পোস্টগুলি

প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাহাদীসে কুদ্সীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ পরিচয় প্রকাশের নিমিত্তে সর্ব প্রথম‘ নূর-এ-মোহাম্মদ’ -কে সৃষ্টি করেছেন। অপর আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৪১উল্লিখিত হাদীস দুটিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তার অনন্ত বিশালতা সম্পর্কে অবগত হওয়া , সর্বজ্ঞানের নগরী নবী মোহম্মদ (সা.) ব্যতীত যেমন আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তদ্রুপ মহানবী (সা.)-এর শান ও মান বোঝার যোগ্যতা এক আল্লাহ ব্যতীত মানুষ তো দূরের কথা অনেক নবী (সা.)-এর পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ , আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ হে আলী আমাকে কেউ চিনতে/বুঝতে পারেনি তুমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। তোমাকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। আর আল্লাহকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং তুমি ব্যতীত” ।৪২উল্লিখিত হাদীসটি জানার পর আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি। হযরত আলীর নবী (সা.)-এর সমজ্ঞান আছে কি ? অতঃপর যখন নিন্মোক্ত হাদীস দু’ টি জানতে পারলাম তখন আমার ঐ ভুল ধারণাটি দূর হলো।নবী (সা.) বলেছেন ,“ আমি এবং আলী একই নূরের দুটি টুকরো” ।“ আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছে তার দরজা।” ৪৩আমি পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদেরকে কোরআন হাদীস ও সেই সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে যাচাই বাছাই করতে হবে। এখন আমি একটি বহুল প্রচারিত হাদীসের বর্ণনা করছি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত :“ রাসূল (সা.) বলেছেন বনী ইস্রাইলীরা ৭২ ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায় তন্মধ্যে মাত্র একটি ফেরকা হবে নাজাতপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। তাছাড়া সবগুলো ফেরকা হবে জাহান্নামী।” ৪৪উল্লিখিত হাদীসের আলোকে পাঠকের দৃষ্টি-আকর্ষণ করছি :· আমরা কি কখনও নিজেদের যাচাই করে দেখেছি , আমার অবস্থান বাহাত্তরে না একে ?· যাচাইয়ের পথতো সর্বদা উন্মুক্ত এখন শুধু আমাদের ইচ্ছা প্রকাশের প্রয়োজন। যেমন· আমরা কি কোরানের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি ?· আমরা কি সে সকল হাদীস অনুসরণ করি যার সাথে কোরআনের সম্পৃক্ততা রয়েছে ?· আমরা কি হারাম হালাল বিবেচনা করি ?· আমরা কি সুদ-ঘুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করি ?· আমরা কি অপরাধ দুর্নীতি থেকে দূরে থাকি ?· আমরা কি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করি ?· আমারা কি আইনের শাসন ও অপরাধী দমনে সক্রিয় ?· আমরা কি সত্য প্রকাশের ভূমিকা ও মিথ্যা প্রচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করি ?· আমরা কি সত্য ও মিথ্যা এক করে দিই ?· আমরা কি সত্যকে গোপন করি ?· আমরা কি অঙ্গীকার কিংবা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি ?· আমরা কি ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ?· আমরা কি স্বজনপ্রীতি আর সুযোগসন্ধানী থেকে মুক্ত ?· আমরা কি নিজ ত্রুটি সংশোধন না করে অন্যের ত্রুটি প্রচার থেকে সরে আসতে পেরেছি ?· আমাদের কথা এবং কাজে মিল আছে কি ?· আমরা কি নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পেরেছি ?· আমরা কি নিজেকে ছাড়া দেশ ও দশের কথা ভাবি কখনো ?এই সকল প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই ১৪শ বছর পূর্বেই পবিত্র কোরআনে প্রকাশ করেছেন। অথচ এর মর্মবাণী অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করেননি। আর ভুলে গেছেন আল্লাহর মনোনীত মহান ইমামদের। যে কারণে আমাদের সমাজ দেশ তথা সারা বিশ্বে অশান্তি , নৈরাজ্য , দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , সুদ-ঘুষের অবাধ প্রচলন , নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি , শাসনের নামে শোষণের উপস্থিতি , ব্যবসার নামে প্রতারণা , আমানতের খেয়ানত ও জালিয়াতির নব নব কৌশল আবিষ্কার , মানবতার মূল্যবোধের অবক্ষয় , শিষ্টাচার হীনতা , বেলাল্লাপনার প্রচার ও প্রসার সহ নানাবিধ অনৈতিক অবক্ষয়ে আমরা জর্জরিত।যদি ধর্ম কিংবা নীতি বলতে আমাদের মধ্যে কিছু থেকে থাকে তবে কেন এত বিপর্যয় ? সত্যি কথা বলতে কি আমাদের মধ্যে ধর্মের শুধু নামটাই বিদ্যমান আছে। এর অন্ত:র্নিহীত কার্যক্রম অর্থাৎ সততা , ন্যায়-নিষ্ঠা , পাপ কর্মের ভয় ও খোদাভীরুতা বহু পূর্বেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে। যেমন , দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধারের আগমণ পর্যন্ত যদি শুধু এইটুকু সময় আমারা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ড খাতায় লিপিবদ্ধ করি , তবে দেখতে পাব আমি প্রতিদিন কত মিথ্যা কর্মে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এদিক থেকে আমরা বরাবরই দুর্ভাগা। রমজানের আগমণের পূর্বেই আমাদের ব্যবসায়ীগণ দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের অনুরূপ নয়। দুখঃজনক হলেও সত্য যে , আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ যেন মামুলি ব্যপার। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা বিরল। গানে কিংবা কবিতায় আমরা নিজেদের যেভাবে তুলে ধরি বাস্তবে যদি তাই হোতো , তবে কতই না সুন্দর হোতো। বাস্তবতা এটাই। আমাদের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে অপরাধ-দুর্নীতির মতো কোনো না কোন জটিল সমস্যা নেই। আর সমস্যা তো মানুষেরই সৃষ্ট। কবে আমরা এমন সব সমস্যা হতে মুক্ত হবো তা কেবল আল্লাহ পাকই জানেন।পবিত্র কোরআনে নামাজের বিষয়ে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই নামাজে মনোযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে , যদি আমরা নামাজী হয়ে যাই তাহলে আমাদের উচিৎ এতিম , মিসকীনদের সাহায্য করা এবং লোক দেখানো নামাজ না পড়া। আর অবশ্যই মন্দ কথা কিংবা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা অনেকেই দু’ টাই সমান্তরালে করে যাচ্ছি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐসকল নামাজী যখন নামাজ শেষে হাট-বাজারে কিংবা তাদের কর্মস্থলে এসে নিত্য কর্মে যোগ দেন , তাদের তখনকার আচার-আচরণ থেকেই তা প্রকাশিত হয়। আর অনূরূপ নামাজীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পূর্ব থেকেই অবগত।তাই তিনি সূরা মাউনের ৪-৬ নং আয়াতে তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন এভাবে :) فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ(“ ধিক সেই সব নামাজীর প্রতি , যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বে-খবর। যা তারা লোক দেখানোর জন্য করে” ।তাই আমাদের সকলের নামাজ ও কর্ম সেরূপ হওয়া বাঞ্ছণীয় যেন আমরা হতে পারি আল্লাহর করুণা প্রত্যাশী , ধিক্কারের অধিকারী নয়।মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক যে সকল আয়াত নাজিল করেছেন তার কিছু অংশ পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :১) এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরহেজগারদের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শন ; যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে , নামাজ কায়েম করে এবং তাদেরকে যে রুযী দান করা হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে এবং আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে ও পরকালে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই নিজেরদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত , তাঁরাই সফলকাম। (সূরা-২: আয়াত- ৫)২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিয়ো না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না। আর নামাজ কায়েম করো , যাকাত প্রদান করো এবং অবনত হও তাদের সাথে , যারা অবনত হয়। (২ : ৪২-৪৩)৩) সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সেই সমস্ত বিনয়ী লোকগণ ব্যতীত , যারা এ কথা বিশ্বাস করে যে , তাদেরকে উপস্থিত হতে হবে স্বীয় পালনকর্তার সামনে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (২ : ৪৫-৪৬)৪) তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (৫ : ১৫)৫) তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন , আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সেই সব ঈমানদার ব্যক্তি যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে রুকু অবস্থায়। (৫ : ৫৫)৬) হে রাসূল পৌঁছিয়ে দিন , আপনার রবের পক্ষ থেকে যা আপনাকে বলা হয়েছে। যদি আপনি তা না পৌঁছান , তবে আপনার রেসালাতের কাজ পরিপূর্ণ হলো না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত প্রদান করেন না। (৫ : ৬৭)৭) আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম , আমার নিয়ামত দ্বারা এবং ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (৫ : ৩)৮) নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। (৪ : ৪৩)৯) হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। হে ঈমানদারগণ তোমরা নবী (সা.)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ আচরণ করো। তাঁর সাথে সেরূপ আচরণ করো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমরা টের পাবে না। (৪৯ : ১-২)১০) সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে এগিয়ে যাও। তোমরা যেখানেই থাকবে , অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাশীল। (২ : ১৪৮)১১) সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর , আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর , অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিনগণ , তোমরা ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় , তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত , কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় , ক্ষুধা , জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (২ : ১৫২-১৫৫)১২) হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার করো। যেগুলি আমি তোমাদের রুজী হিসেবে দান করেছি এবং শূকরিয়া আদায় করো আল্লাহর , যদি তোমরা তারই বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব , রক্ত , শুকরের মাংস এবং যেসব জীবজন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয় , তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল , অত্যন্ত দয়ালু। (২ : ১৭২-১৭৩)১৩) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে , পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে , বরং সৎকাজ হলো এই যে , ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর , কেয়ামত দিবসের ওপর , ফেরেস্তাদের ওপর , সকল কিতাবের ওপর এবং সমস্ত নবী রাসূলগণের ওপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহর মহব্বতে। সাহায্য করবে আত্মীয়-স্বজন , এতিম , মিসকীন , মুসাফির , ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী কৃতদাসদের। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে , যাকাত প্রদান করে ও স্বীয় প্রতিজ্ঞা সম্পাদন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্য আশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার। (২ : ১৭৭)।১৪) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (২ : ১৮৩)১৫) আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। (২ : ১৮৭)১৬) আর লড়াই করো আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে , যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (২ : ১৯০)১৭) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো , যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় , তাহলে কারো প্রতি কোনো জবরদস্তি নেই। কিন্তু যারা জালেম তাদের বিষয় আলাদা। (২ : ১৯৩)১৮) আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে , তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করে নয়। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন। (২ : ১৯৫)১৯) পার্থিব জীবন কাফেরদের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। তারা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে উপহাস করে। পক্ষান্তরে , যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুজি দান করেন। (২ : ২১২)২০) তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দিন যা তোমরা ব্যয় করবে তা হবে পিতা-মাতার জন্য নিকট আত্মীয়ের জন্য , এতিম , অসহায়ের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যেকোনো সৎ কাজ করবে , নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা ভালভাবে অবগত আছেন। (২ : ২১৫)২১) যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত করো , তবে তা উত্তম। আর যদি গোপনে অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের বিষয়ে সম্যক অবগত। (২ : ২৭১)২২) যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে , কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (৩ : ৮৫)২৩) তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না , যদি তোমদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (৩ : ৯২)।২৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত , ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করো অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (৩ : ১০২)২৫) আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় হস্তে ধারণ করো , পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো , যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকু-ের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন , যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (৩ : ১০৩)২৬) যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন , তাহলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন , তবে এমন কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে ? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। (৩ : ১৬০)২৭) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ ফলপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে , সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। (৩ : ১৮৫)২৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমা করেন না , তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ , যার জন্য ইচ্ছা। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করে আল্লাহর সাথে , সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হলো। (৪ : ৪৮)২৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং উলিল আমরগণের। অতঃপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হও , তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তণ করো। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম। (৪ : ৫৯)৩০) যে আল্লাহর নির্দেশে মস্তক অবনত করে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে , যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। তাঁর চেয়ে উত্তম ধর্ম কার হতে পারে ? আল্লাহ ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন। (৪ : ১২৫)৩১) হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না , মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজেদের ওপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলিল কায়েম করবে ? (৪ : ১৪৪)৩২) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো , যাতে তোমরা সফলকাম হও। (৫ : ৩৫)৩৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিষেধ করা হলো মদ , জুয়া , প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ এই সবকিছু শয়তানের অপবিত্র কাজ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। (৫ : ৯০)৩৪) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরকালের আভাস পরহেযগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বোঝো না ? (৬ : ৩২)৩৫) তোমরা তাদের মন্দ বলো না , যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহ ব্যতীত। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্মকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে স্বীয় পালনকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (৬ : ১০৮)৩৬) তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের ওপর মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন , যাতে তোমাদে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতাও বটে এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল , দয়ালু। (৬ : ১৬৫)৩৭) তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক , কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (৭ : ৫৫)৩৮) আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো , সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ্য জাহিলদের থেকে দূরে থাকো। (৭ : ১৯৯)৩৯) আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় , তোমরা তা মনযোগ দিয়ে শোন এবং নীরব থাক , যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়। (৭ : ২০৪)৪০) হে ঈমাদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না , যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে অধিক ভালবাসে। আর তোমরা যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে , তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (৯ : ২৩)৪১) যে কেউ শুধু পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে , আমি দুনিয়াতেই তাদের কর্মফল পূর্ণরূপে দান করি। যাতে তাদের কিছু মাত্র কমতি না হয়। এরাই হল সেই সব লোক যাদের আখেরাতের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা যা কিছু উপার্জন করেছে সবই বরবাদ ও বিনষ্ট হয়ে গেছে। (১১ : ১৫-১৬)৪২) আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মোমেনদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে , তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে , অতঃপর মরে ও মারে। তাওরাত ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সত্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কে হতে পারে ? সুতরাং আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর , যা তোমরা করেছ তাঁর সাথে। আর এ হচ্ছে মহাসাফল্য। তারাই তওবাকারী , ইবাদতকারী , শোকরগুজারকারী , দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক চ্ছেদকারী , রুকু ও সেজদা আদায়কারী , সৎ কাজে আদেশদানকারী ও মন্দ কাজে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও সেই সব মুমিনদের। (৯ : ১১১-১১২)৪৩) যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে শান্তি লাভ করে , জেনে রাখো , আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে। (১৩ : ২৮)৪৪) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (১৬ : ২৩)৪৫) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (১৭ : ৩২)৪৬) আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদের পাবেন এবং মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের অধিক নিকবর্তী তাদের পাবেন , যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে , খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম ও দরবেশ রয়েছে যারা অহংকার করে না। (৫ : ৮২)৪৭) নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ কর বিনয়ের সাথে। (৫ : ৫৬)৪৮) নামাজ কায়েম করুন সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত , আর ফজরে কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চই ফজরে কোরাআন পাঠ মুখোমুখি হয়। (১৭ : ৭৮)৪৯) তদুপরি যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও , তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না। (৪৭ : ৩৮)৫০) আপনি কেবল তাদের সতর্ক করুন , যারা তাদের পালন কর্তাকে না দেখে ভয় করে এবং নামাজ কায়েম করে। (৩৫ : ১৮)নিবেদক_______ রাকিব আলী ইমামি

সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতাআলী ইবনে আবি তালিবের শাহাদাতের পর ,একদা হামদান গোত্রের সাওদা (আম্মারের কন্যা) নামক এক নারী মুয়াবিয়ার নিকট গিয়েছিল। মুয়াবিয়া সাওদার কঠোর পরিশ্রমের কথা (যা সিফ্ফীনের যুদ্ধে হযরত আলী ও তাঁর সৈন্যদের জন্য করেছিল) স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে ভর্ৎসনা করল অতঃপর তার নিকট জানতে চাইল : কি জন্যে এখানে এসেছে ?সাওদা জবাবে বলল : হে মুয়াবিয়া! মহান আল্লাহ্ আমাদের অধিকার হরণের জন্য তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন ,তুমি সর্বদা আমাদের জন্য এমন শাসক নির্বাচন করছ ,যে আমাদেরকে ফসলের মত কর্তন করে ,এসপান্দের বীজের মত পদদলিত করে এবং আমাদেরকে হত্যা করে। এখন এই বুসর ইবনে আরতাতকে পাঠিয়েছ ,যে আমাদের লোকদেরকে হত্যা করে ,আমাদের সম্পদ ছিনেয়ে নেয় ;যদি কেন্দ্রীয় শাসনের অনুসরণ না করতে চাইতাম ,তবে এখন আমি সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী হতাম ;যদি ওকে পদচ্যুত কর ,তবে তো উত্তম ;আর যদি না কর ,তবে ‘ স্বয়ং আমরাই বিদ্রোহ ও অভ্যূত্থান করব...। মুয়াবিয়া অস্বস্থি বোধ করল এবং বলল : আমাকে স্বীয় গোত্রের ভয় দেখাচ্ছ ,তোমাকে নিকৃষ্টতম অবস্থায় ঐ বুসরের কাছেই প্রেরণ করব ,যাতে তোমার জন্য যা সে উপযুক্ত মনে করবে তাই করে।সাওদা কিছুক্ষণ নীরব থাকল ,যেন তার স্মৃতিপটে অতীতের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠল ;অতঃপর এ পংক্তিগুলো আবৃতি করল :প্রভু হে ! তাঁর উপর শান্তি কর বর্ষণযে শায়িত আজ কবরে ,যার মৃত্যুর সাথে যুগপৎন্যায় ও আদালতের হয়েছে সমাধি।সে তো সত্যের দিশারীসত্যকে কভু করেনি কোন কিছুর বিনিময়ে পরিহারসত্য ও বিশ্বাসের ,তাঁরই মাঝে ছিল সমাহারমুয়াবিয়া জিজ্ঞাসা করল : সে কে ?সাওদা জবাবে বলল : আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। মনে পড়ে ,একদা যাকাত গ্রহণের জন্যে নিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্যে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আমি যখন পৌঁছলাম তখন তিনি নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু যখনই আমাকে দেখলেন নামায শুরু না করে উদার ও দয়াদ্র কন্ঠে আমাকে বললেন : কিছু বলবে কি ?বললাম : জী হ্যাঁ এবং আমার অভিযোগ উপস্থাপন করলাম। ঐ মহান ব্যক্তি স্বীয় নামাযের স্থানে দাঁড়িয়েই ক্রন্দন করলেন এবং মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে বললেন : ‘ প্রভু হে ,তুমি জেনে রাখ ও সাক্ষী থাক যে ,আমি কখনোই তাকে (আদিষ্ট) তোমার বান্দাদের প্রতি অত্যাচারের নির্দেশ দেইনি। অতঃপর তিনি ,অবিলম্বে এক চিলতে চামড়া বের করলেন এবং মহান আল্লাহর নাম ও কোরআনের আয়াত লিখার পর এরূপ লিখেছিলেন :আমার পত্র পাঠ করার সাথে সাথেই তোমার হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন কর ,যাতে কাউকে তোমার পরিবর্তে পাঠানোর পর ঐগুলো তোমার নিকট থেকে বুঝে নিতে পারে...।তিনি পত্রখানা আমাকে দিলেন। আল্লাহর শপথ ,ঐ পত্রখানা বন্ধ কিংবা মোহরাংকিতও ছিল না। পত্রখানা ঐ দায়িত্বশীলের নিকট পৌঁছালাম এবং সে পদচ্যুত হল ও আমাদের নিকট থেকে চলে গেল... । ’‘ মুয়াবিয়া এ কাহিনী শ্রবণান্তে নিরুপায় হয়ে আদেশ দিল ,“ যা সে চায় ,তা-ই তার জন্য লিখে দাও। ”আলী (আ.) ও খলিফাত্রয়মহানবী (সা.) যখন তাঁর দয়ালু আঁখিযুগল বাহ্যতঃ পৃথিবী থেকে নির্লিপ্ত করলেন এবং যখন তার অস্তিত্বের জ্যোতির্ময় নক্ষত্র মানুষের দৃষ্টিসীমা থেকে অস্তমিত হলো ,তখন কিছু কপট ‘ সাকিফায়ে বনি সায়েদায় ’ মিলিত হলো এবং মহানবী (সা.) যে হযরত আলীকে মহান আল্লাহর আদেশক্রমে স্বীয় উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছিলেন ,তা তারা আবু বকরের (আবু কোহাফার পুত্র) অধিকারে ন্যস্ত করল। তারপর যথাক্রমে ওমর ও ওসমান মোটামুটি একই ধরনের চক্রান্ত ও পরিকল্পনার মাধ্যমে খেলাফতের অধিকারী হয়েছিল। আর এভাবেই অবিরাম ২৫ বছর ধরে তারা নবী (সা.)-এর তিরোধানের পর মানুষের উপর হুকুমত করেছিল। স্বভাবতঃই এ সুদীর্ঘ সময় ব্যাপী অদ্বিতীয় ও সর্বাধিক যোগ্য ,ঐশী ও ইসলামী হুকুমতের প্রকৃত নেতা এবং নবী (সা.)-এর উত্তরাধিকারী অর্থাৎ ন্যায়পরায়ণ পথপ্রদর্শক হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ধৈর্য ও স্থৈর্যের আশ্রয় নিলেন ও নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখলেন। আর এ ঘটনাটি মানবতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা দুঃখজনক কাহিনী। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা ,এমন কি যাদের কোন দীন নেই তারাও ইসলামের পথে হযরত আলীর অক্লান্ত শ্রম ও প্রচেষ্টা ,তাঁর সরলতা ,নির্মলতা ,বিরত্ব ,চিন্তা শক্তি ,জ্ঞানের বিস্তৃতি ,ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের কথা জানলে ,ইসলামী সমাজের ভাগ্যে তারা যে অন্যায় ও অত্যাচারের কালিমা লেপন করেছে তার জন্য অপ্রত্যাশিত ভাবে অনুতাপ ও পরিতাপ করে। তাহলে সুবিচারক মুসলমানদের ক্ষেত্রে কি ঘটবে! এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্য আমাদের দুঃখ ও পরিতাপ সুদীর্ঘ পর্বত শ্রেণীর চেয়েও বিস্তৃততর ,সুউচ্চ পর্বত চূড়ার চেয়েও উচ্চতর।যাহোক ,আবু বকর দশম হিজরীতে খলিফা হলো এবং ত্রয়োদশ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করল। আর ইতোমধ্যেই তার খেলাফতের দু ’ বছর ,তিন মাস দশ দিন অতিবাহিত হলো। ১৭তার পর ওমর ইবনে খাত্তাব খেলাফত লাভ করল এবং জিলহজ মাসের শেষ দিকে তেইশ হিজরীতে ‘ আবু লুলু ফিরোজের ’ হাতে নিহত হয়েছিল। তার খেলাফত কাল ছিল দশ বছর ছয় মাস চার দিন। ১৮ওমর নিজের পর খলিফা নির্বাচনের জন্য একটি পরিষদ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল ,যা ওসমান ইবনে আফফানের পক্ষে গিয়েছিল। সে ওমরের পর ,পরিষদের মাধ্যমে চব্বিশ হিজরীর মহরম মাসের প্রথম দিকে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। অতঃপর পয়ত্রিশ হিজরীর জিলহজ মাসে অন্যায় আচরণের কারণে একদল মুসলমানের হাতে নিহত হয়। তার খেলাফত কাল ছিল বার বছর (কয়েকদিন কম)। ১৯মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) স্বেচ্ছাচারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলেন ,যারা তাঁর অধিকার পদদলিত করেছিল এবং ইসলামী বিধান যতটুকু অনুমতি দেয় ,তার সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত যথাসাধ্য প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। একই সাথে বক্তব্য ও দলিলের মাধ্যমে বিষয়টিকে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছিলেন এবং মানুষকে অবহিত করেছিলেন যে ,এরা হলো খেলাফতের অধিকার হরণকারী। বেহেশতে নারীদের নেত্রী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এ ক্ষেত্রে ইমাম আলীর সহকারী ও সহযোগী ছিলেন এবং কার্যক্ষেত্রে আবু বকরের হুকুমতকে অবৈধ বলে বর্ণনা করেছেন।সালমান ,আবু যার ,মেকদাদ ও আম্মার ইয়াসিরের মত প্রিয় নবীর একদল সম্মানিত সাহাবী আবেগময় বক্তব্যের মাধ্যমে আবু বকরের শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন এবং মহানবীর উত্তরসূরী হিসেবে হযরত আলীর অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছিলেন। তবে হযরত আলী (আ.) ইসলামের কল্যাণার্থে ,আর যেহেতু ইসলামের তখনো নব ও বিকাশমান অবস্থা ,এবং তখনও ইসলাম যথেষ্ট পরিমাণে সুস্থিত হয়নি ,সেহেতু তরবারি হাতে তুলে নেন নি বা সমরাগ্নি জ্বালানো থেকে বিরত থেকেছিলেন। (স্বভাবতই এর ফলে ইসলামেরই ক্ষতি হতো এবং মহানবীর সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারত) বরং অপরিহার্য পরিস্থিতিতে আলী (আ.) ইসলামের সম্মান অক্ষুন্ন রক্ষার্থে কোন প্রকার দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে কুন্ঠাবোধ করেন নি। আর তাই দ্বিতীয় খলিফা প্রায়ই বলত :لو لا عليّ لهلك عمر‘ যদি আলী না থাকত তবে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত। ’ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কিংবা অন্য যে কোন সমস্যা যা তাদেরকে হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় করত সেক্ষেত্রে হযরত আলীর সুনির্দেশনা ও সদুপদেশ ,তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করত। সকল ক্ষেত্রে তারা প্রায় আলীর দিকনির্দেশনা ,মহত্ব ও জ্ঞানের কথা তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এখন আমরা এ ধরনের কিছু ঘটনা উল্লেখ করব।হযরত আবু বকরের সময়ইহুদীদের কিছু আলেম আবু বকরের নিকট এসেছিল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল : আমরা তৌরাতে পড়েছি যে নবীর উত্তরসূরী হবে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি ,যদি তুমি এ উম্মতের নবীর উত্তরসূরী হয়ে থাক ,তবে আমাদেরকে বল যে ,আল্লাহ্ কি আকাশে আছেন ,না ভূপৃষ্ঠে ?আবু বকর জবাব দিল : তিনি আকাশে আরশের উপর অধিষ্ঠিত আছেন।তারা বলল : তাহলে ভূপৃষ্ঠে তিনি নেই। সুতরাং জানা গেল যে ,তিনি কোথাও আছেন আবার কোথাও বা নেই।আবু বকর বলল : এটা কাফেরদের কথা। দূর হও ,নতুবা তোমাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিব।তারা ইসলামকে উপহাস করতে করতে ফিরে যাচ্ছিল। হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) তাদের একজনকে ডেকে বললেন : আমি জানি ,তোমরা কী জিজ্ঞাসা করেছ এবং কী জবাব পেয়েছ ;তবে জেনে রাখ যে ইসলাম বলে : মহান আল্লাহ্ স্বয়ং স্থানের অস্তিত্ব দানকারী ,সুতরাং তিনি কোন স্থানে সীমাবদ্ধ নন এবং কোন স্থান তাঁকে ধারণ করতে অক্ষম ;কোন প্রকার সংলগ্ন ও স্পর্শ ব্যতীতই তিনি সর্বত্র বিরাজমান এবং তাঁর জ্ঞান সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে...।ইহুদী পণ্ডিতগণ ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং বললেন : ‘ আপনিই নবীর উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য ,অন্য কেউ নয়। ২০হযরত ওমরের সময়‘ কোদামাত ইবনে মাযয়ূন ’ নামক একব্যক্তি মদ পান করেছিল। ওমর তার উপর শরীয়তের বিধান প্রয়োগ করতে চেয়েছিল ( অর্থাৎ এক্ষেত্রে ৮০ টি চাবুক মারতে হবে ) । কোদামা বলল : আমার উপর চাবুক প্রয়োগ করা অপরিহার্য নয়। কারণ ,মহান আল্লাহ্ বলেন : যারা ঈমান এনেছে এবং সত্য কর্ম করেছে ,তারা যতক্ষণ পর্যন্ত তাকওয়া অবলম্বন ও সৎকর্ম করতে থাকবে ,তারা যা ভক্ষণ করে তার জন্য তাদের কোন আশঙ্কা বা ভয় নেই। ২১ওমর তাকে শাস্তি প্রযোগ থেকে বিরত থাকল। হযরত আলীর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল। তিনি ওমরের নিকট গেলেন এবং ওমরের নিকট জানতে চাইলেন ,কেন আল্লাহর বিধান প্রয়োগ করনি ?