পোস্টগুলি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদনবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা যাহরার মাহাত্ম্য যতই বর্ণনা করা হোক না তা অপূর্ণই থেকে যাবে ঠিক যেমনি জানা যায়নি তাঁর পবিত্র কবর কোথায় রয়েছে এবং তা গোপন বা অজ্ঞাত থাকার রহস্যই বা কী।তিনি কেবল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী ছিলেন না। বলা হয় মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এবং তাঁর পর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)। আর তাঁর পরই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলেন হযরত ফাতিমা। তাই এমন ব্যক্তিদের মহিমা ও মহত্ত্ব পুরোপুরি তুলে ধরা মহান আল্লাহর পর কেবল এই তিন শীর্ষ সৃষ্টির পক্ষেই সম্ভব। বলা হয় ইমাম হাসান ও হুসাইনসহ মাওলা মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহর আহলে বাইতের ১১ জন সদস্য মা ফাতিমাকে তাঁদের জন্য আদর্শ বা হুজ্জাত বলে মনে করতেন।এমন কোনো নারীর কথা কি কল্পনা করা যায় যিনি তার দুই শিশু-সন্তানসহ তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও স্বামীকে খাবার সংগ্রহের কথা বলছেন না ইসলামের জন্য তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ বিঘ্নিত হবে বলে? অথবা এমন নারীর কথা কি চিন্তা করা যায় যিনি পর পর তিন দিন শুধু পানি পান করে রোজা রাখা সত্ত্বেও ইফতারের সময় ক্ষুধার্ত সাহায্যপ্রার্থীকে খাদ্য দেয়ার জন্য সেই তিন দিন কেবল পানি দিয়েই ইফতার করেন? আসলে হযরত ফাতিমা যাহরা ছিলেন মানবজাতির চিরন্তন গৌরব ও আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতারঅন্যতম মডেল। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা। মাওলা মোহাম্মদ সাঃ এর পুত্র সন্তানরা শৈশবেই ইন্তিকাল করায় মক্কার কাফিররা যখন মহানবীকে আবতার বা নির্বংশ বলে বিদ্রূপ করতো তখন মহান আল্লাহ তাঁকে দান করেন হযরত ফাতিমা যাহরা। পবিত্র কুরআনে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে 'কাওসার' হিসেবে যার অর্থ মহত্ত্ব আর নেয়ামতের চির-প্রবহমান ঝর্ণা। আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী বলেছেন, হযরত ফাতিমার শানেই সুরা কাওসার নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।অবশ্য পরবর্তী যুগে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। একের পর এক রাসূলের বংশধরদের শহীদ করা সত্ত্বেও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশেই ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানকে যুক্ত করা হয় বাবার সাথে শুধু ফাতিমা ছাড়া। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘হে রাসূলের সন্তান’ বলে সম্বোধন করত।মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যা সন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাত্‌ম্‌’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। এ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কারণ, আল্লাহ তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’ হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকহযরত ফাতিমা ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ বহু মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবীর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা'র অন্য একটি উপাধি উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী (সা:) তাঁকে সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ নারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণেই ফাতিমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে তাকে সালাম দিতেন মহানবী (সা)। রাসুলে খোদা বলেছেন, 'ফাতিমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু আমাকে সন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও সন্তুষ্ট করে, আর যা কিছু ফাতিমা কে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়।' হযরত ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী উল্লেখ করেছেন। অনেকেই মনে করেন প্রিয় কন্যা ফাতিমাকে নিজের দেহের অংশ বলে মহানবী (সা) এটাও বুঝিয়েছেন যে পিতার রিসালাতের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ফাতিমা। এই মহীয়সী নারীর অনন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবা না থাকলে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যেত।হযরত ফাতিমাকে কেউ কেউ কষ্ট দেবেন- এটা জানতেন বলেই বিশ্বনবী (সা) তাঁকে রাগানোর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে এবং ফাতিমা কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হলে আল্লাহও ক্রুদ্ধ হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহও আনন্দিত হন।’অনেক মহৎ গুণের আদর্শ হযরত ফাতিমার রয়েছে অনেক উপাধি। যেমন, তাঁর উপাধি ছিল আস-সিদ্দিক্বা বা সত্য-নিষ্ঠ,আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত,আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র,আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আজ জাকিয়া বা সতী, মুহাদ্দিসাহ বা হাদিসের বর্ণনাকারী, সাইয়্যিদাতুন নিসায়িল আলামিন বা নারীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, খাতুনে জান্নাত বা বেহেশতি নারীদের নেত্রী, আয যাহরা বা দ্যুতিময় ইত্যাদি। আর পিতা মহানবীর প্রতি অশেষ ভালোবাসা ও সেবার কারণে তাঁকে বলা হত উম্মে আবিহা বা পিতার মাতা।হযরত ফাতিমা যখন নামাজের জন্য দাঁড়াতেন তখন তাঁর জ্যোতি আকাশের ফেরেশতা ও অন্যান্যদের দিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর এ কারণে তাঁকে যাহরা উপাধি দেয়া হয়।রাসুল (সা)’র ওফাতের পর তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন ওহির ফেরেশতা। ওহির ফেরেশতা তাঁকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানান। আর তার থেকে সেসব বিষয় লিখে রাখেন হযরত আলী (আ)। আর এ জন্যই ফাতিমাকে বলা হয় মুহাদ্দিসা।হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। মশক দিয়ে পানি তুলতে তুলতে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে সেগুলো মদীনার দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমার কাপড়ের পোশাকে থাকতো তালি। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।হযরত ফাতিমা সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহর যিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর যিকির থাকত।রাসূলের স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। রাসূলে খোদা ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে,তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়,তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে। হযরত ফাতিমা যাহরা পিতার শারীরিক বিদায়ের কারণে যতটা না দুঃখ পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন পিতার আদর্শ তথা ইসলামের শিক্ষা ম্লান ও বিকৃত হয়ে পড়ার কারণে। রাসুলে খোদার কাছেই তিনি শুনেছিলেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ওপর অনেক বিপদ ও মুসিবত তথা ইসলামের ওপরই অনেক দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সেইসব বিপদ মুকাবিলার মত কঠিন ধৈর্যের খোদায়ী পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সর্বকালের সেরা মহামানবী হযরত ফাতিমা ঠিক যেভাবে সিফফিন ও কারবালা প্রান্তরসহ যুগে যুগে নানা বিপদ, সংকট ও শত্রুতার মোকাবেলায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্য।কোনো কোনো ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ: মহানবী (সা)অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমাকে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমা জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন।তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হযরত হাসান ও হুসাইন কিভাবে মারা যাবেন সেইসব তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত হযরত ফাতিমার কাছ থেকে। ফাদাক সম্পর্কিত তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।মাওলা মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে বা দ্বিতীয় হিজরিতে হযরত ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে। আলী (আ.) ছিলেন সত্য, ন্যায়বিচার ও খোদাভীরুতার প্রতীক। আলী (আ.)'র ঘরে তিনি হন আদর্শ স্ত্রী ও মাতা। গড়ে তোলেন বেহেশতি যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.) এবং জাইনাব (সা.)'র মত ইসলামের ইতিহাসের প্রবাদতুল্য গৌরব সৃষ্টিকারী অনন্য সন্তান। বিয়ের দিন এক দরিদ্র নারী নবী-নন্দিনীর কাছে পোশাক সাহায্য হিসেবে চাইলে তিনি নিজের বিয়ের জন্য তৈরি নতুন পোশাকটি তাকে দান করে দেন। এর মাধ্যমে তিনি কুরআনের এই আয়াতটি বাস্তবায়ন করেছিলেন যেখানে সর্বোত্তম ও প্রিয় বস্তু থেকে দান করতে বলা হয়েছে। ফাতিমা যাহ্‌রা (সা.আ.) মুসলিম সমাজের বিচ্যুতি ঠেকানোর জন্য ও সত্যের জন্য সংগ্রামের সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। নারীমুক্তির আদর্শ হিসেবে এই মহামানবীর জন্মদিন ইরানসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পালিত হয় নারী ও মা দিবস হিসেবে। মাওলা হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:) সম্পর্কে বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের অঙ্গ, চোখের জ্যোতি, অন্তরের ফল এবং আমার রূহস্বরূপ। সে হচ্ছে মানুষরূপী স্বর্গীয় হুর। প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ বুখারীতে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেছেন, ফাতিমা আমার অংশ। যে কেউ তাকে অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো সে আমাকেই অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত করলো। একই ধরনের হাদীস বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফ ও আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসায়ীর ফাজায়েল গ্রন্থসহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে। হাদীসে এটাও এসেছে যে যা আল্লাহর রসূল (সা:)কে অসন্তুষ্ট করে তা আল্লাহকেও অসন্তুষ্ট বা ক্রুদ্ধ করে। হযরত ফাতিমা (সা:)'র উচ্চতর মর্যাদা উপলব্ধি করার জন্য কেবল এ হাদীসই যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইত (আঃ)'র সদস্য হযরত ফাতিমা যে নিষ্পাপ ছিলেন তাও এসব বর্ণনা থেকে স্পষ্ট। হযরত ফাতিমা (সা:)'র সান্নিধ্য ও সেবা না পেলে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র জীবনও পুরোপুরি বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করতো না। তাঁরা ছিলেন একে-অপরের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) হযরত ফাতিমা (সা:)-কে মানুষের আকৃতিতে ফেরেশতা বলেও প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন, আমি যখনই বেহেশতের সুবাস পেতে চাইতাম তখনই কন্যা ফাতিমার ঘ্রাণ নেই।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দুঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (সা:)'র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সা:)'র আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। ফাতিমা সিদ্দিকা (সা. আ.) ঐশী পন্থায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। 'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। রাসূল (সা.)'র মৃত্যুর পর পিতার বিয়োগ-ব্যথায় কাতর ফাতিমাকে সান্ত্বনা দিতে আসতেন স্বয়ং জিবরাইল (আ.)। হযরত ফাতিমা ইমাম হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে।নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা:)র চেহারার দিকে তাকানো এবং কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন। ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তাঁর বংশধররা ইতিহাসে অনন্য। ফাতিমার ত্যাগের শিক্ষাই হল কারবালার শিক্ষা। এ শিক্ষা আজও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আদর্শ। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ। তাই হজরত ফাতিমা(সা) আদর্শ মানবাত্মার প্রতীকবেশুমার লানত বর্ষিত হোক দুশমনে আহলে বায়েত পারআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদদিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম31=12=202

