পোস্টগুলি

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলতরজব মাস চন্দ্র মাসের সপ্তম মাস। আমাদের জানা উচিত যে, রজব, শাবান ও রমজান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস এবং এ মাসগুলির ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) থেকে রেওয়াত বর্ণিত যে, “রজব মাস হলো আল্লাহর বড় মাহত্বপূর্ণ মাস এবং অপরাপর কোন মাসই এ মাসের ফজিলত স্পর্শ করতে পারে না। কাফেরদের সাথে যুদ্ধ এ মাসে হারাম।”তিনি আরো বলেন, “রজব মাস আল্লাহর, শাবান মাস আমার এবং রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস।যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে সে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে এবং আল্লাহর গজব থেকে দূরে থাকবে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ থেকে একটি দরজা তার প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”হযরত ইমাম মুসা কাজিম (আঃ) থেকে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা পালন করবে জাহান্নামের আগুন তার কাছ থেকে এক বছরের পথের সমান দূরে সরে যায় আর যে ব্যক্তি তিন দিন রোজা রাখে তার উপর বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। পুনশ্চঃ তিনি এরশাদ করেন, রজব হলো বেহেশতের একটি স্রোতস্বিনী জলধারার নাম যা দুধের চেয়ে অধিক শুভ্র এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে অবশ্যই সে সেই স্রোতস্বিনীর পানি পান করবে।”ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, “রজব মাস উম্মতের জন্য ক্ষমার মাস।”সুতরাং এ মাসে বেশী বেশী গুণাহ থেকে ক্ষমা চাও কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অধিক ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। রজব মাসকে বরকতের মাসও বলা হয়। কেননা, আমার উম্মতের উপর রহমত এ মাসেই অধিক বর্ষিত হয়।”রাসুল (সাঃ) এর রেওয়াতে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি রজব মাসে ১০০ বার ‘আসতাগফেরুল্লাহি লা ইলাহা ইল্লা ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আতুবো ইলাইহ্’অতঃপর সদ্বকা দান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার উপর রহমত বর্ষণ করবেন এবং ক্ষমা প্রদর্শন করবেন। আর যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াটি ৪০০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তাকে একশত শহীদের পুরস্কার দান করবেন। রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যে ব্যক্তি রজব মাসে এক হাজার বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার নামের পাশে হাজারটি নেকী লিখবেন এবং বেহেশতে তার জন্য একশত শহর নির্মাণ করে দিবেন। সৈয়দ ইবনে তাউস রেওয়াত করেন, “যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখে এবং চার রাকাআত নামাজ আদায় করে যার প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর ১০০ বার আয়াতুল কুরসী এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর ২০০ বার সূরা তাওহীদ পাঠ করে সেই ব্যক্তি ততক্ষণ মৃত্যুবরণ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেহেশতে তার ঘর নিজের চোখে অবলোকন না করে নেয়।”এ হাদীসটিও সৈয়দ তাউস মহানবী (সাঃ) থেকে রেওয়াত করেছেন যে, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন জোহর ও আসরের নামাজের মধ্যবর্তী সময় ৪ রাকআত নামাজ পড়ে, যার নিয়ম হলো প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর আয়াতুল কুরসী সাতবার এবং সূরা তাওহীদ পাঁচবার পাঠ করে অতঃপর ‘আসতাগফেরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ওয়া আসআলুহুত তাওবাহ’আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেদিন থেকে সে নামাজ পড়ছে সেদিন থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত প্রতিটি দিন তার জন্য হাজার নেকী লিখে দিবেন এবং প্রতিটি আয়াতের বিনিময়ে যা সে পাঠ করেছে বেহেশতে লাল ইয়াকুতের শহর তাকে দান করবেন এবং প্রত্যেক হরফের পরিবর্তে শ্বেত শুভ্র দরজা বিশিষ্ট প্রাসাদ দান করবেন এবং তার বিবাহ হুরের সাথে সম্পাদন করবেন। তার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং তার নাম ইবাদতকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করবেন এবং তার সমাপ্তি সৌভাগ্য ও ক্ষমার দ্বারা হবে। এই মাসের বৃহস্পতিবার, জুমআ এবং শনিবার এই তিনদিন রোজা রাখা উচিত কেননা রেওয়াতে পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি তিনটি মাস হতে যা হারাম মাস হিসেবে গণ্য ঐ দিনগুলিতে রোজা রাখে তাহলে আল্লাহ তাকে ৯০০ বছরের ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। যে ব্যক্তি রজব মাসে জুমআর দিন ১০০ বার সূরা তাওহীদ পাঠ করবে তার জন্য কেয়ামতের দিন একটি বিশেষ নূর সৃষ্টি হবে যে তাকে বেহেশতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।ইতিহাসের পাতায় পবিত্র রজব মাসরজব মাস পৃথিবীর ইতিহাসে অতি গুরুত্বপুর্ণ মাস। তাৎপর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক মাস। আরবী সপ্তম মাস। এ মাসের গুরুত্ব ফজিলত আজ মুসলিম বিশ্বে মুসলিম জনগণের কাছে হারানো অতীত। মুসলিম জাতি রজবের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বেখেয়াল হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিচ্যুতির কারনে আজ ইসলামী খেলাফত হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত মুসলমান ইসলামের ইতিহাস থেকে।১লা রজব : ইমাম মুহাম্মদ বনি আলী আল বাকির (আ.)-এর জন্ম দিন।২রা রজব: ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর জন্ম দিন।৩রা রজব : ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর শাহাদত দিবস।৪র্থ রজব : লাইলাতুল রাগাইব বা কামনার ( আশার্পূণ করার রাত, অর্থাৎ বিশেষ নামায পড়ে মনের অব্যক্ত বাসনাগুলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত ) পবিত্র রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালন করার জন্য অধিক তাগিদ করা হয়েছে এবং এই রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করার জন্য বলা হয়েছে।নামাযের নিয়মঃদুই দুই রাকাত করে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করতে হবে যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহার পর ৩ বার সুরা ক্বদর এবং ১২ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।৭ই রজব: আব্বাসিয় খলিফা মামুন ইমাম রেজা (আ.)-কে তার উত্তরসূরী হওয়া আবদেন করে পত্র পাঠিয়েছিলেন।১০ম রজব : ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী আল যাওয়াদ (আ.)-এর জন্ম দিন।১০ম রজব: হযরত আলী আসগারের জন্ম দিন ।১২ই রজব :১. আমিরুল মুমেনীন ইমাম আলী (আ.) কুফাকে ইসলামী হুকুমতের রাজধানী হিসেবে মননীত করে কুফাতে প্রবেশ করে।২.আর এদিনেই মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যব্যক্তি ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া মৃত্যুরবন করে।১৩ ই রজব : পবিত্র ক্বাবার সন্তান এবং আল্লাহর রাসুলের (স.) পরবর্তি প্রতিনিধি হযরত ইমাম আলী ইবনে আবিতালিবের (আ.)জন্ম দিন।১৫ই রজব :১. ইতিহাসের নির্যাতিতা কারবালা আর্দশের পতাকাবাহী বীর নারী হযরত যায়নাবের ওফাত দিবস।২. আজকের এই দিনে মুসলমানদের কেবলা পরির্বতন হয় ।৩. এদিনেই দীর্ঘ তিন বছর শা’বে আবিতালিবে বন্দী ও নির্বাসিত জীবন অবসান ঘটে, মুসলমানরা মুক্ত হন।১৬ই রজব: হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ ক্বাবা ঘরের মধ্য থেকে বের হয়ে আসনে।১৭ই রজব : ইমাম রেজা (আ.) –কে বিষপানে বাধ্যকারী অভিশপ্ত আব্বাসিয় খলিফা মামুনের মৃত্যু দিবস ।১৮ই রজব: মহানবীর (স.) সন্তান ইব্রাহীমের ওফাত দিবস।১৯শে রজব: অভিশপ্ত আব্বাসীয় খলিফা মু’তামিদের মৃত্যু দিবস।২০শে রজব : প্রথম খলিফা আবুবকর খাইবারের যুদ্ধ থেকে পশ্চাদে ফিরে আসেন ।২৩শে রজব :১. জারাহ বিন সানান আসাদী আজকের এদিনে মাদায়ানে ইমাম হাসান (আ.) উরুতে বিষক্তখঞ্জর দিয়ে আঘাত করেন।২. ইমাম মুসা বিন জাফর (আ.)-কে বিষপ্রয়োগ আক্রান্ত করা হয়।৩. দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব খাইবারের যুদ্ধ থেকে পশ্চাদে ফিরে আসেন।২৪শে রজব :১. শেরে খোদা আমিরুল মোমনেীন আলী (আ.)-এর হাতে খাইবারের দূর্গ মুসলমানরা জয় করেন।২. খাইবার বিজয়ের দিনে ইমাম আলী (আ.)এর ভাই জাফর-এ তাইয়ার হাবাশিয়া (ইথোপিয়া)প্রত্যাবর্তন করেন ।২৫শে রজব: হযরত মুসা বিন জাফর আল কাজিম (আ.)-এর শাহাদত দিবস।২৬শে রজব: আমিরুল মুমেনিন (আ.)-এর মহান পিতা আবিতালিবের ওফাত দিবস।২৭শে রজব : মহানবী (স.)-এর নবুয়াত প্রাপ্তি দিবস।২৮শে রজব : ঐতিহাসিক কারবালা ঘটনার প্রথম যাত্রা ইমাম হোসেন (আ.) মদীনা ত্যাগ করে মক্কার উদ্দ্যেশে রওনা দেনআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাসাল

রেওয়ায়েতের আলোকে টিকটিকিটিকটিকি (বৈজ্ঞানিক নাম: Hemidactylus frenatus ভূমধ্যসাগরীয় প্রজাতিঃ Hemidactylus turcicus। এশীয় টিকটিকিকে ভূমধ্যসাগরীয় গৃহটিকটিকির সাথে উল্টাপাল্টা করা যাবে না) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় সরীসৃপ। এটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় গৃহটিকটিকি, এশীয় গৃহটিকটিকি,দেয়াল টিকটিকি,গৃহগিরগিটি,বা চন্দ্রগিরগিটি নামেও পরিচিত। বেশিরভাগ টিকটিকিই নিশাচর, দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে এবং রাতে পোকামাকড়ের সন্ধানে বের হয়। এগুলি বারান্দার আলোর প্রতি আকৃষ্ট পোকামাকড়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে চড়ে বেড়ায় এবং বিশেষ “টিক টিক” শব্দ শুনে এদের চিহ্নিত করা যায় ।এরা দৈর্ঘ্যে ৭৫–১৫০ মিমি (৩–৬ ইঞ্চি) হয় এবং প্রায় ৫ বছর বেঁচে থাকে। অধিকাংশ মাঝারি থেকে বৃহদাকারের টিকটিকি শান্ত প্রকৃতির হয়। কিন্ত বিপদের আভাস পেলে এরা কামড় দিতে পারে। Hemidactylus frenatus উষ্ণ ও আর্দ্র স্থানে থাকে যেখানে এরা পচা কাঠে পোকামাকড় খাওয়ার জন্য বুকে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ায় I এসব স্থানের পাশাপাশি শহুরে পরিবেশেও এদের দেখা যায়। প্রাণীটি খুব দ্রুত এর আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে । এরা পোকামাকড় ও মাকড়সা শিকার করে খায়।হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: টিকটিকি হচ্ছে নাপাক সরীসৃপ প্রাণি। পূর্বে টিকটিকির অন্য রূপ ছিল পরবর্তিতে আল্লাহ তাদেরকে টিকটিকিতে রূপান্তরিত করে দেন। যখন তোমরা টিকটিকি মারবে তখন গোসল করবে।ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন: একদা আমার পিতা ইমাম বাকির (আ.) মসজিদুল হারামে বসে একজনের সাথে কথা বলছিলেন এমতাবস্থায় সেখানে একটি টিকটিকি পরিলক্ষিত হয় যে নিজের জিহবাকে বারবার বাহির করছিল ইমাম (আ.) তাঁর কাছে বসে থাকা একজন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি জান এই টিকটিকি কি বলছে? সে বলে: না আমি জানি না। ইমাম (আ.) বলেন: এই টিকটিকি বলছে: তোমরা যদি উসমান সম্পর্কে খারাপ কিছু [অভিসম্পাত কর] বল তাহলে আমি আলী সম্পর্কে খারাপ কথা বলবো। তখন আমার পিতা ইমাম বাকির (আ.) বলেন:(لیس یموت من بنی امیه میّت الّا مسخ وزغاً) যখন কোন বণি উমাইয়া মারা যায় সে টিকটিকিতে পরিণত হয়। যখন আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান-এর মৃত্যুর সময় যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে এবং মারা যায় হঠাৎ সে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার সন্তান ওয়ালিদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে, খুরমা গাছের কান্ডকে একজন মানুষের আকার অনুযায়ি কাটে এবং তাতে লোহার বর্ম পরিয়ে দেয় যেন লোকজন তা বুঝতে না পারে এবং এভাবে তার দাফন কার্য সম্পাদিত হয়। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র মারওয়ানের পরিবার, আমি এবং আমারর সন্তান ব্যাতিত আর কেউ জানে না। [কাফি, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩২, হাদীস নং ৩০৫, আল খারায়েজ ওয়াল জারায়েহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪]রাসুল (সা.)-এর যুগে কোন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে তাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হতো যেন তিনি ঐ বাচ্চার জন্য দোয়া করেন। যখন মারওয়ান বিন হাকাম জন্মগ্রহণ করে তখন হযরত আয়েশা তাকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে যায় রাসুল (সা.) ঐ বাচ্চাকে দেখে বলেন: (اخرجوا عنی الوزغ ابن الوزغ) “এই বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাও টিকটিকির বাচ্চা টিকটিকি”। [মুসতাদরাক, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৭৯, ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাত, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৬৯, কিতাবুল ফেতান, পৃষ্ঠা ৭৩, কাফি, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৩৮]আল্লামা মাজলিসি (রহ.) আরো বর্ণনা করেছেন যে, যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে জ্বালানোর জন্য অগ্নিকুন্ডকে তৈরি করা হয় তখন টিকটিকি তার শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে, তার শরীরে সাদা সাদা দাগ পড়ে যায় এবং তার শরীর মাটির রঙ্গের হয়ে যায়। টিকটিকির বৈশিষ্ট হচ্ছে যে ঘর থেকে জাফরানের ঘ্রাণ আসে সে ঘরে টিকটিকি থাকে না এবং সে শীতকালে নিজের গর্ত থেকে বাহির হয় না এমনকি কিছু খায়ও না। [বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃষ্ঠা ২৩৭]মরহুম বাহরানি তার “নাফিসুল হাদায়েক্ব” নামক গ্রন্থে করেছেন যেভাবে তওবা করলে গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তারপরে গোসল করা মুস্তাহাব অনুরূপভাবে টিকটিকি মারলেও গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তারপরে গোসল করা মুস্তাহাব। [হাদায়েক্বুন নাযেরা, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৯৫]রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি টিকটিকিকে এক আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে একশতটি সওয়াব দান করা হবে, আর কেউ যদি টিকটিকিকে দুই আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে পঞ্চাশটি সওয়াব দান করা হবে এবং কেউ যদি টিকটিকিকে তিন আঘাতে মারতে পারে তাহলে তাকে প্রথম এবং দ্বিতীয় সওয়াবের চেয়ে কম সওয়াব দান করা হবে। [সহীহ মুসলিম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪২, সুনানে ইবনে দাউদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩১, মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৬, শারহে উসুলে কাফি, খন্ড ১২, পৃষ্ঠা ৩১৪]রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী বলেন যে: একদা আমি হযরত আয়েশা-এর ঘরে যায় সেখানে একটি বর্শা রাখা ছিল। আমি হযরত আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করি এটা দিয়ে আপনি কি করবেন? তিনি বলেন: এটা দিয়ে টিকটিকি মারবো। কেননা রাসুল (সা.) বলেছিলেন: যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন সকল প্রাণি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু টিকটিকি আগুন বুদ্ধির জন্য ফুঁ দিচ্ছিল। আর এইজন্য তিনি আমাদেরকে টিকটিকি মারার নির্দেশ দিয়েছেন। [সহীহ বুখারী, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১২, সহীস মুসলিম, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৪২, মুসনাদে আহমাদ, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮৩]আরেকটি রেওয়ায়েত যা সিয়ুতী বর্ণনা করেছেন ব্যাঁঙ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর জন্য প্রজ্বলিত আগুনকে নিভানোর জন্য চেষ্টা করছিল কিন্তু টিকটিকি আগুনে ফুঁ দিচ্ছিল। আর এই কারণে ব্যাঙ মারতে নিষেধ করা হয়েছে আর টিকটিকি মারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। [দুররুল মানসুর, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩২২, বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬১, পৃষ্ঠা ৪৮, হাদীস নং ২৫]

মহানবী (সা.)’র ইন্তিকালের পূর্বের ঘটনাসমূহমহানবী (সা.) এর ইন্তিকালের পূর্বে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো পর্যালোচনা করলে আমরা সঠিক পথের সন্ধান পেতে পারি। ঘটনাগুলো হচ্ছে এই ধরণের যে, নবি করিম (সা.) কিছু সংখ্যক সাহাবাকে সঙ্গে নিয়ে জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করতে যান। সেখানে সাহাবাদের সামনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেনঃ ইসলামে ফেতনা সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। আমি অতি তাড়াতাড়ি এই দুনিয়া হতে বিদায় নিব। তিনি আমিরুল মুমিনিন আলি (আ.) কে তাঁর ওয়াসি হিসেবে নিযুক্ত করেন। কিছু সংখ্যক সাহাবা এমন কাজ করেন যাতে নবি করিম (সা.) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।আমিরুল মুমিনিন আলি (আ.) বলেন যেঃ নবি করিম (সা.) ইন্তিকালের পূর্বে আমার সাথে বিশেষ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন। ঐ আলোচনায় আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দেন যা হাজার জ্ঞানের দরজার সমতুল্য এবং প্রত্যেকটি জ্ঞানের দরজা হতে হাজার দরজা খুলে যাবে।মহানবি (সা.) আমিরুল মুমিনিন আলি (আ.) এর কোলে মাথা রেখে ইহজগত ত্যাগ করেন। যেহেতু তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওয়াসি ছিলেন সেহেতু ইন্তিকালের পর তাঁকে গোসল দান করা ও দাফন কাফন করা তাঁর দায়িত্ব ছিল। সুতরাং রাসুলের ইন্তিকালের পর তিনি এই কাজ আঞ্জাম দেন।তাবাকাতে ইবনে সাদে এইভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বে একটি দলকে সাথে নিয়ে কবর জিয়ারত করতে যান। শিয়া এবং সুন্নিদের মাঝে এখতেলাফ হচ্ছে এই বিষয়ে যে ঐ দলে আলি (আ.) ছিল না আবু রাফে ছিল। তবে হ্যাঁ এখানে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয় তা এই যে নবি করিম (সা.) একটি দলকে সাথে করে জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়রত করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেনঃ আমার নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ এসেছে যে, আমি যেন জান্নাতুল বাকির অধিবাসীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। অতপর কবরস্থানের মধ্যবর্তী স্থানে দাড়িয়ে বলেনঃ আস সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। কবর বাসীর জন্য দোয়া করেন এবং বলেনঃ হে কবরের অধিবাসীরা, তোমাদের সৌভাগ্য যে এই ফেতনা তোমাদেরকে দেখতে হবে না। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, খঃ ২, পৃঃ ২০৪।)প্রকৃত পক্ষে এই ফেতনার কানণেই মুয়াবিয়ার সন্তান ইয়াজিদের মত কুখ্যাত ব্যক্তি ক্ষমতায় আসে। হুসাইন (আ.) ও তাঁর সাথীদেরকে কারবালায় শহিদ করা হয়। হুসাইনের দেহের উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে দেওয়া হয়। সকলের মাথা দেহ হতে আলাদা করে বল্লমের মাথায় ঝুলিয়ে নিয়ে যওয়া হয়। ইয়াজিদের মদ্যপানের অনুষ্ঠানে হুসাইন (আ.) এর মাথা উপস্থিত করা হয়। সেখানে তাঁর মুখে ছড়ি দ্বারা আঘাত করা হয়। এই ফেতনার কানণেই হজরত জয়নবের চাদর কেড়ে নেওয়া হয় এবং বেপর্দা করে শামের বাজারে ঘোরানো হয়। মহিলাদের তাবুতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়…।মহানবি (সা.) আমিরুল মুমিনিন আলি (আ.) কে বলেনঃ আমাকে দীর্ঘ হায়াত ও দুনিয়ার সম্পদ এবং আল্লাহর সাথে মুলাকাত ও বেহেশতের মাঝে এখতিয়ার দান করা হয়েছে। আমি আল্লাহর মুলাকাতকে প্রাধান্য দান করেছি।নবি করিম (সা.) জান্নাতুল বাকিতে যে বক্তব্য দেন তাতে উল্লেখ করেনঃأَقْبَلَتِ الْفِتَنُ كَقِطَعِ‏ اللَّيْلِ‏ الْمُظْلِمِ يَتْبَعُ أَوَّلَهَا آخِرُهَا‎রাতের অন্ধকারের ন্যায় ফেতনা ঘনিয়ে আসছে। একে অপরের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে ইসলামকে ফেতনার স্বীকার করবে। (আল এরশাদ ফি মারেফাতে হুজাজিল্লাহে আলাল এবাদ, খঃ ১, পৃঃ ১৮১।)বানি ইসরাইলে ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল। হারুনকে অমান্য করা হয়েছিল। তাওরাতের নির্দেশকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। পক্ষান্তরে সামেরীকে অনুস্বরণ করা হয়েছিল। গোবৎসকে খোদা হিসেবে এবাদত করে ছিল। হজরত ইসা (আ.) এর উম্মতে কি ঘটনা ঘটেছিল? তাঁর ওয়াসিকে অমান্য করা হয়েছিল। পুলেসকে তাঁর ওয়াসির স্থানে বসানো হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামেও কি এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? যার কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলছেনঃأَقْبَلَتِ الْفِتَنُ كَقِطَعِ‏ اللَّيْلِ‏ الْمُظْلِمِ يَتْبَعُ أَوَّلَهَا آخِرُهَا‎ অতপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আলি (আ.) কে বলেনঃإِنَّ جَبْرَئِيلَ كَانَ يَعْرِضُ عَلَيَّ الْقُرْآنَ كُلَّ سَنَةٍ مَرَّةً وَ قَدْ عَرَضَه‏ عَلَيَّ الْعَامَ مَرَّتَيْنِ وَ لَا أَرَاهُ إِلَّا لِحُضُورِ أَجَلِي‎প্রত্যেক বছর জিবরাইল একবার আমার নিকট পূর্ণ কোরআন উপস্থাপন করে; কিন্তু এই বছর দুইবার উপস্থাপন করেছে। এর কারণ আমার ইন্তিকাল নিকটবর্তী হওয়া ব্যতিত আর আর কিছুই হতে পারে না। (আল এরশাদ ফি মারেফাতে হুজাজিল্লাহে আলাল এবাদ, খঃ ১, পৃঃ ১৮১।)উল্লেখ্য যে মহানবি (সা.) কি স্বাভাবিকভাবে ইন্তিকাল করেছেন না শাহাদত বরণ করেছেন; এই বিষয়টিও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর অসুস্থতার কারণ কি ছিল? অবশ্য কোরআন শরিফ এই দুইটি বিষয়ের প্রতিই ইশারা করেছে।أَ فَإِنْ ماتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلى‏ أَعْقابِكُمْ‎অর্থাৎ নবি যদি ইন্তিকাল করেন অথবা শাহাদত বরণ করেন তাহলে কি তোমরা পিছনে ফিরে যাবে। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৪।)মহানবি (সা.) অত্যন্ত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর ইহজগত ত্যাগ করার সময় হয়েছে। ইসলাম রুমের সেনাবাহিনী দ্বারা হুমকির সম্মুখিন হয়েছে। সুতরাং তিনি তার মোকাবিলা করার জন্য সেনা প্রধান নিযুক্ত করেছেন এবং সাহাবাদেরকে সেই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার দির্দেশ দেন; অথচ তাঁর পরবর্তী ওয়াসি নির্ধানণ করেননি! যিনি তাঁর পর রাহবারী করবেন। গাদিরে খোমে নবি করিম (সা.) তাঁর পরবর্তী ওয়াসিকে পুরোপুরিভাবে পরিচিত করিয়েছেন।মহানবি (সা.) জীবনের শেষ দিকে মসজিদুননবিতে নামাজের পর বক্তব্যে বলেনঃ হে লোকসকল আমার প্রতি যদি কাউরো দাবি থাকে তাহলে সে যেন তা গ্রহণ করে। তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের নিকট পূর্ণভাবে ইসলাম উপস্থাপন করেছি। আমি সববিছু তোমাদের নিকট বর্ণনা করেছি। আল্লাহ তায়ালা যাকিছু তোমাদের জন্য হালাল করেছন তা আমি তোদের জন্য হালাল করেছি; আর তিনি তোদের জন্য যা হারাম করেছেন তা আমি তোদের জন্য হারাম করেছি।নবি করিম (সা.) ২৩ বছর যাবত ইসলাম প্রচারের জন্য যে কষ্ট করেছন কোন নবি এত কষ্ট করেননি। এমন কি হজরত নুহ (আ.) যে ৯৫০ বছরেরও বেশি তাবলিগ করেছেন, তবুও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ২৩ বছরের কষ্ট তাঁর চেয়েও বেশী।ইবনে আবিল হাদিদ বর্ণনা করেনঃ নবি করিম (সা.) হজরত আয়েশার বাড়িতে ছিলেন। হজরত বেলালের আজানের শব্দ আসে। নবি করিম (সা.) বলেন যেঃ আমি অত্যন্ত দুর্বল। মসজিদে যেতে পারব না। একজনকে নামাজ পড়াতে বল। তাঁর নিকট খবর আসে যে, হজরত আবু বকর ও উমর মসজিদে আছেন। হজরত আবু বকর নামাজের ইমামতি করছেন। এই খবর শুনে তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন; কেননা তাদের এ সময়ে মসজিদে থাকার কথা ছিল না। মহানবি (সা.) তাদেরকে হজরত উসামার নেতৃত্বে গঠিত বাহিনীতে গিয়ে যোগ দানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ সময় মমজিদে থাকার অর্থ হচ্ছে তাঁর নির্দেশকে অমান্য করা। যারা উসামার বাহিনীকে অমান্য করেছে তাদের সম্পর্কে তিনি বলেনঃلَعَنَ اللَّهُ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْ جَيْشِ أُسَامَة‎যারা উসামার বাহিনীকে অমান্য করেছে তাদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। (শারহে নাজুল বালাগাহ, খঃ ৯, পৃঃ ১৯৭; খঃ ১৩, পৃঃ ৩৩।)মহানবি (সা.) আমিরুল মুমিনিন আলি (আ.) ও ফাজল ইবনে আব্বাসকে বলেনঃ আমাকে মসজিতে নিয়ে যাও। তারা তাঁকে মসজিদে নিয়ে যান। হজরত আবু বকরকে মেহরাব হতে সরিয়ে দিয়ে, তিনি নিজেই নামাজের ইমামতি করেন। তিনি অত্যন্ত দুর্বল থাকার কারণে বসে থেকে নামাজ পড়ান।রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের পর বক্তব্য দান করেন। তিনি সাহাবাগণকে তাঁর ইন্তিকালের পর ফেতনা সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে সাবধান করে দেন। তিনি সেখানে হাদিসে সাকালাইন পুনরায় নর্ণনা করেন।إنّي تارك فيكم الثقلين‏ كتاب اللّه و عترتي لن تضلّوا ما إن تمسّكتم بهما‎অর্থাৎ আমি তোদের মাঝে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি, একটি হচ্ছে আল্লার কিতাব (আল কোরআন) অপরটি হচ্ছে আমার ইতরাত (আহলুল বাইত)। এই দুইটিকে যদি দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। (আল মুরশেদ ফি ইমামাতি আলি ইবনে আবি তালেব আলাইহিস সালাম, পৃঃ ১১৬।)অতপর তিনি আবু বকর, উমর ও উসমানসহ বার জন সাহাবাকে একত্রিত করেন এবং তাদেরকে বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে উসামার দলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিইনি? কেন তোমরা যাওনি? কেন তোমরা মদিনায় রয়েছ? সকলেই বিভিন্ন ওযর দেখায়। হজরত আবু বকর বলেনঃ আমি পুনরায় আপনার হাতে বাইআত করতে চায়। হজরত উমর বলেনঃ আমি আপনার খবর কাফেলার নিকট হতে জানতে চাওয়াকে পছন্দ করিনি। (বুখারী, খঃ ১, পৃঃ ২২, কিতাবুল ইলম, ও খঃ ২, পৃঃ ১৪। মুসলিম, খঃ ২, পৃঃ ১৪।)বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, রাসুল (সা.) তিনবার বলেনঃ نفذوا جیش اسامه অর্থাৎ উসামার বাহিনীকে সুসজ্জিত কর। (আল মিলাল ওয়ান নেহাল, শাহরেস্থানী, খঃ ১, পৃঃ ২৩। তারিখে তাবারী, খঃ ৩, পৃঃ ৪২৯। মাগাজী, খঃ ২, পৃঃ ১১৭।)রাসুল (সা.) মসজিদ হতে বাড়িতে ফিরে আসেন। তাঁর অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। হজরত ফাতেমা জাহরা (আঃ) তাঁর পিতার পার্শ্বে বসে আছেন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা ইহজগত ত্যাগ করছেন। তাঁর আদরের কন্যা পাশে বসে অঝর নয়নে কাঁদছেন। রাসুল (সা.) ফাতেমা (আ.) কে বলেনঃ ফাতেমা আমার নিকটে এসো। ফাতেমা তাঁর নিকট যান। তিনি তাঁকে বলেনঃ ফাতেমা কেঁদ না। আমার ইন্তিকালের পর আমার পরিবারের মধ্য হতে তুমি সর্বপ্রথম আমার নিকট আসবে। হজরত ফাতেমা (আ.) এই খবর শুনে খুশি হন এবং চেহারা হাস্যউজ্জল হয়।তাবাকাতে ইবনে সাদে বর্ণিত হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলি (আ.) এর কোলে মাথা রেখে ইন্তিকাল করেছেন। জেহনী দেলান বুখারীর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, রসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আয়েশার কোলে মাথা রেখে ইন্তিকাল করেছেন। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, খঃ ২, পৃঃ ২০৪।)হজরত ইবনে আব্বাস বলেনঃ সুলুল্লাহ (সা.) হজরত আলি (আ.) এর কোলে মাথা রেখে ইন্তিকাল করেছেন। আলি (আ.) তাঁর ভাই। তিনি নবি করিম (সা.) কে গোসল দান করেছে। (আল ওয়াফাউল ওয়াফা, খঃ ১, পৃঃ ৩৩। আল খাসায়েস, খঃ ২, পৃঃ ২২৮। শারহে)ফাজল ইবনে অব্বাস রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি কি আপনাকে গোসল দানে অংশ গ্রহণ করতে পারি? উত্তরে তিনি বলেনঃ তুমি শুধু পানি নিয়ে এসো। নবিকে তাঁর ওয়াসি গোসল দিবে এবং দাফন করবে। (মুসতাদরাকে হাকেম, খঃ ১, পৃঃ ১৩৮। কানজুল উম্মাল, খঃ ৬, পৃঃ ৪০০।)হজরত আলি (আ.) বলেনঃ রাসুল (সা.) আমার বুকের ওপর মাথা রেখে ইহজগত ত্যাগ করেছেন। আমি তাঁকে গোসল দিয়েছি একং দাফন করেছি। গোসল দানের সময় ফেরেশতারা আমাকে সহযোগিতা করেছে। তাঁর ওয়াসি হওয়ার জন্য আমার চেয়ে বেশী হকদার কে হতে পারে?আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশাল

▪️নামধারী মুসলমান আবু বকর , ওমর ও উসমান দয়াল রাসূল পাক ‎ﷺ কে ওহুদের যুদ্ধে ইসলাম বিরোধী অপশক্তির মাঝে নিশ্চিত মৃত্যু ভেবেই ফেলে রেখে পালিয়েছিল। ▪️সুত্র- মুসনাদ আহমদ অধ্যায় ফাযায়েলে সাহাবা , হাদিস ২৫৯ ।▪️মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন : উহুদ যুদ্ধ থেকে সর্বপ্রথম আমার পিতা আবু বকর পালিয়েছে ।▪️তারিখুল খুলাফা পৃষ্ঠা ৩৬ সহি বুখারী হাদিস ৩৬৯৯ সহি তিরমিজি হাদিস ৩৭০৬ ।এপ্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন : ▪️স্মরণ কর) যখন তোমরা উঁচু জমির দিকে উঠছিলে বা পলায়ন করছিল এবং কারও দিকে ফিরে তাকানোর মত হুঁশটুকু তোমাদের ছিল না এবং রসূল তোমাদের পশ্চাতে থেকে তোমাদেরকে ডাকছিল।তাইসিরুল ।সুরা আল ইমরান ,আয়াত -১৫৩ ।▪️আল্লাহ পাক ঐ সমস্ত মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে এআয়াত নাজিল করেছে , যারা উহুদের যুদ্ধ থেকে পলায়ন করেছে । এবং তাফসিরে দূরে মনসুর এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন যে ,জনাব ওমর নিজেই বলেছেন এই আয়াত আমাদের জন্য নাজিল হয়েছে , কেনোনা আমরাই উহুদের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে ছিলাম ।মুসলমানদের তথাকথিত বীর আবু বকর উমর উসমান এতোটাই বীর ছিলো যে রাসুল কে একা ফেলে ময়দান থেকে পালিয়েছে ।হাকিমুল উম্মত হযরত আব্দুল হক সাহেব এর কিতাব মাদারজুন নবূয়াত কিতাবে বিস্তারিত বর্ননা আছে । যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যখন রাসূল পাক ‎ﷺ আবু বকর ,ওমর ও ওসমানকে জিজ্ঞেস করলেন ,তোমরা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালালে কেনো ?উত্তরে : তখন তারা বলেছিল ইয়া রাসুল আল্লাহ্ ‎ﷺ ! শয়তান আমাদের কানে আওয়াজ দিয়েছিল যে মুহাম্মদ মারা গেছেন ( নাউযুবিল্লাহ ) তাই আমরা ভাবলাম আপনিই যখন নেই , তখন আমরা থেকে কি করব ? সেই জন্যে যুদ্ধের ময়দান থেকে চলে এসেছি ।এরপর প্রিয় নবী ‎ﷺ হযরত মাওলা আলীকে জিজ্ঞেস করলেন ,তুমি পালাওনি কেন ? উত্তরে : মাওলা আলী বলেন , “ইয়া রাসুল আল্লাহ্ ‎ﷺ তাহলেতো আমি কাফের হয়ে যেতাম “ আমার সুপ্রিয় দরদীগন ! যারা রাসুল পাক ‎ﷺ কে রেখে পালিয়েছিল , তারা কি হলো? আপনাদের শুদ্ধ বিবেককেই জিজ্ঞেস করুন। আল্লাহ পাক বলেন: “তারাই হল প্রকৃত কাফির আর কাফিরদের জন্য আমি অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।”তাইসিরুল ,সুরা আন নিসা / আয়াত -১৫১সত্য প্রকাশ করলে ফেইস বুকে কিছু কিছু জ্ঞানপাপী যেভাবে গালাগাল করে , তাতে মনে হচ্ছে ফেইস বুক থেকে পলায়ন করা ছাড়া কোনো উপায় নাই ।তাই সত্য প্রকাশক আমার দরদীগনের নিকট জানার বাসনা , যারা পূর্বে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে মোনাফেক হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে বড় বড় খলিফা ও বড় বড় সাহাবী না মানলে যদি নামধারী সুন্নী মুসলমানদের ঈমান না থাকে এবং মোনাফেক ও কাফেরদেরকে মানাই ঈমান হয়ে থাকে তাহলে মহাসত্য প্রকাশকারী আমাদের “ অনলাইনে আহলে বায়াতের গোলামি” নামক যুদ্ধক্ষেত্র হতে যদি আমি পলায়ন করি তাহলে নামধারী সুন্নী মুসলমানদের কাছথেকে আমি কি খেতাব পেতে পারি!এপ্রসংগে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানের সূরা আন নিসা/ আয়াত -১৫১ কি বলেছেন তা না পড়ে আমাদের অনলাইনের আহলে বায়াতের গোলাম কোনো যুদ্ধাকে গালাগাল না করার বিনীত অনুরোধ করছি

