সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

বৈশিষ্ট্য

সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

Imported post: Facebook Post: 2023-08-04T20:32:41

Imported post: Facebook Post: 2023-08-04T16:44:20

Imported post: Facebook Post: 2023-08-04T16:42:46

Imported post: Facebook Post: 2023-08-06T00:37:55

Imported post: Facebook Post: 2023-07-29T19:02:52

Imported post: Facebook Post: 2023-07-29T18:15:02

Imported post: Facebook Post: 2023-07-29T17:53:03

Imported post: Facebook Post: 2023-07-29T04:47:04

Imported post: Facebook Post: 2023-07-28T20:26:02

Imported post: Facebook Post: 2023-07-28T17:59:16

কীভাবে নবীর উম্মত নবী (সাঃ) এর সন্তানকে হত্যা করলো এ জিজ্ঞাসা সবযুগের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের। আর এ ধরনের প্রশ্ন জাগাটাও খুব স্বাভাবিক। কেননা,ইমাম হোসাইনের (আঃ) মর্মান্তিক শাহাদাত এক বিষাদময় ঘটনা কিংবা আল্লাহর পথে চরম আত্মত্যাগের এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্তই শুধু নয়,এ ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলে বড়ই অদ্ভুত মনে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর তিরোধানের মাত্র ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। আর এ হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিল স্বয়ং রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উম্মত যারা রাসূল এবং তার বংশকে ভালবাসে বলে ইতোমধ্যেই খ্যাতিলাভ করেছিল। তাও আবার রাসূলের (সাঃ) সেইসব শত্রুদের পতাকাতলে দাড়িয়ে মুসলমানরা রাসূলের (সাঃ) সন্তানের উপর এ হত্যাকাণ্ড চালায় যাদের সাথে কি-না রাসূলুল্লাহ (সাঃ)র তিন-চার বছর আগ পর্যন্ত ও অব্যাহতভাবে যুদ্ধ করে গেছেন!মক্কা বিজয়ের পর যখন চারদিকে ইসলামের জয়জয়কার তখন ইসলামের ঐ চির শত্রুরাও বাধ্য হয়েই নিজেদের গায়ে ইসলামের একটা লেবেল লাগিয়ে নেয়। তাই বলে ইসলামের সাথে তাদের শত্রুতার কোনো কমিত ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের উক্তিটি সুপ্রযোজ্য । তিনি বলেছিলেন-استسلموا و لم یسلموا“তারা মুসলমান হয়নি,ইসলাম গ্রহনের ভান করেছিল মাত্র।” আবু সুফিয়ান প্রায় ২০ বছর যাবত রাসূলুল্লাহর (সা.) সাথে যুদ্ধ করে। শুধু তাই নয়,শেষের দিকে ৫/৬ বছর সে ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং ফেতনা সৃষ্টিতে সরদারের ভূমিকা পালন করে।মোয়াবিয়া তার পিতার কাধে কাধ মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামে। এভাবে আবু সুফিয়ানের দল অর্থাৎ উমাইয়ারা ইসলামের চরমতম শত্রুতে পরিণত হয়। অথচ আমরা অত্যন্ত আশ্চর্য়ের সাথে প্রত্যক্ষ করি যে,রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ওফাতের মাত্র দশবছর পরে সেই মোয়াবিয়া এসে ইসলামী শাসনযন্ত্রের শীর্ষে আরোহণ করে শাম বা সিরিয়ার গভর্ণর হয়ে বসে। আরও বিশবছর পরে ইসলামের এই শত্রু হয়ে বসলো স্বয়ং মুসলমানদের খলীফা! এখানেই শেষ নয়,রাসূলের (সাঃ) মৃত্যুর পর পঞ্চাশ বছর পর এবার মুসলমানদের খলীফা হল মোয়াবিয়া-পুত্র ইয়াযিদ। আর এই ইয়াযিদ নামায,রোযা,হজ্ব যাকাত তথা ইসলামের বিধি-বিধান পালনকারী মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে অর্ধশতাব্দী গড়াতে না গড়াতেই রাসূলের (সাঃ) সন্তানকে হত্যা করলো। এসব নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাথা বিগড়ে গেলেও ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঐ সব মুসলমানরা যে ইসলামকে পরিত্যাগ করেছিল তা নয়,বরং ইমাম হোসাইনের (আঃ) প্রতি তাদের ভক্তির অভাব ছিল তারও কোনো প্রমাণ মেলে না। কারণ,ইমাম হোসাইনের (আঃ) প্রতি বীতশ্রদ্ধ হলে তারা হয়তো বলতে পারতো যে,(নাউযুবিল্লাহ) ইমাম হোসাইন (আঃ) ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। সুতরাং তাকে হত্যা করতে কোনো বাধা নেই। বরং তারা নিশ্চিতভাবে ইয়াযিদের ওপর ইমাম হোসাইনের (আঃ) সহস্র গুণে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় বিশ্বাস করতো। তাহলে এখন প্রশ্ন হল যে,প্রথমতঃ কিভাবে মুসলিম শাসন ক্ষমতা ইসলামের ঘোরশত্রু আবু সুফিয়ানের দলের হাতে পড়েলা? দ্বিতীয়তঃ যে মুসলমানরা ইমাম হোসাইনের (আঃ) রক্তের মূল্য যথার্থভাবে অবগত ছিল তারা কিভাবে ইমাম হোসাইনকে (আঃ) হত্যা করলো?চলবেলানাতুল্লাহি আলাল কাজেবিননিবেদক মোঃ রাকিব হোসেন

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=697474038335900&id=100042199309276

Imported post: Facebook Post: 2023-08-03T07:31:00

Imported post: Facebook Post: 2023-08-02T20:19:57

Imported post: Facebook Post: 2023-07-31T21:05:14

Imported post: Facebook Post: 2023-07-30T14:04:49

Imported post: Facebook Post: 2023-07-29T22:34:47

‘ইহ্তিজাজ’ নামক গ্রন্থে আল্লামা তাবারসী বর্ণনা করেছেন,যখন জনগণ ইমাম আলীর হাতে বাইআত করল তখন তিনি ইমাম হাসানকে বলেছিলেন,“দাঁড়িয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দাও যাতে কুরাইশগণ আমার পরে তোমাকে ভুলে না যায়।”ইমাম হাসান (আ.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা করার পর বলেছিলেন,“হে লোকসকল! আমার নানা রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : আমি জ্ঞানের নগরী এবং আলী তার দরজা। তাই কেবল দরজা ব্যতীত কি নগরীতে প্রবেশ করা সম্ভব?”হযরত আলী (আ.) তখন ইমাম হাসানকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর তিনি ইমাম হুসাইনের দিকে তাকিয়ে বললেন,“বৎস! তুমিও উঠে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা কর যাতে করে কুরাইশরা আমার পরে তোমাকে ভুলে না যায়। আর তোমাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে,তোমার বক্তব্যও যেন তোমার ভাইয়ের বক্তব্যের অনুগামী হয়।”এ কথা শুনে ইমাম হুসাইন (আ.) মিম্বরে দণ্ডায়মান হয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর দরুদ প্রেরণ করার পর বললেন,معاش الناس سمعت رسول الله (ص) و هو یقول: إنّ علیّا هو مدینة هدی، فمن دخلها نجی و من تخلّف عنها هلك“হে লোকসকল! আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি : নিশ্চয়ই আলীই হিদায়েতের নগরী;যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে তারাই সফলকাম হবে। আর যারা এ থেকে দূরে থাকবে (অর্থাৎ হেদায়েতের নগরীতে প্রবেশ করবে না) তারা ধ্বংস হবে।”তখন হযরত আলী (আ.) উঠে দাঁড়িয়ে ইমাম হুসাইনকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বললেন,معاش النّاس اشهدوا أنّها فرخا رسول الله و ودیعته الّتی استودعهما و أنا أستودعکموا هما، معاش النّاس و رسول الله سائلکم عنها “হে লোকসকল! তোমরা সাক্ষী থেকো যে,এরা দু’জন রাসূলুল্লাহর সন্তান এবং তাঁর আমানত যা তিনি তোমাদের কাছে রেখে গেছেন। আর আমিও তাদের দু’জনকে তোমাদের কাছে আমানতস্বরূপ রাখছি। হে লোকসকল! মহানবী তোমাদের সবাইকে এদের দু’জনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন।”

শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়,মানবসভ্যতার ইতিহাসে মহান স্বাক্ষর ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ।________________________________"—নিশ্চয়ই পরস্পর সম্মুখীন বাহিনীদ্বয়ের মধ্যে তোমাদের জন্য সুন্দর দৃষ্টান্ত আছে। একটি বাহিনী আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল, অপর বাহিনীটি ছিল খোদাদ্রোহী —"। (আল কুরআন)আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস।২ হিজরির ১৭ রমজান (১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে বদর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্দেশক গ্রন্থ আল কুরআনুল কারিম নাজিলের মাস রমজানুল মোবারকের আজ ১৭ তারিখ অসাধারণ তাৎপর্যের অধিকারী। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, মানবসভ্যতার ইতিহাসে এবং সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে আজকের দিনটি অত্যন্ত ভাস্বর।বদর একটি কূপের নাম।এই কূপের নিকটবর্তী স্থানকে বদর প্রান্তর বলা হয়।এটি মদিনার উপকন্ঠ থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত। এ প্রান্তরের যুদ্ধই ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ।মহানবী (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীর্ঘ ১৩ বছর মক্কায় অতিবাহিত করেন। রাসুল (সা.) কাফেরদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি আল্লাহর হুকুমে মক্কায় বসবাসরত সাহাবিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে মদিনায় হিজরত করেন।ঠিক হিজরতের দ্বিতীয় বছরেই নবীজীর (সা.) নেতৃত্বে গঠিত মদিনা রাষ্ট্রটি মক্কার কাফের শক্তির হুমকির মুখোমুখি হয়।বদর ইসলাম ও মুসলমানের জয়ের ইতিহাস। বদর হলো অধিক সংখ্যক কাফেরের ওপর স্বল্পসংখ্যক মুমিনের সফলকাম হওয়ার ইতিহাস। বদর হলো আত্মত্যাগের ইতিহাস। বদর হলো শাহাদাতের সূচনার ইতিহাস। বদর হলো যুদ্ধের ময়দানে ফেরেশতা দিয়ে মুমিনদেরকে আল্লাহর সাহায্য করার ইতিহাস।পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণে বদরযুদ্ধের সূচনা হয় তা হচ্ছে-মদীনা শরীফে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন ওবাইর ও ইহুদীদের ষড়যন্ত্র, সন্ধি শর্ত ভঙ্গ, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বাড়া আক্রান্ত হওয়ার শংকা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংস সাধন এবং নবীজী (সা.) কে চিরতরে নিশ্চিহৃ করার অশুভ চক্রান্ত। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল নাখলার ঘটনা, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার, যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য ওহী লাভ, মক্কাবাসীদের ক্ষোভ। এসব কারণে এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণের সংবাদ শুনে তাদের গতিরোধ করার জন্য ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ ১৭ রমজান ৩১৩ জন মুজাহিদ (৬০ জন মুহাজির অবশিষ্টরা ছিল আনছার) নিয়ে মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল সত্যের অনুসারী ও মিথ্যার পতাকাবাহী দু’টি দলের প্রত্য সশস্ত্র লড়াই।যোদ্ধাসংখ্যা বা সরঞ্জাম কোনো দিক দিয়েই দুই দলের মধ্যে সমতা ছিল না। এক দিকে ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে প্রায় নিরস্ত্র ৩১৩ জন মুমিন বান্দার ক্ষুদ্র একটি দল। অন্য দিকে বিশেষ করে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ও তার বাহিনী সমকালীন উন্নত অস্ত্রসজ্জিত প্রশিক্ষিত ও সংগঠিত প্রায় এক হাজার বাছাই করা সৈন্যের দল। আরব ভূমির অঘোষিত রাজধানী থেকে এই বিশাল বাহিনীটি এসেছে ইসলামের অনুসারী ক্ষুদ্র দলটির অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার দর্প নিয়ে। অন্য দিকে ক্ষুদ্র হলেও মহাসত্যের অকৃত্রিম অনুসারীদের ছিল জগৎনিয়ন্তার মদদ লাভের বিশ্বাস। শাশ্বত বিধানের মর্যাদা রক্ষায় নিজেদের সর্বস্ব চূড়ান্ত নিবেদনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনে দৃঢ়প্রত্যয়ী এ দলটি। মানুষের সব ধারণা নাকচ করে দিয়ে প্রায় উপকরণহীন মুষ্টিমেয় দলটিকে জয়ী করেন মহান রাব্বুল আলামিন। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় নতুন অধ্যায়। তাই শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে এ দিনটি অনন্য অবস্থান দখল করে রেখেছে।বদরযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পবিত্র মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলাম তথা মুসলমানদের বিজয়ের ধারা সূচিত হয়েছিল এবং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন, আর মুশরিক বাহিনীর ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়েছিলেন। আর এরা ছিল গোত্রসমূহের সর্দার এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। এ জেহাদে ইসলাম ও রাসূল (সা.)-এর চরম ১৪ জন শত্রুর মধ্যে আবু জেহেল, উৎবা ও শায়বাসহ ১১ জনই জাহান্নামে পৌঁছে যায়। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা । আলী (আ.) এই প্রথমবারের মত তরবারির যুদ্ধে তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগ পান।বহু বছর পরে মুয়াবিয়া(লা:) হযরত আলী (আ.)'র খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে এক চিঠিতে আমিরুল মু'মিনিন তাকে সতর্ক করে দিয়ে লিখেছিলেন,—“যে তরবারি দিয়ে আমি তোমার নানা (উতবা), তোমার মামা (ওয়ালিদ) ও ভাই হানজালার ওপর আঘাত হেনেছিলাম (তথা তাদের হত্যা করেছিলাম) সে তরবারি এখনও আমার কাছে আছে।”বদর যুদ্ধের প্স্তুতি কালে রাসুল(সাঃ) আনছার ও মুহাজিরদের নিয়ে গঠিত এক সামরিক পরিষদের মতামত জানতে চাইলেন।এ পরিষদে যে কথাগুলো উত্থাপিত হয়েছিল তাতে একদিকে যেমন অনেকের সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘোটেছিল,অন্যদিকে অপর একদলের ভীরুতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল।সর্বপ্রথম হযরত আবুবকর ইবনে কুহাফা উঠে দাড়ালেন ও বললেনঃ“কুরাইশ গোত্রপতিরা ও বীরেরা এ সেনাবাহিনী (মুশরিক বাহিনী) গঠন করেছে। কুরাইশরা কখনোই কোন আদর্শে ঈমান আনে নি এবং এক মুহুর্তের জন্যও পরাজিত ও অপমানিত হয় নি।আর আমরা পুর্ন প্রস্তুতি নিয়ে বের হইনি(অর্থাত মদীনায় ফিরে যাওয়াই আমাদের জন্য কল্যানকর)”।সুত্রঃ-তারীখে ত্বাবারী,২য় খন্ড,পাতা-১৪০,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ননায়।হযরত উমর(রাঃ) উঠেও একই কথা বললেন।এ সময় মিক্বদাদ উঠে দাড়ালেন এবং বললেনঃ“মহান আল্লাহর শপথ,আমরা বনী ইস্রাইলের মত নই যারা মুসাকে বলেছিল” হে মুসা!তুমি ও তোমার প্রভু গিয়ে যুদ্ব কর,আর আমরা এখানে বসলাম।“বরং আমরা তাঁদের বিপরীতে বলবঃ “আপনি আপনার প্রভুর সাহায্য নিয়ে জিহাদ করুন,আমরাও আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ব করবো”।ত্বাবারী লিখেছেনঃ-মিক্বদাদ যখন কথা বলতে উঠে দাড়ালেন তখন রাসুল(সাঃ)-এর চেহারায়( আগের ২জন হযরত আবুবকর ও উমরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে) ক্ষোভ ফুটে উঠেছিল।কিন্তু যখন মিক্বদাদের কথায় তিনি(সাঃ) সুসংবাদের ইঙ্গিত পেলেন তখন তাঁর(সাঃ) চেহারায় স্বভাবিকতা ফিরে এল।সুত্রঃ-তারীখে ত্বাবারী,২য় খন্ড,পাতা-১৪০,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ননায়।সা’দ বিন মু’আযও উঠে দাড়ালেন এবং লোহিত সাগরের দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ“আপনি যখন এ সাগরে পা ফেলবেন,তখন আমরাও আপনার পশ্চাতে পা ফেলবো।আপনি যা কল্যানকর মনে করবেন সে পথেঈ আমাদেরকে এগিয়ে নেবেন “।এসময় রাসুলের(সাঃ) চেহারায় আনন্দ ফুটে উথলো এবং তিনি সুসংবাদ হিসাবে তাদেরকে বললেনঃ“আমি কুরাইশদের মরন দেখতে পাচ্ছি।“অতঃপর ইসলামী সেনারা রাসুলের(সাঃ) নেতৃত্বে যাত্রা করলেন ও বদরের কুপের পাশে গিয়ে অবস্থান গ্রহন করলেন।সত্য গোপনকরন ইতিহাস লেখকদের মধ্যে ত্বাবারী ও মক্বরিযির মত কেউ কেউ বাস্তব চিত্রকে গোড়ামীর পর্দা দিয়ে ঢেকে দিতে চেয়েছেন এবং এ ব্যাপারে রাসুলের(সাঃ) সাথে কথোপকথনকে যেভাবে ওয়াক্বেদী তাঁর মাগ্বাযী গ্রন্থে বর্ন্না করেছেন সেভাবে লিখতে প্রস্তুত হননি।বরং তারা বলেনঃ হযরত আবুবকর উঠে দাড়ালেন ও ভাল কথা বললেন এবং অনুরুপভাবে হযরত উমর দাড়ালেন ও ভাল কথা বললেন।কিন্তু এই ২জন খ্যাতনামা ইতিহাস লেখককে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে,তারা যদি ভাল কথাই বলে থাকেন তো সে কথাগুলো বর্ননা করা থেকে বিরত থাকলেন কেন,অথচ মিক্বদাদ ও সা’দের কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে বর্ননা করেছেন?তারা যদি ভাল কথা বলে থাকেন তাহলে তাদের কথায় রাসুলের(সাঃ) চেহারায় ক্ষোভ ফুটে উঠেছিল কেন,যা স্বয়ং ত্বাবারী উল্লেখ করেছেন?(আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন—আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী লেখা "বেলায়েতের দ্যুতি")বদর যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করলেন:-"হে আল্লাহ! এ কঠিন মুহূর্তে আপনি আমাকে সাহায্য করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি আমাকে দিয়েছেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রদত্ত ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির শপথ করে বলছি, যদি আপনি বিজয়ী না করেন, তাহলে এ পৃথিবীতে আপনার ইবাদত করার কেউ থাকবে না"। মহান রাব্বুল আলামীন রসুলুল্লাহ (সাঃ)ডাকে সাড়া দিয়ে আল-কুরআনের সূরা আল আনফালের ১২-১৪নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেছেন-“আর স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের কাছে এ মর্মে প্রত্যাদেশ পাঠালেন যে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সাথে আছি। তোমরা পরস্পরে ঈমানদারদের মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি করো। আর আমি অচিরেই কাফেরদের অন্তকরণে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করবো। তোমরা কাফিরদের ঘাড়ে আঘাত কর এবং জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর…।”অন্যত্র বলা হয়েছে-‘যখন তুমি মুমিনদের বলছিলে, “এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে তোমাদের প্রতিপালক প্রেরিত তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সহায়তা করবেন?” হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং সাবধান হয়ে চলো, তবে তারা দ্রুতগতিতে তোমাদের ওপর আক্রমণ করলে আল্লাহ পাঁচ সহস্র চিহ্নিত ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৪-১২৫)বদর যুদ্ধের সফলতা ছিল আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি, বিশ্ববিজয়ের সূচনা, সর্বোত্তম ইতিহাস সৃষ্টি, প্রথম সামরিক বিজয়, কুরাইশদের শক্তি খর্ব, ইসলামী রাষ্ট্রের পত্তন, নবযুগের সূচনা, রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন, জেহাদের অনুপ্রেরণা, বীরত্বের খেতাব লাভ, পার্থিব শক্তির ভিত্তি স্থাপন, ইসলাম ও মহানবী (রা.)-এর প্রতিষ্ঠা, মিথ্যার ওপর সত্যের জয় সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সৃষ্টি সূরা আনফালে ও সূরা আলে ইমরানে,ঘোষিত আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা পূরণ, দয়াল রাসূল (সা.) উনার দোয়া কবুল এবং বদর যুদ্ধে ফেরেশতা দিয়ে মুজাহিদদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য করেছিলেন।যা মুসলমানদের পক্ষে আল্লাহ তায়ালার গায়েবী সাহায্যের জলন্ত প্রমাণ।বদর যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। ইসলামের আত্মশুদ্ধি, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য, সাধনা, প্রার্থনা, সেবা, আত্মনিবেদন ও সংগ্রামের সব অধ্যায় যে একই সূত্রে গাঁথা, তার এক মহান স্বাক্ষর দ্বিতীয় হিজরির এই ১৭ রমজান।বদর দিবসের এই সামগ্রিক শিক্ষা বিকশিত হোক প্রত্যেক মুসলমানের অন্তর ও জীবনে।—সৈয়দ হোসাইন উল হকএম-ফিল,ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড হিস্টোরি,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।