পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

হুসাইন (আঃ)-এর শাহাদাতের শোকে স্বয়ং রাসূল (সঃ) কেঁদেছেন, তাই মাতমে হুসাইন (আঃ) সুন্নতে রাসূল। (তিরমযি-৩৭৭১) আহলে বায়েতের জন্য প্রাণাধিক ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে (সূরা: শুরা-২৩)। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, তাদের দুঃখ বা নির্যাতনের কথা মনে করে স্মৃথিচারণ করা ও মাতমের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করা কোরআনেরই একটি হুকুম। হুসাইন (আঃ)-এর জন্য আকাশ ও জমিন কাঁন্না করে, যেহেতু তিনি মুমেনদের (বেহেশতের) সর্দার (সূরা: দুখান-২৯)। হুসাইন (আঃ)-এর অমর আত্নত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এটা যদি মাতমের মাধ্যমে হয় দোষের কিছু দেখছি না। (সূরা: বাকারা-১৫২) হুসাইন (আঃ) মরে গেছেন এমন কথা বলে মাতম করা যাবে না দাবি করলে ঈমান নষ্ট হবে (কোরআনের আদেশ অমান্য হবে)। (সূরা: বাকারা-১৫৪; সূরা: আলে ইমরান-১৬৯) দুনিয়ায় কেহ যদি হুসাইনের নাম না নেয় তবে কিচ্ছু যায় আসে না। এই দায়িত্ব আল্লাহ এবং ফেরেশতারা নিয়েছেন যদিও ঈমানদারদেরকেও দায়িত্ব দিয়েছেন (সূরা: আহযাব-৫৬) আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদঁ ওয়া আলে মুহাম্মদঁ।

কারবালা প্রান্তরে শীয়ারাই ইমাম হোসেনকে (আঃ) হত্যা করেছে —- ইদানীং অামাদের অনেক সু্ন্নি ভাই অজ্ঞতায় হোক বা মাযহাবগত বিদ্বেষবশত ভাবে হোক – একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন যে , কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (আঃ) কে শীয়ারা হত্যা করেছিল । এখন শীয়ারা সেই অনুতাপে বুক চাপরিয়ে মাতম করে পূর্বের পাপের প্রায়াশ্চিত্ত করে । সেইসাথে ভয়ংকর টাটকা ডাঁহা একটি মিথ্যা কথা বাজারে ছাড়া হচ্ছে যে , কারবালা হত্যাযজ্ঞ সম্বন্ধে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া কিছুই জানত না । কারবালা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ঈয়াযীদর নিয়োগ দেওয়া গর্ভনর নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ । কারবালা নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া খুবই কান্নাকটি এবং দুঃখ প্রকাশ করেছিল ! বেশ ভাল কথা । প্রতিটা মানুষ স্বাধীনভাবে যে কোন কথা বলতেই পারেন । হোক সেটা সত্য অথবা টাটকা ডাঁহা মিথ্যা ! যাইহোক , যে সকল সুন্নি ভাইরা হরহামেশা এ কথাটি বলে থাকেন , তাদের নিকট বিনীত ভাবে কয়েকটি প্রশ্ন রইল । আশ করি , যৌক্তিক জবাব পাব । প্রশ্ন – ১) – ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে ওকবাকে যে কোন মূল্যে ইমাম হোসেনের (আঃ) বাইআত গ্রহন অন্যথায় হত্যার আদেশ দিয়েছিল কেন ? প্রশ্ন – ২) – ইমাম হোসেন (আঃ) কে গুপ্তহত্যার জন্য হজ্ব চলাকালীন সময় মক্কাতে কেন গুপ্তঘাতক প্রেরন করেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ? প্রশ্ন – ৩) – কারবালা তথা কুফা নগরীতে সর্বপ্রথম শহীদ মুসলিম বিন আকিলের পৈচাশিক হত্যার বিচার ঈয়াযীদ কেন করে নাই ? প্রশ্ন – ৪) – উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে তখন ঈয়াযীদ কেন কুফার গর্ভনর নিয়োগ করে পাঠিয়েছিল ? প্রশ্ন – ৫) – কারবালা প্রান্তরে মাত্র ১১০ জনের মহিলা শিশু সহ কাফেলার বিরুদ্বে প্রায় তিরিশ হাজার বিশাল রাজকীয় সৈন্যের বহর কার হুকুমে এবং কেন জড়ো হয়েছিল ? প্রশ্ন – ৬) – কারবালার ময়দানে যারা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে তারা যদি শীয়া হয় তাহলে কেন সেই সকল শীয়া হত্যাকারীগনকে বিচারের আওতায় আনে নি , ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ? প্রশ্ন – ৭) – বিচার করা তো দূরের কথা , কেন সেই সকল হত্যাকারীগনকে ঈয়াযীদ খলীফার দরবার থেকে লক্ষ লক্ষ দিরহাম পুরস্কার দেয়া হল ? প্রশ্ন – ৮) – কারবালা হত্যাযজ্ঞের পরে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদের কোন বিচার করা তো দূরের কথা ! ইমাম হোসেন (আঃ) কে হত্যার পরেও উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে কুফার গর্ভনর হিসাবে বহাল রেখেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া । এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের কয়েক মাস পর উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ সিরিয়ায় গিয়ে ঈয়াযীদের সাথে দেখা করলে ঈয়াযীদ পরম খুশীমনে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে আলিঙ্গন করে তার কপালে চুমু খায় এবং তার সিংহাসনের ঠিক পাশেই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বসতে দেয় । রাজদরবারের এক গায়ককে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে স্বাগতম জানানোর জন্য গান পরিবেশন করতে বলা হয় । সেই সাথে পুরো রাজদরবারে বিশেষ ভাবে তৈরী মদের বিশাল পরিবেশন করা হয় । অতঃপর আনন্দ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় ঈয়াযীদ নিজের হাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ ও ওমর ইবনে সাদকে দশ লক্ষ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) পুরস্কার হিসাবে প্রদান করে । এবং সেই সাথে এক বছরের জন্য ইরাকের কুফা ও বসরা প্রদেশের বার্ষিক খাজনার পুরাটাই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে গ্রহনের অনুমতি দেয় । ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বিচারের আওতায় না এনে এভাবে কেন পুরস্কৃত করেছিল ? প্রশ্ন – ৯) – কারবালার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নবী পরিবারের সদস্যগনকে সাত্বনা দেয়ার পরিবর্তে ঈয়াযীদ কেন একটি বছর কারাগারে বন্দী করে রাখল ? প্রশ্ন – ১০) – পুরো এক বছর বন্দীকালীন সময় ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) এর হাত ও পায়ে কেন ২৪ ঘন্টা শিকলের বেড়ী পরিয়ে রাখা হত ? প্রশ্ন – ১১) – কেন হোসেনকন্যা সকিনা (সাঃআঃ) কে জেলখানার ভেতরেই কবর দিতে হল ? প্রশ্ন – ১২) – নবী পরিবারকে কেন ঈয়াযীদ বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে বাধ্য হল – ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটটি জানাবেন কি ? প্রশ্ন – ১৩) – মূয়াবীয়া পুত্র ঈয়াযীদ নিশ্চয়ই শীয়া ছিল না , তাহলে এই সবই কি রাজকীয় মেহমানদারীর সংগায় পড়ে ? প্রশ্ন – ১৪) – কারবালার ঘটনার এক বছর পরে পুরো তিনদিন পর্যন্ত মদীনা শহরে অবাধে লুটপাট , সাহাবী হত্যা , বহু নারী ধর্ষণের অনুমতি ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যবাহিনীকে দিয়েছিল ? প্রশ্ন – ১৫) – এই বেহিসাব নারী ধর্ষণের ফলে বহু নারী গর্ভবতী হয়েছিল , তাদের জন্য দায়ী কে ? প্রশ্ন – ১৬) – মদীনার মসজিদ এ নবীকে ঈয়াযীদ কেন ঘোড়া রাখার আস্তাবল বানিয়েছিল ? প্রশ্ন – ১৭) – মক্কাতে পবিত্র ক্বাবা গৃহে ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যদেরকে দিয়ে আগুন লাগিয়েছিল ? সর্বশেষ প্রশ্ন – কারবালার হত্যাযজ্ঞের প্রধান নায়ক ঈয়াযীদ , মূয়াবীয়া ও আবু সুফিয়ান তাহলে কি শীয়া ছিল ? সে সকল সুন্নি ভাইরা এই কথাটি বলে থাকেন যে , শীয়ারাই ইমাম হোসেন (আঃ) কে কারবালা প্রান্তরে হত্যা করেছিল – দয়া করে তাদের নিকট থেকে উপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলির টু দি পয়েন্টে যৌক্তিক জবাবের প্রতীক্ষায় থাকলাম

বছর ঘুইরা আইলো আবার মহররমের চান! হায় আল্লাহ! ক্যামন কইর‍্যা কাইরা নিলো ফাতেমার সন্তান! কান্দে আকাশ, কান্দে বাতাস হইয়া জারে জার! হায় আল্লাহ! জয়নাবেরে কেমন কইরা ঘুড়ায় হাট-বাজার! ক্যামনে শুকায় বুক তিয়াশায়, আসগর- সকিনার!! হায় আল্লাহ! ক্যামন কইর‍্যা কস্ট দিছে আওলাদ সকিফার! ক্যামন কইর‍্যা মারছে ওরা মাওলা আব্বাসেরে ক্যামন কইর‍্যা তীর মারছে ছোট্ট আসগরেরে! হায় আল্লাহ্‌!! ক্যামন কইর‍্যা সহ্য করছে , আমার মাওলায়! ক্যামন কইর‍্যা প্রান সইপাছে তোমার হাওলায়!!! ও খোদা তোমার কাছে মিনতি করি, তাদের দোহাই দিয়া! পাগলার প্রানের তিয়াশ মিটাও তাদের বদলা নিয়া। সকিফার আওলাদেগো সাজা আমি চাই! তোমার কাছে বিচার দিলাম, মাওলা মালিক সাঁই।। Z Ahmed Ahmed

পবিত্র কুরআনুল কারীম নবীর আহলে বায়াতের সঙ্গে ও নবীর আহলে বায়াত পবিত্র কুরআনুল কারীমের সঙ্গে আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ পবিত্র কোরআন, হাদীস এবং বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থে কাদেরকে আহলে বাইত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে? এবং কোরআনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কি? আদি কাল থেকেই এ বিষয়টা নিয়ে মুফাসসিরগণ ও কালাম শাস্ত্রবিদগণ বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও পর্যালোচনা করে আসছেন। এ ব্যাপারে অনেক গ্রন্থও রচিত হয়েছে। এই লেখনিগুলো থেকে পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারের কিছুসংখ্যক সদস্যকে আহলে বাইত বলা হয়েছে। অন্যদিকে নবী (সা.) এর বিভিন্ন বর্ণনায় এ বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তাদের এবং পবিত্র কোরআনের মধ্যে একটা চিরস্থায়ী বন্ধনও রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সাথে আহলে বাইতের এই চিরস্থায়ী বন্ধন বিশেষ মর্যাদার পরিচয় বহন করে। পবিত্র কোরআন মজিদে ‘আহলে বাইত’ শব্দটি মাত্র দু’বার এসেছে : সূরা হুদের ৭৩ নং আয়াতে : قَالُواْ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللّهِ رَحْمَتُ اللّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ অর্থাৎ ‘তারা বলল তুমি কি আল্লাহর কোন কাজে বিস্ময়বোধ করছো, তোমাদের উপরে সর্বদা আল্লাহর (বিশেষ) রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে; অবশ্যই তিনি মহাপ্রশংসিত ও মহামর্যাদাবান।’ সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا অর্থাৎ ‘হে আহলে বাইত নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা চান তোমাদেরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে দুরে রাখতে এবং সম্পূর্ণরূপে পূত ও পবিত্র করতে।’ প্রথম আয়াতটি হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং তার পরিবার সম্পর্কে। দ্বিতীয় আয়াতটিতে -যা তাতহীরের আয়াত নামে প্রসিদ্ধ- নবী (সা.) এর পরিবারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত পোষণ করেন। এই আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা নবী (সা.) এর আহলে বাইতকে সকল প্রকারের কলুষতা থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আহলে বাইত কারা : আহলে বাইতের মর্যাদার ব্যাপারে সকলেই একমত তবে আহলে বাইত কারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। নবী (সা.)এর আহলে বাইতকে চেনার একমাত্র পথ হচ্ছে হাদীস ও রেওয়ায়েত। বিভিন্ন হাদীস ও রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.), হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.) হচ্ছেন আহলে বাইত। জালালউদ্দিন সূয়ূতি তার তাফসীরে এ সম্পর্কে অনেক রেওয়ায়েত সনদ সহকারে নবী (সা.) এর সাহাবীদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তাবারসিও হযরত আবু সাঈদ খুদরী, আনাস বিন মালেক, ওয়াছেলা বিন আছকা, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা.), জাবের বিন আব্দুল্লাহ ও হাসান বিন আলী (আ.) সহ অন্যান্য সাহাবা সূত্রে এর উল্লেখ করে অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। নবী পত্মী উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি নিম্নলিখিত আয়াতটির শানে নুযুল বর্ননা করতে গিয়ে বলেছেন : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا যখন এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিল। তারা হলেন জীবরাঈল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী (আ.), ফাতিমা (আ.), হাসান ও হোসাইন (আ.) এবং আমি ছিলাম দরজার মুখে। আমি রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গণ্য নই?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না তুমি তাদের মধ্যে নও, তবে নিশ্চয় তুমি সঠিক পথে আছো; নিশ্চয়ই তুমি কল্যাণের মধ্যে রয়েছো; তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য।’ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন, হে আহলে বাইত, তোমাদের উপর সালাম ও দরুদ। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইচ্ছা পোষণ করেছেন তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন : فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ অর্থাৎ ‘বলুন : (হে নবী) এসো আমরা আমাদের সন্তানদের আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদের এবং আমরা আমাদের নারীদের তোমরা তোমাদের নারীদের এবং আমরা আমাদের নিজেদেরকে (নাফসকে) আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ডেকে নিয়ে এসো। অতঃপর আমরা (আল্লাহর দরবারে) আবেদন জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণ করি।’ (আলে ইমরান : ৬১) যখন আয়াতটি অবতীর্ণ হল তখন মহানবী (সা.) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে ডেকে আনলেন। তিনি বললেন : اللهم هولاءِ أهْلُ بَيْتِي ‘হে আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত।’ নবী (সা.) এর বর্ণনা সমূহে আহলে বাইত ও কোরআনের বন্ধন : নবী (সা.) তাঁর আহলে বাইতের অনেক ফযিলতের কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁর ঐ সব বর্ণনা আহলে বাইতকে তাঁর উম্মতদের মধ্যে অতি উচ্চ আসনে আসীন করেছে। এই ফযিলতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরআন ও আহলে বাইতের একাত্মতা এবং তাদের মধ্যকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাদের মধ্যে যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে তা কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। শিয়া সুন্নী সকলেই যে হাদীসের ব্যপারে একমত তা হাদীসে ‘সাকালাইন’ নামে পরিচিত। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন : إنّى تارِكٌ فِيكُمْ الثَقْلَيْنِ کِتَابَ اللهِ و عِتْرَتِی أَهْلَ بَيْتِی إنْ تَمَسَّکْتُمْ بِهِمَا لَنْ تَضِلُّوا أبَداً ‘আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, অপরটি হচ্ছে আমার রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়, আমার আহলে বাইত। তোমরা যদি এ দুটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।’ এই হাদীসটি নবী করিম (সা.) এর অনেক বিশিষ্ট সাহাবী বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি মুতাওয়াতির (অসংখ্য) সূত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। অনেকেই উল্লিখিত হাদীসটি বিশেরও অধিক সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের প্রেক্ষাপট ও দলীল সমূহের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নবী (সা.) এই কথাগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সাহাবা ও অনুসারীদের সামনে বলেছেন এবং আহলে বাইত ও কোরআনের মধ্যে যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ইবনে হাজার হাইসামি (একজন প্রসিদ্ধ সুন্নী আলেম) এ ব্যাপারে বলেছেন যে, উল্লিখিত হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেরও অধিক সংখ্যক সাহাবী এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই হাদীসটি বিদায় হজ্জ্বের সময় অথবা আরাফার দিনে স্বয়ং নবীর মুখ থেকে শুনেছেন এবং বর্ণনা করেছেন । কেউ কেউ বলেছেন নবী (সা.) তাঁর অসুস্থতার সময় বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবীর সমাবেশে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য দল বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পর একটা বক্তৃতা দেন এবং সেখানেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কোরআন এবং আহলে বাইতের মধ্যে বিদ্যমান চিরস্থায়ী ও দৃঢ় বন্ধনের পেছনে একটা সূক্ষ্ণ ঐশী পরিকল্পনা রয়েছে। কোরআনের কিছু কিছু আয়াত সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছে যে, সকল যুগের ঐশী বাণীসমূহ দুটো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবসময় আল্লাহর ঐশী বাণী সে যুগের নবীর মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই ওহীর পাশাপাশি একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ ছিলেন, যিনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি আল্লাহর দ্বীনকে এর সকল দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তমরূপে বর্ণনা করতে পারেন, সেই সাথে অদৃশ্যেরও জ্ঞান রাখেন। অন্যদিকে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ পবিত্রতার অধিকারী এবং কু প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনায় কখনও প্রভাবিত হন না। আল্লাহর ওহী প্রচার এবং প্রসারের দায়িত্ব ছাড়াও তা বর্ণনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। আর অনুকূল পরিস্থিতিতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা এবং ইসলামী বিধানকে প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বে ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির দায়িত্বও তারা পালন করে থাকেন। সর্বোপরি তারা হচ্ছেন ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির দিশারী। পবিত্র কোরআনে এব্যাপারে বলা হয়েছে যে : وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকে কেবল তাঁর স্বজাতির ভাষায়ই প্রেরণ করেছি যাতে করে সে তাদের জন্য (আমার বাণী) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। (ইব্রাহীম:৪) পবিত্র কোরআনেও নবী (সা.) এর এই দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ‘তোমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে করে যা কিছু মানুষদের জন্য পাঠানো হয়েছে, তা তুমি তাদের জন্য সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা কর; হয়তো তারা চিন্তা ভাবনা করবে।’(নাহল:৪৪) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে : هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَ الْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি সাধারণ জনগোষ্ঠীর (নিরক্ষর লোকদের) মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনায়, তাদেরকে পবিত্র করে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়, অথচ তারা তার পূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিলো।’(জুমুআ : ২) এসব আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, আল্লাহর ঐশী বাণীসমূহ ব্যাখ্যার জন্য তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত বান্দারা সবসময় ছিলেন। সুতরাং এমন এক ব্যক্তি সর্বদা অবশ্যই থাকবেন যিনি ওহী সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হবেন। নবুওয়াতের ধারা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ওহী নাযিলের ধারাও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কোরআনের বাণীর আহ্বান চিরন্তন হওয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। একদিকে এই অবিনশ্বর ও চিরন্তন হওয়ার বৈশিষ্ট্য, অন্যদিকে মুসলমানরা তাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও ধর্মীয় জীবনে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত এ গ্রন্থের মুখাপেক্ষী হওয়ায় সব যুগেই কোরআনের পাশাপাশি তার সমস্ত গূঢ় রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত একজন ব্যাখ্যাকারক প্রয়োজন। পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধন থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ হচ্ছে নবী (সা.) এর মৃত্যুর পর একমাত্র তাঁর আহলে বাইতের দ্বারাই পবিত্র কোরআনের আয়াত সমুহের নির্ভুল ও সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্পাদিত হয়েছে। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি নিজেই এ দায়িত্ব পালন করতেন। নবী (সা.) এর মৃত্যুর সাথে সাথে যদিও ওহী নাযিলের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু আল্লাহর বাণী প্রচার, প্রসার ও বর্ণনার কাজ শেষ হয়ে যায় নি। কোরআনের আয়াত নবী (সা.) এর সময়কার মানুষদের যেভাবে সম্বোধন করেছে তার পরবর্তী যুগের মানুষদেরকেও ঠিক সেভাবেই সম্বোধন করেছে। আহলে বাইত ও পবিত্র কোরআনের এই বন্ধন যদি অব্যাহত না থাকত নবী (সা.) এর পরবর্তী যুগে কোরআন একটি নীরব প্রতিবেদন হয়ে পড়ত। কখনোই মুসলমানদের চাহিদা মিটাতে পারতো না এবং ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে তারা ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়তো। হযরত আলী (আ.) এর বাণীতে এর সত্যতা পাওয়া যায়। ‘কোরআন আল্লাহর নির্বাক গ্রন্থ, আর আমি তার ব্যখ্যা বিশ্লেষণকারী, সুতরাং আল্লাহর সবাক পুস্তককে আঁকড়ে ধর।’ ইমাম বাকের (আ.) কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে নবী (সা.) এর পর মানুষের পথ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নিস্পাপ ইমামগণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, আল্লাহ বলেছেন : إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ ‘অর্থাৎ নিশ্চয় (হে নবী) তুমি সতর্ককারী এবং প্রত্যেক জাতির জন্য পথ প্রদর্শক রয়েছে।’(রা’দ : ৭) এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম বাকের (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ভীতি প্রদর্শনকারী। আর প্রত্যেক যুগে আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে একজন ইমাম থাকবেন যিনি নবী (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার দিকে মানুষকে আহ্বান করবেন। নবী (সা.) এর পর প্রথম ইমাম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.)।’ ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : ‘সব সময়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে থেকে কাউকে না কাউকে নির্বাচিত করেন, যে তাঁর কিতাবের আদ্যপ্রান্ত সব জানেন।’ তাঁর থেকে অন্য আরেক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে : ‘আল্লাহর কসম কোরআনের সমস্ত জ্ঞান ভান্ডার আমাদের নিকটে মজুদ রয়েছে।’ এটা মনে রাখা দরকার যে, আহলে বাইত কর্তৃক আল্লাহর বাণীসমূহকে ব্যাখ্যা দান এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি কোন নির্দিষ্ট আয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট যুগের জন্যও নয়। বরং এটা সর্ব যুগের ও সর্ব কালের জন্য। এর যথার্থতা হাদীসে সাকালাইন থেকে ষ্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কেননা ঐ হাদীসেই কোরআন ও আহলে বাইতের চিরস্থায়ী বন্ধনের কথা বলা হয়েছে যা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইবনে হাজার হাইসামী কোরআন এবং আহলে বাইতের অব্যাহত বন্ধনের ব্যাপারে বলেছেন : সাকালাইনের হাদীস আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দান করে এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছে যে, কোরআন যেমন কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে এবং সেটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে তেমনি আহলে বাইতও কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে এবং তাদেরকে কোরআনের মতই আঁকড়ে ধরতে হবে। উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, আহলে বাইত (আ.) আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং আল্লাহর পবিত্র বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাদের সমতুল্য কেউ নেই। এর যথার্থতা পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৩৩ এবং ওয়াকেয়ার ৭৭-৭৯ নং আয়াত : إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * في كِتابٍ مَّكْنُونٍ * لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ অর্থাৎ নিশ্চয় এটি মহাসম্মানিত কোরআন যা গুপ্ত এক সুরক্ষিত গ্রন্থে আছে। পবিত্র লোকেরা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করে না (করতে পারেনা)। কোন কোন মুফাসসির (তাবাতাবাঈ) لا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ বাক্য কে كِتَابٍ مَّكْنُون বাক্যাংশের সিফাত (বৈশিষ্ট্য) হিসেবে বলেছেন। এই অবস্থায় আল্লাহর পবিত্র বাণীর অর্থ হবে যে, শুধুমাত্র যারা الْمُطَهَّرُونَ অর্থাৎ পবিত্র কেবল তারাই কোরআনের মূল উৎস ও এর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তাতহীরের আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আহলে বাইত (আ.) হচ্ছেন সেই মুতাহ্হারুন বা পবিত্র ব্যক্তিবর্গ। অতএব তাঁরাই আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। ইমাম আলী (আ.) বলেন : ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সমস্ত পাপ পংকিলতা থেকে মুক্ত রেখেছেন। আমরা পৃথিবীতে মানুষের জন্য পথ প্রদর্শনকারী। আমরা সব সময় কোরআনের সাথে এবং কোরআন আমাদের সাথে; তারা কখনোই একে অপরের থেকে আলাদা হবে না। প্রচারে ইয়া আলী আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ) সুরা নিসা,আয়াত# ৬৯ “ এবং যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে,সুতরাং তারা সেই লোকদের সাথী হবে নবীগন,সত্যবাদীগন,শহীদ্গন এবং সতকর্মপরায়নদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাদের নিয়ামত দান করেছেন।আর তারা কতই না উত্তম সাথী!(১)” মুলঃমাওলানা ফরমান আলীর উর্দু তাফসীর অনুবাদঃ মাওলানা শেখ সাবের রেজা সম্পাদনা ও পুনর্লিখনঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনোয়ারুল কবির আরিফ(ষ্টুডেন্ট অফ পি এইচ ডি,ইরান) প্রকাশকঃঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে,নুরুস সাকলায়েন জনকল্যান সংস্থা,বেগম বাজার,ঢাকা। সঠিক তাফসীর(১)ঃ এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,নবীগন অর্থে মহানবী(সাঃ),সত্যবাদীগন অর্থে হজরত আলী(আঃ),শহীদগন বলতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন(আঃ),সতকর্ম্পরায়ন অর্থে অবশিষ্ট ইমামগণকে বুঝান হয়েছে।আর এটা অনুমতির অনেক নিকটবর্তীও বটে।কেননা,’নাবিয়্যিন’এর উদ্দেশ্য যে মহানবী(সাঃ) তা ষ্পষ্ট,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।‘সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ)।কেননা ‘সিদ্দিক’ শব্দের অর্থ যদি সত্যায়নকারী ধরা হয় তবে ইতিহাসসমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে,রাসুল(সাঃ)এর নবুওতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী তিনিই।আর যদি সত্যবাদী অর্থ গ্রহন করা হয় তবুও তিনি ছাড়া অপর কেউ তাঁর দাবীদার হতে পারে না।কারন,অন্য কোন সাহাবীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট ছিল না।কারন,তারা ২৮ থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত মুর্তির সামনে মাথা নত করেছেন ও শিরক করেছেন।পক্ষান্তরে হজরত আলী(আঃ) কখনও মুর্তির সামনে মাথা নত করেননি এবং সবসময় আল্লাহর একত্বের ঘোষনায় সত্যবাদী ছিলেন।আর ইমাম ২ ভাই ( ইমাম হসান ও ইমাম হুসাইন)আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াও ষ্পষ্ট এবং ‘সালেহীন’ বলতে অবশিষ্ট ইমামগন উদ্দেশ্য হওয়াতে কোন মুসলমান সন্দেহ করতে পারে না।কেননা সালেহীন বলতে সৎ কর্মের ক্ষেত্রে পুর্নতম ব্যাক্তিদেরকে বুঝান হয়।আর ে বিষয়টি ষ্পষ্ট যে,প্রতি যুগে নবী বংশের পবিত্র ইমামগন সতকর্ম,পরহেজগারিতা ও অন্য বৈশিষ্টে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ট ছিলেন