বেলায়াতে আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)“তোমাদের ওলি(পৃষ্ঠপোষক, অভিভাবক)তো শুধু মাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসুল (সা) ও মুমিনবৃন্দ যারা সলাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায়”।( মায়েদা আ নং-৫৫)উল্লেখিত আয়াতটি যদি আমরা পবিত্র হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করি তাহলে স্পষ্টভাবে হযরত আলী(আ)এর বেলায়েতের কথাই বর্ণিত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয। শুধু মাত্র হিংসাপরায়ণ ও মাঝহাবী একগুঁয়েমী সম্প্রদায়গণই তা অস্বীকার করে।উল্লেখিত আয়াতের তাফসির হিসাবে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে যে হাদিসটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবদিক থেকে পরিপূর্ণ যা আহলে সুন্নতের বিখ্যাত তাফসিরকারক ফকরে রাজী(র) তাঁর তাফসিরে কবিরে হযরত আবুযার গিফফারী(রা)থেকে বর্ণনা করেছেনঃএকদা রাসুল (সা)এর ইমামতিতে যোহরের নামাজ আদায় করেছিলাম,অতঃপর একজন অভাবী মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্য কামনা করল কিন্তু কেউই তাকে কিছু দিলনা, অতঃপর অভাবী লোকটি তার দুহাত আকাশের দিকে উত্তোলন করে বললঃ ” হে আল্লাহ তুমি স্বাক্ষী থেকো আমি তোমার রাসুলের(সা) মসজিদে এসে সাহায্য চাইলাম কেউই আমাকে সাহায্য করলো না” আলী(আ) তখন নামাজের(মুস্তাহাব) রুকুতে ছিলেন সে তাঁর ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলটি অভাবীর দিকে ইশারা করল ও সেখানে একটি আংটি ছিল। অভাবী লোকটি এসে আংটিটি নিয়ে চলে গেল। এ ঘটনাটি নাবী(সা) এর সামনেই ঘটল। অতঃপর নাবী(সা) বললেনঃ হে আল্লাহ আমার ভাই মুসা(আ) তোমার কাছে আবেদন করেছিল “হে আমার প্রভু আমার বক্ষ স্ফীত কর,আমার কাজকে আমার জন্য সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তাকে কাটিয়ে দাও,যাতে মানুষ আমার কথাকে বুঝতে পারে। আমার পরিবার থেকে একজনকে আমার উজির বানিয়ে দাও। আমার ভাই হারুনকে এ পদে মনোনীত কর, তাঁর দ্বারা আমার পিঠকে মজবুত কর,তাকে আমার কাজে অংশীদার বানিয়ে দাও ” (সুরা তোয়াহা আ নং-২৫-৩২) অতঃপর তুমি তার এ আবেদন কবুল করে কোরআনে বলেছোঃ খুব শীঘ্রই তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহুকে মজবুত করব। ও তোমার জন্য রাজত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করব। হে আল্লাহ আমি তোমার নবী ও তোমারই মনোনীত, আমার বক্ষকে স্ফীত কর, আমার কাজকে সহজ করে দাও, আলীকে এ পদে মনোনীত কর।তাঁর দ্বারা আমার পিঠকে মজবুত কর।আবুজার (রা) বলেনঃ আল্লাহর শপথ, তখনও রাসুলুল্লাহ(সা) তাঁর কথা শেষ করেনি জিবরাইল(আ) অবতরণ করলেন এবং আয়াতটি রাসুলুল্লাহর(সা) কাছে পাঠ করলেন।(এছাড়া হাদিসবেত্তা বালখীও মুসনাদে আহমাদের সূত্রে হদিসটি নকল করেছেন)উল্লেখিত সুরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ ও রাসুলের(সা) পরে যে ইমাম আলী (আ) মুমিনদের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক, নেতা তথা ওলী তা আহলে সুন্নতের হাদিস গ্রন্থে চব্বিশটি(২৪) হাদিস বর্ণিত হয়েছে (গায়াতুল মারাম,মরহুম মুহাদ্দিস বাহরানী)এছাড়া তাফসিরে তাবারী, তাফসিরে আসবাব উন নযুল, নরুল আবসার, সাওয়াকে মুহারিক,তাফসিরে ইবনে কাসির যা আল্লামা আমিনী তাঁর বিখ্যাত কিতাব “আল গাদিরে” আহলে সুন্নতের ২০টি সূত্র উল্লেখিত আয়াতের আলোচিত বিষয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন।ইমাম আলী (আ) এর বেলায়েতের পক্ষে বর্ণিত হাদিস গুলো দশজন বিখ্যাত সাহাবী(রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে।তাঁরা হলেনঃ১। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী ২। ইবনে আব্বাস ৩। আম্মার ইয়াসির ৪। আনাস ইবনে মালেক ৫। আবুজার গিফফারী ৬। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ৭। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ৮। সালামাত ইবনে কহিল ৯। আবদুল্লাহ ইবনে গালেব ১০। আকবাত ইবনে হাকিম।এছাড়া ইমাম আলী(আ) এ আয়াতের শানে নযুল সম্পর্কে নিজের বেলায়েতের তথা খিলাফতের পক্ষে হাদিসের মাধ্যমে যুক্তি পেশ করেছেন।ইমাম আলী(আ)এর বেলায়েতের পক্ষে বর্ণিত হাদিসসমূহ মুতাওাতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির হাদিস তাকেই বলা হয় যা এত বেশি পরিমাণে বর্ণিত ও পুনরাবৃত্তি হয়েছে যার ফলে সবাই নিশ্চিত হতে পারে যে সে হাদিসের মূল বিষয়বস্ত সত্য ও অবধারিত এবং সে হাদিসের সনদ পর্যালোচনা করার প্রয়োজন পড়ে না।অতএব সুরা মায়েদার ৫৫নং আয়াত ও মুতাওয়াতির হাদিসের আলোকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে ইমাম আলী (আ) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের(সা) পরে সকল মুমিন মুসলমানগণের অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক তথা ওলি অর্থাৎ বেলায়েতের অধিকারী।ইমাম আলী (আ) এর বেলায়েতের পক্ষে আর একটি হাদিস উল্লেখ করা যথেষ্ট বলে মনে করছি।হাদিসে হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্হে ইবনে আব্বাস(রা) হতে বর্ণনা করেছেন যেখানে আলী(আ) এর দশটি বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে, তন্মধ্যে নবী(সা) আলী( আ) কে বলেছেন ” আমার পর তুমি সকল মুমিনের অভিভাক হবে।শান্তি বর্ষিত হোক তাদের প্রতি যারা সত্যকে গ্রহণ করেআরলানত বর্ষিত হোক তাদের উপরে যারা সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে মিথ্যা কে সঙ্গে নিয়ে চলে

পবিত্র কুরআন বিরোধী কিছু হাদিস পোস্টপর্ব ((((((((৮))))))))২৫. কুরআনে ‘এক ব্যক্তি হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, বুখারি-মুসলিমে ‘পাঁজরের হাড় হতে!কুরআনে দেখুন, ‘হে মানবম-লী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দুইজন হতে বহু নর-নারী ছড়ায়ে দেন ... (৪:১; ৭:১৮৯; ৩৯:৬; ৪৯:১৩)। [আল্লাহ কি মানব সৃষ্টির ইতিহাস বলেন নি?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘নারীকে পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে তোমার জন্য কখনো কিছুতেই সোজা হবে না। যদি তুমি তার দ্বারা কাজ নিতে চাও, এ বাঁকা অবস্থায় নিবে। যদি সোজা করতে যাও ভেঙ্গে ফেলবে। আর এ ভাঙ্গা হলো তাকে তালাক দেয়া (মেশকাত-৬/৩১০০, ৩১০১)। [আল্লাহ কি ‘নারীকে পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে সৃষ্টি করার কথা বলেছেন?]২৬. কুরআনে ‘সালামুন আলাইকুম, বুখারি-মুসলিমে‘আসছালামু আলাইকুম.........কুরআনে দেখুন- ‘সালামুন আলাইকুম (৭:৪৬; ১৩:২৪; ১৬:৩২; ৩৯:৭৩) ও ‘সালামুন (১৪:২৩; ৩৩:৪৪; ৩৬:৫৮; ৪৩:৮৯; ৫০:৩৪; ৫১:২৫; ৫৬:২৬, ৯১; ৯৭:৫ আয়াত)। ‘তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয় তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তারই অনুরূপ করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী (৪:৮৬)। [কুরআন থেকে উত্তর দেওয়াটাই উত্তম। কুরআন অনুসারে মুসলিমরা সালাম বিনিময় করেন কি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘এক ব্যক্তি নবীর খেদমতে এসে বললো, ‘আস্সালামু আলাইকুম। ... আরেক ব্যক্তি এসে বললো, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ্। আরেক ব্যক্তি এসে বললো, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ ওয়া বারাকাতুহ্ (তিরমিযি ও আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৯/৪৪৩৯। ‘আরও এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, ওয়া মাগফিরাতুহু (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৯/৪৪৪০। ‘রাসূলের কাছে কেউ আসলে তিনি তাকে বলতেন, চলে যাও এবং এসে বল, ‘আস্ছালামু আলাইকুম’ (তিরমিযি ও আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৯/৪৪৬৬। [রাসূলকে আল্লাহ সালাম দিতে বলেছেন (৬:৫৪)। প্রচলিত হাদিসে রাসূল সালাম প্রত্যাশী ছিলেন কেন?]২৭. কুরআনে ‘সৎকর্মে জান্নাত, অস্বীকৃতিতে জাহান্নাম, প্রচলিত হাদিসে ‘পূর্ব নির্ধারিত!কুরআনে দেখুন, ‘তিনিই (আল্লাহই) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ হয় কাফির এবং তোমাদের মধ্যে কেউ হয় মু‘মিন, ... যে ব্যক্তি আল্লাহে বিশ^াস করে ও সৎকর্ম করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে, ... কিন্তু যারা কুফরি করে এবং আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে (৬৪:২, ... ৯, ১০)। [ঈমান এনে সৎকর্ম করলেই জান্নাত, না করলে জাহান্নাম নয় কি?}প্রচলিত দেখুন, ‘একদিন রাসূল করিম দুইটি কিতাব নিয়ে বের হলেন ... ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন ঃ এ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে একটি কিতাব, এতে সমস্ত জান্নাতিদের নাম, তাদের বাপদাদার নাম ও বংশ পরিচয় এবং এদের শেষ ব্যক্তির নামের পর সর্বমোট যোগ করা হয়েছে। ... অতঃপর তাঁর বাম হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন ঃ এও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ হতেই একটি কিতাব। এতে সমস্ত জাহান্নামিদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে (তিরমিযি);-মেশকাত-১/৯০। [উক্ত হাদিস সঠিক হলে সকল অপকর্মের জন্য আল্লাহই দায়ী নয় কি?]২৮. কুরআনে ‘মূসাকে কিতাব দেওয়া হয় পর্বতে, প্রচলিত হাদিসে‘আদম সৃষ্টির চল্লিশ বছর আগে!কুরআনে দেখুন, ‘[পাহাড়ে সংজ্ঞাহীন মূসার জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আল্লাহ বললেন,] ... আমি যা দিলাম তা গ্রহণ কর ... আমি তার জন্য ফলকে সর্ববিষয়ে উপদেশ ও সকল বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি; সুতরাং এগুলো শক্তভাবে ধর এবং তোমার সম্প্রদায়কে তাদের যা উত্তম তা গ্রহণ করতে দির্দেশ দাও (৭:১৪৪-১৪৫)। [আল্লাহ কি আদম সৃষ্টির আগে তাওরাত কিতাব লিখেছিলেন?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘ ... মূসা আদমকে বললেন, ‘... আপনি আপনার ত্রুটির-বিচ্যুতির দ্বারা মানব জাতিকে জমিনে নামিয়ে এনেছেন। আদম বললেন, ‘... আমার সৃষ্টির কতকাল পূর্বে আল্লাহ তাওরাত কিতাব লিখেছেন বলে তুমি জান? মূসা বললেন, ‘চল্লিশ বছর পূর্বে! ... আদম বললেন, ‘তবে কি তুমি আমায় এমন একটি কাজ করেছি বলে তিরস্কার করছো যা আমি আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আমি তা করব বলে আল্লাহ লিখে রেখেছিলেন? (মুসলিম);-মেশকাত-১/৭৫। [আল্লাহ আগেই তা লিখে রাখলে আমাদের সকল কর্মের জন্য আল্লাহই দায়ী নয় কি?]লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্রমুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খেলাফত উচ্ছেদঃক্ষমতা মুয়াবিয়ার হস্তগত হলে ইসলামী খেলাফত এর অবসান ঘটে এবং রাজতন্ত্রের সুত্রপাত ঘটে। মুয়াবিয়ার বায়াত এর পর সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস মুয়াবিয়ার উদ্দেশে বলেন- হে রাজা আপনার প্রতি সালাম। (ইবনুল আসির ৩য় খণ্ড) মুয়াবিয়া নিজেও বলেছেন আমি মুসলমান দের মধ্যে সর্বপ্রথম রাজা। (আলবিদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড) হাফেজ ইবনে আসীর বলেন-মুয়াবিয়া কে খলিফা না বলে রাজা বলা সুন্নত। কারন মহানবী সাঃ বলেন আমার পর ত্রিশ বছর খেলাফত থাকবে অতঃপর বাদশাহির আগমন ঘটবে। হিজরি ৪১ সালে ইমাম হোসেন আঃ এর খেলাফত ত্যাগের মাধ্যমে সে মেয়াদ পূর্ণ হয়। ( দেখুন আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড মুয়াবিয়াকে ইমাম হাসান এর হত্যাকারী উল্লেখ করে আল্লামা আব্দুর রহমান জামি রাঃ তার বিখ্যাত কিতাব শাওয়াহেদূন নবুয়ত কিতাব এ লিখেন –হযরত ইমাম হাসান আঃ কে মুয়াবিয়ার আদেশেই তার স্ত্রীর মাধ্যমে বিষ দেয়া হয়েছিল। বিশিষ্ট সাহাবা হাজর ইবনে আদি রাঃ কে জীবিত দাফনঃ মুয়াবিয়ার নির্দেশে ৭০ হাজার এর অধিক মসজিদ এ যখন মওলা আলী আঃ ও তার পবিত্র বংশধর দের গালিগালাজ ও অভিসম্পত দেয়া হচ্ছিল তখন হযরত হাজর ইবনে আদি কুরআন ও হাদিস থেকে শেরে খোদা মওলা আলীর শানে বর্ণিত তা পাঠ করতে লাগলেন। অতঃপর মুয়াবিয়ার নির্দেশে হাজর বিন আদি রাঃ ও তার সাত জন সঙ্গিকে হত্যা করা হয় অত্যন্ত নির্মম ভাবে। মুয়াবিয়ার নির্দেশে তাদের কে জীবিত মাটিতে পুতে মারা হয় যাতে কেও মুয়াবিয়ার আদেশ অমান্য করার সাহস না পান।( এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরন তাবারী ৪র্থ খন্ড,ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খন্দ,ইবনে খালদুন ৩য় খণ্ড) এই নির্মম হত্যা কাণ্ডের পর আবুল আওলিয়া হযরত হাসান বসরি রাঃ অভিমত প্রকাশ করেন যে, এ অহেতুক হত্যাকাণ্ডের কারনে মুয়াবিয়ার নিষ্কৃতি নেই। ( ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ৮ম খণ্ড) এই ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ আগেই পত্রের মাধ্যমে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু মুয়াবিয়া হযরত আয়েশার এই কথা শুনেন নি। পরে হযরত আয়েশা রাঃ মুয়াবিয়ার সাক্ষাতে আসলে বলেন –হে মুয়াবিয়া তুমি হাজর কে হত্যা করতে গিয়ে আল্লাহকে একটুকুও ভয় করলা না? (বিস্তারিত দেখুন আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, তাবারী ৪র্থ খণ্ড) এই সব মুনাফিক হত্যাকারী দের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ কুরআন এ বলেন- কোন মুসলমান কে যে স্বেচ্ছায় হত্যা করবে তার শাস্তি দোজখে এবং সেথায় সে চিরস্থায়ী হবে, তার উপর আল্লাহর লানত (সুরা নেছা ৯৩)বায়তুল মালের অপব্যবহারঃ বায়তুল মাল হচ্ছে খলিফা বা সরকারের নিকট আল্লাহ্‌ ও জনগনের আমানত। অথচ মুয়াবিয়া রাজা হবার পর বায়তুল মাল কে নিজের মালে পরিনত করেছেন। বায়তুল মালে জনগনের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। তিনি তার ইচ্ছা মোতাবেক ভোগ ও বণ্টন করতেন। বায়তুল মালের হিসাব চাওয়ার অধিকার কারো থাকল না। জনগণ কে নির্ভর করতে হত বাদসার দান দাক্ষিণ্যর উপর। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড,আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৯ম খণ্ড) নও মুসলিম দের উপর জিজিয়া করঃ ইসলামের বিস্তার এর ফলে মুসলমান বেড়ে যায় ফলে জিজিয়া কর কমে যায়। তাই বায়তুল মাল এর আয় হ্রাস পায় যা মুয়াবিয়ার ভোগ বিলাস এ ব্যঘাত সৃষ্টি হয়। তাই মুয়াবিয়া নও মুসলিম দের মধ্যে জিজিয়া কর আরোপ করা হয়। যা সম্পূর্ণ কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী। সাধারন মানুষের ইসলাম গ্রহন এর চাইতে ও মুয়াবিয়ার ধন সম্পদ বৃদ্ধি করাই ছিল তার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (ইবনুল আসীর ৪র্থ খণ্ড) মুয়াবিয়া কুরআন এর আদেশ লঙ্ঘন করে গনিমত এর মালের মূল্যবান সোনা চাঁদি নিজেই রেখে দিতেন। (আত তাবারী, আল ইস্তিয়াব ১ম খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ডযাদেরকে পূজা করার কথা নয় আমরা তাদেরকেই পূজা করে চলেছি হায়রে মানুষ হায়রে বিবেক বিবেক মরে গেছে মানুষ বেঁচে আছে মরার কথা হল মানুষকে কিন্তু বর্তমান মরে গেছে মানুষের বিবেক

