পোস্টগুলি

‘হাদি’ মুয়াবিয়া শরিয়াতের উত্তরাধিকারী নিয়ম পাল্টায় ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ও আন নিহায়া’ খণ্ড ৮ পাতা ১৪১ এ লিখেছেঃ “সুন্না হচ্ছে কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার হতে পারবে না, আর না মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হতে পারবে, যিনি প্রথম প্রথম এটা চালূ করেন যে মুসলিম কাফিরের থেকে উত্তরাধিকার পাবে, কিন্তু কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার পাবে না তিনি হলেন মুয়াবিয়া, বানী উমায়া একই নিয়ম চালু রেখেছিল, উমার বিন আব্দুল আযিযের সময় তিনি সুন্নাকে ফিরিয়ে আনেন, কিন্তু হিশাম আবার মুয়াবিয়া ও বানী উমাইয়াদের নিয়মে ফিরে যান”। এখন দেখুন সাহিহ বুখারি এর হাদিস খণ্ড ৮ হাদিস নং ৭৫৬ “রসুল আল্লাহ সাঃ বলেছেন ‘একজন মুসলিম কাফেরের উত্তরাধিকারি হতে পারবে না, আর না একজন কাফের মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারবে”। প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা হাসীনে কাবা ইয়া রওনকে কাবা মাওলা হায়দার – মারহাবা মারহাবা সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা ইতিহাস চমকান বিরল তারিফে বিলাদত প্রকাশ ক্বাবা শরীফে যীনাতুল আরেফিন – মারহাবা প্রথম দীদারে নূরে হাবীবী আদবী তাবাসসুমে দেন সালামী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালনে – মারহাবা ইমামে আউয়াল মিন আলে রছূল ধন্য লাভে তিনি প্রিতমা বতুল বাবুল ইলম মাওলা – মারহাবা যাহির বাতিনী ইলমী গৌরব ছড়ান জান্নাতী ফুলদ্বয়ের সৌরভ শাফীউল উম্মাহ আক্বা মারহাবা সীমাহীন বিরত্বে উচ্চে যুলফিকার তাগুত মিটায়ে করেন উদ্ধার উম্মাহ্’র রাহগীর আসাদুল্লাহ মারহাবা

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চেনে না প্রাণের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে পর্ব শেষ গাদীরে খুম নামক স্থানে আয়াতগুলো নাজিল হওয়া মাত্র নবী করিম (স.) থমকে দাড়িয়ে গেলেন এবং যারা বিভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিলেন সবাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোক পাঠালেন। সব লোক জমায়েত হওয়ার পর হামদ ও সালাত সম্পন্ন করলেন। উটের উপর যে গদি ছিলো তার উপর আরো গদি স্থাপন করেলেন যেনো উচু হয়। এরপর শিষ্যবর্গকে বললেন- মুসলমানগন তোমরা কি জনো না যে আমি মোমিনদের নিকট প্রত্যেকের নিজ নিজ আত্মা অপেক্ষাও তোমাদের হিতৈষী বন্ধু। শিষ্যগন বললেন- হে আল্লাহর হাবিব, আমাদের আত্মা অপেক্ষা অধিক প্রিয় সুহৃদ। অতঃপর তিনি তাদের বললেন- হে মুসলমানগন আল্লাহ আমাকে আহ্বান করেছেন, আমিও তার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তোমরা জানিও যে আমি তোমাদের মধ্যে দুটো সমপরিমান ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি এ দুটোকে আকড়ে ধরে থাকো তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবেনা। যদি একটিকে ছাড়ো তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার আহলে বায়াত (আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন) এ দুটো কখনোই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবেনা যতক্ষন না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখো তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরন করবে এটা আমি দেখবো। (সিরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী নোমানী/বোখারী/মুসলিম/তিরমিজি মসনদে হাম্বল/তফসিরে কবির/হিলায়তুল আউলিয়া (১ম খন্ড) তফসিরে দোররে মনসুর/উসদুল গাবা। মোল্লাগন এই গুরুত্বপূনূ হাদিসটিকে বলে থাকেন এভাবে- একটি আল্লাহর কিতাব আরেকটি রাসুলের হাদিস। তারা তারা রাসুলের বংশধর তথা পাক পাঞ্জাতন বলতে চান না। রাসুল পাক আরো বললেন- তোমরা জেনে রাখবে খোদাতায়ালা আমার প্রভু আর আমি বিশ্ববাসীর প্রভু। পরে তিনি আলীর হস্ত ধারন করে বলতে লাগলেন- মান কুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলাউন মাওলাহু। আমি যার মওলা আলীও তার মওলা। হে আল্লাহ যে ব্যক্তি তাকে বন্ধু বানায় তুমিও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো এবং যে ব্যক্তি আলীর সাথে শক্রতা করে তুমিও তার সঙ্গে শত্রুতা করো। অতপর উমর (রা.) আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন ও অভিনন্দন জানালেন এবং বললেন- স্বাগতম, স্বাগতম হে আবু তালিব সন্তান, প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মওলা হিসেবে অভিনন্দিত হয়ে তুমি সকাল করবে, সন্ধ্যা করবে। (মেশতাত ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৫৪৮) ফজলুল করিম/সুসনদে আহম্মদ/তফসীরে দুররে মনসুর/জালাল উদ্দিন সিউতি ২য় খন্ড মিসর/মুসলিম/মোস্তাদরাক হাকিম। এক নরুল ইসলাম ফারুকী শহীদ হয়েছেন আরো লক্ষ লক্ষ ফারুকী মওজুদ আছে এবং থাকবে ইনশা আল্লাহ। ক্ষমতার অপব্যাবহার করে আজ এত বড় অন্যায় কাজ হাতে নিচ্ছো ইজিদি সৌদি সরকার এর পরিনাম ভয়াবহ যেনো রেখো

নিভে আসছে জীবন প্রদীপ… আর বুঝি হলোনা বেশিদিন এ ধরায় থাকা…! খুব বেশি সময় হয়তো চাহেনা মোরে নিঠুর এ ধরা…!! এ দেহ ভুবন নিস্তেজ হয়ে আসছে…হারিয়ে মনোবল…। নিষ্ঠুর এ ধরার নিষ্ঠুর সব মানুষ গুলোর নীরব ঘাত-প্রতিঘাতে…! আর কতো করবো অভিনয় খুব বেশি ভালো থাকার…?? ভেবেছিলাম প্রদীপ হয়ে দীপ্তি ছড়াবো…সৃজন করবো স্রস্টা হয়ে… মিশে রবো প্রকৃতিতে সৃষ্টির উচ্ছ্বাসে…। তা আর বুঝি তেমন হবেনা…যেমন একসময় চেয়েছিলাম। জ্বলেই গেলাম দিবা নিশি…দিবসে রবি নিশিতে হয়ে শশী..! দীপ্ততায় কতটুকু ছড়ালো তা হলোনা হিসেব নিকেশ…। এই বুঝি ফুরালো বেলা খেলা বুঝি হলো মোর শেষ…

হযরত আবু তালিব আঃ এয় সাম্প্রতিক কিছু তথ্য ইসলামে বিভ্রান্তির অন্ত নেই। যতই দিন যাচ্ছে এর শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটছে। তেমনি একটি বিভ্রান্তি আছে আমাদের সমাজের একটি অংশের ভিতর রাসূল (সাঃ) এর সম্মানিত চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) সম্পর্কে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধবাদীরা বিশেষ করে উমাইয়া শাসকদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অনিবার্য ফল এই বিষয়টি। কুচক্রী মহল অতি সুক্ষ্মভাবে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর বিরুদ্ধে নানা প্রকার বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং নিজেদের মনগড়া হাদীস রচনা করে তাতে ইসলামের লেবাস পরিধান করে ব্যাপকভাবে। যা আজ বিভিন্ন হাদীস হিসাবে পরিচিত দেখতে পাই। মুসলমানরা আজ তারই দুঃখজনক শিকার। যারা বলেন হযরত আবু তালিব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন নাই, তাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের সংজ্ঞা কি অথবা কাদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় তারা বিশ্বাসী তা তলিয়ে দেখা দরকার। খতিয়ে দেখা দরকার তাদের গুরুদের ইতিহাস। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, হযরত আবু তালিব তাঁর আশি বছরের জীবনের এক মুহূর্তের জন্যও মুর্তি পূজায় অংশ নেননি। কিংবা তুচ্ছতম কোন মন্দ বা গর্হিত কাজের প্রতি তাঁর মৌন সমর্থন বা অংশগ্রহণ এর একটি উদাহরণ কেউ পেশ করতে পারবে না। বরং তাঁর জীবনেতিহাস হচ্ছে মানব কল্যাণে আত্মনিবেদিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ভদ্রতা, নম্রতা, পরোপকারিতা, অতিথিপরায়ণতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলী তাঁর মধ্যে ছিল পুর্বপুরুষদের ন্যায় বিদ্যমান। তাঁর চারিত্রিক সদগুণাবলী, দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয়, বলিষ্ঠ মনোবল, অনন্য যোগ্যতা ইত্যাদি গুণ বৈশিষ্ট্যই তাঁকে সম্মানের সু উচ্চাসনে সমাসীন রেখেছিল। পক্ষান্তরে, মহানবী (সাঃ) আবির্ভূত হওয়ার পূর্বেও তিনি ছিলেন তৌহিদবাদের বিশ্বাসী একজন খাঁটি মু’মিন মুসলমান এবং পিতা আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর পর তিনি খানায়ে কা’বার মুতাওয়াল্লী বা তত্ত্বাবধায়ক মনোনিত হন। এ জন্যই মক্কাবাসীদের নিকট তিনি ছিলেন সবচাইতে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। হযরত আবুতালিব (রাঃ) এর স্ত্রী অর্থাৎ হযরত আলী (আঃ) এর মাতার নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ)। হযরত আবু তালিব (রাঃ) ধার্মিক লোক ছিলেন এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ধর্মের অনুসারী একেশ্বরবাদী ছিলেন। তিনি মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে কখনও বিশ্বাস করতেন না। (কাশফ আল জুম্মাহ, খঃ ১, পৃঃ ৬০) তিনি বিবাহের জন্য ধার্মিক মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। আবু তালিব তার চাচা আসাদ এর বাড়ী গিয়ে তার কন্যা ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চাচা প্রস্তাবে রাজী হন। হযরত আবু তালিব এবং ফাতিমা ছিলেন হাশেমী গোত্রের প্রথম যুগল যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ফাতিমাও স্বামীর ন্যায় একেশ্বরবাদী। মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে তিনি কখনও বিশ্বাস করতেন না। (আল ফুসুল আল মহিম্মাহ, পৃঃ ১৭২) এই বিবাহে যে শিগা পড়া হয় তা ছিল তাওহীদ বা স্রষ্টার একত্ববাদের বিস্তারিত স্বীকৃতি। যার বিস্তারিত উল্লেখ আছে বিহারুল আনোয়ার এর ৩৫ খণ্ড পৃঃ ৯৮তে। তাঁর ছেলেমেয়েরা হল হযরত আলী (আঃ), হযরত জাফর (রাঃ), হযরত আকিল (রাঃ), জুমানাহ এবং ফাখতাহ (উম্মে হানী, মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী)। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ২২, পৃঃ ২৬) ফাতিমা বিনতে আসাদ আলী (আঃ) ইবনে আবিতালিব এর জন্ম কাবার অভ্যন্তরেই দিয়েছিলেন। (আল মুসতাদারক, খঃ ৩, পৃঃ ৪৮৩) ফাতিমা বিনতে আসাদ ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী একাদশতম ব্যক্তি। আবার হযরত খাদিজা (রাঃ) এর পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। (ইবনে আবী আল হাদিদ,শারহ নাহজুল বালাগাহ, খঃ ১ পৃঃ ১৪) হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর এক পুত্র হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) মু’তার যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসাবে অসীম বীরত্বের দৃষ্টান্ট স্থাপন করে শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর শাহাদাতের পর মহানবী (সাঃ) দীর্ঘদিন ধরে শোকাভিভূত ও বিমর্য ছিলেন। আর তাঁর দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। অবশেষে হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ)কে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহপাক জাফরকে তাঁর দু’টো কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্ত রাঙ্গা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এজন্য তাঁকে বলা হয় “জাফর-এ-তৈয়ার” বা দু’পাখার অধিকারী জাফর। ফাতিমা বিনতে আসাদ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বেঁচে ছিলেন। হিজরতের তৃতীয় বছরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি ইনতেকাল করলে রাসুল (সাঃ) তাঁর নিজের একটি কাপড় দ্বারা ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) এর শরীর আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিজে কবর খনন করে তাকে শায়িত করলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন। (আল ফুসুল আল মুহিম্মাহ, পৃঃ ১৭৭)। হযরত মহানবী (সাঃ) এর বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর অভিভাবক ও পিতামহ হযরত আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করেন। দাদার মৃত্যুবরণ মহানবী (সাঃ) এর কোমল আত্মার ওপর এতটা গভীর দাগ কেটেছিল যে, দাদা আব্দুল মুত্তালিব যেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিন তিনি সমাধিস্থলে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা পর্যন্ত অশ্রুপাত করেছিলেন এবং তিনি কখনই পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবকে ভুলেননি। (তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭) দাদার মৃত্যুর পর তাঁর চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হযরত আবু তালিব ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর পিতা হযরত আব্দুল্লাহর সহোদর। আবদুল্লাহ ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে। আব্দুল্লাহ, যুবায়র ও আবু তালিব এই তিনজন ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আমর এর গর্ভজাত সন্তান। হযরত হামযা (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ) অন্য স্ত্রীর সন্তান। (সীরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, ইফাবা, প্রথম খঃ পৃঃ ১৫১) হযরত আবু তালিব (রাঃ) দানশীল, পরোপকার ও জনহিতকর কাজে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ কারণেই হযরত আব্দুল মুত্তালিব তাঁর অনাথ নাতির লালন পালন করার জন্য আবু তালিব (রাঃ)কে মনোনীত করেছিলেন। এ সম্পর্কে ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) বলেন, “আবু তালিব মুহাম্মাদ (সাঃ)কে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসলেন। আমি তার সেবায় আত্মনিয়োগ করলাম এবং সে আমাকে ‘মা’ বলে ডাকত।” (বিহার আল আনওয়ার,খঃ ৩৫, পৃঃ ৮৩) দাদার ন্যায় মহানবী (সাঃ) সর্বদা চাচা আবু তালিব এর সাথে থাকতেন। একবার চাচা আবু তালিব কুরাইশদের শামদেশে (সিরিয়া) বাৎসরিক বাণিজ্যিক সফরে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মহানবী (সাঃ)কে মক্কায় রেখে যাওয়ার এবং কতিপয় ব্যক্তিকে তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কাফেলা রওনার পূর্বমুহূর্তে মহানবী (সাঃ) এর চোখ অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে গেল এবং চাচা আবু তালিব এর কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও এ বিচ্ছেদ তাঁর কাছে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে হলো। মহানবী (সাঃ) এর দুঃখভারাক্রান্ত মুখমণ্ডল চাচা আবু তালিব এর অন্তরে আবেগ অনুভূতির প্রলয়ঙ্কর তুফানের সৃষ্টি করল। তিনি অবশেষে কষ্ট সংবরণ করে হলেও মহানবী (সাঃ) কে নিজের সাথে নিলেন। এই সময় মহানবী (সাঃ) এর বয়স ছিল বার বছর। (দীওয়ানে আবু তালিব, পৃঃ ৩৩) কুরাইশ নেতৃবর্গের একটি উচ্চ পর্যায়ের পরিষদবর্গ এক অঙ্গীকার পত্র বা চুক্তিনামা স্বাক্ষর করে তা কাবাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখেন এবং মহানবী (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে অর্থনৈতিক, ক্রয় বিক্রয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বৈবাহিকসহ সকল সম্পর্ক বয়কটের ঘোষণা করেন। মহানবী (সাঃ) এর একমাত্র সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক তাঁর পিতৃব্য হযরত আবু তালিব (রাঃ) তাঁর সকল আত্মীয়, স্বজন ও বনি হাশিম বংশের প্রতি মহানবী (সাঃ)কে সাহায্য করার আহ্বান জানান। তিনি বনি হাশিমের সবাইকে পবিত্র মক্কা নগরীর বাইরে একটি পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে তাঁরা সবাই সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই উপত্যকাটি ‘শোবে আবুতালিব’ বা আবু তালিবের উপত্যকা নামে প্রসিদ্ধ। সেখানে তাঁদের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে, অনাহারে ও অর্ধাহারে। এমনকি অনেক সময় পাহাড়ী গাছ গাছড়ার ফলমূল, পত্র ও পল্লব ইত্যাদি আহার করে জীবন ধারণ করতে হয়েছে, তাও বাধামুক্ত ছিলনা। যিনি ছিলেন আরবের অবিসংবাদিত নেতা, খানায়ে কা’বার কর্তৃত্ব ছিল যাঁর হাতে; সব হারিয়ে সমাজচ্যুত হলেন ইসলামের জন্য। মহানবী (সাঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) ও হযরত খাদিজা (রাঃ) অবরোধ চলাকালীন সময়ে তাঁদের সকল সম্পদ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। এই বয়কট সময়কালীন সময়ে কোরাইশদের কিছু ব্যক্তি বনি হাশিম বংশের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে অতিগোপনে শোবে আবুতালিবে অবস্থানকারী মুসলমানদেরকে খাদ্যসহ কিনা কাটার সহযোগিতা করতেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইতিহাস সাক্ষী এই সময়ে ‘শোবে আবুতালিব’ এ অবস্থানকারী মুসলমানদের জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর (রাঃ) এর কোন ভূমিকা ছিল বলে জানা যায় না। তখন তাদের কি ভূমিকা ছিল? কোথায় তাদের অবস্থান ছিল এবং অনাহার মুসলমানদের এই অসহায় ও দূর্যোগমুহূর্তে কতিপয় কোরাইশদের ন্যায় খাদ্য বা অন্যকোন সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কিনা? ইতিহাসে তাও জানা যায় না। এই সময়ে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের ভূমিকা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) এর নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসের মাঝামাঝিতে এ অবরোধের অবসান হয়। এ অবরোধ পুরো তিন বছর স্থায়ী হয়েছিলো। হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালঃ হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে, আশি বছর বয়সে হযরত আবু তালিব (রা) মক্কা নগরীতে ইনতেকাল করেন। এই দিন মহানবী (সাঃ) তাঁর একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিরক্ষা বিধায়ককে হারান। যিনি তাঁকে ৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকতা দান ও রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পতঙ্গের মতো তাঁর অস্তিত্বে প্রদীপের চারপাশে ঘুরেছে। মহানবী (সাঃ) এর আয় উপার্জনের সক্ষম হওয়া পর্যন্ত তিনি মহানবী (সাঃ) এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেছেন এবং তাঁকে তাঁর নিজ সন্তানের উপরও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। রাসুল (সাঃ) এবং হযরত আলী (আঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর মৃতদেহের গোসল দান, কাফন পরানো, জানাযার নামায পড়ানো, দাফন করা ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে ইসলামী নিয়মে সুসম্পন্ন করেছেন। দাফন কাজ সমাধা করে মহানবী (সাঃ) মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন তা হলো, “হে আল্লাহ! আমার চাচা আবু তালিবের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। যিনি আমাকে লালন পালন করেছেন। শক্রর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সর্বদা আমাকে ছায়াদান করেছেন। এখন আর আমার এমন সাহায্যকারী অভিভাবক নেই। এখন যার যেমন ইচ্ছা আমার সাথে আচরণ করবে। হে আল্লাহ! তোমার কাছে জানাই আমার দূর্বলতা ও অক্ষমতার ফরিয়াদ। আমার প্রতি বর্ষন করো তোমার করুনা কৃপা।” (তারীখুল খামীস, পৃঃ ৩০১, সীরাতুল হালবিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৭) চাচা আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালের পর থেকে প্রায়ই মহানবী (সাঃ) কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা যেতো। প্রায়শঃই তিনি বলতেন, “যত দিন আমার চাচা আবু তালিব জীবিত ছিলেন তত দিন কেউ আমাকে উত্ত্যক্ত করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যু আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, প্রঃ ১২ ইঃ ফাঃ ঢাকা) মৃত্যুকালে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর অসিয়ত ছিল, “হে আমার আত্মীয়স্বজনগণ! মুহম্মদের দলের বন্ধু ও সমর্থক হয়ে যাও। মহান আল্লাহর শপথ, যে কেউ তাঁর অনুসরণ করবে, তাঁর পথে চলবে, সে সুপথপ্রাপ্ত ও সৌভাগ্যমন্ডিত হবে। আমার জীবন যদি অবশিষ্ট থাকত এবং আমার মৃত্যু যদি পিছিয়ে যেত তাহলে আমি তাঁর নিকট থেকে সব ধরনের বিপদাপদ ও তিক্ত ঘটনা প্রতিহত করতাম এবং তাঁকে রক্ষা করতাম।” (সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯০, তারিখে খামীস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯) “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও। কারণ তুমি সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী, তোমার দলই অত্যন্ত সম্মানিত দল। তুমি সম্মানিত পিতার সন্তান। মহান আল্লাহর শপথ, যখন তোমাকে কোন কন্ঠ কষ্ট দেবে তখন অত্যন্ত ধারালো কন্ঠসমূহ তোমার পক্ষাবলম্বন করে সেই কন্ঠকেই আঘাতে জর্জরিত করে দেবে এবং ধারালো তরবারিগুলো তাদেরকে বধ করবে। মহান আল্লাহর শপথ, পশুপালকের কাছে পশুগুলো যেভাবে নত হয় ঠিক সেভাবে আরবগণ তোমার কাছে নতজানু হবে ও বশ্যতা স্বীকার করবে।” (সাইয়্যেদ ইবনে তাউস প্রণীত, আত তারায়েফ, পৃঃ ৮৫)#আল-হাসানাইন প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ) সুরা নিসা,আয়াত# ৬৯ “ এবং যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে,সুতরাং তারা সেই লোকদের সাথী হবে নবীগন,সত্যবাদীগন,শহীদ্গন এবং সতকর্মপরায়নদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাদের নিয়ামত দান করেছেন।আর তারা কতই না উত্তম সাথী!(১)” মুলঃমাওলানা ফরমান আলীর উর্দু তাফসীর অনুবাদঃ মাওলানা শেখ সাবের রেজা সম্পাদনা ও পুনর্লিখনঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনোয়ারুল কবির আরিফ(ষ্টুডেন্ট অফ পি এইচ ডি,ইরান) প্রকাশকঃঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে,নুরুস সাকলায়েন জনকল্যান সংস্থা,বেগম বাজার,ঢাকা। সঠিক তাফসীর(১)ঃ এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,নবীগন অর্থে মহানবী(সাঃ),সত্যবাদীগন অর্থে হজরত আলী(আঃ),শহীদগন বলতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন(আঃ),সতকর্ম্পরায়ন অর্থে অবশিষ্ট ইমামগণকে বুঝান হয়েছে।আর এটা অনুমতির অনেক নিকটবর্তীও বটে।কেননা,’নাবিয়্যিন’এর উদ্দেশ্য যে মহানবী(সাঃ) তা ষ্পষ্ট,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।‘সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ)।কেননা ‘সিদ্দিক’ শব্দের অর্থ যদি সত্যায়নকারী ধরা হয় তবে ইতিহাসসমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে,রাসুল(সাঃ)এর নবুওতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী তিনিই।আর যদি সত্যবাদী অর্থ গ্রহন করা হয় তবুও তিনি ছাড়া অপর কেউ তাঁর দাবীদার হতে পারে না।কারন,অন্য কোন সাহাবীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট ছিল না।কারন,তারা ২৮ থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত মুর্তির সামনে মাথা নত করেছেন ও শিরক করেছেন।পক্ষান্তরে হজরত আলী(আঃ) কখনও মুর্তির সামনে মাথা নত করেননি এবং সবসময় আল্লাহর একত্বের ঘোষনায় সত্যবাদী ছিলেন।আর ইমাম ২ ভাই ( ইমাম হসান ও ইমাম হুসাইন)আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াও ষ্পষ্ট এবং ‘সালেহীন’ বলতে অবশিষ্ট ইমামগন উদ্দেশ্য হওয়াতে কোন মুসলমান সন্দেহ করতে পারে না।কেননা সালেহীন বলতে সৎ কর্মের ক্ষেত্রে পুর্নতম ব্যাক্তিদেরকে বুঝান হয়।আর ে বিষয়টি ষ্পষ্ট যে,প্রতি যুগে নবী বংশের পবিত্র ইমামগন সতকর্ম,পরহেজগারিতা ও অন্য বৈশিষ্টে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ট ছিলেন। প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ মোঃ আবু তুরাব বিধি তুমার ধর্ম কি সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টি কর্তা মোঃ জাহিদ হুসাইন

