পোস্টগুলি

জুলাই, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

💘💘কারবালা পরবর্তী ইতিহাস 💘💘 সিরিয়ার জামে মসজিদে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) এর ভাষণ — সিরিয়ার মসজিদে নবী-বংশকে ও হযরত আলী (আঃ) কে গালি-গালাজ করা হত মুয়াবীয়ার আমল থেকেই । কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর একদিন এই মসজিদে হযরত আলী (আঃ) ও ইমাম হুসাইন (আঃ) কে উদ্দেশ করে অপমানজনক কথা বলছিল ঈয়াযীদের বেতনভোগী খতিব । বন্দী অবস্থায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ)। তিনি খতিবকে বললেন , খতিব তুমি ইয়াযীদকে সন্তষ্ট করতে গিয়ে দোযখে স্থান তৈরি করেছ নিজের জন্য । অতঃপর তিনি (আঃ) ইয়াযীদের দিকে ফিরে বললেন , আমাকেও মিম্বরে যেতে দাও , কিছু কথা বলব যাতে আল্লাহ খুশি হবেন ও উপস্থিত লোকদের সওয়াব হবে । উপস্থিত লোকদের চাপের মুখে ইয়াযীদ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয় । ইয়াযীদ লোকদের প্রতি বলেছিল ইনি এমন এক বংশের লোক যারা ছোটবেলায় মায়ের দুধ পানের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানও অর্জন করতে থাকে । বন্দী ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসাসূচক কিছু বাক্য বলার পর বলেছিলেন – হে জনতা ! আল্লাহ আমাদের ছয়টি গুণ ও সাতটি মর্যাদা দিয়েছেন । জ্ঞান , সহনশীলতা , উদারতা , বাগ্মিতা , সাহস ও বিশ্বাসীদের অন্তরে আমাদের প্রতি ভালবাসা । আমাদের মর্যাদাগুলো হল রাসূল (সাঃ) , আল্লাহর সিংহ ও সত্যবাদী আমিরুল মু’মিনিন আলী (আঃ) , বেহেশতে দুই পাখার অধিকারী হযরত জাফর আততাইয়ার (রাঃ) , শহীদদের সর্দার হামজা (রাঃ) , রাসূল (সাঃ) এর দুই নাতী হযরত হাসান (আঃ) ও হুসাইন (আঃ) আমাদের থেকেই, আর আমরাও তাঁদের থেকেই । যারা আমাকে জানে তারা তো জানেই , যারা জানে না তাদেরকে জানাচ্ছি , আমার বংশ-পরিচয় — হে জনতা ! আমি মক্কা ও মিনার সন্তান , আমি যমযম ও সাফা’র সন্তান । আমি তাঁর সন্তান যিনি হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) তুলেছিলেন তাঁর কম্বলের প্রান্ত ধরে , আমি ওই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সন্তান যিনি কাবা তাওয়াফ করেছেন ও সাই করেছেন (সাফা ও মারওয়ায়) তথা হজ্ব করেছেন । আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যাকে একরাতেই মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল (রাসূলের মেরাজের ইঙ্গিত) । … আমি হুসাইনের সন্তান যাকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে , আমি আলীর সন্তান যিনি মুর্তাজা (অনুমোদনপ্রাপ্ত) , আমি মুহাম্মদের সন্তান যিনি বাছাইকৃত , আমি ফাতিমাতুজ জাহরা (সাঃআঃ) এর সন্তান , আমি সিদরাতুল মুনতাহার সন্তান , আমি শাজারাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় গাছের সন্তান , হযরত খাদিজা (সাঃআঃ) এর সন্তান আমি , আমি এমন একজনের সন্তান যিনি তার নিজের রক্তে ডুবে গেছেন , আমি এমন একজনের সন্তান যার শোকে রাতের আধারে জ্বীনেরা বিলাপ করেছিল , আমি এমন একজনের সন্তান যার জন্য শোক প্রকাশ করেছিল পাখিরা । ইমাম (আঃ) এর খোতবা এ পর্যন্ত পৌঁছলে উদ্বেলিত জনতা চীৎকার করে কাঁদতে লাগল ও বিলাপ শুরু করল । ফলে ইয়াযীদ আশঙ্কা করল যে , গণ-বিদ্রোহ শুরু হতে পারে । সে মুয়াজ্জিনকে তখনই আযান দেয়ার নির্দেশ দিল । ইমাম (আঃ) আজানের প্রতিটি বাক্যের জবাবে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য বলছিলেন । যখন মুয়াজ্জিন বলল , আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- তখন ইমাম (আঃ) মাথা থেকে পাগড়ী নামিয়ে মুয়াজ্জিনের দিকে তাকিয়ে বললেন , আমি এই মুহাম্মাদের নামে অনুরোধ করছি , তুমি এক মুহূর্ত নীরব থাক । এরপর ইমাম (আঃ) ইয়াযীদের দিকে তাকিয়ে বললেন , এই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাসূল কি আমার প্রপিতামহ না তোমার ? যদি বল তোমার তাহলে গোটা পৃথিবী জানে তুমি মিথ্যা বলছ । আর যদি বল আমার তাহলে কেন তুমি আমার বাবাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছ , তাঁর মালপত্র লুট করেছ ও তাঁর নারী-স্বজনদের বন্দী করেছ ? একথা বলে ইমাম (আঃ) নিজের জামার কলার ছিঁড়ে ফেললেন এবং কাঁদলেন । এরপর বললেন , আল্লাহর কসম এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই যার প্রপিতামহ হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) , কেন এ লোকগুলো আমার পিতাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে এবং আমাদেরকে রোমানদের মত বন্দী করেছে ? …অভিশাপ তোমার ওপর যেদিন আমার প্রপিতামহ ও পিতা তোমার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন । গন বিদ্রোহের আশংকায় দিশেহারা ও আতংকিত ইয়াযীদ অবস্থা বেগতিক দেখে নামাজ শুরু করার নির্দেশ দেয় । কিন্ত ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ জনতার অনেকেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান । পরিস্থিতির চাপে পড়ে সচতুর ইয়াযীদ নিজেও ভোল পাল্টে ফেলে ইমাম হুসাইন (আঃ) ও নবী পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং এর দায় জিয়াদের ওপর চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে । সুপ্রিয় পাঠক , কারবালার ঘটনার পরবর্তী ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না । সেই জানার প্রয়াসেই আজকে এই লেখাটি দেয়া হল 💘💘 প্রচারে ❤️❤️মোঃ শামসীর হায়দার❤️❤️

❤️❤️আল্লাহর কাছে এমন একটি দৃশ্য খুবই ভাল লেগেছিল ❤️❤️ রাসূল (সাঃ) একদিন মসজিদ এ নব্বীতে আসরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন । নবীজী (সাঃ) যখন সেজদায় গেলেন , হঠাৎই হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) তাঁর প্রিয় নানাজী (সাঃ) এর পিঠের উপর উঠে বসে পড়লেন । ছোট্ট নাতি খেলার ছলে নানার পিঠে উঠে পড়েছে । মহানবী (সাঃ) নাতি হোসেন (আঃ) পিঠ থেকে নামাতেও পারছেন না । পাছে পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে নাতি যদি ব্যাথ্যা পায় ! কেননা ছোট্ট দুই নাতি ইমাম হাসান (আঃ) ও ইমাম হোসেন (আঃ) কে মহানবী (সাঃ) প্রচন্ড মহব্বত করতেন । তাঁদেরকে কেউ কষ্ট দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্তরে খুব ব্যাথ্যা পেতেন । এদিকে নাতিও পিঠ থেকে নামছেন না । মহানবী (সাঃ) এর সেজদাও প্রলম্বিত হচ্ছে । সেজদা এতটাই দীর্ঘায়ীত হচ্ছিল যে , অনেক সাহাবী নিজ সেজদা থেকে মাথা খানিক উঁচু করে দেখছিল যে , এরকম অস্বাভাবিক দেরী হচ্ছে কেন ? যারাই মাথা তুলছিলেন তারাই দেখছিলেন যে , এক নূরের উপরে আরেক ছোট্ট নূর সওয়ারী হয়েছে । তৎক্ষনাত তারা পুনরায় সেজদাতে চলে গেলেন যতক্ষন নবীজী (সাঃ) নিজে সেজদা থেকে না উঠছেন । ইতিহাস বলে যে , প্রায় সত্তরবার মহানবী (সাঃ) — সুবহানা রাব্বিয়াল আলা — বলেছিলেন । এক পর্যায় রাসুল (সাঃ) সেজদা থেকে ওঠার জন্য মনস্থ করলেন । ঠিক তখনই জীবরাইল (আঃ) হাজির হয়ে বললেন , ইয়া রাসুল (সাঃ) , দয়া করে ততক্ষন পর্যন্ত আপনি সেজদা থেকে মাথা উঠাবেন না যতক্ষন ইমাম হোসেন (আঃ) আপন ইচ্ছায় আপনার পিঠ থেকে নেমে না পড়েন । কারন এই দৃশ্যটি মহান আল্লাহর খুব পছন্দ হয়েছে । শুধু আল্লাহ নিজে নন , আরশে আজীমে যারাই আছেন এমনকি সকল ফেরেশতাগনও এই দৃশ্যটি দেখছেন —————- । পাঠক , ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি এজন্যেই বললাম যে , সেজদারত অবস্থায় নাতি উঠেছে নানার পিঠে । সেজদা আদায় করার সময় অতিক্রান্ত হয় গেছে অনেক আগেই । সাধারন কোন মুসল্লির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলে নামাযই বাতিল হবে । কিন্ত যাঁর জন্য নামায সেই মহান আল্লাহর কাছে এই দৃশ্য এতটাই ভাল লেগেছিল যে , ফেরেশতা পাঠিয়ে আদেশ দিলেন যে , যতক্ষন নাতি নিজ ইচ্ছায় পিঠ থেকে না নামে ততক্ষন যেন নানা সেজদায় পড়ে থাকে ! হায় ! আমার মজলুম ইমাম !! হায় ! আমার মজলুম ইমাম !! পাঠক , জানেন কি আপনি ! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর এরকম অসম্ভব রকমের প্রিয় দুই সহোদরের সাথে কলেমা পড়নেওয়ালা নামধারী তথাকথিত মুসলমান উম্মত কি আচরন করেছেন ! শুনে যান – আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত দ্বিতীয় ইমাম হাসান (আঃ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে । হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয় নি – প্রিয় নাতিকে নানার পাশে দাফন করতে দেয়া হয় নি । দাফনে বাঁধা দেয়ার জন্য সত্তরের উপর তীর নিক্ষেপ করো হয়েছিল ইমাম হাসান (আঃ) এর জানাজাতে । পাঠক , জানেন কি আপনি ! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর এরকম অসম্ভব রকমের প্রিয় দুই সহোদরের সাথে কলেমা পড়নেওয়ালা নামধারী তথাকথিত মুসলমান উম্মত কি আচরন করেছেন ! আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত তিনদিনের তৃষ্ণার্ত তৃতীয় ইমাম হোসেন (আঃ) কে প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সম্মুখে কারবালার ময়দানে জবাই করা হয়েছে । জবাই করার পূর্বে ইমাম হোসেন (আঃ) এর পবিত্র দেহ মোবারকে প্রায় দুইশর উপর তীর নিক্ষেপ করা হয়েছিল । জবাই করে মাথা সম্পূর্ন বিছিন্ন করে পবিত্র দেহ মোবারকের উপর দিয়ে এমন ভাবে ঘোড়া দাবড়িয়েছিল যে , ইমাম হোসেন (আঃ) এর পাঁজরের প্রত্যেকটা হাঁড়গুলো মাটির সাথে থেঁতলে গিয়েছিল । পাঠক , আপনি আরও জেনে নিন যে , নারকীয় জঘন্য নির্মম এই হত্যাযজ্ঞ জগতের কোন অমুসলিম করে নি । হত্যাযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে নবীজী (সাঃ) এর কলেমা পড়নেওয়ালা মুসলিম উম্মতের দ্বারা । প্রিয় পাঠক , এবারে আপনি প্রচন্ড রকমের হতবাক হয়ে যাবেন , এটা জেনে যে , নবীজী (সাঃ) প্রিয় প্রথম নাতি ইমাম হাসান (আঃ) এর হত্যার প্রধান কুশীলব ও পৃষ্ঠপোষককে মোরা রাঃআনহু কাতেবে ওহী মার্কা সাহাবী সনদ দিয়ে যাচ্ছি হাজার বছর ধরে । এবারে আপনি হয়ত বাকরুদ্ব হবেন , এটা জেনে যে , নবীজী (সাঃ) এর প্রিয় দ্বিতীয় নাতি ইমাম হোসেন (আঃ) এর হত্যার প্রধান কুশীলব ও পৃষ্ঠপোষককে মোরা ইদানীং রাঃআনহু মার্কা সাহাবীর সনদ দেয়া শুরু করেছি । পাঠক , এবারে আপনি হয়ত ভাবছেন যে , এরা আবার কোন দলীয় মুসলমান ? পাঠক , জবাবটি , তাহলে কান খুলে ঠান্ডা মাথায় শুনে যান – মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের হত্যাকারীগন ও হত্যাকারীগনের প্রধান কুশীলব , পৃষ্ঠপোষকগন এবং সেই সকল কুলাঙ্গার হত্যাকারীগনকে যারা রাঃআনহু মার্কা সাহাবা বলে – ওনারা সকলেই হচ্ছেন – — গাদীর এ খুম পরিত্যাগকারী মুসলিম উম্মাাহ । মোরা সকলেই আবার জান্নাতের প্রত্যাশীও বটে প্রচারে ❤️❤️ মোঃ শামসীর হায়দার❤️❤️

—– তুমি কি এ আয়াত পড় নি —– আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” ——– তাদের সাথে পথ চলছিল এমন কিছু লোক আমাকে বলেছে যে , আমরা শহীদ ইমাম হোসেন (আঃ) এর জন্য জ্বীনদের কান্না ও শোক পালনের শব্দ শুনেছি রাত থেকে সকাল পর্যন্ত । আমরা যখন দামেস্কে পৌছালাম , নারী ও বন্দীদেরকে দিনের আলোতে শহরে প্রবেশ করালাম । অত্যাচারী সিরিয়ার নাগরিকরা বলল , ” আমরা এতো সুন্দর বন্দী এর আগে দেখিনি , তোমরা কারা “? ইমাম হোসেন (আঃ) এর কন্যা সাইয়েদা সাকিনাহ (আঃ) উত্তর দিলেন , ” আমরা মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর বন্দী পরিবার “। তাদেরকে এবং ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) কে আটকে রাখা হল মসজিদের সিড়িঘরে । ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) তখন অল্পবয়সী যুবক এবং প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন । সিরিয়াবাসীদের মধ্য থেকে এক বৃদ্ব লোক এগিয়ে এসে ইমাম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলল , ” সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদেরকে হত্যা ও ধ্বংস করেছেন এবং বিদ্রোহের আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন ” । এরপর ঐ বৃদ্ব যা ইচ্ছে বলতে লাগল এবং এক পর্যায় ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেল । এবারে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) বললেন , ” তুমি কি আল্লাহর কোরআন পড়েছ ” ? বৃদ্ব বলল , ” অবশ্যই পড়েছি ” । ইমাম (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড়েছ , “— বলুন ( হে আমার রাসুল ) , আমি তোমাদের কাছে কিছু দাবী করি না ( নবুয়তের পরিশ্রমের জন্য ) , শুধু আমার রক্তের আত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া — ” সুরা শুরা / ২৩ । বৃদ্ব বলল , ” হ্যা , অবশ্যই পড়েছি ” । ইমাম (আঃ) আবারও বললেন , ” আমরাই সেই পরিবার থেকে । এছাড়া এই আয়াত তুমি কি পড় নি , “— এবং দিয়ে দাও তোমার রক্তের আত্মীয়দের অধিকার —- ” সুরা – বনি ঈসরাইল / ২৬ । বৃদ্ব বলল সে তাও পড়েছে । ইমাম (আঃ) পুনরায় বললেন , ” আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” । এরপর তিনি (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড় নি ” ? “ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ । সুরা – আহযাব / ৩৩ “। বৃদ্ব বলল , ” কেন নয় , আমি অবশ্যই এই আয়াতগুলো বহুবার পড়েছি ” । ইমাম ( আঃ ) তখন বললেন , ” আমরাই তারা যাদের কথা এখানে বলা হয়েছে ” । একথা শুনে সিরিয়ার ঐ বৃদ্ব লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুহাত আকাশের দিকে তুলে বলল , ” হে আল্লাহ , ক্ষমা করুন আমাকে , আমি এক্ষনে আপনার সামনে নিজেকে মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর সন্তানদের শত্রু ও হত্যাকারীদের সাথে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করছি , আমি সব সময় কোরআন পড়েছি কিন্ত আজকে পর্যন্ত এর উপরে আমি এইভাবে গভীরভাবে ভাবি নি ” । সুপ্রিয় পাঠক , প্রায় ১২০০ বছর আগেকার ঘটনা । বুকে হাত দিয়ে আমি বা আমরা কি বলতে পারি , আমাদের বর্তমান অবস্থা ঐ বৃদ্বের থেকে ভাল ! মাশা আল্লাহ , কোরআন তো একেবারে মুখস্ত , কিন্ত ” আহলে বাইত ” এই শব্দটার মান মর্যাদা সম্পর্কে কতটুকু অবগত আছি ! এই যে শোকের মাস মহররম চলছে , আমরা কতটুকু আলাপ আলোচনা করি এ মাসে সংঘটিত পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক ” কারবালা ” নিয়ে ! ” আহলে বাইত ” বা ” কারবালা ” তো শুধু শীয়াদের একক কোন বিষয় নয় । আহলে বাইত তো সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত । আমরা এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

[শিয়ারা যদি খারাপ হয়ে থাকে আর যদি পথবষ্ট হয়ে থাকে মওলা আলী আঃ কে ভালোবেসে,তো নবী মুহাম্মদ সাঃ কী হবে...? ] মহানবী (সা.) বলেছেন, “আলী এবং তার অনুসারীরা নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন বিজয়ী।” [আল ফেরদৌস, খ–৩, পৃ-৬১, হাদীস-৪১৭২] মহানবী (সা.) বলেছেন, “আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে।” [আল মুস্তাদারক হাকিম, খ–৩, পৃ-১২৪] রাসূল (সা.) বলেছেন, “হে আলী তুমি আমার নিকট মুসার ভাই হারুনের ন্যায়। শুধু আমার পরে আর কোনো নবী নেই।” [সুনানে তিরমিযি, খ–৫, পৃ-৬৪১, হাদীস-৩৭৩০; সহীহ মুসলিম, খ–৪, পৃ-৪৪] মহানবী (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে। সে আমার পরে সকল মুমিনদের নেতা।” [মুসনাদে আহামাদ, খ–৪, পৃ-৪৩৮] রাসূল (সা.) হযরত আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “হে আলী আমার পরে তুমি প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী।” [আল মুস্তাদারক হাকেম, খ–৩, পৃ-১৩৪]

—এত লোক কি ভুল করতে পারে — আমাদের চারপাশে প্রচলিত ইসলামে একটা কথা খুবই বহুল প্রচলিত যে , — — ” আরে ভাই , আমি না হয় কম বুঝি , তাই বলে পৃথিবীর এতো মুসলমান বা আলেম , মাওলানা সাহেবরা কি ভুল করে ? এত বিরাট সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ? ” আপনি যখনই কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে ইসলামের কোন বিষয়ের উপর কিছুটা গভীরে যেয়ে আলাপ করবেন এবং সেই সাথে কোরআন থেকে প্রমান উপস্থাপন করবেন ও পাশাপাশি সহীহ সিত্তাহের হাদিসের উল্লেখ করবেন । কিছু সময় পরে লক্ষ্য করবেন যে , ঐ ভদ্রলোক তখন পাল্টা কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন না । কেননা আপনি কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল উপস্থাপন করেছেন । যেমন , আপনি কোরআনে বর্নিত ইমামত , ইফতারের সঠিক সময়সূচী বা অযুতে পা মসেহ ইত্যাদি বিষয় কথা বলছেন । ভদ্রলোক এক পর্যায় আপনার উপস্থাপিত পবিত্র কোরআন ও সহীহ সিত্তাহের দলিলগুলো সরাসরি অস্বীকার করবেন না । আবার সেই সাথে আপনার যুক্তিগুলো স্বীকারও করবেন না । এমতাবস্থায় , ভদ্রলোক মহাশয় অতি চমৎকার ভাবে নীচে উল্লেখিত কথাটি বলে বসবেন । ” কি যে বলেন ভাই , আমি নাহয় মাদ্রাসা লাইনে পড়ি নাই , কিন্ত এতো বিশাল সংখ্যক হুজুর , মুরুব্বী , বুুজুর্গ , মাওলানা , আলেম সাহেবরা কি ভুল করতে পারে কিম্বা আমার পরলোকগত ময়মুরুব্বীরা কি ভুল করতে পারে ” ? ভদ্রলোক আরও বলবেন যে ,” ভাই আমার অতসত বুঝে কাজ নেই , বেশী বুঝতে গেলে ঈমান নষ্ট হবে , মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব বা আমার বাপ দাদারা যা করে গেছেন সেটার উপরেই থাকব ভাই ” । এখন আপনি যতই চেষ্টা করেন , আর কোন লাভ নেই । ভদ্রলোকের ঐ একটিই শেষ কথা — ” এতো বিশাল সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ” ! অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক সংখ্যার আধিক্যের উপর ইস্পাত কঠিন থাকবেন । অনেকটা আমাদের গনতন্ত্রের ফর্মুলা । যে দল বেশী ভোট পাবে বা যাদের দিকে পাল্লা ভারী তারাই বিজয়ী । আপনি তখন কি আর করিবেন । কথা বলাটাই মহা ভুল — এই চিন্তা করিয়া মনটা খারাপ করিবেন , খুবই স্বাভাবিক । পাঠক , আসুন , একটু অন্য ভাবে বিষয়টা চিন্তা করি । জাতিসংঘ আদম শুমারী মতে বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা সাড়ে সাতশো কোটির উপরে । এর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো কোটি । পৃথিবীতে সংখ্যার তুলনায় বৌদ্ব ধর্মের অনুসারী বেশী । তাহলে ঐ ভদ্রলোক যে সংখ্যা আধিক্যের উপর জোর দিলেন , তাহলে কি বৌদ্ব ধর্ম সঠিক ? যেহেতু পাল্লা ওদিকে ভারী তাহলে চলুন , বৌদ্ব ধর্ম পালন করি !! সাধারন হিসাবে তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , সংখ্যা আধিক্যের এই ফর্মুলাটা যুক্তিতে টেকে না । এবার আসুন এই ” সংখ্যা আধিক্য ” এর বিষয় পবিত্র কোরআন কি বলে ! “— যদি তুমি পৃথিবীর (লোকদের) বেশীর ভাগকে অনুসরন কর , তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে যাবে । তারা কিছুই অনুসরন করে না অনুমানগুলো ছাড়া , এবং তারা শুধু ধারনা ছাড়া কিছু করে না — ” । সুরা – আনআম / ১১৬ । “— তবু জনগনের বেশীর ভাগই বিশ্বাস করবে না যত ব্যাকুলই তুমি হও না কেন —” । সুরা – ইউসুফ / ১০৩ । “— নিঃসন্দেহে আমরা তোমাদের কাছে সত্য এনেছিলাম , কিন্ত তোমরা বেশীর ভাগই সত্যের প্রতি ঘৃনা পোষন করতে — ” । সুরা – যুখরুফ / ৭৮ । “— যখন তাদের বলা হয় , অনুসরন কর আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন , তারা বলে , আমরা বরং অনুসরন করব , যার অনুসরন আমাদের পিতারা করে এসেছে । কী ! যদি এমনও হয় যে , শয়তান তাদের ডাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে —” । সুরা – লুকমান / ২১ । এবার উপরের আয়াতগুলোর সাথে নবীজী (সাঃ) এর এই বিখ্যাত হাদিসটি মিলিয়ে নিন — রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল , ইয়া রাসুল (সাঃ) , আপনি বলেছেন যে , আপনার উম্মতের মধ্যে ৭৩টি দল হবে । তারমধ্যে ৭২টি দল জাহান্নামী এবং একটি মাত্র দল জান্নাতি । দয়া করে বলবেন কি , নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতি ঐ দল কোনটি ? জবাবে রাসুল (সাঃ) বলেছেন , “ সুসংবাদ ! হে আলী , নিশ্চয়ই তুমি এবং তোমার শীয়া বা অনুসারীগন জান্নাতে প্রবেশ করবে ”। সুত্র – তারিখে দামেস্ক (ইবনে আসাকির,খন্ড-২,পাতা-৪৪২ , হাদিস # ৯৫১ / নুরুল আবসার (শিবলাঞ্জী) ,পাতা-৭১,১০২ / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাহ,পাতা-৬২ / তাতহিরাতুল খাওয়াস(ইবনে জাওজী আল হানাফী),পাতা-১৮ / তাফসীরে ফাতহুল কাদীর(আল শাওকানী),খন্ড-৫,পাতা-৪৭৭ / তাফসীরে রুহুল মায়ানী আলুসী,খন্ড-৩০,পাতা-২০৭ / ফারাইদ সিমতাইন(ইবনে শাব্বাঘ),খন্ড-১,পাতা-১৫৬ / তাফসীরে দুররে মানসুর,খন্ড-৬,পাতা-১২২ / মানাকিব(ইবনে আল মাগাজেলী),পাতা-১১৩ / মুখতাসার তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৩,পাতা-১০ / মিয়ান আল ইতিদাল,খন্ড-২,পাতা-৩১৩ / আরজাহুল মাতালেব,পাতা-১২২,১২৩,৮৭৭(উর্দু) / তাফসীরে তাবারী,খন্ড-৩০,পাতা-১৪৭ / ফুসুল আল মাহিম্মা,পাতা-১২২ / কিফায়াতুল তালেব,পাতা ১১৯ / আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খন্ড-২,পাতা-৬৫৫ / হুলিয়াতুল আউলিয়া,খন্ড-৪,পাতা৩২৯ / তারিখে বাগদাদ,খন্ড-১২,পাতা-২৮৯ / আল তাবরানী মুজাম আল কাবির,খন্ড-১,পাতা-৩১৯ / আল হায়সামী মাজমা আল জাওয়াইদ,খন্ড-১০,পাতা-২১-২২ / ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৪২,পাতা-৩৩১ / আল হায়সামী আল সাওয়ায়িক আল মুহারিকা,পাতা-২৪৭ / মুয়াদ্দাতুল কুরবা,পাতা-৯২ / তাফসীরে ফাতহুল বায়ান,খন্ড-১০,পাতা-২২৩(নবাব সিদ্দিক হাসান খ ভুপালী,আহলে হাদিস) / তাফসীরে ফাতহে কাদীর,খন্ড-৫,পাতা-৬৪,৬২৪ / সাওয়ারেক আল মুহারেকা( ইবনে হাজার মাকিক),পাতা-৯৬ / শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,খন্ড-২,পাতা-৩৫৬ / মুসনাদে হাম্বাল,খন্ড-৫,পাতা-২৮ / নুজহাত আল মাজালিস,খন্ড-২,পাতা-১৮৩ / মানাকেব (আল খাওয়ারেজমী),খন্ড-৬,পাতা – ৬৩ । সুপ্রিয় পাঠক , এবারে আপনি ভদ্রলোককে ইফতারের সময়সূচী , অযুতে পা মাসেহ বা হযরত আলী (আঃ) তথা আহলে বায়েত (আঃ) গনের ইমা্মত বা আলী (আঃ) এর বেলায়েত বা ইমামত ইত্যাদি যা কিছুই বুঝাতে চেষ্টা করুন না কেন — আদৌ কি কোন লাভ হইবে ! কেননা পবিত্র কোরআন Quantity is not nesserery , main thing is The Best Quality এই নীতির কথাই বলে । অর্থাৎ ” সংখ্যার আধিক্যের জয় জয়কার ” এই ফর্মুলা পবিত্র কোরআন প্রত্যাখ্যান করে । হিসাব আরও পরিস্কার জলের মত মিলিয়ে নিন — কারবালাতে একদিকে ছিলেন মাত্র – ৭২ জন অপরদিকে ছিল বিশাল ত্রিশ হাজারের অধিক । ওখানে কোন পক্ষেই ননমুসলিম ছিলেন না প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র — গাদীর এ খুম নামক স্থানে বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুমে লক্ষাধিক হজ্ব ফেরৎ হাজি সাহাবাগনের সম্মুখে রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর ওফাত পরবর্তী ইমাম বা খলীফা নিযুক্ত করে গেলেন । ইমাম আলী (আঃ) এর এই ইমামত বা খেলাফতের পক্ষে বিপক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে । রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস মতে ইমাম আলী (আঃ) কে নির্ভর করে মুমিন সাহাবী ও মুনাফিক সাহাবী এবং কাফেরের পরিচয় পাওয়া যাবে । ইমাম আলী (আঃ) কে কেন্দ্র করে যেমন মুমিনরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে ইমাম আলী (আঃ) এর বিরোধীরাও এক বিশাল ঐক্য গঠন করেছিল । যা ইতিহাসের পাতায় সহীফা মাল’উনা নামে লিপিবদ্ধ আছে । ইমামীয়াদের বিভিন্ন গ্রন্থে সহীফা মাল’উনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । সহীফা কোন লিখিত পৃষ্ঠা , পাতা বা বই পুস্তককে বলা হয়ে থাকে । যেমন বিভিন্ন নবী আউলিয়াদের লিখিত সহীফা ছিল । আর মাল’উনা অর্থ হচ্ছে যার উপর লানত বর্ষিত হয়েছে এমন কোন জিনিষ । তাহলে সহীফা মাল’উনা’র অর্থ হচ্ছে অভিশপ্ত একটি লেখা । আর এটি হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ জন সাহাবীদের চুক্তিপত্র যা গাদীরের ঘটনার পর তৈরী করা হয়েছিল । এরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল যে , কোন অবস্থাতেই হযরত আলী (আঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর শুন্য পদে ইমাম বা খলীফা হতে দেয়া যাবে না । তাই তারা একটি প্রতিজ্ঞাপত্র বা চুক্তিপত্র লিখে মক্কাতে গোপন করে রাখে । আর এ চুক্তিপত্রটি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমরের খেলাফত কালের শেষ সময়ে ফাঁস হয় এবং আহলে সুন্নতের বিভিন্ন গ্রন্থে তার উল্লেখ করা হয়েছে । সূত্র – সুনানে নেসায়ি , ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ৮৮ / মুসতাদরাক , ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ২২৬ / মু’জামুল আওসাত , ৭ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২১৭ / বিহারুল আনওয়ার , ১০ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২৯৭ । অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে , রাসুল (সাঃ) নিজের জীবনে ইলমে গাইবের মাধ্যমে কিছু লোকের মনের অভ্যন্তরের কথা অন্যদের জন্য কেন বলে যান নি , যাতে পরবর্তীতে কোন দ্বন্দ্ব দেখা না দেয় ? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পবিত্র কোরানের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুনাফেক লোকদের জন্য উল্লেখ করেছেন , ” — তোমাদের চারপাশে বেদুইনদের মাঝে মুনাফিকরা আছে এবং মদীনার শহরবাসীদের মাঝেও (যারা) মুনাফেকিতে ডুবে আছে । তুমি তাদেরকে জান না , আমরা তাদের জানি এবং আমরা তাদের দুইবার শাস্তি দিব , এরপর তাদের পাঠান হবে এক বিরাট শাস্তির দিকে — । ” সুরা – তাওবা , / ১০১ । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবশ্যই কোন বিশেষ মাসলেহাত বা কল্যানের কারনে এ সকল লোকদের নাম নবী (সাঃ) এর কাছেও প্রকাশ করেন নি । যাহোক , এই ঘটনার ধরাবাহিকতায় ১২ জন সাহাবী ঠিক করলেন যে , তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পথে মহানবী (সাঃ) কে পাহাড়ের চুড়া থেকে বড় বড় পাথরখন্ড উপর থেকে ফেলে দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করে ফেলবেন । এদের মধ্যে পাঁচজন পাথরখন্ড নিয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থান নিয়েছিলেন । ঘটনার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন — মহানবী (সাঃ) তায়েফ নামক একটি স্থানে গমন করার জন্য হুনায়েন প্রান্তরে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের শত্রুরা নবী করিম (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে বসে । এ সময় মহানবী (সাঃ) এর অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) কে যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একাকী ঘোরতর বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে পলায়ন করেন । ওনারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পেছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও ওনারা নবীজী (সাঃ) কে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে গেলেন । মহানবী (সাঃ) এর চরমতম বিপদের সময় হাতে গোনা দুএকজন সাহবাগনকে নিয়ে একমাত্র হযরত আলী (আঃ) তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে দুশমনদের কবল থেকে মহানবী (সাঃ) কে উদ্বার করেন । খুব সংকটের মধ্যে যুদ্বজয় শেষে রাসুল (সাঃ) উটের পিঠে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে রওয়ানা হলেন । ততক্ষনে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে । বিশ্বস্ত সংগী হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) উটের রশি ধরে টেনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন । বড় একটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবার সময় আল্লাহর ফেরেশতা রাসুল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে , কিছুটা সামনে পাহাড়ের উপর শত্রুরা আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে । সন্ধে তখন আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে । সন্ধার হালকা আলোয় কিছুটা অগ্রসর হলে রাসুল (সাঃ) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) পাহাড়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পেলেন । এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে । বিদ্যুৎের তীব্র ঝলকানীতে রাসুল (সাঃ) খুব পরিস্কার ভাবে পাঁচজনের ঐ দলটিকে চিনে ফেললেন । ঐ পাঁচজন বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে যে , যখনই রাসুল (সাঃ) তাদের আয়েত্বের মধ্যে চলে আসবে তখনই তারা পাথরখন্ডগুলো গড়িয়ে ফেলে দেবে রাসুল (সাঃ) এর উপরে । বিশাল বড় বড় পাথরখন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য । বিদ্যুৎের সুতীব্র আলোর ঝলকানীতে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ঐ পাঁচজনের দলটিকে মুহূর্তেই চিনে ফেললেন এবং চীৎকার করে নবীজী (সাঃ) কে বললেন , হুজুর , অামি সবাইকে চিনে ফেলেছি , ওরা হচ্ছে অমুক , অমুক , অমুক ! রাসুল (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে থামিয়ে দিয়ে বললেন যে , তুমিও চিনেছ , আমিও চিনেছি । থাক আর বলতে হবে না । হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর উচ্চঃস্বরে চীৎকার চেঁচামেচীতে ঐ পাঁচজন খুব দ্রত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায় । এ ঘটনার পরের দিন ঐ পাঁচ মুনাফিকদের একজন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) কে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে , আমার নাম ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ? জবাবে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) বললেন , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন । বিফল হয় তিনি সেদিন চলে গেলেন । কয়েকদিন পরে পুনরায় তিনি একই প্রশ্ন করলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর নিকট যে , আমার নামটি ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ? দ্বিতীয়বারও একই জবাব দিলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) যে , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন । কিন্ত নাছোরবান্দা হযরত ওমর আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না । অধৈর্য হয়ে বেচারা হযরত ওমর বলেই ফেললেন যে , হে আবু হুযাইফা ! তুমি বল আর না বল , আমি বিলক্ষন জানি যে , ঐ তালিকায় আমার নামটি আছে । তৃতীয়বার হযরত ওমর নিজে চলে গেলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর বাড়ীতে । বাড়ীতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন । কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবারে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) হযরত ওমর বললেন , তুমি যখন নিজেই জান যে , ঐ তালিকায় তুমি আছ কি নেই ! তাহলে কেন অযথা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে আস ? যাইহোক , হযরত হুযাইফা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) এর খুব কাছের একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু পর্যায়ের মুমিন সাহাবা ছিলেন । তিনি বিলক্ষন জানতেন যে , প্রচুর পরিমানে মুনফিকবৃন্দ রাসুল (সাঃ) এর সাথে চলাফেরা করত । কিন্ত নবী করিম (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে এ কাজের অনুমতি দেননি । মহানবী (সাঃ) বলেন , আমি এটা চাইনা যে , প্রচার করা হোক যে , মোহাম্মাাদ তার সাহাবীদের হত্যা করেছে । দ্রষ্টব্য – আল মোহাল্লা , ১১তম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২২৪ । এরূপ অনেক ঘটনাই ছিল যা ইসলামকে রক্ষার খাতিরে নবী করিম (সাঃ) মুখ বন্ধ করে ছিলেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হননি । যাইহোক , এটা প্রমাণিত যে , শীয়া ও সুন্নি হাদীস মতে রাসুল (সাঃ) এর আশপাশে বেশ কিছু ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী মোনাফেক সাহাবী ছিল যারা ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারনে সবসময় চেষ্টা করেছে খেলাফত বা ইমামত যেন কোন প্রকারেই হযরত আলী (আঃ) এর হস্তগত না হয় । কিন্ত সত্য যতই ফূৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সত্য ততই উদ্ভাসিত হয়ে যে – পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন – “ – তারা চায় আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে তাদের মুখগুলো দিয়ে , কিন্ত আল্লাহ সংকল্পবদ্ব তাঁর নূর সম্পূর্ন করার , যদিও কাফেররা তার বিরোধী হতে পারে — “ । সুরা – তওবা / ৩২ । সেই সথে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র বাণী — “ আলী মা’আল হাক্ব ওয়াল হাক্ব মা’আল আলী ”। আলী সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং হক সর্বদা আলীর অনুগামী প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯) ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১) ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২) ১৩. সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلصِّدِّيقُونَ ثَلَاثَةٌ: مُؤْمِنُ آلِ يس، وَ مُؤْمِنُ آلِ فِرْعَوْنَ، وَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَ هُوَ أَفْضَلُهُمْ. প্রকৃত সত্যবাদী তিনজন : আলে ইয়াসীনের মুমিন,আলে ফেরআউনের মুমিন আর আলী ইবনে আবি তালিব,আর সে হলো তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (কানযুল উম্মাল ১;৬০১/৩২৮৯৮,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬২৮/১০৭২,আল ফেরদৌস ২:৪২১/৩৮৬৬) [উল্লেখ্য,আলে ইয়াসীনের মুমিন হলো হাবীব নায্যার (ইয়াসীন : ২০),আর আলে ফেরআউনের মুমিন হলো হেযকিল (গাফির : ২৮)] ১৪. সতকর্মশীলদের নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ عَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ. আলী সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয়। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৯,কানযুল উম্মাল ১১:৬০২/৩২৯০৯,আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা :১২৫,আল ইমাম আলী (আ.)-ইবনে আসাকির ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫) ১৫. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও মরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَنْ أَحَبَّ‌أَنْ يَحْيَا‌حَيَاتِي‌وَ‌يَمُوتَ مَوْتِي‌فَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ. যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে মেনে চলে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯) ১৬. ঈসা (আ.)-এর ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে বলেনঃ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَي(ع)، أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّي بَهَتُوا أُمَّهُ، وَ أََحَبَّتْهُ النَّصَارَي حَتَّي أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ فِيهَا. তুমি ঈসা (আ.)-এর সমতুল্য। ইয়াহুদীরা প্রচন্ড শত্রুতার কারণে তাঁর মায়ের ওপর অপবাদ আরোপ করে। আর খ্রিস্টানরা অতিরঞ্জিত ভালোবাসার কারণে তাঁকে এমন মর্যাদায় আসীন করলো যে মর্যাদা তাঁর ছিল না। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৪,মুসনাদে আহমাদ ১:১৬০,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৩) ১৭. বড় পুণ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ حَسَنَةٌ لَايَضُرُّ مَعَهَا سَيِّئَةٌ، وَ بُغْضُهُ سَيِّئَةٌ لَا يَنْفَعُ مَعَهَا حَسَنَةٌ. আলীর প্রতি ভালোবাসা বড় পুণ্যের কাজ যার কারণে কোনো মন্দই ক্ষতি করতে পারে না। আর তার সাথে শত্রুতা করা বড়ই নোংরা কাজ যার কারণে কোনো পুণ্যের কাজই ফলপ্রসূ হয় না। (আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৫,আল মানাকিব-খারেযমী : ৩৫) ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০) এস, এ, এ ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস এস, এ, এ ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯) ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১) ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২) ১৩. সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلصِّدِّيقُونَ ثَلَاثَةٌ: مُؤْمِنُ آلِ يس، وَ مُؤْمِنُ آلِ فِرْعَوْنَ، وَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَ هُوَ أَفْضَلُهُمْ. প্রকৃত সত্যবাদী তিনজন : আলে ইয়াসীনের মুমিন,আলে ফেরআউনের মুমিন আর আলী ইবনে আবি তালিব,আর সে হলো তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (কানযুল উম্মাল ১;৬০১/৩২৮৯৮,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬২৮/১০৭২,আল ফেরদৌস ২:৪২১/৩৮৬৬) [উল্লেখ্য,আলে ইয়াসীনের মুমিন হলো হাবীব নায্যার (ইয়াসীন : ২০),আর আলে ফেরআউনের মুমিন হলো হেযকিল (গাফির : ২৮)] ১৪. সতকর্মশীলদের নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ عَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ. আলী সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয়। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৯,কানযুল উম্মাল ১১:৬০২/৩২৯০৯,আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা :১২৫,আল ইমাম আলী (আ.)-ইবনে আসাকির ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫) ১৫. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও মরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَنْ أَحَبَّ‌أَنْ يَحْيَا‌حَيَاتِي‌وَ‌يَمُوتَ مَوْتِي‌فَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ. যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে মেনে চলে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯) ১৬. ঈসা (আ.)-এর ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে বলেনঃ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَي(ع)، أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّي بَهَتُوا أُمَّهُ، وَ أََحَبَّتْهُ النَّصَارَي حَتَّي أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ فِيهَا. তুমি ঈসা (আ.)-এর সমতুল্য। ইয়াহুদীরা প্রচন্ড শত্রুতার কারণে তাঁর মায়ের ওপর অপবাদ আরোপ করে। আর খ্রিস্টানরা অতিরঞ্জিত ভালোবাসার কারণে তাঁকে এমন মর্যাদায় আসীন করলো যে মর্যাদা তাঁর ছিল না। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৪,মুসনাদে আহমাদ ১:১৬০,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৩) ১৭. বড় পুণ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ حَسَنَةٌ لَايَضُرُّ مَعَهَا سَيِّئَةٌ، وَ بُغْضُهُ سَيِّئَةٌ لَا يَنْفَعُ مَعَهَا حَسَنَةٌ. আলীর প্রতি ভালোবাসা বড় পুণ্যের কাজ যার কারণে কোনো মন্দই ক্ষতি করতে পারে না। আর তার সাথে শত্রুতা করা বড়ই নোংরা কাজ যার কারণে কোনো পুণ্যের কাজই ফলপ্রসূ হয় না। (আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৫,আল মানাকিব-খারেযমী : ৩৫) ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০

