পোস্টগুলি

মোঃ জাহিদ হোসেন

হাদিস “আ’শারাহ মুবাশশারাহর”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন সাহাবী বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন) ব্যাপারে আলোচনা আহলে সুন্নাতের রাবীগনের(হাদিস বর্ননাকারীগন) মধ্যে বিশেষ করে আহমাদ ইবনে আ’উফের উদ্বৃতি দিয়ে বলেছে যে,নবী(সাঃ) বলেছেনঃএই ১০জন হচ্ছেন বেহেস্তবাসীঃ ১/আবুবকর ২/ওমর ৩/আলী(আঃ)৪/উসমান ৫/তালহা ৬/যুবাইর ৭/আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ৮/সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ৯/সাঈদ বিন যাইদ ১০/আবু উবাদাহ ইবনে জাররাহ (তিরমিজী,খন্ড-১৩,পাতা-১৮২;সুনানে আবি দাউদ,খন্ড-২,পাতা-২৬৪।)এই হাদিসটি সাঈদ ইবনে যাইদের উদ্বৃতিতে সামান্য পার্থক্য সহকারে উল্লেখ হয়েছে,সুত্রঃ আল-গাদীর,খন্ড,পাতা-১১৮)। এটি হচ্ছে একটি জাল হাদিস।আহলে সুন্নাত এই জাল হাদিসকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।আর এই ১০ জনের নাম সমুহকে “আশারাহ মুবাশশারাহ”( এই দুনিয়া থেকে যে ১০ জন বেহেস্তের ঘোষনা প্রাপ্ত হয়েছেন।) পবিত্র মসজিদে নববীর দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছিল।আর তাদের এই বিষয়টি সাধারন মানুষের মধ্যেও বিশেষ প্রসিদ্ব। একজন আহলে বাইতি আলেম বলেনঃমদীনায় একটি কাজের জন্য আ’মিরিন বে মারুফের দফতরে গিয়েছিলাম।ঐ দফতরের প্রধানের সাথে আলোচনা করতে করতে আশারাহ মুবাশশারাহর প্রসঙ্গে কথা ঊঠলো। বললামঃ আপনার কাছে আমার একটি প্রশ্ন আছে। প্রধানঃ বলুন। আহলে বাইতি শিয়া আলেমঃ এটা কিভাবে সম্ভব যে, ২ জন বেহেস্তবাসী একে অপরের সাথে যুদ্ব করে?তালহা ও যুবাইর যারা ঐ ১০জনের মধ্যে আছেন তারা হযরত আয়েশার ছত্রছায়ায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের(আঃ) বিরুদ্বে (তিনিও হচ্ছেন বেহেস্তবাসী) বসরায় জঙ্গে জামালের সুচনা করে এবং যে কারনে বহু লোক নিহত হয়েছিল? যখন কোরান বলছে যে, “যদি কেউ কোন মু’মিনকে ইচ্ছা করে হত্যা করে তবে তার শাস্তি হচ্ছে দোযখ আর সে চিরদিনের জন্য সেখানে থাকবে” ( সুরা হাক্কঃ৪৪)। এই আয়াতের আলোকে যারা সেদিন মু’মিনদের বিরুদ্বে যুদ্ব করেছিল তারা অবশ্যই দোযখে যাবে।কেননা তাদের কারনে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অতএব, বিচক্ষনতার দৃষ্টিতে বিচার করলে বুঝা যায় উক্ত “আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস। প্রধানঃ যারা সেদিন যুদ্ব করেছিল তারা হচ্ছে মুজতাহিদ।তাই তারা ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় দিয়েছিল।সেই কারনে তারা উপায়হীন ছিল। আহলে বাইতি আলেমঃ রাসুলের(সাঃ) হাদিসের বিরুদ্বে( এবং কোরানের বিরুদ্বে) ইজতিহাদ করা জায়েজ নয়।আর যেহেতু তিনি বলেছেন,যা সকল মুসলমান গ্রহন করে থাকেঃ -“ হে আলী!তোমার সাথে যুদ্ব করা মানেই আমার সাথে যুদ্ব করা আর তোমার সাথে সন্দ্বি করা মানেই আমার সাথে সন্দ্বি করা( মানাকিবে ইবনে মাগাযিলি,পাতা-৫০;মানাকিবে খাওয়ারিযমী,পাতা-৭৬, ও ২৪)। রাসুল(সাঃ) আরো বলেনঃ “ যে আলীকে আনুগত্য করবে সে যেন আমার আনুগত্য করলো আর যে আলীর সাথে বিরোধীতা করবে সে যেন আমার সাথে বিরোধীতা করলো(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)। “ আলী সত্যের সাথে এবং সত্য তার সাথে।যেখানেই আলী থাকবে সত্যও সেখানেই থাকবে “(কানজুল উম্মাল,খন্ড-৬,পাতা-১৫৭,আল- ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ,পাতা-৭৩,মাজমুয়’য যাওয়াইদ হাইছামী,খন্ড-৭,পাতা-২৩৫ ও .........)। সুতরাং ফলাফল দাড়াল এই, ঐ যুদ্বের এক পক্ষ হচ্ছে সত্যের পক্ষে আর তিনি হচ্ছেন আলী(আঃ) এবং অন্য পক্ষ হচ্ছে বাতিল।অতএব,“আশারাহ মুবাশশারাহ” হাদিসটি হচ্ছে জাল হাদিস কেননা বাতিল পক্ষকে কখনো বেহেস্তবাসী বলা যায় না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই হাদিসের রাবী হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আ’ঊফ আর সেও ঐ ১০ জনের একজন।সে এমন এক ব্যক্তি যে ওমরের ইন্তেকালের পর তার তৈরীকৃত শুরার আলোচনায় আলীর(আঃ) উপর চড়াও হয়ে বলেছিল যে, বাইয়াত কর তা না হলে হত্যা করা হবে।আর এই আব্দুর রহমানই উসমানের সাথে বিরোধীতা করেছে।আর উসমান তাকে মুনাফিক বলেছিল।তাহলে কি এমন পরিস্তিতিতে উক্ত রেওয়ায়েত সঠিক বলে মনে হয়? আবুবকর ও ওমরকে কি বেহেস্তবাসী হবার সু-সংবাদ দেয়া হয়েছিল?কেননা তারা তো বেহেস্তের নারী নেত্রী হযরত ফাতিমা (সা আ) ওফাতের কারন।আর এ কারনে হযরত ফাতিমা(সা আ) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলেননি। ওমর কি হযরত আলীকে(আঃ) আবুবকরের হাতে বাইয়াত গ্রহন করার জন্য ভয় দেখায় নি? সে কি বলে নি যে,যদি বাইয়াত না কর তবে হত্যা করা হবে? আর তালহা ও যুবাইর উসমানকে হত্যা করার জন্য কি পীড়াপীড়ি করে নি? তারা কি ইমাম আলী(আঃ)এর আনুগত্য করা থেকে বের হয়ে যাননি? তারা কি জঙ্গে জামালের যুদ্বে আমিরুল মু’মিনিন ইমাম হযরত আলীর(আঃ) বিরুদ্বে তলোয়ার হাতে তুলে নেয় নি?! ওই ১০জনের আরো একজন হচ্ছে সা’দ বিন ওয়াক্কাস। সে এই হাদিসটিকে সত্য বলেছে।কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,উসমানকে কে হত্যা করেছে? তখন উত্তরে সে বলেছিলঃআয়েশা যে তলোয়ার উন্মুক্ত করেছে এবং তালহা যে তলোয়ারকে ধার দিয়েছে,সেই তলোয়ার দিয়ে উসমানকে হত্যা করেছে। উক্ত ১০ জনের একে অপরের সাথে শত্রুতা ছিল।তাহলে কিভাবে বলা যায় যে, তারা সকলেই বেহেশতো বাসী?অবশ্যই বলা যায় না। এপর্যন্ত আলোচনা থেকে পরিস্কার যে,উক্ত হাদিসটি মিথ্যা। আরো একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার এই যে,যে ২জনকে উক্ত হাদিসের রাবী হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ,যার উল্লেখিত হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা সম্পৃক্ত নয়।আর সে কারনেই তা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।অন্যজন হচ্ছে সাঈদ ইবনে যাইদ,সে মুয়াবিয়ার খেলাফতের সময় হাদিস বর্ননা করতো।সুতরাং এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, এই হাদিসে মুয়াবিয়ার পাপী হাতের স্পর্শ আছে।অতএব,আশারাহ মুবাশশারাহ হাদিসটি সনদের দিক থেকে একেবারেই ভিত্তিহীন ও অনির্ভরযোগ্য(আল-গাদীর কিতাবের ব্যাখ্যা নামক গ্রন্থ,খন্ড-১০,পাতা-১২২ থেকে ১২৮) আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক___ MJH

#শাহাদাৎ_ই_যাহরা_সাঃ_আঃ সুরা হাশরের একুশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ বলেন “কোরান যদি পর্বতের উপর নাজিল করতাম তাহলে তা ধুলিকনাতে পরিনত হয়ে যেতো” সেই কোরান আল্লাহ্ নাজিল করলেন কোথায়? তার প্রিয় হাবিবের কলবে (হৃদয়ে/অন্তরে)- (রেফারেন্স সুরা আশ শুয়ারা, আয়াত ১৯৪)। আর নিজের কলব সম্পর্কে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ সঃ কি বলেছেন? আসুন কিছু হাদিস দেখিঃ একদা রাসূল (সা.) হযরত ফাতেমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে আসলেন এবং (উপস্থিত জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে) বললেন : “যে ফাতিমাকে চেনে সে তো চিনেছেই। আর যে তাকে চেনে না তার জেনে রাখা উচিত যে ফাতেমা মুহাম্মদের কন্যা। সে আমার শরীরের অংশ,আমার হৃদয়,আমার অন্তরাত্মা। সুতরাং যে তাকে কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে কষ্ট দিল।”- কাশফুল গুম্মাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪। আরেক হাদিসে মাওলা মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন : “আমার কন্যা ফাতিমা পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সকল নারীদের নেত্রী। সে আমার দেহের অংশ এবং আমার নয়নের মণি। ফাতেমা আমার হৃদয়ের ফসল এবং দেহের মধ্যে আমার অন্তর সমতুল্য। ফাতেমা মানুষরূপী একটি হুর। যখন সে ইবাদতে দণ্ডায়মান হয় তখন পৃথিবীর বুকে নক্ষত্রসমূহের মত তাঁর জ্যোতি আসমানের ফেরেশতাদের জন্যে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। আর তখন মহান স্রষ্টা তাঁর ফেরেশতাদের বলেন : “হে আমার ফেরেশতাকুল! আমার দাসী ফাতেমা,আমার অন্যান্য দাসীদের নেত্রী। তাঁর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কর,দেখ সে আমার ইবাদতে দণ্ডায়মান এবং আমার ভয়ে তাঁর দেহ কম্পিত। সে মন দিয়ে আমার ইবাদতে মশগুল। তোমরা সাক্ষী থাক,আমি তাঁর অনুসারীদেরকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা করবো।”- আমালী,সাদুক,পৃ. ৯৯,১০০। রাসূল (সা.) বলেছেন : “যে ফাতেমাকে কষ্ট দেয় সে যেন আমাকে কষ্ট দেয় আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করলো।- বিহারুল আনওয়ার,৪৩তম খণ্ড,পৃ. ৩৯। মানাকিবে শাহরে আশুব,৩য় খণ্ড,পৃ. ১১২। কানযুল ফাওয়াইদ,কারাজেকি,মাকতাবাহ্ মুসতাফাভী,কোম,পৃ. ৩৬০,পঞ্চম অধ্যায়; রেসালাহ্ আত্ তায়া'জ্জুব। ফুসুল আল মুখতারাহ্,শেখ মুফিদ,পৃ. ৫৭। আর এ কথাগুলি কিন্তু নবী সঃ কন্যার মন রাখতে বা নিজের সন্তানের শান উচু করার জন্য বলেননি, আয়াত টা ভুলে যান নি আশা করি, যে, “কোন কিছুই তিনি আপন প্রবৃত্তির তাড়নায় বলেন না,তার প্রতিটি কথাই ওহী বলে গণ্য যা তার প্রতি অবতীর্ণ হয়।”- আন নাজম : ৩,৪।“ কাজেই এটা প্রমানিত যে হাদিসের বাক্যগুলিও মাওলা নিজ থেকে বলেননি, আল্লাহ্‌ পাক তাকে দিয়ে বলিয়েছেন। মুহাম্মদের সঃ কথা যদি সত্য হয়ে থাকে আপনারা রাজি'আল্লাহ বলে গলায় রক্ত তুলে ফেললেও লাভ হবেনা। তারা লানতের মালা অলরেডি গলায় পরে নিয়েছেআর যিনি লানতুল্লাহর মুখমন্ডল থেকে রাজি’আল্লাহর মুখোশ খুলে দিয়েছেন উনার নাম জনাবে ফাতেমা যাহরা। আর সেজন্যই তাকে বিদায় নিতে হয় দুনিয়া থেকে। মাওলা মুহাম্মদ সঃ মা ফাতেমা সাঃ আঃ কে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেন। যা উনি আর কারো সন্মানেই করেননি। কায়েনাতের সবাই মাওলার সন্মানে উঠে দাড়াতো, কিন্তু আমার মাওলা সঃ মা ফাতেমা সাঃ আঃ দেখে দাঁড়িয়ে সন্মান জানাতেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, যখন হযরত ফাতেমা নবী (সা.) এর নিকট আসতেন তখন তিনি দাড়িয়ে তাঁকে স্বাগতম জানাতেন, তাঁর হাত ধরে চুমু খেতেন এবং তাঁকে নিজের জায়গায় বসাতেন। এটা কি মেয়ের প্রতি দেখানো বাবার সন্মান? নাকি নারীর প্রতি দেখানো পুরুষের সন্মান? কোনটাই না। যদি এর কোনটা হতো তাহলে দুটোই আমাদের জন্য সুন্নত হয়ে যেতো। আর আমাদের মোল্লারা সুন্নত ছাড়তে রাজীনা তাতে যদি ফরজও ছুটে যায় তবুও সুন্নত ছাড়বেনা ( চেইতেন না, সুন্নতের নামে আপনারা কি করেন তা সবাই জানে, ভরা রাস্তায় ঢিলা কুলুপ নিয়ে আপনারা ড্রাই ক্লিনিং এ লেগে যান সুন্নতের নামে।) বাবা যদি মেয়েকে দেখে দাড়াতেন তবে অন্তত কয়েকজন হলেও এই সুন্নত, পালন করতেন। আর পুরুষ যদি নারীকে দাঁড়িয়ে সন্মান করতেন তাহলে আরও কেউ কেউ দাবী করতেন যে রসুল আমাকে দেখেও দাঁড়াতেন। তাহলে কে দাঁড়াতেন কাকে দেখে? নবুয়ত দাঁড়াতেন ওহুদায়ে বতুল কে দেখে, রিসালাত দাঁড়াতেন উম্মে আবিহা কে দেখে। কোরানের মতে রসুল সঃ যা বলেন তা ওহী, আর রসুল সঃ বলেছেন ফাতেমা উম্মে আবিহা, ফাতিমা তার পিতার মা, আর মায়ের শান কে না জানে? মা না থাকলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হতোনা, মা না থাকলে সন্তানের লালন পালন হতোনা, মা না থাকলে যা যা হয় না বা হতোনা সবই রসুল সঃ এর জন্য মা ফাতেমা সাঃ আঃ পালন করেছেন। আর এ কারনেই তিনি উম্মে আবিহা। সেই ফাতেমার ঘরে,( যে ঘরে রসুল গিয়ে ব্যথামুক্ত হয়েছেন, যে ঘরে জিবরাঈল চাক্কি পিষেছেন, যে ঘরে মিকাইল দোলনা ঝুলিয়েছেন, যে ঘরের সামনে তারকা নাজিল হয়েছে, যে ঘরে জিবরাঈল মিসকিন সেজে এসেছেন) আগুন দেয়া হয়েছিলো, রসুলের হৃদয়ে (ফাতেমা) পদাঘাত করে পাজর ভেংগে দেয়া হয়েছিলো, লাথি মেরে হত্যা করা হয়েছিলো গর্ভের সন্তানকে। এমনভাবে হাত ভেংগে দেয়া হয়েছিলো যে সেই হাত দিয়ে বাকি হায়াতে জিন্দেগীতে তিনি তসবির দানা পর্যন্ত টানতে পারেন নি। হায় হায়, এগুলি কোন কাফেরে কিন্তু করেনি, এগুলি করেছে বড় দলের ওস্তাদেরা ( আমরা কাফের এ জন্য যে আমরা তাদের নাম, পরিচয় বলে দেই) রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর আহলে বায়াতে রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর রাজশক্তি কর্তৃক এত অত্যাচারের পাহাড় নেমে আসে এবং তা সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা যাহারা সর্বক্ষণ ক্রন্দন ও পিতার উদ্দেশ্যে ফরিয়াদ করতেন । লোকেরা মাওলা আলীর (আঃ) কাছে অভিযোগ করে এবং হযরত আলী (আঃ) জান্নাতুল বাক্বীতে একটি ছোট ঘর তৈরী করে দেন, যেখানে গিয়ে মা ফাতেমা রোজ বসে তাঁর বাবাকে স্বরন করে কাঁদতেন ( রাসুল (সাঃ) এর ঐ সময়কার উম্মতেরা হযরত ফাতেমা যাহারা (সাঃ আঃ) কে পিতার শোকে কান্না করার শব্দ কেও সহ্য করতে পারতেন না এখানেও উনাদের আপত্তি অভিযোগ ছিলো, রাসুল (সঃ) কন্যা কে আরো অনেক ভাবে কষ্ট দিতো ঐ সময়ের মুসলমানেরা, মন খুলে পিতা জন্য কাঁদবে কিন্তু সেটাও করতে দিতো না বরং অভিযোগ করতো তাদের ডিস্টার্ব হয় বলে ) । এটাই ইতিহাসে 'বাইতুল হুজন' বলে প্রসিদ্ধ, অর্থাৎ শোক এবং ক্রন্দন করার ঘর বা শোকের ঘর নামে পরিচিত । ঘটনার শুরু কিন্তু সেদিনে না বন্ধুরা। ভেবে দেখুন, রসুল সঃ এর ওফাতের আগপর্যন্ত সাহাবীগনই সকল যুদ্ধ করেছেন। রসুল সঃ এর ওফাতের পাচদিন গত না হতেই ফাতেমার (সাঃ আঃ) ঘরে পঞ্চাশজন বা আরও বেশি সৈনিক সহ হুকুমতের প্রথম খলিফার গুন্ডাবাহিনী আসে কোথা থেকে!!! আসলে এর শুরু হয়েছে বদরের যুদ্ধের পর থেকেই। এদের বাপ চাচা রা যখন বদরের যুদ্ধে কুকুরের মতো মারা পরে আলী এবং হামজা সহ অন্যান্য মুসলিমের হাতে। কাপুরুষের দল তখন থেকেই নিজের জীবন বাচানোর জন্য মুখে মুখে ইসলামের কথা বলে, যোগ দেয়। মনে মনে লাতের পুজাই করতে থাকে, এই লাতখোরদের কাছে লাতও ছিলো ব্যবসার উপকরন, এজন্য কেউ লাতের মন্দিরের পুরোহিত (বাকি সময় দর্জি), কেউ লাতের মন্দিরের সামনে কোষ্ঠী বিচার ( পরে মালিকাতুল আরবের পয়সা মেরে গনী) আবার কেউ অন্ধকারে মরুযাত্রীদের হত্যা করে লুঠ (পরবর্তীতে রাগী যুবক) করা সত্তেও ইসলাম কবুল করে শুধু মাত্র নিজেরা টিকে থাকবে বলেই নয়, এদের গুরুমা ছিলো পতিতালয়ের সর্দারনী এক রাজি’ল্লাহু’আনহা যে বদরে প্রায় সবই খুইয়েছিলো, সে এবন তার স্বামী বরাবরই উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসে, তার স্বামী ইবনে হার্ব ফান্ড তৈরী করে। আমরা জানি আরবদের প্রতিশোধস্পৃহা খুব বেশি, সে এটাকে পুজি করে। কাফেরদের যার যার আত্মীয় মারা গেছে মুসলিমদের হাতে তাদের কাছে গিয়ে প্রতিশোধ নিবে বলে ফান্ড কালেক্ট করে ( মনে আছে খন্দকের যুদ্ধে আমর কে ১৭ কাবিলার লোকে চাদা দিয়ে এনেছিলো?) এই ফান্ড যোগার এবং খরচ করতো পতিতার স্বামী ইবনে হার্ব। আর যেহেতু তারা কাফেরদের কাছ থেকে ফান্ড কালেক্ট করে কাজেই তারা কোন যুদ্ধেই সক্রিয় অংশগ্রহন করেনা, কাউকে হত্যা করা তো দুরের কথা ( আসলে এরা হুকুমতের লোভে এসেছিলো, পলিটিশিয়ান, আর সবাই জানে পলিটিশিয়ান কাউকে হত্যা করেনা,প্রক্সির মাধমে করায়) এদের বাধ ভেঙ্গে যায় গাদীরের দিনে, আলীকে মাওলা ঘোষনা তারা মেনে নিতে পারেনি, সেখান থেকেই তাদের খিলাফত দখল করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। এতোদিনে ফান্ডও জমেছে বেশ, সৈন্য সংগ্রহও করা শুরু হয়। সকিফায় পায় চুড়ান্ত রূপ। ইসলামের মোড় এখান থেকে বিভক্ত হয়ে যায়। দ্বীনে ইসলাম আর হুকুমতে ইসলাম। এবার আসি ফাদাক প্রসংগেঃ আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না (সুরা বণি ইসরাঈল/২৬)। ইবনে আব্বাস ও আবু সাঈদ খুদরীর কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই আয়াতটি নাযিল হল, তখন নবী স. ফাতেমাকে ডেকে ফাদাক ও আওয়ালী নামক ভূ-খন্ড তাকে দান করলেন ও বললেন “এই অংশ মহান আল্লাহ তা’য়ালা তুমি ও তোমার বংশধরদের জন্য বন্টণ করছেন (সূয়ূতি, ৫/২৭৩; অলূসি, ১৫/৬২; মুত্তাকি হিন্দি, ৩/৭৬৭; যাহাবি/২২২৮, ইবনে কাসির. ৩/৩৬)। এই মর্মে মাওলা মুহাম্মদ সঃ অসিয়তনামাও লিখে যান, যার সাক্ষী ছিলেন হাসনাইন আঃ কিন্তু হুকুমতের প্রথম খলিফা (যার খিলাফতের একমাত্র যোগ্যতা তিনি ছিলেন সবচে বয়স্ক) তা অস্বীকার করে দখল করে নেন রাস্ট্রায়েত্বের কথা বলে তিনি তার ইলম দিয়ে ঘোষনা করেন নবীর ওয়ারিশ হয়না ( অথচ তিনি ভুলে গেলেন যে কোরানে ওয়ারিশের কথা বলা আছে, তিনি ভুলে গেলেন তা আমি মানিনা, তিনি কোরান পড়লে জানতেনই, তিনি উপেক্ষা করলেন খুমসের আয়াতও) চার ঘন্টা বিবি দাঁড়িয়ে থাকলেন, ফলাফল? নবীর স্বহস্তে লেখা অসিয়ত নামা ছিড়ে ফেলে দেয়ার আগে তাতে থুথু ছিটাতেও দেখলেন তিনি! (হায় হায়) হুকুমত লোভীরা বুঝে গিয়েছিলো এদের কে থামাতে হবে নইলে হুকুমতে টিকে থাকা যাবেনা, ফাদাক তো বাহানা! কাজেই এবারে আলীর বায়াত আদায় করতে হবে, তারা জানে যে আমাদের মতো লোকের কাছে আলী নত হবেনা, কাজেই সৈন্যদল নিয়ে তার বাড়ী আক্রমন করে। হায় হায়! আবার ঘুরে এলো সেই দিন! আমরা শুধু বুক চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনা! আবারও এলো রসুলের (সঃ) হাত ভাঙা, পাঁজর ভাঙার কারনে মৃত্যু বরণ করার দিন! ভাবছেন ব্যাটা শোকে পাগল হয়ে গেছে!? রসুলে হাত আবার কে ভাংলো? কেই বা রসুলের পাঁজর ভাঙল? নিচের হাদিস টা আবার খেয়াল করে দেখুন মাওলা মুহাম্মদ সঃ বলেছেনঃ ফাতিমা আমারই একটি অঙ্গ ,যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করল সে আমাকে অসন্তুষ্ট করল” (ফাতহুল বারি শরহে সহীহ বুখারী- খণ্ড:৭ ,পৃ:৮৪ ,বুখারী- খণ্ড: ৬ ,পৃ: ৪৯১।) তাহলে কি আমি মিথ্যা বলেছি?! মাওলা মুহাম্মদ কি বলেন নাই যে, হে ফাতিমা খোদা তোমার অসন্তুষ্টিতে অসন্তুষ্ট এবং তোমার সন্তুষ্টে সন্তুষ্ট হয়” (মুসতাদরাক-এ-হাকিম- খণ্ড:৩ ,পৃ:১৫৪ ,মাজমাউজ জাওয়ায়েদ- খণ্ড:৯ ,পৃ:২০৩ ,বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ও সহীহ বলে গন্য হয়েছে।) আপনার ঘরে আগুন দেয়া হলে আপনার গর্ভের বাচ্চাকে লাথি মেরে হত্যা করা হলে, আপনার পাঁজর ও হাত ভেঙ্গে ফেললে কি আপনি অসন্তুষ্ট হবেন? বুখারী ও মুসলিম সাহেব বলেছেন যে ফাতেমা সাঃ আঃ এর অসন্তুষ্টি তে আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হোন। তাহলে নিমকহারামের দল কাকে সন্তুস্ট করতে তার গৃহে আক্রমন করেছিলো?? সেই ঘর যেখানে জিবরাইল এসেছেন মিসকিন হয়ে!! যেখানে মিকাইল এসেছেন চাক্কি পিষতে!! যেই ঘরের মর্যাদা সম্পর্কে মাওলা মুহাম্মদ নিজে বলেছেন যে এই ঘর নবীদের ঘরের চেয়েও উত্তম! যে ঘর সম্পর্কে হাদিসশাস্ত্রবিদরা উল্লেখ করেছেন: যখন এই পবিত্র আয়াত নবী (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়ঃ “ ফি বুয়ুতিন আজেনাল্লাহো আন তুরফায়া ওয়া য়ুজকারা ফিহাসমুহু ইউসাব্বিহু লাহুফিহা- বিলগুদুওবি ওয়াল আসাল।” (সুরা নূর- আয়াত ৩৬।) নবী করীম এই আয়াতটি মসজিদে তেলাওয়াত করলেন সেই সময় এক ব্যক্তি উঠে প্রশ্ন করলেন: হে মহানবী (সা.) এই ঘরগুলি বলতে ও তার গুরুত্ব বলতে কি বোঝায় ? (অর্থাৎ: কোন ঘর ও তার কি গুরুত্ব) । রাসূল (সা.) বললেন: নবীগণের গৃহগুলিকে বোঝানো হয়েছে।তখনি হজরত আবুবকর উঠে হজরত আলী (আ.) ও ফাতিমা (সাঃ আঃ) এর গৃহের দিকে ইশারা করে বললেন: আচ্ছা এই গৃহ কি সেই গৃহের মধ্যে আছে ? উত্তরে নবী করীম (সা.) বললেন: হ্যাঁ, বরং তাদের থেকেও উত্তম।(দূররে মনছুর- খণ্ড:৬ ,পৃ:২০৩ ; তাফসিরে সুরা নূর। রুহুল মায়ানী- খণ্ড:১৮ ,পৃ:১৭৪।) সেই ঘরকে কেমন অসন্মান করা হয়েছে! অথচ মুমিনের কর্তব্য ছিলো সেই ঘরের প্রতি সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শন করা। যে ঘর আল্লাহর নূরের কেন্দ্র এবং আল্লাহ যাকে সম্মান করার আদেশ দিয়েছেন তার সাথে অত্যন্ত সম্মান ও ভদ্রতার সঙ্গে আচরণ করা আবশ্যক।হায় নিকৃষ্ট! হায় জঘন্য!! ক্ষমতালোভী হারামীরা সেই গৃহের মর্যাদা তো দিলোই না, আমার মাওলার একমাত্র সন্তান যাকে তিনি কখনই মা ছাড়া ডাকেননি, যাকে তিনি উম্মে আবিহা বলেছেন তাকেও সেই নাজায়েজ মুসলিম নামধারী হন্তকের দল এভাবে আক্রমণ করলো! নবী করীম (সা.) দীর্ঘ নয় মাস পর্যন্ত নিজের কন্যার বাড়ি এসে তাঁর ও তাঁর স্বামীর উপর সালাম করতেন এবং এই আয়াতকে তেলাওয়াত করতেন: إ ِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا (সুরা আহযাব: ৩৩) (দূররে মনছুর- খণ্ড: ৬,পৃ: ৬০৬।) সেই ঘরের সাথে এমন আচরণ! সেই ঘরের বাসিন্দা যারা প্রত্যেকেই মাওলা মুহাম্মদের প্রাণস্বরূপ, তাদের সাথে কি ব্যবহার করলো!! হায় হায়! আবুবকর হজরত আলী (আ.) এর বাইয়াত নেওয়ার জন্য (লোক) পাঠায় কিন্তু হজরত আলী (আ.) অস্বীকার করার ফলে উমর আগুনের ফলতে নিয়ে আসল ,দ্বারেই হজরত ফাতিমা (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। হজরত ফাতিমা (আ.) বললেন: হে খাত্তাবের পুত্র! আমিতো দেখছি তুমি আমার ঘর জ্বালানোর পরিকল্পনা নিয়েছ ? উত্তরে উমর বলল: হ্যাঁ ,তোমার পিতা যার জন্য প্রেরিত হয়েছে (সেই কাজের সহযোগিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়) আর এটা তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।(আল ইমামাতো অল সেয়াসাতো- পৃ:১২ মুদ্রণ: মিশর।) বেজন্মা বলে কি!! নষ্ট খলিফার বায়াত নেয়া নাকি নবুয়তের চেয়েও গুরুত্বপুর্ন!!এদের জাহান্নামেও ঠাই হবে বলে মনে হয় না! যখন জনগণ আবুবকরের হাতে বাইয়াত করলেন ,হজরত আলী (আ.) ও যোবায়ের হজরত ফাতিমা (আ.) এর গৃহে পরামর্শ ও আলোচনা করছিলেন ,এই খবর উমর ইবনে খাত্তাবের কর্ণগোচর হল অতঃপর সে ফাতিমা (আ.) এর গৃহে এসে বলল: হে নবী নন্দিনী! আমার প্রিয়তম ব্যক্তি তোমার পিতা ,তোমার পিতার পর তুমি নিজে ; কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা কিন্তু আল্লাহর কসম তোমাদের এই ভালোবাসা আমার জন্য বাধা সৃষ্টি করবে না তোমার এই ঘরে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিদের উপর আগুন লাগানোর আদেশ দেওয়া থেকে যাতে তারা দগ্ধ হয়ে যায়। এই কথা বলে উমর চলে যায় ,অতঃপর হজরত আলী ও যোবায়ের গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন ,হজরত ফাতিমা (আ.) আলী (আ.) ও যোবায়েরকে বললেন: উমর আমার নিকটে এসেছিল আল্লার কসম খেয়ে বলছিল যে যদি তোমাদের এই“ ইজতেমা ” সমাবেশ বন্ধ না হয় ,দ্বিতীয় বার অব্যাহত থাকে তাহলে তোমাদের গৃহকে জ্বালিয়ে দেব। আল্লার কসম! যার জন্য আমি কসম খেয়েছি অবশ্যই আমি সেটা করব। (আনসাবুল আশরাফ- খণ্ড:১ ,পৃ:৫৮৬ ,মুদ্রণ: দারে-এ-মায়া’ রিফ ,কাহেরা।) দেখুন কি ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো তাদের কাছে বায়াত, যে কারনে শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি তা করেও দেখিয়েছে! (এই বায়াত ছিলো হাতে হাত রেখে বায়াত) এর পরে হতে পারতো নবী ঘোষণা দেয়ঃ যার হাতে উমরের জান আছে তার কসম খেয়ে বলছি তোমরা ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে এস ,নইলে ঘরে যারা আছে তাদের সহ ঘরকে জ্বালিয়ে দেব। খোদাভীরু কিছু লোক আল্লাহর ভয়ে এবং রসুলের ঘরের সম্মান রক্ষার জন্য উমরের উদ্দেশ্যে বলল: “ হে হাফসার পিতা! এই ঘরে ফাতিমা (আ.) আছেন ” সে চিৎকার করে বলল:“ থাকে থাকুক!!” (আব্দুল ফাত্তাহ আব্দুল মক্বসুদ- আলী ইবনে আবীতালিব - খণ্ড:৪,পৃ:২৭৬-২৭৭।) শুধু তাই? দেখুন আরওঃ উমর হজরত ফাতিমা (আ.) এর গর্ভে লাথিমারে তাঁর গর্ভে মহসিন (নামে বাচ্চা) ছিল সে গর্ভপাত হয়ে যায়।(মিজানুল এ’ তেদাল - খণ্ড:৩ ,পৃ:৪৫৯।) মাওলা মুহাম্মদ সঃ দোয়া করার সময় প্রায়ই ফাতেমা যাহ্‌রা( সাঃ আঃ) কে বলতেন “ফাতেমা আমি দোয়া করি তুমি আমিন বলো” মাওলা মুহাম্মদ এর দোয়া যার আমিনের মুখাপেক্ষী তার নাম ফাতেমা। সেই ফাতেমা কে নির্মমভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।তার সামনে যখন রাসুলুল্লাহ সঃ এর ওসিয়ত ( বাগে ফেদাক এর) ছিড়ে ফেলা হয়( শুধু ছিড়েই ফেলেনি ছেড়ার আগে তাতে থুতু দিয়েছে দুশমনে যাহ্‌রা, যদিও আজ তাকেই হতে পারতো নবী মনে করা হয়।)চার ঘন্টা তার পিতার দরবারে দাঁড়িয়ে থেকে তার পিতার ওসিয়তের সাথে এমন ব্যবহার দেখে আর সইতে পারলেন না উম্মে আবিহা! মুহুর্তেই তার মাথার চুল সব সাদা হয়ে যায় (ইয়া উম্মে আবিহা! ইয়া যাহ্‌রা!!) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাঁকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে।’নবী (সাঃ) আরও বলেন,‘ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহ্ও রাগান্বিত হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহ্ও আনন্দিত হন।’ অথচ তার সাথে কেমন আচরন করা হয়েছে!এই আচরন যদি অন্য দেশের অন্য ধর্মের কেউ করতো তাহলে হয়তো বলা যেতো যে ওরা প্রতিশোধ নিয়েছে! এরা যে প্রতিশোধ টা নিলো তা কিসের ছিলো?? চিন্তা করে দেখার অনুরোধ। শুধু তাই নয়, ফাতেমার ঘর যে ঘর কে মাওলা মুহাম্মদ সঃ যে কোন নবীর ঘর থেকেও আফজাল বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেই ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। লাথি দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলেছে, সেই দরজায় চাপা পরেছেন উম্মে আবিহা, পাষণ্ডরা নিচে চাপা পরা মা ফাতেমার গায়ে পারা দিয়ে( কেউ কেউ পা দিয়ে আঘাত করে) ঘরে ঢুকেছেন। দরজার নিচে শুয়ে রসুলের অংশ, রসুলের মা চিৎকার করে বলেছেন “ও আলী!! আমার মহসীন শহীদ হয়ে গেছে!!! ও আলী আমার হাত ভেঙ্গে গেছে!! ও আলী আমার পাঁজর ভেঙ্গে গেছে! হায় হায়! এরপর ইসলামের নেতাগন ঘর তছনছ করে বেড়িয়ে যাওয়ার পরে ফিজ্জা( ফাতেমার সেবিকা) এসে উম্মে আবিহা কে তোলার পরে মা ফাতেমা বলেন আলী কোথায়? ফিজ্জা কেদে বলে মাওলা কে গলায় রশি বেধে টেনে নিয়ে গেছে। এই জুলুমের পর (মাওলা মুহাম্মদ (সা.) এর ওফাতের) নব্বুই দিনের মতো অতিক্রান্ত হয়েছে। তিন তিনটি মাস রাসূল(স.) এর কন্যা ফাতেমাতুজ্জাহরা (সা.) এর জন্যে ছিল যথেষ্ট কষ্টদায়ক। একদিকে রাসূলে খোদার অনুপস্থিতির বেদনা অপরদিকে একদল লোকের অত্যাচার-সব মিলিয়ে তিনি এতো বেশি বিরক্ত ছিলেন যে একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে কেবল একটিমাত্র জিনিসই তাঁকে কিছুটা স্বস্তি দিতো। সেটা হলো নবীজীর দেয়া একটি প্রতিশ্রুতি। নবীজী ওফাতকালে বলেছিলেন: কন্যা আমার! আমার পরে আমার খান্দান থেকে তুমিই সর্বপ্রথম আমার কাছে আসবে। এ সময়টি আলী (আ) এবং তাঁর সন্তানদের জন্যে কঠিন সময় কাটছিলো। তিনি এমন এক মহীয়সী নারীকে হারাতে বসেছেন যাঁর উপস্থিতিতে তাঁর জীবনের মুহূর্তগুলো জ্ঞান-বিশ্বাস এবং ধৈর্যের পরাকাষ্ঠায় অলঙ্কৃত হয়ে ছিল। আলী (আ) তাঁর পরম বিশ্বস্ত স্ত্রীকে হারাতে বসেছেন যিনি প্রতি মুহূর্তে তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিলো তিনি এই পার্থিব জগতের সকল দুশ্চিন্তা ভুলতে বসেছেন। আলী (আ) ফাতেমা (সা) এর সর্বশেষ দৃষ্টিকে গভীরভাবে অনুসরণ করছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন এরপর আর তিনি ফাতেমা (সা) এর দৃষ্টির জ্যোতি দেখতে পাবেন না, যেই দৃষ্টি তাঁকে আন্তরিক প্রশান্তি দিতো। ফাতেমা (সা) এর কথায় নিরবতা ভাঙলো। তিনি বললেন: হে আলি! জেনে রাখো আর কয়েক মুহূর্ত পরই আমি আর তোমাদের মাঝে থাকছি না। বিদায় নেবার সময় এসে গেছে। আমার কথাগুলো শোনো। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো স্রষ্টা নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। বেহেশত এবং জাহান্নামের আগুন সত্য এবং বাস্তব। কিয়ামতের দিন অবশ্যই আসবে। তোমাকে ওসিয়্যৎ করছি , আমার ওফাতের পর আমাকে রাতের বেলা গোসল দিয়ো এবং রাতের বেলা দাফন করো; কাউকে খবর দেবে না। এরপর আমার শিয়রে সামনাসামনি বসো এবং কোরআন তিলাওয়াত করো আর দোয়া করো। তোমাকে আল্লাহর হাতে সঁপে যাচ্ছি। আমার সন্তানদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত সালাম এবং দরুদ পাঠালাম।" রেওয়ায়েত এ পাই, বিবি জাহরা সাঃ আঃ তার শেষ দিবসে মাওলা আলী আঃ কে বলেন যে তিনি আজ একটু ভালো বোধ করছেন, ভাঙ্গা হাত ও পাজরের ব্যথা তেমন অনুভব করছেন না, জ্বরও অনুভব করছেন না। তিনি বিছানায় উঠে বসলেন, আলী এবং ফিজ্জার সাহায্যে উঠে সন্তানদের গোসল করাতে শুরু করলেন, এবং গোসল শেষে কাপর পরিয়ে খাইয়ে তাদের চাচাতো ভাইয়ের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন, এবং তিনি বাচ্চাদের কাপর কাচতে লাগলেন। মাওলা আলী তা দেখে অবাক হয়ে এর কারন জিজ্ঞেস করলেন। বিবি উত্তর দিলেন “আজ আমার শেষ দিন,আমি আমার বাচ্চাদের শেষ বারের মতো গোসল করিয়ে, খাইয়ে দিতে চেয়েছিলাম।তারা খুব দ্রুতই এতীম হয়ে যাচ্ছে।“ মাওলা আলী বললেন “হে রসুল কন্যা, তুমি কিভাবে জানলে? বিবি উত্তর দিলেন “বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম তিনি বললেন আজ রাতে আমি উনার সাথে মিলিত হতে যাচ্ছি, উনি আমাকে আমার অসিয়ত করে যেতে বলেছেন”। মাওলা আলীর চোখ ভিজে উঠলো। সবাইকে বাইরে যেতে বলে তিনি বললেন “ হে নবী কন্যা, তুমি তোমার অসিয়ত করো”। বিবি শুরু করলেন “আমার প্রিয় স্বামী, আপনি খুব ভাল করেই জানেন যে আমি কেন এগুলি করেছি। আমার অস্থিরতা ক্ষমা করুন; তারা আমার সাথে এবং আমার অসুস্থতার সময় এতটা কষ্ট সহ্য করেছে যে আমি তাদের জীবনের শেষ দিনগুলিতে খুশি দেখতে চাই। আমি খুবই খুশি এবং আমি খুব দু:খিতও। আমি খুশি এজন্য যে আমার সমস্যাগুলি খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে এবং আমি আমার বাবার সাথে দেখা করব এবং খুবই দুঃখিত এজন্য যে আমি আপনার মতো স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবো।" “প্রিয় স্বামী মিথ্যার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই, মাওলা! যখন থেকে আমি আপনার সঙ্গী হয়েছি তখন থেকে আজব্দি কোনদিন কি আপনাকে অমান্য করেছি?” আলী জবাব দিলেন “এসব কি বলো!তুমি আমার অবাধ্য!! তুমি অনেক বেশি নিষ্ঠাবতী, আল্লাহর ভয়ে ভীত। তোমা থেকে আলাদা হওয়া, তোমাকে হারানো আমার জন্য অনেক বেশি বেদনাদায়ক, তবে এটা অনিবার্য গন্তব্য। সবাইকেই যেতে হবে। তবে তোমার মৃত্যু আমার মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে হারানোর ব্যথা তাজা করে দিবে, নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে, ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। কি বেদনাদায়ক, তিক্ত ও করুণ দুর্যোগ। নিশ্চয় এটি এমন একটি দুর্যোগ, যার জন্য কোনও সান্তনা নেই এবং এর চে বড় বিপর্যয় নেই যার জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ নেই।" তারা দুজনেই কেঁদে উঠলেন এবং ইমাম আলী (আঃ) তার মাথা জড়িয়ে ধরে বললেন: “তোমার অসিয়ত করো। আমাকে নির্দেশ দাও; তুমি অবশ্যই আমাকে নিবেদিত দেখতে পাবে এবং তুমি আমাকে যা করতে বলবে আমি তা সম্পাদন করব। তোমার বিষয় আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে”। বিবি প্রথমে পারিবারিক বিষয়ে অসিয়ত করেন, পরে বলেন “যারা আমার ও আমার পরিবারের উপর জুলুম করেছে,অন্যায় করেছে তারা যেন আমার জানাজায় শরিক না হয়।কারন তারা আমার ও রাসুলুল্লাহ সঃ এর দুশমন। তাদের বা তাদের অনুসারীদের কাউকে আমার জন্য দুয়াতেও শরিক হতে দিবেন না। আমাকে রাতে গোসল দিয়ে রাতেই জানাজা করে দাফন করে দিবেন।আমি চাই আপনি আমার কবরের পাশে বসে কোরান তিলাওয়াত করুন।আমার মৃত্যু যেন আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত না করে দেয়, আপনাকে আরও অনেক দিন দ্বীন ও মানবতার সেবা করতে হবে,আমার কস্টগুলি যেন আপনাকে ধইর্যহারা না করে দেয়। প্রিয় স্বামী, আমার মাওলা! আমাকে কথা দিন”। আলী বলেন “হ্যা বিবি, কথা দিচ্ছি। তোমাকে ফুলের মতো তোমার বাবার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলাম, তোমাকে আমার সংসারে এনে যে কষ্ট আমি দিয়েছি, দয়া করে তুমি তোমার বাবার কাছে আমার নামে অভিযোগ কোরোনা, আমাকে ক্ষমা করে দিও”। বিবি যাহরা বলতে থাকেন “প্রিয় স্বামী!দয়া করে এসব বলবেন না, আমাকে আপনার চেয়ে ভালো আর কেউ বাসতে পারতোনা, কেউ রাখতে পারতোনা। আমি জানি আপনি বাচ্চাদের কতো ভালোবাসেন, আপনাকে ওদের দিকে খেয়াল রাখতে বলাটা বেয়াদবি, তবু বলি হুসাইনের দিকে একটু বেশি খেয়াল দিবেন, ও বড় বেশি মা পাগল।আমি আহত হওয়ার আগপর্যন্ত সে আমার বুকে ঘুমিয়েছে, বুকে ব্যথার জন্য এই কয়দিন ও বঞ্চিত হয়েছে। মাওলা আলী বিবি যাহরার ভাঙ্গা হাতে হাত বুলিয়ে আদর করছিলেন।উনার তপ্ত অশ্রু বিবির হাতের উপর পরলে তা দেখে বিবি যাহরা বললেন “স্বামী কেদোনা! আমি জানি তোমার অন্তর কতো কোমল, বাইরে থেকে যাই দেখাক, তুমি ইতিমধ্যেই অনেক সহ্য করেছো, কিন্তু তোমাকে আরও অনেক সইতে হবে। এরপর বিবি যাহরা শুয়ে থেকেই গোসল করলেন, তিনি তার রবের সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুত ছিলেন তারপর আসমা বিনতে উমায়েস কে নির্দেশ দিলেন একটু অপেক্ষা করে বিবির নাম ধরে ডাকতে যদি উনি জবাব না দেন তো বুঝে নিতে যে উনি রবের কাছে চলে গেছেন। আসমা বিনতে উমায়েস কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ডাকলেন, সাড়া পেলেন না। তিনি তখন বললেন “ ইয়া যাহরা, ও সর্বশ্রেস্টহ নবীর কন্যা!হে কন্টকাকীর্ণ পথে যারা হেটেছে তাদের সেরা! তারপর তিনি আন নাজমের ৯ নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন। কোন উত্তর নেই, ঘর নীরব, আসমা বিনতে উমায়েস তখন যাহরা সাঃ আঃ দিকে এগিকে যান, গিয়ে দেখেন তিনি আর নেই, রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। (ইন্নালিল্লাহে......) সে সময়ই ইমাম হাসান ও হুসাইন বাসায় ঢুকেন, আসমা বিনতে উমায়েস কে জিজ্ঞেস করেন “মা কোথায়? আমাদের মা তো এ সময়ে ঘুমায় না!” আসমা জবাব দেন “হে রসুলের সন্তানেরা তোমাদের মা ঘুমায়নি, সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে”। ইমাম হাসান কথাটা শোনার সাথে সাথে ঝাপ দিয়ে মায়ের বুকে পরে, মায়ের মুখে চুমু দিয়ে বলে “ মা! আমার সাথে কথা বলো। নইলে আমি মরে যাবো মা, আমার সাথে কথা বলো”। ইমাম হুসাইন মায়ের পায়ে চুমু খেয়ে বলে “মাগো! আমি তোমার হুসাইন, আমি মরে যাবার আগেই আমার সাথে কথা বলো মা!” এরপর হুসাইন ইমাম হাসানের দিকে ফিরে বললেন “আল্লাহ্‌ তোমাকে আমাদের মা হারানোর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দিন” বিবি যাহরার ওফাতের সময়টাতে মাওলা আলী কোথায় ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ আছে, একদল বলেন তিনি যাহরার সাথেই ছিলেন, আরেকদল বলেন মসজিদে ছিলেন। হাসান হুসাইন মসজিদে গিয়ে বাবাকে মায়ের ওফাতের খবর দিলে মাওলা আলী অজ্ঞান হয়ে যান।যখন জ্ঞান ফিরে পান তখন তিনি কাদলেন, বললেন “কে এখন আমাকে সান্তনা দিবে, হে নবীকন্যা! আমার দুঃখ দুর্দশায় তুমিই আমাকে সান্তনা দিয়েছো এখন কে তোমার অভাব পুরন করবে!!একটি ফুল কলি অবস্থায় ছিঁড়ে ফেলা হলো । এটি জান্নাত হতে এসেছিল এবং জান্নাতেই চলে গেল । কিন্তু সুবাস রেখে গেল আমার মধ্যে। বিবির শাহাদাতে আমার মাওলা আলী রক্ত মাতম করেছেন। মদিনার লোকজন শুনেছে যে উনি চিৎকার করে কেদেছেন। এমন অবস্থায় এক লোক উনার দরজায় গিয়ে টোকা দেয়, মাওলা আলী এমন অবস্থায় বেড় হয়ে আসেন যে তার আমামা খুলে কাধে নেমে এসেছে! কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে, অশ্রু আর রক্তে দাড়ি ভিজে গেছে। লোকটি এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে মাওলা কি হয়েছে!! মাওলা ডুকরে কেদে উত্তর দেন "হে ইবনে নওফেল! আমার হাসান হুসাইন আজ এতিম হয়ে গেছে!! অন্য রেওয়ায়েত বিবি জাহরার এক দাসী আসমা বিনতে উমাইস তাঁর ওফাতের কাহিনী বর্ণনা করেন। ওফাতের দিন তিনি বাচ্চাদের জন্য খাবার প্রস্তুত করেন এবং আসমাকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর ইবাদাতের কক্ষে চলে যান। তিনি কিছুক্ষণ পর তাঁর কক্ষের মধ্যে জোরে জোরে তাকবীর ধ্বনি দিতে থাকেন। আসমা যখন তাঁর তাকবীর ধ্বনি আর শুনতে পেলেন না তখন মসজিদে গিয়ে আলী (আ.)-কে তাঁর স্ত্রীর ওফাতের খবর দিলেন। আসমার প্রতি নির্দেশ ছিল ছেলে-মেয়েরা ঘরে ফিরে এলে এ খবর দেয়ার পূর্বেই তাঁদের খাবার খাইয়ে দিতে হবে। আসমা সে কাজটিই করলেন। ইমাম হাসান ও হোসাইন এলে তিনি তাঁদের খাবার দিলেন। তাঁরা তাঁদের মায়ের হাতে ছাড়া খাবেন না বলে বায়না ধরলে আসমা তাঁদের মায়ের ওফাতের খবর দেন। তাঁরা মায়ের ঘরে প্রবেশ করার পর পরই ইমাম আলী (আ.) সেখানে উপস্থিত হন এবং নিজেকে সামলে নিয়ে কাফন-দাফনের প্রস্তুতি নেন। ইসলামের সাথে সাথে ইসলামের ইতিহাসও এই পরিবারের সাথে খুবই অমানবিক আচরণ করেছে। যে জন্য আমরা সহজে তাদের সম্পর্কে জানতে পারিনা। যাই হোক তাঁকে (বিবি যাহরা সাঃ আঃ) রাতের অন্ধকারে জান্নাতুল বাকী গোরস্তানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজায় কয়েকজন পারিবারিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাওলা আলী আঃ বলেন “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! দয়া করে আমার এবং আপনার কন্যার ছালাম নিন। যাকে আপনার সান্নিধ্য থেকে অনতি দূরে দাফন করা হচ্ছে এবং অতি শীঘ্র তিনি আপনার সাথে মিলিত হচ্ছেন।হে নবী মোস্তফা, আপনার প্রিয় কন্যার মৃত্যু আমাকে ধৈর্য এবং সান্ত্বনাহারা করেছে। আমি আমার সমস্ত সংযম হারিয়ে ফেলেছি। হে আলাহর রাসুল, আপনার বিচ্ছেদ ভোগ করার পর আমাকে আবার ধৈর্যের সাথে আকস্মিক এই মহাদুর্ঘটনা সহ্য করতে হবে।আমি আপনাকে আমার নিজ হাতে কবরে স্থাপন করেছিলাম। আমার বুকের উপর বিশ্রাম অবস্থায় আমার গ্রীবা এবং বুকের মধ্যখানে আপনার মস্তক অবস্থিত থাকা অবস্থায় আপনার দেহ হতে নফস বিদায়গ্রহণ করেছিল। নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌র জন্য এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।আপনার কন্যা যাকে আমার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল তা আমার কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হলো। এখন দুঃখ আমার সাথী হয়েছে এবং সুখ আমা হতে বিদায় নিয়েছে। এই দুঃখ এত তীব্র যে, অন্য সকল দুঃখকে এটি অভিভূত ও গ্রাস করে ফেলে এবং এটি আমাকে বিনিদ্র রজনী এবং নিরানন্দ দিনের মধ্যে ফেলে গেল।যতকাল আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত এবং শান্তির রাজ্যে আমার উভয়ের সঙ্গে মিলিত না করেন এখন হতে ততকাল আমার জীবন বিরামহীন একটি হৃদয়- বেদনায় পরিণত হলো। হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আপনার সাহাবীরা আপনার কন্যার প্রতি কি আচরণ করেছে এবং কিরূপ দুর্ব্যবহার করেছে তা তিনিই বলবেন।আপনার পরলোক গমনের পর অল্পকালের মধ্যেই তাঁর উপর যা কিছু ঘটেছে তার বিস্তারিত বিষয়াদি তাকেই জিজ্ঞেস করবেন। আপনার কাছে হতে এই ব্যবধান এত অল্পকালের যে লোকেরা এখনো আপনাকে স্মরণ করে এবং আপনার বিষয় বলাবলি করে।দয়া করে আমার বিদায় সম্ভাষণ ও ছালাম আপনারা উভয়েগ্রহণ করুন। এই বিদায় সম্ভাষণ ও সালাম একটি সরল হৃদয়ের ইচ্ছা বা উৎসর্গ। সে হৃদয় আপনাদের কোমল স্নেহের স্মৃতি তার কবরের দিকে সানন্দে বহন করবে।হে আল্লাহ্‌র মনোনীত নবী কন্যা! বিদায়। তুমি শান্তিতে বিশ্রাম করো। যে শান্তি হতে লোকেরা ইহজগতে তোমাকে বঞ্চিত করেছে। তোমার কবর ছেড়ে আমার স্বস্থানে যাওয়া দারা এটা বুঝায় না এ আমি তোমার সঙ্গলাভের দ্বারা শ্রান্ত হয়েছি।আহা যদি আমি আজীবন তোমার সঙ্গলাভ করতাম এই আমার আশা। যারা দুঃখের সাথে ধৈর্য ধারণ করে তাদের জন্য আল্লাহ পুরষ্কার সংরক্ষিত রেখেছেন। এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই যার কারণে আমি তোমার কবরের উপর স্থায়ী একটি বাসস্থান তৈরি করে থাকব। বিদায়!তোমার থাকুক আল্লাহ্‌র শান্তি ও আশীর্বাদ। (ভাব পাগলা আব্দ্দুল্লাহ) Ref: ১। তাবারি, ২য় খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা । ২। ইবনে আব্দে রাব্বাহ লিখিত ' আকদুল ফরিদ ' ২য় খণ্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা , মিশরে মুদ্রিত। ৩। আবুল ফিদার ইতিহাস, ১ম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা, মিশরে মুদ্রিত । ৪। আল্লামা ইবনে কাতিবা লিখিত কিতাবুল ইমামত ওয়া সিয়াসাত ১ম খণ্ড, ২০ পৃষ্ঠা, মিশরে মুদ্রিত ( এই পুস্তক এই বিষয়ে অত্যন্ত বিস্তৃত একটি বর্ণনা দিয়েছে ) । ৫। মোরাভেজ- উল যাহাব মাসুদি, ১৫৯ পৃষ্ঠা । ৬। শাহরিসতানির লিখিত মিল্লাল ওয়া নাহাল ১ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা, বোম্বাই, ভারত । ৭। শিবলী নোমানীর ' আল ফারুক ' ভারতে মুদ্রিত । ৮। ইবনে আবিল হাদিদের নাহজুল বালাগার ভাষ্য ।

শিয়া অর্থ অনুসারী শেষ পর্ব অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে কোরআন শরিফের আয়াত অনুযায়ী 'নবুওয়াত' বিষয়টিও নবীদের বংশে উত্তরাধিকার হিসেবে ছিল। কোরআন শরিফে বলা হয়েছে : 'ও অবশ্যই আমরা নুহ ও ইব্রাহীমকে পাঠিয়েছি এবং নবুওয়াত ও কিতাবকে তাদের বংশে স্থিত করেছি' (সূরা তুর, আয়াত নং-২৬)। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, যারা নবুয়াত প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অধিকারী ছিল (অর্থাত্ত যারা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মনোনীত হওয়ার জন্য উপযুক্ত যোগ্যতার অধিকারী ছিল) তারা হযরত নুহ এবং ইব্রাহীম (আ.)-এর বংশ থেকে নবুওয়াতের দায়িত্ব লাভ করেছিল। উপরোক্ত হাদীস এবং ইমামত বিষয়ের হাদীস (যা পরবর্তিতে বলা হবে) ছাড়াও অন্যান্য দলিল আছে যেগুলি পর্যালোচনা করলে, শিয়া নামের এক গোষ্ঠী বা দল কে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সময়ে সৃষ্টি হওয়াকে একটি স্বাভাবিক বা জরুরী বিষয় বলে মনে হবে। যেমন, মক্কায় যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে তার নিজ আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করেন এবং সরাসরি ইসলাম প্রচার করার দায়িত্বে নিযুক্ত হন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাদেরকে নিজ গৃহে দাওয়াত করেন এবং প্রয়োজনীয় খাবার প্রস্তুত করেন। খাওয়া শেষে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রিসালাত সম্পর্কে বলেন এবং উপস্থিত মেহমানদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রতি দাওয়াত দিয়ে এরূপ বলেছিলেন: তোমাদের মধ্যে যে ইসলাম ধর্মকে মেনে নিয়ে আমাকে সাহায্য করবে, আমার “ওয়াছি” ও 'প্রতিনিধি' হবে। সবাই চুপ করেছিল। শুধুমাত্র যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইসলাম দাওয়াতে জবাব দিয়েছিলেন, তিনি হলেন আলী (আ.) এবং তখন তিনি তের বছরের কিশোর ছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.) -কে বসতে বললেন এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার পুনরায় ইসলামের প্রতি দাওয়াত করলেন। প্রত্যেক বারই, শুধুমাত্র আলী (আ.) তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ছিলেন। অতঃপর, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-এর প্রস্তুতি এবং আল্লাহ তা'য়ালার ইচ্ছার প্রতি তার আত্মসমর্পণকে মেনে নিয়ে, আল্লাহ তা'য়ালার নির্দেশে আলী (আ.)-কে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন (এই ঘটনাটি, শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে। সুন্নি সূত্রের মধ্যে বলা যেতে পারে যেমন; তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক (ম ৩১০ হিজরি), খণ্ড-৩, পৃ.-৬২,৬৩। ইবনে আছির, আলকামিলু ফিততারিখ, (ম ৬৩০ হিজরি), খণ্ড-২, পৃ.-৪০, ৪১। মুসনাদে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, মুসনাদে আল আশারাহ বিল জান্নাত, হাদীস নম্বর ৮৪১)। একটি গুরুত্বপুর্ণ বক্তব্যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে সর্বদা হক্বের সাথে, অর্থাত্ত সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি ও অযথা কাজ থেকে মুক্ত বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রাসাঙ্গিক ভাবে মুসলমান এবং সমস্ত সত্য-সন্ধানীদের কাছে চেয়েছেন যে তাকে আলী (আ.) অনুসরণ করে। উম্মে সালামা বলেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: "আলী (আ.) সর্বদা হক্বের সাথে এবং কোরআন ও হক্ব সর্বদা আলী (আ.)-এর সাথে আর কিয়ামত পর্যন্ত একে অপরের থেকে পৃথক হবে না' এই হাদীসটি ইবনে আববাস, আবু বকর, আয়েশা, আবু সাইদ খুদরি, আবু লাইলি এবং আবু আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন (গাফ্ফারি, শিয়া বা প্রকৃত ইসলাম, গ্রন্থ অনুযায়ী, পৃ.-১০, এই হাদিসটি শিয়া সূত্র ছাড়াও অন্য মাযহাব থেকে পনেরটি সূত্র হতে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন; দেখুন: হাকিম নিশাবুরির মুস্তাদরাক গ্রন্থে, ইবনে হাজারের ছাওয়ায়িকুল মুহরিকাহ গ্রন্থে, মুত্তাকি হিন্দির কানযুল উম্মাল ও ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাহ গ্রন্থে)। এছাড়াও হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেছেন: 'আল্লাহ তা'য়ালা আলী (আ.)-কে রহমত করুন। হে আল্লাহ, সর্বদা হক্বকে আলী (আ.)-এর সাথে স্থিত কর (আত তিরমিযি, সুনান, কিতাবুল মানাকিব, হাদিস নং-৩৬৪৭)। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এরূপ কয়েকবার আলী (আ.)-কে ইসলামের বিষয়ে তাঁর সাহাবাগণের মধ্যে সর্বজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: 'হিকমতের (প্রজ্ঞার) দশটি ভাগ আছে যার নয়টি আলী (আ.)-কে এবং শুধুমাত্র একটি সমস্ত মানুষের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে (ইবনে কাছির ( মৃত্যু-৭৭৪ হিজরি), আলবিদায়া ওয়ান্নিহায়াহ, খণ্ড-৭, পৃ.-৩৫৯)। অনেক পরে, দ্বিতীয় খলীফা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর এই বক্তব্যগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিল: 'আল্লাহ তা'য়ালা যেন আলী (আ.)-এর অনুপস্থিতিতে আমাকে কোন জটিল সমস্যার সম্মুখীন না করেন' (উদাহরণ স্বরূপ, দেখুন এই গ্রন্থে, ইবনে হাজার, আল ইছাবাহ ফি তামিযিস সাহাবাহ এবং ইবনে কাছির, আল বিদায়াতু ওয়ান্নিহায়াহ, খণ্ড-৭, পৃ.-৩৬)। উপরোক্ত বক্তব্য ছাড়াও, ইসলামের জন্য ইমাম আলী (আ.)-এর আত্মোসর্গী ভূমিকা পালন ছাড়াও যে গুরুত্বপুর্ণ কাজগুলি করেছেন, তা আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। কেননা, সেগুলি জানলে মুসলমানদের মাঝে ইমাম আলী (আ.)-এর স্থান ও মর্যাদা বুঝা যাবে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন মক্কার মুশরিকরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে ঐ পরিকল্পনাটি অবগত করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি কি প্রস্তুত আছো আমার স্থানে শয়ন করতে। যাতে করে শত্রুরা মনে করবে যে, মুহাম্মাদ বাড়িতেই আছে এবং আমি কোন অসুবিধা ছাড়াই মক্কা থেকে হিজরত করতে পারি'। আলী (আ.) এই কাজটি অতি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। আর এই সত্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাযিল হয়: 'এবং মানুষের মধ্যে এমন কেউ আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উত্সর্গ করে দেয়' (সূরা বাকারা, আয়াত নং-২০৭)। আর হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন থেকেই ইসলামী পঞ্জিকা শুরু হয়েছিল। আলী (আ.) ইসলামের স্বার্থে অনেক কাজ করেছেন, যা ইতিহাসের গ্রন্থগুলিতে, শিয়া ও সুন্নি হাদীস গ্রন্থসমূহে এসেছে। যেমন, হযরত আলী (আ.)-এর বদরের যুদ্ধে, খন্দকের যুদ্ধে, হুনাইনের যুদ্ধে ... অংশগ্রহণ ও মৌলিক ভূমিকা পালন করা। পূর্বে যেরূপে বলা হয়েছে, সঠিকভাবে ইমামত সম্পর্কে এবং বিশেষভাবে হযরত আলী (আ:)-এর ইমামত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বর্ণিত হাদীসগুলি স্বতন্ত্রভাবে আলোচিত হওয়া উচিত্। কিন্তু এখানে আমরা সুপরিচিত 'হাদীসে গাদীর' সম্পর্কে বলে বক্তব্য শেষ করব। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর শেষ হজ্ব সফর (হাজ্বাতুল বিদা) থেকে ফিরে আসার পথে, তার সাথে থাকা হাজার হাজার মুসালমানদেরকে, ঐ স্থানে অবস্থিত ক্ষুদ্র জলাশয় যার নাম ছিল 'গাদীর' একত্রিত হতে বললেন। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একটি উঁচুস্থানে (যা উটের পিঠের উপর বসার আসন তৈরি করা হয়েছিল) দাড়িয়ে বললেন: 'আমি যার মাওলা ও অভিভাবক, এই আলী হচ্ছে তার মাওলা ও অভিভাবক'। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল‌ ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন

শিয়া মাযহাবের সূচনা সাধারণত এই প্রশ্ন হয়ে থাকে যে শিয়া মাযহাব কোন সময় থেকে শুরু হয়েছে। ইমামত সম্পর্কে অনেক হাদীস বিভিন্ন সূত্রে শিয়া এবং অন্যান্য মাযহাব থেকে বর্ণিত হয়েছে যা পরবর্তিতে "শিয়া মাযহাবের আক্বাইদ" নামক অধ্যায়ে উল্লেখ ও পর্যালোচনা করা হবে। এখানে আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর থেকে বর্ণিত হাদীসগুলি যেখানে কোন গোষ্ঠীকে আলী (আ.)-এর শিয়া বা অনুসারী বলে স্মরণ করেছেন সেগুলি, অতঃপর এই বিষয়ের উপর উল্লেখিত দলিলগুলি যা বিভিন্ন হাদীসসমূহে ও ইসলামী ইতিহাসে এসেছে এবং আমাদের আলোচ্য বিষয়কে বুঝতে সহায়তা করবে, সেগুলি উল্লেখ করব। যে সমস্ত হাদীসগুলি এখানে উল্লেখ করা হবে তা আহলে সুন্নাতের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। উল্লেখিত হাদীসগুলি (যা এই বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে) শুধুমাত্র উদাহরণ স্বরূপ আনা হল কিন্তু এ বিষয়ক অন্যান্য হাদীসগুলি এই সূত্রে অথবা অন্যান্য সূত্রে পাওয়া যাবে। ১- ইবনে আসাকির (মৃত্যু ৫৭১ হিজরি) জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারি থেকে বলেন: একদিন আমরা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট ছিলাম যখন আলী (আ.) প্রবেশ করলেন। এমন সময় হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বললেন: 'তারই কসম, যার হাতে আমার জীবন, এই ব্যক্তির (আলী) ও তার শিয়ারা (অনুসারী) কিয়ামত দিবসে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে' অতঃপর সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হয় 'অবশ্যই যারা ঈমান এনেছে এবং নেককাজ করবে সমস্ত মানব জাতির থেকে তারা উত্তম'। এর পর থেকে যখন হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর সাহাবাগণ আলী (আ.)-কে দেখতেন, বলতেন মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি এসেছে (ইবনে আছাকির, তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড- ২, পৃঃ- ৪৪২, সুয়ুতি, আদ্দুররুল মানছুর, খণ্ড-৮, পৃঃ-৫৮৯০)। ২- ইবনে হাজার (মৃত্যু-৯৭৪ হিজরি) ইবনে আববাস থেকে বর্ণনা করে যে : হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সূরা বাইয়েনার সাত নং আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর আলী (আ.)-কে বলেন: 'ঐ (উত্তম) ব্যক্তি তুমি এবং তোমার শিয়ারা। তুমি এবং তোমার শিয়ারা কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যখন আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তোমরাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত অবস্থায় এবং তাদের গর্দান ধরে নিয়ে যাওয়া হবে' (ইবনে হাজার, আছছাওয়াইকুল মোহরিকাহ, অধ্যায়-১১)। এই গ্রন্থেই ইবনে হাজার উম্মে সালামা থেকে বর্ণনা করে : এক রাতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন তার বাড়ীতে ছিল, তাঁর কন্যা ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর সাথে আলী (আ.) প্রবেশ করেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন: "হে আলী, তুমি ও তোমার সাহাবাগণ বেহেশত্বাসী। তুমি ও তোমার শিয়ারা বেহেশতবাসী"। ৩- ইবনে আছির (মৃত্যু-৬০৬ হিজরি) বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন : "হে আলী, তুমি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, তুমি ও তোমার শিয়ারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তা'য়ালা তোমাদের উপর সন্তুষ্ট আর তোমার শত্রুরা উপস্থিত হবে রাগান্বিত এবং তাদের গর্দান ধরা হবে' এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর নিজ হাতে গর্দান ধরে দেখিয়ে দেন (ইবনে আছির, আননিহায়াহ, কামাহ ধাতুমূল)। অন্যান্য আরো হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে "আমাদের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এবং এই ব্যাখ্যাটি পুর্বে উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলির সাথে একমত, যেমন আমরা পূর্বে বলেছি শিয়া হচ্ছে তারাই যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিক্ষাদানের ফলে ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে, না আলী (আ.)-এর নিজ সিদ্ধান্তে। প্রকৃত অর্থে আলী (আ.)-এর শিয়া, অর্থাত্ত হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিয়া। উদাহরণ স্বরূপ, ইবনে আসাকির হযরত মুহাম্মাদ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছে যে : 'অবশ্যই বেহেশ্তে একটি ঝর্না আছে যা ফুলের মধুর থেকেও মিষ্টি, মাখনের থেকেও নরম, বরফের থেকেও ঠাণ্ডা এবং তার সুগন্ধ মেশকের থেকেও বেশি। ঐ ঝর্নার তলদেশে যে মাটি আছে তা থেকে আমি এবং আমার আহলে বাইত তৈরি হয়েছে আর আমাদের শিয়ারাও ঐ মাটির অংশ বিশেষ থেকে তৈরি হয়েছে' (তারিখে ইবনে আছাকির, খণ্ড-১, পৃ.-১৩১)। অন্যান্য অনেক হাদীস আছে যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আলী (আ.)-কে 'তোমার বংশধরের শিয়া' বলে সম্বোধন করেছেন। এই উক্তিটিও পূর্বের আলোচ্য বিষয়ের সমর্থক। কেননা পূর্বে আমরা বলেছি, শিয়া হচ্ছে ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী এবং তার ইমামতের উপর বিশ্বাসীগণ। ঠিক যেরূপ আমরা তৃতীয় অধ্যায়ে এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত আলোচনা করব যে, শিয়া মাযহাবিগণ এই বিষয়ের উপর বিশ্বাসী যে, ইমাম আলী (আ.) হচ্ছেন প্রথম ইমাম এবং তারপর 'ইমামত বিষয়টি' হযরত ফাতিমা (সা. আ.) ও তাঁর বংশের থেকে আল্লাহ তা'য়ালা যাদেরকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উপস্থাপন করেছেন, তাদের মধ্যে অব্যাহত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ, যামাখশারি (মৃত্যু-৫২৮হিজরি ) তার নিজ গ্রন্থে 'রাবিউল আবরার' বলেন: হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: 'হে আলী, যখন কিয়ামত দিবস আসবে, আমি আল্লাহ তা'য়ালার রহমত ও অনুগ্রহে আশ্রয় নেব এবং তুমি আমার প্রতি আশ্রয় নিবে, তোমার সন্তানরা তোমার প্রতি আর তাঁদের শিয়ারা (অনুসারীরা) তাদের কাছে আশ্রয় নিবে। ঐ সময় দেখবে যে আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়' (সুবহানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-৬, পৃ.-১০৪) আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল‌ ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন

শিয়া অর্থ অনুসারী প্রথম পর্বে আরবি ভাষায় শিয়া শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, এক, দুই অথবা একদল অনুসারী। শিয়া শব্দটি কোরআন শরীফে কয়েকবার এই অর্থে ব্যবহার হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ: আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুসা (আ.)-এর একজন অনুসারীকে তাঁর শিয়া বলেছেন (সূরা কিছাছ, আয়াত-১৫)। অন্যক্ষেত্রে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে হযরত নুহ (আ.) এর শিয়া বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে (সূরা ছাফ্ফাত, আয়াত-৩৭,৮৩)। ইসলামের প্রারম্ভে শিয়া শব্দটি প্রকৃত বা অভিধানিক অর্থে, বিভিন্ন ব্যক্তির অনুসারীগণকে বলা হত। যেমন, কিছু রেওয়ায়েতে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর শিয়া এবং কিছু রেওয়ায়াতে মোয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের শিয়া বলে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিন্তু এই শব্দটি ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় বা পারিভাষিক অর্থে পরিবর্তন হয় যার অর্থে শুধুমাত্র ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারীগণকে এবং যারা তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী তাদেরকে শিয়া বলা হয়। শাহরেস্তানি (মৃত্যু-৫৪৮ হিজরি) আল মিলালু ওয়াননিহাল নামক গ্রন্থে যা বিভিন্ন দ্বীন ও মাযহাব সম্পর্কে লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, এইরূপ বলেছেন: 'শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে বিশেষভাবে অনুসরণ করে এবং তার ইমামত ও খেলাফতকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইচ্ছা এবং তারই শিক্ষাদানের ফল স্বরূপ বলে মনে করে (শাহরেস্তানি, আল মিলালু ওয়াননিহাল, খণ্ড-১,পৃ.-১৪৬)। এই সংজ্ঞাটি যথার্থ, কেননা শিয়ারা এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী যে হযরত আলী (আ.)-কে অনুসরণ করার কারণ হচ্ছে হযরত মোহম্মাদ (সা.)-এর আদেশ ও তারই ইচ্ছাস্বরূপ, না হযরত আলী (আ.)-এর নিজ ইচ্ছা, যেরূপ শিয়া ব্যতীত অনেকেই মনে করে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের উপর অর্পণ করে গিয়েছেন এবং তার মৃত্যুর পর এমন ব্যক্তির অনুসরণ করেছে যাকে তারা নিজেরাই সকিফাতে নির্ধারণ করেছিল। অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে যে আবু বকর ইবনে আবি কোহাফা যে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল সে নিজে এই বিশ্বাসের উপর বিশ্বাসী ছিল যে অবশ্যই স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করতে হবে এবং উমর ইবনে খাত্তাবও ছয়জনের একটি পরামর্শ পরিষদ গঠন ও তার সমস্ত কর্মসূচী নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন, যাতে করে এই কমিটির মধ্যে থেকে একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নির্ধারণ করতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে আলী (আ.) চতুর্থ খলীফা ছিলেন এবং সমস্ত মুসালমানরা তাকে নির্বাচন করেছিল কিন্তু তিনি তৃতীয় খলীফা উছমান বিন আফ্ফানের মৃত্যুর পর, খেলাফত দায়িত্বকে বাধ্য হয়ে মেনে নেন। হাসান ইবনে মুসা নো'বাখতি (মৃত্যু-৩১৩ হিযরি) শিয়া মাযহাবের একজন বিখ্যাত গবেষক তার ফিরাকুশ শিয়া নামক গ্রন্থে এরুপ বলেন: শিয়া, ইমাম আলী (আ.)-এর দল ও গোষ্ঠী। তারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জামানায় এবং তার পরেও শিয়া নামে পরিচিত ছিল এবং আলী (আ.)-এর অনুসারী ও তার ইমামতের উপর বিশ্বাসী । শেইখ মুফিদ (মৃত্যু-৪১৩ হিযরি) একজন বিখ্যাত আলেম, শিয়া শব্দের ব্যাখ্যাতে এরূপ বলেন: শিয়া হচ্ছে তারাই যারা ইমাম আলী (আ.)-কে অনুসরণ করে এবং তাঁকে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অব্যবহিত পরে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মেনে থাকে (মুফিদ, আওয়ায়েলুল মাকালাত, পৃ.-৩৬)। (শিয়া মাযহাবের অনুসারীদেরকে পরবর্তীতে ইমামিয়া বলা হত) শেইখ মুফিদ শিয়া মাযহাবের নামের পরিবর্তন ও ইমামিয়া বলার কারণে বলেন: এই সংজ্ঞাটি তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় যারা ইমামতের প্রয়োজনীয়তা ও তা সব জামানাই (যুগেই) অব্যাহত থাকার এবং সুস্পষ্টভাবে ইমাম (আ.)-কে নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা, এছাড়াও তার নিষপাপত্ব ও পরিপূর্ণতার উপর ঈমান রাখে (মাছদার, পৃ.-৩৭)। এমতাবস্থায় বলতে পারি শিয়া মুসলমান বলতে তাদেরকে বোঝায় যারা হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অসিয়ত ও তার স্থলাভিষিক্তের উপর এরূপ বিশ্বাস রাখে: ক)- হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর স্থলাভিষিক্তির পদ একটি ঐশী পদ। খ)- যেরূপ হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা"য়ালার পক্ষ থেকে মনোনীত হয়েছেন, সেইরূপ তার স্থলাভিষিক্তও আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দ্বারা মানুষের মাঝে উপস্থাপিত হবে। গ)- ইমাম আলী (আ.), হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ঠিক পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত। আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা‌ মোহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম নিবেদক মোঃ জাহিদ হোসেন

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছেপর্ব (((((শেষ)))))চারঃ মুসলিম তার সহিহাতে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ যখন অবতীর্ণ হল নিম্নলিখিত আয়াতটিفَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّـهِ عَلَى الْكَاذِبِينَঅর্থাৎঃ বল (হে নবী)-এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের, মহিলাদের এবং নিজেদেরকে ডেকে আনি আর তোমারাও তাই কর । অতঃপর (এসো) চ্যালেঞ্জ করি আর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষন করি ।২৩তখন মহানবী (সা.) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইনকে ডেকে আনলেন । তিনি বললেনঃالهی هولاء اهلیঅর্থাৎঃ হে আল্লাহ এরা আমার আহলে বাইত ।২৪পাঁচঃ সহি তিরমিযি গ্রন্থে নিম্নলিখিতভাবে বর্ণীত আছেঃতাতহীরের আয়াত নাযিল হবার পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিদিন যোহর নামাজের সময় আল্লাহর রাসুল ফাতিমার গৃহে আগমন করে উক্ত আয়াত পাঠ করতেন । প্রিয় নবী (সা.) উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় বলেছেনঃاللهم اهل بیتی و خاصتی فاذهب عنهم الرجس و طهرهم تطهیراঅর্থাৎঃ হে আল্লাহ আমার আহলে বাইত থেকে তুমি সকল অপবিত্রতা দূরীভূত কর এবং পূত-পবিত্র কর ।২৫ছয়ঃ সহি মুসলিম ও জামেয় উসূল গ্রন্থদ্বয়ে এভাবে বর্ণীত আছে যে, হাসীন বিন সামারাহ যায়েদ বিন আরকামকে জিজ্ঞেস করলেন, নবীর পত্নীগণও কি আহলে বাইতের মধ্যে গণ্য ? তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ, না এরকম নয় । কেননা স্ত্রী জীবনের কিছু সময় স্বামীর সাথে অবস্থান করে । অতঃপর স্বামী তালাক দিয়ে দিলে সে তার পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজনের কাছে প্রত্যাবর্তন করে এবং স্বামী থেকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে যায় । কিন্তু রাসুলের আহলে বাইত এমন সব ব্যক্তিবর্গ যাদের জন্য সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তারা যেখানেই যান না কেন কখনো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন না ।২৬সাতঃ অন্যত্র এরূপ উল্লেখ আছে যে, তাতহীরের আয়াত পাঁচজন তথা নবী (সা.), হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীর জন্য অবতীর্ণ হয়েছে ।২৭আটঃ বুখারী ও মুসলিম উভয়েই হযরত আয়েশার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, মুসআব বিন শাইবাহ তার বোন সাফিয়্যা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি হযরত আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছেনঃ ‘একদা রাসুল (সা.) একটি কালো আ’বা পরিধান করে গৃহের বাইরে আসলেন । পথিমধ্যে হাসান ইবনে আলীর সাথে দেখা হল । তিনি হাসানকে স্বীয় আ’বার ভিতর প্রবেশ করালেন । অতঃপর হুসাইন ইবনে আলী আগমন করলে তাকেও পূর্বানুরূপভাবে তার আ’বার ভিতরে নিয়ে নিলেন । অতঃপর ফাতিমা ও আলী ইবনে আবি তালিব আগমন করলে তারাও নবীর আ’বার ভিতরে প্রবেশ করলেন । আর পরক্ষণে তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করেনঃإِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-নিশ্চিয়ই আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদের নিকট থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২৮তথ্যসূত্রঃ১. আল ক্বামুস আল মুহিত্বলিল ফিরুযাবাদী, খণ্ড-৩, ফাসল আল হামযা, বাব আল লাম, পৃঃ৩৩১, প্রিন্টঃ কায়রো, হালাবী ফাউন্ডেশন ।২. সূরা আল কেসাস, আয়াত নং-২৯ ।৩. সূরা আল আনকাবুত, আয়াত নং-৩৩ ।৪. সূরা আল হুদ,আয়াত নং-৪৫-৪৬ ।৫. সূরা আল হুদ,আয়াত নং-৭৩ ।৬. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩৩ ।৭. রুহুল মায়ানি, আলুসী, খণ্ড-২৪, পৃঃ ১৪।৮. প্রাগুক্ত৯. তাফসীর আল কাশশাফ, খণ্ড-৩, পৃঃ ২৬; ফাতহ আল ক্বাদীর, শাওকানী, খণ্ড-৪, পৃঃ ২৮০।১০. আকরামাহ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুনঃক) আত তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৪১ ।খ) মিযান আল এ’তিদাল, যাহাবী, তারজামাতে আকরামাহ ।গ) আল মা’য়ারিফ, ইবনে কুতাইবা, পৃঃ-৪৫৫, প্রিন্ট কোম ।১১. মিযান আল এ’তিদাল, যাহাবী, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৭৩,৫৬২; আল ফাসল লি ইবনে হাযম, খণ্ড-৪, পৃঃ ২০৫ ।১২. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩২ ।১৩. সূরা আহযাব,আয়াত নং-৩০ ।১৪. সহি বুখারী, খণ্ড-৩, পৃঃ ৩৪ ।১৫. সূরা তাহরীম,আয়াত নং-৪ ।১৬. সহি বুখারী, খণ্ড-৭, পৃঃ ২৮-২৯ ।১৭. তাফসীর আল কাবির, খণ্ড-৩, পৃঃ ৪ ।১৮. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ১১৫; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২৮, পৃঃ ১০১; আত তাবাকাতুল কোবরা, খণ্ড-৮, পৃঃ ১৩৫; সহি বুখারী, খণ্ড-৩,পৃঃ ১৩৭; খণ্ড-৪, পৃঃ ২২; সহি মুসলিম, কিতাব আত তালাক, হাদীস নং-৩১,৩২,৩৩,৩৪।১৯. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩ পৃঃ১০৫; আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ, ইবনে কুবাইবা, খণ্ড-১, পৃঃ ৭১,৭২, গবেষক আলী শিরী; আল ফুতুহ, খণ্ড-২, পৃঃ ২৪৯ ।২০. আদ দুররুল মানসুর, সূয়ুতী, খণ্ড-৪, পৃঃ ১৯৮; মুশকিল আল আসার, খণ্ড-১, পৃঃ ২৩৩ একই বিষয়ে শব্দের তারতম্য ভেদে বিভিন্ন হাদীস বিদ্যমান, দৃষ্টান্ত স্বরূপঃ সহি আত তিরমিযি, খণ্ড-১৩ পৃঃ ২৪৮; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০৬; উসদুল গা’বা, খণ্ড-৪, পৃঃ ২৯ ।২১. মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; সহি মুসলিম, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৫৪, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ ৯; সুনানে বায়হাকী, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০০ ।২২. আদ দুররুল মানসুর, সূয়ুতী, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৯৯; তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৩, পৃঃ ৪৮৩; মুসনাদ আত তাইয়ালীসি, খণ্ড-৮, পৃঃ ২৭৪; মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; সহি মুসলিম, খণ্ড-৫, পৃঃ ১৫৪, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ ৯; সুনানে বায়হাকী, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০০ ।২৩. সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-৬১ ।২৪. সহি মুসলিম, খণ্ড-৬, বাবে ফাযায়িলে আলী, পৃঃ ১২০,১২১ ।২৫. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ ৩০৪,৩১৯ ।২৬. সহি মুসলিম, খণ্ড-৭, পৃঃ ১২৩ ।২৭. দুরারুস সিমতাইন, পৃঃ ২৩৯; উসদুল গাবা, খণ্ড-২, পৃঃ ১২, খণ্ড-৩, পৃঃ৪১৩, খণ্ড-৪, পৃঃ২৯; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-১, পৃঃ১৮৫, খণ্ড-৩, পৃঃ২৫৯, খণ্ড-৬, পৃঃ১৯৮; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২২, পৃঃ৭ ।২৮. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ২৬৮; বাবে ফাযায়িলে আহলে বাইত; মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, খণ্ড-৩, পৃঃ ১৪৭; তাফসীরে তাবারী, খণ্ড-২২, পৃঃ৫ ।আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ দিন ওয়া আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম খালিফা তুল বিলা ফাসালনিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়পর্ব (((((২)))))আকরামাহ ও মাক্বাতিল বিন সুলাইমান সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে শুধুমাত্র নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে গন্য করেছেন । যদিও আমরা উক্ত আয়াতের পূর্ববর্তী দু’টি আয়াতে নবীর স্ত্রীগণের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাবধান বাণী পরিলক্ষিত করি । তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেননি যে তারা সমস্ত ধরণের অপবিত্রতা থেকে মুক্ত । বরং তিনি আল কোরআনে উল্লেখ করেছেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُঅর্থাৎঃ হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা তো অন্যান্য নারীদের মত নও যদি আল্লাহকে ভয় কর ।১২যদি নবীর (সা.) স্ত্রীরা পবিত্র এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হতেন তাহলে আল্লাহ কখনো তাদের উল্লেখ করে এ ধরণের বক্তব্য পেশ করতেন না । সাথে সাথে নিম্নের আয়াতটিও যথার্থ বলে পরিগণিত হতো না ।আল্লাহ বলেনঃيَا نِسَاءَ النَّبِيِّ مَن يَأْتِ مِنكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّـهِ يَسِيرً‌اঅর্থাৎঃ-হে, নবীর স্ত্রীগণ, তোমাদের মধ্যে যে প্রকাশ্য কোন অপবিত্র কাজে লিপ্ত হয় তার আযাব ও শাস্তি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আল্লাহর জন্যে এ কাজ খুবই সহজ ।১৩আর যদি নবীর (সা.) স্ত্রীগণ সকল পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্ত হবেন তাহলে নবীকে (সা.) কষ্ট দেয়া কি পবিত্রতার পরিপন্থি নয় ?আল বুখারী তার স্বীয় সহিহাতে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেন,انّ النبی هجر عایشة و حفصة شهرا کاملا و ذلک بسبب افشاء حفصة الحدیث الذی اسراه لها الی عایشة، قالت للنبی: انّک اقسمت ان لا تدخل علینا شهرا ؟অর্থাৎঃ- নবী (সা.) পূর্ণ এক মাস আয়েশা ও হাফসাকে বয়কট করেছিলেন । এটা এ কারণে যে হাফসা নবীর গোপন কথা আয়েশার কাছে ফাস করে দিয়েছিল । আয়েশা নবীকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন একমাস আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না ?১৪সহি আল-বুখারীতে অন্যত্র এভাবে উল্লেখ আছে যে, ইবনে আব্বাস বলেছেনঃابن عباس یقول: لم ازل حریصا علی ان عمر بن خطاب عن المراتین من ازواج النبی (ص) التین قال الله تعالی فیها: ان تتوبا الی الله فقدصغت قلوبکما.অর্থাৎঃ-আমি ওমর বিন খাত্তাবকে সে দু’জন নবীপত্নীর ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিলাম, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ যদি তারা দু’জন আল্লাহর কাছে তওবা করে তাহলে সে কাজটিই সঠিক হবে । কেননা তোমাদের দু’জনের অন্তর (বাতিলের দকে) ঝুকে গিয়েছিল ।১৫অতঃপর আল-বুখারী এভাবে বর্ণনা দিচ্ছেনঃحتی حج و حججت معه.....................حنی قال ابن عباس، فقلت للخلیفه: من المراتین؟ فقال عمر بن خطاب:و اعجب لک یا ابن عباس ! هما عایشة و حفصة...........................অর্থাৎঃ- (ইবনে আব্বাস বলেন) ইতিমধ্যে তিনি (হযরত ওমর) হজ্জ সম্পন্ন করেন আর আমিও তার সাথে হজ্জ আদায় করি ।……….ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি খলিফাকে জিজ্ঞেস করলাম ঐ দু’জন মহিলা কারা ছিলেন ? ওমর বিন খাত্তাব উত্তর দিলেনঃ আশ্চর্য তো, তুমি তা জান না হে ইবনে আব্বাস ! তারা হলেন আয়েশা ও হাফসা………………….১৬বিখ্যাত সুন্নী আলেম ও তাফসীরকারক আল্লামা ফাখরে রাযী তার তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীর আল-কাবির’-এ সূরা তাহরীমের চতুর্থ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, এ আয়াতটি হযরত আয়েশা ও হাফসাকে সম্বোধন করে নাযিল হয়েছে ।১৭অন্যত্র এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,ها هی عایشة تعقبها للنبی (ص) بعد ما فقدته فی لیالی نوبتها و قوله (ص) لها ما لک یا عایشة ! اغرت ؟ فقالت: و ما لی ان لا یغار مثلی علی مثلک ؟ فقال لها افاخذک شیطانک ؟!অর্থাৎঃ- যখন আয়েশা কয়েক রাত্র নবী (সা.) এর অনুপস্থিতি ও তার পালা অতিক্রম হওয়ায় চুপিসারে হযরতের পিছু লেগেছিল তখন মহানবী (সা.) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমার কি হয়েছে হে আয়েশা ? তুমি কেন আমাকে শুধু তোমার জন্য মনে করছো ? আয়েশা বলেনঃ আমার মত মানুষ কি আপনার মত ব্যক্তির ব্যাপারে ইর্ষা করতে পারে না ? অতঃপর নবী (সা.) তাকে বললেনঃ তোমাকে কি তোমার শয়তানে ধরেছে ?১৮এভাবে প্রিয় নবী (সা.) এর পিছু লাগা এবং মহানবীর (সা.) উক্তি ‘তোমাকে কি তোমার শয়তান ধরেছে ?’ কোনক্রমেই সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘আহলে বাইতকে আল্লাহ সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে তুরে রেখেছেন এবং তাদেরকে পুত পবিত্র করেছেন;- উক্তির সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না ।হযরত আয়েশা নবী করিম (সা.) এর অমীয় বাণী ও ঐতিহাসিক নির্দেশ অমান্য করে ‘হাওয়াব’ নামক স্থান অতিক্রম করে আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন । ইতিহাসে এ যুদ্ধ “জঙ্গে জামাল” বা “উষ্টের যুদ্ধ” নামে অভিহিত । এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু সাহাবী তাবেয়ীন ও হাফেজ-ক্বারী হতাহত হন । এ যুদ্ধের কারণ উদঘাটন করলেই বিবেকবান মানুষ মাত্রই উপলদ্ধি করতে পারবেন যে মা আয়েশা যদি কোরআনের পরিভাষায় ‘রেজস’ বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকতেন তাহলে কখনো এ যুদ্ধ সংঘটিত হত না । এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সম্বন্ধে অবগত হবার জন্য পাঠকদের নিম্নলিখিত পুস্তকগুলো অধ্যায়নের অনুরোধ করছি ।১. কামেল ফি আত তারিখ, খণ্ড-৩, পৃঃ-১০৭ ।২. আল ফুতুহ, খণ্ড-১, অধ্যায়-২, পৃঃ-৪৫৬ ও ৪৫৭ ।৩. আনসাব আল আশরাফ, খণ্ড-২, পৃঃ-২২৮, কায়রো ।৪. আত তাবাক্বাত আল কোবরা, খণ্ড-৩, পৃঃ-৩১, বৈরুত ।৫. কানযুল উম্মাল, খণ্ড-৩, পৃঃ-১৬১ ।৬. মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড-৬, পৃঃ-৯৭, রৈুত ।৭. মাজমুআ আয-যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৭, পৃঃ-৩৪ ।৮. সহি আল বুখারী, কিতাব বিদয় আল খালক ।৯. সহি আল বুখারী, কিতাব আল জিহাদ ওয়াল মিযার বাবে আয়ওয আন নাবী, খণ্ড-৪, পৃঃ-৪৬; খণ্ড-২, পৃঃ-১২৫ ।১০. সহি মুসলিম, খণ্ড-২, পৃঃ-৫৬০; খণ্ড-৮, পৃঃ-১৮১, মিশর, শেবকাত এলাহিয়া, শারহেন নাবাবী ।তাছাড়াও হযরত আয়েশা হযরত ওসমানকে কাফের ফতোয়া দিয়ে জনগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খলিফাকে হত্যা করতে । তার ঐতিহাসিদ ফতোয়া ইতিহাস গ্রন্থসমূহে এভাবে উল্লেখ আছে যে তিনি বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد کفرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে কাফের হয়ে গেছে ।তিনি হযরত ওসমানকে না’সাল বলে একজন ইয়াহুদী বৃদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন ।আবার কোন কোন ইতিহাস গ্রন্থে এভাবে বর্ণীত আছে যে, তিনি ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,اقتلو نعثلا فقد فجرঅর্থাৎঃ- না’সালকে হত্যা কর সে ফাজের হয়ে গেছে ।১৯এত কিছুর পর কি করে তাতহীরের পবিত্র আয়াতটিতে উল্লেখিত আহলে বাইতের মধ্যে নবী (সা.) এর স্ত্রীগণও গণ্য হতে পারেন ?বস্তুতঃ যদি আমারা তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থাবলী পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সেখানে আহলে বাইত বলতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলীকে বোঝানো হয়েছে । এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তথাপি আমার সংক্ষিপ্ততার প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নে বহুল উল্লেখিত ও প্রচারিত কয়েকটি হাদীস সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য উপস্থাপন করলাম । নিরপেক্ষ মন ও মুক্ত চিন্তা নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইল ।একঃ নবী পত্নী উম্মে সালমা থেকে বর্ণীত আছে যে তিনিإِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اআয়াতটির শানে নুযুল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছে । তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন । তারা হলেনঃ জিবরাইল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন । আর আমি ছিলাম দরজার মুখে । আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নই ? উত্তরে তিনি বললেনঃ (না, এরকম নয়) নিশ্চয় তুমি মঙ্গল পথের যাত্রী, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য ।২০দুইঃ আব্দুল্লাহ বিন জা’ফর বিন আবি তালিব থেকে বর্ণীত আছে যে তিনি বলেছেন,کما نظر رسول الله (ص) الی رحمه هابطه، قال: ادعو لی، ادعو لی ! فقالت صفیحه- بنت حیی بن اخطب زوجه رسول الله (ص): من یا رسول الله ؟ قال (ص): اهل بیتی: علیا و فاطمة و الحسن و الحسین.অর্থাৎঃ একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরাইল (আ.) এর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন । তিনি বলেন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে আন, তাদেরকে আমার নিকট ডেকে পাঠাও ! সাফিয়্যা (নবী পত্নী, হুয়িয়্যা বিন আখতারের কন্যা) প্রশ্ন করলেনঃ কাদের কথা বলছেন হে আল্লাহর রাসুল ? প্রতিত্তোরে তিনি বললেনঃ তারা আমার আহলে বাইত-আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন ।২১তিনঃ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণীত হেয়েছে যে তিনি বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট থেকে অতিক্রম করতেন এবং বলতেনঃالصلاة یا اهل البیت، إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-হে আহলে বাইত, সালাম ও দরুদ তোমাদের উপর । নিশ্চয় আল্লাহ মনস্থ করেছেন তোমাদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করেছেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।২২নিবেদক________ মোঃ জাহিদ হোসেন

আহলে বাইত আঃ কাদের কে বলা হয়েছেبسم الله الرحمن الرحیمপর্ব (((((১)))))নবী করিম (সা.)-এর আহলে বাইতকে ভালবাসার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই । তবে আহলে বাইত কারা– এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতানৈক্য বিদ্যমান । মুসলমানদের কোন এক সম্প্রদায় আহলে বাইত বলতে শুধুমাত্র তার সম্মানীতা স্ত্রীগণকে বুঝিয়ে থাকেন । আবার অন্য এক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হযরত ফাতিমা, তার স্বামী ও সন্তানদ্বয়কে রাসুলের সাথে সংযোগ করে থাকেন । আবার নবী (সা.) এর আহলে বাইতের মধ্যে হযরত আব্বাস, আক্বীল ও জাফর তাইয়্যারকেও শামিল করে থাকেন ।প্রকৃতপক্ষে আহলে বাইতের সদস্যগণ কারা ? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে আমরা ‘আহল’ ও ‘বাইত’ শব্দদ্বয়ের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের উল্লেখ করে মূল অর্থের দিকে দৃষ্টিপাত করবো।আরবী অভিধানে ‘আহল’ এর অর্থ হচ্ছেঃاهل الرجال، عشیرته و ذو قرباه، جمع : اهلون و اهلان، و اهل یأهل یأهل اهولا تأهل و اتهل: اتخذ اهلا.অর্থাৎঃ-একটি পুরুষের পরিবার, তার আত্মীয়-স্বজন, ‘আহল’ এর বহুবচন হচ্ছে ‘আহলুন’ অতীত কাল বুঝানোর জন্য ‘আহালা’ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের জন্যে ‘ইয়াহেলুন’ বা ‘ইয়াহালু’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে । আর ‘আহুলান’ হচ্ছে মূল ক্রিয়া সূচক শব্দ । ‘তায়াহহালা’ বা এত্তাহালার অর্থ হচ্ছে পরবিার গঠন করেন ।و اهل الامر : ولایته وللبیت سکانه و للمذهب من یدیه به، و للرجل زوجته کأهلته. للنبی (ص) ازواجه و بناته و صهره علی (رضی الله عنه) او نسائه، و الرجال الذین هم و لکل نبی امنه........অর্থাৎঃ-কোন কাজের জন্যে আহল বলতে তার কতৃত্ব আর ঘরের জন্যে ‘আহল’ বলতে গৃহবাসীদের বুঝায় । মাযহাবের জন্য ‘আহল’–এর অর্থ হচ্ছে মাযহাবের পরিচালক । একটা পুরুষের ‘আহল’ বলতে তার স্ত্রীকে বুঝানো হয় । নবী (সা.) এর জন্যে ‘আহল’ বলতে বুঝায় তার স্ত্রীবর্গ কন্যাগণ, তার জামাতা আলী (রাজীঃ) এবং ঘরের মহিলারা অতঃপর নবীদের আহল হচ্ছে তাদের উম্মত…………………।১‘আহল’ শব্দটি পবিত্র আল কোরআনে ৫৪ বার ব্যবহার হয়েছে । প্রতিবারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এ শব্দটিকে । ‘আহল’ শব্দের অর্থ কখনো শুধুমাত্র স্ত্রী ও সন্তান উভয়কেই বুঝানো হয়েছে আল-কোরআনে । কোথাও আবার আহল বলতে আত্মীয়-স্বজনকেও বুঝানো হয়েছে ।দৃষ্টান্ত স্বরূপ আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃفَلَمَّا قَضَىٰ مُوسَى الْأَجَلَ وَسَارَ‌ بِأَهْلِهِ آنَسَ مِن جَانِبِ الطُّورِ‌ نَارً‌ا قَالَ لِأَهْلِهِ امْكُثُوا إِنِّي آنَسْتُ نَارً‌ا لَّعَلِّي آتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ‌ أَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ‌ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَঅর্থাৎঃ-অতঃপর যখন মূসা (আঃ) তার প্রতিশ্রুত কর্মের সময়সীমা অতিক্রম করেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশ পানে যাত্রা করেন । পথিমধ্যে তুর পর্বতের সন্নিকটে আগুন দেখতে পেলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পাচ্ছি । সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসতে পারি অথবা তোমাদের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করতে পারি ।২উক্ত আয়াতে আল্লাহ দু’বার ‘আহল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন । এখানে ‘আহল’ শব্দের অর্থ স্ত্রী । উক্ত আয়াতে ‘আহল’ শব্দের উদ্দেশ্য হযরত মুসা (আ.) এর স্ত্রী অন্য কেউ নয় ।আল-কোরআনে আল্লাহ বলেনঃإِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهْلَكَ إِلَّا امْرَ‌أَتَكَ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِ‌ينَঅর্থাৎঃ-“নিশ্চয় আমি তোমাকে (হযরত লুত আ.) এবং তোমার পরিবারকে নাজাত দিব, তোমার স্ত্রী ব্যতীত, কেননা সে অভিশপ্ত এবং পশ্চাদপদের শিকার ।৩উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ‘আহল’ বলতে স্ত্রী, পরিবার পরিজন, সন্তান-সন্তুতি সকলকে বুঝিয়েছেন । যদিও লুতের স্ত্রীকে আল্লাহ অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন ।আল্লাহ অন্যত্র হযরত লুত (আ.) সম্পর্কে বলেনঃوَنَادَىٰ نُوحٌ رَّ‌بَّهُ فَقَالَ رَ‌بِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ‌ صَالِحٍ…..অর্থাৎঃ-“নূহ (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করলো-হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র তো আমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী । (আল্লাহ) বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে (তোমার পুত্র) তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে অসৎ!৪এক্ষেত্রে ‘আহল’ অর্থ ঐ ব্যক্তির পদাংক অনুসরণকারী পরিবারের সদস্য । এ কারণে আল্লাহ হযরত নুহ (আ.) এর পুত্রকে তার আহল এর মধ্যে গন্য করেননি । কেননা সে অসৎ কাজে লিপ্ত ।উপসংহারে বলা যায় ‘আহল’ শব্দের একক কোন অর্থ নেই । স্থান ভেদে এর অর্থ বিভিন্ন হতে পারে ।আর ‘বাইত’ শব্দও কোরআন ও হাদীসের বহু স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে । ‘বাইতের’ অর্থও বিভিন্ন ধরণের । কোথাও ‘বাইত’ অর্থ মসজিদুল হারাম আবার কোথাও মসজিদুন্নাবী ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে ।তবে আল-কোরআনের ‘বাইত’ শব্দ ‘আহল’ শব্দের সাথে সংযোগ করে ব্যবহৃত হয়েছে দু’বার ।সূরা হুদে আল্লাহ বলেন,رَ‌حْمَتُ اللَّـهِ وَبَرَ‌كَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِঅর্থাৎঃ-আল্লাহর রহমত ও বরকত আহলে বাইতের উপর বর্ষিত ।৫সূরা আহযাবে আল্লাহ আরো বলেন,إِنَّمَا يُرِ‌يدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّ‌جْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَ‌كُمْ تَطْهِيرً‌اঅর্থাৎঃ-আল্লাহ মনস্থ করলেন তোমাদেরকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে হে আহলে বাইত এবং মনস্থ করলেন তোমাদেরকে পুত-পবিত্র করতে ।৬মহানবী (সা.) এর হাদীসেও ‘আহলে বাইত’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে । শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের বর্ণিত হাদীসগুলোতে প্রায় ৮০ পন্থায় ‘আহলে বাইত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । তার পরও মুসলমানদের মধ্যে আহলে বাইতের সংজ্ঞা ও অর্থ এবং সদস্যদের ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান । মুসলমানরা তাদের নিজ নিজ মাযহাবের পক্ষে আহলে বাইতের অর্থ করেই দায়িত্ব সমাপ্ত করে থাকেন । অনেকে বলে থাকেন, তাতহীরের আয়াতে উল্লেখিত আহলে বাইতের উদ্দেশ্য বনি হাশিমের লোকজন । আবার অনেকের মতে বনি হাশিমের মু’মিন সন্তানগণ অর্থাৎ আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান ব্যতীত অন্য কেউ আহলে বাইতের মধ্যে গন্য নয় ।৭আবার কেউ কেউ বলেন, আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও তার সন্তানরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য ।৮কোন এক মুসলিম সম্প্রদায় বলেন, রাসুলের (সা.) সম্মানিতা স্ত্রীগণ, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ইবনে আলী ও হযরত হুসাইন ইবনে আলী আহলে বাইতের সদস্যবৃন্দ ।৯অনেকে বলেন, নবীর স্ত্রীরা শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে গন্য । কেননা আকরামাহ বিন আব্দুল্লাহ নাজদাহ আল হারুরী-যিনি আলীর সাথে শত্রুতার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের অতিক্রম করেছে, সে ‘নবীর (সা.) স্ত্রীগণ শুধুমাত্র আহলে বাইতের সদস্য বলে প্রচার করত । সে আরো বিশ্বাস করত খারেজী দল বহির্ভূত সকল মুসলমান কাফের । হজ্বের সময় সে চিৎকার করে বলত, ‘যদি আমার হাতে শক্তি থাকতো তাহলে আমার ডানে বায়ে যত লোক আছে তাদের সকলকে হত্যা করতাম ।’ সে মসজিদুল হারামে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিত, ‘এখানে কাফের ব্যাতীত অন্য কেউ নেই ।’ তার আক্বিদা-বিশ্বাসের মধ্যে আরেকটি দিক হলো যে সে বিশ্বাস করত,انما انزل الله متسابه القرآن لیضل بهঅর্থাৎঃ আল্লাহ কোরআনের ‘মুতাশাবেহ’ আয়াতগুলো মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবতীর্ণ করেছেন ।সে সমসাময়িক কালে মিথ্যাবাদী বলে খ্যাতি লাভ করেছিল । আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব ও ইবনে মাসউদ বলেছেন, ‘আকরামার হাদীস জালকারী ও মিথ্যাবাদী বলে কুখ্যাতি আছে ।’ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী তার সম্পর্কে বলেছেন, সে একজন মিথ্যাবাদী ।১০আকরামার ন্যায় আরো একজন ব্যক্তি নবীর (সা.) স্ত্রীগণকে শুধুমাত্র আহলে বাইতের মধ্যে শামিল করেছেন । তিনি হচ্ছেন মাক্বাতিল ইবনে সুলাইমান আল-বালখী আল আযুদী আল খোরাসানী । তিনি তৌহিদ ও রেসালাতের ব্যাপারে অনেক আপত্তিমূলক বক্তব্য পেশ করেছেন যা আহলে সুন্নাতের আক্বিদার সম্পূর্ণ পরিপন্থি ।১১নিবেদক______ মোঃ জাহিদ হোসেন

আলী (আ.)কে গোপনে দাফনের কারণ কি?আলী (আ.)-এর মত একজন পূর্ণ মানবকে গোপনে দাফন করতে হয়েছে। কিন্তু কেন? কারণ তার যেরূপ পরম বন্ধু রয়েছে সেরূপ পরম শত্রুও রয়েছে। ‘হযরত আলী (আ.)-যেমন প্রচণ্ড আকর্ষণ ক্ষমতার অধিকারী তেমনি বিকর্ষণ ক্ষমতারও। তার মত মানুষের বন্ধুও যেমনি থাকে চরম অন্তরঙ্গ ও উচ্চ পর্যায়ের যারা যে কোন সময়ে তার জন্য প্রাণ দিতে অকুণ্ঠিত তেমনি শত্রুও থাকে যারা তার রক্তের জন্য পিপাসার্ত বিশেষত অভ্যন্তরীণ ও নিকটতম শত্রু। যেমন খারেজীরা দীনের বাহ্যিক কাঠামোতে বিশ্বাসী ও ঈমানের অধিকারী,কিন্তু দীনের মূল শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ। আলী (আ.) নিজেই বলেছেন,এরা ঈমানদার,কিন্তু অজ্ঞ। তার ভাষায়-لا تقولوا الخوارج بعدی فلیس من طلب الحق فأخطاه کمن طلب الباطل فأدرکه“খারেজীদের আমার মৃত্যুর পর আর হত্যা করো না,যেহেতু যারা সত্যের সন্ধানী,কিন্তু ভুল করছে তারা যারা অসত্যকে জানার পরও তার অনুসরণ করছে এক সমান নয়।” খারেজীদের সঙ্গে মুয়াবিয়ার অনুসারীদের তুলনা করে বলেছেন,“আমার মৃত্যুর পর এদের হত্যা করো না। এদের সঙ্গে মুয়াবিয়ার অনুসারীদের পার্থক্য রয়েছে,এরা সত্যকে চায়,কিন্তু বোকা (তাই অন্যদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়) ও ভুল করে। কিন্তু মুয়াবিয়াপন্থীরা সত্যকে জেনেই তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত।”তাই কেন আলীকে এত বন্ধু ও সুহৃদ থাকা সত্ত্বেও রাত্রিতে গোপনে দাফন করা হয়েছে? এই খারেজীদের ভয়ে। যেহেতু তারা বলত আলী মুসলমান নয়, তাই ভয় ছিল তারা জানতে পারলে কবর থেকে তার লাশ বের করে অপমান করত।ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময়ের শেষ দিকে প্রায় শত বছর পর্যন্ত নবী পরিবারের ইমামরা ব্যতীত কেউই জানত না যে,ইমাম আলী (আ.)-কে কোথায় দাফন করা হয়েছে।একুশে রমযানের ভোরে ইমাম হাসান (আ.) জানাযার আকৃতিতে সাজিয়ে একটি খাটিয়া কিছু ব্যক্তির হাতে দেন মদীনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতে লোকজন মনে করে আলী (আ.)-কে মদীনায় দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু ইমাম আলীর সন্তানগণ ও কিছু সংখ্যক অনুসারী যারা তার দাফনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা জানতেন তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে। বর্তমানে কুফার নিকটে নাজাফে যে স্থানে আলীর সমাধি রয়েছে সেখানে তারা গোপনে যিয়ারতে আসতেন। ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময় যখন খারেজীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং আলীর প্রতি অসম্মানের সম্ভাবনা রহিত হয় তখন ইমাম সাদিক তার এক সাহাবী সাফওয়ান (রহ.)-কে সে স্থান চিহ্নিত করে গাছ লাগিয়ে দিতে বলেন। এরপর থেকে সবাই জানতে পারে ইমাম আলীর কবর সেখানে এবং তার ভক্ত ও অনুসারীরা তার কবর যিয়ারত করতে শুরু করে।যে রাতে আলীকে দাফন করা হয় খুব কম সংখ্যক লোক তার দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন। ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন,সে সাথে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী। তাদের মধ্যে সামায়া ইবনে সাওহান যিনি আলী (আ.)-এর অন্তরঙ্গ বন্ধু ও অনুসারী ছিলেন তিনি একজন তুখোর বক্তাও ছিলেন। আলীকে দাফনের সময় তাদের অন্তর যেরূপ বিরাগ বেদনায় স্তব্ধ ও কণ্ঠ বায়ুরূদ্ধ হচ্ছিল,সে সাথে মনে অনুভূত হচ্ছিল প্রচণ্ড ক্রোধ। এরূপ অবস্থায় কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যখন সবাই কাঁদছিলেন সামায়া যার হৃদয় প্রচণ্ড কষ্টে মুষড়ে পড়ছিল তিনি কবর থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে মাথা ও সারা শরীরে মাখতে শুরু করলেন। কবরের মাটিকে বুকে চেপে ধরে বললেন,“হে আমীরুল মুমিনীন! আমার পক্ষ থেকে সালাম। আপনি সৌভাগ্যের সাথে জীবন যাপন করেছেন,সৌভাগ্যের সাথেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আপনার সম্পূর্ণ জীবন ছিল সাফল্যমণ্ডিত,আল্লাহর ঘর কাবায় জন্মগ্রহণ করেছেন,আল্লাহর ঘর মসজিদেই শাহাদাত বরণ করেছেন। জীবনের শুরুও আল্লাহর ঘরে,জীবনের পরিসমাপ্তিও আল্লাহর ঘরে। হে আলী! আপনি কতটা মহৎ ছিলেন আর এ মানুষরা কতটা হীন!যদি এ সম্প্রদায় আপনার কথা মতো চলত তবে আসমান ও তাদের পায়ের নীচে থেকে নেয়ামত বর্ষিত হতো। তারা আখেরাতে ও দুনিয়ার সাফল্য লাভ করত। কিন্তু আফসোস! এ জনগণ আপনার মর্যাদা বোঝেনি। আপনার অনুসরণ না করে বরং আপনাকে কষ্ট দিয়েছে,আপনার হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে। আপনাকে এ অবস্থায় কবরে পাঠিয়েছে

ব্যবসায়ী হযরত আবু তালিব আঃ ও কিশোর নবী মোহাম্মদ (সাঃ.)পর্ব (১)হযরত আবু তালিব তাঁর পিতা আব্দুল মোতালিবের নিকট থেকে ভাতিজা মোহাম্মদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকে কখনও তাঁকে একা ছেড়ে দেননি। সার্বক্ষণিক নিজে অথবা তাঁর পরিবারের লোক সমেত ভাতিজাকে আগলে রেখেছেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। হযরত আবু তালিব নিজের ব্যবসায়িক কাজেও মোহাম্মদ (সা.)-কে সাথে নিয়ে যেতেন। ভাতিজাকে নিয়ে তিনি যতবার ব্যবসয়িক সফরে গিয়েছেন ততবারই অকল্পনীয় সাফল্য তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মোহাম্মদ কোনো সাধারণ মানুষ নহেন।একবার দামেশকের সন্নিকটে হযরত আবু তালিবের কাফেলা পৌঁছালে , বুহায়রা নামক এক খ্রীষ্টান পাদ্রী ঐ কাফেলার সকলকে তার মেহমান হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তখন ১২ বছরের নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে মালামাল রক্ষার প্রহরায় রেখে সকলেই বুহায়রার দরবারে উপস্থিত হলেন। বুহায়রা বললেন ,“ যাঁর উদ্দেশ্যে আমি আপনাদের আমন্ত্রণ জানালাম তিনিই তো আসলেন না” । বুহায়রা নিজে গিয়ে কিশোর নবীকে স্বসম্মানে নিজ দরবারে নিয়ে আসলেন।আপ্যায়ন শেষে বুহায়রা সকলের অগোচরে নবী মোহাম্মদ (সা.) ও হযরত আবু তালিবকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,“ হে আবু তালিব আপনি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে , আপনার বংশে আল্লাহর মনোনীত শেষ নবী‘ মোহাম্মদ’ রয়েছেন। যিনি আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আপনাদের আগমণের বার্তা আমি আগে থেকেইে অবগত আছি। কারণ আমাদের ইঞ্জিল কিতাবে মোহাম্মদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। আর আপনারা যখন আমার এলাকায় প্রবেশ করেন তার পূর্ব থেকেই একখণ্ড মেঘ আপনাদের ছায়া দিয়ে আসছিল। যখন আপনারা সকলে আমার দরবারে এলেন তখনও মেঘটি কাফেলার স্থানে স্থির ছিল। এতে আমি নিশ্চিত হলাম যে , কিতাবে উল্লিখিত নবী মোহাম্মদ এখনও আমার দরবারে উপস্থিত হননি। তাই আমি নিজে গিয়ে নবী আপনাকে নিয়ে আসলাম। আর মেঘ খন্ডটিও আমাদের সাথে চলতে শুরু করল” ।বুহায়রা আরও বললেন ,“ হে আবু তালিব! আপনি অতি শীঘ্রই দামেষ্ক ত্যাগ করুন। কারণ মোহাম্মদের প্রচুর শত্রু রয়েছে। আর হে মোহাম্মদ! আপনি যখন আল্লাহর একত্ববাদের পরিপূর্ণ মিশন শুরু করবেন , তখন যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে আমিও আপনার সাহায্যকারী হবো।” বুহায়রার মুখে ভাতিজার খোদায়ী মিশনের কথা শুনে হযরত আবু তালিব আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন আর ভাবলেন , মহান আল্লাহ তাঁরই বংশকে শেষ নবী (সা.)-এর আগমণের জন্য নির্বাচিত করেছেন। এক অনাবিল স্বর্গীয় প্রশান্তি তাঁর হৃদয় প্রাণে দোলা দিতে লাগল। এই ব্যবসায়িক সফর শেষে হযরত আবু তালিব আরো সতর্ক হলেন। মোহাম্মদ (সা.)-এর আত্মরক্ষায় নিজে এবং তাঁর সন্তানদের সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখলেন।৮হযরত আবু তালিব আঃ এর নিকট কাফেরদের অভিযোগযে মোহাম্মদ (সা.)-এর শিশু-কিশোর ও যৌবনকাল আরবের কাফের-মুশরিক ও আরব অনারবদের মাঝে অতিবাহিত হয়েছে , যারা তাঁর চরিত্রমাধুরীতে মুগ্ধ হয়ে তাঁর নাম রেখেছিল‘ আল-আমিন’ অর্থাৎ সত্যবাদী , যারা মোহাম্মদ (সা.)-এর দেয়া সমাধান মেনে নিত অনায়াসে। মাত্র আট বছর বয়সে যিনি‘ হজরে আসওয়াদ’ নামক কালো পাথর স্থানান্তর নিয়ে উদ্ভূত গোত্রীয় দ্বন্দ্বের শান্তিময় সমাধান করেছিলেন। পাথরটি চাদরের মাঝখানে রেখে চার গোত্রপতিকে চার কোন ধরার মাধ্যমে তা স্থানান্তর ও নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনের পরামর্শ প্রদান পূর্বক নিষ্পত্তি করেন। এতে সকলে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ছিল।আবার সেই কাফেরাই তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ , কুৎসা রটনা ও অস্ত্রধারণ এমনকি তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করে , কারণ ছিল মোহাম্মদ (সা.) তাদের বাপ-দাদার ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তিনি একাধিক দেব-দেবীর বিপক্ষে ও এক আল্লাহর পক্ষে কথা বলেন। এটাই মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।লা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিনবেশুমার লানত বর্ষিত হোক ওই সব অন্ধদের উপর

ব্যবসায়ী হযরত আবু তালিব আঃ ও কিশোর নবী মোহাম্মদ (সাঃ)পর্ব (((((২)))))প্রথম অভিযোগএকবার আবু জাহেল , আবু লাহাব , আবু সুফিয়ান , ওৎবা , শাইবা , প্রমুখ কাফের মুশরিক নেতৃবর্গ জনাব আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করল যে ,“ আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র মোহাম্মদ আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের বিরোধিতা করছে। এমনকি আমাদের পূজনীয় দেব-দেবী লাত , মানাত ও ওজ্জা মূর্তি সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলছে” । হযরত আবু তালিব তাদের অভিযোগ শুনে শুধু এতটুকু তাদের জিজ্ঞেস করলেন ,“ তোমরা কি মোহম্মদকে কখনও মিথ্যে বলতে শুনেছ ?” সকলে মস্তক অবনত কন্ঠে স্বীকার করেছিল ,“ না আমরা শুনিনি” । অতঃপর তিনি বললেন ,“ তাহলে মোহাম্মদ যে আল্লাহর কথা বলছে তিনি অবশ্যই এক ও অদ্বিতীয় এবং সর্বশক্তিমান আর আমাদের ও তোমাদের পালনকর্তা।” হযরত আবু তালিবের এরূপ বক্তব্য শুনে কাফেররা বিরক্ত হয়ে তাৎক্ষণিক বিদায় নিল।দ্বিতীয় অভিযোগযতই দিন যাচ্ছিল একত্ত্ববাদ ততই প্রসার লাভ করছিল। মোহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর কাজ থেকে বিরত রাখার সকল প্রচেষ্টা ও অব্যাহত রয়েছে। তবুও ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণকারী লোকজনের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণনাশের জন্য বিষ প্রয়োগের চেষ্টাও বার বার ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে কাফের সর্দাররা পুনরায় হযরত আবু তালিবের স্মরনাপন্ন হলো। তারা বললো ,“ হে আবু তালিব! আপনার মর্যাদা ও ঐতিহ্যের সম্মানে আমরা এতদিন আপনার ভাতিজা মোহাম্মদের কার্যকলাপ অনেক সহ্য করেছি। কিন্তু আমাদের ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে। এখন আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম। কেননা , মোহাম্মদ প্রকাশ্যে আমাদের বাপ-দাদার ধর্মের ও দেব-দেবীর বিরোধিতা করছে। আপনি হয় তাকে একাজ থেকে বিরত রাখুন। না হয় তার পক্ষে অস্ত্রধারণ করুন। তরবারির দ্বারাই বিষয়টির ফয়সালা হোক।” একথা শুনে হযরত আবু তালিব বললেন ,“ মোহাম্মদ কি মানুষদের মন্দ কাজের দিকে আহবান করছে ?” হযরত আবু তালিবের এমন কথায় কাফেরেরা হতভম্ব হয়ে ফিরে গেল। আবার হাশেমিদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারনের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ভেবে তারা অগ্রসর হতে সাহসী হলো না।তৃতীয় প্রচেষ্টাবহু বাধা বিপত্তি ও গোপণ ষড়যন্ত্র করেও যখন ইসলামের ক্রমাগত অগ্রযাত্রা ঠেকানো গেল না , তখন কাফের সর্দারেরা লোভ-লালসা ও প্রলোভনের পথ বেছে নিল। আবার তারা হযরত আবু তালিবের স্মরণাপন্ন হলো এবং বলল ,“ হে আবু তালিব! আমরা আপনার ভাতিজার সাথে এ পর্যন্ত অনেক ভাল ব্যবহার করেছি , আমরা তাকে সমগ্র আরবের নের্তৃত্ব কর্তৃত্ব ও সবচেয়ে সুন্দরী নারী এবং অজস্র ধন-সম্পদ দেয়ারও প্রস্তাব করেছি। বিনিময়ে সে আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে মেনে নিবে। কিন্তু সে আমাদের উপহার ও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তাই নয় এখন সে আরও জোরেশোরে প্রকাশ্যে দেব-দেবীর বিরুদ্ধে অপমানজনক কথা বলছে এবং আমাদের বাপ-দাদার ধর্মকে ভ্রান্ত বলে আখ্যায়িত করছে। এ অবস্থা আমরা আর চলতে দিতে পারি না। এর পূর্বেও আমরা আপনাকে এ বিষয়ে নালিশ করেছিলাম কিন্তু আপনি আমাদের কথা গ্রাহ্য করেননি। সুতরাং আজই এর সুরাহা করতে হবে। হয় আপনার ভাতিজা মোহম্মদের ধর্ম প্রচার বন্ধ করুন , না হয় তাকে আমাদের হাতে সোপর্দ করুন।”কাফের সর্দারদের এরূপ বক্তব্যে হযরত আবু তালিব গর্জে উঠে বললেন ,“ হে সর্দারগণ সুস্পষ্ট ভাবে জেনে রাখো , মোহাম্মদকে সোপর্দ করা তো দূরের কথা কেউ তার চুল পরিমাণ ক্ষতির চিন্তাও করো না। অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি। আর যদি তা তোমাদের কারো হতে প্রকাশ পায় , তবে তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হবে।”মোহাম্মদ (সা.)-এর জন্য হযরত আবু তালিবের এরূপ দৃঢ় কঠিন অবস্থান কাফেরদের নিরাশ করে দিল। আর ভাতিজাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন ,“ হে মোহাম্মদ! আজ থেকে তুমি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর বিধান ও বিষয়াবলির কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চালিয়ে যাও। আমি কখনও তোমাকে বিচলিত হতে দেব না এবং তোমাকে কাফেরদের হাওলাও করব না। আল্লাহর কসম আমি জানি তোমার দাওয়াত সত্য , তুমি ঐ রবের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ নসিহতকারী ও বিশ্বস্ত। আমি বেঁচে থাকতে কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।” ৯এখন প্রশ্ন হচ্ছে উল্লিখিত উক্তির পরেও কি হযরত আবু তালিবের ঈমান আনার প্রয়োজন রয়েছে ? আর যাদের তা প্রয়োজন , তারা কি ভেবে দেখেছেন ? যে ঈমানী দায়িত্ব হযরত আবু তালিব নবী ও তাঁর ইসলামের জন্য সম্পন্ন করে গেছেন এর কোটি ভাগের এক ভাগও তাদের পক্ষে করা সম্ভব কি ?আমি এখন আমার প্রিয় নবী (সা.)-এর স্পর্শকরা‘ হযরে আসওয়াদ’ পাথরের অন্ত:নিহীত তথ্য মুমেনীনদের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করছি। উক্ত পাথর নিয়ে চৌদ্দ’ শ বছর পূর্বে যে দ্বন্দের উদ্ভব হয়েছিল , নবী (সা.) তা মিটিয়েছিলেন কিশোর বয়সে। আর মহান আল্লাহ পাক তাঁর নবী (সা.)-এর স্পর্শের কারণে এই পাথরকে যে মর্যাদা দান করলেন তা হচ্ছে , সে কেয়ামত পর্যন্ত হাজীদের পাপ মোচন করে যাবে। আফসোস! ঐসকল মুসলমানের প্রতি যারা ভুলে গেলেন আমার নবী (সা.)-এর আট বছর বয়স থেকে শুরু করে পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত হযরত আবু তালিবের দেহ , মন , প্রাণ ও সমাজ সংসারে নবী (সা.)-এর স্পর্শ কিংবা ছোঁয়া রয়েছে কত শত কোটি ? তাহলে সেই মহান আবু তালিবের মর্যাদা কত উর্দ্ধে তাকি নির্ণয়যোগ্য ?হে কানার দলেরা তোমাদের উপর বেশুমার লানত বর্ষিত হোকলা'নাতুল্লাহি আল্লাল কাজেবিন