পোস্টগুলি

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂

ইমাম মাহদী আঃ এর দাদা ইমাম হাদি আঃ এর অলৌকিক নানান ঘটনামহানবী (সা:)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। মাওলা হযরত মোঃ (সা:) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্যে অতি মূল্যবান বা ভারী ও সম্মানিত দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছিঃএকটি হল আল্লাহর কিতাব ও অপরটি হল আমার আহলে বাইত।অতঃপর নিশ্চয়ই এ দুটি জিনিস হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। মুসলিম ও তিরমিজি শরীফের এ হাদিস অনুযায়ী মহানবী (সঃ)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের জানা এবং তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।মহানবী (সা:)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। খোদা পরিচিতি আর সৌভাগ্যের পথরূপ আলোর অফুরন্ত আলোকধারাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা রেখে গেছেন সংগ্রাম আর জ্ঞান-প্রদীপ্ত খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল আদর্শ। ইসলাম তার প্রকৃত রূপকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য এই আহলে বাইত (আ.)’র কাছে চিরঋণী। বিশ্বনবী (সা.)’র সেই মহান আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম নাকী বা হাদী (আ.)’র শাহাদত-বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা এবং আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য সালাম ও দরুদ।ইমাম নাকী বা হাদী (আ.) ২২০ হিজরিতে পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের গুরু দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২১২ হিজরির ১৫ ই জিলহজ বা খৃষ্টীয় ৮২৮ সালে পবিত্র মদীনার উপকণ্ঠে। ইমাম নাকী (আ.)’র মায়ের নাম ছিল সুমমানা খাতুন। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)’র আহলে বাইতের ধারায় ইমাম হাদী ছিলেন দশম ইমাম। মহত্ত্ব আর সর্বোত্তম মানবীয় সব গুণ ছিল তাঁর ভূষণ।হজরত ইমাম হাদি (আ:)'র শাহাদতবার্ষিকীক্ষমতাসীন আব্বাসীয় শাসকরা আহলে বাইতের প্রত্যেক সদস্যকে জন-বিচ্ছিন্ন করে রাখতো যাতে তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য পতনের কারণ না হয়। শিশু ইমাম হাদী (আ.)-কে সুশিক্ষিত করার নামে তাঁকে জন-বিচ্ছিন্ন করে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে তাঁর কাছে পাঠান। আবদুল্লাহ জুনাইদি নামের এই পণ্ডিত অল্প কয়েকদিন পরই ইমামের অতি উচ্চ মর্যাদা তথা ইমামতের বিষয়টি বুঝতে পারেন। শিশু ইমাম হাদী (আ.)’র জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করে জুনাইদি বলেছেন:'জ্ঞানের যে ক্ষেত্রেই আমি আমার পাণ্ডিত্য তুলে ধরার চেষ্টা করতাম সেখানেই বনি হাশিমের এই মহান ব্যক্তিত্ব আমার সামনে বাস্তবতার দরজাগুলো খুলে দিতেন।... সুবাহানআল্লাহ! এত জ্ঞান তিনি কিভাবে আয়ত্ত্ব করেছেন? মানুষ ভাবছে যে আমি তাঁকে শেখাচ্ছি, অথচ বাস্তবতা হল আমি তাঁর কাছে শিখছি। আল্লাহর শপথ জমিনের বুকে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।'ইমাম নাকী (আ.)-কে কেন ইমাম হাদী বলা হত- এই বর্ণনা থেকেই তা স্পষ্ট। তিনি যতদিন মদীনায় ছিলেন জনগণের ওপর তাঁর গভীর প্রভাব শত্রুদের মনে ঈর্ষার আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।মসজিদে নববীর তৎকালীন পেশ ইমাম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদও হিংসার এই আগুন থেকে মুক্ত ছিলেন না। তিনি ইমাম হাদী (আ.)’র নামে নানা অপবাদ দিয়ে চিঠি পাঠান আব্বাসীয় শাসক মুতাওয়াক্কিলের কাছে। মদীনায় শিশু ইমামের ব্যাপক প্রভাব ও উঁচু সামাজিক অবস্থান এই শাসকের কাছেও ছিল অসহনীয়। ফলে মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে মদীনা থেকে উত্তর বাগদাদের সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তিকে পাঠান। এই ৩০০ ব্যক্তির নেতা ছিল ইয়াহিয়া বিন হারসামাহ।ইবনে জাওজি এই ঘটনা সম্পর্কে হারসামাহ’র উদ্ধৃতি তুলে ধরেছিলেন। হারসামাহ বলেছেন: 'যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন জনগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারা ইমাম হাদী (আ.)’র প্রাণহানির আশঙ্কা করেই এভাবে কাঁদছিল। জনগণের ক্রন্দনে মনে হচ্ছিল যেন কিয়ামত শুরু হয়েছে।'এটা স্পষ্ট যে, মদীনার জনগণের প্রতিরোধের আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তি পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।ইমাম হাদী (আ.)'র পথ নির্দেশনায় জনগণ শাসকদের অত্যাচার অবিচার ও তাদের পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অযোগ্যতার কথা খুব অচিরেই বুঝে ফেলবে ও এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে –এমন আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমামকে কৌশলে তৎকালীন রাজধানী সামেরা শহরে নিয়ে আসে।কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ইমাম হাদী (আ.) সামেরা শহরেও প্রকৃত ইসলাম প্রচার, যুগোপযোগী সংস্কার, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং আব্বাসীয়দের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরার কাজ অব্যাহত রাখেন। ফলে আব্বাসীয় শাসকরা এখনেও ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় ইমাম হাদী (আ.) তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বাধ্য না হলে তাগুতি শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা যে নিষিদ্ধ ইমাম তা মুসলমানদের জানিয়ে দেন। এ ছাড়াও তিনি জনগণকে সুপথ দেখানোর জন্য শিক্ষার কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে থাকেন।ইমাম হাদী (আ.) আবদুল আজিম হাসানি ও ইবনে সিক্কিত আহওয়াজিসহ ১৮৫ জন ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করেছিলেন এবং তারা সবাই ছিল সে যুগের নানা জ্ঞানে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।হজরত ইমাম হাদি (আ:) 'র শাহাদতবার্ষিকীইমাম বিভ্রান্ত চিন্তাধারার প্রচারকদের ওপর নজর রাখতেন। মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, সে যা করে তা বাধ্য হয় বলেই করে- এই মতবাদ তথা জাবরিয়া মতবাদে বিশ্বাসীদের যুক্তি খণ্ডন করে ইমাম হাদী (আ.) বলেছিলেন, 'এই মতবাদের অর্থ হল আল্লাহই মানুষকে পাপে জড়িত হতে বাধ্য করেন এবং পরে পাপের জন্য শাস্তিও দেন বলে বিশ্বাস করা। আর এই বিশ্বাসের অর্থ আল্লাহকে জালিম বলে মনে করা তথা তাঁকে অস্বীকার করা।' কথিত খলিফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)কে জব্দ ও অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। ইমামকে সম্মান প্রদর্শনের নামে মুতাওয়াক্কিল তাঁকে নিজ দরবারে হাজির করে অপমানিত এবং কখনও কখনও হত্যারও চেষ্টা করেছে।ইমাম হাদী (আ.)'র ওপর নানা ধরনের নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি জালিম ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত আব্বাসীয় সরকার তাঁকে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। ২৫৪ হিজরির এই দিনে তথা তেসরা রজব আব্বাসীয় খলিফা মুতাজ ৪১ বছর বয়সের ইমাম হাদী (আ.)কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। ফলে বিশ্ববাসী তাঁর উজ্জ্বল নূর থেকে বঞ্চিত হয়।ইমাম হাদী (আ.)’র মাধ্যমে অনেক মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন, আব্বাসীয় রাজার কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য রাজার নির্দেশে ইমাম (আ.)-কে আকস্মিভাবে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে পায় যে ইমামের চারদিকে রয়েছে একশ জনেরও বেশী সশস্ত্র দেহরক্ষী। আর একবার রাজা মুতাওয়াক্কিল ইমামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য তাঁর সামনে ৯০ হাজার সেনার সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নিলে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলকে আকাশ ও জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে সে দেখতে পায় যে, আকাশ আর জমিন ভরে গেছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সশস্ত্র ফেরেশতায় এবং রাজা তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।একই রাজা ইমামকে অপমান করার জন্য তাঁকে খাবারের দাওয়াত দেয়। ইমাম খাবারে হাত দেয়া মাত্রই রাজার নিয়োজিত এক ভারতীয় জাদুকরের জাদুর মাধ্যমে ওই খাবার উধাও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসতে থাকলে ইমাম জাদুকরের পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবন্ত হতে বলেন। সিংহটি জীবন্ত হয়ে ওই জাদুকরকে টুকরো টুকরো করে ফেলে।মুতাওয়াক্কিল কখন কিভাবে মারা যাবে তাও ইমাম আগেই বলেছিলেন। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক সেভাবে ও সেই সময়ই মারা গিয়েছিল এই আব্বাসীয় রাজা।মুহাম্মাদ বিন শরাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম হাদী (আ.)'র সঙ্গে মদীনার একটি রাস্তায় হাঁটছিলাম। ইমামের কাছে একটি প্রশ্ন করব বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই ইমাম হাদী (আ.) বললেন: 'আমরা এখন ভিড়ের মধ্যে রয়েছে এবং জনগণ চলাফেরা করছে। এখন প্রশ্ন করার জন্য ভালো সময় নয়।' (বিহারুল আনোয়ার)মুহাম্মাদ বিন ফারাজ থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম হাদী (আ.) আমাকে বলেছেন, যখনই কোনো বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে চাও তা লিখে তোমার জায়নামাজের নিচে রাখবে এবং এক ঘণ্টা পর তা তুলে দেখবে। এরপর থেকে আমি এই পদ্ধতিতে ইমামের কাছ থেকে লিখিত জবাব দেখতে পেতাম। আবু হাশিম জা'ফরি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একদিন ইমামের সঙ্গে সামেরার বাইরে যান ও এক স্থানে দু'জনেই মুখোমুখি হয়ে মাটিতে বসেন। এ সময় আবু হাশিম তার তীব্র অভাবের কথা জানালে ইমাম ওই স্থানের ভূমি থেকে এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে তা আবু হাশিমকে দেন এবং বলেন যে এগুলো তার অভাব দূর করবে ও যা দেখবেন তা যেন কাউকে না বলেন। আবু হাশিম শহরে ফিরে দেখেন যে সেই বালুগুলো লাল আগুনের মত চকচকে স্বর্ণ হয়ে গেছে। স্বর্ণকারকে তা দিয়ে বড় স্বর্ণের টুকরো করে দিতে বললে সে বিস্মিত হয়ে বলে: এমন ভালো ও বালু আকৃতির স্বর্ণ তো কখনও দেখিনি! কোথা থেকে এনেছ!?দাউদ বিন কাসিম জাফরিকে হজের সফর উপলক্ষে বিদায় দিতে গিয়ে ইমাম সামেরার বাইরে নিজের বাহন থেকে নেমে হাত দিয়ে মাটিতে একটি বৃত্ত আঁকেন। এরপর ইমাম হাদী (আ.) বলেন: হে চাচা! এই বৃত্তের ভেতরে যা আছে তা থেকে আপনার সফরের খরচ উঠিয়ে নেন। জাফরি তাতে হাত দিতেই একটি স্বর্ণ-পিণ্ড পেলেন যার ওজন ছিল দুইশত মিসক্বাল। ইমাম হাদী (আ.)’র কয়েটি সংক্ষিপ্ত বাণী শুনিয়ে শেষ করবো আজকের এ আলোচনা। তিনি বলেছেন:স্বার্থপরতা জ্ঞান অর্জনের পথে বাধা এবং তা অজ্ঞতা ডেকে আনে। যা অন্তরে গৃহীত ও কাজে প্রকাশিত সেটাই মানুষের ঈমান।আখিরাতের পুরষ্কার হলো দুনিয়ার কষ্ট ও পরীক্ষার বিনিময়।মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী হওয়া তৌফিক দান করুন। আমিন।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমদুশমনে আহলে বায়েতলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

হযরত আবু বকর (লাঃ.) খেলাফত লাভকথিত যে, নবী করিম (সা.) হযরত আবু কবরকে খেলাফত দিয়ে গেছেন । তিনি হযরত আবুবকরকে নামাজের ইমামতি করার দায়িত্ব দিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে হযরত আবু বকরই খেলাফতের আসন অলংকৃত করার জন্যে অন্য সবার চাইতে বেশী যোগ্য । আর তাই বনি সাক্বিফার সমাবেশে সাহাবীরা তাকে খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করেছেন ।”কিন্তু ইতিহাস স্বীকৃত সত্য যে, বনি সাক্বিফাতে খলিফা নির্বাচনের প্রসংঙ্গ নিয়ে মোহাজের ও আনসারদের মধ্যে যে বাক-বিতন্ডা ও তর্ক বিতর্ক হয়েছিলো সেখানে কখনো নামাজের প্রসংঙ্গ উত্থাপিত হয়নি । উপস্থিত কেউ হযরত আবু বকরের খেলাফত লাভের জন্যে নামাজের ইমামতির যুক্তি উপস্থাপন করেন নি । সেখানে আমরা দেখতে পাই আনসাররা খেলাফতের জন্যে নিজেদেরকে সর্বাধিক যোগ্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন । আর মোহাজেররা খেলাফতের জন্যে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছিলন । তারা সেখানে কোন ক্রমেই আবুবকরের নামাজের ইমামতের ঘটনা তুলে ধরেননি । বরং হযরত ওমর সেখানে এগিয়ে এসে ঝগড়া ও মতভেদ এড়িয়ে ঘোষণা করলেন, “আমি আবু বকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করলাম।” এভাবে সেদিন বনি সক্বিফাতে উপস্থিত সাহাবীরা হযরত আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছিলেন ।তখনও রাসূলের পবিত্র লাশ দাফন করা হয়নি খেলাফতের ব্যাপারে সাহাবীদের মধ্যে অনৈক্য শুরু হয়ে গিয়েছিল । বনি সক্বিফার সমাবেশে সাহাবীদের মাঝে উত্তপ্ত মতদগ্ধ কি প্রমাণ করে না যে তাদের মধ্যে খেলাফতের ব্যাপারে কোন প্রকার ঐক্যমত ছিল না ?( তারিখে ইয়াকুবী, খণ্ড-২, পৃঃ-১২৩-১২৬ ; সহি বুখারী, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৯০ ; মিলাল ওয়ান নিহাল, শাহরেস্তানী, খণ্ড-১, পৃঃ-৫৭; তারিখে তাবারী, খণ্ড-২, পৃঃ-৭৮ ; তারিখে খোলাফা, পৃঃ-৪৩; আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা, ইবনে হিশাম, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩৩১; তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৪, পৃঃ-১৯৬ ।)মুলতঃ বনি সক্বিফার নির্বাচনী সমাবেশেরই বা কি প্রয়োজন ছিল ? নবী (সা.) তো হযরত আবু বকরকে খলিফা মনোনীত করে গেছেন-ই ! আর যদি তিনি নবী (সা.) কর্তৃক খলিফা মনোনীত হয়েই থ্কবেন তাহলে সেখানে সেদিন কারো মনে ছিলো না কেন ?হযরত আব্বাস থেকে বর্ণিত যে, তিনি হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরকে জিজ্ঞেস করেন, “খেলাফতের ব্যাপারে নবী (সা.) আপনাকে কি কিছু বলে গেছেন ? তারা উভয়েই বললেন না । অতঃপর তিনি হযরত আলীকে বলেন, “ হে আলী তোমার হাত বাড়িয়ে দাও, আমি তোমার হাতে বাইয়াত গ্রহন করি ।”(আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, ইবনে কুতাইবা, খণ্ড-১, পৃঃ-২১)বস্তুতঃপক্ষে নবী (সা.) কর্তৃক খেলাফতের মনোনয়ন হযরত আলী ইবনে আবি তালিবকেই প্রদান করা হয়েছিল যা গাদীরে খুমের ঘটনায় আমরা স্পষ্ট উপলদ্ধি করতে পারি ।আর নামাজে ইমামতির বিষয়টা কি করে খেলাফতের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে ? সাহাবী ও তাবেয়ীনের যুগে কখনো এ ধরণের ব্যাখ্যার অবতারণা করা হয়নি । তাবেয় ও তাবেয়ীনের যুগে যখন হযরত আবু বকরের খেলাফতের বৈধতার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সংশয় উত্থাপিত হতে থাকে তখন তার নির্বাচনের বৈধতা প্রমাণের জন্যে নামাজে ইমামতির যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে । আর হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হযরত আবু বকরের নামাজে ইমামতির হাদীস ছাড়াও হযরত হাফসা থেকে বর্ণিত হাদীসও বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । তিনি বলেছেন, “আবু বকর নামাজে ইমামতি করেন নি, বরং ওমর নামাজে ইমামতি করেছেন ।”(ফাইযুল ক্বাদির শারহে আল জামেয়া আস সাগীর, খণ্ড-৫, পৃঃ-৫২১)অন্যদিকে এমন সব হাদীস বিদ্যমান যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, অসুস্থ অবস্থায়ও প্রিয় নবী (সা.) স্বয়ং নামাজে ইমামতি করেছেন ।(সহি মুসলিম, খণ্ড-৩, পৃঃ-৫১; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৫৭; তারিখে তাবারী, খণ্ড-২, পৃঃ-৪৩৯)সুতরাং নামাজে ইমামতির বিষয়টা কোনক্রমে খেলাফত লাভের বৈধ কারণ হতে পারে না ।আর যদি হযরত আবু বকর রাসূলের খলিফা হিসেবে মনোনীত হয়ে থাকবেন তাহলে এত সাহাবীদের বিরোধীতার কারণ কিলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিনপ্রচারেমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৮.০১.২১

সূরা আন নিসা; ‏আয়াত ৭-১০ ‎(পর্ব ৩)পবিত্র কুরআনের তাফসির কুরআনের আলো'র আজকের পর্বে সূরা আন নিসার ৭ থেকে ১০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো। এই সূরার ৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا (7)"বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং তাতে নারীরও অংশ আছে, ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে নারীর অংশ নির্দিষ্ট।" (৪:৭)সূরা নিসার প্রথম কয়েকটি আয়াতে এতিম ও অনাথ শিশুদের প্রসঙ্গ সহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরা হয়েছে। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ‏রাসূল ‎(সা.)'র একজন সাহাবীর ইন্তেকালের পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কয়েকজন ভাতিজা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। অথচ ঐ সাহাবীর স্ত্রী ও তাঁর কয়েকটি শিশুকে সম্পত্তির কোন অংশ দেয়া হয়নি। এর কারণ, ‏অজ্ঞতার যুগে আরবদের বিশ্বাস ছিল শুধুমাত্র যুদ্ধ করতে সক্ষম পুরুষরাই উত্তরাধিকার বা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ পাবার যোগ্য। মহিলা বা শিশুরা যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় বলে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য নয়। এ অবস্থায় পবিত্র কোরআনের এই আয়াত নাজিল হয়। এতে নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়েছে- ‏মীরাস বা উত্তরাধিকারগত সম্পদে পুরুষদের যেমন অংশ আছে, ‏তেমনি তাতে নারীদেরও অংশ রয়েছে। উত্তরাধিকারগত সম্পদ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে নারীর অংশ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট।এই আয়াতে শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏ইসলাম শুধু নামাজ রোজার ধর্ম নয়। দুনিয়ার জীবনও এ ধর্মের গুরুত্ব পেয়েছে। আর তাই ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী ও এতিমদের অধিকার রক্ষাকে ঈমানের শর্ত বলে মনে করে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏আল্লাহর বিধান অনুযায়ী উত্তরাধিকারগত সম্পদের ভাগ-বণ্টন করতে হবে, ‏সামাজিক প্রথা বা পরলোকগত কোন ব্যক্তির সুপারিশ অনুযায়ী নয়।তৃতীয়ত ‎: ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে এর মোট পরিমাণ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। মোট পরিমাণ যাই হোক না কেন সমস্ত ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ । উত্তরাধিকারগত সম্পদের মোট পরিমাণ কম হবার অজুহাতে কোন উত্তরাধিকারীর অধিকারকে উপেক্ষা করা যাবে না।সূরা নিসার ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا (8)"সম্পত্তি বণ্টনকালে উত্তরাধিকারী নয় এমন গরীব, ‏আত্মীয়, ‏পিতৃহীন ও অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিও এবং তাদের সঙ্গে সদালাপ করবে।" (৪:৮)পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা ও তা জোরদার করতে হলে সুন্দর ও মানবিক ব্যবহার জরুরী। তাই উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের বিধান উল্লেখের পরপরই কোরআনের আয়াতে এ সম্পর্কিত দু'টি নৈতিক বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি হলো, ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের সময় আত্মীয়-স্বজন বিশেষ করে এতিম ও দরিদ্র-আত্মীয় স্বজন উপস্থিত থাকলে তারা সম্পদের উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও সব উত্তরাধিকারীর সম্মতি নিয়ে মোট উত্তরাধিকার থেকে তাদেরকে কিছু দেয়া যেতে পারে ও দরিদ্র আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ধনী আত্মীয়ের প্রতি যদি হিংসা বিদ্বেষ থেকেও থাকে, ‏তাহলে এই দানের ফলে তা প্রশমিত হতে পারে এবং পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধনও এতে শক্তিশালী হবে। দ্বিতীয় নৈতিক বিধানে বঞ্চিত ও দরিদ্র আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুন্দর এবং ভদ্রভাবে কথা বলার নিদের্শ দেয়া হয়েছে, ‏যাতে তারা এমন ধারণা করার সুযোগ না পায় যে, ‏দারিদ্রের কারণে তাদের সাথে নির্দয় আচরণ করা হচ্ছে।এই আয়াতের মূল শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমতঃ বঞ্চিতদের স্বাভাবিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও তাদেরকে বিভিন্ন ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে।দ্বিতীয়তঃ উপহার দেয়া এবং সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। বস্তুগত তথা বৈষয়িক বিষয়ে উপকার করার পাশাপাশি ভালবাসাপূর্ণ আত্মিক সম্পর্কের মাধ্যম আত্মীয় ও আপনজনদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ প্রতিরোধ করা উচিত।সূরা নিসার ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَلْيَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا (9)"নিজেদের অসহায় সন্তানদের ছেড়ে গেলে ভবিষ্যতে তাদের কি হবে এই ভেবে যারা উদ্বিগ্ন তাদের উচিত অন্য মানুষদের এতিম সন্তানের ব্যাপারেও অনুরূপ ভয় করা এবং আল্লাহকে ভয় করা ও সদ্ভাবে কথা বলা উচিত।" (৪:৯)পবিত্র কোরআন এতিমদের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে দয়া সঞ্চারের জন্য তাদের অসহায় সন্তানের একটি কল্পিত দৃষ্টান্ত দিচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‏ধরে নেয়া যাক, ‏তারা এমন পাষান-হৃদয় মানুষের তত্ত্বাবধানে রয়েছে যিনি তাদের কচি মনের অনুভূতিকে কোন গুরুত্বই দেন না এবং তাদের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার করেন না। এমন অবস্থায় মানুষ নিশ্চয়ই এই ভেবে উদ্বিগ্ন হবে যে, ‏তাদের মৃত্যুর পর অন্যরা তাদের সন্তানদের সাথে কেমন ব্যবহার করবে? ‏এরপর আল্লাহ বলেছেন, "হে মানুষ! ‏অন্যদের এতিম সন্তানের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে তোমাদেরকেও আল্লাহকে মনে রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার না করে ভালো ও পছন্দনীয় আচরণ কর। এতিমদের মন জয় কর এবং তাদেরকে ভালবেসে তাদের স্নেহের চাহিদা পূরণ করবে।"এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমতঃ এতিম ও সমাজের বঞ্চিত লোকদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত যেমন ব্যবহার অন্যরাও আমাদের সন্তানদের সঙ্গে করবে বলে আমরা আশা রাখি।দ্বিতীয়তঃ সমাজে ভাল ও মন্দ কাজের প্রতিফল দেখা যায়। এমনকি এই প্রতিফল আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সন্তানদের কাছেও পৌঁছে। তাই আমাদের কাজ-কর্মের সামাজিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা যেন অসচেতন না থাকি।তৃতীয়তঃ শুধু পোশাক ও খাবারই এতিমদের চাহিদা নয়। তাদের মনের স্নেহের চাহিদা মেটানো আরো গুরুত্বপূর্ণ।সূরা নিসার ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا (10)"যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পত্তি গ্রাস করে, ‏নিশ্চয়ই তারা তাদের পেট আগুন দিয়ে পূর্ণ করছে। শীঘ্রই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।" (৪:১০)এই আয়াতে এতিমদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরে বলা হয়েছে,এতিমদের সম্পদ গ্রাস করা আগুন খাওয়ার সমতুল্য। কারণ, ‏কিয়ামতের সময় তা আগুন হয়ে দেখা দেবে। আমরা এই পৃথিবীতে যা যা করি, ‏তার একটি বাহ্যিক চেহারা রয়েছে। কিন্তু এসব কাজের প্রকৃত চেহারা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এসব কাজের প্রকৃত চেহারা পরকালেই স্পষ্ট হবে। পরকালের শাস্তি আমাদের কাজেরই ফল মাত্র। যে এতিমের সম্পদ গ্রাস করে, ‏তার হৃদয় যেমন পুড়বে, ‏তেমনি বিবেকও এই অপরাধের জন্য তাকে দংশন করবে। এই অপরাধ অত্যাচারীর সমস্ত অস্তিত্বকে অগ্নিদগ্ধ করবে।আগের আয়াতে এতিমদের ওপর অত্যাচারের সামাজিক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। আর এই আয়াতে এতিমদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের সুপ্ত প্রতিফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ‏যাতে ঈমানদার লোকেরা এতিমদের সম্পদে হাত দেয়ার আগে এই প্রতিফলের কথা মনে রেখে তা থেকে বিরত হয়। এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏হারাম সম্পদ ভোগ করা, ‏বিশেষ করে, ‏এতিমদের সম্পদ গ্রাস করা বাহ্যিকভাবে উপভোগ্য মনে হলেও তা প্রকৃতপক্ষে আত্মা ও বিবেকের জন্য যন্ত্রণাদায়ক এবং এ অপরাধ মানুষের ভালো গুন বিনষ্ট করে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏পরকালে দোযখের আগুন আমাদের মন্দ কাজেরই প্রতিফল। আল্লাহ তার বান্দাদেরকে কখনও পুড়তে চান না। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের গোনাহ হতেই অগ্নিদগ্ধ হচ্ছি।প্রচারেমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৭.০১.২১

সূরা আন নিসা; ‏আয়াত ৪-৬ ‎(পর্ব ২)পবিত্র কুরআনের তাফসির বিষয়ক ‎'কুরআনের আলো'র আজকের পর্বে সূরা আন নিসার ৪ থেকে ৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। এই সূরার ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا (4)"তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দেবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, ‏তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।"(৪:৪)গত পর্বে আমরা বলেছিলাম সূরা নিসার আয়াতগুলো শুরু হয়েছে পারিবারিক বিধি বিধানের বর্ণনা দিয়ে। পরিবার গঠন বা বিয়ের সময় বরের পক্ষ থেকে নববধুকে মোহরানা দেয়ার রীতি সব জাতির মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে। দুঃখজনকভাবে কোন কোন জাতির মধ্যে বিশেষ করে ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মহিলাদের কোন মর্যাদা ছিল না। সে সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরা স্ত্রীদেরকে মোহরানা দিত না অথবা দিলেও পরে তা জোর করে ফেরত নিত। পবিত্র কোরআন নারীর পারিবারিক অধিকার রক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানা পরিশোধ করতে বিবাহিত পুরুষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের কঠোরতা ও কর্কশ আচরণ পরিহার করতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এও বলছেন, "মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া বা এর অংশবিশেষ ফিরিয়ে নেয়াও তোমাদের জন্য বৈধ নয়। যদি তারা অর্থাৎ স্ত্রীরা নিজেরাই খুশী মনে মোহরানার কিছু অংশ ফিরিয়ে দিতে চায়, ‏তাহলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।"এই আয়াতে উল্লেখিত না হলেও শব্দটির অর্থ হলো, ‏মৌচাকের মৌমাছি। মৌমাছি যেমন কোন স্বার্থের আশা না করেই মানুষকে মধু দেয়,সে রকম পুরুষেরও উচিত জীবনসঙ্গীকে দাম্পত্য জীবনের মধু হিসেবেই মোহরানা দেয়া। আর যা উপহার হিসেবে দেয়া হয়,তা ফিরে পাবার আশা করা কি অন্যায় নয় ‎?এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয় মূল্য নয়, ‏বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার নিদর্শন ও উপহার। কোরআনের আয়াতে ‎'মোহরানা' ‏শব্দটিকে বলা হয়েছে, ‏যা সাদাক্কাত বা আন্তরিকতা শব্দ থেকে উদ্ভূত।দ্বিতীয়ত ‎: ‏মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রী-ই এর মালিক। স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া যেমন বন্ধ রাখা যায় না,তেমনি তা ফেরতও নেয়া যায় না।তৃতীয়ত ‎: ‏মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়। এজন্যে স্ত্রীর প্রকৃত বা আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরী।সূরা নিসার পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে,وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا (5)"আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধন সম্পত্তি তোমাদের উপজীবিকা করেছেন, ‏তা অবোধ এতিমদের হাতে অর্পণ করো না, ‏তবে তা হতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করাও, ‏তাদের পরিধান করাও এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে কথা বল।" (৪:৫)এখানে এতিমদের কথা বলা হয়েছে। এতিমরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে সম্পদ অর্পণ করা যাবে না। বরং ওইসব সম্পদ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে তাদের ভরণ পোষণ করতে হবে। এরপর মহান আল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক উপদেশ দিয়ে বলেছেন,অবোধ এতিম শিশুদের সাথেও সুন্দর করে কথা বলতে হবে। অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এতিমদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা যাবে না। যদি তাদেরকে তাদের সম্পদ না-ও দাও কিন্তু কথা বার্তা এবং আচরণে তাদের সাথে ভদ্রতা রক্ষা করতে হবে।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,এক. ‏অর্থ ও সম্পদ সমাজ ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং শক্তিশালী করার মাধ্যম। তবে শর্ত হল, ‏অর্থ ও সম্পদ বুদ্ধিমান সৎ এবং ধার্মিক লোকদের অধিকারে রাখতে হবে।দুই. ‏ইসলামী সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞ ও সৎলোকদের হাতে থাকা উচিত।তিন. ‏ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ার অর্থ সম্পদ খারাপ কোন কিছু নয়,বরং তা সমাজের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় রাখার মাধ্যম,অবশ্য যদি তা অবিবেচক লোকদের হাতে না পড়ে।সূরা নিসার ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে,وَابْتَلُوا الْيَتَامَى حَتَّى إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آَنَسْتُمْ مِنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَنْ يَكْبَرُوا وَمَنْ كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ وَمَنْ كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا (6)"পিতৃহীনদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে, ‏তাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিবে যতদিন তারা বিয়ের যোগ্য না হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে বুদ্ধির পরিপক্ক বিকাশ দেখা গেলে তাদের সম্পদ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে বলে তাড়াতাড়ি তা অপব্যয় করো না ও খেয়ে ফেলো না এবং যে ধনী সে পারিশ্রমিক নেয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে দরিদ্র, ‏সে এতিমদের ভরণ পোষণের জন্য পারিশ্রমিক নেয়ার অধিকার রাখে। আর যখন তোমরা এতিমদের সম্পত্তি তাদের কাছে ফেরত দেবে, ‏তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখ। হিসাব নেয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।" (৪:৬)এই আয়াতে এতিমদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাদের কাছে সম্পদ ফেরত দেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যাতে সমাজের দুর্বল শ্রেণীর অধিকার রক্ষা পায়। এই পদ্ধতি হলো,প্রথমত ‎: ‏এতিমরা যথন অর্থ ও সম্পদ রক্ষার মত উপযোগী জ্ঞানের অধিকারী হবে,তখনই তা তাদের কাছে তাদের সম্পদ ফেরত দিতে হবে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏এতিমদের সম্পদ তাদের কাছে ফেরত দেয়ার আগ পর্যন্ত রক্ষা করতে হবে। এতিমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগেই তাদের সম্পদ খরচ করা যাবে না।তৃতীয়ত ‎: ‏এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ও তাদের ভরণপোষণের জন্য সেখান থেকে কোন মজুরী নেয়া যাবে না। অবশ্য যদি বয়স্ক বা দরিদ্র হন, ‏তবে কিছু মজুরী নিতে পারেন। এছাড়াও এতিমদের সম্পদ ফেরত দেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে যাতে এ নিয়ে কোন মতবিরোধ বা সমস্যা দেখা না দেয়।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏সম্পদের অধিকারী হবার জন্য শুধু শারীরিক পূর্ণতাই যথেষ্ট নয়, ‏জ্ঞান বুদ্ধির দিক থেকেও পরিপক্ক হতে হবে। তরুণ ও যুবকরা যদি নিজেদের প্রাপ্য অর্থ সম্পদের অধিকারী হতে চায় তাহলে তাদেরকে অর্থ সম্পদ সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান ও বিবেচনা শক্তি অর্জন করতে হবে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতা জরুরী। এক্ষেত্রে আল্লাহকেও মনে রাখতে হবে এবং সমাজে নিজের সম্মান রক্ষার জন্য সাক্ষী প্রমাণের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।তৃতীয়ত ‎: ‏স্বচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিকে কোন কিছু পাওয়ার আশা না রেখেই সমাজ সেবা করতে হবে। সমাজ সেবার নামে দরিদ্রের সম্পদ থেকে আয় উপার্জনের চিন্তা অন্যায়। ‎#নিবেদকমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আহলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৪.০১.২১

সূরা আন নিসা; ‏আয়াত ১-৩ ‎(পর্ব ১)সূরা আন নিসায় মোট ১৭৬টি আয়াত রয়েছে। এ আয়াতগুলো মদীনায় নাজিল হয়েছিল। এই সূরার অধিকাংশ আয়াতে পরিবারে মহিলাদের অধিকার এবং পারিবারিক বিষয়ে বক্তব্য থাকায় এর নাম হয়েছে সূরা নিসা। এই সূরার এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (1)"হে মানুষ! ‏তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদের একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দু'জন থেকে পৃথিবীতে বহু নর-নারী বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, ‏যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে আবেদন কর। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর, ‏নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।" (৪:১)সূরা নিসার প্রথম আয়াতেই দু'দু'বার খোদাভীরু হবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্ম, ‏প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারেই হয়ে থাকে। তাই পরিবারের এসব ভিত্তি যদি আল্লাহর আইন অনুযায়ী না হয়,তাহলে ব্যক্তি ও সমাজের মানসিক সুস্থতা বলতে কিছুই থাকবে না। আল্লাহ মানুষের মধ্যে নিজেকেই বড় ভাবার যে কোন ইচ্ছা বা ঝোঁক প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান করে বলছেন,সমস্ত মানুষকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই বংশ,বর্ণ ও ভাষাকে শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ মনে না করে বরং খোদাভীরু হওয়াকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি মনে করা উচিত। এমনকি নারী ও পুরুষের মধ্যে মানসিক এবং দৈহিক পার্থক্য সত্ত্বেও তাদের কেউই একে অপরের চেয়ে বড় নয়। কারণ সমস্ত নারী ও পুরুষ একজন পুরুষ এবং নারী থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে।পবিত্র কোরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের পরই মা-বাবার প্রতি আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। এভাবে তাদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। আর এই আয়াতে আল্লাহর নামের পর সমস্ত আত্মীয় স্বজনদের অধিকার রক্ষার আআহ্বান জানানো হয়েছে এবং তাদের প্রতি যাতে কোন রকম অবিচার করা না হয় সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম। তাই এ ধর্মে সমাজ ও পরিবারে পরস্পরের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খোদাভীরু হবার জন্যে এবং আল্লাহর ইবাদত তথা দাসত্ব করার জন্যে অন্যদের অধিকার রক্ষা জরুরী।দ্বিতীয়ত ‎: ‏মানব সমাজকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেক মানুষকেই মানব সমাজের সম্মানিত সদস্য হিসেবে ধরে নিয়ে অন্যদের সমান অধিকার দিতে হবে। কারণ,মানুষের মধ্যে অঞ্চল, ‏বর্ণ, ‏গোষ্ঠী ও ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই একই উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছেন।তৃতীয়ত ‎: ‏গোটা মানব জাতি একে অপরের আত্মীয়। কারণ,তাদের সবার আদি পিতা ও মাতা ছিলেন হযরত আদম ‎(আ.) ‏এবং বিবি হাওয়া। তাই সব মানুষকেই ভালবাসতে হবে এবং তাদেরকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের মতই শ্রদ্ধা করতে হবে।সূরা নিসার দুই নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَآَتُوا الْيَتَامَى أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا (2)"এতিমদের প্রাপ্য সম্পদ তাদেরকে দাও, ‏নিজেদের খারাপ সম্পদ এতিমদের দিয়ে এতিমদের ভালো সম্পদ কেড়ে নিও না। তাদের সম্পদ তোমাদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে গ্রাস কর না। নিশ্চয়ই এটা মহা পাপ।" (৪:২)এ আয়াতে এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা অথবা ইসলামী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী এতিমদের যতটুকু সম্পদ পাওনা তারচেয়ে কম দেয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এতিমদের ভালো সম্পদ নিয়ে এর বিনিময়ে তাদেরকে নিজের কম মূল্যবান সম্পদ দেয়া এবং যে কোন পন্থায় তাদের সম্পদ গ্রাস করাকেও মহাপাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, ‏এতিমের অভিভাবকরা হল তাদের ধন সম্পদের আমানতদার এবং এতিম শিশুরা বড় হলে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দেয়াও এ সব অভিভাবকদের দায়িত্ব। তাই এতিমদের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে যাচ্ছে তাই কাজ করা যাবে না।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমতঃ এতিমদের সম্পদ অবশ্যই তাদেরকে দিতে হবে। তারা তাদের সম্পদের কথা না জানলেও অথবা ভুলে গেলেও এটাই অভিভাবকদের কর্তব্য।দ্বিতীয়তঃ শিশুরাও সম্পদের মালিক হয়। অবশ্য তারা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত নিজস্ব সম্পদ দখলের অধিকার রাখে না।তৃতীয়তঃ ইসলাম বঞ্চিত ও অভিভাবকহীন ব্যক্তিদের প্রতি গুরুত্ব দেয় এবং তাদের সহায়তা করে।সূরা নিসার তিন নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَى فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلَّا تَعُولُوا (3)"যদি তোমরা এতিম কন্যাদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না বলে আশঙ্কা কর,তাহলে তাদেরকে বিয়ে কর না এবং পবিত্র ও পছন্দনীয় নারীদের মধ্য থেকে দু'জন, ‏তিনজন বা চারজনকে বিয়ে কর। কিন্তু যদি আশঙ্কা কর ন্যায় বিচার করতে পারবে না, ‏তাহলে একটি মাত্র বিয়ে করবে,অথবা তাও যদি না পার, ‏তবে তোমাদের অধিকারভূক্ত দাসীদেরকে বিয়ে করবে, ‏এতে অবিচার না হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।" (৪:৩)এতিম সংক্রান্ত আয়াতের ধারাবাহিকতায় এই আয়াতে এতিম কন্যাদের কথা বলা হয়েছে। এতিম কন্যাদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো তারা এতিম ছেলে শিশুদের তুলনায় বেশী বঞ্চিত ও অত্যাচারের শিকার হয়। তাই ন্যায় বিচারক মহান আল্লাহ বলছেন, ‏এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অন্যায় আচরণ নিষিদ্ধ। অনেক স্বার্থান্বেষী মানুষ এতিম কন্যাদের সম্পত্তি দখলের জন্য তাদেরকে বিয়ে করতে চায় এবং এ জন্যে সব ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু আল্লাহ বলছেন, ‏তোমরা এতিম কন্যাদের বিয়ে করার ফলে তাদের প্রতি যদি সামান্য জুলুমেরও আশঙ্কা থাকে,তবে তাদের বিয়ে কর না।বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‏এক শ্রেণীর লোভী মানুষ এতিম কন্যাদেরকে লালন পালনের নামে নিজেদের ঘরে নিয়ে আসতো এবং কিছুকাল পর ওইসব কন্যাদেরকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি দখল করতো। তাদেরকে বিয়ের মোহরানাও প্রচলিত রীতির তুলনায় অত্যন্ত কম দেয়া হতো। এ অবস্থায় এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অবিচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এই আয়াতসহ সূরা নিসার ১২৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। বহু পুরুষ তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে এতিম কন্যাদেরকে বিয়ে করতো। আল্লাহ তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এ সব পুরুষদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‏যদি নতুন বিয়ের ইচ্ছে থাকে তাহলে কেন শুধু এতিম কন্যাদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছ? ‏অন্যান্য মেয়েদেরকেও বিয়ের প্রস্তাব দাও অথবা অন্তত তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকেই বিয়ে কর।এই আয়াতে পুরুষদেরকে চারটি বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে,যদিও এই রীতি ইসলামের আবিস্কার নয় বরং সামাজিক কারণে চার বিবাহ কোন কোন অবস্থায় অতীতের মত এ যুগেও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। আসলে ইসলাম ধর্ম বহু বিবাহ প্রথা চালু করেনি বরং সামাজিক বাস্তবতা হিসেবে বিরাজমান এই প্রথাকে বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করেছে। ইসলাম এক্ষেত্রে অর্থাৎ একাধিক বা চার বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার শর্ত বেঁধে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, "যদি তোমরা স্ত্রীদের সবার সঙ্গে সমান ও ন্যায় আচরণ করতে পারবে না বলে ভয় কর, ‏তাহলে একের বেশী স্ত্রী গ্রহণ করা বৈধ নয়।"এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,এক. ‏এতিম কন্যাদের সম্পদ ও সম্মান নিয়ে হেলাফেলা বন্ধের জন্য তাদের সাথে সব সময় এমনকি বিয়ের সময়ও ন্যায় বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।দুই. ‏স্বামী ও স্ত্রী নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হলো, ‏অন্তর দিয়ে পছন্দ করা পুরুষকে জোরপূর্বক কারো সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করা বৈধ নয়।তিন. ‏একই সাথে চার জন স্ত্রী রাখা ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত। কিন্তু কোন কোন পুরুষ যদি এ আইনের অপব্যবহার করে,তাহলে এ আইনটি ভালো নয় এমন বলা যাবে না। বরং এটা সমাজের বিশেষ প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর প্রতি ইসলাম ধর্মের উদার নীতির প্রকাশপ্রচারেমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৪.০১.২১

l🐕🐕🐕🐕🐕🐕মুয়াবিয়া মুনাফিক ছিল তার প্রমাণ ‎حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، وَأَبُو مُعَاوِيَةَ عَنِ الأَعْمَشِ، ح وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، – وَاللَّفْظُ لَهُ – أَخْبَرَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرٍّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ وَالَّذِي فَلَقَ الْحَبَّةَ وَبَرَأَ النَّسَمَةَ إِنَّهُ لَعَهْدُ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَىَّ أَنْ لاَ يُحِبَّنِي إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يُبْغِضَنِي إِلاَّ مُنَافِقٌ ‏.‏১৪৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ‎(রহঃ) ‏আলী ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণনা করেন যে, ‏তিনি বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, ‏যিনি বীজ থেকে অংকুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, ‏নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ‏মুমিন ব্যাক্তই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যাক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।🦮🦮🦮🦮🦮🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺সাহিহ মুসলিম ই ফা হাদিস নং ‎( ‏অন লাইন) ‏১৪৪🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺সাহাবীরা বলেন ‎“আমরা আলী এর প্রতি ঘৃনা দেখে মুনাফেকদেরকে চিনতাম”*ফাযাইলে সাহাবা ‎, ‏ইমাম হাম্বাল হাদিস নং ১০৮৬*রিয়াদ আন নাদারা ‎, ‏মুহিবুদ্দিন তাবারি, ‏খণ্ড ৩ পাতা ২৪২🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺মনের মধ্যে শুধু ঘৃনা রাখলে মুনাফেক হয়ে যায় হাদিস অনুজাই আর যে ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ করবে সেট মস্ত বড় মুনাফেক ও ইসলামের শত্রু। মুয়াবিয়া ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছিল সিফফিনের যুদ্ধ।🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺🐕‍🦺যে ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করে সে রসুল পাক সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেযে ইমাম আলী আঃ এর সাথে যুদ্ধ করে সে রসুল পাক সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে। ‎#রাসুল সাঃ এর সাথে যুদ্ধকারী মুনাফেক, ‏ইসলামের শত্রু মানবতার শত্রু।حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ الْبَغْدَادِيُّ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ نَصْرٍ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ السُّدِّيِّ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَليٍّ وَفَاطِمَةَ وَالْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبْتُمْ وَسِلْمٌ لِمَنْ سَالَمْتُمْ“যায়েদ বিন আরকম রাঃ বলেছেন ‎‘ ‏আল্লাহর রসুল সাঃ আলী, ‏ফাতেমা, ‏হাসান ও হুসাইনদের সমদ্ধে বলেছেন আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, ‏আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত হই যারা এদের সাথে যুদ্ধ করে”।• ‏সুনান তিরমিযি ‎(বাব/ ‏অধ্যায় ফাযাইলে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ) • ‏মুস্তাদ্রক আলা সাহিহাইন, ‏হাকিম নিশাবুরি। ‎(অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল সাঃ) * ‏সুনান ইবনে মাজা, ‏অধ্যায় ফাযাইলে হাসান ও হুসাইন।عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : نظر النبي صلى الله عليه و سلم إلى علي و فاطمة و الحسن و الحسين فقال : أنا حرب لمن حاربكم و سلم لمن سالمكم هذا حديث حسن من حديث أبي عبد الله أحمد بن حنبل عن تليد بن سليمان فإني لم أجد له رواية غيرها و له شاهد عن زيد بن أرقم“ ‏আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন ‎“ ‏রাসুল সাঃ আলী, ‏ফাতেমা, ‏হাসান আঃ হুসাইনের দিক দৃস্টিপাত করলেন এবং বললেন ‎‘আমি তাদের যাথে যুদ্ধরত থাকি যারা এদের সাথে যুদ্ধরত হয়, ‏আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে”।* ‏ফাদাইলে সাহাবা, ‏খন্ড ২ হাদিস নং ‎1350, ‏ইমাম হাম্বাল* ‏মুস্তাদ্রাক ‎‘আলা সাহিহাইন, ‏হাকিম নিশাবুরি। ‎(অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল সাঃ)মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম 🕋হযরত মূয়াবীয়ার যে কাজগুলি বিশ্লেষনের দাবী রাখে ।একমাত্র মুয়াবীয়ার পরিবারই বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ পর্যায়ক্রমে নবী বংশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী শত্রুতা করেছে ।আবু সুফিয়ান , মূয়াবীয়া এবং ঈয়াযীদ — এই তিন পুরুষই পর্যায়ক্রমে রাসুল (সাঃ) , হযরত আলী (আঃ) , হযরত হাসান (আঃ) এবং হযরত হোসেনের (আঃ) বিরুদ্বে সরাসরি ভয়াবহ ষড়যন্ত্র এবং সর্বাত্মক বিদ্রোহ ও যুদ্ব করেছে ।নিম্নে শুধুমাত্র দ্বিতীয় পুরুষ কুখ্যাত মূয়াবীয়ার কুকর্মের সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেয়া হইল ।ওহাবী-সালাফীদের সবথেকে প্রিয় খলীফা হচ্ছে হযরত মূয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান । এই বিষয় দুনিয়ার শীয়া-সুন্নিসহ সকল ইসলামী গবেষকবৃন্দ সম্পূর্ন ঐক্যমত পোষন করেন ।ইসলামী সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম রাজতন্ত্র স্থাপনকারী উমাইয়া বংশের প্রথম খলীফা জনাব মুয়াবীয়া তার দীর্ঘ শাসন আমলে নিম্নলিখিত কাজগুলো করেন যা ইসলামের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ন নয় ।১) –হযরত আলীর (আঃ) মর্মান্তিক শাহাদাতের পরে সাহাবাগনের সাথে পরামর্শ না করে ছলছাতুরী আর তরবারীর সাহায্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ।উল্লেখ্য যে , মারেফুল কোরআন , পৃ- ৪২৭ এ বর্নিত হাদিস অনুযায়ী জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে ।২) –মূয়াবীয়া ছিল নবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতগনের (আঃ) অন্যতম প্রকাশ্য শত্রু । মুয়াবীয়া তার শাসন আমলে প্রতি জুমআর দিন খুৎবায় নবী-পরিবারকে গালাগালি দেওয়ার প্রথা চালু করেছিল । গালিগালাজ দেওয়ার প্রথা কমপক্ষে ৭০ বছর যাবৎ বলবৎ ছিল । ঐ সময় জুমআর নামাজের আগে খুৎবা পাঠ করা হইত । সে কারনে অনেক মুসল্লীরাই গালাগালি শ্রবণ না করে চলে যেত । তাই সচতুর মুয়াবীয়া নির্দেশ দেন যেন খুৎবা নামাজের আগেই আরম্ভ করা হয় যাতে করে খুৎবায় নবী-বংশের বিরুদ্ধে গালাগালি শুনতে মুসল্লিগণ একপ্রকার বাধ্য থাকেন ।হযরত আলী (আঃ) সহ সকল আহলে বায়েতগনের (আঃ) প্রতি সকল প্রদেশের মসজিদের মিম্বর হতে অভিসম্পাত বা গালাগাল করার নির্দেশ বাধ্যতামূলক করা , যা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পর্যন্ত বলবৎ ছিল ।৩) –ইমাম হাসানের (আঃ) সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত লিখিত চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা ।৪) –দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসানকে (আঃ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করে স্বীয় পুত্র ঈয়াযীদকে গদিতে বসানোর রাস্তাকে পরিষ্কার করেন ।৫) –প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের পুত্র হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে (রাঃ) জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা ।৬) –কুখ্যাত মুয়াবীয়া খাবার নিমন্ত্রন করে ফাঁদ পেতে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশাকে হত্যা করে মাটিতে পূতে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে আড়াল করেছিল । তাই ইতিহাসে উম্মল মুমেনিন হযরত আয়েশার কবরের সঠিক কোন অস্তিত্ব নাই ।৭) –রাজকীয় কায়দায় নিজেকে রাজা হিসেবে দাবী করে সাম্রাজ্য শাসন করা ।৮) –মদখোর , ভোগবিলাসী পুত্র ঈয়াযীদকে খলীফা হিসাবে মনোনীত করা ।৯) –বদরী সাহাবী হযরত ইবনে আদীকে (রাঃ) তাঁর ১২ জন সঙ্গীসহ জীবন্ত কবরস্থ করেন এই মুয়াবীয়া ।১০) –মুহাম্মদ বিন আবুবকর , মালিক আশতার সহ অনেকেই মুয়াবীয়ার জঘন্য হত্যার শিকার । মুয়াবীয়া তার রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কত জনকে যে গুপ্ত হত্যা করিয়েছে তার কোন সঠিক হিসাব নাই ।১১) –মহানবীর (সাঃ) আশেক হযরত উয়ায়েস করণীকেও (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে প্রাণ দিতে হয় মুয়াবীয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ।১২) –হযরত ওসমান হত্যার পিছনেও বর্ণচোরা মুয়াবীয়ার হাত ছিল । তাই সে ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্রাট হবার পরেও হযরত ওসমান হত্যার কোন বিচার করে নাই ।১৩) –মুসলিম বাহিনীর লাশ হতে মস্তক বিছিন্ন এবং তা শহরে প্রর্দশন চালুকরন ।১৪) –মিথ্যা হাদিস তৈরী , প্রচারকরনের মহা ব্যবস্থাকরন ।১৫) –রাসুলের (সাঃ) হাদিস “সম্মানীত স্বামীর জন্য সন্তান এবং বেশ্যার জন্য কিছুই না” এর বিপরীতে জিয়াদকে ভাই হিসেবে ঘোষনা প্রদান ।১৬) –প্রাদেশিক শাসকদের অন্যায় কাজের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নেওয়া ।১৭) –দাড়িয়ে খুৎবা প্রদানের বদলে বসে খুৎবা প্রদান ।১৮) –ঈদের নামাজে আযান প্রথা চালু করা ।১৯) –রেশমী বস্ত্র পরিধান করা ।২০) –নবীজীর (সাঃ) আমলের ফেৎরা প্রথার পরির্বতন করা ২১) –বায়তুল মালকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিগনিত করা ।সুপ্রিয় পাঠক ,প্রসঙ্গক্রমে আরও জেনে নিন যে , মুয়াবীয়ার সঠিক কোন পিতৃপরিচয় নাই ।কারন তার মা তাকে পেটে ধরা অবস্থায় আবু সুফিয়ানের সাথে ঘর-সংসার শুরু করে । আর বিবাহের পূর্বে হিন্দা যখন পতিতালয় পরিচালনা করত তখনই মুয়াবীয়া তার পেটে এসেছিল ।ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় যে , মুয়াবীয়ার জন্মদাত্রী জননী হিন্দা বিনতে আতবা তৎকালীন সময় কুখ্যাত বেশ্যা ছিল । সেসময় মক্কার সবথেকে বড় বেশ্যাপল্লীর প্রধান পরিচালিকা ছিল !বলা হয় মুয়াবীয়া চারজনের সন্তান ছিল । অর্থাৎ মুয়াবীয়ার সম্ভাব্য পিতা ছিল চারজন —১) আমারা বিন অলীদ মখজুমী২) মুসাফির বিন আমর৩) আবু সুফিয়ান৪) আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব !যেহেতু হিন্দা বহু ঘাটের পানি পান করেছিল তাই মুয়াবীয়ার প্রকৃত পিতা নির্ধারন করা অসম্ভব একটি বিষয় ।সূত্র – বইয়ের নাম – *উমাইয়া খেলাফত পৃষ্ঠা-৯* ভারতের কলিকাতার সবার পরিচিত লেখক – ডক্টর ওসমান গনী , এম এ, পিএইচডি, ডিলিট ,বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক – ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ,কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় , কলিকাতা / সিবত ইবনে জুজি তাজকেরা নামক পুস্তক পৃ-১১৬ ।অতএব মূয়াবীয়া যে কোন পুরুষের রাসায়ানিক বিক্রীয়ায় হিন্দার গর্ভে এসেছিল খোদ হিন্দাও তা জানত না ।সুপ্রিয় পাঠক ,দয়া করে ইতিহাস জানুন । এখানে শীয়া বা সুন্নি বিবেচ্য নয় । নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করুন ।— আমরা কি প্রকৃত সুন্নাহ অনুসরন করছি —লেখক – এম , এ , রহমান ,পৃষ্ঠা – ১৭৫ , ১৭৬ ।লা'নাতুল্লাহি আলা কাউমে জালেমিন…………………নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ এর মর্যাদাপর্ব ‎(((((৫)))))★. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেيايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين“হে ঈমানদাররা তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।”[সূরা তওবা,আয়াত নং ১১৯]★কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন যে, ‏আয়াতে সাদেকীন বা সত্যবাদী বলতে হযরত আলী ‎(আ:) ‏ও তাঁর সঙ্গীদের বুঝানো হয়েছে।সত্যিকার অর্থে এর উজ্জ্বল প্রতিপাদ্য ‎(মিসদাক) ‏হচ্ছেন হযরত আমীরুল মুমেনীন ‎(আ:)।*(ক.) ‏ইবনে জওযী হানাফী প্রণীত- ‏তাযকেরাতুল খাওয়াস: ‏পৃঃ ১৬।*(খ.) ‏মানাকেবে খাওয়ারেজমী হানাফী: ‏পৃঃ ১৭৮।*(গ.) ‏দুররুল মানসূর-সূয়ুতী: ‏৩য় খন্ড,পৃঃ ৩৯০।*(ঘ.) ‏আলূসী প্রণীত তাফসীরে রুহুল মাআনী: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ৪১।★৮. ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃيَا عَلِيُّ، إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي أَنْ اُدْنِيكَ وَ أُعَلِّمُكَ ِلتَعِيَ، وَ أََنْزَلَتْ هَذِهِ الْآيَهُ: «وَ تَعِيَهَا اُذُنٌ وَاِعيَةٌ» فَأََنْتَ اُذُنٌ وَاعِيَةٌ لِعِلْمِي.হে আলী ‎(আঃ)! ‏আল্লাহ আঁমাকে বলেছেন,তোমাকে আঁমার কাছে এনে আঁমার ইলমকে তোমাকে শিক্ষা দিতে যাতে তুমি সেগুলো পুরোপুরি শিখে নাও। এ মর্মে এই আয়াত নাযিল হয়েছে ‎‘‘এবং সত্যগ্রাহী কান এটাকে ধারণ করে’’।কাজেই তুমি আঁমার জ্ঞানের সত্যগ্রাহী কান! [সূরা আল হাক্কাহ্: ‏১২ ‎(হিলিয়াতুল আউলিয়া-১:৬৭,আদ দুররুল মানসূরঃ ৮:২৬৭]✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃصَاحِبُ سِرِّي عَلِيُّ ابْنُ أَبِي طَالِبٍ.আলী ‎(আঃ) ‏আঁমার গোপন রহস্যকথার একমাত্র আধার। ‎*******দলিল********(ক.) ‏আল ফেরদৌসঃ ২:৪০৩/৩৭৯৩*(খ.) ‏আল ইমাম আলী ‎(আঃ)– ‏ইবনে আসাকিরঃ ২:৩১১/৮২২✌হযরত ইমাম নেসায়ী ‎(رضي الله عنه) ‏উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা ‎(رضي الله عنه) ‏হতে বর্ণনা করেন- ‏ঐ জাত পাকের কসম! ‏রাসূলে পাক ‎(ﷺ) ‏এঁর বেসালে হক ‎(ইন্তেকালের) ‏সময় সবচেয়ে নিকটে ছিলেন হযরত আলী আলাইহিস সালাম।দরজার নিকট আমি দেখেছি হুযুর পাক আলীর মুখে মুখ লাগিয়ে,বুকে বুক লাগিয়েছেন এবং চুপি চুপি কিছু গোপন কথা বলেছেন। ‎[খাসায়েসে কুবরা: ‏পৃষ্টা ২৮-২৯,মিশরে ছাপা,ইয়া মুকালরেবুল ক্বুলুবঃ পৃষ্টা-৪৫]✌জাবের ‎(রাঃ) ‏বলেনঃ তায়েফের দিন রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏হযরত আলী ‎(رضي الله عنه) ‏কে কাছে ডাকলেন।তাঁকে একপাশে নিয়ে কানে কানে যুক্তি করলেন।লোকজন বললো,‘‘তাঁর চাচাতো ভাইয়ের সাথে যুক্তি করা কতো দীর্ঘায়িত হলো!’’ ‏রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বললেন ‎:مَا اَنْتَجَيْتُهُ ، وَلَكِنْ اللهَ انْتَجَاهُ.আমি তাঁর সাথে যুক্তি করিনি,বরং আল্লাহ তাঁর সাথে যুক্তি করেছেন। ‎*******দলিল********(ক.) ‏আর রিয়াদুন নাদ্রাহঃ ৩:১৭০ ‎*(খ.) ‏সুনানে তিরমিযীঃ ৫:৬৩৯/৩৭২৬*(গ.) ‏খাসায়েসে নাসায়ী: ‏৫*(ঘ.) ‏ফাযায়েলূস সাহাবা-২:৫৬০/৯৪৫*(ঙ.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১৩০- ‏১৩২✌তাঈফ যুদ্ধের দিন রাসূল ‎(ﷺ) ‏আলী ‎(আঃ)- ‏এঁর সাথে গোপনে কথা বললে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে,নবিজী তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ গোপনে কথাবার্তা বলছেন,রাসূল ‎(ﷺ) ‏বললেন আমি তাঁর সাথে গোপনে কথা বলিনি,বস্তুতঃ আল্লাহ তা’আলাই তার সঙ্গে কথা বলেছেন। ‎[তিরমিযি,ইফাবাঃ ৬:৩৭২৬]নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম১২.০১.২১

পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে আমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ এর মর্যাদাপর্ব ‎((((((৬))))))★. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেانما انت منذر ولكل قوم هاد“হে নবী আঁপনি! ‏ভয় প্রদর্শনকারী! ‏প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক।[সূরা রা’দ,আয়াত নং ৭]★এখানে ভয় প্রদর্শনকারী বলতে রাসুল ‎ﷺ ‏আর পথপ্রদর্শক বলতে হযরত আলী ‎(আ:) ‏বুঝানো হয়েছে।আহলে সুন্নাতের যে সব সূত্রে এ বর্ণনাটি এসেছে তন্মধ্যে রয়েছে।*(ক.) ‏ফখরে রাযী প্রণীত তাফসীরে কাবীর- ‏৫ম খন্ড,পৃঃ ২৭১।দারুত তাবাআহ আমেরাহ্,মিশরে মুদ্রিত এবং এছাড়া অন্য এক সংস্করণের ২১তম খন্ড,পৃষ্ঠা: ‏১৪*(খ.) ‏তাফসীরে ইবনে কাসীর: ‏২য় খন্ড, ‏পৃষ্ঠা-৫২*(গ.) ‏দুররুল মানসুর,সুয়ূতী ৪র্থ খন্ড,পৃষ্ঠা ৪৫।*(ঘ.) ‏আলুসী প্রণীত রুহুল মায়ানী ১৩তম খন্ড,পৃঃ ৭৯।*(ঙ.) ‏হাসকানী হানাফী প্রণীত ‎“শাওয়াহেদুত তানযীল” ‏১ম খন্ড,পৃঃ ২৯৩ ও ৩০৩,হাদীস নং ৩৭৮-৪১৬।*(চ.) ‏তাফসীরে শওকানী: ‏৩য় খন্ড,পৃঃ ৭০।*(ছ.) ‏ইবনুস সাবাগ মালেকী,ফসুলুল মুহিম্মাত পৃঃ ১০৭।*(জ.) ‏শাবলেবখী প্রণীত ‎‘নূরুল আবসার’ ‏পৃঃ ৭১।ওসমানিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত, ‏মিশর।*(ঝ.) ‏কান্দযী হানাফী প্রণীত ‎‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ‏পৃঃ ১১৫ ও ১২১ হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃأنَا الْمُنْذِرُ وَ عَلِيٌّ الْهَادِي، بِكَ يَا عَلِيُّ يَهْتَدِي الْمُهْتَدُونَ.আঁমি হলাম সাবধানকারী।আর হে আলী তোমার মাধ্যমে পথ অন্বেষণকারীরা পথ খুঁজে পাবে।[তাফসীরে তাবারীঃ ১৩:৭২,ইমাম আলী ‎(رضي الله عنه) (অনুবাদ)-ইবনে আসাকিরঃ ২:৪১৭/৯২৩]★. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে-“যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‏আঁপনি রাসুল নন।আঁপনি বলে দিন, ‏আঁমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি যার কাছে কিতাবের ‎(ইলমুল কিতাব ‎) ‏জ্ঞান আছে,সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট।[সুুরা রাদ,আয়াত নং ৪৩]আবদুল্লাহ বিন সালাম বলেছেন যে,আমি নবীজীকে ‎(ﷺ) ‏প্রশ্ন করলাম যে ‎, ‏এই আয়াতে ঐ ব্যক্তি যার নিকট কিতাবের সমূদয় জ্ঞান রয়েছে,তিঁনি কে? ‏নবীজী ‎(ﷺ) ‏উত্তরে বললেন,ঐ ব্যক্তিটি হচ্ছে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব। ‎*******দলিল********(ক.) ‏আল কাশফু ওয়াল বায়ানঃ ৪র্থ খন্ড,পৃঃ ৬০*(খ.) ‏আল নাঈম আল মুকিমঃ পৃ-৪৮৯*(গ.)তাফসীরে কুরতুবিঃ ৯ম খন্ড,পৃঃ ৩৩৬নিবেদকমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম১৪.০১.২১

সাহাবারা সবাই জান্নাতি, তবে আবার আশশারে মোবাশশারা কেনো! তাহলে বাকিরা কই যাবে। আবার এদের মাঝে আহলে বায়াতের কেউ নেই। না আছেন জান্নাতের মহিলাকুলের সরদার, না আছেন জান্নাতের যুবকদের সরদার। শিয়ারা এই ফরায়েজি আন্দোলন দেইখা পালাইবে। কি উর্বর চিন্তাভাবনা। আবুল আওলিয়া হজরত হাসান বসরি রাঃ আরও বলেন-মুয়াবিয়ার চারটি কাজের যে কোন একটি তার আখেরাত ধ্বংস হবার জন্য যথেষ্ট। ক, মুসলিম উম্মাহ ও বৈধ ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করা ও শূরার পরামর্শ ব্যতীত ক্ষমতা গ্রহন করা খ, শরাবি ও লম্পট পুত্র ইয়াজিদ কে স্থলাভিষিক্ত করা। গ, যিয়াদ (তার পিতার জারজ সন্তান) কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আপন ভাই হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। ঘ, মহানবীর বিশিষ্ট সাহাবা হাজর বিন আদি রাঃ ও তার সঙ্গিদের বিনা দোষে হত্যা করা। ( ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৯ম খণ্ড)উল্লেখ্য যে মুয়াবিয়ার বাবা আবু সুফিয়ান তায়েফ এ এক ঘরে রাত্রি যাপন করেন। সেখানে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সামিয়া নামক এক গ্রীক দাসীর সাথে সহবাস করেন। কিছুদিন পর তার ঔরস এ এক ছেলে জন্ম গ্রহন করেন । আবু সুফিয়ান লজ্জায় পিতৃত্ত অস্বীকার করে । এই জন্য এই ছেলের নাম হয় জিয়াদ ইবনে আবিহ অর্থাৎ জিয়াদ কারো পুত্র নয় । মুয়াবিয়া ও তাকে ভাই বলে স্বীকার করে নি। কিন্তু আমীর হবার পর ও হজরত আলী আঃ এর বিরুদ্ধে যখন মাঠে নামল তখন জিয়াদ কে ভাই বলে স্বীকৃতি দিয়ে নিজ দলে টেনে নিল।ইমাম যুহরী রাঃ বলেন –মুয়াবিয়ার এই কাজটি নিঃসন্দেহে শরিয়ত বিরোধী। ( আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড)যে সব সাহাবা ও ব্যক্তিরা মুয়াবিয়া কে পথ ভ্রষ্ট মানতেন তাদের তালিকা- ১ উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা রাঃ ২ উম্মুল মুমেনিন হজরত উম্মে সালমাহ রাঃ ৩ হজরত আবু দারদা রাঃ ৪ হজরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ ৫ কায়েস বিন সাদ রাঃ ৬ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ ৭ আবু জর গিফারি রাঃ ৮ হাজর বিন আদী রাঃ ৯ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ ১০ হজরত ওয়াইস করণী রাঃ ১১ হজরত হাসান বসরী রাঃ ১২ মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (মুয়াবিয়ার পৌত্র) ১৩ আল্লামা ইবনে আসির ১৪ শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভি ১৫ শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি

পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে আমিরুল মোমেনীন মাওলা আলী ইবনে আবী তালিব ‎(আ:) ‏এঁর মর্যাদা- ‏পর্ব ‎(((((৪))))★ ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেوالذي جاء بالصدق وصدق به ألاءك هم المتقون‘যিঁনি সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন এবং যিঁনি তা সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা পরহেযগার।’[সূরা যুমার,আয়াত নং ৩৩]✊এ আয়াতের তাফসীরে কোন কোন মুফাসসীর বলেছেন যে,-‘যিঁনি সত্য বাণী নিয়ে এসেছেন বলতে এখানে নবিজী ‎ﷺ ‏এঁর কথা বলা হয়েছে।আর-“যিঁনি তা সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিঁনি হযরত আলী ‎(আ:)।” ‏নিঃসন্দেহে প্রথম যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ‎ﷺ-এঁর উপর ঈমান আনেন তিঁনি ছিলেন হযরত আলী ‎(আ:)।আহলে সুন্নাতের কোন কোন মুফাসসীরও তাদের তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলী ‎(আ:) ‏সম্পর্কে বলে অভিমত দিয়েছেন।যেমন:*(ক.) ‏হাসকানী হানাফী প্রণীত শাওয়াহেদুত তানযীল: ‏২য় খন্ড,পৃঃ ১২০*(খ.) ‏সূয়ূতী প্রণীত দুররুল মানসূর: ‏৫ম খন্ড,পৃঃ ৩২৮।*(গ.) ‏তাফসীরে কুরতুবী: ‏পঞ্চদশ খন্ড, ‏পৃঃ ২৫৬।*(ঘ.) ‏কিফায়াতুত তালিব কুঞ্জী শাফেয়ী: ‏পৃঃ ২৩৩,হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।এবার হাদিস শরীফ লক্ষ্য করুন:রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃأََوَّلُ مَنْ صَلَّي مَعِي عَلِيٌّ.সর্বপ্রথম আঁমার সাথে যে নামায পড়েছে সে হলো আলী ‎(আঃ)। ‎*******দলিল********(ক.) ‏কানযুল উম্মাল- ‏১১:৬১৬/৩২৯৯২ ‎*(খ.) ‏আল ফেরদৌস- ‏১:২৭/৩৯✌আলী ‎(আঃ) (ﷺ) ‏প্রথম মুসলিম।সর্ব প্রথম তিঁনি সালাত আদায় করেন।[তিরমিযি,ইফাঃ ৬:৩৭৩৪,৩৭২৮]☝রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃأََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ.তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে।আর সে হলো আলী ‎(আঃ)। ‎*****দলিল*******(ক.) ‏আল মুস্তাদরাক-হাকেমঃ ৩:১৩৬ ‎*(খ.) ‏আল ইস্তিয়াবঃ ৩:২৭,২৮*(গ.) ‏উসুদুল গাবাহঃ ৪:১৮*(ঘ.) ‏তারীখে বাগদাদঃ ২:৮১*(ঙ.) ‏কান্জুল উম্মাল,২য় খন্ড,পৃঃ ২১৪, ‏হাদিস নং ১১৯৩আঁমার উপর সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী এবং আঁমাকে সর্বপ্রথম সমর্থনকারী হলেন আলী।[আনসাব উল আশরাফ,২য় খন্ড,পৃ: ‏৩৬২]নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম১০.০১.২১

পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ এর মর্যাদাপর্ব ‎(((৩)))সূরা মায়েদা আয়াত নম্বর ‎55 ‏পাশাপাশি আরও কিছু হাদিস ও আয়াত দ্বারা প্রমাণিতউক্ত আয়াতের পাশাপাশি আরও কতিপয় হাদিস আপনাদের সামনে তুলে ধরছিহাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছেمَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَي آدَمَ فِي عِلْمِهِ، وَ إِلَي نُوحٍ فِي فَهْمِهِ وَ إِلَي إِبْرَاهِيمَ فِي حِلْمِهِ وَ إِلَي يَحْيَي بْنِ زَكَرِيَّا فِي زُهْدِهِ وَ إِلَي مُوسَي بْنِ عِمْرَانَ فِي بَطْشِهِ فَلْيَنْظُرْ إِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ.যে ব্যক্তি আদমকে তাঁর জ্ঞানে,নুহকে তাঁর ধীশক্তিতে,ইবরাহীমকে তাঁর দূরদর্শিতায়, ‏ইয়াহিয়াকে তাঁর সংযমশীলতায় আর মূসা ইবনে ইমরানকে তাঁর সাহসিকতায় দেখতে চায় সে যেন আলী ‎(আঃ) ‏এর প্রতি লক্ষ্য করে।দলিল*(ক.) ‏ইমাম আলী ‎(আঃ)-ইবনে আসাকির ২:২৮০/৮১১*(খ.) ‏আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াঃ ৭:৩৬৯💟রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏ইমাম আলী ‎(আঃ) ‏কে বলেনঃأنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَي إِلَّا أَنَّهُ لَا نَبِيَّ بَعْدي.আঁমার নিকট তুমি মুসার কাছে হারুনের ন্যায়।শুধু আঁমার পরে কোনো নবী নেই।দলিল*(ক.) ‏সুনানে তিরমিযীঃ ৫:৬৪১/৩৭৩০*(খ.) ‏মাসাবিহুস্ সুন্নাহঃ ৪:১৭০/৪৭৬২*(গ.) ‏সহীহ মুসলিমঃ ৪:৪৪/৩০✌রাসূল ‎ﷺ ‏বলিয়াছেনঃ ‎“হে আলী! ‏মূসা ‎(আঃ) ‏এঁর কাছে হারূণ ‎(আঃ) ‏এঁর যেরূপ মর্যাদা,আঁমার কাছে তোমারও সেরূপ মর্যাদা।কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে আঁমার পরে কোন নবী নেই।”[সহীহ বুখারী-কিতাবুল মানাকিব,হাদিস নং-৩৪৩৪,মিশকাতঃ ১১তম খন্ড,হাদিস নং ৫৮২৮]🌺 রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَ لَهُ نَظِيرٌ فِي اُمَّتِهِ وَ عَلِيٌّ نَظِيرِي.এমন কোনো নবী নেই যার উম্মতের মধ্যে তাঁর দৃষ্টান্ত কেউ ছিল না।আর আঁমার দৃষ্টান্ত হলো আলী ইবনে আবি তালিব।দলিল**(ক.) ‏আর রিয়াদুন নাদ্রাহঃ ৩:১২০*(খ.) ‏যাখায়েরুল উকবা: ‏৬৪✌রাসূলুল্লাহ ‎(ﷺ) ‏বলেছেনঃاَللَّهُمَّ إنِّيأَقُولُكَمَاقَالَأَخِيمُوسَي: اَللَّهُمَّ اجْعَلْ لِيوَزِيراً مِنْ أَهْلِيأَخِيعَلِيّاً اُشْدُدْ بِهِ أزْرِي وَ أَشْرِكْهُ فِيأَمْرِي كَيْ نُسَبِّحَكَ كَثِيراً وَ نَذْكُرَكَ كَثيراً، إِنَّكَ كُنْتَ بِنَا بَصِيراً.হে আল্লাহ! ‏আঁমিও আঁমার ভাই মুসার মতো বলছি,‘‘হে খোদা! ‏আঁমার জন্য আঁমার পরিবারের মধ্যে থেকে কাউকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়োগ করো। আঁমার ভাই আলী ‎(আঃ)কে যার দ্বারা আঁমার শক্তি মজবুত হয় এবং আমাকে সাহায্য করে। যাতে তোমার মহিমা বর্ণনা করতে সক্ষম হই এবং তোমার অধিক ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারি। অবশ্য তুমি আমাদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধকারী।দলিল*(ক.) ‏আর রিয়াদুন নাদরাহঃ ৩:১১৮*(খ.) ‏ফাযায়িলুস সাহাবাঃ ২:৬৭৮/১১৫নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম০৮.০১.২১

পবিত্র কুরআনের আলো থেকে আলী ইবনে আবী তালিব আঃ এর মর্যাদাপর্ব ‎(((২)))উল্লেখিত সব বর্ণনাতেই একথা বলা হয়েছে যে,যখন নবিজী ‎ﷺ-এঁর কাছে ‎‘কুরবা’ ‏বা নিকটাত্মীয় কারা তা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেন যে,তারা হলেন হযরত আলী ‎(আ:), ‏ফাতেমা ‎(আ:),ইমাম হাসান ‎(আ:) ‏ও হুসাইন ‎(আ:)।(ক্রমশঃ)★৩. ‏পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেوَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشْرِى نَفْسَهُ ٱبْتِغَآءَ مَرْضَاتِ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ رَءُوفٌۢ بِٱلْعِبَادِ“লোকদের মধ্যে এমন অনেক আছে, ‏যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে নিজেদের প্রাণকে বিক্রি করে,আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি দয়াশীল।”[সূরা আল বাকারা,আয়াত নং ২০৭]🌺এ আয়াতও হযরত আলী ‎(আ:) ‏প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে।নবিজী ‎ﷺ ‏যখন মক্কা থেকে মদীরায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মক্কার মুশরিকরা রাতে হযরতের উপর হামলা করে তাঁকে হত্যার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আল্লাহ তায়ালা নবিজী ‎ﷺ ‏কে মুশরিকদের নীল নকশা সম্পর্কে অবহিত করেন।তখন নবিজীর বিছানায় শুয়ে থাকার জন্য হযরত আলী ‎(আ:) ‏তৈরী হন।সে রাতটি ‎‘লাইলাতুল মুবিত’ ‏নামে প্রসিদ্ধ হয়।কোন কোন সুন্নী আলেমগন সে বর্ণনাটি সমর্থন করেছেন।যেমন:*(ক.) ‏হাসকানী হানাফী প্রণীত শাওয়াহেদুত তানযীল: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ১৩৩-১৪১*(খ.) ‏ইবনে সাবাগ মালেকী প্রণীত ‎“ফসুলুল মুহিম্মাত” ‏হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত- ‏পৃঃ ৩১।*(গ.) ‏সাবত ইবনে জাওযী প্রণীত ‎‘তাযকিরাতুল খাওয়াস’ ‏হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত-পৃঃ ৩৫ ও ২০০।*(ঘ.) ‏কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‎‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ‏ইস্তামবুলে মুদ্রিত,পৃঃ ৯২।*(ঙ.) ‏ফাখরুদ্দীন রাযীর তাফসীরে কবীর: ‏৫ম খন্ড,পৃঃ ২২৩।মিশরে মুদ্রিত।*(চ.) ‏শাবলাঞ্জী প্রণীত ‎‘নূরুল আবসার’ ‏ওসমানিয়া জাপাখানায় মুদ্রিত, ‏পৃঃ ৭৮*(ছ.) ‏মুসনাদে আহমদ: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ৩৪৮।★৪. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেالذين ينفقون اموالهم باليل والنهار سرا وعلانية فلهم اجرهم عند ربهم ولاخوف عليهم ولاهم يحزنون“যারা রাতে ও দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে প্রতিদান রয়েছে। তাদের জন্য কোন ভয় নেই, ‏তারা চিন্তিতও হবে না।”[সূরা বাকারা,আয়াত নং ২৭৪]★আহলে সুন্নাত সহ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে,এ আয়াত হযরত আলী ‎(আ:) ‏সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। যেমন:*(ক.) ‏কাশশাফে যামাখশারী: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ৩১৯।বৈরুতে মুদ্রিত,১ম খন্ড,পৃষ্ঠা-১৬৪ মিশর হতে মুদ্রিত।*(খ.) ‏ইবনে জাওজী হানাফী প্রণীত তাযকেরাতূল খাওয়াস’: ‏পৃঃ ১৪।*(গ.) ‏ফখরে রাযীর ‎‘তাফসীরে কবীর’: ‏৭ম খন্ড,পৃঃ ৮৯,মিশরে মুদ্রিত।*(ঘ.)তাফসীরে কুরতুবী:৩য় খন্ড,পৃঃ ৩৪৭*(ঙ.) ‏তাফসীরে ইবনে কাসীর: ‏১ম খন্ড, ‏পৃঃ ৩২৬।*(চ.) ‏আদ দুররুল মানসূর: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ৩৬৩।*(চ.) ‏কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‎‘ইউনাবিউল মুওয়াদ্দাত’: ‏পৃঃ ৯২,ইস্তামবুলে মুদ্রিত পৃঃ ২১২।★৫. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেانما وليكم الله و رسوله والذين أمنوا الذين يقيمون الصلوة ويؤتون الزكوة وهم راكعون“নিশ্চয়ই তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ,তাঁর রসূল এবং যারা ঈমান এনেছে আর রুকু অবস্থায় যাকাত দান করে।” [সূরা মায়েদা,আয়াত নং ৫৫]✌হযরত আলী ‎(আ:)-এর ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হয়েছে।ঘটনাটি ছিল এই যে,একজন ভিখারী মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্যের প্রার্থনা জানায়।কিন্তু কেউ তাতে সাড়া দেয়নি।ঐ সময় হযরত আলী ‎(আ:) ‏নামাযে রুকুতে ছিলেন।ঐ অবস্থাতেই তিনি আঙ্গুলের ইশারা করেন।ভিখারী কাছে আসে এবং হযরত আলীর হাত থেকে তাঁর আংটিটি খুলে নেয়।★এ আয়াতের শানে নযূল যে হযরত আলী ‎(আ.) ‏তা আহলে সুন্নাতের মুফাসসীরগণও সমর্থন করেছেন এবং তাদের তাফসীরের কিতাবে তা উদ্বৃত করেছেন।যেমন:*(ক.) ‏মুুহিউদ্দীন তাবারী প্রণীত যাখায়েরুল ওকবা পৃঃ ৮৮,কায়রোর মাকতাবাতুল কুদসী হতে মুদ্রিত।*(খ.) ‏তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬ষ্ঠ খন্ড, ‏পৃঃ ১৪৯ মিশরের মুনিরিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত।*(গ.) ‏তাফসীরে ইবনে কাসীর: ‏২য় খন্ড, ‏পৃঃ ৭১,মিশরে মুদ্রিত।*(ঘ.) ‏শেখ আবুল হাসান আলী ইবনে আহমদ আল ওয়াহিদ আন নিশাপুরী আসবাবুল নুযূল: ‏পৃ ১৪৮ হিন্দিয়া প্রকাশনী থেকে মুদ্রিত ‎(১৩১৫ হিজরী) ‏মিশর।*(ঙ.) ‏জালালুদ্দীন সুয়ূতী প্রণীত লুবাবুন নূকুল মুস্তাফা আল হালাবী ছাপাখানা হতে মুদ্রিত,পৃঃ ৯০।*(চ.) ‏তাফসীরে বায়যাভী-আনোয়ারুত তানযীল প্রাচীন মিশরে মুদ্রিত,পৃঃ ১২০।*(ছ.) ‏তাফসীরে তাবারী: ‏৬ষ্ঠ খন্ড,পৃষ্ঠা ১৬৫, ‏মিশরে মুদ্রিত।*(জ.) ‏আল্লামা নাসাফী: ‏১ম খন্ড,পৃঃ ২৮৯।*(ঝ.) ‏আল্লামা যামাখশারী প্রণীত ‎‘আল কাশশাফ’ ‏১ম খন্ড,পৃঃ ৩৪৭। আত্তেজারাত ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত,মিশর।*(ঞ.) ‏ফাখরে রাযীর তাফসীরে কাবীর ১২তম খন্ড,পৃঃ ২৬-নতুন মুদ্রণ,মিশর হতে।*(ট.) ‏শেখ আবু বকর আহমদ ইবনে আলী আর রাযী হানাফী প্রণীত আহকামুল কুরআন: ‏২য় খন্ড,পৃঃ ৫৪৩ মিশর হতে মুদ্রিত।*(ঠ.) ‏কুরতুবী প্রণীত আল জামে লি আহকামিল কুরআন: ‏৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ২২১, ‏মিশরে মুদ্রিত।*(ড.) ‏তাফসীরে আদদুররুল মানসুর: ‏২য় খন্ড,পৃঃ ২৯৩,প্রথম প্রকাশ,মিশর।⏩সূরা মায়দাহ ৫৫ নং আয়াত,যেখানে আল্লাহ্‌ ‏রাব্বুল আলামিন মসজিদে নববিতে সংগঠিত একটি ঘটনার প্রশংসায় নাযিল করেছিলেন।‘তোমাদের ওয়ালি তো হচ্ছেন আল্লাহ্‌ ‏এবং তাঁর রাসুল এবং সেই সকল মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত দেয়।’আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট হিসেবে তাফসিরকারক ও ঐতিহাসিকগণ চমৎকার একটি ঘটনার বর্ণনা করেছেন। একবার আল্লাহ’র রাসুল ‎(ﷺ) ‏সাহাবীদের সাথে মসজিদে নববিতে বসে ছিলেন, ‏যখন আলী ‎(رضي الله عنه) ‏সালাত আদায় করছিলেন।এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে মসজিদে নববিতে সকলের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করে নিরাশ হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ ‏দরবারে অভিযোগ করছিল যে,‘ইয়া আল্লাহ্‌! ‏তুমি সাক্ষি থেকো,তোমার নবীর মসজিদ থেকে আমি খালি হাতে ফিরে গেলাম।’ ‏তখন আবুল হাসান ‎(আলী ‎(رضي الله عنه)) ‏রুকু অবস্থায় ছিলেন এবং ভিক্ষুকের দিকে তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন এবং ভিক্ষুক তাঁর হাত থেকে রাসুল ‎(ﷺ)’র উপহার দেয়া সুলেমানি আংটি খুলে নিয়ে যায়।এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে রাসুল ‎(ﷺ) ‏আল্লাহ’র দরবারে হাত তুলে দোয়া করেন,‘হে আল্লাহ্‌! ‏তুমি হারুনকে যেমন মুসার স্থলাভিষিক্ত করেছিলে, ‏তেমনই আলি’কে আঁমার স্থলাভিষিক্ত করে দাও।’ ‏তখন জিবরাঈল ‎(عليه السلام) ‏সূরা মায়েদার ৫৫ আয়াত নিয়ে হাজির হন।[তাফিসির-এ-মারেফুল কোরআন,সূরা মায়েদাহ আয়াত ৫৫]এখানে পবিত্র কুরআনুল কারীম দিয়ে খুব সুন্দর করে আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব এর বর্ণনা করা হয়েছে যেটাকে স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ও রাহমাতাল্লিল আলামিন রাসুলে খোদার মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়েছেনিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম০৬.০১.২১

পবিত্র কোরআনের আলোকে মাওলা আলী ‎(আ:) ‏এঁর মর্যাদা-১ম পর্ব ‎★১. ‏হজরত আলী ‎(আঃ) ‏মর্যাদা এত অধিক যে,ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল বলেন-রাসূল ‎ﷺ-এঁর সাহাবীগণের মধ্যে অন্য কারো সম্পর্কে আলী ‎(আঃ)-এঁর মত এত অধিক মর্যাদা বর্ণিত হয়নি।[মুনতাহাল আমালঃ ১ম খণ্ড,পৃষ্ঠা-১২০ ও তারিখে হাবিবুস সাঈরঃ১ম খণ্ড,পৃঃ ৪১১]★ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ আলী ‎(আঃ)-এঁর শানে ‎(সম্পর্কে) ‏যত কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে,অন্য কোন ব্যক্তির শানে এত পরিমাণ আয়াত নাজিল হয়নি।[ইমতাউল আসমাঃ পৃষ্ঠা ৫১০]🌺পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছেمن المؤمنین رجال صدقوا ماعاهدوا الله علیه فمنهم من قضی نحبه ومنهم من ینتظر وما بدلوا تبدیلا“মুমিনদের মধ্যে এমন পুরুষ রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতির ‎(আল্লাহর রাস্তায় আত্মত্যাগ) ‏উপর অবিচল রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছুলোক তাদের ওয়াদা পূর্ণ করেছে।আর কিছু লোক অপেক্ষায় আছে এবং তাদের প্রতিশ্রুতিতে কোনরূপ পরিবর্তন করেনি।”[সূরা আহজাব,আয়াত নং ২৩]⏩এ আয়াতে কাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসীরদের বিভিন্ন মত রয়েছে।নিশ্চিতভাবে শাহাদাতের জন্য অপেক্ষমান লোকদের মধ্যে হযরত আলী ‎(আ:) ‏অন্যতম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোন কোন মুফাসসীর এ মতটির কথা উল্লেখ করেছেন।যেমন:*১. ‏হাকেম আবুল কাসেম হেসকানী হানাফী ‎‘শাওয়াহেদুত্ তানযীল’ ‏কিতাবের ১ম ও ২য় খন্ডে ৬২৭ ও ৬২৮ নম্বর হাদীসে হযরত আলী ‎(আ:) ‏থেকে এ মর্মে বর্ণনা করেন যে,তিঁনি বলেছেন ‎:رجال صدقوا ‏আয়াতটি আঁমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।খোদার কসম,আঁমি কি সেই ব্যক্তি যে শাহাদাতের জন্য অপেক্ষা করছি! ‏আঁমি কখনো নিঁজের কর্মপন্থা পরিবর্তন করিনি,আঁমি আঁমার প্রতিশ্রুতির উপর অবিচল রয়েছি।’★★⏫*২. ‏কান্দুযী হানাফী প্রণীত ‎‘ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ‏ইস্তম্বুলে মুদ্রিত পৃষ্ঠা: ‏৯৬ এবং হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত,পৃ: ‏১১০।*৩. ‏মানাকেবে খাওয়ারেজমী হানাফী, ‏হায়দারিয়া ছাপাখানায় মুদ্রিত,পৃষ্ঠা: ‏১৯৭।*৪. ‏তাযকেরায়ে ইবনে জাওযী হানাফী- ‏পৃঃ ১৭।*৫. ‏আসসাওয়ায়েকুল মুহরেকা: ‏পৃঃ ৮০।*৬. ‏শাবলাঞ্জী নূরুল আবসার,সাদীয়া প্রেসে মুদ্রিত-পৃঃ ৭৮*৭.তাফসীরে খাজেম ৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা: ‏২০৩*৮. ‏ফাজায়েলুল খাম্সা মিনাস সেহাহ আস্ সিত্তা ১ম খন্ড,পৃঃ ২৮৭।✌আয়াতটি খন্দকের যুদ্ধ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ।ঐ সময় কাফের ও মুশরিকদের বিশাল বাহিনী মদীনার দিকে অভিযান পরিচালনা করে।রসূলে খোদা ‎ﷺ ‏তাদের অভিযান সম্পর্কে অবহিত হয়ে পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন যে,মদীনার চার পাশে খন্দক খনন করা হবে,যাতে দুশমন মদীনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। খন্দক খননের পর শত্রু বাহিনী এ অবস্থায় মুখোমুখি হয়ে হোঁচট খায়। এরপর মাত্র কয়েকজন ব্যতীত শত্রুসৈন্যরা খন্দক বেষ্টনীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে আমর ইবনে আবদু ছিল প্রচন্ড-বীরত্বের অধিকারী।সে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে প্রতিদ্বন্দীর জন্য হাঁক দিতে থাকে।মুসলমানরা তখন ইতস্তত বোধ করছিলেন।এ সময় হযরত আলী ‎(আ:) ‏তার সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত হন।ঠিক ঐ সময় নবী করিম ‎ﷺ ‏হযরত আলীর জন্য দোয়া করেন এবং এ বিখ্যাত উক্তিটি করেন-برز الایمان کله الشرک کلهঅর্থাৎ ‎“সমগ্র ঈমান ‎(আলী) ‏সমগ্র কুফরের মুখোমুখি হয়েছে।”আলী যদি পরাজিত হয় প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও ঈমান পরাজয় বরণ করবে আর যদি আমর ইবনে আবদু পরাজিত হয় তাহলে সমস্ত কুফরই যেন পরাজিত হবে।শেষ পর্যন্ত হযরত আলী ‎(আ:) ‏জয়লাভ করেন।তিঁনি আমর ইবনে আবদুকে হত্যা করেন।এ প্রসঙ্গে নবী করিম ‎ﷺ ‏বলেন,لضربة علی یوم الخندق افضل من عبادة الثقلینঅথবাضربة علی یوم الخندق افضل من اعمال امتی الی یوم القیامة“খন্দকের দিন আলীর আঘাতের মর্যাদা মানব ও জ্বিন উভয় জাতির ইবাদতের চাইতে উত্তম।” ‏অথবা ‎“খন্দকের দিন আলীর একটি আঘাতের মর্যাদা উম্মতের কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের ইবাদতের চাইতে উত্তম।” ‏শত্রুর উপর হানা হযরত আলীর একটি আঘাতের এতখানি মূল্য কেন সে বিষয়টিও পরিষ্কার।কেননা,হযরত আলীর এ আঘাত যদি সেদিন না হত তাহলে হয়ত কুফরী শক্তি জয়লাভ করত।পরিণামে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেত। অন্যদের ইবাদত-বন্দেগী করার অবকাশ তখন কিভাবে থাকত? ‏এ বর্ণনাটি সুন্নী আলেমগণ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।যেমন:*(ক.) ‏আল্লামা ইযযুদ্দীন ঈজী প্রণীত ‎‘কিতাবে মুওয়াফেক’ ‏ইস্তামবুলে মুদ্রিত-পৃঃ ৬১৭।*(খ.) ‏ফখরুদ্দীন রাজী প্রণীত নেহায়াতুল উকুল ফি দেরায়াতিল উসুল।পান্ডুলিপি- ‏পৃঃ ১১৪।*(গ.) ‏আল্লামা তাফতাযানী প্রণীত সারহুল সাকাসেদ: ‏২য় খন্ড,পৃঃ ২৩০*(ঘ.) ‏আল্লামা কান্দুযী প্রণীত ‎“ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’-৯৫ ও ১৩৭ পৃষ্ঠাইস্তামবুলে মুদ্রিত।*(ঙ.) ‏আল্লামা মওলভী আদ দেহলভী প্রণীত ‎‘তাজহীযুল যাহিশ: ‏পান্ডু লিপি পৃঃ ৪০৭।*(চ.) ‏আল্লামা বেহজাত আফিন্দী প্রণীত ‎“তারিখে আলে মুহাম্মদ’-পৃঃ ৫৭★২. ‏পবিত্র কোরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছেقل لا اسءلكم عليه اجرأ الا المودة في القربي“হে নবী! ‏তুমি বলে দাও,আঁমি রেসালাতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না,একমাত্র আঁমার নিকটাত্মীয়দের সাথে ভালোবাসা পোষণ ছাড়া।”[সূরা শূরা,আয়াত নং ২৩]★আহলে সুন্নাত সূত্রে বহু বর্ণনা আছে যে, ‏আয়াতে কুরবা বা নিকটাত্মীয় বলতে হযরত আলী ‎(আ:),হযরত ফাতেমা, ‏হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তাঁদের সাথে ভালোবাসা পোষণ করা অবশ্য কর্তব্য বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।*(ক.) ‏তাফসীরে তাবারী: ‏২৫ খন্ড,পৃঃ ২৫ মিশরে মুদ্রিত।*(খ.) ‏তাফসীরে কাশশাফ: ‏৩য় খন্ড,পৃঃ ৪০২/৪র্থ খন্ড,পৃঃ ২২০,মিশরে মুদ্রিত।*(গ.) ‏তাফসীরে কাবীর: ‏২৭ তম খন্ড,পৃঃ ১৬৬।মিশকুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত আলী ‎(আ:)-এর পরিচয় মুদ্রিত।*(ঘ.) ‏তাফসীরে বায়যাভী: ‏৪র্থ খন্ড,পৃঃ ১২৩।মিশকুরআন ও হাদীসের আলোকে হযরত আলী ‎(আ:)-এর পরিচয় মুদ্রিত।*(ঙ.) ‏তাফসীরে ইবনে কাছির: ‏৪র্থ খন্ড, ‏পৃষ্ঠা-১১২।*(চ.) ‏তাফসীরে কুরতুবী: ‏১৬তম খন্ড, ‏পৃষ্ঠাঃ ২২।*(ছ.) ‏দুররুল মানসুর: ‏৬ষ্ঠ খন্ড,পৃঃ ৭।*(জ.) ‏ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত-কান্দুযী হানাফী: ‏পৃঃ ১০৬,১৯৪,২৬১ ইস্তামবুলে মুদ্রিত।*(ঝ.) ‏তাফসীরে নাসাফী: ‏৪র্থ খন্ড,পৃঃ ১০৫।নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম03.01.21

আ’শারাহ মুবাশশারাহ" আল হাদিস নাকি জাল হাদিস?হাদিস “আ’শারাহ মুবাশশারাহর”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন সাহাবী বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন) ব্যাপারে আলোচনাআহলে সুন্নাতের রাবীগনের(হাদিস বর্ননাকারীগন) মধ্যে বিশেষ করে আহমাদ ইবনে আ’উফের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছে যে,নবী(সাঃ) বলেছেনঃএই ১০জন হচ্ছেন বেহেস্তবাসীঃ ১/আবুবকর ২/ওমর ৩/আলী(আঃ) ৪/উসমান। ৫/তালহা। ৬/যুবাইর ৭/আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ৮/সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্ক ৯/সাঈদ বিন যাইদ ১০/আবু উবাদাহ ইবনে জাররাহ (তিরমিজী,খন্ড-১৩,পাতা-১৮২;সুনানে আবি📖📖 দাউদ,খন্ড-২,পাতা-২৬৪।)এই হাদিসটি সাঈদ ইবনে যাইদের উদ্বৃতিতে সামান্য পার্থক্য সহকারে উল্লেখ হয়েছে,সুত্রঃ আল-গাদীর,খন্ড,পাতা-১১৮)।📖📖এটি হচ্ছে একটি জাল হাদিস।আহলে সুন্নাত এই জাল হাদিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।আর এই ১০ জনের নাম সমুহকে “আশারাহ মুবাশশারাহ”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন।) পবিত্র মসজিদে নববীর দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল।আর তাদের এই বিষয়টি সাধারন মানুষের মধ্যেও বিশেষ প্রসিদ্ব।একজন আহলে বাইতি আলেম বলেনঃমদীনায় একটি কাজের জন্য আ’মিরিন বে মারুফের দফতরে গিয়েছিলাম।ঐ দফতরের প্রধানের সাথে আলোচনা করতে করতে আশারাহ মুবাশশারাহর প্রসঙ্গে কথা ঊঠলো।বললামঃ আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে।প্রধানঃ বলুন।আহলে বাইতি শিয়া আলেমঃ এটা কিভাবে সম্ভব যে, ২ জন বেহেস্তবাসী একে অপরের সাথে যুদ্ব করে?তালহা ও যুবাইর যারা ঐ ১০জনের মধ্যে আছেন তারা হযরত আয়েশার ছত্রছায়ায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের(আঃ) বিরুদ্বে (তিনিও হচ্ছেন বেহেস্তবাসী) বসরায় জঙ্গে জামালের সুচনা করে এবং যে কারনে বহু লোক নিহত হয়েছিল?যখন কোরান বলছে যে, “যদি কেউ কোন মু’মিনকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তবে তার শাস্তি হচ্ছে দোযখ আর সে চিরদিনের জন্য সেখানে থাকবে” ( সুরা হাক্কঃ৪৪)।📖📖📖এই আয়াতের আলোকে যারা সেদিন মু’মিনদের বিরুদ্বে যুদ্ব করেছিল তারা অবশ্যই দোযখে যাবে।কেননা তাদের কারনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।অতএব, বিচক্ষনতার দৃষ্টিতে বিচার করলে বুঝা যায় উক্ত “আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস।প্রধানঃ যারা সেদিন যুদ্ব করেছিল তারা হচ্ছে মুজতাহিদ।তাই তারা ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় দিয়েছিল।সেই কারনে তারা উপায়হীন ছিল।আহলে বাইতি আলেমঃ রাসুলের(সাঃ) হাদিসের বিরুদ্বে( এবং কোরানের বিরুদ্বে) ইজতিহাদ করা জায়েজ নয়।আর যেহেতু তিনি বলেছেন,যা সকল মুসলমান গ্রহন করে থাকেঃ-“ হে আলী!তোমার সাথে যুদ্ব করা মানেই আমার সাথে যুদ্ব করা আর তোমার সাথে সন্দ্বি করা মানেই আমার সাথে সন্দ্বি করা( মানাকিবে ইবনে মাগাযিলি,পাতা-৫০;মানাকিবে খাওয়ারিযমী,পাতা-৭৬, ও ২৪)।📖📖📖রাসুল(সাঃ) আরো বলেনঃ “ যে আলীকে আনুগত্য করবে সে যেন আমার আনুগত্য করলো আর যে আলীর সাথে বিরোধীতা করবে সে যেন আমার সাথে বিরোধীতা করলো(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস📖📖 সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।📖📖📖“ আলী সত্যের সাথে এবং সত্য তার সাথে।যেখানেই আলী থাকবে সত্যও সেখানেই থাকবে “(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল-📖📖 ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)।📖📖সুতরাং ফলাফল দাড়াল এই, ঐ যুদ্বের এক পক্ষ হচ্ছে সত্যের পক্ষে আর তিনি হচ্ছেন আলী(আঃ) এবং অন্য পক্ষ হচ্ছে বাতিল।অতএব,“আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস কেননা বাতিল পক্ষকে কখনো বেহেস্তবাসী বলা যায় না।আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই হাদিসের রাবী হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আ’ঊফ আর সেও ঐ ১০ জনের একজন।সে এমন এক ব্যক্তি যে ওমরের ইন্তেকালের পর তার তৈরীকৃত শুরার আলোচনায় আলীর(আঃ) উপর চড়াও হয়ে বলেছিল যে, বাইয়াত কর তা না হলে হত্যা করা হবে।আর এই আব্দুর রহমানই উসমানের সাথে বিরোধীতা করেছে।আর উসমান তাকে মুনাফিক বলেছিল।তাহলে কি এমন পরিস্তিতিতে উক্ত রেওয়ায়েত সঠিক বলে মনে হয়?আবুবকর ও ওমরকে কি বেহেস্তবাসী হবার সু-সংবাদ দেয়া হয়েছিল?কেননা তারা তো বেহেস্তের নারী নেত্রী হযরত ফাতিমা (সা আ) ওফাতের কারন।আর এ কারনে হযরত ফাতিমা(সা আ) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলেননি।ওমর কি হযরত আলীকে(আঃ) আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করার জন্য ভয় দেখায় নি? সে কি বলে নি যে,যদি বাইয়াত না কর তবে হত্যা করা হবে?আর তালহা ও যুবাইর উসমানকে হত্যা করার জন্য কি পীড়াপীড়ি করে নি? তারা কি ইমাম আলী(আঃ)এর আনুগত্য করা থেকে বের হয়ে যাননি? তারা কি জঙ্গে জামালের যুদ্বে আমিরুল মু’মিনিন ইমাম হযরত আলীর(আঃ) বিরুদ্বে তলোয়ার হাতে তুলে নেয় নি?!ওই ১০জনের আরো একজন হচ্ছে সা’দ বিন ওয়াক্কাস। সে এই হাদিসটিকে সত্য বলেছে।কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,উসমানকে কে হত্যা করেছে? তখন উত্তরে সে বলেছিলঃআয়েশা যে তলোয়ার উন্মুক্ত করেছে এবং তালহা যে তলোয়ারকে ধার দিয়েছে,সেই তলোয়ার দিয়ে উসমানকে হত্যা করেছে।উক্ত ১০ জনের একে অপরের সাথে শত্রুতা ছিল।তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, তারা সকলেই বেহেশতো বাসী?অবশ্যই বলা যায় না।এপর্যন্ত আলোচনা থেকে পরিস্কার যে,উক্ত হাদিসটি মিথ্যা।আরো একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার এই যে,যে ২জনকে উক্ত হাদিসের রাবী হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ,যার উল্লেখিত হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা সম্পৃক্ত নয়।আর সে কারনেই তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।অন্যজন হচ্ছে সাঈদ ইবনে যাইদ,সে মুয়াবিয়ার খেলাফতের সময় হাদিস বর্ননা করতো।সুতরাং এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এই হাদিসে মুয়াবিয়ার পাপী হাতের স্পর্শ আছে।অতএব,আশারাহ মুবাশশারাহ হাদিসটি সনদের দিক থেকে একেবারেই ভিত্তিহীন ও অনির্ভরযোগ্য(আল-গাদীর কিতাবের ব্যাখ্যা নামক গ্রন্থ,খন্ড-১০,পাতা-১২২ থেকে ১২৮ নেয়া)।📖📖নিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার মিথ্যা হাদিস রচনাকারীর অপর রোজ কেয়ামত তাক বেশুমার লানত বর্ষিত হোকআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

সর্বকালের সেরা নারী হযরত ফাতিমা আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকজান্নাতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমার ‎( ‏আ.) ‏শাহাদাতকোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী ১৩ ই জমাদিউল আউয়াল শাহাদাত বরণ করেছিলেন সর্বকালের সেরা নারী নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা জাহরা ‎(সালামুল্লাহি আলাইহা)। এ উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।ইসলাম ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম, ‏আল্লাহর নবী-রাসূলরা কেমন ছিলেন ও কেন এবং কিভাবে তাঁদের মেনে চলব ‎?-এসব প্রশ্নে উত্তর জানা খুবই জরুরি। আমরা অনেকেই ইসলামের মূল নেতৃত্বের স্বরূপ ও ধারাবাহিকতার বিষয়েও মাথা ঘামাই না। তাই রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏কিংবা হযরত ফাতিমাকে যেভাবে জানা উচিত সেভাবে তাঁদেরকে জানতে পারিনি। আমরা বলি হযরত ফাতিমা মহানবীর মেয়ে। কিন্তু এর চেয়ে বড় ও আসল পরিচয় হল তিনি বেহেশতের নারীদের নেত্রী। আমরা জানি, ‏কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেই যে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি তারা নবী-রাসূলগণের স্ত্রী-সন্তানও হয় তবুও না। হযরত নূহ ‎(আ.)-এর স্ত্রী-সন্তান এবং হযরত লূত ‎(আ.)-এর স্ত্রী জাহান্নামবাসী হয়েছে, ‏এটি পবিত্র কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহর বিরোধিতা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এমনকি কেউ যদি রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.)-এর স্ত্রী-সন্তান হন, ‏তবুও তাঁরা কেবল এ সম্পর্কের ভিত্তিতে বেহেশতে যেতে পারবেন না। যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আহযাবের ৩০ নং আয়াতে ‎: ‘হে নবীপত্নিগণ! ‏তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল আচরণ করবে তার শাস্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’ ‏হযরত ফাতিমা মাত্র ১৮ বা ২০ কিংবা সর্বোচ্চ ৩০ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏তাঁকে ‎‘বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী’ ‏বলে সম্মান দিলেন। এটা স্পষ্ট, ‏রাসূলুল্লাহ্ ‎(সা.) ‏নিজের খেয়াল-খুশিমতো তাঁকে এ উপাধি দেননি। কারণ, ‏কুরআনের ভাষায় তিনি প্রবৃত্তির খেয়ালে কোন কথা বলেন না। তাই আমরা বলতে পারি, ‏হযরত ফাতিমা ‎(আ.) ‏ইসলামের জন্য অসাধারণ বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন বলেই আল্লাহর রাসূল ‎(সা.) ‏তাঁকে এত বেশি ভালবাসতেন এবং তাঁকে অনুসরণ করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে উদাসীন থেকেছি। ইসলামের মহানবীর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। এ কারণে কাফের বা পথভ্রষ্টরা মহানবীকে নিয়ে উপহাস করে বলত যে নবী নির্বংশ হয়ে যাবেন। তাদের সে মশকরার জবাব হিসেবে সুরা কাউসার নাজিল হয়। কাউসার মানে অফুরন্ত নেয়ামত। তফসিরকারকদের মতে, ‏কাউসার বলতে নবী কন্যা ফাতিমাকে ইংগিত করা হয়েছে। আল্লাহর বাণীর সেই সীমাহীন মহিমায় পৃথিবী আজও আওলাদে রাসুল বা নবী বংশের সন্তানদের পদচারণায় মুখর। অন্যদিকে এককালের সেই গর্বিত পুরুষ ও অন্ধকারের উপাসক ও মহানবীর প্রাণের শত্রু খল নায়কদের বংশ বিলীন হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে নির্বংশ হয়ে গেছে আবু লাহাবের মতো গোত্রপতিরা। আর নবী বংশের জ্যোতিধারা রক্ষা পেয়েছে ফাতিমার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে।মহানবীর আহলে বাইত বা পবিত্র বংশ হিসেবে রসুলে খোদার বংশধরকে যে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে থাকে তার উৎসধারা ফাতিমা। যে যুগে নারীকে ভোগের পণ্য মনে করা হতো ও কন্যা সন্তানকে হত্যা করে পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করা যায় বলে মনে করা হতো সে যুগে হজরত ফাতিমার(সা) ‏মাধ্যমে বংশ রক্ষার এই ঘোষণা এক অনন্য সমাজ বিপ্লবেরই ধ্বনি হয়ে ওঠে।নবী নন্দিনী ফাতিমাকে ঘিরে এমন আরো অসাধারণ ঘটনা রয়েছে। নবী নিজ কন্যাকে ‎‘উম্মে আবিহা’ ‏বলে সম্মান দেখাতেন। এর অর্থ ‎‘বাবার মাতা'। ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক দিনগুলোতে নবী মোস্তফাকে অশেষ কষ্ট ও লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে। কাফিররা মহানবীকে বারবার আঘাত হেনেছে। ইবাদত মগ্ন রসুলে খোদার দেহে নোংরা এবং ময়লা পদার্থ ঢেলে দিত তারা। এই দিনগুলোতে হযরত ফাতিমা ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ছিলেন মহানবীর দুঃসাহসী সহযোগী ও মাতৃতুল্য সেবিকা। হজরত ফাতিমা সব যুগের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সম্মানিত। হুজুরে পাক বলেছেন, ‏ঈসার মাতা মরিয়ম নিজ যুগের সম্মানিতা মহিলা। কিন্তু আমার কন্যা ফাতিমা সকল যুগের শ্রেষ্ঠ নারী। তিনি আরো বলেছেন, ‏ফাতিমা আমার দেহের একটি অংশ, ‏যে জিনিসে সে দুঃখ পায় তাতে আমিও দুঃখ পাই। ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশে করবে। অন্যদিকে ফাতিমার অনুসারীদের স্পর্শ করবে না আগুন। হযরত ফাতিমা কাছে এলে দ্বীনের নবী নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নিজের পাশে বসতে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় ফাতিমাকে সম্মান দেখানোর পেছনে রয়েছে ঐশীলোকের সুস্পষ্ট ইংগিত । ফাতিমার স্বামী আলী(আ)কে খোদ নবী নিজের জ্ঞান-নগরীর দরজা বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর দুই সন্তান ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে বেহেশতে যুবকদের নেতা বলেছেন মহানবী। অথচ ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই এই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। হজরত আলীকে ‎(আ) ‏মসজিদে তরবারির আঘাতে ও ইমাম হাসান(আ)কে বিষ দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। আর ইমাম হুসাইনকে কি মর্মস্পর্শী পরিস্থিতিতে কারবালায় আত্মত্যাগ করেতে হয়েছে তা সবাই জানে। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তার বংশধররা এ ভাবেই ইতিহাসকে অতিক্রম করে গেছেন। এ সবই হলো ফাতিমার শিক্ষা, ‏ত্যাগ এবং মহিমার শ্রোতধারার ফসল। তাদের সে আত্মত্যাগের গাঁথা আজও মানুষকে অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রেরণা যোগায়। সত্যকে জানতে হলে, ‏স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ । হজরত ফাতিমা(সা) ‏কেবল নবী দুলালি বা নারীদের আদর্শ নন তিনি এক কথায় আদর্শ মানবাত্মার প্রতীক । কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী একটি মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমা ‎(সা)-কে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমার ওসিয়ত অনুযায়ী গোপনীয়তা বজায় রাখতে তাঁর দাফনেও অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মাত্র কয়েকজন অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে। মুসলমানদের মধ্য থেকে বিশ্বনবীর আহলে বাইতের অতি ঘনিষ্ঠ ওই কয়েকজন ব্যক্তি দাফনে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ফাতিমা ‎(সা) ‏জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হাসান ও হুসাইন ‎(আ.) ‏কিভাবে মারা যাবেন সেই তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন ‎(আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা ‎(সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, ‏খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে। বিশ্বনবী ‎(সা.) ‏বলেছেন, ‏মহান আল্লাহ আলী, ‏তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।'মাসহাফই ফাতিমা' ‏নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা ‎(সা. ‏আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী ‎(আ.)। এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা যা ঘটবে তার বর্ণনা ও সব শাসকদের নাম লেখা আছে বলে মনে করা হয়।নবী-নন্দিনী ‎(সা:) ‏বলেছেন, ‏পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, ‏রাসূলে খোদা ‎(সা.)র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা ‎(সা. ‏আ.) ‏রাসূল ‎(সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: ‏আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, ‏আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন।হযরত ফাতিমা ‎(সা:) ‏বলেছেন, ‏আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, ‏মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, ‏তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।বিশ্বনবী ‎(সা.) ‏ও তাঁর পবিত্র বংশধর ও বিশেষ করে ফাতিমা ‎(সা)’র প্রতি অশেষ দরুদ ও সালাম পাঠানোর পাশাপাশি সবাইকে আবারও শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি আজকের এই গভীর শোকের দিনে। হযরত ফাতিমা জাহরা ‎(সা. ‏আ.)’র একটি বক্তব্য ও দোয়া তুলে ধরে শেষ করব আজকের এই আলোচনা। তিনি বলেছেন, ‏নারীদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় হচ্ছে, ‏তারা যেন কোনো অচেনা পুরুষকে না দেখে এবং কোনো অচেনা পুরুষও তাদের না দেখে।জান্নাতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমার ‎( ‏আ.) ‏দু'আ ‎:اَللّٰهُمَّ ذَلِّلْ نَفْسِيْ فِيْ نَفْسِيْ وَ عَظِّمْشَأْنَكَ فِيْ نَفْسِيْ وَ أَلْهِمْنِيْ طَاعَتَكَوَالْعَمَلَ بِمَا يُرْضِيْكَ وَ التَّجَنُّبَ لِمَايُسْخِطُكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَহে আল্লাহ ‎, ‏আমার নফসের ‎( ‏সত্ত্বা বা অন্তর ‎) ‏কাছে আমার নফসকেই হীন ‎- ‏নীচ ‎( ‏ছোট ‎, ‏ক্ষুদ্র ও অপদস্ত অর্থাৎ যলীল ‎) ‏করে দিন ‎; ‏আর আপনার শা'ন ‎( ‏মাকাম ও মর্যাদা ‎) ‏আমার অন্তরে বড় ও মহান ‎( ‏আযীম্ ‎) ‏করে দিন ‎; ‏আমাকে আপনার আনুগত্য করা ‎, ‏যা আপনাকে সন্তুষ্ট করে তা আঞ্জাম দেওয়া এবং যা আপনাকে অসন্তুষ্ট করে তা থেকে বিরত ও দূরে থাকার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিন ‎, ‏হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ‎( ‏ইয়া আরহামার রাহিমীন ‎) ‏।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমনিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার

ফাতেমার আ. ‏মৃত্যু ও নানাবিধ গোপণ রহস্যপ্রশ্ন: ‏উৎসুক হৃদয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এমন হতে পারে যে, ‏কী কারণে হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা নবী স. ‏এর ওফাতের মাত্র তিন মাসের মধ্যে মারা যান? ‏তবে কি তিনি কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, ‏নাকি তাঁর সাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। যদি সাভাবিক মৃত্যু না হয়ে থাকে, ‏তবে কেন আমরা সুন্নি আলেম ওলামাদের মুখ থেকে তার কারণ সম্পর্কে কিছু শুনতে পাই না?উত্তর: ‏এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটি ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। আর ভূমিকাটি হল আমার জীবনের বাস্তক একটি ঘটনা। ঘটনাটি এরূপ:ভূমিকানবীর স. ‏আহলে বাইতকে ভালবাসার কারণে অনেক বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে। একদিন আমার বড় ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করে বলল যে, ‏তুই যে মাযহাবের অনুসরণ করিস, ‏আলেম ওলামারা কেন তার বিরোধিতা করে? ‏আমি বললাম ‎: ‏ভাই জান! ‏যে আলেম ওলামারা আমার মাযহাবের বিরেধিতা করে, ‏তাদেরকে প্রশ্ন করো যে, ‏হযরত ফাতেমা জাহরা কত বছর বয়সে মারা গিয়েছেন? ‏তাঁর মৃত্যুর কোন কারণ ছিল কি? ‏নাকি তিনি সাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যদি তুমি আমার এসব প্রশ্নের উত্তর এনে দিতে পার, ‏তবে আমি তোমাকে বলব যে, ‏এসব আলেমরা কেন আমাদের বিরোধিতা করে।আমার সেই ভাই ১৮ মাস হল মারা গেছেন, ‏কিন্তু তিনি আমাকে সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেন নি; ‏হয়তো আলেমদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন উত্তর পান নি। তবে এ কথা সত্য যে, ‏তারপর থেকে আমার ভাই কখনো আমার সাথে বিরোধিতা করেন নি। আমি নিজেও যখন উপরোক্ত প্রশ্নাদির উত্তর জানতে পেরেছি, ‏তখন থেকেই আমি আহলে বাইতকে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং আমি মনে করি: ‏যেকোন বিবেকবান মুসলমানই এসব প্রশ্নের উত্তর জানলে নবীর আহলে বাইতকে আগের চেয়ে আরো বেশি ভাল বাসবে।যেহেতু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে ভূমিকা টেনে পাঠকবর্গকে বিরক্ত করেছি, ‏তাই এ পর্যায়ে উপরোক্ত প্রশ্নাদির জবাব সংক্ষেপে উল্লেখ করব তার পর সম্ভব হলে প্রতিটি প্রশ্নে জবাব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।সংক্ষিপ্ত উত্তরঠিক যেভাবে প্রশ্নে উল্লেখ করেছি যে, ‏নবী স. ‏এর ওফাতের তিনমাসের মধ্যেই ফাতেমা জাহরা মুত্যু বরণ করেছিলেন, ‏তার এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না। রাসূল স. ‏এর ওফাতের পর হযরত আলীকে জোর করে বাইয়াত করানোর জন্য তাকে যখন বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আসা হয়, ‏তখন হযরত ফাতেমা সা. ‏বাধা দেন এবং আগন্তক লোকদের সামনে তিনি যান। যাতে তারা আলীকে নিতে না পারে। কিন্তু এই বাধাই অবশেষে ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হয়ে যায়। এ জন্য বলা যায় যে, ‏নবী স. ‏এর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া বেলায়াতের রক্ষক হিসেবে প্রথম শহীদ হল হযরত ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা।অথচ সুন্নি আলেম ওলামারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেন না। হয়তো কেউ কেউ তার কারণ জানেন না, ‏অথবা জেনে বুঝেও তা বলেন না। কারণ তখন হয়তো সুন্নি মতাদর্শ প্রশ্নের সম্মুখিন হবে!ফাতেমার আ. ‏মৃত্যুর মূল রহস্যপ্রশ্ন ৩ ‎: ‏ফাতেমা আ. ‏এর মৃত্যুর মূল রহস্য কী?উত্তর ‎: ‏এ পশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে তার দৈহিক আঘাতের কারনাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন।ফাতেমা আ. ‏এর দৈহিক আঘাত প্রাপ্তির মূল কারণ সমূহ নিম্নরূপ:১- ‏নবীর মৃত্যুতে গভীর শোক, ‏সবেদনা ও কান্না।২- ‏নবীর ওসি অর্থাৎ হযরত আলীর মজদুরিয়াত ও নিঃসঙ্গতার কারণে আত্মিক শোক ও প্রতিরক্ষা ছিল দৈহিক আঘাতের দ্বিতীয় কারণ।ইবনে শাহর অশুব ‎(মৃ: ‏৫৯৯ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:“উম্মে সালমা ফাতেমার ঘরে প্রবেশ করে বলল ‎: ‏ওহে নবী কন্যা! ‏কিভাবে রাত কাটালেন।ফাতেমা বললেন ‎: ‏শোক ও দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে রাত কাটিয়েছি। শোক এই কারণে যে, ‏প্রিয় নবীকে হারিয়েছি ও দুঃখ এই জন্য যে, ‏তাঁর স্থলাভিষিক্তের উপর আরোপিত জুলুম। আল্লাহর কসম করে বলছি: ‏এতে নবীর উত্তরসূরীর প্রতি অবমাননা হয়েছে ‎(মানাকিবু অলে আবি তালিব, ‏২/২০৫।)।[1]৩- ‏ফাতেমা সা. ‏এর পবিত্র পদ ও মর্যাদার অবমাননা ছিল তৃতীয় কারণ ‎(নাহজুল বালাগার শারহ, ‏ইবনে আবিল হাদিদ, ‏১৬/২১৪) ‏।আল্লামা তাবারসি ‎(মৃ: ‏ষষ্ট হিজরি) ‏বর্ণনা করেছিন:[ফাদাকের খোৎবা সমাপ্তির পর ফাতেমা বলেছিলেন ‎:لَیتَنِی مِتُّ قَبلَ هینَـتِی وَ دُونَ ذِلَّتِی...হায়, ‏যদি এমন জুলুমের স্বীকার হবার পূর্বে মারা যেতাম! (এহতিজাজ, ‏খন্ড ১, ‏পৃ ১০৭)।অতএব, ‏বলা যায় যে, ‏ফাতেমার শোকের কারণ শুধু পিতার মৃত্যুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং তার সাথে আরে দু’টি ব্যাথা যোগ হয়েছিল।৪- ‏ফাতেমার বাড়িতে হামলার সময় তাঁর দেহে মারাত্মক আঘাত হানা হয়েছিল। অন্য ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ‎: ‏তার পিতার বিরহ বিচ্ছেদের সাথে সাথে তাকে এমন আঘাত করা হয়েছিল, ‏যার ফলে তিনি ধরাশায়ি হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।কাজি নোমানি মাগরিবি বর্ণনা করেছেন ‎:[عَن أبِی عَبدِاللهِ جَعفَرِبنِ مُحَمَّدٍ الصادِقِ‌علیه‌السّلام عَن ‌أبِیهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]إنَّ رَسُولَ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله أسَرَّ إلی فاطِمَة‌َعلیهاالسّلام أنَّها أولی(أوَّلُ) مَن یَلحَقُ بِهِ مِن أهلِ بَـیتِهِ فَلَمّا قُبِضَ وَ نالَها مِن القَومِ ما نالَها لَزِمَت الفِراشَ وَ نَحَلَ جِسمُها وَ ذابَ لَحمُها وَ صارَت کَالخَیالِ. *ইমাম জাফর সাদিক আ. ‏তাঁর পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন ‎: ‏রাসূল স. ‏ফাতেমাকে চুপিসারে বললেন ‎: ‏তাঁর ওফাতের পর তার আহলে বাইতের মধ্য থেকে সর্ব প্রথম যে তাঁর সাথে গিয়ে মিলিত হবে, ‏সে হল ফাতেমা আ.। অতঃপর যখন নবী স. ‏মৃত্যু বরণ করলেন এবং তার ঘরে হামলা করে তাকে আহত করা হল, ‏তখন তিনি শয্যাশায়ী হয়ে গেলেন, ‏ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়লেন ও এমন ভাবে শুকিয়ে গেলেন যেন মনে হয়েছিল শুকনো কাঠি হয়ে গেছেন ‎(দায়ায়িমুল ইসলাম, ‏১/২৩২)।শেখ তুসি বর্ণনা করেন ‎:وَ المَشهُورُ الَّذِی لاخِلافَ فِیهِ بَـینَ الشِیعَةِ أنَّ عُمَرَ ضَرَبَ عَلی بَطنِها حَتّی أسـقَطَت...শিয়া সুন্নি মধ্যে এ বিষয়ে প্রসিদ্ধি রয়েছে ও কোনরূপ মতপার্থক্য নেই যে, ‏ফাতেমার পেটে ওমর এমন আঘাত হেনেছিল যে কারণে গর্ভের সন্তান পড়ে যায় ‎(তালখিছুশ শাফি, ‏৩/১৫৬)।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:فَلَمّا قُبِضَ رَسُولُ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله وَ جَری ما جَری فِی یَومِ دُخُولِ القَومِ عَلَیها دارَها وَ إخراجِ ابنِ عَمِّها اَمِیرِالمُؤمِنِینَ ‌علیه‌السّلام وَ ما لَحِقَها مِن الرَجُلِ أسـقَطَت بِهِ وَلَداً تَماماً وَ کانَ ذلِکَ أصلَ مَرَضِها وَ وَفاتِها. ‏নবী স. ‏যখন মারা গেলেন, ‏তারপর যেদিন ফাতেমার ঘরে হামলার ঘটনা ঘটল, ‏আমিরুল মুমিনিনকে জোরপূর্বক বের করে আনা হল এবং ঐ পুরুষের দ্বারা যে বালা ফাতেমার উপর আসল, ‏যে কারণে তাঁর গর্ভের পূর্ণ ছেলে-সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। আর এটাই ছিল তাঁর অসুস্থতা ও মৃত্যুর মূল কারণ ‎(দালায়েল উল ইমামাহ/২৭)।আল্লামা হিল্লি ‎(মৃ: ‏৭২৬ হি.) ‏বর্ণনা করেন,وَ ضُرِبَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام فَألقَت جَنِیناً اسمُهُ مُحسِنٌ... ‏ফাতেমাকে আ. ‏এমন আঘাত হানা হল, ‏যে কারণে তার গর্ভের সন্তান ‎‘মোহসেন’ ‏পড়ে গেল ‎... (শারহুত তাজরিদ/৩৭৬)।অতএব, ‏উপরোক্ত কারণাদি পর্যালোচনা করার পর প্রমাণিত হয় যে, ‏ফাতেমা জাহরা সা. ‏আমিরুল মুমিনিন হযরত আলীর পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে আত্মিক ও দৈহিক ভাবে মারাত্মক আঘাত প্রাপ্ত হন। আর তাই ছিল তাঁর মৃত্যু ও অসুস্থতার মূল কারণ। যে আঘাত খলিফার দরবারি লোকদের পক্ষ থেকে ফাতেমার ঘরে হানা হয়েছিল।মুহাম্মদ ইবনে জারির ইবনে রুস্তম তাবারি ‎(মৃ: ‏চতূর্থ হিজরি) ‏বর্ণনা করেন:[عَن أبِی‌بَصِیرٍ عَن أبِی عَبدِاللهِ‌علیه‌السّلام: قالَ:]وَ کانَ سَبَبُ وَفاتِها أنَّ قُنفُذاً مَولی عُمَرَ لَکَزَها بِنَعلِ السَیفِ بِأمرِهِ، فَأسـقَطَت مُحسِناً وَ مَرِضَت مِن ذلِکَ مَرَضاً شَدِیداً...ইমাম আবু আব্দিল্লাহের কাছ থেকে আবু বাছির বর্ণনা করেছেন ‎: ‏ওমরের নির্দেশে তার ভৃত্য ‎‘কুনফুয’ ‏তরবারির গিলাফ দিয়ে ফাতেমাকে আঘাত হেনেছিল, ‏যে কারণে মুহসিনের গর্ভপাত ঘটে এবং সে কারণেই ফাতেমা আ. ‏মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন… (দালায়েল উল ইমামাহ/৪৫)।কাফয়ামি ‎(মৃ: ‏৯০৫ হি.) ‏বর্ণনা করেছেন ‎:إنَّ سَبَبَ وَفاتِهاعلیهاالسّلام هُوَ أنَّها ضُرِبَت وَ أسـقَطَت.নিশ্চয় ফাতেমার মৃত্যুর কারণ হল: ‏তিনি আঘাত প্রাপ্ত হলেন ও তাতে গর্ভপাত হল ‎(মেসবাহ/৫২২)।প্রিয় পাঠকবর্গ! ‏উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে সত্যই কি বলা যায় না যে, ‏ফাতেমা জাহরার মৃত্যু ছিল শাহাদাতের মৃত্যু?তাবারসি বর্ণনা করেন ‎:وَ حالَت فاطِمَةُ‌علیهاالسّلام بَـینَ زَوجِها وَ بَـینَهُم عِندَ بابِ البَیتِ فَضَرَبَها قُنفُذٌ بِالسَوطِ عَلی عَضُدِها، فَبَـقِیَ أثَرُهُ فِی عَضُدِها مِن ذلِکَ مِثلَ الدُملُوجِ مِن ضَربِ قُنفُذٍ إیّاها فَأرسَلَ أبوبَکرٍ إلی قُنفُذٍ إضرِبها، فَألجَـأها إلی عِضادَةِ بَـیتـِها، فَدَفَعَها فَکَسَرَ ضِلعاً مِن جَنبِها وَ ألقَت جَنِیناً مِن بَطنِها، فَلَم ‌تَزَل صاحِبَةَ فِراشٍ حَتّی ماتَت مِن ذلِکَ شَهِیدَه ...হযরত ফাতেমা তাঁর স্বামি ও আক্রমনকারী ব্যক্তিদের মাঝে দাড়িয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন, ‏তখন ‎‘কুনফুয’ ‏ফাতেমার উরুতে এমন আঘাত হানল যে, ‏তার দাগ বেন্ডেজের আকার ধারণ করল। আবুবকর কুনফুযকে ফাতেমাকে মারার জন্য পাঠিয়েছিল! ‏তাই কুনফুয ফাতেমাকে ঘর থেকে আছার দিয়ে ফেলে দিল, ‏তখন তাঁর উরুর হাড় ভেঙ্গে গেল ও পেটের সন্তানের গর্ভপাত ঘটল। অতঃপর দীর্ঘ শহ্যাশায়ী হল এবং সে অবস্থাতেই শহীদি মৃত্যু বরণ করলেন ‎…(এহতেজাজ, ‏১/৮৩)।[1]। হাদিসের আরবী পাঠ এরূপ ‎:دَخَلَت اُمُّ سَلَمَةَ عَلی فاطِمَةَ‌علیهاالسّلام فَقالَت لَها:کیفَ أصبَحتِ عَن لَیلَتِکِ یا بِنتَ رَسُولِ اللهِ‌صلّی‌الله‌علیه‌وآله؟ قالَت:أصبَحتُ بَینَ کَمدٍ وَ کَربٍ، فَقدِ النَبِیِّ وَ ظُلمِ الوَصِیِّ. هُتِکَ ـ وَاللهِ ـ حِجابُهُ...বেশুমার লানত বর্ষিত হোক সেই সকল ইবলিশ শয়তান মারদুদের উপরআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমনিবেদন মোঃ শামসীর হায়দার