পবিত্র কুরআন বিরোধী কিছু হাদিস পোস্টপর্ব (((((((৭)))))))২১. কুরআনে ‘নর-নারী একে অপরের অংশ, বুখারি-মুসলিমে ‘অধিকাংশ নারী জাহান্নামি!কুরআনে দেখুন, ‘অতঃপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ (৩:১৯৫)। ‘মু’মিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব (১৬:৯৭)। ‘পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মু’মিন হয়ে সৎকর্ম করে তারা দাখিল হবে জান্নাতে, সেথায় তাদের দেওয়া হবে বে-হিসাব পরিমাণ রিয্ক (৪০:৪০)। ‘নারীর উপর পুরুষের মর্যাদা আছে (২:২২৮; ৪:৩৪)। [আল্লাহ কি নারী-পুরুষের কর্মের সঠিক মূল্যায়ণ করবেন না?]বুখারি- মুসলিমে দেখুন, ‘অতঃপর আমি জাহান্নামের দ্বারে দাঁড়াই, তখন (দেখিলাম) তাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশ নারী সম্প্রদায় (মেশকাত-৯/৫০০৪)। ‘আমি জাহান্নামে তাকায়ে দেখলাম তার অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী সম্প্রদায় (মেশকাত-৯/৫০০৫)। ‘একদা রাসূল আমাদের উপদেশ দিয়ে বললেন, ‘হে নারী সমাজ! তোমরা সদকা কর যদিও তোমাদের গহনা পত্রের হয়। কেননা, কিয়ামতের দিন তোমরাই জাহান্নামের অধিক অধিবাসী হবে (তিরমিযি);-মেশকাত-৪/১৭১৬। [আল্লাহর তাঁর কিতাবে অধিক সংখ্যক নারীকে জাহান্নামে দেওয়ার ওয়াদা করেছেন কি?]২২. কুরআনে ‘রাসূলকে অনুসরণ, প্রচলিত হাদিসে ‘সাহাবীদের!কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন (৩:৩১)। ‘কেউ রাসূলের অনুসরণ করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল (৪:৮০)। [রাসূল একমাত্র ওহীর (৬:৫০; ৭:২০৩; ১০:১৫; ২১:৪৫ ও ৪৬:৯) অনুসরণ করেছেন। রাসূলের মৃত্যুর পরে কুরআন ব্যতিত অন্য কাউকে অনুসরণের নির্দেশ আল্লাহ্ আমাদেরকে দিয়েছেন কি?]রযীনে দেখুন, ‘তিনি (আল্লাহ্) ওহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদকে জানিয়ে দিলেন, ‘আল্লাহর নিকট রাসূলের সাহাবীদের মর্যদা হলো― আসমানের তারকারাজির ন্যায়। ... রাসূল আরো বলেছেন, ‘আমার সাহাবীগণ হলেন তারকারাজির সদৃশ। অতএব, তোমরা তাদের যে কাউকেও অনুকরণ করবে হেদায়েত পাবে (মেশকাত-১১/৫৭৬৪)। [আল্লাহ্ মুহাম্মাদের নিকট ওহী করেছেন, তাহলে ‘সাহাবীদের অনুসরণের নির্দেশ কুরআনে নেই কেন?]২৩. কুরআনে ‘সুলায়মান কে পরীক্ষা, বুখারি-মুসলিমে ‘১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমন!কুরআনে দেখুন, ‘আমি তো সুলায়মানকে পরীক্ষা করলাম এবং তার আসনের উপর রাখলাম একটি ধড়; অতঃপর সুলায়মান আমার অভিমুখী হলো। সে বলল, ‘আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমি ছাড়া কেউ না হয়। আপনি তো পরম দাতা। তখন আমি তার অধীন করে দিলাম বায়ুকে, যা তার আদেশে, সে যেখানে ইচ্ছা করত সেথায় মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত হতো (৩৮:৩৪-৩৬)। [আল্লাহ মানুষকে যেভাবে ইচ্ছা পরীক্ষা করতে পারেন?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘একদা সুলায়মান বললেন, ‘অবশ্যই আমি অদ্য রাত্রে আমার নব্বই জন স্ত্রীর নিকটে গমন করব, অপর এক বর্ণনায় আছে- একশত স্ত্রীর কাছে গমন করব। আর প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে অশ্বারোহী মুজাহিদ গর্ভে ধারণ করবে এবং এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন মালাইকা তাঁকে বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন। কিন্তু সুলায়মান তা বলতে ভুলে যান। অতঃপর তিনি সমস্ত বিবিদের কাছে গমন করলেন, কিন্তু একজন ছাড়া তাদের কেউই গর্ভধারণ করল না। সেও অর্ধ অঙ্গের একটি সন্তান প্রসব করল (মেশকাত-১০/৫৪৭৫)। [একজন বিবিকে ঘুম ভাঙ্গাতে, দরজা খুলতে, প্রস্তুতি নিতে এবং মিলিত হতে ১০ মিনিট করে লাগলে সময়ের প্রয়োজন [(১০০দ্ধ১০)স্ট৬০ = ১৬.৬। প্রায় ১৭ ঘণ্টা সময়। এ কি করে সম্ভব? সু-প্রিয় পাঠক! আপনি কতটুকু পারেন?]২৪. কুরআনে ‘পরীক্ষার জন্য সৃষ্টি, বুখারি-মুসলিমে ‘সৃষ্টির আগেই কে কি করবে তা লেখে রাখা হয়েছে!কুরআনে দেখুন, ‘আর তিনিই আকাশম-লী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, ... তোমাদের মধ্যে কে কার্যে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য (১১:৭)। ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি, মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ (১৮:৭)। ‘যিনি (আল্লাহ্) সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? (৬৭:২)। ‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এজন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন (৭৬:২)। ‘ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক উম্মত (জাতি) করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তাদ্বারা পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং সৎকর্মে তোমরা প্রতিযোগীতা কর (৫:৪৮)। [আল্লাহ্ ভবিষ্যতে কে-কি করবেন তা লিখে রেখেছেন কি?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই আল্লাহ্ তাঁর মাখলুকাতের তক্দীর লিখে রেখেছেন (মেশকাত-১/৭৩)। ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টিতে চল্লিশ দিন তার মা গর্ভে শুক্ররূপে, তারপর চল্লিশ দিন লাল জমাট রক্তপি-রূপে, তৎপর চল্লিশ দিন মাংসপি-রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ্ চারটি বিষয়সহ জনৈক মালাইকাকে তার নিকট পাঠান। মালাইকা (ফিরিশতা) লিখে দেন ১. তার আমল, ২. তার মৃত্যু, ৩. তার রিয্ক ও ৪. সে সৎ লোক কি অসৎ লোক হবে (মেশকাত-১/৭৬)। [উপরোক্ত তিন ধরনের লেখা-লেখির বিষয় আল্লাহর কিতাবে আছে কি?]লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণমূলক পোস্টপর্ব ((((((৬)))))) ও এক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শেষআত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআনিল কারিম’ এর রচয়িতা মনে করেন এ শব্দটির আসল অর্থ হল “পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থান”। আর এ শব্দটির অন্যান্য সকল অর্থকে এই অর্থের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন: ‘ওয়ালি শব্দটির জন্য অন্য যে সব অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে যেমন- নিকটবর্তী, ভালবাসা, সাহায্য করা এবং অনুসরণ তা এই অর্থের থেকে উদ্ভূত আবশ্যিক ও অবিচ্ছেদ্য অর্থ। (মুস্তাফাভী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ১৩তম খণ্ড, পৃ.-২০২) প্রথমত: ওয়ালির যৌথ অর্থ রয়েছে অর্থাৎ একটা সামগ্রিক অর্থের (নৈকট্য ও সংযুক্তি) জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে যার দৃষ্টান্ত রয়েছে যেগুলোর ওপর প্রযোজ্য হয়ে থাকে। উপরিউল্লিখিত কোন লেখকই ভালবাসা, সাহায্য করা, অনুসরণ এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে যোগ্যতম এসবকে ওয়ালির প্রকৃত অর্থ বলে উল্লেখ করেননি। (আর তাই এ অর্থগুলো গ্রহণের জন্য তার প্রতি নির্দেশক ও নির্দিষ্টকারী দলীল থাকতে হবে, তা না থাকলে ঐ অর্থ গ্রহণ বৈধ হবে না)।দ্বিতীয়ত: এই শব্দের প্রকৃত অর্থের ব্যাপারে দুটি ভিন্ন রকমের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একদল নিকটবর্তিতাকে অন্যদল দুটি জিনিসের পাশাপাশি অবস্থানকে এই শব্দের প্রকৃত অর্থ বলেছেন এবং নিকটবর্তিতাকে এই পাশাপাশি অবস্থানের অপরিহার্য পরিণতি হিসাবে তার আবশ্যিক অর্থ বলে চিহ্নিত করেছেন।দ্বিতীয় মতটিকেই অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় তবে নিকটবর্তিতাও মূল অর্থটির অন্যতম দৃষ্টান্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ওয়ালি শব্দটির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে পাশাপাশি দুটি জিনিসের এমনভাবে অবস্থান যেন তাদের মধ্যে কোন দূরত্ব না থাকে। অর্থাৎ দুটি জিনিস পরস্পরের সাথে এমনভাবে সংযুক্ত যেন অন্য কোন কিছুই তাদের মধ্যে না থাকে। যেমন যদি কয়েক ব্যক্তি পাশাপাশি বসে থাকে, তখন আমরা বলি যায়েদ সভার সামনের সারিতে বসে আছে আর যায়েদের পাশেই আমর এবং আমরের পাশেই বকর বসে আছে। (অর্থাৎ তাদের একে অপরের মধ্যে কোন ফাঁক নেই) এই কারণেই ولی শব্দটি قرب (নিকটবর্তিতা) এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। সেটা স্থানের ক্ষেত্রেই হোক আর অবস্তুক কোন সত্তার ক্ষেত্রেই হোক (যেমন কোন সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির সাথে কারো ভাল সম্পর্ক আছে বুঝাতে তিনি তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বলা হয়ে থাকে)। এই নিকটবর্তিতার সম্পর্কের কারণেই বন্ধুত্ব, দায়িত্বলাভ, সাহায্যকারী, কর্তৃত্বশীল এবং এরূপ অন্যান্য অর্থে তা ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ এ সকল অর্থেই (দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে) এক ধরনের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও সংযোগ রয়েছে। তাই ولی শব্দটি যেখানেই ব্যবহৃত হবে সেখানে বাক্যের অর্থনির্দেশক অভ্যন্তরীণ ও সংযুক্ত শাব্দিক দলীল এবং অবস্থা ও ভাবগত দলীলের ভিত্তিতে তার অর্থ খুজে বের করতে হবে। (মুতাহ্হারী, মাজমুএ আছার, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫-২৫৬)২. যেহেতু ولي و ولايت এর প্রকৃত অর্থ হল সংযুক্তি, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তিতা, তাই আলোচ্য আয়াতে কর্তৃত্ব অর্থদানের সাথে পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতের গৃহীত অর্থের (বন্ধু ও সাহায্যকারী) পার্থক্য বাচনভঙ্গি ও বর্ণনাধারার মধ্যে কোন ছেদ ঘটায়না। কেননা সমস্যা তখনই দেখা দিবে যখন ولایت একটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ হবে কিন্তু ইতি পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ولایت কোন দ্ব্যর্থবোধক শব্দ নয় বরং এর অভিন্ন অর্থ রয়েছে। তিনটি আয়াতেই সান্নিধ্য এবং নিকটবর্তিতার অর্থ রয়েছে। যদিও সংযুক্তি ও নৈকট্য নির্দেশকারী বস্তুর উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান কিন্তু একই ধারা ও ভাবার্থ নির্দেশের জন্য আয়াত তিনটির দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে এতটুকু ঐক্য থাকাই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তাআলা প্রথমে মুমিনদেরকে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের সান্নিধ্য লাভের চেষ্টা এবং তাদের নিকটবর্তী হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। ইহুদীদের সাথে এই সংযোগ ও সান্নিধ্য শুধুমাত্র বন্ধুত্বের ব্যাপারে অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়ার দ্বারা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমেই সম্ভব। বেলায়াতের আয়াতেও মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাঁর এবং তাঁর রাসূল ও কিছু সংখ্যক মুমিনের সান্নিধ্যে যাওয়ার বা নিকটবর্তী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কারণ আল্লাহর সান্নিধ্য কেবল তাঁর সৃষ্টিগত অনিবার্য (অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক) নিয়ম এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির গণ্ডিতে নির্ধারিত শরীয়তের বিধি বিধানের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করার মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব। তেমনিভাবে রাসূলের (সা.) রেসালাতকে মেনে নিয়ে এবং তার অনুসরণ করেই শুধু রাসূলের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।তেমনি ভাবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তাঁর মনোনীত ব্যক্তির অনুসরণ করা এবং তার আনুগত্যের পতাকাতলে একত্রিত হওয়ার মাধ্যমেই ঐ কর্তৃত্বশীল ব্যক্তির নিকটবর্তী হওয়া যায়। সুতরাং বন্ধু, সাহায্যকারী, অভিভাবক ও নেতা এদের সকলের ওপরেই বেলায়েত বা নৈকট্য ও সংযুক্তির বিষয়টি প্রযোজ্য। তবে এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা ঐ ব্যক্তির সাথে সম্পর্কের দৃষ্টিতে তাদের ঘনিষ্ঠতা ও প্রভাবের পর্যায়ের ভিন্নতা থেকে উদ্ভূত।৩. যদি বেলায়তের আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং তার পরবর্তী আয়াতে সাহায্যকারী হয় তবুও তা অসঙ্গত ও আলাদা তো নয়ই বরং সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রথমেই বলেছেন: আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের কিছুসংখ্যক ওয়ালি (কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত) এবং পরবর্তী আয়াতে এরশাদ করেছেন: যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের সাহায্য করবে তারাই বিজয়ী হবে।আয়াতের শুরুতে তিনি মুমিনদের একাংশের ইমামত ও বেলায়াতকে সত্যায়ন ও নিশ্চিত করেছেন অতপর পরের আয়াতে মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদেরকে সাহায্য করার জন্য। (সাইয়েদ মুরতাজা, প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৫) যেভাবে রাসূল (সা.) গাদীরে খুমের ঘটনার সময় প্রথমে হযরত আলী (আ.) কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন, তারপর দোয়া করেছেন এবং বলেছেন: হে আল্লাহ যে আলীকে (আ.) সাহায্য করবে তুমি তাকে সাহায্য কর, আর যে তাকে অপদস্ত করতে চায় তুমিও তাকে অপদস্ত কর।৪. তদুপরি যদি কোন ক্ষেত্রে কোন আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলের সাথে তার পূর্ব ও পরের আয়াতের বর্ণনাধারাগত অর্থের বৈপরীত্য দেখা যায় তবে সেক্ষেত্রে আয়াতের অন্তস্থ অর্থগত দলীলকে বর্ণনাধারাগত অর্থের মিল থাকার নীতির «سیاق» ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। সুতরাং এই আয়াতে ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এব্যপারে শেখ তুসীর যুক্তি প্রমাণই সঠিক। উপসংহার:পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,১. «انما» এই আয়াতে সবসময়ের মতই সীমাবদ্ধতার (হাসর) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর হাসর থাকার কারণে ওয়ালি শব্দটি “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” অর্থের জন্যই নির্ধারিত হয়েছে। এ কারণে বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থ হতে পারেনা।