পোস্টগুলি

নবী-পরিবারের (আঃ) অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয় ১৭টি আয়াত আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ১৪২৮ চন্দ্র-বছর আগে ২৫ শে জিলহজ দয়াল নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের অনন্য আত্মত্যাগের প্রশংসায় নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসান বা দাহরের ৫ থেকে ২২ নম্বর আয়াত।এ ছাড়াও ১৪০২ বছর আগে ৩৫ হিজরির ঐই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফতের দায়িত্ব পালন শুরু করেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)।একবার হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) অসুস্থ হয়ে পড়লে হযরত আলী (আ.) মানত করেন যে তাঁরা সুস্থ হলে তিন দিন রোজা রাখবেন। একই মানত করেন হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) ও তাঁর সন্তান হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) এবং পরিচারিকা ফিজ্জা। ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.) সুস্থ হলে তারা মানত বা প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য রোজা রাখেন। ইফতারের জন্য কিছুই ছিল না ঘরে। হযরত আলী (আ.) এক রাত ধরে শ্রমিকের কাজ করে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে সামান্য আটা কিনে আনেন। সেই আটার এক তৃতীয়াংশ দিয়ে ৫টি রুটি বানান হযরত ফাতিমা (সা. আ.)। কিন্তু ইফতারির সময় একজন নিঃস্ব বা হতদরিদ্র ব্যক্তি এসে খাবার চাইলে ৫ জনই তাঁদের ৫টি রুটি দিয়ে দেন ওই নিঃস্ব ব্যক্তিকে। তাঁরা শুধু পানি পান করে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত কাটান এবং পরদিনও রোজা রাখেন। হযরত ফাতিমা (সা.) পরের দিনের ইফতারের জন্য সেই আটার অন্য এক তৃতীয়াংশ দিয়ে আরো ৫টি রুটি বানান। এই দিন ইফতারের সময় আসে এক ইয়াতিম। সবাই তাঁদের রুটিগুলো ওই ইয়াতিমকে দিয়ে দেন এবং কেবল পানি পান করে রাত কাটান। তৃতীয় দিনেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। এবার এসেছিল মুক্তিপ্রাপ্ত অমুসলিম এক বন্দী। তাকে রুটিগুলো দিয়ে দেয়ায় ঘরের সব আটা শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা তিন দিন ইফতার ও সাহরির সময় কেবলই পানি পান করেছেন। কোনো প্রতিদান ও এমনকি সামান্য মৌখিক কৃতজ্ঞতারও আশা না করে নিজের জরুরি খাদ্যও এভাবে দান করার নজির ইতিহাসে বিরল। এ অবস্থায় রাসূল (সা.) এসে দেখেন যে সদ্য রোগমুক্ত তাঁর প্রিয় দুই নাতি হযরত হাসান ও হুসাইন (আ.) (ক্ষুধার কষ্টে কাতর হয়ে) কাঁপছেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বললেন, তোমার অবস্থায় আমি খুবই দুঃখিত। তিনি ফাতিমা (সা.)’র কাছে গিয়ে দেখলেন দুর্বল হয়ে পড়া ফাতিমা (সা.)’র চোখ দুটি গর্তে নেমে গেছে। ফাতিমা (সা.)-কে কাছে টেনে নিয়ে তিনি বললেন: আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইছি! তোমরা তিন দিন ক্ষুধার্ত!এ সময় আবির্ভূত হন হযরত জিবরাইল (আ.)। তিনি সুরা দাহরের প্রথম থেকে ২২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়ে শোনান রাসূল (সা.)-কে। ইমাম ফাখরে রাজি, আবুল ফারাজ জাওজি ও জালাল উদ্দিন সিয়ুতিসহ বেশ কয়েকজন বিখ্যাত সুন্নি মনীষী এই শা’নে নাজুলকে সমর্থন করেছেন।কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে দয়াল নবি (সা.) এই ঘটনার পর শিশু ইমাম হুসাইন (আ.)'র ইচ্ছার আলোকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তাঁদের জন্য বেহেশত থেকে খুরমা বা খেজুর পাঠানো হয়। বিশ্বনবী (সা.) নিজের পবিত্র হাতে ইমাম হুসাইন (আ.), হাসান (আ.), ফাতিমা (সা.) ও আলী (আ.)'র মুখে বেহেশতি খেজুর তুলে দেন। এ সময় ফেরেশতারা অভিনন্দনসূচক বাক্য উচ্চারণ করলে রাসূল (সা.)ও তা পুনরাবৃত্তি করেন। সুরা দাহরে এসেছে:৫। নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা বা পুণ্যাত্মারা পান করবে এমন পানীয় যাতে বেহেশতি কাফুর মিশ্রিত থাকবে, ৬। এটা এমন একটি ঝর্ণা বা প্রস্রবণ যেখান থেকে আল্লাহ্‌র ভক্ত বান্দাগণ পান করবে, এবং তা প্রবাহিত করতে পারবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ৭। তারা মান্নত বা প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট ছড়িয়ে পড়বে ব্যাপক ভাবে।৮। তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।৯। তারা বলে: কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি নাপ্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

গ্রন্থসূত্রঃ নব্বই তালিমে আল্লাহ্ দর্শন....হযরত বারা ইবনে আযেব ও যায়দ ইবনে আরকাম (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন গাদীরে খোম নামক স্থানে ঝিলের কাছে অবতরণ করিলেন,( বিদায় হজ্জ হতে আসার সময়, মক্কা মদীনার মধ্যবর্তী একটা যায়গার নাম) লক্ষ্যাধিক সাহাবা হাজীদের সামনে তখন তিনি( সাঃ)আলী (আঃ) এর হাত ধরিয়া উচু করিয়া বলিলেন ঃ ইহা কি তোমরা জান না, আমি মুমিনদের নিকট তাহাদের প্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয় ? লোকেরা বলিল, হাঁ। তিনি আবার বলিলেন, তোমরা কি জান না, আমি প্রত্যেক মুমিনের কাছে তাহার প্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয়? তাহারা বলিল হাঁ। তিনি আবার বলিলেন, আমি কি আল্লাহর আওলা নই (অধিক নিকটবর্তী)? সমস্বরে সকলে বলিল, হাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ আমার মাওলা, আমি তোমাদের মাওলা, আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। তারপর তিনি এই দেয়া করিলেন, হে আল্লাহ ! যেই ব্যক্তি আলীকে ভালোবাসে তুমিও তাহাকে ভালোবাস। আর যে ব্যক্তি তাহাকে শত্রু ভাবে, তুমিও তাহার সহিত শত্রুতা পোষন কর। ইহার পর মাওলা আলী আঃ কে হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, ধন্যবাদ হে আবু তালিবের পুত্র ! তুমি সকাল সন্ধা (অর্থাৎ সর্ব সময়) প্রতিটি মুমিন নারী - পুরুষের মাওলা হইয়াছো। - ৫৮৪৪ মেসকাত শরীফ, - আহমদআরো আছে!

ইমাম হাসান (আ.) এর সাথে মুসলমানদের বাইয়াতপ্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ যখন আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) মসজিদে কুফায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হলেন। তখন ইমাম হাসান (আ.) তাঁর নির্দেশে নামাযের ইমামতি করেন এবং তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তেও ইমাম হাসান (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়ে যান। তিনি বলেন: হে আমর পুত্র! আমার (মৃত্যুর) পর আমার স্থানে আসীন হবে...’ অতঃপর তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) ও মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া এবং তাঁর অপর সন্তানদেরকে ও শিয়া নেতৃবৃন্দকে এ ওসিয়তের উপর সাক্ষ্য হিসেবে রেখে ইমাম হাসান (আ.) কে স্বীয় গ্রন্থ ও অস্ত্র দান করে বলেন: হে আমার পুত্র! আল্লাহর রাসূল (স.) আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন যাতে আমি তোমাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেই, যেভাবে তিনি আমাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন এবং নিজের কিতাব ও অস্ত্রকে আমায় দান করেছেন। আর তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তোমাকে নির্দেশ দেই যেন নিজের জীবনের শেষ মুহূর্তে এগুলোকে তোমার ভাই হুসাইনের নিকট হস্তান্তর কর’। একদা ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনার শাষকের কাছে একটি খবর পৌছানোর জন্য আলী আকবর (আ.) কে দ্বায়িত্ব দেন যখন তিনি উক্ত খবরটি নিয়ে মদীনার শাষকের কাছে পৌছায় তখন শাষক তাকে জিজ্ঞাসা করে যে তোমার নাম কি? প্রতিউত্তরে তিনি বলেন আমার নাম আলী, শাষক আবার জিজ্ঞাসা করে যে তোর ভাইয়ের নাম কি? সে আবারও বলে আলী তখন শাষক রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমার বাবাকি তার সকল সন্তানের নাম আলী রাখতে চাই। উক্ত খবরাট তিনি তাঁর বাবা ইমাম হুসাইন (আ.) এর কাছে পৌছায়। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন যে, খোদার শপথ যদি আমাকে ১০টি সন্তান দান করেন তাহলে আমি তাদের সবার নাম আলী রাখবো এবং যদি খোদা আমাকে ১০টি কন্যা সন্তান দান করেন তাহলে তাতের সবার নাম রাখবো ফাতিমা। আলী আকবরের ব্যাক্তিত্বঃ হজরত আলী আকবর ছিলেন সূদর্শন, যুবক, মিষ্টিভাষি এবং সর্বপরি তিনি ছিলেন রাসুল (সা.) এর সদৃশ।(মুনতাহিউল আমাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭৫) ইমাম হোসাইন (আ.)'র জন্মলগ্নে তার মা অর্থাৎ হযরত ফাতেমার (সা.) এর পাশে ছিলেন নবী (সা.)এর ফুপু সাফিয়া বিনতে আবদুল মোত্তালিব। রাসূল সে সময় তার ফুপুর কাছে এসে বলেন, হে ফুপু, আমার ছেলেকে আমার কাছে কাছে আনুন। তখন সাফিয়া বললেন, আমি তাকে এখনও পবিত্র করিনি। বিশ্বনবী (সা.) বললেন, "তাকে তুমি পবিত্র করবে? বরং আল্লাহই তাকে পরিষ্কার ও পবিত্র করেছেন।" ইমাম হোসাইন (আ.)’র জন্মের পর তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইক্বামত পাঠ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সা.)। মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি এই শিশুর নাম রাখেন হোসাইন। এ শব্দের অর্থ সুন্দর, সৎ, ভালো ইত্যাদি। হযরত সালমান ফারস (রা.) বলেছেন, একদিন দেখলাম যে, রাসূল (সা.) হোসাইন (আ.)-কে নিজের জানুর ওপর বসালেন ও তাকে চুমু দিলেন এবং বললেন, " তুমি এক মহান ব্যক্তি ও মহান ব্যক্তির সন্তান এবং মহান ব্যক্তিদের পিতা। তুমি নিজে ইমাম ও ইমামের পুত্র এবং ইমামদের পিতা। তুমি আল্লাহর দলিল বা হুজ্জাত ও আল্লাহর হুজ্জাতের পুত্র এবং আল্লাহর নয় হুজ্জাতের (বা নয় ইমামের) পিতা, আর তাঁদের সর্বশেষজন হলেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)"।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রাণপ্রিয় নাতী হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে নিজের সন্তান বলে অভিহিত করতেন। এ ছাড়াও তিনি বলেছেন, "নিশ্চয়ই হাসান ও হোসাইন জান্নাতে যুবকদের সর্দার।" (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং-৩৭২০)

“নামায” কবুল হল কিনা ?– কিভাবে বুঝা যাবে ! মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত সমগ্র সৃষ্টিজগতের ষষ্ঠ ইমাম ,ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) এর কাছে এসে একজন জিজ্ঞেস করল যে ,“হে রাসুল (সাঃ) এর সন্তান , হে মাওলা , আমি অধম বান্দা , মৃত্যুর পূর্বে আমি কি ভাবে বুঝব যে , আমার আদায়কৃত নামায কবুল হয়েছে কি না ” ?তখন অন্যান্য সাহাবীরা রাগ করে বললেন , এটা কোন প্রশ্ন হল ? কিয়ামতের আগে এটা জানা কি সম্ভব ? এটা একমাত্র আল্লাহই জানেন ।তখন ইমাম (আঃ) বললেন যে , বাধা দিও না , তাকে প্রশ্ন করতে দাও । জী হ্যা , মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই জানা সম্ভব , আপনার নামাজ কবুল হল কি না !সকলেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন , মাওলা , এটা কিভাবে সম্ভব হয় ?ইমাম (আঃ) বলেন যে , যদি তুমি দেখতে পাও যে , নামায আদায় করার পর তোমার প্রতিদিনের গুনাহ এর পরিমান কমে এসেছে অর্থাৎ তুমি যে গুনাহ আগে নিদ্বির্ধায় করতে তা এখন করতে গেলে তোমার বিবেক তোমাকে বাধা ‍দিচ্ছে , তা হলে তুমি বুঝবে যে , তোমার নামাজ কবুল হয়েছে ।অর্থাৎ গুনাহ করতে তোমার বিবেক যতটুকু বাধা দেয় তোমার নামায ততটুকুই কবুল হয়েছে ।তোমরা কি পবিত্র কোরআনে পড় নি যে , নামাজ গুনাহ করতে বাধা দান করে ।পাঠক ,একমাত্র নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) তথা বার ইমাম (আঃ) গনের পক্ষেই সম্ভব —” সালুনি – সালুনি ” – এই কথাটি বলাপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আহালে আল বায়াত এবং ইমাম হযরত আলীর নামের শেষে আলাইহিস (আঃ) সালাম ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ'আলাইহিস সালাম' যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান,হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা 'আলাইহিস সালাম'ব্যবহার করি। আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে,কোনো মুসলমানের নামের পর "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম?আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের,পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।'অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে।"আলাইহিসসালাম" শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এবার আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছুপ্রমাণ তুলে ধরছি:১-সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের " কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবেহ" অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) "বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু" শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমার নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে।একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের "বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী" শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষ্যনীয়।২- একই ধরণের ব্যবহার রয়েছে সুন্নি মাজহাবের আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি'র "ফাজলি ফাতিমাতা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১ ) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই "সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।একই হাদীস গ্রন্থের "মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)'র নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু "রাজিয়াল্লাহু আনহু" বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। "রাজিয়াল্লাহু আনহু" শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক।৩- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইমাম ফাখরে রাজিও শিয়া মুসলমানদের ইমাম বা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর "আলাইহিসসালাম" দোয়াটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.) কয়েকটি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সমান সুবিধা বা সম্মানের অধিকারী। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন "আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম" শব্দের মাধ্যমে।৪- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত "আলে ইয়াসিন" শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (দ:) বা মুহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন বিশ্বনবী (সা.)-এরই অন্যতম নাম।৫-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে " আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ" । সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা।তাই এটা স্পষ্ট বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পরে বা তাঁদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা "সালাওয়াতুল্লাহ আলাইহি" বলা একটি ধর্মীয় নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নাত।আমাদের এই শ্রোতা ভাইয়ের প্রশ্নের আরেকটি অংশ হল, ‘আশা'রা মুবাশ্বারা' তথা পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবির সংখ্যা দশ জন যাদের মধ্যে চার জন হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম চার জন খলিফা, আর এই চার জনের একজন হলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) অথচ শিয়া মুসলমানরা শুধু হযরত আলী (আ.)-কেই কেন প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?উত্তর:বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আহদিনি লিমা আখতুলিফা ফিহি মিনাল হাক্কি বিইজনিকা ইন্নাকা তাহদি মানতাশায়ু সিরাতিম মুস্তাক্বিম।(হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ-সা. ও তার পবিত্র বংশধরদের ওপর দরুদ বর্ষিত হোক এবং আমরা যখন বিরোধ ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ের শিকার হই তখন তোমার প থেকে আমাদের সঠিক পথ দেখাও, নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ দেখাও)এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, রেডিও তেহরান মুসলমানদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বিষয়ের চর্চার চেয়ে তাদের ঐক্যের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। (কারণ, শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবই এক আল্লাহ, অভিন্ন ও এক পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী (সা.)কে শেষ নবী ও রাসূল বলে মানে। মতবিরোধ শুধু সাহাবিদের নিয়ে।) তা সত্ত্বেও আপনার প্রশ্নের জবাবে শিয়া মুসলিম ভাইদের কিছু বক্তব্য ও যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি যাতে আপনার মত পাঠক ও শ্রোতাদের কৌতুহল মেটে। (তবে আগেই বলে রাখছি, বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে কোনো সুন্নি ভাই শিয়া মুসলমানদের যুক্তি বা দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেবেন কিনা সেটা তাদের একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা এখানে একজন শ্রোতা/পাঠকের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গক্রমে শিয়া মুসলমানদের বক্তব্য ও সেসবের পক্ষে তাদের যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি মাত্র। কাউকে আহত করা বা বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরা রেডিও তেহরানের কাজ বা দায়িত্ব নয় কিংবা কোনো সাহাবির সম্মানহানি করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মোটকথা শিয়া মুসলমানদের এইসব বক্তব্য রেডিও তেহরানের নিজস্ব বক্তব্য নয় এবং এইসব মতামতের জন্য রেডিও তেহরান ও এর বাংলা বিভাগ দায়ী নয়। এই সর্তকবাণী নিম্নের আলোচনার জন্যও প্রযোজ্য।)শিয়া ও সুন্নি দুটি ভিন্ন মাজহাব। এ দুই মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই কিছু না কিছু পার্থক্য থাকবেই। যেমন পার্থক্য রয়েছে সুন্নিদের চার মাজহাবের মধ্যেও। এই চার মাজহাবের ইমামরা যদি সব বিষয়ে একমত হতেন তাহলে তো তাদের মাজহাবের সংখ্যা চারটি না হয়ে একটিই হত। কিংবা তারা যদি একে-অপরকে নিজের চেয়ে বড় মনে করতেন তথা অন্য মাজহাবের ইমামদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন তাহলে অবশ্যই নিজ মাজহাব ত্যাগ করে অন্যের মাজহাব গ্রহণ করতেন।তদ্রুপ শিয়া ও সুন্নি ভাইয়েরা তাদের মাজহাবের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন সে ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারেন। যেমন, সুন্নি মাজহাবের দৃষ্টিতে হযরত আলী (আ.)'র মর্যাদা বা অবস্থান রাসূলের (সা.) ও প্রথম তিন খলিফার পরে চতুর্থ স্থানে। অন্যদিকে শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলী (আ.) রাসূলের (সা.)পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, কারণ তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের সদস্য। শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে কুরআন ও হাদিসেই রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.)-কে সাহাবাদের উর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে। (এমনকি তাঁদের মর্যাদা বিশ্বনবী (সা.) ছাড়া অন্যান্য নবী-রাসূলগণের চেয়েও বেশি, ঠিক যেমনটি সুন্নি বিশ্বে বলা হয় রাসূল (সা.)'র উম্মতের আলেমগণের মর্যাদা বনি-ইসরাইলের নবীগণের চেয়ে উচ্চতর। সব নবী-রাসূল বলেছেন, আমরা নবী-রাসূল না হয়ে যদি শেষ নবী(সা.)'র উম্মত হতাম! বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে মসজিদের মিলাদ মাহফিলে সুর করে রাসূলের প্রশংসা বর্ণনার সময়বলা হয়,[ (হে রাসূল- সা.!)- নবী না হয়ে হয়েছি উম্মত তোমার তার তরে শোকর হাজারবার।] হযরত ঈসা (আ.) বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উম্মত হিসেবে আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং আহলে বাইতের পবিত্র ইমাম তথা শেষ ইমাম হিসেবে বিবেচিত হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র পেছনে নামাজ পড়বেন ও তাঁর সাহায্যকারী হবেন। ব্যাপারটা খুবই লক্ষ্যনীয় যে, একজন নবী শেষ নবীর (সা.) বংশে জন্ম নেয়া একজন ইমামের পেছনে নামাজ পড়বেন!!! )এটা স্পষ্ট, রাসূল (সা.)'র সাহাবিদের ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিতে সকল সাহাবিই সম্মানিত এবং আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট ও তারা সবাই বেহেশতে যাবেন। তবে কোনো কোনো সুন্নি ইমামের দৃষ্টিতেও রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের মর্যাদা রাসূল (সা.)'র পর সবার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ তাঁরা সাহাবাদের মধ্যেও সর্বোত্তম সাহাবা ছিলেন। এঁরা হলেন হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)। আর রাসূলের (সা.) আহলে বাইত বলতে এই কয়েজন ছাড়াও হযরত হোসাইন (আ.)'র বংশে জন্ম নেয়া আরো নয় জন ইমামকেও বোঝায়, যাদের মধ্যে ইমাম মাহদী (আ.) হলেন সর্বশেষ ইমাম। এই আহলে বাইতরা যে নিষ্পাপ তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অনেক সুন্নি আলেমও তাদের তাফসিরে স্বীকার করেছেন। আর (নিকটতম) আহলে বাইত বলতেও যে কেবলই আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে বোঝায় (তাঁদের সবার ওপর সালাম ও দরুদ) তাও অনেক সুন্নি আলেম সুরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন।শিয়া মুসলমানরা বলেন, মহানবী (স.) তাঁর আহলে বাইত বলতে তাঁর নিষ্পাপ ও পবিত্র বংশধরকে বোঝাতেন। যেমন- হযরত ফাতেমা (সাঃ আঃ), ইমাম হাসান ও হুসাইন (সালামুল্লাহি আলাইহিম)। কেননা মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃ-১৩০)এবং তিরমিযী স্বীয় সুনানে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে," হে নবী পরিবারের সদস্যগণ! আল্লাহ তো শুধু তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ রাখতে চান।" এই আয়াতটি মহানবী (স.) এর উপর উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (সাঃ আঃ)'র ঘরে অবতীর্ণ হয়। মহানবী (স.), ফাতেমা(সাঃ আঃ), হাসান(আ.) ও হুসাইন (আ.)কে নিজের আলখাল্লা বা আবা'র মধ্যে নিলেন এমতাবস্থায় আলী (আ.) তাঁর পেছনে অবস্থান করছিলেন। তাঁদেরকে একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে এরূপ দোয়া করলেন: "হে আমার প্রতিপালক! এরাই আমার আহলে বাইত। অপবিত্রতাকে এদের হতে দূর করে এদেরকে পবিত্র কর।" উম্মে সালমা বললেন: হে আল্লাহর নবী! আমিও কি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত (আমিও কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত)? তিনি বললেন: তুমি নিজের স্থানেই থাকো। তুমি সত্য ও কল্যাণের পথেই রয়েছ। অনেকে বলতে পারেন রাসূল (সা.) আহলে বাইত শব্দের আভিধানিক অর্থ ঘরের লোক। সেই হিসেবে হযরত আয়শা ও হাফসা প্রমুখ রাসূলের স্ত্রীগণও কি তাঁর আহলে বাইত? শিয়া মুসলমানরা মনে করেন কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে রাসূলের স্ত্রীরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কারণ, আহলে বাইতের সদস্যরা মাসুম বা নিষ্পাপ ও পবিত্র। তাঁরা কখনও ভুল করেন না বা অন্যায় কিছু করেন না। কিন্তু হযরত আয়শা ও হাফসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ৬৬ নম্বর সুরা তথা সুরা তাহরিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন:"তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।" (৬৬-৪)এ থেকে বোঝা যায় রাসূল (সা.)'র স্ত্রীগণ আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না। (যদিও হযরত খাদিজা (সাঃ আঃ) সম্পর্কে হাদিসে এসেছে তিনি সর্বকালের চার সেরা নারীর একজন। অন্য তিনজন হলেন হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত মারিয়াম (আঃ) ও ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া (আঃ)। )আমরা জানি হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে সুন্নি বিশ্বের জুমার খোতবায়ও বেহেশতি যুবকদের সর্দার বলা হয়। আর তাঁদের মা নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ)-কে বলা হয় জান্নাতের নারীদের সর্দার। অতএব তারা নিঃসন্দেহে এ পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। কিন্তু ‘আশা'রা মুবাশ্বারা'য় এই তিনজনের নাম নেই।শিয়া মুসলমানরা মনে করেন আহলে বাইত বহির্ভূত সাহাবারা নিষ্পাপ নন। তাই তারা ভুল করতে পারেন ও তাদের অনেকেই ভুল করেছেন। আবার তাদের অনেকেই ছিলেন সুমহান ও সৎ, কিন্তু সবাই নন। অথচ রাসূলের আহলে বাইতের সদস্যরা সবাইই নিষ্পাপ যা সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে:"হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে (সব ধরনের ভুল-ত্র“টি ও পাপ থেকে) পূত-পবিত্র রাখতে।"-সুরা আহজাব-৩৩পবিত্র কুরআনে রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসার নির্দেশ এসেছে। তাদের আনুগত্যও করতে বলা হয়েছে। যেমন, সুরা শুরার ২৩ নম্বর আয়াতে এসেছে:"(হে নবী! আপনি)বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক বা মুজুরি চাই না কেবল আমার পরিবারের প্রতি ভালবাসা চাই।"সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে এসেছে:“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ‘উলিল আমর' বা তোমাদের মধ্যে যারা [আইনসঙ্গত] মতার অধিকারী তাদের”শিয়া মুসলমানরা মনে করেন ইতিহাসের কতগুলো বাস্তবতা উপো করা অন্ধের পওে সম্ভব নয়। যেমন, সাহাবারা পরস্পর যুদ্ধ করেছেন। তাদের সবাই নিজেদেরকে সঠিক পথে অটল বলে দাবি করা সত্ত্বেও একে-অপরকে বিভ্রান্ত বলেছেন। হযরত আয়শা, হযরত তালহা ও হযরত যুবাইর জামাল যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধে মারা গেছেন দশ হাজার সাহাবি ও তাদের সন্তান। এ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর হযরত আয়শা ভুল স্বীকার করে হযরত আলী (আ.)'র কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। হযরত আলী (আ.) ও মুয়াবিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘটিত সিফফিন যুদ্ধে মারা গেছে অন্ততঃ ৫০ হাজার সাহাবি ও সাহাবিদের সন্তান এবং সঙ্গী। এসব যুদ্ধের ব্যাপারে সুন্নিদের বক্তব্য হল সাহাবা হওয়ার কারণে তারা উভয় পক্ষই ছিল সঠিক পথে। কিন্তু শিয়ারা বলেন, দু-জন নবী বা দুজন সৎ মানুষ কখনও পরস্পরের সঙ্গে শত্র“তা পোষণ বা যুদ্ধ করে না-এটাই বিবেকের দাবি। সিরাতুল মুস্তাক্বিম বা সঠিক পথ একটিই হয়, একাধিক হয় না। এক লাখ বা দুই লাখ ২৪ হাজার নবী যদি একই যুগে একই অঞ্চলে থাকতেন তাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া বিবাদ হত না। স্বার্থ নিয়ে বা মতা নিয়ে কখনও দু-জন ভাল মানুষের মধ্যেই দ্বন্দ্ব হয় না। তাই যে কোনো দ্বন্দ্বে অবশ্যই এক প সঠিক পথে থাকে অন্য প অন্যায়ের পে বা অন্ততঃ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে।হযরত আলী (আ.), হযরত তালহা ও যোবাইর-কে "আশা'রা মুবাশ্বারার" তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা যদি জানতেন যে তারা বেহশতী হওয়ার সুসংবাদ দুনিয়াতেই পেয়েছেন তাহলে বেহেশতী হওয়া সত্ত্বেও কেন একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন? তারা তো বলতে পারতেন, আপনিও বেহেশতী, আমিও বেহেশতী, তাই আমরা সবাই সঠিক পথেই আছি, আপনার কাজ আপনি করুন আমার কাজ আমি করি, কেউ কারো কাজে বাধা দেয়ার দরকার নেই,আমরা কেন বেহেশতী হয়েও একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব? কিন্তু তারা কি এমন কথা বলেছেন? তাছাড়া সুন্নি সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মুসলমানদের কেউ যদি একে-অপরকে হত্যার জন্য যুদ্ধ করে তবে তারা উভয়ই জাহান্নামি। জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে সাহাবিরা কি পরস্পরকে হত্যার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি? যদি হাদিসটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো আলী (আ.), তালহা ও যুবাইর-সবাইই জাহান্নামি (নাউজুবিল্লাহ)। তাহলে আসল সত্য বিষয়টা কী? নিচের হাদিসটি দেখুন:রাসূল (সা.) একবার হযরত যোবাইরকে বলেছিলেন তুমি কি আলী(আ.)-কে ভালবাস। তিনি জবাবে বললেন, এটা কেমন কথা, আলীকে ভালবাসব না! তাছাড়া তিনি তো আমার আত্মীয়ও হন! রাসূল (সা.) বলেছিলেন, কিন্তু একদিন তুমি তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হবে। জামাল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত আলী (আ.) যোবাইরকে এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দিলে যোবাইর লজ্জিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছিলেন, সে আমার উম্মতের একদল ‘বাগী' বিদ্রোহী বা পথভ্রষ্ট লোকের হাতে শহীদ হবে। যখন সিফফিন যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র পে যুদ্ধরত অবস্থায় মুয়াবিয়ার সেনাদের হাতে হযরত আম্মার (রা.) শহীদ হন, তখন মুয়াবিয়ার পক্ষে থাকা অনেক সাহাবির বোধদয় হয়।এ ছাড়াও রাসূল (সা.) বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। "আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)'র সঙ্গে শত্র“তা করা মুনাফেকী" (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)। " আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা"(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, "হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।" রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্র“তা করবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, " আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)।"যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নীচু করে দোজখে নিপে করবেন। "(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)।"আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ,যে আলীর সাথে শত্র“তা রাখে তুমিও তার সাথে শত্র“তা রাখ।" (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্র“তা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম। পবিত্র কুরআনে সাহাবা বা মুহাম্মাদ (সা.)'র সাহবি বা সঙ্গীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়ালু বা রহমশীল। কিন্তু সাহাবাদের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ কি দয়া বা পারস্পরিক রহমের পরিচয় বহন করে?শিয়া মুসলমানরা এইসব বক্তব্য, হাদিস ও যুক্তির আলোকে বলেন যে, সাহাবারা ভুল করতে পারেন ও অন্যায় যুদ্ধেও লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু নবী বংশের ইমাম বা রাসূলের আহলে বাইত (আ.) ভুল করতে পারেন না কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে নিষ্পাপ হওয়ার কারণে।আর শিয়া মুসলমানরা এটাও মনে করেন যে, ন্যায় ও অন্যায়ের প্রশ্নে এবং সঠিক ও ভুল পথের প্রশ্নে অবশ্যই ন্যায়ের পক্ষ নিতে হবে। সঠিক ও ভুল পথ কখনও সমান হতে পারে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে যারা বলবে যে আমরা উভয় পক্ষেই আছি বা উভয় পক্ষকেই সম্মান করি, তা হবে সুবিধাবাদিতা ও অনৈতিক। তারা আরও বলেন, আমরা যদি রাসূল (সা.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর বন্ধুদেরকেও ভালবাসতে হবে এবং তাঁর শত্র“দেরকে বা বিপক্ষ শক্তিকেও ভালবাসি বলা যাবে না। ঠিক একইভাবে যদি বলি যে আলী (আ.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বা বিরোধী গ্র“পকেও ভালবাসা উচিত নয়।এবার আমরা সুন্নী মাজহাবের হাদিসের আলোকে অন্য সাহাবিদের তুলনায় আমিরুল মুমিমিন হযরত আলী (আ.) এবং রাসূল (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত বা নিষ্পাপ বংশধরদের শ্রেষ্ঠত্বের সপে আরো কিছু দলিল তথা হাদিস ও রেওয়ায়েত বা ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরছি:" এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।" (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ'-ড. মো. হোসাইন হায়কাল,প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪)হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, "যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)'র অসংখ্য শত্র“ ছিল। শত্র“রা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)'র দোষ-ত্র“টি বের করার, কিন্তু পারেনি।"হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, "যত সুন্দর ও মজবুত সনদের দ্বারা আলী (আ.)'র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনি আসেনি।"হাদিসে সাকালাইন১। মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে "খুম" নামক একটি পুকুরের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন:হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড,পৃ.১৮০৩। দারেমী এই টেক্সট বা মাতন তথা হাদিসের মূলপাঠটি নিজ ‘সুনান'-শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেছেন। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২।২। তিরমিযি এই হাদিসটিতে শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো:"নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু'টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রাধান্য রাখে। (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা ল্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া)আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।'' (সূত্র:সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।)মুসলিম এবং তিরমিযী যাদের দু'জনই সহীহ হাদিস গ্রন্থ এবং (দুই পৃথক) ‘সুনান'-এর প্রণেতা। আর (মুসলিম এবং তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত) উক্ত হাদিস দু'টি সনদগত দিক থেকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য এবং কোনরূপ আলোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন রাখে না। অর্থাৎ, এই হাদিস দু'টি সনদগতভাবে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও নিখুঁত।হাদিসে সাকালাইনের ভাবার্থযেহেতু মহানবী (স.) নিজ বংশধরকে পবিত্র কুরআনের পাশে স্থান দিয়েছেন এবং উভয়কে উম্মতের মাঝে আল্লাহর হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাই এ দু'টির প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়:১। মহানবী (স.) এর বংশধরদের বাণী কুরআনের মতোই হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল)। আর দ্বীনি বিষয়ে চাই তা বিশ্বাসগত (আকিদাগত) দিক হোক আর ফেকাহগত দিক হোক, অবশ্যই তাদের বাণীকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে এবং কোনো বিষয়ে তাদের প থেকেবর্ণিত কোনো যুক্তি বিদ্যমান থাকলে অন্যের শরণাপন্ন হওয়া বৈধ নয়।মহানবী (স.) এর ওফাতের পর মুসলমানরা যদিও খেলাফত এবং উম্মতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়টিতে দু'টি দলে বিভক্ত হয়েছেন এবং প্রত্যেকেই নিজেদের দাবির সপে যুক্তি পেশ করেছেন এবং এসব বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তারপরও আহলে বাইত (আ.) যে ধর্মীয় জ্ঞানের নির্ভুল উৎস সে বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা উচিত নয়। কেননা সবাই হাদিসে সাকালাইন সহীহ হওয়ার পে ঐকমত্য পোষণ করেন। আর এই হাদিসে পবিত্র কুরআন এবং আহলে বাইত (আ.)- কে আকাঈদ ও আহকামের বিষয়ে মারজা বাএকমাত্র ফয়সালাকারী কর্তৃপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদি উম্মতে মুহাম্মাদী (স.) এই হাদিসটির ওপর আমল করে তাহলে তাদের মতানৈক্য কমে আসবে এবং তাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।২। পবিত্র কুরআন যেহেতু মহান আল্লাহরই বাণী, তাই এ মহাগ্রন্থ সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত; তাই কিভাবে তার মাঝে ভুল-ত্র“টির সম্ভাবনা থাকবে যখন স্বয়ং মহান আল্লাহই এই মহাগ্রন্থ সম্পর্কে বলেন :"তাতে তার আগে ও পিছে কোনো দিক থেকেই বাতিল বা মিথ্যা প্রবেশ করতে পারে না। তা তো প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত আল্লাহর প থেকে নাজিল করা হয়েছে।" যদি পবিত্র কুরআন সব ধরনের ভুল ও বাতিল হতে মুক্ত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে তার সমকও সব ভুল-ত্র“টি থেকে মুক্ত। কেননা নিষ্পাপ নয় এমন ব্যক্তি অর্থাৎ কোনো গোনাহগার ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পবিত্র কুরআনের জুটি হতে পারে না। হাদিসে সাকালাইন ও এই আয়াতে কারিম তাঁদের তথা আহলে বাইত (আ.)-গণের সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত হওয়ার সাী স্বরূপ। অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ নবী হওয়া নয় বা নিষ্পাপ হওয়ার জন্য নবী হওয়া জরুরি নয়। কেননাএমন হতে পারে যে, কোনো এক ব্যক্তি নিষ্পাপ বা গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন। যেমন- হযরত মারইয়াম (আ.) নিম্নোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন:"...আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তোমাকে বিশ্বের নারীদের ওপর মনোনীত করেছেন।"আরো কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা :রাসুলের আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধরের মর্যাদা এত বেশি যে, সুন্নি ইমাম শাফেয়ী তার প্রসিদ্ধ কবিতায় বলেছেন: "হে মহানবী (স.) এর বংশধর! তোমাদের প্রতি ভালোবাসা একটি ফরজ কাজ যা মহান আল্লাহ কোরআনে অবতীর্ণ করেছেন। তোমাদের মাহাত্ম প্রমাণের ক্ষেত্রে এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর দরুদ পড়বে না তাঁর (আল্লাহর রাসূলের) জন্যও সে দরুদ পড়নি।"অন্যদিকে সাহাবিদের একদল সম্পর্কে হাদীসে এসেছেঃবুখারী ও মুসলিম মহানবী (স.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন:"কিয়ামতের দিন আমার সাহাবিদের মধ্যে হতে একটি দল (অথবা বলেছেন আমার উম্মতের মধ্য হতে) আমার সামনে উপস্থিত হবে। অতঃপর তাদেরকে হাউজে কাওসার হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে (হাউজে কাওসারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না)। তখন আমি বলব:হে আমার প্রভু! এরা আমার সাহাবি। মহান আল্লাহ উত্তরে বলবেন: আপনার পরে এরা যা কিছু করেছে সে সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তারা তাদের পূর্বাবস্থায় (অজ্ঞতা তথা জাহেলিয়াতের যুগে)প্রত্যাবর্তন করেছিল। (বোখারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-৯৪, ১৫৬ পৃ, ২য় খণ্ড,৩২ পৃ, মুসলিম শরীফ ৭ম খণ্ড, পৃ-৬৬)মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখুন ও সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ দিন এবং ইসলামী ঐক্য জোরদারের তৌফিক দিন ও কাফেরদের ইসলাম-বিরোধী ষড়যন্ত্রগুলো বানচালের যোগ্যতা দান করুন। আমীন।

খলনায়কগনের সংক্ষিপ্ত সফল খতিয়ান –বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে হজ্ব ফেরত লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনের সম্মুখে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার ঘোষনা মোতাবেক রাসুল (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত ইমাম ও খলীফা নিযুক্ত হলেন ইমাম আলী (আঃ) ।প্রকাশ্য এই ঘোষনায় মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল খলনায়কগনের ।যে আশা নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর দলে লোক দেখান ইসলাম ধর্ম কবুল করে যোগ দিয়েছিল এই ভেবে যে , রাসুল (সাঃ) চোখ বুজলেই তাঁর শূন্য আসনে টুপ করে বসে পড়বে !কিন্ত এ কি হল !শূন্য আসনে বসবে ইমাম আলী (আঃ) !এত দিনের স্বপ্ন আশা সবই যে জলে গেল । কিছুতেই তা হতে দেয়া যায় না ।শুরু হল ভয়ংকর ষড়যন্ত্র এবং নিঁখুত পরিকল্পনা ।ষড়যন্ত্রকারীদের দলে দুষ্ট লোকের অভাব হল না ।প্রথম পদক্ষেপ শতভাগ সফল –রাসুলে (সাঃ) এর পরিস্কার নির্দেশ সত্বেও ওসামার নেতৃত্বে যুদ্বে না যেয়ে মদীনার উপকণ্ঠে পালিয়ে থাকল – কখন রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের সংবাদ পাওয়া যায় ।দ্বিতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল –রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার আদেশ সত্বেও খাতা কলম না দিয়ে অসিয়ত নামা কিছুতেই লিখতে দেওয়া হল না ।তৃতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল –বিষ মিশ্রিত ঔষধ এক প্রকার জোর করেই রাসুল (সাঃ) কে খাইয়ে দেয়া হল ।চতুর্থ পদক্ষেপ শতভাগ সফল –রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকাল সংবাদ জানার পরেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও রাসুল (সাঃ) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ না করে বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা চুড়ান্ত করন ।ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত ফলাফল –আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যাঁদের নির্বাচিত করেছিলেন তাঁদেরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতার মসনদে বসে গেল ।খলনায়কগনের টোটাল পরিকল্পনা ১০০ ভাগ সফল ।চুড়ান্ত পরিনতি –রাসুল (সাঃ) রেখে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম সম্পূর্ন ভাবে অবহেলিত ও নির্বাসিত ।প্রায় ১৫০০ বছর যাবত খলনায়কগনের প্রচারিত ও বাজারজাত কৃত ফরমালিন যুক্ত বিকৃত কুৎসিত জঘন্য ইসলামকে দুনিয়ার সকলেই প্রকৃত ইসলাম বলে মনে করে ।দরবারী মোল্লা , ভাড়াটে হাদিস লেখক , ভাড়াটে মুফতিগণ হয়ে গেল ইসলামের সোল এজেন্ট ।অজ্ঞ , জাহেল , মুনাফিক ভন্ড ব্যক্তিবর্গ হয়ে গেল কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী !জান্নাতের টিকিট বিক্রী শুরু হল ।এই ভন্ড ও বিকৃত ইসলাম থেকে জন্ম নেয় অসংখ্য নাস্তিক , অসংখ্য শিক্ষিত ব্লগার , অসংখ্য তালেবান , আই এস আই এস ও উগ্র জংগী সংগঠন ।পক্ষান্তরে –প্রকৃত মহানায়কগন শুরু থেকেই অবহেলিত , উপেক্ষিত ও নির্বাসিত ।সর্ব নিকৃষ্ট খলনায়কগনের ভয়ংকর অট্টহাসিতে পুরো মুসলিম উম্মাাহ আজ সর্ব নিকৃষ্ট ও জংলী ও অসভ্য জাতি হিসাবে পরিচিত ।বেঈমান , মুনাফিক , ছিনতাইকারী , লুটেরা , খুনী , লুচ্চা , বদমাশ , ধর্ষনকারী ব্যক্তিগন যে জাতির নেতা হয় সে জাতির এমন পরিনতি হবেই হবে ।শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতাপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

— মাজার চুম্বন ও শিরক ——-একজন মুসলমান আলেম বললেন , মদীনায় মসজিদে নব্বীর পাশে দাড়িয়েছিলাম ।হঠাৎ সেখানে শীয়া মাযহাবের এক লোক এসে নবীজীর (সাঃ) মাজারের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন দিতে শুরু করল ।মসজিদের ইমাম সাহেব তা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , ” ওহে মুসাফির , কেন তুমি এই বিবেক বুদ্বিহীন মাজারের দেয়ালকে চুমু দিচ্ছ ? এর মাধ্যমে তুমি তো শিরক করছ ” ।ইমাম সাহেবের ক্রুদ্ব চেহারা দেখে বেচারা শীয়া লোকটি ভারাক্রান্ত অন্তরে দ্রুত চলে গেল ।মুসলিম আলেম তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলল , ” এই দেয়ালে চুম্বন দেয়ার অর্থ হচ্ছে নবীজীর (সাঃ) প্রতি ভালবাসা । ঠক যেমন পিতা তার সন্তানকে চুম্বনের মাধ্যমে ভালবসা প্রকাশ করে । এখানে সে তো কোন শিরক করে নি ” ।ইমাম সাহেব বললেন , ” না , এটাকেও শিরক বলে ” ।মুসলমান আলেম বললেন , ” ও তাই নাকি , তাহলে সুরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) এর পরনের জামাটি তাঁর চোখে পরম স্নেহ মমতায় বুলালেন এবং তাঁর চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরে এল ।এখন আমার প্রশ্ন হল , ঐ জামাটি তো কাপড়ের তৈরী ছিল । তাহলে কিভাবে ঐ জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এর চোখের উপর রাখাতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল ?এমনটিই নয় কি যে , কাপড়ের তৈরী জামাটি হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের ছোয়া পেয়ে ঐরকম বিশেষত্ব পেয়েছিল ।এ ছাড়াও সুরা ইউসুফের ৯৪ নং অায়াত অনুসারে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহুদূর থেকে ওনার পু্ত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের সুঘ্রান অনুভব করেছিলেন ।এসবই তো হচ্ছে ভালবাসা ও ভক্তির আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ।আমি বা আপনি কাবা গৃহের পবি্ত্র কাল পাথরটিকে তো অজস্র চুমু দিয়ে থাকি । তো এখানে আপনি শিরকের কি দেখলেন ? আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ” ।ইমাম সাহেব বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাজের বাহানা দিয়ে যৌক্তিক কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন ।উপরের ঘটনায় এটা বলা যায় যে , নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগন এক ধরনের বিশেষ আধ্যাতিকতায় পারদর্শী । আর তাঁদের এই বিশেষ আধ্যাতিকতা থেকে উপকৃত হওয়াতে কোন শিরক নেই । বরং তা হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদেরই অনুরুপ । কেননা তাঁরাও এই বিশেষত্বকে তাওহীদের নূর থেকেই গ্রহন করেছেন ।আমরা আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের মাজারর পাশে বসে তাঁদের সাথে আন্তরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করি । যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই সেহেতু তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি ।পবিত্র কোরআনে সুরা ইউসুফের ৯৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে ,“– হে পিতা , আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , কেননা আমরা ভুল করেছিলাম — “।সুতরাং আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও অলি আউলিয়াগনের তাওয়াছছুল করা বা তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ন জায়েজ বা বৈধ । আর যারা এটাকে তাওহীদ থেকে আলাদা মনে করে থাকেন , তারা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত নয় । অথবা অযথা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের অন্তর চক্ষুতে পর্দা পড়ে গেছে ।সুরা মায়েদার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,“– যারা ঈমান এনেছো , পরহেজগার থেকো এবং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মাধ্যমের অন্বেষন কর —“।” মাধ্যম ” এই আয়াতের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ওয়াজীব কাজের আজ্ঞাম দেয়া এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই নয় । বরং মুস্তাহাব বিষয় যেমন আম্বীয়া , পবিত্র ইমামগন , প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের প্রতি তাওয়াছছুল করাকেও মাধ্যম বলা হয়েছে ।সুরা নিসার ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে ,“– আর যখন বিরোধিতাকারীরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল এবং তোমার কাছে এসে তোমার মাধ্যমে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল । আর নবী তাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন তখন তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহনকারী ও মেহেরবান হিসাবে উপলব্দি করেছিল — “।এ প্রসংগে একটি কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের আদি পিতা-মাতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) আমাদের শেষ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বায়েতগনের (আঃ) নামের উছিলায় আল্লাহর রহমত অর্জন করেছিলেন ।আহলে সুন্নাতের দুটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি ।এক ব্যক্তি নবীজীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন যে , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আমি কোন এক ব্যাপারে কসম করেছিলাম যে , যদি সফল হই তবে বেহেশতের দরজায় চুম্বন করব । এখন এ পর্যায় কি করব ” ?নবী (সাঃ) বললেন , ” মায়ের পায়ে ও পিতার কপালে চুম্বন কর “।লোকটি বলল , ” পিতা মাতা যদি ইন্তেকাল করে তখন কি করব ” ?নবী (সাঃ) বললেন , ” তাদের কবরে চুম্বন করলেই হবে ” ।সূত্র – আল আলামু – কুতুবুদ্দিন হানাফি , পৃ- ২৪ ।সুন্নি মাযহাবের বিশিষ্ট সাধক সাফিয়ান ছাওরী ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে বললেন , ” কেন মানুষ কাবা গৃহের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে ও চুম্বন করে ? ওটাতো একটা পুরান কাপড় ছাড়া আর কিছুই না ” !ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেন , ” এই কাজটি এমন যে , এক ব্যক্তি অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে । পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির হাত ধরে ক্ষমা চাইছে এবং তার চারিপার্শে ঘুরছে এই আশায় যে , ঐ ব্যক্তি যেন তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেয় ” ।আনোয়ারুল বাহিয়াহ , ইমাম সাদিক (আঃ) জীবনী ।সম্মানীয় পাঠক ,লেখাটি পড়ে এখন থেকে আর কখনই আমার মত অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠ মোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না , দয়া করে ।পরিপূর্ন নিশ্চিন্ত মনে নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করুন ও তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্ত দুঃখ বেদণা , পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান । — ইসলামী চিন্তাধারার উপর একশ একটি মুনাযিরা ,ইমাম আলী (আঃ) ফাউন্ডেশন ,পৃষ্ঠা – ১৬০ ছায়া অবলম্বনেপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ হাসনাইন জ্বরে আক্রান্ত(মাওলা পরিবারে অসুস্থতা খুব একটা আসেনি, তারিখে পাই সব মিলিয়ে চারটি ঘটনা, ১ মাওলা মুহাম্মদ সঃ তার শরীরে ব্যথা অনুভব করেছেন, ২ আলী চোখের সমস্যায় ভুগেছেন, ৩ ফাতেমা অসুস্থ হয়েছেন, ৪ হাসনাইন জ্বরে ভুগেছেন।আর যখনই কেউ অসুস্থ হয়েছে তখনই কোন না কোন বিশেষ ঘটনা, সাথে বিশেষ কোন আয়াত এসেছে। আশা করি সব কয়টাই তুলে ধরবো)মাওলা আলীর পরিবার রোজা রেখেছেন, বাদ নেই হাসান হোসাইন ও, মা ফাতেমা সাঃ আঃ রুটি বানিয়েছেন মাত্র তিনটি, ইফতারের আগে একজন এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন “ আমি মিসকিন আমাকে কিছু খাবার দিন।“ মা সব রুটি তাকে দিয়ে দিলেন। নিজেরা অভুক্ত থেকে গেলেন, কেউ একটু লবন কেউ পানি খেয়ে রোজা রাখলেন।পরেরদিনও একই ঘটনা। ইফতারের আগে একজন এলেন, বললেন “আমি ইয়াতিম, আমাকে কিছু খাবার দিন। মা দিয়ে দিলেন। সেদিনও সবাই অভুক্ত থেকে গেলেন।তৃতীয় দিনেও একই ঘটনা। সেদিন এসে বললেন আমি বন্দী। তিনদিন অভুক্ত থেকে হাসনাইন আঃ জ্বরে পরলেন। আল্লাহ পাক তাদের এই ত্যাগ দেখে এবং তার নজীর রাখতে পুরা একটা সুরা নাজিল করলেন সুরার নাম আদ দাহর (মানুষ)। সেটার আট নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন “ তারা ক্ষুধার্ত থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতীম, আর বন্দীকে খাদ্য দান করে। ( যদিও তারা সবাই জানতেন এই মিসকিন বা ইয়াতিম বা বন্দী আর কেউ না স্বয়ং জিব্রাইল।) তবুও তারা বলে আমরা তো আল্লাহর সন্তুস্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনা, শোকরও না।যারা আহলে বায়েতকে সাধারন সাহাবীর সাথে তুলনা করেন তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই কোরানের আরেকটি আয়াতের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। আল্লাহ্‌ বলেছেন তার হাবিব কে “ স্মরন করুন যখন ইব্রাহীমের নিকট সন্মানিত অতিথি এসেছিলো আর সে (ইব্রাহীম আঃ) বাছুর ভুনা করে পরিবেশন করেছিলো......।জীব্রাঈল আ যখন ইব্রাহীম আঃ এর কাছে যান তখন তার পরিচয় “সন্মানিত অতিথি” আর জিবরাঈল আ যখন মা ফাতেমা সাঃ আঃ এর দরজায় গিয়ে দাঁড়ায় তখন তার পরিচয়? মিসকিন, ইয়াতিম, বন্দী!! কাজেই হে জ্ঞানান্ধ কার সাথে কার তুলনা করো একটু ভেবে দেখো।আল্লাহুমা সাল্লেওয়ালা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলে মুহাম্মদ।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদরেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস — ভিত্তিহীন একটি হাদিস ।একটি বহুল প্রচলিত মুরছাল হাদিস এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা —মহানবী (সাঃ) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে সমগ্র উম্মতগনের জন্য বললেন যে , ” — রেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস ——- ” ।প্রিয় পাঠক ,উপরে উল্লেখিত হাদিসটি আমাদের চারিপাশে প্রচলিত ইসলামে সর্বাধিক প্রচারিত একটি জনপ্রিয় একটি হাদিস । হাদিসটি আমাদের সম্মাানীয় আলেম ওলামাগন বিভিন্ন ওয়াজে , টিভি প্রোগ্রামে বয়ান করে থাকেন ।বেশ ভাল কথা ।তো এবারে আমাদের সম্মাানীয় আলেমগনের পক্ষ থেকে সর্বাধিক প্রচারিত হাদিসটির রেফারেন্স খুঁজতে যেয়ে পবিত্র কোরআনের ঠিক পরেই সবথেকে নির্ভরযোগ্য সহীহ আল বুখারি শরীফ এবং সহীহ আল মুসলিম শরীফে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না ।এমনকি সহীহ তিরমিজি শরীফ , আবু দাউদ শরীফ , ইবনে মাজাহ এবং নাসায়ি শরীফেও এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না ।মোটকথা এই যে , সহীহ সিহাহ সিত্তাহ হাদিসগ্রন্থ সমূহে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব নেই ।স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে যে , সর্বাধিক প্রচারিত ও বাজারজাতরন কৃত জনপ্রিয় এই হাদিসটি তাহলে কোথায় আছে ?গবেষনায় দেখা গেল যে , হাদিসটি আছে মুয়াত্তা মালেকি তে ।হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মালেক বিন আনাস (রঃ) ।কে ছিলেন এই মালেক বিন আনাস (রাঃ) ?উনি সাহাবি ছিলেন না । উনি ছিলেন তাবেঈন ।সংগত কারনে আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর বিদায় হজ্ব ভাষণের সময় উনি উপস্থিত ছিলেন না ।তাছাড়া হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে নি ।অর্থাৎ উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী হাদিসটি মুরসাল ।মূরসাল হাদীস হচ্ছে যেই হাদীসের রাবিদের পরম্পরায় একজন বা একটি জেনারেশান বাদ পড়ে গেছে ।অন্য দলীল না থাকলে মূরসাল হাদীস গ্রহনযোগ্য নয় ।পাঠক ,এবারে জেনে নিন যে , প্রকৃত সত্য তাহলে কোনটি ।হাদিসে সাকালাইন নামে এই হাদিসটি বহুল প্রচারিত —মহানবী (সাঃ) বলেন যে –” হে মানবসকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি ভারী জিনিষ (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি , যদি এই দুইটি আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না ।প্রথমটি হচ্ছে , পবিত্র কোরআন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আমার ইতরাত , আহলে বাইত (রক্তজ বংশধর) । নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিষ হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনই পরস্পর থেকে বিছিন্ন হবে না ” ।সূত্র – সহীহ তিরমিজি , খন্ড – ৬ , হাদিস – ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড – ১১ , হাদিস – ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ১৮১ , ৩৯৩ (ইসলামিচ ফাউন্ডেশন) / তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ) , পৃষ্ঠা – ১২ , ১৩ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম) / মাদারেজুন নাবুয়াত , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ১১৫ (শায়খ আব্দুল হক দেহলভী) / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড – ১ , পৃষ্ঠা – ৫৬৬ / মুসলিম মুসনাদে আহমদ / নাসাঈ / কানযুল উম্মাল / তাফসীরে ইবনে কাছির / মিশকাতুল মাছাবিহ / তাফসীরে কবির ।সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষন –পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সনদ হচ্ছে , মহানবী (সাঃ) এর রক্তজ বংশধর তথা পুতঃপবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও অানুগত্য করা ।এই সাবধান বানী মহানবী (সাঃ) সেই সময় সকল সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন । অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য করা সকল সাহাবীগনের জন্যও বাধ্যতামূলক ছিল ।এই অবস্থায় আমরা যদি মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য না করি , তাহলে পথভ্রষ্টতা থেকে আদৌ কি মুক্তি পাব ?আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী তার তাফসীরে মাযাহারীতে লিখেছেন –” নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) এর কথা এজন্যে তাগিদ করেছেন যে , হেদায়েত ও ইমামত তথা বেলায়েতের বিষয় আহলে বাইত (আঃ) গনই একমাত্র পথপ্রর্দশক ” ।সূত্র – তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ ।বিশ্লেষন —উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী এই হাদিসে সাকালাইন হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ ।সবথেকে অবাক করা বিষয় এই যে , প্রচলিত ইসলামে একটি মুরসাল হাদিস নিয়ে অনেক আলোচনা , ব্যাপক প্রচার ও বাজাতজাতকরন হয় ।কিন্ত অতীব দুঃখের বিষয় হল যে , এতগুলো সনদে উল্লেখ থাকা সত্বেও বিশুদ্ব সহীহ এই হাদিসটি নিয়ে আলোচনা খুবই কম হয় !নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গন তথা নবী বংশ নিয়ে আলোচনা এত কম হয় কেন ?পরিশেষে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত মনে করিয়ে দিয়ে আপাঃতত বিদায় –“ — এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না অথবা সত্যকে গোপন কর না যখন তোমরা জান – “ ।সুরা – বাকারা / ৪২ ।পাঠক ,বহুল প্রচারিত একটি মুরছাল হাদিসের বিপরীতে আসুন আমরা গ্রহন করে নেই সর্বাধিক বিশুদ্ব রেওয়ায়েত সমৃদ্ব সহীহ হাদিসকে ।প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদইয়া আমিরুল মুমিনিন আলি ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদ নবী পরিবারের(আঃ) শানে পবিত্র কোরানের আয়াতসুরা আল-বাকারাহ,আয়াত# ২০৭“মানুষের মধ্যে এমনও মানুষ আছে যে নিজের জীবনকে খোদার রাস্তায় খোদার সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য বিক্রয় করিয়া দেয়।আল্লাহ এই ধরনের বান্দাকে ভালবাসিয়া থাকেন”।সালাবী নিজের তাফসীরে বর্ননা করিয়াছেন যে,যখন আল্লাহর রাসুল(সাঃ) মক্কা হইতে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন তখন হযরত আলী(আঃ)কে নিজের স্থানে রাখিয়া গেলেন যেন আমানত ও ঋন মানুষদেরকে পরিশোধ করিয়া দেন।হযরত রাসুলে খোদা (সাঃ) রাত্রে যখন গারে সাওরের দিকে রওনা হইলেন তখন হযরত আলী(আঃ)কে আদেশ করিলেন তিনি যেন নবী পাকের(সাঃ) বিছানায় শায়িত থাকেন।তিনি বলিলেন হে আলী!আমার বিছানায় আমার সবুজ হাজরামী চাদর গায়ে ঘুমাইয়া থাক।আমি আশা করি যে,তোমার নিকট কোন আপদ-বিপদ আসিবে না।হযরত আলী(আঃ) রাসুলের(সাঃ) কথা মত আমল করিলেন।আল্লাহতায়ালা নিজের ২ ফেরেস্তা জিব্রাঈল ও মিকাঈল(আঃ)কে বলিলেন যে,আমি তোমাদের ২ জনের মধ্যে ভ্রাতৃ্ত্ব বন্দ্বন স্থাপন করিলাম।তোমাদের মধ্যে একজনের আয়ু অন্য জনের আয়ু হইতে বৃ্দ্বি করিয়া দিলাম ।এখন তুমি নিজের জীবন অপরের বিসর্জন দিতে রাজী আছ কি? তখন ঐ ২ ফেরেস্তা নিজের জীবনকে প্রাধান্য দিল।তখন মহান রাব্বুল আলামীন ২ ফেরেশ্তাকে বলিলেনঃ তোমরা আলী বিন আবি তালিবের মত হইতে পার না? আমি তাঁহার মধ্যে এবং আমার রাসুলের(সাঃ) মধ্যে ভ্রাতৃ্ত্ব বন্দ্বন স্থাপন করিয়া দিয়াছি।হয্রত আলী রাসুলের(সাঃ) বিছানায় ঘুমাইয়া আছে।যেন নিজের জীবনটা হযরত রাসুলের(সাঃ) জন্য বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।তাই তোমরা ২ ফেরেস্তা পৃথিবীতে গিয়া হযরত আলীর হেফাজত কর।হযরত জিব্রাঈল(আঃ) হযরত আলীর(আঃ) মাথার দিকে ঘুরিয়া দাড়াইলেন এবং মিকাঈল(আঃ) তাঁহার পায়ের দিকে দাড়াইলেন।হযরত জিব্রাঈল(আঃ) বলিলেন,ধন্যবাদ হে আলী,তোমার সমকক্ষ কে হইতে পারে?আল্লাহতায়ালা তোমার দ্বারা ফেরেস্তাদের উপর গর্ব করিতেছেন।এই প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এই আয়াত নাযিল করিলেন।(সুত্রঃ ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,৩য় খন্ড, পৃঃ২৩৮;আল-গাদীর,২য় খন্ড,পৃঃ৪৭; মুরাজেয়াত, পৃঃ৬৪;মুস্তাদরাকে হাকিম,৩য় খন্ড,পৃঃ৪;তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ৭১;)।সুরা আলে ইম্রান,আয়াত# ১০৩“এবং আল্লাহর রজ্জুকে আকড়াইয়া ধর সবাই মিলে আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না।“রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৫ম ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে, হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)এর বংশধররাই আল্লাহপাকের মজবুত রজ্জু যাঁহাকে আল্লাহতায়ালা দৃঢ়ভাবে আকড়াইয়া ধরার আদেশ দিয়াছেন(তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০৬;তাফসীরে ফুরাত,পৃঃ১৪;মাজমাউল বায়ান,২য় খন্ড,পৃঃ৪৮২;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৪)।সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪“তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহপাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হিকমাত দান করিয়াছি।“আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েত হতে বর্ননা করিয়াছেন যে,তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সাথে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাঁহারা হইলাম আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদিগকে ইমামতি দান করিয়াছেন।রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৫ম ইমাম বাকের (আঃ) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইব্রাহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করিয়াছেন।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরগনকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লাহর আদেশ অমান্য করার সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ,পৃঃ১২১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন,২য় খন্ড,পৃঃ২০৪)।সুরা নিসা,আয়াত# ৫৯“হে ঈমানদারগন,নির্দেশ মান্য কর আল্লাহর এবং রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কতৃ্ত্বের অধিকারী।“রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৬ষ্ট ইমাম জাফর সাদিক(আঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হইলো যে,উত্তরাধিকারীর আদেশ মান্য করা কি অবশ্যই কর্তব্য? তিনি ফরমাইলেনঃহ্যা,তাঁহারা ঐসব ব্যাক্তি যাহাদের আদেশ পালন করা এই আয়াতে ফরজ করা হইয়াছে এবং অনেক বর্ননায় আসিয়াছে।আর এই আয়াতে “যারা কতৃ্ত্বের অধিকারী” তারা হইলেন রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ১২ ইমাম।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪১;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন,২য় খন্ড,পৃ১৪১,২৯০, ও ৬৪১;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬৪;)।সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম।“গাদীরে খুমে যখন রাসুল(সাঃ) হযরত আলীকে খেলাফত ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃখোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন,নিজের অবদানকে সপুর্ন করিলেন।আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)।সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪“তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহ পাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হেকমাত দান করিয়াছি।“আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ইমামগন হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সংগে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাহারা হইলেন আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদের ইমামতি দান করিয়াছেন।হযরত ইমাম বাকের(আ:) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইবারহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন(১২ ইমাম) সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করাইয়াছে।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লহর আদেশ অমান্যের সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ১২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ২০৪;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯; শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৩;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৬৭;সাওয়েকে মুহরেকা,পৃঃ১৫০)।সুরা নিসা,আয়াত# ৮৩“যদি তাহারা উহা রাসুল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত,তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্দ্বান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্নয় করিতে পারিত।“হযরত ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে,যাহারা বাস্তবতা জানেন আর যাহারা ক্ষমতাসম্পন্ন তাহারা হইলেন হযরত মুহাম্মাদের(সাঃ) বংশধর।আয়াশী হযরত ইমাম রেজা(আঃ) হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, ইহা দ্বারা হযরত নবী করিমের(সাঃ) বংশধরকে বুঝানো হইয়াছে। কারন তাহারা হইলেন ঐ সব ব্যক্তি যাঁহারা কোরানের বাস্তব তথ্য ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।তাঁহারাই হালাল ও হারামের উপর অবগত হইয়াছেন।আর তাহারাই সৃষ্টির উপর আল্লাহতায়ালার হুজ্জাত বা অকাট্য প্রমানস্বরুপ।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৫;রাওয়ানে যাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৯২;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ৪০প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম হযরত ফাতেমা সুগরার চিঠিকে এই ফাতেমা সুগরাআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদইমাম হুসাইন (আ.) এক কন্যার নাম ছিল ফাতিমা সুগরা। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ফাতিমা সুগরা মদীনাতে একা থেকে যান।হজরত ফাতিমা সুগরার চিঠিইমাম হুসাইন (আ.) এক কন্যার নাম ছিল ফাতিমা সুগরা। যখন ইমাম হুসাইন (আ.) মদীনা থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ফাতিমা সুগরা মদীনাতে একা থেকে যান।যখন ফাতিমা সুগরা দেখলেন যে তার বাবা হুসাইন (আ.) তাকে একা রেখে ঘোড়াতে সাওয়ার হচ্ছেন তখন তিনি বাবাকে বলেন হে বাবা! কেন আপনি আমাকে একা ছেড়ে যাচ্ছেন? তখন ইমাম হুসাইন (আ.) ঘোড়া থেকে নেমে এসে বলেনঃ হে ফাতিমা সুগরা! তুমি অসুস্থ আর আমি এক অজানা ঠিকানার দিকে রওনা হচ্ছি এ সফরের সহ্য ক্ষমতা তোমার মধ্যে নাই তাই তোমাকে এই মদীনাতে ছেড়ে যাচ্ছি। যদি কোন উপযুক্ত ঠিকানা পাই তাহলে তোমাকে চাচা আব্বাস এবং ভাই আলী আকবরের মাধ্যমে আমার কাছে ডেকে নিব। তখন ফাতিমা সুগরা বলেনঃ আমার মন বলছে যে, এর পরে হয়তো আপনার সাথে আমার আর দেখা হবে না তাই আামাকে অনুমতি দেন যে, আমি যেন আমার ফুফু এবং বোনদের সাথে বিদায় নিয়ে নেই।ইমাম হুসাইন (আ.)তাকে অনুমতি দিলে তিনি তার ফুফু ও বোনদের কাছে যান এবং তাদের কাছ থেকে বিদায় নেন এবং যখন তিনি আলী আসগারের মা রোবাবের কাছে আসেন এবং তার কাছ থেকে বিদায় নেন এবং ছোট ভাই আলী আসগারকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেনে এবং তাকে আদর করেন এবং অন্যান্য সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ঘরের দিকে ফিরে যান।ইমাম হুসাইন (আ.) ফাতিমা সুগরাকে মদীনায় উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামার কাছে রেখে যান। তিনি প্রত্যেক দিন অশান্ত এবং অস্থির অবস্থায় বাড়ির উঠানে দৌড়ে আসতেন এবং দেখতেন যে তার বাবা তার জন্য কোন খবর পাঠিয়েছে কি না। বেশ অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন তার বাবার কোন খবর তিনি পাননি, তখন তিনি তার দাদী ফাতিমা যাহরা (সা.আ.) এর ন্যায় ঘরের কোণায় বসে সারাক্ষণ ক্রন্দন করতেন। একবার তিনি তার বাবাকে তার অবস্থার কথা জানিয়ে চিঠি লিখার মনস্থির করলেন।যখন তিনি চিঠি লিখছিলেন এবং ক্রন্দন করছিলেন তখন একজন আরবী বেদুঈন সেখান থেকে অতিক্রম করছিল। তখন সে ফাতিমা সুগরার ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পায়, সে তার উদ্দেশ্যে সালাম জানিয়ে বলেঃ হে নবী পরিবার আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক, আমি একজন আরব বেদুঈন। আমি যাচ্ছি কারবালাতে যুদ্ধ করতে যদি আপনার কোন আরজী থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন হয়তো আমি আপনার কোন উপকারে আসতে পারি।তখন ফাতিমা সুগরা অসুস্থ অবস্থায় দরজায় আসে এবং তার সালামের উত্তর দেয় এবং বলেঃ আমার বাবা কারবালার দিকে গেছে এবং আমি আমার বাবার কাছ থেকে দূরে থাকার কারণে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে গেছি এবং আমি একজন বার্তা বাহকের অপেক্ষায় আছি যদি কোন বার্তা বাহক কারবালার উদ্দেশ্যে যায় তাহলে আমি তার মাধ্যমে আমার বাবার কাছে আমার অবস্থার কথা লিখে পাঠাব। যদি তুমি আমার এই চিঠিটি নিয়ে যাও তাহলে আমি তোমার জন্য দোয়া করবো।আরবের সেই বেদুঈন ফাতিমা সুগরার চিঠিটি নিয়ে কারবালার উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং ১০ই মহরম ইমাম হুসাইন (আ.) এর খেদমতে উপস্থিত হয় এবং ফাতিমা সুগরার সেই দুঃখভারাক্রান্ত চিঠিটি ইমাম হুসাইন (আ.) কে দেয়। ইমাম হুসাইন (আ.) কাসীদের কাছ থেকে তার আদরের দুলালী ফাতিমা সুগরার চিঠিটি নিয়ে খুলে পড়েন এবং অঝরে ক্রন্দন করতে থাকেন এবং তার আহলে বাইত কে ডেকে বলেনঃ হে জয়নাব! হে উম্মে কুলসুম! হে সকিনা! হে রুকাইয়া! আস দেখ মদীনা থেকে চিঠি এসেছে। তখন হজরত জয়নাব (সা.আ.) আসেন এবং বলেন হে ভাই দয়া করে আমাকে উক্ত চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত করুন। তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন উক্ত চিঠিটি হচ্ছে ফাতিমা সুগরার, সে তার চাচাকে সালাম জানিয়েছে কিন্তু সে জানে না যে, তার চাচা দুই হাত কাটা অবস্থায় ফুরাতের কিনারে শহীদ হয়ে গেছে, সে তার ভাই আলী আকবরকে সালাম জানিয়েছে কিন্তু সে জানেনা যে তার ভাই শত্রুদের তরবারির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা গেছে, সে তার ছোট ভাইকে আদর বলেছে কিন্তু সে জানে না যে, তার ভাই আলী আসগার গলায় তীর মেরে তাকে শহীদ করা হয়েছে।পরে উক্ত আরবী বেদুঈন সম্পর্কে আর কোন কোন কথা ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়নি যে সে উক্ত যুদ্ধে ইমাম হুসাইন (আ.) এর পক্ষে অংশগ্রহণ করে শহীদ নাকি ফিরে যায়?সূত্রঃ- মাখযানুল বুকা, পৃষ্ঠা ২৪০।- বুকাউল হুসাইন (আ.), পৃষ্ঠা ২৯২-২৯৪প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এক মহিষী নারী ফিজ্জা আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদ পৃথিবীর মাঝে পৃথিবীর বুকে এমন বহু মুফতি মাওলানামুফাসসির কাড়ি আছেনযারা সত্যকে লুকিয়ে রেখে মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে এবং সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে ঢেকে রাখছেনইনি এমন একজন মা যাকে যায়নাব বিনতে আলী সংবর্ধনা দিয়েছেনইনার এমন করুণ ইতিহাস আছে যারা কেউ তুলে ধরে না তিনি কারবালার ইতিহাস যদি ভালো করে যদি তা না হয় তাহলে এই ইতিহাসের ভিতর বুঝা যাবে ফিজ্জা নৌবিইয়ামহীয়সী দাসী ফিজ্জা’র সংক্ষিপ্ত জীবন বিবরণিফিজ্জা নৌবিইয়া হযরত ফাতিমা যাহরা ‎(সা.আ.)’র দাসী ছিলেন। রাসুল ‎(সা.) ‏তাকে এই নামে ডাকতেন। বলা হয় যে, ‏ফিজ্জা আসলে নৌবিইয়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। নৌবিইয়া হচ্ছে দক্ষিণ সুদানের একটি এলাকা অথবা মিশরের দক্ষিণ পূর্ব একটি এলাকা। অনেকে তাকে হিন্দ বাসী বলেও মনে করেন। আবার অনেকে তাকে হিন্দ বাদশাহর মেয়ে বলেও মনে করেন, ‏যিনি হাবাশার লোকদের কাছে বন্দি হন। পরবর্তিতে হাবাশার বাদশা ফিজ্জাকে রাসুল ‎(সা.)’র জন্য উপহার স্বরূপ প্রেরণ করেন এবং রাসুল ‎(সা.) ‏ফিজ্জাকে ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র কাছে দান করেন।ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র গৃহে ফিজ্জা:ফিজ্জা ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র দাসী ছিলেন। ফিজ্জাকে রাসুল ‎(সা.) ‏হাদীয়া স্বরূপ ফাতিমা ‎(সা.আ.)কে দান করেছিলেন এবং তার নামকরণ করেন ফিজ্জা। হযরত ফাতিমা যাহরা ‎(সা.আ.) ‏গৃহের কাজগুলোকে ভাগ করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি কাজ করতেন এবং পরের দিন ফিজ্জা কাজ করতো।ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন ‎(আ.) ‏যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন আলী ‎(আ.) ‏ও ফাতিমা ‎(সা.আ.) ‏মান্নত করেন যে, ‏হাসনাইন সুস্থ হয়ে গেলে তাঁরা রোজা রাখবেন। অতঃপর তাঁরা সুস্থ হয়ে গেলে ফিজ্জাও তাঁদের সাথে রোজা রাখেন। ফাতিমা যাহরা ‎(সা.আ.)’র মৃত্যুর পরে আলী ‎(আ.) ‏পরিবারের সকলকে বলেন যে আস তোমরা তোমাদের মা কে শেষবারের মতো দেখে নাও। তখন তিনি ফিজ্জাকে ডাকেন এবং তাকেও ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র চেহারাকে দেখিয়ে দেন। হযরত ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র শাহাদতের পরে ফিজ্জা প্রায় ২০ বছর তাঁর পরিবারের খেদমত করেন। ইমাম আলী ‎(আ.) ‏ফিজ্জাকে সৎ এবং তাকওয়াধারী মহীলা বলে আখ্যায়িত করেছেন।ফিজ্জার পরিবার:আলী ‎(আ.) ‏বলেন: ‏ফিজ্জা আবু সাআলাবা হাবাসীর স্ত্রী ছিলেন এবং এই স্বামী থেকে তার একটি পুত্র সন্তান ছিল। আবু সাআলাবার মৃত্যুর পরে ফিজ্জা আবু মালিক গ্বাতফানিকে বিবাহ করেন। উক্ত বিবাহের পরে আবু সাআলাবার পুত্রটি মারা যায়। পরবর্তিতে আবু মালিক থেকে ফিজ্জার একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। যার নাম ছিল শোহরাত বিনতে মুসকাত বিনতে ফিজ্জা।ফিজ্জার কন্যার কেরামত:মালিক বিন দিনার বলেন: ‏এক বছর আমি হজ্বে যাচ্ছিলাম পথিমধ্যে দেখলাম যে, ‏একজন দূর্বল নারী রোগা গাধার উপরে বসে ছিল এবং গাধাটি আর পথ চলতে পারছিল না। আমি তাকে বলি যে, ‏কেন সে এমন দূর্বল গাধায় আরোহণ করে সফর করছে। তখন নারীটি আকাশের দিকে মুখ তুলে বললো: ‏আপনি আমাকে আমার ঘরে থাকতে দিলেন না নিজের ঘরে পৌছালেন। আপনার সত্তার শপথ আপনার পরিবর্তে কেউ যদি আমার সাথে এমন আচরণ করতো তাহলে আমি আপনার কাছে তার অভিযোগ করতাম। হঠাৎ ঐ পথে দিয়ে একজন ব্যাক্তি আসে যার হাতে একটি পশু ছিল সে উক্ত মহীলাকে তার গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌছে দেয়। মালিক বিন দিনার বলেন: ‏আমি উক্ত ঘটনা দেখে বুঝতে পারি যে, ‏সে একজন পরহেজগার এবং পূণ্যবতী নারী যাকে আল্লাহ উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি: ‏আপনি কে? ‏সে বলে: ‏আমি শোহরাত বিনতে মুসকাত বিনতে ফিজ্জা।ফিজ্জার বৈশিষ্ট:ফিজ্জা প্রায় ২০ বছর যাবত যখনই কথা বলতো তখন কোরআনের আয়াত দ্বারা কথা বলতো। তিনি রাসুল ‎(সা.)’র ওফাতের পর থেকে নিয়ে হযরত ফাতিমা যাহরা ‎(সা.আ.) ‏সম্পর্কিত দীর্ঘ রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন। হযরত আলী ‎(আ.) ‏ফিজ্জা সম্পর্কে বলেন: (اللهم بارک لنا فی فضّتنا)। আবার কেউ কেউ বলেন: ‏ফিজ্জা রসায়ন বিজ্ঞান সম্পর্কে অবগত ছিল এবং সে উক্ত বিদ্যাটি হযরত ফাতিমা যাহরা ‎(আ.) ‏থেকে অর্জন করেছিলেন। রাসুল ‎(সা.) ‏ও তাকে কিছু যিকিরের শিক্ষা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর তার জ্ঞানের প্রশংসা করেছেন।বর্ণিত হয়েছে যে, ‏কাবা শরীফের একজন জিয়ারতকারী তার কাফেলা থেকে দূরে পড়ে যায়। উক্ত ব্যাক্তিটি হঠাৎ একজন নারীকে দেখতে পাই এবং বুঝতে পারে যে, ‏সেও পথ হারিয়ে ফেলেছে এবং বুঝতে পারছে না যে কোথায় যাবে। লোকটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কে?ফিজ্জা তার উত্তরে কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে বুঝাতে চান যে, ‏কেন সে সালাম ব্যাতিত কথাবার্তা শুরু করে।ফিজ্জা বলেন: وَ قُلْ سَلامٌ فَسَوْفَ یَعْلَمُونَঅর্থঃ এবং বলুন, ‘সালাম। তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। ‎(সূরা যুখরুফ, ‏আয়াত নং ৮৯)লোকটি বলে: ‏সালামুন আলাইকেলোকটি বলে: ‏তুমি এ মরুভুমিতে কি করছ?ফিজ্জা বলেন: وَ مَنْ یَهْدِ اللَّهُ فَمالَهُ مِنْ مُضِلٍঅর্থঃ আর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, ‏তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। ‎(সূরা যুমার, ‏আয়াত নং ৩৭)লোকটি বলে: ‏তুমি কি জ্বিন নাকি মানুষ?ফিজ্জা বলেন: يا بنى‏آدم خذوا زينتكمঅর্থঃ হে বনী-আদম! ‏তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও। ‎(সূরা আরাফ, ‏আয়াত নং ৩১)লোকটি বলে: ‏তুমি কোথায় থেকে আসছো?ফিজ্জা বলেন: یُنادَوْنَ مِنْ مَكانٍ بَعیدٍঅর্থঃ তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। সূরা ফুসসিলাত, ‏আয়াত নং ৪৪।লোকটি বলে: ‏তুমি কোথায় যাবে?ফিজ্জা বলেন: وَلِلّهِ عَلَى النّاسِ حِجُّ الْبَیْتِঅর্থঃ আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য। ‎(সূরা আলে ইমরান, ‏আয়াত নং ৯৭)লোকটি বলে: ‏তুমি কখন তোমার কাফেলা হারিয়ে ফেলেছ?ফিজ্জা বলেন: وَ لَقَدْ خَلَقْنَا السَّماواتِ وَ الْاَرْضِ فِى سِتَّةِ اَیّامٍঅর্থঃ আমি নভোমন্ডল, ‏ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি। ‎(সূরা ক্বাফ, ‏আয়াত নং ৩৮)লোকটি বলে: ‏তুমি কি খাবার খাবে?ফিজ্জা বলেন: وَ ما جَعَلْناهُمْ جَسَداً لا یأْكُلُونَ الطَّعامَঅর্থঃ আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, ‏তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না। ‎(সূরা আম্বিয়া, ‏আয়াত নং ৮)খাবার খাওয়ার পরে লোকটি ফিজ্জাকে বলে: ‏একটু তাড়াতাড়ি পথ চলতে হবে।ফিজ্জা বলেন: لايكلف اللَّه نفساً إلا وسعهاঅর্থঃ আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। ‎(সূরা বাকারা, ‏আয়াত নং ২৮৬)লোকটি বলে: ‏তাহলে তুমি আমার বাহনে আরোহন কর।ফিজ্জা বলেন: لو كان فيهما آلهة الا اللَّه لفسدتاঅর্থঃ যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, ‏তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। ‎(সূরা আম্বিয়া, ‏আয়াত নং ২২)লোকটি তার বাহন থেকে নিচে নেমে আসে এবং ফিজ্জাকে আরোহন করায়।ফিজ্জা বলেন: سبحان الذى سخّر لنا هذاঅর্থঃ যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। ‎(সূরা যুখরুফ, ‏আয়াত নং ১৩)লোকটি বলে: ‏আমি তাঁকে এভাবে তার কাফেলাতে পৌছে দেই। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কাফেলার কাউকে কি চিন?ফিজ্জা বলেন: يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِঅর্থঃ হে দাউদ! ‏আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।(সূরা সোয়াদ, ‏আয়াত নং ২৬)وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌআর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! (আলে ইমরান, ‏আয়াত নং ১৪৪)يَا يَحْيَى خُذِ الْكِتَابَঅর্থঃ হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। ‎(সূরা মরিয়ম, ‏আয়াত নং ১২)فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِي يَا مُوسَىঅর্থঃ অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌছলেন, ‏তখন আওয়াজ আসল হে মূসা। ‎(সূরা তাহা, ‏আয়াত নং ১১)এ আয়াত সমূহের তেলাওয়াত করে তার চার সন্তানদের নামকে বুঝিয়ে দেয়।আমি উক্ত কাফেলাকে থামতে বললাম এবং উক্ত নামগুলিকে উদ্দেশ্যে করে ডাক দিলাম। তখন চারজন যুবক আমার কাছে আসে। আমি ফিজ্জাকে জিজ্ঞাসা করি এরা কারা?ফিজ্জা বলে: الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَاঅর্থঃ ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ‎(সূরা কাহাফ, ‏আয়াত নং ৪৬)যে এরা হচ্ছে আমার সন্তান।তার সন্তানরা তাদের মাকে পেয়ে অনেক খুশি হয়। তখন ফিজ্জা আবার কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করে তাদেরকে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের আদেশ দেয়।ফিজ্জা বলে: إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا سَقَيْتَঅর্থঃ আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, ‏যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, ‏তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন। ‎(কেসাস, ‏আয়াত নং ২৫)আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি যে এ নারীর পরিচয় কি?তার সন্তান জবাব দেয় তিনি হচ্ছে আমার মা ফিজ্জা এবং তিনি ছিলেন হজরত ফাতেমা ‎(সা.আ.) ‏এর দাসী। আর তিনি এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে তার মনের ভাবকে কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেন।আলী ‎(আ.) ‏বলেন: ‏ফিজ্জাকে রাসুল ‎(সা.) ‏কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন যা সে সর্বদা পাঠ করতো। একদা ফাতিমা ‎(সা.আ.) ‏তাকে বলেন: ‏হে ফিজ্জা! ‏তুমি আটা খামির করবে নাকি রুটি বানাবে? ‏ফিজ্জা বলে: ‏আমি অঅটা খামির করব এবং কাঠও একত্রিত করব। এই বলে সে মরুভূমিতে যায় এবং সেখানে একটি বড় কাঠ সে খুজে পায়। কিন্তু কাঠটি এতই বড় ছিল যে, ‏সে কাঠটি তুলতে অপারগ ছিল। তখন রাসুল ‎(সা.)’র শিখানো দোয়াটি পাঠ করা শুরু করে।يا واحدُ ليسَ كَمِثلِهِ أحدٌ، تَميتُ‏ كُلُّ‏ أحدٍ وَ تَفني‏ كُلُّ‏ أحدٍ، وَ أنتَ عَلَى عرشِكَ واحدٌ، وَ لا تَأخُذُهُ سنةٌ وَ لا نَومٌহঠাৎ মুরুভূমি থেকে একজন লোক তার কাছে আসে। মনে হচ্ছিল যেন সে তার ডাক শুনেই এসেছে। সেই ব্যাক্তি উক্ত কাঠটি নিজের ঘাড়ে নিয়ে ফাতিমা ‎(সা.আ.)’র ঘরের দরজার কাছে রেখে চলে যায়।ওফাত:ফিজ্জার কবর সিরিয়ার দামেস্কে বাবুস সাগ্বীর নামক কবরস্থানে রয়েছে। ফিজ্জার কবরটি আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিবের কবরের কিছু দূরেই অবস্থিত। ফিজ্জার কবর ঘরটিতে সবুজ গুম্বুজ এবং চারিধারে কালো পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। তথ্যসূত্র:১. ‏আলামুন নিসাইল মুমিনাত, ‏পৃষ্ঠা ৬৯৬, ‏৬৯৯-৭০০।২. ‏আল এসাবা, ‏খন্ড ৮, ‏পৃষ্ঠা ২৮১।৩. ‏মাজমাউল বাহরাইন, ‏খন্ড ২, ‏পৃষ্ঠা ১৭৮।৪. ‏রিয়াযুস সালিকিন, ‏খন্ড ৪, ‏পৃষ্ঠা ২২৪।৫. ‏বিহারুল আনওয়ার, ‏খন্ড ৯, ‏পৃষ্ঠা ৫৭৫, ‏খন্ড ৪১, ‏পৃষ্ঠা ২৭৩, ‏খন্ড ৪৩, ‏পৃষ্ঠা ৪৭, ‏১৭৯।৬. ‏মাশারেকে আনওয়ারুল ইয়াক্বিন, ‏পৃষ্ঠা ১২১।৭. ‏তাফসীরে নুরুস সাকালাইন, ‏খন্ড ৩, ‏পৃষ্ঠা ১৫৭।৮. ‏মাওসুআতুল কোবরা, ‏খন্ড ১৭, ‏পৃষ্ঠা ৪২৮- ‏৪৩০।৯. ‏তাসলিয়াতুল মাজালিস, ‏খন্ড ১, ‏পৃষ্ঠা ৫২৯।১০. ‏শারহুল আখবার, ‏খন্ড ২, ‏পৃষ্ঠা ৩২৭, ‏৩২৮।১১. ‏মানাকেবে আলে আবি তালিব, ‏খন্ড ৩, ‏পৃষ্ঠা ১৮৩।১২. ‏রিয়াহিনুশ শারিয়া, ‏খন্ড ২, ‏পৃষ্ঠা ৩১৩- ‏৩২৬।১৩. ‏আস সাকিব ফিল মানাকিব, ‏পৃষ্ঠা ২৮১।১৪. ‏মোআসসেসেহ আশুরা, ‏পৃষ্ঠা ২৩১।১৫. ‏ইসবাতুল হুদা, ‏খন্ড ৪, ‏পৃষ্ঠা ৩৭।১৬. ‏কাফি, ‏খন্ড ১, ‏পৃষ্ঠা ৪৬৫।১৭. ‏আল ইরশাদ, ‏পৃষ্ঠা ১১৩।১৮. ‏আমাকেনে সিয়াহাতি ওয়া যিয়ারাতি দামেস্ক, ‏পৃষ্ঠা ৪৭।১৯. ‏মানাকেবে ফাতিমি দার সেরে ফার্সী, ‏পৃষ্ঠা ১০৪, ‏১১৬।২০. ‏উসদুল গ্বাবা, ‏খন্ড ৫, ‏পৃষ্ঠা ৫৩০।২১. ‏আল আসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ‏খন্ড ৮, ‏পৃষ্ঠা ২৮১।২২. ‏আসরারে শাহাদাত, ‏খন্ড ২, ‏পৃষ্ঠা ২২৮, ‏৬৩০।২৩. ‏আশুরা চে রুযি আস্ত, ‏পৃষ্ঠা ২৯০।২৪. ‏উসুল মিনাল কাফি, ‏খন্ড ১, ‏পৃষ্ঠা ৪৬৫প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

হযরত মাসুমা (সা)’র শুভ জন্মবার্ষিকীনবীজীর আহলে বাইতের মহিয়সী নারী হযরত মাসুমা (সা)‘র শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আপনাদের সবার প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তার আসল নাম ছিল ফাতেমা। মাসুমা ছিল তাঁর উপাধি। তিনি ছিলেন ইমাম মূসা কাজেম (আ) এর কন্যা এবং ইমাম রেযা (আ) এর বোন। ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় এই মহিয়সী নারী ধর্মীয় চিন্তাবিদ ও জ্ঞানী-গুণী-মনীষীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।তাঁর পবিত্র জন্মবার্ষিকীতে আমরা তাঁরই জীবনাদর্শ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।জন্ম১৭৩ হিজরীর পহেলা জিলক্বাদ হযরত মাসুমা (সা) মদীনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের অনেক আগেই তাঁর প্রিয় দাদা ইমাম সাদেক (আ) তাঁর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বলেছিলেনঃ ইরানের কোম শহরে আমার বংশের এক নারী গমন করবে। তার নাম হবে ফাতেমা-সে মূসা ইবনে জাফরের মেয়ে। এরপর ইমাম সাদেক (আ) বলেন তাকে ঘিরে এই কোম শহরে রাসূলে খোদার খান্দানের জন্যে একটি পবিত্র স্থাপনা বা হেরেম হবে।নবীজীর আহলে বাইত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন এই মহিয়সী নারীর জন্মের অপেক্ষায় দিন গুনছিল। অবশেষে সেই শুভ লগ্নটি ঘনিয়ে এলো। পহেলা জিলক্বাদে ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ) এবং তাঁর স্ত্রী নাজমার চোখগুলো নবজাতক কন্যা শিশুটির মুখখানি দেখে আনন্দে ঝলমল করে উঠলো। শিশুকন্যার শুভজন্মে তাঁর ভাই ইমাম রেজা (আ)ও ভীষণ খুশি হলেন।শৈশবহযরত মাসুমা (সা) এর শৈশব কাটে পিতা ইমাম মূসা ইবনে জাফর (আ) এবং ভাই ইমাম রেযা (আ) এর বহু স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় সান্নিধ্যে। যার ফলে তাদেঁর মহামূল্যবান জ্ঞান ভাণ্ডারের অসামান্য রত্নে সমৃদ্ধ হয় তাঁর জ্ঞান। অবশ্য শৈশবের এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। কেননা হারুনের কারাগারে তাঁর পিতা শাহাদাত বরণ করেন। দশ বছরের কন্যা শিশু মাসুমা (সা) এর জীবন জুড়ে তাই নেমে আসে দুঃখের করুণ অন্ধকার। পিতার মৃত্যুর পর ভাই ইমাম রেযা (আ) এর অভিভাবকত্বে বেড়ে ওঠেন তিনি। ইতিহাসে এসেছে ইমাম রেযা (আ) তাঁর বোন হযরত মাসুমা (সা) কে ভীষণ ভালোবাসতেন। একইভাবে মাসুমা (সা)ও ভাইয়ের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ।মাসুমা (সা) ছিলেন উন্নত নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী। তাঁর আচার-ব্যবহারও ছিল শালীন। ধৈর্য ও স্থিরতায় তিনি ছিলেন অসম্ভব দৃঢ় মনোবল। ইতিহাসে এসেছে মাসুমা (সা) ছিলেন একজন হাদিস বিশেষজ্ঞ। তাছাড়া জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাঁর ছিল অসাধারণ খ্যাতি। একদিন আহলে বাইতের প্রতি অনুরক্ত একদল লোক ফিকাহ এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে মদীনায় ইমাম কাজেম (আ) এর কাছে আসেন। কিন্তু তারা যখন ইমামের বাড়িতে এলেন তখন জানলেন যে ইমাম সফরে গেছেন। নিরুপায় হয়ে তাঁরা তাঁদের প্রশ্নগুলো লিখিত আকারে ইমামের পরিবারের কারো কাছে দিলেন যাতে পরবর্তী সফরে এসে তাদেঁর প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে পারেন।ক‘দিন পর বিদায় নেবার জন্যে তাঁরা ইমামের বাড়ির দরোজায় যান। সেখানে গিয়ে জানতে পান যে হযরত মাসুমা (সা) তাদের প্রশ্নগুলোর জবাব তৈরি করে রেখেছেন। প্রশ্নের জবাব পেয়ে তাঁরা ভীষণ খুশি হলেন। ফেরার সময় ইমাম কাজেম (আ) এর সাথে তাদেঁর দেখা হয় এবং তারা ইমামকে ঘটনাটা বর্ণনা করেন। ইমাম মাসুমা (সা) এর লেখা জবাবগুলো দেখেন এবং সেগুলো একদম সঠিক বলে অনুমোদন করেন। নিজের মেয়ের ব্যাপারে তিনি তখন তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বললেন-তার বাবা তার জন্যে উৎসর্গিত হোক।পিতার সমৃদ্ধ জ্ঞানের ভাণ্ডারকে তিনি জনগণের মাঝে বিস্তার করেন। তিনি বাবার কাছে যা শিখেছেন এবং যেভাবে শিখেছেন ঠিক সেভাবেই তা জনগণের কাছে পৌছিয়েঁছেন। তিনি বাবার কাছে শিখেছেন অবস্থা যতো প্রতিকূলই হোক না কেন সর্বাবস্থায় সত্য ও সঠিক পথে অনড় থাকতে হবে,কোনোভাবেই সত্য থেকে দূরে সরা যাবে না।এইসব শিক্ষা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তাঁর ভাই তাঁর সহযোগী ছিলেন।২০০ হিজরীতে আব্বাসীয় খলিফা মামুনের পীড়াপীড়ি ও হুমকি ধমকির কারণে ইমাম রেযা (আ) বাধ্য হয়েছিলেন খোরাসানে যেতে। তিনি তাঁর পরিবারের কাউকে সঙ্গে না নিয়েই মারভের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।তাঁর সফরের এক বছর পর ভাই ইমাম রেযা (আ) এর সাথে সাক্ষাৎ করা এবং মুসলমানদের নেতা ও ইমামের ব্যাপারে তাঁর দায়-দায়িত্ব পালনের জন্যে মাসুমা (সা) ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। সে অনুযায়ী তিনিও মারভের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তাঁর সাথে তাঁর ভাই এবং আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই ছিলেন। পথিমধ্যে যাঁরাই মাসুমা (সা) এর কথা শুনেছে তারাই গভীর আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে এবং তাঁর বিচিত্র জ্ঞানের ভাণ্ডার থেকে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হাজির হতো। জনগণের এরকম আগ্রহ আর ভালোবাসা দেখে তিনিও তাঁর দায়িত্ব পালন করার সুযোগ নেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বনী আব্বাসীয় শাসকদের প্রকৃত চেহারা জনগণের সামনে তুলে ধরেন এবং তাদের জুলুম-নির্যাতন আর প্রতারক নীতির কথা ফাঁস করে দেন। এগুলো তিনি আব্বাসীয়দের ভয়-ভীতি প্রদর্শন আর জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদেই তিনি করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হযরত মাসুমা (সা) ভাই ইমাম রেযা (আ) এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে মারভ শহরে যাবার জন্যে যে সফর শুরু করেছিলেন, সেই সফর শেষ হয় নি। তাদেঁর কাফেলা যখন সভে শহরে গিয়ে পৌছেঁ তখন বলদর্পী শাসক গোষ্ঠির অনেকেরই রোষানলে পড়ে যান তাঁরা। শাসক বাহিনী মাসুমা (সা) এর পথ রোধ করে দাঁড়ায় এমনকি তাঁর নিকটজনদের অনেককেই শহীদ করে। মাসুমা (সা)ও এই সফরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে তাঁর পক্ষে আর মারভের পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব নয় তখন তাঁর সঙ্গীদের বললেন তাকেঁ যেন কোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেনঃ আমাকে কোম শহরে নিয়ে যাও! কেননা আমার বাবার কাছে শুনেছি যে তিনি বলেছিলেন এই শহরটি নবীজীর আহলে বাইতের প্রতি অনুরাগীদের কেন্দ্র। সে কারণেই তাকেঁ কোম শহরে নিয়ে যাওয়া হয়।কোম শহরের লোকজন যখন হযরত মাসুমা (সা) এর আগমনের খবর জানতে পায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবার জন্যে দলে দলে এগিয়ে যায়। মূসা ইবনে খাযরাজ নামের এক লোক মাসুমা (সা) এর আতিথেয়তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মাসুমা (সা) কোমের জনগণের মাঝে ১৭টি দিন অতিবাহিত করেন। জীবনের শেষ এ কটি দিন তিনি আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটান। অবশেষে অসুস্থতার কারণে তিনি চিরন্তন সত্যের সান্নিধ্যে চলে যান। এভাবেই মহিয়সী এই নারী কোম শহরে স্থায়ীভাবে থেকে যান। ভাই ইমাম রেযা (আ) এর সাথে সাক্ষাৎ আর হয়ে উঠলো না। ইমাম রেযা (আ) বলেছেনঃ ‘যে-ই কোমে ফাতেমার যিয়ারতে যাবে, সে যেন আমাকেই যিয়ারত করলো।’কোম শহরে মাসুমা (সা) এর মাযার মোবারক থাকায় আহলে বাইতের অনুসারীগণ ইরান থেকে তো বটেই এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোমে আসেন। এভাবে মানুষের আনাগোনার ফলে কালক্রমে কোম শহরটি গড়ে ওঠে। হযরত মাসুমা (সা) এর মহান অস্তিত্বের বরকতে কোমে গড়ে ওঠে ধর্মীয় বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। সেইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামী চিন্তাদর্শের বিকাশ ঘটে সমগ্র বিশ্বময়। ইসলাম নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এবং ইসলামী মহান মনীষীদের সৃষ্টি ও লালনপালন করার ক্ষেত্রে কোমের অবদান অবিস্মরণীয়। মাসুমা (সা) এর মাযারটি যেন এক মৌচাক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌমাছিরা এসে আধ্যাত্মিক এক সুরের গুঞ্জন তোলে এখানে। সেই গুঞ্জনে ভরে যায় ভক্ত-অনুরক্তদের মন, প্রশান্ত হয়ে ওঠে অশান্ত আত্মাপ্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

(পর্ব ৭২): বেলায়েতে ফকিহ'র শাসনব্যবস্থার প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা (শেষ পর্ব)ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯ ১৭:৪০ Asia/Dhakaগত কয়েক আসরে আমরা বলেছি, যতদিন এই ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব না হচ্ছে ততদিন মুসলিম বিশ্বের দায়িত্ব হচ্ছে যোগ্য আলেমের নেতৃত্বে তাঁর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করা।শিয়া মাজহাবে এই মতাদর্শ অনুযায়ী ‘বেলায়েতে ফকিহ’ বা যোগ্য নেতৃত্বের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমন একজন বিজ্ঞ আলেম বেলায়েতে ফকিহ’র গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করবেন যিনি সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক দিক দিয়ে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন। প্রখ্যাত শিয়া আলেম শেখ মুফিদ বেলায়েতে ফকিহ’র প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব রাজা-বাদশাহদের কাছ থেকে গ্রহণ করে যোগ্য আলেমদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।পরবর্তী যুগে শেখ তুসি, ইবনে ইদরিস হালাবি, খাজা নাসিরউদ্দিন তুসি, মোহাক্কেক সানি এবং শেখ বাহায়ি’র মতো প্রখ্যাত শিয়া ফকিহগণ ‘বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু এসব চিন্তাবিদ এই শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মতবাদকে বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। সমসাময়িক যুগে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) ‘বেলায়েতে ফকিহ’ বা যোগ্য আলেমের শাসন সম্পর্কিত সেই কাঙ্ক্ষিত ফতোয়াকে বাস্তবরূপ দান করতে সক্ষম হন। তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ইমাম মাহদি (আ.)’র নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী যে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে সৃষ্ট ইসলামি শাসনব্যবস্থা হচ্ছে তার সূচনা।অবশ্য মুসলিম আলেম ও চিন্তাবিদদের মধ্যে এই মতবাদ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কোনো কোনো আলেম মনে করেন, ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের আগে পৃথিবীতে কোনো ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র এই মহান ইমামই ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা রাখেন। পক্ষান্তরে অন্য আলেমগণ মনে করেন, ইমাম মাহদির সার্বজনীন ন্যায়পরায়ণ শাসনব্যবস্থা আসার আগে যদি মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী একই কাজের প্রচেষ্টা না চালায় অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা না দেয় তাহলে পৃথিবী জুলুম অত্যাচারে ভরে যাবে। কাফির, মুশরিক ও জালেমদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে তারা দুর্বল ও মজলুমের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আর সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার কাজটি সর্বোত্তম উপায়ে তখনই করা সম্ভব যখন মুসলমানরা যোগ্য আলেমের নেতৃত্বে একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। ইরানের মুসলিম জাতি ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের দেশে সেরকমই একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে।পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় কাফির ও মুশরিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে হযরত নুহ, হযরত মূসা ও হযরত ঈসা আলাইহিমুস সালামের মতো নবীদের সংগ্রামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তবে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর যুগের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছিলেন সেটির গুরুত্ব আজকের যুগে উপলব্ধি করা তুলনামূলক অনেক সহজ। এ সম্পর্কে সূরা মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:“তোমাদের জন্যে ইব্রাহিম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে।”ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের এই নীতি- অবস্থান সকল যুগের সকল মুসলমানের জন্য আদর্শ। কিন্তু ইমাম মাহদি (আ.)’র অনুপস্থিতিতে এই কাজটি যার নেতৃত্বে হবে তিনিই হলেন বেলায়েতে ফকিহ।বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে, সমাজে ইসলামি শরিয়ত বাস্তবায়ন করা। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলামের হুকুম-আহকামগুলো জাগতিক শাসনব্যবস্থার অধীনে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বিশ্বনবী (সা.) মদীনায় যে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সেখানে ইসলামের সব আদেশনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হতো এবং আজও প্রতিটি মুসলমানের অন্তরে সেরকম একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কাজ করে। ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব মুসলমানদের সে স্বপ্ন এবং অপেক্ষার অবসান ঘটাবে ঠিকই কিন্তু তার আগে যে শাসনব্যবস্থা মুসলমানদেরকে ওই মহাবিপ্লবের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটি হচ্ছে ‘বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থা। অবশ্য বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা বিবেচনা করতে হবে। আর তা হলো, যেকোনো আলেম বা ফকিহ এই শাসনভার গ্রহণ করতে পারবেন না। এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য বিশেষ কিছু শর্ত ও গুণাবলী প্রয়োজন। ইমাম হাসান আসকারি (আ.) এই বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, যে ফকিহ তার কুপ্রবৃত্তিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে, নিজের জীবনে ধর্মীয় বিধিবিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাকওয়া বা পরহেজগারি অবলম্বন করতে পারবেন তাকে অনুসরণ করা সাধারণ মুসলমানের জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। এখানে যে বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইমাম বেশি তাগিদ দিয়েছেন তা হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।তো বন্ধুরা, আজকের এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা শেষ করতে যাচ্ছি ঐশী দিশারী শীর্ষক ধারাবাহিকের সর্বশেষ পর্ব। এ আসরে আমরা রাসূলে খোদা (সা.)’র জীবনী থেকে শুরু করে মহান ইমামদের জীবনী সংক্ষেপে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। সবশেষে আমরা বলেছি, ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাবের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সব ধরনের জুলুম অত্যাচারের অবসান ও সারাবিশ্বে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই শাসন দেখার প্রবল আকুতি ব্যক্ত করে আসর গুটিয়ে নিচ্ছি। আমাদেরকে সঙ্গ দেয়ার জন্য আপনাদের প্রত্যেককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