রাসুল (সা:) ইন্তেকালের পরপরই রাসুল (সা:) এর রেখে যাওয়া শূন্য আসনে খলীফা হয়ে টুপ করে বসে পড়লেন হযরত আবু বকর । উল্লেখ্য যে , রাসুল (সা:) ইন্তেকালের সংবাদ জানা সত্বেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও হযরত আবু বকর , হযরত ওমর , হযরত ওসমান সহ বহু সংখ্যক নামকরা মোহাজের , আনসার সাহাবী রাসুল (সা:) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহন করে নাই । ওনারা তখন বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ বাটোয়ারা করে খলীফা নির্বাচন করলেন । এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে , হযরত আবু বকর প্রথম খলীফা হলেন - এই ঘটনাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:)এর অনুমোদন আছে কি ? এই বিষয়টির স্বপক্ষে সহীহ সিত্তাহ হাদিস , বিখ্যাত কোন তাফসীর গ্রন্থ থেকে কোন রেফারেন্স দেখাতে পারবেন কি ? যে কোন জাল বানোয়াট হাদিস হলেও চলবে !

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ইসলামের চরম শত্রু আবু লাহাব ও উতবা প্রশ্ন: আবু লাহাব কে ? উত্তর: আবু লাহাব ছিল রাসূল (সা)-এর চাচা এবং মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় নেতা। প্রশ্ন: আবু লাহাবের স্ত্রী কে ছিল ? উত্তর: তার স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আওরায়া বিনতে হারব। তার উপনাম ছিল উম্মে জামীল। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর সাথে তার ব্যবহার কিরুপ ছিলো ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর চাচা হওয়া সত্ত্বেও সে ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু। মুসলিমদের উপর নির্যাতন তীব্রতর করার প্রস্তাব সেই রেখেছিলো। প্রশ্ন: তার স্ত্রী উম্মে জামীল (রা) রাসূল (সা)-এর সাথে কেমন আচরণ করতো ? উত্তর: স্বামীর মতো সেও রাসূল (সা) এর সাথে ঘৃণা ও শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করতো। রাসূল (সা)-কে কষ্ট দেয়ার জন্য সে রাসূল (সা)-এর বাড়ির সামনে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা ও কাটা বিছিয়ে রাখতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা) সম্পর্কে মানুষের কাছে আবু লাহাব কী বলত ? উত্তর: ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন আবু লাহাব প্রকাশ্যে বলত, “ হে মানুষেরা! তোমরা তার কথা শুনবে না কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী ও ধর্মত্যাগী”। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে আবু লাহাব কী করল? উত্তর: রাসূল (সা)কে অপমান করার জন্য সে কৌশল বের করল। সে রাসূল (সা)-কে পাথর ছুড়ে মারল, তার দুই ছেলে উতবা ও উতাইবাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে তালাক প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি রাসূল (সা)-এর দ্বিতীয় ছেলে ইন্তিকালে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল এবং রাসূল (সা)-কে নির্ব্বংশ বলে বেড়াতে লাগলো। প্রশ্ন: তার ছেলে উতাইবা রাসূল (সা)-এর সাথে কীরূপ ব্যবহা করেছিল ? উত্তর: একদিন উতাইবা রাসূল (সা)-এর কাছে এগিয়ে আসলো এবং কর্কশভাবে চিত্কার করে বলতে লাগলো, “আমি আপনার শিক্ষায় বিশ্বাসী নই। এরপর সে রাসূল (সা)-এর উপর হিংস্র হাত উঠাল এবং তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো। কিন্তু রাসূল (সা)-এর পবিত্র মুখে থুথু পড়েনি। তার এমন আচরণে রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! তোমার কুকুরদের মধ্য থেকে একটি কুকুর তার উপর নাযিল কর”। প্রশ্ন: উতাইবার কী পরিণতি হয়েছিলো? উত্তর: একবার উতাইবা তার দেশের কিছু লোকের সাথে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং ‘যারাকা’ নামাক স্থানে যাত্রা বিরতি করল। হঠাত একটি সিংগ তাদের কাছে এসে তাদের মাঝখান থেকে উতাইবাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল এবং তার মাথা ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়েছিল। প্রশ্ন: উকবা বিন আবি মুয়িত কে? উত্তর : সেও মক্কার একজন নেতা যে রাসূল (সা) ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতো। প্রশ্ন: সে রাসূল (সা)-এর সাথে কী আচরণ করতো ? উত্তর: সে উটনীর নাড়ি-ভূড়ির ময়লা-আবর্জনা এনে রাসূল (সা)-এর উপর রাখত। এ নিকৃষ্ট কাজে কাফিরদের মধ্যে হাসির বন্যা বয়ে যেত। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর পিঠ থেকে নোংরা আবর্জনাগুলো কে পরিস্কার করতো ? উত্তর : ফাতিমা (রা) এসে তার বাবার পিঠ থেকে এ নোংরা আবর্জনাগুলো পরিস্কার করতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এরপর কী করতেন ? উত্তর: তিনি উকবার উপর আল্লাহর গযবের বা আযাবের প্রার্থনা করতেন। প্রশ্ন: সালাত পড়ার সময় রাসূল (সা)-এর সাতে কী করতো ? উত্তর: একবার রাসূল (সা) সালাত পড়ছিলেন এমন সময় উকবা এসে তার গলায় পা রাখল এবং তার চোখগুলো সামনের দিকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ধরে রাখল। প্রশ্ন: পরবর্তীতে রাসূল (সা) যখন সালাতের সেজদায় যেতেন তখন উকবা তার মাথায় কী নিক্ষেপ করতো ? উত্তর: সে ভেড়ার নাড়ি-ভূড়ি এনে রাসূল (সা)-এর মাথায় নিক্ষেপ করত। প্রশ্ন: কে রাসূল (সা)-এর মাথা থেকে এগুলো পরিষ্কার করতেন ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর মেয়ে ফাতিমা (রা)। প্রশ্ন: উকবার কি রাসূল (সা)-কে মারার চেষ্টা করেছিলো ? উত্তর : হ্যাঁ, সে রাসূল (সা)-এর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেছিলো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে বাঁচানোর জন্য কে এগিয়ে এসেছিলো ? উত্তর: আবু বকর (রা) রাসূলকে বাঁচাতে এলেন। তিনি উকবাকে শক্তভাবে ধরে ধাক্বা মেরে রাসূল (সা) থেকে তাকে আলাদা করে দিলেন। প্রশ্ন : আবু বকর (রা) তাকে কি বললেন ? উত্তর: তিনি বললেন, “তুমি কি এ কারণে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে, যে বলে তার শাসনকর্তা আল্লাহ”। প্রশ্ন: উকবার কি পরিণতি হয়েছিলো ? উত্তর: বদর যুদ্ধে তাকে বন্দী করা হয়। পরে রাসূল (সা)-এর নির্দেশে সাফরা নামক স্থানে আলী বিন আবি তালিব আঃ তাকে হত্যা করে

