পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

হযরত আলী (আ.)এর ফযিলত ও মর্যাদা🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂হযরত আলী ইবন আবী তালিব (আ.) কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন আবু তালিব (আ.) আর মাতার ফাতিমা বিনতে আসাদ । শিশু বয়স থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদের কাছে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।তার ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা.)থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে নিম্নে তার কিছু আলোচনা করা হল।১। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর কাঁধে হাত রেখে বলেছেন :هذا إمام البررة قاتل الفجرة منصور من نصره,مخذول من خذله“এই আলী সৎ কর্মশীলদের ইমাম,অন্যায়কারীদের হন্তা,যে তাকে সাহায্য করবে সে সাফল্য লাভ করবে (সাহায্য প্রাপ্ত হবে) এবং যে তাকে হীন করার চেষ্টা করবে সে নিজেই হীন হবে।”হাদীসটি হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন,“এই হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তদুপরি বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।”২। নবী (সা.) বলেছেন,“আলী সম্পর্কে আমার প্রতি তিনটি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে :إِنَّهٌ سيّد الْمسلمين و إمام الْمتّقين و قائد الغرّ الْمُحجّلينনিশ্চয়ই সে মুসলমানদের নেতা,মুত্তাকীদের ইমাম এবং নূরানী ও শুভ্র মুখমণ্ডলের অধিকারীদের সর্দার।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এনেছেন ও বলেছেন,“হাদীসটি সনদের দিক হতে বিশুদ্ধ কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।”৩। নবী (সা.) বলেছেন,“আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে যে,আলী মুসলমানদের নেতা,মুত্তাকীদের অভিভাবক এবং শুভ্র ও উজ্জ্বল কপালের অধিকারীদের (সৌভাগ্যবানদের) সর্দার।” ইবনে নাজ্জার ও অন্যান্য সুনান লেখকগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।৪। নবী হযরত আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,مرحبا بسيّد المسلمين و إمام المتقين“হে মুসলমানদের নেতা ও মুত্তাকীদের ইমাম! তোমাকে সাধুবাদ।” আবু নাঈম তাঁর ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।৫। একদিন রাসূল (সা.) ঘোষণা করলেন,“প্রথম যে ব্যক্তি এ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে সে মুত্তাকীদের ইমাম,মুসলমানদের নেতা,দীনের মধুমক্ষিকা (সংরক্ষণকারী),সর্বশেষ নবীর প্রতিনিধি ও উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের অধিকারীদের সর্দার।” তখন আলী ঐ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে নবী (সা.) তাঁকে এ সুসংবাদ দানের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কোলাকুলি করলেন ও তাঁর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,“তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করবে,আমার বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেবে,যে বিষয়ে তারা মতদ্বৈততা করবে তুমি তা ব্যাখ্যা করে বোঝাবে।৬। নবী (সা.) বলেছেন,“আল্লাহ্ আমার নিকট আলীকে এভাবে বর্ণনা করেছেন-আলী হেদায়েতের ধ্বজাধারী,আমার আউলিয়া অর্থাৎ বন্ধুদের ইমাম,আমার আনুগত্যকারীদের আলোকবর্তিকা এবং সে এমন এক আদর্শ মুত্তাকীদের উচিত অপরিহার্যরূপে যার পদাঙ্কনুবর্তী হওয়া।”লক্ষ্য করুন এই ছয়টি সহীহ হাদীস তাঁর ইমামত ও আনুগত্যের অপরিহার্যতাকে কিরূপে সুস্পষ্ট করছে! তাঁর ওপর সালাম বর্ষিত হোক।৭। নবী (সা.) আলীর প্রতি ইশারা করে বলেন,“এই প্রথম ব্যক্তি যে আমার প্রতি ঈমান এনেছে ও প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সে কিয়ামতে আমার সঙ্গে হাত মিলাবে,সে সিদ্দীকে আকবর ও ফারুক (এই উম্মতের সত্যপন্থী ও অসত্যপন্থীদের মধ্যে পার্থক্যকারী),সে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সীমারেখা টানবে এবং সে মুমিনদের সংরক্ষণকারী।”৮। নবী বলেছেন,“হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি চাও তোমাদের আমি এমন বিষয়ের প্রতি নির্দেশনা দেব যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো গোমরাহ ও বিপথগামী হবে না? সেটি হলো আলী। আমাকে তোমরা যেরূপ ভালবাস তাকেও সেরূপ ভালবাস। আমাকে যেরূপ শ্রদ্ধা কর তাকেও সেরূপ শ্রদ্ধা ও সম্মান কর এবং আমি তোমাদের যা বলছি তা আল্লাহ্ জিবরাঈলের মাধ্যমে আমাকে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন।”৯। নবী (সা.) বলেছেন,أنا مدينة العلم و عليّ بابُها فمن أراد المدينة فليأت الباب“আমি জ্ঞানের শহর ও আলী তার দ্বার এবং যে কেউ শহরে প্রবেশ করতে চাইলে দ্বার দিয়েই প্রবেশ করবে।”১০। নবী (সা.) বলেছেন,أنا دار الحكمة و عليّ بابُها “আমি প্রজ্ঞার ঘর আলী তার দরজা।”১১। নবী (সা.) বলেছেন,“আলী আমার জ্ঞানের প্রবেশ দ্বার ও আমি যে বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি আমার পরে আমার উম্মতের জন্য সে তার ব্যাখ্যাকারী। তার ভালবাসা ও বন্ধুত্বই ঈমান এবং তার শত্রুতাই নিফাক।”১২। নবী (সা.) আলীকে বলেন,“তুমি আমার পর উম্মত যে বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পতিত হবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যাদানকারী।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় আনাস ইবনে মালিক হতে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে,বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি বিশুদ্ধ তদুপরি তাঁরা তা বর্ণনা করেন নি।আমার মতে যে কেউ এই হাদীস এবং এর অনুরূপ অন্যান্য হাদীস নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন (বুঝবেন),আলী (আ.)-এর সঙ্গে রাসূলের সম্পর্ক রাসূলের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্কের ন্যায়। কারণ নবীকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,“আমি আপনার প্রতি এ জন্যই গ্রন্থ নাযিল করেছি যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্য যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে সে বিষয় পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন এবং এই কোরআন মুমিনদের জন্য রহমত ও হেদায়েতের উপকরণ।” নবীও আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,“তুমি আমার পর যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যাদানকারী (তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে তা বর্ণনাকারী)।”১৩। নবী (সা.) হতে আরেকটি হাদীস যা মারফু (অবিচ্ছিন্ন) সূত্রে ইবনে সাম্মাক আবু বকর হতে বর্ণনা করেছেন,عليّ منّي بِمنْزلتي من ربّي অর্থাৎ আলীর স্থান আমার নিকট আমার প্রতিপালকের নিকট আমার স্থান ও মর্যাদার ন্যায়।১৪। দারে কুতনী তাঁর ‘কিতাবুল আফরাদ’ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস সূত্রে রাসূল হতে বর্ণনা করেছেন,“আলী ইবনে আবি তালিব ক্ষমার দ্বার। যে কেউ এ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে সে মুমিন,আর কেউ তা হতে বের হয়ে গেলে সে কাফের।”১৫। নবী (সা.) বিদায় হজ্বের সময় আরাফাতের ময়দানে বলেন,“আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। আমার পক্ষ হতে ঐশী বাণী পৌঁছানোর অধিকার কারো নেই একমাত্র আলী ব্যতীত।”এই হলো সম্মানিত রাসূলের কথা যিনি শক্তিমান ও আরশের অধিপতির নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ্ তাঁর সম্পর্কে যেমনটি বলেছেন,তিনি বিশ্বস্ত,তোমাদের নবী উন্মাদ নন,তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কিছু বলেন না,বরং তিনি তাই বলেন যা তাঁর প্রতি ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়। যেহেতু এটি অস্বীকার করার উপায় নেই সেহেতু এই সহীহ হাদীস সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ আছে কি? যদি আল্লাহর মহান বাণী প্রচারের এই গুরু দায়িত্বের বিষয়ে আপনি চিন্তা করেন এবং বড় হজ্বের সময়ে তা বর্ণনার পেছনে যে হেকমত লুকিয়ে রয়েছে সে বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি দেন তাহলে সত্য আপনার নিকট তার প্রকৃতরূপে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।যদি এই বাণীর শব্দগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেন,দেখবেন বাণীটি কতটা অর্থবহ এবং উন্নত ও গভীর। কারণ রাসূল (সা.) সবদিক বিবেচনা করে দেখেছেন বিষয়টির গুরুত্বের কারণে আলী ব্যতীত অন্য কেউ সঠিকভাবে এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম নয় এবং নবীর পক্ষ হতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি,খলীফা ও প্রশাসনিক দায়িত্বসম্পন্ন একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নন।সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি আমাদের হেদায়েত করেছেন এবং তিনি হেদায়েত না করলে আমরা কখনো হেদায়েত পেতাম না।১৬। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,“যে আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো,আর যে আমার বিরোধিতা করলো সে আল্লাহরই বিরোধিতা করলো। আর যে আলীর আনুগত্য করেছে সে যেন আমারই আনুগত্য করেছে,আর যে তার বিরোধিতা করেছে সে আমারই বিরোধিতা করেছে।” হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবী তাঁর ‘তালখিসে মুসতাদরাক’-এ হাদীসটি এনে বলেছেন যে,বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ।১৭। নবী (সা.) বলেছেন,“হে আলী! যে আমা হতে বিচ্ছিন্ন হলো সে আল্লাহ্ হতেই বিচ্ছিন্ন হলো আর যে আলী হতে বিচ্ছিন্ন হলো সে আমা হতেই বিচ্ছিন্ন হলো।