২. «هم راکعون» বাক্যটি معطوف হওয়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ এতে একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তির ন্যায় অগ্রহণযোগ্য নীতির অবতারণা হয়। তাছাড়া এই বাক্যটি থেকে প্রথম যে অর্থটি শ্রোতার মনে আসে তা হল «هم راکعون» হল অবস্থাবাচক বাক্য বা حالیة جملة এবং আয়াতের শানে নুজুলসহ আয়াতের ব্যাখ্যাকারী বহির্গত অন্যান্য দলীলও উক্ত দাবির (معطوف হওয়ার) বিপরীত বিষয়কে প্রমাণ করে।৩. বহু সংখ্যক ভাষাবিদের মতে রুকু শব্দটির প্রকৃত অর্থ ‘উপুড় হওয়া’ এ শব্দটি বিনয়ী বা ন¤্রতার অর্থে ব্যবহারের জন্য قرینه বা সমর্থক দলীলের প্রয়োজন। অথচ এই আয়াতে এরূপ কোন قرینه নেই।৪. মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং ভালকাজের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহার আরবি সাহিত্যে প্রচলিত আছে। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি ও বৈয়াকরণ এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।৫. «ولی» শব্দটির যৌথ অর্থ রয়েছে যা একটা সামগ্রিক অর্থ অর্থাৎ সান্নিধ্য বা নৈকট্য নির্দেশের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সামগ্রিক অর্থের অনেক দৃষ্টান্ত ( مصاﺪیق) রয়েছে যেমন- মুক্ত, মুক্তকারী, ভালবাসা পোষণকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক, নেতা ইত্যাদি। তবে পবিত্র এই আয়াতে বিদ্যমান «انما» সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয়টি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দলীলের ভিত্তিতে বলা যায় যে, ওয়ালি শব্দটি কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বা অভিভাবক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।সুতরাং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আলী (আ.) এর নেতৃত্বের বিষয়টি এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং এক্ষেত্রে ফাজেল কুশচী, ফাখরুদ্দীন রাজী ও অন্যরা যা বলেছেন তা এ মত খণ্ডনকারী দলীল বলে গণ্য হতে পারে না।টীকা :১. মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাসান তুসী (জন্ম ৫৯৭ হি. ও মৃত্যু ৬৭২ হি.) বিশ্ব বিখ্যাত পণ্ডিত, ইরান এবং ইসলামের গর্ব। (হাসান আল-আমীন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী) তিনি মোগল যুগের একজন উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন তিনি তার জীবদ্দশায় ইসলামের অনেক খেদমত করেছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে যেমন-দর্শন, কালাম, গণিত এবং জ্যাতিষ শাস্ত্রে অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। কালামশাস্ত্রে তার রচিত তাজরীদুল এ’তেকাদ গ্রন্থটি চির অমর হয়ে আছে। এই গ্রন্থের ভাষার মাধুর্যতা, বর্ণনার ধারা এবং বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ অনেককে এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করতে এবং এতে টীকা সংযোজন করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধুমাত্র আহলে বাইতের অনুসারীরাই নয় এমনকি আহলে সুন্নাতের অনেক গণ্যমান্য প্রসিদ্ধ আলেমও এর বিষয়বস্তুকে তাদের গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন।২. আলাউদ্দীন আলী বিন মুহাম্মাদ কুশচী (৮৭৯হি.) ফাজেল কুশচী এবং মোল্লা আলী কুশচী নামে প্রসিদ্ধ, তিনি আহলে সুন্নাতের আশআরী চিন্তাধারার একজন মনীষী। তিনি তাজরীদুল ইতিকাদ গ্রন্থটির অন্যতম ব্যখ্যাকারক। তিনি তার শারহে জাদীদে তাজরীদ নামের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে ইমামতের আলোচনায় শেখ তুসীর দৃষ্টিভঙ্গির ত্রুটি ধরেছেন ও সমালোচনা করেছেন। (আগা বুজুর্গে তেহরানী, আয যারিয়াহ ইলা আছারিশ শিয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৪; যারকুলী, আল আলাম, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৯; কাহালা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২২৭; কুম্মি, আলকুনি ওয়াল আলকাব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৯৪) গ্রন্থসূচী:১. আল কোরআনুল কারীম।২. ইবনে যিন্নী, আবিল ফাতহ ওসমান, আল খাসায়িস, গবেষণা মুহাম্মদ আলী নাজ্জার, বৈরুত, আলামুল কিতাব।৩. ইবনে ফারেস, মুকায়িসুল লুগাহ, মাকতাবুল এ’লামিল ইসলামী, ১৪০৪ হি:।৪. ইবনে হিশাম আনসারী, আব্দুল্লাহ, মুগনী আল-লাবিব আন কুতুবেল আ-আরিব, তেহরান, মুয়াসসাসে আস-সাদেক, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬।৫. ইস্পাহানী, রাগেব, মুফরাদাতে আলফাজিল কোরআন, গবেষণা দাউদি, ছাফওয়ান আদনান, দামেস্ক ও বৈরুত, দারুল কালাম ও দারুস সামিয়াহ, প্রথম সংস্করণ।৬. আলুসী, মাহমুদ, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনুল আযিম, সাবউল মাছানী, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০ হিজরি।৭. আমিনী, আব্দুল হোসাইন, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, বৈরুত, দারুল কিতাবিল আরাবি, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৭৯ হিজরি।৮. ইজি, আজদুদ্দিন আব্দুর রহমান বিন আহমাদ, আল-মাওয়াকিফ, বৈরুত, দারুল জিয়াল, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ।৯. বাহরানী, ইবনে মাইসাম, আন নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকিকি আমরিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে আল হাদী, ১ম সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।১০. বাইদ্বাভী, আব্দুল্লাহ বিন ওমর, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৮১৮ হিজরি।১১. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, আল মুতাওয়াল, বৈরুত, দারু ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।১২. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মুখতাছার, ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।১৩. তাফতাজানী, মাসউদ বিন ওমর, শারহুল মাকাসিদ ফি ইলমিল কালাম, পাকিস্তান, দারুল মাআরেফ আন নোমানিয়া, ১ম সংস্করণ।১৪. ছাআলাবি, আব্দুর রহমান, আল জাওয়াহিরুল হাসান, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৬ হিজরি।১৫. জুরজানী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহুল মাওয়াকিফ, মিসর, মাতবাআতুস সাআদাহ, ১ম সংস্করণ, ১৩২৫ হিজরি।১৬. জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, বৈরুত, ১ম সংস্করণ, ১৪২৩ হিজরি।১৭. হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, বৈরুত, মুয়াসসাসাহ আল আলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪২২ হিজরি।১৮. হাসকানী, শাওয়াহিদুত তানযিল লি কাওয়ায়িদুত তাফযিল, তেহরান, বেজারাতে এরশাদে ইসলামী, ১৪১১হিজরি।১৯. হাসান আল আমিন, আল ইসমাঈলিয়্যুন ওয়াল মোগল ওয়া নাসিরুদ্দীন তুসী, কুম, মারকাজুল গাদীর লিদিরাসাতুল ইসলামিয়্যাহ, ২য় সংস্করণ, ১৪১৭ হিজরি।হোসাইনি কাফুমি, আবুল বাকা আইয়্যুব বিন মুসা, আল মুজাম ফিল মুস্তালাহাত ওয়াল ফুরুকুল লুগাবিয়্যাহ, তাহকিক আদনান দারউইশ, বৈরুত, মুয়াসসাসে আর রিসালাহ, ১৪১৯ হিজরি।২০. হালাবি, সামিন, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, বৈরুত, দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৪ হিজরি।২১. হালাবি, হাসান বিন ইউসুফ, কাশফুল মোরাদ ফি শারহি তাজরীদিল ইতিকাদ, তাহকিক হাসানযাদে আমুলী, কুম, মুয়াসসাসাতুন নাশরিল ইসলামী, ১০ম সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।২২. দারউইশ, মহিউদ্দীন, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, সিরিয়া, দারুল ইরশাদ, ১৪১৫ হিজরি।২৩. দোআস, এরাবুল কোরআনিল কারীম, দামেস্ক, দারুল মুনির, ১৪২৫ হিজরি।২৪. রাযী, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ওমর, মাফাতিহুল গাইব, বৈরুত, দারুল ইহইয়াউত তুরাছিল আরাবি, ১৪২০হিজরি।২৫. যুবাইদি, মুহাম্মদ মুরতাজা, তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরুল ক্বামূস, বৈরুত, দারুস সাদর, ১৩৮৬ হিজরি।২৬. যারকুলী, খাইরুদ্দীন, আল এ’লাম, বৈরুত, দারুল ইলম, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ।২৭. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আসাসুল বালাগাহ, তাহকিক আব্দুর রাহিম মাহমুদ, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।২৮. যামাখশারী, মাহমুদ বিন ওমর, আল কাশশাফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, বৈরুত, দারুল কিতাবুল আরাবি, ১৪০৭ হিজরি।২৯. সাকাকী, ইউসুফ বিন আবি বকর, মেফতাহুল উলুম, বৈরুত, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৭ হিজরি।৩০. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, কুম, নাবিদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।৩১. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, কুম, আয়াতুল্লাহ মারআশী নাজাফি লাইব্রেরী, ১৪০৪ হিজরি।৩২. সাইয়্যেদ শারাফ উদ্দীন আল মুসাভি, আব্দুল হোসাইন, আল মুরাজায়াত, তাহকিক হোসাইন আর রাযী, দারুল কিতাবুল ইসলামি।৩৩. সাইয়্যেদ মুরতাজা আলামুল হুদা, আশ শাফি ফিল ইমামাহ, কুম, মুয়াসসাসে ইসমাঈলিয়্যান, ২য় সংস্করণ।৩৪. সূয়ুতী, জালাল উদ্দীন, আল মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়েহা, দারুল ইহইয়ায়ে কিতাবুল আরাবি, ১ম সংস্করণ।৩৫. শাহরেস্তানী, মুহাম্মদ বিন আব্দুল করিম, আল মেলাল ওয়ান নেহাল, বৈরুত, দারুল মা’রেফাহ।৩৬. শেখ মুফিদ, আল ইফসাহ ফি ইমামাতি আমিরিল মুমিনিন, কুম, মুয়াসসাসেহ আল বে’সাত, ১ম সংস্করণ, ১৪১২ হিজরি।৩৭. ছাফী, মাহমুদ বিন আব্দুর রহিম, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, বৈরুত, দারুর রাশিদ, ১৪১৮ হিজরি।৩৮. তাবাতাবাই, সাইয়্যেদ মুহাম্মদ হোসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, দারুল কিতাবুল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭২ ফার্সি সাল।৩৯. তাবারসী, ফাজল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান ফি তাফসীরিল কোরআন, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ ফার্সি সাল।৪০. তাবারী, মুহাম্মদ বিন জারীর, দালায়েলুল ইমামাহ, কুম, দারুজ জাখায়ির লিলমাতবুআত।৪১. তুরাইহী, ফাখরুদ্দীন, মাজমাউল বাহরাইন, তেহরান।৪২. তুসী, মুহাম্মদ বিন হাসান, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়তাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, বৈরুত, দারুল আযওয়া, ১৪০৬ হিজরি।৪৩. তুসী, মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ, তাজরীদুল ইতিকাদ, দাফতারে তাবলিগাতে ইসলামী, ১ম সংস্করণ, ১৪০৭ হিজরি।৪৪. ফাইয়ুমি, আল মিসবাহুল মুনির, কুম, দারুল হিজর, ৩য় সংস্করণ, ১৪২৫ হিজরি।৪৫. কুম্মি, আব্বাস, আল কুনি ওয়াল আলকাব, তেহরান, মাকতাবাতুস সাদর।৪৬. কুশচী, আলী বিন মুহাম্মাদ, শারহে তাজরীদুল আকায়েদ, কুম, মানশূরাতে রাযী।৪৭. কাশানী, ফাতহুল্লাহ, মিনহাজুস সাদেকীন ফি ইলযামিল মুখালিফিন, তেহরান, ইসলামিয়্যা প্রেস, ১৩৭৮ ফার্সি সাল ।৪৮. কাহালী, ওমর রেজা, মু’জামুল মুআল্লিফিন, বৈরুত, মাকতাবাতুল মুসান্না।৪৯. কুলাইনি, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, উসূলে কফি, আনুবাদ মুহাম্মদ বাকের, তেহরান, আসওয়েহ প্রেস, ৪র্থ সংস্করণ।৫০. মুহাম্মদ আল আমিন, আসওয়াউল বায়ান ফি ইযাহেল কোরআন বিল কোরআন, বৈরুত, দারুর ফেকর, ১৪১৫ হিজরি।৫১. মুস্তাফাবী, আত তাহকিক ফি কালামাতিল কোরআন আল কারিম, ইরান, বেজারাতুছ ছাকাফাহ ওয়াল ইরশাদে ইসলামী, ১ম সংস্করণ।৫২. মুতাহ্হারী, মুরতাজা, মাজমুএ আছার, তেহরান, সাদর, ২য় সংস্করণ।৫৩. নূহাস, এরাবুল কোরআন, বৈরুত, দারুল কুতুবুল এলমিয়্যাহ, ১৪২১ হিজরি।৫৪. হাশেমী, আহমাদ, জাওয়াহেরুল বালাগাহ, কুম, ওয়ারিওন, ৪র্থ সংস্করণ।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক____________ মোঃ আলী হুসাইন

হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) এর ইবাদত দর্শন ›হযরত ফাতিমা (সা.আ.)ভূমিকানবীকন্যা ও বেহেশ্তে নারীদের সম্রাজ্ঞী হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা। মাত্র আঠারো বছরের সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে তিনি জীবনের প্রত্যেকটি অঙ্গনে এমনভাবে কদম রেখেছেন যে, পরম উপাস্যের একত্বের সৌন্দর্য সত্তার শুভ্র তাজাল্লি তাঁর প্রাণের দর্পণে প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ হতে আয়াত-ই তাতহীর [সূরা আহযাব : ৩৩] অবতীর্ণের মাধ্যমে তিনি নিষ্কলুষ ও নিষ্পাপত্বের মহামূল্যবান মর্যাদার খেতাবটি অর্জন করে নিতে সক্ষম হন। আল্লাহর ইবাদত করাকে তিনি নিজ জীবনের সাথে এমন নিগুঢ়ভাবে মিশিয়ে নেন যে তার সুবাদে তিনি বিরল এক মাকামের অধিকারী হন। সে মাকামটি হলো ‘তাঁর সন্তুষ্টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির কারণ এবং তাঁর অসন্তুষ্টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টির কারণ’ হওয়া। ইবাদতের প্রভাবে তাঁর সত্তা এমন ভাবে মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তার তাজাল্লির প্রকাশস্থলে পরিণত হয় যে, তাঁকে কষ্ট দেওয়া স্বয়ং আল্লাহকে কষ্ট দেওয়ার শামিল হয়ে দাঁড়ালো। এ কারণে অত্র প্রবন্ধে আমরা হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা’র ইবাদত দর্শনের একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। যাতে বিশ্বজগৎ সৃষ্টির দর্শনের সাথে ইবাদতের সম্পর্কটা জানা যায়। তবে মূল পর্যালোচনায় প্রবেশ করার আগে সংক্ষেপে ইবাদত ও তার প্রভাব সম্পর্কে কিছু ধারণা বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যা হযরত ফাতিমা যাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা’র ইবাদত দর্শনকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।ইবাদত-এর অর্থভাষাতত্ত্ববিদগণের অনেকের অভিমত হলো ‘ইবাদত’ কথাটির অর্থ হচ্ছে কথায় ও কর্মে উভয় দিক হতে ‘বিনয়শীল থাকা’ অথবা ‘পরম বিনয়’ প্রকাশ করা, তবে তা অবশ্যই আল্লাহকে উপাস্য হিসাবে বিশ্বাস রেখে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের সংকল্প সহকারে হতে হবে। এ কথা থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, ইবাদত যতই বিনয় ও অবনত হওয়ার প্রকাশ হোক না কেন, তাই বলে যে কোন বিনয় ও অবনত হওয়াকে ‘ইবাদত’ বলে আখ্যায়িত করা যায় না। উপাস্য হিসাবে বিশ্বাস পোষণ এবং তাঁর নৈকট্য অর্জনের সংকল্প-এ দুটি বিষয় ইবাদতের অনিবার্য শর্ত।আর আভিধানিক ভাবে ‘আব্দ’ তথা ইবাদতকারী সেই ব্যক্তিকেই বলা হয় যে আপাদমস্তক স্বীয় মনিব তথা মাওলার সাথে সম্পৃক্ত। তার ইচ্ছা মনিবের ইচ্ছাধীন। তার চাওয়াও মনিবের চাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। সে মনিবের বিপরীতে নিজেকে কোন কিছুর মালিক বলে মনে করে না। আর মনিবের আনুগত্য করতে কোন শৈথিল্যও সে প্রদর্শন করে না। মোটকথা, ইবাদত তথা বন্দেগি হচ্ছে সেই পরম সত্তার প্রতি নিরঙ্কুশ বিনয় জ্ঞাপন, যিনি সকল কিছুর উৎসমূল। একারণে একমাত্র সেই সত্তাই ‘উপাস্য’ হতে পারেন, যিনি সকল অনুগ্রহ ও অনুকম্পার নিরঙ্কুশ দাতা। এক আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ সেই যোগ্যতার অধিকারী নয়। বান্দার দিক থেকে তাই বন্দেগি হলো একজন মানুষের আত্মিক পূর্ণতার চূড়ান্ত মাত্রা এবং মাবুদের সাথে তার নৈকট্যের প্রকাশ।ইবাদতের স্বরূপ ও তাৎপর্যইবাদতের সারকথা হলো মানুষ আল্লাহর পবিত্র সত্তা ব্যতীত অন্য কাউকে উপাসনার উপযুক্ত বলে জানবে না, একমাত্র তাঁরই আদেশ মেনে চলবে এবং সর্বদা তাঁকেই স্মরণ করবে। আর সুখে-দুঃখে সকল বিষয়ে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টিকেই বিবেচনায় রেখে চলবে। এ অর্থে বান্দার ইবাদত কখনো কখনো নামায, রোযা, হজ ও যাকাতের ন্যায় বিশেষ আমলসমূহ পালনের মাধ্যমে; আবার কখনো কখনো মিথ্যাচার, গীবত, ব্যভিচার, হত্যা ইত্যাদি বিশেষ কিছু পাপাচারমূলক কাজ হতে বিরত থাকার মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে।এই ইবাদতের জন্যই আল্লাহ জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন [وَ ما خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ] । নবী রাসূলগণের প্রেরণের উদ্দেশ্যও ছিল মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহ্বান জানানো [وَ لَقَدْ بَعَثْنا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ]। মানুষ যেভাবেই মূল্যায়ন করুক না কেন, বাস্তবতা হলো মানুষের জন্য ইবাদত তথা বন্দেগির মাকামই হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু মাকাম। ইবাদতের মাধ্যমেই মানুষ আধ্যাত্মিকতার উচ্চতর মাকামে পৌঁছতে সক্ষম হয়। নবী-রাসূলগণ ও ওলি-আউলিয়াগণ সকলেই এই ইবাদত ও আনুগত্যের পথ ধরেই আধ্যাত্মিকতার শিখরে উপনীত হতে পেরেছেন। আর এ কারণেই নামাযের তাশাহুদে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর রাসূল হওয়ার আগে তাঁর বান্দা হওয়ার সাক্ষ্য প্রদান করা ফরয করা হয়েছে [اشهد أن محمدا عبده و رسوله]।ইবাদত মানুষকে আত্ম-সংশোধন ও আত্মিক পবিত্রতা দান করে, চিত্তে প্রশান্তি আনে, আল্লাহর নৈকট্যের মাকামে পৌঁছে দেয় এবং বান্দাকে সৃষ্টি জগতের ওপর কর্তৃত্ব শক্তির অধিকারী করে তোলে। তখন সে আল্লাহর অনুমতিক্রমে অলৌকিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে পারে। এমর্মে একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে : [وَ مَا تَقَرَّبَ إِلَي عَبْدٌ بِشَيْ‏ءٍ أَحَبَّ إِلَي مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَ إِنَّهُ لَيَتَقَرَّبُ إِلَي بِالنَّافِلَةِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَ بَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَ لِسَانَهُ الَّذِي يَنْطِقُ بِهِ وَ يَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا إِنْ دَعَانِي أَجَبْتُهُ وَ إِنْ سَأَلَنِي أَعْطَيْتُهُ وَ مَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْ‏ءٍ أَنَا فَاعِلُهُ كَتَرَدُّدِي عَنْ مَوْتِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَ أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ] ‘আমার নৈকট্যের সবচেয়ে উত্তম উসিলা হলো ফরযসমূহকে পালন করা। আর মুস্তাহাবসমূহ পালনের মাধ্যমে সে আমার মুহব্বত অভিমুখে অগ্রসর হতে পারে, যতক্ষণ না আমিও তাকে ভালোবাসি। অবশেষে আমি যখন তাকে ভালোবাসি, তখন আমিই হই তার কান যা দ্বারা সে শোনে, আমিই হই তার চোখ যা দ্বারা সে দেখে, আমিই হই তার জিহ্বা যা দ্বারা সে কথা বলে এবং আমিই হই তার হাত যা দ্বারা সে প্রহার করে। সে যখন আমার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে, আমি তা মঞ্জুর করি এবং সে যখন আমার কাছে কিছু চায়, আমি তা প্রদান করি।’ফাতিমা (সা. আ.) শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারিণীহযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা সম্পর্কে মানুষ যত বেশি চিন্তা করবে এবং তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে যত বেশি অনুধ্যান করবে, ততই সে বিস্ময়ের সম্মুখীন হবে। কীভাবে একজন নারী দুনিয়ায় মাত্র আঠারো বছর আয়ুষ্কালের মধ্যে এমন আধ্যাত্মিক পূর্ণতায় পৌঁছতে সক্ষম হন যে, তাঁকে সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসাবে পরিচয় দেওয়া হবে। হযরত ফাতিমা রাসূলের কন্যা হিসাবে নয়, বরং আল্লাহর জযবায় বিগলিত এবং তাঁর আনুগত্যে আত্ম-নিবেদিত হিসাবেই আধ্যাত্মিকতার পরম শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) বলেন, হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহার চেয়ে অধিক ইবাদতকারী আর কেউ ছিল না। তিনি এত বেশি ইবাদতে দণ্ডায়মান হতেন যে তাঁর পদযুগলে কড়া পড়ে যেত। [বিহারুল আনওয়ার, খ. ৩, পৃ. ৬১] হাসান বসরী, যিনি একজন অধিক ইবাদতকারী এবং অতিশয় পরহেযগার মানুষ হিসাবে পরিচিত, তিনি হযরত ফাতিমা সম্পর্কে বলেন : নবীদুহিতা এত বেশি ইবাদতে মশগুল হতেন এবং নামাযের মেহরাবে দণ্ডায়মান হতেন যে, তাঁর পদযুগলে কড়া পড়ে গিয়েছিল।হযরত ফাতিমার ভীত-বিহ্বল ও বিনয়ী চিত্ততাঁর নামায ও ইবাদতের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল আন্তরিক ভীতি ও বিনয়শীলতা। আবু মুহাম্মাদ দেইলামি ‘ইরশাদ-উল কুলুব’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলেন : كانت فاطمة تنهج فى صلواتها من خوف الله ‘নামাযের হালে আল্লাহর ভয়ে ফাতিমার নিঃশ্বাস যেন গুণে গুণে নির্গত হতো।’ [ইরশাদ-উল কুলুব, খ. ১, পৃ. ১০৫] রেওয়ায়াতে এসেছে যে, আল্লাহ ফেরেশতাদের ডেকে বলেন : তাকিয়ে দেখ আমার কানিজ ফাতিমার দিকে, কীভাবে সে আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান হয়েছে, আমার ভয়ে তার সর্বাঙ্গ কাঁপছে এবং নিজের অন্তরাত্মা দিয়ে আমার ইবাদতে মশগুল হয়েছে! [ফাতিমা মিনাল মাহদ-ই ইলাল লাহদ, পৃ. ১৭৩]বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হযরত ফাতিমা ছিলেন চৌদ্দ মাসুমের মধ্যে একজন এবং পাঁচ পঞ্জতনের অন্যতম বাতি। ইবাদতের হালে তাঁর এ ভীতির কারণ অন্য কিছু ছিল না, কেবল মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর পূর্ণ মারিফাত তথা বাতেনী জ্ঞান ও পরিচিতি ব্যতীত। আল্লাহর ওলি-আউলিয়াগণের ভীতি তখনই সৃষ্টি হয় যখন তাঁরা মাবুদের পরম সত্তার মহিমা, শান ও মহান অভিব্যক্তির সাক্ষাৎ পেয়ে যান। তখন তাঁরা এ ব্যাপারে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন, না জানি কোন পর্দা এসে তাঁর ও তাঁর প্রেমাস্পদের মাঝে অন্তরাল হয়ে দাঁড়ায়!আর এ অবস্থা ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ছাড়া সৃষ্টি হয় না যাঁরা মহামহিমের বিশালতা ও তাঁর নৈকট্যের অপার্থিব স্বাদ আস্বাদন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। একারণে মহান আল্লাহ বলেন :انما یخشی الله من عباده العلماء – আল্লাহর বান্দাদের মধ্য হতে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁর ভয় করে। সুতরাং এখানে ‘ভয়’ কথাটি একটি বিশেষ অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। আর হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা ও অন্য মাসুম ইমামগণ (আ.) এর ভয় হলো সেই শ্রেণিভুক্ত।নামাযের হালে হযরত ফাতিমার ভীতি ও বিনয়মহান আল্লাহর সনে দণ্ডায়মান হওয়া ও নামায আদায় করার জন্য হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহার একটি নির্দিষ্ট জায়গা ছিল। বিশেষ পরিচ্ছদে, বিশেষ জায়নামাযের ওপর বিশেষ আদবের সাথে এমনভাবে তিনি ইবাদতে মশগুল হতেন যে, তাঁর ঘরই তাঁর জন্য মসজিদে পরিণত হয়। ইবাদতের হালে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য আকাশের ফেরেশতারা সেখানে ভীড় জমাতো। এ সময়ে তিনি এমনই বিনয়াবনত ও ভীত অবস্থায় থাকতেন যেন ঈমানের নির্যাস তাঁর অস্থিমজ্জায় ঢুকে গেছে।স্বয়ং আল্লাহও আপন বান্দাদের কাছে এরূপ বিনয় ও ভয় চান। হযরত মূসা (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন : ‘হে ইমরানের পুত্র! তোমার হৃদয় হতে আমাকে ভয় দাও। আর তোমার দেহ হতে আমাকে বিনয় দাও। আর তোমার চক্ষু হতে রাতের আঁধারে আমাকে অশ্রু দান করো। আর আমাকে ডাকো। নিশ্চয় তুমি আমাকে নিকটেই পাবে সাড়াদানকারী হিসাবে।’ [আমালি আস-সাদুক : ২১৫]আল্লামা তাবাতাবাঈ (রহ.) বলেন : এ ভয় পরাভূত ব্যক্তিদের মধ্যে উৎপত্তি লাভ করা এক বিশেষ চিহ্ন, যখন সে এক অপরাজেয় দুর্দান্ত প্রতাপশালী সুলতানের বিপরীতে এমনভাবে উপস্থিত হয় যে, তার সমস্ত মনোযোগ ও ধ্যান-জ্ঞান তাঁর দিকেই নিবিষ্ট হয়। আর অন্য সবকিছু হতে তার মনোসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা ছিলেন তেমনই একজন। তিনি নামাযে দণ্ডায়মান হয়ে শুধু আল্লাহর ইবাদতের কথাই ভাবতেন। মাবুদ আল্লাহর প্রতি প্রেমভক্তি ও উপাসনা ব্যতীত অন্য কোন স্মৃতি বা চিন্তা তাঁর মনে উঁকি দিত না। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায়, তার অন্তর কেবল ইবাদতের জন্যই শূন্য ছিল। কেবল সে ছিল আর তাঁর মাবুদ। জীবন কিরূপ, কীভাবে নির্বাহ করতে হবে এসব চিন্তা থেকে সে ছিল পুরোপুরি মুক্ত। [দার মাকতাবে ফাতেমা, পৃ. ১৭০]ইবাদতের আকুল আকাঙ্ক্ষাহযরত ফাতিমা সালামুল্লাহি আলাইহা আল্লাহর বন্দেগিতে ডুবে থাকতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন : ‘কন্যা আমার! তুমি আল্লাহর নিকট হতে এমন কিছু চাও যা জিবরাইল আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ হযরত ফাতিমা আরজ করলেন : ‘একমাত্র আল্লাহর বন্দেগি করার তৌফিক ছাড়া আমার আর কোন মনোস্কামনা নেই। আমার আকাঙ্ক্ষা শুধু এটুকু যেন আল্লাহর ‘ওয়াজ্হ’ তথা চেহারায় তাকাতে পারি এবং তাঁর সৌন্দর্য দর্শনে মুগ্ধ হতে পারি।’ [আল-কাফি, হাদিস নং ৫৩৬]কেনই বা তিনি এরূপ ইবাদতপরায়ণ হবেন না, যখন তিনি লালিত পালিত হয়েছেন এমন ব্যক্তির ক্রোড়ে যিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী। যে নবী এত দীর্ঘক্ষণ ধরে নামাযে দণ্ডায়মান থাকতেন যে, স্বীয় প্রতিপালক তাঁকে বললেন হলেন : ‘ত্বা-হা, আমি আপনাকে কষ্টে নিপতিত করার জন্য এ কোরআন আপনার ওপর অবতীর্ণ করি নি।’ [ত্বা-হা : ১-২] হযরত ফাতিমাও ইবাদতের মর্যাদা ও মূল্যমানকে মহাপ্রতিপালকের প্রতি তাঁর সুগভীর মা’রিফাতপ্রসূত বলেই জানতেন। কাজেই এখানে আশ্চর্য ও বিস্ময়ের কোন অবকাশ নেই যে, কেন এ মহিয়ষী নারী ইবাদত হতে এত বেশি মাত্রায় মজা উপভোগ করতেন। আর কেনই বা তিনি মহান আল্লাহর খাতিরে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে দণ্ডায়মান হয়ে নিজেকে কষ্টে নিক্ষেপ করতেন এবং বিনয় ও হীনতা প্রকাশ করতেন। একটিবারের জন্যও তিনি এ কিয়াম, রুকু ও সিজদার কঠিন সাধনা চালিয়ে যেতে অসন্তুষ্ট হননি।উপসংহারতাঁর ইবাদতের গুণ বন্দনার কথা রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে। ‘ইলালুশ শারা’য়ি’ গ্রন্থে এসেছে : ‘তিনি যখন ইবাদতে দাঁড়াতেন, একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আসমানের বাসিন্দাদের জন্য আলো ছড়াতেন।’ [খ. ১, পৃ. ২১৫] নামাযের প্রতি এ তাঁর এ প্রবল আকর্ষণের কারণে এক পর্যায়ে হযরত জিরবাইল তাঁকে বিশেষ এক নামাযের তা’লিম দেন। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন : ‘আমার মা ফাতিমা সর্বদা জিবরাইল তাঁকে যে দু’রাকাত নামায শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তা আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে সূরা হামদের পরে একশ’ বার সূরা কাদর এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা হামদের পরে একশ বার সূরা তাওহীদ পাঠ করতেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে তাসবীহাতে যাহরা পাঠ করতেন।’হযরত ফাতিমা ইবাদত-বন্দেগির পথে অনেক সৃজনশীলতারও স্বাক্ষর রেখে গেছেন। যেমন প্রথম দিকে তিনি একটি সুতায় ৩৪টি গিরা দিয়ে তা তাসবীহ হিসাবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু হযরত হামযা সাইয়্যেদুশ শুহাদার শাহাদাত বরণের পর তাঁর কবর হতে সংগ্রহ করা মাটি হতে পুঁথি বানিয়ে সুতায় গেঁথে সেটাকেই তাসবীহ হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেন। এরপর থেকে মানুষের মধ্যে তাসবীহ ব্যবহারের প্রচলন লাভ করে। [ওয়াসায়িলুশ শিয়া, খ. ১৪, পৃ. ১০৩৩আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমআল্লাহ বলেন, এতিমদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও (আল কোরআন-০৪/০২); আবু বকর বলেন, নবীদের উত্তারাধিকার হয় না (বোখারী)। আল্লাহ বলেন, রাসূল (সঃ) যা দেন তা গ্রহণ করো (আল কোরআন-৫৯/০৭); ওমর বলেন, রাসূল (সঃ) প্রলাপ বকছেন (মুসলিম)!সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক ও বিশ্লেষণমূলক পোস্টপর্ব (((((৫)))))রুকুর প্রকৃত অর্থ :কুশচীর পূর্বে আহলে সুন্নাতের আরো অনেক আলেম ও মনীষী “রুকু” কে বিনয়ী অর্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। যেন এর দ্বারা তারা দাবি করতে পারেন যে, এই সিফাত অর্থাৎ রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান একজন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সকল মু’মিনই এর অন্তর্ভুক্ত। অথচ রুকুর প্রকৃত অর্থ বিনয়ী নয়। কেননা :ভাষাবিদদের অনেকেই বলেছেন যে রুকুর প্রকৃত অর্থ হল “উপুড় হওয়া” বা “বাঁকা হওয়া”। যামাখশারী তার আসাসুল বালাগা গ্রন্থটিতে, যা শব্দের প্রকৃত অর্থ থেকে রূপক অর্থকে আলাদা করার জন্য নিমিত্তে রচনা করেছেন, লিখেছেন “রুকু” এর অর্থ হল “ঝুকে পড়া”।(যামাখশারী, আসাসুল বালাগ, পৃ.-১৭৬)তাজুল আরুস (যুবাইদি, তাজুল আরুস মিন জাওয়াহিরুল ক্বামূস, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৬২) এবং মাজমাউল বাহরাইন (তুরাইহী, মাজমাউল বাহরাইন, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৩৩৯) এর লেখকবৃন্দও বলেছেন রুকুর অর্থ বাঁকা হওয়া বা ন্যুব্জ হয়ে পড়া।তাজুল আরুসে এভাবে এসেছে:«رکع الشیخ» : এ বৃদ্ধ ব্যক্তি ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে রুকুর প্রকৃত অর্থ এটিই আর এখান থেকেই নামাজের রুকুর অর্থ নেয়া হয়েছে।ইবনে ফারেস লিখেছেন:“রাকাআ” শব্দটি মানুষ ছাড়াও অন্যান্য যে কোন কিছুর ক্ষেত্রে উপুড় ও নত হওয়া অর্থে ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক বক্র ও নুব্জ বস্তুকে রুকুকারী বলা হয়। আর নামাজের রুকুর অর্থও এটাই। (ইবনে ফারেস, মুকায়িসুল লুগাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩৪)রাগেব ইসফাহানীও বলেছেন যে, রুকুর অর্থ উপুড় হওয়া। (ইসফাহানী, মুফরাদাতু আলফাজিল কোরআন, ৩৬৪)ফাইয়ুমি লিখেছেন: رکع رکوعا : উপুড় হওয়া, যে বৃদ্ধলোক বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছে তাকে «رکع الشیخ» বলা হয় অর্থাৎ বয়স্ক লোকটি বাঁকা হয়ে গেছে। (ফাইয়ুমি, আল মিসবাহুল মুনির, পৃ.-২৩৭)অতএব প্রকৃত অর্থে রুকু হচ্ছে বিশেষ পদ্ধতিতে মাথা নোয়ানো আর ইসলামি শরীয়তেও তা এই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কারণে “বিনয়ী ও নমনীয়” হচ্ছে রুকুর রূপক অর্থ। (সাইয়েদ মুরতাজা, প্রগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩১) আর তাই কোন কারিনা অর্থাৎ সমর্থক দলীল বা রূপক অর্থ নির্দেশক সহযোগী প্রমাণ ছাড়া এ শব্দটিকে “বিনয়ী ও নমনীয়” অর্থে ব্যবহার করা ঠিক নয়।বেলায়াতের আয়াতে “রুকু” যে তার রূপক অর্থ অর্থাৎ “বিনয়ী ও নমনীয়” অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং রুকু তার প্রকৃত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।ولی শব্দটির অর্থ :আলোচ্য আয়াতে আহলে সুন্নাত এবং ইমামীয়া কালামশাস্ত্রবীদদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে ولی শব্দটির অর্থ নিয়ে।আহলে সুন্নাতের অনেক আলেম যেমন: ইজি এবং কুশচী (কুশচী, প্রাগুক্ত,পৃ.৩৬৮ ইজি, প্রাগুক্ত, পৃ.-৬০২) মনে করেন এই আয়াতে “ওয়ালি” শব্দটির অর্থ ‘কর্তৃত্বে ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতম’ নয়। কেননা :প্রথম দলীল : আয়াতের অবস্থানজনিত ভাব বা বাচনিক ধারাএই আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন :يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍঅর্থাৎ হে মুমিনগণ তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। (সূরা মায়েদা-৫১) “ওয়ালি” র অর্থ বন্ধু বা সাহায্যকারী। কেননা এই আয়াতে ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে না করা হয়েছে সুতরাং “ওয়ালি” শব্দটি এখানে নেতৃত্ব বা ইমামত অর্থে ববহৃত হয় নি। বরং উদ্দেশ্য হল বন্ধু এবং সাহায্যকারী। অনুরূপভাবে পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে:وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَঅর্থাৎ আর যারা আল্লাহ তার রাসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। (মায়েদা-৫৬) এখানে تَوَلّ শব্দটির অর্থ বন্ধুত্ব এবং সাহায্যকারী, ইমামত নয়। সুতরাং আলোচ্য আয়াতের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী আয়াত থেকেও বোঝা যায় যে এই আয়াতের “ওয়ালি” র অর্থ বন্ধু এবং সাহায্যকারী। তাই এ ক্ষেত্রে গ্রহণ উপযুক্ত নয়।তাদের বক্তব্যের সারমর্ম হল এই আয়াতের পূর্ব ও পরবর্তী আয়াতের বাচনিক রূপ ও ধারাই বলে দিচ্ছে যে, ওয়ালি শব্দের অর্থ বন্ধু এবং সাহায্যকারী আর তা ওয়ালি শব্দকে ইমামত বা কর্তৃত্ব অর্থে গ্রহণের যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে।দ্বিতীয় দলীল: হাসর অনুপস্থিতহাসর দ্বিধা, সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটা স্পষ্ট যে এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় খেলাফতের বিষয়টি উপস্থাপিত হয়নি এবং ইমামতের ব্যাপারে কোন বিতর্কও ছিলনা। অন্যদিকে এই আয়াতে “ইন্নামা” সীমাবদ্ধতার জন্যও ব্যবহৃত হয়নি। পূর্বেই এই আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে।সমালোচনা ও পর্যালোচনা :কুশচী “ওয়ালি” শব্দের আরেক অর্থ যে “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” তা মেনে নিয়েছেন। এতদসত্বেও বলেছেন: ‘এই আয়াত সম্পর্কে যেসব যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, তাতে ‘ওয়ালি’ শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত হয়নি।’ কিন্তু তিনি তার মতকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। কেননা তার তিনটি দলীলই প্রত্যাখ্যাত।প্রথম আপত্তির জবাব:যদিও বেলায়াতের আয়াতে “ওয়ালি” শব্দটির অর্থ “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” হয় তবুও পূর্ববর্তী আয়াতের সাথে অসামঞ্জস্য তো নয়ই বরং পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ তাআলা বেলায়েতের আয়াতের পূর্বে এরশাদ করেছেন:হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়ী ও নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবেনা। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী, মহাজ্ঞানী।এই আয়াত হযরত আলী (আ.) এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। (শেখ মুফিদ, আল ইফসাহ ফি ইমামাতি আমিরিল মুমিনিন, পৃ.-১৩২) যেমনিভাবে হযরত আলী (আ.) উষ্ট্রের যুদ্ধে এব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইমাম বাকের ও ইমাম সাদেক (আ.) থেকে বর্ণিত অসংখ্য রেওয়ায়েতে এর সত্যতার প্রমাণ মেলে। (তাবারসী, প্রাগুক্ত, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩২১) এই রেওয়াইয়াত আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। (রাযী, প্রাগুক্ত, পৃ.-৩৭৮) এই ব্যাপারে আহলে বাইতের অনুসারীদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।এই হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায় যে, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা হযরত আলী (আ.) এর বেলায়াতের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন এবং বেলায়াতের আয়াতে এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। সুতরাং বেলায়াতের আয়াতে ওয়ালি শব্দটিকে “কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত” অর্থে গ্রহণ করলেও তার পূর্ববর্তী আয়াতের বাচনভঙ্গি বা ধারার সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে।ওয়ালি র প্রকৃত অর্থ :،وِلاء، وِلایت، وَلایت وَلاء, ولی، مولی، اولی এই শব্দগুলো ولی শব্দমূল থেকে গৃহীত হয়েছে। মুকায়িসুল লুগাহ এর গ্রন্থকার ইবনে ফারেস বলেছেন ولی শব্দটির মূল হচ্ছে وَلی অর্থ-নিকটবর্তী।( ইবনে ফারেস, মুকায়িসুল লুগাহ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১৪১)আল মিসবাহুল মুনির এর প্রণেতা ফাইয়ুমির মতেও ওয়ালি শব্দটির অর্থ নিকটবর্তী, কাছাকাছি।«ولی» فعیل এর ওজনে (গঠনরূপে) فاعل (কর্তাবাচক) অর্থ দান করে। (ফাইয়ুমি, আল মিসবাহুল মুনির,পৃ. ৬৭২) ওয়ালি শব্দটির প্রকৃত ও আসল অর্থ হচ্ছে নিকটাত্মীয়, কাছাকাছি যা তার অন্যান্য অর্থ যেমন-কর্তৃত্বশীল, মুক্তকারী, চাচাতো ভাই, সাহায্যকারী, রক্ষক এবং বন্ধু এসবের সাথেও সামঞ্জস্যশীল।আল্লামা রাগেব তার মুফরাদাত নামক অভিধানে লিখেছেন : ولي শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল দুটি জিনিসের এমনভাবে পাশাপাশি অবস্থান যেন তাদের মাঝে কোন ফাঁক না থাকে। ‘ওয়ালি’ র অন্যান্য যেসব অর্থ তিনি উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে তিনি এ অর্থের দিকেই প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। ( আল্লামা রাগেব ইসফাহানী, আল মুফরাদাত, পৃ.-৮৮৫)জালাল উদ্দিন সূয়ুতীও «ولی ، یلی» এবং তার থেকে নির্গত সকল শব্দকে «وقع بعد» তার পরেই রয়েছে বা অবস্থান করছে অর্থ করেছেন। (জালাল উদ্দিন সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়্যাহ ফি শারহিল আলফিয়্যাহ, পৃ.-২৯, ৬১ ও ৯৮)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক________ মোঃ আলী হুসাইনচলবে

দুনিয়ার বুকে বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবি মুনকার#আশারা _মুবাশ্শিরা (عَشْرَه مُبَشَّرَه )হাদীস অর্থাৎ তথাকথিত জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী সংক্রান্ত হাদীস। আহলে সুন্নতের কারো কারো মতে হাদীসে উল্লেখিত দশজন তাদের জীদ্দশয়ায় যাই করুন না কেন অবশেষে তারা বেহেশতে প্রবেশ করবেন ।সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের হাদীসউল্লেখিত হাদীস মাসনাদে ইবনে হানম্বাল [ইবনে হানম্বাল, আহমাদ বিন মুহাম্মদ, মুসনাদে আহমাদ, ৩য়খন্ড ২০৮ পৃ। ] সুনানে তিরমিজি [সহি তিরমিজি, মুহাম্মদ, সুনানে তিরমিজি, ৫খন্ড, ৬৪৮ নম্বর পৃ.] বর্ণিত হয়েছে । আহলে সুন্নাতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হাদীস গ্রন্থ সাহি বোখারী ও সাহি মুসলিম গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি । [সুলাইমান বিন আসআশ, সুনানে আবি দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ২১১ পৃ.] তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হাদীসটি নিম্নরূপ«قال رسول الله (صلی الله علیه وآله): اَبُوبَکْرٌ فِی الْجَنَّةِ، وَ عُمَرٌ فِی الْجَنّة، وَ عَلِیٌّ فِی الْجَنَّة، وَ عُثمان فِی الْجَنّةِ، وَ طَلْحَة فِی الْجَنَّة، وَ الزَُّبَیْرُ فِی الْجَنَّةِ وَ عَبْدُالرَّحمنِ بْنِ عُوفٍ فِی الْجَنَّة، وَ سَعْدُ بْنِ اَبِی وَقّاصٍ فِی الْجَنَّةِ، وَ سَعِیدُ بْنِ زَیْدٍ فِی الْجَنَّةِ وَ اَبُوعُبَیْدَةِ ابْنِ الجَّراحِ فِی الْجَنَّةِ .রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন:(১) আবু বকর জান্নাতী, (২)ওমর জান্নাতী, (৩)ওসমান জান্নাতী, (৪)আলী জান্নাতী, (৫)তালহা জান্নাতী, (৬)যুবায়ের জান্নাতী, (৭)আব্দুল রহমান বিন আউফ জান্নাতী, (৮)সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতী, (৯)সাঈদ বিন জাইদ জান্নাতী, (১০)আবু উবাইদাহ ইবনে জারাহ জান্নাতী।উক্ত হাদীসের সমস্যা সমুহউক্ত হাদীসটি আহলে বাইতের (আ.)এর ধারায় কোন সূত্রে বর্ণিত হয়নি । শুধু তাই নয় বরং আহলে সুন্নাতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সহি বোখারী ও সহি মুসলিম গ্রন্থেও হাদীসটি উল্লেখ করেন নি । উল্লেখ না করার মুলত: কারণ হল রাবীদের ধারাবাহিকতায় অবিশ্বাস্ত ব্যক্তির উপস্থিতি এবং হাদীসের ‘মাতন’ এর চরম দূর্বলতা ।হাদীস বর্ণনাকারীদের প্রথম সুত্র :অন্যদিকে সুনানে তিরমিজি ও মুসনাদে হানম্বাল গ্রন্থে হামিদ বিন আব্দুর রহমানের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে উক্ত বর্ণনাতে তিনি তার পিতা আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে হাদীসটি শুনেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। অথচ বিশ্বাস্ত ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী তার পিতার মৃত্যুর[৩২ হি. সনে] সময় তার বয়স ছিল [জন্ম ৩৩ হি.সনে] এক বছরের কম ! তাহলে তিনি ঐ বয়সে হাদীসটি কিভাবে শুনলেন ? তাই তিনি কোন ক্রমেই ঐ বয়সে হাদীসটি বর্ণনা করা বা শ্রবনের উপযোগী ছিলেন না তাই অবশ্যই অন্য কারো মাধ্যমে হাদীসটি তার কাছে এসে পৌছেছে উক্ত ব্যক্তির নাম ইতিহাসে বা হাদীসের সনদে উল্লেখিত হয়নি ।[ইবনে হাজার আসকালানী, তাহজীব আত্ তাহজীব ৩খন্ড, ৪০-৪১ নম্বর পৃ. এবং ৬ষ্ঠখন্ড, ২২২ পৃ.]হাদীস বর্ণনাকারীদের দ্বিতীয় সুত্র :উল্লেখিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় এমন ব্যাক্তিদের নাম উল্লেখিত হয়েছে যাদেরকে স্বয়ং আহলে সুন্নাতেরই হাদীসবিদগণ সত্যবাদী হিসেবে গ্রহণ করেন নি । যেমন: আব্দুল আজিজ দ্বার অর্বাদি যিনি আবু হাতেম নামে প্রশিদ্ধ [জাহাবী, মিজানুল এতেদাল, ২খন্ড ৬৩৪ পৃ. ]অথবা সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থে সাঈদ বিন জাইদ থেকে বর্ণিত হয়েছে [সুনানে আবি দাউদ, ৩খন্ড, ৪০১ পৃ.]। অন্য আরেকজন আব্দুল্লাহ বিন জালিম যার নাম উল্লেখিত হয়েছে , সহি বোখারী ও সহি মুসলিমের দৃষ্টিতে তারা কাজ্জাব বা চরম মিথ্যাবাদী তাদের প্রতি বিশ্বাস করা যায় না এবং তাদের সনদে হাদিস বর্ণনা করা থেকে তারা উভয়ই বিরত থেকেছেন , এবং স্পষ্ট ভাবে বলেছেন তাদের বর্ণিত হাদিস সহি নয়।[হাকেম নিশাপুরী , মুস্তাদরাক আল সা্হিয়াইন বি জিলাতিল তালখিস লিজ জাহাবী, তৃতীয় অধ্যায়, ৩১৭ পৃ.]অন্যদিকে যাদের নামেই সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে তাদের শেষ ব্যক্তিদ্বয় উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী আর এজন্যেই নিজেদের রাজনৈতিক সুযোগ ও সুবির্ধার্থে হাদীসটি জাল করার সন্দেহ থেকে যায় । আব্দুর রহমান বিন আউফ ও সাঈদ বিন জাইদ যারা উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী তারা নিজেরাই হলেন ঐ তথাকথিক সুসংবাদ প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত । অথচ যাদের নাম ঐ হাদীসে নেই তাদের কোন একজনও উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনা করেন নি ! শুধু তাই নয় মহানবী (স.) থেকে উক্ত হাদিসটি বর্ণনার কথা ঐদুইজন ছাড়া আর কেউই বর্ণনা করেন নি অন্য কেউকে উক্ত ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যাইনি।বনি সাকীফাতে যখন নেতা নির্বাচানের বাজার ছিল উত্তপ্ত তখন আনসার ও মুহাজিরগণ প্রত্যেকের ফজিলত সমুহ বর্ণনা করছিলেন সেখানেও এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের কথা উল্লেখ করা হয়নি । হাদীসটি সর্বপ্রথম মুয়াবিয়ার যুগে দামেষ্কে আত্মপ্রকাশ করে । যেখানে ছিল হাদিস জাল করার মহা সমারোহ ।তথাকথিত হাসদীসটির আলোচ্য বিষয়বস্তুগত সমস্যাকুরআন ও মহানবীর (স.) সুন্নাত বিরোধী হাদীসহাদীসটির সবচেয়ে বড় আরেকটি সমস্যা হল হাদীসে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মহানবীর তিরোধনের পরপরই তাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে ! এমন কি কোন কোন ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি তলোয়ার ধরেছেন এবং খুন হয়েছেন ! উদহারণ স্বরূপ জনাব তালহা ও যুবায়ের ইমাম আলী (আ.) এর হাতে বাইয়াত করার পর সে বাইয়াত ভঙ্গ করেন এবং বাইয়াত ভঙ্গকারীদের দলে যোগ দেন এবং উষ্ট্রের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন যেখানে অসংখ্য সাধারণ মুসলমান নিহত হন । অতএব যারা পরস্পরকে খুন করতে উদ্ধ্যাত হন তারা কিভাবে জান্নাতের সুসংবাদ পাবেন ?ইসলামী ইতিহাসের সোনালী যুগে আরো অনেক মহান সাহাবী ছিলেন তাদের নাম উল্লেখিত হাদিসে ঐ দশজনের মধ্যে নেই কেন? হযরত বীর হামজা, সালমান ফার্সি ,.. অতএব ঐ দশজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার মধ্যে কোনো না কোনো রহস্য রয়েছে ?শুধু তাই নয় আরো মজার বিষয় হল উক্ত হাদীসে মহানবীকেও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন হিসাবে অন্তভুক্ত করা হয়েছে! رسول الله عاشر عشرة کان [ সুনানে ইবনে মাজা , ১খন্ড, ৪৮ পৃ.] অতএব নিজে নিজেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ! প্রত্যেক ব্যক্তির একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে সেই অবস্থানগত দিক থেকে নি:সন্দেহে মহানবী (স.) স্থান সবার উর্দ্ধে কিন্তু উক্ত হাদীসে সবার শেষে নাম আনা হচ্ছে । এছাড়া মহানবী (স.) এর জান্নাতী হওয়ার ক্ষেত্রে সুসংবাদ দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে কি ?! সুতরাং স্পষ্টত অনুধাবন যোগ্য এটি একটি বানোয়াট হাদীস যা বিশেষ কিছু ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধির অভিসন্ধিমুলক কাজ ।হাদীসটি কোরআন বিরোধীহাদীসে উল্লেখিত দশজন ব্যক্তিকে কেন এমন বিশেষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হল তা কারো জানা নেই তবে এটি স্পষ্ট যে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এক অপরের সাথে রক্তাক্ত যুদ্ধ করেছেন যার ফলে নিজেরাও নিহত হয়েছেন আবার হাজার হাজার লোককে খুন হয়েছে ।পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন : «وَ مَنْ یَقْتُلُ مُؤْمِناً مُعْتَمِّداً فَجَزاءُهُ جَهَنَّمُ خالِداً فِی‌ها؛ [حاقة/سوره۶۹، آیه۴۴. ] “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন ঈমানদারকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম সে চিরকাল সেখানেই থাকবে৷ আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন৷” (৪:৯৩) অতএব আপনি কিভাবে ভাবলেন নিজে খুন-খারাবী করবেন হাজার হাজর নিরীহ ঈমানদার ব্যক্তির হত্যার কারণ হবেন মহান আল্লাহ কোন বিচার ছাড়াই আপনাকে এমনিই ছেড়ে দিবেন ?! নি:সন্দেহে হাদীসটি একটি বানোয়াট ও মিথ্যা জাল হাদিস ।কেউ কেউ তাদের স্পষ্ট ত্রুটিগুলো লুকাতে বা আপব্যাখ্যা করতে তথাকথিত সাহাবীগণের ইজতেহাদের অবতারণা করে থাকেন কিন্তু তারা একবারও চিন্তা করেন না যে যিনি শরীয়াত এনেছেন এবং প্রচার করেছেন তাঁর প্রদত্ত শরীয়াতের বিরুদ্ধে ইজতেহাদ করলে ধর্মের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না । বরং ইজতেহাদ হল শরীয়াতের অস্পষ্ট বিষয়গুলো বা নব্যসৃষ্ট সমস্যা সমূহের সমাধান প্রদানের জন্য শরীয়াতের ধারক ও প্রচারকের যথার্থ আর্দশ বা পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ থেকে তার সমাধান খুঁজে বের করা ।মহানবী (স.) বলেছেন : یا عَلِیُّ حَرْبُکَ حَرْبِی، وَ سِلْمُکَ سِلْمِی: হে আলী যেব্যক্তি তোমার সাথে যুদ্ধ করে সে আমার সাথেই যুদ্ধ করলো আর যেব্যক্তি তোমার সাথে সন্ধি করে সে আমার সাথেই সন্ধি করলো।মহানবী (স.) আরো বলেন: مَنْ اَطاعَ عَلِیّاً فَقَدْ اَطاعَنِی، وَ مَنْ عَصی عَلیِّاً فَقَد‌ْ عَصانِی যেব্যক্তি আলীকে আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্যতা করলো, আর যেব্যক্তি আলীর বিরোধীতা করলো সে আমারই বিরোধীতা করলো। [মানাকিব আল আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব, ইবনে মাগাজী, ১ম খন্ড ১৯ পৃ.- মানাকিব আল খাওয়ারেজিম্মি আল মওফাক ইবনে আহমাদ ১ম খন্ড, ৩০৩ পৃ.] ।হযরত আলী ইবনে আবিতালিব উক্ত হাদিসটিকে প্রত্যাখান করেছেন :বিভিন্ন ইতিহাসে জামালের যুদ্ধের পেক্ষাপটে বর্ণিত হয়েছে যে হযরত আলী ইবনে আবিতালিব যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে হযরত তালহা ও যোবায়েরকে ডাকলেন এবং বললেন: তোমরা কি জানো জামালের যুদ্ধের সেনাগণ অভিশপ্ত ? হযরত যোবায়ের বললেন আমরা কিভাবে অভিশপ্ত হলাম ? আমরা তো জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত ! আলী ইবনে আবিতালিব বললেন: আমি যদি তোমাদেরকে জান্নাতী মনে করতাম তাহলে যুদ্ধে আসতাম না । তোমাদের সাথে যুদ্ধ করাকে বৈধ মনে করতাম না । তখন হযরত যোবায়ের বললেন: আপনি কি সাঈদ বিন আমর বিন নাফিল যে হাদিস মহানবী থেকে বর্ণনা করেছেন কুরাইশদের ১০জন জান্নাতী সেটি কি আপনি শোনেন নি ? হ্যাঁ, আমি শুনেছি সাঈদ ওসমানের শাসনামলে তার নিজের স্বার্থে বর্ণনা করেছে। হযরত যোবায়ের বললেন : তাহলে এটা কি মথ্যা হাদিস ? হযরত আলী বললেন: আপনি তাদের নাম গুলো বলেন তারপর আমি বলছি । হযরত নয়জনের নাম বললেন । হযরত আলী বললেন : দশম ব্যক্তি কে ? হযরত যোবায়ের বললেন : আপনি নিজেই । হযরত আলী বললেন : তাহলে আপনি সাক্ষ্য দিলেন যে আমি জান্নাতী । তবে আপনি যা নিজের জন্য ও আপনার অনুসারীদের জন্য দাবী করেছেন তা অস্বীকৃতি জানাচ্ছি । তখন হযরত যোবায়ের বললেন: তাহলে আপনি সাঈদকে সন্দেহ করছেন যে সে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করেছে ? তখন হযরত আলী বললেন: আমি সন্দেহ করছি না বরং নিশ্চিত ভাবেই বলছি যে সাঈদ হাদিস জাল করেছে এটা মিথ্যা হাদীস । তবে এদের অনেকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে একটি কূপের কিনারাতে বাধাঁ অবস্থায় থাকবে যখন আল্লাহ জাহান্নমীদের শাস্তি দিতে চাইবেন তখন ঐ কূপের মুখে পাথরের ঢাকনাটি খুলবেন । আমি এবিষয়গুলো মহানবী থেকে শুনেছি । একথা শোনার পর হযরত যোবায়ের অশ্রুসিক্ত চোখে হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের নিকট থেকে চলে গেলেন । [১- আল ইহতেজাজ তাবরেসী, ১খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা। ২- আল কাফায়াতু ফি ইবতাল তওবাতুল খাতিয়াহ, শেইখ মুফিদ, ২৪ পৃষ্ঠা। ৩- মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ, ১৪-১৫ পৃষ্ঠাআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমানে আহলে বাইত আঃ পা

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্ট((((পর্ব ৪))))১. « هم راکعون » যদি আতফ্ হয় তাহলে এক্ষেত্রে দুটি মৌলিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে আর এক বাক্যে দুই মৌল নীতির ব্যতিক্রম ঘটা ব্যাকরণশাস্ত্রের রীতিবিরুদ্ধ ও বাগ্মিতার পরিপন্থী হিসাবে জায়েজ ও বৈধ নয়। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনের -সাহিত্যিকমান ও আলংকারিক (বালাগাত ও ফাসাহাত) দৃষ্টিতে যার অবস্থান শীর্ষ চূড়ায়- মধ্যে এমন বিষয় থাকা অসম্ভব। (ইবনে হিশাম আনসারী, প্রাগুক্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৯) এ দু’টি পরিপন্থী নীতি হল :ক. جملة اسمیة (যে বাক্যের প্রথমে ইসম বা বিশেষ্য থাকে), جملة فعلیة (যে বাক্যের প্রথমে ফেল বা ক্রিয়া থাকে) এর সাথে আতফ বা সংযুক্ত হয়েছে। কেননা নাহুশাস্ত্রবিদগণের মতে, আতফের নিয়ম হল দুটি বাক্যের রূপ একই রকম হওয়া। (সূয়ুতী, আল বাহজাতুল মারজিয়াহ ফি শারহিল আলফিয়া, পৃ-১০৪)খ. « هم راکعون » বাক্যটিকে আতফ ধরলে এর পূর্বে «یقیمون الصلاة» বাক্যটির উল্লেখ থাকায় পুনরাবৃত্তি ঘটছে অথচ নিয়ম হল পুনরাবৃত্তি না হওয়া (অর্থাৎ নামাজের পর তার একটি অংশ রুকুর উল্লেখ বাচালতার শামিল বলে মানানসই নয়)। (সাইয়েদ মুরতাজা, আশ-শাফী ফিল ইমামাহ, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩৭) ২. আহলে বাইতের অনুসারী ও আহলে সুন্নাতের সূত্রে এই আয়াত সম্পর্কিত যে সব রেওয়াইয়াত বর্ণিত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে “ওয়াও” حالیة (অবস্থাসূচক) অব্যয়। শেখ হুররে আমেলী উল্লিখিত বিষয়ে উভয় সূত্র থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেছেন। (হুররে আমেলী, ইছবাতুল হুদা, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৪১।) এসব হাদীসের কোন কোনটিতে এভাবে বলা হয়েছে : আলী (আ.) রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছেন। (রাযী, মাফাতিহুল গাইব, ১২তম খণ্ড, পৃ.৩৮৩; সূয়ুতী, আদ্ দুররুল মানসূর ফি তাফসীরিল মা’ছুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৯৩) অন্য আরেক রেওয়ায়েতে আরো সুন্দর ও স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে নবী করীম (সা.) ভিক্ষুককে জিজ্ঞাসা করলেন: “আলী কি অবস্থায় তোমাকে দান করেছে?” ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়।” (সূয়ুতী, পৃ.-৩৯৪; তাবারী, দালায়িলুল ইমামাহ, পৃ.-৫৪) নাহু শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন: কোন ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তার উত্তরে حال আসে। এই হাদীসে রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর আংটি দান কালীন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিক্ষুক বলল: “রুকু অবস্থায়”। সুতরাং « و هم راکعون» বাক্যটি جملة حالیة (অবস্থাসূচক বাক্য)।৩. যামাখশারীও তাফসীরে কাশ্শাফে বলেছেন: “ওয়াও” حالیة বা অবস্থাসূচক অব্যয়। আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গবেষক ও মুফাচ্ছিরগণও স্বীকার করেছেন যে এ বাক্যটি حالیة। (রাযী, ১২তম খণ্ড, পৃ.-৩৮৫; আলুসী, রুহুল মাআনী ফি তাফসীরিল কোরআনিল আযিম, ৫ম খণ্ড, পৃ.- ৪৫৮; ছাআলাবী, আল জাওয়াহিরুল হাসান, ১ম খণ্ড, পৃ.-৪৩৮; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ওয়া বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ.-৫০৮; ছাফী, আল জাদওয়াল ফি এরাবিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-৩৮৬; বায়দ্বাভী, আনওয়ারুত তানযিল ওয়া আসরারুত তা’বিল, ২য় খণ্ড, পৃ.-১৩২)আহলে বাইতের অনুসারীদের তাফসীর গ্রন্থসমূহে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, “ওয়াও” حالیة হওয়ার ব্যাপারে সকলেই একমত। (তাবাতাবাই, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.-১২; তাবারসী, মাজমাউল বায়ান, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৩২১; কাশানী, মিনহাজুস সাদেকীন, ৩য় খণ্ড, পৃ.-২৫৫)৪. ইসলামী যুগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কবিতাও রচিত হয়েছে, ঐসব কবিতায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় তারাও এই বাক্যকে حال হিসেবে ধরে নিয়েছেন। যা হাসসান বিন ছাবেত এর কবিতাতেও ফুটে উঠেছে, আল্লামা আমিনীও তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদীরে” এ কবিতাটিকে আহলে বাইতের অনুসারী এবং সুন্নিদের বিভিন্ন সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন। ( আমিনী, আল গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ৩য় খণ্ড, পৃ.-৬২; আলুসী, প্রাগুক্ত; হাসকানী, শাওয়াহেদুত তানযিল লে কাওয়ায়েদুত তাফযিল, ১ম খণ্ড, পৃ.-২১৪) কবিতাটি হচ্ছে :ابا حسن تفدیک نفسی و مهجتی وکل بطئ فی الهدی و مسارعأیذهب مدحی و المحبین ضائعاً و ما المدح فی ذات الاله بضائعفأنت الذی اعطیت اذ انت راکع فدتک نفوس القوم یا خیر راکعহে আবা হাসান আমার জান প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। আরও উৎসর্গ হোক তাদের প্রাণ যারা ধীর অথবা দ্রুত গতিতে হেদায়েতের পথে চলে।আমার স্তুতি এবং প্রেমিকরা যদিও হারিয়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যাবে? কিন্তু আল্লাহর কৃত প্রশংসা শেষ হবার নয়।তুমিই তো রুকুরত অবস্থায় দান করে ছিলে। আমাদের সকলের প্রাণ তোমার জন্য উৎসর্গ হোক হে উত্তম রুকুকারী।নাহুশাস্ত্রবিদগণ বর্ণনা করেছেন: অবস্থাসূচক বাক্যে واو এর পরিবর্তে (স্থান বা কালবাচক) اذ এরও ব্যবহার হতে পারে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ.-২৩) কবিতার শেষ লাইনেও «و انت» এর পরিবর্তে «اذ انت» ব্যবহৃত হয়েছে যা حال এর অর্থই দেয়। কেননা তখন অর্থ হবে : “রুকু করার সময় দান করেছ”।৫. আলোচ্য আয়াতের সাথে «رایت زیدا و هو راکب» অর্থাৎ ‘আমি যায়েদকে দেখেছি এমতাবস্থায় যে সে আরোহী ছিল’ এমন বাক্য থেকে প্রথমেই যা মনে ভেসে উঠে তা হচ্ছে তা হচ্ছে و هو راکب বাক্যটি যায়েদের অবস্থা বর্ণনা করছে যে, সে আরোহী অবস্থায় আছে। (বাহরানী, আন-নাজাতু ফিল কিয়ামাহ ফি তাহকীকি আমরিল ইমামাহ, পৃ.-৯৬)বহুবচন মূলক শব্দ একবচনের অর্থে ব্যবহার করা:কেন বহুবচন মূলক শব্দকে একবচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে? এর উত্তরে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উল্লেখ করা যেতে পারে :১. এ বিষয়টি শুধুমাত্র এ আয়াতেই নয় পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ্যে অনেক স্থানেও একবচনের জায়গায় বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তন্মধ্যে মুবাহেলার আয়াত (আলে ইমরান:৬১) যেখানে হযরত আলী (আ.) এর জন্য বহুবচন «انفسنا» ও হযরত ফাতেমা (আ.) এর জন্যও বহুবচন «نسائنا» ব্যবহৃত হয়েছে। এরূপ আরো অনেক স্থানে এরূপ ভাষা প্রয়োগের দৃষ্টান্ত মুফাসসিরগণ উপস্থাপন করেছেন। আল্লামা আমিনী তার আল গাদীর গ্রন্থে প্রায় বিশটি আয়াত উল্লেখ করেছেন যেসব আয়াতে একবচনের জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আমিনী, আল গাদীর, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৬৪)২. যামাখশারী তাঁর ‘আল কাশশাফ’ তাফসীর গ্রন্থে এর কারণ হিসেবে বলেছেন:অন্যদের এমন কাজে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য এই আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মুমিন ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য এমনই হতে হবে যাতে করে তারা এরূপ ভাল কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং তা সম্পাদনে বিলম্ব না করে, যদি নামাজরত অবস্থায়ও থাকে। এমন ভালও মঙ্গলজনক কাজে যেন নামাজ শেষ হওয়ারও অপেক্ষা না করে। (যামাখশারী, কাশশাফ, ১ম খণ্ড, পৃ.-৬৪৯)৩. আল্লামা তাবারসী মনে করেন : হযরত আলী (আ.) এর সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্দেশের জন্যই বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বহুবচনের শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয় আর এটা ভাষাবিদদের নিকট একটি মামূলী ব্যাপার, সে জন্য কোন দলীল প্রমাণেরও প্রয়োজন হয়না। (তাবারসী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৭)অন্যান্য গ্রন্থেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাখরুদ্দিন রাযী, প্রাগুক্ত; তুসী, আল-ইকতিসাদ ফিমা ইয়াতাআল্লাকু বিল ইতিকাদ, পৃ.-৩২৩; তাবাতাবাই, প্রাগুক্ত; মিনহাজুস সাদেকীন, প্রাগুক্ত; আলুসী, প্রাগুক্ত)সূয়ুতী, আল-মাযহার গ্রন্থে লিখেছেন :একজন শ্রোতার ক্ষেত্রে বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা এটা আরবদের একটা রীতি। যেমন কোন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে : «انظروا فی امری» অর্থাৎ আমার ব্যাপারে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং পবিত্র কোরআনেও এসেছে- «ربّ ارجعون» হে আমার পালন কর্তা আমাকে আপনারা (পুনরায় দুনিয়ায়) ফিরে যেতে দিন। (সূয়ুতী, আল-মাযহার ফি উলুমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, ১ম খণ্ড, পৃ.-৩৩৩; আল-আমিন, আযওয়াউল বায়ান ফি ইযাহিল কোরআন বিল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-৩৫৫; হালাবি, আদ-দুররুল মাসূন ফি ইলমিল কিতাবিল মাকনূন, ৫ম খণ্ড, পৃ.-২০০; ছাফী, প্রাগুক্ত, ১৮তম খণ্ড, পৃ.-২০৯)৪. এই কারণে আহলে বাইতের অনুসারীদের বিভিন্ন গ্রন্থে যে সমস্ত রেওয়াইয়াত রয়েছে (কুলায়নি, উসূলে কাফি, ২য় খণ্ড, পৃ.-৩৯৭) এই আয়াত আহলে বাইতের ইমামদের সকলের ইমামতের প্রমাণ স্বরূপ। শুধু আলী (আ.) এর জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং সমস্ত ইমামের ইমামতকেই প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু যেহেতু রাসূল (সা.) এর পর প্রথম খলিফা কে?- এ বিষয়টি নিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটা মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে। সেজন্য আহলে বাইতের অনুসারীদের পক্ষ থেকে শুধু আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্যই এটা উপস্থাপন করা হয়। আর একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার আরবি ভাষার নিয়মানুসারেই হয়েছে।৫. হামল বার মা’না বা ভাবার্থের ওপর প্রয়োগ- এর নিয়ম অনুসারেও একবচনের ক্ষেত্রে বহুবচনের ব্যবহারের বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। এটি আরবি ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, আরবি সাহিত্যের বিভিন্ন গ্রন্থে এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ: পুংলিঙ্গ কে স্ত্রীলিঙ্গ, আবার স্ত্রীলিঙ্গকে পুংলিঙ্গ, অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দ্বারা একবচনের উদ্দেশ্য আবার একবচনের শব্দ দ্বারা বহুবচনকে উদ্দেশ্য করা হয় এটা হামল বার মা’না এর নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে জিন্নী, আল খাসায়িস, ২য় খণ্ড, পৃ.-৪১১) অর্থাৎ আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনাম বা ইঙ্গিতবাচক বিশেষ্য «اسم اشارة» শব্দটি পূর্বের যে শব্দটিকে নির্দেশ করছে বচন ও লিঙ্গের ক্ষেত্রে তার অনুরূপ হয় না।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খলীফাতুল বিলা ফাশালনিবেদক__________ মোঃ আলী হুসাইনচলবে