#৭২জন উল্লেখযোগ্য কারবালা শহীদের নাম -- ১#হযরত সৈয়েদেনা ইমাম হোসাইন ইবনে আলী(আঃ).. ২#হযরত আব্বাস বিন আলী (আঃ) ৩#হযরতসৈয়েদেনা আলী আকবর বিন হুসাঈন (আঃ ) ৪# হযরত সৈয়েদেনা আলী আসগর বিন হুসাঈন (আঃ) ৫#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন আলী (আঃ) 6#হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আলী ( আঃ) ৭#হযরত সৈয়েদেনা উসমান বিনআলী(আঃ) ৮# হযরতসৈয়েদেনা আবু বকরবিন আলী (আঃ) ৯#হযরত সৈয়েদেনা আবু বকর বিন হাসান(আঃ) ১০#হযরত সৈয়েদেনা কাসিম বিন হাসান(আঃ) ১১#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন হাসান (আঃ) ১২#হযরত সৈয়েদেনা আওন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর(আঃ) ১৩# হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর(আঃ) ১৪# হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিনআকীল(আঃ) ১৫# হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন মুসলিম (আঃ) ১৬#হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন সাঈদ বিন আকীল (আঃ) ১৭#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল রহমান বিন আকীল(আঃ) ১৮# হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আকীল(আঃ) ১৯#হযরত ওনস বিন হাস` আসাদী (আঃ) ২০# হযরত হাবিব বিন মাজাহির আসাদী(রাদিআল্লাহু) ২১#হযরত মুসলিম বিন আওসাজা আসাদী (রাদিআল্লাহু ) ২২#হযরত কাইস বিন মাসহার আসাদী (রাদিআল্লাহু) ২৩# হযরত আবু সামামা উমরু বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু ২৪#হযরত বুরির হামদািন(রাদিআল্ লাহু ২৫#হযরত হানালাবিন আসাদ ( রাদিআল্লাহু) ২৬#হযরত আবিস শাকরি(রাদিআল্লা হু) ২৭# হযরত আব্দুল রহমান রাহবি (রাদিআল্লাহু) ২৮#হযরত সাইফ বিন হাস` (রাদিআল্লাহু) ২৯#হযরত আমির বিন আব্দুল্লাহ হামদানি(রাদিআল্লাহু) ৩০# হযরত জুনাদা বিন হাস` (রাদিআল্লাহু) ৩১#হযরত মাজমা বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু) ৩২# হযরত নাফে বিন হালাল (রাদিআল্লাহু) ৩৩# হযরত হাজ্জাজ বিন মাসরুক (রাদিআল্লাহু) মুয়াজ্জিন এ কাফেলা ৩৪# হযরত ওমর বিন কারজা (রাদিআল্লাহু) ৩৫# হযরত আব্দুল রহমান বিন আবদে রব (রাদিআল্লাহু) ৩৬#হযরত জুনাদা বিন কাব (রাদিআল্লাহু) ৩৭#হযরত আমির বিন জানাদা (রাদিআল্লাহু) ৩৮#হযরত নাঈম বিন আজলান (রাদিআল্লাহু) ৩৯#হযরত স্বাদ বিন হাস`(রাদিআল্লাহু) ৪০#হযরত জুহায়ের বিন কাইন(রাদিআল্লাহু) ৪১#হযরত সালমান বিন মাজারাইব (রাদিআল্লাহু) ৪২#হযরত সাঈদ বিন ওমর(রাদিআল্লাহু) ৪৩#হযরত আব্দুল্লাহ বিন বাসির (রাদিআল্লাহু) ৪৪# হযরত ইয়াজিদবিন জাঈদ কানদি (রাদিআল্লাহু) ৪৫#হযরত হারব বিন ওমর উল কাইস (রাদিআল্লাহু ৪৬# হযরত জাহির বিন আমির (রাদিআল্লাহু:) ৪৭# হযরত বাসির বিন আমির (রাদিআল্লাহু) ৪৮# হযরত আব্দুল্লাহ আরওয়াহ গাফফারি (রাদিআল্লাহু) ৪৯#হযরত জন (রাদিআল্লাহু) ৫০#হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমির (রাদিআল্লাহু) ৫১# হযরত আব্দুল আলা বিন ইয়াজিদ (রাদিআল্লাহু) ৫২# হযরত সেলিম বিন আমির (রাদিআল্লাহু) আজদী ৫৩#হযরত কাসিম বিন হাবীব (রাদিআল্লাহু) ৫৪#হযরত জায়েদ বিন সেলিম (রাদিআল্লাহু) ৫৫#হযরত নোমান বিন ওমর (রাদিআল্লাহু) আবদী ৫৬#হযরত ইয়াজিদ বিন সাবিত (রাদিআল্লাহু) ৫৭#হযরত আমির বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু) ৫৮#হযরত সাইফ বিন মালিক (রাদিআল্লাহু) (৫৯#হযরত জাবির বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু) ৬০#হযরত মাসুদ বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু) ৬১#হযরত আব্দুল রহমান বিন মাসুদ (রাদিআল্লাহু) ৬২# হযরত বাকের বিন হাই ৬৩# হযরত আম্মার বিন হাসান তাই (রাদিআল্লাহু) ৬৪#হযরত জুরঘামা বিন মালিক (রাদিআল্লাহু) ৬৫#হযরত কানানা বিনআতিক(রাদিআল্লাহু) ৬৬#হযরত আকাবা বিন স্লাট (রাদিআল্লাহু) ৬৭#হযরত হুর বিন ইয়াজিদ তামিমি (রাদিআল্লাহু) ৬৮#হযরত আকাবা বিন স্লট (রাদিআল্লাহু) ৬৯#হযরত হাবালা বিন আলী শিবানী (রাদিআল্লাহু) ৭০#হযরত কানাবা বিন ওমর (রাদিআল্লাহুতায়াল আনহু) ৭১#হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইয়াকতার (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু) ৭২#হযরত গোলাম এ তুরকি (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু) Golam Hasan Nur shojib

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ২ ❤️❤️❤️❤️❤️২৪ জিলহজ ঈদে মোবাহেলা দিবস__+__ আল্লাহ __১___+___২__+___৩__+__৪___+__৫___+ আল্লাহ❤️❤️❤️❤️❤️ নাজরানের প্রতিনিধি দল সাদামাটা পোশাক পরে এবং সোনার আংটি খুলে রেখে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম জানালে তিনিও সম্মাানের সাথে তাদের সালামের জবাব দেন এবং তারা যে সব উপঢৌকন এনেছিল , সেগুলোর কিছু কিছু গ্রহণ করেন । আলোচনা শুরু করার আগে প্রতিনিধিরা বলেছিল , তাদের প্রার্থনার সময় হয়েছে । মহানবী (সাঃ) তাদেরকে মদীনার মসজিদে নববীতে নামায ও প্রার্থনা করার অনুমতি দেন এবং তারা পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে । সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ । নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনা — কতিপয় সীরাত রচয়িতা , মুহাদ্দিস (হাদীসবিদ) এবং ঐতিহাসিক মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনার মূল বিষয় উদ্ধৃত করেছেন । তবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস এ আলোচনা এবং মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন । সূত্র – মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুহলুল ইবনে হুমাম ইবনে মুত্তালিব (জন্ম ২৯৭ হিজরী এবং মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী) । তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মুত্তালিব শাইবানীর ‘মুবাহালা’ গ্রন্থ এবং হাসান ইবনে ইসমাঈলের৮ ‘যিলহজ্ব মাসের আমল’ গ্রন্থ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন । সূত্র – দেখুন ইকবালুল আমাল, পৃ. ৪৯৬-৫১৩ । তবে এ ক্ষুদ্র পরিসরে এ মহা ঐতিহাসিক ঘটনার সমুদয় দিক , যেসবের প্রতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে , কতিপয় ঐতিহাসিক , এমনকি সামান্য ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন নি , সেসব উদ্ধৃত করা সম্ভব হবে না । আর তাই হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আলাপ-আলোচনা যা উদ্ধৃত করেছেন , তার অংশ বিশেষের প্রতি আমরা ইঙ্গিত করব । সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ । মহানবী (সাঃ) বলেন , “আমি আপনাদেরকে তাওহীদী (একত্ববাদী) ধর্ম , এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি ।” এরপর তিনি পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত তাদেরকে তেলাওয়াত করে শুনালেন । নাজরানের প্রতিনিধিগন বলেন , “আপনি যদি ইসলাম বলতে বিশ্বজাহানের এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকেই বুঝিয়ে থাকেন , তা হলে আমরা আগেই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলছি ।” মহানবী (সাঃ) বলেন , “ইসলামের (মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ) কতিপয় নিদর্শন আছে । আর আপনাদের কতিপয় কর্মকাণ্ড বলে দেয় যে , আপনারা ইসলামে যথাযথ বাইয়াত হন নি । আপনারা কিভাবে বলেন যে , আপনারা এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতকারী , অথচ আপনারা একই সময় ক্রুশের উপাসনা করেন এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকেন না , আর মহান আল্লাহর পুত্রসন্তানেও বিশ্বাস করেন ?” নাজরানের প্রতিনিধিরা বলেন , “আমরা তাঁকে (হযরত ঈসা মসীহ্) ‘আল্লাহ্’ বলে বিশ্বাস করি । কারণ তিনি মৃতদের জীবিত এবং অসুস্থ রোগীদের আরোগ্য দান করতেন এবং কাদা থেকে পাখি তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে দিতেন । আর এ সব কাজ থেকে প্রতীয়মান হয় , তিনি আল্লাহ্ ।” মহানবী (সাঃ) বলেন , “না , তিনি মহান আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই সৃষ্টি, যাকে তিনি হযরত মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভে রেখেছিলেন । আর মহান আল্লাহ্ই তাঁকে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন ।” একজন প্রতিনিধি বলেন , “হ্যাঁ, তিনিই মহান আল্লাহর পুত্র । কারণ তাঁর মা মারিয়াম (আঃ) কোন পুরুষের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই তাঁকে জন্ম দিয়েছিলেন । তাই অনন্যোপায় হয়ে বলতেই হয় যে , তাঁর পিতা হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্, যিনি বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ।” এ সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে বললেন : “আপনি তাদেরকে বলে দিন : হযরত ঈসা মসীহর অবস্থা এ দিক থেকে হযরত আদম (আঃ) এর অবস্থার সাথে সদৃশ যে , তাঁকে তিনি তাঁর অসীম ক্ষমতা দিয়ে বিনা পিতা-মাতায় মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন । সূত্র – সূরা আলে ইমরানের ৫৯তম আয়াত ) إنّ مثل عيسي عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثمّ قال له كن فيكون( “ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর কাছে ঈসার উপমা হচ্ছে আদমের উপমা সদৃশ; আদমকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং এরপর তিনি তাকে বলেছিলেন :‘ হয়ে যাও’ , আর সে হয়ে যায় ।” তাই পিতা না থাকা যদি তিনি (ঈসাঃ) যে খোদার পুত্র- এ কথার প্রমান বলে বিবেচিত হয় , তা হলে হযরত আদম (আঃ) কে এ আসনের জন্য অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা উচিত । কারণ হযরত আদম (আঃ)-এর পিতা ছিল না , আর তাঁর মাও ছিলেন না ।” নাজরানের প্রতিনিধিরা বলল , “আপনার বক্তব্য আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আর পথ হচ্ছে এটাই যে, একটি নির্দিষ্ট সময় আমরা পরস্পর মুবাহালা করব এবং যে মিথ্যাবাদী, তার ওপর লানত (অভিশাপ) দেব এবং মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করব । ” সূত্র – বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৩২ । তবে মুবাহালার সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং সীরাতে হালাবী থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা করার প্রস্তাব স্বয়ং মহানবীই দিয়েছিলেন । ঠিক একইভাবেتعالوا ندع أبنائنا … (এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি এবং তোমরা তোমাদের সন্তানদের আহবান করো…)-এ আয়াত থেকেও এ বক্তব্যের সমর্থন মেলে । তখন ওহীর ফেরেশতা মুবাহালার আয়াত নিয়ে অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে জানান, যারা তাঁর সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং সত্য মেনে নেবে না , তাদেরকে মুবাহালা করতে আহবান জানাবেন এবং উভয় পক্ষ যেন মহান আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করেন যে, তিনি মিথ্যাবাদীকে স্বীয় দয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেন । فمن حاجّك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالوا ندع أبنائنا و أبنائكم و نسائنا و نسائكم و أنفسنا و أنفسكم ثمّ نبتهل فنجعل لعنة الله علي الكاذبين “আপনার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্ক করে (এবং সত্য মেনে নিতে চায় না) তাকে বলে দিন : এস , আমরা আহবান করি আমাদের পুত্র সন্তানদের এবং তোমাদের পুত্র সন্তানদের, আমাদের নারীগণকে এবং তোমাদের নারীগণকে , আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে , অতঃপর আমরা (মহান আল্লাহর কাছে) বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর মহান আল্লাহর অভিশম্পাৎ করি ।” সুরা – আলে ইমরান / ৬৩ প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর আহবানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُ 'হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও, যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) রাসূলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুর আলামিনের। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন আর অপরটি হচ্ছে আমার পবিত্র আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দুটোকে শক্ত করে আকড়ে ধর তবে কখনোই পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ হাদিসটি সামান্য শব্দের তারতম্যভেদে বিভিন্ন বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- সহিহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ:-১২২, দারুল যিল, বৈরুত; সহিহ তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ:-৬৬৩, বৈরুত; মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪, বৈরুত; কানযুল উম্মাল, ১ম খণ্ড, পৃ:-১৮৭; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪৮, বৈরুত। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)এর হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো।” বিশ্বনবী এসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:- 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫। আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো। (তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)। **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে । আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা"। (খাসায়েসে নেসায়ী ২৩; মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮; আল মু'জামুল কাবীর-তাবরানী ১৮:১২৮/২৬৫; হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ৬:২৯৬)। **নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ্‌র কসম যাহার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যাক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে সে জাহান্নামী'' । (সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১০৪; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮)। হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমীন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । রাসূলের (সাঃ) সাহাবাগন ইমাম আলী (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন । আবু যার গিফারী (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), হতে বর্ণীত যে, আমরা সাহাবাগন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহিহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৬০ মিশর প্রিন্ট; আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭, এমদাদিয়া লাইঃ; সহী মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাঃ-১৪৪ ইসঃ ফাঃ বাঃ; মুসনাদে হাম্বাল, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৮৪; সুনানে নাসাঈ, ৮ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ মিশর প্রিন্ট; সহিহ তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ (মিশর); ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫৫ (মিশর); হযরত আলী, পৃঃ-১৪, এমদাদিয়া লাইঃ)। **রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি জ্ঞানের নগরী, আলী সেই নগরীর প্রবেশদ্বার, যে কেউ জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন সেই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে । (সহীহ বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ-৬৩১; সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৩; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-১৭১। তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৭৯; আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী তাঁর লিসান গ্রন্থে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ' এই হাদীসের বহুবিধ সুত্র রয়েছে, হাকেম তাঁর মুস্তাদারাক গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন । তিনি এ ব্যাপারে তাঁর রায় পেশ করতে গিয়ে বলেন এ হাদীসটি বিশুদ্ধ ।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল হোসাইন আহমদ আল আমিনী আন নাজাফী, তাঁর আল গাদীর গ্রন্থে উক্ত হাদীসের বরননাকারীদের একটি তালিকা দিয়েছেন যাদের সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৩ জন। আল গাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৬১-৭৭)। **রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একজন উত্তরসুরী থাকে, আর "আমার উত্তরসুরী হচ্ছে, আলী ইবনে আবু তালিব।" (আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪৬; তারিখে বাগদাদ, ১১তম খণ্ড, পৃঃ-১৭৩; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৫০, কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-১৫৮; ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৩৩, তারিখে ইবনে আশাকীর শাফায়ী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৫; শাওয়াহেদুত তানজিল, ২য় খণ্ড, পৃঃ-২২৩)। **হযরত আবু হুরাইরা, হযরত সালমান ফারসী থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত সালমান ফারসী বলেন, " ইয়া রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌ যে নবীকেই প্রেরন করেছেন, তাঁকেই বলে দিয়েছেন যে, কে তাঁর উত্তরসুরী হবে । তবে কি আল্লাহ্‌ আপনাকেও বলেছেন যে, কে আপনার উত্তরসুরী হবে ? " নবী করিম (সাঃ) বললেন, " আমার উত্তরসুরী, আলী ইবন আবু তালিব হবে।" (শারহে বোখারী ইবনে হাজার আসকালানী, খণ্ড-১৮, পৃঃ-১০৫)। **রাসূল (সাঃ) আলী কে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এ হলো আমার ভাই আর আমার পরে আমার উত্তরসুরী এবং তোমাদের খলিফা, তাঁর নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তাঁর আনুগত্য করো ।(তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩১; শারাহ নাহজুল বালাগা, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-২১১ (ইবনে হাদীদ), আল কামিল ফিত তারিখ, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৬৩; কানজুল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-১৩১; মায়ালিমুত তানযিল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৭৯ । **হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মান আবগাদানা আহলিল বাইতি ফা হুয়া মৃনাফিকুন । অর্থাৎ- যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা তো কপট, মুনাফিক ।( ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬; মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১; তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর : আল্লামা সুয়ুতী, ৭ম:৩৪৯; শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪) **হযরত যিরর (রা:) হতে বর্নিত, হযরত আলী (আ:) বলেছেন; আমার নিকট উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লামের অঙ্গীকার হচ্ছে- কেবল মুমিনই তোমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। (সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-৫০১৭, ইসলামিক ফাঃ বাঃ) **হুজুর পাক(সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আলীকে গালী দিল, সে রাসূল (সাঃ) কে ই গালি দিল”। (বুখারী, তিরমিজি, মিশকাত ৫৮৪২ নং হাদিস) “আলী কে যারা মহব্বত করে তারা মুমিন”। (আহামদ তিরমিযী, মিশকাত ১১ তম খন্ড ১৫৬ পৃ:) “আলী এর প্রতি মহব্বত করে যারা তারা মুমিন, যারা না করে তারা মুনাফিক”। (মিশকাত ১১তম খণ্ড, পৃ: ১৫৬) 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মুহাম্মদ সাহাবিদের মধ্যে আলী (আ.)’র অনন্য এবং শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কিছু যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ: রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন: " আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০) রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। “আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকী” (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)।“আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, “হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।” রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে। “যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।”(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)। “আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।” (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: “এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।” (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ’-ড. মো. হোসাইন হায়কাল, প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪) হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, “যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)’র অসংখ্য শত্রু ছিল। শত্রুরা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)’র দোষ-ত্রুটি বের করার, কিন্তু পারেনি।” হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, “যত সুন্দর ও মজবুত সনদের মাধ্যমে আলী (আ.)’র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনি আসেনি।” হযরত আলী সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, আলী প্রেম মানুষের পাপ এমনভাবে ধ্বংস করে যেমনি আগুন জ্বালানী কাঠ ধ্বংস করে দেয়। একবার হযরত আলী (আ.)-কে দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তিনটি এমন বৈশিষ্ট্য তোমার রয়েছে যেটা আমারও নেই, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তুমি এমন একজনকে শ্বশুর হিসেবে পেয়েছে, যা আমি পাইনি, এমন একজনকে তুমি স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, যে কিনা আমার কন্যা, আর তৃতীয়টি হচ্ছে তুমি হাসান- হুসাইনের মত সন্তানের পিতা যেটা আমার নেই। রাসূলে খোদা (সা.) এর আগেও বহুবার আলী (আ.)-র বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ইবনে আব্বাসসহ আরো অনেকের বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলের পরে আলী (আ.)-ই ছিলেন সবচেয়ে মোত্তাকি ও সাহসী ব্যক্তি। একবার বিশ্বনবী (সা.) কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে ঘরে বসেছিলেন। সেখানে একটি বিশেষ পাখীর মাংস খাবার হিসেবে আনা হয়েছিল। রাসূল (সা.) বললেন, হে আল্লাহ তোমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এমন সময় দরজায় টোকা দিলেন আলী (আ.)। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে নিয়ে সেই মাংস খান। জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারি বলেছেন, একবার রাসূল (সা.)-র কাছে আলী (আ.) এলেন। রাসূল বললেন, আলী (আ.) ও তার অনুসারীরা কিয়ামতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত। এ সময় সূরা বাইয়ানার ৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে এবং সত কাজ করেছে, তারা আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। এরপর থেকে রাসূলের সাহাবিরা আলী (আ.)-কে দেখলেই বলতেন, ওই যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। হযরত আলী (আ.) ছিলেন জ্ঞান, বীরত্ব, সাহস, দূরদর্শিতা, মহানুভবতা, দয়া, পরোপকার, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি গুণের আকরসহ মানবীয় মূল্যবোধ ও যোগ্যতার সব দিক থেকে একজন ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ আদর্শ মানব। বিশ্বনবী (সা.) তাঁকে প্রায় ৫/৬ বছর বয়স থেকে নিজের হাতে ও নিজের ঘরে রেখে মনের মত করে গড়ে তোলেন এবং জ্ঞানগত নানা দিকসহ সব দিকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। উমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন, আলী না থাকলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত এবং আলীর মত একজন মহামানব জন্ম দেয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর আর কোনো নারীর নেই। তিনি আলী (আ.)'র শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করেছেন যা আর কারো ছিল না। এ তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল: "(নবী-নন্দিনী) ফাতিমা (সা. আ.)'র সঙ্গে তাঁর বিয়ে, মসজিদে (নববীর) ভেতরে তাঁর বসবাস অব্যাহত থাকা যা আমার জন্য বৈধ নয় এবং খায়বার যুদ্ধের পতাকা (তথা সেনাপতিত্ব) পাওয়া।" আলী (আ.)'র আগে অন্য সেনাপতিরা মদিনায় ইহুদি শত্রুদের খায়বার দুর্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, "আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে পতাকা দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাঁকে ভালবাসেন।" বেলায়েত বা নেতৃত্বের দর্শন: সমাজ পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব একটি অপরিহার্য বিষয়। মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা নেয়ামত হলো- নেতৃত্বের যোগ্যতা। এই যোগ্যতা, গুণ ও ক্ষমতা সীমিত সংখ্যক লোকের মধ্যেই আল্লাহ দিয়ে থাকেন। বাকীরা তাদের অনুসরণ করেন। মানব ইতিহাসের কিছু নেতা সরাসরি আল্লাহর মাধ্যমে মনোনীত। এঁরা হলেন, নবী, রাসূল ও আহলে বাইতের ইমামগণ, যারা সরাসরি আল্লাহর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। ফলে তাদের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ সব মানুষের জন্য যথাযথভাবে অনুকরণীয়। মানব সমাজের নেতৃত্বের বিষয়টি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, সে বিষয়টি পবিত্র কুরানেও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মরণ করো যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সেসব পরীক্ষায় সে পুরোপুরি উত্তীর্ণ হলো। এরপর আল্লাহ বলেছিলেন "আমি তোমাকে সব মানুষের নেতার পদে অধিষ্ঠিত করবো।" ইবরাহীম আবেদন করেছিলেন- আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও ( ইমাম বা নেতা করুন)। আল্লাহ জবাব দিলেন: "আমার এ অঙ্গীকার জালেমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে না (কেবলমাত্র তোমার যেসব বংশধর নিষ্পাপ ও পবিত্র থাকবে,তারাই এ পদের যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে)। হজরত মূসা(আ.) তাঁর ভাই হারুনকে নিজের সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য আল্লাহর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর আল্লাহ তা কবুল করেন। সূরা ত্বাহার ৩৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: আল্লাহ বললেন, "হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো।' সূরা সা'দের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা, হজরত দাউদ (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'হে দাউদ ! আমি অবশ্যই তোমাকে পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের প্রতিনিধি করেছি। সুতরাং মানুষের মধ্যে সত্য ও [ ন্যায়ের ] ভিত্তিতে বিচার -মীমাংসা কর।' এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে,তিনিই মানব জাতির নেতা ও ইমাম নির্ধারণ করেন। ইসলাম ধর্মে নেতৃত্ব ও ইমামত কেবল মানুষের দৈনন্দিন ও প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার জন্য নয়। ইসলাম ধর্মে একজন ইমাম বা নেতা, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক-উভয় ক্ষেত্রের নেতা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে একজন নেতা, জনগণ থেকে আলাদা নয়। গাদিরের ঘটনাকে তিনি জনগণের নেতৃত্ব ও নীতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হিসেবে গণ্য করেন। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তাঁর পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি আলী (আ.)-এর যোগ্যতা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, “হে জনগণ, এমন কোনো জ্ঞান নেই, যা আল্লাহ আমাকে দেননি এবং আমিও পরহেজগারদের নেতা আলী (আ.)-কে সেই জ্ঞান শিখিয়েছি। আপনারা কেউই আলী (আ.)-র পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তাঁর পথ থেকে দূরে সরে যাবেন না। তাঁর নেতৃত্বকে অমান্য করবেন না। কারণ সে সবাইকে সত্যের পথে পরিচালিত করে এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করে। সে অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটায় এবং নিজে অন্যায় থেকে দূরে থাকে। আলী (আ.) আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই ভয় করে না। আলী (আ.) হচ্ছে প্রথম মুসলমান। রাসূলে খোদার জন্য সে তাঁর প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সে সর্বদা রাসূলের পাশে ছিল ও আছে এবং আর কেউই তাঁর মতো রাসূলের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে এতো বেশি আন্তরিক নয়। হে মুসলমানগণ, আলী (আ.) হচ্ছে আমার ভাই, স্থলাভিষিক্ত ও আমার শিক্ষায় শিক্ষিত। সে আমার উম্মতের নেতা-কোরানের তাফসির যার জানা। সে কুরআনের দিকে আহ্বানকারী এবং কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। সে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সে আল্লাহ বিরোধীদের শত্রু এবং আল্লাহপ্রেমীদের বন্ধু। সে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে জনগণকে বিরত রাখে।” মানুষের ওপর তিনিই নেতৃত্ব দেয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্য যিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আর বিশ্বনবী (সা.)’র পর তাঁর পবিত্র হাদিস অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)। কারণ, হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি জ্ঞানের নগর আর আলী হল তার দরজা। অর্থাত বিশ্বনবী (সা.)’র জ্ঞানের শহরে প্রবেশের জন্য আলী (আ.) নামক মাধ্যম বা দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। এ ছাড়াও হাদিসে বলা হয়েছে, “আল ওলামাউ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া।” অর্থাত নবীগণের উত্তরসূরি হচ্ছেন আলেমগণ। হযরত আলী (আ.) যে বিশ্বনবী (সা.)’র পর শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন তাতে তাঁর শত্রু -মিত্র নির্বিশেষে কোনো সাহাবিই সন্দেহ পোষণ করতেন না। এ কারণেই মহান আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) আলী (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত তথা মুসলমানদের ইমাম বা নেতা বলে ঘোষণা করেছিলেন পবিত্র গাদীর দিবসে। এই ইমামত হচ্ছে নবুওতেরই ধারাবাহিকতা। ইসলামে ঐশী ইমামত বা খোদায়ী নেতৃত্ব ঠিক করে দেন মহান আল্লাহ। আর সেটা বংশ পরম্পরায়ও চলতে পারে। যেমন, নবী হয়েছিলেন ইব্রাহিম (আ.)'র বংশধরগণ এবং হযরত দাউদ (আ.)'র পুত্র সুলায়মান ও হযরত মুসা (আ.)'র ভাই হারুন (আ.)। ইমামত বা নবুওতের মত ঐশী বা খোদায়ী পদগুলোতে কারা আসীন হবেন মানুষ তা ঠিক করার অধিকার রাখে না। কারণ, মানুষের মনোনয়ন বা নির্বাচন ভুলও হতে পারে। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই তা ঠিক করে দেন। বিশ্বনবী (সা.) বিভিন্ন সময় আলী(আ.) কে নিজ খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। এরমধ্যে তিনটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করছি: প্রথমত: রাসূল হিসেবে মনোনীত হওয়ার তথা বে’সাতের প্রথম দিকে: বিশ্বনবীকে (সা.) যখন নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় তখন তিনি সবার উদ্দেশে বললেন:“যে ব্যক্তি এই পথে আমাকে সাহায্য করবে, সেই হবে আমার ওয়াসি তথা কর্তৃত্বের অধিকারী, উজির বা পৃষ্ঠপোষক এবং স্থলাভিষিক্ত ।” রাসূল (স.) এভাবে বলেন- “তোমাদের মাঝে কে এমন আছে যে এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করবে যাতে সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, উজির (পৃষ্ঠপোষক), খলিফা এবং স্থলাভিষিক্ত হতে পারে?” কেবল আবু তালিবের সন্তান আলী (আ.) রাসূল (স.) এর কথায় হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন।আর তখন আল্লাহর রাসূল (স.) নিজ আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশে বলেন- “এই (আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসি এবং খলিফা। অতএব, তোমরা তার কথা শোন এবং তাকে অনুসরণ কর।” দ্বিতীয়ত: তাবুকের যুদ্ধে: রাসূলুল্লাহ (স.) আলী (আ.) এর উদ্দেশে বলেন- “[হে আলী!] তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার কাছে ঠিক তদ্রূপ যেমন হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর কাছে। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোনা নবী নেই (আসবে না)।’ অর্থাৎ যেভাবে হারুন (আ.) কোনরকম ব্যবধান ছাড়াই মুসা (আ.) এর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন তুমিও আমার খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত। তৃতীয়ত: দশম হিজরিতে: বিদায় হজ থেকে ফেরার পথে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে হাজিদের এক বিশাল সমাবেশে মহানবী (স.) আলী (আ.) কে মুসলমান ও মু’মিনদের নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন- “আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।” এই বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর বললেন:- “হে আল্লাহ! তাকে তুমি ভালবাসত যে আলীকে ভালবাসে ও তুমি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে; তুমি সহযোগিতা কর তাকে যে আলীকে সহযোগিতা করে, তুমি তাকে নিঃসঙ্গ কর যে আলীকে একা রাখে এবং সত্যকে আলীর সাথে রাখ তা যে দিকেই থাক না কেন”। হে লোকসকল! আপনারা অবশ্যই যারা উপস্থিত আছেন তারা এই বাণীটি অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন। রাসূলের (সা.) বক্তব্য শেষ হলে জিবরাঈল (আ.) আবার দ্বিতীয়বারের মত অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে এই বাণীটি পৌঁছে দেন: আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম ও আমার নেয়ামত বা অবদানকে তোমাদের উপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা-৩) রাসূল (সা.) এই বাণী পেয়ে মহা-আনন্দিত হলেন এবং বললেন- মহান আল্লাহর শুকর করছি যে তিনি দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং মহান প্রভু আমার রেসালাতের বা নবুওতি দায়িত্বের ও আলীর বেলায়াতের বা অভিভাবকত্বের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আল্লাহর রাসূল (স.) তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি না?” তখন উপস্থিত সব মুসলমান দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) এর এ কথার প্রতি সম্মতি জানান। অতএব, বিষয়টি হতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদিসে 'মাওলা' বলতে মু’মিনদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল (স.) যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন উম্মতের ক্ষেত্রে তা তিনি আলী(আ.) এর জন্যও নিশ্চিত করে যান।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ১ 24 জিলহজ মোবাহেলা দিবস — বিস্তারিত ঘটনা সমূহ সত্তরটি গ্রাম সমেত নাজরান অঞ্চল হিজায ও ইয়েমেন সীমান্তে অবস্থিত । ইসলামের চূড়ান্ত পর্যায়ে আবির্ভাব কালে এ এলাকাটি হিযাজের একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল । এ এলাকার অধিবাসীরা বিভিন্ন কারণে মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতা ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল । সূত্র – ইয়াকুত হামাভী তাঁর মু’ জামুল বুলদান গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ২৬৬-২৬৭ পৃষ্ঠায় নাজরানবাসীদের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার কারণগুলো বর্ণনা করেছেন । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও ধর্মীয় কেন্দ্রসমূহের প্রধানদের কাছে চিঠি-পত্র প্রেরণের পাশাপাশি মহানবী (সঃ) নাজরানের আর্চবিশপ আবু হারিসা-এর কাছে ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছিলেন । সূত্র – .‘ উসকুফ’ বা‘ আর্চ বিশপ’ শব্দটি গ্রীক‘ ইপেসকোপ’ শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী, তদারককারী, পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক । আর এখন এ শব্দটি ধর্মযাজক বা পাদ্রীর চেয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের খ্রিষ্টধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক পদ বোঝাতে ব্যবহৃত হয় । “ইবরাহীম (আঃ) , ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকূব (আঃ) এর প্রভুর নামে , (এ পত্রটি) মহান আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পক্ষ থেকে নাজরানের মহামান্য আর্চবিশপের প্রতি । ইসহাক ও ইয়াকূবের প্রভুর প্রশংসা করছি এবং আপনাদের বান্দাদের (গায়রুল্লাহর) উপাসনা থেকে মহান আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানাচ্ছি । আপনাদেরকে গায়রুল্লাহর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহর আধিপত্যে (বেলায়েত) প্রবেশ করার আহবান জানাচ্ছি । আর যদি আপনারা আমার দাওয়াত গ্রহণ না করেন , তা হলে অন্ততঃপক্ষে ইসলামী সরকারকে কর (জিযিয়া) প্রদান করুন (যে, এ কর প্রদান করার দরুন আপনাদের জীবন ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে) । এর অন্যথা হলে আপনাদের প্রতি সমূহ বিপদ অর্থাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সূত্র – বিহারুল আনওয়ার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫ । কিছু কিছু শীয়া ঐতিহাসিক সূত্রে আরও বেশী বর্ণিত হয়েছে যে , মহানবী (সাঃ) আহলে কিতাব এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঐ আয়াতও পত্রে লিখেছিলেন , যার মধ্যে এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি সবাইকে আহবান জানানো হয়েছে । ” — আপনি বলে দিন : হে আহলে কিতাব ! আমাদের ও তোমাদের মাঝে যে বিষয়টি অভিন্ন , সেই বিষয়ের দিকে তোমরা সবাই ফিরে আস । সূরা – আলে ইমরান / ৬৪ । এই আয়াতের মর্মার্থ, বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ২৮৭ । মহানবী (সাঃ) এর প্রেরিত প্রতিনিধি দল নাজরানে প্রবেশ করে তাঁর পত্র নাজরানের প্রধান খ্রিষ্ট ধর্মযাজকের কাছে অর্পণ করেন । আর্চবিশপ ভালভাবে পত্রটি পাঠ করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শসভার আয়োজন করেন । ঐ পরামর্শ সভার একজন সদস্য ছিলেন শুরাহবিল , যিনি বুদ্ধিমত্তা , বিচারক্ষমতা ও দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন । তিনি আর্চবিশপের উত্তরে বলেছিলেন , “আমার ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান খুবই কম । সুতরাং অভিমত ব্যক্ত করার অধিকার আমার নেই । আর যদি আপনারা অন্য কোন বিষয়ে আমার সাথে পরামর্শ করতেন , তা হলে আমি আপনাদের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পথের সন্ধান দিতাম । কিন্তু অনন্যোপায় হয়ে একটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি যে , আমরা আমাদের ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে বহু বার শুনেছি যে , একদিন হযরত ইসহাকের বংশধারা থেকে নবুওয়াতের পদ ইসমাঈলের বংশধারায় স্থানান্তরিত হবে । আর ‘মুহাম্মদ’, যিনি ইসমাঈলের বংশধর , তিনিই যে সেই প্রতিশ্রুত নবী হবেন , তা মোটেই অসম্ভব নয় ।” এ পরামর্শসভা এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করে যে , নাজরানের প্রতিনিধি দল হিসেবে একদল লোক মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে যেসব বিষয় তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার দলিল স্বরূপ সেসব কাছে থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার জন্য মদীনায় যাবে । তাই নাজরানবাসীর মধ্য থেকে ষাটজন সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে এ প্রতিনিধি দলের সদস্য নির্বাচিত করা হয় । তাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনজন ধর্মীয় নেতা যাঁদের পরিচয় নীচে দেয়া হল – ১) – আবু হারিসাহ ইবনে আলকামাহ্ : নাজরানের প্রধান ধর্মযাজক বা আর্চবিশপ যিনি হিজাযে রোমের গীর্জাসমূহের স্বীকৃত প্রতিনিধি ছিলেন । ২) – আবদুল মসীহ্ : নাজরানের প্রতিনিধি দলের নেতা, যিনি বিচার-বুদ্ধি, দক্ষতা, কর্মকৌশল ও ব্যবস্থাপনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । ৩) – আইহাম : যিনি ছিলেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং নাজরানবাসীর সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত । সূত্র – তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৬ । প্রতিনিধি দল রেশমী বস্ত্র নির্মিত অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করে , হাতে স্বর্ণ নির্মিত আংটি পরে এবং গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে অপরাহ্নে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে মহানবী (সাঃ) কে সালাম জানায় । কিন্তু তিনি তাদের ঘৃণ্য ও অসংযত অবস্থা- তাও আবার মসজিদের অভ্যন্তরে,- দেখে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হন । তারা বুঝতে পারে যে , মহানবী (সাঃ) তাদের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন । কিন্তু তারা এর কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিল না । তাই তারা তৎক্ষণাৎ হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের এ ঘটনা সম্পর্কে জানালে তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে সমাধান আলী ইবনে আবী তালিবের হাতে রয়েছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ তাদের পূর্ব পরিচিত ছিলেন । প্রতিনিধি দল যখন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আঃ) এর কাছে গমন করে তাঁকে ঘটনা সম্পর্কে জানায় , তখন আলী (আঃ) তাদেরকে বলেছিলেন , “আপনাদের উচিত আপনাদের এসব জমকালো পোশাক ও স্বর্ণালংকার পাল্টিয়ে সাদা-সিধাভাবে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হওয়া । তা হলে আপনাদেরকে যথাযথ সম্মান করা হবে ।” প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান যে আয়াতের শানে নুজুলে ৪ লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে ছদ্মবেশী সাহাবী সামরাহ বিন জুনদাবকে ক্রয় করেন এবং তাকে (সামরাহ বিন জুনদাব) দিয়ে রেওয়ায়েত করান যে, উপরে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলীর(আঃ) হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের শানে নাজিল হয়েছে সুরা বাকারা ,আয়াত# ২০৭ “ এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ(এরুপ) বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল”।(১) সঠিক তাফসীরঃ(১) যখন মক্কার কাফিররা সম্মিলিতভাবে রাসুল(সাঃ)কে হত্যা করার পরামর্শ করে তাঁর ঘর অবরোধ করল এবং আল্লাহ তাকে অবহিত করলেন তখন তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে হযরত আলী(আঃ)-কে বললেন, ‘কাফিররা আমাকে শয্যায় হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে।তুমি আমার স্থানে শুয়ে নিজেকে চাদরে ঢেকে ঘুমিয়ে থাক যাতে তারা মনে করে যে,আমি ঘুমাচ্ছি এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যাইনি’।হযরত আলী(আঃ) বললেন, ‘আমি বেচে থাকি বা না থাকি,আপনার নিরাপত্তা অবশ্যই কাম্য’।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ হযরত আলীর(আঃ) প্রশংসায় আয়াতটি অবতীর্ন করেন।রাসুলাল্লাহ(সাঃ০ বলেন যে, আল্লাহ জিব্রিল ও মিকাইল(আঃ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, ‘আমি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব রচনা করেছি এবং একের পরমায়ু অপরের থেকে বেশী করেছি।তোমাদের মধ্যে কে এমন আছ যে, নিজ আয়ু নিজ ভাইকে দিয়ে দেবে’।কিন্তু উভয়েই অস্বীকার করলেন।তখন আল্লাহ তাঁদের বললেন, আমি আমার ওলী আলী এবং আমার নবী মুহাম্মাদের মধ্যে ভ্রাতৃ্ত্ব রচনা করেছি।তাকিয়ে দেখ,আমার ওলী আমার নবীর জন্য কীরুপে নিজ জীবন উতসর্গ করতে উদ্যত হয়েছে এবং নবীর শয্যায় নির্ভয়ে ঘুমিয়ে আছে।তোমরা উভয়ে এখন পৃথিবীতে অবতরন কর এবং আলীকে শত্রুদের থেকে রক্ষা কর’।একথা শুনেই তারা উভয়ে পৃথিবীতে আগমন করলেন এবং জিব্রিল(আঃ) আলীর(আঃ) মাথার দিকে এবং মিকাইল(আঃ) তাঁর পায়ের দিকে বসলেন।তখন জিব্রিল(আঃ) হযরত আলীকে(আঃ)উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন, ‘হে আবু তালিবের সন্তান!ধন্যবাদ।আপনার তুলনা কোথায় আছে যে, স্বয়ং আল্লাহ নিজ ফেরেস্তাদের কাছে আপনার কারনে গর্ব করেছেন’।(তাফসীরে ফাখরুদ্দিন রাজী,তাফসীরে সালাবী এবং ইমাম গাজ্জালী রচিত ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন দ্রষ্টব্য)। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান উক্ত আয়াতের শানে নুজুলে ৪ লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে ছদ্মবেশী সাহাবী সামরাহ বিন জুনদাবকে ক্রয় করেন এবং তাকে (সামরাহ বিন জুনদাব) দিয়ে রেওয়ায়েত করান যে, উপরে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলীর(আঃ) হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের শানে নাজিল হয়েছে। প্রচারে মোঃ ইয়া আলী আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদীও ওয়া আলে মোহাম্মদ মুবাহিলাতে রাসূল আকরাম (সা.)-এর সঙ্গী প্রচুর সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী তাদের হাদীস গ্রন্থে এবং ঐতিহাসিক ও মুফাসসিরগন তাদের ইতিহাস ও তাফসীরের কিতাবসমূহে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ফাতেমা আয যাহরা (আ.), নাজরানের খৃষ্টান পাদ্রীদের সাথে নবী (সা.)-এর চ্যালেঞ্জের আহবানে অংশগ্রহণকারী আহলে বাইতের পাঁচ সদস্যের মধ্যে অন্যতম। এ বিষয়টি তাদের উচ্চ মর্যাদা ছাড়াও এমন একটি শক্তিশালী প্রমাণ যার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায় যে,“ নবী (সা.)-এর নিষ্পাপ আহলে বাইত হযরত আলী, হযরত ফাতেমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন বৈ কেউ নন। তাঁর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রীবর্গ এ বিশেষ মর্যাদার মধ্যে গণ্য। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে মুবাহিলার ঘটনা বর্ণনা করা হলো : একদা নাজরানের কতিপয় খৃষ্টান পাদ্রী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খেদমতে এসে হযরত ঈসা (আ.)-এর সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে নিম্নের এ আয়াতটি পাঠ করেন : إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ অর্থাৎ“ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার উদাহরণ আদমের ন্যায় যেমনি করে তিনি তাকে ( আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। ” (আলে ইমরান : ৫৯) তারপরও উপস্থিত খৃষ্টান পাদ্রীরা সন্তুষ্ট হলো না। বরং তারা উক্ত আয়াতের প্রতিবাদ করে বসে। তখন মুবাহিলার আয়াত অবতীর্ণ হয়। সে আয়াতে আল্লাহ্ বলেন : فَمَنْ حَآجَّكَ فِيْهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ اْلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَ أَبْنَآءَكُمْ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَكُمْ وَ أَنْفُسَنَا وَ أَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْلَّعْنَتَ اللهِ عَلَى اْلْكَاذِبِيْنَ অর্থাৎ ‚যারা তোমার কাছে ( মাসিহ্ সম্পর্কে) অকাট্য জ্ঞান ও দলীল আসার পরও তোমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয় তুমি তাদেরকে বলে দাও,আস! আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদের আহবান জানাও, আমরা আমাদের নারীদের ডেকে আনি আর তোমরাও তাই কর এবং আমরা আমাদেরকে ডেকে আনি আর তোমরাও তোমাদেরকে ডেকে আন। অতঃপর এসো আমরা মুবাহিলা (চ্যালেঞ্জ) করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণ করি।“ ( আলে ইমরান : ৬১) মুবাহিলার অর্থ হচ্ছে : ‚কোন বিষয়ে বিবাদমান ও শত্রুভাবাপন্ন দু’ পক্ষ পরস্পরের উপর অভিশাপ বর্ষন করবে আর তারা আল্লাহর কাছে বাতিল পক্ষের উপর আযাব ও অভিশাপ কামনা করবে। এ কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর মনোনীত পয়গম্বরদের দ্বারাই সম্ভব। কেননা তারাই আল্লাহর সাথে সত্যিকার সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।“ নাজরানের খৃষ্টানরা প্রথমে সম্মত হয়েছিল যে তারা পরের দিন মুবাহিলাতে অংশগ্রহণ করবে কিন্তু রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে ফিরে গিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হয়। ইতোমধ্যে খৃষ্টান পাদ্রী তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন : ‚যদি মুহাম্মদ আগামীকাল তাঁর সন্তান ও আহলে বাইতের সদস্যদের নিয়ে আসে তাহলে তাঁর সঙ্গে মুবাহিলা হতে বিরত থাকবে আর যদি তার সঙ্গী-সাথি ও সাহাবীদের নিয়ে আসেন তাহলে তাঁর সাথে মুবাহিলায় কোন আপত্তি নেই।“ তার পরের দিন যথারীতি হযরত মুহাম্মদ (সা.), আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.), হযরত ফাতেমা আয যাহরা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে সাথে নিয়ে মুবাহিলার উদ্দেশ্যে যথাস্থানে উপস্থিত হলেন। তিনি খৃষ্টানদের মুখোমুখি মাটির উপর বসে পড়েন। অতঃপর তিনি তাঁর আহলে বাইতকে বলেন : ‚আমি যখন দোয়া করবো তখন তোমরা তার শেষে আমিন বলবে।“ খৃষ্টানরা তাঁর প্রতিনিধি দলকে দেখেই ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে গেল। খৃষ্টানরা তাঁর পদ্ধতি অপরাপর সত্যপন্থী নবী ও রাসূলদের পদ্ধতির অনুরূপ বলে স্বীকারোক্তি পেশ করলো। তারা নবী (সা.)-এর অনুরোধ জানালো যে,তিনি যেন মুবাহিলা পরিত্যাগ করে তাদের সাথে শান্তি চুক্তিতে সম্মতি হন। তারা শান্তি ও সন্ধির পক্ষে সম্মতি স্বরূপ কিছু অর্থ পরিশোধ করে ফিরে গেল।(মানাকিবে শাহরে আশুব,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪২-১৪৪। কাশফুল গুম্মাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ৪২৫,৪২৬। মুনতাহাল আমাল,পৃ. ১১৪,১১৭,১৭৬,১৭৭। ফুসুলুল মুখতারা,শেখ মুফিদ,পৃ. ১৭। আর সহীহ মুসলিম,মুসনাদে আহ্মাদ বিন হাম্বাল এবং আবু নাঈম ইস্পাহানী রচিত“ ফি-মা নাযালা মিনাল কুরআন ফি আমিরুল মুমিনীন” গ্রন্থে,তাফসীরে কাশশাফ এবং আগানী আবুল ফারাজ ইস্পাহনী ও শিয়া-সুন্নী আলেমদের লিখিত অনেক গ্রন্থে এবং অধিকাংশ তাফসীরের কিতাবগুলোতে মুবাহিলার এ মর্যাদাপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে প্রচারে ইয়া আলী আঃ