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাকুস্ সহীহাইন’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যদিও হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তদুপরি বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেননি।১৮। উম্মে সালামাহ্ রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“যে কেউ আলীকে মন্দ নামে সম্বোধন করলো সে যেন আমাকেই মন্দ নামে সম্বোধন করলো।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলেছেন। যাহাবীও তাঁর ‘তালখিস’ গ্রন্থে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করেছেন। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩২৩ পৃষ্ঠায় এবং নাসায়ী তাঁর ‘খাসায়েসুল আলাভীয়া’ গ্রন্থের ১৭ পৃষ্ঠায় উম্মে সালামাহ্ হতে এবং অন্যান্য হাদীসবিদগণও এটি বর্ণনা করেছেন। এরূপ অপর একটি হাদীস যা আমর ইবনে শাশ নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন তা হলো : যে কেউ আলীকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল।১৯। নবী (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসে সে যেন আমাকেই ভালবেসেছে,আর যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে সে আমার সঙ্গেই শত্রুতা পোষণ করেছে।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলেছেন। যাহাবীও তাঁর ‘তালখিস’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে বিশুদ্ধ বলেছেন।আলী নিজেও বলেছেন,“সেই সত্তার শপথ,যিনি বীজ অঙ্কুরিত এবং মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করেন,উম্মী নবী (সা.) এই কথা বলেছেন যে,মুমিন ব্যতীত আমাকে (আলীকে) কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে না।”২০। নবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বলেন,يا عليّ أنت سيّد في الدّنيا و سيّد في الآخرة,حبيبك حبِيبِي و حبيبِي حبيب الله و عدوّك عدوّي و عدوّي عدوّ الله و الويل لمن أبغضك بعدي“হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে নেতা,তোমার বন্ধু আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু আল্লাহর বন্ধু। তোমার শত্রু আমার শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে আমার পর তোমার সঙ্গে শত্রুতা করবে।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ বলেছেন।

পবিত্র কিবলা পরিবর্তন দিবসমহানবী (সা.)-এর হিজরতের কয়েক মাস অতিবাহিত না হতেই ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ শুরু হলো। হিজরতের সপ্তদশ মাসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসল কাবাকে কিবলা হিসাবে গ্রহণের এবং নামাযের সময় মসজিদুল হারামের দিকে লক্ষ্য করে নামায পড়ার। বিস্তারিত ঘটনাটি নিম্নরূপ :মহানবী (সা.) মক্কী জীবনের তের বছর বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়েছেন। তাঁর মদীনায় হিজরতের পরও এ নির্দেশ বহাল থাকে। মদীনায় হিজরতের পরও ঐশী নির্দেশ এটি ছিল যে,ইয়াহুদীরা যে কিবলার দিকে ফিরে নামায পড়ে মুসলমানগণও যেন সে দিকে ফিরে নামায পড়ে। এ বিষয়টি কার্যত প্রাচীন ও নবীন এ দু’ ধর্মের নৈকট্য ও সহযোগিতার চি‎‎ হ্ন হিসাবে প্রতীয়মান হতো। কিন্তু মুসলমানদের উন্নতি ও সমৃদ্ধির শঙ্কা ইয়াহুদীদেরকে আচ্ছাদিত করল। কারণ মুসলমানদের উত্তরোত্তর অগ্রগতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই সারা আরব উপদ্বীপে ইসলামের বিজয়ের আলামত বহন করছিল। ইয়াহুদীরা আশংকা করল অচিরেই তাদের ধর্ম বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা বিভিন্নভাবে মহানবী (সা.) ও মুসলমানদের কষ্ট দিতে লাগল। বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বলতে লাগল,মুহাম্মদ দাবি করে যে,সে স্বতন্ত্র এক ধর্ম নিয়ে এসেছে এবং তার আনীত শরীয়ত পূর্ববর্তী সকল ধর্মের সমাপ্তকারী ও স্থলাভিষিক্ত,অথচ সে স্বতন্ত্র কিবলার অধিকারী নয়,বরং ইয়াহুদীদের কিবলার দিকে নামায পড়ে। তাদের এ কথা মহানবীকে বেশ কষ্ট দিত। তিনি মাঝরাত্রিতে গৃহ থেকে বের হতেন এবং আকাশের দিকে তাকিয়ে এ বিষয়ে ওহী আগমনের প্রতীক্ষা করতেন। নিম্নোক্ত আয়াতটি এ কথার সত্যতা প্রমাণ করে :) قد نرى تقلّب وجهك في السّماء فلنولّينّك قبلة ترضها(“ আমরা আকাশের দিকে তোমার অর্থবহ দৃষ্টিসমূহকে লক্ষ্য করেছি। তাই যে কিবলার দিকে তুমি সন্তুষ্ট সে দিকেই তোমার মুখ ফিরিয়ে দেব।” 446পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ থেকে জানা যায় ইয়াহুদীদের আচরণের প্রতিবাদ ছাড়াও কিবলা পরিবর্তনের অন্য কারণও বিদ্যমান ছিল এবং তা হলো মুসলমানদের পরীক্ষা করা। এ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মুমিনদের মিথ্যা ঈমানের দাবিদারদের থেকে পৃথক করা হয়েছিল যাতে রাসূল (সা.) তাদের চিনতে পারেন। কারণ নামাযের মধ্যে ঐশী নির্দেশ মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে নতুন ধর্মের প্রতি ঈমান ও ইখলাসের (নিষ্ঠা) প্রমাণ বহন করে এবং এ নির্দেশের অবমাননা কপটতার চি‎ হ্ন হিসাবে পরিগণিত। পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে এ বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে :) و ما جعلنا القبلة الّتي كنت عليها إلّا لنعلم من يتّبع الرّسول ممّن ينقلب على عقبيه و إن كانت لكبيرة إلّا على الّذين هدى الله(“ তুমি এতদিন যে কিবলার অনুসরণ করছিলে তা এ উদ্দেশ্যে ছিল যে,যাতে আমরা জানতে পারি কে রাসূলের অনুসরণ করে ও কে ফিরে যায়। মহান আল্লাহ্ যাদের সৎ পথে পরিচালিত করেছেন তা ব্যতীত অপরের নিকট এটি নিশ্চয়ই কঠিন।” 447অবশ্য আরব উপদ্বীপ ও ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়নে কিবলা পরিবর্তনের অন্যান্য কারণও জানা যায়।প্রথমত কাবা একত্ববাদের মহান সৈনিক হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে নির্মিত হওয়ায় আরবদের নিকট বিশেষ সম্মানিত ছিল। তাই কাবাকে কিবলা হিসাবে ঘোষণা আরবের সাধারণ মানুষদের সন্তুষ্টির কারণ হয়েছিল এবং তাদেরকে ইসলাম ও ইসলামের একত্ববাদী চিন্তাকে গ্রহণে উৎসাহিত করেছিল। সুতরাং সভ্যতাবিবর্জিত ও একগুঁয়ে মনোভাবের আরব মুশরিকদের ইসলামের প্রতি ঝোঁকানোর এ মহৎ লক্ষ্য কিবলা পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত ছিল। এর ফলেই সারা বিশ্বে ইসলামের প্রসারের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল।দ্বিতীয়ত কাবাকে কিবলা হিসাবে গ্রহণের ফলে ইয়াহুদীদের হতে মুসলমানরা স্বতন্ত্র হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু মদীনার ইয়াহুদীদের ইসলাম গ্রহণের সম্ভাবনা প্রায় বিলীন হয়ে গিয়েছিল সেহেতু এর প্রয়োজন ছিল। তারা প্রতি মুহূর্তেই ষড়যন্ত্র করত এবং জটিল প্রশ্ন উত্থাপনের মাধ্যমে মহানবীর সময় ক্ষেপণ করত। তারা মনে করত এর মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাই কিবলা পরিবর্তন ইয়াহুদীদের প্রত্যাখ্যান ও দূরত্ব সৃষ্টির কারণ হয়েছিল। 10 মুহররম (আশুরার দিন) রোযা রাখার বিধান রহিত হওয়ার লক্ষ্যও এটি ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা রাখত। মহানবী (সা.) এবং মুসলমানগনও এ দিনটিকে স্মরণ করে রোযা রাখতেন। পরবর্তীতে আশুরার রোযা রহিত হওয়ার নির্দেশ আসে এবং রমযান মাসের রোযা ফরয করা হয়।যেহেতু ইসলামের সকল ক্ষেত্রেই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। তাই তার পূর্ণত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সকল দিকেই প্রকাশিত হওয়া আবশ্যক।উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে ভাবতে লাগলেন তাঁদের পূর্ববর্তী নামাযসমূহ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই তখনই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো :) و ما كان الله ليضيع إيمانكم إنّ الله بالنّاس لرءوف رحيم(“ আল্লাহ্ তোমাদের কর্মকে নিষ্ফল করবেন না। নিশ্চয়ই তিনি মানুষের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাময়।” 448মহানবী (সা.) যোহরের নামাযের দু’ রাকাত পড়েছিলেন এমতাবস্থায় জিবরাইল অবতীর্ণ হলেন এবং মহানবীকে ওহীর দ্বারা নির্দেশ দেয়া হলো মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরানোর। কোন কোন হাদীসে এসেছে যে,জিবরাইল (আ.) রাসূলের হাত ধরে মসজিদুল হারামের দিকে ঘুরিয়ে দেন। যে সকল নর-নারী মসজিদে নামাযরত ছিলেন তাঁরাও তাঁর অনুকরণে সে দিকে ঘোরেন। সে দিন থেকেই কাবা মুসলমানদের স্বতন্ত্র কিবলা হিসাবে ঘোষিত হলো

হযরত জয়নাব (সা.আ.)'র ওফাত বার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই শোক ও সমবেদনাহযরত জয়নাব (সা.আ.) এমন এক মহিয়সী রমণী ছিলেন তিনি, যাঁর সম্মান-মর্যাদা আর সাহসী ভূমিকার ঐশ্বর্যে ইসলামের ইতিহাসের পাতা স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে আছে। হযরত জয়নাব (সা.) ষষ্ঠ হিজরীর ৫ই জমাদিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতেমা (সা.) এর তৃতীয় সন্তান। তাঁর জন্মের সময় নবীজী সফরে ছিলেন। তাই তাঁর মা ফাতেমা (সা.) আলী (আ.) কে মেয়ের জন্যে একটা ভালো নাম দিতে বললেন। কিন্তু হযরত আলী (আ.) এটা নবীজীর জন্যে রেখে দিলেন এবং নবীজীর সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন।নবীজী যখন সফর থেকে ফিরে এলেন তখন এই কন্যার জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে বললেন: "আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,এই কন্যার নাম রাখো জয়নাব অর্থাৎ বাবার অলংকার। রাসূলে খোদা (সা.) জয়নাবকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বললেন-সবার উদ্দেশ্যে বলছি,এই মেয়েটিকে সম্মান করবে,কেননা সে-ও খাদিজার মতো।ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সত্যি-সত্যিই জয়নাব (সা.) খাদিজা (সা.) র মতোই ইসলামের দুর্গম পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দ্বীনের সত্যতাকে তুলে ধরার জন্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।জয়নাব (সা.) তাঁর জীবন শুরু করেন এক আধ্যাত্মিকতার পরিবেশপূর্ণ পরিবারে। কেননা এই পরিবার রাসূলে খোদা (সা.),আলী (আ.) এবং ফাতেমা (সা.) এর মতো মহান ব্যক্তিত্ববর্গের অস্তিত্বের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছে, পবিত্র হয়েছে। এঁরা ছিলেন পূত-পবিত্র জীবনের অধিকারী এবং মানবীয় মর্যাদা ও ফযিলতের গোড়াপত্তনকারী। জয়নাব (সা.) সেই শিশুকাল থেকেই প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন এবং আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ মনের অধিকারী ছিলেন। সেই ছোট্ট বেলায় তিনি একবার তাঁর মা ফাতেমা (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ একটা ধর্মীয় ভাষণ শুনেছিলেন। সেই ভাষণ তাঁর মুখস্থ হয়ে যায় এবং পরবর্তী ঐ ভাষণের একজন বর্ণনাকারী হয়ে যান তিনি। তাঁর এই সচেতনতার জন্যে এবং তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তির জন্যে বয়সকালে তাঁকে সবার কাছেই 'আকিলা' উপাধিতে পরিচিত ছিলেন। আকিলা মানে হলো বুদ্ধিমতী ও চিন্তাশীল রমণী।তাঁর জীবনে বিপদের ঘূর্ণিঝড় অতি দ্রুতই ঘনিয়ে আসে। তিনি শিশু বয়সে প্রিয় নানা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে হারান। তার অল্প পরেই হারান মা ফাতেমা (সা.) কে। এরপর তাঁকে লালন পালন পরার দায়িত্বভার অর্পিত হয় প্রিয় পিতা হযরত আলী (আ.) এর ওপর। পিতার তীক্ষ্ম জ্ঞান-গরিমা, আধ্যাত্মিকতা,নীতি-নৈতিকতা আর সচেতন প্রজ্ঞার ঐশ্বর্যে নিজেও সমৃদ্ধি অর্জন করেন এবং এভাবেই তিনি বেড়ে ওঠেন। যে সময়টায় অধিকাংশ নারীই ছিল প্রায় মূর্খ এবং নিরক্ষর,সে সময়টায় হযরত জয়নাব (সা.) ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং তাঁর জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার কথা সবার কানে পৌঁছে যায়। তাঁর প্রশিক্ষণ ক্লাসে কোরআন তাফসিরের ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্যে নারীরা ছিল উদগ্রীব। তিনি যতদিন মদিনায় ছিলেন ততদিন মদিনার মানুষ তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় এবং যখন তিনি কুফায় অবস্থান করেছিলেন তখনো তিনি সেখানকার জনগণকে জ্ঞানের মহিমায় উদ্ভাসিত করেন।জয়নাব (সা.) যখন বিয়ের বয়সে উপনীত হন, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ছিলেন সে সময়কার আরবের একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু জয়নাব (সা.) কখনোই বস্তুতান্ত্রিক জীবনের সাথে নিজেকে জড়ান নি। উন্নত চিন্তাদর্শের অধিকারী ছিলেন বলে তিনি বস্তুতান্ত্রিক জীবনের বৃত্তে নিজেকে আবদ্ধ করেন নি। তিনি শিখেছিলেন,কখনোই এবং কোনোভাবেই অত্যাচারীদের লোভনীয় মোহের কাছে সত্যের মহামূল্যবান সম্পদকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। সে জন্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথে দ্বীনকে উজ্জীবিত রাখার সংগ্রামে এবং সমাজ সংস্কারের পথে আত্মনিয়োগ করবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিয়ের সময় জয়নাব (সা.) শর্ত দিয়েছিলেন যে তিনি সারাজীবন তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এর পাশে থাকবেন। আব্দুল্লাহও তাঁর এই শর্ত মেনে নিয়েছিলো। সেজন্যেই তিনি ইমাম হোসাইন (আ.) এর মদিনা থেকে কারবালায় ঐতিহাসিক সফরকালে তাঁর সাথে গিয়েছিলেন এবং অত্যাচারী উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।হযরত জয়নাব (সা.) র ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হবার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ালেখা করা এবং নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যদের বন্দী হবার ঘটনা নিয়ে পড়ালেখা করা। ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে জয়নাব (সা.) র ভূমিকা আজো জ্বলজ্বল করছে। তাঁর মাঝে ছিল নজিরবিহীন এক ব্যক্তিত্ব,আল্লাহকে তিনি যে কতোটা গভীরভাবে চিনেছিলেন,তা তাঁর ব্যক্তিত্বের মাঝে তাঁর কর্মতৎপরতায় ফুটে উঠতো। আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আকর্ষণ। নামায বা আল্লাহর স্মরণই ছিল তাঁর মানসিক প্রশান্তির কারণ। আল্লাহর নূর তাঁর অন্তরে এতোবেশি আলোকিত ছিল যে দুনিয়ার কোনো দুঃখ-কষ্টই তাঁর কাছে ততোটা গ্রাহ্য ছিল না।মনোবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,রাগের সময় বা গভীর অনুভূতিশীল কোনো মুহূর্তে মানুষ তার ভেতরে যা লুকায়িত আছে সেসব প্রকাশ করে ফেলে। হযরত জয়নাব (সা.) ও তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এবং তাঁর প্রিয়জনদের শাহাদাতের পর কঠিন সেই মুহূর্তে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে,বীরত্বের সাথে এবং সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য রেখেছিলেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর যে গভীর আস্থা এবং নির্ভরশীলতা,তাঁর ভেতরে যে স্বাভাবিক ধৈর্যশক্তি,সেসবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি। তিনি রক্তপিপাসু উমাইয়া শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নবীজীর আহলে বাইতের সত্যতাকে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিজয় হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। ইয়াজিদের দরবারে যিনি যেরকম ওজস্বিতার সাথে বক্তব্য রেখেছেন,তা সবার অন্তরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে,আলী (আ.) এর স্মৃতিকে সবার সামনে জাগ্রত করে তুলেছিল। তিনি সবসময় কোরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখতেন যাতে প্রামাণ্য হয়।ইবনে কাসির নামে একজন বাকপটু আরব ছিলেন। তিনি জয়নাব (সা.) এর বক্তৃতা শুনে এতোবেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েন যে, একবার কাঁদতে কাঁদতে উচ্চস্বরে বলেছিলেন: "আমার বাবা-মা তোমার জন্যে উৎসর্গিত, তোমার গুরুজনেরা সবচেয়ে উত্তম মুরব্বি,তোমাদের শিশুরা সবচেয়ে ভালো এবং তোমাদের রমণীরা সর্বোত্তম নারী। তোমাদের বংশ সকল বংশের উপরে এবং কখনোই পরাজিত হবে না।" হযরত জয়নাব (সা.) তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ.) থেকে শুনেছিলেন যে, মানুষ ঈমানের হাকিকত উপলব্ধি করতে পারে না,যতক্ষণ না তার মাঝে তিনটি বৈশিষ্ট্য না থাকে। দ্বীনের ব্যাপারে সচেতনতা,দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করা এবং সৎ জীবন যাপন করা। এই মহিয়সী নারী কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ধৈর্যের অলংকার দিয়ে তিনি তাঁর মন এবং আত্মাকে সাজিয়েছেন। জয়নাব (সা.) র দৃষ্টিতে সত্যের পথে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর পথে জীবন বিলানো এমন এক সৌন্দর্য যেই সৌন্দর্য মানবতার চিরন্তন প্রশংসার দাবিদার। এজন্যেই তিনি আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনার পর অত্যাচারী শাসকদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন-"আমি তো সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছু দেখি না।" হযরত জয়নাব (সা.আ.) এর ওফাত বার্ষিকীতে আমাদের উচিত তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে সাহস সঞ্চয় করা। নিজের জীবনকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে নির্বিঘ্নে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। কায়েমি স্বার্থবাদীদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে কোনোরকম আপোষ না করার শিক্ষা লাভ করা এবং পার্থিব জগতের ধন-সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পরকালীন স্বার্থকে জীবনের সর্বোত্তম প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা অর্জনের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া। সকল কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দিন।# এলাহী আমিনআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজিজ ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

রাসুল(সাঃ) এবং আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর(আঃ) স্মরণীয় বানীমহানবী (সা.) বলেন : মুমিনকে কোন কাঠিন্য, অসুস্থতা ও দুঃখ স্পর্শ করলে তাতে যদি তার সামান্য কষ্টও হয় আল্লাহ্ সেটির বিনিময়ে তার পাপসমূহ খণ্ডন করেন।মহানবী (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি ইচ্ছামতো খায়, ইচ্ছামতো পরিধান করে আর ইচ্ছামতো বাহনে আরোহণ করে, আল্লাহ্ তার ওপর অনুগ্রহের দৃষ্টি ফেলেন না যতক্ষণ না সে তা হারায় কিংবা বর্জন করে (এবং তওবা করে)।মহানবী (সা.) বলেন : মুমিন হলো একটি গমের শীষের মতো যা কখনো মাটিতে নুয়ে পড়ে আবার কখনো স্বীয় পায়ে দাঁড়ায়। আর কাফের হলো শক্ত গাছের মতো যা সর্বদা দণ্ডায়মান থাকে এবং কোনো সংবেদনের অধিকারী নয় (যে, ন্যায়ের কাছে মাথানত করবে)।তাঁকে (মহানবীকে) প্রশ্ন করা হলো : মানুষের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন? উত্তরে তিনি বললেন : নবীগণ, অতঃপর সত্যপথে তাঁদের অনুরূপ ও সদৃশতমগণ। আর মুমিন তার ঈমানের মাত্রা অনুযায়ী এবং সৎকর্মের পরিমাণ অনুযায়ী পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যখন তার ঈমান সঠিক এবং কর্ম সৎ হবে তখন তার পরীক্ষাও কঠিনতর হবে। আর যার ঈমান নিকৃষ্ট আর কর্ম দুর্বল হবে তার পরীক্ষাও কম হবে।ইমাম আলী (আ.) বলেন : বিবেকবানের সাথে চলাফেরায় কোনো ভয় নেই। তার মর্যাদা থেকে লাভবান না হলেও তার বুদ্ধি থেকে লাভবান হবে। আর তার খারপ চরিত্র থেকে দূরে থাকবে। সম্মানীয় লোকের সাহচর্য বর্জন কর না। আর যদি তার বুদ্ধি থেকে কোনো উপকার লাভ না-ও কর তবু তোমার বুদ্ধি দ্বারা তার সম্মান থেকে লাভবান হও। আর যথাসম্ভব ধিকৃত আহম্মক থেকে পলায়ন করবে।ইমাম আলী (আ.) বলেন : হে লোকসকল! আল্লাহর থেকে ইয়াকীন কামনা কর। আর সুস্থতার প্রতি সচেতন হও। কারণ, সর্বোত্তম নেয়ামত হলো সুস্থতা। আর সুন্দরতম জিনিস যেটা অন্তরে স্থায়ী হয় তা হলো ইয়াকীন। লোকসানকারী হলো সেই ব্যক্তি যে দীনের ক্ষেত্রে লোকসান করে। আর গর্ব করতে হয় তাকে নিয়ে যার সুন্দর ইয়াকীন রয়েছে।ইমাম আলী (আ.) বলেন : জিহ্বা হলো একটি দাঁড়িপাল্লা, অজ্ঞতা একে হালকা করে আর বুদ্ধি একে ভারী করে।ইমাম আলীর নিকট আরজ করা হলো : প্রকৃত তওবা কী? তিনি উত্তর দিলেন : অন্তর দিয়ে অনুশোচনা, জিহ্বা দ্বারা ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা আর সে কাজে প্রত্যাবর্তন না করার দৃঢ় সংকল্প।মহানবী (সা.) বলেন : যদি আল্লাহর নিকট দুনিয়া (র মূল্য) একটি মশার ডানার সমানও হতো তাহলে কাফের ও মুনাফিকদেরকে (তিনি) কিছু প্রদান করতেন না।মহানবী (সা.) বলেন : দুনিয়া পরিবর্তনশীল (এক হাত থেকে আরেক হাতে আবর্তনশীল)। যা কিছু তোমার প্রাপ্য সেটা তোমার শত অক্ষমতা সত্ত্বেও অর্জিত হয়। আর (দুনিয়ার) যা কিছু তোমার জন্য অনিষ্টকর সেটা তুমি তোমার শক্তি দ্বারা প্রতিহত করতে পারবে না। যে ব্যক্তি তার হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে তার শরীর আরামে থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তার জন্য যা কিছু বরাদ্দ করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার চোখ উজ্জ্বল হয়।মহানবী (সা.) বলেন : আল্লাহ্ দু’টি স্বরকে ঘৃণা করেন : বিপদের সময় চিৎকার করে কান্নাকাটি করা আর নেয়ামত লাভ ও খুশির সময় বাঁশি বাজানো (গান-বাজনা করা)।ইমাম আলী (আ.) বলেন : তোমার ভাইয়ের জন্য তোমার সম্পদ ও জীবন দাও আর তোমার শত্রুর সাথে ন্যায্য আচরণ ও ন্যায়বিচার কর আর সকল মানুষের প্রতি তোমার সদ্ব্যবহার ও সদাচার প্রদর্শন কর। আর লোকজনকে সালাম দাও যাতে তারা তোমাকে সালাম দেয়।ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : তিনটি জিনিস মমতা আনে : দীন, বিনয় আর দান।ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : যে ব্যক্তি তিনটি থেকে বিরাগ হয় সে তিনটি জিনিসে উপনীত হয়। যে মন্দ কাজ থেকে বিরাগ হয়, সে সম্মান পায়, যে অহংকার থেকে বিরাগ হয়, সে মর্যাদা পায় আর যে কৃপণতা থেকে বিরাগ হয় সে আভিজাত্য পায়।ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : তিনটি জিনিস শত্রুতা আনে : কপটতা, জুলুম আর স্বার্থপরতা।অনুবাদ : আব্দুল কুদ্দুস বাদশা(তুহাফুল উকুল থেকে সংকলিত

মাওলা মোহাম্মদ (সা) প্রিয়তম শ্রেষ্ঠ অনুসারী ও উয়াসি উনার পবিত্র সাবে নুজুলসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই 🎂🎂🎂🎂🎂ঈদ মোবারক 🎂🎂🎂🎂🎂পবিত্র ১৩ রজব তথা আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি অশেষ শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা মুবারকবাদ। হযরত আলী-আ. ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'এর পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি ছিলেন মহানবীর (সা) পরপরই তাঁর ঘোষিত মুসলমানদের প্রধান নেতা বা উত্তরসূরি, চাচাতো ভাই এবং প্রিয়তম কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমার স্বামী ও বেহেশতি যুবকদের দুই নেতা ইমাম হাসান ও হুসাইনের পিতা।তিনি ছিলেন মহানবীর (সা) পরপরই তাঁর ঘোষিত মুসলমানদের প্রধান নেতা বা উত্তরসূরি, চাচাতো ভাই এবং প্রিয়তম কন্যা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমার স্বামী ও বেহেশতি যুবকদের দুই নেতা ইমাম হাসান ও হুসাইনের পিতা।মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র একটি হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আলী(আ.)-কে পুরোপুরি বা পরিপূর্ণভাবে চেনেন কেবল আল্লাহ ও তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সা.) এবং আল্লাহ ও তাঁর সর্বশেষ রাসূল (সা.)-কে ভালভাবে চেনেন কেবল আলী (আ.)।হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে রাসূলে পাক (সা:) বলেছেন, মুসার সাথে হারুনের যে সম্পর্ক তোমার সাথে আমার সেই সম্পর্ক, শুধু পার্থক্য হল হারুন (আঃ) নবী ছিলেন, তুমি নবী নও।মহানবী (সা:) আরো বলেছেন: হে আম্মার! যদি দেখ সমস্ত মানুষ একদিকে চলে গেছে, কিন্তু আলী চলে গেছে অন্য দিকে, তবুও আলীকে অনুসরণ কর, কারণ, সে তোমাকে ধ্বংসের দিকে নেবে না। -মাওলা মোহাম্মদ (সা:) আরো বলেছেন:* আমি আলী থেকে, আর আলী আমার থেকে, যা কিছু আলীকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা কিছু আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকে কষ্ট দেয়।* হে আলী! ঈমানদার কখনও তোমার শত্রু হবে না এবং মোনাফেকরা কখনও তোমাকে ভালবাসবে না।- অনেক সাহাবী এ হাদিসের ভিত্তিতেই মোনাফেকদের সনাক্ত করতেন। রাসূলে পাক (সা:)'র স্ত্রী আয়েশা বিনতে আবুবকর হযরত আলী (আঃ)'র শাহাদতের খবর শুনে বলেছিলেন, "হে রাসূল! আপনার সবচেয়ে প্রিয়পাত্র শাহাদত বরণ করেছেন। এমন এক ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন যিনি ছিলেন রাসূল (সা:)'র পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।-আর এইসব বাণী থেকে এটা স্পষ্ট যে আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.) ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র মহত ও সুন্দর ব্যক্তিত্ব এত বিশাল বিস্তৃত ও এত বিচিত্রময় যে একজন মানুষের পক্ষে তাঁর সব বৈশিষ্ট্য ও পরিধি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করাও সম্ভব নয়। মানুষের মনে উত্তেজনা ও প্রভাব সৃষ্টিতে আমিরুল মু' মিনিন আলী (আ.)'র সুবিশাল ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব ইতিহাসে দখল করে আছে অনন্য ও শীর্ষস্থানীয় অবস্থান। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পর এ ব্যাপারে তিনি সত্যিই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে তথা হিজরি সপ্তম শতকে মুহাম্মাদ ইবনে শাহরাসুব আল-মাজান্দারানি নামের একজন মুসলিম পণ্ডিত ছিলেন। তার লাইব্রেরিতে " মানাকিব" বা "মহত গুণাবলী' শীর্ষক এক হাজার বই ছিল। আর এসবগুলোই ছিল হযরত আলী (আ.)'র মহত গুণাবলী সম্পর্কে লিখা।ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট সূফী সাধক ও চিশতিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা খাজা মুঈনউদ্দিন চিশতী (র.) বলেছেন,সমুদ্রকে যেমন ঘটিতে ধারণ করা অসম্ভব তেমনি বর্ণনার মাধ্যমে আলী (আ.)'র গুণাবলী তুলে ধরাও অসম্ভব। হযরত আলী (আ.)'র চরিত্রে আমরা দেখতে পাই একজন দার্শনিকের বৈশিষ্ট্য, একজন বিপ্লবী নেতার বৈশিষ্ট্য, একজন সূফী শায়খের বৈশিষ্ট্য এবং নবী-রাসূলদের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ থাকে তারও অনেক বৈশিষ্ট্য।হযরত আলী (আ) রাতে যখন তিনি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতেন তখন আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকত না। আবার দিনে ছিলেন জনগণের মাঝে কর্মমুখর। দিনের বেলায় জনগণ তাঁর দয়া ও সততায় মুগ্ধ হতেন আর তাঁর উপদেশ, পরামর্শ ও জ্ঞানপূর্ণ কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। অন্যদিকে রাতে আকাশের তারকারাজি দেখত হযরত আলী (আ.) কিভাবে আল্লাহর ইবাদতে অশ্রু বিসর্জন করছেন আর আকাশ তাঁর প্রেমপূর্ণ মুনাজাত শুনত।হযরত আলী (আ.) একাধারে একজন জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ, রহস্যবাদী ব্যক্তি, সমাজের নেতা, আত্মসত্তা বিসর্জনকারী ব্যক্তি, মুজাহিদ, বিচারক, শ্রমিক, একজন বাগ্মী ও লেখক। তাঁর সব আকর্ষণীয় গুণ নিয়ে তিনি ছিলেন পূর্ণতার সব অর্থেই একজন পূর্ণাঙ্গ মানব।আলী (আ.) এমন এক নাম যাঁর নাম উচ্চারণ ও যাঁর বরকতময় জীবনের আলোচনা মানুষের ঈমানকে তাজা করে দেয়। রাসূল (সা.) বলতেন, আলীর দিকে তাকানোও ইবাদত। হযরত আলী (আ.)'র আকাশ-ছোঁয়া বীরত্ব ও মহত্ত্ব কেবল মুসলিম কবি, সাহিত্যিক বা মনীষীদেরই প্রভাবিত করেনি, অমুসলিম পণ্ডিতরাও তার সুবিশাল ব্যক্তিত্বের ব্যাপকতায় অভিভূত ও হতবাক হয়েছেন। তাঁর মহত্ত্ব ও উদারতার প্রশংসা করে আর ডি ওসবোর্ন বলেছেন, আলী (আ.) ছিলেন মুসলমানদের ইতিহাসের সর্বোত্তম আত্মার অধিকারী সর্বোত্তম ব্যক্তি।ওয়াশিংটন আরভিং বলেছেন, "সব ধরনের নীচতা ও কৃত্রিমতা বা মিথ্যার বিরুদ্ধে আলী (আ.)'র ছিল মহত সমালোচনা এবং আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক সব ধরনের কূটচাল থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছিলেন।"ঐতিহাসিক মাসুদির মতে, রাসূল (সা.)'র চরিত্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিল যার ছিল তিনি হলেন আলী (আ.)। আমীরুল মুমিনীন আলী সম্পর্কে মাওলানা রুমী লিখেছেন, “সাহসিকতায় তুমি ছিলে খোদার সিংহ তা জানি/পৌরুষত্বে আর বদান্যতায় কি তুমি তা জানেন শুধুই অন্তর্যামী।”হযরত আলীর (আ.) ফজিলত ও উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে মহানবীর যত প্রামাণ্য হাদিস রয়েছে অন্য কোনো সাহাবি সম্পর্কে এত হাদিস নেই। মহানবী (সা) আলী (আ)-কে তাঁর জ্ঞান নগরীর ত্বোরণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, আমি যাদের নেতা ও অভিভাবক আমার পরে আলীই তাদের অভিভাবক বা মাওলা। অর্থাৎ আমি যেমন উম্মতের মাওলা বা প্রধান তেমনি আমার পরে আলীই উম্মতের প্রধান। বিদায় হজের পর গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে তিনি এই সম্মাননা প্রদান করেন আলীকে। সেদিন তিনি আলীর মাথায় নিজের পাগড়ি পরিয়ে দেন এবং তিন দিন ধরে চলা উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুসলমানদের সবাই আলী-আ.'