পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০২০ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলী মোহাম্মদ ওয়া সাল্লিমসাহাবিদের মধ্যে আলী (আ.)’র অনন্য এবং শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কিছু যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ: রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন:" আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। “আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকী” (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)।“আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, “হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।” রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে। “যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।”(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)। “আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।” (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম।রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: “এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।” (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ’-ড. মো. হোসাইন হায়কাল, প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪)হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, “যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)’র অসংখ্য শত্রু ছিল। শত্রুরা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)’র দোষ-ত্রুটি বের করার, কিন্তু পারেনি।লা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলী মোহাম্মদ ওয়া সাল্লিমওয়াহেছ করনি রঃ (আল্লাহ আপনার রহস্যকে হেফাজত করেন)ওমরকে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি নবীর কেমন প্রেমিক আমার নবীর দন্ত মোবারক শহীদ হলো আর আপনার সকল দাঁত এখনো আছে?! কিন্তু মাওলা আলিকে বলেননি বরং মাওলা আলিকে বললেন পবিত্র হবার জন্য আমাকে অজু শিখিয়ে দিয়ে জান হে বেলায়েতের বাদশাহ। তবে কি অপবিত্র অবস্থায় এতোদিন ওয়াহেছ করনি রঃ তাঁর বন্ধু কে আর জাত পাকের ইবাদত করেছেন?! তেমন কিছু হলে(অপবিত্র হলে) আমার দয়াল নবী কেমন তাঁর বন্ধুর গন্ধ পেতেন?যা খোলাফায়ে রাশেদীনের তিন স্বঘোষিত খলিফার ক্ষেত্রে শুনা যায়নি। যাক রুপক শব্দের প্রভাব এবং ব্যাপকতা এতোটাই গভীর যে সবচেয়ে গভীরতম পর্যায়ে না পৌঁছে কোন কথাই চূড়ান্ত পর্যায়ে বলা ঠিক নয়,যে এটাই সত্যো।কারন সত্যো অনেক পর্দা দিয়ে নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন।। কিন্তু কারবালার কোরবানির সামর্থ এবং যোগ্যতা কোনটাই কারো ছিলো না।ভালোকরে বললে আল্লাহ তাদের কাছে এই কোরবানি চাননি। জাতপাক কাদের কোরবানি গ্ৰহন করেন এবং চাঁন তাই ঠিক মতো আমরা জানিনা। যেমন আল্লাহ বলেন,হে আহলে বায়েতগন আমি আপনাদের পবিত্রতা কে কাল কিয়ামত পর্যন্ত সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্র রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।যা বাকি কোন মাখলুকাতের ক্ষেত্রে বলেননি। রূপক জানুন আর তা জানার একমাত্র পথ এই আহলে জামানায় একজন মুর্শিদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যোমে। সাঁইজির কালাম, জেনে শুনে করো পিরিত শেষ ভালো দাড়ায় যাতে না জেনে ম‌ইজনা পিরিতে।পৃথিবীর সকল মানুষ পবিত্র হয়েই এই ভবে আসে।তারপর বেশিরভাগ মানুষই কর্মদোষে ময়লা হন।যে ময়লা সাবান (একজন মুর্শিদ)ছাড়া পরিস্কার করা যায়না।একজন মুর্শিদের নিকট সম্পুর্ন আত্বসমর্পণ না করা পর্যন্ত নিজেকে পরিস্কারে রাখা যায়না।এই ভবে একমাত্র মোহাম্মদের পবিত্র পুত্রগন‌ই ব্যাতিকক্রম।এই জাতের রক্ত এবং নূরের প্রবাহমান দ্বারা যেই পর্যন্ত তাঁরা কেউ ময়লা নন পরিস্কারের প্রশ্ন‌ই আসেনা। কিন্তু জন্ম থেকেই এই জাত সমর্পণে কায়েম।পার্থিব জীবনে একজন কোনভাবেই পরিস্কার না হয়ে পবিত্র হতে পারেনা। পরিস্কার থাকতে পারাটা বলা যায় পবিত্রতার পূর্বশর্ত।যা একজন মুর্শিদের তরফ থেকে রহমত।আর এই রহমত আমাদের অর্জন করতে হয় আপনি মুর্শিদের ভাবের ভাবি হয়ে।যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য কাজ।একমাত্র মোহাম্মদের পবিত্র আলের পুত্রগন‌ই ব্যাতিকক্রম যারা এই কায়ানাতে আসেন পবিত্র অবস্থায় একটা প্রতিশ্রুতির মধ্যে দিয়ে।যা আর কোন মাখলুকাত আসেননা।আর তাই এইজাত এই কায়ানাতের জন্য রহমত।এই ভবে পরিস্কার হলেই পবিত্র নন আবার পবিত্র হলেই সব শেষ নয়। বরং পবিত্রতাতে কায়েম থাকতে পারাটাই হচ্ছে তাঁর উপর রহমত বর্ষিত হয়েছে তাও কায়েম থাকা।যদিনা রহমত কায়েম থাকে বরকত এবং নেয়ামতের ভান্ডার থেকে এই ভবে কেউ খরচ করতে পারেনা।যেমন আল্লাহ বলেছেন, এবং তোমরা খরচ করো আমার নেয়ামতের ভান্ডার থেকে।এই কায়ানাতে এইমাত্র মোহাম্মদের পবিত্র সন্তানদের রক্ত এবং নূরের প্রবাহমান দ্বারা বা আলগন‌‌ই কেবল পবিত্রতায় কায়েম রাখার প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ।কাল কেয়ামত পর্যন্ত উভয় জগতের জন্য রহমত,বরকত এবং নেয়ামতের জন্য মনোনীত। এবং এই ভবে তাঁদের রহমত ব্যাতিত কোন হাল অর্জন করা এককথায় অসম্ভব।মে যতো সহজে বুঝবে তার জন্য ততোই ভালো আর এটাই তার তকদীর না বোঝাটাও তার তকদীর।আর এই পবিত্রতম জাত হলো আহলে বায়েত এবং তাঁদের পবিত্র মাসুম পুত্রগন।এই কায়ানাতে এই জাতের চাইতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উত্তোম আর কিছুই নেই। তাঁদের সাথে তুলনা করার উপযুক্ত‌ও আমি আর কাউকে দেখিনা।** সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালা আলে ওয়াসাল্লাম।হাজারো দুরুদ সালাম ও সালাত আপনাদের উপরনিবেদক Sufy Sanwer Hossain Pantho

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমবেদনাদায়ক সফর মাসসফর মাসটি হচ্ছে আরবি বছরের দ্বিতিয় মাস। যেহেতু মহরম মাসটিকে জাহেলিয়াতের যুগে পবিত্র মাস বলে মনে করা হতো সেহেতু আরবের জাহেলি যুগের লোকেরা উক্ত মাসে যুদ্ধ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতো। কিন্তু সফর মাস আগমেণের সাথে সাথে তারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘর থেকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওনা হতো আর এ কারণে তাদের ঘরগুলো খালি পড়ে থাকতো আর এ কারণেইে এ মাসকে ‎“সফর” ‏বলে নামকরণ করা হয়।সফর মাসের নামকরণের দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:- ‏সফর মাসটি ‎“صُفْرَة” ‏থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে হলুদ। কেননা শরৎকালে গাছের পাতাগুলো হলুদ রঙ্গের হয়ে যায়।- ‏সফর মাসের নামকরণের আরেকটি কারণ হচ্ছে উক্ত মাসটি ‎“صِفْر” ‏শব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে খালি বা শুন্য কেননা যারা হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ করাকে হারাম বলে মনে করতো তারা উক্ত মাসে নিজেদের ঘর থেকে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বাহির হয়ে পড়তো। আর এ কারণেই তাদের শহর এবং ঘরগুলো মানব শূন্য অবস্থায় পড়ে থাকতো।নিন্মে সফর মাসের বিভিন্ন দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হলো:১লা সফর:- ‏ইমাম হুসাইন ‎(আ.)এর কাটা মাথাকে শামে আনা হয়।- ‏আহলে বাইত ‎(আ.)দেরকে বন্দি করে শামে আনা হয়।- ‏যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন ‎(আ.)কে শহিদ করা হয়।- ‏সিফফিনের যুদ্ধ শুরু হয়।২য় সফর:- ‏আহলে বাইত ‎(আ.)দেরকে পাপিষ্ঠ এজিদের দরবারে উপস্থিত করা হয় এবং অন্য এক মতে যায়দ বিন আলি বিন হুসাইন ‎(আ.)কে উক্ত দিনে ১২০ হিজরিতে বণি উমাইয়ার বিরোধিতা ও বিপ্লবি আন্দোলন করার কারণে তাকে ৪২ বছর বয়সে শহিদ করা হয়।৩য় সফর:- ‏এক বর্ণনামতে ইমাম মোহাম্মাদ বাকের ‎(আ.) ‏সন ৫৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন।৫ম সফর:- ‏সন ৬১ হিজরিতে হজরত রুকাইয়া ‎(সা.আ.)এর শাহাদত।৭ম সফর:- ‏এক বর্ণনামতে সন ১২৮ হিজরিতে ইমাম মূসা কাযিম ‎(আ.) ‏মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত ‎“আবওয়া” ‏নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।৮ই সফর:- ‏সন ৩৫ হিজরি হজরত সালমান ফার্সি ‎(রা.)এর ওফাত দিবস।৯ম সফর:- ‏সন ৩৭ হিজরি সিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া কর্তৃক হজরত আম্মারে ইয়াসির ‎(রা.)এর শাহাদত। সন ৩৮ হিজরিতে নাহরাওয়ানের যুদ্ধ শুরু হয়।১২ সফর:- ‏হজরত মূসা ‎(আ.)এর ভাই হজরত হারুন ‎(আ.)এর ওফাত দিবস।১৩ই সফর:- ‏সিফফিনের যুদ্ধে উমরে আসের বিচারক নির্ধারনের ষড়যন্ত্রের কারণে খারেজি ফেরকার সৃষ্টি হয়।১৪ই সফর:- ‏উমরে আস কর্তৃক মোহাম্মাদ বিন আবু বকরকে হত্যা করা হয়।১৮ই সফর:- ‏সন ৩৭ হিজরি সিফফিনের যুদ্ধে ওয়াইস কার্নি ‎(রা.)কে শহিদ করা হয়।২০শে সফর:- ‏ইমাম হুসাইন ‎(আ.)এর চল্লিশা।- ‏উক্ত দিনে ইমাম হুসাইন ‎(আ.)এর চল্লিশা কে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ যিয়ারত পাঠ করা হয়ে থাকে। যাকে যিয়ারতে আরবাইন বলা হয়। যিয়ারতটি হচ্ছে নিন্মরূপ:السَّلامُ عَلَى وَلِيِّ اللَّهِ وَ حَبِيبِهِ السَّلامُ عَلَى خَلِيلِ اللَّهِ وَ نَجِيبِهِ السَّلامُ عَلَى صَفِيِّ اللَّهِ وَ ابْنِ صَفِيِّهِ السَّلامُ عَلَى الْحُسَيْنِ الْمَظْلُومِ الشَّهِيدِ السَّلامُ عَلَى أَسِيرِ الْكُرُبَاتِ وَ قَتِيلِ الْعَبَرَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَشْهَدُ أَنَّهُ وَلِيُّكَ وَ ابْنُ وَلِيِّكَ وَ صَفِيُّكَ وَ ابْنُ صَفِيِّكَ الْفَائِزُ بِكَرَامَتِكَ أَكْرَمْتَهُ بِالشَّهَادَةِ وَ حَبَوْتَهُ بِالسَّعَادَةِ وَ اجْتَبَيْتَهُ بِطِيبِ الْوِلادَةِ وَ جَعَلْتَهُ سَيِّدا مِنَ السَّادَةِ وَ قَائِدا مِنَ الْقَادَةِ وَ ذَائِدا مِنَ الذَّادَةِ وَ أَعْطَيْتَهُ مَوَارِيثَ الْأَنْبِيَاءِ وَ جَعَلْتَهُ حُجَّةً عَلَى خَلْقِكَ مِنَ الْأَوْصِيَاءِ فَأَعْذَرَ فِي الدُّعَاءِ وَ مَنَحَ النُّصْحَ وَ بَذَلَ مُهْجَتَهُ فِيكَ لِيَسْتَنْقِذَ عِبَادَكَ مِنَ الْجَهَالَةِ وَ حَيْرَةِ الضَّلالَةِ وَ قَدْ تَوَازَرَ عَلَيْهِ مَنْ غَرَّتْهُ الدُّنْيَا وَ بَاعَ حَظَّهُ بِالْأَرْذَلِ الْأَدْنَى وَ شَرَى آخِرَتَهُ بِالثَّمَنِ الْأَوْكَسِ وَ تَغَطْرَسَ وَ تَرَدَّى فِي هَوَاهُ وَ أَسْخَطَكَ وَ أَسْخَطَ نَبِيَّكَ وَ أَطَاعَ مِنْ عِبَادِكَ أَهْلَ الشِّقَاقِ وَ النِّفَاقِ وَ حَمَلَةَ الْأَوْزَارِ الْمُسْتَوْجِبِينَ النَّارَ [لِلنَّارِ] فَجَاهَدَهُمْ فِيكَ صَابِرا مُحْتَسِبا حَتَّى سُفِكَ فِي طَاعَتِكَ دَمُهُ وَ اسْتُبِيحَ حَرِيمُهُ اللَّهُمَّ فَالْعَنْهُمْ لَعْنا وَبِيلا وَ عَذِّبْهُمْ عَذَابا أَلِيما السَّلامُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ السَّلامُ عَلَيْكَ يَا ابْنَ سَيِّدِ الْأَوْصِيَاءِ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَمِينُ اللَّهِ وَ ابْنُ أَمِينِهِ عِشْتَ سَعِيدا وَ مَضَيْتَ حَمِيدا وَ مُتَّ فَقِيدا مَظْلُوما شَهِيدا وَ أَشْهَدُ أَنَّ اللَّهَ مُنْجِزٌ مَا وَعَدَكَ وَ مُهْلِكٌ مَنْ خَذَلَكَ وَ مُعَذِّبٌ مَنْ قَتَلَكَ وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ وَفَيْتَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَ جَاهَدْتَ فِي سَبِيلِهِ حَتَّى أَتَاكَ الْيَقِينُ فَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ قَتَلَكَ وَ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ظَلَمَكَ وَ لَعَنَ اللَّهُ أُمَّةً سَمِعَتْ بِذَلِكَ فَرَضِيَتْ بِهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أُشْهِدُكَ أَنِّي وَلِيٌّ لِمَنْ وَالاهُ وَ عَدُوٌّ لِمَنْ عَادَاهُ بِأَبِي أَنْتَ وَ أُمِّي يَا ابْنَ رَسُولِ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّكَ كُنْتَ نُورا فِي الْأَصْلابِ الشَّامِخَةِ وَ الْأَرْحَامِ الْمُطَهَّرَةِ [الطَّاهِرَةِ] لَمْ تُنَجِّسْكَ الْجَاهِلِيَّةُ بِأَنْجَاسِهَا وَ لَمْ تُلْبِسْكَ الْمُدْلَهِمَّاتُ مِنْ ثِيَابِهَا وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ مِنْ دَعَائِمِ الدِّينِ وَ أَرْكَانِ الْمُسْلِمِينَ وَ مَعْقِلِ الْمُؤْمِنِينَ وَ أَشْهَدُ أَنَّكَ الْإِمَامُ الْبَرُّ التَّقِيُّ الرَّضِيُّ الزَّكِيُّ الْهَادِي الْمَهْدِيُّ وَ أَشْهَدُ أَنَّ الْأَئِمَّةَ مِنْ وُلْدِكَ كَلِمَةُ التَّقْوَى وَ أَعْلامُ الْهُدَى وَ الْعُرْوَةُ الْوُثْقَى وَ الْحُجَّةُ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا وَ أَشْهَدُ أَنِّي بِكُمْ مُؤْمِنٌ وَ بِإِيَابِكُمْ مُوقِنٌ بِشَرَائِعِ دِينِي وَ خَوَاتِيمِ عَمَلِي وَ قَلْبِي لِقَلْبِكُمْ سِلْمٌ وَ أَمْرِي لِأَمْرِكُمْ مُتَّبِعٌ وَ نُصْرَتِي لَكُمْ مُعَدَّةٌ حَتَّى يَأْذَنَ اللَّهُ لَكُمْ فَمَعَكُمْ مَعَكُمْ لا مَعَ عَدُوِّكُمْ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَ عَلَى أَرْوَاحِكُمْ وَ أَجْسَادِكُمْ [أَجْسَامِكُمْ‏] وَ شَاهِدِكُمْ وَ غَائِبِكُمْ وَ ظَاهِرِكُمْ وَ بَاطِنِكُمْ آمِينَ رَبَّ الْعَالَمِينَ.২১শে সফর:- ‏সন ৪২০ হিজরিতে ইমাম মাহদি ‎(আ.) ‏শেইখ মুফিদ ‎(রহ.)এর উদ্দেশ্যে ‎(توقیع) ‏বা স্বিকৃতিনামা প্রেরণ করেন।২৩শে সফর:- ‏হজরত সালেহ ‎(আ.)এর মাদি উটের পা কেটে ফেলা হয়। হজরত ইউনুস ‎(আ.) ‏মাছের পেটে আটকে পড়েন।২৪শে সফর:- ‏রাসুল ‎(সা.)এর রোগ প্রবল হয়।২৫শে সফর:- ‏রাসুল ‎(সা.) ‏তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে ওসিয়ত লিখার জন্য কাগজ ও কলম চান কিন্তু হজরত উমর তা দান করতে বাধা প্রদান করেন।২৬শে সফর:- ‏সন ১১ হিজরিতে রাসুল ‎(সা.) ‏রোমীয়দের সাথে যুদ্ধ করার জন্য উসামার নেতৃত্বে তাঁর সাহাবিদেরকে রওনা হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।২৮শে সফর:- ‏সন ১১ হিজরি রাসুল ‎(সা.) ‏এবং ২৮ হিজরিতে ইমাম হাসান ‎(আ.)এর শাহাদত দিবস।৩০শে সফর:- ‏সৈয়দ ইবনে তাউস থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুযায়ি ইমাম রেযা ‎(আ.)এর শাহাদত দিবস। ইমাম রেযা ‎(আ.)কে আব্বাসিয় খলিফা মামুন বিষ দান করে এবং উক্ত বিষের কারণে ইমাম রেযা ‎(আ.) ‏শাহাদত বরণ করেন।লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন….......………….………………………………নিবেদক... ‏মোঃ শামসীর হায়দার

একত্ববাদ সম্পর্কে আলী (আ.)'র কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র হাদিস অনুযায়ী তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.) ছিলেন মহানবীর পর মানুষের জন্য নুহ (আ.)'র কিশতির সমতুল্য। ইসলামকে জানা ও বোঝার জন্য মূল্যবান তথ্যসহ মানুষের জন্য আত্ম-সংশোধন, সর্বোত্তম চরিত্র গঠনের ও চিরস্থায়ী সুখ বা সৌভাগ্যের পথ-নির্দেশনা পাওয়া যায় তাঁদের বাণীতে।বিশেষ করে হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আমি জ্ঞানের শহর আর আলী এর দরজা। অর্থাৎ যে আমার জ্ঞান অর্জন করতে চায় তাকে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তাই আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.)'র কিছু অমূল্য বাণী ওদিক-নির্দেশনা তুল ধরব । আজ আমরা শুনব খাঁটি একত্ববাদ সম্পর্কে আলী (আ.)'র কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য। আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) বলেছেন: আল্লাহর ইবাদতের বা ধর্মের সর্বসূচনা হলো তাঁকে চেনা। আর তাঁর পরিচিতির মূল হলো তাঁর একত্বে বিশ্বাস করা। আর তাঁর একত্বের মূলকথা হলো তাঁর সৃষ্টিকূলের সকল সিফাত বা গুণ থেকে আল্লাহকে পৃথক জানা। কেননা, বুদ্ধিবৃত্তি সাক্ষ্য দেয় যে, প্রত্যেক সিফাত এবং মওসূফ (যার ওপর গুণ আরোপ করা হয়) উভয়ই সৃষ্ট ও পৃথক অস্তিত্ব। আর প্রত্যেক সৃষ্ট সাক্ষ্য দেয় যে, তার স্রষ্টা রয়েছে যিনি গুণও নন, গুণের পাত্রও নন। আর প্রত্যেক গুণ ও তার পাত্র সাক্ষ্য দেয় তারা এ দুইয়ের মিশ্রিত শঙ্কর বা যৌগ, অর্থাৎ মৌল কিছু নয়। (যেমন, লবন ও লবনাক্ততা দুই ভিন্ন অস্তিত্ব, আর লবন হচ্ছে কয়েকটি মৌলিক পদার্থের মিশ্রণ)। যৌগিক কোনো কিছুর সংযুক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, সে উদ্ভূত হয়েছে কোনো কিছু থেকে বা তার উৎপত্তি ঘটেছে কোনো কিছু থেকে। উৎপত্তি সাক্ষ্য দেয় তা আদি হতে পারে না। যিনি আদি অস্তিত্ব তার সৃষ্ট হওয়া অসম্ভব হবে। কাজেই যারা আল্লাহর ওপর সৃষ্টির গুণ আরোপের মাধ্যমে আল্লাহর সত্তাকে চিনেছে বলে মনে করে সে প্রকৃতপক্ষে তাঁকে চেনেনি। কারণ তারা সৃষ্টির গুণের সঙ্গে আল্লাহকে সংশ্লিষ্ট করে আসলে তাঁকে দুই সত্তা বলেই তুলে ধরল। আর যে আল্লাহর জন্য অন্ত বা সমাপ্তি রয়েছে বলে ধারণা করে সে তাঁকে এক বলে মানল না।আলী (আ.) বলেন, যে আল্লাহর জন্য (যৌগিক বা) একাধিক সত্তার কোনো দৃষ্টান্তকে কিংবা কোনো দৃষ্টান্তকে কল্পনা করে সে তাঁকে বিশ্বাস করলো না ও তাঁকে চিনতে পারল না। (অন্য কথায়) যে তাঁর জন্য কোনো সমকক্ষ বা সদৃশকে কল্পনা করে সে তাঁর সারসত্যে উপনীত হয় নি।আলী (আ.) বলেছেন: যে আল্লাহকে ইশারা করে দেখায় সে তাঁকে সীমিত করে ও তাঁকে সংখ্যা বা গণনার মধ্যে নামিয়ে আনে। যে তাঁকে সীমাবদ্ধ করে সে তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করে নি। যে তাঁর জন্য অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করে সে তাঁর তথা আল্লাহর বন্দেগির অধিকার পালন করে নি। যা কিছু নিজের (অংশের) ওপর নির্ভর করে বিরাজ করে তা সৃষ্ট। আর যা কিছু নিজ ভিন্ন অন্য কিছুর কারণে বিদ্যমান তা নির্ভরশীল অস্তিত্ব এবং কারণের ফলস্বরূপ।আল্লাহর সৃষ্টিই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য। বুদ্ধি-বিবেকের মাধ্যমে তাঁর পরিচিতিতে বিশ্বাস আসে। চিন্তার মাধ্যমে তাঁর হুজ্জাত (দলিল) প্রমাণিত হয়। আর তিনি নিজ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির ওপর হুজ্জাত বা দলিল প্রতিষ্ঠা করেন।আলী (আ.) বলেছেন: আল্লাহ্ সৃষ্টিরাজিকে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের ও তাদের মাঝে পর্দা টেনে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের থেকে তাঁর বিচ্ছিন্নতা এটাই যে, তাদের সত্তা থেকে তিনি পৃথক। সেগুলোকে (প্রথমবার) সৃষ্টিই সাক্ষ্য দেয় যে, সৃষ্টির জন্য তাঁর কোনো উপকরণ নেই। কারণ, উপকরণ, উপকরণের অধিকারীর কাছে তার অভাবের কথা তুলে ধরে। আর এই যে, প্রথমবার তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এটা সাক্ষ্য দেয় যে, তাঁর নিজের কোনো সূচনা নেই। কারণ, যার নিজেরই শুরু থাকে, সে অন্যকে সৃষ্টি করতে অপারগ হয়।আল্লাহর ৯৯ নামআল্লাহর নামগুলো তাঁর প্রতিফলক। আর তাঁর কাজগুলো তাঁর অস্তিত্বকে নির্দেশ করে। তাঁর সত্তা হলো নিখাঁদ সারসত্য। আর তাঁর মূলসত্তা তাঁর এবং তাঁর সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোনো সিফাত (গুণ)কে আরোপ করে সে আল্লাহকে জানে না। আর যে আল্লাহর জন্য কোনো দৃষ্টান্তকে ধারণা করে সে তাঁকে অতিক্রম বা ত্যাগ করেছে। আর যে তাঁর মূল সত্তাকে খোঁজে সে ভুল পথে পা বাড়িয়েছে।মুমিনদের নেতা আলী (আ.) আরো বলেছেন: যদি কেউ বলে আল্লাহ কোথায়? তা হলে সে তাঁকে স্থানাবদ্ধ করে ফেলেছে। আর যদি কেউ বলে, তিনি কিসের মধ্যে, তা হলে সে তাঁকে অন্য কিছুর অন্তর্ভুক্ত বলে ধারণা করেছে। আর যদি কেউ বলে, তিনি কোন্ পর্যন্ত, তা হলে সে তাঁর জন্য অন্ত নির্ধারণ করলো। আর যদি কেউ বলে কেনো তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে, তা হলে সে তাঁর জন্য কারণ দাঁড় করিয়েছে। আর কেউ যদি বলে, তিনি কিভাবে রয়েছেন, তা হলে তাঁর জন্য সদৃশ দাঁড় করিয়েছে। যদি কেউ বলে, সেই সময় থেকে ছিলেন, তা হলে তাঁকে সময়ের অধীন করেছে। যদি কেউ বলে, তিনি কোন্ সময় অবধি থাকবেন, তা হলে সে তাঁকে শেষযুক্ত বলে মনে করেছে। যে তাঁর জন্য কোনো শেষ রয়েছে বলে মনে করেছে সে তাঁর অংশ রয়েছে বলে মনে করলো। যে তাঁকে অংশের অধিকারী বলে মনে করে সে তাঁর জন্য গুণ বা সিফাত তুলে ধরলো। যে তাঁর জন্য সিফাতকে ধারণা করে সে তাঁর সম্পর্কে অযাচিত বলেছে তথা তাঁকে বিভক্ত করেছে। আর যে তাঁকে বিভক্ত জ্ঞান করেছে সে তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।আলী (আ.) আরো বলেছেন: আল্লাহ্ সৃষ্টির পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তিত হন না। তদ্রুপ যে কোনো সৃষ্টির সীমাবদ্ধকরণের ফলে সীমাবদ্ধ হন না। তিনি এক তবে সংখ্যার হিসাবে নয় (অর্থাৎ তিনি সংখ্যার ঊর্ধ্বে)। তিনি নিরঙ্কুশভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিনি অভ্যন্তর কিন্তু কোনো কিছুর সাথে মিশে নয়। তিনি বাহির কিন্তু কোনো কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়। তিনি প্রকাশমান তবে চোখে পড়ার নয়। তিনি সূক্ষ্ম তবে (সেই সূক্ষ্মতা) দৃশ্যমান নয়। তিনি কর্মের কর্তা তবে নড়াচড়ার (গতি) আশ্রয়ী হয়ে নন। তিনি পরিমাপ করেন তবে চিন্তা সঞ্চালনের মাধ্যমে তা করেন না।আল্লাহ পরিচালনা করেন তবে চলাচলের মাধ্যমে নন। তিনি শোনেন তবে অঙ্গের মাধ্যমে নয়। তিনি দেখেন তবে উপকরণের মাধ্যমে নয়। তিনি কাছে তবে দূরত্বের স্বল্পতার কারণে তা নন। তিনি দূরে তবে ব্যবধানের কারণে নয়।আলী (আ.) আরো বলেছেন: তিনি বিদ্যমান তবে না থাকার (অনস্তিত্বের) পরে নয়। সময় তাঁর সঙ্গী হয় না। স্থান তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে না। নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না আর সিফাত বা গুণ তাঁকে সীমাবদ্ধ করে না। কোনো উপকরণ তাঁকে আবদ্ধ করে না। তাঁর অস্তিত্ব সব সময়ের পূর্বে। আর তাঁর অস্তিত্ব শূন্যতার (অনস্তিত্বের) পূর্বে এবং তাঁর আদিত্ব সূচনার চেয়ে অগ্রবর্তী (অর্থাৎ তিনি অনাদি)।আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেছেন, আল্লাহর সৃষ্ট সৃষ্টিগুলোর ইন্দ্রিয়ের (সীমাবদ্ধতা) থেকে জানা যায় যে, তাঁর কোনো ইন্দ্রিয় নেই। তাঁর সৃষ্ট বস্তুসত্তা থেকেই জানা যায় যে, তাঁর কোনো বস্তুসত্তা নেই। আর প্রাণীকুলের সৃষ্টি থেকেই জানা যায় যে, তাঁর কোনো প্রাণদাতা নেই। আর তাঁর সৃষ্ট বিপরীত বৈশিষ্ট্যের বস্তুগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে জানা যায় যে, তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। আর সব জিনিসের মধ্যে তিনি যে সমন্বয় সাধন করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, তাঁর কোনো সঙ্গী নেই। তিনি আলোকে আঁধারের বিপরীত আর গরমকে শীতের বিপরীত নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ দ্রব্যগুলোর সৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন উপাদানগুলোকে জোড়া দিয়েছেন আর পৃথকগুলোকে পরস্পর মিশিয়ে দিয়েছেন। যাতে সেগুলোর বিভাজন, বিভাগকারীর এবং মিশ্রণ (সংযুক্তি) মিশ্রিতকারীর (সংযুক্তিকারী) অস্তিত্বের প্রমাণ ফুটে উঠে। পুত-পবিত্র (আল্লাহ্) সেগুলোকে তাঁর প্রতিপালকত্বের দলিল এবং তাঁর অদৃশ্যতার সাক্ষ্য হিসেবে ধার্য করেছেন। আর এসবকে করেছেন তাঁর হিকমত তথা প্রজ্ঞার নিদর্শন। কারণ, তাদের সৃষ্টি হওয়া তাদের উৎপত্তি ঘটার এবং তাদের অস্তিত্ব তাদের এক সময়কার অনস্তিত্বের বার্তা তুলে ধরে। আর তাদের নানা রূপের পরিবর্তন জানায় যে, তারা ধ্বংসশীল।আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেছেন: আর সৃষ্টির নিজের অদৃশ্য হওয়া এটা জানায় যে, তাদের স্রষ্টা অনস্তিত্ব ও অস্তমিত হওয়ার নন। আর এটাই হলো মহান আল্লাহর বাণীর তাৎপর্য। ইরাশাদ হচ্ছে : “আমি প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি যাতে তোমরা স্মরণ করো।” আর এ দুই জোড়ার মধ্যে (তা সংযুক্ত হওয়ার) পূর্বে এবং পরে বিচ্ছিন্নতা দান করেছেন যাতে জানা যায় যে, তাঁর নিজের অগ্র ও পশ্চাৎ নেই। সেগুলোর বিভিন্ন রকমের প্রকৃতি সাক্ষ্য দেয় যে, তাদের প্রকৃতি দানকারীর কোনো প্রকৃতি নেই। আর সেগুলোর পরস্পর ভিন্নতা নির্দেশ করে যে, তাদের ভিন্নতাদানকারীর (স্র্রষ্টার) কোনো ভিন্নতা নেই। আর সেগুলোর সময়সম্পৃক্ত থাকা নির্দেশ করে যে, তাদের সময়সম্পৃক্তকারী সত্তা সময়সম্পৃক্ত নন। সেগুলোকে একে অপর থেকে পর্দাবৃত করেছেন যাতে জানা যায় যে, তাঁর নিজের এবং তাদের মধ্যে কোনো পর্দা নেই। যখন কোনো প্রতিপালিত ছিল না তখন তিনি প্রতিপালকের মর্যাদায় সমাসীন ছিলেন। তিনি তখনও ইলাহ (উপাস্য) ছিলেন যখন কোন উপাসক ছিল না। তিনি শ্রোতা ছিলেন যখন কোন শ্রাব্য ছিল না। আর তিনি তখনও জানতেন যখন জ্ঞাত কিছুই ছিল না। আর তিনি তখনও ক্ষমতাধারী ছিলেন যখন ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো ক্ষেত্র ছিল না।আলী (আ.) আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেন: এমন নয় যে, আল্লাহ যখন থেকে সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই স্রষ্টার উপাধি লাভ করেছেন। আর এমনও নয় যে, যখন থেকে উদ্ভাবিত বস্তুগুলোকে উদ্ভাবন করেছেন তখন থেকে ‘বারী’ (বা উদ্ভাবন কর্তা) উপাধি লাভ করেছেন। তিনি সব জিনিসকেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন করেছেন তবে কোনো কিছু থেকে নয়। সব জিনিসকেই পরস্পর মিশিয়ে দিয়েছেন তবে কোনো জিনিসের মাধ্যমে নয়। তাদের পরিমাপ করেছেন তবে চিন্তা ও কল্পনা দিয়ে নয়। তাঁর মূল সত্তার ওপর কোনো কল্পনাশক্তিরই নাগাল নেই। আর তাঁর সত্তা বোধশক্তিগুলোয় স্থান সংকুলান পায় না। (অর্থাৎ আল্লাহকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।) আল্লাহর মধ্যে ‘কখন এবং কোন্ সময়’-এর কোনো স্থান নেই। আর (পুরাঘটিত অতীত বাচক) ‘কদ’ তাঁকে নিকটবর্তী করে না। আর (সংশয় ও সন্দেহবাচক) ‘হয়তোবা’ তাঁকে পর্দার আড়াল করতে পারে না। আর ‘মাআ’ তথা সাথে বা সঙ্গে- বাচক অব্যয় তাঁর সাথে যুক্ত হয় না । অর্থাৎ ‘তাঁর সাথে’ বাক্যাংশটি তাঁর জন্য ব্যবহার করা যায় না। আর ‘হুয়া’ (সে বা তিনি বাচক সর্বনাম) তাঁকে (তাঁর পরিচয়কে পুরোপুরি) তুলে ধরে না। উপকরণগুলো নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রাখে। আর প্রত্যেক উপকরণই তার নিজের সদৃশের ইঙ্গিত দেয়।আলী (আ.) মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেছেন: প্রত্যেক জিনিসের তৎপরতা সেগুলোর নিজের পরিমণ্ডলের মধ্যেই থাকে। উপকরণগুলোর সাহায্য গ্রহণ অভাবের প্রমাণ বহন করে। দু’টি জিনিসের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিপরীত জিনিস থাকার প্রমাণ। মিল বা সদৃশ, সাদৃশ্যকে নির্দেশ করে। প্রত্যেক সৃষ্ট তার সময়ের (অধীন হওয়ার) প্রমাণবাহী। নামগুলোর মাধ্যমেই তাদের সিফাত (বা গুণগুলো) পরস্পর পৃথক হয়। আর তাদের থেকেই তাদের নিদর্শনগুলো আলাদা হয়। আর তাদের ঘটনাগুলো তাদের দিকেই ফিরে যায়। কখন তার উৎপত্তি ঘটেছে- এ প্রশ্ন সেটাকে আদি হওয়া থেকে বিরত রাখে। আর ‘কখনো কখনো’ এর প্রয়োগযোগ্যতা সেটার অনন্ত হওয়াকে নাকচ করে দেয়। কারণের ওপর নির্ভরশীলতা তার অপরিহার্য অস্তিত্ব হওয়াকে নাকচ করে দেয়।আলী (আ.) মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে আরো বলেছেন: সৃষ্ট বিষয়গুলো পরস্পর থেকে আলাদা এবং নিজের পৃথককারীর স্মারক। আর পরস্পর থেকে অপসারিত বিষয় নিজের অপসারণকারীর নির্দেশক। এইসব বিষয় তাদের মাধ্যমেই বুদ্ধিবৃত্তির সামনে তাদের স্রষ্টার প্রকাশ তুলে ধরে। আর তাদের মাধ্যমেই তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টি থেকে আড়াল। এ সব ঘটনা দিয়েই কল্পনাগুলো বিচার করে। আর সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা। সেগুলো থেকে প্রমাণের সূত্র বের হয় এবং সুশৃঙ্খল হয়। আর বুদ্ধিবৃত্তিগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে বিশ্বাস পোষণ করাটা হৃদয়ে গেঁথে যায় এবং স্বীকার করার মাধ্যমে ঈমান বাস্তব রূপ নেয়।

ইয়াজিদি নৃশংসতার জের: বাবার কাটা শিরে মাথা রেখে শিশু রুকাইয়ার দামেস্কে হযরত রুকাইয়ার (সা.আ) মাজার ও মসজিদ-কমপ্লেক্সদামেস্কে হযরত রুকাইয়ার (সা.আ) মাজার ও মসজিদ-কমপ্লেক্স১৩৮১ চন্দ্র-বছর আগে ৬১ হিজরির ৫ ই সফর হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র চার বছরের কন্যা হযরত রুকাইয়া শাহাদত বরণ করেন ইয়াজিদি নৃশংসতার জেরে।শহীদদের নেতা ও কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.)'র সবচেয়ে ছোটো ও আদরের মেয়ে হিসেবে ওই কচি বয়সে বাবার হৃদয়-বিদারক শাহাদত এবং বাবার ছিন্ন মস্তক মুবারককে বর্শার আগায় বিদ্ধ করে নিয়ে যেতে দেখা ছিল তাঁর জন্য এক অতি ভয়ানক দৃশ্য! তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বাবার ছিন্ন মাথার দিকে তাকিয়ে-থাকা এই কচি ও ইয়াতিম শিশুর আর্তনাদ যেন আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে তুলতো। কিন্তু এ অবস্থায়ও কারবালার ময়দান থেকে পাষণ্ড ইয়াজিদ-বাহিনী তাঁকে তাঁর বড় বোন হযরত (দ্বিতীয়) ফাতিমা (সা. আ.) ও হযরত সাকিনা (সা. আ.) এবং ফুফি হযরত জাইনাব (সা. আ.) ও হযরত উম্মে কুলসুম (সা.আ.)'র সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের দরবারে নিয়ে যায়।ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নবী-পরিবারের বন্দীদের দিকে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপের বান ছুঁড়ে মারছিল এবং চরম বেয়াদবী দেখিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.)'র কর্তিত শির মুবারক নিয়ে খেলা করছিল যাতে বন্দীদের ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে লবণ মাখিয়ে দেয়া যায়।নবী-পরিবারের সদস্যদেরকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে নেয়া হয় বন্দী অবস্থায়। কারবালা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত দীর্ঘ ও মরুময় দুর্গম পথে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও কচি শিশু রুকাইয়া (সা.আ.)-কে হাঁটানো হয় এবং পাষণ্ড উমাইয়া সেনারা এ সময় তাকে ধমক দেয়া ছাড়াও চাবুক দিয়ে মারতেও দ্বিধা বোধ করেনি।রুকাইয়া (সা.আ.)-কে দামেস্কে ইয়াজিদের রাজ-দরবারে সবার সামনে উপহাস করেছে খোদ ইয়াজিদ (আল্লাহর অশেষ অভিশাপ বর্ষিত হোক তার ওপর) এবং এ সময় এই মহাপাপী ইমামের কর্তিত শির মুবারকের ওপর বেত দিয়ে আঘাত হানছিল। ইমামের শির মুবারক একটি প্লেটের ওপর রাখা হয়েছিল।নবী-পরিবারের সদস্যদেরকে বন্দী করে রাখা হয় একটি জরাজীর্ণ ভবনের ধ্বসে-পড়া কাঠামো বা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। সেখানে রাতের বেলায় শিশু রুকাইয়া (সা.আ.)'র মর্মভেদী কান্নায় ইয়াজিদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। এ অবস্থায় মহাপাপী ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন (আ.)'র কর্তিত শির মুবারকটি এই শিশুর কাছে পাঠায় যাতে তাঁর কান্না থেমে যায়। বাবার ছিন্ন শির মুবারকটি দেখে শিশু রুকাইয়া (সা.আ.) ছুটে যান ও প্রিয় বাবার মাথাটি কোলে নেন এবং নিজের মাথাও রাখেন নিষ্পাপ ইমামের মাথায়। এ অবস্থায় তিনি দশই মুহররম থেকে গত ২৫ দিনে তাঁর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নানা বেদনা, যন্ত্রণা ও নির্যাতনের ঝড়গুলোর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ভাবতে থাকেন এবং এ অবস্থার মধ্যেই এক সময় চিরতরে নিথর ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন যখন তাঁর আত্মা পাড়ি জমায় বেহেশতে চিরশান্তির আশ্রয়ে। (ইমামের কাটা শিরের সঙ্গে কী তাঁর কোনো কথা হয়েছিল?)নতুন ইমাম ও ভাই হযরত যাইনুল আবেদীন (আ.) ওই ধ্বংসস্তূপের মাটিতেই দাফন করেন ছোট্ট বোনকে। সেখানে গড়ে ওঠে এক দর্শনীয় মাজার। সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের বহু মানুষ আজও সেখানে জিয়ারত করতে ভিড় জমান। ইতিহাস লেখকদের কেউ কেউ ইমামের এই শিশু কন্যাার নামকে ক্ষুদ্র ফাতিমা বা 'ফাতিমায়ে সুগরা' বলে উল্লেখ করেছেন। বড় ফাতিমা বা ইসলামের ইতিহাসের দ্বিতীয় ফাতিমা (সা. আ.) নামে ইমামের পৃথক এক কন্যার কথাও জানা যায়। কোনো কোনো লেখক ভুলবশত ইমাম-কন্যা সাকিনা ও রুকাইয়া (সা.আ.)-কে একই সন্তানের দুই নাম বলে মনে করেন। কিন্তু তারা দুই জনই ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)'র দুই ভিন্ন কন্যা। সাকিনা (সা. আ.) অনেক পরে বড় হয়ে মারা যান মদীনায়। কবি নজরুলের কবিতায়ও পৃথকভাবে ফাতিমা ও সাকিনা নামটি এসেছে: কঙ্কন পৌচী খুলে ফেল সকিনাকাঁদে কেরে কোলে করে কাশেমেরকাটা শীরখান খান খুন হয়ে ক্ষরে বুকফাটা নীরকেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যুও রুদ্ধবিশ্বের ব্যাথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্রগড়া গড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমাআম্মাগো পানি দেও ফেটে গেল ছাতিমা

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলী মোহাম্মদ ওয়া সাল্লিমমহান আল্লাহ নিজেই ইমাম হোসাইনের রক্তের বদলা নেবেনثار ‏শব্দটি ‎ثأر ‏অথবা ‎ثؤرة ‏শব্দ মূল থেকে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে প্রতিশোধ,রক্তের বদলা,রক্তপণ; ‏রক্ত অর্থেও তা ব্যবহৃত হয়।(মাজমাউল বাহরাইন, ‏১ম খণ্ড, ‏পৃ. ‏২৩৭; ‏মুঈন, ‏মোহাম্মাদ, ‏ফারসি অভিধান, ‏১ম খণ্ড, ‏পৃ. ‏১১৮৫; ‏মুফরাদাতে রাগেব, ‏পৃ. ‏৮১)📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚১. ثارالله ‏শব্দটির বিভিন্ন অর্থ রয়েছে যার প্রতিটিরই আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা রয়েছে,যেগুলোর সামগ্রিক অর্থ হলো যে,আল্লাহ্ তা‘আলা ইমাম হোসাইন ‎(আ.)-এর রক্তের অভিভাবক এবং তিনি নিজেই শত্রুদের থেকে এই মহান ব্যক্তির রক্তের বদলা নিতে চান। কেননা,কারবালায় সাইয়্যেদুশ শুহাদার রক্ত ঝরানো মহান আল্লাহর নিষিদ্ধের সীমা লঙ্ঘন,তাঁর সম্মান বিনষ্ট করা এবং তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করার শামিল। সর্বোপরি আহলে বাইত ‎(আ.) ‏হচ্ছেন ‎‘আলুল্লাহ্’ ‏অর্থাৎ আল্লাহর মনোনীত ও বিশেষজন; ‏এই ইমামদের রক্ত ঝরানোর অর্থ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সম্মানিত ও তাঁর প্রিয়তম ব্যক্তিদের রক্ত ঝরানো।(মুহাদ্দেছি, ‏জাওয়াদ, ‏দারস্হাঈ আজ যিয়ারতে আশুরা, ‏পৃ. ‏১৪; ‏আজিজি তেহরানি, ‏আসগার; ‏শারহে যিয়ারতে আশুরা পৃ. ‏৩৫।)📚📚📚📚📚📚📚📚যদিও এ শব্দটি পবিত্র কোরআনে ব্যবহৃত হয়নি,কিন্তু কোরআনের আয়াতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যে,আল্লাহ্ বলেছেন ‎–) وَمَنْ قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا(অর্থাৎ যে অন্যায়ভাবে নিহত হয় নিশ্চয় আমরা তার উত্তরাধিকারীকে ‎(প্রতিশোধ গ্রহণের) ‏অধিকার দান করেছি। ‎(সূরা বনি ইসরাঈল ‎: ‏৩৩)📚📚📚📚📚📚📚📚যদি কেউ ‎(যে কোন ধর্মের অনুসারী হোক) ‏অন্যায় ও মযলুমভাবে নিহত হয় তাহলে তার অভিভাবকরা তার রক্তপণ আদায়ের অধিকার রাখে। যেহেতু আহলে বাইতের ইমামগণ বিশেষ করে ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏সত্য,ন্যায় এবং আল্লাহর পথে অসহায় ও মযলুমভাবে শহীদ হয়েছেন,সেহেতু আল্লাহ নিজেই তাঁর রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণকারী। কেননা,স্বয়ং আল্লাহ্ই ইমাম হোসাইনের রক্তের উত্তরাধিকারী।এই কারণে ‎ثأرالله ‏এই অর্থে ব্যবহৃত হয় যে,ইমাম হোসাইনের রক্ত আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত এবং তিনি নিজেই ইমাম হোসাইনের রক্তের বদলা নেবেন। এই শব্দটা আল্লাহর সাথে সাইয়্যেদুশ শুহাদার সুদৃঢ় বন্ধনের প্রতি ইঙ্গিত করে যে,তাঁকে হত্যার মাধ্যমে যেন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত ও তাঁর সবচেয়ে নৈকট্যপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির রক্ত ঝরানো হয়েছে। ফলে তাঁর রক্তের প্রতিশোধ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গ্রহণ করলে হবে না।(ثأرالله ‏ফারহাঙ্গে আশুরা)২. ‏যদি ‎ثار ‏শব্দটির অর্থ রক্ত হয়,তাহলে অবশ্যই ‎ثار الله ‏শব্দটি প্রকৃত অর্থে ব্যবহৃত হয়নি; ‏বরং তা উপমা হিসেবে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা,এ বিষয়টি সুনিশ্চিত যে,আল্লাহ কোন বস্তুগত অস্তিত্ব নন যে,তাঁর শরীর অথবা রক্ত থাকবে। অতএব,এ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর উপমা দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়কে বুঝানো হয়েছে,যেমনভাবে মানুষের শরীরে রক্তের ভূমিকা অর্থাৎ জীবনকে বাঁচিয়ে রাখা। আল্লাহর দ্বীনের সাথে ইমাম হোসাইনের সম্পর্কও ঠিক সেরকম। আশুরা বিপ্লবই ইসলামকে পুনরায় জীবনদান করেছে।৩. ‏সম্ভবত এই ব্যাপারটিকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমরা বিভিন্ন রেওয়ায়াতের দলিলের ভিত্তিতে একটি ভালো ফলাফলে পৌঁছতে পারি। আলী ‎(আ.)-কেও ‎‘আসাদুল্লাহ’ (আল্লাহর সিংহ) ‏বা ‎‘ইয়াদুল্লাহ’ (আল্লাহর হাত) ‏বলা হয়েছে। ‎‘হাদীসে কুরবে নাওয়াফেল’ (নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সংক্রান্ত হাদীস)-এ মহানবী ‎(সা.) ‏থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন ‎: ‘আমার বান্দা ওয়াজিবসমূহের থেকে অধিক পছন্দনীয় কিছু দ্বারা আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে না,তদ্রূপ নফল দ্বারাও আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। তখন আমিও তাকে ভালোবাসি আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই,যা দ্বারা সে শ্রবণ করে এবং আমি তার চোখ হয়ে যাই,যা দ্বারা সে দেখে,আমি তার জিহ্বা হয়ে যাই,যা দ্বারা সে কথা বলে,আমি তার হাত হয়ে যাই,যা দ্বারা সে ধরে,আমি তার পা হয়ে যাই,যা দ্বারা সে পথ চলে; ‏যদি সে আমার দরবারে দোয়া করে আমি তা পছন্দ করি এবং যদি আমার কাছে কিছু চায় তবে তাকে তা দান করি’(আল-মাহাসেন, ‏বারকি, ‏১ম খণ্ড, ‏পৃ. ‏২৯১)📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚এই রেওয়ায়াত থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে,আল্লাহর ওলীরা হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে তাঁর প্রতিনিধি এবং আল্লাহর স্পষ্ট দলিল হিসেবে তাঁর কর্মের প্রকাশকারী। যেহেতু আল্লাহ নিরাকার সেহেতু তাঁর দেহ নেই,কিন্তু তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তাঁর ওলীদের মাধ্যমেই নিজের গুণাবলির প্রকাশ ঘটান এবং যখন তাঁর কোন বান্দাকে সাহায্য করতে চান তখন তাঁদের মাধ্যমেই তা করেন এবং ধর্মকে বাঁচানোর জন্য যে রক্ত তিনি ঝরাতে চান তা তাঁর ওলীদের শাহাদাতের মাধ্যমেই ঝরান। ঠিক যেভাবে আল্লাহর রাসূল ‎(সা.) ‏হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় তাঁর হাতকে সবার হাতের ওপর আল্লাহর কুদরাতী হাতের ‎(ইয়াদুল্লাহ) ‏নমুনাস্বরূপ রেখেছিলেন এবং মহান আল্লাহ তখন এ আয়াত ‎يَدُ اللَّـهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ‏অবতীর্ণ করেন,তেমনি ইমাম হোসাইনের রক্তও ‎‘আল্লাহর রক্ত’ (ثارالله) ‏হিসেবে গণ্য হয়েছে। যিয়ারতে আশুরায় আমরা পড়ি ‎:السلام علیك یا ثار الله و ابن ثاره و الوتر الموتورঅর্থাৎ ‎‘হে আল্লাহর রক্ত,তাঁর রক্তের সন্তান,তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে নিঃসঙ্গ একাকী!’ ‏তেমনিভাবে মরহুম ইবনে কুলাভেই ইমাম হোসাইন ‎(আ.)-এর ১৭ এবং ২৩ নং যিয়ারতে এভাবে বর্ণনা করেছেন ‎:انک ثارالله فی الارض والدم الذی لا یدرک ترته احد من اهل الارض ولا یدرکه الا الله وحدهযেমনভাবে মানুষের শরীরে রক্তের জীবনসঞ্চারী ভূমিকা রয়েছে এবং রক্ত থাকা বা না থাকার ওপর তার জীবন ও মৃত্যু নির্ভর করে,ইমাম আলী ও ইমাম হোসাইনের উপস্থিতি আল্লাহর নিকট তাঁর ধর্মের জন্য তেমন ভূমিকা রাখে। যদি হযরত আলী ‎(আ.) ‏না থাকতেন তাহলে বদর,উহুদ,খায়বার ও খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হতো এবং ইসলাম টিকে থাকত না; ‏আর যদি ইমাম হোসাইন ‎(আ.) ‏না থাকতেন তাহলে ইসলামের কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকত না। কেননা,আল্লাহ তাঁর মনোনীত বান্দাদের-যখন তাঁরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য আত্মোৎসর্গী ভূমিকা রাখেন-প্রতি তাঁর ঐশী সাহায্য প্রেরণ করার মাধ্যমেই সকল যুগে তাঁর ধর্মকে টিকিয়ে রেখেছেন।হ্যাঁ,যতদিন ইমাম হোসাইনের স্মৃতি জগরুক থাকবে,তাঁর নাম মানুষের মুখে মুখে ধ্বনিত হবে,হোসাইনপ্রীতি মানুষের অন্তরে অন্তরে স্পন্দিত হবে,তাঁর বেলায়াত ও প্রেমের শিখা মানুষের হৃদয়ে প্রজ্বলিত থাকবে,‘ইয়া হোসাইন’ ‏আহাজারি আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হবে ততদিন আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর নাম টিকে থাকবে। কেননা,তিনি তাঁর সর্বস্ব আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছেন,উৎসর্গ করেছেন। সত্যকে বিচ্যুতকারী মুনাফিকদের কুৎসিত চেহারা থেকে মুখোশ খুলে দিয়েছেন এবং মহানবীর খাঁটি ও প্রকৃত ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। আর তাই তাঁর রক্ত আল্লাহর রক্তের মর্যাদা পেয়েছে।(আশুরা ও কারবালা বিষয়ক প্রশ্নোত্তর গ্রন্থ থেকে সংকলিতনিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকাল পরবর্তী ইমামত এবং খেলাফত ।আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ।সেই মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া করছি যিনি তাঁর অগনিত নেয়ামত সমূহের মধ্যে থেকে অন্যতম নেয়ামত হিসেবে “ইমামত” পদ্বতির মত পবিত্র একটি নেয়ামত আমাদের দান করেছেন যার মাধ্যমে পথহারা পথিক সঠিক পথের দিশা পায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে ইহকাল এবং পরকালে চিরমুক্তি পায় ।প্রিয় পাঠক ,এখানে ছোট একটি প্রশ্নের অবসান করা দরকার ।অনেকেই মনে করেন যে , খলীফা ও ইমাম ভিন্ন জিনিষ । অনেকে এটাও মনে করেন যে , ইহজগতে মানুষকে শাসন করার জন্য খেলাফাত পদ্বতির প্রয়োজন এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইমামত পদ্বতির প্রয়োজন আছে ।কিন্তু প্রকৃত বিষয় হচ্ছে উভয়ই এক ও অভিন্ন । আল্লাহর নির্দেশে রাসূলের (সাঃ) ঘোষিত প্রতিনিধিগণই হলেন খলীফা এবং একইসাথে সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা ।অর্থাৎ আমাদের নেতা বা ইমামগণ হলেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) প্রতিনিধি বা খলীফা । কাজেই দেখা যাচ্ছে যে , রাসূলের (সাঃ) রেখে যাওয়া খেলাফত অতি অবশ্যই ইমামতের মধ্যেই অন্তরর্নিহিত !এর জন্য ভিন্ন কোন চিন্তা বা ধারনা তৈরী করা হলে সেটা হবে ব্যক্তি , গোষ্ঠী বা মানুষের দ্বারা সৃষ্টিকৃত যা পবিত্র কোরআন ও হাদিস পরীপন্থী এবং মোটেও আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত নয় ।নিম্নে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাতে মনযোগ দেওয়ার জন্য বনীত আবেদন করছি ।সর্বশক্তিমান আল্লাহর চিরন্তন বিধান হচ্ছে , মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে তাঁর প্রতিনিধি বা খলীফা প্রেরণ করা । এই ধারা নবী রাসূল আগমনের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত জারী ছিল ।“ – এটাই আল্লাহর বিধান যা পূর্ব থেকে চলে আসছে এবং তোমরা কখনই পাইবে না আল্লাহর বিধানে কোন পরিবর্তন — “ ।সুরা – ফাতহ / ২৩ ।পবিত্র কোরআনের আলোকে যদি আমরা এ বিষয়ে চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাব যে , মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ।মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) সমগ্র মানবজাতির ইমাম বা নেতা নিযুক্ত করেছিলেন ।“ – এবং যখন ইবরাহীমের প্রভু তাকে পরীক্ষা করলেন সুনিদিষ্ট কিছু কথা দিয়ে এবং সেগুলো সে সম্পাদন করল , তিনি বললেন , “আমি তোমাকে মানবজাতির ইমাম বানিয়ে দিচ্ছি ।” সে বলল , “আর আমার বংশধর থেকেও?” তিনি বললেন , আমার অঙ্গীকার জালিমদের নিকট পৌঁছায় না —– “ ।সুরা – বাকারা / ১২৪ ।হযরত ইব্রাহিম (আঃ) একজন রেসালাত প্রাপ্ত নবী ও রাসুল হওয়া সত্ত্বেও আরও কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতকার্য হয়ে ইমামতের স্তরে পৌঁছেছেন ! এবং এ ইমামতের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে মহান আল্লাহ নিজে ঘোষনা বা ওয়াদা) করেছেন ।তবে হ্যা ! হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) বংশের জালিমদের বেলায় ইমামতের ধারা প্রযোজ্য নহে ।একদিকে আল্লাহ ওয়াদা দিচ্ছেন অপরদিকে তাঁর ওয়াদার নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তা গ্রহণকল্পে ঘোষণা করে জানিয়ে দিচ্ছেন ,” — সুতরাং তুমি আল্লাহ সম্পর্কে কখনই এইরুপ ধারনা কর না যে , তিনি তাঁর রাসুলদের সাথে সম্পাদিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন । নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী , প্রতিশোধ গ্রহণকারী —- ” ।সুরা – ইবরাহীম / ৪৭ ।এখানে উল্লেখ্য যে , নবী-রাসুলগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ঠিক একইভাবে ইমামগনের মনোনয়ন এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মানুষের সামান্যতম এখতিয়ার নেই । ইমামত মনোনয়ন এবং নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণই আল্লাহর একক ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ।তাই এ প্রসঙ্গে আল্লাহ অত্যন্ত পরিস্কার করে বলেন —” —- তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন ও যাকে ইচ্ছা তাকেই মনোনীত করেন । এতে তাদের কোন ক্ষমতা নেই —– ” ।সুরা – কাসাস / ৬৮ ।“ – আমরা তাদেরকে ইমাম নির্বাচিত করেছিলাম আমাদের আদেশ অনুসারে হেদায়েত করতেন — “ ।সুরা – আম্বিয়া / ৭৩ ।“ – এবং তাদের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম ইমামদের যারা আমাদের আদেশে পথ দেখায় — “ ।সুরা – সাজদাহ / ২৪ ।তারপর আল্লাহ এরশাদ করেন ,” —- এটাই আল্লাহর পথ ! স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকেই তিনি এর দ্বারা সৎ পথে পরিচালিত করেন…..। “সুরা – আনআম / ৮৮ ।মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরন করেছেন । যেহেতু তাঁদের প্রত্যাগমণের ধারার সমাপ্তি ঘটেছে সেহেতু মানবজাতি কি অন্ধকার পথে থাকবে ?সহজ জবাবটি হচ্ছে — কখনই নহে ।আল্লাহ বলেন ,” — এরা সেসব লোক যাদের আমরা গ্রন্থ , নির্দেশ ও নবুয়ত দান করেছিলাম । এখন যদি এসব লোক (কাফেরগন) নবুয়ত অস্বীকার করে তবে আমরা এই বিষয়ের দায়িত্ব এমন এক সম্প্রদায়ের উপর ন্যস্ত করেছি যারা সেটাকে অবিশ্বাস করে না —– ” ।সুরা – আনআম / ৮৯ ।পবিত্র কোরআনে বর্নিত এই আয়াতে এই বিশেষ বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট তা হল , নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী কোন এক জাতির প্রতি ইঙ্গিত করা হচ্ছে যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারণ করা । এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ইমামতের আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছুই দৃশ্যমান হয় না ।যা নিম্নে খুবই সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে ।নবুয়ত ধারার সমাপ্তির পরে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও পরিচালনার জন্য আল্লাহ্ কাদেরকে নির্বাচন করেছেন এ ব্যাপারে আল্লাহ বলছেন ।“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের বংশকে এবং ইমরানের বংশকে সমস্ত জাতির উপর —” ।সুরা – আলে ইমরান / ৩৩ ।পবিত্র কোরআন ও ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে , হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল এসেছেন , সবাই ইব্রাহীমের (আঃ) পবিত্র বংশ থেকেই এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত হাদী আসবেন তাঁরাও ইব্রাহীম (আঃ) তথা মুহাম্মদের (সাঃ) পবিত্র বংশ হতে , এটা পবিত্র কোরআনেরই চুড়ান্ত সিদ্বান্ত ।সুতরাং নবুয়ত ধারা সমাপ্তির পরে ইমামত একমাত্র রাসুলের (সাঃ) পুতঃপবিত্র বংশধরদের জন্য জন্যই মনোনীত ।পূর্বোক্ত আলোচনা সমূহের ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে , বিশ্বনবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর ইসলামী উম্মতের মাঝে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম বা নেতার অস্তিত্ব ছিল এবং থাকবে ।এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সাঃ) থেকে অসংখ্য হাদিস রয়েছে যার কতিপয় হাদিস নিম্নে তুলে ধরা হল ।যাবের বিন সামরাতেন বলেন , রাসুলকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে , “বারজন” প্রতিনিধি আর্বিভাবের পূর্ব পর্যন্ত এই অতীব সম্মানীত ধর্মের সমাপণ ঘটবে না । যাবের বললেন , জনগণ তাকবির ধ্বনিতে গগন মুখরিত করে তুলল । অতঃপর রাসুল (সাঃ) আস্তে কিছু কথা বললেন ।আমি আমার পিতাকে বললাম , কি বললেন ?পিতা বললেন , রাসুল (সাঃ) বললেন , তারা সবাই “কুরাইশ বংশের” হবেন ।সূত্র — সহীহ আল বুখারী , খন্ড -৬, হাদিস -৬৭১৬- (আধুনিক) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস -৩২৪২-(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৬, হাদিস-৭২২২-আহলে হাদিস লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত / সহীহ আল মুসলিম, খন্ড-৫, হাঃ-৪৫৫৪, ৪৫৫৫, ৪৫৫৭, ৪৫৫৮, ৪৫৫৯- (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / আবু দাউদ, খঃ-৫, হাঃ-৪২৩০, ৪২৩১-ইঃ ফাঃ; তিরমিজি, খঃ-২, পৃঃ-৪৫, মুসনাদে আহম্মদ খঃ-১, পৃঃ-৩৯৮, খঃ-৫, পৃঃ-৮৬, ১০৫-আরবী; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৭, আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৫৮৮-উর্দু; মুস্তাদারাক হাকেম, খন্ড-৩, পৃঃ-৬১৭-১৮-ভারত / তারিখে বাগদাদ, খন্ড-১৪, পৃঃ-৩৫৩, হাদিস-৭৬৭৩-আরবি / মুনতাখারা কানজুল উম্মাল, খন্ড-৫, পৃঃ-৩১২-হায়দারাবাদ / তারিখ আল খোলাফা, পৃঃ-১০-আরবি / আস সাওয়ায়েকে আল মুহরেকা, ১৮৯-আরবি / ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৬৯৭-উর্দু / কানজুল উম্মাল, খন্ড-১২, পৃঃ-১৬৫, হাদিস-৩৪৫০১ ।রাসুল (সাঃ) বলেন , ‘আমার পরে “১২জন” ইমাম পর্যন্ত ইসলাম সমুন্নত থাকবে এবং তারা “কুরাইশ” বংশ থেকে’ ।সূত্র – সহীহ আল বুখারী, হাদিস-৬৭১৬; ৬৭৯৬ ।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) নবী (সাঃ) এর বিশিষ্ট সাহাবী বর্ণনা করেন যে , আমি মহানবীকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম যে , আপনার ইন্তেকাল পরবর্তীকালে কতজন নেতা (ইমাম) হবেন ?নবী (সাঃ) বললেন যে, “বনী ইসরাইলের খতিবদের ন্যায় বারোজন হবে”। সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৫ / সাওয়ায়েকে মুহরেকা, পৃঃ-১৩, (মিশর) / মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৯৬ ।“আমার পর বারোজন নেতা হবেন । তাঁরা সবাই বনি হাশেমগণের মধ্যে হতে হবেন” ।নবী (সাঃ) আবার অন্য এক হাদিসে বলেছেন যে, আমার পর “বারজন নেতা হবেন” তাঁরা সবাই “বনি হাশিমের” মধ্য হতে হবেন ।সুত্র – ইয়া নাবিয়ুল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৪১৬ ( উর্দু) ।অন্য একটি হাদিস – সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি বলেন , এমতাবস্থায় রাসুলের (সাঃ) নিকট উপস্থিত হলাম যে যখন হোসাইন (আঃ) তাঁর ঊরুর উপর ছিল এবং তিনি তাঁর চোখ ও ওষ্ঠতে চুম্বন দিচ্ছেন আর বলছেন যে , তুমি সাইয়্যেদের সন্তান সাইয়্যেদ এবং তুমি ইমামের সন্তান ইমাম , তুমি ঐশী প্রতিনিধির সন্তান ঐশী প্রতিনিধি । আর তুমি নয়জন ঐশী প্রতিনিধিরও বাবা , যাদের নবম ব্যক্তি হলেন কায়েম (ইমাম মাহদী) ।”সূত্র – ইয়ানাবী-উল্-মুয়াদ্দাহ্, (সুলাইমান বিন ইব্রাহীম কান্দুযি) ৭ম মুদ্রণ, ৩০৮ নং পৃষ্ঠা ।হাদিসে এসেছে নবী (সাঃ) বলেছেন যে , “দ্বীন ইসলাম ধ্বংস হবেনা কিয়ামত পর্যন্ত অথবা বারজন খলীফার আগমন পর্যন্ত , তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছেন আলী ইবনে আবু তালিব অতঃপর হাসান তারপর হোসাইন (আঃ) তারপর মুহাম্মদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মদ , হাসান ইবনে আলী এবং তাদের সর্ব শেষ হচ্ছেন আল মাহদী (আঃ) ”।সূত্র — সহীহ আল মুসলিম , ৬ষ্ঠ খণ্ড , পৃ- ৩-৪ / সহীহ আল বুখারী , ৪র্থ খণ্ড , পৃ- ১৫৬ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ , ১ম খণ্ড , পৃ- ৩৪৯ / সহীহ আত তিরমিযি ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩৪২ / সুনানে আবু দাউদ , ৩য় খণ্ড , পৃ- ৩০২ / কানযূল উম্মাল , ১২তম খণ্ড ,পৃ- ১৬৫ ।এই প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন —প্রসিদ্ব আহলে সুন্নাত এর পন্ডিত শায়খ সুলাইমান কান্দুজী হানাফী তুর্কি কতৃক রচিত তার প্রসিদ্ব গ্রন্থ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত নামক গ্রন্থে বর্ননা করেছেন যে ,নাছাল নামক একজন হিহুদী মহানবীর (সাঃ) নিকট আরজ করলেন যে ,ইয়া রাসুল (সাঃ) ! আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই যা কিছুদিন ধরে আমার মনকে অশান্ত রাখছে । কথা দিচ্ছি , আপনার জবাব যদি সঠিক হয় তাহলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করব ।নবী (সাঃ) বললেন , হে আবু আম্মারা , তুমি প্রশ্ন করে যাও , কোন সমস্যা নাই ।অনুমতি পেয়ে ঐ ব্যক্তি প্রশ্ন শুরু করল ।প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে সে খুবই সন্তষ্ট হল এবং বলল যে , আপনি খুবই সঠিক জবাব দিয়েছেন ।প্রশ্নের এক পর্যায় সে জিজ্ঞাসা করল যে , আমাকে বলে দিন , আপনার ইন্তেকালের পরে কে আপনার উত্তরাধিকারী হবে ?কেননা আজ পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল তাঁর পরবর্তী উত্তরসূরীর নাম পরিচয় না বলে এই পৃথিবী ত্যাগ করেন নাই । যেমন আমাদের নবী হযরত মুসা (আঃ) বলে গেছেন যে , তাঁর অবর্তমানে হযরত ইউসা বিন নুন হলেন তাঁর উত্তরসূর বা স্থলাভিষিক্ত ।মহানবী (সাঃ) বললেন যে , “আমার পরে আমার উত্তরসূরী বা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে আমার ভাই হযরত আলী ইবনে আবু তালিব এবং তাঁর পর আমার দুই সন্তান হাসান ও হোসাইন , অতঃপর কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট নয়জন ইমাম হোসাইন এর বংশ থেকে আগমন করবেন ।লোকটি বলল , “ইয়া মুহাম্মাদ (সাঃ) , দয়া করে অবশিষ্ট নয়জনের নাম বলে দিন” ।নবীজী (সাঃ) বললেন যে ,“হোসাইনের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদীন হবে ,জয়নুল আবেদীনের অন্তধানের পর তাঁর স্বীয় পুত্র মোহাম্মাদ বাকের হবে ,মোহাম্মাদ বাকেরের ইন্তেকালের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক হবে ,জাফর সাদিকের তিরোধানের পর তাঁর পুত্র মুসা কাজেম হবে ,মুসা কাজেমের ইহলোক ত্যাগের পর তাঁর পুত্র আলী রেজা হবে ,আলী রেজার ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র মুহাম্মাদ তাক্বী হবে ,মুহাম্মাদ তাক্বীর তিরোধানের পর তাঁর পূত্র আল নাক্বী হবে ,আল নাক্বীর ইহলোক ত্যাগের পরে তাঁর পূত্র হাসান আসকারী হবে ,হাসান আসকারীর ইন্তেকালের পর তাঁর পূত্র ইমাম মাহদী হবে সর্বশেষ বারতম ইমাম ।তাঁরা আল্লাহর হুজ্জাত বা জমিনের বুকে অকাট্য দলিল ।”এই জবাব পেয়ে পরক্ষনেই ঐ হিহুদী লোকটি মহানবীর (সাঃ) নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন ।সূত্র – ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত ,পৃ-৪৪১ (বৌরুত) / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ৬৯১-৬৯৪ ( লাহোর,উর্দু) / ফারায়েদ নি , খন্ড-২ , পৃ- ১৩৩ , ৩১২ / সিয়ারানীও আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওয়াহীর , খন্ড- ৩ পৃ- ৩২৭ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত – পৃঃ-৪২৭ (বৈরুত) / ইবনে আরাবী – ইবক্বাউল ক্বাইয়্যিম-২৬৬ / অধ্যায়ে , মানাকেবে ইবনে শাহার আশুব,খঃ-১, পৃঃ-২৮২ / রাওয়ানে যাভেদ, খঃ-২, পৃঃ-৭২ / কিফায়া আল আসার, খঃ-৭, পৃঃ-৭; (পুরোনো প্রিন্ট) / কিফায়া আল আসার, পৃঃ-৫৩, ৬৯; (কোম প্রিন্ট) / গায়াতুল মারাম, খঃ-১০, পৃঃ-২৬৭; ইসবাতুল হুদা, খঃ-৩, পৃঃ-১২৩ / নাযালুল আবরার , পৃঃ ১৭৪-১৭৫ / ইরাক থেকে মুদ্রিত , নুরুল আবছার / ফুসুলুল মুহিম্মা / মাতালিবুস সুউল ফী মানাকিবে আলে রাসূল, পৃঃ ৮৯; মিশর থেকে প্রকাশিত / ফারায়িদুস সিমতাইন ।সুপ্রিয় পাঠক ,“– স্মরন কর , সেদিনের ( কিয়ামত) কথা , যখন আমি সকল মানুষকে তাদের ইমামসহ আহবান করিব –” ।সুরা – বনী ঈসরাইল / ৭১ ।মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ইমামত পদ্বতির প্রসংঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেন যে , “যে ব্যক্তি তার নিজের যুগের ইমামের মারফত বা না চিনে মৃত্যুবরন করল , সে জাহেলিয়াতেের মৃত্যুবরন করল” ।সূত্র – সহীহ মুসলিম , খন্ড-২ ,পৃ- ১২৮ / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড-৪ , পৃ-৯৬ / সহীহ আল মুসলিম , হাদিস আরবী-১৮৫১ , বাংলা-৪৬৪১ / সহীহ ইবনে হাব্বান , জামেয়া বাইনা সহীহ / সহীহ মুসলিম , খন্ড – ৩ , হাদিস – ১৮৫১ (লেবানন) / কানজুল উম্মাাল , খন্ড – ১ , পৃ- ১০৩ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১৮৯ (উর্দ্দু) / মাজমা আজ জাওয়াইদ , খন্ড – ৫ , পৃ- ২১৮ / তাফসীরে ইবনে কাসির , খন্ড – ১ , পৃ- ৫১৭ (মিশর) / আস সুনান আল কুবরা , খন্ড – ৮ , পৃ- ১৫৬ / আল মুসনাদ , খন্ড – ৪ , পৃ- ৯৬ (মিশর) / জাওয়াহির আল মুদিয়া , খন্ড – ২ , পৃ- ৪৫৭ / শারাহ আল মাকাসিদ , খন্ড – ২ , পৃ- ২৭৫ / হিলিয়াতুল আউলিয়া , খন্ড – ৩ , পৃ- ২২৪ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৫৬ ।১২ ইমাম সম্পর্কে রাসুলের (সাঃ) যে হাদিসটি বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায় , ষষ্ঠ ইমাম সাদেক (আঃ) থেকে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে ।তিনি সালমান ফার্সি (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , রাসূল (সঃ) বলেছেন ,“আমি রাসুলের (সাঃ) কাছে উপস্থিত হলাম , তিনি আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন , ‘হে সালমান , আল্লাহ কোন নবী বা রাসুলকে পাঠান না যদি তার সাথে থাকে ১২ জন’।‘ইয়া রাসুলুল্লাহ , আমি তা দুই কিতাবের লোকদের কাছ থেকে জেনেছি’।‘হে সালমান , তুমি কি আমার ১২ জন সর্দারকে চেনো , যাদেরকে আল্লাহ আমার পরে ইমাম হিসেবে নির্বাচন করেছেন ?’‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ভাল জানেন ।’‘হে সালমান , আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন পবিত্রতম আদি নুর থেকে এবং আমাকে ডাকলেন এবং আমি তার আদেশ মানলাম ।এরপর তিনি আলীকে (আঃ) আমার নুর থেকে সৃষ্টি করলেন এবং তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।আমার নুর ও আলীর নুর থেকে তিনি সৃষ্টি করলেন ফাতিমাকে (সাঃআঃ) । তিনি তাকে ডাকলেন এবং সে আদেশ মানলো ।আমার , আলীর (আঃ) ও ফাতিমার (সাঃআঃ) নূর থেকে সৃষ্টি করলেন আল হাসান (আঃ) ও আল হোসাইনকে (আঃ) ।তিনি তাদের ডাকলেন এবং তাঁরা তাঁর আদেশ মানলো ।আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ৫টি নাম থেকে নাম দিয়েছেন ।আল্লাহ হলেন আল মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসার যোগ্য) ।আল্লাহ হলেন আল আলী (উচ্চ) এবং এ হলো (আঃ) যে উচ্চ প্রশংসনীয় ,আল্লাহ হলেন ‘আল ফাতির যিনি শুন্য থেকে সৃষ্টি করেন এবং এ হল ফাতিমা (সাঃআঃ) ।আল্লাহ হলেন তিনি যার কাছে আছে হাসান অন্যের জন্য কল্যান এবং এ হল হাসান (আঃ) ।আল্লাহ হলেন মুহাসসিন পরম সুন্দর এবং এ হল হুসাইন (আঃ) ।তিনি ৯ জন ইমামকে সৃষ্টি করলেন আল হুসাইনের (আঃ) নুর থেকে এবং তাদেরকে ডাকলেন এবং তারা তাঁর আদেশ মানলো ।আল্লাহ উঁচু আকাশ , বিস্তৃত পৃথিবী , বাতাস , ফেরেশতা ও মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই আমরা ছিলাম নূর । যারা তাঁর প্রশংসা করত , তাঁর কথা শুনতো এবং তাঁকে মেনে চলতো ।’‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সঃ), আমার বাবা ও মা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক , ঐ ব্যক্তির জন্য কি আছে যে এ ব্যক্তিদের, সেভাবে স্বীকৃতি দেয় যেভাবে তাঁদের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ?’‘হে সালমান , যেই তাদের স্বীকৃতি দেয় যেভাবে দেওয়া উচিত এবং তাঁদের উদাহরন অনুসরন করে , তাঁদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে এবং তাঁদের শত্রুদের কাছ থেকে মুক্ত থাকে , মহান আল্লাহর শপথ , সে আমাদের একজন । সে সেখানে ফেরত আসবে যেখানে আমরা ফেরত আসবো এবং সে সেখানে থাকবে যেখানে আমরা আছি ।’‘ইয়া রাসুল (সাঃ) ! তাঁদের নাম ও বংশধারা জানা না থাকলে কি বিশ্বাস আছে ?’‘না , সালমান ।’‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি তাঁদের কোথায় পাব ?’‘তুমি ইতিমধ্যেই আল হুসাইনকে (আঃ) জেনেছো , এরপর আসবে ইবাদাতকারীদের সদার আলী ইবনুল হুসাইন (যায়নুল আবেদীন) (আঃ), এরপর তার পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ)-পূর্বের ও পরের , নবী ও রাসুলদের জ্ঞান বিদীনকারী (আল-বাক্কির) ।এরপর জাফর ইবনে মুহাম্মাদ, আল্লাহর সত্যবাদী জিহবা (আল সাদিক) ।এরপর মুসা ইবনে জাফর (আঃ) , যে আল্লাহর ধৈযের মাধ্যমে তার রাগকে নিশ্চুপ রেখেছে (আল কাযিম) ।এরপর আলী ইবনে মুসা (আঃ) , যে আল্লাহর গোপন বিষয়ে সন্তুষ্ট আছে (আল রিদা) ।এরপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ) , আল্লাহর সৃষ্টির মাঝ থেকে নির্বাচিত জন (আল মুখতার) ।এরপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ (আঃ) , যে আল্লাহর দিকে পথ প্রদর্শক (আল হাদী) ।এরপর আল হাসান ইবনে আলী (আঃ) , যে নিশ্চুপ-আল্লাহর গোপন বিষয়ের বিশ্বস্ত পাহারাদার (আল আসকারী) ।এরপর মিম হা দাল (মুহাম্মাদ) , যাকে ডাকা হয় ইবনে আল হাসান (আঃ) যে ঘোষক আল্লাহর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে ।’সালমান (রাঃ) বলেন , ‘আমি কাঁদলাম , এরপরে বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমার জীবন তাদের সময় পযন্ত দীঘায়িত হোক ।’রাসুল (সাঃ) বললেন , হে সালমান , এটি তেলাওয়াত করে নাও —” — অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত দ্বয়ের প্রথমটির সময় আসন্ন হবে তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্বে আমাদের কতক কঠোর শক্তিশালী বান্দাদের প্রেরন করব এবং তারা তোমাদের গৃহসমূহে তোমাদের তন্ন তন্ন করে খুজবে এবং এ প্রতিশ্রুতি পূর্ন হওয়া অবশ্যস্ভাবী । অতঃপর তোমাদের জন্য পুনরায় তাদের উপর আক্রমন করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেব এবং ধন সম্পদ ও পুত্র সন্তান দ্বারা তোমাদের সহায়তা করব এবং জনসংখ্যায় তোমাদের অধিক করব —- ” ।সুরা – বনী ইসরাঈল / ৫ , ৬ ।সালমান (রাঃ) বললেন , ‘আমি অনেক কাঁদলাম, এবং আমার আকাঙ্ক্ষা প্রচন্ড হয়ে দাঁড়ালো । আমি বললাম , ইয়া রাসুলাল্লাহ , এটি কি আপনার কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি ?’‘হ্যাঁ , তাঁর শপথ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন এবং সংবাদ দিয়েছেন , এটি একটি প্রতিশ্রুতি আমার , আলীর , ফাতিমার , আল-হাসান , আল-হুসেইন এবং আল-হুসেইনের বংশ থেকে ৯ জন ইমামদের কাছ থেকে তোমার জন্য এবং তাদের জন্য যারা আমাদের সাথে আছে এবং যাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে ।যে তার বিশ্বাসে সত্যিকারভাবে আন্তরিক , তাহলে আল্লাহর শপথ সালমান , ইবলিস ও তার বাহিনীগুলো আসুক । যার আছে সত্যিকার আবিশ্বাস সে শাস্তি পাবে প্রত্যাঘাত ও নির্যাতন এবং উত্তরাধীকারের (অন্যদের দ্বারা) মাধ্যমে। তোমার রব কারও উপরে যুলুম করবেন না ।এই আয়াতে বলা হয়েছে —” —- আর আমরা চাই যাদেরকে দেশে হীনবল (অসহায়) করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি ও তাদেরকে নেতা নিযুক্ত করি এবং তাদেরকে (সেই দেশের) উত্তরাধিকারী করি এবং তাদের পৃথিবীতে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করি এবং ফিরআউন , হামান ও তাদের বাহিনীকে যা তারা আশংকা করত তা দেখিয়ে দেই —– ।”.সুরা – কাসাস / ৫ , ৬ ।সালমান (রাঃ) বলেন , আমি আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে বিদায় নিলাম সম্পুন ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে ।কিভাবে সালমান মৃত্যুর সাথে দেখা করবে অথবা কীভাবে মৃত্যু তার সাথে দেখা করবে”।সূত্র – মিসবাহুস শারিয়াহ, লেখক — ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) ।আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এই ইমামতের ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় প্রদান করা হয়েছিল যা ইতঃপূর্বে কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রেও হয়নি । সাধারণত সকল নবী রাসূলগণই তাদের পরিচয় সম্পর্কে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় ব্যক্ত করেছেন ।কিন্তু ইমামতের বেলায় ভিন্ন ।হজ্ব ফেরৎ লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনকে সাথে নিয়ে গাদীরে খুম নামক স্থানে পৌঁছালে আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) প্রতি কঠোর হুশিয়ারীমূলক নির্দেশ নাযিল করে সূরা মায়েদার ৬৭ নং আয়াতে বলেন —“ – হে রাসুল , পৌঁছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে এবং যদি তুমি তা না কর , তুমি তাঁর রেসালতই পৌঁছে দাও নি এবং আল্লাহ তোমাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের দলকে পথ দেখান না —- “ ।সুরা – মাইদাহ / ৬৭ ।উক্ত আয়াতে এমন একটি নির্দেশ পৌছাঁনোর কথা বলা হচ্ছে যা না পৌছাঁলে রাসূলের (সাঃ) রিসালাত-ই বৃথা !কারন , ঐ নির্দেশটি রেসালাতের বিনিময়যোগ্য !আর তখনই কোন কিছু বিনিময় হয় যখন একটা আরেকটার পরিপূরক গুন সম্পন্ন হয় ।কি ছিল সেই নির্দেশ ?রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ শেষে ১ লক্ষ ২০ হাজার (কমবেশি) সাহাবাসহ মদীনার দিকে রওয়ানা হন । গাদীরে খুম নামক জায়গায় পৌছাঁলে উক্ত আয়াত নাযিল হয় ।এতক্ষণে সাহাবীগণ (রাঃ) বিভিন্ন দিকে যাত্রা শুরু করেন । রাসূল (সাঃ) দূত পাঠিয়ে সকলকে একত্রিত করেন । অতঃপর রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ পৌছানোর লক্ষে একত্রিত লোক সম্মুখে ভাষণ দেন ।আল্লাহর গুণকীর্তন করে রাসূল (সাঃ) মূল বক্তব্যটি পেশ করেন । তিনি সকলকে জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের মাওলা নই ?সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করেন , আমি কি মুমিনদের জান-মালের চেয়ে অধিক প্রিয় নই ?সকলে বলিল , হ্যা অবশ্যই ।তারপর তিনি বলেন, “মান কুন্তো মওলাহু ফাহাজা আলীয়্যুন মওলা” অর্থাৎ আমি যার মাওলা এই আলী ও তার মাওলা ।নবীজী (সাঃ) আরও বলেন , আমার পরে সে (আলী) সকল মুমিনদের অভিবাবক ও স্থলাভিষিক্ত ।অতঃপর উপস্থিত সকলে মাওলা আলীর (আঃ) বেলায়াতের সাক্ষী প্রদান করেন । হযরত আবু বকর , হযরত ওমর এসে মাওলা আলীকে (আঃ) অভিন্দন জানিয়ে বলেন , হ্যা “আলী ইবনে আবু তালিব” ! আজ থেকে তুমি সকল মুমিনের মাওলা হয়ে গেলে ।তারপর সকলে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হওয়ার মনস্থির করেন ।ইতিমধ্যে আল্লাহ সূরা মায়েদার ৫নং আয়াত নাজিল করে দিলেন —-” —- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ন করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি সন্তষ্ট হলাম —– ” ।সুরা – মায়েদা / ৩ ।নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পূর্বেই এর (রিসালাতের) বাহক (সাঃ) কর্তৃক ইমামতকে স্বীকৃতি দিয়ে রিসালাতের উদ্দেশ্য ইমামতের উপর ন্যাস্ত হয় । রিসালাত ইমামতকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করে । ইমামত রিসালাতকে আঁকড়ে ধরে পরবর্তী কাজ আঞ্জাম দিয়ে দ্বীনের প্রতিষ্ঠিত পথকে সুসংহত রাখে ।সমসাময়িক অনেক লোকজন রিসালাতকে যেমন অস্বীকার করেছে তেমনি ইমামতকেও ।তাই আল্লাহ্ বলেন ,” —- নিঃসন্দেহে তারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল যখন তা তাদের নিকট এসেছিল । সুতরাং অচিরেই তাদের কাছে যেসব ব্যাপারে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করত তার খবর এসে যাবে —– ” ।সুরা – আনআম / ৫ ।প্রিয় পাঠক ,পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট একটিই প্রার্থনা যে , আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত অশেষ করুনা , দয়া ও নেয়ামতের মিষ্টি সুপেয় পবিত্র বার ইমামত ধারার প্রতি সর্বক্ষন যেন প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি ।রাসুলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত তথা বার ইমামীয়ার (আঃ) আর্দশ বুকে ধারন করে যেন মৃত্যুবরন করতে পারি ।ইমামে যামানা (আঃফাঃ) এর যহুরকে ত্বরান্বিত করুন ।ঈলাহী আমীন

উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশার (রা.) ভ্রাতা মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে হত্যা করেন মুয়াবিয়ামুয়াবিয়া হিজরী ৩৮ সনে ওমর ইবনে আসকে ছয় হাজার সৈন্যের একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে মিশরে প্রেরণ করেছিলেন । ঐ সময়ে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মিশরে হযরত আলী (আ.) - এর পক্ষ থেকে গর্ভণর হিসাবে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত। ওমর ইবনে আস মিশরে প্রবেশের পথে একটি স্থানে অবতরণ কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করে । আর সেখানে তৃতীয় খলিফা ওসমানের সর্মথকগণকে সমবেত করা হয় । উসমানের সমর্থকদের নিয়ে ওমর ইবনে আস জামায়াতে নামাজ আদায় করে ওখানে বসেই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে একটি পত্র লেখেন:"হে আবু বকরের পুত্র ! আমি তোমাকে অভিভূত করতে চাই যে আমি তোমাকে পরাজিত করতে চাই না । তবে জেনে রাখো ! মিশরের জনগণ তোমার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে এবং তারা আর তোমার আনুগত্য মেনে চলতে রাজি নয়, তারা তোমার থেকে অনুতপ্ত। অতএব যখন তাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে তখন তারা কিন্তু তোমাকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করবে। সুতরাং আমি তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি মিশর ত্যাগ করে চলে যাও । - তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। "একইসাথে মুয়াবিয়া যে পত্রটি মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে সম্বোধন করে লিখেছিলেন সেটিও মিশরের নতুন গর্ভনর মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন ওমর ইবনে আস। মুয়াবিয়ার ঐ চিঠিতে লেখা ছিলেন: " ওসমানকে তোমার চেয়ে অধিক কেউ নিপীড়ন ও ক্ষতি করেছে বলে আমার জানা নেই। তুমি ঐ ব্যক্তি যে ষড়যন্ত্র ও তাঁর হত্যায় অংশ নিয়ে ছিলে।তুমি কি ভেবেছো আমি এসব কিছু উপেক্ষা করব বা ভুলে যাব ...! এখন আমি একটি দল পাঠিয়েছি যারা তোমার রক্তের জন্য তৃষ্ণার্ত এবং তোমাকে হত্যা করার মাধ্যমে জিহাদ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন। অবশেষে ওমর ইবনে আস এবং তার বন্ধু মুয়াবিয়া ইবনে হুদাযইজ জনাব মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের বেশ কয়েকজন সাথীদের হত্যা করেন, বিশেষ করে কাননাহ ইবনে বাশার সহ আরো কয়েকজনকে হত্যা করে । এরপর যখন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে খুঁজে পায় তখন তাঁকে বন্দী করে মিশরের একটি কারাগারে নিয়ে আটকে রাখে । আর সেখানে তারা তাকে তৃষ্ণা নিবারণে বাধা দেয় এবং তিনি যখন পচন্ড পিপাসায় ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে হত্যা করা হয় । অতপর তারা একটি মৃত গাধার দেহের উপর তাঁকে ফেলে আগুন দিয়ে আগুনে জ্বালিয়ে দেয় !!! উম্মুল মোমনেীন হযরত আয়েশা (রা.) (মুহাম্মদ ইবনু আবু বকরের বোন) -এর যখন খবরটি শোনেন তখন তিনি অনেক ক্রোন্দন করেন এবং নামাজ পড়ে মুয়াবিয়া ও ওমর ইবনে আসের প্রতি অভিশাপ দেন। [তারিখে তাবারী, ৬খণ্ড, ৫৮ নম্বর পৃষ্ঠা, ৩৮ বছরের ঘটনাবলী,/ আল-কামিল ইবনে আসির, ৩খণ্ড, ১৫৪ নম্বর পৃষ্ঠা ৩৮ সনের ঘটনাবলী।/ তারিখে ইবনে কাসির, ৭খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, ৩৮ সনের ঘটনাবলী/ আল এস্তিয়াব ২খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা।/ তাহজিব আত তাহজিব, ৯খন্ড, ৮১ পৃষ্ঠা]মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মৃত্যুর সংবাদ যখন মুয়াবিয়া ও তার অনুসারীদের কাছে পৌঁছালো, তখন তারা খুবই খুশী ও আনন্দ উল্লাস করেছিল। অন্যদিকে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মৃত্যু এবং মুয়াবিয়ার উল্লাসের সংবাদ যখন ইমাম আলী (আ.) -কে জানানো হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন: তারা যতখানি খুশি হয়েছে আমি ততোধিক শোকাহত হয়ে আছি যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো । আমি এ পর্যন্ত কারো ব্যাপারে এতোখানি শোকাহত হইনি। আমি তাঁকে নিজের হাতে লালনপালন করেছি তাঁকে আমি সন্তান হিসাবে বিবেচনা করতাম।… হে খোদা এ কুরবানী তোমার পথে উৎসর্গ করলাম।[ - মুরুজুজ্ জাহাব ২খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা।/ তারিখে ইবনে কাসির, ৭খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, ৩৮ সনের ঘটনাবলী ] ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ আল-নুযুমুজ জাহরা-তে বলা হয়েছে তারা মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের মস্তক শিরশ্ছেদ করে দামেস্কে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের কাছে নিয়ে যায় । আর তারই নির্দেশে ইসলামী ইতিহাসে এই প্রথমবার কারো কর্তিত মস্তক সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করানো হয় । [-আল-নুযুমুজ জাহরা গ্রন্থ, ১ম খন্ড, ১১০ নম্বর পৃষ্ঠা]

মূয়াবীয়া ও তার উপদেশনামা প্রসঙ্গ ।মুয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান তার দুঃশ্চরিত্র লম্পট মাতাল পুত্র ঈয়াযীদকে খলীফা বানানোর জন্য বিভিন্ন অপকৌশল ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে লম্পট ঈয়াযীদের প্রতি বাইআত গ্রহন করতে বাধ্য করেছিলেন ।ইতিহাস থেকে জানা যায় মূয়াবীয়া মৃত্যশয্যায় থাকাকালে ঈয়াযীদ দামেস্কের বাইরে মৃগয়ারত ছিল ।মৃত্যুশয্যায় জনাব মূয়াবীয়া তার সুযোগ্য কুলাঙ্গার পুত্র ঈয়াযীদের জন্য যে উপদেশনামা লিখে দিয়েছিলেন তা ১৯৯২ সালের ৪ ই জুলাই , দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল যা নিম্নে উদৃত করা হইল ।"হে প্রিয় বৎস !আমি তোমার পথের সব কাটা অপসারন করে পথ সম্পুর্ন পরিস্কার করে দিয়েছি । দুশমনদের পরাস্ত করে আরববাসীদের গর্দান তোমার কাছে নত করে দিয়েছি । তোমার জন্য অঢেল ধন-সম্পদ জমা করে রেখেছি ।তোমার প্রতি আমার একান্ত উপদেশ , আমার এসব উপকারের কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তুমি হেজাজবাসীদের প্রতি সবসময় দয়াপ্রবন থাকবে , তারাই তোমার আসল ভিত্তি । যারা তোমার কাছে আসবে তাদের প্রতি সদা উত্তম ব্যবহার করবে । সেইসাথে ইরাকবাসীদের প্রতিও অনুগ্রহ করবে । তারা প্রতিদিন নয়া শাসনকর্তা দাবী করলে তা-ই করবে । সিরিয়ানদেরকে তোমার উপদেষ্টা নিয়োগ করবে ।দুশমনদের সাথে মোকাবেলা করতে হলে সিরিয়ানদের সাহায্য গ্রহন করবে । সফল হবার পরে সিরিয়ানদেরকে তাদের শহরে ফেরত আনবে । কেননা অন্যস্থানে অধিক অবস্থানের ফলে তাদের নৈতিক পরিবর্তন হবার আশংকা থাকে ।প্রিয় বৎস ! তোমার চারজন প্রধান শত্রু এখনও রয়ে গেল ।এরা হল -- হুসাইন ইবনে আলী , আবদুল্লা ইবনে উমর , আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর ও আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের ।তবে এই চারজনের মধ্যে হুসাইন ইবনে আলী তোমার জন্য অধিক বিপদজ্জনক -- ।"বাংলা অনুবাদক ।প্রিয় পাঠক ,ইদানীং অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে এটা বলার চেষ্টা করেন যে , কারবালা হত্যাযজ্ঞে ঈয়াযীদ দায়ী নয় । ঈয়াযীদের প্রসঙ্গে পরে আলাপ হবে । আপাঃতত এটা তো দেখলেন যে , লম্পট পুত্রের থেকে জারজ পিতা কোন অংশেই কম নন !এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে তার সারাটি জীবন ব্যয় করেছে হযরত আলীর (আঃ) বিরুদ্বে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও যুদ্ব করে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে প্রতিটি মসজিদ থেকে জুমআর খুৎবাতে ইমাম আলী (আঃ) এবং তাঁর পবিত্র সন্তানদের প্রতি গালিগালাজ করিয়েছে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে হযরত হাসানকে (আঃ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করিয়েছে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে হযরত আবু বকরের পুত্রকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -যে বিশ্বনবীর (সাঃ) অসংখ্য মুমিন সাহাবীকে নির্বিচারে হত্যা করেছে ।এই হইল সেই মূয়াবীয়া -ইমাম হোসেনকে (আঃ) হত্যা করার জন্য জোর তাগিদ সহ ওসিয়তনামা করে গেল !সর্বনিকৃষ্ট কুলাঙ্গার মূয়াবীয়ার প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচন্ড শাস্তি ও লানত বর্ষিত হোক ।ঈলাহী আমিন ।সকলকে ধন্যবাদ এবং সালাম জানিয়ে আজকের মত বিদায় ।খোদা-হাফেজ ।নিবেদনে -সাকিল আহমেদ ।লাব্বাইক ইয়া হোসেন (আঃ) ,ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ।আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজহুম ।আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ) ।লেখাটি সকলের প্রিয় Shoaib Mollah ভাইয়ের লেখা থেকে সংগৃহীত ।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম 🕋হযরত মূয়াবীয়ার যে কাজগুলি বিশ্লেষনের দাবী রাখে ।একমাত্র মুয়াবীয়ার পরিবারই বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ পর্যায়ক্রমে নবী বংশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী শত্রুতা করেছে ।আবু সুফিয়ান , মূয়াবীয়া এবং ঈয়াযীদ — এই তিন পুরুষই পর্যায়ক্রমে রাসুল (সাঃ) , হযরত আলী (আঃ) , হযরত হাসান (আঃ) এবং হযরত হোসেনের (আঃ) বিরুদ্বে সরাসরি ভয়াবহ ষড়যন্ত্র এবং সর্বাত্মক বিদ্রোহ ও যুদ্ব করেছে ।নিম্নে শুধুমাত্র দ্বিতীয় পুরুষ কুখ্যাত মূয়াবীয়ার কুকর্মের সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেয়া হইল ।ওহাবী-সালাফীদের সবথেকে প্রিয় খলীফা হচ্ছে হযরত মূয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান । এই বিষয় দুনিয়ার শীয়া-সুন্নিসহ সকল ইসলামী গবেষকবৃন্দ সম্পূর্ন ঐক্যমত পোষন করেন ।ইসলামী সাম্রাজ্যে সর্বপ্রথম রাজতন্ত্র স্থাপনকারী উমাইয়া বংশের প্রথম খলীফা জনাব মুয়াবীয়া তার দীর্ঘ শাসন আমলে নিম্নলিখিত কাজগুলো করেন যা ইসলামের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ন নয় ।১) –হযরত আলীর (আঃ) মর্মান্তিক শাহাদাতের পরে সাহাবাগনের সাথে পরামর্শ না করে ছলছাতুরী আর তরবারীর সাহায্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ।উল্লেখ্য যে , মারেফুল কোরআন , পৃ- ৪২৭ এ বর্নিত হাদিস অনুযায়ী জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে ।২) –মূয়াবীয়া ছিল নবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতগনের (আঃ) অন্যতম প্রকাশ্য শত্রু । মুয়াবীয়া তার শাসন আমলে প্রতি জুমআর দিন খুৎবায় নবী-পরিবারকে গালাগালি দেওয়ার প্রথা চালু করেছিল । গালিগালাজ দেওয়ার প্রথা কমপক্ষে ৭০ বছর যাবৎ বলবৎ ছিল । ঐ সময় জুমআর নামাজের আগে খুৎবা পাঠ করা হইত । সে কারনে অনেক মুসল্লীরাই গালাগালি শ্রবণ না করে চলে যেত । তাই সচতুর মুয়াবীয়া নির্দেশ দেন যেন খুৎবা নামাজের আগেই আরম্ভ করা হয় যাতে করে খুৎবায় নবী-বংশের বিরুদ্ধে গালাগালি শুনতে মুসল্লিগণ একপ্রকার বাধ্য থাকেন ।হযরত আলী (আঃ) সহ সকল আহলে বায়েতগনের (আঃ) প্রতি সকল প্রদেশের মসজিদের মিম্বর হতে অভিসম্পাত বা গালাগাল করার নির্দেশ বাধ্যতামূলক করা , যা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পর্যন্ত বলবৎ ছিল ।৩) –ইমাম হাসানের (আঃ) সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত লিখিত চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা ।৪) –দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসানকে (আঃ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করে স্বীয় পুত্র ঈয়াযীদকে গদিতে বসানোর রাস্তাকে পরিষ্কার করেন ।৫) –প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের পুত্র হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরকে (রাঃ) জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা ।৬) –কুখ্যাত মুয়াবীয়া খাবার নিমন্ত্রন করে ফাঁদ পেতে উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়েশাকে হত্যা করে মাটিতে পূতে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে আড়াল করেছিল । তাই ইতিহাসে উম্মল মুমেনিন হযরত আয়েশার কবরের সঠিক কোন অস্তিত্ব নাই ।৭) –রাজকীয় কায়দায় নিজেকে রাজা হিসেবে দাবী করে সাম্রাজ্য শাসন করা ।৮) –মদখোর , ভোগবিলাসী পুত্র ঈয়াযীদকে খলীফা হিসাবে মনোনীত করা ।৯) –বদরী সাহাবী হযরত ইবনে আদীকে (রাঃ) তাঁর ১২ জন সঙ্গীসহ জীবন্ত কবরস্থ করেন এই মুয়াবীয়া ।১০) –মুহাম্মদ বিন আবুবকর , মালিক আশতার সহ অনেকেই মুয়াবীয়ার জঘন্য হত্যার শিকার । মুয়াবীয়া তার রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কত জনকে যে গুপ্ত হত্যা করিয়েছে তার কোন সঠিক হিসাব নাই ।১১) –মহানবীর (সাঃ) আশেক হযরত উয়ায়েস করণীকেও (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে প্রাণ দিতে হয় মুয়াবীয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই ।১২) –হযরত ওসমান হত্যার পিছনেও বর্ণচোরা মুয়াবীয়ার হাত ছিল । তাই সে ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্রাট হবার পরেও হযরত ওসমান হত্যার কোন বিচার করে নাই ।১৩) –মুসলিম বাহিনীর লাশ হতে মস্তক বিছিন্ন এবং তা শহরে প্রর্দশন চালুকরন ।১৪) –মিথ্যা হাদিস তৈরী , প্রচারকরনের মহা ব্যবস্থাকরন ।১৫) –রাসুলের (সাঃ) হাদিস “সম্মানীত স্বামীর জন্য সন্তান এবং বেশ্যার জন্য কিছুই না” এর বিপরীতে জিয়াদকে ভাই হিসেবে ঘোষনা প্রদান ।১৬) –প্রাদেশিক শাসকদের অন্যায় কাজের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নেওয়া ।১৭) –দাড়িয়ে খুৎবা প্রদানের বদলে বসে খুৎবা প্রদান ।১৮) –ঈদের নামাজে আযান প্রথা চালু করা ।১৯) –রেশমী বস্ত্র পরিধান করা ।২০) –নবীজীর (সাঃ) আমলের ফেৎরা প্রথার পরির্বতন করা ২১) –বায়তুল মালকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পরিগনিত করা ।সুপ্রিয় পাঠক ,প্রসঙ্গক্রমে আরও জেনে নিন যে , মুয়াবীয়ার সঠিক কোন পিতৃপরিচয় নাই ।কারন তার মা তাকে পেটে ধরা অবস্থায় আবু সুফিয়ানের সাথে ঘর-সংসার শুরু করে । আর বিবাহের পূর্বে হিন্দা যখন পতিতালয় পরিচালনা করত তখনই মুয়াবীয়া তার পেটে এসেছিল ।ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় যে , মুয়াবীয়ার জন্মদাত্রী জননী হিন্দা বিনতে আতবা তৎকালীন সময় কুখ্যাত বেশ্যা ছিল । সেসময় মক্কার সবথেকে বড় বেশ্যাপল্লীর প্রধান পরিচালিকা ছিল !বলা হয় মুয়াবীয়া চারজনের সন্তান ছিল । অর্থাৎ মুয়াবীয়ার সম্ভাব্য পিতা ছিল চারজন —১) আমারা বিন অলীদ মখজুমী২) মুসাফির বিন আমর৩) আবু সুফিয়ান৪) আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব !যেহেতু হিন্দা বহু ঘাটের পানি পান করেছিল তাই মুয়াবীয়ার প্রকৃত পিতা নির্ধারন করা অসম্ভব একটি বিষয় ।সূত্র – বইয়ের নাম – *উমাইয়া খেলাফত পৃষ্ঠা-৯* ভারতের কলিকাতার সবার পরিচিত লেখক – ডক্টর ওসমান গনী , এম এ, পিএইচডি, ডিলিট ,বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক – ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ,কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় , কলিকাতা / সিবত ইবনে জুজি তাজকেরা নামক পুস্তক পৃ-১১৬ ।অতএব মূয়াবীয়া যে কোন পুরুষের রাসায়ানিক বিক্রীয়ায় হিন্দার গর্ভে এসেছিল খোদ হিন্দাও তা জানত না ।সুপ্রিয় পাঠক ,দয়া করে ইতিহাস জানুন । এখানে শীয়া বা সুন্নি বিবেচ্য নয় । নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করুন ।— আমরা কি প্রকৃত সুন্নাহ অনুসরন করছি —লেখক – এম , এ , রহমান ,পৃষ্ঠা – ১৭৫ , ১৭৬ ।লা'নাতুল্লাহি আলা কাউমে জালেমিন…………………নিবেদক মোঃ জাহিদ হুসাইন

মাওলা মোহাম্মদ (সা.)এর দেখানো পথ ও সৌভাগ্যের সিঁড়ি (সপ্তম পর্ব)আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমসর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও শিক্ষক মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর প্রখ্যাত সাহাবি মুআয ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় তাঁকে কিছু অসিয়ত করেছিলেন। এখানে সেই অমর অসিয়তের প্রধান কিছু অংশ তুলে ধরছি।রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: হে মুআয! তাদেরকে তথা ইয়েমেনের নও-মুসলিমদেরকে আল্লাহর কুরআন শিক্ষা দাও। তাদেরকে ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তোল। মানুষকে তাদের নিজ নিজ স্থানে স্থাপন করো- সৎ হোক আর মন্দ হোক। আর আল্লাহর নির্দেশকে তাদের মধ্যে বাস্তবায়ন করো। আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর মালের ব্যাপারে কারো ভয় করবে না। কারণ, তা তোমার কর্তৃত্বাধীন বা ইখতিয়ারাধীন নয় এবং তোমার মালও নয়। আর তাদের আমানতকে কম হোক আর বেশি হোক তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। আর অধিকার তরক করার ক্ষেত্র ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে তুমি তাদের সাথে নমনীয় ও ক্ষমাশীল হবে। মূর্খ বলবে, আল্লাহর অধিকার বর্জন করেছ। আর তোমার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে যে বিষয়েই তোমার প্রতি অভিযোগের ভয় করবে, ক্ষমা চেয়ে নেবে যাতে তারা তোমাকে ক্ষমা করে। জাহেলি যুগের রীতি-নীতিগুলোর মূলোৎপাটন করবে, তবে সেগুলো ছাড়া যেগুলোকে ইসলাম সমর্থন করেছে।মাওলা (সা.) মুআয ইবনে জাবাল (রা.)-কে আরো বলেছেন, ইসলামের বিষয়গুলো তা ছোট-বড় যা-ই হোক সবগুলোকেই প্রকাশ করো। আর তোমার সর্বাধিক প্রচেষ্টা যেন নামাযের মধ্যে নিয়োজিত হয়। কেননা, নামায হলো ধর্মের প্রতি স্বীকারোক্তির পরে ইসলামের মূল বিষয়। মানুষকে আল্লাহ্ এবং পরকালের কথা স্মরণ করাও। উপদেশকে চালু রাখবে। কারণ, এটা আল্লাহর প্রিয় বিষয়গুলোর পথে চলতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এরপর তাদের মধ্যে শিক্ষকদেরকে ছড়িয়ে দাও। আর ঐ আল্লাহর ইবাদত করো যার কাছে ফিরতে হবে। আর আল্লাহর রাস্তায় কারো ভর্তসনার তোয়াক্কা করবে না।মাওলা (সা.) মুআয ইবনে জাবাল (রা.)-কে আরো বলেছেন, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি আল্লাহকে ভয় করে চলবে, সত্য কথা বলবে, অঙ্গীকার রক্ষা করবে, আমানত ফিরিয়ে দেবে, খেয়ানত থেকে দূরে থাকবে, কোমল ভাষায় কথা বলবে, আগে সালাম দেবে, প্রতিবেশীকে সাহায্য করবে, অনাথের প্রতি সদয় হবে, ভালো কাজ করবে, প্রত্যাশাকে ছোট করবে, পরকালকে ভালোবাসবে, হিসাব-নিকাশকে ভয় করবে, ঈমানের প্রতি লেগে থাকবে, কোরআনকে বুঝে পড়বে, রাগ সংবরণ করবে এবং বিনয়ী হবে।আমি তোমাকে সতর্ক করছি যে, কোন মুসলমান ভাইয়ের বদনাম করো না কিংবা পাপীকে অনুসরণ করো না কিংবা ন্যায়বান নেতাকে অমান্য করো না কিংবা সত্যবাদীকে অবিশ্বাস করো না, কিংবা মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করো না। তোমার প্রতিপালককে পদে পদে স্মরণ করবে। আর প্রত্যেক পাপের জন্য নতুন করে তওবা করবে-গোপন পাপকে গোপন তওবার মাধ্যমে, আর প্রকাশ্য পাপকে প্রকাশ্য তওবার মাধ্যমে।মাওলা (সা.) মুআয ইবনে জাবাল (রা.)-কে আরো বলেছেন, হে মুআয! যদি না জানতাম যে, কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকব না, তা হলে আমার উপদেশকে ছোট করতাম। কিন্তু আমি জানি যে, আমরা কখনোই কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকব না। তাই জেনে রাখ, হে মুআয! তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সেই বেশি প্রিয় যে আমার সাথে তদ্রূপ সাক্ষাৎ করবে যেরূপ (ভালো অবস্থায়?) আমার থেকে আলাদা হয়েছে।এবারে মাওলা মোহাম্মদ (সা.) এর অন্য একটি উপদেশমূলক ভাষণ বা বক্তব্য তুলে ধরছি:প্রত্যেক জিনিসেরই মর্যাদা থাকে। আর সভার মর্যাদা হলো কিবলামুখী হওয়া। যে ব্যক্তি সবার চেয়ে প্রিয় হতে চায়, তার উচিত আল্লাহকে ভয় করা। যে ব্যক্তি চায় সবচেয়ে শক্তিশালী হতে, তার উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আর যে ব্যক্তি চায় সবচেয়ে ক্ষমতাবান হতে, তার উচিত নিজের কাছে যা আছে তার চেয়ে আল্লাহর কাছে যা আছে তার ওপর বেশি নির্ভর করা। এরপর মহানবী (সা.) বলেন : তোমাদেরকে কি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকের কথা বলব? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন :যে ব্যক্তি একা বসবাস করে, আর আগন্তুককে বাধা দেয় ও নিজ ক্রীতদাসকে চাবুক মারে, তোমাদেরকে কি তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা বলব? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! তিনি বললেন : যে বিচ্যুতিকে ক্ষমা করে না এবং অজুহাতকে মেনে নেয় না। আবারো বললেন : তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা কি বলব না? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ ! তিনি বললেন : যার কাছ থেকে ভালোর আশা নেই, আর যার অনিষ্টতা থেকেও নিস্তার নেই। এরপর মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বললেন : তার চেয়েও নিকৃষ্ট লোকের কথা কি তোমাদেরকে বলব না? সবাই বলল : অবশ্যই হে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)! তিনি বললেন : যে মানুষের সাথে শত্রুতা করে আর মানুষও তার সাথে শত্রুতা করে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র উপদেশমূলক ওই ভাষণে আরো এসেছে, "ঈসা (আ.) বনি ইসরাইলের উদ্দেশ্যে বলেছেন : হে বনি ইসরাইল! মূর্খের কাছে প্রজ্ঞার কথা বলো না, তা হলে তার ওপর অবিচার করবে। আর যারা প্রজ্ঞার পাত্র সেখানে তার থেকে কুণ্ঠিত হয়ো না, তা হলে তাদের ওপর অবিচার করবে। আর অত্যাচারীর সমকক্ষ হয়ো না, তা হলে তোমার গুণ-মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে। হে বনি ইসরাইল! কাজকর্ম তিন ধরনের হয় : এক ধরনের কাজের সঠিক হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। তোমরা তার পেছনেই থাকো। আরেক ধরনের কাজের ভ্রষ্ট হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। তোমরা তা পরিহার করো। আরেক ধরনের কাজ বিতর্কিত। সেটাকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দাও।হে লোকেরা ! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে (কিছু) শিক্ষা। কাজেই সেসব শিক্ষার দিকে ফিরে যাও। আর নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে পরিণতি। তোমরা সে পরিণতিতে পৌঁছাও। নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি দু’টি ভয়ের মধ্যে থাকে। প্রথমত সে জীবন নিয়ে যে জীবন তার পার হয়ে গেছে, অথচ জানে না সেজন্য আল্লাহ্ কী করবেন। আর দ্বিতীয়ত যে আয়ু তার বাকি রয়েছে, অথচ জানে না সেজন্য আল্লাহ্ কী নির্ধারণ করে রেখেছেন। কাজেই আল্লাহর বান্দাকে নিজের থেকেই নিজের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। দুনিয়াকে আখেরাতের জন্য, যৌবনকে বৃদ্ধ হওয়ার আগে এবং জীবনকে মৃত্যু আসার আগে কাজে লাগাতে হবে। সেই সত্তার (আল্লাহর) কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মৃত্যুর পরে কোনো নালিশের জায়গা নেই। আর দুনিয়ার পরে কোনো বাড়ি নেই, বেহেশত এবং দোযখ ছাড়া।…………নিবেদক মোঃ শামসীর হায়দার

যে মুয়াবিয়া বৃদ্ধ হয়ার পরেও নারি লোভি ছিল।যে কিনা নারিদের উলংগ করে বিভিন্ন স্থানে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে খুচিয়ে দেখত । সে হকের পথে ছিলো??? হাসসোকর বিষয় 🤣🤣🤣রেফারেন্সঃ আল বেদায়া অনেহায়া ৮ম খন্ড ২৭০ পৃষ্ঠা

আল্লাহ পাক স্বয়ং মোয়াবিয়াকে জাহান্নামী বলছে। আমার কিছু করার নাই। ধারাবাহিক পোস্ট নং ০১+২ পর্ব । ‎♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। সূরা আন নিসা ‎(النّساء), ‏আয়াত: ‏৪ঃ ৯৩وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدًا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمًاউচ্চারণঃ ওয়া মাইঁ ইয়াকতুলমু’মিনাম মুতা‘আম্মিদান ফাজাঝাউহূজাহান্নামুখা-লিদান ফীহা-ওয়া গাদিবাল্লা-হু ‎‘আললইহি ওয়া লা‘আনাহু ওয়া আ‘আদ্দাল্লাহু ‎‘আযা-বান ‎‘আজীমা-। অর্থ: "যে ব্যাক্তি জ্ঞাতসারে মোমিন কে হত্যা করে তাহার পুরষ্কার জাহান্নাম, ‏ঊহাতে সে স্থায়ী হইয়া থাকিবে এবং তাহার উপরে আল্লাহর গজব ও লানত, ‏এবং তাহার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করিয়াছেন৷"এবার আপনি ই সিদ্ধান্ত নেন কোরআন মানবেন নাকি মুয়াবিয়াকে ভালবেসে যাবেন।কারণ মোয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষের হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করেছে। তাছাড়া সে এই যুদ্ধে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী রাঃ কে হত্যা করে। আর তারা সবাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর মুমিন। এবার আপনার বিচার বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নিন। মোয়াবিয়া কতোবড় নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিলো। এরপরও যদি কেউ মোয়াবিয়াকে সাহাবী বলে, ‏আপনি ধরে নিবে সে পবিত্র কুরআন শরীফ অস্বীকারকারী এবং পাক পান্জাতনের চিরশত্রু। এদের সাথে আপনি কোন সম্পর্ক রাখবেন না। তাহলে আপনি কখনো ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারবেন না। যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখেন ।♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦স্বয়ং রাসূল পাক সঃ মোয়াবিয়াকে মোনাফেক বলেছে। বিস্তারিত পড়ুন। ‎( ‏ধারাবাহিক পর্ব নং২ । ‎♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦♦কারবালা প্রান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমি। ইতিহাসের সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক মাবিয়ার বংশ পরিচয় এবং মাবিয়ার ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ। এই মাবিয়া হলো নরপিশাচ কাফের এজিদের পিতা। এই মাবিয়া এজিদকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কে এই মাবিয়ামাবিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে ‎" ‏খিলাফতের ইতিহাস ‎" ‏নামক গ্রন্হের লেখক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, ‏আমির মাবিয়া হযরত রাসূল পাক ‎(সঃ) ‏এর মুখোশধারী সাহাবী ছিলেন। তার পুরো বংশ রাসূল পাক সঃ এর সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলেন এবং অবশেষে নিরুপায় হয়ে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানদের চরম ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মাবিয়া এবং তার বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। রাসূল পাক সঃ এর প্রবলতম ঘোর শক্রু কুরাইশ দলপতি নরপিশাচ আবু সুফিয়ান তার পিতা ছিলেন। যিনি রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। রাসূল পাক সঃ কে হত্যা করতে সর্ব ক্ষণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। এমন কোন অপরাধ নাই যে, ‏সে রাসূল পাক সঃ এর সাথে করার চেষ্টা করে নাই। যখন দেখল রাসূল পাক সঃ এর কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, ‏তখন দুরভিসন্ধি নিয়ে মক্কা বিজয়ের পর তার সন্তান মাবিয়াকে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যাতে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে চরম ক্ষতি করা যায়। এই ধরণের চরম মোনাফেকি উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে পড়ে। মাবিয়ার মাতার নাম ছিল হেন্দা। যিনি ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট নারী হিসাবে পরিচিত। এই নরপিশাচ নারী রাসূল পাক সঃ এর আপন চাচা হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল এবং হামজা রাঃ এর শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরেছিল। এই সেই নারী যিনি প্রতিটি যুদ্ধে কাফেরদেরকে উৎসাহ প্রদান করত। তার ভাই, ‏পিতা ‎-মাতা এবং বংশধরেরা রাসূল পাক সঃ এর ঘোরতর শক্রু ছিল। এই নরপিশাচ হেন্দার ভাই এবং পিতা বদরের যুদ্ধে মারা যায়। আর হেন্দার এই ভাই ও পিতাকে বদর যুদ্ধে হামজা রাঃ হত্যা করে। তাই হেন্দা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ওহুদের যুদ্ধে হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খায় এবং তার শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরে। মাবিয়ার দাদা ছিলেন উমাইয়া। এই উমাইয়া নরপিশাচ হযরত বিল্লাহ রাঃ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করেন। আর এই উমাইয়া নামানুসারে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে দাদার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করেন। আর এই উমাইয়া খিলাফত শাসনামল ছিল দীর্ঘ ৮৯ বছর। আচ্ছা বলুন তো একজন বিধর্মী কাফেরের নামে কি মুসলিম খিলাফত হতে পারে। আমার রাসূল পাক সঃ কে চরমভাবে হেয়পতিপন্ন এবং অপমান করার জন্য মাবিয়া ও তার নরপিশাচ ছেলে এজিদ এই কাজটি করেছিল। রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে স্হাপন করল নরপিশাচ উমাইয়ার নাম। যা আজও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।প্রথম দিকে মাবিয়া একজন সামান্য সৈনিক, ‏পরে একজন ক্ষুদ্র সেনাপতি ছিলেন। তারপর ক্ষমতার লোভে হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিদ্রোহী হয়ে শিফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মাবিয়া কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেক ক্ষমতাবান হন। পরবর্তীতে মাবিয়া খারেজিদের দ্বারা মাওলা আলীকে গুপ্ত হত্যা করে মুসলিম খিলাফতের খলিফা নিযুক্ত হন। আবু সুফিয়ান জীবিত থাকলে দেখতে পারতেন, ‏রাসূল পাক সঃ এর যে সকল কাজের বিরোধিতা তিনি সর্বদা করতেন, ‏সেই সকল কাজের বিরোধিতা করে মাবিয়া মুসলিম খিলাফতের বাদশাহ হন। মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর একজন নামধারী সাহবী হলেও, ‏রাসূল পাক সঃ এর সঙ্গ তিনি পাননি। কারণ রাসূল পাক সঃ মক্কা বিজয় করে আবার মদিনায় চলে যায়। আর মাবিয়া মক্কায় থেকে যায়। হযরত রাসূল পাক সঃ হযরত আলী রাঃ সমন্ধে যা বলেন, " ‏যে ব্যক্তি আমার আলীকে গালি দিল, ‏সে যেন আমাকে গালি দিল ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরিফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৫)। ‎" ‏হে আল্লাহ ‎! ‏আমি যার বন্ধু, ‏আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ ‎! ‏যে আলীকে ভালবাসবে তুমি তাকে ভালবাসিও, ‏যে আলীর শক্রু হবে তুমি তার শক্রু হইও ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৫ ‎)। ‎" ‏মোনাফেক ব্যক্তিই আলীকে ভালবাসবে না এবং মু'মেন ব্যক্তি আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৪ ‎)। ‎" ‏আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা ‎"। ‎( ‏শরহে ফিকহে আকবার, ‏পৃষ্ঠা নং ১১২ ‎)। ‎" ‏দুনিয়ার ধন-সম্পদের মধ্যে আমার জন্য দুইটি ‎( ‏ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন ‎) ‏স্বর্গীয় ফুলস্বরুপ ‎"। ‎( ‏মেশকাত শরীফ, ‏পৃষ্ঠা নং ৫৬৯ ‎)। ‎" ‏আমি যার মাওলা, ‏হযরত আলী তার মাওলা ‎"। ‎( ‏বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, ‏পৃষ্ঠা নং ২৮০। রাহমানিয়া লাইব্রেরি, ‏ঢাকা। ‎)। হযরত আলী রাঃ বলেন, " ‏কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার এবং মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না ‎"। ‎( ‏মাওলার অভিষেক, ‏সদর উদ্দিন চিশতি ‎)। সুতরাং হযরত আলী রাঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা। আর রাসূল পাক সঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে স্বয়ং আল্লাহর সাথে বিরোধিতা করা। অথচ দেখা যায় যে, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে চরম বিরোধিতা করেছেন। শিফফিন নামক যুদ্ধ তার জলন্ত প্রমাণ। আসলে মাবিয়া রাসূল পাক সঃ এর রেখে যাওয়া ধর্মকে ধবংস করতে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই এই বিরোধিতা করছেন।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক কর্ণেল অসবর্ন বলেন, " ‏বিচক্ষণহীন, ‏অবিবেকী ও নির্মম উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা তার নিজ স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যেকোন অপরাধমূলক কার্য করতে সংকোচ বোধ করত না। প্রবল প্রতিদ্বন্দীকে অপসারণের জন্য হত্যাই ছিল তার চিরাচরিত রীতি। সে ইমাম হাসানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। হযরত আলীর সহকারী মালিক আল আসতারকে অনুরূপ ভাবে হত্যা করেছিল। তার পুত্র এজিদের উত্তরাধিকারী নিরাপদ করবার জন্য মাবিয়া হযরত আলীর একমাত্র জীবিত পুত্র হোসাইনের সাথে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করতে দ্বিধা করেন নাই ‎"।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক মুর বলেন, " ‏কোরআন ও হাদিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রথম ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমাধি রচনা করেন মাবিয়া। ধূর্ততা, ‏কপটতা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অবমাননা করে মৃত্যুর পূর্বে শুধুমাত্র নিজ অযোগ্য পুত্রকেই মনোনীত করেন নাই, ‏বরং ছলে-বলে ও কৌশলে আরব জাহানের জনসাধারণের আনুগত্য অর্জন করেন ‎"।মাবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, ‏মাবিয়া ছিলেন ধূর্ত, ‏ধর্ম ভয়হীন, ‏তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, ‏কৃপণ অথচ নিজ স্বার্থে অস্বাভাবিক উদার এবং যাবতীয় ধর্মীয় কাজে লোক দেখানো নিষ্ঠাবান। কিন্তু তার কোন পরিকল্পনা বা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণতা সাধনে কোন মানবীয় বা ধর্মীয় রীতিনীতিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারত না ‎"।মাবিয়া বিভিন্ন সময়ে হজরত আলী রাঃ এর প্রতি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শিফফিনের যুদ্ধে মাবিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হযরত আলী রাঃ এর কাছ থেকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। শিফফিনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে হঠাৎ মাবিয়াকে দেখে হযরত আলী রাঃ বলে উঠলেন, " ‏মাবিয়া তুমি নিজে যুদ্ধের ময়দানে আসছ না কেন ‎? ‏তাহলে ব্যাপারটা সহজেই মিমাংসিত হতে পারে ‎"।মাবিয়ার সেনাপতি আমর সম্মান রক্ষার জন্য মাবিয়াকে যুদ্ধে হযরত আলী রাঃ এর মোকাবিলা করবার জন্য উৎসাহিত করলেন। কিন্তু মাবিয়া বললেন, " ‏হযরত আলীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ কোনদিন জীবিত থাকে না ‎"।মাবিয়া প্রায়ই গর্ব করে বলতেন, " ‏আরবীয় রাজাদের মধ্যে আমিই প্রথম রাজা ‎"।মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা হযরত আলী রাঃ এর শাহাদাৎ বরণের পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হাসান রাঃ খলিফা নির্বাচিত হলেন। রাজনীতি এবং কূটনীতি সম্পর্কে ইমাম হাসান রাঃ এর তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাছাড়া ইমাম হাসান রাঃ ছিলেন খুবই শান্তশিষ্ট এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। সিরিয়া ও মিশরের উচ্চবিলাষী শাসক মাবিয়া খিলাফতের এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করলেন। হযরত ইমাম হাসান রাঃ সেনাপতি কায়েসের নেতৃত্বে মাবিয়ার বিরুদ্ধে ১২হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কায়েস যখন শক্রু পক্ষের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধরত, ‏তখন মাবিয়া ধূর্ততার আশ্রয় নিলেন। মাবিয়া বীর যোদ্ধা কায়েসের মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে ইমাম হাসান রাঃ এর সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তখন মাবিয়া এবং ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মাবিয়ার পরে হযরত ইমাম হোসাইন রাঃ মুসলিম খলিফা হবেন। কিন্তু প্রতারক মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে নরপিশাচ এজিদকে খলিফা নিযুক্ত করে এবং তার নামে খেলাফতের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সকল প্রাদেশিক গভর্নরের নিকট ফরমান জারি করে। কিন্তু মাবিয়ার এই ফরমান মক্কা ও মদিনা লোক ব্যতীত, ‏সকল প্রদেশের গভর্নররা এজিদকে খলিফা হিসাবে মেনে নিল। রাসূল পাক সঃ বলেন, ‏মোনাফেকের চিহ্ন ৩টি। ১/ ‏কথায় কথায় মিথ্যা বলে। ২/ ‏ওয়াদা ভঙ্গ করে। ৩/ ‏আমানতের খিয়ানত করে। আর এই মোনাফেক কাফেরদের চেয়ে ভয়ংকর। আর মাবিয়া ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে, ‏ইতিহাসে সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক হিসাবে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সময়ও খিলাফত নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু পেরে উঠতে না পারলেও একেবারে পিছবা হননি। তিনি মোক্ষম সুযোগ মনে করে অতি শীঘ্রই ইরাক আক্রমন করলেন। মাবিয়া দীর্ঘ ২০বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং তার বংশধরেরা দীর্ঘ ৮৯ বছর মুসলিম খলিফা হিসাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ‎( ‏৬৬১ ‎- ‏৭৫০) ‏সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। মাবিয়ার দাদার নাম ছিল উমাইয়া। আর এই উমাইয়ের নামে মুসলিম খিলাফত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। হযরত রাসূল পাক সঃ এর নাম চিরতরে মুছে ফেলা হয়। এই উমাইয়া ছিল একজন বিধর্মী কাফের এবং রাসূল পাক সঃ ও ইসলামের একজন বড় দুশমন ছিল। সে বিখ্যাত আশেকে রাসূল হযরত বেলাল রাঃ কে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ এবং ইসলামের বিরোধিতা করে যে ক্ষতি সাধন করেছে, ‏মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদের দ্বারা রাসূল পাক সঃ এবং ইসলাম ধর্মের তার চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতি সাধিত হয়েছে, ‏যা কোনদিন পূরণ হবার নয়। কারণ উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সঃ বংশের কাউকে হত্যা করতে পারে নাই। কিন্তু মাবিয়া এবং তার পুত্র এজিদ রাসূল পাক সঃ এর পরিবারের সকল সদস্য নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। তারা হযরত আলী রাঃ, ‏ইমাম হাসান ও হোসাইন রাঃ এবং সন্তানদের সহ সবাইকে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। মাবিয়া তার পূর্ব পুরুষদের প্রতিশোধ নিতেই বিধর্মী কাফের উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত চালু করে এবং এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন ঘটান। যা এজিদি ইসলাম নামে পরিচিত এবং এখনো সারা বিশ্বে বিরাজমান।নরপিশাচ এজিদ কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মদিনা ও মক্কায় আক্রমন করে। এজিদের সৈন্য বাহিনী মদীনার মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মদীনাবাসীর উপর চরম নির্যাতন করে এবং শিশুসহ বহু লোককে হত্যা করে। এরপর এজিদের সৈন্য বাহিনী মক্কায় আক্রমন করে ২মাস শহর অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা পবিত্র কাবাগৃহের গিলাফ অগ্নিসংযোগ করে। এই অবরোধ চলাকালে এজিদের মৃত্যু হলে, ‏এজিদের সৈন্য বাহিনীরা মক্কা ছেড়ে দামেস্ক নগরে চলে যায়। যারা মাবিয়াকে সাহাবী মনে করেন, ‏তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন। ১/ ‏মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ‎? ‏২/ ‏মাবিয়া কেন ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছিল ‎? ‏৩/ ‏মাবিয়া কেন নরপিশাচ কাফের এজিদকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করলো ‎? ‏৪/ ‏মাবিয়া কেন খারেজিদের দলভুক্ত করল। আর এই খারেজিদের নিয়ে মাবিয়া শেরে খোদা হযরত আলী ‎(রাঃ) ‏এবং ইমাম হাসান ‎(রাঃ) ‏এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ৫/ ‏মাবিয়া কেন শিফফিনের যুদ্ধে শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর পক্ষের শত শত নিরীহ নিষ্পাপ বিখ্যাত সাহাবীদের হত্যা করল। আর এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। ৬/ ‏মাবিয়া কেন শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর ওফাতের পর ইমাম হাসান রাঃ কে হটিয়ে নিজে কেন মুসলিম জাহানের খলিফা হলো। মাবিয়া কি ইমাম হাসান রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ‎? ‏৭/ ‏মাবিয়া কেন ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে ইমাম হোসাইন রাঃ এর পরিবর্তে নিজ পুত্র কাফের এজিদকে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত করল। তাহলে এজিদ কি ইমাম হোসাইন রাঃ এর চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল ‎? ‏৮/ ‏মাবিয়া কেন শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী ‎(রাঃ) ‏কে হত্যা করলো। ৯/ ‏মাবিয়া কেনো রাসূল পাক সঃ এর নাম বাদ দিয়ে, ‏তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করলো। অথচ রাসূল পাক সঃ বলেছেন, ‏মোনাফেক ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে না। তাহলে আপনারা বলুন ‎, ‏মাবিয়া কি হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করল না ‎? ‏নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করেছেন। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ পাগল এবং মাবিয়ার অনুসারী ছাড়া সবাই বলবে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা করেছেন। মাবিয়া যদি হযরত আলী রাঃ কে ভালবাসত, ‏তাহলে কখনোই হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করতে পারত না। আর এই জন্যই রাসূল পাক সঃ বলেছেন, ‏যে হযরত আলীকে ভালবাসবে না, ‏সে মোনাফেক। মূলত মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেননি বরং স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছেন। মূলত রাসূল পাক সঃ মাবিয়াকে মোনাফেক বলেছেন, ‏আমি কিন্তু বলিনি। আমি শুধুমাত্র তুলে ধরেছি। উপরের হাদিসগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে মাবিয়া সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। কারা এই খারেজি ‎? ‏খারিজ আরবি শব্দ। আর বাংলা অর্থ বাতিল। রাসূল পাক সঃ এর এক ধরনের মোনাফেক সাহাবী ছিল। যারা মক্কা বিজয়ের পর নিরুপায় হয়ে মাবিয়া এবং তার পিতা- ‏মাতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে। এই খারেজি সম্প্রদায় রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে ২৭টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা প্রতিবারই পরাজয় বরণ করে। অবশেষে মক্কা বিজয়ের পর তারা চিন্তা করল, ‏আমরা তো সারাজীবন ইসলাম ধর্মের বাহিরে থেকে রাসূল পাক সঃ এবং তার পরিবার-পরিজন ও ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি করতে পারলাম না। এখন দেখি ইসলাম ধর্মের ভিতরে ঢুকে নবী পরিবার ধব্বংস করতে পারি কিনা এবং মুহাম্মদের নাম চিরতরে মুছে ফেলতে পারি কিনা। এই উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা সবাই মুসলমান হয়ে গেল। রাসূল পাক সঃ ওফাতের পর তারা প্রচন্ডভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা সর্ব ক্ষণ হযরত আলী রাঃ এর বিরোধিতা করতে লাগল এবং ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ শুরু করল। তারা এমন কোন জগন্য কাজ নাই, ‏যা তারা করল না। আর এদেরকে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ত মাবিয়া। কারণ এরা একসময় মাবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধ করেছিল। অবশেষে হযরত আলী রাঃ এদেরকে ইসলাম ধর্ম থেকে বাতিল এবং বের করে দেন। এই খারজিরা শুধু মাত্র হযরত আবু বকর রাঃ এবং ওমর ফারুক রাঃ মানে। তারা কখনো শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে মানে না। বরং তারা বলে হযরত আলী রাঃ খলিফার অযোগ্য। তাই হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। অবশেষে মাবিয়া এদেরকে দলভুক্ত করেন। পরবর্তীতে মাবিয়ার নির্দেশে এই খারেজিরা শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ কে নামাজরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং মাবিয়া সমগ্র মুসলিম জাহানের অবৈধভাবে খলিফা হয়ে যায়। যারা বলে শিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হযরত আলী রাঃ এবং মাবিয়ার ভুল বুঝাবুঝির কারণে। হযরত আলী রাঃ ছিলেন সমস্ত ভুলের উর্ধে। জীবনে বিন্দুমাত্র ভুল করেন নাই। এমন দলিল কেউ দিতে পারবেন না। কারণ রাসূল পাক সঃ ছিলেন জ্ঞানের শহর এবং হযরত আলী রাঃ ছিলেন দরজা। এরা মূলত হযরত আলী রাঃ কে কলংকিত করার জন্য বলে দুজনের ভুল বুঝাবুঝির কারনে শিফফিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তাই দুজনই সঠিক। এরা মূলত মাবিয়ার অপরাধ ঢাকার জন্য হযরত আলীকে দোষী বানায়। শিফফিনের যুদ্ধে শত শত বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করা হয়। তাহলে এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। যদি দুজনই সঠিক হয়, ‏তাহলে দুজনকেই হত্যাকারী বলা হবে। দেখেন এরা কত কৌশলে হযরত আলী রাঃ কে হত্যাকারী সাব্যস্ত করল। মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল।রাসূল পাক সঃ বলেন, ‏যে হযরত আলীকে কষ্ট দেয়, ‏সে স্বয়ং আমাকে কষ্ট দেয়। তাহলে মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, ‏হযরত আলী রাঃ এবং রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়েছিল। আর রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সাহাবী হতে পারে না। যে হযরত আলী রাঃ কে অমান্য করে, ‏সে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ কে অমান্য করার শামিল। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, ‏মাবিয়া হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে কষ্টের বদলে আনন্দ দিয়েছে। এটা শুধু পাগল ছাড়া আর কেউ বলবে না। সেদিন শিফফিনের যুদ্ধে যদি হযরত আলী রাঃ মাবিয়ার নিকট পরাজয় বরণ করত। তাহলে নিশ্চয়ই মাবিয়া হযরত আলী রাঃ কে হত্যা অথবা বন্দী করত। তখনকার আরব জাহানের এটাই ছিল প্রচলন। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, ‏হজরত আলী পরাজিত হলে মাবিয়া তাকে সম্মান করে জামাই আদর করে সিংহাসনে বসাত। যদি তাই হতো তাহলে আর যুদ্ধ সংঘটিত হতো না। তাই হযরত আলী রাঃ আক্ষেপ করে তার অনুসারীদের বলেছিলেন, " ‏কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার আর মাবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না ‎"।কতটা অবিশ্বাস, ‏কতটা আস্হাহীন,কতটা সন্দেহ এবং কতটা শক্রুতা পোষণ করলে একজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। মাবিয়া ঠিক সেইরুপ শেরে খোদা হযরত আলী রাঃ এর সাথে করেছিল। আর হযরত আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা পোষণ করা মানে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে শক্রুতা করা। মাবিয়া কোন সাহসে হযরত আলী রাঃ কে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করেছিল। যে হযরত আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও অবিশ্বাস করবে, ‏সে কখনো ঈমানদার হতে পারে না। তাইতো রাসূল পাক সঃ যথার্থ বলেছেন, ‏মুমেন ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে এবং মোনাফেক ব্যক্তিই হযরত আলীর শক্রুতা পোষণ করবে। রাসূল পাক সঃ এর এই কথার দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় মাবিয়া কতটা নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল। এই শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য নষ্ট হয়। এক পক্ষ চলে যায় হযরত আলী রাঃ এর সাথে এবং অপর পক্ষ চলে যায় মাবিয়ার সাথে। সেই অনৈক্য ধারা এখনো বিরাজমান রয়ে গেছে। এক পক্ষ হযরত আলী রাঃ এর সাথে রয়ে গেছে এবং অপর পক্ষ মাবিয়ার সাথে রয়ে গেছে। মাবিয়া এবং তার বংশধরতা যেহেতু দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, ‏তাই মাবিয়ার অনুসারীর সংখ্যা বেশী। আর হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার। তাই মুসলিম বিশ্বে হযরত আলী রাঃ এর সংখ্যা খুবই সীমিত। এখন আপনি বলুন, ‏আপনি কার পক্ষ অবলম্বন করবেন। হযরত আলী রাঃ এর অনুসারীরা হলো আহলে বায়াত অর্থাৎ অলী আল্লাহর দলে। আর মাবিয়ার অনুসারীরা হলো আহলে বায়াতের বিপক্ষে। যারা বায়াত প্রথা মানে না এবং বিশ্বাস করে না। এদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্বটা সেই শিফফিনের যুদ্ধ থেকে শুরু হয়েছে এবং চলমান রয়ে গেছে। কোন কুতর্ক চাই না, ‏শুধু মাত্র সুতর্ক এবং দলিল সহকারে যুক্তি ও প্রমাণ চাই। এই ৯টি প্রশ্নের সঠিক ও সুন্দর উত্তর চাই। যার ইতিহাস জানা আছে সেই শুধু উত্তর দিবেন। ‎( ‏সূত্রঃ মোয়াবিয়া ও কারবালা, ‏সৈয়দ গোলামুর রহমান। খিলাফতের ইতিহাস, ‏মুহম্মদ আহসান উল্লাহ। এজিদি ধর্ম, ‏এ,কে, ‏মনজুরুল হক। মাওলার অভিষেক, ‏সদর উদ্দিন চিশতি, ‏সুফি দর্শন, ‏ফকির আব্দুর রশিদ,এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, ‏দেওয়ানবাগ দরবার শরিফ, ‏ইসলামের ইতিহাস, ‏ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, ‏ইসলামের ইতিহাস, ‏কে আলী, ‏ইমাম হাসান ও হোসাইন ‎(রাঃ), ‏মাওলানা মোঃ মনিরুজ্জামান এবং HSC এর পাঠ্য বই ইসলামের ইতিহাস বই পড়লে মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাছাড়া বরিয়াবরী দরবার শরীফ এবং বাবা জাহাঙ্গীর এর সুরেশ্বরী দরবার শরীফের কিতাবগুলো পড়তে পারেন। আমি সামান্য কিছু অংশ মাত্র তুলে ধরেছি ‎)। বিঃদ্রঃ ও ভাই আপনার একটি শেয়ার করা মানে শত শত মানুষ দেখার সুযোগ পাওয়া। আমার দয়াল রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে একটিবার শেয়ার করুন। হয়ত বা এই একটি শেয়ার আপনার মুক্তির কারণ হতে পারে। মহান দয়ালু আল্লাহ তায়ালা এই একটি শেয়ারের উছিলায় আপনার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়ে, ‏মুক্তির ব্যবস্হা করতে পারে। আসুন ভাই, ‏রাসূল পাক সঃ কে ভালবেসে ইসলামের মহা শক্রুদের মুখোশ উন্মোচন করি। ‎" ‏রাসূল পাক সঃ এর প্রতি নাই যার প্রেম, ‏কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন ‎"।যেকোনো আহলে বায়াত প্রেমিক এই পোস্ট কপি করার পূর্ণ অধিকার রাখে।