এই বুখারীর ওপরে বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার লানত বর্ষিত হোক গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ) অধ্যায়ঃ ৫/ গোসল (كتاب الغسل) হাদিস নম্বরঃ ২৬৮ ৫/১২. একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা। ২৬৮. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেয়া হয়েছে। সা‘ঈদ (রহ.) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাযি.) তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। (২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৬) Narrated Qatada: Anas bin Malik said, "The Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) used to visit all his wives in a round, during the day and night and they were eleven in number." I asked Anas, "Had the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) the strength for it?" Anas replied, "We used to say that the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) was given the strength of thirty (men)." And Sa`id said on the authority of Qatada that Anas had told him about nine wives only (not eleven). بَاب إِذَا جَامَعَ ثُمَّ عَادَ وَمَنْ دَارَ عَلَى نِسَائِهِ فِي غُسْلٍ وَاحِدٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَدُورُ عَلَى نِسَائِهِ فِي السَّاعَةِ الْوَاحِدَةِ مِنَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَهُنَّ إِحْدَى عَشْرَةَ‏.‏ قَالَ قُلْتُ لأَنَسٍ أَوَكَانَ يُطِيقُهُ قَالَ كُنَّا نَتَحَدَّثُ أَنَّهُ أُعْطِيَ قُوَّةَ ثَلاَثِينَ‏.‏ وَقَالَ سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ إِنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُمْ تِسْعُ نِسْوَةٍ‏.‏‏ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

—স্বয়ং আল্লাহর মহান শপথ — ” — তাই আমি শপথ করি , ঐ স্থানগুলোর মাধ্যমে যেখানে তারাগুলো অস্ত যায় । এবং নিশ্চ য়ই এটি একটি মহান শপথ , যদি তোমরা জানতে , নিশ্চ য়ই এটি এক মর্যাদাপূর্ণ কোরআন , এক সুরক্ষিত কিতাবে , কেউ তাকে স্পর্শ করে না শুধুমাত্র পবিত্রগন ব্যাতীত —-” । সুরা – ওয়াক্বীয়া / ৭৫ , ৭৬ , ৭৭ , ৭৮ , ৭৯ । পাঠক , আপনার কিছুটা বাড়তি মনযোগ চাইছি , প্লীজ । উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলির প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে শপথ বা কসম নিচ্ছেন । শপথ সাধারনত অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন , খুবই মর্যাদাবান বিষয় , ব্যক্তিত্ব বা স্থানসমূহের বিষয় নেওয়া হয় থাকে । বলাই বাহুল্য যে , এখানে স্বয়ং আল্লাহ নিজে ঐ স্থানসমূহের শপথ বা কসম নিচ্ছেন যেখানে নক্ষত্র সমূহ অবতরন বা অস্ত যায় ! অবশ্যই এখানে প্রশ্ন জাগবে যে , সেই মহান এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান কোনটা ? সেই সাথে আল্লাহ নিজেই বলছেন যে , এই শপথটি অতি মহান এবং খুবই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন । তাহলে ঐ স্থানটি অতি অবশ্যই খুবই উচ্চ মর্যাদাপূর্ন স্থান পাঠক , আপনাকে মনে করিয়ে দেই যে , পৃথিবীতে এমন একটি গৃহ ছিল – যে পবিত্র গৃহে সম্মাানীয় ফরেশতাগন হরহামেশা পবিত্র কোরআনের ওহী নিয়ে নাজিল হতেন । এই পবিত্র গৃহে ফেরেশতাগন শুধু ওহী নিয়ে যাতায়াত করেই ক্ষান্ত হতেন না ! ঐ গৃহের বিভিন্ন গৃহস্থালী কাজগুলোও ফেরেশতাগন করে দিতেন । যেমন আটা পিষার চাকতি পিষে যব বা গমের আটা প্রস্তত করে দিতেন । ঐ গৃহের দোলনা দুলিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিতেন । ঈদের সময় ঐ গৃহের বাচ্চাদের জন্য আল্লাহর দরবার থেকে নতুন জামা নিয়ে আসতেন । পবিত্র গৃহের পবিত্র ব্যক্তিবর্গের জন্য পুতঃপবিত্রতার আয়াত নিয়ে আসতেন । এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহটি “চাদরের হাদিসের” জন্য বিখ্যাত । পৃথিবীতে একটি মাত্র গৃহ ছিল , যে গৃহে প্রবেশের জন্য নবীজী (সাঃ) এর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল । পৃথিবীতে এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহের মহান মানুষগুলোকেই মহান আল্লাহ নবীজীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন । পৃথিবীতে এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহের মানুষগুলোকেই মহান আল্লাহ তাঁর ইমামত পদ্বতির জন্য ইমাম হিসাবে মনোনীত ও নির্বাচিত করেছিলেন । লেখা দীর্ঘায়ীত না করে শুধু এইটুকুই বলছি যে — এই পবিত্র গৃহের পবিত্র মানুষগুলোর জন্যই – ” ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ কেয়ামত পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম চিরকৃতজ্ঞ থাকবে এই পবিত্র গৃহের পবিত্র মানুষগুলোর নিকট । পবিত্র এই মানুষগুলোর আত্নত্যাগ এবং মহান কুরবানীর জন্য দুনিয়ায় এখনও ইসলাম মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে । যাইহোক , সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেই পবিত্রতম স্থানটি সম্পর্কে শপথ করে আমাদের জানিয়ে দিলেন ঐ গৃহটির মান মর্যাদা সম্বন্ধে । সকলের নিকট বিনীত একটি জিজ্ঞাস্য — স্বয়ং আল্লাহ যে স্থানটি নিয়ে শপথ করেন আমরা কি আজ পর্যন্ত সেই পবিত্র গৃহটির পবিত্র মানুষগুলোকে যথাযথ সম্মাান ও মূল্যায়ন করতে পেরেছি ? প্রশ্নটি এজন্যই করলাম যে , ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের কয়েকটি দিন পরেই এ পবিত্র গৃহটিতে রাসুলেরই (সাঃ) নামধারী কিছু উম্মমত আগুন দিতে কোনরুপ দ্বিধবোধ করে নি ! পবিত্র মানুষগুলোকে চরম হেনস্তা করতেও ওদের বিবেক দংশিত হয় নি ! মানছি যে , ওদের কর্মের দায়ভার আমাদের নয় । সবশেষে শুধু এ প্রশ্নটি করেই বিদায় — রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের চরম শত্রুগনকে আমরা কিভাবে রাঃআনহু বলছি প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহর প্রশংসা নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত। আলী (আঃ) তাঁর বক্তব্যে আল্লাহ এবং মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে মূল্যবান অনেক কথাই বলেছেন। আলী (আঃ) যে খোদার কথা বলেছেন তিনি শুষ্ক ও নি®প্রাণ কিংবা মানুষের সাথে অপরিচিত কেউ নন। তিনি জীবিত এবং সচেতন। মানুষের সাথে তাঁর কথাবার্তা বিনিময় হয়। তিনি মানুষকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করেন এবং তিনি তাদের আন্তরিক প্রশান্তি ও সন্তুষ্টির উৎস। সকল সৃষ্টিই নিজের অস্তিত্বের গভীরে তার সাথে গোপন রহস্যের সূতোয় বাঁধা। তাদের সবাই আল্লাহর প্রশংসায় লিপ্ত। অন্যভাবে বলা যায়,নাহজুল বালাগায় আল্লাহ খুবই প্রিয় সত্ত্বা-মানুষের ভালোবাসার মূল উৎস। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ীঃ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। এ কারণেই হযরত আলী (আঃ) আল্লাহকে চেনার উপায়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা,অন্তরের সকল কালিমা দূর করে স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা আনা,সত্ত্বার গভীরে ডুবে যাওয়া,আল্লাহর জিকির করা ইত্যাদিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইমাম আলী (আঃ) সত্ত্বাকে আল্লাহর সৃষ্টি বলে মনে করেন এ অর্থে যে বিশ্ব হলো সৃষ্ট বস্তু আর আল্লাহই তাকে তাঁর নিজস্ব কৌশলে সৃষ্টি করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে আল্লাহ যা সৃষ্টি করার কথা ভাবেন তা-ই সৃষ্টি হয়ে যায়। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী মহান স্রষ্টা। যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুঁজে বেড়ায় তাকে ইমাম আলী (আঃ) বলেন সে যেন কোরআনে কারিমের প্রতি মনোনিবেশ করে। কেননা মানুষের চিন্তাশক্তি সীমিত। সে তার নিজের অপূর্ণ চিন্তা দিয়ে একাকী আল্লাহর মতো মহান সত্ত্বাকে খোঁজার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারবে না। আলী (আঃ) বলেন-হে প্রশ্নকারী! যথার্থ দৃষ্টি দাও! কোরআন আল্লাহর যেসব গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছে তার প্রতি আস্থাশীল হও! তাঁর হেদায়েতের আলো থেকে উপকৃত হও! যা কিছু আল্লাহর কিতাব,নবীজীর সুন্নাত এবং অলী-আউলিয়াদের হেদায়েতের পথ থেকে দূরে রাখে এবং শয়তানের প্ররোচনা যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের ত্যাগ করো। ঐশী আদর্শের শিক্ষকগণ জ্ঞানের পথে সদা অটল-অবিচল ছিলেন। আলী (আঃ) আল্লাহর একত্বের ব্যাপারে বহু প্রমাণ অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এবং তারপর তাঁর আনুগত্য করা আমাদের জন্যে ফরয বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে,মানুষ খুবই দুর্বল এবং অক্ষম সৃষ্টি এবং তাই মানুষের উচিত সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা, তার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকা এবং তার সন্তুষ্টির জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ প্রসঙ্গে ইমাম আলী (আঃ) তাঁর ছেলে ইমাম হোসাইন (আঃ) এর উদ্দেশ্যে বলেছেন-জেনে রোখো হে আমার সন্তান! আল্লাহর যদি কোনো অংশীদার বা শরিক থাকতো তাহলে তাঁর নবীরাও তোমার কাছে আসতো। তুমি তাদের শক্তির নিদর্শন দেখতে এবং তাদের কর্মনৈপুন্য ও গুণাবলী সম্পর্কে জানতে। কিন্তু খোদা তায়ালা এক এবং একক সত্ত্বা। যেমনটি তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন-তাঁর নিরঙ্কুশ একাধিপত্যে কারো কোনো রকম অংশিদারিত্ব নেই এবং তাঁর শক্তি নিঃশেষ হবার নয়। তাঁর অস্তিত্ব সবসময় ছিল এবং তিনি সকল কিছুর শুরু তবে তাঁর জন্যে শুরু বলে কিছু নেই। সবকিছুরই সমাপ্তি আছে কিন্তু তাঁর কোনো সমাপ্তি নেই। মানুষ তাঁর শক্তি সম্পর্কে যতোটুকু চিন্তা করতে পারে প্রকৃতপক্ষে তিনি তার চেয়েও অনেক উর্ধ্বে। এখন যেহেতু এই উপলব্ধি বা বোধ তোমার হয়েছে তাই আল্লাহর প্রতি অনুগত হও। তাঁর শাস্তিকে ভয় করো এবং তাঁর রাগের কারণগুলোকে পরিত্যাগ করো। কেননা খোদা তায়ালা তোমাকে পুণ্যকাজ ছাড়া আর কোনো কিছুর আদেশ দেন নি এবং মন্দকাজ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ব্যাপারে নিষেধ করেন নি। আলী (আঃ) আল্লাহকে গভীর প্রেম ও আধ্যাত্মিকতার সাথে চিনতেন এবং তাঁর ভালোবাসা পোষণের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত একটি বক্তব্য হলো-হে খোদা! তোমার বেহেশতের লোভে কিংবা তোমার জাহান্নামের ভয়ে আমি তোমার ইবাদাত করি নি,বরং তোমাকে ইবাদাতের উপযুক্ত এবং প্রশংসার যোগ্য জেনেই তোমার ইবাদাত করেছি। তিনি বিনীতভাবে এবং যথার্থ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্যে বেদনাহতের মতো মোনাজাত করতেন। রাতের অন্ধকারে যখন সবাই গভীর নিদ্রায় ডুবে যেতো তখন তিনি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে গুঞ্জন করতে করতে বলতেন-হে খোদা! তুমি তো তোমার সকল প্রিয় বান্দার দুঃসময়ের সঙ্গী এবং যারা তোমার ওপর নির্ভর করে তাদের অভাব-অভিযোগের ব্যাপারে তুমি তো সবই জানো। হে খোদা! আমার জন্যে তুমি যা কিছু যথার্থ মনে করো তার নির্দেশনা দাও! আমার অন্তরকে উন্নতি-অগ্রগতির দিকে এবং পূর্ণতার দিকে ধাবিত করো-কেননা;এই অনুগ্রহ তোমার হেদায়াতের বাইরে প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

মহানবী (সাঃ) ও অসমাপ্ত শেষ অসিয়তনামা — — মহানবী (সাঃ) ও অসমাপ্ত শেষ অসিয়তনামা —- প্রশ্ন – রাসুল (সাঃ) কেন ওনার জীবনের অন্তিম সময় অসিয়তনামা লেখার ব্যাপারে আরও জোর তাকীদ দিলেন না ? বিশ্লেষন মূলক জবাব – মহানবী (সাঃ) ওনার জীবনের শেষের দিনগুলোয় বললেন , ” আমাকে খাতা আর কলম দাও , আমি তোমাদের জন্য অসিয়ত লিখে দিয়ে যাব , যাতে করে আমার পরে তোমাদের কোন ক্ষতি না হয় ” । অনেকটা এরকমই ছিল মহানবী (সাঃ) এর শেষ ইচ্ছা বা আদেশ । কিন্ত ইতিহাস স্বাক্ষী যে , নবীজী (সাঃ) এর এই রকম মহামূল্যবান অভিপ্রায় সফল হল না , হযরত ওমরের প্রচন্ড বিরোধিতার জন্য । ” মেজবাবু ” কিছুতেই নবীজী (সাঃ) কে ওনার শেষ ইচ্ছা পুরন করতে দিলেন না । রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছেন এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট । হযরত ওমরের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও ইতিহাসে বিদ্যমান । চীৎকার , চেচামেচী , হট্টগোল ইত্যাদি জঘন্য বেয়াদবীমূলক আচরনে নবীজী (সাঃ) ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে অসিয়ত না লিখেই ওমরসহ ওনার দলবলকে ঘর থেকে বের করে দিলেন । সূত্র – সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক । ” হযরত ওমরের বিরোধীতা এমন চরম পযায় উপনীত হয়েছিল যে , লেখনীর যে সরজ্ঞামগুলো রাসুল (সাঃ) এর খেদমতে পেশ করা হচ্ছিল , হযরত ওমর সেই সরজ্ঞামগুলো নবীজী (সাঃ) এর মুখের সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ” । সূত্র – মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ৩৬৪ (মিশর মুদ্রন , ১৩১৩ হিজরী ) / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৪২ । সুপ্রিয় পাঠক, প্রশ্নটা এখানেই , মহানবী (সাঃ) কেন তখন হযরত ওমরের প্রবল বিরোধিতার মুখে জোর করে হলেও অসিয়ত লেখার কাজটি সমাপ্ত করলেন না ? এ প্রশ্নের উত্তরটিও খুবই সুষ্পষ্ট – কারন মহানবী (সাঃ) যদি এ পত্র বা অসিয়ত লেখার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি বা জোর করতেন , তা হলে যে ” মেজবাবু ” বলেছিলেন , ” রোগযন্ত্রনা মহানবীর উপর প্রবল হয়েছে ” , তখন উনি এবং ওনার দলবল মহানবীর (সাঃ) সাথে বেয়াদবীর চরম ষ্পর্ধা প্রদশন করতেন এবং তাদের দলীয় লোকেরা জনগনের মধ্যে তা রটনা করে তাদের দাবি প্রমান করার চেষ্টা করতেন । অর্থাৎ তারা তখন বলে বেড়াতেন যে , রোগ যন্ত্রনায় নবীজী (সাঃ) যা কিছু লিখেছেন তা মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয় । কারন তখন ওনার মাথার ঠিক ছিল না । (নাউযুবিল্লাহ ) । এ অবস্থায় মহানবীর (সাঃ) শানে বেয়াদবীপূর্ন আচরনের মাত্রা যেমন বৃদ্বি পেত ও অব্যাহত থাকত , তেমনি মহানবীর (সাঃ) পত্রের কার্যকারিতাও আর থাকত না । এ কারনেই কেউ কেউ যখন তাদের বেয়াদবী আর মন্দ আচরন লাঘব করার জন্য মহানবী (সাঃ) এর কাছে বলেছিলেন ,”আপনি কি ইচ্ছে করেন যে, আমরা কাগজ কলম নিয়ে আসি ? ” মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র চেহারা তখন প্রচন্ড উষ্মায় রক্তিম হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাদের বলেছিলেন ,” এতসব কথাবার্তার পর তোমরা কাগজ কলম আনতে চাচ্ছ ! কেবল এ টুকু তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি যে, আমার বংশধরদের সাথে সদাচরন করবে ” । একথা বলে তিনি উপস্থিত সকলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং আলী , আব্বাস ও ফযল ব্যতীত তারা সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায় । সূত্র – বিহারুল আনোয়ার , ২২তম খন্ড ,পৃ- ৪৬৯ এবং শেখ মুফিদ প্রনীত কিতাব আল ইরশাদ এবং তাবারসী প্রনীত আলামুল ওয়ারা । – চির ভাস্বর মহানবী (সাঃ) – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী , পৃ ৪২২, ছায়া অবলম্বনে —। বিঃদ্রঃ – এ বিষয় বিস্তারিত জানতে হলে , পড়ুন — – হাদীসে কিরতাস এবং হযরত উমর (রাঃ) এর ভূমিকা , লেখক – আব্দুল করিম মুশতাক । রেমন পাবলিশার্স ২৬ , বাংলাবাজার , ঢাকা । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

কে এই ইমরান — — সুরা আল ইমরান — পবিত্র কোরআনের ৩য় নাঃ সুরা । কে সেই ” ইমরান ” ? “—- আদমকে , নূহকে ও ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে আল্লাহ বিশ্বজগতে মনোনীত করিয়াছেন — ” “—– ইহারা একে অপরের বংশধর । আল্লাহ সবশ্রোতা , সবজ্ঞ —– ” । সুরা – আল ইমরান , ৩৩,৩৪ । আলে ইবরাহীম অর্থাৎ ইবরাহীমের বংশধর ও আলে ইমরান অর্থাৎ ইমরানের বংশধর থেকেই মহান আল্লাহ মহানবীর ( সাঃ ) ওফাতের পর সমগ্র জ্বীন ও মানবজাতি সহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের হেদায়েত বা পরিচালনার জন্য ১২ জন পবিত্র ইমামগনকে ( আঃ ) মনোনীত করেছেন । ওনাদেরকে মনোনয়ন করার আগে মহান আল্লাহ ইবরাহীম ও ইমরানকে মনোনীত করেছেন । তো এই প্রসংগে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পরিচয় তুলে ধরার এখানে অপেক্ষা রাখে না । তবে যার নামে এই সুরার নামই রাখা হয়েছে ” ইমরান ” , সেই হযরত ইমরানের সম্পর্কে কিছু কথা বলার অবকাশ আছে । এখন মূল প্রশ্ন — কে সেই ” ইমরান ” ?? যাঁকে এবং যাঁর বংশধরকে স্বয়ং মহান আল্লাহ নিজে মনোনীত করেছেন ! সমগ্র ইসলামের ইতিহাসে তিনজন ” ইমরানই ” বিখ্যাত এবং বিশেষ মান মর্যাদার অধিকারী । প্রথম — ” ইমরান ” হচ্ছেন হযরত মুসা (আঃ) এর পিতা । যিনি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর । কাজেই তিনি তো মনোনীত আছেনই এবং ওনার বংশধর সেই ধারাভুক্ত । কাজেই তাকে বা তার বংশধরকে আবার মনোনয়নের প্রয়োজন হয় না । দ্বিতীয় — ” ইমরান ” হচ্ছেন হযরত মরিয়ম (আঃ) এর পিতা । সেই সুত্রে তিনি হযরত ঈসা (আঃ) এর নানা । তিনিও হযরত ইবরাহীমের বংশধর । আর তিনি কোন পুত্র সন্তান রেখে যান নি । হযরত মরিয়ম (আঃ) হচ্ছেন ওনার কন্যা সন্তান । হযরত ঈসা (আঃ) এর মাতা তিনি । তিনিও ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর । কাজেই তিনিও মনোনীত । এবং হযরত ঈসা (আঃ) অবিবাহিত ছিলেন বিধায় পুত্র বা কন্যা সন্তানের কোন প্রশ্নই আসে না । তথা ওনার বংশধরের কোন অস্তিত্ব নেই । এখন সর্বশেষ ও তৃতীয় —– ” ইমরান ” হচ্ছেন মহানবী (সাঃ) এর চাচা , যিনি আবু তালিব নামে সর্বাধিক পরিচিত । এই আবু তালিবেরই প্রকৃত নাম হচ্ছে ” ইমরান ” । প্রচলিত নাম হচ্ছে আবু তালিব বা তালিবের পিতা । ওনার জৈষ্ঠ পুত্রের নাম হচ্ছে তালিব । তাই ওনাকে ডাকা হতো আবু তালিব । একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কোন উল্লেখযোগ্য ” ইমরান” অদ্যবধি ইসলামের ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায় নি । সুতরাং মহান আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও ঘোষিত ” আলে ইমরান ” ( ইমরানের বংশধর ) , এই হযরত আবু তালিব (আঃ) ছাড়া আর কে হতে পারে ? আমীরুল মুমিনীন ওয়া ইমামুল মোত্তাকীন হযরত আলী ( আঃ ) ওনারই সুযোগ্য সন্তান । যার জন্মই হয়েছিলো পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে । এবং এই মহা সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে আর কারও হয় নি । জান্নাতবাসীদের সর্দার তথা ২য় ও ৩য় ইমাম , ইমাম হযরত হাসান ( আঃ ) এবং ইমাম হযরত হোসেন (আঃ) এই আবু তালিব বা ইমরানের পৌত্র । হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) এর বংশ থেকে শেষ যামানার ইমাম হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত যে নয়জন আল্লাহর মনোনীত ইমাম আগমনের সংবাদ বা ঘোষনা মহানবী (সাঃ) দিয়েছেন , তারা সকলেই , ” আলে ইমরান ” তথা আবু তালিবের বংশধর । এই বংশধরকেই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে পুত পবিত্র বলে ঘোষনা দিয়েছেন । মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তি ছাড়া কোন লোককে মনোনীত করা আল্লাহর বিধানে নেই । সেই হিসেবে অতি অবশ্যই হযরত আবু তালিব বা ইমরান (আঃ) আল্লাহর মনোনীত একজন মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তি । এবং এই বংশধরকে আল্লাহ মহব্বত ও সম্মান ও আনুগত্য করার আদেশও দিয়েছেন । রাসুলে খোদা বলেন , ” যে আলীকে ভালোবাসে ও আনুগত্য করে সে পবিত্র আত্মার অধিকারী ” । ( তিরমিযি ) । আর আবু তালিব হচ্ছেন আলী (আঃ) এর জন্মদাতা পিতা । তাহলে তিনি কতো পবিত্র হবেন তা কি ভেবে দেখার দাবি রাখে না ? যার ঔরস থেকে আল্লাহ কতৃক মনোনীত ইমামতের ধারা শুরু হলো , সেই আবু তালিব বা ইমরানকে একদল মুসলিম নামধারী জ্ঞানপাপীরা ” কাফের ” বা “মৃত্যুর আগ পর্যন্র ঈমান আনে নি ” এই জাতীয় ভয়ংকর জঘন্য কথা বলতে অন্তর কাপে না ! যাইহোক , সুপ্রিয় পাঠক , আশা করি সুরা আলে ইমরানের , ইমরান ব্যক্তিটি কে – প্রকৃত পরিচয় পেয়েছেন । — নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) ও ইসলামের ইতিহাস প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) সঞ্জরী বলেছেনঃ- "আউসাফে আলী বগুফতেগু মুমকিন নিস্ত, গুনজায়েশে বহর দর সবু মুমকিন নিস্ত " বংঙ্গানুবাদঃ আলীর (আঃ) মহিমা ভাষার তুলিতে যায় না কখনো আঁকা, অসীম সাগর কলসির মাঝে যায় কি কখনো রাখা ? মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রহঃ) তাঁর 'দিউয়ানে শামস তাবরিজ' গ্রন্থে হযরত আলীর (আঃ) তাৎপর্য নির্দেশ করেছেনঃ- "এটা কুফরি নয়, আমি কাফির নই।যত দিন হতে এই সৃষ্টি আছে,আলী (আঃ) আছেন, যত দিন সৃষ্টি থাকবে,আলী (আঃ) থাকবেন। "এক রাতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আলীর (আঃ) কাছে কোরআনের তফসির শুনতে আসেন।শুধু সুরা ফাতেহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল দেখে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ এক সুরা ফাতিহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল। বাকি কিতাব তো পড়ে রইল। মাওলা আলী (আঃ) বললেনঃ কোরআনের মূল সুরা এই ফাতিহা আর সুরা ফাতেহার মূল বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিমের মূল হচ্ছে বিসমিল্লাহ। বিসমিল্লাহর মূল হছে 'বে' হরফ টি।'বে' হরফের মূল হচ্ছে নুকতাটি আর এই নোকতাটি কে জানো? ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না। আলী (আঃ) বললেনঃ"আনা নুখতাতু আতহাল বায়ে " আমিই 'বে' -এর নিচের এই নুকতা। মহানবী (সাঃ) বলে গেছেনঃ হে আল্লাহ্‌, আলী যেদিকে ঘুরবে হককে সেদিকে ঘুরিয়ে দিও।আরো বলেছেনঃ মোনাফেক ব্যতীত কেউ আলী বিদ্বেষী হতে পারে না।আলীর সাথে বিদ্বেষ রাখে কি-না, তা দেখে কে মোনাফেক, সাহাবা ও আনসারগণ তা নির্ণয় করতেন।[তিরমিজি ] হযরত জাবের (রাঃ) বলেনঃ তায়েফ গমনের দিন রসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলীকে (আঃ) ডেকে নিয়ে পরামর্শে বসলেন।এক ঘণ্টা বেশী দেরি হওয়ায় সাহাবীগণ আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে এমন কি লম্বা-চওড়া গোপন পরামর্শ করলেন? রসুলে খোদা (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ গোপন পরামর্শ আমি করিনি, স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই তাঁর সাথে পরামর্শ করেছেন । প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আমার কথা সুব.ই.আজল ইয়ে মুঝছে কাঁহা জিব্রাইল নে জো আকাল কা গুলাম হো…ও দিল না কার কবুল। -আল্লামা ইকবাল। অর্থঃ আজ ভোরে জিব্রাইল এসে বললোঃ - যারা আকল ( সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধির ) গোলাম হয়, তাদের হৃদয় তুমি কবুল করিও না। অর্থাৎ তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করিও না। জিন্দেগি আপনি যব ইস শকল্ সে গুজরি গালিব, হম ভি ক্যায়া ইয়াদ করেঙ্গে কি খুদা রাখতে থে। -মীর্জা গালিব। অর্থাৎ নিজের জীবন যখন এমনই বিবর্ণ, গালিব, কী করে যে ভাবি, একদা আমাতেই ছিল স্র্রষ্টার বাস? প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব আঃ নিঃসন্দেহে আমাদের শেষ নবী (সা.) হচ্ছেন সকল নবীদের সর্দার এবং সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকেও তিনি ছিলেন সবার উর্দ্ধে। দ্বীনে ইসলাম দুনিয়ার বুকে আসার পরে সকল দ্বীন বাতিল হয়ে যায় এমনকি হজরত নূহ, হজরত ইব্রাহিম, হজরত মূসা, হজরত ঈসা (আ.) এর শরীয়ত সমূহও বাতিল হয়ে গেছে। হজরত ঈসা (আ.) যিনি লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন তিনি যখন আবির্ভূত হবেন তখন তিনিও হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর শরীয়তের উপরে ঈমান আনবেন এবং ইমাম মাহদী (আ.) এর পিছনে নামাজ আদায় করবেন। রাসুল (সা.) এর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যাক্তিত্বগণ হচ্ছেন আহলে বাইত (আ.) গণ। পবিত্র আহলে বাইত (আ.) এর সদস্য ইমাম মাহদী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন যে কজন নবীই আবির্ভূত হবেন তাঁরা ইমাম মাহদী (আ.) কে ইমাম হিসেবে মেনে নিবেন। কেননা তাদের নবুওয়াতের পর্ব শেষ হয়ে গেছে এবং এখন হচ্ছে ইমামতের সময় তাই তারাও রাসুল (সা.) এর আহলে বাইত এর ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নিবেন। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে আহলে বাইত (আ.) দের সম্মানকে আলোচনা করতে পারি। ১- আহলে বাইত (আ.) এর অস্তিত্বঃ قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন? (সূরা ছোয়াদ, আয়াত নং ৭৫) لِقَوْلِ النَّبِيِ‏: كُنْتُ‏ نَبِيّاً وَ آدَمَ‏ بَيْنَ الْمَاءِ وَ الطِّين‏ রাসুল (সা.) বলেছেনঃ আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদমের অস্তিত্ব পানি ও মাটির মধ্যে ছিল। (মানাকেবে আলী ইবনে আবি তালিব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৪) ২- মানবীয় মর্যাদার দৃষ্টিতে কোরআনের বর্ণিত হয়েছে যে আহলে বাইত (আ.) কে খোদা ঐশী জ্ঞান দান করেছেন। বিভিন্ন স্থানে আহলে বাইত (আ.) কে নাতিক্বে কোরআন বলা হয়েছে। وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَسْتَ مُرْسَلاً قُلْ كَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ কাফেররা বলেঃ আপনি প্রেরিত ব্যক্তি নন। বলে দিন,আমার ও তোমাদের মধ্যে প্রকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি, যার কাছে গ্রন্থের জ্ঞান আছে। (সূরা রা’দ, আয়াত নং ৪৩) وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত নং ১২) ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ আমাদের কাছে খোদার রহস্য এবং জ্ঞানের মধ্যে থেকে কিছু রহস্য এবং জ্ঞান আছে যা নিকটবর্তি মালায়েকা এবং অন্যান্য নবীগণ এবং ঐ সকল মুমিন যারা পরিক্ষিত হয়েছে তাদের মধ্যেও ও উক্ত রহস্য ও জ্ঞানকে ধারণ করার ক্ষমতা নেই। খোদাকে আমরা (আহলে বাইত) ছাড়া আর কেউ উক্ত জ্ঞানের মাধ্যমে ইবাদত করেনি। (কাফি খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০২) ৩- ক্ষমতা বা শক্তিঃ ক্ষমতা বা শক্তি হচ্ছে জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। খোদা পবিত্র কোরআনে বলেছেনঃ আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত নং ১২) যদি আহলে বাইত (আ.) গণ সেই জ্ঞানের অধিকারী হন তাহলে অবশ্যই তারা হবেন সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী ব্যাক্তি। ৪- খোদার প্রতি ভরসা এবং তাকওয়ার দৃষ্টিতেঃ যদি কারো কাছে খোদার দানকৃত বিভিন্ন ধরণের জ্ঞান থাকে তাহলে অবশ্যই তার ফযিলতও হবে বেশী। لَوْ كُشِفَ‏ الْغِطَاءُ مَا ازْدَدْتُ يَقِينا যদি আমাদের চোখের সামনে থেকে পর্দাকে সরিয়ে নেয়া হয় তাহলেও আমার বিশ্বাসে কোন প্রভাব ফেলবে না। (ইরশাদুল কুলুব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪) ৫- রাসুল (সা.) এর ন্যায় আহলে বাইত (আ.) ও ফযিলতের অধিকারী ছিলেনঃ فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৬১) ৬- হজরত ঈসা (আ.) ইমাম মাহদী (আ.) এর পিছনে নামাজ আদায় করবেন। ২০শে রমজান ৪০ হিজরীতে যখন ইমাম আলী (আ.) চেহারায় মৃত্যুর আলামত প্রস্ফুটিত হয়। তিনি তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ.) কে বলেনঃ আমাদের বাড়ির দরজার যে সকল শিয়ারা একত্রিত হয়ে আছে তাদেরকে আমার কাছে আসতে দাও যেন তারা আমার সাথে সাক্ষাত করতে পারে। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে শিয়ারা ইমাম আলী (আ.) এর চারিদিকে ঘিরে ক্রন্দন ও আহাজারী করতে থাকে। তখন ইমাম আলী (আ.) তাদেরকে বলেনঃ আমার মারা যাওয়ার পূর্বে তোমাদের কিছু জানার থাকলে আমাকে প্রশ্ন করতে পার কিন্তু শর্ত হচ্ছে তোমাদের প্রশ্ন যেন ছোট এবং সংক্ষিপ্ত হয়। ইমাম আলী (আ.) এর একজন সাহাবী সাআসাআ বেন সোহান যিনি শিয়া ও সুন্নী আলেম উভয়ের কাছেই বিশ্বস্ত ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি ইমাম (আ.) কে প্রশ্ন করেন যে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত আদম (আ.) এর? ইমাম (আ.) তার উত্তরে বলেনঃ মানুষ নিজের প্রশংসা নিজেই করা বিষয়টি ঠিক না। কিন্তু স্বয়ং খোদা বলেছেনঃ وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা দোহা, আয়াত নং ১১) তাই বলছি যে হজরত আদম (আ.) এর চেয়ে আমার ফযিলত বেশী। (হজরত আদম (আ.) এর জন্য বেহেস্তে সকল ধরণের নেয়ামত আরাম আয়েশের ব্যাবস্থা ছিল শুধুমাত্র তাকে গন্দুম খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি গন্দুম খান এবং তাকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ার বুকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। যদিও আমার জন্য গন্দুমকে নিষিদ্ধ করা হয়নি কিন্তু যেহেতু আমি দুনিয়াকে পছন্দ করি না সেহেতু তা আমার জন্য হালাল থাকলেও তা আমি পছন্দ করতাম না। উক্ত কথা দ্বারা তিনি হজরত আদম (আ.) এরর ফযিলত কমাতে চাননি বরং তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের কেরামত ও ফযিলত তার জোহদ এবং ইবাদতের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। যে ব্যাক্তি দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে অবশ্যই সে খোদার নিকট ততই প্রিয় হবে। অতঃপর সাআসাআ জিজ্ঞাসা করেন আপিনি উত্তম না হজরত নূহ নবী? ইমাম (আ.) জবাবে বলেন আমি। কেননা যখন হজরত নূহ (আ.) তাঁর গোত্রতে দাওয়াত দেন কিন্ত তারা তার অনুসরণ করেনি উপরন্তু তার উপরে অনেক জুলুম ও অত্যাচার করে। হজরত নূহ (আ.) তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং বলেনঃ হে খোদা! কোন কাফেরকে দুনিয়ার বুকে জিবীত রেখেন না। কিন্তু রাসুল (সা.) এর ওয়াফাতের সাথে সাথে তাঁর উম্মতেরা আমার উপরে অনেক অত্যাচার করেছে। কিন্তু আমি কখনও তাদেরকে অভিসম্পাত করিনি বরং ধৈর্য ধারণ করেছি। তিনি তার ধৈর্য সম্পর্কে তাঁর খুৎবা সেকসেকিয়াতে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে আমি এমন অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করেছি যে, আমার চোখে কাটা এবং আছে এবং গলাতে হাড় বিধে আছে। ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে ব্যাক্তি বীপদ ও কষ্টের সময়ে ধের্য ধারণ করবে সে খোদার নিকট তার ফযিলত ততই বেশী হবে। সাআসাআ আবার জিজ্ঞঅসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেছেনঃ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِـي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن قَالَ بَلَى وَلَـكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৬০) কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে, যদি আমার চোখের সামনে থেকে পর্দাকে সরিয়ে নেয়া হয় তাহলেও আমার বিশ্বাসে কোন প্রভাব ফেলবে না। (ইরশাদুল কুলুব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪) ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন মানুষের ফযিলত তার বিশ্বসের সাথে বৃদ্ধি পায় এবং সবচেয়ে বড় বিশ্বাস হচ্ছে খোদার প্রতি বিশ্বাস। সাআসাআ আবার জিজ্ঞাসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত মূসা (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। এর দলিলে তিনি বলেনঃ হজরত মূসা (আ.) কে যখন খোদা ফেরাউনের কাছে দ্বীনের দাওয়ার দেয়ার জন্য প্রেরণ করেন তখন তিনি বলেনঃ قَالَ رَبِّ إِنِّي قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَأَخَافُ أَن يَقْتُلُونِ وَأَخِي هَارُونُ هُوَ أَفْصَحُ مِنِّي لِسَانًا فَأَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُصَدِّقُنِي إِنِّي أَخَافُ أَن يُكَذِّبُونِ মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। (সূরা কেসাস, আয়াত নং ৩৩) আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। (সূরা কেসাস, আয়াত নং ৩৪) কিন্তু যখন রাসুল (সা.) আমাকে সূরা বারাআতের প্রথম আয়াত প্রচারের জন্য মক্কায় কুরাইশের কাফেরদের মাঝে প্রেরণ করেন যেখানে এমন কোন গোত্রের লোক ছিল না যে আমার হাতে মারা যায়নি। কিন্তু আমি ভয় পাইনি এবং রাসুল (সা.)এর নির্দেশ কে পালন করেছি। ইমাম তার উক্ত কথার মাধ্যমে খোদার প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসাকে বুঝাতে চেয়েছেন যে, খোদার প্রতি যার তাওয়াক্কুল যত বেশী হবে তার ফযিলত ততই বেশী হবে। হজরত মূসা তার ভাইয়ের প্রতি ভরসা করেছিলেন কিন্তু আমি শুধুমাত্র খোদার উপরে ভরসা করেছিলাম। সাআসাআ আবার জিজ্ঞাসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত ঈসা (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। এর দলিলে তিনি বলেনঃ যখন হজরত জিব্রাইলি (আ.) খোদার নির্দেশে হজরত মারিয়াম (আ.) এর উপরে ফু দেয় তখন হজরত মারিয়াম (আ.) গর্ভবতি হয়ে পড়েন এবং যখন তার বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসে তখন তাকে ওহী করা হয় যে তুমি বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে বাইরে চলে যাও কেননা উক্ত স্থানটি হচ্ছে ইবাদতের স্থান না বাচ্চা জন্মদানের স্থান। তাই তিনি বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে বাইরে চলে যান এবং একটি শুষ্ক স্থানে হজরত ঈসা (আ.) কে জন্মদান করেন। কিন্তু যখন আমার মা হজরত ফাতেমা বিনতে আসাদ যখন বুঝতে পারেন যে আমার জন্মের সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন তিনি কাবার কাছে আসেন এবং দোয়া করেন যে, হে খোদা! আপনাকে এই পবিত্র কাবা ঘরের এবং যিনি এ কাবা ঘরকে তৈরী করেছেন তার ওয়াস্তা দিচ্ছি আমার প্রসব বেদনাকে আপনি সহজ করে দিন। তখন কাবা ঘরের দেয়াল ফেটে যায় এবং আমি কাবা ঘরে জন্মগ্রহণ করি। যেহেতু পবিত্র কাবা বাইতুল মোকাদ্দাসের উপরে প্রাধান্য রাখে সেহেতু হজরত আলী (আ.) হজরত ঈসা (আ.) এর তুলনায় ফযিলতের দিক থেকে উত্তম স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ইবনে আবিল হাদীদ, ইমাম হাম্বাল, ইমাম ফাখরে রাযী, শেইখ সুলাইমান বালখি হানাফী সহ অন্যান্যরাও ‍উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেনঃ যদি কেউ হজরত আদম (আ.) এর জ্ঞানকে দেখতে চায় তাহলে সে যেন হজরত আলী (আ.) এর জ্ঞানের প্রতি লক্ষ্য রাখে, যদি কেউ হজরত নূহ (আ.) এর যিনি ছিলেন তাকওয়ার প্রতিমূর্তি ও হিকমত দেখতে চাই, যদি কেউ হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর খোদার বন্ধুত্ব এবং তাঁর হিলম কে দেখতে চায়, যদি কেউ হজরত মূসা (আ.)সম্ভ্রমকে দেখতে চায়, যদি কেউ হজরত ঈসা (আ.) এর ইবাদতকে দখেতে চায় তাহলে সে যেন হজরত আলী (আ.) এর প্রতি দৃষ্টিপাত করে। (আল মুসতারশেদ ফি ইমামাতিল আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), পৃষ্ঠা ২৮৭, হাদীস নং ১০১) অশেষে মীর সৈয়দ আলী হামেদানী শাফেয়ী উক্ত হাদীসের শেষে লিখেছেন যে, বিভিন্ন নবীর ৯০টি গুণ হজরত আলী (আ.) এর মধ্যে ছিল যা আর অন্য কারো মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। এছাড়াও বালখি হানাফী, গান্জি শাফেয়ী এবং আহমাদ ইবনে হাম্বাল সহ অন্যান্যরাও ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে যে সকল ফযিলত বর্ণনা করেছেন আর অন্য কোন সাহাবীর ক্ষেত্রে তা বর্ণনা করেননি। সুতরাং উক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে বুঝতে পারি যে, হজরত আলী (আ.) এর মধ্যে বিভিন্ন নবীর গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

কাবার মনোবাসনা J.H শত নবীর আদর যত্নে লালিত পালিত আমি, আমার মর্যাদা জানে তারা আর জানে অন্তরজামি। লক্ষ মানুষের মনের আশা শুধু দেখবে বলে আমায়, সারা জিবন করে সঞ্চয় তারা দিবা নিশি কাটে এ আশায়। কেউবা আবার সফল হয় কেউ ভোগে নিরাশায়, আমার দেখা না পেলে ভাবে বুঝি জিবন গেল বৃথায়। শত আশা বাসনা রেখেছে পুষেছে তাদের মণি কোঠায়, আমি শুনি তাদের সব কথা কিন্তু কেউ শোনে না আমায়। শোন শোন হে দুনিয়া বাসি! শোন আমার কথা, তোমদের মতো আমারও রয়েছে কিছু না বলা কথা। আমার জন্ম হলো আদিম যুগে বয়স একটু বেশি আমার, সব প্রবিণতা দূর হয়ে যায় যখন আসে দিনটি ফিরে আবার। ১৩ই রজব হলো আমার নবিন হওয়ার দিন, আজকের শিশু কালকে আমায় করবে জানি স্বাধিন। ছিলাম যখন লাত উজ্জার মাঝে আমি নিরুপায়, আশার আলো জালায় তখন খোদার ওয়ালি রাসুলের ভাই। ভুলবো না তোমায় হে মহা মানব তুমি রেখেছ আমার মান, তোমার চিহ্ন আমার বুকে কখনও হবে না অম্লান। তুমি অম্লান তুমি চীরস্থায়ি তুমি খোদার অবদান, তাইতো আজও সারা দুনিয়া তোমার গাইছে গুণগাণ।

সত্যের সন্ধানে 😱মুসলমান দের ২য় খলিফা সমকামী😱 ইবনে সির্রিন কতৃক রেওয়ায়তঃ "হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব এরশাদ করেন,যে জাহিলিয়া যুগে আমার এক বদ অভ্যাস ছাড়া আমার কিছুই নেই, যদি সেটা কোন পুরুষ আমার সাথে করে(যৌন কর্ম) বা আমি কেউ কে করি(যৌন যোগাযোগ)।" أَخْبَرَنَا قَالَ : أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْرَقُ ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيُّ ، وَهَوْذَةُ بْنُ خَلِيفَةَ ، قَالُوا : أَخْبَرَنَا ابْنُ عَوْنٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ ، قَالَ : قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : "ما بقى فىّ شىءٌ من أمر الجهليّة إلا أنى لستُ أُبالى إلى أيّ النّاس نَكَحْتُ وأيّهما أنكحْت" طبقات ابن سعد. خ(٣) ص.(٢٦٩) الناشر: مكتبة الخانجي سنة النشر: 1421 - 2001 রেফারেন্সঃ- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কতৃক অনুমোদিত কিতাব তাবাকাতে ইবনে সাদ খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ২৬৯

ইয়া আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদে মাদাদে ইয়া পাক পাঞ্জাতন মাদাদে ইয়া 12 ইমাম 14 মাসুম আঃ মাদাদে আদম (আ.) সৃষ্টি হতে আজ পর্যন্ত প্রতিটি যুগে পৃথিবীর বুকে অসংখ্য মহামানবের আগমণ ঘটেছে। তাদের অনেকের কথা আমাদের মাঝে এখনও চর্চা হয় এবং আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, আবার তাদের কারো কারো নাম ইতিহাসের উত্থান-পতনে নাম মুছে গেছে অথবা মুছে ফেলা হয়েছে। হযরত আলী (আ.)ও এমন একজন ব্যক্তিত্বের নাম, যার নাম শত্রুরা শত চেষ্টা করেও ইতিহাসের পাতা হতে মুছে ফেলতে পারেনি। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতেই তিনি ইসলামের প্রতিটি ঘটনার সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন এবং ইসলামকে তত্কালীন সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে যে অবদান তিনি রেখেছেন তা আজও মুসলমানরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর নবুয়্যতি মিশনের শুরু দিন হতে তাঁর জীবনের অন্তিম লঘ্ন পর্যন্ত হযরত আলী (আ.) তাঁর পাশে অবস্থান করেছেন। ছোটবেলা থেকেই নবী (স.) এর সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা হযরত আলী (আ.) শত প্রতিকূলতার মাঝেও কখনই মহানবী (স.) কে নিঃসঙ্গ ত্যাগ করেন নি। যার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে ওহুদের যুদ্ধ। যখন সাহাবীরা নিজের জীবনের মায়ায় আল্লাহর রাসূল (স.) কে ত্যাগ করে পলায়নে ব্যস্ত তখন ইসলামের অকুতোভয় এ সৈনিক ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন শত্রুদের উপর। আর আহত আল্লাহর রাসূল (স.) কে রক্ষা করছিলেন তাঁর (স.) দেয়া তলোয়ার চালিয়ে ও নিজের শরীরে আঘাতের পর আঘাত গ্রহণের মাধ্যমে। ওহুদের যুদ্ধের দিনে মহানবী (স.) এর উপর আস্থা হারানো সাহাবীরা পরবর্তীতে ইসলামের এ এ সেনাপতিকে –যিনি নুবয়্যতি জ্ঞান ও শিষ্টাচারের মাঝেই বেড়ে উঠেছেন- বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করতে থাকে। কিন্তু এ প্রবাদের ন্যায় –যাতে বলা হয়েছে যে, ‘আতর অনাস্ত কে খুদ বেবুয়াদ, না অনকে আত্তার বেগুয়াদ’ (সুগন্ধী আতর হচ্ছে সেটা যা নিজেই সুগন্ধ ছড়ায়, ঐটা নয় যার প্রশংসা বিক্রেতা করে)- ইমাম আলী (আ.) সুগন্ধী আতরের ন্যায় নিজেই সুবাশ ছড়িয়েছেন, চাই অন্য কেউ তার প্রশংসা করুক বা না করুক। ইসলামের শত্রুরা বিশেষতঃ বনি উমাইয়া চক্র ক্ষমতায় আসার পর হযরত আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর উপর গাল-মন্দ করার প্রচলন ঘটায়। এরপর হতে বনি উমাইয়া সরকারের অধিনে থাকা সকল মেম্বর হতে আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর উপর গালমন্দ করা হয়। যা দীর্ঘ কয়েক দশক যাবত অব্যাহত ছিল। এছাড়া হযরত আলী (আ.) এর শানে যে সকল হাদীস মহানবী (স.) হতে সাহাবীরা বর্ণনা করেছেন সেগুলোকে কখন মুছে দিয়ে, আবার কখনও বা জায়িফ (দূর্বল) বলে উল্লেখ করে তার মর্যাদাকে খর্ব করার অপচেষ্টাও চালানো হয়েছে (যার কিছু কিছু নমুনা বর্তমানেও পরিলক্ষিত)। কিন্তু যারাই এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তারাই হয়েছে অপদস্ত এবং হযরত আমির (আ.) এর সম্মান ও মর্যাদা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ‘অন্যন্য সাহাবীদের উপর হযরত আলী (আ.) এর শ্রেষ্ঠত্ব’ শীর্ষক এ সিরিজে আমরা তাঁর (আ.) শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ইতিহাস হতে বিভিন্ন দলিল ও প্রমাণ উপস্থাপন করব। যেগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে আবনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হবে। হযরত আলী (আ.) এর বংশ পরিচয় প্রাচীণকাল হতেই বংশ মর্যাদার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। আর সর্বক্ষেত্রে এর বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে, বিশেষতঃ যখনই কোন বিবাহের কথা ওঠে তখন বংশ মর্যাদার বিষয়টিকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মতই দৃষ্টিতে রাখা হয়। আর কোরআন ও হাদীসের পাশাপাশী বর্তমান যুগে সায়েন্সও এটা প্রমাণ করেছে যে, ভাল ও সুস্থ পিতা-মাতাই সমাজকে একটি ভাল ও সুস্থ সন্তান উপহার দিতে সক্ষম। তাই সবকিছুর আগে হযরত আলী (আ.)-এর বংশ পরিচয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক। বংশের দিক হতে রাসূল (স.) এর মত একই বংশ পরিচয়ের অধিকারী তিনি। কেননা তারা ছিলেন পরস্পরের চাচাতো ভাই। আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তাদের পিতামহ। হযরত মহানবী (স.) ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ (আ.) এর একমাত্র সন্তান এবং হযরত আলী (আ.) ছিলেন হযরত আবু তালিবের কনিষ্ঠ সন্তান। ঐতিহাসিকগণ যেভাবে এ মহান দুই ব্যক্তিত্বের পূর্বপুরুষদের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন, ঠিক সেভাবেই আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হল: পর্যায়ক্রমিকভাবে তাঁদের পূর্বপুরষগণ হলেন- আবুতালিব, আব্দুল মোত্তালিব, হাশেম (এই নামের কারণেই আহলে বাইত (আ.) গণকে হাশেমী বলা হয়), আব্দে মানাফ, কুসাই, কালাব, মুর্‌রা, কায়া’ব, লুওয়াই, গালিব, ফাহ্‌র, মালিক, নাদ্‌র, কানানাহ, খুযাইমাহ, মুদরেকাহ, ইলইয়া’স, মুযার, নাযার, মায়াদ, আদনান। (কামেলে ইবনে আসির, ২য় খণ্ড, পৃ. ১ ও ২১) নিশ্চিতভাবে, তাঁদের পূর্ব পুরুষের তালিকা মায়াদ বিন আদনান পর্যন্ত এভাবেই সঠিক। কিন্তু আদনানের পূর্বপুরুষগণ হতে হযরত ইসমাঈল (আ.) পর্যন্ত, সংখ্যা এবং নামের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। আর ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়েত অনুযায়ী যা তিনি হযরত মহানবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, যখনই তাঁর পূর্বপুরুষের তালিকা আদনান পর্যন্ত পৌঁছায় তখন তিনি আদনান হতে অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যখন তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের নামের তালিকা বর্ণনা করেছেন, তখন আদনানের পর আর কারো নাম বলেন নি। আর তিনি নির্দেশ দিতেন যে, আদনান হতে ইসমাঈল (আঃ) পর্যন্ত তাঁর পূর্বপুরুষদের নাম গণনা না করার জন্য। তিনি আরো বলেছেন: আর এ সম্পর্কে যা কিছু আরবদের মধ্যে প্রসিদ্ধ, সেগুলো সঠিক নয় (সিরায়ে হালাবি, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬)। তাই আমরাও রাসূল (সঃ)-এর নির্দেশ মোতাবেক শুধুমাত্র আদনান পর্যন্ত গণনা করাকে যথেষ্ঠ মনে করবো। উপরোক্ত আলোচনার পর পাঠক মহোদয়ের নিকট এই বিষয়টি কি স্পষ্ট নয় যে, বংশ মর্যাদার দিক থেকেও অন্যান্য সাহাবীদের উপর আলী (আ.) এর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে?! কারণ যদি অন্য কারো বংশ মর্যাদা আলীর চেয়ে উচ্চ হয় তবে তাঁর বংশ মর্যাদা মহানবী (স.)-এরও উপরে। আর আমরা এটা জানি যে, বংশের দিক থেকে মহানবী (স.) মর্যাদার সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছেন। আর যেহেতু আলী (আ.) তাঁর আপন চাচাতো ভাই, তাই তিনিও এ দিক থেকে অন্যান্য সাহাবীদের ওপরে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। কাবা গৃহে জন্মগ্রহণ আলী (আঃ)-এর কাবাগৃহ অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণের বিষয়টিতে ওলামাদের মতৈক্য রয়েছে। (মুরুরুয যাহাব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৮; তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃ. ১১; কাশফুল গাম্মাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৯; মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব, ২য় খণ্ড, পৃ.১৭৫; আ’লামুল ওয়ারা, পৃ. ১৫৩; শাবলাঞ্জি কর্তৃক রচিত নূরুল আবসার, পৃ. ৮৫; বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৭, হাদীস নং ১০; ফুসুলুল মুহিম্মাহ, পৃ. ১২) আর মতৈক্য রয়েছে এ বিষয়েরও উপর যে, একমাত্র আলী (আ.)-ই এমন মহান সৌভাগ্যের অধিকারী। কোন সাহাবী তো দূরের কথা কোন নবী, রাসূল ও আল্লাহর ওলীও এমন সৌভাগ্য লাভ করেন নি। কিন্তু ফাতেমা বিনতে আসাদের (হযরত আলী (আ.) এর মাতা) কা’বা গৃহে প্রবেশ ও সেথায় তাঁর জন্মগ্রহণের ঘটনাটির বর্ণনায় রাবী ও ঐতিহাসিকদের মাঝে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনে আব্বাস তার পিতা আব্বাস হতে যে রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন তাতে এটা স্পষ্ট হয় যে, কা’বা গৃহের দরজায় তালা লাগানো ছিল এবং ফাতেমা বিনতে আসাদ কর্তৃক দোয়া, পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ ও আসমানী কিতাবের উপর স্বীকৃতি দেয়ার পর, তাঁর পিতামহ হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর কথায়, আল্লাহকে কা’বা গৃহের, যে তাকে তৈরী করেছে তাঁর, এবং যে সন্তান তার গর্ভে বিদ্যমান ছিল তার কসম দেবার পর তার সন্তান প্রসব সহজতর করার জন্যে কা’বা গৃহের দেয়ালে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়। হযরত আব্বাস (রা.) বলেন: আমি দেখলাম যে, কা’বা গৃহের দেয়াল বিপরীত দিক থেকে ফেঁটে গেল এবং ফাতেমা তাতে প্রবেশ করল। অতঃপর দেয়াল পূনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। এরপর আমরা যতই চেষ্টা করলাম দরজা খোলার জন্যে -যাতে আমাদের কিছু মহিলারা ফাতেমার নিকট গিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারে- কিন্তু দরজা খুললো না। আর তখনই বুঝতে পারলাম যে, এটা স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ হতে। ফাতেমা তিনদিন কা’বা গৃহের মধ্যে অবস্থান করলো। চতুর্থ দিন আল্লাহর নির্দেশে দরজা খুলে গেল এবং যে স্থান দিয়ে ফাতেমা প্রবেশ করেছিলো ঠিক সে স্থান দিয়েই সে বেরিয়ে এল... (খারায়েজ ও জারায়েহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭১; মানাক্বেবে ইবনে মাগাযেলী, পৃ. ৭; [সামান্য পার্থক্যে বর্ণিত হয়েছে] নাহজুল হাক্ব, পৃ. ২৩৩; [সামান্য পার্থক্যে বর্ণিত হয়েছে] এহকাকুল হাক্ব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫৬) ‘বাশারাতিল মুস্তাফা’ ইয়াযিদ ইবনে ক্বানআব হতে বর্ণনা করেছেন, “যখন ফাতেমার প্রসব বেদনা উঠল তখন তিনি কা’বায় প্রবেশ করলেন, অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন, এমতাবস্থায় তার হতে আলী (আ.) ছিলেন।” (বাশারাতুল মুস্তাফা, পৃ. ৮; বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৮ ও ৯) অন্য একটি রেওয়ায়েত হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত হয়েছে, “ফাতেমা জন্ম দিয়েছেন আলী (রা.) কে কা’বাগৃহে।” (বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৬ ও ৩৭) ওয়ারযান্দি শাফেয়ী ‘নাযমুদ দুরার’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, “যখন ফাতেমার প্রসব বেদনা উঠলো তখন আবু তালিব (আঃ) এশার পর তাকে কা’বা গৃহে প্রবেশ করান অতঃপর আলী (আঃ) সেখানে জন্মলাভ করেন।” (নাযমু দুরারুস সামত্বীন, পৃ. ৮০) শুরুতেই উল্লেখ করেছি যে, কোন নবী-রাসূল (আ.)ও এমন সৌভাগ্যের অধিকারী হননি। তাই সাহাবাদের মধ্যে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণের জন্য জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মুখে এমন শক্ত দলিল উপস্থাপনের পর আর কোন দলিলের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এটাও যথেষ্ঠ যে, তিনি তার জীবনের প্রথম নিঃশ্বাসটি আল্লাহর ঘরেই ফেলেন। যা অন্যান্য সাহাবীদের ভাগ্যে জোটেনি। উল্লেখ্য, কিছু বছর পূর্ব পর্যন্ত সে ফাঁটলটি কা’বা গৃহের দরজার বিপরীত পার্শ্বে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই ফাঁটলটি আর পরিলক্ষিত হয় না। কেননা তদস্থল ইট দ্বারা গেঁথে দেয়া হয়েছে। আপনার যারা দেখতে ইচ্ছুক তারা যদি কখনো মক্কায় যাবার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তবে অবশ্যই দেখতে পাবেন যে, কা’বা গৃহের অন্যান্য স্থানের গাঁথুনি হতে সেই স্থানের গাঁথুনির যথেষ্ঠ অমিল রয়েছে। আর এটাই এর স্পষ্ট সাক্ষি যে, এই স্থানে পূর্বে কোন কিছু ছিল যা বর্তমানে মুছে ফেলা হয়েছে।# প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

কিবলা পরিবর্তন যেভাবে হল — মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসা বা আল আকসা মসজিদটি ফিলিস্তিনের পবিত্র নগরী বায়তুল মোকাদ্দাসে বা জেরুজালেমে অবস্থিত। এই মসজিদের কারনে বায়তুল মোকাদ্দাসকে সংক্ষেপে আল-কুদ্‌স শরীফও বলা হয় । ঐতিহাসিকভাবে আল-কুদ্‌সের মর্যাদা অপরিসীম । কারন এ জায়গাকে কেন্দ্র করে অনেক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে । বায়তুল মোকাদ্দাস বিখ্যাত নবী হযরত দাউদ (আঃ) ও হযরত সোলাইমান (আঃ) এর রাজধানী ছিল । হযরত সোলাইমান (আঃ) কর্তৃক নির্মিত গম্বুজবিশিষ্ট সেই বিখ্যাত মসজিদ এখনও মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে আছে । এই মসজিদটি মুসলমানদের কাছে অন্য একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ । মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মিরাজ-এর সময় এই মসজিদে এসে সকল নবী-রাসূলকে নিয়ে নামায পড়েছিলেন এবং এখান থেকেই স্বর্গীয় বাহন বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ শুরু করেছিলেন । শুধু তাই নয় , ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কিবলা করে নামায আদায় করতেন । দীর্ঘ তের বছর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস । এর কারণ ছিল তখনও পর্যন্ত মক্কার কাবা কাফেরদের দখলে ছিল । কাবার আঙিনায় ৩৬০টি মূর্তি বসানো ছিল । আল্লাহর ঘরকে তারা অনাচারে পরিপূর্ণ করে রেখেছিল । মদীনায় হিজরত করার পর মুসলমানরা ইহুদিদের সাথে একটি রাষ্ট্রে বাস করতে থাকে । ইহুদিরা মুসলমানদের এই বলে খোটা দিত যে , তোমরা তো আমাদের ধর্মকেই অনুসরণ করছ । কারন , জেরুজালেমকে কিবলা বানিয়ে নামায পড়ো তোমরা ! এ কথা জানতে পেরে মহানবী (সাঃ) খুব দুঃখ পেলেন । তিনি দুঃখ ভরা মন নিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলেন এবং মহান প্রভুর কাছ থেকে কোন সান্ত্বনার বাণী শোনার অপেক্ষায় থাকলেন । পবিত্র কাবা শরীফ — দ্বিতীয় হিজরিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সাঃ) এর মনের কষ্ট দূর করার সিদ্ধান্ত নিলেন । একদিন মহানবী (সাঃ) বনি সালিমের মসজিদে জোহরের নামায পড়ছিলেন । দুই রাকাত পড়ার পর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ) এর দুই হাত ধরে তাঁকে কা’বা শরীফের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন । তখন থেকেই কাবা মুসলমানদের কিবলায় পরিনত হল । এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৪৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন , “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি । অতএব , অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন । এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক , সেদিকে মুখ কর । যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে , (এ ধর্মগ্রন্থ) তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত সত্য । তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নেই ।” এই আয়াত থেকে বোঝা যায় , বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে মুখ ফেরানোতে আল্লাহরই ইচ্ছা কার্যকর ছিল এবং কোন বিশেষ দিককে তিনি প্রাধান্য না দিয়ে বলেছেন , সকল দিকই তাঁর দিক । কাজেই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তনের মাঝে অবাক হওয়ার কিছু নেই । তাছাড়া কাবাকেই আল্লাহ’তাআলা মুসলমানদের জন্য চিরস্থায়ী কিবলা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন । বায়তুল মোকাদ্দাসের ব্যাপারটি ছিল সাময়িক । বন্ধুরা , মহান আল্লাহর এই সুস্পষ্ট ঘোষণার পর বাহানাবাজ ইহুদিরা এবার নতুন আপত্তি তুলে মুসলমানদেরকে বলল , যদি আগের কেবলা সঠিক হয় , তাহলে কোন কারণে তা বাতিল করা হল ? কেন এতকাল পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হল ? তার জবাবে মহান আল্লাহ একই সূরার ১৪২ আয়াতে বলেন , “নির্বোধ লোকেরা বলবে যে , তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল ? বলো ! পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই । তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন ।” পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে , কেবলার অর্থ এই নয় যে , আল্লাহ স্থান বা কোন অঞ্চল নিয়ে আছেন বা আল্লাহ পশ্চিম দিকে আছেন বা পূর্ব দিকে আছেন । প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পূর্ব-পশ্চিম সব দিকেই আছেন এবং সবই তার মালিকানাধীন । আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন স্থানেরই বিশেষ কোন মর্যাদা নেই । আল্লাহর নির্দেশেই আমরা কোন বিশেষ স্থানকে সম্মান করি । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল , আল্লাহর নির্দেশের অনুগত হওয়া । আল্লাহ যেদিকেই মুখ ফেরানোর নির্দেশ দেন , সেদিকেই আমাদের মুখ ফেরানো উচিত-তা কাবাই হোক বা বায়তুল মোকাদ্দাস হোক । তারাই আল্লাহর সহজ ও সঠিক পথে পরিচালিত হবে , যারা আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করবে । কিবলা পরিবর্তন হলেও বায়তুল মোকাদ্দাসের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে এতটুকু কমে যায়নি । মক্কা, মদীনার পরেই আল-কুদস মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থান । পবিত্র এই মসজিদটি ইহুদিবাদি ইসরাইল দখল করে রেখেছে । ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল । শুধু আল-আকসা মসজিদই নয় , মানবতার দুশমন ইসরাইল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে রেখেছে । এছাড়া , ইসরাইলি সেনারা মাঝেমধ্যেই ফিলিস্তিনে হামলা চালাচ্ছে । ইসরাইলি হামলার কারণে ফিলিস্তিনি শিশুরা প্রতিনিয়ত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠছে প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

বিদায়-বেলায় - কাজী নজরুল ইসলাম---ছায়ানট তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না, জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না। ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না, শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।। হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। চলার তোমার বাকী পথটুকু- পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক- হায়, অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না, ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।। দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি তব ব্যথা কেউ বোঝে না, তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী, পথে ফেরে যারা পথ-হারা, কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না, বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি? দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে? এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে! তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায় কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায় আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়- পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক! কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না, ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।। প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

মহান আল্লাহ কতৃক মনোনীত পবিত্র এগার জন ইমাম (আঃ) গন নিম্নলিখিত খলীফা বাহাদুরগনের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে শাহাদত বরন করেন — ১ ) – ২১শে রমজান ৪০ হিজরী , ৩১ শে জানুয়ারী ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম ইমাম হযরত আলী (আঃ) কুফার মসজিদে সেজদারত অবস্থায় ইবনে মুলজিম কতৃক বিষাক্ত তলোয়ারের আঘাতে শাহাদত বরণ করেন । ২ ) – ২৮ শে সফর ৫০ হিজরী , ২৯ শে মার্চ ৬৭০ খ্রীষ্টাব্দে আবু সুফিয়ানের জারজ পুত্র মুয়াবীয়ার প্রত্যক্ষ চক্রান্তে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসান (আঃ)। ৩ ) – ১০ ই মহররম ৬১ হিজরী , ১২ ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রীষ্টাব্দে মুয়াবীয়ার জারজ পুত্র ঈয়াযীদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতায় তৃতীয় ইমাম হযরত হুসাইন (আঃ) কারবালার ময়দানে পরিবার পরিজনসহ শাহাদত বরণ করেন । ৪ ) – ২৫ শে মহররম , ৯৫ হিজরী , ২৪ শে জানুয়ারী ৭১৩ খ্রীষ্টাব্দে চতুর্থ ইমাম হযরত জয়নাল আবেদীন (আঃ) তৎকালীন উমাইয়া খলিফা আল উয়ালিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৫ ) – ৭ ই জ্বিলহাজ্ব ১১৪ হিজরী , ৩১ শে জানুয়ারী ৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দে পঞ্চম ইমাম হযরত বাকের (আঃ) তৎকালীন উমাইয়া খলিফা হিসামের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৬ ) – ১৫ বা ২৫ শে সাওয়াল ১৪৮ হিজরী , ৭ ই ডিসেম্বর ৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৭ ) – ২৫ শে রজব ১৮৩ হিজরী , ৪ ঠা সেপ্টেবর ৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে সপ্তম ইমাম মুসা কাজেম (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা হারুন আর রশীদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৮ ) – ১৭ সফর বা ২৩ শে জ্বিলকদ ২০৩ হিজরী , ২৬ শে মে ৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে অষ্টম ইমাম হযরত আলী রেজা (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা মামুনের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ৯. ) – শেষ জ্বিলকদ ২২০ হিজরী, ২৮ শে নভেম্বর ৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে নবম ইমাম হযরত আলী তাক্বী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিমের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১০ ) – ৩রা রজব ২৫৪ হিজরী , ১লা জুলাই ৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে দশম ইমাম হযরত আলী নাক্বী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মুতামিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১১ ) – ৮ই রবিউল আউয়াল ২৬০ হিজরী , ৪ঠা জানুয়ারী ৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে একাদশ ইমাম হযরত হাছান আসকারী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মুতাজিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১২ ) – বর্তমান যামানার সর্বশেষ ও দ্বাদশ ইমাম হযরত মেহেদী (আঃ) কে মহান আল্লাহ নিজস্ব কুদরতে রক্ষা করেছেন এবং আল্লাহর হুকুমে যথা সময় তিনি আগমন করিবেন , ইনশা আল্লাহ । সম্মানীয় পাঠক , মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গনের পবিত্র ১১ জন ইমামগনকে ধারাবাহিকভাবে এভাবেই পর্যায়ক্রমে অবৈধভাবে হত্যা করা হয় । ইতিহাসের নিষ্ঠুর নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো বছরের পর বছর ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে । সত্য বেশীদিন চাপা থাকে না । আসুন নিরপেক্ষ মন নিয়ে লুকিয়ে ফেলা ইতিহাস জানার চেষ্টা করি ।

মাথা বিছিন্নকরনের রীতি — বর্বর অসভ্য আরব দেশে সে যুগে একটা রীতি চালু ছিল । এক গোত্র আরেক গোত্রের কাউকে হত্যার পর , লাশের মাথা শরীর থেকে কেটে নিত । এর পর ওই মাথা সারা শহরে প্রদক্ষিন করা হত । এই অসভ্য বর্বর প্রথাটা সম্পূর্ন ইসলামি রীতি বিরোধী । প্রশ্ন – ঐ যুগের এই ভয়ংকর রীতি পুনরায় কে চালু করে জানেন ? জবাব – জনাব মুয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান । সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবীয়া বাহিনীর হাতে শহীদ হন সাহাবি আম্মাার বিন ইয়াসির (রাঃ)। তাঁর মস্তক কেটে নিয়ে , ঐ মস্তক মুবারক হাজির করা হয় মুয়াবীয়ার কাছে । সুন্নি তথ্য সুত্র – ১) – মুসনাদে হাম্বাল , হাদিস নং – ৬৫৩৮ এবং ৬৯২৯ [মিশর মুদ্রন] ২) – সাদের তাবাকাত , ভো – ৩ , পেইজ – ২৫৩ । একই পন্থা অনুসরন করেছিল মূয়াবীয়ার জারজ কুলাঙ্গার সন্তান ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া । কারবালা প্রান্তর থেকে ৭২ জন শহীদগনের কর্তিত পবিত্র মস্তক বর্শার মাথায় করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এই নরপিশাচ ঈয়াযীদের দরবারে । প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

খলনায়কগনের সংক্ষিপ্ত সফল খতিয়ান – বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে হজ্ব ফেরত লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনের সম্মুখে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার ঘোষনা মোতাবেক রাসুল (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত ইমাম ও খলীফা নিযুক্ত হলেন ইমাম আলী (আঃ) । প্রকাশ্য এই ঘোষনায় মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল খলনায়কগনের । যে আশা নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর দলে লোক দেখান ইসলাম ধর্ম কবুল করে যোগ দিয়েছিল এই ভেবে যে , রাসুল (সাঃ) চোখ বুজলেই তাঁর শূন্য আসনে টুপ করে বসে পড়বে ! কিন্ত এ কি হল ! শূন্য আসনে বসবে ইমাম আলী (আঃ) ! এত দিনের স্বপ্ন আশা সবই যে জলে গেল । কিছুতেই তা হতে দেয়া যায় না । শুরু হল ভয়ংকর ষড়যন্ত্র এবং নিঁখুত পরিকল্পনা । ষড়যন্ত্রকারীদের দলে দুষ্ট লোকের অভাব হল না । প্রথম পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুলে (সাঃ) এর পরিস্কার নির্দেশ সত্বেও ওসামার নেতৃত্বে যুদ্বে না যেয়ে মদীনার উপকণ্ঠে পালিয়ে থাকল – কখন রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের সংবাদ পাওয়া যায় । দ্বিতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার আদেশ সত্বেও খাতা কলম না দিয়ে অসিয়ত নামা কিছুতেই লিখতে দেওয়া হল না । তৃতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল – বিষ মিশ্রিত ঔষধ এক প্রকার জোর করেই রাসুল (সাঃ) কে খাইয়ে দেয়া হল । চতুর্থ পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকাল সংবাদ জানার পরেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও রাসুল (সাঃ) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ না করে বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা চুড়ান্ত করন । ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত ফলাফল – আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যাঁদের নির্বাচিত করেছিলেন তাঁদেরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতার মসনদে বসে গেল । খলনায়কগনের টোটাল পরিকল্পনা ১০০ ভাগ সফল । চুড়ান্ত পরিনতি – রাসুল (সাঃ) রেখে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম সম্পূর্ন ভাবে অবহেলিত ও নির্বাসিত । প্রায় ১৫০০ বছর যাবত খলনায়কগনের প্রচারিত ও বাজারজাত কৃত ফরমালিন যুক্ত বিকৃত কুৎসিত জঘন্য ইসলামকে দুনিয়ার সকলেই প্রকৃত ইসলাম বলে মনে করে । দরবারী মোল্লা , ভাড়াটে হাদিস লেখক , ভাড়াটে মুফতিগণ হয়ে গেল ইসলামের সোল এজেন্ট । অজ্ঞ , জাহেল , মুনাফিক ভন্ড ব্যক্তিবর্গ হয়ে গেল কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী ! জান্নাতের টিকিট বিক্রী শুরু হল । এই ভন্ড ও বিকৃত ইসলাম থেকে জন্ম নেয় অসংখ্য নাস্তিক , অসংখ্য শিক্ষিত ব্লগার , অসংখ্য তালেবান , আই এস আই এস ও উগ্র জংগী সংগঠন । পক্ষান্তরে – প্রকৃত মহানায়কগন শুরু থেকেই অবহেলিত , উপেক্ষিত ও নির্বাসিত । সর্ব নিকৃষ্ট খলনায়কগনের ভয়ংকর অট্টহাসিতে পুরো মুসলিম উম্মাাহ আজ সর্ব নিকৃষ্ট ও জংলী ও অসভ্য জাতি হিসাবে পরিচিত । বেঈমান , মুনাফিক , ছিনতাইকারী , লুটেরা , খুনী , লুচ্চা , বদমাশ , ধর্ষনকারী ব্যক্তিগন যে জাতির নেতা হয় সে জাতির এমন পরিনতি হবেই হবে । শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

— মাজার চুম্বন ও শিরক ——- একজন মুসলমান আলেম বললেন , মদীনায় মসজিদে নব্বীর পাশে দাড়িয়েছিলাম । হঠাৎ সেখানে শীয়া মাযহাবের এক লোক এসে নবীজীর (সাঃ) মাজারের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন দিতে শুরু করল । মসজিদের ইমাম সাহেব তা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , ” ওহে মুসাফির , কেন তুমি এই বিবেক বুদ্বিহীন মাজারের দেয়ালকে চুমু দিচ্ছ ? এর মাধ্যমে তুমি তো শিরক করছ ” । ইমাম সাহেবের ক্রুদ্ব চেহারা দেখে বেচারা শীয়া লোকটি ভারাক্রান্ত অন্তরে দ্রুত চলে গেল । মুসলিম আলেম তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলল , ” এই দেয়ালে চুম্বন দেয়ার অর্থ হচ্ছে নবীজীর (সাঃ) প্রতি ভালবাসা । ঠক যেমন পিতা তার সন্তানকে চুম্বনের মাধ্যমে ভালবসা প্রকাশ করে । এখানে সে তো কোন শিরক করে নি ” । ইমাম সাহেব বললেন , ” না , এটাকেও শিরক বলে ” । মুসলমান আলেম বললেন , ” ও তাই নাকি , তাহলে সুরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) এর পরনের জামাটি তাঁর চোখে পরম স্নেহ মমতায় বুলালেন এবং তাঁর চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরে এল । এখন আমার প্রশ্ন হল , ঐ জামাটি তো কাপড়ের তৈরী ছিল । তাহলে কিভাবে ঐ জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এর চোখের উপর রাখাতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল ? এমনটিই নয় কি যে , কাপড়ের তৈরী জামাটি হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের ছোয়া পেয়ে ঐরকম বিশেষত্ব পেয়েছিল । এ ছাড়াও সুরা ইউসুফের ৯৪ নং অায়াত অনুসারে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহুদূর থেকে ওনার পু্ত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের সুঘ্রান অনুভব করেছিলেন । এসবই তো হচ্ছে ভালবাসা ও ভক্তির আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ । আমি বা আপনি কাবা গৃহের পবি্ত্র কাল পাথরটিকে তো অজস্র চুমু দিয়ে থাকি । তো এখানে আপনি শিরকের কি দেখলেন ? আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ” । ইমাম সাহেব বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাজের বাহানা দিয়ে যৌক্তিক কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন । উপরের ঘটনায় এটা বলা যায় যে , নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগন এক ধরনের বিশেষ আধ্যাতিকতায় পারদর্শী । আর তাঁদের এই বিশেষ আধ্যাতিকতা থেকে উপকৃত হওয়াতে কোন শিরক নেই । বরং তা হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদেরই অনুরুপ । কেননা তাঁরাও এই বিশেষত্বকে তাওহীদের নূর থেকেই গ্রহন করেছেন । আমরা আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের মাজারর পাশে বসে তাঁদের সাথে আন্তরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করি । যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই সেহেতু তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি । পবিত্র কোরআনে সুরা ইউসুফের ৯৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে , “– হে পিতা , আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , কেননা আমরা ভুল করেছিলাম — “। সুতরাং আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও অলি আউলিয়াগনের তাওয়াছছুল করা বা তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ন জায়েজ বা বৈধ । আর যারা এটাকে তাওহীদ থেকে আলাদা মনে করে থাকেন , তারা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত নয় । অথবা অযথা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের অন্তর চক্ষুতে পর্দা পড়ে গেছে । সুরা মায়েদার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে , “– যারা ঈমান এনেছো , পরহেজগার থেকো এবং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মাধ্যমের অন্বেষন কর —“। ” মাধ্যম ” এই আয়াতের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ওয়াজীব কাজের আজ্ঞাম দেয়া এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই নয় । বরং মুস্তাহাব বিষয় যেমন আম্বীয়া , পবিত্র ইমামগন , প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের প্রতি তাওয়াছছুল করাকেও মাধ্যম বলা হয়েছে । সুরা নিসার ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে , “– আর যখন বিরোধিতাকারীরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল এবং তোমার কাছে এসে তোমার মাধ্যমে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল । আর নবী তাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন তখন তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহনকারী ও মেহেরবান হিসাবে উপলব্দি করেছিল — “। এ প্রসংগে একটি কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের আদি পিতা-মাতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) আমাদের শেষ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বায়েতগনের (আঃ) নামের উছিলায় আল্লাহর রহমত অর্জন করেছিলেন । আহলে সুন্নাতের দুটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি । এক ব্যক্তি নবীজীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন যে , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আমি কোন এক ব্যাপারে কসম করেছিলাম যে , যদি সফল হই তবে বেহেশতের দরজায় চুম্বন করব । এখন এ পর্যায় কি করব ” ? নবী (সাঃ) বললেন , ” মায়ের পায়ে ও পিতার কপালে চুম্বন কর “। লোকটি বলল , ” পিতা মাতা যদি ইন্তেকাল করে তখন কি করব ” ? নবী (সাঃ) বললেন , ” তাদের কবরে চুম্বন করলেই হবে ” । সূত্র – আল আলামু – কুতুবুদ্দিন হানাফি , পৃ- ২৪ । সুন্নি মাযহাবের বিশিষ্ট সাধক সাফিয়ান ছাওরী ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে বললেন , ” কেন মানুষ কাবা গৃহের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে ও চুম্বন করে ? ওটাতো একটা পুরান কাপড় ছাড়া আর কিছুই না ” ! ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেন , ” এই কাজটি এমন যে , এক ব্যক্তি অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে । পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির হাত ধরে ক্ষমা চাইছে এবং তার চারিপার্শে ঘুরছে এই আশায় যে , ঐ ব্যক্তি যেন তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেয় ” । আনোয়ারুল বাহিয়াহ , ইমাম সাদিক (আঃ) জীবনী । সম্মানীয় পাঠক , লেখাটি পড়ে এখন থেকে আর কখনই আমার মত অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠ মোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না , দয়া করে । পরিপূর্ন নিশ্চিন্ত মনে নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করুন ও তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্ত দুঃখ বেদণা , পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান । — ইসলামী চিন্তাধারার উপর একশ একটি মুনাযিরা , ইমাম আলী (আঃ) ফাউন্ডেশন , পৃষ্ঠা – ১৬০ ছায়া অবলম্বনে প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

পাপ - কাজী নজরুল ইসলাম---সাম্যবাদী সাম্যের গান গাই!- যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই। এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনি করেনিক’ কে আছে পুরুষ-নারী? আমরা ত ছার; পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারী! তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল, দেবতার পাপ-পথ দিয়া পশে স্বর্গে অসুর দল! আদম হইতে শুরু ক’রে এই নজরুল তক্‌ সবে কম-বেশী ক’রে পাপের ছুরিতে পুণ্য করেছে জবেহ্‌ ! বিশ্ব পাপস্থান অর্ধেক এর ভগবান, আর অর্ধেক শয়তান্‌! থর্মান্ধরা শোনো, অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো! পাপের পঙ্কে পুণ্য-পদ্ম, ফুলে ফুলে হেথা পাপ! সুন্দর এই ধরা-ভরা শুধু বঞ্চনা অভিশাপ। এদের এড়াতে না পারিয়া যত অবতার আদি কেহ পুণ্যে দিলেন আত্মা ও প্রাণ, পাপেরে দিলেন দেহ। বন্ধু, কহিনি মিছে, ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব হ’তে ধ’রে ক্রমে নেমে এস নীচে- মানুষের কথা ছেড়ে দাও, যত ধ্যানী মুনি ঋষি যোগী আত্মা তাঁদের ত্যাগী তপস্বী, দেহ তাঁহাদের ভোগী! এ-দুনিয়া পাপশালা, ধর্ম-গাধার পৃষ্ঠে এখানে শূণ্য-ছালা! হেথা সবে সম পাপী, আপন পাপের বাট্‌খারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি! জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও, টুপি প’রে টিকি রেখে সদা বল যেন তুমি পাপী নও। পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং, ট্রেডমার্কার ধুম? পুলিশী পোশাক পরিয়া হ’য়েছ পাপের আসামী গুম। বন্ধু, একটা মজার গল্প শোনো, একদা অপাপ ফেরেশতা সব স্বর্গ-সভায় কোনো এই আলোচনা করিতে আছিল বিধির নিয়মে দুষি,’ দিন রাত নাই এত পূজা করি, এত ক’রে তাঁরে তুষি, তবু তিনি যেন খুশি নন্‌-তাঁর যত স্নেহ দয়া ঝরে পাপ-আসক্ত কাদা ও মাটির মানুষ জাতির’ পরে! শুনিলেন সব অন্তর্যামী, হাসিয়া সবারে ক’ন,- মলিন ধুলার সন-ান ওরা বড় দুর্বল মন, ফুলে ফুলে সেথা ভুলের বেদনা-নয়নে , অধরে শাপ, চন্দনে সেথা কামনার জ্বালা, চাঁদে চুম্বন-তাপ! সেথা কামিনীর নয়নে কাজল, শ্রেনীতে চন্দ্রহার, চরণে লাক্ষা, ঠোটে তাম্বুল, দেখে ম’রে আছে মার! প্রহরী সেখানে চোখা চোখ নিয়ে সুন্দর শয়তান, বুকে বুকে সেথা বাঁকা ফুল-ধনু, চোখে চোখে ফুল-বাণ। দেবদুত সব বলে, ‘প্রভু, মোরা দেখিব কেমন ধরা, কেমনে সেখানে ফুল ফোটে যার শিয়রে মৃত্যু-জরা!’ কহিলেন বিভু-‘তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ যে দুইজন যাক্‌ পৃথিবীতে, দেখুক কি ঘোর ধরণীর প্রলোভন!’ ‘হারুত’ ‘মারুত’ ফেরেশতাদের গৌরব রবি-শশী ধরার ধুলার অংশী হইল মানবের গৃহে পশি’। কায়ায় কায়ায় মায়া বুলে হেথা ছায়ায় ছায়ায় ফাঁদ, কমল-দীঘিতে সাতশ’ হয়েছে এই আকাশের চাঁদ! শব্দ গন্ধ বর্ণ হেথায় পেতেছে অরূপ-ফাঁসী, ঘাটে ঘাটে হেথা ঘট-ভরা হাসি, মাঠে মাঠে কাঁদে বাঁশী! দুদিনে আতশী ফেরেশতা প্রাণ- ভিজিল মাটির রসে, শফরী-চোখের চটুল চাতুরী বুকে দাগ কেটে বসে। ঘাঘরী ঝলকি’ গাগরী ছলকি’ নাগরী ‘জোহরা’ যায়- স্বর্গের দূত মজিল সে-রূপে, বিকাইল রাঙা পা’য়! অধর-আনার-রসে ডুবে গেল দোজখের নার-ভীতি, মাটির সোরাহী মস-ানা হ’ল আঙ্গুরী খুনে তিতি’! কোথা ভেসে গেল-সংযম-বাঁধ, বারণের বেড়া টুটে, প্রাণ ভ’রে পিয়ে মাটির মদিরা ওষ্ঠ-পুষ্প-পুটে। বেহেশ্‌তে সব ফেরেশ্‌তাদের বিধাতা কহেন হাসি’- ‘ হার”ত মার”তে কি ক’রেছে দেখ ধরণী সর্বনাশী!’ নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি-ইশারায় লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়। সুন্দরী বসুমতী চিরযৌবনা, দেবতা ইহার শিব নয়-কাম রতি প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে স্তনদান —- এই সব ইতরামী বন্ধ হবে কবে ? পৃথিবীতে প্রতিটি শিশুই তার মায়ের দুধ পান করবে — এটাই যৌক্তিক ও স্বাভাবিক । কেননা মায়ের এই একফোঁটা দুধের মাধ্যমে শিশুটি বেঁচে থাকে । পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ আছে যে , শিশু তার মায়ের দুধ পান করবে । ” — মায়েরা তাদের সন্তানদের দুধ পান করাবে পুরো দুই বছরের জন্য –” । সুরা – বাকারাহ / ২৩৩ । শিশুর অধিকার তার মায়ের দুধ পান করবে – এটা জগতের নাস্তিক আস্তিক নির্বিশেষে সকলেই মানে । পাঠক , এবারে আপনাদেরকে এমন একটা বিষয় দেখাব যে , আমি নিশ্চি ত যে , আপনারা স্তম্ভিত হয়ে যাবেন এবং অবশ্যই বলবেন যে , এত বিশাল জঘন্য ইতরামী কিভাবে সম্ভব ! তাও আবার ইসলাম ধর্মে এবং সহীহ সিত্তাহ হাদিস গ্রন্থের নামে বাজারজাতকরন হয়েছে । এখানে লিখতেও রুচীতে বাধছে । কিন্ত কি করব ! সকলের জানা উচিত যে , কিভাবে মহান ধর্ম ইসলামকে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) কে এবং উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশাকে পৃথিবীর সকলের সামনে কতটা নীচ ও হীন করে উপস্থাপিত কর হয়েছে । যথাসম্ভব শালীনতা বজায় রেখে বলছি যে , বলতে কি পারবেন — একজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আরেকজন অপরিচিতা প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার স্তনে নিজের মুখ লাগিয়ে শিশুদের মত চুষতে পারে ! এই জাতীয় জঘন্যতম অশ্লীল বিধান জগতের কোন ধর্মেই এমনকি মানব সভ্যতায় কখনই অনুমোদন দেয় না । একমাত্র অশ্লীল চলচ্চিত্র বা ব্লু ফ্লিমের কথা ভিন্ন । এই জাতীয় অশ্লীল কার্যাবলী ধর্ম বর্ন জাতি নির্বিশেষে সকলেই একবাক্যে অশ্লীল ও মহাপাপ বলে থাকে । এ প্রসংগে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি মনে করিয়ে দিয়ে মূল প্রসংগে আসছি । ” — মুমিন নারীদের বল তাদের দৃষ্টি নীচু করতে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহ রক্ষা করতে এবং তাদের আকর্ষনগুলো প্রদর্শন না করতে , শুধু তাছাড়া যা প্রকাশ্য এবং তারা তাদের মাথার চাদর বুক পর্যন্ত টেনে দিক এবং তাদের আকর্ষনগুলো যেন প্রদর্শন না করে শুধু তাদের স্বামীদের সামনে ছাড়া —– ” । সুরা – নূর / ৩১ । পবিত্র কোরআন সহ পৃথিবীর যে কোন ধর্ম গ্রন্থেই একজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আরেকজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার স্তনে নিজের মুখ লাগিয়ে শিশুদের মত চুষতে পারে – এরকম জঘন্য নোংরা অশ্লীল অবাধ যৌনাচারের কথা কোথাও বলা নেই । অশ্লীলতা ও চরম বেহায়াপনা নিজের চোখেই দেখুন — উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা থেকে বর্নিত – হযরত আয়েশা হাদীস বর্ণনা করছেন যে , সাহলাহ বিনতে সোহায়েল (আবী হোযায়ফার স্ত্রী) একদা রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বলছেন যে , ইয়া রাসুল আল্লাহ ! আমি আবী হোযায়ফার মুখ দেখছি । কিন্তু ওনার বন্ধুও ওনার সাথে এসেছেন । আমি লজ্জা করছি । (কারন ঐ বন্ধুটি অপরিচিত নামাহারাম) তখন রাসুল (সাঃ) বললেন যে , তাকে নিজের স্তন থেকে দুধ পান করাও তাহলে সে তোমার জন্য মাহরাম (পরিচিত রক্তজ আত্মীয়) হয়ে যাবে । সাহলাহ অবাক হয়ে বলল যে , ইয়া রাসুল আল্লাহ ! আমি তাকে কি ভাবে দুধ পান করাব ! সে তো আমার থেকে বয়সে অনেক বড় ! (অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক নামাহরাম পুরুষ) রাসুল (সাঃ) মৃদু হেসে বললেন যে , আমি জানি যে , সে তোমার থেকে বয়সে অনেক বড় । (নাউযুবিল্লাহ) সূত্র – সহীহ আল মুসলিম শরিফ , হাদীস নং – ১৪৫৩ , রেজা’আতুল কাবীর অধ্যায় / সোনানে ইবনে মাজা , হাদীস নং – ১৯৪৩ , ১৯৪৪ , রেজা’আতুল কাবীর অধ্যায় । 26 – (1453) حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: جَاءَتْ سَهْلَةُ بِنْتُ سُهَيْلٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَرَى فِي وَجْهِ أَبِي حُذَيْفَةَ مِنْ دُخُولِ سَالِمٍ وَهُوَ حَلِيفُهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْضِعِيهِ»، قَالَتْ: وَكَيْفَ أُرْضِعُهُ؟ وَهُوَ رَجُلٌ كَبِيرٌ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «قَدْ عَلِمْتُ أَنَّهُ رَجُلٌ كَبِيرٌ»، زَادَ عَمْرٌو فِي حَدِيثِهِ: وَكَانَ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا، وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي عُمَرَ: فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صحيح مسلم ج2 ص1076 المؤلف: مسلم بن الحجاج أبو الحسن القشيري النيسابوري (المتوفى: 261هـ)، المحقق: محمد فؤاد عبد الباقي، الناشر: دار إحياء التراث العربي – بيروت، عدد الأجزاء:5 سنن ابن ماجه ج 1 ص625 المؤلف: ابن ماجة أبو عبد الله محمد بن يزيد القزويني، وماجة اسم أبيه يزيد (المتوفى: 273هـ)، تحقيق: محمد فؤاد عبد الباقي، الناشر: دار إحياء الكتب العربية – فيصل عيسى البابي الحلبي،عدد الأجزاء: 2 প্রিয় পাঠক , ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন যে , কত বড় জঘন্য কুৎসিত নোংরা হাদিস লিপিবব্দ করা হয়েছে । স্বামীর অপরিচিত একজন বন্ধুকে স্ত্রী তার নিজের স্তন পান করালে স্বামীর অপরিচিত বন্ধুটি ঐ মহিলার মাহরাম অর্থাৎ রক্তজ আত্মীয় সমপর্যায় হয়ে যাবে ! আসলেই সহীহ সিত্তাহ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত এই জাতীয় অশ্লীল হাদিসের বিষয় মন্তব্য করতেও রুচীতে বাঁধে ! শেষ পর্যন্ত আল্লাহকেও জাহান্নামী বানিয়ে দিল ! অবশ্য বনু সকীফার ইসলামে সবই সম্ভব ! সহীহ আল বুখারীতে স্থান পাওয়া সহীহ হাদিস এই ক্ষেত্রেই আল্লাহকে কে চরমতম বিতর্কিত ও হীন করে দেয় । অন্যান্য ধর্মালম্বী ব্যক্তিগন এই জাতীয় হাদিসগুলোকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে আল্লাহকে নিয়ে বড়ই ঠাট্টা উপহাস করে থাকেন । তখন আমাদের ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে থাকতে হয় । খুব জানতে ইচ্ছে করে তখন — সর্বশ্রেষ্ঠ মহামনাব হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) সম্বন্ধে সহীহ , বিশুদ্ব ও নির্ভেজাল কিতাবে এই জাতীয় জঘন্য নোংরা কুরুচীপূর্ন হাদিস সমূহ কিভাবে স্থান পায় ? মহানবী (সাঃ) এর শানে এই জাতীয় বেয়াদবীপূর্ন হাদিস যারা লিপিবদ্ব করলেন তাদের অবস্থান কোথায় হওয়া উচিৎ ? অবাক করা বিষয় এটাই যে , আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সকল সম্মাানীয় সুন্নি আলেমগন একত্রিত হয়ে এই জাতীয় জঘন্য করুচীপূর্ন নোংরা ও অশ্লীল হাদিসগুলো বাতিল বলে যৌথ ঘোষনা করছেন না ! আফসোস ! এ পর্যন্ত সম্মাানীয় কোন সুন্নি আলেমগনের নিকট থেকে যৌক্তিক কোন জবাব পেলাম না ! আক্ষেপ নিয়ে বলতেই হয় যে , বনু সকীফার ইসলামে অসম্ভব বলে কিছুই নেই ! প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার কালাল্লাহুতায়ালা জাল্লা জালালুহু আম্মা নাওয়ালুহু ফিল কোরআনুল মাজিম-'ক্বুল লা আছআলুকুম আলাইহে আজরান ইল্লাল মায়াদাত্তা ফিল কুরবা।' (সূরা : শুরা ২৩, আয়াত)। অর্থ- বলুন হে রাসূল (সা.), রেসালাত বা নবুয়ত বিষয়ে চাইলে কোনো পারিশ্রমিক, আমি চাই আমার নিকট আত্মীয়ের অর্থাৎ আহলে বাইয়াতের সঙ্গে মাআদ্দাতা বা মহব্বত। ওই আয়াতকে বলা হয় আয়াতে মাআদ্দাতা বা প্রাণাধিক ভালোবাসার নিদর্শন। ওই আয়াত দ্বারা আল্লাহ আহলে বাইয়াতের প্রতি মহব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। রইসুল মুফাচ্ছেরীন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, উক্ত সূরা শুরার ২৩নং আয়াত যখন নাজিল হয়, তখন সাহাবায়ে কেরাম হুজুর পাককে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার কোনো নিকট আত্মীয়, যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাজিল হলো? জবাবে নবী করিম (সা.) বলেন, আলী, মা ফাতেমা, ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন। (তাফসিরে এ জালালইন মিসরি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩২নং পৃষ্ঠা, তাফসিরে ইবনে আরাবির দ্বিতীয় খণ্ড, ২১১ পৃ.)। তা ব্যতীত ও নিকট আত্মীয় সম্পর্কে মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৬৮ ও ২৬৯ পৃষ্ঠায় হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াকাস থেকে বর্ণিত- যে সূরা আল ইমনরার ৬১নং আয়াত নাজিল হলো তখন রাসূল (সা.) আলী, মা ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনকে রাসূলের (সা.) গায়ের কাল কম্বলের ভেতর ডেকে নিয়ে বললেন, 'হে আল্লাহ সাক্ষী থাকুন, তারাই আমার নিকট আত্মীয়।' আল্লাহ সূরা আল ইমরানের ১০৩নং আয়াতে ফরমাইয়াছেন- 'তোমরা আল্লাহ রুজ্জোকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেও না।' এখন প্রশ্ন আসে আল্লাহর রুজ্জো কী? এর জবাবে হুজুরে পাক (সা.) হাদিস তিরমিজি শরিফে ফরমাইয়াছেন আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এবং আমি, আল্লাহ পাকের রুজ্জো। যারা পাক পাঞ্জাতনের সঙ্গে দৃঢ় মহব্বত রেখেছেন তারাই আল্লাহর রুজ্জোকে আঁকড়ে ধরেছে। উক্ত আয়াতেই বলা হয়েছে, 'তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেও না।' কারণ যদি মুসলমানরা ভিন্ন ভিন্ন আকিদা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফেকরা সৃষ্টি করে, তবে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হয়ে ইসলামকে দুর্বল করে ফেলবে। এতে মোহাম্মদী ইসলামকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলবে। হজরত আলা ইবনে সুররা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হজরত রাসূল (সা.) ফরমাইয়াছেন- 'হোসাইন আমা হতে এবং আমি হোসাইন হতে।' অর্থাৎ আমি ও হোসাইন অভিন্ন। যে কেউ হোসাইনকে মহব্বত করে, আল্লাহ তাকেও মহব্বত করেন। হোসাইন স্বয়ংই একটি বংশ। (মেশকাত শরিফ, ৫৯০৯)। হাদিসের আলোকে আহলে বাইয়াত :মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৭৩ পৃষ্ঠায় হজরত যায়েদ ইবনে আকরাম হতে বর্ণিত গাদীর ই কুমের ভাষণে রাসূল (সা.) ফরমাইয়াছেন, আমি দুটি ভারি জিনিস তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি। তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে রাখলে বা আমলে নিয়ে এলে আমার পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না বা অন্ধকারে পড়ে মরবে না। এ দুটি ভারি জিনিসের মধ্যে ১নং কিতাবাল্লাহ আল্লাহর বাণী পাক কোরআন ও ২নং আমার আহলে বায়াত। তাই দুই জিনিস একটি অপরটি হতে কখনও পৃথক হবে না হাউজে কাওছার পর্যন্ত। মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৮১ পৃষ্ঠায় হজরত আবিয়ার গফিফারি কাবা ঘরের দরজা ধরে কসম খেয়ে বলেছেন, তোমরা জেনে রেখ আহলে বাইয়াত হজরত নূহর (আ.) কিস্তি বা নৌকার মতো। হজরত নূহর (আ.) পল্গাবনের সময় যারা কিস্তি বা নৌকায় উঠেছিল, তারাই বেঁচেছিল এবং যারা ওঠেনি, তারাই ধ্বংস হয়েছিল। হজরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলছেন, অসিলার মাকামের ওপর আর কোনো মাকাম নেই। সুতরাং তোমরা আমার জন্য অসিলা প্রার্থী হও। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), অসিলার মাকামে আপনার সঙ্গে থাকবেন কে? জবাবে নবী করিম (সা.) বললেন, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আ.)। হজরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত- হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, হাশর দিবসে চার ব্যক্তির জন্য আমি নিজেই সুপারিশ করব- ১. যে আমার আহলে বাইয়াত ও বংশধরকে সম্মান দেবে; ২. যে আমার আহলে বাইয়াতের বংশধরের অভাব পূরণ করবে; ৩. যে আমার আউলাদের মধ্যে কেউ অস্থির হয়ে পড়লে উদ্ধার করার জন্য প্রয়াসী হবে; ৪. যে আমার আউলাদের জন্য কথায় ও কাজে মনেপ্রাণে মহব্বত রাখে।

আহালে আল বায়াত এবং ইমাম হযরত আলীর নামের শেষে আলাইহিস (আঃ) সালাম ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ 'আলাইহিস সালাম' যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান,হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা 'আলাইহিস সালাম'ব্যবহার করি। আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে,কোনো মুসলমানের নামের পর "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম?আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের,পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।'অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে। "আলাইহিসসালাম" শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এবার আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছুপ্রমাণ তুলে ধরছি: ১-সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের " কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবেহ" অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) "বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু" শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমার নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের "বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী" শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষ্যনীয়। ২- একই ধরণের ব্যবহার রয়েছে সুন্নি মাজহাবের আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি'র "ফাজলি ফাতিমাতা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১ ) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই "সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। একই হাদীস গ্রন্থের "মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)'র নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু "রাজিয়াল্লাহু আনহু" বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। "রাজিয়াল্লাহু আনহু" শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক। ৩- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইমাম ফাখরে রাজিও শিয়া মুসলমানদের ইমাম বা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর "আলাইহিসসালাম" দোয়াটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.) কয়েকটি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সমান সুবিধা বা সম্মানের অধিকারী। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন "আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম" শব্দের মাধ্যমে। ৪- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত "আলে ইয়াসিন" শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (দ:) বা মুহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন বিশ্বনবী (সা.)-এরই অন্যতম নাম। ৫-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে " আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ" । সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা। তাই এটা স্পষ্ট বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পরে বা তাঁদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা "সালাওয়াতুল্লাহ আলাইহি" বলা একটি ধর্মীয় নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নাত। আমাদের এই শ্রোতা ভাইয়ের প্রশ্নের আরেকটি অংশ হল, ‘আশা'রা মুবাশ্বারা' তথা পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবির সংখ্যা দশ জন যাদের মধ্যে চার জন হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম চার জন খলিফা, আর এই চার জনের একজন হলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) অথচ শিয়া মুসলমানরা শুধু হযরত আলী (আ.)-কেই কেন প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?উত্তর: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আহদিনি লিমা আখতুলিফা ফিহি মিনাল হাক্কি বিইজনিকা ইন্নাকা তাহদি মানতাশায়ু সিরাতিম মুস্তাক্বিম। (হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ-সা. ও তার পবিত্র বংশধরদের ওপর দরুদ বর্ষিত হোক এবং আমরা যখন বিরোধ ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ের শিকার হই তখন তোমার প থেকে আমাদের সঠিক পথ দেখাও, নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ দেখাও) এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, রেডিও তেহরান মুসলমানদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বিষয়ের চর্চার চেয়ে তাদের ঐক্যের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। (কারণ, শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবই এক আল্লাহ, অভিন্ন ও এক পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী (সা.)কে শেষ নবী ও রাসূল বলে মানে। মতবিরোধ শুধু সাহাবিদের নিয়ে।) তা সত্ত্বেও আপনার প্রশ্নের জবাবে শিয়া মুসলিম ভাইদের কিছু বক্তব্য ও যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি যাতে আপনার মত পাঠক ও শ্রোতাদের কৌতুহল মেটে। (তবে আগেই বলে রাখছি, বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে কোনো সুন্নি ভাই শিয়া মুসলমানদের যুক্তি বা দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেবেন কিনা সেটা তাদের একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা এখানে একজন শ্রোতা/পাঠকের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গক্রমে শিয়া মুসলমানদের বক্তব্য ও সেসবের পক্ষে তাদের যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি মাত্র। কাউকে আহত করা বা বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরা রেডিও তেহরানের কাজ বা দায়িত্ব নয় কিংবা কোনো সাহাবির সম্মানহানি করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মোটকথা শিয়া মুসলমানদের এইসব বক্তব্য রেডিও তেহরানের নিজস্ব বক্তব্য নয় এবং এইসব মতামতের জন্য রেডিও তেহরান ও এর বাংলা বিভাগ দায়ী নয়। এই সর্তকবাণী নিম্নের আলোচনার জন্যও প্রযোজ্য।) শিয়া ও সুন্নি দুটি ভিন্ন মাজহাব। এ দুই মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই কিছু না কিছু পার্থক্য থাকবেই। যেমন পার্থক্য রয়েছে সুন্নিদের চার মাজহাবের মধ্যেও। এই চার মাজহাবের ইমামরা যদি সব বিষয়ে একমত হতেন তাহলে তো তাদের মাজহাবের সংখ্যা চারটি না হয়ে একটিই হত। কিংবা তারা যদি একে-অপরকে নিজের চেয়ে বড় মনে করতেন তথা অন্য মাজহাবের ইমামদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন তাহলে অবশ্যই নিজ মাজহাব ত্যাগ করে অন্যের মাজহাব গ্রহণ করতেন। তদ্রুপ শিয়া ও সুন্নি ভাইয়েরা তাদের মাজহাবের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন সে ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারেন। যেমন, সুন্নি মাজহাবের দৃষ্টিতে হযরত আলী (আ.)'র মর্যাদা বা অবস্থান রাসূলের (সা.) ও প্রথম তিন খলিফার পরে চতুর্থ স্থানে। অন্যদিকে শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলী (আ.) রাসূলের (সা.)পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, কারণ তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের সদস্য। শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে কুরআন ও হাদিসেই রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.)-কে সাহাবাদের উর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে। (এমনকি তাঁদের মর্যাদা বিশ্বনবী (সা.) ছাড়া অন্যান্য নবী-রাসূলগণের চেয়েও বেশি, ঠিক যেমনটি সুন্নি বিশ্বে বলা হয় রাসূল (সা.)'র উম্মতের আলেমগণের মর্যাদা বনি-ইসরাইলের নবীগণের চেয়ে উচ্চতর। সব নবী-রাসূল বলেছেন, আমরা নবী-রাসূল না হয়ে যদি শেষ নবী(সা.)'র উম্মত হতাম! বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে মসজিদের মিলাদ মাহফিলে সুর করে রাসূলের প্রশংসা বর্ণনার সময় বলা হয়,[ (হে রাসূল- সা.!)- নবী না হয়ে হয়েছি উম্মত তোমার তার তরে শোকর হাজারবার।] হযরত ঈসা (আ.) বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উম্মত হিসেবে আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং আহলে বাইতের পবিত্র ইমাম তথা শেষ ইমাম হিসেবে বিবেচিত হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র পেছনে নামাজ পড়বেন ও তাঁর সাহায্যকারী হবেন। ব্যাপারটা খুবই লক্ষ্যনীয় যে, একজন নবী শেষ নবীর (সা.) বংশে জন্ম নেয়া একজন ইমামের পেছনে নামাজ পড়বেন!!! ) এটা স্পষ্ট, রাসূল (সা.)'র সাহাবিদের ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিতে সকল সাহাবিই সম্মানিত এবং আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট ও তারা সবাই বেহেশতে যাবেন। তবে কোনো কোনো সুন্নি ইমামের দৃষ্টিতেও রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের মর্যাদা রাসূল (সা.)'র পর সবার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ তাঁরা সাহাবাদের মধ্যেও সর্বোত্তম সাহাবা ছিলেন। এঁরা হলেন হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)। আর রাসূলের (সা.) আহলে বাইত বলতে এই কয়েজন ছাড়াও হযরত হোসাইন (আ.)'র বংশে জন্ম নেয়া আরো নয় জন ইমামকেও বোঝায়, যাদের মধ্যে ইমাম মাহদী (আ.) হলেন সর্বশেষ ইমাম। এই আহলে বাইতরা যে নিষ্পাপ তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অনেক সুন্নি আলেমও তাদের তাফসিরে স্বীকার করেছেন। আর (নিকটতম) আহলে বাইত বলতেও যে কেবলই আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে বোঝায় (তাঁদের সবার ওপর সালাম ও দরুদ) তাও অনেক সুন্নি আলেম সুরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন। শিয়া মুসলমানরা বলেন, মহানবী (স.) তাঁর আহলে বাইত বলতে তাঁর নিষ্পাপ ও পবিত্র বংশধরকে বোঝাতেন। যেমন- হযরত ফাতেমা (সাঃ আঃ), ইমাম হাসান ও হুসাইন (সালামুল্লাহি আলাইহিম)। কেননা মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃ-১৩০) এবং তিরমিযী স্বীয় সুনানে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে, " হে নবী পরিবারের সদস্যগণ! আল্লাহ তো শুধু তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ রাখতে চান।" এই আয়াতটি মহানবী (স.) এর উপর উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (সাঃ আঃ)'র ঘরে অবতীর্ণ হয়। মহানবী (স.), ফাতেমা(সাঃ আঃ), হাসান(আ.) ও হুসাইন (আ.)কে নিজের আলখাল্লা বা আবা'র মধ্যে নিলেন এমতাবস্থায় আলী (আ.) তাঁর পেছনে অবস্থান করছিলেন। তাঁদেরকে একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে এরূপ দোয়া করলেন: "হে আমার প্রতিপালক! এরাই আমার আহলে বাইত। অপবিত্রতাকে এদের হতে দূর করে এদেরকে পবিত্র কর।" উম্মে সালমা বললেন: হে আল্লাহর নবী! আমিও কি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত (আমিও কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত)? তিনি বললেন: তুমি নিজের স্থানেই থাকো। তুমি সত্য ও কল্যাণের পথেই রয়েছ। অনেকে বলতে পারেন রাসূল (সা.) আহলে বাইত শব্দের আভিধানিক অর্থ ঘরের লোক। সেই হিসেবে হযরত আয়শা ও হাফসা প্রমুখ রাসূলের স্ত্রীগণও কি তাঁর আহলে বাইত? শিয়া মুসলমানরা মনে করেন কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে রাসূলের স্ত্রীরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কারণ, আহলে বাইতের সদস্যরা মাসুম বা নিষ্পাপ ও পবিত্র। তাঁরা কখনও ভুল করেন না বা অন্যায় কিছু করেন না। কিন্তু হযরত আয়শা ও হাফসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ৬৬ নম্বর সুরা তথা সুরা তাহরিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।" (৬৬-৪) এ থেকে বোঝা যায় রাসূল (সা.)'র স্ত্রীগণ আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না। (যদিও হযরত খাদিজা (সাঃ আঃ) সম্পর্কে হাদিসে এসেছে তিনি সর্বকালের চার সেরা নারীর একজন। অন্য তিনজন হলেন হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত মারিয়াম (আঃ) ও ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া (আঃ)। ) আমরা জানি হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে সুন্নি বিশ্বের জুমার খোতবায়ও বেহেশতি যুবকদের সর্দার বলা হয়। আর তাঁদের মা নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ)-কে বলা হয় জান্নাতের নারীদের সর্দার। অতএব তারা নিঃসন্দেহে এ পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। কিন্তু ‘আশা'রা মুবাশ্বারা'য় এই তিনজনের নাম নেই। শিয়া মুসলমানরা মনে করেন আহলে বাইত বহির্ভূত সাহাবারা নিষ্পাপ নন। তাই তারা ভুল করতে পারেন ও তাদের অনেকেই ভুল করেছেন। আবার তাদের অনেকেই ছিলেন সুমহান ও সৎ, কিন্তু সবাই নন। অথচ রাসূলের আহলে বাইতের সদস্যরা সবাইই নিষ্পাপ যা সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে: "হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে (সব ধরনের ভুল-ত্র“টি ও পাপ থেকে) পূত-পবিত্র রাখতে।"-সুরা আহজাব-৩৩ পবিত্র কুরআনে রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসার নির্দেশ এসেছে। তাদের আনুগত্যও করতে বলা হয়েছে। যেমন, সুরা শুরার ২৩ নম্বর আয়াতে এসেছে: "(হে নবী! আপনি)বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক বা মুজুরি চাই না কেবল আমার পরিবারের প্রতি ভালবাসা চাই।" সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে এসেছে: “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ‘উলিল আমর' বা তোমাদের মধ্যে যারা [আইনসঙ্গত] মতার অধিকারী তাদের”শিয়া মুসলমানরা মনে করেন ইতিহাসের কতগুলো বাস্তবতা উপো করা অন্ধের পওে সম্ভব নয়। যেমন, সাহাবারা পরস্পর যুদ্ধ করেছেন। তাদের সবাই নিজেদেরকে সঠিক পথে অটল বলে দাবি করা সত্ত্বেও একে-অপরকে বিভ্রান্ত বলেছেন। হযরত আয়শা, হযরত তালহা ও হযরত যুবাইর জামাল যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধে মারা গেছেন দশ হাজার সাহাবি ও তাদের সন্তান। এ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর হযরত আয়শা ভুল স্বীকার করে হযরত আলী (আ.)'র কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। হযরত আলী (আ.) ও মুয়াবিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘটিত সিফফিন যুদ্ধে মারা গেছে অন্ততঃ ৫০ হাজার সাহাবি ও সাহাবিদের সন্তান এবং সঙ্গী। এসব যুদ্ধের ব্যাপারে সুন্নিদের বক্তব্য হল সাহাবা হওয়ার কারণে তারা উভয় পক্ষই ছিল সঠিক পথে। কিন্তু শিয়ারা বলেন, দু-জন নবী বা দুজন সৎ মানুষ কখনও পরস্পরের সঙ্গে শত্র“তা পোষণ বা যুদ্ধ করে না-এটাই বিবেকের দাবি। সিরাতুল মুস্তাক্বিম বা সঠিক পথ একটিই হয়, একাধিক হয় না। এক লাখ বা দুই লাখ ২৪ হাজার নবী যদি একই যুগে একই অঞ্চলে থাকতেন তাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া বিবাদ হত না। স্বার্থ নিয়ে বা মতা নিয়ে কখনও দু-জন ভাল মানুষের মধ্যেই দ্বন্দ্ব হয় না। তাই যে কোনো দ্বন্দ্বে অবশ্যই এক প সঠিক পথে থাকে অন্য প অন্যায়ের পে বা অন্ততঃ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। হযরত আলী (আ.), হযরত তালহা ও যোবাইর-কে "আশা'রা মুবাশ্বারার" তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা যদি জানতেন যে তারা বেহশতী হওয়ার সুসংবাদ দুনিয়াতেই পেয়েছেন তাহলে বেহেশতী হওয়া সত্ত্বেও কেন একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন? তারা তো বলতে পারতেন, আপনিও বেহেশতী, আমিও বেহেশতী, তাই আমরা সবাই সঠিক পথেই আছি, আপনার কাজ আপনি করুন আমার কাজ আমি করি, কেউ কারো কাজে বাধা দেয়ার দরকার নেই,আমরা কেন বেহেশতী হয়েও একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব? কিন্তু তারা কি এমন কথা বলেছেন? তাছাড়া সুন্নি সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মুসলমানদের কেউ যদি একে-অপরকে হত্যার জন্য যুদ্ধ করে তবে তারা উভয়ই জাহান্নামি। জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে সাহাবিরা কি পরস্পরকে হত্যার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি? যদি হাদিসটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো আলী (আ.), তালহা ও যুবাইর-সবাইই জাহান্নামি (নাউজুবিল্লাহ)। তাহলে আসল সত্য বিষয়টা কী? নিচের হাদিসটি দেখুন: রাসূল (সা.) একবার হযরত যোবাইরকে বলেছিলেন তুমি কি আলী(আ.)-কে ভালবাস। তিনি জবাবে বললেন, এটা কেমন কথা, আলীকে ভালবাসব না! তাছাড়া তিনি তো আমার আত্মীয়ও হন! রাসূল (সা.) বলেছিলেন, কিন্তু একদিন তুমি তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হবে। জামাল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত আলী (আ.) যোবাইরকে এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দিলে যোবাইর লজ্জিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছিলেন, সে আমার উম্মতের একদল ‘বাগী' বিদ্রোহী বা পথভ্রষ্ট লোকের হাতে শহীদ হবে। যখন সিফফিন যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র পে যুদ্ধরত অবস্থায় মুয়াবিয়ার সেনাদের হাতে হযরত আম্মার (রা.) শহীদ হন, তখন মুয়াবিয়ার পক্ষে থাকা অনেক সাহাবির বোধদয় হয়। এ ছাড়াও রাসূল (সা.) বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। "আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)'র সঙ্গে শত্র“তা করা মুনাফেকী" (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)। " আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা"(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, "হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।" রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্র“তা করবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, " আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)। "যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নীচু করে দোজখে নিপে করবেন। "(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)। "আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ,যে আলীর সাথে শত্র“তা রাখে তুমিও তার সাথে শত্র“তা রাখ।" (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্র“তা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম। পবিত্র কুরআনে সাহাবা বা মুহাম্মাদ (সা.)'র সাহবি বা সঙ্গীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়ালু বা রহমশীল। কিন্তু সাহাবাদের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ কি দয়া বা পারস্পরিক রহমের পরিচয় বহন করে?শিয়া মুসলমানরা এইসব বক্তব্য, হাদিস ও যুক্তির আলোকে বলেন যে, সাহাবারা ভুল করতে পারেন ও অন্যায় যুদ্ধেও লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু নবী বংশের ইমাম বা রাসূলের আহলে বাইত (আ.) ভুল করতে পারেন না কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে নিষ্পাপ হওয়ার কারণে। আর শিয়া মুসলমানরা এটাও মনে করেন যে, ন্যায় ও অন্যায়ের প্রশ্নে এবং সঠিক ও ভুল পথের প্রশ্নে অবশ্যই ন্যায়ের পক্ষ নিতে হবে। সঠিক ও ভুল পথ কখনও সমান হতে পারে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে যারা বলবে যে আমরা উভয় পক্ষেই আছি বা উভয় পক্ষকেই সম্মান করি, তা হবে সুবিধাবাদিতা ও অনৈতিক। তারা আরও বলেন, আমরা যদি রাসূল (সা.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর বন্ধুদেরকেও ভালবাসতে হবে এবং তাঁর শত্র“দেরকে বা বিপক্ষ শক্তিকেও ভালবাসি বলা যাবে না। ঠিক একইভাবে যদি বলি যে আলী (আ.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বা বিরোধী গ্র“পকেও ভালবাসা উচিত নয়। এবার আমরা সুন্নী মাজহাবের হাদিসের আলোকে অন্য সাহাবিদের তুলনায় আমিরুল মুমিমিন হযরত আলী (আ.) এবং রাসূল (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত বা নিষ্পাপ বংশধরদের শ্রেষ্ঠত্বের সপে আরো কিছু দলিল তথা হাদিস ও রেওয়ায়েত বা ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরছি: " এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।" (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ'-ড. মো. হোসাইন হায়কাল,প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪) হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, "যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)'র অসংখ্য শত্র“ ছিল। শত্র“রা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)'র দোষ-ত্র“টি বের করার, কিন্তু পারেনি।" হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, "যত সুন্দর ও মজবুত সনদের দ্বারা আলী (আ.)'র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনি আসেনি।" হাদিসে সাকালাইন ১। মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে "খুম" নামক একটি পুকুরের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন: হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড,পৃ.১৮০৩। দারেমী এই টেক্সট বা মাতন তথা হাদিসের মূলপাঠটি নিজ ‘সুনান'-শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেছেন। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২। ২। তিরমিযি এই হাদিসটিতে শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো: "নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু'টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রাধান্য রাখে। (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা ল্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।'' (সূত্র:সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।) মুসলিম এবং তিরমিযী যাদের দু'জনই সহীহ হাদিস গ্রন্থ এবং (দুই পৃথক) ‘সুনান'-এর প্রণেতা। আর (মুসলিম এবং তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত) উক্ত হাদিস দু'টি সনদগত দিক থেকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য এবং কোনরূপ আলোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন রাখে না। অর্থাৎ, এই হাদিস দু'টি সনদগতভাবে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও নিখুঁত। হাদিসে সাকালাইনের ভাবার্থ যেহেতু মহানবী (স.) নিজ বংশধরকে পবিত্র কুরআনের পাশে স্থান দিয়েছেন এবং উভয়কে উম্মতের মাঝে আল্লাহর হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাই এ দু'টির প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়: ১। মহানবী (স.) এর বংশধরদের বাণী কুরআনের মতোই হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল)। আর দ্বীনি বিষয়ে চাই তা বিশ্বাসগত (আকিদাগত) দিক হোক আর ফেকাহগত দিক হোক, অবশ্যই তাদের বাণীকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে এবং কোনো বিষয়ে তাদের প থেকে বর্ণিত কোনো যুক্তি বিদ্যমান থাকলে অন্যের শরণাপন্ন হওয়া বৈধ নয়। মহানবী (স.) এর ওফাতের পর মুসলমানরা যদিও খেলাফত এবং উম্মতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়টিতে দু'টি দলে বিভক্ত হয়েছেন এবং প্রত্যেকেই নিজেদের দাবির সপে যুক্তি পেশ করেছেন এবং এসব বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তারপরও আহলে বাইত (আ.) যে ধর্মীয় জ্ঞানের নির্ভুল উৎস সে বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা উচিত নয়। কেননা সবাই হাদিসে সাকালাইন সহীহ হওয়ার পে ঐকমত্য পোষণ করেন। আর এই হাদিসে পবিত্র কুরআন এবং আহলে বাইত (আ.)- কে আকাঈদ ও আহকামের বিষয়ে মারজা বা একমাত্র ফয়সালাকারী কর্তৃপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদি উম্মতে মুহাম্মাদী (স.) এই হাদিসটির ওপর আমল করে তাহলে তাদের মতানৈক্য কমে আসবে এবং তাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ২। পবিত্র কুরআন যেহেতু মহান আল্লাহরই বাণী, তাই এ মহাগ্রন্থ সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত; তাই কিভাবে তার মাঝে ভুল-ত্র“টির সম্ভাবনা থাকবে যখন স্বয়ং মহান আল্লাহই এই মহাগ্রন্থ সম্পর্কে বলেন : "তাতে তার আগে ও পিছে কোনো দিক থেকেই বাতিল বা মিথ্যা প্রবেশ করতে পারে না। তা তো প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত আল্লাহর প থেকে নাজিল করা হয়েছে।" যদি পবিত্র কুরআন সব ধরনের ভুল ও বাতিল হতে মুক্ত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে তার সমকও সব ভুল-ত্র“টি থেকে মুক্ত। কেননা নিষ্পাপ নয় এমন ব্যক্তি অর্থাৎ কোনো গোনাহগার ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পবিত্র কুরআনের জুটি হতে পারে না। হাদিসে সাকালাইন ও এই আয়াতে কারিম তাঁদের তথা আহলে বাইত (আ.)-গণের সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত হওয়ার সাী স্বরূপ। অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ নবী হওয়া নয় বা নিষ্পাপ হওয়ার জন্য নবী হওয়া জরুরি নয়। কেননা এমন হতে পারে যে, কোনো এক ব্যক্তি নিষ্পাপ বা গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন। যেমন- হযরত মারইয়াম (আ.) নিম্নোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন: "...আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তোমাকে বিশ্বের নারীদের ওপর মনোনীত করেছেন।" আরো কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা : রাসুলের আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধরের মর্যাদা এত বেশি যে, সুন্নি ইমাম শাফেয়ী তার প্রসিদ্ধ কবিতায় বলেছেন: "হে মহানবী (স.) এর বংশধর! তোমাদের প্রতি ভালোবাসা একটি ফরজ কাজ যা মহান আল্লাহ কোরআনে অবতীর্ণ করেছেন। তোমাদের মাহাত্ম প্রমাণের ক্ষেত্রে এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর দরুদ পড়বে না তাঁর (আল্লাহর রাসূলের) জন্যও সে দরুদ পড়নি।" অন্যদিকে সাহাবিদের একদল সম্পর্কে হাদীসে এসেছেঃ বুখারী ও মুসলিম মহানবী (স.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: "কিয়ামতের দিন আমার সাহাবিদের মধ্যে হতে একটি দল (অথবা বলেছেন আমার উম্মতের মধ্য হতে) আমার সামনে উপস্থিত হবে। অতঃপর তাদেরকে হাউজে কাওসার হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে (হাউজে কাওসারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না)। তখন আমি বলব: হে আমার প্রভু! এরা আমার সাহাবি। মহান আল্লাহ উত্তরে বলবেন: আপনার পরে এরা যা কিছু করেছে সে সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তারা তাদের পূর্বাবস্থায় (অজ্ঞতা তথা জাহেলিয়াতের যুগে)প্রত্যাবর্তন করেছিল। (বোখারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-৯৪, ১৫৬ পৃ, ২য় খণ্ড, ৩২ পৃ, মুসলিম শরীফ ৭ম খণ্ড, পৃ-৬৬) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখুন ও সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ দিন এবং ইসলামী ঐক্য জোরদারের তৌফিক দিন ও কাফেরদের ইসলাম-বিরোধী ষড়যন্ত্রগুলো বানচালের যোগ্যতা দান করুন। আমীন।

নবী পরিবারের(আঃ) শানে পবিত্র কোরানের আয়াত সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম।“ গাদীরে খুমে যখন রাসুল(সাঃ) হযরত আলীকে খেলাফত ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃখোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন,নিজের অবদানকে সপুর্ন করিলেন।আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)। সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪ “তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহ পাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হেকমাত দান করিয়াছি।“ আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ইমামগন হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সংগে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাহারা হইলেন আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদের ইমামতি দান করিয়াছেন।হযরত ইমাম বাকের(আ:) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইবারহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন(১২ ইমাম) সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করাইয়াছে।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লহর আদেশ অমান্যের সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ১২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ২০৪;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯; শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৩;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৬৭;সাওয়েকে মুহরেকা,পৃঃ১৫০)। সুরা নিসা,আয়াত# ৮৩ “যদি তাহারা উহা রাসুল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত,তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্দ্বান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্নয় করিতে পারিত।“ হযরত ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে,যাহারা বাস্তবতা জানেন আর যাহারা ক্ষমতাসম্পন্ন তাহারা হইলেন হযরত মুহাম্মাদের(সাঃ) বংশধর। আয়াশী হযরত ইমাম রেজা(আঃ) হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, ইহা দ্বারা হযরত নবী করিমের(সাঃ) বংশধরকে বুঝানো হইয়াছে। কারন তাহারা হইলেন ঐ সব ব্যক্তি যাঁহারা কোরানের বাস্তব তথ্য ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।তাঁহারাই হালাল ও হারামের উপর অবগত হইয়াছেন।আর তাহারাই সৃষ্টির উপর আল্লাহতায়ালার হুজ্জাত বা অকাট্য প্রমানস্বরুপ।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৫;রাওয়ানে যাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৯২;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ৪০)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৫৫ “তোমাদের বন্দ্বু তো আল্লাহ,তাঁহার রাসুল ও মু’মিনগন-যাহারা সালাত কায়েম করে ও রুকুর অবস্থায় যাকাত দেয়”। হযরত আবু যর গিফারী(রাঃ) এইভাবে বর্ননা করিয়াছেনঃএকদিন আমি রাসুলের(সাঃ) সঙ্গে মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করিলাম।একজন ভিক্ষুক মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিল।কেহ তাহাকে কিছুই দিল না।ঐ ভিক্ষুক তাহার ২ হাত আকাশের দিকে উত্তোলন করিয়া বলিলঃহে ল্লাহ!আমি তোমার পয়গাম্বরের মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিলাম,কিন্তু কেহ আমাকে কিছুই দিল না।এই সময় আলী(আঃ)সালাতে রুকুর অবস্থায় ছিলেন।তিনি নিজের আঙ্গুলের ইশারায় ভিক্ষুককে ইঙ্গিত করিলেন।হযরত আলী(আঃ)এর ডান হাতের আঙ্গুলে আংটি ছিল।ভিক্ষুকটি অগ্রসর হইয়া হযরত আলীর(আঃ) আঙ্গুলের আংটি খুলিয়া নিল।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এই ঘটনা দেখিয়া নিজের মাথা আকাশের দিকে ঘুরাইয়া বলিলেনঃহে আল্লাহ! হযরত মুসা(আঃ) আপনার প্রার্থনা করিয়াছিলেন যে,হে আল্লাহ আমার বক্ষ প্রসারিত করিয়া দাও আর আর আমার জাক আমার জন্য সহজ করিয়া দাও এবং আমার জিহবার জড়তা দূর করিয়া দাও যাহাতে লোকেরা আমার কথা বুঝিতে পারে।আর আমার বংশ হতে আমার ভাই হযরত হারুনকে(আঃ) সাহায্যকারী করিয়া দাও,যেন সে আমার শক্তিকে দৃঢ় করে।আমার কাজে আমার সঙ্গী করিয়া দাও। আল্লাহতায়ালা হযরত মুসাকে(আঃ) বলিলেন,আমি তোমার ভাই দ্বারা তোমার শক্তি তোমার শক্তিকে দৃঢ় করিয়া দিলাম।তোমাকে রাজত্ব দান করিলাম।হে আল্লাহতায়ালা!আমি মুহাম্মাদ তোমার প্রিয় রাসুল।হে আল্লাহ আমার বক্ষকে প্রসারিত করুন,আমার কাজ সহজ করুন এবং আমার বংশধরকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করুন।আমার পৃষ্টকে আলী দ্বারা শক্তিশালী করুন।হযরত আবুযর গিফারী বলিলেন যে,আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) কথা তখনো শেষ হয় নাই ,এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল(আঃ) এই আয়াতে পাক নিয়ে হুজুর (সাঃ)এর নিকট উপস্থিত হইলেন।(সুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ৭১;তাফসীরে ত্বাবারী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৬৫;তাফসীরে রাজী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৩১;তাফসীরে খাজিন,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯৬;তাফসীরেআবুল বারাকাত,১ম খন্ড,পৃঃ ৪৯৬;তাফসীরে নিশাপুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৬১; আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খন্ড,পৃঃ৩৫৭;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ৩২৯;আল-গাদীর,৩য় খন্ড,পৃঃ১৫৬ ও ১৬২;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৬১;)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৬৭ “হে রাসুল!পৌছাইয়া দিন যাহা কিছু আপনার প্রতি অবতীর্ন হইয়াছে আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।যদি এমন না হয় তবে আপনি তাহার কোন সংবাদই পৌছাইলেন না।আর আল্লাহতায়ালা আপনাকে রক্ষা করিবেন মানুষের অনিষ্ট হইতে”। সমস্ত মোফাসসের এবং ঐতিহাসিকগন একমত যে,এই আয়াত গাদীরে খুম নামক স্থানে হযরত আলী(আঃ)এর শানে নাজিল হইয়াছে।রাসুল(সাঃ) উটের পালান দ্বারা একটি মিম্বর বানানোর জন্য আদেশ দিলেন এবং সেই মিম্বরের উপর দাড়াইয়া রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেন যে,আমি যাহার নেতা ,এই আলীও তাহার নেতা।(সুত্রঃআল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২১৪ ও ২২৯;জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৩৮;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;আসবাবুল নযুল,পৃঃ১৩৫;শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৮৭)। সুরা আ’রাফ,আয়াত# ১৭২ “হে নবী স্মরন করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্টদেশ হইতে তাহাদের বংশধরগনকে বাহির করিলেন”। হোযাইফা বিন ইয়ামানী বর্ননা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃযদি মানুষ জানিত যে,আলী কখন হইতে আমিরুল মু’মিনিন,তবে কখনো তাঁহার মরযাদাকে অস্বীকার করিত না।হযরত আলী তখন থেকেই আমিরুল মু’মিনিন যখন হযরত আদমের শরীর ও আত্না মাটি ও পানির মধ্যে ছিল।আল্লাহপাক ফরমাইলেনঃযখন আদমের পৃষ্টদেশ হতে সমস্ত আত্নাকে বাহির করা হইলো,তাহাদের উপর সাক্ষী করা হইলো এবং জিজ্ঞাসা করা হইলো যে,আমি কি তাহাদের প্রভু নই?ফেরেশ্তারা বলিলঃঅবশ্যই,আমরা সাক্ষী থাকিলাম। তারপর আল্লাহতায়ালা ফরমাইলেনঃআমি তোমাদের প্রভু,মুহাম্মাদ তোমাদের রাসুল এবং আলী তোমাদের আমীর।(সুত্রঃ জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৫৮;রাওয়ান জাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৪৯১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ২১৬;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৭১) প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

চর্ম চক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখা কি সম্ভব ? মহান আল্লাহকে দেখা সম্পর্কিত — ” শরহে তায়াররুফ ” কিতাবে আছে — হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) হচ্ছেন আধ্যাত্নবিদগনের মধ্যমনি । মারেফত ও হাকিকত সম্পর্কিত যে সকল বাণী তিনি উচ্চারন করেছেন , আর কেউ তা বর্ণনা করতে সক্ষম হবে না । মাওলা আলী (আঃ) একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন , ” হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তরাধিকার এবং আধ্যাত্নজ্ঞান সম্পর্কে যার যা ইচ্ছা আমার সীমা থেকে জেনে নিতে পার । এ মজলিসেই দা’লাব ইয়ামনী নামে খ্যাত এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিল । হযরত আলী (আঃ) তার সম্পর্কে বললেন , ‘ এ লোকটি অনেক লম্বা- চওড়া দাবি করে । তার দাবি আমার কখনও ভাল লাগেনি । দা’লাব মজলিসে দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল , আমি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই । হযরত আলী (আঃ) বললেন , তুমি কেবল ফিকাহ্‌ ও জ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন করবে । পরীক্ষা- নিরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয় জিজ্ঞাসা করবে না । দা’লাব বলল , আচ্ছা , বলুন তো দেখি আপনি আপনার পরওয়ারদেগারকে দেখেছেন ? মাওলা আলী (আঃ) জবাবে বললেন , এটা কিরূপে সম্ভব যে , আমি পরওয়ারদিগারের এবাদত করব , অথচ তাঁকে দেখব না ? দা’লাব বলল , আপনি তাঁকে কিরূপ পেয়েছেন ? ইমাম আলী (আঃ) বললেন , চর্মচক্ষে তুমি তাঁকে দেখবে না । বরং অন্তর্চক্ষু ও বিশ্বাসের মাধ্যমে তাঁকে দেখতে পারবে । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তিনি দৃষ্টান্তবিহীন । কোন স্থান বিশেষে তিনি সীমাবদ্ধ নেই এবং তিনি কোন কালেরও অনুবর্তী নন । ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তাঁকে চিনা যায় না এবং কোন মানুষ দ্বারা তাঁকে অনুমানও করা যায় না । দা’লাব এসব কথা শুনে চীৎকার করত অজ্ঞান হয়ে গেল । জ্ঞান ফিরে এলে সে বলল , এখন আমি আল্লাহ্‌র সাথে অঙ্গীকার করছি যে কাউকে পরীক্ষার ছলে কোন প্রশ্ন করব না । শাওয়াহেদুন – নবুয়ত । সুপ্রিয় পাঠক , আল্লাহর পরিচয় – এ সম্পর্কিত বিষয় আরও বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন – নাহজ আল বালাঘা , মূল – হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) , বাংলা অনুবাদ – জেহাদুল ইসলাম প্রচারে ইয়া আলী আঃ

বালাগাল উলা বি কামালিহী – বাংলা অনুবাদ — বালাগাল উলা বি – কামালিহী কাশাফাদ্দুজা বি – জামালিহী হাসুনাত জামিউ খিসালিহী সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । পৃথিবীর সকল মুমিন মুসলমান এই পবিত্র দরুদ শরীফ সম্বন্ধে যথেষ্ট অবগত । কিন্ত আমরা বেশীরভাগ মুসলমান সুন্দর এই দরুদ শরীফের বাংলা অর্থ জানি না । সম্মানীয় পাঠক , আসুন জেনে নেই – অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া চমৎকার এই দরুদ শরীফটির বাংলা অনুবাদ এবং এর জন্ম ইতিহাস । বাংলা অনুবাদ – যিনি (সাধনায়) পূর্ণতার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন , যাঁর সৌন্দর্যের আলোকে অন্ধকার দুর হয়েছে , যাঁর আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । বালাগ = পৌঁছানো । কামালিহী = পূর্ণতা , পরিপূর্ণ । জামালিহী = সৌন্দর্য । খিসালিহী = আচরণ – ব্যবহার , চরিত্র । ইতিহাস থেকে জানা যায় , হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এই দরুদ শরীফের প্রথম দু’লাইন লেখার পর কি লিখবেন তা তিনি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তন্দ্রাছন্ন ভাব আসলে স্বপ্ন দিদারে তিনি রাসুল (সাঃ) এর জিয়ারত পান । প্রিয় নবীজী (সাঃ) তখন সাদী (রহঃ) কে বলেন – হে সাদী ! তুমি লিখ – হাসুনাত জামিউ খিসালিহী , সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । বাংলা অনুবাদ – যার আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার যে , এই দরুদ শরীফ রাসুল (সাঃ) হযরত শেখ সাদী (রহঃ) কে দিয়ে লিখিয়েছেন । সুবহানাল্লাহ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে দাড়িয়ে যেতেন — হযরত আয়েশা থেকে বর্নিত – ‘ আমি কথাবার্তা ও আলোচনায় রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে ফাতিমার (সাঃআঃ) চেয়ে বেশী মিল আছে এমন কাউকেই দেখিনি । ফাতিমা (সাঃআঃ) যখন রাসূলের (সাঃ) নিকট আসতেন , মহানবী (সাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বসাতেন , তাঁর হাত টেনে চুমু দিতেন , স্বাগত জানাতেন । ফাতিমা (সাঃআঃ) পিতার সাথে একই রকম করতেন ।’ সূত্র – আবু দাউদ , বাবু মা জায়াফিল কিয়াম (৫২১৭) / সহীহ তিরমিযী , মানাকিবু ফাতিমা (৩৮৭১)

— এবং যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায় —- ” । কে বা কাঁরা সেই মুমিনবৃন্দ —- “— তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ , তাঁর রাসুল এবং মু’মিনবৃন্দ যারা নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায় —- ” । সুরা – মায়েদা /৫৫ । সুপ্রিয় পাঠক , উপরের আয়াতে কয়েকটি বিষয় খুবই পরিস্কার – ১) – মহানবী (সাঃ) সমগ্র উম্মাতের জন্য অভিভাবক যিনি মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত হয়েছেন , ২) – এবং ঐ মুমিনবৃন্দ সমগ্র উম্মতের জন্য অভিভাবক যাঁরা রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানে সক্ষম , ৩) – মহানবী (সাঃ) তাঁর ওফাত পরবর্তীতে সমগ্র উম্মতকে নেতাবিহীন অবস্থায় ছেড়ে যান নি , ৪) – সমগ্র উম্মতের জন্য আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ঐ মুমিনগন রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানে সক্ষম । পাঠক , এবারে আসুন দেখে নেয়া যাক যে , নামাযে রুকুরত অবস্থায় কোন মুমিনগন যাকাত প্রদান করলেন । নবীজির (সাঃ) সাহাবি হযরত আবু যার আল গিফারী (রাঃ) বলেন , ” আমি একদা রাসুল (সাঃ) এর সাথে যোহরের নামায আদায় করছিলাম । ইতিমধ্যে একজন ভিখারী মসজিদে প্রবেশ করে ভিক্ষা চাইল । কিন্ত কেউ তাকে কোন সাহায্য করল না । ভিক্ষুকটি দু’হাত তুলে আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ জানালো , ” ইয়া আল্লাহ্‌ , তুমি সাক্ষী থেকো , আমি মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সাহায্য চাইলাম , কিন্ত কেউ দিল না “। তখন হযরত আলী (আঃ) নামাজে রুকু কালীন অবস্থায় ছিলেন । তিনি ইশারা করলে ঐ ভিক্ষুক লোকটি হযরত আলীর (আঃ) হাতের আংটি খুলে নিয়ে যায় । আর পুরো এই ঘটনাটি নবীর (সাঃ) চোখের সামনে ঘটে । নবীজি (সাঃ) নামাজ শেষে দু’হাত তুলে আল্লাহ্‌র কাছে মোনাজাত করলেন , ” ইয়া আল্লাহ্‌ , যখন হযরত মুসা (আঃ) তোমাকে বলেছিল , ” — আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ দিন আমার পরিবার থেকে , হারুন , আমার ভাইকে , তার মাধ্যমে আমার পিঠকে মজবুত করুন , এবং তাকে আমার কাজকর্মে অংশীদার করুন —” । সুরা ত্বাহা , আয়াত-২৯-৩২ । তখন ওহী নাযিল হয়েছিল । তুমি তাঁর ভাই হারুন কে দিয়ে তাঁর বাহুবল শক্তিশালী করছিলে । হে প্রভু , নিশ্চ য়ই আমি তোমার নবী এবং মনোনীত ব্যক্তি । ইয়া আল্লাহ্‌ , তুমি আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও । আমার জন্য আমার আ’হল থেকে আলীকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়োগ কর , তাঁর মাধ্যমে আমার কোমরকে শক্তিশালী করে দাও ।” তখনও প্রিয় নবী (সাঃ) এর মোনাজাত সমাপ্ত হয় নি , এমনি সময় সুরা মায়েদার এই ৫৫ নাঃ আয়াত নাজিল হয় । এই আয়াতে এই দিকটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে , নবী (সাঃ) এর মোনাজাতের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্‌ ওহী প্রেরন করলেন যে , আমি আপনার মোনাজাত কবুল করলাম ও হযরত আলীকে আপনার স্থলাবর্তী খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করলাম । যেভাবে মুসার (আঃ) মোনাজাতে আল্লাহ্‌ হারুন (আঃ) কে মুসার (আঃ) স্থলাবর্তী খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করেছিলেন ঠিক একইভাবে নবী (সাঃ) এর মোনাজাতে আল্লাহ্‌ হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর নবীর জন্য মনোনীত করলেন । মহানবী (সাঃ) এর পর আর কোন নবী বা রাসুলের আগমন হবে না তাই হযরত আলী (আঃ) কে ইমাম ও বেলায়েত ( ওয়ালী ) ঘোষণার মাধ্যমে মনোনয়ন দেওয়া হল । যা আমরা এখন জানলাম , আর যেভাবে হযরত মুসার (আঃ) পর হযরত হারুন (আঃ) সেই সময় মানব জাতির জন্য হেদায়েতকারী ছিলেন , ঠিক নবীর পর হযরত আলী (আঃ) বেলায়েতের অধিকারী রূপে মানব জাতির জন্য হেদায়েতকারী হবেন । আয়াতে এই বিষয়টাই স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে । অতএব , এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আঃ) ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে নবীজী (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত ইমাম বা খলীফা হিসাবে মেনে নেওয়া আদৌ কি সম্ভব ? যাইহোক আপনি যথেষ্ট বিবেকবান , বিবেক আপনার সিদ্বান্ত আপনার , দয়া করে ভুলে যাবেন না যে , আপনার সিদ্বান্তের জবাবের প্রতীক্ষায় স্বয়ং আল্লাহ অপেক্ষামান আছেন । সূত্র – তাফসিরে নুরুল কোরআন , খঃ-৬, পৃঃ-২৮৫ (আমিনুল ইসলাম) / কুরআনুল করিম , পৃঃ-৩০০ ( মহিউদ্দীন খান / আরজাহুল মাতালেব , পৃঃ-৭৩,৭৪ ( উর্দু) ,/ কানজুল উম্মাল , খঃ-৭, পৃঃ-৩০৫ / তাফসিরে কাশফুল বায়ান , খঃ-১, পৃঃ-৭৪ / তাফসিরে কানজুল ইমান, পৃঃ-২২৩ ( আহমদ রেজা খা) / তাফসিরে মারেফুল কোরআন , খঃ-৩, পৃঃ-১৫৯ ( মুফতি মোঃ শফি ) / তাফসিরে ইবনে কাসির, খঃ-৩, পৃঃ-৪৮৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / তাফসিরে তাবারী, খঃ-৬, পৃঃ-২৮৮ / তাফসিরে কাশশাফ, খঃ-১, পৃঃ-৬৮৩ / তাফসিরে ইবনে জাওযীয়াদ আল মুসির, খঃ-২, পৃঃ-৩৮৩ / তাফসিরে কুরতুবি, খঃ-৬, পৃঃ-২৮৮ / তাফসিরে ফাখরে রাজী, খঃ-১২, পৃঃ-২৫ / তাফসিরে ইবনে কাসির, খঃ-২, পৃঃ-৭১ / তাফসিরে দুররে মানসুর, খঃ-২, পৃঃ-২৯৩ / তাফসিরে আহকামুল কোরআন, পৃঃ-২৯৩ / আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খঃ-৭, পৃঃ-৩৫৭ / নুরুল আবসার, পৃঃ-৭৭ / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-২১২ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

কাতেব এ ওহী – হযরত মূয়াবীয়া । কাতেব এ ওহী নামে অপপ্রচার — যিনি বা যারা কুখ্যাত পতিতা সর্দারনী হিন্দার তথাকথিত পুত্র মুয়াবীয়াকে সাহাবীর সম্মাান দিয়েও খুশী হতে পারেন নি তারাই তার নামের আগে “কাতেব এ অহি” জুড়ে দেন । মক্কা বিজয়ের আরও পরে মুয়াবীয়া জান ও সম্পদ বাঁচাতে ইসলাম গ্রহন করেন । পবিত্র কোরআন এর প্রায় সব আয়াত তখন নাজিল হয়ে গেছে । কোরআন সম্পূর্ণ হতে তখন মাত্র আর কয়েকটি আয়াত বাকি ছিল । তাহলে তখন মূয়াবীয়ার পক্ষে ওহি লিখার সৌভাগ্য হল কিভাবে ? তাছাড়া কোরআন এর কোন আয়াত মুয়াবীয়া লিখলেও তাতে কি হয়েছে ? কেননা কোরআনের যে কোন একটি আয়াত এখন যে কেউ লিখতেই পারে । তাহলে তো লক্ষ লক্ষ কাতেব এ ওহী হয়ে যায় । তৎকালীন সময় কখনও কখনও মুনাফিকদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে কে দিয়েও অহি লিখিয়েছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় । অথচ এই উবাইকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করে সুরা মুনাফেকুন নাজিল হয়েছে । মারওয়ানকেও অনেকে কাতেব এ ওহি বলে থাকেন কিন্ত তাকে তো সাহাবার মর্যাদা দেয়া হয় না । মুয়াবীয়ার অসংখ্য মুনাফেকি থাকা সত্ত্বেও যারা মুয়াবীয়ার সমালোচনা করলে ঈমান চলে যাবে বলে ফতোয়া দেন , তাদের আগে নিজের ঈমান কতটুকু আছে তা ভেবে দেখা উচিত । হযরত মূয়াবীয়ার যে কাজগুলি বিশ্লেষনের দাবী রাখে — রাজতন্ত্র স্থাপনকারী উমাইয়া বংশের প্রথম খলীফা জনাব মুয়াবিয়া নিম্নলিখিত কাজগুলো করেন যা ইসলামের সাথে মোটেই সংগতিপূর্ন নয় – ১) – সাহাবাকেরামদের সাথে পরামর্শ না করে ছলছাতুরী আর তরবারীর সাহায্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল । ( মারেফুল কোরআন , পৃ – ৪২৭ এ হাদিস অনুযায়ী জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে ) ২) – হযরত আলী (আঃ) সহ সকল আহলে বায়েত (আঃ) গনের প্রতি সকল প্রদেশের মসজিদের মিম্বর হতে অভিসম্পাত বা গালাগাল করার নির্দেশ বাধ্যতামূলক করা , যা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পরযন্ত বলবৎ ছিল । ৩) – ইমাম হাসান (আঃ) এর সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা । ৪) – দ্বিতীয় ইমাম হাসান (আঃ) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা । ৫) – হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর (রাঃ) কে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা । ৬) – উম্মু ল মুমেনীন হযরত আয়েশাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে ওনার লাশ গুম করে ফেলা হয় । ৭) – রাজকীয় কায়দায় বা নিজেকে রাজা হিসেবে দাবী করে শাসন করা । ৮) – মদখোর , ভোগবিলাসী পুত্র ঈয়াযীদকে খলীফা হিসাবে মনোনীত করা । ৯) – মুসলিম বাহিনীর লাশ হতে মস্তক বিছিন্ন এবং তা শহরে প্রর্দশন চালুকরন । ১০) – মিথ্যা হাদিস তৈরী , প্রচারকরনের মহা ব্যবস্থাকরন । ১১) – হযরত হুজুর ইবনে আদী (রাঃ) ও তার সাথীদের হত্যা করা । ১২) – রাসুল (সাঃ) এর হাদিস “সম্মাানীত স্বামীর জন্য সন্তান এবং বেশ্যার জন্য কিছুই না ” এর বিপরীতে জিয়াদকে ভাই হিসেবে ঘোষনা প্রদান । ১৩) – সকল ক্ষেত্রে উমাইয়া বংশের লোকদের প্রাধান্য দেয়া । এরা সারা মুসলিম সাম্রাজ্যে পাপাচার , অসমতা , অত্যাচার ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে । ১৪) – প্রাদেশিক শাসকদের অন্যায় কাজের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নেয়া । ১৫) – দাড়িয়ে খুৎবা প্রদানের বদলে বসে খুৎবা প্রদান । ১৬) – ঈদের নামাজে আযান প্রথা চালু করা । ১৭) – রেশমী বস্ত্র পরিধান করা । ১৮) – নবীজী (সাঃ) এর আমলের ফেৎরা প্রথার পরির্বতন করা । ১৯) – বায়তুল মালকে নিজের সম্পওি হিসেবে পরিগনিত করা । সুপ্রিয় পাঠক , দয়া করে ইতিহাস জানুন । এখানে শীয়া বা সুন্নি বিবেচ্য নয় । নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করুন , আজ এই পর্যন্ত । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

যে ভাবে হযরত আলী(আ)র কাছ থেকে বায়াত নেয় হয় প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।যেমন,তিনি হযরত জাফর সাদেক(আঃ) থেকে বর্ননা করেন যে,হযরত আলী(আঃ) বাইয়াত হননি যতক্ষন না গাঢ় ধোঁয়ায় তাঁর ঘর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে(তালখীছুশ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। এ পরযায়ে ১ম ৩টি প্রশ্নটি সম্পর্কে আমাদের আলোচনায় ইতি টানবো,আর বিচারের ভার ছেড়ে দেবো সজাগ ও সচেতন জনগনের ওপর।আর বাকী আলোচনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলীল প্রমানের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে নেবো। আলীকে(আঃ) যেভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটুকুও আগের অংশের ন্যায় বেদনাদায়ক ও তিক্তকর বটে।কেননা এটা কখনোই কল্পনীয় ছিল না যে,হযরত আলীর(আঃ) ন্যায় ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে যে,৪০ বছর পর মুয়াবিয়া তা নিয়ে কটাক্ষ করবেন।তিনি আমিরুল মু’মিনিন আলীকে(আঃ) লেখা তার পত্রে কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্বে ইমামের(আঃ) প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করে লিখেনঃ “........এমনকি খেলাফত প্রশাসনের কর্তারা আপনাকে জব্দ করে ফেলে এবং অবাধ্য উটের ন্যায় বাইয়াতের জন্য মসজিদে টেনে নিয়ে যায়”(ইবনে আবিল হাদিদ মুয়াবিয়ার পত্রের পুর্ন বিবরন উদ্বৃত করেছেন,শরহে নাহজুল বালাগাহ,১৫তম খন্ড,পৃঃ১৮৬)। আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) মুয়াবিয়ার পত্রের উত্তরে পরোক্ষভাবে মুল বিষয়টি মেনে নেন এবং এটাকে তাঁর মযলুম অবস্থার প্রমান বলে মনে করেন।তিনি বলেনঃ “তুমি বলেছো যে,আমাকে অবাধ্য উটের ন্যায় চালিত করে বাইয়াতের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।আল্লাহর শপথ,তুমি আমাকে কটাক্ষ করতে চেয়েছ।কিন্তু বাস্তবে তুমি আমাকে প্রশংশা করেছো।আর তুমি আমাকে অপদস্ত করতে চেয়েছ,কিন্তু অপদস্ত করেছো নিজেকে।মযলুম হওয়া কোন মুসলমানের জন্য দোষের কিছু নয়(নাহাজুল বালাগাহঃপত্র নং ২৮)। ইবনে হাদীদ একমাত্র ব্যক্তি নন যে, ইমামের(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতার এ কাহিনী বর্ননা করেছেন।বরং তাঁর আগে ইবনে আব্দে রাব্বি ইক্কদুল ফারীদ গ্রন্থে(২য় খন্ড,পৃঃ২৫৮) এবং তাঁর পরে “ছুবহুল আ’শী” গ্রন্থের গ্রন্থকারও(১ম খন্ড,পৃঃ১২৮) এ ঘটনা বর্ননা করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, ইবনে আবিল হাদীদ যখন নাহজুল বালাগায় ইমামের(আঃ) ২৮নং পত্রের ব্যাখ্যায় পৌছান তখন ইমামের(আঃ) পত্র ও মুয়াবিয়ার পত্রের বর্ননা প্রদান করেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন না।কিন্তু গ্রন্থের শুরুতে যখন ২৬তম পত্রের ব্যাখ্যা শেষ করেন তখন মুল ঘটনা অস্বীকার করে বলেনঃ “ এ ধরনের বিষয়াদি কেবল শিয়ারা বর্ননা করে থাকে।অন্যদের থেকে এরুপ বর্ননা আসেনি(শারহে নাহজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। হযরত ফাতিমার(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন ৩য় প্রশ্নটি ছিল এই যে হযরত আলির(আঃ) কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহনের ঘটনায় রাসুলাল্লাহর(সাঃ) প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমার (আঃ) প্রতি কি কোন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁকে কেন আঘাত করা হয়? শিয়া মনিষীবর্গের দৃষ্টিকোন থেকে এই প্রশ্নের উত্তর আগের ২টি প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে বেশী অপ্রীতিকর।কারন,খলিফার লোকেরা হযরত আলীকে(আঃ) মসজিদে নিয়ে যেতে চাইলে হযরত ফাতিমা(আঃ) বাধা হয়ে দাড়ান।তখন হযরত ফাতিমা(আঃ) তাঁর স্বামীকে নিয়ে যেতে না দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হন যা বর্ননা করার ভাষা নেই(কিতাবে সুলাইম বিন ক্কায়েস,পৃঃ৭৪ ও তদ পরবর্তী)। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মনীষীগন খলিফাগনের অবস্থান বজায় রাখার স্বার্থে ইতিহাসের এ অংশটি বর্ননা করা থেকে বিরত থেকেছেন।এমন কি ইবনে আবিল হাদীদও এটাকে সেসব বিষয়ভুক্ত করেছেন যা কেবল শিয়ারাই বর্ননা করে থাকে(শারহে নাহাজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা বলেনঃ “প্রথম দিকে হাদিসবেত্তাগন ও ইতিহাস লেখকগন নবী দুলালীর প্রতি প্রদর্শিত ধৃষ্টতার কথা বর্ননা করতে অস্বীকৃ্তি জানাতেন না।তাঁদের মধ্যে এ বিষয়টি প্রসিদ্ব ছিল যে,খলিফার আজ্ঞাবাহী ধাক্কা দিয়ে ঘরের দরযাটি ভেঙ্গে হযরত ফাতিমার(আঃ) উপর ফেলে দেয় এবং তা তাঁর গর্ভস্থিত সন্তানের গর্ভপাতের কারন হয়। আর কুনফুয হযরত ওমরের নির্দেশে ফাতিমা যাহরাকে(আঃ) চাবুকের আঘাত করতে থাকে যাতে তিনি হযরত আলীকে(আঃ) ছেড়ে দেন।কিন্তু তাঁরা পরবর্তীতে দেখলেন যে,এসব কথা বর্ননা করা খলিফাদের পদ ও অবস্থানের পরিপন্থী,সেকারনে তা বর্ননা করা থেকে বিরত থাকলেন”(তালখীশুছ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। সায়েদ মুর্তাযার বক্তব্যের সাক্ষ্য হলো এই যে, অনেক সতররতা ও নিয়ন্ত্রন আরোপ সত্বেও এসব ঘটনার কথা তাঁদের কিছু কিছু গ্রন্থে চোখে পড়ে।শাহরিস্থানী মু’তাজিলা নেতা ইব্রাহীম ইবনে সাইয়্যার ওরফে গ্বিতাম থেকে বর্ননা করেন যে তিনি বলতেনঃ “হযরত ওমর বাইয়াত গ্রহনের দিনগুলোতে(এর কোন এক দিন) হযরত ফাতিমার(আঃ) পাজরের ওপরে দরযা ফেলে দেন।ফলে তাঁর গর্ভশ্তিত সন্তানের গর্ভপাত ঘটে।তিনি বাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন তাঁদের সমেত ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতেও নির্দেশ দেন,যদিও ঘরে ভেতর হযরত আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন(আঃ) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না”(আল-মেলাল ওয়ান-নেহাল,২য় খন্ড,পৃঃ৯৫ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

রেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস — ভিত্তিহীন একটি হাদিস । একটি বহুল প্রচলিত মুরছাল হাদিস এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা — মহানবী (সাঃ) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে সমগ্র উম্মতগনের জন্য বললেন যে , ” — রেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস ——- ” । প্রিয় পাঠক , উপরে উল্লেখিত হাদিসটি আমাদের চারিপাশে প্রচলিত ইসলামে সর্বাধিক প্রচারিত একটি জনপ্রিয় একটি হাদিস । হাদিসটি আমাদের সম্মাানীয় আলেম ওলামাগন বিভিন্ন ওয়াজে , টিভি প্রোগ্রামে বয়ান করে থাকেন । বেশ ভাল কথা । তো এবারে আমাদের সম্মাানীয় আলেমগনের পক্ষ থেকে সর্বাধিক প্রচারিত হাদিসটির রেফারেন্স খুঁজতে যেয়ে পবিত্র কোরআনের ঠিক পরেই সবথেকে নির্ভরযোগ্য সহীহ আল বুখারি শরীফ এবং সহীহ আল মুসলিম শরীফে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না । এমনকি সহীহ তিরমিজি শরীফ , আবু দাউদ শরীফ , ইবনে মাজাহ এবং নাসায়ি শরীফেও এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না । মোটকথা এই যে , সহীহ সিহাহ সিত্তাহ হাদিসগ্রন্থ সমূহে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব নেই । স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে যে , সর্বাধিক প্রচারিত ও বাজারজাতরন কৃত জনপ্রিয় এই হাদিসটি তাহলে কোথায় আছে ? গবেষনায় দেখা গেল যে , হাদিসটি আছে মুয়াত্তা মালেকি তে । হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মালেক বিন আনাস (রঃ) । কে ছিলেন এই মালেক বিন আনাস (রাঃ) ? উনি সাহাবি ছিলেন না । উনি ছিলেন তাবেঈন । সংগত কারনে আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর বিদায় হজ্ব ভাষণের সময় উনি উপস্থিত ছিলেন না । তাছাড়া হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে নি । অর্থাৎ উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী হাদিসটি মুরসাল । মূরসাল হাদীস হচ্ছে যেই হাদীসের রাবিদের পরম্পরায় একজন বা একটি জেনারেশান বাদ পড়ে গেছে । অন্য দলীল না থাকলে মূরসাল হাদীস গ্রহনযোগ্য নয় । পাঠক , এবারে জেনে নিন যে , প্রকৃত সত্য তাহলে কোনটি । হাদিসে সাকালাইন নামে এই হাদিসটি বহুল প্রচারিত — মহানবী (সাঃ) বলেন যে – ” হে মানবসকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি ভারী জিনিষ (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি , যদি এই দুইটি আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । প্রথমটি হচ্ছে , পবিত্র কোরআন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আমার ইতরাত , আহলে বাইত (রক্তজ বংশধর) । নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিষ হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনই পরস্পর থেকে বিছিন্ন হবে না ” । সূত্র – সহীহ তিরমিজি , খন্ড – ৬ , হাদিস – ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড – ১১ , হাদিস – ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ১৮১ , ৩৯৩ (ইসলামিচ ফাউন্ডেশন) / তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ) , পৃষ্ঠা – ১২ , ১৩ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম) / মাদারেজুন নাবুয়াত , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ১১৫ (শায়খ আব্দুল হক দেহলভী) / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড – ১ , পৃষ্ঠা – ৫৬৬ / মুসলিম মুসনাদে আহমদ / নাসাঈ / কানযুল উম্মাল / তাফসীরে ইবনে কাছির / মিশকাতুল মাছাবিহ / তাফসীরে কবির । সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষন – পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সনদ হচ্ছে , মহানবী (সাঃ) এর রক্তজ বংশধর তথা পুতঃপবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও অানুগত্য করা । এই সাবধান বানী মহানবী (সাঃ) সেই সময় সকল সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন । অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য করা সকল সাহাবীগনের জন্যও বাধ্যতামূলক ছিল । এই অবস্থায় আমরা যদি মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য না করি , তাহলে পথভ্রষ্টতা থেকে আদৌ কি মুক্তি পাব ? আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী তার তাফসীরে মাযাহারীতে লিখেছেন – ” নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) এর কথা এজন্যে তাগিদ করেছেন যে , হেদায়েত ও ইমামত তথা বেলায়েতের বিষয় আহলে বাইত (আঃ) গনই একমাত্র পথপ্রর্দশক ” । সূত্র – তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ । বিশ্লেষন — উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী এই হাদিসে সাকালাইন হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ । সবথেকে অবাক করা বিষয় এই যে , প্রচলিত ইসলামে একটি মুরসাল হাদিস নিয়ে অনেক আলোচনা , ব্যাপক প্রচার ও বাজাতজাতকরন হয় । কিন্ত অতীব দুঃখের বিষয় হল যে , এতগুলো সনদে উল্লেখ থাকা সত্বেও বিশুদ্ব সহীহ এই হাদিসটি নিয়ে আলোচনা খুবই কম হয় ! নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গন তথা নবী বংশ নিয়ে আলোচনা এত কম হয় কেন ? পরিশেষে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত মনে করিয়ে দিয়ে আপাঃতত বিদায় – “ — এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না অথবা সত্যকে গোপন কর না যখন তোমরা জান – “ । সুরা – বাকারা / ৪২ । পাঠক , বহুল প্রচারিত একটি মুরছাল হাদিসের বিপরীতে আসুন আমরা গ্রহন করে নেই সর্বাধিক বিশুদ্ব রেওয়ায়েত সমৃদ্ব সহীহ হাদিসকে । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

আমি শিয়া!! আলীর শিয়া নই!! নূহের শিয়া!! ইব্রাহিম (আঃ) ছিলেন নূহ (আঃ)-এর অনুসারী বা 'শিয়া' শিয়া শব্দের অর্থ কি এবং কাদেরকে শিয়া বলা হয় এই বিষয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই সুস্পষ্ট ধারনা নাই। যার জন্য আমরা 'শিয়া' বলে গালি দেই বা মন্তব্য করি। কিন্তু 'শিয়া' শব্দের অর্থ কি তা আমরা জানিনা। আসুন দেখি কুরআন কি বলেছে!!! 'শিয়া' আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ অনুসারী। অর্থাৎ 'শিয়া' শব্দের অর্থ হল অনুসারী। কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ ﻭَﺇِﻥَّ ﻣِﻦ ﺷِﻴﻌَﺘِﻪِ ﻟَﺈِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ অনুবাদঃ ওয়া'ইন্না মিন শিয়াতিহি লা ইব্রাহিম। অর্থঃ আর ইব্রাহিম ছিল নূহের একজন অনুসারী বা নূহ পন্থীদেরই একজন। ***সূরা আস-সাফফাতঃ আয়াত-৮৩। 'শিয়া' সম্পৰ্কে সংগৃহিত দলিলঃ ইসলামী পরিভাষায় শিয়া বলতে মুসলমানদের সেই দলকে বুঝানো হয় যারা বিশ্বাস করেন, রাসূল (সাঃ) ইন্তেকালের আগে বিভিন্ন যায়গায় বিশেষ করে দশম হিজরীর ১৮ই যিলহজ্ব 'গাদির খুম' নামক স্থানে হযরত আলী (রাদিঃ)- কে নিজের প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন। তাদের মতে, বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাদিঃ)- কে সুস্পষ্টভাবে নিজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং খলিফা নির্ধারণ করে যান। গাদীরে খুমের এ হাদিসটি হাদিসে মুতাওয়াতিরের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ মুসলিম ও বুখারী - দুটি হাদিসগ্রন্থেই এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। শিয়া আলেমদের পাশাপাশি প্রায় ৩৬০ জন বিশিষ্ট সুন্নি আলেম ও পণ্ডিত এ হাদিসটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। হাদিসটি বিশ্বনবী (সাঃ)- এর ১১০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। হাদিসের সূত্রঃ রেডিও তেহরান/ এএস/ এমআই/২০ মন্তব্যঃ উপরের হাদিসের সত্যতা সম্পৰ্কে আমার জানা নাই। যেভাবে পেয়েছি আমি সবার অবগতির জন্য সেইভাবেই পোষ্ট করলাম। যদি হাদিসটি সম্পৰ্কে কোন দ্বীনি বন্ধুর মতামত থাকে তাহলে মেহেরবানী করে মন্তব্য করুন। তবে, কুরআনের আয়াত কুরআন থেকে নিয়েছি। আমার নিজের কিছু কথা সংযোজন করেছি। মূলকথা হলঃ আমরা মুসলিমরা সবাই ইব্রাহিম (আঃ) এবং বিশ্বনবী (সাঃ)- এর 'শিয়া' বা অনুসারী কপি পেস্ট

ইসলামের অনন্য মহানায়ক ইমাম রেজা (আ.) ১১ ই জিলকাদ ইসলামের ইতিহাসের এক মহা-খুশির দিন। কারণ, ১৪৮ হিজরির এই দিনে মদিনায় ইমাম মুসা ইবনে জাফর সাদিক (আ.)'র ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.)। তাঁর পবিত্র ও কল্যাণময়ী মায়ের নাম ছিল উম্মুল বানিন নাজমা। ১৮৩ হিজরিতে খলিফা হারুনের কারাগারে পিতা ইমাম কাজিম (আ.)'র শাহাদতের পর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে মুসলিম উম্মাহর ইমামতের ঐশী দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইমাম রেজা (আ.)। এই মহান ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে ইমাম রেজা (আ.)'র জন্মদিনের তাবাররুক হিসেবে তাঁর জীবনের প্রধান কিছু ঘটনা ও প্রকৃত ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাঁর অমর অবদান তুলে ধরার চেষ্টা করব আজকের এই বিশেষ আলোচনায়। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত তথা মাসুম বংশধররা ছিলেন খোদায়ী নানা গুণ ও সৌন্দর্যের প্রকাশ। তাঁরা ছিলেন মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ বা পরিপূর্ণ আদর্শ। তাঁদের মহত গুণ ও যোগ্যতাগুলো সত্য-সন্ধানী এবং খোদা-প্রেমিকদের জন্য অফুরন্ত শিক্ষা ও প্রেরণার উতস হয়ে আছে। শেখ সাদুক ইমাম রেজা (আ.) সম্পর্কে এক বইয়ে লিখেছেন, অসাধারণ নানা গুণ ও যোগ্যতার জন্য আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) রেজা বা সন্তুষ্ট, সাদিক বা সত্যবাদী, ফাজেল বা গুণধর, মু'মিনদের চোখের প্রশান্তি বা আলো ও কাফির বা অবিশ্বাসীদের ক্ষোভের উতস প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তবে আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.)'র একটি বড় উপাধি হল 'আলেমে আ'লে মুহাম্মাদ' বা মুহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের আলেম। ইমাম রেজা (আ.)'র পিতা ইমাম মুসা কাজিম (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আমার বাবা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আমাকে বার বার বলতেন যে, আলে মুহাম্মাদের আলেম বা জ্ঞানী হবে তোমার বংশধর। আহা! আমি যদি তাঁকে দেখতে পেতাম!তাঁর নামও হবে আমিরুল মু'মিনিন (আ.)'র নাম তথা আলী। প্রায় হাজার বছর আগে লিখিত 'শাওয়াহেদুন্নবুওয়াত' নামক বইয়ে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, যারা ইরানের খোরাসানে অবস্থিত (যার বর্তমান নাম মাশহাদ) ইমাম রেজা (আ.)'র মাজার জিয়ারত করবে তারা বেহেশতবাসী হবে। বিশিষ্ট কবি ও আধ্যাত্মিক সাধক মাওলানা আবদুর রহমান জামির লিখিত এই বইটি বহু বছর আগে বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে (মাওলানা মহিউদ্দিনের মাধ্যমে) (পৃ.১৪৩-১৪৪)। [এ বইয়ের ২৭২ পৃষ্ঠায় পবিত্র কোম শহরে অবস্থিত হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.)’র পবিত্র মাজার জিয়ারত সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়েছে। এই ফাতিমা মাসুমা ছিলেন ইমাম রেজা-আ.’র ছোট বোন। মাসুমা বা নিষ্পাপ ছিল তাঁর উপাধি।] বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরানের খোরাসানে তাঁর শরীরের একটি অংশকে তথা তাঁর পবিত্র বংশধারা বা আহলে বাইতের একজন সদস্যকে দাফন করা হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। নবীবংশের প্রত্যেক ইমামের জীবনই যেন মহাসাগরের মতই মহত গুণ, জ্ঞান, আর কল্যাণের নানা ঐশ্বর্যে কুল-কিনারাহীন এবং শাহাদাতের স্বর্গীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী ইমামদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রাজনৈতিক সংগ্রাম। ইসলামের মধ্যে নানা বিকৃতি চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের ইমামগণ। হিজরি প্রথম শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইসলামি খেলাফত যখন সুস্পষ্টভাবেই রাজতন্ত্রের রূপ নেয় এবং ইসলামী নেতৃত্ব জোর- জুলুমপূর্ণ বাদশাহিতে রূপান্তরিত হয়, তখন থেকেই আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ সময়োপযোগী পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল অব্যবস্থা বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাঁদের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে থাকেন। তাঁদের এইসব রাজনীতির বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং ইমামতের ভিত্তিতে হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করা। কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের সব ধরনের চরম অত্যাচার-নিপীড়নের মুখেও তাঁরা তাঁদের এই ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁদের শাহাদাতের পবিত্র রক্ত থেকে জন্ম দিয়েছে খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের লক্ষ-কোটি অনুসারী। শাহাদতের বেহেশতি গুল বাগিচার পথ ধরে ইমামতের সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে এবং তাঁদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরিগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজো তৎপর রয়েছে। ইমামতের নুরানি জ্যোতিতে অলোকময় পৃথিবী তাঁদের নির্ভুল দিক-নির্দেশনায় খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃত ইসলামের সঠিক দিশা। ইমামের পবিত্র জন্মবার্ষিকী তাই গোটা মুসলিম উম্মাহর মুক্তির স্মারক। ইমাম রেজা (আ.)'র ইমামতির সময়কাল ছিল বিশ বছর। এই বিশ বছরে আব্বাসীয় তিনজন শাসক যথাক্রমে বাদশাহ হারুন এবং তার দুই পুত্র আমিন ও মামুনের শাসনকাল অতিক্রান্ত হয়েছিল। ইমাম রেজা (আ.) তাঁর পিতা ইমাম মূসা কাজিম (আ.)’র নীতি-আদর্শকে অব্যাহত গতি দান করেন। ফলে ইমাম মূসা কাজিম (আ.)’র শাহাদাতের পেছনে যেই কারণগুলো দেখা দিয়েছিল, স্বাভাবিকভাবেই ইমাম রেজা (আ.)ও সেই কারণগুলোর মুখোমুখি হন। অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের নেপথ্য রোষের মুখে পড়েন তিনি। আব্বাসীয় রাজবংশে বাদশা হারূন এবং মামুনই ছিল সবচে পরাক্রমশালী এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারা প্রকাশ্যে ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির কথা বলে বেড়াতেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইমামদের রক্তের তৃষ্ণায় তৃষিত ছিলেন। ইমামদের প্রতি তাঁদের এ ধরনের আচরণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। এক, আহলে বাইত প্রেমিক বা নবীবংশ প্রেমিকদের আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া, এবং দুই শিয়া মুসলমানদের মন জয় করা। ইমামদের সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ থাকলে জনগণের কাছে তাদের শাসনও বৈধ বলে গৃহীত হবে-এ ধরনের চিন্তাও ছিল তাদের মনে। কারণ, মুসলমানরা যদি দেখে যে, বিশ্বনবী (সা.)’র নিষ্পাপ বংশধরগণ তথা হযরত আলীর (আ) পরিবারবর্গের প্রতি বাদশাহর সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে, তাহলে তারা আব্বাসীয়দের শাসনকে বৈধ মনে করে খুশি হবে, ফলে তারা আর বিরোধিতা করবে না। এরফলে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে। ইমাম রেজা (আ.) শাসকদের এই দুরভিসন্ধিমূলক রাজনীতি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁর কৌশলটি ছিল এমন, যার ফলে একদিকে বাদশা মামুনের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়, অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের জনগণও প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই সত্য হলো এই যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র নবী পরিবারের নিষ্পাপ বা পবিত্র ইমামগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং তাঁরা ছাড়া কেউ ঐ পদের যোগ্য নয়। জনগণের মাঝে এই সত্য প্রচারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাদশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে-এই আশঙ্কায় ধূর্ত মামুন ইমাম রেজাকে (আ) সবসময়ই জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শুধু ইমাম রেজা (আ.) নন প্রায় সকল ইমামকেই এভাবে গণ-বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা তাঁদেরকে গৃহবন্দী করাসহ কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তারপরও নিষ্পাপ ইমামদের সুকৌশলের কারণে তাঁদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়। আর জনগণের কাছে মহান ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে জনগণ প্রকৃত সত্য বুঝতে পারে, এবং নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে। বিশেষ করে বাদশাহ মামুনের অপততপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেজা (আ.) যখন দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন ইরাকের অধিকাংশ জনগণ মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। হযরত আলী(আ.)’র পবিত্র খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহি যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষ-নীতির কৌশল গ্রহণ করে। বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে । বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। উল্লেখ্য যে, নবীবংশের মধ্যে ইমাম রেজা(আ.)ই প্রথম ইরান সফর করেন। যাই হোক, যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাঁকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। ইমামও নবী করিম (সা.), তাঁর আহলে বাইত ও নিষ্পাপ ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান। চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলেন, হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি , আলী বিন মূসা বিন রেজার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে , খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করবো। ইমাম, মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন। তাই তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন, তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারী না হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই। ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হতে বাধ্য করে। ইমাম রেজা (আ.) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করেন। শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ছিল এরকম-এক, তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না। দূরে থেকে তিনি খেলাফতের সম্পর্ক রক্ষা করবেন। তিনি কেন এ ধরনের শর্তারোপ করেছিলেন , তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তাঁর মোনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন - হে খোদা ! তুমি ভালো করেই জানো , আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল ( আ ) কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ছাড়া আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি, তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি। ইমাম রেজা র এই দায়িত্ব গ্রহণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আব্বাসীয়রা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তারা ভেবেছিল, খেলাফত বুঝি চিরদিনের জন্যে আব্বাসীয়দের হাত থেকে আলীর (আ) বংশধরদের হাতে চলে গেল। তাদের দুশ্চিন্তার জবাবে বাদশা মামুন তার আসল উদ্দেশ্যের কথা তাদেরকে খুলে বলে। তা থেকেই বোঝা যায়, যেমনটি আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইমামকে খোরাসানে আমন্ত্রণ জানানো এবং তাঁর পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পেছনে মামুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, শিয়াদের বৈপ্লবিক সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। যাতে তাদের উত্তাল রাজনীতিতে ভাটা পড়ে যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি ছিল আব্বাসীয় খেলাফতকে বৈধ বলে প্রমাণ করা। তৃতীয়ত, ইমামকে উত্তরাধিকার বানানোর মাধ্যমে নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও মহান উদার হিসেবে প্রমাণ করা। তো মামুনের এই অশুভ উদ্দেশ্যের কথা জানার পর আব্বাসীয়রা ইমামকে বিভিন্নভাবে হেয় ও মর্যাদাহীন করে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ ইমামকে তারা কিছুতেই অপদস্থ করতে পারে নি। যেমন, বিভিন্ন ধর্মের জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের মাধ্যমে জটিল প্রশ্নের অবতারণা করে ইমাম রেজা (আ.)-কে জব্দ করার চেষ্টা, কিংবা ক্ষরা-পীড়িত অঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য ইমামকে দিয়ে এই আশায় দোয়া করানো যে দোয়া কবুল না হলে ইমামের মর্যাদা ধূলিসাৎ হবে। কিন্তু ইমাম প্রতিটি জ্ঞানগত বিতর্কে বিজয়ী হতেন এবং বৃষ্টির জন্য করা তাঁর দোয়াও কবুল হয়েছিল। বাদশাহ মামুন একবার তার সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তরের আসরে ইমামকে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে ইমাম কোনো এক প্রেক্ষাপটে মামুনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিমত দেন। এতে বাদশা ভীষণ ক্ষেপে যান এবং ইমামের বিরুদ্ধে অন্তরে ভীষণ বিদ্বেষ পোষণ করতে থাকেন। এইভাবে ইমামত, জনপ্রিয়তা, খেলাফত, আলীর বংশধর প্রভৃতি বিচিত্র কারণে বাদশাহ ইমামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে থাকে। অন্যদিকে জনগণ বুঝতে পারে যে, খেলাফতের জন্যে মামুনের চেয়ে ইমামই বেশি উপযুক্ত। ফলে ইমামের বিরুদ্ধে মামুনের ক্রোধ এবং হিংসা বাড়তেই থাকে। আর ইমামও মামুনের বিরুদ্ধে অকপট সত্য বলার ক্ষেত্রে নির্ভীক ছিলেন। কোনোভাবেই যখন ইমামকে পরাস্ত করা গেল না, তখন মার্ভ থেকে বাগদাদে ফেরার পথে ইরানের বর্তমান মাশহাদ প্রদেশের তূস নামক অঞ্চলে মামুন ইমামকে ডালিমের রস বা আঙ্গুরের সাথে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে হৃদয়-জ্বালা মেটাবার উদ্যোগ নেয়। ২০৩ হিজরির ১৭ই সফরে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। তখন ইমামের বয়স ছিল পঞ্চান্ন বছর। আসলে বিষ প্রয়োগে ইমামের সাময়িক মৃত্যু ঘটলেও আসল মৃত্যু ঘটেছিল মামুনেরই। পক্ষান্তরে ইমাম শাহাদাতের পেয়ালা পান করে যেন অমর হয়ে গেলেন চিরকালের জন্যে। তার প্রমাণ মেলে মাশহাদে তাঁর পবিত্র সমাধিস্থলে গেলে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইমামের জন্মদিনে কাতারে কাতারে মানুষ আসে তাঁর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। সোনালি রঙ্গের সমাধি-ভবনের চারপাশ জাঁকজমক আর অপূর্ব ঐশ্বর্যে কোলাহল-মুখর হয়ে ওঠে নিমেষেই। যুগ যুগ ধরে মানুষের নেক-বাসনা পূরণের উসিলা হিসেবে কিংবদন্তীতুল্য খ্যাতি রয়েছে নবীবংশের ইমামগণের। ইমাম রেজা (আ.) ও তাঁর পবিত্র মাজারও এর ব্যতিক্রম নয়। কেনো ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইমামের মাযারে এসে ভিড় জমান? এ সম্পর্কে যিয়ারতকারীগণ বিভিন্নভাবে তাঁদের আবেগ-অনুভূতি জানিয়েছেন। একজন বলেছেন, আমি যখনই বা যেখানেই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই, তখনই ইমাম রেজা (আ.)’র মাজারে চলে আসি। এখানে এসে আল্লাহর দরবারে সমস্যার সমাধান চেয়ে দোয়া করি। আমি বহুবার লক্ষ্য করেছি , ধর্মীয় এবং পবিত্র স্থানসমূহ বিশেষ করে ইমাম রেজা (আ.)’র পবিত্র মাযারে এলে মনোবেদনা ও সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিতে অন্তর ভরে যায়। মনের ভেতর নবীন আশার আলো জেগে ওঠে। এভাবে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও আন্তরিক প্রশান্তির কথা বলেছেন। জীবিতাবস্থায় যিনি মানুষের কল্যাণে ছিলেন আত্মনিবেদিত, শহীদ হয়েও তিনি যে অমরত্মের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে একইভাবে মানব-কল্যাণ করে যাবেন-তাতে আর বিস্ময়ের কী আছে! ইমাম রেজা (আ.)'র যুগে মুসলমানরা গ্রিক দর্শনসহ ইসলাম-বিরোধী নানা মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। এ সময় মুসলমানদের শাসক ছিলেন আব্বাসিয় খলিফা মামুন। সে ছিল আব্বাসিয় শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত ও জ্ঞানী। সমসাময়িক নানা বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল। আমরা আগেই বলেছি মামুন ইমাম রেজা (আ.)-কে ইরানের মার্ভ অঞ্চলে নিয়ে এসেছিলেন। মার্ভ শহর ছিল মামুনের রাজধানী। সে এই মহান ইমামের উপস্থিতিতে বিভিন্ন অঞ্চলের জ্ঞানী-গুণীদের নিয়ে জ্ঞানের নানা বিষয়ে অনেক বৈঠক করতেন। বিশেষজ্ঞ বা পণ্ডিতদের দিয়ে ইমাম রেজা (আ.)-কে জব্দ করাই ছিল এইসব বৈঠকের আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু ইমাম রেজা (আ.) নানা ধরনের কঠিন প্রশ্ন ও জটিল বিতর্কের এইসব আসরে বিজয়ী হতেন এবং বিতর্ক শেষে ওইসব পণ্ডিত ও জ্ঞানীরা ইমামের শ্রেষ্ঠত্বও অকাট্য যুক্তির কথা স্বীকার করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। খলিফা মামুন হযরত ইয়াহিয়া (আ.)'র অনুসারী হওয়ার দাবিদার তথা সাবেয়ি ধর্মের এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে একবার নিয়ে আসেন এ ধরনের এক বিতর্কের আসরে। সেখানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নি-উপাসকদের পণ্ডিতরাও উপস্থিতি ছিল। এই আসরে ইমাম রেজা (আ.) ইসলামের বিরোধিতা সম্পর্কে কারো কোনো বক্তব্য, যুক্তি বা প্রশ্ন থাকলে তা তুলে ধরার আহ্বান জানান এবং তিনি এর জবাব দেবেন বলে ঘোষণা করেন। ইমরান নামের ওই সাবেয়ি পণ্ডিত অবজ্ঞাভরে বলল: "তুমি যদি না চাইতে তবে তোমার কাছে আমি প্রশ্ন করতাম না। আমি কুফা, বসরা, সিরিয়া ও আরব দেশে গিয়েছি এবং তাদের সব দার্শনিক বা যুক্তিবাদীদের সঙ্গে বিতর্ক করেছি। কিন্তু তাদের কেউই প্রমাণ করতে পারেনি যে আল্লাহ এক ও তিনি ছাড়া অন্য কোনো খোদা নেই এবং তিনি এই একত্বের মধ্যে বহাল রয়েছেন। এ অবস্থায় আমি কি তোমার কাছে প্রশ্ন করতে পারি? ইমাম রেজা (আ.) বললেন, যত খুশি প্রশ্ন করতে পার। ফলে সে ইমামকে বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন করে। ইমাম রেজা (আ.)ও বহু সংখ্যক পণ্ডিত ও বিপুল দর্শকদের উপস্থিতিতে একে-একে ইমরানের সব প্রশ্নের এত সুন্দর জবাব দিলেন যে ওই সাবেয়ি পণ্ডিত সেখানেই মুসলমান হয়ে যান। ইমাম রেজা (আ.) বিতর্কে অংশগ্রহণকারী পণ্ডিতদের ধর্ম-বিশ্বাস ও মতবাদে উল্লেখিত দলিল-প্রমাণের আলোকেই তাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন। একবার খলিফা মামুন বিখ্যাত খ্রিস্টান পণ্ডিত জাসলিককে বললেন ইমাম রেজা (আ.)’র সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে। জাসলিক বললেন, আমি কিভাবে তাঁর সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হব যখন তাঁর ধর্মগ্রন্থ তথা কুরআন ও এর দলিল-প্রমাণের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই এবং তিনি যেই নবীর বক্তব্যকে দলিল-প্রমাণ হিসেবে পেশ করবেন তাঁর প্রতিও আমার ঈমান নেই। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, যদি ইঞ্জিল তথা বাইবেল থেকে দলিল-প্রমাণ তুলে ধরি তাহলে কি আপনি তা গ্রহণ করবেন? জাসলিক বললেন, হ্যাঁ। আসলে ইমাম উভয়-পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে জাসলিকের সঙ্গে বিতর্ক করলেন। বিতর্কে জাসলিক এতটা প্রভাবিত হলেন যে তিনি বললেন: খ্রিস্ট বা ঈসার কসম, আমি কখনও ভাবিনি যে মুসলমানদের মধ্যে আপনার মত কেউ থাকতে পারেন। ইমাম রেজা (আ.)ইহুদি সর্দার ও পণ্ডিত রাস উল জালুত-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, মুসা (আ.)’র নবী হওয়ার দলিল বা প্রমাণ কী? রাস উল জালুত বললেন, তিনি এমন মু’জিজা বা অলৌকিক নিদর্শন এনেছেন যে তাঁর আগে আর কেউই তেমনটি আনতে পারেনি। ইমাম প্রশ্ন করলেন: কেমন সেই মো’জেজা? জালুত বললেন: যেমন, সাগরকে দুই ভাগকরে মাঝখানে পথ সৃষ্টি করা, হাতের লাঠিকে সাপে পরিণত করা, পাথরে ওই লাঠি দিয়ে আঘাত করে কয়েকটি ঝর্ণা বইয়ে দেয়া, হাত সাদা করা এবং এ রকম আরো অনেক মু’জিজাবা অলৌকিক নিদর্শন; আর অন্যরা এর মোকাবেলায় কিছু করতে পারত না ও এখনও তার চেয়ে বেশি ক্ষমতা কারো নেই। জবাবে ইমাম রেজা (আ.) বললেন, এটা ঠিকই বলেছেন যে, হযরত মুসা (আ.)’র আহ্বানের সত্যতার প্রমাণ হল, তিনি এমন কিছু কাজ করেছেন যা অন্যরা করতে পারেনি; তাই কেউ যদি নবুওতের দাবিদার হনও এমন কিছু কাজ করেন যা অন্যরা করতে পারেন না, এ অবস্থায় তাঁর দাবিকে মেনে নেয়া কি আপনার জন্য ওয়াজিব বা অপরিহার্য নয়? ইহুদি আলেম বললেন: না, কারণ আল্লাহর কাছে উচ্চ অবস্থান ও নৈকট্যের দিক থেকে কেউই মুসা নবীর সমকক্ষ নয়। তাই কেউ যদি মুসা নবীর মত মু’জিজা বা অলৌকিক নিদর্শন দেখাতে না পারেন তাহলে তাকে নবী হিসেবে মেনে নেয়া আমাদের তথা ইহুদিদের জন্য ওয়াজিব নয়। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, তাহলে মুসা নবী (আ.)’র আগে যে নবী-রাসূলবৃন্দ এসেছেন তাঁদের প্রতি কিভাবে ঈমান রাখছেন? তাঁরা তো মুসা (আ.)’র অনুরূপ মু’জিজা আনেননি। রাস উল জালুত এবার বললেন, ওই নবী-রাসূলবৃন্দ যদি তাঁদের নবুওতের সপক্ষে মুসা নবীর মু’জেজার চেয়ে ভিন্ন ধরনের মু’জিজা দেখাতে পারেন তাহলে তাদের নবুওতকে স্বীকৃতি দেয়ায়ও ওয়াজিব বা জরুরি। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, তাহলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)’র প্রতি কেন ঈমান আনছেন না? অথচ তিনি তো মৃতকে জীবিত করতে পারতেন, অন্ধকে দৃষ্টি দান করতেন, চর্ম রোগ সারিয়ে দিতেন, কাদা দিয়ে পাখি বানিয়ে তাতে ফু দিয়ে জীবন্ত পাখিতে পরিণত করতেন। রাস উল জালুত এবার বললেন, তিনি এইসব কাজ করতেন বলে বলা হয়ে থাকে, তবে আমরা তো দেখিনি। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, আপনারা কি মুসা নবী (আ.)’রমু’জিজা দেখেছেন? এইসব মু’জিজার খবর কি আপনাদের কাছে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে পৌঁছেনি? - জি হ্যাঁ, ঠিক তাই। বললেন রাস উল জালুত - ইমাম রেজা (আ.) বললেন, "ভালো কথা, তাহলে ঈসা (আ.)’র মু’জিজাগুলোর নির্ভরযোগ্য খবরও তো আপনাদের কাছে বলা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় আপনারা মুসা নবী (আ.)-কে নবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনলেও ঈসা (আ.)’র প্রতি ঈমান আনছেন না। "তিনি আরো বললেন, "বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র নবুওতসহ অন্যান্য নবী-রাসূলদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের নবী (সা.)র অন্যতম মু’জিজা হল এটা যে তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র ইয়াতিম ও রাখালের কাজ করে পারিশ্রমিক নিতেন। তিনি কোনো পড়াশুনা করেননি এবং কোনো শিক্ষকের কাছেও আসা-যাওয়া করেননি। কিন্তু তারপরও তিনি এমন এক বই এনেছেন যাতে রয়েছে অতীতের নবী-রাসূলদের কাহিনী ও ঘটনাগুলোর হুবহু বিবরণ। এতে রয়েছে অতীতের লোকদের খবর এবং কিয়ামত পর্যন্ত সুদূর ভবিষ্যতের খবর। এ বই অনেক নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা তুলে ধরেছে।" এভাবে রাস উল জালুতের সঙ্গে ইমাম রেজা (আ.)’র আলোচনা চলতে থাকে। সংলাপ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে ইহুদি সর্দার ও পণ্ডিত রাস উল জালুত ইমাম রেজা (আ.)-কে বললেন: "আল্লাহর কসম! হে মুহাম্মদের সন্তান (বংশধর)! ইহুদি জাতির ওপর আমার নেতৃত্বের পথে যদি বাধা হয়ে না দাঁড়াত তাহলে আপনার নির্দেশই মান্য করতাম। সেই খোদার কসম দিয়ে বলছি, যে খোদা মুসার ওপর নাজেল করেছেন তাওরাত ও দাউদের ওপর নাজেল করেছি যাবুর। এমন কাউকে দেখিনি যিনি তাওরাত ও ইঞ্জিল আপনার চেয়ে ভালো তিলাওয়াত করেন এবং আপনার চেয়ে ভালোভাবে ও মধুরভাবে এইসব ধর্মগ্রন্থের তাফসির করেন।" এভাবে ইমাম রেজা (আ.) তাঁর অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে সবার জন্য সর্বোত্তম ও বোধগম্যভাবে ইসলামের বিশ্বাসগুলো তুলে ধরেছিলেন। আর তিনি এত গভীর ও ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী এবং সেসবের প্রচারক ও বিকাশক ছিলেন বলেই তাঁকে ‘আলেমে আলে মুহাম্মাদ’ বা বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের আলেম শীর্ষক উপাধি দেয়া হয়েছিল। এই মহাপুরুষের কয়েকটি বাণী শুনিয়ে ও সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করব তাঁর জন্মদিনের আলোচনা। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, ১."জ্ঞান ও প্রজ্ঞা হচ্ছে এমন এক গচ্ছিত সম্পদের মত যার চাবি হল, প্রশ্ন। আল্লাহর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক, কারণ প্রশ্নের মাধ্যমে চার গ্রুপ তথা প্রশ্নকারী, শিক্ষার্থী, শ্রবণকারী ও প্রশ্নের উত্তর- প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

হরফের ভেদ ১) আলিফ= আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ:)। ২) বা= বাবে হিত্তা,বাবে হাল আতা,বায়জাতুল বলদ,বুরহানআল্লাহ আলী (আ:)। ৩) তা= আয়াতে তাতহির আলী (আ:)। ৪) ছা=ছিফওয়াতুল্লাহ,সিদ্দিকুল আকবর আলী (আ:)। ৫) জীম = জুল বারকা আলী (আ:)। ৬) হা= হায়দার আলী (আ:)। ৭) খা= খাতামুল ওয়াছিয়ান আলী (আ:)। ৮) দাল= দামাদে মোস্তফা (সা:) আলী (আ:)। ৯) জাল = জুলকারনাঈন আলী (আ:)। ১০) রা = রাহবার আলী (আ:)। ১১) জা = জাব্বাতুল জান্নাত আলী (আ:)। ১২) সীন = সাজীদ আলী (আ:)। ১৩) শীন = শায়েখুল মোহাজেরীন ওয়া আনসার আলী (আ:)। ১৪) সোয়াদ = সাফদার আলী (আ:)। ১৫) দোয়াদ = দাস্তে খোদা আলী (আ:)। ১৬) তোয়া = আত ত্বাহীর আলী (আ:)। ১৭) যোয়া = জুল উনজুলওয়ায়ী আলী (আ:)। ১৮) আঈন = আলী আলী,আঈনুল্লাহ আলী (আ:)। ১৯) গাঈন = কাবে কা গওহর আলী (আ:)। ২০) ফা = ফাত্তাহে খায়বর,ফাত্তাহে লাশকর আলী (আ:)। ২১) ক্বাফ = কাতেলুল ফাজেরাহ আলী (আ:)। ২২) কাফ = কাসিমুন্নারে ওয়াল জান্নাত আলী (আ:)। ২৩) লাম = লেসানুল্লাহ আলী (আ:)। ২৪) মীম = মাওলায়ে কায়নাত,মাওলাল মু'মিনিন,মুকিমুলহুজ্জা,মানারুল ইমান,মাহদি,মুনজেজুলওয়াদ আলী (আ:)। ২৫) নুন = নাসিরে রাসুলআল্লাহ, নফসে রাসুলআল্লাহ, নুরে খোদা আলী (আ:)। ২৬) ওয়াও = ওয়াজহুল্লাহ আলী (আ:)। ২৭) হা = আল হাদী, আলী (আ:)। ২৮) লাম আলিফ = লাফাত্তা ইল্লা আলী, আলী (আ:)। ২৯) হামজা = হুজ্জাতআল্লাহ আলী (আ:)। ৩০) ইয়া = ইয়াসুবুল মু'মিনীন,ইয়াদুল ্লাহ,ইমামুল আউলিয়া, ইমামুল বারারাহ আলী (আ:)।

গাদিরে খুমের বার্তা সর্বশেষ নবী মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ২৩ বছর ধরে নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের পর বলেছেন, 'নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আর কোনো নবী আমার মতো এত কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েনি।' তিনি তার নবুওয়তের শেষ বছরে বিদায় হজ্বের সময় গাদিরে খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্থলাভিষিক্তের নাম ঘোষণা করেন। তিনি এমন একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্ধারণ করেন, যিনি এর আগে বহুবার কাজ-কর্ম, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও ঈমানদারিতার ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। রাসূলের পর মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন যোগ্যতম। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) মোনাফিকদের শক্তি ও ক্ষমতা এবং আলী (আ.)-র প্রতি তাদের ঈর্ষার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণে তিনি আলী (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণার বিষয়ে শংকার মধ্যে ছিলেন। কুরানের কয়েকটি আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহতায়ালা শেষ পর্যন্ত রাসূলকে এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য করেন এবং এ কাজটি না করলে রাসূলের নবুওয়তের দায়িত্ব পরিপূর্ণ হবে না বলে জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় রাসূলে খোদা দশম হিজরির ১৮ জিলহজ্ব গাদিরে খুম নামক স্থানে আলী (আ.)-কে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন। তখন থেকেই ১৮ই জিলহজ্ব পবিত্র গাদির দিবস হিসেবে পরিচিত। সেদিন রাসূল (সা.) হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে গাদির এলাকায় তার সফরসঙ্গীদের থামতে বললেন। যেসব হাজী ওই স্থান থেকে কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন তিনি এবং যারা পেছনে ছিলেন, তাদেরকেও সেখানে এসে সমবেত হতে বললেন। পাশাপাশি তিনি লেখকদেরকেও উপস্থিত হতে বললেন। বেশিরভাগ হাজি সেখানে এসে উপস্থিত হওয়ার পর তিনি উটের জিনকে মঞ্চের মতো করে তাতে আরোহণ করেন এবং ভাষণ দেন। ভাষণের পর হজরত আলী (আ.)-র হাত ওপরে তুলে ধরে তাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি রাসূলের আহলে বাইতকে পবিত্র কুরানের সমতুল্য হিসেবে ঘোষণা করেন। কিয়ামত পর্যন্ত পবিত্র কুরান ও আহলে বাইত যে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না, তিনি সবাইকে সে কথা জানিয়ে দেন। রাসূলের এ বার্তাটি বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবো, এ প্রত্যাশা রইলো। পাশাপাশি সবার প্রতি থাকলো পবিত্র ঈদে গাদিরের শুভেচ্ছা। গাদিরে খুমের ঘটনার বর্ণনা দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-র আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'হে রাসুল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও ,যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) মদিনা, মিশর ও ইরাকের অধিবাসীদের সবাইকে জুহফা এলাকা হয়েই নিজ নিজ অঞ্চলে ফিরতে হতো। স্বাভাবিকভাবেই রাসূল (সা.)-ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে সেই পথ দিয়েই মদিনায় ফিরছিলেন। রাসূল (সা.) ও তার সফরসঙ্গীরা ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার জুহফা অঞ্চলে পৌঁছান। সেখানেই ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) ওই ওহি নিয়ে আসেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-কে এ নির্দেশও দেয়া হয় যে, হজরত আলী (আ.)-কে যেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত তথা পরবর্তী নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং আলী (আ.)-কে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়। রাসুলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর দায়িত্বের এই বোঝা থেকে মুক্ত হতে উদ্যোগী হলেন। তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,'সব প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' এর জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, 'এর একটি হচ্ছে পবিত্র কুরান,যা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যম। কাজেই বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পেতে কুরানকে সঠিকভাবে মেনে চলবেন। আর অন্যটি হলো, আমার আহলে বাইত। আল্লাহতায়ালা আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন যে, এ দু'টি জিনিস কখনোই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। কুরান ও আমার আহলে বাইত যাতে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, সে জন্য আমি সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। আপনারা কখনোই এ দুটি বিষয়ে অবাধ্য হবেন না এবং তা মেনে চলার বিষয়ে অবহেলা করবেন না।' এরপর আল্লাহর রাসুল ( সা.) আলী (আ.)-র হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো ।' বিশ্বনবী এসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরইমধ্যে হজরত জিব্রাইল ( আ.) আবার ওহি বা প্রত্যাদেশ বাণী নিয়ে হাজির হলেন। রাসূল (সা.) যে তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি সে বিষয়টি রাসূলকে জানিয়ে দিলেন। আল্লাহ বললেন, 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো, তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা,তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ শেখ মুফিদ তাঁর আল-ইরশাদ বইয়ে লিখেছেন, নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে মোবাহেলার বেশ কিছু দিন পর বিদায় হজ্বের ঘটনা ঘটে। বিদায় হজ্বের কিছু দিন আগে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে ইয়েমেনে পাঠান নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিশ্রুত অর্থ ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য। রাসূল (সা.) এ কাজে আলী(আ.)-কে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেননি এবং অন্য কাউকে এ কাজের জন্য যোগ্য মনে করেননি। আলী (আ.) তখনও ইয়েমেনে অবস্থান করছিলেন। এরইমধ্যে হজ্বের সময় হয়ে গেলো। রাসূলে খোদা হজ্বব্রত পালনের জন্য ২৫শে জিলক্বাদ মদিনা ত্যাগ করেন। তিনি আলী(আ.)-র কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাকে ইয়েমেন থেকে সরাসরি মক্কায় চলে আসতে বলেন। আলী (আ.) তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ইয়েমেন থেকে মক্কার দিকে রওনা হন। তিনি এত দ্রুত ইয়েমেন থেকে মক্কার দিকে ছুটে আসেন যে, রাসূল (সা.) মক্কায় প্রবেশের আগেই তিনি রাসূলের হজ্ব কাফেলায় যোগ দিতে সক্ষম হন। আলী (আ.)-কে দেখে রাসূল খুশি হন এবং জিজ্ঞেস করেন-আলী, তুমি কী নিয়তে ইহরাম বেধেছ? আলী (আ.) জবাবে বললেন, যেহেতু আমি জানতাম না আপনি কী নিয়ত করেছেন, সে কারণে ইহরাম বাধার সময় বলেছি, হে আল্লাহ, আপনার রাসূল যে নিয়তে ইহরাম বেধেছেন, আমিও ওই একই নিয়ত করছি। রাসূল (সা.) বললেন, 'আল্লাহু আকবার। প্রিয় আলী, তুমি হজ্ব পালন ও কুরবানি করার ক্ষেত্রে আমার অংশীদার।' এটি ছিলো রাসূলের সর্বশেষ হজ্ব। সমাজ পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব একটি অপরিহার্য বিষয়। মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম সেরা নেয়ামত হলো- নেতৃত্বের যোগ্যতা।এই যোগ্যতা, গুণ ও ক্ষমতা সীমিত সংখ্যক লোকের মধ্যেই আল্লাহ দিয়ে থাকেন। বাকীরা তাদের অনুসরণ করেন। মানব ইতিহাসের কিছু নেতা সরাসরি আল্লাহর মাধ্যমে মনোনীত। এঁরা হলেন, নবী, রাসূল ও আহলে বাইতের ইমামগণ, যারা সরাসরি আল্লাহর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। ফলে তাদের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ সব মানুষের জন্য যথাযথভাবে অনুসরণীয়। মানব সমাজের নেতৃত্বের বিষয়টি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, সে বিষয়টি পবিত্র কুরানেও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরানের সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মরণ করো যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সেসব পরীক্ষায় সে পুরোপুরি উত্তীর্ন হলো। এরপর আল্লাহ বলেছিলেন "আমি তোমাকে সব মানুষের নেতার পদে অধিষ্ঠিত করবো।" ইবরাহীম আবেদন করেছিলেন- আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও ( ইমাম বা নেতা করুন)। আল্লাহ জবাব দিলেনঃ "আমার এ অঙ্গীকার জালেমদের ব্যাপারে প্রযোজন্য হবে না (কেবলমাত্র তোমার যেসব বংশধর নিষ্পাপ ও পবিত্র থাকবে,তারাই এ পদের যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে)। হজরত মূসা (আ.)তার ভাই হারুনকে নিজের সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য আল্লাহর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর আল্লাহ তা কবুল করেন। সূরা ত্বাহার ৩৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: আল্লাহ বললেন, "হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো।' সূরা সা'দের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা, হজরত দাউদ (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'হে দাউদ ! আমি অবশ্যই তোমাকে পৃথিবীতে সৃষ্টিকূলের প্রতিনিধি করেছি। সুতারাং মানুষের মধ্যে সত্য ও [ ন্যায়ের ] ভিত্তিতে বিচার -মীমাংসা কর।' এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে,তিনিই মানব জাতির নেতা ও ইমাম নির্ধারণ করেন। ইসলাম ধর্মে নেতৃত্ব ও ইমামত কেবলমাত্র মানুষের দৈনন্দিন ও প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার জন্য নয়। ইসলাম ধর্মে একজন ইমাম বা নেতা, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক-উভয় ক্ষেত্রের নেতা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে একজন নেতা, জনগণ থেকে আলাদা নয়। গাদিরের ঘটনাকে তিনি জনগণের নেতৃত্ব ও নীতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হিসেবে গণ্য করেন। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি আলী (আ.)-এর যোগ্যতা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, হে জনগণ, এমন কোনো জ্ঞান নেই, যা আল্লাহ আমাকে দেননি এবং আমিও পরহেজগারদের নেতা আলী (আ.)-কে সেই জ্ঞান শিখিয়েছি। আপনারা কেউই আলী (আ.)-র পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তার পথ থেকে দূরে সরে যাবেন না। তার নেতৃত্বকে অমান্য করবেন না। কারণ সে সবাইকে সত্যের পথে পরিচালিত করে এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করে। সে অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটায় এবং নিজে অন্যায় থেকে দূরে থাকে। আলী (আ.) আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই ভয় করে না। আলী (আ.) হচ্ছে প্রথম মুসলমান। রাসূলে খোদার জন্য সে তার প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সে সর্বদা রাসূলের পাশে ছিল ও আছে এবং আর কেউই তার মতো রাসূলের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে এতো বেশি আন্তরিক নয়। হে মুসলমানগণ, আলী (আ.) হচ্ছে আমার ভাই, স্থলাভিষিক্ত ও আমার শিক্ষায় শিক্ষিত। সে আমার উম্মতের নেতা-কোরানের তাফসির যার জানা। সে কোরানের দিকে আহ্বানকারী এবং কুরানের নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। সে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সে আল্লাহ বিরোধীদের শত্রু এবং আল্লাহপ্রেমীদের বন্ধু। সে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে জনগণকে বিরত রাখে। রাসূলে খোদা (সা.) এর আগেও বহুবার আলী (আ.)-র বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ইবনে আব্বাসসহ আরো অনেকের বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলের পরে আলী (আ.)-ই ছিলেন সবচেয়ে মোত্তাকি ও সাহসী ব্যক্তি। জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারি বলেছেন, একবার রাসূল (সা.)-র কাছে আলী (আ.) এলেন। রাসূল বললেন, আলী (আ.) ও তার অনুসারীরা কিয়ামতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত। এ সময় সূরা বাইয়ানার ৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে এবং সতকাজ করেছে, তারা আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। এরপর থেকে রাসূলের সাহাবিরা আলী (আ.)-কে দেখলেই বলতেন, ওই যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহর নির্দেশে ১৮ই জ্বিলহজ্ব রাসূল (সা.), হজরত আলী (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করায় দিনটি হয়েছে মহিমান্বিত। এ দিনেই আল্লাহ ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুগ্রহ সম্পন্ন করেছেন। এই মহা অনুগ্রহের জন্য সব মুসলমানের উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এ কারণে যখনি ঈদে গাদির উপস্থিত হয় তখনি সব মুসলমানের উচিত এ দেয়া করা: 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও তার প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ হিজরী ৩৫ সনের শেষ ভাগে হজরত আলী (আ.)-এর খেলাফত কাল শুরু হয়। প্রায় ৪ বছর ৫ মাস পর্যন্ত এই খেলাফত স্থায়ী ছিল। হযরত আলী (আ.) খেলাফত পরিচালনার ব্যাপারে হযরত রাসুল (সা.)-এর নীতির অনুসরণ করেন।[1] তাঁর পূর্ববর্তী খলিফাদের যুগে যেসব (ইসলামী নীতি মালার) পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, তিনি সেগুলোকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। খেলাফত প্রশাসনে নিযুক্ত অযোগ্য লোকদের তিনি দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন।[2] তাঁর এসব পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে এক বৈপ্লবিক আন্দেলন ছিল, যা পরবর্তিতে প্রচুর সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। হযরত ইমাম আলী (আ.) খেলাফতের প্রথম দিনে জনগণের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন সেখানে তিনি বলেনঃ হে জনগণ! জেনে রেখো নবুয়াতের যুগে যে সমস্যায় তোমরা ভুগেছিলে আজ আবার সেই সমস্যাতেই জড়িয়ে পড়লে। তোমাদের মধ্যে একটা ব্যাপক পরির্বতন ঘটবে। যে সকল মহৎ ব্যক্তিরা এতদিন পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা এখন সামনের সারিতে চলে আসবেন। একইভাবে যেসব অযোগ্য লোক এতদিন সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছিল আজ তারা পিছনে চলে যাবে। (সত্য ও মিথ্যা বিদ্যমান এবং এতদুভয়ের প্রত্যেকেরই অনুসারীও রয়েছে। তবে সবারই উচিত সত্যকে অনুসরণ করা) মিথ্যার পরিমাণ যদি অধিকও হয়, সেটা এমন নতুন কিছু নয়। সত্যের পরিমাণ যদি কমও হয়, হোক না! অনেক সময় কমওতো সবার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে থাকে। আর উন্নতির আশাও এতে রয়েছে। তবে এমনটি খুব কমই দেখা যায় যে, যা একবার মানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে তা পুনরায় তার কাছে ফিরে এসেছে”।[3] এ ভাবে হযরত আলী (আ.) তাঁর বৈপ্লবিক প্রশাসনকে অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বৈপ্লবিক আন্দোলনসমূহের স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে, এই আন্দোলনের ফলে যাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তারা এ ধারার বিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা দেখতে পাই হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের বৈপ্লবিক নীতি বহু স্বার্থোন্বেষী মহলকে আঘাত করেছিল। তাই শুরুতেই সারা দেশের যত্রতত্র থেকে আলী (আ.)-এর খেলাফতের বিরোধী সূর বেজে ওঠে। বিরোধীরা তৃতীয় খলিফার রক্তের প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র মুলক শ্লোগানের ধুঁয়ো তুলে বেশ কিছু রক্তাক্ত যুদ্ধের অবতারণা করে। এ জাতীয় গৃহযুদ্ধ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালব্যাপী অব্যাহত ছিল। শীয়াদের দৃষ্টিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া এসব যুদ্ধের সূচনাকারীদের অন্য কোন উদ্দেশ্যই ছিল না। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের শ্লোগান ছিল সম্পূর্ণরূপে গণপ্রতারণামূলক একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। এতে কোন ভুল বোঝা বুঝির এখানে অবকাশ নেই।[4] হযরত আলী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যা জংগে জামাল নামে পরিচিত, তা শুধুমাত্র শ্রেণী বৈষম্যগত মত পার্থক্যের জঞ্জাল বৈ আর কিছুই ছিল না। ঐ মতর্পাথক্য দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা বাইতুল মালের অর্থ বন্টনের শ্রেণীগত বৈষম্য সৃষ্টির ফলে উদ্ভত হয়েছিল। হযরত ইমাম আলী (আ.) খলিফা হওয়ার পর ঐ সমস্যার সমাধান ঘটান এবং তিনি জনগণের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বাইতুল মালের’ অর্থের সুষম বন্টন করেন।[5] আর এটাই ছিল হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনার্দশ। কিন্তু হযরত আলী (আ.)-এর এ পদক্ষেপ তালহা ও যুবাইরকে অত্যন্ত ক্রোধাম্বিত করেছিল। যার ফলে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীতা করতে শুরু করেন। তারা যিয়ারতের নাম করে মদীনা ছেড়ে মক্কায় গেলেন। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা তখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তারা এটা ভাল করেই জানতেন যে, ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে উম্মুল মুমেনীন আয়েশার সর্ম্পকের টানা পোড়ন চলছে। এ অবস্থাকে তারা আপন স্বার্থে কাজে লাগান এবং নবীপত্মী আয়েশাকে খুব সহজেই হযরত আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে নিজপক্ষে টেনে নিতে সমর্থ হন। অতঃপর তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীর শ্লোগানে আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে জংগে জামাল’ নামক এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। ।[6] অথচ এই প্রসিদ্ধ সাহাবীদ্বয় তাল্‌হা ও যুবায়ের বিপ্লবীদের দ্বারা ওসমানের বাড়ী ঘেরাওকালীন মুহুর্তে মদীনাতেই ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় খলিফা ওসমানকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে এতটুকু সাহায্যও তারা করেননি।[7] এমনকি খলিফা ওসমান নিহত হওয়ার পর মুহাজিরদের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম তিনিই হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত’ গ্রহণ করেন।[8] ওদিকে নবীপত্নী আয়েশাও স্বয়ং ওসমানের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ওসমানকে হত্যার ব্যাপারে সব সময়ই বিরোধীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। নবীপত্নী আয়েশা ওসমানের নিহত হওয়ার সংবাদ শোনা মাত্রই তার প্রতি অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ করেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন। তৃতীয় খলিফাকে হত্যার ব্যাপারে মূলত রাসুল (সা.)-এর সাহাবীরাই জড়িত ছিলেন। তারা মদীনার বাইরে বিভিন্ন স্থানে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে জনগণকে খলিফার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে দ্বিতীয় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল, তা হচ্ছে সিফফিনের যুদ্ধ। দীর্ঘ দেড় বছর এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এ যুদ্ধ ছিল কেন্দ্রীয় খেলাফত প্রসাশন দখলের জন্যে মুয়াবিয়ার চরম লালসার ফসল। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ছলনাময়ী শ্লোগানের ছত্রছায়ায় তিনি এ যুদ্ধের অবতারণা করেন। এ যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষেরও বেশী লোক অন্যায়ভাবে নিহত হয়। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়াই ছিলেন প্রথম আক্রমনকারী। এটা কোন আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ ছিল না। বরং এটা ছিল মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে একটি আক্রমনাত্মক যুদ্ধ। কারণ, প্রতিশোধ গ্রহণমূলক যুদ্ধ কখনই আত্মরক্ষামূলক হতে পারে না। এ যুদ্ধের শ্লোগান ছিল তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ। অথচ তৃতীয় খলিফা তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অরাজকতা ও বিশৃংখলা দমনে মুয়াবিয়ার কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠান। মু য়াবিয়াও তার সেনাবাহিনীসহ সিরিয়া থেকে মদিনার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু মুয়াবিয়া উদ্দেশ্যমুলকভাবে পথিমধ্যে এত বেশী দেরী করেন যে, ততদিনে তৃতীয় খলিফা বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই মুয়াবিয়া তার বাহিনীসহ সিরিয়ায় ফিরে যান। এর পর সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীতে বিদ্রোহ শুরু করেন।[9] সিফ্‌ফিন’ যুদ্ধের পর নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছু সাহাবীও এ যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। একদল লোক যারা সিফফিনের’ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল, তারাই পরবর্তীতে আবার মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তারা তদানিন্তন ইসলামী খেলাফত বা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকে। তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী বা সমর্থকদের সন্ধান পাওয়া মাত্রই তাদেরকে হত্যা করত। এমন কি গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে তাদের মাথা কেটে হত্যা করত।[10] সিফফিন যুদ্ধের পর মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় সংঘটিত এ-বিদ্রোহও হযরত ইমাম আলী (আ.) দমন করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই একদিন কুফা শহরের এক মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ঐসব খারেজীদের হাতেই তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল হযরত আলী (আ.) তাঁর ৪ বছর ৯ মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল: ১। নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষণীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন। মুয়াবিয়ার চোখ ধাঁধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরালে তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদ্রতম জীবন যাপন করতেন। তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি। অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি। ২। পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্য জ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত: ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন। তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। কেননা, তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতিকে শান্ত করে, নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন। অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন। কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলেগেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন। আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয়। ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয়। মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তাব দিয়ে ছিল। তাদের প্রস্তাব ছিল, মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদা গুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্য বিরোধীতা না করেন, তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না। কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি। অথচ নবুয়তের চরম দূর্যোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমর্দন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন। অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন। কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য।[11] আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি। শুধু তাই নয়, নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্কগুলোকে সাহাবী’ বা মুজতাহীদ’ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন। অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে।[12] তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়[13] বর্ণনা করেছেন।[14] তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌত্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন। সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন, তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন। এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে, যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও[15] সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন। ৩। হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন।[16] ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী-পন্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.), হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.), হযরত মিসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন। যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উৎস হিসেবে পরিচিত। ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র), কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র), তাফসীর, কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উৎস হিসেবে পরিচিত। [1] তারীখে ইয়াকুবি, ২য় খন্ড, ১৫৪ নং পৃষ্ঠা। [2] তারীখে ইয়াকুবি, ২য় খন্ড, ১৫৫ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬৪ নং পৃষ্ঠা। [3] নাহজুল বালাগা, ১৫ নং বক্তৃতা। [4] মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারী মুষ্টিমেয় কিছু সাহাবী খলিফার ‘বাইয়াত’ (আনুগত্য প্রকাশ) গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠির শীর্ষে ছিলেন হযরত সালমান ফারসী (রা.), হযরত আবুযার (রা.), হযরত মিকদাদ (রা.) এবং হযরত আম্মার (রা.)। একই ভাবে স্বয়ং হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতের সময়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কিছুলোক তার ‘বাইয়াত’ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সব বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোরপন্থীরা ছিলেন, জনাব সাইদ বিন আস, ওয়ালিদ বিন উকবা, মারওয়ান বিন হাকাম, ওমর বিন আস, বাসার বিন এরাদা, সামার নিজান্দা, মুগাইরা বিন শু’আবা ও আরো অনেকে। খেলাফতের যুগের এ দুই বিরোধী পক্ষের লোকদের সবার ব্যক্তিগত জীবনী এবং তাদের ঐতিহাসিক কার্যকলাপ যদি আমরা সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করি, তাহলে তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। প্রথম বিরোধী পক্ষের সদস্যরা সবাই ছিলেন হযরত রাসুল (সা.)-এর বিশেষ সাহাবী বৃন্দ। তাঁরা সংযম সাধনা, ইবাদত, আত্মত্যাগ, খোদা ভীরুতা, ইসলামী চেতনার দিক থেকে রাসুল (সা.) এর বিশেষ প্রিয় পাত্রদের অনর্-ভূক্ত ছিলেন। মহানবী (সা.) এঁদের সর্ম্পকে বলেছেনঃ ‘মহান আল্লাহ্‌ আমাকে অবগত করেছেন যে চারজন ব্যক্তিকে তিনি ভাল বাসেন। আর আমাকে আদেশ দিয়েছেন, আমিও যেন তাঁদেরকে ভাল বাসি”। সবাই ঐ ব্যক্তিদের নাম জিজ্ঞেস করলে, এর উত্তরে পর পর তিনবার তিনি “প্রথম আলী (আ.) অতঃপর সালমান (রা.), আবুযার (রা.) ও মিকদাদের (রা.) নাম উচ্চারণ করেন।” (সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খন্ড, ৬৬ নং পৃষ্ঠা।) হযরত আয়েশা (রা.) বলেনঃ হযরত রাসুল (সা.) বলেছেনঃ ‘‘যে দুটি বিষয় আম্মারের (রা.) প্রতি উপস্থাপিত হবে, আম্মার (রা.) অবশ্যই ঐ দু’ ক্ষেত্রে সত্যকেই বেছে নেবে।’’ (ইবনে মাজা ১ম খন্ড, ৬৬ নং পৃষ্ঠা। ) মহানবী (সা.) বলেছেনঃ ‘‘আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে আবুযারের (রা.) চেয়ে অধিকতর সত্যবাদী আর কেউ নেই।’’ (ইবনে মাজা, ১ম খন্ড, ৬৮ নং পৃষ্ঠা।) এদের কারও জীবন ইতিহাসেই শরীয়ত বিরোধী একটি কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় না। এরা কেউ অন্যায়ভাবে কোন রক্তপাত ঘটাননি। অন্যায়ভাবে কারও অধিকার কখনও হরণ করেননি। কারও অর্থসম্পদ কখনও ছিনিয়ে নেননি। জনগণের মাঝে তারা কখনই দূর্নীতি ও পথ ভ্রষ্টতার প্রসারে লিপ্ত হননি। কিন্তু দ্বিতীয় বিরোধী পক্ষের ব্যক্তিদের জঘণ্য অপরাধ ও ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডের অসংখ্য সাক্ষীতে ইতিহাস পরিপূর্ণ। ইতিহাসে অন্যায়ভাবে প্রচুর রক্তপাত তারা ঘটিয়েছেন। মুসলমানদের ধনসম্পদ লুন্ঠন করেছেন। এতসব লজ্জাকর কান্ড তারা ঘটিয়েছেন যে, তা গুনে শেষ করাও কঠিন। তাদের ঐ সব ঐতিহাসিক অপরাধের আদৌ কোন যুক্তিপূর্ণ অজুহাত খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের ঐ সব কুকর্মের মোকাবিলায় শুধুমাত্র এটা বলেই সান্তনা দেয়া হয় যে, তারা যত অপরাধই করুক না কেন, আল্লাহ্‌ তো তাদের প্রতি সন্তুষ্ট (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। কুরআন বা সুন্নায় উল্লেখিত ইসলামী আইন অন্যদের জন্য, ওসব সাহাবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়!! [5] মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬২ নং পৃষ্ঠা। নাহজুল বালাগা, ১২২ নং বক্তৃতা। তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৬০ নং পৃষ্ঠা। শারহু্‌ ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ১৮০ নং পৃষ্ঠা। [6] তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, তারীখে আবিল ফিদা, ১ম খন্ড, ১৭২ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬৬ নং পৃষ্ঠা। [7] তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৫২ নং পৃষ্ঠা। [8] মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬২ নং পৃষ্ঠা। নাহজুল বালাগা, ১২২ নং বক্তৃতা। তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৬০ নং পৃষ্ঠা। শারহু্‌ ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ১৮০ নং পৃষ্ঠা। [9] তৃতীয় খলিফা যখন বিপ্লবীদের দ্বারা নিজ বাড়ী ঘেরাও অবস্থায় কাটাচ্ছিলেন। তখন এ অবস্থার নিরসন কল্পে সাহায্য চেয়ে তিনি মুয়াবিয়ার কাছে পত্র পাঠান। মুয়াবিয়া উক্ত পত্র পেয়ে প্রায় বারো হাজার সৈনের একটি সেনাবাহিনীকে অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত করেন। তিনি ঐ সেনাবাহিনী সহ সিরিয়া থেকে মদীনার দিকে রওনা দেন। কিন্তু এর পরই তিনি আপন সেনাবাহিনীকে সিরিয়া সীমান্তে অবস্থান করার নির্দেশ দেন। অতঃপর সেনাবাহিনী ঐ অবস্থায় রেখে তিনি একাই মদীনায় গিয়ে তৃতীয় খলিফার সাথে সাক্ষাত করেন এবং খলিফাকে সাহায্যের জন্যে তার প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস‘তী চুড়ান্তের প্রতিবেদন পেশ করেন। তৃতীয় খলিফা এর প্রত্যুত্তরে বলেনঃ ‘তুই উদ্দেশ্য-মুলকভাবে সেনাবাহিনীর অভিযান থামিয়ে রেখে এসেছিস, যাতে করে আমি নিহত হই আর আমার হত্যার প্রতিশোধের বাহানায় তুই বিদ্রোহ করার সুযোগ পাস। তাই নয় কি? (তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৫২ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয যাহাব, ৩য় খন্ড ২৫ নং পৃষ্ঠা। তারীখে তাবারী, ৪০২ নং পৃষ্ঠা।’) [10] মুরুযুয যাহাব, ২য় খন্ড ৪১৫ নং পৃষ্ঠা। [11] পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ “তাদের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি একথা বলে প্রস্থান করে যে, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের উপাস্যদের পুজায় দৃঢ় থাক।’’(-সুরা আস্‌ সোয়াদ, ৬ নং আয়াত।) আল্লাহ্‌ আরও বলেছেনঃ ‘‘আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি প্রায় কিছুটা ঝুকে পড়তেন।’’(-সুরা আল ইসরা, ৭৪ নং আয়াত।) মহান আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ ‘‘তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও, তাহলে তারাও নমনীয় হবে।’’(সুরা আল কালাম, ৯ নং আয়াত।) উপরোক্ত আয়াত গুলোর হাদীস ভিত্তিক তাফসির দ্রষ্টব্য। [12] ‘কিতাবুল গারার ওয়াদ দারার আমাদি, ও মুতাফাররিকাতু জাওয়ামিউ হাদীস’। [13] ‘মুরুযুয্‌ যাহাব’ ২য় খন্ড, ৪৩১ নং পৃষ্ঠা। ‘শারহু ইবনি আবিল হাদীদ’ ১ম খন্ড, ১৮১ নং পৃষ্ঠা। [14] আশবাহ্‌ ও নাযাইরু সুয়ুতী ফিন্‌ নাহু ২য় খন্ড। শারহু ইবনি আবিল হাদীদ ১ম খন্ড ৬ নং পৃষ্ঠা। [15] নাহ্‌জুল বালাগা দ্রষ্টব্য। [16] শারুহু ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ৬-৯ নং পৃষ্ঠা। ‘জঙ্গে জামালের’ যুদ্ধে জনৈক বেদুইন ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-কে বললো: “হে আমিরুল মু’মিনীন!” আপনার দৃষ্টিতে আল্লাহ্‌ কি এক? পার্শ্বস্থ সবাই ঐ ব্যক্তিকে আক্রোমণ করে বললো:ঃ “হে বেদুইন এ দূর্যোগমুহুর্তে তুমি কি ইমাম আলী (আ.)-এর অরাজক মানসিক পরিসি‘তি লক্ষ্য করছো না! জ্ঞান চর্চার আর কোন সময় পেলে না”? ইমাম আলী (আ.) তাঁর সাথীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “ঐ ব্যক্তিকে ছেড়ে দাও। কেননা, মৌলিক বিশ্বাস ও ইসলামী মতাদর্শের সংশোধন এবং ইসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সুস্পষ্ট করার জন্যেই তো আজ আমি এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। “অতঃপর তিনি ঐ বেদুইন আরব ব্যক্তির প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ উত্তর দিয়ে ছিলেন। (বিহারুল আনোয়ার, ২য় খন্ড, ৬৫ নং পৃষ্ঠা।)

— মুনাফিক মুসলমান এবং মসজিদ —- মসজিদ এ যেরার বা ক্ষতির মসজিদ — মহানবী (সাঃ) এর সময় মদীনার একটি বিখ্যাত ও শিক্ষনীয় ঘটনা হল , মসজিদ এ যেরার ঘটনা । কিছু মুনাফিক সাহাবী মুসলমান সিদ্বান্ত নিল যে , তারা মসজিদে কোবার পাশে আরেকটি মসজিদ তৈরী করবে । বাহ্যিকভাবে তারা প্রচার করবে যে , ইসলামের প্রচার করার জন্যই তারা এই মসজিদ তৈরী করেছে । কিন্ত তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে , এই মসজিদের নামে ধীরে ধীরে তারা এখানে আগত মুসল্লীদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন ফেতনা ফ্যাসাদ , বিভেদ সৃষ্টি করবে এবং খুব সূক্ষভাবে ইসলামী শাসনের বিরোধীতা করবে । তারা মহানবী (সাঃ) এর নিকট আসল এবং নিজেদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে এই ভাবে ব্যাখ্যা করে বলল যে , মসজিদে নবী থেকে বনী সালিম গোত্রের বসবাস বেশ দূর হয় যায় । বয়স্ক , দূর্বল লোকদের পক্ষে মসজিদে নবীতে যাতায়াত বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায় । আমাদের ইচ্ছে যে , মূলত বয়স্ক মুরুব্বীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই নতুন মসজিদটি তৈরী করব , যাতে তারা এখানে এসে আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করতে পারেন । এছাড়াও ঝড় বৃষ্টির রাতে অনেকেরই মসজিদে নবীতে আসতে কষ্ট হয় । এ মসজিদটি তাদের নিকটে হওয়াতে এরকম বহু লোকেরই উপকার হবে । তারা নবীজী (সাঃ) এর কাছে কসম খেল যে , সৎ , নেক এবং ইসলামের খেদমত ভিন্ন তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই । দয়াল নবী (সাঃ) গায়েবী এলমে সব কিছুই জানতেন । শুধুমাত্র উম্মতকে জ্ঞান দেবার উদ্দেশ্যে ওদেরকে অনুমতি দিলেন । নবম হিজরিতে তাবুকে যুদ্বের সময় মহানবী (সাঃ) তাবুক রওয়ানা হয় গেলেন । তাবুক থেকে ফিরে আসার পথে ঐ মুনাফিকগুলো নবীজী (সাঃ) এর নিকটে নিবেদন করল যে , আপনি দয়া করে নবনির্মিত মসজিদে নামাজ পড়াবেন এবং আপনার নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে এই নতুন মসজিদটির শুভ উদ্বোধন হবে । আপনার নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে এই মসজিদটি খুব সম্মাানের সাথে বিখ্যাত একটি মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত পাবে । ঠিক ঐ মুহূর্তে হযরত জীব্রাইল (আঃ) পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে আসলেন , ‘– আর যারা একটি মসজিদকে লক্ষ্য বানিয়েছিল অন্তর্ঘাতের জন্য এবং অবাধ্যতার জন্য , এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য , এবং আচমকা আক্রমনের উদ্দেশ্যে তাদের মাধ্যমে যারা যুদ্ব করেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্বে এর আগে , তারা অবশ্যই শপথ করবে , আমরা ভাল ছাড়া অন্য কিছুই চাই নি , এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে , নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী । (তুমি) সেখানে কখনও দাঁড়িও না ! যে মসজিদ খোদা সম্পর্কে সতর্কতার উপর প্রতিষ্ঠিত প্রথম দিন থেকেই , আর যোগ্য যে তুমি তাতে ( নামাজের জন্য) দাঁড়াবে –” । সুরা – তওবা / ১০৭ , ১০৮ । সাথে সাথে মহানবী (সাঃ) নির্দেশ দিলেন যে , ফেতনা সৃষ্টিকারী মসজিদের নামে এই আস্তানাটিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবার জন্য । সে জায়গায় ময়লা আর্বজনা ফেলার স্থান তৈরী করা হল । এর ফলে মুনাফিকদের ভয়াবহ একটা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল । সুপ্রিয় পাঠক , নবীজী (সাঃ) এর জীব্বদশাতেই কিছু মুনাফিক মুসলমান মসজিদ বানিয়ে ইসলামের ক্ষতি করতে চেয়েছে । আর এখনতো ১৫০০ বছর পরের কথা । নিত্য নতুন কত টেকনিক আবিস্কৃত হয়েছে আমাকে ও আপনাকে বিভ্রান্ত করবার জন্য । কত বিশাল বিশাল টিভি চ্যানেল , কোরআন – হাদিস ফটাফট মুখস্ত ঝারছে , কত সুন্দর বেশভূষা ইত্যাদির আড়ালে মুনাফেকি কার্যকলাপ অতীতেও চলছে বর্তমানেও চলছে । সবচেয়ে বড় কথা হল , আমরা শুধু কোরআন আঁকড়ে ধরেছি । কিন্ত কোরআনের মূল চালিকা শক্তি আহলে বায়েত (আঃ) গনকে পরিত্যাগ করেছি । সুবিখ্যাত একজন বিশাল কুখ্যাত সাহাবী বলেছিলেন , ” — রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট —-“। নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গনকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র কোরআনকে আঁকড়ে ধরা মুসলমান জাতি বর্তমানে পৃথিবীতে সব থেকে অসহায় , বোকা , দূর্বল , নিকৃষ্টমানের হাস্যকর জাতিতে পরিনত হয়েছে । খুব সহজেই গাদীর এ খুম পরিত্যাগকারী বৃহৎ মুসলিম জাতিকে হাজার বছর ধরে বিভ্রান্ত ও বোকা বানিয়ে রাখা সম্ভব । পাঠক , আসুন , আমরা সকলে মিলে নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র অাহলে বায়েত (আঃ) গনকে আরও উত্তম রুপে চিনি ও জানি । যে জাতি আহলে বায়েত (আঃ) গনকে মূল্যায়ন করেছে তারা আজ সকল মুসলমানের মধ্যে জ্ঞান , বিজ্ঞানসহ সকল দিক থেকেই অগ্রগামী প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

নবী পরিবারের(আঃ) শানে পবিত্র কোরানের আয়াত সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম।“ গাদীরে খুমে যখন রাসুল(সাঃ) হযরত আলীকে খেলাফত ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃখোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন,নিজের অবদানকে সপুর্ন করিলেন।আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)। সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪ “তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহ পাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হেকমাত দান করিয়াছি।“ আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ইমামগন হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সংগে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাহারা হইলেন আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদের ইমামতি দান করিয়াছেন।হযরত ইমাম বাকের(আ:) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইবারহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন(১২ ইমাম) সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করাইয়াছে।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লহর আদেশ অমান্যের সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ১২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ২০৪;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯; শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৩;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৬৭;সাওয়েকে মুহরেকা,পৃঃ১৫০)। সুরা নিসা,আয়াত# ৮৩ “যদি তাহারা উহা রাসুল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত,তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্দ্বান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্নয় করিতে পারিত।“ হযরত ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে,যাহারা বাস্তবতা জানেন আর যাহারা ক্ষমতাসম্পন্ন তাহারা হইলেন হযরত মুহাম্মাদের(সাঃ) বংশধর। আয়াশী হযরত ইমাম রেজা(আঃ) হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, ইহা দ্বারা হযরত নবী করিমের(সাঃ) বংশধরকে বুঝানো হইয়াছে। কারন তাহারা হইলেন ঐ সব ব্যক্তি যাঁহারা কোরানের বাস্তব তথ্য ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।তাঁহারাই হালাল ও হারামের উপর অবগত হইয়াছেন।আর তাহারাই সৃষ্টির উপর আল্লাহতায়ালার হুজ্জাত বা অকাট্য প্রমানস্বরুপ।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৫;রাওয়ানে যাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৯২;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ৪০)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৫৫ “তোমাদের বন্দ্বু তো আল্লাহ,তাঁহার রাসুল ও মু’মিনগন-যাহারা সালাত কায়েম করে ও রুকুর অবস্থায় যাকাত দেয়”। হযরত আবু যর গিফারী(রাঃ) এইভাবে বর্ননা করিয়াছেনঃএকদিন আমি রাসুলের(সাঃ) সঙ্গে মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করিলাম।একজন ভিক্ষুক মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিল।কেহ তাহাকে কিছুই দিল না।ঐ ভিক্ষুক তাহার ২ হাত আকাশের দিকে উত্তোলন করিয়া বলিলঃহে ল্লাহ!আমি তোমার পয়গাম্বরের মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিলাম,কিন্তু কেহ আমাকে কিছুই দিল না।এই সময় আলী(আঃ)সালাতে রুকুর অবস্থায় ছিলেন।তিনি নিজের আঙ্গুলের ইশারায় ভিক্ষুককে ইঙ্গিত করিলেন।হযরত আলী(আঃ)এর ডান হাতের আঙ্গুলে আংটি ছিল।ভিক্ষুকটি অগ্রসর হইয়া হযরত আলীর(আঃ) আঙ্গুলের আংটি খুলিয়া নিল।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এই ঘটনা দেখিয়া নিজের মাথা আকাশের দিকে ঘুরাইয়া বলিলেনঃহে আল্লাহ! হযরত মুসা(আঃ) আপনার প্রার্থনা করিয়াছিলেন যে,হে আল্লাহ আমার বক্ষ প্রসারিত করিয়া দাও আর আর আমার জাক আমার জন্য সহজ করিয়া দাও এবং আমার জিহবার জড়তা দূর করিয়া দাও যাহাতে লোকেরা আমার কথা বুঝিতে পারে।আর আমার বংশ হতে আমার ভাই হযরত হারুনকে(আঃ) সাহায্যকারী করিয়া দাও,যেন সে আমার শক্তিকে দৃঢ় করে।আমার কাজে আমার সঙ্গী করিয়া দাও। আল্লাহতায়ালা হযরত মুসাকে(আঃ) বলিলেন,আমি তোমার ভাই দ্বারা তোমার শক্তি তোমার শক্তিকে দৃঢ় করিয়া দিলাম।তোমাকে রাজত্ব দান করিলাম।হে আল্লাহতায়ালা!আমি মুহাম্মাদ তোমার প্রিয় রাসুল।হে আল্লাহ আমার বক্ষকে প্রসারিত করুন,আমার কাজ সহজ করুন এবং আমার বংশধরকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করুন।আমার পৃষ্টকে আলী দ্বারা শক্তিশালী করুন।হযরত আবুযর গিফারী বলিলেন যে,আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) কথা তখনো শেষ হয় নাই ,এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল(আঃ) এই আয়াতে পাক নিয়ে হুজুর (সাঃ)এর নিকট উপস্থিত হইলেন।(সুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ৭১;তাফসীরে ত্বাবারী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৬৫;তাফসীরে রাজী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৩১;তাফসীরে খাজিন,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯৬;তাফসীরেআবুল বারাকাত,১ম খন্ড,পৃঃ ৪৯৬;তাফসীরে নিশাপুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৬১; আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খন্ড,পৃঃ৩৫৭;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ৩২৯;আল-গাদীর,৩য় খন্ড,পৃঃ১৫৬ ও ১৬২;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৬১;)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৬৭ “হে রাসুল!পৌছাইয়া দিন যাহা কিছু আপনার প্রতি অবতীর্ন হইয়াছে আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।যদি এমন না হয় তবে আপনি তাহার কোন সংবাদই পৌছাইলেন না।আর আল্লাহতায়ালা আপনাকে রক্ষা করিবেন মানুষের অনিষ্ট হইতে”। সমস্ত মোফাসসের এবং ঐতিহাসিকগন একমত যে,এই আয়াত গাদীরে খুম নামক স্থানে হযরত আলী(আঃ)এর শানে নাজিল হইয়াছে।রাসুল(সাঃ) উটের পালান দ্বারা একটি মিম্বর বানানোর জন্য আদেশ দিলেন এবং সেই মিম্বরের উপর দাড়াইয়া রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেন যে,আমি যাহার নেতা ,এই আলীও তাহার নেতা।(সুত্রঃআল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২১৪ ও ২২৯;জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৩৮;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;আসবাবুল নযুল,পৃঃ১৩৫;শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৮৭)। সুরা আ’রাফ,আয়াত# ১৭২ “হে নবী স্মরন করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্টদেশ হইতে তাহাদের বংশধরগনকে বাহির করিলেন”। হোযাইফা বিন ইয়ামানী বর্ননা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃযদি মানুষ জানিত যে,আলী কখন হইতে আমিরুল মু’মিনিন,তবে কখনো তাঁহার মরযাদাকে অস্বীকার করিত না।হযরত আলী তখন থেকেই আমিরুল মু’মিনিন যখন হযরত আদমের শরীর ও আত্না মাটি ও পানির মধ্যে ছিল।আল্লাহপাক ফরমাইলেনঃযখন আদমের পৃষ্টদেশ হতে সমস্ত আত্নাকে বাহির করা হইলো,তাহাদের উপর সাক্ষী করা হইলো এবং জিজ্ঞাসা করা হইলো যে,আমি কি তাহাদের প্রভু নই?ফেরেশ্তারা বলিলঃঅবশ্যই,আমরা সাক্ষী থাকিলাম। তারপর আল্লাহতায়ালা ফরমাইলেনঃআমি তোমাদের প্রভু,মুহাম্মাদ তোমাদের রাসুল এবং আলী তোমাদের আমীর।(সুত্রঃ জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৫৮;রাওয়ান জাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৪৯১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ২১৬;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৭১) প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

কিছু অজ্ঞ মূর্খরা আছে যারা মনে করেন সীয়ারা আলী (রাঃ) কে মানেন তারা নাকি রাসূলকে মানেনা, সীয়া আর সুন্নীর মধ্যে পার্থক্য ওদের মত মুর্খরাই সৃষ্ট করেছে। এতই যদি জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে ভাল করে যেনে নিন আলী কে আর রাসূল কে? রাসূল (সাঃ) বলেছেন :""আমি হচ্ছে জ্ঞেনের শহর আলী তার দরজা স্বরুপ,,,, "আরো বলেন : হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও"""সহি মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড, সহি তিরমিজি ৫খন্ড। ""মান কুন্তু মাওলা, ফাহাজা আলীউন মাওলা,, আমি যার মাওলা,আলীও তার মাওলা,,,।। হযরত মুহাম্মাদ (স:) সুতরাং, যে ব্যাক্তি মাও:আলীকে, মাওলা হিসেবে মানে না,সে ব্যাক্তি রাসুল (স:) এর হুকুম অমান্য করে,,আর যে রাসুল (স:) এর অমান্য করে সে ইসলামিক আঈন অনুযায়ী মুনাফিক,,,,।।।। রাসুল (স:) বলেন,, মুনাফিক ব্যাতিত কেউ আলীকে হিংসা করে না, আর মুমিন ব্যাতিত কেউ আলীকে মোহাব্ব্যাত করে না।

মাসুম গণ (আ.) -এর বানীতে ইমাম হোসাইন (আ.) 1. হাদীসে কুদসী : হোসাইনকে ওহীভান্ডারের রক্ষক মনোনীত করা হয়েছে এবং আমি শাহাদতের মাধ্যমে সম্মান প্রদান করেছি। আর তার শেষ পরিণতিকে চরম সফল্যমন্ডিত করেছি। তাই সে-ই হল শহীদদের শিরোমণি এবং সকলের শীর্ষে তার অবস্থান । আমি আমার র্পূণ কালিমাকে তার সাথে রেখেছি এবং আমার র্পূণনিদর্শনকেও তার কাছেই রেখেছি। আর তার বংশধারার র্নিভর করছে প্রত্যেকের প্রতিদান ও শাস্তি।[1] 2. হযরত মহানবী (স.)নি:সন্দেহে হোসেনের (আ.) শাহাদত মুমিনদের অন্তরে এমন এক উত্তাপ ও আবেগের সৃষ্টি করে যা কখনও শীতল হবে না।[2] 3. হযরত আমিরুল মুমেনিন আলী (আ.): ইমাম আলী (আ.) নিজ সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন : এ এমন এক ব্যক্তি যার স্মৃতি ও নাম স্মরণ মুমিনদের চোখে অশ্রু ঝরাতে থাকবে। হোসেন (আ.) বললেন : আপনি কি আমাকেই সম্বোধন করে বলছেন ? তিনি উত্তরে বললেন : জ্বী, আমার সন্তান।[3] 4. হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.)আমার গর্ভাবস্থায় যখন হোসাইন (আ.)ছয় মাসে উর্ত্তীণ হল, তখন থেকে রাতের আধাঁরে আর আমার প্রদ্বীপের প্রয়োজন হয়নি আর ইবাদতের সময় ও প্রভুর সান্নিধ্য লাভের জন্য যখন র্নিজনতা অবলম্বন করতাম তখন তাঁর তাসবিহ ও তাকদীস পাঠের আওয়াজ শুনতে পেতাম।[4] 5. ইমাম হাসান (আ.) আমাকে বিষ পানে শহীদ করা হবে কিন্তু হে আবা আবদুল্লাহ্! তোমার মসিবতের দিনটির ন্যায় আর কোন মসিবতের দিন আসবে না।[5] 6. হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)আমার হত্যা ক্রোন্দনে এক মহাধারার সৃষ্টি করবে। আর কোন মুমিন ব্যক্তিই দু:খ ও অশ্রুসিক্ত চোখ না নিয়ে আমাকে স্মরণ করবে না।[6] 7. হযরত সাইয়েদুল সাজেদিন হোসাইন বিন আলী (আ.)আমি এক ব্যক্তির সন্তান যার জন্য আসমানের ফেরেস্তাগণ এবং ভূ-পৃষ্ঠে জ্বীনেরা ও পাখিরা বাতাসে শোকে শোকাহত হয়ে ক্রোন্দন করেছিল ।[7] 8. হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.)ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়ার মৃত্যুর পর আর কোন ব্যক্তির মৃত্যুতে আসমানকে কাঁদতে দেখা যায়নি একমাত্র হোসাইন ইবনে আলীর (আ.) শাহাদত ব্যতীত। তাঁর শাহাদতে চলি।লশদিন ধরে শোকে ক্রোন্দনরত ছিল।[8] 9. হযরত জাফর সাদিক (আ.) মসিবতের সময় আহাজারি ও ফরিয়াদ করে কান্নাকাটি অপছন্দনীয় তবে কেবল হোসাইন (আ.)এর শোকে ক্রোন্দন ব্যতীত। হোসাইনের (আ.) শোকে ক্রোন্দন ও আহাজারির জন্য প্রতিদান দেয়া হবে।[9] 10. হযরত মুসা ইবনে জাফর (আ.) ইমাম রেজার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন :মহররম মাস যখন শুরু হত তখন আমার পিতার মুখে আর হাসি-খুশী দেখা যেত না। তিনি যেন দু:খ ও বেদনায় ভরাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। এভাবে আশুরার দিন পযন্ত যেদিন, শোক ও দু:খে ক্রোন্দন করতেন। আর বলতেন এমন একটি দিনে হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল।[10] 11. হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা দো (আ.)হোসেনের (আ.)মসিবত আমাদের অন্তরকে আহত ও চক্ষুকে ব্যথিতকে তোলেছে। এমসিবত আমাদের অশ্রু ঝরিয়েছে আমাদের আপনজনদেরকে ঐ দুরদেশে লাঞ্চিত ও অসয়হ করেছে। সেদিনের দু:খ বেদনা এতই গভীর যে আমাদেরকে চিরদিনের জন্য শোকাহত ও ব্যথিত করেছে।[11] 12. হযরত ইমাম ত্বাকী (আ.)কোন ব্যক্তি যদি ২৩ রমজানে (যে রাতটি কদরের রাত হওয়ার সম্ভবনা আছে) ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করে তাহলে ২৪ হাজার ফেরেস্তা ও এবং স্বয়ং মহানবীও (স.)তার সাক্ষাত করেন। এরা ঐদল যারা এই রাতে ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি আবেদন করেন।[12] 13. হযরত ইমাম আলী নকী (আ.): যে ব্যক্তি ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারতের জন্য নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে ফুরাতের নদে স্নান করবে। খোদা তার নাম সফল ব্যক্তিদের লিষ্টে লিখে দিবেন। আর যখন সে ঐ হোসেনকে সালাম করবে তখন তাকে সফলতা লাভকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণনা করেন। তারপর যখন সে জিয়‍ারতের নামাজ শেষ করে তখন ‍একজন ফেরেস্তা তাকে বলেন : আল্লাহর রাসুল তোমার প্রতি দরুদ পাঠিয়েছেন এবং তোমাকে বলেন তোমার গোনাহ্ সমূহ ক্ষমা করা হয়েছে। অতপর তখন তুমি আরার প্রথম অবস্থায় ফিরে গেছে।[13] 14. হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)হে আল্লাহ্ আমি তাঁর ওসিলা দিয়ে তোমার কাছে প্রাথনা করছি যে এমন একটি দিনে (৩রা শাবান) জন্ম গ্রহণ করেছিল। যার জন্মের পূর্বে তাঁর শাহাদতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যার শোকে আসমান ও আসমানবাসীরা, আর ভূ-পৃষ্ঠ ও তার অধিবাসীগণ ক্রোন্দন করছে। এটা এমন এক অবস্থায় যখন সে পৃথিবীতেই পা রাখেনি।[14] 15. হযরত ইমাম মাহদী (আ.)যদিও সময় আমাকে পিছায়ে দিয়েছে পরিণতি আপনাকে সাহায্য করা থেকে বিরত রেখেছে ফলে আপনার সাথী হয়ে দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারিনি । তবে প্রতিটি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি্ কাঁদছি আর আপনার স্মৃতিচারণ করে বুক ফাটা কান্নায় আর্তনাদ করছি।[15] অনুবাদ :মো. আলী নওয়াজ খান। [1] -উসুল আল কাফী, ২খন্ড, ৪৭২ পৃ. মাযাআ ফি ইসনা আশার ওয়ান নাস্ আলাইহা, অধ্যায় ৩ নম্বর হাদীস। [2] – মুস্তাদরাকুল ওসাইল ১০ম খন্ড, ৩১৮ পৃ. ৪৯তম আববাবুল মাজার মাজার অধ্যায় ১৩ নম্বর হাদীস। [3] – বিহারুল আনোয়ার ৪৪তম খন্ড, ২৮০ পৃ, ওয়া ফাজলু যিয়ারাতুল হোসায়েন (আ.) ৩৮পৃ.। . [4] – বিহারুল আনোয়ার ৪৩খন্ড, ২৭৩ পৃ,। আওয়ালেম গ্রন্থ ১৭তম খন্ড؛ ১১পৃ.। আদ্দামায়াস সাকিরাহ্ ২৫৯ পৃ. এবং খাসাইসুস হোসাইনীয়া ৩১ পৃ.।. [5] – ‌আমুলী-ই শেখ সাদুক ১১৬ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৫ খন্ড, ২১৮ পৃ, । মাসিরুল আহজান, ৯ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ১৫৪ পৃ. এবং লুহুফ ২৫ পৃ.। [6]- ‌আমুলী-ই শেখ সাদুক ১৩৭ পৃ, ।কামিরুজ জিয়ারাত, ১০৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ, । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৬ পৃ. এবং ইসবাতুল হিদাইয়া ২খন্ড, ৫৮৪ পৃ.। [7] – বিহারুল আনোয়ার ৪৫খন্ড, ১৭৪ পৃ, এবং আওয়ালেম গ্রন্থ ১৭ তম খন্ড ৪৮৫ পৃ.। [8] – কামিরুজ জিয়ারাত, ৯০ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৫ খন্ড, ২১১ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৪৬৯ পৃ.। [9] – কামিরুজ জিয়ারাত, ১০০ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৯১ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৩ পৃ.। [10] -আমুলী-ই শেখ সাদুক ১২৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ,। । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৮ পৃ.। [11] -আমুলী-ই শেখ সাদুক ১২৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ,। । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৮ পৃ.। [12] – ওসাইলুশ শীয়া ১০ম খন্ড ১৭০ পৃ. ৫৩ নম্বর অধ্যায় আল আববাসুল মাজার ৫ নম্বর হাদীস। [13] – ওসাইলুশ শীয়া ১০ম খন্ড ৩৮০ পৃ. ৫৯ নম্বর অধ্যায় আববাসুল মাজার ১০ নম্বর হাদীস। কামিরুজ জিয়ারাত, ১৮৫-১৮৬ পৃ, । [14] – মিসবাহুল মুতাহাজ্জিদ, ৭৫৮ পৃ, বিহারুল আনোয়ার ৯৮ খন্ড, ৩৪৭ পৃ. মাঠাতিহুল জিনান, মহরমের তৃতীয় দিনে আমল।. [15] – বিহারুল আনোয়ার , ৯৮ খন্ড, ৩২ পৃ. প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি