পোস্টগুলি

পবিত্র কুরআনুল কারীম বিরোধী কিছু হাদিস(((((পর্ব 5)))))১৪. কুরআনে ‘ওহী অনুসরণের নির্দেশ, প্রচলিত হাদিসে ‘রাসূলের নির্দেশের অনুসরণের নির্দেশ!কুরআনে দেখুন, ‘তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা ওহী হয় তুমি তারই অনুসরণ কর, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং মুশরিকদের হতে মুখ ফিরিয়ে নাও (৬:১০৬)। ‘তোমার প্রতি যে ওহী হয়েছে তুমি তার অনুসরণ কর ... (১০:১০৯)। ‘তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা ওহী হয় তার অনুসরণ কর; তোমরা যা কর, আল্লাহ তো সে বিষয়ে সম্যক অবহিত (৩৩:২)। [রাসূল কি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে ওহীর অনুসরণ করেন নি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘তোমরা জেনে রাখ! আমি আল্লাহ্র কসম করে বলছি, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেক বিষয় আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআনের বিষয়ের সমান; বরং তা অপেক্ষাও অধিক হবে (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-১/১৫৭। [রাসূলের নির্দেশ কুরআন থেকে অধিক সত্য হলে কুরআনের প্রয়োজন আছে কি?]১৫. কুরআনে ‘মানুষের প্রশ্নের জবাব আল্লাহ্ দিয়েছেন, প্রচলিত হাদিসে ‘রাসূল দিয়েছেন!কুরআনে দেখুন, ‘লোকে তোমাকে নূতন চাঁদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘তা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময়-নির্দেশক ... (২:১৮৯)। ‘লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তারা কি ব্যয় করবে। বল, ‘যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন এবং মুসাফিরদের জন্য... (২:২১৫)। ‘লোকে তোমাকে রজঃস্র্রাব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-মিলন করবে না ... (২:২২২)। ‘লোকে তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘এর জ্ঞান কেবল আল্লাহরই আছে.... (৩৩:৬৩)। অন্যান্য বিষয় (২:২১৭; ২:২১৯; ১৭:৮৫; ১৮:৮৩; ২০:১০৫ আয়াত)। [আল্লাহ্ রাসূলকে যা নির্দেশ দিয়েছেন, রাসূল তা মানুষের নিকট প্রচার করেছেন কি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘এক বেদুইন এসে বলল, ‘আমি চাঁদ দেখেছি। ... রাসূল লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দিলেন তারা যেন সিয়াম সাধনা করে (আবূ দাঊদ, তিরমিযি, ইবনু মাযাহ ও দারেমী);-মেশকাত-৪/১৮৮১। ‘এক ব্যক্তি কিছু অর্থ ব্যয় সম্বন্ধে রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘তা ব্যয় করবে নিজের জন্য, ... তোমার সন্তানের জন্য, ... তোমার পরিবারের জন্য, ... তোমার খাদেমের জন্য ... এবং এর পর তোমার যেখানে ইচ্ছা ব্যয় করবে (ইবনু মাযাহ ও নাসাঈ);-মেশকাত-৪/১৮৪৪। ‘যখন কোন ব্যক্তি রজঃস্রাব অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সংগম করবে সে যেন অর্ধ দিনার দান করে (তিরমিযি);-মেশকাত-২/৫০৮। ‘অনেক বেদুইন জিজ্ঞাসা করত, ‘কিয়ামত কখন ঘটবে? তখন তিনি তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের দিকে তাকিয়ে বলতেন, এ বালকটি যদি জীবিত থাকে, তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তোমাদের মধ্যে কিয়ামত নেমে আসবে (বুখারি-মুসলিম)-মেশকাত-১০/৫২৭৮। [হাদিস অনুসারে রাসূল আল্লাহর একটি নির্দেশও প্রচার করেন নি। আসলে কি তাই?]১৬. কুরআনে ‘কুরআন সব মানুষের গ্রন্থ, বুখারি-মুসলিমে ‘শুধুমাত্র মুসলিমদের!কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল (৭:১৫৮; ৩৪:২৮)। ‘বল! হে মানুষ! তোমাদের রবের নিকট হতে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে (১০:১০৮; ৩১:৩৩)। ‘এ (কুরআন) তো বিশ^জগতের জন্য উপদেশ (৬৮:৫২)। ‘নিশ্চয়ই এ (কুরআন) সকলের জন্য উপদেশবাণী (৭৪:৫৪)। [কুরআন সকলের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক গ্রন্থ নয় কি?]বুখারি- মুসলিমে দেখুন, ‘রাসূল নিষেধ করেছেন শত্রুভুমিতে কুরআন নিয়ে সফর করতে। .. .. তিনি আরও বলেছেন, ‘কুরআন নিয়ে ভ্রমণ করো না। কেননা, তা শত্রুর হাতে পড়া সম্পর্কে আমি নিরাপদ মনে করি না (মেশকাত-৫/২০৯৩)। [কুরআন সকলের জন্য উন্মুক্ত গ্রন্থ হলে রাসূল এমন কথা বলতে পারেন কি?]১৭. কুরআনে ‘কুরআন শিক্ষা গ্রহণের জন্য সহজ, প্রচলিত হাদিসে ‘কঠিন!কুরআনে দেখুন, ‘কুরআন আমি সহজ করে দিয়েছি শিক্ষা (উপদেশ) গ্রহণের জন্য; অতএব শিক্ষা (উপদেশ) গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০)। ‘আমি তো তোমার ভাষায় এ (কুরআন) কে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে (৪৪;৫৮)। ‘আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছি, যাতে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে (৩৯:২৭; ১৭:৮৯; ১৮:৫৪ )। [আল্লাহ্ কি বলেছেন, উপদেশ গ্রহণের জন্য কুরআন শিক্ষা কঠিন?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘নবি করিম বলেন, যে ব্যক্তি কুরআনের মধ্যে আপন রায় মোতাবেক কিছু বলল, সে শুদ্ধ বললেও অন্যায় করল। ইবনে মাসউদ বলেন, ‘যদি সত্যিকারের এলেম হাসিল করতে চাও তবে কুরআনের অর্থের মধ্যে চিন্তা ও গবেষণা কর। কারণ এর মধ্যে আদি-অন্তের সমগ্র এলম বিদ্যমান আছে। তবে শর্ত হলো যাবতীয় শর্ত ও আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখা। তফসির করার জন্য ১৫টি বিষয় পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন। বিষয়গুলো হলো- ১. আভিধানিক অর্থ জানা : যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ওপর ও কিয়ামতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করল তার জন্য আভিধানিক অর্থ জানা ব্যতীত কুরআনের ব্যাখ্যা করা কিছুতেই জায়েয নয়। ২. এল্মে নাহু : আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ। ... ... ..., ১৪. ঐসকল হাদিস জানা যা কুরআনের সংক্ষিপ্ত অর্থ সমূহের ব্যাখ্যাস্বরূপ। ১৫. আল্লাহ্ প্রদত্ত এলেম হাসিল হওয়া। উপরে বর্ণিত ১৫টি বিদ্যা তাফসীরকারকদের জন্য হাতিয়ার স্বরূপ। ঐসব বিদ্যায় অনভিজ্ঞ ব্যক্তি তাফসীর করলে তা মনগড়া তাফসীরের পর্যায়ভুক্ত হবে, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। সূত্র : তাবলীগী নেছাব, সংশোধিত সংস্করণ : ১১ নভেম্বর ১৯৯৪ ইং, পরিবেশক- তাবলীগী ফাউন্ডেশন, ৫০ বাংলা বজার, ঢাকা এর ‘ফাজায়েলে কোরআন’ এর ২৫-২৯ পৃষ্ঠা থেকে।

পবিত্র কোরআন বিরোধী কিছু হাদিস((((পর্ব 4))))১০. কুরআনে ‘একটি কিতাবের অনুসরণের নির্দেশ, প্রচলিত হাদিসে ‘দুইটির!কুরআনে দেখুন, ‘তোমার নিকট একটি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে এবং মু’মিনদের জন্য উপদেশ। তোমার রবের নিকট হতে তোমাদের নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ কর (৭:১-২; ২:৩৮; ২০:১২৩; ২১:১০; ৯৮:১-৩)। ‘এ কিতাব আমি অবতীর্ণ করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং এর অনুসরণ কর এবং সাবধান হও (৬:১৫৫)। [আল্লাহ মানুষকে পথ-প্রদর্শনের জন্য কয়টি কিতাব পাঠিয়েছেন?]ইমাম মালেক এর ‘মোয়াত্তা’য় দেখুন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে জিনিস দুইটি আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে গোমরাহ হবে না: আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সূন্নাহ (মেশকাত-১/১৭৭)। [আল্লাহ তাঁর কিতাবের সাথে ইমাম মালেক এর ‘মোয়াত্তার অনুসরণ করতে বলেছেন কি?]১১. কুরআনে ‘জিব্রীল পৌঁছে দিতেন কুরআন, প্রচলিত হাদিসে ‘হাদিস!কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘যে কেউ জিব্রীলের শত্রু এজন্য যে, সে আল্লাহর নির্দেশে তোমার হৃদয়ে এ (কুরআন) পৌঁছে দিয়েছে, যা তার পূর্ববর্তী (কিতাবের) সমর্থক এবং যা মু‘মিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ (২:৯৭)। ‘নিশ্চয়ই এ (কুরআন) জগতসমূহের রব হতে অবতীর্ণ। রুহুল আমিন (জিব্রীল) এ নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার (২৬:১৯২-১৯৪)। [জিব্রীল কি আল্লাহর নির্দেশে কুরআন রাসূলের হৃদয়ে পৌঁছে দিতেন না?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘একবার জিব্রীল রাসূলের নিকট আসলেন এবং তাঁকে ওযূ ও সালাত শিক্ষা দিলেন এবং যখন তিনি ওযূ সমাপ্ত করলেন এক কোষ পানি নিলেন ও তা আপন পুরুষাঙ্গের উপর ছিটায়ে দিলেন (আহমদ ও দারাকুতনী);-মেশকাত-২/৩৩৮। ‘একবার জিব্রীল আসলেন এবং বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! যখন ওযূ করবেন (পুরুষাঙ্গের উপর) পানি ছিটাবেন (তিরমিযি);-মেশকাত-২/৩৩৯, ৩৫৬। ‘জিব্রীল রাসূলের দুইবার ইমামত করেছেন। ফজর, ... যোহর, ... আসর, ... মাগরিব, ... ইশা, ... ও ফজরের সালাত পড়ালেন এবং বললেন এ তোমার পূর্বেকার নবিগণের (সালাতের) সময় (আবূ দাঊদ ও তিরমিযি);-মেশকাত-২/৫৩৬, ৫৩৭, ৬৮৫, ৭১০, ৮৬৭, ৮৭৬ ... ... এরূপ বহু হাদিস। [এ জিব্রীল কোন জিব্রীল যে রাসূলকে কুরআনের বাইরের বিষয় শিক্ষা দিতেন?]১২. কুরআনে ‘রাসূলকে ওহী অনুসরণের নির্দেশ, প্রচলিত হাদিসে ‘রাসূলের আদেশ-নিষেধ অনুসরণ কর!কুরআনে দেখুন, ‘বল, ... ‘আমার প্রতি যা ওহী হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি (৬:৫০; ৭:২০৩; ৪৬:৯)। বল, ‘নিজ হতে এ (কুরআন) বদলানো আমার কাজ নয়। আমার প্রতি যা ওহী হয়, আমি কেবল তারই অনুসরণ করি (১০:১৫)। বল, ‘আমি তো কেবল ওহী দ্বারাই তোমাদের সতর্ক করি (২১:৪৫)। ‘তোমার নিকট একটি কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, ‘তোমার মনে যেন এর সম্পর্কে কোন সঙ্কোচ না থাকে এর দ্বারা সতর্কীকরণের ব্যাপারে (৭:২)। [রাসূর নিজ ইচ্ছামত নিজের বাণী দ্বারা মানুষকে সতর্ক করতেন কি?]প্রচলিত হাদিসে দেখুন, ‘আমি তোমাদের কাউকেও যেন এরূপ না দেখি, ... তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌঁছবে যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা নিষেধ করেছি তখন সে বলবে, ‘আমি এসব কিছু জানি না, আল্লাহর কিতাবে যা পাব তারই অনুসরণ করব (আবূ দাঊদ, ইব্নু মাযাহ, তিরমিযি, আহমদ, বায়হাকী, দালাএলুন নুবুওত);-মেশকাত-১/১৫৫। [কার নির্দেশ মানার জন্য আল্লাহ কি রাসূল পাঠিয়েছিলেন?]১৩. কুরআনে ‘দীনের নামে সকল কিতাব বর্জনীয়, বুখারি-মুসলিমে ‘আল্লাহ বলেন ও জিবরাঈলের নাম দিয়ে লেখা!কুরআনে দেখুন, ‘এরূপে আমি মানব ও জিনের মধ্যে হতে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা প্ররোচিত করে। ... ... সুতরাং তাদের ও তাদের (বুখারি ও তার দোসরদের) মিথ্যা রচনাকে বর্জন কর (৬:১১২)। আরও দেখুন ৩৯:৪১, ৫৫; ৪২:১০; ৪৫:১৮; ৪৬:২৩ আয়াত। [অর্থবোধক শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরি হয় এবং শত শত বা হাজার হাজার বাক্য দ্বারা কিতাব রচনা করা হয়। সুতরাং আল্লাহর নামে কুরআন ব্যতীত দীন হিসেবে যত কথাই বলা হোক না কেন তা বর্জনীয়। হোক সে বুখারি অথবা মুসলিম বা অন্য কেউ?]বুখারি- মুসলিমে দেখুন, ‘রমযান মাসে প্রত্যেক রাত্রেই জিবরাঈল রাসূলের নিকট আসতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন শুনাতেন। যখন তাঁর সাথে জিবরাঈল সাক্ষাৎ করতেন তাঁর দান বর্ষণকারী বাতাস অপেক্ষাও বেড়ে যেত (মেশকাত-৪/১৯৯৭)। কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম আর তুমি আমাকে দেখতে আস নি। ... আমি তোমার নিকট খানা চেয়েছিলাম আর তুমি আমাকে খাদ্যা দাও নি। ... আমি তোমার নিকট পানি চেয়ে ছিলাম আর তুমি আমাকে পানি পান করাও নি। ... অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, অভুক্তকে খাদ্য দিলে ও পিপাসার্তকে পানি পান করালে আল্লাহর নিকট পাওয়া যেত (মেশকাত-৪/১৪৪২)। আল্লাহ বলেন, এরূপ হাদিস ১/১১১, ১১২; ৪/১৪৪২, ১৪৬৩, ১৫০৯, ১৫১৮, ১৫৪২, ১৬৪৪, ১৬৬৯; ৪/১৮৬৩, ১৯৭৪, ১৯৯৫; ৫/২১৫৭, ২১৫৮, ২১৫৯, ২১৬০, ২১৭৭, ২২০২; ৮/৪২৮৯; ৯/৪৪৫৭, ৪৭৮৭, ৪৭৯২, ৪৭৯৫, ৪৮০৪, ৪৮৪৩, ৪৮৮৩, ৪৯৪৫, ৪৯৯৬, ৫০৮৪, ৫০৯১; ১০/৫৩১৭, ৫৩২০, ৫৩২১, ৫৩২৩, ৫৩৪৪, ৫৩৪৫, ৫৩৪৭, ৫৩৪৮, ৫৩৭১, ৫৩৮৪, ৫৩৮৫, ৫৩৮৬; ১১/৫৯৬৯; ৫৯৮৬, ৬০২৩। [উক্ত হাদিসগুলোতে ‘আল্লাহ বলেন’ বলে লেখা হয়েছে। আল্লাহ বললে তা কুরআনে নেই কেন?]

পবিত্র। কোরআন বিরোধী কিছু হাদিস(((((পর্ব 3)))))৫. কুরআনে ‘বিপদ আপতিত হলে ইন্নালিল্লাহি ... ... বুখারি-মুসলিমে ‘লা ইলাহা ... !কুরআনে দেখুন, ‘যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে ‘ইন্নালিল্লাহি ... ... (আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী)। এরাই তারা যাদের প্রতি তাদের রবের নিকট হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎপথে পরিচালিত (২:১৫৬-১৫৭)। [আল্লাহ মানুষের বিপদের সময় কি বলতে হবে তা কি তিনি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন নি?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘রাসূল বিপদের সময় বলতেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ... ... (মহান সহিঞ্চু আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই; ... যিনি মহা আরশের রব! আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, যিনি আসমানসমূহ ও যমিনের রব এবং মহাআরশের রব! (মেশকাত-৫/২৩০৫)। [আল্লাহ যা শিক্ষা দিয়েছেন রাসূল তা না বলার কারণ কি?]৬.কুরআনে ‘মৃত্যু হয় শাস্তি ও শান্তিতে, বুখারি-মুসলিমে‘ফিরিস্তা চপেটাঘাত খায় মূসার হাতে!কুরআনে দেখুন, ‘যাদের মৃত্যু ঘটায় ফিরিস্তাগণ তারা নিজেদের প্রতি যুলূম করতে থাকা অবস্থায়; অতঃপর তারা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা মন্দ কর্ম করতাম না ... ... তোমরা দ্বার দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে।... ... ফিরিস্তাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিস্তারা বলবে ‘সালামুন আলাইকুম’ তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর (১৬:২৮,২৯,৩২)। [ফিরিস্তাগণ কি মানুষের অনুমতি নিয়ে মৃত্যু ঘটায়?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘মৃত্যুর ফিরিস্তা মূসা ইবনে ইমরানের নিকট এসে বললেন, ‘আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তখন মূসা মৃত্যুর ফিরিস্তার চোখের উপর চপেটাঘাত করলেন। ফলে তার চক্ষু উপড়িয়ে গেল। ... ... ফিরিস্তা আল্লাহর নিকট গিয়ে বললেন, ‘আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠায়েছেন, যে মরতে চায় না। এমন কি সে আমার চক্ষু উপড়িয়ে ফেলেছে। তখন আল্লাাহ তার চক্ষু ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘তুমি আবার আমার সেই বান্দার নিকট যাও এবং বল: তুমি কি বেঁচে থাকতে চাও? যদি তুমি বেঁচে থাকতে চাও, তা হলে একটি ষাঁড়ের পিঠে হাত রাখ এবং তোমার হাত ওর যতগুলি পশম ঢেকে ফেলবে, প্রতিটি পশমের বদলে তোমাকে এক এক বছর আয়ু দান করা হবে। এ শুনে মূসা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা, তারপর কি হবে? ফিরিস্তা বললেন; তারপর তোমাকে মরতে হবে ... (মেশকাত-১০/৫৪৬৮)। [আল্লাহ মূসাকে ঐরপ ক্ষমতা দিয়েছিলেন কি?]৭. কুরআনে ‘ঈমান ও সৎকর্মে জান্নাত, বুখারি-মুসলিমে‘আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস্ত করলে!কুরআনে দেখুন, ‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে (২:৮২)। [কুরআনের সকল আইন মানার শর্তে সালাত প্রতিষ্ঠিত এবং ইমামের নিকট যাকাত-সদকা (৯:৭১-৭২, ১০৩-১০৪; ৬৩:১০) দিলেই জান্নাত নিশ্চিত হয়। আল্লাহ কি তাঁর কিতাবে কারা জান্নাতে যাবে তা বলেন নি?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘আল্লাহর নিরানব্বই- এক কম একশতটি নাম রয়েছে। যে তা মুখস্ত করবে জান্নাতে যাবে (মেশকাত-৫/২১৭৯; ২১৮০)। [কুরআনে কি আল্লাহর নিরানব্বটি নাম আছে? ৯৯টি নাম মুখস্ত করলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দিতে চেয়েছেন কি?]৮. কুরআনে ‘আল্লাহর নামে দীনের কিতাব লিখবে না, বুখারি-মুসলিরা লিখেছে!কুরআনে দেখুন, ‘সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, ‘এ আল্লাহর নিকট হতে।’ তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তারা উপার্জন করে তার জন্য শাস্তি তাদের (২:৭৯, ২৫৭; ৬:১১২)। [আল্লাহর নাম দিয়ে বুখারি-মুসলিমদের কিতাব লিখতে আল্লাহ বলেছেন কি?]৯. কুরআনে ‘আল্লাহু, প্রচলিত হাদিসে ‘আল্লাহু আকবার!কুরআনে দেখুন, ‘বল, ‘তোমরা ‘আল্লাহ’ ডাকো অথবা রাহমান ডাকো সকল সুন্দর নামই তো তাঁর (১৭:১১০)। ‘আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেই সকল নামেই ডাকবে; যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করবে; তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেওয়া হবে (৭:১৮০)। [নাম বিকৃত করে আল্লাহ নামের সাথে আকবার নাম যুক্ত করে ‘আল্লাহু আকবার’ বলা উচিত হবে কি?]বুখারি-মুসলিমে দেখুন, ‘রাসূল বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার (মেশকাত-৮/৩৭৫৫, ৩৮০৪)। ‘আল্লাহু আকবার’ পূর্ণ করে আসমান ও জমিনে মধ্যে যা আছে তাকে (রযীন);-মেশকাত-৫/২২১৪। ‘রাসূল সালাতে কেবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে হাত উঠিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহু আকবার’ (ইবনু মাযাহ);-মেশকাত-২/৭৫৪, ৭৬৪। ‘বল, ‘আল্লাহু আকবার’ (মুসলিম ও আবূদাঊদ);-মেশকাত-২/৫৯১ ও ২/৫৯৪। ২/৫৯৯, ৭৪৫, ৬০৯; ৩/১১৩২, ১১৯৪ নং হাদিসে ‘আল্লাহু আকবার’ শব্দ রয়েছে। [আল্লাহ তার কিতাবে ‘আল্লাহু আকাবার’ নামে ডাকতে বলেছেন কি?]

Shah Ast Hussain (a.s), Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s), Deen Panah Ast Hussain (a.s)Sar Daad Na Daad Dast Dar Dast-E-YazeedHaqqa Ke Bina La Illah Ast Hussain (a.s)Sardaaro Shehenshaah Ay Shaahe Shaheedan,Qaari Sare Naiza Ay Waarise QuranKehti Hain Namazein Ab Tak Sare MaidaanSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Shah Ast Hussain (a.s), Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s), Deen Panah Ast Hussain (a.s)Azan O Namaaze Milad-E-Mohammed (s.a.w.w),Ye Majlis-O-Matam Abbas (a.s) Ka ParchamKehti Hain Sabilein Kehta Hai MuharramSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Akbar (a.s) Ka Kaleja Halq-E-Ali Asgher (a.s),Abbas (a.s) Ke Baazu Zainab (s.a) Ka Khula SarKehte Hain Ye Tujhse Ay Shaam Ke LashkarSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Shah Ast Hussain (a.s), Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s), Deen Panah Ast Hussain (a.s)Marqad Se Nikal Kar Khud Fatema Zahra (s.a),Maqtal Ki Zameen Par Deti Rahi PehraKhanjar Se Sina Se Kehti Rahi Zahra (s.a)Suno Zindaa Hai Hussain (a.s)Zanjeer-E-Sitam Ne Rasta Nahi Roka,Pehne Huwi Bairi Chalte Rahe MawlaKehta Hai Abhi Tak Sajjad (s.a) Ka SajdaSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Shaah Ast Hussain (a.s), Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s), Deen Panah Ast Hussain (a.s)Adaa Ke Tamache Rukhsaare Sakeena (a.s),Jalta Huwa Damaan Garmi Ka MahinaKehti Thi Phuphi (s.a) Se Har Aik Se KehnaSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Beemare Madina Woh Fatema Sughra (s.a),Darwaaze Pe Baithi Takti Hai Jo RastaKhud Ko Yehi Kehkar Deti Hai DilasaSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Shah Ast Hussain (a.s), Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s), Deen Panah Ast Hussain (a.s)Sarwar Sare Majlis Zikre Shahe Waala,Rehan Musalsal Is Gham Ka HawalaDorahta Hai Har Dam Tareekh Ka JumlaSuno Zindaa Hai Hussain (a.s)Shaah Ast Hussain (a.s),Badshaah Ast Hussain (a.s),Deen Ast Hussain (a.s),Deen Panah Ast Hussain (a.s)Sar Daad Na Daad Dast Dar Dast YazeedHaqqa Ke Bina La Illaaha Ast Hussain (a.s)

হযরত জয়নাব (সা.)র শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সবার প্রতি রইল অনেক অনেক অভিনন্দন। হযরত জয়নাব (সা.) ষষ্ঠ হিজরীর ৫ই জমাদিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন। এমন এক মহিয়সী রমণী ছিলেন তিনি, যাঁর সম্মান-মর্যাদা আর সাহসী ভূমিকার ঐশ্বর্যে ইসলামের ইতিহাসের পাতা স্বর্ণোজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.) এবং হযরত ফাতেমা (সা.) এর তৃতীয় সন্তান।তাঁর জন্মের সময় নবীজী সফরে ছিলেন। তাই তাঁর মা ফাতেমা (সা.) আলী (আ.) কে মেয়ের জন্যে একটা ভালো নাম দিতে বললেন। কিন্তু হযরত আলী (আ.) এটা নবীজীর জন্যে রেখে দিলেন এবং নবীজীর সফর থেকে ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন। নবীজী যখন সফর থেকে ফিরে এলেন তখন এই কন্যার জন্মের সংবাদে খুশি হয়ে বললেন: "আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,এই কন্যার নাম রাখো জয়নাব অর্থাৎ বাবার অলংকার। রাসূলে খোদা (সা.) জয়নাবকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে বললেন-সবার উদ্দেশ্যে বলছি,এই মেয়েটিকে সম্মান করবে,কেননা সে-ও খাদিজার মতো। "ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে,সত্যি-সত্যিই জয়নাব (সা.) খাদিজা (সা.) র মতোই ইসলামের দুর্গম পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দ্বীনের সত্যতাকে তুলে ধরার জন্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।জয়নাব (সা.) তাঁর জীবন শুরু করেন এক আধ্যাত্মিকতার পরিবেশপূর্ণ পরিবারে। কেননা এই পরিবার রাসূলে খোদা (সা.),আলী (আ.) এবং ফাতেমা (সা.) এর মতো মহান ব্যক্তিত্ববর্গের অস্তিত্বের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছে,পবিত্র হয়েছে। এঁরা ছিলেন পূত-পবিত্র জীবনের অধিকারী এবং মানবীয় মর্যাদা ও ফযিলতের গোড়াপত্তনকারী। জয়নাব (সা.) সেই শিশুকাল থেকেই প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন এবং আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ মনের অধিকারী ছিলেন। সেই ছোট্ট বেলায় তিনি একবার তাঁর মা ফাতেমা (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ একটা ধর্মীয় ভাষণ শুনেছিলেন। সেই ভাষণ তাঁর মুখস্থ হয়ে যায় এবং পরবর্তী ঐ ভাষণের একজন বর্ণনাকারী হয়ে যান তিনি। তাঁর এই সচেতনতার জন্যে এবং তীক্ষ্ম স্মৃতিশক্তির জন্যে বয়সকালে তাঁকে সবার কাছেই 'আকিলা' উপাধিতে পরিচিত ছিলেন। আকিলা মানে হলো বুদ্ধিমতী ও চিন্তাশীল রমণী।তাঁর জীবনে বিপদের ঘূর্ণিঝড় অতি দ্রুতই ঘনিয়ে আসে। তিনি শিশু বয়সে প্রিয় নানা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কে হারান। তার অল্প পরেই হারান মা ফাতেমা (সা.) কে। এরপর তাঁকে লালন পালন পরার দায়িত্বভার অর্পিত হয় প্রিয় পিতা হযরত আলী (আ.) এর ওপর। পিতার তীক্ষ্ম জ্ঞান-গরিমা, আধ্যাত্মিকতা,নীতি-নৈতিকতা আর সচেতন প্রজ্ঞার ঐশ্বর্যে নিজেও সমৃদ্ধি অর্জন করেন এবং এভাবেই তিনি বেড়ে ওঠেন। যে সময়টায় অধিকাংশ নারীই ছিল প্রায় মূর্খ এবং নিরক্ষর,সে সময়টায় হযরত জয়নাব (সা.) ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং তাঁর জ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার কথা সবার কানে পৌঁছে যায়। তাঁর প্রশিক্ষণ ক্লাসে কোরআন তাফসিরের ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্যে নারীরা ছিল উদগ্রীব। তিনি যতদিন মদিনায় ছিলেন ততদিন মদিনার মানুষ তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় এবং যখন তিনি কুফায় অবস্থান করেছিলেন তখনো তিনি সেখানকার জনগণকে জ্ঞানের মহিমায় উদ্ভাসিত করেন।জয়নাব (সা.) যখন বিয়ের বয়সে উপনীত হন, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর ছিলেন সে সময়কার আরবের একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু জয়নাব (সা.) কখনোই বস্তুতান্ত্রিক জীবনের সাথে নিজেকে জড়ান নি। উন্নত চিন্তাদর্শের অধিকারী ছিলেন বলে তিনি বস্তুতান্ত্রিক জীবনের বৃত্তে নিজেকে আবদ্ধ করেন নি। তিনি শিখেছিলেন,কখনোই এবং কোনোভাবেই অত্যাচারীদের লোভনীয় মোহের কাছে সত্যের মহামূল্যবান সম্পদকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। সে জন্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন,তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথে দ্বীনকে উজ্জীবিত রাখার সংগ্রামে এবং সমাজ সংস্কারের পথে আত্মনিয়োগ করবেন। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে বিয়ের সময় জয়নাব (সা.) শর্ত দিয়েছিলেন যে তিনি সারাজীবন তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এর পাশে থাকবেন। আব্দুল্লাহও তাঁর এই শর্ত মেনে নিয়েছিলো। সেজন্যেই তিনি ইমাম হোসাইন (আ.) এর মদিনা থেকে কারবালায় ঐতিহাসিক সফরকালে তাঁর সাথে গিয়েছিলেন এবং অত্যাচারী উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন।হযরত জয়নাব (সা.) র ব্যক্তিত্বের সাথে পরিচিত হবার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে পড়ালেখা করা এবং নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যদের বন্দী হবার ঘটনা নিয়ে পড়ালেখা করা। ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে জয়নাব (সা.) র ভূমিকা আজো জ্বলজ্বল করছে। তাঁর মাঝে ছিল নজিরবিহীন এক ব্যক্তিত্ব,আল্লাহকে তিনি যে কতোটা গভীরভাবে চিনেছিলেন,তা তাঁর ব্যক্তিত্বের মাঝে তাঁর কর্মতৎপরতায় ফুটে উঠতো। আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আকর্ষণ। নামায বা আল্লাহর স্মরণই ছিল তাঁর মানসিক প্রশান্তির কারণ। আল্লাহর নূর তাঁর অন্তরে এতোবেশি আলোকিত ছিল যে দুনিয়ার কোনো দুঃখ-কষ্টই তাঁর কাছে ততোটা গ্রাহ্য ছিল না।মনোবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,রাগের সময় বা গভীর অনুভূতিশীল কোনো মুহূর্তে মানুষ তার ভেতরে যা লুকায়িত আছে সেসব প্রকাশ করে ফেলে। হযরত জয়নাব (সা.) ও তাঁর ভাই ইমাম হোসাইন (আ.) এবং তাঁর প্রিয়জনদের শাহাদাতের পর কঠিন সেই মুহূর্তে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে,বীরত্বের সাথে এবং সুস্পষ্টভাবে বক্তব্য রেখেছিলেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর যে গভীর আস্থা এবং নির্ভরশীলতা,তাঁর ভেতরে যে স্বাভাবিক ধৈর্যশক্তি,সেসবেরই প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি। তিনি রক্তপিপাসু উমাইয়া শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। নবীজীর আহলে বাইতের সত্যতাকে সংরক্ষণ করেছিলেন এবং কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিজয় হয়েছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। ইয়াজিদের দরবারে যিনি যেরকম ওজস্বিতার সাথে বক্তব্য রেখেছেন,তা সবার অন্তরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে,আলী (আ.) এর স্মৃতিকে সবার সামনে জাগ্রত করে তুলেছিল। তিনি সবসময় কোরআনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখতেন যাতে প্রামাণ্য হয়।ইবনে কাসির নামে একজন বাকপটু আরব ছিলেন। তিনি জয়নাব (সা.) এর বক্তৃতা শুনে এতোবেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েন যে,একবার কাঁদতে কাঁদতে উচ্চস্বরে বলেছিলেন: "আমার বাবা-মা তোমার জন্যে উৎসর্গিত, তোমার গুরুজনেরা সবচেয়ে উত্তম মুরব্বি,তোমাদের শিশুরা সবচেয়ে ভালো এবং তোমাদের রমণীরা সর্বোত্তম নারী। তোমাদের বংশ সকল বংশের উপরে এবং কখনোই পরাজিত হবে না।"হযরত জয়নাব (সা.) তাঁর পিতা ইমাম আলী (আ.) থেকে শুনেছিলেন যে, মানুষ ঈমানের হাকিকত উপলব্ধি করতে পারে না,যতক্ষণ না তার মাঝে তিনটি বৈশিষ্ট্য না থাকে। দ্বীনের ব্যাপারে সচেতনতা,দুর্দশায় ধৈর্য ধারণ করা এবং সৎ জীবন যাপন করা। এই মহিয়সী নারী কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং ধৈর্যের অলংকার দিয়ে তিনি তাঁর মন এবং আত্মাকে সাজিয়েছেন। জয়নাব (সা.) র দৃষ্টিতে সত্যের পথে দাঁড়ানো এবং আল্লাহর পথে জীবন বিলানো এমন এক সৌন্দর্য যেই সৌন্দর্য মানবতার চিরন্তন প্রশংসার দাবিদার। এজন্যেই তিনি আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনার পর অত্যাচারী শাসকদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন-"আমি তো সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কিছু দেখি না।" হযরত জয়নাব (সা.আ.)’র শুভ জন্মবার্ষিকীতে আমাদের উচিত তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে সাহস সঞ্চয় করা। নিজের জীবনকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে নির্বিঘ্নে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। কায়েমি স্বার্থবাদীদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে কোনোরকম আপোষ না করার শিক্ষা লাভ করা এবং পার্থিব জগতের ধন-সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে পরকালীন স্বার্থকে জীবনের সর্বোত্তম প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করা এবং তা অর্জনের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া। সকল কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দিন

প্রকৃতি কুরআন বিরোধী কিছু হাদিসপর্ব 2কুরআনে ‘মুরতাদের শাস্তি আল্লাহ দিবেন, বুখারি-মুসলিমে `মুরতাদকে হত্যা করলে জান্নাত!কুরআনে দেখুন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ স্বীয় দীন হতে ফিরে যায় এবং কাফিররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়। তারাই অগ্নিবাসী (২:২১৭)। ‘সেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কতক মুখ কাল হবে; যাদের মুখ কাল হবে (তাদেরকে বলা হবে) ‘ঈমান আনয়নের পর কি তোমরা কুফুরি করে ছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর (৩:১০৬)। ‘হে মু‘মিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যাঁরা তাকে ভালোবাসবে (৫:৫৪)। ‘তারা আল্লাহর শপথ করে যে, তারা কিছুই বলেনি; কিন্তু তারা তো কুফুরির কথা বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কাফির হয়েছে; ... কিন্তু তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন (৯:৭৪)। ‘কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফুরির জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি (১৬:১০৬)। [যারা দীন ইসলাম ত্যাগ করেছে তাদেরকে হত্যা করার অধিকার আল্লাহ কাউকে দিয়েছেন কি?]বুখারিÑমুসলিমে দেখুন, ‘দীন ইসলাম ত্যাগকারী যে মুসলিম জামায়াত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তাকে হত্যা করা হালাল (মেশকাত-৭/৪১৭২, ৪২৫৩, ৪২৬০, ৪২৭০)। ‘যে কেউ তার দীন (ইসলাম) পরিবর্তন করবে (মুরতাদ হবে) তাকে হত্যা কর (মেশকাত-৭/৪২৫১)। ‘যখন কোন বান্দা শিরকের দিকে পালিয়ে যায় তখন তার হত্যা হালাল (আবূ দাঊদ);-মেশকাত-৭/৪২৬৬। [আল্লাহ ধর্ম ত্যাগীদের হত্যার নির্দেশ দেন নি। সুতরাং রাসূল দীন ইসলাম ত্যাগকারীকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন কি?]৩. কাফির / নাস্তিক কারা?১. ‘আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেই না তারাই কাফির (সূরা-৫, মায়িদা, আয়াত-৪৪)। ‘কেবল কাফিররাই আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে (সেূরা-২৯, ‘আনকাবুত, আয়াত-৪৭)। [কাফির মানে নাস্তিক। উপরোক্ত আয়াত অনুসারে ‘আল্লাহর কিতাব অনুসারে বিধান না দিলে কাফির / নাস্তিক।]২. ‘যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে ও তাঁর রাসূলদেরকেও এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) তারতম্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতক বিশ্বাস করি ও কতক অবিশ্বাস করি’ আর তারা মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, তারাই প্রকৃত কাফির (সূরা-৪, নিসা, আয়াতঃ ১৫০-১৫১)। [উপরোক্ত আয়াত অনুসারে কুরআনের সাথে নিজেদের মনমত কোন বিষয় যোগ করে ধর্ম বানিয়ে নিলেও কাফির!]৪. কুরআনে ‘মৃত ব্যক্তিকে শুনানো অসম্ভব ‘মুসলিমে ‘সম্ভব!কুরআনে দেখুন, ‘তুমি তো মৃতকে কথা শুনাতে পারবে না (২৭:৮০; ৩০:৫২)। ‘তুমি শুনাতে পারবে কেবল তাদেরকে, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে (২৭:৮১; ৩০:৫৩)। ‘তাদের পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করেছি! তুমি কি তাদের কাউকে দেখতে পাও অথবা ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাও? (১৯:৯৮)। [জীবিত অবস্থায় কুরআন না শুনলে মৃত ব্যক্তির কাছে কুরআন পড়লে মৃত লাশ কুরআনের আয়াত শোনেন কি?]মুসলিমে... দেখুন, ‘তোমাদের মৃত ব্যক্তিদেরকে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ শিক্ষা দিবে (মেশকাত-৪/১৫২৮)। ‘তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট ‘সূরা ইয়াসিন’ পড়বে (আহমদ, আবূ দাউদ ও ইব্নু মাযাহ);-মেশকাত-৪/১৫৩৪। ‘যে শুধু আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য সূরা ‘ইয়াসিন’ পড়বে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে; সুতরাং তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট তা (সূরাহ ইয়াসিন) পড়বে (বায়হাকী-শোআবে);-মেশকাত-৫/২০৭৪। [মৃত ব্যক্তিকে কুরআন শুনানোর কথা আল্লাহর কিতাবে আছে কি?]বেশুমার লানত বর্ষিত হোক

চমৎকার ! এই না হলে মুসলমান ? আমার বাবা ইতিহাস জানতেন ঠিক তবে তিনি তো ইতিহাস বানাননি। এবার আপনাদের বোখারী গং থেকে সহিহ হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে আমার পোস্টের রেফারেন্স দিচ্ছি।মা ফাতেমা (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উপর চরম অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং আমৃত্যু তার সাথে আর কথা বলেনি। [বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৩৯১৬; মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৪৪৪৪]রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ফাতেমা আমার দেহেরই একটি একটি টুকরা। যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে যেন আমাকে অসন্তুষ্ট করল। [বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৩৪৪১; মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৬১৫০.৬১৫১ তাহলে আবু বকর (রাঃ) কি রাসূল (সাঃ) কেও অসন্তুষ্ট করলেন না?হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফা হওয়ার পর বায়াত সংগ্রহের অভিযান শুরু করেন, এর প্রথম লক্ষ্য ছিল হযরত আলী (রাঃ)। কারন, হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন রাসূল (রাঃ) কর্তৃক নিযুক্ত বৈধ উত্তরাধিকারী বিধায় তার পক্ষ হতেই অবৈধ খলিফার বিপদের আশংকা করেছিলেন সবচেয়ে বেশী। তাই আবু বকর (রাঃ) এর নির্দেশে হযরত ওমর (রাঃ) একদল সৈন্যসহ হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর বাসগৃহ অবরোধ করতে পাঠালেন। হযরত ওমর (রাঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর গৃহ অবরোধ করে স্বদম্ভে বললেন, “ঘরে যারা আছে তারা এসে যদি আবু বকর (রাঃ) এর বায়াত না নেও তবে ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হবে।” তখন লোকেরা বলছিল, আরে এখানে তো মা ফাতেমা (রাঃ) আছেন। হযরত ওমর (রাঃ) আবারও স্বদম্ভে বলেছিলেন, থাকুক। এরপর মাওলা আলী (রাঃ) এর হুকুমে মা ফাতেমা (রাঃ) দরজায় এসে দাড়ালেন যাতে তাকে দেখে অন্ততঃ এরা সমীহ করে। কিন্তু কার্য তার বিপরীত দেখে মা ফাতেমা (রাঃ) দরজা বন্ধ করে দেন। হযরত ওমর (রাঃ) দরজায় সজোরে আঘাত করেন, ফলে দরজা ভেঙ্গে গিয়ে মা ফাতেমা (রাঃ) এর উপর পড়ে। ফলে দরজার আঘাতে মা ফাতেমা (রাঃ) এর পাজরের হাড় ভেঙ্গে যায় এবং তদ্দরুন তার গর্ভপাত হয় এবং গর্ভের সন্তানটি মারা যায়, তার নাম রাখা হয়েছিল মুহসীন। মা ফাতেমা (রঃ) আবু বকর ও ওমর (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “খোদার কসম, প্রত্যেক নামাজে আমি তোমাদের দুইজনের জন্য বদদোয়া করতে থাকব।”[ইবনে কুতাইবার “আল ইমামাহ ওয়াসসিয়াসাহ”; তাবারীর “তারিখ”; ইবনে আব্দি রাব্বিহ মালিকীর “আকদুল ফরিদ”; ইবনে আবিল হাদীদের “শারহে নাহজুল বালাগাহ”; মাসউদীর “মরুজুয যাহাব”]আবু বকর যে পদ্ধতিতে ওমরকে খলিফা নিযুক্ত করেছিলেন তাকে বলা যায় স্বেচ্ছাতন্ত্র। তিনি ইন্তেকালের পূর্বে ওসমানকে ডেকে এনে (ওমরের নাম) খেলাফত নামা লিখিয়েছিলেন।[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ম খন্ড ৪২ পৃষ্ঠা]আবু বকর এবং ওমর একই প্ল্যান-প্রোগ্রাম মোতাবেকই কাজ করে খেলাফতের কার্য পরিচালনা করেছেন এবং ওসমান যাতে পরবর্তী খলিফা হতে পারে তার সুব্যবস্থা এবং হযরত আলী (রাঃ) কে যাতে বঞ্চিত বা হত্যা করা যায় তার প্ল্যান মোতাবেকই ছয় সদস্য বিশিষ্ট এক বোর্ড গঠন করে খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয়।ওমর তার পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও সুহাইবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, “যদি মানুষ মতভেদ করে তোমরা সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষালম্বন করো, কিন্তু যদি তিনজন একদিকে এবং তিনজন অপর দিকে থাকে তবে আবদুর রহমান ইবনে আওফ যেদিকে থাকে তোমরা সেদিকে থেকো।” [তাবারী প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৭২৫ এবং ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৫১৪]“যদি দু’জন সদস্য একজন প্রার্থীর পক্ষে রায় দেয় এবং অপর দু’জন সদস্য অন্য প্রার্থীর পক্ষে রায় দেয় তবে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর তার মধ্যস্থতা করবে। আবদুল্লাহ যে পক্ষকে নির্দেশ দিবে সে পক্ষ খলিফা নিয়োগ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর এর রায় যদি তারা মেনে না নেয়, তবে আবদুর রহমান ইবনে আওফ যার পক্ষে থাকবে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর সে পক্ষে সমর্থন করবে। অপর পক্ষে এ রায় অমান্য করলে তাদের মাথা কেটে হত্যা করতে হবে। [তাবারী প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৭৭৯ এবং ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৬৭নিবেদকমোঃ শামসীর হায়দার

আল কোরআনে মাওলা আলী (আঃ)কে আল্লাহর নফস ঘোষনা করা হয়েছে । আল্লাহ্‌ পাক রাব্বুল ইজ্জত বলেন "মানুষের মধ্যে এমনও মানুষ আছে যে নিজের নাফসকে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য বিক্রয় করে দেয় । আল্লাহ এইধরনের বান্দাকে ভালবেসে থাকেন...।" সুরা বাকারা/২০৭ । প্রানপ্রিয় বিবি খাদিজা বিনতে খুয়ায়লিদ সাঃআঃ এর ওফাত এবং অল্প কিছুদিন পরে হজরত আবু তালিবের ওফাতের কষ্ট নিয়ে মাওলা মুহাম্মদ সঃ বেদনায় জর্জরিত ছিলেন, এ অবস্থায় ৭০ কাবিলার কাফের একত্রিত হয়ে মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে হত্যা করার জন্য উঠে পরে লাগে, ভেতরে বাইরে শত্রুরা হত্যার উদ্দেশ্যে ওত পেতে আছে। এমতাবস্থায় আল্লাহর হুকূমে মাওলা(সাঃ)মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার প্রস্তুতি নিলেন তখন হযরত আলীকে (আঃ) নিজের স্থানে স্থলাভিষিক্ত করেন ,যেনো ওনার কাছে গচ্ছিত আমানতগুলো মানুষদেরকে পৌছে দেন।মাওলা আলীর মোটেই ইচ্ছে নেই আল্লাহর রসুল, উনার মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে একা যেতে দেয়ার। কিন্তু মাওলার হুকুম! কি আর করার। মাওলা আলী তার জীবনে মাওলা মুহাম্মদ সঃ এর কথায় কোনদিন কোন প্রশ্ন করেননি। যা বলেছেন “জ্বী মাওলা, লাব্বাঈক ইয়া মাওলা” কিন্তু রসুল সঃ যখন তাকে বললেন “আমার সবুজ চাদরটা গায়ে দিয়ে আমারবিছানায় শুয়ে থাক।তুমি আমার বিছানায় ঘুমিয়ে যাও” মাওলা আলী তখন শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করলেন “ আমি যদি ঘুমাই, তাহলে আপনার জীবন বাঁচবে? আপনি নিরাপদে থাকবেন?” মাওলা মুহাম্মদ সঃ জবাব দিলেন “ হ্যাঁ। যদি তুমি “আমি” হয়ে ঘুমাও।“ একথা শুনে হযরত আলী (আঃ)শোকরনা সেজদা সেরে নবীজীর আদেশমতো নবীজীর (সাঃ)বিছানায় শায়িত হলেন, নবীজীর(সাঃ)স্থলবর্তী হিসাবে। আর এমন নিশ্চিন্তে ঘুম দিলেন যেন কোন বিপদই নেই। ঠিক তখনই মহান আল্লাহ নিজের দুই ফেরেশতা জীব্রঈল ও মিকাঈল (আঃ)কে বললেন যে , " আমি তোমাদের দুইজনের মধ্যে ভাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করলাম । তোমাদের মধ্যে একজনের আয়ু অন্যজনের আয়ু হতে বৃদ্বি করে দিলাম ।এখন কে নিজের জীবন অপরের জন্য উৎসর্গ করবে? ঐ দুই ফেরেশতা নিজের জীবনকেই প্রাধান্য দিল।মানে দুজনেই নিজে বেচে থাকার আকুতি প্রকাশ করেন।আল্লাহ্‌ পাক রাব্বুল আলামীন তখন ঐ দুই ফেরেশতাকে বললেন , " পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখো , তোমরা কি আলী ইবনে আবু তালিবের মত হতে পার না ?আমি আলী ও মুহাম্মদের মধ্যে ভাতৃত্ব স্থাপন করেছি।রাসুলের বিছানায় এখন আলী শায়িত আছে, সে জানে যে তার জীবন ঝুকির মুখে, কিন্তু কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে! নিজের জীবনটা রাসুলের জন্য বিসর্জন দেওয়ার জন্য সম্পূর্ন প্রস্তত । তাই তোমরা উভয় পৃথিবীতে গিয়ে আলীর জীবন হেফাজত কর "।কারন সেই সময় রাসুলের গৃহের চর্তুদিকে চল্লিশ (কেউ কেউ বলেন ৭০ জন) জন কাফের উম্মুক্ত তলোয়ার হাতে রাসুলকে (সাঃ) হত্যার জন্য প্রস্তত ছিল ।উভয় ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরন করে , আলীর (আঃ) মাথার কাছে হযরত জীব্রাঈল(আঃ)এবং পায়ের কাছে মিকাঈল (আঃ)দাড়ালেন। জীব্রাঈল (আঃ) বললেন , " ধন্যবাদ ইয়া আলী ইবনে আবু তালিব , আপনার সমকক্ষ আর কেইবা হতে পারে, মহান আল্লাহআপনাকে নিয়ে ফেরেশতাদের সম্মুখে গর্ব করেছেন এবং এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নবীজীর উপর নাজিল করেছেন "।সূত্র - তাফসীরে দুররে মানসুর ,খন্ড-৩,পৃ-১৮০ , মুসতাদরাকে হাকেম ,খন্ড-৩পৃ-৪ , মুসনাদে হাম্বাল , খন্ড-১, পৃ- ৩৪৮ ,কোরআনুল কারিম , পৃ-৫২৯ ( মহিউদ্দিনখান ) সহ প্রায় ৫০ টি গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ আছে।ভাব পাগলা আব্দুল্লাহ (৩০-১০-২১)

ঈদ মোবারকআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদসর্বোত্তম মহামানব ও তাঁরই নুরের এক অনন্য নক্ষত্রের জন্ম-বার্ষিকীহযরত মাওলা মুহাম্মাদ (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তাঁর শুভ জন্মদিন তাই মানব জাতির জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন এবং এই দিন মুসলমানদের ঐক্যের সবচেয়ে বড় শুভ-লগ্ন। এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি অশেষ মুবারকবাদ, মহান আল্লাহর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শুকরিয়া এবং হযরত মাওলা মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি অশেষ দরুদ ও সালাম।গভীর আঁধার কেটে ভেসে ওঠে আলোকের গোলক,/সমস্ত পৃথিবী যেন গায়ে মাখে জ্যোতির পরাগ;/তাঁর পদপ্রান্তে লেগে নড়ে ওঠে কালের দোলক/বিশ্বাসে নরম হয় আমাদের বিশাল ভূভাগ।/হেরার বিনীত মুখে বেহেস্তের বিচ্ছুরিত স্বেদ/শান্তির সোহাগ যেন তাঁর সেই ললিত আহ্বান/তারই করাঘাতে ভাঙ্গে জীবিকার কুটিল প্রভেদ/দুঃখীর সমাজ যেন হয়ে যাবে ফুলের বাগান।/লাত-মানাতের বুকে বিদ্ধ হয় দারুণ শায়ক/যে সব পাষাণ ছিল গঞ্জনার গৌরবে পাথর/একে একে ধ্বসে পড়ে ছলনার নকল নায়ক/পাথর চৌচির করে ভেসে আসে ঈমানের স্বর।/লাঞ্ছিতের আসমানে তিনি যেন সোনালী ঈগল/ডানার আওয়াজে তাঁর কেপে ওঠে বন্দীর দুয়ার;/ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় জাহেলের সামান্য শিকল/আদিগন্ত ভেদ করে চলে সেই আলোর জোয়ার।...../মোহাম্মাদ- এ নামেই বাতাস বয়,/মোহাম্মাদ- এ শব্দে জুড়ায় দেহ/মোহাম্মাদ- এ প্রেমেই আল্লা খুশী/দোযখ বুঝিবা নিভে যায় এই নামে।/ঐ নামে কত নিপীড়িত তোলে মাথা/কত মাথা দেয় শহীদেরা নির্ভয়ে,/রক্তের সীমা, বর্ণের সীমা ভেঙ্গে/মানুষেরা হয় সীমাহীন ইয়াসীন।/এই নামে ফোটে হৃদয়ে গোলাপ কলি/যেন অদৃশ্য গন্ধে মাতাল মন,যেন ঘনঘোর আঁধারে আলোর কলি/অকুল পাথারে আল্লার আয়োজন। (কবি আলমাহমুদ)আজ মাওলা মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)'রও শুভ জন্মদিন। তাই এ উপলক্ষেও সবাইকে জানাচ্ছি মুবারকবাদ এবং এই মহান ইমামের উদ্দেশে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম। ইসলামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও এ ধর্মকে সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলাসহ সার্বিক ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন। ইমাম জাফর আস সাদিক ৮৩ হিজরির ১৭ ই রবিউল আউয়াল মদীনায় ভূমিষ্ঠ হন। তিনি ১৪৭ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মনসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে। এই মহান ইমাম সম্পর্কে আমরা আরও কথা বলব আরও কিছুক্ষণ পর।মাওলা মুহাম্মাদে আবির্ভাবের অনেক আগ থেকেই সারা বিশ্বই ভরে গিয়েছিল জুলুম, শোষণ, অনাচার, কুসংস্কার, অশান্তি, সংঘাত এবং সব ধরনের পাপাচারে। এ অবস্থায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হিসেবে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.)'র আবির্ভাব ছিল ঘন অমাবস্যার রাতে সূর্যের প্রদীপ্ত উন্মেষের মতই অফুরন্ত কল্যাণ আর আলোর বন্যার ছড়াছড়ির সমতুল্য এবং তাঁর বাণী স্বাধীকারহারা মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অধিকার ফিরে পাওয়ার দূর্বার বাসনা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সঞ্চালন করেন সততা, সৌন্দর্য, ন্যায়বিচার, সুধর্ম এবং সব ধরনের সৎগুণ ও নীতির জোয়ার। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ বিশ্ব-সভ্যতার চরম উন্নতির পরিবেশ তৈরি হয়। মহানবী (সা) হচ্ছেন প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন বিশ্বের প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র বা সংবিধান যা ঐতিহাসিক মদীনা সনদ হিসেবে খ্যাত।শাসনতন্ত্র ছাড়া কোনো দেশ চলতে পারে না। মানবজাতিকে নিয়মের অনুসারী ও সুশৃঙ্খল করতে শাসনতন্ত্র বা সংবিধান জরুরি। বিশ্বের সবচেয়ে উচ্ছৃঙ্খল, যুদ্ধবাজ এবং অনিয়ম ও রক্তপাতে অভ্যস্ত আরব গোত্রগুলো মহান ইসলামী আদর্শের ছায়াতলে এই মদীনা সনদের আওতায় এসে হয়ে পড়ে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জাতিতে। মহানবী (সা) মদীনা সনদের মাধ্যমে নির্যাতন-উৎপীড়ন, নারীদের প্রতি অবিচার, কলহ-বিদ্বেষ, উঁচু-নিচুর বিভেদসহ সব ধরনের অন্যায় দুর করতে মদীনা সনদের মাধ্যমে মানবতার সব কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন ও উদারতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ সনদের মাধ্যমে সকল ঐশী ধর্মের অনুসারীদের প্রতি শ্রদ্ধাব্যঞ্জক ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথও তিনি দেখিয়েছেন। এর মাধ্যমে মহানবী -সা. ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এবং আশরাফের কৌলীন্যও বন্ধ করেছেন। মানবজাতির জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর উপদেশমালা দিয়ে গেছেন মাওলা মুহাম্মাদ (সা)। ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের ভাষণ এ ধরনেরই উপদেশমালার অন্যতম। এতেও রয়েছে পবিত্র কুরআনের নীতিমালার আলোকে প্রণীত মদিনা সনদের প্রতিফলন। মদিনা সনদের ৪৭টি ধারার মধ্যে মানবতা স্থান পেয়েছে সর্বাগ্রে। আধুনিক যুগে আমরা মানবতার যেসব শ্লোগান শুনি ও সেসবের বাস্তবায়ন খুব কমই দেখি সেই মানবতার নীতিমালার সর্বোত্তম শিক্ষক ছিলেন মহানবী (সা) এবং তিনি কেবল কথায় নয় কাজের মাধ্যমেই সেইসব নীতির বাস্তবায়ন দেখিয়ে গেছেন। -মহানবীর আদর্শ রাষ্ট্র ও ইসলামী ব্যবস্থায় দাসরা হয়ে পড়ে স্বাধীন মানুষের মর্যাদাসম্পন্ন এবং নারীও পায় সর্বোচ্চ ন্যায়-বিচার-ভিত্তিক সম্মান। হিংসা-বিদ্বেষ এবং ধনী-দরিদ্রের প্রভেদ বিলুপ্ত হয়ে সবাই হয় ভাইভাই। প্রত্যেক মানুষের সঙ্গে মহানবী (সা) এমন সুন্দর, আন্তরিক ও মহানুভব আচরণ করতেন যেন সবাই তাঁর আপন পরিবারেরই সদস্য। মহানবীর সাম্যবাদ ফুটে উঠেছে কবি নজরুলের ভাষায় এভাবে:ইসলামে নাই ছোট বড় আর আশরাফ, আতরাফ/নিষ্ঠুর হাতে এই ভেদজাল কর মিসমার খাক।চাকর সাজিতে, চাকরি করিতে/ইসলাম আনে নাই পৃথিবীতে।মরিবে ক্ষুধায় কেহ নিরন্ন/কারো ঘরে রবে অঢেল অন্ন/হাতে হাত দিয়ে আগে চল।.. খোদার সৃষ্ট মানুষের ভালোবাসিতে পারে না যারাজানিনা কেমনে জনগণ নেতা হতে চায় হায় তারা .... মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে জন/‘এক আল্লাহ ছাড়া প্রভু নাই’- কহিল যে জন,/মানুষের লাগি চির দীন-হীন বেশ ধরিল যে- জন।/বাদশাহ-ফকিরে এক শামিল করিল যেজন-এল ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী/ব্যথিত মানবের ধ্যানের ছবিআজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল মুক্তি কলরোলে/তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলেবিশিষ্ট গবেষক মুহাম্মাদ শফি চাকলাদার লিখেছেন: বিশ্বের প্রথম যে শাসনতন্ত্র দিয়ে গেছেন মহানবী (সা) সে সম্পর্কেই আমরা কতটুকু জানি বা জানবার চেষ্টা করি? যেখানে ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের সভ্য বলে দাবি করে, সেই ইউরোপ-আমেরিকায় নারীদের জন্য কোন স্থান ধর্মে- ইবাদতে কোথাও ছিল না। রোমের সংসদে নারীদের স্থান ছিল অপবিত্র জানোয়ার হিসেবে। এটা জানা যায় যে, রাসূল (সা.)-এর নবুওত লাভের পূর্বে ৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে ফরাসীরা নারীদের প্রতি অনুগ্রহ করে স্বীকৃতি দেয় যে, নারী প্রাণী হবে হয়তো, তবে শুধু পুরুষদের সেবার উদ্দেশ্যেই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘মদীনা সনদ’ যে ভূমিকা রাখল বা প্রবর্তন করল তারই ধারায় ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। রাসূল (সা.)-এর মানবাধিকার ৬২৪ খৃ. আর ১৯৪৮ খৃ. মাঝে প্রায় ১৪০০ বছর পার হল। প্রথম মহাযুদ্ধের পর যখন জাতিসংঘের আদলে ‘লীগ অব নেশন্স’ প্রতিষ্ঠিত হয় সে সম্পর্কে ‘চোর-ডাকাত’ কবিতায় কবি নজরুল লিখেছেন:যারা বড় ডাকাত দস্যু জোচ্চোর দাগাবাজতারা তত বড় সম্মানী গুণী জাতিসংঘেতে আজ॥আজ বিশ্বের নানা অঞ্চলে বিশেষ করে ফিলিস্তিনে, ইয়েমেনে, মিয়ানমারে ও আফগানিস্তানে যেসব হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে এবং এসব দেশের নারী ও শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতিমালা লঙ্ঘন করে, আর নীরব দর্শক হয়ে বা সবুজ সংকেত দিয়ে জাতিসংঘ যে কখনও তার মেরুদণ্ডহীনতা ও কখনও অনিরপেক্ষতা দেখাচ্ছে তাঁর কারণও হচ্ছে মহানবীর ইসলামী আদর্শ ও মানবতার নীতি বাস্তবায়নের মত যোগ্য বিশ্ব-নেতৃত্বের অভাব। তাই বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত মানবতা যেন কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত গানের সঙ্গেই সুর মিলিয়ে মহানবীর যোগ্য উত্তরসূরির হাতে তথা ইমাম মাহদির হাতে মানবতার পুনমুক্তির প্রত্যাশায় বলতে চায়: পাঠাও বেহেশত হতে হযরত পুনঃসাম্যের বাণী/আর দেখিতে পারিনা মানুষে মানুষে এই হীন হানাহানি॥বলিয়া পাঠাও হে হযরত, যাহারা তোমার প্রিয় উম্মত/সকল মানুষে বাসে তারা ভালো খোদার সৃষ্টি জানি সবারে খোদারই সৃষ্টি জানি॥আধেক পৃথিবী আনিল ঈমান যে উদারতা গুণে/ তোমার যে উদারতা গুণেশিখিনি আমরা সে উদারতা কেবলি গেলাম শুনে/কোরানে হাদিসে কেবলি গেলাম শুনে।তোমার আদেশ অমান্য করে/লাঞ্ছিত মোরা ত্রিভুবন ভরে।/আতুর মানুষে হেলা করে বলি, ‘আমরা খোদারে মানি’।বৃথা বলি ‘আমরা খোদারে মানি’॥মুসলমানদের মধ্যে মহানবীর আদর্শের অনুসরণ ম্লান ও অতি-দুর্বল হয়ে পড়ায় ইসলামের পুনর্জাগরণের প্রত্যাশী সাম্যবাদের কবি নজরুল আক্ষেপ করে বলেছিলেন: আল্লাহতে যার পূর্ণ ইমান কোথা সে মুসলমান! আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

ঈদ মোবারক সকল মুমিন ও মমিনা কে জানাই ঈদ মোবারকমহানবী হযরত মাওলা মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম জাফর সাদিক (আ)'র জন্মদিন ১৭ রবিউল আউয়াল ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছিলেন,আমাদের তথা রাসূল (সাঃ)'র আহলে বাইতের কাছে রয়েছে ভবিষ্যতের জ্ঞান,অতীতের জ্ঞান,অন্তরে অনুপ্রাণিত বা সঞ্চারিত জ্ঞান,ফেরেশতাদের বাণী যা আমরা শুনতে পাই,আমাদের কাছে রয়েছে রাসূল (সাঃ)'র অস্ত্রসমূহ এবং আহলে বাইতের সদস্য ইমাম মাহদী (আঃ)'র কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত সেগুলো আমাদের হাতছাড়া হবে না। আমাদের কাছে রয়েছে হযরত মূসা (আঃ)'র তৌরাত,হযরত ঈসা (আঃ)'র ইঞ্জিল, হযরত দাউদ (আঃ)'র যাবুর এবং মহান আল্লাহর পাঠানো অন্যান্য আসমানি কেতাব। ইমাম সাদিক্ব আরও বলেছেন:এ ছাড়াও আমাদের কাছে রয়েছে হযরত ফাতিমা (সঃ)'র সহিফা যাতে রয়েছে সমস্ত ভবিষ্যৎ ঘটনার বিবরণ এবং পৃথিবীর শেষ ঘণ্টা পর্যন্ত সমস্ত শাসকের নাম তাতে লেখা আছে। আমাদের কাছে রয়েছে আল জামী নামের দলীল,সত্তুর গজ দীর্ঘ ঐ দলীলে লেখা রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)'র নিজ মুখের উচ্চারিত ও নির্দেশিত বাণী এবং ঐসব বাণী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ) নিজ হাতে লিখেছিলেন। আল্লাহর শপথ! এতে রয়েছে মানুষের জন্যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সবকিছু। হযরত মাওলা মুহাম্মাদ (সাঃ)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যরা সব সময়ই অন্য যে কোনো ব্যক্তিত্ব বা শাসকদের চেয়ে মানুষের বেশী শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসার পাত্র ছিলেন। আর এ জন্যে কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ও ক্ষমতাসীন শাসকরা এই মহাপুরুষগণকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন এবং ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। আব্বাসীয় শাসক আল মানসুর ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) 'র ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারই নির্দেশে ১৪৮ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করা হয় নবী বংশ তথা আহলে বাইতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)কে। কিন্তু অন্য অনেক মহান ইমামের মতোই ধার্মিক মানুষের অন্তরের রাজ্যে আজো ক্ষমতাসীন হয়ে আছেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.)মুসলমানদের সব মাজহাবের কাছেই বরেণ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁর আদর্শ হতে পারে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সূত্র। চারজন সুন্নি ইমামের মধ্যে একজন তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র এবং আরও দুই জন সুন্নি ইমাম তাঁর পরোক্ষ ছাত্র ছিলেন।মালিকি মাজহাবের ইমাম মালেক বিন আনাস ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর শপথ! মানুষের কোনো চোখ সংযম সাধনা, জ্ঞান, ফজিলত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে জা’ফর ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে বড় কাউকে দেখেনি, কোনো কান এসব ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে বড় কারো কথা শুনেনি এবং কোনো হৃদয়ও তা কল্পনা করেনি।ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.)’র একটি অমূল্য বাণী তিনি বলেছেন,যারা নামাজকে গুরুত্বহীন মনে করবে অথবা কম গুরুত্ব দিবে তারা আমাদের তথা মাওলা মুহাম্মাদ (সা.)’র আহলে বাইতের শাফায়াত তাদের ভাগ্যে জুটবে না।আজকের এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে আবারও সবাইকে জানাচ্ছি অশেষ মুবারকবাদ। #

মুয়াবিয়া মুনাফিক ছিল তার প্রমাননাসিবিদের ‎‘হাদি’ ‏মুয়াবিয়া ‎‘হারাম’ ‏পান করেছেআহলে সুন্নার ইমাম, ‏ইমাম আহমেদ বিন হাম্বল তার মুসনাদে হাম্বলে খণ্ড ৫ পাতা ৩৪৭ এ উল্লেখ করেছেন।📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ قَالَدَخَلْتُ أَنَا وَأَبِي عَلَى مُعَاوِيَةَ فَأَجْلَسَنَا عَلَى الْفُرُشِ ثُمَّ أُتِينَا بِالطَّعَامِ فَأَكَلْنَا ثُمَّ أُتِينَا بِالشَّرَابِ فَشَرِبَ مُعَاوِيَةُ ثُمَّ نَاوَلَ أَبِي ثُمَّ قَالَ مَا شَرِبْتُهُ مُنْذُ حَرَّمَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مُعَاوِيَةُ كُنْتُ أَجْمَلَ شَبَابِ قُرَيْشٍ وَأَجْوَدَهُ ثَغْرًا وَمَا شَيْءٌ كُنْتُ أَجِدُ لَهُ لَذَّةً كَمَا كُنْتُ أَجِدُهُ وَأَنَا شَابٌّ غَيْرُ اللَّبَنِ أَوْ إِنْسَانٍ حَسَنِ الْحَدِيثِ يُحَدِّثُنِي📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚“আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা বর্ণনা করেছেন ‎“আমি ও আমার আব্বা মুয়াবিয়ার কাছে গেলাম,মুয়াবিয়া আমাদের ফারসের উপর বসতে দিল এবং আমাদের জন্য খাদ্য পরিবেশন করল ও আমরা খেলাম, ‏তারপর মুয়াবিয়া শারাব নিয়ে এল, ‏মুয়াবিয়া পান করল ও আমার আব্বাকে দিল, ‏আমার আব্বা বললেন ‎*এটা আমি রসুল সাঃ হারাম করার* ‏পর থেকে পান করেনি”।মুয়াবিয়ার হারাম বীর্যে পয়দা হওয়া নাসিবিদের কাছে তাদের হারাম বাপের পর্দা ফাঁস হয়ে যায় এই হাদিসে তাই কিছু নাসিবি এটাকে এড়িয়ে যাওয়ার বাহানা খোঁজে।মা’যাম আয যাওয়াদ এ ইমাম হাইসামি এটাকে উল্লেখ করে লিখেছেন📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚رواه أحمد ورجاله رجال الصحيحআহমেদ বর্ণনা করেছেন এবং বর্ণনাকারিগন সাহিহ।আল্লামাহ হাসান সাক্কাফ, ‏বর্তমানে জর্ডনের ইমাম নমবি সেন্টারের চিফ তিনি ইবনে জাওজির কিতাব ‎‘দুফা শুবাহ আল তাসবিহ’ ‏এর হাশিয়া লেখাতে এই হাদিসের নোটে লিখেছেন ‎‘বর্ণনা কারীগণ সব সাহিহ মুসলিমের বর্ণনা কারী”শেইখ শুয়াইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদ এর এই হাদিসের কমেন্ট এ বলেছেন ‎‘শক্তিশালী সনদ’।সুতারং এটাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নাসিবিদের নেই।আরও দেখুন মুয়াবিয়ার দারু প্রীতি এবং দারু খেয়ে মাতাল হওয়ার কথা ইবনে আসাকির তার তারিখে উল্লেখ করেছেন। আরবিটা দেওয়া হল।📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚عبد الله بن الحارث بن امية بن عبد شمس بن عبد مناف وفد على معاوية وهو كبير ذكر أبو علي الحسين بن القاسم الكوكبي نا أحمد بن عبيد نا حسين بن علوان الكلبي عن عنبسة بن عمرو قال وفد عبد الله بن الحارث بن امية بن عبد شمس على معاوية فقربه حتى مست ركبتاه رأسه ( 2 ) ثم قال له معاوية ما بقي منك قال ذهب والله خيري وشري قال معاوية ذهب والله خير قلبك وبقي شر كثير فما لنا عندك قال إن أحسنت لم أحمدك وإن اسأت لمتك قال والله ما انصفتني قال ومتى أنصفتك فوالله لقد شججت أخاك حنظلة فما أعطيتك عقلا ولا قودا وأنا الذي أقول * أصخر بن حرب لانعدك ( 3 ) سيدا * فسد غيرنا إذ كنت لست بسيد * وانت الذي تقول * شربت الخمر حتى صرت كلا * على الأدنى ومالي من صديق وحتى ما أوسد من وساد * إذا أنشو سوى الترب السحيق * فوثب على معاوية يخبطه بيده ومعاوية ينحاز ويضحك📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚নাসিবিদের ‎‘হাদি’ ‏মুয়াবিয়া মদ চোরাচালান করতমুহাদ্দিস শাহ আব্দুল আযিয দেহলবি তার শিয়া বিরোধী প্রপাগ্নডা বই ‎‘তোফা ইসনা আশারি’এর পাতা ৬৩৮ এ লিখেছেনঃ“আবাদা বিন সামিত সিরিয়াতে ছিল তিনি মুয়াবিয়ার লাইন দেওয়া উটের বহর দেখলেন যেগুলির পিছনে মদ ঝোলান ছিল, ‏আবাদা জিজ্ঞেস করল ‎‘এতে কি আছে’? ‏লোকজন বলল এতে মদ আছে যেগুলি মুয়াবিয়া বিক্রি করতে পাঠিয়েছে। আবাদা একটা ছুরি নিয়ে উটের ‎(ঝোলান) ‏দড়ি গুলি কেটে দিল যাতে সব মদ পড়ে যায়”।এই রেওয়াত ইবনে আসাকির এর তারিখ এ দামিস্ক ‎,যাহাবির সিয়ার আলাম নাবুলাতেও পাওয়া যায় কিন্তু মনে হচ্ছে নতুন ভার্সন থেকে মুয়াবিয়ার নামটা তুলে দিয়ে ‎‘অমুক’ ‏বসান হয়েছে।তা সত্ত্বেও আবাদা বিন সামিত যে মদ গুলি ফেলে দেয় সেগুলি সিরিয়ার শাসকএর ছিল সেকথা এই বই গুলিতে উল্লেখ আছে।আর সেটাই যথেষ্ট প্রমানের জন্য যে সিরিয়ার শাসক মুয়াবিয়া ছিল।শেখ শোয়াইব আরনাউত সিয়ার আলাম নাবুলার হাসিয়াতে এটাকে ‎‘হাসান’ ‏উত্তম হাদিস বলে বর্ণনা করেছেন।মদ চোরাচালান করার আরও হাদিস পাওয়া যায় যেমন মুত্তাকী আল হিন্দি তার ‎‘কানযুল আম্মাল’ ‏এ উল্লেখ করেছেন। খণ্ড হাদিস নং ১৩৭১৬📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚عن محمد بن كعب القرظي قال : غزا عبد الرحمن بن سهل الانصاري في زمن عثمان ، ومعاوية أمير على الشام ، فمرت به روايا خمر تحمل ، فقام إليها عبد الرحمن برمحه ، فبقر كل رواية منها فناوشه (2) غلمانه حتى بلغ شأنه معاوية ، فقال : دعوه فانه شيخ قد ذهب عقله فقال : كذب والله ما ذهب عقلي ولكن رسول الله صلى عليه وسلم نهانا أن ندخله بطوننا واسقيتنا ، وأحلف بالله لئن أنا بقيت حتى أرى في معاوية ما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم لابقرن (1) بطنه أو لاموتن دونه.📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚“মুহাম্মাদ বিন কা’ব আল কুরযি বর্ণনা করেছে ‎‘আব্দুর রাহমান বিন সাহল আল আনসারি উসমানের জামানায় একটা যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন এবং মুয়াবিয়া সিরিয়ার আমির ছিল, ‏তার সামনে দিয়ে মদের ব্যরেল যাচ্ছিল ফলে তিনি বর্শা নিয়ে গেলেন এবং সব ব্যরেল খুঁচিয়ে দিলেন। গোলামেরা বাধা দিতে লাগল এমনকি মুয়াবিয়ার কাছে খবর দেওয়া হল এব্যপারে। মুয়াবিয়া বলল ‎‘ওকে ছেড়ে দাও ও বুড়ো আর ওর মাথার দোষ হয়েছে’, (আব্দুর রহমান) ‏বলল ‎‘আল্লাহের কসম ও মিথ্যা বলেছে, ‏আমার মাথার দোষ হয়নি, ‏রসুল সাঃ আমাদের এটা পান করতে বারণ করেছেন, ‏আমি আল্লাহের কসম করে বলছি যদি আমি ততদিন বেঁচে থাকি সেটা দেখতে যেটা আমি রসুল সাঃ থেকে শুনেছি মুয়াবিয়া সমন্ধে, ‏হয় আমি মুয়াবিয়ার পেট চিরে দেব অথবা মারা যাব”।( ‏নোটঃ রসুল সাঃ থেকে কি শুনেছিল সেটা হল যে রাসুল সাঃ মুয়াবিয়া কে অভিসম্পাত দিয়েছিল যে মুয়াবিয়ার পেট কক্ষন ভরবে না ‎…সাহিহ মুসলিম ‎)উপরুক্ত হাদিসটা আরও অনেক কিতাবে উল্লেখ করেছে যেমনঃ১) ‏ইবনে আসাকির এর আসদুল গাবা, ‏খণ্ড ১ পাতা ৬৯৯।২) ‏আল ইসাবা, ‏খণ্ড ৪ পাতা ৩১৩।৩) ‏তারিখ দামিস্ক, ‏খণ্ড ৩৪ পাতা ৪২০।📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚নিবেদকমোঃ আলীলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲

ইমামত অস্বীকারকারীর পরিনামঃ🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲“একজন প্রার্থনাকারী চাইলো একটি শাস্তি যা অবশ্যই ঘটবে,-- যা কেউ এড়াতে পারে না বিশ্বাসহীনদের কাছ থেকে”(সুরা মা-য়ারিজ,আয়াত# ১-২)📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚।সুফিয়ান বিন ওয়াইনা বর্ননা করিয়াছেন যে,যখন রাসুল(সাঃ) গাদীরে খুমে লোকদেরকে একত্র করিলেন এবং হযরত আলীর(আঃ) হাত ধরিয়া ফরমাইলেনঃআমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা,এই সংবাদ সারা দেশব্যাপী ছড়াইয়া পড়িল।হারিস বিন নোমান এই সংবাদ শুনিয়া নিজের উটের পিঠ হইতে নামিয়া রাসুলের(সাঃ) খেদমতে হাজির হইল এবং বাক-বিতন্ডা আরম্ভ করিল।সে বলিল যে,হে মুহাম্মাদ(সাঃ)! আপনি আমাদের কলেমা পড়িতে আদেশ দিলেন আমরা তাহা গ্রহন করিলাম,৫ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিলেন আমরা তাহা পালন করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন ১ মাস রোজা পালনের আমরা তাও কবুল করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন আমাদেরকে হজ্ব করিতে আমরা তাহাও নতশিরে মানিয়া লইলাম।তারপর এই সব মানিয়া নেয়ার পরও আপনি সন্তুষ্ট হইলেন না।এমনকি আপনি নিজের চাচাতো ভাইয়ের হাত ধরিয়া আমাদের উপর তাহার কতৃ্ত্ব স্থাপন করিলেন এবং বলিলেন যে, আমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা।এই আদেশ কি আপনার পক্ষ হইতে না কি আল্লাহর পক্ষ হইতে?তখন রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃঐ আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই,এই আদেশ আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে।তারপর হারিস ফিরিয়া তার উটের দিকে যাইতে লাগিল আর বলিতে লাগিলঃহে আল্লাহ!যাহা মুহাম্মাদ(সাঃ) বলিয়াছেন তাহা যদি সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে আমার উপর আকাশ হইতে পাথর নিক্ষেপ কর অথবা আমার উপর কোন ভয়ানক কোন আযাব প্রেরন কর।হারিস নিজের উটের পিঠে উঠিতে না উঠিতেই আকাশ হইতে একটি পাথর তাহার মাথার উপর পড়িল এবং তাহার নিম্নদেশ দিয়া বাহির হইয়া গেল,তৎক্ষনাৎ সে ইন্তেকাল করিল।তারপর এই আয়াত নাযিল হইলো📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚(সুত্রঃ কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ৩০০; শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,২য় খন্ড,পৃঃ ২৮৬;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩৯;তাযকেরা সিবত ইবনে জাওযী,পৃঃ১৯;ফুসুলুল মহিম্মা,পৃঃ২৬;নুযহাতুল মাযালিস,২য় খন্ড, পৃঃ২৪২;ফাজাএলুল খামছা,১ম খন্ড,পৃঃ৩৯;নুরুল আবসার,পৃঃ১৭৮; বয়ানুস সায়াদাহ,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২০২📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚📚🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲🤲নিবেদকমোঃ আলীআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

আল্লামা বুরহানুদ্দিন বলেছেনসুন্নি হানাফি ফিকাহর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হিদায়ায় আল্লামা বুরহানুদ্দিন মুয়াবিয়াকে ‘জালিম বাদশাহদের সারিতে’ স্থান দিয়েছেন এবং আলী (আ.) ন্যায় বা হকের পক্ষে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। (হিদায়া, খণ্ড-৩, পৃ-১৩৩, বিচারকার্য অধ্যায়)সুন্নি মাজহাবের ফাতহুল কাদির গ্রন্থে এসেছে: “সত্য সেযুগে আলীর সঙ্গেই ছিল। কারণ, তাঁর (নেতৃত্বের প্রতি জনগণের) বায়আত (আনুগত্যের শপথ) বিশুদ্ধ ছিল ও তা গৃহীত হয়। তাই তিনি জামাল যুদ্ধে ন্যায়ের পথে ছিলেন ও মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধের সময়ও ন্যায়ের পথে ছিলেন। এ ছাড়াও আলী (আ.)’র ন্যায় পথে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় আম্মারের প্রতি রাসূলের (সা.) উক্তির আলোকে। রাসূল (সা.) আম্মারকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, তোমাকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হত্যা করবে। আর তাঁকে হত্যা করেছিল মুয়াবিয়ার সঙ্গীরা। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে মুয়াবিয়ার ও তার সঙ্গীরা (আমর ইবনে আসসহ) বিদ্রোহী ছিল।”এমন স্পষ্ট হাদিসের পরও মুয়াবিয়া ইজতিহাদি (বা ইসলামী মূল নীতির ভিত্তিতে নতুন বা স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা আবিষ্কার) ভুল করেছেন বলে সাফাই দেয়ার কোনো উপায় নেই। অন্যদিকে বুখারির হাদিসে (আম্মারের মানাকিব বা মর্যাদা অধ্যায়ে, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ-৫৩০) এসেছে, (রাসুল-সা. বলেছেন,) ‘শয়তান কখনও আম্মারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না।’ আম্মার আগাগোড়াই ছিলেন আলীর (আ. পক্ষে। মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস তা জানা সত্ত্বেও আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অব্যাহত রেখেছিল এবং তারা আম্মারকে হত্যা করার পরও সঠিক পথ ধরেননি।আল্লামা সুয়ুতি বলেন- ইয়াজিদের পিতা (মুয়াবিয়া) ইয়াজিদকে যুবরাজ নিযুক্ত করেন, আর তা মেনে নেয়ার জন্য জনগণের ওপর বলপ্রয়োগ করেন।আলী আঃ কে গালি দেয়ার প্রথা চালু মুয়াবিয়ার আদেশ ছিল এরূপ- খোদার কসম , কখনো আলী আঃ কে গালি দেয়া ও অভিসম্পত দেয়া বন্ধ হবে না যতদিন শিশুরা যুবকে এবং যুবকরা বৃদ্ধে পরিনত হবে না। তামাম দুনিয়ায় আলীর ফজিলত বর্ণনা কারী আর কেও থাকবে না। (রাউফল হেজাব, আত তাবারী ৪র্থ খণ্ড, ইবনুল আসীর ৩য় খণ্ড, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড। ) মুসলিম শরীফের ফাজায়েল এ আলী ইবনে আবু তালিব অধ্যায় এ লিখা আছে যে- মুয়াবিয়া তার সমস্ত প্রদেশের গভর্নর এর উপর এ আদেশ জারী করেন যে , সকল মসজিদের খতিব গণ মিম্বর থেকে আলীর উপর অভিসম্পত করাকে যেন তাদের দায়িত্ব মনে করেন। (মুসলিম শরীফ) কারো মৃত্যুর পর তাকে গালি দেয়া ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী।নিবেদকমোঃ আলীআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

সিরাতে মুস্তাকিম বলতে কাঁদের পথকে বুঝানো হয়েছে ?পবিত্র কোরআনে“ সূরা ফাতিহাতে ” আমাদের“ সরল সঠিক পথে ও যাদের প্রতিতি আপনি নেয়ামত দান করেছেন তাদের পথে পরিচালিত করুন। ” বলতে কাদের পথকে বুঝানো হয়েছে ?সালাবী তার তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে (সূরা ফাতিহার তাফসীরে) ইবনে বুরাইদা হতে বর্ণনা করেছেন যে ,“ সিরাতে মুস্তাকিম ” বলতে“ মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর ইতরাত , আহলে বাইতের পথকে বুঝানো হয়েছে ” । ওয়াকী ইবনে যাররাহ সুফিয়ান সাওরী সাদী আসবাত ও মুজাহিদ হতে এরা সকলেই ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন , আমাদের সরল সঠিক পথে হেদায়েত কর , অর্থাৎ“ মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের পথ। ”সূত্রঃ- ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃঃ-১১১ ; আরজাহুল মাতালেব , পৃঃ-৫৪৪ ; বায়ানুস সায়াদাহ , খঃ-১ , পৃঃ-৩৩ ; তাফসীর আলী বিন ইবরাহীম , খঃ-১ , পৃঃ-২৮ ; সাওয়াহেদুত তানযিল , খঃ-১ , পৃঃ-৫৭ ; তাফসীরুল বুরহান , খঃ-১ , পৃঃ-৫২ ; মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব , খঃ-১ , পৃঃ-১৫৬ ; আল মোরাজয়াত , পৃঃ-৫৫ ; মাজমাউল বায়ান , খঃ-১ , পৃঃ-২৮ ; সাওয়ায়েকুল মোহরিকা , পৃঃ-১৬ ; কিফায়াতুল মোওয়াহহেদীন , খঃ-১ , পৃঃ-১৯২ ; রওয়ানে জাভেদ , খঃ -১ , পৃঃ-১০ ; তাফসীরে নূরুস সাকালাইন , খঃ-১ , পৃঃ-২০-২১ ; তাফসীরে নমূনা , খঃ-১ , পৃঃ-৭৫ ; তাফসীরে ফুরাত , খঃ-১ , পৃঃ-১০।

হানাফী ইমাম আবু হানিফা: "ইমাম জাফর সাদিকের চেয়ে বড় ফকিহ আর দেখিনি" ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এমন একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যেখান থেকে হাজার হাজার আলেম বেরিয়ে আসেন।ইমাম বাকের (আ.) খাঁটি মোহাম্মাদি ইসলাম প্রচারের যে কাজ শুরু করেছিলেন ইমাম জাফর সাদেক (আ.) তাকে পূর্ণতায় পৌঁছে দেন। শুধু শিয়া চিন্তাবিদরা নন সেইসঙ্গে সুন্নি আলেম ও বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গও ইমামের এই কাজে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আজকের আসরে আমরা ইমাম সম্পর্কে এরকম কয়েকজন চিন্তাবিদের মতামত শুনব।কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হামিদ বলেন: আমি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিকাহ শাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছি। এরমধ্যে ইমাম সাদেক আমার দৃষ্টি গভীরভাবে আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। তিনি ফিকাহ শাস্ত্রকে এতটা সমৃদ্ধ করেছেন যে, তা শিয়া ও সুন্নি গবেষকদের চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হাদিস বিশারদ মালিক বিন আনাস বলেন: জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ইবাদতের দিক দিয়ে আমি জাফর বিন মোহাম্মাদ সাদেক (আ.)’র সমতুল্য আর কাউকে দেখিনি।হানাফি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফা নুমান বিন সাবেত বলেন: আমি ইমাম জাফর বিন মোহাম্মাদের চেয়ে বড় ফকিহ আর দেখিনি। আমি একদিন খলিফা মানসুরের নির্দেশে ফিকাহ শাস্ত্রের ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন খলিফার দরবারে উপস্থিত আলেমদের সামনে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করি। দরবারে উপস্থিত ইমাম জাফর সাদেক (আ.) ৪০টি প্রশ্নেরই এত সুন্দর ও চমৎকার উত্তর দেন যে, উপস্থিত প্রত্যেকে একবাক্যে স্বীকার করেন ইসলামি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিক দিয়ে তিনি সব আলেমের চেয়ে অগ্রগামী।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইসলামের ইতিহাসের বেশিরভাগ শাসকের ইসলামি জ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। কখনো কখনো যদি তাদের দরবারে কোনো আলেমের দেখা পাওয়া যেত তাহলে এ কাজে শাসকের উদ্দেশ্য ছিল এসব আলেমকে নিজের ক্ষমতা সুসংহত করার কাজে ব্যবহার করা এবং জনগণকে এটা বোঝানো যে, শাসক আলেমদের অনেক সম্মান করেন। কখনো কখনো আলেমদের অপমান করার জন্যও খলিফার দরবারে তলব করা হতো। আব্বাসীয় খলিফা মানসুর একই উদ্দেশ্যে আবু হানিফাকে ফিকাহ শাস্ত্রের ৪০টি জটিল প্রশ্ন প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে দরবারে উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে ইমাম জাফর সাদকে (আ.)কে বিপদে ফেলা যায়। মানসুরের ধারণা ছিল ইমাম এসব প্রশ্নের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। কিন্তু মানসুরের ধারণার বিপরীতে ইমাম সাদেক (আ.) এসব প্রশ্নের এতটা প্রজ্ঞাপূর্ণ উত্তর দেন যাতে উপস্থিত সকলে হতভম্ভ হয়ে যায়।জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পাশাপাশি তাকওয়া ও সাধাসিধে জীবনযাপনের দিক দিয়েও ইমামের জুড়ি ছিল না। মানুষের সঙ্গে অতি উত্তম আচরণ ও উন্নত নৈতিক গুণাবলীর কারণে সাধারণ মানুষই ইমামকে সাদেক উপাধি দিয়েছিল; যে নামে তিনি সর্বাধিক পরিচিতি অর্জন করেন। মিশরের বিখ্যাত লেখক ড. আহমাদ আমিন এ সম্পর্কে বলেন: ইমাম সাদেক শুধু শিয়া মাজহাবের সবচেয়ে বড় ফকিহ ছিলেন না সেইসঙ্গে ইসলামের ইতিহাসের পরবর্তী আরো বহু যুগ ধরে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি। বন্ধুরা! ইমাম জাফর সাদেক (আ.) কত মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা উপলব্ধি করার জন্য তাঁর সম্পর্কে আমরা আরো দু’জন বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিতের বক্তব্য তুলে ধরব। মিশরের প্রখ্যাত কবি, লেখক ও গবেষক আব্দুর রহমান আশ-শারকাভি ইমাম সাদেক (আ.) সম্পর্কে লিখেছেন: ইমাম সাদেকের যুগের সকল মানুষ তাঁকে ভালোবাসত ও সম্মান করত। কারণ, তাঁর চিন্তাশক্তির ব্যাপ্তি ছিল বিশাল, তাঁর চরিত্র ছিল মহান, মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকত এবং মানুষের সঙ্গে তার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত অমায়িক। পরোপকারে তাঁর জুড়ি ছিল না। শাসকগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ হুমকি ও চাপ সত্ত্বেও তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে আল্লাহর একত্ববাদ ও দ্বীন প্রচারের দায়িত্ব পালন করে গেছেন।ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে মুসলিম বিশ্বের আরেকজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ মোহাম্মাদ বিন তালহা শাফিয়ী বলেন: আহলে বাইতের মহান আলেম জাফর বিন মোহাম্মাদ সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতেন এবং সব সময় আল্লাহর জিকির তাঁর মুখে লেগে লাগত। তিনি বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন, কুরআনের মর্মার্থ ও শিক্ষা গভীরভাবে অনুধাবন করতেন এবং সেখান থেকে সাধারণ মানুষের বোঝার মতো শিক্ষা বের করে আনতেন। নিজের নফস বা রিপুকে তিনি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর নূরানি চেহারা দেখলে মানুষের আখেরাতের কথা স্মরণ হয়ে যেত। তিনি বক্তৃতা দিতে শুরু করলে মানুষের দুনিয়াপ্রেম ছুটে যেত এবং তারা কিয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করত। তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করে শেষ করা সম্ভব নয়।ইমাম জাফর সাদেক (আ.) মোহাম্মাদি ইসলাম প্রচারের মহান দায়িত্ব পালনের একই সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তৎপর ছিলেন। ইমাম যে পরিপূর্ণ ফিকাহ সংকলন রেখে গেছেন তা থেকে বোঝা যায়, ইসলাম তখনই মানুষের কল্যাণ করতে পারবে যখন এই ঐশী ধর্ম মানুষের জীবনের প্রতিটি প্রয়োজন পূরণের মতো দিকনির্দেশনা বাতলে দিতে পারবে। ইসলামি ফিকাহ শাস্ত্রে আধিপত্যকামী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শিক্ষা থাকতে হবে। আল্লাহর কিতাব কুরআন মজিদ থেকে উৎসারিত জ্ঞান দিয়ে ইমাম যে পূর্ণাঙ্গ ফিকাহ সংকলন রেখে গেছেন তাতে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। এজন্যই ইমাম সাদেক (আ.)’র ফিকাহ সংকলনকে আব্বাসীয় শাসকরা ভয় পেত।শেষাংশে এবার আমরা ইমাম জাফর সাদেক (আ.)’র কিছু মূল্যবান উপদেশবাণী শুনব। তিনি বলেছেন: ইসলামের শত্রুরা তোমাদের সন্তানদের অন্তরকে ভ্রান্ত শিক্ষা দিয়ে পূর্ণ করে ফেলার আগে তাদের মাঝে আমাদের শিক্ষা ছড়িয়ে দাও। প্রজ্ঞাবান ও বুৎপত্তিসম্পন্ন, ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, সত্যবাদী ও কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষদের আমরা ভালোবাসি। আমাদের অনুসারীরা সঠিক পথপ্রাপ্ত, মুত্তাকি, নেককার, ঈমানদার ও সফলকাম হয়। আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাই হচ্ছেন তিনি, যিনি আমার ভুল-ত্রুটিগুলো আমার সামনে তুলে ধরেন। মানসুর আব্বাসির বিষপ্রয়োগে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার আগ মুহূর্তে ইমাম সাদেক (আ.) সর্বশেষ যে মূল্যবান বাণী রেখে যান তা হচ্ছে: যে ব্যক্তি নামাজকে অবহেলা করে সে আমাদের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে।#নিবেদকমোঃ আলীআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র জন্মবার্ষিকীসকল মোমিন মোমিনা কে জানাই ঈদ মোবারক🎂🎂🎂🎂🎂(((পর্ব ১)))🎂🎂🎂🎂🎂দশই রজব ইসলামের মহাখুশির দিন। এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন মাওলা মোহাম্মদ (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা তাকি(আ)। নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামী-তাদের সবারই নেতা।আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ) এর জন্ম-বার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন ও প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং মাওলা মোহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম ।ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগত-বিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা (আ) ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নাম ‘সাবিকাহ’ বলে জানা যায়। ইমাম রেজা (আ) তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর। ইমাম জাওয়াদ (আ) ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র সাত বা আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ)’র ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম‌লা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂🎂

ইমাম মাহদী আঃ এর দাদা ইমাম হাদি আঃ এর অলৌকিক নানান ঘটনামহানবী (সা:)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। মাওলা হযরত মোঃ (সা:) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্যে অতি মূল্যবান বা ভারী ও সম্মানিত দুটি জিনিষ রেখে যাচ্ছিঃএকটি হল আল্লাহর কিতাব ও অপরটি হল আমার আহলে বাইত।অতঃপর নিশ্চয়ই এ দুটি জিনিস হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। মুসলিম ও তিরমিজি শরীফের এ হাদিস অনুযায়ী মহানবী (সঃ)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের জানা এবং তাঁদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।মহানবী (সা:)’র আহলে বাইত বা তাঁর পবিত্র বংশধরগণ হলেন মহানবী (সা:)র পর মুসলমানদের প্রধান পথ প্রদর্শক। খোদা পরিচিতি আর সৌভাগ্যের পথরূপ আলোর অফুরন্ত আলোকধারাকে ছড়িয়ে দিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করার জন্য তাঁরা রেখে গেছেন সংগ্রাম আর জ্ঞান-প্রদীপ্ত খাঁটি মুহাম্মদী ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল আদর্শ। ইসলাম তার প্রকৃত রূপকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য এই আহলে বাইত (আ.)’র কাছে চিরঋণী। বিশ্বনবী (সা.)’র সেই মহান আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম নাকী বা হাদী (আ.)’র শাহাদত-বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা এবং আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য সালাম ও দরুদ।ইমাম নাকী বা হাদী (আ.) ২২০ হিজরিতে পিতা ইমাম জাওয়াদ (আ.)’র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের গুরু দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ২১২ হিজরির ১৫ ই জিলহজ বা খৃষ্টীয় ৮২৮ সালে পবিত্র মদীনার উপকণ্ঠে। ইমাম নাকী (আ.)’র মায়ের নাম ছিল সুমমানা খাতুন। মাওলা মোহাম্মদ (সা.)’র আহলে বাইতের ধারায় ইমাম হাদী ছিলেন দশম ইমাম। মহত্ত্ব আর সর্বোত্তম মানবীয় সব গুণ ছিল তাঁর ভূষণ।হজরত ইমাম হাদি (আ:)'র শাহাদতবার্ষিকীক্ষমতাসীন আব্বাসীয় শাসকরা আহলে বাইতের প্রত্যেক সদস্যকে জন-বিচ্ছিন্ন করে রাখতো যাতে তাঁদের বিপুল জনপ্রিয়তা সরকারের জন্য পতনের কারণ না হয়। শিশু ইমাম হাদী (আ.)-কে সুশিক্ষিত করার নামে তাঁকে জন-বিচ্ছিন্ন করে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৎকালীন আব্বাসীয় শাসক এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে তাঁর কাছে পাঠান। আবদুল্লাহ জুনাইদি নামের এই পণ্ডিত অল্প কয়েকদিন পরই ইমামের অতি উচ্চ মর্যাদা তথা ইমামতের বিষয়টি বুঝতে পারেন। শিশু ইমাম হাদী (আ.)’র জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করে জুনাইদি বলেছেন:'জ্ঞানের যে ক্ষেত্রেই আমি আমার পাণ্ডিত্য তুলে ধরার চেষ্টা করতাম সেখানেই বনি হাশিমের এই মহান ব্যক্তিত্ব আমার সামনে বাস্তবতার দরজাগুলো খুলে দিতেন।... সুবাহানআল্লাহ! এত জ্ঞান তিনি কিভাবে আয়ত্ত্ব করেছেন? মানুষ ভাবছে যে আমি তাঁকে শেখাচ্ছি, অথচ বাস্তবতা হল আমি তাঁর কাছে শিখছি। আল্লাহর শপথ জমিনের বুকে তিনি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।'ইমাম নাকী (আ.)-কে কেন ইমাম হাদী বলা হত- এই বর্ণনা থেকেই তা স্পষ্ট। তিনি যতদিন মদীনায় ছিলেন জনগণের ওপর তাঁর গভীর প্রভাব শত্রুদের মনে ঈর্ষার আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।মসজিদে নববীর তৎকালীন পেশ ইমাম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদও হিংসার এই আগুন থেকে মুক্ত ছিলেন না। তিনি ইমাম হাদী (আ.)’র নামে নানা অপবাদ দিয়ে চিঠি পাঠান আব্বাসীয় শাসক মুতাওয়াক্কিলের কাছে। মদীনায় শিশু ইমামের ব্যাপক প্রভাব ও উঁচু সামাজিক অবস্থান এই শাসকের কাছেও ছিল অসহনীয়। ফলে মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে মদীনা থেকে উত্তর বাগদাদের সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তিকে পাঠান। এই ৩০০ ব্যক্তির নেতা ছিল ইয়াহিয়া বিন হারসামাহ।ইবনে জাওজি এই ঘটনা সম্পর্কে হারসামাহ’র উদ্ধৃতি তুলে ধরেছিলেন। হারসামাহ বলেছেন: 'যখন মদীনায় প্রবেশ করলাম তখন জনগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারা ইমাম হাদী (আ.)’র প্রাণহানির আশঙ্কা করেই এভাবে কাঁদছিল। জনগণের ক্রন্দনে মনে হচ্ছিল যেন কিয়ামত শুরু হয়েছে।'এটা স্পষ্ট যে, মদীনার জনগণের প্রতিরোধের আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)-কে সামেরায় নিয়ে আসার জন্য ৩০০ ব্যক্তি পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন।ইমাম হাদী (আ.)'র পথ নির্দেশনায় জনগণ শাসকদের অত্যাচার অবিচার ও তাদের পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের অযোগ্যতার কথা খুব অচিরেই বুঝে ফেলবে ও এভাবে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে –এমন আশঙ্কার কারণেই মুতাওয়াক্কিল ইমামকে কৌশলে তৎকালীন রাজধানী সামেরা শহরে নিয়ে আসে।কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও ইমাম হাদী (আ.) সামেরা শহরেও প্রকৃত ইসলাম প্রচার, যুগোপযোগী সংস্কার, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং আব্বাসীয়দের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরার কাজ অব্যাহত রাখেন। ফলে আব্বাসীয় শাসকরা এখনেও ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সুযোগ না থাকায় ইমাম হাদী (আ.) তাঁর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। বাধ্য না হলে তাগুতি শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা যে নিষিদ্ধ ইমাম তা মুসলমানদের জানিয়ে দেন। এ ছাড়াও তিনি জনগণকে সুপথ দেখানোর জন্য শিক্ষার কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করতে থাকেন।ইমাম হাদী (আ.) আবদুল আজিম হাসানি ও ইবনে সিক্কিত আহওয়াজিসহ ১৮৫ জন ছাত্রকে উচ্চ শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করেছিলেন এবং তারা সবাই ছিল সে যুগের নানা জ্ঞানে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।হজরত ইমাম হাদি (আ:) 'র শাহাদতবার্ষিকীইমাম বিভ্রান্ত চিন্তাধারার প্রচারকদের ওপর নজর রাখতেন। মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, সে যা করে তা বাধ্য হয় বলেই করে- এই মতবাদ তথা জাবরিয়া মতবাদে বিশ্বাসীদের যুক্তি খণ্ডন করে ইমাম হাদী (আ.) বলেছিলেন, 'এই মতবাদের অর্থ হল আল্লাহই মানুষকে পাপে জড়িত হতে বাধ্য করেন এবং পরে পাপের জন্য শাস্তিও দেন বলে বিশ্বাস করা। আর এই বিশ্বাসের অর্থ আল্লাহকে জালিম বলে মনে করা তথা তাঁকে অস্বীকার করা।' কথিত খলিফা মুতাওয়াক্কিল ইমাম হাদী (আ.)কে জব্দ ও অপমানিত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। ইমামকে সম্মান প্রদর্শনের নামে মুতাওয়াক্কিল তাঁকে নিজ দরবারে হাজির করে অপমানিত এবং কখনও কখনও হত্যারও চেষ্টা করেছে।ইমাম হাদী (আ.)'র ওপর নানা ধরনের নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি জালিম ও শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ফলে ভীত-সন্ত্রস্ত আব্বাসীয় সরকার তাঁকে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে। ২৫৪ হিজরির এই দিনে তথা তেসরা রজব আব্বাসীয় খলিফা মুতাজ ৪১ বছর বয়সের ইমাম হাদী (আ.)কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে। ফলে বিশ্ববাসী তাঁর উজ্জ্বল নূর থেকে বঞ্চিত হয়।ইমাম হাদী (আ.)’র মাধ্যমে অনেক মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেমন, আব্বাসীয় রাজার কয়েকজন জল্লাদ ও ভৃত্য রাজার নির্দেশে ইমাম (আ.)-কে আকস্মিভাবে হত্যা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখতে পায় যে ইমামের চারদিকে রয়েছে একশ জনেরও বেশী সশস্ত্র দেহরক্ষী। আর একবার রাজা মুতাওয়াক্কিল ইমামকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য তাঁর সামনে ৯০ হাজার সেনার সশস্ত্র মহড়ার উদ্যোগ নিলে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলকে আকাশ ও জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে বললে সে দেখতে পায় যে, আকাশ আর জমিন ভরে গেছে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সশস্ত্র ফেরেশতায় এবং রাজা তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।একই রাজা ইমামকে অপমান করার জন্য তাঁকে খাবারের দাওয়াত দেয়। ইমাম খাবারে হাত দেয়া মাত্রই রাজার নিয়োজিত এক ভারতীয় জাদুকরের জাদুর মাধ্যমে ওই খাবার উধাও হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই হাসতে থাকলে ইমাম জাদুকরের পাশে থাকা বালিশে অঙ্কিত সিংহের ছবিকে জীবন্ত হতে বলেন। সিংহটি জীবন্ত হয়ে ওই জাদুকরকে টুকরো টুকরো করে ফেলে।মুতাওয়াক্কিল কখন কিভাবে মারা যাবে তাও ইমাম আগেই বলেছিলেন। ইমামের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ঠিক সেভাবে ও সেই সময়ই মারা গিয়েছিল এই আব্বাসীয় রাজা।মুহাম্মাদ বিন শরাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম হাদী (আ.)'র সঙ্গে মদীনার একটি রাস্তায় হাঁটছিলাম। ইমামের কাছে একটি প্রশ্ন করব বলে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই ইমাম হাদী (আ.) বললেন: 'আমরা এখন ভিড়ের মধ্যে রয়েছে এবং জনগণ চলাফেরা করছে। এখন প্রশ্ন করার জন্য ভালো সময় নয়।' (বিহারুল আনোয়ার)মুহাম্মাদ বিন ফারাজ থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইমাম হাদী (আ.) আমাকে বলেছেন, যখনই কোনো বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে চাও তা লিখে তোমার জায়নামাজের নিচে রাখবে এবং এক ঘণ্টা পর তা তুলে দেখবে। এরপর থেকে আমি এই পদ্ধতিতে ইমামের কাছ থেকে লিখিত জবাব দেখতে পেতাম। আবু হাশিম জা'ফরি থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একদিন ইমামের সঙ্গে সামেরার বাইরে যান ও এক স্থানে দু'জনেই মুখোমুখি হয়ে মাটিতে বসেন। এ সময় আবু হাশিম তার তীব্র অভাবের কথা জানালে ইমাম ওই স্থানের ভূমি থেকে এক মুঠো বালি হাতে নিয়ে তা আবু হাশিমকে দেন এবং বলেন যে এগুলো তার অভাব দূর করবে ও যা দেখবেন তা যেন কাউকে না বলেন। আবু হাশিম শহরে ফিরে দেখেন যে সেই বালুগুলো লাল আগুনের মত চকচকে স্বর্ণ হয়ে গেছে। স্বর্ণকারকে তা দিয়ে বড় স্বর্ণের টুকরো করে দিতে বললে সে বিস্মিত হয়ে বলে: এমন ভালো ও বালু আকৃতির স্বর্ণ তো কখনও দেখিনি! কোথা থেকে এনেছ!?দাউদ বিন কাসিম জাফরিকে হজের সফর উপলক্ষে বিদায় দিতে গিয়ে ইমাম সামেরার বাইরে নিজের বাহন থেকে নেমে হাত দিয়ে মাটিতে একটি বৃত্ত আঁকেন। এরপর ইমাম হাদী (আ.) বলেন: হে চাচা! এই বৃত্তের ভেতরে যা আছে তা থেকে আপনার সফরের খরচ উঠিয়ে নেন। জাফরি তাতে হাত দিতেই একটি স্বর্ণ-পিণ্ড পেলেন যার ওজন ছিল দুইশত মিসক্বাল। ইমাম হাদী (আ.)’র কয়েটি সংক্ষিপ্ত বাণী শুনিয়ে শেষ করবো আজকের এ আলোচনা। তিনি বলেছেন:স্বার্থপরতা জ্ঞান অর্জনের পথে বাধা এবং তা অজ্ঞতা ডেকে আনে। যা অন্তরে গৃহীত ও কাজে প্রকাশিত সেটাই মানুষের ঈমান।আখিরাতের পুরষ্কার হলো দুনিয়ার কষ্ট ও পরীক্ষার বিনিময়।মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাওলা মোহাম্মদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অনুসারী হওয়া তৌফিক দান করুন। আমিন।প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুমদুশমনে আহলে বায়েতলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিন

হযরত আবু বকর (লাঃ.) খেলাফত লাভকথিত যে, নবী করিম (সা.) হযরত আবু কবরকে খেলাফত দিয়ে গেছেন । তিনি হযরত আবুবকরকে নামাজের ইমামতি করার দায়িত্ব দিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে হযরত আবু বকরই খেলাফতের আসন অলংকৃত করার জন্যে অন্য সবার চাইতে বেশী যোগ্য । আর তাই বনি সাক্বিফার সমাবেশে সাহাবীরা তাকে খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করেছেন ।”কিন্তু ইতিহাস স্বীকৃত সত্য যে, বনি সাক্বিফাতে খলিফা নির্বাচনের প্রসংঙ্গ নিয়ে মোহাজের ও আনসারদের মধ্যে যে বাক-বিতন্ডা ও তর্ক বিতর্ক হয়েছিলো সেখানে কখনো নামাজের প্রসংঙ্গ উত্থাপিত হয়নি । উপস্থিত কেউ হযরত আবু বকরের খেলাফত লাভের জন্যে নামাজের ইমামতির যুক্তি উপস্থাপন করেন নি । সেখানে আমরা দেখতে পাই আনসাররা খেলাফতের জন্যে নিজেদেরকে সর্বাধিক যোগ্য হিসেবে তুলে ধরেছিলেন । আর মোহাজেররা খেলাফতের জন্যে নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছিলন । তারা সেখানে কোন ক্রমেই আবুবকরের নামাজের ইমামতের ঘটনা তুলে ধরেননি । বরং হযরত ওমর সেখানে এগিয়ে এসে ঝগড়া ও মতভেদ এড়িয়ে ঘোষণা করলেন, “আমি আবু বকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করলাম।” এভাবে সেদিন বনি সক্বিফাতে উপস্থিত সাহাবীরা হযরত আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছিলেন ।তখনও রাসূলের পবিত্র লাশ দাফন করা হয়নি খেলাফতের ব্যাপারে সাহাবীদের মধ্যে অনৈক্য শুরু হয়ে গিয়েছিল । বনি সক্বিফার সমাবেশে সাহাবীদের মাঝে উত্তপ্ত মতদগ্ধ কি প্রমাণ করে না যে তাদের মধ্যে খেলাফতের ব্যাপারে কোন প্রকার ঐক্যমত ছিল না ?( তারিখে ইয়াকুবী, খণ্ড-২, পৃঃ-১২৩-১২৬ ; সহি বুখারী, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৯০ ; মিলাল ওয়ান নিহাল, শাহরেস্তানী, খণ্ড-১, পৃঃ-৫৭; তারিখে তাবারী, খণ্ড-২, পৃঃ-৭৮ ; তারিখে খোলাফা, পৃঃ-৪৩; আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা, ইবনে হিশাম, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩৩১; তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৪, পৃঃ-১৯৬ ।)মুলতঃ বনি সক্বিফার নির্বাচনী সমাবেশেরই বা কি প্রয়োজন ছিল ? নবী (সা.) তো হযরত আবু বকরকে খলিফা মনোনীত করে গেছেন-ই ! আর যদি তিনি নবী (সা.) কর্তৃক খলিফা মনোনীত হয়েই থ্কবেন তাহলে সেখানে সেদিন কারো মনে ছিলো না কেন ?হযরত আব্বাস থেকে বর্ণিত যে, তিনি হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরকে জিজ্ঞেস করেন, “খেলাফতের ব্যাপারে নবী (সা.) আপনাকে কি কিছু বলে গেছেন ? তারা উভয়েই বললেন না । অতঃপর তিনি হযরত আলীকে বলেন, “ হে আলী তোমার হাত বাড়িয়ে দাও, আমি তোমার হাতে বাইয়াত গ্রহন করি ।”(আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, ইবনে কুতাইবা, খণ্ড-১, পৃঃ-২১)বস্তুতঃপক্ষে নবী (সা.) কর্তৃক খেলাফতের মনোনয়ন হযরত আলী ইবনে আবি তালিবকেই প্রদান করা হয়েছিল যা গাদীরে খুমের ঘটনায় আমরা স্পষ্ট উপলদ্ধি করতে পারি ।আর নামাজে ইমামতির বিষয়টা কি করে খেলাফতের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে ? সাহাবী ও তাবেয়ীনের যুগে কখনো এ ধরণের ব্যাখ্যার অবতারণা করা হয়নি । তাবেয় ও তাবেয়ীনের যুগে যখন হযরত আবু বকরের খেলাফতের বৈধতার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সংশয় উত্থাপিত হতে থাকে তখন তার নির্বাচনের বৈধতা প্রমাণের জন্যে নামাজে ইমামতির যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে । আর হযরত আয়েশা থেকে বর্ণিত হযরত আবু বকরের নামাজে ইমামতির হাদীস ছাড়াও হযরত হাফসা থেকে বর্ণিত হাদীসও বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । তিনি বলেছেন, “আবু বকর নামাজে ইমামতি করেন নি, বরং ওমর নামাজে ইমামতি করেছেন ।”(ফাইযুল ক্বাদির শারহে আল জামেয়া আস সাগীর, খণ্ড-৫, পৃঃ-৫২১)অন্যদিকে এমন সব হাদীস বিদ্যমান যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, অসুস্থ অবস্থায়ও প্রিয় নবী (সা.) স্বয়ং নামাজে ইমামতি করেছেন ।(সহি মুসলিম, খণ্ড-৩, পৃঃ-৫১; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৫৭; তারিখে তাবারী, খণ্ড-২, পৃঃ-৪৩৯)সুতরাং নামাজে ইমামতির বিষয়টা কোনক্রমে খেলাফত লাভের বৈধ কারণ হতে পারে না ।আর যদি হযরত আবু বকর রাসূলের খলিফা হিসেবে মনোনীত হয়ে থাকবেন তাহলে এত সাহাবীদের বিরোধীতার কারণ কিলা'নাতুল্লাহি আলাল কাজেবিনপ্রচারেমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৮.০১.২১

সূরা আন নিসা; ‏আয়াত ৭-১০ ‎(পর্ব ৩)পবিত্র কুরআনের তাফসির কুরআনের আলো'র আজকের পর্বে সূরা আন নিসার ৭ থেকে ১০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো। এই সূরার ৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا (7)"বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং তাতে নারীরও অংশ আছে, ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে নারীর অংশ নির্দিষ্ট।" (৪:৭)সূরা নিসার প্রথম কয়েকটি আয়াতে এতিম ও অনাথ শিশুদের প্রসঙ্গ সহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরা হয়েছে। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ‏রাসূল ‎(সা.)'র একজন সাহাবীর ইন্তেকালের পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কয়েকজন ভাতিজা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। অথচ ঐ সাহাবীর স্ত্রী ও তাঁর কয়েকটি শিশুকে সম্পত্তির কোন অংশ দেয়া হয়নি। এর কারণ, ‏অজ্ঞতার যুগে আরবদের বিশ্বাস ছিল শুধুমাত্র যুদ্ধ করতে সক্ষম পুরুষরাই উত্তরাধিকার বা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ পাবার যোগ্য। মহিলা বা শিশুরা যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় বলে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য নয়। এ অবস্থায় পবিত্র কোরআনের এই আয়াত নাজিল হয়। এতে নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়েছে- ‏মীরাস বা উত্তরাধিকারগত সম্পদে পুরুষদের যেমন অংশ আছে, ‏তেমনি তাতে নারীদেরও অংশ রয়েছে। উত্তরাধিকারগত সম্পদ কম বা বেশী যাই হোক না কেন তাতে নারীর অংশ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট।এই আয়াতে শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏ইসলাম শুধু নামাজ রোজার ধর্ম নয়। দুনিয়ার জীবনও এ ধর্মের গুরুত্ব পেয়েছে। আর তাই ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী ও এতিমদের অধিকার রক্ষাকে ঈমানের শর্ত বলে মনে করে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏আল্লাহর বিধান অনুযায়ী উত্তরাধিকারগত সম্পদের ভাগ-বণ্টন করতে হবে, ‏সামাজিক প্রথা বা পরলোকগত কোন ব্যক্তির সুপারিশ অনুযায়ী নয়।তৃতীয়ত ‎: ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে এর মোট পরিমাণ কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। মোট পরিমাণ যাই হোক না কেন সমস্ত ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ । উত্তরাধিকারগত সম্পদের মোট পরিমাণ কম হবার অজুহাতে কোন উত্তরাধিকারীর অধিকারকে উপেক্ষা করা যাবে না।সূরা নিসার ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُمْ مِنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا (8)"সম্পত্তি বণ্টনকালে উত্তরাধিকারী নয় এমন গরীব, ‏আত্মীয়, ‏পিতৃহীন ও অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিও এবং তাদের সঙ্গে সদালাপ করবে।" (৪:৮)পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা ও তা জোরদার করতে হলে সুন্দর ও মানবিক ব্যবহার জরুরী। তাই উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের বিধান উল্লেখের পরপরই কোরআনের আয়াতে এ সম্পর্কিত দু'টি নৈতিক বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি হলো, ‏উত্তরাধিকারগত সম্পদ বণ্টনের সময় আত্মীয়-স্বজন বিশেষ করে এতিম ও দরিদ্র-আত্মীয় স্বজন উপস্থিত থাকলে তারা সম্পদের উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও সব উত্তরাধিকারীর সম্মতি নিয়ে মোট উত্তরাধিকার থেকে তাদেরকে কিছু দেয়া যেতে পারে ও দরিদ্র আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ধনী আত্মীয়ের প্রতি যদি হিংসা বিদ্বেষ থেকেও থাকে, ‏তাহলে এই দানের ফলে তা প্রশমিত হতে পারে এবং পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধনও এতে শক্তিশালী হবে। দ্বিতীয় নৈতিক বিধানে বঞ্চিত ও দরিদ্র আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সুন্দর এবং ভদ্রভাবে কথা বলার নিদের্শ দেয়া হয়েছে, ‏যাতে তারা এমন ধারণা করার সুযোগ না পায় যে, ‏দারিদ্রের কারণে তাদের সাথে নির্দয় আচরণ করা হচ্ছে।এই আয়াতের মূল শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমতঃ বঞ্চিতদের স্বাভাবিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও তাদেরকে বিভিন্ন ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে।দ্বিতীয়তঃ উপহার দেয়া এবং সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। বস্তুগত তথা বৈষয়িক বিষয়ে উপকার করার পাশাপাশি ভালবাসাপূর্ণ আত্মিক সম্পর্কের মাধ্যম আত্মীয় ও আপনজনদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ প্রতিরোধ করা উচিত।সূরা নিসার ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-وَلْيَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا (9)"নিজেদের অসহায় সন্তানদের ছেড়ে গেলে ভবিষ্যতে তাদের কি হবে এই ভেবে যারা উদ্বিগ্ন তাদের উচিত অন্য মানুষদের এতিম সন্তানের ব্যাপারেও অনুরূপ ভয় করা এবং আল্লাহকে ভয় করা ও সদ্ভাবে কথা বলা উচিত।" (৪:৯)পবিত্র কোরআন এতিমদের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে দয়া সঞ্চারের জন্য তাদের অসহায় সন্তানের একটি কল্পিত দৃষ্টান্ত দিচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ‏ধরে নেয়া যাক, ‏তারা এমন পাষান-হৃদয় মানুষের তত্ত্বাবধানে রয়েছে যিনি তাদের কচি মনের অনুভূতিকে কোন গুরুত্বই দেন না এবং তাদের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার করেন না। এমন অবস্থায় মানুষ নিশ্চয়ই এই ভেবে উদ্বিগ্ন হবে যে, ‏তাদের মৃত্যুর পর অন্যরা তাদের সন্তানদের সাথে কেমন ব্যবহার করবে? ‏এরপর আল্লাহ বলেছেন, "হে মানুষ! ‏অন্যদের এতিম সন্তানের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে তোমাদেরকেও আল্লাহকে মনে রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার না করে ভালো ও পছন্দনীয় আচরণ কর। এতিমদের মন জয় কর এবং তাদেরকে ভালবেসে তাদের স্নেহের চাহিদা পূরণ করবে।"এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমতঃ এতিম ও সমাজের বঞ্চিত লোকদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা উচিত যেমন ব্যবহার অন্যরাও আমাদের সন্তানদের সঙ্গে করবে বলে আমরা আশা রাখি।দ্বিতীয়তঃ সমাজে ভাল ও মন্দ কাজের প্রতিফল দেখা যায়। এমনকি এই প্রতিফল আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সন্তানদের কাছেও পৌঁছে। তাই আমাদের কাজ-কর্মের সামাজিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা যেন অসচেতন না থাকি।তৃতীয়তঃ শুধু পোশাক ও খাবারই এতিমদের চাহিদা নয়। তাদের মনের স্নেহের চাহিদা মেটানো আরো গুরুত্বপূর্ণ।সূরা নিসার ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا (10)"যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পত্তি গ্রাস করে, ‏নিশ্চয়ই তারা তাদের পেট আগুন দিয়ে পূর্ণ করছে। শীঘ্রই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।" (৪:১০)এই আয়াতে এতিমদের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরে বলা হয়েছে,এতিমদের সম্পদ গ্রাস করা আগুন খাওয়ার সমতুল্য। কারণ, ‏কিয়ামতের সময় তা আগুন হয়ে দেখা দেবে। আমরা এই পৃথিবীতে যা যা করি, ‏তার একটি বাহ্যিক চেহারা রয়েছে। কিন্তু এসব কাজের প্রকৃত চেহারা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। এসব কাজের প্রকৃত চেহারা পরকালেই স্পষ্ট হবে। পরকালের শাস্তি আমাদের কাজেরই ফল মাত্র। যে এতিমের সম্পদ গ্রাস করে, ‏তার হৃদয় যেমন পুড়বে, ‏তেমনি বিবেকও এই অপরাধের জন্য তাকে দংশন করবে। এই অপরাধ অত্যাচারীর সমস্ত অস্তিত্বকে অগ্নিদগ্ধ করবে।আগের আয়াতে এতিমদের ওপর অত্যাচারের সামাজিক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। আর এই আয়াতে এতিমদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের সুপ্ত প্রতিফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ‏যাতে ঈমানদার লোকেরা এতিমদের সম্পদে হাত দেয়ার আগে এই প্রতিফলের কথা মনে রেখে তা থেকে বিরত হয়। এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏হারাম সম্পদ ভোগ করা, ‏বিশেষ করে, ‏এতিমদের সম্পদ গ্রাস করা বাহ্যিকভাবে উপভোগ্য মনে হলেও তা প্রকৃতপক্ষে আত্মা ও বিবেকের জন্য যন্ত্রণাদায়ক এবং এ অপরাধ মানুষের ভালো গুন বিনষ্ট করে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏পরকালে দোযখের আগুন আমাদের মন্দ কাজেরই প্রতিফল। আল্লাহ তার বান্দাদেরকে কখনও পুড়তে চান না। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের গোনাহ হতেই অগ্নিদগ্ধ হচ্ছি।প্রচারেমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৭.০১.২১

সূরা আন নিসা; ‏আয়াত ৪-৬ ‎(পর্ব ২)পবিত্র কুরআনের তাফসির বিষয়ক ‎'কুরআনের আলো'র আজকের পর্বে সূরা আন নিসার ৪ থেকে ৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে। এই সূরার ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-وَآَتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا (4)"তোমরা নারীগণকে তাদের মোহরানা বা একটা নির্দিষ্ট উপহার দেবে। যদি তারা সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, ‏তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ করবে।"(৪:৪)গত পর্বে আমরা বলেছিলাম সূরা নিসার আয়াতগুলো শুরু হয়েছে পারিবারিক বিধি বিধানের বর্ণনা দিয়ে। পরিবার গঠন বা বিয়ের সময় বরের পক্ষ থেকে নববধুকে মোহরানা দেয়ার রীতি সব জাতির মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে। দুঃখজনকভাবে কোন কোন জাতির মধ্যে বিশেষ করে ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মহিলাদের কোন মর্যাদা ছিল না। সে সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরা স্ত্রীদেরকে মোহরানা দিত না অথবা দিলেও পরে তা জোর করে ফেরত নিত। পবিত্র কোরআন নারীর পারিবারিক অধিকার রক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানা পরিশোধ করতে বিবাহিত পুরুষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের কঠোরতা ও কর্কশ আচরণ পরিহার করতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এও বলছেন, "মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া বা এর অংশবিশেষ ফিরিয়ে নেয়াও তোমাদের জন্য বৈধ নয়। যদি তারা অর্থাৎ স্ত্রীরা নিজেরাই খুশী মনে মোহরানার কিছু অংশ ফিরিয়ে দিতে চায়, ‏তাহলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে।"এই আয়াতে উল্লেখিত না হলেও শব্দটির অর্থ হলো, ‏মৌচাকের মৌমাছি। মৌমাছি যেমন কোন স্বার্থের আশা না করেই মানুষকে মধু দেয়,সে রকম পুরুষেরও উচিত জীবনসঙ্গীকে দাম্পত্য জীবনের মধু হিসেবেই মোহরানা দেয়া। আর যা উপহার হিসেবে দেয়া হয়,তা ফিরে পাবার আশা করা কি অন্যায় নয় ‎?এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয় মূল্য নয়, ‏বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার নিদর্শন ও উপহার। কোরআনের আয়াতে ‎'মোহরানা' ‏শব্দটিকে বলা হয়েছে, ‏যা সাদাক্কাত বা আন্তরিকতা শব্দ থেকে উদ্ভূত।দ্বিতীয়ত ‎: ‏মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রী-ই এর মালিক। স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া যেমন বন্ধ রাখা যায় না,তেমনি তা ফেরতও নেয়া যায় না।তৃতীয়ত ‎: ‏মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়। এজন্যে স্ত্রীর প্রকৃত বা আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরী।সূরা নিসার পঞ্চম আয়াতে বলা হয়েছে,وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَعْرُوفًا (5)"আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধন সম্পত্তি তোমাদের উপজীবিকা করেছেন, ‏তা অবোধ এতিমদের হাতে অর্পণ করো না, ‏তবে তা হতে তাদের জীবিকা নির্বাহ করাও, ‏তাদের পরিধান করাও এবং তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে কথা বল।" (৪:৫)এখানে এতিমদের কথা বলা হয়েছে। এতিমরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে সম্পদ অর্পণ করা যাবে না। বরং ওইসব সম্পদ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে তাদের ভরণ পোষণ করতে হবে। এরপর মহান আল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক উপদেশ দিয়ে বলেছেন,অবোধ এতিম শিশুদের সাথেও সুন্দর করে কথা বলতে হবে। অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক এতিমদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলা যাবে না। যদি তাদেরকে তাদের সম্পদ না-ও দাও কিন্তু কথা বার্তা এবং আচরণে তাদের সাথে ভদ্রতা রক্ষা করতে হবে।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,এক. ‏অর্থ ও সম্পদ সমাজ ব্যবস্থাকে গতিশীল এবং শক্তিশালী করার মাধ্যম। তবে শর্ত হল, ‏অর্থ ও সম্পদ বুদ্ধিমান সৎ এবং ধার্মিক লোকদের অধিকারে রাখতে হবে।দুই. ‏ইসলামী সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞ ও সৎলোকদের হাতে থাকা উচিত।তিন. ‏ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ার অর্থ সম্পদ খারাপ কোন কিছু নয়,বরং তা সমাজের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় রাখার মাধ্যম,অবশ্য যদি তা অবিবেচক লোকদের হাতে না পড়ে।সূরা নিসার ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে,وَابْتَلُوا الْيَتَامَى حَتَّى إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آَنَسْتُمْ مِنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَنْ يَكْبَرُوا وَمَنْ كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ وَمَنْ كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا (6)"পিতৃহীনদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে, ‏তাদের শিক্ষা-দীক্ষা দিবে যতদিন তারা বিয়ের যোগ্য না হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে বুদ্ধির পরিপক্ক বিকাশ দেখা গেলে তাদের সম্পদ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে বলে তাড়াতাড়ি তা অপব্যয় করো না ও খেয়ে ফেলো না এবং যে ধনী সে পারিশ্রমিক নেয়া থেকে বিরত থাকবে। আর যে দরিদ্র, ‏সে এতিমদের ভরণ পোষণের জন্য পারিশ্রমিক নেয়ার অধিকার রাখে। আর যখন তোমরা এতিমদের সম্পত্তি তাদের কাছে ফেরত দেবে, ‏তখন তাদের জন্য সাক্ষী রেখ। হিসাব নেয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।" (৪:৬)এই আয়াতে এতিমদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাদের কাছে সম্পদ ফেরত দেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যাতে সমাজের দুর্বল শ্রেণীর অধিকার রক্ষা পায়। এই পদ্ধতি হলো,প্রথমত ‎: ‏এতিমরা যথন অর্থ ও সম্পদ রক্ষার মত উপযোগী জ্ঞানের অধিকারী হবে,তখনই তা তাদের কাছে তাদের সম্পদ ফেরত দিতে হবে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏এতিমদের সম্পদ তাদের কাছে ফেরত দেয়ার আগ পর্যন্ত রক্ষা করতে হবে। এতিমরা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগেই তাদের সম্পদ খরচ করা যাবে না।তৃতীয়ত ‎: ‏এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ও তাদের ভরণপোষণের জন্য সেখান থেকে কোন মজুরী নেয়া যাবে না। অবশ্য যদি বয়স্ক বা দরিদ্র হন, ‏তবে কিছু মজুরী নিতে পারেন। এছাড়াও এতিমদের সম্পদ ফেরত দেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে যাতে এ নিয়ে কোন মতবিরোধ বা সমস্যা দেখা না দেয়।এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো,প্রথমত ‎: ‏সম্পদের অধিকারী হবার জন্য শুধু শারীরিক পূর্ণতাই যথেষ্ট নয়, ‏জ্ঞান বুদ্ধির দিক থেকেও পরিপক্ক হতে হবে। তরুণ ও যুবকরা যদি নিজেদের প্রাপ্য অর্থ সম্পদের অধিকারী হতে চায় তাহলে তাদেরকে অর্থ সম্পদ সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান ও বিবেচনা শক্তি অর্জন করতে হবে।দ্বিতীয়ত ‎: ‏অর্থ ও সম্পদের ব্যাপারে দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতা জরুরী। এক্ষেত্রে আল্লাহকেও মনে রাখতে হবে এবং সমাজে নিজের সম্মান রক্ষার জন্য সাক্ষী প্রমাণের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।তৃতীয়ত ‎: ‏স্বচ্ছল ও ধনী ব্যক্তিকে কোন কিছু পাওয়ার আশা না রেখেই সমাজ সেবা করতে হবে। সমাজ সেবার নামে দরিদ্রের সম্পদ থেকে আয় উপার্জনের চিন্তা অন্যায়। ‎#নিবেদকমোঃ জাহিদ হুসাইন আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আহলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম২৪.০১.২১