ইমাম আলী আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা বিশ্বজগত ও ইমাম আলীর (আঃ) দৃষ্টিভঙ্গি নাহজুল বালাগা একটি সমুদ্রের মতো। সেখান থেকে যতোই নেওয়া হোক না কেন, কমবে না। আমরা বিশাল এই সমুদ্র থেকে বিন্দুর মতো খানিকটা আহরণের চেষ্টা করবো। সুন্দর এই বিশ্বজগত আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামতে পূর্ণ। মানুষ এইসব নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়। আমরা যদি একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে,এই বিশ্বকে ঘিরে মানুষের রয়েছে বিচিত্র আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া এককথায় ব্যাপক আকর্ষণ। মানুষের ব্যাপক গবেষণার ফলে বিশ্বের সূক্ষ্ম অণূ-পরমাণু আবিস্কৃত হয়েছে। এইসব গবেষণায় পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে যে অবিশ্বাস্যরকম শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে বিশ্ব নিরর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। আর মানুষকেও খামোখাই পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি। আলী (আঃ) বিশ্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আল্লাহর নিদর্শন বলে মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব কিছুই মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষের উচিত প্রকৃতির যথার্থ ব্যবহার করা। আল্লাহর অলি-আউলিয়া বা ধর্মীয় মনীষীগণও প্রাকৃতিক সম্পত তথা আল্লাহর নিয়ামতগুলোকে সৎ ও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। হযরত আলী (আঃ) চেষ্টা করেছেন পুকুর থেকে পানি তুলে খেজুর বাগান তৈরি করতে যাতে মানুষ সেগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। পৃথিবীর সাথে মানুষের সম্পর্ককে আলী (আঃ) তুলনা করেছেন একজন ব্যবসায়ীর সাথে বাজারের সম্পর্ক কিংবা একজন কৃষক এবং কৃষিক্ষেতের সম্পর্কের সাথে। একইভাবে যে ব্যক্তি এই পৃথিবীতে কাজ করবে আখেরাতে তার ফল সে পাবে। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীটা ঈমানদারদের জন্যে একটি উত্তম স্থান। তিনি মনে করেন দুনিয়া মানুষের জন্যে স্থায়ী কোনো বাসস্থান নয় বরং এটা মানুষের জন্যে একটা ক্রসিং-পয়েন্ট এবং পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে লাফ দেওয়ার মঞ্চ। নাহজুল বালাগায় আলী (আঃ) এর এই দৃষ্টিভঙ্গি কথোপকথনের ভঙ্গিতে এসেছে। সেখানে এক ব্যক্তি দুনিয়াকে ধিক্কার দেয় আর আলী (আঃ) তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়। কবি আত্তার এই বিষয়টিকে মুসিবাৎ নমেহ-তে কবিতার মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেঃ آن يكي در پيش شير دادگر ذم دنيا كرد بسياري مگر حيدرش گفتا كه دنيا نيست بد بد تويي-زيرا كه دوري از خرد ন্যায়পরায়ন সিংহ আলীর সামনে সে পৃথিবীকে দিয়েছে ধিক্কার প্রচুর, তবে তার হায়দার বলেন পৃথিবী নয় মন্দ মন্দ তো তুমি, জ্ঞান থেকে দূরে অন্ধ হযরত আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে ব্যক্তির ঈমান নেই তার জন্যে এই পৃথিবী ভয়াবহ এক নরক যা কেবল তার জন্যে ধ্বংসেরই দ্বার খুলে দেয়। এই সমস্যা এমন সময় দেখা দেয় যখন মানুষ পার্থিব এই জগতের মোহে পড়ে যায়। মানুষ যদি নিজের ব্যাপারে সতর্ক না হয় এবং এই বিশ্বজগত সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নেবে এবং ক্ষণিকের পথ চলার অঙ্গন এই বিশ্ব তার সামনে ভিন্ন লক্ষ্য তৈরি করবে। এরকম অবস্থায় একজন মানুষ পৃথিবীর মোহজালে আটকা পড়ে যায়। এই মোহ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। একেই বলে দুনিয়াপূজা, যার বিরুদ্ধে ইসলাম সংগ্রাম করতে বলে পরকালীন পাথেয়। আলী (আঃ) ও মানুষকে এ ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন। আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীর নেতিবাচক দিকটি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো আলী (আঃ) পৃথিবীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, উপরে ওঠার সিঁড়ি হলো পবিত্রতা, সততা ইত্যাদি গুণাবলি। কিন্তু যখনই তিনি পৃথিবীর অসুন্দর রূপ নিয়ে কথা বলেছেন তখনই মনে হয়েছে তিনি যেন এমন কোনো ঘৃণিত শত্রু সম্পর্কে কথা বলছেন যে কিনা মানুষকে সবসময় ধোকা দেয়। তিনি পৃথিবীকে এমন এক সাপের সাথে তুলনা দেন, যে সাপ দেখতে বেশ সুন্দর এবং নাদুস নুদুস অথচ তার দাঁতের নিচে আছে মারাত্মক বিষ। অন্যত্র তিনি বলেছেন-পৃথিবী তাঁর কাছে এমন একটা পাতার মতো অর্থহীন যার মুখে বসে আছে আস্ত এক ফড়িং কিংবা ছাগলের নাকের পানির মতোই তুচ্ছ ময়লা। ঘৃণিত এই পৃথিবী এমন এক জগত, যে আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং মানবিকতাকে ধ্বংস করে দেয়। আলী (আঃ) এর মতে মানুষ যদি পৃথিবীর মোহে পড়ে যায় তাহলে সে তার উন্নত সকল মূল্যবোধকে হারাতে বসে। এ কারণেই তিনি পৃথিবীর নশ্বরতা নিয়ে বারবার কথা বলেছেন। হযরত আলী (আঃ) পৃথিবীকে কঠিন ঝড়ের সাথে তুলনা করেন, যেই ঝড় সমুদ্রের বুকের নৌকায় বসবাসকারীদেরকে মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়, আবার কাউকে কাউকে সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে মারে, কেউবা ঢেউয়ের বুকে ডুবতে ডুবতে বেঁচে যায় এবং ভবঘুরে বানিয়ে ছেড়ে দেয়। পৃথিবী সম্পর্কে মানুষকে এভাবে ভীতি প্রদর্শন করানোর পর ইমাম আলী (আঃ) আল্লাহর সকল বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তারা যেন সুস্বাস্থ্য এবং সময়-সুযোগকে অমূল্য রতন ভাবে এবং মৃত্যুর বাস্তবতাকে যথার্থভাবে মেনে নিয়ে অতীতের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন-হে আল্লাহর বান্দাগণ! সাবধান হও! তোমার মুখে ভাষা থাকতে থাকতে, তোমার শরীর সুস্থ থাকতে থাকতে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো খেদমতের জন্যে প্রস্তুত থাকতে থাকতে এবং ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত থাকতে থাকতে সাবধান হও! সুযোগ এবং সামর্থ হারাবার আগেভাগেই হুশিয়ার হও! অনিবার্য মৃত্যুর দূত তোমার দরোজায় টোকা দেওয়ার আগে ভাগেই হুশিয়ার হও! ইমাম আলী (আঃ) বোঝাতে চেয়েছেন যে শারিরীক সামর্থ থাকতে থাকতেই আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগি বেশি বেশি করে নাও! যে-কোনো সময় মৃত্যু এসে যেতে পারে কিংবা বার্ধক্যের সময় ইচ্ছা থাকলেও ইবাদাত বন্দেগি যৌবনকালের মতো করা সম্ভব হয় না। দুনিয়ার চাকচিক্য এমন যে এই মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্যে একটা শক্তির প্রয়োজন হয় যে শক্তি মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে। সেইসাথে এই শক্তি পৃথিবীকে নশ্বর হিসেবে সবসময় সামনে তুলে ধরে আর অবিনশ্বর পারলৌকিক জীবনের দিকে নিয়ে যায় এবং এভাবে নিজের সত্যিকারের সৌভাগ্য নিশ্চিত করে। ইমাম আলী (আঃ) পরহেজগারী এবং খোদাভীতিকেই এই শক্তি তথা মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা বলে বোঝাতে চেয়েছেন। যারা নিজেদেরকে আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে রজ্জুবদ্ধ করেছে এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টিজগতের বাস্তবতার দিকে অগ্রসর হয়েছে তাদের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরকালের শেষ বিচারের দিন কঠিন মুসবতের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হবেন।

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ওহাবীরা জানে মদিনার রাসুল, চিনেনা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.)-কে পর্ব ১ এজিদের বীজ থেকে ওহাবীদের জন্ম। আসুন ভাই মুসলমানগন আপনাদেকে বলি এজিদ কে এবং ওহাবী কারা? তারা কি সত্যিই নবী প্রেমিক মুসলমান (?) সৌদি সরকার ওহাবী, মুয়াবিয়া বীজের বংশ তারা। সুতরাং আজ তারা প্রিয় নবীর রওজা পাক সরিয়ে নেয়ার যে জঘন্য কাজে এগিয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ এই বংশের লোকেরা এর আগেও করে গেছেন যা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে। আসুন আমরা চিনে নেই এই সৌদি রাজ বংশ আসলে কারা। আরবের বড় বড় কাফের আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ছিলো প্রিয় নবীর ঘোর শত্রু। এদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ছিলো নবী পাক (স.)-এর জঘন্যতম শত্রু। আরেকজন ঘোরতর শত্রুর নাম ছিলো ওতবা। ওই ওতবার মেয়ের নাম ছিলো হিন্দা। পাপিষ্ঠা রাক্ষসী হিন্দা ওহুদের যুদ্ধে প্রিয় নবী (স.)-এর চাচা হামজার পেট চিরে কলিজা বের করে চিবিয়ে খায় এবং হাত ও নাক কেটে নেয় গলার অলংকার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। ওই কলিজা ভক্ষনকারীর ছেলের নাম মুয়াবিয়া। মুয়াবিয়ার পিতার নাম আবু সুফিয়ান। মহানবীর ঘোর দুশমন আবু সুফিয়ান আর হিন্দার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম পরবর্তী জীবন ব্যবস্থায় গনিমতের মাল ভক্ষন ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা ছাড়া ইসলামের প্রতি ত্যাগ ও মোহাব্বতের একটি দৃষ্টান্তও কেউ দেখাতে পারবেন না। ঈমান (মৌখিক ঈমান) আনার পরও মহানবীর প্রতিষ্ঠিত মহান আদর্শগুলোকে একে একে হত্যা করেছে আর প্রিয় নবীর পবিত্র বংশধররা সে আদর্শ বাচিয়ে রাখার জন্য অকাতরে জীবন কোরবানি দিয়েছেন। মুয়াবিয়ার কুলাঙ্গার পুত্র ইয়াজিদ। আরেকটু জেনে রাখুন- ইতিহাসের কালপ্রবাহে বনি কুরাইশ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায় একটি ইমাইয়া আরেকটি হাশেমী। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর আদি পুরুষ হাশিম থেকেই এদুটি গোত্রের মধ্যে জ্ঞাতি বিদ্বেষের বিষাক্ত ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব, যোগ্যতা ও প্রতিপত্তির কারনে তৎকালীন কুরাইশে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছিলেন। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ও যোগ্যতা তার ভ্রাতুষ্পুত্র আবদে শামসের পুত্র উমাইয়া কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সবসময় কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতো ক্ষমতা লোভি উমাইয়া। আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী এই শত্রুতা চলতে থাকে বংশানুক্রমিক ভাবে। হযরত উসমান (রা.) খেলাফতপ্রাপ্ত হলে উমাইয়া নেতারা একে একে খলিফার ঘরে অভ্যর্থনা জানাতে আসছিলেন। আবু সুফিয়ান তখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পথে তিনি সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের মধ্যে বনি উমাইয়া ছাড়া অ্ন্য কেউ নেই তো? হ্যাঁ সূচক উত্তর পাওয়ার পর আবু সুফিয়ান সঙ্গীদের বললেন- দেখো, বহু কষ্ট আর সাধনার পর ক্ষমতা আমাদের হাতে এসেছে। এটাকে বলের ন্যায় বনি উমাউয়ার এক হাত থেকে অন্য হাতে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটা (খেলাফত) যেনো আর কোনোদিন বনি হাশিমীদের ঘরে ফিরে না যায় (রউফুল হেজাব) আবু সুফিয়ানের পুত্র আমির মুয়াবিয়া ক্ষমতা, মসনদ, ব্যক্তিস্বার্থ ও গোত্রীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। আজ চৌদ্দ শো বছর পর আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে ইসলামের ঘোর শত্রুদল। তারা নামে মুসলমান। তারা লম্বা জামা পরে। কপালে নামাজের কালো দাগ। মুখে দাড়ি আছে, মাথায় টুপি। আসলে তারা নকল মুসলমান। আজ শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয় নবীর পাক রওজাতে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত। তারা প্রায় ১০০ বছর আগে জান্নাতুল বাকীতে অবস্থিত প্রিয় নবীর আহলে বায়াতের নাম নিশানা মিটিয়ে দিয়েছে সেখানে অবস্থিত সমস্ত রওজাগুলিকে ধ্বংশের মাধ্যমে। তারা এবার প্রিয় নবীর পবিত্র রওজা শরীফের দিকে এগিয়ে আসছে বোলডেজার নিয়ে। ভাই মুসলমান, শুনে রাখুন- যাদের অন্তরে প্রিয় নবীর প্রেম মহাব্বত নেই, যারা সকলের চেয়ে প্রিয় নবীকে বেশি ভাল না বাসবে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- একটি শুচের ছিদ্র দিয়ে যদিও একটি উট প্রবেশ করতে সক্ষম হয় কিন্তু তাদের দ্বারা বেহেস্তে প্রবেশ করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় যাদের অন্তরে প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (স.)-এর প্রেম ভক্তি সকল বস্তুর চেয়ে বেশি না হবে। এখন চিন্তা করে দেখুন সৌদিরা আদৌ মহানবীকে ভালবাসেন কিনা। ভালোই যদি বাসতেন তাহলে তারা শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয়নবীর রওজা মোবারকে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত হতো না। নবীর প্রতি মুসলমানদের প্রেম-ভক্তি-ভালবাসা সৌদিদের কাছে শিরক। তাহলে তারা কোন আল্লাহর ইবাদত করে একটু ভেবে দেখুন তো? যে আল্লাহ বলছেন- মুহাম্মদকে সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?)

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ পৃথিবীতে মানুষের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো অব্যাহত কর্মচাঞ্চল্য, এটা মানুষের ব্যক্তিজীবনের অবশ্যম্ভাবী একটি প্রয়োজনীয়তা। ইমাম আলী (আঃ) মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ সম্পর্কে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখেন। এক্ষেত্রে তিনি আরেকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করেন। সেটা হলো মানুষেরজীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা। যেই শৃঙ্খলা তাকে উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়। হযরত আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার সময়ের একটা অংশ জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে ব্যয় করা এবং আরেকটি অংশ ব্যয় করা উচিত মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে। ইমাম আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার জীবনের একটা সময় জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যে ব্যয় করা এবং অপর একটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করার জন্যে। আর এ প্রশান্তির ব্যাপারটি একমাত্র ইবাদাত-বন্দেগী বা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হয়। মানুষের সময়ের তৃতীয় অংশটি তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি লালনের জন্যে ব্যয় করা উচিত যাতে তার জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শক্তি লাভ করতে পারে। হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেন,মুমিন জীবনের কর্মপরিকল্পনায় তিনটি সময়সুনির্দিষ্ট আছে। একটা হলো তার স্রষ্টার ইবাদাত-বন্দেগির সময়। দ্বিতীয় সময়টা হলো যখন সে তার জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় আর তৃতীয় সময়টা হলো তার সৎ আনন্দগুলো আস্বাদনের সময়। আজকের আলোচনায় আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর বক্তব্যের তৃতীয় অংশটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবো-যেখানে তিনি জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ ও সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ দৈনন্দিন জীবন সমস্যায় এতো বেশি জর্জরিত যে,নিজের দিকে তাকাবার সময় খুব কমই মেলে। যার ফলে আমরা লক্ষ্য করবো যে মানুষ তার নিজের সম্পর্কে মানুষ উদাসীনতায় ভোগে। আমরা লক্ষ্য করবো যে, এই উদাসীনতার পরিণতিতে ব্যক্তির মাঝে অশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এগুলো থেকেমুক্তির জন্যে সে ভুল চিত্তবিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে-যা তার চিন্তা-চেতনায় ডেকে আনছে নিরন্তর অবক্ষয়। আলী (আঃ) মানুষের এই চিন্তা-চেতনাগত অবক্ষয় রোধকল্পে আভ্যন্তরীণ বা আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন সুস্থ বিনোদনের জন্যে বই পড়া যেতে পারে যে বই মানুষের মনের খোরাক দেয়,আত্মিক এবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে। তিনি বলেছেন,জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় এবং নতুন অভিনতুন বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নিজেদের অন্তরগুলোকে বিনোদিত করো,কেননা মনও শরীরের মতো ক্লান্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত হলো,মানুষের জন্যে একঘেঁয়ে কাজ বা একঘেঁয়ে জীবন বিরক্তিকর এবং তা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যেই মানুষের উচিত হলো স্বাভাবিক ও একঘেঁয়ে জীবনের ছন্দে মাঝে মাঝে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য আনা। যেমন মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপর পড়ালেখা করা। এগুলো অন্তরকে প্রশান্ত করে,সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটি বিনোদন-মাধ্যম। ইসলামে খেলাধুলার ব্যাপারে বলা হয়েছে খেলাধুলা শারীরিক শক্তি-সামর্থবৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দেরও একটি মাধ্যম। ইসলামে মানুষের সুস্থতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই লক্ষ্য করা যাবে ঐশী শিক্ষা মানুষের জন্যে প্রাণদায়ী। যেমন রোযা অসুস্থ ব্যক্তির ওপর হারাম। একইভাবে মাদক যেহেতু মানুষের শরীর মনের জন্যে খুবই ক্ষতিকর এবং জীবন চলার পথকে স্থবির কিংবা একবারে বন্ধই করে দেয় সেজন্যে ইসলাম মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে তিরষ্কৃত এমনকি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ইমাম আলী (আঃ) ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, বিমর্ষ বা মাতাল ব্যক্তিদের ওপর আস্থা রেখো না। তিনি মুমিনদেরকে সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হবার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছেন! আলী (আঃ) নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তির বাইরেও সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী। নবীজীর যে-কোনো আদেশ পালনের জন্যে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।  নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সংকলিত হয়েছে সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনীষীদের দৃষ্টিতে যুগ যুগ ধরে সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়-বিচার এবং স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিরাপত্তা জীবনের মৌলিক দিকগুলোর একটি এবং সামজিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর মানব উন্নয়ন ও বিকাশের অনিবার্য ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী। এ কারণেই মানুষের একটি পবিত্রতম প্রত্যাশা হলো এই নিরাপত্তা। আল্লাহর পক্ষ থেকে পূণ্যবানদের সমাজের জন্যে সুসংবাদ হিসেবে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে আল্লাহ তাদের এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে,পৃথিবীতে তিনি তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত দান করবেনই যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন। তিনি তাদের জন্যে তাঁর মনোনীত দ্বীনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেবেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে শান্তি আরনিরাপত্তামূলক অবস্থায় পরিবর্তিত করে দেবেন।" মানুষের এই প্রাচীন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ নিরাপত্তা তার অস্তিত্বের সাথেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। জীবন যাপনের প্রয়োজনে মানুষ পরস্পরের সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে এবং এভাবেই একটি সমাজবিনির্মাণ করে। তাদের এই সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি হলো ন্যায় ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করাহযরত আলী (আঃ) নাহজুল বালাগা'য় বলেছেন ইতিহাসের কাল-পরিক্রমায় রাষ্ট্র গঠন কিংবা সরকার গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। একথা সর্বজন বিদিত যে ইমাম আলী (আঃ) ক্ষমতার মসনদ বা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেশাসনকার্য পরিচালনা করেন নি, বরং তিনি এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন যার ছত্রছায়ায় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়,অপরের অধিকার নষ্ট করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়,জনগণ নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে শত্রুদেরমোকাবেলার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালায় হযরত আলী (আঃ) অবশ্য এই বক্তব্যটি রেখেছিলেন খারজিদের কথা মাথায় রেখে-যারা হযরত আলী (আঃ) এর হুকুমাতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। নাহজুল বালাগায় তিনি বলেছেন-"তারা বলে হুকুমাত,বিচার বা শাসন-কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ কথা সত্য। আরো সত্য যে মানুষ-চাই শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ-শাসকের মুখাপেক্ষী। মুমিন ব্যক্তিগণ হুকুমাতেরছায়ায় নিজেদের কাজে মশহুল হয় আর অমুসলিমরা তা থেকে উপকৃত হয়। হুকুমাতের কল্যাণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে হুকুমাতের মাধ্যমেই বায়তুল মাল আদায় হয়,শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হয়,রাস্তাঘাট সুরক্ষিত হয়,সবলের হাত থেকে দুর্বল তারঅধিকার রক্ষা করতে পারে। আর এগুলো সম্ভব হয় তখন যখন পুণ্যবানরা শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে জীবনযাপন করতে পারে এবং বাজে লোকদের হাত থেকে নিরাপদ থাকে। হযরত আলী (আঃ) এ কারণেই নিরাপত্ত প্রতিষ্ঠা করাকে সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকে একটি নিয়ামত হিসেবে গণ্য করতেন। তাঁর দৃষ্টিতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার মৌলিক শক্তি হলো আল্লাহ এবং ইসলামের প্রতিঈমান। নাহজুল বালাগায় এসেছে-সকল প্রশংসা আল্লাহর,যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সহজ পথের নির্দেশনা দিয়েছেন ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হবার জন্যে। তিনি ইসলামের স্তম্ভ করেছেন সুদৃঢ় যাতে কেউ একে ধ্বংস করতে না পারে। যারা ইসলামকে অবলম্বন করেছে তাদের জন্যে মহান আল্লাহ ইসলামকে করেছেন শান্তির উৎস। যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় তাদের অন্তরে দিয়েছেন বিশ্বস্ততা,যারা ইসলামের ওপর নির্ভর করতে চায় তাদের জন্যে দিয়েছেন আনন্দ। যে বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে চায় ইসলামকে তার জন্যে করেছেনঢালস্বরূপ। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে একটি দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করা উচিত যেখানে কোনো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়।তার মানে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দেশের সরকারের মৌলিক একটি দায়িত্ব। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে হযরত আলী (আঃ) বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে আমরানাহজুল বালাগা থেকে একটি ছোট্ট উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ইমাম বলেছেন-চেষ্টা করো সততা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার। প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ত থেকো। সৎ পথ অনুসরণ করো। অহমিকা থেকে দূরে থেকো। আগ্রাসন বা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থেকো ইত্যাদি মুসলমানদের এই মহান নেতা মানুষের জান-মালের হেফাজত করা এবং সম্মান রক্ষা করাকেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অংশ বলে মনে করেন। সেজন্যে তিনি তাঁর বক্তব্যে কিংবা উপদেশে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালে যখন শুনতে পেলেন যে একদল লোক মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে এবং তাঁরই শাসিত এলাকার ভেতর ইহুদি এক মহিলা লাঞ্ছিত হয়েছে,তিনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন-এই ঘটনায় শোকে-দুঃখেকেউ যদি মরেও যায়,তাহলে তাকে তিরষ্কৃত করা হবে না।

আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা খুৎবা তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন সব কিছুকেই। কোন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ এবং কোন পরামর্শ দাতার পরামর্শ বা কোন সাহায্যকারীর সাহায্য ছাড়াই। (খুতবা:১৫৫) পৃথিবী তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীকে। তা আবার ঝুলিয়েও রেখেছেন। তা ধরে রেখেছেন কোন অবলম্বন ছাড়াই। এমনভাবে তৈরী করেছেন যা পা ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তা উঁচু করে রেখেছেন কোন খুঁটি ছাড়াই। (খুতবা:১৮৫) বাতাস তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তাঁর স্বীয় ক্ষমতায়। আর আসমান ও জমিনের মধ্যে বাতাসকে প্রবাহীত করেছেন সহানুভূতির সাথে। (খুতবা:১) চাঁদ তিনি (আল্লাহ), সজ্জিত করেছেন আসমানকে উজ্জল নক্ষত্র ও উল্কার আলোকচ্ছটা দিয়ে। এর সাথে স্থাপন করেছেন দীপ্তশালী সূর্যকে। আর স্থাপন করেছেন উজ্জল চাঁদকে, যা স্বীয় কক্ষ পথের চতুর্দিকে আবর্তন করছে। (খুতবা:১) রাত তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য। যখন রাত্র পতিত হয় ও অন্ধকার নেমে আসে। আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁর জন্যেই। যখন নক্ষত্ররাজী ঝিকিমিকি করে এবং তা আবার ডুবেও যায়। (খুতবা:৪৮) সূর্য লক্ষ্য কর: সূর্য ও চাঁদের দিকে, ঘাষ, লতা-পাতা ও বৃহদাকার গাছগুলোর দিকে, পানি ও পাথরের দিকে, সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের দিকে, বিশাল বিশাল পর্বতশৃঙ্গ ও তার উচ্চতার দিকে। লক্ষ্য কর: ভাষার পার্থক্য ও তার বৈচিত্রতার দিকে। আরো লক্ষ্য কর রাতের পর দিন ও দিনের পরে রাতে পালাবদলের দিকে। (খুতবা:১৮৫) পিপড়া তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন পিপড়াকে। লক্ষ কর এই পিপড়ার ছোট্ট সুন্দর দেহটার দিকে। চেয়ে দেখ কেমন করে সে জমিনের উপর বুক দিকে হেটে চলে এবং কিভাবে সে জীবিকা সংগ্রহ করে, কিভাবে শষ্যদানা বহন করে নিজের ঘরে এনে সেগুলোকে আবার গুদামজাত করে। সে গরমকালে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে শীতকালের জন্য এবং শক্তি সঞ্চয় করে রাখে ওই সময়ের জন্য যখন সে দূর্বল হয়ে পড়বে। (খুতবা:১৮৫) পদতল তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যই। তিনি পিপড়া ও মাছির পদতল দিয়েছেন, আবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন পিপড়া ও মাছির থেকেও বড় কিছু, আর তা হচ্ছে তিমিমাছ ও হাতি। (খুতব:১৬৫) কীট-পতঙ্গ যদি তুমি চাও, তাহলে আমি তোমাকে ওই কীট-পতঙ্গ সমন্ধে বলবো। আল্লাহ তাকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন, যা অনুরূপ চাঁদের মত। তাকে ছোট্ট দুটি কান দিয়েছেন, যা তার মুখমণ্ডল উপযোগী। তাকে সুতিক্ষ্ম ইন্দ্রীয় দিয়েছন ও মুখের অগ্রভাগে দুটি ধারালো দাঁত, যা দিয়ে সে বিভিন্ন কিছু কাটতে পারে। তাকে কাস্তের মত দুটি পালক দিয়েছেন, যা অনুরূপ পায়ের মত, যার সাহায্যে সে শক্তভাবে দড়াঁতে পারে। (খুতবা:১৮৫) পাঁখি পাঁখিরা আল্লাহর নির্দিশের আজ্ঞাবহ। তিনি জানেন তাদের পালকের সংখ্যা এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হিসাব। আর পানি ও মাটির উপর দাড়াঁনোর জন্য তাদের পাগুলোতে শক্তি দিয়েছেন। আর তিনি জানেন তাদের সব প্রজাতির ব্যাপারে, যেমন: কাক, ঘুঘু, ঈগল ও উট পাখি। (খুতবা:১৮৫) ময়ূর তাঁর (আল্লাহর), সৃষ্টিত সব পাখির মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর হচ্ছে এই ময়ূর। যাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন অধিক সুন্দর সমতান, সূর লালিত্য দিয়ে। আর তাকে সাজিয়েছেন সুন্দর রং, বর্ণ ও রূপ দিয়ে, যা অধিক সুন্দর্জিত। তার ডানাগুলো এবং বিভিন্ন রংয়ে রঙ্গিন লম্বা লেজটি যেন একত্র নরম হাতে নিখুতভাবে বাধানো। (খুতবা:১৬৫) বাদুড় বাদুড় হচ্ছে তাঁর সুন্দর সৃষ্টির একটি দৃষ্টান্ত। এটি একটি অলৌকিক বিষয় তাঁর সৃষ্টিতে, একটি রহস্যময় নমুনা তাঁর বিজ্ঞতার। এগুলোর সবই আমরা একটি বাদুড়ের মধ্যে দেখতে পাই। যা সংকুচিত হয়ে যায় সূর্যের আলোয়। যদিও সূর্যের আলো সব কিছুকেই ততপর করে তোলে তাদের প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু সে একবিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করে না। সে ততপর হয়ে ওঠে রাত্রে। যদিও রাতের অন্ধকার থামিয়ে অন্য সকল প্রকার জীবন্ত প্রাণীর ততপরতাকে। আল্লাহর অস্তিত্বের জীবন্ত প্রমাণ হচ্ছে এটাই। (খুতবা:১৫৫) মাছ তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন মাছকে। তিনি অবগত আছেন গভীর জঙ্গলের মধ্যে পশুদের দলনেতা, গভীর সমুদ্রের তলদেশে মাছদের ঘোরা ফেরা, মানুষের নিতান্ত গোপন পাপগুলো সমন্ধে এবং আরো অবগত আছেন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের মাটির বুকে আছড়ে পড়ার শব্দ সমন্ধে। (খুতবা:১৯৮) জীবিকা তিনি (আল্লহ), একমাত্র জীবিকা দানকারী। সব কিছুই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করে আছে। তাঁর কারণেই সব কিছুর অস্তিত্ব বিরাজমান। তিনি তো সকল অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন, সম্মানদাতা বিনয়ীদের, শক্তিদাতা শক্তিহীনদের, সান্তনাদাতা দু:খিদের। তিনি প্রতিটি বক্তার সব কথাই শ্রবণ করেন। তিনি ওই সকল ব্যক্তির গোপন চিন্তা সমন্ধে জানেন যারা নি:শ্চুপ অবস্থায় বসে আছে। তিনিই তো জীবিকা দান করেন প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীকে। আর সব কিছুই প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছে মৃত্যুর মাধ্যমে। (খুতবা:১০৯) দাউদ (আ.) তিনি ছিলেন একজন ধর্মসঙ্গীতের গ্রন্থকার (অর্থাৎ বেহেশ্তের দাওয়াত প্রদানকারী)। আর ছিলেন আবৃত্তিকারক রাজ প্রাসাদের বাসিন্দাদের (অর্থাৎ নিয়ামত আনায়নকারী সঠিক পথ গ্রহণকারীদের জন্য)। তিনি খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ঝুড়ি বুনতেন এবং খুলে যাওয়া ঝুড়ির তলাগুলো নিজের হাতে ঠিক করতেন। তিনি একদিন তার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি বললেন: “কে আছো তোমাদের মধ্যে আমাকে সাহায্য করতে পার, এই ঝুড়িগুলো বিক্রয়ের জন্য”? তিনি যবের আটার রুটি খেয়ে জীবন-ধারণ করেছিলেন, যা ঝুড়ি বিক্রিত টাকা দিয়ে কিনতো।(খুতবা:১৬০) লতা-পাতা মুসা (আ.) বললেন: “হে আমার আল্লাহ নি:সন্দেহে তুমি যা কিছু আমার জন্য পাঠাও আমি সেগুলোর মুখাপেক্ষি”। আল্লাহর কসম, তিনি আল্লাহর কাছে শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য রুটি ছাড়া অন্য কিছুই চান নি। কেননা, তিনি খাদ্য হিসেবে মাটিতে উৎপাদিত লতা-পাতাই ব্যবহার করতেন। একারণেই শেষ পর্যায়ে লতা-পাতার সবুজ রং তার পেটের চামড়ায় প্রতিয়মান হয়ে ছিল। যার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। (খুতবা:১৬০) শীতকাল আমি তোমাদেরকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে বলবো: তিনি মারইয়াম (সা. আ.)-এর সন্তান, তার ছিল একটি পথরের বালিশ, তিনি পরিধান করতো মোটা বস্ত্র এবং মোটামুটি খাবার খেত। অন্ধকার রাতে চাঁদই ছিল তার একমাত্র আলোর উৎস। শীতকালে পৃথিবীর পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত এই বিস্তীর্ন আকাশ ছিল তার ঘরের ছাদ। মরুভূমিতে গবাদি পশুর জন্য কিছু উৎপন্ন করাই ছিল তার পছন্দের বিষয়। (খুতবা:১৬০) সুসংবাদ অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠালেন (আল্লাহ্ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন)। আল্লাহর সাক্ষী অনুযায়ী, নবী (সা.) একজন সুসংবাদের দুত এবং ভয় প্রদর্শন ও সতর্ককারী। তিনি শ্রেষ্ট সৃষ্টি হিসেবে একটি নি:ষ্পাপ শিশুর মত এবং মানবজাতির মধ্যে পবিত্রতম ব্যক্তি পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে। সব কিছু পরিচালনার জন্য এমনকি সব বিষয়ে তিনি ছিলেন নি:স্কলংকের নি:স্কলংক এবং সর্বাধিক উদার ছিলেন তাদের জন্য যারা স্বীয় উদারতাকে প্রকাশ করত। (খুতবা:১০৫) আরবের অধিবাসী আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে (আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষন করুন) পাঠিয়েছেন পৃথিবীর মানুষদেরকে সতর্ককারী ও স্বীয় সত্য দ্বীন প্রকাশের তত্বাবধায়ক হিসেবে। সে সময় তোমরা ওহে আরবের অধিবাসী! কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের অনুসারী ছিলে আর তোমাদের এলাকাটি তখন অতি খারাপ জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। তোমরা বসবাস করতে পাহাড়ের গুহার মধ্যে, যার আসে পাশে থাকতো বিষাক্ত সাপ। তোমরা পান করতে কর্দমাক্ত ঘোলা পানি এবং খেতে নিম্নমাণের খাবার। তোমরা একে অপরের রক্ত ঝরাতে এবং নষ্ট করতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক। মুর্তিগুলো তোমাদের মনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। আর পাপগুলো তোমাদের চেপে ধরেছিল যখন তোমরা মুর্তিগুলোর দাসত্য করতে। (খুতবা:২৬ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।

আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী ও সংক্রান্ত হাদিস পর্ব শেষ ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০) প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

রাসূলে পাক সাল্লালল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, " হেকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলী আঃ কে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকি এক ভাগ।" হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪। আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী :২৮৭/৩২৮।কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ রমযান মাস ছিল অন্য এক রকম রমযান। এ মাস ভিন্ন এক পবিত্রতা নিয়ে বিরাজ করছিল। আলীর পরিবারের জন্যও এ রমযান প্রথম দিক থেকেই অন্য রকম ছিল। ভয় ও শঙ্কার একটি মিশ্রিত অবস্থা বিরাজমান ছিল। ইসলামের ইতিহাসে চরমপন্থী হিসেবে বিবেচিত খাওয়ারেজ বা খারেজীরা আলী (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাই আলী(আ.)'র জীবনধারা এ রমযানে অতীতের রমযানগুলোর মত ছিল না। হযরত আলী(আ.)'র শক্তিমত্তার একটি বর্ণনা নাহজুল বালাগা থেকে এখানে বর্ণনা করব। তিনি বলেছেন, যখন এ আয়াত 'মানুষ কি ভেবে নিয়েছে আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না’ (আনকাবুত ১-২।) নাযিল হলো তখন বুঝতে পারলাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর পর এ উম্মতের জন্য ফেতনা ও কঠিন পরীক্ষা আসবে। فَقُلتُ:يا رَسولُ الله (ص) ماهذهِ الفتنةٌ الّتي اخبرك الله تعالى بها তখন রাসূলকে প্রশ্ন করলাম: হে আল্লাহর রাসূল! এ আয়াতে আল্লাহ যে ফেতনার কথা বলছেন সেটা কি? তিনি বললেন: يا علىُّ اِنّ امتى سيفتنونَ من بعدي হে আলী! আমার পর আমার উম্মত পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যখন আলী শুনলেন রাসূল মৃত্যুবরণ করবেন এবং তাঁর পরে কঠিন পরীক্ষা আসবে তখন ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করে বললেন: يا رسول الله اَوَ ليسَ قد قُلتَ لى يومَ اُحدٍ حيثُ استشهدَ مَنِ استشهدَ منَ المسلمينَ و حيّزتِ عنّى الشّهادةُ ইয়া রসুলাল্লাহ্! ওহুদের দিনে যারা শহীদ হওয়ার তাঁরা শহীদ হলেন এবং শাহাদাত আমার থেকে দূরে চলে গেল, আমি এর থেকে বঞ্চিত হলাম এবং খুবই দুঃখ পেয়ে আপনাকে প্রশ্ন করলাম, কেন এ মর্যাদা আমার ভাগ্যে ঘটল না। আপনি বললেন, ابشرُ فانّ الشّهادةَ مِن ورائك “আমি তোমাকে শাহাদাতের সুসংবাদ দিচ্ছি। যদিও এখানে শহীদ হওনি কিন্তু অবশেষে শাহাদাত তোমার ভাগ্যে ঘটবে।"[আলী(আ.) এ সময় পঁচিশ বছরের যুবক ছিলেন এবং এক বছর হলো হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.)-কে বিবাহ করেছেন এবং এক সন্তানের জনক। এ বয়সের যুবক যখন জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখে তখন আলী(আ.) শাহাদাতের প্রত্যাশী। উল্লেখ্য, ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সত্তর জন শহীদ হয়েছিলেন যাদের নেতা ছিলেন হযরত হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব(রা.) এবং আলী(আ.) ওহুদের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ছিলেন।] তারপর মহানবী (সা.) বললেন, انَّ ذلك لكذلك، فكيفَ صبركَ اذن অবশ্যই এমনটি হবে তখন তুমি কিভাবে ধৈর্যধারণ করবে।’ আলী তাঁর জবাবে বললেন, ‰এখানে ধৈর্যের স্থান নয়, বরং শোকর করার স্থান।' (নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১৫৪।) রাসূল (সা.)-এর পবিত্র মুখ থেকে নিজের শাহাদাত সম্পর্কে যে খবর তিনি শুনেছিলেন সে সাথে বিভিন্ন আলামত যা তিনি দেখতেন, কখনো কখনো তা বলতেন যা তাঁর পরিবারের সদস্য এবং নিকটবর্তী শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাহাবীদের মধ্যে শঙ্কা ও কষ্ট বৃদ্ধি করত। তিনি আশ্চর্যজনক কিছু কথা বলতেন। এ রমযান মাসে নিজের ছেলে-মেয়েদের ঘরে ইফতার করতেন। প্রতি রাতে যে কোন এক ছেলে বা মেয়ের ঘরে মেহমান হতেন- কোন রাতে ইমাম হাসানের(আ.) ঘরে, কোন রাতে ইমাম হুসাইনের(আ.) ঘরে, কোন রাতে হযরত যয়নাবের(সা.) ঘরে (যিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে জা'ফরের স্ত্রী ছিলেন)। এ মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম খাবার খেতেন। সন্তানরা এতে খুবই কষ্ট পেতেন। তাঁরা কখনো প্রশ্ন করতেন, 'বাবা, কেন এত কম খান?' তিনি বলতেন, ‰আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হতে চাই যে উদর ক্ষুধার্ত থাকে।' সন্তানরা বুঝতেন তাঁদের পিতা কিছুর জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। কখনো কখনো তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, ‰আমার ভাই ও বন্ধু রাসূল (সা.) আমাকে যে খবর দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য। তাঁর কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। খুব শীঘ্রই তা সত্যে পরিণত হবে।' ১৩ই রমযান এমন কিছু বললেন যা অন্য সব দিনের চেয়ে পরিবেশকে বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলল। সম্ভবত জুমআর দিন খুতবা পড়লেন। ইমাম হুসাইন (আ.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‰বাবা এ মাসের কত দিন বাকি রয়েছে?' উত্তর দিলেন, ‰হে পিতা, ১৭ দিন।' তিনি বললেন, ‰তাহলে আর দেরি নেই। এ মাথা আর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে। এ শ্মশ্রু শিগগিরই রঙ্গিন হবে।' উনিশে রমযান আলী (আ.)-এর সন্তানরা রাতের একটি অংশ তাঁর সঙ্গে কাটালেন। ইমাম হাসান(আ.) নিজের ঘরে চলে গেলেন। আলী(আ.) জায়নামাজে বসলেন। শেষ রাতে উদ্বিগ্নতার কারণে ইমাম হাসান(আ.) বাবার নামাযের স্থানে গিয়ে বসলেন(অথবা প্রতি রাতই হয়তো এ রকম করতেন)। (ইমাম হাসান-আ. ও ইমাম হুসাইন-আ. হযরত ফাতেমা যাহরা-সা.'র সন্তান বলে ইমাম আলী-আ. এঁদের প্রতি আলাদা রকম স্নেহ করতেন। কারণ এঁদের প্রতি স্নেহকে রাসূলুল্লাহ-সা. ও ফাতেমা যাহরা-সা.'র প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে মনে করতেন) যখন ইমাম হাসান(আ.) তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি বললেন, ملكتني عينى و انا جالسٌ فسنح لى رسول الله (ص) فقلتُ يا رسول الله ماذا لقيتُ من امّتك من الاود واللددِ فقال ادعُ عليهم فقلتُ ابدلنى الله بهم خيراً منهم و ابدلهم بى شرَّ لهم منِّي হে পুত্র, হঠাৎ স্বপ্নের মধ্যে রাসূলকে আবির্ভূত হতে দেখলাম। যখন তাঁকে দেখলাম তখন বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মতের হাতে আমার অন্তর রক্তাক্ত হয়েছে।' প্রকৃতপক্ষে তাঁর সঙ্গে মানুষের অসহযোগিতা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলার ক্ষেত্রে তাদের অনীহা আলী (আ.)-কে তীব্র যন্ত্রণা দিয়েছে। উষ্ট্রের যুদ্ধের বায়আত ভঙ্গকারীরা, সিফফিনে মুয়াবিয়ার প্রতারণা (মুয়াবিয়া অত্যন্ত ধূর্ত ছিল, ভালোভাবেই জানত কি করলে আলীর হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করা যাবে। আর সে তা-ই করত), সবশেষে খারেজীদের রূহবিহীন আকীদা-বিশ্বাস যারা ঈমান ও এখলাছ মনে করে আলী (আ.)-কে কাফের ও ফাসেক বলত। আমরা জানি না আলী(আ.)'র সঙ্গে এরা কি আচরণ করেছে! সত্যিই আলী(আ.)'র উপর আপতিত মুসিবতগুলো দেখে কেউই বিস্মিত না হয়ে পারে না। একটি পাহাড়ও এত ব্যাপক ও কঠিন মুসিবত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। এমন অবস্থা যে, আলী (আ.) তাঁর এইসব মুসিবতের কথা কাউকে বলতেও পারেন না। এখন যখন রাসূলে আকরাম (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলেন তখন বললেন, ‰ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মত আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এদের নিয়ে আমি কি করব?' তারপর ইমাম হাসানকে বললেন, 'পুত্র, তোমার নানা আমাকে নির্দেশ দিলেন এদের প্রতি অভিশাপ দিতে। আমিও স্বপ্নের মধ্যেই অভিশাপ দিয়ে বললাম: "হে আল্লাহ! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে মৃত্যু দান কর এবং এদের উপর এমন ব্যক্তিকে প্রভাব ও প্রতিপত্তি দান কর এরা যার উপযুক্ত।” বোঝা যায়, এ বাক্যের সাথে কতটা হৃদয়ের বেদনা ও দুঃখ জড়িয়ে রয়েছে! আলী (আ.) সুবহে সাদিকের সময় ঘর থেকে যখন বের হচ্ছিলেন বাড়ির হাঁসগুলো অসময়ে ডেকে উঠল। আলী বললেন, دعوهنَّ فانّهنَّ صوائحُ تتبعها نوائح এখন পাখির কান্না শোনা যাচ্ছে, বেশি দেরি নয় এরপর এখান থেকেই মানুষের কান্না শোনা যাবে।" উম্মে কুলসুম আমিরুল মুমিনীনের সামনে এসে বাধা দিলেন। তিনি বললেন, ‰বাবা, আপনাকে মসজিদে যেতে দেব না। অন্য কাউকে আজ নামায পড়াতে বলুন।' প্রথমে বললেন, '(বোনের পুত্র) জুদাহ ইবনে হুবাইরাকে বল জামাআত পড়াতে।' পরক্ষণেই আলী (আ.) বললেন, ‰না আমি নিজেই যাব।' বলা হলো, অনুমতি দিন আপনার সঙ্গে কেউ যাক। তিনি বললেন, ‰না, আমি চাই না কেউ আমার সঙ্গে যাক।' হযরত আলী(আ.)'র জন্য রাতটি ছিল অত্যন্ত পবিত্র। কেবল আল্লাহই জানেন তাঁর মধ্যে সে রাত্রে কেমন উত্তেজনা ছিল! তিনি বলছেন, 'আমি অনেক চেষ্টা করেছি এ আকস্মিক শিহরণের রহস্য উদঘাটন করব।' যদিও তাঁর ধারণা ছিল যে কোন বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। যেমন নাহজুল বালাগায় আলী (আ.) নিজেই বলছেন, كم اطردت الايّام ابحثها عن مكنون هذا الامر فابى الله الا اخفاءهُ অনেক চেষ্টা করেছি এ রহস্যের গোপনীয়তা উদঘাটন করব, কিন্তু আল্লাহ চাননি, বরং তিনি এটা গোপন রেখেছেন। নিজেই ফজরের আজান দিতেন। সুবহে সাদিকের সময় নিজেই মুয়াজ্জিনের স্থানে দাঁড়িয়ে (আল্লাহু আকবার বলে) উচ্চৈস্বরে আজান দিলেন। সেখান থেকে নামার সময় সুবহে সাদেকের সাদা আভাকে বিদায় জানালেন। তিনি বললেন, 'হে সাদা আভা! হে শুভ্র ভোর! হে প্রভাত! যেদিন থেকে আলী এ পৃথিবীতে চোখ খুলেছিল তার পর এমন কোন ফজর কি আসবে যে, তোমার উদয় হবে আর আলী ঘুমিয়ে থাকবে? অর্থাৎ এবার আলীর চোখ চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বে।' যখন তিনি নেমে এলেন তখন বললেন, خلّوا سبيلَ المومنِ المجاهدِ في الله ذي الكتبِ و ذي المشاهدِ في الله لا يعبدُ غيرَ الواحدِ و يوقظُ النّاسَ الى المساجدِ “এই মুমিন ও মুজাহিদের (আলীর) জন্য রাস্তা খুলে দাও যে গ্রন্থ ও শাহাদাতের অধিকারী, যে একক খোদা ছাড়া আর কারো ইবাদত করেনি এবং মানুষকে মসজিদে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগাতো।" পরিবারের কাউকে অনুমতি দেননি বাইরে যাওয়ার। আলী (আ.) বলেছিলেন, ‰পাখিদের কান্নার পর মানুষের আহাজারি শুনতে পাবে।' স্বাভাবিকভাবেই হযরত যয়নাব কোবরা (আ.), উম্মে কুলসুম (আ.) ও পরিবারের বাকী সদস্যরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় ছিলেন, আজ রাতে কি ঘটতে যাচ্ছে? হঠাৎ এক প্রচণ্ড চিৎকারে সবাই ঘটনা বুঝতে পারলেন। একটি আওয়াজ চারিদিকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল- تهدّمت واللهِ اركان الهدى وانطمست اعلام التّقى و انفصمتِ العروةُ قتلَ ابنُ عمِّ المصطفى قُتِلَ الوصىُّ المجتبى قُتِلَ علىُّ المرتضى قَتَلَهُ اشقى الاشقياء ধর্ম বা দীনের স্তম্ভ ধ্বসে পড়েছে, তাকওয়ার ধ্বজা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, মজবুত বন্ধন ছিন্ন হয়ে পড়েছে, মুস্তাফা (সাঃ)'র চাচাতো ভাই ও ওয়াসীকে হত্যা করা হয়েছে, আলী মোর্তজা(আ.) নিহত হয়েছেন, তাঁকে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হত্যা করেছে। وَ لاَ حَوْلَ وَ لاَ قُوَّةَ إِلاَ بِاللهِ العَلِي الْعَظِيْمِ. প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ ....................... এই দুজনের ভিতরে কথা বার্তা আদান-প্রদান একবার নবীজী (স) মাওলা আলীকে (আ) বললেন, "হে আলী , তোমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে , যা অন্য কারো মধ্যে নেই , এমনকি আমার মধ্যেও নেই" তা শুনে মাওলা আলী (আ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (স), এ আপনি কি বলছেন ! এও কি সম্ভব, আপনি হলেন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন। নবীজী (স) মৃদু হেসে তখন বললেন, "তোমার বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে, যেমন তোমার জন্ম পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হয়েছে, আমার হয়নি । তোমার শ্বশুর সাইয়্যেদুল মুরসালীন, আমার নয় । তোমার শ্বাশুড়ী হযরত খাদীজাতুল কোবরা সিদ্দীকা, আমার নয় । তোমার স্ত্রী হলেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী, আমার নয় । তোমার দুই পুত্র, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার, আমার নয় । তাই তুমি কত ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান । তবে তোমরা সবাই আমা হতে আর আমি তোমাদের থেকে" .................... হাদিসে কুদসী

আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা সম্পর্কে মহানবীর বাণী আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ১. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন : أدِّبُوا أولادَكُم عَلى ثَلاثَ خِصالٍ : حُبِّ نَبِيِّكُم ، حُبِّ أهلِ بَيتِهِ و قِراءَةِ القُرآنِ ؛ তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বৈশিষ্ঠে লালন পালন কর: নবীকে ভালোবাসা, নবীর আহলে বাইতকে ভালোবাসা এবং কুরআন তেলাওয়াত করা।(কান্জুল আম্মাল,হাদীস নং 45409) ২. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: إنَّ فاطِمةَ بَضعَةٌ مِنّي و هِىَ نورُ عَيني و ثَمَرَةُ فُؤادي ؛ يَسوؤُني ما ساءَها و يَسُرُّني ما سَرَّها و إنَّها أوَّلُ مَن يَلحَقُني مِن أهلِ بَيتي ؛ ফাতেমা আমার শরীরের এক অংশ ও আমার চোখের মনি এবং আমার অন্তরের ফল স্বরূপ। যে কেউ তাকে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দিল, আর যে কেউ তাকে খুশি করে সে আমাকে খুশি করলো, ফাতেমা আমার আহলে বাইতের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। (আমলি,শেইখ সাদুক,পৃ:575) ৩. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন مَثَلُ أهلِ بَيتي مَثَلُ سَفينَةِ نوحٍ عليه السلام مَن رَكِبَ فيها نَجا و مَن تَخَلَّفَ عَنها غَرِقَ ؛ আমার আহলে বাইতের উদাহরন হযরত নুহ আ. এর নৌকার মত: যে এই নৌকায় উঠবে সে বেঁচে যাবে আর যে এই নৌকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ডুবে যাবে। (মানাকেবে আমিরাল মুমেনিন আলী রা.খ-1,পৃ-296) ৪. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: أوَّلُ مَن يَرِدَ عَلَيَّ الحَوضَ أهلُ بَيتي ومَن أحَبَّني مِن اُمَّتي সর্ব প্রথম যারা হাউজে কাওসারের পাশে আমার সাথে মিলিত হবে তারা হলো আমার আহলে বাইত এবং আমার কিছু উম্মাত যারা আমাকে ভালোবাসে। (কান্জুল আম্মাল, খ-12, পৃ-100,হাদীস নং -34178) ৫. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: إنّا أهلُ بَيتٍ قَد أذهَبَ اللّه عَنَّا الفَواحِشَ ما ظَهَرَ مِنها وما بَطَنَ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় অশ্লীলতা থেকে আহলে বাইতকে দুরে রেখেছেন। (আল ফেরদৌস, খ-1 ,পৃ-54,হাদীস নং-144) ৬. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: عاهَدَني رَبّي أن لا يَقبَلَ إيمانَ عَبدٍ إلاّ بِمَحَبَّةِ أهلِ بَيتي . আল্লাহ তাআলা আমাকে কথা দিয়েছেন যে, আহলে বাইতকে মহব্বত না করলে কোন বান্দার ঈমান কবুল করবেন না । (এহকাকুল হাক খ:9 পৃ:454) ৭. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: أوَّلُ ما يُسأَلُ عَنهُ العَبدُ حُبُّنا أهلَ البَيتِ . কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম আমার আহলে বাইতকে ভালোবাসার ব্যপারে প্রশ্ন করা হবে। (বিহারুল আনওয়ার, খ:27, পৃ:79 হাদীস নং:18) ৮. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: لا يَتِمُّ الإِيمانُ إلاّ بِمَحَبَّتِنا أهلَ البَيتِ . আমার আহলে বাইতের ভালোবাসা ছাড়া কারও ঈমান পরিপূর্ন হবে না। ( বিহারুল আনওয়ার খ:36 পৃ:322 হাদীস নং:178) ৯. হযরত মুহাম্মাদ স.বলেছেন: مَن صَلّى صَلاةً لَم يُصَلِّ فيها عَلَيَّ ولا عَلى أهلِ بَيتي لَم تُقبَل مِنهُ যে ব্যক্তি তার নামাজে আমার উপর এবং আমার আহলে বাইতের উপর দুরূদ পাঠ করবে না আল্লাহর দরবারে তার নামাজ কবুল হবে না। (মোসতাদরাকুল অসায়েল খ:5 পৃ:15) প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