ওমর প্রাগুক্ত আয়াতটি পাঠ করল। ইমাম বললেন : কোদামাহ এ আয়াতের অন্তর্ভূক্ত নয়। কারণ ,যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও কল্যাণকর্ম সম্পাদন করে ,তারা আল্লাহর হারামকে হালাল করে না ;কোদামাহকে ফিরিয়ে আন এবং ওকে তওবা করতে বল। যদি তওবা করে তবে তার উপর আল্লাহর বিধান প্রয়োগ কর। নতুবা তাকে হত্যা করতে হবে। কারণ মদ পানের নিষিদ্ধতাকে অস্বীকার করে সে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হয়েছে।কোদামাহ একথা শুনে ফিরে এসে তওবা করল এবং পাপাচার থেকে বিরত থাকল। কিন্তু ওমর জানতো না যে ,তার শাস্তির পরিমাণ কতটুতু হবে। সুতরাং ইমাম আলীর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিল। তিনি বললেন : আশিটি চবুক। ২২হযরত ওসমানের সময়আল্লামা মাজলিসি কাশশাফ ,ছা ’ লাবী ও খতিবের ‘ আরবাইন ’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে ,এক নারী ওসমানের সময় ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। ওসমান ব্যভিচারের হদ জারি করার হুকুম দিল। কারণ ,হতে পারে এ বাচ্চা তার স্বামী থেকে নয় এবং সে পূর্বেই কারো মাধ্যমে অন্তঃসত্তা হয়েছিল। তাই তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল।ইমাম এ ঘটনা শুনে ওসমানকে বললেন : আমি মহান আল্লাহর কিতাব নিয়ে এ ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক করতে চাই। কারণ মহান আল্লাহ্ এক আয়াতে অন্তঃসত্তা থেকে দুগ্ধ পান করানো পর্যন্ত ত্রিশ মাস সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন :) وحمله و فصاله ثلاثون شهرا (গর্ভ ধারণ থেকে স্তন্য পান সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ,সময় হলো ত্রিশ মাস। (সূরা আহকাফ : ১৫)। অন্যত্র স্তন্য পানের সময়কাল ২৪ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।যেমন :) والوالدات يرضعن اولادهنّ حولين كاملين لمن اراد ان يتمّ الرّضاعة (‘ যে স্তন্য কাল পূর্ণ করতে চায় তার জন্য জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাবে (সূরা বাকারা : ২৩৩)। ’অতএব ,যদি নিশ্চিতরূপে চব্বিশ মাস নির্ধারিত হয়ে থাকে ,তবে প্রথম আয়াতের মতে যে গর্ভধারণ ও স্তন্য প্রদানের মোট সময় কাল ত্রিশ মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে ,এতদুভয়ের অন্তর ছয় মাস হয়ে থাকে ,যা গর্ভধারণের সর্বনিম্নকাল। অতএব ,এ নারী কোরআনের মতে কোন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হয়নি...।অতঃপর ওসমানের আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হলো। জ্ঞানীগণ ও আমাদের ফকীহগণ এ দু ’ আয়াত ব্যবহার করেই গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময় কাল ছয় মাস বলে জানেন। অর্থাৎ স্বীয় বৈধ পিতার বীর্য থেকে ছয় মাসে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তা অপেক্ষা কম সময়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে না। হযরত আলীর মতও এরকমই ছিল।হযরত আলীর (আ.)-এর শাহাদাতচল্লিশ হিজরীতে খারেজীদের একদল মক্কায় মিলিত হলো এবং চক্রান্তমূলক পরিকল্পনা করেছিল যে ,হযরত আলীকে ,মুয়াবিয়াকে ও আমর ইবনে আসকে যথাক্রমে কুফা ,শাম ও মিশরে নির্দিষ্ট সময়ে হত্যা করবে। পবিত্র রমযান মাসের ১৯ তারিখের রাত্রে হত্যার তারিখ নির্ধারণ করা হলো। এ পরিকল্পনা কার্যকরী করার জন্য নির্বাহীও যথাক্রমে এরূপে নির্দিষ্ট করা হলো : আবদুর রহমান (মুলজামের পুত্র) হযরত আলীকে হত্যা করবে ,মুয়াবিয়াকে হত্যা করবে হাজ্জাজ (আবদুল্লাহ্ সূরাইমীর পুত্র) এবং আমর আসকে হত্যা করবে আমর (বাকর তামীমীর পুত্র)।এ উদ্দেশ্যে ইবনে মুলজাম কুফায় আসল। কিন্তু কাউকেই সে তার স্বীয় নোংরা উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেনি। একদা একজন খারেজীর গৃহে আশ্রয় নিল। কোতামাহর (সুদর্শনা ও মনোহারীণী রমনী) সাথে সাক্ষাৎ লাভের পর ,তার প্রতি আকৃষ্ট হলো। অতঃপর তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করল। যখন তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল ,সে বলল : ‘ আমার মোহরানা হবে তিন হাজার দেরহাম ,এক গোলাম এবং আলী ইবনে আবি তালিবের হত্যা। ’ কোতামাহ পূর্ব থেকেই নাহরাওয়ানের যুদ্ধে তার পিতা ও ভাই ,হযরত আলীর হাতে নিহত হওয়ার ফলে তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত এবং চরম প্রতিহিংসায় জ্বলছিল। ইবনে মুলজাম ,কোতামাহর কাছে ব্যক্ত করেছিল যে ,ঘটনাক্রমে আমি এ কর্ম সম্পাদনের জন্যেই কুফায় এসেছি ?আর এভাবেই ইবনে মুলজামের পূর্ব পরিকল্পনা কোতামাহর কামাতুর প্রেমের ছোঁয়ায় দৃঢ়তর হলো।অবশেষে সে বিষাদ রজনী উপস্থিত হলো ইবনে মুলজাম তার দু ’ একজন একান্ত সহযোগীর সাথে ,এ কলুষ চিন্তা মাথায় নিয়ে মসজিদে রাত্রিযাপন করল...। ২৩এ বিষাদময় রজনীর ত্রিশ বছরের ও অধিক পূর্বে হযরত আলী (আ.) মহানবীর নিকটে জানতে পেরেছিলেন যে ,তিনি রমযান মাসে শহীদ হবেন। এ ব্যাপারটি হযরত আলীর নিকট শুনবো :...যখন মহানবী (সা.) রমযান মাসের ঐ বিখ্যাত খোতবাটি পাঠ করলেন ,আমি উঠে দাঁড়ালাম ও জানতে চাইলাম : হে আল্লাহর রসূল (সা.)! এ মাসের উৎকৃষ্ট কর্মসমূহ কি কি ?তিনি বললেন : পাপাচার থেকে দূরে থাকা। অতঃপর মহানবী (সা.) বেদনাগ্রস্থ হয়ে কাঁদলেন এবং এ মাসে আমার শাহাদাত সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করলেন...। ২৪ইমামের কথাবার্তা ও আচার-আচরণেও সুস্পষ্ট ছিল যে ,এ মাসে তিনি শাহাদাত বরণ করবেন ,একথা তিনি জানতেন। ঐ বছরেই তিনি বলেছিলেন : ‘ এ বছর হজের সময় আমি তোমাদের মাঝে থাকব না।অনুরূপ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো : কেন ইফতারের সময় সল্প খাবার গ্রহণ করেন ?তখন তিনি বলতেন : খালি পেটে মহান আল্লাহর সাক্ষাতে যেতে চাই। ২৫কিন্তু ঊনিশের রাত্রিতে বিন্দুমাত্র নিদ্রা গ্রহণ করেন নি। অধিকাংশ সময় বলতেন : আল্লাহর শপথ ,মিথ্যা বলব না ও আমাকেও মিথ্যা বলা হয়নি ,‘ অদ্যরজনী সে প্রতিশ্রুত রজনী। ২৬অবশেষে ঐ প্রাতে যখন হযরত আলী (আ.) মসজিদে এলেন। ফজরের নামায পড়া অবস্থায় নিকৃষ্টতম ব্যক্তি ইবনে মুলজামের বিষাক্ত রক্তলোলুপ তরাবারি হযরত আলীর উপর হানা হলো। আর সেই সাথে সত্যের মেহরাবে রঞ্জিত হলো বিভাকর। এর দু ’ দিন পর একুশে রমযানের রাত্রিতে চল্লিশ হিজরী সনে অস্তমিত হলো রঞ্জিত রবি। ২৭তাঁর পবিত্র দেহ নাজাফের পবিত্র মাটিতে সমাহিত করা হলো ,যা আজ মুসলমানদের বিশেষ করে শিয়াদের হৃদয় মণিতে পরিণত হয়েছে।ইমাম যেরূপ আজীবন মহান আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে বেঁচে ছিলেন ,ঐ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার সময়ও আল্লাহর স্মরণেই ছিলেন। ...যখন ইবনে মুলজামের তরবারি তাঁর দীপ্তিময় মাথায় আঘাত হানল ,তখন প্রথম যে কথাটি তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তা হলো :فزت وربّ الكعبة“ কাবার প্রভুর শপথ ,আমি সফলকাম হলাম। ”অতঃপর তাঁকে রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় গৃহে নিয়ে আসা হলো...। শাহাদাতের শয্যায় দু ’ দিন পর চির নিদ্রায় চক্ষু মুদন করলেন। ...তিনি প্রতিটি মুহূর্তে তারপরও মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের চিন্তায় ছিলেন। ...যদি ও ইমাম হাসান (আ.) এবং তদনুরূপ ইমাম হোসাইন (আ.) ও দ্বাদশ ইমাম পর্যন্ত তাঁর সন্তানগণের ইমামত সম্পর্কে নবী (সা.) ও আলী (আ.) থেকে পূর্বেও একাধিক বার বর্ণিত হয়েছিল ,তথাপি কর্তব্য সমাপনার্থে জীবনের অন্তিম লগ্নগুলোতে পুনরায় তা মানুষের জন্য বর্ণনা করলেন...। ২৮অন্তিম বাণীজীবনের শেষ লগ্নগুলোতে সন্তানসন্ততি ও পরিবার-পরিজন এবং মুসলমানদের জন্য এরূপ অসিয়ত করলেন :“ তোমাদেরকে সংযমের দিকে আহবান জানাব এবং তোমরা তোমাদের কর্মগুলোকে বিন্যস্ত কর। সর্বদা মুসলমানদের সংশোধন ও সংস্কারের চিন্তায় থেকো...। অনাথদেরকে বিস্মৃত হয়ো না ;প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণ করো। কোরআনকে জীবনের কর্মসূচী হিসাবে গ্রহণ কর।الله الله في الصّلاة فانّها عمود دينكم“ নামাযকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করো ,যা তোমাদের দ্বীনের স্তম্ভ। ”মহান আল্লাহর পথে তোমাদের ধন-সম্পদ ,বক্তব্য ও জীবন দিয়ে জিহাদ ও ত্যাগ তিতীক্ষা করো।পরস্পর মিলেমিশে থেকো সৎ কর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মে নিষেধ করা থেকে বিরত থেক না। কেননা ,যদি প্রভুর প্রদত্ত এ কর্তব্য পালনে অসচেতন থাক ,তবে সমাজে নিকৃষ্টজন তোমাদের উপর শাসন করবে ,আর তখন যতই তাদেরকে অভিশম্পাত কর না কেন ,তা গৃহিত হবে না। ২৯আল্লাহর সন্তুষ্টি বর্ষিত হোক এ মহান পবিত্র ইমামের উপর। আর অব্যাহত থাকুক তাঁর জন্য পবিত্রগণের ও সৎকর্মশীলদের দরূদ ,যিনি ছিলেন অসাধারণ। আর তিনি তো বিশ্বের বিস্ময় ,বিস্ময়কর তার জীবন ব্যবস্থা ,বিস্ময়কর তার বিদায়।তথ্যসূত্র১ . বিহারুল আনওয়ার ,৩৫তম খণ্ড ,পৃ. ৮।২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৩।৩ . নাহজুল বালাগা ,খোতবা নং ২৩৪- এর কিছু অংশ ,পৃ. ৮০২।৪ . সীরাতে ইবনে হিশাম ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৪৫। অনুরূপ আল গাদীর ,৩য় খণ্ড ,পৃ.২২০-২৪০ তে আহলে সুন্নাতের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহ থেকে অনেক রেওয়ায়েত উল্লিখিত আছে।৫ . তারিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১১৭১-১১৭৪ ,এছাড়া মাজমায়ুল বায়ান ,৭ম খণ্ড ,পৃ. ২০৬ দ্রষ্টব্য।৬ . তাবিখে তাবারি ,৩য় খণ্ড ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।৭ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ১২৩২-১২৩৪।৮ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ২২-২৩।৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৪৩-৪৫।১০ .বিহারুল আনওয়ার ,২০তম খণ্ড ,পৃ. ২০৫।১১ .এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫৭- ৫৮১২ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ১৫-১৬।১৩ . ( النبیُّ اولی بالمؤمنين من انفسهم ) সূরা আহযাব : ৬।১৪ . আল গাদীর ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৯-১১।১৫ . ওসায়েল ,১১তম খণ্ড ,পৃ. ৭৯।১৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮০।১৭ .মুরুজুয যাহাব ,২য় খণ্ড ,পৃ. ২৯৮।১৮ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩০৪।১৯ .প্রাগুক্ত ,পৃ. ৩৩১।২০ . ইহতিজাযে তাবরিসি ,নতুন সংস্করণ ,১ম খণ্ড ,পৃ. ৩১২।২১ . সূরা মায়িদাহ : ৯৩।২২ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৯৭ ।২৩ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৯।২৪ . উয়ুনু আখবারির রিজা ,১ম খণ্ড ,পৃ. ২৯৭।২৫ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ১৫১।২৬ . প্রাগুক্ত ,পৃ. ৮।২৭ . এরশাদ ,শেখ মুফিদ ,পৃ. ৫ ;বিহারুল আনওয়ার ,৪২তম খণ্ড ,পৃ. ২৮১।২৮ . প্রাগুক্ত ।২৯ . নাহজুল বালাগাহ ,২য় খণ্ড ,পৃ. ৪৭ ,দামেস্ক থেকে প্রকাশিত (লক্ষণীয় যে ,এ অসিয়তের মূলবক্তব্য সংক্ষিপ্তাকারে প্রাসঙ্গিকরূপে অনুবাদ করা হয়েছে)।

কাগজ ও কলম নিয়ে এসো” : মহানবী (সা.)খেলাফত কুক্ষিগত করার জন্য তাঁর ঘরের বাইরে যে সব তৎপরতা চলছিল, সে ব্যাপারে মহানবী (সা.) সম্পূর্ণ ওয়াকিব ছিলেন। এ কারণে তিনি মতবিরোধের উদ্ভব ঠেকানো এবং তাঁর মূল ধারা থেকে বিচ্যুতি ঘটার আগেই তা রোধ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর আহলে বাইতের খিলাফতের ভিত্তি লিখিত আকারে মজবুত করবেন এবং খিলাফত প্রসঙ্গে একখানা জীবন্ত দলিল রেখে যাবেন।এ কারণেই যেদিন নেতৃত্বাস্থানীয় সাহাবীগণ তাঁকে দেখার জন্য আসেন, সেদিন তিনি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন : “আমার জন্য কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো, যাতে আমি তোমাদের জন্য কিছু বিষয় লিখে দিতে পারি যেটা দিয়ে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।”১ইবনে আব্বাস এ ঘটনা বর্ণনা করার পর বলেন : “এটাই ছিল ইসলামের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ যে একদল সাহাবীর মত-পার্থক্য ও ঝগড়া-বিবাদ মহানবী (সা.)-এর কাঙ্ক্ষিত পত্র লেখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ালো।”২বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, এর অর্থ ছিল তিনি পত্রের বিষয়বস্তু মুখে বলবেন এবং তাঁর একজন লেখক তা লিপিবদ্ধ করবেন। আর তা না হলে মহানবী (সা.) তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কখনো কলম হাতে নেন নি এবং এক লাইনও লিখেন নি। অধিক স্পষ্ট হওয়ার জন্য আমার প্রণীত ‘দার মাকতাবে ওয়াহী’ গ্রন্থ অধ্যয়ন করুন।এ ঐতিহাসিক ঘটনা একদল সুন্নী ও শিয়া হাদীসবিদ ও ঐতিহাসিক বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসবিদ্যার নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকে তা নির্ভরযোগ্য ও সহীহ বর্ণনাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। একটি বিষয় আছে। আর তা হলো, আহলে সুন্নাতের মুহাদ্দিসগণ প্রধানত হযরত উমরের উক্তি অর্থগতভাবে উদ্ধৃত করেছেন অর্থাৎ তাঁরা তাঁর ধৃষ্টতামূলক উক্তির মূল পাঠ ব্যক্ত করেন নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, হযরত উমরের উক্তি উদ্ধৃত করা থেকে বিরত থাকা এজন্য নয় যে, ধৃষ্টতার কথা উল্লেখ করা আসলে মহানবী (সা.)-এর প্রতি এক ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন; বরং দ্বিতীয় খলীফার মর্যাদা রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তাঁর উক্তিতে হাত দেয়া হয়েছে এবং পরিবর্তন করা হয়েছে, পাছে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাঁর অবমাননাকর উক্তি শুনে তাঁর ব্যাপারে হতাশ না হয় (এবং কুধারণা পোষণ না করে)।এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ‘আস সাকীফাহ্’ গ্রন্থের রচয়িতা আবু বকর জওহারী যখন তাঁর গ্রন্থে এ অধ্যায়ে উপনীত হন, তখন তিনি হযরত উমরের উক্তিটি এভাবে বর্ণনা করেন :و قال عمر كلمة معناها أنّ الوجع قد غلب علي رسول الله“এবং হযরত উমর একটি কথা বলেন, যার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহর ওপর রোগ-যন্ত্রণা প্রবল হয়েছে।”৩তবে আহলে সুন্নাতের হাদীসবেত্তাদের মধ্য থেকে যখন কেউ কেউ দ্বিতীয় খলীফার উক্তির মূল পাঠ হুবহু উদ্ধৃত করতে চান, তখন তাঁরা তাঁর সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ থেকে বিরত থাকেন এবং এতটুকু লিখেন : فقالوا هجر رسول الله “অতঃপর তারা বলল : রাসূলুল্লাহ্ রোগের কারণে প্রলাপ বকেছেন।”৪নিশ্চিতভাবে এ ধরনের অশালীন ও জঘন্য উক্তি যে কোন ব্যক্তিরই হয়ে থাকুক না কেন, তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়। কারণ পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য অনুসারে মহানবী (সা.) সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষিত এবং তিনি ওহী ছাড়া কোন কথা বলেন না।নিষ্পাপ নবীর সান্নিধ্যে সাহাবীদের বিবাদ এতটা বিরক্তিকর ও মনোকষ্টের কারণ হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কয়েকজন স্ত্রী পর্দার অন্তরাল থেকে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন : “কেন আপনারা মহানবীর নির্দেশ অমান্য করছেন?” দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর তাঁদেরকে চুপ করানোর জন্য বলেছিলেন : “আপনারা হযরত ইউসুফের সঙ্গীদের স্ত্রীদের সদৃশ। যখন মহানবী অসুস্থ হন, তখন আপনারা তাঁর জন্য নিজেদের নয়নগুলোয় চাপ দেন (অশ্রুপাত করেন) এবং যখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন, তখন আপনারা তাঁর ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।”৫কতিপয় গোঁড়া ব্যক্তি বাহ্যত দ্বিতীয় খলীফার বিরুদ্ধাচরণের পক্ষে কিছু অজুহাত দাঁড় করিয়েছেন।৬ তবে যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আসলে তাঁরা তাঁকে এ কাজের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছেন এবং حسبنا كتاب الله (মহান আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ পবিত্র কুরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট)- তাঁর এ উক্তিকে তাঁরা অসার গণ্য করেছেন এবং সবাই স্বীকার করেছেন, ইসলাম ধর্মের দ্বিতীয় মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর সুন্নাত এবং পবিত্র কুরআন কখনোই উম্মতকে মহানবীর হাদীস ও বাণীসমূহের ব্যাপারে অমুখাপেক্ষী করে নি।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ‘মুহাম্মদের জীবনী’ গ্রন্থের রচয়িতা ড. হাসানাইন হাইকাল ইশারা-ইঙ্গিতে দ্বিতীয় খলীফার এ কাজ সমর্থন করে লিখেছেন : “এ ঘটনার পর ইবনে আব্বাস বিশ্বাস করতেন, মহানবী (সা.) যে বিষয়টি লিখে দিতে চাচ্ছিলেন, তা লেখার ক্ষেত্রে বাধা দান করে মুসলমানরা আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে হারিয়েছে। কিন্তু হযরত উমর তাঁর বিশ্বাসের ওপর বহাল থেকেছেন। কারণ মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন :)ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء(“আমরা পবিত্র কুরআনে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ সবকিছু এ গ্রন্থে বর্ণনা করেছি)।”৭তিনি যদি এ আয়াতের আগের ও পরের অংশের দিকে দৃষ্টি দিতেন, তা হলে তিনি কখনোই এ আয়াতের এ রকম অপব্যাখ্যা করতেন না এবং নিষ্পাপ মহানবীর বিপরীতে হযরত উমরের এ কাজ সমর্থন করতেন না। কারণ আয়াতে উল্লিখিত কিতাব বা গ্রন্থের অর্থ বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ এবং অস্তিত্বের পত্রসমূহকে বোঝানো হয়েছে। আর এ অস্তিত্বজগতের প্রতিটি সৃষ্টি আসলে সৃষ্টিগ্রন্থের এক একটি পৃষ্ঠা এবং সমগ্র সৃষ্টি এ সৃষ্টিগ্রন্থের সমুদয় পৃষ্ঠাতুল্য।)و ما من دابّة فِى الأرض و لا طائر يطير بجناحيه الّا أمم أمثالكم ما فرّطنا فِى الكتاب من شىء ثمّ الى ربّهم يُحشرون(“পৃথিবীতে (বিচরণকারী) প্রতিটি জীব-জন্তু এবং (আকাশে) স্বীয় ডানা মেলে উড্ডয়নকারী প্রতিটি বিহঙ্গ তোমাদের মতোই এক একটা প্রজাতি (أمم), আমরা (সৃষ্টি) গ্রন্থে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি (অর্থাৎ আমরা এ সৃষ্টিলোকে যা যা সৃষ্টি করা সম্ভব, সেগুলো সবই সৃষ্টি করেছি) এবং সব কিছুই তাদের প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে।” (সূরা আনআম : ৩৮)যেহেতু ‘আমরা এ গ্রন্থের মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করি নি’- এ বাক্যের আগের বাক্য ‘জীবকূল ও পক্ষীকূল’ সৃষ্টি করার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এর পরের বাক্য কিয়ামত দিবসে পুনরুজ্জীবিত করণ প্রক্রিয়া বা হাশরের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু নিশ্চিত করে বলা যায়, আয়াতে উল্লিখিত ‘গ্রন্থ’ যার মধ্যে কোন কিছুই উপেক্ষা করা হয় নি, তা বলতে গ্রন্থবৎ প্রকৃতিজগৎ (সৃষ্টিগ্রন্থ) এবং অস্তিত্বের পত্রকেই বোঝানো হয়েছে।অধিকন্তু আমরা যদি মেনেও নিই যে, আয়াতের ‘গ্রন্থ’ শব্দ আসলে পবিত্র কুরআন, তা হলে পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুসারে এ গ্রন্থ বোঝার জন্য মহানবী (সা.)-এর ব্যাখ্যা ও দিক-নির্দেশনা আবশ্যক।)و أنزلنا إليك الذّكر لتبيّن للنّاس ما نزل إليهم(“আর আমরা আপনার কাছে এ ‘স্মরণ’ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি জনগণের কাছে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেন।” (সূরা নাহল : ৪৪)এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ্ এ আয়াতে لتقرأ অর্থাৎ ‘যাতে আপনি পাঠ করেন’ বলেন নি, বরং তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন لتبيّن অর্থাৎ ‘যাতে আপনি ব্যাখ্যা করেন’। সুতরাং মহান আল্লাহর গ্রন্থই যদি মুসলিম উম্মাহর জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে, তবুও মহানবী (সা.) প্রদত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি এ গ্রন্থের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে।৮উম্মত যদি এ ধরনের দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্রের মুখাপেক্ষী না-ই হতো, তা হলে যখন ইসলাম ধর্মের প্রখ্যাত বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ইবনে আব্বাস (রা.)-এর গণ্ডদেশ বেয়ে মুক্তার মতো অশ্রুবিন্দু ঝরতে থাকত, তখন কেন তিনি বলতেন :يوم الخميس و ما يوم الخميس ثمّ جعل تسيل دموعه حتّي رؤيت علي خدّيه كأنها نظام اللؤلؤ قال رسول الله : ايتونِى بالكتف و الدّواة أو اللوح و الدّواة اكتب لكم كتاباً لن تضلّوا بعده ابداً فقالوا...“হায় বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এরপর তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল; আর তাঁর গণ্ডদেশদ্বয়ের উপর তা মুক্তার মতো দেখা যাচ্ছিল। তিনি বললেন : মহানবী (সা.) বলেছেন : আমার কাছে তোমরা কাঁধের হাড় ও দোয়াত বা কাগজ ও দোয়াত নিয়ে এসো। তা হলে আমি তোমাদের জন্য এমন একটি পত্র (নির্দেশনামা) লিখে দেব যে, এরপর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। অতঃপর একদল লোক বলল : রাসূলুল্লাহ্ (সা.)”৯ ...এ ধরনের তীব্র শোক যা ইবনে আব্বাস প্রকাশ করেছেন, তা সত্বেও এবং মহানবী (সা.) নিজেই যে তাকীদ দিয়েছেন তার ভিত্তিতে কিভাবে এ কথা বলা সম্ভব যে, পবিত্র কুরআন মহানবী (সা.)-এর এ পত্রের প্রতি মুসলিম উম্মাহকে অমুখাপেক্ষী করেছে?এখন যখন মহানবী (সা.) এ ধরনের একটি নির্দেশনামা লিপিবদ্ধ করাতে পারলেন না, তখন অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিলের ভিত্তিতে কি ধারণা করা সম্ভব যে, এ নির্দেশনা লেখানোর পেছনে মহানবীর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? এ পত্রের বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য কী ছিল?পবিত্র কুরআন তাফসীর করার ক্ষেত্রে নতুন অথচ দৃঢ় পদ্ধতি,- যা বর্তমানে সকল গবেষক ও আলেমের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে,- হচ্ছে কোন একটি বিষয়ে অবতীর্ণ আয়াতের দ্ব্যর্থবোধকতা ও সংক্ষিপ্ততা ঐ একই বিষয়ে অবতীর্ণ অপর কোন আয়াতের মাধ্যমে দূর করা হয়, যা অর্থ নির্দেশের ক্ষেত্রে প্রথমটির চেয়ে অধিকতর স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর পারিভাষিক অর্থে আমরা এভাবে পবিত্র কুরআনের আয়াতকে অপর এক আয়াতের সাহায্যে তাফসীর (ব্যাখ্যা) করি।এ পদ্ধতি পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ ব্যাখ্যার সাথেই একান্তভাবে শুধু সংশ্লিষ্ট নয়, বরং হাদীসসমূহের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য। তাই এক হাদীসের সাহায্যে অনুরূপ আরেক হাদীসের সংক্ষিপ্ততা ও দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করা যায়। কারণ আমাদের মহান ইমামগণ সংবেদনশীল ও দৃষ্টি আকর্ষণীয় বিষয়াদির ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপকারী ও পুনরাবৃত্তিমূলক অনেক বক্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, যার সবই অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশের ক্ষেত্রে একই ধাঁচের ও একই পর্যায়ের নয়; কখনো কখনো সেসব অর্থ ও লক্ষ্য নির্দেশ করার ক্ষেত্রে পরিষ্কার; আবার কখনো কখনো পরিবেশ-পরিস্থতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অর্থ ও লক্ষ্য ইশারা-ইঙ্গিতে বর্ণনা করতে হয়েছে।বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) রোগশয্যায় শায়িতাবস্থায় একটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য সাহাবীগণকে কাগজ-কলম আনার নির্দেশ দেন এবং তিনি তাঁদের স্মরণ করিয়েও দেন, এ নির্দেশনামার কারণে তারা কখনো পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতির মধ্যে পড়বে না।১০ অতঃপর মহানবীর সান্নিধ্যে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তিনি ঐ চিঠি বা প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা সম্বলিত পত্র লেখানো থেকে বিরত থাকেন।এ ক্ষেত্রে কেউ হয় তো প্রশ্ন করতে পারে, যে পত্র মহানবী (সা.) লেখাতে চেয়েছিলেন, তা কী প্রসঙ্গে ছিল। এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। কারণ আলোচনার শুরুতে আমরা যে মূলনীতি উল্লেখ করেছি, তার আলোকে অবশ্যই বলা যায়, আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর ওয়াসায়াত এবং খিলাফত দৃঢ়ীকরণ এবং তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার অপরিহার্যতা তুলে ধরা ছাড়া মহানবীর আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আর এ বিষয় হাদীসে সাকালাইন বিবেচনায় আনলে স্পষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ্য, হাদীসে সাকালাইনের ব্যাপারে শিয়া-সুন্নী সকল হাদীসবিশারদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। কারণ মহানবী (সা.) যে পত্র লিখাতে চেয়েছিলেন, সে ব্যাপারে বলেছেন : “যাতে তোমরা আমার পরে পথভ্রষ্ট না হও, সেজন্য আমি এ পত্রটি লিখাচ্ছি।” আর হাদীসে সাকালাইনেও তিনি হুবহু এ বাক্যই (অর্থাৎ আমার পরে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না) বলেছেন এবং কিতাব ও তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার কারণ তিনি এটাই বিবেচনা করেছেন যে, এ দুই মূল্যবান ও ভারী বিষয়ের অনুসরণই হচ্ছে পথভ্রষ্ট না হবার কারণ।انّى تارك فيكم الثّقلين ما ان تمسّكتم بِهما لن تضلّوا : كتاب الله و عترتى اهل بيتِى“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন পর্যন্ত এ দু’টি তোমরা আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন পর্যন্ত তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুই অতি মূল্যবান জিনিস হচ্ছে : মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধর (ইতরাত)।”এ দুই হাদীসের১১ শব্দমালা এবং এদের মধ্যে বিদ্যমান সাদৃশ্য বিবেচনায় আনলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব নয় কি যে, কাগজ ও কলম চাওয়ার পেছনে মহানবীর উদ্দেশ্য ছিল হাদীসে সাকালাইনের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু বা এর অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তুর চেয়েও উন্নত কিছু লিপিবদ্ধ করা; আর তা ছিল মহানবীর প্রত্যক্ষ ওয়াসী ও উত্তরাধিকারীর বেলায়েত (নেতৃত্ব) এবং ওয়াসায়াত দৃঢ়ীকরণ যা ১৮ যিলহজ্ব ইরাক, মিশর ও হিজাযের হাজীগণের পৃথক হবার স্থান গাদীরে খুমের মহাসমাবেশে মৌখিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল?এছাড়াও যে ব্যক্তি মহানবীর ওফাতের পরপর সাকীফায়ে বনী সায়েদায় খিলাফতের জন্য শূরা বা পরামর্শসভার আয়োজন করে নিজের পুরনো বন্ধুকে বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে খিলাফতের জন্য প্রার্থী করেছিলেন এবং তাঁর বন্ধু নিজের মৃত্যুকালে তাঁকে তাঁর সেবার নগদ পুরস্কারও দিয়েছিলেন এবং তাঁকে সকল মূলনীতির বিপরীতে খিলাফতের জন্য মনোনীত করেছিলেন, সেই ব্যক্তির দুর্দমনীয় বিরোধিতা এ বিষয়ের সাক্ষী যে, মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা এবং তাঁর কাছে সাহাবীগণের এ সমাবেশে এমন কিছু প্রমাণ বিদ্যমান ছিল, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, মহানবী (সা.) খিলাফত ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্বভারের ব্যাপারে কিছু কথা লিখাতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তিনি (হযরত উমর) কাগজ-কলম আনার ব্যাপারে বিরোধিতা করেন। আর তা না হলে এতটা জবরদস্তির কোন কারণ থাকত না। মহানবী (সা.) কেন এ পত্র লেখার ব্যাপারে আর তাকীদ দিলেন না?মহানবী (সা.) যিনি তাদের বিরোধিতা সত্বেও নিজ সচিবকে ডেকে এ পত্র লেখাতে পারতেন, তিনি কেন (ঐ পত্র লেখানোর ক্ষেত্রে) শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত থাকলেন?এ প্রশ্নের উত্তরও সুস্পষ্ট। কারণ মহানবী (সা.) যদি এ পত্র লেখার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করতেন, তা হলে যারা বলেছিলেন যে, ‘রোগযন্ত্রণা মহানবীর ওপর প্রবল হয়েছে’, তারাই মহানবীর সাথে আরো বেয়াদবীর চরম স্পর্ধা প্রদর্শন করত এবং তাদের সমর্থকরাও জনগণের মধ্যে তা রটনা করে তাদের দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করত। এ অবস্থায় মহানবীর শানে বেয়াদবীপূর্ণ আচরণের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পেত ও অব্যাহত থাকত, তেমনি মহানবীর পত্রের কার্যকারিতাও আর থাকত না। এ কারণেই কেউ কেউ যখন তাদের বেয়াদবী ও মন্দ আচরণ লাঘব করার জন্য মহানবীর কাছে বলেছিলেন : “আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, আমরা কাগজ-কলম নিয়ে আসি?” তখন তাঁর চেহারা প্রচণ্ড উষ্মায় ফেটে পড়ছিল, তা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাদের বলেছিলেন : “এতসব কথা-বার্তার পর তোমরা কাগজ-কলম আনতে চাচ্ছ? কেবল এতটুকু তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি যে, আমার বংশধরদের সাথে সদাচরণ করবে।” এ কথা বলে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং আলী, আব্বাস ও ফযল ব্যতীত তারা সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায়।১২ অন্তিম পত্র লিখতে না পারার ক্ষতিপূরণ প্রচেষ্টাকতিপয় সাহাবীর প্রকাশ্য বিরোধিতা যদিও মহানবীকে পত্র লেখার অভিপ্রায় পরিত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল, তবুও তিনি ভিন্ন এক পদ্ধতিতে তাঁর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছিলেন এবং ইতিহাসের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মহানবী (সা.) রোগযন্ত্রণায় প্রচণ্ড কষ্ট পাওয়া সত্বেও এক হাত আলীর কাঁধে এবং অন্য হাত মায়মুনার কাঁধের উপর রেখে মসজিদের দিকে গমন করেন এবং প্রাণশক্তি নিঃশেষকারী তীব্র কষ্ট সহ্য করেও তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন। জনতার নয়ন অশ্রুজলে ভিজে গিয়েছিল এবং মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সুমসাম নীরবতা বিরাজ করছিল। জনতা তখন মহানবীর সর্বশেষ বাণী ও উপদেশাবলী শোনার অপেক্ষা করছিল। মহানবী (সা.) সভাস্থলের নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন : “আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি।” ঐ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল : “ঐ দুই মূল্যবান জিনিস কী?” (উষ্মায়) মহানবীর মুখমণ্ডল প্রজ্বলিত হয়ে উঠল এবং তিনি বললেন : “আমি নিজেই এর ব্যাখ্যা দেব; তাই প্রশ্ন করার কোন কারণ নেই।” অতঃপর তিনি বললেন : “এক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং অন্যটি আমার বংশধর।”১৩ইবনে হাজর আসকালানী ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আরেকভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এ দু’টি বর্ণনাই১৪ সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। তিনি লিখেছেন : “মহানবী (সা.) যখন অসুস্থ তখন কোন একদিন যখন সাহাবীগণ তাঁর বিছানার চারপাশ ঘিরে রেখেছিলেন, তখন তিনি তাঁদের দিকে মুখ করে বলেছিলেন : হে লোকসকল! আমার অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে এবং খুব শীঘ্রই আমি তোমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেব। তোমরা জেনে রাখ, আমি তোমাদের মধ্যে মহান আল্লাহর কিতাব এবং আমার বংশধরদের রেখে যাচ্ছি। এরপর তিনি হযরত আলীর হাত ধরে তা উঁচুতে তুলে বললেন :هذا علىّ مع القرآن و القرآن مع علىّ لا يفترقان-এই আলী পবিত্র কুরআনের সাথে এবং পবিত্র কুরআন আলীর সাথে আছে। এরা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”১৫মহানবী (সা.) যদিও তাঁর অসুস্থ হওয়ার আগে একাধিক উপলক্ষে১৬ হাদীসে সাকালাইন বিভিন্ন আঙ্গিক ও ভাষাগত অবয়বে বর্ণনা করেছিলেন এবং এ দুই অতি মূল্যবান বিষয়ের প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, তবু যেহেতু তিনি রোগশয্যায় শায়িত হয়ে আবারও পবিত্র কুরআন ও তাঁর বংশধরদের (ইতরাত) আঁকড়ে ধরে থাকার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি তাঁর অন্তিম পত্র লেখার ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই উপস্থিতিতে তিনি পবিত্র কুরআন ও ইতরাতের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সেহেতু ধারণা করা যায়, হাদীসে সাকালাইনের পুনরাবৃত্তিই ছিল ঐ অন্তিম পত্রের শূন্যতা পূরণ করা, যা তিনি লিখতে পারেন নি। তথ্যসূত্র :১. ايتونِى بدواة و صحيفة اكتب لكم كتابا لا تضلّون بعده২. সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২ এবং ২য় খণ্ড, পৃ. ১৪; সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৪; মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩২৫ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৪৩. ইবনে আবীল হাদীদ প্রণীত শারহু নাহজিল বালাগাহ্, ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৪. সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪ এবং মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৫৫. কানযুল উম্মাল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৩৮ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৪৬. মরহুম মুজাহিদ আল্লামা সাইয়্যেদ শারাফুদ্দীন তাঁর ‘আল মুরাজায়াত’ গ্রন্থে তাঁদের সকল অজুহাত উল্লেখ করে সেগুলো আকর্ষণীয়ভাবে খণ্ডন করেছেন।৭. মুহাম্মদের জীবনী, পৃ. ৪৭৫৮. মহানবী (সা.) প্রদত্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতি পবিত্র কুরআনের মুখাপেক্ষিতার সীমা বর্ণনা করা আমাদের এ আলোচনার গণ্ডির বাইরে। আমরা ‘পবিত্র কুরআনের জটিল আয়াতসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা’ এবং মানসূরে জভীদ গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে এ সংক্রান্ত আলোচনা করেছি।৯. মুসনাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৫১০. اكتب لكم كتاباً لن تضلّوا بعده ابداً আমি তোমাদের একটি পত্র লিখে দেব যার পরে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আপনারা যদি লক্ষ্য করেন, তা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, মহানবী (সা.) لن تضلّوا (তোমরা আর কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না)-এ বাক্যের দ্বারা তাঁর পত্র লেখার কারণ ব্যক্ত করেছেন।১১. হাদীসে সাকালাইন ও কাগজ-কলমের হাদীস১২. বিহারুল আনওয়ার, ২২তম খণ্ড, পৃ. ৪৬৯ এবং শেখ মুফীদ প্রণীত কিতাব আল ইরশাদ এবং তাবারসী প্রণীত আলামুল ওয়ারা১৩. বিহারুল আনওয়ার, ২২তম খণ্ড, পৃ. ৪৭৬১৪. প্রথম বর্ণনা ও রেওয়ায়েত বিহারুল আনওয়ারের ২২তম খণ্ডের ৪৭৬ পৃ. থেকে উদ্ধৃত এবং দ্বিতীয় বর্ণনা ইবনে হাজর আসকালানী বর্ণিত।১৫. আসসাওয়ায়েক আল মুহরিকাহ্, ৯ম অধ্যায়, পৃ. ৫৭ এবং কাশফুল গাম্মাহ্, পৃ. ৪৩১৬. হাদীসে সাকালাইন শিয়া-সুন্নী হাদীসবিদগণ যে সব হাদীস ও রেওয়ায়েতের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন, সেসবের অন্তর্ভুক্ত। এ হাদীস ৬০টিরও অধিক সূত্রে মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে হাজার আসকালানী আস সাওয়ায়েক আল মুহরিকাহ্ গ্রন্থের ১৩৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : “মহানবী (সা.) বিভিন্ন উপলক্ষ, যেমন আরাফাতের দিবসে, গাদীরে খুমের দিবসে, তায়েফ নগরী থেকে প্রত্যাবর্তনের পর, এমনকি রোগশয্যায় শায়িত অবস্থায়ও পবিত্র কুরআন ও তাঁর ইতরাতের সাথে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।”মরহুম মীর হামেদ হুসাইন হিন্দী তাঁর গ্রন্থের একটি অংশে হাদীসে সাকালাইনের সনদসমূহ এবং এর অর্থের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রেখেছেন এবং এসবের সমগ্র সম্প্রতি ৬ খণ্ডে ইসফাহান থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। মিশরের ‘দারুত তাকরীব’ সংস্থার (ইসলামী মাযহাবসমূহকে নিকটবর্তী করার সংস্থা) পক্ষ থেকে ১৩৭৪ হিজরীতে এ হাদীস সংক্রান্ত একটি সন্দর্ভ প্রকাশ করা হয়েছিল। এ সন্দর্ভে সনদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ হাদীসের গুরুত্ব এবং সকল শতকে এ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের বিশেষ দৃষ্টি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।লা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিনবেশুমার লানত বর্ষিত হোকনিবেদক_____ রাকিব আলী ইমামি

প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাহাদীসে কুদ্সীর মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মহান আল্লাহ পাক তাঁর নিজ পরিচয় প্রকাশের নিমিত্তে সর্ব প্রথম‘ নূর-এ-মোহাম্মদ’ -কে সৃষ্টি করেছেন। অপর আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ৪১উল্লিখিত হাদীস দুটিতে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হচ্ছে মহান সৃষ্টিকর্তার অনন্ত বিশালতা সম্পর্কে অবগত হওয়া , সর্বজ্ঞানের নগরী নবী মোহম্মদ (সা.) ব্যতীত যেমন আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তদ্রুপ মহানবী (সা.)-এর শান ও মান বোঝার যোগ্যতা এক আল্লাহ ব্যতীত মানুষ তো দূরের কথা অনেক নবী (সা.)-এর পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ , আরেকটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন ,“ হে আলী আমাকে কেউ চিনতে/বুঝতে পারেনি তুমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। তোমাকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং আল্লাহ ব্যতীত। আর আল্লাহকে কেউ বুঝতে পারেনি আমি এবং তুমি ব্যতীত” ।৪২উল্লিখিত হাদীসটি জানার পর আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়ি। হযরত আলীর নবী (সা.)-এর সমজ্ঞান আছে কি ? অতঃপর যখন নিন্মোক্ত হাদীস দু’ টি জানতে পারলাম তখন আমার ঐ ভুল ধারণাটি দূর হলো।নবী (সা.) বলেছেন ,“ আমি এবং আলী একই নূরের দুটি টুকরো” ।“ আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছে তার দরজা।” ৪৩আমি পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি প্রকৃত সত্য উদঘাটনে আমাদেরকে কোরআন হাদীস ও সেই সমসাময়িক ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকে যাচাই বাছাই করতে হবে। এখন আমি একটি বহুল প্রচারিত হাদীসের বর্ণনা করছি। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত :“ রাসূল (সা.) বলেছেন বনী ইস্রাইলীরা ৭২ ফেরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩ ফেরকায় তন্মধ্যে মাত্র একটি ফেরকা হবে নাজাতপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। তাছাড়া সবগুলো ফেরকা হবে জাহান্নামী।” ৪৪উল্লিখিত হাদীসের আলোকে পাঠকের দৃষ্টি-আকর্ষণ করছি :· আমরা কি কখনও নিজেদের যাচাই করে দেখেছি , আমার অবস্থান বাহাত্তরে না একে ?· যাচাইয়ের পথতো সর্বদা উন্মুক্ত এখন শুধু আমাদের ইচ্ছা প্রকাশের প্রয়োজন। যেমন· আমরা কি কোরানের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি ?· আমরা কি সে সকল হাদীস অনুসরণ করি যার সাথে কোরআনের সম্পৃক্ততা রয়েছে ?· আমরা কি হারাম হালাল বিবেচনা করি ?· আমরা কি সুদ-ঘুষ থেকে নিজেকে রক্ষা করি ?· আমরা কি অপরাধ দুর্নীতি থেকে দূরে থাকি ?· আমরা কি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করি ?· আমারা কি আইনের শাসন ও অপরাধী দমনে সক্রিয় ?· আমরা কি সত্য প্রকাশের ভূমিকা ও মিথ্যা প্রচারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করি ?· আমরা কি সত্য ও মিথ্যা এক করে দিই ?· আমরা কি সত্যকে গোপন করি ?· আমরা কি অঙ্গীকার কিংবা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি ?· আমরা কি ন্যায় বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ?· আমরা কি স্বজনপ্রীতি আর সুযোগসন্ধানী থেকে মুক্ত ?· আমরা কি নিজ ত্রুটি সংশোধন না করে অন্যের ত্রুটি প্রচার থেকে সরে আসতে পেরেছি ?· আমাদের কথা এবং কাজে মিল আছে কি ?· আমরা কি নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কিছু করতে পেরেছি ?· আমরা কি নিজেকে ছাড়া দেশ ও দশের কথা ভাবি কখনো ?এই সকল প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই ১৪শ বছর পূর্বেই পবিত্র কোরআনে প্রকাশ করেছেন। অথচ এর মর্মবাণী অধিকাংশ মানুষ উপলব্ধি করেননি। আর ভুলে গেছেন আল্লাহর মনোনীত মহান ইমামদের। যে কারণে আমাদের সমাজ দেশ তথা সারা বিশ্বে অশান্তি , নৈরাজ্য , দুর্নীতি , চাঁদাবাজি , সুদ-ঘুষের অবাধ প্রচলন , নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি , শাসনের নামে শোষণের উপস্থিতি , ব্যবসার নামে প্রতারণা , আমানতের খেয়ানত ও জালিয়াতির নব নব কৌশল আবিষ্কার , মানবতার মূল্যবোধের অবক্ষয় , শিষ্টাচার হীনতা , বেলাল্লাপনার প্রচার ও প্রসার সহ নানাবিধ অনৈতিক অবক্ষয়ে আমরা জর্জরিত।যদি ধর্ম কিংবা নীতি বলতে আমাদের মধ্যে কিছু থেকে থাকে তবে কেন এত বিপর্যয় ? সত্যি কথা বলতে কি আমাদের মধ্যে ধর্মের শুধু নামটাই বিদ্যমান আছে। এর অন্ত:র্নিহীত কার্যক্রম অর্থাৎ সততা , ন্যায়-নিষ্ঠা , পাপ কর্মের ভয় ও খোদাভীরুতা বহু পূর্বেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। এর প্রমাণ মেলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে। যেমন , দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধারের আগমণ পর্যন্ত যদি শুধু এইটুকু সময় আমারা নিজেরা নিজেদের কর্মকাণ্ড খাতায় লিপিবদ্ধ করি , তবে দেখতে পাব আমি প্রতিদিন কত মিথ্যা কর্মে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর এদিক থেকে আমরা বরাবরই দুর্ভাগা। রমজানের আগমণের পূর্বেই আমাদের ব্যবসায়ীগণ দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেন তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ আমাদের অনুরূপ নয়। দুখঃজনক হলেও সত্য যে , আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ যেন মামুলি ব্যপার। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা বিরল। গানে কিংবা কবিতায় আমরা নিজেদের যেভাবে তুলে ধরি বাস্তবে যদি তাই হোতো , তবে কতই না সুন্দর হোতো। বাস্তবতা এটাই। আমাদের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে অপরাধ-দুর্নীতির মতো কোনো না কোন জটিল সমস্যা নেই। আর সমস্যা তো মানুষেরই সৃষ্ট। কবে আমরা এমন সব সমস্যা হতে মুক্ত হবো তা কেবল আল্লাহ পাকই জানেন।পবিত্র কোরআনে নামাজের বিষয়ে বেশ কয়েকবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের সকলেরই নামাজে মনোযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে , যদি আমরা নামাজী হয়ে যাই তাহলে আমাদের উচিৎ এতিম , মিসকীনদের সাহায্য করা এবং লোক দেখানো নামাজ না পড়া। আর অবশ্যই মন্দ কথা কিংবা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা অনেকেই দু’ টাই সমান্তরালে করে যাচ্ছি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐসকল নামাজী যখন নামাজ শেষে হাট-বাজারে কিংবা তাদের কর্মস্থলে এসে নিত্য কর্মে যোগ দেন , তাদের তখনকার আচার-আচরণ থেকেই তা প্রকাশিত হয়। আর অনূরূপ নামাজীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পূর্ব থেকেই অবগত।তাই তিনি সূরা মাউনের ৪-৬ নং আয়াতে তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন এভাবে :) فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ(“ ধিক সেই সব নামাজীর প্রতি , যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বে-খবর। যা তারা লোক দেখানোর জন্য করে” ।তাই আমাদের সকলের নামাজ ও কর্ম সেরূপ হওয়া বাঞ্ছণীয় যেন আমরা হতে পারি আল্লাহর করুণা প্রত্যাশী , ধিক্কারের অধিকারী নয়।মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক যে সকল আয়াত নাজিল করেছেন তার কিছু অংশ পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করছি :১) এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। পরহেজগারদের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শন ; যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে , নামাজ কায়েম করে এবং তাদেরকে যে রুযী দান করা হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে এবং আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে ও আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে যারা বিশ্বাস করে ও পরকালে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই নিজেরদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত , তাঁরাই সফলকাম। (সূরা-২: আয়াত- ৫)২) তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিয়ো না এবং জেনে শুনে সত্যকে গোপন করো না। আর নামাজ কায়েম করো , যাকাত প্রদান করো এবং অবনত হও তাদের সাথে , যারা অবনত হয়। (২ : ৪২-৪৩)৩) সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সেই সমস্ত বিনয়ী লোকগণ ব্যতীত , যারা এ কথা বিশ্বাস করে যে , তাদেরকে উপস্থিত হতে হবে স্বীয় পালনকর্তার সামনে এবং তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে। (২ : ৪৫-৪৬)৪) তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (৫ : ১৫)৫) তোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন , আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সেই সব ঈমানদার ব্যক্তি যারা নামাজ কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে রুকু অবস্থায়। (৫ : ৫৫)৬) হে রাসূল পৌঁছিয়ে দিন , আপনার রবের পক্ষ থেকে যা আপনাকে বলা হয়েছে। যদি আপনি তা না পৌঁছান , তবে আপনার রেসালাতের কাজ পরিপূর্ণ হলো না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চই আল্লাহ কাফেরদেরকে হেদায়েত প্রদান করেন না। (৫ : ৬৭)৭) আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম , আমার নিয়ামত দ্বারা এবং ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (৫ : ৩)৮) নামাজের ধারে কাছেও যেয়ো না নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। (৪ : ৪৩)৯) হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন। হে ঈমানদারগণ তোমরা নবী (সা.)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ আচরণ করো। তাঁর সাথে সেরূপ আচরণ করো না। এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমরা টের পাবে না। (৪৯ : ১-২)১০) সৎ কাজে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে এগিয়ে যাও। তোমরা যেখানেই থাকবে , অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমতাশীল। (২ : ১৪৮)১১) সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর , আমিও তোমাদের স্মরণ করব এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর , অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিনগণ , তোমরা ধৈর্যের সাথে নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় , তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না বরং তারা জীবিত , কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় , ক্ষুধা , জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। (২ : ১৫২-১৫৫)১২) হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার করো। যেগুলি আমি তোমাদের রুজী হিসেবে দান করেছি এবং শূকরিয়া আদায় করো আল্লাহর , যদি তোমরা তারই বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জীব , রক্ত , শুকরের মাংস এবং যেসব জীবজন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক নিরুপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয় , তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল , অত্যন্ত দয়ালু। (২ : ১৭২-১৭৩)১৩) সৎকর্ম শুধু এই নয় যে , পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে , বরং সৎকাজ হলো এই যে , ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর , কেয়ামত দিবসের ওপর , ফেরেস্তাদের ওপর , সকল কিতাবের ওপর এবং সমস্ত নবী রাসূলগণের ওপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে আল্লাহর মহব্বতে। সাহায্য করবে আত্মীয়-স্বজন , এতিম , মিসকীন , মুসাফির , ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী কৃতদাসদের। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে , যাকাত প্রদান করে ও স্বীয় প্রতিজ্ঞা সম্পাদন করে এবং অভাবে রোগে শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্য আশ্রয়ী এবং তারাই পরহেজগার। (২ : ১৭৭)।১৪) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (২ : ১৮৩)১৫) আর পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। (২ : ১৮৭)১৬) আর লড়াই করো আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে , যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (২ : ১৯০)১৭) আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো , যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় , তাহলে কারো প্রতি কোনো জবরদস্তি নেই। কিন্তু যারা জালেম তাদের বিষয় আলাদা। (২ : ১৯৩)১৮) আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে , তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করে নয়। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালবাসেন। (২ : ১৯৫)১৯) পার্থিব জীবন কাফেরদের জন্য সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। তারা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে উপহাস করে। পক্ষান্তরে , যারা পরহেযগার তারা সেই কাফেরদের তুলনায় কেয়ামতের দিন অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করবে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সীমাহীন রুজি দান করেন। (২ : ২১২)২০) তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দিন যা তোমরা ব্যয় করবে তা হবে পিতা-মাতার জন্য নিকট আত্মীয়ের জন্য , এতিম , অসহায়ের জন্য ও মুসাফিরদের জন্য। আর তোমরা যেকোনো সৎ কাজ করবে , নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা ভালভাবে অবগত আছেন। (২ : ২১৫)২১) যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান খয়রাত করো , তবে তা উত্তম। আর যদি গোপনে অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। এতে আল্লাহ তোমাদের কিছু গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্মের বিষয়ে সম্যক অবগত। (২ : ২৭১)২২) যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে , কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (৩ : ৮৫)২৩) তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না , যদি তোমদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (৩ : ৯২)।২৪) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেভাবে ভয় করা উচিত , ঠিক তেমনি ভাবে ভয় করো অবশ্যই তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (৩ : ১০২)২৫) আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ় হস্তে ধারণ করো , পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো , যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকু-ের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন , যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (৩ : ১০৩)২৬) যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন , তাহলে কেউ তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন , তবে এমন কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে ? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানদের ভরসা করা উচিত। (৩ : ১৬০)২৭) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ ফলপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে দোযখের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে , সে-ই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। (৩ : ১৮৫)২৮) নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমা করেন না , তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন এছাড়া অন্যান্য অপরাধ , যার জন্য ইচ্ছা। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করে আল্লাহর সাথে , সে তো এক মহাপাপে লিপ্ত হলো। (৪ : ৪৮)২৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং উলিল আমরগণের। অতঃপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হও , তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তণ করো। যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক থেকে উত্তম। (৪ : ৫৯)৩০) যে আল্লাহর নির্দেশে মস্তক অবনত করে সৎ কাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করে , যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ। তাঁর চেয়ে উত্তম ধর্ম কার হতে পারে ? আল্লাহ ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন। (৪ : ১২৫)৩১) হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না , মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজেদের ওপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলিল কায়েম করবে ? (৪ : ১৪৪)৩২) হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো তাঁর নৈকট্য অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো , যাতে তোমরা সফলকাম হও। (৫ : ৩৫)৩৩) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য নিষেধ করা হলো মদ , জুয়া , প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ এই সবকিছু শয়তানের অপবিত্র কাজ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকো যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও। (৫ : ৯০)৩৪) পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরকালের আভাস পরহেযগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর। তোমরা কি বোঝো না ? (৬ : ৩২)৩৫) তোমরা তাদের মন্দ বলো না , যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহ ব্যতীত। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কৃতকর্মকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে স্বীয় পালনকর্তার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (৬ : ১০৮)৩৬) তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের ওপর মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন , যাতে তোমাদে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন যা কিছু তোমাদের দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তিদাতাও বটে এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল , দয়ালু। (৬ : ১৬৫)৩৭) তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক , কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (৭ : ৫৫)৩৮) আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো , সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ্য জাহিলদের থেকে দূরে থাকো। (৭ : ১৯৯)৩৯) আর যখন কোরআন পাঠ করা হয় , তোমরা তা মনযোগ দিয়ে শোন এবং নীরব থাক , যাতে তোমাদের ওপর রহমত হয়। (৭ : ২০৪)৪০) হে ঈমাদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না , যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে অধিক ভালবাসে। আর তোমরা যারা তাদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে , তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (৯ : ২৩)৪১) যে কেউ শুধু পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে , আমি দুনিয়াতেই তাদের কর্মফল পূর্ণরূপে দান করি। যাতে তাদের কিছু মাত্র কমতি না হয়। এরাই হল সেই সব লোক যাদের আখেরাতের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই। তারা যা কিছু উপার্জন করেছে সবই বরবাদ ও বিনষ্ট হয়ে গেছে। (১১ : ১৫-১৬)৪২) আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মোমেনদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে , তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে , অতঃপর মরে ও মারে। তাওরাত ইঞ্জিল ও কোরআনে এ সত্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কে হতে পারে ? সুতরাং আনন্দিত হও সে লেনদেনের ওপর , যা তোমরা করেছ তাঁর সাথে। আর এ হচ্ছে মহাসাফল্য। তারাই তওবাকারী , ইবাদতকারী , শোকরগুজারকারী , দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক চ্ছেদকারী , রুকু ও সেজদা আদায়কারী , সৎ কাজে আদেশদানকারী ও মন্দ কাজে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহের হেফাজতকারী। বস্তুত সুসংবাদ দাও সেই সব মুমিনদের। (৯ : ১১১-১১২)৪৩) যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে শান্তি লাভ করে , জেনে রাখো , আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে। (১৩ : ২৮)৪৪) নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। (১৬ : ২৩)৪৫) আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (১৭ : ৩২)৪৬) আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদের পাবেন এবং মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বের অধিক নিকবর্তী তাদের পাবেন , যারা নিজেদের খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ এই যে , খ্রীষ্টানদের মধ্যে আলেম ও দরবেশ রয়েছে যারা অহংকার করে না। (৫ : ৮২)৪৭) নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেস্তাগণ নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ কর বিনয়ের সাথে। (৫ : ৫৬)৪৮) নামাজ কায়েম করুন সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত , আর ফজরে কোরআন পাঠ করুন। নিশ্চই ফজরে কোরাআন পাঠ মুখোমুখি হয়। (১৭ : ৭৮)৪৯) তদুপরি যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও , তবে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য এক জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না। (৪৭ : ৩৮)৫০) আপনি কেবল তাদের সতর্ক করুন , যারা তাদের পালন কর্তাকে না দেখে ভয় করে এবং নামাজ কায়েম করে। (৩৫ : ১৮)

অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়াইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) রমজান মাসে এই দোয়াগুলো পড়তেন। ‘আলবালাদুল আমিন’ ও ‘মিসবাহুল কাফআমি’ নামক গ্রন্থে রয়েছে এই দোয়াগুলো।১ম রোজার দোয়াالیوم الاوّل : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ صِیامی فیهِ صِیامَ الصّائِمینَ، وَقِیامی فیهِ قیامَ الْقائِمینَ، وَنَبِّهْنی فیهِ عَنْ نَوْمَةِ الْغافِلینَ، وَهَبْ لى جُرْمی فیهِ یا اِلـهَ الْعالَمینَ، وَاعْفُ عَنّی یا عافِیاً عَنْ الُْمجْرِمینَ .হে আল্লাহ ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসেবে গ্রহণ কর। আমার নামাজকে কবুল কর প্রকৃত নামাজীদের নামাজ হিসেবে। আমাকে জাগিয়ে তোলো গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগত সমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার যাবতীয় অপরাধ। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।২য় রোজার দোয়াالیوم الثّانی : اَللّـهُمَّ قَرِّبْنی فیهِ اِلى مَرْضاتِکَ، وَجَنِّبْنی فیهِ مِنْ سَخَطِکَ وَنَقِماتِکَ، وَوَفِّقْنی فیهِ لِقِرآءَةِ ایـاتِکَ بِرَحْمَتِکَ یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ .হে আল্লাহ! তোমার রহমতের উসিলায় আজ আমাকে তোমার সন্তুষ্টির কাছাকাছি নিয়ে যাও। দূরে সরিয়ে দাও তোমার ক্রোধ আর গজব থেকে । আমাকে তৌফিক দাও তোমার পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত করার । হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াময়।৩য় রোজার দোয়াالیوم الثّالث : اَللّـهُمَّ ارْزُقْنی فیهِ الذِّهْنَ وَالتَّنْبیهَ، وَباعِدْنی فیهِ مِنَ السَّفاهَةِ وَالَّتمْویهِ، وَاجْعَلْ لى نَصیباً مِنْ کُلِّ خَیْر تُنْزِلُ فیهِ، بِجُودِکَ یا اَجْوَدَ الاَْجْوَدینَ .হে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে সচেতনতা ও বিচক্ষণতা দান কর। আমাকে দূরে রাখ অজ্ঞতা , নির্বুদ্ধিতা ও ভ্রান্ত কাজ-কর্ম থেকে। এ দিনে যত ধরণের কল্যাণ দান করবে তার প্রত্যেকটি থেকে তোমার দয়ার উসিলায় আমাকে উপকৃত কর। হে দানশীলদের মধ্যে সর্বোত্তম দানশীল।৪র্থ রোজার দোয়াالیوم الرّابع : اَللّـهُمَّ قَوِّنی فیهِ عَلى اِقامَةِ اَمْرِکَ، وَاَذِقْنی فیهِ حَلاوَةَ ذِکْرِکَ، وَاَوْزِعْنی فیهِ لاَِداءِ شُکْرِکَ بِکَرَمِکَ، وَاحْفَظْنی فیهِ بِحِفْظِکَ وَسَتْرِکَ، یا اَبْصَرَ النّاظِرینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার নির্দেশ পালনের শক্তি দাও। তোমার জিকিরের মাধুর্য আমাকে আস্বাদন করাও। তোমার অপার করুণার মাধ্যমে আমাকে তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য প্রস্তুত কর । হে দৃষ্টিমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দৃষ্টিমান। আমাকে এ দিনে তোমারই আশ্রয় ও হেফাজতে রক্ষা কর।৫ম রোজার দোয়াالیوم الخامس : اَللّـهُمَّ اجْعَلْنی فیهِ مِنْ الْمُسْتَغْفِرینَ، وَاجْعَلْنی فیهِ مِنْ عِبادِکَ الصّالِحینَ اْلقانِتینَ، وَاجْعَلنی فیهِ مِنْ اَوْلِیائِکَ الْمُقَرَّبینَ، بِرَأْفَتِکَ یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ .হে আল্লাহ ! এই দিনে আমাকে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। আমাকে শামিল কর তোমার সৎ ও অনুগত বান্দাদের কাতারে। হে আল্লাহ ! মেহেরবানী করে আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর। হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান।৬ষ্ঠ রোজার দোয়াالیوم السّادس : اَللّـهُمَّ لا تَخْذُلْنی فیهِ لِتَعَرُّضِ مَعْصِیَتِکَ، وَلاتَضْرِبْنی بِسِیاطِ نَقِمَتِکَ، وَزَحْزِحْنی فیهِ مِنْ مُوجِباتِ سَخَطِکَ، بِمَنِّکَ وَاَیادیکَ یا مُنْتَهى رَغْبَةِ الرّاغِبینَ .হে আল্লাহ! তোমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে এ দিনে আমায় লাঞ্চিত ও অপদস্থ করো না। তোমার ক্রোধের চাবুক দিয়ে আমাকে শাস্তি দিওনা। সৃষ্টির প্রতি তোমার অসীম অনুগ্রহ আর নিয়ামতের শপথ করে বলছি তোমার ক্রোধ সৃষ্টিকারী কাজ থেকে আমাকে দূরে রাখো। হে আবেদনকারীদের আবেদন কবুলের চূড়ান্ত উৎস।৭ম রোজার দোয়াالیوم السّابع : اَللّـهُمَّ اَعِنّی فِیهِ عَلى صِیامِهِ وَقِیامِهِ، وَجَنِّبْنی فیهِ مِنْ هَفَواتِهِ وَآثامِهِ، وَارْزُقْنی فیهِ ذِکْرَکَ بِدَوامِهِ، بِتَوْفیقِکَ یا هادِیَ الْمُضِلّینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে রোজা পালন ও নামাজ কায়েমে সাহায্য কর। আমাকে অন্যায় কাজ ও সব গুনাহ থেকে রক্ষা করো। তোমার তৌফিক ও শক্তিতে সবসময় আমাকে তোমার স্মরণে থাকার সুযোগ দাও। হে পথহারাদের পথ প্রদর্শনকারী।৮ম রোজার দোয়াالیوم الثّامن : اَللّـهُمَّ ارْزُقْنی فیهِ رَحْمَةَ الاَْیْتامِ، وَاِطْعامَ اَلطَّعامِ، وَاِفْشاءَ السَّلامِ، وَصُحْبَةَ الْکِرامِ، بِطَولِکَ یا مَلْجَاَ الاْمِلینَ .হে আল্লাহ ! তোমার উদারতার উসিলায় এ দিনে আমাকে এতিমদের প্রতি দয়া করার, ক্ষুধার্তদের খাদ্য দান করার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ও সৎ ব্যক্তিদের সাহায্য লাভ করার তৌফিক দাও । হে আকাঙ্খাকারীদের আশ্রয়স্থল ।৯ম রোজার দোয়াالیوم التّاسع : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ لی فیهِ نَصیباً مِنْ رَحْمَتِکَ الْواسِعَةِ، وَاهْدِنی فیهِ لِبَراهینِکَ السّاطِعَةِ، وَخُذْ بِناصِیَتی اِلى مَرْضاتِکَ الْجامِعَةِ، بِمَحَبَّتِکَ یا اَمَلَ الْمُشْتاقینَ .হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার রহমতের অধিকারী কর। আমাকে পরিচালিত কর তোমার উজ্জ্বল প্রমাণের দিকে। হে আগ্রহীদের লক্ষ্যস্থল। তোমার ভালোবাসা ও মহব্বতের উসিলায় আমাকে তোমার পূর্ণাঙ্গ সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাও।১০ম রোজার দোয়াالیوم العاشر : اَللّـهُمَّ اجْعَلْنی فیهِ مِنَ الْمُتَوَکِّلینَ عَلَیْکَ، وَاجْعَلْنی فیهِ مِنَ الْفائِزینَ لَدَیْکَ، وَاجْعَلْنی فیهِ مِنَ الْمُقَرَّبینَ اِلَیْکَ، بِاِحْسانِکَ یا غایَةَ الطّالِبینَ .হে আল্লাহ! তোমার প্রতি যারা ভরসা করেছে আমাকে সেই ভরসাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর। তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে শামিল করো সফলকামদের মধ্যে এবং আমাকে তোমার নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নাও। হে অনুসন্ধানকারীদের শেষ গন্তব্য।১১তম রোজার দোয়াالیوم الحادی عشر : اَللّـهُمَّ حَبِّبْ اِلَیَّ فیهِ الاِْحْسانَ، وَکَرِّهْ اِلَیَّ فیهِ الْفُسُوقَ وَالْعِصْیانَ، وَحَرِّمْ عَلَیَّ فیهِ السَّخَطَ وَالنّیرانَ بِعَوْنِکَ یا غِیاثَ الْمُسْتَغیثینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও আর অন্যায় ও নাফরমানীকে অপছন্দনীয় কর। তোমার অনুগ্রহের উসিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী।১২ তম রোজার দোয়াالیوم الثّانی عشر : اَللّـهُمَّ زَیِّنّی فیهِ بِالسِّتْرِ وَالْعَفافِ، وَاسْتُرْنی فیهِ بِلِباسِ الْقُنُوعِ وَالْکَفافِ، وَاحْمِلْنی فیهِ عَلَى الْعَدْلِ وَالاِْنْصافِ، وَآمِنّی فیهِ مِنْ کُلِّ ما اَخافُ، بِعِصْمَتِکَ یا عِصْمَةَ الْخائِفینَ .হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আত্মিক পবিত্রতার অলঙ্কারে ভূষিত কর। অল্পে তুষ্টি ও পরিতৃপ্তির পোশাকে আবৃত্ত কর। ন্যায় ও ইনসাফে আমাকে সুসজ্জিত কর। তোমার পবিত্রতার উসিলায় আমাকে ভীতিকর সবকিছু থেকে নিরাপদে রাখ। হে খোদা ভীরুদের রক্ষাকারী।১৩ তম রোজার দোয়াالیوم الثّالث عشر : اَللّـهُمَّ طَهِّرْنی فیهِ مِنَ الدَّنَسِ وَالاَْقْذارِ، وَصَبِّرْنی فیهِ عَلى کائِناتِ الاَْقْدارِ، وَوَفِّقْنی فیهِ لِلتُّقى وَصُحْبَةِ الاَْبْرارِ، بِعَوْنِکَ یا قُرَّةَ عَیْنِ الْمَساکینَ .হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে কলুষতা ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র কর। যা কিছু তকদীর অনুযায়ী হয় তা মেনে চলার ধৈর্য আমাকে দান কর। তোমার বিশেষ অনুগ্রহে আমাকে তাকওয়া অর্জন এবং সৎ কর্মশীলদের সাহচর্যে থাকার তৌফিক দাও। হে অসহায়দের আশ্রয়দাতা।১৪ তম রোজার দোয়াالیوم الرّابع عشر : اَللّـهُمَّ لا تُؤاخِذْنی فیهِ بِالْعَثَراتِ، وَاَقِلْنی فیهِ مِنَ الْخَطایا وَالْهَفَواتِ، وَلا تَجْعَلْنی فیهِ غَرَضاً لِلْبَلایا وَالاْفاتِ، بِعِزَّتِکَ یا عِزَّ الْمُسْلِمینَ .হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে আমার ভ্রান্তির জন্যে জিজ্ঞাসাবাদ করো না। আমার দোষ-ত্রুটিকে হিসেবের মধ্যে ধরো না। তোমার মর্যাদার উসিলায় আমাকে বিপদ-আপদ ও দুর্যোগের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করো না। হে মুসলমানদের মর্যাদা দানকারী।১৫ তম রোজার দোয়াالیوم الخامس عشر : اَللّـهُمَّ ارْزُقْنی فیهِ طاعَةَ الْخاشِعینَ، وَاشْرَحْ فیهِ صَدْری بِاِنابَةِ الُْمخْبِتینَ، بِاَمانِکَ یا اَمانَ الْخائِفینَ .হে আল্লাহ! এদিনে আমাকে তোমার বিনয়ী বান্দাদের মতো আনুগত্য করার তৌফিক দাও। তোমার আশ্রয় ও হেফাজতের উসিলায় আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে খোদাভীরু ও বিনয়ী বান্দাদের অন্তরে পরিণত কর। হে খোদাভীরু মুত্তাকীদের আশ্রয়দাতা।১৬ তম রোজার দোয়াالیوم السّادس عشر : اَللّـهُمَّ وَفِّقْنی فیهِ لِمُوافَقَةِ الاَْبْرارِ، وَجَنِّبْنی فیهِ مُرافَقَةَ الاَْشْرارِ، وَآوِنی فیهِ بِرَحْمَتِکَ اِلى دارِ الْقَـرارِ، بِاِلهِیَّتِکَ یا اِلـهَ الْعالَمینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সৎবান্দাদের সাহচর্য লাভের তৌফিক দাও। আমাকে মন্দ লোকদের সাথে বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখো। তোমার খোদায়ীত্বের শপথ করে বলছি, আমাকে তোমার রহমতের বেহেশতে স্থান দাও। হে জগতসমূহের প্রতিপালক।১৭ তম রোজার দোয়াالیوم السّابع عشر : اَللّـهُمَّ اهْدِنی فیهِ لِصالِحِ الاَْعْمالِ، وَاقْضِ لی فیهِ الْحَوائِجَ وَالاْمالَ، یا مَنْ لا یَحْتاجُ اِلَى التَّفْسیرِ وَالسُّؤالِ، یا عالِماً بِما فی صُدُورِ الْعالَمینَ، صَلِّ عَلى مُحَمَّد وَآلِهِ الطّاهِرینَ .হে আল্লাহ ! এ দিনে আমাকে সৎকাজের দিকে পরিচালিত কর। হে মহান সত্ত্বা যার কাছে প্রয়োজনের কথা বলার ও ব্যাখ্যা দেয়ার দরকার হয় না । আমার সব প্রয়োজন ও আশা-আকাঙ্খা পূরণ করে দাও। হে তাবত দুনিয়ার রহস্যজ্ঞানী! হযরত মুহাম্মদ (স/) এবং তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর রহমত বষর্ণ কর।১৮ তম রোজার দোয়াالیوم الثّامن عشر : اَللّـهُمَّ نَبِّهْنی فیهِ لِبَرَکاتِ اَسْحارِهِ، وَنَوِّرْ فیهِ قَلْبی بِضیاءِ اَنْوارِهِ، وَخُذْ بِکُلِّ اَعْضائی اِلَى اتِّباعِ آثارِهِ، بِنُورِکَ یا مُنَوِّرَ قُلُوبِ الْعارِفینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে সেহরীর বরকতের উসিলায় সচেতন ও জাগ্রত করে তোল। সেহরীর নূরের ঔজ্জ্বল্যে আমার অন্তরকে আলোকিত করে দাও। তোমার নূরের উসিলায় আমার প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গে তোমার নূরের প্রভাব বিকশিত কর। হে সাধকদের অন্তর আলোকিতকারী!১৯ তম রোজার দোয়াالیوم التّاسع عشر : اَللّـهُمَّ وَفِّرْ فیهِ حَظّی مِنْ بَرَکاتِهِ، وَسَهِّلْ سَبیلی اِلى خَیْراتِهِ، وَلا تَحْرِمْنی قَبُولَ حَسَناتِهِ، یا هادِیاً اِلَى الْحَقِّ الْمُبینِ .হে আল্লাহ! আমাকে এ মাসের বরকতের অধিকারী কর। এর কল্যাণ অজর্নের পথ আমার জন্য সহজ করে দাও। এ মাসের কল্যাণ লাভ থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না। হে স্পষ্ট সত্যের দিকে পথো নির্দেশকারী।২০ তম রোজার দোয়াالیوم العشرون : اَللّـهُمَّ افْتَحْ لی فیهِ اَبْوابَ الْجِنانِ، وَاَغْلِقْ عَنّی فیهِ اَبْوابَ النّیرانِ، وَوَفِّقْنی فیهِ لِتِلاوَةِ الْقُرْآنِ، یا مُنْزِلَ السَّکینَةِ فى قُلُوبِ الْمُؤْمِنینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমার জন্যে বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দাও এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দাও। আমাকে কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান কর। হে ঈমানদারদের অন্তরে প্রশান্তি দানকারী।২১ তম রোজার দোয়াالیوم الحادی والعشرون : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ لى فیهِ اِلى مَرْضاتِکَ دَلیلاً، وَلا تَجْعَلْ لِلشَّیْطانِ فیهِ عَلَیَّ سَبیلاً، وَاجْعَلِ الْجَنَّةَ لى مَنْزِلاً وَمَقیلاً، یا قاضِیَ حَوائِجِ الطّالِبینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত কর। শয়তানদের আমার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দিওনা। জান্নাতকে আমার গন্তব্যে পরিণত কর। হে প্রার্থনাকারীদের অভাব মোচনকারী।২২ তম রোজার দোয়াالیوم الثّانی والعشرون : اَللّـهُمَّ افْتَحْ لى فیهِ اَبْوابَ فَضْلِکَ، وَاَنْزِلْ عَلَیَّ فیهِ بَرَکاتِکَ، وَوَفِّقْنی فیهِ لِمُوجِباتِ مَرْضاتِکَ، وَاَسْکِنّی فیهِ بُحْبُوحاتِ جَنّاتِکَ، یا مُجیبَ دَعْوَةِ الْمُضْطَرّینَ .হে আল্লাহ! আজ তোমার করুণা ও রহমতের দরজা আমার সামনে খুলে দাও এবং বরকত নাজিল কর। আমাকে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দাও। তোমার বেহেশতের বাগানের মাঝে আমাকে স্থান করে দাও। হে অসহায়দের দোয়া কবুলকারী।২৩ তম রোজার দোয়াالیوم الثّالث والعشرون : اَللّـهُمَّ اغْسِلْنی فیهِ مِنَ الذُّنُوبِ، وَطَهِّرْنی فیهِ مِنَ الْعُیُوبِ، وَامْتَحِنْ قَلْبی فیهِ بِتَقْوَى الْقُلُوبِ، یا مُقیلَ عَثَراتِ الْمُذْنِبینَ .হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দাও। আমাকে সব দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র কর। তাকওয়া ও খোদাভীতির মাধ্যমে আমার অন্তরকে সকল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ কর। হে অপরাধীদের ভুল-ত্রুটি মার্জনাকারী।২৪ তম রোজার দোয়াالیوم الرّابع والعشرون : اَللّـهُمَّ اِنّی اَسْأَلُکَ فیهِ ما یُرْضیکَ، وَاَعُوذُبِکَ مِمّا یُؤْذیکَ، وَاَسْأَلُکَ التَّوْفیقَ فیهِ لاَِنْ اُطیعَکَ وَلا اَعْصیْکَ، یا جَوادَ السّائِلینَ .হে আল্লাহ! আজ তোমার কাছে ঐসব আবেদন করছি যার মধ্যে তোমার সন্তুষ্টি রয়েছে। যা কিছু তোমার কাছে অপছন্দনীয় তা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমারই আনুগত্য করার এবং তোমার নাফরমানী থেকে বিরত থাকার তৌফিক দাও। হে প্রার্থীদের প্রতি দানশীল।২৫ তম রোজার দোয়াالیوم الخامس والعشرون : اَللّـهُمَّ اجْعَلْنی فیهِ مُحِبَّاً لاَِوْلِیائِکَ، وَمُعادِیاً لاَِعْدائِکَ، مُسْتَنّاً بِسُنَّةِ خاتَمِ اَنْبِیائِکَ، یا عاصِمَ قُلُوبِ النَّبِیّینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে তোমার বন্ধুদের বন্ধু এবং তোমার শত্রুদের শত্রু করে দাও। তোমার আখেরী নবীর সুন্নত ও পথ অনুযায়ী চলার তৌফিক আমাকে দান কর। হে নবীদের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষাকারী।২৬ তম রোজার দোয়াالیوم السّادس والعشرون : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ سَعْیی فیهِ مَشْکُوراً، وَذَنْبی فیهِ مَغْفُوراً وَعَمَلی فیهِ مَقْبُولاً، وَعَیْبی فیهِ مَسْتُوراً، یا اَسْمَعَ السّامِعینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমার প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করে নাও। আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। আমার সব আমল কাজ কবুল করো এবং সব দোষ-ত্রু টি ঢেকে রাখ। হে সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা।২৭ তম রোজার দোয়াالیوم السّابع والعشرون : اَللّـهُمَّ ارْزُقْنی فیهِ فَضْلَ لَیْلَةِ الْقَدْرِ، وَصَیِّرْ اُمُوری فیهِ مِنَ الْعُسْرِ اِلَى الْیُسْرِ، وَاقْبَلْ مَعاذیری، وَحُطَّ عَنّیِ الذَّنْبَ وَالْوِزْرَ، یا رَؤوفاً بِعِبادِهِ الصّالِحینَহে আল্লাহ! আজকের দিনে আমাকে শবেকদরের ফজিলত দান কর। আমার কাজ কর্মকে কঠিন থেকে সহজের দিকে নিয়ে যাও। আমার অক্ষমতা কবুল কর এবং ক্ষমা করে দাও আমার সব অপরাধ। হে যোগ্য বান্দাদের প্রতি মেহেরবান।২৮ তম রোজার দোয়াالیوم الثّامن والعشرون : اَللّـهُمَّ وَفِّرْ حَظّی فیهِ مِنَ النَّوافِلِ، وَاَکْرِمْنی فیهِ بِاِحْضارِ الْمَسائِلِ، وَقَرِّبْ فیهِ وَسیلَتى اِلَیْکَ مِنْ بَیْنِ الْوَسائِلِ، یا مَنْ لا یَشْغَلُهُ اِلْحـاحُ الْمُلِحّینَ .হে আল্লাহ! এ দিনে আমাকে নফল এবাদতের পর্যাপ্ত সুযোগ দাও। ধর্মীয় শিক্ষার মর্যাদায় আমাকে ভূষিত কর। তোমার নৈকট্য লাভের পথকে আমার জন্যে সহজ করে দাও। হে পবিত্র সত্তা ! যাকে, অনুরোধকারীদের কোন আবেদন নিবেদন , ন্যায়বিচার থেকে টলাতে পারে না।২৯ তম রোজার দোয়াالیوم التّاسع والعشرون : اَللّـهُمَّ غَشِّنی فیهِ بِالرَّحْمَةِ، وَارْزُقْنی فیهِ التَّوْفیقَ وَالْعِصْمَةَ، وَطَهِّرْ قَلْبی مِنْ غَیاهِبِ التُّهْمَةِ، یا رَحیماً بِعِبادِهِ الْمُؤْمِنینَ .হে আল্লাহ ! আজ আমাকে তোমার রহমত দিয়ে ঢেকে দাও। গুনাহ থেকে মুক্তিসহ আমাকে সাফল্য দান কর। আমার অন্তরকে মুক্ত কর অভিযোগ ও সন্দেহের কালিমা থেকে । হে ঈমানদার বান্দাদের প্রতি দয়াবান।৩০ তম রোজার দোয়াالیوم الثلاثون : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ صِیامى فیهِ بِالشُّکْرِ وَالْقَبُولِ عَلى ما تَرْضاهُ وَیَرْضاهُ الرَّسُولُ، مُحْکَمَةً فُرُوعُهُ بِالاُْصُولِ، بِحَقِّ سَیِّدِنا مُحَمَّد وَآلِهِ الطّاهِرینَ، وَالْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعالَمینَ .হে আল্লাহ ! তুমি ও তোমার রাসুল ঠিক যেমনিভাবে খুশি হবে তেমনি করে আমার রোজাকে পুরস্কৃত কর এবং কবুল করে নাও। আমাদের নেতা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও তার পবিত্র বংশধরদের উসিলায় আমার সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমলকে মূল এবাদতের সাথে যোগ করে শক্তিশালী কর। আর সব প্রশংসা ও স্তুতি জগতসমূহের প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহর

মা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (আ.) এর ঘরের সম্মান হানি(পর্ব ১)হ্যাঁ ,এতটা তাগিদ ও সুপারিশ করার পরেও আফসোস যে এমন কিছু অসম্মানজনক ব্যবহার নবী নন্দিনীর সাথে করা হয়েছে যে তা সহ্য করার মত নয়। আর এ এমন একটা সমস্যা যে কারো দোষ আড়াল করা ঠিক নয়।আমি এই ব্যাপারে সমস্ত উক্তি আহলে সুন্নত ওয়াল জমায়েতের গ্রন্থসমূহ হতে উল্লেখ করব ,যাতে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে হজরত ফাতিমা জাহরা (সা.) এর গৃহের সম্মানহানি ও পরবর্তী ঘটনাগুলি ঐতিহাসিকভাবে অকাট্য সত্য এবং এটি কোন অসত্য ঘটনা নয়! যদিও খলিফাদের যুগে ব্যাপকভাবে আহলে বাইতের গুণ ও মর্যাদাকে গোপন করা হয়েছে ,কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ও হাদীসের গ্রন্থসমূহে এখনও পর্যন্ত তা জীবন্ত ও রক্ষিত আছে। আর আমি প্রথম শতাব্দী থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত এ সম্পর্কে লেখা গ্রন্থের নাম ও লেখকের নাম উল্লেখ করব।১। ইবনে আবি শায়বা ও তার“ আল মুসান্নিফ ” পুস্তকআবুবকর ইবনে আবি শায়বা (১৫৯-২৩৫) আল মুসান্নিফ গ্রন্থের লেখক সহিহ সনদের সাথে এইভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন:إنه حين بويع لابي بكر بعد رسول الله (ص) كان علي والزبير يدخلان علی فاطمة بنت رسول الله (ص)، فيشاورونها و يرتجعون في أمرهم، فلما بلغ ذلك عمر بن خطاب خرج حتي دخل علی فاطمة،فقال: يا بنت رسول الله (ص) والله ما أحدٌ أحب إلينا من أبيك وما من أحد أحب إلينا بعد أبيك منك، وأيم الله ما ذاك بمانعي إن اجتمع هؤلاء النفر عندك إن أمرتهم أن يحرق عليهم البيتقال: فلما خرج عمر جاؤوها، فقالت (ع): تعلمون أنّ عمر قد جاءني، وقد حلف بالله لئن عدتم ليحرقنّ عليكم البيت، وايم الله ليمضين لمّا حلف عليهঅর্থাৎ: যখন জনগণ আবুবকরের হাতে বাইয়াত করলেন ,হজরত আলী (আ.) ও যোবায়ের হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে পরামর্শ ও আলোচনা করছিলেন ,এই খবর উমর ইবনে খাত্তাবের কর্ণগোচর হল অতঃপর সে ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে বলল: হে নবী নন্দিনী! আমার প্রিয়তম ব্যক্তি তোমার পিতা ,তোমার পিতার পর তুমি নিজে ; কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা দগ্ধ হয়ে যায়। এই কথা বলে উমর চলে যায় ,অতঃপর হজরত আলী ও যোবায়ের গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন ,হজরত ফাতিমা (আ.) আলী (আ.) ও যোবায়েরকে বললেন: উমর আমার নিকটে এসেছিল আল্লার কসম খেয়ে বলছিল যে যদি তোমাদের এই“ ইজতেমা ” সমাবেশ বন্ধ না হয় ,দ্বিতীয় বার অব্যাহত থাকে তাহলে তোমাদের গৃহকে জ্বালিয়ে দেব। আল্লার কসম! যার জন্য আমি কসম খেয়েছি অবশ্যই আমি সেটা করব।১১উল্লেখ্য এই ঘটনাকে“ আল মুসান্নিফ ” গ্রন্থে সহিহ সনদের সাথে উল্লেখ করেছে।২। বালাজুরী ও তার“ আনসাবুল আশরাফ ” গ্রন্থআহমাদ বিন ইয়াহিয়া জাবির বাগদাদী বালাজুরী (মৃত্যু:২৭০) বিখ্যাত লেখক ও মহান ঐতিহাসিক এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে নিজের গ্রন্থ“ আনসাবুল আশরাফ ” এ এই ভাবে উল্লেখ করেছেন:إنّ أبابكر أرسل إلى علي يريد البيعة فلم يبايع، فجاء عمر و معه فتيلة: فتلقّته فاطمة علی البابفقالت فاطمة: بإبن الخطّاب: أتراك محرقاً عليّ بابي؟ قال: نعم و ذلك أقوى فيما جاء به أبوكঅর্থাৎ: আবুবকর হজরত আলী (আ.) এর বাইয়াত নেওয়ার জন্য (লোক) পাঠায় কিন্তু হজরত আলী (আ.) অস্বীকার করার ফলে উমর আগুনের ফলতে নিয়ে আসল ,দ্বারেই হজরত ফাতিমা (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। হজরত ফাতিমা (আ.) বললেন: হে খাত্তাবের পুত্র! আমিতো দেখছি তুমি আমার ঘর জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছ ? উত্তরে উমর বলল: হ্যাঁ ,তোমার পিতা যার জন্য প্রেরিত হয়েছে (সেই কাজের সহযোগিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়) আর এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।১২৩। ইবনে কুতাইবা ও তার“ আল ইমামাত ওয়াস সিয়াসাত ” গ্রন্থবিখ্যাত ঐতিহাসিক আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন কুতাইবা দিনাওয়ারী (২১২-২৭৬) তিনি সাহিত্যিকদের অন্যতম প্রধান ও ইসলামী ইতিহাস লেখকদের মধ্যে একজন ,তাঁর সংকলিত পুস্তক“ তাভিলে মুখতালাফুল হাদীছ ” ও“ আদাবুল কাতিব ” ইত্যাদি। তিনি তাঁর“ আল ইমামাত ওয়া সেয়াসাত ” গ্রন্থে এমনি লিপিবদ্ধ করেছেন:إنّ أبا بكر رضي الله عنه تفقد قوماً تخلّفوا عن بيعته عند علي كرّم الله وجهه فبعث إليهم عمر فجاء فناداهم وهم في دار علي، فأبوا أن يخرجوا فدعا بالحطب و قال: والّذي نفس عمر بيده لتخرجنّ أو لأحرقنّها علی من فيها، فقيل له: يا أبا حفص إنّ فيها فاطمة، فقال: وإن !অর্থাৎ: যাঁরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি তাঁরা হজরত আলী (আ.) এর গৃহে একত্রিত হয়ে ছিলেন ,আবুবকর খবর পাওয়ায় ওমরকে অনুসন্ধানের জন্য তাঁদের নিকটে পাঠাল ,সে হজরত আলী (আ.) এর গৃহে এসে সকলকে উচ্চস্বরে বলল ঘর থেকে বের হয়ে এস ,তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন ,ফলে উমর কাঠ তলব করল এবং বলল: তাঁর কসম যার হাতে উমরের জীবন আছে সকলে বাইরে এস নইলে যে ঘরে তোমরা আছ আগুন লাগিয়ে দেব। এক ব্যক্তি উমরকে বলল: হে হাফসার পিতা এই ঘরে রাসুলের কন্যা ফাতিমা (আ.) আছেন ,উমর বলল: থাকে থাকুক!১৩ইবনে কুতাইবা এই ঘটনাকে সবথেকে বেদনা দায়ক এবং কষ্ট দায়ক বলে উল্লেখ করেছেন ,তিনি বলেন:ثمّ قام عمر فمشى معه جماعة حتى أتوا فاطمة فدقوا الباب، فلمّا سمعت أصواتهم نادت بأعلى صوتها يا أبتاه رسول الله ماذا لقيناك بعدك من إبن الخطّاب وإبن أبي قحافة فلمّا سمع القوم صوتها و بكائها إنصرفوا. وبقى عمر ومعه قوم فأخرجوا علياً فمضوا به إلي أبي بكر فقالوا له بايع، فقال: إنّ أنا أفعل فمه؟ فقالوا: إذاً والله الذي لا إله إلا هو نضرب عنقكঅর্থাৎ: উমর একদল লোকের সাথে হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে ঘরের দরজা করাঘাত করল ,যখন ফাতিমা (আ.) এদের শব্দ শুনলেন উচ্চস্বরে বললেন: হে রাসুলুল্লাহ আপনার পর আমাদের উপর খাত্তাবের ছেলে এবং আবি কুহাফার পুত্র কি যে মুসিবত নিয়ে এসেছে! যখন উমরের সাথিরা হজরত জাহরা (আ.) এর চিৎকার ও কান্না শুনলেন ,ফিরে গেলেন ,কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক উমরের সাথে ছিল ,তারা হজরত আলী (আ.) কে ঘর থেকে বের করে আনল। আবুবকরের নিকটে নিয়ে এসে তাঁকে বলল: বাইয়াত করুন ,আলী (আ.) বললেন: যদি বাইয়াত না করি কি হবে ? তারা বলল: সেই খোদার শপথ যিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই ,তোমার শির গর্দান থেকে আলাদা করে দেব।১৪সুনিশ্চিতভাবে দুই খলীফার প্রেমিকদের জন্য ইতিহাসের এই অংশটুকু খুবই অসহনীয় ও অরুচিকর ,তাই কিছু সংখ্যক ব্যক্তি পরিকল্পনা নিয়ে বললেন যে ইবনে কুতাইবার পুস্তক অগ্রহণীয় কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এ গ্রন্থ ইবনে কুতাইবার নয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও যে ইবনে আবিল হাদীদ যিনি ইতিহাসের অভিজ্ঞ এক শিক্ষক এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচিত বলে স্বীকার করেন এবং সর্বদা এই পুস্তক থেকে প্রয়োজনে প্রচুর বর্ণনা করেছেন। আফসোসের বিষয় যে এই পুস্তক বিকৃত করা হয়েছে এবং কিছু অংশকে বাদ দিয়ে মুদ্রণ করা হয়েছে কিন্তু সেই মূল ও অবিকৃত অংশটি ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শরহ্ নাহজুল বালাগা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।“ জরকলি ” এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচিত বলে মনে করেন,অতপর তিনি বলেন: কিছু সংখক আলেম এই ব্যপারে ভিন্ন মত রাখেন। অর্থাৎ এ গ্রন্থের বিষয়ে অন্যদের সংশয় ও সন্দেহ আছে বলে উল্লেখ করেছেন কিন্তু নিজেরা বলেননি যে তা ইবনে কুতাইবার রচিত নয়। যেমন ইলিয়াছ সারকিস১৫ এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচনা বলে গণ্য করেন।লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

মা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (আ.) এর ঘরের সম্মান হানি(পর্ব ১)হ্যাঁ ,এতটা তাগিদ ও সুপারিশ করার পরেও আফসোস যে এমন কিছু অসম্মানজনক ব্যবহার নবী নন্দিনীর সাথে করা হয়েছে যে তা সহ্য করার মত নয়। আর এ এমন একটা সমস্যা যে কারো দোষ আড়াল করা ঠিক নয়।আমি এই ব্যাপারে সমস্ত উক্তি আহলে সুন্নত ওয়াল জমায়েতের গ্রন্থসমূহ হতে উল্লেখ করব ,যাতে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে হজরত ফাতিমা জাহরা (সা.) এর গৃহের সম্মানহানি ও পরবর্তী ঘটনাগুলি ঐতিহাসিকভাবে অকাট্য সত্য এবং এটি কোন অসত্য ঘটনা নয়! যদিও খলিফাদের যুগে ব্যাপকভাবে আহলে বাইতের গুণ ও মর্যাদাকে গোপন করা হয়েছে ,কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ও হাদীসের গ্রন্থসমূহে এখনও পর্যন্ত তা জীবন্ত ও রক্ষিত আছে। আর আমি প্রথম শতাব্দী থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত এ সম্পর্কে লেখা গ্রন্থের নাম ও লেখকের নাম উল্লেখ করব।১। ইবনে আবি শায়বা ও তার“ আল মুসান্নিফ ” পুস্তকআবুবকর ইবনে আবি শায়বা (১৫৯-২৩৫) আল মুসান্নিফ গ্রন্থের লেখক সহিহ সনদের সাথে এইভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন:إنه حين بويع لابي بكر بعد رسول الله (ص) كان علي والزبير يدخلان علی فاطمة بنت رسول الله (ص)، فيشاورونها و يرتجعون في أمرهم، فلما بلغ ذلك عمر بن خطاب خرج حتي دخل علی فاطمة،فقال: يا بنت رسول الله (ص) والله ما أحدٌ أحب إلينا من أبيك وما من أحد أحب إلينا بعد أبيك منك، وأيم الله ما ذاك بمانعي إن اجتمع هؤلاء النفر عندك إن أمرتهم أن يحرق عليهم البيتقال: فلما خرج عمر جاؤوها، فقالت (ع): تعلمون أنّ عمر قد جاءني، وقد حلف بالله لئن عدتم ليحرقنّ عليكم البيت، وايم الله ليمضين لمّا حلف عليهঅর্থাৎ: যখন জনগণ আবুবকরের হাতে বাইয়াত করলেন ,হজরত আলী (আ.) ও যোবায়ের হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে পরামর্শ ও আলোচনা করছিলেন ,এই খবর উমর ইবনে খাত্তাবের কর্ণগোচর হল অতঃপর সে ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে বলল: হে নবী নন্দিনী! আমার প্রিয়তম ব্যক্তি তোমার পিতা ,তোমার পিতার পর তুমি নিজে ; কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা দগ্ধ হয়ে যায়। এই কথা বলে উমর চলে যায় ,অতঃপর হজরত আলী ও যোবায়ের গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন ,হজরত ফাতিমা (আ.) আলী (আ.) ও যোবায়েরকে বললেন: উমর আমার নিকটে এসেছিল আল্লার কসম খেয়ে বলছিল যে যদি তোমাদের এই“ ইজতেমা ” সমাবেশ বন্ধ না হয় ,দ্বিতীয় বার অব্যাহত থাকে তাহলে তোমাদের গৃহকে জ্বালিয়ে দেব। আল্লার কসম! যার জন্য আমি কসম খেয়েছি অবশ্যই আমি সেটা করব।১১উল্লেখ্য এই ঘটনাকে“ আল মুসান্নিফ ” গ্রন্থে সহিহ সনদের সাথে উল্লেখ করেছে।২। বালাজুরী ও তার“ আনসাবুল আশরাফ ” গ্রন্থআহমাদ বিন ইয়াহিয়া জাবির বাগদাদী বালাজুরী (মৃত্যু:২৭০) বিখ্যাত লেখক ও মহান ঐতিহাসিক এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে নিজের গ্রন্থ“ আনসাবুল আশরাফ ” এ এই ভাবে উল্লেখ করেছেন:إنّ أبابكر أرسل إلى علي يريد البيعة فلم يبايع، فجاء عمر و معه فتيلة: فتلقّته فاطمة علی البابفقالت فاطمة: بإبن الخطّاب: أتراك محرقاً عليّ بابي؟ قال: نعم و ذلك أقوى فيما جاء به أبوكঅর্থাৎ: আবুবকর হজরত আলী (আ.) এর বাইয়াত নেওয়ার জন্য (লোক) পাঠায় কিন্তু হজরত আলী (আ.) অস্বীকার করার ফলে উমর আগুনের ফলতে নিয়ে আসল ,দ্বারেই হজরত ফাতিমা (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। হজরত ফাতিমা (আ.) বললেন: হে খাত্তাবের পুত্র! আমিতো দেখছি তুমি আমার ঘর জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছ ? উত্তরে উমর বলল: হ্যাঁ ,তোমার পিতা যার জন্য প্রেরিত হয়েছে (সেই কাজের সহযোগিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়) আর এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।১২৩। ইবনে কুতাইবা ও তার“ আল ইমামাত ওয়াস সিয়াসাত ” গ্রন্থবিখ্যাত ঐতিহাসিক আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন কুতাইবা দিনাওয়ারী (২১২-২৭৬) তিনি সাহিত্যিকদের অন্যতম প্রধান ও ইসলামী ইতিহাস লেখকদের মধ্যে একজন ,তাঁর সংকলিত পুস্তক“ তাভিলে মুখতালাফুল হাদীছ ” ও“ আদাবুল কাতিব ” ইত্যাদি। তিনি তাঁর“ আল ইমামাত ওয়া সেয়াসাত ” গ্রন্থে এমনি লিপিবদ্ধ করেছেন:إنّ أبا بكر رضي الله عنه تفقد قوماً تخلّفوا عن بيعته عند علي كرّم الله وجهه فبعث إليهم عمر فجاء فناداهم وهم في دار علي، فأبوا أن يخرجوا فدعا بالحطب و قال: والّذي نفس عمر بيده لتخرجنّ أو لأحرقنّها علی من فيها، فقيل له: يا أبا حفص إنّ فيها فاطمة، فقال: وإن !অর্থাৎ: যাঁরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি তাঁরা হজরত আলী (আ.) এর গৃহে একত্রিত হয়ে ছিলেন ,আবুবকর খবর পাওয়ায় ওমরকে অনুসন্ধানের জন্য তাঁদের নিকটে পাঠাল ,সে হজরত আলী (আ.) এর গৃহে এসে সকলকে উচ্চস্বরে বলল ঘর থেকে বের হয়ে এস ,তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন ,ফলে উমর কাঠ তলব করল এবং বলল: তাঁর কসম যার হাতে উমরের জীবন আছে সকলে বাইরে এস নইলে যে ঘরে তোমরা আছ আগুন লাগিয়ে দেব। এক ব্যক্তি উমরকে বলল: হে হাফসার পিতা এই ঘরে রাসুলের কন্যা ফাতিমা (আ.) আছেন ,উমর বলল: থাকে থাকুক!১৩ইবনে কুতাইবা এই ঘটনাকে সবথেকে বেদনা দায়ক এবং কষ্ট দায়ক বলে উল্লেখ করেছেন ,তিনি বলেন:ثمّ قام عمر فمشى معه جماعة حتى أتوا فاطمة فدقوا الباب، فلمّا سمعت أصواتهم نادت بأعلى صوتها يا أبتاه رسول الله ماذا لقيناك بعدك من إبن الخطّاب وإبن أبي قحافة فلمّا سمع القوم صوتها و بكائها إنصرفوا. وبقى عمر ومعه قوم فأخرجوا علياً فمضوا به إلي أبي بكر فقالوا له بايع، فقال: إنّ أنا أفعل فمه؟ فقالوا: إذاً والله الذي لا إله إلا هو نضرب عنقكঅর্থাৎ: উমর একদল লোকের সাথে হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে ঘরের দরজা করাঘাত করল ,যখন ফাতিমা (আ.) এদের শব্দ শুনলেন উচ্চস্বরে বললেন: হে রাসুলুল্লাহ আপনার পর আমাদের উপর খাত্তাবের ছেলে এবং আবি কুহাফার পুত্র কি যে মুসিবত নিয়ে এসেছে! যখন উমরের সাথিরা হজরত জাহরা (আ.) এর চিৎকার ও কান্না শুনলেন ,ফিরে গেলেন ,কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক উমরের সাথে ছিল ,তারা হজরত আলী (আ.) কে ঘর থেকে বের করে আনল। আবুবকরের নিকটে নিয়ে এসে তাঁকে বলল: বাইয়াত করুন ,আলী (আ.) বললেন: যদি বাইয়াত না করি কি হবে ? তারা বলল: সেই খোদার শপথ যিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই ,তোমার শির গর্দান থেকে আলাদা করে দেব।১৪সুনিশ্চিতভাবে দুই খলীফার প্রেমিকদের জন্য ইতিহাসের এই অংশটুকু খুবই অসহনীয় ও অরুচিকর ,তাই কিছু সংখ্যক ব্যক্তি পরিকল্পনা নিয়ে বললেন যে ইবনে কুতাইবার পুস্তক অগ্রহণীয় কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এ গ্রন্থ ইবনে কুতাইবার নয়। কিন্তু এ সত্ত্বেও যে ইবনে আবিল হাদীদ যিনি ইতিহাসের অভিজ্ঞ এক শিক্ষক এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচিত বলে স্বীকার করেন এবং সর্বদা এই পুস্তক থেকে প্রয়োজনে প্রচুর বর্ণনা করেছেন। আফসোসের বিষয় যে এই পুস্তক বিকৃত করা হয়েছে এবং কিছু অংশকে বাদ দিয়ে মুদ্রণ করা হয়েছে কিন্তু সেই মূল ও অবিকৃত অংশটি ইবনে আবিল হাদীদ তাঁর শরহ্ নাহজুল বালাগা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।“ জরকলি ” এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচিত বলে মনে করেন,অতপর তিনি বলেন: কিছু সংখক আলেম এই ব্যপারে ভিন্ন মত রাখেন। অর্থাৎ এ গ্রন্থের বিষয়ে অন্যদের সংশয় ও সন্দেহ আছে বলে উল্লেখ করেছেন কিন্তু নিজেরা বলেননি যে তা ইবনে কুতাইবার রচিত নয়। যেমন ইলিয়াছ সারকিস১৫ এই পুস্তককে ইবনে কুতাইবার রচনা বলে গণ্য করেন।লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন