পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শুধু ঝগড়া এবং মতভেদ --অফুরন্ত ঝগড়া ৷ এ ঝগড়ার কোন কুল-কিনারা নাই । দিন যত যায় , যুগ যত যায় - ঝগড়া শুধু বেড়েই চলে । কমার কোন লক্ষন নাই ।পাঠক ,বলছিলাম যে , সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ নিয়ে ।দুঃখজনক ঐতিহাসিক বাস্তবতা এটাই যে , ১৫০০ বছর পূর্বে রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরেই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে তৎকালীন মুসলিম উম্মতের মধ্যে বিভক্তির সূত্রপাত হয়েছিল । বিভক্তি নামক বিষবৃক্ষের দরুন আজ মুসলিম উম্মাহ শতভাগে বিভক্ত ।যদিও পবিত্র কোরআনে দ্বিধা-বিভক্ত না হওয়ার জন্য আল্লাহ অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ এবং হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন ।" --- যারা নিজেদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক নাই । তাদের ব্যাপার কেবল আল্লাহর অধীন । অতঃপর তিনি তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদের অবহিত করবেন ----- " ।সুরা - আনআম / ১৫৯ ।কিন্ত কে শোনে কার কথা !আজকের বাস্তবতা হল ---নামাজ আদায়ের পদ্বতি নিয়ে ঝগড়া ,আযান নিয়ে ঝগড়া ,তারাবীহ নিয়ে ঝগড়া ,রোজা নিয়ে ঝগড়া ,নবীকে (সাঃ) দূরুদ প্রেরন নিয়ে ঝগড়া ,বিয়ে নিয়ে ঝগড়া ,তালাক নিয়ে ঝগড়া ,দাফন করা নিয়ে ঝগড়াহজ্ব নিয়ে ঝগড়া ।মোটকথা , দ্বীনের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ঝগড়া এবং মতভেদ নাই ৷পাঠক ,বলতে পারেন - এর মূল কারন কি ?সমগ্র মুসলিম উম্মাহ যেন দলে দলে বিভক্ত না হয়ে যায় --- পবিত্র কোরআনৈ এই সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আদেশ থাকা সত্বেও মুসলিম উম্মাহ আজ কেন শতধা বিভক্ত ?এই দায় কার উপর বর্তায় ?সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন চলে আসে যে , রাসুলের (সাঃ) ওফাতেরর পরে কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে রাসুল (সাঃ) কোন ব্যক্তিবর্গের অধীনে বা জিম্মায় সোপর্দ করে গেলেন ?মুসলিম উম্মাহর একত্রিকরন বিষয় রাসুলের (সাঃ) পক্ষ সুস্পষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা ছিল কি ?পাঠক ,সহজভাবে সরল জবাবটা নিয়ে নিন ।বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুম মোতাবেক গাদীর এ খুমের ঘোষনা অনুযায়ী নবীজী (সাঃ) স্বয়ং নিজে তাঁর ওফাত পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত সর্বপ্রথম ইমাম এবং খলীফা হিসাবে হযরত আলী ইবনে ইমরান ওরফে আবু তালিবকে (আঃ) সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য নির্বাচিত করে দিলেন ।সেইসাথে কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির শাসনভর এবং হেদায়েতের জন্য হযরত আলীর (আঃ) বংশধারা থেকে পবিত্র এগারজন ইমামের (আঃ) নাম এবং পরিচয় বলে গেলেন ।আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করেছেন ।দুঃখজনক বাস্তবতা এটাই যে , হযরত মুসার (আঃ) অবাধ্য উম্মতের মত রাসুলের (সাঃ) উম্মত রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরে হযরত আলীকে (আঃ) অবজ্ঞাভরে দূরে সরিয়ে দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন "সাহাবীগনের" নিকট থেকে ।মূলত বিভক্তি শুরু হল সেখান থেকে ।আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) অনুমোদনহীন অবৈধভাবে গঠিত বনু সকীফার খেলাফত পদ্বতিই হচ্ছে সকল ভষ্ট্রতার মূলভিত্তি ।১৫০০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল - মুসলিম উম্মত নিজেরা এখনও সঠিকভাবে জানতে পারল না যে , আসল ইসলামটা কি ?এক দল বলে - তুই কাফের , বাতিল ।আরেক দল বলে - তুই কাফের , বাতিল ।এটাই হল বাস্তবতা ।পাঠক ,লেখার শেষাংশে চলে এসেছি ।আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) নির্দেশ মোতাবেক ---"হে মানবসকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি ভারী জিনিষ (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি , যদি এই দুইটি আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । প্রথমটি হচ্ছে , পবিত্র কোরআন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আমার ইতরাত , আহলে বাইত (রক্তজ বংশধর) । নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিষ হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনই পরস্পর থেকে বিছিন্ন হবে না " ।#সূত্র - সহীহ তিরমিজি , খন্ড - ৬ , হাদিস - ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড - ১১ , হাদিস - ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড - ২ , পৃষ্ঠা - ১৮১ , ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ) , পৃষ্ঠা - ১২ , ১৩ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড - ৪ , পৃষ্ঠা - ৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম) / মাদারেজুন নাবুয়াত , খন্ড - ৩ , পৃষ্ঠা - ১১৫ (শায়খ আব্দুল হক দেহলভী) / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড - ১ , পৃষ্ঠা - ৫৬৬ / মুসলিম মুসনাদে আহমদ / নাসাঈ / কানযুল উম্মাল / তাফসীরে ইবনে কাছির / মিশকাতুল মাছাবিহ / তাফসীরে কবির / মুসনাদুল ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল , লেখক - আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ শাইবানী (মৃত্যু - ২৪১হি .), খন্ড ১৭ , পৃ - ১৭০, ২১১, ৩০৯, খন্ড ১৮, পৃ: নং ১১৪, খন্ড ২৩, পৃ: নং ১০ ও ১১, প্রকাশক - মুয়াসসিসাতুর রিসালা , প্রথম প্রকাশ - ২০০১ ইং / সহীহ মুসলিম, লেখক - মুসলিম বিন হাজ্জাজ নিশাবুরী (মৃত্যু - ২৬১হি.), খন্ড ৪, পৃ - ১৮৭৩, প্রকাশনা - দারুল ইহইয়াইত তুরাসিল আরারী, বৈরুত / সুনানুত তিরমিযি , লেখক - মুহাম্মাদ ইবনে ইসা আত্ তিরমিযি (মৃত্যু: ২৭৯হি.), খন্ড - ৫ম , পৃ - ৬৬৩, প্রকাশক - শিরকাতু মাকতাবাতি ওয়া মাত্ববায়াতি মুসত্বাফা আল বাবি আল হালাবি, মিশর , দ্বিতীয় প্রকাশ - ১৯৭৫ ইং / উসুদুল গ্বাবা ফি মা’রিফাতিস সাহাবা, লেখক - আবুল হাসান আলী ইবনে আবিল কারাম ইবনে আসির (মৃত্যু: ৬৩০হি.), খন্ড ২য় , পৃ - ১৩, প্রকাশক: দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা , প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৪ ইং / তাফসিরুল দুররিল মানসূর, লেখক - আব্দুর রাহমান ইবনে আবি বাকর জালালুদ্দীন সুয়ুতি (মৃত্যু: ৯১১হি.), খন্ড ৭ম, পৃ - ৩৪৯, প্রকাশক - দারুল ফিকর, বৈরুত / আল মুসান্নাফ ফিল আহাদিস ওয়াল আসার, লেখক - আবু বাকর আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (মৃত্যু: ২৩৫হি.), খন্ড ৬ষ্ঠ , পৃ - ৩০৯, প্রকাশক - মাকতাবাতুর রুশদ, বিয়াদ, প্রথম প্রকাশ - ১৪০৯ হিজরী / কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআ’ল, লেখক - আলাউদ্দীন আলী ইবনে হিসামুদ্দীন আল ক্বাদেরী আল মুত্তাক্বী আল হিন্দী (মৃত্যু: ৯৭৫হি.), খন্ড ১ম. পৃ - ১৭২, ১৮৬, ১৮৭, খন্ড ১৪তম , পৃ - ৪৩৫, মুয়াসসিসাতুর রিসালা , পঞ্চম প্রকাশ: ১৪০১হি . ১৯৮১ইং / তাফসীর ইবনে কাসির , লেখক - আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমার ইবনে কাসির আদ দামেশক্বী (মৃত্যু: ৭৭৪হি.), খন্ড ৭ম, পৃ - ১৮৫, প্রকাশক - দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৯হি., বৈরুত / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৭ম, পৃ - ৬৬৮, লেখক - আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমার ইবনে কাসির আদ দামেশক্বী (মৃত্যু: ৭৭৪হি.) , প্রকাশক - দারুল হিজরিন লিততাবায়া’ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযিহ ওয়াল ই’লান, প্রথম প্রকাশ - ১৪১৮হি. ২০০৩ ইং / সাহিহ ওয়া দ্বাইফুল জামিয়’ আস সাগ্বির ওয়া যিয়াদাতিহি , লেখক - আব্দুর রাহমান ইবনে আবি বাকর জালালুদ্দীন সুয়ুতি (মৃত্যু: ৯১১হি.), খন্ড ১ম, হাদিস নং - ৪২২২, ৪২২৩, ৫২৪৮, ৫৫৪৩ ও ৮২৩৯ / মাজমাউয যাওয়াইদ, লেখক - আবুল হাসান নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবি বাকরইবনে সুলাইমান আল হাইসামী (মৃত্যু: ৮০৭হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ১৭০, খন্ড ৯ম, পৃ - ১৬৩-১৬৫, খন্ড ১০ম, পৃ - ৩৬৩, প্রকাশক - মাকতাবাতুল ক্বুদসী, প্রকাশকাল: ১৪১৪হি. ১৯৯৪ইং / আল মুসতাদরাক আস সাহিহাইন, লেখক - আবু আবদিল্লাহ আল হাকিম মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল্লাহ আন নিশাবুরী (মৃত্যু: ৪০৫হি.), খন্ড ৩য় , পৃ - ১১৭, ১১৮, ১৬০, প্রকাশক - দারুল কুতুব আল ইলমিয়্যা, প্রথম প্রকাশ - ১৪১১হি. ১৯৯০ইং, বৈরুত / হিল্লিইয়্যাতুল আওলিয়া ওয়া ত্বাবাক্বাতুল আসফিয়া, লেখক - আবু নাঈম আহমাদ ইবনে আবদিল্লাহ আল ইসফাহানী (মৃত্যু: ৪৩০হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ৩৫৫, প্রকাশক - আসসাআদাহ্ বি-জাওয়ারি মুহাফিযাতি মিসর, প্রকাশকাল ১৩৯৪হি. ১৯৭৪ইং / আস সাওয়ায়িক্বুল মুহরিক্বাহ , লেখক - আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হাজার আল হাইসামী (মৃত্যু: ৯৭৪হি.), খন্ড ১ম , পৃ - ১০৯, খন্ড ২য় , পৃ- ৩৬১, ৩৬৮, ৪৩৮, ৬৫২, ৬৫৩, প্রকাশক -- মুয়াসসিসাতুর রিসালা, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৮হি./ ১৯৯৮ ইং, বৈরুত ।আজ যদি পবিত্র আহলে বাইতের পবিত্র বার ইমামগন (আঃ) থেকে ইসলাম নেওয়া হত তাহলে এই ঝগড়া থাকত না ।মোবাহেলার ময়দানে অমুসলিম সম্প্রদায় শুধুমাত্র নবীজীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বায়েতগনকে (আঃ) সম্মান করেছিল বিধায় আজও তারা পুরো পৃথিবীতে সম্মানিত ।পক্ষান্তরে ,মোরা মুসলিম উম্মত - গাদীর এ খুম পরিত্যাগ করে সাহাবা কতৃক সৃষ্ট অবৈধ বনু সকীফাকে আঁকড়ে ধরাতে আজ পৃথিবীতে আমরা সর্বনিম্ন লজ্জাবিহীন আর তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হাস্যকর জাতিতে পরিনত হয়েছি ।আজ যদি মুসলমানগন নবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতগন (আঃ) থেকে ইসলাম গ্রহণ করত তাহলে আজ মুসলমানের মর্যাদা আল্লাহপাক সব জাতির উপরে রাখতেন ৷যেহেতু আসল পরিত্যাগ করে ভূয়া ভন্ডদের কাছ থেকে "নকল ইসলাম" ধারন করেছি - তাই স্বাভাবিক ভাবে নকল ও ভূয়া সেবনে যা হয় আমাদের মুসলিম জাতির ঠিক তাই হয়েছে ।যেমন কর্ম তেমন ফল !সেই জন্য আজ পৃথিবীর সমস্ত জাতির কাছে আমরা তথা বনু সকীফার অনুসরনকারী মুসলমান একটা সার্কাস জাতিতে পরিনত হয়েছি ।সকলে আমাদের নিয়ে খালি ফুটবল খেলে । আমাদের জীবনটা দুনিয়ার সকলের লাথি খেতে খেতেই গেল !পাঠক ,এটা কিন্ত আমার একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত মতামত ।আমার এই মতামতে কেউ দুঃখ পেয়ে থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন , প্লীজ।ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী ,সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম ,আল্লাহুম্মাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ)।- সংগ্রহ -আমি মুশকিল কোশা মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)'র দলে।

"রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে, সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে, আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে, সে যেন আমার পর আমার আহলে বাইত'র ("আলী,ফাতেমা, হাসান,হোসাইন) অনুসরণ করে। কারণ তারা আমার সর্বাধিক আপন এবং তারা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে, আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে।।ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা তাঁদের (আহলে বাইত'র) শ্রেষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে কর্তন করে। আল্লাহ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করুন।"সূত্র : কানজুল উম্মাল - খন্ডঃ-৫ পৃষ্ঠাঃ- ২১৭ / মুসনাদে হাম্বাল - খন্ডঃ-৫ হাঃ পৃষ্ঠাঃ- ৯৪ / মুস্তাদরাক হাকেম - খন্ডঃ- ৩ পৃষ্ঠাঃ-১২"।।

ইসলামের পুরনো ক‍্যান্সারপ্রচারে মুন্নি আক্তারকিছু জ্ঞানপাপী আলেম শতশত বছর ধরে অবান্তর হাদিসের ভিত্তিতে দুশ্চরিত্র মুয়াবিয়াকে সাহাবী বানিয়ে রেখেছে৷যদিও কুরআন কারা সাহাবী হিসেবে গণ্য হবে তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তারপরও তারা নির্লজ্জের মত ফোর্থ হ্যান্ড হাদীস দেখিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে! এবার দেখা যাক কুরআন কি বলছে?'সূরাহ তওবাহ : আয়াত ১০০وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَاتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُم جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। The vanguard (of Islam)- the first of those who forsook (their homes) and of those who gave them aid, and (also) those who follow them in (all) good deeds,- well- pleased is Allah with them, as are they with Him: for them hath He prepared gardens under which rivers flow, to dwell therein for ever: that is the supreme felicity.সূরাহ হাদীদ : আয়াত ১০وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُوْلَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَى وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। যদিও আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন তবে তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। And what cause have ye why ye should not spend in the cause of Allah.- For to Allah belongs the heritage of the heavens and the earth. Not equal among you are those who spent (freely) and fought, before the Victory, (with those who did so later). Those are higher in rank than those who spent (freely) and fought afterwards. But to all has Allah promised a goodly (reward). And Allah is well acquainted with all that ye do. উপরের আয়াত দুটিতে সাহাবি হওয়ার জন্য দুটি যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে-০১. রাসুল করিম সাঃ এর প্রথম দিকের সঙ্গী হতে হবে০২.মক্বা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহনকারী হতে হবে৷মুয়াবিয়ার উপরোক্ত দুটি যোগ্যতার একটিও নেই৷যে সকল দুর্বল হাদিস দিয়ে মুয়াবিয়ার গ্রহনযোগ্যতা দেয়া হচ্ছে সেই হাদীস গুলির চেয়ে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য হাদীসে স্বয়ং রাসুল করিম সাঃ এর মুখে মুয়াবিয়ার সমালোচনা আমরা দেখতে পাই৷# সহিহ মুসলিম ,হাদীস নম্বর - ৬২৯৮ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত আছে যে, "আমি একদিন ছেলেদের সাথে খেলা করছিলাম, এমন সময় রাসুল করিম সাঃ কে আসতে দেখলাম৷আমি একটি দরজার আড়ালে চলে গেলাম৷৷কিন্তু রাসুল করিম আমার কাঁধ ধরে আমাকে ডেকে আনলেন এবং মুয়াবিয়াকে ডাকতে বললেন৷আমি ডাকতে গিয়ে তাকে ভোজনে ব্যস্ত দেখতে পেলাম এবং ফিরে আসলাম৷রাসুল করিম আবার আমাকে যেতে বললেন ,আমি আবার গেলাম এবং মুয়াবিয়াকে ডাকলাম কিন্তু সে তখনও ভোজনে ব্যাস্ত ছিল৷আমি ফিরে এসে রাসুল করিমকে এটা জানানোর পর তিনি বল্লেন 'আল্লাহ যেন তার পেট কখনও পূর্ণ না করেন' !"**এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হানবাল রহ. এবং ইমাম হাকিম রহ. দ্বারা পরিক্ষীত এবং স্বীকৃত৷# আল তাবারী (৮ম খন্ড) , পৃষ্ঠা নং ১৮৬, দার আল মারিফ পাবলিকেশন, মিশর৷এই হাদীসটি দুজন সাহাবার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে— হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত আছে, "আমি রাসুল করিম সাঃ কে বলতে শুনেছি যে " মুয়াবিয়ার মৃত্যু ইসলামের পথে হবেনা"!হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা.হতে বর্ণিত আছে, " আমি রাসুব করিম সাঃ কে বলতে শুনেছি ' মৃত্যুর সময় মুয়াবিয়া আমার উম্মত হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবেনা'!"** এমন সহীহ হাদীস থাকার পরও তারা কেন চার নাম্বার হাদীস নিয়ে মেতে আছে তা জ্ঞানীজনদের না বোঝার কথা নয়৷ইসলামের ইতিহাসে প্রথম অন্তঃকোন্দল বা ফিৎনার জনক এই দুশ্চরিত্র মুয়াবিয়া৷ ৬৭৫ হিজরী সালের মে মাসে হযরত আলী কা. সাথে এই যুদ্ধ শুরু হয়৷এখান থেকেই মুয়াবিয়া সুক্ষ কৌশলে মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নী বিভক্তির সূত্রপাত ঘটায়৷আজ মুসলমান শতভাগে বিভক্ত!মুয়াবিয়া ইসলামী খিলাফতের বিলুপ্তি ঘটিয়ে নিজের কুপুত্র এজিদ কে আরব হেজাজের রাজা মনোয়ন করার মাধ্যমে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করে৷ রাজতন্ত্রের মাধ্যমেই যুগেযুগে অযোগ্য ব্যক্তিদেরকে মুসলমানদের শাসক হবার সুযোগ তৈরী করে দেয়া হয়েছিল৷ এজিদ হতে শুরু করে মক্বার গভর্নর হুসেন শরীফ আর আজকের সৌদ পরিবারের মত অযোগ্য শাসকরা বরাবরই এই রাজতন্ত্রের ছত্রছায়ায় থেকেই লালিত পালিত হয়েছে৷ মুয়াবিয়া নিজেকে লজ্জায় কোনোদিন 'খলিফা' দাবী করতে পারে নাই৷শেষ পর্যন্ত তাকে 'আমীর' উপাধি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে৷ইসলামের ঘরের অভ্যন্তরের শত্রু হচ্ছে মুয়াবিয়া আর এজিদ গং এবং তাদের পা চাটা কিছু জ্ঞানপাপী আলেম৷এদের নির্মূল করতে পারলে মুসলমানদের ঐক্য ফিরে আসতে পারে৷এরা যতদিন মুসলমানদের অভ্যন্তরে আছে ততদিন মুসলমানরা কখনোই এক হতে পারবেনা৷ মুসলমানদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক

নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর শুভ জন্মপর্ব ৯প্রচারে মুন্নি আক্তারএ ধরনের ঘটনাবলী হযরত ইবরাহীম, হযরত মূসা, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো মহান নবীদের জন্মগ্রহণের সময় সংঘটিত হওয়া তাঁদের নবুওয়াত ও রিসালাতের যুগে ঐ সব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়; আর এ সব কিছু আসলে মহান আল্লাহ্‌র ঐশী কৃপা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে এবং মানব জাতির হেদায়েত ও তাদেরকে মহান নবীদের দীন প্রচার কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই সংঘটিত হয়েছে।মহানবীর জন্মের দিন, মাস ও বছরসাধারণ সীরাত রচয়িতাগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, মহানবী হাতির বছর (عام الفيل) অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কারণ, তিনি অকাট্যভাবে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ অথবা ৬৩ বছর। অতএব, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।অধিকাংশ ঐতিহাসিক ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মহানবী (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে মতভেদ আছে। শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, মহানবী ১৭ রবিউল আউয়াল, শুক্রবার ফজরের সময় (ঊষালগ্নে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর আহলে সুন্নাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে তিনি ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।[4]এ দু’অভিমতের মধ্যে কোনটি সঠিক?একটি দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ইসলাম ধর্মের মহান নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস, বরং আমাদের অধিকাংশ ধর্মীয় নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস সুনির্দিষ্ট নয়। এ অস্পষ্টতার কারণেই আমাদের বেশিরভাগ উৎসব ও শোকানুষ্ঠানের তারিখ অকাট্যভাবে জানা যায় নি। ইসলামের পণ্ডিত ও আলেমগণ বিগত শতাব্দীগুলোতে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এক বিশেষ পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করতেন। কিন্তু কি কারণে তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ খুব সূক্ষ্মভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি তা (আজও) জানা যায় নি।আমি ভুলব না ঐ সময়ের কথা যখন ভাগ্যবিধি আমাকে (লেখক) কুর্দিস্তানের একটি সীমান্ত শহরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল; ঐ এলাকার একজন আলেম এ বিষয়টি (অর্থাৎ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সঠিক তারিখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ) উত্থাপন করেন এবং এজন্য তিনি অনেক দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আলেমদের উদাসীনতা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করার কারণে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘‘এ ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে কিভাবে তাঁদের মধ্যে এ রকম মতবিরোধ বিরাজ করা সম্ভব?’’ তখন আমি তাঁকে বললাম, ‘‘এ বিষয়টির কিছুটা সমাধান করা সম্ভব। আপনি যদি এ শহরের একজন আলেমের জীবনী রচনা করতে চান এবং আমরা ধরেও নিই যে, এ আলেম ব্যক্তি বেশ কিছুসংখ্যক সন্তান এবং অনেক আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন তাহলে উক্ত আলেমের শিক্ষিত সন্তান-সন্ততি এবং বিরাট পরিবার যারা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞাত তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর আত্মীয় যারা নয় তাদের থেকে কি আপনি তাঁর জীবনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংগ্রহ করবেন? নিশ্চিতভাবে আপনার বিবেক এ ধরনের কাজের অনুমতি দেবে না।মহানবী (সা.) জনগণের মধ্য হতে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর সময় তিনি উম্মাহ্‌ মাঝে তাঁর আহলে বাইত ও অন্যান্য সন্তান-সন্ততি রেখে গেছেন। তাঁর নিকটাত্মীয়গণের বক্তব্য : মহানবী (সা.) যদি আমাদের শ্রদ্ধেয় পিতা হয়ে থাকেন এবং আমরাও যদি তাঁর ঘরে বয়ঃপ্রাপ্ত এবং তাঁর কোলে প্রতিপালিত হয়ে থাকি, তাহলে আমরাই সকলের চেয়ে এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত যে, আমাদের বংশের প্রধান (মহানবী) অমুক দিন অমুক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এমতাবস্থায় তাঁর সন্তান-সন্ততি ও বংশধরদের বক্তব্য উপেক্ষা করে দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যকে কি তাঁদের বক্তব্যের ওপর প্রাধান্য দেয়া সম্ভব হবে?’’উপরোল্লিখিত আলেম আমার এ কথা শোনার পর মাথা নিচু করে বললেন, ‘‘আপনার কথা আসলে أهل البيت أدرى بما في البيت (ঘরের লোক ঘরে যা আছে সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত)- এ প্রবাদ বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থের অনুরূপ। আর আমিও মনে করি যে, মহানবী (সা.)-এর জীবনের যাবতীয় বিশেষত্ব ও খুঁটিনাটি দিক সম্বন্ধে শিয়া ইমামীয়াহ্ মাজহাবের বক্তব্য যা তাঁর সন্তান-সন্ততি, বংশধর ও নিকটাত্মীয়দের থেকে সংগৃহীত তা সত্যের নিকটবর্তী।’’ এরপর আমাদের মধ্যকার আলোচনা অন্যান্য বিষয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো যা এখানে উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই।

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৭[আয়াতুল্লাহ জা’ফর সুবহানী প্রণীত ‘ফুরুগে আবাদিয়াত’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘চিরভাস্বর মহানবী (সা.)’-এর প্রথম খণ্ড থেকে সংকলিত।][1]. সূরা ত্বাহা : ৪১-৪৩।[2]. সূরা মরিয়ম : ১৮-৩২।[3]. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫; বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৪৮; সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬৪।[4]. আল ইমতা’ গ্রন্থের ৩ পৃষ্ঠায় মাকরীযী মহানবীর জন্মদিন, মাস ও সাল সংক্রান্ত যত অভিমত আছে সেগুলো উল্লেখ করেছেন।[5]. কাফী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৩৯।[6]. একমাত্র তুরাইহী ‘মাজমাউল বাহরাইন’ গ্রন্থে ‘শারক’ (شرق) ধাতু সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি নকল করেছেন যার পরিচয় অজ্ঞাত।[7]. মহানবী (সা.) এ সত্যটি নিম্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,و إنّ الزّمان قد اشتداز كهيئته يوم خلق السّماوات و الأرض ‘‘যে বিন্দু থেকে সময়ের সূচনা হয়েছিল সেখানেই (আজ) তা (সময়) ফিরে গেল। আর ঐ বিন্দুটি হলো ঐ দিন যেদিন মহান আল্লাহ্ আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন।’’[8]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ২৫২।[9]. সীরাতে হালাবী, পৃ. ৯৭।[10]. অন্য এক দল লোকের মতে মহানবীর নাম নয়, বরং এগুলো পবিত্র কোরআনের হুরুফে মুকাত্তায়াতের অন্তর্গত।[11]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩; কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, طه (ত্বাহা) ও يس (ইয়াসীন) শব্দদ্বয় মহানবীর নামসমূহের অন্তর্গত।[12]. انسان العيون في سيرة الأمين و المأمون গ্রন্থের ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৩-১০০।[13]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৮৪; ইবনে শাহরআশুব প্রণীত মানাকিব, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৯।[14]. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩।[15]. বিহারুল আনওয়ার, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৪৪২।[16]. সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১‘‘এক মহান তারা ঝিলমিল করল ও সভার মধ্যমণি হলোআমাদের ব্যথিত অন্তরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুহৃদ হলো।’’জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।মহান মনীষীদের শৈশবপ্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গভীরভাবে অধ্যয়ন করা উচিত। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এতটা মহান ও ব্যাপক যে, তাঁর জীবনের সমস্ত অধ্যায়, এমনকি তাঁর শৈশব ও মাতৃস্তন্য পান করার সময়কালের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। যুগের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গ, সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতার কাফেলার অগ্রবর্তীদের জীবন সাধারণত আকর্ষণীয়, সংবেদনশীল ও আশ্চর্যজনক পর্যায় ও দিক সম্বলিত। তাঁদের জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রূণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। আমরা বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর। আর আমরা যদি এ ধরনের বিষয় বিশ্বের সেরা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেনে নিই তাহলে মহান আল্লাহ্‌র প্রিয় নবী ও ওলীদের ক্ষেত্রে এতদসদৃশ বিষয়াদি মেনে নেয়াও খুব সহজ হবে।পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোশে্ছদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহ্‌র ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : ‘‘আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।’’মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল, ‘‘আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।’’[1]হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ, জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে, ‘‘ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।’’ মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘‘কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।’’ আমাদের দূত তখন বললেন, ‘‘এ কাজ মহান আল্লাহ্‌র কাছে অত্যন্ত সহজ।’’ পরিশেষে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশে ঈসা মসীহ্‌ নূর হযরত মরিয়মের গর্ভে স্থাপিত হলো। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুর গাছের দিকে নিয়ে গেল। তিনি তাঁর নিজ অবস্থার ব্যাপারে দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন। আমরা বললাম, ‘‘খেজুর গাছ বাঁকাও, তাহলে তাজা খেজুর নিচে পড়বে।’’ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, ‘‘যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?’’ তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন, ‘‘আমি মহান আল্লাহ্‌র বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম পর্ব ৬মহানবীর স্তন্যপানের সময়কালনবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চি‎হ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্‌র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্‌র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

#ইন্না শা-নি’আকা হুওয়াল আবতার’ #পর্ব-১যে কেউ যখন কোন মিথ্যা বলে তার কোন না কোন কারন থাকে, জানি না মাওলা মুহাম্মদ সঃ কে চল্লিশ বছরে নবী বলার পিছনে কি কারন থাকতে পারে! হয়তো কারন টা এমন যে কেউ যখন তাকে ( যে মিথ্যা বলবে) জিজ্ঞেস করে যে তোমার বুজুর্গ তো চল্লিশ বছর পর্যন্ত মুর্তিপুজা করেছে! সে তোমার রাহবার হয় কিভাবে? তখন তাকে বাধ্য হয়েই মিথ্যা বলতে হয় যে, “চল্লিশ বছর তো হুজুরও নবী ছিলেন না!” এটা তার মুর্তিপুজারী রাহবার কে বাচানোর চেষ্টা। আমি তাকে দোষ দিই না। আশ্চর্য হই তখন যখন ওরাই আবার “ঈদে মিলাদুন্নবী” পালন করে। কেন ভাই?? আপনাদের হিসাবে তো মুহাম্মদ সঃ জন্মের সময় নবী ছিলেনই না! তাহলে কার জন্মদিন পালন করেন?ঈদ ই মিলাদুন্নবী তাদের জন্য, যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ্ সর্বপ্রথমে মুহাম্মদের নূর সৃষ্টি করেছেন। যারা বিশ্বাস করে আউয়ালুনা মুহাম্মদ, আখেরুনা মুহাম্মদ, আওসাতুনা মুহাম্মদ, কুল্লানা মুহাম্মদ।“ যারা বিশ্বাস করে, এমনকি জিব্রাঈলের জন্মের আগেও মাওলা মুহাম্মদ নবীই ছিলেন। যারা এটা বিশ্বাস করেন ‘আদম কে সৃস্টির আগেও আমি নবীই ছিলাম। অনেকেই দাবী করতে পারেন আমি যে রেওয়ায়েত গুলি উল্লেখ করলাম সেগুলি জঈফ, সে জন্য শুধু রেওয়ায়েত না আয়াতও দিলাম সুরা আন’আমের ১৬২-১৬৩ আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ “আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।”“তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং আমি এতেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম মুসলমান।” দেখুন তো কে প্রথম মুসলিম? তাইলে ইব্রাহীম আঃ? বা আদম আঃ??তারাও তো ইসলামেরই নবী ছিলেন! তাহলে তারা কেন প্রথম মুসলিম নন? যাই হোক যারা এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী, তাদেরকে জানাই ঈদে মিলাদুন্নবীর শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।লিখতে বসেছি সেই সত্ত্বার জন্মদিন এর কথা যিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন,। সেদিন আমাকে ইনবক্সে এক ভাই বললো আপনাদের ইতিহাস শিয়াদের বানানো, আমাদেরটার চেয়ে আলাদা। আমি বললাম কেন? বললো আপনারা সতেরোই রবিউল আউয়াল রসুলের বেলাদত বলেন, ১২ কে মানেন না! আমি বললাম আমি কি মুনাফিক যে “১২ কে অস্বীকার করবো! আমি তো এই দুয়া করি যে সবাই ১২ ই মানুক ( আল্লাহই জানে কি বুঝলো) ১২,১৭ এগুলি তারিখ, তারখের হিসাবের আগেও আমার মাওলা ছিলেন! রবিউল আউয়াল চাদের মাস, চাঁদ ছিলোনা কিন্তু আমার মাওলা ছিলেন। চাঁদ চলে সুর্যের আলো দ্বারা, সুর্য ছিলোনা, আমার মাওলা ছিলেন, সুর্য তো দুরের কথা সৌরজগতের কিছুই ছিলোনা আমার মাওলা ছিলেন, এবং নবীই ছিলেন। যারা ১২ ই রবিউল আউয়াল কে বেলাদত দিবস মানেন তাদের সন্মানে আজ থেকে লিখা শুরু করলাম মাওলা চাইলে চলবে ১৭ পর্যন্ত।

আল্লাহর কর্তিক মনোনীত ইমাম ও তার দায়িত্বআমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, রাসূল (সা.) এর ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির দু’ধরনের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে। যথা :একটি বাহ্যিক শাসন অপরটি আধ্যাত্মিক শাসন।বাহ্যিক শাসনঅর্থাৎ শাসন পরিচালনা, আইনের বাস্তবায়ন, অধিকার সংরক্ষণ, ইসলামী রাষ্ট্রের সংরক্ষণ ইত্যাদি।এক্ষেত্রে ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির কাজ অন্যান্য শাসকদের মতই, তবে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কখনই ইসলামের আইন ও বিচারবিধির ওপর পূর্ণ জ্ঞান ব্যতীত সম্ভব নয়।আধ্যাত্মিক শাসনআধ্যাত্মিক শাসন এই অর্থে যে, ইমাম বা খলিফা তথা প্রতিনিধির কর্তব্য হচ্ছে সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল সমস্যার সমাধান দান ও মানুষের হেদায়েতের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি (যা কোন কারণে বলা হয় নি) মুসলমানদের নিকট তুলে ধরা।এক্ষেত্রে ইমাম বা খলিফা, একজন শাসকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অবশ্যই ধর্মীয় বিধি-বিধান ও কোরআনের তাফসীর বা ব্যাখ্যাও জনগণের সামনে বর্ণনা করবেন যাতে ইসলামের চিন্তা-ধারাকে যে কোন ধরনের বিচ্যুতি থেকে রক্ষা এবং বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ-সংশয় হতে মুক্ত রাখতে পারেন। সুতরাং ইমাম বা খলিফাকে অবশ্যই রাষ্ট্রের অধিবাসীদের মধ্যে ইসলামের ভিত্তি, মানদণ্ড ও শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জ্ঞানী ও বিজ্ঞ হতে হবে। অর্থাৎ সবার চেয়ে বেশি মহানবী (সা.)-র প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের ঝর্ণা ধারা হতে পানি পান এবং তাঁর থাকাকালীন সময়ে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান ও নৈতিক লাভবান হওয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী হতে হবে। সুতরাং ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য এরূপ ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য যিনি রাসূল (সা.) এর পবিত্র অস্তিত্ব থেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করেছেন। সেই সাথে তিনি একদিকে ইসলামের জন্য অগ্রবর্তী ভূমিকা পালনকারীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হবেন অন্যদিকে সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে নিজের স্বার্থের উপর মুসলমানদের ও ইসলামের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বীনকে রক্ষার জন্য আত্মোৎসর্গ করার দৃষ্টান্তের অধিকারী হবেন।ইমাম বা খলিফার শাসনকার্যের ক্ষেত্রে মুসলমানদের সমস্ত সম্পদের উপর তার শাসন কর্তৃত্বের অধিকার থাকবে বিশেষ করে খুম্স, যাকাত, রাজস্ব ও ভূমিকর, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা গণিমত, খনিজ ও অন্যান্য সাধারণ সম্পদ ইত্যাদি যা ইমাম বা খলিফার অধীনে থাকবে এবং ইমাম বা খলিফার দায়িত্ব হচ্ছে এগুলোকে কোন প্রকার অনিয়ম ছাড়াই জনগণের মাঝে বন্টন করা; অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণকর কোন কাজে লাগানো। সুতরাং তাকে অবশ্যই ইসলামের ন্যায় ভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত এবং দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত হতে হবে। এমনকি তাকে সংবেদনশীল বিশেষ মুহূর্তেও ভুল করা চলবে না অর্থাৎ তাকে জ্ঞান ও কর্ম উভয় ক্ষেত্রেই নির্ভুল হতে হবে। এমন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউই শনাক্ত করতে সক্ষম নয়। ঠিক এই দলিলের ভিত্তিতেই ইমামত তথা খেলাফত হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত যা তাঁর পক্ষ হতে উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকেই প্রদান করা হয়। তাই ঐ পবিত্র পদ মানুষের নির্বাচনের নাগালের বাইরে।অন্যভাবে বলা যায়, ইমামত তথা খেলাফত আল্লাহর মনোনীত একটি পদ যাতে মানুষের ভোটের কোন প্রভাব নেই। এ চিন্তার ভিত্তিতে আমরা রাসূল (সা.) এর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্ণিত দলিল ও ঐশী নির্দেশের উপর নির্ভর করবো এবং রাসূল (সা.) এর বাণীসমূহ যা এই সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করে তার ফলাফলের উপর সিদ্ধান্ত নিব।হযরত আলীর (আ.) খেলাফতের অকাট্য প্রমাণযে সকল প্রমাণাদি সরাসরি সুস্পষ্টভাবে আলীর (আ.) খেলাফত ও নেতৃত্বকে প্রমাণ করে তার সংখ্যা এত বেশী যে যদি আমরা তা উল্লেখ করতে চাই তাহলে শুধু সেগুলিই একটা বড় গ্রন্থে রূপ লাভ করবে। তাই এখানে সামান্য কয়েকটির উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থাকবো।প্রথমেই বলা দরকার যে, যদিও মুসলিম সমাজ রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের পর নেতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও রাসূল (সা.) এর প্রকৃত খলিফা হযরত আলীকে ২৫ বছর ধরে শাসনকার্য হতে দূরে রেখেছিল, কিন্তু এতে তাঁর সত্তাগত মর্যাদার মূল্য বিন্দু পরিমাণও কমে নি; বরং তারা নিজেরাই একজন নিষ্পাপ বা মাসুম নেতা হতে বঞ্চিত হয়েছে এবং উম্মতকেও তার সুফল থেকে বঞ্চিত করেছে। কারণ তাঁর মান-মর্যাদা বাহ্যিক খেলাফতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না, বরং খেলাফতের পদটি স্বয়ং আলীর (আ.) দায়িত্বভারের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তাই তাঁকে খেলাফত থেকে দূরে রাখার কারণে রাসূলের নীতি ও সুন্নতের অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।যখন আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) কুফা শহরে প্রবেশ করলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর সামনে এসে বলল : ‘আল্লাহর কসম, হে আমিরুল মু’মিনীন! খেলাফতই আপনার মাধ্যমে মর্যাদা লাভ করেছে ও সৌন্দর্য্যমন্ডিত হয়েছে, এমন নয় যে আপনি ঐ খেলাফতের মাধ্যমে মর্যাদা লাভ করেছেন। আপনার কারণেই এই পদটি মর্যাদার উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, এমন নয় যে আপনি ঐ পদের কারণে উচ্চস্তরে পৌঁছেছেন। খেলাফতই আপনার মুখাপেক্ষী হয়েছিল, আপনি তার প্রতি মুখাপেক্ষী ছিলেন না।’আহমাদ ইবনে হাম্বালের পুত্র আব্দুল্লাহ বলেছেন : “একদিন আমার পিতার নিকট বসেছিলাম। কুফার অধিবাসী একদল লোক প্রবেশ করলো ও খলিফাদের খেলাফত সম্পর্কে আলোচনা করলো; কিন্তু আলীর খেলাফত সম্পর্কে কথা-বার্তা একটু দীর্ঘায়িত হল। আমার পিতা মাথা উঁচু করে বললেন :‘তোমরা আর কত আলী ও তার খেলাফত (শাসনকর্তৃত্ব) সম্পর্কে আলোচনা করতে চাও? খেলাফত আলীকে সুশোভিত করে নি বরং আলীই খেলাফতকে সৌন্দর্য্য দান করেছেন’।”আমরা জানি যে, গাদীরের ঘটনা একটি প্রামাণিক ঘটনা যা ইসলামের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং বেলায়াতের (কর্তৃত্বের) হাদীসও مَنْ كُنْتُ مَولاهُ فَعَليٌّ مَوْلاهُ একটি তর্কাতীত বাণী যা রাসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। আর অর্থ ও ভাবধারার ক্ষেত্রেও কোন প্রকার অস্পষ্টতার চিহ্ন তাতে নেই; যারাই একটু আরবি ব্যকরণ সম্পর্কে জ্ঞাত ও বুদ্ধিবৃত্তিক এবং প্রচলিত সর্বগ্রাহ্য মাপকাঠি সম্পর্কে পরিচিত তারা যদি ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিতে পক্ষপাতহীনভাবে এই হাদীসটির প্রতি দৃষ্টিপাত করে তাহলে অবশ্যই স্বীকার করবে যে এই হাদীসটি আলী ইবনে আবী তালিবের (আ.) ইমামত, নেতৃত্ব ও প্রাধান্যতার কথাই প্রমাণ করে।এমন কি এই হাদীসটিকে যদি না দেখার ভান করি, তারপরেও আলী (আ.) এর ইমামত ও নেতৃত্ব সম্পর্কে শিয়া এবং সুন্নীদের গ্রন্থসমূহে যথেষ্ট পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা আমাদের নিকট বিদ্যমান।রাসূল (সা.) হতে এ সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরবো।মহানবী (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিনিধি বা খলিফারাসূল (সা.) বলেছেন : لكلِّ نَبيٍ وَصيٌّ وَ وٰارِثٌ وَ اِنَّ عَلياً وَصيّي وَ وٰارثيঅর্থাৎ ‘প্রত্যেক নবীরই ওসী বা প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী আছে এবং নিশ্চয়ই আমার প্রতিনিধি ও উত্তরাধি-কারী হল আলী।’আরো বলেন : أنٰا نَبِيُّ هٰذِهِ الاُمَّةِ وَ عَلِيٌّ وَصيّي في عِترَتي وَ اَهْلِ بَيتي وَ اُمَّتي مِنْ بَعديঅর্থাৎ ‘আমি এই উম্মতের (জাতির) নবী আর আলী হচ্ছে আমার ওসী বা প্রতিনিধি।’তিনি বলেন : عَليٌ أخي وَ وَزيري وَ وٰارثي وَ وَصيي وَ خَليفَتي في اُمَّتيঅর্থাৎ ‘আমার উম্মতের মধ্যে আলীই আমার ভাই, আমার সহযোগী উজীর, প্রতিনিধি, উত্তরাধিকারী ও আমার খলিফা।’এসব হাদীসে ওসী (প্রতিনিধি) ও উত্তরাধিকারী এ দু’টি শিরোনামকে বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ঐ দু’টির প্রত্যেকটিই আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) এর ইমামত বা খেলাফতকেই প্রমাণ করে।ওসী বা প্রতিনিধির অধিকারওসী বা প্রতিনিধি তাকেই বলা হয় যিনি সমস্ত দায়-দায়িত্বের ক্ষেত্রে অসিয়তকারীর অনুরূপ অর্থাৎ যা কিছুর উপর অসিয়ত-কারীর অধিকার ও ক্ষমতা ছিল ওসীরও তার উপর অধিকার ও ক্ষমতা রয়েছে এবং তা ব্যবহার করতে পারবেন তবে যে ক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্টভাবে তাকে অসিয়ত করবেন কেবল সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত তার ব্যবহারের অধিকার আছে।এই হাদীসে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে অসিয়তের ক্ষেত্রে দায়িত্বকে সীমিত করেন নি বরং তাঁকে নিঃশর্তভাবে ওসী বা প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন অর্থাৎ রাসূল (সা.) এর অধীনে যা কিছু আছে তার সবকিছুতে আলীর (আ.) অধিকার আছে আর এটাই হচ্ছে ইমামত বা খেলাফতের প্রকৃত অর্থ।উত্তরাধিকারীউত্তরাধিকারী শব্দটি শুনে প্রথম যে চিত্রটি মাথায় আসে তা হচ্ছে উত্তরাধিকারী ব্যক্তি উত্তরাধিকারী মনোনীতকারীর সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়; কিন্তু আলী (আ.) শরীয়তের দৃষ্টিতে রাসূল (সা.) এর সম্পদের উত্তরাধিকারী ছিলেন না। কেননা, ইমামিয়া ফিক্হের আইন অনুযায়ী মৃতের যখন কোন সন্তান থাকে, তখন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয় না (সন্তানগণ সম্পদের প্রথম পর্যায়ের উত্তরাধিকারী, তারপর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন)। আর আমরা জানি যে, রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় সন্তান রেখে গিয়েছিলেন। ফাতিমা যাহরা (সালামুল্লাহি আলাইহা) তাঁর (রাসূলের) ইন্তেকালের পরেও কমপক্ষে ৭৫ দিন জীবিত ছিলেন, তাছাড়াও রাসূল (সা.) এর স্ত্রীগণ, যারা সম্পদের এক অষ্টাংশের অধিকারী ছিলেন, তাঁদের অনেকেই জীবিত ছিলেন। যদি এ বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করি তবুও আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই। আর চাচাতো ভাই তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে উত্তরাধিকার পায় এবং আমরা জানি রাসূল (সা.)-এর চাচা আব্বাস তাঁর (সা.) মৃত্যুর পরও জীবিত ছিলেন। আর চাচা হচ্ছেন দ্বিতীয় পর্যায়ের উত্তরাধিকারী বা ওয়ারিশ।কিন্তু আহলে সুন্নাতের ফিকাহ্শাস্ত্র অনুযায়ী, স্ত্রী-গণকে তাদের অংশ (১/৮) দেওয়ার পর সম্পদকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, তার এক অংশ পাবে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) যিনি রাসূল (সা.)-এর একমাত্র কন্যা ছিলেন। অপর অংশটি যেটা তার অংশের বাইরে : সেটা তাঁর (সা.) চাচা আব্বাসের দিকে বর্তায়। সুতরাং, হযরত আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) কোনভাবেই রাসূল (সা.) এর সম্পদের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। অপরদিকে যেহেতু রাসূল (সা.) সরাসরি তাকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছেন তাই অবশ্যই এই হাদীসে ‘এরস বা উত্তরাধিকারের’ বিষয়টি সম্পদ ভিন্ন অন্যকিছুকে বুঝায়। স্বাভাবিকভাবেই এই হাদীসে উত্তরাধিকারের বিষয়টি রাসূল (সা.) এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক মর্যাদার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং আলী (আ.) রাসূল (সা.) এর জ্ঞান ও সুন্নাতের উত্তরাধিকারী। সেই দলিলের ভিত্তিতেই তিনি তাঁর (সা.) খলিফা বা প্রতিনিধি।রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) বলেছেন ‘তুমি আমার ভাই ও উত্তরাধিকারী।’ আলী (আ.) বলেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছ থেকে উত্তরাধিকারী হিসেবে কি পাব?’ রাসূল (সা.) বললেন : ‘ঐ সকল জিনিস যা আমার পূর্ববর্তী নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন।’ জিজ্ঞেস করলেন : ‘তাঁরা কি জিনিস উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন?’ তিনি বললেন : ‘আল্লাহর কিতাব ও নবীদের সুন্নাত।’ আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) নিজেও বলেছেন : ‘আমি রাসূল (সা.) এর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী।’ মু’মিনদের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আলী (আ.)রাসূল (সা.) যখনই এমন কোন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতেন যে, আলীর (আ.) সাথে যে কারণেই হোক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে বা যদি কেউ মূর্খতার বশে আলী (আ.) সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর নিকট অভিযোগ করতো, তিনি তাদেরকে বলতেন : مٰا تريدُونَ مِنْ عَلِيٍّ اِنَّ عَلياً مِنّي وَ أَنٰا مِنْهُ وَ هُوَ وليُّ كُلِّ مُؤمِنٍ بَعديঅর্থাৎ ‘আলীর সম্পর্কে তোমরা কি বলতে চাও সে আমার থেকে আর আমি তার থেকে। আমার পরে আলীই প্রত্যেক মো’মিনের ওয়ালী বা পৃষ্ঠপোষক (অভিভাবক)।’যদিও বাক্যে ব্যবহৃত ‘ওয়ালী’ শব্দটির অনেকগুলো আভিধানিক অর্থ রয়েছে, তারপরেও এই হাদীসে নেতা, পৃষ্ঠপোষক বা অভিভাবক ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহার হয় নি; এই হাদীসে ‘আমার পরে’ শব্দটিই উক্ত মতকে স্বীকৃতি প্রদান করে। কারণ, যদি ‘ওয়ালী’ শব্দের উদ্দেশ্য বন্ধুত্ব, বন্ধু, সাথী, প্রতিবেশী, একই শপথ গ্রহণকারী, এ ধরনের অর্থই হত তাহলে ‘রাসূল (সা.) এর পরে’ যে সময়ের প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত করা হয়েছে তার দরকার ছিল না, কারণ তাঁর (সা.) জীবদ্দশায়ই তিনি (আলী) ঐরূপ ছিলেন।রাসূল (সা.) এর বাণীতে আলী (আ.)-র পৃষ্ঠপোষকতা বা অভিভাবকত্বকে মেনে নেওয়ার সুফলের কথাযখনই সাহাবীগণ রাসূল (সা.) এর পরে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি ও ইসলামী রাষ্ট্র নেতা সম্পর্কে তাঁর (সা.) সাথে কথা বলতেন, তখনই তিনি (কোন কোন হাদীস অনুযায়ী দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন) এবং আলীর (আ.) পৃষ্ঠপোষকতা বা অভিভাবকত্ব মেনে নেওয়ার সুফল সম্পর্কে বক্তব্য দিতেন।তিনি বলতেন : إنْ وَلَّيْتُمُوهٰا عَلياً وَجَدْتُمُوهُ هٰادياً مَهْدياً يَسْلُكُ بِكُمْ عَلَى الطَّريقِ المستقيمঅর্থাৎ ‘যদি খেলাফতকে আলীর হাতে তুলে দাও, তাহলে দেখবে যে, হেদায়াত প্রাপ্ত ও হেদায়াতকারী হিসাবে সে তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করছে।’ أما وَالَّذي نَفْسي بِيَدِهِ لَئِنَ اَطاعُوه لَيَدْخُلُنَّ الجَنَّةَ اَجْمَعينَ اَكْتعينَঅর্থাৎ ‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যারা আলীর আনুগত্য করবে তারা সকলেই বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।’ اِنْ تسْتخْلِفُوا عَلياً ـ‌وَ لا اَرٰاكُمْ فَاعِلينَ‌ـ تجِدُوهُ هٰادياً مَهْدياً يَحْمِلُكُمْ عَليَ المَحَجَّةِ الْبَيْضٰاءঅর্থাৎ ‘যদি তোমরা আলীকে খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নাও, তাহলে (আমার মনে হয় না তোমরা এমনটি করবে) দেখবে যে, সে সঠিক পথপ্রাপ্ত ও পথপ্রদর্শক; তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।’আলী (আ.) এর জন্য নির্ধারিত খেলাফতরাসূল (সা.) হতে বর্ণিত আছে যে, শবে মেরাজে (ঊর্ধ্বগমনের রাতে) যখন আমি নৈকট্যের প্রান্ত সীমাতে পৌঁছলাম ও আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হলাম, তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ! আমি জবাব দিলাম: ‘লাব্বাইক (আমি হাজির)।’ তিনি বললেন : ‘তুমি কি আমার বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে দেখেছ যে, তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি আমার অনুগত?’আমি বললাম : ‘হে আল্লাহ তাদের মধ্যে আলীই সবচেয়ে বেশী অনুগত।’তিনি বললেন : ‘তুমি সত্যই বলেছ হে মুহাম্মদ! তুমি কি স্বীয় খলিফা বা প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছ যে তোমার পরে তোমার দায়িত্বগুলি পালন করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে যারা কোরআন সম্পর্কে জানে না তাদেরকে কোরআন শিক্ষা দিবে?’আমি বললাম : ‘হে আল্লাহ! আপনি নিজেই আমার জন্য প্রতিনিধি নির্ধারণ করে দিন।’ তিনি বললেন : ‘আমি আলীকে তোমার প্রতিনিধি হিসেবে নির্ধারণ করলাম; তুমি তাকে স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন কর।’একইভাবে রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য নবী নির্বাচন করেছেন ও প্রত্যেক নবীর জন্য নির্ধারণ করেছেন তার প্রতিনিধি। আমি হলাম এই জাতির নবী আর আলী হচ্ছে আমার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি বা ওসী।’উপরিউক্ত আলোচনা থেকে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হয় তা হচ্ছে মহানবী (সা.) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী সর্বোত্তম ও সুযোগ্য ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত বা খলিফা নির্ধারণ করেছেন। তাই তাঁর আনুগত্য করা সকল মুসলমানের জন্য ফরয। তাঁকে অমান্য করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করা। সে কারণে আমাদের সকলের দায়িত্ব হচ্ছে রাসূলে (সা.) এর নির্ধারিত ব্যক্তির অনুসরণ করা।প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কিপ্রচারে মোঃ আবু তুরাব

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভ জন্ম পর্ব ৬মহানবীর স্তন্যপানের সময়কালনবজাতক শিশু মুহাম্মাদ (সা.) কেবল তিনদিন মাতৃস্তন্য পান করেছিলেন। এরপর দু’জন মহিলা মহানবীর স্তন্যদানকারিণী দাই মা হওয়ার গৌরব লাভ করেছিলেন। তাঁরা হলেন :১. আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ্ : তিনি তাঁকে চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। তাঁর এ কাজের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মহানবী (সা.) ও তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজাহ্ তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।তিনি পূর্বে মহানবীর চাচা হযরত হামযাকেও স্তন্যদান করেছিলেন। নবুওয়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর মহানবী (সা.) আবু লাহাবের কাছ থেকে তাঁকে ক্রয় করার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আবু লাহাব তাঁকে বিক্রয় করতে সম্মত হয় নি। কিন্তু মহানবী তাঁকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সাহায্য করেছেন। মহানবী যখন খাইবার যুদ্ধ থেকে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি সাভীবার মৃত্যু সংবাদ পান এবং তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে গভীর শোক ও বেদনার চি‎হ্ন ফুটে ওঠে। তিনি সওবিয়ার সন্তান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করলেন যাতে করে তাঁর ব্যাপারে তিনি ইহ্সান করতে পারেন। কিন্তু তিনি জানতে পারলেন যে, সেও তার মায়ের আগে মৃত্যুবরণ করেছে।[13]২. হালীমাহ্ বিনতে আবি যূইযাব : তিনি ছিলেন সা’দ বিন বকর বিন হাওয়াযিন গোত্রীয়। তাঁর সন্তানদের নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আনীসাহ্ ও শাইমা; তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান মহানবীর সেবা-যত্ন করেছে। আরবের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গের প্রথা ছিল তারা তাদের নবজাতক সন্তানদের ধাত্রী মায়েদের কাছে অর্পণ করত। এ সব দাই সাধারণত শহরের বাইরে বসবাস করত। যাতে করে মরুর নির্মল মুক্ত হাওয়া ও পরিবেশে কুরাইশদের নবজাতক শিশুরা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালিত হয় ও সুস্থ-সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের অস্থি দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়, শহরের বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি ও কলেরা যা নবজাতক শিশুদের জন্য ছিল সবচেয়ে বিপজ্জনক তা থেকে নিরাপদ থাকে সেজন্য কুরাইশরা তাদের নবজাতক সন্তানদের ঐ সব দাইয়ের হাতে তুলে দিত। কুরাইশ নবজাতকগণ দাই মায়েদের কাছে (আরব গোত্রসমূহের মাঝে প্রতিপালিত হওয়ার কারণে) বিশুদ্ধ আরবী ভাষা রপ্ত করে ফেলত। বনি সা’দ গোত্রের দাইগণ এ ক্ষেত্রে খুবই খ্যাতি লাভ করেছিল। তারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পবিত্র মক্কায় আসত এবং কোন নবজাতককে পেলেই নিজেদের সাথে নিয়ে যেত।হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করার ৪ মাস পরে বনি সা’দের দাইগণ মক্কায় আসে এবং ঐ সময় ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল বলেই তারা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের সাহায্যের প্রতি আগের চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিল।কিছুসংখ্যক ঐতিহাসিক বলেন : কোন দাই হযরত মুহাম্মাদকে দুধ দিতে রাজী হয় নি। তারা ইয়াতিম নয় এমন শিশুদের অগ্রাধিকার দিচ্ছিল। কারণ ঐ সব শিশুর পিতারা দাইদের বেশি সাহায্য করতে পারবে। তাই তারা অনাথ শিশুদের নিতে চাইত না, এমনকি হালীমাও নবজাতক হযরত মুহাম্মাদকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন বলে কোন ব্যক্তিই তাঁর কাছে নিজ সন্তান অর্পণ করে নি। তিনি আবদুল মুত্তালিবের নাতিকেই অবশেষে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হালীমাহ্ তাঁর স্বামীকে বলেছিলেন, ‘‘চল, খালি হাতে বাসায় না ফিরে এ অনাথ শিশুকেই গ্রহণ করি। আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ্‌র দয়া আমাদেরকেও শামিল করবে।’’ ঘটনাচক্রে তাঁর অনুমানই সত্য হলো। যে সময় থেকে তিনি অনাথ শিশু মহানবীর লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন সেদিন থেকেই মহান আল্লাহ্‌র কৃপা ও অনুগ্রহ তাঁর জীবনকে ঘিরে রেখেছিল।[14]এ ঐতিহাসিক বর্ণনাটির প্রথম অংশ কাল্পনিক উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়। কারণ বনি হাশিম বংশের সুমহান মর্যাদা এবং আবদুল মুত্তালিব- যাঁর দানশীলতা, পরোপকার এবং অভাবী-বিপদগ্রস্তদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি আপামর জনতার মুখে মুখে ফিরত তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের কারণে দাইগণ তো নবজাতক শিশু মুহাম্মাদকে লালন-পালনের জন্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেই না, বরং তাঁকে নেয়ার জন্য তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এ কারণেই উপরিউক্ত ঐতিহাসিক বর্ণনার এ অংশ উপাখ্যান ব্যতীত আর কিছুই নয়।অন্য দাইয়ের কাছে হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে না দেয়ার কারণ ছিল তিনি স্তন্যদানকারী কোন মহিলার স্তন মুখেই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে হালীমাহ্ সাদীয়াহ্ এলে তিনি তাঁর স্তন মুখে দিয়েছিলেন। তাই তখন আবদুল মুত্তালিবের পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।[15]আবদুল মুত্তালিব হালীমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘তুমি কোন্ গোত্রের?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি বনি সা’দ গোত্রের।’’ আবদুল মুত্তালিব বললেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘হালীমাহ্।’’ আবদুল মুত্তালিব হালীমার নাম ও গোত্রের নাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, بخّ بخّ سعد و حلم. خصلتان فيهما خير الدهر و عز الأبد يا حليمة ‘‘বাহ্বা, বাহ্বা! হে হালীমাহ্ ! দু’টি যথাযথ ও সুন্দর গুণ; একটি সৌভাগ্য [সাআদাত (سعادت)- যা থেকে হালীমার গোত্রের নাম বনি সা’দ-এর উৎপত্তি)] এবং অপরটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা [হিলমুন (حلم)- যা থেকে হালীমাহ্ নামের উৎপত্তি)] যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুগের কল্যাণ এবং চিরস্থায়ী সম্মান ও মর্যাদা।’’প্রচারে মুন্নি আক্তার

ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাতইমাম হাসান (আ.) তৃতীয় হিজরীর ১৫ই রমজান মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। ৭ বছর পর্যন্ত স্বীয় পিতামহ হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর সান্নিধ্য লাভের পর পিতার সাথে ছিলেন প্রায় ৩০ বছর। আমিরুল মু'মিনীন (আ.) এর শাহাদাতের পর ১০ বছর যাবত ইমামতের দায়িত্ব পালন করেন এবং ৫০ হিজরীর ২৮শে সফর ৪৭ বছর বয়সে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের চক্রান্ত ও নির্দেশে স্বীয় স্ত্রী জো'দা বিনতে আশয়াস বিন কায়েস কর্তৃক বিষপ্রয়োগে শাহাদাত বরণ করেন।যেভাবে শহীদ হনসন্ধী করতে ইমাম হাসান (আ.) কে বাধ্য করে উমাইয়া সরকার তাদের বিভিন্ন কুউদ্দেশ্যে পৌঁছুতে সক্ষম হলেও তাদের অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়নে ইমাম হাসান (আ.) এর অস্তিত্ব ছিল বিরাট বাধা। মুয়াবিয়ার অন্যতম টার্গেট ছিল স্বীয় কুলাঙ্গার পুত্র ইয়াযিদকে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করা; যা ছিল ইমাম হাসান (আ.) এর সাথে কৃত সন্ধীর শর্ত বিরোধী। আর তাই সে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সে জানতো যে, যদি ইমাম (আ.) এর জীবদ্দশায় এ ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে হাসান (আ.) এর কঠোর বিরোধিতার মুখোমুখি হবে। এরই ভিত্তিতে সে যে কোন উপায়ে ইমাম (আ.) কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন আলোচনা ও পর্যালোচনার পর এ চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইমাম (আ.) এর স্ত্রী জো'দা বিনতে আশয়াসকেই তারা বেছে নেয়। আর তাই গোপনে জো'দার নিকট এক লক্ষ দিরহাম পাঠিয়ে তাকে এ প্রলোভন দেখানো হয় যে, যদি হাসানকে হত্যা করতে পারো তবে তোমাকে ইয়াযিদের সাথে বিয়ে দেওয়া হবে। আর জো'দাও মুয়াবিয়ার চক্রান্তে সাড়া দিয়ে ইমামের খাওয়ার পানিতে বিষ মিশিয়ে দেয় এবং ইমাম হাসান (আ.) ঐ বিষে আক্রান্ত হয়েই শাহাদাত বরণ করেন।ইমাম (আ.) এর ওসিয়তইমাম হাসান (আ.) কে বিষ প্রদানের পর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর ভাইয়েরা তার শিয়রে এসে উপস্থিত হয়ে যখন তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তখন ইমাম (আ.) বললেন : ‘আমি আখেরাতের দিনগুলোর প্রথম দিনে এবং দুনিয়ার দিনগুলোর শেষ দিনে অবস্থান করছি'। এরপর তিনি বললেন : ‘আমি আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিচ্ছি, তার কোন শরিক নেই এবং তিনিই একমাত্র উপাসনার যোগ্য। যে তার অনুসরণের পথ বেছে নেবে সে সফলকাম হবে, আর যে তার অবাধ্য হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। আর যে গুনাহ ও ভুলের পর তার নিকট তওবা করবে সে হেদায়েত লাভ করবে। হে হুসাইন! আমার লাশকে আমার নানা আল্লাহর রাসূল (স.) এর পাশে দাফন করো, তবে শর্ত হল যেন কেউ এতে বাধা না দেয়। যদি কেউ এ কাজে তোমাকে বাধা দেয় তবে তুমি যেন দৃঢ়তা দেখিও না। কেননা এ কাজের জন্য একটি ফোঁটাও রক্ত ঝরুক আমি তা কখনই চাই না।'ইমাম হাসান (আ.) এর ওপর ক্রন্দনের ফজিলত ও প্রভাবইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন : ‘যখন আমার সন্তান হাসান মুজতাবাকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হবে তখন জমীন ও আসমান তার জন্য শোক পালন করবে। জেনে রাখো আমার সন্তান হাসানের জন্য ক্রন্দন ও শোক প্রকাশের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যে ব্যক্তি তার উপর বয়ে যাওয়া মুসিবতের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করে, যেদিন সকলের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে সেদিন তার চোখে দৃষ্টি শক্তি থাকবে এবং যেদিন সকলের অন্তর ভারাক্রান্ত থাকবে সেদিন তার অন্তর সকল দুঃখ-বেদনা হতে মুক্ত থাকবে। আর যে ব্যক্তি (জান্নাতুল) বাকীতে তার কবর যেয়ারত করবে, পুলে সিরাতে যখন সকলের পা নড়বড়ে অবস্থায় থাকবে তখন তার পা থাকবে দৃঢ়।'জুনাদাহ'র প্রতি ইমাম হাসান (আ.) এর ওসিয়তইমাম হাসান (আ.) কে বিষ প্রয়োগের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে জুনাদাহ বিন আবি উমাইয়া তার নিকট আসলো। কুশল বিনিময়ের পর ইমাম (আ.) কে বললো: হে আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তান আমাকে নসিহত করুন। ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) তার উদ্দেশ্যে বললেন : ‘হে জুনাদাহ, মৃত্যু তোমার দরজার কড়া নাড়ার পূর্বেই যে সফর তোমার সামনে রয়েছে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। জেনে রাখো, তুমি সর্বদা দুনিয়ার সন্ধানে আর মৃত্যু সর্বদা তোমার সন্ধানে। যে দিনটি এখনও এসে পৌঁছায়নি সেদিনের দুঃখকে যে দিনে তুমি অবস্থান করছো তার উপর চাপিয়ে দিও না... জেনে রাখো, পৃথিবীর হালাল সম্পদের জন্য রয়েছে হিসাব আর হারাম সম্পদের জন্য রয়েছে শাস্তি এবং সন্দেহভাজন সম্পদের জন্য রয়েছে ইতাব ও তিরস্কার... নিজের দুনিয়ার জন্য এমনভাবে চেষ্টা করো যেন তুমি সর্বদা সেখানে অবস্থান করবে এবং নিজের আখেরাতের জন্য এমনভাবে কাজ করো যেন আগামীকালই তোমার মৃত্যু হবে। যদি তুমি সম্মান ও... এর সন্ধানে রয়েছো তবে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার হীনতা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে আল্লাহর আনুগত্য করাকে নিজের উপর আবশ্যক করে নাও।'ইমাম হাসান (আ.) এর শেষ ক্রন্দনবর্ণিত হয়েছে যে, যখন বিষ ইমাম হাসান (আ.) এর সমস্ত দেহে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করলো এবং তিনি মূমূর্ষ অবস্থা অতিক্রম করছিলেন তখন হঠাত তার চোখ অশ্রুসিক্ত হল। উপস্থিত সকলে জিজ্ঞেস করলেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তান, আল্লাহর নবী (স.) এর নিকট আপনার যে মর্যাদা ও স্থান রয়েছে এবং এত ইবাদত ও আল্লাহর আনুগত্যের পরও এমন মূহুর্তে ক্রন্দন করছেন? তিনি (আ.) বললেন : ‘আমি দু'টি জিনিষের জন্য ক্রন্দন করছি; প্রথম, কেয়ামতের দিনের ভীতির বিষয়ে যা সত্যিই কঠিন দিন। দ্বিতীয়, আমার আত্মীয়-স্বজনদের হতে পৃথক হওয়ার কারণে; এটাও কঠিন কাজ।'ইমাম হাসান (আ.) হতে বর্ণিত কতিপয় অমীয় বাণীসালামের গুরুত্ব :ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সালাম প্রদানের পূর্বে কথা শুরু করে তার কথার উত্তর দিও না।'জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘নিরবতা, ত্রুটি গোপন রাখে এবং সম্মান রক্ষা করে। যে এ গুণের অধিকারী সে সর্বদা প্রশান্তিতে থাকে এবং তার সহচর ও তার সাথে ওঠাবসাকারীরাও তার হতে নিরাপদে থাকে।'শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্য ও কল্যাণ :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘যে কল্যাণের মাঝে কোন মন্দ থাকে তা হল : নেয়ামতের বিপরীতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও বিপর্যয়ের সময় ধৈর্য্যধারণ করা।'বুদ্ধিবৃত্তির পূর্ণতা :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘জনগণের সাথে উত্তম ব্যবহার, বুদ্ধিবৃত্তির পূর্ণতার পরিচয়'।ওয়াজিবের জন্য মুস্তাহাব কর্ম ত্যাগ করা :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘যখন মুস্তাহাব ইবাদাত ও কর্মসমূহ, ওয়াজিব ইবাদাত ও কর্মসমূহের ক্ষতিসাধন করে তখন তা ত্যাগ করো।'আধ্যাত্মিক বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান :তিনি (আ.) বলেছেন : ‘আমি ঐ সকল ব্যক্তিদের বিষয়ে আশ্চর্য হই যারা নিজেদের শরীরের খাদ্যের বিষয়ে চিন্তা করে কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়াদি ও আত্মার খাদ্যের বিষয়ে চিন্তা করে না। ক্ষতিকর খাদ্য থেকে নিজের পেটকে বাঁচিয়ে রাখে, কিন্তু যে সকল নোংরা চিন্তা তার অন্তরকে দূষিত করে তা হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে না।'আত্মীয়তার বিষয়ে :জনৈক ব্যক্তি ইমাম হাসান (আ.) এর উদ্দেশ্যে বললেন : আমার একটি বিবাহযোগ্যা কন্যা রয়েছে, কেমন ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দেব? ইমাম হাসান (আ.) বললেন : এমন ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে দাও যে তাকাওয়াধারী ও পরেজগার। কেননা তাকওয়াবান ব্যক্তি যদি তাকে ভালবাসে তবে তাকে সম্মান করবে। আর যদি তাকে ভাল নাও বাসে তবে অন্তত তার উপর অত্যাচার করবে না।'ইমামের দৃষ্টিতে রাজনীতি :জনৈক ব্যক্তি ইমাম (আ.) কে সিয়াসাত তথা রাজনীতির অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেন : ‘রাজনীতি হল, আল্লাহর অধিকার এবং আল্লাহর জীবিত ও মৃত বান্দাদের অধিকার মেনে চলার নাম।' অতঃপর তিনি ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বলেন : ‘আল্লাহর অধিকার হল; যা কিছু মহান আল্লাহ্ বাস্তবায়নের নির্দেশ ও আঞ্জাম দিতে নিষেধ করেছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলা'। আল্লাহর জীবিত বান্দাদের অধিকার হল, ‘নিজের দ্বীনি ভাইয়ের বিষয়ে তোমার কর্তব্যকে পালন করা, তোমার দ্বীনি ভাইয়ের সেবা দানের ক্ষেত্রে বিলম্ব না করা এবং ইসলামি সমাজের নেতার বিষয়ে, যতক্ষণ সে জনগণের বিষয়ে একনিষ্ঠ থাকে ততক্ষণ তুমিও তার প্রতি একনিষ্ঠ থেকো, আর যখন সে সত্য পথ হতে বিভ্রান্ত হয়ে যায় তখন তার প্রতিবাদ জানাও'। আর আল্লাহর মৃত বান্দাদের অধিকার হল; ‘তাদের উত্তম কর্মসমূহকে স্মরণ করা এবং তাদের মন্দ কর্মসমূহকে গোপন করা'

মানুষ আল্লাহর রহস্যমানুষের অন্তর এ আল্লাহ্‌ জাতরুপে অবস্থান করার কারনেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব । মানুষ যেমন আল্লাহর রহস্য তেমনি ভাবে শয়তানেরও রহস্য। গুরুপ্রেম যত গভীর হবে আল্লাহর পরিচয় লাভ তত সহজ হবে। আমার “আমি” নামক পবিত্র নফস হতে খান্নাসরুপী ষড়রিপুর শয়তানের বন্ধন হতে কেমন করে মুক্তি পাওয়া যায় সেই শিক্ষাটি একজন সত্যগুরু হতে গ্রহন করে নিয়ে সেই পথেই এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্‌ ও শয়তান এই দুইটি সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী । আল্লাহ্‌ পবিত্র হলে শয়তান অপবিত্র, আল্লাহ্‌ স্রষ্টা কিন্তু শয়তান সৃষ্টি, এই দান্দিক দুই মেরুর মিশ্রণই হল মানুষ। কলব শয়তানের কু মন্ত্রনা দানের প্রধান কেন্দ্র হলেও আবার সেই কলব ই আল্লাহর আরস। আল্লাহ্‌ জাত রুপে এই কলবেই অবস্থান নেয়। তাই মানুষই শয়তানের প্রকাশ আবার মানুষই আল্লাহর প্রকাশ। আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম সবচেয়ে ভাল ফেরেস্তা বানালেন । কিন্তু ফেরেস্তারা আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয় ছিল না , তারপর সব চেয়ে খারাপ শয়তান বানালেন। এইটাও আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয় ছিল না। মানুষ ভাল এবং খারাপের সমন্বয় এ তৈরি। এই মানুষই আল্লাহর সব চেয়ে প্রিয়। তাই তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তার পরিচয় মানুষের মাধ্যমে, তার নুরের বিকাশ স্থল মানুষের মাধ্যমে, তার সৃষ্টির বিকাশ মানুষের মাধ্যমে। এই মানুষকেই দিলেন তিনি জগত পরিচালনার দায়িত্ত। এই মানুষ কেই দিলেন তিনি সম্পূর্ণ ফানা হয়ে আল্লাহর মধ্যে মিশে যাবার ফর্মুলা। এই মানুষের জন্যই তিনি সৃষ্টি করলেন বিশ্বজগৎ। মানুষের জন্যই নাজিল করলেন তার কিতাব। মানুষের মধ্যে থেকেই তিনি নির্বাচিত করলেন তার খলিফা। আল্লাহ্‌ নুরের, শয়তান ধোয়া বিহীন আগুনের, কিন্তু মানুষ মাটির তৈরি হলেও এই ৩ টি মানুষের মধ্যে একাকার হয়ে মিশে আছে। তাই নিজেকে চিনতে পারলেই আল্লাহকে চেনা যায়, আল্লাহকে পাওয়া যায়। তাই মহানবী (দঃ) বলেছেন- মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু- অর্থ – যে নিজেকে চিনেছে সে তার রব কে চিনেছে। তাই আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি বলেছেন- তার কথা সেই বলছে, তার কাজ সেই করছে। মানুষের এই রহস্য বুঝতে না পেরেই জিন জাতির আবুল গাণ্ডিব এর ছেলে আজাজিল ফেরেশতাদের সর্দার থেকে বিতাড়িত শয়তান এ পরিণত হল। অথচ আবুল গাণ্ডিব এর ছেলে আজাজিল ছয় কোটি বছর ইবাদত করেছিলেন। এর মধ্যে এক লক্ষ বছর শুধু আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জিকির করেছিলেন। শয়তান আদম পুজার বিরুদ্ধে। কিন্তু শয়তান আল্লাহ্‌ পুজা করতে কখনও অস্বীকার করে নি। ঠিক যেন শয়তানের ধর্ম টার সাথে হুবুহু মিলে যায় আজকের আহলে হাদিস, জামাতে ইসলাম, অহাবি দের সাথে, অহাবি, জামাত, আহলে হাদিস দের আল্লাহ্‌ পুজা করতে কোন আপত্তি নাই কিন্তু পীর, অলির কথা আসলেই শয়তানের মত আমি এক আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করি না বা মানি না চলে আসবেই। এই বেহুশদের চৈতন্য ফিরে আসতে আর কত যুগ অপেক্ষা করতে হবে তা আমার জানা নাই। তবে এইটা ঠিক সবায় সত্য পেলে আল্লাহর দুনিয়া সৃষ্টির খেলাটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বিষয় টা নিজের বা সত্য পথ প্রাপ্ত দের দায়িত্ব অসচেতনতার কথা স্বীকার না করে তকদিরের লিখন বা তাদের কে গালাগালি করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। যা আজকের পীর ফকিররা অহরহ করছে। আত্ম সমালোচনার জন্যই কথাটা বললাম কেও কষ্ট পেয়ে থাকলেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত (كتاب فضائل الصحابة رضى الله تعالى عنهم)হাদিস নম্বরঃ ৬০০৭ ৪. আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) এর ফযীলত ৬০০৭। যুহায়র ইবনু হারব ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... ইয়াযীদ ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি, হুসায়ন ইবনু সাবুরা এবং উমার ইবনু মুসলিম-- আমরা যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমরা যখন তার কাছে বসি, তখন হুসায়ন বললেন, হে যায়দ! আপনি তো বহু কল্যাণ প্রত্যক্ষ করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আপনি বহু কল্যাণ লাভ করেছেন, হে যায়দ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমাদের বলুন না। যায়দ (রাঃ) বললেন, ভ্রাতূষ্পূত্র! আমার বয়স হয়েছে, আমি পুরানো যুগের মানুষ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে যা আমি সংরক্ষণ করোছিলাম, এর কিছু অংশ ভুলে গিয়েছি। তাই আমি যা বলি, তা কবুল কর আর আমি যা না বলি, সে ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না।তারপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “খুম্ম” নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি। এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন।তারপর বললেনঃ আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। হুসায়ন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর 'আহলে বাইত' কারা, হে যায়দ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণ কি আহলে বাইতর অন্তভুক্ত নন?যায়দ (রাঃ) বললেন, বিবিগণও আহলে বাইতর অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইত তাঁরাই, যাদের উপর যাকাত গ্রহন হারাম। হুসায়ন বললেন, এ সব লোক কারা? যায়দ (রাঃ) বললেন, এরা আলী, আকীল, জাফের ও আব্বাস (রাঃ) এর পরিবার-পরিজন। হুসায়ন বললেন, এদের সবার জন্য যাকাত হারাম? যায়দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।Yazid b. Hayyan reported, I went along with Husain b. Sabra and 'Umar b. Muslim to Zaid b. Arqam and, as we sat by his side, Husain said to him: Zaid. you have been able to acquire a great virtue that you saw Allah's Messenger (ﷺ) listened to his talk, fought by his side in (different) battles, offered prayer behind me. Zaid, you have in fact earned a great virtue. Zaid, narrate to us what you heard from Allah's Messenger (ﷺ). He said: I have grown old and have almost spent my age and I have forgotten some of the things which I remembered in connection with Allah's Messenger (ﷺ), so accept whatever I narrate to you, and which I do not narrate do not compel me to do that. He then said: One day Allah's Messenger (ﷺ) stood up to deliver sermon at a watering place known as Khumm situated between Mecca and Medina. He praised Allah, extolled Him and delivered the sermon and. exhorted (us) and said: Now to our purpose. O people, I am a human being. I am about to receive a messenger (the angel of death) from my Lord and I, in response to Allah's call, (would bid good-bye to you), but I am leaving among you two weighty things: the one being the Book of Allah in which there is right guidance and light, so hold fast to the Book of Allah and adhere to it. He exhorted (us) (to hold fast) to the Book of Allah and then said: The second are the members of my household I remind you (of your duties) to the members of my family. He (Husain) said to Zaid: Who are the members of his household? Aren't his wives the members of his family? Thereupon he said: His wives are the members of his family (but here) the members of his family are those for whom acceptance of Zakat is forbidden. And he said: Who are they? Thereupon he said: 'Ali and the offspring of 'Ali, 'Aqil and the offspring of 'Aqil and the offspring of Ja'far and the offspring of 'Abbas. Husain said: These are those for whom the acceptance of Zakat is forbidden. Zaid said: Yes. باب مِنْ فَضَائِلِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رضى الله عنه ‏‏ حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَشُجَاعُ بْنُ مَخْلَدٍ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ عُلَيَّةَ، قَالَ زُهَيْرٌ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنِي أَبُو حَيَّانَ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ حَيَّانَ، قَالَ انْطَلَقْتُ أَنَا وَحُصَيْنُ، بْنُ سَبْرَةَ وَعُمَرُ بْنُ مُسْلِمٍ إِلَى زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ فَلَمَّا جَلَسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْنٌ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا رَأَيْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَمِعْتَ حَدِيثَهُ وَغَزَوْتَ مَعَهُ وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْرًا كَثِيرًا حَدِّثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم - قَالَ - يَا ابْنَ أَخِي وَاللَّهِ لَقَدْ كَبِرَتْ سِنِّي وَقَدُمَ عَهْدِي وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أَعِي مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا حَدَّثْتُكُمْ فَاقْبَلُوا وَمَا لاَ فَلاَ تُك

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদরবিউল আওয়াল মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিপহেলা রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.)এর দাফন: পহেলা রবিউল আওয়ালের মধ্যে রাতে রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে হজরত আলি (আ.) দাফন করেন। কেননা অন্যান্য ব্যাক্তিরা রাসুল (সা.)এর পবিত্র দেহকে ফেলে রেখে খেলাফত নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফায় একত্রিত হয়েছিল। (তাবাকাত ইবনে সাআদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮)শেইখ মুফিদ (রহ.) বলেন: অনেকেই রাসুল (সা.) এর জানাযায় অংশগ্রহণ করেননি কারণ তখন তারা খলিফা নির্বাচনের জন্য বণি সাকিফাতে উপস্থিত ছিল। (তাকরিবুল মাআরেফ, পৃষ্ঠা ২৫৬)২- লাইলাতুল মাবিত: পহেলা রবিউল আউয়ালের রাতটি ইসলামের ইতিহাসে ‚লাইলাতুল মাবিত“ নামে পরিচিত। রাসুল (সা.)এর বেসাতের ১৩ তম বর্ষে হিজরতের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.) উক্ত রাতে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পথিমধ্যে ‚সউর“ নামক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। অপর দিকে হজরত আলি (আ.) শত্রুদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাত করার লক্ষ্যে রাসুল (সা.)এর বিছানায় নিদ্রা যান। তখন তাঁর সম্পর্কে সুরা বাকারা’এর ২০৭ নং আয়াত নাযিল হয়। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩৯)৩- রাসুল (সা.) এর হিজরত: বেসাতের ১৩ তম বর্ষে উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন। (শাওয়াহেদুত তানযিল, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)৪- হিজরি বর্ষের সূচনা: হিজরত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসেও সবচেয়ে তাৎপর্যবহ, সুদূরপ্রসারী ঘটনা এটি। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। মুসলমানরা মক্কার কাফেরদের পাশবিক নির্যাতন-নিপীড়ন, অব্যাহত অমানবিক আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ নীরবে সহ্য করার পর তাদের স্পর্ধা আরো বেড়ে যায়। তারা মহানবী (সা.)-কেও হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আল্লাহ তায়ালা তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেন। মহানবী (সা.) ও মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। হিজরতের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দ্বার উন্মোচিত হয়। সশস্ত্র যুদ্ধে তাগুতি শক্তির মোকাবিলার শুভ সূচনা হয়। উদিত হয় মক্কা বিজয়সহ ইসলামের বিশ্বজয়ের রঙিন সূর্য। হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে হজরত উমরের যুগে ইমাম আলি (আ.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করেন। মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র চান্দ্রমাসের পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন। (আস সহিহ মিন সিরাহ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১৭৪- ২০৬)৫- হজরত আলি (আ.) এর ঘরে আক্রমণ: সন ১১ হিজরির উক্ত তারিখের রাতে রাসুল (সা.) দাফন কার্য সম্পাদন হওয়ার পরে যারা বণি সাকিফাতে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা দিনে হজরত আলি (আ.)এর কাছে জোরপূর্বক বাইয়াত নেয়ার জন্য তাঁর ঘরে হামলা করে। কিন্তু হজরত আলি (আ.) রাসুল (সা.) এর ওসিয়ত অনুযায়ি কোরআন সংঙ্কলনের কাজে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি হামলাকারিদের বলেন: মহান আল্লাহর শপথ আমি সম্পূর্ণ কোরআন একত্রিত করার পূর্বে ঘর থেকে বাহির হব না। (এহতেজাজ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৮, ২৮১)৬- ইমাম হাসান আসকারি (আ.)কে বিষ প্রদান: রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ইমাম হাসান আসকারি (আ.) সন ২৬০ হিজরির উক্ত তারিখে বিষাক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইতিহাসে অন্যান্য তারিখের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যেমন: ৪ঠা রবিউল আওয়াল, ৮ই রবিউল আওয়াল। (মেসবাহে কাফআমি, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৩)৩য় রবিউল আওয়াল:১- হজরত সালমান (রা.) এর কূটতর্ক: রাসুল (সা.)কে দাফনের তৃতিয় দিন হজরত সালমান (রা.) জনসম্মুখে এস বলেন: হে লোকেরা! তোমরা আমার কথা মনযোগ সহকারে শোন অতৎপর চিন্তা করো। এটা তোমরা এ বিষয় সম্পর্কে ভালভাবে অবগত আছ যে, আমাকে রাসুল (সা.) কর্তৃক বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমি যদি আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা শুরু করি তাহলে হয়তো তোমাদের অনেকেই আমাকে পাগল বলে অভিহিত করবে অথবা বলবে যে, হে আল্লাহ! তুমি সালমানের উক্ত কথার জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দাও। অতঃপর তিনি হজরত আলি (আ.) এর ফযিলত বর্ণনা করা শুরু করেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন: যারা তাঁর প্রাপ্য খেলাফতকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। বক্তব্যর পরিসমাপ্তিতে বলেন: তোমরা জেনে রাখ আমি আমার বিশ্বাসের কথাকে তোমার সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি আমার জন্য রাসুল (সা.) এর পরে হজরত আলি (আ.) কে ইমাম স্বরূপ মেনে নিয়েছি। (গায়াতুল মারাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২০)২- এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে ভাঙ্গার চেষ্টা: সন ৬৪ হিজরির উক্ত দিনে এজিদের নির্দেশে কাবা গৃহকে মিনজানিক (দালান ভাঙ্গার গুলতি বিশেষ) দ্বারা ভাঙ্গা হয়। উক্ত ঘটনার ১১ দিন পরে এজিদ মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ৬৩)৫ই রবিউল আওয়াল১- হজরত সকিনা (সা.)এর মৃত্যুদিবস: ইমাম হুসাইন (আ.)এর কন্যা হজরত সকিনা (সা.আ.) কারবালার ঘটনার ৫৬ বছর পরে সন ১১৭ হিজরির উক্ত তারিখে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মাতার নাম ছিল রোবাব তিনি তাঁর মায়ের সাথেই বন্দি অবস্থায় কুফা ও শামে যান। তাঁর স্বামির নাম ছিল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান (আ.)যিনি কারবালাতে শাহাদত বরণ করেন। যেহেতু ইমাম হাসান (আ.)এর আব্দুল্লাহ নামে কয়েকজন সন্তান ছিল। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন তখন মদিনার শাষক আব্দুল মালেক বলে: তোমরা অপেক্ষা কর তাঁর জানাযার নামাজ আমি পড়াব। কিন্তু সে ওয়াদা করে আর জানাযার নামাজ পড়াতে আসেনি। অবশেষে মোহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ওরফে নাফসে যাকিয়া রাতে তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে মদিনায় দাফন করে দেন। (দালায়েলুল ইমামা, পৃষ্ঠা ৪২৪)৮ই রবিউল আওয়ালইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদত:রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ি ২৬০ হিজরিতে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)২৮ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব রাতে তিনি মদনিাবাসিদের নামে একাধিক পত্র লিখেন। যখন শামেরাবাসিরা তাঁর শাহাদতের খবর সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে ইমাম (আ.)এর ঘরের সম্মুখে একত্রিত হয় এবং শামে তাদের ক্রন্দন এবং আহাজারির কারণে পরিবেশ শোকাবহ হয়ে উঠে। ইমাম মাহদি (আ.) তাঁকে গোসল, কাফন দেন, জানাযার নামাজ পড়ান এবং তাঁকে ইমাম হাদি (আ.) এর পাশে দাফন করে দেন। (কামাল উদ্দিন, পৃষ্ঠা ৪৭৫)৯ই রবিউল আওয়াল১- ইমাম মাহদি (আ.)এর ইমামতের প্রথম দিন: সন ২৬০ হিজরি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)এর শাহাদতের পরে উক্ত দিনটি ছিল ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের প্রথম দিন এবং সেদিন থেকেই ইমাম মাহদি (আ.) এর ইমামতের স্বল্পকালিন অন্তর্ধান শুরু হয়। (মুতাদরাকে সাফিনাতুল বিহার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৭)২- হজরত উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যুদিবস: ২৩ অথবা ২৪ হিজরির উক্ত তারিখে রাতের শেষ অংশে হজরত উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মত অনুযায়ি তিনি রোজ বুধবার ২৬শে জিলহজ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে তার মৃত্যুর ঘটনা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুগাইরা বিন শোয়বার দাশ যার নাম ছিল ‘আবু লুলু’ সে হজরত উমরকে কয়েকবার চাকু দ্বারা মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং উক্ত কারণে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। (তাবাকাতে কুবরা, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৫)৩- উমর ইবনে সাআদের মৃত্যুদিবস: মোখতারে সাকাফির নেতৃত্বে উমরে সাআদকে হত্যা করা হয়। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩৬)১০ই রবিউল আওয়াল:১- রাসুল (সা.) এর সাথে হজরত খাদিজা (সা.আ.)এর বিবাহ: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্বে উক্ত তারিখে উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হজরত খাদিজা (সা.আ.) এর সম্পদ এতই বেশি ছিল যে ৮০ হাজার উট শুধুমাত্র তাঁর ব্যাবসার মালামাল বহণ করতো। আরবের বিভিন্ন ব্যাক্তিত্বগণ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন কিন্তু তিনি তাদের বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হন নি। কিন্তু তিনি রাসুল (সা.) এর সততা এবং সত্যবাদিতা দেখ মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। অতঃপর তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। (ইকবালুল আমাল, পৃষ্ঠা ৫৯৯)২- মদিনার অত্যাচারি শাষক দাউদ বিন আলির মৃত্যু: সাফফাহ-এর চাচা দাউদ বিন আলি সন ১৩৩ হিজরি ১০ই রবিউল আওয়াল তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এর দোয়ার কারণে মৃত্যু বরণ করে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৬৭)৩- মালেক বিন আনাসের মৃত্যুদিবস: সন ১৭৯ হিজরিতে মালেক বিন আনাস আসবাহা যিনি ছিলেন মালেকি মাযহাবের কর্ণধারক। তিনি উক্ত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। (রওযাতুল জান্নাত, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২২৪)৪- মুয়াবিয়ার খেলাফত অর্জন: ৪১ হিজরির রবিউল আউয়ালের ১০ তারিখে মুয়াবিয়া কপটতার মাধ্যমে খেলাফত অর্জন করেছিল। হজরত উসমানের পরে সে ছিল বণি উমাইয়ার খেলাফতের আরেকজন খলিফা। যার জন্য মুসলমানদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করা হয়। তবে ইতিহাসে মাবিয়ার খেলাফত অর্জনের বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তারিখ বর্ণিত হয়েছে যেমন: ৫ই রবিউল আওয়াল, প্রথম অথবা ১৫ই জামাদিউল আওয়াল বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ২৫শে রবিউল আওয়াল। (মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ, পৃষ্ঠা ৬, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ২০)১২ই রবিউল আওয়াল১- রাসুল (সা.) মদিনায় প্রবেশ করেন:উক্ত তারিখের অস্তবেলায় রাসুল (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌছায় এবং কুবা নাক স্থানে হজরত আলি (আ.)এর জন্য অপেক্ষা করেন। যখন হজরত আলি (আ.) সেখানে এসে পৌছান তখন রাসুল (সা.) তাঁদেরকে নিয়ে মদিনায় প্রবেশ করেন। (মাশারুশ শিয়া, পৃষ্ঠা ২৮)তবে আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে এই তারিখেই নবী (স.) জন্ম গ্রহণ করেন এবং এই একই তারিখে মৃত্যু বরণ করেন।২- মোতাসিম আব্বাসির মৃত্যু: সন ২২৭ হিজরির উক্ত তারিখে রোজ বৃহঃস্পতিবারে রাতের প্রথমভাগে মোতাসেম আব্বাসি সামেরায় মারা যায়। তার মৃত্যুর কারণ হচ্ছে সে “হেজামত” (এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরিরে বদ রক্ত বাহির করা হয়) করার পরে তার জ্বর আসে এবং উক্ত জ্বরের কারণে সে ৪৯ বছর বয়সে মারা যায়। (তাতেম্মাতুল মুনতাহি, পৃষ্ঠা ২৯৭- ৩১০)৩- আহমাদ বিন হাম্বালের মৃত্যুদিবস: সন ২৪১ হিজরির ‍উক্ত তারিখে হাম্বালি মাযহাবের কর্ণধারক আহমাদ বিন হাম্বাল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করে এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। ইতিহাসের অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ি তিনি রবিউস সানি মাসে মৃত্যুবরণ করেন। (মারাকেদুল মাআরেফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩)১৪ই রবিউল আওয়াল১- এজিদ বিন মাবিয়ার মৃত্যু: সন ৬৪ হিজরির উক্ত তারিখে এজিদ ইবনে মাবিয়া বিন আবু সুফিয়ান ৩৫ অথবা ৩৭ বছর বয়সে অতিরিক্ত মদ পানের কারণে দামেস্কে মারা যায় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এজিদের রাজত্বকাল ছিল তিন বছর আট মাস। এছাড়াও ইতিহাসে এজিদের মৃত্যু তরিখ সম্পর্কে অন্য মতামতও বর্ণিত হয়েছে যমন: ১৫ই রবিউল আওয়াল। (ফেইযুল আলাম, পৃষ্ঠা ২১৬, তারিখে তাবারি, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৮৯)২- আব্বাসিয় খলিফা মুসা হাদির মৃত্যু: ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ি সন ১৭০ হিজরির উক্ত তারিখে আব্বাসিয় খলিফা মাহদি আব্বাসির পুত্র মুসা হাদি ২৫ অথবা ২৬ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে। ইতিহাসের অন্য বর্ণনা অনুযায়ি ১৫, ১৮ তারিখটিও তার মৃত্যুর দিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসে তার পাষন্ডতা, ক্রোধ এবং বিদ্বেষ ছিল প্রসিদ্ধ। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ৮৯, তাতেম্মাতুল মুনতাহা, পৃষ্ঠা ২২৪, ২২২)১৭ই রবিউল আওয়াল১- হজরত মোহাম্মাদ (সা.)এর জন্মদিবস: হজরত মোহাম্মাদ (সা.) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রচলিত ধারনা মতে, তিনি ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগষ্ট বা আরবি রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ জন্মগ্রহণ কনে। সকল আলেমদের মতে রাসুল (সা.) শুক্রবার প্রভাতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় বিশ্বে অবিস্মরণিয় কিছু ঘটনা ঘটে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ মাতার নাম ছিল আমিনা। (এলামুল ওয়ারা, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩)২- ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জন্মদিবস: সন ৮৩ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম জাফর, উপনাম আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি সাদিক। তাঁর পিতার নাম ইমাম বাকের (আ.) এবং মাতার নাম ছিল উম্মে ফারওয়া। (আল ইরশাদ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৭৯)২২শে রবিউল আওয়ালবণি নাযিরের যুদ্ধ: ৪র্থ হিজরি বণি নাযির নামক যুদ্ধটি সংঘটিত হয় এবং ইয়াহুদিদেরকে মদিনা থেকে বহিস্কার করা হয়। (আস সাহিহ মিনাস সিরাহ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৬)২৩শে রবিউল আওয়াল:কুম নগরিতে হজরত মাসুমা (সা.আ.) এর আগমণ: ফাতেমা-এ সানী, হজরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা’। তিনি ১৭৩ হিজরী’র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। হজরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়। হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।সন ২০১ হিজরির উক্ত তারিখে ইমাম রেযা (আ.)এর বোন হজরত ফাতেমা মাসুমা (সা.আ.) পবিত্র কুম নগরিতে আগমণ করেন এবং দিন পরে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৫৭, পৃষ্ঠা ২১৯)২৫শে রবিউল আওয়াল:১- দুমাতুল জুন্দাল-এর যুদ্ধ: সন ৫ হিজরিরে উক্ত তারিখে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। উক্ত এলাকায় কিছু লোকজন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন কাফেলাদেরকে লুট করতো। রাসুল (সা.) উক্ত ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হলে তিনি মদিনাতে নিজের স্থলে সাবা বিন আরফাতা গাফফারিকে রেখে নিজেই ২৫শে রবিউল আওয়াল এক হাজার সৈন্য নিয়ে মদিনা থেকে বাহিরে আসেন। যখন রাহজানরা রাসুল (সা.) এর আগমণ সম্পর্কে অবগত হয় তখন তারা পালিয়ে যায়। তখন মুসলমানরা তাদের সকল মালামালকে নিয়ে ২০শে রবিউস সানি মদিনায় ফিরে আসে। (কালায়েদুন নুহুর, খন্ড রবিউল আওয়াল, পৃষ্ঠা ১৫০)২- ইমাম হাসান (আ.) ও মাবিয়ার মাঝে সন্ধি: ইমাম হাসান (আ.)এর সাথে মাবিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়। মুয়াবিয়ার সঙ্গে ইমাম হাসান (আ.)’র সন্ধির কিছু শর্ত:-আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও হেফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।-মুয়াবিয়াকে হজরত আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, গালি-গালাজ, অপবাদ ও প্রচারণা বন্ধ করতে হবে।-জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন ইরানি প্রদেশগুলোর সরকারি আয় থেকে তাদের পরিবারগুলোকে এক মিলিয়ন দেরহাম অর্থ সাহায্য দিতে হবে।- ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে উল্লেখ করবেন না।-মুয়াবিয়াকে অনৈসলামী আচার-আচরণ পরিহার করতে হবে এবং আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতে হবে।-মুয়াবিয়া কোনো ব্যক্তিকেই (খেলাফতের জন্য) নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করতে পারবে না। মুয়াবিয়া মারা গেলে খেলাফত ফেরত দিতে হবে ইমাম হাসান (আ.)’র কাছে।-ইমাম হাসান (আ.) যদি মারা যান, তাহলে মুসলিম জাহানের খেলাফত হস্তান্তর করতে হবে রাসুল(সা.)এর ছোট নাতি হজরত ইমাম হুসাইন(আ.)’র কাছে।কিন্তু মুয়াবিয়া প্রকাশ্যেই নির্লজ্জভাবে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করেছিল। মুয়াবিয়া ৫০ হিজরিতে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে ইমাম হাসান(আ.)-কে শহীদ করে। ৬০ হিজরিতে মৃত্যুর কিছু দিন আগে মুয়াবিয়া তার মদ্যপ ও লম্পট ছেলে ইয়াজিদকে মুসলমানদের খলিফা বলে ঘোষণা করে।মুয়াবিয়া বলত যেখানে টাকা দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি টাকা বা ঘুষ ব্যবহার করি, যেখানে চাবুক দিয়ে কাজ হয় সেখানে আমি তরবারি ব্যবহার করি না, আর যেখানে তরবারি দরকার হয় সেখানে তরবারি ব্যবহার করি। (বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৪৪, পৃষ্ঠা ৬৫)প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করীম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৫প্রাচ্যবিদদের ভুলভ্রান্তিপবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-কে দু’বা ততোধিক নামে পরিচিত করিয়েছে।[10]সূরা আলে ইমরান, সূরা মুহাম্মাদ, সূরা ফাত্হ ও সূরা আহযাবের ১৩৮, ২, ২৯ ও ৪০ নং আয়াতে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে এবং সূরা সাফের ৬ নং আয়াতে তাঁকে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এ দু’নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, মহানবীর মা হযরত আমেনা দাদা আবদুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম ‘আহমদ’ রেখেছিলেন। আর এ বিষয়টি ইতিহাসেও উল্লিখিত হয়েছে।[11]অতএব, কতিপয় প্রাচ্যবিদ যে দাবি করেছেন, সূরা সফের ৬ নং আয়াতে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট উক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিল শরীফ যে নবীর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছে তাঁর নাম আহমদ, তিনি মুহাম্মাদ নন; আর মুসলমানগণ যে ব্যক্তিকে তাদের নিজেদের নেতা বলে বিশ্বাস করে তিনি মুহাম্মাদ, তিনি আহমদ নন’’- তাঁদের এ দাবি সর্বৈব ভিত্তিহীন। কারণ পবিত্র কোরআন আমাদের নবীকে ‘আহমদ’ নামেও পরিচিত করিয়েছে এবং কতিপয় স্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে অভিহিত করেছে। যদি এ নবীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তাঁদের দলিল পবিত্র কোরআনই হয়ে থাকে (আর এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যাপার ঠিক এটিই) তাহলে এ ক্ষেত্রে বলতে হয়, পবিত্র কোরআন তাঁকে এ দু’টি নামেই অভিহিত করেছে অর্থাৎ একস্থানে তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ এবং অন্যস্থানে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছে। এ আপত্তিটির মূলোৎপাটন করার জন্য আমরা নিচে আরো বেশি ব্যাখ্যা দেব।আহমদ মহানবী (সা.)-এর নামসমূহের একটিমহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সংক্ষিপ্ত তথ্য ও জ্ঞান রয়েছে তাঁরা জানেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) শৈশব ও বাল্যকাল থেকেই ‘আহমদ’ ও ‘মুহাম্মাদ’ এ দু’নামে পরিচিত ছিলেন। জনগণের কাছে তিনি এ দু’নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ ছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর জন্য ‘মুহাম্মাদ’ এবং তাঁর মা আমেনা ‘আহমদ’ নামটি মনোনীত করেছিলেন। এ বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসের অকাট্য বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত এবং সকল সীরাত রচয়িতা এ বিষয়টি বর্ণনা করেছেন এবং এতৎসংক্রান্ত বিশদ বর্ণনা সীরাতে হালাবীতে রয়েছে যা পাঠকবর্গ পড়ে দেখতে পারেন।[12]দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পিতৃব্য আবু তালিব হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বর্ণনাধিক ভালোবাসা, মমতা ও স্নেহ দিয়ে পুরো ৪২ বছর মহানবীর পবিত্র অস্তিত্ব প্রদীপের চারদিকে পতঙ্গের মতো লেগে থেকেছেন। তিনি মহানবীর প্রাণ রক্ষা করার জন্য তাঁর নিজ জান-মাল উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি। তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবীর শানে যে কবিতা আবৃত্তি করেছেন তাতে তিনি কখনো তাঁকে ‘মুহাম্মাদ’ নামে আবার কখনো ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। আর সে সাথে এ বিষয়টি থেকে প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, তখন থেকেই ‘আহমদ’ নামটি তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ নাম হিসাবেই প্রচলিত ছিল।এখন আমরা নিচে নমুনাস্বরূপ আরো কতিপয় পঙ্‌ক্তির উদ্ধৃতি দেব যেগুলোতে তিনি মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছিলেন।إن يكن ما أتى به أحمد اليوم سناء و كان في الحشر دينا‘‘আজ আহমদ যা আনয়ন করেছেন তা আসলে নূর (আলো) এবং কিয়ামত দিবসের পুরস্কার।’’و قوله لأحمد أنت أمرء خلوف الحديث ضعيف النسب‘‘শত্রুরা বলছে : আহমদের বাণী ও কথাগুলো নিরর্থক এবং সে নিম্নবংশীয় অর্থাৎ দুর্বল বংশমর্যাদার অধিকারী।’’و ان كان أحمد قد جاء هم بحق و لم يأتهم بالكذب‘‘নিঃসন্দেহে আহমদ তাদের কাছে সত্যধর্ম সহকারে এসেছেন, তিনি কোন মিথ্যা ধর্ম নিয়ে আসেন নি।’’ارادو قتل أحمد ظالموه و ليس بقتلهم فيهم زعيم‘‘যারা আহমদের ওপর জুলুম করেছে তারা চেয়েছিল তাঁকে হত্যা করতে, কিন্তু এ কাজে তাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ ছিল না।’’ইতিহাস ও হাদীসশাস্ত্রের গবেষক, পণ্ডিত ও আলেমগণ যে সব কবিতা আবু তালিবের সাথে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেছেন সেগুলোতে তিনি তাঁর ভাতিজা মহানবী (সা.)-কে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করেছেন। যা কিছু এখন আমরা বর্ণনা করেছি তার সব কিছুই আমরা তাঁর দিওয়ান (কাব্যসমগ্র)-এর ১৯, ২৫ ও ২৯ পৃষ্ঠা হতে নিয়েছি। এ ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকবর্গকে আমরা নিম্নোক্ত দু’টি গ্রন্থ অধ্যয়ন করার অনুরোধ করছি। গ্রন্থদ্বয় হলো :১. আহমাদ, মওউদুল ইঞ্জিল (ইঞ্জিলের প্রতিশ্রুত নবী আহমদ), পৃ. ১০১-১০৭;২. মাফাহীমুল কোরআনপ্রচারে মুন্নি আক্তার

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদনবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্মপর্ব ৪এ বক্তব্যের ব্যাপারে আপত্তিসমূহমরহুম শহীদে সানী এ অভিমত থেকে যে ফলাফলে উপনীত হয়েছেন তা সঠিক নয়। তিনি نسيء (নাসি) শব্দের যে অর্থ ব্যক্ত করেছেন মুফাস্‌সিরদের মধ্যে কেবল মুজাহিদই উক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য মুফাস্‌সির তা ভিন্নভাবে ও ভিন্ন অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন। আর উপরিউক্ত ব্যাখ্যাটি ততটা দৃঢ় ও শক্তিশালী নয়। কারণ :প্রথমত মক্কা নগরী সকল সমাজ ও গোত্রের কেন্দ্রস্থল ছিল এবং সমগ্র আরব জাতির একটি সাধারণ ইবাদাতগাহ্ বলে গণ্য হতো। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতি দু’বছর অন্তর হজ্বের দিন-ক্ষণ পরিবর্তন করা স্বাভাবিকভাবে আপামর জনতাকে ভুলের মধ্যে ফেলে দেবে এবং হজ্বব্রতের মহান সমাবেশ ও সামষ্টিক ইবাদাতের বিরল সম্মান ও মর্যাদাকেও সমূলে বিনষ্ট করে দেবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে যা কিছু তাদের জন্য গৌরব ও সম্মানের ভিতস্বরূপ তা প্রতি দু’বছর অন্তর পরিবর্তিত হয়ে যাক, হজ্বের সময় হারিয়ে যাক এবং উক্ত মহাসমাবেশ ধ্বংস হয়ে যাক- এ ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে মক্কাবাসীদের সম্মত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।দ্বিতীয়ত খুব সূক্ষ্মভাবে যদি হিসাব-নিকাশ করা হয় তাহলে শহীদে সানীর বক্তব্যের অপরিহার্য অর্থ দাঁড়ায় এটি যে, নবম হিজরীর হজ্বের দিবসগুলো যিলক্বদ মাসে পড়েছিল, অথচ ঐ বছরেই হয়রত আলী (আ.) মহানবীর পক্ষ থেকে হজ্বের দিনগুলোতে মুশরিকদের উদ্দেশ্যে সূরা তাওবাহ্ পাঠ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। মুফাস্‌সির ও মুহাদ্দিসগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, হযরত আলী উক্ত সূরা ১০ যিলহজ্ব পাঠ করেন এবং মুশরিকদের ৪ মাসের সুযোগ দেন। আর সকল মুফাস্‌সির ও মুহাদ্দিস ১০ যিলহজ্বকে সেই সুযোগের শুরু বলেই জানেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে কেউ বলেন নি যে, সেটি ছিল যিলক্বদ মাসে।তৃতীয়ত نسيء শব্দের অর্থ হচ্ছে এই যে, যেহেতু জীবিকা নির্বাহের কোন সঠিক পথ ও পদ্ধতি ছিল না তাই তারা প্রধানত লুটতরাজ ও রাহাজানির মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত। এ কারণেই যিলক্বদ, যিলহজ্ব ও মুহররম এ তিন মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ রাখা তাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। তাই মুহররম মাসে যুদ্ধ করা এবং তৎপরিবর্তে সফর মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার অনুমতি দেয়ার জন্য কখনো কখনো তারা পবিত্র কাবার দায়িত্বশীলদের কাছে আবেদন করত। نسيء শব্দের অর্থও ঠিক এটিই। আর মুহররম ব্যতীত অন্য কোন মাসের ক্ষেত্রে কখনই نسيء ছিল না। তাই এ ব্যাপারে স্বয়ং আয়াতটিতেও ইঙ্গিত রয়েছে : يُحلّونه عاما‘‘তারা এক বছর যুদ্ধ হালাল করত এবং আরেক বছর যুদ্ধ হারাম করত।’’আমরা মনে করি সমস্যা সমাধানের পথ হচ্ছে এই যে, আরবগণ বছরের দু’টি সময়-একটি যিলহজ্ব মাসে ও একটি রজব মাসে-হজ্ব করত। এমতাবস্থায় হযরত আমেনা হজ্বের মাসে অথবা তাশরীকের দিবসগুলোতে রাসূলে খোদা (সা.)-এর নূর গর্ভে ধারণ করেছিলেন- এর উদ্দেশ্য সম্ভবত রজব মাসও হতে পারে। মহানবী (সা.) যদি ১৭ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করে থাকেন তাহলে গর্ভধারণকাল ৮ মাস ও কয়েকদিন হয়ে থাকবে।মহানবী (সা.)-এর নামকরণমহানবী (সা.)-এর জন্মগ্রহণের পর সপ্তম দিবস উপস্থিত হলো। আবদুল মুত্তালিব মহান আল্লাহ্‌র দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি দুম্বা যবেহ করলেন। মহানবীর নাম রাখার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সকল কুরাইশ নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাখলেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘‘আপনি কেন আপনার নাতির নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাখলেন, অথচ আরবদের মধ্যে এ নামটি অত্যন্ত বিরল?’’ তখন তিনি বললেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম যে, সে আকাশ ও পৃথিবীতে প্রশংসিত হোক।’’ এ সম্পর্কে কবি হাসসান ইবনে সাবিত লিখেছেন :فشق له من اسمه ليبجله فذو العرش محمود و هذا محمّد‘‘নবীর সম্মান ও মর্যাদার জন্য স্রষ্টা তাঁর নিজ নাম থেকে তাঁর (নবীর) নাম নিষ্পন্ন করেছেন; তাই আরশের অধিপতি (মহান আল্লাহ্) মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং ইনি (তাঁর নবী) মুহাম্মাদ (অর্থাৎ প্রশংসিত)।’’আর এ দু’টি শব্দই (মাহমুদ ও মুহাম্মাদ) একই উৎসমূল (হাম্দ) থেকে উৎসারিত এবং উক্ত শব্দদ্বয়ের অর্থও একই। নিঃসন্দেহে এ নাম চয়ন করার ক্ষেত্রে ঐশী অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। কারণ মুহাম্মাদ নামটি যদিও আরবদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল, কিন্তু সে সময় খুব অল্পসংখ্যক ব্যক্তির নামই মুহাম্মাদ রাখা হয়েছিল। কতিপয় ঐতিহাসিক যে সূক্ষ্ম পরিসংখ্যান দিয়েছেন তদনুযায়ী ঐ দিন পর্যন্ত সমগ্র আরবে কেবল ১৬ ব্যক্তির নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাখা হয়েছিল। তাই এতৎসংক্রান্ত কবির উক্তি প্রণিধানযোগ্য :أنّ الّذين سموا باسم محمّد من قبل خير النّاس ضعف ثمان‘‘মহানবীর আগে যাদের নাম মুহাম্মাদ রাখা হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল ৮-এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ষোল।’’[9]বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, একটি শব্দের বাস্তব নমুনা যত কম হবে এতে ভুলভ্রান্তিও তত কমে যাবে। আর যেহেতু পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহ তাঁর নাম, চি‎হ্ন এবং আত্মিক ও দৈহিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তাই মহানবীর শনাক্তকারী নিদর্শন অবশ্যই এতটা উজ্জ্বল হতে হবে যে, তাতে কোন ভুলভ্রান্তির অবকাশই থাকবে না। তাঁর অন্যতম নিদর্শন তাঁর নাম। এ নামের বাস্তব নমুনা অর্থাৎ যাদের নাম মুহাম্মাদ বাস্তবে তাদের সংখ্যা এতটা কম হবে যে, ব্যক্তি মহানবীকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সন্দেহ আর বিদ্যমান থাকবে না। বিশেষ করে যখন তাঁর পবিত্র নামের সাথে তাঁর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হবে। এমতাবস্থায় তাওরাত ও ইঞ্জিলে যে ব্যক্তির আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তাকে খুব স্বচ্ছ ও স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।প্রচারে মুন্নি আক্তার

নবী করিম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর শুভ জন্মপর্ব ৩গর্ভধারণকালপ্রসিদ্ধি আছে যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র অস্তিত্বের নূর তাশরীকের (হজ্বের মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়ামে তাশরীক অর্থাৎ তাশরীকের দিনসমূহ বলে অভিহিত করা হয়) দিনগুলোতে হযরত আমেনার জরায়ুতে স্থাপিত হয়েছিল।[5]তবে ১৭ রবিউল আউয়ালে যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এতৎসংক্রান্ত ঐতিহাসিকদের মধ্যে প্রচলিত প্রসিদ্ধ অভিমতের সাথে এ বিষয়টির মিল নেই। কারণ এমতাবস্থায় হযরত আমেনার গর্ভধারণকাল ৩ মাস অথবা ১ বছর ৩ মাস বলে ধরতে হবে। আর এ বিষয়টি স্বয়ং প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। আর কোন ঐতিহাসিক বা আলেম তা মহানবীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেন নি।[6]প্রখ্যাত গবেষক আলেম শহীদে সানী (৯১১-৯৬৬ খ্রি.) উপরিউক্ত আপত্তিটির এভাবে সমাধান করেছেন : ইসমাঈলের বংশধরগণ তাদের নিজ পূর্বপুরুষদের অনুকরণে যিলহজ্ব মাসেই হজ্বব্রত পালন করত। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশেষ কিছু কারণে তারা প্রতি দু’বছর একই মাসে হজ্বব্রত পালনের চিন্তা-ভাবনা করে। অর্থাৎ দুই বছর তারা যিলহজ্ব মাসে, এর পরের দু’বছর মুহররম মাসে এবং এ ধারাক্রমানুসারে হজ্বব্রত পালন করার চিন্তা করেছিল। তাই ২৪ বছর গত হওয়ার মাধ্যমে পুনরায় হজ্বের দিনগুলো স্বস্থানে অর্থাৎ যিলহজ্ব মাসে ফিরে আসত। আরবদের রীতিনীতি এ ধারার ওপরই বহাল ছিল। অবশেষে ১০ হিজরীতে প্রথম বারের মতো হজ্বের দিবসগুলো যিলহজ্ব মাসে ফিরে আসে। মহানবী (সা.) একটি ভাষণ দানের মাধ্যমে (হজ্ব সংক্রান্ত) যে কোন ধরনের পরিবর্তন জোরালোভাবে নিষিদ্ধ করেন। তিনি যিলহজ্ব মাসকে হজ্বের মাস হিসাবে অভিহিত করেন।[7]আর নিম্নোক্ত এ আয়াতটি নিষিদ্ধ মাসগুলো পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞাস্বরূপ অবতীর্ণ হয়েছিল; আর নিষিদ্ধ মাসসমূহ পিছিয়ে দেয়া ছিল জাহেলী আরবদের অন্যতম প্রচলিত প্রথা। আয়াতটি নিম্নরূপ :إنّما النّسيئ في زيادة الكفر يُضلّ به الذين كفروا و يُحلّونه عاما و يحرّمونه عاما‘‘হারাম মাসসমূহ পরিবর্তন করা হচ্ছে কুফ্র বৃদ্ধির নিদর্শন মাত্র। যারা কাফির তারা এ কাজের দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়। তারা এক বছর ঐ কাজকে হালাল করে এবং আরেক বছর তা হারাম করে।’’ (সূরা তাওবাহ্ : ৩৭)এই পরিস্থিতিতেই প্রতি দু’বছর তাশরীকের দিবসগুলো পরিবর্তিত হতো। যদি হাদীসে বর্ণিত হয়ে থাকে যে, হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নূর তাশরীকের দিবসগুলোতে হযরত আমেনার গর্ভে স্থাপিত হয়েছিল এবং তিনি ১৭ রবিউল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাহলে এ দু’ব্যাপারে কোন স্ববিরোধিতা নেই। কারণ, ঐ অবস্থায় স্ববিরোধিতার উদ্ভব হতে পারে যখন তাশরীকের দিবসগুলো বলতে যিলহজ্ব মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ বোঝাবে। তবে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তদনুযায়ী তাশরীকের দিনগুলো সর্বদা পরিবর্তিত হয়েছে এবং চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করার পর এ বিষয়ে আমরা পৌঁছেছি যে, মহানবী (সা.)-এর ভ্রূণ হযরত আমেনা কর্তৃক গর্ভে ধারণ এবং তাঁর জন্মগ্রহণের বছরে হজ্বের দিবসগুলো জমাদিউল উলা মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর যেহেতু মহানবীর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসেই হয়েছিল এমতাবস্থায় হযরত আমেনার গর্ভধারণকাল প্রায় ১০ মাস হয়েছিল।প্রচারে মুন্নি আক্তার

মহানবীর জন্মের দিন, মাস ও বছরনবী করীম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ জন্ম পর্ব ২সাধারণ সীরাত রচয়িতাগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, মহানবী হাতির বছর (عام الفيل) অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কারণ, তিনি অকাট্যভাবে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬২ অথবা ৬৩ বছর। অতএব, তিনি ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।অধিকাংশ ঐতিহাসিক ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, মহানবী (সা.) রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তাঁর জন্মদিন সম্পর্কে মতভেদ আছে। শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, মহানবী ১৭ রবিউল আউয়াল, শুক্রবার ফজরের সময় (ঊষালগ্নে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর আহলে সুন্নাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে তিনি ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।[4]এ দু’অভিমতের মধ্যে কোনটি সঠিক?একটি দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ইসলাম ধর্মের মহান নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস, বরং আমাদের অধিকাংশ ধর্মীয় নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস সুনির্দিষ্ট নয়। এ অস্পষ্টতার কারণেই আমাদের বেশিরভাগ উৎসব ও শোকানুষ্ঠানের তারিখ অকাট্যভাবে জানা যায় নি। ইসলামের পণ্ডিত ও আলেমগণ বিগত শতাব্দীগুলোতে যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো এক বিশেষ পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করতেন। কিন্তু কি কারণে তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ খুব সূক্ষ্মভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি তা (আজও) জানা যায় নি।আমি ভুলব না ঐ সময়ের কথা যখন ভাগ্যবিধি আমাকে (লেখক) কুর্দিস্তানের একটি সীমান্ত শহরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল; ঐ এলাকার একজন আলেম এ বিষয়টি (অর্থাৎ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সঠিক তারিখ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ) উত্থাপন করেন এবং এজন্য তিনি অনেক দুঃখ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আলেমদের উদাসীনতা ও শৈথিল্য প্রদর্শন করার কারণে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘‘এ ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে কিভাবে তাঁদের মধ্যে এ রকম মতবিরোধ বিরাজ করা সম্ভব?’’ তখন আমি তাঁকে বললাম, ‘‘এ বিষয়টির কিছুটা সমাধান করা সম্ভব। আপনি যদি এ শহরের একজন আলেমের জীবনী রচনা করতে চান এবং আমরা ধরেও নিই যে, এ আলেম ব্যক্তি বেশ কিছুসংখ্যক সন্তান এবং অনেক আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন তাহলে উক্ত আলেমের শিক্ষিত সন্তান-সন্ততি এবং বিরাট পরিবার যারা স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জীবনের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞাত তারা উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর আত্মীয় যারা নয় তাদের থেকে কি আপনি তাঁর জীবনের প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সংগ্রহ করবেন? নিশ্চিতভাবে আপনার বিবেক এ ধরনের কাজের অনুমতি দেবে না।মহানবী (সা.) জনগণের মধ্য হতে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর সময় তিনি উম্মাহ্‌ মাঝে তাঁর আহলে বাইত ও অন্যান্য সন্তান-সন্ততি রেখে গেছেন। তাঁর নিকটাত্মীয়গণের বক্তব্য : মহানবী (সা.) যদি আমাদের শ্রদ্ধেয় পিতা হয়ে থাকেন এবং আমরাও যদি তাঁর ঘরে বয়ঃপ্রাপ্ত এবং তাঁর কোলে প্রতিপালিত হয়ে থাকি, তাহলে আমরাই সকলের চেয়ে এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত যে, আমাদের বংশের প্রধান (মহানবী) অমুক দিন অমুক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এমতাবস্থায় তাঁর সন্তান-সন্ততি ও বংশধরদের বক্তব্য উপেক্ষা করে দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের বক্তব্যকে কি তাঁদের বক্তব্যের ওপর প্রাধান্য দেয়া সম্ভব হবে?’’উপরোল্লিখিত আলেম আমার এ কথা শোনার পর মাথা নিচু করে বললেন, ‘‘আপনার কথা আসলে أهل البيت أدرى بما في البيت (ঘরের লোক ঘরে যা আছে সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত)- এ প্রবাদ বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থের অনুরূপ। আর আমিও মনে করি যে, মহানবী (সা.)-এর জীবনের যাবতীয় বিশেষত্ব ও খুঁটিনাটি দিক সম্বন্ধে শিয়া ইমামীয়াহ্ মাজহাবের বক্তব্য যা তাঁর সন্তান-সন্ততি, বংশধর ও নিকটাত্মীয়দের থেকে সংগৃহীত তা সত্যের নিকটবর্তী।’’ এরপর আমাদের মধ্যকার আলোচনা অন্যান্য বিষয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো যা এখানে উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই।প্রচারে মুন্নি আক্তার

নবী করীম মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শুভ জন্মপ্রথম পর্বআল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়ালা আলে মোহাম্মদ ‘‘এক মহান তারা ঝিলমিল করল ও সভার মধ্যমণি হলোআমাদের ব্যথিত অন্তরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সুহৃদ হলো।’’জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। তাদের জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার ব্যবধান মাত্রাতিরিক্তভাবে সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। আর এ পথেই একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।মহান মনীষীদের শৈশবপ্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় গভীরভাবে অধ্যয়ন করা উচিত। কখনো কখনো কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এতটা মহান ও ব্যাপক যে, তাঁর জীবনের সমস্ত অধ্যায়, এমনকি তাঁর শৈশব ও মাতৃস্তন্য পান করার সময়কালের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। যুগের প্রতিভাবান ব্যক্তিবর্গ, সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সভ্যতার কাফেলার অগ্রবর্তীদের জীবন সাধারণত আকর্ষণীয়, সংবেদনশীল ও আশ্চর্যজনক পর্যায় ও দিক সম্বলিত। তাঁদের জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রূণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। আমরা বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর। আর আমরা যদি এ ধরনের বিষয় বিশ্বের সেরা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মেনে নিই তাহলে মহান আল্লাহ্‌র প্রিয় নবী ও ওলীদের ক্ষেত্রে এতদসদৃশ বিষয়াদি মেনে নেয়াও খুব সহজ হবে।পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোশে্ছদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহ্‌র ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি, বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : ‘‘আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে, সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও, তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।’’মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল, ‘‘আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।’’[1]হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ, জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে, ‘‘ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।’’ মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, ‘‘কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।’’ আমাদের দূত তখন বললেন, ‘‘এ কাজ মহান আল্লাহ্‌র কাছে অত্যন্ত সহজ।’’ পরিশেষে মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশে ঈসা মসীহ্‌ নূর হযরত মরিয়মের গর্ভে স্থাপিত হলো। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুর গাছের দিকে নিয়ে গেল। তিনি তাঁর নিজ অবস্থার ব্যাপারে দুঃখভারাক্রান্ত ছিলেন। আমরা বললাম, ‘‘খেজুর গাছ বাঁকাও, তাহলে তাজা খেজুর নিচে পড়বে।’’ সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, ‘‘যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?’’ তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন, ‘‘আমি মহান আল্লাহ্‌র বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’[2]পবিত্র কোরআন, তাওরাত ও হযরত ঈসার অনুসারিগণ যখন এ দু’মহান উলূল আযম নবী সংক্রান্ত যাবতীয় উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করে তখন ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে যেসব আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটেছিল সে সব ব্যাপারে বিস্মিত হওয়া এবং সেগুলোকে ভাসাভাসা ও অগভীর বলে বিবেচনা করা অনুচিত। আমরা হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে দেখতে পাই :মহানবীর জন্মগ্রহণের মুহূর্তে সম্রাট খসরুর প্রাসাদের দ্বারমণ্ডপ (ايوان) ফেটে গিয়েছিল এবং এর কয়েকটি স্তম্ভ ধসে পড়েছিল। ফারস প্রদেশের অগ্নি উপাসনালয়ের প্রজ্বলিত অগ্নি নিভে গিয়েছিল। ইরানের সাভেহ্‌ হ্রদ শুকিয়ে গিয়েছিল। পবিত্র মক্কার প্রতিমালয়সমূহে রক্ষিত মূর্তি ও প্রতিমাসমূহ মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তাঁর দেহ থেকে নূর (আলো) বের হয়ে তা আকাশের দিকে উত্থিত হয়েছিল যার রশ্মি ফারসাখের পর ফারসাখ (মাইলের পর মাইল) পথ আলোকিত করেছিল। সম্রাট আনুশিরওয়ান ও পুরোহিতগণ অতি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দর্শন করেছিলেন।মহানবী (সা.) খতনাকৃত ও নাভি কর্তিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন :الله أكبر و الحمد لله كثيرا سبحان الله بكرة و أصيلا‘‘আল্লাহ্ মহান, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র, সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।’’এ সব বিষয় ও তথ্য সকল মৌলিক নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।[3] হযরত মূসা ও হযরত ঈসার ব্যাপারে যে সব বিষয় আমরা বর্ণনা করেছি সেগুলো বিবেচনায় আনলে এ ধরনের ঘটনাসমূহ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ করার কোন অবকাশ থাকে না।এখন প্রশ্ন করা যায় যে, এ ধরনের অলৌকিক ও অসাধারণ ঘটনাবলীর প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই বা কি ছিল? এ প্রশ্নের জবাবে সংক্ষেপে অবশ্যই বলতে হয় : যেমনভাবে আমরা আলোচনা করেছি ঠিক তেমনি এ ধরনের অস্বাভাবিক ও অলৌকিক ঘটনাবলী কেবল মহানবী (সা.)-এর সাথেই বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং অন্যান্য নবী-রাসূলের জন্মগ্রহণের সাথেও সম্পর্কযুক্ত ছিল। পবিত্র কোরআন ছাড়াও অন্য সকল জাতি, বিশেষ করে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান জাতির ইতিহাস তাদের নিজেদের নবীদের ব্যাপারে এ ধরনের বহু অলৌকিক ঘটনা বর্ণনা করেছে।এ ছাড়াও এ ধরনের ঘটনাবলী ঐ সব অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকের অনুভূতিকে জাগ্রত করে যারা বিভিন্ন জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে। এ সব অত্যাচারী ক্ষমতাধর শাসক এ সব ঘটনা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ হবে যে, কি হয়েছিল যে, একজন বৃদ্ধা রমণীর মাটি নির্মিত ঘরে চির ধরে নি, অথচ সম্রাট খসরু পারভেজের রাজপ্রাসাদের বৃহৎ বৃহৎ স্তম্ভ ধসে পড়েছিল? ইরানের ফারস প্রদেশের অগ্নিমন্দিরের আগুন (অগ্নি প্রজ্বলিত থাকার) সকল উপকরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কেন নিভে গিয়েছিল, অথচ তখন সব জিনিসই স্ব স্ব স্থানে বহাল ছিল? তারা এ ধরনের ঘটনার কারণ কি হতে পারে সে ব্যাপারে যদি চিন্তা-ভাবনা করত তাহলে বুঝতে পারত এ সব ঘটনা মূর্তিপূজার যুগের অবসান সম্পর্কে এবং খুব শীঘ্রই যে সকল শয়তানী শক্তি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে সে ব্যাপারেও সুসংবাদ প্রদান করছে।মূলনীতিগতভাবে ঐ একই দিনে ঘটে যাওয়া অলৌকিক ঘটনাবলী যে অত্যাচারী শাসকদের উপলব্ধি ও শিক্ষাগ্রহণের কারণ হতেই হবে এমনটি বোধ হয় জরুরি নয়, বরং যে ঘটনাটি কোন এক বছরে সংঘটিত হয়েছে তা বছরের পর বছর শিক্ষণীয় হতে পারে এবং তার কার্যকারিতা বহাল থাকতে পারে; আর এতটুকুই যথেষ্ট।মহানবী (সা.) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ঠিক এ রকমই। কারণ এ সব ঘটনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ঐ সব মানুষের অন্তরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়া ও মনোযোগ সৃষ্টি করা যারা মূর্তিপূজা, অন্যায় ও জুলুমের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল।মহানবীর রিসালাত বা নবুওয়াতী মিশনের সমসাময়িক জনগোষ্ঠী এবং এর পরবর্তী প্রজন্মসমূহ এমন একজন মানুষের আহবান শুনতে পাবে যিনি তাঁর সকল শক্তি প্রয়োগ করে মূর্তিপূজা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। যখন তারা তাঁর জীবনের প্রথম দিকের ঘটনাসমূহ অধ্যয়ন করবে তখন প্রত্যক্ষ করবে যে, এ ব্যক্তির জন্মগ্রহণের রাতে এমন সব ঘটনা ঘটেছিল যা তাঁর দাওয়াহ্ বা প্রচার কার্যক্রমের সাথে পূর্ণ সংগতিশীল। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের ঘটনার একই সাথে সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি আসলে তাঁর সত্যবাদী হওয়ারই নিদর্শনস্বরূপ বলে তারা গ্রহণ করবে এবং এ কারণে তারা তাঁর প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করবে।এ ধরনের ঘটনাবলী হযরত ইবরাহীম, হযরত মূসা, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মতো মহান নবীদের জন্মগ্রহণের সময় সংঘটিত হওয়া তাঁদের নবুওয়াত ও রিসালাতের যুগে ঐ সব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়; আর এ সব কিছু আসলে মহান আল্লাহ্‌র ঐশী কৃপা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে এবং মানব জাতির হেদায়েত ও তাদেরকে মহান নবীদের দীন প্রচার কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই সংঘটিত হয়েছে।কালেকশন মোঃ শামসীর হায়দার থেকেঃ