পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদআশুরার প্রেক্ষাপট: ‏কিভাবে মহানবীর ‎(সা) ‏কথিত ‎'উম্মতের' ‏হাতেই শহীদ হন ইমাম হোসাইন ‎(আ) ?কীভাবে নবীর ‎(সা.) ‏উম্মতই নবীর ‎(সা.) ‏সন্তানকে হত্যা করলো ‎(!)? -এ জিজ্ঞাসা সব যুগের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের। আর এ ধরনের প্রশ্ন জাগাটাও খুব স্বাভাবিক।কারণ, ‏ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏মর্মান্তিক শাহাদাত এক বিষাদময় ঘটনা কিংবা আল্লাহর পথে চরম আত্মত্যাগের এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্তই শুধু নয়, ‏এ ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলে বড়ই অদ্ভুত মনে হবে। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)-এর তিরোধানের মাত্র ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে না হতেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।আর এ হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিল স্বয়ং রাসূলুল্লাহর ‎(সা.) ‏কথিত উম্মত যারা রাসূল এবং তাঁর বংশকে ভালবাসে বলে ইতোমধ্যেই খ্যাতিলাভ করেছিল। তাও আবার রাসূলের ‎(সা.) ‏সেইসব শত্রুর পতাকাতলে দাঁড়িয়ে মুসলমানরা রাসূলের ‎(সা.) ‏সন্তানের উপর এ হত্যাকাণ্ড চালায় যাদের সাথে কি-না রাসূলুল্লাহ ‎(সা.)মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যুদ্ধ করে গেছেন! ‏মক্কা বিজয়ের পর যখন চারদিকে ইসলামের জয়জয়কার তখন ইসলামের ঐ চির শত্রুরাও বাধ্য হয়েই নিজেদের গায়ে ইসলামের একটা লেবেল লাগিয়ে নেয়। তাই বলে ইসলামের সাথে তাদের শত্রুতার কোনো কমতি ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের উক্তিটি সুপ্রযোজ্য । তিনি বলেছিলেন-استسلموا و لم یسلموا“ ‏তারা মুসলমান হয়নি, ‏ইসলাম গ্রহণের ভান করেছিল মাত্র।”আবু সুফিয়ান প্রায় ২০ বছর ধরে রাসূলুল্লাহর ‎(সা.) ‏সাথে যুদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, ‏শেষের দিকে ৫/৬ বছর সে ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং ফেতনা সৃষ্টিতে সরদারের ভূমিকা পালন করে। মোয়াবিয়া তার পিতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নামে। এভাবে আবু সুফিয়ানের দল অর্থাৎ উমাইয়ারা ইসলামের চরম শত্রুতে পরিণত হয়। অথচ আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে প্রত্যক্ষ করি যে, ‏রাসূলুল্লাহর ‎(সা.) ‏ওফাতের মাত্র দশ বছর পরে সেই মোয়াবিয়া এসে ইসলামী শাসনযন্ত্রের শীর্ষে আরোহণ করে শাম বা সিরিয়ার গভর্নর হয়ে বসে। আরও বিশ বছর পরে ইসলামের এই শত্রু হয়ে বসলো স্বয়ং মুসলমানদের খলীফা! ‏এখানেই শেষ নয়, ‏রাসূলের ‎(সা.) ‏মৃত্যুর পর পঞ্চাশ বছর পর এবার মুসলমানদের খলীফা হল মোয়াবিয়া-পুত্র ইয়াজিদ। আর এই ইয়াজিদ নামায, ‏রোযা, ‏হজ্ব যাকাত তথা ইসলামের বিধি-বিধান পালনকারী মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে অর্ধ-শতাব্দী গড়াতে না গড়াতেই রাসূলের ‎(সা.) ‏সন্তানকে হত্যা করলো। এসব নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাথা বিগড়ে গেলেও ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঐ সব মুসলমানরা যে ইসলামকে পরিত্যাগ করেছিল তা নয়, ‏বরং ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏প্রতি তাদের ভক্তির অভাব ছিল তারও কোনো প্রমাণ মেলে না। কারণ, ‏ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏প্রতি বীতশ্রদ্ধ হলে তারা হয়তো বলতে পারতো যে,(নাউযুবিল্লাহ) ‏ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। সুতরাং তাঁকে হত্যা করতে কোনো বাধা নেই। বরং তারা নিশ্চিতভাবে ইয়াজিদের ওপর ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏সহস্র গুণে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় বিশ্বাস করতো। তাহলে এখন প্রশ্ন হল যে, ‏প্রথমতঃ কিভাবে মুসলিম শাসন ক্ষমতা ইসলামের ঘোর শত্রু আবু সুফিয়ানের দলের হাতে পড়লো? ‏দ্বিতীয়তঃ যে মুসলমানরা ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏রক্তের মূল্য যথার্থভাবে অবগত ছিল তারা কিভাবে ইমাম হোসাইনকে ‎(আ.) ‏হত্যা করলো? (কারবালায় ইমামের পক্ষে প্রায় ১০০ জন ও বিপক্ষে ইয়াজিদ বাহিনীর প্রায় ২০-৩০ হাজার সেনা সমাবেশের আর্ট ছবি) ‏প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলতে হয় যে, ‏উমাইয়াদের মধ্যে প্রথমভাগে মুসলমান হবার গৌরব অর্জন করেছিল এবং ইসলামের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করতো না,বরং ইসলামের জন্যে অনেক অবদানই রেখেছিল এমন ব্যক্তির ‎(অর্থাৎ ওসমানের) ‏খলীফা পদ লাভই ছিল এর মূল কারণ। এর ফলেই উমাইয়ারা সর্ব প্রথম মুসলিম খেলাফত লাভ করার সুযোগ পায়। আর,এ সুযোগের অপব্যবহার করে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে নিজেদের মুলুকে বা ব্যক্তিগত রাজত্বে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল। স্বয়ং মারওয়ানই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। অবশ্য দ্বিতীয় খলিফার শাসনামলেই মোয়াবিয়াকে শাম বা সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে নিযুক্তির মাধ্যমে ইসলামী শাসনযন্ত্রে উমাইয়াদের উত্থান ঘটে। পরবর্তীতে অন্য সব গভর্নরের পদে রদবদল করা হলেও মোয়াবিয়াকে তার পদে বহাল রাখা হয়। এটাই ছিল মুসলিম শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মাধ্যমে উমাইয়াদের হীন বাসনা চরিতার্থকরণের পথে প্রথম অনুকূল ইঙ্গিত।উমাইয়ারা তৃতীয় খলিফা ওসমানের শাসন ব্যবস্থায় দুর্নীতি ছড়ায় ও গোলযোগ সৃষ্টি করে। এতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ওসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং শেষ পর্যন্ত মোয়াবিয়া তার সে লালসা পূরণের জন্য মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গেল। সে নিজের পক্ষ থেকে ওসমানকে ‎‘মজলুম খলীফা’,‘ ‏শহীদ খলীফা’ ‏প্রভৃতি সুবিধামত স্লোগান দিয়ে প্রচারকার্য শুরু করলো এবংনিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে আদাজল খেয়ে লেগে গেল। সে ওসমানের রক্তভেজা জামা সবার সামনে মেলে ধরে তারঅসহায়ত্বকে গতিশীল রূপ দেয় এবং বলে বেড়ায়,‘যেহেতু ওসমানের হত্যার পর আলী ‎(আ.) ‏খলীফা হয়েছেন, ‏তাছাড়া ওসমানের হত্যাকারীদেরকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন-তাই ওসমান হত্যার জন্য মূলতঃ আলীই ‎(আ.) ‏দায়ী।’ ‏এই বলে সে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে থাকে যাতে মানুষের অনুভূতিকে আকৃষ্ট করতে পারে। তার এ প্রচেষ্টা সফলও হয়। কারণ, ‏তার কান্নার সাথে সুর মিলিয়ে অনেকেই চোখের পানি ঝরায় ও শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে মজলুম খলীফার রক্তের প্রতিশোধ নিতে যেই কথা-সেই কাজ- ‏এইরুপে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তারা মোয়াবিয়াকে আশ্বাস দেয়ঃ আমরা প্রস্তুত আছি, ‏তুমি যা বলবে তাই আমরা পালন করতে রাজী আছি। এভাবে পদলোভী স্বার্থপর মোয়াবিয়া মুসলমানদেরকে নিয়েই ইসলামের বিরুদ্ধে বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। ইসলামের ঊষালগ্নের প্রহেলিকাময় ঘটনাবলী এবং নবীর ‎(সা.) ‏উম্মতের হাতে নবীর ‎(সা.) ‏সন্তানের হত্যার কারণইতিহাসে বেশকিছু বিস্ময়কর ও নজিরবিহীন ঘটনা রয়েছে যেগুলোর কারণ এবং সূত্র খুঁজতে গিয়ে অনেকেই হয়তো বিপাকে পড়তে পারেন। এগুলোর মধ্যে একটি হল ইসলামের ঊষালগ্নেই সমসাময়িক নানা মতভেদ ও দ্বন্দ্ব।[কারবালা ময়দানের এখানেই ছিল ইমাম হুসাইনেরর ‎(আ) ‏একমাত্র জীবিত পুত্র ও নতুন ইমাম হযরত জাইনুল আবেদীন ‎(আ)'র তাবু। অসুস্থতার কারণে তিনি কারবালার যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। তাঁর বেঁচে যাওয়াটাও ছিল বিস্ময়কর এবং অলৌকিক] ‏আরেকটি ঘটনা হল ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏আন্দোলন এবং বিদ্রোহ। আত্মীয়-অনাত্মীয়,চেনা-অচেনা নির্বিশেষে সবাই কুফার লোকদের বিশ্বাসঘাতকতার ইস্যু টেনে ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏কে বিরত রাখতে চেষ্টা করছিল। তারা যে ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এ চেষ্টা চালিয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু রহস্যের বিষয় হল যে, ‏ইমাম হোসাইনও ‎(আ.) ‏তাদের চিন্তাধারাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেননি। অথচ মক্কা,কারবালা এবং কুফার পথে তার বিভিন্ন ভাষ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ‏ইমাম হোসাইনের ‎(আ.)ও একটা স্বতন্ত্র চিন্তাধারা ছিল যা অনেক ব্যাপক ও দূরদর্শী। তাঁর হিতাকাঙ্খীদের ভাবনা কেবল নিজের এবং পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। অথচ, ‏ইমাম হোসাইনের ‎(সা.) ‏চিন্তা ছিল দীন,ঈমান ও আকীদার নিরাপত্তাকে নিয়ে। তাই, ‏মারওয়ানের এক নসিহতের জবাবে ইমাম হোসাইন ‎(সা.) ‏বলেনঃو علی الاسلام السلام اذ قد بلیت الامة براع مثل یزید‘‘ ‏ইয়াজিদের মতো কেউ যদি উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের বিদায় ।’’মোয়াবিয়া ও ইয়াজিদের ইসলামী শাসন ক্ষমতা লাভ এবং ইসলামে অবিচল মুসলমানদের নিয়ে যথাক্রমে হযরত আলী ‎(আ.) ‏এবং ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী গঠন ছিল ইসলামের ঊষালগ্নের প্রহেলিকাময় ঘটনাবলীর অন্যতম। এখানে দুটি বিষয়কে খতিয়ে দেখা দরকার। তাহলেই ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা,এর কারণ,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উদঘাটন করা আমাদের পক্ষে সহজতর হবে। প্রথমতঃ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ইসলাম ও কোরআনের সাথে উমাইয়া বংশের তীব্র সংঘাত এবং দ্বিতীয়তঃ ইসলামী শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে তাদের সফলতা। ইসলামের সাথে উমাইয়াদের এহেন শত্রুতাসুলভ আচরণের কারণ হল যে,একাদিক্রমে তিন বংশ ধরে বনি হাশিম ও বনি উমাইয়ার মধ্যে গোষ্ঠীগত কোন্দল চলে আসছিল। অতঃপর যখন বনি হাশিম ইসলাম ও কোরআনের ধারক ও বাহক হবার গৌরব লাভ করে তখন বনি উমাইয়ারা ঈর্ষায় পুড়ে মরতে থাকে। ফলতঃ তারা বনি হাশিমকে সহ্য করতে পারলো না,সাথে সাথে ইসলাম ও কোরআনকেও না। দ্বিতীয় কারণ হলঃ তৎকালীন কোরাইশ গোত্রের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে উমাইয়াদের পার্থিব জীবনধারার সাথে ইসলামী বিধানের অসামঞ্জস্য ও বৈপরীত্য। ‎‌ইসলামী নীতিমালায় তাদের প্রভুত্বমূলক প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয়। তাদের ভাব ও মন-মানস ছিল সুবিধাবাদী ও বস্তুবাদী। উমাইয়াদের যথেষ্ট বুদ্ধি থাকলেও তাদের ঐ বস্তুবাদী মানসিকতার কারণে খোদায়ী বিধান থেকে তারা উপকৃত হতে পারেনি। কারণ ঐশী শিক্ষাকে সে-ই অবনত মস্তকে গ্রহণ করতে পারে যার মধ্যে মর্যাদাবোধ, ‏উন্নত আত্মা এবং মহত্বের আনাগোনা রয়েছে এবং যার মধ্যে সচেতনতা ও সত্যান্বেষী মনোবৃত্তি নিহিত আছে। অথচ উমাইয়ারা অতিশয় দুনিয়া চর্চা করতে করতে এসব গুণগুলোর সব ক’ ‏টি হারিয়ে বসেছিল। অগত্যা তারা ইসলামের সাথে শত্রুতায় নেমে পড়ে। পবিত্র কুরআনেও এ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সত্যকে মেনে নেবার সক্ষমতা যাদের আছে তাদেরকে ইশারা করে কুরআনে বলা হয়েছেঃ ‎لِیُنْذِرَ مَنْ کَانَ حَیًّا‘ ‏যাতে তিনি ‎(রাসূল) ‏সচেতনদের সতর্ক করতে পারেন।’’ (ইয়াসীনঃ ৭০) إِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّکْرَকেবল তাদেরকেই সতর্ক করো যারা উপদেশ মেনে চলে’ ‏। ‎(ইয়াসীনঃ ১১) وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِینَ‘ ‏আমরা কোরআন অবতীর্ণ করি ‎,যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। আর তা জালেমদের ক্ষতিই বাড়ায়। ‎’ ( ‏বনী ইসরাঈলঃ ৮২) لِیَمِیزَ اللَّهُ الْخَبِیثَ مِنَ الطَّیِّبِ‘ ‏এটি এজন্য যে,আল্লাহ কুজনদেরকে সুজন হতে পৃথক করবেন।’ (আনফাল ‎: ‏৪৮)মোদ্দাকথা,আল্লাহর রহমত থেকে তারাই উপকৃত হতে পারবে যাদের প্রস্তুতি ও যোগ্যতা রয়েছে। এটি একটি খোদায়ী নীতি। আর উমাইয়াদের মধ্যে সে প্রস্তুতি না থাকায় তারা ইসলাম এবং কোরআনের অমিয় সুধা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।রাসূলের ‎(সা.) ‏চাচা হযরত আব্বাস এবং আবু সুফিয়ানের মধ্যে এক সাক্ষাতে তাদের মধ্যকার কথোপকথন থেকে আবু সুফিয়ানের নিরেট ও অন্ধ আত্মার প্রকাশ ঘটে।কিন্তু উমাইয়া দল কিভাবে চিরকাল শত্রুতা করেও হঠাৎ করে একটা তৎপর ইসলামী দল হিসাবে আত্ম প্রকাশ করলো-উপরন্তু তারা ইসলামের শাসন ক্ষমতাকে নিজেদের কুক্ষিগত করতে সক্ষম হলো? ‏এ প্রশ্নের জবাবের শুরুতে একটা বিষয় উল্লেখ্য । তাহলো-নবনির্মিত ও নব প্রতিষ্ঠিত কোনো জাতি হঠাৎ করেই শক্তিশালী ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না, ‏চাই সে ঐক্য যত শক্তিশালীই হোক না কেন। একটু চিন্তা করলে আমাদের সামনে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হবে যে, ‏আরবে নব প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত মজবুত হতে না হতেই দ্বিতীয় খলীফার আমলে ব্যাপক দেশজয়ের ফলে ইসলামের অতি দ্রুত প্রচার ও প্রসার ঘটে। তাই ইসলাম তার স্বাভাবিক গতিতে সীমান্ত অতিক্রম করে দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েনি। ফলে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে দেখা দেয় নানা দ্বন্দ্ব-বিভেদ এবং গড়ে ওঠে অসংহত মুসলিম সাম্রাজ্য। এর পাশাপাশি আরবের ইসলামী সংস্কৃতিতে অনারব ও অনৈসলামী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ করে। ফলে অতি শীঘ্রই আরব তার স্বাতন্ত্র্য ও ইসলামী সাংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলে।কয়েক যুগ আগের কারবালা সেযুগের নব-প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র ‎‘ ‏লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ -এর পতাকাতলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল বটে এবং জাতি-বর্ণের ব্যবধানকে দ্রুত মোজেজার ন্যায় মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল বটে কিন্তু বিভিন্ন গোত্র, ‏ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ,রীতি-নীতি,আদব-কায়দা এবং ভিন্ন আকীদা-বিশ্বাসে গড়ে ওঠা মানুষগুলোর দীন ও দীনের আইন-কানুন মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সমান যোগ্যতা ও প্রস্তুতি ছিল না। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে একজন গাঢ় ঈমানদার হলে আরেকজন যে দুর্বল ঈমানের অধিকারী ছিল একথা অস্বীকার করার জো নেই। আরেকজন হয়তো সন্দেহ ও বিভ্রান্তিতে নিপতিত ছিল এবং কেউ কেউ অন্তরে কুফরি মনোভাবও হয়তো পোষণ করতো। এ ধরনের একটা জনসমষ্টিকে বছরের পর বছর তথা শতাব্দীর পর শতাব্দীঅবধি একটা নির্দিষ্ট সাম্রাজ্যের শাসনাধীনে ধরে রাখা সহজ কথা নয়।পবিত্র কোরআনে বহুবার মোনাফিকদের কথা উল্লেখ করেছে। মোনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক করার ধরন দেখে বোঝা যায় যে, ‏এরা মারাত্মক। কোরআন মুসলমানদেরকে এই গুরুতর বিপদ থেকে রক্ষা করতে চায়। আব্দুল্লাহ ইবনে সালুল মদীনার মোনাফিকদের শীর্ষে ছিল। কোরআন‘ ‏মুয়াল্লাফাতু কুলুবুহুম’ ‏এর কথা উল্লেখ করেছে যারা দায়ে পড়ে কিংবা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মুসলমানের তালিকায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে। যাহোক, ‏তারা যাতে আস্তে আস্তে খাঁটি মুসলমান হতে পারে সেদিকে তাদেরকে উৎসাহিত করা উচিত। বায়তুলমাল থেকে তাদেরকে সাহায্য করতে হবে যাতে অন্ততপক্ষে তাদের অনাগত বংশধররা খাটি মুসলমান হয়ে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে নিয়োগ করা মারাত্মক ভুল। রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏তাঁর দয়া ও সদাচরণ থেকে কাউকে বঞ্চিত করতেন না। এমন কি মোনাফিক এবং‘মুয়াল্লাফাতু কুলুবুহুম’ ‏দেরকেও না। কিন্তু তাদের প্রতি সতর্কাবস্থা তিনি কখনো বর্জন করেননি। আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহর ‎(সা.) ‏জীবদ্দশায় কোনো দুর্বল ঈমানদার,মুয়াল্লাফাতু কুলুবুহুম কিংবা মোনাফিক উমাইয়াদের কেউই ইসলামী শাসনযন্ত্রের ধারে কাছেও ঘেষতে পারেনি। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল,রাসূলের ‎(সা.) ‏মৃত্যুর পর থেকে বিশেষ করে তৃতীয় খলিফারআমলে তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কুক্ষিগত করে। রাসূলের ‎(সা.) ‏জীবদ্দশায় মারওয়ান ও তার বাবা হাকাম মক্কা ও মদীনা থেকে নির্বাসন প্রাপ্ত হয়েছিল। কিন্তু এ সময় তারা ফিরে আসার সুযোগ পায়। প্রথম দুই খলীফার আমলেও তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা সংক্রান্ত তৃতীয় খলিফার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ঐ মারওয়ানই ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি এবংওসমান হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তৃতীয় খলিফার সময় উমাইয়ারা বড় বড় পদে আসীন এবং বায়তুল মালে হস্তক্ষেপ করে। যেটুকু তাদের ঘাটতি ছিল তা হল ধার্মিকতা। কিন্তু তৃতীয় খলিফার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অদ্ভুত এক প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির মাধ্যমে‘ ‏ধার্মিক’ ‏হবার গৌরবটাও তারা হাতে পায় এবং সেটাকেও তাদের লক্ষ্য চরিতার্থ করার কাজে নিয়োগ করে। আর এর বদৌলতেই মোয়াবিয়া দীন ও দীনের শক্তির নামে হযরত আলীর ‎(আ.) ‏মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ও বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে মোয়াবিয়া আলেমদেরকে ভাড়া করে আরও একটা কৃতিত্ব বাড়ায়। অর্থাৎ এখন থেকে সে চারটি দিককে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে মুসলমানদের শাসন-মঞ্চে আবির্ভূত হয়। এগুলো ছিলঃ ‎(১) ‏বড় বড় রাজনৈতিক পদ ‎(২) ‏ধন-দৌলতের প্রাচুর্য ‎(৩) ‏অতিমাত্রায় ধার্মিকতা এবং ‎(৪) ‏দরবারী আলেম সমাজ। দামেস্কের জাইনাবিয়া মসজিদ ও হযরত জাইনাব ‎(সা)'র পবিত্র মাজার ‎(পুরোণো ফাইল ছবি) ‏তৃতীয় খলিফার যুগে উমাইয়াদের রাজনৈতিক উত্থান এবং বায়তুলমালের ছড়াছড়ি দেখে দীনদার এবং দুনিয়াদার উভয়পক্ষই ক্ষেপে ওঠে। দুনিয়াদাররা তাদের চোখের সামনে উমাইয়াদের ভোগ-বিলাস সহ্য করতে পারেনি কারণ তারা তাদের নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে সচেতন ছিল। আর দীনদাররা দেখছিল যে, ‏ইসলামী সমাজের আশু ধ্বংস অনিবার্য। এ কারণেই দেখা যায় যে,আমর ইবনে আস যেমন এর বিরোধিতায় নামে তেমনি আবুজর বা আম্মারও এর বিরোধিতা করেন। আমর ইবনে আস বলেঃ‘ ‏আমি এমন কোনো রাখালের পার্শ্ব অতিক্রম করিনি যাকে উসমানের হত্যার জন্যে উস্কানি দেই নি’। হযরত আলী ‎(আ.) ‏জামালের যুদ্ধে বলেন ‎:لعن الله اولانا بقتل عثمان‘ ‏ওসমান হত্যা করতে আমাদের মধ্যে যারা অগ্রণী ছিল আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দিক।’যখন হযরত ওসমান অবরোধের মধ্যে ছিলেন তখন হযরত আলী তাকে বিভিন্ন উপদেশও দিক-নির্দেশনার পাশাপাশি তাকে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করেছেন। কিন্তু মোয়াবিয়া এই ফেতনা-ফ্যাসাদের সূচনা ও পরিণতি সম্বন্ধে ভালভাবেই অবগত ছিল। তাই খলিফা ওসমান তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেও মোয়াবিয়া তার বিশাল বাহিনী নিয়ে সিরিয়াতেই বসে থাকলো। কারণ সে বুঝেছিল যে, ‏জীবিত ওসমানের চেয়ে মৃত ওসমানই তার জন্যে বেশি সুবিধাজনক। তারপর যখন ওসমানের হত্যার সংবাদ শুনলো অমনি হায় ওসমান! ‏হায় ওসমান! ‏বলে চীৎকার করে উঠলো। খলিফা ওসমানের রক্ত ভেজা জামা লাঠির মাথায় করে ঘুরালো,মিম্বারে বসে শোক গাঁথা গেয়ে নিজেও যেমন কাঁদলো তেমনি অজস্র মানুষের চোখের পানি ঝরালো, ‏আর কোরআনের এই আয়াত নিজের স্লোগানে পরিণত করল: وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِیِّهِ سُلْطَانًا ‘ ‏যে মজলুম অবস্থায় নিহত হয় তার উত্তরসূরিকে আমরা কর্তৃত্ব দান করেছি’ ( ‏বনী ইসরাইল ‎: ‏৪৪ ‎) ‏ফলে ওসমানের রক্তের বদলা নেয়ার জন্যে মোয়াবিয়া ধন-দৌলত ও সরকারী পদগুলোর সাথে ধার্মিকতাকেও যুক্ত করতে সক্ষম হয় এবং ইসলামী সাম্রাজ্যের একটা বড় অংশের অধিকর্তা হয়ে বসে। অন্যকথায়, ‏ধার্মিকতার শক্তিকে রাজনীতি ও ধন-দৌলতের সাথে যোগ করে জনগণ তথা হযরত আলীর ‎(আ.) ‏অনুসারীদেরকে সংকটাবস্থায় নিক্ষেপ করে। তাদেরকে বস্তুগত দিক থেকেও যেমন সংকটে ফেলে তেমনি আত্মিক ও মানসিকভাবেও। অবশ্য কেবল ধার্মিকতা মজলুমের পক্ষ হয়েই অগ্রসর হয়। কিন্তু যদি জনগণের অজ্ঞতা এবং ক্ষমতাসীনদের প্রতারণার বলে ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হয় তাহলে আর দুর্দশার শেষ নেই। আল্লাহ আমাদেরকে সেদিনের হাত থেকে বাঁচান যেদিন ধর্ম রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত হবে।এই ছিল ইসলামী খেলাফত লাভ ও আলেম সমাজের ওপর মোয়াবিয়ার কর্তৃত্ব লাভ করার সংক্ষিপ্ত কাহিনী,যা তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে সম্ভব হয়েছিল। যথাঃ উমাইয়াদের, ‏বিশেষ করে মোয়াবিয়ার কূটবুদ্ধি, ‏পূর্ববর্তী খলীফাদের সরলতা যারা এদেরকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় স্থান দিয়েছিল আর জনগণের অজ্ঞতা ও মূর্খতা।মোয়াবিয়া তথা উমাইয়ারা দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্যে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়;(১) ‏জাতিগত ব্যবধান সৃষ্টি যার ভিত্তিতে আরব,অনারবের চেয়ে অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হতো।(২) ‏গোত্রীয় ব্যবধান সৃষ্টি যার ভিত্তিতে আব্দুর রহমান ইবনে আউফের মতো লোকেরা লাখপতি হয় অথচ ফকীররা ফকীরই থেকে যায়।আলী ‎(আ.) ‏দুনিয়া ত্যাগ করলে মোয়াবিয়া খলীফা হয়। কিন্তু আশ্চর্যের সাথে সে দেখতে পেল যে,তার ধারণাকে বদলে দিয়ে মৃত্যুর পরেও হযরত আলী ‎(আ.) ‏একটা শক্তি হয়েই বহাল রয়ে গেছেন। মোয়াবিয়ার ভাব-লক্ষণ দেখে বোঝা যেত যে,এ কারণে সে বড়ই উদ্বিগ্ন ছিল। তাই মোয়াবিয়া হযরত আলীর ‎(আ.) ‏বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার যুদ্ধে নামে। আদেশ জারী করা হলো যে, ‏মিম্বারে এবং খোতবায় হযরত আলী ‎(আ.) ‏কে অভিশাপ দিতে হবে। হযরত আলীর ‎(আ.) ‏অন্যতম সমর্থকদেরকে বেপরোয়াভাবে হত্যা করা হলো এবং বলা হলো যে, ‏প্রয়োজনে মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে হলেও তাদেরকে বন্দী করবে যাতে হযরত আলীর ‎(আ.) ‏গুণ-মর্যাদা প্রচার না হয়। পয়সা খরচ করে হযরত আলীর ‎(আ.) ‏শানে বর্ণিত হাদীসগুলো জাল করে উমাইয়াদের পক্ষে বর্ণনা করা হয়। তবুও বরাবরই উমাইয়া শাসনের জন্যে হযরত আলীর সমর্থকরা একটা হুমকি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।উমাইয়া শাসনামলের বিশ্লেষণ আমাদেরকে কেবল বিস্ময়াভিভূতই করে না বরং আমাদের জন্যে দিক নির্দেশনা বের হয়ে আসে। এটা যেনতেন কোনো ব্যাপার নয় যে, ‏চৌদ্দশ’ ‏বছর আগের ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কি লাভ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাব। কারণ,চৌদ্দশ বছর আগের ইতিহাসের ঐ খণ্ড অধ্যায়ে ইসলামের মধ্যে যে বিষক্রিয়া সংক্রমিত হয়েছিল তা থেকে মুক্তির আশা সুদূর পরাহত। তাই এ নিয়ে গবেষণা করলে বরং আমাদের লাভ ছাড়া কোনো ক্ষতি নেই। উমাইয়াদের ঐ বিষাক্ত চিন্তার উপকরণকে ইসলামী চিন্তাধারার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। ইসলামের খাঁটি রূপ দেখতে হলে এসব ভেজাল উপকরণের অপসারণ দরকার। খোদা না করুন,আজ আমরা যারা দিবারাত্রি উমাইয়াদের গালি দেই তাদের মধ্যেও হয়তো উমাইয়া চিন্তাধারা বিদ্যমান। অথচ আমরা তাকে একবারে বিশুদ্ধ ইসলাম বলে মনে করি।মোয়াবিয়া যখন দুনিয়া ত্যাগ করে তখন ইতোমধ্যে সংযোজিত কিছু বিদআত প্রথার সাথে আরও কয়েকটি প্রথার চলন করে যায়। যেমন ‎:এক ‎. ‏হযরত আলীকে ‎(আ.) ‏অহরহ অভিসম্পাত করাদুই ‎. ‏টাকার বিনিময়ে হযরত আলীর ‎(আ.) ‏বিরুদ্ধে হাদীস জাল করা।তিন ‎. ‏প্রথমবারের মতো ইসলামী সমাজে বিনাদোষে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করার অবাধ নীতি চালু করা। এছাড়া সম্মানীয়দের সম্মান খর্ব করা এবং হাত-পা কেটে বিকল করে দেয়া।চার ‎. ‏বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা। যে প্রথা পরবর্তী খলীফারাও অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করে। এসব অমানবিক প্রথার চলন মোয়াবিয়াই চালু করে যায়। সে ইমাম হাসান ‎(আ.),মালেক আশতার, ‏সা’ ‏দ ইবনে ওয়াক্কাছ প্রমুখকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে।পাঁচ ‎. ‏খিলাফতকে নিজের খান্দানে আবদ্ধ রেখে রাজতন্ত্র প্রথা চালু করা এবং ইয়াজিদের মতো অযোগ্য ব্যক্তিকেও খলীফা পদে মনোনীত করা।ছয় ‎. ‏গোত্র বৈষম্যের স্তিমিতপ্রায় আগুনকে পুনরায় অগ্নিবৎ করা।এগুলোর মধ্যে হযরত আলীকে ‎(আ.) ‏অভিসম্পাত করা,হাদীস জাল করা এবং ইয়াজিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ ছিল মোয়াবিয়ার কার্যকলাপের অন্যতম। রূপান্তরিতইয়াজিদ ছিল মূর্খ ও নির্বোধ। সাধারণতঃ খলীফার পুত্রদের মধ্যে যাকে ভাবী খলীফা হিসাবে মনোনীত করা হতো তাকে বিশেষ শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হত;যেমন আব্বাসীয়দের মধ্যে প্রচলন ছিল। কিন্তু ইয়াজিদ বড় হয় মরুভূমিতে রাজকীয় বিলাসিতায়। দুনিয়ার খবরও সে রাখতো না;পরকালেরও না। মোটকথা খলীফা হবার বিন্দুমাত্র যোগ্যতাও তার ছিল না। ওসমানের সরলতার সুযোগে বায়তুলমাল লুণ্ঠিত হয়েছিল,বড় বড় পদগুলো অযোগ্যদের হাতে চলে গিয়েছিল। কিংবা মোয়াবিয়া হযরত আলীর ‎(আ.) ‏বিরুদ্ধে অভিসম্পাত দেয়া,হাদীস জাল করা, ‏বিনা দোষে হত্যা, ‏বিষ প্রয়োগ,খেলাফতকে রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত করা প্রভৃতি প্রথা চালু করেছিল। কিন্তু ইয়াজিদের যুগে এসে ইসলাম আরো বিপর্যস্ত হতে থাকে। দেশ-বিদেশের দূত এসে সরাসরি ইয়াজিদের কাছে যেত। কিন্তু,অবাক হয়ে দেখতো যে,রাসূলুল্লাহর ‎(সা.) ‏আসনে এমন একজন বসে আছে যার হাতে মদের বোতল,আর পাশে বসিয়ে রেখেছে রেশমী কাপড় পরা বানর। এরপরে ইসলামের ইজ্জত বলতে আর কি-বা থাকতে পারে? ‏ইয়াজিদ ছিল অহংকারী,যৌবনের পাগল,ক্ষমতালোভী এবং মদ্যপ। এ কারণেই ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏বলেছিলেনঃ‘ ‏যদি ইয়াজিদের মতো দুর্ভাগা উম্মতের শাসক হয় তাহলে এখানেই ইসলামের ইতি টানতে হবে। ইয়াজিদ প্রকাশ্যে খোদাদ্রোহিতায় নামে। অন্য কথায়,এতোদিনের গোপনতার পর্দা ছিন্ন করে ইয়াজিদ উমাইয়াদের আসল চেহারাটা প্রকাশ করে দেয়। ইসলাম যদি জিহাদ করার আদেশ দিয়ে থাকে-যদি অন্যায়ের গলা চেপে ধরার আদেশ দিয়ে থাকে তাহলে এটাই ছিল তা পালনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। তা নাহলে,এরপর আর কি নিয়ে ইসলামের দাবী উত্থাপন করার থাকে?কাজেই,যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, ‏ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏কেন বিদ্রোহ করতে গেলেন তাহলে একই সাথে তার এ প্রশ্নও করা উচিত যে,রাসূলুল্লাহ ‎(সা.) ‏কেন আপোষহীন বিদ্রোহ করেছিলেন কুফরের বিরুদ্ধে ‎? ‏কিংবা,হযরত ইবরাহীম ‎(আ.) ‏কেন একা হয়েও নমরুদের বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন? ‏আর কেনই বা হযরত মূসা ‎(আ.) ‏একমাত্র সহযোগী ভ্রাতা হারুনকে নিয়ে ফেরাউনের রাজ প্রাসাদে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন? ‏এসবের জবাব খুবই স্পষ্ট যা ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। নাস্তিকতা এবং খোদাদ্রোহিতাকে সমূলে উৎপাটন করাই ছিল এসব কালজয়ী মহা পুরুষদের মূল উদ্দেশ্য । আর নাস্তিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে বস্তুগত সাজ-সরঞ্জাম না হলেও চলে। কারণ,স্বয়ং আল্লাহই তাদের সহায়। তাই ইমাম হোসাইন ‎(আ.)ও উমাইয়া খোদাদ্রোহিতা এবং ইয়াজিদী বিচ্যুতিকে ধূলিসাৎ করে দেবার জন্যেই একবারে অসহায় অবস্থায় পড়েও বিদ্রোহে নামেন। প্রকৃতপক্ষে তার এ পদক্ষেপ ছিল পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলদেরই ‎(আ.) ‏অনুকরণ। বুদ্ধিজীবীদের মতে,বিদ্রোহ তখনই মানায় যখন বিদ্রোহীদের অন্ততপক্ষে সমান সাজ-সরঞ্জাম এবং শক্তি থাকে। কিন্তু,ঐশী-পুরুষদের বেলায় আমরা এই যুক্তির কোনো প্রতিফলন দেখি না। বরং তারা সবাই একবারে খালি হাতে তৎকালীন সর্ববৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ইমাম হোসাইন ‎(আ.)ও এ নিয়মের ব্যতিক্রম নন। তাছাড়া ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏যদি সেদিন ইয়াজিদ বাহিনীর সমান এক বাহিনী নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হতেন তাহলে তার এ অসামান্য বিপ্লব ঐশী দ্যুতি হারিয়ে অতি নিষ্প্রভ হয়ে পড়তো। এই দর্শন প্রতিটি ঐশী বিপ্লবের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল।মানব সমাজে সংঘটিত অজস্র বিপ্লবের মধ্যে ঐশী বিপ্লবকে পৃথক মনে করার দুটি মাপকাঠি রয়েছে:এক ‎. ‏ঐ বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিচার। অর্থাৎ এসব বিপ্লব মনুষ্যত্বকে উন্নত ও উত্তম করতে,মানবতাকে মুক্তি দিতে,একত্ববাদ ও ন্যায়পরায়ণতাকে রক্ষা করতে এবং জুলুম ও স্বৈরাচারের মূলোৎপাটন করে মজলুমের অধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্যেই পরিচালিত হয়। জমি-জায়গা বা পদের লোভে কিংবা গোষ্ঠীগত বা জাতিগত বিদ্বেষের কারণে নয়। দুই ‎. ‏এসব বিপ্লবের উদ্ভব হয় স্ফুলিঙ্গের মতো। চারদিকে যখন মজলুম-নিপীড়ন এবং অত্যাচার ও স্বৈরাচারের ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক সেই মুহূর্তে অন্ধকারের বুক চিরে বারুদের মতো জ্বলে ওঠে এসব বিপ্লব। চরম দুর্দশায় নিমজ্জিত হয়ে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়ে তখন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো মানুষের ভাগ্যাকাশে আশার দীপ জ্বালিয়ে দেয় এসমস্ত ঐশী বিপ্লব। এই চরম দুর্দিনে মানবতাকে মুক্তি দেয়ার মতো দূরদর্শিতা একমাত্র ঐশী-পুরুষদেরই থাকে। কিন্তু,সাধারণ মানুষ একবারে হাল ছেড়ে দেয়-এমনকি কেউ প্রতিকারে উদ্যোগী হলেও তারা তাকে সমর্থন করতে চায় না। এ ঘটনা আমরা ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏বিপ্লবের মধ্যেও প্রত্যক্ষ করি। তিনি যখন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন তখন সমসাময়িক তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা এটাকে অবাস্তব ব্যাপার বলে মনে করল। এ কারণে তাদের অনেকেই ইমাম হোসাইনের ‎(আ.) ‏সাথে একাত্মতা প্রকাশে বিরত থাকে।কিন্তু ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏ভালভাবে জানতেন যে,এ মুহূর্তে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তাই অন্য কারও সহযোগিতা থাকবে কি-না সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নবী-রাসূলদের মতো নিজেই আগুনের ফুলকির মতো জ্বলে উঠলেন। হযরত আলী ‎(আ.) ‏বনী উমাইয়াদের ধূর্তামি সম্পর্কে বলেন ‎:انّها فتنة عمیاء مظلمة‘‘ ‏তাদের এ ধোঁকাবাজি নিরেট ও অন্ধকারময় প্রতারণা।’’তাই ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏এই অন্ধকার থেকে উম্মতকে মুক্ত করার জন্যে ইতিহাসে বিরল এক অসামান্য ও অবিস্মরণীয় বিপ্লবের পথ বেছে নেন।প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ নবীবংশের ৫ম বংশধর ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আঃ.)'এর শাহাদাতবার্ষিকী৭ ই জিলহজ্ব ইসলামের ইতিহাসের এক শোকাবহ দিন। কারণ, হযরত মাওলা মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতে জন্ম-নেয়া পঞ্চম ইমাম তথা হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.) ১১৪ হিজরি সনের ৫৭ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। এই মহান ইমামের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা।ইমাম মুহাম্মদ বাক্বির (আ.)'র জন্ম হয়েছিল পবিত্র মদীনায় ৫৭ হিজরির পয়লা রজব অথবা তেসরা সফর। কারবালার মহা-ট্র্যাজেডি ও মহা-বিপ্লবের সময় তিনি পিতা ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ও দাদা ইমাম হুসাইন (আ.)'র সঙ্গে ছিলেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর।তাঁর মা ছিলেন হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)'র কন্যা ফাতিমা। এভাবে ইমাম বাক্বির (আ.) ছিলেন পিতা ও মাতা- উভয়ের দিক থেকেই হযরত আলী (আ.) ও নবী-নন্দিনী ফাতিমা (সা.)'র বংশধর।পিতা ইমাম সাজ্জাদ তথা আহলে বাইতে জন্ম-নেয়া চতুর্থ ইমাম হযরত ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) হিজরি ৯৫ সালে শাহাদত বরণ করলে তিনি মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব তথা ইমামত লাভ করেন। আর সেই থেকে শাহাদত লাভের সময় পর্যন্ত তথা ১৯ বছর পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। মদীনায় পবিত্র জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়। প্রায় একই স্থানে রয়েছে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) ও ইমাম বাক্বির (আ.)'র পুত্র তথা বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতে জন্ম-নেয়া ষষ্ঠ ইমাম হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.)'র কবর। এখানে তাঁদের সবার কবরের ওপরই ছিল সুদৃশ্য গম্বুজসহ মাজার। কিন্তু প্রায় ১২/১৩ শত বছর ধরে এইসব মাজার টিকে থাকা সত্ত্বেও এখন থেকে প্রায় ৮৮ বছর আগে ধর্মান্ধ ওয়াহাবিরা এই পবিত্র মাজারগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে।সিরিয়ার এক ব্যক্তি নিজেকে অত্যধিক জ্ঞানী বলে মনে করতেন। সুযোগ পেলেই ইমাম বাক্বির (আ.)-কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা ছিল তার স্বভাব। একদিন সে ইমামের ক্লাসে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে ইমামকে বললেন: নবীর আহলে বাইতের প্রতি আমার কোনো অনুরাগ নেই। কিন্তু যেহেতু আপনি কথা বলার শিল্পে ও নানা জ্ঞানে বেশ দক্ষ তাই আপনার ক্লাসে আসি। কিন্তু আমি আপনার অনুরাগী ও অনুসারী নই। ইমাম বাক্বির আ. বললেন: আল্লাহর কাছে কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। এভাবে সে ইমামের প্রতি অপমানজনক আচার-আচরণ চালিয়ে যাচ্ছিল।সিরিয় এই পণ্ডিত কিছুকাল পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। নানা ধরনের চিকিতসায় কোনো সুফল আসছিল না। চলাফেরার শক্তি হারা ওই পণ্ডিতের অবস্থা এক রাতে বেশ শোচনীয় হয়ে পড়ে। সে এ সময় স্বপ্ন দেখে যে, তাঁর মৃত্যু হয়েছে ও এই সময় ইমাম বাক্বির (আ.) তার আরোগ্যের জন্য দোয়া করছেন; আর আল্লাহ ইমামের দোয়া কবুল করায় পণ্ডিত আবারও জীবন ফিরে পেয়েছে। এই স্বপ্নের কথা তুলে ধরে পণ্ডিত বন্ধুদের দিয়ে ইমামকে অনুরোধ জানান তিনি যেন তাকে দেখতে আসেন। ইমামের কাছ যাওয়ার শক্তি তার ছিল না বলে সে দুঃখ প্রকাশ করে। এদিকে আহলে বাইতের এমন ঘোর বিরোধী ব্যক্তির মুখে এমন কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়। যাই হোক, ইমাম তাকে দেখতে আসেন ও ওই পণ্ডিতের পরিবারের সদস্যদের বলেন তার জন্য বিশেষ ওষুধ তৈরি করতে। ইমাম নিজের হাতে তাকে ওষুধ সেবন করান। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ওই ব্যক্তি কয়েক দিনের মধ্যেই মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওঠে। এবার সে নিজেই ইমাম বাক্বির (আ.)'র কাছে এসে অত্যন্ত আদব সহকারে বসে ইমামের কাছে ক্ষমা চায় ও অশ্রুসজল চোখে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি মানুষের মধ্যে আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ এবং যারাই আপনাকে ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বা জোটবদ্ধ হবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।ইমাম বাক্বির (আ.) ছিলেন অন্য ইমামদের মতই মানুষের জন্য সর্বাত্মক পথ-প্রদর্শক, সংশোধক ও সমাজ-সংস্কারক। তাঁর ইবাদত-বন্দেগি, খোদাভীরুতা, মহানুভবতা ও দয়া ছিল সবার জন্যই অনুকরণীয় আদর্শ। মানুষকে হেদায়াতের কঠিন দায়িত্ব পালনে মশগুল থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজের পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কৃষিকাজের মত কঠোর পরিশ্রম করতেন। ইমাম অলসতা ও বেকারত্বকে ঘৃণা করতেন।ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রচারের জন্য এই মহান ধর্ম ইমাম বাক্বির (আ.)'র কাছে চির-ঋণী হয়ে আছে। ইমাম অনেক সুযোগ্য ছাত্র তৈরি করেছিলেন। তাঁকে বাক্বির বলা হয় এ কারণে যে তিনি ছিলেন দ্বিন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশকারী এবং বিশ্লেষক। আল্লাহ-প্রদত্ত অলৌকিক জ্ঞানের অধিকারী ইমামের জ্ঞানের কাছে সে যুগের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীরাও ছিলেন শিশুর মত তুচ্ছ। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারিকে বলেছিলেন, তুমি আমার সন্তান তথা বংশধর বাক্বিরকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। তুমি তখন তাঁকে আমার সালাম পৌঁছে দিও। জাবির শিশু ইমাম বাক্বির (আ.)'র সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাঁর পায়ে চুমো দিয়ে বলেছিলেন, "হে নবীর সন্তান! আপনার জন্য আমার জীবন উতসর্গিত হোক। আপনার পিতা নবী (সা.)'র সালাম গ্রহণ করুন, কারণ, তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। ইমাম বাক্বির (আ.) অশ্রুসজল চোখে বললেন: সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)'র ওপর ততদিন ধরে বর্ষিত হোক যতদিন এই আকাশ ও জমিন টিকে থাকবে। আর তোমার ওপরও সালাম হে জাবির, যেহেতু তুমি তাঁর সালাম আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছ।"জনৈক আসাদ বিন কাসির বলেছেন : আমি একবার আমার দরিদ্র অবস্থা এবং আমার ওপর ভাইদের অত্যাচারের ব্যাপারে ইমামের কাছে নালিশ করলাম। তিনি বললেন : "যে ভাই সামর্থবান ও সম্পদশালী অপর ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে, কিন্তু ঐ ভাই দরিদ্র হয়ে গেলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ও তার ওপর অত্যাচার চালায় সে অত্যন্ত খারাপ মানুষ।" এরপর তিনি আমাকে ৭০০ দেরহাম দান করার নির্দেশ দিলেন যাতে আমি সেই অর্থ দিয়ে আমার দারিদ্র্য দূর করতে পারি। এরপর ইমাম আমাকে বললেন : "তুমি স্বচ্ছল হতে পারলে কিনা তা আমাকে জানিও"।জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল অন্যান্য ইমামদের মতই ইমাম বাক্বির (আ.)'র চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বনি উমাইয়া শাসকদের নানা কুকীর্তির সমালোচনা করতেন। শাসকদের জুলুম জাতির জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনে বলে তিনি মনে করতেন। হিশাম বিন আবদুল মালিক ইমামের এইসব ভূমিকার জন্য তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন ও গোপনে তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেন। হিশাম তাঁকে সিরিয়ায় নিজ দরবারেও তলব করেন। ইমাম বাক্বির আ. সেখানে উপস্থিতি হয়ে বলেন:তোমার হাতে রয়েছে ক্ষণস্থায়ী রাজত্ব, কিন্তু আমাদের জন্যই হল চিরস্থায়ী নেতৃত্ব ও শাসন এবং খোদাভীরুদের জন্যই রয়েছে শুভ-পরিণাম। সিরিয়ায় ইমাম বাক্বির (আ.)'র উপস্থিতি তাঁর আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বকে সবার কাছেই স্পষ্ট করে দেয়। সেখানেও তিনি খাঁটি ইসলামকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন। ফলে গণ-জাগরণের ভয়ে ভীত হিশাম ইমামকে আবারও মদীনায় ফেরত পাঠান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিশামের হিংসার হিংস্র আগুন ইমাম বাক্বির (আ.)-কে শহীদ করার মাধ্যমে ইসলামের এই অনন্য মহামানবকে মুসলমানদের কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নেয়। কিন্তু হিশামের হিংসার অনল নেভাতে পারেনি ইমামের রেখে যাওয়া জ্ঞানের আলো এবং আহলে বাইতের প্রতি অফুরন্ত ভালবাসা। আহলে বাইত চিরকালই প্রকৃত মুমিনের হৃদয়ে বিরাজ করছেন ইসলামের প্রকৃত নেতা হিসেবে।ইমাম মোহাম্মাদ বাক্বির (আ.)'র একটি বাণী শুনিয়ে এবং সবাইকে আরো একবার গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে এই মহান ইমামের শাহাদত-বার্ষিকীর আলোচনা শেষ করবো।ইমাম বাক্বির (আঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তির অন্তরে জ্বলজ্বলে ও সাদা কোন অংশ নেই, সে মুমিন নয়। যখন ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করে তখন ঐ সাদা অংশের ওপর কালো একটি ছাপ পড়ে। যদি সে তওবা করে আল্লাহর কাছে অনুশোচনা করে তবে সেই কালো ছাপ মুছে যায়। আর যদি সে তওবা না করে পাপ কাজ অব্যাহত রাখে, তবে কালো ছাপ গভীর থেকে গভীরতর হয়। একসময় তার অন্তরে আর কোন সাদা জায়গা থাকে না,পুরোপুরি কালো হয়ে যায়। এ ধরনের অন্তরের অধিকারীরা কখনো সুপথ পায় না।প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ সবার উদ্দেশে মিনতি করে বলছি আপনারা এই পোস্ট পড়বেন কেউ এড়িয়ে যাবেন নাআল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓জবেহ আজিম বা মহান কোরবানী শুরু হল কা’বা বানানে ওয়ালা, হযরত ইসমাঈল (আ:) মাধ্যমে আর শেষ হল কা’বা বাঁচানে ওয়ালা, মাওলা হুসাইন আলাই‌হিস সালাম মাধ্যমে।আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছসর পূর্বে সংঘটিত পিতা পুত্রের আত্মত্যাগের এই অপূর্ব ঘটনা যুগ যুগ ধরে আল্লাহ্ তালার অবতীর্ণ দ্বীনে হক-ইছলামের হেফাজত ও মর্যাদা রক্ষায় ও মুসলিম জাতির ন্যায্য স্বর্থরক্ষার উৎসরূপে কাজ করে আসছে। আনুষ্ঠানিক কোরবানী বিগত সাড়ে হাজার বছর ধরে সমগ্ৰ মুছলিম বিশ্বে চালু রয়েছে। এটা হজরত ইবরাহিম (আঃ) ও কিশোর পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-এর ঐশী প্রেমের চরম নিদর্শন। ইহা পিতা পুত্র উভয়েরই খােদার রাহে উৎসর্গ হওয়ার চির অস্নান স্মরণিকা মাত্র।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুছলমানই কোরবানীর শিক্ষা সম্বন্ধে অবগত নয়। আল্লাহ্ তালার আদেশে আত্মোৎসর্গের এমন মহান ঘটনা হতে যে তাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যে সম্বন্ধে মুছলমানই অজ্ঞতার তিমিরে ডুবে আছে।পিতা পুত্রের আত্মোৎসর্গের মহান ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? ইহা কি খোদা প্রেমের চরম ও পরম নিদর্শন নয়?আল কোরআন-এর ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓“যবেহ ’ অর্থাৎ ‘যাবিহুন বা মাযবুহুনে বোজর্গ ও আজীমবোজর্গঅর’ যার বাংলা শাব্দিক অর্থঃ মহান ও বৃহৎ যবাইকৃত। এধরণের গুণবাচক শব্দ কোরআনে একটি বার ব্যবহৃত হয়েছে।সূরা আস সাফ্‌ফাত এর ১০৭ নং আয়াতে, এই আয়তে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ‘অফাদাইনাহু বিযিবহিন আজীম’ অর্থাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।’(ছুরে ছাফফাত-এর ১০২ আয়াত থেকে ১০৯ আয়াত পর্যন্ত দেখার অনুরোধ করছি)।অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি তাফসীরকারী এখানে বলেন যে ‘জবেহ আজিম’ এর উদ্দেশ্য ভেড়া নামক পশু যবেহকে বুঝানো হয়নি।আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে যেহেতু এই যবেহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ‘আজীম’ বলে নামকরণ করা হয়েছে; সেহেতু সয়ং যবেহ নিজস’লে কখনো আজিম হতে পারে না,এর উদ্দেশ্য ভিন্ন।হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। যখন হজরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইছমাইল (আঃ) কে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কোরবানী করতে তৈরী হলেন তখন তার হাত থেমে গেল, পুত্র গর্দান ঝুকিয়ে দিলেন এবং সানন্দে ভাবতে লাগলেন। কখন কোরবানী হবেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর হাতের শক্তি লোপ পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলেন, কোরবানী করতে পারছি না কেন? আমার সবচেয়ে বেশী মহব্বতের বস্তুই ত কোরবান করা আল্লাহর আদেশ। এ দুনিয়ায় পুত্র ইছমাইলের চেয়ে বেশী মহব্বতের তা আমার আর কিছু নেই। আমার হাত কেন উঠছে না? ছুরিকে কি কেউ ধরে রাখল? না আমার মধ্যে কি মহব্বত এসে গেল? নিশ্চয়ই মহব্বত আসে নাই। তা আসলে অবশ্যই আমার হৃদয় কাঁপত, চক্ষুতে জল আসত। তার কোনটাই আমার মধ্যে আসে নাই। আচ্ছা আবার চেষ্টা করব, আবার ছুরি চালাব এবং দেখব কে আমার হাতের শক্তি কেড়ে নেয়। হজরত ইবাহিমের যে হাতে ছুরি ছিল, হঠাৎ সে হাতে টের পেলেন যে, তা পাথরের মত ভারী হয়ে গেছে। হাতের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। ছুরি বলল, হে ইবরাহিম (আঃ) আমার কোন দোষ নাই, আমি কি করব। এ তোমার আল্লাহর হুকুম। হজরত ইবরাহিম রাগ করে ছুরি ফেলে দিলেন। ছুরি বলতে লাগল, ইয়া খলিলুল্লাহ আমার উপর কেন রাগ করছেন? আপনার আরজু, যে ইছমাইলকে কোরবানী করবেন এবং এটা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু এও আল্লাহর হুকুম যে আমি আপনার হুকুম এনকার করা(হুকুম রদ করা)। আমি বলি আল্লাহ্ পাকের যা হুকুম তাই হয়েছে, এতে আমার .কি দোষ। হজরত ইবরাহিম হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন। হঠাৎ টের পেলেন পানির মত কি যেন উনার কদম মোবারকে লাগছে। চক্ষু খুলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সত্যই কি দেখছেন, না স্বপু? হজরত ইছমাইল দাঁড়িয়ে আছেন, এদিকে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে গেছে। বেহুস বেকারার হয়ে হজরত ইবরাহিম কাঁদতে লাগলেন ও ফরিয়াদ করতে লাগলেন, আয় পাক পরওয়ারদেগার, কেন আমার কোরবানী কবুল করলেন না? কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হেয়ে পড়লেন। তখনই আল্লাহপাকের আদেশ আসল,হে ইব্রাহিম তুমি কেদনা,তোমার ছেলেকে কোরবানী করতে পার নাই, কিন্তু আমি তোমাকে এর চেয়ে বড় ও মহান এক কোরবানী দান করলাম। হজরত ইবরাহিমের বেকারারী দূর হয়ে হুস আসল ও শুনতে পেলেন,আয় খলিল তুমি বল যে, মোহাম্মদ (দঃ) কি সবচেয়ে বেশী আজিজ নয়❓হজরত ইবরাহিম চতুর্দিকে দেখতে লাগলেন, হঠাৎ আছমানের দিকে চাইলেন ও দেখতে পেলেন “জবেহ আজিম”। (মিনাতে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কুরাবানী করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুরাবনীর পরিবর্তে মিশাল কুরবানী “জবেহ আজিম” হচ্ছে কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর কুরবানী তারই বংশে দান করলেন) ।হজরত ইবরাহিম আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলেন ছবতে রছুল, নোয়াছায়ে রছুল জামে শাহাদত পান করলেন। রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক তার বদলা দেবেন।অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার নিকট আমার সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?তিনি বললেনঃ হে আমার পরোয়ারদেগার তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার দোস্ত- মুহাম্মাদ হলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে ইব্রাহীম, সে সবচেয়ে প্রিয় নাকি তুমি নিজে?তিনি বললেনঃ তিনিই সবচেয়ে প্রিয়।আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তার সন্তান তোমার জন্য সবচেয়ে প্রিয় নাকি তোমার সন্তান?তিনি উত্তর বললেনঃ তাঁর সন্তান।আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তাঁর সন্তান দুশমনের হাতে অন্যায় ও নির্যাতনের মাধ্যমে কুরবানী হলে তুমি বেশী ব্যথিত হবে নাকি তোমার সন্তান তোমার হাতে আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নিহত হলে বেশি ব্যথিত হবে?তিনি উত্তরে বললেনঃ দুশমনের হাতে তাঁর কুরবানী হওয়াটা আমাকে বেশী ব্যথিত করবে।আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে ইব্রাহীম, উম্মতে মুহাম্মাদের কিছু লোক মুহাম্মাদের সন্তান হোসাইনকে তাঁর ইনে-কালের পর জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করবে যেমনিভাবে ভেড়া হত্যা করা হয়, এর জন্য তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে।হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথাগুলো শুনে তাঁর অন-র অশান- হয়ে গেলে, মনঃকষ্টে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।আল্লাহ তায়ালা আবারো তাঁর কাছে অহীর মাধ্যমে বললেনঃ হে ইব্রাহীম, তোমার সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করতে না পারার সেই শোকটা হোসেইনের হত্যার শোকের সাথে পবির্তন করে দেব এবং মুসিবাতের ক্ষেত্রে সবরের দরুন সর্বোচ্চ সওয়াব তোমাকে প্রদান করবো। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘অফাদানাহু বিযিবহে আজীম’ অথাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে সর্বোচ্চ সম্মান শাহাদতে জাহেরী ও শাহাদতে ছিররী রক্ষিত আছে তা আল্লাহ্ পাক হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে দেন নাই। তা শুধু হাসনাইন (আ.) পাক দ্বয়ের জন্য রক্ষিত আছে। মওলা হাছানকে দান করবেন শাহাদতে ছিররী ও মওলা হােছাইনকে দান করবেন শাহাদতে জাহেরী। বিনা দোষে গুপ্তভাবে যে কোন উপায়ে নিহত হওয়াকে শাহাদতে ছিররী ও ধর্ম রক্ষার জন্য সম্মুখ যুদ্ধে জেনে শুনে আত্ম বিসর্জন করাকে বলা হয় শাহাদতে জাহেরী।ইমাম বংশ হলেন করুনার কাওছার। গলায় ছুরি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন তবু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন নি। ফরিয়াদ করলে বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেত। আঘাতের বিনিময়ে প্রেম বিতরণ করাই ইমাম বংশের আদর্শ। নবী করিম (দঃ) ও ইমাম বংশ কাউকে ধ্বংস করতে এ দুনিয়াতে আসেননি। তারা এসেছেন গড়তে। হাসি মুখে প্রাণ বলি দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে প্রেমের মূল্যবােধকে দাঁড় করাতে। একবার ভেবে দেখুন ত?অবশ্য বেআদবী না করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে হজরত ইবরাহিম (আঃ) তার আপনি পুত্রকে কোরবানী করতে যেয়ে হাত থর থর করে কাঁপছে। মমতার কাছে উৎসর্গ হার মানতে চাইছে। তাই কাপড়ে চােখ দুটাে বেঁধে নিতে হল, অথচ আড়াই দিনের উপবাসী তৃষ্ণিত অবস্থায় থেকে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র রাহে হজরত ইমাম হােছাইন নামক হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কারবালার মাঠে একটি একটি করে সন্তানদের কোরবানী দিয়ে চলেছেন। পা হতে মাথা পর্যন্ত হুবহু হজরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সঙ্গে মিল হজরত আলী আকবর যার কণ্ঠস্বর শুনতে নবী করীম (দঃ)-এর কণ্ঠস্বর বলে ভুলু হয়। সেই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত হজরত আলী আকবর শাহাদত বরণ করলেন। শহীদ হলেন দুধের শিশু আলী আছগর। তবুও আল্লাহ পাকের কাছে করেন নি কোন ফরিয়াদ, কোন কাতর যাচঞা।কেউ কি ভেবে দেখেছে সবাই জাহেরী ভাবে হজ্ব করে পশু কোরবানী দিচ্ছেন আর তাদের কে বাচানোর জন্য কারবালায় কোরবানী হয়ে গেলেন আল্লাহ পাক ও রাসুলে পাক (দ:) প্রিয়জন। ভেবে দেখুনত, একটু চােখ বন্ধ করে, চিন্তা করুন ত সেই কারবালার দৃশ্য। সেই পানির পিপাসায় ছান্তিফাটা আলী আছগরের শহীদ হবার দৃশ্য। তুলনা করতে গেলে কি হজরত ইবরাহিমের (আঃ) কোরবানী প্ৰদীপ হতে সূর্য খোঁজার মত তুলনা হয় না!হযরত ইসমাইল (আ:) এর প্রাণ দিতে হয় নি, তাঁর পরিবার পরিজনদেরকেও আল্লাহর পথে বিসর্জন দিতে হয় নি, তারপরেও হযরত ইসমাইল (আ:)”র স্মরণে পৃথিবী আজও কম্পমান।আর মওলা হোসাইন (আ:) তাঁর ৬ মাসের শিশুটি সহ মোট ৭২ জনকে কোরবানী দেবার পরেও মুসলিম জাতির সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন নি।আফসোস, কতটা দূর্ভাগ্য! কারবালায় নবী পরিবারের আত্মোৎসর্গের কথা, মহা আত্মত্যাগের কথা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া মুসলিম বিশ্বের তেমন কেউ জানে না বললেই চলে ।আমার প্রশ্ন হল আলাহর হুকুমের কারনে সুন্নাতে ইব্রাহিমী (আ:) খাতিরে মুসলমান হিসাবে সুন্নি- শিয়া,কাদিয়ানী, সালাফি, ওহাবী -মওদুদী,খারেজী-আহলে হাদীস সব ফেরকা মিলে শত লক্ষ কোটি পশু কোরবানী আল্লাহ কে খুশি করলাম।কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে কুলকায়েনাতের সেরা কোরবানী কোরবানী হোসাইনী (আ:) (সপরিবার সবাই শহীদ) জন্য আমরা মুসলমান নামধারীরা কি করছি।ইসলাম কে বাচনোর জন্য হোসাইনী কোরবানী(আ:)এত তুচ্ছ হয়ে গেল । সুন্নাতে ইব্রাহিমী কোরবানীর জন্য যেখানে লক্ষ কোটিরপশু জবেহ করলাম সেখানে হোসাইনী কোরবানী (আ:) জন্য আমরা মুসলমানরা একদম নীরব।গ্রন্থসূত্রঃ- জবেহ আজিম এবং জিকিরে শাহাদাত— সৈয়দ হোসাইন উল হক।প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

—এত লোক কি ভুল করতে পারে —আমাদের চারপাশে প্রচলিত ইসলামে একটা কথা খুবই বহুল প্রচলিত যে ,— — ” আরে ভাই , আমি না হয় কম বুঝি , তাই বলে পৃথিবীর এতো মুসলমান বা আলেম , মাওলানা সাহেবরা কি ভুল করে ? এত বিরাট সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ? ”আপনি যখনই কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে ইসলামের কোন বিষয়ের উপর কিছুটা গভীরে যেয়ে আলাপ করবেন এবং সেই সাথে কোরআন থেকে প্রমান উপস্থাপন করবেন ও পাশাপাশি সহীহ সিত্তাহের হাদিসের উল্লেখ করবেন । কিছু সময় পরে লক্ষ্য করবেন যে , ঐ ভদ্রলোক তখন পাল্টা কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন না । কেননা আপনি কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল উপস্থাপন করেছেন ।যেমন , আপনি কোরআনে বর্নিত ইমামত , ইফতারের সঠিক সময়সূচী বা অযুতে পা মসেহ ইত্যাদি বিষয় কথা বলছেন ।ভদ্রলোক এক পর্যায় আপনার উপস্থাপিত পবিত্র কোরআন ও সহীহ সিত্তাহের দলিলগুলো সরাসরি অস্বীকার করবেন না । আবার সেই সাথে আপনার যুক্তিগুলো স্বীকারও করবেন না ।এমতাবস্থায় ,ভদ্রলোক মহাশয় অতি চমৎকার ভাবে নীচে উল্লেখিত কথাটি বলে বসবেন ।” কি যে বলেন ভাই , আমি নাহয় মাদ্রাসা লাইনে পড়ি নাই , কিন্ত এতো বিশাল সংখ্যক হুজুর , মুরুব্বী , বুুজুর্গ , মাওলানা , আলেম সাহেবরা কি ভুল করতে পারে কিম্বা আমার পরলোকগত ময়মুরুব্বীরা কি ভুল করতে পারে ” ?ভদ্রলোক আরও বলবেন যে ,” ভাই আমার অতসত বুঝে কাজ নেই , বেশী বুঝতে গেলে ঈমান নষ্ট হবে , মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব বা আমার বাপ দাদারা যা করে গেছেন সেটার উপরেই থাকব ভাই ” ।এখন আপনি যতই চেষ্টা করেন , আর কোন লাভ নেই ।ভদ্রলোকের ঐ একটিই শেষ কথা —” এতো বিশাল সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ” !অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক সংখ্যার আধিক্যের উপর ইস্পাত কঠিন থাকবেন ।অনেকটা আমাদের গনতন্ত্রের ফর্মুলা ।যে দল বেশী ভোট পাবে বা যাদের দিকে পাল্লা ভারী তারাই বিজয়ী ।আপনি তখন কি আর করিবেন ।কথা বলাটাই মহা ভুল — এই চিন্তা করিয়া মনটা খারাপ করিবেন , খুবই স্বাভাবিক ।পাঠক ,আসুন , একটু অন্য ভাবে বিষয়টা চিন্তা করি ।জাতিসংঘ আদম শুমারী মতে বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা সাড়ে সাতশো কোটির উপরে । এর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো কোটি ।পৃথিবীতে সংখ্যার তুলনায় বৌদ্ব ধর্মের অনুসারী বেশী । তাহলে ঐ ভদ্রলোক যে সংখ্যা আধিক্যের উপর জোর দিলেন , তাহলে কি বৌদ্ব ধর্ম সঠিক ?যেহেতু পাল্লা ওদিকে ভারী তাহলে চলুন , বৌদ্ব ধর্ম পালন করি !!সাধারন হিসাবে তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , সংখ্যা আধিক্যের এই ফর্মুলাটা যুক্তিতে টেকে না ।এবার আসুন এই ” সংখ্যা আধিক্য ” এর বিষয় পবিত্র কোরআন কি বলে !“— যদি তুমি পৃথিবীর (লোকদের) বেশীর ভাগকে অনুসরন কর , তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে যাবে । তারা কিছুই অনুসরন করে না অনুমানগুলো ছাড়া , এবং তারা শুধু ধারনা ছাড়া কিছু করে না — ” ।সুরা – আনআম / ১১৬ ।“— তবু জনগনের বেশীর ভাগই বিশ্বাস করবে না যত ব্যাকুলই তুমি হও না কেন —” ।সুরা – ইউসুফ / ১০৩ ।“— নিঃসন্দেহে আমরা তোমাদের কাছে সত্য এনেছিলাম , কিন্ত তোমরা বেশীর ভাগই সত্যের প্রতি ঘৃনা পোষন করতে — ” ।সুরা – যুখরুফ / ৭৮ ।“— যখন তাদের বলা হয় , অনুসরন কর আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন , তারা বলে , আমরা বরং অনুসরন করব , যার অনুসরন আমাদের পিতারা করে এসেছে । কী ! যদি এমনও হয় যে , শয়তান তাদের ডাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে —” ।সুরা – লুকমান / ২১ ।এবার উপরের আয়াতগুলোর সাথে নবীজী (সাঃ) এর এই বিখ্যাত হাদিসটি মিলিয়ে নিন —রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল , ইয়া রাসুল (সাঃ) , আপনি বলেছেন যে , আপনার উম্মতের মধ্যে ৭৩টি দল হবে ।তারমধ্যে ৭২টি দল জাহান্নামী এবং একটি মাত্র দল জান্নাতি ।দয়া করে বলবেন কি , নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতি ঐ দল কোনটি ?জবাবে রাসুল (সাঃ) বলেছেন , “ সুসংবাদ ! হে আলী , নিশ্চয়ই তুমি এবং তোমার শীয়া বা অনুসারীগন জান্নাতে প্রবেশ করবে ”।সুত্র – তারিখে দামেস্ক (ইবনে আসাকির,খন্ড-২,পাতা-৪৪২ , হাদিস # ৯৫১ / নুরুল আবসার (শিবলাঞ্জী) ,পাতা-৭১,১০২ / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাহ,পাতা-৬২ / তাতহিরাতুল খাওয়াস(ইবনে জাওজী আল হানাফী),পাতা-১৮ / তাফসীরে ফাতহুল কাদীর(আল শাওকানী),খন্ড-৫,পাতা-৪৭৭ / তাফসীরে রুহুল মায়ানী আলুসী,খন্ড-৩০,পাতা-২০৭ / ফারাইদ সিমতাইন(ইবনে শাব্বাঘ),খন্ড-১,পাতা-১৫৬ / তাফসীরে দুররে মানসুর,খন্ড-৬,পাতা-১২২ / মানাকিব(ইবনে আল মাগাজেলী),পাতা-১১৩ / মুখতাসার তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৩,পাতা-১০ / মিয়ান আল ইতিদাল,খন্ড-২,পাতা-৩১৩ / আরজাহুল মাতালেব,পাতা-১২২,১২৩,৮৭৭(উর্দু) / তাফসীরে তাবারী,খন্ড-৩০,পাতা-১৪৭ / ফুসুল আল মাহিম্মা,পাতা-১২২ / কিফায়াতুল তালেব,পাতা ১১৯ / আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খন্ড-২,পাতা-৬৫৫ / হুলিয়াতুল আউলিয়া,খন্ড-৪,পাতা৩২৯ / তারিখে বাগদাদ,খন্ড-১২,পাতা-২৮৯ / আল তাবরানী মুজাম আল কাবির,খন্ড-১,পাতা-৩১৯ / আল হায়সামী মাজমা আল জাওয়াইদ,খন্ড-১০,পাতা-২১-২২ / ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৪২,পাতা-৩৩১ / আল হায়সামী আল সাওয়ায়িক আল মুহারিকা,পাতা-২৪৭ / মুয়াদ্দাতুল কুরবা,পাতা-৯২ / তাফসীরে ফাতহুল বায়ান,খন্ড-১০,পাতা-২২৩(নবাব সিদ্দিক হাসান খ ভুপালী,আহলে হাদিস) / তাফসীরে ফাতহে কাদীর,খন্ড-৫,পাতা-৬৪,৬২৪ / সাওয়ারেক আল মুহারেকা( ইবনে হাজার মাকিক),পাতা-৯৬ / শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,খন্ড-২,পাতা-৩৫৬ / মুসনাদে হাম্বাল,খন্ড-৫,পাতা-২৮ / নুজহাত আল মাজালিস,খন্ড-২,পাতা-১৮৩ / মানাকেব (আল খাওয়ারেজমী),খন্ড-৬,পাতা – ৬৩ ।সুপ্রিয় পাঠক ,এবারে আপনি ভদ্রলোককে ইফতারের সময়সূচী , অযুতে পা মাসেহ বা হযরত আলী (আঃ) তথা আহলে বায়েত (আঃ) গনের ইমা্মত বা আলী (আঃ) এর বেলায়েত বা ইমামত ইত্যাদি যা কিছুই বুঝাতে চেষ্টা করুন না কেন — আদৌ কি কোন লাভ হইবে !কেননা পবিত্র কোরআন Quantity is not nesserery , main thing is The Best Quality এই নীতির কথাই বলে ।অর্থাৎ ” সংখ্যার আধিক্যের জয় জয়কার ” এই ফর্মুলা পবিত্র কোরআন প্রত্যাখ্যান করে ।হিসাব আরও পরিস্কার জলের মত মিলিয়ে নিন —কারবালাতে একদিকে ছিলেন মাত্র – ৭২ জনঅপরদিকে ছিল বিশাল ত্রিশ হাজারের অধিক ।ওখানে কোন পক্ষেই ননমুসলিম ছিলেন নাপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র —গাদীর এ খুম নামক স্থানে বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুমে লক্ষাধিক হজ্ব ফেরৎ হাজি সাহাবাগনের সম্মুখে রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর ওফাত পরবর্তী ইমাম বা খলীফা নিযুক্ত করে গেলেন ।ইমাম আলী (আঃ) এর এই ইমামত বা খেলাফতের পক্ষে বিপক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে ।রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস মতে ইমাম আলী (আঃ) কে নির্ভর করে মুমিন সাহাবী ও মুনাফিক সাহাবী এবং কাফেরের পরিচয় পাওয়া যাবে ।ইমাম আলী (আঃ) কে কেন্দ্র করে যেমন মুমিনরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে ইমাম আলী (আঃ) এর বিরোধীরাও এক বিশাল ঐক্য গঠন করেছিল ।যা ইতিহাসের পাতায় সহীফা মাল’উনা নামে লিপিবদ্ধ আছে ।ইমামীয়াদের বিভিন্ন গ্রন্থে সহীফা মাল’উনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।সহীফা কোন লিখিত পৃষ্ঠা , পাতা বা বই পুস্তককে বলা হয়ে থাকে ।যেমন বিভিন্ন নবী আউলিয়াদের লিখিত সহীফা ছিল ।আর মাল’উনা অর্থ হচ্ছে যার উপর লানত বর্ষিত হয়েছে এমন কোন জিনিষ ।তাহলে সহীফা মাল’উনা’র অর্থ হচ্ছে অভিশপ্ত একটি লেখা ।আর এটি হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ জন সাহাবীদের চুক্তিপত্র যা গাদীরের ঘটনার পর তৈরী করা হয়েছিল ।এরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল যে , কোন অবস্থাতেই হযরত আলী (আঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর শুন্য পদে ইমাম বা খলীফা হতে দেয়া যাবে না ।তাই তারা একটি প্রতিজ্ঞাপত্র বা চুক্তিপত্র লিখে মক্কাতে গোপন করে রাখে ।আর এ চুক্তিপত্রটি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমরের খেলাফত কালের শেষ সময়ে ফাঁস হয় এবং আহলে সুন্নতের বিভিন্ন গ্রন্থে তার উল্লেখ করা হয়েছে ।সূত্র – সুনানে নেসায়ি , ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ৮৮ / মুসতাদরাক , ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ২২৬ / মু’জামুল আওসাত , ৭ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২১৭ / বিহারুল আনওয়ার , ১০ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২৯৭ ।অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে , রাসুল (সাঃ) নিজের জীবনে ইলমে গাইবের মাধ্যমে কিছু লোকের মনের অভ্যন্তরের কথা অন্যদের জন্য কেন বলে যান নি , যাতে পরবর্তীতে কোন দ্বন্দ্ব দেখা না দেয় ?এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পবিত্র কোরানের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে ।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুনাফেক লোকদের জন্য উল্লেখ করেছেন ,” — তোমাদের চারপাশে বেদুইনদের মাঝে মুনাফিকরা আছে এবং মদীনার শহরবাসীদের মাঝেও (যারা) মুনাফেকিতে ডুবে আছে । তুমি তাদেরকে জান না , আমরা তাদের জানি এবং আমরা তাদের দুইবার শাস্তি দিব , এরপর তাদের পাঠান হবে এক বিরাট শাস্তির দিকে — । ”সুরা – তাওবা , / ১০১ ।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবশ্যই কোন বিশেষ মাসলেহাত বা কল্যানের কারনে এ সকল লোকদের নাম নবী (সাঃ) এর কাছেও প্রকাশ করেন নি ।যাহোক , এই ঘটনার ধরাবাহিকতায় ১২ জন সাহাবী ঠিক করলেন যে , তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পথে মহানবী (সাঃ) কে পাহাড়ের চুড়া থেকে বড় বড় পাথরখন্ড উপর থেকে ফেলে দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করে ফেলবেন ।এদের মধ্যে পাঁচজন পাথরখন্ড নিয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থান নিয়েছিলেন ।ঘটনার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন —মহানবী (সাঃ) তায়েফ নামক একটি স্থানে গমন করার জন্য হুনায়েন প্রান্তরে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের শত্রুরা নবী করিম (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে বসে । এ সময় মহানবী (সাঃ) এর অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) কে যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একাকী ঘোরতর বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে পলায়ন করেন ।ওনারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পেছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও ওনারা নবীজী (সাঃ) কে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে গেলেন ।মহানবী (সাঃ) এর চরমতম বিপদের সময় হাতে গোনা দুএকজন সাহবাগনকে নিয়ে একমাত্র হযরত আলী (আঃ) তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে দুশমনদের কবল থেকে মহানবী (সাঃ) কে উদ্বার করেন ।খুব সংকটের মধ্যে যুদ্বজয় শেষে রাসুল (সাঃ) উটের পিঠে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে রওয়ানা হলেন ।ততক্ষনে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে ।বিশ্বস্ত সংগী হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) উটের রশি ধরে টেনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন ।বড় একটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবার সময় আল্লাহর ফেরেশতা রাসুল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে , কিছুটা সামনে পাহাড়ের উপর শত্রুরা আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে ।সন্ধে তখন আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে ।সন্ধার হালকা আলোয় কিছুটা অগ্রসর হলে রাসুল (সাঃ) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) পাহাড়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পেলেন ।এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে । বিদ্যুৎের তীব্র ঝলকানীতে রাসুল (সাঃ) খুব পরিস্কার ভাবে পাঁচজনের ঐ দলটিকে চিনে ফেললেন ।ঐ পাঁচজন বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে যে , যখনই রাসুল (সাঃ) তাদের আয়েত্বের মধ্যে চলে আসবে তখনই তারা পাথরখন্ডগুলো গড়িয়ে ফেলে দেবে রাসুল (সাঃ) এর উপরে । বিশাল বড় বড় পাথরখন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য ।বিদ্যুৎের সুতীব্র আলোর ঝলকানীতে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ঐ পাঁচজনের দলটিকে মুহূর্তেই চিনে ফেললেন এবং চীৎকার করে নবীজী (সাঃ) কে বললেন , হুজুর , অামি সবাইকে চিনে ফেলেছি , ওরা হচ্ছে অমুক , অমুক , অমুক !রাসুল (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে থামিয়ে দিয়ে বললেন যে , তুমিও চিনেছ , আমিও চিনেছি । থাক আর বলতে হবে না ।হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর উচ্চঃস্বরে চীৎকার চেঁচামেচীতে ঐ পাঁচজন খুব দ্রত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায় ।এ ঘটনার পরের দিন ঐ পাঁচ মুনাফিকদের একজন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) কে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে , আমার নাম ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ?জবাবে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) বললেন , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন ।বিফল হয় তিনি সেদিন চলে গেলেন । কয়েকদিন পরে পুনরায় তিনি একই প্রশ্ন করলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর নিকট যে , আমার নামটি ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ?দ্বিতীয়বারও একই জবাব দিলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) যে , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন ।কিন্ত নাছোরবান্দা হযরত ওমর আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না ।অধৈর্য হয়ে বেচারা হযরত ওমর বলেই ফেললেন যে , হে আবু হুযাইফা ! তুমি বল আর না বল , আমি বিলক্ষন জানি যে , ঐ তালিকায় আমার নামটি আছে ।তৃতীয়বার হযরত ওমর নিজে চলে গেলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর বাড়ীতে । বাড়ীতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন ।কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবারে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) হযরত ওমর বললেন , তুমি যখন নিজেই জান যে , ঐ তালিকায় তুমি আছ কি নেই ! তাহলে কেন অযথা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে আস ?যাইহোক , হযরত হুযাইফা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) এর খুব কাছের একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু পর্যায়ের মুমিন সাহাবা ছিলেন । তিনি বিলক্ষন জানতেন যে , প্রচুর পরিমানে মুনফিকবৃন্দ রাসুল (সাঃ) এর সাথে চলাফেরা করত ।কিন্ত নবী করিম (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে এ কাজের অনুমতি দেননি ।মহানবী (সাঃ) বলেন , আমি এটা চাইনা যে , প্রচার করা হোক যে , মোহাম্মাাদ তার সাহাবীদের হত্যা করেছে ।দ্রষ্টব্য – আল মোহাল্লা , ১১তম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২২৪ ।এরূপ অনেক ঘটনাই ছিল যা ইসলামকে রক্ষার খাতিরে নবী করিম (সাঃ) মুখ বন্ধ করে ছিলেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হননি ।যাইহোক ,এটা প্রমাণিত যে , শীয়া ও সুন্নি হাদীস মতে রাসুল (সাঃ) এর আশপাশে বেশ কিছু ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী মোনাফেক সাহাবী ছিল যারা ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারনে সবসময় চেষ্টা করেছে খেলাফত বা ইমামত যেন কোন প্রকারেই হযরত আলী (আঃ) এর হস্তগত না হয় ।কিন্ত সত্য যতই ফূৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সত্য ততই উদ্ভাসিত হয়ে যে –পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন –“ – তারা চায় আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে তাদের মুখগুলো দিয়ে , কিন্ত আল্লাহ সংকল্পবদ্ব তাঁর নূর সম্পূর্ন করার , যদিও কাফেররা তার বিরোধী হতে পারে — “ ।সুরা – তওবা / ৩২ ।সেই সথে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র বাণী —“ আলী মা’আল হাক্ব ওয়াল হাক্ব মা’আল আলী ”।আলী সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং হক সর্বদা আলীর অনুগামীপ্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

#হযরত_মুহাম্মাদ ‎(সাঃ) ‏কে হত্যা করা হয়েছেআল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ।খুবই গুরুত্বপুর্ন লেখা আশা করি মনোযোগ সহকারে পড়বেন সম্পুর্ন লেখাটা পড়বেন শেষ হওয়া অবধি এবং সাথে সাথে প্রত্যেকটা তথ্য ও রেফারেন্স হাদীসগুলো থেকে মিলিয়ে নিবেন ।কোরআনে সূরা আলে ইমরান ‎- ‏১৪৪ নং আয়াত থেকে,وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْقَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَىٰأَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَشَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَAnd Muhammad is no more than a messenger; ‏the messengers have already passed away before him; ‏if then hedies or is killed will you turn back upon your heels? ‏And whoever turns backupon his heels, ‏he will by no means do harm to Allah in the least and Allahwill reward the grateful."--- ‏আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয় ‎! ‏তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন । তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন ‎, ‏তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে ‎? ‏বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে ‎, ‏তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না । আর যারা কৃতজ্ঞ ‎, ‏আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন ‎---" ‏।উপরের আয়াতে এই কথার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ‎, ‏রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নি বরঞ্চ তাঁকে হত্যা ‎(শহীদ) ‏করা হয়েছে । কারন ‎أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ ,أَو ‏এর মানে ‎‘ ‏অথবা ‎’ ‏ও হয় আবার ‎‘ ‏বরঞ্চ ‎’ ‏হিসাবে ধরা যায় ।এখানে যে ভাবে বলা হচ্ছে তাতে দুটো মানে নেওয়া যেতে পারে । সুতরাং এটার মানে দাঁড়াল যে ‎“ ‏যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন বরঞ্চ কতল করা হয়।নবী ‎(সাঃ) ‏কে শহীদ করা হয়েছ এটা আরও ভালো ভাবে বোঝা যায় যখন আমরা দেখি যে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ ‎(রাঃ) ‏বলছেন যে ‎,عَنْ عَبدِ اللَّهِ قَالَ لَأَنْ أَحْلِفَ تِسْعًا أَنَّ رَسُولَاللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُتِلَ قَتْلًا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَحْلِفَ وَاحِدَةً أَنَّهُلَمْ يُقْتَلْ وَذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ جَعَلَهُ نَبِيًّا وَاتَّخَذَهُ شَهِيدًا“ ‏আমি ন’বার কসম খেতে পারি যে, ‏নবিকে হত্যা করা হয়েছে ‎, ‏কিন্ত একবারও কসম খাব না যে তাঁকে ‎(কতল) ‏করা হয়নি । আল্লাহ তাঁকে নবী ও শহীদ করেছেন ‎”।-মুসনাদ এ আহমাদ ইবনে হাম্বাল ।- ‏মুসত্রাদক‘আলা সাহিহাইন তাহাকিক যাহাবিঃ বুখারি ও মুসলিমের standard এর হাদিস।- ‏মজমাউজ জওাদ, ‏বর্ণনা কারিগন সব সিকাহ ‎( ‏বিশস্ত)।- ‏কানজোল উম্মাল, ‏তারিখ এ ঈসলাম, ‏যাহাবি। তারিখ এ দামিস্ক, ‏ইবনে আসাকির।- ‏আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ‏ইবনে কাসির।আরও অনেক হাদিসের বইয়ে।সুতরাং একথা বোঝা যাছে যে ‎, ‏নবী পাক ‎(সাঃ) ‏কে হত্যা করা হয়েছে । এটা আহলে সুন্নাহও মনে করে ।এখন প্রশ্ন থাকে যে, #কে বা কারা কিভাবে নবী ‎(সাঃ) ‏কে হত্যা করেছে ‎?আহলে সুন্নাহ তাঁদের চিন্তা ধার অনুসারে বলে যে,যয়নব বিনতে হারিস একজন ইহুদি মহিলা,যার ভাই মরহাবকে ইমাম আলি হত্যা করে ছিলেন । খাইবারে যুদ্ধের পরে ঐ হিহুদী মহিলা বিষ খাবারে বিষ দিয়েছিল, ‏সেই বিষক্রিয়াতে নবী ‎(সাঃ) ‏মারা যান।সংক্ষিপ্ত ঘটনা ‎-#খাইবার যুদ্ধে ইহুদিদের পরাজয়ের পরে যখন নবী পাক ‎(সাঃ) ‏ঐখানে অবস্থান করছিলেন তখন যয়নব বিনতে হারিস নামে এক ইহুদি মহিলা রসুল ‎(সাঃ) ‏কে দাওয়াত করে বিষ মেশানো বকরি রান্না করে দেন ‎, ‏যাতে মুহাম্মাদ ‎(সাঃ) ‏কে পরীক্ষা করা যায় যে ‎, ‏তিনি একজন আল্লাহ প্রেরিত সত্যিকারের রাসুল ।হাদিস আর ইসলামের ইতিহাসের কিতাব থেকে আমরা এই বিষয় তিন ধরনের বর্ণনা পাই-এখানে আমি ‎#সহীহ বুখারি ও মুসলিম থেকে একটা একটা করে হাদিস উল্লেখ করছি ‎-১) ‏রাসুল ‎(সাঃ) ‏রান্না করা উক্ত গোস্ত খান এবং বুঝতে পারেন যে ‎, ‏এতে বিষ মেশানো আছে । এবং ইহুদি মহিলাটাকে হত্যা করা হয়নি ।#সহিহ বুখারি হাদিস নং ‎- ‏২৪৪১আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব ‎(রহঃ) ‏আনাস ইবনু মালিক ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণিত যে ‎, ‏তিনি বলেন ‎, ‏জনৈক ইয়াহূদী মহিলা নবী ‎(সাঃ) ‏এর খিদমতে বিষ মিশানো বকরী নিয়ে এলো । সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি ‎(সাঃ) ‏খেলেন এবং খাওয়ার পরে বিষক্রিয়া টের পেয়ে মহিলাকে হাজির করা হল । তখন বলা হল ‎, ‏আপনি কি এই মহিলাকে হত্যার আদেশ দিবেন না ‎?তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏না । আনাস ‎(রাঃ) ‏বলেন নবী ‎(সাঃ) ‏এর ‎(মুখ গহবরের) ‏তালুতে আমি বরাবরই বিষ ক্রিয়ার আলামত দেখতে পেতাম ।২) ‏রাসুলের ‎(সাঃ) ‏ও একজন সাহাবী ঐ গোস্ত খেলেন আর ঐ সাহাবী মারা গেলেন। রাসুল ‎(সাঃ) ‏বুঝতে পারলেন যে ‎, ‏খাবারে বিষ দেওয়া আছে । ইহুদি মহিলাকে হত্যা করা হয় ।#সহিহ বুখারি ‎- ‏হাদিস নং ‎- ‏৩৯২৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ‎(রহঃ) ‏আবূ হুরায়রা ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণিত যে ‎, ‏যখন খায়বার বিজয় হয়ে গেল তখন ইহুদীদের পক্ষ থেকে রান্না করা একটি বকরী রাসূল ‎(সাঃ) ‏কে হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয় । সেই রান্না করা বকরীটিতে বিষ মেশানো ছিল । খায়বার যুদ্ধে যখন ইহুদীদের জন্য মুসলমানদের আনুগত্য স্বীকার ব্যতীত অন্য কোন পথ বাকী রইল না তখন তারা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । ইহুদী হারিসের কন্যা ও সালাম ইবনু মুশফিমের স্ত্রী যয়নাব একটি বকরীর গোশতে বিষ মিশিয়ে তা রাসূল ‎(সাঃ) ‏এর জন্য হাদিয়া হিসাবে পাঠাল । রাসূল ‎(সাঃ) ‏বকরীটির গোশত খেলেও বিষ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারে নি বটে ‎, ‏কিন্ত তাঁর সাহাবী বার আ ইবনু মা’রূর ‎(রাঃ) ‏বিষক্রিয়ার ফলে শহীদ হন । ষড়যন্ত্রকারী মহিলা ধরা পড়ার পর প্রথমে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছিল ‎, ‏কিন্ত পরবর্তীতে যখন বারাআ ‎(রাঃ) ‏মারা গেলেন তখন ‎‘ ‏কিসাস ‎’ ‏হিসেবে তাকে হত্যা করা হয় ।৩) ‏রাসুল ‎(সাঃ) ‏খাওয়ার আগেই ইহুদি মহিলাকে ডেকে পাঠান ও সরাসরই বলে দেন যে ‎, ‏এতে বিষ মেশান আছে ।#সহিহ বুখারি ‎- ‏হাদিস নং ‎- ‏৫৩৬২কুতায়বা ‎(রহঃ) ‏আবূ হুরায়রা ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন ‎, ‏খায়বার যখন বিজয় হয় ‎, ‏তখন রাসুলুল্লাহ ‎( ‏সাঃ) ‏এর নিকট হাদীয়া স্বরুপ একটি ভুনা বকরী প্রেরিত হয় । এর মধ্যে ছিল বিষ । তখন রাসুলুল্লাহ ‎(সাঃ) ‏বলেন যে ‎, ‏এখানে যত ইয়াহুদী আছে আমার কাছে তাদের জমায়েত কর । তার কাছে সবাইকে জমায়েত করা হলে । রাসুলুল্লাহ ‎(সাঃ) ‏তাদের সন্মোধন করে বললেন ‎, ‏আমি তোমাদের নিকট একটি বিষয়ে জানতে চাই ‎, ‏তোমরা কি সে বিষয়ে আমাকে সত্য কথা বলবে ‎?তারা বলল ‎, ‏হ্যা ‎, ‏হে আবূল কাসিম ।রাসুলুল্লাহ ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏তোমাদের পিতা কে ‎? ‏তারা বলল ‎, ‏আমাদের পিতা অমুক । রাসুলুল্লাহ ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏তোমরা মিথ্যে বলেছ বরং তোমাদের পিতা অমুক । তারা বলল ‎, ‏আপনি সত্য ও সঠিক বলেছেন । এরপর তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏আমি যদি তোমাদের নিকট আর একটি প্রশ্ন করি ‎, ‏তা হলে কি তোমরা সে ব্যাপারে আমাকে সত্য কথা বলবে ‎? ‏তারা বলল ‎, ‏হে আবূল কাসিম ‎, ‏যদি আমরা মিথ্যে বলি তবে তো আপনি আমাদের মিথ্যা জেনে ফেলবেন ‎, ‏যেমনিভাবে জেনেছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে । তখন তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏তোমরা কি এ বকরীর মধ্যে বিষ মিশ্রিত করেছ ‎?তারা বলল ‎, ‏হ্যা । তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্ভুদ্ধ করেছে ‎?তারা বলল ‎, ‏আমরা চেয়েছি ‎!যদি আপনি নবুওয়াতের দাবীতে মিথ্যাবাদী হন ‎, ‏তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে যাব । আর যদি আপনি সত্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হন ‎, ‏তবে এ বিষ আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ।বিঃদ্রঃ ‎- ‏উপরে একই ঘটনার সহিহ হাদিসের তিন রূপ দেওয়া হল ‎- ‏এই বিষয় আরও কিছু জানা যায় যে ‎, ‏ইহুদি মহিলা পরবর্তীতে ‎#মুসলিম হয়ে গিয়েছিল ।যাইহোক ‎, #খাইবারের যুদ্ধ ৬য় হিজরিতে হয়েছিল আর রাসুল ‎(সাঃ) ‏১০ ম হিজরিতে মারা যান । এ কথা বোধগম্যের বাইরে যে ‎, ‏বিষ পানের ৪ বছর পর কি ভাবে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে ‎! ‏ধরে নিলাম যে ‎, ‏রাসুল ‎(সাঃ) ‏ঐ গোস্ত খেয়েছিলেন ।ঐ ইহুদিদের কথা অনুযায়ী ওরা ‎#বিষ দিয়েছিল রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর থেকে তাৎক্ষনিক ভাবে মুক্তি পাওয়ার জন্য ।অথচ এটাও দেখা যাচ্ছে যে ‎, ‏রাসুল ‎(সঃ) ‏আদৌও ঐ গোস্ত খান নি ।এখন এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে ‎, ‏ঐ ইহুদি মহিলা বিষ দিয়ে ছিল আর এটাপরীক্ষা কারার জন্য যে ‎, ‏তিনি প্রকৃত নবী কিনা ।এখন যদি রাসুল পাকের ‎(সাঃ) ‏উপর ‎#বিষক্রিয়া হয় বা অন্য একজন সাহাবা মারা যাওয়ার পর বোঝা যায়ে যে ‎, ‏বিষ আছে । তবে তো ঐ মহিলার পরীক্ষাতে রসুল ‎(সাঃ) ‏পাস করতে পারলেন না ।আর ঐ মহিলা মুসলিম বা হবেন কেন ‎?এখন দেখা যাক ‎, ‏রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর মৃত্যুর সময়কার কিছু হাদিস ।যেখানে বলা হচ্ছে যে ‎, ‏নবী ‎(সাঃ) ‏যখন অসুস্থ ছিলেন ‎, ‏সেই সময় তিনি ‎(সাঃ) ‏ঘুমাচ্ছিলেন। তখন আয়শা নবী ‎(সাঃ) ‏এর মুখে কিছু দ্রব্য ঢুকিয়ে দেন। তখন রাসুল ‎(সাঃ) ‏কড়া ভাবে আয়শাকে বলেছিলেন যে ‎, ‏এভাবে তাঁর মুখে যেন কিছু না দেওয়া হয় ।সূত্র ‎- ‏সহিহ আল বুখারি ‎, ‏আধুনিক প্রকাশনী ‎-ঢাকা ‎, ‏বাংলাদেশ।৫২৯৪ ‎- ‏ইবনে আব্বাস ও আয়শা থেকে বর্ণিত । নবী ‎(সাঃ) ‏ইন্তেকাল করলে হযরত আবু বকর নবী ‎(সাঃ) ‏কে চুমু দিলেন । হযরত আয়েশা ‎(রাঃ) ‏আরও বলেন ‎, ‏নবীজী ‎(সাঃ) ‏এর অসূখের সময় আমরা তার মুখে কিছু ঢেলে দিলাম । তখন তিনি রাসুল ‎(সাঃ) ‏আমাদের ইশারা দিতে থাকলেন যে ‎, ‏তোমরা আমায় মুখে কিছু ঢেল না । আমরা মনে করলাম ‎, ‏এটা ঔষধের প্রতি একজন রোগীর অরুচির প্রকাশ মাত্র । এরপর তিনি যখন সুস্থবোধ করলেন তখন বললেন ‎, ‏আমি কি তোমাদের আমার মুখে কিছু ঢালতে নিষেধ করি নি ‎? ‏আমরা বললাম ‎, ‏আমরাতো ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারন অনীহা মনে করেছিলাম । তখন তিনি রাসুল ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏আমি এখন যাদের এ ঘরে দেখতে পাচ্ছি তাদের সকলকে এটা না গিলিয়ে ছাড়ব না শুধুমাত্র আব্বাস ‎(রাঃ) ‏ছাড়া । কেননা, ‏তিনি তোমাদের সংগে জড়িত ছিলেন না ।৬৪২০ ‎- ‏হযরত আয়েশা ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণিত ‎-তিনি বলেন ‎, ‏আমরা নাবী ‎(সাঃ) ‏এর অসুখের সময় তার মুখের এক কিনারায় ঔষধ ঢেলে দিলাম ।তিনি ‎(সাঃ) ‏বলেন ‎, #তোমরা আমার মুখের কিনারায় ঔষধ দিও না । আমরা মনে করলাম ‎, ‏রোগী ঔষধ সেবন অপছন্দ করেই থাকে। যখন তাঁর হুশ ফিরে এলো ‎, ‏তখন তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏তোমাদের মধ্যে যেন এমন কেউ থাকে না ‎, ‏যার মুখের কিনারায় জোর পুর্বক ঔষধ ঢেলে দেয়া না হয় শুধুমাত্র আব্বাস ব্যতীত।কেননা ‎, ‏সে তোমাদের কাছে হাজির ছিল না ।৬৪৩০ ‎- ‏মূসা’দ্দাদ ‎(রহঃ) ‏হযরত আয়েশা ‎(রাঃ) ‏থেকে বর্ণিত ‎- ‏তিনি বলেন ‎, ‏আমরা নবী ‎(সাঃ) ‏এর অসুখের সময় তার মুখের কিনারায় ঔষধ ঢেলে দিলাম । আর তিনি ‎(সাঃ) ‏আমাদের দিকে ইশারা করতে থাকলেন যে ‎, ‏তোমরা আমার মূখের কিনারায় ঔষধ ঢেলে দিও না । আমরা মনে করলাম যে ‎, ‏রোগীর ঔষধের প্রতি অনীহা-ই এর কারণ । যখন তিনি ‎(সাঃ) ‏হুশ ফিরে পেলেন ‎, ‏তখন বললেন ‎, #আমাকে জোর পূর্বক ঔষধ সেবন করাতে কি তোমাদেরকে নিষেধ করি নি ‎? ‏আমরা বললাম ‎, ‏রোগীর ঔষধের প্রতি অনীহা তাই এর কারণ বলে আমরা মনে করেছি । তখন তিনি ‎(সাঃ) ‏বললেন ‎, ‏তোমাদের মাঝে যেন এমন কেউ না থাকে যার মুখে জোরপূর্বক ঔষধ ঢালা হয় আর আমি দেখতে থাকব শুধু আব্বাস ব্যতীত । কেননা ‎, ‏সে তোমাদের সাথে ছিল না ।#নোট ‎- ‏উপরে অনেক বেশির ভাগ জায়গাতে ঔষধ শব্দ অরিজিনালে নেই অনুবাদক বসিয়ে দিয়েছেন ‎, ‏বরং অরিজিনাল আরবীতে এটা আছে ‎‘(কিছু একটা) ‏ঢেলেদিলাম’) ‏।সুতরাং উপরের হাদিস সমূহ থেকে দেখা যাচ্ছে যে ‎, #রাসুল ‎(সাঃ) ‏তার অসুস্থতার সময় হযরত আয়েশা এবং আরও কেউ রসুলের ‎(সাঃ) ‏মুখে কিছু ঢুকিয়ে দেন...যেটা রাসুল পাক ‎(সাঃ) ‏নিষেধ করার পরেও । রাসুল ‎(সাঃ) ‏পরিষ্কার ভাবে বারণ করেছিলেন যে ‎, ‏তাঁর মুখে যেন কিছু না দেওয়া হয় । পরে রাসুল ‎(সাঃ) ‏একটু হুস ফিরে পেলে রাগান্বিত হয়ে বললেন যে ‎, ‏এটাকে সবাইকে মুখে দিতে হবে এবং রাসুল ‎(সাঃ) ‏সেটা দেখবেন ‎, ‏শুধু হযরত আব্বাস ‎(রাঃ) ‏ব্যতীত কারণ তিনি ঐ সময় ছিলেন না ।রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর মৃত্যুর কারণ হিসাবে আয়েশা এটা প্রচার করতে লাগলেন যে ‎, ‏টেস্টিস এ ‎#টিউমার ফেটে গিয়ে মারা গিয়েছেন ।মুসনাদে আহমাদ ও আবু ইয়ালাআল মাসুলি ‎-حدثنا كامل ، حدثنا ابن لهيعة ، حدثني أبو الأسود ، عنعروة ، عن عائشة ، قالت : مات رسول الله صلى الله عليه وسلم من ذات الجنبকিন্ত কেউ এটাকে বিশ্বাস করতে চায় নি কারণ রাসুল ‎(সাঃ) ‏আগেই বলে গিয়েছিলেন যে ‎, ‏এই ধরনের রোগ আমাদের রাসুলদের হয় না ।এই সব দেখে আয়েশা বললেন যে ‎, ‏খাইবার যুদ্বে খাবারের বিষ ক্রীয়ায় তিনি ‎(সাঃ) ‏মারা গিয়েছেন ‎?আপনারা উপরে আহলে সুন্নিদের সহীহ হাদিস থেকে বুঝতেই পারছেন যে ‎, ‏খাইবার যুদ্বে আল্লাহের রাসুল ‎(সাঃ) ‏বিষ খান নি বলেই বোঝা যাচ্ছে । আবার খেলেও তাঁর উপর ঐ বিষ কোন ক্রীয়া করে নি । আবার ঐ বিষ দেওয়া হয়েছিল ৬ষ্ঠ হিজরিতে এবং রাসুল ‎(সাঃ) ‏ইন্তেকাল করেছেন ১০ম হিজরিতে । তাহলে দীর্ঘ চার দশক কিভাবে একজন লোক দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে ‎? ‏এতো গেল আহলে সুন্নাতের হাদিস গ্রন্থ থেকে দলিল ।এখন দেখা যাক যে ‎, ‏শীয়া হাদিস বা তাফসির বই এ কি বলা হচ্ছে-তাফসির এ আইয়াস ও আল্লামা মাজলিশি ও আলি ইবনে ইব্রাহিম কুম্মি যিনি ইমাম হাসন আল আসকারী এর সমসাময়িক ছিলেন ‎-ইমাম জাফর সাদিক এর থেকে বর্ণনা করেছেন যে ‎, ‏তার মুল মর্ম হল যে রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর ওফাতের শেষ দিনের দিকে আবুবকর আর ওমরের ইশারাতে আয়শা ও হাফসা রাসুল ‎(সাঃ) ‏কে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে ছিলেনসুপ্রিয় পাঠক, ‏এই লেখাটিতে নিজস্ব কোন কিছুই বলা হয়নি । ইতিহাস থেকে যা পাওয়া যায় তাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এখন এই লেখাটা গ্রহন করা বা না করা যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচি ।তবে হ্যা ‎, ‏এই বিষয় আপনাদের শালীন ভাষায় যৌক্তিক যে কোন তথ্যাদি বা মতামত সাদরে গ্রহনীয় ।⭐⭐দয়াল রাসূল পাক ‎(সঃ) ‏এর জন্মদিন ও মৃত্যু দিন কি একই তারিখে হয়েছিলো ‎❓নাকি মুসলমানদের আনন্দ নষ্ট করেছিলো ষড়যন্ত্রকারীরা ‎❓ ***সমাজে দীর্ঘ কাল ধরে এটাই প্রচলিত যে আমাদের দয়াল রাসূল ‎(সা:) ‏১২ই রবিউল আওয়াল রোজ সোমবার জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং তিনি ঐ একই তারিখে ওফাত লাভ করেন । কিন্তু দয়াল রাসূল ‎(সাঃ) ‏হিজরী পূর্ব ৫৩ সালের ১২ই রবিউল আওয়াল রোজ সোমবার জন্মগ্রহন করলেও তার ওফাতের প্রকৃত তারিখটি ছিল হিজরী ১১ সালের ১লা রবিউল আওয়াল রোজ সোমবার। স্বধর্মীদের অজ্ঞতা আর বিধর্মীদের চক্রান্তের কবলে পড়ে হয়ত কোন এক ভাবে এই সঠিক ইতিহাসটির বিকৃতি ঘটেছে। পবিত্র আল-কোরআনে আল্লাহ্‌ ‏এরশাদ করেন, “আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম, ‏আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম কে একমাত্র ধর্ম হিসেবে কবুল করে নিলাম।” (সুরা মায়েদাঃ আয়াত- ‏৩) ‏এই আয়াতটি ১০ই হিজরীর ৯ই জিলহজ্ব রোজ শুক্রবার অর্থাৎ বিদায় হজের দিন আরাফার ময়দানে নাজিল হয়েছিল। আর এই তারিখটি হযরত রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর ওফাত লাভের প্রকৃত তারিখ নির্ণয়ে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ‎(রাঃ) ‏বলেন, “এই আয়াতটি ১০ম হিজরীর ৯ই জিলহজ্ব তারিখে নাজিল হয়। এরপর রাসূল ‎(সাঃ) ‏আর মাত্র ৮১ দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন।” (তফসীরে মা’রেফুল কোরআন) ‏তফসিরে দুররে মানসুরের ৩য় খণ্ডে বলা হয়েছে ‎“ইবনে জারির কর্তৃক ইবনে জুরাইজ হতে বর্ণিত হয়েছে, ‏তিনি বলেন-এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসুল ‎(সাঃ) ‏৮১ রাত দুনিয়াতে অবস্থান করেন।” ‏তফসিরে তাবারীর ৪র্থ খণ্ডে বলা হয়েছে, “হাজ্জাজ কর্তৃক ইবনে জুরাইজ হতে বর্ণিত হয়েছে, ‏তিনি বলেন-এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর ৮১ রাত রাসূল ‎(সাঃ) ‏জীবিত ছিলেন।” ‏ইবনে জারির বলেন যে আরাফা দিবসের পর রাসুল ‎(সাঃ) ‏৮১ দিন জীবিত ছিলেন। ‎(তফসীরে ইবনে কাসীর- ‏২য় খণ্ড)ইমাম বাগবী বলেন, “হারুন ইবনে আনতারা তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, ‏এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসুল ‎(সাঃ) ‏৮১ দিন জীবিত ছিলেন।” (তফসীরে মাযহারী-৩য় খণ্ড) ‏সুতরাং ১০ম হিজরীর বিদায় হজ্জের দিনটি মূলসুত্র ধরে ৮১তম দিন কবে হয় তা হিসাব করলে খুব সহজেই বের করা সম্ভভ যে রাসুল ‎(সাঃ) ‏আসলে কবে ওফাত লাভ করেছিলেন। এ কথাটি ঐতিহাসিক ভাবে প্রমানিত যে ১০ম হিজরীর ৯ই জিলহজ্ব হযরত রাসুল ‎(সাঃ) ‏এর আরাফার ময়দানে বিদায় হজ্জের ভাষণ দান কালে উক্ত আয়াতটি নাজিল হয়েছিল এবং তার পর তিনি আর মাত্র ৮১ দিন পৃথিবীর বুকে জীবিত ছিলেন। চন্দ্রবর্ষ হিসাব অনুযায়ী এক মাস ২৯ দিন হলে তার পরের মাস হয় ৩০ দিনে। এই হিসেবে জিলহজ্ব মাস ২৯ দিন, ‏মহররম মাস ৩০ দিন, ‏সফর মাস ২৯ দিন। এখন ১০ম হিজরীর ৯ই জিলহজ্ব থেকে হিসাব করলে দেখা যায় যে ওই জিলহজ্ব মাসের বাকি থাকে আর ২১ দিন, ‏তার পরের মাস অর্থাৎ ১১ হিজরীর মহরম মাসের ৩০ দিন এবং সফর মাসের ২৯ দিন। সর্বমোট ৮০ দিন। সেই হিসেবে ৮১ তম দিন হয় ১লা রবিউল আওয়াল। এবং সেই দিনটিও ছিল সোমবার। এখন এই ৩টি মাসের সব কয়টি মাস ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন যাই হোক না কেন বিদায় হজ্জের দিন থেকে হিসেব করলে ৮১ তম দিন কখনই এবং কোন ভাবেই ১২ ই রবিউল হয় না।

হযরত ফাতিমা জাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) বলেছেনঃ-আমি হচ্ছি বায়তুল মামুরের মতো,যাহা আসমান বাসিদের কিবলা এবং ফেরেস্তারা যার চত্বরের তাওয়াফ করতে থাকে।সূত্র :ফাজাইল এ আহলুলবাইত (আ), খন্ড -০১ , পৃঃ ২৪৯ , আল কাতরা খন্ড -১ পৃঃ ৩৫১/৩৫২ ।হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেনঃ- তোমরা যদি আদমকে তাঁর জ্ঞানে, নুহকে তাঁর ধীশক্তিতে, ইবরাহীমকে তাঁর দূরদর্শিতায়, ইয়াহিয়াকে তাঁর সংযমশীলতায় আর মূসা ইবনে ইমরানকে তাঁর সাহসিকতায় এবং ঈসার সেবা ও মিতাচার দেখতে চাও, তাহলে আলীর উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকাও।সূত্র -ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব-ইবনে আসাকির ২:২৮০/৮১১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭:৩৬৯।আল্লাহ যাদের এ্যাতো সম্মানে ভূষিত করলেন,তারা যে সবসময় সত্যের ওপরই অটল থাকবেন, তাতে আর সন্দেহ কী! কিন্তু কালের ঘোলাজলে বিচক্ষণ মাছ শিকারীরা তাঁর ওপর যেসব রাজনৈতিক কূটচাল চেলে সাময়িক স্বার্থ চরিতার্থ করেছিল,তাদের কৃতকর্ম আজ অপ উপসর্গযোগে কলঙ্কিত।ইমাম (আ:) প্রথম জালিমের এর কালে বিভিন্ন লোকদের উপহাস ও অবহেলার পাত্র হয়েছেন, কিন্তু তিনি কখনো এর জন্য ভেঙে পড়েন নি কারন তিনি সর্বদা নিজের ঘরে প্রবেশ করার পর নবী কন্যা ফাতিমা (সাঃ) কে দেখতেন এবং উনার সাথে কথা বলে নিজের সকল দুঃখ ঘুচিয়ে ফেলতেন। মাওলা প্রায়ই বলতেনঃ-"রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শ্রেষ্ঠ উপহার যা আমাকে দিয়েছেন’ তিনি ফাতিমা (সা.আ.)।"মাওলা যখন নবীকণ্যা স্যাইয়েদা ফাতিমা যাহরা (সাঃআঃ) কে বিবাহ করে ঘরে এনেছিলেন, মাওলার মন আনন্দে ভরপুর ছিলো, কারণ স্যাইয়েদা ফাতিমা(সাঃআঃ) দো জাহানের শ্রেষ্ঠ নারী, যার সৌন্দর্য্য কে আল্লাহ নিজের সৌন্দর্য্য বলেছেন । মাওলা খুব আনন্দে থাকতেন সারাদিন যতই কঠিন যেত কিন্তু যখন তিনি ঘরে প্রবেশ করে স্যাইয়েদা ফাতিমা (সাঃআঃ)-এর পবিত্র চেহারার যিয়ারত করতেন এবং বলতেনঃ- "ফাতিমার চেহারা দেখলে আলী হয়ে যায় এমন যেন তার কোনো দুঃখ নেই৷"হযরত আবু বকরের খেলাফত কালে মাওলা আলী (আঃ) কে অনেকেই 'সালাম' দিত না। এই ঘটনা মাওলার দাসী হযরত ফিজ্জা কাছ থেকে শুনে হযরত ফাতিমা (সাঃআঃ) খুব দুঃখ পান, মাওলা আলী(আঃ) ঘরে প্রবেশ করলে সৈয়দা ফাতিমা(সাঃআঃ) তার পায়ে হাত রেখে তাকে বলেন, "আস সালামু আলাইকা ইয়া আমীরুল মুমিনীন "।তখন মাওলার চোখে পানি এসে পড়ে এবং বলেন, হে রাসুলের কন্যা, এ আপনি কি করছেন? আমাকে এভাবে ঝুকে সালাম করবেন না, আপনার মর্যাদা আমার নিকট অনেক বেশি।স্যাইয়েদা ফাতিমা(সাঃআঃ) বলেন, আমার মাওলা, শুনেছি আপনাকে কেউ সালাম করে না।মাওলা বললেন,এর চেয়ে বেশি দুঃখের ব্যাপার হলো আমি আলী যদি কাউকে সালাম দেই তাহলে সে সালামের জবাব দেওয়াও প্রয়োজন মনে করেনা।আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মদ।———সৈয়দ হোসাইন উল হক

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নারীর বিয়েআগস্ট ১৩, ২০১৮ ১৪:০৬ Asia/Dhakaগত পয়লা জিলহজ ছিল 'হযরত আলী (আ) ও খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমার (সা.আ) শুভ বিয়ের ১৪৩৭ তম বার্ষিকী'। ইরানে এ দিবসটি পালন করা হয় পরিবার দিবস হিসেবে। এ উপলক্ষে সবাইকে অনেক সালাম ও শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি পেশ করছি বিশ্বনবী (সা) ও তার পবিত্র আহলে বাইতের শানে বিশেষ করে হযরত আলী (আ) ও ফাতিমা জাহরা (সা.আ)'র শানে অশেষ দরুদ ও সালাম।ইসলাম ধর্ম পরিবার গঠন ও পরিবার রক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে মহানবীর পরিবারের পর আলী ও ফাতিমার পরিবার হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার। বিশ্বনবী (সা)'র বংশধারা রক্ষাকারী এ পরিবার থেকেই জন্ম নিয়েছেন বেহেশতি যুবকদের দুই সর্দার হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (মহান আল্লাহর অশেষ দরুদ বর্ষিত হোক তাদের ওপর চিরকাল)। মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদিসহ (আ) মোট ১১ জন ইমামের জন্ম হয়েছে এই মহতী পরিবারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন। এরপর মহান আল্লাহর নির্দেশে গোপনে তিন বছর মানুষকে ধর্মের দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন। তিন বছর পর তিনি প্রকাশ্যে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও মক্কাবাসীকে ধর্মের পথে দাওয়াত দেন। রাসূলের গোত্র বনু হাশিমের মধ্য থেকে তাঁর চাচা আবু লাহাব তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। আর মক্কার নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের প্রায় সবাই রাসূলের সাথে শত্রুতা শুরু করে।এরমধ্যে রাসূলের পুত্রসন্তানরা মারা গেলে কাফির-মুশরিকরা রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করতে থাকে। আস ইবনে ওয়ায়েল রাসূলকে ‘আবতার’ (লেজকাটা) বা নির্বংশ বলে গালি দেয়। সে বলত, ‘আরে মুহাম্মাদের তো কোন পুত্রসন্তান নেই, সে মরে গেলে তার নাম নেয়ার কেউ থাকবে না।’ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এ কথায় খুব কষ্ট পেতেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ কষ্ট দূর করার জন্য যে অমূল্য নেয়ামত তাঁকে দান করেন তিনিই হলেন হযরত ফাতিমা (আ.)। এর প্রেক্ষিতেই পবিত্র কুরআনের সূরা কাওসার নাযিল হয়।আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেন, হযরত ফাতিমার শানে এ সূরা নাযিল হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে। পরবর্তী কালে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সকল ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি।আবু জাহেল, আবু সুফিয়ানরা চেয়েছিল রাসূলকে হত্যা করতে। আবু সুফিয়ানের সন্তান আমীরে মুয়াবিয়া চেয়েছিল হযরত আলীকে হত্যা করতে, তার রাজত্বকালেই ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। মুয়াবিয়ার ছেলে ইয়াযীদ কারবালায় নৃশংসভাবে ইমাম হুসাইনকে সপরিবারে শহীদ করে। পরবর্তীকালে একের পর এক রাসূলের বংশধরকে হত্যা করা হয়। তারপরও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশধারাতেই শেষ জামানায় ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সেদিন আল্লাহ তা‘আলার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হবে যা তিনি সূরা তওবায় বলেছেন : ‘তিনি তো সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য-ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে সেটিকে (নিজ ধর্মকে) সব ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন; যদিও অংশীবাদীরা তা অপছন্দ করে।’রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব নারীর সন্তানদের তাদের পুরুষদের সাথে সংযুক্ত করা হয় শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’ আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ 'হে রাসূলের সন্তান' বলে সম্বোধন করত। হযরত ফাতিমার জন্মের মাধ্যমে রাসূল অপরিসীম মানসিক শান্তি অনুভব করেন। তিনি তাঁকে কতটা ভালবাসতেন তা তাঁর কথায় বারবার প্রকাশিত হয়েছে। এ ভালবাসা অকারণ ছিল না। হযরত ফাতিমার তাকওয়া, তাঁর দুনিয়াবিমুখতা, তাঁর দায়িত্বশীলতা সব মিলিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর যে অবস্থান সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ভালবাসতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হযরত ফাতিমা আসলে তিনি তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানাতেন। এটি কি শুধু একজন কন্যার প্রতি পিতার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল? আলেমরা বলেছেন, কখনই নয়। কারণ, অন্য কোন সন্তানের ক্ষেত্রে রাসূল এমন কাজ করতেন না। প্রকৃতপক্ষে এ ছিল বেহেশতের নারীদের নেত্রীর প্রতি মহান আল্লাহর রাসূলের সম্মান বা ভালবাসা প্রদর্শন।হযরত ফাতিমা এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেন যখন সারা বিশ্বে নারীদের মানুষ বলে গণ্য করা হত না। তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হত। খ্রিস্টানরা নারীকে ‘শয়তানের দোসর’ বলত এবং নারী জাতিকে সব পাপের উৎস বলে মনে করত। আরবরা কন্যা-সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দিত।পবিত্র কুরআনে সেই জাহেলিয়াতের যুগের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে : ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখ কালো হয়ে যায়, অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে তাকে অপমান সহ্য করে থাকতে দেবে, না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে।’ হযরত ফাতিমা সেই অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ নারী জাতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথমে তাঁর স্ত্রী হযরত খাদিজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নারী জাতিকে সম্মানিত করেন। পরে নিজ কন্যা ফাতিমার প্রতি দায়িত্ব পালন করেও নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন।রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। যেমন : তিনি বলেন, ‘চারজন নারী সমগ্র নারী জাতির মধ্যে সর্বোত্তম : মারইয়াম বিনতে ইমরান, আসিয়া বিনতে মুযাহিম, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে ফাতিমা।’রাসূল (সা.) বলেন, ‘বেহেশতে সর্বপ্রথম আমার কাছে যে পৌঁছবে সে হচ্ছে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ।’বুখারী শরীফের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাকে রাগিয়ে দেয় সে আমাকেও রাাগিয়ে দেয়।’তিনি আরও বলেন, ‘ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগ করলে আল্লাহও রাগ করেন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও হন আনন্দিত ।’ হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) বেহেশতি নারীদের সর্দার তথা খাতুনে জান্নাত। তাঁর অসাধারণ নানা গুণ, অতি উচ্চ স্তরের খোদাভীতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব তথা মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসুলের (সা) কন্যা হওয়ার বিষয়টি সবাই জানতেন। তাই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খলিফাসহ সাহাবিদের অনেকেই এই মহামানবীকে বিয়ে করার জন্য মহানবীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বনবী (সা) তাদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। মহানবী বলতেন, ফাতিমার ব্যাপারটি আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। অর্থাৎ ফাতিমার বিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে সম্পন্ন হবে।আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাসূলের কাছে গিয়ে বলেন, ‘যদি ফাতিমাকে আমার সাথে বিয়ে দেন তাহলে মূল্যবান মিশরীয় কাপড় বোঝাই এক হাজারটি উট এবং আরও এক হাজার দিনার তথা এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা মোহরানা হিসাবে প্রদান করব।’ রাসূল (সা.) এ প্রস্তাবে খুব অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, ‘তুমি কি মনে করেছ আমি অর্থ ও সম্পদের গোলাম? তুমি সম্পদ ও অর্থ দিয়ে আমার সাথে বড়াই করতে চাও?’হযরত ফাতিমার বিয়ে প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ফেরেশতা আমার কাছে এসে বললেন, আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি আপনার কন্যা ফাতিমাকে আসমানে আলী ইবনে আবি তালিবের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনিও তাঁকে জমিনে তাঁর সাথে বিয়ে দিন। বলা হয় ৪০ হাজার ফেরেশতা ছিলেন বেহেশতে অনুষ্ঠিত এই শুভ বিয়ের সাক্ষী।দ্বিতীয় হিজরিতেই হযরত ফাতিমার সাথে হযরত আলীর বিয়ে হয়। তাঁর বিয়ের বিষয়ে ইতিহাসে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে তাঁর মর্যাদা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) পরবর্তীকালে বলেন, ‘আলীর জন্ম না হলে ফাতিমার সুযোগ্য স্বামী পাওয়া যেত না।’ (হযরত মারইয়ামের কোনো সুযোগ্য স্বামী সৃষ্টি করেননি মহান আল্লাহ। তাই তিনি চিরকুমারীই হয়ে আছেন) বিয়ের সময় হযরত ফাতিমার বয়স ছিল মাত্র দশ-এগারো বছর। অথচ ফাতিমার এ বয়সেই রাসূল বলছেন, ‘আলীর জন্ম না হলে ফাতিমার সুযোগ্য স্বামী পাওয়া যেত না।’- এ কথার মধ্যে কত বড় রহস্য লুকিয়ে ছিল তা পরবর্তীকালে প্রকাশ হয়েছে। ইসলামের জন্য হযরত আলী (আ.)-এর ত্যাগ ও অবদান কিংবদন্তীতুল্য অমর ইতিহাস হয়ে আছে। বদর, উহুদ, খন্দক ও খায়বারসহ অন্য অনেক যুদ্ধে তাঁর অতুলনীয় বীরত্বের কথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। অন্যদিকে তিনিই হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জ্ঞানের ভাণ্ডার।রাসুলে খোদা যখন নবুয়্যত পান, তখন কিশোর আলীই তাঁর প্রতি প্রথম ইমান আনেন। শুধু তাই নয়, নবীজিকে তিনি সবসময় ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। তাঁর বীরত্ব, জ্ঞান গরিমা, ত্যাগ, প্রজ্ঞা ও সাহসিকতায় রাসুল (সা.) ছিলেন মুগ্ধ। আর সেজন্যই তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমাকে প্রাণপ্রিয় আলীর সাথেই বিয়ে দিয়েছিলেন।একইভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হযরত আলীর প্রশান্তির মাধ্যম হযরত ফাতিমার অবদানও অনন্য বা অতুলনীয়। তিনি রাসূলের ওফাতের পর ক্রান্তিকালে মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর ভূমিকার মাধ্যমে সত্যের আলো প্রজ্বলিত করেই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ দু’টি ভাষণ আমাদের হেদায়াতের পথনির্দেশ করে। তাই এটা স্পষ্ট কেন রাসূল সেই দশ বছরের বালিকা ও বাইশ বছরের যুবক সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন!হযরত আলী (আ) ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য মহানবীর (সা) কাছে আসলেও মহানবীর সামনে শ্রদ্ধার কারণে ও লজ্জায় তা বলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় মহানবী (সা) আঁচ করতে পারেন যে আলী ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছেন। তবুও তিনি বিষয়টা তা-ই কিনা জানতে চাইলে আলী (আ) জানান যে, 'হ্যাঁ, আমি এ উদ্দেশ্যেই এসেছি'।হযরত ফাতিমা (সা.আ) তাঁর বাবা তথা মহানবীর (সা) পর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর (আ) সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হবেন- এটাই ছিল স্বাভাবিক। তবুও মহানবী (সা) নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধার আদর্শ তুলে ধরার জন্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হযরত ফাতিমার মতামত জানতে চান। চাচাত ভাই আলীকেও তিনি জানান যে ফাতিমার মতামত জেনে আসি। মহানবী প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে বলেন: আমি তোমাকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির স্ত্রী করতে চাই। তোমার কি মত?[মহানবীর (সা) এ বাণী থেকে বোঝা যায় হযরত আলীর মর্যাদা ছিল হযরত ফাতিমার চেয়েও বেশি। কারণ মহানবীর (সা) পর আলী (আ) হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। অন্যদিকে তিনি বেহেশতি নারীর নেত্রীরও ইমাম বা নেতা।] ফাতিমা লজ্জায় মাথা নুইয়ে থাকেন এবং হ্যাঁ ও না-বোধক কিছুই না বলে চুপ করে থাকেন। এ অবস্থায় মহানবী বলেন: আল্লাহু আকবর! তাঁর নীরবতা সম্মতিরই প্রমাণ। তাই এটা স্পষ্ট মেয়েদের বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মত নেয়া জরুরি। জোর করে কোনো নারীকে কোনো পুরুষের কাছে বিয়ে দেয়া বৈধ নয়। অন্যদিকে ইসলামী আইন অনুযায়ী কোনো কুমারী নারী পিতা বা বৈধ অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারে না।দ্বিতীয় হিজরির ১ জিলহাজ্জ রোজ শুক্রবার হযরত আলীর সাথে হযরত ফাতিমার শুভ-বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ সময় হযরত আলীর বয়স ছিল প্রায় ২২ অথবা ২৩। এ বিয়ের চুক্তি চূড়ান্ত করেছিলেন মহানবী (সা) নিজেই। এ বিয়ের অনুষ্ঠানে আনসার ও মুহাজিরদের সবাই উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মহানবী (সা:) সাহাবীদের বলেছিলেন,আল্লাহর আদেশে আমি ফাতিমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। এরপর মহানবী (সা.) হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আলী তুমি কি এতে রাজী আছ? হযরত আলী সম্মতি জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ, আমি রাজী। তখন নবীজী দু'হাত তুলে তাঁদের জন্য এবং তাঁদের অনাগত বংশধরদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দোয়া করেন। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে কনেকে দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ। আর হযরত আলী (আ.) নিজের ঢাল বিক্রি করে তা পরিশোধ করেছিলেন। হযরত আলী তাঁর বর্মটি বিক্রি করে ৫০০ দিরহাম বা রৌপ্য মুদ্রা পেয়েছিলেন। একটি উট, একটি তরবারি ও একটি বর্ম এবং কয়েকটি খেজুরের বাগান ছাড়া হযরত আলীর কাছে আর কোনো সম্পদই ছিল না।কোনো কোনো হাদিসে বলা হয়, হযরত ফাতিমা (সা. আ) তাঁর বিয়ের একমাত্র মোহরানা হিসেবে বিচার-দিবস তথা কিয়ামতের দিনে তাঁরই বাবার পাপী উম্মতের শাফায়াত তথা তাঁদেরকে ক্ষমা করার অধিকার চেয়েছিলেন। আর মহান আল্লাহ তাঁর এই দাবি কবুল হওয়ার কথা জানিয়ে দেন জিবরাইলের মাধ্যমে।অথচ আজকাল মুসলমান নর-নারীর বিয়ের মোহরানা নিয়ে কত বাড়াবাড়ি হচ্ছে। মোহরানার অংক বা সম্পদ নিয়ে বস্তুগত প্রতিযোগিতা হচ্ছে! ভাবখানা এমন যে যার বিয়ের মোহরানা যত বেশি তার মর্যাদা যেন ততই উপরের!হযরত ফাতিমার বিয়ে উপলক্ষে নব-দম্পতির জন্য যেসব উপহার কেনা হয়েছিল মোহরানার অর্থ দিয়ে সেসব ছিল: একটি আতর, কিছু জামা-কাপড় ও কিছু গৃহস্থালি সামগ্রী। বর্ণনা থেকে জানা যায় যে মোট ১৮টি উপহার কেনা হয়েছিল: এসবের মধ্যে ছিল: চার দিরহাম দামের মাথা ঢাকার একটি বড় রুমাল বা স্কার্ফ। এক দিরহাম দামের একটি পোশাক-সামগ্রী। খেজুর পাতা ও কাঠের তৈরি একটি বিছানা। চারটি বালিশ। বালিশগুলো ছিল আজখার নামক সুগন্ধি ঘাসে ভরা। পশমের তৈরি একটি পর্দা। একটি ম্যাট বা পাপোশ। হাত দিয়ে গম পেশার একটি যাঁতাকল। খাবার পানি রাখার জন্য চামড়ার তৈরি একটি মোশক। তামার তৈরি একটি বেসিন বা হাত ধোয়ার পাত্র। দুম্বা বা উটের দুধ দোহনের জন্য একটি বড় পাত্র। সবুজ রং-করা একটি বড় মাটির পাত্র বা জগ।ইসলামের দুই মহীয়সী নারী উম্মে আইমান ও উম্মে সালামাহ হযরত ফাতিমাকে খুব ভালবাসতেন। ফাতিমার বিয়ের সময় তাঁরা মহানবীর (সা) কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর সম্মানিত রাসুল! আজ যদি খাদিজা (সা. আ) বেঁচে থাকতেন তাহলে এ বিয়ের আয়োজনে তিনি খুবই খুশি হতেন! তাই নয়কি?এমন একটি শুভক্ষণে ইসলামের জন্য সর্বস্ব-ত্যাগী ও সর্বপ্রথম মুসলমান বিবি খাদিজার নাম শোনা মাত্রই মহানবীর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। তিনি খাদিজার সব ত্যাগ-তিতিক্ষা ও মহানুভবতার কথা স্মরণ করতে করতে বললেন: 'খাদিজার মত একজন নারী আর কোথায় পাওয়া যাবে? সেই দিনগুলোতে যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল সে সময় কেবল খাদিজাই আমাকে সুনিশ্চিতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং তাঁর সব সম্পদ ও জীবন আমার হাতে ছেড়ে দিয়েছিল যাতে আল্লাহর ধর্ম ইসলাম প্রচার করা যায়। খাদিজা হচ্ছে সেই নারী যাকে এই খবর দিতে মহান আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দেন যে, বেহেশতের অতি উচ্চ বা সম্মানজনক স্থানে খাদিজার জন্য মহামূল্য সবুজ পান্নার তৈরি একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে।'এরপর ফাতিমাকে আলীর ঘরে পাঠানোর জন্য অনুমতি চান হযরত উম্মে সালামাহ। এ অবস্থায় মহানবী বললেন, আলী নিজেই কেনো এ প্রস্তাব নিয়ে এল না আমার কাছে? লজ্জার কারণে আলী তা বলতে পারছে না বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় মহানবী তাঁকে আসতে বললেন। আলী (আ) মহানবীর সামনে এসে মাথা নিচু করে রাখলেন। মহানবী তাকে বললেন, তুমি কি তোমার স্ত্রীকে ঘরে নিয়ে যেতে চাও? আলী মাথা নিচু রেখেই বললেন: জি, আমার মা-বাবা আপনার জন্য কোরবান হউক। সে রাত বা তার পরের দিনই এ জন্য ব্যবস্থা করবেন বলে মহানবী জানান।হযরত আলী জানান এ বিয়ের উৎসবের জন্য বর্ম বিক্রির অর্থ থেকে কিছু অর্থ সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে উম্মে সালামাহ'র কাছে দেয়া হয়েছিল। মহানবী (সা) তার থেকে দশ দিরহাম নিয়ে আমায় বলেন: কিছু তেল, খেজুর ও 'কাশ্ক' ('কাশ্ক' হচ্ছে দুধ বা দই থেকে তৈরি করা বিশেষ খাদ্য) কিনে আন এই অর্থ দিয়ে। সেসব আনা হলে মহানবী তাঁর জামার হাতাগুলো গুটিয়ে সেগুলো মেশানো শুরু করেন নিজ হাতে। ওই তিন খাদ্যের মিশ্রণে তৈরি হল বিয়ের অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য হালুয়া জাতীয় বিশেষ মিষ্টি খাবার।খাবার তৈরির পর মহানবী আলীকে বললেন, দাওয়াত দাও যতজনকে তুমি ইচ্ছে করছ! আলী বললেন, আমি মসজিদে গিয়ে দেখলাম সেখানে অনেক সাহাবি সমবেত রয়েছেন। আমি তাদের বললাম: মহানবীর (সা) দাওয়াত কবুল করুন। তারা রওনা দিলেন মহানবীর (সা) দিকে। আমি মহানবীকে (সা) বললাম: মেহমানের সংখ্যা তো বিপুল। তিনি বিশেষ খাবারটি ঢাকলেন একটি শিট দিয়ে এবং বললেন: তাদেরকে আসতে বল একসাথে দশ-দশ জন করে। ফলে দশ জনের এক একটি গ্রুপ এসে খেয়ে বেরিয়ে গেলে দশ জনের অন্য গ্রুপ আসছিল। এভাবে বহু মেহমান এসে খাবার খাওয়া সত্ত্বেও তা যেন মোটেও কমছিল না। সাতশত নারী-পুরুষ মহানবীর (সা) বানানো সেই বরকতময় মিষ্টি খাবার খেয়েছিলেন।মেহমানরা সবাই চলে গেলে মহানবী (সা) আলীকে ডানে ও ফাতিমাকে নিজের বাম দিকে বসিয়ে তাঁদের জন্য দোয়া করেন। তিনি নিজের মুখ থেকে কিছু লালা বের করে তা ফাতিমা ও আলীর ওপর ছড়িয়ে দেন। এরপর আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলেন: হে আল্লাহ! তারা আমার থেকে ও আমি তাদের থেকে! হে প্রভু! আপনি যেমন আমার থেকে সব ধরনের অপবিত্রতা ও কদর্যতা দূর করেছেন, তেমনি তাদের কাছ থেকেও সেসব দূর করে তাদের পবিত্র করুন। এরপর বর-কনেকে বললেন: ওঠো এবং ঘরে যাও। তোমাদের ওপর মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।বলা হয় বিয়ের দিন বা রাতে হযরত ফাতিমার কাছে এসে একজন দরিদ্র ব্যক্তি কিছু সাহায্য চাইলে তিনি তার বিয়ের পোশাক দান করে দেন ওই ব্যক্তির কাছে যাতে তা বিক্রি করে ওই ব্যক্তি কিছু অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। ফলে একটি পুরনো পোশাক পরেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন হযরত ফাতিমা (সা.আ)। হযরত ফাতিমা ও আলীর বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল খুবই সাদামাটা। তাই হযরত উম্মে আইমান এসে মহানবীর কাছে দুঃখ করে বললেন, সেদিনও তো আনসারদের এক মেয়ের বিয়ে হল। সে অনুষ্ঠানে কত জাঁকজমক ও আনন্দ-ফুর্তি হল! অথচ বিশ্ববাসীর নেতা মহানবীর মেয়ের বিয়ে কিনা এতো সাদাসিধেভাবে হচ্ছে! এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, এ বিয়ের সাথে পৃথিবীর কোন বিয়ের তুলনাই হয় না। পৃথিবীতে এ বিয়ের কোন জাঁকজমক না হলেও আল্লাহর আদেশে আসমানে এ বিয়ে উপলক্ষে ব্যাপক জাঁকজমক হচ্ছে। বেহেশতকে অপূর্ব সাজে সাজানো হয়েছে। ফেরেশতারা, হুর-গিলমান সবাই আনন্দ করছে। বেহেশতের গাছপালা থেকে মণি-মুক্তা ঝরছে! আর সেগুলো সংগ্রহ করছেন বেহেশতের হুরিরা। কিয়ামত পর্যন্ত তারা সেগুলো সংগ্রহ করতেই থাকবেন যাতে সেগুলোর বিনিময়ে পুরস্কার পাওয়া যায়। একথা শুনে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মুখ খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।বিয়ের পর সাংসারিক কাজের দায়িত্ব ও শ্রম-বিভাগ:বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) আলী ও ফাতিমাকে বলে দিয়েছিলেন যে বাইরের কাজগুলো করবে আলী আর ঘরোয়া (গৃহস্থালী ও মেয়েলি) কাজগুলো করবে ফাতিমা। হযরত ফাতিমা এতে খুশি হয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলেছিলেন, এই শ্রম-বিভাজনের ফলে যেসব কাজ করতে ঘরের বাইরে যেতে হয় ও বার বার পর-পুরুষদের সামনে পড়তে হয় তা থেকে তিনি নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন। ইমাম জাফর সাদিক (আ) বলেছেন, হযরত আলী পানি ও জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতেন। অন্যদিকে হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ) আটা পিষতেন ও রুটি বানাতেন।অবশ্য ইসলাম স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতে পুরুষকে উৎসাহ দেয় যাতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। হযরত আলীও অনেক সময় ঘরের কাজে ফাতিমাকে সাহায্য করতেন। ইসলাম নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দেয় বলে এ ধর্ম কখনও নারীকে সামাজিক ভূমিকা পালনে বিরত রাখে না। শালীনতা বজায় রেখে ও সংসারের মূল দায়িত্বগুলো পালনের পাশাপাশি নারী সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে পারেন। মহানবীর (সা) ওফাতের পর হযরত ফাতিমাকে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ফাদাকের বাগান থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং খেলাফতের ব্যাপারেও মহানবীর (সা) নির্দেশ অমান্য করা হয় বলে হযরত ফাতিমা মসজিদে নববীতে গিয়ে হযরত আলীর নেতৃত্বের অধিকার সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছিলেন। গৃহস্থালী ও সাংসারিক দায়িত্ব ছাড়াও সব ধরনের সামাজিক দায়িত্বও পুরোপুরি পালন করে গেছেন হযরত জাহরা (সা.আ)। তাই হযরত আলী (আ) বলেছিলেন, 'আল্লাহর শপথ! আমি কখনও ফাতিমাকে অসন্তুষ্ট করিনি অথবা তাকে কোনো কাজ করতে বাধ্য করিনি। অন্যদিকে ফাতিমাও আমাকে কখনও রাগিয়ে দেয়নি বা আমাকে অমান্য করেনি। বস্তুত যখনই আমি তাঁর দিকে তাকাতাম আমার অন্তর থেকে সব বেদনা বা দুঃখ দূর হয়ে যেত।' এই মহা-শুভদিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি আবারও শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদ হজরত ইমাম তাকি (আ.) এর অলৌকিক জ্ঞান- ১ জিলক্বদ মাসের শেষ দিন দয়াল নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২৩০ হিজরির এই দিনে ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাহাদত বরণ করেছিলেন। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। পিতা ইমাম রেজা (আ.)'র শাহাদতের পর তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব পান এবং ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে পবিত্র মদীনায়। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর ততপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এই মহান ইমামের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম এবং সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" রাজা-বাদশাহদের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আহলে বাইতের ইমামগণের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ইসলাম ও এর শিক্ষাকে রক্ষা করা। আব্বাসীয় শাসক মামুন ও মুতাসিম ছিল ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র যুগের দুই বাদশাহ। ইমাম পবিত্র মদীনা ছাড়াও হজ্জ্বের সময় মক্কায় গমন উপলক্ষে সেখানে ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন এবং বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ আচার-আচরণের মাধ্যমে দিক-নিদের্শনা দিতেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে। শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধেও থাকতেন সোচ্চার। এইসব শাসক বিশ্বনবী (সা.)'র আদর্শ ও সুন্নাতকে ত্যাগ করেছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের প্রতিপালিত সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলা মোকাবেলা করে আহলে বাইত (আ.)'র আদর্শকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি আল্লাহর সবর্শক্তিমান ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদাত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ) এর ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়। ইমাম জাওয়াদ (আ) বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের সাথে এমন এমন তর্ক-বাহাসে অংশ নিতেন যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। একদিন আব্বাসীয় খলিফা মামুন ইমাম জাওয়াদ (আ) এর জ্ঞানের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্যে একটি মজলিসের আয়োজন করে। সেখানে তৎকালীন জ্ঞানী-গুণীজনদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐ মজলিসে তৎকালীন নামকরা পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম ইমামকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এইঃ যে ব্যক্তি হজ্জ্ব পালনের জন্যে এহরাম বেঁধেছে,সে যদি কোনো প্রাণী শিকার করে,তাহলে এর কী বিধান হবে? ইমাম জাওয়াদ (আ) এই প্রশ্নটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে মূল প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট ২২টি দিক তুলে ধরে উত্তরের উপসংহার টানেন। উত্তর পেয়ে উপস্থিত জ্ঞানীজনেরা অভিভূত হয়ে যান এবং ইমামের জ্ঞানগত অলৌকিক ক্ষমতার প্রশংসাও করলেন প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদইয়া আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদ ইমামত অস্বীকারকারীর পরিনাম“একজন প্রার্থনাকারী চাইলো একটি শাস্তি যা অবশ্যই ঘটবে,-- যা কেউ এড়াতে পারে না বিশ্বাসহীনদের কাছ থেকে”(সুরা মা-য়ারিজ,আয়াত# ১-২)।সুফিয়ান বিন ওয়াইনা বর্ননা করিয়াছেন যে,যখন রাসুল(সাঃ) গাদীরে খুমে লোকদেরকে একত্র করিলেন এবং হযরত আলীর(আঃ) হাত ধরিয়া ফরমাইলেনঃআমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা,এই সংবাদ সারা দেশব্যাপী ছড়াইয়া পড়িল।হারিস বিন নোমান এই সংবাদ শুনিয়া নিজের উটের পিঠ হইতে নামিয়া রাসুলের(সাঃ) খেদমতে হাজির হইল এবং বাক-বিতন্ডা আরম্ভ করিল।সে বলিল যে,হে মুহাম্মাদ(সাঃ)! আপনি আমাদের কলেমা পড়িতে আদেশ দিলেন আমরা তাহা গ্রহন করিলাম,৫ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিলেন আমরা তাহা পালন করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন ১ মাস রোজা পালনের আমরা তাও কবুল করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন আমাদেরকে হজ্ব করিতে আমরা তাহাও নতশিরে মানিয়া লইলাম।তারপর এই সব মানিয়া নেয়ার পরও আপনি সন্তুষ্ট হইলেন না।এমনকি আপনি নিজের চাচাতো ভাইয়ের হাত ধরিয়া আমাদের উপর তাহার কতৃ্ত্ব স্থাপন করিলেন এবং বলিলেন যে, আমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা।এই আদেশ কি আপনার পক্ষ হইতে না কি আল্লাহর পক্ষ হইতে?তখন রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃঐ আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই,এই আদেশ আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে।তারপর হারিস ফিরিয়া তার উটের দিকে যাইতে লাগিল আর বলিতে লাগিলঃহে আল্লাহ!যাহা মুহাম্মাদ(সাঃ) বলিয়াছেন তাহা যদি সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে আমার উপর আকাশ হইতে পাথর নিক্ষেপ কর অথবা আমার উপর কোন ভয়ানক কোন আযাব প্রেরন কর।হারিস নিজের উটের পিঠে উঠিতে না উঠিতেই আকাশ হইতে একটি পাথর তাহার মাথার উপর পড়িল এবং তাহার নিম্নদেশ দিয়া বাহির হইয়া গেল,তৎক্ষনাৎ সে ইন্তেকাল করিল।তারপর এই আয়াত নাযিল হইলো।(সুত্রঃ কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ৩০০; শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,২য় খন্ড,পৃঃ ২৮৬;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩৯;তাযকেরা সিবত ইবনে জাওযী,পৃঃ১৯;ফুসুলুল মহিম্মা,পৃঃ২৬;নুযহাতুল মাযালিস,২য় খন্ড, পৃঃ২৪২;ফাজাএলুল খামছা,১ম খন্ড,পৃঃ৩৯;নুরুল আবসার,পৃঃ১৭৮; বয়ানুস সায়াদাহ,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২০২;)। মোঃ শামসীর