অবস্থার কথা উল্লেখ করে এত বেশি কাঁদতেন যে অশ্রুতে খাবার ভিজে যেত। জীবনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল তাঁর।একদিন তাঁর খাদেম ইমামের কান্নারত অবস্থায় তাঁকে বলেন: আপনার দুঃখ ও আহাজারি শেষ হয়নি?উত্তরে তিনি বলেন: তোমার জন্য আক্ষেপ! ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। তাঁর ১২ জন সন্তান ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাঁর এক পুত্র ইউসুফকে চোখের আড়ালে রাখায় শোকে, দুঃখে ও অতিরিক্ত কান্নায় তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে পড়েন, চুল পেকে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। সন্তান জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর এ অবস্থা হয়েছিল। আর আমি আমার পিতা, ভাই এবং পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে মাটিতে পড়ে যেতে ও শহীদ হতে দেখেছি; তাই কিভাবে আমার দুঃখ ও অশ্রু থামতে পারে?ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ছিলেন অসম্ভব দয়ালু। জনগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করার ব্যাপারে তিনি খুব গুরুত্ব দিতেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্যের কারণে রাতে যাদের চোখে ঘুম আসতো না, তিনি তাঁর আত্মপরিচয় গোপন রেখে তাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করতেন।দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নেমে আসলেই তিনি মদীনার অভাবগ্রস্তদের ঘরে ঘরে খাবার নিয়ে হাজির হতেন। তাঁর এই বদান্যতা ইতিহাসখ্যাত। ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এর সমসাময়িক একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন যাহরি। তিনি বলেন, বৃষ্টি-শীতল এক রাতে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)কে অন্ধকারে দেখতে পেলাম পিঠের পরে বস্তা নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছেন। বললাম- হে রাসূলে খোদার সন্তান! তোমার পিঠে এটা কিসের বোঝা? তিনি বললেন সফরে বেরুতে চাচ্ছি তো তাই কিছু পাথেয় নিয়েছি। বললাম-আমার গোলাম তো এখানেই আছে,সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। ইমাম বললেন- না,আমি নিজেই বোঝাটা বহন করতে চাই। যাহরি বলেন- এই ঘটনার পর কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু ইমাম সফরে গেলেন না। ইমামের সাথে দেখা হলে বললাম- সফরে যে যেতে চাইলেন যান নি? ইমাম বললেন-হে যাহরি! সফর বলতে তুমি যা ভেবেছো আসলে এই সফর সেই সফর নয়। বরং আমি সফর বলতে আখেরাতের সফর বুঝিয়েছি। এই সফরের জন্যে প্রস্তুতি নাও। এই সফরের প্রস্তুতি হলো গুনাহ থেকে দূরে থাকা এবং সৎ কাজ করা। ততোক্ষণে যাহরি বুঝলো যে ইমামের উদ্দেশ্য কী ছিল এবং ইমাম ঐ যে বোঝাটি বহন করছিলেন,তা ছিল অভুক্তদের জন্যে খাবারের বোঝা।সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্বসহ মানুষের বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় স্থান পাওয়া ইমামের দোয়াগুলো খুবই কার্যকর। বাবা-মা সম্পর্কে তাঁর দোয়ার একাংশে বলা হয়েছে: “হে আল্লাহ! আমার কণ্ঠ যেন বাবা মায়ের সামনে নীচ বা অনুচ্চ থাকে। আমার বক্তব্য যেন তাদের জন্য হয় সন্তোষজনক। আমার আচরণ যেন তাঁদের সামনে বিনম্র থাকে; তাদের জন্য আমার অন্তরকে দয়ার্দ্র কর। আমি যেন তাঁদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেই এবং আমাকে তাঁদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল করুন।”“রিসালাতুল হুকুক” ইমাম জাইনুল আবেদীন (আ.)’র আরেকটি অনন্য অবদান। এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। এসবের মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরের নানা অঙ্গের অধিকার, নানা ধরণের ইবাদতের অধিকার; বাবা, মা, শিক্ষক, ছাত্র, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, ভাই, উপকারকারী, সহচর, প্রতিবেশী, বন্ধু, অংশীদার, অর্থ,ঋণ-প্রার্থী, শত্রু, খারাপ লোক, ভিক্ষুক, দ্বীনী ভাই, একসাথে বসবাসকারী অধিকার এবং ইসলামের আশ্রয়ে থাকা কাফেরদের অধিকার সংক্রান্ত আলোচনা। যেমন, পেটের অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: পেটকে হারাম খাবারে পূর্ণ করো না এবং উদর ভর্তি করে খেও না।ইমাম সাজ্জাদ (আ) বলেছেন,আমি তাদের ব্যাপারে বিস্মিত যারা ক্ষতির কারণে বিভিন্ন ধরনের খাবার বর্জন করে অথচ তারা কদর্যতার কারণে পাপ বর্জন করে না।তোমরা বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান লাভের চেষ্টা করবে। তোমরা মনে রেখো যারা অপর ভাইয়ের প্রয়োজন মেটায় এবং দীন-দুঃখীদের সাহায্য করেন কেবল তাদেরকেই বেহেশতে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়ে থাকে।ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ.)'র জীবনে বহু মু'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন, অসুস্থ ব্যক্তিকে অলৌকিকভাবে সুস্থ করা, অদৃশ্যের খবর বলে দেয়া বা জানা, বন্দী অবস্থায় আবদুল্লাহ বিন মারোয়ানের প্রহরীদের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।১. আবু খালিদ কাবুলি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)'র সান্নিধ্যে এসেছিলেন দুই বার। তিনি অন্য কাউকে ইমাম মনে করতেন। দ্বিতীয় সাক্ষাতের সময় ইমাম (আ.) তাকে বলেন: যদি তুমি চাও তাহলে বেহেশতে আমার অবস্থান এখনই তোমাকে দেখাব।এরপর ইমাম তাঁর হাত মুবারক আবু খালিদের চোখের ওপর বুলালেন। আবু খালিদ নিজেকে বেহেশতে দেখতে পেল এবং সেখানে নানা প্রাসাদ ও নদ-নদী দেখতে পেল। এরপর ইমাম আবারও খালিদের চোখে হাত বুলান, আর সঙ্গে সঙ্গে খালিদ নিজেকে আবারও ইমামের সামনে দেখতে পেল।২. কুখ্যাত জালিম ও রক্তপিপাসু হাজ্জাজ বিন ইউসুফ উমাইয়া শাসক আবদুল মালিককে লিখেছিল: আপনি যদি আপনার রাজত্বের ভিত্তিকে মজবুত করতে চান তাহলে আলী বিন হুসাইনকে হত্যা করুন।জবাবে আবদুল মালিককে গোপন চিঠিতে লিখে পাঠান: 'বনি হাশিমের রক্তপাত কোরো না। কারণ, বনি হাশিমের লোকদের হত্যা করে আবু সুফিয়ানের বংশধরদের রাজত্বকে তেমন টেকসই বা স্থায়ী করা যাবে না।'কিন্তু এর কয়েকদিন পরই আবদুল মালিক ইমামের কাছ থেকে একটি চিঠি পান। ওই চিঠিতে লেখা ছিল: 'তুমি যেই চিঠিতে বনি হাশিমের রক্ত রক্ষার কথা হাজ্জাজকে লিখেছ সে সম্পর্কে আমি জানাতে পেরেছি।....' আবদুল মালিক এই চিঠির তারিখের সঙ্গে নিজের সেই গোপন চিঠির তারিখেরও মিল খুঁজে পান।৩. একবার ইমাম যখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মাধ্যমে বাগদাদে বন্দী ছিলেন তখন তার সঙ্গে থাকা এক বন্দী নিজ সন্তানদের কথা ভেবে খুবই কাঁদছিল। ইমাম তখন তাকে প্রস্তাব দেন যে, তুমি কি তোমার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিজের ঘরে দেখা-সাক্ষাৎ করতে চাও? ওই বন্দী এই প্রস্তাব শুনে আরো বেশি কেঁদে ওঠে। এরপর ইমাম তাঁর হাতের ওপর ওই ব্যক্তিকে হাত রাখতে বলেন এবং চোখ বন্ধ করতে বলেন। সে তা করলে কয়েক মুহূর্ত পরই ইমাম বললেন: এবার চোখ খোল। চোখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজেকে নিজের ঘরে দেখতে পেল। ইমাম বললেন: যাও পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ-খবর নাও। সে তাই করল খুশি মনে। তার পরিবার তাকে ইমাম জাইনুল আবেদীনের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে তাঁর অবস্থা বর্ণনা করায় সবাই কাঁদতে থাকে। এ অবস্থায় লোকটি আবার ইমামের কাছে ফিরে এলে তিনি তাকে আবারও একই পদ্ধতিতে কারাগারে ফিরিয়ে আনেন।

মাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (তৃতীয় পর্ব )আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমাওলা মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও উত্তরাধিকারী আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন: হে আলী! মিথ্যা কারণে আল্লাহকে নিয়ে কসম করবে না আর সত্যের ক্ষেত্রেও আবশ্যক না হলে তা করবে না। আল্লাহকে তোমাদের কসমের হাতিয়ারে পরিণত কর না। কেননা, যে ব্যক্তি আল্লাহকে নিয়ে মিথ্যা কসম করে আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না এবং তার প্রতি সদয় হন না।হে আলী! আগামীকালের জীবিকা নিয়ে দুঃখ করো না। কারণ, প্রত্যেক আগামীকালের (সাথে তার জন্য নির্ধারিত) জীবিকাও এসে পড়ে।হে আলী! গোঁয়ার্তুমি থেকে দূরে থাক। এর গোড়ায় রয়েছে মূর্খতা আর পরিণামে রয়েছে অনুশোচনা।হে আলী! দাঁত মাজতে ভুলো না। কারণ, দাঁত মাজার ফলে মুখ পবিত্র হয়, আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন এবং চোখের জ্যোতি বাড়ে। আর দাঁত খিলাল করার কারণে তুমি ফেরেশতাদের প্রিয় হবে। কারণ, যে ব্যক্তি খাওয়ার পর দাঁত খিলাল করে না তার মুখের দুর্গন্ধে ফেরেশতারা বিরক্ত হয়।হে আলী! রাগান্বিত হয়ো না। আর যদি রাগান্বিত হও, তা হলে বসে পড় এবং আল্লাহর বান্দাদের ওপর তাঁর ক্ষমতার কথা এবং তাদের প্রতি তাঁর ধৈর্যের কথা চিন্তা করো। আর যখন তোমাকে বলা হয় : আল্লাহকে ভয় করো, তখন তোমার ক্রোধকে দূরে ঠেলে দাও এবং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় প্রত্যাবর্তন করো।হে আলী! তোমার নিজের জন্য যা কিছু ব্যয় করো তার মধ্যে আল্লাহকে (সন্তুষ্টিকে) উদ্দেশ্য করো। যাতে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য সঞ্চয় হয়।হে আলী! নিজ পরিবার, প্রতিবেশী এবং যাদের সাথে ওঠা-বসা ও কথাবার্তা বল তাদের সাথে সদাচরণ করবে যাতে আল্লাহর কাছে সেগুলো সঞ্চিত দেখতে পাও।হে আলী! যা কিছু নিজের জন্য পছন্দ করো না, তা অন্যের জন্যও কামনা করো না। আর যা কিছু নিজের জন্য পছন্দ করো, তা তোমার ভাইয়ের জন্যও চাও। যাতে তোমার বিচারে ন্যায়বান হতে পার এবং তোমার ন্যায়বিচারে সুবিচারক হতে পার, আর আসমানবাসীর কাছে প্রিয় হতে পার, আর জমিনবাসীর বুকে বন্ধুর আসন করে নিতে পার। আমার এ ওসিয়তকে সংরক্ষণ করো মহান আল্লাহ্ চাহেন তো।এবারে শামউন ইবনে লাভী ইবনে ইয়াহুদা নামক একজন পাদ্রীর নানা প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ (সা.) যেসব অমূল্য বক্তব্য রেখেছিলেন সেগুলোর কিছু প্রধান অংশ এখানে তুলে ধরব। শামউন ঈসা (আ.)-এর জনৈক হাওয়ারীর বংশধর ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.) এর কাছে অনেক প্রশ্ন তুলে ধরেন। আর রাসূল (সা.) তার সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। ফলে শামউন তাঁর প্রতি ঈমান আনেন এবং তাঁর নবুওয়াতকে সত্য বলে স্বীকার করে নেন।এক পর্যায়ে শামউন বলেন : আমাকে বলুন দেখি আকল তথা বুদ্ধিবৃত্তি কি এবং তার প্রকৃতি কিরূপ? তা থেকে কি নির্গত হয় এবং কী নির্গত হয় না? সেগুলোর সব শ্রেণীর ব্যাখ্যা দিন। রাসূলে খোদা (সা.) বললেন :“আকল হলো অজ্ঞতা এবং নাফসের একটি বাঁধন। নাফস (প্রবৃত্তি) জঘন্যতম জন্তুর ন্যায়। যদি এ বাঁধন না থাকে, তা হলে তা পাগলা কুকুর হয়ে যায়। সুতরাং আকল হলো অজ্ঞতার বাঁধন। আল্লাহ্ আকলকে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁকে বললেন : সামনে ফেরো। সে ফিরলো। তাকে বললেন : পেছনে ফেরো। সেও পেছনে ফিরলো। আল্লাহ্ বললেন : আমার মহিমা ও মর্যাদার শপথ, তোমার চেয়ে বড় এবং অধিক অনুগত কোনো সৃষ্টিকে আমি সৃষ্টি করি নি। তোমাকে দিয়েই শুরু করবো এবং তোমাকেই নিজ দরগাহে ফিরিয়ে আনব। পারিশ্রমিক এবং সওয়াব তোমার জন্যই। শাস্তিও তোমার ভিত্তিতেই হবে। আকল থেকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা নির্গত হলো। আর ধৈর্য থেকে জ্ঞান। আর জ্ঞান থেকে চিন্তার পরিপক্কতা, আর চিন্তার পরিপক্কতা থেকে চারিত্রিক পবিত্রতা। আর চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে আত্মসংযম। আর আত্মসংযম থেকে লজ্জা। আর লজ্জা থেকে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা, আর ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া। আর অব্যাহতভাবে সৎ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া থেকে মন্দ কাজকে ঘৃণা করা। আর মন্দ কাজকে ঘৃণা করা থেকে উপদেশ দাতার উপদেশ মেনে চলা। এ হলো কল্যাণের দশটি শ্রেণী। এ প্রত্যেক শ্রেণীর আবার দশটি করে প্রকার রয়েছে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলছিলেন, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা থেকে (আসে) : ১. সুন্দর বৈশিষ্ট্যে সজ্জিত হওয়া ২. পুণ্যবানদের সাথে ওঠাবসা ৩. লাঞ্ছনা দূরীকরণ ৪. নিচতা থেকে নির্গমন, ৫। কল্যাণের প্রতি ঝোঁক, ৬. উচ্চতর মর্যাদার নিকটবর্তী হওয়া, ৭. মার্জনা ৮. অবকাশ প্রদান, ৯. সদাচার, ১০. নীরবতা। বুদ্ধিমান ব্যক্তির সহিষ্ণুতা থেকে এসব নির্গত হয়।আর জ্ঞান থেকে নির্গত হয় : ১. অভাবহীনতা, এমনকি যদি নিঃস্বও হয়ে থাকে। ২. দানশীলতা, যদিও সে কৃপণ থাকে। ৩. ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি, যদিও সে বিনয়ী থাকে, ৪। সুস্থতা, যদিও সে রুগ্ন থাকে, ৫. নৈকট্য, যদিও সে দূরে থাকে, ৬. লজ্জাশীলতা, যদিও সে মুখরা থাকে, ৭. মর্যাদাশীলতা, যদিও সে অধীনস্থ হয়, ৮. আভিজাত্য, যদিও সে নীচ (বংশের হয়ে) থাকে, ৯. প্রজ্ঞা এবং ১০. (যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা ও সময়ের) সদ্ব্যবহার। এগুলো হলো আকল-সমৃদ্ধ বা বিবেকবান ব্যক্তির জ্ঞানের ফল। সুতরাং ধন্য হোক সে ব্যক্তি যে আকলকে প্রয়োগ করেছে এবং জ্ঞান লাভ করেছে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলছিলেন, আর চিন্তার পরিপক্কতা থেকে নির্গত হয় : ১. অবিচলতা, ২. হেদায়েত, ৩. সৎকর্মশীলতা ৪. সংযমশীলতা, ৫. সফলতা, ৬. মধ্যপন্থা, ৭. মিতাচার, ৮. পারিশ্রমিক ও সওয়াব ৯. মর্যাদা ১০. আল্লাহর দীনকে অনুধাবন। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার চিন্তার পরিপক্কতা থেকে লাভ করে। ধন্য হোক সেই ব্যক্তি যে সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে চলে।আর চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে যা যা উৎসারিত হয় সেগুলো হল : ১. সন্তুষ্টি, ২. প্রশান্তি৩. উপকার লাভ, ৪. শান্তি, ৫. যাচাই (সতর্ক অনুসন্ধান), ৬. বিনয়, ৭. (আল্লাহর) স্মরণ, ৮, চিন্তা-গবেষণা, ৯, বদান্যতা, ১০. উদারতা।এগুলো বিবেকবান ব্যক্তির চারিত্রিক পবিত্রতা থেকে উৎসারিত হয় আর সে আল্লাহর প্রতি ও নিজের ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে।আর আত্মসংযম থেকে যা যা উৎসারিত হয় সেগুলো হল : ১. কল্যাণ চিন্তা, ২. বিনয়, ৩. সংযম ৪. তওবা, ৫. বোধশক্তি, ৬. শিষ্টাচার, ৭. সদাচার ৮. বন্ধুত্ব, ৯. কল্যাণকর এবং ১০. সুআচার-ব্যবহার। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার সম্ভ্রম থেকে লাভ করে। ধন্য সেই ব্যক্তি যার প্রভু তাকে আত্মসংযমের বৈশিষ্ট্য দিয়ে সম্মানিত করেন।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) আরো বলছিলেন, আর লজ্জা থেকে উৎসারিত হয় : ১. নমনীয়তা, ২. দয়াশীলতা, ৩ ও ৪. প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর পাহারার প্রতি মনোযোগ, ৫. (দৈহিক ও মানসিক) সুস্থতা, ৬, মন্দ থেকে দূরে থাকা, ৭. সমৃদ্ধি, ৮. দানশীলতা, ৯. বিজয় এবং ১০. মানুষের মাঝে সুনামের সাথে স্মরণ। এগুলো বিবেকবান ব্যক্তি তার লজ্জা থেকে অর্জন করে। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নসিহত গ্রহণ করে এবং তাঁর অপমানকে ভয় করে।আর ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে উৎসারিত হয় : ১. দয়া, ২. পরিণামদর্শিতা, ৩. আমানত রক্ষা, ৪. খেয়ানত বর্জন, ৫. সত্যবাদিতা, ৬. লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা, ৭. সম্পদের পরিশুদ্ধি, ৮. শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি, ৯. অসঙ্গত কাজ থেকে নিষেধ, ১০. বোকামি বর্জন। বিবেকবানরা এসব বিষয় ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্ততা থেকে পেয়ে থাকেন। সুতরাং ধন্য সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তিত্ব ও স্থিরচিত্তের অধিকারী হয় এবং যার মধ্যে লঘুচিত্ততা আর মূর্খতা থাকে না এবং যে ক্ষমাশীল হয় ও মার্জনা করে।ইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদপ্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

মাওলা আলী(আঃ)এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী’র বিবাহ সম্পর্কিত রহস্যের বেড়াজালে উমাইয়্যা মিথ্যাচারের সত্য উন্মোচন। [একটি গবেষণামূলক যৌথ প্রবন্ধ]_________________________________________________________একদল নামধারী আলেম, ধর্মব্যবসায়ীরা খুব আগ্রহের সাথে বয়ান করে “হযরত উমর যদি ফাতেমার উপর অত্যাচারই করে থাকবেন,তাহলে কে আলী তার কন্যা উম্মে কুলসুম কে উমর (রাঃ) সাথে বিয়ে দিলেন?” বলতে বলতে তাদের চোখে যেন সেই বিয়ের দৃশ্য ভাসে, তারা ছয়ের মাইর মেরেছেন ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।এরা আসলে আদুভাই, এক পড়া বারবার পড়তে পড়তে দাড়ি গজায় গেছে, আর দাড়ি তাদের মুলধন,এটা এসেছে মানেই কামাই চালু।এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নাসিবিরা খেলাফতের মূল ইতিহাসের তিক্ততাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়।যা জালিমের পক্ষে কৌশলী অবস্থান তথা একধরনের সূক্ষ নেফাকী। আর এরকম সুক্ষ নেফাকীগত কৌশলি ফাঁদ থেকে সরল মুসলিমের বড় একটা অংশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি।যার দরুন আজ মিথ্যা সত্যের পোশাক পরে সমাজে বিচরণ করছে। সত্য পোশাক হারিয়ে লুকিয়ে আছে। সত্যের অনুসরণ ও আনুগত্য করবে বলে ধিরে ধিরে সত্যের বিলুপ্ত ঘটানো হচ্ছে। আর মিথ্যাকে নতুন করে সত্যের রুপে সাজানো হচ্ছে। এই আশায় যে, একদিন মানুষ মিথ্যাটাকেই সত্য হিসাবে বরণ করবে, এবং তারই অনুসরণ ও আনুগত্য করবে।মিথ্যার স্থায়িত্ব যতবেশি হবে তার গ্রহণ যোগ্যতা ততবেশি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর বিলুপ্ত ঘটানো সত্যটা যাদের সংগ্রহে থাকবে, যখন নতুন প্রজন্মের কাছে তারা তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করবে, নতুনরা তখন বলবেঃ “এগুলো আমাদের কিতাবে নেই। এসব আমাদের কিতাব নয়।” যুগে যুগে এমনটাই হয়ে আসছে।অনেক হয়েছে, আর নয়।এবারে আমরা প্রমাণ করব যে,উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) এর সাথে ওমর ইবনে খাত্তাবের বিয়ে হয়নি।যা ছিল বরাবরের মতই উমাইয়া মিথ্যাচারের বেড়াজাল।ইতিহাসে হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) এর উপনাম ছিল উম্মে কুলসুম।দেখে নিতে পারেন ঐতিহাসিক সূত্রঃ আল ইরশাদ, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৩৫৪/ বিহারুল আনওয়ার,খন্ড ৪২,পৃষ্ঠা ৭৪/ ইনাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৭/এহকাকুল হাক, খন্ড ১০,পৃষ্ঠা ৪২৬।তোমরা এমনকি তোমাদের হতে পারতো নবীর বেলায়ও হোম ওয়ার্কে ফাকি দিয়েছো।এসো তোমাদের আমরাই শিখাই।আরে গর্ধভের দল, উম্মে কুলসুম কি কোন নাম? উম্মে কুলসুম হলো কুলসুমের মা। যেমন আবুল হাসান মানে হাসানের বাবা।যদিও হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) বেলায় একটু ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়।আল্লামা আব্বাস বিন মোহাম্মদ রেজা আল-কুমি,”আল কুনা ওয়াল আলকাব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) তাকে ‘উম্মে কুলসুম’ উপনাম দিয়েছিলেন,কারণ তিনি তার খালা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর পালিত কন্যা উম্মে কুলসুমের-এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন।সুত্রঃ আল কুনা ওয়াল আলকাব,-মুহাদ্দিসে কুমী ,খণ্ডঃ ০১ (৫তম সংস্করণ),পৃষ্ঠাঃ ২২৮।মাওলা আলী (আঃ) এবং জনাবে ফাতিমা জাহরা (সাঃ আঃ) যাহরার কন্যা হযরত জয়নব আল-সুগরা (সাঃ আঃ) তার উপনাম ছিলো উম্মে কুলসুম।দুই বছর বয়সে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) দেখেছেন তাদের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে তার মা ফাতিমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মক ভাবে আহত করা হলো (যে আঘাতে মা কিছুদিন পরেই শাহাদাত বরন করেন),তার বাবা আলী (আঃ) কে তারই সামনে দিয়ে গলায় রশি বেধে নিয়ে যাওয়া হলো,তার ভাই মহসিন (আঃ) শহিদ হলো, মায়ের উপর চাবুক ও চড় মারা হলো, সমস্ত ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। মা ফাতিমার ভেঙে যাওয়া দেহের অংশ দেখেছেন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)।তিনি কান্না ও অত্যাচার কে দেখেছেন।কে করেছে এগুলি? এটা সবাই জানে। মানে না, যাই হোক আজকের বিষয়বস্তুতে আলোকপাত করতে চাই।আহলে সুন্নাতের বিখ্যাত স্কলার জনাব আল্লামা শিবলী নোমানী কর্তৃক প্রণীত “আল-ফারুক” কিতাবের ২য় খন্ডের ৫৩৯ নম্বর পৃষ্ঠা এবং তারীখে আবুল ফিদা গ্রন্থের ১ম খন্ডের ১৭১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে যেঃ হিজরী ১৭ সনে ওমর বিন খাত্তাব ও উম্মে কুলসুমের এর বিবাহ হয় যখন উম্মে কুলসুমের এর বয়স ৫ কিংবা ৪ বছর। কারণ ঐ একই পৃষ্ঠা তাঁর জন্ম সাল ১২ বা ১৩ হিজরী উল্লেখ করা হয়েছে।অন্যদিকে, হিজরী ১১ সনে রাসূলে খোদা (দুরুদ) এর ওফাতের মাত্র ৬ মাস পরে মা ফাতিমা (সাঃ আঃ)-এ পরলোক গমণ গমণ করেন ।এবং হিজরী ৯ সনে উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন।সুন্নী সূত্রঃ বোখারী,আরবী ইংলিশ ভার্সন,খন্ড-৫,হাদিস- ৫৪৬/শীয়া সূত্রঃ আনওয়ারুল হোসাইনিয়া , খন্ড-৩, পৃঃ ৩৯।মাওলা আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৯ম হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মা ফাতিমা (সাঃ আঃ) ১১ হিজরীতে পরলোক গমণ করেন ।এদিকে হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ১২-১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ।তাই স্পষ্ট করে বুঝা যাচ্ছে যে, ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম – আলী (আঃ) ও ফাতেমা (সাঃ আঃ) এর সন্তান নন।কারণ মা ফাতেমা (সাঃ আঃ) ১১ সালেই পরলোক গমণ করেছেন।সুহৃদ! এটা কি সম্ভব যে,মা ইন্তেকালের ২ বছর পর সন্তানের জন্ম হয়েছে ?একটু মাথা খাটালেই বোঝা যায় ১২-১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুম নামে যে কন্যার কথা বলা হয় সে কন্যা আলী (আঃ)-এর কন্যা নয় বরং ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম অন্য কোন গোত্রের অন্য কারও সন্তান। তাই শেইখ মুফিদ (রহ.) সহ আরো কয়েকজন আলেম যেমনঃ সৈয়দ মির নাসের হুসাইন লাখনাভি এবং শেইখ মোহাম্মাদ জাওয়াদ বালাগি তাদের স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত উমরের সাথে হজরত উম্মে কুলসুমের বিবাহ সংঘটিত হয়নি।সাথে থাকুন, সেটাই প্রমাণ করব ইনশাআল্লাহ্।পাঠক,সুন্নী রেফারেন্স অনুযায়ী উম্মে কুলসুম (হযরত ওমরের স্ত্রী) হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন।ইমাম হাসান (আঃ) কে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস তার (ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম) মৃত্যুতে শোক প্রার্থণা করার জন্য বলেন।এবং এটা আরেকটা বেদনাদায়ক ঘটনা যে, হিজরী ৫০ সালে ইমাম হাসান (আঃ) ও শাহাদাত বরন করেন।আর উনাকে নিশ্চয়ই জীবিত থাকতেই শোক প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল তাই না? সুন্নী সূত্রঃ আল ইসতিয়াব , খন্ড-২, পৃঃ ৭৯৫ / তারিখে খামিস , খন্ড-২, পৃঃ ৩১৮ / তারিখে তাবারি, খন্ডঃ১২, পৃঃ ১৫।এবার অবাক হবেন এ জন্য যে,ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম যিনি হিজরী ৫০ সালের আগে ইন্তেকাল করেছেন এবং ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) ৬১ হিজরী সনে কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আঃ)-সহ যাত্রী ছিলেন !তিনি কারবালার যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং এই সময় তার ভাই মওলা হুসাইন (আঃ)-কে ত্যাগ করার জন্য কুফার লোকদের সমালোচনা করেন।সূত্রঃ Al-Qurashi, Baqir Shareef,The Life of Imam Husain (as)- পৃষ্ঠাঃ ১৫০২/মোজাফফারি তারিখ,পৃষ্ঠাঃ ২০৮ /আল্লামা মাজলিসি তার মারআতুল উকুল,খন্ড ২০, ও বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৫ উল্লেখ করেছেন।এবং উম্মে কুলসুম বিনতে আলীর (সাঃ আঃ) বিয়ে হয়েছিল তাঁর চাচাতো ভাই আওন ইবনে জাফর (রাঃ)-এর সাথে।এবং হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।সুন্নী সূত্রঃ- রজাতুল ইহবাব, খন্ড-৩, পৃঃ ৫৮৫ / তারিখে খামিস, খন্ড-৩, পৃঃ ৩১৮।হযরত আওন ইবনে জাফর (রাঃ) তিনি জাফর ইবনে আবু তালিব এবং আসমা বিনতে উমাইসের তৃতীয় পুত্র ছিলেন। তিনি তার চাচাত বোন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ)-কে বিয়ে করেন,যিনি মুহাম্মদ (সা) এর নাতনি ছিলেন।তাদের কোনও সন্তান ছিল না।সূত্রঃ-মুহাম্মদ ইবনে সাদ কর্তৃক প্রণীত, আল তাবাকাত আল-কবির, খণ্ড ০৮,Translated by Bewley(1995) দ্য উইমেন অফ মদীনা, পৃঃ ১৯৬/২৯৯ লন্ডন: টা-হা পাবলিশার্স।এখানে উল্লেখ্য যে উমরের সাথে যে উম্মে কুলসুমের বিবাহ হয় এবং তার থেকে নাকি সন্তানও জন্ম হয় যাদের নাম নাকি যায়েদ ও ফাতেমা !কাজেই আবার প্রমাণিত হলো হযরত ওমরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ও ইমাম আলী (আঃ) -এর কন্যা উম্মে কুলসুম (সাঃ আঃ) এক নয় দুটি ভিন্ন মানুষ।আহলে সুন্নার বিখ্যাত আলেম জনাব ইবনে কুতাইবাহ কর্তৃক প্রণীত তার “আল-মাআরিফ” গ্রন্থে লিখেছেনঃ- ইমাম আলী (আঃ)-এর সকল কন্যার বিয়ে হয়েছে হযরত আকিল (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর সন্তানদের সাথে ।ব্যতিক্রম শুধু উম্মুল হাসান বিনতে সায়্যীদ ও ফাতেমার ক্ষেত্রে।কিন্তু কোথাও তিনি উল্লেখ করেন নি যে, হযরত ওমরের সাথে ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যার বিবাহ বন্ধন হয়েছে।সুন্নী সূত্রঃ আল-মাআরিফ,পৃঃ ৮০।এখানে হযরত ওমরের পৌত্তলিক দিনগুলোসহ ইসলাম গ্রহণ করার পর পর্যন্ত অন্যান্য সকল স্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা উপযুক্ত হবে বলে মনে করি।হযরত ওমর ছিলেন খুবই রগচটা, নারীদের প্রহার করতেও কুন্ঠাবোধ করতেন না। ( হুজুর পিলিজ চেইতেন না, ইতিহাসে উনাকে রাগি যুবক নামেই বেশি চিনে) যে কারনে তার স্ত্রীরা তাকে তালাক দিয়ে যেতো। যাই হোক তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ওসমান বিন মাযুন এর বোন জয়নব বিনতে মাজুন (জাহিলিয়ার যুগে)। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন “কারিবা” যিনি ইবনে উমাইত উল মাকযামির কন্যা এবং রাসুল (সঃ) এর স্ত্রী ঊম্মে সালমা (রাঃ) এর বোন । উল্লেখ্য হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দে হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কারিবা’র সাথে হযরত ওমরের তালাক হয় ।তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন জারুল আল খুজাই’র কন্যা মালাইকা,তাকেও উম্মে কুলসুম বিনতে জারউয়িলা খুজিমা নামে ডাকা হত,এছাড়াও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি।দুই পুত্র সন্তান ছিল এবং হিজরী ৬ খ্রীষ্টাব্দের আগে তালাকপ্রাপ্ত হন।মদিনা হিজরতের পর তিনি (ওমর) বিয়ে করেন আসিম বিন থাবিত যিনি ছিলেন উচ্চ স্থানীয় আনসার এবং বদরের যুদ্ধা তার কন্যা “জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ”কে।জমিলা’র প্রথম নাম ছিল আসিয়া যা রাসুল (সঃ) পরিবর্তন করেছিলেন তার ইসলাম গ্রহণের পরে। হযরত ওমর তাকেও তালাক দেন কিছু অজানা কারণে ।জামিলা বিনতে আসিম ইবনে সাবিত ইবনে আবিল আকলাহ (আউস গোত্রের সদস্য)।তার আরও স্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন,আল হারিত বিন হিশাম আল মাখযুমি’র কন্যা উম্মে হাকিম, ফুখিয়া ইয়ামেনিয়া এবং আতিকা বিনতে জায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফায়েল। সুন্নি সূত্রঃ- শিবলী নোমানি’র প্রণীত,আল-ফারুক – ইংলিশ অনুবাদের পাতা নং ৩৪০-৩৪৩,খন্ড-২,অধ্যায়-১৯ ।History of the Prophets and Kings 4/ 199 by Muhammad ibn Jarir al-Tabari(তারিখ আল-তাবারী)/আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৬খন্ড পৃঃ৩৫২ /ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, আরবী ৮/১৯৩।এটা উল্লেখ করা জরুরী যে লেখক,শিবলী নোমানি খুব সহজেই প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের কন্যার কথা উপেক্ষা করেছেন।সঠিক ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণ করে যে,হযরত ওমরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উম্মে কুলসুম ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা নয় তিনি ছিলেন হযরত আবু বকরের কন্যা ।আমরা এটা জানি যে,শিবলী নোমানী উপরে দুই জন উম্মে কুলসুমের কথা উল্লেখ করেছেন,ঠিক ?অথবা সে কি একই উম্মে কুলসুম যিনি ছিলেন আবু বকরের মেয়ে?যদি হ্যা হয় তবে কেন লেখক সেটা উল্লেখ করলেন না ?আপনাদের কাছে তা স্পষ্ট না হলেও আমাদের কাছে স্পষ্ট। সবাই হালকা করে প্রলেপ দিয়ে দিয়ে আজকের এই মিথ্যাকে পোক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।পাঠক,এখানে ঐতিহাসিক দলিল ও তথ্যের মাধ্যমে তারই উত্তর দিচ্ছি – হযরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে যার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে তাবারিঃ খন্ড-৩, পাতা-৫০, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিলঃ খন্ড-৩, পাতা-১২১, মিশরে মুদ্রিত;/ তারিখে খামিসঃ খন্ড-২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/ ইবনে হাজর আস্কালানি কর্তৃক প্রণীত, আল-ইসাবা, খন্ড-৩, পাতা-২৭।এছাড়াও মনে রাখবেন যে,আবু বকর হিজরী ১৩ সনে মারা যান।সুন্নি সুত্রঃ জালাল উদ্দিন সূয়ুতি কর্তৃক প্রণীত,তারিখে খলিফা,পাতা-৫৫১, মেজর এইচ এস ব্যারেট এর ইংরেজি অনুবাদ।পরোক্ষভাবে এটা মনে দরকার যে,আসল অভিযোগ ছিল প্রথম দলিল যা উম্মে কুলসুমের বিয়েকালীন বয়স ৪-৫ বুঝানোর জন্য দেয়া হয়েছে।শিবলী নোমানী’র আল-ফারুক গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী ১৩ হিজরীতে জন্ম নেয়া উম্মে কুলসুমের বিয়ে হয় ১৭ হিজরীতে ।এদিকে একাধিক সুন্নি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,হিজরী ১৩ সনে আবু বকরের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং তার নাম রাখা হয় উম্মে কুলসুম।অন্যদিকে ইমাম আলী (আঃ) এর মেয়ে হযরত জয়নব আল-সুগরা উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) জন্মগ্রহণ করেন ৯ম হিজরীতে।উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)ছিলেন উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের বড় বোন,এই কারণে হযরত ওমর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকরের জন্য উম্মুল মুমেনীন আয়েশা’র নিকট প্রস্থাব পাঠান,এবং উম্মুল মুমেনীন আয়েশা তা গ্রহণ করেন।নিশ্চিত হওয়ার জন্য দয়া করে আহলে সুন্নার দলিলগুলি দেখুনঃ তারিখে খামিস, খন্ডঃ ২, পাতা-২৬৭, মিশরে মুদ্রিত;/তারিখে কামিল, খন্ডঃ ৩, পাতা-২১, মিশরে মুদ্রিত;/ইবনে আব্দুল বার’র প্রণীত, আল-ইসতিয়াব, খন্ডঃ ২, পাতা-৭৯৫, হায়দ্রাবাদ ডেকান মুদ্রিত।অনেক হয়েছে দলিলের প্যাচাল, একটু নিজের মতো বলি, মাওলা আলীর ভাই জাফর ইবনে আবি তালিদ বিয়ে করেন আসমা বিনতে ইমায়েস ইবনে মা’আদ কে। উনার দুই ছেলে জাফর এবং আওন কে রেখে ,জাফর ইবনে আবি তালিব শাহাদাত লাভ করেন। পরে আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন আবু বকর ইবনে কুহাফা। এই আসমার বিনতে উমায়েস এবং আবু বকরের সন্তান হলো মুহাম্মদ বিন আবু বকর আর উম্মে কুলসুম বিনতে আবু বকর। আবু বকরের মৃত্যুর পরে মাওলা আলী আসমা বিনতে উমায়েস কে বিয়ে করেন। এই উম্মে কুলসুমের সাথেই বিয়ে হয়ে ছিলো ওমরের। শুধু তাই নয় এই উম্মে কুলসুমের স্বামী হওয়ার ভাগ্য হযরত তালহাও লাভ করেছিলেন।কাজেই উম্মে কুলসুম ইমাম আলি (আ.)’এর ঔরসজাত সন্তান ছিল না।কেননা জাফর বিন আবু তালিব আসমা বিনতে উমাইসকে বিবাহ করেন। জাফরের পক্ষ থেকে দুটি সন্তান জন্মলাভ করে ‘অউন ও জাফর’। পরে জাফরের শাহাদতের পরে হজরত আবু বকর তাকে বিবাহ করেন। হজরত আবু বকরের পক্ষ থেকে উম্মে কুলসুম জন্মগ্রহণ করে। আর উক্ত উম্মে কুলসুমকে হজরত উমর বিবাহ করেন। সুন্নি সুত্রঃ এহকাকুল হাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৭৬, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩১৫।সুতরাং হে সত্যান্বেষী ! আশা করি এটা এখন ক্লিয়ার যে সে ছিল হযরত আবু বকরের মেয়ে উম্মে কুলসুম,ইমাম আলী (আঃ) এর কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (সাঃ আঃ) নয় যার সাথে হযরত ওমরের বিয়ে হয়।আর যে বা যারা মিথ্যাশ্রয়ী তাদের উপর আল্লাহর লানত।নিবেদনে –সৈয়দ হোসাইন উল হকইসলামিক লেখক ও গবেষক,সাহেবজাদা,সুরাবই সাহেব বাড়ি দরবার শরীফ হবিগঞ্জ।এম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,যুক্তরাজ্য।জনাব ভাব পাগলা আব্দুল্লাহইসলামিক লেখক ও গবেষক,জামালপুর বাংলাদেশ।

আজ কারবালায় শহীদ কৃষ্ণাঙ্গ বীর জুনের লাশ দাফন করা হয়সেপ্টেম্বর ০৯, ‏২০২০ ১৯:২১ Asia/Dhakaআজ কারবালায় শহীদ কৃষ্ণাঙ্গ বীর জুনের লাশ দাফন করা হয়আজ হতে ১৩৮১ চন্দ্র-বছর আগে ৬১ হিজরির এই দিনে তথা ২০ মহররম ইসলামী জাগরণের অনন্য আদর্শ সৃষ্টিকারী কারবালার অসম যুদ্ধে শহীদ কৃষ্ণাঙ্গ বীর জুন বিন হুওয়াওয়ির ‎(جوْنِ بْنِ حُوَیِّ) ‏লাশ দাফন করা হয়।জুন ছিলেন কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইনের ৭২ জন বীর সঙ্গীর অন্যতম। তিনি আশুরার দিন বীর-বিক্রমে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। সাবেক খ্রিস্টান জুন বিন হুওয়াওয়ি এক সময় মহানবীর ‎(সা) ‏বিখ্যাত নিবেদিত-প্রাণ সাহাবি হযরত আবু জার গিফারির ক্রীতদাস ছিলেন। তৃতীয় খলিফা ওসমান বিন আফফান যখন আবু জারকে রাবাধা মরুভূমিতে নির্বাসনে পাঠান তখন তিনি আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর ‎(আ) ‏কাছে চলে আসেন। হযরত আলীর অনুরোধে জুন তাঁর কাছেই থেকে যান। ৪০ হিজরিতে হযরত আলী ‎(আ) ‏শহীদ হলে জুন ইমাম হাসান ‎(আ)'র কাছে থাকেন। এরপর ইমাম হাসান ‎(আ) ‏৫০ হিজরিতে শহীদ হলে জুন ইমাম হুসাইনের সঙ্গে যোগ দেন। ইমাম হুসাইন ‎(আ) ‏মদিনা ত্যাগ করলে তিনি ইমামের সঙ্গেই থাকার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। কারবালায় প্রায় সময়ই তিনি ইমামকে সঙ্গ দিয়েছিলেন। সুন্দর আচার-আচরণ ও অগাধ জ্ঞানের কারণে ধুসর ও কোঁকড়ানো চুলের অধিকারী বৃদ্ধ জুনকে সবাই শ্রদ্ধা করতেন। আশুরার আগের রাতে ইমাম জুনকে নিরাপদ কোনো স্থানে চলে যেতে বললে এই কৃষ্ণাঙ্গ বীর বলেন, 'আমি আপনার সাহচর্য ও মেহমানদারিতে উপকৃত হওয়া সত্ত্বেও আপনার বিপদের সময় আপনাকে ত্যাগ করব?-এটা তো ন্যায় বিচার হতে পারে না।' ‏পরের দিন ১০ মহররম ইমামের ক্ষুদ্র বাহিনীর ওপর জালিম উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের লেলিয়ে-দেয়া বিশাল বাহিনীর প্রথম দু'টি হামলা প্রতিহত করেছিলেন জুন। জোহরের নামাজের পরই যুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি। যুদ্ধে নেমে জুন আবৃত্তি করছিলেন:লড়তে প্রস্তুত আত্মার অধিকারী আমি রাহে আল্লাহরআল্লাহর দুষমনদের রক্তের জন্য তৃষ্ণার্ত একটি তরবারি আছে আমার।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি লড়ে যাব তাদের সঙ্গে শত্রু যারা আল্লাহর, ‏আল্লাহর রাসুলের নাতির সেবায় মশগুল হবে আমার তরবারি আর জিহ্বা বারবার। জুনের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ঘটনা প্রসঙ্গে শহীদ অধ্যাপক মুর্তাজা মুতাহ্‌হারি ‎(র) 'ইমাম হুসাইনের ‎(আ) ‏কালজয়ী বিপ্লব' ‏শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন: ‏আশুরার দিন যারা রাসূলের ‎(সা.) ‏খান্দানের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তাদের মধ্যে ক’জনকেই শেষ মুহূর্তে ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏নিজে এসে ধরেছিলেন। এই ক’জনের মধ্যে দু’জন মুক্ত হওয়া গোলাম ছিল। তাদের একজন হযরত আবুজারের গোলাম ছিলেন ও পরে তিনি তার মুক্তিদান করেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ, ‏নাম জুন। মুক্ত হবার পরও তিনি নবী-বংশকে ছেড়ে চলে যাননি। নবী-বংশের খাদেম হিসেবে তিনি স্বেচ্ছায় থেকে গিয়েছিলেন।আশুরার দিন এই জুন ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏কাছে এসে বললেন,‘আমাকে যুদ্ধে যাবার অনুমতি দিন।’ ‏ইমাম বললেন,‘দেখ,জুন। তুমি সারা জীবন লোকের খেদমত করলে। তোমার উচিত বাড়ীতে ফিরে গিয়ে এখন থেকে মুক্ত জীবন শুরু করা। তুমি এ পর্যন্ত যা করছে তাতেই আমরা তোমার উপর সন্তুষ্ট।’ ‏কিন্তু জুন নাছোড়বান্দা। ইমামের কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করে যুদ্ধে যেতে চাইলেন। তবুও ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏না করলেন। কিন্তু এরপর জুন কৌশল হিসেবে এমন এক কথা বললেন যা শুনে ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏আর তাঁকে আটকানো জায়েজ হবে না বলে মনে করলেন। জুন বললেন: ‏হে ইমাম! ‏বুঝতে পেরেছি কেন আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন না! ‏আমি যে কালো! ‏আমার গা থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়! ‏আমার কি শহীদ হওয়ার যোগ্যতা আছে! ‏আমি কোথায় আর এ সৌভাগ্য কোথায়!একথা শুনে ইমাম হুসাইন বললেন: ‏না,তার জন্যে না। ঠিক আছে তুমি যাও। জুন অনুমতি পেয়ে খুব খুশী হলেন। বীরদর্পে ‎(ঘোড়া নিয়ে) ‏ময়দানে প্রবেশ করলেন। প্রাণপণ লড়াই করলেন এবং শেষ পর্যন্ত আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। এবার কিন্তু ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏নিজেই তাঁর কাছে ছুটে এলেন। তাঁর মাথা কোলে তুলে নিয়ে ইমাম দোয়া করলেন:« ...أللهمَّ بَیِّض وَجهَهُ وَ طَیِّب ریحَهُ» ‏হে আল্লাহ,পরকালে তাঁকে সাদা চামড়ার করে দিন, ‏তাঁর গা থেকে সুগন্ধ ছড়িয়ে দিন। তাকে আবরারদের সাথে পুনরুত্থান করুন। ‎(আবরার অর্থাৎ যারা মুত্তাকিনদের চেয়েও উচ্চ-শ্রেণীর মু'মিন ‎) ‏কুরআনে সূরা মুতাফফেফিফেনর ১৮ নম্বর আয়াতে এসেছে ‎:(کَلَّا إِنَّ کِتَابَ الْأَبْرَارِ لَفِی عِلِّیِّینَ)‘‘অবশ্যই পুণ্যবানদিগের ‎(আবরার) ‏আমলনামা ইল্লিয়িনে’’।এবার এক মর্মভেদী দৃশ্যের অবতারণা হলো। আঘাতের চোটে জুন বেহুশ হয়ে গিয়েছিলেন। তার চোখের ওপর রক্ত জমাট বেধে ছিল। ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏আস্তে আস্তে তাঁর চোখের উপর থেকে রক্ত সরিয়ে দিলেন। এসময় জুনের হুশ ফিরলো। ইমাম হুসাইন ‎(আ.)-কে দেখে তিনি হাসলেন। ইমাম হুসাইন ‎(আ.)ও তাঁর মুখের উপর মুখ রাখলেন যা কেবলমাত্র জুনের এবং হযরত আলী আকবরের ভাগ্যেই হয়েছিল।ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏তাঁর মুখের ওপর নিজের মুখ রাখায় জুন এতোই খুশি হলেন যে মৃদু হাসলেন এবং ঐ হাসি মুখেই শাহাদাত বরণ করলেন।তাঁর দেহের রং অলৌকিকভাবে ফর্সা বা সাদা হয়ে গিয়েছিল। শাহাদাতের দশ দিন পর জুনের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং বনি আসাদ গোত্রের লোকেরা তাঁকে দাফন করে। উল্লেখ্য, ‏শাহাদাতের তিন দিন পরও কারবালার ময়দানে শহীদদের লাশ পড়ে ছিল। ওইসব লাশ ফুলে উঠেনি ও সেখানে কোনো দূর্গন্ধও দেখা দেয়নি। স্থানীয় বেদুইনরা এখানে এসে এক অপূর্ব বিশেষ সুঘ্রাণ পেয়ে বিস্মিত হত। এমন মিষ্টি সুঘ্রাণ তারা জীবনেও অনুভব করেনি। তারা এ বিষয়ে ইমাম জাইনুল আবেদিনকে ‎(আ) ‏প্রশ্ন করলে তিনি জানান যে এই বিশেষ সুঘ্রাণ আসছে জুনের লাশ থেকে ইমাম হুসাইনের ‎(আ) ‏দোয়ার বরকতে। কারবালার শহীদদের অন্য সুঘ্রাণও ছিল যা অনুভব করার যোগ্যতা সবার ছিল না।

বিশ্বনবী (সা.)'র দেখানো সৌভাগ্যের সিঁড়ি (দ্বিতীয় পর্ব )মে ২৮, ২০১৬ ২১:৫৭ Asia/Dhakaবিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও উত্তরাধিকারী আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছেন: হে আলী! নিশ্চয় মুমিনের চি‎হ্ন তিনটি: রোযা, নামায ও যাকাত। আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষের চি‎‎হ্ন তিনটি: সামনে তোষামোদি, পেছনে বদনাম আর বিপদে গালি-গালাজ করা।অত্যাচারীর চি‎হ্ন তিনটি: অধীনকে দমন, ঊর্ধ্বতনকে অমান্য, আর অত্যাচারীদের সাথে আঁতাত করা।নিজেকে জাহিরকারীর চি‎হ্ন তিনটি: লোকজনের সামনে তৎপরতা দেখানো, একাকী থাকলে আলসেমি করা আর সবাই তার কাজে বাহবা দিক সেটাই পছন্দ করে।মুনাফিকের চি‎হ্ন তিনটি: কারো কথা বর্ণনার সময় মিথ্যারোপ করা, আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা।রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে আরো বলেছেন, হে আলী! অলসের চি‎হ্ন তিনটি: এতটা ঢিলেমি করা যে দায়িত্ব অবহেলায় পর্যবসিত হয়, আর এতটা অবহেলা করা যে (সম্পদ ও সুযোগ) নষ্ট হয়ে যায়, আর এ অবস্থায় পাপীতে পরিণত হওয়া।আর বিচক্ষণ লোকের জন্য তিনটি উদ্দেশ্য ছাড়া কাজে ব্রত হওয়া মানায় না: জীবন-জীবিকা নির্বাহ অথবা পরকালের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ অথবা হারাম নয় এমন পথে উপভোগ করা।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন:হে আলী! নিশ্চয় মূর্খতার চেয়ে কোনো দারিদ্র্য নেই, বিচক্ষণতার চেয়ে ফলদায়ক সম্পদ নেই, স্বার্থপরতার চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো একাকীত্ব নেই, পরামর্শের চেয়ে ভালো কোনো সহযোগিতা নেই, চিন্তা করার ন্যায় কোনো বুদ্ধিবৃত্তি নেই, সচ্চরিত্রের ন্যায় কোনো বংশ মর্যাদা নেই। আর চিন্তার মতো কোনো ইবাদত নেই। নিশ্চয় কথার রোগ হলো মিথ্যা, জ্ঞানের রোগ হলো বিস্মৃতি, আর দানের রোগ হলো করুণার গর্ব (বলে বেড়ানো ও খোঁটা দেয়া)। সাহসিকতার রোগ অত্যাচার, সৌন্দর্যের রোগ অহংকার আর বংশের রোগ বড়াই।হে আলী! যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন তিনবার তাকবীর দিবে এবং বলবে : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি খালাকানী ওয়া আলাকাকা ওয়া কাদ্দারাকা মানাযিলা ওয়া জাআলাকা আয়াতাল্লিল আলামীন’ (অর্থ : আল্লাহর প্রশংসা যিনি আমাকে এবং তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমার জন্য বিভিন্ন প্রহর নির্ধারণ করেছেন আর গোটা জগতবাসীর জন্য তোমাকে করেছেন নিদর্শন)।হে আলী! যখন আয়নায় তাকাবে তখন তিনবার তাকবীর দিয়ে বলবে : আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতানি খল্কি ফা হাসসিন খুলকি। অর্থ : হে আল্লাহ্! আমার সৃষ্টিকে যেমন সুন্দর করেছেন সেভাবে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করুন।হে আলী! কোনো বিষয় যখন তোমাকে ভীত করে দেয় তখন বলবে : আল্লাহুম্মা বি হাক্কি মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলে মুহাম্মাদিন ইল্লা ফাররাজতা আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ এবং আলে মুহাম্মদের উসিলায় আমাকে নিরাপদ করুন।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন:হে আলী! তোমার চলার পথে যদি কোনো সাপ দেখ, হত্যা করবে। কারণ, আমি জ্বিনের সাথে শর্ত করেছি তারা সাপের বেশে আত্মপ্রকাশ করবে না।হে আলী! দুর্ভাগ্যের চি‎হ্ন চারটি: শুষ্ক চোখ ( তথা যে চোখ আল্লাহর ভয়ে ও মুমিনদের কষ্ট দেখে ক্রন্দন করে না), কঠিন অন্তর, উচ্চ অভিলাষ, আর দুর্দশাগ্রস্ত হয়েও দুনিয়াকে ভালোবাসা।হে আলী! যখন তোমার সামনেই তোমার প্রশংসা করা হয়, তখন বলবে: হে আল্লাহ্! তারা আমার সম্পর্কে যেমনটা ধারণা করে, আমাকে তার চেয়ে উত্তম করে দাও আর আমার সম্পর্কে যেগুলো জানে না সেগুলোকে ক্ষমা করে দাও, আর আমার সম্পর্কে যা বলে সে ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করো না।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন: হে আলী! যখনই সহবাস করবে তখন বলবে : হে আল্লাহ্! আমাকে শয়তান থেকে দূরে রাখ আর আমাদেরকে যা দান করবে তার থেকে শয়তানকে দূর করে দাও। তা হলে তোমাদের ভাগ্যে যদি কোনো সন্তান লিপিবদ্ধ হয়, তা হলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।হে আলী! লবণ দিয়ে খাওয়া শুরু করবে এবং লবণ দিয়েই শেষ করবে। কারণ, লবণ ৭০ টি রোগ প্রতিরোধ করে যার মধ্যে ন্যূনতম হলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধীত্ব, কুষ্ঠরোগ এবং শ্বেতরোগ।রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে আরো বলেছেন, হে আলী! শরীরে তেল মালিশ করবে। কারণ, যে ব্যক্তি শরীরে তেল মালিশ করে ৪০ দিন শয়তান (বা জীবাণু) তার কাছাকাছি হয় না।হে আলী! স্বীয় স্ত্রীর সাথে চন্দ্রের প্রথমা আর মাসের মধ্যরাতে সহবাস করো না। তুমি কি দেখ না যে, যারা বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী হয়, তারা অধিকাংশই প্রথমা আর মধ্য মাসের জাতক।হে আলী! যখন তোমার কোনো পুত্র বা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামাত দিবে। তা হলে শয়তান তার কখনো ক্ষতি করবে না।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন: হে আলী! আমি কি তোমাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করবো না? বললাম: অবশ্যই, হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন: সে হলো সেই ব্যক্তি যে (অন্যের) পাপকে ক্ষমা করে না এবং বিচ্যুতিকে মেনে নেয় না। আমি কি তার চেয়েও অধম ব্যক্তির সংবাদ তোমাকে দেব? বললাম: অবশ্যই, হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন : সে হলো সেই ব্যক্তি যার অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণ নেই, আর যার থেকে কল্যাণেরও কোনো আশা নেই।হে আলী! সত্যিই আল্লাহ্ খুশী হন তাঁর বান্দার ওপর যখন সে বলে : হে প্রতিপালক আমার! আমাকে ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া পাপ মার্জনা করার আর কেউ নেই। আল্লাহ্ বলেন : হে আমার ফেরেশতারা! আমার এ বান্দা জেনেছে যে, আমি ছাড়া পাপ মার্জনা করার কেউ নেই। তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে মার্জনা করে দিলাম।হে আলী! মিথ্যা পরিহার করো। কারণ, মিথ্যা মুখে কালিমা এনে দেয়, আর সে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আর সত্য মুখ উজ্জ্বল করে আর আল্লাহর কাছে সত্যবাদী বলে লিপিবদ্ধ হয়। জেনে রাখ, সত্য হলো কল্যাণময়, আর মিথ্যা অমঙ্গলকর।হে আলী! পরনিন্দা ও একের কথা অপরের কাছে লাগানো থেকে দূরে থাক। কারণ, পরনিন্দা রোযাকে বিনষ্ট করে আর কথা লাগানো কবর আযাবের কারণ হয়।

ইমাম হুসাইন ‎(আঃ) ‏কে কারা হত্যা করেছে? – ‏৩(ওহাবি, ‏নাসেবীদের ও আহলে সুন্নাহদের প্রপাগন্ডার জবাব)৪) ‏ইমাম হুসাইন আঃ ও তার সাথীদের ও নবী পরিবারের হত্যায় ইয়াজিদ, ‏সাহাবা, ‏সাহাবাদের পুত্ররা ও উসমানের ধর্মের লোকেরা সহ কারা জড়িত ছিল তার প্রমাণ। এই সব হত্যাকারিদের সাথে আহলে সুন্নাহ ও নাসেবীদের সখ্যতা।মুসলিম বিন আকীলের গ্রেফতার কারিদের পরিচয়ঃ এর আগে উল্লখে করা হয়েছে যে ইয়াজিদ, ‏ইবনে যিয়াদকে চিঠি লিখে মুহাম্মাদ বিন আকীলে হত্যা করার কথা বলেছিল। সেই মত ইবনে যিয়াদ তদন্ত্ব চালিয়ে মুসলিম বিন আকীলকে গ্রেফতার করেঃ ইবনে কাসীর তার ইতিহাস ‎‘আল বেদায় ও আন নেহায়া’ ‏এর খড ৮ পাতা ২৯৪ ‎( ‏বাংলা ইঃফা) ‏এ উল্লেখ করেছেনঃوبعث ابن زياد عمرو بن حريث المخزومي وكان صاحب شرطته ومعه عبدالرحمن ومحمد بن الأشعث في سبعين أو ثمانين فارسا ، فلم يشعر مسلم إلا وقد أحيط بالدار“ইবনে যিয়াদ তার পুলিশ প্রধান আমর বিন হারিস আল মাখযুমিকে ৭০ বা ৮০ জন অশ্বারোহী দিয়ে পাঠালো সাথে আব্দুর রহমান ও মুহাম্মাদ বিন আশাসকে পাঠালো। মুসলিম বিন আকিল কিছু বোঝার আগেই সেই বাড়ি ঘিরে নেওয়া হয়…”।এখানে আমরা দুজনের নাম পেলাম যারা ইমাম হুসাইনের সাথি মুসলিম বিন আকীলের বিরুদ্ধে ইবনে যিয়াদের সেনা/পুলিশ ছিল, ‏১) ‏আমর বিন হারিস আল মাখযুমি ২) ‏মুহাম্মাদ বিন আশাসআমর বিন হারিস আল মাখযুমি কে?এখানে আমরা যে নতুন নাম পেলাম সে হল আমর বিন হারিস আল মাখযুমি যে কিনা কুফার পুলিশ প্রধান ছিল, (মুহাম্মাদ বিন আশাসের নাম আগেও এসেছে পরে এই ব্যাক্তির পরিচয় দেওয়া হবে) ‏এবং ইবনে আকীলের গ্রেফতারে প্রধান ভুমিকা রাখে।এই আমর বিন হারিস আল মাখযুমি একজন সাহাবী ছিলেন।যাহাবি তার ‎‘সিয়ার আলাম নাবুলা’ ‏এর খন্ড ৩ পাতা ৪১৮ এ উল্লেখ করেছেঃكان عمرو من بقايا أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم الذين كانوا نزلوا الكوفة… له صحبة ورواية.“আমর বিনকে রাসুল সাঃ এর সাহাবীদের মধ্যে গন্য করা হয় এবং সে কুফার অভিবাসী হয়ে যায়…… ‏সে সাহাবী এবং রাসুল সাঃ এর থেকে বর্ননা করেছেন”।সাহাবীদের ও অন্যান্যদের জীবনীর উপরে ইবনে আসীরের লেখা বিখ্যাত কেতাব ‎‘উসুদুল গাবা’ ‏এর খন্ড ৪ পাতা ৯৮ এ আমর বিন হারিসের কথায় উল্লেখ করেছেনঃوولي لبني أمية بالكوفة وكانوا يميلون إليه ويثقون به وكان هواه معهم“তাকে বনি উমাইয়ারা নিয়োগ করেছিল কুফাতে, ‏তারা তাকে বিশ্বাস করত”।অনুরুপ ভাবে যাহাবি তার ‎‘আল কাশিফ’ ‏এর খন্ড ২ পাতা ৭৪, ‏৪১৪০ নং জীবনীতে, ‏ইবনে হাজর তার তাহযিব আত তাহযিব এর খন্ড ১ পাতা ৭৩২ এ জীবনী নং ৫০২৪ এ আমর বিন হারিসকে সাহাবী হিসাবে গননা করেছেন।মুসলিম বিন আকীলের গ্রেফতার ও লড়াইয়ের মুল হোতা আহলে সুন্নার কাছে অতি সম্মানিয় ব্যাক্তি। আহলে সুন্নাহ এনার থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তার হাদিস আহলে সুন্নাহর প্রধান প্রধান কেতাবে দেখা যায় যেমনঃ১) ‏সহিহ বুখারি।২) ‏সহিহ মুসলিম।৩) ‏সুনান আবু দাউদ।৪) ‏সুনান তিরমিযি।৫) ‏সুনান আন নাসাঈ।৬) ‏সুনান ইবনে মাজা।মুসতাদরাক আল হাকিম, ‏তাবারানি, ‏মুসনদে ইমাম আহমাদ আরো অনেক হাদিসের কিতাবে।মুসলিম বিন আকীলকে গ্রেফতার করার সময় অস্ত্রের যুদ্ধ হয় এবং তাতে মুসলিম বিন আকীল ঘায়েল হয়ে যান এবং তাকে গ্রফতার করা হয়ঃ ইবনে কাসীর তার ইতিহাস ‎‘আল বেদায় ও আন নেহায়া’ ‏এর খড ৮ পাতা ২৯৫ ‎( ‏বাংলা ইঃফা) ‏এ উল্লেখ করেছেনঃ“ ‏ঐতিহাসিকগন বলেন, ‏মুসলিম বিন আকীল যখন কুফার প্রশাসকের প্রাসাদদ্বারে পৌঁছল, ‏তখন সাহাবাদের ছেলেগনদের মধ্য থেকে তাঁর পরিচিত একদল আমির উমারা ছিলেন। ইবনে যিয়াদের সাক্ষাতের অনুমতির জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে মুসলিম গুরুতর আহত তাঁর মুখমণ্ডল ও কাপড় চোপড় রক্তে রঞ্জিত তিনি ভীষন পিপাসার্ত আর এই সময় সেখানে এক কলস ঠান্ডা পানি ছিল। তা থেকে পান করার জন্য তিনি কলসিটা ধরতে চাইলেন, ‏তখন তাদের এক ব্যাক্তি বলল ‎‘আল্লাহর কসম! ‏জাহান্নামের তপ্ত পানি পান করার পুর্বে তুমি তার থেকে পান করবে না’। তখন তিনি তাকে বললেন ‎‘তোমার সর্বনাশ হোক! ‏হে বাচ্চা! ‏আমার থেকে তুমি জাহান্নামের তপ্ত পানি এবং সেখানে চিরস্থায়ী হওয়ার বেশি উপযুক্ত’”।উপরের রেফারেন্স থেকে বোঝা গেল যে সাহাবী ও সাহাবীদের ছেলেপুলেরা কিভাবে ইমাম হুসাইন ‎(আঃ) ‏এর দুত মুসলিম বিন আকীলের হত্যায় জড়িত।যেসব সাহাবাদের ছেলেপুলেরা ইবনে যিয়াদের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছিল তাদের নাম ইবনে কাসীর উল্লেখ করেননি, ‏কিন্তু তাবারিতে নাম পাওয়া যায় যেমন, ‏কাসীর বিন শাবিবাহ বিন আল হুসাইব আল হারিসি। ইবনে সাদ তার তাবাকাত এ এই তাবেই সমন্ধে উল্লেখ করেছেন ‎“সে উমার বিন খাত্তাব থেকে বর্ননা করেছে এবং সে মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের গভর্নর ছিল’। ‎(খন্ড ৪ পাতা ১০৪)উপরের দলিল থেকে প্রমাণিত হল যে সাহাবা ও সাহাবাদের ছেলেপুলেরা ইমাম হুসাইন ‎(আঃ) ‏এর সাথিদের হত্যায় জড়িত ছিল।উসমানের ধর্মের লোকেরা ইমাম হুসাইন আঃ ও তাঁর সাথিদের হত্যাকান্ডে জড়িতএ বিষয় প্রমানের জন্য সরাসরি কারবালার যুদ্ধ থেকে তুলে ধরা হচ্ছে। যখন যুদ্ধ শুরু হয় এবং এক এক পক্ষ থেকে একজন একজন করে যুদ্ধ হচ্ছিল তখন হুসাইন ‎(আঃ) ‏এর দল থেকে নাফি বিন হিলাল বার হয়ে এসে বললেনঃ“আমি জামালি, ‏আলী আলির ধর্মে বিশ্বাস করি’।মুজাহিম আল হুরাইস নামে একজন বার হয়ে হুংকার ছাড়ল ‎‘আমি উসমানের ধর্ম অনুসরণ করি’।নাফি উত্তর দিল ‎‘বরং তুই শয়তানের ধর্ম অনুসরণ করিস’। আর পরে সে ‎(নাফি) ‏তাকে আক্রমণ করল ও হত্যা করল’। ‎(তাবারি খন্ড ১৯ পাতা ১৩৬,১৩৭)ইবনে যিয়াদ কুফার গভর্নর ছিল সে উসমানী ছিল এবং উসমান হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে নির্দেশ দেয়ঃ“হুসাইনের জন্য পানি বন্ধ করে দাও ঠিক সেই ভাবে যেভাবে আমিরুল মোমিনিন উসমানকে করা হয়েছিল”। ‎(তাবারি খন্ড ১৯ পাতা ১০৭)ইবনে কাসীর ‎(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খন্ড ৮ পাতা ৩২৮ ইঃফা): “হুসাইন আর পানির মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াও এবং তাদের সাথে সেই রকম ব্যবহার করো যে রকম ব্যবহার নিরপরাধ, ‏আল্লাহভীরু মজলুম আমিরুল মোমিনিন উসমানের সাথে করা হয়েছিল”।ইবনে কাসীর ‎(আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া খন্ড ৮ পাতা ৩৬৫ ইঃফা): “ইবনে যিয়াদ আল হারমাযুনের গভর্নরের আমর ইবনে সায়ীদের কাছে হুসাইনের নিহত হওয়ার সুসংবাদ দিয়ে পত্র প্রেরণ করলো সে একজন ঘোষকে ডেকে এই খবর ঘোষনা দিল। বনূ হাসিমের মেয়েরা যখন এই সংবাদ শুনল তারা উচ্চস্বরে কান্না বিপাল করতে লাগলো। তখন আমর বিন সায়ীদ বলতে লাগলো এই হল উসমান বিন আফফানের শোকে বিলাপকারীণিদের বদলা”।সুতরাং ইমাম হুসাইন ‎(আঃ) ‏এর হত্যাকে উসমানের হত্যার বদলা নেওয়া হিসাবে দেখা হয় এবং উসমানীদের বা উসমানের শিয়া বা অনুসরণকারিদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়।ইবনে তাইমিয়া তার ‎“মিনহাজ আস সুন্নাতে’ “যদি নাসেবী ইবনে সাদকে উসমানী বলা হয়, ‏সেটা এইজন্য যে উসমানের জন্য তার প্রতিশোধ নেওয়া ও তাকে প্রশংসা করার জন্য”।ইবনে তাইমিয়া আর উল্লখে করেছে ‎وقد كان من شيعة عثمان من يسب عليا ويجهر بذلك على المنابر“উসমানের শিয়ারা প্রকাশ্যে মিম্বার থেকে আলিকে গালি দিত”।মুহাম্মাদ বিন আশাস ‎/ ‏আশআস কে?এর আগে বেশ কয়েক বার এই নাম উল্লেখ হয়েছে এখানে আর একবার রিভিশন করা হল।কুফায় এসে ইবনে যিয়াদ সরকারি পুলিশদের নির্দেশ দেয় যে মুসলিম বিন আকিলকে সহ তার সাহায্যকারিদের গ্রেফতার করার জন্য। এই কাজের জন্য ইয়ামানি গোত্র প্রধান কাসির বিন শিবাব ও মুহাম্মাদ বিন আশাসকে ভার দেয়। তাবারী খন্ড ১৯ পাতা ৪৯;“কাসীর, ‏কালব গোত্রের একজনের সাথে দেখায় পায় যার নাম আবদুল আলা বিন ইয়াজিদ। সে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিল মুসলিম বিন আকীলের ও অন্যান্য যুবকদের সাথে যুক্ত হতে। কাসীর তাকে পাকড়াও করে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে গেল এবং এই ব্যাক্তির ব্যাপারে বলল, ‏কিন্তু লোকটা বলল যে সে তার কাছে আসছিল। ইবনে যিয়াদ বলল, ‘নিশ্চই নিশ্চই! ‏আমার মনে পড়েছে তুমি আমকে এই ব্যাপারে ওয়াদা করেছিলে’! ‏ইবনে যিয়াদ তাকে গারদে দিতে বলল।মুহাম্মাদ বিন আশাস বনু উমারাহ গোত্রের ঘরদের দিকে গেল। উমারাহ বিন সালখিন আল আজদি তার কাছে এলো, ‏সে অস্ত্র নিয়ে ইবনে আকীলের কাছে যাচ্ছিল। মুহাম্মাদ বিন আশাস তাকে ধরে ইবনে যিয়াদের কাছে পাঠাল, ‏ইবনে যিয়াদ তাকে কারাগারে দিল”।‘আল বেদায় ও আন নেহায়া’ ‏এর খড ৮ পাতা ২৯৪ ‎( ‏বাংলা ইঃফা) ‏এ উল্লেখ করেছেনঃوبعث ابن زياد عمرو بن حريث المخزومي وكان صاحب شرطته ومعه عبدالرحمن ومحمد بن الأشعث في سبعين أو ثمانين فارسا ، فلم يشعر مسلم إلا وقد أحيط بالدار“ইবনে যিয়াদ তার পুলিশ প্রধান আমর বিন হারিস আল মাখযুমিকে ৭০ বা ৮০ জন অশ্বারোহী দিয়ে পাঠালো সাথে আব্দুর রহমান ও মুহাম্মাদ বিন আশাসকে পাঠালো। মুসলিম বিন আকিল কিছু বোঝার আগেই সেই বাড়ি ঘিরে নেওয়া হয়…”।এখন আমরা দেখবো যে আহলে সুন্নাহরএই পুর্বপুরুষ মুহাম্মাদ বিন আশাস ও আহলে সুন্নাহর মধ্যে আঁতাত। যথারীতি আহলে সুন্নাহর ধর্মগুরু এই আহলে বাইত আঃ এর শত্রু। এর থেকে হাদিস শিক্ষা নিয়েছে আহলে সুন্নাহ আর অনেক ধর্ম গুরু। আমরা এই ব্যাক্তির হাদিস পাই নিম্নোক্ত হাদিসের কেতাব গুলিতেঃ১) ‏মুয়াত্তা এ ইমাম মালিক।২) ‏সুনানে ইমাম নাসাই।৩) ‏মুসনদে ইমাম হাম্বল।৪) ‏সুনান কুবরা, ‏বাইহাকী।মুসলিম এই ব্যক্তির নাতিপুতির থেকে হাদিস বর্ননা করেছেন।রেজাল শাস্ত্রে ইমামগণ যেমন ইবনে হিব্বান তাকে তার শিকাত এ উল্লেখ করেছেন। ‎(তাহযিব আল কামাল, ‏খন্ড ২৪ পাতা ৪৯৬)।ইবনে হাজর আস্কালানী তার তাকরীব আত তাহযীব এ তাকে তাবেঈন বলে উল্লেখ করেছেন এবং যার হাদিস কবুল করা যায় বলেছেন ‎(মকবুল)। ‎(খন্ড ২ পাতা ৫৭, ‏জীবনী নং ৫৭৬০)।এই মুহাম্মাদ ইবনে আশাস আহলে সুন্নাহর বড় সাহাবী পরিবারের সাথে যুক্ত, ‏তাহযিব আল কামাল খন্ড ২৪ পাতা ৪৯৫ ‎“মুহাম্মাদ বিন আশাস বিন কায়েস আল কিন্দি আবুল কাসেম আল কুফি, ‏তাঁর মা উম্মে ফারাহ বিন আবি কুহাফা যে আবু বকরের বোন”।আহলে বাইতের এই শত্রুকে মুখতার হত্যা করে। তাহযীব আল কামাল খন্ড ২৪ পাতা ৪৯৬قتله المختار سنة ست وستين“আল মুখতার তাকে ৬৬ সনে হত্যা করে”।প্রসঙ্গত একটা কথা পাঠকদের বলে রাখি সে এই মুখতার রহঃ কে আহলে সুন্নাহরা গালি দেয় নামে পরে কাজ্জাব লেখে এবং নিন্দা মন্দ করে। অথচ ইমাম হুসাইন ‎(আঃ) ‏হত্যায় জড়িত প্রায় সব লোকদের এই মুখতার হত্যা করে। সেই কারনেই হয়ত মুখতারের মত লোককে আহলে সুন্নাহ দেখতে পারে না। অথচ মুখতার তাবেঈ ছিল ও সাহাবীর ছেলে ছিল। পরে ইনশাল্লাহ এই বিষয় আর আলোচনা করা হবে। হুসাইন আঃ এর হত্যাকারীদের যে ব্যাক্তি সাজা দিয়েছে আহলে সুন্নাহর কাছে সেই মুখতার একজন জগন্য লোক ও মিথ্যাবাদী। এটাও প্রমান করে হুসাইন আঃ এর হত্যাকারীদের প্রতি আহলে সুন্নাহর মুহাব্বাতও আত্মিক একাত্ব।উমার বিন সাদ বিন আবি ওক্কাসউমার বিন সাদ হচ্ছে বিখ্যাত সাহাবী সাদ ইবনে আবি ওক্কাস এর পুত্র। সে সাদ বিন আবি ওক্কাস উমার বিন খাত্তাবের দ্বারা গঠিত খলিফা কমিটির একজন সদস্য ছিলেন ও খলিফা হওয়ার প্রার্থী ছিলেন।এই উমার বিন সাদ কারবালায় ইয়াজিদের বাহিনীর সেনাপতি ছিল। এই উমার বিন সাদ যে ইয়াজিদকে চিঠি লিখেছিল যে কুফার গভর্নর নুমান বিন বাসীর দুর্বল লোক। এই উমার বিস সাদকে ইয়াজিদ তার চিঠিতে লিখেছিল যে আমার শীয়া। অর্থাৎ এই উমার বিন সাদ ইয়াজিদের শীয়া ছিল।তখন কুফায় ইয়াজিদের শীয়ারা ‎– ‏ইয়াজিদের দলের লোকেরা ইয়াজিদকে চিঠি লেখেঃ“মুসলিম বিন আকীল কুফায় এসেছে আর শীয়ারা হুসাইন বিন আলির হয়ে তার হাতে বায়াত করছে। যদি আপনি কুফানদের চান তবে একজন কঠিন লোককে এখানে পাঠান যে আপনার হুকুম তালিম করবে এবং ওই কাজ করবে ঠিক সেই ভাবে আপনি আপানার শত্রুদের প্রতি ব্যবহার করেন। নুমান বিন বাশীর একজন দুর্বল লোক বা দুর্বলের মত ব্যবহার করছে”। ‎(তাবারি খন্ড ১৯, ‏পাতা ৩০)এই ধরনের চিঠি যা ইয়াজিকে কুফা থেকে আহলে সুন্নাহর মোতবার লোকেরা লিখেছিল তাদের নামঃ১) ‏আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন সাইদ আল হাযরামি ২) ‏আম্মারা বিন উকবাহ ৩) ‏উমার বিন সাদ বিন আবি ওক্কাস। ‎(তাবারি খন্ড ১৯ পাতা ৩০)ইয়াজিদ বসরা/কুফার গভর্নর ইবনে যিয়াদকে চিঠি লেখেঃ“কুফা থেকে আমার শিয়ারা আমাকে লিখেছে যে ইবনে আকীল কুফাতে অবস্থান করছে এবং লোকজন জড়ো করছে মুসলিমদের মধ্যে বিদ্রোহ করার জন্য। সুতারং তুমি যখন আমার এই পত্র পড়বে কুফায় যাও ও ইবনে আকীলকে খোঁজ এমন ভাবে যেন তুমি দানা খুজছো এবং তাকে খুঁজে বার কর। তাকে চেন দিয়ে বাধো, ‏হত্যা করো কিংবা বিতাড়িত করো’। ‎( ‏তাবারী খন্ড ১৯ পাতা ১৮ এবং ৩১)এই উমার বিন সাদই প্রথম ব্যাক্তি যে কারবালার যুদ্ধে প্রথম তীর ছোটে এবং বলে সাক্ষী থেকে আমি প্রথম তীর ছুড়েছি।বুখারি তার তারিখ আস সাগীর এর উল্লেখ করেছেনঃأبو المعلي العجلي قال سمعت أبي أن الحسين لما نزلكربلاء فأول من طعن في سرادقه عمر بن سعد“আবু মুয়ালি আল ইজলি তার পিতা থেকে বর্ননা করেছেন যে ‎“ ‏যখন হুসাইন কারবালায় এল, ‏উমার বিন সাদ প্রথম ব্যাক্তি ছিল যে তাবুগুলির দড়িগুলি কেটে দিয়েছিল”। ‎(বুখারি তারিখ আস সগীর, ‏খন্ড ১ পাতা ১৭৮)ইমাম যাহাবি তার বিখ্যাত বই সিয়ার আলাম আন নাবুলা এখন খন্ড ৪ পাতা ৩৪৯ঃ এ উল্লেখ করেছেনঃ“উমার বিন সাদ, ‏সেনাপতি ছিল হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী বাহিনীর, ‏অতপর মুখতার তাকে হত্যা করে’।কয়েক বছর পরে মুখতার রহঃ যখন ইবনে যিয়াদ কে তাড়ায় আর একে একে ইমাম হুসাইন আঃ এর হত্যাকারীদেরকে হত্যা করে তখন এই উমার বিন সাদকেও হত্যা করে।এখন দেখা যাক আহলে সুন্নাহর সাথে এই লানত প্রাপ্ত লোকের সখ্যতা ও আহলে সুন্নাহ কেমন ভাবে এই তাদের এই মহান ব্যাক্তির থেকে হাদিস ও ধর্ম শিক্ষা নিয়েছে।আহলে সুন্নাহর রেজাল শাস্ত্রের পণ্ডিত হাফেজ ইবনে হজর আস্কালানি তার ‎‘তাহযীব আত তাহযীবে’র খন্ড ৭ পাতা ৩৯৬ এ ৭৪৭ নং বায়োগ্রাফিতে উল্লেখ করেছেন।عمر بن سعد بن أبي وقاص الزهري أبو حفص المدنيسكن الكوفة.روى عن أبيه وأبي سعيد الخدري.وعنه ابنه ابراهيم وابن ابنه أبو بكر بن حفصابن عمر وأبو إسحاق السبيعي والعيزار بن حريث ويزيدبن أبي مريم وقتادة والزهري ويزيد بن أبي حبيبوغيرهم“উমার বিন সাদ বিন আবি ওক্কাস আল যুহুরি আবু হাফস আল মাদানি কুফার বাসিন্দা। সে তার পিতা ও আবু সাইদ আল খুদরি থেকে ‎(হাদিস) ‏বর্ননা করেছেন। আর তার ছেলে ইব্রাহিম, ‏পৌত্র আবু বকর বিন হাফস বিন উমার, ‏আবু ইসহাক আল সাবেই, ‏আইজার বিন হারিস, ‏ইয়াজিদ বিন আবি মরিয়াম, ‏কাতাদা, ‏যুহুরি ও ইয়াজিদ বিন আবি হাবীব ও অন্যান্যরা তার থেকে ‎(হাদিস) ‏বর্ননা করেছেন”।ইবনে হাজর আস্কালানী তার ‎‘তাকরিব আত তাহযীবে’র খণ্ড ১ পাতা ৭১৭ এ উমার বিন সাদ ইবনে আবি ওক্কাসকে ‎‘সুদুক’ (সত্যাবাদী/বিশস্ত হাদিস বর্ননাকারী, ‏সত্যবাদী ধর্ম শিক্ষা দাতা) ‏সেই সাথে উল্লখে করেছেন যে হুসাইন আঃ এর বিরুদ্ধে সেনার আমীর ছিল!عمر بن سعد بن أبي وقاص المدني نزيل الكوفة صدوقولكن مقته الناس لكونه كان أميرا على الجيش الذينقتلوا الحسين بن عليআহলে সুন্নাহর রেজাল শাস্ত্রের ইমামদের ইমাম আল ইজলি এর কথা ‎‘তাহযীব আল কামাল খন্ড ২১ পাতা ৩৫৭ এ ‎(বায়োগ্রাফি নং ৪২৪০) ‏এ আমার পড়িঃوقال أحمد بن عبدالله العجلي (2): كان يروي عن أبيهأحاديث، وروى الناس عنه.وهو الذي قتل الحسين، وهو تابعي ثقة.“আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল ইজলি বলেছেন ‎‘ ‏সে ‎(উমার বিন সাদ) ‏তার পিতা থেকে ‎(হাদিস) ‏বর্ননা করত, ‏এবং জনগণ তার থেকে বর্ননা করেছে। এবং হুসাইনের কাতিলদের একজন, ‏এবং শিকা তাবেঈ’।পাঠকগন দেখুন আহলে সুন্নাহর মহান ইমামের কাছে এই ব্যাক্তি ‎‘শিকা’ ‏অর্থাৎ বিশস্ত!।সালাফি ওহাবি ও উমাইয়া মেন্টালিটির প্রিয় রেজাল ও ইতিহাসের ইমাম, ‏ইমাম যাহাবি তার কেতাব ‎‘মিযান আল এতিদাল’ ‏এর খন্ড ৩ পাতা ১৯৮ এ উমার বিন সাদ লানতি এর সমন্ধে লিখেছেনঃهو في نفسه غير متهم “ব্যাক্তিত্ব হিসাবে তাকে তিরস্কার করা হয় না”।এই লানতি ব্যাক্তি থেকে আহলে সুন্নাহর মুহাদ্দেসগন প্রবল ভাবে হাদিস নিয়েছেন। যেমনঃ১) ‏ইমাম নাসাই, ‏তার সুনান আন নাসাই এ। সালাফিদের গুরু আলবানি এই হাদিসকে সাহিহ ও বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন।৩) ‏আহলে সুন্নাহর ফেকার ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তার মুসনদে একাধিক বার এই লানতির থেকে হাদিস নিয়েছেন।*আরও মজার ব্যাপার সালাফিদের প্রিয় মুহাদ্দিস সুয়াইব আরনাউত মুসনদে আহমাদের তাহকিকে এই হাদিস গুলির সনদ ‎‘হাসান’ (উত্তম) ‏বলে সার্টিফাই করেছেন। ‎(দেখুন রেসালা পাবলিকেশনের, ‏ওস্তাদ সুউয়াইব আরনাউত কতৃক তাহাকিক করা মুসনদে আহমাদের খন্ড ৩ এর হাদিস নং ১৪৮৭, ‏১৫৩১, ‏১৫৭৫)*আহলে সুন্নাহর মুহাক্কিক শেইখ আহমাদ শাকির তার তাহাক্কিক কৃত মুসনদে আহমাদ ‎(দারুল হাদিস, ‏কায়রো থেকে প্রকাশিত) ‏এই উমার বিন সাদ লানতির হাদিসকে সাহিহ সনদ বলেছেন। ‎(হাদিস নং ১৫১৯ দেখুন)সুতারং একথা সহজেই বোঝা যায় যে আহলে সুন্নাহের সাথে হুসাইন আঃ এর কাতিলদের কত ঘনিষ্ঠতা এবং এটাও প্রমান হয় যে হুসাইন আঃ এর হত্যাকারীরা কোন দলের। বরং সরাসরি প্রমান হয় এরা যে আহলে সুন্নাহর দলের ও আহলে সুন্নাহর পুর্বজও বটে। যাদের উপর আহলে সুন্নাহর শিক্ষাদীক্ষা অনেকটাই নির্ভর করে আছে।উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ বা উবাইদুল্লাহ ইবনে আবিহাইবনে যিয়াদের পরিচয় দেওয়া লাগবে না। ইবনে যিয়াদ লাঃ কুফা ও বসরার গভর্নর ছিল। ইয়াজিদের নির্দেশে ইমাম হুসাইন আঃ কে বিরুদ্ধে যুদ্ধের সেনা পাঠায় এবং কারবালায় ইমাম হুসাইন আঃ হত্যা করে।ইমাম হুসাইন আঃ মক্কা ছেড়ে কুফায় যাত্রা করছেন সেটার খবর পাওয়ার পরে ইয়াজিদ, ‏ইবনে যিয়াকে চিঠি লেখেঃ ইবনে কাসীর ইতিহাস ‎‘আল বেদায় ও আন নেহায়া’ ‏এর খড ৮ পাতা ৩১২ ‎( ‏বাংলা ইঃফা)“আমার কাছে সংবাদ পৌঁছিয়েছে যে, ‏হুসাইন কুফা অভিমুখে রওনা হয়েছে, ‏এর ফলে আমার গভর্নরদের মধ্যে তুমি পরিক্ষার সম্মুখীন হয়েছো। এই পরিক্ষার ফলের উপর তোমার মুক্তি ও সম্মান লাভ নির্ভর করবে। কিংবা ক্রীতদাসের মত দাসত্ব ও অপমান বহন করবে। আর এই কারণেই ইবনে যিয়াদ তাকে হত্যা করে ও ইয়াজিদের কাছে তাঁর মাথা পাঠিয়ে দেয়”।ইবনে হজর আশকালানি তার ‎‘তাজিল আল মুনফ’আ বিজওয়াইদ রিজাল আল আইম্মাতুল আরবা’ ‏এর খন্ড ১ পাতা ৮৪০ এ উল্লেখ করেছেনঃعبيد الله بن زِيَاد أَمِير الْكُوفَة لمعاوية ولابنه يزِيد وَهُوَالَّذِي جهز الجيوش من الْكُوفَة للحسين بن عَليّ رضىالله تَعَالَى عَنْهُمَا حَتَّى قتل بكربلاء وَكَانَ يعرف بِابْنمرْجَانَة وَهِي أمه وَقد ذكر لَهُ بن عَسَاكِر فِي تَارِيخدمشق تَرْجَمَة وَجرى ذكره فِي سنَن أبي دَاوُد وَلم يترجملَهُ الْمزي وَمن تَرْجَمته أَنه ولد فِي سنة اثْنَتَيْنِ أَو ثَلَاثوَثَلَاثِينَ وروى عَن سعد بن أبي وَقاص وَمُعَاوِيَة وَمَعْقِلبن يسَار وَابْن أُميَّة أخي بني جعدة وروى عَنهُ الْحسنالْبَصْرِيّ وَأَبُو الْمليح بن أُسَامَة“… ‏সে উমাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ, ‏কুফার আমির ছিল মুয়াবিয়া ও তার ছেলে ইয়াজিদের তরফ থেকে এবং সে কুফা থেকে সেনা বাহিনী প্রস্তুত করেছিল হুসাইনের ‎(রাঃ) ‏এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য কারবালায় তার কতল পর্যন্ত।সে ইবনে মারজানা নামে পরিচিত ছিল আর সে ‎(মারজানা) ‏তার মা ছিল।ইবনে আসাকির তারিখে দামিস্কে তার জীবনী উল্লেখ করেছেন আর সুনানে আবু দাউদে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে………………. ‏এবং সে সাদ ইবনে আবি ওক্কাস, ‏মুয়াবিয়া, ‏মাকেল বিন ইয়াসির এবং বানি জাদাহ এর ভাই ইবনে উমাইয়া থেকে ‎(হাদিস) ‏বর্ননা করেছে এবং তার থেকে হাসান বসরি ও আবু মালিহ বিন উসামা ‎(হাদিস) ‏বর্ননা করেছেন”।ইবনে যিয়াদ কুফার গভর্নর ছিল সে উসমানী ছিল এবং উসমান হত্যার প্রতিশোধ হিসাবে নির্দেশ দেয়ঃ“হুসাইনের জন্য পানি বন্ধ করে দাও ঠিক সেই ভাবে যেভাবে আমিরুল মুমিনিন উসমানকে করা হয়েছিল”। ‎(তাবারি খন্ড ১৯ পাতা ১০৭)ইবনে যিয়াদ মুয়াবিয়ার খাস লোক ছিল ‎(এর আগেও প্রমান দেওয়া হয়েছে) ‏এবং মুয়াবিয়ার থেকে হাদিস বর্ননা করেছেঃ ইবনে কাসীর তার ‎‘আল বেদায়া ওয়া আন নেহায়া’তে ‎(খণ্ড ৮ পাতা ৫০৬ বাং)قال ابن عساكر وروى الحديث عن معاوية وسعد بن أبي وقاص ومعقل بن يسار ، وحدث عنه الحسن البصري وأبوالمليح بن أسامة“ইবনে আসাকির বলেছেন যে,সে ‎(উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ) ‏মুয়াবিয়া, ‏সাদ ইবন আবি ওক্কাস,মাকাল বিন ইয়াসির থেকে হাদিস বর্ননা করেছে,আর তার থেকে হাসান বসরি ও আবু মালিহ বিন উসামা বর্ননা করেছে”।আহলে সুন্নাহদের কাছে যেমন মুয়াবিয়া মহান ব্যাক্তি এই ইবনে যিয়াদের কাছেও মুয়াবিয়া তেমন মহান,আহলে সুন্নাহ তাদের হাদিস ধর্ম শিক্ষা এই লানতির থেকে নিয়েছে।নাসেবীদের জন্য আরও দলিল দেওয়া হল ঠিক যেমন আহলে সুন্নাহর কাছে ইয়াজিদ আমিরুল মুমিনিন ও ষষ্ট খলিফা ইবনে যিয়াদের লাঃ এর কাছে ইয়াজিদ আমিরুল মোমিনিন ও খলিফা। এটা প্রমান করে যে আহলে সুন্নাহও ইবনে যিয়াদের অনুসারী।ইবনে যিয়াদ, ‏আমর বিন সাদকে লেখেঃ ইবনে কাসীর(বেদায়া আন নেহায়া খন্ড ৮ পাতা ৩২৮ ইঃফা)“হুসাইন আর পানির মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াও এবং তাদের সাথে সেই রকম ব্যাবহার করো যে রকম ব্যবহার নিরপরাধ, ‏আল্লাহভীরু মজলুম আমিরুল মোমিনিন উসমানের সাথে করা হয়েছিল। আর হুসাইন ও তার সাথিদের আমিরুল মুমিনিন ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বায়াতের জন্য প্রস্তাব দাও”।এর আগে দেখানো করা হয়েছে যে ইয়াজিদ খ্রিস্টান উপদেষ্টা স্যার জনের পরামর্শে ইবনে যিয়াদকে কুফার গভর্নরের দায়িত্ব আবার দেয়। উপরের দলিলাদি থেকে প্রমাণিত হয় যে ইবনে যিয়াদ উসমানী ছিল এবং উসমানকে আমিরুল মোমিনিন মানত, ‏ঠিক যেমন আজকের আহলে সুন্নাহ মানে, ‏মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদকে আমিরুল মোমিনিন বলে মানত ঠিক যেমন আজকের আহলে সুন্নাহ ও নাসেবীরা মানে।আহলে সুন্নাহ যে ইবনে যিয়াদের উত্তর পুরুষ তা উপরের দলিল সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়। শিমর বিন যুলজোশান আল মানুল লাঃশিমর বিন যুলজোশান ইমাম হুসাইন আঃ কে তার ধড় থেকে মাথা আলাদা করে হত্যা করে। আহলে সুন্নাহর এই শিমর বিন যুলজোশানকে নিয়ে মহা বিপদে আছে না পারে গিলতে না পারে উগরাতে। গলায় এমন ভাবে আটকিয়ে আছে যে আহলে সুন্নাহ আওয়াজ করেতে পারে না, ‏কিছু বলতে চাইলে গ্যা গোঁ আওয়াজ বার হয়। ফলে আহলে সুন্নাহর ওই আওয়াজ সুনে বলে যে শিমর সিফফিনের যুদ্ধে আলির ‎(আঃ) ‏এর দলে ছিল ফলে সে শিয়া ছিল। এজন্য তারা একটা রেফারেন্স দেয়ঃআল কুম্মিয়ের কেতাব ‎‘সাফিনাতুন নাজাতের’ ‏খন্ড ৪ পাতা ৪৯২ তে আল কুম্মি লিখেছেন ‎“আমি বলি, ‏শিমর সিফফিনের যুদ্ধে আমিরুল মোমিনিনের সেনা বাহিনীতে ছিল”।সুতরাং ইতিহাসিক ভাবে যেটা এসেছে, ‏শিমর লানাতুল্লাহ আলইহি সিফফিনের যুদ্ধে ইমাম আলী আঃ এর পক্ষে ছিলো। সুতরাং তাঁদের প্রোপ্যাগান্ডা যথারিতি শুরু!! ‏শিমর শিয়া ছিল, ‏শিমর শিয়া ছিল!!এই কথার জবাবঃ ১) ‏তালহা, ‏যুবাইর ইমাম আলী আঃ এর হাতে হাত রেখে বায়াত করেছিল। এখন যারা যে যুক্তিতে বলে শিমর শীআ ছিল তারা তালহা ও যুবাইরকে কি বলবেন? ‏শিয়া ‎?২) ‏যখন ইমাম আলী আঃ এর বায়াত হয় তখন যারাই ইমাম আলী আঃ কে মেনেছিল তারা পরবর্তী ইসলামে শাসক হিসাবে মেনেছিল, ‏তাঁদের মধ্যে সাধারণ লোক, ‏সুন্নি আকীদা এর লোক- ‏যারা আবু বকর উমার ও উসমানের খিলাফাতকে বৈধ মনে করে এবং শুধু মাত্র সাধারণ লোকজন ‎(যাদের কাছে কে খলিফা হল কোন যাই আসে না) ‏ও শীয়া আকীদার লোক ছিল-যারা ইমাম আলী আঃ কেই একমাত্র বৈধ খলিফা মনে করত। ‎(এ বিষয় প্রথম অধ্যায় আলোচনা বিশদ করা হয়েছে।) ‏সুতরাং ইমাম আলী এর হাতে বায়াত হলেই বা সিফফিনে আলী আঃ এর সেনা দলে থাকলেই যে সে শীয়া ছিল তার কোন প্রমান নেই।কেননা আহলে সুন্নার প্রচুর লোক আলী আঃ এর হাতে বায়াত হয়েছিল ও সিফফিনেও আলী আঃ এর সেনা দলে ছিল।৩) ‏৩৮ হিজরিতে যখন সিফফিনের যুদ্ধে যারাই ইমাম আলী আঃ এর দলে যোগ দিয়েছিল সবাই আকাইদ এ শীয়া ছিল না। রাষ্ট্র এর প্রধান হিশাবে ইমাম আলী আঃ এর দলে সুন্নি সহ বিভিন্ন যায়গা থেকে বহু গোত্র ইমাম আলী আঃ এর দলে যোগ দিয়েছিল। শিমর ও ইমাম আলী আঃ এর দলে ছিল।৬১ হিজরিতে কারো দ্বারা অনুষ্ঠিত কাজ ৩৭/৩৮ হিজরিতে সেই ব্যাক্তি কোথায় ছিল সেটা দিয়ে বিচার হয় না। বহু লোক ধর্মপ্রান মুসলিম ছিল পরে নাস্তিক হয়ে গিয়েছে। এমন কি আল্লাহের রাসুল সাঃ এর এক ওহি লেখক ও মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল।সুতারং শিমর ৬১ হিজরিতে কার দলের হয়ে কার নির্দেশে ইমাম হুসাইন আঃ কে কতল করেছে সেটা বিবেচ্য। ৬১ হিজরিতে ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে যিয়াদের চিঠি নিয়ে শিমর লাঃ কারবালায় আসে এবং ইমাম হুসাইন আঃ কে কতল করে।৪) ‏নাসেবীদের জন্য কাউন্টার প্রশ্নঃ নাসিবিরা যদি এক কথায়ে বলতে চায় যে সিফফিনে ইমাম আলী আঃ এর দলে যারা ছিল তারা শিয়া তবে মুয়াবিয়ার দলে কারা ছিল? ‏নিশ্চয়ই আহলে সুন্নাহরা আর নাসিবিরা।আহলে সুন্নাহর খেলাফতি আকীদায় পরম্পরার দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে যে শিমর আহলে সুন্নাহর মাজহাবের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি ছিল। আহলে সুন্নাহরা আবু বকর ‎,উমার, ‏উসমান ও আলি আঃ এর খিলাফাত মানে এবং তারপরে মুয়াবিয়াকে মানে এবং অতি উচ্চ ধরনা রাখে, ‏তার পরে ইয়াজিদেকে খলিফা/আমীর মানে এবং এর পরে উমাইয়া ও আব্বাসিদের তার পরে তুর্কিদের খলিফা হিসাবে মান্য করে।শিমর সিফফিনে আলী আঃ এর দলে ছিলে তার পরে মুয়াবিয়ার খিলাফত মান্য করে তার পরে ইয়াজিদকে আমিরুল মোমিনিন মানত।৫) ‏এখন আমি দেখাব শিমর এর মেলামেশা, ‏সখ্যতা কাদের সাথে ছিল। আহলে সুন্নার বড় বড় আলেম দের সাথে ছিল।ইমাম আবু ইশাক ‎(মৃঃ১২৯) ‏আহলে সুন্নাহর বড় মাপের তাবেই যার সম্বন্ধে সুন্নি রেজাল শাস্ত্রের ইমাম গনদের অন্যতম ইমাম যাহাবি তার সিয়ার আলাম আন নাবুলাতে লিখেছেনঃ ‎-“শেইখ, ‏আলেম, ‏কুফার মুহাদ্দিস ‎” (খণ্ড ৫ পাতা ৩৯২)তারিখে হুফফাজ- ‏ইমাম যাহাবিঃ ‎“ফুযাউইল বলেছেন ‎‘ ‏আবু ইশাক প্রত্যেক তিন দিনে কুরআন খতম করতেন………… ‏তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন, ‏তাকওয়া ধারী, ‏জ্ঞানের পাত্র ছিলেন, ‏আরও গুনাগুন ছিল”। ‎(খণ্ড ১ পাতা ১১১)এখন দেখুন আবু ইশাক আর শিমর লানাতুল্লাহ আলাইহি একসাথে নামায পড়ছেন। এখানে বোঝা যায় শিমর কে ছিল।মিযান আল এতেদাল, ‏ইমাম যাহাবিঃ ‎“আবু ইশাক বলেছেন, ‏শিমর আমাদের সাথে নামায পড়ত আর বলত যে ‎‘ও আল্লাহ তুমি যান আমি সৎ লোক তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও’। আমি বললাম ‎‘আল্লাহ কেন তোমাকে ক্ষমা করে দেবেন যখন তুমি রসূল আল্লাহের সন্তানের হত্যায় অংশগ্রহণ করেছ’? ‏সে ‎(শিমর) ‏বলল ‎‘তোমার অহ! ‏আমি কি করতাম? ‏আমাদের শাসক এই রকম করতে বলেছিল। আমরা তাদের অবাধ্য হয়নি……………’। আমি ‎(আবু ইশাক) ‏বললাম ‎‘বাহ ভাল অজুহাত! ‏নিশ্চয়ই হুকুম মান্য করা শুধু ভাল কাজের জন্য হয়’।” ( ‏খণ্ড ২ পাতা ২৮০)উপরের শিমর আর আবু ইশহাকের কথা থেকে এটা পরিষ্কার যে শিমর কাদের সাথে নামায পড়ত, ‏উঠাবসা করত। আরও এটা জানা যায় যে শিমর কার হুকুমে ইমাম হুসাইন আঃ কে হত্যা করেছিল!শিমার শুধু সুন্নি ছিল না, ‏সুন্নিরা শিমারের থেকে শিক্ষা নিয়েছে, ‏হাদীস নিয়েছে!মিযান আল এতেদাল, ‏ইমাম যাহাবি, ‏শিমারের জীবনীর আলোচনাতে ‎[ شمر ] 3742 – شمر بن ذى الجوشن، أبو السابغة الضبابى. عن أبيه. وعنه أبو إسحاق السبيعى.“……………… ‏আবু ইশাক তার( ‏শিমর) ‏থেকে বর্ণনা করেছেন”আহলে সুন্নাহর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল তার মুসনাদে শিমরের থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন!শাবাষ বিন রাবেইঃহুসাইন আঃ কে আহলে সুন্নাহর পিতৃপুরুষদের মধ্যে যারা চিঠি লিখেছিল তাদের নেতা ছিল এই ব্যাক্তি। এই ব্যাক্তি কারবালায় ইমাম হুসাইন আঃ এর বিরুদ্ধে আমর বিন সাদের বাহিনীতে যুক্ত হয়েছিল। এর ব্যাপারে আগেই সংক্ষেপে বলা হয়েছে। এখানে আহলে সুন্নাহর এই পিতৃব্যের আরো একটু আলোচনা করা হলঃআহলে সুন্নাহর রেজাল ও হাদিস শাস্ত্রের ইমাম যাহাবি তার ‎‘সিয়ার আলাম নাবুলা’র খন্ড ৪ পাতা ১৫০ এ উল্লেখ করেছেনঃشَبَثُ بنُ رِبْعِيٍّ * التَّمِيْمِيُّ اليَرْبُوْعِيُّأَحَدُ الأَشْرَافِ وَالفُرْسَانِ، كَانَ مِمَّنْ خَرَجَ عَلَى عَلِيٍّ، وَأَنْكَرَعَلَيْهِ التَّحْكِيْمَ، ثُمَّ تَابَ وَأَنَابَ.وَحَدَّثَ عَنْ: عَلِيٍّ،وَحُذَيْفَةَ.وَعَنْهُ: مُحَمَّدُ بنُ كَعْبٍ القُرَظِيُّ، وَسُلَيْمَانُالتَّيْمِيُّ.لَهُ حَدِيْثٌ وَاحِدٌ فِي (سُنَنِ أَبِي دَاوُدَ)“আশরফ ও বাহাদুর একজন…………সে আলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং সালিশি মানতে অস্বীকার করেছিল, ‏পরে তওবা করেছিল। সে হাদিস বর্ননা করেছে আলী, ‏হুজাইফা থেকে এবং তার থেকে মুহাম্মাদ বিন ক’আব আল কারদ্বি ও সুলাইমান তামিমি হাদিস বর্ননা করেছে, ‏সুনান আবি দাউদে তার একটা হাদিস উল্লখে আছে”।ইবনে মাজা তার থেকে হাদিস নিয়েছে, ‏বুখারিরি ওস্তাদ আব্দুর রাজ্জাক ও ইবনে আবি শায়বা তাদের নিজ নিজ মুসান্নাফে শাবাষ থেকে হাদিস বর্ননা করেছে। আহলে সুন্নাহর বড় রেজাল শাস্ত্রের পণ্ডিত ইবনে হিব্বান তাকে তাঁর শিকাত এ উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে সে ভুল করেছে ‎(হাদিস বর্ননায়)।এ লানতি আহলে সুন্নাহর কাছে মর্যাদা রাখে তা উপরে দলিল সমূহ থেকে বোঝা যাচ্ছে। এর থেকে আহলে সুন্নাহ হাদিস নিয়েছে ধর্ম শিক্ষা নিয়েছে!আবু দাউদের হাদিসঃحَدَّثَنَا عَبَّاسٌ الْعَنْبَرِيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ عَمْرٍو حَدَّثَنَاعَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْهَادِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِكَعْبٍ الْقُرَظِيِّ عَنْ شَبَثِ بْنِ رِبْعِيٍّ عَنْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامعَنْ …النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذَا الْخَبَرِআবু দাউদ এই হাদিসে কোন কমেন্ট করেনি সুতারং আবু দাউদ এই হাদিসের সনদ সহিহ মানত। কেননা আবু দাউদ বলেছেন যে আমার কেতাবে কোন হাদিসে সমস্যা থাকলে তাকে সেখানে আমি মন্তব্য লিখব, ‏আর আমি কোন মন্তব্য না করার অর্থ সেই হাদিস বিসস্ত। ‎( ‏সুত্র সওকানির ‎‘নিল আল আওতার’ ‏খন্ড ১ পাতা ১৫)ইমাম নাসাইয়ের সুনান আল কাবীরের হাদিসের অংশ বিশেষঃأخبرنا أحمد بن عمرو بن السرح قال أخبرنا بن وهبقال أخبرني عمرو بن مالك وحيوة بن شريح عن بنالهاد عن محمد بن كعب عن شبث بن ربعي عن …عليبن أبي طالب قال قدم على رسول الله صلى الله عليهوسلم سبي فقال علي لفاطمةসুতারং ইমাম হুসাইন আঃ কে চিঠি লিখে এবং পরে ইয়াজিদের বাহিনীতে যোগ দেওয়া ‎‘মহান’ ‏লোকের সাথে আহলে সুন্নাহের প্রগাড় সম্পর্কের ও সম্পৃক্ততা একটা প্রমানিত ও উন্মুক্ত ব্যাপার। আহলে সুন্নাহর শিক্ষা দীক্ষা সেই সন হত্যাকারীদের সাথে সম্পর্কিত। আরো প্রমান হয় যে আহলে সুন্নাহর বরং এই সব লোকদের উত্তরসুরি।ইমাম হুসাইন আঃ এর হত্যা কারীদের মাযহাবের আরো কিছু প্রমানঃইমাম হুসাইন আঃ এর শাহাদতের পরে শিয়াদের ইমামত এর ধারার ইমাম হন যাইনুল আবেদিন আঃ যাকে ঘিরে আকাইদি শিয়াদের আনাগোনা ছিল, ‏তাঁর কাছ থেকে শিয়ারা শিক্ষা গ্রহন করত। সহিফাহ এ সাজ্জাদিয়া ইমাম যাইনুল আবেদিন আঃ এর দোয়ার কেতাব।অপর দিকে আহলে সুন্নাহরা তাদের নেতাদের কাছে যেত ও শিক্ষা গ্রহন করতো ফতোয়া গ্রহন করত। যেমন আহলে সুন্নাহর দ্বীনের এক অংশ যার উপর নির্ভর করে সেই ইবনে উমার। ইবনে উমার ইয়াজিদের এক ভক্ত ছিল এর আগে দেখানো হয়েছে যে টাকা খেয়ে ইয়াজিদকে ইবনে উমার বায়াত করে। ইবনে উমার ইয়াজিদের জন্য প্রবল ভাবে ক্যানভাস করেঃসাহিহ আল বুখারিঃ ইফাঃ অনলাইনঃ ৬৬২৬। ‎“সুলায়মান ইবনু হারব ‎(রহঃ) … ‏নাফি ‎(রহঃ) ‏থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ‏যখন মদিনার লোকেরা ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া ‎(রাঃ) ‏এর বায়আত ভঙ্গ করল, ‏তখন ইবনু উমর ‎(রাঃ) ‏তার বিশেষ ভক্তবৃন্দ ও সন্তানদের সমবেত করলেন এবং বললেন, ‏আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ‏কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ‎?