(পর্ব ৭১): ইমাম মাহদি (আ.) আসার আগ পর্যন্ত ‘বেলায়েতে ফকিহ’র দায়িত্বডিসেম্বর ২৮, ২০১৯ ১৭:১০ Asia/Dhakaগত কয়েক আসরে আমরা বলেছি, যতদিন ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাব না হচ্ছে ততদিন মুসলমানদেরকে নানা ধরনের পরীক্ষা ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অস্থিরতা ও সংঘাত, যুদ্ধ, রক্তপাত, বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান বিস্তার, অন্যায়-অবিচার-জুলুমে গোটা বিশ্ব ছেয়ে যাবে। অবশ্য এসবের মধ্যেও অল্প কিছু মানুষ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দূরদর্শিতার কারণে ধর্মের সঠিক পথে অটল থাকবেন। এ সম্পর্কে ইমাম হাসান আসকারি (আ.) বলেন: জেনে রেখো, ইমাম মাহদির আবির্ভাবের সময় এতটা দেরি হবে যে, মানুষ তার আবির্ভাব সম্পর্কে দ্বিধা-সন্দেহে ভোগা শুরু করবে। তবে যারা নিজেদের ঈমান মজবুত রাখতে পারবে তারা এই সন্দেহে ভুগবে না এবং সব ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। আবির্ভাবের পর ইমাম মাহদি (আ.) নিজেই নিজের পরিচয় ঘোষণা করে সবাইকে জানিয়ে দেবেন, নবী-রাসূলদের পথ অনুসরণ করে পৃথিবীতে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। এ সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেন: ইমাম মাহদি কাবা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেবেন: হে মানুষ! যাদের হযরত আদম ও হযরত শীষ (আ.)কে দেখার ইচ্ছা আছে তারা আমাকে দেখো। হযরত নূহ ও তাঁর সন্তান সামকে দেখার ইচ্ছা যাদের- তারা আমার দিকে তাকাও। যারা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর সন্তান ইসমাইলের চেহারা মুবারক দেখার ইচ্ছা পোষণ করো তারা আমার চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করো। যারা হযরত মূসা ও তাঁর সহযোগী ইউশাকে দেখতে চাও তারা আমার দিকে তাকাও। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও আলী (আ.)কে দেখার ইচ্ছা যাদের তারাও আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করো। আমার দাওয়াতের বাণী শোনো কারণ তোমরা যা কিছু জানো এবং যা কিছু জানো না তার সব খবর আমার কাছে আছে। এরপর হযরত মাহদি (আ.) অতীতে নবী-রাসূলদের কাছে নাজিলকৃত কিতাব ও সহিফার কিছু অংশ পাঠ করে শোনাবেন। সবশেষে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে বোঝা যায়, ইমাম মাহদি নবী-রাসূলদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করতে এবং সবাইকে সে পথ অনুসরণ করে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, তিনি যতক্ষণ আবির্ভূত না হচ্ছেন ততক্ষণ সাধারণ মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের দায়িত্ব কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত মুসলমানদেরকে যোগ্য ও পারদর্শী আলেম ও ফকিহদের দিকনির্দেশনা মনে চলতে হবে। তাদের ফতোয়া অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। আমরা যেমন দুনিয়াবি বিভিন্ন বিষয়াদিতে আলোচ্য বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হই তেমনি ধর্মীয় বিষয়ে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ আলেমদের কাছে যেতে হবে।এখানেও প্রশ্ন রয়েছে। আমরা কি জীবনের চলার পথের সকল কাজের জন্য আলেম ও ফকিহদের শরণাপন্ন হবো নাকি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়ে তাদের মতামত নেবো? এ সম্পর্কে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.)’র মতামত হচ্ছে, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক’সহ সব বিষয়ে যোগ্য আলেমদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। অবশ্য কোনো কোনো ফকিহ আছেন যারা ধর্মীয় বিষয়ের বাইরে অর্থাৎ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য বিষয়ে মতামত দিতে চান না। তারা ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে নাক গলান না এবং তাদের আচরণে মনে হয় পৃথিবীর চলমান ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করে ইমাম খোমেনী (রহ.) বলেন: ইজতেহাদের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে স্থান ও কাল। অতীতের কোনো এক সময় তখনকার প্রেক্ষাপটে একটি বিষয়ে একজন ফকিহ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সময়ের পরিবর্তনে নতুন প্রেক্ষাপটে তার কার্যকারিতা নাও থাকতে পারে। কাজেই একজন ফকিহ বা একজন মুজতাহিদকে সমাজের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর পূর্ণ দখল রাখতে হবে। তিনি একদিকে যেমন ইবাদত-বন্দেগি ও পরহেজগারির দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রগামী হবেন তেমনি সমাজকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলীও তার মধ্যে থাকতে হবে। অবশ্য পবিত্র কুরআনে যেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট আদেশ ও নিষেধ রয়েছে সেসব বিষয়ে নতুন করে কোনো গবেষণা করার সুযোগ নেই।ইমাম খোমেনী এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের আগে ‘বেলায়েতে ফকিহ’র শাসনব্যবস্থা নামক ধর্মীয়-রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ইসলামি বিপ্লবের পর এই কর্মসূচি অনুযায়ী তিনি ইরানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই শাসনব্যবস্থায় বেলায়েতে ফকিহ শুধু ধর্মীয় জ্ঞানে পারদর্শী নন একইসঙ্গে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব অঙ্গনে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ‘বেলায়েত ফকিহ’র দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সাল থেকে বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ‘বেলায়েত ফকিহ’র গুরুদায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ সম্পর্কে ইমাম খোমেনী (রহ.) আরো বলেন: যতক্ষণ ফকিহ’র লেখা বইয়ের মধ্যে কিংবা তাঁর অন্তরে ফিকাহশাস্ত্র ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ফিকাহ যেমন মুসলমানের কোনো কাজে লাগে না তেমনি খোদাদ্রোহী জালেম শাসকদেরও এতে কোনো ক্ষতি হয় না। # পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ

(পর্ব ৭০): ইমাম মাহদি (আ.) ভূপৃষ্ঠে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেনডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১৯:১৮ Asia/Dhakaইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: মহান আল্লাহ ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব ও বিপ্লবকে অবধারিত করে রেখেছেন।কাজেই তাঁর সম্পর্কে কারো মনে যেন কোনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে। ভূপৃষ্ঠ জুলুম-অত্যাচারে ছেয়ে যাওয়ার পর তিনি এই পৃথিবীতে আবার শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর আবির্ভাবকে বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।শিয়া মাজহাবে ১২ ইমামে বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের অঙ্গ। এ কারণে ইমাম বাকের (আ.) বলেন: হযরত আলী (আ.) থেকে ইমামতের যে ধারা শুরু হয়েছে তা ইমাম মাহদি (আ.) পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে এবং এ বিষয়টির প্রতি গভীর বিশ্বাস রাখতে হবে। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এ সম্পর্কে বলেন: যে ব্যক্তি বাকি ১১ ইমামে বিশ্বাস রাখবে কিন্তু ইমাম মাহদি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করবে তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হবে না।ইমাম মাহদি (আ.)’র আবির্ভাব সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর পর এবার আমাদের এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগের সময়গুলোতে মুসলিম উম্মাহর কি দায়িত্ব রয়েছে তা জেনে নেয়া প্রয়োজন।ইমাম মুসা কাজেম (আ.) এ সম্পর্কে বলেন: যারা ইমাম মাহদির আবির্ভাবের আগের সময়টাতে ধৈর্যধারণ করে ইমামদের অনুসৃত পথ আকড়ে থাকবে তারাই সফলকাম। তারা দ্বীনের পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। আমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এই শ্রেণির মানুষ বড় সৌভাগ্যবান এবং কিয়ামতের দিন তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে এবং আমাদের সবার গন্তব্য হবে অভিন্ন।তবে এই মহান ইমামের আবির্ভাবের আগের সময়টাতে মুসলিম উম্মাহর কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যখন মুসলমানদের মধ্যে অসংখ্য মত ও পথ সৃষ্টি হয়েছে এবং সবগুলো মত ও পথের অনুসারীরা লোকজনকে তাদের দলে ভেড়ানোর জন্য নানারকম কৌশল অবলম্বন করছে। এ অবস্থায় ইমাম মুসা কাজেম (আ.) খাঁটি ঈমানদারদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে গেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য কোনো ভ্রান্ত মতবাদ অনুসরণ না করে ইমামতের রজ্জু শক্ত করে আকড়ে ধরতে হবে। ইমামতকে আকড়ে থাকলে একজন মুসলমানের লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।অন্যান্য ইমামের মতো ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.)ও যুগের ইমাম মাহদি (আ.) সম্পর্কে কিছু মূল্যবান উপদেশ দিয়ে গেছেন। তাঁর সময়কার অন্যতম প্রখ্যাত ফকিহ ও মুহাদ্দিস আবু আলী রিয়ান বিন সোলাত ইমামকে জিজ্ঞাসা করেন: আপনি কি শেষ জামানার ইমাম? এ প্রশ্নের উত্তরে ইমাম রেজা (আ.) বলেন: না, আমি শেষ জামানার ইমাম নই। কারণ, রাজনৈতিক ও শারিরীক দিক দিয়ে প্রয়োজনীয় শক্তি আমার নেই। শেষ জামানার ইমাম অর্থাৎ ইমাম মাহদি (আ.) সুঠামদেহী যুবক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে তিনি মস্তবড় প্রভাবশালী ব্যক্তি হবেন।ইমাম রেজা (আ.) আরো বলেন, ইমাম মাহদি এতটা শক্তির অধিকারী হবেন যে, সবচেয়ে উঁচু গাছের দিকে তিনি হাত বাড়ালে সে গাছ মাটি থেকে উপড়ে চলে আসবে এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার ছাড়লে পাহাড়ের পাথরগুলো ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকবে। তাঁর হাতে থাকবে হযরত মুসার লাঠি এবং আঙুলে থাকবে হযরত সুলায়মানের আংটি। তিনি হবেন আমার চতুর্থ বংশধর। তার আগমনের উপযুক্ত প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তাকে গোপন করে রাখবেন। পৃথিবী জুলুম-অত্যাচারে ভরে গেলে তিনি এই ধরাপৃষ্ঠে আগমন করবেন এবং গোটা বিশ্বে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।ইমাম রেজা (আ.)’র এই হাদিসে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। ইমাম মাহদি এমন সময় আবির্ভূত হবেন যখন তাঁর আগমনের প্রেক্ষাপট তৈরি হবে এবং তিনি যথেষ্ট শক্তির অধিকারী থাকবেন। তাঁর বিপ্লব হবে বিশ্বজয়ী বিপ্লব। অর্থাৎ বিশ্বের সব জাতি এই মহান ইমামকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে; পাশাপাশি জালিম শাসকদের পরাভূত করার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় শক্তিমত্তারও অধিকারী হবেন। এ কারণেই ইমাম রেজা (আ.) বলেন: “ইমাম মাহদি এতটা শক্তির অধিকারী হবেন যে, সবচেয়ে উঁচু গাছের দিকে তিনি হাত বাড়ালে সে গাছ মাটি থেকে উপড়ে চলে আসবে এবং দুই পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি হুঙ্কার ছাড়লে পাহাড়ের পাথরগুলো ঝরঝর করে ঝরে পড়তে থাকবে।”এখান থেকে সহজেই অনুমিত হয় আল্লাহ তায়ালা ইমাম মাহদি (আ.)কে এতটা শক্তি দান করবেন যাতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা বাস্তবায়নের পথে কোনো শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। বাহ্যিক এই শক্তির পাশাপাশি তিনি নবী-রাসূলদের মতো ঐশী মদদেরও অধিকারী হবেন। ইমাম রেজা (আ.) হয়তো এ কারণেই বলেছেন, তাঁর হাতে থাকবে হযরত মুসার লাঠি ও হযরত সুলমানের আংটি। হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর ইচ্ছায় ফেরাউনের মতো মস্তবড় প্রতাপশালী শাসককে তার লাঠির সাহায্যে পরাভূত করেছিলেন। অন্যদিকে হযরত সুলায়মানের আংটি আমাদেরকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর এই নবী বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন এবং জিন ও পশুপাখী পর্যন্ত তাঁর আদেশ মেনে চলত। হযরত সুলায়মানের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব ছিল না।ইমাম মাহদি (আ.)’র শক্তিমত্তা ও সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর সক্ষমতা সম্পর্কে ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন: “…তাঁর প্রতিটি কাজের জন্য পৃথিবী প্রস্তুত থাকবে এবং সব কঠিন বিষয় তাঁর জন্য সহজ হয়ে যাবে। সারা পৃথিবী থেকে আসা ৩১৩ জনের একটি বাহিনী নিয়ে তিনি জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন। তিনি অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এতটা বীরবিক্রমে লড়াই করবেন যে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।#পার্সটুডে/মুজাহিদুল ইসলাম/ মো: আবু সাঈদ / ২৪