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান (كتاب العلم) হাদিস নম্বরঃ ১১৫ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা ১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে। The writing of knowledge Narrated 'Ubaidullah bin `Abdullah: Ibn `Abbas said, "When the ailment of the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) became worse, he said, 'Bring for me (writing) paper and I will write for you a statement after which you will not go astray.' But `Umar said, 'The Prophet is seriously ill, and we have got Allah's Book with us and that is sufficient for us.' But the companions of the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) differed about this and there was a hue and cry. On that the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) said to them, 'Go away (and leave me alone). It is not right that you should quarrel in front of me." Ibn `Abbas came out saying, "It was most unfortunate (a great disaster) that Allah's Messenger (sallallahu 'alaihi wa sallam) was prevented from writing that statement for them because of their disagreement and noise. (Note: It is apparent from this Hadith that Ibn `Abbas had witnessed the event and came out saying this statement. The truth is not so, for Ibn `Abbas used to say this statement on narrating the Hadith and he had not witnessed the event personally. See Fath Al-Bari Vol. 1, p.220 footnote.) (See Hadith No. 228, Vol. 4). باب كِتَابَةِ الْعِلْمِ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَجَعُهُ قَالَ ‏"‏ ائْتُونِي بِكِتَابٍ أَكْتُبُ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّوا بَعْدَهُ ‏"‏‏.‏ قَالَ عُمَرُ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم غَلَبَهُ الْوَجَعُ وَعِنْدَنَا كِتَابُ اللَّهِ حَسْبُنَا فَاخْتَلَفُوا وَكَثُرَ اللَّغَطُ‏.‏ قَالَ ‏"‏ قُومُوا عَنِّي، وَلاَ يَنْبَغِي عِنْدِي التَّنَازُعُ ‏"‏‏.‏ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ كِتَابِهِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=122

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ মহান আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য যুগ যুগ ধরে এক লক্ষ চব্বিশ মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। আর সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) এর ওফাতের মাধ্যমে নবুওয়তী ধারার পরিসমাপ্তি হয়। এর পর থেকে মানব জাতিকে হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ ইমামতের ধারাকে পৃথিবীর বুকে জারি করে দেন। যার প্রথম ইমাম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.)। রাসুল (সা.) যে সকল হাদীসে আলী (আ.)-কে তার পরবর্তী ইমাম বা স্থলাভিষিক্ত হিসাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে থেকে কিছু হাদীস নিম্নে বর্ণনা করা হল। এনযারের হাদীস এনযারের হাদীস বলতে ঐ হাদীসকে বুঝানো হয় যা রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীয় নিকটাত্মীয়দের সতর্কীকরণের নির্দেশ পাওয়ার প্রেক্ষিতে বর্ণনা বরেছিলেন। নবুওয়াতের ৩য় বর্ষে রাসূল (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন। وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ ‘আর আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের-কে (পরকালের শাস্তি সম্পর্কে) ভয় প্রদর্শন করুন।’ (সূরা শুয়ারা-২১৪) এ আয়াত নাযিলের পর রাসুল (সা.) তার নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করলেন এবং খাবার পরিবেশনের পর বনি হাশিমের লোকদের গোত্রপতিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানগণ, মহান আল্লাহর শপথ আরবদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে তার নিজ গোত্রের জন্য আমি যে দ্বীন বা ধর্ম নিয়ে এসেছি এর চাইতে উত্তম কোন দ্বীন বা ধর্ম নিয়ে এসেছে। আমি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি। আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তোমাদেরকে যেন এই দ্বীনের দিকে আহ্বান করি এবং তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করবে? পরবর্তীতে সে হবে আমার ভাই, ওয়াসী ও আমার খলিফা। রাসূলের এ বক্তব্য শুনে সমগ্র মজলিস জুড়ে নীরবতা বিরাজ করছিল। সকলেই নিশ্চুপ। এমন সময় কিশোর বয়সের হযরত আলী (আ.) দাঁড়িয়ে অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে বললেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনাকে এ কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করবো।’ রাসূল (সা.) তাকে বসতে বললেন। এরপর তিনি তার উপরিউক্ত কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু হযরত আলী ব্যতীত কেউ তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দিল না। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তার নিকটাত্মীয়দেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে লোকসকল সে (হযরত আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসী এবং আমার খলিফা। তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার অনুসরণ করবে।’ মানযিলাতের (মর্যাদা সম্পর্কিত) হাদীস তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসূল (সা.) তার প্রতিনিধি হিসেবে আলী (আ.)-কে মদিনায় রেখে গেলেন। আলী (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন যত দিন পর্যন্ত না তিনি মদিনায় ফিরে আসেন জনগণের দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক বিষয় যেন দেখাশুনা করেন এবং সকল প্রকার সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে এ সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে রক্ষা করেন। যখন মুনাফিকরা হযরত আলী (আ.)-র মদিনা অবস্থানের কথা শুনতে পেলেন, তখন তারা গুজব রটালো যে, আলী ও রাসূলের মধ্য সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তাঁর প্রতি রাসূলের পূর্বের ন্যায় আর ভালবাসা নেই। এ জন্য রাসূল (সা.) তাকে জিহাদের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ গ্রহণের অনুমতি দেন নি। এ গুজব পুরো মদিনায় ছড়িয়ে পড়ল। আলী (আ.) তা শুনে অত্যন্ত মনঃক্ষুন্ন হলেন। রাসূল (সা.) মদিনা থেকে তখনও তেমন দূরে চলে যান নি, এমন সময় হযরত আলী (আ.) রাসূলের নিকট পৌঁছলেন এবং এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আলী, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, মর্যাদার দৃষ্টিতে আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মূসার সাথে হারুনের সস্পর্কের ন্যায়, পার্থক্য শুধু এটুকুই যে আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।’ হাদিসটির পর্যালোচনা এ হাদিসটিতে রাসূল (সা.) মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁর সাথে আলী (আ.) এর সম্পর্ককে হযরত মূসা (আ.) ও হযরত হারুন (আ.) এর মধ্যকার সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছেন। হযরত হারুন যে সকল পদমর্যাদা লাভ করেন, হযরত আলী (আ.) ঠিক তেমনি পদমর্যাদা লাভ করেন। পার্থক্য শুধু এই যে হারুন (আ.) নবী ছিলেন কিন্তু আলী (আ.) রাসূলের পরবর্তী কোন নবী নন। কারণ নবুয়তী ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। যেমনটি পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ কোন মানুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’ (সূরা আহযাব:৪০)। আমরা কোরআনে দেখতে পাই যে, হযরত মূসা হযরত হারুনকে নবী, ওয়াসী, উত্তরাধিকারী, পৃষ্ঠপোষক, স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ্ তা কবুল করেন। (সূরা ত্বাহা:২৯-৩৪) গাদীরের হাদিস দশম হিজরিতে রাসূল (সা.) বিদায় হজ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ্ব একথা শুনে চারদিক থেকে রাসূল (সা.) এর সাথে হজ্জ্বে অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মধ্যে হাজ্বীদের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী এ হজ্বে লক্ষাধিক হাজী উপস্থিত ছিলেন। হজ্ব সমাপ্ত করে রাসূল (সা.) সাহাবাদের নিয়ে মদিনার দিকে যাত্রা করলেন। দশম হিজরির ১৮ই জিলহজ্ব রাসূল (সা.) সাহাবাদের নিয়ে জুহফা অঞ্চলের গাদীরে খুম স্থানে উপস্থিত হয়েছেন। এখানেই ঐতিহাসিক চৌরাস্তা বিদ্যমান যেখান থেকে মদিনা, ইরাক, মিশর ও ইয়ামেনের হাজ্বীরা রাসূলের (সা.) এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আলাদা পথে যাত্রা করবেন। দুপুর ঘনিয়ে এসেছে, সূর্যের তীক্ষ্ণ কিরণ সমস্ত মরু প্রান্তর আগুনের মত জ্বলছে; হঠাৎ করে রাসূলের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসলো যেন সবাই থেমে গিয়ে এক জায়গায় একত্রিত হয়। মুসলমানরা সবাই একত্রিত হল। মুয়াজ্জিন উচ্চ কণ্ঠে যোহরের আযান দিলেন; সবাই দ্রুত নামাযের প্রস্তুতি নিলো। সূর্যের তাপ এত অত্যধিক ছিল যে মুসলমানরা তাদের গায়ের আবা (এক ধরনের চাদর) এর কিছু অংশ পায়ের নিচে কিছু অংশ সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে মাথার উপর ধরছিল। এ অবস্থায় যোহরের নামায শেষ হল। সবাই তাদের তৈরী ছোট্ট খিমায় (তাবুতে) বিশ্রামের চিন্তা করছিল এমন সময় রাসূল (সা.) ঘোষণা করলেন সবাই যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক গুরুত্বপূর্ণ খবর শোনার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অনেক ভীড়ের কারণে দূরের লোক রাসূলকে দেখতে পাচ্ছিল না তাই উটের পিঠের হাওদা দিয়ে উঁচু করে মঞ্চ তৈরী করা হল। এরপর রাসূল সেখানে উঠলেন। মহান আল্লাহর প্রশংসা শেষে নিজেকে তাঁর কাছে সঁপে দিলেন এবং জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন : ‘আমি অতি শীঘ্রই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নিব। নিশ্চয় আমি একজন দায়িত্বশীল এবং তোমরাও (তোমাদের ব্যাপারে) দায়িত্বশীল। আমার ব্যাপারে তোমরা কি বলো?’ সকলেই উচ্চ কণ্ঠে বললেন : ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর দ্বীনকে প্রচার করেছেন, আমাদেরকে কল্যাণের দিকে আহবান করেছেন, এ পথে অনেক চেষ্টা করেছেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুক।’ এরপর রাসূল (সা.) বললেন : ‘হে লোক সকল তোমরা কি সাক্ষ্য দেবে না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল; জান্নাত, জাহান্নাম ও মৃত্যু সত্য; নিঃসন্দেহে আল্লাহ কিয়ামতের দিনে সবাইকে ডাকবেন এবং মাটির নিচে আবৃত সবাইকে জীবিত করবেন?’ সকলেই একত্রে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ আবারো বললেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান ও ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে?’ উপস্থিত জনতার মধ্যে থেকে একজন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ঐ দু’টি জিনিস কি?’ রাসূল (সা.) বললেন : ‘আল্লাহর কিতাব যার এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে। আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধর যাতে করে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও, অপরটি হচ্ছে আমার ইতরাত, আহলে বাইত। মহান আল্লাহ্ আমাকে খবর দিয়েছেন এ দু’টি জিনিস কিয়ামত পর্যন্ত একে অপর থেকে পৃথক হবে না। এ দু’টি জিনিস থেকে কখনই অগ্রগামী হয়ো না এবং পিছে পড়ো না তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন সময় রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর হাত ধরে উপরে উঠালেন সকলেই আলী (আ.)-কে রাসূলের পাশে দেখলেন। রাসূল (সা.) বললেন : ‘হে লোকসকল, তোমরা কি অবগত নও যে, আমি মু’মিনদের উপর তাদের নিজেদের চাইতে অগ্রাধিকার রাখি?’ সকলেই এক বাক্যে বললেন : হ্যাঁ, অবশ্যই।’ (মুসনাদে আহমাদ) রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ্ আমার মাওলা এবং আমি মু’মিনদের মাওলা। তাদের উপর তাদের নিজেদের চাইতে আমি অধিক অগ্রাধিকার রাখি।’ অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা।’ এ বাক্যটি রাসূল (সা.) তিনবার উচ্চারণ করেন। আহমাদ বিন হাম্বল তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) এই বাক্যটি চার বার উচ্চারণ করেছেন। অতঃপর বললেন : ‘হে আল্লাহ্, যে আলীকে ভালবাসে, তুমি তাকে ভালবাস, এবং শত্রুতা কর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে। হে আল্লাহ্, যে আলীকে সাহায্য করে তুমিও তাকে সাহায্য কর। তার শত্রুদেরকে তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত কর এবং তাঁকে (আলী) সত্যের মাপকাঠি বানিয়ে দাও।’ অতঃপর বললেন : ‘তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ সকলের দায়িত্ব হচ্ছে যারা অনুপস্থিত তাদেরকে এ খবর পৌঁছে দেওয়া।’ রাসূলের ভাষণ শেষ হতেই ওহীর বার্তা বাহক জিবরাইল (আ.) রাসূল (সা.) কে সুসংবাদ দিলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْت لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتمَمْت عَلَيْكُمْ نِعْمَتي وَرَضِيت لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা-৩) এমন সময় রাসূল (সা.) উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ধ্বনি দিলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ তোমার শুকরিয়া আদায় করছি যে তোমার দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

রিসালাতে খলিফা ওমর (রাঃ)……………………… ………………………………………….. হযরত উকবা ইবনে আমের রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল দঃ বলেছেন,আমার পরে কেঁউ নবি হলে নিশ্চই ওমর ইবনে খাত্তাব হতো। (তিরমিজি -৩৬২৪) উক্ত হাদিসটি এমন কোন মুসলমান নাই যিনি জিবনে একবার হলেও শুনেন নি। যদি নবিজি দঃ ওমরেরে শানে উক্ত কথা বলেই যেতেন তবে প্রশ্ন জাগে কি করে আবু বকর রাঃ ইসলামের প্রথম খলিফ হন!!!???? কেন আবু বকর রাঃ নবিজির পরে যার নবি হবার কথা সেই ওমর রাঃ হাতে বায়াত গ্রহন করলেন না!!??? আর তিনি ওমর রাঃ কেন উক্ত হাদিস টি নিয়ে জনগনের কাছে এসে দাবি উপস্থাপন করলেন না!!?? এহেন মর্যাদাশিল ব্যক্তি যিনি নবি হবার যোগ্য (ওমর রাঃ) তাকে ১ম খলিফা বানাতে আবু বকর রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবিদের কিসে বাধাদিল। তাহলে নবিজির দঃ এর নামে চালিয়ে দেয়া উক্ত হাদিসটি কি আসলেই নবিজির বাক্য নাকি মাউলা আলী আঃ এর শান ও মানকে আরাল করার জন্য এই ধরনের হাদিসের আত্যপ্রকাশ করানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রনিত ভাবে। পৃথিবিতে আগত সকল নবি ও রাসুলই মুলত ৪টি বংশধারা থেকে এসেছেন, মহান আল্লাহ বলেন- নিঃসন্দেহে আল্লাহ- আদম, নুহ, আলে ইবরাহিম ও আলে ইমরানকে নির্বাচন করেছেন যারা একে অপরের বংসধর ছিল( সূরা আলে ইমরান ৩৩,৩৪) কোন নবি রাসুল ও তার পরবর্তি নবি (ওয়ারিস) কখনোই মুশরিক ছিলেন না আর না তারা কখনো মুরশরিক থেকে মুসলমান হয়েছেন। ওমর নিজের বক্তব্য- আমি ইসলাম থেকে অনেক দূরে ছিলাম। জাহেলিয়াতের যুগে মদে আসক্ত ছিলাম এবং খুব বেশি পরিমানে মদ খেতাম ...(সিরাতে ইবনে হিসাম,প্রথম খন্ড ৩৬৮-৩৬৯) আল্লাহপাকের কোরআন সাক্ষিদেয়, কোন নবি কিং বা নবির উত্তরসূরি কখনই মদ পারন করেন নি। যিনি নবির ওয়ারিস হবেন তিনি কুফরি থেকে মুক্ত ও পবিত্র হবেন। মাউলা আলী আঃ বলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং রাসুলের দঃ ভাই। আমি সিদ্দিকে আকবর। আমার পর কেবল মিথ্যাবাদীই এরুপ বলবে। আমি লোকদের মাঝে সাত বছর বয়সের পূর্বেই সালাত আদায় করেছি (সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফ,খন্ড-১, পৃ-৮৩,ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ওমর রাঃ নবি হতেন এটি একটি অতিব মিথ্যা, বানোয়াট বর্ননা। আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সঙ্গে মিলাবে না। এবং যেনেশুনে সত্যকে গোপন করবে না। (বাকারা-২/৪২) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম -রাজীব রহমান

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪৮ ২০৯১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আত্মীয়দের মর্যাদা এবং ফাতিমা (রাঃ) বিনতে নবী (সাঃ) এর মর্যাদা। নবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতবাসী মহিলাগণের সরদার ৩৪৪৮। আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা। যে তাঁকে কষ্ট দিবে, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল। Narrated Al-Miswar bin Makhrama: Allah's Messenger (ﷺ) said, "Fatima is a part of me, and he who makes her angry, makes me angry." بَابُ مَنَاقِبُ قَرَابَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْقَبَةِ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ بِنْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَاطِمَةُ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3706

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪১ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৪১। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের প্রাক্কালে) আলী (রাঃ) কে বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন, তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর। And narrated Sad that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali, "Will you not be pleased from this that you are to me like Aaron was to Moses?" باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدٍ، قَالَ سَمِعْتُ إِبْرَاهِيمَ بْنَ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِعَلِيٍّ ‏ "‏ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3699

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৮ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, মদিনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকটে বসে আলী (রাঃ) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বললেন, সে কি বলছে? সে বলল, সে তাকে আবূ তুরাব (রাঃ) বলে উল্লেখ করছে। সাহল (রাঃ) (একথা শুনে) হেসে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, তাঁর এ নাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই রেখেছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি (নাম রাখার) ঘটনাটি জানার জন্য সাহল (রাঃ) এর আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবূ আব্বাস, এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বললেন, (একদিন) আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এস মসজিদে শুয়ে রইলেন। (অল্পক্ষণ পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই (আলী) কোথায়? তিনি বললেন, মসজিদে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাঁর চাঁদর পিঠ থেকে সরে গিয়েছে। তাঁর পিঠে ধূলা-বালি লেগে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিঠ থেকে ধুলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে লাগলেন, উঠে বস হে আবূ তুরাব। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছিলেন। Narrated Abu Hazim: A man came to Sahl bin Sa`d and said, "This is so-and-so," meaning the Governor of Medina, "He is calling `Ali bad names near the pulpit." Sahl asked, "What is he saying?" He (i.e. the man) replied, "He calls him (i.e. `Ali) Abu Turab." Sahl laughed and said, "By Allah, none but the Prophet (ﷺ) called him by this name and no name was dearer to `Ali than this." So I asked Sahl to tell me more, saying, "O Abu `Abbas! How (was this name given to `Ali)?" Sahl said, "`Ali went to Fatima and then came out and slept in the Mosque. The Prophet (ﷺ) asked Fatima, "Where is your cousin?" She said, "In the Mosque." The Prophet (ﷺ) went to him and found that his (i.e. `Ali's) covering sheet had slipped of his back and dust had soiled his back. The Prophet (ﷺ) started wiping the dust off his back and said twice, "Get up! O Abu Turab (i.e. O. man with the dust). باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ فَقَالَ هَذَا فُلاَنٌ ـ لأَمِيرِ الْمَدِينَةِ ـ يَدْعُو عَلِيًّا عِنْدَ الْمِنْبَرِ‏.‏ قَالَ فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ يَقُولُ لَهُ أَبُو تُرَابٍ‏.‏ فَضَحِكَ قَالَ وَاللَّهِ مَا سَمَّاهُ إِلاَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، وَمَا كَانَ لَهُ اسْمٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْهُ‏.‏ فَاسْتَطْعَمْتُ الْحَدِيثَ سَهْلاً، وَقُلْتُ يَا أَبَا عَبَّاسٍ كَيْفَ قَالَ دَخَلَ عَلِيٌّ عَلَى فَاطِمَةَ ثُمَّ خَرَجَ فَاضْطَجَعَ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَيْنَ ابْنُ عَمِّكِ ‏"‏‏.‏ قَالَتْ فِي الْمَسْجِدِ‏.‏ فَخَرَجَ إِلَيْهِ فَوَجَدَ رِدَاءَهُ قَدْ سَقَطَ عَنْ ظَهْرِهِ، وَخَلَصَ التُّرَابُ إِلَى ظَهْرِهِ، فَجَعَلَ يَمْسَحُ التُّرَابَ عَنْ ظَهْرِهِ فَيَقُولُ ‏"‏ اجْلِسْ يَا أَبَا تُرَابٍ ‏"‏‏.‏ مَرَّتَيْنِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3696

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৭ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৭। কুতায়বা (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যান নি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সান্ধ্যায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে এমন এক ব্যাক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করাবেন। তারপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন আলী (রাঃ), অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করি নি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেই (পতাকা) দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দিলেন। Narrated Salama: `Ali happened to stay behind the Prophet (ﷺ) and (did not join him) during the battle of Khaibar for he was having eye trouble. Then he said, "How could I remain behind Allah's Messenger (ﷺ)?" So `Ali set out following the Prophet (ﷺ) , When it was the eve of the day in the morning of which Allah helped (the Muslims) to conquer it, Allah's Messenger (ﷺ) said, "I will give the flag (to a man), or tomorrow a man whom Allah and His Apostle love will take the flag," or said, "A man who loves Allah and His Apostle; and Allah will grant victory under his leadership." Suddenly came `Ali whom we did not expect. The people said, "This is `Ali." Allah's Messenger (ﷺ) gave him the flag and Allah granted victory under his leadership. باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي عُبَيْدٍ، عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ كَانَ عَلِيٌّ قَدْ تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي خَيْبَرَ وَكَانَ بِهِ رَمَدٌ فَقَالَ أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَخَرَجَ عَلِيٌّ فَلَحِقَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِي فَتَحَهَا اللَّهُ فِي صَبَاحِهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ ـ أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ ـ غَدًا رَجُلاً يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ـ أَوْ قَالَ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ـ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِ ‏"‏‏.‏ فَإِذَا نَحْنُ بِعَلِيٍّ وَمَا نَرْجُوهُ، فَقَالُوا هَذَا عَلِيٌّ‏.‏ فَأَعْطَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3695

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৬ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে, পতাকা তাকে দেয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস।যখন তিনি এলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু’আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে দুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম। Narrated Sahl bin Sa`d: Allah's Messenger (ﷺ) said, "Tomorrow I will give the flag to a man with whose leadership Allah will grant (the Muslim) victory." So the people kept on thinking the whole night as to who would be given the flag. The next morning the people went to Allah's Messenger (ﷺ) and every one of them hoped that he would be given the flag. The Prophet (ﷺ) said, "Where is `Ali bin Abi Talib?" The people replied, "He is suffering from eye trouble, O Allah's Messenger (ﷺ)." He said, "Send for him and bring him to me." So when `Ali came, the Prophet (ﷺ) spat in his eyes and invoked good on him, and be became alright as if he had no ailment. The Prophet (ﷺ) then gave him the flag. `Ali said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! Shall I fight them (i.e. enemy) till they become like us?" The Prophet (ﷺ) said, "Proceed to them steadily till you approach near to them and then invite them to Islam and inform them of their duties towards Allah which Islam prescribes for them, for by Allah, if one man is guided on the right path (i.e. converted to Islam) through you, it would be better for you than (a great number of) red camels." باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلاً يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ ‏"‏ قَالَ فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ، غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ ‏"‏ أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ‏"‏‏.‏ فَقَالُوا يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتُونِي بِهِ ‏"‏‏.‏ فَلَمَّا جَاءَ بَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ، فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ، فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ‏.‏ فَقَالَ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ أُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا فَقَالَ ‏"‏ انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ، فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3694

Sharif Ul Islam পড়ুন আরও জানতে পারবেন। খাতুনে জান্নাত ফাতিমা যাহরা, পৃ- ১১২ , ১১৯ (রহমানিয়া লাইব্রেরী) / হযরত ফাতেমা যাহরা , পৃ- ৬১ , ৬২ , ৬৭ , ৬৮ (তাজ লাইব্রেরী) / হযরত ফাতেমা যাহরা , পৃ- ১৮০ , ১৮৯ , ১৯০ (হামিদিয়া লাইব্রেরী) / নাহজ আল বালাঘা , পৃ- ৩৬৪ - ৩৭৫ (জেহাদুল ইসলাম) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৬ , হাদিস নং - ৬২৫৮ (আধুনিক প্রকাশনী) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৩ , হাদিস নং - ২৮৬০ , ৩৪৩৬ , ৩৪৩৭ , ৩৪৩৮ (আধুনিক প্রকাশনী) / হিলিয়াত আল আউলিয়া , খন্ড - ২ , পৃ- ৪৩ (মিশর) / আস সুনান আল কুবরা , খন্ড - ৩ , পৃ- ৩৯ , খন্ড - ৪ , পৃ- ৩৩৪ (হায়দারাবাদ , ভারত) / আনসার আল আশরাফ (বালাজুরি) , খন্ড - ১ , পৃ- ৪০৫ (মিশর) / আল ইসতিয়াব , খন্ড - ৪ , পৃ- ১৮৯৭ (মিশর) / উসুদ আল ঘাবা (ইবনে আসির) , খন্ড - ৫ , পৃ- ৫২৪ (মিশর) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৫ , পৃ- ১৭৭ , খন্ড - ৮ , পৃ- ১৮৫ (মিশর) / সহীহ আল মুসলিম , খন্ড - ৫ , পৃ- ১৫৩ / সুনান আল কুবরা , খন্ড - ৪ , পৃ- ২৯ , খন্ড - ৬ , পৃ- ৩০০ (হায়াদারাবাদ , ভারত) / আল তাবাকাত ইবনে সাদ , খন্ড - ২ , পৃ- ৮৬ (লেডেন) / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড - ১ , পৃ- ৯ (মিশর) / তারিখে তাবারী , খন্ড - ১ , পৃ- ১৮২৫ (লেডেন) / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , খন্ড - ৫ , পৃ- ২৮৫ (মিশর) / শারহ নাহাজ আল বালাঘা , (ইবনে হাদীদ) , খন্ড - ৬ , পৃ- ৪৬ (মিশর) / ওয়াফা আল ওয়াফা , খন্ড - ৩ , পৃ- ৯৯৫ (মিশর) / আশ শাফি, খন্ড ৪ , পৃষ্ঠা - ১১৫ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৩৪ ।

আহলে বাইত › ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী বাকের (আ.) নবীজীর আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.) ১১৪ হিজরী সনের ৭ জিলহজ্ব ৫৭ বছর বয়সে শাহাদাতবরণ করেন। যেদিন তার শাহাদাতের খবর মদীনা শহরে ছড়িয়ে পড়লো সেদিন আহলে বাইতের অনুরাগীদের অন্তর শোকে-দুঃখে ভীষণ কাতর হয়ে পড়েছিল। কারণ হলো তারা আর নবীজীর আহলে বাইতের ঐ নূরানী ও সদয় চেহারাটি আর দেখবে না,মসজিদে আর তাঁর হৃদয়গ্রাহী উষ্ণ বক্তব্য শুনতে পাবে না-এই চিন্তায় তাদের মন ভেঙ্গে গেল। ইমামের অস্তিত্বহীনতা তাঁর ঘনিষ্ট সহচরদের জন্যে ছিল খুবই কষ্টের ব্যাপার। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন জাবের ইবনে ইয়াযিদ জোফি। দুঃখের মুহূর্তগুলো যেন তার কাটছিল না। তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠছিল ইমামের প্রিয় সান্নিধ্যের বহু অমর স্মৃতি। জাবের প্রথমবারের মতো যখন ইমামকে মসজিদে দেখেছিলেন তখন বহু কৌতূহলী মানুষ ইমামের চারদিকে বৃত্তাকারে বসে ছিলেন। সবাই তাঁর যুক্তিপূর্ণ ও প্রজ্ঞাময় কথা শুনছিলো। প্রথম যেই উপদেশটি তিনি ইমামের কাছ থেকে শুনেছিলেন সেটা তিনি কখনোই ভোলেন নি,সবসময় তা তার স্মরণে ছিল। ইমামের ঐ উপদেশ তাকে সবসময় জ্ঞান-অন্বেষী করে রেখেছিল। ইমাম বাকের (আ.) বলেছিলেনঃ 'জ্ঞান অন্বেষণ করো! কেননা জ্ঞান অন্বেষণ করা পূণ্যের কাজ। জ্ঞান তোমাকে অন্ধকারে পথ দেখাবে, দুঃসময়ে জ্ঞান তোমাকে সাহায্য করবে। জ্ঞান হলো মানুষের সবচেয়ে উত্তম বন্ধু।' এই উপদেশ পাবার কারণে জাবের ইমাম বাকের (আ.) এর যুক্তি বাহাসের জলসায় এবং যে-কোনো জ্ঞানের আসরে উপস্থিত থাকতেন। ইমামের প্রজ্ঞাময় বক্তৃতা থেকে ভীষণ উপকৃত হতেন। জাবের তাই ইমামকে হারাবার ব্যথায় বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। ইমামের স্মৃতিময় সান্নিধ্যের কথা মনে করে কাঁদতে লাগলেন আর আনমনে ইমামের সেই বাণীটি আওড়ালেনঃ 'হে জাবের!যার অস্তিত্বে বা সত্ত্বায় আল্লাহর স্মরণের মাহাত্ম্য বিদ্যমান রয়েছে তার অন্তরে আর অন্য কোনো কিছুর প্রতি ভালোবাসা জাগবে না। খোদাকে যারা অন্বেষন করে,যারা তাকেঁ পেতে চায় তারা দুনিয়া পুজারী হয় না,পার্থিব জগতের মোহ তাদের মাঝে থাকে না। তাই চেষ্টা করো আল্লাহ তাঁর হেকমাত ও দ্বীনের যা কিছু তোমার কাছে আমানত রেখেছেন তা রক্ষণাবেক্ষণ করো!' জাবেরও ইমামের জন্যে শোকাভিভুত জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হলো। একদল লোক ইমামের পবিত্র লাশ কাধেঁ করে নিয়ে মদীনা শহরের বাকি কবরস্থানে নিয়ে গেল এবং তাকেঁ সেখানে দাফন করলো। এই দিনটিই সেইদিন অর্থাৎ ১১৪ হিজরীর জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখ। যেখানেই সত্য,ন্যায় ও বাস্তবতার নিদর্শন দেখা যাবে সেখানেই আহলে বাইতের নাম জ্বলজ্বল করবে। কেননা তাঁরা ছিলেন নীতিনৈতিকতার বিচারে সবোর্চ্চ পর্যায়ের। তাঁরা সবসময় অঙ্গনে এসেছেন সত্য-কল্যঅন ও মানবীয় পূর্ণতায় পৌঁছার পথ দেখাতে। মানুষের মাঝে তাদেঁর অস্তিত্বই ছিল সূর্যের মতো উজ্জ্বল পথ প্রদর্শকের মতো। ইমাম বাকের (আ.) এর ইমামতির মেয়াদকাল ছিল ১৯ বছর। হিজরী ৯৫ সালে তাঁর এই মেয়াদকালের সূচনা হয়। এই সময়টাতে ইসলামী সমাজ উমাইয়া শাসকদের শেষ দিককার এবং আব্বাসীয় শাসনের শুরুর দিককার সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল। এই মেয়াদকালে বহু কিতাব এবং দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ অনূদিত হয়েছিল। সেইসাথে কালের এই ক্রান্তিলগ্নে সমাজে বহুরকম বিকৃত ফের্কার বিস্তার ঘটেছিল। মানুষ তাই বিকৃত চিন্তার বেড়াজালে আটকে পড়ার সুযোগ ছিল খুব সহজেই। ইমাম বাকের (আ.) এবং তাঁর সন্তান ইমাম সাদেক (আ.) ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নে দ্বীনের যথার্থ স্বরূপ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রকৃত ইসলামকে তুলে ধরার জোর প্রচেষ্টা চালান। তাদেঁর এই প্রচেষ্টা ছিল বেশ প্রভাব বিস্তারকারী। বিশেষ করে তাঁরা মদীনায় একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞানপিপাসু ও আধ্যাত্মিকতার আলো প্রত্যাশীরা দলে দলে তাই মদীনায় যেতে শুরু করেন। এভাবে দ্বীনের ব্যাপক প্রচার প্রসার ঘটে। এ কারণেই তাকেঁ বাকেরুল উলুম নামে অভিহিত করা হয়। যার অর্থ হলো পণ্ডিত বা জ্ঞানের বিশ্লেষক। ইমাম বাকের (আ.) তাঁর সময়ে ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষার সীমান্তপ্রহরী ছিলেন। ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি ও নৈতিকতার বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিকৃত আকিদা ও চিন্তাচেতনার বিচার-বিশ্লেষণ করা এবং ইসলামের বিশ্বাস ও মূল্যবোধগুলোর দৃঢ়তা ও মজবুতির ক্ষেত্রে ইমাম বাকের (আ.) মূল্যবান অবদান রেখেছিলেন। একটি সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই যেসব শাসক অত্যাচারী এবং কেবল নিজেদের স্বার্থচিন্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং মানবীয় কোনো নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন নয় তারা সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে। ইমাম বাকের (আ.) এর ইমামতিকালটি ছিল তেমনি এক শাসকগোষ্ঠির শাসনকাল। ইমাম তাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরেন এবং একজন সৎ নেতৃত্বের গুণাবলি জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এভাবে অত্যাচারী খলিফাদের কাজকর্ম জনগণের সমালোচনার মুখে পড়ে।সে কারণে আব্বাসীয় শাসক বিশেষ করে হিশাম বিন আব্দুল মালেকের ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন ইমাম। ইমাম বাকের (আ.) সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে বলেনঃ নিঃসন্দেহে যাদের মাঝে তিনটি গুণের সমাবেশ নেই তারা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নয়। ঐ তিনটি গুণ হলো-এ্যাকঃ আল্লাহকে ভয় করা এবং খোদার নাফরমানী থেকে নিরাপদ থাকা, দুইঃ সহিষ্ণুতা ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা এবং তিনঃ অধীনস্থদের ব্যাপারে পিতৃসুলভ সদয় হওয়া এবং তাদের সাথে সদাচরণ করা। ইমাম বাকের (আ.) ছিলেন পরোপকারী ও অসহায়-বঞ্চিত জনগোষ্ঠির প্রতি সদয়। তিনি নিঃস্ব-হতদরিদ্রদের সাথে মিশতেন। তাদের সাথে কথা বলে তাদের ক্লান্ত আত্মাকে প্রশান্ত করতেন। তিনি সবাইকে বলতেন বঞ্চিতদেরকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ডাকা না হয়। তাঁর জ্ঞান আর মিষ্টি আচার-আচরণের কারণে জনগণ তাঁর কথায় ব্যাপক আকৃষ্ট হত। বহু ছাত্র তিনি তৈরি করে গেছেন। তাঁর থেকে বর্ণিত অসংখ্য হাদিস এখনো মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজে লাগছে। হিশাম বিন আব্দুল মালেক ইমামের এই প্রভাব সঞ্য করতে পারলো না। সে ছিল অর্থলোভি এক পাথর-হৃদয়। সে তার অধীনস্থদের আদেশ দেয় বিভিন্নভাবে ইমামকে যেন চাপের মুখে রাখা হয়। কিন্তু কোনোরকম সীমাবদ্ধতা আরোপ করে ইমামকে তাঁর দায়িত্ব পালন থেকে দূরে রাখতে পারে নি। ইমামের বিরুদ্ধে তাই হিশামের অন্তরে ক্ষোভের আগুণ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল। অবশেষে হিশাম ইমামের নূরানী অস্তিত্বকেই বিলীন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করলো। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ইমাম বাকের (আ.) কে বিষপ্রয়োগে শহীদ করা হয়। তাঁর শাহাদাতের সেই শোকাবহ স্মৃতিময় দিনটিই হলো ৭ জিলহজ্ব। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছসর পূর্বে সংঘটিত পিতা পুত্রের আত্মত্যাগের এই অপূর্ব ঘটনা যুগ যুগ ধরে আল্লাহ্ তালার অবতীর্ণ দ্বীনে হক-ইছলামের হেফাজত ও মর্যাদা রক্ষায় ও মুসলিম জাতির ন্যায্য স্বর্থরক্ষার উৎসরূপে কাজ করে আসছে। আনুষ্ঠানিক কোরবানী বিগত সাড়ে হাজার বছর ধরে সমগ্ৰ মুছলিম বিশ্বে চালু রয়েছে। এটা হজরত ইবরাহিম (আঃ) ও কিশোর পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-এর ঐশী প্রেমের চরম নিদর্শন। ইহা পিতা পুত্র উভয়েরই খােদার রাহে উৎসর্গ হওয়ার চির অস্নান স্মরণিকা মাত্র।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুছলমানই কোরবানীর শিক্ষা সম্বন্ধে অবগত নয়। আল্লাহ্ তালার আদেশে আত্মোৎসর্গের এমন মহান ঘটনা হতে যে তাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যে সম্বন্ধে মুছলমানই অজ্ঞতার তিমিরে ডুবে আছে।পিতা পুত্রের আত্মোৎসর্গের মহান ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? ইহা কি খোদা প্রেমের চরম ও পরম নিদর্শন নয়? ⭕️কোরআনের ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓ "যবেহ ’ অর্থাৎ ‘যাবিহুন বা মাযবুহুনে বোজর্গ ও আজীমবোজর্গঅর’ যার বাংলা শাব্দিক অর্থ ঃ মহান ও বৃহৎ যবাইকৃত। এধরণের গুণবাচক শব্দ কোরআনে একটি বার ব্যবহৃত হয়েছে। 🔰তাহলো সূরা আস সাফ্‌ফাত এর ১০৭ নং আয়াতে, এই আয়তে আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ ‘অফাদাইনাহু বিযিবহিন আজীম’ অর্থাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।’(ছুরে ছাফফাত-এর ১০২ আয়াত থেকে ১০৯ আয়াত পর্যন্ত দেখার অনুরোধ করছি) । অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি তাফসীরকারী এখানে বলেন যে ‘যেবহে আজিম’ এর উদ্দেশ্য ভেড়া নামক পশু যবেহকে বুঝানো হয়নি।আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে যেহেতু এই যবেহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ‘আজীম’ বলে নামকরণ করা হয়েছে; সেহেতু সয়ং যবেহ নিজস'লে কখনো আজিম হতে পারে না। এর উদ্দেশ্য ভিন্ন।হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। যখন হজরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইছমাইল (আঃ) কে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কোরবানী করতে তৈরী হলেন তখন তার হাত থেমে গেল, পুত্র গর্দান ঝুকিয়ে দিলেন এবং সানন্দে ভাবতে লাগলেন। কখন কোরবানী হবেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর হাতের শক্তি লোপ পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলেন, কোরবানী করতে পারছি না কেন? আমার সবচেয়ে বেশী মহব্বতের বস্তুই ত কোরবান করা আল্লাহর আদেশ। এ দুনিয়ায় পুত্র ইছমাইলের চেয়ে বেশী মহব্বতের তা আমার আর কিছু নেই। আমার হাত কেন উঠছে না? ছুরিকে কি কেউ ধরে রাখল? না আমার মধ্যে কি মহাবৃত এসে গেল? নিশ্চয়ই মহাব্ৰত আসে নাই। তা আসলে অবশ্যই আমার হৃদয় কাঁপত, চক্ষুতে জল আসত। তার কোনটাই আমার মধ্যে আসে নাই। আচ্ছা আবার চেষ্টা করব, আবার ছুরি চালাব এবং দেখব কে আমার হাতের শক্তি কেড়ে নেয়। হজরত ইবাহিমের যে হাতে ছুরি ছিল, হঠাৎ সে হাতে টের পেলেন যে, তা পাথরের মত ভারী হয়ে গেছে। হাতের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। ছুরি বলল, হে ইবরাহিম (আঃ) আমার কোন দোষ নাই, আমি কি করব। এ তোমার আল্লাহর হুকুম। হজরত ইবরাহিম রাগ করে ছুরি ফেলে দিলেন। ছুরি বলতে লাগল, ইয়া খলিলুল্লাহ আমার উপর কেন রাগ করছেন? আপনার আরজু, যে ইছমাইলকে কোরবানী করবেন এবং এটা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু এও আল্লাহর হুকুম যে আমি আপনার হুকুম এনকার করা(হুকুম রদ করা)। আমি বলি আল্লাহ্ পাকের যা হুকুম তাই হয়েছে, এতে আমার .কি দোষ। হজরত ইবরাহিম হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন। হঠাৎ টের পেলেন পানির মত কি যেন উনার কদম মোবারকে লাগছে। চক্ষু খুলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সত্যই কি দেখছেন, না স্বপু? হজরত ইছমাইল দাঁড়িয়ে আছেন, এদিকে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে গেছে। বেহুস বেকারার হয়ে হজরত ইবরাহিম কাঁদতে লাগলেন ও ফরিয়াদ করতে লাগলেন, আয় পাক পরওয়ারদেগার, কেন আমার কোরবানী কবুল করলেন না? কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হেয়ে পড়লেন। তখনই আল্লাহপাকের আদেশ আসল,হে ইব্রাহিম তুমি কেদনা,তোমার ছেলেকে কোরবানী করতে পার নাই, কিন্তু আমি তোমাকে এর চেয়ে বড় ও মহান এক কোরবানী দান করলাম। হজরত ইবরাহিমের বেকারারী দূর হয়ে হুস আসল ও শুনতে পেলেন, 🔰আয় খলিল তুমি বল যে, মোহাম্মদ (দঃ) কি সবচেয়ে বেশী আজিজ নয়❓ হজরত ইবরাহিম চতুর্দিকে দেখতে লাগলেন, হঠাৎ আছমানের দিকে চাইলেন ও দেখতে পেলেন “জবোঁহ আজীম৷”। (মিনাতে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কুরাবানী করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুরাবনীর পরিবর্তে মিশাল কুরবানী "যবেহ আজীম" হচ্ছে কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর কুরবানী তারই বংশে দান করলেন) ।হজরত ইবরাহিম আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলেন ছবতে রছুল, নোয়াছায়ে রছুল জামে শাহাদত পান করলেন। রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক তার বদলা দেবেন। 🔰অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলেন হে ইব্রাহীম, তোমার নিকট আমার সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি? তিনি বললেন :- হে আমার পরোয়ারদেগার তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার দোস্ত- মুহাম্মাদ হলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। 🔰আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন :- হে ইব্রাহীম, সে সবচেয়ে প্রিয় নাকি তুমি নিজে? তিনি বললেন ঃ তিনিই সবচেয়ে প্রিয়। 🔰আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তার সন্তান তোমার জন্য সবচেয়ে প্রিয় নাকি তোমার সন্তান? তিনি উত্তর বললেন ঃ তাঁর সন্তান। 🔰আবার জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তাঁর সন্তান দুশমনের হাতে অন্যায় ও নির্যাতনের মাধ্যমে কুরবানী হলে তুমি বেশী ব্যথিত হবে নাকি তোমার সন্তান তোমার হাতে আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নিহত হলে বেশি ব্যথিত হবে? তিনি উত্তরে বললেন :- দুশমনের হাতে তাঁর কুরবানী হওয়াটা আমাকে বেশী ব্যথিত করবে। 🔰আল্লাহ তায়ালা বললেন ঃ হে ইব্রাহীম, উম্মতে মুহাম্মাদের কিছু লোক মুহাম্মাদের সন্তান হোসাইনকে তাঁর ইনে-কালের পর জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করবে যেমনিভাবে ভেড়া হত্যা করা হয়, এর জন্য তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথাগুলো শুনে তাঁর অন-র অশান- হয়ে গেলে, মনঃকষ্টে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। 🔰আল্লাহ তায়ালা আবারো তাঁর কাছে অহীর মাধ্যমে বললেন হে ইব্রাহীম, তোমার সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করতে না পারার সেই শোকটা হোসেইনের হত্যার শোকের সাথে পবির্তন করে দেব এবং মুসিবাতের ক্ষেত্রে সবরের দরুন সর্বোচ্চ সওয়াব তোমাকে প্রদান করবো। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘অফাদানাহু বিযিবহে আজীম’ অথাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম। আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে সর্বোচ্চ সম্মান #শাহাদতে_জাহেরী ও #শাহাদতে_ছিররী রক্ষিত আছে তা আল্লাহ্ পাক হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে দেন নাই। তা শুধু হাসনাইন আ. জন্য রক্ষিত আছে। হজরত হাছানকে দান করবেন শাহাদতে ছিররী ও হজরত হােছাইনকে দান করবেন শাহাদতে জাহেরী। বিনা দোষে গুপ্তভাবে যে কোন উপায়ে নিহত হওয়াকে শাহাদতে ছিররী ও ধর্ম রক্ষার জন্য সম্মুখ যুদ্ধে জেনে শুনে আত্ম বিসর্জন করাকে বলা হয় শাহাদতে জাহেরী। ইমাম বংশ হলেন করুনার কাওছার। গলায় ছুরি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন তবু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন নি। ফরিয়াদ করলে বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেত। আঘাতের বিনিময়ে প্রেম বিতরণ করাই ইমাম বংশের আদর্শ। নবী করিম (দঃ) ও ইমাম বংশ কাউকে ধ্বংস করতে এ দুনিয়াতে আসেননি। তারা এসেছেন গড়তে। হাসি মুখে প্রাণ বলি দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে প্রেমের মূল্যবােধকে দাঁড় করাতে। একবার ভেবে দেখুন ত? অবশ্য বেআদবী না করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে হজরত ইবরাহিম (আঃ) তার আপনি পুত্রকে কোরবানী করতে যেয়ে হাত থর থর করে কাঁপছে। মমতার কাছে উৎসর্গ হার মানতে চাইছে। তাই কাপড়ে চােখ দুটাে বেঁধে নিতে হল, অথচ আড়াই দিনের উপবাসী তৃষ্ণিত অবস্থায় থেকে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র রাহে হজরত ইমাম হােছাইন নামক হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কারবালার মাঠে একটি একটি করে সন্তানদের কোরবানী দিয়ে চলেছেন। পা হতে মাথা পর্যন্ত হুবহু হজরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সঙ্গে মিল হজরত আলী আকবর যার কণ্ঠস্বর শুনতে নবী করীম (দঃ)-এর কণ্ঠস্বর বলে ভুলু হয়। সেই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত হজরত আলী আকবর শাহাদত বরণ করলেন। শহীদ হলেন দুধের শিশু আলী আছগর। তবুও আল্লাহ পাকের কাছে করেন নি কোন ফরিয়াদ, কোন কাতর যাচঞা। ভেবে দেখুনত, একটু চােখ বন্ধ করে, চিন্তা করুন ত সেই কারবালার দৃশ্য। সেই পানির পিপাসায় ছান্তিফাটা আলী আছগরের শহীদ হবার দৃশ্য। তুলনা করতে গেলে কি হজরত ইবরাহিমের (আঃ) কোরবানী প্ৰদীপ হতে সূর্য খোঁজার মত তুলনা হয় না? দেহের মৃত্যু প্রেমের জীবন। যে হাত প্রেমের স্পর্শে প্রেম প্ৰজ্বলিত হয়ে বিকিরণ করে প্ৰেম, সেই হাতে পার্থিব সম্মানের মৃত্যু হিমা শীতল হয়ে বিকিরণ করে মহা ক্ষমা। —-—— সৈয়দ হোসাইন উল হক

😥😥😥ইমাম হোসাইন (আ.)এর দূত মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদত😥😥😥 ৬০ হিজরীর নয়ই জিলহজ্ব আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)’র ভাতিজা ও ইমাম হোসাইন (আ.)’র চাচাতো ভাই হযরত মুসলিম ইবনে আকিল (রা.) কুফায় শাহাদত বরণ করেন। তার লোম হর্ষক বেদনা বিধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আপনাদের প্রতি রইলো আন্তরিক শোক ও সমবেদনা মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যায় মৃত্যুকালে সে ইমাম হোসেন (আ.)এর সাথে কৃত সন্ধি ভঙ্গ করে স্বীয়পুত্র নরাধম ইয়াজিদকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করে। হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানায়। কুফাবাসীরা হযরত হোসাইন (আ.) এর মক্কা আগমন এবং ইয়াজিদের হাতে বাইআত গ্রহণে তার অস্বীকৃতির খবর জানত । এ খবর পেয়েই তারা সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ীর ঘরে সমবেত হয় । সমাবেশে সুলাইমান ইবনে সা’দ দাড়িয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য শেষে তিনি বলেন ওহে আলীর অনুসারীরা! তোমরা সবাই শুনেছ যে,মুআবিয়া মরে গেছে এবং নিজের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে । তার কৃতকর্মের ফল সে পাবে । তার ছেলে ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেছে । আপনারা আরো জানেন যে,হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তার সাথে বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি উমাইয়ার জালিম ও খোদাদ্রোহীদের দূরাচার থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তোমরা তার পিতার অনুসারী । হোসাইন (আ.) আজ তোমাদের সমর্থন ও সহযোগিতার মুখাপেক্ষী । যদি এ ব্যপারে নিশ্চিত হও যে,তাকে সাহায্য করবে এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে,তাহলে লিখিত আকারে নিজের প্রস্তুতির কথা তাকে জানিয়ে দাও । যদি ভয় পাও এবং আশংকা কর যে,তোমাদের মধ্যে গাফলতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে,তাহলেও তাকে জানিয়ে দাও,তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও । তাকে ধোকা দিও না । এরপর তিনি নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুর উপর একটি পত্র লেখেন- بسم الله الرحمن الرحیم এ পত্র হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সমীপে সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ী,মুসাইয়্যেব ইবনে নাজরা,রেফাআ ইবনে শাদ্দাদ,হাবিব ইবনে মাজাহের আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ায়েলসহ একদল মুমিন ও অনুসারীর পক্ষ হতে প্রেরিত হল । সালামের পর আল্লাহর তা’রিফ ও প্রশংসা যে,তিনি আপনার ও আপনার পিতার দুশমনদের ধ্বংস করেছেন । সেই জালিম ও রক্তপিপাসু,যে উম্মতের শাসন ক্ষমতা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অন্যায়ভাবে চেপে বসেছে এবং মুসলমানদের বাইতুল মাল আত্মসাৎ করেছে,মন্দ লোকদের বাচিয়ে রেখেছে,আল্লাহর সম্পদকে অবাধ্য দুরাচারীদের হাতে তুলে দিয়েছে,সামুদ সম্প্রদায় যেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে তারাও সেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হোক । আপনি ছাড়া আমাদের আজ কোন নেতা নেই । কজেই আপনি যদি আমাদের শহরে তাশরীফ আনেন তাহলে বড়ই অনুগ্রহ হবে । আশা করি আপনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত করবেন । কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশির ‘দারুল এমারাত’ প্রাসাদে রয়েছে । কিন্তু আমরা তার পেছেনে জামাত ও জুমার নামাজে শরীক হইনি । ঈদের দিন তার সাথে ঈদগাহে যাইনি । যদি শুনতে পাই যে,আপনি কুফায় আসছেন তাহলে তাকে কুফা থেকে বিতাড়িত করে সিরিয়া পাঠিয়ে দেব । হে পয়গাম্বরের সন্তান আপনার প্রতি সালাম,আপনার পিতার পবিত্র রুহের প্রতি সালাম । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু চিঠিখানা লেখার পর পাঠিয়ে দিল । দুইদিন অপেক্ষার পর আর একদল লোককে প্রায় ১৫টি চিঠি নিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে পাঠিয়ে দিল । ঐ সব চিঠির প্রত্যেকটিতে দুই কি তিন বা চার জনের স্বাক্ষর ছিল । কিন্তু হোসাইন (আ.) এত সব চিঠিপত্র পাওয়ার পরও নীরব রইলেন তাদের কোন পত্রের উত্তর দিলেন না । এমন কি মাত্র এক দিনেই ৩০০ টি চিঠি এসে তার হাতে পৌছে । এরপরও পর্যায়ক্রমে একের পর এক চিঠি আসছিল । তার চিঠি ১২হাজার ছাড়িয়ে যায় । সর্বশেষ যে চিঠিখানা তার হাতে এসে পৌছে তা ছিল হানি ইবনে হানি ছবিয়ী এবং সায়ীদ ইবনে আব্দুল্লাহ হানাফীর । তারা উভয়ে ছিল কুফার অধিবাসী । ঐ পত্রে তারা লিখেন- بسم الله الرحمن الرحسم ইবনে হোসাইন আলী (আ.) এর খেদমতে তার ও তার পিতার অনুসারীদের পক্ষ হতে প্রেরিত হলো । সালাম বাদ জনগন আপনার আগমনের অপেক্ষায়। আপনি ছাড়া কাউকে তারা চায় না । হে নবীর সন্তান ! অতি শীঘ্র আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন । কেননা,বাগ-বাগিচাগুলোতে সবুজের সমারোহ এসেছে,ফলগুলো পেকেছে,লতাগুল্ম জেগে উঠেছে এবং সবুজ পত্রে গাছের সৌন্দর্য শোভায় মাতিয়ে তুলেছে । আসুন আপনি আমাদের মাঝে আসুন । কেননা আপনার সৈন্যদলের মাঝেই তো আপনি আসবেন । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু চিঠি পাওয়ার পর পত্র বাহক দু’জনের কাছে হোসাইন ইবনে আলী (আ.) জিজ্ঞেস করেন –এ চিঠিগুলো কে কে লিখেছে । তারা বলল,হে আল্লাহর রাসুলের সন্তান! পত্রের লেখকরা হলেন-শাব্স ইবনে রাবায়ী,হাজার ইবনে আবজার,ইয়াজিদ ইবনে হারেছ,ইয়াজিদ ইবনে রোয়াম,উরওয়া ইবনে কাইছ,আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আতারেদ । এরুপ পরিস্থিতিতে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)একদিন কাবাঘরের পাশে গিয়ে রুকন ও মাকামে ইব্রাহীমের মাঝখানে দাড়িয়ে দু’রাকত নামায আদায় এবং মহান আল্লাহর দরবারে পরিস্থিতির কল্যাণকর পরিণতির জন্য দোয়া করেন । অতপর মুসলিম ইবনে আকিলকে ডেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন । এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীর চিঠির জবাব লিখে মুসলিম ইবনে আকিলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। জবাবী পত্রে তাদের আমন্ত্রণ কবুলের ওয়াদা দিয়ে লেখা ছিল- আমি আমার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে তোমাদের কাছে পাঠালাম যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে । মুসলিম ইমামের পত্র নিয়ে কুফায় আসেন । কুফাবাসী হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ও মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে আনন্দিত হল ।তাকে মুখতার ইবনে আবী ওবায়দা সাকাফীর বাড়িতে থাকতে দিলেন । অনুসারীরা দলে দলে মুসলিম ইবনে আকিলের সাথে সাক্ষাত করতে আসতে লাগল । প্রত্যেক দল আসার সাথে সাথে মুসলিম ইমামের পত্র পড়ে শুনাতে থাকেন । আনন্দে দর্শনার্থীদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করছিল । দেখতে দেখতে আঠারশো লোক তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে । আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম বাহেলী,এমারা ইবনে ওয়ালীদ এবং ওমর ইবনে সাআদ ইয়াজিদের কাছে এক পত্র পাঠিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলের আগমন সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন । ঐ পত্রে নোমান ইবনে বশীরকে কুফার গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে ইবনে যিয়াদকে নিয়োগ দানের করে । ঐ পত্রে মুসলিম ও হোসাইনের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে বিবরণ দেয় । পত্রে কড়া নির্দেশ প্রদান করে যে,মুসলিমকে গ্রেফতার ও হত্যা কর। ইবনে যিয়াদ চিঠি পাওয়ার পর কুফা গমনের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়ে যায় । মুসলিম ইবনে আকিল এ সংবাদ শুনে ভয় পেলেন । হয়তো ইবনে যিয়াদ তার কুফা অবস্থানের সংবাদ জেনে ফেলতে পারে । এমনকি তার অনিষ্ট সাধন করতে পারে এজন্যে তিনি মুখতারের ঘর থেকে এসে হানি ইবনে উরওয়ার ঘরে আশ্রয় নেন । হানি ইবনে উরওয়া তাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিলেন । মুসলিম ইবনে আকিলকে আশ্রয়দেয়ার অপরাধে ইবনে যিয়াদ হানি ইবনে উরওয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে। হানির নিহত হওয়ার সংবাদ মুসলিম ইবনে আকিলের কাছে পৌছালে যত লোক তার হাতে বাইআত করেছিল,তাদের সহ তিনি ইবনে যিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বের হন । ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এ সময় দারুল ইমারায় আশ্রয় নেয় এবং প্রাসাদের ভীতরে ঢোকার সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয় । তার দলীয় লোকেরা মুসলিমের সঙ্গী সাথীদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় । আর যারা যিয়াদের সাথে দারুল ইমারার (প্রাসাদ) ভেতরে ছিল তারা মুসলিমের বাহিনীকে সিরিয়া থেকে সৈন্য বাহিনী আসার হুমকি দিচ্ছিল । ঐ দিন এভাবেই কেটে গেল এবং রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এল । কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মিথ্যা প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে বেশির ভাগ মানুষই ইমামের প্রতিনিধিকে (মুসলিমকে) ত্যাগ করেন। মুসলিমের সঙ্গী সাথীরা ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল । পরস্পর বলাবলি করতে লাগল আমরা কেন গোলযোগ আর বিশৃংখলার আগুন জ্বালাচ্ছি । আমাদের তো উচিৎ ঘরে বসে থাকা আর মুসলিম ও ইবনে যিয়াদের ব্যাপারে নিজেকে না জড়ানো । আল্লাহই তাদের মধ্যে সমাধান করে দিবেন । এভাবে সবাই চলে গেল শেষ পর্যন্ত ১০ জন লোক ছাড়া আর কেউই মুসলিমের সাথে রইল না । এবার তিনি মসজিদে এসে মাগরিবের নামাজ পড়লেন,নামাজের পর দেখলেন ঐ দশ জনও সেখানে নেই । তিনি অত্যন্ত অসহায়ভাবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়লেন । অলিগলির পথ চলতে চলতে তিনি ‘তাওয়া’ নাম্নী এক মহিলার ঘরে এসে পানি চাইলেন । মহিলা পানি দিলে তা তিনি পান করলেন এবং মুসলিমকে আশ্রয় দিলেন । কিন্তু তার ছেলে গিয়ে ইবনে যিয়াদকে ব্যপারটা জানিয়ে দিল । ইবনে যিয়াদ মুহাম্মদ ইবনে আশআসকে একদল লোক সহ মুসলিমকে গ্রেফতারের জন্য পাঠাল । মুসলিম তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলেন এবং তাদের সাথে একাই যুদ্ধে লিপ্ত হলেন ও তাদের বেশ কিছু লোককে হত্যা করলেন । আশআস চিৎকার দিয়ে বলল – হে মুসলিম আমরা তোমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি । মুসলিম বললেন- ধোকাবাজ,ফাসেক লোকদের নিরাপত্তা দেয়ার কোন দাম নেই । যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মুসলিমের ঢাল ও তরবারী ভেঙ্গে যাওয়ায় তার মনোবল কিছুটা দূর্বল হয়ে যায় (এত গুলো মানুষের সাথে একাই তাও আবার ভাঙ্গা ঢাল ও তরবারী নিয়ে ) ইতি মধ্যে এক ব্যক্তি পিছন থেকে তীরের সাহায্যে আঘাত করলে তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান । তখন তাকে বন্দী করে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় । ইবনে যিয়াদ বকর ইবনে হামারানকে দারুল ইমারার ছাদের উপর মুসলিমকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিল । মুসলিম যাওয়ার সময় তাছবীহ পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্র্রার্থনা করছিলেন । ছাদের উপর পৌছা পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করতে থাকলেন । তার মাথা দেহ থেকে আলাদ হয়ে গেল । তার হত্যাকারী অত্যন্ত ভীত বিহ্বলভাবে ছাদ থেকে নেমে আসল । ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করল তোমার কি হল । বলল হে আমীর যখন তাকে হত্যা করছিলাম তখন কুৎসিত কাল চেহারা এক লোক দেখলাম যে আমার মুখোমুখি দাড়িয়ে দাতে নিজের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে । তাকে দেখে এত ভয় পেয়েছি যে জীবনে কোন কিছুতেই এত ভয় পাইনি । যিয়াদ বলল মণে হয় মুসলিমকে হত্যা করাতে তোমার মণে ভয় ধরে গেছে প্রচারে 😥😥😥 বিধি তুমার ধর্ম কি😥😥😥

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৭। উম্মু আতিয়া (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনা বাহিনী প্রেরণ করেন, তাদের সঙ্গে আলী (রাঃ)-ও ছিলেন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার দুই হাত উপরে তুলে বলতে শুনলামঃ ইয়া আল্লাহ আলীকে না দেখিয়ে আমাকে মৃত্যু দান করো না। যঈফ, মিশকাত (৬০৯০) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আলোচ্য সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। Narrated Umm 'Atiyyah: "The Prophet (ﷺ) sent an army in which was 'Ali." She said: "While he was raising his hands, I heard the Messenger of Allah (ﷺ) saying: 'O Allah! Do not cause me to die until You allow me to see 'Ali." حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَيَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَغَيْرُ، وَاحِدٍ، قَالُوا أَخْبَرَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي الْجَرَّاحِ، حَدَّثَنِي جَابِرُ بْنُ صُبْحٍ، قَالَ حَدَّثَتْنِي أُمُّ شَرَاحِيلَ، قَالَتْ حَدَّثَتْنِي أُمُّ عَطِيَّةَ، قَالَتْ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشًا فِيهِمْ عَلِيٌّ ‏.‏ قَالَتْ فَسَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ رَافِعٌ يَدَيْهِ يَقُولُ ‏ "‏ اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْنِي حَتَّى تُرِيَنِي عَلِيًّا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43804

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৬। আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, উম্মী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ ওসিয়াত করেন যে, মুমিনরাই তোমাকে ভালবাসবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। আদী ইবনু সাবিত (রাযিঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগের জন্য দু'আ করেছেন, আমি সে যুগেরই অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১৪), মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated 'Ali: "The Prophet (ﷺ) - the Unlettered Prophet - exhorted me (saying): 'None loves you except a believer and none hates you except a hypocrite.'" 'Adi bin Thabit (a narrator) said: "I am from the generation whom the Prophet (ﷺ) supplicated for." حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ عُثْمَانَ ابْنُ أَخِي، يَحْيَى بْنِ عِيسَى حَدَّثَنَا أَبُو عِيسَى الرَّمْلِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ لَقَدْ عَهِدَ إِلَىَّ النَّبِيُّ الأُمِّيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنَّهُ لاَ يُحِبُّكَ إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَبْغَضُكَ إِلاَّ مُنَافِقٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عَدِيُّ بْنُ ثَابِتٍ أَنَا مِنَ الْقَرْنِ الَّذِينَ دَعَا لَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42096

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৩ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৩। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামাতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় থাকবে। যঈফ, যঈফা (৩১২২), তাখরীজুল মুখতারাহ (৩৯২-৩৯৭) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা জাফর ইবনু মুহাম্মাদ হতে শুধুমাত্র এই সূত্রেই হাদীসটি জেনেছি। Narrated 'Ali bin Husain: from his father, from his grandfather, 'Ali bin Abi Talib: "The Prophet (ﷺ) took Hasan and Husain by the hand and said: 'Whoever loves me and loves these two, and their father and mother, he shall be with me in my level on the Day of Judgement." حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ، أَخْبَرَنِي أَخِي، مُوسَى بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ، جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ، مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيهِ، عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ بِيَدِ حَسَنٍ وَحُسَيْنٍ فَقَالَ ‏ "‏ مَنْ أَحَبَّنِي وَأَحَبَّ هَذَيْنِ وَأَبَاهُمَا وَأُمَّهُمَا كَانَ مَعِي فِي دَرَجَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43803

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩২ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩২। ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাসজিদে) আলী (রাযিঃ)-এর দ্বার ছাড়া সকল দ্বার বন্ধ করে দেয়ার হুকুম দিয়েছেন। সহীহঃ যঈফাহ (৪৯৩২, ৪৯৫১) নং হাদীসের অধীনে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র শুবাহ হতে উক্ত সনদে এভাবেই জানতে পেরেছি। Narrated Ibn 'Abbas: "The Prophet (ﷺ) ordered that the gates be closed, except the gate of 'Ali." حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُخْتَارِ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي بَلْجٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِسَدِّ الأَبْوَابِ إِلاَّ بَابَ عَلِيٍّ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ عَنْ شُعْبَةَ بِهَذَا الإِسْنَادِ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42093

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩০ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩০। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ) কে বললেনঃ আমার নিকটে তুমি মর্যাদায় মূসা (আঃ) এর নিকট হারুনের মর্যাদার মত। তবে আমার পরে কোন নাবী নেই। পূর্বের হাদিসের সহায়তায় সহীহ। আবু ঈসা বলেন, উপুর্যুক্ত সনদে এ হাদিসটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে সা'দ, যাইদ ইবনু আরকাম, আবু হুরাইরা ও উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) হতেও হাদিস বর্ণিত আছে। Narrated Jabir bin 'Abdullah: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali: "You are to me in the position that Harun was to Musa, except that there is no Prophet after me." حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ الزُّبَيْرِيُّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيٍّ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ سَعْدٍ وَزَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=45313

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৯ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৯। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। হাদীসটি ৩৭২২ নং হাদীসেও বর্ণনা করা হয়েছে আবূ ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত সনদ সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43802

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৮ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৮। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবুওয়াত পেয়েছেন সোমবার এবং আলী (রাঃ) নামায আদায় করেন মঙ্গলবার। সনদ দুর্বল আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু মুসলিম আল-আওয়ারের সূত্রেই এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। আর মুসলিম আল-আওয়ার হাদীসবিশেষজ্ঞদের মতে তেমন মজবুত রাবী নন। উক্ত হাদীস মুসলিম হতে, তিনি হাববাহ হতে, তিনি আলী (রাঃ) হতে এ সূত্রেও একই রকম বর্ণিত হয়েছে। Narrated Anas bin Malik: "The advent of the Prophet (ﷺ) was on Monday and 'Ali performed Salat on Tuesday." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَابِسٍ، عَنْ مُسْلِمٍ الْمُلاَئِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ بُعِثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَصَلَّى عَلِيٌّ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ مُسْلِمٍ الأَعْوَرِ ‏.‏ وَمُسْلِمٌ الأَعْوَرُ لَيْسَ عِنْدَهُمْ بِذَلِكَ الْقَوِيِّ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ حَبَّةَ عَنْ عَلِيٍّ نَحْوَ هَذَا ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43801

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৭। আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আলী! তুমি ও আমি ছাড়া আর কারো জন্য এ মাসজিদে নাপাক হওয়া বৈধ নয়। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৯) যঈফা (৪৯৭৩) আলী ইবনুল মুনযির বলেন, আমি যিরার ইবনু সুরাদকে প্রশ্ন করলাম, এ হাদীসের মর্মার্থ কি? তিনি বলেন, তুমি ও আমি ছাড়া নাপাক অবস্থায় এ মসজিদের মধ্য দিয়ে হাটাচলা করা অন্য কারো জন্য জায়িজ নয়। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আলোচিত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (ইমাম বুখারী) এ হাদীস আমার নিকট শুনেছেন এবং তিনি এটিকে গারীব বলে মত দিয়েছেন। Narrated Abu Sa'eed: that the Messenger of Allah (ﷺ) said to 'Ali: "O 'Ali! It is not permissible for anyone to be Junub in this Masjid except for you and I." حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي حَفْصَةَ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِعَلِيٍّ ‏ "‏ يَا عَلِيُّ لاَ يَحِلُّ لأَحَدٍ أَنْ يُجْنِبَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ غَيْرِي وَغَيْرَكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ قُلْتُ لِضِرَارِ بْنِ صُرَدٍ مَا مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ قَالَ لاَ يَحِلُّ لأَحَدٍ يَسْتَطْرِقُهُ جُنُبًا غَيْرِي وَغَيْرَكَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ سَمِعَ مِنِّي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ هَذَا الْحَدِيثَ وَاسْتَغْرَبَهُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43800

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৬। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ তাইফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে নিকটে ডেকে তার সাথে চুপিচুপি কথাবার্তা বললেন। জনসাধারণ বলল, তিনি তার চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথাবার্তা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি, বরং আল্লাহ্ তা'আলাই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৮), যঈফা (৩০৮৪) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আল-আজলাহ-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জেনেছি। ইবনুল ফুযাইল ব্যতীত অন্য রাবীও আল-আজলাহ হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। "আল্লাহ্ তা'আলাই চুপিসারে তার সাথে কথা বলেছেন” বাক্যের মর্মার্থ এই যে, তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ তা'আলাই আমাকে হুকুম করেছেন। Narrated Jabir: "The Messenger of Allah (ﷺ) called 'Ali on the Day (of the battle) of At-Ta'if, and spoke privately with him, so the people said: 'His private conversation with his cousin has grown lengthy.' So the Messenger of Allah (ﷺ) said: 'I did not speak privately with him, rather Allah spoke privately with him.'" حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنِ الأَجْلَحِ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا يَوْمَ الطَّائِفِ فَانْتَجَاهُ فَقَالَ النَّاسُ لَقَدْ طَالَ نَجْوَاهُ مَعَ ابْنِ عَمِّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَا انْتَجَيْتُهُ وَلَكِنَّ اللَّهَ انْتَجَاهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ الأَجْلَحِ وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ ابْنِ فُضَيْلٍ أَيْضًا عَنِ الأَجْلَحِ ‏.‏ وَمَعْنَى قَوْلِهِ ‏"‏ وَلَكِنَّ اللَّهَ انْتَجَاهُ ‏"‏ ‏.‏ يَقُولُ اللَّهُ أَمَرَنِي أَنْ أَنْتَجِيَ مَعَهُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43799

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৫ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৫। আল-বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি সামরিক বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং একদলের সেনাপতি বানালেন আলী (রাঃ)-কে এবং অপর দলের অধিনায়ক বানালেন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-কে। তিনি আরো বলেনঃ যখন যুদ্ধ শুরু হবে তখন আলী হবে (সমগ্র বাহিনীর) প্রধান সেনাপতি। রাবী বলেন, আলী (রাঃ) একটি দুর্গ জয় করেন এবং সেখান হতে একটি যুদ্ধবন্দিনী নিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে খালিদ (রাঃ) এক চিঠি লিখে আমার মাধ্যমে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে পাঠান যাতে তিনি আলী (রাঃ)-এর দোষ চর্চা করেন। রাবী বলেন, আমি চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাযির হলাম। তিনি চিঠি পড়ার পর তার (মুখমণ্ডলের) রং বিবর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি এমন লোক প্রসঙ্গে কি ভাবো যে আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলও যাকে ভালোবাসেন? রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ্ তা'আলার অসন্তোষ ও তার রাসূলের অসন্তোষ হতে আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় চাই। আমি একজন বার্তাবাহক মাত্র। (এ কথায়) তিনি নীরব হন। সনদ দুর্বল। ১৬৮৭ নং হাদীসে পূর্বেও বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। Narrated Al-Bara: "The Prophet (ﷺ) dispatched two armies and put 'Ali bin Abi Talib in charge of one of them, and Khalid bin Al-Walid in charge of the other. He said: "When there is fighting, then (the leader is) 'Ali." He said: "So 'Ali conquered a fortress and took a slave girl. So Khalid sent me with a letter to the Prophet (ﷺ) complaining about him. So I came to the Prophet (ﷺ) and he read the letter and his color changed, then he said: 'What is your view concerning one who loves Allah and His Messenger, and Allah and His Messenger love him.'" He said: "I said: 'I seek refuge in Allah from the wrath of Allah and the anger of His Messenger, and I am but a Messenger.' So he became silent." حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، حَدَّثَنَا الأَحْوَصُ بْنُ جَوَّابٍ أَبُو الْجَوَّابِ، عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشَيْنِ وَأَمَّرَ عَلَى أَحَدِهِمَا عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَعَلَى الآخَرِ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ وَقَالَ ‏"‏ إِذَا كَانَ الْقِتَالُ فَعَلِيٌّ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَافْتَتَحَ عَلِيٌّ حِصْنًا فَأَخَذَ مِنْهُ جَارِيَةً فَكَتَبَ مَعِي خَالِدٌ كِتَابًا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشِي بِهِ ‏.‏ قَالَ فَقَدِمْتُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَ الْكِتَابَ فَتَغَيَّرَ لَوْنُهُ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ مَا تَرَى فِي رَجُلٍ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ غَضَبِ اللَّهِ وَغَضَبِ رَسُولِهِ وَإِنَّمَا أَنَا رَسُولٌ فَسَكَتَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43798

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৪ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৪। আমির ইবনু সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাহঃ) হতে তার পিতার সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু'আবিয়াহ ইবনু আবী সুফইয়ান (রাযিঃ) সা'দ (রাযিঃ)-কে আমীর নিযুক্ত করে বললেন, আবূ তুরাবকে গালি দিতে তোমায় বাধা দিল কিসে? সা'দ (রাযিঃ) বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তিনটি কথা মনে রাখব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে সময় পর্যন্ত আমি তাকে গালমন্দ করব না। ঐগুলোর একটি কথাও আমার নিকটে লাল রংয়ের উট লাভের তুলনায় বেশি প্রিয়। (এক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি আলী (রাযিঃ)-এর লক্ষ্যে একটি কথা বলতে শুনেছি, যে সময় তিনি তাকে মাদীনায় তার জায়গায় নিয়োগ করে কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। সে সময় আলী (রাযিঃ) তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে শিশু ও নারীদের সঙ্গে কি রেখে যাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার মর্যাদা আমার নিকট মূসা (আঃ)-এর নিকট হারূন (আঃ)-এর মতই? কিন্তু (পার্থক্য এই যে,) আমার পরবর্তীতে কোন নাবী নেই। (দুই) আমি খাইবারের (যুদ্ধাভিযানের) দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন এক লোকের হাতে আমি (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ করব যে আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলও তাকে মুহাব্বাত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেকে তা লাভের আশায় অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা আলীকে আমার নিকটে ডেকে আন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার কাছে এসে হাযির হন, তখন তার চোখ উঠেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই চোখে স্বীয় মুখ নিঃসৃত লালা লাগিয়ে দেন এবং তার হাতে পতাকা অৰ্পণ করেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে বিজয়ী করলেন। (তিন) এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হল (অনুবাদ) আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে....."— (সূরা আ-লি ইমরান ৬১)। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমাহ, হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ)-কে ডাকেন (এবং তাদেরকে নিয়ে খোলা ময়দানে গিয়ে) বললেনঃ হে আল্লাহ! এরা সকলে আমার পরিবার-পরিজন। সহীহঃ মুসলিম (হাঃ ৭/১২০)। আবূ ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated 'Amir bin Sa'd bin Abi Waqqas: from his father, saying "Mu'awiyah bin Abu Sufyan ordered Sa'd, saying 'What prevented you from reviling Abu Turab?' He said: 'Three things that I remember from the Messenger of Allah (ﷺ) prevent me from reviling him. That I should have even one those things is more beloved to me than red camels. I heard the Messenger of Allah (ﷺ) speaking to 'Ali, and he had left him behind in one of his battles. So 'Ali said to him: "O Messenger of Allah! You leave me behind with women and children?" So the Messenger of Allah (ﷺ) said to him: "Are you not pleased that you should be in the position with me that Harun was with Musa? Except that there is no Prophethood after me?" And on the Day of (the battle of) Khaibar, I heard him saying: "I shall give the banner to a man who loves Allah and His Messenger, and Allah and His Messenger love him." So we all waited for that, then he said: "Call 'Ali for me." He said: 'So he came to him, and he had been suffering from Ramad (an eye condition), so he (ﷺ) put spittle in his eye and gave the banner to him, then Allah granted him victory. And when this Ayah was revealed: 'Let us call our sons and your sons, our women and your women...' (3:61) the Messenger of Allah (ﷺ) called 'Ali, Fatimah, Hasan, and Husain and said: "O Allah, these are my family." حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ مِسْمَارٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَمَّرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا تُرَابٍ قَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلاَثًا قَالَهُنَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَنْ أَسُبَّهُ لأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لِعَلِيٍّ وَخَلَفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخَلِّفُنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نُبُوَّةَ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ ‏"‏ ادْعُ لِي عَلِيًّا ‏"‏ ‏.‏ فَأَتَاهُ وَبِهِ رَمَدٌ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ فَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ ‏.‏ وَأُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ‏:‏ ‏(‏ قلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ ‏)‏ الآيَةَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42090

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৩ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৩। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি (জ্ঞানের ভাণ্ডার) পাঠশালা এবং আলী তার দরজা। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৭) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব মুনকার। কিছু রাবী এ হাদীস শারীক হতে বর্ণনা করেছেন এবং তারা এর সনদে আস-সুনাবিহী হতে’ উল্লেখ করেননি। অনন্তর আমরা উক্ত হাদীস শারীক হতে কোন নির্ভরযোগ্য রাবীর সূত্রে জানতে পারিনি। এ অনুচ্ছেদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। Narrated 'Ali: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "I am the house of wisdom, and 'Ali is its door." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ بْنِ الرُّومِيِّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ سُوَيْدِ بْنِ غَفَلَةَ، عَنِ الصُّنَابِحِيِّ، عَنْ عَلِيٍّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مُنْكَرٌ ‏.‏ وَرَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ شَرِيكٍ وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ عَنِ الصُّنَابِحِيِّ وَلاَ نَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ وَاحِدٍ مِنَ الثِّقَاتِ عَنْ شَرِيكٍ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43797

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২২ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২২। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৬) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং আলোচ্য সূত্রে গারীব। Narrated 'Ali: "When I would ask the Messenger of Allah (ﷺ), he would give me, and when I would be silent, he would initiate (speech or giving) with me." حَدَّثَنَا خَلاَّدُ بْنُ أَسْلَمَ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، أَخْبَرَنَا عَوْفٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ هِنْدٍ الْجَمَلِيِّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ كُنْتُ إِذَا سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْطَانِي وَإِذَا سَكَتُّ ابْتَدَأَنِي ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43796

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২১ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২১।  আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাখির ভুনা গোশত হাযির ছিল। তিনি বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার নিকট সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার সাথে এই পাখির গোশত খাওয়ার জন্য হাযির করে দাও। ইত্যবসরে আলী (রাঃ) এসে হাযির হন এবং তার সাথে খাবার খান। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৫) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে আস-সুদীর রিওয়ায়াত হতে এ হাদীস জেনেছি। এ হাদীস অন্যভাবেও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। আস-সুদীর নাম ইসমাঈল ইবনু আবদুর রহমান। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর দেখা পেয়েছেন এবং হুসাইন ইবনু আলী (রাঃ)-কে দেখেছেন। শুবা, সুফিয়ান সাওরী, যাইদাহ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আলকাত্তান প্রমুখ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। Narrated Anas bin Malik: "There was a bird with the Prophet (ﷺ), so he said: 'O Allah, send to me the most beloved of Your creatures to eat this bird with me.' So 'Ali came and ate with him." حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ عِيسَى بْنِ عُمَرَ، عَنِ السُّدِّيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم طَيْرٌ فَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ ائْتِنِي بِأَحَبِّ خَلْقِكَ إِلَيْكَ يَأْكُلُ مَعِي هَذَا الطَّيْرَ ‏"‏ ‏.‏ فَجَاءَ عَلِيٌّ فَأَكَلَ مَعَهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ السُّدِّيِّ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَنَسٍ ‏.‏ وَعِيسَى بْنُ عُمَرَ هُوَ كُوفِيٌّ وَالسُّدِّيُّ اسْمُهُ إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَقَدْ أَدْرَكَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ وَرَأَى الْحُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ وَثَّقَهُ شُعْبَةُ وَسُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَزَائِدَةُ وَوَثَّقَهُ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43795

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৬। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ সহীহাহ (৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি' (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated Al-Bara bin 'Azib: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali bin Abi Talib: "You are from me, and I am from you." And there is a story along with this Hadith. حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ إِسْرَائِيلَ، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42088

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২০ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২০।  ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের মধ্যে ভায়ের সম্পর্ক সৃষ্টি করলেন। তারপর আলী (রাঃ) কান্না ভেজা চোখে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার সাহাবীদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ দুনিয়া ও পরকালে তুমি আমারই ভাই। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৪) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে যাইদ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। Narrated Ibn 'Umar: that the Messenger of Allah (ﷺ) made bonds of brotherhood among his Companions. So 'Ali came crying saying: "O Messenger of Allah! You have made a bond of brotherhood among your Companions, but you have not made a bond of brotherhood with me and anyone." So the Messenger of Allah (ﷺ) said to him: "I am your brother, in this life and the next." حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى الْقَطَّانُ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحِ بْنِ حَىٍّ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ جُمَيْعِ بْنِ عُمَيْرٍ التَّيْمِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ آخَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ عَلِيٌّ تَدْمَعُ عَيْنَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ آخَيْتَ بَيْنَ أَصْحَابِكَ وَلَمْ تُؤَاخِ بَيْنِي وَبَيْنَ أَحَدٍ ‏.‏ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنْتَ أَخِي فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أَوْفَى ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43794

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৯ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৯। হুবশী ইবনু জুনাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আলী আমার হতে এবং আমি আলী হতে। আমার কোন কাজ থাকলে আমি নিজেই সম্পন্ন করি অথবা আমার পক্ষ হতে তা আলীই সম্পন্ন করে। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১১৯)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated Hubshi bin Junadah: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "'Ali is from me and I am from 'Ali. And none should represent me except myself or 'Ali." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ عَلِيٌّ مِنِّي وَأَنَا مِنْ عَلِيٍّ وَلاَ يُؤَدِّي عَنِّي إِلاَّ أَنَا أَوْ عَلِيٌّ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42089

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৭। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা আনসার সম্প্রদায় মুনাফিকদের নিশ্চয় চিনি। তারা আলী (রাঃ)-এর প্রতি হিংসা পোষণকারী। অত্যন্ত দুর্বল সনদ আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র আবূ হারুনের সূত্রেই হাদীসটি জানতে পেরেছি। শুবা (রাহঃ) আবূ হারূন আল-আবদীর সমালোচনা করেছেন। এ হাদীস আমাশ হতে, তিনি আবূ সালিহ হতে, তিনি আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে এ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আল মুসাবির আল-হিমইয়ারী তার মা এর নিকট থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ আমি উম্মু সালামাহ-এর নিকট গিয়ে তাকে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, একমাত্র মুনাফিকরাই আলী (রাঃ)-কে ভালবাসে না। আর মুমিনগণ তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না। যঈফ, মিশকাত (৬০৯১) এ অনুচ্ছেদে আলী (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি এই সূত্রে হাসান গারীব। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান হতে সুফিয়ান সাওরী হাদীস বর্ণনা করেছেন। Narrated Abu Sa'eed Al-Khudri: "We, the people of the Ansar, used to recognize the hypocrites, by their hatred for 'Ali bin Abi Talib." Narrated Al-Musawir Al-Himyari: from his mother who said: "I entered upon Umm Salamah, and I heard her saying: "The Messenger of Allah (ﷺ) used to say: "No hypocrite loves 'Ali, and no believer hates him." حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي هَارُونَ الْعَبْدِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ إِنَّا كُنَّا لَنَعْرِفُ الْمُنَافِقِينَ نَحْنُ مَعْشَرَ الأَنْصَارِ بِبُغْضِهِمْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ أَبِي هَارُونَ ‏.‏ وَقَدْ تَكَلَّمَ شُعْبَةُ فِي أَبِي هَارُونَ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ‏.‏ حَدَّثَنَا وَاصِلُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبِي النَّصْرِ، عَنِ الْمُسَاوِرِ الْحِمْيَرِيِّ، عَنْ أُمِّهِ، قَالَتْ دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَسَمِعْتُهَا تَقُولُ، كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يُحِبُّ عَلِيًّا مُنَافِقٌ وَلاَ يَبْغَضُهُ مُؤْمِنٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ هُوَ أَبُو نَصْرٍ الْوَرَّاقُ وَرَوَى عَنْهُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43792

মক্কা শরীফ থেকে হজ সেরে মদীনা শরীফ ফেরার পথে রসুলে পাক (স:) মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের মধ্যবরতী স্থান গদীরে খুম নামক স্থানে আল্লাহ তা'লার হুকুমে সমস্ত সাহাবী দিগকে একত্রিত করে হযরত আলী (আ:) এঁর বেলায়াতের উপর একটি ভাষণ প্রদান করেছিলেন। তাই এই ভাষণটিকে গদীরে খুমের ভাষণও বলা হয়। সেদিন উপস্থিত জনতা অরথাত সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার। উঁটের পিঠের হাওদা গুলো দিয়ে স্টেজ তৈরী করা হল। রসুলে পাক (স:) তাতে আরোহন করে আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা পড়লেন অতঃপর বললেন ঃ আমি অতি শীঘ্রই আল্লাহ-র ডাকে সাড়া দিয়ে তোমাদের থেকে বিদায় নেব। আমি নিজেও একজন দায়িত্বশীল এবং তোমরাও তোমাদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। আমি দেখবো তোমরা আমার ব্যাপারে কিভাবে সাক্ষ্য দিবে । জনগণ উচ্চস্বরে বলতে লাগল আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আপনার রেসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন; আমাদেরকে নসীহত করেছেন, আল্লাহ আপনাকে জাযা ও খায়র প্রদান করুন। অতঃপর হুযুর (সঃ) বললেন ঃতোমরা কি আল্লাহ-র একত্ববাদ, আমার নবুয়াত ও কেয়ামতের দিন মৃত ব্যক্তিদের জীবিত হওয়ার সেই সত্য কথার সাক্ষী প্রদান করবে না? সকলেই বলল হ্যাঁ সাক্ষ্য দিচ্ছি। তিনি (সঃ) বললেন হে আল্লাহ সাক্ষী থেকো। অতঃপর হযুর (সঃ) বললেন যা ইমাম তিরমিযী হাযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) হতে বরননা করেছেন, " নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি গুরুত্বপূরন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যদি তোমরা সে দুটিকে আকড়ে ধর তাহলে আমার পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটির মধ্যে একটি অপরটি অপেক্ষা অত্যন্ত বড়। আল্লাহ-র কেতাব (কুরান মজীদ) এবং আমার খানদান আমার আহলে বায়েত আসমান থেকে যমীন পর‍্যান্ত বিসতৃত রশি। আর এ দুটি হাওযে কওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর‍্যন্ত কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সুতরাং দেখ যে,তোমরা আমার পর এদুটির সাথে কিরূপ ব্যবহার কর। (তিরমিযী শরীফ, ২য় খণ্ড, ২২০ প্রিষ্ঠা) তারপর রসুলুল্লাহ (সঃ) মওলা আলী (আঃ) এর হাত উচু করে তুলে ধরে বললেন,- "ইয়া আয়্যোহাননাস ইন্নাল্লাহা মওলায়া ওয়া আনা মওলাল মু'মিনীনা ওয়া আনা আওলা বেহিম মিন আনফুসিহিম ফা মান কুনতু মওলাহু ফা হাযা মওলাহু য়া'নি আলীয়ান আলায়হিসসালাম।" তরজমা ঃ "হে মানব জাতি নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমার মওলা আর আমি সমগ্র মুমিনদিগের মওলা এবং আমি তাদের জানের থেকেও অধিক নিকটবরতী। সুতরাং আমি যার মওলা ইনি অর্থাৎ আলী (আঃ) তার মওলা। " এই বাক্যটি নবী পাক (সঃ) তিন বার কারো মতে চারবার পুনরাবৃত্তি করলেন। অতঃপর আসমানের দিকে হাত দুটি তুলে বললেন, " হে আল্লাহ যে ইনার সাথে বন্ধুত্ব্ব রাখে তুমি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখো। এবং যে ইনার সাথে শত্রুতা রাখে তুমি তার সাথে শত্রুতা রাখ। এবং যে ইনাকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস। এবং যে ইনাকে হিংসা করে তুমি তাকে হিংসা কর। এবং যে ইনাকে সাহায্য করে তুমি তাকে সাহায্য কর এবং যে ইনাকে সাহায্য করা ছেড়ে দেয় তুমিও তাকে সাহায্য করা ছেড়ে দাও। এবং যে স্থানেই ইনি যান সত্যকে ইনার সাথে রাখ। " ১। তাবারাণী : আল মু'জামুল কবীর, ৩ : ৬৭ ২। হায়সামী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ : ১৬৪ ৩। ইবনে কাসীর : আল বেদায়া ওয়াননেহায়া, ৫ : ৪৬৩ ৪। ইবনে হজর মক্কী : আস সোয়ায়েকুল মুহরিকা প্রিষ্ঠা - ৩৫ (মিশর প্রিন্ট) ৫। গদীর এ খুম এর চূড়ান্ত ঘোষণা, প্রিষ্ঠা - ২৭-২৯ বিঃদ্রঃ এই কারণে এই দিনটি কে ঈদ এ গদীর বলা হয়। অর্থাত এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য খুব আনন্দের দিন।

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৬। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ সহীহাহ (৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি' (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated Al-Bara bin 'Azib: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali bin Abi Talib: "You are from me, and I am from you." And there is a story along with this Hadith. حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ إِسْرَائِيلَ، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42088

আখলাক ( সদাচরণ এবং চরিত্র ) সদাচরণ এবং নৈতিক চরিত্র ও আদর্শ ( আখলাক ) সংক্রান্ত ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) - এর কিছু অমিয় বাণীঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর রাহে যুদ্ধে গমনকারী মুজাহিদকে যে সওয়াব ও পূ্ণ্য দেন ঠিক সেটার ন্যায় তিনি বান্দাকে সদাচরণ অবলম্বন করার জন্য সওয়াব ও পূণ্য দেবেন । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০১ , হাদীস নং ১২ ) قال الصّادق ( ع ) : إِنَّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی لَيُعطِيَ العَبدَ مِنَ الثَّوَابِ عَلَی حُسنِ الخُلقِ کَمَا يُعطِي المُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللهِ يَغدُو وَ يَرُوحُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফরযসমুহ আঞ্জাম দেয়ার পর বান্দার যে আমলটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তা হচ্ছে মানুষের সাথে তার ( ঐ বান্দার ) সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৬ ) قال الصّادق ( ع ) : مَا يَقدِمُ المُؤمِنُ عَلَی الله بِعَمَلٍ بَعدَ الفَرَائِضِ أَحَبَّ إِلَی اللهِ تَعَالَی مِن أَن يَسَعَ النَّاسَ بِخُلقِهِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ যে সব বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )কে সম্বোধন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর এ বাণী বা আয়াতঃ হে মুহাম্মাদ , নিশ্চয়ই আপনি এক অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর আছেন । তিনি ( ইমাম সাদিক আঃ ) বলেনঃ এই অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শ হচ্ছে দানশীলতা ( বদান্যতা / মহত্ত্বالسَّخَاءُ ) এবং সদাচারণ ও সদ্ব্যবহার ( حُسنُ الخُلقِ)) ( দ্রঃ তাফসীর নূরুস সাকালাইন , খঃ ৫ , পৃঃ ৩৯১ , হাদীস নং ২৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : کَانَ فِيمَا خَاطَبَ اللهُ تَعَالَی نَبِيَّهُ ( ص ) أَن قَالَ لَهُ : يَا مُحَمَّدُ (( إِنّکَ لَعَلَی خُلقٍ عَطِيمٍ )) قَالَ : السَّخَاءُ وَ حُسنُ الخُلقِ . সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের ( ভালো স্বভাব ও চরিত্র ) সীমা পরিসীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের সীমা পরিসীমা হচ্ছে এই যে ) স্বীয় পার্শ্বদেশ অর্থাৎ হস্তদ্বয় বিনয়াবনত ও নমনীয় করবে ( তুমি নম্র ও ভদ্র হবে ) , মুখের ভাষাকে মিষ্টি মধুর ও মার্জিত ( পবিত্র ) করবে ( ভালো ও সুন্দর কথা বলবে ) এবং স্বীয় দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে ও প্রফুল্ল চিত্তে সাক্ষাৎ করবে । ( দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ২৫৩ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - لَمَّا سُئِلَ عَن حَدِّ حُسنِ الخُلقِ - : تُلِينُ جَانِبَکَ ، وَ تُطَيِّبُ کَلَامَکَ ، وَ تَلقَی أَخَاکَ بِبِشرٍ حَسَنٍ . উত্তম নৈতিক চরিত্রের ( مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) ব্যখ্যা প্রসঙ্গেঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ মহানবী ( সাঃ )কে উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করেছিলেন । অতঃপর তোমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা কর , যদি তোমাদের মাঝে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক ) বিদ্যমান থাকে তাহলে এরজন্য মহান আল্লাহর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে তা আরও বৃদ্ধি করে দেয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত কর । অতঃপর তিনি ( ইমাম সাদিক ) ১০ টি উত্তম ( সুন্দর ) নৈতিক চরিত্র উল্লেখ করেনঃ ১. দৃঢ় বিশ্বাস ( ইয়াকীন ) , ২. পরিতোষ ও সন্তুষ্টি ( কানাআত ) , ৩. ধৈর্য্য ( সবর ) , ৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ( শুকুর ) , ৫. সহিষ্ণুতা ( হিলম ) , ৬. সদাচরণ ( সদ্ব্যবহারঃ হুসনুল খুলক ) , ৭. দানশীলতা ( বদান্যতাঃ সাখা ) , ৮. আত্মসম্মানবোধ ( গাইরাত ) , ৯. সাহস ( শাজাআত ) এবং ১০. পৌরুষ ও মনুষ্যত্ব ( মুরূআত ) । ( দ্রঃ আমালীস সাদূক , হাদীস নং ৮ , পৃঃ ১৮৪ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی خَصَّ رَسُولَ اللهِ ( ص ) بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ، فَامتَحِنُوا أَنفُسَکُم ، فَإِن کَانَت فِيکُم فَاحمَدُوا اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ وَ ارغَبُوا إِلَيهِ فِي الزِّيَادَةِ مِنهَا ، فَذَکَرَهَا عَشَرَةً : اليَقِينُ ، وَ القَنَاعَةُ ، وَ الصَّبرُ ، وَ الشُّکرُ ، وَ الحِلمٌ ، وَ حُسنُ الخُلقِ ، وَ السَّخَاءُ ، وَ الغَيرَةُ ، وَ الشَّجَاعَةُ ، وَ المُرُوءَةُ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (- আর তাঁকে উত্তম নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল -) যে তোমার সাথে অন্যায় ( জুলুম ) করেছে তাকে তোমার ক্ষমা করা , যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক স্থাপন , যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দেয়া ( দান করা ) এবং তোমার নিজের বিরুদ্ধে হলেও সত্য বলা ।(দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ১৯১ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - وَ قَد سُئِلَ عَن مَکَارِمِ الأَخلَاقِ : العَفوُ عَمَّن ظَلَمَکَ ، وَ صِلَةُ مَن قَطَعَکَ ، وَ إِعطَاءُ مَن حَرَمَکَ ، وَ قَولُ الحَقِّ وَ لَو عَلَی نَفسِکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) জার্রাহ আল-মাদায়েনীকে বলেনঃ " আমি তোমাকে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) সম্পর্কে বলব কি ?" তা ( উত্তম নৈতিক চরিত্র ) হচ্ছে মানুষকে ক্ষমা করা , অর্থ সম্পদ দিয়ে (অভাবগ্রস্ত দ্বীনী) ভাইকে সাহায্য করা এবং মহান আল্লাহকে অনেক স্মরণ করা ।( দ্রঃ প্রাগুক্তঃ হাদীস নং ২ ) عَنهُ ( ع ) - لِجَرَّاح المَدَائِنِيِّ - أَلَا أُحَدِّثُکَ بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ؟ الصَّفحُ عَنِ النَّاسِ ، وَ مُؤَامسَاةُ الرَّجُلِ أَخَاهُ فِي مَالِهِ ، وَ ذِکرُ اللهِ کَثِيرَاً . ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( হুসনুল খুলক ) রিযক ও রুজি বৃদ্ধি করে ।( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৬ , হাদীস নং ৭৭ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : حُسنُ الخُلقِ يَزِيدُ فِي الرِّزقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিশ্চয়ই দয়া ও অনুগ্রহ ( البِرّ ) , শিষ্ঠাচার ও সদাচরণ ( সদ্ব্যবহার ও উত্তম নৈতিক চরিত্র ) দেশকে আবাদ ও উন্নত এবং মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৫ , হাদীস নং ৭৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ البِرَّ وَ حُسنَ الخُلقَ يَعمُرانِ الدِّيَارَ وَ يَزِيدَانِ فِي الأَعمَارِ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ রোদ যেমন শক্তিশালী ( পরাক্রমশালী ) ব্যক্তিকে ধরাশায়ী ( ক্লান্ত শ্রান্ত ) করে ঠিক তেমনি সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র পাপকে গলিয়ে দ্রবীভুত ( অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন ) করে দেয় । ( আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৭ ও ৯ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : الخُلقُ الحَسَنُ يَمِيثُ الخَطِيئَةَ کَمَا تَمِيثُ الشَّمسُ الجَلِيدُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও উত্তম চরিত্রের ( হুসনুল খুলক ) চেয়ে আর অধিক উপভোগ্য ও মিষ্টি মধুরকোন জীবন নেই । ( দ্রঃ ইলালুশ শারায়ে , পৃঃ ৫৬০ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : لَا عَيشَ أَهنَأُ مِن حُسنِ الخُلقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যেমন সিরকা মধুকে নষ্ট করে ঠিক তেমনি অসদাচরণ ও অসদ্ব্যবহারও( সূউল খুলক سُوءُ الخُلقِ ) কর্মকে বিনষ্ট করে দেয় । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ৩২১ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ سُوءَ الخُلقِ لَيُفسِدُ العَمَلَ کَمَا يُفسِدُ الخَلُّ العَسَلَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ হযরত লুকমান ( আঃ) নিজ পুত্রকে বলেনঃ হে বৎস্য , তোমাকে অস্থিরতা ও ব্যাকুলতা , অসদাচরণ ( অসংযত আচরণ ও ব্যবহার ) এবং অধৈর্য হওয়া থেকে সাবধান করছি । কারণ এ ধরণের স্বভাব ও চরিত্রের অধিকারী কখনও দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে না । তুমি তোমার নিজ কর্ম ও বিষয়াদির ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ধীরস্থির রাখবে ( অর্থাৎ অযথা ত্বরা করবে না ) ।স্বীয় ( দ্বীনী ) ভাইদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজেকে ধৈর্য্যশীল ও অভ্যস্ত করবে ( ধৈর্য্যের সাথে তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে তাদের খরচ যোগাবে আর এ ক্ষেত্র ধৈর্য্যাবলম্বন করা প্রয়োজন ) । আর সকল মানুষের সাথে স্বীয় ব্যবহার ও আচরণকে সুন্দর করবে । ( দ্রঃ কাসাসুল আম্বিয়া , পৃঃ ২৯০ , হাদীস নং ৭৮৮ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : قَالَ لُقمَانُ ( ع ) لِابنِهِ : يَا بُنَيَّ ، إِيَّاکَ وَ الضَّجَرَ وَ سُوءَ الخُلقِ وَ قِلَّةِ الصَّبرِ ، فَلَا يَستقِيمُ عَلَی هذِهِ الخِصَالِ صَاحِبٌ، وَ أَلزِم نَفسَکَ التُّؤَدَةَ فِي أُمُورِکَ ، وَ صّبِّر عَلَی مَؤُونَةِ الإِخوَانِ نَفسَکَ ، وَ حَسِّن مَعَ جَمِيعِ النَّاسِ خُلقَکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যে ব্যক্তির স্বভাব ও মেজাজ রুক্ষ ও অসংযত ( যে বদমেজাজী ) সে নিজের আত্মাকেই শাস্তি (যন্ত্রণা ও কষ্ট) দেয় । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৪ , হাদীস নং ৬৩ ) قَالَ الإِمامُ الصَّادِقُ ( ع ) : مَن سَاءَ خُلقُهُ عَذَّبَ نَفسَهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মাংস মাংসবৃদ্ধি করে ( অর্থাৎ মাংস খেলে দেহের মাংস ও পেশী বৃদ্ধি লাভ করে ) । তাই যে ব্যক্তি ( লাগাতার ) ৪০ দিন মাংস ( red meat বা লাল মাংস ) খাওয়া ত্যাগ করবে তার স্বভাব ( মেজাজ ) ও আচরণ রুক্ষ ও অসংযত হবে ( অর্থাৎ সে বদমেজাজী হয়ে যাবে )। ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ৬ , পৃঃ ৩০৯ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : اَللَّحمُ يُنبِتُ اللَّحمَ ، وَ مَن تَرَکَ اللَّحمَ أَربَعِينَ يَومَاً سَاءَ خُلقُهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ) বলেনঃ তোমাকে দুটো স্বভাব বা খাসলত সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি । আর ঐ দুটো খাসলত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ ১. অস্থিরতা ( ব্যাকুলতা ) এবং আলস্য । তাই যদি তুমি অস্থির ও ব্যাকুলচিত্ত ( অধৈর্য্যশীল ) হও তাহলে তুমি কোনো সত্য বিষয় বা হকের ( অধিকার ) ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করতে পারবে না । আর যদি তুমি অলস হও তাহলে কোনো অধিকার ( হক )ই আদায় করতে পারবে না । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭২ , পৃঃ ১৯২ , হাদীস নং ৮ ) قَالَ الإمَامُ الصَّادقُ ( ع ) : إِيَّاکَ وَ خَصلَتَينِ : الضَّجَرَ وَ الکَسَلَ ، فَإِنَّکَ إِن ضَجَرتَ لَم تَصبِر عَلَی حَقٍّ ، وَ إِن کَسَلتَ لَم تُؤَدِّ حَقَّاً . যখন ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ )কে ইয়াহইয়া ইবনে ইমরান আল-হালাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ " সবচেয়ে সুন্দর স্বভাব ও চারিত্রক বৈশিষ্ট্য কোনটি ? " তখন তিনি ( আঃ ) বললেনঃ ভীতিপ্রদান ও ভয়ের উদ্রেক করে না এমন গাম্ভীর্য্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব , শাস্তি ও প্রতিশোধগ্রহণের স্পৃহা ও মনোবৃত্তি পরিহার করে ক্ষমা করা এবং দুনিয়াবী ( পার্থিব ) পণ্য - সামগ্রী এবং বিষয় থেেক মুখ ফিরিয়ে পারলৌকিক বিষয়ে লিপ্ত ও মগ্ন হওয়া ( হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম চারিত্রিক স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য ) । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ২৪০ , হাদীস নং ৩৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) - لَمَّا سَأَلَهُ يَحيَی بنُ عِزرَانَ الحَلَبِيُّ عَن أَجمَلِ الخِصَالِ : وَقَارٌ بِلَا مَهَابَةٍ ، وَ سَمَاحٌ بِلَا طَلَبِ مّکَافَاةٍ و تَشَاغُلٍ بِغَيرِ مَتَاعِ الدُّنيَا . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ ধর্ম ( দ্বীন ) ও ধর্মীয় ( দ্বীনী ) ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্যই হচ্ছে তাকীয়াহ নীতি অবলম্বন । আর তাকীয়াহ নীতি মেনে চলার কারণে ভীত ( সন্ত্রস্ত ) ব্যক্তি যদি রক্ষা পায় এবং বেঁচে যায় তাহলে তা ( তাকীয়াহ ) হবে সবচেয়ে মহৎ ও ভদ্রজনোচিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণ । ( বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭৫ , পৃঃ ৪১৫ , হাদীস নং ৬৮ ) তাকীয়াহ ( التَّقِيَّةُ ) শত্রু বা শত্রুমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে সত্য ধর্ম ও সঠিক আকীদা-বিশ্বাস প্রকাশ করলে যদি তাদের পক্ষ থেকে জান-মালের ক্ষতি এবং মান-সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা থাকে তাহলে এমতাবস্থায় তা প্রকাশ না করে বরং শত্রুর ধর্মমত ও আকীদা-বিশ্বাস বাহ্যতঃ ব্যক্ত (প্রকাশ) এবং তাদের মত শরয়ী বিধি-বিধান পালন করে এবং অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও আস্থা গোপণ রেখে ক্ষতির হাত থেকে মুমিনদের জান-মাল ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করাই হচ্ছে তাকীয়াহ । আর তাকীয়াহ শব্দের আভিধানিক অর্থও হচ্ছে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা বা সংরক্ষণ ( التَّحَفُّظُ عَنِ الضَّرَرِ) এবং এ অর্থে ই হচ্ছে তাকওয়া ( تَقوَی ) , তুকাত ( تُقَاة ) এবং ইত্তিকা ( اِتِّقَاء ) । ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে উত্তম নৈতিক গুণাবলী পরষ্পর শর্তাধীন । ( অর্থাৎ প্রতিটি উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের শর্ত হচ্ছে অপর কোনো উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ; তাই সকল নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এগুলোর যাবতীয় শর্ত , অবস্থা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে । ) ( দ্রঃ শেখ তূসী প্রণীত আল- আমালী , পৃঃ ৩০১ , হাদীস নং ৫৯৭ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ خِصَالَ المَکَارِمِ بَعضُهَا مُقَيَّدٌ بِبَعضٍ . প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

হজরত ইমাম তাকি (আ.) এর অলৌকিক জ্ঞান- ১    জিলক্বদ মাসের শেষ দিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২৩০ হিজরির এই দিনে ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাহাদত বরণ করেছিলেন। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। পিতা ইমাম রেজা (আ.)'র শাহাদতের পর তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব পান এবং ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে পবিত্র মদীনায়। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর ততপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এই মহান ইমামের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম এবং সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" রাজা-বাদশাহদের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আহলে বাইতের ইমামগণের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ইসলাম ও এর শিক্ষাকে রক্ষা করা। আব্বাসীয় শাসক মামুন ও মুতাসিম ছিল ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র যুগের দুই বাদশাহ। ইমাম পবিত্র মদীনা ছাড়াও হজ্জ্বের সময় মক্কায় গমন উপলক্ষে সেখানে ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন এবং বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ আচার-আচরণের মাধ্যমে দিক-নিদের্শনা দিতেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে। শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধেও থাকতেন সোচ্চার। এইসব শাসক বিশ্বনবী (সা.)'র আদর্শ ও সুন্নাতকে ত্যাগ করেছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের প্রতিপালিত সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলা মোকাবেলা করে আহলে বাইত (আ.)'র আদর্শকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি আল্লাহর সবর্শক্তিমান ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদাত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ) এর ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়। ইমাম জাওয়াদ (আ) বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের সাথে এমন এমন তর্ক-বাহাসে অংশ নিতেন যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। একদিন আব্বাসীয় খলিফা মামুন ইমাম জাওয়াদ (আ) এর জ্ঞানের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্যে একটি মজলিসের আয়োজন করে। সেখানে তৎকালীন জ্ঞানী-গুণীজনদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐ মজলিসে তৎকালীন নামকরা পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম ইমামকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এইঃ যে ব্যক্তি হজ্জ্ব পালনের জন্যে এহরাম বেঁধেছে,সে যদি কোনো প্রাণী শিকার করে,তাহলে এর কী বিধান হবে? ইমাম জাওয়াদ (আ) এই প্রশ্নটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে মূল প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট ২২টি দিক তুলে ধরে উত্তরের উপসংহার টানেন। উত্তর পেয়ে উপস্থিত জ্ঞানীজনেরা অভিভূত হয়ে যান এবং ইমামের জ্ঞানগত অলৌকিক ক্ষমতার প্রশংসাও করলেন। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

**** সেই দুটি বস্তু কী ? ***** ------------------------------ আমাদের মুসলিম সমাজে একটি বিষয় ব্যাপক ভাবে প্র্রচলিত আছে যে, সেটা হলো :--- -- "কোরআন ও হাদিস মেনে চললেই হবে" আর কিছু প্রয়োজন নাই, তাতেই ইসলাম মানা হয়ে যাবে,ধর্ম পালন করা হয়ে যাবে ইত্যাদী। -- অথচ কোরআন ও হাদিস শরীফের ভিতরে যাহাদেরকে অনুস্বরণ আনুগত্য করা ও প্রাণের চাইতে বেশী ভালবাসার জন্য আদেশ দেওয়া আছে। তাহা বলা হয়না। -- তাহলে সেই ফরজ আদেশ বা সুন্নাহটি কাহাকে বলে ? অবশ্যই তা জানা প্রয়োজন আছে। -- আসল সত্যটি কী ক্ষমতার স্বার্থে মানুষের কাছে গোপন রেখে তৎকালিন মোনাফেকগণ মুসলমানের মাঝে বাতিল ফেরকা তৈরীর সূত্রপাত করেছিল এখনো অব্যাহত আছে। -- চিন্তাশীলদের জন্য হাদিস শরীফ দুই খানি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :--- ------------------------------ 'রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন-- ﺍﻧﻲ ﺗﺎﺭﻙ ﻓﻴﻜﻢ ﺍﻟﺜﻘﺎﻟﻴﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﻋﺘﺮﻃﻲ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ অর্থঃ "আমি তোমাদের নিকটে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি প্রথম হচ্ছে-- আল্লাহর কিতাব, এবং দ্বিতীয় হচ্ছে-আহলে বাইত।" -- ( নবী করিম (সা:)'র পরিবারের সদস্যগণ।" অর্থাৎ-- পাক পাঞ্জাতনের চার জন সদস্য যথা-- হযরত মওলা আলী (আ:), মা ফাতেমা (আ:), ইমাম হাসান (আ:), ইমাম হোসাইন (আ:)। -- সূত্রঃ-- (মুসলিম ৭/১২২, হামিদিয়া লাইব্রেরী বুখারী ৫/২৮০--২৮২।তিরমিযী ৬ষ্ঠ খন্ড, মুসতাদরাক আল হাকীম ৩/১০৯। শিবলি নুমানীর সিরাতুন নাবী ২য় খন্ড, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৪--১৭। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড । আমি কেন তাবলীগ করি--২৮ নং পৃঃ) -- ★★★★★ প্রশ্ন :- কিস্তিয়ে নূহ্ (আ:) কী ? অর্থাৎ--নূহ (আ:)'র নৌকা কোনটি ? -- উত্তরঃ--আহলে বাইয়াত। (আলে মোহাম্মদ (সা:)। -- " নবী (সাঃ)-এর প্রিয় সাহাবি হযরত আবুজার আল গিফারী (রাঃ) একদা পবিত্র কা'বার দরজায় দাঁড়িয়ে উপস্থিত সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে-- " হে লোক সকল । আশা করি তোমরা আমাকে ভাল করেই চিন এবং জান । আর তোমাদের মাঝে কেউ যদি এমন থেকে থাকে, যারা আমার পরিচয় জানো না,তাঁদের কাছে আমার পরিচয় হচ্ছে, আমি আবুজার আল গিফারী । রাসুল (সাঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর । আর এই ঘনিষ্ঠ সাহচার্যের দরুন, আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে- -- "আমার আহলে বাইত এর সদস্যগণ মানুষের জন্য ( মানব জাতীর জন্য ) তেমনি আশ্রয় ও নাজাতের কিস্তি যেমন, আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি মহা প্রলয়ের সময় তার কওমের আশ্রয় ও নাজাতের প্রতীক ( বা মাধ্যম) ছিল । অর্থাৎ, যাহারাই হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তিতে উঠেছিল, তারাই মহাপ্রলয় থেকে নাজাত পেয়েছিল, -- তেমনি এই উম্মতের যারা আমার আহলে বাইতকে ভালোবাসবে,অনুসরণ করবে বা তাদের দলভুক্ত থাকবে তারাই নাজাত পাবে ও যারা অনুসরণ করবে না তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।" -- " সুত্রঃ-- কানজুল উম্মাল খঃ-৬,পৃঃ-২৫৬। মুসনাদে হাম্বাল খঃ-২-পৃঃ-৭৮৬, তাফসীরে কাবির-- খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৭, মেশকাত--খঃ-১১, হাঃ-১৬৭, -- মুস্তাদারাকে হাকেম-- খঃ-৩, পৃঃ-১৫১, খঃ-২, পৃঃ-৩৪৩, তারিখে খোলফা পৃঃ-৩০৭, সাওয়ায়েকে মোহরেকা পৃঃ-১৫০। -- "সংক্ষিপ্ত আলোচনা" আহলে বাইতের প্রধান হলেন মাওলা আলী (আ:) । যিঁনি মুমিন ও মুনাফিক চিনার বা স্বনাক্ত করার মানদন্ড । -- মাওলা আলী (আ:) কে যে ভালবাসে সে মুমিন । যে বিরুধীতা করে সে মুনাফিক। ( হাদিস) -- মাওলা আলী (আ:) হতে ত্বরীকার ছিলছিলা শুরু হয়েছে যা হাত বাই হাত সিনা ব সিনা হক্কানী পীর-মুর্শীদ ওলী-আওলীয়াগণের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। বেলায়েতি নূর বা জ্ঞান ছাড়া কেহ কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানি বা আলেম হতে পারবে না। -- শরীয়তের ভাষায় তিনিই আলেম যার জাহেরী ও বাতেনী এলেম আছে । -- রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন যে -- " আমি জ্ঞানের শহর বা ভান্ডার, এই শহরে প্রবেশের (এক মাত্র) দরওজা হচ্ছে মওলা আলী (আ:)।" ( হাদিস) -- কেবল আক্ষরিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গ কখনোই কোরআনের জ্ঞানে আলেম হতে পারবে না। এটাই শরীয়তের বিধান। -- অথচ ইয়াজিদি উমাইয়া বংশের শাসন আমলে প্রতিষ্টিত আহলে বাইয়াত বিরুধী শিক্ষা ব্যাবস্থার যাতাকলে প্রকৃত তাছাউফ শিক্ষা ও আহলে বাইয়াত এর ভালবাসার আদর্শ ধামাচাপা পরে আছে। -- সত্য স্বন্ধানীদের তাহাই আবিষ্কার করে আমল করতে হয় প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার