পোস্টগুলি

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআললাহুমমা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদমা খাতুনে জান্নাত ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ উনার নিজস্ব সম্পত্তিবাগে ফাদাকপর্ব 3ফলতঃ এ ব্যবস্থার কারণে আয়াতটির সাধারণত্ব প্রভাবিত হয়নি বা এটা সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধানের বিপরীত কিছু নয়। সুতরাং রাসূলের মতানুসারে সত্যবাদিতা গুণের জন্য একজন সাক্ষীকে দুজন সাক্ষীর সমান ধরে নেয়া হয়ে থাকে। তাহলে ফাতিমার পক্ষে আলী ও উন্মে আয়মনের সাক্ষ্য কি তাদের নৈতিক মহত্ত্ব ও সত্যবাদিতার জন্য যথেষ্ট ছিল না ? এছাড়া ,উক্ত আয়াতে এ দুপথ ছাড়া দাবী প্রতিষ্ঠিত করার আর কোন পথ উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে কাজী নুরুল্লা মারআশী (৯৫৬/১৫৪৯– ১০১৯ / ১৬১০) লিখেছেনঃউম্মে আয়মনের সাক্ষ্য অসম্পূর্ণ বলে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে ভুল করেছে। কারণ কোন কোন হাদিসে দেখা যায়। একজন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রদান করা বৈধ এবং তাতে কুরআনের নির্দেশ ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করা হয়নি । কারণ এ আয়াতের গুঢ়ার্থ হলো দুজন পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে এবং তাদের সাক্ষ্যই যথেষ্ট । এ কথা দ্বারা এটা বুঝায় না যে ,যদি সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্র থেকে থাকে তা গ্রহণীয়া হবে না এবং সে ভিত্তিতে রায় দেয়া যাবে না এটাই হচ্ছে আয়াতটির মূলভাব । কোন কিছুর ভাবার্থ চূড়ান্ত যুক্তি নয় । তাই এ ভাবার্থও গ্রাহ্য করা যায় না । বিশেষ করে হাদিস এর বিপরীত ভাব ব্যক্ত করেছে । এ ভাবার্থকে এড়িয়ে গেলে তা আয়াত অমান্য করা বুঝায় না । দ্বিতীয়তঃ আয়াতটি দুটি বিষয়ের যে কোনটি বেছে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে । তা হলো দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী । যদি হাদিস দ্বারা তৃতীয় একটি বিষয় বেছে নেয়ার জন্য যোগ করা হয় তবে তাতে কি করে কুরআনের আয়াত লঙ্ঘিত হয়েছে বলা যাবে ? যাহোক এতে বুঝা যাচ্ছে যে ,দাবীদার দুজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করতে বাধ্য নয়। কারণ যদি কোন দাবীতে কোন সাক্ষী না থেকে থাকে তাহলে আল্লাহর নামে শপথ করে। বললেই তার দাবী আইনসিদ্ধ হবে এবং তার অনুকূলে সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে। এতদসংক্রাক্ত বিষয়ে ১২ জনের অধিক সাহাবা বর্ণনা করেছেন যে ,আল্লাহর রাসূল শপথ গ্রহণ পূর্বক একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন ।রাসূলের (সা.) কতিপয় সাহাবা ও জুরিসপ্রুডেন্সের কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তি ব্যাখ্যা করেছেন যে ,এ সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে অধিকার ,সম্পদ ও লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত এবং এ সিদ্ধান্ত আবু বকর ,উমর ,উসমান খলিফাত্রয়ও মেনে চলতেন (নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১২৮ ;তায়ালিসী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৮ – ৩০৯ ;তিরমিজী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৬২৭ – ৬২৯ ;মাযাহ ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৭৯৩ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৪৮ ,৩১৫ ,৩২৩ ;৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩০৫ ;৫ম খণ্ড ২৮৫ ;আনাস ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৭২১ – ৭২৫ ;শাফী ,১০ম খণ্ড ,পৃঃ ১৬৭ – ১৭৬ ;কুন্তি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২১২ – ২১৫ ;শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২০২ ;হিন্দি ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩) ।যেখানে শপথ করে সাক্ষ্য দিলে একজন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়ার বিধান রয়েছে সেক্ষেত্রে যেহেতু আবু বকরের দৃষ্টিতে ফাতিমার উপস্থাপিত সাক্ষী অসম্পূর্ণ ছিল ,সেহেতু তিনি ফাতিমার শপথ নিয়ে তাঁর অনুকূলে রায় দিতে পারতেন। কিন্তু এখানে মূল উদ্দেশ্যই ছিল ফাতিমাকে বঞ্চিত করে আলী পরিবারকে অভাব অনটনে নিপতিত করা এবং ফাতিমার সত্যবাদিতাকে কলঙ্কিত করা যাতে করে ভবিষ্যতে তার প্রশংসা চাপা পড়ে যায়।যাহোক যখন রাসূলের দানের ভিত্তিতে ফাতিমার দাবী এসব তালবাহানা করে বাতিল করে দেয়া হয়েছিল তখন তিনি দাবী করলেন যে ,রাসূলের উত্তরাধিকারিণী হিসাবে তিনিই ফাদাকের মালিক। এ বিষয়ে ফাতিমা বলেছিলেন ?যদিও আপনি রাসূলের দানকে অস্বীকার করছেন ,কিন্তু ফাদাক ও খাইবারের রাজস্ব এবং মদিনার কাছে কিছু জমি যে রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি একথা অস্বীকার করতে পারবেন না । কাজেই আমিই রাসূলের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী । কিন্তু আবু বকর নিজেই একটি হাদিস ব্যক্ত করে ফাতিমার উত্তরাধিকারিত্ব অস্বীকার করলেন । তিনি বললেন রাসূল বলেছেন ,“ আমরা নবীগণের কোন উত্তরাধিকারী নেই ;আমরা যা কিছু রেখে যাই তার সবই জাকাত হিসাবে বায়তুল মাল ।বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৯৬ ;৫ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ,২৬ ,১১৫ ,১১৭ ;৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫ ; নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩ – ১৫৫ তিরমিজী ,৪র্থ খণ্ড পৃঃ ১৫৭ – ১৫৮ ;তায়ালিসী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪২ – ১৪৩: নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;হাম্বল ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪ ,৬ ,৯ ,১০: শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৩০০ ;সাদ , ২য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৬ – ৮৭ ;তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৮২৫ বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৭৩ – ১৭৪) |আবু বকর ছাড়া রাসূলের এহেন উক্তি আর কারো জানা ছিল না। এমনকি সাহাবাদের মধ্যে আর কেউ এমন কথা শোনেনি। জালালুদ্দিন আবদুর রহমান সুয়ুতী (৮৪৯/১৪৪৫ – ৯১১/১৫০৫) এবং শিহাবুদ্দিন ইবনে হাজর হায়তামী (৯০৯/১৫০৪ – ৯৭৪/১৫৬৭)আগের 1 নাম্বার 2 নাম্বার পোস্ট এখানে দেয়া হলhttps://www.facebook.com/100027086030151/posts/504876190425244/?app=fblhttps://www.facebook.com/100027086030151/posts/505996093646587/?app=fbl

ঈদে বিলাদতে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ২০শে জুমাদাল উখরা শরীফমহান আল্লাহ পাক উনার মহান কুদরত হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সীমাহীন খুছুছিয়ত মুবারক হতে কতিপয় খুছুছিয়ত মুবারক-আল্লামা আবূ মুহম্মদ হুসাইন, ঢাকা।পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,১. সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, ত্বাহিরা, ত্বয়িইবাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম জিসিম মুবারকের গোশত মুবারক উনার এক বিশেষ টুকরা মুবারক। সুবহানাল্লাহ!২. উনার পবিত্রতম মুহব্বত-ই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম মুহব্বত। সুবহানাল্লাহ!৩. উনি পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মূল-মধ্যমণি। সুবহানাল্লাহ!৪. উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নসব বা বংশ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!৫. তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ছূরত মুবারক, সীরত মুবারক উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। সুবহানাল্লাহ!৬. তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হাক্বীক্বী আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!৭. উনার সাদী মুবারক স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সুসম্পন্ন করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!৮. নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতের নাজাতের জন্য যে দোয়া মুবারক করতেন ঠিক অনুরূপভাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিও মুসলিম উম্মাহর নাজাতের জন্য সারারাত কেঁদে কেঁদে মুনাজাত মুবারক-এ মশগুল থাকতেন। সুবহানাল্লাহ!৯. উনার পবিত্রতম মুহব্বতে উনার মুবারক তাশরীফে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুহব্বতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং পবিত্রতম হাত মুবারক ধরে চুমু মুবারক দিয়ে স্বীয় আসন মুবারকে বসিয়ে দিতেন। সুবহানাল্লাহ!১০. উনিই হচ্ছেন পবিত্র জান্নাতী মহিলা উনাদের সাইয়্যিদাহ।১১. উনাকে ও উনার পবিত্রতম আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সবাইকে পবিত্রতম ঘুমের সময় হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তিনিসহ অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা স্বীয় নূরের পাখা দ্বারা বাতাস করতেন। সুবহানাল্লাহ!১২. উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্রতম জান্নাত থেকে উনার জন্য পবিত্রতম পোশাক মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ!১৩. তিনি ‘যাহরা’ অর্থৎ ‘কুসুম কলি’১৪. তিনি ‘ত্বাহিরা’ তথা পবিত্রতম থেকে পবিত্রতম। উনার পবিত্রতম ৬ জন আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই বাদ আছর যমীনে তাশরীফ মুবারক নিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে যথারীতি পবিত্র আছর নামায আদায়ের পর পবিত্র মাগরিব নামায আদায় করেছেন। সাধারণত সন্তান আগমনের পরে যে স্বভাবিক মাজুরতা দেখা দেয় তা থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। সুবহানাল্লাহ! তিনি انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت و يطهركم تطهيرا ১৫. এই পবিত্রতম আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছদাক। সুবহানাল্লাহ!১৬. তিনি পবিত্র পর্দা পালনে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী নমুনা। পবিত্র পর্দা পালনে যে দৃষ্টান্ত মুবারক রেখেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বে-নযীর ঘটনা। সুবহানাল্লাহ!১৭. খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন হাশরবাসীদের প্রতি এ ফরমান মুবারক জারি করবেন যে, হে হাশরবাসী তোমরা সকলেই তোমাদের দৃষ্টিকে অবনত করো, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, খাতুনে জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ! সেই মুহূর্ত মুবারকে উনাকে ৭০ হাজার জান্নাতী হুর উনারা ইস্তিকবাল জানাবেন। উনাদের বেষ্টনী মুবারকের মধ্য দিয়ে অতিদ্রুত গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে পবিত্র জান্নাত মুবারকে প্রবেশ করবেন। সুবহানাল্লাহ!১৮. মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্রতম মুহব্বতে উম্মতের নাজাতের জন্য উনি স্বয়ং উনার পবিত্রতম জান-মালসহ উনার পবিত্রতম কালিজা উনার টুকরা দুই আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে কুরবান করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!১৯. তিনি বাতাসের চেয়েও অধিক দ্রুতগতিতে নিজের মাল-সম্পদ গরিব দুঃখীদের মুহব্বতে অকাতরে বিলিয়ে দিতেন। এ ব্যাপারে তিনি ছিলেন বে-নযীর, একক ও অদ্বিতীয় অযুদ পাক। সুবহানাল্লাহ!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদসকল মুমিন মুমিনাত কে জানাই অনেক অনেক মোবারক বাদপঞ্চম ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী বাকের (আ.) শুভো জন্মদিনরাসূলে কারিমের পবিত্র আহলে বাইতের মহান ইমাম হযরত বাকের (আ) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। শুভ এই দিনে নবীজী গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছিলেন। সম্ভবত আর কখনোই নবীজীর বক্তব্যের গুরুত্বটা এরচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে নি। তিনি বলেছিলেন-'হে জনগণ! আমি দুটি মূল্যবান জিনিস তোমাদের জন্যে রেখে গেলামঃ একটি আল্লাহর কিতাব কোরআন এবং অপরটি আমার আহলে বাইত।যতোদিন তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে ততোদিন তোমরা গোমরাহ হবে না।'এই দুটি মৌলিক বিষয় আজকের দিনে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের মাপকাঠি হিসেবে ইসলামী উম্মাতের তরী-কে মুক্তির উপকূলে পৌঁছাতে পারে। যাই হোক আহলে বাইতের এই মহান ইমামের জন্মদিনে তাঁরি জীবনাদর্শ থেকে খানিকটা আলোকপাত করে নিজেদের ধন্য করার চেষ্টা করবো।ইমাম বাকের (আ) ৫৭ হিজরীতে মদীনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ইমাম সাজ্জাদ (আ)। তাঁর জন্মের বহু বছর আগে নবীজী জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী নামে তাঁর এক সঙ্গীকে বলেছিলেন-'হে জাবের! তুমি আমার পরে জীবিত থাকবে এবং আমার এক উত্তর প্রজন্ম দেখতে ঠিক আমার মতো হবে,তার নামও হবে আমার নামে,তুমি তাকে দেখতে পাবে। যেখানেই তুমি তাকে দেখতে পাও আমার সালাম পৌঁছে দিও।' বহু বছর পর জাবের শেষ পর্যন্ত ইমাম বাকের (আ) এর খেদমতে হাজির হয়ে রাসূলে খোদার সালাম তাঁকে পৌঁছে দেন।হিজরী প্রথম শতাব্দির শেষের বছরগুলোতে একদিকে উমাইয়া শাসকদের অত্যাচার, জুলুম নিপীড়ন এবং অন্যদিকে তাদের বিরোধীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়। এ কারণে জনগণ দ্বীনি জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করতে পারছিলো না ঠিকমতো।ইতিহাসের পাতায় এমন বহু প্রমাণপঞ্জী রয়েছে যে তখন বহু মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কেও জানতো না। যেমন কীভাবে নামায পড়তে হয় জানতো না। হজ্বের ব্যাপারেও তারা ছিল উদাসীন। খেলাফত ব্যবস্থা এ সময় দিন দিন দুর্বল থেকে দুর্বলতরো এবং অক্ষম থেকে অক্ষমতরো হয়ে পড়ছিলো। নবীজীর আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ হলেন মুসলমানদের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত ও যোগ্যতম। তাঁদের উপস্থিতি সত্ত্বেও সে সময় মানুষ খেলাফত এবং শাসনকার্য সংক্রান্ত বিষয়ে মতপার্থক্যে ভুগছিল। কেউ কেউ খেলাফতকে উমাইয়াদের অধিকার বলে মনে করতো,আবার অনেকেই আহলে বাইতের অবস্থান ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বক্র চিন্তা তথা অনেকটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ভাবতো।এ রকম একটি সময়ে উজ্জ্বল সূর্যের মতো আবির্ভূত হন ইমাম বাকের (আ)। তাঁর আগমনে অজ্ঞতার আঁধারের সকল পর্দা সরে যায়। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার আলোকে তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক পথ দেখান এবং সর্বপ্রকার বক্র চিন্তা,কু-সংস্কার আর অজ্ঞতার অভিশাপ থেকে মুসলমানদেরকে মুক্তি দেন। নবীজীর আহলে বাইতের মর্যাদা এবং ইমামতের অবস্থান সম্পর্কে তিনি জনগণকে সচেতন করে তোলেন। রাসূলে খোদার পর আহলে বাইতের নেতৃত্বকেই ইসলামী উম্মাহর মুক্তির সবচেয়ে উত্তম পথ বলে তিনি মনে করতেন। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন,বিশ্বাস ও চিন্তাগত বিভিন্ন বিষয়ে সমাধান দেওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র আহলে বাইতই হলো সবচেয়ে উপযুক্ত। তিনি বলেছেন-রাসূলে খোদার সন্তানেরা হলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ঐশী জ্ঞানের দরোজা এবং জান্নাতের দিকে আহ্বানকারী।জ্ঞান ও বিজ্ঞানের উন্নতি এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে ইমাম বাকের (আ) শিক্ষা ও সংস্কৃতির বহু কেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁর পরে তাঁরি উত্তরসূরি স্বীয় সন্তান ইমাম সাদেক (আ) বিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। হিজরী প্রথম শতাব্দির শেষের দিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইমাম বাকের (আ) এর চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্যিকার অর্থেই জনগণের মাঝে ইসলামী চিন্তা ও মূল্যবোধের প্রাণ সঞ্চারের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। জাবের ইবনে ইয়াযিদ যোড়ফি ইমাম বাকের (আ) এর একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি ইমামের কাছ থেকে অন্তত সত্তুর হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন। জাবের বলেছেন-আঠারো বছর ইমাম বাকের (আ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। যখন তাঁর কাছ থেকে চলে আসতে চেয়েছি,তাঁকে বলেছি, হে রাসূলের সন্তান! আমাকে জ্ঞানে পরিতৃপ্ত করুন! ইমাম বাকের (আ) বললেন-'হে জাবের! আঠারো বছর পরও কি তুমি জ্ঞানে পরিতৃপ্ত হও নি? বললাম-আপনি হলেন অসীম এক ঝর্ণাধারা, এই ঝর্ণাধারার তো শেষ নেই।'ইমাম বাকের (আ) এর অস্তিত্ব ঝর্ণার জলের মতো ইসলামী চিন্তাবিদদের এমনকি ধর্মের অনুসারীদেরও আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটাতো। জ্ঞানের ভাণ্ডার হবার কারণে বহু অজানা বিষয়ে জানার জন্যে ইমামের কাছে ভিড় করতো জ্ঞান অন্বেষীগণ। যারা তাঁর কাছে আসতো তারা ইমামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো। মুসলিম ইতিহাসবিদ ইবনে হাজার হিসামি ইমাম বাকের (আ) এর জ্ঞান,চরিত্র , অন্তরের পবিত্রতা এবং আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির ক্ষেত্রে তাঁর একাগ্রতার উল্লেখ করে বলেন- তিনি যতোটা উচ্চ মর্যাদার ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁর সেই ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করা এবং তাঁর প্রশংসা করার যোগ্যতা অনেকেরই নেই।অত্যাচারী এবং তাদের অনুসারীদের প্রসঙ্গে ইমামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী ছিল এ রকম-জুলুম-নির্যাতনকারী নেতৃবৃন্দ এবং তাদের অনুসারীরা আল্লাহর দ্বীনের বাইরে অবস্থান করে।ইমাম বাকের (আ) এর জীবনের শেষ এগারোটি বছরে উমাইয়া শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালেকের শাসন চলছিল। হিশাম ছিল বখিল,রূঢ় এবং নির্যাতনকারী শাসক। তার শাসনকালে মানুষের জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। সেজন্যে জনগণ আগের তুলনায় আরো বেশি ইমামের শরণাপন্ন হতে লাগলো। হিশাম এমনিতেই ইমামের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে সবসময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতো। তাই চেষ্টা করতো তাঁর আধ্যাত্মিক প্রভাব বিস্তারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে। একবার হজ্জ্বের সময় ইমাম বাকের (আ) এবং তাঁর সন্তান ইমাম সাদেক (আ) এর প্রতি জনগণের ব্যাপক আকর্ষণ ও শ্রদ্ধাবোধ দেখে হিশাম উদ্বিগ্ন ও রুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই হজ্জ্ব থেকে ফেরার পর তাঁদের দু'জনকেই মদীনা থেকে সিরিয়ায় তলব করা হয়। কিন্তু এই ঘটনায় জনগণের কাছে তাঁদের জনপ্রিয়তা তো কমেই নি বরং মুসলমানদের মাঝে বিশেষ করে সিরিয়াবাসীদের কাছে নবীজীর সন্তান হিসেবে তাঁদের পরিচিতি আরো বৃদ্ধি পায়। উপায়ন্তর না দেখে হিশাম তাঁদেরকে পুনরায় মদীনায় ফেরৎ পাঠায়।ইমাম বাকের (আ) ছিলেন একজন দানবীর ও পরোপকারী। তিনি নিজের জমিজমাতে নিজেই চাষবাস করতেন এবং উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি দিয়ে গরীবদের সাহায্য করতেন। আসওয়াদ ইবনে কাসির নামে এক ব্যক্তি বলেছেন-আমি আমার অভাব-অনটন এবং আমার ভাইয়ের নির্দয়তার কথা ইমামকে জানাই। ইমাম তখন বলেন-সক্ষমতা এবং ধন-সম্পদ থাকাকালে যে তোমার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখে অথচ অভাব-অনটনের সময় তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যায়,এই ভ্রাতৃত্ব একেবারেই হীন ও মন্দ। এটা বলে তিনি আমাকে সাতশ দিরহাম দেওয়ার আদেশ দিয়ে বললেন-এটা তুমি খরচ করো এবং যখনি প্রয়োজন পড়বে আমাকে তোমার অবস্থা সম্পর্কে জানাবে।আজকের আলোচনা শেষ করার আগে ইমামের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণীর উদ্ধৃতি দিচ্ছি।ইমাম বাকের (আ) বলেছেন, সর্বোৎকৃষ্ট পুঁজি হলো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস।তিনি আরো বলেছেন,সর্বোৎকৃষ্ট পূর্ণতা হলো দ্বীন সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া,দুঃসময়ে ধৈর্য ধারণ করা এবং জীবন যাপনে শৃঙ্খলা বিধান করা।#আল হাসানাইন

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদপর্ব ১ফাদাক সম্পর্কে –ফাদাক মদিনার নিকটবর্তী হিজাজের একটা সবুজ ,উর্বর গ্রাম এবং এটা শামরুখ নামক দুর্গ দ্বারা সংরক্ষিত স্থান ছিল (হামাবি ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৩৮ ;বুখারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০১৫ ;সামহুদী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১২৮০) । ফাদাক ইহুদিদের দখলে ছিল। ৭ম হিজরিতে এক শান্তিচুক্তির ফলে ফাদাকের মালিকানা রাসূলের (সা.) কাছে চলে যায়। এ চুক্তির মূল কারণ হলো খায়বার দুর্গের পতনের পর ইহুদিরা মুসলিম শক্তি অনুধাবন করতে পেরেছিল এবং তাদের মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল। তাছাড়া কিছু সংখ্যক ইহুদি আশ্রয় প্রার্থনা করায় রাসূল (সা.) তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। তারা একটা শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছিল যে ,ফাদাক নিয়ে তাদের অবশিষ্ট এলাকায় কোন যুদ্ধ না করার জন্য। ফলে রাসূল (সা.) তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এ ফাদাক তার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হলো এবং এতে অন্য কারো কোন স্বার্থ – স্বামীত্ব ছিল না। এতে কারো কোন স্বার্থ থাকতেও পারে না। কারণ জিহাদে অর্জিত গণিমতের মালে মুসিলিমদের অংশ ছিল। যেহেতু এ সম্পত্তি বিনা জিহাদে পাওয়া গেছে তাই এটাকে‘ ফায় ’ বলা হতো এবং রাসূল (সা.) একাই এর মালিক ছিলেন। এতে অন্য কারো কোন অংশ ছিল না। তাই আল্লাহ বলেনঃআল্লাহ ইহুদিদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে ফায় দিয়েছেন তার জন্য তোমারা অশ্ব কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি। আল্লাহু যার ওপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলের কর্তৃত্ব দান করেন।(কুরআন – ৫৯:৬)কোন প্রকার যুদ্ধ ছাড়া ফাদাক অর্জিত হয়েছে। এ বিষয়ে কারো কোন দ্বীমত নেই। সুতরাং এটা রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল এবং এতে কারো কোন অধিকার ছিল না। ঐতিহাসিকগণ লিখেছনঃযেহেতু মুসলিমগণ তাদের ঘোড়া ও উট ব্যবহার করেনি। সেহেতু ফাদাক রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল (তাবারী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫৮২ – ১৫৮৩ আছীর ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২২৪ – ২২৫ ;হিশাম ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৬৮ খালদুন ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪০ ;বাকরী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৫৮ শাফী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৫০ ;বালাজুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৩) ৷উমর ইবনে খাত্তাবও মনে করতেন যে ফাদাক রাসূলের (সা.) অংশীদারবিহীন সম্পত্তি। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে ,আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যা দিয়েছিলেন বনি নজিরের সম্পত্তিও তার অন্তর্ভুক্ত। এতে কারো ঘোড়া বা উট ব্যবহৃত হয়নি। তাই এটা আল্লাহর রাসূলের ব্যক্তিগত সম্পদ (বুখারী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৮২: ৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১২১ – ১২২ ;নিশাবুরী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ১৫১ ;আশাছ ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১৩৯ – ১৪১ ;নাসাঈ ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ২৫ ,৪৮ ,৬০ ,২০৮ ;শাফী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৬ – ২৯৯) ।বিশ্বস্ত সূত্রে এটা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত যে ,রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশাতেই উক্ত ফাদাক তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন। আল বাজ্জার , আবু ইয়ালা , ইবনে আবি হাতিম , ইবনে মারদুওয়াই ও অন্যান্য অনেকে আবু সাইদ খুদরী ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে ,যখন কুরআনের আয়াত -“ নিকটবর্তী আত্মীয় পরিজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও ” (১৭:২৬) – নাজিল হয়েছিল তখন রাসূল (সা.) ফাতিমাকে ডেকে এনে তাঁকে ফাদাক দান করে দিয়েছিলেন। (শাফী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৭ ;শাফী ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৬ ;হিন্দি ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৪৯৩ ;শাফী ,১৫শ খণ্ড ,পৃঃ ৬২) ।আবু বকর যখন ক্ষমতা দখল করেছিল তখন ফাতিমাকে বঞ্চিত ও দখলচ্যুত করে ফাদাক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেনঃনিশ্চয়ই ,আবু বকর ফাতিমার কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নিয়েছেন ( হাদীদ ,১৬শ খণ্ড ,পৃঃ ২১৯ সামহুদী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১০০০ ;হায়তামী ,পৃঃ ৩২) ।আবু বকরের এহেন কাজে ফাতিমা সোচ্চার হয়ে উঠলেন এবং তিনি প্রতিবাদ করে বললেন ,“ রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় আমাকে ফাদাক দান করে গিয়েছিলেন। অথচ আপনি তার দখল নিয়ে নিয়েছেন। ” এতে আবু বকর সাক্ষী উপস্থাপন করার জন্য বললেন। ফলে ,আমিরুল মোমেনিন ও উন্মে আয়মন ফাতিমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে ,উম্মে আয়মন রাসূলের (সা.) একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী ছিলেন। তিনি উসামা ইবনে জায়েদ ইবনে আল – হারিছাহর মাতা ছিলেন। রাসূল করিম (সা.) প্রায়ই বলতেন ,“ আমার মাতার মৃত্যুর পরে উন্মে আয়মন আমার মাতা। ” রাসূল (সা.) তাকে বেহেশতবাসীদের একজন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। (নিশাবুরী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৬৩ ;তাবারী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ৩৪৬০ ;বার ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৭৯৩ ;আছীর ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৫৬৭ ;সাদ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১৯২ ;হাজর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ৪৩২) ।প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

নবী নন্দিনী ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (আ.)আল্লা হুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদমহান আল্লাহর অশেষ রহমত যে তিনি এমন কয়েকজন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যাঁরা মানুষের জন্য সব ধরনের পূর্ণতা ও উন্নতির আদর্শ। নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.) সেইসব অসাধারণ মানুষেরই একজন। যার জন্ম হয়েছিল হিজরি পূর্ব অষ্টম বছরের ২০শে জমাদি উস সানি তারিখে।হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.) ছিলেন নারী ও পুরুষ তথা গোটা মানব জাতির জন্য অসাধারণ ত্যাগ, বিশ্বস্ততা, অন্যায়ের ব্যাপারে আপোসহীনতা, সততা, দানশীলতা, ধৈর্য, চারিত্রিক পবিত্রতা, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টিসহ অনেক মহান স্বর্গীয় গুণের আদর্শ। আর এ জন্যেই তাঁর উপাধি ছিল আসসিদ্দিকা বা সত্যনিষ্ঠ, আল-মুবারাকাহ বা বরকতপ্রাপ্ত, আত-ত্বাহিরা বা পবিত্র, আল-মারজিয়া বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, আয যাকিয়া বা সতী, আয জাহরা বা দ্যূতিময় প্রভৃতি।স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সাঃ)এর সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (আ.)এর অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা অর্থাৎ তাঁর পিতার জননী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে সকল যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহের অংশ, যা কিছু তাকে সন্তুষ্ট করে তা আমাকে সন্তুষ্ট করে এবং যা কিছু ফাতেমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয়, আর যা আমাকে কষ্ট দেয়, তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। হযরত ফাতিমা (সাঃ) বেহেশতে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবেন বলে বিশ্বনবী (সাঃ) উল্লেখ করেছেন।অনেক ইসলামী পণ্ডিতের বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের সূরা কাওসার-এ উল্লেখিত কাওসার বলতে হযরত ফাতেমা (আ.)কেই বোঝানো হয়েছে। মক্কার কাফের ও মুশরিকরা যখন বিশ্বনবী (সাঃ)কে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করতো এবং রাসূলের ওফাতের পরই তার ধর্ম শেষ হয়ে যাবে বলে প্রচার করতো তখন এই সূরা নাজিল হয়। এ সূরায় কাফেররাই নির্বংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ফাতিমা (আ.)’র মাধ্যমে রাসূলে পাক(সাঃ) এর বংশধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নির্মূল হয়ে গেছে আবু লাহাব ও আবু জাহেলদের বংশধর।হযরত ফাতিমা (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ) এর আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধারায় জন্ম নেয়া মুসলমানদের ১১ জন ইমামের জননী। বিশ্বনবী (সাঃ) ও স্বামী আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (রাঃ)এর পর এই ১১ জনই ইসলামকে সব সংকট ও দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষার কাণ্ডারি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। এরই প্রমাণ দেখা যায় কারবালায় তাঁর পুত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও এর আগে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)এর নজিরবিহীন আত্মত্যাগে। মুসলমানদের নেতা হিসেবে ও বেহেশতী যুবকদের সর্দার হিসেবে এই দুই মহাপুরুষকে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন হযরত ফাতেমা (আ.)। বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁদেরকে নিজ সন্তান বলে উল্লেখ করতেন।একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হযরত ফাতিমা (আ.)এটা প্রমাণ করেছেন যে, পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরী কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো । কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।হযরত ফাতিমা (আ.) ছিলেন একজন আদর্শ জননী, একজন আদর্শ স্ত্রী বা গৃহিনী, একজন আদর্শ সমাজ সেবিকা। অর্থাৎ মুসলিম নারী যে শালীনতা বজায় রেখে জীবনের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেছেন নবী নন্দিনী। আজকের যুগে যেসব মহিলা বা বুদ্ধিজীবী নারীমুক্তির কথা ভাবছেন তাদের জন্য প্রকৃত আদর্শ হযরত ফাতিমা (আ.)।বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর ওফাতের পর খুব বেশি দিন বাঁচেন নি হযরত ফাতিমা (আ.)। এ সময় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও বাণীকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি অসম সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন ।হযরত ফাতিমা (আ.)মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন। তাই মুক্তিকামী মুসলমানরা আজও কেবল তাঁর পবিত্র নাম স্মরণ করেই ইসলামের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না।রাসূল (সাঃ) একবার প্রাণপ্রিয় কন্যাকে বলেছিলেন, হে ফাতেমা! আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন, তোমাকে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সজ্জিত করেছেন এবং তোমাকে বিশ্বের নারীকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।হযরত ইমাম হাসান মুজতাবা(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, একবার শুক্রবার রাতে দেখলাম মা ফাতিমা (আ.)এবাদতে মগ্ন। একটানা রূকু ও আর সেজদায় থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে উঠলো। আমি শুনতে পেলাম তিনি মুমিন নারী ও পুরুষের জন্য অনেক দোয়া করছেন, কিন্তু নিজের জন্য কোনো দোয়াই করলেন না। আমি প্রশ্ন করলাম, মা, আপনি কেন নিজের জন্য দোয়া করলেন না, যেভাবে অন্যরা দোয়া করে থাকে? তিনি জবাবে বললেন, হে আমার পুত্র! আগে প্রতিবেশীর কথা ভাবতে হবে, এরপর নিজের ঘরের কথা… ।আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরিব-দূঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (আ.)এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণ বা কারো উদ্দেশ্যে যে কোনো বক্তব্য রাখার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে মহান আল্লাহর বিভিন্ন নেয়ামতের কথা খুব সুন্দর ও হৃদয়স্পর্শী ভাষায় তুলে ধরে আল্লাহর প্রশংসা করা ছিল তাঁর অন্য একটি বড় বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (সাঃ)এর আহলে বাইতের অন্য সদস্যদের মত তিনিও কখনও অন্যায়ের সাথে আপোস করেননি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা বা সক্রিয় থাকার মধ্যে তিনি খুঁজে পেতেন আনন্দ। হযরত ফাতিমা (আ.) বলেছেন, আল্লাহর সেবায় মশগুল হয়ে যে সন্তুষ্টি পাই তা আমাকে অন্য সব সন্তুষ্টি বা আনন্দ থেকে বিরত রাখে এবং সব সময় মহান আল্লাহর সুন্দর দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ রাখার প্রার্থনা ছাড়া আমার অন্য কোনো প্রত্যাশা নেই।নবী নন্দিনী হজরত ফাতেমা(আঃ)বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সাঃ) এর চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। পবিত্র কোরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদের মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়।ফাতিমা (আ.) মানবজাতির চিরন্তন গৌরব। এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে জন্ম না নিলে আদর্শের দিক থেকে মানবজাতির মধ্যে বিরাজ করতো ব্যাপক অপূর্ণতা এবং আদর্শিক শূন্যতা ও আধ্যাত্মিক অপূর্ণতার অশেষ ঘূর্ণাবর্তে মানবজাতি হতো বিভ্রান্ত, ফলে মানুষ কাঙ্ক্ষিত উন্নতির সোপান থেকে চিরকালের জন্য থাকতো পিছিয়েপ্রচারে ইয়া আলী আঃ

৫৭ হিজরীর এই দিনে (১ রজব) মাতা উম্মে আব্দুল্লাহর গর্ভে ইমাম জয়নুল আবেদিন আঃ এর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। যিনি পিতার দিক থেকে মাওলা হুসাইনের রক্ত বহন করেছেন, এবং মাতার দিক থেকে মাওলা হাসানের রক্ত বহন করেছেন। তার নাম করন করা হয় মুহাম্মদ আবু জাফর। বাকের উল উলুম (জ্ঞানের বিকাশদানকারী) উনার উপাধী। এই নামেই উনি পরিচিত হন। তিনি যে এ নামে পরিচিত হবেন তা মাওলা মুহাম্মদ সঃ ই জানিয়েছিলেন।মাওলা মুহাম্মদ (সা.) তাঁর মহান সাহাবী জাবির বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী কে বলেছিলেন : হে জাবির! তুমি আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবি তালিব’ যার নাম তৌরাতে ‘বাকের’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে তাকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। যখন তোমার সাথে তাঁর দেখা হবে তাকে আমার সালাম পৌঁছে দিও।নবী (সা.)-এর ওফাতের পর তার ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী জাবির অনেক দিন জীবিত ছিলেন। একদিন ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)-এর বাড়ীতে এসে শিশু অবস্থায় ইমাম বাকেরকে দেখে বললেন : কাছে এসো... ইমাম বাকের (আ.) তার কাছে এলে তিনি তাঁকে ফিরে যেতে বললেন. ইমাম ফিরে গেলেন। জাবির তাঁর পবিত্র দেহ ও পথ চলাকে লক্ষ্য করে বললেন : কাবার প্রভূর কসম! অবিকল নবী (সা.)-এর মত দেখতে হয়েছে। তারপর তিনি ইমাম সাজ্জাদকে জিজ্ঞাসা করলেন,এই শিশু কে? ইমাম বললেন : আমার সন্তান ‘মুহাম্মদ বাকের’' যে আমার পরে ইমাম। জাবির উঠে দাঁড়ালেন এবং ইমাম বাকের (আ.)-এর পায়ে চুম্বন দিয়ে বললেন : হে নবী (সা.)-এর সন্তান,আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনার প্রপিতা নবী (সা.)-এর সালাম ও দরুদ গ্রহণ করুন কেননা তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন।ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টি মোবারক পানিতে ভরে গেল। তিনি বললেন : সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)-এর উপর,যতদিন এই আকাশ মণ্ডলী ও জমিন অবশিষ্ট থাকবে। আর আপনার উপরেও সালাম ও দরুদ হে জাবির। যেহেতু আপনি তাঁর সালামকে আমার কাছে পৌঁছিয়েছেন।- (আমালি, শেখ সাদুক, পৃ. ২১১।)ইমাম বাকের (আ.)-এর জ্ঞানও অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় আল্লাহ্ প্রদত্ত ছিল। তাঁদের কোন শিক্ষক ছিল না বা অন্য মানুষদের মত কারো নিকট শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। জাবির বিন আবদুল্লাহ্ প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে এসে শিক্ষা লাভ করতেন আর প্রায়ই তাঁকে বলতেন : হে দীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশ দানকারী! সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি শৈশব থেকেই আল্লাহর দেয়া জ্ঞানে জ্ঞানী। (ইলালুশ শারায়ে, শেখ সাদুক, পৃ. ২২২ ।)আবদুল্লাহ্ বিন আতা মাক্কী বলেন : কখনও কোন মনীষীকে কারো কাছে এমন ছোট হতে দেখিনি যতটা ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে তাদেরকে হতে দেখেছি। হাকাম বিন উতাইবাহ্ যিনি সকলের কাছে জ্ঞানের দিক দিয়ে অতি সম্মানের পর্যায়ে ছিলেন,তাকেও ইমামের সামনে শিশুর মত বসে থাকতে দেখেছি। ঠিক একজন বিজ্ঞ শিক্ষকের সামনে ছাত্রের বসে থাকার মত। (এরশাদ, শেখ মুফিদ, পৃ. ২৪৬ ।)এমনকি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরও তার গুনগান গাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেনি “আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের কাছে এক লোক একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে ইমামকে দেখিয়ে দিল এবং বলল এই শিশুর কাছে জিজ্ঞেস কর,আর তার দেয়া উত্তরটি আমাকে অবহিত কর। ঐ লোক ইমামের কাছে প্রশ্ন করল এবং তার উপযুক্ত জবাবও পেল। সে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরকে এই জবাব সমন্ধে অবহিত করলে আবদুল্লাহ্ বলেন : তাঁরা এমন বংশের যাদের জ্ঞান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত।“-(মানাকেব, ইবনে শারহে আশুব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩২৯)আজ তার বেলাদত দিবসে সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহুমা সাল্লেওয়ালা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলে মুহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিমআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদদুশমানে আহলে বায়াত পার বেশুমার নালত বর্ষিত হোকজান্নাতে বৃদ্বদের নেতা প্রসংগে –সপ্তম আব্বাসীয় খলীফা মামুনের বিশাল রাজকীয় দরবার ।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পক্ষ থেকে সকল জ্ঞানীগুনিজনের এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ।সপ্তম আব্বাসীয় খলীফা মামুন স্বয়ং নিজে সেখানে প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ।ঐ সমাবেশে অনেকক্ষন ব্যপী এক মুনাযিরা অনুস্ঠিত হয় , যা ছিল নিম্নরুপ —একজন বিজ্ঞ সুন্নি আলেম বললেন , রেওয়াতে আছে যে , নবী (সাঃ) হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের শানে বলেছেন ,” হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর হচ্ছেন বেহেশতে বৃদ্বদের নেতা “।খলীফা মামুন তীব্র প্রতিবাদের সুরে বললেন যে , এই হাদিসটি মোটেই গ্রহনযোগ্য নয় । কেননা বেহেশতে কোন বৃদ্ব ও বৃদ্বা থাকবেই না ।এছাড়া এ ব্যাপারে রেওয়ায়েত রয়েছে যেমন , নবীজী (সাঃ) এর কাছে এক বৃদ্বা মহিলা এসেছিলেন । আর মহানবী (সাঃ) সেই বৃদ্বা মহিলাকে বলেছিলেন যে , বৃদ্বা মহিলা কখনইবেহেশতে প্রবেশ করবে না ।এই কথা শুনে বৃদ্বা মহিলা কাঁদতে শুরু করেন ।মৃদু হেসে দয়াল নবীজী (সাঃ) তাকে বললেন , আল্লাহ বলেছেন , বেহেশতে যারা প্রবেশ করবে, আমরা তাদেরকে নতুন জন্ম দান করাব এবং সকলকে যুবক যুবতীর রুপ দান করব , পুরুষগন তাদের স্ত্রীগনের সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ব হবে এবং তারা মিষ্টভাষী ও সমব য়সের অধিকারী হবে ।সূত্র – ওয়াকীহা – ৩৫-৩৭ ।যেহেতু তোমাদের চিন্তা মতে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর যুবক হয়ে যাবে ও তারা বেহেশতে প্রবেশ করবে , সেহেতু তোমরা কিভাবে এই রেওয়ায়েত উল্লেখ কর , যখন কিনা রাসুল (সাঃ) বলেছেন , ” হাসান এবং হোসেন (আঃ) হচ্ছেন পূর্বের ও পরের বেহেশতবাসী যুবকদের সর্দার এবং তাদের পিতা আলী (আঃ) এর মর্যাদা তাদের থেকেও উচ্চে “।সূত্র – বিহারুল আনোয়ার ,খন্ড-৪৯,পৃ-১৯৩

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদআমিরুল মোমেনিন আলি ইবন আবি তালিব আঃ এর বাণীআমি মোমেনের ইয়াসুব” আর সম্পদ দুষ্টদের ইয়াসুব’।’১। ২৬২ নং বাণীতে ইয়াসুব’ শব্দের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তা ছাড়াও আবু লায়লা গিফারী, আবুজর, সালমান, ইবনে আব্বাস ও হুজায়ফা ইবনে ইয়ামান থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ আমার মৃত্যুর পরপরই বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ দেখা দেবে। এ সময় তোমরা আলী ইবনে আবি তালিবকে অনুসরণ করো । কারণ শেষ বিচারের দিন সে হবে প্রথম ব্যক্তি যে আমাকে দেখবে এবং আমার সাথে। করমর্দন করবে। সে হলো সাদিক আল-আকবর (সত্যের মাহপূজারী), আমার উম্মতের মধ্যে সে সর্বশ্রেষ্ঠ ফারুক (সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী) এবং সে হলো মোমেনগণের ইয়াসুব” আর সম্পদ হলো মোনাফেকদের ইয়াসুব’ । (শাফী***, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৫৮; হিন্দি’, ১২শ খণ্ড, পৃঃ ২১৪, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩ হাদীদ’, ১৩শ খণ্ড, ২২৮ আসাকীরা, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ৭৪-৭৮ শীর্ষকী*

শুধু ঝগড়া এবং মতভেদ --অফুরন্ত ঝগড়া ৷ এ ঝগড়ার কোন কুল-কিনারা নাই । দিন যত যায় , যুগ যত যায় - ঝগড়া শুধু বেড়েই চলে । কমার কোন লক্ষন নাই ।পাঠক ,বলছিলাম যে , সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ নিয়ে ।দুঃখজনক ঐতিহাসিক বাস্তবতা এটাই যে , ১৫০০ বছর পূর্বে রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরেই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন মুসলিম উম্মতের মধ্যে বিভক্তির সূত্রপাত হয়েছিল । বিভক্তি নামক বিষবৃক্ষের দরুন আজ মুসলিম উম্মাহ শতভাগে বিভক্ত ।যদিও পবিত্র কোরআনে দ্বিধা-বিভক্ত না হওয়ার জন্য আল্লাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ এবং হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ।" --- যারা নিজেদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক নাই । তাদের ব্যাপার কেবল আল্লাহর অধীন । অতঃপর তিনি তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদের অবহিত করবেন ----- " ।সুরা - আনআম / ১৫৯ ।কিন্ত কে শোনে কার কথা !আজকের বাস্তবতা হল ---নামাজ আদায়ের পদ্বতি নিয়ে ঝগড়া ,আযান নিয়ে ঝগড়া ,তারাবীহ নিয়ে ঝগড়া ,রোজা নিয়ে ঝগড়া ,নবীকে (সাঃ) দূরুদ প্রেরন নিয়ে ঝগড়া ,বিয়ে নিয়ে ঝগড়া ,তালাক নিয়ে ঝগড়া ,দাফন করা নিয়ে ঝগড়াহজ্ব নিয়ে ঝগড়া ।মোটকথা , দ্বীনের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ঝগড়া এবং মতভেদ নাই ৷পাঠক ,বলতে পারেন - এর মূল কারন কি ?সমগ্র মুসলিম উম্মাহ যেন দলে দলে বিভক্ত না হয়ে যায় --- পবিত্র কোরআনৈ এই সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আদেশ থাকা সত্বেও মুসলিম উম্মাহ আজ কেন শতধা বিভক্ত ?এই দায় কার উপর বর্তায় ?সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন চলে আসে যে , রাসুলের (সাঃ) ওফাতেরর পরে কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে রাসুল (সাঃ) কোন ব্যক্তিবর্গের অধীনে বা জিম্মায় সোপর্দ করে গেলেন ?মুসলিম উম্মাহর একত্রিকরন বিষয় রাসুলের (সাঃ) পক্ষ সুস্পষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা ছিল কি ?পাঠক ,সহজভাবে সরল জবাবটা নিয়ে নিন ।বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুম মোতাবেক গাদীর এ খুমের ঘোষনা অনুযায়ী নবীজী (সাঃ) স্বয়ং নিজে তাঁর ওফাত পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত সর্বপ্রথম ইমাম এবং খলীফা হিসাবে হযরত আলী ইবনে ইমরান ওরফে আবু তালিবকে (আঃ) সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্বাচিত করে দিলেন ।সেইসাথে কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির শাসনভর এবং হেদায়েতের জন্য হযরত আলীর (আঃ) বংশধারা থেকে পবিত্র এগারজন ইমামের (আঃ) নাম এবং পরিচয় বলে গেলেন ।আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করেছেন ।দুঃখজনক বাস্তবতা এটাই যে , হযরত মুসার (আঃ) অবাধ্য উম্মতের মত রাসুলের (সাঃ) উম্মত রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরে হযরত আলীকে (আঃ) অবজ্ঞাভরে দূরে সরিয়ে দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন "সাহাবীগনের" নিকট থেকে ।মূলত বিভক্তি শুরু হল সেখান থেকে ।আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) অনুমোদনহীন অবৈধভাবে গঠিত বনু সকীফার খেলাফত পদ্বতিই হচ্ছে সকল ভষ্ট্রতার মূলভিত্তি ।১৫০০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল - মুসলিম উম্মত নিজেরা এখনও সঠিকভাবে জানতে পারল না যে , আসল ইসলামটা কি ?এক দল বলে - তুই কাফের , বাতিল ।আরেক দল বলে - তুই কাফের , বাতিল ।এটাই হল বাস্তবতা ।পাঠক ,লেখার শেষাংশে চলে এসেছি ।আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) নির্দেশ মোতাবেক ---"হে মানবসকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি ভারী জিনিষ (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি , যদি এই দুইটি আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । প্রথমটি হচ্ছে , পবিত্র কোরআন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আমার ইতরাত , আহলে বাইত (রক্তজ বংশধর) । নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিষ হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনই পরস্পর থেকে বিছিন্ন হবে না " ।#সূত্র - সহীহ তিরমিজি , খন্ড - ৬ , হাদিস - ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড - ১১ , হাদিস - ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড - ২ , পৃষ্ঠা - ১৮১ , ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ) , পৃষ্ঠা - ১২ , ১৩ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড - ৪ , পৃষ্ঠা - ৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম) / মাদারেজুন নাবুয়াত , খন্ড - ৩ , পৃষ্ঠা - ১১৫ (শায়খ আব্দুল হক দেহলভী) / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড - ১ , পৃষ্ঠা - ৫৬৬ / মুসলিম মুসনাদে আহমদ / নাসাঈ / কানযুল উম্মাল / তাফসীরে ইবনে কাছির / মিশকাতুল মাছাবিহ / তাফসীরে কবির / মুসনাদুল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল , লেখক - আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ শাইবানী (মৃত্যু - ২৪১হি .), খন্ড ১৭ , পৃ - ১৭০, ২১১, ৩০৯, খন্ড ১৮, পৃ: নং ১১৪, খন্ড ২৩, পৃ: নং ১০ ও ১১, প্রকাশক - মুয়াসসিসাতুর রিসালা , প্রথম প্রকাশ - ২০০১ ইং / সহীহ মুসলিম, লেখক - মুসলিম বিন হাজ্জাজ নিশাবুরী (মৃত্যু - ২৬১হি.), খন্ড ৪, পৃ - ১৮৭৩, প্রকাশনা - দারুল ইহইয়াইত তুরাসিল আরারী, বৈরুত / সুনানুত তিরমিযি , লেখক - মুহাম্মাদ ইবনে ইসা আত্ তিরমিযি (মৃত্যু: ২৭৯হি.), খন্ড - ৫ম , পৃ - ৬৬৩, প্রকাশক - শিরকাতু মাকতাবাতি ওয়া মাত্ববায়াতি মুসত্বাফা আল বাবি আল হালাবি, মিশর , দ্বিতীয় প্রকাশ - ১৯৭৫ ইং / উসুদুল গ্বাবা ফি মা’রিফাতিস সাহাবা, লেখক - আবুল হাসান আলী ইবনে আবিল কারাম ইবনে আসির (মৃত্যু: ৬৩০হি.), খন্ড ২য় , পৃ - ১৩, প্রকাশক: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা , প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৪ ইং / তাফসিরুল দুররিল মানসূর, লেখক - আব্দুর রাহমান ইবনে আবি বাকর জালালুদ্দীন সুয়ুতি (মৃত্যু: ৯১১হি.), খন্ড ৭ম, পৃ - ৩৪৯, প্রকাশক - দারুল ফিকর, বৈরুত / আল মুসান্নাফ ফিল আহাদিস ওয়াল আসার, লেখক - আবু বাকর আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (মৃত্যু: ২৩৫হি.), খন্ড ৬ষ্ঠ , পৃ - ৩০৯, প্রকাশক - মাকতাবাতুর রুশদ, বিয়াদ, প্রথম প্রকাশ - ১৪০৯ হিজরী / কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআ’ল, লেখক - আলাউদ্দীন আলী ইবনে হিসামুদ্দীন আল ক্বাদেরী আল মুত্তাক্বী আল হিন্দী (মৃত্যু: ৯৭৫হি.), খন্ড ১ম. পৃ - ১৭২, ১৮৬, ১৮৭, খন্ড ১৪তম , পৃ - ৪৩৫, মুয়াসসিসাতুর রিসালা , পঞ্চম প্রকাশ: ১৪০১হি . ১৯৮১ইং / তাফসীর ইবনে কাসির , লেখক - আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমার ইবনে কাসির আদ দামেশক্বী (মৃত্যু: ৭৭৪হি.), খন্ড ৭ম, পৃ - ১৮৫, প্রকাশক - দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৯হি., বৈরুত / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৭ম, পৃ - ৬৬৮, লেখক - আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমার ইবনে কাসির আদ দামেশক্বী (মৃত্যু: ৭৭৪হি.) , প্রকাশক - দারুল হিজরিন লিততাবায়া’ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযিহ ওয়াল ই’লান, প্রথম প্রকাশ - ১৪১৮হি. ২০০৩ ইং / সাহিহ ওয়া দ্বাইফুল জামিয়’ আস সাগ্বির ওয়া যিয়াদাতিহি , লেখক - আব্দুর রাহমান ইবনে আবি বাকর জালালুদ্দীন সুয়ুতি (মৃত্যু: ৯১১হি.), খন্ড ১ম, হাদিস নং - ৪২২২, ৪২২৩, ৫২৪৮, ৫৫৪৩ ও ৮২৩৯ / মাজমাউয যাওয়াইদ, লেখক - আবুল হাসান নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবি বাকরইবনে সুলাইমান আল হাইসামী (মৃত্যু: ৮০৭হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ১৭০, খন্ড ৯ম, পৃ - ১৬৩-১৬৫, খন্ড ১০ম, পৃ - ৩৬৩, প্রকাশক - মাকতাবাতুল ক্বুদসী, প্রকাশকাল: ১৪১৪হি. ১৯৯৪ইং / আল মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, লেখক - আবু আবদিল্লাহ আল হাকিম মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল্লাহ আন নিশাবুরী (মৃত্যু: ৪০৫হি.), খন্ড ৩য় , পৃ - ১১৭, ১১৮, ১৬০, প্রকাশক - দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা, প্রথম প্রকাশ - ১৪১১হি. ১৯৯০ইং, বৈরুত / হিল্লিইয়্যাতুল আওলিয়া ওয়া ত্বাবাক্বাতুল আসফিয়া, লেখক - আবু নাঈম আহমাদ ইবনে আবদিল্লাহ আল ইসফাহানী (মৃত্যু: ৪৩০হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ৩৫৫, প্রকাশক - আসসাআদাহ্ বি-জাওয়ারি মুহাফিযাতি মিসর, প্রকাশকাল ১৩৯৪হি. ১৯৭৪ইং / আস সাওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ , লেখক - আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হাজার আল হাইসামী (মৃত্যু: ৯৭৪হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ১০৯, খন্ড ২য় , পৃ- ৩৬১, ৩৬৮, ৪৩৮, ৬৫২, ৬৫৩, প্রকাশক -- মুয়াসসিসাতুর রিসালা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৮হি./ ১৯৯৮ ইং, বৈরুত ।আজ যদি পবিত্র আহলে বাইতের পবিত্র বার ইমামগন (আঃ) থেকে ইসলাম নেওয়া হত তাহলে এই ঝগড়া থাকত না ।মোবাহেলার ময়দানে অমুসলিম সম্প্রদায় শুধুমাত্র নবীজীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বায়েতগনকে (আঃ) সম্মান করেছিল বিধায় আজও তারা পুরো পৃথিবীতে সম্মানিত ।পক্ষান্তরে ,মোরা মুসলিম উম্মত - গাদীর এ খুম পরিত্যাগ করে সাহাবা কতৃক সৃষ্ট অবৈধ বনু সকীফাকে আঁকড়ে ধরাতে আজ পৃথিবীতে আমরা সর্বনিম্ন লজ্জাবিহীন আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হাস্যকর জাতিতে পরিনত হয়েছি ।আজ যদি মুসলমানগন নবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতগন (আঃ) থেকে ইসলাম গ্রহণ করত তাহলে আজ মুসলমানের মর্যাদা আল্লাহপাক সব জাতির উপরে রাখতেন ৷যেহেতু আসল পরিত্যাগ করে ভূয়া ভন্ডদের কাছ থেকে "নকল ইসলাম" ধারন করেছি - তাই স্বাভাবিক ভাবে নকল ও ভূয়া সেবনে যা হয় আমাদের মুসলিম জাতির ঠিক তাই হয়েছে ।যেমন কর্ম তেমন ফল !সেই জন্য আজ পৃথিবীর সমস্ত জাতির কাছে আমরা তথা বনু সকীফার অনুসরনকারী মুসলমান একটা সার্কাস জাতিতে পরিনত হয়েছি ।সকলে আমাদের নিয়ে খালি ফুটবল খেলে । আমাদের জীবনটা দুনিয়ার সকলের লাথি খেতে খেতেই গেল !পাঠক ,এটা কিন্ত আমার একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত মতামত ।আমার এই মতামতে কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন , প্লীজ।ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ)।- সংগ্রহ -আমি মুশকিল কোশা মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)'র দলে।

"রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে, সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে, আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে, সে যেন আমার পর আমার আহলে বাইত'র ("আলী,ফাতেমা, হাসান,হোসাইন) অনুসরণ করে। কারণ তারা আমার সর্বাধিক আপন এবং তারা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে, আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে।।ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা তাঁদের (আহলে বাইত'র) শ্রেষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে কর্তন করে। আল্লাহ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করুন।"সূত্র : কানজুল উম্মাল - খন্ডঃ-৫ পৃষ্ঠাঃ- ২১৭ / মুসনাদে হাম্বাল - খন্ডঃ-৫ হাঃ পৃষ্ঠাঃ- ৯৪ / মুস্তাদরাক হাকেম - খন্ডঃ- ৩ পৃষ্ঠাঃ-১২"।।

ইসলামের পুরনো ক‍্যান্সারপ্রচারে মুন্নি আক্তারকিছু জ্ঞানপাপী আলেম শতশত বছর ধরে অবান্তর হাদিসের ভিত্তিতে দুশ্চরিত্র মুয়াবিয়াকে সাহাবী বানিয়ে রেখেছে৷যদিও কুরআন কারা সাহাবী হিসেবে গণ্য হবে তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তারপরও তারা নির্লজ্জের মত ফোর্থ হ্যান্ড হাদীস দেখিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে! এবার দেখা যাক কুরআন কি বলছে?'সূরাহ তওবাহ : আয়াত ১০০وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَاتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُم جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। The vanguard (of Islam)- the first of those who forsook (their homes) and of those who gave them aid, and (also) those who follow them in (all) good deeds,- well- pleased is Allah with them, as are they with Him: for them hath He prepared gardens under which rivers flow, to dwell therein for ever: that is the supreme felicity.সূরাহ হাদীদ : আয়াত ১০وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। যদিও আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন তবে তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। And what cause have ye why ye should not spend in the cause of Allah.- For to Allah belongs the heritage of the heavens and the earth. Not equal among you are those who spent (freely) and fought, before the Victory, (with those who did so later). Those are higher in rank than those who spent (freely) and fought afterwards. But to all has Allah promised a goodly (reward). And Allah is well acquainted with all that ye do. উপরের আয়াত দুটিতে সাহাবি হওয়ার জন্য দুটি যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে-০১. রাসুল করিম সাঃ এর প্রথম দিকের সঙ্গী হতে হবে০২.মক্বা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহনকারী হতে হবে৷মুয়াবিয়ার উপরোক্ত দুটি যোগ্যতার একটিও নেই৷যে সকল দুর্বল হাদিস দিয়ে মুয়াবিয়ার গ্রহনযোগ্যতা দেয়া হচ্ছে সেই হাদীস গুলির চেয়ে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য হাদীসে স্বয়ং রাসুল করিম সাঃ এর মুখে মুয়াবিয়ার সমালোচনা আমরা দেখতে পাই৷# সহিহ মুসলিম ,হাদীস নম্বর - ৬২৯৮ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে যে, "আমি একদিন ছেলেদের সাথে খেলা করছিলাম, এমন সময় রাসুল করিম সাঃ কে আসতে দেখলাম৷আমি একটি দরজার আড়ালে চলে গেলাম৷৷কিন্তু রাসুল করিম আমার কাঁধ ধরে আমাকে ডেকে আনলেন এবং মুয়াবিয়াকে ডাকতে বললেন৷আমি ডাকতে গিয়ে তাকে ভোজনে ব্যস্ত দেখতে পেলাম এবং ফিরে আসলাম৷রাসুল করিম আবার আমাকে যেতে বললেন ,আমি আবার গেলাম এবং মুয়াবিয়াকে ডাকলাম কিন্তু সে তখনও ভোজনে ব্যাস্ত ছিল৷আমি ফিরে এসে রাসুল করিমকে এটা জানানোর পর তিনি বল্লেন 'আল্লাহ যেন তার পেট কখনও পূর্ণ না করেন' !"**এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হানবাল রহ. এবং ইমাম হাকিম রহ. দ্বারা পরিক্ষীত এবং স্বীকৃত৷# আল তাবারী (৮ম খন্ড) , পৃষ্ঠা নং ১৮৬, দার আল মারিফ পাবলিকেশন, মিশর৷এই হাদীসটি দুজন সাহাবার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে— হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে, "আমি রাসুল করিম সাঃ কে বলতে শুনেছি যে " মুয়াবিয়ার মৃত্যু ইসলামের পথে হবেনা"!হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা.হতে বর্ণিত আছে, " আমি রাসুব করিম সাঃ কে বলতে শুনেছি ' মৃত্যুর সময় মুয়াবিয়া আমার উম্মত হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবেনা'!"** এমন সহীহ হাদীস থাকার পরও তারা কেন চার নাম্বার হাদীস নিয়ে মেতে আছে তা জ্ঞানীজনদের না বোঝার কথা নয়৷ইসলামের ইতিহাসে প্রথম অন্তঃকোন্দল বা ফিৎনার জনক এই দুশ্চরিত্র মুয়াবিয়া৷ ৬৭৫ হিজরী সালের মে মাসে হযরত আলী কা. সাথে এই যুদ্ধ শুরু হয়৷এখান থেকেই মুয়াবিয়া সুক্ষ কৌশলে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নী বিভক্তির সূত্রপাত ঘটায়৷আজ মুসলমান শতভাগে বিভক্ত!মুয়াবিয়া ইসলামী খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটিয়ে নিজের কুপুত্র এজিদ কে আরব হেজাজের রাজা মনোয়ন করার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে৷ রাজতন্ত্রের মাধ্যমেই যুগেযুগে অযোগ্য ব্যক্তিদেরকে মুসলমানদের শাসক হবার সুযোগ তৈরী করে দেয়া হয়েছিল৷ এজিদ হতে শুরু করে মক্বার গভর্নর হুসেন শরীফ আর আজকের সৌদ পরিবারের মত অযোগ্য শাসকরা বরাবরই এই রাজতন্ত্রের ছত্রছায়ায় থেকেই লালিত পালিত হয়েছে৷ মুয়াবিয়া নিজেকে লজ্জায় কোনোদিন 'খলিফা' দাবী করতে পারে নাই৷শেষ পর্যন্ত তাকে 'আমীর' উপাধি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে৷ইসলামের ঘরের অভ্যন্তরের শত্রু হচ্ছে মুয়াবিয়া আর এজিদ গং এবং তাদের পা চাটা কিছু জ্ঞানপাপী আলেম৷এদের নির্মূল করতে পারলে মুসলমানদের ঐক্য ফিরে আসতে পারে৷এরা যতদিন মুসলমানদের অভ্যন্তরে আছে ততদিন মুসলমানরা কখনোই এক হতে পারবেনা৷ মুসলমানদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক

নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর শুভ জন্মপর্ব ৯প্রচারে মুন্নি আক্তারএ ধরনের ঘটনাবলী হযরত ইবরাহীম, হযরত মূসা, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো মহান নবীদের জন্মগ্রহণের সময় সংঘটিত হওয়া তাঁদের নবুওয়াত ও রিসালাতের যুগে ঐ সব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়; আর এ সব কিছু আসলে মহান আল্লাহ্‌র ঐশী কৃপা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে এবং মানব জাতির হেদায়েত ও তাদেরকে মহান নবীদের দীন প্রচার কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই সংঘটিত হয়েছে।মহানবীর জন্মের দিন, মাস ও বছরসাধারণ সীরাত রচয়িতাগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, মহানবী হাতির বছর (عام الفيل) অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কারণ, তিনি অকাট্যভাবে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ অথবা ৬৩ বছর। অতএব, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।অধিকাংশ ঐতিহাসিক ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মহানবী (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে মতভেদ আছে। শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, মহানবী ১৭ রবিউল আউয়াল, শুক্রবার ফজরের সময় (ঊষালগ্নে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর আহলে সুন্নাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে তিনি ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।[4]এ দু’অভিমতের মধ্যে কোনটি সঠিক?একটি দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ইসলাম ধর্মের মহান নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস, বরং আমাদের অধিকাংশ ধর্মীয় নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস সুনির্দিষ্ট নয়। এ অস্পষ্টতার কারণেই আমাদের বেশিরভাগ উৎসব ও শোকানুষ্ঠানের তারিখ অকাট্যভাবে জানা যায় নি। ইসলামের পণ্ডিত ও আলেমগণ বিগত শতাব্দীগুলোতে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এক বিশেষ পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করতেন। কিন্তু কি কারণে তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ খুব সূক্ষ্মভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি তা (আজও) জানা যায় নি।আমি ভুলব না ঐ সময়ের কথা যখন ভাগ্যবিধি আমাকে (লেখক) কুর্দিস্তানের একটি সীমান্ত শহরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল; ঐ এলাকার একজন আলেম এ বিষয়টি (অর্থাৎ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সঠিক তারিখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ) উত্থাপন করেন এবং এজন্য তিনি অনেক দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আলেমদের উদাসীনতা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করার কারণে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘‘এ ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে কিভাবে তাঁদের মধ্যে এ রকম মতবিরোধ বিরাজ করা সম্ভব?’’ তখন আমি তাঁকে বললাম, ‘‘এ বিষয়টির কিছুটা সমাধান করা সম্ভব। আপনি যদি এ শহরের একজন আলেমের জীবনী রচনা করতে চান এবং আমরা ধরেও নিই যে, এ আলেম ব্যক্তি বেশ কিছুসংখ্যক সন্তান এবং অনেক আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন তাহলে উক্ত আলেমের শিক্ষিত সন্তান-সন্ততি এবং বিরাট পরিবার যারা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞাত তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর আত্মীয় যারা নয় তাদের থেকে কি আপনি তাঁর জীবনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংগ্রহ করবেন? নিশ্চিতভাবে আপনার বিবেক এ ধরনের কাজের অনুমতি দেবে না।মহানবী (সা.) জনগণের মধ্য হতে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর সময় তিনি উম্মাহ্‌ মাঝে তাঁর আহলে বাইত ও অন্যান্য সন্তান-সন্ততি রেখে গেছেন। তাঁর নিকটাত্মীয়গণের বক্তব্য : মহানবী (সা.) যদি আমাদের শ্রদ্ধেয় পিতা হয়ে থাকেন এবং আমরাও যদি তাঁর ঘরে বয়ঃপ্রাপ্ত এবং তাঁর কোলে প্রতিপালিত হয়ে থাকি, তাহলে আমরাই সকলের চেয়ে এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত যে, আমাদের বংশের প্রধান (মহানবী) অমুক দিন অমুক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এমতাবস্থায় তাঁর সন্তান-সন্ততি ও বংশধরদের বক্তব্য উপেক্ষা করে দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যকে কি তাঁদের বক্তব্যের ওপর প্রাধান্য দেয়া সম্ভব হবে?’’উপরোল্লিখিত আলেম আমার এ কথা শোনার পর মাথা নিচু করে বললেন, ‘‘আপনার কথা আসলে أهل البيت أدرى بما في البيت (ঘরের লোক ঘরে যা আছে সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত)- এ প্রবাদ বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থের অনুরূপ। আর আমিও মনে করি যে, মহানবী (সা.)-এর জীবনের যাবতীয় বিশেষত্ব ও খুঁটিনাটি দিক সম্বন্ধে শিয়া ইমামীয়াহ্ মাজহাবের বক্তব্য যা তাঁর সন্তান-সন্ততি, বংশধর ও নিকটাত্মীয়দের থেকে সংগৃহীত তা সত্যের নিকটবর্তী।’’ এরপর আমাদের মধ্যকার আলোচনা অন্যান্য বিষয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো যা এখানে উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৭[আয়াতুল্লাহ জা’ফর সুবহানী প্রণীত ‘ফুরুগে আবাদিয়াত’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘চিরভাস্বর মহানবী (সা.)’-এর প্রথম খণ্ড থেকে সংকলিত।][1]. সূরা ত্বাহা : ৪১-৪৩।[2]. সূরা মরিয়ম : ১৮-৩২।[3]. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫; বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৪৮; সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪।[4]. আল ইমতা’ গ্রন্থের ৩ পৃষ্ঠায় মাকরীযী মহানবীর জন্মদিন, মাস ও সাল সংক্রান্ত যত অভিমত আছে সেগুলো উল্লেখ করেছেন।[5]. কাফী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।[6]. একমাত্র তুরাইহী ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থে ‘শারক’ (شرق) ধাতু সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি নকল করেছেন যার পরিচয় অজ্ঞাত।[7]. মহানবী (সা.) এ সত্যটি নিম্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,و إنّ الزّمان قد اشتداز كهيئته يوم خلق السّماوات و الأرض ‘‘যে বিন্দু থেকে সময়ের সূচনা হয়েছিল সেখানেই (আজ) তা (সময়) ফিরে গেল। আর ঐ বিন্দুটি হলো ঐ দিন যেদিন মহান আল্লাহ্ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।’’[8]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৫২।[9]. সীরাতে হালাবী, পৃ. ৯৭।[10]. অন্য এক দল লোকের মতে মহানবীর নাম নয়, বরং এগুলো পবিত্র কোরআনের হুরুফে মুকাত্তায়াতের অন্তর্গত।[11]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩; কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, طه (ত্বাহা) ও يس (ইয়াসীন) শব্দদ্বয় মহানবীর নামসমূহের অন্তর্গত।[12]. انسان العيون في سيرة الأمين و المأمون গ্রন্থের ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩-১০০।[13]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪; ইবনে শাহরআশুব প্রণীত মানাকিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৯।[14]. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩।[15]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৪৪২।[16]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১‘‘এক মহান তারা ঝিলমিল করল ও সভার মধ্যমণি হলোআমাদের ব্যথিত অন্তরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুহৃদ হলো।’’জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।মহান মনীষীদের শৈশবপ্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গভীরভাবে অধ্যয়ন করা উচিত। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এতটা মহান ও ব্যাপক যে, তাঁর জীবনের সমস্ত অধ্যায়, এমনকি তাঁর শৈশব ও মাতৃস্তন্য পান করার সময়কালের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। যুগের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গ, সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতার কাফেলার অগ্রবর্তীদের জীবন সাধারণত আকর্ষণীয়, সংবেদনশীল ও আশ্চর্যজনক পর্যায় ও দিক সম্বলিত। তাঁদের জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রূণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। আমরা বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর। আর আমরা যদি এ ধরনের বিষয় বিশ্বের সেরা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেনে নিই তাহলে মহান আল্লাহ্‌র প্রিয় নবী ও ওলীদের ক্ষেত্রে এতদসদৃশ বিষয়াদি মেনে নেয়াও খুব সহজ হবে।পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোশে্ছদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহ্‌র ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : ‘‘আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।’’মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল, ‘‘আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।’’[1]হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ, জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে, ‘‘ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।’’ মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘‘কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।’’ আমাদের দূত তখন বললেন, ‘‘এ কাজ মহান আল্লাহ্‌র কাছে অত্যন্ত সহজ।’’ পরিশেষে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশে ঈসা মসীহ্‌ নূর হযরত মরিয়মের গর্ভে স্থাপিত হলো। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুর গাছের দিকে নিয়ে গেল। তিনি তাঁর নিজ অবস্থার ব্যাপারে দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন। আমরা বললাম, ‘‘খেজুর গাছ বাঁকাও, তাহলে তাজা খেজুর নিচে পড়বে।’’ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, ‘‘যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?’’ তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন, ‘‘আমি মহান আল্লাহ্‌র বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম পর্ব ৬মহানবীর স্তন্যপানের সময়কালনবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চি‎হ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্‌র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্‌র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

#ইন্না শা-নি’আকা হুওয়াল আবতার’ #পর্ব-১যে কেউ যখন কোন মিথ্যা বলে তার কোন না কোন কারন থাকে, জানি না মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে চল্লিশ বছরে নবী বলার পিছনে কি কারন থাকতে পারে! হয়তো কারন টা এমন যে কেউ যখন তাকে ( যে মিথ্যা বলবে) জিজ্ঞেস করে যে তোমার বুজুর্গ তো চল্লিশ বছর পর্যন্ত মুর্তিপুজা করেছে! সে তোমার রাহবার হয় কিভাবে? তখন তাকে বাধ্য হয়েই মিথ্যা বলতে হয় যে, “চল্লিশ বছর তো হুজুরও নবী ছিলেন না!” এটা তার মুর্তিপুজারী রাহবার কে বাচানোর চেষ্টা। আমি তাকে দোষ দিই না। আশ্চর্য হই তখন যখন ওরাই আবার “ঈদে মিলাদুন্নবী” পালন করে। কেন ভাই?? আপনাদের হিসাবে তো মুহাম্মদ সঃ জন্মের সময় নবী ছিলেনই না! তাহলে কার জন্মদিন পালন করেন?ঈদ ই মিলাদুন্নবী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ্ সর্বপ্রথমে মুহাম্মদের নূর সৃষ্টি করেছেন। যারা বিশ্বাস করে আউয়ালুনা মুহাম্মদ, আখেরুনা মুহাম্মদ, আওসাতুনা মুহাম্মদ, কুল্লানা মুহাম্মদ।“ যারা বিশ্বাস করে, এমনকি জিব্রাঈলের জন্মের আগেও মাওলা মুহাম্মদ নবীই ছিলেন। যারা এটা বিশ্বাস করেন ‘আদম কে সৃস্টির আগেও আমি নবীই ছিলাম। অনেকেই দাবী করতে পারেন আমি যে রেওয়ায়েত গুলি উল্লেখ করলাম সেগুলি জঈফ, সে জন্য শুধু রেওয়ায়েত না আয়াতও দিলাম সুরা আন’আমের ১৬২-১৬৩ আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ “আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।”“তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং আমি এতেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম মুসলমান।” দেখুন তো কে প্রথম মুসলিম? তাইলে ইব্রাহীম আঃ? বা আদম আঃ??তারাও তো ইসলামেরই নবী ছিলেন! তাহলে তারা কেন প্রথম মুসলিম নন? যাই হোক যারা এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী, তাদেরকে জানাই ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।লিখতে বসেছি সেই সত্ত্বার জন্মদিন এর কথা যিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন,। সেদিন আমাকে ইনবক্সে এক ভাই বললো আপনাদের ইতিহাস শিয়াদের বানানো, আমাদেরটার চেয়ে আলাদা। আমি বললাম কেন? বললো আপনারা সতেরোই রবিউল আউয়াল রসুলের বেলাদত বলেন, ১২ কে মানেন না! আমি বললাম আমি কি মুনাফিক যে “১২ কে অস্বীকার করবো! আমি তো এই দুয়া করি যে সবাই ১২ ই মানুক ( আল্লাহই জানে কি বুঝলো) ১২,১৭ এগুলি তারিখ, তারখের হিসাবের আগেও আমার মাওলা ছিলেন! রবিউল আউয়াল চাদের মাস, চাঁদ ছিলোনা কিন্তু আমার মাওলা ছিলেন। চাঁদ চলে সুর্যের আলো দ্বারা, সুর্য ছিলোনা, আমার মাওলা ছিলেন, সুর্য তো দুরের কথা সৌরজগতের কিছুই ছিলোনা আমার মাওলা ছিলেন, এবং নবীই ছিলেন। যারা ১২ ই রবিউল আউয়াল কে বেলাদত দিবস মানেন তাদের সন্মানে আজ থেকে লিখা শুরু করলাম মাওলা চাইলে চলবে ১৭ পর্যন্ত।

আল্লাহর কর্তিক মনোনীত ইমাম ও তার দায়িত্বআমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, রাসূল (সা.) এর ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির দু’ধরনের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। যথা :একটি বাহ্যিক শাসন অপরটি আধ্যাত্মিক শাসন।বাহ্যিক শাসনঅর্থাৎ শাসন পরিচালনা, আইনের বাস্তবায়ন, অধিকার সংরক্ষণ, ইসলামী রাষ্ট্রের সংরক্ষণ ইত্যাদি।এক্ষেত্রে ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির কাজ অন্যান্য শাসকদের মতই, তবে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কখনই ইসলামের আইন ও বিচারবিধির ওপর পূর্ণ জ্ঞান ব্যতীত সম্ভব নয়।আধ্যাত্মিক শাসনআধ্যাত্মিক শাসন এই অর্থে যে, ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির কর্তব্য হচ্ছে সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সমস্যার সমাধান দান ও মানুষের হেদায়েতের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি (যা কোন কারণে বলা হয় নি) মুসলমানদের নিকট তুলে ধরা।এক্ষেত্রে ইমাম বা খলিফা, একজন শাসকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অবশ্যই ধর্মীয় বিধি-বিধান ও কোরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যাও জনগণের সামনে বর্ণনা করবেন যাতে ইসলামের চিন্তা-ধারাকে যে কোন ধরনের বিচ্যুতি থেকে রক্ষা এবং বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ-সংশয় হতে মুক্ত রাখতে পারেন। সুতরাং ইমাম বা খলিফাকে অবশ্যই রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মধ্যে ইসলামের ভিত্তি, মানদণ্ড ও শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী ও বিজ্ঞ হতে হবে। অর্থাৎ সবার চেয়ে বেশি মহানবী (সা.)-র প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের ঝর্ণা ধারা হতে পানি পান এবং তাঁর থাকাকালীন সময়ে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান ও নৈতিক লাভবান হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী হতে হবে। সুতরাং ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরূপ ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য যিনি রাসূল (সা.) এর পবিত্র অস্তিত্ব থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করেছেন। সেই সাথে তিনি একদিকে ইসলামের জন্য অগ্রবর্তী ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হবেন অন্যদিকে সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে নিজের স্বার্থের উপর মুসলমানদের ও ইসলামের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বীনকে রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গ করার দৃষ্টান্তের অধিকারী হবেন।ইমাম বা খলিফার শাসনকার্যের ক্ষেত্রে মুসলমানদের সমস্ত সম্পদের উপর তার শাসন কর্তৃত্বের অধিকার থাকবে বিশেষ করে খুম্স, যাকাত, রাজস্ব ও ভূমিকর, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা গণিমত, খনিজ ও অন্যান্য সাধারণ সম্পদ ইত্যাদি যা ইমাম বা খলিফার অধীনে থাকবে এবং ইমাম বা খলিফার দায়িত্ব হচ্ছে এগুলোকে কোন প্রকার অনিয়ম ছাড়াই জনগণের মাঝে বন্টন করা; অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণকর কোন কাজে লাগানো। সুতরাং তাকে অবশ্যই ইসলামের ন্যায় ভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত এবং দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত হতে হবে। এমনকি তাকে সংবেদনশীল বিশেষ মুহূর্তেও ভুল করা চলবে না অর্থাৎ তাকে জ্ঞান ও কর্ম উভয় ক্ষেত্রেই নির্ভুল হতে হবে। এমন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউই শনাক্ত করতে সক্ষম নয়। ঠিক এই দলিলের ভিত্তিতেই ইমামত তথা খেলাফত হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত যা তাঁর পক্ষ হতে উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই প্রদান করা হয়। তাই ঐ পবিত্র পদ মানুষের নির্বাচনের নাগালের বাইরে।অন্যভাবে বলা যায়, ইমামত তথা খেলাফত আল্লাহর মনোনীত একটি পদ যাতে মানুষের ভোটের কোন প্রভাব নেই। এ চিন্তার ভিত্তিতে আমরা রাসূল (সা.) এর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্ণিত দলিল ও ঐশী নির্দেশের উপর নির্ভর করবো এবং রাসূল (সা.) এর বাণীসমূহ যা এই সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করে তার ফলাফলের উপর সিদ্ধান্ত নিব।হযরত আলীর (আ.) খেলাফতের অকাট্য প্রমাণযে সকল প্রমাণাদি সরাসরি সুস্পষ্টভাবে আলীর (আ.) খেলাফত ও নেতৃত্বকে প্রমাণ করে তার সংখ্যা এত বেশী যে যদি আমরা তা উল্লেখ করতে চাই তাহলে শুধু সেগুলিই একটা বড় গ্রন্থে রূপ লাভ করবে। তাই এখানে সামান্য কয়েকটির উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থাকবো।প্রথমেই বলা দরকার যে, যদিও মুসলিম সমাজ রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পর নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও রাসূল (সা.) এর প্রকৃত খলিফা হযরত আলীকে ২৫ বছর ধরে শাসনকার্য হতে দূরে রেখেছিল, কিন্তু এতে তাঁর সত্তাগত মর্যাদার মূল্য বিন্দু পরিমাণও কমে নি; বরং তারা নিজেরাই একজন নিষ্পাপ বা মাসুম নেতা হতে বঞ্চিত হয়েছে এবং উম্মতকেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত করেছে। কারণ তাঁর মান-মর্যাদা বাহ্যিক খেলাফতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না, বরং খেলাফতের পদটি স্বয়ং আলীর (আ.) দায়িত্বভারের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তাই তাঁকে খেলাফত থেকে দূরে রাখার কারণে রাসূলের নীতি ও সুন্নতের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।যখন আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) কুফা শহরে প্রবেশ করলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর সামনে এসে বলল : ‘আল্লাহর কসম, হে আমিরুল মু’মিনীন! খেলাফতই আপনার মাধ্যমে মর্যাদা লাভ করেছে ও সৌন্দর্য্যমন্ডিত হয়েছে, এমন নয় যে আপনি ঐ খেলাফতের মাধ্যমে মর্যাদা লাভ করেছেন। আপনার কারণেই এই পদটি মর্যাদার উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, এমন নয় যে আপনি ঐ পদের কারণে উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন। খেলাফতই আপনার মুখাপেক্ষী হয়েছিল, আপনি তার প্রতি মুখাপেক্ষী ছিলেন না।’আহমাদ ইবনে হাম্বালের পুত্র আব্দুল্লাহ বলেছেন : “একদিন আমার পিতার নিকট বসেছিলাম। কুফার অধিবাসী একদল লোক প্রবেশ করলো ও খলিফাদের খেলাফত সম্পর্কে আলোচনা করলো; কিন্তু আলীর খেলাফত সম্পর্কে কথা-বার্তা একটু দীর্ঘায়িত হল। আমার পিতা মাথা উঁচু করে বললেন :‘তোমরা আর কত আলী ও তার খেলাফত (শাসনকর্তৃত্ব) সম্পর্কে আলোচনা করতে চাও? খেলাফত আলীকে সুশোভিত করে নি বরং আলীই খেলাফতকে সৌন্দর্য্য দান করেছেন’।”আমরা জানি যে, গাদীরের ঘটনা একটি প্রামাণিক ঘটনা যা ইসলামের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং বেলায়াতের (কর্তৃত্বের) হাদীসও مَنْ كُنْتُ مَولاهُ فَعَليٌّ مَوْلاهُ একটি তর্কাতীত বাণী যা রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। আর অর্থ ও ভাবধারার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার অস্পষ্টতার চিহ্ন তাতে নেই; যারাই একটু আরবি ব্যকরণ সম্পর্কে জ্ঞাত ও বুদ্ধিবৃত্তিক এবং প্রচলিত সর্বগ্রাহ্য মাপকাঠি সম্পর্কে পরিচিত তারা যদি ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিতে পক্ষপাতহীনভাবে এই হাদীসটির প্রতি দৃষ্টিপাত করে তাহলে অবশ্যই স্বীকার করবে যে এই হাদীসটি আলী ইবনে আবী তালিবের (আ.) ইমামত, নেতৃত্ব ও প্রাধান্যতার কথাই প্রমাণ করে।এমন কি এই হাদীসটিকে যদি না দেখার ভান করি, তারপরেও আলী (আ.) এর ইমামত ও নেতৃত্ব সম্পর্কে শিয়া এবং সুন্নীদের গ্রন্থসমূহে যথেষ্ট পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা আমাদের নিকট বিদ্যমান।রাসূল (সা.) হতে এ সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরবো।মহানবী (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিনিধি বা খলিফারাসূল (সা.) বলেছেন : لكلِّ نَبيٍ وَصيٌّ وَ وٰارِثٌ وَ اِنَّ عَلياً وَصيّي وَ وٰارثيঅর্থাৎ ‘প্রত্যেক নবীরই ওসী বা প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী আছে এবং নিশ্চয়ই আমার প্রতিনিধি ও উত্তরাধি-কারী হল আলী।’আরো বলেন : أنٰا نَبِيُّ هٰذِهِ الاُمَّةِ وَ عَلِيٌّ وَصيّي في عِترَتي وَ اَهْلِ بَيتي وَ اُمَّتي مِنْ بَعديঅর্থাৎ ‘আমি এই উম্মতের (জাতির) নবী আর আলী হচ্ছে আমার ওসী বা প্রতিনিধি।’তিনি বলেন : عَليٌ أخي وَ وَزيري وَ وٰارثي وَ وَصيي وَ خَليفَتي في اُمَّتيঅর্থাৎ ‘আমার উম্মতের মধ্যে আলীই আমার ভাই, আমার সহযোগী উজীর, প্রতিনিধি, উত্তরাধিকারী ও আমার খলিফা।’এসব হাদীসে ওসী (প্রতিনিধি) ও উত্তরাধিকারী এ দু’টি শিরোনামকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ঐ দু’টির প্রত্যেকটিই আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) এর ইমামত বা খেলাফতকেই প্রমাণ করে।ওসী বা প্রতিনিধির অধিকারওসী বা প্রতিনিধি তাকেই বলা হয় যিনি সমস্ত দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে অসিয়তকারীর অনুরূপ অর্থাৎ যা কিছুর উপর অসিয়ত-কারীর অধিকার ও ক্ষমতা ছিল ওসীরও তার উপর অধিকার ও ক্ষমতা রয়েছে এবং তা ব্যবহার করতে পারবেন তবে যে ক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্টভাবে তাকে অসিয়ত করবেন কেবল সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত তার ব্যবহারের অধিকার আছে।এই হাদীসে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে অসিয়তের ক্ষেত্রে দায়িত্বকে সীমিত করেন নি বরং তাঁকে নিঃশর্তভাবে ওসী বা প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর অধীনে যা কিছু আছে তার সবকিছুতে আলীর (আ.) অধিকার আছে আর এটাই হচ্ছে ইমামত বা খেলাফতের প্রকৃত অর্থ।উত্তরাধিকারীউত্তরাধিকারী শব্দটি শুনে প্রথম যে চিত্রটি মাথায় আসে তা হচ্ছে উত্তরাধিকারী ব্যক্তি উত্তরাধিকারী মনোনীতকারীর সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়; কিন্তু আলী (আ.) শরীয়তের দৃষ্টিতে রাসূল (সা.) এর সম্পদের উত্তরাধিকারী ছিলেন না। কেননা, ইমামিয়া ফিক্হের আইন অনুযায়ী মৃতের যখন কোন সন্তান থাকে, তখন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় না (সন্তানগণ সম্পদের প্রথম পর্যায়ের উত্তরাধিকারী, তারপর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন)। আর আমরা জানি যে, রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় সন্তান রেখে গিয়েছিলেন। ফাতিমা যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) তাঁর (রাসূলের) ইন্তেকালের পরেও কমপক্ষে ৭৫ দিন জীবিত ছিলেন, তাছাড়াও রাসূল (সা.) এর স্ত্রীগণ, যারা সম্পদের এক অষ্টাংশের অধিকারী ছিলেন, তাঁদের অনেকেই জীবিত ছিলেন। যদি এ বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করি তবুও আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই। আর চাচাতো ভাই তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে উত্তরাধিকার পায় এবং আমরা জানি রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্বাস তাঁর (সা.) মৃত্যুর পরও জীবিত ছিলেন। আর চাচা হচ্ছেন দ্বিতীয় পর্যায়ের উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিশ।কিন্তু আহলে সুন্নাতের ফিকাহ্শাস্ত্র অনুযায়ী, স্ত্রী-গণকে তাদের অংশ (১/৮) দেওয়ার পর সম্পদকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, তার এক অংশ পাবে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) যিনি রাসূল (সা.)-এর একমাত্র কন্যা ছিলেন। অপর অংশটি যেটা তার অংশের বাইরে : সেটা তাঁর (সা.) চাচা আব্বাসের দিকে বর্তায়। সুতরাং, হযরত আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) কোনভাবেই রাসূল (সা.) এর সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। অপরদিকে যেহেতু রাসূল (সা.) সরাসরি তাকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছেন তাই অবশ্যই এই হাদীসে ‘এরস বা উত্তরাধিকারের’ বিষয়টি সম্পদ ভিন্ন অন্যকিছুকে বুঝায়। স্বাভাবিকভাবেই এই হাদীসে উত্তরাধিকারের বিষয়টি রাসূল (সা.) এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং আলী (আ.) রাসূল (সা.) এর জ্ঞান ও সুন্নাতের উত্তরাধিকারী। সেই দলিলের ভিত্তিতেই তিনি তাঁর (সা.) খলিফা বা প্রতিনিধি।রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) বলেছেন ‘তুমি আমার ভাই ও উত্তরাধিকারী।’ আলী (আ.) বলেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছ থেকে উত্তরাধিকারী হিসেবে কি পাব?’ রাসূল (সা.) বললেন : ‘ঐ সকল জিনিস যা আমার পূর্ববর্তী নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন।’ জিজ্ঞেস করলেন : ‘তাঁরা কি জিনিস উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন?’ তিনি বললেন : ‘আল্লাহর কিতাব ও নবীদের সুন্নাত।’ আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) নিজেও বলেছেন : ‘আমি রাসূল (সা.) এর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী।’ মু’মিনদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আলী (আ.)রাসূল (সা.) যখনই এমন কোন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতেন যে, আলীর (আ.) সাথে যে কারণেই হোক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে বা যদি কেউ মূর্খতার বশে আলী (আ.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর নিকট অভিযোগ করতো, তিনি তাদেরকে বলতেন : مٰا تريدُونَ مِنْ عَلِيٍّ اِنَّ عَلياً مِنّي وَ أَنٰا مِنْهُ وَ هُوَ وليُّ كُلِّ مُؤمِنٍ بَعديঅর্থাৎ ‘আলীর সম্পর্কে তোমরা কি বলতে চাও সে আমার থেকে আর আমি তার থেকে। আমার পরে আলীই প্রত্যেক মো’মিনের ওয়ালী বা পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক)।’যদিও বাক্যে ব্যবহৃত ‘ওয়ালী’ শব্দটির অনেকগুলো আভিধানিক অর্থ রয়েছে, তারপরেও এই হাদীসে নেতা, পৃষ্ঠপোষক বা অভিভাবক ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহার হয় নি; এই হাদীসে ‘আমার পরে’ শব্দটিই উক্ত মতকে স্বীকৃতি প্রদান করে। কারণ, যদি ‘ওয়ালী’ শব্দের উদ্দেশ্য বন্ধুত্ব, বন্ধু, সাথী, প্রতিবেশী, একই শপথ গ্রহণকারী, এ ধরনের অর্থই হত তাহলে ‘রাসূল (সা.) এর পরে’ যে সময়ের প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত করা হয়েছে তার দরকার ছিল না, কারণ তাঁর (সা.) জীবদ্দশায়ই তিনি (আলী) ঐরূপ ছিলেন।রাসূল (সা.) এর বাণীতে আলী (আ.)-র পৃষ্ঠপোষকতা বা অভিভাবকত্বকে মেনে নেওয়ার সুফলের কথাযখনই সাহাবীগণ রাসূল (সা.) এর পরে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি ও ইসলামী রাষ্ট্র নেতা সম্পর্কে তাঁর (সা.) সাথে কথা বলতেন, তখনই তিনি (কোন কোন হাদীস অনুযায়ী দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন) এবং আলীর (আ.) পৃষ্ঠপোষকতা বা অভিভাবকত্ব মেনে নেওয়ার সুফল সম্পর্কে বক্তব্য দিতেন।তিনি বলতেন : إنْ وَلَّيْتُمُوهٰا عَلياً وَجَدْتُمُوهُ هٰادياً مَهْدياً يَسْلُكُ بِكُمْ عَلَى الطَّريقِ المستقيمঅর্থাৎ ‘যদি খেলাফতকে আলীর হাতে তুলে দাও, তাহলে দেখবে যে, হেদায়াত প্রাপ্ত ও হেদায়াতকারী হিসাবে সে তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করছে।’ أما وَالَّذي نَفْسي بِيَدِهِ لَئِنَ اَطاعُوه لَيَدْخُلُنَّ الجَنَّةَ اَجْمَعينَ اَكْتعينَঅর্থাৎ ‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যারা আলীর আনুগত্য করবে তারা সকলেই বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।’ اِنْ تسْتخْلِفُوا عَلياً ـ‌وَ لا اَرٰاكُمْ فَاعِلينَ‌ـ تجِدُوهُ هٰادياً مَهْدياً يَحْمِلُكُمْ عَليَ المَحَجَّةِ الْبَيْضٰاءঅর্থাৎ ‘যদি তোমরা আলীকে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নাও, তাহলে (আমার মনে হয় না তোমরা এমনটি করবে) দেখবে যে, সে সঠিক পথপ্রাপ্ত ও পথপ্রদর্শক; তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।’আলী (আ.) এর জন্য নির্ধারিত খেলাফতরাসূল (সা.) হতে বর্ণিত আছে যে, শবে মেরাজে (ঊর্ধ্বগমনের রাতে) যখন আমি নৈকট্যের প্রান্ত সীমাতে পৌঁছলাম ও আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হলাম, তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ! আমি জবাব দিলাম: ‘লাব্বাইক (আমি হাজির)।’ তিনি বললেন : ‘তুমি কি আমার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে দেখেছ যে, তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি আমার অনুগত?’আমি বললাম : ‘হে আল্লাহ তাদের মধ্যে আলীই সবচেয়ে বেশী অনুগত।’তিনি বললেন : ‘তুমি সত্যই বলেছ হে মুহাম্মদ! তুমি কি স্বীয় খলিফা বা প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছ যে তোমার পরে তোমার দায়িত্বগুলি পালন করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে যারা কোরআন সম্পর্কে জানে না তাদেরকে কোরআন শিক্ষা দিবে?’আমি বললাম : ‘হে আল্লাহ! আপনি নিজেই আমার জন্য প্রতিনিধি নির্ধারণ করে দিন।’ তিনি বললেন : ‘আমি আলীকে তোমার প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করলাম; তুমি তাকে স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন কর।’একইভাবে রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য নবী নির্বাচন করেছেন ও প্রত্যেক নবীর জন্য নির্ধারণ করেছেন তার প্রতিনিধি। আমি হলাম এই জাতির নবী আর আলী হচ্ছে আমার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি বা ওসী।’উপরিউক্ত আলোচনা থেকে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয় তা হচ্ছে মহানবী (সা.) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী সর্বোত্তম ও সুযোগ্য ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত বা খলিফা নির্ধারণ করেছেন। তাই তাঁর আনুগত্য করা সকল মুসলমানের জন্য ফরয। তাঁকে অমান্য করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করা। সে কারণে আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে রাসূলে (সা.) এর নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ করা।প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কিপ্রচারে মোঃ আবু তুরাব

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম পর্ব ৬মহানবীর স্তন্যপানের সময়কালনবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চি‎হ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্‌র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্‌র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাতইমাম হাসান (আ.) তৃতীয় হিজরীর ১৫ই রমজান মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর পর্যন্ত স্বীয় পিতামহ হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর সান্নিধ্য লাভের পর পিতার সাথে ছিলেন প্রায় ৩০ বছর। আমিরুল মু'মিনীন (আ.) এর শাহাদাতের পর ১০ বছর যাবত ইমামতের দায়িত্ব পালন করেন এবং ৫০ হিজরীর ২৮শে সফর ৪৭ বছর বয়সে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের চক্রান্ত ও নির্দেশে স্বীয় স্ত্রী জো'দা বিনতে আশয়াস বিন কায়েস কর্তৃক বিষপ্রয়োগে শাহাদাত বরণ করেন।যেভাবে শহীদ হনসন্ধী করতে ইমাম হাসান (আ.) কে বাধ্য করে উমাইয়া সরকার তাদের বিভিন্ন কুউদ্দেশ্যে পৌঁছুতে সক্ষম হলেও তাদের অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়নে ইমাম হাসান (আ.) এর অস্তিত্ব ছিল বিরাট বাধা। মুয়াবিয়ার অন্যতম টার্গেট ছিল স্বীয় কুলাঙ্গার পুত্র ইয়াযিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করা; যা ছিল ইমাম হাসান (আ.) এর সাথে কৃত সন্ধীর শর্ত বিরোধী। আর তাই সে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সে জানতো যে, যদি ইমাম (আ.) এর জীবদ্দশায় এ ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে হাসান (আ.) এর কঠোর বিরোধিতার মুখোমুখি হবে। এরই ভিত্তিতে সে যে কোন উপায়ে ইমাম (আ.) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন আলোচনা ও পর্যালোচনার পর এ চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইমাম (আ.) এর স্ত্রী জো'দা বিনতে আশয়াসকেই তারা বেছে নেয়। আর তাই গোপনে জো'দার নিকট এক লক্ষ দিরহাম পাঠিয়ে তাকে এ প্রলোভন দেখানো হয় যে, যদি হাসানকে হত্যা করতে পারো তবে তোমাকে ইয়াযিদের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। আর জো'দাও মুয়াবিয়ার চক্রান্তে সাড়া দিয়ে ইমামের খাওয়ার পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয় এবং ইমাম হাসান (আ.) ঐ বিষে আক্রান্ত হয়েই শাহাদাত বরণ করেন।ইমাম (আ.) এর ওসিয়তইমাম হাসান (আ.) কে বিষ প্রদানের পর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর ভাইয়েরা তার শিয়রে এসে উপস্থিত হয়ে যখন তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তখন ইমাম (আ.) বললেন : ‘আমি আখেরাতের দিনগুলোর প্রথম দিনে এবং দুনিয়ার দিনগুলোর শেষ দিনে অবস্থান করছি'। এরপর তিনি বললেন : ‘আমি আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছি, তার কোন শরিক নেই এবং তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য। যে তার অনুসরণের পথ বেছে নেবে সে সফলকাম হবে, আর যে তার অবাধ্য হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। আর যে গুনাহ ও ভুলের পর তার নিকট তওবা করবে সে হেদায়েত লাভ করবে। হে হুসাইন! আমার লাশকে আমার নানা আল্লাহর রাসূল (স.) এর পাশে দাফন করো, তবে শর্ত হল যেন কেউ এতে বাধা না দেয়। যদি কেউ এ কাজে তোমাকে বাধা দেয় তবে তুমি যেন দৃঢ়তা দেখিও না। কেননা এ কাজের জন্য একটি ফোঁটাও রক্ত ঝরুক আমি তা কখনই চাই না।'ইমাম হাসান (আ.) এর ওপর ক্রন্দনের ফজিলত ও প্রভাবইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন : ‘যখন আমার সন্তান হাসান মুজতাবাকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হবে তখন জমীন ও আসমান তার জন্য শোক পালন করবে। জেনে রাখো আমার সন্তান হাসানের জন্য ক্রন্দন ও শোক প্রকাশের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যে ব্যক্তি তার উপর বয়ে যাওয়া মুসিবতের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করে, যেদিন সকলের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে সেদিন তার চোখে দৃষ্টি শক্তি থাকবে এবং যেদিন সকলের অন্তর ভারাক্রান্ত থাকবে সেদিন তার অন্তর সকল দুঃখ-বেদনা হতে মুক্ত থাকবে। আর যে ব্যক্তি (জান্নাতুল) বাকীতে তার কবর যেয়ারত করবে, পুলে সিরাতে যখন সকলের পা নড়বড়ে অবস্থায় থাকবে তখন তার পা থাকবে দৃঢ়।'জুনাদাহ'র প্রতি ইমাম হাসান (আ.) এর ওসিয়তইমাম হাসান (আ.) কে বিষ প্রয়োগের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে জুনাদাহ বিন আবি উমাইয়া তার নিকট আসলো। কুশল বিনিময়ের পর ইমাম (আ.) কে বললো: হে আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তান আমাকে নসিহত করুন। ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) তার উদ্দেশ্যে বললেন : ‘হে জুনাদাহ, মৃত্যু তোমার দরজার কড়া নাড়ার পূর্বেই যে সফর তোমার সামনে রয়েছে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। জেনে রাখো, তুমি সর্বদা দুনিয়ার সন্ধানে আর মৃত্যু সর্বদা তোমার সন্ধানে। যে দিনটি এখনও এসে পৌঁছায়নি সেদিনের দুঃখকে যে দিনে তুমি অবস্থান করছো তার উপর চাপিয়ে দিও না... জেনে রাখো, পৃথিবীর হালাল সম্পদের জন্য রয়েছে হিসাব আর হারাম সম্পদের জন্য রয়েছে শাস্তি এবং সন্দেহভাজন সম্পদের জন্য রয়েছে ইতাব ও তিরস্কার... নিজের দুনিয়ার জন্য এমনভাবে চেষ্টা করো যেন তুমি সর্বদা সেখানে অবস্থান করবে এবং নিজের আখেরাতের জন্য এমনভাবে কাজ করো যেন আগামীকালই তোমার মৃত্যু হবে। যদি তুমি সম্মান ও... এর সন্ধানে রয়েছো তবে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার হীনতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে আল্লাহর আনুগত্য করাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও।'ইমাম হাসান (আ.) এর শেষ ক্রন্দনবর্ণিত হয়েছে যে, যখন বিষ ইমাম হাসান (আ.) এর সমস্ত দেহে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলো এবং তিনি মূমূর্ষ অবস্থা অতিক্রম করছিলেন তখন হঠাত তার চোখ অশ্রুসিক্ত হল। উপস্থিত সকলে জিজ্ঞেস করলেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তান, আল্লাহর নবী (স.) এর নিকট আপনার যে মর্যাদা ও স্থান রয়েছে এবং এত ইবাদত ও আল্লাহর আনুগত্যের পরও এমন মূহুর্তে ক্রন্দন করছেন? তিনি (আ.) বললেন : ‘আমি দু'টি জিনিষের জন্য ক্রন্দন করছি; প্রথম, কেয়ামতের দিনের ভীতির বিষয়ে যা সত্যিই কঠিন দিন। দ্বিতীয়, আমার আত্মীয়-স্বজনদের হতে পৃথক হওয়ার কারণে; এটাও কঠিন কাজ।'ইমাম হাসান (আ.) হতে বর্ণিত কতিপয় অমীয় বাণীসালামের গুরুত্ব :ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সালাম প্রদানের পূর্বে কথা শুরু করে তার কথার উত্তর দিও না।'জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘নিরবতা, ত্রুটি গোপন রাখে এবং সম্মান রক্ষা করে। যে এ গুণের অধিকারী সে সর্বদা প্রশান্তিতে থাকে এবং তার সহচর ও তার সাথে ওঠাবসাকারীরাও তার হতে নিরাপদে থাকে।'শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্য ও কল্যাণ :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘যে কল্যাণের মাঝে কোন মন্দ থাকে তা হল : নেয়ামতের বিপরীতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও বিপর্যয়ের সময় ধৈর্য্যধারণ করা।'বুদ্ধিবৃত্তির পূর্ণতা :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘জনগণের সাথে উত্তম ব্যবহার, বুদ্ধিবৃত্তির পূর্ণতার পরিচয়'।ওয়াজিবের জন্য মুস্তাহাব কর্ম ত্যাগ করা :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘যখন মুস্তাহাব ইবাদাত ও কর্মসমূহ, ওয়াজিব ইবাদাত ও কর্মসমূহের ক্ষতিসাধন করে তখন তা ত্যাগ করো।'আধ্যাত্মিক বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘আমি ঐ সকল ব্যক্তিদের বিষয়ে আশ্চর্য হই যারা নিজেদের শরীরের খাদ্যের বিষয়ে চিন্তা করে কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়াদি ও আত্মার খাদ্যের বিষয়ে চিন্তা করে না। ক্ষতিকর খাদ্য থেকে নিজের পেটকে বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু যে সকল নোংরা চিন্তা তার অন্তরকে দূষিত করে তা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে না।'আত্মীয়তার বিষয়ে :জনৈক ব্যক্তি ইমাম হাসান (আ.) এর উদ্দেশ্যে বললেন : আমার একটি বিবাহযোগ্যা কন্যা রয়েছে, কেমন ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দেব? ইমাম হাসান (আ.) বললেন : এমন ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে দাও যে তাকাওয়াধারী ও পরেজগার। কেননা তাকওয়াবান ব্যক্তি যদি তাকে ভালবাসে তবে তাকে সম্মান করবে। আর যদি তাকে ভাল নাও বাসে তবে অন্তত তার উপর অত্যাচার করবে না।'ইমামের দৃষ্টিতে রাজনীতি :জনৈক ব্যক্তি ইমাম (আ.) কে সিয়াসাত তথা রাজনীতির অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন : ‘রাজনীতি হল, আল্লাহর অধিকার এবং আল্লাহর জীবিত ও মৃত বান্দাদের অধিকার মেনে চলার নাম।' অতঃপর তিনি ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেন : ‘আল্লাহর অধিকার হল; যা কিছু মহান আল্লাহ্ বাস্তবায়নের নির্দেশ ও আঞ্জাম দিতে নিষেধ করেছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা'। আল্লাহর জীবিত বান্দাদের অধিকার হল, ‘নিজের দ্বীনি ভাইয়ের বিষয়ে তোমার কর্তব্যকে পালন করা, তোমার দ্বীনি ভাইয়ের সেবা দানের ক্ষেত্রে বিলম্ব না করা এবং ইসলামি সমাজের নেতার বিষয়ে, যতক্ষণ সে জনগণের বিষয়ে একনিষ্ঠ থাকে ততক্ষণ তুমিও তার প্রতি একনিষ্ঠ থেকো, আর যখন সে সত্য পথ হতে বিভ্রান্ত হয়ে যায় তখন তার প্রতিবাদ জানাও'। আর আল্লাহর মৃত বান্দাদের অধিকার হল; ‘তাদের উত্তম কর্মসমূহকে স্মরণ করা এবং তাদের মন্দ কর্মসমূহকে গোপন করা'

মানুষ আল্লাহর রহস্যমানুষের অন্তর এ আল্লাহ্‌ জাতরুপে অবস্থান করার কারনেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষ যেমন আল্লাহর রহস্য তেমনি ভাবে শয়তানেরও রহস্য। গুরুপ্রেম যত গভীর হবে আল্লাহর পরিচয় লাভ তত সহজ হবে। আমার “আমি” নামক পবিত্র নফস হতে খান্নাসরুপী ষড়রিপুর শয়তানের বন্ধন হতে কেমন করে মুক্তি পাওয়া যায় সেই শিক্ষাটি একজন সত্যগুরু হতে গ্রহন করে নিয়ে সেই পথেই এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্‌ ও শয়তান এই দুইটি সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী । আল্লাহ্‌ পবিত্র হলে শয়তান অপবিত্র, আল্লাহ্‌ স্রষ্টা কিন্তু শয়তান সৃষ্টি, এই দান্দিক দুই মেরুর মিশ্রণই হল মানুষ। কলব শয়তানের কু মন্ত্রনা দানের প্রধান কেন্দ্র হলেও আবার সেই কলব ই আল্লাহর আরস। আল্লাহ্‌ জাত রুপে এই কলবেই অবস্থান নেয়। তাই মানুষই শয়তানের প্রকাশ আবার মানুষই আল্লাহর প্রকাশ। আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম সবচেয়ে ভাল ফেরেস্তা বানালেন । কিন্তু ফেরেস্তারা আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয় ছিল না , তারপর সব চেয়ে খারাপ শয়তান বানালেন। এইটাও আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয় ছিল না। মানুষ ভাল এবং খারাপের সমন্বয় এ তৈরি। এই মানুষই আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয়। তাই তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তার পরিচয় মানুষের মাধ্যমে, তার নুরের বিকাশ স্থল মানুষের মাধ্যমে, তার সৃষ্টির বিকাশ মানুষের মাধ্যমে। এই মানুষকেই দিলেন তিনি জগত পরিচালনার দায়িত্ত। এই মানুষ কেই দিলেন তিনি সম্পূর্ণ ফানা হয়ে আল্লাহর মধ্যে মিশে যাবার ফর্মুলা। এই মানুষের জন্যই তিনি সৃষ্টি করলেন বিশ্বজগৎ। মানুষের জন্যই নাজিল করলেন তার কিতাব। মানুষের মধ্যে থেকেই তিনি নির্বাচিত করলেন তার খলিফা। আল্লাহ্‌ নুরের, শয়তান ধোয়া বিহীন আগুনের, কিন্তু মানুষ মাটির তৈরি হলেও এই ৩ টি মানুষের মধ্যে একাকার হয়ে মিশে আছে। তাই নিজেকে চিনতে পারলেই আল্লাহকে চেনা যায়, আল্লাহকে পাওয়া যায়। তাই মহানবী (দঃ) বলেছেন- মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু- অর্থ – যে নিজেকে চিনেছে সে তার রব কে চিনেছে। তাই আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন- তার কথা সেই বলছে, তার কাজ সেই করছে। মানুষের এই রহস্য বুঝতে না পেরেই জিন জাতির আবুল গাণ্ডিব এর ছেলে আজাজিল ফেরেশতাদের সর্দার থেকে বিতাড়িত শয়তান এ পরিণত হল। অথচ আবুল গাণ্ডিব এর ছেলে আজাজিল ছয় কোটি বছর ইবাদত করেছিলেন। এর মধ্যে এক লক্ষ বছর শুধু আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জিকির করেছিলেন। শয়তান আদম পুজার বিরুদ্ধে। কিন্তু শয়তান আল্লাহ্‌ পুজা করতে কখনও অস্বীকার করে নি। ঠিক যেন শয়তানের ধর্ম টার সাথে হুবুহু মিলে যায় আজকের আহলে হাদিস, জামাতে ইসলাম, অহাবি দের সাথে, অহাবি, জামাত, আহলে হাদিস দের আল্লাহ্‌ পুজা করতে কোন আপত্তি নাই কিন্তু পীর, অলির কথা আসলেই শয়তানের মত আমি এক আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করি না বা মানি না চলে আসবেই। এই বেহুশদের চৈতন্য ফিরে আসতে আর কত যুগ অপেক্ষা করতে হবে তা আমার জানা নাই। তবে এইটা ঠিক সবায় সত্য পেলে আল্লাহর দুনিয়া সৃষ্টির খেলাটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বিষয় টা নিজের বা সত্য পথ প্রাপ্ত দের দায়িত্ব অসচেতনতার কথা স্বীকার না করে তকদিরের লিখন বা তাদের কে গালাগালি করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। যা আজকের পীর ফকিররা অহরহ করছে। আত্ম সমালোচনার জন্যই কথাটা বললাম কেও কষ্ট পেয়ে থাকলেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة رضى الله تعالى عنهم)হাদিস নম্বরঃ ৬০০৭ ৪. আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) এর ফযীলত ৬০০৭। যুহায়র ইবনু হারব ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি, হুসায়ন ইবনু সাবুরা এবং উমার ইবনু মুসলিম-- আমরা যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমরা যখন তার কাছে বসি, তখন হুসায়ন বললেন, হে যায়দ! আপনি তো বহু কল্যাণ প্রত্যক্ষ করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আপনি বহু কল্যাণ লাভ করেছেন, হে যায়দ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমাদের বলুন না। যায়দ (রাঃ) বললেন, ভ্রাতূষ্পূত্র! আমার বয়স হয়েছে, আমি পুরানো যুগের মানুষ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যা আমি সংরক্ষণ করোছিলাম, এর কিছু অংশ ভুলে গিয়েছি। তাই আমি যা বলি, তা কবুল কর আর আমি যা না বলি, সে ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না।তারপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “খুম্ম” নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন।তারপর বললেনঃ আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। হুসায়ন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর 'আহলে বাইত' কারা, হে যায়দ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণ কি আহলে বাইতর অন্তভুক্ত নন?যায়দ (রাঃ) বললেন, বিবিগণও আহলে বাইতর অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইত তাঁরাই, যাদের উপর যাকাত গ্রহন হারাম। হুসায়ন বললেন, এ সব লোক কারা? যায়দ (রাঃ) বললেন, এরা আলী, আকীল, জাফের ও আব্বাস (রাঃ) এর পরিবার-পরিজন। হুসায়ন বললেন, এদের সবার জন্য যাকাত হারাম? যায়দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।Yazid b. Hayyan reported, I went along with Husain b. Sabra and 'Umar b. Muslim to Zaid b. Arqam and, as we sat by his side, Husain said to him: Zaid. you have been able to acquire a great virtue that you saw Allah's Messenger (ﷺ) listened to his talk, fought by his side in (different) battles, offered prayer behind me. Zaid, you have in fact earned a great virtue. Zaid, narrate to us what you heard from Allah's Messenger (ﷺ). He said: I have grown old and have almost spent my age and I have forgotten some of the things which I remembered in connection with Allah's Messenger (ﷺ), so accept whatever I narrate to you, and which I do not narrate do not compel me to do that. He then said: One day Allah's Messenger (ﷺ) stood up to deliver sermon at a watering place known as Khumm situated between Mecca and Medina. He praised Allah, extolled Him and delivered the sermon and. exhorted (us) and said: Now to our purpose. O people, I am a human being. I am about to receive a messenger (the angel of death) from my Lord and I, in response to Allah's call, (would bid good-bye to you), but I am leaving among you two weighty things: the one being the Book of Allah in which there is right guidance and light, so hold fast to the Book of Allah and adhere to it. He exhorted (us) (to hold fast) to the Book of Allah and then said: The second are the members of my household I remind you (of your duties) to the members of my family. He (Husain) said to Zaid: Who are the members of his household? Aren't his wives the members of his family? Thereupon he said: His wives are the members of his family (but here) the members of his family are those for whom acceptance of Zakat is forbidden. And he said: Who are they? Thereupon he said: 'Ali and the offspring of 'Ali, 'Aqil and the offspring of 'Aqil and the offspring of Ja'far and the offspring of 'Abbas. Husain said: These are those for whom the acceptance of Zakat is forbidden. Zaid said: Yes. باب مِنْ فَضَائِلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رضى الله عنه ‏‏ حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَشُجَاعُ بْنُ مَخْلَدٍ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ عُلَيَّةَ، قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنِي أَبُو حَيَّانَ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ حَيَّانَ، قَالَ انْطَلَقْتُ أَنَا وَحُصَيْنُ، بْنُ سَبْرَةَ وَعُمَرُ بْنُ مُسْلِمٍ إِلَى زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ فَلَمَّا جَلَسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْنٌ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا رَأَيْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتَ حَدِيثَهُ وَغَزَوْتَ مَعَهُ وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا حَدِّثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - يَا ابْنَ أَخِي وَاللَّهِ لَقَدْ كَبِرَتْ سِنِّي وَقَدُمَ عَهْدِي وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أَعِي مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا حَدَّثْتُكُمْ فَاقْبَلُوا وَمَا لاَ فَلاَ تُك