'দোয়া তাওয়াসসুল'(চৌদ্দ মাসূমের উসিলা ধরে দোয়া)بسم الله الرحمن الرحيماللّٰهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ، يَا أَبَا الْقاسِمِ ، يَا رَسُولَ اللّٰهِ، يَا إِمامَ الرَّحْمَةِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلَانَا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حَاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আল্লাহ্, আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি আর একাগ্রচিত্তে তোমার প্রতি আত্মনিবিষ্ট হয়েছি, তোমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উসিলায়। হে ক্বাশেমের পিতা, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), হে রহমতের কান্ডারী, হে আমাদের নেতা ও অভিভাবক! আমরা তোমারই পানে চেয়ে আছি এবং তোমাকে মধ্যস্ততাকারী হিসাবে গ্রহণ করেছি। আর তোমাকে উসিলা হিসাবে আল্লাহর সামনে পেশ করেছি এবং আমাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্যে তোমাকে অগ্রে স্থান দিয়েছি। হে আল্লাহর কাছে সন্মানিত সত্তা! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো। يَا أَبَا الْحَسَنِ، يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، يَا عَلِىَّ بْنَ أَبِى طالِبٍ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে হাসান (আ.)-এর পিতা, হে মুমিনদের নেতা, হে আলী ইবনে আবি তালিব! হে যমিনের বুকে আল্লাহর স্বাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের অগ্রনী ও অভিভাবক! আমরা তোমার সমুক্ষে ভিক্ষার ঝুলি বাড়িয়ে দিয়েছি। আর তোমারই শাফায়াত কামনা করছি এবং আল্লাহর দরবারে তোমাকে উসিলা হিসাবে পেশ করছি। আর আমাদের উদ্দেশ্য পূরণে তোমাকেই সামনে রাখছি। হে আল্লাহর দৃষ্টিতে এক সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব! আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। يا فاطِمَةُ الزَّهْراءُ، يَا بِنْتَ مُحَمَّدٍ، يَا قُرَّةَ عَيْنِ الرَّسُولِ، يَا سَيِّدَتَنا وَمَوْلاتَنا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكِ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكِ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهَةً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعِي لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে ফাতিমা আয্ যাহরা! হে মুহাম্মাদ (সা.)-এর কন্যা, হে রাসুল (সা.)-এর নয়নের মনি, হে আমাদের নেত্রী ও অভিভাবিকা, আমরা (সকল কিছু থেকে বিমুখ হয়ে) তোমার দরবারে ভীড় জমিয়েছি। আমরা তোমাকে মধ্যস্ততা করার জন্যে আবেদন জানাচ্ছি এবং তোমার ওয়াসিলাতে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করছি। আর আমাদের হাজত পূরনের লক্ষ্যে তোমাকেই সামনে রাখছি। হে আল্লাহর দৃষ্টিতে পবিত্রা ও সন্মানিতা বিবি! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো। يَا أَبا مُحَمَّدٍ، يَا حَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ، أَيُّهَا الْمُجْتَبىٰ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে মুহাম্মাদের পিতা! হে হাসান ইবনে আলী! হে মুজতাবা! হে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সন্তান! হে যমিনের বুকে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও মাওলা! আমরা তোমারই পানে তাকিয়ে আছি। আর আমাদের শাফায়াত করার জন্য আকুতি জানাচ্ছি এবং আল্লাহর দরবারে তোমাকে ওয়াসিলা হিসাবে পেশ করছি। আর আমদের হাযতগুলো দু’হস্তে তোমার সামনে পেশ করছি। হে আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন উজ্জ্বলতম প্রতিচ্ছবি! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্যে শাফায়াত করো। يَا أَبا عَبْدِاللّٰهِ، يَا حُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ، أَيُّهَا الشَّهِيدُ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ، اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আবা আবদিল্লাহ! হে হুসাঈন ইবনে আলী! হে আল্লাহর পথে সর্বস্ব দানকারী! হে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সন্তান! হে আল্লাহর সৃষ্টি জগতে তাঁর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের দলপতি ও অভিভাবক! আমরা তোমার নিকট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি এবং তোমারই শাফায়াত কামনা করছি এবং আল্লাহর নিকট তোমাকে মধ্যস্ততাকারী হিসাবে স্থির করেছি। আর আমাদের হাজত দু’হস্তে তোমার সামনে পেশ করছি। হে আল্লাহর নিকট এক জ্যোতিময় চেহারা! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো।يا اَبَا الْحَسَنِ، يا عَلِىَّ بْنَ الْحُسَيْنِ، يَا زَيْنَ الْعابِدِينَ، يَا ابْنَ رَسُولِ، اللّٰهِ يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ইয়া আবাল হাসান! হে আলী ইবনে হুসাঈন! হে ইবাদতকারীদের সৌন্দর্য! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের অগ্রনী ও অভিভাবক! আমরা তোমার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি। আমরা তোমার শাফায়াতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তুমিই আমাদের মাধ্যম এবং তোমার সামনে আমাদের হাজত উপস্থাপন করছি। হে আল্লাহর প্রিয়ভাজন ব্যক্তি! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য আবেদন করো। يَا أَبا جَعْفَرٍ، يَا مُحَمَّدَ بْنَ عَلِيٍّ، أَيُّهَا الْباقِرُ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حَاجَاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আবা জা’ফার! হে মুহাম্মাদ ইবনে আলী! হে জ্ঞানের দ্বার উন্মচনকারী! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে আল্লাহর সৃষ্টিজগতে তার সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও মাওলা! আমরা তোমার করুনা প্রার্থী এবং তোমার শাফায়াত মনে-প্রানে কামনা করি। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে তুমিই আমাদের মাধ্যম। আর আমরা আমাদের হাজতগুলো তোমার সমানে পেশ করছি। হে আল্লাহর নিকট উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো।يَا أَبا عَبْدِ اللّٰهِ، يَا جَعْفَرَ بْنَ مُحَمَّدٍ، أَيُّهَا الصَّادِقُ ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانَا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আবা আবদিল্লাহ! হে জা’ফর ইবনে মুহাম্মাদ! তুমিই তো সত্যবাদী! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে সৃষ্টি জগতে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও অভিভাবক! আমরা তোমার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি। আমরা তোমার শাফায়াত কামনা করছি। আর তোমাকে আল্লাহর সমীপে মাধ্যম হিসাবে পেশ করছি এবং আমাদের হাজত তোমার সামনে তুলে ধরেছি। হে খোদায়ী নূরে উদ্ভাসিত অপরূপ চেহারা! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্যে শাফায়াত করো। يَا أَبَا الْحَسَنِ، يَا مُوسَى بْنَ جَعْفَرٍ، أَيُّهَا الْكاظِمُ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانَا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حَاجَاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে আবাল হাসান! হে মুসা ইবনে জা’ফর আল কাযেম! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের অগ্রনী ও মাওলা! আমরা তোমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি এবং তোমাকে মধ্যস্থতার জন্যে নিবেদন করছি। আর আমরা আল্লাহর সমীপে তোমাকে মাধ্যম হিসাবে পেশ করছি এবং আমাদের সকল হাজত তোমার সামনে উপস্থাপন করছি। হে আল্লাহর আলোকময় সৃষ্টি! আল্লাহর সমীপে আমাদের জন্য সুপারিশ করো। يَا أَبَا الْحَسَنِ يَا عَلِىَّ بْنَ مُوسىٰ، أَيُّهَا الرِّضا ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حَاجَاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আবাল হাসান! হে আলী ইবনে মুসা আর রিদ্বা! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে আল্লাহর সৃষ্টি জগতে তাঁর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও অভিভাবক! আমরা তোমার বদন পানে চেয়ে আছি। আর আমরা তোমার শাফায়াত লাভে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি এবং আল্লাহর সমীপে তোমাকে মাধ্যম হিসেবে পেশ করেছি। আর আমাদের হাজত পূরনে তোমাকে সামনে রেখেছি। হে আল্লাহর প্রিয়ভাজন ব্যক্তি! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য শাফায়াত করো।يَا أَبا جَعْفَرٍ يَا مُحَمَّدَ بْنَ عَلِيٍّ ، أَيُّهَا التَّقِىُّ الْجَوادُ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانَا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حَاجَاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛ হে আবা জা’ফর! হে মুহাম্মাদ ইবনে আলী! হে তাক্বী আল জা’ওয়াদ! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে সৃষ্টির মাঝে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও মাওলা! আমরা তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আর তোমার শাফায়াত প্রাপ্তির কামনা করছি। আল্লাহর দরবারে তোমাকে ওয়াসিলা হিসেবে পেশ করছি এবং আমাদের মনের মকসুদ দু’হস্তে তোমার সামনে তুলে ধরেছি। হে আল্লাহর দৃষ্টিতে মহাসম্মানিত পুরুষ! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য শাফায়াত কর। يَا أَبَا الْحَسَنِ، يَا عَلِىَّ بْنَ مُحَمَّدٍ ، أَيُّهَا الْهادِى النَّقِىُّ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে আবাল হাসান! হে আলী ইবনে মুহাম্মাদ! হে হাদী আন্ নাক্বী! হে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সন্তান! হে সৃষ্টি জগতের বুকে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের অগ্রনী ও নেতা! আমরা তোমার করুনা প্রার্থী। আমরা তোমার শাফায়াত কামনা করছি এবং তোমাকে মাধ্যম হিসাবে আল্লাহর নিকট পেশ করছি। আর আমাদের মনোবাসনা পূরণে তোমাকেই অগ্রে স্থান দিয়েছি। হে আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো।يَا أَبا مُحَمَّدٍ، يَا حَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ أَيُّهَا الزَّكِىُّ الْعَسْكَرِىُّ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ؛হে মুহাম্মাদের পিতা! হে হাসান ইবনে আলী! হে যাকী আল্ আসকারী! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে আল্লাহর জমিনে তাঁর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও অভিভাবক! আমরা তোমার বদনপানে চেয়ে আছি। আমরা তোমার সুপারিশের জন্য উদগ্রীব হয়ে অছি। আর তোমাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আল্লাহর সামনে পেশ করছি এবং আমাদের মনোবাঞ্চনা পূরনে তোমাকেই সামনে রাখছি। হে আল্লাহর মনোনীত এক উজ্জ্বল সত্ত্বা। আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করো। يَا وَصِىَّ الْحَسَنِ، وَالْخَلَفُ الْحُجَّةُ، أَيُّهَا الْقائِمُ الْمُنْتَظَرُ الْمَهْدِىُّ ، يَا ابْنَ رَسُولِ اللّٰهِ ، يَا حُجَّةَ اللّٰهِ عَلىٰ خَلْقِهِ، يَا سَيِّدَنا وَمَوْلانا إِنَّا تَوَجَّهْنا وَاسْتَشْفَعْنا وَتَوَسَّلْنا بِكَ إِلَى اللّٰهِ وَقَدَّمْناكَ بَيْنَ يَدَيْ حاجاتِنا، يَا وَجِيهاً عِنْدَ اللّٰهِ اشْفَعْ لَنا عِنْدَ اللّٰهِ. হে হাসান [আসকারী (আ.)]-এর ওয়াসী ও কার্যনির্বাহক এবং সাক্ষ্য বহনকারীদের উত্তরাধিকারী! হে আল্ ক্বায়েম আল মুনতাযার আল মাহদী! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সন্তান! হে সৃষ্টি জগতের বুকে আল্লাহর সাক্ষ্য বহনকারী! হে আমাদের নেতা ও অভিভাবক! আমরা তোমার দিকে চেয়ে আছি এবং আমরা তোমারই শাফায়াতের মখাপেক্ষী। আর তোমাকে মাধ্যম হিসেবে আল্লাহর সমীপে পেশ করছি এবং আমাদের হাজত পূরনে তোমাকে সামনে রাখছি। হে আল্লাহর নিকট এক উজ্জ্বল চেহারা! আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য শাফায়াত করো।(অত:পর প্রার্থনাকারী আল্লাহর কাছে নিজের প্রার্থনা তুলে ধরবেন। ইনশাআল্লাহ তার দোয়া কবুল হয়ে যাবে)।আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আলা আলে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজ্জাহুম। ওয়া আলা লানাতুল্লাহে আলাল কওমে জালেমিন। ওয়া আলা লানাতুল্লাহে আলাল কওমে কাতেলে কাজেবিন। ধন্যবাদান্তেঃ " শিয়ানে আহলে বাইত আঃ "M.d. Tajul Islam Haidere Jaffari Azadar.

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণমূলক পোস্টপর্ব (((৩)))অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, “ইন্নামা”কে হাসর নির্দেশ করার জন্যই প্রণয়ন করা হয়েছে, এমনকি অন্যান্য সীমাবদ্ধতা নির্দেশের ক্ষেত্রে তা অন্যান্য সীমাবদ্ধতাসূচক অব্যয়গুলোর থেকেও শক্তিশালী। এই কারণে কোন কোন বাক্যে ইন্নামা “সীমাবদ্ধতা” অর্থ দান করে না- এ দাবি আরবি ব্যাকরণের রীতিবিরুদ্ধ। আর তাই কোন ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা অর্থ না দিলে তা এর প্রকৃত «حقیقی» অর্থের পরিপন্থী বিধায় এ ধরনের বাক্যের সাথে অবশ্যই সমর্থক কোন দলীল «قرینه» ও প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। আর যখন তা না থাকবে তখন প্রকৃত অর্থেই তা ব্যবহৃত হয়েছে ধরতে হবে, রূপক অর্থে গ্রহণের কোন সুযোগ নেই।সুতরাং ফখরুদ্দীন রাযীর যুক্তি সঠিক নয় তিনি ভ্রমাত্মক যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। কেননা হাসর দুই প্রকার, অথচ তিনি মনে করেছেন এক প্রকার।মা’আনী ও বায়ান (অলংকার শাস্ত্রের দুটি শাখা) শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, হাসর দুই প্রকার। এক. হাসরে হাক্বিকী (প্রকৃত হাসর)। দুই. হাসরে গায়রে হাক্বিকী (অপ্রকৃত হাস)। (তাফতাজানী, শারহে আল-মুখতাসার, পৃ. ১৭৩)হাসরে হাক্বীকি সকল বাস্তব দৃষ্টান্তকে অন্তর্ভুক্ত করে বলে একটি সর্বজনীন বিষয় কিন্তু হাসরে গায়রে হাক্বীকি আপেক্ষিক এবং তা কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির মধ্যে সীমাবদ্ধতা নির্দেশে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন কোন ব্যক্তি ধারণা করছে, আমরও যায়েদের সাথে এসেছে তখন তাকে যদি বলা হয় «انّما جاء زید» এর অর্থ দাঁড়াবে শুধু যায়েদ এসেছে তার সাথে আমর আসেনি কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, যায়েদ ছাড়া অন্য কেউই আসেনি। অতএব এরূপ ক্ষেত্রে কেবল আমর যে আসেনি এটা নিশ্চিত করার জন্য انّما দ্বারা একদিকে যাইদের আসাকে সমর্থন করা হয়েছে অপর দিকে আমরের আগমনকে নাকচ করা হয়েছে।উল্লিখিত দুটি আয়াতে কাসরে গায়রে হাক্বীকি অথবা ইবনে হিশামের ভাষায় কাসরে মোকাইয়্যাদ (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬২) ব্যবহৃত হয়েছে। এমন নয় যে তাতে কোন হাসরই ব্যবহৃত হয়নি।«انّما الحیاة الدنیا لعب و لهو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। একই বিষয় বস্তু সম্পর্কিত আয়াত পবিত্র কোরআনে «ما النافیة» অর্থাৎ না বোধক ‘মা’ এবং “ইল্লা” যা حروف استثناء (বা ব্যতিক্রম সূচক অব্যয়) সহযোগে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন : «و ما الحیاة الدنیا الا لعب و لهو» পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা আনআম, আয়াত-৩২) ফখরুদ্দীন রাযি এখানে হাসরকে অস্বীকার করতে পারেননা এমনকি এ আয়াত দ্বারা তার যুক্তিও খণ্ডন করা হয়েছে। কেননা না বোধক অব্যয় «لا و ما» যখনই ইস্তিসনা অর্থাৎ ব্যতিক্রমসূচক কোন অব্যয়ের সাথে আসে তখন স্পষ্টতই তা সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়।