পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদীউ ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ৯ শোকাবহ মহররম উপলক্ষ্যে 'মহররমে শহীদ-সম্রাটের মহাবিপ্লব' শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার নবম পর্ব তথা আশুরা পর্ব থেকে সবাইকে জানাচ্ছি সংগ্রামী সালাম ও গভীর শোক। উতারো সামান, দাঁড়াও সেনানী নির্ভিক-সিনা বাঘের মত/আজ এজিদের কঠিন জুলুমে হয়েছে এ প্রাণ ওষ্ঠাগত, কওমী ঝাণ্ডা ঢাকা পড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায়, /পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে অজ নভঃনীলায় ... হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়! /কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়!... হোক্ দুশমন অগণন তবু হে সেনানী! আজ দাও হুকুম/মৃত্যু সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মোরা ভাঙ্গবো ক্লান্ত প্রাণের ঘুম! হবে কারবালা মরু ময়দান শহীদ সেনার শয্যা শেষ/হে সিপাহসালার! জঙ্গী ইমাম আজ আমাদের দাও আদেশ! ... তীব্র ব্যাথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তাচলে,/ডোবে ইসলাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে, কলিজা কাঁপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহু সফেন/ওঠে আসমান জমিনে মাতম; কাঁদে মানবতা: হায় হোসেন। মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাদেরকে আবারও মহান আশুরা সম্পর্কে জানার ও এ বিষয়ে আলোচনা শোনার সুযোগ দিয়েছেন। কারবালার মহাবিপ্লব সম্পর্কিত আমাদের গত কয়েক পর্বের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে এ মহাবিপ্লব তথা আশুরা-বিপ্লবের রয়েছে বহুমাত্রিকতা। আসলে ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে সংঘটিত এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই পরিপূর্ণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি। কালের মহাপাখায় এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই সব দিককে জানার এবং সবগুলো মহৎ গুণ চর্চার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারবালা ও আশুরা একত্ববাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, খোদাপ্রেম ও ইসলামী আদর্শের জন্য চরম ত্যাগ-তিতিক্ষা, মানবতা, মহত্ত্ব, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা, মহানুভবতা, মুক্তিকামিতা , সততা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মসংশোধনের নানা দিক শেখার এক মহান বিশ্ববিদ্যালয়। কারবালা এটা প্রমাণ করে যে রক্ত তরবারির ওপর বিজয়ী হতে পারে। সত্যের পক্ষে মুষ্টিমেয় সেনানীও ভেঙ্গে দিতে পারে প্রবল পরাক্রান্ত তাগুতি শক্তির সিংহাসন। যে বৈশিষ্ট্যটি হোসাইনী আন্দোলনকে মহতী ও পবিত্র করেছে তা হলো ইমাম হোসাইনের (আ.) দুরদর্শিতা ও উন্নত চিন্তাধারা। অর্থাৎ এ আন্দোলন এ কারণেই মহান যে,আন্দোলনকারী যা বুঝতে ও দেখতে পারেছন তা অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না। তিনি তার একাজের সুদূর প্রসারী ভাব দেখতে পাচ্ছেন। তার চিন্তাধারা সমসাময়িক যেকানো চিন্তাশীল লোকের উর্ধ্বে । ইবনে আব্বাস, ইবনে হানাফিয়া,ইবনে উমর প্রমুখ হয়তো পুরোপুরি নিষ্ঠার সাথে ইমামকে (আ.) কারবালায় যেতে নিষেধ করিছিলেন। তাদের চিন্তার মান অনুযায়ী ইমামকে বাধা দেয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হোসাইন (আ.) যা দেখেছিলেন তারা তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। তারা অত্যাসন্ন বিপদকেও যেমন অনুভব করছিলেন না তেমনি এ ধরনের আন্দোলন ও বিদ্রোহের সুদুরপ্রসারী ভাবকেও অনুধাবন করতে পারছিলেন না। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) সবকিছুই দিনের আলোর মতো দেখছিলেন। তিনি একাধিকবার বলেছেনঃ ওরা আমাকে হত্যা করবেই;আর আল্লাহর শপথ করে বলছি যে,আমার হত্যার পর ওদের অবস্থা বিপন্ন হবে। এ ছিল ইমাম হোসাইনের (আ.) তীক্ষ্ণ দুরদর্শিতা। ইমাম হোসাইন (আ.) এক মহান ও পবিত্র আত্মার নাম। মূলত যখন কোন আত্মা মহান হয় তখন বেশী কষ্টের সম্মুখীন হয়। কিন্তু ছোট আত্মা অধিক নির্ঝঞ্জাটে থাকে।ছোট আত্মা একটু ভাল খাবারের জন্যে চাটুকারও হতে রাজি। ছোট আত্মা ক্ষমতা বা খ্যাতির লোভে হত্যা-লুন্ঠনও করতে রাজি। কিন্তু যার রয়েছে মহান আত্মা, সে শুকনো রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়,তারপর ঐ সামান্য আহার শেষে সারারাত জেগে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হয়। নিজের দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র গাফলতি করলে ভয়ে তাঁর শরীর কাপতে থাকে। যার আত্মা মহান সে আল্লাহর পথে ও স্বীয় মহান লক্ষ্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চায়। আর এ পথে যখন সফলকাম হয় তখন আল্লাহকে শোকর করে। আত্মা মহান হলে আশুরার দিনে,এক শরীরে তিনশ’ ক্ষত সহ্য করতে হয়। যে শরীর ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয় সে একটি মহান আত্মার অধিকারী হওয়ার অপরাধেই জরিমানা দেয়, বীরত্ব,সত্য-প্রেম এবং শহীদী আত্মার জন্যই জরিমানা দেয়। এই মহান আত্মা বলে ওঠে আমি আমার রক্তের মূল্য দিতে চাই। শহীদ কাকে বলে? প্রতিদিন কত মানুষ নিহত হচ্ছে । কিন্তু তাদেরকে কেন শহীদ বলা হয় না? শহীদ শব্দটি ঘিরে কেন এক পবিত্রতার আবেশ পাওয়া যায়? কারণ শহীদ সেই ব্যক্তি যার এক মহান আত্মা আছে সে আত্মা এক মহান লক্ষ্যকে অনুসরণ করে। শহীদ সে ব্যক্তি যে নিজ ঈমান ও আকীদা রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, যে নিজের জন্যে তো নয়ই বরং মনুষ্যত্ব ও মানবতার স্বার্থে,সত্য ও হাকিকতের স্বার্থে মহান আল্লাহর পথে চরমদুঃখ-দুর্দশা এমন কি মৃত্যুকেও সাদরে বরণ করে নেয়। শহীদ তার বুকের রক্ত দিতে চায় যেমনভাবে একজন ধনী তার ধনকে ব্যাংক বন্দী না করে তা সৎপথে দান-খয়রাত করে নিজ ধনের মূল্য দিতে চায়। সৎপথে ব্যয়িত প্রতিটি পয়সা যেমন লক্ষ -কোটি পয়সার মতো মূল্য লাভ করে তেমনি শহীদের প্রতি ফোটা রক্ত লক্ষ-কোটি ফোটায় পরিণত হয়। অনেকে হয়তো নিজ চিন্তাশক্তির মূল্য দেয় ও একটি আদর্শিক গ্রন্থ মানবকে উপহার দেয়। কেউ কেউ নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি উপকারী শিল্প মানুষকে উপহার দেয়। কিন্তু শহীদরা তাদের রক্ত দিয়ে মানবের শান্তি ও কল্যাণের পথকে মসৃণ ও সুনিশ্চিত করে। এখন প্রশ্ন হলো: এদের মধ্যে কে মানবতাকে সবচেয়ে বেশী সেবা করলো ? অনেকে হয়তো ধারণা করতে পারে যে, একজন লেখক বা একজন ধনী কিংবা একজন শিল্পীর সেবাই সবচেয়ে বেশী। কিন্তু আসলে এ ধারণা একবারেই ভুল। শহীদদের মতো কেউই মানুষকে তথা মানবতাকে সেবা করতে পারে না। শহীদরাই সমস্ত কন্টকময় পথ পেরিয়ে মানবতার মুক্তি ও স্বাধীনতাকে বয়ে নিয়ে আসে। তারাই ন্যায়-নীতিবান ও শান্ত সমাজ গড়ে দিয়ে যায় যাতে জ্ঞানীর জ্ঞান, লেখেকর কলম, ধনীর ধন, শিল্পীর শিল্প সুস্থ পরিবেশে বিনা বাধায় বিকাশ লাভ করতে পারে এবং মানবতা নিশ্চিন্তে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শহীদরাই প্রদীপের মতো একটি পরিবেশকে আলোকিত করে রাখে যাতে সবাই অনায়াসে পথ চলতে পারে। পবিত্র কোরআন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছে। জগতে অবশ্যই প্রদীপ থাকতে হবে। অন্ধকার জগত নীরব-বধির, জীবনযাত্রা সেখানে অচল। এ সম্বন্ধে প্রখ্যাত কবি পারভীন এ’তেসামী সুন্দর একটি উপমার অবতারণা করেছেন। তিনি একজন দক্ষ শিল্পী ও একটি প্রদীপের কথোপকথনকে এভাবে চিত্রিত করেছেন- শিল্পী প্রদীপকে বলেঃ ‘তুমি জান না,আমি গত রাতে এক মুহুর্তেও ঘুমাইনি। সারা রাত জেগে কত সুন্দর সুন্দর ফুল তুলেছি। আমার জামাটিকে গুলবাগিচা বানিয়েছি। তুমি কখনোই আমার মতো ফুল তুলতে পারবে না। আমি আমার শরীরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে অসামান্য দক্ষতা খরচ করেছি।’ শিল্পীর একথা শুনে প্রদীপ একটু মুচকি হেসে বললোঃ তুমি যে দাবী করছো সারা রাত জেগে তোমার রুচি ও দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছো-এসবই ছিল আমার আত্ম-উৎসর্গের ফল। আমি তিলে তিলে ক্ষয় হয়েছি ও তোমাকে আলো দিয়েছি বলেই তো তুমি তোমার দক্ষতাকে সুচ ও সুতোয় আঁকতে পেরেছো। তোমার এসব দক্ষতা আমার জীবনের বিনিময়েই সম্ভব হয়েছে। তারপর বলছে: ‘তাই তুমি সারা রাত ধরে যা করেছ বলে দাবী করছো-এসবই আমি করেছি।’ আজকে ইবনে সিনা-ইবনে সিনা হতো না, শেখ সাদী-শেখ সাদী হতো না,জাকারিয়া রাজী-জাকারিয়া রাজী হতে পারতো না যদি শহীদরা তাজা রক্ত খরচ করে ইসলামের চারাগাছকে সজীব না করতেন, ইসলামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে না রাখতেন। তাদের সমস্ত অস্তিত্বে একত্ববাদ, খোদাভীতি,ন্যায়পরায়ণতা,সৎসাহস আর বীরত্বে ভরপুর। তাই আমরা আজ যারা মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি তারা সবাই এ শহীদদের প্রতি ঋণী। ইমাম হোসাইনের (আ.) রক্তের প্রতি নবীজীর (সা.) উম্মত ঋণী। ইতিহাসের অনেক স্মরণীয় পুরুষই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন,যে পরিস্থিতিতে ইমাম হোসাইন (আ.) পড়েন আশুরার রাত্রে। অর্থাৎ বস্তুগত দিক দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েন এবং শত্রুকে পরাজিত করার বিন্দুমাত্র আশা নেই বরং অতিশীঘ্রই তিনি তার সঙ্গী-সাথীসহ শত্রুদের হাতে খণ্ড-বিখণ্ড হবেন এটিই নিশ্চিত হয়ে ওঠে। অনেকেই এ মুহুর্তে অভিযোগ করেন,আফসোস করেন ইতিহাস এ ধরনের বহু ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী। বলা হয় যে,নেপোলিয়ন যখন ঐ পরিস্থিতিতে পড়লো তখন বলেছিল : হায় প্রকৃতি! তুমি আমাকে এভাবেই মারলে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) সবকিছু বুঝতে পেরেও মৃত্যু নির্ঘাত জেনেও আশুরার রাতে কী বলছেন? তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে সমবেত করলেন যেন যে কোনো বিজয়ীর চেয়েও তার মানসিকতায় উজ্জ্বলতার ঢেউ খেলে যাচ্ছে । তিনি বললেন : আল্লাহর জন্য সর্বোত্তম প্রশংসা। সুখে ও দুঃখে তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ তোমার প্রশংসা করছি আমাদেরকে নবুওতের ঘরানার সম্মান দিয়েছ বলে এবং কুরআনের ও ধর্মের বিধি-বিধানের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছ বলে। এতসব মহাবিপদেও ইমাম হোসাইনের (আ.) কথা ও কাজ ছিল এমনই যেন সব কিছু তাঁর অনুকূলে আছে এবং সত্যি -সত্যিই সবকিছু তাঁর অনুকূলে ছিল। কারণ, এ পরিস্থিতি একমাত্র তার জন্যেই দুঃখবহ ও প্রতিকূল, যে কেবল দুনিয়া ও ক্ষমতা চায় আর ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। কিন্তু যার সবকিছুই আল্লাহর জন্যে, এমন কি যদি হুকুমতও চান তাহলেও তা আল্লাহর জন্যই চান এবং জানেন যে আল্লাহর পথেই এগিয়ে এসেছেন তাহলে তার কাছে তো এ পরিস্থিতি অবশ্যই অনুকূল। এজন্যে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরগুজারী-ই তো করবেন। মোটকথা আমরা দেখলাম যে, এ আন্দোলনের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত কেবল পৌরুষত্ব, বীরত্ব, সত্যানুসরণ এবং সত্য-প্রেম। কিন্তু এ বীরত্ব কোনো গোত্র বা দেশ বিশেষে সীমাবদ্ধ নয়, এতে কোনো ‘‘আমিত্ব’’ এবং আত্মস্বার্থ নেই। সবই ও সবকিছুই আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর পথে। তিনি এ পথে শেষ নিশ্বাস নেয়া পর্যন্ত ও অটল ছিলেন। যুদ্ধক্লান্ত ইমাম হোসাইন (আ.) যখন শেষ তীর খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তখনও সেই চিরাচরিত কেবলা থেকে কখনও পথভ্রষ্ট হননি, শেষ মুহুর্তেও সেই কেবলার দিকে ফিরে পরম শান্তিতে বললেন : ‘ হে আল্লাহ! আপনার বিচারে আমি সন্তুষ্ট, আপনার আদেশের প্রতি আমি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই হে অসহায়দের সহায়।’ ইমামের সঙ্গে শহীদ-হওয়া সঙ্গীরাও ছিলেন ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার যোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইমামের প্রতি তাদের মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল কিংবা গভীর ইমাম-প্রেমের একটা পটভূমি তাদের হৃদয়ে তৈরি হয়েই ছিল। তাই মহান আল্লাহর পরিচালিত আত্মত্যাগের নানা কঠিন পরীক্ষায় তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচল থাকেন, অথচ ইমাম হুসাইন তাদের সবাইকে বলেছিলেন যে তারা ইচ্ছা করলেই প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়া যাওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন । তারা দুর্বল ঈমানদারদের চিন্তার বিপরীতে বিপদের কঠিন পাহাড় ও অনিবার্য মৃত্যু দেখেও একজন শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষের পৌরুষোচিত সংগ্রামে অংশগ্রহণের গৌরব হাতছাড়া করতে চাননি। খোদা-প্রেমের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতাই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মহান সংগ্রামের পথে অবিচল রেখেছে। ইসলাম ও এর কর্ণধার ইমামের প্রতি তাদের ভালবাসা ছিল কিংবদন্তীতুল্য। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদীউ ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ৯ শোকাবহ মহররম উপলক্ষ্যে 'মহররমে শহীদ-সম্রাটের মহাবিপ্লব' শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার নবম পর্ব তথা আশুরা পর্ব থেকে সবাইকে জানাচ্ছি সংগ্রামী সালাম ও গভীর শোক। উতারো সামান, দাঁড়াও সেনানী নির্ভিক-সিনা বাঘের মত/আজ এজিদের কঠিন জুলুমে হয়েছে এ প্রাণ ওষ্ঠাগত, কওমী ঝাণ্ডা ঢাকা পড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায়, /পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে অজ নভঃনীলায় ... হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়! /কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়!... হোক্ দুশমন অগণন তবু হে সেনানী! আজ দাও হুকুম/মৃত্যু সাগরে ঝাঁপ দিয়ে মোরা ভাঙ্গবো ক্লান্ত প্রাণের ঘুম! হবে কারবালা মরু ময়দান শহীদ সেনার শয্যা শেষ/হে সিপাহসালার! জঙ্গী ইমাম আজ আমাদের দাও আদেশ! ... তীব্র ব্যাথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তাচলে,/ডোবে ইসলাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে, কলিজা কাঁপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহু সফেন/ওঠে আসমান জমিনে মাতম; কাঁদে মানবতা: হায় হোসেন। মহান আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাদেরকে আবারও মহান আশুরা সম্পর্কে জানার ও এ বিষয়ে আলোচনা শোনার সুযোগ দিয়েছেন। কারবালার মহাবিপ্লব সম্পর্কিত আমাদের গত কয়েক পর্বের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে এ মহাবিপ্লব তথা আশুরা-বিপ্লবের রয়েছে বহুমাত্রিকতা। আসলে ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বে সংঘটিত এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই পরিপূর্ণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি। কালের মহাপাখায় এ মহাবিপ্লব ইসলামেরই সব দিককে জানার এবং সবগুলো মহৎ গুণ চর্চার কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারবালা ও আশুরা একত্ববাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ইসলামী নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ, খোদাপ্রেম ও ইসলামী আদর্শের জন্য চরম ত্যাগ-তিতিক্ষা, মানবতা, মহত্ত্ব, বীরত্ব, বিশ্বস্ততা, মহানুভবতা, মুক্তিকামিতা , সততা, আধ্যাত্মিকতা ও আত্মসংশোধনের নানা দিক শেখার এক মহান বিশ্ববিদ্যালয়। কারবালা এটা প্রমাণ করে যে রক্ত তরবারির ওপর বিজয়ী হতে পারে। সত্যের পক্ষে মুষ্টিমেয় সেনানীও ভেঙ্গে দিতে পারে প্রবল পরাক্রান্ত তাগুতি শক্তির সিংহাসন। যে বৈশিষ্ট্যটি হোসাইনী আন্দোলনকে মহতী ও পবিত্র করেছে তা হলো ইমাম হোসাইনের (আ.) দুরদর্শিতা ও উন্নত চিন্তাধারা। অর্থাৎ এ আন্দোলন এ কারণেই মহান যে,আন্দোলনকারী যা বুঝতে ও দেখতে পারেছন তা অন্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না। তিনি তার একাজের সুদূর প্রসারী ভাব দেখতে পাচ্ছেন। তার চিন্তাধারা সমসাময়িক যেকানো চিন্তাশীল লোকের উর্ধ্বে । ইবনে আব্বাস, ইবনে হানাফিয়া,ইবনে উমর প্রমুখ হয়তো পুরোপুরি নিষ্ঠার সাথে ইমামকে (আ.) কারবালায় যেতে নিষেধ করিছিলেন। তাদের চিন্তার মান অনুযায়ী ইমামকে বাধা দেয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু হোসাইন (আ.) যা দেখেছিলেন তারা তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। তারা অত্যাসন্ন বিপদকেও যেমন অনুভব করছিলেন না তেমনি এ ধরনের আন্দোলন ও বিদ্রোহের সুদুরপ্রসারী ভাবকেও অনুধাবন করতে পারছিলেন না। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) সবকিছুই দিনের আলোর মতো দেখছিলেন। তিনি একাধিকবার বলেছেনঃ ওরা আমাকে হত্যা করবেই;আর আল্লাহর শপথ করে বলছি যে,আমার হত্যার পর ওদের অবস্থা বিপন্ন হবে। এ ছিল ইমাম হোসাইনের (আ.) তীক্ষ্ণ দুরদর্শিতা। ইমাম হোসাইন (আ.) এক মহান ও পবিত্র আত্মার নাম। মূলত যখন কোন আত্মা মহান হয় তখন বেশী কষ্টের সম্মুখীন হয়। কিন্তু ছোট আত্মা অধিক নির্ঝঞ্জাটে থাকে।ছোট আত্মা একটু ভাল খাবারের জন্যে চাটুকারও হতে রাজি। ছোট আত্মা ক্ষমতা বা খ্যাতির লোভে হত্যা-লুন্ঠনও করতে রাজি। কিন্তু যার রয়েছে মহান আত্মা, সে শুকনো রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়,তারপর ঐ সামান্য আহার শেষে সারারাত জেগে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হয়। নিজের দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র গাফলতি করলে ভয়ে তাঁর শরীর কাপতে থাকে। যার আত্মা মহান সে আল্লাহর পথে ও স্বীয় মহান লক্ষ্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চায়। আর এ পথে যখন সফলকাম হয় তখন আল্লাহকে শোকর করে। আত্মা মহান হলে আশুরার দিনে,এক শরীরে তিনশ’ ক্ষত সহ্য করতে হয়। যে শরীর ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হয় সে একটি মহান আত্মার অধিকারী হওয়ার অপরাধেই জরিমানা দেয়, বীরত্ব,সত্য-প্রেম এবং শহীদী আত্মার জন্যই জরিমানা দেয়। এই মহান আত্মা বলে ওঠে আমি আমার রক্তের মূল্য দিতে চাই। শহীদ কাকে বলে? প্রতিদিন কত মানুষ নিহত হচ্ছে । কিন্তু তাদেরকে কেন শহীদ বলা হয় না? শহীদ শব্দটি ঘিরে কেন এক পবিত্রতার আবেশ পাওয়া যায়? কারণ শহীদ সেই ব্যক্তি যার এক মহান আত্মা আছে সে আত্মা এক মহান লক্ষ্যকে অনুসরণ করে। শহীদ সে ব্যক্তি যে নিজ ঈমান ও আকীদা রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, যে নিজের জন্যে তো নয়ই বরং মনুষ্যত্ব ও মানবতার স্বার্থে,সত্য ও হাকিকতের স্বার্থে মহান আল্লাহর পথে চরমদুঃখ-দুর্দশা এমন কি মৃত্যুকেও সাদরে বরণ করে নেয়। শহীদ তার বুকের রক্ত দিতে চায় যেমনভাবে একজন ধনী তার ধনকে ব্যাংক বন্দী না করে তা সৎপথে দান-খয়রাত করে নিজ ধনের মূল্য দিতে চায়। সৎপথে ব্যয়িত প্রতিটি পয়সা যেমন লক্ষ -কোটি পয়সার মতো মূল্য লাভ করে তেমনি শহীদের প্রতি ফোটা রক্ত লক্ষ-কোটি ফোটায় পরিণত হয়। অনেকে হয়তো নিজ চিন্তাশক্তির মূল্য দেয় ও একটি আদর্শিক গ্রন্থ মানবকে উপহার দেয়। কেউ কেউ নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটি উপকারী শিল্প মানুষকে উপহার দেয়। কিন্তু শহীদরা তাদের রক্ত দিয়ে মানবের শান্তি ও কল্যাণের পথকে মসৃণ ও সুনিশ্চিত করে। এখন প্রশ্ন হলো: এদের মধ্যে কে মানবতাকে সবচেয়ে বেশী সেবা করলো ? অনেকে হয়তো ধারণা করতে পারে যে, একজন লেখক বা একজন ধনী কিংবা একজন শিল্পীর সেবাই সবচেয়ে বেশী। কিন্তু আসলে এ ধারণা একবারেই ভুল। শহীদদের মতো কেউই মানুষকে তথা মানবতাকে সেবা করতে পারে না। শহীদরাই সমস্ত কন্টকময় পথ পেরিয়ে মানবতার মুক্তি ও স্বাধীনতাকে বয়ে নিয়ে আসে। তারাই ন্যায়-নীতিবান ও শান্ত সমাজ গড়ে দিয়ে যায় যাতে জ্ঞানীর জ্ঞান, লেখেকর কলম, ধনীর ধন, শিল্পীর শিল্প সুস্থ পরিবেশে বিনা বাধায় বিকাশ লাভ করতে পারে এবং মানবতা নিশ্চিন্তে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শহীদরাই প্রদীপের মতো একটি পরিবেশকে আলোকিত করে রাখে যাতে সবাই অনায়াসে পথ চলতে পারে। পবিত্র কোরআন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছে। জগতে অবশ্যই প্রদীপ থাকতে হবে। অন্ধকার জগত নীরব-বধির, জীবনযাত্রা সেখানে অচল। এ সম্বন্ধে প্রখ্যাত কবি পারভীন এ’তেসামী সুন্দর একটি উপমার অবতারণা করেছেন। তিনি একজন দক্ষ শিল্পী ও একটি প্রদীপের কথোপকথনকে এভাবে চিত্রিত করেছেন- শিল্পী প্রদীপকে বলেঃ ‘তুমি জান না,আমি গত রাতে এক মুহুর্তেও ঘুমাইনি। সারা রাত জেগে কত সুন্দর সুন্দর ফুল তুলেছি। আমার জামাটিকে গুলবাগিচা বানিয়েছি। তুমি কখনোই আমার মতো ফুল তুলতে পারবে না। আমি আমার শরীরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে অসামান্য দক্ষতা খরচ করেছি।’ শিল্পীর একথা শুনে প্রদীপ একটু মুচকি হেসে বললোঃ তুমি যে দাবী করছো সারা রাত জেগে তোমার রুচি ও দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছো-এসবই ছিল আমার আত্ম-উৎসর্গের ফল। আমি তিলে তিলে ক্ষয় হয়েছি ও তোমাকে আলো দিয়েছি বলেই তো তুমি তোমার দক্ষতাকে সুচ ও সুতোয় আঁকতে পেরেছো। তোমার এসব দক্ষতা আমার জীবনের বিনিময়েই সম্ভব হয়েছে। তারপর বলছে: ‘তাই তুমি সারা রাত ধরে যা করেছ বলে দাবী করছো-এসবই আমি করেছি।’ আজকে ইবনে সিনা-ইবনে সিনা হতো না, শেখ সাদী-শেখ সাদী হতো না,জাকারিয়া রাজী-জাকারিয়া রাজী হতে পারতো না যদি শহীদরা তাজা রক্ত খরচ করে ইসলামের চারাগাছকে সজীব না করতেন, ইসলামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে না রাখতেন। তাদের সমস্ত অস্তিত্বে একত্ববাদ, খোদাভীতি,ন্যায়পরায়ণতা,সৎসাহস আর বীরত্বে ভরপুর। তাই আমরা আজ যারা মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি তারা সবাই এ শহীদদের প্রতি ঋণী। ইমাম হোসাইনের (আ.) রক্তের প্রতি নবীজীর (সা.) উম্মত ঋণী। ইতিহাসের অনেক স্মরণীয় পুরুষই এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন,যে পরিস্থিতিতে ইমাম হোসাইন (আ.) পড়েন আশুরার রাত্রে। অর্থাৎ বস্তুগত দিক দিয়ে তিনি সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েন এবং শত্রুকে পরাজিত করার বিন্দুমাত্র আশা নেই বরং অতিশীঘ্রই তিনি তার সঙ্গী-সাথীসহ শত্রুদের হাতে খণ্ড-বিখণ্ড হবেন এটিই নিশ্চিত হয়ে ওঠে। অনেকেই এ মুহুর্তে অভিযোগ করেন,আফসোস করেন ইতিহাস এ ধরনের বহু ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী। বলা হয় যে,নেপোলিয়ন যখন ঐ পরিস্থিতিতে পড়লো তখন বলেছিল : হায় প্রকৃতি! তুমি আমাকে এভাবেই মারলে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) সবকিছু বুঝতে পেরেও মৃত্যু নির্ঘাত জেনেও আশুরার রাতে কী বলছেন? তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে সমবেত করলেন যেন যে কোনো বিজয়ীর চেয়েও তার মানসিকতায় উজ্জ্বলতার ঢেউ খেলে যাচ্ছে । তিনি বললেন : আল্লাহর জন্য সর্বোত্তম প্রশংসা। সুখে ও দুঃখে তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ তোমার প্রশংসা করছি আমাদেরকে নবুওতের ঘরানার সম্মান দিয়েছ বলে এবং কুরআনের ও ধর্মের বিধি-বিধানের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছ বলে। এতসব মহাবিপদেও ইমাম হোসাইনের (আ.) কথা ও কাজ ছিল এমনই যেন সব কিছু তাঁর অনুকূলে আছে এবং সত্যি -সত্যিই সবকিছু তাঁর অনুকূলে ছিল। কারণ, এ পরিস্থিতি একমাত্র তার জন্যেই দুঃখবহ ও প্রতিকূল, যে কেবল দুনিয়া ও ক্ষমতা চায় আর ব্যর্থ হয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুণছে। কিন্তু যার সবকিছুই আল্লাহর জন্যে, এমন কি যদি হুকুমতও চান তাহলেও তা আল্লাহর জন্যই চান এবং জানেন যে আল্লাহর পথেই এগিয়ে এসেছেন তাহলে তার কাছে তো এ পরিস্থিতি অবশ্যই অনুকূল। এজন্যে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরগুজারী-ই তো করবেন। মোটকথা আমরা দেখলাম যে, এ আন্দোলনের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত কেবল পৌরুষত্ব, বীরত্ব, সত্যানুসরণ এবং সত্য-প্রেম। কিন্তু এ বীরত্ব কোনো গোত্র বা দেশ বিশেষে সীমাবদ্ধ নয়, এতে কোনো ‘‘আমিত্ব’’ এবং আত্মস্বার্থ নেই। সবই ও সবকিছুই আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর পথে। তিনি এ পথে শেষ নিশ্বাস নেয়া পর্যন্ত ও অটল ছিলেন। যুদ্ধক্লান্ত ইমাম হোসাইন (আ.) যখন শেষ তীর খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তখনও সেই চিরাচরিত কেবলা থেকে কখনও পথভ্রষ্ট হননি, শেষ মুহুর্তেও সেই কেবলার দিকে ফিরে পরম শান্তিতে বললেন : ‘ হে আল্লাহ! আপনার বিচারে আমি সন্তুষ্ট, আপনার আদেশের প্রতি আমি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পিত, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই হে অসহায়দের সহায়।’ ইমামের সঙ্গে শহীদ-হওয়া সঙ্গীরাও ছিলেন ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার যোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইমামের প্রতি তাদের মধ্যে গভীর ভালবাসা ছিল কিংবা গভীর ইমাম-প্রেমের একটা পটভূমি তাদের হৃদয়ে তৈরি হয়েই ছিল। তাই মহান আল্লাহর পরিচালিত আত্মত্যাগের নানা কঠিন পরীক্ষায় তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচল থাকেন, অথচ ইমাম হুসাইন তাদের সবাইকে বলেছিলেন যে তারা ইচ্ছা করলেই প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে তাঁকে ছেড়ে চলে যাওয়া যাওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন । তারা দুর্বল ঈমানদারদের চিন্তার বিপরীতে বিপদের কঠিন পাহাড় ও অনিবার্য মৃত্যু দেখেও একজন শ্রেষ্ঠ ও পরিপূর্ণ মানুষের পৌরুষোচিত সংগ্রামে অংশগ্রহণের গৌরব হাতছাড়া করতে চাননি। খোদা-প্রেমের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতাই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত মহান সংগ্রামের পথে অবিচল রেখেছে। ইসলাম ও এর কর্ণধার ইমামের প্রতি তাদের ভালবাসা ছিল কিংবদন্তীতুল্য। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদীও ওয়া আলে মোহাম্মদ সালাম হো সালাম আয় যায়নাব বিনতে আলী আঃ পর্ব ১ ইসলামের ইতিহাসে যেসব মহীয়সী নারী জ্ঞান, মনীষা, প্রজ্ঞা ও সাহসী ভূমিকার জন্য চিরভাস্বর হয়ে রয়েছেন তাঁদের মধ্যে হযরত যায়নাব (আ.) অন্যতম। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাবলীর প্রত্যক্ষদর্শী হযরত যায়নাব শুধু যে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পরে তাঁর পরিবারের নারী ও শিশুদের এবং অসুস্থ ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর অভিভাবিকার দায়িত্ব পালন করেন তা নয়, বরং কুফা ও দামেশ্কে অসাধারণ সাহসিকতার সাথে ইমাম হোসাইন ও তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রতি ইয়াযীদের জুলুম-অত্যাচারের কথা সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন। এর ফলে ইয়াযীদ ও তার তাঁবেদারদের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের জাল ছিন্ন হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের কাছে সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। ইয়াযীদ ও তার সুবিধাভোগীরা এ মর্মে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছিল যে, ইয়াযীদ মুসলিম উম্মাহ্‌ বৈধ খলিফা এবং ইমাম হোসাইন ছিলেন একজন ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি যিনি ক্ষমতার লোভে ‘খলিফাতুল মুসলিমীন’ ইয়াযীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। কিন্তু হযরত যায়নাব এ মিথ্যাচারের স্বরূপ প্রকাশ করে দেন এবং ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মিশন ও তাঁকে যে অন্যায়ভাবে শহীদ করা হয় তা তুলে ধরেন। ফলে কারবালার ঘটনার স্বরূপ মিথ্যাচারের জঞ্জালের নিচে চাপা পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। হযরত যায়নাব (আ.)-এর ভূমিকার ফলে মুসলিম উম্মাহ্ অচেতনতার নিদ্রা থেকে জেগে ওঠে। এর ফলে অচিরেই বিভিন্ন স্থানে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, উমাইয়্যা নরঘাতকদের বিরুদ্ধে ইমাম হোসাইনকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হয় এবং উমাইয়্যা শাসনের ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। জন্ম ও প্রাথমিক জীবন হযরত যায়নাব (আ.) নারীকুল শিরোমণি হযরত ফাতেমা যাহ্‌রা (আ.) ও জ্ঞান নগরীর দরজা হযরত আলী (আ.)-এর সন্তান। তাঁর জন্মের তারিখ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে অধিকতর সঠিক বলে পরিগণিত মত অনুযায়ী তাঁর জন্ম হিজরী পঞ্চম সালের পাঁচ জমাদিউল উলা। তিনি ৬২ হিজরীর ১৫ রজব ৫৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মাযার দামেশ্কে অবস্থিত; তাঁর নামানুসারে ঐ জায়গা ‘যায়নাবিয়া’ নামে সুপরিচিত। স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (আ.) তাঁর নাম রাখেন যায়নাব। তাঁর ডাকনাম ছিল উম্মে কুলসুম। উল্লেখ্য যে, তাঁর কনিষ্ঠতম বোনের নামও যায়নাব ও ডাকনাম উম্মে কুলসুম ছিল। হযরত যায়নাব (আ.) ‘যায়নাবে কোব্‌রা’ (বড় যায়নাব) ও তাঁর ছোট বোন ‘যায়নাবে ছোগ্রা’ (ছোট যায়নাব) নামে পরিচিত ছিলেন। যায়নাবে ছোগ্রা হযরত ফাতেমা (আ.)-এর সন্তান ছিলেন না; হযরত ফাতেমার ইন্তেকালের পর হযরত আলী ‘ছাহ্বায়ে ছা’লাবিয়া’ নামে একজন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন; তাঁরই সন্তান যায়নাবে ছোগ্রা। অনেকে এই দুই যায়নাবকে এক করে ফেলেন। হযরত যায়নাবে কোব্‌রা ছিলেন মানব জাতির ইতিহাসে সর্বাধিক মহিমান্বিত পরিবারের সন্তান। বেহেশতে নারীদের নেত্রী হযরত ফাতেমা যাহ্‌রা ছিলেন তাঁর মাতা, শেরে খোদা হযরত আলী ছিলেন তাঁর পিতা, বেহেশতে যুবকদের নেতা হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন ছিলেন তাঁর ভ্রাতা এবং সর্বোপরি সৃষ্টিলোকের সৃষ্টির কারণ রাহ্‌মাতুল্লিল ‘আলামীন রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন তাঁর নানা। এমন অনন্যসাধারণ প্রিয়জনদের নয়নমনি ছিলেন হযরত যায়নাবে কোব্‌রা। তিনি এমন এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন যেখানে হযরত জিবরাঈল (আ.) অবতরণ করতেন। খোদায়ী ওহীর ধারক-বাহক ও ব্যাখ্যাকারকদের সাহচর্যে তিনি বড় হন। হযরত যায়নাব ছিলেন অনন্যসাধারণ মেধা ও স্মরণশক্তির অধিকারী। এর অন্যতম প্রমাণ এই যে, হযরত ফাতেমা হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ইন্তেকালের কিছুদিন পরে মসজিদে নববীতে যে ভাষণ দেন হযরত যায়নাব তা হুবহু মনে রাখেন ও পরবর্তীকালে বর্ণনা করেন, অথচ ঐ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস তাঁর নিকট থেকে শুনে হযরত ফাতেমা (আ.)-এর ভাষণ বর্ণনা করেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ কৈশোরকাল থেকেই তিনি মনীষার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। এ কারণে তিনি বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হন। লোকমুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব উপাধি প্রচলিত হয়ে পড়ে। এসব উপাধির মধ্যে সর্বাধিক বিশিষ্ট উপাধি হচ্ছে ‘আকীলাতু বানী হাশেম’ (হাশেম বংশের বুদ্ধিমতী মহিলা)। তাঁর অন্যান্য উপাধির মধ্যে রয়েছে : মুআছ্ছাক্বাহ্ (নির্ভরযোগ্য; নির্ভরযোগ্যা হাদীস-বর্ণনাকারিণী), ‘আলেমাতু গায়রা মু‘আল্লামাহ্’ (কারো কাছে শিক্ষাগ্রহণ ব্যতিরেকেই যিনি ‘আলেমাহ্), ‘আরেফাহ্, ফাযেলাহ্, কামেলাহ্ ও ‘আবেদাতু আলে ‘আলী (আলী-বংশের ‘আবেদাহ্)। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ৭ কারবালা ঘটনার একপিঠে রয়েছে পাশবিক নৃশংসতা ও নরপিশাচের কাহিনী এবং এ কাহিনীর নায়ক ছিল ইয়াযিদ, ইবনে সা’ দ,ইবনে যিয়াদ এবং শিমাররা। আর অপর পিঠে ছিল একত্ববাদ,দৃঢ় ঈমান,মানবতা,সাহসিকতা,সহানুভূতি ও সহমর্মিতা এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মদানের কাহিনী এবং এ কাহিনীর নায়ক আর ইয়াযিদরা নয়,বরং এ পিঠের নায়ক হলেন শহীদ সম্রাট ইমাম হোসাইন (আ.),তাঁর ভগ্নি হযরত যয়নাব এবং তাঁর ভাই হযরত আব্বাসরা,যাদেরকে নিয়ে বিশ্বমানবতা গৌরব করতে পারে। তাই কারবালা ঘটনার সমস্তটাই ট্রাজেডি বা বিষাদময় নয়। অবশ্য পৃথিবীতে বহু ঘটনাই ঘটেছে যেগুলোর কেবল একপিঠ রয়েছে অর্থাৎ এসব ঘটনা কেবলমাত্র দুঃখজনক ও শোকাবহ। উদাহরণ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর তথাকথিত সভ্যতার লালন ভূমি ইউরোপের এক দেশ‘‘ বসিনয়ার’’ কথাই ধরা যাক কিংবা বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের কথাই ধরা যাক-কেবল মুসলমানের গন্ধটুকু তাদের গায়ে থাকায় তাদের উপর চালানো হলো নির্মম গণহত্যা,নারী ধর্ষণ,ঘর-বাড়ী ধ্বংস.... ইত্যাদি । তাদের অপরাধ শুধু এটুকু যে,তারা ছিল মুসলমান। আর এ জন্যেই এটি দুঃখজনক যে, বিশ্বে আজ এতগুলো নিরাপত্তা সংস্থা রয়েছে যারা কুকুরের উপরে অত্যাচার করাকেও নিন্দা করে,রয়েছে মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘ। অথচ এদের কোনটাকেই তোয়াক্কা না করে এক নিরস্ত্র-নিরীহ জাতিকে ধ্বংস করার পায়তারা চললো। কেউ তাদেরকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না। তাই এ ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু এ ঘটনার এই একটিমাত্রই পিঠ আছে যা কেবল নৃশংসতা ও পাশবিকতায় ভরা। কিন্তু কারবালাকে এভাবে বিচার করলে অবশ্যই ভুল হবে। এ ঘটনার একটি কালো অধ্যায় ছিল সত্য,কিন্তু আরেকটি উজ্জ্বল অধ্যায়ও আছে। শুধু তাই নয়,এর উজ্জ্বল অধ্যায় কালো অধ্যায়ের চেয়ে শত-সহস্র গুণে ব্যাপক ও শ্রেষ্ঠ । শহীদ সম্রাট ইমাম হোসাইন (আ.) আশুরার রাতে তার সঙ্গী-সাথীদেরকে প্রশংসা করে বলেনঃ ‘‘ আমি পৃথিবীতে তোমাদের চেয়ে বিশ্বস্ত ও উত্তম কোনো সহযোগীর সন্ধান পাইনি।’’ ইমাম হুসাইন (আ) কিন্তু বললেন না : নিরাপরাধ হওয়া সত্ত্বেও আগামীকাল তোমাদেরকে হত্যা করা হবে। বরং তিনি এমন এক সনদপত্র পেশ করলেন যার মাধ্যমে তাঁর সহযোগীরা বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর (সা.) সহযোগীদের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন হলেন,তাঁর পিতা হযরত আলী (আ.)-এর সহযোগীদের চেয়েও মর্যাদা-সম্পন্ন হলেন। আম্বিয়াদের যারা সাহায্য করেছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছেঃ ‘‘ কত নবী যুদ্ধ করেছেন,তাদের সাথে বহু আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল তাতে তারা হীনবল হয়নি ও নতি স্বীকার করেনি। আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে পছন্দ করেন।’’ (আল ইমরানঃ ১৪৬) অথচ ইমাম হোসাইন (আ.) প্রকারান্তরে তাঁর সহযোগীদেরকে আম্বিয়াকেরামের এ সকল সহযোগীদের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ যদি ইমাম হোসাইনের (আ.) মর্মান্তিক শাহাদাত উপলক্ষে শোক মিছিল করে,অথচ অমানুষ ইয়াযিদের নামের পাশে সম্মানসূচক নানান শব্দও ব্যাবহার করে থাকে-তাহলে সে কারবালা থেকে কোন শিক্ষাই নিতে পারলো না। মহাপুরুষদের শ্রদ্ধা করা মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি । অভ্যাসকে বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা একান্তই বোকামি। কিন্তু মহাপুরুকে যেমন সম্মানভরে স্মরণ করা হয় তেমনি কাপুরুষকেও অবশ্যই ঘৃণা করা উচিত। কেননা,মহাপুরুষ ও কাপুরুষ উভয়কেই যদি আমরা শ্রদ্ধা করলাম-তাহলে হক আর বাতিলের মধ্যে আর কি-ই বা তফাৎ থাকলো? কাজেই,যে কেবল ইমাম হোসাইনের (আ.) মজলুমতাকে নিয়েই মূর্ছিত হবে সে যেমন ভুল করবে ঠিক তেমনিভাবে যে ইয়াজিদকে নায়ক বানিয়ে তার নামের পাশে সম্মানার্থক বিভিন্ন উপাধি ব্যাবহার করবে সেও একজন কাপুরুষকেই স্বীকৃতি দিল। যদিও আমরা সবাই ইমাম হোসাইনকেই (আ.) শ্রদ্ধা করি। যে বৈশিষ্ট্য কোনো আন্দোলন ও বিদ্রোহকে মহান করে তা হলো এমন এক বিশেষ পরিস্থিতিতে এ আন্দোলন অনুষ্ঠিত হবে যখন কোনো মানুষ এর ধারণাও করতে পারে না। ঘন অন্ধকারের মধ্যে এক খণ্ড আলোর ঝলকানি,ব্যাপক জুলুম-স্বৈরাচারের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার বজ্র আওয়াজ,চরম স্থবিরতার মধ্যে প্রকাণ্ড ধাক্কায় নিস্তব্ধ নিশ্চুপের মধ্যে হঠাৎ গর্জে ওঠা। উদাহরণস্বরূপ নমরুদের মতো একজন অত্যাচারী শোষক পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলে। কিন্তু আজীবন এ পিরিস্থিতি অব্যাহত থাকেনি। হঠাৎ করে একজন ইবরাহীমের (আ.) আবির্ভাব ঘটে ও নমরুদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ‘‘ ইবরাহীম একাই এক অনুগত জাতি ছিলেন।’’ (নাহলঃ ১২০) তেমনি ফেরাউনের মতো একজন নির্দয় ও অহংকারীও রক্ষা পায়নি। কুরআনের ভাষায় : ‘‘ ফেরাউন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদেরকে সে হীনবল করেছিল। তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করতো এবং নারীদেরকে সে জীবিত রাখত।’’ (কাসাস-৪)কিন্তু এই পরাক্রমশালী ফেরাউনও টেকেনি। হঠাৎ করে একজন মূসা (আ) তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। আরব যখন শোষণ-নিপীড়ন,মূর্তিপূজা,কন্যা সন্তানকে জীবিত হত্যা,রক্তপাত,দ্বন্দ-কলহ,ব্যভিচারে এবং অন্ধকারে ছেয়ে গেল তখন একজন মুহাম্মদের (সা.) আবির্ভাব হয় যিনি বলতে থাকেনঃ ‘‘ বলো,আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,তবেই তোমরা সুখী হতে পার।” স্বৈরাচারী উমাইয়া সরকার নিজ স্বার্থসিন্ধির জন্যে সব ধরনের সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত হয়েছিল, এমন কি ধর্মকে ভাঙ্গিয়েও সৈরতন্ত্রের ভিত গাড়তে উদ্যত হয় ,দুনিয়ালোভী হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে টাকা দিয়ে কিনে তাদের সপক্ষে হাদীস জাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়। বলা হয়,এক দরবারী আলেম বলেছিলঃ ‘‘ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর নানার তলোয়ারের আঘাতেই নিহত হয়েছেন।’’ একথার মাধ্যমে সে বলতে চেয়েছিল যে,ইমাম হোসাইনের (আ.) নানার ধর্মমতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। বনি উমাইয়া ইসলামকে এমনভাবে তাদের শোষণ ও স্বৈরাচারের সেবায় নিয়োগ করতে পেরেছিল যে তারা একদল দুনিয়ালোভী ও নামমাত্র মুসলমানকে ইসলামী জিহাদের নামে ইমাম হোসাইনের (আ.) বিরুদ্ধে লিপ্ত করতে সক্ষম হয়। তারা ইমাম হোসাইনকে (আ.) হত্যা করতে পারার জন্যে শোকর আদায়স্বরূপ একাধিক মসজিদ নির্মাণ করে। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় যে,মানুষকে কিভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। এ রকম এক বিপর্যয়ের মুহুর্তে ইমাম হোসাইন (আ.) মুক্তির মশাল জ্বালিয়ে এগিয়ে এলেন। যখন মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল,মানুষের মতামত প্রকাশের কোনো সাহস ছিল না। কোনো সত্যি কথা বলাও যখন কারও সাহসে কুলাতো না, এমন কি এর কোনো প্রতিরোধ অবাস্তবে পরিণত হয়-ঠিক সে মুহুর্তে ইমাম হোসাইন (আ.) বীরদর্পে বিরোধিতায় নামলেন,বজ্রকন্ঠে সত্যবাণীর স্লোগান তুলে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলেন। খোদাদ্রোহী স্বৈরাচারের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিলেন। আর এ কারণেই তাঁর আন্দোলন মহিমা লাভ করেছে। তাঁর আন্দোলন কালের গন্ডী ছাড়িয়ে যুগ-যুগান্তরের মুক্তিকামী ও সত্যান্বেষী মানুষের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শে পরিণত হয়েছে।

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ৬ হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র কালজয়ী মহাবিপ্লব নানা কারণে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে এবং এইসব কারণে এই মহাপুরুষ ও তাঁর সঙ্গীরা মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে ভালবাসা আর শ্রদ্ধার অক্ষয় আসন করে নিয়েছেন। এই কারণগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আন্তরিক চিত্তে যথাসময়ে জরুরিতম দায়িত্বটি পালন করা ও এ জন্য নিজের সন্তান ও জীবনসহ সব কিছু বিলিয়ে দেয়ার মত সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার। ইমামের অতুলনীয় বীরত্ব, সাহসিকতা ও আপোসহীনতাও এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ইয়াজিদের মত বর্বর ও নিষ্ঠুর শাসকের আনুগত্য অস্বীকারের পরিণতি কি হতে পারে তা ভেবে যখন অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব আতঙ্কিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিলেন অথবা আপোস বা নীরবতার পথ ধরেছিলেন তখন ইমাম হুসাইন (আ) প্রকাশ্যেই এই চরম জালিম ও তাগুতি শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জনগণকে জাগাতে সচেষ্ট হন। এ সময় ইমামের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক সাহাবি ও এমনকি তাঁর এক সৎ ভাইও বিপ্লবী তৎপরতা বন্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন তাকে। কুফার পথে এক ব্যক্তি ইমামকে জিজ্ঞেস করেছিল;‘ চলে এলেন যে!!।’ তার একথার অর্থ ছিল যে-মদীনায় আপনি শান্তিতে ছিলেন। সেখানে আপনার নানার মাজার। রাসূলুল্লাহর (সা.) মাজারের পাশে থাকলে কেউই আপনাকে বিরক্ত করতো না। অথবা মক্কায় আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিলেই আপনি নিরাপদে থাকতেন, বেরিয়ে এসে আপনি বরং ভূল করেছেন এবং বিপদ বাড়িয়েছেন। জবাবে ইমাম বলেন,‘ তোমার এ ধারণা ভূল। তুমি জান না যে, আমি যদি কোনো পশুর গর্তে গিয়েও আশ্রয় নেই তবুও ওরা আমাকে ছাড়বে না। ওদের সাথে আমার যে দ্বন্দ্ব তার কোন সমাধান নেই। আপোষ-রফাও এখানে চলে না। ওরা আমার কাছ থেকে যেটা চায় কখনই তা আমি মেনে নিতে পারিনা আর আমি যেটা চাই সেটা ওদের পক্ষেও মেনে নেয়া অসম্ভব। হোসাইনী আন্দোলনের আরেক বড় কারণ ছিল ‘‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার’’ অর্থাৎ‘ সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ।’ মদীনা থেকে বের হবার সময়েই তিনি তার এ লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন। মোহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া ছিলেন ইমাম হোসাইনের (আ.) সৎ ভাই। তার একহাত পঙ্গু থাকায় জিহাদ করতে অসমর্থ ছিলেন বলে ইমাম হোসাইনের (আ.) সাথে আসতে পারেনিন। ইমাম হোসাইন (আ.) মদীনাতে একটা অসিয়তনামা লিখে তার হাতে দিয়ে এসেছিলেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘ এটা হল ভাই মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার কাছে লেখা হোসাইন ইবনে আলীর (আ.) অসিয়তনামা।’ পরবর্তী কয়েকটি লাইনে ইমাম হোসাইন (আ.) আল্লাহর একত্ববাদ এবং রাসূলের (সা.) রিসালাতের প্রতি সাক্ষ প্রদান করলেন,কারণ ইমাম হোসাইন (আ.) জানতেন যে,তার হত্যার পর প্রচার করা হবে-ইমাম হোসাইন (আ.) দীন থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই প্রথমেই তিনি দীনের প্রতি তার অবিচল থাকার প্রমাণ রেখে এবার ইয়াযিদের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহ এবং আন্দোলনের রহস্য বর্ণনা করলেনঃ ‘আমি যশ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার জন্যে বিদ্রোহ করছি না। আমি আমার নানার উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই, আমি চাই সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করতে এবং অসৎকাজে বাধা দিতে। সর্বোপরি,আমার নানা এবং বাবা হযরত আলী (আ.) যে পথে চলেছেন সে পথেই চলতে চাই।( দ্রঃ মাকতা লু খারাযমী ১ / ১৮৮ ) এখানে কিন্তু বাইয়াত প্রসঙ্গেরও কোনো উল্লেখ নেই,আবার কুফাবাসীদের দাওয়াত প্রসঙ্গেরও উল্লেখ নেই। অর্থাৎ,এর মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (আ.) বোঝাতে চেয়েছেন যে,উপরোক্ত ইস্যু না থাকলেও তিনি ইয়াজিদকে সহ্য করতেন না। দুনিয়ার মানুষ জেনে রাখুক যে,এ হোসাইন ইবনে আলীর (আ.) খ্যাতি অর্জনের কোনো লোভ নেই, ক্ষমতারও কোনো লোভ নেই। বরং তিনি একজন সংস্কারক। যুগ যুগ ধরে ইসলামে যে বিদআতের আচ্ছাদন সৃষ্টি করা হয়েছে-তিনি সে সব আচ্ছাদন ছিন্ন করে ইসলাম এবং মুসলমানদেরকে মুক্ত করতে চান। ইমাম হোসাইন বলেছিলেন ‘ অধমের পুত্র আরেক অধম (ইবনে যিয়াদ) আমাকে আত্মসমর্পণ করা নতুবা যুদ্ধের হুমকি দেখাচ্ছে । নতি স্বীকার করা আমাদের কখনোই মানায় না। স্বয়ং আল্লাহ,তার রাসূল (সা.) ও মুমিনরা আমাদের নতি স্বীকারকে ঘৃণা করেন।’ ইমাম হোসাইনের (আ.) এই মহান ও ঐশী আত্মা তার সমস্ত প্রাণ ও রক্তমাংসের সাথে একাকার ছিল। হোসাইন (আ.) থেকে তা পৃথক করা আদৌ সম্ভব ছিল না। ইয়াযিদী কর্মকাণ্ড মেনে নেয়ার আর বিন্দুমাত্র সহ্য ক্ষমতা ইমাম হোসাইনের (আ.) ছিল না। তাই তিনি এবার আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন এবং ইয়াযিদী শক্তির উৎখাত করে ইসলাম এবং মুসলমানের মুক্তি দেয়াই তার এখন চুড়ান্ত লক্ষ্য ধার্য হল। ওলিদ মুয়াবিয়ার মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে ইমামকে আহ্বান জানালে ইমাম হুসাইন (আ) তাকে জানান যে: 'হে ওলিদ! আমাদের বংশ হল নবুওত ও রেসালতের খনি এবং ফেরেশতাদের আসা-যাওয়ার স্থান ও খোদায়ী রহমতের স্থান। মহান আল্লাহ নবী-পরিবারের মাধ্যমে ইসলামকে উদ্বোধন করেছেন এবং এই বংশকে সঙ্গে নিয়েই ইসলামকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেবেন। আর ইয়াজিদ যার আনুগত্য করতে তুমি আমায় বলছ সে হচ্ছে এমন এক মদখোর ও খুনি যার হাত নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। সে হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহর বিধি-বিধানের সীমানা লণ্ডভণ্ড করেছে এবং জনগণের সামনেই নানা অশ্লীল কাজ ও পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় অমন উজ্জ্বল রেকর্ড ও উন্নত পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও আমার মত একজন ব্যক্তি কী এই পাপিষ্ঠের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে বা তার নেতৃত্ব মেনে নেবে? তোমার ও আমার উচিত এ বিষয়ে ভবিষ্যতের দিকে নজর দেয়া এবং তাহলে দেখতে পাবে যে খেলাফত বা মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমাদের মধ্যে কে বেশি উপযুক্ত?' এভাবে ইসলামের সেই চরম দুর্দিনে নানার ধর্ম ও সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন তাঁরই সুযোগ্য নাতি হযরত ইমাম হুসাইন (অ)। মহানবী (সা) মুসলিম উম্মাহর এই অমর ত্রাণকর্তাকে 'উম্মতের নাজাতের তরী' ও 'হেদায়াতের প্রদীপ' বলে উল্লেখ করেছিলেন। এর অর্থ ইমাম হুসাইনের (আ) দেখানো পথ ও আদর্শ অনুসরণ ছাড়া মুসলমানরা তাদের ঈমান ও পবিত্র ধর্মকে রক্ষা করতে পারবে না। বিশ্বনবী (সা) গোটা আহলে বাইতকে (আ) নুহের নৌকার সঙ্গে তুলনা করলেও ইমাম হুসাইনের (অ) ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ওই বিশেষণ যুক্ত করেছেন যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একজন ডুবন্ত বা আহত ব্যক্তিকে উদ্ধারেরর জন্য দ্রুত গতিশীল বাহন বা গাড়ি দরকার। অন্যদিকে সাধারণ রোগিকে ধীরে-সুস্থে বা কিছুটা পরেও সাধারণ কোনো গাড়িতে চড়িয়ে হাসপাতালে নেয়া যায়। কারবালার মহাবিপ্লবের আদর্শ ও ইমাম হুসাইনের (আ) ভূমিকা মৃতপ্রায় ইসলামকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত গতিশীল নৌকা বা বাহনের ভূমিকাই পালন করেছিল। # প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদীউ ওয়া আলে মোহাম্মদ শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ৮ মহান তাসুয়া বা আশুরার পূর্ব দিন। ১৩৮০ বছর আগে এই দিনে অর্থাৎ ৬১ হিজরির নয়ই মহররম কুফায় ইয়াজিদের নিযুক্ত কুখ্যাত গভর্নর ইবনে জিয়াদ ইমাম হুসাইন (আ.)’র ছোট্ট শিবিরের ওপর অবরোধ জোরদারের ও হামলার নির্দেশ দেয়। এর আগেই আরোপ করা হয়েছিল অমানবিক পানি-অবরোধ। পশু-পাখী ও অন্য সবার জন্য ফোরাতের পানি ব্যবহার বৈধ হলেও এ অবরোধের কারণে কেবল নবী-পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এই নদীর পানি। ইয়াজিদ বাহিনীর সেনা সংখ্যাও ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং দশই মহররমের দিনে তা প্রায় বিশ বা ত্রিশ হাজারে উন্নীত হয়। ইমাম হুসাইন (আ.) নয়ই মহররমের বিকালের দিকে এক দিনের জন্য যুদ্ধ পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন যাতে দশই মহররমের রাতটি শেষবারের মত ইবাদত বন্দেগিতে কাটানো যায়। ইয়াজিদ বাহিনীর প্রধান প্রথমে রাজি না হলেও পরে এ প্রস্তাবে রাজি হয়। বিকালেই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) নিজ সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। সঙ্গীরা আবারও তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেন।নয়ই মহররম কালজয়ী কারবালা বিপ্লবের চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিন। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতি অর্জনের সর্বশেষ দিন। এই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর প্রায় ১০০ জন সহযোগী। আর এ জন্যই তাঁরা ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন।ইমাম হুসাইন (আ)'র আন্দোলনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া বা নিষেধ করা। এ বিষয়ের উপস্থিতি এই আন্দোলনকে যেমন একটা মহান আদর্শে পরিণত করেছে ঠিক তেমনিভাবে এ আন্দোলন,‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’কে বেশি গুরুত্ববহ করে তুলেছে। ইসলামের এই রোকন ইমাম হুসাইনের (আ.) আন্দোলনকে শুধু ইসলামী বিপ্লবের শীর্ষেই আসন দান করেনি ,বরং যুগ যুগ ধরে বিপ্লবী মুসলমানদের জন্যে অনুকরণীয় আদর্শে রুপান্তরিত করেছে। ইসলামে নামায,রোযা,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদি রোকনগুলোর মত‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি । কিন্তু কেবল নামায রোযা আর হজ্ব এগুলো নিয়েই মুসলমানরা মশগুল হয়ে পড়েছিল। ধীরে ধীরে ইসলামের অন্য ভিত্তিগুলো একবারে ভুলেই যাচ্ছিল মুসলমানরা। অথচ নামায কিংবা রোযার মত‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’ -এর গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়।ইমাম হোসাইন (আ.) প্রমাণ করেছেন যে,জায়গা বিশেষে আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকারের জন্যে জানমাল উৎসর্গ করতে হয়। সেদিন অনেকেই ইমামের এই আন্দোলনকে সঠিক ও উপযুক্ত পদক্ষেপ বলে মেনে নিতে পারেনি। অবশ্য তাদের চিন্তার মান অনুযায়ী তাদের এই আপত্তি করাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ইমাম হোসাইনের (আ.) চিন্তার মান এসবের অনেক উর্দ্ধে ছিল। অন্যেরা বলছিল যে,ইমাম যদি ইয়াযিদের বিরোধিতায় নামেন পরিণতিতে ইমাম জানমাল হারাবেন। ইমাম হুসাইন (আ) যখন মদীনা থেকে রওয়ানা হন তখন ইবনে আব্বাস বলেছিলেনঃ‘ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কুফাবাসীরা আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে,অনেকেই সেদিন এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। কিন্তু ইমাম জবাবে বলেছিলেন : ‘ তোমরা যা বলছো তা আমার অজ্ঞাত নয়,আমিও তা জানি।’ মূলতঃ ইমাম হোসাইন (আ.) বিশ্বকে বোঝালেন যে,‘ আমর বিল মারুফ এবং নাহী আনীল মুনকারের’ জন্যে জীবনও দেয়া যায়,ধন-সম্পদ সবকিছু উৎসর্গ করা যায়। ইসলামের এই ভিত্তিটির জন্যে পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তি কি ইমাম হোসাইনের (আ.) ন্যায় আত্মত্যাগ করতে পেরেছে? যেদিন ইমাম মক্কা ছেড়ে আসেন সেদিন মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার কাছে লেখা অসিয়তনামায় তিনি এ বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি লেখেন : ‘‘ আমি কোনো ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার লোভে কিংবা কোনো গোলযোগ সৃষ্টির জন্যে বিদ্রোহ করছি না,আমি শুধু আমার নানার উম্মতের মধ্যে সংস্কার করতে চাই,আমি‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’ করতে চাই এবং আমার নানা যে পথে চলেছেন আমিও সেই পথে চলতে চাই।’’ ইমাম হোসাইন (আ.) দীর্ঘ পথ চলার সময় বারবার সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ- এই লক্ষ্যকে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে এ সময়গুলোতে তিনি বাইয়াত প্রসঙ্গেরও যেমন কোনো উল্লেখ করেননি তেমনি দাওয়াত প্রসঙ্গেরও কোনো উল্লেখ করেননি। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল পথিমধ্যে তিনি যতই কুফা সম্পর্কে ভয়ানক ও হতাশাব্যঞ্জক খবর শুনছিলেন ততই তার বক্তব্য জ্বালাময়ী হয়ে উঠছিল। সম্ভবতঃ ইমামের দূত মুসলিম ইবনে আকীলের শহীদ হবার সংবাদ শুনেই ইমাম এই বিখ্যাত খোতবা প্রদান করেনঃ ‘ হে মানবমণ্ডলী! পৃথিবী আমাকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছে,আমাকে বিদায় জানাচ্ছে । পরকাল আমাকে সাদরে বরণ করছে,উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছে। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছনা যে সত্য অনুসারে আমল করা হচ্ছে না,তোমরা কি দেখতে পাও না যে আল্লাহর বিধানসমূহকে পদদলিত করা হচ্ছে ? দেখতে পাওনা যে চারদিকে ফেতনা-ফ্যাসাদে ছেয়ে গেছে অথচ কেউ এর প্রতিবাদ করছে না?’’ ‘‘ এ অবস্থায় একজন মুমিনের উচিত নিজের জীবন উৎসর্গ করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা। যদি জীবন উৎসর্গ করতে হয় তাহলে এটাই তার উপযুক্ত সময়।’’ ( দ্রঃ তুহফাল উকুলঃ ২৪৫ ) অর্থাৎ‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’ এতই মূল্যবান। পথিমধ্যে উচ্চারিত অন্য আরেকটি খোতবায় ইমাম সার্বিক অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেনঃ ‘‘ হে লোকসকল! আমি এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুবরণকে কল্যাণ ও মর্যাদাকর ছাড়া আর কিছুই মনে করি না।’’ অর্থাৎ একে আমি সত্যের জন্যে শহীদ হওয়া মনে করি। এ থেকে বোঝা যায় যে‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’ করতে গিয়ে নিহত হলে সে শহীদের মর্যাদার অধিকারী হবে। ‘‘ আর জালেমদের সাথে বেঁচে থাকাকে আমি নিন্দাকর অপমান মনে করি। আমার আত্মা এমন আত্মা নয় যে,জালেমদের সাথে আপোষ করে বেঁচে থাকতে পারবে।’’ ইমাম এর চেয়েও আরো বড় কথা বলেন যখন অবস্থা শতভাগ প্রতিকূল হয়ে ওঠে। কাফেলা যখন ইরাকের সীমানায় পৌঁছায় তখন হুর ইবনে ইয়াযিদ আর-রিয়াহীর এক বিশাল বাহিনীর বাধার সম্মুখীন হন। হুর এক হাজার সৈন্যযোগে ইমামের কাফেলাকে বন্দী করে কুফায় নিয়ে যাবার দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিল। তাবারীর মতো বিশ্বস্ত ঐতিহাসিকগণ ঐ মুহুর্তে ইমামের সেই বিখ্যাত খোৎবার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। ইমাম ঐ খোতবায় রাসূলুল্লাহর (সা.) উদ্ধৃতি দিয়ে‘ আমর বিল মারুফ ওয়া নাহী আনীল মুনকার’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন : ‘‘ হে লোক সকল! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘ যদি কেউ কোনো অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী সরকারকে দেখে যে হালালকে হারাম করে,হারামকে হালাল করে,বায়তুলমালকে নিজের ব্যাক্তিগত খাতে খরচ করে,আল্লাহর বিধি-বিধানকে পদদলিত করে,মুসলমানের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করে না,এরপরও যদি সে নিশ্চুপ বসে থাকে তাহলে আল্লাহ তাকে ঐ জালেমদের সাথে একই শাস্তি প্রদান করবেন। ইমাম হুসাইন (আ) বলছিলেন, আজকে বনি উমাইয়ার যারা হুকুমত করছে তারা কি ঐসব জালেম ও স্বৈরাচারীদের মতন নয়? দেখতে পাও না যে তারা হালালকে হারাম করেছে আর হারামকে হালাল? তারা কি আল্লাহর বিধানকে পদদলিত করেনি? বায়তুলমালের অর্থকে তারা কি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেনি? আত্মসাৎ করেনি? তাই এরপরও যারা নীরবতা অবলম্বন করবে তারাও ইয়াযিদদের মতোই বলে সাব্যস্ত হবে।’’ এবার তিনি নিজের প্রসঙ্গে বলেন : আর আমার নানার এই আদেশ পালন করতে অন্যদের চেয়ে আমিই বেশী যোগ্য,আমারই দায়িত্ব অধিক ।’’ ( দ্রঃ তারিখে তাবারীঃ ৪ / ৩০৪ )কোনো মানুষ যখন ইমাম হোসাইনের (আ.) এসব বৈশিষ্ট্যের সাথে পরিচিত হয় তখন বলে যে,এ ধরনের ব্যক্তিই তো চির ভাস্বর হয়ে থাকার অধিকার রাখেন। তিনিই তো চিরঞ্জীব থাকার যোগ্য । কেননা হোসাইন নিজের জন্যে ছিলেন না। তিনি নিজেকে মানুষ ও মানবতার জন্যে উৎসর্গ করেছেন। একত্ববাদ,ন্যায়পরায়ণতা এবং মনুষ্যত্বের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আর এ কারণেই সব মানুষই তাকে ভালবাসে,তাকে শ্রদ্ধা করে। যখন কোনো মানুষ এমন একজনকে দেখে যার নিজের জন্যে কিছুই নেই,মান-সম্মান,মর্যাদা,মানবতা যা আছে তা সবই অন্যের জন্যে -তখন সে নিজেকে ঐ ব্যক্তির সাথে একাত্ম করে নেয়। ইয়াজিদ বাহিনীর অন্যতম জেনারেল হুর ইমাম হোসাইনের (আ.) সাথে সাক্ষাতে ইমামকে কুফায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব করলে ইমাম এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি কখনো অপমানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাননি। মনুষ্যত্বের মাহত্ম্য ও মর্যাদাকেই তিনি অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছেন। তিনি বললেনঃ আমি যাব না। শেষ পর্যন্ত আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে,তিনি এমন এক রাস্তায় যাবেন যে রাস্তা কুফারও নয়,মদীনারও নয়। অবেশেষ তিনি মহররম মাসের দুই তারিখে কারবালা ভূখন্ডে এসে পৌঁছুলেন। প্রায় ৭২ জন সঙ্গী-সাথীসহ সেখানে তাঁবু গাড়লেন। পশ্চিামারা ও তাদের অন্ধ অনুসারী কথিত আধুনিকতাবাদীরা বলে ইসলাম ভাগ্য-নির্ভর ধর্ম। কিন্তু কুরআন বলে, ‘‘ আল্লাহ কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ থেকেই তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে অগ্রসর হয়।’’ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জন্য এর চেয়ে বেশী স্বাধীনতা,কর্তৃত্ব আর কি হতে পারে? মুসলমানদের মধ্যেও যারা সবকিছু আল্লাহ করবে এই আশায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে,এই আয়াতের চপেটাঘাত তাদের মুখেও লাগে। তাদেরকে ধমক দিয়ে এই আয়াতটি বলেঃ অনর্থক বসে থেকো না,আল্লাহ অনিবার্যভাবে কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করবেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে আসবে, তাদের যা করার তা ভালভাবে সম্পাদন করবে। তাদের চরিত্র , মানসিকতা, লক্ষ্য এবং সর্বোপরি নিজেরা শুদ্ধ হবে। এর চেয়ে গুরুদায়িত্ব আর কি হতে পারে ? তাও আবার একটা সমাজ তথা গোটা জাতির ওপর এই দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।আরেকটি আয়াতে পবিত্র কোরআন একটা কলূষিত জাতির পরিণতি তুলে ধরে বলছেঃ আল্লাহ কোনো জাতির জন্যে যে নেয়ামত দান করেছেন তা তিনি ফিরিয়ে নেন না যতক্ষণ তারা নিজেরাই তা বর্জন করে।’’ ( আনফালঃ ৫৩ ) অর্থাৎ যখন কোনো জাতি কলূষতায় নিমজ্জিত হয়,ফেতনা-ফ্যাসাদে ভরে যায়,তাদের সমাজ এভাবে তাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়,তখনই আল্লাহও তাদেরকে নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেন। যতক্ষণ কোনো জাতি নিজেরাই নিজেদের দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে এগিয়ে আসবে না,যতক্ষণ কোনো জাতি পরিশ্রমী ও ত্যাগী হবে না,যতক্ষণ কোনো মুক্ত -স্বাধীন চিন্তার পথ ধরবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সে জাতি উন্নত হবে না, মুক্তি পাবে না। অন্যদিকে যখন কোনো জাতি তাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে উঠে পড়ে লাগবে,পরিশ্রম করবে,কল্যাণের রাস্তা বেছে নিতে পারবে একমাত্র সে জাতিই আল্লাহর সমর্থন লাভ করবে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় তারা আল্লাহর ফায়েজ,রহমত ও সহযোগিতার অধিকারী হবে। যদি অন্যের ওপর ভরসা করে নিস্ক্রিয় হয়ে বসে থাকে থাকলে সমস্যার সমাধান হতো তাহলে ঐ পরিস্থিতিতে হযরত ইমাম হোসাইনও (আ.) সবার আগে তাই করতেন। কিন্তু কেন তা তিনি করেননি? কারণ তিনি নিজেই নিজ জাতির তথা নানার উম্মতের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। তিনি সমাজকে কলূষমুক্ত করতে চেয়েছিলেন যে কলূষতা বজায় থাকলে সবাইকে একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) কিভাবে সমাজকে কলুষতা মুক্ত করবেন? কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন? সোজা কাজতো আমরাও করতে পারি। সাধারণ পর্যায়ের সমস্যা সমাধান করা সবার পক্ষে সম্ভব। ইসলাম বলেছেঃ কেউ মারা গেলে তার জানাযায় শরীক হও,কুরআনখানিতে অংশ নাও। সবাই এসব কাজ করেও থাকে। কিন্তু ইসলাম সবসময় এ ধরনের সাধারণ কাজ চায় না। কখনো কখনো ইমাম হোসাইনের (আ.) মত পদক্ষেপ নিতে হয়,বিদ্রোহ করতে হয়। এমন কিছু করতে হয় যা কেবল ঐ সময়ের মুসলিম সমাজকেই ঝাঁকুনি দেবে না,বরং এক বছর পর তা এক রকমভাবে,পাঁচ বছর পর আরেক রকমভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। এমন কি ৫০ বছর-১০০ বছর,শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তা সত্যের পথে সংগ্রামকারীদের জন্যে এক আদর্শ হিসেবেই চিরজাগরুক থাকবে। আর এটিই হলো নিজেদের ভাগ্যে নিজেরাই পরিবর্তন আনা। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ৫ গত কয়েক পর্বে আমরা ইমাম হোসাইনের শাহাদতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে উমাইয়া শাসনামলের বিশ্লেষণ করেছি। আসলে খোদাবিমুখ উমাইয়া নেতারা ইসলামী চিন্তাধারার সাথে তাদের বিষাক্ত চিন্তাধারার উপকরণগুলোকে মিশিয়ে দিয়েছিল। ইসলামের খাঁটি রূপ দেখতে হলে এসব ভেজাল উপকরণের অপসারণ জরুরি। মোয়াবিয়া মৃত্যুর আগে ইতোমধ্যে সংযোজিত কিছু বিদআত বা কুপ্রথার সাথে আরও কয়েকটি কুপ্রথা চালু করে যায়। যেমন : এক. হযরত আলীকে (আ.) অহরহ অভিসম্পাত করা। দুই. টাকার বিনিময়ে আলীর (আ.) বিরুদ্ধে হাদীস জাল করা। তিন. প্রথমবারের মতো ইসলামী সমাজে বিনাদোষে হত্যাযজ্ঞের অবাধ নীতি চালু করা। এছাড়া সম্মানীয়দের সম্মান খর্ব করা এবং হাত-পা কেটে বিকল করে দেয়া। চার. বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা। যে প্রথা পরবর্তী খলীফারাও অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করে। এসব অমানবিক প্রথা মোয়াবিয়াই চালু করে যায়। সে ইমাম হাসান (আ.),মালেক আশতার,সা’দ ইবনে ওয়াক্কাছ প্রমুখকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে। পাঁচ. খিলাফতকে নিজের খান্দানে আবদ্ধ রেখে রাজতন্ত্র চালু করা এবং ইয়াযিদের মতো অযোগ্য ব্যক্তিকেও খলীফা পদে মনোনীত করা। ছয়. গোত্র বৈষম্যের স্তিমিতপ্রায় আগুনকে পুনরায় প্রজ্জ্বলন করা। মোয়াবিয়ার কার্যকলাপের মধ্যে হযরত আলীকে (আ.) অভিসম্পাত করা,হাদীস জাল করা এবং ইয়াযিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। ইয়াযিদ ছিল মূর্খ ও নির্বোধ। সাধারণতঃ খলীফার পুত্রদের মধ্যে যাকে ভাবী খলীফা হিসাবে মনোনীত করা হতো তাকে বিশেষ শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হত । কিন্তু ইয়াযিদ বড় হয় মরুভূমিতে রাজকীয় বিলাসিতায়। দুনিয়াবি ও পরকালীন কোনো বিষয়েরই সে খবর রাখত না বলে খলীফা হবার বিন্দুমাত্র যোগ্যতাও তার ছিল না। ওসমানের সরলতার সুযোগে বায়তুলমাল লুন্ঠিত হয়েছিল,বড় বড় পদগুলো অযোগ্যদের হাতে চলে গিয়েছিল। মোয়াবিয়া হযরত আলীর (আ.) বিরুদ্ধে অভিশাপ দেয়া,হাদীস জাল করা, বিনা দোষে হত্যা,বিষ প্রয়োগ ও খেলাফতকে রাজতন্ত্রে রুপান্তরিত করার মত নানা কুপ্রথা চালু করেছিল। কিন্তু ইয়াযিদের যুগে এসে ইসলামের ইজ্জত চরম রসাতলে যায়। দেশ-বিদেশের দূতরা এসে অবাক হয়ে দেখতো যে,রাসূলুল্লাহর (সা.) আসনে এমন একজন বসে আছে যার হাতে মদের বোতল,আর পাশে বসিয়ে রেখেছে রেশমী কাপড় পরা বানর। ইয়াযিদ ছিল অহংকারী, প্রকাশ্য ব্যাভিচারী,ক্ষমতালোভী এবং মদ্যপ। এ কারণেই ইমাম হোসাইন (আ.) বলেছিলেনঃ ‘যদি ইয়াযিদের মতো দুর্ভাগা উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের ইতি টানতে হবে। ইয়াযিদ প্রকাশ্যে খোদাদ্রোহিতায় নামে। অন্য কথায়,এতোদিনের গোপনতার পর্দা ছিন্ন করে ইয়াযিদ উমাইয়াদের আসল চেহারাটা প্রকাশ করে দেয়। ফলে ইসলামী জিহাদের এটাই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট সময়। তাই ,যদি কেউ প্রশ্ন করে যে,ইমাম হোসাইন (আ.) কেন বিদ্রোহ করতে গেলেন?- তাহলে একই সাথে তার এ প্রশ্নও করা উচিত যে, মহানবী কেন আপোষহীন বিদ্রোহ করেছিলেন ? কিংবা,হযরত ইবরাহীম (আ.) কেন একা হয়েও নমরুদের বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন? আর কেনই বা হযরত মূসা (আ.) একমাত্র সহযোগী ভ্রাতা হারুনকে নিয়ে ফেরাউনের রাজপ্রাসাদে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন? এসবের জবাব খুবই স্পষ্ট। নাস্তিকতা এবং খোদাদ্রোহিতাকে সমূলে উৎপাটন করাই ছিল এসব কালজয়ী মহাপুরুষদের মূল উদ্দেশ্য। আর নাস্তিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে বস্তুগত সাজ-সরঞ্জাম না হলেও চলে। কারণ,স্বয়ং আল্লাহই তাদের সহায়। তাই ইমাম হোসাইন (আ.)ও উমাইয়া খোদাদ্রোহিতা এবং ইয়াযিদী বিচ্যুতিকে ধুলিসাৎ করতে চরম সংকটে থেকেও বিদ্রোহে নামেন। আসলে ইমামের এ পদক্ষেপ ছিল অতীতের নবী-রাসূলদেরই (আ.) অনুকরণ। বুদ্ধিজীবীদের মতে, বিদ্রোহ তখনই মানায় যখন বিদ্রোহীদের অন্ততপক্ষে সমান সাজ-সরঞ্জাম এবং শক্তি থাকে। কিন্তু,ঐশী-পুরুষদের বেলায় আমরা এই যুক্তির কোনো প্রতিফলন দেখি না। বরং তারা সবাই একবারে খালি হাতে তৎকালীন সর্ববৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ইমাম হোসাইন (আ.)ও এ নিয়মের ব্যতিক্রম নন। তাছাড়া ইমাম হোসাইন (আ.) যদি সেদিন ইয়াযিদ বাহিনীর সমান এক বাহিনী নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হতেন তাহলে তার এ অসামান্য বিপ্লব ঐশী দ্যুতি হারিয়ে অতি নিস্প্রভ হয়ে পড়তো। এই দর্শন রয়েছে প্রতিটি ঐশী বিপ্লবেই। মানব সমাজে সংঘটিত অজস্র বিপ্লবের মধ্যে ঐশী বিপ্লবকে পৃথক মনে করার দুটি মাপকাঠি রয়েছেঃ প্রথমত ঐ বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পার্থক্য। খোদায়ী বিপ্লবগুলো মনুষ্যত্বকে উন্নত ও উত্তম করতে, মানবতাকে মুক্তি দিতে, একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতাকে রক্ষা করতে এবং জুলুম ও স্বৈরাচারের মূলোৎপাটন করে মজলুমের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই পরিচালিত হয়। জমি-জায়গা বা পদের লোভে কিংবা গোষ্ঠীগত বা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে নয়। দ্বিতীয়ত. ঐশী বা খোদায়ি বিপ্লবের উদ্ভব হয় স্ফুলিঙ্গের মতো। চারদিকে যখন মজলুম-নিপীড়ন এবং অত্যাচার ও স্বৈরাচারের ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক সেই মুহূর্তে অন্ধকারের বুক চিরে বারুদের মতো জ্বলে ওঠে এসব বিপ্লব। চরম দুর্দশায় নিমজ্জিত হয়ে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো মানুষের ভাগ্যাকাশে আশার দীপ জ্বালিয়ে দেয় এসমস্ত ঐশী বিপ্লব। এই চরম দুর্দিনে মানবতাকে মুক্তি দেয়ার মতো দূরদর্শিতা একমাত্র ঐশীপুরুষদেরই থাকে। কিন্তু,সাধারণ মানুষ একেবারে হাল ছেড়ে দেয়-এমনকি কেউ প্রতিকারে উদ্যোগী হলেও তারা তাকে সমর্থন করতে চায় না। এ ঘটনা ইমাম হোসাইনের (আ.) বিপ্লবেও দেখা গেছে। ইমাম হুসাইন (আ) যখন ইয়াযিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিলেন তখন সমসাময়িক তথাকিথত বুদ্ধিজীবীরা এটাকে অবাস্তব ব্যাপার বলে মনে করল। এ কারণে তাদের অনেকেই ইমাম হোসাইনের (আ.) সাথে একাত্মতা প্রকাশে বিরত থাকে। কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) ভালভাবে জানতেন যে,এ মুহূর্তে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া অনিবার্য। তাই অন্য কারও সহযোগিতা থাকবে কি-না সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নবী-রাসূলদের পথ ধরে আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠলেন। হযরত আলী (আ.) বনী উমাইয়াদের ধূর্তামী সম্পর্কে বলেন : ‘‘তাদের এ ধোকাবাজি নিরেট ও অন্ধকারময় প্রতারণা।’’ তাই ইমাম হোসাইন (আ.) এই অন্ধকার থেকে উম্মতকে মুক্ত করার জন্যে ইতিহাসে বিরল এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় মহাবিপ্লবের পথ বেছে নেন।

فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ আসুন দেখি এই মুয়াবিয়াটা কে ????? তারা আলী (আঃ)- এর প্রতি শত্রুতাবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে। ১৯৭. আরাফায় তালবিয়া ৩০০৯. আহমদ ইবন উসমান ইবন হাকীম আঊদী (রহঃ) ... সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) বলেনঃ আমি ইবন আব্বাস (রাঃ)-এর সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেনঃ কী হলো লোকদেরকে তোমরা তালবিয়া পাঠ করতে দেখছি না? আমি বললামঃ #মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর ভয়ে। এরপর #ইবন_আব্বাস (রাঃ) তার তাবু হতে বের হলেন এবং বললেনঃ (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ) তারা #আলী (রাঃ)- এর প্রতি শত্রুতাবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে। التَّلْبِيَةُ بِعَرَفَةَ أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ حَكِيمٍ الْأَوْدِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ عَنْ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ قُلْتُ يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ فَقَالَ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ২৪/ হজ্জের নিয়ম পদ্ধতি (كتاب مناسك الحج) হাদিস নম্বরঃ ৩০০৯ তাহক্বীকঃ সহীহ।

فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ আসুন দেখি এই মুয়াবিয়াটা কে ????? তারা আলী (আঃ)- এর প্রতি শত্রুতাবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে। ১৯৭. আরাফায় তালবিয়া ৩০০৯. আহমদ ইবন উসমান ইবন হাকীম আঊদী (রহঃ) ... সাঈদ ইবন জুবায়র (রাঃ) বলেনঃ আমি ইবন আব্বাস (রাঃ)-এর সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেনঃ কী হলো লোকদেরকে তোমরা তালবিয়া পাঠ করতে দেখছি না? আমি বললামঃ #মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর ভয়ে। এরপর #ইবন_আব্বাস (রাঃ) তার তাবু হতে বের হলেন এবং বললেনঃ (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ) তারা #আলী (রাঃ)- এর প্রতি শত্রুতাবশত সুন্নত ছেড়ে দিয়েছে। التَّلْبِيَةُ بِعَرَفَةَ أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ حَكِيمٍ الْأَوْدِيُّ قَالَ حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ قَالَ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ عَنْ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَاتٍ فَقَالَ مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ قُلْتُ يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ فَقَالَ لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ২৪/ হজ্জের নিয়ম পদ্ধতি (كتاب مناسك الحج) হাদিস নম্বরঃ ৩০০৯ তাহক্বীকঃ সহীহ।

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ৩ কীভাবে নবীর (সা.) উম্মতই নবীর (সা.) সন্তানকে হত্যা করলো (!)? -এ জিজ্ঞাসা সব যুগের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর তিরোধানের মাত্র ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। আর এ হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিল স্বয়ং রাসূলুল্লাহর (সা.) উম্মত যারা রাসূল এবং তাঁর বংশকে ভালবাসে বলে ইতোমধ্যেই খ্যাতিলাভ করেছিল। তাও আবার রাসূলের (সা.) সেইসব শত্রুর পতাকাতলে দাঁড়িয়ে মুসলমানরা রাসূলের (সা.) সন্তানের উপর এ হত্যাকাণ্ড চালায় যাদের সাথে কি-না রাসূলুল্লাহ (সা.)মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যুদ্ধ করে গেছেন! মক্কা বিজয়ের পর যখন চারদিকে ইসলামের জয়জয়কার তখন ইসলামের ঐ চির শত্রুরাও বাধ্য হয়েই নিজেদের গায়ে ইসলামের একটা লেবেল লাগিয়ে নেয়। তাই বলে ইসলামের সাথে তাদের শত্রুতার কোনো কমতি ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের উক্তিটি সুপ্রযোজ্য । তিনি বলেছিলেন- “ তারা মুসলমান হয়নি, ইসলাম গ্রহণের ভান করেছিল মাত্র।” আবু সুফিয়ান প্রায় ২০ বছর ধরে রাসূলুল্লাহর (সা.) সাথে যুদ্ধ করেছে। শেষের দিকে ৫/৬ বছর সে ইসলামের বিরুদ্ধে ফেতনা সৃষ্টিতে সরদারের ভূমিকা পালন করে। মোয়াবিয়াও তার বাবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামের চরম শত্রুতায় নামে। অথচ রাসূলুল্লাহর (সা.) ওফাতের মাত্র দশ বছর পরে সেই মোয়াবিয়াই সিরিয়ার গভর্নর হয়ে বসে। আরও বিশ বছর পরে ইসলামের এই শত্রু হয়ে বসলো স্বয়ং মুসলমানদের খলীফা! এখানেই শেষ নয়, রাসূলের (সা.) মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর এবার মুসলমানদের খলীফা হল মোয়াবিয়া-পুত্র ইয়াজিদ। আর এই ইয়াজিদ নামায, রোযা, হজ্ব যাকাত তথা ইসলামের বিধি-বিধান পালনকারী মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে অর্ধ-শতাব্দী গড়াতে না গড়াতেই রাসূলের (সা.) সন্তানকে হত্যা করলো। ঐ সব মুসলমানরা যে ইসলামকে পরিত্যাগ করেছিল তা নয়, বরং ইমাম হোসাইনের (আ.) প্রতি তাদের ভক্তির অভাব ছিল তারও কোনো প্রমাণ মেলে না। বরং তারা নিশ্চিতভাবে ইয়াজিদের ওপর ইমাম হোসাইনের (আ.) সহস্র গুণে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় বিশ্বাস করতো। তাহলে কিভাবে মুসলিম শাসন ক্ষমতা ইসলামের ঘোর শত্রু আবু সুফিয়ানের দলের হাতে পড়লো? যে মুসলমানরা ইমাম হোসাইনের (আ.) রক্তের মূল্য ভালোভাবেই জানত তারা কিভাবে ইমাম হোসাইনকে (আ.) হত্যা করলো? আসলে উমাইয়া ব্যক্তিত্ব ওসমানের খেলাফতের অপব্যবহার করে উমাইয়ারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে ব্যক্তিগত রাজত্বে পরিণত করতে সক্ষম হয়। স্বয়ং মারওয়ানই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। অবশ্য দ্বিতীয় খলিফার শাসনামলেই মোয়াবিয়াকে শাম বা সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে নিযুক্তির মাধ্যমে ইসলামী শাসনযন্ত্রে উমাইয়াদের উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে অন্য সব গভর্নরের পদে রদবদল করা হলেও মোয়াবিয়াকে তার পদে বহাল রাখা হয়। এটাই ছিল মুসলিম শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মাধ্যমে উমাইয়াদের হীন বাসনা চরিতার্থকরণের পথে প্রথম অনুকূল ইঙ্গিত। উমাইয়ারা তৃতীয় খলিফা ওসমানের শাসন ব্যবস্থায় দুর্নীতি ছড়ায় ও গোলযোগ সৃষ্টি করে। এতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং শেষ পর্যন্ত মোয়াবিয়া তার সে লালসা পূরণের মোক্ষম সুযোগ পায়। সে ওসমানের রক্তভেজা জামা সবার সামনে মেলে ধরে বলে বেড়ায়,‘যেহেতু ওসমানের হত্যার পর আলী (আ.) খলীফা হয়েছেন, তাছাড়া ওসমানের হত্যাকারীদেরকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন-তাই ওসমান হত্যার জন্য মূলতঃ আলীই (আ.) দায়ী।’ এই বলে সে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে যাতে মানুষের অনুভূতিকে আকৃষ্ট করতে পারে। তার এ প্রচেষ্টা সফলও হয়। কারণ, তার কান্নার সাথে সুর মিলিয়ে অনেকেই চোখের পানি ঝরায় ও শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে মজলুম খলীফার রক্তের প্রতিশোধ নিতে যেই কথা-সেই কাজ- এইরুপে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তারা মোয়াবিয়াকে আশ্বাস দেয়ঃ আমরা প্রস্তুত আছি, তুমি যা বলবে তাই আমরা পালন করতে রাজী আছি। এভাবে পদলোভী স্বার্থপর মোয়াবিয়া মুসলমানদেরকে নিয়েই ইসলামের বিরুদ্ধে বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। ইমাম হোসাইনের (আ.) আন্দোলন ও বিদ্রোহ নিয়েও সবার মধ্যে স্পষ্ট আর স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। আত্মীয়-অনাত্মীয়, চেনা-অচেনা নির্বিশেষে সবাই কুফার লোকদের বিশ্বাসঘাতকতার ইস্যু টেনে ইমাম হোসাইনকে (আ.) বিরত রাখতে চেষ্টা করছিল। তারা যে ইমাম হোসাইনের (আ.) জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ চেষ্টা চালিয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইমাম হোসাইনও (আ.) তাদের চিন্তাধারাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেননি। অথচ মক্কা,কারবালা এবং কুফার পথে তার বিভিন্ন ভাষ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমাম হোসাইনের (আ.)ও একটা স্বতন্ত্র চিন্তাধারা ছিল যা অনেক ব্যাপক ও দূরদর্শী। তাঁর হিতাকাঙ্খীদের ভাবনা কেবল নিজের এবং পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। অথচ, ইমাম হোসাইনের (সা.) চিন্তা ছিল দীন,ঈমান ও আকীদার নিরাপত্তাকে নিয়ে। তাই, মারওয়ানের এক নসিহতের জবাবে ইমাম হোসাইন (সা.) বলেনঃ ‘‘ ইয়াজিদের মতো কেউ যদি উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের বিদায় ।’’ মোয়াবিয়া ও ইয়াজিদের ইসলামী শাসন ক্ষমতা লাভ এবং ইসলামে অবিচল মুসলমানদের নিয়ে যথাক্রমে হযরত আলী (আ.) এবং ইমাম হোসাইনের (আ.) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী গঠন ছিল ইসলামের ঊষালগ্নের প্রহেলিকাময় ঘটনাবলীর অন্যতম। এখানে দুটি বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। প্রথমতঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ইসলাম ও কুরআনের সাথে উমাইয়া বংশের তীব্র সংঘাত এবং দ্বিতীয়তঃ ইসলামী শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে তাদের সফলতা। ইসলামের সাথে উমাইয়াদের এহেন শত্রুতাসুলভ আচরণের কারণ হল যে,একাদিক্রমে তিন বংশ ধরে বনি হাশিম ও বনি উমাইয়ার মধ্যে গোষ্ঠীগত কোন্দল চলে আসছিল। এরপর যখন বনি হাশিম ইসলাম ও কুরআনের ধারক ও বাহক হবার গৌরব লাভ করে তখন বনি উমাইয়ারা ঈর্ষায় পুড়ে মরতে থাকে। তাই তারা বনি হাশিমকে সহ্য করতে পারেনি, সাথে সাথে ইসলাম ও কুরআনকেও না সইতে পারেনি। ইসলামের সঙ্গে উমাইয়াদের শত্রুতার দ্বিতীয় কারণ হলঃ তৎকালীন কোরাইশ গোত্রের কাফের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে উমাইয়াদের পার্থিব জীবনধারার সাথে ইসলামী বিধানের অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্য। ‌ইসলামী নীতিমালায় তাদের প্রভুত্বমূলক প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয়। তাদের ভাব ও মন-মানস ছিল সুবিধাবাদী ও বস্তুবাদী। উমাইয়াদের যথেষ্ট বুদ্ধি থাকলেও তাদের ঐ বস্তুবাদী মানসিকতার কারণে খোদায়ী বিধান থেকে তারা উপকৃত হতে পারেনি। কারণ ঐশী শিক্ষাকে সে-ই অবনত মস্তকে গ্রহণ করতে পারে যার মধ্যে মর্যাদাবোধ, উন্নত আত্মা এবং মহত্বের আনাগোনা রয়েছে এবং যার মধ্যে সচেতনতা ও সত্যান্বেষী মনোবৃত্তি নিহিত আছে। অথচ উমাইয়ারা অতিশয় দুনিয়া চর্চা করতে করতে এসব গুণগুলোর সব ক’ টি হারিয়ে বসেছিল। তাই তারা ইসলামের সাথে শত্রুতায় নেমে পড়ে।

আজ ১০শে সেপ্টেম্বর,রোজো মঙ্গলবার সারা দেশে পবিত্র আশুরা অর্থাৎ ১০ই মহরম। একটি হাদিসের কথা মনে করিয়েই শুরু করছি। 🔰রাছুল সা. বলেছিলেন “নবী সা.কে যতক্ষন প্রানের চেয়েও প্রিয় মনে করতে পারবে না ততক্ষন সে ব্যক্তি মুসলমান হতে পারবে না।”– হাদিস। আর আমার মতে রাছুল সা. এর পছন্দই উম্মতে মুহাম্মদির পছন্দ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে কতই না শোক দিবস পালন হয়। মিডিয়ার বদৌলতে মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলিম অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের প্রানের চেয়েও প্রিয় নবী সা. এর বংশ ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়ার পর আমাদের দেশের মিডিয়ার লোকজন সেটা প্রচারে বিরত থাকে কি করে সেটা বোধগম্য নয়❓ পুরা অগাস্ট মাস জুড়েই টিভি পর্দায় কালো পতাকা দেখা যায়। তাতে কোন কোন দলের মানুষের আপত্তি দেখা যায় কিন্তু মহরম শোকের মাস হিসাবে শোকের চিহ্ন ব্যবহারে কোন মুসলমান সেটায় বিরোধী করার থাকবে না ইয়াজিদের অনুসারী ছাড়া। তারা হয়তো ভুলেই গেছেন যে তারাও যখনই আল্লার দরবারে হাত উঠায় বেহেস্তের জন্য দোয়া করে। কিন্তু বেহেস্তের সর্দার এবং তিঁনার ৬ মাসের মাসুম শিশু আলী আজগর সহ গোটা পরিবার সহ ৭২জনকে যারা হত্যা করেছে তাদের (হত্যাকারী) কথা বেশী বেশী করে মানুষদেরকে জানানো দরকার। এই ঘৃনীত লেবাসধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা পরিহিত নামাজী নামধারী মুসলমান ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকারীদের নাম যেন প্রতিটি মুসলমানের জানা থাকে সে ব্যবস্থা করা উচিৎ। এই বরবর পাষন্ড হত্যাকারীর দল বলেছিলো তারাতাড়ি হুসাইনের কল্লা কাইটা আনো আসরের নামায যেন কাজা না হয়। ঐ জাহেলের দল চিন্তাও করে নাই নামায পড়ে তাড়া কোন বেহেস্তের আশায়❗️ হ্যায়রে নামাজী। চিন্তায় আসে নাই বেহেস্তের সর্দারের ওখানে স্থান মিলবে কিনা❓ ঐ জাহেলদের অন্যায় লোক সমাজের সামনে তুলে না ধরে গোপন রাখলে বেহেস্তের সর্দারদের রৌশানল থেকে রেহাই পাবেন না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ই মহরম, এই দিনটি যে কি দিবস হিসাবে পালন করা দরকার। বা এই দিনটিতে কি করণীয়। এমনকি কি হিসাবে পালন করা হচ্ছে। সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই জানা নাই। যারা এই দিনটি সম্পর্কে অবগত তাদের মধ্যে কেউ কেউ শোক পালনের উদ্দেশ্যে রোযা রাখে মাছ, গোস্ত খায় না। খায় শুধু দেহের চাহিদা পুরনের জন্য আমিশ বিহীন খাদ্য। আবার একদল আছে যারা রোযা রাখে এবং ভাল ভাল খাবার খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন। হ্যায় কোনটা যে সঠিক আগত দিনের ভবিষ্যত বাসীরা কি করে বুঝবে❓ সেটার তাদের বিবেচনা করবে চিন্তা করবে আশা নিয়েই লিখছি। প্রকৃত নবীর উম্মত যারা তারা কিভাবে এই দিনে খুশির দিন হিসাবে পালন করে সেটা বড় নেক্কারজনক বিষয়❓কারণ সকলেই জানেন এই দিনেই রাছুল সা. এর চেহারা শাদৃশ্য তিঁনার প্রানপ্রিয় নাতী রাছুল সা. যাদের সন্তান বলে সব সময়ই ডাকতেন। বেহেস্তবাসী পুরুষগনদের সর্দার হযরত হুসাইন আ. এর কল্লা কেটে হত্যা করেছে নামধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা ওয়ালা নামাযী মুসলমানের দল। এই দলের যারা অনুসরনকারী তারা তো খুশি বানাতেই পারেন এমন কি তাদের নেতারাও ১০ই মহরম কারবালার ময়দানে হুসাইন আ. এর মস্তক নিয়ে খেলায় মত্তই ছিলেন। এক দল আছে শুধু জামাতে নামায আদায় করার দাওয়াত দেওয়াতেই ব্যস্ত অথচ যিঁনি এই নামায আনয়নকারী তিঁনার পছন্দের কর্ম গুলির দিকে মোটেও দৃষ্টিপাত করেন না। শুধু মুসলমানদেরকেই দিনের দাওয়াত দিয়ে বেড়ান নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেরকমই থাকুক সেগুলি বাছ বিচার করার কোন প্রয়োজনই মনে করেন না। এমনকি নিজ পরিবারের কথা যেন একেবারেই ভুলে যান। দাওয়াত যে তার নিজ ঘরেই বেশী প্রয়োজন তা না করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তারানোই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এত সোয়াব নিয়ে যে তারা কোন বেহেস্তে যাবে সেটাই প্রশ্ন❓বেহেস্তের সর্দারগন যে একে অপরের খুবই ঘনিষ্ট ভাই এবং মা হুসাইন আ. এর। 🔰আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে একাধিকবার বলেছেন “যার যার বোঝা তাকেই বহন করতে হবে”। তাহলে দাওয়াতের সওয়াব কই যদি সে নিজের আকিদা পরিবর্তন করতে না পারেন। সরকারী চাকুরীজীবি ঘুষ খাওয়া ছাড়া চলতে পারেন না তাহলে জামাতে নামায আদায় করে কি ফায়দা❓ব্যবসায়ী ভেজাল দিতে দিতে এই অবস্থায় দাড়ায় যে ভেজাল না দিলে ব্যবসাই করতে পারেন না। তাহলে এই নামাযের ফায়দা কি❓ ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলানা সাহেবগন ফ্রীতে তো কোন কাজ, কোন অনুষ্ঠান/ ওয়াজ মাহফিল এমনকি মুরদার যানাজাও পড়ায় না। তবে এই দাওয়াত নামাযের ফায়দা কি❓ এখানে একটি হাদিস মনে করে দেওয়া প্রয়োজন মুসনাদে আহমদ হাদিস পুস্তকে উল্লেখিত শক্তিশালী হাদিস “উম্মু দারদা রা. বলেন, একদিন আবূদ দারদা রা. রাগাম্বিত অবস্থায় ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে আপনাকে রাগালো? তিনি বললেন “আমি এদের মধ্যে (তাঁর সমসাময়িক মানুষদের মধ্যে) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন নিয়ম-রীতি দেখতে পাচ্ছি না। শুধু এতটুকু দেখতে পাচ্ছি যে, এরা জামাতে নামায আদায় করে।” রাছুল সা. বলেছেন হুজুরিল কাল্ব ছাড়া নামায নাই। তাহলে এই সব অবৈধ পয়সার অধিকারীদের কাল্ব কিভাবে “হুজুরিল কাল্ব” হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নামায তো পড়া হয় আল্লাকে সেজদা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। নামাযে দাড়িয়ে সূরা ফাতেহায় আমরা বলি(ইয়া’কা না’বুদু, ওয়া ইয়া কানা’সতাইন) অর্থ- “আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” আল্লা তৎক্ষনাত কিছু বলেননা তাই প্রতি ওয়াক্তে ওয়াক্তে আল্লার সাথে প্রত্যারনা করা হচ্ছে। একবার চিন্তা করেন দেখবেন আপনার অধিনস্ত কোন মানুষ কিছু চুরি করার পর মাফ চায় আপনি কতবার মাফ করবেন। অপরাধিকে আপনি এই প্রশ্ন কি করবেন না যে, আর কতবার মাফ করবো? আল্লা জিজ্ঞাসা করে না এবং সাথে সাথে কোন বিচার করে না বিধায় প্রতি ওয়াক্তেই প্রত্যারনার সাহস পায় মানুষ। রাছুল সা. এর মেরাজের আগে ১০ই মহরমের রোজা ফরজ ছিল। মেরাজে রমজানের ৩০ রোজা ফরজ হওয়ার পর এই রোজাটা নফল হিসাবে রাছুল সা. পালন করতেন ওফাতের আগ পর্যন্ত। ১০ই মহরমের একটি রোজার পরিবর্তে ৩০ রোজা ফরজ হয়েছে অর্থাৎ মহরমের ১রোজা সমান ৩০রোজার সোয়াব বুঝানোর জন্য সেটা বললে ভুল হবে কি? যখন ১০ই মহরমের রোজা ফরজ ছিলো। এটা নফল হওয়ার পরও এই রোজার সোয়াবের কম হওয়ার কোন সুযোগ নেই আমার বিশ্বাস। ১০ই মহরম এর দিন যারা ভাল ভাল খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন তাদেরও অধিকাংশই জানেন না যে কেন রোযা রাখছেন এবং কেন ভাল ভাল খাচ্ছেন। যারা খাচ্ছেন তাদের দোষ কি তারা সঠিক ঘটনাটা শুনেন নাই এই জন্য জানার চেষ্টাও করেন নাই। নবী সা. বংশ যারা নিধন করেছেন তারা প্রচার করেছে এই বলে যে আজকের দিনে মুসা আ. ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন সেই খুশীতে খাবেন এবং তাদেরও খাওয়াবেন। আরে সাধারন ভাবেই চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন সাড়াদিন কষ্ট করে ভাল খেতে হবে কেন❓ঈদুল আযহার দিনে তো রোযা রেখে ভাল খেতে হয় না এমনিতে সকলেই ভাল খায়। তবে কেন রাছুল সা. যেদিন ফরয রোজা হিসাবে পালন করেছেন মেরাজের আগ পর্যন্ত সেদিন কেন খুশি পালন করবেন❓ এই দিনটিতে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ শোক পালন করার উদ্দেশ্যে রোযা রাখে মাছ গোস্ত খায় না শুধু শরীরের প্রয়োজনে আহার করে তাদেরকে ইয়াজিদের অনুসারীরা শিয়া নামে ভূশিত করেছেন। এই শিয়া নামের খেতাবটি বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সা. এর এবং নবীজীর বার্তা বাহক জিব্রাইল আ. এর জানা ছিল না এমনকি আল্লাহ এই মুসলমানদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেন নাই। যদি করতো তবে অবশ্যই কোরআনের কোথাও শিয়া হওয়ার জন্য মানুষকে বলতেন। যারা এই নাম করণ করেছেন তারা আল্লাহ এবং রাসুলের চেয়েও বড় ইমানদার হওয়ার চেষ্টায় আছেন বলেই মনে হয়।(নাউজুবিল্লাহ্)। এই কথা মনে হওয়ার কারণ নবী পরিবারের পক্ষে কেউ কোন মন্তব্য করলেই এই ইয়াজিদের অনুসারীরা এক কথায় শিয়া বলে অবহিত করেন। ১০ই মহরহ এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আলোচনা করলেই বিচক্ষন ব্যক্তিগন সত্য উদঘাটন করতে সুবিধা হবে এবং সেই মতে এই বৎসর আশুরা পালন করতে সুবিধা হবে।। ভালভাবে চিন্তা করে এখন থেকে সামনের বছর গুলিতে বেহেস্তর সর্দারদের উদ্দেশ্যে পালন করে বেহেস্তের অংশীদার হতে চেষ্টা করবেন নাকি তাঁদের রৌশানলে পরার মত করে দিনটি পালন করবেন। আল্লা কোরআনে “মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন” একাধিক আয়াতে। সুন্নি বা শিয়ার কথা বলেন নাই। যে বা যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য বা যে গরজে শিয়া সুন্নী ভাগ করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন হাশরের ময়দানে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি তাদের অনুসারীরাও রেহাই পাবেন না। বিশ্বনবীকে অনুসরন করে যে বা যারাই ইসলামের জন্য সত্য সঠিক কাজ করবেন সেটাই মুসলমানের কাজ হবে সুন্নি বা শিয়া হওয়ায় কিছু যায় আসবে না আল্লা বা রাছুল সা. এর। কারণ আবারও বলছি আল্লা রাছুল শিয়া সুন্নি ভাগ করেন নাই। একজন ঘুশখোর সুন্নি আর একজন নির্অপরাধ শিয়া বা বিধর্মী জ্ঞানীদের বিচারে কে উত্তম❓ ভুলে গেলে চলবে না হাশরের ময়দানে স্বার্থনেশীদের ফতোয়া কারোরই কোন কাজে আসবে না। যার যার হাত পা এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গই স্বাক্ষী দিবে। এবং যারা নামায পড়েন তাদেরও মনে রাখা উচিৎ যখন নামায পড়েন তখন রাছুল সা. এর পরিবারের উপর দরুদ সালাম এবং ইব্রাহিম আ. এর উপর দরুদ সালাম পেশ না করলে নামাযই হয় না। সেখানে ১০ই মহরম এইসব পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে মুসা আ. জন্য খুশী পালন করেন। এই সকল কর্মকান্ডের জন্য মানুষ মুনাফেকে পরিনত হয়। এইসব বিভ্রান্ত কর্ম করে তারা আবার বেহেস্ত আশা করে নোংরা স্বজনপ্রীতি করে বেহেস্তে যেতে চান। তারা ভুলে যান সেই বেহেস্তের সর্দাদের অনুমতি ব্যতীত ঢুকবেন কিভাবে? তাও মনে শান্তি হতো যদি মানুষ মুসা আ. এর কথা না বল খুশির জন্য বলত দুনিয়া সৃষ্টি বা আদম আ. এর জন্মের খুশিতে মহরম পালন করছেন অথবা ইব্রাহিম আ. এর অগ্নি হতে রক্ষা পাওয়ার খুশী পালন করছেন তাতেও মনকে প্রবোধ দেওয়া যেত। যেহেতু ইব্রাহিম আ. মুসলমানের জাতির পিতা। এবং আল্লা আদেশ করেছেন২২:৭৮#“তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক”। আমার ধারনা মুসা আ. নবীর কোন বংশধর যদি থাকতো তবে আমাদের আখেরী নবীর বংশধরের শোকেই শোক পালন করতেন। ———সৈয়দ হোসাইন উল হক

📚শুধু একটি রাতের জন্য❗️ ▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄▄ ♻️৯ই মহররম সন্ধ্যার কিছু আগে ইমাম হােসেন (আঃ) নিজ তাবুর সামনে বসেছিলেন। এমন সময় দেখা গেল যে, এজিদি বাহিনী পঙ্গপালের মতো ইমাম হােসেন (আঃ)-এর তাবুর দিকে ছুটে আসছে। ইমাম হােসেন (আঃ) তখন তাদের হঠাৎ আক্রমণের কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, কুফা থেকে ইবনে যিয়াদ খবর পাঠিয়েছে যে, ইমাম হােসেন (আঃ)-এর মাথা কেটে পাঠান হােক। তাই এজিদী সেনাপতিরা আক্রমণে এসেছে। ইমাম হােসেন (আঃ) চুড়ান্তভাবে বুঝতে পারলেন তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? হযরত আব্বাসের মারফত ইমাম হােসেন (আঃ) তাদের বলে পাঠালেন, ঠিক আছে, তোমরা যদি যুদ্ধই করতে চাও, তবে আগামী কাল সকাল থেকে যুদ্ধ শুরু করো। আমাদেরকে আজ রাতে আল্লাহর ইবাদত করার শেষ সুযোগ দাও। এতে অনেকে রাজি হলো, আবার অনেকে রাজি হলো না তাদের ভেতরে অনেক আলাপ আলোচনা হলো। অনেকে বলল। ইমাম হােসেন (আঃ) তো আমাদের হাতের মুঠায় আছেন। এক রাতের জন্য কি যায় আসে। কাল সকালে যুদ্ধ আরম্ভ করা যাক। তখন ইমাম হােসেন (আঃ)-কে এক রাতের সময় দেয়া হলো এবং এজিদী সৈন্য বাহিনী নিজ তাঁবুতে ফিরে গেল। ইমাম হােসেন (আঃ) এক রাতের সময় পেলেন আল্লাহর ইবাদত করার জন্য ❓ শুধু কি তাই। ইমাম হােসেন (আঃ)-এর এক রাত সময় নেয়ার পেছনে আরো অনেক কারণ নিহিত ছিল। ইমাম হােসেন (আঃ) ও উনার সঙ্গী সাখীরা সারারাত ইবাদত করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ইতিপূর্বে ইমাম হােসেন (আঃ)-এর ইবাদতের কি কোন কমতি পড়েছিল❓ না পড়েনি। কারণ যে ইমাম হােসেন (আঃ) জীবনে ২৯ বার শুধু পায়ে হেঁটে হজ্জ করেছিলেন। সেই ইমাম হােসেন (আঃ)- এর বাকী ইবাদতের কি তুলনা হয়। মা ফাতেমার গর্ভে যার জন্ম, নবী (সাঃ) ও ইমাম আলী (আঃ)-এর কোলে যার লালন পালন। যে ইমাম হােসেন (আঃ)-কে নবীর সন্তান বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। 📖(সূরা আলে ইমরান) তার ইবাদতের মরতবা আমাদের ধারণার উর্ধে। এ ছাড়াও আরও তিন'টি কারণ উল্লেখযোগ্য, ✅প্রথমতঃ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে দশই জিলহজ্ব কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। ইমাম হােসেন (আঃ) সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে নিজের কোরবানীকে ১০ই মহররম পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। ✅ দ্বিতীয়তঃ ছয় মাসের কম কোরবানী হয় না। হযরত আলী আসগর-এর বয়স নয়ই মহররম ছয় মাস পুরো হতে একদিন বাকী ছিল সেই কারণেও একদিন সময়ের প্রয়োজন ছিল । ✅তীতৃয়তঃ-কুফা নগরীতে বসে ইবনে জিয়াদ যে গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল। কারবালায় তার পক্ষের সেনাপতিরা বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু ইমাম (আঃ) বুঝতে পেরেছিলেন, ইবনে যিয়াদ চেয়েছিল যে রাতের অন্ধকারে নবীর বংশকে শেষ করে দিলে পরে কেউই ঠিক করে বলতেই পারবে না যে নবী বংশের কে কাকে হত্যা করেছে। সে সুযোগ কিন্তু ইমাম হােসেন (আঃ) তাদের দেননি, কারণ ইমাম হােসেন (আঃ) নবীর ওফাতের পর থেকে তাদের কার্যকলাপ একে একে সবই দেখে আসছিলেন। 📍প্রথমেই তারা জালিয়াতি করে মা ফাতেমার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। অতঃপর মা ফাতেমার উপর ঘরের দরজা ফেলে। তাঁকে যখম করেছে। ধুকে ধুকে তিনি শহীদ হয়েছেন। খুনীকে লোকে ধরতে পারেনি। 📍বাবা আলী (আঃ)-কে মসজিদে নামাজ রত অবস্থায় শহীদ করা হয়েছে। আসল হত্যাকারীর নাম নেপথ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। 📍ভাই ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগো শহীদ করা হয়েছে। আসল খুনীকে ধরা গেল না। ভাই ইমাম হাসানের জানাযার উপর তীর নিক্ষেপ করে লাশ ও কাফনকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। তীর মারার নির্দেশকারীনি নেত্রীকে ধরা গেল না। এখন সেই একই ষড়যন্ত্রের জাল আমার উপর বিস্তৃত হয়ে এসেছে। রাতের অন্ধকারে আমাদের মিছমার করে দিতে এসেছিল। তার গতি তিনি ঘুরিয়ে দিলেন। ইমাম হােসেন (আঃ) চান দিনের আলোতে যুদ্ধ হােক। আমার ছেলে আলী আকবরকে-কে হত্যা করে তা লোকে চিনে নিক, আমার ভাই হাসানের ছেলে কাসেমের হত্যাকারীকে লোকে প্ৰকাশ্য দিবালোকে তাকে চিনে নিক। বােন জায়নাবের ছেলে আওন ও মুহম্মদ এর হত্যাকারী কে, আমার ছোট্ট শিশু আলী আসগরের হত্যাকারী কে, ভাই আব্বাসের কে হত্যাকারী, কে আমাকে হত্যা করে একে একে লোকে তাদের চিনে নিক। কারা আমাদের মাথা কেটে বর্শার মাথায় বিদ্ধ করে । কারা আমাদের লাশের উপর ঘোড়া দাবড়িয়ে লাশ গুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করে। আমাদের তাঁবুতে আগুন দেয়। কারা কারা আমার ছোট্ট মেয়ে সখিনার অলংকার কেড়ে নিয়ে তার মুখে চড় মারে। আমার ছেলে জায়নুল আবেদীন, বোন বিবি জায়নাবসহ অন্যান্য বিবি ও শিশুদেরকে বন্দী করে কারবালা থেকে কুফা, আর কুফা থেকে দামেস্কে নির্যাতনসহ শহরে বাজারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেয়, লোকে তাদের পরিস্কার চিনে নিক। এবারে লুকা ছাপা নেই, কারণ, তিনি জানতেন যে, এই কারবালার যুদ্ধ হক ও বাতিলের যুদ্ধ। আগামীতে নবী ও আহলে বায়তের অনুসরণকারীর হাজার লক্ষ লোকের সামনে প্ৰকাশ্যে যেন তাদের নাম বলতে পারে । আজ যখন আমরা মা ফাতেমা (আঃ), ইমাম আলী (আঃ), ইমাম হােসেন (আঃ)-এর আসল হত্যাকারীর নাম বলি তখন তথাকথিত আরবী বিদ্যানেরা প্রতিবাদ করে, কিন্তু কারবালার নবী বংশের হত্যাকারীর নাম বললে তখন তথাকথিত আলেম সমাজ হত্যাকারীর পক্ষ নেয়ার কোন সুযোগই যেন না পায়। আমি মনে করি, ইমাম হােসেন (আঃ) রাতে যুদ্ধ না করে দিনের আলোতে এজিদী বাহিনীর আক্রমণের মােকাবেলা করে প্রকৃত হত্যাকারীর পক্ষ অবলম্বন করার আর সুযোগই দেন নি। 🙏হে আল্লাহ ! জান্নাতের সর্দার সাইয়্যেদুশ শোহাদা ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের প্রেমে আমাদের মশগুল করে দিন । যাকে রাহমাতুল্লল আলামীন করে পাঠিয়েছ ও যাদের(আহলে বাইত) প্রতি ভালবাসা ফরয করে দিয়েছ, তাদের শানে বেআদবী আমার প্রাণে দারুন অঘাত হানে। ওগাে পরম পরাক্রমশালী দয়ার ভান্ডার, একটু রহমত দয়াকরে পাপীকে দাও! তোমার প্রিয় হাবিবের দরবারেও রহমত ভিক্ষা চাই, আহলে বয়েতের চরণ তলে একটু আশ্ৰয় চাই। কোন ভাষায় ডাকলে তুমি খুশী হবে সে ভাষা এ পাপীর জানা নেই। তুমি অন্তরের মালিক তাই বলি “আল্লাহুমা ইয়া ওলিয়ার ভিলায়ে ছামিউদ দেয়া য়ে কাশিফাত দুবরে য়াল বালায়ে আছিরিফ আন্নাল কাহিবা ওয়াল মারাদা ওয়াল ও বায়া ওয়াত তাউনা ওয়াল কাহতুয়া ওয়াল ছুকমারা ওয়াল ফিজায়া বাহাক্কে নাবীই মােহাম্মদানিল মােস্তফা নিল ওয়া আলা নিল মােরতাজা ওয়া ফাতিমাতে । জোহরায়ে ওয়া হাছানিল মোজতাবা ওয়াল হােছাইনে শাহিদে কারবালায়ে ইয়। রাব্বা, ইয়া রাব্বা, ইয়া রাব্বা। রাব্বানা তাকাৰ্ব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতা ছামিউল আলীম বাহাক্কে লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রছুলুল্লাহ।আমিন ছুম্মা আমীন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ ।

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ২ গত পর্বে কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র পরিচয় ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আসলে কারবালা বিপ্লবের অশেষ গুরুত্ব ও মহিমা এবং এ বিপ্লবের প্রবাদপুরুষ ইমাম হুসাইনের (আ) অনন্য মহামর্যাদা স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা অসম্ভব। কারবালায় ইমামের সহযোগী ও সঙ্গীরাও বিশ্ব-ইতিহাসে ঐশী নেতাদের সহযোগী হিসেবে অনন্য ও শ্রেষ্ঠত্বের মহিমায় সমুজ্জ্বল। আমরা এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেব। গত পর্বে আমরা আরও বলেছিলাম কারবালার মহাবিপ্লবকে বুঝতে হলে এর মহানায়ক ও তাঁর সহযোগীদের পরিচয় আর মর্যাদা জানা যেমন জরুরি তেমনি কারবালায় বাতিল ও মিথ্যার পক্ষের পতাকাধারীদের তথা বনি-উমাইয়াদের নানা কুকীর্তি এবং বিশেষ করে তাদের চরম অনৈতিক, অমানবীক, পাশবিক ও খোদাদ্রোহী চরিত্র সম্পর্কেও সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। আসলে আরবের কোন গোত্রই বনি উমাইয়্যার মত স্বার্থপর ও অহঙ্কারী ছিল না। এ গোত্র বেড়েই উঠেছিল উগ্র স্বভাব, স্বার্থান্বেষী মনোবৃত্তি, বিলাসিতা ও আনন্দ-ফূর্তির কুশিক্ষা নিয়ে। জাহেলী যুগে ও ইসলামী যুগেও এরা ছিল অর্থসম্পদ,শাসন-ক্ষমতা ও পদমর্যাদার কাঙ্গাল। ইসলামের আগমনের পর দীর্ঘ একুশ বছর ধরে এ গোত্রই ছিল ইসলামের প্রধান ও প্রকাশ্য শত্রু এবং ইসলামকে ধ্বংসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মক্কা বিজয়ের পর এ গোত্র পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করলে রাসূল (সা.) তাদের ‘তোলাকা’ বা মুক্ত যুদ্ধবন্দী বলে ঘোষণা করেন। ইসলামের আবির্ভাবের পরও তারা দুনিয়াবী ফায়দা নেই এমন কোন কাজ আত্মনিয়োগ করতে রাজি হত না। ইসলাম তাদের কাছে একটাই অর্থ বহন করত। আর তা হল বনি উমাইয়্যার ওপর মহানবীর (সা) গোত্র তথা বনি হাশিমের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার এবং রাসূলের নবুওয়াতকেও তারা এ দৃষ্টিতেই দেখত। তাই আবু সুফিয়ান হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিজয় ও মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তার দেখে হযরত আব্বাস (রা.)-কে বলেছিল : ‘তোমার ভাতিজার রাজত্ব তো বিশাল রূপ ধারণ করেছে!’ তাই প্রথম থেকেই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল এ কর্তৃত্বকে ছিনিয়ে এনে নিজেদের হস্তগত করা। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বনি উমাইয়্যার নেতৃস্থানীয় কোন ব্যক্তিকে কোন প্রশাসনিক কাজে নিয়োগ করতেন না। কিন্তু রাসূলের ওফাতের পর দামেশ্‌ক বিজিত হলে বনি উমাইয়্যা প্রশাসনিক পদ লাভ করে। দ্বিতীয় খলিফার সময় দীর্ঘ প্রায় দশ বছর মু‘আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান দামেশ্‌কের গভর্নর থাকায় বনি উমাইয়্যা তার মদদ পেত। তৃতীয় খলিফা ওসমানের বার বছরের শাসনকালে মুআবিয়া আরও স্বাধীনতা পায়। মুহাজির ও আনসারদের ঐকমত্যে খেলাফত যখন হযরত আলী (আ.)-এর হাতে আসে, তখন বনি উমাইয়্যা দীর্ঘদিনের প্রতিহিংসার আগুন প্রজ্বলন করে এবং তৃতীয় খলিফার রক্তের দোহাই দিয়ে ফেতনা ছড়াতে থাকে। এ জন্য তারা প্রথমে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পটভূমি রচনা করে। কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পবিত্র কুরআনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে ও কুটচালের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতাকে সরল মুসলমানদের সামনে বৈধ বলে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায় এবং সফলও হয়। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে আলী (আ.)-এর পক্ষ থেকে নিয়োজিত গভর্নর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী-সাথীদের হত্যার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেমন আলী (আ)'র নিযুক্ত মিশরের গভর্নর মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকরকে একটি মৃত গাধার চামড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে ও পুড়িয়ে এবং অপর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মালিক আশতারকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। উমাইয়্যা আমলে সাধারণ জনজীবন, বিশেষ করে শাম তথা বৃহত্তর সিরিয়া ও মিশরের জনসাধারণের নৈতিকতার এত বেশি স্খলন হয় যে, বিখ্যাত ঐতিহাসিক মাসউদীর ভাষায়: ‘তারা কোন অসঙ্গত কাজ থেকেই বিরত থাকত না, দীনদারকে কাফের বানাতে তাদের কোনোই দ্বিধা ছিল না। নবী-বংশ বিরোধী প্রচারণায় সিরিয়রা এতো বেশি ধোঁকা খেয়েছিল যে হযরত আলী (আ) যখন কুফার গ্রান্ড মসজিদে ঘাতকের হামলার শিকার হন তখন সিরিয়ার জনগণ বিস্মিত হয়েছিল। তাদের অনেকেই তখন বলেছিল: আলী কি নামাজ পড়তো নাকি? সে মসজিদে কিভাবে হামলার শিকার হলো!? ইমাম হুসাইন (আ.) তৎকালীন জনগণের নৈতিক অধঃপতনের প্রতি ইশারা করেছেন এভাবে : ‘আল্লাহ্‌র কসম! হে জনগণ! যা কিছু উত্তম ও সঙ্গত তা তোমাদের মাঝে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়েছে, আর তোমাদের জীবনের শিকড় গেড়েছে সেই লাঞ্ছনার ভূমিতলে।’ অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়েছিল যে, যখন উমাইয়্যা শাসনের পতন ঘটে ও আব্বাসীয় খলিফা আবুল আব্বাস সাফফাহ্ শামের ক্ষমতা দখল করে, তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে আলী, শাম বাহিনীর নেতৃস্থানীয়দের ধরে সাফফাহ্‌র কাছে নিয়ে যায়। সে সময়ে তারা সবাই কসম করে বলতে থাকে যে, তারা বনি উমাইয়্যা ছাড়া কাউকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)- এর পরিবারের সদস্য তথা তাঁর আহলে বাইত হিসেবে চিনত না! এ বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, বনি উমাইয়্যা কীভাবে জনসাধারণের অজ্ঞতা ও মূর্খতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছিল। উমাইয়্যা যুগের দরবারি আলেম ও খতীবরা জনগণকে ইসলামের সঠিক হুকুম-আহকাম ও দীনের দর্শন শিক্ষা না দিয়ে আলী (আ.) এর বিরুদ্ধে অভিশাপ ও গালি দেয়ার বুলি শেখাতেন, ফলে মানুষ এভাবে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে বাদ দিয়ে বনি উমাইয়্যাকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর আহলে বাইত বলে ভাবত, ও আলীর অনুসারীদের বলত ‘কাফের’ বা‘জিন্দীক’। এ অবস্থা এত দীর্ঘকাল বজায় ছিল যে আবদুল মালেক ইবনে মারোয়ানের শাসনামলে দশ বারো বছরের এক শিশু রাজদরবারে এসে কাঁদতে কাঁদতে নিজের বাবার বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে বলে যে, আমার বাবা এত বড় জালিম যে তিনি আমার নাম রেখেছেন আলী! কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর নবী-পরিবারের সদস্যদের বন্দী হয়ে শামে নীত হবার পর যখন এক বৃদ্ধ অবগত হয় যে, বন্দী হয়ে আসা লোকগুলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সন্তান, তখন ওই বৃদ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। কারণ, তার ধারণাও ছিল না যে, মহানবী (সা.)-এর কোন সন্তান বেঁচে রয়েছেন। হয়ত এ কারণেই ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ইয়াযীদের দরবারে ভাষণ দানকালে সর্বপ্রথমে নিজের বংশ-পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। অন্যদিকে ইয়াজিদের মা ‘মেইসুন’ ছিল কালব গোত্রের খ্রিস্টান। এ গোত্র অশ্লীলতা ও নোংরামিতে অভ্যস্ত ছিল। ইয়াযীদের কুকুর নিয়ে খেলা, জুয়া, মদ্যপান, সহিংসতা, স্বার্থপরতা, স্বেচ্ছাচারিতা, বেপরোয়া ভাব, হত্যা,রক্তপাত, নারী-আসক্তি ইত্যাদি মানব চরিত্রের জন্য কলঙ্কজনক আরও অনেক কু-অভ্যাসের কথা সেদিন কারও অজানা ছিল না। ইয়াজিদ কবিতা আওড়িয়ে বলত: অর্থ: হায়! যদি আমার পিতৃপুরুষরা বদরের ভূমি থেকে উঠে আসত এবং কুফার ঘটনা দেখত! বনি হাশিম তথা মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধররা তো রাজত্ব নিয়েই খেলেছে; আসলে না কোন নবী এসেছে, আর না কোন ওহী নাযিল হয়েছে! মু‘আবিয়া ৫৯ হিজরিতে তাঁর ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে শামের জনগণের কাছ থেকে ফাসেক ও মহাপাপী ইয়াযীদের জন্য খেলাফতের বাইয়াত আদায় করে। অথচ ইমাম হাসানের (আ) সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাউকে খলিফা করার বা ঘোষণা দেয়ার অধিকার মুয়াবিয়ার ছিল না। ওই চুক্তি অনুযায়ী খেলাফত থাকবে ইমাম হাসানের (আ) হাতে অথবা তার অবর্তমানে ইমাম হুসাইনের (আ) হাতে। কিন্তু মুয়াবিয়ার ষড়যন্ত্রে ইমাম হাসানকে শহীদ করা হয় এবং ইয়াজিদকে খলিফা ঘোষণা করে এই উমাইয়া শাসক। মু‘আবিয়া ক্ষমতাকে তাঁর বংশগত করার লক্ষ্যে যারা খেলাফতের দাবিদার হতে পারে তাদের ওপর কঠোরতা আরোপ শুরু করে। শামের জনগণের কাছ থেকে ইয়াযীদের খেলাফতের নামে বাইয়াত নেয়ার পর মুয়াবিয়া মদীনার নেতৃবৃন্দকেও বলে ইয়াজিদের নামে বাইয়াত নিতে। কিন্তু হেজাজের নেতৃবৃন্দ ও জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বনি উমাইয়্যা ছাড়া আর কেউ বাইয়াত করল না। কিন্তু তারপরও মু‘আবিয়া হজ ও ওমরার অজুহাতে হেজাজে এসে নিজের অযোগ্য পুত্রকে যুবরাজ বলে ঘোষণা দেয়। ইমাম হুসাইন (আ.) বেশ কিছু কাল ধরে উমাইয়্যাদের চিন্তাধারার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। প্রায়ই তিনি বিপদ সংকেত দিয়ে বলতেন : ‘নিজের নীরবতার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাই।’ কেননা, ইমাম জানতেন যে, কুরআন ও ইসলামের টিকে থাকা নির্ভর করছে তাঁর আত্মত্যাগ ও শাহাদাতের ওপর। কারণ, বনি উমাইয়্যা ইসলাম বলতে রাজত্ব ও ক্ষমতা ছাড়া আর কিছুই বুঝেনি। ইয়াজিদ যেমন অন্তরে ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখত না, তেমনি বাহ্যিকভাবেও তা মেনে চলত না। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) ছিলেন ঈমান ও হাকীকতের বাস্তব প্রতীক এবং দীনের প্রতি গভীর বিশ্বাস তাঁর সমস্ত শিরা-উপশিরায় বেগবান রক্তের মত ঢেউ খেলে যেত। তিনি ভাল করেই মু‘আবিয়ার দুরভিসন্ধি বুঝলেন এবং এক অগ্নিঝরা ভাষণের মাধ্যমে তাঁর নীল নকশাকে ফাস করে বলেন : 'হে মু‘আবিয়া! … সত্যিই কি তুমি জনগণকে ইয়াজিদের বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করতে চাও? যখন তার চরিত্রই তার উত্তম পরিচয়। তার চিন্তাচেতনা ও অভিমত তার কাজেই প্রকাশিত। তুমি ইয়াজিদ সম্পর্কে এবং আলে মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর তার কর্তৃত্বের ব্যাপারে যা ঘোষণা করেছ, তা আমি শুনেছি! তাহলে আস, এ ইয়াজিদকে কুকুর, বানর, কবুতর, নারী-আসক্তি ও ফূর্তিবাজি সম্পর্কে পরীক্ষা করে দেখ…। হে মু‘আবিয়া! শুনেছি যে, তুমি আমাদের প্রতিও ইশারা করেছ। আল্লাহ্‌র কসম করে বলছি, মহানবী (সা.) তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের জন্যই উত্তরাধিকার হিসাবে রেখে গেছেন।' হে মু‘আবিয়া! কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড-যেখানে যোগ্যতম লোকদের থাকা দরকার, সেখানে তাদেরকে বর্জন করছ এবং একজন পাপাচারী ও সম্ভোগে বুঁদ হয়ে থাকা লোককে অগ্রগণ্য করছ?

১৩৮০ চন্দ্র-বছর আগে ৬১ হিজরির ৭ মহররম ইয়াজিদ বাহিনীর সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের জন্য ফোরাত নদীর পানি বন্ধ করে দেয়। ৭ মহররম রাতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) অভিশপ্ত ওমর সাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন ও কথা বলেন। খুলি বিন ইয়াজিদ নামের এক ব্যক্তি এই ঘটনার সংবাদ ইয়াজিদের নিযুক্ত ইরাকের গভর্নর ইবনে জিয়াদের কাছে পৌঁছে দেয়। খুলি ইমামের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ পোষণ করত। এ সাক্ষাতের খবর শুনে ওমর সাদের কাছে একটি চিঠি লেখে ইবনে জিয়াদ। ইবনে জিয়াদ এ ধরনের সাক্ষাতের ব্যাপারে সাদকে সতর্ক করে দেয় এবং নবী-পরিবার ও হুসাইন (আ.)’র সঙ্গীদের জন্য ফোরাতের পানি বন্ধ করতে বলে। ইমাম শিবির যেন এক ফোটা পানিও নিতে না পারে ফোরাত থেকে সে নির্দেশ দেয় ইবনে জিয়াদ। ফোরাত নদীর একটি শাখা কারবালা প্রান্তরের পাশ দিয়ে বহমান ছিল। ইবনে জিয়াদ ইমাম হুসাইনের কাফেলার ওপর চাপ সৃষ্টি ও অবরোধ জোরদারের জন্য কারবালায় আরও সেনা পাঠাতে থাকে। আমর ইবনে হাজ্জাজ যুবাইদি নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ইয়াজিদ বাহিনীর ৫০০ অশ্বারোহী সেনা ফোরাতের তীর নবী-পরিবার ও তাদের সঙ্গীদের জন্য নিষিদ্ধ করে। অবশ্য ইমাম হুসাইন (আ)'র সৎ ভাই ( ও আশুরার দিনে তাঁর অন্যতম সেনাপাতি) আবুল ফজল আব্বাস রাতের বেলায় এক অভিযান চালিয়ে ফোরাত থেকে কিছু পানি আনেতে সক্ষম হন এবং তাতে নবী-পরিবার আরও একদিন পানি ব্যবহারের সুযোগ পান। কিন্তু পরের দিন থেকে ১০ মহররম পর্যন্ত তিন দিন ইমাম শিবিরে আর এক ফোটা পানিও যায়নি। অথচ ফোরাতের পানি কখনও কোনো পশুর জন্যও নিষিদ্ধ হয়নি। পাপিষ্ঠ ও জালিম ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর পরিবার এবং সঙ্গীদেরকে বাধ্য করাই ছিল পানি-অবরোধের উদ্দেশ্য। কিন্তু ইমাম ও তাঁর সঙ্গীরা শাহাদতের অমিয় সুধা পান করাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। ফলে (১০ মহররম) মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও লড়াই করে শহীদ হন ইমাম (আ.) ও তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যসহ ইমামের সংগ্রামী সাথীরা। এভাবে সৃষ্টি হয় ইতিহাসের অনন্য বীরত্বের ঘটনা।

শহীদ সম্রাট মাওলা হুসাইন ইবনে আলী আঃ পর্ব ১ কারবালার মর্মবিদারী ঘটনা মানব ইতিহাসের এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা, যার সামনে বিশ্বের মহান চিন্তাবিদরা থমকে গিয়ে পরম বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে স্তুতি-বন্দনায় মুখরিত হয়েছেন এই নজিরবিহীন আত্মত্যাগের। কারণ, কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের মহানায়করা 'অপমান আমাদের সয় না” -এই শ্লোগান দিয়ে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সংখ্যায় হাতে গোনা জনাকয়েক হওয়া সত্ত্বেও খোদায়ী প্রেম ও শৌর্যে পূর্ণ টগবগে অন্তর নিয়ে জিহাদ ও শাহাদাতের ময়দানে এসে প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার অন্ধকার জগতকে পেছনে ফেলে উর্দ্ধজগতে মহান আল্লাহর সনে পাড়ি জমান। তাঁরা নিজ কথা ও কাজ দিয়ে জগতবাসীকে জানিয়ে দিয়ে যান যে,‘‘ যে মৃত্যু সত্যের পথে হয়,তা মধূর চেয়েও সুধাময়।’’ কারবালার মহাবিপ্লব বিশ্বের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে অবিস্মরণীয়। এই মহাট্র্যাজেডির পরিবেশ ও পটভূমি লুকিয়ে ছিল আরব গোত্রগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দ্বন্দ্বের মধ্যে। মহানবী (সা) নিজে ছিলেন কুরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত গোত্র তথা হাশেমি গোত্রের। হযরত ইব্রাহিম (আ)'র বংশধারা হতে আসা এ গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কাবা ঘরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। মহানবীর (সা) দাদা আবদুল মোত্তালেব ও পরবর্তীতে আবুতালিব একই কারণে বিশেষ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। পরবর্তীকালে মহানবী (সা) মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল (সা) হিসেবে আরব বিশ্বে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। আর মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত আলী (আ) এবং হযরত ফাতিমা জাহরার (সালামুল্লাহি আলাইহা) সন্তান হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইনও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হওয়ায় গোত্রবাদী ইর্ষায় আক্রান্ত হয়েছিল অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই হাশেমি বংশের মোকাবেলায় কুরাইশ বংশের অন্য গোত্রগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক জোরালো হয়ে উঠেছিল। আর এ অবস্থা থেকে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সক্ষম হয়েছিল উমাইয়া বংশ। উমাইয়াদের উত্থানের সুবাদে এ বংশের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও এক সময় ইসলামের চরম শত্রু হিসেবে কুখ্যাত আবু সুফিয়ানের ছেলে মুয়াবিয়া ছলে বলে কৌশলে মুসলমানদের ওপর ক্ষমতাসীন হতে সক্ষম হয়। এরপর আমির মুয়াবিয়ার সৃষ্ট রাজতান্ত্রিকতাকেই ইসলামের লেবাস পরিয়ে ইসলামকে চিরতরে নির্মূলের যে ষড়যন্ত্র করেছিল ইয়াজিদের নেতৃত্বাধীন মুনাফিক উমাইয়ারা তার বিরুদ্ধে পাহাড়ের মত বাধা হয়ে দাঁড়ান মহানবীর (সা) দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ)। মুয়াবিয়া জীবিত থাকতেই তারই নির্দেশে ইয়াজিদের পক্ষে আগাম বাইয়াত নেয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ)'র মত শতভাগ নীতি-পরায়ন নিষ্পাপ ইমামের পক্ষে ইয়াজিদের মত চরিত্রহীন ও কুলাঙ্গার ব্যক্তিকে খলিফা হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে ইরাকের অধিবাসীরা ইমাম হুসাইন (আ)-কে মুসলমানদের নেতা বা খলিফা মনে করত। তারা ইমামকে কুফায় আসার আমন্ত্রণ জানায় যাতে সেখান থেকে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় এবং উমাইয়া জুলুমশাহীর শোষণ ও নির্যাতন থেকে জনগণ মুক্তি পায়। হযরত ইমাম হুসাইন (আ) ইরাকিদের ও বিশেষ করে কুফাবাসীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। তবে কুফাবাসী আমন্ত্রণ না জানালেও তিনি কুলাঙ্গার ইয়াজিদের নেতৃত্ব কখনও মেনে নিতেন না। কুফাবাসীদের চিত্তের দুর্বলতা সম্পর্কেও অবহিত ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ)। তাই সেখানকার জনগণের মনোভাব বোঝার জন্য তিনি প্রথমে সেখানে পাঠিয়েছিলেন নিজের চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে। আকিল প্রথম যখন সেখানে যান তখন স্থানীয় জনগণ তাকে বিপুল সম্বর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেয়। কিন্তু ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদ ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্যাতন শুরু করায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায় এবং মুসলিম ইবনে আকিল অসহায় অবস্থায় একাই প্রতিরোধ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত শহীদ হন। মুসলিম ইবনে আকিলের শহাদাতের খবর শুনে ইমাম অত্যন্ত শোকাহত হলেও তাঁর বিপ্লবী মিশন তথা কুফাগামী যাত্রা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু কুফায় পৌঁছার পথে কারবালা নামক অঞ্চলে ইবনে জিয়াদের বাহিনীর মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয় ইমামের কাফেলা। সেখানে ইমামকে ইয়াজিদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে হয় তিনি ইয়াজিদের নেতৃত্ব মেনে নেবেন অথবা তাকে মৃত্যু বেছে নিতে হবে। ইমাম হুসাইন (আ) প্রথম থেকেই জানতেন যে তাঁর শাহাদাত ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে মুসলমানদের জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই তিনি আপোষ বা সন্ধির দিকে না গিয়ে মুষ্টিমেয় সঙ্গী-সাথীসহ অসম এক যুদ্ধে জড়িয়ে ত্যাগ ও বীরত্বের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ইমামের সঙ্গীরা বীরত্ব ও সততার সঙ্গে সংগ্রাম করে ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন। ইয়াজিদের অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নত করেননি বলে ইমামের কাফেলা ও সঙ্গীদেরকে ফোরাতের পানি থেকেও বঞ্চিত করেছিল নির্দয় ও নৃশংস পাশবিক চিত্তের ইয়াজিদ বাহিনী। ইমাম হুসাইন (আ) ও তাঁর পরিবারের অনেক সদস্য পিপাসার্ত অবস্থায় এমন নৃশংসভাবে শহীদ হন যে বিশ্বের ইতিহাসে এমনসব নিষ্ঠুরতার কোনো তুলনা নেই। বিখ্যাত ঐতিহাসিক গীবন কারবালার এই ঘটনার করুণ ও মর্মান্তিক অবস্থা প্রসঙ্গে লিখেছেন, সেই সুদূর অতীতের সেই করুণ পরিবেশে ইমাম হুসাইনের শাহাদতের ঘটনা ছিল এতই ট্র্যাজিক যে তা সবচেয়ে কঠিন হৃদয়ের অধিকারী পাঠকের মনেও ইমামের জন্য সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে।

হজরত ইমাম হুসাইন (আ.) জনাব কুলইনী কাফিতে উল্লেখ করছেন যে, ইমাম হুসাইন (আ.) ৩য় হিজরীতে এবং এক বর্নামতে তিনি ৪থ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১ হিজরীতে শাহাদত বরণ করেন। তার বাবার নাম হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এবং মাতার নাম হজরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) থেকে একটি রেওয়ায়েত বণিত হয়েছে যে, একবার রাসুল (সা.) এর কাছে হজরত জিব্রাইল (আ.) খোদার পক্ষ থেকে আসেন এবং বলেন যে ইয়া রাসুল আল্লাহ (সা.) আপনার কন্যা ফাতিমা (সা.আ.) এর ঘরে এক সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যাকে আপনার উম্মতেরা শহীদ করবে। তখন রাসুল (সা.) বলেন হে জিব্রাইল সেই সন্তানকে যে ফাতিমার ঘরে জন্মগ্রহণ করবে এবং আমার উম্মতেরা তাকে শহীদ করবে তাহলে আমার এই সন্তানটি নিয়ে কি করা উচিত? তখন আবার জিব্রাইল (আ.) আসমানের দিকে ফিরে যান এবং পুণরায় ফিরে আসেন এবং আবার উক্ত কথাটি রাসুল (সা.) এর কাছে বলেন এবং রাসুল (সা.) ও তাকে একই জবাব দেন। পরে আবার যখন জিব্রাইল (আ.) ফিরে আসেন এবং রাসুল (সা.) কে বলেনঃ ইয়া রাসুল (সা.) আল্লাহআপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, উক্ত সন্তানের বংশধারা হতে ইমামত, বেলায়াত এবং আপনার (সা.) ওয়াসী নিবাচন করা হবে। তখন রাসুল (সা.) আনন্দিত হন এবং উক্ত সুসংবাদটি গ্রহণ করেন। যখন রাসুল (সা.) তার কন্যা ফাতিমাকে উক্ত খবরটি দেন তখন ফাতিমা (সা.আ.) বলেন যে, হে বাবা আমি এই সন্তানটি নিয়ে কি করব? তখন আবার রাসুল (সা.) বলেন হে ফাতিমা আল্লাহতোমার এই সন্তানের বংশধারাতেই ইমামত এবং বেলায়াত দান করবেন তখন ফাতিমা (সা.আ.) বলেন যে তাহলে সেই সন্তানকে আমি চাই। উক্ত ঘটনার ৬ মাস পরে হজরত ইমাম হুসাইন (অ.) জন্মগ্রহন করেন এবং আরো বণিত হয়েছে যে, তিনি জন্মগ্রহণের পরে কারো দ্বুগ্ধ পান করেননি তখন তাকে রাসুল (সা.) এর কাছে আনা হলে রাসুল (সা.) বলেনঃ হুসাইন আমার থেকে আমি হুসাইন থেকে। হয়তো এই বাক্যের প্রথম অংশটি এই রেওয়ায়েতের কারণে বণিত হয়েছে যে তার দুগ্ধ পানকালিন সময়ে ইমাম হুসাইনের নামকরণের সময়ে বণিত হয়েছিল। আল্লামা মাজলিসি বিহারুল আনওয়ার খন্ড ৪৩, পৃষ্ঠা নং ২৩৯। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) কে রাসুল (সা.) এর কোলে দেয়া হয় তখন তিনি তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে আকামত দেন। তারপর হজরত আলী (আ.) কে জিজ্ঞাসা করেন যে এই সন্তানের নাম কি রেখেছ? আলী (আ.) এক্ষেত্রে আমি আপনাকে অগ্রধিকার দিব তখন রাসুল (সা.) বলেন যে আমি এ ক্ষেত্রে খোদাকে অগ্রাধিকার দিব। সেই মূহুতে জিব্রাইল (আ.) নাযিল হয় এবং বলেনঃ হে রাসুল আল্লাহ আপনাকে সালাম বলেছেন। এবং তিনি বলেছেন যে তোমার কাছে আলী হচ্ছেন তেমন যেমনটি হারুন ছিলেন মূসার নিকট কিন্তু তোমার পরে আর কোন নবী আসবে না। আপনিও আপনার সন্তানের নাম হারুনের সন্তানের নাম অনুযায়ি রাখুন। রাসুল (সা.) বলেনঃ হারুনের সন্তানের নাম কি ছিল? তিনি বলেন সুবাইর বা সুব্বাইর। তখন রাসুল (সা.) বলেনঃ আরবী ভাষাতে তা কি হবে? জিব্রাইল (আ.)বলেনঃ তার নাম রাখ হুসাইন। তখন তার নাম রাখা হলো হুসাইন। রাসুল (সা.) বলেছেনঃ و أنا من حسين‏ এর অথটাও স্পষ্ট কেননা ইসলাম সম্মানিত হয় এবং রক্ষা পাই ইমাম হুসাইন (আ.) এর কিয়াম, তার শাহাদত এবং তার সঙ্গিদের শাহাদতের কারণে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামকে চিনতে হলে হুসাইনী মকতব থেকে চিনতে হবে কেননা তিনি ছিলেন হেদায়াতের প্রদীপ স্বরূপ। হাদীসে বণিত হয়েছে যেঃ إنّ الحسين‏ مصباح‏ الهدى‏ و سفينة النجاة অবশ্যই হুসাইন হচ্ছেন হেদায়াতের আলোকবতিকা স্বরূপ এবং নাজাতের তরী।(মুসিরুল আহযান, পৃষ্ঠা নং ৪) বতমানে আমরা মুসলিম উম্মা যারা বিভিন্ন দল ও মতে বিভক্ত রয়েছি তার মূলে একটিই কারণ নিহিত রয়েছে আর তা হচ্ছে আমরা হুসাইনী মকতব থেকে দূরে সরে গেছি। যে ইমাম হুসাইন (আ.) কে নিমম অত্যাচারের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছিল। কিন্তু তার শাহাদতের যে প্রভাব তা আমরা ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখতে পাই এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি আর তা হচ্ছে ইসলাম ও কোরআন রক্ষা পাই এবং দুনিয়ার বুকে সম্মানিত হয়। রেওয়ায়েতে বণিত হয়েছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইমাম হুসাইন (আ.) কে তার শাহাদতের বিনিময়ে তাকে তিনটি জিনীষ দান করেন। ১- তার মাজারের গম্বুজের নিচে দোয়া করলে তার দোয়া কবুল হবে। ২- তার বংশধারাতে ইমামত থাকবে। ৩- তার কবরের মাটির দ্বারা মানুষ সুস্থতা লাব করবে। তাই আমাদের কতব্য হচ্ছে যে,আমরা যেন ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পকে অধ্যায়ন করি কেননা তার জীবনিতে আমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষনীয় অনেক বিষয় এবং আদশের পাঠশালা প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭৯ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭৯। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বুক হতে মাথা পর্যন্ত অংশের সাথে আল-হাসানের শরীরের সাদৃশ্য ছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বুক হতে পা পর্যন্ত নীচের অংশের সাথে আল-হুসাইনের শরীরের সাদৃশ্য ছিল। যঈফ, মিশকাত (৬১৬১) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated 'Ali: said: "Al-Hasan is greater in resemblance to the Messenger of Allah (ﷺ) with regards to what is between the chest and the head, and Al-Husain is greater in resemblance to the Messenger of Allah (ﷺ) with regards to what is below that." حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ هَانِئِ بْنِ هَانِئٍ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ الْحَسَنُ أَشْبَهُ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَا بَيْنَ الصَّدْرِ إِلَى الرَّأْسِ وَالْحُسَيْنُ أَشْبَهُ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا كَانَ أَسْفَلَ مِنْ ذَلِكَ ‏.‏ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43813

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭৮ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) বলেন, আমি ইবনু যিয়াদের নিকট হাযির ছিলাম। সে সময় আল-হুসাইন (রাযিঃ)-এর শির (কারবালা হতে) এনে হাযির করা হল। সে তার নাকে ছড়ি মারতে মারতে (ব্যঙ্গোক্তি করে) বলতে লাগল, এর ন্যায় সুশ্ৰী আমি কাউকে তো দেখিনি! বৰ্ণনাকারী বলেন, সে সময় আমি বললাম, সতর্ক হও! লোকদের মাঝে (দৈহিক কাঠামোয়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আল-হুসাইন ইবনু আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না। সহীহঃ মিশকাত, তাহকীক সানী (৬১৭০), বুখারী। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated Anas bin Malik: "I was with Ibn Ziyad and the head of Al-Husain was brought. He began to poke it in the nose with a stick he had, saying: 'I do not see the like of this as beautiful, why is he mentioned as such?'" He said: "I said: 'Behold, he was of the closest resemblance to the Messenger of Allah (ﷺ).'" حَدَّثَنَا خَلاَّدُ بْنُ أَسْلَمَ أَبُو بَكْرٍ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، أَخْبَرَنَا هِشَامُ بْنُ حَسَّانَ، عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ سِيرِينَ، قَالَتْ حَدَّثَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ كُنْتُ عِنْدَ ابْنِ زِيَادٍ فَجِيءَ بِرَأْسِ الْحُسَيْنِ فَجَعَلَ يَقُولُ بِقَضِيبٍ لَهُ فِي أَنْفِهِ وَيَقُولُ مَا رَأَيْتُ مِثْلَ هَذَا حُسْنًا لَمْ يُذْكَرْ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ أَمَا إِنَّهُ كَانَ مِنْ أَشْبَهِهِمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42131

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭৩ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭৩। আবূ বাকরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাসজিদে নাববীর) মিম্বারে উঠে বললেনঃ আমার এ পুত্র (হাসান) নেতা হবে এবং আল্লাহ তা'আলা তার মাধ্যমে (মুসলমানদের) দু'টি বিবদমান দলের মাঝে সমঝোতা স্থাপন করাবেন। সহীহঃ রাওযুল নামীর (৯২৩), ইরওয়া (১৫৯৭), বুখারী। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। “এই পুত্র" দিয়ে আল-হাসান ইবনু আলী (রাযিঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। Narrated Abu Bakrah: that the Messenger of Allah (ﷺ) ascended the Minbar and said: "Indeed, this son of mine is a chief, Allah shall bring peace between two [tremendous] parties through his hands." حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا الأَنْصَارِيُّ، مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ حَدَّثَنَا الأَشْعَثُ، هُوَ ابْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، قَالَ صَعِدَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ ‏ "‏ إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ يُصْلِحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ يَعْنِي الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42126

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭২ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭২। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত-এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন। তিনি ফাতিমা (রাঃ)-কে বলতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন। যঈফ, মিশকাত (৬১৫৮) আবূ ঈসা বলেনঃ আনাস (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীসটি গারীব। Narrated Anas bin Malik: That the Messenger of Allah (ﷺ) was asked: "Which of the people of your house are most beloved to you?" He said: "Al-Hasan and Al-Husain." And he used to say to Fatimah: "Call my two sons for me." And he would smell them and hug them. حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الأَشَجُّ، حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنِي يُوسُفُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ أَهْلِ بَيْتِكَ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ ‏"‏ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ ‏"‏ ‏.‏ وَكَانَ يَقُولُ لِفَاطِمَةَ ‏"‏ ادْعِي لِي ابْنَىَّ ‏"‏ ‏.‏ فَيَشُمُّهُمَا وَيَضُمُّهُمَا إِلَيْهِ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43812

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭০ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭০। আবদুর রহমান ইবনু আবী নুম (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু উমার (রাযিঃ)-এর কাছে জানতে চায়। ইবনু উমার (রাযিঃ) বললেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্রকে (নাতি হুসাইন) হত্যা করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দু'জন এই পৃথিবীতে আমার দুটি সুগন্ধময় ফুল। সহীহঃ মিশকাত (৬১৫৫), সহীহাহ (৫৬৪), বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি সহীহ। শু'বাহ (রাহঃ) এ হাদীস মাহদী ইবনু মাইমূন হতে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনু আবী ইয়াকুবের সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর বরাতেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। Narrated 'Abdur-Rahman bin Abu Nu'm: that a man from the people of Al-'Iraq asked Ibn 'Umar about the blood of a gnat that gets on the clothes. Ibn 'Umar said "Look at this one, he asks about the blood of a gnat while they killed the son of the Messenger of Allah (ﷺ)! And I heard the Messenger of Allah (ﷺ) said: 'Indeed Al-Hasan and Al-Husain - they are my two sweet basils in the world.'" حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْعَمِّيُّ، حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي نُعْمٍ، أَنَّ رَجُلاً، مِنْ أَهْلِ الْعِرَاقِ سَأَلَ ابْنَ عُمَرَ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ يُصِيبُ الثَّوْبَ فَقَالَ ابْنُ عُمَرَ انْظُرُوا إِلَى هَذَا يَسْأَلُ عَنْ دَمِ الْبَعُوضِ وَقَدْ قَتَلُوا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ إِنَّ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ هُمَا رَيْحَانَتَاىَ مِنَ الدُّنْيَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَقَدْ رَوَاهُ شُعْبَةُ وَمَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي يَعْقُوبَ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوُ هَذَا ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42125

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৬৮ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৬৮। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন (রাযিঃ) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার। সহীহঃ সহীহাহ (৭৯৬) সুফইয়ান ইবনু ওয়াকী’-জারীর ও মুহাম্মাদ ইবনু ফুযাইল হতে, তিনি ইয়াযীদ (রাহঃ) হতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু আবী নুম হলেন আবদুর রহমান ইবনু আবী নুম আল-বাজালী, কুফার অধিবাসী। তার উপনাম আবূল হাকাম। Narrated Abu Sa'eed: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "Al-Hasan and Al-Husain are the chiefs of the youth of Paradise." حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي نُعْمٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ ‏"‏ ‏.‏ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، وَمُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ يَزِيدَ، نَحْوَهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَابْنُ أَبِي نُعْمٍ هُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي نُعْمٍ الْبَجَلِيُّ الْكُوفِيُّ وَيُكْنَى أَبَا الْحَكَمِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42123

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৭৫ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা ৩৭৭৫। ইয়া'লা ইবনু মুররাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মুহাব্বাত করে, আল্লাহ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১৪৪)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র 'আবদুল্লাহ ইবনু উসমান ইবনু খুসাইমের সূত্রেই জেনেছি। একাধিক বর্ণনাকারী এটি 'আবদুল্লাহ ইবনু উসমান ইবনু খুসাইম হতে বর্ণনা করেছেন। Narrated Ya'la bin Murrah: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "Husain is from me, and I am from Husain. Allah loves whoever loves Husain. Husain is a Sibt among the Asbat." [Asbat, plural of Sibt: A great tribe. Meaning, Al-Husain would have many offspring, such that they would become a great tribe. And this has indeed occurred. See Tuhfat Al-Ahwadhi (4/341).] حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ رَاشِدٍ، عَنْ يَعْلَى بْنِ مُرَّةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ حُسَيْنٌ مِنِّي وَأَنَا مِنْ حُسَيْنٍ أَحَبَّ اللَّهُ مَنْ أَحَبَّ حُسَيْنًا حُسَيْنٌ سِبْطٌ مِنَ الأَسْبَاطِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ وَإِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42128

কিছু লেখার ইচ্ছে ছিলোনা কিন্তু ১০ই মহরমকে কেন্দ্র করে দেখতে পেলাম অনেকে শোকের পরিবর্তে অনেক খুশির সংবাদ প্রচার করছে মনে হচ্ছে তাদের বাপ দাদা ঐ সময় ক্যালেন্ডার তৈরী করেছিলো,খুশির সংবাদ গুলো সংক্ষেপে নিচে দিলাম সাথে কিছু কথা- ১)হযরত আইয়ুব (আঃ) কঠিন রোগথেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।২) হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহন করেছিলেন।৩) হযরত দাউদ (আঃ) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন।৭) হযরত সোলেমান (আঃ) তাঁর হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন।৮) হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।৯)হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর হারানো পুত্রহযরত ইউসুফ (আঃ) কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন ।১০) ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহন করেছিলেন ইত্যাদি। আপনারা ভাবুন তো মহরমের কারা খুশি হয়েছিলো? আর রক্তের বন্যায় ভেসে কারা শোকে মাতাম করেছিলো? আজ যারা মহরম আসলে খুশির খবর খবর দিচ্ছে তারা কি নবী পরিবারে শোক আত্নত্যাগকে বলি দিচ্ছেননা? ইমাম হুসাইনের রক্তের বিনিময়ে ইসলামকে আড়াল করার চেষ্টা করছেনা? শোকাবহ মাসে এটা কি আহলে বায়াতের শোককে ভুলে থেকে এজিদ পন্হীদের মত আনন্দ করার জন্য এই বার্তা প্রচার করছেনা? ভিন্ন প্রসংগে খানিকটা যায় কেউ আছেন মুয়াবিয়ার ভক্ত থাকলে জবাব দিয়েনতো? ১) শয়তান মুয়াবিয়া(লা) মক্কা বিজয়ের পর মদীনাতে যায়নি তাহলে সে কাতেবী ওহী হলো কিভাবে? ২) ওসমান(র:) কোরআন বোর্ড তৈরী করলেন কিন্তু মুয়াবিয়ার ওহী লিখক কিন্তু কোরআন সংকলনে তার অপরিহার্য নেই কেন? ৩) মুৃয়াবিয়া মুনাফিক না হলে এজিদকে ক্ষমতায় বসালো কেন? ৪) আবু বকরের ছেলে মুহাম্মাদ বিন আবুবকর কে ঘোড়ার চামড়া বেধে আগুন লাগিয়ে মারলো কেন? ৫) আলী(আ:) পাক পান্জাতনের একজন তার সাথে সিফফিনের যুদ্ধ করলো কেন? ৫) ইমানদার কি পাক পান্জাতনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে পারে? ৬) মুয়াবিয়া লুচ্চা লম্পট,বদমাশ না হলে ১৬ বছরের যুবতী মেয়েকে উলংগ সর্ব শরীর দেখে লাঠি দিয়া নাড়া দিয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো ভোগ সামগ্রিরর মতো বাসনা করে কেন? ৭) যারা নবী নবী করে গলা শোকাও নবী(স:) তো বলেছেন - মুনাফিক আলীর বিরুধীতা করবে মুমিন নয়, তাহলে মুয়াবিয়া আলী (আ:) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে মুমিন হয় কিভাবে? ৮) ইমাম হাসান (আ:) কে বিষ প্রয়োগ করিয়ে মারলো কেন? ৯) হযরত আলী (আ:) কে পলিটিক্যাল কিলিং করলো কেন? ১০) মহরম আসলে তোমরা এতো খুশির সংবাদ বলো এগুলো কি এজিদের মতো মহরমকে শোকের পরিবর্তে আনন্দে পরিবর্তন করার পায়তারা নয় কি? কপি

একটি মহান আধ্যাত্মিক সফর — মদীনা থেকে কারবালা । পর্ব – ০১ । লেখাটি শুরুর পূর্বে দুটি কথা পাঠকদের উদ্দেশ্য বিনীত নিবেদন এই যে , আমি সহ আমরা অনেকেই কারবালা ঘটনার পূর্নাঙ্গ সঠিক ইতিহাস জানি না । বিশেষ করে ইমাম হোসেন (আঃ) কবে কোন তারিখে সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ইরাকের কুফা নগরীর উদ্দেশ্যে প্রিয় জন্মভূমি মদীনা ছেড়ে রওয়ানা হলেন । দীর্ঘ এই সফরে পথিমধ্যে ওনাদেরকে কারা কিভাবে কারবালা নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলেছিল । ওনারা তখন না পারছিলেন সামনে অগ্রসর হতে , না পারছিলেন অন্য কোথাও চলে যেতে । শর্ত দেওয়া হয়েছিল – হয় ঈয়াযীদের প্রতি আনুগত্য বা বাইয়াত গ্রহন কর নতুবা মৃত্যুকে বেছে নাও ! যাইহোক , এই লেখার উদ্দেশ্য হল যে , কুফা নগরীতে যাওয়ার জন্য ইমাম হোসেন (আঃ) তার সংগী সাথী এবং পরিবার পরিজন নিয়ে ২৮শে রজব ৬০ হিজরীতে মদীনা ত্যাগ করেন । ওনাদের যখন কারাবাল নামক স্থানে এনে চর্তুদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা হল সেদিনটি ছিল ০৩রা মহরম ৬১ হিজরী । দীর্ঘ এই সফরে ইমাম হোসেন (আঃ) এর কাফেলা কোন কোন এলাকা অতিক্রম করেছিলেন এবং ঐ সকল এলাকাতে সংঘটত বিশেষ বিশেষ ঘটনা সমূহ এই লেখাতে সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ননা কর হল । লেখাটি অত্যন্ত দীর্ঘ হওয়াতে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক পর্বে দেয়া হল । আজ থাকছে প্রথম পর্ব । আজকের পর্বে থাকছে মদীনা এবং মক্কা এলাকার বিশেষ ঘটনা সমূহ । তৃতীয় ইমাম হুসাইন (আঃ) এর মদীনা থেকে কারবালার সফর ছিল একটি আধ্যাত্মিক সফর। তিনি উক্ত সফরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন এবং উম্মতে মোহাম্মাদীকে সত্যর পথে আহবান জানান । নিন্মে বিভিন্ন স্থানের নাম এবং সেখানে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করা হল — মদীনা — ২৮শে রজব ৬০ হিজরীতে ইমাম হোসেন (আঃ) তাঁর আধ্যাত্মিক সফর শুরু করেন । সে সময় মদীনার গর্ভণর ছিল ওয়ালিদ বিন আতিক্বা । মূয়াবীয়ার মৃত্যুর পরে ঈয়াযীদের দরবার থেকে গর্ভনর ওয়ালিদ বিন আতিক্কাকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেয়া হয় যে , সে যেন ইমাম হুসাইন (আঃ) এর কাছ থেকে যে কোন মূল্যে বাইআত গ্রহন করে । ইমাম হুসাইন (আঃ) তার জবাবে বলেন , ঈয়াযীদ হচ্ছে একজন ফাসিক , মদ্যপায়ী ব্যাক্তি , সে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন নির্দোষ মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে । আমি কখনই তার বাইআত গ্রহন করব না । যখন মারওয়ান বিন হাকাম ইমাম হুসাইন (আঃ) এর কাছে ঈয়াযীদের বাইআতের জন্য কথা বলে , তখন ইমাম হুসাইন (আঃ) তার জবাবে বলেন , হে খোদার শত্রু ! আমাকে তোমরা ছেড়ে দাও । কেননা আমি রাসুল (সাঃ) থেকে শুনেছি যে , তিনি বলেছেন , আবু সুফিয়ানের সন্তানদের জন্য মুসলমানদের খেলাফতকে তিনি হারাম বলে ঘোষনা দিয়েছেন । তিনি যদি মূয়াবীয়াকে মেম্বারের উপরে দেখতেন তাহলে তিনি তাকে সেখান থেকে নীচে নামিয়ে দিতেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাসুল (সাঃ) এর উম্মতেরা তা দেখেছে এবং তারা কিছুই বলেনি । সুতরাং আল্লাহ তাদের উপর ঈয়াযীদ নামক একজন ফাসেককে তাদের শাসক করে দিয়েছেন । ইমাম হুসাইন (আঃ) ৬০ হিজরী ২৮শে রজব রাতে তার নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং সঙ্গি সাথীদের নিয়ে মদীনা থেকে মক্কার দিকে রওনা হন । ইমাম হুসাইন (আঃ) মদীনা থেকে বাহির হওয়ার সময় দুটি ওসিয়ত করেন – ১) – আমার মদীনা থেকে বাহির হওয়ার উদ্দেশ্যে হচ্ছে শুধুমাত্র রাসুল (সাঃ) এর উম্মতের হেদায়াতের জন্য আমি আমার নানা হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) এবং আমার বাবা হযরত আলী (আঃ) এর ন্যায় আর্দশ অনুযায়ি জনগণকে সৎ কাজের উপদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করব । ২) – তারাই নিজেরদের মুসলমান বলে দাবী করতে পারবে যারা মানুষকে খোদার পথে দাওয়াত দেয় এবং সৎকর্ম করে । যারা আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে তারা রাসুল (সাঃ) থেকে কখনও পৃথক হবে না এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার আল্লাহর কাছে রয়েছে । ঘটনাস্থল – মক্কা – ৩রা শাবান থেকে ৮ই জিলহজ্ব ৬০ হিজরীতে ইমাম হুসাইন (আঃ) মক্কাতে পৌছান এবং সেখানে আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিবের ঘরে অবস্থান করেন । মক্কার জনগন এবং হাজীরা তাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য ভীড় জমায় । ইমাম হুসাইন (আঃ) কুফাবাসীদের কাছ থেকে ১২ হাজার চিঠি আসার পরে মুসলিম বিন আক্বিলকে ১৫ই রমজান নিজের প্রতিনিধি হিসেবে কুফাতে প্রেরণ করেন । ইমাম হুসাইন (আঃ) মুসলিমের চিঠির উপরে ভিত্তি করে এবং মক্কাতে রক্তপাত হারাম বলে তিনি হজ্ব ছেড়ে দিয়ে ওমরাহ করেন এবং ৮ই জিলহজ্ব তিনি মক্কা থেকে ইরাকের কুফার দিকে রওনা হন । তিনি মক্কা ছেড়ে আসার পূর্বে জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন যে , আমরা রাসুল (সাঃ) এর আহলে বাইতগন খোদার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট । যারাই তাদের নিজের রক্তকে খোদার পথে এবং আমাকে সাহায্যে করার কাজে উৎসর্গ করতে চায় তারা যেন আমার সাথে এই আধ্যাত্মিক সফরে অংশগ্রহন করে । প্রথম পর্বের এখানেই সম্পাতি । আগামী ২য় পর্বে থাকছে সাফফা নামক স্থানের ঘটনা সমূহ , ইনশা আল্লাহ । ততক্ষনে ভাল ও সুস্থ থাকুন প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি