পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছেপর্ব (((((শেষ)))))চারঃ মুসলিম তার সহিহাতে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ যখন অবতীর্ণ হল নিম্নলিখিত আয়াতটিفَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّـهِ عَلَى الْكَاذِبِينَঅর্থাৎঃ বল (হে নবী)-এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের, মহিলাদের এবং নিজেদেরকে ডেকে আনি আর তোমারাও তাই কর । অতঃপর (এসো) চ্যালেঞ্জ করি আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষন করি ।২৩তখন মহানবী (সা.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইনকে ডেকে আনলেন । তিনি বললেনঃالهی هولاء اهلیঅর্থাৎঃ হে আল্লাহ এরা আমার আহলে বাইত ।২৪পাঁচঃ সহি তিরমিযি গ্রন্থে নিম্নলিখিতভাবে বর্ণীত আছেঃতাতহীরের আয়াত নাযিল হবার পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিদিন যোহর নামাজের সময় আল্লাহর রাসুল ফাতিমার গৃহে আগমন করে উক্ত আয়াত পাঠ করতেন । প্রিয় নবী (সা.) উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় বলেছেনঃاللهم اهل بیتی و خاصتی فاذهب عنهم الرجس و طهرهم تطهیراঅর্থাৎঃ হে আল্লাহ আমার আহলে বাইত থেকে তুমি সকল অপবিত্রতা দূরীভূত কর এবং পূত-পবিত্র কর ।২৫ছয়ঃ সহি মুসলিম ও জামেয় উসূল গ্রন্থদ্বয়ে এভাবে বর্ণীত আছে যে, হাসীন বিন সামারাহ যায়েদ বিন আরকামকে জিজ্ঞেস করলেন, নবীর পত্নীগণও কি আহলে বাইতের মধ্যে গণ্য ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ, না এরকম নয় । কেননা স্ত্রী জীবনের কিছু সময় স্বামীর সাথে অবস্থান করে । অতঃপর স্বামী তালাক দিয়ে দিলে সে তার পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনের কাছে প্রত্যাবর্তন করে এবং স্বামী থেকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যায় । কিন্তু রাসুলের আহলে বাইত এমন সব ব্যক্তিবর্গ যাদের জন্য সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারা যেখানেই যান না কেন কখনো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না ।২৬সাতঃ অন্যত্র এরূপ উল্লেখ আছে যে, তাতহীরের আয়াত পাঁচজন তথা নবী (সা.), হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে ।২৭আটঃ বুখারী ও মুসলিম উভয়েই হযরত আয়েশার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, মুসআব বিন শাইবাহ তার বোন সাফিয়্যা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ ‘একদা রাসুল (সা.) একটি কালো আ’বা পরিধান করে গৃহের বাইরে আসলেন । পথিমধ্যে হাসান ইবনে আলীর সাথে দেখা হল । তিনি হাসানকে স্বীয় আ’বার ভিতর প্রবেশ করালেন । অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী আগমন করলে তাকেও পূর্বানুরূপভাবে তার আ’বার ভিতরে নিয়ে নিলেন । অতঃপর ফাতিমা ও আলী ইবনে আবি তালিব আগমন করলে তারাও নবীর আ’বার ভিতরে প্রবেশ করলেন । আর পরক্ষণে তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করেনঃإِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-নিশ্চিয়ই আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদের নিকট থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২৮তথ্যসূত্রঃ১. আল ক্বামুস আল মুহিত্বলিল ফিরুযাবাদী, খণ্ড-৩, ফাসল আল হামযা, বাব আল লাম, পৃঃ৩৩১, প্রিন্টঃ কায়রো, হালাবী ফাউন্ডেশন ।২. সূরা আল কেসাস, আয়াত নং-২৯ ।৩. সূরা আল আনকাবুত, আয়াত নং-৩৩ ।৪. সূরা আল হুদ,আয়াত নং-৪৫-৪৬ ।৫. সূরা আল হুদ,আয়াত নং-৭৩ ।৬. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩৩ ।৭. রুহুল মায়ানি, আলুসী, খণ্ড-২৪, পৃঃ ১৪।৮. প্রাগুক্ত৯. তাফসীর আল কাশশাফ, খণ্ড-৩, পৃঃ ২৬; ফাতহ আল ক্বাদীর, শাওকানী, খণ্ড-৪, পৃঃ ২৮০।১০. আকরামাহ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুনঃক) আত তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৪১ ।খ) মিযান আল এ’তিদাল, যাহাবী, তারজামাতে আকরামাহ ।গ) আল মা’য়ারিফ, ইবনে কুতাইবা, পৃঃ-৪৫৫, প্রিন্ট কোম ।১১. মিযান আল এ’তিদাল, যাহাবী, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৭৩,৫৬২; আল ফাসল লি ইবনে হাযম, খণ্ড-৪, পৃঃ ২০৫ ।১২. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩২ ।১৩. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩০ ।১৪. সহি বুখারী, খণ্ড-৩, পৃঃ ৩৪ ।১৫. সূরা তাহরীম,আয়াত নং-৪ ।১৬. সহি বুখারী, খণ্ড-৭, পৃঃ ২৮-২৯ ।১৭. তাফসীর আল কাবির, খণ্ড-৩, পৃঃ ৪ ।১৮. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ১১৫; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২৮, পৃঃ ১০১; আত তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড-৮, পৃঃ ১৩৫; সহি বুখারী, খণ্ড-৩,পৃঃ ১৩৭; খণ্ড-৪, পৃঃ ২২; সহি মুসলিম, কিতাব আত তালাক, হাদীস নং-৩১,৩২,৩৩,৩৪।১৯. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩ পৃঃ১০৫; আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, ইবনে কুবাইবা, খণ্ড-১, পৃঃ ৭১,৭২, গবেষক আলী শিরী; আল ফুতুহ, খণ্ড-২, পৃঃ ২৪৯ ।২০. আদ দুররুল মানসুর, সূয়ুতী, খণ্ড-৪, পৃঃ ১৯৮; মুশকিল আল আসার, খণ্ড-১, পৃঃ ২৩৩ একই বিষয়ে শব্দের তারতম্য ভেদে বিভিন্ন হাদীস বিদ্যমান, দৃষ্টান্ত স্বরূপঃ সহি আত তিরমিযি, খণ্ড-১৩ পৃঃ ২৪৮; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০৬; উসদুল গা’বা, খণ্ড-৪, পৃঃ ২৯ ।২১. মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; সহি মুসলিম, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৫৪, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ ৯; সুনানে বায়হাকী, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০০ ।২২. আদ দুররুল মানসুর, সূয়ুতী, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৯৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৩, পৃঃ ৪৮৩; মুসনাদ আত তাইয়ালীসি, খণ্ড-৮, পৃঃ ২৭৪; মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; সহি মুসলিম, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৫৪, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ ৯; সুনানে বায়হাকী, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০০ ।২৩. সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৬১ ।২৪. সহি মুসলিম, খণ্ড-৬, বাবে ফাযায়িলে আলী, পৃঃ ১২০,১২১ ।২৫. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০৪,৩১৯ ।২৬. সহি মুসলিম, খণ্ড-৭, পৃঃ ১২৩ ।২৭. দুরারুস সিমতাইন, পৃঃ ২৩৯; উসদুল গাবা, খণ্ড-২, পৃঃ ১২, খণ্ড-৩, পৃঃ৪১৩, খণ্ড-৪, পৃঃ২৯; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ১৮৫, খণ্ড-৩, পৃঃ২৫৯, খণ্ড-৬, পৃঃ১৯৮; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২২, পৃঃ৭ ।২৮. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ২৬৮; বাবে ফাযায়িলে আহলে বাইত; মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২২, পৃঃ৫ ।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসালনিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়পর্ব (((((২)))))আকরামাহ ও মাক্বাতিল বিন সুলাইমান সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে শুধুমাত্র নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে গন্য করেছেন । যদিও আমরা উক্ত আয়াতের পূর্ববর্তী দু’টি আয়াতে নবীর স্ত্রীগণের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাবধান বাণী পরিলক্ষিত করি । তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেননি যে তারা সমস্ত ধরণের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত । বরং তিনি আল কোরআনে উল্লেখ করেছেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُঅর্থাৎঃ হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা তো অন্যান্য নারীদের মত নও যদি আল্লাহকে ভয় কর ।১২যদি নবীর (সা.) স্ত্রীরা পবিত্র এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হতেন তাহলে আল্লাহ কখনো তাদের উল্লেখ করে এ ধরণের বক্তব্য পেশ করতেন না । সাথে সাথে নিম্নের আয়াতটিও যথার্থ বলে পরিগণিত হতো না ।আল্লাহ বলেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ مَن يَأْتِ مِنكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّـهِ يَسِيرً‌اঅর্থাৎঃ-হে, নবীর স্ত্রীগণ, তোমাদের মধ্যে যে প্রকাশ্য কোন অপবিত্র কাজে লিপ্ত হয় তার আযাব ও শাস্তি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহর জন্যে এ কাজ খুবই সহজ ।১৩আর যদি নবীর (সা.) স্ত্রীগণ সকল পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্ত হবেন তাহলে নবীকে (সা.) কষ্ট দেয়া কি পবিত্রতার পরিপন্থি নয় ?আল বুখারী তার স্বীয় সহিহাতে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন,انّ النبی هجر عایشة و حفصة شهرا کاملا و ذلک بسبب افشاء حفصة الحدیث الذی اسراه لها الی عایشة، قالت للنبی: انّک اقسمت ان لا تدخل علینا شهرا ؟অর্থাৎঃ- নবী (সা.) পূর্ণ এক মাস আয়েশা ও হাফসাকে বয়কট করেছিলেন । এটা এ কারণে যে হাফসা নবীর গোপন কথা আয়েশার কাছে ফাস করে দিয়েছিল । আয়েশা নবীকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন একমাস আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না ?১৪সহি আল-বুখারীতে অন্যত্র এভাবে উল্লেখ আছে যে, ইবনে আব্বাস বলেছেনঃابن عباس یقول: لم ازل حریصا علی ان عمر بن خطاب عن المراتین من ازواج النبی (ص) التین قال الله تعالی فیها: ان تتوبا الی الله فقدصغت قلوبکما.অর্থাৎঃ-আমি ওমর বিন খাত্তাবকে সে দু’জন নবীপত্নীর ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ যদি তারা দু’জন আল্লাহর কাছে তওবা করে তাহলে সে কাজটিই সঠিক হবে । কেননা তোমাদের দু’জনের অন্তর (বাতিলের দকে) ঝুকে গিয়েছিল ।১৫অতঃপর আল-বুখারী এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেনঃحتی حج و حججت معه.....................حنی قال ابن عباس، فقلت للخلیفه: من المراتین؟ فقال عمر بن خطاب:و اعجب لک یا ابن عباس ! هما عایشة و حفصة...........................অর্থাৎঃ- (ইবনে আব্বাস বলেন) ইতিমধ্যে তিনি (হযরত ওমর) হজ্জ সম্পন্ন করেন আর আমিও তার সাথে হজ্জ আদায় করি ।……….ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি খলিফাকে জিজ্ঞেস করলাম ঐ দু’জন মহিলা কারা ছিলেন ? ওমর বিন খাত্তাব উত্তর দিলেনঃ আশ্চর্য তো, তুমি তা জান না হে ইবনে আব্বাস ! তারা হলেন আয়েশা ও হাফসা………………….১৬বিখ্যাত সুন্নী আলেম ও তাফসীরকারক আল্লামা ফাখরে রাযী তার তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-কাবির’-এ সূরা তাহরীমের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, এ আয়াতটি হযরত আয়েশা ও হাফসাকে সম্বোধন করে নাযিল হয়েছে ।১৭অন্যত্র এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,ها هی عایشة تعقبها للنبی (ص) بعد ما فقدته فی لیالی نوبتها و قوله (ص) لها ما لک یا عایشة ! اغرت ؟ فقالت: و ما لی ان لا یغار مثلی علی مثلک ؟ فقال لها افاخذک شیطانک ؟!অর্থাৎঃ- যখন আয়েশা কয়েক রাত্র নবী (সা.) এর অনুপস্থিতি ও তার পালা অতিক্রম হওয়ায় চুপিসারে হযরতের পিছু লেগেছিল তখন মহানবী (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমার কি হয়েছে হে আয়েশা ? তুমি কেন আমাকে শুধু তোমার জন্য মনে করছো ? আয়েশা বলেনঃ আমার মত মানুষ কি আপনার মত ব্যক্তির ব্যাপারে ইর্ষা করতে পারে না ? অতঃপর নবী (সা.) তাকে বললেনঃ তোমাকে কি তোমার শয়তানে ধরেছে ?১৮এভাবে প্রিয় নবী (সা.) এর পিছু লাগা এবং মহানবীর (সা.) উক্তি ‘তোমাকে কি তোমার শয়তান ধরেছে ?’ কোনক্রমেই সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘আহলে বাইতকে আল্লাহ সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে তুরে রেখেছেন এবং তাদেরকে পুত পবিত্র করেছেন;- উক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না ।হযরত আয়েশা নবী করিম (সা.) এর অমীয় বাণী ও ঐতিহাসিক নির্দেশ অমান্য করে ‘হাওয়াব’ নামক স্থান অতিক্রম করে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন । ইতিহাসে এ যুদ্ধ “জঙ্গে জামাল” বা “উষ্টের যুদ্ধ” নামে অভিহিত । এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সাহাবী তাবেয়ীন ও হাফেজ-ক্বারী হতাহত হন । এ যুদ্ধের কারণ উদঘাটন করলেই বিবেকবান মানুষ মাত্রই উপলদ্ধি করতে পারবেন যে মা আয়েশা যদি কোরআনের পরিভাষায় ‘রেজস’ বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকতেন তাহলে কখনো এ যুদ্ধ সংঘটিত হত না । এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সম্বন্ধে অবগত হবার জন্য পাঠকদের নিম্নলিখিত পুস্তকগুলো অধ্যায়নের অনুরোধ করছি ।১. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩, পৃঃ-১০৭ ।২. আল ফুতুহ, খণ্ড-১, অধ্যায়-২, পৃঃ-৪৫৬ ও ৪৫৭ ।৩. আনসাব আল আশরাফ, খণ্ড-২, পৃঃ-২২৮, কায়রো ।৪. আত তাবাক্বাত আল কোবরা, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩১, বৈরুত ।৫. কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৬১ ।৬. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৯৭, রৈুত ।৭. মাজমুআ আয-যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৭, পৃঃ-৩৪ ।৮. সহি আল বুখারী, কিতাব বিদয় আল খালক ।৯. সহি আল বুখারী, কিতাব আল জিহাদ ওয়াল মিযার বাবে আয়ওয আন নাবী, খণ্ড-৪, পৃঃ-৪৬; খণ্ড-২, পৃঃ-১২৫ ।১০. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ-৫৬০; খণ্ড-৮, পৃঃ-১৮১, মিশর, শেবকাত এলাহিয়া, শারহেন নাবাবী ।তাছাড়াও হযরত আয়েশা হযরত ওসমানকে কাফের ফতোয়া দিয়ে জনগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খলিফাকে হত্যা করতে । তার ঐতিহাসিদ ফতোয়া ইতিহাস গ্রন্থসমূহে এভাবে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد کفرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে কাফের হয়ে গেছে ।তিনি হযরত ওসমানকে না’সাল বলে একজন ইয়াহুদী বৃদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন ।আবার কোন কোন ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণীত আছে যে, তিনি ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد فجرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে ফাজের হয়ে গেছে ।১৯এত কিছুর পর কি করে তাতহীরের পবিত্র আয়াতটিতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও গণ্য হতে পারেন ?বস্তুতঃ যদি আমারা তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থাবলী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সেখানে আহলে বাইত বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীকে বোঝানো হয়েছে । এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তথাপি আমার সংক্ষিপ্ততার প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নে বহুল উল্লেখিত ও প্রচারিত কয়েকটি হাদীস সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য উপস্থাপন করলাম । নিরপেক্ষ মন ও মুক্ত চিন্তা নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইল ।একঃ নবী পত্নী উম্মে সালমা থেকে বর্ণীত আছে যে তিনিإِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اআয়াতটির শানে নুযুল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে । তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন । তারা হলেনঃ জিবরাইল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন । আর আমি ছিলাম দরজার মুখে । আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নই ? উত্তরে তিনি বললেনঃ (না, এরকম নয়) নিশ্চয় তুমি মঙ্গল পথের যাত্রী, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য ।২০দুইঃ আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর বিন আবি তালিব থেকে বর্ণীত আছে যে তিনি বলেছেন,کما نظر رسول الله (ص) الی رحمه هابطه، قال: ادعو لی، ادعو لی ! فقالت صفیحه- بنت حیی بن اخطب زوجه رسول الله (ص): من یا رسول الله ؟ قال (ص): اهل بیتی: علیا و فاطمة و الحسن و الحسین.অর্থাৎঃ একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.) এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন । তিনি বলেন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে আন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে পাঠাও ! সাফিয়্যা (নবী পত্নী, হুয়িয়্যা বিন আখতারের কন্যা) প্রশ্ন করলেনঃ কাদের কথা বলছেন হে আল্লাহর রাসুল ? প্রতিত্তোরে তিনি বললেনঃ তারা আমার আহলে বাইত-আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ।২১তিনঃ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণীত হেয়েছে যে তিনি বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট থেকে অতিক্রম করতেন এবং বলতেনঃالصلاة یا اهل البیت، إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-হে আহলে বাইত, সালাম ও দরুদ তোমাদের উপর । নিশ্চয় আল্লাহ মনস্থ করেছেন তোমাদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করেছেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২২নিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছেبسم الله الرحمن الرحیمপর্ব (((((১)))))নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান । মুসলমানদের কোন এক সম্প্রদায় আহলে বাইত বলতে শুধুমাত্র তার সম্মানীতা স্ত্রীগণকে বুঝিয়ে থাকেন । আবার অন্য এক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হযরত ফাতিমা, তার স্বামী ও সন্তানদ্বয়কে রাসুলের সাথে সংযোগ করে থাকেন । আবার নবী (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্যে হযরত আব্বাস, আক্বীল ও জাফর তাইয়্যারকেও শামিল করে থাকেন ।প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের সদস্যগণ কারা ? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে আমরা ‘আহল’ ও ‘বাইত’ শব্দদ্বয়ের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের উল্লেখ করে মূল অর্থের দিকে দৃষ্টিপাত করবো।আরবী অভিধানে ‘আহল’ এর অর্থ হচ্ছেঃاهل الرجال، عشیرته و ذو قرباه، جمع : اهلون و اهلان، و اهل یأهل یأهل اهولا تأهل و اتهل: اتخذ اهلا.অর্থাৎঃ-একটি পুরুষের পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন, ‘আহল’ এর বহুবচন হচ্ছে ‘আহলুন’ অতীত কাল বুঝানোর জন্য ‘আহালা’ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের জন্যে ‘ইয়াহেলুন’ বা ‘ইয়াহালু’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । আর ‘আহুলান’ হচ্ছে মূল ক্রিয়া সূচক শব্দ । ‘তায়াহহালা’ বা এত্তাহালার অর্থ হচ্ছে পরবিার গঠন করেন ।و اهل الامر : ولایته وللبیت سکانه و للمذهب من یدیه به، و للرجل زوجته کأهلته. للنبی (ص) ازواجه و بناته و صهره علی (رضی الله عنه) او نسائه، و الرجال الذین هم و لکل نبی امنه........অর্থাৎঃ-কোন কাজের জন্যে আহল বলতে তার কতৃত্ব আর ঘরের জন্যে ‘আহল’ বলতে গৃহবাসীদের বুঝায় । মাযহাবের জন্য ‘আহল’–এর অর্থ হচ্ছে মাযহাবের পরিচালক । একটা পুরুষের ‘আহল’ বলতে তার স্ত্রীকে বুঝানো হয় । নবী (সা.) এর জন্যে ‘আহল’ বলতে বুঝায় তার স্ত্রীবর্গ কন্যাগণ, তার জামাতা আলী (রাজীঃ) এবং ঘরের মহিলারা অতঃপর নবীদের আহল হচ্ছে তাদের উম্মত…………………।১‘আহল’ শব্দটি পবিত্র আল কোরআনে ৫৪ বার ব্যবহার হয়েছে । প্রতিবারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটিকে । ‘আহল’ শব্দের অর্থ কখনো শুধুমাত্র স্ত্রী ও সন্তান উভয়কেই বুঝানো হয়েছে আল-কোরআনে । কোথাও আবার আহল বলতে আত্মীয়-স্বজনকেও বুঝানো হয়েছে ।দৃষ্টান্ত স্বরূপ আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃفَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ‌ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ‌ نَارً‌ا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارً‌ا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ‌ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ‌ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَঅর্থাৎঃ-অতঃপর যখন মূসা (আঃ) তার প্রতিশ্রুত কর্মের সময়সীমা অতিক্রম করেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশ পানে যাত্রা করেন । পথিমধ্যে তুর পর্বতের সন্নিকটে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি । সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসতে পারি অথবা তোমাদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করতে পারি ।২উক্ত আয়াতে আল্লাহ দু’বার ‘আহল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এখানে ‘আহল’ শব্দের অর্থ স্ত্রী । উক্ত আয়াতে ‘আহল’ শব্দের উদ্দেশ্য হযরত মুসা (আ.) এর স্ত্রী অন্য কেউ নয় ।আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃإِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَ‌أَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِ‌ينَঅর্থাৎঃ-“নিশ্চয় আমি তোমাকে (হযরত লুত আ.) এবং তোমার পরিবারকে নাজাত দিব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত, কেননা সে অভিশপ্ত এবং পশ্চাদপদের শিকার ।৩উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ‘আহল’ বলতে স্ত্রী, পরিবার পরিজন, সন্তান-সন্তুতি সকলকে বুঝিয়েছেন । যদিও লুতের স্ত্রীকে আল্লাহ অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন ।আল্লাহ অন্যত্র হযরত লুত (আ.) সম্পর্কে বলেনঃوَنَادَىٰ نُوحٌ رَّ‌بَّهُ فَقَالَ رَ‌بِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ‌ صَالِحٍ…..অর্থাৎঃ-“নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলো-হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী । (আল্লাহ) বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে (তোমার পুত্র) তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে অসৎ!৪এক্ষেত্রে ‘আহল’ অর্থ ঐ ব্যক্তির পদাংক অনুসরণকারী পরিবারের সদস্য । এ কারণে আল্লাহ হযরত নুহ (আ.) এর পুত্রকে তার আহল এর মধ্যে গন্য করেননি । কেননা সে অসৎ কাজে লিপ্ত ।উপসংহারে বলা যায় ‘আহল’ শব্দের একক কোন অর্থ নেই । স্থান ভেদে এর অর্থ বিভিন্ন হতে পারে ।আর ‘বাইত’ শব্দও কোরআন ও হাদীসের বহু স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে । ‘বাইতের’ অর্থও বিভিন্ন ধরণের । কোথাও ‘বাইত’ অর্থ মসজিদুল হারাম আবার কোথাও মসজিদুন্নাবী ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে ।তবে আল-কোরআনের ‘বাইত’ শব্দ ‘আহল’ শব্দের সাথে সংযোগ করে ব্যবহৃত হয়েছে দু’বার ।সূরা হুদে আল্লাহ বলেন,رَ‌حْمَتُ اللَّـهِ وَبَرَ‌كَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِঅর্থাৎঃ-আল্লাহর রহমত ও বরকত আহলে বাইতের উপর বর্ষিত ।৫সূরা আহযাবে আল্লাহ আরো বলেন,إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।৬মহানবী (সা.) এর হাদীসেও ‘আহলে বাইত’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে । শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের বর্ণিত হাদীসগুলোতে প্রায় ৮০ পন্থায় ‘আহলে বাইত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । তার পরও মুসলমানদের মধ্যে আহলে বাইতের সংজ্ঞা ও অর্থ এবং সদস্যদের ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান । মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ মাযহাবের পক্ষে আহলে বাইতের অর্থ করেই দায়িত্ব সমাপ্ত করে থাকেন । অনেকে বলে থাকেন, তাতহীরের আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের উদ্দেশ্য বনি হাশিমের লোকজন । আবার অনেকের মতে বনি হাশিমের মু’মিন সন্তানগণ অর্থাৎ আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান ব্যতীত অন্য কেউ আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নয় ।৭আবার কেউ কেউ বলেন, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও তার সন্তানরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য ।৮কোন এক মুসলিম সম্প্রদায় বলেন, রাসুলের (সা.) সম্মানিতা স্ত্রীগণ, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলী আহলে বাইতের সদস্যবৃন্দ ।৯অনেকে বলেন, নবীর স্ত্রীরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে গন্য । কেননা আকরামাহ বিন আব্দুল্লাহ নাজদাহ আল হারুরী-যিনি আলীর সাথে শত্রুতার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের অতিক্রম করেছে, সে ‘নবীর (সা.) স্ত্রীগণ শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য বলে প্রচার করত । সে আরো বিশ্বাস করত খারেজী দল বহির্ভূত সকল মুসলমান কাফের । হজ্বের সময় সে চিৎকার করে বলত, ‘যদি আমার হাতে শক্তি থাকতো তাহলে আমার ডানে বায়ে যত লোক আছে তাদের সকলকে হত্যা করতাম ।’ সে মসজিদুল হারামে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিত, ‘এখানে কাফের ব্যাতীত অন্য কেউ নেই ।’ তার আক্বিদা-বিশ্বাসের মধ্যে আরেকটি দিক হলো যে সে বিশ্বাস করত,انما انزل الله متسابه القرآن لیضل بهঅর্থাৎঃ আল্লাহ কোরআনের ‘মুতাশাবেহ’ আয়াতগুলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবতীর্ণ করেছেন ।সে সমসাময়িক কালে মিথ্যাবাদী বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও ইবনে মাসউদ বলেছেন, ‘আকরামার হাদীস জালকারী ও মিথ্যাবাদী বলে কুখ্যাতি আছে ।’ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী তার সম্পর্কে বলেছেন, সে একজন মিথ্যাবাদী ।১০আকরামার ন্যায় আরো একজন ব্যক্তি নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে শামিল করেছেন । তিনি হচ্ছেন মাক্বাতিল ইবনে সুলাইমান আল-বালখী আল আযুদী আল খোরাসানী । তিনি তৌহিদ ও রেসালাতের ব্যাপারে অনেক আপত্তিমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন যা আহলে সুন্নাতের আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি ।১১নিবেদক______ মোঃ জাহিদ হোসেন

আলী (আ.)কে গোপনে দাফনের কারণ কি?আলী (আ.)-এর মত একজন পূর্ণ মানবকে গোপনে দাফন করতে হয়েছে। কিন্তু কেন? কারণ তার যেরূপ পরম বন্ধু রয়েছে সেরূপ পরম শত্রুও রয়েছে। ‘হযরত আলী (আ.)-যেমন প্রচণ্ড আকর্ষণ ক্ষমতার অধিকারী তেমনি বিকর্ষণ ক্ষমতারও। তার মত মানুষের বন্ধুও যেমনি থাকে চরম অন্তরঙ্গ ও উচ্চ পর্যায়ের যারা যে কোন সময়ে তার জন্য প্রাণ দিতে অকুণ্ঠিত তেমনি শত্রুও থাকে যারা তার রক্তের জন্য পিপাসার্ত বিশেষত অভ্যন্তরীণ ও নিকটতম শত্রু। যেমন খারেজীরা দীনের বাহ্যিক কাঠামোতে বিশ্বাসী ও ঈমানের অধিকারী,কিন্তু দীনের মূল শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ। আলী (আ.) নিজেই বলেছেন,এরা ঈমানদার,কিন্তু অজ্ঞ। তার ভাষায়-لا تقولوا الخوارج بعدی فلیس من طلب الحق فأخطاه کمن طلب الباطل فأدرکه“খারেজীদের আমার মৃত্যুর পর আর হত্যা করো না,যেহেতু যারা সত্যের সন্ধানী,কিন্তু ভুল করছে তারা যারা অসত্যকে জানার পরও তার অনুসরণ করছে এক সমান নয়।” খারেজীদের সঙ্গে মুয়াবিয়ার অনুসারীদের তুলনা করে বলেছেন,“আমার মৃত্যুর পর এদের হত্যা করো না। এদের সঙ্গে মুয়াবিয়ার অনুসারীদের পার্থক্য রয়েছে,এরা সত্যকে চায়,কিন্তু বোকা (তাই অন্যদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়) ও ভুল করে। কিন্তু মুয়াবিয়াপন্থীরা সত্যকে জেনেই তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত।”তাই কেন আলীকে এত বন্ধু ও সুহৃদ থাকা সত্ত্বেও রাত্রিতে গোপনে দাফন করা হয়েছে? এই খারেজীদের ভয়ে। যেহেতু তারা বলত আলী মুসলমান নয়, তাই ভয় ছিল তারা জানতে পারলে কবর থেকে তার লাশ বের করে অপমান করত।ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময়ের শেষ দিকে প্রায় শত বছর পর্যন্ত নবী পরিবারের ইমামরা ব্যতীত কেউই জানত না যে,ইমাম আলী (আ.)-কে কোথায় দাফন করা হয়েছে।একুশে রমযানের ভোরে ইমাম হাসান (আ.) জানাযার আকৃতিতে সাজিয়ে একটি খাটিয়া কিছু ব্যক্তির হাতে দেন মদীনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতে লোকজন মনে করে আলী (আ.)-কে মদীনায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ইমাম আলীর সন্তানগণ ও কিছু সংখ্যক অনুসারী যারা তার দাফনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা জানতেন তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে। বর্তমানে কুফার নিকটে নাজাফে যে স্থানে আলীর সমাধি রয়েছে সেখানে তারা গোপনে যিয়ারতে আসতেন। ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময় যখন খারেজীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং আলীর প্রতি অসম্মানের সম্ভাবনা রহিত হয় তখন ইমাম সাদিক তার এক সাহাবী সাফওয়ান (রহ.)-কে সে স্থান চিহ্নিত করে গাছ লাগিয়ে দিতে বলেন। এরপর থেকে সবাই জানতে পারে ইমাম আলীর কবর সেখানে এবং তার ভক্ত ও অনুসারীরা তার কবর যিয়ারত করতে শুরু করে।যে রাতে আলীকে দাফন করা হয় খুব কম সংখ্যক লোক তার দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন। ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন,সে সাথে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী। তাদের মধ্যে সামায়া ইবনে সাওহান যিনি আলী (আ.)-এর অন্তরঙ্গ বন্ধু ও অনুসারী ছিলেন তিনি একজন তুখোর বক্তাও ছিলেন। আলীকে দাফনের সময় তাদের অন্তর যেরূপ বিরাগ বেদনায় স্তব্ধ ও কণ্ঠ বায়ুরূদ্ধ হচ্ছিল,সে সাথে মনে অনুভূত হচ্ছিল প্রচণ্ড ক্রোধ। এরূপ অবস্থায় কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যখন সবাই কাঁদছিলেন সামায়া যার হৃদয় প্রচণ্ড কষ্টে মুষড়ে পড়ছিল তিনি কবর থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে মাথা ও সারা শরীরে মাখতে শুরু করলেন। কবরের মাটিকে বুকে চেপে ধরে বললেন,“হে আমীরুল মুমিনীন! আমার পক্ষ থেকে সালাম। আপনি সৌভাগ্যের সাথে জীবন যাপন করেছেন,সৌভাগ্যের সাথেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনার সম্পূর্ণ জীবন ছিল সাফল্যমণ্ডিত,আল্লাহর ঘর কাবায় জন্মগ্রহণ করেছেন,আল্লাহর ঘর মসজিদেই শাহাদাত বরণ করেছেন। জীবনের শুরুও আল্লাহর ঘরে,জীবনের পরিসমাপ্তিও আল্লাহর ঘরে। হে আলী! আপনি কতটা মহৎ ছিলেন আর এ মানুষরা কতটা হীন!যদি এ সম্প্রদায় আপনার কথা মতো চলত তবে আসমান ও তাদের পায়ের নীচে থেকে নেয়ামত বর্ষিত হতো। তারা আখেরাতে ও দুনিয়ার সাফল্য লাভ করত। কিন্তু আফসোস! এ জনগণ আপনার মর্যাদা বোঝেনি। আপনার অনুসরণ না করে বরং আপনাকে কষ্ট দিয়েছে,আপনার হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে। আপনাকে এ অবস্থায় কবরে পাঠিয়েছে

ব্যবসায়ী হযরত আবু তালিব আঃ ও কিশোর নবী মোহাম্মদ (সাঃ.)পর্ব (১)হযরত আবু তালিব তাঁর পিতা আব্দুল মোতালিবের নিকট থেকে ভাতিজা মোহাম্মদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকে কখনও তাঁকে একা ছেড়ে দেননি। সার্বক্ষণিক নিজে অথবা তাঁর পরিবারের লোক সমেত ভাতিজাকে আগলে রেখেছেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। হযরত আবু তালিব নিজের ব্যবসায়িক কাজেও মোহাম্মদ (সা.)-কে সাথে নিয়ে যেতেন। ভাতিজাকে নিয়ে তিনি যতবার ব্যবসয়িক সফরে গিয়েছেন ততবারই অকল্পনীয় সাফল্য তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মোহাম্মদ কোনো সাধারণ মানুষ নহেন।একবার দামেশকের সন্নিকটে হযরত আবু তালিবের কাফেলা পৌঁছালে , বুহায়রা নামক এক খ্রীষ্টান পাদ্রী ঐ কাফেলার সকলকে তার মেহমান হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তখন ১২ বছরের নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে মালামাল রক্ষার প্রহরায় রেখে সকলেই বুহায়রার দরবারে উপস্থিত হলেন। বুহায়রা বললেন ,“ যাঁর উদ্দেশ্যে আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানালাম তিনিই তো আসলেন না” । বুহায়রা নিজে গিয়ে কিশোর নবীকে স্বসম্মানে নিজ দরবারে নিয়ে আসলেন।আপ্যায়ন শেষে বুহায়রা সকলের অগোচরে নবী মোহাম্মদ (সা.) ও হযরত আবু তালিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,“ হে আবু তালিব আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে , আপনার বংশে আল্লাহর মনোনীত শেষ নবী‘ মোহাম্মদ’ রয়েছেন। যিনি আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আপনাদের আগমণের বার্তা আমি আগে থেকেইে অবগত আছি। কারণ আমাদের ইঞ্জিল কিতাবে মোহাম্মদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আর আপনারা যখন আমার এলাকায় প্রবেশ করেন তার পূর্ব থেকেই একখণ্ড মেঘ আপনাদের ছায়া দিয়ে আসছিল। যখন আপনারা সকলে আমার দরবারে এলেন তখনও মেঘটি কাফেলার স্থানে স্থির ছিল। এতে আমি নিশ্চিত হলাম যে , কিতাবে উল্লিখিত নবী মোহাম্মদ এখনও আমার দরবারে উপস্থিত হননি। তাই আমি নিজে গিয়ে নবী আপনাকে নিয়ে আসলাম। আর মেঘ খন্ডটিও আমাদের সাথে চলতে শুরু করল” ।বুহায়রা আরও বললেন ,“ হে আবু তালিব! আপনি অতি শীঘ্রই দামেষ্ক ত্যাগ করুন। কারণ মোহাম্মদের প্রচুর শত্রু রয়েছে। আর হে মোহাম্মদ! আপনি যখন আল্লাহর একত্ববাদের পরিপূর্ণ মিশন শুরু করবেন , তখন যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমিও আপনার সাহায্যকারী হবো।” বুহায়রার মুখে ভাতিজার খোদায়ী মিশনের কথা শুনে হযরত আবু তালিব আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন আর ভাবলেন , মহান আল্লাহ তাঁরই বংশকে শেষ নবী (সা.)-এর আগমণের জন্য নির্বাচিত করেছেন। এক অনাবিল স্বর্গীয় প্রশান্তি তাঁর হৃদয় প্রাণে দোলা দিতে লাগল। এই ব্যবসায়িক সফর শেষে হযরত আবু তালিব আরো সতর্ক হলেন। মোহাম্মদ (সা.)-এর আত্মরক্ষায় নিজে এবং তাঁর সন্তানদের সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখলেন।৮হযরত আবু তালিব আঃ এর নিকট কাফেরদের অভিযোগযে মোহাম্মদ (সা.)-এর শিশু-কিশোর ও যৌবনকাল আরবের কাফের-মুশরিক ও আরব অনারবদের মাঝে অতিবাহিত হয়েছে , যারা তাঁর চরিত্রমাধুরীতে মুগ্ধ হয়ে তাঁর নাম রেখেছিল‘ আল-আমিন’ অর্থাৎ সত্যবাদী , যারা মোহাম্মদ (সা.)-এর দেয়া সমাধান মেনে নিত অনায়াসে। মাত্র আট বছর বয়সে যিনি‘ হজরে আসওয়াদ’ নামক কালো পাথর স্থানান্তর নিয়ে উদ্ভূত গোত্রীয় দ্বন্দ্বের শান্তিময় সমাধান করেছিলেন। পাথরটি চাদরের মাঝখানে রেখে চার গোত্রপতিকে চার কোন ধরার মাধ্যমে তা স্থানান্তর ও নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের পরামর্শ প্রদান পূর্বক নিষ্পত্তি করেন। এতে সকলে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ছিল।আবার সেই কাফেরাই তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ , কুৎসা রটনা ও অস্ত্রধারণ এমনকি তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করে , কারণ ছিল মোহাম্মদ (সা.) তাদের বাপ-দাদার ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি একাধিক দেব-দেবীর বিপক্ষে ও এক আল্লাহর পক্ষে কথা বলেন। এটাই মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।লা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিনবেশুমার লানত বর্ষিত হোক ওই সব অন্ধদের উপর

ব্যবসায়ী হযরত আবু তালিব আঃ ও কিশোর নবী মোহাম্মদ (সাঃ)পর্ব (((((২)))))প্রথম অভিযোগএকবার আবু জাহেল , আবু লাহাব , আবু সুফিয়ান , ওৎবা , শাইবা , প্রমুখ কাফের মুশরিক নেতৃবর্গ জনাব আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করল যে ,“ আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র মোহাম্মদ আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের বিরোধিতা করছে। এমনকি আমাদের পূজনীয় দেব-দেবী লাত , মানাত ও ওজ্জা মূর্তি সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলছে” । হযরত আবু তালিব তাদের অভিযোগ শুনে শুধু এতটুকু তাদের জিজ্ঞেস করলেন ,“ তোমরা কি মোহম্মদকে কখনও মিথ্যে বলতে শুনেছ ?” সকলে মস্তক অবনত কন্ঠে স্বীকার করেছিল ,“ না আমরা শুনিনি” । অতঃপর তিনি বললেন ,“ তাহলে মোহাম্মদ যে আল্লাহর কথা বলছে তিনি অবশ্যই এক ও অদ্বিতীয় এবং সর্বশক্তিমান আর আমাদের ও তোমাদের পালনকর্তা।” হযরত আবু তালিবের এরূপ বক্তব্য শুনে কাফেররা বিরক্ত হয়ে তাৎক্ষণিক বিদায় নিল।দ্বিতীয় অভিযোগযতই দিন যাচ্ছিল একত্ত্ববাদ ততই প্রসার লাভ করছিল। মোহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর কাজ থেকে বিরত রাখার সকল প্রচেষ্টা ও অব্যাহত রয়েছে। তবুও ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণকারী লোকজনের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণনাশের জন্য বিষ প্রয়োগের চেষ্টাও বার বার ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে কাফের সর্দাররা পুনরায় হযরত আবু তালিবের স্মরনাপন্ন হলো। তারা বললো ,“ হে আবু তালিব! আপনার মর্যাদা ও ঐতিহ্যের সম্মানে আমরা এতদিন আপনার ভাতিজা মোহাম্মদের কার্যকলাপ অনেক সহ্য করেছি। কিন্তু আমাদের ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। এখন আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। কেননা , মোহাম্মদ প্রকাশ্যে আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের ও দেব-দেবীর বিরোধিতা করছে। আপনি হয় তাকে একাজ থেকে বিরত রাখুন। না হয় তার পক্ষে অস্ত্রধারণ করুন। তরবারির দ্বারাই বিষয়টির ফয়সালা হোক।” একথা শুনে হযরত আবু তালিব বললেন ,“ মোহাম্মদ কি মানুষদের মন্দ কাজের দিকে আহবান করছে ?” হযরত আবু তালিবের এমন কথায় কাফেরেরা হতভম্ব হয়ে ফিরে গেল। আবার হাশেমিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারনের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ভেবে তারা অগ্রসর হতে সাহসী হলো না।তৃতীয় প্রচেষ্টাবহু বাধা বিপত্তি ও গোপণ ষড়যন্ত্র করেও যখন ইসলামের ক্রমাগত অগ্রযাত্রা ঠেকানো গেল না , তখন কাফের সর্দারেরা লোভ-লালসা ও প্রলোভনের পথ বেছে নিল। আবার তারা হযরত আবু তালিবের স্মরণাপন্ন হলো এবং বলল ,“ হে আবু তালিব! আমরা আপনার ভাতিজার সাথে এ পর্যন্ত অনেক ভাল ব্যবহার করেছি , আমরা তাকে সমগ্র আরবের নের্তৃত্ব কর্তৃত্ব ও সবচেয়ে সুন্দরী নারী এবং অজস্র ধন-সম্পদ দেয়ারও প্রস্তাব করেছি। বিনিময়ে সে আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে মেনে নিবে। কিন্তু সে আমাদের উপহার ও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয় এখন সে আরও জোরেশোরে প্রকাশ্যে দেব-দেবীর বিরুদ্ধে অপমানজনক কথা বলছে এবং আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে ভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করছে। এ অবস্থা আমরা আর চলতে দিতে পারি না। এর পূর্বেও আমরা আপনাকে এ বিষয়ে নালিশ করেছিলাম কিন্তু আপনি আমাদের কথা গ্রাহ্য করেননি। সুতরাং আজই এর সুরাহা করতে হবে। হয় আপনার ভাতিজা মোহম্মদের ধর্ম প্রচার বন্ধ করুন , না হয় তাকে আমাদের হাতে সোপর্দ করুন।”কাফের সর্দারদের এরূপ বক্তব্যে হযরত আবু তালিব গর্জে উঠে বললেন ,“ হে সর্দারগণ সুস্পষ্ট ভাবে জেনে রাখো , মোহাম্মদকে সোপর্দ করা তো দূরের কথা কেউ তার চুল পরিমাণ ক্ষতির চিন্তাও করো না। অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি। আর যদি তা তোমাদের কারো হতে প্রকাশ পায় , তবে তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হবে।”মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্য হযরত আবু তালিবের এরূপ দৃঢ় কঠিন অবস্থান কাফেরদের নিরাশ করে দিল। আর ভাতিজাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন ,“ হে মোহাম্মদ! আজ থেকে তুমি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর বিধান ও বিষয়াবলির কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চালিয়ে যাও। আমি কখনও তোমাকে বিচলিত হতে দেব না এবং তোমাকে কাফেরদের হাওলাও করব না। আল্লাহর কসম আমি জানি তোমার দাওয়াত সত্য , তুমি ঐ রবের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ নসিহতকারী ও বিশ্বস্ত। আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।” ৯এখন প্রশ্ন হচ্ছে উল্লিখিত উক্তির পরেও কি হযরত আবু তালিবের ঈমান আনার প্রয়োজন রয়েছে ? আর যাদের তা প্রয়োজন , তারা কি ভেবে দেখেছেন ? যে ঈমানী দায়িত্ব হযরত আবু তালিব নবী ও তাঁর ইসলামের জন্য সম্পন্ন করে গেছেন এর কোটি ভাগের এক ভাগও তাদের পক্ষে করা সম্ভব কি ?আমি এখন আমার প্রিয় নবী (সা.)-এর স্পর্শকরা‘ হযরে আসওয়াদ’ পাথরের অন্ত:নিহীত তথ্য মুমেনীনদের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করছি। উক্ত পাথর নিয়ে চৌদ্দ’ শ বছর পূর্বে যে দ্বন্দের উদ্ভব হয়েছিল , নবী (সা.) তা মিটিয়েছিলেন কিশোর বয়সে। আর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর স্পর্শের কারণে এই পাথরকে যে মর্যাদা দান করলেন তা হচ্ছে , সে কেয়ামত পর্যন্ত হাজীদের পাপ মোচন করে যাবে। আফসোস! ঐসকল মুসলমানের প্রতি যারা ভুলে গেলেন আমার নবী (সা.)-এর আট বছর বয়স থেকে শুরু করে পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত হযরত আবু তালিবের দেহ , মন , প্রাণ ও সমাজ সংসারে নবী (সা.)-এর স্পর্শ কিংবা ছোঁয়া রয়েছে কত শত কোটি ? তাহলে সেই মহান আবু তালিবের মর্যাদা কত উর্দ্ধে তাকি নির্ণয়যোগ্য ?হে কানার দলেরা তোমাদের উপর বেশুমার লানত বর্ষিত হোকলা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিন

সবার কাছে মিনতি আপনারা মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ পড়বেনহযরত আলী (আ.)এর ফযিলত ও মর্যাদাহযরত আলী ইবন আবী তালিব (আ.) কোরায়েশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন আবু তালিব (আ.) আর মাতার ফাতিমা বিনতে আসাদ । শিশু বয়স থেকেই তিনি হযরত মুহাম্মদের কাছে লালিত-পালিত হন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি নবুয়তের ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।তার ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা.)থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে নিম্নে তার কিছু আলোচনা করা হল।১। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর কাঁধে হাত রেখে বলেছেন :هذا إمام البررة قاتل الفجرة منصور من نصره,مخذول من خذله“এই আলী সৎ কর্মশীলদের ইমাম,অন্যায়কারীদের হন্তা,যে তাকে সাহায্য করবে সে সাফল্য লাভ করবে (সাহায্য প্রাপ্ত হবে) এবং যে তাকে হীন করার চেষ্টা করবে সে নিজেই হীন হবে।”হাদীসটি হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী হতে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন,“এই হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তদুপরি বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।”২। নবী (সা.) বলেছেন,“আলী সম্পর্কে আমার প্রতি তিনটি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে :إِنَّهٌ سيّد الْمسلمين و إمام الْمتّقين و قائد الغرّ الْمُحجّلينনিশ্চয়ই সে মুসলমানদের নেতা,মুত্তাকীদের ইমাম এবং নূরানী ও শুভ্র মুখমণ্ডলের অধিকারীদের সর্দার।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এনেছেন ও বলেছেন,“হাদীসটি সনদের দিক হতে বিশুদ্ধ কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।”৩। নবী (সা.) বলেছেন,“আমার প্রতি ওহী অবতীর্ণ হয়েছে যে,আলী মুসলমানদের নেতা,মুত্তাকীদের অভিভাবক এবং শুভ্র ও উজ্জ্বল কপালের অধিকারীদের (সৌভাগ্যবানদের) সর্দার।” ইবনে নাজ্জার ও অন্যান্য সুনান লেখকগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।৪। নবী হযরত আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,مرحبا بسيّد المسلمين و إمام المتقين“হে মুসলমানদের নেতা ও মুত্তাকীদের ইমাম! তোমাকে সাধুবাদ।” আবু নাঈম তাঁর ‘হুলইয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।৫। একদিন রাসূল (সা.) ঘোষণা করলেন,“প্রথম যে ব্যক্তি এ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে সে মুত্তাকীদের ইমাম,মুসলমানদের নেতা,দীনের মধুমক্ষিকা (সংরক্ষণকারী),সর্বশেষ নবীর প্রতিনিধি ও উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের অধিকারীদের সর্দার।” তখন আলী ঐ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে নবী (সা.) তাঁকে এ সুসংবাদ দানের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে কোলাকুলি করলেন ও তাঁর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,“তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করবে,আমার বাণী মানুষের নিকট পৌঁছে দেবে,যে বিষয়ে তারা মতদ্বৈততা করবে তুমি তা ব্যাখ্যা করে বোঝাবে।৬। নবী (সা.) বলেছেন,“আল্লাহ্ আমার নিকট আলীকে এভাবে বর্ণনা করেছেন-আলী হেদায়েতের ধ্বজাধারী,আমার আউলিয়া অর্থাৎ বন্ধুদের ইমাম,আমার আনুগত্যকারীদের আলোকবর্তিকা এবং সে এমন এক আদর্শ মুত্তাকীদের উচিত অপরিহার্যরূপে যার পদাঙ্কনুবর্তী হওয়া।”লক্ষ্য করুন এই ছয়টি সহীহ হাদীস তাঁর ইমামত ও আনুগত্যের অপরিহার্যতাকে কিরূপে সুস্পষ্ট করছে! তাঁর ওপর সালাম বর্ষিত হোক।৭। নবী (সা.) আলীর প্রতি ইশারা করে বলেন,“এই প্রথম ব্যক্তি যে আমার প্রতি ঈমান এনেছে ও প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সে কিয়ামতে আমার সঙ্গে হাত মিলাবে,সে সিদ্দীকে আকবর ও ফারুক (এই উম্মতের সত্যপন্থী ও অসত্যপন্থীদের মধ্যে পার্থক্যকারী),সে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সীমারেখা টানবে এবং সে মুমিনদের সংরক্ষণকারী।”৮। নবী বলেছেন,“হে আনসার সম্প্রদায়! তোমরা কি চাও তোমাদের আমি এমন বিষয়ের প্রতি নির্দেশনা দেব যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো গোমরাহ ও বিপথগামী হবে না? সেটি হলো আলী। আমাকে তোমরা যেরূপ ভালবাস তাকেও সেরূপ ভালবাস। আমাকে যেরূপ শ্রদ্ধা কর তাকেও সেরূপ শ্রদ্ধা ও সম্মান কর এবং আমি তোমাদের যা বলছি তা আল্লাহ্ জিবরাঈলের মাধ্যমে আমাকে বলতে নির্দেশ দিয়েছেন।”৯। নবী (সা.) বলেছেন,أنا مدينة العلم و عليّ بابُها فمن أراد المدينة فليأت الباب“আমি জ্ঞানের শহর ও আলী তার দ্বার এবং যে কেউ শহরে প্রবেশ করতে চাইলে দ্বার দিয়েই প্রবেশ করবে।”১০। নবী (সা.) বলেছেন,أنا دار الحكمة و عليّ بابُها “আমি প্রজ্ঞার ঘর আলী তার দরজা।”১১। নবী (সা.) বলেছেন,“আলী আমার জ্ঞানের প্রবেশ দ্বার ও আমি যে বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি আমার পরে আমার উম্মতের জন্য সে তার ব্যাখ্যাকারী। তার ভালবাসা ও বন্ধুত্বই ঈমান এবং তার শত্রুতাই নিফাক।”১২। নবী (সা.) আলীকে বলেন,“তুমি আমার পর উম্মত যে বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পতিত হবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যাদানকারী।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠায় আনাস ইবনে মালিক হতে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে,বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি বিশুদ্ধ তদুপরি তাঁরা তা বর্ণনা করেন নি।আমার মতে যে কেউ এই হাদীস এবং এর অনুরূপ অন্যান্য হাদীস নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন (বুঝবেন),আলী (আ.)-এর সঙ্গে রাসূলের সম্পর্ক রাসূলের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্কের ন্যায়। কারণ নবীকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ্ বলেছেন,“আমি আপনার প্রতি এ জন্যই গ্রন্থ নাযিল করেছি যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্য যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে সে বিষয় পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন এবং এই কোরআন মুমিনদের জন্য রহমত ও হেদায়েতের উপকরণ।” নবীও আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,“তুমি আমার পর যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করবে সে বিষয়ে ব্যাখ্যাদানকারী (তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে তা বর্ণনাকারী)।”১৩। নবী (সা.) হতে আরেকটি হাদীস যা মারফু (অবিচ্ছিন্ন) সূত্রে ইবনে সাম্মাক আবু বকর হতে বর্ণনা করেছেন,عليّ منّي بِمنْزلتي من ربّي অর্থাৎ আলীর স্থান আমার নিকট আমার প্রতিপালকের নিকট আমার স্থান ও মর্যাদার ন্যায়।১৪। দারে কুতনী তাঁর ‘কিতাবুল আফরাদ’ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস সূত্রে রাসূল হতে বর্ণনা করেছেন,“আলী ইবনে আবি তালিব ক্ষমার দ্বার। যে কেউ এ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে সে মুমিন,আর কেউ তা হতে বের হয়ে গেলে সে কাফের।”১৫। নবী (সা.) বিদায় হজ্বের সময় আরাফাতের ময়দানে বলেন,“আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। আমার পক্ষ হতে ঐশী বাণী পৌঁছানোর অধিকার কারো নেই একমাত্র আলী ব্যতীত।”এই হলো সম্মানিত রাসূলের কথা যিনি শক্তিমান ও আরশের অধিপতির নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ্ তাঁর সম্পর্কে যেমনটি বলেছেন,তিনি বিশ্বস্ত,তোমাদের নবী উন্মাদ নন,তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কিছু বলেন না,বরং তিনি তাই বলেন যা তাঁর প্রতি ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়। যেহেতু এটি অস্বীকার করার উপায় নেই সেহেতু এই সহীহ হাদীস সম্পর্কে আপনি কি বলবেন? এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ আছে কি? যদি আল্লাহর মহান বাণী প্রচারের এই গুরু দায়িত্বের বিষয়ে আপনি চিন্তা করেন এবং বড় হজ্বের সময়ে তা বর্ণনার পেছনে যে হেকমত লুকিয়ে রয়েছে সে বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি দেন তাহলে সত্য আপনার নিকট তার প্রকৃতরূপে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।যদি এই বাণীর শব্দগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেন,দেখবেন বাণীটি কতটা অর্থবহ এবং উন্নত ও গভীর। কারণ রাসূল (সা.) সবদিক বিবেচনা করে দেখেছেন বিষয়টির গুরুত্বের কারণে আলী ব্যতীত অন্য কেউ সঠিকভাবে এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম নয় এবং নবীর পক্ষ হতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি,খলীফা ও প্রশাসনিক দায়িত্বসম্পন্ন একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নন।সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি আমাদের হেদায়েত করেছেন এবং তিনি হেদায়েত না করলে আমরা কখনো হেদায়েত পেতাম না।১৬। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,“যে আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহরই আনুগত্য করলো,আর যে আমার বিরোধিতা করলো সে আল্লাহরই বিরোধিতা করলো। আর যে আলীর আনুগত্য করেছে সে যেন আমারই আনুগত্য করেছে,আর যে তার বিরোধিতা করেছে সে আমারই বিরোধিতা করেছে।” হাকিম নিশাবুরী তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় এবং যাহাবী তাঁর ‘তালখিসে মুসতাদরাক’-এ হাদীসটি এনে বলেছেন যে,বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ।১৭। নবী (সা.) বলেছেন,“হে আলী! যে আমা হতে বিচ্ছিন্ন হলো সে আল্লাহ্ হতেই বিচ্ছিন্ন হলো আর যে আলী হতে বিচ্ছিন্ন হলো সে আমা হতেই বিচ্ছিন্ন হলো।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাকুস্ সহীহাইন’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যদিও হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে তদুপরি বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেননি।১৮। উম্মে সালামাহ্ রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“যে কেউ আলীকে মন্দ নামে সম্বোধন করলো সে যেন আমাকেই মন্দ নামে সম্বোধন করলো।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২১ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলেছেন। যাহাবীও তাঁর ‘তালখিস’ গ্রন্থে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করেছেন। আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩২৩ পৃষ্ঠায় এবং নাসায়ী তাঁর ‘খাসায়েসুল আলাভীয়া’ গ্রন্থের ১৭ পৃষ্ঠায় উম্মে সালামাহ্ হতে এবং অন্যান্য হাদীসবিদগণও এটি বর্ণনা করেছেন। এরূপ অপর একটি হাদীস যা আমর ইবনে শাশ নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন তা হলো : যে কেউ আলীকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল।১৯। নবী (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসে সে যেন আমাকেই ভালবেসেছে,আর যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে সে আমার সঙ্গেই শত্রুতা পোষণ করেছে।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলেছেন। যাহাবীও তাঁর ‘তালখিস’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করে বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে বিশুদ্ধ বলেছেন।আলী নিজেও বলেছেন,“সেই সত্তার শপথ,যিনি বীজ অঙ্কুরিত এবং মানুষের আত্মাকে সৃষ্টি করেন,উম্মী নবী (সা.) এই কথা বলেছেন যে,মুমিন ব্যতীত আমাকে (আলীকে) কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ আমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে না।”২০। নবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বলেন,يا عليّ أنت سيّد في الدّنيا و سيّد في الآخرة,حبيبك حبِيبِي و حبيبِي حبيب الله و عدوّك عدوّي و عدوّي عدوّ الله و الويل لمن أبغضك بعدي“হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে নেতা,তোমার বন্ধু আমার বন্ধু এবং আমার বন্ধু আল্লাহর বন্ধু। তোমার শত্রু আমার শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে আমার পর তোমার সঙ্গে শত্রুতা করবে।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ বলেছেন।২১। নবী (সা.) বলেছেন,“হে আলী! সৌভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোমাকে ভালবাসে ও তোমার বিষয়ে সত্য বলে এবং দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে ও তোমার নামে মিথ্যা ছড়ায়।”হাকিম তাঁর ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন যদিও হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত তবুও বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি।২২। নবী (সা.) বলেছেন,من أراد أن يحيى حياتي و يموت ميتتي و يسكن جنّة الخلد الّتي وعدني ربّى فليتول عليّ بن أبي طالب فإنّه لن يخرجكم من هدى و لن يدخلكم في ضلالة“যে চায় তার জীবন আমার জীবনের মত ও মুত্যু আমার মৃত্যুর মত হোক এবং চায় যে চিরস্থায়ী বেহেশতের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন সেখানে থাকতে,তার উচিত আলী ইবনে আবি তালিবের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয়া। সে তাকে কখনোই হেদায়েতের পথ হতে বিচ্যুত করবে না এবং গোমরাহীর পথেও নিয়ে যাবে না।”২৩। নবী (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি আমার প্রতি ঈমান এনেছে ও আমাকে সত্যায়ন করেছে তার প্রতি আমার উপদেশ হলো সে যেন আলীর অভিভাবকত্বকে গ্রহণ করে। যে কেউ তার বেলায়েতকে গ্রহণ করবে সে প্রকৃতপক্ষে আমার অভিভাবকত্বকেই মেনে নিল। আর যে আমার অভিভাবকত্ব মেনে নিল সে আল্লাহরই অভিভাবকত্বকে গ্রহণ করে নিল। যে ব্যক্তি তাকে ভালবাসল সে যেন আমাকেই ভালবাসল আর যে আমাকে ভালবাসল সে আল্লাহকেই ভালবাসল। যে ব্যক্তি তার প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে মূলত আমার প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে আর যে আমার প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আল্লাহর প্রতিই শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে।”২৪। নবী (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি আশা করে আমার ন্যায় জীবন যাপন ও আমার ন্যায় মৃত্যুবরণ করার এবং সেই চিরস্থায়ী বেহেশতে বসবাসের আকাঙ্ক্ষী হয় যার বৃক্ষসমূহকে আমার প্রতিপালক বপন করেছেন,সে যেন আমার পর আলীর অভিভাবকত্বকে গ্রহণ করে ও তার উত্তরাধিকারীর বেলায়েতকেও মেনে নেয়। সে যেন আমার পর আমার আহলে বাইতের অনুসরণ করে কারণ তারা আমার ইতরাত (রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়) ও আমা হতেই তাদের সৃষ্টি। আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আল্লাহ্ তাদের রিযিক হিসেবে দিয়েছেন। দুর্ভাগ্য আমার উম্মতের সেই লোকদের যারা তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করে এবং আমার ও তাদের মধ্যে বিচ্ছেদের সৃষ্টি করে। আল্লাহর শাফায়াত হতে তারা বঞ্চিত।”২৫। নবী (সা.) বলেছেন,“যে কেউ পছন্দ করে আমার মত জীবন যাপন করতে ও আমার ন্যায় মৃত্যুবরণ করতে এবং সেই চিরস্থায়ী বেহেশত যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন তার অধিবাসী হতে সে যেন আমার পর আলী ও তার বংশধরদের অভিভাবকত্বকে মেনে নেয়। তারা তোমাদেরকে হেদায়েতের দ্বার হতে বহিষ্কার করবে না এবং গোমরাহীর পথেও পরিচালিত করবে না।”২৬। নবী (সা.) হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে বলেন,“হে আম্মার! যখন দেখবে আলী এক পথে চলছে আর লোকেরা অন্য পথে। আলীর সঙ্গে যাও ও অন্যদের ত্যাগ কর। কারণ সে তোমাকে পতনের পথে পরিচালিত করবে না এবং হেদায়েতের পথ হতেও বের করে দেবে না।”২৭। রাসূল (সা.) হতে হযরত আবু বকর বর্ণনা করেছেন,“রাসূল (সা.) বলেছেন : আমার ও আলীর হাত ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সমান।”২৮। নবী (সা.) ফাতিমা (আ.)-কে বলেন,“হে ফাতিমা! তুমি এই বিয়েতে (আলীর সাথে) সন্তুষ্ট কি? (জেনে রাখ) আল্লাহ্ পৃথিবীবাসীদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবং দু’ব্যক্তিকে তাদের হতে মনোনীত করলেন,যার একজন তোমার পিতা,অন্যজন তোমার স্বামী।”২৯। নবী (সা.) বলেছেন,أنا المنذر و عليّ الهاد وبك يا عليّ يهتدي المهتدون من بعدي“আমি ভয়প্রদর্শনকারী এবং আলী হেদায়েতকারী। হে আলী! আমার পর তোমার মাধ্যমেই হেদায়েতপ্রাপ্তগণ হেদায়েত পাবে।”৩০। নবী (সা.) বলেছেন,يا عليّ لا يحل لأحد أن يجنب في المسجد غيري و غيرك“হে আলী! আমি ও তুমি ব্যতীত মসজিদে কারো অপবিত্র হওয়া জায়েয হবে না।”অনুরূপ একটি হাদীস যা তাবরানী হযরত উম্মে সালামাহ্ এবং সা’দের সূত্রে নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“আমি ও আলী ব্যতীত এ মসজিদে কারো অপবিত্র হওয়া বৈধ হবে না।” ৩১। নবী (সা.) বলেছেন,أنا و هذا يعني عليّا حجة على أمّتي يوم القيامة“আমি ও এই ব্যক্তি (আলী) কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের জন্য দলিল।”খাতীব বাগদাদী হযরত আনাস হতে হাদীসটি বর্ণনা করছেন। কিরূপে সম্ভব যে,আবুল হাসান আলী ইবনে আবি তালিব রাসূলের মত উম্মতের জন্য দলিল হবেন অথচ তাঁর স্থলাভিষিক্ত ও অভিভাবক হিসেবে উম্মতের পরিচালক ও নির্দেশক হবেন না?৩২। নবী (সা.) বলেছেন,“বেহেশতের দ্বারে লেখা রয়েছে :لا إله إلّا الله محمّد رّسول الله عليّ أخو رسول اللهআল্লাহ্ ব্যতীত উপাস্য নেই,মুহাম্মদ তাঁর রাসূল এবং আলী রাসূলের ভ্রাতা।”৩৩। নবী (সা.) বলেছেন,“আরশের পাদদেশে লেখা রয়েছে আল্লাহ্ ছাড়া উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁকে আমি আলীর মাধ্যমে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছি।”৩৪। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি নূহের লক্ষ্যের দৃঢ়তা,আদমের জ্ঞানের গভীরতা,ইবরাহীমের সহিষ্ণুতা,মূসার বুদ্ধিমত্তা ও ঈসার আত্মসংযম (দুনিয়া বিমুখতা) দেখতে চায় সে যেন আলীর প্রতি লক্ষ্য করে।” ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে এবং বায়হাকী তাঁর ‘সহীহ’তে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।৩৫। রাসূল (সা.) আলীকে বলেছেন,“হে আলী! তোমার মধ্যে ঈসার নিদর্শনসমূহ রয়েছে,যে নিদর্শনের কারণে ইহুদীরা তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করতঃ তাঁর মাতাকে অপবাদ দিয়েছে ও নাসারারা তাঁর প্রতি ভালবাসার বশবর্তী হয়ে তাঁকে আল্লাহর স্থানে বসিয়েছে।”৩৬। নবী (সা.) বলেছেন, السّبق ثلاثة السّابق إلى موسى يوشع بن نون و السّابق إلى عيسى صاحب ياسين و السّابق إلى محمّد عليّ بن أبى طالب“অগ্রগামীরা তিন ব্যক্তি : মূসার অনুগামীদের মধ্যে অগ্রগামী হলেন ইউশা ইবনে নূন,ঈসার অনুগামীদের মধ্যে অগ্রগামী হলেন ইয়াসীনের অধিকারী এবং মুহাম্মদের অগ্রগামীদের প্রধান হলো আলী ইবনে আবি তালিব।” ৩৭। নবী বলেছেন,“তিন ব্যক্তি সিদ্দীক : হাবীব নাজ্জার (আলে ইয়াসীনের মুমিন ব্যক্তি) যিনি বলেছিলেন : হে আমার জাতি! আল্লাহর রাসূলদের আনুগত্য কর;হিযকীল (ফিরআউন বংশের মুমিন ব্যক্তি) যিনি বলেছিলেন : ঐ ব্যক্তিকে এ কারণেই কি তোমরা হত্যা করতে চাও যে,সে বলে : আমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ্ এবং আলী ইবনে আবি তালিব যে তাঁদের সকল হতে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।”৩৮। নবী (সা.) আলীকে বলেন,“আমার উম্মত অচিরেই তোমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে যদিও তখন তুমি আমার বিধানের ওপর জীবন যাপন করবে ও আমার সুন্নাহর ওপর মুত্যুবরণ করবে। যে কেউ তোমাকে ভালবাসবে সে যেন আমাকেই ভালবাসল আর যে তোমার সঙ্গে শত্রুতা করবে সে যেন আমার সঙ্গেই শত্রুতা করল। আমি দেখতে পাচ্ছি খুব নিকটেই তোমার শ্মশ্রু তোমার মস্তকের রক্তে রঞ্জিত হবে।” হযরত আলী (আ.) বলেন,“নবী (সা.) আমাকে যেসব বিষয়ে অবহিত করেন তার অন্যতম হলো এ উম্মত তাঁর পর আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”ইবনে আব্বাস বলেন,“নবী (সা.) আলীকে বলেছেন : আমার পর খুব নিকটেই তুমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হবে। আলী প্রশ্ন করলেন : তখন কি আমি দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব? রাসূল (সা.) বললেন : হ্যাঁ,তখন তুমি সঠিক দীনের ওপরই থাকবে।”৩৯। নবী (সা.) একদিন সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন,“তোমাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি রয়েছে যে কোরআনের ব্যাখ্যার জন্য যুদ্ধ করবে যেমনটি আমি এর অবতীর্ণ হবার জন্য যুদ্ধ ও প্রচেষ্টা চালিয়েছি।” আবু বকর ও উমরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকলেই ঘাড় সজাগ করে অপেক্ষা করতে লাগলেন। হযরত আবু বকর বললেন,“আমি কি সেই ব্যক্তি?” রাসূল (সা.) বললেন,“না।” হযরত উমর বললেন,“আমি কি?” তিনি বললেন,“না,বরং সেই ব্যক্তি যে এখন তার জুতায় তালি দিচ্ছে (তখন আলী [আঃ] তাঁর জুতা সেলাই করছিলেন)।”আবু সাঈদ খুদরী বলেন,“আলীর নিকট গিয়ে এ সুসংবাদ দিলাম। তিনি তাঁর মাথা নীচু করেই রইলেন যেন তিনি রাসূল (সা.) হতে অসংখ্যবার একথা শুনেছেন।”অনুরূপ হাদীস আবু আইউব আনসারী খলীফা হযরত উমরের সময় বলেছেন,“রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আলীকে ‘নাকেসীন’ (প্রতিজ্ঞাভঙ্গকারী),‘মারেকীন’ (ধর্মচ্যুত) এবং ‘কাসেতীন’দের (সীমালঙ্ঘনকারী ও বিদ্রোহী) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ও তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”(*২১) তদ্রুপ হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের হাদীসটিও। তিনি বলেন,“রাসূল (সা.) বলেছেন :يا عليّ ستقاتلك الفئة الباغية و أنت على الحق فمن لم ينصرك يومئذ ليس منّيহে আলী! শীঘ্রই একদল সীমালঙ্ঘনকারী (বিদ্রোহী) তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে যদিও তখন তুমি সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে ব্যক্তি তখন তোমাকে সাহায্য করবে না সে আমার অনুসারী নয়।”অনুরূপ একটি হাদীস হযরত আবু যর রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ,তোমাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি রয়েছে যে আমার পরে কোরআনের ব্যাখ্যার জন্য যুদ্ধ করবে যেমন আমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে তা অবতীর্ণ হবার জন্য যুদ্ধ করেছি।”মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে আবি রাফে তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর দাদা আবু রাফে হতে বর্ণনা করেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“আমার পর একদল আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে,তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে সবার ওপর বাধ্যতামূলক। যে ব্যক্তি অস্ত্র হাতে তাদের সঙ্গে যুদ্ধে অক্ষম সে যেন জিহ্বার দ্বারা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে,তাতেও অক্ষম হলে সে যেন অন্তর দ্বারা (ঘৃণার মাধ্যমে) যুদ্ধ করে।”আখদ্বার আনসারী বলেন,“নবী করিম (সা.) বলেছেন : আমি কোরআন অবতীর্ণ হবার জন্য যুদ্ধ করেছি এবং আলী এর ব্যাখ্যার জন্য যুদ্ধ করবে।” ৪০। নবী (সা.) বলেছেন, يا عليّ أخصمك بالنّبوّة فلا نبوّة بعدي و تخصم النّاس بسبع أنت أوّلهم إيْمانا بالله و أوفاهم بعهد الله و أقسمهم بالسّويّة و أعدلهم في الرّعيّة و أعظمهم عند الله مزية“হে আলী,তোমার ওপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব হলো নবুওয়াতের কারণে এবং আমার পরে কোন নবী ও রাসূল নেই। আর সকল মানুষের ওপর তোমর সাতটি শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে,তুমি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে ঈমান এনেছ,তুমি আল্লাহর প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রে সবার চেয়ে অগ্রগামী,তুমি সকল মানুষ হতে প্রত্যয়ী এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে সবার হতে অগ্রগামী,বায়তুল মাল বণ্টনে সর্বাধিক সমতা রক্ষাকারী,বিচার ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সকল হতে ন্যায় বিচারক,আল্লাহর নিকট সম্মানের ক্ষেত্রে সকলের চেয়ে নৈকট্যের অধিকারী।”আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেছেন,“রাসূল (সা.) বলেছেন : হে আলী! সাতটি বৈশিষ্ট্যের কারণে তুমি অন্যদের হতে শ্রেষ্ঠ,তুমি সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী,তাঁর প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনকারী,তাঁর নির্দেশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক দৃঢ়,জনগণের প্রতি সবচেয়ে দয়ালু,বিচারের ক্ষেত্রে পারদর্শী এবং জ্ঞান,বিদ্যা,দয়া,উদারতা ও সাহসিকতা ইত্যাদি যাবতীয় সৎ গুণের ক্ষেত্রে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম।”আপনার নিকট এ সম্পর্কিত চল্লিশটি হাদীস বর্ণনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলো এখানে লিপিবদ্ধ করেছি। এ হাদীসগুলো ছাড়াও সমার্থক ও সমমর্যাদার প্রচুর হাদীস রয়েছে (যেগুলো বর্ণনার সুযোগ এখানে নেই) যেগুলো থেকে বোঝা যায় এই উম্মতের মধ্যে রাসূলের পর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আলী ইবনে আবি তালিব এবং এ উম্মতের নেতৃত্বের দায়িত্ব রাসূলের পর একইভাবে আলীর ওপর অর্পিত হয়েছে।তাই শব্দগতভাবে সব হাদীস একই রকম না হলেও অর্থের দিক থেকে তা সমার্থক ও মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। সুতরাং বিষয়টি আপনার নিকট অকাট্যরূপে প্রতিভাত হয়েছে বলে মনে করছি। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসালনিবেদক______ কবির উদ্দিন

ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে ইবনে মুলযামের প্রথম সাক্ষাতইমাম আলীর (আ.)সাথে ইবনে মুলযামের প্রথম সাক্ষাতের ঘটনা সত্যিই বিশ্ময়কর ছিল।কেননা সেদিন সে নিজেই জানতো না তার ভবিষ্যত পরিণতি কি হবে ? পবিত্র কুরআনের র্নিদেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মানুষই চরম পতনের তীরপ্রান্ত দিয়ে পথ হেটে চলছে যেকোন মুর্হুতেই তার সামান্য অসাবধনতার ফলে গুমরাহী ও বিচ্যুতির অসীম গুহায় নিপাতিত হতে পারে। ইতিহাসে আমরা এমন অনেক মানুষের সাক্ষাত পাই যারা প্রথম জীবনে ছিলেন চরম গুমরাহীতে অথচ তাদের শেষ পরিণতি ছিল কল্যাণকর।আবার এমন অনেক মানুষের সাক্ষাত পাই যাদের প্রথম জীবন ছিল পবত্রি ও সততায়পূর্ণ অথচ শেষ পরিণতি হল অত্যন্ত ভয়নক ও নিকৃষ্ট। এরকম ব্যক্তিদের একজন হল ইবনে মুলযাম ।কাহিনীর সারসংক্ষেপ হল ইবনে মুলজাম ইয়ামেন থেকে বাইয়াতের লক্ষ্যে ইমাম আলী (আ.)-এর সান্নিধ্যে আসেন। ইয়ামেনের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি থেকে তাকে বেছে নেয়ার ঘটনাটিও বিষ্ময়কর। অতএব আপনি যে স্তরের মানুষ হোন না কেন প্রতিটি মুর্হুতে আপনার পদস্খলনের সম্ভবনা রয়েছে। আর এই পদস্খলন থেকে একমাত্র রক্ষার উপায় হল বিচক্ষণাদীপ্ত মজবুত ঈমান ও আমলে সালেহ।তবে কেন এবং কি কারণে মানুষের শেষ পরিণতি নিকৃষ্ট হয় তা বিশ্লেষনের জন্য আরেকটি প্রবন্ধের প্রয়োজন। বর্তমান কাহিনীটি আল্লামা মাজলীসি,বিহারুল আনোয়ার গ্রন্থের ৪২ তম খন্ডের২৫৯ নম্বর পাতা বর্ণনা করেছেন।লুত বিন ইয়াহিয়া থেকে আবুল হাসান আলী ইবনে আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল বুকরা বর্ণনা করেন: তৃতীয় খলিফা ওসমান নিহত হওয়ার পর জনগণ যখন ইমাম আলী(আ.)এর হাতে বাইয়াত করলেন তখন হাবিব বিন মুনতাজির নামক জনৈক ব্যক্তি তৃতীয় খলিফার পক্ষ থেকে ইয়ামেনের কোন এক শহরের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।ইমাম আলী(আ.)তাকে নিজ অবস্থানে বহাল থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য একটি পত্র লেখেন। পত্রটি হল নিন্মরূপ :বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহর দাস, আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিবের পক্ষ থেকে হাবীব বিন মুনতাজবিকে,সালামুন আলাইকুম,সমস্ত প্রসংশ ঐ প্রভুর যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই।এবং আল্লাহর রাসুল ও তার আহলে বাইতের প্রতি দরুদ । অতপর পূর্বে আপনি যাদের উপর র্কতৃত্ব করতেন সে অবস্থানেই আপনাকে বহাল রাখলাম, আপনি আপনার কাজ অব্যহত রাখেন।আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি জনগণে মাঝে ন্যায় সঙ্গত আচারণ করুন এবং তাদেরকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখুন। আর জেনে রাখুন ! মুসলিম উম্মার উপর কেউ কর্তৃত্ব লাভ করলে যদি ন্যায় সঙ্গত আচারন না করে তাহলে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় তাদেরকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে যখন তাদের হস্তদ্বয় গৃবাতে বাঁধা থাকবে।র্পাথিব জীবনে ন্যায়পরায়ণ আচারণ ব্যতীত তাকে কোন কিছুই ঐ বন্ধন মুক্ত করতে পারবে না।সুতরাং এবিষয়গুলো ইয়ামেনের জনগনের নিকট পাঠ করুন এবং তাদের থেকে বাইয়াত গ্রহণ করুন। জনগণ স্বত:র্স্ফূতভাবে আপনার কাছে বাইয়াত করলে আপনিও ভালভাবে কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।: “و اَنفِذ اِلیّ مِنهُم عَشرَۀ یَکونُونَ مِِن عُقلائِهِم وَ فُصحائِهِم وَ ثِقَاتِهِم، مِمَّن یَکُونُ اَشَدُّهُم عَونَاً مِن اَهلِ الفَهمِ وَ الشُّجاعَۀِ عارِفینَ بالله، عالِمینَ بِاَدیانِهِم وَ مالَهُم وَ ما عَلَیهِم وَ اَجودُهم رأیاً، وَ عَلَیکَ وَ عَلَیهِمُ السّلامইয়ামেনেরে জনগনের মধ্য থেকে আমি যে বৈশিষ্টগুলো উল্লখে করছি তার উপর ভিত্তি করে ১০ জনকে বেছে আমার কাছে প্রেরণ করুন, বিচেক্ষণ, স্পষ্টভাষী (ভাল বক্তা) ও জনগনের বিশ্বস্ত এবং যারা জনগনের সেবা করতে সুদৃঢ়, সাহসী, খোদা পরিচিতি ও ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী, নিজের অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সর্ম্পকে অবগত ও সুচিন্তিত মতামতরে অধিকারী।এমন দশজনকে বেছে আমার কাছে পাঠান।[ইমাম ব্যক্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতি গুরুতারোপ করেছেন যথাক্রমে: (১) বুদ্ধিবৃত্তি বা আকল (২) ভালবক্তা (৩) জনগনের বিশ্বস্ত (৪) জনসেবায় সুদৃঢ় (৫) বিচক্ষণ ও বুঝদার লোক (৬) সাহসী (৭) খোদা পরিচিতির অধিকারী (৮) র্ধমীয় বিষয়ে জ্ঞানী (৯) নিজের ও জনগনের অধিকার সর্ম্পকে সচতেন (১০) যাদের মতামত ও পরার্মশ কল্যাণকর।সত্যিকারই কমোর ভাঙ্গা সব বৈশিষ্ট্য যারতার মধ্যে পাওয়া সম্ভব নয়। অতএব নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ঐসব বৈশিষ্ট্যের মানুষেরা হবনে ব্যতিক্রমধর্মী লোক।]ইমাম আলী (আ.) চিঠিটি মহর করে হাবীবের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। হাবীব চিঠিটি পেয়ে চুম্মুন করে চোখে ও মাথার উপর তুলে নিলেন।হাবীব চিঠিটি পড়ার পর মিম্বারে উঠলেন এবং আল্লাহ প্রসংশা ও মুহাম্মদ ও তার পরিবারের প্রতি দরুদ পাঠ করে বললেন : হে লোকসকল! ওসমান তার দায়িত্ব পালন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে জনগন তার পর আল্লাহর বান্দা, কল্যাণকামী নেতা, রাসুলের (স.) ভাইকে খলিফা হিসেবে মেনে নিয়েছেন । অতএব বর্তমান খলিফা হলেন খেলাফাতের জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যক্তি রাসুলের চাচাতো ভাই, রাসুলের কন্যার জামাই, হাসান ও হোসেনের পিতা আমিরুল মোমনেীন আলী ইবনে আবি তালিব। তার কাছে বাইয়াত করার ক্ষেত্র্রে তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গী কি ?রাবী বর্ণনা করছেন: («قالَ: فضجّ النّاسُ بِالبُکاءِ وَ النَّحیبِ، وَ قالُوا: سَمعاً وَ طَاعَۀً وَ حُبَّاً وَ کَرامَۀً لله وَ لِرَسولِهِ وَ ِلأخی رَسُولِه، فَاَخَذَ لَهُ البَیعَۀُ عَلَیهِم عَامَۀ؛)হাবীবের কথা শেষ না হতেই জনগন আবেগে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো এবং বলতে লাগলো, আমারা আপদমস্তক তার কাছে অবনত, সে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রেমিক এবং রাসুলের ভাই। তখন হাবীব সবার থেকে বাইয়াত গ্রহন করলেন।فَاختارَ مِنهُم مأۀ ثُمَّ مِنَ المِأۀِ سَبعینَ، ثُمَّ مِنَ السَّبعین ثَلاثینَ، ثُمَّ مِنَ الثَّلاثینَ عَشرَۀً فیهِم عَبدَ الرَّحمنِ بنِ مُلجَمِ المُرادیবাইয়াত গ্রহণ শেষে বললেন আমি তোমাদের মধ্য থেকে ১০ জন সাহসী ও শ্রেষ্ঠ লোককে আলীর (আ.)কাছে পাঠাতে চাই।অবশ্য তিনিই এমনটি চেয়েছেন। সবাই এক বাক্যে বললেন ঠিক এ্টাই আমরা করবো।অতপর তারা তাদের মধ্য থেকে ১০০জন বেছে নিলেন, তারপর ১০০ জন থেকে ৭০ জনকে তারপর ৭০ জনথেকে ১০ জনকে আর এই দশ জনের মধ্যে একজন ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে মুলযাম।দশজন মনোনীত হওয়ার সাথে সাথেই ইমাম আলী (আ.)এর কৃতজ্ঞতা ও সহযোগীতার বার্তা পৌছানোর জন্য তাদেরকে কুফায় পাঠানো হল।তারা কুফাতে পৌছায়েই ইমাম আলী (আ.)এর সন্নিধ্যে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম ও খলিফা হিসেবে সম্ভাষণ জানালেন।ইমাম আলী (আ.) ও তাদের সালামের উত্তর দিয়ে স্বাগত জানালেন। অতপর [যেহেতু আগে থেকেই ইবন মুলযামকে এই দলের মুখপাত্র হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল] ইবনে মুলযাম সম্মুখে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলা শুরু করলো :«فَتَقَدَّمَ ابْنُ مُلْجَمٍ وَ قَامَ بَیْنَ یَدَیْهِ وَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَیْکَ أَیُّهَا الْإِمَامُ الْعَادِلُ وَ الْبَدْرُ التَّمَامُ وَ اللَّیْثُ الْهُمَامُ وَ الْبَطَلُ الضِّرْغَامُ وَ الْفَارِسُ الْقَمْقَامُ وَ مَنْ فَضَّلَهُ اللَّهُ عَلَى سَائِرِ الْأَنَامِ صَلَّى اللَّهُ عَلَیْکَ وَ عَلَى آلِکَ الْکِرَامِ أَشْهَدُ أَنَّکَ أَمِیرُ الْمُؤْمِنِینَ صِدْقاً وَ حَقّاً؛হে ন্যায়পরায়ন নেতা আপনার প্রতি সালাম!হে র্পূনীমার চাঁদ, হে সাহসী বীর, যুদ্ধের ময়দানের একক অশ্বারোহী, যাকে মহান আল্লাহ সকল ফজিলত দিয়েছেন (নবুয়াত ব্যতীত)! আপনার প্রতি দরুদ এবং আপনার মহান পরিবার পরিজনের প্রতি।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি সকল মোমীনদের অভিভাবক…..।তার বক্তব্যের ধরণ দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় যে সে সাহস, মেধা, দক্ষবক্তা, অদ্ভুত এক ব্যক্তিত্ব।অতপর ইবনে মুলযাম বললেন :أَنَّکَ وَصِیُّ رَسُولِ اللَّهِ صلی الله علیه و آله وَ الْخَلِیفَةُ مِنْ بَعْدِهِ وَ وَارِثُ عِلْمِهِ لَعَنَ اللَّهُ مَنْ جَحَدَ حَقَّکَ وَ مَقَامَکَ أَصْبَحْتَ أَمِیرَهَا وَ عَمِیدَهَا لَقَدِ اشْتَهَرَ بَیْنَ الْبَرِیَّةِ عَدْلُکَ وَ هَطَلَتْ شَآبِیبُ فَضْلِکَ وَ سَحَائِبُ رَحْمَتِکَ وَ رَأْفَتِکَ عَلَیْهِمْ وَ لَقَدْ أَنْهَضَنَا الْأَمِیرُ إِلَیْکَ فَسُرِرْنَا بِالْقُدُومِ عَلَیْکَ فَبُورِکْتَ بِهَذِهِ الطَّلْعَةِ الْمَرْضِیَّةِ وَ هُنِّئْتَ بِالْخِلَافَةِ فِی الرَّعِیَّةِ؛নিশ্চয় আপনিই রাসুলের (স.) উত্তরসূরী ও তার পরবর্তি খলিফা [ না যারা আপনার পূর্বে খেলাফাতকে জব্দদখল করেছিল] এবং তাঁর জ্ঞানের ওয়ারিস (উত্তরসূরী)। আল্লাহর অভিশাপ ঐসব ব্যক্তিদের প্রতি যারা আপনার অধিকার, মাকাম ও শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করে …..।ইমাম আলী (আ.) ইয়ামেন থেকে আগত ইবনে মুলযাম ও বাকীদের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে নিজের কাছে ডাকলেন।তারা যখন কাছে আসলেন, তাদের প্রতিনিধির প্রত্রটি ইমামের হাতে দিলেন। ইমাম পত্রটি খুলে পড়েই খুশী হয়েগেলেন।অতপর তিনি আদেশ দিলেন তাদের প্রত্যেককে একসেট ইয়ামেনী পোশাক, আবা এবং একটি করে এ্যারাবিয়ান ঘোড়া প্রদান করে সম্মান হোক।ইবনে মুলযাম যখন এমন মহানুভবতা প্র্রত্যক্ষ করলেন তখন আবার ইমাম আলী (আ.)-এর প্রসংশায় কবিতা পাঠ শুরু করে দিলেন।اَنتَ المُهَیمِنُ وَ المُهَذَّبُ ذُو النَّدیوَ اِبنَ الضَّراغِمِ فی الطراز الاَوّلاللهُ خَصَّکَ یا وَصِیُّ مُحمَّدوَ حَباکَ فَضلاً فِی الکِتابِ المُنَزَّلوَ حَباکَ بِالزَّهراءِ بِنتَ مُحَمَّدحُورِیۀٍ بِنتِ النَّبیِّ المُرسَلতুমি পবিত্র, মহানব্যক্তি, দানশীল,বিরপুরুষ, মহান আল্লাহই আপনাকে রাসুলের (স.) উত্তরসুরী হিসেবে মনোনীত করেছেন।আর আপনাকে যে ফজিলত দেয়া হয়েছে তা কুরআনে নাযিল হয়েছে। মানবরূপ হুর রাসুলের কন্যা হযরত জাহরা (সালামুল্লাহ আইলা্হা)-কে আপনার সহর্ধামিনী করে ধন্য করেছেন।راوی می‌گوید: «فَاسْتَحْسَنَ أَمِیرُ الْمُؤْمِنِینَ علیه السلام کَلَامَهُ مِنْ بَیْنِ الْوَفْدِ فَقَالَ: لَهُ مَا اسْمُکَ یَا غُلَامُ؟ قَالَ اسْمِی عَبْدُ الرَّحْمَنِ قَالَ ابْنُ مَنْ قَالَ ابْنُ مُلْجَمٍ الْمُرَادِیِّ قَالَ لَهُ أَ مُرَادِیٌّ أَنْتَ قَالَ نَعَمْ یَا أَمِیرَ الْمُؤْمِنِینَ؛রাবী বর্ণনা করেন : ইমাম আলী (আ.) তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জিঙ্গাসা করলেন হে যুবক তোমার নাম কি ? সে বলল : আব্দুর রহমান। তিনি আবার বললেন : তোমার বাবার নাম কি ? সে বলল : ইবনে মুলযাম মুরাদী। তিনি বললেন : তুমি সত্যিই কি মুরাদীর সন্তান !? সে বলল : জী! আমিরুল মোমেনীন। অতপর ইমাম বললেন : ইন্নালিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজেউন, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম।আসবাগা বিন নাবাতার বর্ণনায় এসেছে যে, ইবনে মুলযাম বাইয়াত করে ফিরে চলে যাওয়ার সময় তাকে ইমাম পুনরায় ডাকেন বাইয়াত করার জন্য। বাইয়াত আবার চলে যাওয়ার পরপর তাকে পুনরায় ডাকা হয়। তখন ইবনে মুলযাম বললো : হে আমিরুল মুমেনীন আমার সাথে যে আচারণ করছেন সেভাবে তো বাকীদের সাথে করা হচ্ছে না, এর কারণ কি ? ইমাম বললেন : সবধান থেকো যেন তুমি তোমার প্রতিজ্ঞা (বাইয়াত)ভঙ্গ করনা। তখন ইবনে মুলযাম বললেন:وَ إِنِّی وَ اللَّهِ لَأُحِبُ الْإِقَامَةَ مَعَکَ وَ الْجِهَادَ بَیْنَ یَدَیْکَ وَ إِنَّ قَلْبِی مُحِبٌّ لَکَ وَ إِنِّی وَ اللَّهِ أُوَالِی وَلِیَّکَ وَ أُعَادِی عَدُوَّکَ؛খোদার শপথ করে বলছি আমি আপনাকে অত্যন্ত ভালবাসি, আমি আপনার সাথেই আছি, আপনার সাথে থেকেই জিহাদ করতে চাই।খোদার শপথ আমি আপনার বন্ধুদেরকেও ভালবাসি আর শত্রুদের সাথে শত্রুতা করি।সেদিন সত্যিই হয়ত ইবনে মুলযামের কথাই সত্য ছিল।কিন্তু সময়ের আর্বতনে এই ইবনে মুলযাম আমিরুল মোমেনীন আলী (আ.) খুনীতে পরিণত হয়েছে।কারবালার ময়দানে ইমাম হোসেন (আ.)এর পবিত্র মস্তক বিচ্ছিন্নকারী অভিশপ্ত শীমার । সিফ্ফিনের যুদ্ধে ঐ শীমার ইমাম (আ.)এর পক্ষ হয়ে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে আর কারবালার ময়দানে তার ভুমিকা দেখুন!অতএব বহু শীমার বহু ইবনে মুলযাম আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। এযুগের শীমার তারাই যারা সৎ ও ভাল কাজে বাঁধা প্রদান করে। ন্যায় কাজ থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়। যারা মিথ্যা গুজব তৈরী করে র্ধমীয় ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তিত্বকে হত্যা করে।অতএব সবধান বন্ধুগণ ! দাবীদার ভাল মানুষে আজ দেশ সয়লাব। তাই নিজেকে সবসময়ই বিচক্ষণতার সাথে বাস্তবতার সাথে মিলায়ে নিতে হবে। কেননা, মহান আল্লাহ বলেছেন, নি:শ্চয় প্রতিটি মানুষ পতনের মধ্যে নিপাতিত একমাত্র বিচক্ষণতা সম্পন্ন মজবুত ঈমান ও আমলে সালেহ ব্যাতীত।এই পতনমুখী অতি চিকন পথ বেয়ে আমরা প্রত্যেকেই চেলেছি। আবেদ, আলেম, দরবেশ, জ্ঞানীগুনী সবাই ঐ পতনের পথ বেয়ে পথ চলেছেন। অতএব প্রতিটি ক্ষেত্রে সাবধনতার বিকল্প অন্যকিছু কিছু নেই। তাই আসুন কুরআন ভিত্তিক জীবন চর্চা করি।লা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

ইন্নালিল্লাহইবনে মুলজিম পার বেশুমার লানতহজরত আলী (আ.) এর খেলাফতের সূচনা লগ্নে হাবীব বিন মুন্তাজাব ছিল ইয়ামেনের শাষক। ইমাম আলী (আ.) তাকে ইয়ামেনের জনগণের কাছ থেকে বাইয়াত নেয়ার জন্য চিঠি লিখেন। হাবীব ১০ জন উপযুক্ত ইয়ামেনবাসীকে আব্দুর রহমান বিন মুলজামের নেতৃত্বে কুফাতে প্রেরণ করেন। আব্দুর রহমান ইবনে মুলজাম কুফাতে আসে এবং হজরত আলী (আ.) কে মোবারকবাদ জানায় এবং বলে খোদার লানত হোক সে ব্যাক্তির উপরে যে আপনার প্রতি সন্দেহ পোষণ করে কেননা আপনি হচ্ছে রাসুল (সা.) এর ওয়ালী এবং ওয়াসী এবং সে হজরত আলী (আ.) এর শানে কবিতা আবৃতি করে। ইমাম আলী (আ.) তাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার নাম কি? সে বলে আব্দুর রহমান ইবনে মুলজাম মুরাদী।ইমাম আলী উক্ত নামটি শুনার সাথে সাথে হাতের উপরে হাত রেখে তিন বার বলেনঃ (انّاللّه و انّاالیه راجعون) তারপরে তার দিকে তাকিয়ে বলেনঃ তুমিই তাহলে মুরাদী। ইয়ামেনের লোকেরা বাইয়াত করে কিন্তু তারপরে ইমাম আলী ইবনে মুলজামের কাছ থেকে আরো দুইবার বাইয়াত নেন এবং এভাবে ইবনে মুলজামের কাছ থেকে তিনি তিনবার বাইয়াত নেন। তখন সে বলেঃ হে আলী! কেন আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করছেন? ইমাম তাকে বলেনঃ কেননা একসময় তুমি এই বাইয়াতকে তুচ্ছজ্ঞান মনে করবে এবং তা ভঙ্গ করবে। সে বলে আমার অন্তর আপনার ভালবাসায় পূর্ণ। আমি চাই আপনার সাথে থেকে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে। ইমাম মুচকি হেসে তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং অবশেষে বলেন যে হে ইবনে মুলজাম! তুমিই আমাকে হত্যা করবে।ইবনে মুলজাম বলেঃ যদি আপনি আমার সম্পর্কে এমন ধারণা পোষণ করেন তাহলে আমাকে নির্বাসন দিন। ইমাম (আ.) তাকে বলেনঃ তুমি ইয়ামেনের লোকদেরকে নিয়ে ইয়ামেনে ফিরে যাও। কিন্তু তিনদিন পরে ইবনে মুলজাম অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার সঙ্গিরা তাকে ছেড়েই ইয়েমেনে চলে যায় এবং সে কুফাতে থেকে যায়। ইমাম স্বয়ং তার সেবা যত্ন করেন এবং তার মুখে খাবার তুলে দেন এবং তার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তার সেবা করেন। তারপর থেকে ইবনে মুলজাম ইমাম আলী (আ.) এর পক্ষে কাজ করতো। তারপর ইমাম আলী (আ.) তাকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং তাকে টাকা দেন এবং বলেন অমি তোমার জীবন রক্ষা করতে চাই অথচ তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও। ইবনে মুলজাম এ কথা শুনার পরে বলে হে আলী! যদি এমনটি হয় তাহলে আপনি আমাকে হত্যা করুন। ইমাম (আ.) তার জবাবে বলেনঃ কাউকে অপরাধের আগে শাস্তি দেওয়া ঠিক না।জামালের যুদ্ধে ইবনে মুলজাম হজরত আলী (আ.) এর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে এমনকি সে সিফফিনের যুদ্ধেও ইমাম আলী (আ.) এর পক্ষে যুদ্ধ করে।খারেজি ফেরক্বা প্রকৃতপক্ষে সিফফিনের যুদ্ধ থেকেই এর সূত্রপাত ঘটে। উক্ত দলটি ছিল আগ্রাসী ও অন্ধবিশ্বাসী তারা নিজেদেরকে ঈমান ও তাকওয়ার পোষাকের মধ্যে নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখেছিল। তারা তাদের অদ্ভুত চিন্তাধারা এবং অযৌক্তিক দলিলের ভিত্তিতে হজরত আলী (আ.) খেলাফতকালে সমস্যার সৃষ্টি করে। ইমাম আলী (আ.) তাদেরকে সকল ভুল চিন্তাধারা থেকে সত্য পথের আহবান জানান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারা ইমাম আলী (আ.) এর কথা কে মেনে নেয়নি। সুতরাং ইমাম আলী (আ.) ও তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর অন্য কোন পথ খুজে পাননি। তারা তাদের একগুঁয়েমি এবং বিদ্রোহপূর্ণ চিন্তাচেতনার অনুসরণ করে চলছিল। অবশেষে তারা নাহরাওয়ানের যুদ্ধে পরাজিত হয়।সাহাবীরা মনে করেছিল যে উক্ত যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর খারেজিরা হয়তো নিমূল হয়ে যাবে। একজন বলেঃ হে আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) সব খারেজিরা ধ্বংস হয়ে গেছে।ইমাম (আ.) তার জবাবে বলেনঃ না। খোদার শপথ! এমনটি না। বরং তারা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রূপে আসবে এবং ধ্বংস হবে এবং তারা চুরি, লুটতারাজ এবং ছিনতাইকারীদের সাথে যোগ দিবে। রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনে মুলজাম সিফফিনের যুদ্ধ থেকেই হজরত আলী (আ.) কাছ থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং নাহরাওয়ানের যুদ্ধে হজরত আলী (আ.) এর বিপক্ষে যুদ্ধে অংগ্রহণ করে।সে খারেজিদের মধ্যে একটি পরিবারের মেয়ে যার নাম ছিল কোত্তাম তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। উক্ত মেয়েটি ছিল হজরত আলী (আ.) কে হত্যা করার পিছনে অন্যতম কারণ। এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃইমাম আলী (আ.) সিফফিন এবং নাহরাওয়ানের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পূর্বেই ইবনে মুলজাম কুফাতে পৌছায় এবং জনগণকে ইমাম (আ.) এর বিজয়ের সুসংবাদ দেয়। যখন সে কোত্তামের বাড়ির কাছে পৌছায় তখন কোত্তাম তাকে নাহরাওয়ানের শহীদদের নাম জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যে তার গোত্রের কয়েকজন উক্ত যুদ্ধে মারা যায়। তখন কোত্তাম অনেক ক্রন্দন করে। তখন ইবনে মুলজাম কোত্তামকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। কোত্তামও তার এ প্রস্তাবকে কবুল করে এবং তাকে দেনমোহর হিসেবে কয়েকটি শর্ত দেয় যে,– হজরত আলী (আ.) কে হত্যা করতে হবে।– তিন হাজার দিনার।– একটি দাশ ও একটি দাসী।ইবনে মুলজাম ভয় পেয়ে বলে হজরত আলীকে মারা সহজ ব্যাপার না। কোত্তাম মুলজামকে আকর্ষিত করার জন্য নিজেকে পরিপাটি করে রাখতো এবং তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখাত যেন সে উক্ত বিষয়টি কবুল করে।তখন ইবনে মুলজাম বাকর বিন উবাইদুল্লাহ তামীমী এবং আমরু বিন বাকর তামীমী নামক আরো দুজন খারেজিদের সাথে সাক্ষাত করে এবং পরিকল্পনা করে যে আলী, মাবিয়া এবং আমরু আসকে কিভাবে হত্যা করা যায়। তারা একেকজনকে হত্যার দ্বায়িত্ব নেয়।১৯শে রমজান ৪০ হিজরীতে ইবনে মুলজাম ইমাম আলী (আ.) এর উপরে হামলা করে এবং বলেঃ (الحکمُ للّه ‏یا على ‏لا لَکَ) তার একাজ থেকে স্পষ্ট হয় যে সে ছিল খারেজি।উক্ত ঘটনা থেকে আমরা বেশ কিছু বিষয় বুঝতে পারি তা হচ্ছেঃ– যদিও ইবনে মুলজাম হজরত আলী (আ.) কে শহীদ করে কিন্তু তাদের মূখ্যে উদ্দেশ্য ছিল ইমামতকে চীরতরে শেষ করে দেয়া এবং এটা ছিল একটা বাতিল চিন্তাধারা।– ইবনে মুলজাম ছিল সেই বাতিল ফেরক্বার একজন সদস্য মাত্র।– উক্ত চিন্তাধারা শুধুমাত্র হজরত আলী (আ.) এর যুগেই ছিল না বরং তা রাসুল (সা.) যুগেও পরিলক্ষিত হয়। উক্ত চিন্তধারা হজরত আলী (আ.) কে হত্যা করেই শেষ হয়ে যায়নি বরং তা আজও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হচ্ছে।– উক্ত চিন্তাধারাটি হচ্ছে এমন এক বাতিল চিন্তাধারা যা ইমামতকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।সূত্রঃ১- ফুরুগ্বে বেলায়াত, আয়াতুল্লাহ জাফর ‍সুবহানী।২- তারিখে তাহলিলি ইসলাম তা পায়ান উমাভিয়ান।৩- যিন্দেগানী আমিরুল মুমিনিন।৪- তাতেম্মা ফি তাওয়ারিখিল আয়েম্মা (আলাই হিমুস সালাম), পৃষ্ঠা ৫৪।লা'নাতুল্লাহি আলাল কাউমে জালেমিননিবেদক_______ কবির উদ্দি

ইসলামে হযরত আবু তালিব আঃ এর অবদান:::::::::::::_________পর্ব (((((৩)))))_____________:::::::::::::::মহানবী (সা.) জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারিয়েছেন। মায়ের কাছে তিনি পিতা আব্দুল্লার ইন্তেকালের কথা জানতে পেরেছেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাতা আমেনার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হন।ফলে তাঁর লালন-পালনের ভার পিতামহ জনাব আব্দুল মোতালিব গ্রহণ করেন। মাত্র দুই ছর পর তিনিও এ পৃথীবি ছেড়ে চলে গেলেন। শিশু মোহাম্মদ (সাঃ) অসহায় হয়ে পড়লেন। মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর হাবিবের জন্য নিজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। আট বছর বয়সে শুরু হলো নবী (সা.)-এর জীবনের এক নতুন অধ্যায় , তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন পিতৃব্য হযরত আবু তালিব। মোহাম্মদ (সা.)-কে চাচা আবু তালিব ও চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ প্রাণাধিক ভালবাসতেন। মোহাম্মদ (সা.)-কে তিনি কখনো মায়ের শূন্যতা বুঝতে দেননি। নিজেদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও মোহাম্মদ (সা.)-কে তা অনুধাবন করতে দেননি। এই মহিমান্বিত পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা , আদর-যন্ন আর লালন-পালন ও ছত্রছায়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর শিশু , কিশোর ও যৌবনকাল অতিবাহিত হয়েছিল। জীবনের সেই সময়গুলো কত সুখময় ছিল নবী (সা.) তা বুঝতে পেরেছিলেন , যখন মাতৃসুলভ চাচি ইন্তেকাল করলেন।নবী (সা.) সেই মহিয়সী চাচিকে‘ মা’ বলেই ডাকতেন। তাঁর ইন্তেকালে নবী (সা.) দীর্ঘদিন অশ্রুসজল ছিলেন। হযরত আবু তালিব যেমনি পিতার ন্যায় স্নেহ ভালবাসা দিয়ে নবীকে আগলে রেখেছেন , তেমনি তাঁর ভরণ-পোষণ , পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যন্য প্রয়োজন মিটিয়েছেন অকৃপণ ভাবে। এমনকি নিজের সন্তানের চেয়েও নবীকে দিয়েছেন অগ্রাধিকার। নিজেরা কষ্টে থাকলেও নবী (সা.)-এর কষ্টে থাকা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।এখানে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করছি: রাসূল (সা.) বলেছেন ,“ যে ব্যক্তি তার জান-মাল , ইজ্জত-সম্মান ও সন্তানসন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে আমাকে অধিক ভালবাসে না তার ঈমান পরিপূর্ণ নয়” । উল্লিখিত হাদীসের আলোকে প্রমাণ হয় হযরত আবু তালিব ছিলেন একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার। একজন স্নেহবৎসল পিতা , দয়ালু চাচা ও একজন দরদি অভিভাবক। তাঁরা উভয়ই চাচা এবং ভ্রাতুষ্পুত্র একে অন্যের প্রতি এতটাই অনুরোক্ত ছিলেন যেন মনে হতো তাঁদের জীবন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। দেশে বিদেশে হযরত আবু তালিব আঃ যেখানেই সফর করতেন নবীকে সাথে রাখতেন। যে কারণে আরবের লোকেরা মোহাম্মদ (সা.)-কে‘ আবু তালিবের ইয়াতিম’ নামেও ডাকত। ভাতিজাকে কখনও তিনি একা ছাড়তেন না , এমনকি ঘুমানো কালেও পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এরূপে নবী (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে 25 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 17 টি বছর তিনি হযরত আবু তালিবের গৃহে অবস্থান করেন।আর যেখানে এত বছর নবী (সা.) অবস্থান করলেন , সেখানে যে খাওয়া দাওয়া করেছেন তা নিশ্চই হালাল ছিল। কারণ নবী-রাসূলগণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করেন না। তাহলে যারা বলেন ,“ আবু তালিব ঈমান আনেননি” । তারা নবী (সা.)-কে কোথায় পৌঁছালেন ? কারণ পবিত্র কোরআনে সূরা তওবার 28 নং আয়াতে আল্লাহ পাক উল্লেখ করছেন :) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِ‌كُونَ نَجَسٌ(“ হে ইমানদারগন! নিশ্চই মুশরিকরা হচ্ছে অপবিত্র” ।📚📚📚📚তাই ঐ সকল ওলামাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আপনাদের উক্তি সত্য হলে , নবী (সা.) কি 17 বছর হালাল খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন ? যা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে আমরা জানতে পেরেছি নবী মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া (আ.) যখন লালন-পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এই শিশুকে দুধ পান করানোর জন্য ধাত্রীর আহবান করলেন অতঃপর অসংখ্য ধাত্রীর আগমণ ঘটল কিন্তু কেউ শিশু মূসাকে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হল না। তখন সেখানে উপস্থিত নবী মূসা (আ.)-এর আপন ভগ্নী বললেন ,“ আমি আপনাদের এমন এক ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি , হয়তো এই শিশু তাঁর দুগ্ধ পান করবে” । আর বাস্তবেও তাই ঘটল , অর্থাৎ আল্লাহ তাঁকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিলেন এবং মায়ের দুগ্ধই পান করালেন। উক্ত ঘটনায় ইহাই প্রমানিত হয় যে , আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলগণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত যখন যা ইচ্ছা খাদ্য কিংবা পানীয় গ্রহণ করেন না।দুঃখজনক হলেও সত্য যে , আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে কিছু সংখ্যক মুসলমান নামধারী উম্মত এমন সব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন , যা শুনে অন্য ধর্মের অনুসারীরাও লজ্জাবোধ করেন। যেমন রাসূল (সা.)-কে সদা সর্বদা অভাবী , ক্ষুধার্ত ও অসহায় হিসেবে উপস্থাপন , তালিওয়ালা জামা পরিধারণ , রাসূল (সা.)-এর সিনাছাক করে ময়লা দূরিকরণ , রাসূল (সা.)-কে নিরক্ষর নির্ধারণ ও চল্লিশ বছর পর নবী নির্ধারণ সহ বেশ কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনী আমাদের সমজে প্রচলিত আছে। অথচ পবিত্র কোরআনে বেশকিছু সংখ্যক নবীর নাম ও বর্ণনা রয়েছে , যাঁদের কারো কখনো সিনাছাক করতে হয়নি এবং কেহ নিরক্ষর ছিলেন এমন প্রমাণও নেই। তাই প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হিসাবে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত নূন্যতম আকিদা এই হওয়া উচিৎ ছিল যে , আমাদের সমাজে যে সকল বক্তব্য রাসূল (সা.)-এর মান-মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং ভিন্ন ধর্মের লোকেদের কাছে রাসূল (সা.)-এর শাণ ও মানকে প্রশ্নের সন্মূখিন করে তোলে , অন্তত সে সকল প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।উদহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে যে , ইসলামের ইতিহাসের প্রথম তিন খলিফার সন্মানিত পিতাগণ , কে কোন অবস্থানে ছিলেন বা তাঁরা প্রকাশ্যে কলেমা পড়ে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন কি না এবিষয়ে ইতিহাসে তেমন কোন আলোচনা পরিলক্ষিত হয় না। অথচ চতুর্থ খলিফার সম্মানিত পিতা সম্পর্কে যারা মর্যাদাহানীকর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা কি নিশ্চিত বলতে পারেন যে , দ্বীন ইসলাম এতে কত টুকু উপকৃত হয়েছে ?আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)-এর 8 বছর বয়স থেকে শুরু করে তাঁর 50 বছর বয়স পর্যন্ত সুদীর্ঘ 42 বছরের এক অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি যে কেবলমাত্র নবী (সা.)-এর অভিভাবক ছিলেন এমন নয় , তিনি ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা , কল্যানের অগ্রদূত , মজলুমের বন্ধু ও জালেমের শত্রু। নবী (সা.)-এর বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।হযরত আবু তালিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়ে ক্ষুদ্র একজন লেখক হিসেবে যে বিষয়টি বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে তা সমীপে প্রকাশ করছি।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসাললা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিননিবেদক______ কবির উদ্দিন

রাসূল (সা.) এর ভালবাসা, আবু তালিবের ঈমানেরই স্বাক্ষ্য স্বরূপমহান সৃষ্টিকর্তার নামেই শুরু করছি, পবিত্র কোরআনের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি আল্লাহ পাকের মনোনীত দ্বীন হলো ‘ইসলাম’(সূরা আলে ইমরান , আয়াত-১৯)। এই ইসলামকে যিনি সমগ্র বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নবী-রাসূলগণের সর্দার হযরত মোহাম্মদ (সা.)। যে নবী (সা.)-এর আগমণ না হলে আমরা মহান আল্লাহ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতাম না, জানতে পারতাম না কোরআন সম্পর্কে, জানতে পারতাম না দ্বীন সম্পর্কে, এমনকি জানতে পারতাম না আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেও। তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার যে, নবী (সা.) সমগ্র দুনিয়ার মানুষকে জাহেলী যুগের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে গেছেন। আর সেই জাহেলী ভাব যদি এখনো মুসলমানদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়, তবে কি আমরা ভেবে নেব যে, কোরআনের আলো যাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি তারা কি আজও অন্ধকারে নিমজ্জিত?এমনই অসংখ্য অমিল অসংগতিপূর্ণ বিষয় বরাবরই আমাদের অন্তরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলছে। এসকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্যই আমি বিভিন্ন সময়ে স্বনামধন্য আলেম-ওলামা ও বুজর্গগণের স্মরণাপন্ন হয়েছিলাম। কিন্তু যথাযথ উত্তর না পাওয়ার কারণেই পবিত্র কোরআন, হাদীস ও ইসলামের ইতিহাসের গবেষণামূলক অধ্যয়নে রত হই। অতঃপর সত্য উন্মোচনে কিছু লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। যে প্রশ্নগুলো আমাকে সদা বিব্রত করত, তার কিছু অংশ পাঠকের উদ্দেশে বর্ণনা করছি। যেমন: পবিত্র হাদীস-আল-কিসায় নবীকন্যা ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) থেকে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী বর্ণনা করেন। মহান আল্লাহ পাক বলেছেন: “যদি আমি মোহাম্মদকে সৃষ্টি না করতাম তবে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তথা কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”(সহীহ মুসলিম , ৭ম খণ্ড , পৃ-১৩ ; সহীহ তিরমিযী , খণ্ড-১২ , পৃ-৮৫ ।)তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, নবী (সা.) না হলে তো আমরা আল্লাহর পরিচিতি, ইসলাম কিংবা মুসলমান-এর কোনটাই পেতাম না। তাহলে যিনি বা যাঁরা নবী (সা.)-কে লালন-পালন করেছেন, তারা তো ইসলামকেই লালন-পালন করেছেন। যাঁরা নবী (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছেন, তাঁরা তো ইসলামকেই আশ্রয় দিয়েছেন। যারা নবী (সা.)-এর জন্য যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা তো ইসলামের জন্যই যুদ্ধ করেছেন। আর যে মহিয়সী নারী নিজের সমস্ত ধন-সম্পদ নবী (সা.)-এর দ্বীন রক্ষায় বিলিয়ে দিয়েছেন, তিনি তো ইসলামকেই সাহায্য করেছেন এবং দ্বীন ইসলামকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই মহান প্রভু তাঁদের সেই অবদানের প্রতিদান দিতে ও কার্পণ্য করেননি। পবিত্র কোরআনের সূরা আদ-দ্বোহার ৬ ও ৮ নং আয়াতে ঐসকল মুমিন-মুমিনাতের কর্মের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদের কাজকে প্রভু নিজের কর্ম হিসেবে প্রকাশ করেছেন। রব্বুল আলামীন বলছেন:أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ“তিনি কি আপনাকে এতিম রূপে পাননি? অতঃপর আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব রূপে, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন।”(মাআরেফুল কোরআন , মুফতি মোঃ শফি , অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান) যদি আমরা উল্লিখিত আয়াতসমূহের গভীরে প্রবেশ করি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট মিলিয়ে দেখি তবে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে নবী (সা.)-কে এতিম অবস্থায় আশ্রয় দিয়েছেন দুই মহান ব্যক্তি। একজন তাঁর দাদা আবদুল মোতালিব, অপরজন চাচা আবু তালিব। আর নিঃস্ব অবস্থায় অভাবমুক্ত করেছেন বিবি খাদীজাতুল কোবরা। এই তিন মুমিন-মুমিনার কর্মকাণ্ড এতোটাই প্রশংসনীয় যে, তাঁদের কৃতকর্মকে আল্লাহ পাক নিজ কর্ম বলে স্বীকৃতি প্রদান করছেন। তাহলে মূল প্রসঙ্গে আসি, আমাদের সমাজের সেই সব আলেম যারা তাদের ওয়াজ-মাহফিল কিংবা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন, “নবী (সা.)-এর চাচা হযরত আবু তালিব নাকি ঈমান আনেননি। নবী (সা.) বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি তিনি চাচাকে ঈমান আনার জন্য কানে কানেও আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু চাচা নাকি ঐ অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।” তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ইসলামের জন্য যিনি অসংখ্য ত্যাগ-তিতীক্ষা ও অবদান রেখে গেছেন। তার পরেও কেন তাঁর বিরুদ্ধে এই প্রচার প্রচারণা। আর যারা তা করছেন তারাই বা কোন ইসলাম প্রচার করছেন?তাই সেই মুহসিনে ইসলাম হযরত আবু তালিব, ইসলামের জন্য যে এহসান করেছেন তার কিছু অংশ আমি পাঠকের সামনে তুলে ধরছি। মহান খোদার একত্ববাদের প্রথম ঘোষণার সকল ব্যবস্থা হাশেমি বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র এই আবু তালিবই সর্বপ্রথম ‘দাওয়াত-এ-জুলআসিরা’-র মাধ্যমে সুসম্পন্ন করেছিলেন। সমগ্র আরবের কাফের সর্দারদের উত্তম আপ্যায়নের মাধ্যমে তিনি মোহাম্মদ (সা.)-এর খোদায়ী মিশন ও একত্ববাদের ঘোষণার সকল বন্দোবস্ত করেছিলেন। পরপর দুই দিন কাফের সর্দারেরা ভোজন শেষে চলে যায়। তৃতীয় দিন হয়রত আবু তালিব তরবারি উন্মুক্ত করে বলেছিলেন, “হে সর্দারগণ তোমরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে অপেক্ষা করো যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ভাতিজা মোহাম্মদ তাঁর বক্তব্য শেষ না করে”। কাফেরেরা সেদিন আবু তালিবের নির্দেশ অমান্য করার সাহস পায়নি।(কামিল ইবনে আসির , খণ্ড- ২ , পৃ-৪১ ; আবু তালিব মুমিনে কুরাইশ , পৃ-১৫০) ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে ঐ দিনই আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রকাশ্যে জনসম্মুখে একত্ববাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “শোনো হে সর্দারগণ! আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি আমাদের ও তোমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, তিনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যেসকল দেব-দেবীর পূজা করছ তা তোমাদের কোনো কল্যাণে আসবে না। কোনো দেব-দেবী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়। এগুলো তোমাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের সৃষ্টি। আল্লাহর সমকক্ষ কোনো শক্তিই নেই। তিনি সর্বশক্তিমান। আমি তার দাসদের অন্যতম। আর আজকের দিনে আল্লাহর কাজে যে আমাকে সাহায্য করবে সে হবে আমার ওয়াসী, আমার বন্ধু, আমার সাহায্যকারী ও আমার ভাই।” তখন উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে হযরত আবু তালিবের কিশোর পুত্র হযরত আলীই নবী (সা.)-এর সাহায্যকারী হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করে দাঁড়িয়েছিলেন। নবী (সা.) তাঁকে বসার জন্য ইঙ্গিত করলেন। নবী (সা.) একই কথা তিনবার উচ্চারণ করে দেখতে চেয়েছিলেন কোরাইশ সর্দারদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন কি না? কিন্তু না ঐ তিনবারই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন হযরত আবু তালিবেরই সন্তান আট বছরের কিশোর আলী। আর ঐ সভাতেই নবী (সা.) তাঁর ওয়াসীর ঘোষণা প্রদান করেন, শুধু দুনিয়াতে নয় আখেরাতের জন্যেও।পাঠকের অবগতির জন্য আরো কিছু বিষয় আমি তুলে ধরছি। শুধু যে হযরত আবু তালিব এবং তাঁর পুত্র আলী, নবী (সা.)-কে ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়। হযরত আবু তালিবের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকট আত্মীয়দের মধ্যে এমন কোনো সদস্য ছিলেন না যে, এক মুহূর্তের জন্যও মোহাম্মদ (সা.)-কে শত্রুদের সম্মুখে একা ছেড়ে গেছেন। এমনিভাবে হযরত আবু তালিব ও তাঁর পরিবার পরিজন ইসলামের নবী (সা.)-এর সাহায্যকারী ছিলেন মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। মক্কার কাফেররা যখন মোহাম্মদ (সা.)-কে লোভ-লালসা দেখানোর পরেও ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হলোনা এবং হাশেমিদের সাথে যুদ্ধেও মোকাবিলার সাহস পাচ্ছিল না। তখন তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করল। মোহাম্মদ (সা.)-কে আশ্রয়দানকারী হযরত আবু তালিব ও তাঁর পরিবার পরিজনদেরকে একঘরে করে দেয়ার নীতি অবলম্বন ও সমাজ থেকে তাঁদেরকে বয়কট করার ঘোষণা এবং কাবার দেয়ালে কাফের সর্দাররা তাদের স্বাক্ষরিত শপথপত্র ঝুলিয়ে দিল। এমনসব প্রতিকূল পরিবেশ ও অবরোধ সত্ত্বেও হযরত আবু তালিব, মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর বিন্দুমাত্র আঁচড় যেন না আসে সে ব্যবস্থাই করেছিলেন। তিনি ভাতিজাকে নিয়ে সপরিবারে মক্কার অদূরে পাহাড়ের পাদদেশে একটি উপত্যকায় অবস্থান নিলেন। আর এই অবস্থার অবসান ঘটতে সময় লেগেছিল তিন বছরেরও অধিক সময়কাল। আবু তালিবের পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থানের ঐ স্থানটি আজও ইসলামের ইতিহাসে ‘শেবে আবু তালিব’ নামে পরিচিত। হযরত আবু তালিব নবী (সা.) ও ইসলামের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণে সকল কাজের আন্জাম দিয়ে গেছেন। তদুপরি যেসব আলেম এই মহান ব্যক্তির সৎ কাজের স্বীকৃতির পরিবর্তে তাঁর ঈমান না আনার তির ছুঁড়ছেন। তারা কি হযরত আবু তালিবের এহসানের পরিবর্তে তাঁর প্রতি জুলুম করছেন না? অথচ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা আর-রহমানের ৬০নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন:هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُঅর্থাৎ এহসানের প্রতিদানে এহসান ছাড়া আর কি হতে পারে?আল্লাহর রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে নিজ চাচার প্রশংসা করে তাঁর প্রতি যে সম্মান দেখাতেন এবং ভালবাসা প্রকাশ করেছিলেন, সেই দৃষ্টান্তগুলোর মধ্য থেকে শুধুমাত্র দু’টির প্রতি ইশারা করছি:ক. কোনো কোনো ঐতিহাসিক নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন যে, মহানবী (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই আক্বীল ইবনে আবি তালিবকে বলেন: “আমি তোমাকে দু’টি কারণে ভালোবাসি; (প্রথমত) আমার সঙ্গে তোমার আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে এবং (দ্বিতীয়ত) আমি জানি যে আমার চাচাজান তোমাকে খুব ভালোবাসতেন।”( তারিখুল খামিস।)খ. হালাবী তার নিজ গ্রন্থ সীরাতে রাসূল (সা.)-এ বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয় চাচাকে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বলেন- “যতদিন আমার চাচা আবু তালিব জীবিত ছিলেন কুরাইশ কাফেররা ততদিন আমার কোন ক্ষতি সাধন করতে পারেনি।”(সিরায়ে হালাবি)এটা স্পষ্ট যে, হযরত আবু তালিবের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা এবং তাঁর সুউচ্চ ব্যক্তিত্বের প্রতি মহানবী (সা.)-এর গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন হযরত আবু তালিবের ঈমানেরই প্রমাণ স্বরূপ। কেননা আল্লাহর রাসূল (সা.) কোরআন ও হাদীসের স্বাক্ষ্য অনুযায়ী কেবল মু’মিনদেরকেই ভালোবাসেন এবং কাফের ও মুশরিকদের ব্যাপারে কঠোর হবেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে:مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচররা কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল...।”(সূরা ফাতহ , আয়াত-২৯)অন্য এক স্থানে বলা হচ্ছে: لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা।”(সূরা মুজাদালাহ , আয়াত-২২।)উক্ত আয়াতগুলোর আলোকে এবং হযরত আবু তালিবের প্রতি রাসূল (সা.)-এর গভীর ভালবাসাসহ বিভিন্ন সময়ে চাচার প্রতি তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী প্রশংসা ও সম্মান প্রদর্শনের আলোকে বলা যায়, মহান আল্লাহর রাসূলের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই প্রমান করে যে, হযরত আবু তালিব সন্দেহাতীত ভাবে খাটি ঈমানদার ছিলেন। (ইসলামে হযরত আবু তালিবের অবদান গ্রন্থ থেকে সংকলিত)নিবেদক________ কবির উদ্দিন

শাজারায় আবু তালিব আঃ শাজারায়ে মোহাম্মদ (সা.)‘ শাজারা’ একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হচ্ছে গাছ। এই গাছের সহিত মানুষের বংশ বিস্তার কিংবা বংশীয় ধারার মিল রয়েছে। যেমন একটি মাত্র বীজ থেকে যদিও বট বৃক্ষের মতো একটি বিশাল গাছের সূচনা হয়ে থাকে , তবে যখন তা পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে তখন তা পরিবেশ সমাজ তথা মানুষের কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর এই গাছের মূল থেকে শুরু করে ডাল-পালা শাখা-প্রশাখা কাণ্ড ও পাতার বিস্তৃতি তার বিশালতার বার্তাই প্রকাশ করে। আবার এই গাছ থেকেই সৃষ্টি হয় অসংখ্য গাছের বীজ।অনুরূপ মানব জাতি এক আদম থেকেই সৃষ্টি যেমন সত্য। তেমনই এর রয়েছে নানা রূপ-বর্ণ-গোত্র , জাতিসত্ত্বা ও ভাষার বৈচিত্রতা। এতে ভিন্নতা রয়েছে কৃষ্টি-কালচার ও সামাজিকতায় , ভিন্নতা রয়েছে শাজারা কিংবা বংশীয় ধারাতেও। মহান আল্লাহপাক তাঁর রেসালাতের ধারাকে কেয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণড়ব রাখার নিমিত্তে নবী রাসূল ও ইমামদের শাজারা অর্থাৎ বংশীয় ধারাকে সর্বতোভাবে পূতপবিত্র রেখেছেন এবং এটি আল্লাহর বিশেষ নূরের ধারা যা নবী আদম (আ.) থেকে ইমাম মাহদী (আ.) পর্যন্ত প্রবাহিত।কোন কোন নবী রাসূল ও ইমাম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আবার কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আবার অনেকে প্রশাসনিক পদে না থাকলেও জাতির কাছে ছিলেন সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে। যেমন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) , নবী দাউদ (আ.) , নবী সোলায়মান (আ.) তাঁরা প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। নবী ইউসুফ (আ.) তাঁর সময়ে রাষ্ট্রের খাদ্য ভান্ডারের দায়িত্বে অর্থাৎ খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন। আবার ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হাসান (আ.) উভয়েই রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।যদি আমরা একটু ইতিহাসে ফিরে যাই তবে দেখতে পাব যে , মহান আল্লাহ পাক কাবার দায়িত্ব বরাবরই কোরাইশ বংশীয় হাশেমিদের হাতে ন্যস্ত রেখেছেন। যারা সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে অলংকৃত ছিলেন। অর্থাৎ নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর পরবর্তিতে তাঁরই বংশীয় ধারায় কাবার কর্তৃত্ব হাশেমিদের হাতেই বিদ্যমান ছিল। আর এ ধারাতেই রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূল-ইমাম ও কাবার মোতাওয়াল্লি। তাঁদেরই বংশীয় পরিচয় কিংবা শাজরা নিম্নে তুলে ধরছি।আল্লাহর নূর প্রথমে নবী আদম (আ.)-এর ছুলবে/পেশানীতে অন্তঃরীত হয়। পরে তাঁর থেকে নিম্নে বর্ণিত ধারায় প্রবাহিত হয়ে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে।৩১উল্লিখিত শাজারায় যে বিষয়টি লক্ষনীয় তা হচ্ছে আবু তালিবের পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে অসংখ্য নবী-রাসূল রয়েছেন। আবার রয়েছেন কাবার মোতাওয়াল্লী , যা তিনি নিজেও ছিলেন। সম্মানিত পাঠকগণ যদি গভীর ভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে অনুধাবন করা সহজতর হবে যে , হযরত আবু তালিবের ভাতিজা মোহাম্মদ (সা.) সকল নবী-রাসূলের সর্দার ও জান্নাতের মালিক। যাঁর লালন-পালনকারী ছিলেন আবু তালিব স্বয়ং। আবু তালিবের সন্তান হযরত আলী , যিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর‘ ওয়াসী’ ছিলেন। যিনি‘ কুল্লে ঈমান’ ছিলেন , যিনি‘ জ্ঞান নগরীর দরজা’ ছিলেন। যিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর উপযুক্ত‘ জানাশীন’ । তাঁর সম্পর্কে নবী (সা.)-এর অসংখ্য হাদীস রয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন ,“ আলী হচ্ছে সৃষ্টি কূল সেরা” ।৩২ রাসূল (সা.) আরো বলেছেন ,“ আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে” ।৩৩হযরত আলী ইমামতের প্রথম ইমাম ও তাঁর বংশে ১১ জন ইমামের আর্বিভাব হবে। শেষ ইমামের নাম হবে মোহাম্মদ আল মাহ্দী। তাঁর চেহারা নবী (সা.)-এর চেহারার সাদৃশ্য , দ্বীন ইসলাম তাঁরই মাধ্যমে অন্য সকল দ্বীনের র ওপর জয়লাভ করবে। পাঠকের জ্ঞাতার্থে আমি এখানে কয়েকটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি , হযরত আবু তালিবের পুত্র হযরত আলী রাসূল (সা.)-এর দ্বীনকারী পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং তিনিই নবীজীর প্রথম সাহাবী। হযরত আবু তালিবের পুত্রবধূ নবী (সা.)-এর কলিজার টুকরা মা ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহ আলাইহা , তিনি জান্নাতে নারীদের সর্দার ও জগতের শ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী। আবু তালিবের দুই নাতি ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন মালিকে দোজাহান রাসূলে পাক (সা.)-এরও নাতি , যাঁরা হচ্ছেন জান্নাতে যুবকদের সর্দার। এবার পাঠক বিবেচনা করে দেখুন হযরত আবু তালিবের মর্যাদা কিরূপ হতে পারে ?হযরত আবু তালিবের নামে বিভ্রান্তি প্রচারের কারণসমূহআইয়্যামে জাহেলিয়াতের সময় মহান আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে এই ধরণীর মাঝে প্রেরণ করেন। সমগ্র দুনিয়া স্বীকৃত যে , নবী-রাসূলগণের শাজারা বা বংশধারা নিশ্চিত ভাবে পূত-পবিত্র। যদিও বহু মানুষের মাঝে এ ধারণাটি বিদ্যমান যে , নবীজী আমাদের মতোই মানুষ ছিলেন(!) আসলে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আমাদের মাঝে রয়েছে ভুল-ভ্রান্তি সহ নানাবিধ অসংগতি ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ প্রবণতা। আর পবিত্র কোরআনের সূরা নাজমের ১ থেকে ৪ নং আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর নবী সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন:) وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى(“ নক্ষত্রের কছম যখন তা অস্ত যায় , তোমাদের সাথি ভুল করে না পথ ভ্রষ্ট হয় না এবং নিজের নফ্সের তাড়নায় কথা বলে না। তাঁর কাছে ওহী প্রত্যাদেশ হয়” ।অর্থাৎ যা কিছু বলেন ওহি থেকে বলেন। উল্লিখিত আয়াতটিতে সাহাবিদের উদ্দ্যেশ করে বলা হয়েছে , তোমাদের সাথি ভুল করে না। অর্থাৎ সাহাবিদের কিছু অংশ মনে করতেন নবী (সা.) তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। তাই মহান রব্বুল আলামিন তাঁর নবী সম্পর্কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ঐ সকল সাহাবির ধারণা সঠিক নয়। তাহলে নবী (সা.) আমাদের মতো মানুষ হলেন কী করে ?তবে হ্যাঁ নবী (সা.) অবয়বে মানুষ সাদৃশ্য , কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মাঝে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ নূর। আর আমরা অনুরূপ নই। সুতরাং সকল নবী , রসূল ও ইমামদের সৃষ্টিতে রয়েছে আল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর মানুষের সৃষ্টিতে রয়েছে সাধারণ ও অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। যেমন পবিত্র কোরানের সূরা ওয়াকেয়ার ৭ থেকে ১০ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে :) وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلَاثَةً فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ(“ তোমরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। যারা ডান দিকের তাঁরা কত ভাগ্যবান। আর যারা বাম দিকের তারা কতই না হতভাগা। আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই , তাঁরাই নৈকট্যশীল” ।উল্লিখিত আয়াতে কিয়ামত পরবর্তি ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। আর এতেই প্রতীয়মান হয় যে , সাধারণ সৃষ্ট্য পর্যায়ের মানুষ কখনও অগ্রবর্তীগণের দলভূক্ত হতে পারবে না। তবে সাধারণ পর্যায়ের তারাই অসাধারণদের দলভূক্ত হতে পারবেন। যাঁদের রয়েছে ধৈর্য , ন্যায়-নিষ্ঠা , সৎকাজ ও ক্ষমা প্রবণতা। তাঁরাই হচ্ছেন ডানদিকস্থ । আর নবী-রাসূল-ইমামগণ হচ্ছেন অগ্রবর্তীগণ।তবে আমি যে ইমামগণের কথা বলছি তাঁরা কিন্তু মসজিদের ইমাম নন। তাঁরা হচ্ছেন আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত মানব জাতির নেতৃত্ব দানকারী দ্বীন ইসলামের ইমাম। যেমন নবী ইব্রাহীম (আ.) যখন আল্লাহর দেয়া কঠিন পরীক্ষায় ঊত্তীর্ণ হলেন তখন আল্লাহ পাক বললেন:) إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا(“ আমি তোমাকে মানব জাতির জন্য ইমাম মনোনীত করলাম” ৩৪উল্লিখিত আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে , যখন তিনি ইমাম মনোনীত হলেন , তার পূর্বে তিনি নবী ছিলেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহর কাছে ইমামের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নবী ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ইমামতের ইমামগণের মডেল। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামগণ হচ্ছেন , ইমাম আলী থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.) পর্যন্ত মোট বার জন ইমাম। আমাদের সকল মাজহাব তথা ধর্মের লোকেরা জানেন যে , শেষ জামানায় একজন ইমামের আবির্ভাব ঘটবে , তিনি হচ্ছেন ইমাম মাহ্দী (আ.)। তিনি অন্ধকারাছন্ন পৃথিবীতে আলোর উন্মেষ ঘটাবেন এবং পাপে নিমজ্জিত পৃথিবীকে পূর্ণতার আলোয়ে উদ্ভাসিত করবেন। আর তিনি ন্যায় ও শান্তির মানণ্ড স্থাপন করবেন।যে বিষয়টি বলার জন্যে আমাকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের অবতারণা করতে হলো। তা হচ্ছে , প্রথমত জাহেলী যুগ ও তৎপরবর্তী সময়ে মহানবী (সা.)-কে সেই সময়কালীন কাফের-মুশরিক ও নব্য মুসলমানগণ কোন প্রকার মেনে নিলেও পরবর্তী সময়ে যখন তিনি বিদায় হজ্ব শেষে‘ গাদীর-এ-খোম’ নামক স্থানে সোয়া লক্ষ হাজীদের মহাসমাবেশে তাঁর পরবর্তী কালে ইসলামের দিক নির্দেশনা ও ওয়াসীর ঘোষণা দিলেন এবং তিনি বললেন ,“ আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারি বস্তু রেখে যাচ্ছি একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব অপরটি আমার ইতরাতে আহলে বাইত” ।৩৫এই বলে হযরত আলীর হাত উঁচিয়ে ধরলেন এবং তাৎক্ষনিক উচ্চারণ করলেন ,“ আল্লাহ আমার মাওলা , আমি মোমিনদের মাওলা , আমি যার যার মাওলা এই আলীও তাদের মাওলা।” ৩৬সেদিন অনেকেই এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারেননি। কারণ শাসন ক্ষমতা ও নবুয়্যত দুটোই এতদিন হাশেমিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আবার নবী পরবর্তী সময়ে তা চলে যাচ্ছে ইমাম আলী ও তাঁর সন্তানদের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে তো পুরো বিষয়টি মোহাম্মদ ও তাঁর বংশীয় লোকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সেদিন যাদের অন্তরে এ বিদ্বেষের দানা বেঁধেছিল , তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিল নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর। এর সাক্ষ্য মিলে সেই সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ থেকে।আমি এখানে শুধু ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছি। প্রিয় নবী (সা.)-এর দাফন সম্পন্ন হতে দেরি হয়েছিল ৩ দিন। সামান্য কিছু সাহাবী ব্যতীত অধিকাংশ সাহাবী ছিলেন অনুপস্থিত। নবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর যারা মুসলমান ও সাহাবী হয়েছেন , তাদের এক বিরাট অংশ নবী পরবর্তী সময়ে নবী বংশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যেমন আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের পূর্বে কাফের থাকা অবস্থায় নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে ২৬টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের পর তিনি ও তার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন। উভয়ে রাসূল (সা.)-এর সাহাবী হয়ে পরবর্তী সময়ে হযরত আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধে লিপ্ত হন। ইসলামের ইতিহাসে মুয়াবিয়া দু’ টি বৃহৎ যুদ্ধে হযরত আলীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। একটি জঙ্গে জামাল ও অপরটি জঙ্গে সিফ্ফীন। প্রথমটিতে মুয়াবিয়া সরাসরি জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। আর দ্বিতীয়টিতে হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি , বর্শার মাথায় কোরআনের পাতা বিধ্য ও শালিশী প্রতারণার মাধ্যমে , নিশ্চিত পরাজয় ঠেকানোর নিমিত্তে হযরত আলীকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করেন।আমি ভেবে পাই না হযরত আলী ও মুয়াবিয়া উভয়ই যদি হকের ওপর থাকেন তাহলে যুদ্ধ কিংবা হাজার হাজার লোকের প্রাণহানি কেন ? পবিত্র কোরানের কোথাও হকের সাথে হকের যুদ্ধের কথা উল্লেখ নাই। অথচ আমাদের আলেম-ওলামা বলেন ,“ উভয়ই হকের ওপর ছিলেন” ।যদি হযরত আলী এবং মুয়াবিয়া উভয়ই হকের ওপর ছিলেন , তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় ? ঐ দুই যুদ্ধের প্রথমটিতে মৃত্যুবরণ করেন ২০ হাজার লোক ও পরেরটিতে মৃত্যুবরণ করেন ৭০ হাজার লোক। তাহলে এ সকল লোকের মৃত্যুর জন্য কে বা কারা দায়ী ? আর যদি কেউ দায়ী না হন , তবে কি তাদের মৃত্যু অযথা ? এমন অনৈতিক অসঙ্গগতিপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা নিশ্চই কোন আকল জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে অপারগ। আর তখনই যারা অন্তত বিবেকসম্পন্ন তাদের অন্তরে সাড়া দিবে ,“ ডালমে কুচ কালা হ্যায়।” বাস্তবেও তাই , অর্থাৎ এখানে প্রকৃত ইসলাম ও নামধারী ইসলাম এই দুটোকে কৌশলে এক করে দেয়া হয়েছে।নবী (সা.) থাকাকালীন ইসলামের শত্রু ছিল , নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পরেও ছিল , আজও আছে। তবে কিছুটা পার্থক্য চোখে পড়বে যেমন , নবী থাকাকালীন ইসলাম বিরোধী কাফের মুশরিকরা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছে। আর অনেকে ইসলামও গ্রহণ করেছে। কিন্তু নামধারী ইসলাম গ্রহণকারী মুনাফেকরা নবী থাকা অবস্থায় সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও তাদের নানাবিধ অপকর্মের দরুন মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর নবীকে বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছেন। যার সাক্ষ্য মেলে পবিত্র কোরানের সূরা মুনাফিকুনে। দুঃখজনক হলেও সত্য ইসলাম সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মুনাফিকদের দ্বারাই। যাদের দেখলে মনে হয় মুসলিম কিন্তু কর্মকাণ্ড কাফেরের চেয়েও নিকৃষ্ট।পাঠক পাঠিকাদের জ্ঞাতার্থে আমি ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা তুলে ধরছি। যারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যক্রম কায়েম করে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে খোদ নবী বংশের লোকদের ওপর। যেমন চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর সময় ও পরবর্তী সময়ে হযরত ইমাম হাসান থেকে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আমীরে মুয়াবিয়া চুক্তির সকল শর্ত ভঙ্গ করেন। প্রসাশনে নিজ বংশীয় অযোগ্য লোকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল করেন। পবিত্র জুম্মার দিনে নামাজের খোতবায় মসজিদে মসজিদে হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের ওপর গালমন্দ করার প্রথা চালু করেন। যাহা দীর্ঘ ৮৩ বছর পর ওমর বিন আব্দুল আজিজের শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। আল্লাহর রাসূল কর্তৃক নির্ধারিত ফেতরা এক’ সার পরিবর্তে মুয়াবিয়ার শাসন আমলে তা আধা’ সা নির্ধারন করা হয়। ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মুয়াবিয়া তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতেন না। মুয়াবিয়া তার পরবর্তী সময়ে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে ক্ষমতায় বসানোর নিমিত্তে নামী দামি লোকজন ও গোত্র প্রধানদের স্বীকৃতি আদায়ে অর্থ বল ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। মুয়াবিয়া নিজের ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতেন। মুয়াবিয়া জাল হাদীসের প্রচলন , প্রসার ও বিস্তার ঘটান। মুয়াবিয়া নব্য মুসলমানদের ওপর জিজিয়া কর আরোপ করেন।এমন অসঙ্গতিপূর্ণ বেশ কিছু কার্যক্রম মুয়াবিয়া ও তদীয় পুত্র ইয়াজিদ কর্তৃক ইসলামের নামে প্রচার ও প্রসার লাভ করে। ঐসময়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইয়াজিদ নিজের নামের সঙ্গে‘ আমীরুল মুমিনীন’ টাইটেল ব্যবহার করে। যদি আমরা একটু পেছনে ফিরে যাই তবে সহজেই অনুমেয় যে , নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন আবু সুফিয়ান। তার পুত্র মুয়াবিয়া সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হন ইমাম আলী ও ইমাম হাসানের বিরুদ্ধে। মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে।এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছিল , হাশেমি ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে। উমাইয়াদের বরাবরই বিদ্বেষ ছিল কেন তাদের মধ্যে নবী আসেননি ? তাদের মতে হাশেমিদের মধ্যে‘ নবুয়াত’ ও‘ খেলাফত’ দুটিই থাকা সমীচীন নয়। সুতরাং একটা অন্তত তাদের চাই। আর এই কারণেই যত শক্রতা , হানাহানি , জোর-জুলুম , খুন-খারাবী ও মিথ্যার প্রচার প্রচারণার ধারাবাহিকতা দৃশ্যমান।আরব জনগণ হাশেমিদের ওপর সন্তুষ্ট থাকার মূল কারণ ছিল , তাঁরা ছিলেন উদার , ন্যায়পরায়ণ ও খোদাভীরু । তাঁরা কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেননি। আবার জালেমদের শাস্তি প্রদানেও তাঁরা পিছপা হননি। যে কারণে সাধারণ মানুষ হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী ছিলেন সর্বযুগে। আর এটাও ছিল উমাইয়াদের বিদ্বেষের আরেকটি কারণ। কেন সকলে হাশেমিদের পক্ষাবলম্বী হবে ?স্বয়ং আল্লাহ কিংবা রাসূলও যদি হযরত আলী ও তাঁর সন্তানদের প্রশংসা করে তবে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে , (নাউজুবিল্লাহ) হযরত আলীর মর্যাদা যদি আকাশচুম্বী হয়ে যায় , তবে তা ধূলিস্মাৎ করতে হলে তাঁর মুমিন পিতাকে কাফের বানাতে হবে। আর এর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার বিন্দুমাত্র কমতি হয়নি। জাল হাদীস তৈরি , মিথ্যা ইতিহাস রচনা , উমাইয়া আলেমে দ্বীন তৈরির কারখানা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রমের কোনটাতেই মুয়াবিয়া পিছিয়ে ছিলেন না।৩৭মুয়াবিয়ার প্রশংসা করতে গিয়ে , মওলানা শিবলী নোমানী তার সিরাতুন নবী গ্রন্থে রাসুলের পরবর্তীতে বার জন খলিফার নাম উল্লেখ করতে গিয়ে ৫ ও ৬ নম্বরে মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদকে অন্তর্ভূক্ত করে‘ রাজিআল্লাহু আনহু’ বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি এসব হচ্ছে ইতিহাস বিতর্কিত সুস্পষ্ট নমুনানিবেদক_______ রাকিব আলী ইমামি