অনুরূপভাবে ফখরুদ্দীন রাযি সূরা আনআমের পবিত্র এই আয়াতে হাসরের বা সীমাবদ্ধতার অর্থকে সঠিকভাবে করেননি। কেননা উল্লিখিত আয়াতটিতে «محصور فیه» (অর্থাৎ যার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে) হল لعب و لهو । ফখরুদ্দীন রাযি যে অর্থ করেছেন তার দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, তিনি «حیاة الدنیا» পার্থিব জীবনকে «محصور فیه» ধরেছেন। কিন্তু সমস্ত অলংকার শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন “ইন্নামা” এর মাহসূর ফি সবসময় বাক্যের শেষে আসে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহিরুল বালাগা, পৃ. ১৫২) অতএব এ আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে- দুনিয়া শুধু খেলাধুলা ও আমোদ ফুর্তির। আবু হাইয়্যানও ফখরুদ্দীন রাযির ন্যায় যামাখশারীর প্রতি আপত্তি জানিয়েছেন। قُلْ إِنَّمَا يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ‘বলুন আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে, তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৮)এ আয়াতের ব্যাপারে যামাখশারী বলেছেন: «أنما» (আন্নামা)«إنما» (ইন্নামা)র মতই হাসরের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে আন্নামা গুণিতের «موصوف» জন্য সিফাত বা গুণকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং ইন্নামা সিফাতের জন্য মাউসূফ বা গুণিতকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। (যামাখশারী, আল কাশিফ আন হাক্বায়িকি গাওয়ামিজিত তানযিল, পৃ. ১৩৯)। আবু হাইয়্যান, যামাখশারীর এই বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে বলেছেন- আন্নামাও ইন্নামার ন্যায় হাসরের প্রতি ইঙ্গিত করে এটা শুধু যামাখশারী বলেছেন যা অন্য কেউ বলেননি।আবু হাইয়্যান আরো বলেছেন: যদি এই আয়াতে হাসর থেকে থাকে, তাহলে অর্থ হবে যে, তাওহীদ (আল্লাহর একমাত্র উপাস্য হওয়ার বিষয়) ছাড়া নবী (সা.) এর নিকট অন্য কোন বিষয়ে ওহী আসেনি অথচ নবী (সা.) এর নিকট তাওহীদ ছাড়া অন্য বিষয়েও ওহী এসেছে।ইবনে হিশাম আনসারী যামাখশারীর পক্ষ অবলম্বন করে আবু হাইয়্যান এর যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেছেন : আবু হাইয়্যানের এই বক্তব্য ঠিক নয়, কেননা এই আয়াতে “হাসরে মোকাইয়্যাদ” রয়েছে এবং আয়াতের অর্থ হবে : প্রভুত্ব ও রুবুবিয়্যাতের ব্যাপারে তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব) ছাড়া আমার প্রতি কোন ওহী নাযিল হয়নি। এমন কাসরকেকে কাসরে ক্বালব বলা হয়। কেননা শ্রোতার আস্থা এবং বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে (কারণ মুশরিকরা ধারণা করত মানুষের ওপর তাদের উপাস্য মুর্তিগুলোরও প্রভুত্ব রয়েছে, এ আয়াতে তাদের এ বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে)। (ইবনে হিশাম আনসারী, মুগনি আল লাবিব আন কুতুবিল আ’আরিব, ১ম খণ্ড, পৃ-৬২)।ইবনে হিশাম এমন একটি খণ্ডনমূলক উত্তরও দিয়েছেন যা স্পষ্টভাবে আবু হাইয়্যানের যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করে। তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের উল্লেখ করেছেন যাতে না বাচক ‘মা’ এবং ‘ইল্লা’ ব্যবহৃত হওয়া সত্ত্বেও সার্বিকভাবে সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে না। তিনি বলেছেন:« وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ »অর্থাৎ মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)এই আয়াতে না বাচক ‘মা’ «ما النافیة» এবং ‘ইল্লা’ নিঃসন্দেহে হাসরের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে মহানবীর (সা.) সিফাত শুধুমাত্র রেসালাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এতদসত্বেও হাসর ব্যবহার করা হয়েছে। (ইবনে হিশাম, প্রাগুক্ত) সুতরাং এখানে হাসরে মোকাইয়্যাদ বা আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশিত হয়েছে। তেমনি সুরা আহযাবের ৪০নং আয়াতেও «ما النافیة» এবং لکن আপেক্ষিক সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করছে অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যকার কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।যেমনটি পরিলক্ষিত হয় যে, যামাখশারীর প্রতি আবু হাইয়্যানের আপত্তি কোনভাবেই ধোপে টেকে না।তাফতাজানী এবং কুশচীর বক্তব্যও সঠিক নয়। কেননা হাসর সব সময় বিদ্যমান কোন বিষয় ও বাস্তবে অস্তিত্বমান কিছুকে প্রত্যাখ্যান করতে ব্যবহৃত হয়না। বরং কখনও কখনও ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদের সৃষ্টি করতে পারে এমন সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়; অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি তার বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে ভবিষ্যতে দ্বিধা-সংকোচ বা বিবাদ সৃষ্টির আশংকা করে, তবে এরূপ ক্ষেত্রেও সে হাসর ব্যবহার করতে পারে। এটা অন্যভাবেও বলা যায় যে, হাসর কখনও সন্দেহকে দূরীভূত করার জন্য আবার কখনও তাকে প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে মা’আনী ও বায়ান শাস্ত্রবিদগণ মত দিয়েছেন যে, হাসর ব্যবহারের জন্য সন্দেহের অবকাশ ও সম্ভাবনা থাকাই যথেষ্ট, বাস্তবে সন্দেহের অস্তিত্ব থাকতে হবে এমন কথা নেই।বেলায়াত সম্পর্কিত আয়াতে সম্ভাব্য দ্বিধা-সংকোচ বা সন্দেহ প্রতিরোধ করার জন্য হাসর ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাআলা ভালভাবেই জানতেন যে ভবিষ্যতে খেলাফত নিয়ে সংশয় ও দ্বিধার সৃষ্টি হবে তাই এই আয়াতে হাসর ব্যবহার করেছেন।সুতরাং এই বিষয়ে কুশচীও ভুলের শিকার হয়েছেন কারণ তিনি মনে করেরেছন যে, হাসরকে কেবল বিদ্যমান দ্বিধা, সন্দেহ, ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা ও উদাসীনতা দূরীভূত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ তিনি হাসরকে, হাসরে রাফয়ি «رفعی» বা প্রতিহতকারী অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন।এই ভ্রান্তধারণার আরেকটি জবাব হল যে, বালাগাত শাস্ত্রবিদগণ “ইন্নামা” এবং অন্যান্য সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলির মধ্য পার্থক্য করেছেন। তারা বলেছেন “ইন্নামা” ঐ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেখানে শ্রোতা কোন বিষয়ের আবশ্যকতা সম্পর্কে অজ্ঞ নয় বা অস্বীকারকারীও নয় বরং তাকে সচেতন এবং স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় যেন শ্রোতা তার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত হয় ও তার প্রতি নিবেদিত থাকে। (জুরজানী, আল-ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা : পৃ. ৮২) এই বর্ণনা অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় সকল মুসলমান জানতেন যে “ওয়ালি” পদটি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং হযরত আলী (আ.) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার পরেও আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এই আয়াতে “ইন্নামা” ব্যবহার করেছেন যেন মুসলমানেরা তাদের জ্ঞাত এই বিষয়টির আবশ্যক দাবিগুলো পূরণ করে।তৃতীয় : আহলে সুন্নাতের কিছু কিছু আলেম, যেমন- যামাখশারী (যামাখশারী, আল কাশশাফ আন হাকায়েক ওয়া গাওয়ামেজুত তানযিল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪৮) বলেছেন যে “ইন্নামা” এই আয়াতে সীমাবদ্ধতার অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে ।«و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব «اعراب» বা পদচিহ্ন :আলেমদের মধ্যে আরেকটি বাকরণগত মতবিরোধ হচ্ছে «و هم راکعون» বাক্যটির এ’রাব নিয়ে। তাফতাজানী এবং কুশচী এই বাক্যটির এ’রাব সম্পর্কে বলেছেন :আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলী হযরত আলী (আ.) এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার অর্থ হচ্ছে «و هم راکعون» (হুম রাকেউন) বাক্যটি «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত ضمیر (সর্বনাম) টির حال (অবস্থাসূচক বাক্য) যদিও এই তারকিব ওয়াজিব নয়। এটি তার পূর্ববর্তী বাক্যের সাথে عطف (সংযোজিত)ও হতে পারে, এই অর্থে যে মুসলমানরাও তাদের নামাজে রুকু করে অর্থাৎ তাদের নামাজ ইয়াহুদিদের মত রুকু বিহীন নয়।তাফতাজানী এবং কুশচীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। নিম্নোক্ত কারণে এই বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «واو» টি অবস্থাসূচক অব্যয়।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমচলবে______________

 আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমমা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা বিনতে মুহম্মদ (((সাঃ)))ইসলাম ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম, আল্লাহর নবী-রাসূলরা কেমন ছিলেন ও কেন এবং কিভাবে তাঁদের মেনে চলব ?-এসব প্রশ্নে উত্তর জানা খুবই জরুরি। আমরা অনেকেই ইসলামের মূল নেতৃত্বের স্বরূপ ও ধারাবাহিকতার বিষয়েও মাথা ঘামাই না।  তাই রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কিংবা হযরত ফাতিমাকে যেভাবে জানা উচিত সেভাবে তাঁদেরকে জানতে পারিনি। বা জানার চেষ্টা করি না আমরা বলি হযরত ফাতিমা মহানবীর মেয়ে। কিন্তু এর চেয়ে বড় ও আসল পরিচয় হল তিনি বেহেশতের নারীদের নেত্রী। আমরা জানি, কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেই যে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি তারা নবী-রাসূলগণের স্ত্রী-সন্তানও হয় তবুও না। হযরত নূহ (আ.)-এর স্ত্রী-সন্তান এবং হযরত লূত (আ.)-এর স্ত্রী জাহান্নামবাসী হয়েছে, এটি পবিত্র কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে।আল্লাহর বিরোধিতা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এমনকি কেউ যদি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্ত্রী-সন্তান হন, তবুও তাঁরা কেবল এ সম্পর্কের ভিত্তিতে বেহেশতে যেতে পারবেন না। যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আহযাবের ৩০ নং আয়াতে :   ‘হে নবীপত্নিগণ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল আচরণ করবে তার শাস্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’  হযরত ফাতিমা মাত্র ১৮ বা ২০ কিংবা সর্বোচ্চ ৩০ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ‘বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী’ বলে সম্মান দিলেন। এটা স্পষ্ট, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজের খেয়াল-খুশিমতো তাঁকে এ উপাধি দেননি। কারণ, কুরআনের ভাষায় তিনি প্রবৃত্তির খেয়ালে কোন কথা বলেন না। তাই আমরা বলতে পারি, হযরত ফাতিমা (আ.) ইসলামের জন্য অসাধারণ বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন বলেই আল্লাহর রাসূল (সা.) তাঁকে এত বেশি ভালবাসতেন এবং তাঁকে অনুসরণ করতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে উদাসীন থেকেছি। ইসলামের মহানবীর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। এ কারণে কাফের বা  পথভ্রষ্টরা মহানবীকে নিয়ে উপহাস করে বলত যে নবী নির্বংশ হয়ে যাবেন। তাদের সে মশকরার জবাব হিসেবে সুরা কাউসার নাজিল হয়। কাউসার মানে অফুরন্ত নেয়ামত। তফসিরকারকদের মতে,  কাউসার বলতে নবী কন্যা ফাতিমাকে ইংগিত করা হয়েছে।  আল্লাহর বাণীর সেই সীমাহীন মহিমায় পৃথিবী আজও আওলাদে রাসুল বা নবী বংশের সন্তানদের পদচারণায় মুখর। অন্যদিকে এককালের সেই গর্বিত পুরুষ ও অন্ধকারের উপাসক ও মহানবীর প্রাণের শত্রু খল নায়কদের বংশ বিলীন হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে নির্বংশ হয়ে গেছে আবু লাহাবের মতো গোত্রপতিরা। আর নবী বংশের জ্যোতিধারা রক্ষা পেয়েছে ফাতিমার ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে।মহানবীর আহলে বাইত বা পবিত্র বংশ হিসেবে রসুলে খোদার বংশধরকে যে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে থাকে তার উৎসধারা  ফাতিমা। যে যুগে নারীকে ভোগের পণ্য মনে করা হতো ও কন্যা সন্তানকে হত্যা করে পারিবারিক মর্যাদা রক্ষা করা যায় বলে মনে করা হতো সে যুগে হজরত ফাতিমার(সা) মাধ্যমে বংশ রক্ষার এই ঘোষণা এক অনন্য সমাজ বিপ্লবেরই ধ্বনি হয়ে ওঠে।নবী নন্দিনী ফাতিমাকে ঘিরে এমন আরো অসাধারণ ঘটনা রয়েছে। নবী নিজ কন্যাকে ‘উম্মে আবিহা’ বলে সম্মান দেখাতেন। এর অর্থ ‘বাবার মাতা'। ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক দিনগুলোতে নবী মোস্তফাকে অশেষ কষ্ট ও লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে। কাফিররা মহানবীকে বারবার আঘাত হেনেছে।  ইবাদত মগ্ন রসুলে খোদার দেহে নোংরা এবং ময়লা পদার্থ ঢেলে দিত তারা।  এই দিনগুলোতে হযরত ফাতিমা  ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়ার কাজে ছিলেন মহানবীর দুঃসাহসী সহযোগী ও মাতৃতুল্য সেবিকা। হজরত ফাতিমা সব যুগের নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সম্মানিত। হুজুরে পাক  বলেছেন, ঈসার মাতা মরিয়ম নিজ যুগের সম্মানিতা মহিলা। কিন্তু আমার কন্যা ফাতিমা সকল যুগের শ্রেষ্ঠ নারী।  