র হাতে আগাম বাইয়াত করেছিলেন। মহান আল্লাহর নির্দেশে মদিনার পবিত্র মসজিদের সঙ্গে যুক্ত সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হলেও একমাত্র মহানবী (সা.) ও হযরত আলীর বাসস্থানের দরজাকে এর ব্যতিক্রম রাখা হয়।মদিনায় সব মুহাজির একজন আনসার বা কোনো বিশিষ্ট সাহাবির সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং মহানবী-সা নিজে আলীর সঙ্গেই এই ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।একবার মহানবীর কাছে বেহেশতি পাখির গোশত পাঠানো হয় মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ সময় মহানবী সা. বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমার উম্মতের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠান যাতে আমি তাকে নিয়ে এই গোশত খেতে পারি। দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন হযরত আলী। কাফির শক্তিগুলোর সম্মিলিত বাহিনীর মোকাবেলায় খন্দক বা আহযাবের যুদ্ধে হযরত আলীর তরবারির একটি বিশেষ আঘাতকে মহানবী-সা. জিন ও ইনসানের সমস্ত ইবাদতের চেয়েও বেশি মূল্যবান বলে মন্তব্য করেছিলেন। কাফির পক্ষের প্রধান যোদ্ধাকে আলী-আ. ওই আঘাতে ধরাশায়ী করেন। ওই প্রধান যোদ্ধাকে হারাতে না পারলে গোটা ইসলামের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসত। ওই মল্ল যুদ্ধকে গোটা শিরকের সঙ্গে গোটা ইসলামের লড়াই বলেও মহানবী উল্লেখ করেছিলেন।হযরত আলী ছিলেন মহানবীর জীবদ্দশায় সংঘটিত ইসলামের প্রায় প্রতিটি যুদ্ধের প্রধান বীর। খাইবারের দুর্গগুলো বিশেষ করে কামুস দুর্গ বিজয়ে মুসলিম সেনাপতিদের একে একে ব্যর্থতার পর মহানবী-সা. বলেছিলেন, কাল আমি এমন একজনের হাতে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব তুলে দেব যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালবাসেন এবং সেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে।- হযরত আলীর নেতৃত্বে মুসলমানরা ওই যুদ্ধে জয়ী হন এবং যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত আলী কামুস দুর্গের অত্যন্ত ভারী লৌহ-দ্বার উপড়ে ফেলে তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ করা হয় পরে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি তা নাড়াতেও সক্ষম হননি।মহানবীর হিজরতের রাতে আলী-আ. মহানবীর বিছানায় শুয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রিয় নবীজীর জীবন রক্ষা করেছিলেন। হযরত আলীই পুরুষদের মধ্যে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মুসলমান।হযরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, আলীর চারটি গুণ ছিল যা অন্য কারো ছিল না। আরব ও অনারবের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূলের সাথে সালাত আদায় করেছেন। দ্বিতীয়ত: প্রত্যেক জিহাদেই তাঁর হাতে ঝাণ্ডা থাকতো। তৃতীয়ত: লোকেরা যখন রাসূলের কাছ থেকে দৌড়ে পালিয়ে যেত তখনও আলী তাঁর পাশেই থাকতো। চতুর্থত: আলীই রাসূল (সা:)কে শেষ গোসল দিয়েছিলেন এবং তাঁকে কবরে শায়িত করেছিলেন।উমর ইবনে খাত্তাব আলী (আ.)'র পরামর্শ ও জ্ঞানগত সহযোগিতার কাছে নিজের ঋণ স্বীকার করে বলেছেন,"আলী ইবনে আবি তালিবের মত আরেকজনকে গর্ভে ধারণ ও প্রসব করার ক্ষমতা নারীকুলের কারো নেই। আলী না থাকলে উমর ধ্বংস হয়ে যেত।"মহানবী যে কোনো সফরে গেলে বিদায় নেয়া উপলক্ষে সবার শেষে সাক্ষাৎ করতেন হযরত আলীর সঙ্গে এবং সফর থেকে ফিরে এসে সবার আগে সাক্ষাৎ করতেন হযরত আলী আঃ সঙ্গে । কখনও কখনও তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আলীর সঙ্গে আবারও সাক্ষাত ছাড়া আমার মৃত্যু দিও না!রমজানের প্রাক্কালে এক ভাষণে মহানবী-সা হযরত আলীর শাহাদাতের ভবিষ্যদ্বাণী করে খুব কাঁদেন। পবিত্র হজের সময় কাফির মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের আয়াত নাজিল হলে মহানবী-সা. মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত আলীকে হজ-সমাবেশে ওই আয়াত পড়ে শোনানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। হযরত আলীও মহানবীর মতই শৈশবে কখনও মূর্তিপূজা করেননি এবং জীবনে কখনও মদ পান করেননি। অথচ অন্য অনেক বড় সাহাবি এই গৌরবের অধিকারী নন। মহানবী নিজেই শিশু আলীকে ছয় বছর বয়স থেকে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করেন এবং তাঁকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তোলেন। জীরার ইবনে হামজা তাঁর প্রিয় নেতার গুণাবলী তুলে ধরতে গিয়ে বলেছিলেন, "আলীর ব্যক্তিত্ব ছিল সীমাহীন, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন দোর্দণ্ড, তাঁর বক্তব্য ছিল সিদ্ধান্তমূলক, তাঁর বিচার ছিল ন্যায়ভিত্তিক, সব বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল, তাঁর প্রতিটি আচরণে প্রজ্ঞা প্রকাশিত হত। তিনি মোটা বা সাদামাটা খাদ্য পছন্দ করতেন এবং অল্প দামের পোশাক পছন্দ করতেন। তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সম্বোধন করে কিছু বলতে ও প্রথমে কথা বলতে আমরা ভয় পেতাম না। তাঁর হাসিতে মুক্তা ছড়িয়ে পড়তো। তিনি ধার্মিকদের খুব সম্মান করতেন। অভাবগ্রস্তের প্রতি খুবই দয়ালু ছিলেন। এতিম, নিকট আত্মীয় ও অন্নহীনকে খাওয়াতেন, বস্ত্রহীনে বস্ত্র দিতেন ও অক্ষম ব্যক্তিকে সাহায্য করতেন। তিনি দুনিয়া ও এর চাকচিক্যকে ঘৃণা করতেন । আমি আলী ইবনে আবি তালিবকে গভীর রাতে বহুবার মসজিদে দেখেছি যে তিনি সাপে কামড় খাওয়া মানুষের মত আর্তনাদ করে শোকাহত লোকের কেঁদে বলতেন, হে দুনিয়া, আমার কাছ থেকে দূর হও! আমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করো না!" .. এরপর জীরার বলেন, আলী (আঃ)'র অনুপস্থিতিতে আমি সেই মহিলার মতো শোকাহত যার সন্তানকে তার কোলে রেখে কেটে ফেলা হয়েছে।শাহাদত-প্রেমিক আলী(আ.) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তাঁর সঙ্গীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, সবাই কাঁদছে, চারিদিকে ক্রন্দনের শব্দ, কিন্তু আলী (আ.)-এর মুখ হাস্যোজ্জ্বল। তিনি বলছেন, “আল্লাহর শপথ! আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম কি হতে পারে যে, ইবাদতরত অবস্থায় শহীদ হব?”পবিত্র কাবা-ঘরে জন্ম-নেয়া আলী (আ.) ছিলেন সব ধরণের মানবিক মূল্যবোধের ময়দানে বিজয়ী বীর। মানবতার সবগুলো ময়দানেই তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ মহামানব।সবশেষে হযরত আলী (আঃ)’র জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা জানিয়ে এ মহাপুরুষের কয়েকটি একটি অমূল্য বাণী তুলে ধরছি: “প্রকৃত জীবন হচ্ছে মৃত্যুবরণের মাধ্যমে জয়ী হওয়া। আর প্রকৃত মৃত্যু হলো বেঁচে থেকেও নিকৃষ্ট ব্যক্তির অধীনে থাকা।”#আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

১ম ইমাম,হাফিজ ই কুরান,২৩ বছরের কুরান লেখক হযরত আলীর(আঃ) শানে রাসুল(সাঃ) এর কয়েকটি হাদীছ১)রাসুলের(সাঃ) হারুনঃ‘হে আলী! তুমি আমার কাছে সেরুপ যেরুপ ছিল হারুন,মুসার কাছে।কেবল আমার পরে কোন নবী আসবে না’।(সুত্রঃছহি বুখারিঃ৬/৩,মুঃ১৩১৪ তাবুকের যুধ্ব অধ্যায়,সহি মুসলিম ৭/১২০ আলীর ফাজাইল অধ্যায়,সুনানে ইবনে মাজা ১/৫৫, ফাযায়েলে আসহাবে নবী অধ্যায়ে,মুসনাদ ইবনে আহমদ ১/১৭৩,১৭৫, ১৭৭, ১৭৯, ১৮২,১৮৫ এবং ২৩০)।২)রাসুলের(সাঃ) স্থলাভিষিক্তঃজেনে রেখো যে,আলী তোমাদের মাঝে আমার ভাই,উত্তরসুরী এবং স্থলাভিষিক্ত। সুতরাং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং তার আনুগত্য করবে।(সুত্রঃতারীখে তাবারী,২/২১৭,আল কামিল ফিল তারীখ ২/৬৪,মাআলিমুত তানযিল ৪/২৭৮)।৩)জ্ঞানের নগরীর দরওয়াযাঃ‘আমি সমস্ত জ্ঞানের নগরী আর আলী তার দ্বার।কাজেই যে এই নগরীতে প্রবেশ করবে তাকে দ্বার দিয়েই আসতে হবে ’।(সুত্রঃ তারীখে বাগদাদ১১/৪৯-৫০,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৭/৩৭২,আল-মুস্তাদরাকে হাকেম ৩/১২৬-১২৭,জামেউল উসুল ৯ঃ৪৭৩/৬৪৮৯,আল জামেউস সাগীর ১ঃ৪১৫/২৭০৫)।৪)সর্বপ্রথম নামাযীঃ‘সর্বপ্রথম যে আমার সাথে সালাত আদায় করেছে সে হলো আলী’।(সুত্রঃকানযুল উম্মাল, ১১ঃ৬১৬/৩২৯৯২,আলে ফেরদৌস ১ঃ২৭/৩৯)।৫)কেয়ামতের দিন বিজয়ীঃযেমন এরশাদ হচ্ছে, “অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সেরা”(সুরা আল-বায়িনাহঃ৭)।হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রাঃ) বলেছেন,যখন উক্ত আয়াত নাজিল হলো তখন রাসুল(সাঃ)হযরত আলী(আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বললেন,”এই আয়াতের সাক্ষ্য প্রমান আলী তুমি এবং তোমার শিয়ারা(অনুসারীরা),তোমরা কিয়ামতের দিন আসবে তোমাদের ব্যাপারে রাজি হবেন এবং তোমরা আল্লাহর উপর রাজি হবে এবং তোমাদের শত্রুর কালো মুখ ও বিশ্রী চেহারা নিয়ে আসবে”।(সুত্রঃতাফসীরে দুররে মনসুর,খঃ৬,পৃঃ৩৭৯;আরজাহুল মাতালেব,পৃঃ১২২,৮৭৭(উরদু);নুরুল আবসার,পৃঃ৭৮,১১২;ফুসুলুল মোহিম্মা, পৃঃ১২৩;শাওয়াহেদুত তানজিল,খঃ২।পৃঃ৩৫৬;মুসনাদে হাম্বাল,খঃ৫,পৃঃ২৮তারিখে বাগদাদ,খঃ১২,পৃঃ২৮৯;ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত,পৃঃ৬২, আল ফেরদৌস ৩ঃ৬১/৪১৭২)।৬)অন্তরসমুহের কা’বা স্বরুপঃরাসুল(সাঃ) ইমাম আলী(আঃ)কে বলেনঃ ‘তুমি কা’বার ন্যায়।সবাই তোমার কাছে আসে কিন্তু তুমি কারো কাছে যাও না।(সুত্রঃউসুদুল গবাহ ৩১৪৬)।৭)রাসুলের(সাঃ) উত্তরসুরীরাসুল(সাঃ) হযরত আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেনঃ ‘ এ হলো আমার ভাই,আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলিফা।তার নির্দেশের প্রতি করনপাত করো এবং তার আনুগত্য করো।(সুত্রঃতারীখে তাবারী ২ঃ৩৩১,মাআলিমুত তানযিল ৪ঃ২৭৯,কানযুল উম্মাল ১৩ঃ১৩১)।৮)হেদায়াতের পতাকারাসুল(সাঃ) বলেন, ‘বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ব হয়েছেন।অতঃপর আমাকে বলেছেনঃনিশ্চয়ই আলী হলো হেদায়াতের পতাকা,ঈমানের শীষ্র চূড়া,আমার বন্ধুগনের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরুপ।(সুত্রঃহিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১ঃ৬৬,শারহে নাহজুল বালাগাহ-ইবনে আবীল হাদীদ ৯ঃ১৬৮)।৯)সর্বপ্রথম মুসলমানরাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যাক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহন করেছে।আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব।(সুত্রঃআল-মুস্তাদরাক-হাকেম ৩ঃ১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩ঃ২৭,২৮;উসুদুল গাবাহ ৪ঃ১৮;তারীখে বাগদাদ ২ঃ৮১)।১০)নবীকুলের সার নির্যাসরাসুল(সাঃ) বলেনঃ ‘যে ব্যাক্তি আদমকে তার জ্ঞানে,নুহকে তার ধীশক্তিতে, ইব্রাহীমকে তার দুরদরশিতায়,ইয়াহিয়াকে তার সংযমশীলতায় আর মুসা ইবনে ইমরানকে তার সাহসিকতায় দেখতে চায় সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি লক্ষ্য করে।(ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব-ইবনে আসাকির ২ঃ২৮০/৮১১,আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭ঃ৩৬৯)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

আহলে সুন্নাতের পরিচিতিমুসলমানদের সেই বৃহৎ ফেরকা যা পৃথিবী জুড়ে মুসলমানদের সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ এবং চারজন ইমাম তথা আবু হানিফা, মালিক, শাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বলের তাকলীদ করেন এবং তাদেরই ফতোয়া অনুসারে আমল করে থাকেন।পরবর্তীতে এই ফেরকার আরো একটি শাখা বেরিয়েছে যাকে ‘সালফিয়া’ বলা হয়। তার রূপরেখা ইবনে তাইমিয়া নির্ধারণ করেছেন, সে জন্যই এরা ইবনে তাইমিয়াকে ‘মুজাদ্দেদুস সুন্নাহ্’ বলে থাকেন। তারপর ‘ওয়াহাবী’ ফেরকা সৃষ্টি হল, এই ফেরকার প্রবর্তক হলেন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব এবং এটিই হল সাউদী আরবের বর্তমান মাযহাব।আর এরা সকলেই নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলে থাকেন আবার কখনো “ওয়াল জামায়াত” শব্দটিও বর্ধিত করে নেন এবং এদেরকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ নামে ডাকা হয়।ঐতিহাসিক আলোচনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আহলে সুন্নাত যেটিকে খেলাফতে রাশেদা বা খোলাফায়-এ-রাশেদীন বলে থাকেন, সেটি “আবু বকর, উমর, উসমান” এবং আলীর খেলাফতকে বুঝায় (পরবর্তী আলোচনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হযরত আলীকে প্রথম দিকে খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে গণ্য করতেন না। বরং এক দীর্ঘ সময়ের পর গণ্য করা শুরু করেছেন)। আহলে সুন্নাত তাঁর ইমামতকে স্বীকার করেন, স্বয়ং তাঁর যুগেও তাঁকে ইমাম স্বীকার করতেন এবং আজকের যুগেও তাঁকে ইমাম মান্য করেন।আর যে বা যারা খেলাফতে রাশেদাকে অস্বীকার করে, উহাকে শরীয়াত বহিঃর্ভূত গণ্য করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত আলীর খেলাফতকে প্রমান করে, সে হলো ‘শীয়ানে আলী’ আর্থাৎ আলীর অনুসারী’।ইহাও স্পষ্ট যে, আবু বকর হতে বনী আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনকাল পর্যন্ত প্রত্যেক শাসকই আহলে সুন্নাতের প্রতি রাজি ছিল এবং সমস্ত বিষয়াবলীতে তাদের ঐক্যমত ছিল। কিন্তু হযরত আলীর অনুসারীদের প্রতি তারা রাগান্বিত থাকত এবং তাদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতো।এর উপর ভিত্তি করেই তারা আহলে বাইতের অনুসারীদেকে আহলে ‘সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’-এর মধ্যে গণ্য করতো না। বস্তুতঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ব্যবস্থাপনাটি হযরত আলীর সমর্থকদের প্রতি জেদ করেই রচনা করা হয়েছিল এবং রাসুলে খোদা (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মার মাঝে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণ হয়েছে।আবার আমরা যখন ঐতিহাসিক মজবুত উৎসের মাধ্যমে কারণসমূহ নির্ণয় করব এবং বাস্তবতার উপর থেকে পরদা সরাবো তখন জানা যাবে যে, রাসুল (সা.)-এর ঠিক ইন্তেকালের পরপরই ফেরকার বিভক্তি হয়েছিল। যদিও হযরত আবু বকর খেলাফতের মসনদে আসীন হয়েগিয়েছিলেন এবং সাহাবাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার বায়াত করে নিয়েছিল। পক্ষান্তরে হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, বনী হাশিম গোত্র এবং সাহাবাগণের মধ্যেকার কিছু লোক যাদের অধিকাংশ গোলাম ছিলেন, তারা সেই খেলাফতের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। ইহা তো স্পষ্ট আছেই যে, ক্ষমতাসীন হুকুমাত (প্রশাসন) তাঁদেরকে মদীনা থেকে দূরে অবস্থান করতে বাধ্য করেছিল। কিছু কিছু লোককে দেশান্তর করে দিয়েছিল এবং তাঁদেরকে ইসলামের গন্ডির বাহিরে গণ্য করতে লাগল এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার জন্য সেই ব্যবহারেরই প্রচলন রেখেছিল যা কাফেরদের ক্ষেত্রে স্বীকৃত ছিল। আর তাঁদের প্রতি সে ধরণেরই অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নিয়মানুবর্তিতা আরোপ করা হলো, যা কাফেরদের প্রতি আরোপ করা হত।ইহা স্পষ্ট যে, অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সেই যুগের রাজনৈতিক চক্রান্তের রীতি-নীতিকে বুঝতে পারবেন না, আর না সেই যুগের হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার মাত্রা অনুমান করতে পারবেন, যা রাসুল (সা.)-এর পরবর্তীতে মানব ইতিহাসের মহান ব্যক্তিত্বকে অপসারণ করার কারণ হয়েছিল। অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা তো ইহাই যে, “খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে জামানার সমস্ত বিষয়াবলী আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী আঞ্জাম পেত”। সুতরাং তারা খোলাফায়ে রাশেদীনকে ফেরেশতাতুল্য মনে করেন, যারা একে অপরকে সম্মান করতেন এবং তাদের মাঝে কোন বিদ্বেষ ও ঘৃনা ছিল না, আর না তাদের চরিত্রের মাঝে কোন মন্দ দিক ছিল।আপনরা লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আহলে সুন্নাতগণ সাধারণতঃ সমস্ত সাহাবাদের ব্যাপারে, আর বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনের ব্যাপারে আহলে বাইতের অনুসারীদের দৃষ্টিভঙ্গীকে খন্ডন করে থাকেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তাদের ওলামাদের লিখিত ইতিহাসও অধ্যয়ন করেন নি। বরং তারা তাদের পূর্বপুরুষদের নিকট সাধারণ সাহাবাদের বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনদের প্রশংসা শুনেই যথেষ্ট মনে করে নিয়েছেন। তারা যদি উন্মুক্ত দৃষ্টি ও প্রশস্ত অন্তরকে কাজে লাগাতেন এবং নিজেদের ইতিহাস ও হাদীসের কিতাবাদির পৃষ্ঠা উল্টাতেন, আর তাদের অন্তরের মধ্যে যদি সত্য সন্ধানের অনুভূতি হত, তাহলে অবশ্যই তাদের আকীদার পরিবর্তন ঘটত। আর এ বিষয়টি কেবল সাহাবাদের আকীদার সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়, বরং তারা আরো অনেক বিষয়াবালীকে সঠিক বলে জ্ঞান করে থাকেন অথচ সেগুলি সঠিক নয়।আমি আমার সুন্নী ভাইদের জন্য এমন কিছু বাস্তবতা উপস্থাপন করতে চাই, যা’দ্বারা ইতিহাসের কিতাবাদি ভরপুর হয়ে আছে। এবং সংক্ষিপ্ততার সাথে এমন কিছু আলোকিত ও স্পষ্ট আল্লাহর সিদ্ধান্তাবলীকে (নুসুস) চিনিয়ে/প্রকাশ করে দিতে চাই, যা বাতিলকে মুছে হককে প্রকাশ করে দিবে। আশা করি ইহা মুসলমানদের বিরোধ ও বিবাদের ক্ষেত্রে ফলদায়ক ঔষধ বলে প্রমানিত হবে এবং তাঁদেরকে একতার সূত্রে বেঁধে রাখার কারণ বলে বিবেচিত হবে।ইহা মিথ্যা নয় যে, অদ্যকার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হিংসুক নন, আর না তারা ইমাম আলী ও আহলে বাইতের বিরোধি। কিন্তু তাঁদের প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি তারা তাঁদের শত্রুদেরকেও ভালবাসেন। আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে সেই শত্রুদের আনুগত্যও করেন যে তারা সকলেই রাসুল (সা.)-কে দেখেছেন।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত আউলিয়া আল্লাহর প্রতি ভালবাসা এবং তাদের শত্রুদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করার পদ্ধতির উপর আমল করেন না, বরং তারা সবাইকে ভালবাসার পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। তারা মোয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ানকেও বন্ধু গণ্য করেন এবং হযরত আলীকেও বন্ধু গণ্য করে থাকেন।তারা “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের” চমকপ্রদ নামকে খুবই পছন্দ করেন। কিন্তু উহার আঁড়ালে যে ষড়যন্ত্র রচিত হচ্ছে সেটা থেকে তারা অজ্ঞ। তারা যদি এ কথা জানতে পারেন যে, সুন্নাত-এ-মুহাম্মাদী হলেন কেবলমাত্র হযরত আলী আর তিনিই হলেন সেই দরজা যার মাধ্যমে সুন্নাত-এ-মুহাম্মদী পর্যন্ত পৌছানো যায় (অথচ আহলে সুন্নাত প্রত্যেক বিষয়েই তাঁর বিরোধিতা করে থাকেন এবং তিনিও প্রত্যেক বিষয়ে তাদের বিরোধী) তাহলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলতেন এবং গভীরভাবে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। তারপর ‘শিয়ানে আলী’ আর ‘শিয়ানে রাসুল’ ছাড়া আহলে সুন্নাতের কোন নাম নিশানা অবশিষ্ট থাকতো না। কিন্তু এ সমস্ত বিষয়ের জন্য সকল জিনিষের উপর থেকে পরদা উন্মোচন করা আবশ্যক। যা সুন্নাত-এ-মুহাম্মদী থেকে মানুষকে দূরে রাখতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে এবং সেগুলিকে জাহেলিয়াতের বিদআত দ্বারা পরিবর্তন করে ফেলেছে, যা মুসলমানদের জন্য মুসিবাত এবং সিরাতে মুস্তাকীম থেকে সরিয়ে দেয়ার কারণ হয়েছে, তাদের মাঝে বিভক্তি ও বিরোধের কারণ হয়েছে এবং কেউ কেউ একে অপরকে কাফের পর্যন্ত বলেছে এবং পরস্পর যুদ্ধও করেছে। তাদের এই সমস্ত বিষয়াবলীই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও টেকনোলজীতে পশ্চাতে পড়ে থাকার কারণ হয়েছে। আর এভাবেই তাদের প্রতি বিধর্মীদের সাহস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা তাদেরকে তুচ্ছ ও নীচ বলে জ্ঞান করছে এবং প্রতিনিয়ত যুদ্ধের উস্কানী দিচ্ছে। উভয় ফেরকার এই সংক্ষিপ্ত পরিচিত উপস্থাপন করার পর এই কথা বয়ান করে দেয়া জরুরী যে, ‘শিয়ানে আলী’ সুন্নাত বিরোধী কোন বিষয় নয়, যেমনটি সাধারণ মানুষের ধারণা। যদিও তারা গর্বের সাথে নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলে থাকেন এবং অন্যান্যদেরকে সুন্নাত বিরোধি গণ্য করে থাকেন। অথচ বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আহলে বাইতের অনুসারীদের আকীদা হল যে, “কেবল আমরাই রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত আছি। কেননা আমরা সুন্নাতকে ‘সুন্নাতের দরজা’ হযরত আলী ইবনে আবি তালিব নিকট থেকে হাসিল করেছি। আর আমাদের আকীদা হচ্ছে যে, তাহাই রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা হযরত আলীর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছে”।লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিনআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

রজব মাসের 5 তারিখ এবং 214 হিজরী তে পবিত্র সাবে নুজুল 🎂🎂নবীবংশের নক্ষত্র ইমাম নাকী ও হাদি (আ:)🎂🎂 সকল মোমিন ও মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারকহযরত মুহাম্মাদ (সা:) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্যে অতি মূল্যবান বা ভারী ও সম্মানিত দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছিঃ একটি হল আল্লাহর কিতাব ও অপরটি হল আমার আহলে বাইত। অতঃপর নিশ্চয়ই এ দুটি জিনিস হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।মুসলিম ও তিরমিজি শরীফের এ হাদিস অনুযায়ী মহানবী (সঃ)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের জানা এবং তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।মহানবী (সা.)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। খোদা পরিচিতি আর সৌভাগ্যের পথরূপ আলোর অফুরন্ত আলোকধারাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা রেখে গেছেন সংগ্রাম আর জ্ঞান-প্রদীপ্ত খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল আদর্শ।ইসলাম তার প্রকৃত রূপকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য এই আহলে বাইত (আ.)’র কাছে চিরঋণী। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)’র সেই মহান আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম নাকী বা হাদী (আ.)ইমাম নাকী বা হাদী (আ.) ২২০ হিজরিতে পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের গুরু দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২১২ হিজরির ১৫ ই জিলহজ বা খৃষ্টীয় ৮২৮ সালে পবিত্র মদীনার উপকণ্ঠে। বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের ধারায় তিনি ছিলেন দশম ইমাম। মহত্ত্ব আর সর্বোত্তম মানবীয় সব গুণ ছিল তাঁর ভূষণ। ক্ষমতাসীন আব্বাসীয় শাসকরা আহলে বাইতের প্রত্যেক সদস্যকে জন-বিচ্ছিন্ন করে রাখতো যাতে তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য পতনের কারণ না হয়। শিশু ইমাম হাদী (আ.)-কে সুশিক্ষিত করার নামে তাঁকে জন-বিচ্ছিন্ন করে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে তাঁর কাছে পাঠান। আবদুল্লাহ জুনাইদি নামের এই পণ্ডিত অল্প কয়েকদিন পরই ইমামের অতি উচ্চ মর্যাদা তথা ইমামতের বিষয়টি বুঝতে পারেন। শিশু ইমাম হাদী (আ.)’র জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করে জুনাইদি বলেছেন:জ্ঞানের যে ক্ষেত্রেই আমি আমার পাণ্ডিত্য তুলে ধরার চেষ্টা করতাম সেখানেই বনি হাশিমের এই মহান ব্যক্তিত্ব আমার সামনে বাস্তবতার দরজাগুলো খুলে দিতেন।... সুবাহানআল্লাহ! এত জ্ঞান তিনি কিভাবে আয়ত্ত্ব করেছেন? মানুষ ভাবছে যে আমি তাঁকে শেখাচ্ছি, অথচ বাস্তবতা হল আমি তাঁর কাছে শিখছি। আল্লাহর শপথ জমিনের বুকে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। ইমাম নাকী (আ.)-কে কেন ইমাম হাদী বলা হত- এই বর্ণনা থেকেই তা স্পষ্ট। তিনি যতদিন মদীনায় ছিলেন জনগণের ওপর তাঁর গভীর প্রভাব শত্রুদের মনে ঈর্ষার আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।মসজিদে নববীর তৎকালীন পেশ ইমাম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদও হিংসার এই আগুন থেকে মুক্ত ছিলেন না। তিনি ইমাম হাদী (আ.)’র নামে নানা অপবাদ দিয়ে চিঠি পাঠান আব্বাসীয় শাসক মুতাওয়াক্কিলের কাছে। মদীনায় শিশু ইমামের ব্যাপক প্রভাব ও উঁচু সামাজিক অবস্থান এই শাসকের কাছেও ছিল অসহনীয়। ফলে মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে মদীনা থেকে উত্তর বাগদাদের সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তিকে পাঠান। এই ৩০০ ব্যক্তির নেতা ছিল ইয়াহিয়া বিন হারসামাহ। ইবনে জাওজি এই ঘটনা সম্পর্কে হারসামাহ’র উদ্ধৃতি তুলে ধরেছিলেন। হারসামাহ বলেছেন: 'যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন জনগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারা ইমাম হাদী (আ.)’র প্রাণহানির আশঙ্কা করেই এভাবে কাঁদছিল। জনগণের ক্রন্দনে মনে হচ্ছিল যেন কিয়ামত শুরু হয়েছে।' এটা স্পষ্ট যে, মদীনার জনগণের প্রতিরোধের আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তি পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।ইমাম হাদী (আ.)'র পথ নির্দেশনায় জনগণ শাসকদের অত্যাচার অবিচার ও তাদের পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অযোগ্যতার কথা খুব অচিরেই বুঝে ফেলবে ও এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে –এমন আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমামকে কৌশলে তৎকালীন রাজধানী সামেরা শহরে নিয়ে আসে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ইমাম হাদী (আ.) সামেরা শহরেও প্রকৃত ইসলাম প্রচার, যুগোপযোগী সংস্কার, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং আব্বাসীয়দের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরার কাজ অব্যাহত রাখেন। ফলে আব্বাসীয় শাসকরা এখনেও ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় ইমাম হাদী (আ.) তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বাধ্য না হলে তাগুতি শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা যে নিষিদ্ধ ইমাম তা মুসলমানদের জানিয়ে দেন। এ ছাড়াও তিনি জনগণকে সুপথ দেখানোর জন্য শিক্ষার কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে থাকেন।ইমাম হাদী (আ.) আবদুল আজিম হাসানি ও ইবনে সিক্কিত আহওয়াজিসহ ১৮৫ জন ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করেছিলেন এবং তারা সবাই ছিল সে যুগের নানা জ্ঞানে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। ইমাম বিভ্রান্ত চিন্তাধারার প্রচারকদের ওপর নজর রাখতেন। মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, সে যা করে তা বাধ্য হয় বলেই করে- এই মতবাদ তথা জাবরিয়া মতবাদে বিশ্বাসীদের যুক্তি খণ্ডন করে ইমাম হাদী (আ.) বলেছিলেন, 'এই মতবাদের অর্থ হল আল্লাহই মানুষকে পাপে জড়িত হতে বাধ্য করেন এবং পরে পাপের জন্য শাস্তিও দেন বলে বিশ্বাস করা। আর এই বিশ্বাসের অর্থ আল্লাহকে জালিম বলে মনে করা তথা তাঁকে অস্বীকার করা।' কথিত খলিফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)কে জব্দ ও অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। ইমামকে সম্মান প্রদর্শনের নামে মুতাওয়াক্কিল তাঁকে নিজ দরবারে হাজির করে অপমানিত এবং কখনও কখনও হত্যারও চেষ্টা করেছে। ইমাম হাদী (আ.)'র ওপর নানা ধরনের নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি জালিম ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত আব্বাসীয় সরকার তাঁকে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। ২৫৪ হিজরির তেসরা রজব আব্বাসীয় খলিফা মুতাজ ৪১ বছর বয়সের ইমাম হাদী (আ.)কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। ফলে বিশ্ববাসী তাঁর উজ্জ্বল নূর থেকে বঞ্চিত হয়।ইমাম হাদী (আ.)’র মাধ্যমে অনেক মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন, আব্বাসীয় রাজার কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য রাজার নির্দেশে ইমাম (আ.)-কে আকস্মিভাবে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে পায় যে ইমামের চারদিকে রয়েছে একশ জনেরও বেশী সশস্ত্র দেহরক্ষী। আর একবার রাজা মুতাওয়াক্কিল ইমামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য তাঁর সামনে ৯০ হাজার সেনার সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নিলে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলকে আকাশ ও জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে সে দেখতে পায় যে, আকাশ আর জমিন ভরে গেছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সশস্ত্র ফেরেশতায় এবং রাজা তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। একই রাজা ইমামকে অপমান করার জন্য তাঁকে খাবারের দাওয়াত দেয়। ইমাম খাবারে হাত দেয়া মাত্রই রাজার নিয়োজিত এক ভারতীয় জাদুকরের জাদুর মাধ্যমে ওই খাবার উধাও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসতে থাকলে ইমাম জাদুকরের পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবন্ত হতে বলেন। সিংহটি জীবন্ত হয়ে ওই জাদুকরকে টুকরো টুকরো করে ফেলে।মুতাওয়াক্কিল কখন কিভাবে মারা যাবে তাও ইমাম আগেই বলেছিলেন। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক সেভাবে ও সেই সময়ই মারা গিয়েছিল এই আব্বাসীয় রাজা।মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী হওয়া তৌফিক দান করুন। আমিন। # আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

হেদায়াতের আকাশে অনন্য নক্ষত্র ইমাম নাকী ও হাদী (আ.)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসালমহানবী (সা:)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। খোদা পরিচিতি আর সৌভাগ্যের পথরূপ আলোর অফুরন্ত আলোকধারাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা রেখে গেছেন সংগ্রাম আর জ্ঞান-প্রদীপ্ত খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল আদর্শ।খোদা পরিচিতি আর সৌভাগ্যের পথরূপ আলোর অফুরন্ত আলোকধারাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা রেখে গেছেন সংগ্রাম আর জ্ঞান-প্রদীপ্ত খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল আদর্শ। ইসলাম তার প্রকৃত রূপকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য এই আহলে বাইত (আ.)’র কাছে চিরঋণী। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)’র সেই মহান আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম নাকী বা হাদী (আ.)’র শাহাদত-বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা এবং আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য সালাম ও দরুদ।ইমাম নাকী বা হাদী (আ.) ২২০ হিজরিতে পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের গুরু দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২১২ হিজরির ১৫ ই জিলহজ বা খৃষ্টীয় ৮২৮ সালে পবিত্র মদীনার উপকণ্ঠে। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)’র আহলে বাইতের ধারায় তিনি ছিলেন দশম ইমাম। মহত্ত্ব আর সর্বোত্তম মানবীয় সব গুণ ছিল তাঁর ভূষণ।ক্ষমতাসীন আব্বাসীয় শাসকরা আহলে বাইতের প্রত্যেক সদস্যকে জন-বিচ্ছিন্ন করে রাখতো যাতে তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য পতনের কারণ না হয়। শিশু ইমাম হাদী (আ.)-কে সুশিক্ষিত করার নামে তাঁকে জন-বিচ্ছিন্ন করে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে তাঁর কাছে পাঠান। আবদুল্লাহ জুনাইদি নামের এই পণ্ডিত অল্প কয়েকদিন পরই ইমামের অতি উচ্চ মর্যাদা তথা ইমামতের বিষয়টি বুঝতে পারেন। শিশু ইমাম হাদী (আ.)’র জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করে জুনাইদি বলেছেন:'জ্ঞানের যে ক্ষেত্রেই আমি আমার পাণ্ডিত্য তুলে ধরার চেষ্টা করতাম সেখানেই বনি হাশিমের এই মহান ব্যক্তিত্ব আমার সামনে বাস্তবতার দরজাগুলো খুলে দিতেন।... সুবাহানআল্লাহ! এত জ্ঞান তিনি কিভাবে আয়ত্ত্ব করেছেন? মানুষ ভাবছে যে আমি তাঁকে শেখাচ্ছি, অথচ বাস্তবতা হল আমি তাঁর কাছে শিখছি। আল্লাহর শপথ জমিনের বুকে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।'ইমাম নাকী (আ.)-কে কেন ইমাম হাদী বলা হত- এই বর্ণনা থেকেই তা স্পষ্ট। তিনি যতদিন মদীনায় ছিলেন জনগণের ওপর তাঁর গভীর প্রভাব শত্রুদের মনে ঈর্ষার আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।মসজিদে নববীর তৎকালীন পেশ ইমাম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদও হিংসার এই আগুন থেকে মুক্ত ছিলেন না। তিনি ইমাম হাদী (আ.)’র নামে নানা অপবাদ দিয়ে চিঠি পাঠান আব্বাসীয় শাসক মুতাওয়াক্কিলের কাছে। মদীনায় শিশু ইমামের ব্যাপক প্রভাব ও উঁচু সামাজিক অবস্থান এই শাসকের কাছেও ছিল অসহনীয়। ফলে মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে মদীনা থেকে উত্তর বাগদাদের সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তিকে পাঠান। এই ৩০০ ব্যক্তির নেতা ছিল ইয়াহিয়া বিন হারসামাহ।ইবনে জাওজি এই ঘটনা সম্পর্কে হারসামাহ’র উদ্ধৃতি তুলে ধরেছিলেন। হারসামাহ বলেছেন: 'যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন জনগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারা ইমাম হাদী (আ.)’র প্রাণহানির আশঙ্কা করেই এভাবে কাঁদছিল। জনগণের ক্রন্দনে মনে হচ্ছিল যেন কিয়ামত শুরু হয়েছে।'এটা স্পষ্ট যে, মদীনার জনগণের প্রতিরোধের আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তি পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।ইমাম হাদী (আ.)'র পথ নির্দেশনায় জনগণ শাসকদের অত্যাচার অবিচার ও তাদের পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অযোগ্যতার কথা খুব অচিরেই বুঝে ফেলবে ও এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে –এমন আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমামকে কৌশলে তৎকালীন রাজধানী সামেরা শহরে নিয়ে আসে।কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ইমাম হাদী (আ.) সামেরা শহরেও প্রকৃত ইসলাম প্রচার, যুগোপযোগী সংস্কার, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং আব্বাসীয়দের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরার কাজ অব্যাহত রাখেন। ফলে আব্বাসীয় শাসকরা এখনেও ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় ইমাম হাদী (আ.) তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বাধ্য না হলে তাগুতি শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা যে নিষিদ্ধ ইমাম তা মুসলমানদের জানিয়ে দেন। এ ছাড়াও তিনি জনগণকে সুপথ দেখানোর জন্য শিক্ষার কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে থাকেন।ইমাম হাদী (আ.) আবদুল আজিম হাসানি ও ইবনে সিক্কিত আহওয়াজিসহ ১৮৫ জন ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করেছিলেন এবং তারা সবাই ছিল সে যুগের নানা জ্ঞানে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।ইমাম বিভ্রান্ত চিন্তাধারার প্রচারকদের ওপর নজর রাখতেন। মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, সে যা করে তা বাধ্য হয় বলেই করে- এই মতবাদ তথা জাবরিয়া মতবাদে বিশ্বাসীদের যুক্তি খণ্ডন করে ইমাম হাদী (আ.) বলেছিলেন, 'এই মতবাদের অর্থ হল আল্লাহই মানুষকে পাপে জড়িত হতে বাধ্য করেন এবং পরে পাপের জন্য শাস্তিও দেন বলে বিশ্বাস করা। আর এই বিশ্বাসের অর্থ আল্লাহকে জালিম বলে মনে করা তথা তাঁকে অস্বীকার করা।' কথিত খলিফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)কে জব্দ ও অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। ইমামকে সম্মান প্রদর্শনের নামে মুতাওয়াক্কিল তাঁকে নিজ দরবারে হাজির করে অপমানিত এবং কখনও কখনও হত্যারও চেষ্টা করেছে।ইমাম হাদী (আ.)'র ওপর নানা ধরনের নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি জালিম ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত আব্বাসীয় সরকার তাঁকে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। ২৫৪ হিজরির এই দিনে তথা তেসরা রজব আব্বাসীয় খলিফা মুতাজ ৪১ বছর বয়সের ইমাম হাদী (আ.)কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। ফলে বিশ্ববাসী তাঁর উজ্জ্বল নূর থেকে বঞ্চিত হয়।ইমাম হাদী (আ.)’র মাধ্যমে অনেক মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন, আব্বাসীয় রাজার কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য রাজার নির্দেশে ইমাম (আ.)-কে আকস্মিভাবে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে পায় যে ইমামের চারদিকে রয়েছে একশ জনেরও বেশী সশস্ত্র দেহরক্ষী। আর একবার রাজা মুতাওয়াক্কিল ইমামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য তাঁর সামনে ৯০ হাজার সেনার সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নিলে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলকে আকাশ ও জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে সে দেখতে পায় যে, আকাশ আর জমিন ভরে গেছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সশস্ত্র ফেরেশতায় এবং রাজা তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।একই রাজা ইমামকে অপমান করার জন্য তাঁকে খাবারের দাওয়াত দেয়। ইমাম খাবারে হাত দেয়া মাত্রই রাজার নিয়োজিত এক ভারতীয় জাদুকরের জাদুর মাধ্যমে ওই খাবার উধাও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসতে থাকলে ইমাম জাদুকরের পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবন্ত হতে বলেন। সিংহটি জীবন্ত হয়ে ওই জাদুকরকে টুকরো টুকরো করে ফেলে।মুতাওয়াক্কিল কখন কিভাবে মারা যাবে তাও ইমাম আগেই বলেছিলেন। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক সেভাবে ও সেই সময়ই মারা গিয়েছিল এই আব্বাসীয় রাজা।ইমাম হাদী (আ.)’র কয়েটি সংক্ষিপ্ত বাণী শুনিয়ে শেষ করবো আজকের এ আলোচনা। তিনি বলেছেন:স্বার্থপরতা জ্ঞান অর্জনের পথে বাধা এবং তা অজ্ঞতা ডেকে আনে।যা অন্তরে গৃহীত ও কাজে প্রকাশিত সেটাই মানুষের ঈমান।আখিরাতের পুরষ্কার হলো দুনিয়ার কষ্ট ও পরীক্ষার বিনিময়।মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী হওয়া তৌফিক দান করুন। আমিন।#