প্রশ্ন: ফাতেমার ঘরে দুশমনদের হামলার সময় কেন ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা দরজা খুলতে গেলেন? কেন আলী আ. দরজা খুললেন না? উত্তর: উৎসুক হৃদয়ের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। তবে ঐ মূহুর্তে কেন হযরত জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা দরজা খুলতে গেলেন, এ ক্ষেত্রে মনে রাখা আবশ্যক যে, নবীর সাহাবিদের কাছে তাঁর এমন মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ছিল ঠিক যেমন তাদের কাছে নবী স. এর মর্যাদা ছিল। কারণ নবী স. বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানাভাবে এই মহিয়শি নারীর পদ-মর্যাদা তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। যে কারণে পাপিষ্ট এজিদের মত ব্যক্তিও যে কিনা ফাতেমার সন্তানকে হত্যা করার পর শাম শহরের দরবারে কথা বলার সমসয় যখন ফাতেমা আ. এর প্রসঙ্গ আসে, তখন তাকে সম্মান ও মর্যাদার সাথে শ্মরণ করেছিল। তেমনি ভাবে আজকের যুগেও এমন কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে ফাতেমাকে সম্মান দেখাবে না। অথচ ইসলামের ইতিহাসের অধিকাংশ লেখকবৃন্দ আহলে বাইতের ফজিলত বর্ণনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান নি। সারকথা হল, যে নারীকুল শিরোমনির মোকাবেলায় মহান নবী দাড়িয়ে সম্মান দেখাতো ও তাঁর হাতে চুমু খেতো, তার বিষয়ে লেখতে কলমের কালি অপারগতা প্রকাশ করে। মুসলমানদের মাঝে এহেন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থার কারণে কোন মুসলমানের মগজে এমন ধারণা জন্মাতে পারে না যে, কোন মুসলমান তাঁর বিষয়ে বিন্দুমাত্র অবজ্ঞা করবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই ফাতেমা সালামুল্লাহ আলাইহা দরজা খুলতে এসেছিলেন যাতে : ১- নিজ মর্যাদা, ব্যক্তিত্ব ও যুক্তির মাধ্যমে তাদের মন থেকে হামলা করার বাসনা দূর করে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। ২- অথবা তাদের মোকাবেলায় আলীর প্রতিরক্ষায় নিজ সাহায্যর ঘোষণা করতে পারেন। যার মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারবে যে, আলীর এমন মর্যাদা ছিল যে কারণে হযরত ফাতেমা সা. সর্বশক্তি দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন। আর সে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য তাঁর এহেন আগমনটি ছিল চূড়ান্ত দলিল। যদি তখন স্বয়ং হযরত আলী দরজা খুলতে আসতেন, তবে শত্রুপক্ষ আহলে বাইতের ঘরে হামলা করতে আরো বেশি সাহস দেখাতো। আর সে ঘটনায় ফাতেমার ঘরে আগুন দিয়ে আলীকে বন্দী করার পর ওজড় দেখিয়ে বলতো যে, হযরত ফাতেমা আলীর পক্ষে ছিল না। যদি তিনি আলীকে বন্দী করতে বাধা দিতো, তবে আমরা তাকে বন্দী করতাম না। এসব বিষয় বিবেচনা করেই হযরত ফাতেমা যাহরা সা. তাদের জন্য এভাবে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করেন। যাতে আল্লাহর দরবার ও রাসূলের কাছে জবাবদিহি করতে না হয় এমনকি ইতিহাস ও মুসলমানদের কাছে সে ঘটনায় যাতে কোন ওজড় না থাকে। তাই তিনি ব্যাক্তিগত উদ্দোগেই প্রতিরোধের ভূমিকায় নামেন যাতে তাদের বিরুদ্ধে একদিকে আল্লাহর হুজ্জাত সম্পন্ন হয় এবং অন্যদিকে আহলে বাইতের শত্রুপক্ষের নোংড়ামির চিত্র ইতিহাসে লেখা থাকে এবং বিশ্ববাসির কাছে তা সুস্পষ্ট হয় প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর ফজিলত ও সংক্রান্ত হাদিস পর্ব ৩ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২

ইমাম আলী আঃ ফজিলত ও সংক্রান্ত হাদিস প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি পর্ব ২ ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১)

হিকমতের অধিকারী ---- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে । আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ । সূত্র - হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪ / আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮ / কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২ । একই নূর ---- মুহাম্মাাদ (সাঃ) ও ইমাম আলী (আঃ) হলেন - একই নূর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম । তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন । তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হল আলী । সূত্র - ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০ / আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) অাদরিকনী আদরিকনী , সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাাদ ওয়া আলে মুহাম্মাাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মাাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ

ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস পর্ব ১ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯)

♦♪♦♪♦♪♦♪ হযরত আবু বকর যুদ্বে গেলেন না - ইবনে আবিল হাদিদ বর্ণনা করেন - নবী করিম (সাঃ) হযরত আয়েশার বাড়িতে ছিলেন । হজরত বেলালের আজানের শব্দ নবীজী (সাঃ) এর কানে আসে । নবী করিম (সাঃ) বলেন যে , আমি অত্যন্ত দুর্বল । মসজিদে যেতে পারব না । যে কোন একজনকে নামাজ পড়াতে বল । তখন তাঁর নিকট খবর আসে যে , হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর মসজিদে আছেন । এবং হযরত আবু বকর নামাজের ইমামতি করছেন । এই খবর শুনে মহানবী (সাঃ) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন । কেননা এ সময়ে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের মসজিদে থাকার কথা ছিল না । কারন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে হযরত উসামার নেতৃত্বে গঠিত সেনাবাহিনীতে গিয়ে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন । অতএব হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের এ সময় মসজিদে থাকার অর্থ হচ্ছে নবীজী (সাঃ) এর নির্দেশকে পুরোপুরি ভাবে অমান্য করা । যারা উসামার সেনাবাহিনীতে যেতে অমান্য করেছে তাদের সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন - لَعَنَ اللَّهُ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْ جَيْشِ أُسَامَة যারা উসামার বাহিনীকে অমান্য করেছে তাদের ওপর আল্লাহর লানত বা অভিসম্পাত বর্ষিত হোক । সূত্র - শারহে নাজুল বালাগাহ , খন্ড - ৯ , পৃ - ১৯৭ , খন্ড - ১৩ , পৃ - ৩৩ । মহানবী (সাঃ) তখন আমিরুল মুমিনিন আলি (আঃ) ও ফাজল ইবনে আব্বাসকে বলেন , আমাকে এখুনি মসজিদে নিয়ে যাও । তাঁরা মহানবী (সাঃ) কে মসজিদে নিয়ে যান । মহানবী (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করে হযরত আবু বকরকে মেহরাব হতে সরিয়ে দেন । তিনি (সাঃ) নিজেই নামাজের ইমামতি করেন । মহানবী (সাঃ) অত্যন্ত দুর্বল থাকার কারনে বসে থেকে নামাজ পড়ান । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজের পর বক্তব্য দান করেন । তিনি সাহাবাগণকে তাঁর ইন্তিকালের পর ফেতনা সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে সাবধান করে দেন । তিনি সেখানে হাদিসে সাকালাইন পুনরায় নর্ণনা করেন - إنّي تارك فيكم الثقلين كتاب اللّه و عترتي لن تضلّوا ما إن تمسّكتم بهما অর্থাৎ আমি তোমাদের মাঝে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি , একটি হচ্ছে আল্লার কিতাব (আল কোরআন) অপরটি হচ্ছে আমার ইতরাত (আহলুল বাইত) । এই দুইটিকে যদি দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । সূত্র - আল মুরশেদ ফি ইমামাতি আলি ইবনে আবি তালেব আলাইহিস সালাম, পৃঃ ১১৬ / সহীহ তিরমিজি , খন্ড - ৬ , হাদিস - ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড - ১১ , হাদিস - ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড - ২ , পৃষ্ঠা - ১৮১ , ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে

গাদিরে খুম পর্ব শেষ ঘটনা ও ভাষন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে । আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা"। (খাসায়েসে নেসায়ী ২৩; মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮; আল মু'জামুল কাবীর-তাবরানী ১৮:১২৮/২৬৫; হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ৬:২৯৬)। **নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ্‌র কসম যাহার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যাক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে সে জাহান্নামী'' । (সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১০৪; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮)। হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমীন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । রাসূলের (সাঃ) সাহাবাগন ইমাম আলী (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন । আবু যার গিফারী (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), হতে বর্ণীত যে, আমরা সাহাবাগন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহিহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৬০ মিশর প্রিন্ট; আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭, এমদাদিয়া লাইঃ; সহী মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাঃ-১৪৪ ইসঃ ফাঃ বাঃ; মুসনাদে হাম্বাল, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৮৪; সুনানে নাসাঈ, ৮ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ মিশর প্রিন্ট; সহিহ তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ (মিশর); ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫৫ (মিশর); হযরত আলী, পৃঃ-১৪, এমদাদিয়া লাইঃ)। **রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি জ্ঞানের নগরী, আলী সেই নগরীর প্রবেশদ্বার, যে কেউ জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন সেই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে । (সহীহ বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ-৬৩১; সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৩; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-১৭১। তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৭৯; আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী তাঁর লিসান গ্রন্থে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ' এই হাদীসের বহুবিধ সুত্র রয়েছে, হাকেম তাঁর মুস্তাদারাক গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন । তিনি এ ব্যাপারে তাঁর রায় পেশ করতে গিয়ে বলেন এ হাদীসটি বিশুদ্ধ ।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল হোসাইন আহমদ আল আমিনী আন নাজাফী, তাঁর আল গাদীর গ্রন্থে উক্ত হাদীসের বরননাকারীদের একটি তালিকা দিয়েছেন যাদের সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৩ জন। আল গাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৬১-৭৭)। **রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একজন উত্তরসুরী থাকে, আর "আমার উত্তরসুরী হচ্ছে, আলী ইবনে আবু তালিব।" (আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪৬; তারিখে বাগদাদ, ১১তম খণ্ড, পৃঃ-১৭৩; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৫০, কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-১৫৮; ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৩৩, তারিখে ইবনে আশাকীর শাফায়ী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৫; শাওয়াহেদুত তানজিল, ২য় খণ্ড, পৃঃ-২২৩)। **হযরত আবু হুরাইরা, হযরত সালমান ফারসী থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত সালমান ফারসী বলেন, " ইয়া রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌ যে নবীকেই প্রেরন করেছেন, তাঁকেই বলে দিয়েছেন যে, কে তাঁর উত্তরসুরী হবে । তবে কি আল্লাহ্‌ আপনাকেও বলেছেন যে, কে আপনার উত্তরসুরী হবে ? " নবী করিম (সাঃ) বললেন, " আমার উত্তরসুরী, আলী ইবন আবু তালিব হবে।" (শারহে বোখারী ইবনে হাজার আসকালানী, খণ্ড-১৮, পৃঃ-১০৫)। **রাসূল (সাঃ) আলী কে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এ হলো আমার ভাই আর আমার পরে আমার উত্তরসুরী এবং তোমাদের খলিফা, তাঁর নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তাঁর আনুগত্য করো ।(তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩১; শারাহ নাহজুল বালাগা, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-২১১ (ইবনে হাদীদ), আল কামিল ফিত তারিখ, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৬৩; কানজুল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-১৩১; মায়ালিমুত তানযিল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৭৯ । **হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মান আবগাদানা আহলিল বাইতি ফা হুয়া মৃনাফিকুন । অর্থাৎ- যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা তো কপট, মুনাফিক ।( ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬; মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১; তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর : আল্লামা সুয়ুতী, ৭ম:৩৪৯; শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪) **হযরত যিরর (রা:) হতে বর্নিত, হযরত আলী (আ:) বলেছেন; আমার নিকট উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লামের অঙ্গীকার হচ্ছে- কেবল মুমিনই তোমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। (সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-৫০১৭, ইসলামিক ফাঃ বাঃ) **হুজুর পাক(সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আলীকে গালী দিল, সে রাসূল (সাঃ) কে ই গালি দিল”। (বুখারী, তিরমিজি, মিশকাত ৫৮৪২ নং হাদিস) “আলী কে যারা মহব্বত করে তারা মুমিন”। (আহামদ তিরমিযী, মিশকাত ১১ তম খন্ড ১৫৬ পৃ:) “আলী এর প্রতি মহব্বত করে যারা তারা মুমিন, যারা না করে তারা মুনাফিক”। (মিশকাত ১১তম খণ্ড, পৃ: ১৫৬) 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি।

গাদিরে খুম পর্ব ২ ঘটনা ও ভাসন মহানবীর আদেশএসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:- 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫। আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো। (তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)।

গাদিরে খুম পর্ব ১ ঘটনা বা ভাসষ দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর আহবানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُ 'হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও, যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) রাসূলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুর আলামিনের। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন আর অপরটি হচ্ছে আমার পবিত্র আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দুটোকে শক্ত করে আকড়ে ধর তবে কখনোই পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ হাদিসটি সামান্য শব্দের তারতম্যভেদে বিভিন্ন বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- সহিহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ:-১২২, দারুল যিল, বৈরুত; সহিহ তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ:-৬৬৩, বৈরুত; মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪, বৈরুত; কানযুল উম্মাল, ১ম খণ্ড, পৃ:-১৮৭; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪৮, বৈরুত। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)এর হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো।”

প্রশ্ন : আমরা জানি যে, নবী-রাসূলদের নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' দোয়াটি পড়া হয়। কিন্তু মুসলমানরা হযরত আলী (আঃ)সহ তাঁর বংশের অনেকের নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে আপনাদের ব্যাখ্যা জানতে চাই। ---- আবু তাহের, নওমহল, মোমেনশাহী। উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমরা প্রথমেই একটা বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আর তা হলো- 'আলাইহিস সালাম' যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান, হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি। আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে, কোনো মুসলমানের নামের পর "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম? আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের, পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ٣٦:٥٨ ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।' অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে। "আলাইহিসসালাম" শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এবার আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরছি: ১-সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের " কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবেহ" অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) "বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু" শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমার নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের " বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী" শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষণীয়। ২- একই ধরনের ব্যবহার রয়েছে সুন্নি মাজহাবের আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি'র "ফাজলি ফাতিমাত্বা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১ ) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই "সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। একই হাদীস গ্রন্থের "মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (সা.) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)'র নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু "রাজিয়াল্লাহু আনহু" বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। "রাজিয়াল্লাহু আনহু" শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক। ৩- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইমাম ফাখরে রাজিও শিয়া মুসলমানদের ইমাম বা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর "আলাইহিসসালাম" দোয়াটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.) কয়েকটি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সমান সুবিধা বা সম্মানের অধিকারী। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন "আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম" শব্দের মাধ্যমে। ৪- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত "আলে ইয়াসিন" শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (দ:) বা মুহাহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন বিশ্বনবী (সা.)-এরই অন্যতম নাম। ৫-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে " আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ"। সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা। তাই এটা স্পষ্ট বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পরে বা তাঁদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা "সালাওয়াতুল্লাহ আলাইহি" বলা একটি ধর্মীয় নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নাত।

এরকম জালিয়াতির শেষ কোথায় আর কিভাবে এরা এত ঊর্ধ্বে স্থান পেল যারা যারা স্থান পেল জালিয়াতি করে আশ্রায় মোবাশারায় জোরপূর্বক মিথ্যা বানোয়াট তাদের উপরে বেশুমার লানত কিভাবে আশারা মোবাশশার হলেন — একখান খোলা প্রশ্ন ছিল —- মহান আল্লাহ সকল ফেরেশতাগনকে আদেশ করলেন এইমর্মে যে , হযরত আদম (আঃ) কে সেজদা কর । আদেশমত সকল ফেরেশতা সেজদা করলেন কিন্ত জনাব আযাযীল ওরফে ঈবলীশ সেজদা করল না । আল্লাহর সুস্পষ্ট আদেশ লংঘন করার জন্য ঈবলীশকে বিতাড়িত করে দেওয়া হল আল্লাহর দরবার থেকে । শুধু বিতাড়িত করা হল না , ঈবলীশকে চিরজীবনের জন্য মহালানতি এবং চিরজাহান্নামী বলে ঘোষনা দেয়া হল । এবং বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ আর কখনই মহান আল্লাহর দরবারে প্রবেশ করতে পারে নি । বিষয়টি খুবই পরিস্কার যে , আল্লাহ কতৃক যে বিতাড়িত হয় সে লানতি এবং জাহান্নামী বলে ঘোষিত হয় । উপরের বিষয়টি পবিত্র কোরআনে অনেক সুরাতেই বিস্তারিত বলা আছে । পাঠক , এবারে আসুন ইতিহাসের আরেক পর্বে । ঈবলীশ তো আল্লাহর দরবার থেকে গলা ধাক্কা খেল বা বিতাড়িত হল । ঐতিহাসিক এই ঘটনারই অনুরুপ আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল শেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর দরবার বা গৃহে । দ্বিতীয় এই ঘটনাটি ঘটেছিল খুব সম্ভবত ২৪ শে সফর ১১ হিজরী অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে । ঘটনার সারসংক্ষেপ – ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে রাসুল (সাঃ) ওনার গৃহে শুয়ে আছেন । শরীর খুবই অসুস্থ । গৃহে অবস্থানরত সকলেই বুঝতে পারলেন যে , রাসুল (সাঃ) এর অন্তিম সময় খুবই সন্নিকটে । যে কোন মুহূর্তে রাসুল (সাঃ) আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন না ফেরার দেশে । ঘরভর্তি লোকজন বিশেষ করে রাসুল (সাঃ) এর বিখ্যাত কয়েকজন সাহাবা উপস্থিত আছেন । রাসুল (সাঃ) তখন পরিস্কার ভাবে আদেশ দিলেন যে – ওসিয়তনামা লেখার জন্য আমাকে খাতা ও কলম দাও । তোমাদের জন্য আমি ওসিয়তনামা লিখে দিয়ে যেতে চাই যে , আমার পরে তোমরা কখনই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না । — রেখে গেলাম কোরআন ও আহলে বায়েত – এই দুইটি সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকবে , তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । মূলত এই কথাগুলি লিখিত ওসিয়তনামা করার জন্য মহানবী (সাঃ) খাতা কলম চেয়েছিলেন । সংক্ষেপে এটাকেই হাদিসে কিরতাস বলে । প্রশ্ন – ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য মহানবী (সাঃ) কে খাতা কলম দেয়া হয়েছিল ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – নবীজী (সাঃ) এর সুষ্পষ্ট আদেশের পরেও খাতা কলম দেওয়া হয় নি । প্রশ্ন – ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য কেন কি কারনে খাতা কলম দেওয়া হয় নি ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – হযরত ওমরের প্রচন্ড বিরোধিতার জন্য খাতা কলম দেওয়া সম্ভব হয় নি । এমনকি মহানবী (সাঃ) এর মুখের সম্মুখে খাতা কলম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন হযরত ওমর । প্রশ্ন – খাতা কলম না দিয়ে হযরত ওমর তখন মহানবী (সাঃ) কে কি বলেছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – হযরত ওমরের কুখ্যাত উক্তি — রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট । প্রশ্ন – হযরত ওমরের এহেন আচরনের জন্য মহানবী (সাঃ) কি করেছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – মহানবী (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত ওমর সহ তার দলবলকে নবীগৃহ থেকে বের করে দিয়েছিলেন । প্রশ্ন – এত বড় পাপ কর্মের প্রেক্ষিতে হযরত ওমর কি নবীজী (সাঃ) এর কাছে পরে এসে মাফ চেয়েছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – এত বড় পাপ কর্ম করার পরে এবং মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ শোনার পরেও হযরত ওমর বনু সকীফাতে প্রায় চার দিন ব্যস্ত ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর শূন্য আসনে কে ক্ষমতাসীন হবে – সেটা নির্ধারনে । খলীফা নির্বাচন শেষে যখন হযরত ওমর নবীগৃহে আসলেন ততদিনে মহানবী (সাঃ) না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন । অতএব হযরত ওমরের পক্ষে মহানবী (সঃ) এর নিকট মাফ চাওয়ার কোন সুযোগ ঘটে নি । তথ্য সূত্র – সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক ইত্যাদি । দয়া করে পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত মনযোগ দিয়ে পড়ুন এবং নীচে উল্লেখিত মূল প্রশ্নটি সম্পর্কে কিছুটা চিন্তা ভাবনা করুন । “ – একজন মুমিন পুরুষ এবং একজন মুমিন নারীর অধিকার নেই , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন একটি বিষয় সিদ্বান্ত নিয়েছেন , তাঁদের বিষয় অন্য কোন কিছু পছন্দ করার এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে নিঃসন্দেহে [সে] পথভ্রষ্ট হয়েছে সুস্পষ্ট ভুলের ভিতরে — “ । সুরা – আহযাব / ৩৬ । “ — রাসূল তোমাদেরকে যা দেন , তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন , তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা — “ । সূরা – হাশর / ৭ । প্রিয় পাঠক , এখন মূল প্রশ্নটা হচ্ছে যে , মহান আল্লাহর দরবার থেকে আল্লাহ কতৃক বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ চিরজাহান্নামী হয়ে গেল । তাহলে একই ঘটনার অনুরুপ ঘটনা – আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তি কিভাবে আশারা মোবশশারা , রাঃআনহু মার্কা সনদ পায় ? একই কর্মে দুই ধরনের প্রতিফল কিভাবে সম্ভব ! প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

আসুন জেনে নিই হযরত আলী (আঃ) কিছু মহা মূল্যবান বাণী ১। লোকের যে সমস্ত দোষ ত্রুটির উপর আল্লাহ পর্দা দিয়ে রেখেছেন তা তুমি প্রকাশ করার চষ্টা করো না। ২। অজ্ঞদেরকে মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই মৃত অবস্থায় কাল যাপন করতে হয় এবং সমাধিস্থ হবার পূর্বেই তাদের শরীর কবরের আঁধারে সমাহিত; কেননা তাদের অন্তর মৃত, আর মৃতের স্থান কবর। ৩। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের অন্তরে যে বিদ্বেষাগ্নির জন্ম হয়, তা অত্যাচারীকে ভস্ম করেই ক্ষান্ত হয় না, সে আগুনের শিখায় অনেক কিছুই দগ্ধীভূত হয়। ৪। আপনার দ্বারা নেক কাজ সাধিত হলে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করুন এবং যখন অসফল হবেন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ৫। সৎ কাজ অল্প বলে চিন্তা করো না, বরং অল্পটুকুই কবুল হওয়ার চিন্তা কর। ৬। পাপের কাজ করে লজ্জিত হলে পাপ কমে যায়, আর পুণ্য কাজ করে গর্ববোধ করলে পুণ্য বরবাদ হয়ে যায়। ৭। দুনিয়াতে সব চেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করা আর সব চেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা । ৮। তুমি পানির মত হতে চেষ্টা কর, যে কিনা নিজের চলার পথ নিজেই তৈরী করে নেয় ।পাথরের মত হয়োনা, যে নিজে অন্যের পথরোধ করে | ৯। গোপন কথা যতক্ষণ তোমার কাছে আছে সে তোমার বন্দী । কিন্তু কারো নিকট তা প্রকাশ করা মাত্রই তুমি তার বন্দী হয়ে গেলে । ১০। ছোট পাপকে ছোট বলিয়া অবহেলা করিও না, ছোটদের সমষ্টিই বড় হয় । ১১। নীচ লোকের প্রধান হাতিয়ার অশ্লীল বাক্য । ১২। পুণ্য অর্জন অপেক্ষা পাপ বর্জন শ্রেষ্ঠতর । ১৩। মানুষের কিসের এত অহংকার, যার শুরু একফোটা রক্তবিন্দু দিয়ে আর শেষ হয় মৃত্তিকায় । ১৪। সবচেয়ে সাহসী ও বীর্যবান ব্যক্তি হলো সেই যে স্বীয় কামনা বাসনার খেয়াল খুশির উপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম। ১৫। হযরত আলী (রাঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে এক ব্যক্তি অনাহুতভাবে তাকে গালাগাল দিতে শুরু করল। হযরত আলী লোকটির কাছে গিয়ে বললেন, ভাই! তুমি আমার সম্পর্কে যা কিছু বললে তা যদি সত্য হয় তবে আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন আর যদি তোমার এই সমস্ত কথা সত্য না হয় তবে আল্লাহ পাক যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। ১৬। প্রকৃত দ্বীনদারী পার্থিব স্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমেই সম্ভব। ১৭। কারো সাথে বাক্যলাপ না হওয়া পর্যন্ত তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করোনা। ১৮। কেউ স্বীকৃতি না দিলেও তুমি তোমার সদাচরণ অব্যাহত রাখবে। ১৯। বন্ধুত্ব করার মত কোন যোগ্যলোক পাওয়া না গেলেও অযোগ্যদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যেও না। ২০। অল্প বিদ্যায় আমল বিনষ্ট হয়। শুদ্ধ জ্ঞানই আমলের পুর্ব শর্ত।

*****শানে পাক পাঞ্জাতন***** পাক পাঞ্জাতন কি..পাক মানে পবিত্র । পাঞ্জা হলো পাচ এবং ”তন” অর্থ শরীর বা দেহ । সুতরাং পাক-পাঞ্জাতন হলো পবিত্র পাঁচ দেহ মোবারক । তারা কারা.. তারা হলেন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্রাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, মওলা আলী আলাইহিস সালাম, মা খাতুনে জান্নাত ফাতিমা আলাইহিস সালাম, ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম । সৃষ্টির আদিতে পাক পাঞ্জাতনই হলো নুরে মোহাম্মদী সাল্লাল্রাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম । আর এই নুরে মোহাম্মদী হতে পঞ্চ নুরের মাধ্যমে সারা কুল কায়েনাত সৃস্টি। বিস্তারিত….. মানুষ স্রষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব কারণ প্রত্যেক মানুষ মোহাম্মদী বোরকা/লেবাছ পরিহিত অবস্থায় পাক-পাঞ্জাতনের নুরের জ্যোতি নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করেছে কেউ তা উপলব্ধি করতে পারে আবার কেউ পারেনা কারণ আমি কে.. কোথায় থেকে আসলাম ..আবার কোথায় যাব.. এ প্রশ্নের উত্তর খোজে পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সৃষ্টির গোড়াতে যেতে হবে কারণ দুর থেকে গাছের গোড়ায় কি আছে তা দেখতে পারা যায় কিন্তু গভীরভাবে জানা যায়না আর গভীর ভাবে না জানতে পারলে জীবনটাই বৃথা রয়ে যায় তাই চর্ম চক্ষু বা দুনিয়ার জীবনে নবী মোহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোজতবা (সাঃ)- এর তেইশ বা তেষট্রি বৎসরের সমগ্র জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে চলে না । হযরত আদম (আঃ) এর জন্মের বা সৃষ্টির বহু পূর্বে যখন আদম (আঃ) পানি ও কাদায় ছিলেন, তখনও তিনি নবী । আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে । আমাদের এই পৃথিবী জন্মের পূর্বে আমাদের নিশ্চয়ই এক নিথুত সৃষ্টি ছিল । যে নবীর উম্মত আমরা, যাঁর নূর হতে জগতসমূহের সৃষ্টি হয়েছে, নিশ্চয়ই আমরা ঐ নূরের জন্মের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত । তা জানা কি আমাদের কর্তব্য নয় ? যে নূরের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিতে আগমন এবং যে নূরের দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন সেই উৎস পাক পাঞ্জাতনকে না জানা কত বড় মূর্খতা এবং বোকামি তা বলা অধম যোগ্য রাখেনা ।হাদিসে কুদসি থেকে জানতে পারা যায় স্রষ্টা ছাড়া যখন কোনো কিছু বিদ্যমান ছিল না অর্থাৎ আল্লাহপাক একা ছিলেন, আল্লাহ পাকের কুন বা হও আদেশবলে তাঁর নিজ নুর হতে নুরে মোহাম্মদী সৃষ্টি করেন । উক্ত নুরে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করে ময়ুর রুপে ( ময়ুর=রুপক শব্দ ) সাজারাতুল একিন নামক চার ডাল বিশিষ্ট একটি গাছে বসিয়ে রাখেন । উক্ত ময়ুর সত্তর হাজার বছর আল্লাহপাকের তজবিহ পাঠ করতে থাকে । সেই পিন্ডময় রূপাকৃতির প্রতি আল্লাহপাক অপলক নয়নে বহুকাল মজ মোঃ জাহিদ হুসাইন

স্রষ্টা কে পাওয়ার উপায় কি? মাথার জ্ঞান দিয়ে নয় ! মনের আলো দিয়ে তাকে পাওয়া যায়। “যাব মে না বাঁচি, না মেরা কুচ বাঁচা” ! তাহলে কিসের সাথে বন্ধন ! যে তোমাকে খোঁজে-সে তোমাকে পায়-না। আবার যে তোমাকে খোঁজেই না সে তোমাকে কখনই পাবেনা। না মসজিদে এ যাওয়ার প্রয়োজন, না কোন দরগায় ! তুমি যেখানেই আছো তোমার রব সেখানেই আছে-তুমি তোমার মনের মধ্যে বসে দেখ-তোমার রব সেখানেই আছে এবং সেখানেই বসে ইবাদত করো। কুরবানী দিতে হয় কিসের ? নিজের ভিতরের পশুত্বের ! ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসার জন্যই। “যাব মে না বাঁচি, না মেরা কুচ বাঁচা” ! বেঁচে আছে শুধুই জিকির, বেঁচে আছে শুধুই ফিকির। সেই রাতের কথা বলবো-যে রাতে পৃথিবী আর সূর্য নাচতেছিল আর আকাশের তাঁরা গুলো দেখতে ছিল! আমি আমার সূর্যের প্রদক্ষিন করতেছিলাম এবং সূর্য নিজেই নিজের প্রদক্ষিন করতেছিল । রাত যতক্ষন আছে মশাল ততক্ষন জ্বলবেই একটা মশাল নিভে গেলে আরেকটা মশাল জ্বলে উঠবেই । শেষে সকলের ভেতরে পরমাত্মাকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করছি, আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!! প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔 #উহুদের_ময়দানে #মোহাম্মদ(আ) এর দাঁতভাঙ্গার জন্য #আবু_বকর দায়ী।তাকে বলা হয়েছে যুদ্ধ শুরু করলে পিচু হটা যাবে না। বিপক্ষ দলের বিশাল শূ্ণ্য বাহীনি দেখে যুদ্ধের মাঠ থেকে #আবু_বকর #উমর #উসমান মোহাম্মাদ(আ) কে একা পেলে #পালিয়ে গিয়েছে। তখন কাফেরদের অর্তকৃত হামলায় #মোহাম্মাদ(আ) #দাঁত ভেঙ্গে যায়।

ইলমে তাসাউফ অর্জন করা এবং একজন হক্কানী শায়েখের কাছে বাইয়াত হওয়া ফরজ ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৮ ১। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৫৬) ২। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না। ৩। আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯) ৪। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাক-এর সূরা তওবার ১১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও। এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ গণকেই বুঝান হয়েছে। ৫। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “আল্লাহ পাক এর ও উনার রাসুলের ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা (উলিল আমর) আদেশদাতা, তাদের অনুসরণ কর”। ৬। আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”।( সুরা মায়িদা ৩৫)  ৭। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ২৮ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বল্বী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৮। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোস্ত আছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে কলব”। (বুখারী শরীফ) ৯। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।( সুরা কাহফ ২৮) ১০। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “সাবধান! আল্লাহ পাকের যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”।সুরা রাদ ২৮) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের কলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাকের যিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাকের যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।  ১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইল্ম অর্জন করা ফরয। (বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত) ১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বল্বী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইল্ম। (২) যবানী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক, উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল। (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব) সকলেই একমত যে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। ১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ আছে যে, “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”। ১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখ্তারে উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”। উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল, উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। ১৫। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব) ১৬। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)। তাই, ইসলাম কখনও বলে না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহর কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা হয়েছে। ১৭। আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭

সূরা আদ-দুহা (الضحى), আয়াত: ৭ وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدَىٰ উচ্চারণঃ ওয়া ওয়াজাদাকা দাল্লান ফাহাদা-। অর্থঃ তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন

মুয়াবিয়া-পরিবার vs নবি-পরিবার" রসুলের সাহাবা বলে কথিত কুখ্যাত মুয়াবিয়া আজকের এই দিনে খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমার স্বামী, ইমাম হাসান-হোসাইনের পিতা, রসুলের স্থলাভিষিক্ত মওলা- হযরত আলী (আ.)-কে গুপ্তঘাতক দ্বারা হত্যা করেন (উল্লেখ্য যে, আঘাতের পর মাওলা প্রাণ ত্যাগ করেন ২১ রমজান) । আমরা থুতু মারি সেইসব দরবার ও পিরের মুখে- পাকপাঞ্জাতনের অন্যতম সদস্য মওলা আলীকে হত্যা করার পরেও যারা গুন্ডা মুয়াবিয়াকে সাহাবা মনে করে এবং নবি-বংশের জাত-শত্রু এই কুচক্রী পরিবারের পূজা অর্চনা করে । কোরান মতে: একজন মোমিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করে সে কাফের; আর আলী (আ.) শুধু মোমিন নন বরং মোমিনগণের মওলা (সূত্র: হাদিস); কিন্তু এই মুয়াবিয়া সেই মওলা আলীর বিরুদ্ধেই তার বিশাল গুন্ডাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন, যা সিফফিনের যুদ্ধ বলে পরিচিত । উল্লেখ থাকে যে, মহানবি বলেগিয়েছিলেন: এই আম্মার (বেহেশত যার প্রত্যাশী) একটা বিদ্রোহী দলের হাতে শহীদ হবেন । রসুলের প্রিয় সাহাবী হযরত আম্মার মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধে শহীদ হন । মৃত্যুর সময় আম্মারকে এক ফোটা পানিও দেয়া হয় নাই । কোরান ঘোষণা করছে: শুধুমাত্র একজন মোমিনকে হত্যা করলেই অনন্তকাল তাকে জাহান্নামে থাকতে হবে এবং আল্লাহর লানত থাকবে তার উপর (৪:৯৩)। মুয়াবিয়া যে একজন নির্ভেজাল কাফের-মোনাফেক ও জাহান্নামী তা কোরান স্বাক্ষী দেবার পরেও যে সব হারামজাদারা মুয়াবিয়ার প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে- আমরা লাথি মারি তাদের মুখে । একমাত্র মুয়াবিয়ার পরিবারই নবি বংশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শয়তানী করে; নিম্নে তাদের কু কর্মের ছোট একটি তালিকা দেয়া হলো: ১. মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান মহানবির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন । ২. মুয়াবিয়ার মা হিন্দা যুদ্ধের মাঠে রসুলের চাচা হযরত আমীর হামজার কাচা কলিজা চিবিয়ে খান । ৩. তাদেরই সুযোগ্য পুত্র কুখ্যাত মুয়াবিয়া ফাঁদ পেতে হযরত আয়েশাকে হত্যা করে মাটিতে পূতে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে আড়াল করেছিল; তাই ইতিহাসে হযরত আয়েশার কবরের কোন অস্তিত্ব নেই । ৪. হযরত উসমান হত্যার পিছনেও বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার হাত ছিল, তাই সে ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্রাট হবার পরেও উসমান হত্যার বিচার করে নি । ৫. নবির আশেক হযরত উয়ায়েস করণীকেও বৃদ্ধ বয়সে প্রাণ দিতে হয় মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই । ৬. ছেলে ইয়াজীদের সাথে বিবাহ দেবার চুক্তির ভিত্তিতে মুয়াবিয়া জায়েদাকে দিয়ে ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে পুত্র ইয়াজীদকে গদিতে বসানোর রাস্তাকে পরিষ্কার করেন । ৭. দুর্বৃত্ত মুয়াবিয়া ইমাম হোসাইনকে হত্যার সকল ষড়যন্ত্র ও নীল নক্সা অঙ্কন করে যান, যা ইয়াজিদের প্রতি তার একটি চিঠিতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে । ৮. বদরী সাহাবী হযরত ইবনে আদীকে তাঁর ১২ জন সঙ্গী সহ জীবন্ত কবরস্থ করেন এই মুয়াবিয়া । এ জঘন্য কু কর্মের প্রসঙ্গে ইমামুল আউলিয়া হযরত হাসান বসরী (রা:) বলেন: মুয়াবিয়ার পরকাল ধ্বংসের জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, সে রাছুল (সা:)-এর বিশিষ্ট সাহাবী হাজর বিন আদী (রা:) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে বিনা দোষে হত্যা করেছিল । ৯. মুহাম্মদ বিন আবুবকর, মালিক আশতার মুয়াবিয়ার হত্যার শিকার । দুর্বৃত্ত এই মুয়াবিয়া কত জনকে যে গুপ্ত হত্যা করিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই । ১০. নবি বিদ্বেষী পরিবারের অন্যতম সদস্য খুনি মুয়াবিয়া প্রতি জুমার দিন খুৎবায় নবি-পরিবারকে গালাগালী প্রথা চালু করেছিল; আগে খুৎবা পাঠ করা হতো নামাজের পর, সে কারণে অনেক মুসল্লীরাই গালাগালী শ্রবণ না করে চলে যেতো, তাই মুয়াবিয়া নির্দেশ দেন যেন খুৎবা নামাজের আগেই আরম্ভ করা হয় যাতে করে খুৎবায় নবি-বংশের বিরুদ্ধে গালাগালী শুনতে মুসল্লিগণ একপ্রকার বাধ্য থাকেন ।। মুয়াবিয়ার কোন পিতৃপরিচয় নেই, কারণ তার মা তাকে পেটে ধরা অবস্থায় আবু সুফিয়ানের সাথে ঘর-সংসার শুরু করে, আর বিবাহের পূর্বে হিন্দা যখন পতিতালয় পরিচালনা করতো তখনই মুয়াবিয়া তার পেটে এসেছিল । এ জন্যই বোধহয় এই কুলাঙ্গার নানা ষড়যন্ত্র করে ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং জন্ম দিয়ে গেছে আরেক কুলাঙ্গারের । নবি-পরিবারের প্রতি মুয়াবিয়া-পরিবারের এত শত ষড়যন্ত্রের ডকুমেন্ট থাকার পরেও যারা সেই অভিশপ্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, সেই সব কুলাঙ্গারদের গোলামী করে আমরা জুতা মারি তাদের মুখে; কেননা তারা আল্লাহ ও নবির শত্রু, পাকপাঞ্জাতনের শত্রু । মোনাফেকদের সর্দার মুয়াবিয়া সম্পর্কে মুসলিম সমাজের ভুল ধারণা সমূহ অবসান হবার স্বার্থে এবং বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার মুখোশ উন্মোচনের প্রয়াসে এই পোস্টটি সবাই শেয়ার করার মাধ্যমে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ রইল ।।

গাদীরে খুমের ঘটনা হিজরী দশম বছর। রাসূল (সা.) বিদায় হজ্ব সম্পন্ন করেছেন। এ নশ্বর পৃথিবী থেকে শেষ বিদায়ের জণ্যে প্রহর গুনছেন। প্রথম থেকে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এ বৎসর তিনি শেষ হজ্ব সমাপন করবেন। চতুর্দিক থেকে নবীর সাথে হজ্বে অংশগ্রহনের জন্যে অশংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিলো। ঐতিহাসকিদের মধ্যে হাজীদের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। সর্বাপরী ৯০ হাজার থেকৈ ১২৪ হাজার মানুষের সমাগম ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এ বৎসর তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দান করেন যা“ বিদায় হজ্বের ভাষণ” নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। হজ্ব সমাপ্ত করে তিনি আসহাবকে সাথে নিয়ে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন। প্রচন্ড গরম,মাটি ফেটে চৌচির। পথিমধ্যে‘ গাদীরে খুম’ নামক চৌরাস্তায় এসে তিনি থেমে গেলেন। এখানেই ঘটেছে সেই ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ গাদীরে খুমের ঘটনা। শীয়া - সুন্নী নির্বিশেষে সকল এতিহাসিক ও হাদীস বিশারদ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তাদের স্ব - স্ব গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) তার কয়েকজন ঘনিষ্ট সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন এ স্থানে সকলকে সমবেত করতে। যারা এখনো পিছে পড়ে আছে তাদের জন্যে অপেক্ষা করতে বললেন। যারা সিরিয়া ও ইরাক অভিমুখে এ চৌরাস্তা থেকে রওয়ানা হয়ে গেছেন তাদেরকে এ স্থানে ফিরে আসার নির্দেশ দিলেন। উত্তপ্ত বালুকাময় পথঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল কিছুক্ষনের মধ্যেই। নবী (সা.)- এর জন্যে আসন প্রস্তুত করা হল। আসনের উপর সামিয়ানা টাংগানো হল। আসনটি এমন ভাবে উচু করে নির্মান করা হলো যেন বহুদূর থেকেও সকলে সুন্দরভাবে নবী করিম (সা.) কে দেখতে পায়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্যে নবী (সা.) আসহাব ও হাজীদের কষ্ট দিবেন ? গাদীরে খুমে অবস্থান এবং ভাষণ দেয়ার জন্যে আসন তৈরী করার যে কারণ নিহিত আছে তাহলো অব্যবহিত পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া নিম্ন আয়াত يا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ অর্থাৎঃ“ হে রাসূল আপনার রবের নিকট থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌছিয়ে দিন। আর যদি এ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম না হন তা হলে রেসালাতের দাওয়াত - ই পৌছাতে পারলেন না। আল্লাহ মানুষের অনিষ্ট থেকে আপনাকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের জনগোষ্ঠিকে হেদায়েত করবেন না। (সূরা আল মায়েদা,আয়াত নং-৬৭) উপরোল্লিখিত আয়াতটিতে রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ আয়াতটি অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা শুধুমাত্র তিনি নবীকেই অবগত করিয়েছেন। আর তা এক্ষনে মানুষের সমক্ষে পেশ করতে হবে ? এমন কি আবতির্ণ করা হয়েছে যা এভাবে ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যক্ত করতে হবে ? সূরা মায়েদা হচ্ছে নবী (সা.) এর উপর অবতীর্ণ সর্বশেষ সূরা। এ সূরাটি নবীর শেষ জীবনে নাযিল হয়েছে। ইতিপূর্বে তৌহীদ,শেরক,রেসালাত,ক্বিয়ামত,নামাজ,রোজা,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদি সব ধরণের বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল। এমন কি বিষয় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যা কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে হবে ? রাসূল (সা.) তো কোন ভীতু ব্যক্তি নন। তিনি কঠোর বিপদেও মু’ মিনদের সান্তনাকারী ছিলেন। তিনি সকল ধরণের বিপদ সংকুল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন অবশেষে তিনি মক্কা বিজয় করেছেন,বীর দর্পে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেছেন বিজয়ীর বেশে। কাবার মুর্তিগুলোকে তিনি ভেঙ্গে সেখানে নামাজ ক্বায়েম করেছেন। আল্লাহ তাকে এ আয়াতে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে দিচ্ছেন,যদি এ কাজটি আঞ্জাম দেয়া না হয় তাহলে রেসালাতের কোন কিছুই পৌছানো হলো না। এটা এমন একটা কাজ যার ফলে রেসালাত পরিপূর্ণ হবে। আর আল্লাহ রাসূলকে অভয় দিয়ে বলছেন“ আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।” মুলতঃ একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার জন্যেই প্রিয় নবী (সা.) সবাইকে গাদীরে খুমে সমবেত হতে বলেছেন। মহানবী (সা.) তার আসন অলংকৃত করেছেন। তিনি ভাষণ দিচ্ছেনঃ “……………… হে মানব মন্ডলী। আমি কি সকল মু’ মিনদের চেয়ে সর্বোত্তম নেতানই ? … .. তোমরা কি জানোনা আমি প্রতিটি মু’ মিনের প্রানের চেয়েও প্রিয় নেতা…… ..? ” তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো,জ্বি ইয়া রাসূল আল্লাহ” !… . অতঃপর তার পার্শ্বে উপবিষ্ট হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের হাত সকলের সম্মুখে উচু করে তুলে ধরলেন। ঐতিহাসিকগণ বলেন,নবী (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের হাত এমনভাবে উচুতে তুলে ধরেছিলেন যে তাদের উভয়ের বাহুমুলদ্বয় সবাই দেখতে পেয়েছেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বললেনঃ ” ایها الناس! الله مولای و انا مولاکم، فمن کنت مولاه فهذا علی مولاه، اللهم وال من والاه و عاد من عاداه و انصر من نصره و اخذل من خذله." অর্থাৎঃ“ হে লোকসকল ! আল্লাহ আমার প্রভূ ও নেতা,আর আমি তোমাদের নেতা বা মওলা। সুতরাং আমি যার মওলা বা অভিভাবক আলীও তার মওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ যে আলীকে ভালবাসে তুমিও তাকে ভালবাস,যে আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে তুমিও তাকে শত্রু গণ্য কর। আর যে তাকে সাহায্য করে তুমিও তাকে সহায়তা দান কর এবং যে তাকে ত্যাগ করে তুমিও তাকে পরিত্যাগ কর………… .।”

ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘আল ইসাবা’ এর খণ্ড৪ পাতা ২৮১ এ জীবনী নং ৫১৬৭ এ উল্লেখ করেছেঃ وقال بن البرقي والبغوي وغيرهما كان ممن بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقالبن يونس بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقال بن يونس بايع تحت الشجرة وشهد فتح مصر واختط بهاوكان من الفرسان ثم كان رئيس الخيل التي سارت من مصر إلى عثمان في الفتنة “ইবনে বারকি, আল বাগাভি এবং অন্যান্যরাবলেছেন যে সে গাছের নিচে বায়াতে অংশ গ্রহন করেছিলেন.........। ইবনে ইউনুস বলেছেনগাছের নিচে বায়েত ছিলেন, মিশরের বিজয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং বীর যোদ্ধা ছিলেন আরসে উসমানকে আক্রমণ করা সেনা দলের প্রধান ছিল”। অনুরূপ ভাবে ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘তাজিলআল মানফা’ এর ৪৭১ পাতায় উল্লেখ করেছেন তিনি সাহাবী ছিল এবং অন্য সাহাবী তার থেকেবর্ণনা করেছেন। ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া’ এরখণ্ড ৭ পাতা ১৭৯ এ উল্লেখ করেছেনঃ “উসমানের হত্যার পরে তার কাতিলরা তার মাথা কেটেনিতে চেস্টা করছিল, মেয়েরা চিৎকার করতে শুরু করল আর মুখে চপেটাঘাত করতে লাগল (মাতম), উসমানের দুটো স্ত্রী নাইলা আর উম্মুল বানিন আর তার কন্যারা এর মধ্যে ছিল।ইবনে উদাইস বলল ‘উসমানকে ছেড়ে দাও’। ফলে তারা তাকে ছেড়ে দিল আর ঘরে যাকিছু ছিললুটে নিল”। ইবনে আসাকির তার ‘তারিখ এ দামিস্ক’ এ রেওয়াতকরেছেন। ( খন্ড ২ পাতা ৪৭২)ঃ له صحبة وهو ممن بايع تحتالشجرة “সে সাহাবী, এবং সে গাছের নিচে বায়াত কারীদেরমধ্যে ছিল”। এখানে উল্লেখ্য যে আহলে সুন্না ও নাসিবী রাসাহাবাদের মহান মর্যাদা দেখাবার জন্য গাছের নিচে বায়াত করা তথা বায়াতে রেজোয়ান এরকথা উল্লেখ করে এবং কুরআনের আয়াত পড়ে। যেবায়াত এ রেজোয়ান এর সাহাবীরা কিভাবে উসমানকে হত্যা করছে! এখন নাসিবীরা কি করবে? ৮) সাহাবী আমর বিন হামক আল খুজাই এর ভুমিকাউসমান হত্যায়। ইবনেহাজর আস্কালানি তার ‘তাকরীব আত তাহজিব’ পাতা ৪২০ এ এন্ট্রি নং ৫০১৭ “আমরবিন হামক, ইবনে কাহিল আর তাকে ইবনে কাহিন, ইবনে হাবীব আল খজাই ও বলা হয়। সাহাবী যে কুফায় থাকত তারপর মিশরে, সেমুয়াবিয়ার খেলাফাত এ মারা যায়”। ইবনে সাদ তার ‘তাবাকাত’ এ উল্লেখ করেছেন। “মিশরীয়যারা উসমানকে আক্রমণ করে ৬০০ জন ছিল আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আব্দুর রাহমান ইবনেউদাইস ও আমর বিন হামাক্ক আল খুজাই”। (খণ্ড ৩ পাতা ৭১) ইবনে সা’দ তার তাবাকাত এ আরও উল্লকেহকরেছেনঃ( খণ্ড ৩ পাতা ৬৫) “যখন মিশরের লোকেরা উসমানের কাছে এল, তারা দিখাসাবা তে ঘাটী গাড়লো। উসমান,মুহামামদ বিন সালামাহকে ডেকে বলল ‘যাও আর তাদেরকে আমার কাছে আসতে বিরত করো, তারাযাতে খুশি হয় সেই সব দাও, বলো যে আমি তাদের দাবী অউঞ্জাই কাজ করবো আর সমস্যা নিয়েআলোচনা করবো’। মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ তাদের কাছেদিখাসাবাতে গেল। জাবির বলে ‘উসমান আনসারদের মধ্যে থেকে পঞ্চাশ জন যোদ্ধা কেপাঠিয়েছিল আমি তার মধ্যে ছিলাম, আর তাদের (মিশরের থেকে আসা লোকেদের) চারজন নেতাছিল আব্দুর রহমান বিন উদাইস আল বালাভি, সাউদান বিন হিমরান, ইবনে বায়া আর আমরবিন হামক আল খুজাই”। নাসিবীদের প্রিয় আলেম ইবনে কাসির তার ‘বেদায়াআর নেহায়া’ তে উল্লেখ করেছেনঃ وفيها: كانت وفاةعمرو بن الحمق بن الكاهن الخزاعي، أسلم قبل الفتح وهاجر. وقيل: إنه إنما أسلمعام حجة الوداع. وورد في حديث أن رسول الله دعا له أن يمتعه الله بشبابه، فبقيثمانين سنة لا يُرى في لحيته شعرة بيضاء. ومع هذا كان أحد الأربعة الذين دخلواعلى عثمان “আমর বিন হামাক বিন কাহিন আল খুজাই এরমৃত্যুঃ সে ইসলামের মক্কা বিজয়ের আগে দাখিল হয়েছিল এবং হিজরত করেছিল। কেউ কেউ বলেসে বিদায় হজের সময় ইসলাম গ্রহন করেছিল। আর হাদিসে এটা এসেছে যে রাসুল সাঃ তার জন্যদোয়া করেছিল যে ‘আল্লাহ তোমাকে যুবক হিসাবে রাখুক’। ফলে সে ৮০ বছর বেঁচেছিল কিন্তুতার একটাও ছুল পাকে নি। সে ঐ চারজন লোকের মধ্যে একজজ ছিল যে উসমানের ঘরে প্রবেশকরেছিল”। (খণ্ড ৮পাতা ৪৮) ইবনে কাসীর আরও উল্লেখ করেছেনঃ “ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন আউন ইবনে কানানাথেকে যে কানানা বিন বাশার লোহাত রড দিয়ে উসমানের কপালে আর মাথায় আঘাত করে ফলে যেপড়ে যায় আর তখন সাউদান বিন হিমরান তরবারীর দ্বারা আঘাত করে এবং হত্যা করে। আমর বিনহামক তার বুকের উপর চেপে বসে আর এই সময় উসমান শেষ নিশ্বাস নিচ্ছিল, সে নবারবর্শাদিয়ে আঘাত করলো। বর্ণনা কারী বলেন যে তার মধ্যে তিনটে ফস্কিয়ে যায় আর ছ’টাতাকে আঘাত করে আর এই সময় সে মৃত আমার সামনে পড়ে ছিল”। (খণ্ড ৭ পাতা ২০৮) আহলে সুন্নার রেজাল ও হাদিস শাস্ত্রের ইমামইবনে হিব্বান তার ‘শিকাত’ ( বিশস্ত) এ উল্লখে করেছেনঃ “৭০০ লোক মিশর থেকে এলো যাদের নেতা ছিলআব্দুর রাহমান ইবনে উদাইস, আমর বিন হামক আল খুজাই, কানান বিন বাশার, সাউদান বিনহিমরান আল মুরাদি’। ( খণ্ড ২ পাতা ২৫৬)