তিনি আরো বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের একটি অংশ, যে জিনিসে সে দুঃখ পায় তাতে আমিও দুঃখ পাই। ফাতিমা বেহেশতে সর্ব প্রথম প্রবেশে করবে। অন্যদিকে ফাতিমার অনুসারীদের স্পর্শ করবে না আগুন। হযরত ফাতিমা কাছে এলে দ্বীনের নবী নিজে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বরণ করে নিজের পাশে বসতে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় ফাতিমাকে সম্মান দেখানোর পেছনে রয়েছে ঐশীলোকের সুস্পষ্ট ইংগিত । ফাতিমার স্বামী  আলী(আ)কে খোদ নবী নিজের জ্ঞান-নগরীর দরজা বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁর দুই সন্তান ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে বেহেশতে যুবকদের নেতা বলেছেন মহানবী। অথচ ফাতিমা বা তাঁর বংশধরদের কেউই এই ঐশী সম্মানকে পার্থিব ভোগের কাজে লাগান নি। হজরত আলীকে (আ) মসজিদে তরবারির আঘাতে ও ইমাম হাসান(আ)কে বিষ দিয়ে শহীদ করা হয়েছে। আর ইমাম হুসাইনকে কি মর্মস্পর্শী পরিস্থিতিতে কারবালায় আত্মত্যাগ করেতে হয়েছে তা সবাই জানে। আত্মত্যাগের বিশালত্বে ফাতিমা এবং তার বংশধররা এ ভাবেই ইতিহাসকে অতিক্রম করে গেছেন। এ সবই হলো ফাতিমার শিক্ষা, ত্যাগ এবং মহিমার শ্রোতধারার ফসল। তাদের সে আত্মত্যাগের গাঁথা আজও মানুষকে অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রেরণা যোগায়। সত্যকে জানতে হলে, স্রষ্টার পথ চিনতে হলে এবং স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকতে হলে ধরতে হবে হযরত ফাতিমার পথ ।  হজরত ফাতিমা(সা)  কেবল নবী দুলালি বা নারীদের আদর্শ নন তিনি এক কথায় আদর্শ মানবাত্মার প্রতীক । কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হযরত ফাতিমাকে আহত করা হয়েছিল প্রভাবশালী একটি মহলের পক্ষ হতে এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। অনেকেই মনে করেন শত্রুতার প্রেক্ষাপটে হযরত ফাতিমা (সা)-কে দাফন করা হয়েছিল মধ্যরাতে গোপনীয়ভাবে  অতি গোপন স্থানে যা আজো গোপন রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত গোপন থাকবে। হযরত ফাতিমার ওসিয়ত অনুযায়ী গোপনীয়তা বজায় রাখতে তাঁর দাফনেও অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মাত্র কয়েকজন অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে। মুসলমানদের মধ্য থেকে আহলে বাইতের অতি ঘনিষ্ঠ ওই কয়েকজন ব্যক্তি দাফনে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।  ফাতিমা (সা) জানতেন কখন তাঁর মৃত্যু হবে। আর এ জন্য তিনি নিজে গোসল করে নতুন ও পরিষ্কার পোশাক পরে কিবলামুখী হয়েছিলেন। তিনি নিজের মৃত্যু কবে হবে এবং তাঁর দুই প্রিয় সন্তান হাসান ও হুসাইন (আ.)  কিভাবে মারা যাবেন সেই তথ্যসহ ভবিষ্যৎ ইতিহাসের অনেক খবর রাখতেন। হুসাইন (আ.)'র হত্যাকারীদের অভিশাপ দিয়ে গেছেন তিনি। মদিনার নারী সমাজ ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করত ফাতিমা (সা.আ.)'র কাছ থেকে। ফাদাক ও মানজিল শীর্ষক তাঁর ভাষণ এই মহামানবীর অতুল জ্ঞান, খোদাভীরুতা এবং দূরদর্শিতাকেই তুলে ধরে। মাওলা হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আলী, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদেরকে মানুষের জন্য হুজ্জাত বা দলিল করেছেন এবং তাঁরা হল জ্ঞানের দরজা।'মাসহাফই ফাতিমা' নামে খ্যাত গ্রন্থটির সমস্ত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে জিবরাইল ফেরেশতার সঙ্গে ফাতিমা (সা. আ.)'র কথোপকথনের মাধ্যমে যা লিখে গেছেন হযরত আলী (আ.)। নবী-নন্দিনী (সা:) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সা.)র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত। পবিত্র কুরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়। ফাতিমা (সা. আ.) রাসূল (সা.)'র উম্মতের উদ্দেশে বলেছেন: আল্লাহ ঈমানকে তোমাদের জন্য শির্ক হতে পবিত্র হওয়ার ও নামাজকে অহংকার থেকে পবিত্র হওয়ার এবং আমাদের আনুগত্য করাকে ধর্মের ব্যবস্থায় বা ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম করেছেন, আমাদের নেতৃত্বকে অনৈক্যের পথে বাধা ও আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ইসলামের জন্য সম্মানের মাধ্যম করেছেন।হযরত ফাতিমা (সা:) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই। মাওলা হযরত মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধর ও বিশেষ করে ফাতিমা (সা)’র প্রতি অশেষ দরুদ ও সালাম হযরত ফাতিমা জাহরা (সা. আ.)’র একটি বক্তব্য তুলে ধরছি তিনি বলেছেন, নারীদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় হচ্ছে, তারা যেন কোনো অচেনা পুরুষকে না দেখে এবং কোনো অচেনা পুরুষও তাদের না দেখে।  #দুশমানে আহলে বাইত আঃ পার বেশুমার লানত বর্ষিত হোকলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিনচলবে_________________

হযরত ঈসা (আ.)’র শুভ জন্মবার্ষিকীশুভ জন্মদিন মরিয়ম পুত্র ঈসা আঃ২৫ ডিসেম্বর হচ্ছে হযরত ঈসা (আ.)-এর পবিত্র জন্মদিন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রায় সাড়ে পাঁচশ' বছর আগে পৃথিবীর বুকে আগমন করেছিলেন হযরত ঈসা (আ.)। হযরত ঈসা (আ.) একদিকে ছিলেন মানবপ্রেম ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী অন্যদিকে ছিলেন জুলুম, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুকরণীয় আদর্শ।মহান আল্লাহ তাঁকে তাওরাত, ইঞ্জিল ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে বনী ইসরাইলীদের কাছে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সূরা আলে ইমরানের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, "ঈসা বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের জন্য নিদর্শন এনেছি। আমি কাঁদা দিয়ে একটি পাখীর মূর্তি তৈরী করে,তাতে ফু'দেব। ফলে তা আল্লাহর ইচ্ছায় পাখী হয়ে যাবে। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করব এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে মৃতকে জীবিত করব। তোমরা তোমাদের ঘরে যা খাও এবং জমা কর আমি তাও তোমাদের বলে দেব। তোমরা যদি বিশ্বাসী হও তবে সত্য মেনে নেয়ার ব্যাপারে এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।"হযরত ঈসা (আ.) এমন এক ব্যক্তি ছিলেন যিনি জন্মের পর অর্থাৎ দোলনা থেকেই কথা বলতে পারতেন এবং তিনি যা বলতেন, সত্য বলতেন। পবিত্র কোরআনের সূরা মারইয়ামের ৩০ থেকে ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "হযরত ঈসা বললেন, নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর একজন বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আজীবন নামায ও যাকাত আদায় এবং মায়ের অনুগত থাকতে। আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি। শান্তি আমার প্রতি- যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।"আল্লাহপাক মানব জাতিকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করার জন্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলগণ আল্লাহর প্রতি মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একত্ববাদের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি, ভয়-ভীতি, জুলুম নির্যাতন ও জানমালের ক্ষতির শিকার হয়েছেন। হযরত ঈসাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন না। মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে যেমন ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে তেমনি তাঁর কুমারী মাতা হযরত মারিয়াম (সা.আ.)কেও অনেক দুঃখ-কষ্ট ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে।হযরত মারিয়াম ছিলেন হযরত ইমরান ( আ. ) এর মেয়ে। আল্লাহর দরবারে মারিয়াম ছিলেন অসম্ভব মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তাঁর ইবাদাত কবুল করেছেন এবং আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন বলে মনে করতেন।হযরত মারিয়াম ছোট্টবেলা থেকেই হযরত যাকারিয়া (আ.) এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিটা মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে কাটাতেন। হযরত মরিয়ম আল্লাহর ইবাদত ও ধ্যানে এত মশগুল থাকতেন যে, নিজের খাবারের কথাও ভুলে যেতেন। কিন্তু মারিয়ামের অভিভাবকের দায়িত্বপালনকারী হযরত যাকারিয়া (আ.) যখনই তাঁর কক্ষে যেতেন, তখনই সেখানে বেহেশতি খাবার দেখতে পেতেন। তিনি এত মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন যে, নবী-রাসূল না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথা পবিত্র কোরআনের অনেক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে।কুমারী মাতা হযরত মারিয়ামের গর্ভে হযরত ঈসার জন্মের কাহিনীসূরা মারিয়ামের ১৬ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, "হে মুহাম্মদ! এই কিতাবে মারিয়ামের অবস্থা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল এবং তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য সে পর্দা করল। এ অবস্থায় আমি তার কাছে নিজের রুহ অর্থাৎ ফেরেশতাকে পাঠালাম এবং সে তার সামনে একটি পূর্ণ মানবাকৃতিতে নিয়ে হাজির হলো। মারিয়াম অকস্মাৎ বলে উঠলো, "তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাক তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি।"মারিয়াম এ কথা বলে আল্লাহর দূতের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সাথে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এ অবস্থা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আল্লাহর দূত কথা বলে উঠলেন- 'আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এসেছি।' এ কথা শুনে মারিয়ামের অন্তর প্রশান্ত হলো। কিন্তু তারপরই ফেরেশতা বলল- 'আমি এসেছি তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করতে।' এ কথা শুনে মারিয়াম অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো-'তা কী করে সম্ভব! এখন পর্যন্ত কোনো পুরুষ মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি কিংবা আমি তো অসতী মেয়েও নই!'আল্লাহর দূত বলল-'তার মানে হলো, তোমার আল্লাহ বলেছেন, 'এটা আমার জন্যে খুবই সহজসাধ্য একটি ব্যাপার। আর এই ঘটনাটাকে আমরা জনগণের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে এটি হবে একটা রহমত। এটা একটা অবশ্যম্ভাবী এবং স্থিরীকৃত ব্যাপার।'মারিয়াম অবশেষে সন্তান সম্ভবা হলেন। যখন প্রসব বেদনা উঠল তখন তিনি উষর জনহীন এক প্রান্তরে একটি শুকনো খুরমা গাছের নীচে গেলেন। বেদনায় আনমনে বললেন- 'যদি এর আগে আমার মৃত্যু হতো এবং সবকিছু ভুলে যেতাম।' অতিরিক্ত কষ্টের মুখেই তিনি যখন এসব বলেছিলেন তখন হঠাৎ অলৌকিক শব্দ তাঁর কানে ভেসে এল-'দুশ্চিন্তা করো না! ভালো করে দেখো, তোমার রব তোমার পায়ের নীচে থেকে একটি ঝর্ণাধারা জারি করেছেন। আর তোমার মাথার ওপরে তাকাও। দেখো শুকনো খুরমা গাছে কী সুন্দর খেজুর পেকে আছে। ওই গাছে নাড়া দাও যাতে তরতাজা পাকা খেজুর ঝরে পড়ে। এই সুস্বাদু খেজুর খাও আর ওই নহরের পানি পান করো এবং নবজাতককে দেখে চক্ষু জুড়াও। যখন যেখানেই কোনো মানুষ তোমার কাছে এই সন্তান সম্পর্কে জানতে চাইবে, তুমি কেবল ইশারায় বোঝাবে যে, 'আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে রোযা রেখেছি, নীরবতার রোযা, তাই কারো সাথে কথা বলব না।'আল্লাহর কুদরতে হযরত মারিয়াম মা হলেন। সন্তানের মুখ দেখে মা খুশি হলেন ঠিকই কিন্তু মনে সংশয়-না জানি কে, কী ভাবে! আল্লাহ তাই তাঁকে জানিয়ে দিলেন, তিনি যেন কারো সাথে কথা না বলেন। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মারিয়াম (সা. ) পুত্রকে কোলে নিয়ে শহরের দিকে যেতে লাগলেন। মানুষ যখন তাঁর কোলে সন্তান দেখতে পেল, আশ্চর্য হলো। এতদিন যারা মারিয়ামকে একজন পবিত্র ও সচ্চরিত্রবতী এবং তাকওয়াসম্পন্ন বলে মনে করতো, তারা খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। কেউ কেউ আবার তিরস্কারের সুরে বলতে লাগল: "ছি, ছি! এতো তাকওয়া, এতো পূত-পবিত্রতা। অভিজাত বংশের মুখে চুনকালি পড়ল।" তারা বলল, "হে মরিয়ম! একটা আশ্চর্যময় এবং বাজে কাজ করেছো।"মারিয়াম আল্লাহর আদেশক্রমে চুপ করে রইলেন। কেবল কোলের সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। এমন সময় হযরত ঈসা (আ) কথা বলে উঠলেন : "আমি আল্লাহর বান্দা! তিনি আমাকে ঐশীগ্রন্থ দান করেছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আমি যেখানেই থাকি না কেন আল্লাহ আমাকে তাঁর বরকতপূর্ণ ও মঙ্গলময় করেছেন। যতোদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন তিনি আমার প্রতি নামায ও যাকাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মায়ের প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। আমাকে তিনি প্রতিহিংসা পরায়ন বা অনমনীয় হবার মতো হতভাগ্য বানাননি।ঈসা (আ.) সবশেষে বলেন, "আমার ওপরে আল্লাহর শান্তি বা সালাম, যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং যেদিন আমি মরে যাবো,আবার যেদিন আমি জীবিতাবস্থায় জাগ্রত হবো।"ঈসা (আ) ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে লাগলেন। সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর ওপর দায়িত্ব বর্তিত হয়েছিল বনী ইসরাঈলকে এক আল্লাহর ইবাদাত বা তৌহিদের পথে আহ্বান জানানোর। তিনি তাঁর নবুয়্যতের প্রমাণ স্বরূপ বহু মোজেযা দেখিয়েছেন। তিনি ভাস্কর্য তৈরীর কাদামাটি দিয়ে পাখি তৈরী করেন এবং তার ভেতর ফুঁ দিলে আল্লাহর আদেশে পাখিটার ভেতর প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রাণিত হবার পর মাটি দিয়ে তৈরী পাখিটা উড়ে যায়। তিনি জন্মান্ধ এবং বধিরদেরকে আল্লাহর দেওয়া মোজেযার সাহায্যে সুস্থ করে দিতেন। কুষ্ঠ রোগীরাও তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সুস্থ হয়ে যেত। এমনকি মৃতদেরকেও তিনি আল্লাহর দেয়া অলৌকিক শক্তি বলে জীবিত করে দেন।হযরত ঈসা (আ.) একাধারে ৩০ বছর আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করেন। কিন্তু বনী ইসরাইলের আলেমদের শত্রুতার কারণে জনগণ ঈমান আনা থেকে বিরত থাকত। স্বল্পসংখ্যক লোকজন যারা তাঁর কথায় ঈমান এনেছিল, তাদের অনেককেই শিষ্য হিসেবে মনোনীত করলেন যাতে তারা আল্লাহর পথে বা সত্য দ্বীনের পথে আহ্বানের ক্ষেত্রে তাঁর সহযোগী হয়। কিন্তু ইহুদিরা ঈসা (আ.) এর সাথে এতো বেশি শত্রুতা করতে লাগলো যে শেষ পর্যন্ত তাঁর ওপর তারা আক্রমণই করে বসল। তারা চেয়েছিল হযরত ঈসা (আ) কে মেরে ফেলতে। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শত্রুদের অত্যাচার থেকে ঈসা (আ.) কে রক্ষা করলেন। তাঁকে সশরীরে জীবন্ত আসমানে উঠিয়ে নিলেন।ইসলামের আদর্শ ও বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আ) বেঁচে আছেন এবং শেষ যামানায় হযরত মাহদি (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন তাঁরও আগমন ঘটবে। শুধু তাই নয়, তিনি ইমাম মাহদির ইমামতিতে নামাজ পড়বেন এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁকে সহযোগিতা করবেন।বর্তমান বিশ্বে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, সহিংসতা, বর্ণ-বৈষম্য, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এমন এক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, এখন সময় এসেছে ধর্মের প্রকৃত বাস্তবতা উপলব্ধি করার। আধিপত্যকামী, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করলেও তারাই আবার নিজেদেরকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করছে। অথচ আজ যদি যিশু খ্রিস্ট বা হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে থাকতেন তাহলে তিনি বিশ্বের বলদর্পী ও আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতেন এমনকি এক মুহূর্তও অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতেন না। আজ যারা নিজেদেরকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে দাবি করছে তাদের উচিত ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের সব নির্যাতিত জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনা। আর তাহলেই হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মদিন পালন স্বার্থক হবে।#

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমগত পর্বে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জীবনী সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেছি। আজকের পর্বে আমি এই মহীয়সী নারীর জীবন ও কর্ম নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করব।আমি নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাল জন্ম ও শিশুকাল নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছি, কুরাইশ বংশের কাফেরদের অত্যাচার ও হুমকির মুখে মাওলা মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রাতের বেলা হযরত আলী (আ.)কে নিজের বিছানায় শুইয়ে রেখে মদীনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন এবং কাফেররা রাসূলকে হত্যা করতে এসে তার বিছানায় হযরত আলীকে দেখে তাজ্জব হয়ে যায়। এভাবে রাসূলকে হত্যার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। মাওলা মোহাম্মদ মক্কা ত্যাগ করার আগে হযরত আলীকে বলে গিয়েছিলেন, হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহাসহ বনি হাশেম গোত্রের একদল নারীকে নিয়ে তিনি যেন পরবর্তীতে মদীনায় চলে আসেন। হযরত আলী (আ.) এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে নিয়ে মদীনার নিকটবর্তী কুবা এলাকায় রাসূলের সঙ্গে মিলিত হন।মদীনায় হযরত ফাতেমা জাহরার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। সেখানে তাঁর জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। দ্বিতীয় হিজরিতে এই ঐশী বিয়ে সংঘটিত হয়। ওই বছর বদর যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ে মদীনায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় এবং সেখানকার ইসলামি সমাজের ভিত্তি মজবুত হয়। এ সময় কিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি হযরত ফাতেমাকে বিয়ে করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি এসব প্রস্তাবের কোনোটিই গ্রহণ করেননি। এই ব্যক্তিবর্গই একথা উপলব্ধি করতে পারছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল চান হযরত ফাতেমাকে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে তুলে দিতে। এ কারণে তারাই হযরত আলীকে রাসূলুল্লাহর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে থাকেন। এদিকে হযরত আলী (আ.) নিজের অর্থনৈতিক দৈন্য এবং লজ্জাবোধের কারণে বিষয়টি নিয়ে দোটানায় পড়ে যান। কিন্তু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীত হোক। আমি আপনার ঘরে বড় হয়েছি এবং এতদিন আপনার অনেক অনুগ্রহ আমি গ্রহণ করেছি। আপনি আমাকে আমার পিতা-মাতার চেয়ে বেশি স্নেহ করেছেন এবং আপনার মাধ্যমে আমি হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছি। এখন আমার সময় হয়েছে বিয়েশাদি করে সংসার গঠন করার যাতে স্ত্রীর সঙ্গে নিজের দুঃখকষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আপনি যদি আপনার কন্যা ফাতেমাকে আমার সঙ্গে বিয়ে দেন তাহলে সেটা হবে আমার প্রতি আপনার অনেক বড় অনুগ্রহ এবং আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।হযরত আলী (আ.)-এর প্রস্তাব শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: তুমি প্রস্তাব নিয়ে আসার আগে জিব্রাইল আমার কাছে এসে আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা চান আমি তোমার হাতেই ফাতেমাকে তুলে দেই। আলী! জিব্রাইল আল্লাহর নির্দেশ শুনিয়ে আসমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার আগেই তুমি আমার দরজায় কড়া নেড়েছ। এরপর আল্লাহর রাসূল মুহাজির ও আনসারদেরকে মসজিদে নববীতে ডেকে পাঠানোর জন্য হযরত বেলালকে নির্দেশ দেন। সবাই মসজিদে এলে রাসূলে আকরাম (সা.) মিম্বারে উঠে হামদ ও সানা পাঠ করার পর বলেন, হে লোকসকল! আপনারা জেনে রাখুন আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল এসে আলীর সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে দেয়ার নির্দেশ জানিয়ে গেছেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই বিয়ের খুতবা পাঠ করেন। তখন উপস্থিত সবাই নবদম্পতির সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করেন। এরপর আল্লাহর রাসূল ঘরে ফিরে আলী (আ.)কে নিজের ডানপাশে এবং ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহাকে বামপাশে বসান।এরপর আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন: হে আল্লাহ! আপনি এই বিয়ে কবুল করে নিন এবং এদেরকে পুতপবিত্র বংশধর দান করুন।এভাবে হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। কয়েকদিন পর মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) নিজ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করেন: কেমন স্বামী পেয়েছ মা? ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা জবাব দেন: আব্বাজান! আল্লাহ তায়ালা এ যুগের শ্রেষ্ঠ পুরুষকে আমার ভাগ্যে জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু কুরাইশের নারীরা আমাকে বলছে, আপনি নাকি অনেক ধনী ব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে একজন হতদরিদ্র ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এ সময় আল্লাহর রাসূল নিজ কন্যাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: আমি পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ ও চাকচিক্যকে পায়ে ঠেলে পরকালীন জীবনের অসীম নেয়ামতকে প্রাধান্য দিয়েছি। মা আমার, আমি এমন একজনের হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিক দিয়ে যে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এরপর হযরত আলী (আ.)কে ডেকে আল্লাহর রাসূল বলেন: স্ত্রীর সঙ্গে সদাচারণ করবে।জেনে রেখো, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। যে তাকে কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেই কষ্ট দিল এবং যে তাকে খুশি করল সে যেন আমাকেই খুশি করল।হযরত আলী (আ.) ও ফাতেমা জাহরার সমন্বয়ে যে সংসার গঠিত হয় সেখানে দু’জনই ছিলেন সব ধরনের গোনাহ ও অপবিত্রতা থেকে মুক্ত। আলী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ এবং হযরত জাহরা ছিলেন ইসলামের দৃষ্টিতে একজন পরিপূর্ণ নারী। দু’জনই জন্মের পর থেকে আল্লাহর রাসূলের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা অনুযায়ী লালিত পালিত হয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াতে যে কথা বলা হয়েছে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই দম্পতি। ওই আয়াতে আল্লাহ বলছেন: “আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ”তৃতীয় হিজরিতে ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহার কোল জুড়ে আসে তাদের বড় সন্তান হযরত হাসান (আ.)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ওই বছরই ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্তত ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়ে যান যাদের অন্যতম ছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় চাচা হযরত হামজা। ওহুদের যুদ্ধে আহত মুসলিম যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন হযরত ফাতেমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা। দুঃখজনকভাবে আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেও ওই যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন এবং হযরত জাহরা নিজ হাতে পিতার আহত স্থান পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিলেনচলবে

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক বিশ্লেষণ পোস্ট((পর্ব ২))আলোচনার ইতিহাসকালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে প্রাসঙ্গিকভাবে এই আয়াতের ব্যাকরণগত দিকটি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ শিরোনামে স্বতন্ত্রভাবে কখনোই এ বিষয়টির ওপর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ হয়নি। এ দৃষ্টিতে আলোচ্য প্রবন্ধটি এই বিষয়ক স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি আলোচনা বলে গণ্য হতে পারে কারণ এখানে গবেষক তুসীর যুক্তি উপস্থাপনের পর ফাজেল কুশচী ছাড়াও বিশিষ্ট কিছু মনীষী ও বিশেষজ্ঞের মত ও এ সংক্রান্ত তাদের প্রশ্ন ও আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে অতপর আহলে বাইতের অনুসারী কালামশাস্ত্রবিদদের দৃষ্টিতে তার উত্তরও প্রদান করা হয়েছে। উপরন্তু নতুন কিছু উত্তরও উপস্থাপন করা হয়েছে।প্রথমে সংক্ষিপ্তাকারে পবিত্র কোরআনের আয়াতে ব্যবহৃত শব্দাবলী ও বাক্যকে গঠনিক ও ব্যাকরণগত দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ (তারকীব) করা হয়েছে অতপর উল্লিখিত বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।বেলায়াতের আয়াতের শব্দাবলী ও বাক্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ :«انما» ইন্নামা যুক্তশব্দটিতে বিদ্যমান «ان»ইন্না শব্দটি হুরুফে মুশাব্বাহ বেল ফেল (حروف مشبهه بالفعل বা ক্রিয়াপদের সদৃশ অব্যয়সমূহ, যা এর পরে আসা নামবোধক শব্দ বা বিশেষ্যের স্বর বা পদচিহ্নকে নাসব نصب-এ রূপান্তরিত করে।) এর অন্তর্ভুক্ত যার শেষে «ما» ‘মা’ অব্যয়টি সংযুক্ত হয়ে তাকে আমল (পরবর্তী শব্দের পদচিহ্নের উপর প্রভাব বিস্তার) করা থেকে বিরত রেখেছে। «ما» মা অব্যয়টি অতিরিক্ত এবং বাধাদানকারী যার কারণে «ان» ইন্নার আমল রহিত (বাতিল) হয়েছে। «ولی» ওয়ালি শব্দটি خبر (বিধেয়) যাকে পূর্বে এবং «الله» শব্দটি مبتدا (উদ্দেশ্য) যাকে পরে উল্লেখ করা হয়েছে। «رسول» রাসূল এবং «الذین آمنوا» যারা ইমান এনেছে «الله» শব্দটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «الذین یقیمون» অর্থাৎ যারা কায়েম করেছে বাক্যটি «الذین آمنوا» অর্থাৎ যারা ইমান এনেছে বাক্যটির বাদাল بدل» « অথবা আতফে বায়ান «عطف بیان»। «آمنوا» এবং «یقیمون» موصول (সম্বন্ধবাচক সর্বনামের) এর صله (সম্বন্ধ) স্বরূপ। «یؤتون الزکوة» বাক্যটি «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতি عطف (সংযোজিত) হয়েছে। «هم راکعون» বাক্যটি অবস্থাসূচক বাক্য এবং «یؤتون» ক্রিয়াটির মধ্যে নিহিত فاعل (কর্তা) এর حال (অবস্থা) যা কিছু সংখ্যক আলেমের দৃষ্টিতে বৈধ। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমুল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহে তাজরীদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৯।) আবার «یقیمون الصلوة» বাক্যটির প্রতিও عطف (সংযোজিত)। (নূহাশ, এরাবুল কোরআন, ১ম খণ্ড, পৃ-২৭৩; দারউইশ, এরাবুল কোরআন ও বায়ানুহু, ২য় খণ্ড, পৃ-৫০৮।)«انّما»সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয় :পবিত্র এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণশাস্ত্রীয় আলোচনা হচ্ছে «انّما» শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ নিয়ে। আহলে বাইতের অনুসারী আলেমগণ ‘ওয়ালি’ শব্দটি যে এই আয়াতে বন্ধু বা সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি তা প্রমাণ করতে حصر (সীমাবদ্ধতা) এর অর্থকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কেননা এটা হতে পারেনা যে ওয়ালি শব্দটি বন্ধু বা সাহায্যকারী অর্থে শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) এবং কিছু সংখ্যক মুসলমান যারা নামাযরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন : সকল মুমিন অবশ্যই একে অন্যের সাহায্যকারী ও শুভাকাংখী। গবেষক তুসীর দলীল প্রমাণভিত্তিক বর্ণনায়ও এ দিকটিই ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ তিনিও এই আয়াতটিকে তার মতের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার জন্য «انّما» শব্দটিকে حصر (সীমাবদ্ধ) এর অর্থে গ্রহণ করেছেন।"وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ" অর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)ফখরুদ্দীন রাযী, তাফতাজানী এবং মোল্লা আলী কুশচীর ন্যায় আহলে সুন্নাতের বিশিষ্ট আলেমগণ আলোচ্য আয়াতে ওয়ালি শব্দটির অর্থ যে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী তা প্রমাণ করার জন্য ইন্নামা শব্দটি حصر বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। কুশচী লিখেছেন :নিশ্চয় حصر (সীমাবদ্ধতা) শুধুমাত্র কোন বিষয়ে বিদ্যমান সংশয় বা বিবাদকে দূরীভূত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। আর যেহেতু এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় খেলাফত ও নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে কোন সংশয় বা বিবাদই ছিলনা যে حصر (সীমাবদ্ধতা) নির্দেশক শব্দ দ্বারা তার অবসান ঘটানো হবে। (তাফতাজানী, শারহে মাকাছেদ ফি ইলমিল কালাম, ৩য় খণ্ড, পৃ-৫০২; কুশচী, শারহু তাজরীদিল আকায়িদ, পৃ-৩৬৮।)ফখরুদ্দীন রাযীও তার নিজের দাবীকে প্রমাণ করার জন্য পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াতকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি দাবী করেছেন যে এই দুই আয়াতে ইন্নামা সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। তিনি তার মাফাতিহুল গাইব তাফসীরগ্রন্থে আলোচ্য আয়াতটি সম্পর্কে লিখেছেন :“ইন্নামা শব্দটি সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমরা মানিনা। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার বাণী- « إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنْزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ » অর্থাৎ নিশ্চয় পার্থিব জীবনের উপমা সেই পানির মত যা আমি আসমান থেকে বর্ষণ করি। (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-২৪।) নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবনের জন্য এই উপমা ব্যতিত অন্য উপমাও রয়েছে (অর্থাৎ দুনিয়ার উদাহরণ শুধুমাত্র এই এক দৃষ্টান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়)। তেমনি মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন-« إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْو» অর্থাৎ পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ। (সূরা মুহাম্মদ : ৩৬।) অথচ নিঃসন্দেহে পার্থিব জীবন ছাড়াও অন্য স্থানে খেলাধূলা ও আমোদ প্রমোদ হতে পারে।”সমালোচনা ও পর্যালোচনা :ফখরুদ্দীন রাযী ও কুশচী ইন্নামা শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থ শর্তহীনভাবে অস্বীকার করেননি বরং তারা এ শব্দটির সীমাবদ্ধতার অর্থকে সবসময়ের জন্য মনে করেন না। তারা মনে করেন তা বিশেষ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার অর্থে ব্যবহৃত হয়।তবে ফখরুদ্দীন রাযীর এই বক্তব্য ঠিক নয় কারণ ইন্নামা সব সময় এবং সব ক্ষেত্রেই অপরিহার্য ভাবে সীমাবদ্ধতার অর্থ দেয়। কেননা : প্রথমত : সর্ব সম্মতভাবে «انّما» (ইন্নামা) সবসময়ই হাসরের (সীমাবদ্ধতার) অর্থে ব্যবহৃত হয়। অলংকার শাস্ত্রের সমস্ত গ্রন্থসমূহে «ادوات حصر» অর্থাৎ সীমাবদ্ধসূচক অব্যয় সমূহের অলোচনায় «انّما» কে তারই একটা প্রকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (সাক্কাকী, মিফতাহুল উলুম, পৃ. ১৩০; তাফতাজানী, মুখতাসারুল মাআনী, পৃ. ১৮০)। এমনকি নাহু শাস্ত্রে (আরব ব্যাকরণের একটি শাখা) “কখন مبتدا (উদ্দেশ্য) অথবা خبر (বিধেয়) কে পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য' এবং “কখন فاعل (কর্তা) অথবা مفعول কে (কর্মবাচক পদ) পরে নিয়ে আসা অপরিহার্য” শীর্ষক আলোচনায় «محصور فیه» বা কোন কিছুর মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়াকে পরে আসার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে এবং ইন্নামাকে এর উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।দ্বিতীয়ত : অলংকার শাস্ত্রবিদগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইন্নামা হাসর বা সীমিতকরণের জন্য প্রণীত হয়েছে। অলংকারশাস্ত্রের কোন কোন গ্রন্থে সীমাবদ্ধসূচক অব্যয়গুলোর মধ্যকার পার্থক্যে বলা হয়েছে : “ইন্নামা শাব্দিক ক্ষেত্রে হাসর বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করে।” (জুরজানী, আল ইশারাত ওয়া আত তানবিহাত ফি ইলমুল বালাগা,পৃ-৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।) অনুরূপভাবে বলা হয়েছে “কাসর” (সীমিতকরণ) ইন্নামা দ্বারা প্রকাশ করাই অধিক উপযুক্ত।ইন্নামা আতফের (সংযোজন) বিপরীতে কোন কিছুর জন্য কোন বৈশিষ্ট্যকে প্রমাণ করার সাথে সাথেই অন্যদের জন্য তা থাকার সম্ভাবনাকে বাতিল করে। এর বিপরীতে যে সমস্ত হরফে আতফ (সংযোজনসূচক অব্যয়) হাসরের অর্থ দেয় তা থেকে প্রথমে কোন কিছুর কোন একটি বৈশিষ্ট্য থাকার বিষয়টি বোঝা যায় পরে অন্যদের যে তা নেই তা স্পষ্ট হয় অথবা প্রথমে অন্যদের থেকে ঐ বৈশিষ্ট্য নাকচ করে পরে তার জন্য তা প্রমাণ করে। (তাফতাজানী, আল মুতাওয়াল, পৃ. ৪১; জুরজানী, আল ইশারাত ওয়াত তানবিহাত ফি ইলমিল বালাগা, পৃ. ৮১; হাশেমী, জাওয়াহেরুল বালাগা, পৃ. ১৫২।)ইয়া আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবী তালিব আঃ মাদাদচলবে

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমআজকে আমরা জান্নাতে নারীকূলের শিরোমণি ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জীবনী সম্পর্কে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব। এই মহিয়সী নারী যদিও দুই দশকেরও কম সময় পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন তারপরও তাকওয়া ও খোদাভীরুতার দিক দিয়ে তিনি নিজেকে এতটা উন্নত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, প্রায় দেড় হাজার বছর পর আজও তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে রয়েছেন।হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঔরষে জন্মগ্রহণ করে তাঁরই ঘরে লালিত পালিত হয়েছেন। মাওলা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পাশাপাশি তিনি মা হিসেবে পেয়েছিলেন রাসূলের মহীয়সী স্ত্রী ও চরম দুর্দিনের সঙ্গী বিবি খাদিজা সালামুল্লাহি আলাইহাকে। হযরত জাহরা’র উন্নত চরিত্র গঠনে বিবি খাদিজার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। হযরত খাদিজা কুরাইশ বংশের একটি অতি সম্মানিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বংশ পরম্পরায় তাঁর পরিবারও ছিল একত্ববাদে বিশ্বাসী। ইসলাম আবির্ভাবের আগে যারা হাজরে আসওয়াদকে মসজিদুল হারাম থেকে ইয়েমেনে স্থানান্তরের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বিবি খাদিজার পিতা ছিলেন তাদের অন্যতম। এ ছাড়া, বিবি খাদিজার পূর্বপুরুষ আসাদ বিন আব্দুলগ্বারি ছিলেন হিলফুল ফুজুল চুক্তির অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। মক্কার নির্যাতিত ও অসহায় মানুষদেরকে জালেমদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এ চুক্তি হয়েছিল। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)ও এ চুক্তিতে শামিল হয়েছিলেন। এ ছাড়া, বিবি খাদিজার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফেল ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত ও পণ্ডিত ব্যক্তি। হেরা পর্বতের গুহায় যেদিন আল্লাহর রাসূল নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন সেদিন তিনি এই ঘটনা ওয়ারাকা ইবনে নওফেলকে খুলে বলেন। সবকিছু শোনার পর নওফেল বলেছিলেন, “খোদার কসম আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যে ফেরেশতা হযরত মুসা ও হযরত ঈসার কাছে আসত তিনিই আপনার কাছে এসেছেন। আপনি জেনে রাখুন মক্কার কাফের ও মুশরিকরা আপনার দাওয়াতের বাণী মেনে নেবে না এবং আপনার ওপর অত্যাচার চালাবে। ওরা আপনাকে আপনার মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করবে এবং আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করবে। আমি যদি সেদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে আল্লাহর ধর্ম রক্ষায় আপনাকে সহযোগিতা করব।” এরপর ওয়ারাকা ইবনে নওফেল মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) এর কপালে চুমু খেয়ে নিজের গন্তব্যে চলে যান।কাজেই দেখা যাচ্ছে, মাওলা মোহাম্মদ (সা.) এমন একজন নারীকে বিয়ে করেছিলেন যিনি একটি সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যারা আগে থেকেই ছিলেন ঐশী মূল্যবোধ ও উন্নত নৈতিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ। মহান আল্লাহর কাছে বিবি খাদিজার মর্যাদা এতটা উঁচু ছিল যে, হাদিসে এসেছে, হযরত জিব্রাইল (আ.) যতবারই ওহী নিয়ে মাওলা মোহাম্মদ ((সাঃ)) কাছে এসেছেন ততবারই তিনি বলে গিয়েছেন, “আল্লাহ আপনার স্ত্রী বিবি খাদিজাকে সালাম জানিয়েছেন।”একদিন ওহীর ফেরেশতা এসে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)কে বললেন: “আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন, ৪০ দিন বিবি খাদিজার কাছ থেকে দূরে থেকে শুধু আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হতে হবে।” রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পালন করেন। ৪০ দিন শেষে জিব্রাইল (আ.) জান্নাতি খাবার এনে মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) খেতে দেন। আল্লাহর রাসূল সেই খাবার গ্রহণ করার পর ওহীর ফেরেশতা বলেন, আপনি এবার স্ত্রীর সাক্ষাতে যান। মহান আল্লাহ আপনাকে একজন পবিত্র সন্তান দানের ইচ্ছা করেছেন।বিবি খাদিজার গর্ভাবস্থায় জিব্রাইল (আ.) মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) কে বলেন, বিবি খাদিজার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে তার মাধ্যমে আপনার বংশ রক্ষা পাবে। তিনি হবেন এমন ইমামদের মাতা যারা আপনার কাছে ওহী নাজিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আপনার স্থলাভিষিক্ত হবেন। আল্লাহর রাসূল এই খুশির খবর বিবি খাদিজাকে খুলে বলেন। আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের যুগে নারীর কোনো মানবীয়, সামাজিক ও আইনগত অধিকার ছিল না। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করাকে একটি পরিবারের জন্য কলঙ্ক মনে করা হতো। কারো পুত্রসন্তান না থাকলে মনে করা হতো তার বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কারণে মক্কার মুশরিকরা ভেবেছিল আল্লাহর রাসূলের পুত্র সন্তান না থাকায় তাঁর মৃত্যুর পর ইসলামেরও অপমৃত্যু ঘটবে। কিন্তু তাদের অপমানকর বক্তব্যের জবাবে আল্লাহ তায়ালা সূরা কাউসার নাজিল করে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, শত্রুদের এ দুরাশা তো কোনোদিন সফল হবে না। বরং উল্টো নবীনন্দিনী হযরত ফাতিমার মাধ্যমেই রাসূলের বংশ রক্ষা পাবে এবং ইমামত ও বেলায়েতের ধারা জারি থাকার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ছড়িয়ে পড়বে। হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জন্মের দিনগুলোতে ইসলামের দ্রুত প্রসার মক্কার কাফিরদের বিচলিত করে তুলেছিল। তারা নানারকম নির্যাতন, হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেও ইসলামের প্রসার রোধ করতে না পেরে মুসলমানদেরকে ‘শোয়াবে আবু তালিব’ নামক উপত্যকায় অবরুদ্ধ করে রাখে। টানা তিন বছর মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তার পরিবারসহ সব মুসলমান ওই উপত্যকায় দুর্বিসহ জীবন কাটাতে বাধ্য হন। সেই কঠিন দিনে হযরত জাহরা ছিলেন দুগ্ধপোষ্য শিশু। জীবনের শুরুতেই এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাই হয়ত তাঁকে ভবিষ্যতের আরো কঠিন দিন সহ্য করার জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিলেন। টানা তিন বছর অবরুদ্ধ করে রাখার পরও মুসলমানদের মনোবলে বিন্দুমাত্র নমনীয়তা আনতে না পেরে কাফেররা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।এ ঘটনার কিছুদিন পর রাসূলের প্রিয় সহধর্মিনী বিবি খাদিজা সালামুল্লাহি আলাইহা রব্বুল আলামিনের ডাকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। হযরত জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা পরিণত হন মাতৃহীন এতিম শিশুতে। এরপর আর কিছুদিন যেতে না যেতে রাসূলের চাচা আবু তালিব যিনি কাফেরদের চরম বিরোধিতা ও শত্রুতার মাঝে মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন তিনিও ইন্তেকাল করেন। পরপর ঘনিষ্ঠতম দু’জন দরদি মানুষকে হারিয়ে আল্লাহর রাসূল বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এ সময় আবু তালিবের অনুপস্থিতির সুযোগে মক্কার মুশরিকরা নানাভাবে মাওলা মোহাম্মদ (সাঃ) কে কষ্ট দিতে থাকে। এ অবস্থায় আল্লাহর রাসূল প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন। এখান থেকে হযরত জাহরার জীবনে শুরু হয় নতুন অধ্যায়।চলবেপ্রচারে প্রিয় গোলাপ ফুল

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমহজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপাধি এবং উপনাম সমূহহজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর নব্যুয়ত লাভের পাঁচ বছর পর উম্মুল মোমেনীন হয়রত খাদিজার গৃহ আলোকিত করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) ২০শে জামাদিউস সানি পৃথিবীতে আগমন করেন।হযরত ফাতেমা (সা.আ.) ছিলেন মানুষের ব্যক্তি কিংবা সমাজ জীবন সর্বক্ষেত্রেই অনুকরণীয় আদর্শ ও দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মাতা, একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী এবং একজন আদর্শ সমাজ-সেবিকা। কিন্তু রাসুল (সা.) এর কতিপয় সাহাবি তাঁর জিবনকে দূর্বিসহ করে তুলে। রাসুল (সা.) এর ওফাতের পরে তাঁর দরজায় আগুন জালিয়ে দেয় এবং জ্বলন্ত দরজায় লাথি মেরে তার উপরে ফেলে দেয়। যার ফলে দরজার লোহার কাটি দ্বারা তার পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যায়। আর বিভিন্ন শারিরিক এবং মানসিক কষ্ট নিয়ে রাসুল (সা.) এর দুলালি, হজরত আলি (আ.)এর স্ত্রী এবং বেহেস্তের যুবকদের সর্দারের মাতা হজরত ফাতেমা যাহরা (সা.) ৩ রা জামাদিউস সানি,অ্ন্যমতে ১৩ই জামাদিউল আওয়াল শাহাদত বরণ করেন।অথচ তিনি ছিলেন এমন এক মহামানবী যার তুলনা কেবল তিনি নিজেই। অতুলনীয় এই নারী কেবল নারী জাতিরই শ্রেষ্ঠ আদর্শ নন, একইসঙ্গে তিনি গোটা মানব জাতিরই শীর্ষস্থানীয় আদর্শ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বের অনেকেই এই মহীয়সী নারীর পবিত্র জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। হযরত ফাতেমা (সা) এর মর্যাদা ছিল অনেক উর্ধ্বে। স্বয়ং নবীজী (সা.) ফাতেমাকে সম্মান করতেন। জন্মের পর থেকেই নবীজী তাঁর এই কন্যার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করে বিশ্বে নারীর মূল্যবোধ এবং তাঁদের অবস্থান যে কতোটা মর্যাদাসম্পন্ন তা বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন।বিভিন্ন গ্রন্থ সমূহে হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপাধি এবং উপনাম সমূহ বর্ণিত হয়েছে। হজরত ফাতেমা (সা.আ.) উপাধি সমূহ হচ্ছে নিন্মরূপ:১- সৈয়দা: ভদ্রমহিলা, নেত্রি।২-আনিসাতুন হুর: জান্নাতি হুর।৩- নূরয়িা: সত্যের আলোকবর্তিকা।৪- হানিয়া: যত্নশীল নারি।৫- উযরা: কুমারী।৬- কারিমা: সম্মানিত।৭- রাহিমা: করুণাময়ী।৮- শহিদা: শহিদ।৯- আফিফা: সতী।১০- কানেআ: স্বল্প তুষ্ট বা প্রত্যাশাকারিণি।১১- রাশিদা: পরিপূর্ণ নারি।১২- শারিফা: সম্ভ্রান্ত।১৩- হাবিবা: মমতাময়ি বা স্নেহময়ি।১৪- মোহাররামা: মাননীয়।১৫- সাবেরা: ধৈর্যশিল।১৬- সালিমা: অপাপবিদ্ধ বা নিষ্পাপ।১৭- মোকাররামা: মহৎ ও মাননীয়।১৮- সাফিয়া: সমাদৃতা।১৯- আলেমা: প্রজ্ঞাবান নারি।২০- আলিমা: জ্ঞানি নারি।২১- মাসুমা: নিষ্পাপ নারি।২২- মাগসুবা: যার অধিকার হরণ করা হয়েছে।২৩- মাযলুমা: নির্যাতিতা।২৪- মায়মুনা: ভাগ্যবতি।২৫- মানসুরা: ঐশি সাহায্য প্রাপ্ত নারি।২৬- মোহতাসেমা: সম্মানিতা।২৭- জামিলা: প্রশংসনীয় নারি।২৮- জালিলা: মহীয়ান।২৯- মোআযযামা: শ্রদ্ধেয়া।৩০- হামেলাতুল বালভা বেগায়রি সেকওয়া:সহনশিল ও৩১- হালিফাতুল ইবাদ ওয়াত তাকওয়া:৩২- হাবিবাতুল্লাহ: আল্লাহর পছন্দনিয় নারি।৩৩- বিনতুস সাফওয়া: সমাদৃত কন্যা।৩৪- রুকনুল হুদা: হেদায়াতের রুকুন।৩৫- আয়াতুন নাবুওয়া: নবুওয়াতের নিদর্শন।৩৬- সাফিয়াতুল উসাত: গুনাহকারিদের বা অনুতপ্তদের শেফাআতকারি।৩৭- উম্মুল খাইর: অনুগ্রহকারীদের মাতা।৩৮- তোফফাহাতুল জান্নাত: বেহেস্তের আপেল।৩৯- মোতাহহেরা: মার্জিতা।৪০- সাইয়েদাতুন নেসা: নারি নেত্রি।৪১- বিনতুল মোস্তোফা: হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর কন্যা।৪২- সাফওয়াতুর রাব্বুহা: আল্লাহর নির্বাচিতা নারি।৪৩- মোওতেনুল হেদায়াত: হেদায়াতের কেন্দ্রবিন্দু।৪৪- কুররাতুল আয়নুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.)এর চোখের জ্যেতি।৪৫- বাযয়াতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.) এর দেহের অংশ।৪৬- মাহজাতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.) এর হৃদয়ের অন্তরের শেষ রক্ত বিন্দু।৪৭- বাকিয়াতুল মোস্তোফা: রাসুল (সা.)এর উত্তসূরি।৪৮- হাকিমা: প্রজ্ঞাবান নারি।৪৯- ফাহিমা: বুদ্ধিমতি।৫০- আকিলা: প্রজ্ঞাময়ী।৫১- মাহযুনা: দু:খপীড়িতা।৫২- মাকরুবা: মর্মপীড়িতা।৫৩- আলিলা: পীড়িতা।৫৪- আবেদা: ইবাদতকারিণি।৫৫- যাহেদা: আত্মসংযমি নারি।৫৬- কাওয়ামা: জাগরি।৫৭- বাকিয়া: ক্রন্দনকারিণি।৫৮- বাকিয়াতুন নাবুওয়া: নবুওয়াতের উত্তসূরি।৫৯- সাওয়ামা: যে নারি অধিক রোজা রাখে।৬০- আতুফা: স্নেহশিল।৬১- রাউফা: করুণাময়ি।৬২- হান্নানা: সমানুভবী, সমব্যথী।৬৩- বেররা: হিতকারী নারি।৬৪- শাফিক্বা: সহানুভূতিশীল নারি।৬৫- এনানা: পিড়িতা।৬৬- ওয়ালেদাতুস সিবতাইন: রাসুল (সা.) এর দুই নাতির মা।৬৭- দোহাতুন নাবি: নবির বংশ।৬৮- নুরুস সামাভি: আকাশ পথের রশ্মি।৬৯- যোওজাতুল ওয়াসি: রাসুল (সা.) এর ওয়াসির স্ত্রী।৭০- বাদরুত তামাম: পূর্ণিমার চাঁদ।৭১- গোররাতুল গাররা।৭২- দোররাতুল বাইযা: উজ্জ্বল মণি।৭৩- রুহে আবিহা: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর অন্তর বা রূহ।৭৪- ওয়াসেতাতু কাল্লাদাতুল উজুদ: অস্তিত্বের মাঝে মাধ্যেম স্বরূপ।৭৫- দোরাতুল বাহরুশ শারাফ ওয়াল জুদ: সাগরসমতুল্য মহত্ব এবং বদান্যতা।৭৬- ওয়ালিউল্লাহ: আল্লাহর ওয়ালি।৭৭- সেররুল্লাহ: আল্লাহর রহস্য।৭৮- আমিনাতুল ওয়াহি: ওহির আমানতদার।৭৯- আয়নুল্লাহ: ঐশিদৃষ্টি।৮০- মাকিনাতুন ফি আলামিস সামা: স্বর্গীয় পদমর্যাদার অধিকারিণি।৮১- জামালুল আবা: পিতার সৌন্দর্য।৮২- শারাফুল আবনা: সন্তানদের গর্ব।৮৩- দোররাতুল বাহরিল ইলমে ওয়াল কামাল: প্রজ্ঞা এবং পরিপূর্ণতার সাগরের মূল্যবান পাথর।৮৪- জোহারাতুল ইজ্জা ওয়াল জালাল: মর্যাদাপূর্ণ এবং সম্মানিত মূলবান পাথর।৮৫- মাজমুআতিল মাসেরিল ইল্লিয়া: সর্বত্তোম স্মৃতির কেন্দ্র বা কারণ।৮৬- মেশকাতে নূরুল্লাহ: আল্লাহর নূরের চেরাগদান।৮৭- যোজ্জাজা: বাতিদানের কাঁচ।৮৮- কাবাতুল আমালে লেআহলিল হাজ্জাতি: অভাবগ্রস্তদের কাবা।৮৯- লাইলাতুল কদর: লাইলাতুল কদর (ভাগ্য নির্ধারণের রাত্রি)।৯০- লাইলাতুল মোবারাকা: বরকতময় রাত্রি।৯১- ইবনাতু মান সাল্লাত বিহিল মালায়েকা: মালায়েকারা যার পিছনে নামাজ পড়েছে তাঁর কন্যা।৯২- কারারু কালবে উম্মেহা আল মোআযযামা: মাতার অন্তরের সান্ত্বনা।৯৩- আলিয়াতুল মাহল: উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন।৯৪- সেররিল আযামা: মহিমার রহস্য।৯৫- মাকসুরাতিল যালাআ: পাঁজর ভাঙ্গা।৯৬- রাযিযাস সাদর: যার বক্ষকে বারবার আঘাতের মাধ্যেমে ভাঙ্গা হয়েছে।৯৭- মাগসুবাতুল হাক:যা প্রাপ্য অধিকারকে হরণ করা হয়েছে।৯৮- খাফিয়াল কাবর: যার কবরকে গোপন রাখা হয়েছে।৯৯- মাজহুলাতুল কাদর:অজানা ভাগ্য।১০০- মুমতাহিনা: যাকে পরিক্ষা করা হয়েছে।১০১- আল মাযলুমু যোওজুহা: যার স্বামি হচ্ছে অত্যাচারিত।১০২- আল মাকতুলু ওয়ালাদুহা: যার সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে।১০৩- কাউসার:অধিক সন্তানের অধিকারি।১০৪- হানিয়া: মমতাময়ি। হজরত ফাতেমা (সা.আ.) এর উপনাম সমূহ:১- উম্মুল হাসান।২- উম্মুল হুসাইন।৩- উম্মুল মোহসিন।৪- উম্মুল আয়েম্মা।৫- উম্মুস সিবতাইন।৬- উম্মুল কিতাব।৭- উম্মুল আযহার।৮- উম্মুল মুমিনিন।৯- উম্মুল আখইয়ার।১০- উম্মুল আসমা।১১- উম্মে আবিহা।সূত্র:১- আল মানাকেব, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৫৭।২- ফাতেমাতুয যাহরা বাহজাতে কালবে মুস্তোফা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৩।৩- আল লোমআতুল বায়যা, পৃষ্ঠা ৫০।৪- নোখবাতুল বায়ান ফি তিফসিলে সাইয়েদাতিন নেসওয়ান, পৃষ্ঠা ৮৬।৫- মিযানুল এতেদাল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৪।৬- এহকাকুল হাক্ব, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৫২কাতিলে জাহারা বেশুমার লা'নাতুল্লাহিপ্রচারে রাকিব আলী ইমামি

বেলায়েতের আয়াতের ব্যাকরণগত দিক সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক পোস্টপর্ব (((((১)))))কালামশাস্ত্রে আয়াত এবং রেওয়ায়েতসমূহের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত দিক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুরূপ ভাবে বেলায়েত ও নেতৃত্বের বিষয়টিও কালামশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এই লেখনীতে বেলায়েতের আয়াত (সূরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত) সম্পর্কে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদ তাদের মতের সপক্ষে যে সকল ব্যাকরণগত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই বিষয়টি উপস্থাপন করতে গিয়ে ইসলামী বিশ্বের দু’জন প্রসিদ্ধ কালামশাস্ত্রবিদ ‘তাজরিদুল ইতিকাদ’ গ্রন্থের রচয়িতা গবেষক তুসী এবং এ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকারক ফাজেল কুশচীর মতকে মূল ধরা হয়েছে। প্রথমেই এই আয়াত দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েত ও খেলাফতকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে গবেষক তুসীর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রমাণ এবং ব্যাকরণগত যুক্তি বর্ণনা করা হয়েছে। অতপর তার মত খণ্ডন করে গবেষক ফাজেল কুশচী যে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তা উল্লেখ করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।ভূমিকা : বেলায়েত ও নেতৃত্ব সম্পর্কিত আলোচনা কালাম শাস্ত্রের উৎপত্তির শুরু থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। শাহরেস্তানীর মতে রাসূল (সা.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল তা তার স্থলাভিষিক্তি এবং পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়েই। (শাহরেস্তানী, আল-মেলাল ওয়ান নেহাল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৪।) মুসলমানরা এ বিষয়টি নিয়ে দুদলে বিভক্ত হয়। তাদের একদল বিশ্বাস করে যে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর পর হযরত আলী (আ.) কে খলিফা হিসাবে মনোনীত করেছেন। অপরদল বিশ্বাস করে তিনি কাউকেই নেতা নিযুক্ত করে যাননি।তাদের প্রথম দল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পর পরই হযরত আলী (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন আকলী (বুদ্ধিবৃত্তিক) এবং নাকলী (কোরআন ও হাদীসের) দলীল উপস্থাপন করে থাকেন। নাকলী দলীল হিসাবে তারা কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূল (সা.) এর হাদীস ব্যবহার করে থাকেন।তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, সূরা আল-মায়েদার ৫৫ নং আয়াত যা আহলে বাইতের অনুসারীদের মধ্যে বেলায়েতের আয়াত নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই আয়াতটি হচ্ছে-إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَতোমাদের অভিভাবক হচ্ছেন কেবল আল্লাহ ও তার রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করেছে আর রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেছে।আহলে বাইতের অনুসারীদের বিশ্বাস এই আয়াত অকাট্যভাবে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনীন (আ.) এর খেলাফতকে প্রমাণ করে।গবেষক তুসী তার “তাজরিদুল ই’তিকাদ” গ্রন্থে নবী (সা.) এর উত্তরাধিকারী যে ঐশীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, তা দুই দলীল যথা নিষ্পাপতা (ইসমাত) এবং রাসূল (সা.) এর সীরাত বা কর্মনীতি দ্বারা প্রমাণ করে বলেছেন: যে সব দলীল প্রমাণ হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পরপরই হযরত আমিরুল মু’মেনিন আলী (আ.) এর ইমামত ও খেলাফতের দিকে ইঙ্গিত করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেলায়েতের আয়াত। কেননা এই আয়াতে যে সব গুণাবলীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে একমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই তার সমাবেশ ঘটেছে। (তুসী, তাজরিদুল এ’তেকাদ, পৃষ্ঠা নং-২২৫)তাজরিদুল ই’তিকাদ এর ব্যাখ্যাকারক আল্লামা কুশচী, গবেষক তুসীর বক্তব্যকে এভাবে বর্ণনা করেছেন :১. সকল মুফাসসির এব্যাপারে একমত যে, এ আয়াতটি হযরত আলী (আ.) এর শানে অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়েছিল যখন হযরত আলী (আ.) রুকুরত অবস্থায় একজন অসহায় নিঃস্ব ব্যক্তিকে নিজের আংটি দান করেছিলেন।২. «انّما» (ইন্নামা) শব্দটি মূলত আরবি ব্যাকরণশাস্ত্রে হাসর (حصر) বা সীমাবদ্ধতা নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং কোরআন ও হাদীসের বর্ণনাতেও এর সপক্ষে দলীল রয়েছে।৩. «ولي» শব্দটি কখনো সাহায্যকারী অর্থে আবার কখনো কোন বিষয়ে কর্তৃত্বকারী এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন যখন বলা হয়: স্ত্রীর বড়ভাই তার অভিভাবক, অথবা শাসক হলেন অভিভাবকহীনের অভিভাবক এবং অনুরূপভাবে রক্তের দাবিদার ও উত্তরাধিকারীরা নিহত ব্যক্তির রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকারপ্রাপ্ত। উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই «ولي» শব্দটি (কোন কিছুর ওপর) কর্তৃত্বের অধিকারী বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।এই আয়াতেও ওয়ালি শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে অর্থাৎ কর্তৃত্বের অধিকারী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই আয়াতে হাসর (সীমাবদ্ধতা নির্দেশক অব্যয় ‘ইন্নামা’) থাকার কারণে বেলায়াত (শাসনক্ষমতা, কর্তৃত্ব) শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হতে পারেনা। কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍঅর্থাৎ সকল মুসলমান নরনারী পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। (সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং-৭১)।সুতরাং সূরা মায়েদার আলোচ্য আয়াতটিতে «ولي» শব্দটি সাহায্যকারী অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার পক্ষে কোন দলীল প্রমাণ নেই কারণ তাহলে এ (সাহায্যকারী) অর্থটি কেবল ঐসব মুসলমান যারা রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।৪. «ولي» ওয়ালি শব্দের অর্থ ইমাম বা নেতা।৫. যেহেতু আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলীর সমাবেশ শুধুমাত্র আলী (আ.) এর মধ্যেই ঘটেছে সেহেতু একমাত্র তিনিই ইমামত বা নেতৃত্বের যোগ্য। (কুশচী, শারহে তাজরিদুল ইতিকাদ, পৃ-৩৬৮।)কালাম শাস্ত্রের বিভিন্ন গ্রন্থে দু’দল কালাম শাস্ত্রবিদের মধ্যে এ বিষয়ে আয়াতটির ব্যাকরণগত দিক নিয়ে বেশ বিতর্ক পরিলক্ষিত হয়। পাঁচটি ব্যাকরণগত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। এ পাঁচটি বিষয় যথাক্রমে :১. «انّما» ইন্নামা এর সীমাবদ্ধতা।২. «هم راکعون» অবস্থা নির্দেশক বাক্য (جملة حالية), না কি সংযোজিত (معطوف বা সম্বন্ধসূচক) বাক্য?৩. রুকু শব্দের অর্থ।৪. বহুবচনমূলক শব্দরূপকে একবচনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ।৫. «ولی» ওয়ালি শব্দের অর্থ।

যায়নাব বিনতে আলী আঃতার অতি মূল্যবান কিছু গুন অবশিষ্টযেটা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ সালামুল্লা আলাইহা থেকে পাওয়া যায়হযরত যয়নাব (আ.) যখন ভূমিষ্ঠ হলেন তখন তাঁর মা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) আরবদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী তাঁর নাম রাখার জন্য নিয়ে গেলেন আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আ.)-এর কাছে। হযরত আলী (আ.) বললেন, মহানবী (সা.) যেহেতু দূরে আছেন সেহেতু তিনি তাঁকে বাদ রেখে মেয়ের নাম রাখবেন না।যখন মহানবী (সা.) গৃহে ফিরলেন তখন আমীরুল মুমিনীন নবজাতক সন্তানটিকে কী নামে ডাকা হবে তা তাঁর কাছে জানতে চাইলেন। মহানবী (সা.) জবাবে বললেন, আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে না জানা পর্যন্ত তিনি কিছু বলতে পারবেন না এবং অপেক্ষা করতে বললেন।অতঃপর হযরত জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর শুভেচ্ছা তাঁকে জানালেন এবং বললেন, শিশুর নাম যেন যয়নাব রাখা হয় সেটাই আল্লাহর ইচ্ছা। এই শিশুকে যে একদিন মর্মন্তুদ ঘটনাবলি মোকাবিলা করতে হবে সে তথ্যও জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-কে দিলেন। মহানবী (সা.) এই তথ্য অবগত হয়ে বিষণ্ন হলেন এবং বললেন, ‘এই মেয়ের দুঃখে যে কাঁদবে আল্লাহ তাআলা তাকে (ইমাম) হাসান ও হুসাইনের জন্য তাঁর (যয়নাবের) কান্নার অনুরূপই পুরস্কার প্রদান করবেন।’ হযরত যয়নাব (আ.)-এর জন্ম ৫ম, ৬ষ্ঠ অথবা ৭ম হিজরিতে। এ নিয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। সৎগুণাবলি, প্রশংসনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং চমৎকার আচরণের মধ্যেই তাঁর নাম বা পদবির সত্যিকার প্রতিফলন ঘটেছে। যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষালাভ না করলেও হযরত যয়নাব (আ.) ইসলামী নীতিমালা ও এর মূল শাখা-প্রশাখা এবং শরীয়ত ও হাদিসশাস্ত্র সম্বন্ধে প্রভূত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। বলা যায়, আল্লাহ তাআলাই তাঁকে এগুলো দান করেছিলেন। সহনশীলতা ও দয়া ছিল তাঁর বিশেষ গুণ।একমাত্র তাঁর মা হযরত ফাতিমা (আ.) ব্যতীত সমসাময়িককালে হযরত যয়নাব (আ.)-ই ছিলেন সবচেয়ে মহীয়সী মহিলা। তিনি এমনকি তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি ধার্মিক বা পরহেজগার ছিলেন। তিনি আল্লাহর নবী (সা.)-এর পরিবারের একজন সদস্যা হওয়ার কারণে অনেক অভিজাত আরব পরিবার থেকে তাঁর জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে, কিন্তু তাঁর পিতা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর ঐ কথার উপরই অবিচল রইলেন, যেখানে তিনি (মহানবী) বলেছেন, ‘আমাদের কন্যারা আমাদের ছেলেদের জন্য এবং আমাদের ছেলেরা আমাদের কন্যাদের জন্য।’ তিনি তাঁর ভাইয়ের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে জাফরের হাতে হযরত যয়নাব (আ.)-কে সমর্পণ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনে জাফর ছিলেন একজন পরহেজগার তরুণ। মহানবী (সা.)-এর বহু হাদীস তিনি স্মরণে রেখেছিলেন। তিনি বেশিরভাগ সময়ই আমীরুল মুমিনীন, ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সান্নিধ্যে থাকতেন। তিনি তাঁর চাচার সঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধে, সিফফিন ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি কারবালা যুদ্ধের সময় হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গী হতে সক্ষম হননি। তিনি তাঁর দুই ছেলেকে ইমামের সফরসঙ্গী করে পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁরা দু’জনই কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনায় শাহাদাত বরণ করেন। এই শোকাবহ ঘটনার খবর যখন আবদুল্লাহ ইবনে জাফরের কাছে পৌঁছে তখন তিনি বলে ঊঠলেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ অর্থাৎ আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। তিনি সূরা বাকারার ঐ অংশ পাঠ করতে লাগলেন যাতে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সূরা বাকারা : ১৫৬)আক্ষরিক এবং তাত্ত্বিক উভয় অর্থেই এর মানে হচ্ছে আমরা আল্লাহরই এবং তিনিই আমাদের মালিক। সুতরাং তিনি আমাদের জন্য যা কামনা করেন সেটাই মঙ্গলজনক ধরে নিতে হবে এবং শেষ বিচারের দিন প্রতিদান বা পুরস্কার পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে আমরা প্রত্যাবর্তন করব।হযরত যয়নাব (আ.) ও আবদুল্লাহ ইবনে জাফরের ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে ছিল। তাঁরা হচ্ছেন মুহাম্মাদ, আওন আকবর, আলী ও আব্বাস এবং উম্মে কুলসুম।হযরত যয়নাব (আ.) যখনই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর গৃহে যেতেন তখন ইমাম তাঁকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর নিজের আসনে তাঁকে উপবেশন করতে বলতেন। কোন মহিলার প্রতি এ রকম শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ঘটনা তখন সচারাচর দেখা যেত না। তিনি তাঁর পিতা আমীরুল মুমিনীনের মতোই স্পষ্টভাষী ও বাগ্মী ছিলেন। তা না হলে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) চতুর্থ ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর দায়িত্বভার হযরত যায়নাবের উপর দিয়ে যেতেন না।দয়া, ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতায় তিনি ছিলেন তাঁর মায়ের মতোই। এ জন্যই তাঁর মা মৃত্যুশয্যায় ভাইদের দেখাশোনার দায়িত্বভার তাঁর হাতেই অর্পণ করে বলেছিলেন, ‘তাদের প্রতি তুমি যত্নবান থাকবে। তাদের দেখাশোনার ব্যাপারে দায়িত্ব পালনে তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত হলে।’ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে একমাত্র তাঁর মা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)-এর সাথেই তাঁর সাদৃশ্য রয়েছে। তিনি কখনো তাহাজ্জুদের নামায ত্যাগ করেননি। এমনকি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) যেদিন কারবালায় শহীদ হলেন সেদিনও তিনি তাহাজ্জুদের নামায আদায় থেকে বিরত থাকেননি। সেদিনের সেই মর্মান্তিক বিপর্যয়কর অবস্থা, গোলযোগ, সংশয় ও ভীতিকর পরিস্থিতিও তাঁকে তাহাজ্জুদ নামায পড়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘কারবালার চরম পরিস্থিতি ও মর্মান্তিক ঘটনা সত্ত্বেও আমাদের যখন দামেস্ক নিয়ে যাওয়া হলো, আমার ফুফু কখনো মধ্য রাতের নফল নামায বা তাহাজ্জুদ থেকে বিরত থাকেননি।’ হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) যখন বোনের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেন তখন তিনি তাকে এ ধরনের নামাজের মাধ্যমেই স্মরণ করতে বলেছিলেন।তাঁর মতো ধৈর্য, আত্মসংযম, সহনশীলতা, স্থৈর্য কিংবা শান্ত স্বভাব যে কোন মানুষের মধ্যে থাকলে তা তাকে যে কোন ধরনের উত্তেজনা, অন্যায়, দুঃখ-কষ্ট বা জীবন ও সময়ের উত্থান-পতনে অবিচল থাকতে সাহায্য করে। আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর পূর্ণ আত্মসমর্পণ সম্পর্কে একটি উদাহরণই যথেষ্ট। যখন তিনি কারবালার প্রান্তরে তাঁর শহীদ ভাই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মস্তকবিহীন লাশের কাছে দাঁড়িয়ে দু’হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এই ক্ষুদ্র কুরবানি গ্রহণ কর, যিনি তোমার পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন।’ পবিত্র কুরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কুরবানির বিনিময়ে। আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সূরা সাফফাত : ১০৭-১০৯)আমাদের নিজেদের ধ্বংসের জন্য নয়; বরং আরো উৎকর্ষ সাধনের জন্য যদি আমরা আত্মবিসর্জন দেই তা হলে আল্লাহ তাআলার কাছে তা হবে অর্থবহনিবেদক :মুহাম্মাদ আলী হুসাইন জাহিদ।

পবিত্র কুরআন বিরোধী কিছু হাদিস((((((৬))))))১৮. কুরআনে ‘হাদিস ২ প্রকার, মেশকাত শরীফে ‘হাদিস ২৮ প্রকার!হাদিস শব্দের অর্থ কথা, বাণী, বৃত্তান্ত, প্রসংগ বা, উপদেশ। আল্লাহর কিতাবে দুই প্রকার হাদিসের উল্লেখ আছে। যথা- ১. আহ্সানাল হাদিস ও ২. লাহ্ওয়াল হাদিস।কুরআনে দেখুন১. আহ্সানাল হাদিসঃ ‘আল্লাহর অবতীর্ণ করেছেন আহ্সানাল হাদিস১ (উত্তম বাণী) সম্বলিত কিতাব যা সুসমঞ্জস এবং যা পুন: পুন: আবৃত্তি করা হয়। তাতে, যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গাত্র রোমাঞ্চিত হয়, অতঃপর তাদের দেহমন বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এ-ই (আহ্সানাল হাদিসই) আল্লাহর পথনির্দেশ (৩৯:২৩)। [কুরআনের প্রতিটি আয়াতই আল্লাহ্র হাদিস। ৬,২৩৬ টি আয়াত বা হাদিস একত্রিভাবে কুরআনকে আল্লাহ্ বলেছেন ‘আহসানাল হাদিস সম্বলিত কিতাব’।] ‘এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার নিকট তিলাওয়াত করছি যথাযথ ভাবে। সুতরাং আল্লাহ্ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন হাদিসে বিশ্বাস করবে? (৪৫:৬)। ‘সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাবাদীদের জন্য। সুতরাং তারা এর (কুরআনের) পরিবর্তে আর কোন হাদিসে বিশ্বাস স্থাপন করবে? (৭৭:৪৯-৫০)। [দীন হিসেবে আল্লাহর হাদিসের সাথে অন্য হাদিসের অনুসরণ করা যাবে কি?]২. লাহ্ওয়াল হাদিসঃ ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য লাহ্ওয়াল হাদিস২ (অসার বাণী) ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহ্-প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি (৩১:৬)। [‘আহ্সানাল হাদিসের’ অনুসরণ না করলেই শাস্তি। তাহলে ‘লাহ্ওয়াল হাদিসের’ প্রয়োজন আছে কি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘রাসূলুল্লাহ্ তাঁর নবি- জিবনে যা বলেছেন, করেছেন বা অন্যের কোন কথা বা কার্যের প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন তাকে সূন্নাহ বলে। এর অপর নাম হাদিস;-মেশকাত-১/জ্ঞাতব্য বিষয় থেকে। ‘রাসূলুল্লাহ্ (স:)-এর সমস্ত বাণি ও কর্মকে বলা হয় হাদিস- শিক্ষাবর্ষ- ২০১৪, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, সপ্তম শ্রেণি থেকে।‘হাদিস অর্থ কথা বা বাণি। ... হাদিসের মূল বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে হাদিসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ক. কাওলি, খ. ফি’লি এবং গ. তাকরিরি।ক. কাওলিঃ মহানবি (স.)-এর মুখনিঃসৃত বাণীকে ‘কাওলি হাদিস বলে।খ. ফি’লিঃ যে হাদিসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ স্থান পেয়েছে তাকে ফি’লি হাদিস বলে।গ. তাকরিরিঃ মহানবি (স.)-এর সামনে কোনো কথা বলেছেন কিংবা কোন কাজ করেছেন। তিনি তা নিজে করেন নি এবং তাতে বাধাও দেন নি বরং মৌনতা অবলম্বন করে তা সম্মতি বা অনুমোদন দিয়েছেন। এরূপ অবস্থা বা বিষয়ের বর্ণনা যে হাদিসে এসেছে সে হাদিসকে তাকরিরি হাদিস বলা হয়। সনদ বা রাবির পরম্পরার দিক থেকে হাদিস আবার তিন প্রকার। যথা- ক. মারফু, খ. মাওকুফ ও গ. মাকতু।মেশকাতে উপরোক্ত ৬ (ছয়) প্রকার হাদিস ছাড়াও আরও হাদিসের প্রকার ভেদ দেখুন-১. মোত্তাছিল, ২. মোনকাতে, ৩. মোরছাল, ৪. মোআল্লাক, ৫. মোদাল্লাছ, ৬. মোজ্তারেব, ৭. মোদ্রাজ, ৮. মোছ্নাদ, ৯. মাহ্ফুজ ও শাজ¦, ১০. মারূফ ও মোন্কার, ১১. মোআল্লাল, ১২. মোতাবে’ ও শাহেদ, ১৩. ছহীহ, ১৪. হাছান, ১৫. জঈফ, ১৬. মাওজু, ১৭. মাত্রূক, ১৮. মোব্হাম, ১৯. গরীব, ২০. আজীজ, ২১. মাশ্হূর, ২২. মোতাওয়াতের হাদিস। [সু-প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত ২৮ প্রকারের হাদিসগুলোর মধ্যে রহমানের (দয়াময়ের) হাদিস (২৬:৫), মূসার হাদিস (২০:৯; ৭৯:১৫), ইব্রাহীমের মেহমানদের হাদিস (৫১:২৪), সৈন্য বাহিনীর হাদিস (৮৫:১৭) ও কিয়ামতের হাদিসের (৮৮:১) উল্লেখ নেই। [আল্লাহর ২ প্রকারের হাদিস বাদ দিয়ে মানব রচিত ২৮ প্রকারের হাদিসের অনুসরণ করলে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা হয় কি?]১৯. কুরআনে ‘সূন্নত আল্লাহর, বুখারি-মুসলিমে ‘সূন্নত রাসূলের!কুরআনে দেখুন, ‘আমার রাসূলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ সূন্নত এবং তুমি আমার (আল্লাহর) সূন্নতের কোন পরিবর্তন পাবে না (১৭:৭৭)। পূর্বে যেসব নবী অতীত হয়ে গিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এ-ই ছিল আল্লাহর সূন্নত। আল্লাহর সূন্নত সুনির্ধারিত (৩৩:৩৮)। ‘তুমি কখনও আল্লাহর সূন্নতে কোন পরিবর্তন পাবে না (৩৩:৬২; ৩৫:৪৩)। ‘তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না। আল্লাহ্র সূন্নত পূর্ব হতেই চলে আসছে এবং সে ক্ষেত্রে কাফিররা ক্ষতিগ্রস্ত হয় (৪০:৮৫)। ‘এ-ই আল্লাহর সূন্নত- প্রাচীন কাল হতে চলে আসছে, তুমি আল্লাহর সূন্নতের কোন পরিবর্তন পাবে না (৪৮:২৩)। [সূন্নত অর্থ আইন, বিধান, রীতি বা প্রথা ইত্যাদি। আল্লাহর কিতাবে রাসূলের সূন্নত নামে কোন সূন্নত আছে কি?]বুখারি-মুসলিমে ... দেখুন, ‘লোকেরা আমার সূন্নত পরিবর্তন করে অন্য তরীকা গ্রহণ করবে (মেশকাত-১০/৫১৪৯)। ‘যে আমার সূন্নত হতে বিমুখ হবে সে আমার তরীকার নয় (মেশকাত-১/১৩৮)। ‘আমার পর তোমরা অনেক মতভেদ দেখবে, ‘তখন তোমরা আমার সূন্নতকে এবং সৎপথ প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সূন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরবে (আবূ দাঊদ, তিরমিযি, ইবনে মাযাহ ও আহমদ);-মেশকাত-১/১৫৮। ‘যে ব্যক্তি আমার সূন্নতসমূহের এমন কোন সূন্নতকে জিন্দা করেছে যা আমার পর পরিত্যাক্ত হয়ে গিয়েছিল তার জন্য সে সকল লোকের সওয়াবের পরিমাণ সওয়াব রয়েছে যারা এর সাথে আমল করবে (তিরমিযি ও ইবনে মাযাহ);-মেশকাত-১/১৬১, ১৬২। ‘যে আমার সূন্নতকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালোবাসে আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে (তিরমিযি);-মেশকাত-১/১৬৬। [আল্লাহর সূন্নতের সাথে রাসূলের সূন্নত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সূন্নত স্বীকার করলে, সূন্নতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্, রাসূল ও খোলাফায়ে রাশেদীন সমান হয়ে যায় অর্থাৎ শিরক হয়।২০. কুরআনে ‘রাসূলের সংগীদের সমযোগ্যতা অর্জন, প্রচলিত হাদিসে‘রাসূলের সূন্নতকে দৃঢ়ভাবে ধর!কুরআনে দেখুন, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্মদেশে নহর প্রবাহিত, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে (৯:১০০)। [জান্নাতে যেতে হলে রাসূলের সংগী মুহাজির ও আনসারদের মত গুণাবলী অর্জন প্রয়োজন নয় কি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘যে ব্যক্তি আমার উম্মত বিগড়ায়ে যাওয়ার কালে আমার সূন্নতকে দৃঢ়ভাবে আটকায়ে ধরবে তার জন্য একশত শহীদের সওয়াব রয়েছে (তিরমিযি, বায়হাকী);-মেশকাত-১/১৬৭। [সূন্নত আল্লাহর (৩৩:৩৮, ৬২; ৩৫:৪৩; ৪০:৮৫; ৪৮:২৩)। রাসূলের সূন্নতই নাই। সুতরাং হাদিসটি মিথ্যা নয় কি?]লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন