পোস্টগুলি

হুসাইন (আঃ)-এর শাহাদাতের শোকে স্বয়ং রাসূল (সঃ) কেঁদেছেন, তাই মাতমে হুসাইন (আঃ) সুন্নতে রাসূল। (তিরমযি-৩৭৭১) আহলে বায়েতের জন্য প্রাণাধিক ভালবাসা প্রকাশ করতে হবে (সূরা: শুরা-২৩)। তাই এটাই স্বাভাবিক যে, তাদের দুঃখ বা নির্যাতনের কথা মনে করে স্মৃথিচারণ করা ও মাতমের মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশ করা কোরআনেরই একটি হুকুম। হুসাইন (আঃ)-এর জন্য আকাশ ও জমিন কাঁন্না করে, যেহেতু তিনি মুমেনদের (বেহেশতের) সর্দার (সূরা: দুখান-২৯)। হুসাইন (আঃ)-এর অমর আত্নত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। এটা যদি মাতমের মাধ্যমে হয় দোষের কিছু দেখছি না। (সূরা: বাকারা-১৫২) হুসাইন (আঃ) মরে গেছেন এমন কথা বলে মাতম করা যাবে না দাবি করলে ঈমান নষ্ট হবে (কোরআনের আদেশ অমান্য হবে)। (সূরা: বাকারা-১৫৪; সূরা: আলে ইমরান-১৬৯) দুনিয়ায় কেহ যদি হুসাইনের নাম না নেয় তবে কিচ্ছু যায় আসে না। এই দায়িত্ব আল্লাহ এবং ফেরেশতারা নিয়েছেন যদিও ঈমানদারদেরকেও দায়িত্ব দিয়েছেন (সূরা: আহযাব-৫৬) আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদঁ ওয়া আলে মুহাম্মদঁ।

কারবালা প্রান্তরে শীয়ারাই ইমাম হোসেনকে (আঃ) হত্যা করেছে —- ইদানীং অামাদের অনেক সু্ন্নি ভাই অজ্ঞতায় হোক বা মাযহাবগত বিদ্বেষবশত ভাবে হোক – একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন যে , কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (আঃ) কে শীয়ারা হত্যা করেছিল । এখন শীয়ারা সেই অনুতাপে বুক চাপরিয়ে মাতম করে পূর্বের পাপের প্রায়াশ্চিত্ত করে । সেইসাথে ভয়ংকর টাটকা ডাঁহা একটি মিথ্যা কথা বাজারে ছাড়া হচ্ছে যে , কারবালা হত্যাযজ্ঞ সম্বন্ধে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া কিছুই জানত না । কারবালা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ঈয়াযীদর নিয়োগ দেওয়া গর্ভনর নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ । কারবালা নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া খুবই কান্নাকটি এবং দুঃখ প্রকাশ করেছিল ! বেশ ভাল কথা । প্রতিটা মানুষ স্বাধীনভাবে যে কোন কথা বলতেই পারেন । হোক সেটা সত্য অথবা টাটকা ডাঁহা মিথ্যা ! যাইহোক , যে সকল সুন্নি ভাইরা হরহামেশা এ কথাটি বলে থাকেন , তাদের নিকট বিনীত ভাবে কয়েকটি প্রশ্ন রইল । আশ করি , যৌক্তিক জবাব পাব । প্রশ্ন – ১) – ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে ওকবাকে যে কোন মূল্যে ইমাম হোসেনের (আঃ) বাইআত গ্রহন অন্যথায় হত্যার আদেশ দিয়েছিল কেন ? প্রশ্ন – ২) – ইমাম হোসেন (আঃ) কে গুপ্তহত্যার জন্য হজ্ব চলাকালীন সময় মক্কাতে কেন গুপ্তঘাতক প্রেরন করেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ? প্রশ্ন – ৩) – কারবালা তথা কুফা নগরীতে সর্বপ্রথম শহীদ মুসলিম বিন আকিলের পৈচাশিক হত্যার বিচার ঈয়াযীদ কেন করে নাই ? প্রশ্ন – ৪) – উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে তখন ঈয়াযীদ কেন কুফার গর্ভনর নিয়োগ করে পাঠিয়েছিল ? প্রশ্ন – ৫) – কারবালা প্রান্তরে মাত্র ১১০ জনের মহিলা শিশু সহ কাফেলার বিরুদ্বে প্রায় তিরিশ হাজার বিশাল রাজকীয় সৈন্যের বহর কার হুকুমে এবং কেন জড়ো হয়েছিল ? প্রশ্ন – ৬) – কারবালার ময়দানে যারা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে তারা যদি শীয়া হয় তাহলে কেন সেই সকল শীয়া হত্যাকারীগনকে বিচারের আওতায় আনে নি , ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ? প্রশ্ন – ৭) – বিচার করা তো দূরের কথা , কেন সেই সকল হত্যাকারীগনকে ঈয়াযীদ খলীফার দরবার থেকে লক্ষ লক্ষ দিরহাম পুরস্কার দেয়া হল ? প্রশ্ন – ৮) – কারবালা হত্যাযজ্ঞের পরে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদের কোন বিচার করা তো দূরের কথা ! ইমাম হোসেন (আঃ) কে হত্যার পরেও উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে কুফার গর্ভনর হিসাবে বহাল রেখেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া । এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের কয়েক মাস পর উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ সিরিয়ায় গিয়ে ঈয়াযীদের সাথে দেখা করলে ঈয়াযীদ পরম খুশীমনে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে আলিঙ্গন করে তার কপালে চুমু খায় এবং তার সিংহাসনের ঠিক পাশেই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বসতে দেয় । রাজদরবারের এক গায়ককে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে স্বাগতম জানানোর জন্য গান পরিবেশন করতে বলা হয় । সেই সাথে পুরো রাজদরবারে বিশেষ ভাবে তৈরী মদের বিশাল পরিবেশন করা হয় । অতঃপর আনন্দ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় ঈয়াযীদ নিজের হাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ ও ওমর ইবনে সাদকে দশ লক্ষ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) পুরস্কার হিসাবে প্রদান করে । এবং সেই সাথে এক বছরের জন্য ইরাকের কুফা ও বসরা প্রদেশের বার্ষিক খাজনার পুরাটাই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে গ্রহনের অনুমতি দেয় । ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বিচারের আওতায় না এনে এভাবে কেন পুরস্কৃত করেছিল ? প্রশ্ন – ৯) – কারবালার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নবী পরিবারের সদস্যগনকে সাত্বনা দেয়ার পরিবর্তে ঈয়াযীদ কেন একটি বছর কারাগারে বন্দী করে রাখল ? প্রশ্ন – ১০) – পুরো এক বছর বন্দীকালীন সময় ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) এর হাত ও পায়ে কেন ২৪ ঘন্টা শিকলের বেড়ী পরিয়ে রাখা হত ? প্রশ্ন – ১১) – কেন হোসেনকন্যা সকিনা (সাঃআঃ) কে জেলখানার ভেতরেই কবর দিতে হল ? প্রশ্ন – ১২) – নবী পরিবারকে কেন ঈয়াযীদ বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে বাধ্য হল – ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটটি জানাবেন কি ? প্রশ্ন – ১৩) – মূয়াবীয়া পুত্র ঈয়াযীদ নিশ্চয়ই শীয়া ছিল না , তাহলে এই সবই কি রাজকীয় মেহমানদারীর সংগায় পড়ে ? প্রশ্ন – ১৪) – কারবালার ঘটনার এক বছর পরে পুরো তিনদিন পর্যন্ত মদীনা শহরে অবাধে লুটপাট , সাহাবী হত্যা , বহু নারী ধর্ষণের অনুমতি ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যবাহিনীকে দিয়েছিল ? প্রশ্ন – ১৫) – এই বেহিসাব নারী ধর্ষণের ফলে বহু নারী গর্ভবতী হয়েছিল , তাদের জন্য দায়ী কে ? প্রশ্ন – ১৬) – মদীনার মসজিদ এ নবীকে ঈয়াযীদ কেন ঘোড়া রাখার আস্তাবল বানিয়েছিল ? প্রশ্ন – ১৭) – মক্কাতে পবিত্র ক্বাবা গৃহে ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যদেরকে দিয়ে আগুন লাগিয়েছিল ? সর্বশেষ প্রশ্ন – কারবালার হত্যাযজ্ঞের প্রধান নায়ক ঈয়াযীদ , মূয়াবীয়া ও আবু সুফিয়ান তাহলে কি শীয়া ছিল ? সে সকল সুন্নি ভাইরা এই কথাটি বলে থাকেন যে , শীয়ারাই ইমাম হোসেন (আঃ) কে কারবালা প্রান্তরে হত্যা করেছিল – দয়া করে তাদের নিকট থেকে উপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলির টু দি পয়েন্টে যৌক্তিক জবাবের প্রতীক্ষায় থাকলাম

বছর ঘুইরা আইলো আবার মহররমের চান! হায় আল্লাহ! ক্যামন কইর‍্যা কাইরা নিলো ফাতেমার সন্তান! কান্দে আকাশ, কান্দে বাতাস হইয়া জারে জার! হায় আল্লাহ! জয়নাবেরে কেমন কইরা ঘুড়ায় হাট-বাজার! ক্যামনে শুকায় বুক তিয়াশায়, আসগর- সকিনার!! হায় আল্লাহ! ক্যামন কইর‍্যা কস্ট দিছে আওলাদ সকিফার! ক্যামন কইর‍্যা মারছে ওরা মাওলা আব্বাসেরে ক্যামন কইর‍্যা তীর মারছে ছোট্ট আসগরেরে! হায় আল্লাহ্‌!! ক্যামন কইর‍্যা সহ্য করছে , আমার মাওলায়! ক্যামন কইর‍্যা প্রান সইপাছে তোমার হাওলায়!!! ও খোদা তোমার কাছে মিনতি করি, তাদের দোহাই দিয়া! পাগলার প্রানের তিয়াশ মিটাও তাদের বদলা নিয়া। সকিফার আওলাদেগো সাজা আমি চাই! তোমার কাছে বিচার দিলাম, মাওলা মালিক সাঁই।। Z Ahmed Ahmed

পবিত্র কুরআনুল কারীম নবীর আহলে বায়াতের সঙ্গে ও নবীর আহলে বায়াত পবিত্র কুরআনুল কারীমের সঙ্গে আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ পবিত্র কোরআন, হাদীস এবং বিভিন্ন ইসলামী গ্রন্থে কাদেরকে আহলে বাইত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে? এবং কোরআনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কি? আদি কাল থেকেই এ বিষয়টা নিয়ে মুফাসসিরগণ ও কালাম শাস্ত্রবিদগণ বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও পর্যালোচনা করে আসছেন। এ ব্যাপারে অনেক গ্রন্থও রচিত হয়েছে। এই লেখনিগুলো থেকে পরিস্কারভাবে বোঝা যায় যে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারের কিছুসংখ্যক সদস্যকে আহলে বাইত বলা হয়েছে। অন্যদিকে নবী (সা.) এর বিভিন্ন বর্ণনায় এ বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে তাদের এবং পবিত্র কোরআনের মধ্যে একটা চিরস্থায়ী বন্ধনও রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সাথে আহলে বাইতের এই চিরস্থায়ী বন্ধন বিশেষ মর্যাদার পরিচয় বহন করে। পবিত্র কোরআন মজিদে ‘আহলে বাইত’ শব্দটি মাত্র দু’বার এসেছে : সূরা হুদের ৭৩ নং আয়াতে : قَالُواْ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللّهِ رَحْمَتُ اللّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ অর্থাৎ ‘তারা বলল তুমি কি আল্লাহর কোন কাজে বিস্ময়বোধ করছো, তোমাদের উপরে সর্বদা আল্লাহর (বিশেষ) রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে; অবশ্যই তিনি মহাপ্রশংসিত ও মহামর্যাদাবান।’ সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا অর্থাৎ ‘হে আহলে বাইত নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা চান তোমাদেরকে পাপ পঙ্কিলতা থেকে দুরে রাখতে এবং সম্পূর্ণরূপে পূত ও পবিত্র করতে।’ প্রথম আয়াতটি হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং তার পরিবার সম্পর্কে। দ্বিতীয় আয়াতটিতে -যা তাতহীরের আয়াত নামে প্রসিদ্ধ- নবী (সা.) এর পরিবারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সকল মুসলমান একমত পোষণ করেন। এই আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা নবী (সা.) এর আহলে বাইতকে সকল প্রকারের কলুষতা থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আহলে বাইত কারা : আহলে বাইতের মর্যাদার ব্যাপারে সকলেই একমত তবে আহলে বাইত কারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। নবী (সা.)এর আহলে বাইতকে চেনার একমাত্র পথ হচ্ছে হাদীস ও রেওয়ায়েত। বিভিন্ন হাদীস ও রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে হযরত মুহাম্মাদ (সা.), হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.), ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইন (আ.) হচ্ছেন আহলে বাইত। জালালউদ্দিন সূয়ূতি তার তাফসীরে এ সম্পর্কে অনেক রেওয়ায়েত সনদ সহকারে নবী (সা.) এর সাহাবীদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তাবারসিও হযরত আবু সাঈদ খুদরী, আনাস বিন মালেক, ওয়াছেলা বিন আছকা, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা.), জাবের বিন আব্দুল্লাহ ও হাসান বিন আলী (আ.) সহ অন্যান্য সাহাবা সূত্রে এর উল্লেখ করে অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। নবী পত্মী উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি নিম্নলিখিত আয়াতটির শানে নুযুল বর্ননা করতে গিয়ে বলেছেন : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا যখন এ আয়াতটি আমার গৃহে অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিল। তারা হলেন জীবরাঈল (আ.), মিকাইল (আ.), নবী (সা.), আলী (আ.), ফাতিমা (আ.), হাসান ও হোসাইন (আ.) এবং আমি ছিলাম দরজার মুখে। আমি রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি আহলে বাইতের মধ্যে গণ্য নই?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘না তুমি তাদের মধ্যে নও, তবে নিশ্চয় তুমি সঠিক পথে আছো; নিশ্চয়ই তুমি কল্যাণের মধ্যে রয়েছো; তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য।’ আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ছয় মাস পর্যন্ত ফজর নামাজের সময় ফাতিমার গৃহের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বলতেন, হে আহলে বাইত, তোমাদের উপর সালাম ও দরুদ। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইচ্ছা পোষণ করেছেন তোমাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেছেন : فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ অর্থাৎ ‘বলুন : (হে নবী) এসো আমরা আমাদের সন্তানদের আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদের এবং আমরা আমাদের নারীদের তোমরা তোমাদের নারীদের এবং আমরা আমাদের নিজেদেরকে (নাফসকে) আর তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ডেকে নিয়ে এসো। অতঃপর আমরা (আল্লাহর দরবারে) আবেদন জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণ করি।’ (আলে ইমরান : ৬১) যখন আয়াতটি অবতীর্ণ হল তখন মহানবী (সা.) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে ডেকে আনলেন। তিনি বললেন : اللهم هولاءِ أهْلُ بَيْتِي ‘হে আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত।’ নবী (সা.) এর বর্ণনা সমূহে আহলে বাইত ও কোরআনের বন্ধন : নবী (সা.) তাঁর আহলে বাইতের অনেক ফযিলতের কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁর ঐ সব বর্ণনা আহলে বাইতকে তাঁর উম্মতদের মধ্যে অতি উচ্চ আসনে আসীন করেছে। এই ফযিলতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরআন ও আহলে বাইতের একাত্মতা এবং তাদের মধ্যকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাদের মধ্যে যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে তা কেয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে। শিয়া সুন্নী সকলেই যে হাদীসের ব্যপারে একমত তা হাদীসে ‘সাকালাইন’ নামে পরিচিত। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন : إنّى تارِكٌ فِيكُمْ الثَقْلَيْنِ کِتَابَ اللهِ و عِتْرَتِی أَهْلَ بَيْتِی إنْ تَمَسَّکْتُمْ بِهِمَا لَنْ تَضِلُّوا أبَداً ‘আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, অপরটি হচ্ছে আমার রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়, আমার আহলে বাইত। তোমরা যদি এ দুটিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধর তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না।’ এই হাদীসটি নবী করিম (সা.) এর অনেক বিশিষ্ট সাহাবী বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসটি মুতাওয়াতির (অসংখ্য) সূত্রে বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। অনেকেই উল্লিখিত হাদীসটি বিশেরও অধিক সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের প্রেক্ষাপট ও দলীল সমূহের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নবী (সা.) এই কথাগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর সাহাবা ও অনুসারীদের সামনে বলেছেন এবং আহলে বাইত ও কোরআনের মধ্যে যে দৃঢ় বন্ধন রয়েছে, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ইবনে হাজার হাইসামি (একজন প্রসিদ্ধ সুন্নী আলেম) এ ব্যাপারে বলেছেন যে, উল্লিখিত হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেরও অধিক সংখ্যক সাহাবী এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই হাদীসটি বিদায় হজ্জ্বের সময় অথবা আরাফার দিনে স্বয়ং নবীর মুখ থেকে শুনেছেন এবং বর্ণনা করেছেন । কেউ কেউ বলেছেন নবী (সা.) তাঁর অসুস্থতার সময় বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবীর সমাবেশে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য দল বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পর একটা বক্তৃতা দেন এবং সেখানেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কোরআন এবং আহলে বাইতের মধ্যে বিদ্যমান চিরস্থায়ী ও দৃঢ় বন্ধনের পেছনে একটা সূক্ষ্ণ ঐশী পরিকল্পনা রয়েছে। কোরআনের কিছু কিছু আয়াত সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছে যে, সকল যুগের ঐশী বাণীসমূহ দুটো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিল। প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবসময় আল্লাহর ঐশী বাণী সে যুগের নবীর মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই ওহীর পাশাপাশি একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ ছিলেন, যিনি আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং যিনি আল্লাহর দ্বীনকে এর সকল দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তমরূপে বর্ণনা করতে পারেন, সেই সাথে অদৃশ্যেরও জ্ঞান রাখেন। অন্যদিকে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ পবিত্রতার অধিকারী এবং কু প্রবৃত্তি ও শয়তানের প্ররোচনায় কখনও প্রভাবিত হন না। আল্লাহর ওহী প্রচার এবং প্রসারের দায়িত্ব ছাড়াও তা বর্ণনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। আর অনুকূল পরিস্থিতিতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা এবং ইসলামী বিধানকে প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বে ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির দায়িত্বও তারা পালন করে থাকেন। সর্বোপরি তারা হচ্ছেন ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির দিশারী। পবিত্র কোরআনে এব্যাপারে বলা হয়েছে যে : وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকে কেবল তাঁর স্বজাতির ভাষায়ই প্রেরণ করেছি যাতে করে সে তাদের জন্য (আমার বাণী) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। (ইব্রাহীম:৪) পবিত্র কোরআনেও নবী (সা.) এর এই দায়িত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন : وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ‘তোমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে করে যা কিছু মানুষদের জন্য পাঠানো হয়েছে, তা তুমি তাদের জন্য সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা কর; হয়তো তারা চিন্তা ভাবনা করবে।’(নাহল:৪৪) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে : هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَ الْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি সাধারণ জনগোষ্ঠীর (নিরক্ষর লোকদের) মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনায়, তাদেরকে পবিত্র করে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়, অথচ তারা তার পূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিলো।’(জুমুআ : ২) এসব আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, আল্লাহর ঐশী বাণীসমূহ ব্যাখ্যার জন্য তাঁর পক্ষ থেকে মনোনীত বান্দারা সবসময় ছিলেন। সুতরাং এমন এক ব্যক্তি সর্বদা অবশ্যই থাকবেন যিনি ওহী সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী হবেন। নবুওয়াতের ধারা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ওহী নাযিলের ধারাও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কোরআনের বাণীর আহ্বান চিরন্তন হওয়ায় কিয়ামত পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। একদিকে এই অবিনশ্বর ও চিরন্তন হওয়ার বৈশিষ্ট্য, অন্যদিকে মুসলমানরা তাদের ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন ও ধর্মীয় জীবনে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত এ গ্রন্থের মুখাপেক্ষী হওয়ায় সব যুগেই কোরআনের পাশাপাশি তার সমস্ত গূঢ় রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত একজন ব্যাখ্যাকারক প্রয়োজন। পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধন থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণ হচ্ছে নবী (সা.) এর মৃত্যুর পর একমাত্র তাঁর আহলে বাইতের দ্বারাই পবিত্র কোরআনের আয়াত সমুহের নির্ভুল ও সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্পাদিত হয়েছে। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি নিজেই এ দায়িত্ব পালন করতেন। নবী (সা.) এর মৃত্যুর সাথে সাথে যদিও ওহী নাযিলের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু আল্লাহর বাণী প্রচার, প্রসার ও বর্ণনার কাজ শেষ হয়ে যায় নি। কোরআনের আয়াত নবী (সা.) এর সময়কার মানুষদের যেভাবে সম্বোধন করেছে তার পরবর্তী যুগের মানুষদেরকেও ঠিক সেভাবেই সম্বোধন করেছে। আহলে বাইত ও পবিত্র কোরআনের এই বন্ধন যদি অব্যাহত না থাকত নবী (সা.) এর পরবর্তী যুগে কোরআন একটি নীরব প্রতিবেদন হয়ে পড়ত। কখনোই মুসলমানদের চাহিদা মিটাতে পারতো না এবং ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে তারা ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়তো। হযরত আলী (আ.) এর বাণীতে এর সত্যতা পাওয়া যায়। ‘কোরআন আল্লাহর নির্বাক গ্রন্থ, আর আমি তার ব্যখ্যা বিশ্লেষণকারী, সুতরাং আল্লাহর সবাক পুস্তককে আঁকড়ে ধর।’ ইমাম বাকের (আ.) কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে নবী (সা.) এর পর মানুষের পথ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নিস্পাপ ইমামগণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এরশাদ করেছেন, আল্লাহ বলেছেন : إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ ‘অর্থাৎ নিশ্চয় (হে নবী) তুমি সতর্ককারী এবং প্রত্যেক জাতির জন্য পথ প্রদর্শক রয়েছে।’(রা’দ : ৭) এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম বাকের (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ভীতি প্রদর্শনকারী। আর প্রত্যেক যুগে আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে একজন ইমাম থাকবেন যিনি নবী (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার দিকে মানুষকে আহ্বান করবেন। নবী (সা.) এর পর প্রথম ইমাম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.)।’ ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : ‘সব সময়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে থেকে কাউকে না কাউকে নির্বাচিত করেন, যে তাঁর কিতাবের আদ্যপ্রান্ত সব জানেন।’ তাঁর থেকে অন্য আরেক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে : ‘আল্লাহর কসম কোরআনের সমস্ত জ্ঞান ভান্ডার আমাদের নিকটে মজুদ রয়েছে।’ এটা মনে রাখা দরকার যে, আহলে বাইত কর্তৃক আল্লাহর বাণীসমূহকে ব্যাখ্যা দান এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি কোন নির্দিষ্ট আয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট যুগের জন্যও নয়। বরং এটা সর্ব যুগের ও সর্ব কালের জন্য। এর যথার্থতা হাদীসে সাকালাইন থেকে ষ্পষ্টভাবে বোঝা যায়। কেননা ঐ হাদীসেই কোরআন ও আহলে বাইতের চিরস্থায়ী বন্ধনের কথা বলা হয়েছে যা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইবনে হাজার হাইসামী কোরআন এবং আহলে বাইতের অব্যাহত বন্ধনের ব্যাপারে বলেছেন : সাকালাইনের হাদীস আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দান করে এই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করছে যে, কোরআন যেমন কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে এবং সেটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে তেমনি আহলে বাইতও কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে এবং তাদেরকে কোরআনের মতই আঁকড়ে ধরতে হবে। উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, আহলে বাইত (আ.) আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং আল্লাহর পবিত্র বাণীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাদের সমতুল্য কেউ নেই। এর যথার্থতা পবিত্র কোরআনের সূরা আহযাবের ৩৩ এবং ওয়াকেয়ার ৭৭-৭৯ নং আয়াত : إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * في كِتابٍ مَّكْنُونٍ * لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ অর্থাৎ নিশ্চয় এটি মহাসম্মানিত কোরআন যা গুপ্ত এক সুরক্ষিত গ্রন্থে আছে। পবিত্র লোকেরা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করে না (করতে পারেনা)। কোন কোন মুফাসসির (তাবাতাবাঈ) لا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ বাক্য কে كِتَابٍ مَّكْنُون বাক্যাংশের সিফাত (বৈশিষ্ট্য) হিসেবে বলেছেন। এই অবস্থায় আল্লাহর পবিত্র বাণীর অর্থ হবে যে, শুধুমাত্র যারা الْمُطَهَّرُونَ অর্থাৎ পবিত্র কেবল তারাই কোরআনের মূল উৎস ও এর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। আর তাতহীরের আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আহলে বাইত (আ.) হচ্ছেন সেই মুতাহ্হারুন বা পবিত্র ব্যক্তিবর্গ। অতএব তাঁরাই আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। ইমাম আলী (আ.) বলেন : ‘আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সমস্ত পাপ পংকিলতা থেকে মুক্ত রেখেছেন। আমরা পৃথিবীতে মানুষের জন্য পথ প্রদর্শনকারী। আমরা সব সময় কোরআনের সাথে এবং কোরআন আমাদের সাথে; তারা কখনোই একে অপরের থেকে আলাদা হবে না। প্রচারে ইয়া আলী আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ) সুরা নিসা,আয়াত# ৬৯ “ এবং যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে,সুতরাং তারা সেই লোকদের সাথী হবে নবীগন,সত্যবাদীগন,শহীদ্গন এবং সতকর্মপরায়নদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাদের নিয়ামত দান করেছেন।আর তারা কতই না উত্তম সাথী!(১)” মুলঃমাওলানা ফরমান আলীর উর্দু তাফসীর অনুবাদঃ মাওলানা শেখ সাবের রেজা সম্পাদনা ও পুনর্লিখনঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনোয়ারুল কবির আরিফ(ষ্টুডেন্ট অফ পি এইচ ডি,ইরান) প্রকাশকঃঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে,নুরুস সাকলায়েন জনকল্যান সংস্থা,বেগম বাজার,ঢাকা। সঠিক তাফসীর(১)ঃ এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,নবীগন অর্থে মহানবী(সাঃ),সত্যবাদীগন অর্থে হজরত আলী(আঃ),শহীদগন বলতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন(আঃ),সতকর্ম্পরায়ন অর্থে অবশিষ্ট ইমামগণকে বুঝান হয়েছে।আর এটা অনুমতির অনেক নিকটবর্তীও বটে।কেননা,’নাবিয়্যিন’এর উদ্দেশ্য যে মহানবী(সাঃ) তা ষ্পষ্ট,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।‘সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ)।কেননা ‘সিদ্দিক’ শব্দের অর্থ যদি সত্যায়নকারী ধরা হয় তবে ইতিহাসসমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে,রাসুল(সাঃ)এর নবুওতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী তিনিই।আর যদি সত্যবাদী অর্থ গ্রহন করা হয় তবুও তিনি ছাড়া অপর কেউ তাঁর দাবীদার হতে পারে না।কারন,অন্য কোন সাহাবীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট ছিল না।কারন,তারা ২৮ থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত মুর্তির সামনে মাথা নত করেছেন ও শিরক করেছেন।পক্ষান্তরে হজরত আলী(আঃ) কখনও মুর্তির সামনে মাথা নত করেননি এবং সবসময় আল্লাহর একত্বের ঘোষনায় সত্যবাদী ছিলেন।আর ইমাম ২ ভাই ( ইমাম হসান ও ইমাম হুসাইন)আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াও ষ্পষ্ট এবং ‘সালেহীন’ বলতে অবশিষ্ট ইমামগন উদ্দেশ্য হওয়াতে কোন মুসলমান সন্দেহ করতে পারে না।কেননা সালেহীন বলতে সৎ কর্মের ক্ষেত্রে পুর্নতম ব্যাক্তিদেরকে বুঝান হয়।আর ে বিষয়টি ষ্পষ্ট যে,প্রতি যুগে নবী বংশের পবিত্র ইমামগন সতকর্ম,পরহেজগারিতা ও অন্য বৈশিষ্টে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ট ছিলেন

#৭২জন উল্লেখযোগ্য কারবালা শহীদের নাম -- ১#হযরত সৈয়েদেনা ইমাম হোসাইন ইবনে আলী(আঃ).. ২#হযরত আব্বাস বিন আলী (আঃ) ৩#হযরতসৈয়েদেনা আলী আকবর বিন হুসাঈন (আঃ ) ৪# হযরত সৈয়েদেনা আলী আসগর বিন হুসাঈন (আঃ) ৫#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন আলী (আঃ) 6#হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আলী ( আঃ) ৭#হযরত সৈয়েদেনা উসমান বিনআলী(আঃ) ৮# হযরতসৈয়েদেনা আবু বকরবিন আলী (আঃ) ৯#হযরত সৈয়েদেনা আবু বকর বিন হাসান(আঃ) ১০#হযরত সৈয়েদেনা কাসিম বিন হাসান(আঃ) ১১#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন হাসান (আঃ) ১২#হযরত সৈয়েদেনা আওন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর(আঃ) ১৩# হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর(আঃ) ১৪# হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিনআকীল(আঃ) ১৫# হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন মুসলিম (আঃ) ১৬#হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন সাঈদ বিন আকীল (আঃ) ১৭#হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল রহমান বিন আকীল(আঃ) ১৮# হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আকীল(আঃ) ১৯#হযরত ওনস বিন হাস` আসাদী (আঃ) ২০# হযরত হাবিব বিন মাজাহির আসাদী(রাদিআল্লাহু) ২১#হযরত মুসলিম বিন আওসাজা আসাদী (রাদিআল্লাহু ) ২২#হযরত কাইস বিন মাসহার আসাদী (রাদিআল্লাহু) ২৩# হযরত আবু সামামা উমরু বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু ২৪#হযরত বুরির হামদািন(রাদিআল্ লাহু ২৫#হযরত হানালাবিন আসাদ ( রাদিআল্লাহু) ২৬#হযরত আবিস শাকরি(রাদিআল্লা হু) ২৭# হযরত আব্দুল রহমান রাহবি (রাদিআল্লাহু) ২৮#হযরত সাইফ বিন হাস` (রাদিআল্লাহু) ২৯#হযরত আমির বিন আব্দুল্লাহ হামদানি(রাদিআল্লাহু) ৩০# হযরত জুনাদা বিন হাস` (রাদিআল্লাহু) ৩১#হযরত মাজমা বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু) ৩২# হযরত নাফে বিন হালাল (রাদিআল্লাহু) ৩৩# হযরত হাজ্জাজ বিন মাসরুক (রাদিআল্লাহু) মুয়াজ্জিন এ কাফেলা ৩৪# হযরত ওমর বিন কারজা (রাদিআল্লাহু) ৩৫# হযরত আব্দুল রহমান বিন আবদে রব (রাদিআল্লাহু) ৩৬#হযরত জুনাদা বিন কাব (রাদিআল্লাহু) ৩৭#হযরত আমির বিন জানাদা (রাদিআল্লাহু) ৩৮#হযরত নাঈম বিন আজলান (রাদিআল্লাহু) ৩৯#হযরত স্বাদ বিন হাস`(রাদিআল্লাহু) ৪০#হযরত জুহায়ের বিন কাইন(রাদিআল্লাহু) ৪১#হযরত সালমান বিন মাজারাইব (রাদিআল্লাহু) ৪২#হযরত সাঈদ বিন ওমর(রাদিআল্লাহু) ৪৩#হযরত আব্দুল্লাহ বিন বাসির (রাদিআল্লাহু) ৪৪# হযরত ইয়াজিদবিন জাঈদ কানদি (রাদিআল্লাহু) ৪৫#হযরত হারব বিন ওমর উল কাইস (রাদিআল্লাহু ৪৬# হযরত জাহির বিন আমির (রাদিআল্লাহু:) ৪৭# হযরত বাসির বিন আমির (রাদিআল্লাহু) ৪৮# হযরত আব্দুল্লাহ আরওয়াহ গাফফারি (রাদিআল্লাহু) ৪৯#হযরত জন (রাদিআল্লাহু) ৫০#হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমির (রাদিআল্লাহু) ৫১# হযরত আব্দুল আলা বিন ইয়াজিদ (রাদিআল্লাহু) ৫২# হযরত সেলিম বিন আমির (রাদিআল্লাহু) আজদী ৫৩#হযরত কাসিম বিন হাবীব (রাদিআল্লাহু) ৫৪#হযরত জায়েদ বিন সেলিম (রাদিআল্লাহু) ৫৫#হযরত নোমান বিন ওমর (রাদিআল্লাহু) আবদী ৫৬#হযরত ইয়াজিদ বিন সাবিত (রাদিআল্লাহু) ৫৭#হযরত আমির বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু) ৫৮#হযরত সাইফ বিন মালিক (রাদিআল্লাহু) (৫৯#হযরত জাবির বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু) ৬০#হযরত মাসুদ বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু) ৬১#হযরত আব্দুল রহমান বিন মাসুদ (রাদিআল্লাহু) ৬২# হযরত বাকের বিন হাই ৬৩# হযরত আম্মার বিন হাসান তাই (রাদিআল্লাহু) ৬৪#হযরত জুরঘামা বিন মালিক (রাদিআল্লাহু) ৬৫#হযরত কানানা বিনআতিক(রাদিআল্লাহু) ৬৬#হযরত আকাবা বিন স্লাট (রাদিআল্লাহু) ৬৭#হযরত হুর বিন ইয়াজিদ তামিমি (রাদিআল্লাহু) ৬৮#হযরত আকাবা বিন স্লট (রাদিআল্লাহু) ৬৯#হযরত হাবালা বিন আলী শিবানী (রাদিআল্লাহু) ৭০#হযরত কানাবা বিন ওমর (রাদিআল্লাহুতায়াল আনহু) ৭১#হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইয়াকতার (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু) ৭২#হযরত গোলাম এ তুরকি (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু) Golam Hasan Nur shojib

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিঁও ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ২ ❤️❤️❤️❤️❤️২৪ জিলহজ ঈদে মোবাহেলা দিবস__+__ আল্লাহ __১___+___২__+___৩__+__৪___+__৫___+ আল্লাহ❤️❤️❤️❤️❤️ নাজরানের প্রতিনিধি দল সাদামাটা পোশাক পরে এবং সোনার আংটি খুলে রেখে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম জানালে তিনিও সম্মাানের সাথে তাদের সালামের জবাব দেন এবং তারা যে সব উপঢৌকন এনেছিল , সেগুলোর কিছু কিছু গ্রহণ করেন । আলোচনা শুরু করার আগে প্রতিনিধিরা বলেছিল , তাদের প্রার্থনার সময় হয়েছে । মহানবী (সাঃ) তাদেরকে মদীনার মসজিদে নববীতে নামায ও প্রার্থনা করার অনুমতি দেন এবং তারা পূর্ব দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে । সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ । নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনা — কতিপয় সীরাত রচয়িতা , মুহাদ্দিস (হাদীসবিদ) এবং ঐতিহাসিক মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধিদের আলোচনার মূল বিষয় উদ্ধৃত করেছেন । তবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস এ আলোচনা এবং মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য অন্যদের চেয়ে সূক্ষ্ম ও ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন । সূত্র – মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুহলুল ইবনে হুমাম ইবনে মুত্তালিব (জন্ম ২৯৭ হিজরী এবং মৃত্যু ৩৮৭ হিজরী) । তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মুত্তালিব শাইবানীর ‘মুবাহালা’ গ্রন্থ এবং হাসান ইবনে ইসমাঈলের৮ ‘যিলহজ্ব মাসের আমল’ গ্রন্থ থেকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুবাহালার ঘটনার সমুদয় বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন । সূত্র – দেখুন ইকবালুল আমাল, পৃ. ৪৯৬-৫১৩ । তবে এ ক্ষুদ্র পরিসরে এ মহা ঐতিহাসিক ঘটনার সমুদয় দিক , যেসবের প্রতি দুঃখজনক হলেও সত্য যে , কতিপয় ঐতিহাসিক , এমনকি সামান্য ইঙ্গিত পর্যন্ত করেন নি , সেসব উদ্ধৃত করা সম্ভব হবে না । আর তাই হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে মহানবী (সাঃ) এর সাথে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আলাপ-আলোচনা যা উদ্ধৃত করেছেন , তার অংশ বিশেষের প্রতি আমরা ইঙ্গিত করব । সূত্র – সীরাতে হালাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৩৯ । মহানবী (সাঃ) বলেন , “আমি আপনাদেরকে তাওহীদী (একত্ববাদী) ধর্ম , এক-অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি ।” এরপর তিনি পবিত্র কুরআনের কতিপয় আয়াত তাদেরকে তেলাওয়াত করে শুনালেন । নাজরানের প্রতিনিধিগন বলেন , “আপনি যদি ইসলাম বলতে বিশ্বজাহানের এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকেই বুঝিয়ে থাকেন , তা হলে আমরা আগেই তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলছি ।” মহানবী (সাঃ) বলেন , “ইসলামের (মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ) কতিপয় নিদর্শন আছে । আর আপনাদের কতিপয় কর্মকাণ্ড বলে দেয় যে , আপনারা ইসলামে যথাযথ বাইয়াত হন নি । আপনারা কিভাবে বলেন যে , আপনারা এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতকারী , অথচ আপনারা একই সময় ক্রুশের উপাসনা করেন এবং শূকরের মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকেন না , আর মহান আল্লাহর পুত্রসন্তানেও বিশ্বাস করেন ?” নাজরানের প্রতিনিধিরা বলেন , “আমরা তাঁকে (হযরত ঈসা মসীহ্) ‘আল্লাহ্’ বলে বিশ্বাস করি । কারণ তিনি মৃতদের জীবিত এবং অসুস্থ রোগীদের আরোগ্য দান করতেন এবং কাদা থেকে পাখি তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে দিতেন । আর এ সব কাজ থেকে প্রতীয়মান হয় , তিনি আল্লাহ্ ।” মহানবী (সাঃ) বলেন , “না , তিনি মহান আল্লাহর বান্দা ও তাঁরই সৃষ্টি, যাকে তিনি হযরত মারিয়াম (আঃ) এর গর্ভে রেখেছিলেন । আর মহান আল্লাহ্ই তাঁকে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন ।” একজন প্রতিনিধি বলেন , “হ্যাঁ, তিনিই মহান আল্লাহর পুত্র । কারণ তাঁর মা মারিয়াম (আঃ) কোন পুরুষের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েই তাঁকে জন্ম দিয়েছিলেন । তাই অনন্যোপায় হয়ে বলতেই হয় যে , তাঁর পিতা হচ্ছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ্, যিনি বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ।” এ সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরীল (আঃ) অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে বললেন : “আপনি তাদেরকে বলে দিন : হযরত ঈসা মসীহর অবস্থা এ দিক থেকে হযরত আদম (আঃ) এর অবস্থার সাথে সদৃশ যে , তাঁকে তিনি তাঁর অসীম ক্ষমতা দিয়ে বিনা পিতা-মাতায় মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন । সূত্র – সূরা আলে ইমরানের ৫৯তম আয়াত ) إنّ مثل عيسي عند الله كمثل آدم خلقه من تراب ثمّ قال له كن فيكون( “ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর কাছে ঈসার উপমা হচ্ছে আদমের উপমা সদৃশ; আদমকে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং এরপর তিনি তাকে বলেছিলেন :‘ হয়ে যাও’ , আর সে হয়ে যায় ।” তাই পিতা না থাকা যদি তিনি (ঈসাঃ) যে খোদার পুত্র- এ কথার প্রমান বলে বিবেচিত হয় , তা হলে হযরত আদম (আঃ) কে এ আসনের জন্য অধিকতর উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা উচিত । কারণ হযরত আদম (আঃ)-এর পিতা ছিল না , আর তাঁর মাও ছিলেন না ।” নাজরানের প্রতিনিধিরা বলল , “আপনার বক্তব্য আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। আর পথ হচ্ছে এটাই যে, একটি নির্দিষ্ট সময় আমরা পরস্পর মুবাহালা করব এবং যে মিথ্যাবাদী, তার ওপর লানত (অভিশাপ) দেব এবং মহান আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করব । ” সূত্র – বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৩২ । তবে মুবাহালার সাথে সংশ্লিষ্ট আয়াত এবং সীরাতে হালাবী থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা করার প্রস্তাব স্বয়ং মহানবীই দিয়েছিলেন । ঠিক একইভাবেتعالوا ندع أبنائنا … (এসো, আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি এবং তোমরা তোমাদের সন্তানদের আহবান করো…)-এ আয়াত থেকেও এ বক্তব্যের সমর্থন মেলে । তখন ওহীর ফেরেশতা মুবাহালার আয়াত নিয়ে অবতরণ করে মহানবী (সাঃ) কে জানান, যারা তাঁর সাথে অযথা বিতর্কে লিপ্ত হবে এবং সত্য মেনে নেবে না , তাদেরকে মুবাহালা করতে আহবান জানাবেন এবং উভয় পক্ষ যেন মহান আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করেন যে, তিনি মিথ্যাবাদীকে স্বীয় দয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেন । فمن حاجّك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالوا ندع أبنائنا و أبنائكم و نسائنا و نسائكم و أنفسنا و أنفسكم ثمّ نبتهل فنجعل لعنة الله علي الكاذبين “আপনার কাছে সঠিক জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে আপনার সাথে বিতর্ক করে (এবং সত্য মেনে নিতে চায় না) তাকে বলে দিন : এস , আমরা আহবান করি আমাদের পুত্র সন্তানদের এবং তোমাদের পুত্র সন্তানদের, আমাদের নারীগণকে এবং তোমাদের নারীগণকে , আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে , অতঃপর আমরা (মহান আল্লাহর কাছে) বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর মহান আল্লাহর অভিশম্পাৎ করি ।” সুরা – আলে ইমরান / ৬৩ প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর আহবানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُ 'হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও, যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) রাসূলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুর আলামিনের। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন আর অপরটি হচ্ছে আমার পবিত্র আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দুটোকে শক্ত করে আকড়ে ধর তবে কখনোই পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ হাদিসটি সামান্য শব্দের তারতম্যভেদে বিভিন্ন বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- সহিহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ:-১২২, দারুল যিল, বৈরুত; সহিহ তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ:-৬৬৩, বৈরুত; মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪, বৈরুত; কানযুল উম্মাল, ১ম খণ্ড, পৃ:-১৮৭; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪৮, বৈরুত। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)এর হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো।” বিশ্বনবী এসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:- 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫। আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো। (তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)। **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে । আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা"। (খাসায়েসে নেসায়ী ২৩; মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮; আল মু'জামুল কাবীর-তাবরানী ১৮:১২৮/২৬৫; হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ৬:২৯৬)। **নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ্‌র কসম যাহার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যাক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে সে জাহান্নামী'' । (সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১০৪; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮)। হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমীন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । রাসূলের (সাঃ) সাহাবাগন ইমাম আলী (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন । আবু যার গিফারী (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), হতে বর্ণীত যে, আমরা সাহাবাগন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহিহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৬০ মিশর প্রিন্ট; আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭, এমদাদিয়া লাইঃ; সহী মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাঃ-১৪৪ ইসঃ ফাঃ বাঃ; মুসনাদে হাম্বাল, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৮৪; সুনানে নাসাঈ, ৮ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ মিশর প্রিন্ট; সহিহ তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ (মিশর); ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫৫ (মিশর); হযরত আলী, পৃঃ-১৪, এমদাদিয়া লাইঃ)। **রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি জ্ঞানের নগরী, আলী সেই নগরীর প্রবেশদ্বার, যে কেউ জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন সেই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে । (সহীহ বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ-৬৩১; সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৩; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-১৭১। তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৭৯; আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী তাঁর লিসান গ্রন্থে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ' এই হাদীসের বহুবিধ সুত্র রয়েছে, হাকেম তাঁর মুস্তাদারাক গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন । তিনি এ ব্যাপারে তাঁর রায় পেশ করতে গিয়ে বলেন এ হাদীসটি বিশুদ্ধ ।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল হোসাইন আহমদ আল আমিনী আন নাজাফী, তাঁর আল গাদীর গ্রন্থে উক্ত হাদীসের বরননাকারীদের একটি তালিকা দিয়েছেন যাদের সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৩ জন। আল গাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৬১-৭৭)। **রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একজন উত্তরসুরী থাকে, আর "আমার উত্তরসুরী হচ্ছে, আলী ইবনে আবু তালিব।" (আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪৬; তারিখে বাগদাদ, ১১তম খণ্ড, পৃঃ-১৭৩; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৫০, কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-১৫৮; ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৩৩, তারিখে ইবনে আশাকীর শাফায়ী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৫; শাওয়াহেদুত তানজিল, ২য় খণ্ড, পৃঃ-২২৩)। **হযরত আবু হুরাইরা, হযরত সালমান ফারসী থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত সালমান ফারসী বলেন, " ইয়া রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌ যে নবীকেই প্রেরন করেছেন, তাঁকেই বলে দিয়েছেন যে, কে তাঁর উত্তরসুরী হবে । তবে কি আল্লাহ্‌ আপনাকেও বলেছেন যে, কে আপনার উত্তরসুরী হবে ? " নবী করিম (সাঃ) বললেন, " আমার উত্তরসুরী, আলী ইবন আবু তালিব হবে।" (শারহে বোখারী ইবনে হাজার আসকালানী, খণ্ড-১৮, পৃঃ-১০৫)। **রাসূল (সাঃ) আলী কে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এ হলো আমার ভাই আর আমার পরে আমার উত্তরসুরী এবং তোমাদের খলিফা, তাঁর নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তাঁর আনুগত্য করো ।(তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩১; শারাহ নাহজুল বালাগা, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-২১১ (ইবনে হাদীদ), আল কামিল ফিত তারিখ, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৬৩; কানজুল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-১৩১; মায়ালিমুত তানযিল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৭৯ । **হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মান আবগাদানা আহলিল বাইতি ফা হুয়া মৃনাফিকুন । অর্থাৎ- যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা তো কপট, মুনাফিক ।( ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬; মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১; তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর : আল্লামা সুয়ুতী, ৭ম:৩৪৯; শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪) **হযরত যিরর (রা:) হতে বর্নিত, হযরত আলী (আ:) বলেছেন; আমার নিকট উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লামের অঙ্গীকার হচ্ছে- কেবল মুমিনই তোমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। (সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-৫০১৭, ইসলামিক ফাঃ বাঃ) **হুজুর পাক(সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আলীকে গালী দিল, সে রাসূল (সাঃ) কে ই গালি দিল”। (বুখারী, তিরমিজি, মিশকাত ৫৮৪২ নং হাদিস) “আলী কে যারা মহব্বত করে তারা মুমিন”। (আহামদ তিরমিযী, মিশকাত ১১ তম খন্ড ১৫৬ পৃ:) “আলী এর প্রতি মহব্বত করে যারা তারা মুমিন, যারা না করে তারা মুনাফিক”। (মিশকাত ১১তম খণ্ড, পৃ: ১৫৬) 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মুহাম্মদ সাহাবিদের মধ্যে আলী (আ.)’র অনন্য এবং শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কিছু যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ: রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন: " আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০) রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। “আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকী” (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)।“আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা”(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, “হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।” রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে। “যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।”(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)। “আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।” (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: “এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।” (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ’-ড. মো. হোসাইন হায়কাল, প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪) হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, “যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)’র অসংখ্য শত্রু ছিল। শত্রুরা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)’র দোষ-ত্রুটি বের করার, কিন্তু পারেনি।” হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, “যত সুন্দর ও মজবুত সনদের মাধ্যমে আলী (আ.)’র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনি আসেনি।” হযরত আলী সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, আলী প্রেম মানুষের পাপ এমনভাবে ধ্বংস করে যেমনি আগুন জ্বালানী কাঠ ধ্বংস করে দেয়। একবার হযরত আলী (আ.)-কে দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তিনটি এমন বৈশিষ্ট্য তোমার রয়েছে যেটা আমারও নেই, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তুমি এমন একজনকে শ্বশুর হিসেবে পেয়েছে, যা আমি পাইনি, এমন একজনকে তুমি স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, যে কিনা আমার কন্যা, আর তৃতীয়টি হচ্ছে তুমি হাসান- হুসাইনের মত সন্তানের পিতা যেটা আমার নেই। রাসূলে খোদা (সা.) এর আগেও বহুবার আলী (আ.)-র বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ইবনে আব্বাসসহ আরো অনেকের বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলের পরে আলী (আ.)-ই ছিলেন সবচেয়ে মোত্তাকি ও সাহসী ব্যক্তি। একবার বিশ্বনবী (সা.) কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে ঘরে বসেছিলেন। সেখানে একটি বিশেষ পাখীর মাংস খাবার হিসেবে আনা হয়েছিল। রাসূল (সা.) বললেন, হে আল্লাহ তোমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এমন সময় দরজায় টোকা দিলেন আলী (আ.)। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে নিয়ে সেই মাংস খান। জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারি বলেছেন, একবার রাসূল (সা.)-র কাছে আলী (আ.) এলেন। রাসূল বললেন, আলী (আ.) ও তার অনুসারীরা কিয়ামতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত। এ সময় সূরা বাইয়ানার ৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে এবং সত কাজ করেছে, তারা আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। এরপর থেকে রাসূলের সাহাবিরা আলী (আ.)-কে দেখলেই বলতেন, ওই যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। হযরত আলী (আ.) ছিলেন জ্ঞান, বীরত্ব, সাহস, দূরদর্শিতা, মহানুভবতা, দয়া, পরোপকার, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি গুণের আকরসহ মানবীয় মূল্যবোধ ও যোগ্যতার সব দিক থেকে একজন ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ আদর্শ মানব। বিশ্বনবী (সা.) তাঁকে প্রায় ৫/৬ বছর বয়স থেকে নিজের হাতে ও নিজের ঘরে রেখে মনের মত করে গড়ে তোলেন এবং জ্ঞানগত নানা দিকসহ সব দিকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। উমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন, আলী না থাকলে ওমর ধ্বংস হয়ে যেত এবং আলীর মত একজন মহামানব জন্ম দেয়ার ক্ষমতা পৃথিবীর আর কোনো নারীর নেই। তিনি আলী (আ.)'র শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করেছেন যা আর কারো ছিল না। এ তিনটি বৈশিষ্ট্য ছিল: "(নবী-নন্দিনী) ফাতিমা (সা. আ.)'র সঙ্গে তাঁর বিয়ে, মসজিদে (নববীর) ভেতরে তাঁর বসবাস অব্যাহত থাকা যা আমার জন্য বৈধ নয় এবং খায়বার যুদ্ধের পতাকা (তথা সেনাপতিত্ব) পাওয়া।" আলী (আ.)'র আগে অন্য সেনাপতিরা মদিনায় ইহুদি শত্রুদের খায়বার দুর্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন, "আগামীকাল আমি এমন একজনের হাতে পতাকা দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাঁকে ভালবাসেন।" বেলায়েত বা নেতৃত্বের দর্শন: সমাজ পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব একটি অপরিহার্য বিষয়। মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা নেয়ামত হলো- নেতৃত্বের যোগ্যতা। এই যোগ্যতা, গুণ ও ক্ষমতা সীমিত সংখ্যক লোকের মধ্যেই আল্লাহ দিয়ে থাকেন। বাকীরা তাদের অনুসরণ করেন। মানব ইতিহাসের কিছু নেতা সরাসরি আল্লাহর মাধ্যমে মনোনীত। এঁরা হলেন, নবী, রাসূল ও আহলে বাইতের ইমামগণ, যারা সরাসরি আল্লাহর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। ফলে তাদের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ সব মানুষের জন্য যথাযথভাবে অনুকরণীয়। মানব সমাজের নেতৃত্বের বিষয়টি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, সে বিষয়টি পবিত্র কুরানেও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মরণ করো যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সেসব পরীক্ষায় সে পুরোপুরি উত্তীর্ণ হলো। এরপর আল্লাহ বলেছিলেন "আমি তোমাকে সব মানুষের নেতার পদে অধিষ্ঠিত করবো।" ইবরাহীম আবেদন করেছিলেন- আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও ( ইমাম বা নেতা করুন)। আল্লাহ জবাব দিলেন: "আমার এ অঙ্গীকার জালেমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য হবে না (কেবলমাত্র তোমার যেসব বংশধর নিষ্পাপ ও পবিত্র থাকবে,তারাই এ পদের যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে)। হজরত মূসা(আ.) তাঁর ভাই হারুনকে নিজের সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য আল্লাহর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর আল্লাহ তা কবুল করেন। সূরা ত্বাহার ৩৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: আল্লাহ বললেন, "হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো।' সূরা সা'দের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা, হজরত দাউদ (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'হে দাউদ ! আমি অবশ্যই তোমাকে পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের প্রতিনিধি করেছি। সুতরাং মানুষের মধ্যে সত্য ও [ ন্যায়ের ] ভিত্তিতে বিচার -মীমাংসা কর।' এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে,তিনিই মানব জাতির নেতা ও ইমাম নির্ধারণ করেন। ইসলাম ধর্মে নেতৃত্ব ও ইমামত কেবল মানুষের দৈনন্দিন ও প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার জন্য নয়। ইসলাম ধর্মে একজন ইমাম বা নেতা, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক-উভয় ক্ষেত্রের নেতা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে একজন নেতা, জনগণ থেকে আলাদা নয়। গাদিরের ঘটনাকে তিনি জনগণের নেতৃত্ব ও নীতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হিসেবে গণ্য করেন। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তাঁর পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি আলী (আ.)-এর যোগ্যতা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, “হে জনগণ, এমন কোনো জ্ঞান নেই, যা আল্লাহ আমাকে দেননি এবং আমিও পরহেজগারদের নেতা আলী (আ.)-কে সেই জ্ঞান শিখিয়েছি। আপনারা কেউই আলী (আ.)-র পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তাঁর পথ থেকে দূরে সরে যাবেন না। তাঁর নেতৃত্বকে অমান্য করবেন না। কারণ সে সবাইকে সত্যের পথে পরিচালিত করে এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করে। সে অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটায় এবং নিজে অন্যায় থেকে দূরে থাকে। আলী (আ.) আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই ভয় করে না। আলী (আ.) হচ্ছে প্রথম মুসলমান। রাসূলে খোদার জন্য সে তাঁর প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সে সর্বদা রাসূলের পাশে ছিল ও আছে এবং আর কেউই তাঁর মতো রাসূলের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে এতো বেশি আন্তরিক নয়। হে মুসলমানগণ, আলী (আ.) হচ্ছে আমার ভাই, স্থলাভিষিক্ত ও আমার শিক্ষায় শিক্ষিত। সে আমার উম্মতের নেতা-কোরানের তাফসির যার জানা। সে কুরআনের দিকে আহ্বানকারী এবং কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। সে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সে আল্লাহ বিরোধীদের শত্রু এবং আল্লাহপ্রেমীদের বন্ধু। সে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে জনগণকে বিরত রাখে।” মানুষের ওপর তিনিই নেতৃত্ব দেয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্য যিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আর বিশ্বনবী (সা.)’র পর তাঁর পবিত্র হাদিস অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ছিলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)। কারণ, হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি জ্ঞানের নগর আর আলী হল তার দরজা। অর্থাত বিশ্বনবী (সা.)’র জ্ঞানের শহরে প্রবেশের জন্য আলী (আ.) নামক মাধ্যম বা দরজা দিয়েই ঢুকতে হবে। এ ছাড়াও হাদিসে বলা হয়েছে, “আল ওলামাউ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া।” অর্থাত নবীগণের উত্তরসূরি হচ্ছেন আলেমগণ। হযরত আলী (আ.) যে বিশ্বনবী (সা.)’র পর শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন তাতে তাঁর শত্রু -মিত্র নির্বিশেষে কোনো সাহাবিই সন্দেহ পোষণ করতেন না। এ কারণেই মহান আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) আলী (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি বা স্থলাভিষিক্ত তথা মুসলমানদের ইমাম বা নেতা বলে ঘোষণা করেছিলেন পবিত্র গাদীর দিবসে। এই ইমামত হচ্ছে নবুওতেরই ধারাবাহিকতা। ইসলামে ঐশী ইমামত বা খোদায়ী নেতৃত্ব ঠিক করে দেন মহান আল্লাহ। আর সেটা বংশ পরম্পরায়ও চলতে পারে। যেমন, নবী হয়েছিলেন ইব্রাহিম (আ.)'র বংশধরগণ এবং হযরত দাউদ (আ.)'র পুত্র সুলায়মান ও হযরত মুসা (আ.)'র ভাই হারুন (আ.)। ইমামত বা নবুওতের মত ঐশী বা খোদায়ী পদগুলোতে কারা আসীন হবেন মানুষ তা ঠিক করার অধিকার রাখে না। কারণ, মানুষের মনোনয়ন বা নির্বাচন ভুলও হতে পারে। তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই তা ঠিক করে দেন। বিশ্বনবী (সা.) বিভিন্ন সময় আলী(আ.) কে নিজ খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। এরমধ্যে তিনটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করছি: প্রথমত: রাসূল হিসেবে মনোনীত হওয়ার তথা বে’সাতের প্রথম দিকে: বিশ্বনবীকে (সা.) যখন নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় তখন তিনি সবার উদ্দেশে বললেন:“যে ব্যক্তি এই পথে আমাকে সাহায্য করবে, সেই হবে আমার ওয়াসি তথা কর্তৃত্বের অধিকারী, উজির বা পৃষ্ঠপোষক এবং স্থলাভিষিক্ত ।” রাসূল (স.) এভাবে বলেন- “তোমাদের মাঝে কে এমন আছে যে এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করবে যাতে সে তোমাদের মাঝে আমার ভাই, উজির (পৃষ্ঠপোষক), খলিফা এবং স্থলাভিষিক্ত হতে পারে?” কেবল আবু তালিবের সন্তান আলী (আ.) রাসূল (স.) এর কথায় হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন।আর তখন আল্লাহর রাসূল (স.) নিজ আত্মীয় স্বজনদের উদ্দেশে বলেন- “এই (আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসি এবং খলিফা। অতএব, তোমরা তার কথা শোন এবং তাকে অনুসরণ কর।” দ্বিতীয়ত: তাবুকের যুদ্ধে: রাসূলুল্লাহ (স.) আলী (আ.) এর উদ্দেশে বলেন- “[হে আলী!] তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি আমার কাছে ঠিক তদ্রূপ যেমন হারুন (আ.) ছিলেন মুসা (আ.) এর কাছে। তবে পার্থক্য এই যে, আমার পরে আর কোনা নবী নেই (আসবে না)।’ অর্থাৎ যেভাবে হারুন (আ.) কোনরকম ব্যবধান ছাড়াই মুসা (আ.) এর স্থলাভিষিক্ত ছিলেন তুমিও আমার খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত। তৃতীয়ত: দশম হিজরিতে: বিদায় হজ থেকে ফেরার পথে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে হাজিদের এক বিশাল সমাবেশে মহানবী (স.) আলী (আ.) কে মুসলমান ও মু’মিনদের নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন- “আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।” এই বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর বললেন:- “হে আল্লাহ! তাকে তুমি ভালবাসত যে আলীকে ভালবাসে ও তুমি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে; তুমি সহযোগিতা কর তাকে যে আলীকে সহযোগিতা করে, তুমি তাকে নিঃসঙ্গ কর যে আলীকে একা রাখে এবং সত্যকে আলীর সাথে রাখ তা যে দিকেই থাক না কেন”। হে লোকসকল! আপনারা অবশ্যই যারা উপস্থিত আছেন তারা এই বাণীটি অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছিয়ে দিবেন। রাসূলের (সা.) বক্তব্য শেষ হলে জিবরাঈল (আ.) আবার দ্বিতীয়বারের মত অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে এই বাণীটি পৌঁছে দেন: আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম ও আমার নেয়ামত বা অবদানকে তোমাদের উপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদা-৩) রাসূল (সা.) এই বাণী পেয়ে মহা-আনন্দিত হলেন এবং বললেন- মহান আল্লাহর শুকর করছি যে তিনি দ্বীনকে পরিপূর্ণ ও তাঁর নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন এবং মহান প্রভু আমার রেসালাতের বা নবুওতি দায়িত্বের ও আলীর বেলায়াতের বা অভিভাবকত্বের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আল্লাহর রাসূল (স.) তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেছিলেন: “আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের নিজেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব রাখি না?” তখন উপস্থিত সব মুসলমান দাঁড়িয়ে রাসূল (স.) এর এ কথার প্রতি সম্মতি জানান। অতএব, বিষয়টি হতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদিসে 'মাওলা' বলতে মু’মিনদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও তাদের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বোঝানো হয়েছে। অতএব, এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল (স.) যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন উম্মতের ক্ষেত্রে তা তিনি আলী(আ.) এর জন্যও নিশ্চিত করে যান।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ পর্ব ১ 24 জিলহজ মোবাহেলা দিবস — বিস্তারিত ঘটনা সমূহ সত্তরটি গ্রাম সমেত নাজরান অঞ্চল হিজায ও ইয়েমেন সীমান্তে অবস্থিত । ইসলামের চূড়ান্ত পর্যায়ে আবির্ভাব কালে এ এলাকাটি হিযাজের একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল । এ এলাকার অধিবাসীরা বিভিন্ন কারণে মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতা ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিল । সূত্র – ইয়াকুত হামাভী তাঁর মু’ জামুল বুলদান গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ২৬৬-২৬৭ পৃষ্ঠায় নাজরানবাসীদের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার কারণগুলো বর্ণনা করেছেন । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও ধর্মীয় কেন্দ্রসমূহের প্রধানদের কাছে চিঠি-পত্র প্রেরণের পাশাপাশি মহানবী (সঃ) নাজরানের আর্চবিশপ আবু হারিসা-এর কাছে ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছিলেন । সূত্র – .‘ উসকুফ’ বা‘ আর্চ বিশপ’ শব্দটি গ্রীক‘ ইপেসকোপ’ শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী, তদারককারী, পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক । আর এখন এ শব্দটি ধর্মযাজক বা পাদ্রীর চেয়ে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের খ্রিষ্টধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক পদ বোঝাতে ব্যবহৃত হয় । “ইবরাহীম (আঃ) , ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকূব (আঃ) এর প্রভুর নামে , (এ পত্রটি) মহান আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পক্ষ থেকে নাজরানের মহামান্য আর্চবিশপের প্রতি । ইসহাক ও ইয়াকূবের প্রভুর প্রশংসা করছি এবং আপনাদের বান্দাদের (গায়রুল্লাহর) উপাসনা থেকে মহান আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানাচ্ছি । আপনাদেরকে গায়রুল্লাহর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য থেকে বের হয়ে মহান আল্লাহর আধিপত্যে (বেলায়েত) প্রবেশ করার আহবান জানাচ্ছি । আর যদি আপনারা আমার দাওয়াত গ্রহণ না করেন , তা হলে অন্ততঃপক্ষে ইসলামী সরকারকে কর (জিযিয়া) প্রদান করুন (যে, এ কর প্রদান করার দরুন আপনাদের জীবন ও ধন-সম্পদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে) । এর অন্যথা হলে আপনাদের প্রতি সমূহ বিপদ অর্থাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সূত্র – বিহারুল আনওয়ার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৮৫ । কিছু কিছু শীয়া ঐতিহাসিক সূত্রে আরও বেশী বর্ণিত হয়েছে যে , মহানবী (সাঃ) আহলে কিতাব এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঐ আয়াতও পত্রে লিখেছিলেন , যার মধ্যে এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদতের প্রতি সবাইকে আহবান জানানো হয়েছে । ” — আপনি বলে দিন : হে আহলে কিতাব ! আমাদের ও তোমাদের মাঝে যে বিষয়টি অভিন্ন , সেই বিষয়ের দিকে তোমরা সবাই ফিরে আস । সূরা – আলে ইমরান / ৬৪ । এই আয়াতের মর্মার্থ, বিহারুল আনওয়ার, ২১তম খণ্ড, পৃ. ২৮৭ । মহানবী (সাঃ) এর প্রেরিত প্রতিনিধি দল নাজরানে প্রবেশ করে তাঁর পত্র নাজরানের প্রধান খ্রিষ্ট ধর্মযাজকের কাছে অর্পণ করেন । আর্চবিশপ ভালভাবে পত্রটি পাঠ করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য তিনি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরামর্শসভার আয়োজন করেন । ঐ পরামর্শ সভার একজন সদস্য ছিলেন শুরাহবিল , যিনি বুদ্ধিমত্তা , বিচারক্ষমতা ও দক্ষতার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন । তিনি আর্চবিশপের উত্তরে বলেছিলেন , “আমার ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান খুবই কম । সুতরাং অভিমত ব্যক্ত করার অধিকার আমার নেই । আর যদি আপনারা অন্য কোন বিষয়ে আমার সাথে পরামর্শ করতেন , তা হলে আমি আপনাদের সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন পথের সন্ধান দিতাম । কিন্তু অনন্যোপায় হয়ে একটি বিষয় সম্পর্কে আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি যে , আমরা আমাদের ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে বহু বার শুনেছি যে , একদিন হযরত ইসহাকের বংশধারা থেকে নবুওয়াতের পদ ইসমাঈলের বংশধারায় স্থানান্তরিত হবে । আর ‘মুহাম্মদ’, যিনি ইসমাঈলের বংশধর , তিনিই যে সেই প্রতিশ্রুত নবী হবেন , তা মোটেই অসম্ভব নয় ।” এ পরামর্শসভা এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করে যে , নাজরানের প্রতিনিধি দল হিসেবে একদল লোক মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে যেসব বিষয় তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার দলিল স্বরূপ সেসব কাছে থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করার জন্য মদীনায় যাবে । তাই নাজরানবাসীর মধ্য থেকে ষাটজন সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে এ প্রতিনিধি দলের সদস্য নির্বাচিত করা হয় । তাদের নেতৃত্বে ছিলেন তিনজন ধর্মীয় নেতা যাঁদের পরিচয় নীচে দেয়া হল – ১) – আবু হারিসাহ ইবনে আলকামাহ্ : নাজরানের প্রধান ধর্মযাজক বা আর্চবিশপ যিনি হিজাযে রোমের গীর্জাসমূহের স্বীকৃত প্রতিনিধি ছিলেন । ২) – আবদুল মসীহ্ : নাজরানের প্রতিনিধি দলের নেতা, যিনি বিচার-বুদ্ধি, দক্ষতা, কর্মকৌশল ও ব্যবস্থাপনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন । ৩) – আইহাম : যিনি ছিলেন একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং নাজরানবাসীর সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্ত । সূত্র – তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৬ । প্রতিনিধি দল রেশমী বস্ত্র নির্মিত অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিধান করে , হাতে স্বর্ণ নির্মিত আংটি পরে এবং গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে অপরাহ্নে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে মহানবী (সাঃ) কে সালাম জানায় । কিন্তু তিনি তাদের ঘৃণ্য ও অসংযত অবস্থা- তাও আবার মসজিদের অভ্যন্তরে,- দেখে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হন । তারা বুঝতে পারে যে , মহানবী (সাঃ) তাদের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন । কিন্তু তারা এর কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিল না । তাই তারা তৎক্ষণাৎ হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফের সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের এ ঘটনা সম্পর্কে জানালে তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে সমাধান আলী ইবনে আবী তালিবের হাতে রয়েছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ তাদের পূর্ব পরিচিত ছিলেন । প্রতিনিধি দল যখন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আঃ) এর কাছে গমন করে তাঁকে ঘটনা সম্পর্কে জানায় , তখন আলী (আঃ) তাদেরকে বলেছিলেন , “আপনাদের উচিত আপনাদের এসব জমকালো পোশাক ও স্বর্ণালংকার পাল্টিয়ে সাদা-সিধাভাবে মহানবী (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত হওয়া । তা হলে আপনাদেরকে যথাযথ সম্মান করা হবে ।” প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান যে আয়াতের শানে নুজুলে ৪ লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে ছদ্মবেশী সাহাবী সামরাহ বিন জুনদাবকে ক্রয় করেন এবং তাকে (সামরাহ বিন জুনদাব) দিয়ে রেওয়ায়েত করান যে, উপরে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলীর(আঃ) হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের শানে নাজিল হয়েছে সুরা বাকারা ,আয়াত# ২০৭ “ এবং মানুষের মধ্যে এমনও আছে,যে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত বিক্রয় করে দেয় এবং আল্লাহ(এরুপ) বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল”।(১) সঠিক তাফসীরঃ(১) যখন মক্কার কাফিররা সম্মিলিতভাবে রাসুল(সাঃ)কে হত্যা করার পরামর্শ করে তাঁর ঘর অবরোধ করল এবং আল্লাহ তাকে অবহিত করলেন তখন তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে হযরত আলী(আঃ)-কে বললেন, ‘কাফিররা আমাকে শয্যায় হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে।তুমি আমার স্থানে শুয়ে নিজেকে চাদরে ঢেকে ঘুমিয়ে থাক যাতে তারা মনে করে যে,আমি ঘুমাচ্ছি এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যাইনি’।হযরত আলী(আঃ) বললেন, ‘আমি বেচে থাকি বা না থাকি,আপনার নিরাপত্তা অবশ্যই কাম্য’।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ হযরত আলীর(আঃ) প্রশংসায় আয়াতটি অবতীর্ন করেন।রাসুলাল্লাহ(সাঃ০ বলেন যে, আল্লাহ জিব্রিল ও মিকাইল(আঃ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, ‘আমি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব রচনা করেছি এবং একের পরমায়ু অপরের থেকে বেশী করেছি।তোমাদের মধ্যে কে এমন আছ যে, নিজ আয়ু নিজ ভাইকে দিয়ে দেবে’।কিন্তু উভয়েই অস্বীকার করলেন।তখন আল্লাহ তাঁদের বললেন, আমি আমার ওলী আলী এবং আমার নবী মুহাম্মাদের মধ্যে ভ্রাতৃ্ত্ব রচনা করেছি।তাকিয়ে দেখ,আমার ওলী আমার নবীর জন্য কীরুপে নিজ জীবন উতসর্গ করতে উদ্যত হয়েছে এবং নবীর শয্যায় নির্ভয়ে ঘুমিয়ে আছে।তোমরা উভয়ে এখন পৃথিবীতে অবতরন কর এবং আলীকে শত্রুদের থেকে রক্ষা কর’।একথা শুনেই তারা উভয়ে পৃথিবীতে আগমন করলেন এবং জিব্রিল(আঃ) আলীর(আঃ) মাথার দিকে এবং মিকাইল(আঃ) তাঁর পায়ের দিকে বসলেন।তখন জিব্রিল(আঃ) হযরত আলীকে(আঃ)উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলেন, ‘হে আবু তালিবের সন্তান!ধন্যবাদ।আপনার তুলনা কোথায় আছে যে, স্বয়ং আল্লাহ নিজ ফেরেস্তাদের কাছে আপনার কারনে গর্ব করেছেন’।(তাফসীরে ফাখরুদ্দিন রাজী,তাফসীরে সালাবী এবং ইমাম গাজ্জালী রচিত ইহইয়াউ উলুমুদ্দিন দ্রষ্টব্য)। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান উক্ত আয়াতের শানে নুজুলে ৪ লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে ছদ্মবেশী সাহাবী সামরাহ বিন জুনদাবকে ক্রয় করেন এবং তাকে (সামরাহ বিন জুনদাব) দিয়ে রেওয়ায়েত করান যে, উপরে উল্লেখিত আয়াতটি হযরত আলীর(আঃ) হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের শানে নাজিল হয়েছে। প্রচারে মোঃ ইয়া আলী আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদীও ওয়া আলে মোহাম্মদ মুবাহিলাতে রাসূল আকরাম (সা.)-এর সঙ্গী প্রচুর সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী তাদের হাদীস গ্রন্থে এবং ঐতিহাসিক ও মুফাসসিরগন তাদের ইতিহাস ও তাফসীরের কিতাবসমূহে সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ফাতেমা আয যাহরা (আ.), নাজরানের খৃষ্টান পাদ্রীদের সাথে নবী (সা.)-এর চ্যালেঞ্জের আহবানে অংশগ্রহণকারী আহলে বাইতের পাঁচ সদস্যের মধ্যে অন্যতম। এ বিষয়টি তাদের উচ্চ মর্যাদা ছাড়াও এমন একটি শক্তিশালী প্রমাণ যার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায় যে,“ নবী (সা.)-এর নিষ্পাপ আহলে বাইত হযরত আলী, হযরত ফাতেমা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন বৈ কেউ নন। তাঁর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রীবর্গ এ বিশেষ মর্যাদার মধ্যে গণ্য। নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে মুবাহিলার ঘটনা বর্ণনা করা হলো : একদা নাজরানের কতিপয় খৃষ্টান পাদ্রী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খেদমতে এসে হযরত ঈসা (আ.)-এর সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে নিম্নের এ আয়াতটি পাঠ করেন : إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ অর্থাৎ“ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ঈসার উদাহরণ আদমের ন্যায় যেমনি করে তিনি তাকে ( আদমকে) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। ” (আলে ইমরান : ৫৯) তারপরও উপস্থিত খৃষ্টান পাদ্রীরা সন্তুষ্ট হলো না। বরং তারা উক্ত আয়াতের প্রতিবাদ করে বসে। তখন মুবাহিলার আয়াত অবতীর্ণ হয়। সে আয়াতে আল্লাহ্ বলেন : فَمَنْ حَآجَّكَ فِيْهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ اْلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَ أَبْنَآءَكُمْ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَكُمْ وَ أَنْفُسَنَا وَ أَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْلَّعْنَتَ اللهِ عَلَى اْلْكَاذِبِيْنَ অর্থাৎ ‚যারা তোমার কাছে ( মাসিহ্ সম্পর্কে) অকাট্য জ্ঞান ও দলীল আসার পরও তোমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয় তুমি তাদেরকে বলে দাও,আস! আমরা আমাদের সন্তানদের আহবান করি আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদের আহবান জানাও, আমরা আমাদের নারীদের ডেকে আনি আর তোমরাও তাই কর এবং আমরা আমাদেরকে ডেকে আনি আর তোমরাও তোমাদেরকে ডেকে আন। অতঃপর এসো আমরা মুবাহিলা (চ্যালেঞ্জ) করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষণ করি।“ ( আলে ইমরান : ৬১) মুবাহিলার অর্থ হচ্ছে : ‚কোন বিষয়ে বিবাদমান ও শত্রুভাবাপন্ন দু’ পক্ষ পরস্পরের উপর অভিশাপ বর্ষন করবে আর তারা আল্লাহর কাছে বাতিল পক্ষের উপর আযাব ও অভিশাপ কামনা করবে। এ কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর মনোনীত পয়গম্বরদের দ্বারাই সম্ভব। কেননা তারাই আল্লাহর সাথে সত্যিকার সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন।“ নাজরানের খৃষ্টানরা প্রথমে সম্মত হয়েছিল যে তারা পরের দিন মুবাহিলাতে অংশগ্রহণ করবে কিন্তু রাসূল (সা.)-এর কাছ থেকে ফিরে গিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হয়। ইতোমধ্যে খৃষ্টান পাদ্রী তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন : ‚যদি মুহাম্মদ আগামীকাল তাঁর সন্তান ও আহলে বাইতের সদস্যদের নিয়ে আসে তাহলে তাঁর সঙ্গে মুবাহিলা হতে বিরত থাকবে আর যদি তার সঙ্গী-সাথি ও সাহাবীদের নিয়ে আসেন তাহলে তাঁর সাথে মুবাহিলায় কোন আপত্তি নেই।“ তার পরের দিন যথারীতি হযরত মুহাম্মদ (সা.), আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.), হযরত ফাতেমা আয যাহরা,ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে সাথে নিয়ে মুবাহিলার উদ্দেশ্যে যথাস্থানে উপস্থিত হলেন। তিনি খৃষ্টানদের মুখোমুখি মাটির উপর বসে পড়েন। অতঃপর তিনি তাঁর আহলে বাইতকে বলেন : ‚আমি যখন দোয়া করবো তখন তোমরা তার শেষে আমিন বলবে।“ খৃষ্টানরা তাঁর প্রতিনিধি দলকে দেখেই ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে গেল। খৃষ্টানরা তাঁর পদ্ধতি অপরাপর সত্যপন্থী নবী ও রাসূলদের পদ্ধতির অনুরূপ বলে স্বীকারোক্তি পেশ করলো। তারা নবী (সা.)-এর অনুরোধ জানালো যে,তিনি যেন মুবাহিলা পরিত্যাগ করে তাদের সাথে শান্তি চুক্তিতে সম্মতি হন। তারা শান্তি ও সন্ধির পক্ষে সম্মতি স্বরূপ কিছু অর্থ পরিশোধ করে ফিরে গেল।(মানাকিবে শাহরে আশুব,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪২-১৪৪। কাশফুল গুম্মাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ৪২৫,৪২৬। মুনতাহাল আমাল,পৃ. ১১৪,১১৭,১৭৬,১৭৭। ফুসুলুল মুখতারা,শেখ মুফিদ,পৃ. ১৭। আর সহীহ মুসলিম,মুসনাদে আহ্মাদ বিন হাম্বাল এবং আবু নাঈম ইস্পাহানী রচিত“ ফি-মা নাযালা মিনাল কুরআন ফি আমিরুল মুমিনীন” গ্রন্থে,তাফসীরে কাশশাফ এবং আগানী আবুল ফারাজ ইস্পাহনী ও শিয়া-সুন্নী আলেমদের লিখিত অনেক গ্রন্থে এবং অধিকাংশ তাফসীরের কিতাবগুলোতে মুবাহিলার এ মর্যাদাপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে প্রচারে ইয়া আলী আঃ

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান (كتاب العلم) হাদিস নম্বরঃ ১১৫ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা ১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে। The writing of knowledge Narrated 'Ubaidullah bin `Abdullah: Ibn `Abbas said, "When the ailment of the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) became worse, he said, 'Bring for me (writing) paper and I will write for you a statement after which you will not go astray.' But `Umar said, 'The Prophet is seriously ill, and we have got Allah's Book with us and that is sufficient for us.' But the companions of the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) differed about this and there was a hue and cry. On that the Prophet (sallallahu 'alaihi wa sallam) said to them, 'Go away (and leave me alone). It is not right that you should quarrel in front of me." Ibn `Abbas came out saying, "It was most unfortunate (a great disaster) that Allah's Messenger (sallallahu 'alaihi wa sallam) was prevented from writing that statement for them because of their disagreement and noise. (Note: It is apparent from this Hadith that Ibn `Abbas had witnessed the event and came out saying this statement. The truth is not so, for Ibn `Abbas used to say this statement on narrating the Hadith and he had not witnessed the event personally. See Fath Al-Bari Vol. 1, p.220 footnote.) (See Hadith No. 228, Vol. 4). باب كِتَابَةِ الْعِلْمِ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ حَدَّثَنِي ابْنُ وَهْبٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَجَعُهُ قَالَ ‏"‏ ائْتُونِي بِكِتَابٍ أَكْتُبُ لَكُمْ كِتَابًا لاَ تَضِلُّوا بَعْدَهُ ‏"‏‏.‏ قَالَ عُمَرُ إِنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم غَلَبَهُ الْوَجَعُ وَعِنْدَنَا كِتَابُ اللَّهِ حَسْبُنَا فَاخْتَلَفُوا وَكَثُرَ اللَّغَطُ‏.‏ قَالَ ‏"‏ قُومُوا عَنِّي، وَلاَ يَنْبَغِي عِنْدِي التَّنَازُعُ ‏"‏‏.‏ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ إِنَّ الرَّزِيَّةَ كُلَّ الرَّزِيَّةِ مَا حَالَ بَيْنَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ كِتَابِهِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=122

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদিও ওয়া আলে মোহাম্মদ মহান আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়েতের জন্য যুগ যুগ ধরে এক লক্ষ চব্বিশ মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। আর সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন। রাসূল (সা.) এর ওফাতের মাধ্যমে নবুওয়তী ধারার পরিসমাপ্তি হয়। এর পর থেকে মানব জাতিকে হেদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ ইমামতের ধারাকে পৃথিবীর বুকে জারি করে দেন। যার প্রথম ইমাম হচ্ছেন হযরত আলী (আ.)। রাসুল (সা.) যে সকল হাদীসে আলী (আ.)-কে তার পরবর্তী ইমাম বা স্থলাভিষিক্ত হিসাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে থেকে কিছু হাদীস নিম্নে বর্ণনা করা হল। এনযারের হাদীস এনযারের হাদীস বলতে ঐ হাদীসকে বুঝানো হয় যা রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীয় নিকটাত্মীয়দের সতর্কীকরণের নির্দেশ পাওয়ার প্রেক্ষিতে বর্ণনা বরেছিলেন। নবুওয়াতের ৩য় বর্ষে রাসূল (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন। وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ ‘আর আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের-কে (পরকালের শাস্তি সম্পর্কে) ভয় প্রদর্শন করুন।’ (সূরা শুয়ারা-২১৪) এ আয়াত নাযিলের পর রাসুল (সা.) তার নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত করলেন এবং খাবার পরিবেশনের পর বনি হাশিমের লোকদের গোত্রপতিদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানগণ, মহান আল্লাহর শপথ আরবদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে তার নিজ গোত্রের জন্য আমি যে দ্বীন বা ধর্ম নিয়ে এসেছি এর চাইতে উত্তম কোন দ্বীন বা ধর্ম নিয়ে এসেছে। আমি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি। আমার প্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তোমাদেরকে যেন এই দ্বীনের দিকে আহ্বান করি এবং তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করবে? পরবর্তীতে সে হবে আমার ভাই, ওয়াসী ও আমার খলিফা। রাসূলের এ বক্তব্য শুনে সমগ্র মজলিস জুড়ে নীরবতা বিরাজ করছিল। সকলেই নিশ্চুপ। এমন সময় কিশোর বয়সের হযরত আলী (আ.) দাঁড়িয়ে অত্যন্ত দৃঢ় কন্ঠে বললেন : ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনাকে এ কাজে সাহায্য ও সহযোগিতা করবো।’ রাসূল (সা.) তাকে বসতে বললেন। এরপর তিনি তার উপরিউক্ত কথা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু হযরত আলী ব্যতীত কেউ তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দিল না। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তার নিকটাত্মীয়দেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে লোকসকল সে (হযরত আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভাই, ওয়াসী এবং আমার খলিফা। তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার অনুসরণ করবে।’ মানযিলাতের (মর্যাদা সম্পর্কিত) হাদীস তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসূল (সা.) তার প্রতিনিধি হিসেবে আলী (আ.)-কে মদিনায় রেখে গেলেন। আলী (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন যত দিন পর্যন্ত না তিনি মদিনায় ফিরে আসেন জনগণের দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক বিষয় যেন দেখাশুনা করেন এবং সকল প্রকার সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে এ সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রকে রক্ষা করেন। যখন মুনাফিকরা হযরত আলী (আ.)-র মদিনা অবস্থানের কথা শুনতে পেলেন, তখন তারা গুজব রটালো যে, আলী ও রাসূলের মধ্য সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে। তাঁর প্রতি রাসূলের পূর্বের ন্যায় আর ভালবাসা নেই। এ জন্য রাসূল (সা.) তাকে জিহাদের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশ গ্রহণের অনুমতি দেন নি। এ গুজব পুরো মদিনায় ছড়িয়ে পড়ল। আলী (আ.) তা শুনে অত্যন্ত মনঃক্ষুন্ন হলেন। রাসূল (সা.) মদিনা থেকে তখনও তেমন দূরে চলে যান নি, এমন সময় হযরত আলী (আ.) রাসূলের নিকট পৌঁছলেন এবং এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আলী, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, মর্যাদার দৃষ্টিতে আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মূসার সাথে হারুনের সস্পর্কের ন্যায়, পার্থক্য শুধু এটুকুই যে আমার পরে আর কোন নবী আসবে না।’ হাদিসটির পর্যালোচনা এ হাদিসটিতে রাসূল (সা.) মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁর সাথে আলী (আ.) এর সম্পর্ককে হযরত মূসা (আ.) ও হযরত হারুন (আ.) এর মধ্যকার সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছেন। হযরত হারুন যে সকল পদমর্যাদা লাভ করেন, হযরত আলী (আ.) ঠিক তেমনি পদমর্যাদা লাভ করেন। পার্থক্য শুধু এই যে হারুন (আ.) নবী ছিলেন কিন্তু আলী (আ.) রাসূলের পরবর্তী কোন নবী নন। কারণ নবুয়তী ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। যেমনটি পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুহাম্মদ কোন মানুষের পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’ (সূরা আহযাব:৪০)। আমরা কোরআনে দেখতে পাই যে, হযরত মূসা হযরত হারুনকে নবী, ওয়াসী, উত্তরাধিকারী, পৃষ্ঠপোষক, স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ্ তা কবুল করেন। (সূরা ত্বাহা:২৯-৩৪) গাদীরের হাদিস দশম হিজরিতে রাসূল (সা.) বিদায় হজ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটাই তাঁর জীবনের শেষ হজ্জ্ব একথা শুনে চারদিক থেকে রাসূল (সা.) এর সাথে হজ্জ্বে অংশগ্রহণের জন্য অসংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের মধ্যে হাজ্বীদের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী এ হজ্বে লক্ষাধিক হাজী উপস্থিত ছিলেন। হজ্ব সমাপ্ত করে রাসূল (সা.) সাহাবাদের নিয়ে মদিনার দিকে যাত্রা করলেন। দশম হিজরির ১৮ই জিলহজ্ব রাসূল (সা.) সাহাবাদের নিয়ে জুহফা অঞ্চলের গাদীরে খুম স্থানে উপস্থিত হয়েছেন। এখানেই ঐতিহাসিক চৌরাস্তা বিদ্যমান যেখান থেকে মদিনা, ইরাক, মিশর ও ইয়ামেনের হাজ্বীরা রাসূলের (সা.) এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আলাদা পথে যাত্রা করবেন। দুপুর ঘনিয়ে এসেছে, সূর্যের তীক্ষ্ণ কিরণ সমস্ত মরু প্রান্তর আগুনের মত জ্বলছে; হঠাৎ করে রাসূলের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসলো যেন সবাই থেমে গিয়ে এক জায়গায় একত্রিত হয়। মুসলমানরা সবাই একত্রিত হল। মুয়াজ্জিন উচ্চ কণ্ঠে যোহরের আযান দিলেন; সবাই দ্রুত নামাযের প্রস্তুতি নিলো। সূর্যের তাপ এত অত্যধিক ছিল যে মুসলমানরা তাদের গায়ের আবা (এক ধরনের চাদর) এর কিছু অংশ পায়ের নিচে কিছু অংশ সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে মাথার উপর ধরছিল। এ অবস্থায় যোহরের নামায শেষ হল। সবাই তাদের তৈরী ছোট্ট খিমায় (তাবুতে) বিশ্রামের চিন্তা করছিল এমন সময় রাসূল (সা.) ঘোষণা করলেন সবাই যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এক গুরুত্বপূর্ণ খবর শোনার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অনেক ভীড়ের কারণে দূরের লোক রাসূলকে দেখতে পাচ্ছিল না তাই উটের পিঠের হাওদা দিয়ে উঁচু করে মঞ্চ তৈরী করা হল। এরপর রাসূল সেখানে উঠলেন। মহান আল্লাহর প্রশংসা শেষে নিজেকে তাঁর কাছে সঁপে দিলেন এবং জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন : ‘আমি অতি শীঘ্রই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নিব। নিশ্চয় আমি একজন দায়িত্বশীল এবং তোমরাও (তোমাদের ব্যাপারে) দায়িত্বশীল। আমার ব্যাপারে তোমরা কি বলো?’ সকলেই উচ্চ কণ্ঠে বললেন : ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি আল্লাহর দ্বীনকে প্রচার করেছেন, আমাদেরকে কল্যাণের দিকে আহবান করেছেন, এ পথে অনেক চেষ্টা করেছেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুক।’ এরপর রাসূল (সা.) বললেন : ‘হে লোক সকল তোমরা কি সাক্ষ্য দেবে না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল; জান্নাত, জাহান্নাম ও মৃত্যু সত্য; নিঃসন্দেহে আল্লাহ কিয়ামতের দিনে সবাইকে ডাকবেন এবং মাটির নিচে আবৃত সবাইকে জীবিত করবেন?’ সকলেই একত্রে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ আবারো বললেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান ও ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে?’ উপস্থিত জনতার মধ্যে থেকে একজন দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ঐ দু’টি জিনিস কি?’ রাসূল (সা.) বললেন : ‘আল্লাহর কিতাব যার এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে। আল্লাহর কিতাবকে আঁকড়ে ধর যাতে করে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও, অপরটি হচ্ছে আমার ইতরাত, আহলে বাইত। মহান আল্লাহ্ আমাকে খবর দিয়েছেন এ দু’টি জিনিস কিয়ামত পর্যন্ত একে অপর থেকে পৃথক হবে না। এ দু’টি জিনিস থেকে কখনই অগ্রগামী হয়ো না এবং পিছে পড়ো না তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন সময় রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) এর হাত ধরে উপরে উঠালেন সকলেই আলী (আ.)-কে রাসূলের পাশে দেখলেন। রাসূল (সা.) বললেন : ‘হে লোকসকল, তোমরা কি অবগত নও যে, আমি মু’মিনদের উপর তাদের নিজেদের চাইতে অগ্রাধিকার রাখি?’ সকলেই এক বাক্যে বললেন : হ্যাঁ, অবশ্যই।’ (মুসনাদে আহমাদ) রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ্ আমার মাওলা এবং আমি মু’মিনদের মাওলা। তাদের উপর তাদের নিজেদের চাইতে আমি অধিক অগ্রাধিকার রাখি।’ অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, ‘আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা।’ এ বাক্যটি রাসূল (সা.) তিনবার উচ্চারণ করেন। আহমাদ বিন হাম্বল তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) এই বাক্যটি চার বার উচ্চারণ করেছেন। অতঃপর বললেন : ‘হে আল্লাহ্, যে আলীকে ভালবাসে, তুমি তাকে ভালবাস, এবং শত্রুতা কর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে। হে আল্লাহ্, যে আলীকে সাহায্য করে তুমিও তাকে সাহায্য কর। তার শত্রুদেরকে তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত কর এবং তাঁকে (আলী) সত্যের মাপকাঠি বানিয়ে দাও।’ অতঃপর বললেন : ‘তোমরা যারা এখানে উপস্থিত আছ সকলের দায়িত্ব হচ্ছে যারা অনুপস্থিত তাদেরকে এ খবর পৌঁছে দেওয়া।’ রাসূলের ভাষণ শেষ হতেই ওহীর বার্তা বাহক জিবরাইল (আ.) রাসূল (সা.) কে সুসংবাদ দিলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْت لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتمَمْت عَلَيْكُمْ نِعْمَتي وَرَضِيت لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা-৩) এমন সময় রাসূল (সা.) উচ্চৈঃস্বরে তাকবির ধ্বনি দিলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহ তোমার শুকরিয়া আদায় করছি যে তোমার দ্বীনকে পূর্ণ করে দিয়েছ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

রিসালাতে খলিফা ওমর (রাঃ)……………………… ………………………………………….. হযরত উকবা ইবনে আমের রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুল দঃ বলেছেন,আমার পরে কেঁউ নবি হলে নিশ্চই ওমর ইবনে খাত্তাব হতো। (তিরমিজি -৩৬২৪) উক্ত হাদিসটি এমন কোন মুসলমান নাই যিনি জিবনে একবার হলেও শুনেন নি। যদি নবিজি দঃ ওমরেরে শানে উক্ত কথা বলেই যেতেন তবে প্রশ্ন জাগে কি করে আবু বকর রাঃ ইসলামের প্রথম খলিফ হন!!!???? কেন আবু বকর রাঃ নবিজির পরে যার নবি হবার কথা সেই ওমর রাঃ হাতে বায়াত গ্রহন করলেন না!!??? আর তিনি ওমর রাঃ কেন উক্ত হাদিস টি নিয়ে জনগনের কাছে এসে দাবি উপস্থাপন করলেন না!!?? এহেন মর্যাদাশিল ব্যক্তি যিনি নবি হবার যোগ্য (ওমর রাঃ) তাকে ১ম খলিফা বানাতে আবু বকর রাঃ সহ অন্যান্য সাহাবিদের কিসে বাধাদিল। তাহলে নবিজির দঃ এর নামে চালিয়ে দেয়া উক্ত হাদিসটি কি আসলেই নবিজির বাক্য নাকি মাউলা আলী আঃ এর শান ও মানকে আরাল করার জন্য এই ধরনের হাদিসের আত্যপ্রকাশ করানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রনিত ভাবে। পৃথিবিতে আগত সকল নবি ও রাসুলই মুলত ৪টি বংশধারা থেকে এসেছেন, মহান আল্লাহ বলেন- নিঃসন্দেহে আল্লাহ- আদম, নুহ, আলে ইবরাহিম ও আলে ইমরানকে নির্বাচন করেছেন যারা একে অপরের বংসধর ছিল( সূরা আলে ইমরান ৩৩,৩৪) কোন নবি রাসুল ও তার পরবর্তি নবি (ওয়ারিস) কখনোই মুশরিক ছিলেন না আর না তারা কখনো মুরশরিক থেকে মুসলমান হয়েছেন। ওমর নিজের বক্তব্য- আমি ইসলাম থেকে অনেক দূরে ছিলাম। জাহেলিয়াতের যুগে মদে আসক্ত ছিলাম এবং খুব বেশি পরিমানে মদ খেতাম ...(সিরাতে ইবনে হিসাম,প্রথম খন্ড ৩৬৮-৩৬৯) আল্লাহপাকের কোরআন সাক্ষিদেয়, কোন নবি কিং বা নবির উত্তরসূরি কখনই মদ পারন করেন নি। যিনি নবির ওয়ারিস হবেন তিনি কুফরি থেকে মুক্ত ও পবিত্র হবেন। মাউলা আলী আঃ বলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং রাসুলের দঃ ভাই। আমি সিদ্দিকে আকবর। আমার পর কেবল মিথ্যাবাদীই এরুপ বলবে। আমি লোকদের মাঝে সাত বছর বয়সের পূর্বেই সালাত আদায় করেছি (সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফ,খন্ড-১, পৃ-৮৩,ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ওমর রাঃ নবি হতেন এটি একটি অতিব মিথ্যা, বানোয়াট বর্ননা। আর তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সঙ্গে মিলাবে না। এবং যেনেশুনে সত্যকে গোপন করবে না। (বাকারা-২/৪২) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম -রাজীব রহমান

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪৮ ২০৯১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট আত্মীয়দের মর্যাদা এবং ফাতিমা (রাঃ) বিনতে নবী (সাঃ) এর মর্যাদা। নবী (সাঃ) বলেছেন, ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতবাসী মহিলাগণের সরদার ৩৪৪৮। আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা। যে তাঁকে কষ্ট দিবে, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল। Narrated Al-Miswar bin Makhrama: Allah's Messenger (ﷺ) said, "Fatima is a part of me, and he who makes her angry, makes me angry." بَابُ مَنَاقِبُ قَرَابَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْقَبَةِ فَاطِمَةَ عَلَيْهَا السَّلاَمُ بِنْتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَاطِمَةُ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَدَّثَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3706

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪১ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৪১। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের প্রাক্কালে) আলী (রাঃ) কে বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন, তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর। And narrated Sad that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali, "Will you not be pleased from this that you are to me like Aaron was to Moses?" باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا غُنْدَرٌ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدٍ، قَالَ سَمِعْتُ إِبْرَاهِيمَ بْنَ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِعَلِيٍّ ‏ "‏ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3699

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৮ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, মদিনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকটে বসে আলী (রাঃ) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বললেন, সে কি বলছে? সে বলল, সে তাকে আবূ তুরাব (রাঃ) বলে উল্লেখ করছে। সাহল (রাঃ) (একথা শুনে) হেসে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, তাঁর এ নাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই রেখেছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি (নাম রাখার) ঘটনাটি জানার জন্য সাহল (রাঃ) এর আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবূ আব্বাস, এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বললেন, (একদিন) আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এস মসজিদে শুয়ে রইলেন। (অল্পক্ষণ পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই (আলী) কোথায়? তিনি বললেন, মসজিদে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাঁর চাঁদর পিঠ থেকে সরে গিয়েছে। তাঁর পিঠে ধূলা-বালি লেগে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিঠ থেকে ধুলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে লাগলেন, উঠে বস হে আবূ তুরাব। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছিলেন। Narrated Abu Hazim: A man came to Sahl bin Sa`d and said, "This is so-and-so," meaning the Governor of Medina, "He is calling `Ali bad names near the pulpit." Sahl asked, "What is he saying?" He (i.e. the man) replied, "He calls him (i.e. `Ali) Abu Turab." Sahl laughed and said, "By Allah, none but the Prophet (ﷺ) called him by this name and no name was dearer to `Ali than this." So I asked Sahl to tell me more, saying, "O Abu `Abbas! How (was this name given to `Ali)?" Sahl said, "`Ali went to Fatima and then came out and slept in the Mosque. The Prophet (ﷺ) asked Fatima, "Where is your cousin?" She said, "In the Mosque." The Prophet (ﷺ) went to him and found that his (i.e. `Ali's) covering sheet had slipped of his back and dust had soiled his back. The Prophet (ﷺ) started wiping the dust off his back and said twice, "Get up! O Abu Turab (i.e. O. man with the dust). باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلاً، جَاءَ إِلَى سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ فَقَالَ هَذَا فُلاَنٌ ـ لأَمِيرِ الْمَدِينَةِ ـ يَدْعُو عَلِيًّا عِنْدَ الْمِنْبَرِ‏.‏ قَالَ فَيَقُولُ مَاذَا قَالَ يَقُولُ لَهُ أَبُو تُرَابٍ‏.‏ فَضَحِكَ قَالَ وَاللَّهِ مَا سَمَّاهُ إِلاَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، وَمَا كَانَ لَهُ اسْمٌ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْهُ‏.‏ فَاسْتَطْعَمْتُ الْحَدِيثَ سَهْلاً، وَقُلْتُ يَا أَبَا عَبَّاسٍ كَيْفَ قَالَ دَخَلَ عَلِيٌّ عَلَى فَاطِمَةَ ثُمَّ خَرَجَ فَاضْطَجَعَ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَيْنَ ابْنُ عَمِّكِ ‏"‏‏.‏ قَالَتْ فِي الْمَسْجِدِ‏.‏ فَخَرَجَ إِلَيْهِ فَوَجَدَ رِدَاءَهُ قَدْ سَقَطَ عَنْ ظَهْرِهِ، وَخَلَصَ التُّرَابُ إِلَى ظَهْرِهِ، فَجَعَلَ يَمْسَحُ التُّرَابَ عَنْ ظَهْرِهِ فَيَقُولُ ‏"‏ اجْلِسْ يَا أَبَا تُرَابٍ ‏"‏‏.‏ مَرَّتَيْنِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3696

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৭ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৭। কুতায়বা (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যান নি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সান্ধ্যায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে এমন এক ব্যাক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করাবেন। তারপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন আলী (রাঃ), অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করি নি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেই (পতাকা) দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দিলেন। Narrated Salama: `Ali happened to stay behind the Prophet (ﷺ) and (did not join him) during the battle of Khaibar for he was having eye trouble. Then he said, "How could I remain behind Allah's Messenger (ﷺ)?" So `Ali set out following the Prophet (ﷺ) , When it was the eve of the day in the morning of which Allah helped (the Muslims) to conquer it, Allah's Messenger (ﷺ) said, "I will give the flag (to a man), or tomorrow a man whom Allah and His Apostle love will take the flag," or said, "A man who loves Allah and His Apostle; and Allah will grant victory under his leadership." Suddenly came `Ali whom we did not expect. The people said, "This is `Ali." Allah's Messenger (ﷺ) gave him the flag and Allah granted victory under his leadership. باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَاتِمٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي عُبَيْدٍ، عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ كَانَ عَلِيٌّ قَدْ تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي خَيْبَرَ وَكَانَ بِهِ رَمَدٌ فَقَالَ أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَخَرَجَ عَلِيٌّ فَلَحِقَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِي فَتَحَهَا اللَّهُ فِي صَبَاحِهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ ـ أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ ـ غَدًا رَجُلاً يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ـ أَوْ قَالَ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ـ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِ ‏"‏‏.‏ فَإِذَا نَحْنُ بِعَلِيٍّ وَمَا نَرْجُوهُ، فَقَالُوا هَذَا عَلِيٌّ‏.‏ فَأَعْطَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3695

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৬ ২০৮৮. আবু হাসান আলী ইবন আবু তালিব কুরায়শী হাশিমী (রাঃ) এর মর্যাদা নবী করীম (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আপনজন আমি তোমার একান্ত শ্রদ্ধাভাজন। উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওফাত পর্যন্ত তার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন ৩৪৩৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে, পতাকা তাকে দেয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস।যখন তিনি এলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু’আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে দুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম। Narrated Sahl bin Sa`d: Allah's Messenger (ﷺ) said, "Tomorrow I will give the flag to a man with whose leadership Allah will grant (the Muslim) victory." So the people kept on thinking the whole night as to who would be given the flag. The next morning the people went to Allah's Messenger (ﷺ) and every one of them hoped that he would be given the flag. The Prophet (ﷺ) said, "Where is `Ali bin Abi Talib?" The people replied, "He is suffering from eye trouble, O Allah's Messenger (ﷺ)." He said, "Send for him and bring him to me." So when `Ali came, the Prophet (ﷺ) spat in his eyes and invoked good on him, and be became alright as if he had no ailment. The Prophet (ﷺ) then gave him the flag. `Ali said, "O Allah's Messenger (ﷺ)! Shall I fight them (i.e. enemy) till they become like us?" The Prophet (ﷺ) said, "Proceed to them steadily till you approach near to them and then invite them to Islam and inform them of their duties towards Allah which Islam prescribes for them, for by Allah, if one man is guided on the right path (i.e. converted to Islam) through you, it would be better for you than (a great number of) red camels." باب مَنَاقِبُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ الْقُرَشِيِّ الْهَاشِمِيِّ أَبِي الْحَسَنِ رضى الله عنه وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: «أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ». وَقَالَ عُمَرُ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهْوَ عَنْهُ رَاضٍ حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلاً يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ ‏"‏ قَالَ فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ، غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا فَقَالَ ‏"‏ أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ ‏"‏‏.‏ فَقَالُوا يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ قَالَ ‏"‏ فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتُونِي بِهِ ‏"‏‏.‏ فَلَمَّا جَاءَ بَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ، فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ، فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ‏.‏ فَقَالَ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ أُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا فَقَالَ ‏"‏ انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ، فَوَاللَّهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ ‏"‏‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=3694

Sharif Ul Islam পড়ুন আরও জানতে পারবেন। খাতুনে জান্নাত ফাতিমা যাহরা, পৃ- ১১২ , ১১৯ (রহমানিয়া লাইব্রেরী) / হযরত ফাতেমা যাহরা , পৃ- ৬১ , ৬২ , ৬৭ , ৬৮ (তাজ লাইব্রেরী) / হযরত ফাতেমা যাহরা , পৃ- ১৮০ , ১৮৯ , ১৯০ (হামিদিয়া লাইব্রেরী) / নাহজ আল বালাঘা , পৃ- ৩৬৪ - ৩৭৫ (জেহাদুল ইসলাম) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৬ , হাদিস নং - ৬২৫৮ (আধুনিক প্রকাশনী) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৩ , হাদিস নং - ২৮৬০ , ৩৪৩৬ , ৩৪৩৭ , ৩৪৩৮ (আধুনিক প্রকাশনী) / হিলিয়াত আল আউলিয়া , খন্ড - ২ , পৃ- ৪৩ (মিশর) / আস সুনান আল কুবরা , খন্ড - ৩ , পৃ- ৩৯ , খন্ড - ৪ , পৃ- ৩৩৪ (হায়দারাবাদ , ভারত) / আনসার আল আশরাফ (বালাজুরি) , খন্ড - ১ , পৃ- ৪০৫ (মিশর) / আল ইসতিয়াব , খন্ড - ৪ , পৃ- ১৮৯৭ (মিশর) / উসুদ আল ঘাবা (ইবনে আসির) , খন্ড - ৫ , পৃ- ৫২৪ (মিশর) / সহীহ আল বুখারী , খন্ড - ৫ , পৃ- ১৭৭ , খন্ড - ৮ , পৃ- ১৮৫ (মিশর) / সহীহ আল মুসলিম , খন্ড - ৫ , পৃ- ১৫৩ / সুনান আল কুবরা , খন্ড - ৪ , পৃ- ২৯ , খন্ড - ৬ , পৃ- ৩০০ (হায়াদারাবাদ , ভারত) / আল তাবাকাত ইবনে সাদ , খন্ড - ২ , পৃ- ৮৬ (লেডেন) / মুসনাদে হাম্বল , খন্ড - ১ , পৃ- ৯ (মিশর) / তারিখে তাবারী , খন্ড - ১ , পৃ- ১৮২৫ (লেডেন) / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , খন্ড - ৫ , পৃ- ২৮৫ (মিশর) / শারহ নাহাজ আল বালাঘা , (ইবনে হাদীদ) , খন্ড - ৬ , পৃ- ৪৬ (মিশর) / ওয়াফা আল ওয়াফা , খন্ড - ৩ , পৃ- ৯৯৫ (মিশর) / আশ শাফি, খন্ড ৪ , পৃষ্ঠা - ১১৫ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৩৪ ।

আহলে বাইত › ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী বাকের (আ.) নবীজীর আহলে বাইতের পঞ্চম ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.) ১১৪ হিজরী সনের ৭ জিলহজ্ব ৫৭ বছর বয়সে শাহাদাতবরণ করেন। যেদিন তার শাহাদাতের খবর মদীনা শহরে ছড়িয়ে পড়লো সেদিন আহলে বাইতের অনুরাগীদের অন্তর শোকে-দুঃখে ভীষণ কাতর হয়ে পড়েছিল। কারণ হলো তারা আর নবীজীর আহলে বাইতের ঐ নূরানী ও সদয় চেহারাটি আর দেখবে না,মসজিদে আর তাঁর হৃদয়গ্রাহী উষ্ণ বক্তব্য শুনতে পাবে না-এই চিন্তায় তাদের মন ভেঙ্গে গেল। ইমামের অস্তিত্বহীনতা তাঁর ঘনিষ্ট সহচরদের জন্যে ছিল খুবই কষ্টের ব্যাপার। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন জাবের ইবনে ইয়াযিদ জোফি। দুঃখের মুহূর্তগুলো যেন তার কাটছিল না। তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠছিল ইমামের প্রিয় সান্নিধ্যের বহু অমর স্মৃতি। জাবের প্রথমবারের মতো যখন ইমামকে মসজিদে দেখেছিলেন তখন বহু কৌতূহলী মানুষ ইমামের চারদিকে বৃত্তাকারে বসে ছিলেন। সবাই তাঁর যুক্তিপূর্ণ ও প্রজ্ঞাময় কথা শুনছিলো। প্রথম যেই উপদেশটি তিনি ইমামের কাছ থেকে শুনেছিলেন সেটা তিনি কখনোই ভোলেন নি,সবসময় তা তার স্মরণে ছিল। ইমামের ঐ উপদেশ তাকে সবসময় জ্ঞান-অন্বেষী করে রেখেছিল। ইমাম বাকের (আ.) বলেছিলেনঃ 'জ্ঞান অন্বেষণ করো! কেননা জ্ঞান অন্বেষণ করা পূণ্যের কাজ। জ্ঞান তোমাকে অন্ধকারে পথ দেখাবে, দুঃসময়ে জ্ঞান তোমাকে সাহায্য করবে। জ্ঞান হলো মানুষের সবচেয়ে উত্তম বন্ধু।' এই উপদেশ পাবার কারণে জাবের ইমাম বাকের (আ.) এর যুক্তি বাহাসের জলসায় এবং যে-কোনো জ্ঞানের আসরে উপস্থিত থাকতেন। ইমামের প্রজ্ঞাময় বক্তৃতা থেকে ভীষণ উপকৃত হতেন। জাবের তাই ইমামকে হারাবার ব্যথায় বিমর্ষ হয়ে পড়লেন। ইমামের স্মৃতিময় সান্নিধ্যের কথা মনে করে কাঁদতে লাগলেন আর আনমনে ইমামের সেই বাণীটি আওড়ালেনঃ 'হে জাবের!যার অস্তিত্বে বা সত্ত্বায় আল্লাহর স্মরণের মাহাত্ম্য বিদ্যমান রয়েছে তার অন্তরে আর অন্য কোনো কিছুর প্রতি ভালোবাসা জাগবে না। খোদাকে যারা অন্বেষন করে,যারা তাকেঁ পেতে চায় তারা দুনিয়া পুজারী হয় না,পার্থিব জগতের মোহ তাদের মাঝে থাকে না। তাই চেষ্টা করো আল্লাহ তাঁর হেকমাত ও দ্বীনের যা কিছু তোমার কাছে আমানত রেখেছেন তা রক্ষণাবেক্ষণ করো!' জাবেরও ইমামের জন্যে শোকাভিভুত জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হলো। একদল লোক ইমামের পবিত্র লাশ কাধেঁ করে নিয়ে মদীনা শহরের বাকি কবরস্থানে নিয়ে গেল এবং তাকেঁ সেখানে দাফন করলো। এই দিনটিই সেইদিন অর্থাৎ ১১৪ হিজরীর জিলহজ্ব মাসের ৭ তারিখ। যেখানেই সত্য,ন্যায় ও বাস্তবতার নিদর্শন দেখা যাবে সেখানেই আহলে বাইতের নাম জ্বলজ্বল করবে। কেননা তাঁরা ছিলেন নীতিনৈতিকতার বিচারে সবোর্চ্চ পর্যায়ের। তাঁরা সবসময় অঙ্গনে এসেছেন সত্য-কল্যঅন ও মানবীয় পূর্ণতায় পৌঁছার পথ দেখাতে। মানুষের মাঝে তাদেঁর অস্তিত্বই ছিল সূর্যের মতো উজ্জ্বল পথ প্রদর্শকের মতো। ইমাম বাকের (আ.) এর ইমামতির মেয়াদকাল ছিল ১৯ বছর। হিজরী ৯৫ সালে তাঁর এই মেয়াদকালের সূচনা হয়। এই সময়টাতে ইসলামী সমাজ উমাইয়া শাসকদের শেষ দিককার এবং আব্বাসীয় শাসনের শুরুর দিককার সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল। এই মেয়াদকালে বহু কিতাব এবং দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ অনূদিত হয়েছিল। সেইসাথে কালের এই ক্রান্তিলগ্নে সমাজে বহুরকম বিকৃত ফের্কার বিস্তার ঘটেছিল। মানুষ তাই বিকৃত চিন্তার বেড়াজালে আটকে পড়ার সুযোগ ছিল খুব সহজেই। ইমাম বাকের (আ.) এবং তাঁর সন্তান ইমাম সাদেক (আ.) ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নে দ্বীনের যথার্থ স্বরূপ প্রচারের মাধ্যমে জনগণের মাঝে প্রকৃত ইসলামকে তুলে ধরার জোর প্রচেষ্টা চালান। তাদেঁর এই প্রচেষ্টা ছিল বেশ প্রভাব বিস্তারকারী। বিশেষ করে তাঁরা মদীনায় একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জ্ঞানপিপাসু ও আধ্যাত্মিকতার আলো প্রত্যাশীরা দলে দলে তাই মদীনায় যেতে শুরু করেন। এভাবে দ্বীনের ব্যাপক প্রচার প্রসার ঘটে। এ কারণেই তাকেঁ বাকেরুল উলুম নামে অভিহিত করা হয়। যার অর্থ হলো পণ্ডিত বা জ্ঞানের বিশ্লেষক। ইমাম বাকের (আ.) তাঁর সময়ে ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষার সীমান্তপ্রহরী ছিলেন। ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি ও নৈতিকতার বিকাশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিকৃত আকিদা ও চিন্তাচেতনার বিচার-বিশ্লেষণ করা এবং ইসলামের বিশ্বাস ও মূল্যবোধগুলোর দৃঢ়তা ও মজবুতির ক্ষেত্রে ইমাম বাকের (আ.) মূল্যবান অবদান রেখেছিলেন। একটি সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই যেসব শাসক অত্যাচারী এবং কেবল নিজেদের স্বার্থচিন্তা নিয়েই ব্যস্ত থাকে এবং মানবীয় কোনো নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন নয় তারা সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করে। ইমাম বাকের (আ.) এর ইমামতিকালটি ছিল তেমনি এক শাসকগোষ্ঠির শাসনকাল। ইমাম তাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরেন এবং একজন সৎ নেতৃত্বের গুণাবলি জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এভাবে অত্যাচারী খলিফাদের কাজকর্ম জনগণের সমালোচনার মুখে পড়ে।সে কারণে আব্বাসীয় শাসক বিশেষ করে হিশাম বিন আব্দুল মালেকের ব্যাপক চাপের মুখে ছিলেন ইমাম। ইমাম বাকের (আ.) সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে বলেনঃ নিঃসন্দেহে যাদের মাঝে তিনটি গুণের সমাবেশ নেই তারা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নয়। ঐ তিনটি গুণ হলো-এ্যাকঃ আল্লাহকে ভয় করা এবং খোদার নাফরমানী থেকে নিরাপদ থাকা, দুইঃ সহিষ্ণুতা ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা এবং তিনঃ অধীনস্থদের ব্যাপারে পিতৃসুলভ সদয় হওয়া এবং তাদের সাথে সদাচরণ করা। ইমাম বাকের (আ.) ছিলেন পরোপকারী ও অসহায়-বঞ্চিত জনগোষ্ঠির প্রতি সদয়। তিনি নিঃস্ব-হতদরিদ্রদের সাথে মিশতেন। তাদের সাথে কথা বলে তাদের ক্লান্ত আত্মাকে প্রশান্ত করতেন। তিনি সবাইকে বলতেন বঞ্চিতদেরকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ডাকা না হয়। তাঁর জ্ঞান আর মিষ্টি আচার-আচরণের কারণে জনগণ তাঁর কথায় ব্যাপক আকৃষ্ট হত। বহু ছাত্র তিনি তৈরি করে গেছেন। তাঁর থেকে বর্ণিত অসংখ্য হাদিস এখনো মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজে লাগছে। হিশাম বিন আব্দুল মালেক ইমামের এই প্রভাব সঞ্য করতে পারলো না। সে ছিল অর্থলোভি এক পাথর-হৃদয়। সে তার অধীনস্থদের আদেশ দেয় বিভিন্নভাবে ইমামকে যেন চাপের মুখে রাখা হয়। কিন্তু কোনোরকম সীমাবদ্ধতা আরোপ করে ইমামকে তাঁর দায়িত্ব পালন থেকে দূরে রাখতে পারে নি। ইমামের বিরুদ্ধে তাই হিশামের অন্তরে ক্ষোভের আগুণ আরো বহুগুণ বেড়ে গেল। অবশেষে হিশাম ইমামের নূরানী অস্তিত্বকেই বিলীন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করলো। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ইমাম বাকের (আ.) কে বিষপ্রয়োগে শহীদ করা হয়। তাঁর শাহাদাতের সেই শোকাবহ স্মৃতিময় দিনটিই হলো ৭ জিলহজ্ব। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছসর পূর্বে সংঘটিত পিতা পুত্রের আত্মত্যাগের এই অপূর্ব ঘটনা যুগ যুগ ধরে আল্লাহ্ তালার অবতীর্ণ দ্বীনে হক-ইছলামের হেফাজত ও মর্যাদা রক্ষায় ও মুসলিম জাতির ন্যায্য স্বর্থরক্ষার উৎসরূপে কাজ করে আসছে। আনুষ্ঠানিক কোরবানী বিগত সাড়ে হাজার বছর ধরে সমগ্ৰ মুছলিম বিশ্বে চালু রয়েছে। এটা হজরত ইবরাহিম (আঃ) ও কিশোর পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-এর ঐশী প্রেমের চরম নিদর্শন। ইহা পিতা পুত্র উভয়েরই খােদার রাহে উৎসর্গ হওয়ার চির অস্নান স্মরণিকা মাত্র।কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুছলমানই কোরবানীর শিক্ষা সম্বন্ধে অবগত নয়। আল্লাহ্ তালার আদেশে আত্মোৎসর্গের এমন মহান ঘটনা হতে যে তাদের জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে যে সম্বন্ধে মুছলমানই অজ্ঞতার তিমিরে ডুবে আছে।পিতা পুত্রের আত্মোৎসর্গের মহান ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা পাই? ইহা কি খোদা প্রেমের চরম ও পরম নিদর্শন নয়? ⭕️কোরআনের ভাষায় জবেহ আজিম মহান কোরবাণী- কী ❓ "যবেহ ’ অর্থাৎ ‘যাবিহুন বা মাযবুহুনে বোজর্গ ও আজীমবোজর্গঅর’ যার বাংলা শাব্দিক অর্থ ঃ মহান ও বৃহৎ যবাইকৃত। এধরণের গুণবাচক শব্দ কোরআনে একটি বার ব্যবহৃত হয়েছে। 🔰তাহলো সূরা আস সাফ্‌ফাত এর ১০৭ নং আয়াতে, এই আয়তে আল্লাহ তায়ালা বলেন ঃ ‘অফাদাইনাহু বিযিবহিন আজীম’ অর্থাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম।’(ছুরে ছাফফাত-এর ১০২ আয়াত থেকে ১০৯ আয়াত পর্যন্ত দেখার অনুরোধ করছি) । অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি তাফসীরকারী এখানে বলেন যে ‘যেবহে আজিম’ এর উদ্দেশ্য ভেড়া নামক পশু যবেহকে বুঝানো হয়নি।আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে যেহেতু এই যবেহ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মোতাবেক ‘আজীম’ বলে নামকরণ করা হয়েছে; সেহেতু সয়ং যবেহ নিজস'লে কখনো আজিম হতে পারে না। এর উদ্দেশ্য ভিন্ন।হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন পুত্র হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে নিয়েছিলেন। যখন হজরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইছমাইল (আঃ) কে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কোরবানী করতে তৈরী হলেন তখন তার হাত থেমে গেল, পুত্র গর্দান ঝুকিয়ে দিলেন এবং সানন্দে ভাবতে লাগলেন। কখন কোরবানী হবেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ)-এর হাতের শক্তি লোপ পেয়ে গেল। ভাবতে লাগলেন, কোরবানী করতে পারছি না কেন? আমার সবচেয়ে বেশী মহব্বতের বস্তুই ত কোরবান করা আল্লাহর আদেশ। এ দুনিয়ায় পুত্র ইছমাইলের চেয়ে বেশী মহব্বতের তা আমার আর কিছু নেই। আমার হাত কেন উঠছে না? ছুরিকে কি কেউ ধরে রাখল? না আমার মধ্যে কি মহাবৃত এসে গেল? নিশ্চয়ই মহাব্ৰত আসে নাই। তা আসলে অবশ্যই আমার হৃদয় কাঁপত, চক্ষুতে জল আসত। তার কোনটাই আমার মধ্যে আসে নাই। আচ্ছা আবার চেষ্টা করব, আবার ছুরি চালাব এবং দেখব কে আমার হাতের শক্তি কেড়ে নেয়। হজরত ইবাহিমের যে হাতে ছুরি ছিল, হঠাৎ সে হাতে টের পেলেন যে, তা পাথরের মত ভারী হয়ে গেছে। হাতের শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। ছুরি বলল, হে ইবরাহিম (আঃ) আমার কোন দোষ নাই, আমি কি করব। এ তোমার আল্লাহর হুকুম। হজরত ইবরাহিম রাগ করে ছুরি ফেলে দিলেন। ছুরি বলতে লাগল, ইয়া খলিলুল্লাহ আমার উপর কেন রাগ করছেন? আপনার আরজু, যে ইছমাইলকে কোরবানী করবেন এবং এটা আল্লাহর হুকুম। কিন্তু এও আল্লাহর হুকুম যে আমি আপনার হুকুম এনকার করা(হুকুম রদ করা)। আমি বলি আল্লাহ্ পাকের যা হুকুম তাই হয়েছে, এতে আমার .কি দোষ। হজরত ইবরাহিম হয়রান পেরেশান হয়ে গেলেন। হঠাৎ টের পেলেন পানির মত কি যেন উনার কদম মোবারকে লাগছে। চক্ষু খুলে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। সত্যই কি দেখছেন, না স্বপু? হজরত ইছমাইল দাঁড়িয়ে আছেন, এদিকে একটি দুম্বা কোরবানী হয়ে গেছে। বেহুস বেকারার হয়ে হজরত ইবরাহিম কাঁদতে লাগলেন ও ফরিয়াদ করতে লাগলেন, আয় পাক পরওয়ারদেগার, কেন আমার কোরবানী কবুল করলেন না? কাঁদতে কাঁদতে বেহুস হেয়ে পড়লেন। তখনই আল্লাহপাকের আদেশ আসল,হে ইব্রাহিম তুমি কেদনা,তোমার ছেলেকে কোরবানী করতে পার নাই, কিন্তু আমি তোমাকে এর চেয়ে বড় ও মহান এক কোরবানী দান করলাম। হজরত ইবরাহিমের বেকারারী দূর হয়ে হুস আসল ও শুনতে পেলেন, 🔰আয় খলিল তুমি বল যে, মোহাম্মদ (দঃ) কি সবচেয়ে বেশী আজিজ নয়❓ হজরত ইবরাহিম চতুর্দিকে দেখতে লাগলেন, হঠাৎ আছমানের দিকে চাইলেন ও দেখতে পেলেন “জবোঁহ আজীম৷”। (মিনাতে হজরত ইব্রাহিম (আঃ) কুরাবানী করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুরাবনীর পরিবর্তে মিশাল কুরবানী "যবেহ আজীম" হচ্ছে কারবালায় ইমাম হোসাইন (আঃ) এর কুরবানী তারই বংশে দান করলেন) ।হজরত ইবরাহিম আবার কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে গেলেন ছবতে রছুল, নোয়াছায়ে রছুল জামে শাহাদত পান করলেন। রোজ কিয়ামতে আল্লাহ পাক তার বদলা দেবেন। 🔰অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করলেন হে ইব্রাহীম, তোমার নিকট আমার সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি? তিনি বললেন :- হে আমার পরোয়ারদেগার তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার দোস্ত- মুহাম্মাদ হলো আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। 🔰আল্লাহ তায়ালা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন :- হে ইব্রাহীম, সে সবচেয়ে প্রিয় নাকি তুমি নিজে? তিনি বললেন ঃ তিনিই সবচেয়ে প্রিয়। 🔰আল্লাহ তায়ালা আবার জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তার সন্তান তোমার জন্য সবচেয়ে প্রিয় নাকি তোমার সন্তান? তিনি উত্তর বললেন ঃ তাঁর সন্তান। 🔰আবার জিজ্ঞাসা করলেন ঃ তাঁর সন্তান দুশমনের হাতে অন্যায় ও নির্যাতনের মাধ্যমে কুরবানী হলে তুমি বেশী ব্যথিত হবে নাকি তোমার সন্তান তোমার হাতে আমার আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে নিহত হলে বেশি ব্যথিত হবে? তিনি উত্তরে বললেন :- দুশমনের হাতে তাঁর কুরবানী হওয়াটা আমাকে বেশী ব্যথিত করবে। 🔰আল্লাহ তায়ালা বললেন ঃ হে ইব্রাহীম, উম্মতে মুহাম্মাদের কিছু লোক মুহাম্মাদের সন্তান হোসাইনকে তাঁর ইনে-কালের পর জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করবে যেমনিভাবে ভেড়া হত্যা করা হয়, এর জন্য তারা আমার ক্রোধের শিকার হবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একথাগুলো শুনে তাঁর অন-র অশান- হয়ে গেলে, মনঃকষ্টে তাঁর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। 🔰আল্লাহ তায়ালা আবারো তাঁর কাছে অহীর মাধ্যমে বললেন হে ইব্রাহীম, তোমার সন্তানকে নিজ হাতে যবেহ করতে না পারার সেই শোকটা হোসেইনের হত্যার শোকের সাথে পবির্তন করে দেব এবং মুসিবাতের ক্ষেত্রে সবরের দরুন সর্বোচ্চ সওয়াব তোমাকে প্রদান করবো। আর একারণেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ‘অফাদানাহু বিযিবহে আজীম’ অথাৎ আমি তার পরিবর্তে মহান যবেহ কবুল করলাম। আল্লাহ্ পাকের দরবারে যে সর্বোচ্চ সম্মান #শাহাদতে_জাহেরী ও #শাহাদতে_ছিররী রক্ষিত আছে তা আল্লাহ্ পাক হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে দেন নাই। তা শুধু হাসনাইন আ. জন্য রক্ষিত আছে। হজরত হাছানকে দান করবেন শাহাদতে ছিররী ও হজরত হােছাইনকে দান করবেন শাহাদতে জাহেরী। বিনা দোষে গুপ্তভাবে যে কোন উপায়ে নিহত হওয়াকে শাহাদতে ছিররী ও ধর্ম রক্ষার জন্য সম্মুখ যুদ্ধে জেনে শুনে আত্ম বিসর্জন করাকে বলা হয় শাহাদতে জাহেরী। ইমাম বংশ হলেন করুনার কাওছার। গলায় ছুরি হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছেন তবু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন নি। ফরিয়াদ করলে বিরোধী দল সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যেত। আঘাতের বিনিময়ে প্রেম বিতরণ করাই ইমাম বংশের আদর্শ। নবী করিম (দঃ) ও ইমাম বংশ কাউকে ধ্বংস করতে এ দুনিয়াতে আসেননি। তারা এসেছেন গড়তে। হাসি মুখে প্রাণ বলি দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করে প্রেমের মূল্যবােধকে দাঁড় করাতে। একবার ভেবে দেখুন ত? অবশ্য বেআদবী না করে নিরপেক্ষ মন নিয়ে হজরত ইবরাহিম (আঃ) তার আপনি পুত্রকে কোরবানী করতে যেয়ে হাত থর থর করে কাঁপছে। মমতার কাছে উৎসর্গ হার মানতে চাইছে। তাই কাপড়ে চােখ দুটাে বেঁধে নিতে হল, অথচ আড়াই দিনের উপবাসী তৃষ্ণিত অবস্থায় থেকে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে আল্লাহ্র রাহে হজরত ইমাম হােছাইন নামক হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কারবালার মাঠে একটি একটি করে সন্তানদের কোরবানী দিয়ে চলেছেন। পা হতে মাথা পর্যন্ত হুবহু হজরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর সঙ্গে মিল হজরত আলী আকবর যার কণ্ঠস্বর শুনতে নবী করীম (দঃ)-এর কণ্ঠস্বর বলে ভুলু হয়। সেই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত হজরত আলী আকবর শাহাদত বরণ করলেন। শহীদ হলেন দুধের শিশু আলী আছগর। তবুও আল্লাহ পাকের কাছে করেন নি কোন ফরিয়াদ, কোন কাতর যাচঞা। ভেবে দেখুনত, একটু চােখ বন্ধ করে, চিন্তা করুন ত সেই কারবালার দৃশ্য। সেই পানির পিপাসায় ছান্তিফাটা আলী আছগরের শহীদ হবার দৃশ্য। তুলনা করতে গেলে কি হজরত ইবরাহিমের (আঃ) কোরবানী প্ৰদীপ হতে সূর্য খোঁজার মত তুলনা হয় না? দেহের মৃত্যু প্রেমের জীবন। যে হাত প্রেমের স্পর্শে প্রেম প্ৰজ্বলিত হয়ে বিকিরণ করে প্ৰেম, সেই হাতে পার্থিব সম্মানের মৃত্যু হিমা শীতল হয়ে বিকিরণ করে মহা ক্ষমা। —-—— সৈয়দ হোসাইন উল হক

😥😥😥ইমাম হোসাইন (আ.)এর দূত মুসলিম ইবনে আকিলের শাহাদত😥😥😥 ৬০ হিজরীর নয়ই জিলহজ্ব আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)’র ভাতিজা ও ইমাম হোসাইন (আ.)’র চাচাতো ভাই হযরত মুসলিম ইবনে আকিল (রা.) কুফায় শাহাদত বরণ করেন। তার লোম হর্ষক বেদনা বিধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আপনাদের প্রতি রইলো আন্তরিক শোক ও সমবেদনা মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যায় মৃত্যুকালে সে ইমাম হোসেন (আ.)এর সাথে কৃত সন্ধি ভঙ্গ করে স্বীয়পুত্র নরাধম ইয়াজিদকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করে। হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানায়। কুফাবাসীরা হযরত হোসাইন (আ.) এর মক্কা আগমন এবং ইয়াজিদের হাতে বাইআত গ্রহণে তার অস্বীকৃতির খবর জানত । এ খবর পেয়েই তারা সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ীর ঘরে সমবেত হয় । সমাবেশে সুলাইমান ইবনে সা’দ দাড়িয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন । বক্তব্য শেষে তিনি বলেন ওহে আলীর অনুসারীরা! তোমরা সবাই শুনেছ যে,মুআবিয়া মরে গেছে এবং নিজের হিসাব কিতাবের জন্য আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে । তার কৃতকর্মের ফল সে পাবে । তার ছেলে ইয়াজিদ ক্ষমতায় বসেছে । আপনারা আরো জানেন যে,হোসাইন ইবনে আলী (আ.) তার সাথে বিরোধিতা করেছেন এবং তিনি উমাইয়ার জালিম ও খোদাদ্রোহীদের দূরাচার থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন । তোমরা তার পিতার অনুসারী । হোসাইন (আ.) আজ তোমাদের সমর্থন ও সহযোগিতার মুখাপেক্ষী । যদি এ ব্যপারে নিশ্চিত হও যে,তাকে সাহায্য করবে এবং তার দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে,তাহলে লিখিত আকারে নিজের প্রস্তুতির কথা তাকে জানিয়ে দাও । যদি ভয় পাও এবং আশংকা কর যে,তোমাদের মধ্যে গাফলতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পাবে,তাহলেও তাকে জানিয়ে দাও,তাকে তার অবস্থার উপর ছেড়ে দাও । তাকে ধোকা দিও না । এরপর তিনি নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুর উপর একটি পত্র লেখেন- بسم الله الرحمن الرحیم এ পত্র হোসাইন ইবনে আলী (আ.) সমীপে সুলাইমান ইবনে সা’দ খাজায়ী,মুসাইয়্যেব ইবনে নাজরা,রেফাআ ইবনে শাদ্দাদ,হাবিব ইবনে মাজাহের আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ায়েলসহ একদল মুমিন ও অনুসারীর পক্ষ হতে প্রেরিত হল । সালামের পর আল্লাহর তা’রিফ ও প্রশংসা যে,তিনি আপনার ও আপনার পিতার দুশমনদের ধ্বংস করেছেন । সেই জালিম ও রক্তপিপাসু,যে উম্মতের শাসন ক্ষমতা তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অন্যায়ভাবে চেপে বসেছে এবং মুসলমানদের বাইতুল মাল আত্মসাৎ করেছে,মন্দ লোকদের বাচিয়ে রেখেছে,আল্লাহর সম্পদকে অবাধ্য দুরাচারীদের হাতে তুলে দিয়েছে,সামুদ সম্প্রদায় যেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে তারাও সেভাবে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হোক । আপনি ছাড়া আমাদের আজ কোন নেতা নেই । কজেই আপনি যদি আমাদের শহরে তাশরীফ আনেন তাহলে বড়ই অনুগ্রহ হবে । আশা করি আপনার মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিক পথে হেদায়েত করবেন । কুফার গভর্ণর নোমান ইবনে বশির ‘দারুল এমারাত’ প্রাসাদে রয়েছে । কিন্তু আমরা তার পেছেনে জামাত ও জুমার নামাজে শরীক হইনি । ঈদের দিন তার সাথে ঈদগাহে যাইনি । যদি শুনতে পাই যে,আপনি কুফায় আসছেন তাহলে তাকে কুফা থেকে বিতাড়িত করে সিরিয়া পাঠিয়ে দেব । হে পয়গাম্বরের সন্তান আপনার প্রতি সালাম,আপনার পিতার পবিত্র রুহের প্রতি সালাম । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু চিঠিখানা লেখার পর পাঠিয়ে দিল । দুইদিন অপেক্ষার পর আর একদল লোককে প্রায় ১৫টি চিঠি নিয়ে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে পাঠিয়ে দিল । ঐ সব চিঠির প্রত্যেকটিতে দুই কি তিন বা চার জনের স্বাক্ষর ছিল । কিন্তু হোসাইন (আ.) এত সব চিঠিপত্র পাওয়ার পরও নীরব রইলেন তাদের কোন পত্রের উত্তর দিলেন না । এমন কি মাত্র এক দিনেই ৩০০ টি চিঠি এসে তার হাতে পৌছে । এরপরও পর্যায়ক্রমে একের পর এক চিঠি আসছিল । তার চিঠি ১২হাজার ছাড়িয়ে যায় । সর্বশেষ যে চিঠিখানা তার হাতে এসে পৌছে তা ছিল হানি ইবনে হানি ছবিয়ী এবং সায়ীদ ইবনে আব্দুল্লাহ হানাফীর । তারা উভয়ে ছিল কুফার অধিবাসী । ঐ পত্রে তারা লিখেন- بسم الله الرحمن الرحسم ইবনে হোসাইন আলী (আ.) এর খেদমতে তার ও তার পিতার অনুসারীদের পক্ষ হতে প্রেরিত হলো । সালাম বাদ জনগন আপনার আগমনের অপেক্ষায়। আপনি ছাড়া কাউকে তারা চায় না । হে নবীর সন্তান ! অতি শীঘ্র আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন । কেননা,বাগ-বাগিচাগুলোতে সবুজের সমারোহ এসেছে,ফলগুলো পেকেছে,লতাগুল্ম জেগে উঠেছে এবং সবুজ পত্রে গাছের সৌন্দর্য শোভায় মাতিয়ে তুলেছে । আসুন আপনি আমাদের মাঝে আসুন । কেননা আপনার সৈন্যদলের মাঝেই তো আপনি আসবেন । আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু চিঠি পাওয়ার পর পত্র বাহক দু’জনের কাছে হোসাইন ইবনে আলী (আ.) জিজ্ঞেস করেন –এ চিঠিগুলো কে কে লিখেছে । তারা বলল,হে আল্লাহর রাসুলের সন্তান! পত্রের লেখকরা হলেন-শাব্স ইবনে রাবায়ী,হাজার ইবনে আবজার,ইয়াজিদ ইবনে হারেছ,ইয়াজিদ ইবনে রোয়াম,উরওয়া ইবনে কাইছ,আমর ইবনে হাজ্জাজ এবং মুহাম্মদ ইবনে ওমর ইবনে আতারেদ । এরুপ পরিস্থিতিতে হোসাইন ইবনে আলী (আ.)একদিন কাবাঘরের পাশে গিয়ে রুকন ও মাকামে ইব্রাহীমের মাঝখানে দাড়িয়ে দু’রাকত নামায আদায় এবং মহান আল্লাহর দরবারে পরিস্থিতির কল্যাণকর পরিণতির জন্য দোয়া করেন । অতপর মুসলিম ইবনে আকিলকে ডেকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন । এরপর ইমাম হোসাইন (আ.) কুফাবাসীর চিঠির জবাব লিখে মুসলিম ইবনে আকিলের মাধ্যমে প্রেরণ করেন। জবাবী পত্রে তাদের আমন্ত্রণ কবুলের ওয়াদা দিয়ে লেখা ছিল- আমি আমার চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে তোমাদের কাছে পাঠালাম যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ করে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করে । মুসলিম ইমামের পত্র নিয়ে কুফায় আসেন । কুফাবাসী হোসাইন ইবনে আলী (আ.) ও মুসলিম ইবনে আকিলকে পেয়ে আনন্দিত হল ।তাকে মুখতার ইবনে আবী ওবায়দা সাকাফীর বাড়িতে থাকতে দিলেন । অনুসারীরা দলে দলে মুসলিম ইবনে আকিলের সাথে সাক্ষাত করতে আসতে লাগল । প্রত্যেক দল আসার সাথে সাথে মুসলিম ইমামের পত্র পড়ে শুনাতে থাকেন । আনন্দে দর্শনার্থীদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল এবং তার হাতে বাইআত গ্রহণ করছিল । দেখতে দেখতে আঠারশো লোক তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে । আব্দুল্লাহ ইবনে মুসলিম বাহেলী,এমারা ইবনে ওয়ালীদ এবং ওমর ইবনে সাআদ ইয়াজিদের কাছে এক পত্র পাঠিয়ে মুসলিম ইবনে আকিলের আগমন সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন । ঐ পত্রে নোমান ইবনে বশীরকে কুফার গভর্ণরের পদ থেকে সরিয়ে ইবনে যিয়াদকে নিয়োগ দানের করে । ঐ পত্রে মুসলিম ও হোসাইনের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে বিবরণ দেয় । পত্রে কড়া নির্দেশ প্রদান করে যে,মুসলিমকে গ্রেফতার ও হত্যা কর। ইবনে যিয়াদ চিঠি পাওয়ার পর কুফা গমনের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়ে যায় । মুসলিম ইবনে আকিল এ সংবাদ শুনে ভয় পেলেন । হয়তো ইবনে যিয়াদ তার কুফা অবস্থানের সংবাদ জেনে ফেলতে পারে । এমনকি তার অনিষ্ট সাধন করতে পারে এজন্যে তিনি মুখতারের ঘর থেকে এসে হানি ইবনে উরওয়ার ঘরে আশ্রয় নেন । হানি ইবনে উরওয়া তাকে নিজের ঘরে আশ্রয় দিলেন । মুসলিম ইবনে আকিলকে আশ্রয়দেয়ার অপরাধে ইবনে যিয়াদ হানি ইবনে উরওয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে। হানির নিহত হওয়ার সংবাদ মুসলিম ইবনে আকিলের কাছে পৌছালে যত লোক তার হাতে বাইআত করেছিল,তাদের সহ তিনি ইবনে যিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বের হন । ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ এ সময় দারুল ইমারায় আশ্রয় নেয় এবং প্রাসাদের ভীতরে ঢোকার সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয় । তার দলীয় লোকেরা মুসলিমের সঙ্গী সাথীদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় । আর যারা যিয়াদের সাথে দারুল ইমারার (প্রাসাদ) ভেতরে ছিল তারা মুসলিমের বাহিনীকে সিরিয়া থেকে সৈন্য বাহিনী আসার হুমকি দিচ্ছিল । ঐ দিন এভাবেই কেটে গেল এবং রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে এল । কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের মিথ্যা প্রলোভনে প্রতারিত হয়ে বেশির ভাগ মানুষই ইমামের প্রতিনিধিকে (মুসলিমকে) ত্যাগ করেন। মুসলিমের সঙ্গী সাথীরা ধীরে ধীরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল । পরস্পর বলাবলি করতে লাগল আমরা কেন গোলযোগ আর বিশৃংখলার আগুন জ্বালাচ্ছি । আমাদের তো উচিৎ ঘরে বসে থাকা আর মুসলিম ও ইবনে যিয়াদের ব্যাপারে নিজেকে না জড়ানো । আল্লাহই তাদের মধ্যে সমাধান করে দিবেন । এভাবে সবাই চলে গেল শেষ পর্যন্ত ১০ জন লোক ছাড়া আর কেউই মুসলিমের সাথে রইল না । এবার তিনি মসজিদে এসে মাগরিবের নামাজ পড়লেন,নামাজের পর দেখলেন ঐ দশ জনও সেখানে নেই । তিনি অত্যন্ত অসহায়ভাবে মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়লেন । অলিগলির পথ চলতে চলতে তিনি ‘তাওয়া’ নাম্নী এক মহিলার ঘরে এসে পানি চাইলেন । মহিলা পানি দিলে তা তিনি পান করলেন এবং মুসলিমকে আশ্রয় দিলেন । কিন্তু তার ছেলে গিয়ে ইবনে যিয়াদকে ব্যপারটা জানিয়ে দিল । ইবনে যিয়াদ মুহাম্মদ ইবনে আশআসকে একদল লোক সহ মুসলিমকে গ্রেফতারের জন্য পাঠাল । মুসলিম তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিলেন এবং তাদের সাথে একাই যুদ্ধে লিপ্ত হলেন ও তাদের বেশ কিছু লোককে হত্যা করলেন । আশআস চিৎকার দিয়ে বলল – হে মুসলিম আমরা তোমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি । মুসলিম বললেন- ধোকাবাজ,ফাসেক লোকদের নিরাপত্তা দেয়ার কোন দাম নেই । যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে মুসলিমের ঢাল ও তরবারী ভেঙ্গে যাওয়ায় তার মনোবল কিছুটা দূর্বল হয়ে যায় (এত গুলো মানুষের সাথে একাই তাও আবার ভাঙ্গা ঢাল ও তরবারী নিয়ে ) ইতি মধ্যে এক ব্যক্তি পিছন থেকে তীরের সাহায্যে আঘাত করলে তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যান । তখন তাকে বন্দী করে ইবনে যিয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় । ইবনে যিয়াদ বকর ইবনে হামারানকে দারুল ইমারার ছাদের উপর মুসলিমকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দিল । মুসলিম যাওয়ার সময় তাছবীহ পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্র্রার্থনা করছিলেন । ছাদের উপর পৌছা পর্যন্ত তিনি রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করতে থাকলেন । তার মাথা দেহ থেকে আলাদ হয়ে গেল । তার হত্যাকারী অত্যন্ত ভীত বিহ্বলভাবে ছাদ থেকে নেমে আসল । ইবনে যিয়াদ জিজ্ঞেস করল তোমার কি হল । বলল হে আমীর যখন তাকে হত্যা করছিলাম তখন কুৎসিত কাল চেহারা এক লোক দেখলাম যে আমার মুখোমুখি দাড়িয়ে দাতে নিজের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে । তাকে দেখে এত ভয় পেয়েছি যে জীবনে কোন কিছুতেই এত ভয় পাইনি । যিয়াদ বলল মণে হয় মুসলিমকে হত্যা করাতে তোমার মণে ভয় ধরে গেছে প্রচারে 😥😥😥 বিধি তুমার ধর্ম কি😥😥😥

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৭। উম্মু আতিয়া (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনা বাহিনী প্রেরণ করেন, তাদের সঙ্গে আলী (রাঃ)-ও ছিলেন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার দুই হাত উপরে তুলে বলতে শুনলামঃ ইয়া আল্লাহ আলীকে না দেখিয়ে আমাকে মৃত্যু দান করো না। যঈফ, মিশকাত (৬০৯০) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আলোচ্য সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। Narrated Umm 'Atiyyah: "The Prophet (ﷺ) sent an army in which was 'Ali." She said: "While he was raising his hands, I heard the Messenger of Allah (ﷺ) saying: 'O Allah! Do not cause me to die until You allow me to see 'Ali." حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَيَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَغَيْرُ، وَاحِدٍ، قَالُوا أَخْبَرَنَا أَبُو عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي الْجَرَّاحِ، حَدَّثَنِي جَابِرُ بْنُ صُبْحٍ، قَالَ حَدَّثَتْنِي أُمُّ شَرَاحِيلَ، قَالَتْ حَدَّثَتْنِي أُمُّ عَطِيَّةَ، قَالَتْ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشًا فِيهِمْ عَلِيٌّ ‏.‏ قَالَتْ فَسَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ رَافِعٌ يَدَيْهِ يَقُولُ ‏ "‏ اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْنِي حَتَّى تُرِيَنِي عَلِيًّا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43804

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৬। আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, উম্মী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ ওসিয়াত করেন যে, মুমিনরাই তোমাকে ভালবাসবে এবং মুনাফিকরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। আদী ইবনু সাবিত (রাযিঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগের জন্য দু'আ করেছেন, আমি সে যুগেরই অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১৪), মুসলিম। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated 'Ali: "The Prophet (ﷺ) - the Unlettered Prophet - exhorted me (saying): 'None loves you except a believer and none hates you except a hypocrite.'" 'Adi bin Thabit (a narrator) said: "I am from the generation whom the Prophet (ﷺ) supplicated for." حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ عُثْمَانَ ابْنُ أَخِي، يَحْيَى بْنِ عِيسَى حَدَّثَنَا أَبُو عِيسَى الرَّمْلِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ لَقَدْ عَهِدَ إِلَىَّ النَّبِيُّ الأُمِّيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنَّهُ لاَ يُحِبُّكَ إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَبْغَضُكَ إِلاَّ مُنَافِقٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عَدِيُّ بْنُ ثَابِتٍ أَنَا مِنَ الْقَرْنِ الَّذِينَ دَعَا لَهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42096

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩৩ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩৩। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দু’জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামাতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় থাকবে। যঈফ, যঈফা (৩১২২), তাখরীজুল মুখতারাহ (৩৯২-৩৯৭) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা জাফর ইবনু মুহাম্মাদ হতে শুধুমাত্র এই সূত্রেই হাদীসটি জেনেছি। Narrated 'Ali bin Husain: from his father, from his grandfather, 'Ali bin Abi Talib: "The Prophet (ﷺ) took Hasan and Husain by the hand and said: 'Whoever loves me and loves these two, and their father and mother, he shall be with me in my level on the Day of Judgement." حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَهْضَمِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ، أَخْبَرَنِي أَخِي، مُوسَى بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ، جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ، مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيهِ، عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَخَذَ بِيَدِ حَسَنٍ وَحُسَيْنٍ فَقَالَ ‏ "‏ مَنْ أَحَبَّنِي وَأَحَبَّ هَذَيْنِ وَأَبَاهُمَا وَأُمَّهُمَا كَانَ مَعِي فِي دَرَجَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43803

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩২ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩২। ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাসজিদে) আলী (রাযিঃ)-এর দ্বার ছাড়া সকল দ্বার বন্ধ করে দেয়ার হুকুম দিয়েছেন। সহীহঃ যঈফাহ (৪৯৩২, ৪৯৫১) নং হাদীসের অধীনে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। এ হাদীস আমরা শুধুমাত্র শুবাহ হতে উক্ত সনদে এভাবেই জানতে পেরেছি। Narrated Ibn 'Abbas: "The Prophet (ﷺ) ordered that the gates be closed, except the gate of 'Ali." حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُخْتَارِ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِي بَلْجٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِسَدِّ الأَبْوَابِ إِلاَّ بَابَ عَلِيٍّ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ عَنْ شُعْبَةَ بِهَذَا الإِسْنَادِ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42093

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭৩০ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭৩০। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ) কে বললেনঃ আমার নিকটে তুমি মর্যাদায় মূসা (আঃ) এর নিকট হারুনের মর্যাদার মত। তবে আমার পরে কোন নাবী নেই। পূর্বের হাদিসের সহায়তায় সহীহ। আবু ঈসা বলেন, উপুর্যুক্ত সনদে এ হাদিসটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে সা'দ, যাইদ ইবনু আরকাম, আবু হুরাইরা ও উম্মু সালামাহ (রাযিঃ) হতেও হাদিস বর্ণিত আছে। Narrated Jabir bin 'Abdullah: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali: "You are to me in the position that Harun was to Musa, except that there is no Prophet after me." حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ الزُّبَيْرِيُّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيٍّ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ سَعْدٍ وَزَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ وَأَبِي هُرَيْرَةَ وَأُمِّ سَلَمَةَ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=45313

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৯ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৯। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। হাদীসটি ৩৭২২ নং হাদীসেও বর্ণনা করা হয়েছে আবূ ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত সনদ সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43802

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৮ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৮। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবুওয়াত পেয়েছেন সোমবার এবং আলী (রাঃ) নামায আদায় করেন মঙ্গলবার। সনদ দুর্বল আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু মুসলিম আল-আওয়ারের সূত্রেই এ হাদীস প্রসঙ্গে জেনেছি। আর মুসলিম আল-আওয়ার হাদীসবিশেষজ্ঞদের মতে তেমন মজবুত রাবী নন। উক্ত হাদীস মুসলিম হতে, তিনি হাববাহ হতে, তিনি আলী (রাঃ) হতে এ সূত্রেও একই রকম বর্ণিত হয়েছে। Narrated Anas bin Malik: "The advent of the Prophet (ﷺ) was on Monday and 'Ali performed Salat on Tuesday." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَابِسٍ، عَنْ مُسْلِمٍ الْمُلاَئِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ بُعِثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَصَلَّى عَلِيٌّ يَوْمَ الثُّلاَثَاءِ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ مُسْلِمٍ الأَعْوَرِ ‏.‏ وَمُسْلِمٌ الأَعْوَرُ لَيْسَ عِنْدَهُمْ بِذَلِكَ الْقَوِيِّ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنْ مُسْلِمٍ عَنْ حَبَّةَ عَنْ عَلِيٍّ نَحْوَ هَذَا ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43801

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৭। আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আলী! তুমি ও আমি ছাড়া আর কারো জন্য এ মাসজিদে নাপাক হওয়া বৈধ নয়। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৯) যঈফা (৪৯৭৩) আলী ইবনুল মুনযির বলেন, আমি যিরার ইবনু সুরাদকে প্রশ্ন করলাম, এ হাদীসের মর্মার্থ কি? তিনি বলেন, তুমি ও আমি ছাড়া নাপাক অবস্থায় এ মসজিদের মধ্য দিয়ে হাটাচলা করা অন্য কারো জন্য জায়িজ নয়। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আলোচিত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (ইমাম বুখারী) এ হাদীস আমার নিকট শুনেছেন এবং তিনি এটিকে গারীব বলে মত দিয়েছেন। Narrated Abu Sa'eed: that the Messenger of Allah (ﷺ) said to 'Ali: "O 'Ali! It is not permissible for anyone to be Junub in this Masjid except for you and I." حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي حَفْصَةَ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِعَلِيٍّ ‏ "‏ يَا عَلِيُّ لاَ يَحِلُّ لأَحَدٍ أَنْ يُجْنِبَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ غَيْرِي وَغَيْرَكَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ قُلْتُ لِضِرَارِ بْنِ صُرَدٍ مَا مَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ قَالَ لاَ يَحِلُّ لأَحَدٍ يَسْتَطْرِقُهُ جُنُبًا غَيْرِي وَغَيْرَكَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ سَمِعَ مِنِّي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ هَذَا الْحَدِيثَ وَاسْتَغْرَبَهُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43800

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৬। জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ তাইফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে নিকটে ডেকে তার সাথে চুপিচুপি কথাবার্তা বললেন। জনসাধারণ বলল, তিনি তার চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ চুপিসারে কথাবার্তা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি, বরং আল্লাহ্ তা'আলাই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৮), যঈফা (৩০৮৪) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু আল-আজলাহ-এর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জেনেছি। ইবনুল ফুযাইল ব্যতীত অন্য রাবীও আল-আজলাহ হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। "আল্লাহ্ তা'আলাই চুপিসারে তার সাথে কথা বলেছেন” বাক্যের মর্মার্থ এই যে, তার সাথে চুপিসারে কথা বলার জন্য আল্লাহ তা'আলাই আমাকে হুকুম করেছেন। Narrated Jabir: "The Messenger of Allah (ﷺ) called 'Ali on the Day (of the battle) of At-Ta'if, and spoke privately with him, so the people said: 'His private conversation with his cousin has grown lengthy.' So the Messenger of Allah (ﷺ) said: 'I did not speak privately with him, rather Allah spoke privately with him.'" حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنِ الأَجْلَحِ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا يَوْمَ الطَّائِفِ فَانْتَجَاهُ فَقَالَ النَّاسُ لَقَدْ طَالَ نَجْوَاهُ مَعَ ابْنِ عَمِّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَا انْتَجَيْتُهُ وَلَكِنَّ اللَّهَ انْتَجَاهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ الأَجْلَحِ وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ ابْنِ فُضَيْلٍ أَيْضًا عَنِ الأَجْلَحِ ‏.‏ وَمَعْنَى قَوْلِهِ ‏"‏ وَلَكِنَّ اللَّهَ انْتَجَاهُ ‏"‏ ‏.‏ يَقُولُ اللَّهُ أَمَرَنِي أَنْ أَنْتَجِيَ مَعَهُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43799

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৫ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৫। আল-বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'টি সামরিক বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং একদলের সেনাপতি বানালেন আলী (রাঃ)-কে এবং অপর দলের অধিনায়ক বানালেন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-কে। তিনি আরো বলেনঃ যখন যুদ্ধ শুরু হবে তখন আলী হবে (সমগ্র বাহিনীর) প্রধান সেনাপতি। রাবী বলেন, আলী (রাঃ) একটি দুর্গ জয় করেন এবং সেখান হতে একটি যুদ্ধবন্দিনী নিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে খালিদ (রাঃ) এক চিঠি লিখে আমার মাধ্যমে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে পাঠান যাতে তিনি আলী (রাঃ)-এর দোষ চর্চা করেন। রাবী বলেন, আমি চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাযির হলাম। তিনি চিঠি পড়ার পর তার (মুখমণ্ডলের) রং বিবর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি এমন লোক প্রসঙ্গে কি ভাবো যে আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলও যাকে ভালোবাসেন? রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ্ তা'আলার অসন্তোষ ও তার রাসূলের অসন্তোষ হতে আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় চাই। আমি একজন বার্তাবাহক মাত্র। (এ কথায়) তিনি নীরব হন। সনদ দুর্বল। ১৬৮৭ নং হাদীসে পূর্বেও বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। Narrated Al-Bara: "The Prophet (ﷺ) dispatched two armies and put 'Ali bin Abi Talib in charge of one of them, and Khalid bin Al-Walid in charge of the other. He said: "When there is fighting, then (the leader is) 'Ali." He said: "So 'Ali conquered a fortress and took a slave girl. So Khalid sent me with a letter to the Prophet (ﷺ) complaining about him. So I came to the Prophet (ﷺ) and he read the letter and his color changed, then he said: 'What is your view concerning one who loves Allah and His Messenger, and Allah and His Messenger love him.'" He said: "I said: 'I seek refuge in Allah from the wrath of Allah and the anger of His Messenger, and I am but a Messenger.' So he became silent." حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، حَدَّثَنَا الأَحْوَصُ بْنُ جَوَّابٍ أَبُو الْجَوَّابِ، عَنْ يُونُسَ بْنِ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ، قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم جَيْشَيْنِ وَأَمَّرَ عَلَى أَحَدِهِمَا عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَعَلَى الآخَرِ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ وَقَالَ ‏"‏ إِذَا كَانَ الْقِتَالُ فَعَلِيٌّ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَافْتَتَحَ عَلِيٌّ حِصْنًا فَأَخَذَ مِنْهُ جَارِيَةً فَكَتَبَ مَعِي خَالِدٌ كِتَابًا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشِي بِهِ ‏.‏ قَالَ فَقَدِمْتُ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَرَأَ الْكِتَابَ فَتَغَيَّرَ لَوْنُهُ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ مَا تَرَى فِي رَجُلٍ يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ غَضَبِ اللَّهِ وَغَضَبِ رَسُولِهِ وَإِنَّمَا أَنَا رَسُولٌ فَسَكَتَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43798

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৪ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৪। আমির ইবনু সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাহঃ) হতে তার পিতার সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু'আবিয়াহ ইবনু আবী সুফইয়ান (রাযিঃ) সা'দ (রাযিঃ)-কে আমীর নিযুক্ত করে বললেন, আবূ তুরাবকে গালি দিতে তোমায় বাধা দিল কিসে? সা'দ (রাযিঃ) বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তিনটি কথা মনে রাখব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে সময় পর্যন্ত আমি তাকে গালমন্দ করব না। ঐগুলোর একটি কথাও আমার নিকটে লাল রংয়ের উট লাভের তুলনায় বেশি প্রিয়। (এক) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি আলী (রাযিঃ)-এর লক্ষ্যে একটি কথা বলতে শুনেছি, যে সময় তিনি তাকে মাদীনায় তার জায়গায় নিয়োগ করে কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। সে সময় আলী (রাযিঃ) তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে শিশু ও নারীদের সঙ্গে কি রেখে যাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার মর্যাদা আমার নিকট মূসা (আঃ)-এর নিকট হারূন (আঃ)-এর মতই? কিন্তু (পার্থক্য এই যে,) আমার পরবর্তীতে কোন নাবী নেই। (দুই) আমি খাইবারের (যুদ্ধাভিযানের) দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ এমন এক লোকের হাতে আমি (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ করব যে আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসূলও তাকে মুহাব্বাত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেকে তা লাভের আশায় অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা আলীকে আমার নিকটে ডেকে আন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তার কাছে এসে হাযির হন, তখন তার চোখ উঠেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দুই চোখে স্বীয় মুখ নিঃসৃত লালা লাগিয়ে দেন এবং তার হাতে পতাকা অৰ্পণ করেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে বিজয়ী করলেন। (তিন) এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হল (অনুবাদ) আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে....."— (সূরা আ-লি ইমরান ৬১)। সে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমাহ, হাসান ও হুসাইন (রাযিঃ)-কে ডাকেন (এবং তাদেরকে নিয়ে খোলা ময়দানে গিয়ে) বললেনঃ হে আল্লাহ! এরা সকলে আমার পরিবার-পরিজন। সহীহঃ মুসলিম (হাঃ ৭/১২০)। আবূ ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সনদে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated 'Amir bin Sa'd bin Abi Waqqas: from his father, saying "Mu'awiyah bin Abu Sufyan ordered Sa'd, saying 'What prevented you from reviling Abu Turab?' He said: 'Three things that I remember from the Messenger of Allah (ﷺ) prevent me from reviling him. That I should have even one those things is more beloved to me than red camels. I heard the Messenger of Allah (ﷺ) speaking to 'Ali, and he had left him behind in one of his battles. So 'Ali said to him: "O Messenger of Allah! You leave me behind with women and children?" So the Messenger of Allah (ﷺ) said to him: "Are you not pleased that you should be in the position with me that Harun was with Musa? Except that there is no Prophethood after me?" And on the Day of (the battle of) Khaibar, I heard him saying: "I shall give the banner to a man who loves Allah and His Messenger, and Allah and His Messenger love him." So we all waited for that, then he said: "Call 'Ali for me." He said: 'So he came to him, and he had been suffering from Ramad (an eye condition), so he (ﷺ) put spittle in his eye and gave the banner to him, then Allah granted him victory. And when this Ayah was revealed: 'Let us call our sons and your sons, our women and your women...' (3:61) the Messenger of Allah (ﷺ) called 'Ali, Fatimah, Hasan, and Husain and said: "O Allah, these are my family." حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ مِسْمَارٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَمَّرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ مَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا تُرَابٍ قَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلاَثًا قَالَهُنَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَنْ أَسُبَّهُ لأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لِعَلِيٍّ وَخَلَفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخَلِّفُنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نُبُوَّةَ بَعْدِي ‏"‏ ‏.‏ وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ ‏"‏ لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ ‏"‏ ادْعُ لِي عَلِيًّا ‏"‏ ‏.‏ فَأَتَاهُ وَبِهِ رَمَدٌ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ فَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ ‏.‏ وَأُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ‏:‏ ‏(‏ قلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ ‏)‏ الآيَةَ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ هَؤُلاَءِ أَهْلِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42090

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২৩ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২৩। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি (জ্ঞানের ভাণ্ডার) পাঠশালা এবং আলী তার দরজা। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৭) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব মুনকার। কিছু রাবী এ হাদীস শারীক হতে বর্ণনা করেছেন এবং তারা এর সনদে আস-সুনাবিহী হতে’ উল্লেখ করেননি। অনন্তর আমরা উক্ত হাদীস শারীক হতে কোন নির্ভরযোগ্য রাবীর সূত্রে জানতে পারিনি। এ অনুচ্ছেদে ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। Narrated 'Ali: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "I am the house of wisdom, and 'Ali is its door." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ بْنِ الرُّومِيِّ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ سُوَيْدِ بْنِ غَفَلَةَ، عَنِ الصُّنَابِحِيِّ، عَنْ عَلِيٍّ، رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنَا دَارُ الْحِكْمَةِ وَعَلِيٌّ بَابُهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مُنْكَرٌ ‏.‏ وَرَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ شَرِيكٍ وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ عَنِ الصُّنَابِحِيِّ وَلاَ نَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ وَاحِدٍ مِنَ الثِّقَاتِ عَنْ شَرِيكٍ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43797

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২২ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২২। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৬) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং আলোচ্য সূত্রে গারীব। Narrated 'Ali: "When I would ask the Messenger of Allah (ﷺ), he would give me, and when I would be silent, he would initiate (speech or giving) with me." حَدَّثَنَا خَلاَّدُ بْنُ أَسْلَمَ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ بْنُ شُمَيْلٍ، أَخْبَرَنَا عَوْفٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ هِنْدٍ الْجَمَلِيِّ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ كُنْتُ إِذَا سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَعْطَانِي وَإِذَا سَكَتُّ ابْتَدَأَنِي ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43796

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২১ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২১।  আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাখির ভুনা গোশত হাযির ছিল। তিনি বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার নিকট সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার সাথে এই পাখির গোশত খাওয়ার জন্য হাযির করে দাও। ইত্যবসরে আলী (রাঃ) এসে হাযির হন এবং তার সাথে খাবার খান। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৫) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে আস-সুদীর রিওয়ায়াত হতে এ হাদীস জেনেছি। এ হাদীস অন্যভাবেও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। আস-সুদীর নাম ইসমাঈল ইবনু আবদুর রহমান। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর দেখা পেয়েছেন এবং হুসাইন ইবনু আলী (রাঃ)-কে দেখেছেন। শুবা, সুফিয়ান সাওরী, যাইদাহ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আলকাত্তান প্রমুখ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। Narrated Anas bin Malik: "There was a bird with the Prophet (ﷺ), so he said: 'O Allah, send to me the most beloved of Your creatures to eat this bird with me.' So 'Ali came and ate with him." حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ عِيسَى بْنِ عُمَرَ، عَنِ السُّدِّيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم طَيْرٌ فَقَالَ ‏ "‏ اللَّهُمَّ ائْتِنِي بِأَحَبِّ خَلْقِكَ إِلَيْكَ يَأْكُلُ مَعِي هَذَا الطَّيْرَ ‏"‏ ‏.‏ فَجَاءَ عَلِيٌّ فَأَكَلَ مَعَهُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ السُّدِّيِّ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَنَسٍ ‏.‏ وَعِيسَى بْنُ عُمَرَ هُوَ كُوفِيٌّ وَالسُّدِّيُّ اسْمُهُ إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَقَدْ أَدْرَكَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ وَرَأَى الْحُسَيْنَ بْنَ عَلِيٍّ وَثَّقَهُ شُعْبَةُ وَسُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَزَائِدَةُ وَوَثَّقَهُ يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43795

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৬। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ সহীহাহ (৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি' (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated Al-Bara bin 'Azib: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali bin Abi Talib: "You are from me, and I am from you." And there is a story along with this Hadith. حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ إِسْرَائِيلَ، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42088

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭২০ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭২০।  ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের মধ্যে ভায়ের সম্পর্ক সৃষ্টি করলেন। তারপর আলী (রাঃ) কান্না ভেজা চোখে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার সাহাবীদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেননি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ দুনিয়া ও পরকালে তুমি আমারই ভাই। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৪) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ অনুচ্ছেদে যাইদ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। Narrated Ibn 'Umar: that the Messenger of Allah (ﷺ) made bonds of brotherhood among his Companions. So 'Ali came crying saying: "O Messenger of Allah! You have made a bond of brotherhood among your Companions, but you have not made a bond of brotherhood with me and anyone." So the Messenger of Allah (ﷺ) said to him: "I am your brother, in this life and the next." حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى الْقَطَّانُ الْبَغْدَادِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحِ بْنِ حَىٍّ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ جُمَيْعِ بْنِ عُمَيْرٍ التَّيْمِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ آخَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ عَلِيٌّ تَدْمَعُ عَيْنَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ آخَيْتَ بَيْنَ أَصْحَابِكَ وَلَمْ تُؤَاخِ بَيْنِي وَبَيْنَ أَحَدٍ ‏.‏ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَنْتَ أَخِي فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي أَوْفَى ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43794

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৯ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৯। হুবশী ইবনু জুনাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আলী আমার হতে এবং আমি আলী হতে। আমার কোন কাজ থাকলে আমি নিজেই সম্পন্ন করি অথবা আমার পক্ষ হতে তা আলীই সম্পন্ন করে। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১১৯)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। Narrated Hubshi bin Junadah: that the Messenger of Allah (ﷺ) said: "'Ali is from me and I am from 'Ali. And none should represent me except myself or 'Ali." حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ عَلِيٌّ مِنِّي وَأَنَا مِنْ عَلِيٍّ وَلاَ يُؤَدِّي عَنِّي إِلاَّ أَنَا أَوْ عَلِيٌّ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42089

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৭ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৭। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা আনসার সম্প্রদায় মুনাফিকদের নিশ্চয় চিনি। তারা আলী (রাঃ)-এর প্রতি হিংসা পোষণকারী। অত্যন্ত দুর্বল সনদ আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র আবূ হারুনের সূত্রেই হাদীসটি জানতে পেরেছি। শুবা (রাহঃ) আবূ হারূন আল-আবদীর সমালোচনা করেছেন। এ হাদীস আমাশ হতে, তিনি আবূ সালিহ হতে, তিনি আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে এ সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আল মুসাবির আল-হিমইয়ারী তার মা এর নিকট থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ আমি উম্মু সালামাহ-এর নিকট গিয়ে তাকে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, একমাত্র মুনাফিকরাই আলী (রাঃ)-কে ভালবাসে না। আর মুমিনগণ তার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না। যঈফ, মিশকাত (৬০৯১) এ অনুচ্ছেদে আলী (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি এই সূত্রে হাসান গারীব। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান হতে সুফিয়ান সাওরী হাদীস বর্ণনা করেছেন। Narrated Abu Sa'eed Al-Khudri: "We, the people of the Ansar, used to recognize the hypocrites, by their hatred for 'Ali bin Abi Talib." Narrated Al-Musawir Al-Himyari: from his mother who said: "I entered upon Umm Salamah, and I heard her saying: "The Messenger of Allah (ﷺ) used to say: "No hypocrite loves 'Ali, and no believer hates him." حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِي هَارُونَ الْعَبْدِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ إِنَّا كُنَّا لَنَعْرِفُ الْمُنَافِقِينَ نَحْنُ مَعْشَرَ الأَنْصَارِ بِبُغْضِهِمْ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ أَبِي هَارُونَ ‏.‏ وَقَدْ تَكَلَّمَ شُعْبَةُ فِي أَبِي هَارُونَ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ‏.‏ حَدَّثَنَا وَاصِلُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَبِي النَّصْرِ، عَنِ الْمُسَاوِرِ الْحِمْيَرِيِّ، عَنْ أُمِّهِ، قَالَتْ دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ فَسَمِعْتُهَا تَقُولُ، كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يُحِبُّ عَلِيًّا مُنَافِقٌ وَلاَ يَبْغَضُهُ مُؤْمِنٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ ‏.‏ وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ هُوَ أَبُو نَصْرٍ الْوَرَّاقُ وَرَوَى عَنْهُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=43792

মক্কা শরীফ থেকে হজ সেরে মদীনা শরীফ ফেরার পথে রসুলে পাক (স:) মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের মধ্যবরতী স্থান গদীরে খুম নামক স্থানে আল্লাহ তা'লার হুকুমে সমস্ত সাহাবী দিগকে একত্রিত করে হযরত আলী (আ:) এঁর বেলায়াতের উপর একটি ভাষণ প্রদান করেছিলেন। তাই এই ভাষণটিকে গদীরে খুমের ভাষণও বলা হয়। সেদিন উপস্থিত জনতা অরথাত সাহাবীদের সংখ্যা ছিল এক লাখ চব্বিশ হাজার। উঁটের পিঠের হাওদা গুলো দিয়ে স্টেজ তৈরী করা হল। রসুলে পাক (স:) তাতে আরোহন করে আল্লাহ পাকের হামদ ও সানা পড়লেন অতঃপর বললেন ঃ আমি অতি শীঘ্রই আল্লাহ-র ডাকে সাড়া দিয়ে তোমাদের থেকে বিদায় নেব। আমি নিজেও একজন দায়িত্বশীল এবং তোমরাও তোমাদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। আমি দেখবো তোমরা আমার ব্যাপারে কিভাবে সাক্ষ্য দিবে । জনগণ উচ্চস্বরে বলতে লাগল আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আপনার রেসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন; আমাদেরকে নসীহত করেছেন, আল্লাহ আপনাকে জাযা ও খায়র প্রদান করুন। অতঃপর হুযুর (সঃ) বললেন ঃতোমরা কি আল্লাহ-র একত্ববাদ, আমার নবুয়াত ও কেয়ামতের দিন মৃত ব্যক্তিদের জীবিত হওয়ার সেই সত্য কথার সাক্ষী প্রদান করবে না? সকলেই বলল হ্যাঁ সাক্ষ্য দিচ্ছি। তিনি (সঃ) বললেন হে আল্লাহ সাক্ষী থেকো। অতঃপর হযুর (সঃ) বললেন যা ইমাম তিরমিযী হাযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) হতে বরননা করেছেন, " নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি গুরুত্বপূরন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যদি তোমরা সে দুটিকে আকড়ে ধর তাহলে আমার পর তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটির মধ্যে একটি অপরটি অপেক্ষা অত্যন্ত বড়। আল্লাহ-র কেতাব (কুরান মজীদ) এবং আমার খানদান আমার আহলে বায়েত আসমান থেকে যমীন পর‍্যান্ত বিসতৃত রশি। আর এ দুটি হাওযে কওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর‍্যন্ত কখনোই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সুতরাং দেখ যে,তোমরা আমার পর এদুটির সাথে কিরূপ ব্যবহার কর। (তিরমিযী শরীফ, ২য় খণ্ড, ২২০ প্রিষ্ঠা) তারপর রসুলুল্লাহ (সঃ) মওলা আলী (আঃ) এর হাত উচু করে তুলে ধরে বললেন,- "ইয়া আয়্যোহাননাস ইন্নাল্লাহা মওলায়া ওয়া আনা মওলাল মু'মিনীনা ওয়া আনা আওলা বেহিম মিন আনফুসিহিম ফা মান কুনতু মওলাহু ফা হাযা মওলাহু য়া'নি আলীয়ান আলায়হিসসালাম।" তরজমা ঃ "হে মানব জাতি নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমার মওলা আর আমি সমগ্র মুমিনদিগের মওলা এবং আমি তাদের জানের থেকেও অধিক নিকটবরতী। সুতরাং আমি যার মওলা ইনি অর্থাৎ আলী (আঃ) তার মওলা। " এই বাক্যটি নবী পাক (সঃ) তিন বার কারো মতে চারবার পুনরাবৃত্তি করলেন। অতঃপর আসমানের দিকে হাত দুটি তুলে বললেন, " হে আল্লাহ যে ইনার সাথে বন্ধুত্ব্ব রাখে তুমি তার সাথে বন্ধুত্ব রাখো। এবং যে ইনার সাথে শত্রুতা রাখে তুমি তার সাথে শত্রুতা রাখ। এবং যে ইনাকে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবাস। এবং যে ইনাকে হিংসা করে তুমি তাকে হিংসা কর। এবং যে ইনাকে সাহায্য করে তুমি তাকে সাহায্য কর এবং যে ইনাকে সাহায্য করা ছেড়ে দেয় তুমিও তাকে সাহায্য করা ছেড়ে দাও। এবং যে স্থানেই ইনি যান সত্যকে ইনার সাথে রাখ। " ১। তাবারাণী : আল মু'জামুল কবীর, ৩ : ৬৭ ২। হায়সামী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ : ১৬৪ ৩। ইবনে কাসীর : আল বেদায়া ওয়াননেহায়া, ৫ : ৪৬৩ ৪। ইবনে হজর মক্কী : আস সোয়ায়েকুল মুহরিকা প্রিষ্ঠা - ৩৫ (মিশর প্রিন্ট) ৫। গদীর এ খুম এর চূড়ান্ত ঘোষণা, প্রিষ্ঠা - ২৭-২৯ বিঃদ্রঃ এই কারণে এই দিনটি কে ঈদ এ গদীর বলা হয়। অর্থাত এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য খুব আনন্দের দিন।

গ্রন্থঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা (كتاب المناقب عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ ৩৭১৬ ২১. [মুনাফিকরা ‘আলী (রাযিঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী] ৩৭১৬। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাযিঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ সহীহাহ (৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি' (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। Narrated Al-Bara bin 'Azib: that the Prophet (ﷺ) said to 'Ali bin Abi Talib: "You are from me, and I am from you." And there is a story along with this Hadith. حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ إِسْرَائِيلَ، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِعَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ‏ "‏ أَنْتَ مِنِّي وَأَنَا مِنْكَ ‏"‏ ‏.‏ وَفِي الْحَدِيثِ قِصَّةٌ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ Link: http://www.hadithbd.com/share.php?hid=42088

আখলাক ( সদাচরণ এবং চরিত্র ) সদাচরণ এবং নৈতিক চরিত্র ও আদর্শ ( আখলাক ) সংক্রান্ত ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) - এর কিছু অমিয় বাণীঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর রাহে যুদ্ধে গমনকারী মুজাহিদকে যে সওয়াব ও পূ্ণ্য দেন ঠিক সেটার ন্যায় তিনি বান্দাকে সদাচরণ অবলম্বন করার জন্য সওয়াব ও পূণ্য দেবেন । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০১ , হাদীস নং ১২ ) قال الصّادق ( ع ) : إِنَّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی لَيُعطِيَ العَبدَ مِنَ الثَّوَابِ عَلَی حُسنِ الخُلقِ کَمَا يُعطِي المُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللهِ يَغدُو وَ يَرُوحُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফরযসমুহ আঞ্জাম দেয়ার পর বান্দার যে আমলটি মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় তা হচ্ছে মানুষের সাথে তার ( ঐ বান্দার ) সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার । ( দ্রঃ প্রাগুক্ত , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৬ ) قال الصّادق ( ع ) : مَا يَقدِمُ المُؤمِنُ عَلَی الله بِعَمَلٍ بَعدَ الفَرَائِضِ أَحَبَّ إِلَی اللهِ تَعَالَی مِن أَن يَسَعَ النَّاسَ بِخُلقِهِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ যে সব বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ( সাঃ )কে সম্বোধন করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে ছিল তাঁর এ বাণী বা আয়াতঃ হে মুহাম্মাদ , নিশ্চয়ই আপনি এক অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শের উপর আছেন । তিনি ( ইমাম সাদিক আঃ ) বলেনঃ এই অতিমহান ( উত্তম ) চারিত্রিক নীতি ও আদর্শ হচ্ছে দানশীলতা ( বদান্যতা / মহত্ত্বالسَّخَاءُ ) এবং সদাচারণ ও সদ্ব্যবহার ( حُسنُ الخُلقِ)) ( দ্রঃ তাফসীর নূরুস সাকালাইন , খঃ ৫ , পৃঃ ৩৯১ , হাদীস নং ২৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : کَانَ فِيمَا خَاطَبَ اللهُ تَعَالَی نَبِيَّهُ ( ص ) أَن قَالَ لَهُ : يَا مُحَمَّدُ (( إِنّکَ لَعَلَی خُلقٍ عَطِيمٍ )) قَالَ : السَّخَاءُ وَ حُسنُ الخُلقِ . সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের ( ভালো স্বভাব ও চরিত্র ) সীমা পরিসীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (সদাচরণ ও সদ্ব্যবহারের সীমা পরিসীমা হচ্ছে এই যে ) স্বীয় পার্শ্বদেশ অর্থাৎ হস্তদ্বয় বিনয়াবনত ও নমনীয় করবে ( তুমি নম্র ও ভদ্র হবে ) , মুখের ভাষাকে মিষ্টি মধুর ও মার্জিত ( পবিত্র ) করবে ( ভালো ও সুন্দর কথা বলবে ) এবং স্বীয় দ্বীনী ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে ও প্রফুল্ল চিত্তে সাক্ষাৎ করবে । ( দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ২৫৩ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - لَمَّا سُئِلَ عَن حَدِّ حُسنِ الخُلقِ - : تُلِينُ جَانِبَکَ ، وَ تُطَيِّبُ کَلَامَکَ ، وَ تَلقَی أَخَاکَ بِبِشرٍ حَسَنٍ . উত্তম নৈতিক চরিত্রের ( مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) ব্যখ্যা প্রসঙ্গেঃ ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মহান আল্লাহ মহানবী ( সাঃ )কে উত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী করেছিলেন । অতঃপর তোমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা কর , যদি তোমাদের মাঝে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক ) বিদ্যমান থাকে তাহলে এরজন্য মহান আল্লাহর প্রশংসা কর এবং তাঁর কাছে তা আরও বৃদ্ধি করে দেয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত কর । অতঃপর তিনি ( ইমাম সাদিক ) ১০ টি উত্তম ( সুন্দর ) নৈতিক চরিত্র উল্লেখ করেনঃ ১. দৃঢ় বিশ্বাস ( ইয়াকীন ) , ২. পরিতোষ ও সন্তুষ্টি ( কানাআত ) , ৩. ধৈর্য্য ( সবর ) , ৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ( শুকুর ) , ৫. সহিষ্ণুতা ( হিলম ) , ৬. সদাচরণ ( সদ্ব্যবহারঃ হুসনুল খুলক ) , ৭. দানশীলতা ( বদান্যতাঃ সাখা ) , ৮. আত্মসম্মানবোধ ( গাইরাত ) , ৯. সাহস ( শাজাআত ) এবং ১০. পৌরুষ ও মনুষ্যত্ব ( মুরূআত ) । ( দ্রঃ আমালীস সাদূক , হাদীস নং ৮ , পৃঃ ১৮৪ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ اللهَ تَبَارَکَ وَ تَعَالَی خَصَّ رَسُولَ اللهِ ( ص ) بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ، فَامتَحِنُوا أَنفُسَکُم ، فَإِن کَانَت فِيکُم فَاحمَدُوا اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ وَ ارغَبُوا إِلَيهِ فِي الزِّيَادَةِ مِنهَا ، فَذَکَرَهَا عَشَرَةً : اليَقِينُ ، وَ القَنَاعَةُ ، وَ الصَّبرُ ، وَ الشُّکرُ ، وَ الحِلمٌ ، وَ حُسنُ الخُلقِ ، وَ السَّخَاءُ ، وَ الغَيرَةُ ، وَ الشَّجَاعَةُ ، وَ المُرُوءَةُ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ (- আর তাঁকে উত্তম নৈতিক চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল -) যে তোমার সাথে অন্যায় ( জুলুম ) করেছে তাকে তোমার ক্ষমা করা , যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে তার সাথে তোমার সম্পর্ক স্থাপন , যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দেয়া ( দান করা ) এবং তোমার নিজের বিরুদ্ধে হলেও সত্য বলা ।(দ্রঃ মাআনিল আখবার , পৃঃ ১৯১ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : - وَ قَد سُئِلَ عَن مَکَارِمِ الأَخلَاقِ : العَفوُ عَمَّن ظَلَمَکَ ، وَ صِلَةُ مَن قَطَعَکَ ، وَ إِعطَاءُ مَن حَرَمَکَ ، وَ قَولُ الحَقِّ وَ لَو عَلَی نَفسِکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) জার্রাহ আল-মাদায়েনীকে বলেনঃ " আমি তোমাকে উত্তম নৈতিক চরিত্র ( মাকারিমুল আখলাক مَکَارِمُ الأَخلَاقِ ) সম্পর্কে বলব কি ?" তা ( উত্তম নৈতিক চরিত্র ) হচ্ছে মানুষকে ক্ষমা করা , অর্থ সম্পদ দিয়ে (অভাবগ্রস্ত দ্বীনী) ভাইকে সাহায্য করা এবং মহান আল্লাহকে অনেক স্মরণ করা ।( দ্রঃ প্রাগুক্তঃ হাদীস নং ২ ) عَنهُ ( ع ) - لِجَرَّاح المَدَائِنِيِّ - أَلَا أُحَدِّثُکَ بِمَکَارِمِ الأَخلَاقِ ؟ الصَّفحُ عَنِ النَّاسِ ، وَ مُؤَامسَاةُ الرَّجُلِ أَخَاهُ فِي مَالِهِ ، وَ ذِکرُ اللهِ کَثِيرَاً . ইমাম সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও সদ্ব্যবহার ( হুসনুল খুলক ) রিযক ও রুজি বৃদ্ধি করে ।( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৬ , হাদীস নং ৭৭ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : حُسنُ الخُلقِ يَزِيدُ فِي الرِّزقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিশ্চয়ই দয়া ও অনুগ্রহ ( البِرّ ) , শিষ্ঠাচার ও সদাচরণ ( সদ্ব্যবহার ও উত্তম নৈতিক চরিত্র ) দেশকে আবাদ ও উন্নত এবং মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৫ , হাদীস নং ৭৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ البِرَّ وَ حُسنَ الخُلقَ يَعمُرانِ الدِّيَارَ وَ يَزِيدَانِ فِي الأَعمَارِ. ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ রোদ যেমন শক্তিশালী ( পরাক্রমশালী ) ব্যক্তিকে ধরাশায়ী ( ক্লান্ত শ্রান্ত ) করে ঠিক তেমনি সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র পাপকে গলিয়ে দ্রবীভুত ( অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন ) করে দেয় । ( আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ১০০ , হাদীস নং ৭ ও ৯ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : الخُلقُ الحَسَنُ يَمِيثُ الخَطِيئَةَ کَمَا تَمِيثُ الشَّمسُ الجَلِيدُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ সদাচরণ ও উত্তম চরিত্রের ( হুসনুল খুলক ) চেয়ে আর অধিক উপভোগ্য ও মিষ্টি মধুরকোন জীবন নেই । ( দ্রঃ ইলালুশ শারায়ে , পৃঃ ৫৬০ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : لَا عَيشَ أَهنَأُ مِن حُسنِ الخُلقِ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যেমন সিরকা মধুকে নষ্ট করে ঠিক তেমনি অসদাচরণ ও অসদ্ব্যবহারও( সূউল খুলক سُوءُ الخُلقِ ) কর্মকে বিনষ্ট করে দেয় । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ৩২১ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنّ سُوءَ الخُلقِ لَيُفسِدُ العَمَلَ کَمَا يُفسِدُ الخَلُّ العَسَلَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ হযরত লুকমান ( আঃ) নিজ পুত্রকে বলেনঃ হে বৎস্য , তোমাকে অস্থিরতা ও ব্যাকুলতা , অসদাচরণ ( অসংযত আচরণ ও ব্যবহার ) এবং অধৈর্য হওয়া থেকে সাবধান করছি । কারণ এ ধরণের স্বভাব ও চরিত্রের অধিকারী কখনও দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে না । তুমি তোমার নিজ কর্ম ও বিষয়াদির ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে ধীরস্থির রাখবে ( অর্থাৎ অযথা ত্বরা করবে না ) ।স্বীয় ( দ্বীনী ) ভাইদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে নিজেকে ধৈর্য্যশীল ও অভ্যস্ত করবে ( ধৈর্য্যের সাথে তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে তাদের খরচ যোগাবে আর এ ক্ষেত্র ধৈর্য্যাবলম্বন করা প্রয়োজন ) । আর সকল মানুষের সাথে স্বীয় ব্যবহার ও আচরণকে সুন্দর করবে । ( দ্রঃ কাসাসুল আম্বিয়া , পৃঃ ২৯০ , হাদীস নং ৭৮৮ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : قَالَ لُقمَانُ ( ع ) لِابنِهِ : يَا بُنَيَّ ، إِيَّاکَ وَ الضَّجَرَ وَ سُوءَ الخُلقِ وَ قِلَّةِ الصَّبرِ ، فَلَا يَستقِيمُ عَلَی هذِهِ الخِصَالِ صَاحِبٌ، وَ أَلزِم نَفسَکَ التُّؤَدَةَ فِي أُمُورِکَ ، وَ صّبِّر عَلَی مَؤُونَةِ الإِخوَانِ نَفسَکَ ، وَ حَسِّن مَعَ جَمِيعِ النَّاسِ خُلقَکَ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ যে ব্যক্তির স্বভাব ও মেজাজ রুক্ষ ও অসংযত ( যে বদমেজাজী ) সে নিজের আত্মাকেই শাস্তি (যন্ত্রণা ও কষ্ট) দেয় । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭১ , পৃঃ ৩৯৪ , হাদীস নং ৬৩ ) قَالَ الإِمامُ الصَّادِقُ ( ع ) : مَن سَاءَ خُلقُهُ عَذَّبَ نَفسَهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ মাংস মাংসবৃদ্ধি করে ( অর্থাৎ মাংস খেলে দেহের মাংস ও পেশী বৃদ্ধি লাভ করে ) । তাই যে ব্যক্তি ( লাগাতার ) ৪০ দিন মাংস ( red meat বা লাল মাংস ) খাওয়া ত্যাগ করবে তার স্বভাব ( মেজাজ ) ও আচরণ রুক্ষ ও অসংযত হবে ( অর্থাৎ সে বদমেজাজী হয়ে যাবে )। ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ৬ , পৃঃ ৩০৯ , হাদীস নং ১ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : اَللَّحمُ يُنبِتُ اللَّحمَ ، وَ مَن تَرَکَ اللَّحمَ أَربَعِينَ يَومَاً سَاءَ خُلقُهُ . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ) বলেনঃ তোমাকে দুটো স্বভাব বা খাসলত সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছি । আর ঐ দুটো খাসলত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছেঃ ১. অস্থিরতা ( ব্যাকুলতা ) এবং আলস্য । তাই যদি তুমি অস্থির ও ব্যাকুলচিত্ত ( অধৈর্য্যশীল ) হও তাহলে তুমি কোনো সত্য বিষয় বা হকের ( অধিকার ) ক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করতে পারবে না । আর যদি তুমি অলস হও তাহলে কোনো অধিকার ( হক )ই আদায় করতে পারবে না । ( দ্রঃ বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭২ , পৃঃ ১৯২ , হাদীস নং ৮ ) قَالَ الإمَامُ الصَّادقُ ( ع ) : إِيَّاکَ وَ خَصلَتَينِ : الضَّجَرَ وَ الکَسَلَ ، فَإِنَّکَ إِن ضَجَرتَ لَم تَصبِر عَلَی حَقٍّ ، وَ إِن کَسَلتَ لَم تُؤَدِّ حَقَّاً . যখন ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ )কে ইয়াহইয়া ইবনে ইমরান আল-হালাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ " সবচেয়ে সুন্দর স্বভাব ও চারিত্রক বৈশিষ্ট্য কোনটি ? " তখন তিনি ( আঃ ) বললেনঃ ভীতিপ্রদান ও ভয়ের উদ্রেক করে না এমন গাম্ভীর্য্যমণ্ডিত ব্যক্তিত্ব , শাস্তি ও প্রতিশোধগ্রহণের স্পৃহা ও মনোবৃত্তি পরিহার করে ক্ষমা করা এবং দুনিয়াবী ( পার্থিব ) পণ্য - সামগ্রী এবং বিষয় থেেক মুখ ফিরিয়ে পারলৌকিক বিষয়ে লিপ্ত ও মগ্ন হওয়া ( হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম চারিত্রিক স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য ) । ( দ্রঃ আল-কাফী , খঃ ২ , পৃঃ ২৪০ , হাদীস নং ৩৩ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) - لَمَّا سَأَلَهُ يَحيَی بنُ عِزرَانَ الحَلَبِيُّ عَن أَجمَلِ الخِصَالِ : وَقَارٌ بِلَا مَهَابَةٍ ، وَ سَمَاحٌ بِلَا طَلَبِ مّکَافَاةٍ و تَشَاغُلٍ بِغَيرِ مَتَاعِ الدُّنيَا . ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ ধর্ম ( দ্বীন ) ও ধর্মীয় ( দ্বীনী ) ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্যই হচ্ছে তাকীয়াহ নীতি অবলম্বন । আর তাকীয়াহ নীতি মেনে চলার কারণে ভীত ( সন্ত্রস্ত ) ব্যক্তি যদি রক্ষা পায় এবং বেঁচে যায় তাহলে তা ( তাকীয়াহ ) হবে সবচেয়ে মহৎ ও ভদ্রজনোচিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণ । ( বিহারুল আনওয়ার , খঃ ৭৫ , পৃঃ ৪১৫ , হাদীস নং ৬৮ ) তাকীয়াহ ( التَّقِيَّةُ ) শত্রু বা শত্রুমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের কাছে সত্য ধর্ম ও সঠিক আকীদা-বিশ্বাস প্রকাশ করলে যদি তাদের পক্ষ থেকে জান-মালের ক্ষতি এবং মান-সম্ভ্রম হানির আশঙ্কা থাকে তাহলে এমতাবস্থায় তা প্রকাশ না করে বরং শত্রুর ধর্মমত ও আকীদা-বিশ্বাস বাহ্যতঃ ব্যক্ত (প্রকাশ) এবং তাদের মত শরয়ী বিধি-বিধান পালন করে এবং অন্তরে সত্য ধর্মের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস ও আস্থা গোপণ রেখে ক্ষতির হাত থেকে মুমিনদের জান-মাল ও মান-সম্ভ্রম রক্ষা করাই হচ্ছে তাকীয়াহ । আর তাকীয়াহ শব্দের আভিধানিক অর্থও হচ্ছে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা বা সংরক্ষণ ( التَّحَفُّظُ عَنِ الضَّرَرِ) এবং এ অর্থে ই হচ্ছে তাকওয়া ( تَقوَی ) , তুকাত ( تُقَاة ) এবং ইত্তিকা ( اِتِّقَاء ) । ইমাম জাফার সাদিক ( আঃ ) বলেনঃ নিঃসন্দেহে উত্তম নৈতিক গুণাবলী পরষ্পর শর্তাধীন । ( অর্থাৎ প্রতিটি উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের শর্ত হচ্ছে অপর কোনো উন্নত নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্য ; তাই সকল নৈতিক চারিত্রিক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে এগুলোর যাবতীয় শর্ত , অবস্থা এবং প্রয়োগ ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে । ) ( দ্রঃ শেখ তূসী প্রণীত আল- আমালী , পৃঃ ৩০১ , হাদীস নং ৫৯৭ ) قَالَ الإِمَامُ الصَّادِقُ ( ع ) : إِنَّ خِصَالَ المَکَارِمِ بَعضُهَا مُقَيَّدٌ بِبَعضٍ . প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

হজরত ইমাম তাকি (আ.) এর অলৌকিক জ্ঞান- ১    জিলক্বদ মাসের শেষ দিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২৩০ হিজরির এই দিনে ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাহাদত বরণ করেছিলেন। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। পিতা ইমাম রেজা (আ.)'র শাহাদতের পর তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব পান এবং ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে পবিত্র মদীনায়। আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর ততপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এই মহান ইমামের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম এবং সবাইকে জানাচ্ছি গভীর শোক ও সমবেদনা। সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।" রাজা-বাদশাহদের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আহলে বাইতের ইমামগণের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ইসলাম ও এর শিক্ষাকে রক্ষা করা। আব্বাসীয় শাসক মামুন ও মুতাসিম ছিল ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র যুগের দুই বাদশাহ। ইমাম পবিত্র মদীনা ছাড়াও হজ্জ্বের সময় মক্কায় গমন উপলক্ষে সেখানে ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন এবং বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ আচার-আচরণের মাধ্যমে দিক-নিদের্শনা দিতেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে। শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধেও থাকতেন সোচ্চার। এইসব শাসক বিশ্বনবী (সা.)'র আদর্শ ও সুন্নাতকে ত্যাগ করেছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের প্রতিপালিত সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলা মোকাবেলা করে আহলে বাইত (আ.)'র আদর্শকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন। ইমাম জাওয়াদ (আ) মাত্র আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই এ বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা (আ) এর কথা বলা ইত্যাদি আল্লাহর সবর্শক্তিমান ক্ষমতারই নিদর্শন। ইমাম জাওয়াদ (আ) শৈশব-কৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানে-গুণে, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ইবাদাত-বন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ) এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ (আ) এর ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিল-তা দূর হয়ে যায়। ইমাম জাওয়াদ (আ) বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের সাথে এমন এমন তর্ক-বাহাসে অংশ নিতেন যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। একদিন আব্বাসীয় খলিফা মামুন ইমাম জাওয়াদ (আ) এর জ্ঞানের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্যে একটি মজলিসের আয়োজন করে। সেখানে তৎকালীন জ্ঞানী-গুণীজনদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐ মজলিসে তৎকালীন নামকরা পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম ইমামকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এইঃ যে ব্যক্তি হজ্জ্ব পালনের জন্যে এহরাম বেঁধেছে,সে যদি কোনো প্রাণী শিকার করে,তাহলে এর কী বিধান হবে? ইমাম জাওয়াদ (আ) এই প্রশ্নটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে মূল প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট ২২টি দিক তুলে ধরে উত্তরের উপসংহার টানেন। উত্তর পেয়ে উপস্থিত জ্ঞানীজনেরা অভিভূত হয়ে যান এবং ইমামের জ্ঞানগত অলৌকিক ক্ষমতার প্রশংসাও করলেন। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

**** সেই দুটি বস্তু কী ? ***** ------------------------------ আমাদের মুসলিম সমাজে একটি বিষয় ব্যাপক ভাবে প্র্রচলিত আছে যে, সেটা হলো :--- -- "কোরআন ও হাদিস মেনে চললেই হবে" আর কিছু প্রয়োজন নাই, তাতেই ইসলাম মানা হয়ে যাবে,ধর্ম পালন করা হয়ে যাবে ইত্যাদী। -- অথচ কোরআন ও হাদিস শরীফের ভিতরে যাহাদেরকে অনুস্বরণ আনুগত্য করা ও প্রাণের চাইতে বেশী ভালবাসার জন্য আদেশ দেওয়া আছে। তাহা বলা হয়না। -- তাহলে সেই ফরজ আদেশ বা সুন্নাহটি কাহাকে বলে ? অবশ্যই তা জানা প্রয়োজন আছে। -- আসল সত্যটি কী ক্ষমতার স্বার্থে মানুষের কাছে গোপন রেখে তৎকালিন মোনাফেকগণ মুসলমানের মাঝে বাতিল ফেরকা তৈরীর সূত্রপাত করেছিল এখনো অব্যাহত আছে। -- চিন্তাশীলদের জন্য হাদিস শরীফ দুই খানি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :--- ------------------------------ 'রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন-- ﺍﻧﻲ ﺗﺎﺭﻙ ﻓﻴﻜﻢ ﺍﻟﺜﻘﺎﻟﻴﻦ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﻋﺘﺮﻃﻲ ﺍﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ অর্থঃ "আমি তোমাদের নিকটে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি প্রথম হচ্ছে-- আল্লাহর কিতাব, এবং দ্বিতীয় হচ্ছে-আহলে বাইত।" -- ( নবী করিম (সা:)'র পরিবারের সদস্যগণ।" অর্থাৎ-- পাক পাঞ্জাতনের চার জন সদস্য যথা-- হযরত মওলা আলী (আ:), মা ফাতেমা (আ:), ইমাম হাসান (আ:), ইমাম হোসাইন (আ:)। -- সূত্রঃ-- (মুসলিম ৭/১২২, হামিদিয়া লাইব্রেরী বুখারী ৫/২৮০--২৮২।তিরমিযী ৬ষ্ঠ খন্ড, মুসতাদরাক আল হাকীম ৩/১০৯। শিবলি নুমানীর সিরাতুন নাবী ২য় খন্ড, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৪--১৭। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুসলিম শরীফ ৭ম খন্ড । আমি কেন তাবলীগ করি--২৮ নং পৃঃ) -- ★★★★★ প্রশ্ন :- কিস্তিয়ে নূহ্ (আ:) কী ? অর্থাৎ--নূহ (আ:)'র নৌকা কোনটি ? -- উত্তরঃ--আহলে বাইয়াত। (আলে মোহাম্মদ (সা:)। -- " নবী (সাঃ)-এর প্রিয় সাহাবি হযরত আবুজার আল গিফারী (রাঃ) একদা পবিত্র কা'বার দরজায় দাঁড়িয়ে উপস্থিত সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে-- " হে লোক সকল । আশা করি তোমরা আমাকে ভাল করেই চিন এবং জান । আর তোমাদের মাঝে কেউ যদি এমন থেকে থাকে, যারা আমার পরিচয় জানো না,তাঁদের কাছে আমার পরিচয় হচ্ছে, আমি আবুজার আল গিফারী । রাসুল (সাঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর । আর এই ঘনিষ্ঠ সাহচার্যের দরুন, আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে- -- "আমার আহলে বাইত এর সদস্যগণ মানুষের জন্য ( মানব জাতীর জন্য ) তেমনি আশ্রয় ও নাজাতের কিস্তি যেমন, আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি মহা প্রলয়ের সময় তার কওমের আশ্রয় ও নাজাতের প্রতীক ( বা মাধ্যম) ছিল । অর্থাৎ, যাহারাই হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তিতে উঠেছিল, তারাই মহাপ্রলয় থেকে নাজাত পেয়েছিল, -- তেমনি এই উম্মতের যারা আমার আহলে বাইতকে ভালোবাসবে,অনুসরণ করবে বা তাদের দলভুক্ত থাকবে তারাই নাজাত পাবে ও যারা অনুসরণ করবে না তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।" -- " সুত্রঃ-- কানজুল উম্মাল খঃ-৬,পৃঃ-২৫৬। মুসনাদে হাম্বাল খঃ-২-পৃঃ-৭৮৬, তাফসীরে কাবির-- খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৭, মেশকাত--খঃ-১১, হাঃ-১৬৭, -- মুস্তাদারাকে হাকেম-- খঃ-৩, পৃঃ-১৫১, খঃ-২, পৃঃ-৩৪৩, তারিখে খোলফা পৃঃ-৩০৭, সাওয়ায়েকে মোহরেকা পৃঃ-১৫০। -- "সংক্ষিপ্ত আলোচনা" আহলে বাইতের প্রধান হলেন মাওলা আলী (আ:) । যিঁনি মুমিন ও মুনাফিক চিনার বা স্বনাক্ত করার মানদন্ড । -- মাওলা আলী (আ:) কে যে ভালবাসে সে মুমিন । যে বিরুধীতা করে সে মুনাফিক। ( হাদিস) -- মাওলা আলী (আ:) হতে ত্বরীকার ছিলছিলা শুরু হয়েছে যা হাত বাই হাত সিনা ব সিনা হক্কানী পীর-মুর্শীদ ওলী-আওলীয়াগণের মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। বেলায়েতি নূর বা জ্ঞান ছাড়া কেহ কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানি বা আলেম হতে পারবে না। -- শরীয়তের ভাষায় তিনিই আলেম যার জাহেরী ও বাতেনী এলেম আছে । -- রাসুলে পাক (সা:) বলেছেন যে -- " আমি জ্ঞানের শহর বা ভান্ডার, এই শহরে প্রবেশের (এক মাত্র) দরওজা হচ্ছে মওলা আলী (আ:)।" ( হাদিস) -- কেবল আক্ষরিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিবর্গ কখনোই কোরআনের জ্ঞানে আলেম হতে পারবে না। এটাই শরীয়তের বিধান। -- অথচ ইয়াজিদি উমাইয়া বংশের শাসন আমলে প্রতিষ্টিত আহলে বাইয়াত বিরুধী শিক্ষা ব্যাবস্থার যাতাকলে প্রকৃত তাছাউফ শিক্ষা ও আহলে বাইয়াত এর ভালবাসার আদর্শ ধামাচাপা পরে আছে। -- সত্য স্বন্ধানীদের তাহাই আবিষ্কার করে আমল করতে হয় প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

💘💘কারবালা পরবর্তী ইতিহাস 💘💘 সিরিয়ার জামে মসজিদে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) এর ভাষণ — সিরিয়ার মসজিদে নবী-বংশকে ও হযরত আলী (আঃ) কে গালি-গালাজ করা হত মুয়াবীয়ার আমল থেকেই । কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর একদিন এই মসজিদে হযরত আলী (আঃ) ও ইমাম হুসাইন (আঃ) কে উদ্দেশ করে অপমানজনক কথা বলছিল ঈয়াযীদের বেতনভোগী খতিব । বন্দী অবস্থায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ)। তিনি খতিবকে বললেন , খতিব তুমি ইয়াযীদকে সন্তষ্ট করতে গিয়ে দোযখে স্থান তৈরি করেছ নিজের জন্য । অতঃপর তিনি (আঃ) ইয়াযীদের দিকে ফিরে বললেন , আমাকেও মিম্বরে যেতে দাও , কিছু কথা বলব যাতে আল্লাহ খুশি হবেন ও উপস্থিত লোকদের সওয়াব হবে । উপস্থিত লোকদের চাপের মুখে ইয়াযীদ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয় । ইয়াযীদ লোকদের প্রতি বলেছিল ইনি এমন এক বংশের লোক যারা ছোটবেলায় মায়ের দুধ পানের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানও অর্জন করতে থাকে । বন্দী ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) মহান আল্লাহর অশেষ প্রশংসাসূচক কিছু বাক্য বলার পর বলেছিলেন – হে জনতা ! আল্লাহ আমাদের ছয়টি গুণ ও সাতটি মর্যাদা দিয়েছেন । জ্ঞান , সহনশীলতা , উদারতা , বাগ্মিতা , সাহস ও বিশ্বাসীদের অন্তরে আমাদের প্রতি ভালবাসা । আমাদের মর্যাদাগুলো হল রাসূল (সাঃ) , আল্লাহর সিংহ ও সত্যবাদী আমিরুল মু’মিনিন আলী (আঃ) , বেহেশতে দুই পাখার অধিকারী হযরত জাফর আততাইয়ার (রাঃ) , শহীদদের সর্দার হামজা (রাঃ) , রাসূল (সাঃ) এর দুই নাতী হযরত হাসান (আঃ) ও হুসাইন (আঃ) আমাদের থেকেই, আর আমরাও তাঁদের থেকেই । যারা আমাকে জানে তারা তো জানেই , যারা জানে না তাদেরকে জানাচ্ছি , আমার বংশ-পরিচয় — হে জনতা ! আমি মক্কা ও মিনার সন্তান , আমি যমযম ও সাফা’র সন্তান । আমি তাঁর সন্তান যিনি হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) তুলেছিলেন তাঁর কম্বলের প্রান্ত ধরে , আমি ওই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সন্তান যিনি কাবা তাওয়াফ করেছেন ও সাই করেছেন (সাফা ও মারওয়ায়) তথা হজ্ব করেছেন । আমি এমন এক ব্যক্তির সন্তান যাকে একরাতেই মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল (রাসূলের মেরাজের ইঙ্গিত) । … আমি হুসাইনের সন্তান যাকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে , আমি আলীর সন্তান যিনি মুর্তাজা (অনুমোদনপ্রাপ্ত) , আমি মুহাম্মদের সন্তান যিনি বাছাইকৃত , আমি ফাতিমাতুজ জাহরা (সাঃআঃ) এর সন্তান , আমি সিদরাতুল মুনতাহার সন্তান , আমি শাজারাতুল মুবারাকাহ বা বরকতময় গাছের সন্তান , হযরত খাদিজা (সাঃআঃ) এর সন্তান আমি , আমি এমন একজনের সন্তান যিনি তার নিজের রক্তে ডুবে গেছেন , আমি এমন একজনের সন্তান যার শোকে রাতের আধারে জ্বীনেরা বিলাপ করেছিল , আমি এমন একজনের সন্তান যার জন্য শোক প্রকাশ করেছিল পাখিরা । ইমাম (আঃ) এর খোতবা এ পর্যন্ত পৌঁছলে উদ্বেলিত জনতা চীৎকার করে কাঁদতে লাগল ও বিলাপ শুরু করল । ফলে ইয়াযীদ আশঙ্কা করল যে , গণ-বিদ্রোহ শুরু হতে পারে । সে মুয়াজ্জিনকে তখনই আযান দেয়ার নির্দেশ দিল । ইমাম (আঃ) আজানের প্রতিটি বাক্যের জবাবে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বাক্য বলছিলেন । যখন মুয়াজ্জিন বলল , আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ – আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- তখন ইমাম (আঃ) মাথা থেকে পাগড়ী নামিয়ে মুয়াজ্জিনের দিকে তাকিয়ে বললেন , আমি এই মুহাম্মাদের নামে অনুরোধ করছি , তুমি এক মুহূর্ত নীরব থাক । এরপর ইমাম (আঃ) ইয়াযীদের দিকে তাকিয়ে বললেন , এই সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাসূল কি আমার প্রপিতামহ না তোমার ? যদি বল তোমার তাহলে গোটা পৃথিবী জানে তুমি মিথ্যা বলছ । আর যদি বল আমার তাহলে কেন তুমি আমার বাবাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছ , তাঁর মালপত্র লুট করেছ ও তাঁর নারী-স্বজনদের বন্দী করেছ ? একথা বলে ইমাম (আঃ) নিজের জামার কলার ছিঁড়ে ফেললেন এবং কাঁদলেন । এরপর বললেন , আল্লাহর কসম এ পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই যার প্রপিতামহ হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) , কেন এ লোকগুলো আমার পিতাকে জুলুমের মাধ্যমে হত্যা করেছে এবং আমাদেরকে রোমানদের মত বন্দী করেছে ? …অভিশাপ তোমার ওপর যেদিন আমার প্রপিতামহ ও পিতা তোমার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন । গন বিদ্রোহের আশংকায় দিশেহারা ও আতংকিত ইয়াযীদ অবস্থা বেগতিক দেখে নামাজ শুরু করার নির্দেশ দেয় । কিন্ত ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ জনতার অনেকেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান । পরিস্থিতির চাপে পড়ে সচতুর ইয়াযীদ নিজেও ভোল পাল্টে ফেলে ইমাম হুসাইন (আঃ) ও নবী পরিবারের সদস্যদের হত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং এর দায় জিয়াদের ওপর চাপিয়ে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে । সুপ্রিয় পাঠক , কারবালার ঘটনার পরবর্তী ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না । সেই জানার প্রয়াসেই আজকে এই লেখাটি দেয়া হল 💘💘 প্রচারে ❤️❤️মোঃ শামসীর হায়দার❤️❤️

❤️❤️আল্লাহর কাছে এমন একটি দৃশ্য খুবই ভাল লেগেছিল ❤️❤️ রাসূল (সাঃ) একদিন মসজিদ এ নব্বীতে আসরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন । নবীজী (সাঃ) যখন সেজদায় গেলেন , হঠাৎই হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) তাঁর প্রিয় নানাজী (সাঃ) এর পিঠের উপর উঠে বসে পড়লেন । ছোট্ট নাতি খেলার ছলে নানার পিঠে উঠে পড়েছে । মহানবী (সাঃ) নাতি হোসেন (আঃ) পিঠ থেকে নামাতেও পারছেন না । পাছে পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে নাতি যদি ব্যাথ্যা পায় ! কেননা ছোট্ট দুই নাতি ইমাম হাসান (আঃ) ও ইমাম হোসেন (আঃ) কে মহানবী (সাঃ) প্রচন্ড মহব্বত করতেন । তাঁদেরকে কেউ কষ্ট দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্তরে খুব ব্যাথ্যা পেতেন । এদিকে নাতিও পিঠ থেকে নামছেন না । মহানবী (সাঃ) এর সেজদাও প্রলম্বিত হচ্ছে । সেজদা এতটাই দীর্ঘায়ীত হচ্ছিল যে , অনেক সাহাবী নিজ সেজদা থেকে মাথা খানিক উঁচু করে দেখছিল যে , এরকম অস্বাভাবিক দেরী হচ্ছে কেন ? যারাই মাথা তুলছিলেন তারাই দেখছিলেন যে , এক নূরের উপরে আরেক ছোট্ট নূর সওয়ারী হয়েছে । তৎক্ষনাত তারা পুনরায় সেজদাতে চলে গেলেন যতক্ষন নবীজী (সাঃ) নিজে সেজদা থেকে না উঠছেন । ইতিহাস বলে যে , প্রায় সত্তরবার মহানবী (সাঃ) — সুবহানা রাব্বিয়াল আলা — বলেছিলেন । এক পর্যায় রাসুল (সাঃ) সেজদা থেকে ওঠার জন্য মনস্থ করলেন । ঠিক তখনই জীবরাইল (আঃ) হাজির হয়ে বললেন , ইয়া রাসুল (সাঃ) , দয়া করে ততক্ষন পর্যন্ত আপনি সেজদা থেকে মাথা উঠাবেন না যতক্ষন ইমাম হোসেন (আঃ) আপন ইচ্ছায় আপনার পিঠ থেকে নেমে না পড়েন । কারন এই দৃশ্যটি মহান আল্লাহর খুব পছন্দ হয়েছে । শুধু আল্লাহ নিজে নন , আরশে আজীমে যারাই আছেন এমনকি সকল ফেরেশতাগনও এই দৃশ্যটি দেখছেন —————- । পাঠক , ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি এজন্যেই বললাম যে , সেজদারত অবস্থায় নাতি উঠেছে নানার পিঠে । সেজদা আদায় করার সময় অতিক্রান্ত হয় গেছে অনেক আগেই । সাধারন কোন মুসল্লির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলে নামাযই বাতিল হবে । কিন্ত যাঁর জন্য নামায সেই মহান আল্লাহর কাছে এই দৃশ্য এতটাই ভাল লেগেছিল যে , ফেরেশতা পাঠিয়ে আদেশ দিলেন যে , যতক্ষন নাতি নিজ ইচ্ছায় পিঠ থেকে না নামে ততক্ষন যেন নানা সেজদায় পড়ে থাকে ! হায় ! আমার মজলুম ইমাম !! হায় ! আমার মজলুম ইমাম !! পাঠক , জানেন কি আপনি ! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর এরকম অসম্ভব রকমের প্রিয় দুই সহোদরের সাথে কলেমা পড়নেওয়ালা নামধারী তথাকথিত মুসলমান উম্মত কি আচরন করেছেন ! শুনে যান – আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত দ্বিতীয় ইমাম হাসান (আঃ) বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছে । হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয় নি – প্রিয় নাতিকে নানার পাশে দাফন করতে দেয়া হয় নি । দাফনে বাঁধা দেয়ার জন্য সত্তরের উপর তীর নিক্ষেপ করো হয়েছিল ইমাম হাসান (আঃ) এর জানাজাতে । পাঠক , জানেন কি আপনি ! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর এরকম অসম্ভব রকমের প্রিয় দুই সহোদরের সাথে কলেমা পড়নেওয়ালা নামধারী তথাকথিত মুসলমান উম্মত কি আচরন করেছেন ! আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত তিনদিনের তৃষ্ণার্ত তৃতীয় ইমাম হোসেন (আঃ) কে প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের সম্মুখে কারবালার ময়দানে জবাই করা হয়েছে । জবাই করার পূর্বে ইমাম হোসেন (আঃ) এর পবিত্র দেহ মোবারকে প্রায় দুইশর উপর তীর নিক্ষেপ করা হয়েছিল । জবাই করে মাথা সম্পূর্ন বিছিন্ন করে পবিত্র দেহ মোবারকের উপর দিয়ে এমন ভাবে ঘোড়া দাবড়িয়েছিল যে , ইমাম হোসেন (আঃ) এর পাঁজরের প্রত্যেকটা হাঁড়গুলো মাটির সাথে থেঁতলে গিয়েছিল । পাঠক , আপনি আরও জেনে নিন যে , নারকীয় জঘন্য নির্মম এই হত্যাযজ্ঞ জগতের কোন অমুসলিম করে নি । হত্যাযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে নবীজী (সাঃ) এর কলেমা পড়নেওয়ালা মুসলিম উম্মতের দ্বারা । প্রিয় পাঠক , এবারে আপনি প্রচন্ড রকমের হতবাক হয়ে যাবেন , এটা জেনে যে , নবীজী (সাঃ) প্রিয় প্রথম নাতি ইমাম হাসান (আঃ) এর হত্যার প্রধান কুশীলব ও পৃষ্ঠপোষককে মোরা রাঃআনহু কাতেবে ওহী মার্কা সাহাবী সনদ দিয়ে যাচ্ছি হাজার বছর ধরে । এবারে আপনি হয়ত বাকরুদ্ব হবেন , এটা জেনে যে , নবীজী (সাঃ) এর প্রিয় দ্বিতীয় নাতি ইমাম হোসেন (আঃ) এর হত্যার প্রধান কুশীলব ও পৃষ্ঠপোষককে মোরা ইদানীং রাঃআনহু মার্কা সাহাবীর সনদ দেয়া শুরু করেছি । পাঠক , এবারে আপনি হয়ত ভাবছেন যে , এরা আবার কোন দলীয় মুসলমান ? পাঠক , জবাবটি , তাহলে কান খুলে ঠান্ডা মাথায় শুনে যান – মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের হত্যাকারীগন ও হত্যাকারীগনের প্রধান কুশীলব , পৃষ্ঠপোষকগন এবং সেই সকল কুলাঙ্গার হত্যাকারীগনকে যারা রাঃআনহু মার্কা সাহাবা বলে – ওনারা সকলেই হচ্ছেন – — গাদীর এ খুম পরিত্যাগকারী মুসলিম উম্মাাহ । মোরা সকলেই আবার জান্নাতের প্রত্যাশীও বটে প্রচারে ❤️❤️ মোঃ শামসীর হায়দার❤️❤️

—– তুমি কি এ আয়াত পড় নি —– আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” ——– তাদের সাথে পথ চলছিল এমন কিছু লোক আমাকে বলেছে যে , আমরা শহীদ ইমাম হোসেন (আঃ) এর জন্য জ্বীনদের কান্না ও শোক পালনের শব্দ শুনেছি রাত থেকে সকাল পর্যন্ত । আমরা যখন দামেস্কে পৌছালাম , নারী ও বন্দীদেরকে দিনের আলোতে শহরে প্রবেশ করালাম । অত্যাচারী সিরিয়ার নাগরিকরা বলল , ” আমরা এতো সুন্দর বন্দী এর আগে দেখিনি , তোমরা কারা “? ইমাম হোসেন (আঃ) এর কন্যা সাইয়েদা সাকিনাহ (আঃ) উত্তর দিলেন , ” আমরা মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর বন্দী পরিবার “। তাদেরকে এবং ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) কে আটকে রাখা হল মসজিদের সিড়িঘরে । ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) তখন অল্পবয়সী যুবক এবং প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন । সিরিয়াবাসীদের মধ্য থেকে এক বৃদ্ব লোক এগিয়ে এসে ইমাম (আঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলল , ” সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তোমাদেরকে হত্যা ও ধ্বংস করেছেন এবং বিদ্রোহের আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন ” । এরপর ঐ বৃদ্ব যা ইচ্ছে বলতে লাগল এবং এক পর্যায় ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেল । এবারে ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) বললেন , ” তুমি কি আল্লাহর কোরআন পড়েছ ” ? বৃদ্ব বলল , ” অবশ্যই পড়েছি ” । ইমাম (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড়েছ , “— বলুন ( হে আমার রাসুল ) , আমি তোমাদের কাছে কিছু দাবী করি না ( নবুয়তের পরিশ্রমের জন্য ) , শুধু আমার রক্তের আত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা ছাড়া — ” সুরা শুরা / ২৩ । বৃদ্ব বলল , ” হ্যা , অবশ্যই পড়েছি ” । ইমাম (আঃ) আবারও বললেন , ” আমরাই সেই পরিবার থেকে । এছাড়া এই আয়াত তুমি কি পড় নি , “— এবং দিয়ে দাও তোমার রক্তের আত্মীয়দের অধিকার —- ” সুরা – বনি ঈসরাইল / ২৬ । বৃদ্ব বলল সে তাও পড়েছে । ইমাম (আঃ) পুনরায় বললেন , ” আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ” । এরপর তিনি (আঃ) বললেন , ” তুমি কি এ আয়াত পড় নি ” ? “ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ । সুরা – আহযাব / ৩৩ “। বৃদ্ব বলল , ” কেন নয় , আমি অবশ্যই এই আয়াতগুলো বহুবার পড়েছি ” । ইমাম ( আঃ ) তখন বললেন , ” আমরাই তারা যাদের কথা এখানে বলা হয়েছে ” । একথা শুনে সিরিয়ার ঐ বৃদ্ব লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুহাত আকাশের দিকে তুলে বলল , ” হে আল্লাহ , ক্ষমা করুন আমাকে , আমি এক্ষনে আপনার সামনে নিজেকে মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর সন্তানদের শত্রু ও হত্যাকারীদের সাথে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করছি , আমি সব সময় কোরআন পড়েছি কিন্ত আজকে পর্যন্ত এর উপরে আমি এইভাবে গভীরভাবে ভাবি নি ” । সুপ্রিয় পাঠক , প্রায় ১২০০ বছর আগেকার ঘটনা । বুকে হাত দিয়ে আমি বা আমরা কি বলতে পারি , আমাদের বর্তমান অবস্থা ঐ বৃদ্বের থেকে ভাল ! মাশা আল্লাহ , কোরআন তো একেবারে মুখস্ত , কিন্ত ” আহলে বাইত ” এই শব্দটার মান মর্যাদা সম্পর্কে কতটুকু অবগত আছি ! এই যে শোকের মাস মহররম চলছে , আমরা কতটুকু আলাপ আলোচনা করি এ মাসে সংঘটিত পৃথিবীর সবচেয়ে মর্মান্তিক ” কারবালা ” নিয়ে ! ” আহলে বাইত ” বা ” কারবালা ” তো শুধু শীয়াদের একক কোন বিষয় নয় । আহলে বাইত তো সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত । আমরা এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতন প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

[শিয়ারা যদি খারাপ হয়ে থাকে আর যদি পথবষ্ট হয়ে থাকে মওলা আলী আঃ কে ভালোবেসে,তো নবী মুহাম্মদ সাঃ কী হবে...? ] মহানবী (সা.) বলেছেন, “আলী এবং তার অনুসারীরা নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন বিজয়ী।” [আল ফেরদৌস, খ–৩, পৃ-৬১, হাদীস-৪১৭২] মহানবী (সা.) বলেছেন, “আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে।” [আল মুস্তাদারক হাকিম, খ–৩, পৃ-১২৪] রাসূল (সা.) বলেছেন, “হে আলী তুমি আমার নিকট মুসার ভাই হারুনের ন্যায়। শুধু আমার পরে আর কোনো নবী নেই।” [সুনানে তিরমিযি, খ–৫, পৃ-৬৪১, হাদীস-৩৭৩০; সহীহ মুসলিম, খ–৪, পৃ-৪৪] মহানবী (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে। সে আমার পরে সকল মুমিনদের নেতা।” [মুসনাদে আহামাদ, খ–৪, পৃ-৪৩৮] রাসূল (সা.) হযরত আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, “হে আলী আমার পরে তুমি প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর ওপর কর্তৃত্বের অধিকারী।” [আল মুস্তাদারক হাকেম, খ–৩, পৃ-১৩৪]

—এত লোক কি ভুল করতে পারে — আমাদের চারপাশে প্রচলিত ইসলামে একটা কথা খুবই বহুল প্রচলিত যে , — — ” আরে ভাই , আমি না হয় কম বুঝি , তাই বলে পৃথিবীর এতো মুসলমান বা আলেম , মাওলানা সাহেবরা কি ভুল করে ? এত বিরাট সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ? ” আপনি যখনই কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে ইসলামের কোন বিষয়ের উপর কিছুটা গভীরে যেয়ে আলাপ করবেন এবং সেই সাথে কোরআন থেকে প্রমান উপস্থাপন করবেন ও পাশাপাশি সহীহ সিত্তাহের হাদিসের উল্লেখ করবেন । কিছু সময় পরে লক্ষ্য করবেন যে , ঐ ভদ্রলোক তখন পাল্টা কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারবেন না । কেননা আপনি কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল উপস্থাপন করেছেন । যেমন , আপনি কোরআনে বর্নিত ইমামত , ইফতারের সঠিক সময়সূচী বা অযুতে পা মসেহ ইত্যাদি বিষয় কথা বলছেন । ভদ্রলোক এক পর্যায় আপনার উপস্থাপিত পবিত্র কোরআন ও সহীহ সিত্তাহের দলিলগুলো সরাসরি অস্বীকার করবেন না । আবার সেই সাথে আপনার যুক্তিগুলো স্বীকারও করবেন না । এমতাবস্থায় , ভদ্রলোক মহাশয় অতি চমৎকার ভাবে নীচে উল্লেখিত কথাটি বলে বসবেন । ” কি যে বলেন ভাই , আমি নাহয় মাদ্রাসা লাইনে পড়ি নাই , কিন্ত এতো বিশাল সংখ্যক হুজুর , মুরুব্বী , বুুজুর্গ , মাওলানা , আলেম সাহেবরা কি ভুল করতে পারে কিম্বা আমার পরলোকগত ময়মুরুব্বীরা কি ভুল করতে পারে ” ? ভদ্রলোক আরও বলবেন যে ,” ভাই আমার অতসত বুঝে কাজ নেই , বেশী বুঝতে গেলে ঈমান নষ্ট হবে , মহল্লার মসজিদের ইমাম সাহেব বা আমার বাপ দাদারা যা করে গেছেন সেটার উপরেই থাকব ভাই ” । এখন আপনি যতই চেষ্টা করেন , আর কোন লাভ নেই । ভদ্রলোকের ঐ একটিই শেষ কথা — ” এতো বিশাল সংখ্যক মুসলমান কি ভুল করতে পারে ” ! অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক সংখ্যার আধিক্যের উপর ইস্পাত কঠিন থাকবেন । অনেকটা আমাদের গনতন্ত্রের ফর্মুলা । যে দল বেশী ভোট পাবে বা যাদের দিকে পাল্লা ভারী তারাই বিজয়ী । আপনি তখন কি আর করিবেন । কথা বলাটাই মহা ভুল — এই চিন্তা করিয়া মনটা খারাপ করিবেন , খুবই স্বাভাবিক । পাঠক , আসুন , একটু অন্য ভাবে বিষয়টা চিন্তা করি । জাতিসংঘ আদম শুমারী মতে বর্তমান পৃথিবীর জনসংখ্যা সাড়ে সাতশো কোটির উপরে । এর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় দেড়শো কোটি । পৃথিবীতে সংখ্যার তুলনায় বৌদ্ব ধর্মের অনুসারী বেশী । তাহলে ঐ ভদ্রলোক যে সংখ্যা আধিক্যের উপর জোর দিলেন , তাহলে কি বৌদ্ব ধর্ম সঠিক ? যেহেতু পাল্লা ওদিকে ভারী তাহলে চলুন , বৌদ্ব ধর্ম পালন করি !! সাধারন হিসাবে তাহলে দেখা যাচ্ছে যে , সংখ্যা আধিক্যের এই ফর্মুলাটা যুক্তিতে টেকে না । এবার আসুন এই ” সংখ্যা আধিক্য ” এর বিষয় পবিত্র কোরআন কি বলে ! “— যদি তুমি পৃথিবীর (লোকদের) বেশীর ভাগকে অনুসরন কর , তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে যাবে । তারা কিছুই অনুসরন করে না অনুমানগুলো ছাড়া , এবং তারা শুধু ধারনা ছাড়া কিছু করে না — ” । সুরা – আনআম / ১১৬ । “— তবু জনগনের বেশীর ভাগই বিশ্বাস করবে না যত ব্যাকুলই তুমি হও না কেন —” । সুরা – ইউসুফ / ১০৩ । “— নিঃসন্দেহে আমরা তোমাদের কাছে সত্য এনেছিলাম , কিন্ত তোমরা বেশীর ভাগই সত্যের প্রতি ঘৃনা পোষন করতে — ” । সুরা – যুখরুফ / ৭৮ । “— যখন তাদের বলা হয় , অনুসরন কর আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন , তারা বলে , আমরা বরং অনুসরন করব , যার অনুসরন আমাদের পিতারা করে এসেছে । কী ! যদি এমনও হয় যে , শয়তান তাদের ডাকে প্রজ্বলিত আগুনের শাস্তির দিকে —” । সুরা – লুকমান / ২১ । এবার উপরের আয়াতগুলোর সাথে নবীজী (সাঃ) এর এই বিখ্যাত হাদিসটি মিলিয়ে নিন — রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল , ইয়া রাসুল (সাঃ) , আপনি বলেছেন যে , আপনার উম্মতের মধ্যে ৭৩টি দল হবে । তারমধ্যে ৭২টি দল জাহান্নামী এবং একটি মাত্র দল জান্নাতি । দয়া করে বলবেন কি , নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতি ঐ দল কোনটি ? জবাবে রাসুল (সাঃ) বলেছেন , “ সুসংবাদ ! হে আলী , নিশ্চয়ই তুমি এবং তোমার শীয়া বা অনুসারীগন জান্নাতে প্রবেশ করবে ”। সুত্র – তারিখে দামেস্ক (ইবনে আসাকির,খন্ড-২,পাতা-৪৪২ , হাদিস # ৯৫১ / নুরুল আবসার (শিবলাঞ্জী) ,পাতা-৭১,১০২ / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাহ,পাতা-৬২ / তাতহিরাতুল খাওয়াস(ইবনে জাওজী আল হানাফী),পাতা-১৮ / তাফসীরে ফাতহুল কাদীর(আল শাওকানী),খন্ড-৫,পাতা-৪৭৭ / তাফসীরে রুহুল মায়ানী আলুসী,খন্ড-৩০,পাতা-২০৭ / ফারাইদ সিমতাইন(ইবনে শাব্বাঘ),খন্ড-১,পাতা-১৫৬ / তাফসীরে দুররে মানসুর,খন্ড-৬,পাতা-১২২ / মানাকিব(ইবনে আল মাগাজেলী),পাতা-১১৩ / মুখতাসার তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৩,পাতা-১০ / মিয়ান আল ইতিদাল,খন্ড-২,পাতা-৩১৩ / আরজাহুল মাতালেব,পাতা-১২২,১২৩,৮৭৭(উর্দু) / তাফসীরে তাবারী,খন্ড-৩০,পাতা-১৪৭ / ফুসুল আল মাহিম্মা,পাতা-১২২ / কিফায়াতুল তালেব,পাতা ১১৯ / আহমাদ ইবনে হাম্বাল,খন্ড-২,পাতা-৬৫৫ / হুলিয়াতুল আউলিয়া,খন্ড-৪,পাতা৩২৯ / তারিখে বাগদাদ,খন্ড-১২,পাতা-২৮৯ / আল তাবরানী মুজাম আল কাবির,খন্ড-১,পাতা-৩১৯ / আল হায়সামী মাজমা আল জাওয়াইদ,খন্ড-১০,পাতা-২১-২২ / ইবনে আসাকীর তারিখে দামেস্ক,খন্ড-৪২,পাতা-৩৩১ / আল হায়সামী আল সাওয়ায়িক আল মুহারিকা,পাতা-২৪৭ / মুয়াদ্দাতুল কুরবা,পাতা-৯২ / তাফসীরে ফাতহুল বায়ান,খন্ড-১০,পাতা-২২৩(নবাব সিদ্দিক হাসান খ ভুপালী,আহলে হাদিস) / তাফসীরে ফাতহে কাদীর,খন্ড-৫,পাতা-৬৪,৬২৪ / সাওয়ারেক আল মুহারেকা( ইবনে হাজার মাকিক),পাতা-৯৬ / শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,খন্ড-২,পাতা-৩৫৬ / মুসনাদে হাম্বাল,খন্ড-৫,পাতা-২৮ / নুজহাত আল মাজালিস,খন্ড-২,পাতা-১৮৩ / মানাকেব (আল খাওয়ারেজমী),খন্ড-৬,পাতা – ৬৩ । সুপ্রিয় পাঠক , এবারে আপনি ভদ্রলোককে ইফতারের সময়সূচী , অযুতে পা মাসেহ বা হযরত আলী (আঃ) তথা আহলে বায়েত (আঃ) গনের ইমা্মত বা আলী (আঃ) এর বেলায়েত বা ইমামত ইত্যাদি যা কিছুই বুঝাতে চেষ্টা করুন না কেন — আদৌ কি কোন লাভ হইবে ! কেননা পবিত্র কোরআন Quantity is not nesserery , main thing is The Best Quality এই নীতির কথাই বলে । অর্থাৎ ” সংখ্যার আধিক্যের জয় জয়কার ” এই ফর্মুলা পবিত্র কোরআন প্রত্যাখ্যান করে । হিসাব আরও পরিস্কার জলের মত মিলিয়ে নিন — কারবালাতে একদিকে ছিলেন মাত্র – ৭২ জন অপরদিকে ছিল বিশাল ত্রিশ হাজারের অধিক । ওখানে কোন পক্ষেই ননমুসলিম ছিলেন না প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

মুনাফিক সাহাবীদের চুক্তিপত্র — গাদীর এ খুম নামক স্থানে বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুমে লক্ষাধিক হজ্ব ফেরৎ হাজি সাহাবাগনের সম্মুখে রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর ওফাত পরবর্তী ইমাম বা খলীফা নিযুক্ত করে গেলেন । ইমাম আলী (আঃ) এর এই ইমামত বা খেলাফতের পক্ষে বিপক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে । রাসুল (সাঃ) এর বিভিন্ন হাদীস মতে ইমাম আলী (আঃ) কে নির্ভর করে মুমিন সাহাবী ও মুনাফিক সাহাবী এবং কাফেরের পরিচয় পাওয়া যাবে । ইমাম আলী (আঃ) কে কেন্দ্র করে যেমন মুমিনরা ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে ইমাম আলী (আঃ) এর বিরোধীরাও এক বিশাল ঐক্য গঠন করেছিল । যা ইতিহাসের পাতায় সহীফা মাল’উনা নামে লিপিবদ্ধ আছে । ইমামীয়াদের বিভিন্ন গ্রন্থে সহীফা মাল’উনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । সহীফা কোন লিখিত পৃষ্ঠা , পাতা বা বই পুস্তককে বলা হয়ে থাকে । যেমন বিভিন্ন নবী আউলিয়াদের লিখিত সহীফা ছিল । আর মাল’উনা অর্থ হচ্ছে যার উপর লানত বর্ষিত হয়েছে এমন কোন জিনিষ । তাহলে সহীফা মাল’উনা’র অর্থ হচ্ছে অভিশপ্ত একটি লেখা । আর এটি হচ্ছে ১২ থেকে ১৮ জন সাহাবীদের চুক্তিপত্র যা গাদীরের ঘটনার পর তৈরী করা হয়েছিল । এরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছিল যে , কোন অবস্থাতেই হযরত আলী (আঃ) কে রাসুল (সাঃ) এর শুন্য পদে ইমাম বা খলীফা হতে দেয়া যাবে না । তাই তারা একটি প্রতিজ্ঞাপত্র বা চুক্তিপত্র লিখে মক্কাতে গোপন করে রাখে । আর এ চুক্তিপত্রটি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমরের খেলাফত কালের শেষ সময়ে ফাঁস হয় এবং আহলে সুন্নতের বিভিন্ন গ্রন্থে তার উল্লেখ করা হয়েছে । সূত্র – সুনানে নেসায়ি , ২য় খন্ড , পৃষ্ঠা – ৮৮ / মুসতাদরাক , ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ২২৬ / মু’জামুল আওসাত , ৭ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২১৭ / বিহারুল আনওয়ার , ১০ম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২৯৭ । অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে , রাসুল (সাঃ) নিজের জীবনে ইলমে গাইবের মাধ্যমে কিছু লোকের মনের অভ্যন্তরের কথা অন্যদের জন্য কেন বলে যান নি , যাতে পরবর্তীতে কোন দ্বন্দ্ব দেখা না দেয় ? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পবিত্র কোরানের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুনাফেক লোকদের জন্য উল্লেখ করেছেন , ” — তোমাদের চারপাশে বেদুইনদের মাঝে মুনাফিকরা আছে এবং মদীনার শহরবাসীদের মাঝেও (যারা) মুনাফেকিতে ডুবে আছে । তুমি তাদেরকে জান না , আমরা তাদের জানি এবং আমরা তাদের দুইবার শাস্তি দিব , এরপর তাদের পাঠান হবে এক বিরাট শাস্তির দিকে — । ” সুরা – তাওবা , / ১০১ । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অবশ্যই কোন বিশেষ মাসলেহাত বা কল্যানের কারনে এ সকল লোকদের নাম নবী (সাঃ) এর কাছেও প্রকাশ করেন নি । যাহোক , এই ঘটনার ধরাবাহিকতায় ১২ জন সাহাবী ঠিক করলেন যে , তাবুক যুদ্ধ হতে ফেরার পথে মহানবী (সাঃ) কে পাহাড়ের চুড়া থেকে বড় বড় পাথরখন্ড উপর থেকে ফেলে দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করে ফেলবেন । এদের মধ্যে পাঁচজন পাথরখন্ড নিয়ে পাহাড়ের উপর অবস্থান নিয়েছিলেন । ঘটনার খুব সংক্ষিপ্ত বিবরন — মহানবী (সাঃ) তায়েফ নামক একটি স্থানে গমন করার জন্য হুনায়েন প্রান্তরে পৌঁছালে ইসলাম ধর্মের শত্রুরা নবী করিম (সাঃ) কে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমন করে বসে । এ সময় মহানবী (সাঃ) এর অনেক নামকরা বিখ্যাত সাহাবাগন নবীজী (সাঃ) কে যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একাকী ঘোরতর বিপদের মধ্যে ফেলে রেখে পলায়ন করেন । ওনারা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পেছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও ওনারা নবীজী (সাঃ) কে একা ফেলে রেখেই পালিয়ে গেলেন । মহানবী (সাঃ) এর চরমতম বিপদের সময় হাতে গোনা দুএকজন সাহবাগনকে নিয়ে একমাত্র হযরত আলী (আঃ) তাঁর নিজের জীবন বিপন্ন করে প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে দুশমনদের কবল থেকে মহানবী (সাঃ) কে উদ্বার করেন । খুব সংকটের মধ্যে যুদ্বজয় শেষে রাসুল (সাঃ) উটের পিঠে চড়ে তায়েফ শহরের দিকে রওয়ানা হলেন । ততক্ষনে সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে । বিশ্বস্ত সংগী হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) উটের রশি ধরে টেনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন । বড় একটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে যাবার সময় আল্লাহর ফেরেশতা রাসুল (সাঃ) কে জানিয়ে দিলেন যে , কিছুটা সামনে পাহাড়ের উপর শত্রুরা আপনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে । সন্ধে তখন আরেকটু ঘনিয়ে এসেছে । সন্ধার হালকা আলোয় কিছুটা অগ্রসর হলে রাসুল (সাঃ) ও হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) পাহাড়ের উপর দন্ডায়মান অবস্থায় কয়েকটি মনুষ্য মূর্তি দেখতে পেলেন । এমন সময় হঠাৎ করে আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে ওঠে । বিদ্যুৎের তীব্র ঝলকানীতে রাসুল (সাঃ) খুব পরিস্কার ভাবে পাঁচজনের ঐ দলটিকে চিনে ফেললেন । ঐ পাঁচজন বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে যে , যখনই রাসুল (সাঃ) তাদের আয়েত্বের মধ্যে চলে আসবে তখনই তারা পাথরখন্ডগুলো গড়িয়ে ফেলে দেবে রাসুল (সাঃ) এর উপরে । বিশাল বড় বড় পাথরখন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাসুল (সাঃ) কে হত্যা করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য । বিদ্যুৎের সুতীব্র আলোর ঝলকানীতে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) ঐ পাঁচজনের দলটিকে মুহূর্তেই চিনে ফেললেন এবং চীৎকার করে নবীজী (সাঃ) কে বললেন , হুজুর , অামি সবাইকে চিনে ফেলেছি , ওরা হচ্ছে অমুক , অমুক , অমুক ! রাসুল (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে থামিয়ে দিয়ে বললেন যে , তুমিও চিনেছ , আমিও চিনেছি । থাক আর বলতে হবে না । হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর উচ্চঃস্বরে চীৎকার চেঁচামেচীতে ঐ পাঁচজন খুব দ্রত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায় । এ ঘটনার পরের দিন ঐ পাঁচ মুনাফিকদের একজন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) কে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে যে , আমার নাম ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ? জবাবে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) বললেন , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন । বিফল হয় তিনি সেদিন চলে গেলেন । কয়েকদিন পরে পুনরায় তিনি একই প্রশ্ন করলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর নিকট যে , আমার নামটি ঐ মুনাফিকদের তালিকায় আছে কি ? দ্বিতীয়বারও একই জবাব দিলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) যে , নবীজী (সাঃ) খুব কঠোর ভাষায় আমাকে ঐ নামগুলো বলতে নিষেধ করেছেন । কিন্ত নাছোরবান্দা হযরত ওমর আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না । অধৈর্য হয়ে বেচারা হযরত ওমর বলেই ফেললেন যে , হে আবু হুযাইফা ! তুমি বল আর না বল , আমি বিলক্ষন জানি যে , ঐ তালিকায় আমার নামটি আছে । তৃতীয়বার হযরত ওমর নিজে চলে গেলেন হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) এর বাড়ীতে । বাড়ীতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন । কিছুটা বিরক্ত হয়ে এবারে হযরত আবু হুযাইফা (রাঃ) হযরত ওমর বললেন , তুমি যখন নিজেই জান যে , ঐ তালিকায় তুমি আছ কি নেই ! তাহলে কেন অযথা আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে আস ? যাইহোক , হযরত হুযাইফা (রাঃ) নবীজী (সাঃ) এর খুব কাছের একজন বিশ্বস্ত ও উঁচু পর্যায়ের মুমিন সাহাবা ছিলেন । তিনি বিলক্ষন জানতেন যে , প্রচুর পরিমানে মুনফিকবৃন্দ রাসুল (সাঃ) এর সাথে চলাফেরা করত । কিন্ত নবী করিম (সাঃ) হযরত হুযাইফা (রাঃ) কে এ কাজের অনুমতি দেননি । মহানবী (সাঃ) বলেন , আমি এটা চাইনা যে , প্রচার করা হোক যে , মোহাম্মাাদ তার সাহাবীদের হত্যা করেছে । দ্রষ্টব্য – আল মোহাল্লা , ১১তম খন্ড , পৃষ্ঠা – ২২৪ । এরূপ অনেক ঘটনাই ছিল যা ইসলামকে রক্ষার খাতিরে নবী করিম (সাঃ) মুখ বন্ধ করে ছিলেন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হননি । যাইহোক , এটা প্রমাণিত যে , শীয়া ও সুন্নি হাদীস মতে রাসুল (সাঃ) এর আশপাশে বেশ কিছু ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী মোনাফেক সাহাবী ছিল যারা ঈর্ষা ও বিদ্বেষের কারনে সবসময় চেষ্টা করেছে খেলাফত বা ইমামত যেন কোন প্রকারেই হযরত আলী (আঃ) এর হস্তগত না হয় । কিন্ত সত্য যতই ফূৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় সত্য ততই উদ্ভাসিত হয়ে যে – পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন – “ – তারা চায় আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে তাদের মুখগুলো দিয়ে , কিন্ত আল্লাহ সংকল্পবদ্ব তাঁর নূর সম্পূর্ন করার , যদিও কাফেররা তার বিরোধী হতে পারে — “ । সুরা – তওবা / ৩২ । সেই সথে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র বাণী — “ আলী মা’আল হাক্ব ওয়াল হাক্ব মা’আল আলী ”। আলী সর্বদা হকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং হক সর্বদা আলীর অনুগামী প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯) ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১) ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২) ১৩. সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلصِّدِّيقُونَ ثَلَاثَةٌ: مُؤْمِنُ آلِ يس، وَ مُؤْمِنُ آلِ فِرْعَوْنَ، وَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَ هُوَ أَفْضَلُهُمْ. প্রকৃত সত্যবাদী তিনজন : আলে ইয়াসীনের মুমিন,আলে ফেরআউনের মুমিন আর আলী ইবনে আবি তালিব,আর সে হলো তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (কানযুল উম্মাল ১;৬০১/৩২৮৯৮,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬২৮/১০৭২,আল ফেরদৌস ২:৪২১/৩৮৬৬) [উল্লেখ্য,আলে ইয়াসীনের মুমিন হলো হাবীব নায্যার (ইয়াসীন : ২০),আর আলে ফেরআউনের মুমিন হলো হেযকিল (গাফির : ২৮)] ১৪. সতকর্মশীলদের নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ عَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ. আলী সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয়। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৯,কানযুল উম্মাল ১১:৬০২/৩২৯০৯,আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা :১২৫,আল ইমাম আলী (আ.)-ইবনে আসাকির ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫) ১৫. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও মরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَنْ أَحَبَّ‌أَنْ يَحْيَا‌حَيَاتِي‌وَ‌يَمُوتَ مَوْتِي‌فَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ. যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে মেনে চলে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯) ১৬. ঈসা (আ.)-এর ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে বলেনঃ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَي(ع)، أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّي بَهَتُوا أُمَّهُ، وَ أََحَبَّتْهُ النَّصَارَي حَتَّي أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ فِيهَا. তুমি ঈসা (আ.)-এর সমতুল্য। ইয়াহুদীরা প্রচন্ড শত্রুতার কারণে তাঁর মায়ের ওপর অপবাদ আরোপ করে। আর খ্রিস্টানরা অতিরঞ্জিত ভালোবাসার কারণে তাঁকে এমন মর্যাদায় আসীন করলো যে মর্যাদা তাঁর ছিল না। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৪,মুসনাদে আহমাদ ১:১৬০,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৩) ১৭. বড় পুণ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ حَسَنَةٌ لَايَضُرُّ مَعَهَا سَيِّئَةٌ، وَ بُغْضُهُ سَيِّئَةٌ لَا يَنْفَعُ مَعَهَا حَسَنَةٌ. আলীর প্রতি ভালোবাসা বড় পুণ্যের কাজ যার কারণে কোনো মন্দই ক্ষতি করতে পারে না। আর তার সাথে শত্রুতা করা বড়ই নোংরা কাজ যার কারণে কোনো পুণ্যের কাজই ফলপ্রসূ হয় না। (আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৫,আল মানাকিব-খারেযমী : ৩৫) ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০) এস, এ, এ ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস এস, এ, এ ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯) ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১) ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২) ১৩. সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلصِّدِّيقُونَ ثَلَاثَةٌ: مُؤْمِنُ آلِ يس، وَ مُؤْمِنُ آلِ فِرْعَوْنَ، وَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ وَ هُوَ أَفْضَلُهُمْ. প্রকৃত সত্যবাদী তিনজন : আলে ইয়াসীনের মুমিন,আলে ফেরআউনের মুমিন আর আলী ইবনে আবি তালিব,আর সে হলো তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। (কানযুল উম্মাল ১;৬০১/৩২৮৯৮,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬২৮/১০৭২,আল ফেরদৌস ২:৪২১/৩৮৬৬) [উল্লেখ্য,আলে ইয়াসীনের মুমিন হলো হাবীব নায্যার (ইয়াসীন : ২০),আর আলে ফেরআউনের মুমিন হলো হেযকিল (গাফির : ২৮)] ১৪. সতকর্মশীলদের নেতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ عَلِيٌّ أَمِيرُ الْبَرَرَةِ، وَ قَاتِلُ الْفَجَرةِ، مَنْصُورٌ مَنْ نَصَرَهُ، مَخْذُولٌ مَنْ خَذَلَهُ. আলী সতকর্মশীলদের নেতা আর ব্যভিচারীদের হন্তা। যে কেউ তাকে সাহায্য করে সে সাহায্য প্রাপ্ত হয় আর যে ব্যক্তি তাকে ত্যাগ করে সে বিফল হয়। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৯,কানযুল উম্মাল ১১:৬০২/৩২৯০৯,আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা :১২৫,আল ইমাম আলী (আ.)-ইবনে আসাকির ২:৪৭৬/১০০৩ ও ৪৭৮/১০০৫) ১৫. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও মরণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَنْ أَحَبَّ‌أَنْ يَحْيَا‌حَيَاتِي‌وَ‌يَمُوتَ مَوْتِي‌فَلْيَتَولَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ. যে ব্যক্তি আমার মতো জীবন যাপন করতে এবং আমার মতো মৃত্যুবরণ করতে পছন্দ করে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে মেনে চলে। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১১/৩২৯৫৯) ১৬. ঈসা (আ.)-এর ন্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলীকে বলেনঃ فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَي(ع)، أَبْغَضَتْهُ الْيَهُودُ حَتَّي بَهَتُوا أُمَّهُ، وَ أََحَبَّتْهُ النَّصَارَي حَتَّي أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ فِيهَا. তুমি ঈসা (আ.)-এর সমতুল্য। ইয়াহুদীরা প্রচন্ড শত্রুতার কারণে তাঁর মায়ের ওপর অপবাদ আরোপ করে। আর খ্রিস্টানরা অতিরঞ্জিত ভালোবাসার কারণে তাঁকে এমন মর্যাদায় আসীন করলো যে মর্যাদা তাঁর ছিল না। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৪,মুসনাদে আহমাদ ১:১৬০,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১২৩) ১৭. বড় পুণ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ حُبُّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ حَسَنَةٌ لَايَضُرُّ مَعَهَا سَيِّئَةٌ، وَ بُغْضُهُ سَيِّئَةٌ لَا يَنْفَعُ مَعَهَا حَسَنَةٌ. আলীর প্রতি ভালোবাসা বড় পুণ্যের কাজ যার কারণে কোনো মন্দই ক্ষতি করতে পারে না। আর তার সাথে শত্রুতা করা বড়ই নোংরা কাজ যার কারণে কোনো পুণ্যের কাজই ফলপ্রসূ হয় না। (আল ফেরদৌস ২:১৪২/২৭২৫,আল মানাকিব-খারেযমী : ৩৫) ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০

এই বুখারীর ওপরে বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার বেশুমার লানত বর্ষিত হোক গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ) অধ্যায়ঃ ৫/ গোসল (كتاب الغسل) হাদিস নম্বরঃ ২৬৮ ৫/১২. একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা। ২৬৮. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেয়া হয়েছে। সা‘ঈদ (রহ.) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাযি.) তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। (২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৬) Narrated Qatada: Anas bin Malik said, "The Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) used to visit all his wives in a round, during the day and night and they were eleven in number." I asked Anas, "Had the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) the strength for it?" Anas replied, "We used to say that the Prophet (sallallahu ‘alaihi wa sallam) was given the strength of thirty (men)." And Sa`id said on the authority of Qatada that Anas had told him about nine wives only (not eleven). بَاب إِذَا جَامَعَ ثُمَّ عَادَ وَمَنْ دَارَ عَلَى نِسَائِهِ فِي غُسْلٍ وَاحِدٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَدُورُ عَلَى نِسَائِهِ فِي السَّاعَةِ الْوَاحِدَةِ مِنَ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَهُنَّ إِحْدَى عَشْرَةَ‏.‏ قَالَ قُلْتُ لأَنَسٍ أَوَكَانَ يُطِيقُهُ قَالَ كُنَّا نَتَحَدَّثُ أَنَّهُ أُعْطِيَ قُوَّةَ ثَلاَثِينَ‏.‏ وَقَالَ سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ إِنَّ أَنَسًا حَدَّثَهُمْ تِسْعُ نِسْوَةٍ‏.‏‏ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

—স্বয়ং আল্লাহর মহান শপথ — ” — তাই আমি শপথ করি , ঐ স্থানগুলোর মাধ্যমে যেখানে তারাগুলো অস্ত যায় । এবং নিশ্চ য়ই এটি একটি মহান শপথ , যদি তোমরা জানতে , নিশ্চ য়ই এটি এক মর্যাদাপূর্ণ কোরআন , এক সুরক্ষিত কিতাবে , কেউ তাকে স্পর্শ করে না শুধুমাত্র পবিত্রগন ব্যাতীত —-” । সুরা – ওয়াক্বীয়া / ৭৫ , ৭৬ , ৭৭ , ৭৮ , ৭৯ । পাঠক , আপনার কিছুটা বাড়তি মনযোগ চাইছি , প্লীজ । উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলির প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে শপথ বা কসম নিচ্ছেন । শপথ সাধারনত অতি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন , খুবই মর্যাদাবান বিষয় , ব্যক্তিত্ব বা স্থানসমূহের বিষয় নেওয়া হয় থাকে । বলাই বাহুল্য যে , এখানে স্বয়ং আল্লাহ নিজে ঐ স্থানসমূহের শপথ বা কসম নিচ্ছেন যেখানে নক্ষত্র সমূহ অবতরন বা অস্ত যায় ! অবশ্যই এখানে প্রশ্ন জাগবে যে , সেই মহান এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান কোনটা ? সেই সাথে আল্লাহ নিজেই বলছেন যে , এই শপথটি অতি মহান এবং খুবই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন । তাহলে ঐ স্থানটি অতি অবশ্যই খুবই উচ্চ মর্যাদাপূর্ন স্থান পাঠক , আপনাকে মনে করিয়ে দেই যে , পৃথিবীতে এমন একটি গৃহ ছিল – যে পবিত্র গৃহে সম্মাানীয় ফরেশতাগন হরহামেশা পবিত্র কোরআনের ওহী নিয়ে নাজিল হতেন । এই পবিত্র গৃহে ফেরেশতাগন শুধু ওহী নিয়ে যাতায়াত করেই ক্ষান্ত হতেন না ! ঐ গৃহের বিভিন্ন গৃহস্থালী কাজগুলোও ফেরেশতাগন করে দিতেন । যেমন আটা পিষার চাকতি পিষে যব বা গমের আটা প্রস্তত করে দিতেন । ঐ গৃহের দোলনা দুলিয়ে দিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিতেন । ঈদের সময় ঐ গৃহের বাচ্চাদের জন্য আল্লাহর দরবার থেকে নতুন জামা নিয়ে আসতেন । পবিত্র গৃহের পবিত্র ব্যক্তিবর্গের জন্য পুতঃপবিত্রতার আয়াত নিয়ে আসতেন । এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহটি “চাদরের হাদিসের” জন্য বিখ্যাত । পৃথিবীতে একটি মাত্র গৃহ ছিল , যে গৃহে প্রবেশের জন্য নবীজী (সাঃ) এর অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল । পৃথিবীতে এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহের মহান মানুষগুলোকেই মহান আল্লাহ নবীজীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন । পৃথিবীতে এই একটি মাত্র গৃহ যে গৃহের মানুষগুলোকেই মহান আল্লাহ তাঁর ইমামত পদ্বতির জন্য ইমাম হিসাবে মনোনীত ও নির্বাচিত করেছিলেন । লেখা দীর্ঘায়ীত না করে শুধু এইটুকুই বলছি যে — এই পবিত্র গৃহের পবিত্র মানুষগুলোর জন্যই – ” ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ কেয়ামত পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম চিরকৃতজ্ঞ থাকবে এই পবিত্র গৃহের পবিত্র মানুষগুলোর নিকট । পবিত্র এই মানুষগুলোর আত্নত্যাগ এবং মহান কুরবানীর জন্য দুনিয়ায় এখনও ইসলাম মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে । যাইহোক , সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেই পবিত্রতম স্থানটি সম্পর্কে শপথ করে আমাদের জানিয়ে দিলেন ঐ গৃহটির মান মর্যাদা সম্বন্ধে । সকলের নিকট বিনীত একটি জিজ্ঞাস্য — স্বয়ং আল্লাহ যে স্থানটি নিয়ে শপথ করেন আমরা কি আজ পর্যন্ত সেই পবিত্র গৃহটির পবিত্র মানুষগুলোকে যথাযথ সম্মাান ও মূল্যায়ন করতে পেরেছি ? প্রশ্নটি এজন্যই করলাম যে , ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের কয়েকটি দিন পরেই এ পবিত্র গৃহটিতে রাসুলেরই (সাঃ) নামধারী কিছু উম্মমত আগুন দিতে কোনরুপ দ্বিধবোধ করে নি ! পবিত্র মানুষগুলোকে চরম হেনস্তা করতেও ওদের বিবেক দংশিত হয় নি ! মানছি যে , ওদের কর্মের দায়ভার আমাদের নয় । সবশেষে শুধু এ প্রশ্নটি করেই বিদায় — রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের চরম শত্রুগনকে আমরা কিভাবে রাঃআনহু বলছি প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আল্লাহর প্রশংসা নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত। আলী (আঃ) তাঁর বক্তব্যে আল্লাহ এবং মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে মূল্যবান অনেক কথাই বলেছেন। আলী (আঃ) যে খোদার কথা বলেছেন তিনি শুষ্ক ও নি®প্রাণ কিংবা মানুষের সাথে অপরিচিত কেউ নন। তিনি জীবিত এবং সচেতন। মানুষের সাথে তাঁর কথাবার্তা বিনিময় হয়। তিনি মানুষকে নিজের প্রতি আকর্ষণ করেন এবং তিনি তাদের আন্তরিক প্রশান্তি ও সন্তুষ্টির উৎস। সকল সৃষ্টিই নিজের অস্তিত্বের গভীরে তার সাথে গোপন রহস্যের সূতোয় বাঁধা। তাদের সবাই আল্লাহর প্রশংসায় লিপ্ত। অন্যভাবে বলা যায়,নাহজুল বালাগায় আল্লাহ খুবই প্রিয় সত্ত্বা-মানুষের ভালোবাসার মূল উৎস। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ীঃ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। এ কারণেই হযরত আলী (আঃ) আল্লাহকে চেনার উপায়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা,অন্তরের সকল কালিমা দূর করে স্বচ্ছতা ও পবিত্রতা আনা,সত্ত্বার গভীরে ডুবে যাওয়া,আল্লাহর জিকির করা ইত্যাদিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির ভিত্তি বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইমাম আলী (আঃ) সত্ত্বাকে আল্লাহর সৃষ্টি বলে মনে করেন এ অর্থে যে বিশ্ব হলো সৃষ্ট বস্তু আর আল্লাহই তাকে তাঁর নিজস্ব কৌশলে সৃষ্টি করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো যে আল্লাহ যা সৃষ্টি করার কথা ভাবেন তা-ই সৃষ্টি হয়ে যায়। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী মহান স্রষ্টা। যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুঁজে বেড়ায় তাকে ইমাম আলী (আঃ) বলেন সে যেন কোরআনে কারিমের প্রতি মনোনিবেশ করে। কেননা মানুষের চিন্তাশক্তি সীমিত। সে তার নিজের অপূর্ণ চিন্তা দিয়ে একাকী আল্লাহর মতো মহান সত্ত্বাকে খোঁজার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারবে না। আলী (আঃ) বলেন-হে প্রশ্নকারী! যথার্থ দৃষ্টি দাও! কোরআন আল্লাহর যেসব গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করছে তার প্রতি আস্থাশীল হও! তাঁর হেদায়েতের আলো থেকে উপকৃত হও! যা কিছু আল্লাহর কিতাব,নবীজীর সুন্নাত এবং অলী-আউলিয়াদের হেদায়েতের পথ থেকে দূরে রাখে এবং শয়তানের প্ররোচনা যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের ত্যাগ করো। ঐশী আদর্শের শিক্ষকগণ জ্ঞানের পথে সদা অটল-অবিচল ছিলেন। আলী (আঃ) আল্লাহর একত্বের ব্যাপারে বহু প্রমাণ অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন এবং তারপর তাঁর আনুগত্য করা আমাদের জন্যে ফরয বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে,মানুষ খুবই দুর্বল এবং অক্ষম সৃষ্টি এবং তাই মানুষের উচিত সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করা, তার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকা এবং তার সন্তুষ্টির জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ প্রসঙ্গে ইমাম আলী (আঃ) তাঁর ছেলে ইমাম হোসাইন (আঃ) এর উদ্দেশ্যে বলেছেন-জেনে রোখো হে আমার সন্তান! আল্লাহর যদি কোনো অংশীদার বা শরিক থাকতো তাহলে তাঁর নবীরাও তোমার কাছে আসতো। তুমি তাদের শক্তির নিদর্শন দেখতে এবং তাদের কর্মনৈপুন্য ও গুণাবলী সম্পর্কে জানতে। কিন্তু খোদা তায়ালা এক এবং একক সত্ত্বা। যেমনটি তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন-তাঁর নিরঙ্কুশ একাধিপত্যে কারো কোনো রকম অংশিদারিত্ব নেই এবং তাঁর শক্তি নিঃশেষ হবার নয়। তাঁর অস্তিত্ব সবসময় ছিল এবং তিনি সকল কিছুর শুরু তবে তাঁর জন্যে শুরু বলে কিছু নেই। সবকিছুরই সমাপ্তি আছে কিন্তু তাঁর কোনো সমাপ্তি নেই। মানুষ তাঁর শক্তি সম্পর্কে যতোটুকু চিন্তা করতে পারে প্রকৃতপক্ষে তিনি তার চেয়েও অনেক উর্ধ্বে। এখন যেহেতু এই উপলব্ধি বা বোধ তোমার হয়েছে তাই আল্লাহর প্রতি অনুগত হও। তাঁর শাস্তিকে ভয় করো এবং তাঁর রাগের কারণগুলোকে পরিত্যাগ করো। কেননা খোদা তায়ালা তোমাকে পুণ্যকাজ ছাড়া আর কোনো কিছুর আদেশ দেন নি এবং মন্দকাজ ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ব্যাপারে নিষেধ করেন নি। আলী (আঃ) আল্লাহকে গভীর প্রেম ও আধ্যাত্মিকতার সাথে চিনতেন এবং তাঁর ভালোবাসা পোষণের ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত একটি বক্তব্য হলো-হে খোদা! তোমার বেহেশতের লোভে কিংবা তোমার জাহান্নামের ভয়ে আমি তোমার ইবাদাত করি নি,বরং তোমাকে ইবাদাতের উপযুক্ত এবং প্রশংসার যোগ্য জেনেই তোমার ইবাদাত করেছি। তিনি বিনীতভাবে এবং যথার্থ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্যে বেদনাহতের মতো মোনাজাত করতেন। রাতের অন্ধকারে যখন সবাই গভীর নিদ্রায় ডুবে যেতো তখন তিনি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে গুঞ্জন করতে করতে বলতেন-হে খোদা! তুমি তো তোমার সকল প্রিয় বান্দার দুঃসময়ের সঙ্গী এবং যারা তোমার ওপর নির্ভর করে তাদের অভাব-অভিযোগের ব্যাপারে তুমি তো সবই জানো। হে খোদা! আমার জন্যে তুমি যা কিছু যথার্থ মনে করো তার নির্দেশনা দাও! আমার অন্তরকে উন্নতি-অগ্রগতির দিকে এবং পূর্ণতার দিকে ধাবিত করো-কেননা;এই অনুগ্রহ তোমার হেদায়াতের বাইরে প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

মহানবী (সাঃ) ও অসমাপ্ত শেষ অসিয়তনামা — — মহানবী (সাঃ) ও অসমাপ্ত শেষ অসিয়তনামা —- প্রশ্ন – রাসুল (সাঃ) কেন ওনার জীবনের অন্তিম সময় অসিয়তনামা লেখার ব্যাপারে আরও জোর তাকীদ দিলেন না ? বিশ্লেষন মূলক জবাব – মহানবী (সাঃ) ওনার জীবনের শেষের দিনগুলোয় বললেন , ” আমাকে খাতা আর কলম দাও , আমি তোমাদের জন্য অসিয়ত লিখে দিয়ে যাব , যাতে করে আমার পরে তোমাদের কোন ক্ষতি না হয় ” । অনেকটা এরকমই ছিল মহানবী (সাঃ) এর শেষ ইচ্ছা বা আদেশ । কিন্ত ইতিহাস স্বাক্ষী যে , নবীজী (সাঃ) এর এই রকম মহামূল্যবান অভিপ্রায় সফল হল না , হযরত ওমরের প্রচন্ড বিরোধিতার জন্য । ” মেজবাবু ” কিছুতেই নবীজী (সাঃ) কে ওনার শেষ ইচ্ছা পুরন করতে দিলেন না । রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছেন এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট । হযরত ওমরের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও ইতিহাসে বিদ্যমান । চীৎকার , চেচামেচী , হট্টগোল ইত্যাদি জঘন্য বেয়াদবীমূলক আচরনে নবীজী (সাঃ) ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে অসিয়ত না লিখেই ওমরসহ ওনার দলবলকে ঘর থেকে বের করে দিলেন । সূত্র – সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক । ” হযরত ওমরের বিরোধীতা এমন চরম পযায় উপনীত হয়েছিল যে , লেখনীর যে সরজ্ঞামগুলো রাসুল (সাঃ) এর খেদমতে পেশ করা হচ্ছিল , হযরত ওমর সেই সরজ্ঞামগুলো নবীজী (সাঃ) এর মুখের সামনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ” । সূত্র – মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ৩৬৪ (মিশর মুদ্রন , ১৩১৩ হিজরী ) / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত , পৃ- ১৪২ । সুপ্রিয় পাঠক, প্রশ্নটা এখানেই , মহানবী (সাঃ) কেন তখন হযরত ওমরের প্রবল বিরোধিতার মুখে জোর করে হলেও অসিয়ত লেখার কাজটি সমাপ্ত করলেন না ? এ প্রশ্নের উত্তরটিও খুবই সুষ্পষ্ট – কারন মহানবী (সাঃ) যদি এ পত্র বা অসিয়ত লেখার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি বা জোর করতেন , তা হলে যে ” মেজবাবু ” বলেছিলেন , ” রোগযন্ত্রনা মহানবীর উপর প্রবল হয়েছে ” , তখন উনি এবং ওনার দলবল মহানবীর (সাঃ) সাথে বেয়াদবীর চরম ষ্পর্ধা প্রদশন করতেন এবং তাদের দলীয় লোকেরা জনগনের মধ্যে তা রটনা করে তাদের দাবি প্রমান করার চেষ্টা করতেন । অর্থাৎ তারা তখন বলে বেড়াতেন যে , রোগ যন্ত্রনায় নবীজী (সাঃ) যা কিছু লিখেছেন তা মোটেই যুক্তিগ্রাহ্য নয় । কারন তখন ওনার মাথার ঠিক ছিল না । (নাউযুবিল্লাহ ) । এ অবস্থায় মহানবীর (সাঃ) শানে বেয়াদবীপূর্ন আচরনের মাত্রা যেমন বৃদ্বি পেত ও অব্যাহত থাকত , তেমনি মহানবীর (সাঃ) পত্রের কার্যকারিতাও আর থাকত না । এ কারনেই কেউ কেউ যখন তাদের বেয়াদবী আর মন্দ আচরন লাঘব করার জন্য মহানবী (সাঃ) এর কাছে বলেছিলেন ,”আপনি কি ইচ্ছে করেন যে, আমরা কাগজ কলম নিয়ে আসি ? ” মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র চেহারা তখন প্রচন্ড উষ্মায় রক্তিম হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাদের বলেছিলেন ,” এতসব কথাবার্তার পর তোমরা কাগজ কলম আনতে চাচ্ছ ! কেবল এ টুকু তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি যে, আমার বংশধরদের সাথে সদাচরন করবে ” । একথা বলে তিনি উপস্থিত সকলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং আলী , আব্বাস ও ফযল ব্যতীত তারা সবাই সেখান থেকে উঠে চলে যায় । সূত্র – বিহারুল আনোয়ার , ২২তম খন্ড ,পৃ- ৪৬৯ এবং শেখ মুফিদ প্রনীত কিতাব আল ইরশাদ এবং তাবারসী প্রনীত আলামুল ওয়ারা । – চির ভাস্বর মহানবী (সাঃ) – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী , পৃ ৪২২, ছায়া অবলম্বনে —। বিঃদ্রঃ – এ বিষয় বিস্তারিত জানতে হলে , পড়ুন — – হাদীসে কিরতাস এবং হযরত উমর (রাঃ) এর ভূমিকা , লেখক – আব্দুল করিম মুশতাক । রেমন পাবলিশার্স ২৬ , বাংলাবাজার , ঢাকা । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

কে এই ইমরান — — সুরা আল ইমরান — পবিত্র কোরআনের ৩য় নাঃ সুরা । কে সেই ” ইমরান ” ? “—- আদমকে , নূহকে ও ইবরাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে আল্লাহ বিশ্বজগতে মনোনীত করিয়াছেন — ” “—– ইহারা একে অপরের বংশধর । আল্লাহ সবশ্রোতা , সবজ্ঞ —– ” । সুরা – আল ইমরান , ৩৩,৩৪ । আলে ইবরাহীম অর্থাৎ ইবরাহীমের বংশধর ও আলে ইমরান অর্থাৎ ইমরানের বংশধর থেকেই মহান আল্লাহ মহানবীর ( সাঃ ) ওফাতের পর সমগ্র জ্বীন ও মানবজাতি সহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের হেদায়েত বা পরিচালনার জন্য ১২ জন পবিত্র ইমামগনকে ( আঃ ) মনোনীত করেছেন । ওনাদেরকে মনোনয়ন করার আগে মহান আল্লাহ ইবরাহীম ও ইমরানকে মনোনীত করেছেন । তো এই প্রসংগে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পরিচয় তুলে ধরার এখানে অপেক্ষা রাখে না । তবে যার নামে এই সুরার নামই রাখা হয়েছে ” ইমরান ” , সেই হযরত ইমরানের সম্পর্কে কিছু কথা বলার অবকাশ আছে । এখন মূল প্রশ্ন — কে সেই ” ইমরান ” ?? যাঁকে এবং যাঁর বংশধরকে স্বয়ং মহান আল্লাহ নিজে মনোনীত করেছেন ! সমগ্র ইসলামের ইতিহাসে তিনজন ” ইমরানই ” বিখ্যাত এবং বিশেষ মান মর্যাদার অধিকারী । প্রথম — ” ইমরান ” হচ্ছেন হযরত মুসা (আঃ) এর পিতা । যিনি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর । কাজেই তিনি তো মনোনীত আছেনই এবং ওনার বংশধর সেই ধারাভুক্ত । কাজেই তাকে বা তার বংশধরকে আবার মনোনয়নের প্রয়োজন হয় না । দ্বিতীয় — ” ইমরান ” হচ্ছেন হযরত মরিয়ম (আঃ) এর পিতা । সেই সুত্রে তিনি হযরত ঈসা (আঃ) এর নানা । তিনিও হযরত ইবরাহীমের বংশধর । আর তিনি কোন পুত্র সন্তান রেখে যান নি । হযরত মরিয়ম (আঃ) হচ্ছেন ওনার কন্যা সন্তান । হযরত ঈসা (আঃ) এর মাতা তিনি । তিনিও ইবরাহীম (আঃ) এর বংশধর । কাজেই তিনিও মনোনীত । এবং হযরত ঈসা (আঃ) অবিবাহিত ছিলেন বিধায় পুত্র বা কন্যা সন্তানের কোন প্রশ্নই আসে না । তথা ওনার বংশধরের কোন অস্তিত্ব নেই । এখন সর্বশেষ ও তৃতীয় —– ” ইমরান ” হচ্ছেন মহানবী (সাঃ) এর চাচা , যিনি আবু তালিব নামে সর্বাধিক পরিচিত । এই আবু তালিবেরই প্রকৃত নাম হচ্ছে ” ইমরান ” । প্রচলিত নাম হচ্ছে আবু তালিব বা তালিবের পিতা । ওনার জৈষ্ঠ পুত্রের নাম হচ্ছে তালিব । তাই ওনাকে ডাকা হতো আবু তালিব । একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কোন উল্লেখযোগ্য ” ইমরান” অদ্যবধি ইসলামের ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায় নি । সুতরাং মহান আল্লাহ কতৃক মনোনীত ও ঘোষিত ” আলে ইমরান ” ( ইমরানের বংশধর ) , এই হযরত আবু তালিব (আঃ) ছাড়া আর কে হতে পারে ? আমীরুল মুমিনীন ওয়া ইমামুল মোত্তাকীন হযরত আলী ( আঃ ) ওনারই সুযোগ্য সন্তান । যার জন্মই হয়েছিলো পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে । এবং এই মহা সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে আর কারও হয় নি । জান্নাতবাসীদের সর্দার তথা ২য় ও ৩য় ইমাম , ইমাম হযরত হাসান ( আঃ ) এবং ইমাম হযরত হোসেন (আঃ) এই আবু তালিব বা ইমরানের পৌত্র । হযরত ইমাম হোসেন (আঃ) এর বংশ থেকে শেষ যামানার ইমাম হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) পর্যন্ত যে নয়জন আল্লাহর মনোনীত ইমাম আগমনের সংবাদ বা ঘোষনা মহানবী (সাঃ) দিয়েছেন , তারা সকলেই , ” আলে ইমরান ” তথা আবু তালিবের বংশধর । এই বংশধরকেই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে পুত পবিত্র বলে ঘোষনা দিয়েছেন । মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তি ছাড়া কোন লোককে মনোনীত করা আল্লাহর বিধানে নেই । সেই হিসেবে অতি অবশ্যই হযরত আবু তালিব বা ইমরান (আঃ) আল্লাহর মনোনীত একজন মাসুম বা নিষ্পাপ ব্যক্তি । এবং এই বংশধরকে আল্লাহ মহব্বত ও সম্মান ও আনুগত্য করার আদেশও দিয়েছেন । রাসুলে খোদা বলেন , ” যে আলীকে ভালোবাসে ও আনুগত্য করে সে পবিত্র আত্মার অধিকারী ” । ( তিরমিযি ) । আর আবু তালিব হচ্ছেন আলী (আঃ) এর জন্মদাতা পিতা । তাহলে তিনি কতো পবিত্র হবেন তা কি ভেবে দেখার দাবি রাখে না ? যার ঔরস থেকে আল্লাহ কতৃক মনোনীত ইমামতের ধারা শুরু হলো , সেই আবু তালিব বা ইমরানকে একদল মুসলিম নামধারী জ্ঞানপাপীরা ” কাফের ” বা “মৃত্যুর আগ পর্যন্র ঈমান আনে নি ” এই জাতীয় ভয়ংকর জঘন্য কথা বলতে অন্তর কাপে না ! যাইহোক , সুপ্রিয় পাঠক , আশা করি সুরা আলে ইমরানের , ইমরান ব্যক্তিটি কে – প্রকৃত পরিচয় পেয়েছেন । — নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) ও ইসলামের ইতিহাস প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ সুলতানুল হিন্দ গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী (রহঃ) সঞ্জরী বলেছেনঃ- "আউসাফে আলী বগুফতেগু মুমকিন নিস্ত, গুনজায়েশে বহর দর সবু মুমকিন নিস্ত " বংঙ্গানুবাদঃ আলীর (আঃ) মহিমা ভাষার তুলিতে যায় না কখনো আঁকা, অসীম সাগর কলসির মাঝে যায় কি কখনো রাখা ? মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রহঃ) তাঁর 'দিউয়ানে শামস তাবরিজ' গ্রন্থে হযরত আলীর (আঃ) তাৎপর্য নির্দেশ করেছেনঃ- "এটা কুফরি নয়, আমি কাফির নই।যত দিন হতে এই সৃষ্টি আছে,আলী (আঃ) আছেন, যত দিন সৃষ্টি থাকবে,আলী (আঃ) থাকবেন। "এক রাতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আলীর (আঃ) কাছে কোরআনের তফসির শুনতে আসেন।শুধু সুরা ফাতেহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল দেখে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ এক সুরা ফাতিহার তফসির করতেই রাত ফজর হয়ে গেল। বাকি কিতাব তো পড়ে রইল। মাওলা আলী (আঃ) বললেনঃ কোরআনের মূল সুরা এই ফাতিহা আর সুরা ফাতেহার মূল বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিমের মূল হচ্ছে বিসমিল্লাহ। বিসমিল্লাহর মূল হছে 'বে' হরফ টি।'বে' হরফের মূল হচ্ছে নুকতাটি আর এই নোকতাটি কে জানো? ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না। আলী (আঃ) বললেনঃ"আনা নুখতাতু আতহাল বায়ে " আমিই 'বে' -এর নিচের এই নুকতা। মহানবী (সাঃ) বলে গেছেনঃ হে আল্লাহ্‌, আলী যেদিকে ঘুরবে হককে সেদিকে ঘুরিয়ে দিও।আরো বলেছেনঃ মোনাফেক ব্যতীত কেউ আলী বিদ্বেষী হতে পারে না।আলীর সাথে বিদ্বেষ রাখে কি-না, তা দেখে কে মোনাফেক, সাহাবা ও আনসারগণ তা নির্ণয় করতেন।[তিরমিজি ] হযরত জাবের (রাঃ) বলেনঃ তায়েফ গমনের দিন রসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলীকে (আঃ) ডেকে নিয়ে পরামর্শে বসলেন।এক ঘণ্টা বেশী দেরি হওয়ায় সাহাবীগণ আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে এমন কি লম্বা-চওড়া গোপন পরামর্শ করলেন? রসুলে খোদা (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ গোপন পরামর্শ আমি করিনি, স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই তাঁর সাথে পরামর্শ করেছেন । প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

আমার কথা সুব.ই.আজল ইয়ে মুঝছে কাঁহা জিব্রাইল নে জো আকাল কা গুলাম হো…ও দিল না কার কবুল। -আল্লামা ইকবাল। অর্থঃ আজ ভোরে জিব্রাইল এসে বললোঃ - যারা আকল ( সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধির ) গোলাম হয়, তাদের হৃদয় তুমি কবুল করিও না। অর্থাৎ তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করিও না। জিন্দেগি আপনি যব ইস শকল্ সে গুজরি গালিব, হম ভি ক্যায়া ইয়াদ করেঙ্গে কি খুদা রাখতে থে। -মীর্জা গালিব। অর্থাৎ নিজের জীবন যখন এমনই বিবর্ণ, গালিব, কী করে যে ভাবি, একদা আমাতেই ছিল স্র্রষ্টার বাস? প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব আঃ নিঃসন্দেহে আমাদের শেষ নবী (সা.) হচ্ছেন সকল নবীদের সর্দার এবং সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকেও তিনি ছিলেন সবার উর্দ্ধে। দ্বীনে ইসলাম দুনিয়ার বুকে আসার পরে সকল দ্বীন বাতিল হয়ে যায় এমনকি হজরত নূহ, হজরত ইব্রাহিম, হজরত মূসা, হজরত ঈসা (আ.) এর শরীয়ত সমূহও বাতিল হয়ে গেছে। হজরত ঈসা (আ.) যিনি লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন তিনি যখন আবির্ভূত হবেন তখন তিনিও হজরত মোহাম্মাদ (সা.) এর শরীয়তের উপরে ঈমান আনবেন এবং ইমাম মাহদী (আ.) এর পিছনে নামাজ আদায় করবেন। রাসুল (সা.) এর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যাক্তিত্বগণ হচ্ছেন আহলে বাইত (আ.) গণ। পবিত্র আহলে বাইত (আ.) এর সদস্য ইমাম মাহদী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন তখন যে কজন নবীই আবির্ভূত হবেন তাঁরা ইমাম মাহদী (আ.) কে ইমাম হিসেবে মেনে নিবেন। কেননা তাদের নবুওয়াতের পর্ব শেষ হয়ে গেছে এবং এখন হচ্ছে ইমামতের সময় তাই তারাও রাসুল (সা.) এর আহলে বাইত এর ইমামদের নেতৃত্বকে মেনে নিবেন। আমরা বিভিন্ন দিক থেকে আহলে বাইত (আ.) দের সম্মানকে আলোচনা করতে পারি। ১- আহলে বাইত (আ.) এর অস্তিত্বঃ قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন? (সূরা ছোয়াদ, আয়াত নং ৭৫) لِقَوْلِ النَّبِيِ‏: كُنْتُ‏ نَبِيّاً وَ آدَمَ‏ بَيْنَ الْمَاءِ وَ الطِّين‏ রাসুল (সা.) বলেছেনঃ আমি তখন নবী ছিলাম যখন আদমের অস্তিত্ব পানি ও মাটির মধ্যে ছিল। (মানাকেবে আলী ইবনে আবি তালিব, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৪) ২- মানবীয় মর্যাদার দৃষ্টিতে কোরআনের বর্ণিত হয়েছে যে আহলে বাইত (আ.) কে খোদা ঐশী জ্ঞান দান করেছেন। বিভিন্ন স্থানে আহলে বাইত (আ.) কে নাতিক্বে কোরআন বলা হয়েছে। وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَسْتَ مُرْسَلاً قُلْ كَفَى بِاللّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ কাফেররা বলেঃ আপনি প্রেরিত ব্যক্তি নন। বলে দিন,আমার ও তোমাদের মধ্যে প্রকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি, যার কাছে গ্রন্থের জ্ঞান আছে। (সূরা রা’দ, আয়াত নং ৪৩) وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত নং ১২) ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেনঃ আমাদের কাছে খোদার রহস্য এবং জ্ঞানের মধ্যে থেকে কিছু রহস্য এবং জ্ঞান আছে যা নিকটবর্তি মালায়েকা এবং অন্যান্য নবীগণ এবং ঐ সকল মুমিন যারা পরিক্ষিত হয়েছে তাদের মধ্যেও ও উক্ত রহস্য ও জ্ঞানকে ধারণ করার ক্ষমতা নেই। খোদাকে আমরা (আহলে বাইত) ছাড়া আর কেউ উক্ত জ্ঞানের মাধ্যমে ইবাদত করেনি। (কাফি খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০২) ৩- ক্ষমতা বা শক্তিঃ ক্ষমতা বা শক্তি হচ্ছে জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। খোদা পবিত্র কোরআনে বলেছেনঃ আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত নং ১২) যদি আহলে বাইত (আ.) গণ সেই জ্ঞানের অধিকারী হন তাহলে অবশ্যই তারা হবেন সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী ব্যাক্তি। ৪- খোদার প্রতি ভরসা এবং তাকওয়ার দৃষ্টিতেঃ যদি কারো কাছে খোদার দানকৃত বিভিন্ন ধরণের জ্ঞান থাকে তাহলে অবশ্যই তার ফযিলতও হবে বেশী। لَوْ كُشِفَ‏ الْغِطَاءُ مَا ازْدَدْتُ يَقِينا যদি আমাদের চোখের সামনে থেকে পর্দাকে সরিয়ে নেয়া হয় তাহলেও আমার বিশ্বাসে কোন প্রভাব ফেলবে না। (ইরশাদুল কুলুব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪) ৫- রাসুল (সা.) এর ন্যায় আহলে বাইত (আ.) ও ফযিলতের অধিকারী ছিলেনঃ فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৬১) ৬- হজরত ঈসা (আ.) ইমাম মাহদী (আ.) এর পিছনে নামাজ আদায় করবেন। ২০শে রমজান ৪০ হিজরীতে যখন ইমাম আলী (আ.) চেহারায় মৃত্যুর আলামত প্রস্ফুটিত হয়। তিনি তাঁর পুত্র ইমাম হাসান (আ.) কে বলেনঃ আমাদের বাড়ির দরজার যে সকল শিয়ারা একত্রিত হয়ে আছে তাদেরকে আমার কাছে আসতে দাও যেন তারা আমার সাথে সাক্ষাত করতে পারে। দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে শিয়ারা ইমাম আলী (আ.) এর চারিদিকে ঘিরে ক্রন্দন ও আহাজারী করতে থাকে। তখন ইমাম আলী (আ.) তাদেরকে বলেনঃ আমার মারা যাওয়ার পূর্বে তোমাদের কিছু জানার থাকলে আমাকে প্রশ্ন করতে পার কিন্তু শর্ত হচ্ছে তোমাদের প্রশ্ন যেন ছোট এবং সংক্ষিপ্ত হয়। ইমাম আলী (আ.) এর একজন সাহাবী সাআসাআ বেন সোহান যিনি শিয়া ও সুন্নী আলেম উভয়ের কাছেই বিশ্বস্ত ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি ইমাম (আ.) কে প্রশ্ন করেন যে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত আদম (আ.) এর? ইমাম (আ.) তার উত্তরে বলেনঃ মানুষ নিজের প্রশংসা নিজেই করা বিষয়টি ঠিক না। কিন্তু স্বয়ং খোদা বলেছেনঃ وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা দোহা, আয়াত নং ১১) তাই বলছি যে হজরত আদম (আ.) এর চেয়ে আমার ফযিলত বেশী। (হজরত আদম (আ.) এর জন্য বেহেস্তে সকল ধরণের নেয়ামত আরাম আয়েশের ব্যাবস্থা ছিল শুধুমাত্র তাকে গন্দুম খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি গন্দুম খান এবং তাকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ার বুকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। যদিও আমার জন্য গন্দুমকে নিষিদ্ধ করা হয়নি কিন্তু যেহেতু আমি দুনিয়াকে পছন্দ করি না সেহেতু তা আমার জন্য হালাল থাকলেও তা আমি পছন্দ করতাম না। উক্ত কথা দ্বারা তিনি হজরত আদম (আ.) এরর ফযিলত কমাতে চাননি বরং তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের কেরামত ও ফযিলত তার জোহদ এবং ইবাদতের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। যে ব্যাক্তি দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে অবশ্যই সে খোদার নিকট ততই প্রিয় হবে। অতঃপর সাআসাআ জিজ্ঞাসা করেন আপিনি উত্তম না হজরত নূহ নবী? ইমাম (আ.) জবাবে বলেন আমি। কেননা যখন হজরত নূহ (আ.) তাঁর গোত্রতে দাওয়াত দেন কিন্ত তারা তার অনুসরণ করেনি উপরন্তু তার উপরে অনেক জুলুম ও অত্যাচার করে। হজরত নূহ (আ.) তাদেরকে অভিসম্পাত করেন এবং বলেনঃ হে খোদা! কোন কাফেরকে দুনিয়ার বুকে জিবীত রেখেন না। কিন্তু রাসুল (সা.) এর ওয়াফাতের সাথে সাথে তাঁর উম্মতেরা আমার উপরে অনেক অত্যাচার করেছে। কিন্তু আমি কখনও তাদেরকে অভিসম্পাত করিনি বরং ধৈর্য ধারণ করেছি। তিনি তার ধৈর্য সম্পর্কে তাঁর খুৎবা সেকসেকিয়াতে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে আমি এমন অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করেছি যে, আমার চোখে কাটা এবং আছে এবং গলাতে হাড় বিধে আছে। ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, যে ব্যাক্তি বীপদ ও কষ্টের সময়ে ধের্য ধারণ করবে সে খোদার নিকট তার ফযিলত ততই বেশী হবে। সাআসাআ আবার জিজ্ঞঅসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেছেনঃ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِـي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن قَالَ بَلَى وَلَـكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। (সূরা বাকারা, আয়াত নং ২৬০) কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে, যদি আমার চোখের সামনে থেকে পর্দাকে সরিয়ে নেয়া হয় তাহলেও আমার বিশ্বাসে কোন প্রভাব ফেলবে না। (ইরশাদুল কুলুব, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪) ইমাম বুঝাতে চেয়েছেন মানুষের ফযিলত তার বিশ্বসের সাথে বৃদ্ধি পায় এবং সবচেয়ে বড় বিশ্বাস হচ্ছে খোদার প্রতি বিশ্বাস। সাআসাআ আবার জিজ্ঞাসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত মূসা (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। এর দলিলে তিনি বলেনঃ হজরত মূসা (আ.) কে যখন খোদা ফেরাউনের কাছে দ্বীনের দাওয়ার দেয়ার জন্য প্রেরণ করেন তখন তিনি বলেনঃ قَالَ رَبِّ إِنِّي قَتَلْتُ مِنْهُمْ نَفْسًا فَأَخَافُ أَن يَقْتُلُونِ وَأَخِي هَارُونُ هُوَ أَفْصَحُ مِنِّي لِسَانًا فَأَرْسِلْهُ مَعِيَ رِدْءًا يُصَدِّقُنِي إِنِّي أَخَافُ أَن يُكَذِّبُونِ মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। (সূরা কেসাস, আয়াত নং ৩৩) আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে। (সূরা কেসাস, আয়াত নং ৩৪) কিন্তু যখন রাসুল (সা.) আমাকে সূরা বারাআতের প্রথম আয়াত প্রচারের জন্য মক্কায় কুরাইশের কাফেরদের মাঝে প্রেরণ করেন যেখানে এমন কোন গোত্রের লোক ছিল না যে আমার হাতে মারা যায়নি। কিন্তু আমি ভয় পাইনি এবং রাসুল (সা.)এর নির্দেশ কে পালন করেছি। ইমাম তার উক্ত কথার মাধ্যমে খোদার প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসাকে বুঝাতে চেয়েছেন যে, খোদার প্রতি যার তাওয়াক্কুল যত বেশী হবে তার ফযিলত ততই বেশী হবে। হজরত মূসা তার ভাইয়ের প্রতি ভরসা করেছিলেন কিন্তু আমি শুধুমাত্র খোদার উপরে ভরসা করেছিলাম। সাআসাআ আবার জিজ্ঞাসা করে আপনার ফযিলত বেশী না হজরত ঈসা (আ.) এর? তিনি বলেনঃ আমার। এর দলিলে তিনি বলেনঃ যখন হজরত জিব্রাইলি (আ.) খোদার নির্দেশে হজরত মারিয়াম (আ.) এর উপরে ফু দেয় তখন হজরত মারিয়াম (আ.) গর্ভবতি হয়ে পড়েন এবং যখন তার বাচ্চা প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসে তখন তাকে ওহী করা হয় যে তুমি বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে বাইরে চলে যাও কেননা উক্ত স্থানটি হচ্ছে ইবাদতের স্থান না বাচ্চা জন্মদানের স্থান। তাই তিনি বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে বাইরে চলে যান এবং একটি শুষ্ক স্থানে হজরত ঈসা (আ.) কে জন্মদান করেন। কিন্তু যখন আমার মা হজরত ফাতেমা বিনতে আসাদ যখন বুঝতে পারেন যে আমার জন্মের সময় ঘনিয়ে এসেছে তখন তিনি কাবার কাছে আসেন এবং দোয়া করেন যে, হে খোদা! আপনাকে এই পবিত্র কাবা ঘরের এবং যিনি এ কাবা ঘরকে তৈরী করেছেন তার ওয়াস্তা দিচ্ছি আমার প্রসব বেদনাকে আপনি সহজ করে দিন। তখন কাবা ঘরের দেয়াল ফেটে যায় এবং আমি কাবা ঘরে জন্মগ্রহণ করি। যেহেতু পবিত্র কাবা বাইতুল মোকাদ্দাসের উপরে প্রাধান্য রাখে সেহেতু হজরত আলী (আ.) হজরত ঈসা (আ.) এর তুলনায় ফযিলতের দিক থেকে উত্তম স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ইবনে আবিল হাদীদ, ইমাম হাম্বাল, ইমাম ফাখরে রাযী, শেইখ সুলাইমান বালখি হানাফী সহ অন্যান্যরাও ‍উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে রাসুল (সা.) বলেছেনঃ যদি কেউ হজরত আদম (আ.) এর জ্ঞানকে দেখতে চায় তাহলে সে যেন হজরত আলী (আ.) এর জ্ঞানের প্রতি লক্ষ্য রাখে, যদি কেউ হজরত নূহ (আ.) এর যিনি ছিলেন তাকওয়ার প্রতিমূর্তি ও হিকমত দেখতে চাই, যদি কেউ হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর খোদার বন্ধুত্ব এবং তাঁর হিলম কে দেখতে চায়, যদি কেউ হজরত মূসা (আ.)সম্ভ্রমকে দেখতে চায়, যদি কেউ হজরত ঈসা (আ.) এর ইবাদতকে দখেতে চায় তাহলে সে যেন হজরত আলী (আ.) এর প্রতি দৃষ্টিপাত করে। (আল মুসতারশেদ ফি ইমামাতিল আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), পৃষ্ঠা ২৮৭, হাদীস নং ১০১) অশেষে মীর সৈয়দ আলী হামেদানী শাফেয়ী উক্ত হাদীসের শেষে লিখেছেন যে, বিভিন্ন নবীর ৯০টি গুণ হজরত আলী (আ.) এর মধ্যে ছিল যা আর অন্য কারো মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। এছাড়াও বালখি হানাফী, গান্জি শাফেয়ী এবং আহমাদ ইবনে হাম্বাল সহ অন্যান্যরাও ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে যে সকল ফযিলত বর্ণনা করেছেন আর অন্য কোন সাহাবীর ক্ষেত্রে তা বর্ণনা করেননি। সুতরাং উক্ত বর্ণনার ভিত্তিতে বুঝতে পারি যে, হজরত আলী (আ.) এর মধ্যে বিভিন্ন নবীর গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

কাবার মনোবাসনা J.H শত নবীর আদর যত্নে লালিত পালিত আমি, আমার মর্যাদা জানে তারা আর জানে অন্তরজামি। লক্ষ মানুষের মনের আশা শুধু দেখবে বলে আমায়, সারা জিবন করে সঞ্চয় তারা দিবা নিশি কাটে এ আশায়। কেউবা আবার সফল হয় কেউ ভোগে নিরাশায়, আমার দেখা না পেলে ভাবে বুঝি জিবন গেল বৃথায়। শত আশা বাসনা রেখেছে পুষেছে তাদের মণি কোঠায়, আমি শুনি তাদের সব কথা কিন্তু কেউ শোনে না আমায়। শোন শোন হে দুনিয়া বাসি! শোন আমার কথা, তোমদের মতো আমারও রয়েছে কিছু না বলা কথা। আমার জন্ম হলো আদিম যুগে বয়স একটু বেশি আমার, সব প্রবিণতা দূর হয়ে যায় যখন আসে দিনটি ফিরে আবার। ১৩ই রজব হলো আমার নবিন হওয়ার দিন, আজকের শিশু কালকে আমায় করবে জানি স্বাধিন। ছিলাম যখন লাত উজ্জার মাঝে আমি নিরুপায়, আশার আলো জালায় তখন খোদার ওয়ালি রাসুলের ভাই। ভুলবো না তোমায় হে মহা মানব তুমি রেখেছ আমার মান, তোমার চিহ্ন আমার বুকে কখনও হবে না অম্লান। তুমি অম্লান তুমি চীরস্থায়ি তুমি খোদার অবদান, তাইতো আজও সারা দুনিয়া তোমার গাইছে গুণগাণ।

সত্যের সন্ধানে 😱মুসলমান দের ২য় খলিফা সমকামী😱 ইবনে সির্রিন কতৃক রেওয়ায়তঃ "হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব এরশাদ করেন,যে জাহিলিয়া যুগে আমার এক বদ অভ্যাস ছাড়া আমার কিছুই নেই, যদি সেটা কোন পুরুষ আমার সাথে করে(যৌন কর্ম) বা আমি কেউ কে করি(যৌন যোগাযোগ)।" أَخْبَرَنَا قَالَ : أَخْبَرَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْرَقُ ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الأَنْصَارِيُّ ، وَهَوْذَةُ بْنُ خَلِيفَةَ ، قَالُوا : أَخْبَرَنَا ابْنُ عَوْنٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ ، قَالَ : قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ : "ما بقى فىّ شىءٌ من أمر الجهليّة إلا أنى لستُ أُبالى إلى أيّ النّاس نَكَحْتُ وأيّهما أنكحْت" طبقات ابن سعد. خ(٣) ص.(٢٦٩) الناشر: مكتبة الخانجي سنة النشر: 1421 - 2001 রেফারেন্সঃ- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কতৃক অনুমোদিত কিতাব তাবাকাতে ইবনে সাদ খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ২৬৯

ইয়া আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ মাদাদে মাদাদে ইয়া পাক পাঞ্জাতন মাদাদে ইয়া 12 ইমাম 14 মাসুম আঃ মাদাদে আদম (আ.) সৃষ্টি হতে আজ পর্যন্ত প্রতিটি যুগে পৃথিবীর বুকে অসংখ্য মহামানবের আগমণ ঘটেছে। তাদের অনেকের কথা আমাদের মাঝে এখনও চর্চা হয় এবং আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি, আবার তাদের কারো কারো নাম ইতিহাসের উত্থান-পতনে নাম মুছে গেছে অথবা মুছে ফেলা হয়েছে। হযরত আলী (আ.)ও এমন একজন ব্যক্তিত্বের নাম, যার নাম শত্রুরা শত চেষ্টা করেও ইতিহাসের পাতা হতে মুছে ফেলতে পারেনি। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতেই তিনি ইসলামের প্রতিটি ঘটনার সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন এবং ইসলামকে তত্কালীন সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে যে অবদান তিনি রেখেছেন তা আজও মুসলমানরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর নবুয়্যতি মিশনের শুরু দিন হতে তাঁর জীবনের অন্তিম লঘ্ন পর্যন্ত হযরত আলী (আ.) তাঁর পাশে অবস্থান করেছেন। ছোটবেলা থেকেই নবী (স.) এর সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা হযরত আলী (আ.) শত প্রতিকূলতার মাঝেও কখনই মহানবী (স.) কে নিঃসঙ্গ ত্যাগ করেন নি। যার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে ওহুদের যুদ্ধ। যখন সাহাবীরা নিজের জীবনের মায়ায় আল্লাহর রাসূল (স.) কে ত্যাগ করে পলায়নে ব্যস্ত তখন ইসলামের অকুতোভয় এ সৈনিক ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন শত্রুদের উপর। আর আহত আল্লাহর রাসূল (স.) কে রক্ষা করছিলেন তাঁর (স.) দেয়া তলোয়ার চালিয়ে ও নিজের শরীরে আঘাতের পর আঘাত গ্রহণের মাধ্যমে। ওহুদের যুদ্ধের দিনে মহানবী (স.) এর উপর আস্থা হারানো সাহাবীরা পরবর্তীতে ইসলামের এ এ সেনাপতিকে –যিনি নুবয়্যতি জ্ঞান ও শিষ্টাচারের মাঝেই বেড়ে উঠেছেন- বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করতে থাকে। কিন্তু এ প্রবাদের ন্যায় –যাতে বলা হয়েছে যে, ‘আতর অনাস্ত কে খুদ বেবুয়াদ, না অনকে আত্তার বেগুয়াদ’ (সুগন্ধী আতর হচ্ছে সেটা যা নিজেই সুগন্ধ ছড়ায়, ঐটা নয় যার প্রশংসা বিক্রেতা করে)- ইমাম আলী (আ.) সুগন্ধী আতরের ন্যায় নিজেই সুবাশ ছড়িয়েছেন, চাই অন্য কেউ তার প্রশংসা করুক বা না করুক। ইসলামের শত্রুরা বিশেষতঃ বনি উমাইয়া চক্র ক্ষমতায় আসার পর হযরত আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর উপর গাল-মন্দ করার প্রচলন ঘটায়। এরপর হতে বনি উমাইয়া সরকারের অধিনে থাকা সকল মেম্বর হতে আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর উপর গালমন্দ করা হয়। যা দীর্ঘ কয়েক দশক যাবত অব্যাহত ছিল। এছাড়া হযরত আলী (আ.) এর শানে যে সকল হাদীস মহানবী (স.) হতে সাহাবীরা বর্ণনা করেছেন সেগুলোকে কখন মুছে দিয়ে, আবার কখনও বা জায়িফ (দূর্বল) বলে উল্লেখ করে তার মর্যাদাকে খর্ব করার অপচেষ্টাও চালানো হয়েছে (যার কিছু কিছু নমুনা বর্তমানেও পরিলক্ষিত)। কিন্তু যারাই এমন অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে তারাই হয়েছে অপদস্ত এবং হযরত আমির (আ.) এর সম্মান ও মর্যাদা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। ‘অন্যন্য সাহাবীদের উপর হযরত আলী (আ.) এর শ্রেষ্ঠত্ব’ শীর্ষক এ সিরিজে আমরা তাঁর (আ.) শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ইতিহাস হতে বিভিন্ন দলিল ও প্রমাণ উপস্থাপন করব। যেগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে আবনা পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হবে। হযরত আলী (আ.) এর বংশ পরিচয় প্রাচীণকাল হতেই বংশ মর্যাদার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। আর সর্বক্ষেত্রে এর বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে, বিশেষতঃ যখনই কোন বিবাহের কথা ওঠে তখন বংশ মর্যাদার বিষয়টিকে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মতই দৃষ্টিতে রাখা হয়। আর কোরআন ও হাদীসের পাশাপাশী বর্তমান যুগে সায়েন্সও এটা প্রমাণ করেছে যে, ভাল ও সুস্থ পিতা-মাতাই সমাজকে একটি ভাল ও সুস্থ সন্তান উপহার দিতে সক্ষম। তাই সবকিছুর আগে হযরত আলী (আ.)-এর বংশ পরিচয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক। বংশের দিক হতে রাসূল (স.) এর মত একই বংশ পরিচয়ের অধিকারী তিনি। কেননা তারা ছিলেন পরস্পরের চাচাতো ভাই। আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন তাদের পিতামহ। হযরত মহানবী (স.) ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ (আ.) এর একমাত্র সন্তান এবং হযরত আলী (আ.) ছিলেন হযরত আবু তালিবের কনিষ্ঠ সন্তান। ঐতিহাসিকগণ যেভাবে এ মহান দুই ব্যক্তিত্বের পূর্বপুরুষদের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন, ঠিক সেভাবেই আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হল: পর্যায়ক্রমিকভাবে তাঁদের পূর্বপুরষগণ হলেন- আবুতালিব, আব্দুল মোত্তালিব, হাশেম (এই নামের কারণেই আহলে বাইত (আ.) গণকে হাশেমী বলা হয়), আব্দে মানাফ, কুসাই, কালাব, মুর্‌রা, কায়া’ব, লুওয়াই, গালিব, ফাহ্‌র, মালিক, নাদ্‌র, কানানাহ, খুযাইমাহ, মুদরেকাহ, ইলইয়া’স, মুযার, নাযার, মায়াদ, আদনান। (কামেলে ইবনে আসির, ২য় খণ্ড, পৃ. ১ ও ২১) নিশ্চিতভাবে, তাঁদের পূর্ব পুরুষের তালিকা মায়াদ বিন আদনান পর্যন্ত এভাবেই সঠিক। কিন্তু আদনানের পূর্বপুরুষগণ হতে হযরত ইসমাঈল (আ.) পর্যন্ত, সংখ্যা এবং নামের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য রয়েছে। আর ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়েত অনুযায়ী যা তিনি হযরত মহানবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, যখনই তাঁর পূর্বপুরুষের তালিকা আদনান পর্যন্ত পৌঁছায় তখন তিনি আদনান হতে অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেন। কেননা যখন তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের নামের তালিকা বর্ণনা করেছেন, তখন আদনানের পর আর কারো নাম বলেন নি। আর তিনি নির্দেশ দিতেন যে, আদনান হতে ইসমাঈল (আঃ) পর্যন্ত তাঁর পূর্বপুরুষদের নাম গণনা না করার জন্য। তিনি আরো বলেছেন: আর এ সম্পর্কে যা কিছু আরবদের মধ্যে প্রসিদ্ধ, সেগুলো সঠিক নয় (সিরায়ে হালাবি, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬)। তাই আমরাও রাসূল (সঃ)-এর নির্দেশ মোতাবেক শুধুমাত্র আদনান পর্যন্ত গণনা করাকে যথেষ্ঠ মনে করবো। উপরোক্ত আলোচনার পর পাঠক মহোদয়ের নিকট এই বিষয়টি কি স্পষ্ট নয় যে, বংশ মর্যাদার দিক থেকেও অন্যান্য সাহাবীদের উপর আলী (আ.) এর শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে?! কারণ যদি অন্য কারো বংশ মর্যাদা আলীর চেয়ে উচ্চ হয় তবে তাঁর বংশ মর্যাদা মহানবী (স.)-এরও উপরে। আর আমরা এটা জানি যে, বংশের দিক থেকে মহানবী (স.) মর্যাদার সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থান করছেন। আর যেহেতু আলী (আ.) তাঁর আপন চাচাতো ভাই, তাই তিনিও এ দিক থেকে অন্যান্য সাহাবীদের ওপরে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। কাবা গৃহে জন্মগ্রহণ আলী (আঃ)-এর কাবাগৃহ অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণের বিষয়টিতে ওলামাদের মতৈক্য রয়েছে। (মুরুরুয যাহাব, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৮; তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃ. ১১; কাশফুল গাম্মাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৯; মানাকেবে ইবনে শাহরে আশুব, ২য় খণ্ড, পৃ.১৭৫; আ’লামুল ওয়ারা, পৃ. ১৫৩; শাবলাঞ্জি কর্তৃক রচিত নূরুল আবসার, পৃ. ৮৫; বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৭, হাদীস নং ১০; ফুসুলুল মুহিম্মাহ, পৃ. ১২) আর মতৈক্য রয়েছে এ বিষয়েরও উপর যে, একমাত্র আলী (আ.)-ই এমন মহান সৌভাগ্যের অধিকারী। কোন সাহাবী তো দূরের কথা কোন নবী, রাসূল ও আল্লাহর ওলীও এমন সৌভাগ্য লাভ করেন নি। কিন্তু ফাতেমা বিনতে আসাদের (হযরত আলী (আ.) এর মাতা) কা’বা গৃহে প্রবেশ ও সেথায় তাঁর জন্মগ্রহণের ঘটনাটির বর্ণনায় রাবী ও ঐতিহাসিকদের মাঝে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইবনে আব্বাস তার পিতা আব্বাস হতে যে রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন তাতে এটা স্পষ্ট হয় যে, কা’বা গৃহের দরজায় তালা লাগানো ছিল এবং ফাতেমা বিনতে আসাদ কর্তৃক দোয়া, পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ ও আসমানী কিতাবের উপর স্বীকৃতি দেয়ার পর, তাঁর পিতামহ হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর কথায়, আল্লাহকে কা’বা গৃহের, যে তাকে তৈরী করেছে তাঁর, এবং যে সন্তান তার গর্ভে বিদ্যমান ছিল তার কসম দেবার পর তার সন্তান প্রসব সহজতর করার জন্যে কা’বা গৃহের দেয়ালে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়। হযরত আব্বাস (রা.) বলেন: আমি দেখলাম যে, কা’বা গৃহের দেয়াল বিপরীত দিক থেকে ফেঁটে গেল এবং ফাতেমা তাতে প্রবেশ করল। অতঃপর দেয়াল পূনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। এরপর আমরা যতই চেষ্টা করলাম দরজা খোলার জন্যে -যাতে আমাদের কিছু মহিলারা ফাতেমার নিকট গিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারে- কিন্তু দরজা খুললো না। আর তখনই বুঝতে পারলাম যে, এটা স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ হতে। ফাতেমা তিনদিন কা’বা গৃহের মধ্যে অবস্থান করলো। চতুর্থ দিন আল্লাহর নির্দেশে দরজা খুলে গেল এবং যে স্থান দিয়ে ফাতেমা প্রবেশ করেছিলো ঠিক সে স্থান দিয়েই সে বেরিয়ে এল... (খারায়েজ ও জারায়েহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৭১; মানাক্বেবে ইবনে মাগাযেলী, পৃ. ৭; [সামান্য পার্থক্যে বর্ণিত হয়েছে] নাহজুল হাক্ব, পৃ. ২৩৩; [সামান্য পার্থক্যে বর্ণিত হয়েছে] এহকাকুল হাক্ব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫৬) ‘বাশারাতিল মুস্তাফা’ ইয়াযিদ ইবনে ক্বানআব হতে বর্ণনা করেছেন, “যখন ফাতেমার প্রসব বেদনা উঠল তখন তিনি কা’বায় প্রবেশ করলেন, অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন, এমতাবস্থায় তার হতে আলী (আ.) ছিলেন।” (বাশারাতুল মুস্তাফা, পৃ. ৮; বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৮ ও ৯) অন্য একটি রেওয়ায়েত হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত হয়েছে, “ফাতেমা জন্ম দিয়েছেন আলী (রা.) কে কা’বাগৃহে।” (বিহারুল আনওয়ার, ৩৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৬ ও ৩৭) ওয়ারযান্দি শাফেয়ী ‘নাযমুদ দুরার’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, “যখন ফাতেমার প্রসব বেদনা উঠলো তখন আবু তালিব (আঃ) এশার পর তাকে কা’বা গৃহে প্রবেশ করান অতঃপর আলী (আঃ) সেখানে জন্মলাভ করেন।” (নাযমু দুরারুস সামত্বীন, পৃ. ৮০) শুরুতেই উল্লেখ করেছি যে, কোন নবী-রাসূল (আ.)ও এমন সৌভাগ্যের অধিকারী হননি। তাই সাহাবাদের মধ্যে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণের জন্য জ্ঞানী ব্যক্তিদের সম্মুখে এমন শক্ত দলিল উপস্থাপনের পর আর কোন দলিলের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আর তার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এটাও যথেষ্ঠ যে, তিনি তার জীবনের প্রথম নিঃশ্বাসটি আল্লাহর ঘরেই ফেলেন। যা অন্যান্য সাহাবীদের ভাগ্যে জোটেনি। উল্লেখ্য, কিছু বছর পূর্ব পর্যন্ত সে ফাঁটলটি কা’বা গৃহের দরজার বিপরীত পার্শ্বে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই ফাঁটলটি আর পরিলক্ষিত হয় না। কেননা তদস্থল ইট দ্বারা গেঁথে দেয়া হয়েছে। আপনার যারা দেখতে ইচ্ছুক তারা যদি কখনো মক্কায় যাবার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তবে অবশ্যই দেখতে পাবেন যে, কা’বা গৃহের অন্যান্য স্থানের গাঁথুনি হতে সেই স্থানের গাঁথুনির যথেষ্ঠ অমিল রয়েছে। আর এটাই এর স্পষ্ট সাক্ষি যে, এই স্থানে পূর্বে কোন কিছু ছিল যা বর্তমানে মুছে ফেলা হয়েছে।# প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

কিবলা পরিবর্তন যেভাবে হল — মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসা বা আল আকসা মসজিদটি ফিলিস্তিনের পবিত্র নগরী বায়তুল মোকাদ্দাসে বা জেরুজালেমে অবস্থিত। এই মসজিদের কারনে বায়তুল মোকাদ্দাসকে সংক্ষেপে আল-কুদ্‌স শরীফও বলা হয় । ঐতিহাসিকভাবে আল-কুদ্‌সের মর্যাদা অপরিসীম । কারন এ জায়গাকে কেন্দ্র করে অনেক নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে । বায়তুল মোকাদ্দাস বিখ্যাত নবী হযরত দাউদ (আঃ) ও হযরত সোলাইমান (আঃ) এর রাজধানী ছিল । হযরত সোলাইমান (আঃ) কর্তৃক নির্মিত গম্বুজবিশিষ্ট সেই বিখ্যাত মসজিদ এখনও মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে আছে । এই মসজিদটি মুসলমানদের কাছে অন্য একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ । মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মিরাজ-এর সময় এই মসজিদে এসে সকল নবী-রাসূলকে নিয়ে নামায পড়েছিলেন এবং এখান থেকেই স্বর্গীয় বাহন বোরাকে চড়ে ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ শুরু করেছিলেন । শুধু তাই নয় , ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবী (সাঃ) সাহাবীদের নিয়ে বায়তুল মোকাদ্দাসকে কিবলা করে নামায আদায় করতেন । দীর্ঘ তের বছর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল জেরুজালেমের বায়তুল মোকাদ্দাস । এর কারণ ছিল তখনও পর্যন্ত মক্কার কাবা কাফেরদের দখলে ছিল । কাবার আঙিনায় ৩৬০টি মূর্তি বসানো ছিল । আল্লাহর ঘরকে তারা অনাচারে পরিপূর্ণ করে রেখেছিল । মদীনায় হিজরত করার পর মুসলমানরা ইহুদিদের সাথে একটি রাষ্ট্রে বাস করতে থাকে । ইহুদিরা মুসলমানদের এই বলে খোটা দিত যে , তোমরা তো আমাদের ধর্মকেই অনুসরণ করছ । কারন , জেরুজালেমকে কিবলা বানিয়ে নামায পড়ো তোমরা ! এ কথা জানতে পেরে মহানবী (সাঃ) খুব দুঃখ পেলেন । তিনি দুঃখ ভরা মন নিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলেন এবং মহান প্রভুর কাছ থেকে কোন সান্ত্বনার বাণী শোনার অপেক্ষায় থাকলেন । পবিত্র কাবা শরীফ — দ্বিতীয় হিজরিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সাঃ) এর মনের কষ্ট দূর করার সিদ্ধান্ত নিলেন । একদিন মহানবী (সাঃ) বনি সালিমের মসজিদে জোহরের নামায পড়ছিলেন । দুই রাকাত পড়ার পর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ) এর দুই হাত ধরে তাঁকে কা’বা শরীফের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন । তখন থেকেই কাবা মুসলমানদের কিবলায় পরিনত হল । এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ১৪৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন , “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি । অতএব , অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন । এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক , সেদিকে মুখ কর । যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা অবশ্যই জানে যে , (এ ধর্মগ্রন্থ) তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রেরিত সত্য । তারা যা করে তা আল্লাহর অজানা নেই ।” এই আয়াত থেকে বোঝা যায় , বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে মুখ ফেরানোতে আল্লাহরই ইচ্ছা কার্যকর ছিল এবং কোন বিশেষ দিককে তিনি প্রাধান্য না দিয়ে বলেছেন , সকল দিকই তাঁর দিক । কাজেই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিক থেকে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তনের মাঝে অবাক হওয়ার কিছু নেই । তাছাড়া কাবাকেই আল্লাহ’তাআলা মুসলমানদের জন্য চিরস্থায়ী কিবলা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন । বায়তুল মোকাদ্দাসের ব্যাপারটি ছিল সাময়িক । বন্ধুরা , মহান আল্লাহর এই সুস্পষ্ট ঘোষণার পর বাহানাবাজ ইহুদিরা এবার নতুন আপত্তি তুলে মুসলমানদেরকে বলল , যদি আগের কেবলা সঠিক হয় , তাহলে কোন কারণে তা বাতিল করা হল ? কেন এতকাল পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া হল ? তার জবাবে মহান আল্লাহ একই সূরার ১৪২ আয়াতে বলেন , “নির্বোধ লোকেরা বলবে যে , তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিল তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল ? বলো ! পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই । তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন ।” পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে , কেবলার অর্থ এই নয় যে , আল্লাহ স্থান বা কোন অঞ্চল নিয়ে আছেন বা আল্লাহ পশ্চিম দিকে আছেন বা পূর্ব দিকে আছেন । প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পূর্ব-পশ্চিম সব দিকেই আছেন এবং সবই তার মালিকানাধীন । আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন স্থানেরই বিশেষ কোন মর্যাদা নেই । আল্লাহর নির্দেশেই আমরা কোন বিশেষ স্থানকে সম্মান করি । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল , আল্লাহর নির্দেশের অনুগত হওয়া । আল্লাহ যেদিকেই মুখ ফেরানোর নির্দেশ দেন , সেদিকেই আমাদের মুখ ফেরানো উচিত-তা কাবাই হোক বা বায়তুল মোকাদ্দাস হোক । তারাই আল্লাহর সহজ ও সঠিক পথে পরিচালিত হবে , যারা আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করবে । কিবলা পরিবর্তন হলেও বায়তুল মোকাদ্দাসের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে এতটুকু কমে যায়নি । মক্কা, মদীনার পরেই আল-কুদস মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থান । পবিত্র এই মসজিদটি ইহুদিবাদি ইসরাইল দখল করে রেখেছে । ১৯৬৯ সালে তারা একবার আল আকসা মসজিদে অগ্নিসংযোগও করেছিল । শুধু আল-আকসা মসজিদই নয় , মানবতার দুশমন ইসরাইল ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে রেখেছে । এছাড়া , ইসরাইলি সেনারা মাঝেমধ্যেই ফিলিস্তিনে হামলা চালাচ্ছে । ইসরাইলি হামলার কারণে ফিলিস্তিনি শিশুরা প্রতিনিয়ত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে বেড়ে উঠছে প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

বিদায়-বেলায় - কাজী নজরুল ইসলাম---ছায়ানট তুমি অমন ক’রে গো বারে বারে জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না, জল-ছল-ছল চোখে চেয়ো না। ঐ কাতর কন্ঠে থেকে থেকে শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না, শুধু বিদায়ের গান গেয়ো না।। হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। ঐ ব্যথাতুর আঁখি কাঁদো-কাঁদো মুখ দেখি আর শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না। চলার তোমার বাকী পথটুকু- পথিক! ওগো সুদূর পথের পথিক- হায়, অমন ক’রে ও অকর”ণ গীতে আঁখির সলিলে ছেয়ো না, ওগো আঁখির সলিলে ছেয়ো না।। দূরের পথিক! তুমি ভাব বুঝি তব ব্যথা কেউ বোঝে না, তোমার ব্যথার তুমিই দরদী একাকী, পথে ফেরে যারা পথ-হারা, কোন গৃহবাসী তারে খোঁজে না, বুকে ক্ষত হ’য়ে জাগে আজো সেই ব্যথা-লেখা কি? দূর বাউলের গানে ব্যথা হানে বুঝি শুধু ধূ-ধূ মাঠে পথিকে? এ যে মিছে অভিমান পরবাসী! দেখে ঘর-বাসীদের ক্ষতিকে! তবে জান কি তোমার বিদায়- কথায় কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায় আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছে কোথায়- পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক! কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না, ওগো যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।। প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

মহান আল্লাহ কতৃক মনোনীত পবিত্র এগার জন ইমাম (আঃ) গন নিম্নলিখিত খলীফা বাহাদুরগনের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে শাহাদত বরন করেন — ১ ) – ২১শে রমজান ৪০ হিজরী , ৩১ শে জানুয়ারী ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম ইমাম হযরত আলী (আঃ) কুফার মসজিদে সেজদারত অবস্থায় ইবনে মুলজিম কতৃক বিষাক্ত তলোয়ারের আঘাতে শাহাদত বরণ করেন । ২ ) – ২৮ শে সফর ৫০ হিজরী , ২৯ শে মার্চ ৬৭০ খ্রীষ্টাব্দে আবু সুফিয়ানের জারজ পুত্র মুয়াবীয়ার প্রত্যক্ষ চক্রান্তে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসান (আঃ)। ৩ ) – ১০ ই মহররম ৬১ হিজরী , ১২ ই অক্টোবর ৬৮০ খ্রীষ্টাব্দে মুয়াবীয়ার জারজ পুত্র ঈয়াযীদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতায় তৃতীয় ইমাম হযরত হুসাইন (আঃ) কারবালার ময়দানে পরিবার পরিজনসহ শাহাদত বরণ করেন । ৪ ) – ২৫ শে মহররম , ৯৫ হিজরী , ২৪ শে জানুয়ারী ৭১৩ খ্রীষ্টাব্দে চতুর্থ ইমাম হযরত জয়নাল আবেদীন (আঃ) তৎকালীন উমাইয়া খলিফা আল উয়ালিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৫ ) – ৭ ই জ্বিলহাজ্ব ১১৪ হিজরী , ৩১ শে জানুয়ারী ৭৩৩ খ্রীষ্টাব্দে পঞ্চম ইমাম হযরত বাকের (আঃ) তৎকালীন উমাইয়া খলিফা হিসামের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৬ ) – ১৫ বা ২৫ শে সাওয়াল ১৪৮ হিজরী , ৭ ই ডিসেম্বর ৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদেক (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৭ ) – ২৫ শে রজব ১৮৩ হিজরী , ৪ ঠা সেপ্টেবর ৭৯৯ খ্রীষ্টাব্দে সপ্তম ইমাম মুসা কাজেম (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা হারুন আর রশীদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন । ৮ ) – ১৭ সফর বা ২৩ শে জ্বিলকদ ২০৩ হিজরী , ২৬ শে মে ৮১৯ খ্রীষ্টাব্দে অষ্টম ইমাম হযরত আলী রেজা (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা মামুনের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ৯. ) – শেষ জ্বিলকদ ২২০ হিজরী, ২৮ শে নভেম্বর ৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দে নবম ইমাম হযরত আলী তাক্বী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিমের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১০ ) – ৩রা রজব ২৫৪ হিজরী , ১লা জুলাই ৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে দশম ইমাম হযরত আলী নাক্বী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মুতামিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১১ ) – ৮ই রবিউল আউয়াল ২৬০ হিজরী , ৪ঠা জানুয়ারী ৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে একাদশ ইমাম হযরত হাছান আসকারী (আঃ) তৎকালীন আব্বাসীয় খলিফা আল মুতাজিদের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করেন। ১২ ) – বর্তমান যামানার সর্বশেষ ও দ্বাদশ ইমাম হযরত মেহেদী (আঃ) কে মহান আল্লাহ নিজস্ব কুদরতে রক্ষা করেছেন এবং আল্লাহর হুকুমে যথা সময় তিনি আগমন করিবেন , ইনশা আল্লাহ । সম্মানীয় পাঠক , মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গনের পবিত্র ১১ জন ইমামগনকে ধারাবাহিকভাবে এভাবেই পর্যায়ক্রমে অবৈধভাবে হত্যা করা হয় । ইতিহাসের নিষ্ঠুর নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো বছরের পর বছর ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে । সত্য বেশীদিন চাপা থাকে না । আসুন নিরপেক্ষ মন নিয়ে লুকিয়ে ফেলা ইতিহাস জানার চেষ্টা করি ।

মাথা বিছিন্নকরনের রীতি — বর্বর অসভ্য আরব দেশে সে যুগে একটা রীতি চালু ছিল । এক গোত্র আরেক গোত্রের কাউকে হত্যার পর , লাশের মাথা শরীর থেকে কেটে নিত । এর পর ওই মাথা সারা শহরে প্রদক্ষিন করা হত । এই অসভ্য বর্বর প্রথাটা সম্পূর্ন ইসলামি রীতি বিরোধী । প্রশ্ন – ঐ যুগের এই ভয়ংকর রীতি পুনরায় কে চালু করে জানেন ? জবাব – জনাব মুয়াবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ান । সিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবীয়া বাহিনীর হাতে শহীদ হন সাহাবি আম্মাার বিন ইয়াসির (রাঃ)। তাঁর মস্তক কেটে নিয়ে , ঐ মস্তক মুবারক হাজির করা হয় মুয়াবীয়ার কাছে । সুন্নি তথ্য সুত্র – ১) – মুসনাদে হাম্বাল , হাদিস নং – ৬৫৩৮ এবং ৬৯২৯ [মিশর মুদ্রন] ২) – সাদের তাবাকাত , ভো – ৩ , পেইজ – ২৫৩ । একই পন্থা অনুসরন করেছিল মূয়াবীয়ার জারজ কুলাঙ্গার সন্তান ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া । কারবালা প্রান্তর থেকে ৭২ জন শহীদগনের কর্তিত পবিত্র মস্তক বর্শার মাথায় করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এই নরপিশাচ ঈয়াযীদের দরবারে । প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

খলনায়কগনের সংক্ষিপ্ত সফল খতিয়ান – বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে হজ্ব ফেরত লক্ষাধিক হাজী সাহাবাগনের সম্মুখে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার ঘোষনা মোতাবেক রাসুল (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত ইমাম ও খলীফা নিযুক্ত হলেন ইমাম আলী (আঃ) । প্রকাশ্য এই ঘোষনায় মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ল খলনায়কগনের । যে আশা নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর দলে লোক দেখান ইসলাম ধর্ম কবুল করে যোগ দিয়েছিল এই ভেবে যে , রাসুল (সাঃ) চোখ বুজলেই তাঁর শূন্য আসনে টুপ করে বসে পড়বে ! কিন্ত এ কি হল ! শূন্য আসনে বসবে ইমাম আলী (আঃ) ! এত দিনের স্বপ্ন আশা সবই যে জলে গেল । কিছুতেই তা হতে দেয়া যায় না । শুরু হল ভয়ংকর ষড়যন্ত্র এবং নিঁখুত পরিকল্পনা । ষড়যন্ত্রকারীদের দলে দুষ্ট লোকের অভাব হল না । প্রথম পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুলে (সাঃ) এর পরিস্কার নির্দেশ সত্বেও ওসামার নেতৃত্বে যুদ্বে না যেয়ে মদীনার উপকণ্ঠে পালিয়ে থাকল – কখন রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের সংবাদ পাওয়া যায় । দ্বিতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুল (সাঃ) এর পরিস্কার আদেশ সত্বেও খাতা কলম না দিয়ে অসিয়ত নামা কিছুতেই লিখতে দেওয়া হল না । তৃতীয় পদক্ষেপ শতভাগ সফল – বিষ মিশ্রিত ঔষধ এক প্রকার জোর করেই রাসুল (সাঃ) কে খাইয়ে দেয়া হল । চতুর্থ পদক্ষেপ শতভাগ সফল – রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকাল সংবাদ জানার পরেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও রাসুল (সাঃ) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ না করে বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা চুড়ান্ত করন । ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত ফলাফল – আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) যাঁদের নির্বাচিত করেছিলেন তাঁদেরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ক্ষমতার মসনদে বসে গেল । খলনায়কগনের টোটাল পরিকল্পনা ১০০ ভাগ সফল । চুড়ান্ত পরিনতি – রাসুল (সাঃ) রেখে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম সম্পূর্ন ভাবে অবহেলিত ও নির্বাসিত । প্রায় ১৫০০ বছর যাবত খলনায়কগনের প্রচারিত ও বাজারজাত কৃত ফরমালিন যুক্ত বিকৃত কুৎসিত জঘন্য ইসলামকে দুনিয়ার সকলেই প্রকৃত ইসলাম বলে মনে করে । দরবারী মোল্লা , ভাড়াটে হাদিস লেখক , ভাড়াটে মুফতিগণ হয়ে গেল ইসলামের সোল এজেন্ট । অজ্ঞ , জাহেল , মুনাফিক ভন্ড ব্যক্তিবর্গ হয়ে গেল কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যাকারী ! জান্নাতের টিকিট বিক্রী শুরু হল । এই ভন্ড ও বিকৃত ইসলাম থেকে জন্ম নেয় অসংখ্য নাস্তিক , অসংখ্য শিক্ষিত ব্লগার , অসংখ্য তালেবান , আই এস আই এস ও উগ্র জংগী সংগঠন । পক্ষান্তরে – প্রকৃত মহানায়কগন শুরু থেকেই অবহেলিত , উপেক্ষিত ও নির্বাসিত । সর্ব নিকৃষ্ট খলনায়কগনের ভয়ংকর অট্টহাসিতে পুরো মুসলিম উম্মাাহ আজ সর্ব নিকৃষ্ট ও জংলী ও অসভ্য জাতি হিসাবে পরিচিত । বেঈমান , মুনাফিক , ছিনতাইকারী , লুটেরা , খুনী , লুচ্চা , বদমাশ , ধর্ষনকারী ব্যক্তিগন যে জাতির নেতা হয় সে জাতির এমন পরিনতি হবেই হবে । শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

— মাজার চুম্বন ও শিরক ——- একজন মুসলমান আলেম বললেন , মদীনায় মসজিদে নব্বীর পাশে দাড়িয়েছিলাম । হঠাৎ সেখানে শীয়া মাযহাবের এক লোক এসে নবীজীর (সাঃ) মাজারের বিভিন্ন স্থানে চুম্বন দিতে শুরু করল । মসজিদের ইমাম সাহেব তা দেখে প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন , ” ওহে মুসাফির , কেন তুমি এই বিবেক বুদ্বিহীন মাজারের দেয়ালকে চুমু দিচ্ছ ? এর মাধ্যমে তুমি তো শিরক করছ ” । ইমাম সাহেবের ক্রুদ্ব চেহারা দেখে বেচারা শীয়া লোকটি ভারাক্রান্ত অন্তরে দ্রুত চলে গেল । মুসলিম আলেম তখন মসজিদের ইমাম সাহেবকে বলল , ” এই দেয়ালে চুম্বন দেয়ার অর্থ হচ্ছে নবীজীর (সাঃ) প্রতি ভালবাসা । ঠক যেমন পিতা তার সন্তানকে চুম্বনের মাধ্যমে ভালবসা প্রকাশ করে । এখানে সে তো কোন শিরক করে নি ” । ইমাম সাহেব বললেন , ” না , এটাকেও শিরক বলে ” । মুসলমান আলেম বললেন , ” ও তাই নাকি , তাহলে সুরা ইউসুফের ৯৬ নং আয়াতে ইয়াকুব (আঃ) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আঃ) এর পরনের জামাটি তাঁর চোখে পরম স্নেহ মমতায় বুলালেন এবং তাঁর চোখের দৃষ্টি পুনরায় ফিরে এল । এখন আমার প্রশ্ন হল , ঐ জামাটি তো কাপড়ের তৈরী ছিল । তাহলে কিভাবে ঐ জামাটি ইয়াকুব (আঃ) এর চোখের উপর রাখাতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল ? এমনটিই নয় কি যে , কাপড়ের তৈরী জামাটি হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের ছোয়া পেয়ে ঐরকম বিশেষত্ব পেয়েছিল । এ ছাড়াও সুরা ইউসুফের ৯৪ নং অায়াত অনুসারে হযরত ইয়াকুব (আঃ) বহুদূর থেকে ওনার পু্ত্র হযরত ইউসুফের (আঃ) শরীরের সুঘ্রান অনুভব করেছিলেন । এসবই তো হচ্ছে ভালবাসা ও ভক্তির আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ । আমি বা আপনি কাবা গৃহের পবি্ত্র কাল পাথরটিকে তো অজস্র চুমু দিয়ে থাকি । তো এখানে আপনি শিরকের কি দেখলেন ? আমার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ” । ইমাম সাহেব বেশ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে কাজের বাহানা দিয়ে যৌক্তিক কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেলেন । উপরের ঘটনায় এটা বলা যায় যে , নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগন এক ধরনের বিশেষ আধ্যাতিকতায় পারদর্শী । আর তাঁদের এই বিশেষ আধ্যাতিকতা থেকে উপকৃত হওয়াতে কোন শিরক নেই । বরং তা হচ্ছে প্রকৃত তাওহীদেরই অনুরুপ । কেননা তাঁরাও এই বিশেষত্বকে তাওহীদের নূর থেকেই গ্রহন করেছেন । আমরা আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের মাজারর পাশে বসে তাঁদের সাথে আন্তরীক সম্পর্ক সৃষ্টি করি । যেহেতু আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই সেহেতু তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি । পবিত্র কোরআনে সুরা ইউসুফের ৯৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে , “– হে পিতা , আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন , কেননা আমরা ভুল করেছিলাম — “। সুতরাং আম্বীয়াগন , পবিত্র ইমামগন ও অলি আউলিয়াগনের তাওয়াছছুল করা বা তাদের উছিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে কিছু চাওয়াটা সম্পূর্ন জায়েজ বা বৈধ । আর যারা এটাকে তাওহীদ থেকে আলাদা মনে করে থাকেন , তারা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত নয় । অথবা অযথা হিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের অন্তর চক্ষুতে পর্দা পড়ে গেছে । সুরা মায়েদার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে , “– যারা ঈমান এনেছো , পরহেজগার থেকো এবং আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য মাধ্যমের অন্বেষন কর —“। ” মাধ্যম ” এই আয়াতের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র ওয়াজীব কাজের আজ্ঞাম দেয়া এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই নয় । বরং মুস্তাহাব বিষয় যেমন আম্বীয়া , পবিত্র ইমামগন , প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের প্রতি তাওয়াছছুল করাকেও মাধ্যম বলা হয়েছে । সুরা নিসার ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে , “– আর যখন বিরোধিতাকারীরা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছিল এবং তোমার কাছে এসে তোমার মাধ্যমে খোদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল । আর নবী তাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চেয়েছিলেন তখন তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহনকারী ও মেহেরবান হিসাবে উপলব্দি করেছিল — “। এ প্রসংগে একটি কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের আদি পিতা-মাতা হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) আমাদের শেষ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বায়েতগনের (আঃ) নামের উছিলায় আল্লাহর রহমত অর্জন করেছিলেন । আহলে সুন্নাতের দুটি ঘটনা দিয়ে শেষ করছি । এক ব্যক্তি নবীজীর (সাঃ) কাছে এসে বললেন যে , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আমি কোন এক ব্যাপারে কসম করেছিলাম যে , যদি সফল হই তবে বেহেশতের দরজায় চুম্বন করব । এখন এ পর্যায় কি করব ” ? নবী (সাঃ) বললেন , ” মায়ের পায়ে ও পিতার কপালে চুম্বন কর “। লোকটি বলল , ” পিতা মাতা যদি ইন্তেকাল করে তখন কি করব ” ? নবী (সাঃ) বললেন , ” তাদের কবরে চুম্বন করলেই হবে ” । সূত্র – আল আলামু – কুতুবুদ্দিন হানাফি , পৃ- ২৪ । সুন্নি মাযহাবের বিশিষ্ট সাধক সাফিয়ান ছাওরী ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) কে বললেন , ” কেন মানুষ কাবা গৃহের পর্দাকে আঁকড়ে ধরে ও চুম্বন করে ? ওটাতো একটা পুরান কাপড় ছাড়া আর কিছুই না ” ! ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বললেন , ” এই কাজটি এমন যে , এক ব্যক্তি অন্যের অধিকার নষ্ট করেছে । পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির হাত ধরে ক্ষমা চাইছে এবং তার চারিপার্শে ঘুরছে এই আশায় যে , ঐ ব্যক্তি যেন তার কৃতকর্মকে ক্ষমা করে দেয় ” । আনোয়ারুল বাহিয়াহ , ইমাম সাদিক (আঃ) জীবনী । সম্মানীয় পাঠক , লেখাটি পড়ে এখন থেকে আর কখনই আমার মত অর্ধশিক্ষিত গন্ড মূর্খ কাঠ মোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হবেন না , দয়া করে । পরিপূর্ন নিশ্চিন্ত মনে নবী রাসুলগন , পবিত্র ইমামগন ও প্রকৃত অলি আউলিয়াগনের পবিত্র মাজার শরীফ জিয়ারত করুন ও তাঁদের উছিলায় বা মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্ত দুঃখ বেদণা , পাপের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান । — ইসলামী চিন্তাধারার উপর একশ একটি মুনাযিরা , ইমাম আলী (আঃ) ফাউন্ডেশন , পৃষ্ঠা – ১৬০ ছায়া অবলম্বনে প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

পাপ - কাজী নজরুল ইসলাম---সাম্যবাদী সাম্যের গান গাই!- যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই। এ পাপ-মুলুকে পাপ করেনি করেনিক’ কে আছে পুরুষ-নারী? আমরা ত ছার; পাপে পঙ্কিল পাপীদের কাণ্ডারী! তেত্রিশ কোটি দেবতার পাপে স্বর্গ সে টলমল, দেবতার পাপ-পথ দিয়া পশে স্বর্গে অসুর দল! আদম হইতে শুরু ক’রে এই নজরুল তক্‌ সবে কম-বেশী ক’রে পাপের ছুরিতে পুণ্য করেছে জবেহ্‌ ! বিশ্ব পাপস্থান অর্ধেক এর ভগবান, আর অর্ধেক শয়তান্‌! থর্মান্ধরা শোনো, অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজেদের পাপ গোনো! পাপের পঙ্কে পুণ্য-পদ্ম, ফুলে ফুলে হেথা পাপ! সুন্দর এই ধরা-ভরা শুধু বঞ্চনা অভিশাপ। এদের এড়াতে না পারিয়া যত অবতার আদি কেহ পুণ্যে দিলেন আত্মা ও প্রাণ, পাপেরে দিলেন দেহ। বন্ধু, কহিনি মিছে, ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব হ’তে ধ’রে ক্রমে নেমে এস নীচে- মানুষের কথা ছেড়ে দাও, যত ধ্যানী মুনি ঋষি যোগী আত্মা তাঁদের ত্যাগী তপস্বী, দেহ তাঁহাদের ভোগী! এ-দুনিয়া পাপশালা, ধর্ম-গাধার পৃষ্ঠে এখানে শূণ্য-ছালা! হেথা সবে সম পাপী, আপন পাপের বাট্‌খারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি! জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও, টুপি প’রে টিকি রেখে সদা বল যেন তুমি পাপী নও। পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং, ট্রেডমার্কার ধুম? পুলিশী পোশাক পরিয়া হ’য়েছ পাপের আসামী গুম। বন্ধু, একটা মজার গল্প শোনো, একদা অপাপ ফেরেশতা সব স্বর্গ-সভায় কোনো এই আলোচনা করিতে আছিল বিধির নিয়মে দুষি,’ দিন রাত নাই এত পূজা করি, এত ক’রে তাঁরে তুষি, তবু তিনি যেন খুশি নন্‌-তাঁর যত স্নেহ দয়া ঝরে পাপ-আসক্ত কাদা ও মাটির মানুষ জাতির’ পরে! শুনিলেন সব অন্তর্যামী, হাসিয়া সবারে ক’ন,- মলিন ধুলার সন-ান ওরা বড় দুর্বল মন, ফুলে ফুলে সেথা ভুলের বেদনা-নয়নে , অধরে শাপ, চন্দনে সেথা কামনার জ্বালা, চাঁদে চুম্বন-তাপ! সেথা কামিনীর নয়নে কাজল, শ্রেনীতে চন্দ্রহার, চরণে লাক্ষা, ঠোটে তাম্বুল, দেখে ম’রে আছে মার! প্রহরী সেখানে চোখা চোখ নিয়ে সুন্দর শয়তান, বুকে বুকে সেথা বাঁকা ফুল-ধনু, চোখে চোখে ফুল-বাণ। দেবদুত সব বলে, ‘প্রভু, মোরা দেখিব কেমন ধরা, কেমনে সেখানে ফুল ফোটে যার শিয়রে মৃত্যু-জরা!’ কহিলেন বিভু-‘তোমাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ যে দুইজন যাক্‌ পৃথিবীতে, দেখুক কি ঘোর ধরণীর প্রলোভন!’ ‘হারুত’ ‘মারুত’ ফেরেশতাদের গৌরব রবি-শশী ধরার ধুলার অংশী হইল মানবের গৃহে পশি’। কায়ায় কায়ায় মায়া বুলে হেথা ছায়ায় ছায়ায় ফাঁদ, কমল-দীঘিতে সাতশ’ হয়েছে এই আকাশের চাঁদ! শব্দ গন্ধ বর্ণ হেথায় পেতেছে অরূপ-ফাঁসী, ঘাটে ঘাটে হেথা ঘট-ভরা হাসি, মাঠে মাঠে কাঁদে বাঁশী! দুদিনে আতশী ফেরেশতা প্রাণ- ভিজিল মাটির রসে, শফরী-চোখের চটুল চাতুরী বুকে দাগ কেটে বসে। ঘাঘরী ঝলকি’ গাগরী ছলকি’ নাগরী ‘জোহরা’ যায়- স্বর্গের দূত মজিল সে-রূপে, বিকাইল রাঙা পা’য়! অধর-আনার-রসে ডুবে গেল দোজখের নার-ভীতি, মাটির সোরাহী মস-ানা হ’ল আঙ্গুরী খুনে তিতি’! কোথা ভেসে গেল-সংযম-বাঁধ, বারণের বেড়া টুটে, প্রাণ ভ’রে পিয়ে মাটির মদিরা ওষ্ঠ-পুষ্প-পুটে। বেহেশ্‌তে সব ফেরেশ্‌তাদের বিধাতা কহেন হাসি’- ‘ হার”ত মার”তে কি ক’রেছে দেখ ধরণী সর্বনাশী!’ নয়না এখানে যাদু জানে সখা এক আঁখি-ইশারায় লক্ষ যুগের মহা-তপস্যা কোথায় উবিয়া যায়। সুন্দরী বসুমতী চিরযৌবনা, দেবতা ইহার শিব নয়-কাম রতি প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে স্তনদান —- এই সব ইতরামী বন্ধ হবে কবে ? পৃথিবীতে প্রতিটি শিশুই তার মায়ের দুধ পান করবে — এটাই যৌক্তিক ও স্বাভাবিক । কেননা মায়ের এই একফোঁটা দুধের মাধ্যমে শিশুটি বেঁচে থাকে । পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ আছে যে , শিশু তার মায়ের দুধ পান করবে । ” — মায়েরা তাদের সন্তানদের দুধ পান করাবে পুরো দুই বছরের জন্য –” । সুরা – বাকারাহ / ২৩৩ । শিশুর অধিকার তার মায়ের দুধ পান করবে – এটা জগতের নাস্তিক আস্তিক নির্বিশেষে সকলেই মানে । পাঠক , এবারে আপনাদেরকে এমন একটা বিষয় দেখাব যে , আমি নিশ্চি ত যে , আপনারা স্তম্ভিত হয়ে যাবেন এবং অবশ্যই বলবেন যে , এত বিশাল জঘন্য ইতরামী কিভাবে সম্ভব ! তাও আবার ইসলাম ধর্মে এবং সহীহ সিত্তাহ হাদিস গ্রন্থের নামে বাজারজাতকরন হয়েছে । এখানে লিখতেও রুচীতে বাধছে । কিন্ত কি করব ! সকলের জানা উচিত যে , কিভাবে মহান ধর্ম ইসলামকে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) কে এবং উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশাকে পৃথিবীর সকলের সামনে কতটা নীচ ও হীন করে উপস্থাপিত কর হয়েছে । যথাসম্ভব শালীনতা বজায় রেখে বলছি যে , বলতে কি পারবেন — একজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আরেকজন অপরিচিতা প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার স্তনে নিজের মুখ লাগিয়ে শিশুদের মত চুষতে পারে ! এই জাতীয় জঘন্যতম অশ্লীল বিধান জগতের কোন ধর্মেই এমনকি মানব সভ্যতায় কখনই অনুমোদন দেয় না । একমাত্র অশ্লীল চলচ্চিত্র বা ব্লু ফ্লিমের কথা ভিন্ন । এই জাতীয় অশ্লীল কার্যাবলী ধর্ম বর্ন জাতি নির্বিশেষে সকলেই একবাক্যে অশ্লীল ও মহাপাপ বলে থাকে । এ প্রসংগে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি মনে করিয়ে দিয়ে মূল প্রসংগে আসছি । ” — মুমিন নারীদের বল তাদের দৃষ্টি নীচু করতে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহ রক্ষা করতে এবং তাদের আকর্ষনগুলো প্রদর্শন না করতে , শুধু তাছাড়া যা প্রকাশ্য এবং তারা তাদের মাথার চাদর বুক পর্যন্ত টেনে দিক এবং তাদের আকর্ষনগুলো যেন প্রদর্শন না করে শুধু তাদের স্বামীদের সামনে ছাড়া —– ” । সুরা – নূর / ৩১ । পবিত্র কোরআন সহ পৃথিবীর যে কোন ধর্ম গ্রন্থেই একজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আরেকজন অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার স্তনে নিজের মুখ লাগিয়ে শিশুদের মত চুষতে পারে – এরকম জঘন্য নোংরা অশ্লীল অবাধ যৌনাচারের কথা কোথাও বলা নেই । অশ্লীলতা ও চরম বেহায়াপনা নিজের চোখেই দেখুন — উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা থেকে বর্নিত – হযরত আয়েশা হাদীস বর্ণনা করছেন যে , সাহলাহ বিনতে সোহায়েল (আবী হোযায়ফার স্ত্রী) একদা রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বলছেন যে , ইয়া রাসুল আল্লাহ ! আমি আবী হোযায়ফার মুখ দেখছি । কিন্তু ওনার বন্ধুও ওনার সাথে এসেছেন । আমি লজ্জা করছি । (কারন ঐ বন্ধুটি অপরিচিত নামাহারাম) তখন রাসুল (সাঃ) বললেন যে , তাকে নিজের স্তন থেকে দুধ পান করাও তাহলে সে তোমার জন্য মাহরাম (পরিচিত রক্তজ আত্মীয়) হয়ে যাবে । সাহলাহ অবাক হয়ে বলল যে , ইয়া রাসুল আল্লাহ ! আমি তাকে কি ভাবে দুধ পান করাব ! সে তো আমার থেকে বয়সে অনেক বড় ! (অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক নামাহরাম পুরুষ) রাসুল (সাঃ) মৃদু হেসে বললেন যে , আমি জানি যে , সে তোমার থেকে বয়সে অনেক বড় । (নাউযুবিল্লাহ) সূত্র – সহীহ আল মুসলিম শরিফ , হাদীস নং – ১৪৫৩ , রেজা’আতুল কাবীর অধ্যায় / সোনানে ইবনে মাজা , হাদীস নং – ১৯৪৩ , ১৯৪৪ , রেজা’আতুল কাবীর অধ্যায় । 26 – (1453) حَدَّثَنَا عَمْرٌو النَّاقِدُ، وَابْنُ أَبِي عُمَرَ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: جَاءَتْ سَهْلَةُ بِنْتُ سُهَيْلٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَرَى فِي وَجْهِ أَبِي حُذَيْفَةَ مِنْ دُخُولِ سَالِمٍ وَهُوَ حَلِيفُهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْضِعِيهِ»، قَالَتْ: وَكَيْفَ أُرْضِعُهُ؟ وَهُوَ رَجُلٌ كَبِيرٌ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «قَدْ عَلِمْتُ أَنَّهُ رَجُلٌ كَبِيرٌ»، زَادَ عَمْرٌو فِي حَدِيثِهِ: وَكَانَ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا، وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ أَبِي عُمَرَ: فَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صحيح مسلم ج2 ص1076 المؤلف: مسلم بن الحجاج أبو الحسن القشيري النيسابوري (المتوفى: 261هـ)، المحقق: محمد فؤاد عبد الباقي، الناشر: دار إحياء التراث العربي – بيروت، عدد الأجزاء:5 سنن ابن ماجه ج 1 ص625 المؤلف: ابن ماجة أبو عبد الله محمد بن يزيد القزويني، وماجة اسم أبيه يزيد (المتوفى: 273هـ)، تحقيق: محمد فؤاد عبد الباقي، الناشر: دار إحياء الكتب العربية – فيصل عيسى البابي الحلبي،عدد الأجزاء: 2 প্রিয় পাঠক , ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন যে , কত বড় জঘন্য কুৎসিত নোংরা হাদিস লিপিবব্দ করা হয়েছে । স্বামীর অপরিচিত একজন বন্ধুকে স্ত্রী তার নিজের স্তন পান করালে স্বামীর অপরিচিত বন্ধুটি ঐ মহিলার মাহরাম অর্থাৎ রক্তজ আত্মীয় সমপর্যায় হয়ে যাবে ! আসলেই সহীহ সিত্তাহ হাদিসের অর্ন্তভুক্ত এই জাতীয় অশ্লীল হাদিসের বিষয় মন্তব্য করতেও রুচীতে বাঁধে ! শেষ পর্যন্ত আল্লাহকেও জাহান্নামী বানিয়ে দিল ! অবশ্য বনু সকীফার ইসলামে সবই সম্ভব ! সহীহ আল বুখারীতে স্থান পাওয়া সহীহ হাদিস এই ক্ষেত্রেই আল্লাহকে কে চরমতম বিতর্কিত ও হীন করে দেয় । অন্যান্য ধর্মালম্বী ব্যক্তিগন এই জাতীয় হাদিসগুলোকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে আল্লাহকে নিয়ে বড়ই ঠাট্টা উপহাস করে থাকেন । তখন আমাদের ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে থাকতে হয় । খুব জানতে ইচ্ছে করে তখন — সর্বশ্রেষ্ঠ মহামনাব হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) সম্বন্ধে সহীহ , বিশুদ্ব ও নির্ভেজাল কিতাবে এই জাতীয় জঘন্য নোংরা কুরুচীপূর্ন হাদিস সমূহ কিভাবে স্থান পায় ? মহানবী (সাঃ) এর শানে এই জাতীয় বেয়াদবীপূর্ন হাদিস যারা লিপিবদ্ব করলেন তাদের অবস্থান কোথায় হওয়া উচিৎ ? অবাক করা বিষয় এটাই যে , আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সকল সম্মাানীয় সুন্নি আলেমগন একত্রিত হয়ে এই জাতীয় জঘন্য করুচীপূর্ন নোংরা ও অশ্লীল হাদিসগুলো বাতিল বলে যৌথ ঘোষনা করছেন না ! আফসোস ! এ পর্যন্ত সম্মাানীয় কোন সুন্নি আলেমগনের নিকট থেকে যৌক্তিক কোন জবাব পেলাম না ! আক্ষেপ নিয়ে বলতেই হয় যে , বনু সকীফার ইসলামে অসম্ভব বলে কিছুই নেই ! প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার

প্রচারে মোঃ শামসীর হায়দার কালাল্লাহুতায়ালা জাল্লা জালালুহু আম্মা নাওয়ালুহু ফিল কোরআনুল মাজিম-'ক্বুল লা আছআলুকুম আলাইহে আজরান ইল্লাল মায়াদাত্তা ফিল কুরবা।' (সূরা : শুরা ২৩, আয়াত)। অর্থ- বলুন হে রাসূল (সা.), রেসালাত বা নবুয়ত বিষয়ে চাইলে কোনো পারিশ্রমিক, আমি চাই আমার নিকট আত্মীয়ের অর্থাৎ আহলে বাইয়াতের সঙ্গে মাআদ্দাতা বা মহব্বত। ওই আয়াতকে বলা হয় আয়াতে মাআদ্দাতা বা প্রাণাধিক ভালোবাসার নিদর্শন। ওই আয়াত দ্বারা আল্লাহ আহলে বাইয়াতের প্রতি মহব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। রইসুল মুফাচ্ছেরীন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, উক্ত সূরা শুরার ২৩নং আয়াত যখন নাজিল হয়, তখন সাহাবায়ে কেরাম হুজুর পাককে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার কোনো নিকট আত্মীয়, যাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাজিল হলো? জবাবে নবী করিম (সা.) বলেন, আলী, মা ফাতেমা, ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন। (তাফসিরে এ জালালইন মিসরি, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩২নং পৃষ্ঠা, তাফসিরে ইবনে আরাবির দ্বিতীয় খণ্ড, ২১১ পৃ.)। তা ব্যতীত ও নিকট আত্মীয় সম্পর্কে মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৬৮ ও ২৬৯ পৃষ্ঠায় হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াকাস থেকে বর্ণিত- যে সূরা আল ইমনরার ৬১নং আয়াত নাজিল হলো তখন রাসূল (সা.) আলী, মা ফাতেমা, হাসান ও হোসাইনকে রাসূলের (সা.) গায়ের কাল কম্বলের ভেতর ডেকে নিয়ে বললেন, 'হে আল্লাহ সাক্ষী থাকুন, তারাই আমার নিকট আত্মীয়।' আল্লাহ সূরা আল ইমরানের ১০৩নং আয়াতে ফরমাইয়াছেন- 'তোমরা আল্লাহ রুজ্জোকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেও না।' এখন প্রশ্ন আসে আল্লাহর রুজ্জো কী? এর জবাবে হুজুরে পাক (সা.) হাদিস তিরমিজি শরিফে ফরমাইয়াছেন আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এবং আমি, আল্লাহ পাকের রুজ্জো। যারা পাক পাঞ্জাতনের সঙ্গে দৃঢ় মহব্বত রেখেছেন তারাই আল্লাহর রুজ্জোকে আঁকড়ে ধরেছে। উক্ত আয়াতেই বলা হয়েছে, 'তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেও না।' কারণ যদি মুসলমানরা ভিন্ন ভিন্ন আকিদা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ফেকরা সৃষ্টি করে, তবে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হয়ে ইসলামকে দুর্বল করে ফেলবে। এতে মোহাম্মদী ইসলামকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলবে। হজরত আলা ইবনে সুররা (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হজরত রাসূল (সা.) ফরমাইয়াছেন- 'হোসাইন আমা হতে এবং আমি হোসাইন হতে।' অর্থাৎ আমি ও হোসাইন অভিন্ন। যে কেউ হোসাইনকে মহব্বত করে, আল্লাহ তাকেও মহব্বত করেন। হোসাইন স্বয়ংই একটি বংশ। (মেশকাত শরিফ, ৫৯০৯)। হাদিসের আলোকে আহলে বাইয়াত :মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৭৩ পৃষ্ঠায় হজরত যায়েদ ইবনে আকরাম হতে বর্ণিত গাদীর ই কুমের ভাষণে রাসূল (সা.) ফরমাইয়াছেন, আমি দুটি ভারি জিনিস তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি। তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে রাখলে বা আমলে নিয়ে এলে আমার পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না বা অন্ধকারে পড়ে মরবে না। এ দুটি ভারি জিনিসের মধ্যে ১নং কিতাবাল্লাহ আল্লাহর বাণী পাক কোরআন ও ২নং আমার আহলে বায়াত। তাই দুই জিনিস একটি অপরটি হতে কখনও পৃথক হবে না হাউজে কাওছার পর্যন্ত। মেশকাত শরিফের ৩নং জিলদের ২৮১ পৃষ্ঠায় হজরত আবিয়ার গফিফারি কাবা ঘরের দরজা ধরে কসম খেয়ে বলেছেন, তোমরা জেনে রেখ আহলে বাইয়াত হজরত নূহর (আ.) কিস্তি বা নৌকার মতো। হজরত নূহর (আ.) পল্গাবনের সময় যারা কিস্তি বা নৌকায় উঠেছিল, তারাই বেঁচেছিল এবং যারা ওঠেনি, তারাই ধ্বংস হয়েছিল। হজরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলছেন, অসিলার মাকামের ওপর আর কোনো মাকাম নেই। সুতরাং তোমরা আমার জন্য অসিলা প্রার্থী হও। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), অসিলার মাকামে আপনার সঙ্গে থাকবেন কে? জবাবে নবী করিম (সা.) বললেন, আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আ.)। হজরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত- হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, হাশর দিবসে চার ব্যক্তির জন্য আমি নিজেই সুপারিশ করব- ১. যে আমার আহলে বাইয়াত ও বংশধরকে সম্মান দেবে; ২. যে আমার আহলে বাইয়াতের বংশধরের অভাব পূরণ করবে; ৩. যে আমার আউলাদের মধ্যে কেউ অস্থির হয়ে পড়লে উদ্ধার করার জন্য প্রয়াসী হবে; ৪. যে আমার আউলাদের জন্য কথায় ও কাজে মনেপ্রাণে মহব্বত রাখে।

আহালে আল বায়াত এবং ইমাম হযরত আলীর নামের শেষে আলাইহিস (আঃ) সালাম ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ 'আলাইহিস সালাম' যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান,হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা 'আলাইহিস সালাম'ব্যবহার করি। আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে,কোনো মুসলমানের নামের পর "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম?আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের,পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।'অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে। "আলাইহিসসালাম" শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এবার আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছুপ্রমাণ তুলে ধরছি: ১-সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের " কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবেহ" অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) "বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু" শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমার নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের "বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী" শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষ্যনীয়। ২- একই ধরণের ব্যবহার রয়েছে সুন্নি মাজহাবের আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি'র "ফাজলি ফাতিমাতা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১ ) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই "সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। একই হাদীস গ্রন্থের "মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)'র নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু "রাজিয়াল্লাহু আনহু" বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। "রাজিয়াল্লাহু আনহু" শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক। ৩- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইমাম ফাখরে রাজিও শিয়া মুসলমানদের ইমাম বা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর "আলাইহিসসালাম" দোয়াটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.) কয়েকটি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সমান সুবিধা বা সম্মানের অধিকারী। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন "আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম" শব্দের মাধ্যমে। ৪- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত "আলে ইয়াসিন" শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (দ:) বা মুহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন বিশ্বনবী (সা.)-এরই অন্যতম নাম। ৫-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে " আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ" । সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা। তাই এটা স্পষ্ট বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পরে বা তাঁদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা "সালাওয়াতুল্লাহ আলাইহি" বলা একটি ধর্মীয় নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নাত। আমাদের এই শ্রোতা ভাইয়ের প্রশ্নের আরেকটি অংশ হল, ‘আশা'রা মুবাশ্বারা' তথা পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবির সংখ্যা দশ জন যাদের মধ্যে চার জন হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম চার জন খলিফা, আর এই চার জনের একজন হলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) অথচ শিয়া মুসলমানরা শুধু হযরত আলী (আ.)-কেই কেন প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?উত্তর: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আহদিনি লিমা আখতুলিফা ফিহি মিনাল হাক্কি বিইজনিকা ইন্নাকা তাহদি মানতাশায়ু সিরাতিম মুস্তাক্বিম। (হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ-সা. ও তার পবিত্র বংশধরদের ওপর দরুদ বর্ষিত হোক এবং আমরা যখন বিরোধ ও সন্দেহপূর্ণ বিষয়ের শিকার হই তখন তোমার প থেকে আমাদের সঠিক পথ দেখাও, নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ দেখাও) এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, রেডিও তেহরান মুসলমানদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বিষয়ের চর্চার চেয়ে তাদের ঐক্যের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। (কারণ, শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবই এক আল্লাহ, অভিন্ন ও এক পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী (সা.)কে শেষ নবী ও রাসূল বলে মানে। মতবিরোধ শুধু সাহাবিদের নিয়ে।) তা সত্ত্বেও আপনার প্রশ্নের জবাবে শিয়া মুসলিম ভাইদের কিছু বক্তব্য ও যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি যাতে আপনার মত পাঠক ও শ্রোতাদের কৌতুহল মেটে। (তবে আগেই বলে রাখছি, বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে কোনো সুন্নি ভাই শিয়া মুসলমানদের যুক্তি বা দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেবেন কিনা সেটা তাদের একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা এখানে একজন শ্রোতা/পাঠকের প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গক্রমে শিয়া মুসলমানদের বক্তব্য ও সেসবের পক্ষে তাদের যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরছি মাত্র। কাউকে আহত করা বা বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরা রেডিও তেহরানের কাজ বা দায়িত্ব নয় কিংবা কোনো সাহাবির সম্মানহানি করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মোটকথা শিয়া মুসলমানদের এইসব বক্তব্য রেডিও তেহরানের নিজস্ব বক্তব্য নয় এবং এইসব মতামতের জন্য রেডিও তেহরান ও এর বাংলা বিভাগ দায়ী নয়। এই সর্তকবাণী নিম্নের আলোচনার জন্যও প্রযোজ্য।) শিয়া ও সুন্নি দুটি ভিন্ন মাজহাব। এ দুই মাজহাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই কিছু না কিছু পার্থক্য থাকবেই। যেমন পার্থক্য রয়েছে সুন্নিদের চার মাজহাবের মধ্যেও। এই চার মাজহাবের ইমামরা যদি সব বিষয়ে একমত হতেন তাহলে তো তাদের মাজহাবের সংখ্যা চারটি না হয়ে একটিই হত। কিংবা তারা যদি একে-অপরকে নিজের চেয়ে বড় মনে করতেন তথা অন্য মাজহাবের ইমামদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করতেন তাহলে অবশ্যই নিজ মাজহাব ত্যাগ করে অন্যের মাজহাব গ্রহণ করতেন। তদ্রুপ শিয়া ও সুন্নি ভাইয়েরা তাদের মাজহাবের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন সে ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারেন। যেমন, সুন্নি মাজহাবের দৃষ্টিতে হযরত আলী (আ.)'র মর্যাদা বা অবস্থান রাসূলের (সা.) ও প্রথম তিন খলিফার পরে চতুর্থ স্থানে। অন্যদিকে শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলী (আ.) রাসূলের (সা.)পর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, কারণ তিনি ছিলেন রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের সদস্য। শিয়া মাজহাবের দৃষ্টিতে কুরআন ও হাদিসেই রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.)-কে সাহাবাদের উর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে। (এমনকি তাঁদের মর্যাদা বিশ্বনবী (সা.) ছাড়া অন্যান্য নবী-রাসূলগণের চেয়েও বেশি, ঠিক যেমনটি সুন্নি বিশ্বে বলা হয় রাসূল (সা.)'র উম্মতের আলেমগণের মর্যাদা বনি-ইসরাইলের নবীগণের চেয়ে উচ্চতর। সব নবী-রাসূল বলেছেন, আমরা নবী-রাসূল না হয়ে যদি শেষ নবী(সা.)'র উম্মত হতাম! বাংলাদেশসহ আমাদের উপমহাদেশে মসজিদের মিলাদ মাহফিলে সুর করে রাসূলের প্রশংসা বর্ণনার সময় বলা হয়,[ (হে রাসূল- সা.!)- নবী না হয়ে হয়েছি উম্মত তোমার তার তরে শোকর হাজারবার।] হযরত ঈসা (আ.) বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) উম্মত হিসেবে আবারও পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং আহলে বাইতের পবিত্র ইমাম তথা শেষ ইমাম হিসেবে বিবেচিত হযরত ইমাম মাহদী (আ.)'র পেছনে নামাজ পড়বেন ও তাঁর সাহায্যকারী হবেন। ব্যাপারটা খুবই লক্ষ্যনীয় যে, একজন নবী শেষ নবীর (সা.) বংশে জন্ম নেয়া একজন ইমামের পেছনে নামাজ পড়বেন!!! ) এটা স্পষ্ট, রাসূল (সা.)'র সাহাবিদের ব্যাপারে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। সুন্নি মুসলমানদের দৃষ্টিতে সকল সাহাবিই সম্মানিত এবং আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট ও তারা সবাই বেহেশতে যাবেন। তবে কোনো কোনো সুন্নি ইমামের দৃষ্টিতেও রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের মর্যাদা রাসূল (সা.)'র পর সবার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ তাঁরা সাহাবাদের মধ্যেও সর্বোত্তম সাহাবা ছিলেন। এঁরা হলেন হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)। আর রাসূলের (সা.) আহলে বাইত বলতে এই কয়েজন ছাড়াও হযরত হোসাইন (আ.)'র বংশে জন্ম নেয়া আরো নয় জন ইমামকেও বোঝায়, যাদের মধ্যে ইমাম মাহদী (আ.) হলেন সর্বশেষ ইমাম। এই আহলে বাইতরা যে নিষ্পাপ তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অনেক সুন্নি আলেমও তাদের তাফসিরে স্বীকার করেছেন। আর (নিকটতম) আহলে বাইত বলতেও যে কেবলই আলী, ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে বোঝায় (তাঁদের সবার ওপর সালাম ও দরুদ) তাও অনেক সুন্নি আলেম সুরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেছেন। শিয়া মুসলমানরা বলেন, মহানবী (স.) তাঁর আহলে বাইত বলতে তাঁর নিষ্পাপ ও পবিত্র বংশধরকে বোঝাতেন। যেমন- হযরত ফাতেমা (সাঃ আঃ), ইমাম হাসান ও হুসাইন (সালামুল্লাহি আলাইহিম)। কেননা মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃ-১৩০) এবং তিরমিযী স্বীয় সুনানে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন যে, " হে নবী পরিবারের সদস্যগণ! আল্লাহ তো শুধু তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পবিত্র ও বিশুদ্ধ রাখতে চান।" এই আয়াতটি মহানবী (স.) এর উপর উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা (সাঃ আঃ)'র ঘরে অবতীর্ণ হয়। মহানবী (স.), ফাতেমা(সাঃ আঃ), হাসান(আ.) ও হুসাইন (আ.)কে নিজের আলখাল্লা বা আবা'র মধ্যে নিলেন এমতাবস্থায় আলী (আ.) তাঁর পেছনে অবস্থান করছিলেন। তাঁদেরকে একটি চাদর দ্বারা আবৃত করে এরূপ দোয়া করলেন: "হে আমার প্রতিপালক! এরাই আমার আহলে বাইত। অপবিত্রতাকে এদের হতে দূর করে এদেরকে পবিত্র কর।" উম্মে সালমা বললেন: হে আল্লাহর নবী! আমিও কি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত (আমিও কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত)? তিনি বললেন: তুমি নিজের স্থানেই থাকো। তুমি সত্য ও কল্যাণের পথেই রয়েছ। অনেকে বলতে পারেন রাসূল (সা.) আহলে বাইত শব্দের আভিধানিক অর্থ ঘরের লোক। সেই হিসেবে হযরত আয়শা ও হাফসা প্রমুখ রাসূলের স্ত্রীগণও কি তাঁর আহলে বাইত? শিয়া মুসলমানরা মনে করেন কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে রাসূলের স্ত্রীরা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কারণ, আহলে বাইতের সদস্যরা মাসুম বা নিষ্পাপ ও পবিত্র। তাঁরা কখনও ভুল করেন না বা অন্যায় কিছু করেন না। কিন্তু হযরত আয়শা ও হাফসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ৬৬ নম্বর সুরা তথা সুরা তাহরিমের চার নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন: "তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।" (৬৬-৪) এ থেকে বোঝা যায় রাসূল (সা.)'র স্ত্রীগণ আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন না। (যদিও হযরত খাদিজা (সাঃ আঃ) সম্পর্কে হাদিসে এসেছে তিনি সর্বকালের চার সেরা নারীর একজন। অন্য তিনজন হলেন হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ), হযরত মারিয়াম (আঃ) ও ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া (আঃ)। ) আমরা জানি হযরত হাসান ও হোসাইন (আ.)-কে সুন্নি বিশ্বের জুমার খোতবায়ও বেহেশতি যুবকদের সর্দার বলা হয়। আর তাঁদের মা নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ)-কে বলা হয় জান্নাতের নারীদের সর্দার। অতএব তারা নিঃসন্দেহে এ পৃথিবীতেই বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। কিন্তু ‘আশা'রা মুবাশ্বারা'য় এই তিনজনের নাম নেই। শিয়া মুসলমানরা মনে করেন আহলে বাইত বহির্ভূত সাহাবারা নিষ্পাপ নন। তাই তারা ভুল করতে পারেন ও তাদের অনেকেই ভুল করেছেন। আবার তাদের অনেকেই ছিলেন সুমহান ও সৎ, কিন্তু সবাই নন। অথচ রাসূলের আহলে বাইতের সদস্যরা সবাইই নিষ্পাপ যা সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে: "হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে (সব ধরনের ভুল-ত্র“টি ও পাপ থেকে) পূত-পবিত্র রাখতে।"-সুরা আহজাব-৩৩ পবিত্র কুরআনে রাসূল (সা.)'র আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসার নির্দেশ এসেছে। তাদের আনুগত্যও করতে বলা হয়েছে। যেমন, সুরা শুরার ২৩ নম্বর আয়াতে এসেছে: "(হে নবী! আপনি)বলুন, আমি আমার দাওয়াতের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক বা মুজুরি চাই না কেবল আমার পরিবারের প্রতি ভালবাসা চাই।" সুরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াতে এসেছে: “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ‘উলিল আমর' বা তোমাদের মধ্যে যারা [আইনসঙ্গত] মতার অধিকারী তাদের”শিয়া মুসলমানরা মনে করেন ইতিহাসের কতগুলো বাস্তবতা উপো করা অন্ধের পওে সম্ভব নয়। যেমন, সাহাবারা পরস্পর যুদ্ধ করেছেন। তাদের সবাই নিজেদেরকে সঠিক পথে অটল বলে দাবি করা সত্ত্বেও একে-অপরকে বিভ্রান্ত বলেছেন। হযরত আয়শা, হযরত তালহা ও হযরত যুবাইর জামাল যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধে মারা গেছেন দশ হাজার সাহাবি ও তাদের সন্তান। এ যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর হযরত আয়শা ভুল স্বীকার করে হযরত আলী (আ.)'র কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। হযরত আলী (আ.) ও মুয়াবিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘটিত সিফফিন যুদ্ধে মারা গেছে অন্ততঃ ৫০ হাজার সাহাবি ও সাহাবিদের সন্তান এবং সঙ্গী। এসব যুদ্ধের ব্যাপারে সুন্নিদের বক্তব্য হল সাহাবা হওয়ার কারণে তারা উভয় পক্ষই ছিল সঠিক পথে। কিন্তু শিয়ারা বলেন, দু-জন নবী বা দুজন সৎ মানুষ কখনও পরস্পরের সঙ্গে শত্র“তা পোষণ বা যুদ্ধ করে না-এটাই বিবেকের দাবি। সিরাতুল মুস্তাক্বিম বা সঠিক পথ একটিই হয়, একাধিক হয় না। এক লাখ বা দুই লাখ ২৪ হাজার নবী যদি একই যুগে একই অঞ্চলে থাকতেন তাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া বিবাদ হত না। স্বার্থ নিয়ে বা মতা নিয়ে কখনও দু-জন ভাল মানুষের মধ্যেই দ্বন্দ্ব হয় না। তাই যে কোনো দ্বন্দ্বে অবশ্যই এক প সঠিক পথে থাকে অন্য প অন্যায়ের পে বা অন্ততঃ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত থাকে। হযরত আলী (আ.), হযরত তালহা ও যোবাইর-কে "আশা'রা মুবাশ্বারার" তালিকায় রাখা হয়েছে। তারা যদি জানতেন যে তারা বেহশতী হওয়ার সুসংবাদ দুনিয়াতেই পেয়েছেন তাহলে বেহেশতী হওয়া সত্ত্বেও কেন একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন? তারা তো বলতে পারতেন, আপনিও বেহেশতী, আমিও বেহেশতী, তাই আমরা সবাই সঠিক পথেই আছি, আপনার কাজ আপনি করুন আমার কাজ আমি করি, কেউ কারো কাজে বাধা দেয়ার দরকার নেই,আমরা কেন বেহেশতী হয়েও একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব? কিন্তু তারা কি এমন কথা বলেছেন? তাছাড়া সুন্নি সূত্রে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, মুসলমানদের কেউ যদি একে-অপরকে হত্যার জন্য যুদ্ধ করে তবে তারা উভয়ই জাহান্নামি। জামাল ও সিফফিন যুদ্ধে সাহাবিরা কি পরস্পরকে হত্যার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি? যদি হাদিসটি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তো আলী (আ.), তালহা ও যুবাইর-সবাইই জাহান্নামি (নাউজুবিল্লাহ)। তাহলে আসল সত্য বিষয়টা কী? নিচের হাদিসটি দেখুন: রাসূল (সা.) একবার হযরত যোবাইরকে বলেছিলেন তুমি কি আলী(আ.)-কে ভালবাস। তিনি জবাবে বললেন, এটা কেমন কথা, আলীকে ভালবাসব না! তাছাড়া তিনি তো আমার আত্মীয়ও হন! রাসূল (সা.) বলেছিলেন, কিন্তু একদিন তুমি তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধে লিপ্ত হবে। জামাল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হযরত আলী (আ.) যোবাইরকে এই হাদিস স্মরণ করিয়ে দিলে যোবাইর লজ্জিত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছিলেন, সে আমার উম্মতের একদল ‘বাগী' বিদ্রোহী বা পথভ্রষ্ট লোকের হাতে শহীদ হবে। যখন সিফফিন যুদ্ধে হযরত আলী (আ.)'র পে যুদ্ধরত অবস্থায় মুয়াবিয়ার সেনাদের হাতে হযরত আম্মার (রা.) শহীদ হন, তখন মুয়াবিয়ার পক্ষে থাকা অনেক সাহাবির বোধদয় হয়। এ ছাড়াও রাসূল (সা.) বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। "আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)'র সঙ্গে শত্র“তা করা মুনাফেকী" (মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)। " আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা"(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, "হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও।" রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্র“তা করবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, " আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাববক ও নেতা" (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)। "যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নীচু করে দোজখে নিপে করবেন। "(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)। "আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ,যে আলীর সাথে শত্র“তা রাখে তুমিও তার সাথে শত্র“তা রাখ।" (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১) সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্র“তা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম। পবিত্র কুরআনে সাহাবা বা মুহাম্মাদ (সা.)'র সাহবি বা সঙ্গীদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর ও নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়ালু বা রহমশীল। কিন্তু সাহাবাদের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ কি দয়া বা পারস্পরিক রহমের পরিচয় বহন করে?শিয়া মুসলমানরা এইসব বক্তব্য, হাদিস ও যুক্তির আলোকে বলেন যে, সাহাবারা ভুল করতে পারেন ও অন্যায় যুদ্ধেও লিপ্ত হতে পারেন। কিন্তু নবী বংশের ইমাম বা রাসূলের আহলে বাইত (আ.) ভুল করতে পারেন না কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে নিষ্পাপ হওয়ার কারণে। আর শিয়া মুসলমানরা এটাও মনে করেন যে, ন্যায় ও অন্যায়ের প্রশ্নে এবং সঠিক ও ভুল পথের প্রশ্নে অবশ্যই ন্যায়ের পক্ষ নিতে হবে। সঠিক ও ভুল পথ কখনও সমান হতে পারে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে যারা বলবে যে আমরা উভয় পক্ষেই আছি বা উভয় পক্ষকেই সম্মান করি, তা হবে সুবিধাবাদিতা ও অনৈতিক। তারা আরও বলেন, আমরা যদি রাসূল (সা.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর বন্ধুদেরকেও ভালবাসতে হবে এবং তাঁর শত্র“দেরকে বা বিপক্ষ শক্তিকেও ভালবাসি বলা যাবে না। ঠিক একইভাবে যদি বলি যে আলী (আ.)-কে ভালবাসি তাহলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বা বিরোধী গ্র“পকেও ভালবাসা উচিত নয়। এবার আমরা সুন্নী মাজহাবের হাদিসের আলোকে অন্য সাহাবিদের তুলনায় আমিরুল মুমিমিন হযরত আলী (আ.) এবং রাসূল (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত বা নিষ্পাপ বংশধরদের শ্রেষ্ঠত্বের সপে আরো কিছু দলিল তথা হাদিস ও রেওয়ায়েত বা ইসলামী বর্ণনা তুলে ধরছি: " এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।" (তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ'-ড. মো. হোসাইন হায়কাল,প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪) হযরত আহমদ বিন হাম্বল বলেছেন, "যত ফজিলতের বর্ণনা আলীর বেলায় এসেছে অন্য কোনো সাহাবির বেলায় তা আসেনি। আলী (আ.)'র অসংখ্য শত্র“ ছিল। শত্র“রা অনেক অনুসন্ধান করেছে আলী (আ.)'র দোষ-ত্র“টি বের করার, কিন্তু পারেনি।" হযরত কাজী ইসমাইল নাসায়ি আবু আল নিশাবুরি বলেন, "যত সুন্দর ও মজবুত সনদের দ্বারা আলী (আ.)'র ফজিলতগুলো বর্ণিত হয়েছে-অন্য সাহাবিদের বেলায় তেমনি আসেনি।" হাদিসে সাকালাইন ১। মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে যায়েদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (স.) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে "খুম" নামক একটি পুকুরের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন: হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু'টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (স.) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড,পৃ.১৮০৩। দারেমী এই টেক্সট বা মাতন তথা হাদিসের মূলপাঠটি নিজ ‘সুনান'-শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেছেন। সূত্র:সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৩১-৪৩২। ২। তিরমিযি এই হাদিসটিতে শব্দগুলো বর্ণনা করেছেন। মূল হাদিসটি হলো: "নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দু'টি ভারী (মূল্যবান) জিনিস (আমানত হিসেবে) রেখে যাচ্ছি। যদি তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সেগুলো একটি অপরটির উপর প্রাধান্য রাখে। (সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত (রহমতের) ঝুলন্ত রশির ন্যায় এবং অপরটি হলো আমার বংশধর; আমার আহলে বাইত। এরা হাউযে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনও একে অপর হতে আলাদা হবে না। অতএব, তোমরা ল্য রেখ যে, আমার (ছেড়ে যাওয়া) আমানতের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করো।'' (সূত্র:সুনানে তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬৩।) মুসলিম এবং তিরমিযী যাদের দু'জনই সহীহ হাদিস গ্রন্থ এবং (দুই পৃথক) ‘সুনান'-এর প্রণেতা। আর (মুসলিম এবং তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত) উক্ত হাদিস দু'টি সনদগত দিক থেকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য এবং কোনরূপ আলোচনা ও পর্যালোচনার প্রয়োজন রাখে না। অর্থাৎ, এই হাদিস দু'টি সনদগতভাবে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ও নিখুঁত। হাদিসে সাকালাইনের ভাবার্থ যেহেতু মহানবী (স.) নিজ বংশধরকে পবিত্র কুরআনের পাশে স্থান দিয়েছেন এবং উভয়কে উম্মতের মাঝে আল্লাহর হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাই এ দু'টির প্রতি দৃষ্টি রেখে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়: ১। মহানবী (স.) এর বংশধরদের বাণী কুরআনের মতোই হুজ্জাত (চূড়ান্ত দলিল)। আর দ্বীনি বিষয়ে চাই তা বিশ্বাসগত (আকিদাগত) দিক হোক আর ফেকাহগত দিক হোক, অবশ্যই তাদের বাণীকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে এবং কোনো বিষয়ে তাদের প থেকে বর্ণিত কোনো যুক্তি বিদ্যমান থাকলে অন্যের শরণাপন্ন হওয়া বৈধ নয়। মহানবী (স.) এর ওফাতের পর মুসলমানরা যদিও খেলাফত এবং উম্মতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিষয়টিতে দু'টি দলে বিভক্ত হয়েছেন এবং প্রত্যেকেই নিজেদের দাবির সপে যুক্তি পেশ করেছেন এবং এসব বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তারপরও আহলে বাইত (আ.) যে ধর্মীয় জ্ঞানের নির্ভুল উৎস সে বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা উচিত নয়। কেননা সবাই হাদিসে সাকালাইন সহীহ হওয়ার পে ঐকমত্য পোষণ করেন। আর এই হাদিসে পবিত্র কুরআন এবং আহলে বাইত (আ.)- কে আকাঈদ ও আহকামের বিষয়ে মারজা বা একমাত্র ফয়সালাকারী কর্তৃপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদি উম্মতে মুহাম্মাদী (স.) এই হাদিসটির ওপর আমল করে তাহলে তাদের মতানৈক্য কমে আসবে এবং তাদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ২। পবিত্র কুরআন যেহেতু মহান আল্লাহরই বাণী, তাই এ মহাগ্রন্থ সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত; তাই কিভাবে তার মাঝে ভুল-ত্র“টির সম্ভাবনা থাকবে যখন স্বয়ং মহান আল্লাহই এই মহাগ্রন্থ সম্পর্কে বলেন : "তাতে তার আগে ও পিছে কোনো দিক থেকেই বাতিল বা মিথ্যা প্রবেশ করতে পারে না। তা তো প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত আল্লাহর প থেকে নাজিল করা হয়েছে।" যদি পবিত্র কুরআন সব ধরনের ভুল ও বাতিল হতে মুক্ত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে তার সমকও সব ভুল-ত্র“টি থেকে মুক্ত। কেননা নিষ্পাপ নয় এমন ব্যক্তি অর্থাৎ কোনো গোনাহগার ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পবিত্র কুরআনের জুটি হতে পারে না। হাদিসে সাকালাইন ও এই আয়াতে কারিম তাঁদের তথা আহলে বাইত (আ.)-গণের সব ধরনের ভুল-ত্র“টি হতে মুক্ত হওয়ার সাী স্বরূপ। অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, নিষ্পাপ হওয়ার অর্থ নবী হওয়া নয় বা নিষ্পাপ হওয়ার জন্য নবী হওয়া জরুরি নয়। কেননা এমন হতে পারে যে, কোনো এক ব্যক্তি নিষ্পাপ বা গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন। যেমন- হযরত মারইয়াম (আ.) নিম্নোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে গুনাহ হতে মুক্ত কিন্তু নবী নন: "...আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন। আর তোমাকে বিশ্বের নারীদের ওপর মনোনীত করেছেন।" আরো কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা : রাসুলের আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধরের মর্যাদা এত বেশি যে, সুন্নি ইমাম শাফেয়ী তার প্রসিদ্ধ কবিতায় বলেছেন: "হে মহানবী (স.) এর বংশধর! তোমাদের প্রতি ভালোবাসা একটি ফরজ কাজ যা মহান আল্লাহ কোরআনে অবতীর্ণ করেছেন। তোমাদের মাহাত্ম প্রমাণের ক্ষেত্রে এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর দরুদ পড়বে না তাঁর (আল্লাহর রাসূলের) জন্যও সে দরুদ পড়নি।" অন্যদিকে সাহাবিদের একদল সম্পর্কে হাদীসে এসেছেঃ বুখারী ও মুসলিম মহানবী (স.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: "কিয়ামতের দিন আমার সাহাবিদের মধ্যে হতে একটি দল (অথবা বলেছেন আমার উম্মতের মধ্য হতে) আমার সামনে উপস্থিত হবে। অতঃপর তাদেরকে হাউজে কাওসার হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে (হাউজে কাওসারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না)। তখন আমি বলব: হে আমার প্রভু! এরা আমার সাহাবি। মহান আল্লাহ উত্তরে বলবেন: আপনার পরে এরা যা কিছু করেছে সে সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তারা তাদের পূর্বাবস্থায় (অজ্ঞতা তথা জাহেলিয়াতের যুগে)প্রত্যাবর্তন করেছিল। (বোখারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-৯৪, ১৫৬ পৃ, ২য় খণ্ড, ৩২ পৃ, মুসলিম শরীফ ৭ম খণ্ড, পৃ-৬৬) মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে রাখুন ও সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ দিন এবং ইসলামী ঐক্য জোরদারের তৌফিক দিন ও কাফেরদের ইসলাম-বিরোধী ষড়যন্ত্রগুলো বানচালের যোগ্যতা দান করুন। আমীন।

নবী পরিবারের(আঃ) শানে পবিত্র কোরানের আয়াত সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম।“ গাদীরে খুমে যখন রাসুল(সাঃ) হযরত আলীকে খেলাফত ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃখোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন,নিজের অবদানকে সপুর্ন করিলেন।আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)। সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪ “তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহ পাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হেকমাত দান করিয়াছি।“ আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ইমামগন হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সংগে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাহারা হইলেন আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদের ইমামতি দান করিয়াছেন।হযরত ইমাম বাকের(আ:) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইবারহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন(১২ ইমাম) সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করাইয়াছে।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লহর আদেশ অমান্যের সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ১২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ২০৪;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯; শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৩;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৬৭;সাওয়েকে মুহরেকা,পৃঃ১৫০)। সুরা নিসা,আয়াত# ৮৩ “যদি তাহারা উহা রাসুল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত,তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্দ্বান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্নয় করিতে পারিত।“ হযরত ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে,যাহারা বাস্তবতা জানেন আর যাহারা ক্ষমতাসম্পন্ন তাহারা হইলেন হযরত মুহাম্মাদের(সাঃ) বংশধর। আয়াশী হযরত ইমাম রেজা(আঃ) হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, ইহা দ্বারা হযরত নবী করিমের(সাঃ) বংশধরকে বুঝানো হইয়াছে। কারন তাহারা হইলেন ঐ সব ব্যক্তি যাঁহারা কোরানের বাস্তব তথ্য ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।তাঁহারাই হালাল ও হারামের উপর অবগত হইয়াছেন।আর তাহারাই সৃষ্টির উপর আল্লাহতায়ালার হুজ্জাত বা অকাট্য প্রমানস্বরুপ।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৫;রাওয়ানে যাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৯২;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ৪০)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৫৫ “তোমাদের বন্দ্বু তো আল্লাহ,তাঁহার রাসুল ও মু’মিনগন-যাহারা সালাত কায়েম করে ও রুকুর অবস্থায় যাকাত দেয়”। হযরত আবু যর গিফারী(রাঃ) এইভাবে বর্ননা করিয়াছেনঃএকদিন আমি রাসুলের(সাঃ) সঙ্গে মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করিলাম।একজন ভিক্ষুক মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিল।কেহ তাহাকে কিছুই দিল না।ঐ ভিক্ষুক তাহার ২ হাত আকাশের দিকে উত্তোলন করিয়া বলিলঃহে ল্লাহ!আমি তোমার পয়গাম্বরের মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিলাম,কিন্তু কেহ আমাকে কিছুই দিল না।এই সময় আলী(আঃ)সালাতে রুকুর অবস্থায় ছিলেন।তিনি নিজের আঙ্গুলের ইশারায় ভিক্ষুককে ইঙ্গিত করিলেন।হযরত আলী(আঃ)এর ডান হাতের আঙ্গুলে আংটি ছিল।ভিক্ষুকটি অগ্রসর হইয়া হযরত আলীর(আঃ) আঙ্গুলের আংটি খুলিয়া নিল।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এই ঘটনা দেখিয়া নিজের মাথা আকাশের দিকে ঘুরাইয়া বলিলেনঃহে আল্লাহ! হযরত মুসা(আঃ) আপনার প্রার্থনা করিয়াছিলেন যে,হে আল্লাহ আমার বক্ষ প্রসারিত করিয়া দাও আর আর আমার জাক আমার জন্য সহজ করিয়া দাও এবং আমার জিহবার জড়তা দূর করিয়া দাও যাহাতে লোকেরা আমার কথা বুঝিতে পারে।আর আমার বংশ হতে আমার ভাই হযরত হারুনকে(আঃ) সাহায্যকারী করিয়া দাও,যেন সে আমার শক্তিকে দৃঢ় করে।আমার কাজে আমার সঙ্গী করিয়া দাও। আল্লাহতায়ালা হযরত মুসাকে(আঃ) বলিলেন,আমি তোমার ভাই দ্বারা তোমার শক্তি তোমার শক্তিকে দৃঢ় করিয়া দিলাম।তোমাকে রাজত্ব দান করিলাম।হে আল্লাহতায়ালা!আমি মুহাম্মাদ তোমার প্রিয় রাসুল।হে আল্লাহ আমার বক্ষকে প্রসারিত করুন,আমার কাজ সহজ করুন এবং আমার বংশধরকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করুন।আমার পৃষ্টকে আলী দ্বারা শক্তিশালী করুন।হযরত আবুযর গিফারী বলিলেন যে,আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) কথা তখনো শেষ হয় নাই ,এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল(আঃ) এই আয়াতে পাক নিয়ে হুজুর (সাঃ)এর নিকট উপস্থিত হইলেন।(সুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ৭১;তাফসীরে ত্বাবারী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৬৫;তাফসীরে রাজী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৩১;তাফসীরে খাজিন,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯৬;তাফসীরেআবুল বারাকাত,১ম খন্ড,পৃঃ ৪৯৬;তাফসীরে নিশাপুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৬১; আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খন্ড,পৃঃ৩৫৭;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ৩২৯;আল-গাদীর,৩য় খন্ড,পৃঃ১৫৬ ও ১৬২;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৬১;)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৬৭ “হে রাসুল!পৌছাইয়া দিন যাহা কিছু আপনার প্রতি অবতীর্ন হইয়াছে আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।যদি এমন না হয় তবে আপনি তাহার কোন সংবাদই পৌছাইলেন না।আর আল্লাহতায়ালা আপনাকে রক্ষা করিবেন মানুষের অনিষ্ট হইতে”। সমস্ত মোফাসসের এবং ঐতিহাসিকগন একমত যে,এই আয়াত গাদীরে খুম নামক স্থানে হযরত আলী(আঃ)এর শানে নাজিল হইয়াছে।রাসুল(সাঃ) উটের পালান দ্বারা একটি মিম্বর বানানোর জন্য আদেশ দিলেন এবং সেই মিম্বরের উপর দাড়াইয়া রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেন যে,আমি যাহার নেতা ,এই আলীও তাহার নেতা।(সুত্রঃআল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২১৪ ও ২২৯;জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৩৮;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;আসবাবুল নযুল,পৃঃ১৩৫;শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৮৭)। সুরা আ’রাফ,আয়াত# ১৭২ “হে নবী স্মরন করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্টদেশ হইতে তাহাদের বংশধরগনকে বাহির করিলেন”। হোযাইফা বিন ইয়ামানী বর্ননা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃযদি মানুষ জানিত যে,আলী কখন হইতে আমিরুল মু’মিনিন,তবে কখনো তাঁহার মরযাদাকে অস্বীকার করিত না।হযরত আলী তখন থেকেই আমিরুল মু’মিনিন যখন হযরত আদমের শরীর ও আত্না মাটি ও পানির মধ্যে ছিল।আল্লাহপাক ফরমাইলেনঃযখন আদমের পৃষ্টদেশ হতে সমস্ত আত্নাকে বাহির করা হইলো,তাহাদের উপর সাক্ষী করা হইলো এবং জিজ্ঞাসা করা হইলো যে,আমি কি তাহাদের প্রভু নই?ফেরেশ্তারা বলিলঃঅবশ্যই,আমরা সাক্ষী থাকিলাম। তারপর আল্লাহতায়ালা ফরমাইলেনঃআমি তোমাদের প্রভু,মুহাম্মাদ তোমাদের রাসুল এবং আলী তোমাদের আমীর।(সুত্রঃ জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৫৮;রাওয়ান জাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৪৯১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ২১৬;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৭১) প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

চর্ম চক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখা কি সম্ভব ? মহান আল্লাহকে দেখা সম্পর্কিত — ” শরহে তায়াররুফ ” কিতাবে আছে — হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) হচ্ছেন আধ্যাত্নবিদগনের মধ্যমনি । মারেফত ও হাকিকত সম্পর্কিত যে সকল বাণী তিনি উচ্চারন করেছেন , আর কেউ তা বর্ণনা করতে সক্ষম হবে না । মাওলা আলী (আঃ) একদিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন , ” হযরত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তরাধিকার এবং আধ্যাত্নজ্ঞান সম্পর্কে যার যা ইচ্ছা আমার সীমা থেকে জেনে নিতে পার । এ মজলিসেই দা’লাব ইয়ামনী নামে খ্যাত এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিল । হযরত আলী (আঃ) তার সম্পর্কে বললেন , ‘ এ লোকটি অনেক লম্বা- চওড়া দাবি করে । তার দাবি আমার কখনও ভাল লাগেনি । দা’লাব মজলিসে দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল , আমি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাই । হযরত আলী (আঃ) বললেন , তুমি কেবল ফিকাহ্‌ ও জ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন করবে । পরীক্ষা- নিরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয় জিজ্ঞাসা করবে না । দা’লাব বলল , আচ্ছা , বলুন তো দেখি আপনি আপনার পরওয়ারদেগারকে দেখেছেন ? মাওলা আলী (আঃ) জবাবে বললেন , এটা কিরূপে সম্ভব যে , আমি পরওয়ারদিগারের এবাদত করব , অথচ তাঁকে দেখব না ? দা’লাব বলল , আপনি তাঁকে কিরূপ পেয়েছেন ? ইমাম আলী (আঃ) বললেন , চর্মচক্ষে তুমি তাঁকে দেখবে না । বরং অন্তর্চক্ষু ও বিশ্বাসের মাধ্যমে তাঁকে দেখতে পারবে । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তিনি দৃষ্টান্তবিহীন । কোন স্থান বিশেষে তিনি সীমাবদ্ধ নেই এবং তিনি কোন কালেরও অনুবর্তী নন । ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তাঁকে চিনা যায় না এবং কোন মানুষ দ্বারা তাঁকে অনুমানও করা যায় না । দা’লাব এসব কথা শুনে চীৎকার করত অজ্ঞান হয়ে গেল । জ্ঞান ফিরে এলে সে বলল , এখন আমি আল্লাহ্‌র সাথে অঙ্গীকার করছি যে কাউকে পরীক্ষার ছলে কোন প্রশ্ন করব না । শাওয়াহেদুন – নবুয়ত । সুপ্রিয় পাঠক , আল্লাহর পরিচয় – এ সম্পর্কিত বিষয় আরও বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন – নাহজ আল বালাঘা , মূল – হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) , বাংলা অনুবাদ – জেহাদুল ইসলাম প্রচারে ইয়া আলী আঃ

বালাগাল উলা বি কামালিহী – বাংলা অনুবাদ — বালাগাল উলা বি – কামালিহী কাশাফাদ্দুজা বি – জামালিহী হাসুনাত জামিউ খিসালিহী সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । পৃথিবীর সকল মুমিন মুসলমান এই পবিত্র দরুদ শরীফ সম্বন্ধে যথেষ্ট অবগত । কিন্ত আমরা বেশীরভাগ মুসলমান সুন্দর এই দরুদ শরীফের বাংলা অর্থ জানি না । সম্মানীয় পাঠক , আসুন জেনে নেই – অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া চমৎকার এই দরুদ শরীফটির বাংলা অনুবাদ এবং এর জন্ম ইতিহাস । বাংলা অনুবাদ – যিনি (সাধনায়) পূর্ণতার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন , যাঁর সৌন্দর্যের আলোকে অন্ধকার দুর হয়েছে , যাঁর আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । বালাগ = পৌঁছানো । কামালিহী = পূর্ণতা , পরিপূর্ণ । জামালিহী = সৌন্দর্য । খিসালিহী = আচরণ – ব্যবহার , চরিত্র । ইতিহাস থেকে জানা যায় , হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এই দরুদ শরীফের প্রথম দু’লাইন লেখার পর কি লিখবেন তা তিনি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তন্দ্রাছন্ন ভাব আসলে স্বপ্ন দিদারে তিনি রাসুল (সাঃ) এর জিয়ারত পান । প্রিয় নবীজী (সাঃ) তখন সাদী (রহঃ) কে বলেন – হে সাদী ! তুমি লিখ – হাসুনাত জামিউ খিসালিহী , সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । বাংলা অনুবাদ – যার আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার যে , এই দরুদ শরীফ রাসুল (সাঃ) হযরত শেখ সাদী (রহঃ) কে দিয়ে লিখিয়েছেন । সুবহানাল্লাহ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে দাড়িয়ে যেতেন — হযরত আয়েশা থেকে বর্নিত – ‘ আমি কথাবার্তা ও আলোচনায় রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে ফাতিমার (সাঃআঃ) চেয়ে বেশী মিল আছে এমন কাউকেই দেখিনি । ফাতিমা (সাঃআঃ) যখন রাসূলের (সাঃ) নিকট আসতেন , মহানবী (সাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বসাতেন , তাঁর হাত টেনে চুমু দিতেন , স্বাগত জানাতেন । ফাতিমা (সাঃআঃ) পিতার সাথে একই রকম করতেন ।’ সূত্র – আবু দাউদ , বাবু মা জায়াফিল কিয়াম (৫২১৭) / সহীহ তিরমিযী , মানাকিবু ফাতিমা (৩৮৭১)

— এবং যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায় —- ” । কে বা কাঁরা সেই মুমিনবৃন্দ —- “— তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ , তাঁর রাসুল এবং মু’মিনবৃন্দ যারা নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায় —- ” । সুরা – মায়েদা /৫৫ । সুপ্রিয় পাঠক , উপরের আয়াতে কয়েকটি বিষয় খুবই পরিস্কার – ১) – মহানবী (সাঃ) সমগ্র উম্মাতের জন্য অভিভাবক যিনি মহান আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত হয়েছেন , ২) – এবং ঐ মুমিনবৃন্দ সমগ্র উম্মতের জন্য অভিভাবক যাঁরা রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানে সক্ষম , ৩) – মহানবী (সাঃ) তাঁর ওফাত পরবর্তীতে সমগ্র উম্মতকে নেতাবিহীন অবস্থায় ছেড়ে যান নি , ৪) – সমগ্র উম্মতের জন্য আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত ঐ মুমিনগন রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানে সক্ষম । পাঠক , এবারে আসুন দেখে নেয়া যাক যে , নামাযে রুকুরত অবস্থায় কোন মুমিনগন যাকাত প্রদান করলেন । নবীজির (সাঃ) সাহাবি হযরত আবু যার আল গিফারী (রাঃ) বলেন , ” আমি একদা রাসুল (সাঃ) এর সাথে যোহরের নামায আদায় করছিলাম । ইতিমধ্যে একজন ভিখারী মসজিদে প্রবেশ করে ভিক্ষা চাইল । কিন্ত কেউ তাকে কোন সাহায্য করল না । ভিক্ষুকটি দু’হাত তুলে আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ জানালো , ” ইয়া আল্লাহ্‌ , তুমি সাক্ষী থেকো , আমি মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সাহায্য চাইলাম , কিন্ত কেউ দিল না “। তখন হযরত আলী (আঃ) নামাজে রুকু কালীন অবস্থায় ছিলেন । তিনি ইশারা করলে ঐ ভিক্ষুক লোকটি হযরত আলীর (আঃ) হাতের আংটি খুলে নিয়ে যায় । আর পুরো এই ঘটনাটি নবীর (সাঃ) চোখের সামনে ঘটে । নবীজি (সাঃ) নামাজ শেষে দু’হাত তুলে আল্লাহ্‌র কাছে মোনাজাত করলেন , ” ইয়া আল্লাহ্‌ , যখন হযরত মুসা (আঃ) তোমাকে বলেছিল , ” — আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ দিন আমার পরিবার থেকে , হারুন , আমার ভাইকে , তার মাধ্যমে আমার পিঠকে মজবুত করুন , এবং তাকে আমার কাজকর্মে অংশীদার করুন —” । সুরা ত্বাহা , আয়াত-২৯-৩২ । তখন ওহী নাযিল হয়েছিল । তুমি তাঁর ভাই হারুন কে দিয়ে তাঁর বাহুবল শক্তিশালী করছিলে । হে প্রভু , নিশ্চ য়ই আমি তোমার নবী এবং মনোনীত ব্যক্তি । ইয়া আল্লাহ্‌ , তুমি আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও । আমার জন্য আমার আ’হল থেকে আলীকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়োগ কর , তাঁর মাধ্যমে আমার কোমরকে শক্তিশালী করে দাও ।” তখনও প্রিয় নবী (সাঃ) এর মোনাজাত সমাপ্ত হয় নি , এমনি সময় সুরা মায়েদার এই ৫৫ নাঃ আয়াত নাজিল হয় । এই আয়াতে এই দিকটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে , নবী (সাঃ) এর মোনাজাতের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ্‌ ওহী প্রেরন করলেন যে , আমি আপনার মোনাজাত কবুল করলাম ও হযরত আলীকে আপনার স্থলাবর্তী খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করলাম । যেভাবে মুসার (আঃ) মোনাজাতে আল্লাহ্‌ হারুন (আঃ) কে মুসার (আঃ) স্থলাবর্তী খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করেছিলেন ঠিক একইভাবে নবী (সাঃ) এর মোনাজাতে আল্লাহ্‌ হযরত আলী (আঃ) কে তাঁর নবীর জন্য মনোনীত করলেন । মহানবী (সাঃ) এর পর আর কোন নবী বা রাসুলের আগমন হবে না তাই হযরত আলী (আঃ) কে ইমাম ও বেলায়েত ( ওয়ালী ) ঘোষণার মাধ্যমে মনোনয়ন দেওয়া হল । যা আমরা এখন জানলাম , আর যেভাবে হযরত মুসার (আঃ) পর হযরত হারুন (আঃ) সেই সময় মানব জাতির জন্য হেদায়েতকারী ছিলেন , ঠিক নবীর পর হযরত আলী (আঃ) বেলায়েতের অধিকারী রূপে মানব জাতির জন্য হেদায়েতকারী হবেন । আয়াতে এই বিষয়টাই স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে । অতএব , এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে মহানবী (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আঃ) ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে নবীজী (সাঃ) এর স্থলাভিষিক্ত ইমাম বা খলীফা হিসাবে মেনে নেওয়া আদৌ কি সম্ভব ? যাইহোক আপনি যথেষ্ট বিবেকবান , বিবেক আপনার সিদ্বান্ত আপনার , দয়া করে ভুলে যাবেন না যে , আপনার সিদ্বান্তের জবাবের প্রতীক্ষায় স্বয়ং আল্লাহ অপেক্ষামান আছেন । সূত্র – তাফসিরে নুরুল কোরআন , খঃ-৬, পৃঃ-২৮৫ (আমিনুল ইসলাম) / কুরআনুল করিম , পৃঃ-৩০০ ( মহিউদ্দীন খান / আরজাহুল মাতালেব , পৃঃ-৭৩,৭৪ ( উর্দু) ,/ কানজুল উম্মাল , খঃ-৭, পৃঃ-৩০৫ / তাফসিরে কাশফুল বায়ান , খঃ-১, পৃঃ-৭৪ / তাফসিরে কানজুল ইমান, পৃঃ-২২৩ ( আহমদ রেজা খা) / তাফসিরে মারেফুল কোরআন , খঃ-৩, পৃঃ-১৫৯ ( মুফতি মোঃ শফি ) / তাফসিরে ইবনে কাসির, খঃ-৩, পৃঃ-৪৮৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / তাফসিরে তাবারী, খঃ-৬, পৃঃ-২৮৮ / তাফসিরে কাশশাফ, খঃ-১, পৃঃ-৬৮৩ / তাফসিরে ইবনে জাওযীয়াদ আল মুসির, খঃ-২, পৃঃ-৩৮৩ / তাফসিরে কুরতুবি, খঃ-৬, পৃঃ-২৮৮ / তাফসিরে ফাখরে রাজী, খঃ-১২, পৃঃ-২৫ / তাফসিরে ইবনে কাসির, খঃ-২, পৃঃ-৭১ / তাফসিরে দুররে মানসুর, খঃ-২, পৃঃ-২৯৩ / তাফসিরে আহকামুল কোরআন, পৃঃ-২৯৩ / আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খঃ-৭, পৃঃ-৩৫৭ / নুরুল আবসার, পৃঃ-৭৭ / ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-২১২ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

কাতেব এ ওহী – হযরত মূয়াবীয়া । কাতেব এ ওহী নামে অপপ্রচার — যিনি বা যারা কুখ্যাত পতিতা সর্দারনী হিন্দার তথাকথিত পুত্র মুয়াবীয়াকে সাহাবীর সম্মাান দিয়েও খুশী হতে পারেন নি তারাই তার নামের আগে “কাতেব এ অহি” জুড়ে দেন । মক্কা বিজয়ের আরও পরে মুয়াবীয়া জান ও সম্পদ বাঁচাতে ইসলাম গ্রহন করেন । পবিত্র কোরআন এর প্রায় সব আয়াত তখন নাজিল হয়ে গেছে । কোরআন সম্পূর্ণ হতে তখন মাত্র আর কয়েকটি আয়াত বাকি ছিল । তাহলে তখন মূয়াবীয়ার পক্ষে ওহি লিখার সৌভাগ্য হল কিভাবে ? তাছাড়া কোরআন এর কোন আয়াত মুয়াবীয়া লিখলেও তাতে কি হয়েছে ? কেননা কোরআনের যে কোন একটি আয়াত এখন যে কেউ লিখতেই পারে । তাহলে তো লক্ষ লক্ষ কাতেব এ ওহী হয়ে যায় । তৎকালীন সময় কখনও কখনও মুনাফিকদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে কে দিয়েও অহি লিখিয়েছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় । অথচ এই উবাইকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করে সুরা মুনাফেকুন নাজিল হয়েছে । মারওয়ানকেও অনেকে কাতেব এ ওহি বলে থাকেন কিন্ত তাকে তো সাহাবার মর্যাদা দেয়া হয় না । মুয়াবীয়ার অসংখ্য মুনাফেকি থাকা সত্ত্বেও যারা মুয়াবীয়ার সমালোচনা করলে ঈমান চলে যাবে বলে ফতোয়া দেন , তাদের আগে নিজের ঈমান কতটুকু আছে তা ভেবে দেখা উচিত । হযরত মূয়াবীয়ার যে কাজগুলি বিশ্লেষনের দাবী রাখে — রাজতন্ত্র স্থাপনকারী উমাইয়া বংশের প্রথম খলীফা জনাব মুয়াবিয়া নিম্নলিখিত কাজগুলো করেন যা ইসলামের সাথে মোটেই সংগতিপূর্ন নয় – ১) – সাহাবাকেরামদের সাথে পরামর্শ না করে ছলছাতুরী আর তরবারীর সাহায্যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল । ( মারেফুল কোরআন , পৃ – ৪২৭ এ হাদিস অনুযায়ী জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে ) ২) – হযরত আলী (আঃ) সহ সকল আহলে বায়েত (আঃ) গনের প্রতি সকল প্রদেশের মসজিদের মিম্বর হতে অভিসম্পাত বা গালাগাল করার নির্দেশ বাধ্যতামূলক করা , যা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পরযন্ত বলবৎ ছিল । ৩) – ইমাম হাসান (আঃ) এর সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা । ৪) – দ্বিতীয় ইমাম হাসান (আঃ) কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা । ৫) – হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর (রাঃ) কে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা । ৬) – উম্মু ল মুমেনীন হযরত আয়েশাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে ওনার লাশ গুম করে ফেলা হয় । ৭) – রাজকীয় কায়দায় বা নিজেকে রাজা হিসেবে দাবী করে শাসন করা । ৮) – মদখোর , ভোগবিলাসী পুত্র ঈয়াযীদকে খলীফা হিসাবে মনোনীত করা । ৯) – মুসলিম বাহিনীর লাশ হতে মস্তক বিছিন্ন এবং তা শহরে প্রর্দশন চালুকরন । ১০) – মিথ্যা হাদিস তৈরী , প্রচারকরনের মহা ব্যবস্থাকরন । ১১) – হযরত হুজুর ইবনে আদী (রাঃ) ও তার সাথীদের হত্যা করা । ১২) – রাসুল (সাঃ) এর হাদিস “সম্মাানীত স্বামীর জন্য সন্তান এবং বেশ্যার জন্য কিছুই না ” এর বিপরীতে জিয়াদকে ভাই হিসেবে ঘোষনা প্রদান । ১৩) – সকল ক্ষেত্রে উমাইয়া বংশের লোকদের প্রাধান্য দেয়া । এরা সারা মুসলিম সাম্রাজ্যে পাপাচার , অসমতা , অত্যাচার ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে । ১৪) – প্রাদেশিক শাসকদের অন্যায় কাজের বিরুদ্বে ব্যবস্থা না নেয়া । ১৫) – দাড়িয়ে খুৎবা প্রদানের বদলে বসে খুৎবা প্রদান । ১৬) – ঈদের নামাজে আযান প্রথা চালু করা । ১৭) – রেশমী বস্ত্র পরিধান করা । ১৮) – নবীজী (সাঃ) এর আমলের ফেৎরা প্রথার পরির্বতন করা । ১৯) – বায়তুল মালকে নিজের সম্পওি হিসেবে পরিগনিত করা । সুপ্রিয় পাঠক , দয়া করে ইতিহাস জানুন । এখানে শীয়া বা সুন্নি বিবেচ্য নয় । নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে ইতিহাসকে জানার চেষ্টা করুন , আজ এই পর্যন্ত । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

যে ভাবে হযরত আলী(আ)র কাছ থেকে বায়াত নেয় হয় প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।যেমন,তিনি হযরত জাফর সাদেক(আঃ) থেকে বর্ননা করেন যে,হযরত আলী(আঃ) বাইয়াত হননি যতক্ষন না গাঢ় ধোঁয়ায় তাঁর ঘর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে(তালখীছুশ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। এ পরযায়ে ১ম ৩টি প্রশ্নটি সম্পর্কে আমাদের আলোচনায় ইতি টানবো,আর বিচারের ভার ছেড়ে দেবো সজাগ ও সচেতন জনগনের ওপর।আর বাকী আলোচনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলীল প্রমানের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে নেবো। আলীকে(আঃ) যেভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটুকুও আগের অংশের ন্যায় বেদনাদায়ক ও তিক্তকর বটে।কেননা এটা কখনোই কল্পনীয় ছিল না যে,হযরত আলীর(আঃ) ন্যায় ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে যে,৪০ বছর পর মুয়াবিয়া তা নিয়ে কটাক্ষ করবেন।তিনি আমিরুল মু’মিনিন আলীকে(আঃ) লেখা তার পত্রে কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্বে ইমামের(আঃ) প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করে লিখেনঃ “........এমনকি খেলাফত প্রশাসনের কর্তারা আপনাকে জব্দ করে ফেলে এবং অবাধ্য উটের ন্যায় বাইয়াতের জন্য মসজিদে টেনে নিয়ে যায়”(ইবনে আবিল হাদিদ মুয়াবিয়ার পত্রের পুর্ন বিবরন উদ্বৃত করেছেন,শরহে নাহজুল বালাগাহ,১৫তম খন্ড,পৃঃ১৮৬)। আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) মুয়াবিয়ার পত্রের উত্তরে পরোক্ষভাবে মুল বিষয়টি মেনে নেন এবং এটাকে তাঁর মযলুম অবস্থার প্রমান বলে মনে করেন।তিনি বলেনঃ “তুমি বলেছো যে,আমাকে অবাধ্য উটের ন্যায় চালিত করে বাইয়াতের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।আল্লাহর শপথ,তুমি আমাকে কটাক্ষ করতে চেয়েছ।কিন্তু বাস্তবে তুমি আমাকে প্রশংশা করেছো।আর তুমি আমাকে অপদস্ত করতে চেয়েছ,কিন্তু অপদস্ত করেছো নিজেকে।মযলুম হওয়া কোন মুসলমানের জন্য দোষের কিছু নয়(নাহাজুল বালাগাহঃপত্র নং ২৮)। ইবনে হাদীদ একমাত্র ব্যক্তি নন যে, ইমামের(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতার এ কাহিনী বর্ননা করেছেন।বরং তাঁর আগে ইবনে আব্দে রাব্বি ইক্কদুল ফারীদ গ্রন্থে(২য় খন্ড,পৃঃ২৫৮) এবং তাঁর পরে “ছুবহুল আ’শী” গ্রন্থের গ্রন্থকারও(১ম খন্ড,পৃঃ১২৮) এ ঘটনা বর্ননা করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, ইবনে আবিল হাদীদ যখন নাহজুল বালাগায় ইমামের(আঃ) ২৮নং পত্রের ব্যাখ্যায় পৌছান তখন ইমামের(আঃ) পত্র ও মুয়াবিয়ার পত্রের বর্ননা প্রদান করেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন না।কিন্তু গ্রন্থের শুরুতে যখন ২৬তম পত্রের ব্যাখ্যা শেষ করেন তখন মুল ঘটনা অস্বীকার করে বলেনঃ “ এ ধরনের বিষয়াদি কেবল শিয়ারা বর্ননা করে থাকে।অন্যদের থেকে এরুপ বর্ননা আসেনি(শারহে নাহজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। হযরত ফাতিমার(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন ৩য় প্রশ্নটি ছিল এই যে হযরত আলির(আঃ) কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহনের ঘটনায় রাসুলাল্লাহর(সাঃ) প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমার (আঃ) প্রতি কি কোন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁকে কেন আঘাত করা হয়? শিয়া মনিষীবর্গের দৃষ্টিকোন থেকে এই প্রশ্নের উত্তর আগের ২টি প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে বেশী অপ্রীতিকর।কারন,খলিফার লোকেরা হযরত আলীকে(আঃ) মসজিদে নিয়ে যেতে চাইলে হযরত ফাতিমা(আঃ) বাধা হয়ে দাড়ান।তখন হযরত ফাতিমা(আঃ) তাঁর স্বামীকে নিয়ে যেতে না দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হন যা বর্ননা করার ভাষা নেই(কিতাবে সুলাইম বিন ক্কায়েস,পৃঃ৭৪ ও তদ পরবর্তী)। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মনীষীগন খলিফাগনের অবস্থান বজায় রাখার স্বার্থে ইতিহাসের এ অংশটি বর্ননা করা থেকে বিরত থেকেছেন।এমন কি ইবনে আবিল হাদীদও এটাকে সেসব বিষয়ভুক্ত করেছেন যা কেবল শিয়ারাই বর্ননা করে থাকে(শারহে নাহাজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা বলেনঃ “প্রথম দিকে হাদিসবেত্তাগন ও ইতিহাস লেখকগন নবী দুলালীর প্রতি প্রদর্শিত ধৃষ্টতার কথা বর্ননা করতে অস্বীকৃ্তি জানাতেন না।তাঁদের মধ্যে এ বিষয়টি প্রসিদ্ব ছিল যে,খলিফার আজ্ঞাবাহী ধাক্কা দিয়ে ঘরের দরযাটি ভেঙ্গে হযরত ফাতিমার(আঃ) উপর ফেলে দেয় এবং তা তাঁর গর্ভস্থিত সন্তানের গর্ভপাতের কারন হয়। আর কুনফুয হযরত ওমরের নির্দেশে ফাতিমা যাহরাকে(আঃ) চাবুকের আঘাত করতে থাকে যাতে তিনি হযরত আলীকে(আঃ) ছেড়ে দেন।কিন্তু তাঁরা পরবর্তীতে দেখলেন যে,এসব কথা বর্ননা করা খলিফাদের পদ ও অবস্থানের পরিপন্থী,সেকারনে তা বর্ননা করা থেকে বিরত থাকলেন”(তালখীশুছ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। সায়েদ মুর্তাযার বক্তব্যের সাক্ষ্য হলো এই যে, অনেক সতররতা ও নিয়ন্ত্রন আরোপ সত্বেও এসব ঘটনার কথা তাঁদের কিছু কিছু গ্রন্থে চোখে পড়ে।শাহরিস্থানী মু’তাজিলা নেতা ইব্রাহীম ইবনে সাইয়্যার ওরফে গ্বিতাম থেকে বর্ননা করেন যে তিনি বলতেনঃ “হযরত ওমর বাইয়াত গ্রহনের দিনগুলোতে(এর কোন এক দিন) হযরত ফাতিমার(আঃ) পাজরের ওপরে দরযা ফেলে দেন।ফলে তাঁর গর্ভশ্তিত সন্তানের গর্ভপাত ঘটে।তিনি বাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন তাঁদের সমেত ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতেও নির্দেশ দেন,যদিও ঘরে ভেতর হযরত আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন(আঃ) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না”(আল-মেলাল ওয়ান-নেহাল,২য় খন্ড,পৃঃ৯৫ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

রেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস — ভিত্তিহীন একটি হাদিস । একটি বহুল প্রচলিত মুরছাল হাদিস এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা — মহানবী (সাঃ) তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে সমগ্র উম্মতগনের জন্য বললেন যে , ” — রেখে গেলাম পবিত্র কোরআন এবং আমার সুন্নাহ বা হাদিস ——- ” । প্রিয় পাঠক , উপরে উল্লেখিত হাদিসটি আমাদের চারিপাশে প্রচলিত ইসলামে সর্বাধিক প্রচারিত একটি জনপ্রিয় একটি হাদিস । হাদিসটি আমাদের সম্মাানীয় আলেম ওলামাগন বিভিন্ন ওয়াজে , টিভি প্রোগ্রামে বয়ান করে থাকেন । বেশ ভাল কথা । তো এবারে আমাদের সম্মাানীয় আলেমগনের পক্ষ থেকে সর্বাধিক প্রচারিত হাদিসটির রেফারেন্স খুঁজতে যেয়ে পবিত্র কোরআনের ঠিক পরেই সবথেকে নির্ভরযোগ্য সহীহ আল বুখারি শরীফ এবং সহীহ আল মুসলিম শরীফে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না । এমনকি সহীহ তিরমিজি শরীফ , আবু দাউদ শরীফ , ইবনে মাজাহ এবং নাসায়ি শরীফেও এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল না । মোটকথা এই যে , সহীহ সিহাহ সিত্তাহ হাদিসগ্রন্থ সমূহে এই হাদিসটির কোন অস্তিত্ব নেই । স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে যে , সর্বাধিক প্রচারিত ও বাজারজাতরন কৃত জনপ্রিয় এই হাদিসটি তাহলে কোথায় আছে ? গবেষনায় দেখা গেল যে , হাদিসটি আছে মুয়াত্তা মালেকি তে । হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মালেক বিন আনাস (রঃ) । কে ছিলেন এই মালেক বিন আনাস (রাঃ) ? উনি সাহাবি ছিলেন না । উনি ছিলেন তাবেঈন । সংগত কারনে আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এর বিদায় হজ্ব ভাষণের সময় উনি উপস্থিত ছিলেন না । তাছাড়া হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে নি । অর্থাৎ উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী হাদিসটি মুরসাল । মূরসাল হাদীস হচ্ছে যেই হাদীসের রাবিদের পরম্পরায় একজন বা একটি জেনারেশান বাদ পড়ে গেছে । অন্য দলীল না থাকলে মূরসাল হাদীস গ্রহনযোগ্য নয় । পাঠক , এবারে জেনে নিন যে , প্রকৃত সত্য তাহলে কোনটি । হাদিসে সাকালাইন নামে এই হাদিসটি বহুল প্রচারিত — মহানবী (সাঃ) বলেন যে – ” হে মানবসকল , নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে অতীব গুরুত্বপূর্ন দুটি ভারী জিনিষ (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি , যদি এই দুইটি আঁকড়ে ধরে থাক তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । প্রথমটি হচ্ছে , পবিত্র কোরআন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আমার ইতরাত , আহলে বাইত (রক্তজ বংশধর) । নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিষ হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনই পরস্পর থেকে বিছিন্ন হবে না ” । সূত্র – সহীহ তিরমিজি , খন্ড – ৬ , হাদিস – ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড – ১১ , হাদিস – ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ১৮১ , ৩৯৩ (ইসলামিচ ফাউন্ডেশন) / তাফসীরে হাক্কানী (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ) , পৃষ্ঠা – ১২ , ১৩ (হামিদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ (মাওলানা আমিনুল ইসলাম) / মাদারেজুন নাবুয়াত , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ১১৫ (শায়খ আব্দুল হক দেহলভী) / ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ) , খন্ড – ১ , পৃষ্ঠা – ৫৬৬ / মুসলিম মুসনাদে আহমদ / নাসাঈ / কানযুল উম্মাল / তাফসীরে ইবনে কাছির / মিশকাতুল মাছাবিহ / তাফসীরে কবির । সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষন – পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্তি পাওয়ার সনদ হচ্ছে , মহানবী (সাঃ) এর রক্তজ বংশধর তথা পুতঃপবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও অানুগত্য করা । এই সাবধান বানী মহানবী (সাঃ) সেই সময় সকল সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন । অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য করা সকল সাহাবীগনের জন্যও বাধ্যতামূলক ছিল । এই অবস্থায় আমরা যদি মহানবী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গনের অনুসরন ও আনুগত্য না করি , তাহলে পথভ্রষ্টতা থেকে আদৌ কি মুক্তি পাব ? আল্লামা সানাউল্লাহ পানিপথী তার তাফসীরে মাযাহারীতে লিখেছেন – ” নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) এর কথা এজন্যে তাগিদ করেছেন যে , হেদায়েত ও ইমামত তথা বেলায়েতের বিষয় আহলে বাইত (আঃ) গনই একমাত্র পথপ্রর্দশক ” । সূত্র – তাফসীরে মাযহারী , খন্ড – ২ , পৃষ্ঠা – ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৪ , পৃষ্ঠা – ৩৩ । বিশ্লেষন — উসুলে হাদিসের নীতিমালা অনুযায়ী এই হাদিসে সাকালাইন হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ । সবথেকে অবাক করা বিষয় এই যে , প্রচলিত ইসলামে একটি মুরসাল হাদিস নিয়ে অনেক আলোচনা , ব্যাপক প্রচার ও বাজাতজাতকরন হয় । কিন্ত অতীব দুঃখের বিষয় হল যে , এতগুলো সনদে উল্লেখ থাকা সত্বেও বিশুদ্ব সহীহ এই হাদিসটি নিয়ে আলোচনা খুবই কম হয় ! নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ) গন তথা নবী বংশ নিয়ে আলোচনা এত কম হয় কেন ? পরিশেষে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত মনে করিয়ে দিয়ে আপাঃতত বিদায় – “ — এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না অথবা সত্যকে গোপন কর না যখন তোমরা জান – “ । সুরা – বাকারা / ৪২ । পাঠক , বহুল প্রচারিত একটি মুরছাল হাদিসের বিপরীতে আসুন আমরা গ্রহন করে নেই সর্বাধিক বিশুদ্ব রেওয়ায়েত সমৃদ্ব সহীহ হাদিসকে । প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

আমি শিয়া!! আলীর শিয়া নই!! নূহের শিয়া!! ইব্রাহিম (আঃ) ছিলেন নূহ (আঃ)-এর অনুসারী বা 'শিয়া' শিয়া শব্দের অর্থ কি এবং কাদেরকে শিয়া বলা হয় এই বিষয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই সুস্পষ্ট ধারনা নাই। যার জন্য আমরা 'শিয়া' বলে গালি দেই বা মন্তব্য করি। কিন্তু 'শিয়া' শব্দের অর্থ কি তা আমরা জানিনা। আসুন দেখি কুরআন কি বলেছে!!! 'শিয়া' আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ অনুসারী। অর্থাৎ 'শিয়া' শব্দের অর্থ হল অনুসারী। কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ ﻭَﺇِﻥَّ ﻣِﻦ ﺷِﻴﻌَﺘِﻪِ ﻟَﺈِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ অনুবাদঃ ওয়া'ইন্না মিন শিয়াতিহি লা ইব্রাহিম। অর্থঃ আর ইব্রাহিম ছিল নূহের একজন অনুসারী বা নূহ পন্থীদেরই একজন। ***সূরা আস-সাফফাতঃ আয়াত-৮৩। 'শিয়া' সম্পৰ্কে সংগৃহিত দলিলঃ ইসলামী পরিভাষায় শিয়া বলতে মুসলমানদের সেই দলকে বুঝানো হয় যারা বিশ্বাস করেন, রাসূল (সাঃ) ইন্তেকালের আগে বিভিন্ন যায়গায় বিশেষ করে দশম হিজরীর ১৮ই যিলহজ্ব 'গাদির খুম' নামক স্থানে হযরত আলী (রাদিঃ)- কে নিজের প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন। তাদের মতে, বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁর মৃত্যুর পর হযরত আলী (রাদিঃ)- কে সুস্পষ্টভাবে নিজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং খলিফা নির্ধারণ করে যান। গাদীরে খুমের এ হাদিসটি হাদিসে মুতাওয়াতিরের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ মুসলিম ও বুখারী - দুটি হাদিসগ্রন্থেই এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। শিয়া আলেমদের পাশাপাশি প্রায় ৩৬০ জন বিশিষ্ট সুন্নি আলেম ও পণ্ডিত এ হাদিসটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। হাদিসটি বিশ্বনবী (সাঃ)- এর ১১০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। হাদিসের সূত্রঃ রেডিও তেহরান/ এএস/ এমআই/২০ মন্তব্যঃ উপরের হাদিসের সত্যতা সম্পৰ্কে আমার জানা নাই। যেভাবে পেয়েছি আমি সবার অবগতির জন্য সেইভাবেই পোষ্ট করলাম। যদি হাদিসটি সম্পৰ্কে কোন দ্বীনি বন্ধুর মতামত থাকে তাহলে মেহেরবানী করে মন্তব্য করুন। তবে, কুরআনের আয়াত কুরআন থেকে নিয়েছি। আমার নিজের কিছু কথা সংযোজন করেছি। মূলকথা হলঃ আমরা মুসলিমরা সবাই ইব্রাহিম (আঃ) এবং বিশ্বনবী (সাঃ)- এর 'শিয়া' বা অনুসারী কপি পেস্ট

ইসলামের অনন্য মহানায়ক ইমাম রেজা (আ.) ১১ ই জিলকাদ ইসলামের ইতিহাসের এক মহা-খুশির দিন। কারণ, ১৪৮ হিজরির এই দিনে মদিনায় ইমাম মুসা ইবনে জাফর সাদিক (আ.)'র ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.)। তাঁর পবিত্র ও কল্যাণময়ী মায়ের নাম ছিল উম্মুল বানিন নাজমা। ১৮৩ হিজরিতে খলিফা হারুনের কারাগারে পিতা ইমাম কাজিম (আ.)'র শাহাদতের পর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে মুসলিম উম্মাহর ইমামতের ঐশী দায়িত্ব গ্রহণ করেন ইমাম রেজা (আ.)। এই মহান ইমামের জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে ইমাম রেজা (আ.)'র জন্মদিনের তাবাররুক হিসেবে তাঁর জীবনের প্রধান কিছু ঘটনা ও প্রকৃত ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাঁর অমর অবদান তুলে ধরার চেষ্টা করব আজকের এই বিশেষ আলোচনায়। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইত তথা মাসুম বংশধররা ছিলেন খোদায়ী নানা গুণ ও সৌন্দর্যের প্রকাশ। তাঁরা ছিলেন মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ বা পরিপূর্ণ আদর্শ। তাঁদের মহত গুণ ও যোগ্যতাগুলো সত্য-সন্ধানী এবং খোদা-প্রেমিকদের জন্য অফুরন্ত শিক্ষা ও প্রেরণার উতস হয়ে আছে। শেখ সাদুক ইমাম রেজা (আ.) সম্পর্কে এক বইয়ে লিখেছেন, অসাধারণ নানা গুণ ও যোগ্যতার জন্য আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) রেজা বা সন্তুষ্ট, সাদিক বা সত্যবাদী, ফাজেল বা গুণধর, মু'মিনদের চোখের প্রশান্তি বা আলো ও কাফির বা অবিশ্বাসীদের ক্ষোভের উতস প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তবে আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.)'র একটি বড় উপাধি হল 'আলেমে আ'লে মুহাম্মাদ' বা মুহাম্মাদ (সা.)'র আহলে বাইতের আলেম। ইমাম রেজা (আ.)'র পিতা ইমাম মুসা কাজিম (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন, আমার বাবা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আমাকে বার বার বলতেন যে, আলে মুহাম্মাদের আলেম বা জ্ঞানী হবে তোমার বংশধর। আহা! আমি যদি তাঁকে দেখতে পেতাম!তাঁর নামও হবে আমিরুল মু'মিনিন (আ.)'র নাম তথা আলী। প্রায় হাজার বছর আগে লিখিত 'শাওয়াহেদুন্নবুওয়াত' নামক বইয়ে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, যারা ইরানের খোরাসানে অবস্থিত (যার বর্তমান নাম মাশহাদ) ইমাম রেজা (আ.)'র মাজার জিয়ারত করবে তারা বেহেশতবাসী হবে। বিশিষ্ট কবি ও আধ্যাত্মিক সাধক মাওলানা আবদুর রহমান জামির লিখিত এই বইটি বহু বছর আগে বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে (মাওলানা মহিউদ্দিনের মাধ্যমে) (পৃ.১৪৩-১৪৪)। [এ বইয়ের ২৭২ পৃষ্ঠায় পবিত্র কোম শহরে অবস্থিত হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.)’র পবিত্র মাজার জিয়ারত সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়েছে। এই ফাতিমা মাসুমা ছিলেন ইমাম রেজা-আ.’র ছোট বোন। মাসুমা বা নিষ্পাপ ছিল তাঁর উপাধি।] বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইরানের খোরাসানে তাঁর শরীরের একটি অংশকে তথা তাঁর পবিত্র বংশধারা বা আহলে বাইতের একজন সদস্যকে দাফন করা হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। নবীবংশের প্রত্যেক ইমামের জীবনই যেন মহাসাগরের মতই মহত গুণ, জ্ঞান, আর কল্যাণের নানা ঐশ্বর্যে কুল-কিনারাহীন এবং শাহাদাতের স্বর্গীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ভাষ্য অনুযায়ী ইমামদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রাজনৈতিক সংগ্রাম। ইসলামের মধ্যে নানা বিকৃতি চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের ইমামগণ। হিজরি প্রথম শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইসলামি খেলাফত যখন সুস্পষ্টভাবেই রাজতন্ত্রের রূপ নেয় এবং ইসলামী নেতৃত্ব জোর- জুলুমপূর্ণ বাদশাহিতে রূপান্তরিত হয়, তখন থেকেই আহলে বাইতের সম্মানিত ইমামগণ সময়োপযোগী পদ্ধতিতে বিদ্যমান সকল অব্যবস্থা বা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তাঁদের রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে থাকেন। তাঁদের এইসব রাজনীতির বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত ইসলামি সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং ইমামতের ভিত্তিতে হুকুমাত প্রতিষ্ঠা করা। কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের সব ধরনের চরম অত্যাচার-নিপীড়নের মুখেও তাঁরা তাঁদের এই ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁদের শাহাদাতের পবিত্র রক্ত থেকে জন্ম দিয়েছে খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের লক্ষ-কোটি অনুসারী। শাহাদতের বেহেশতি গুল বাগিচার পথ ধরে ইমামতের সেই ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে এবং তাঁদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরিগণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আজো তৎপর রয়েছে। ইমামতের নুরানি জ্যোতিতে অলোকময় পৃথিবী তাঁদের নির্ভুল দিক-নির্দেশনায় খুঁজে পাচ্ছে প্রকৃত ইসলামের সঠিক দিশা। ইমামের পবিত্র জন্মবার্ষিকী তাই গোটা মুসলিম উম্মাহর মুক্তির স্মারক। ইমাম রেজা (আ.)'র ইমামতির সময়কাল ছিল বিশ বছর। এই বিশ বছরে আব্বাসীয় তিনজন শাসক যথাক্রমে বাদশাহ হারুন এবং তার দুই পুত্র আমিন ও মামুনের শাসনকাল অতিক্রান্ত হয়েছিল। ইমাম রেজা (আ.) তাঁর পিতা ইমাম মূসা কাজিম (আ.)’র নীতি-আদর্শকে অব্যাহত গতি দান করেন। ফলে ইমাম মূসা কাজিম (আ.)’র শাহাদাতের পেছনে যেই কারণগুলো দেখা দিয়েছিল, স্বাভাবিকভাবেই ইমাম রেজা (আ.)ও সেই কারণগুলোর মুখোমুখি হন। অর্থাৎ কায়েমি স্বার্থবাদি মহলের নেপথ্য রোষের মুখে পড়েন তিনি। আব্বাসীয় রাজবংশে বাদশা হারূন এবং মামুনই ছিল সবচে পরাক্রমশালী এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারা প্রকাশ্যে ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির কথা বলে বেড়াতেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইমামদের রক্তের তৃষ্ণায় তৃষিত ছিলেন। ইমামদের প্রতি তাঁদের এ ধরনের আচরণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। এক, আহলে বাইত প্রেমিক বা নবীবংশ প্রেমিকদের আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া, এবং দুই শিয়া মুসলমানদের মন জয় করা। ইমামদের সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ থাকলে জনগণের কাছে তাদের শাসনও বৈধ বলে গৃহীত হবে-এ ধরনের চিন্তাও ছিল তাদের মনে। কারণ, মুসলমানরা যদি দেখে যে, বিশ্বনবী (সা.)’র নিষ্পাপ বংশধরগণ তথা হযরত আলীর (আ) পরিবারবর্গের প্রতি বাদশাহর সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে, তাহলে তারা আব্বাসীয়দের শাসনকে বৈধ মনে করে খুশি হবে, ফলে তারা আর বিরোধিতা করবে না। এরফলে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে। ইমাম রেজা (আ.) শাসকদের এই দুরভিসন্ধিমূলক রাজনীতি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁর কৌশলটি ছিল এমন, যার ফলে একদিকে বাদশা মামুনের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়, অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের জনগণও প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। আর সেই সত্য হলো এই যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র নবী পরিবারের নিষ্পাপ বা পবিত্র ইমামগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং তাঁরা ছাড়া কেউ ঐ পদের যোগ্য নয়। জনগণের মাঝে এই সত্য প্রচারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাদশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে-এই আশঙ্কায় ধূর্ত মামুন ইমাম রেজাকে (আ) সবসময়ই জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শুধু ইমাম রেজা (আ.) নন প্রায় সকল ইমামকেই এভাবে গণ-বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা তাঁদেরকে গৃহবন্দী করাসহ কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তারপরও নিষ্পাপ ইমামদের সুকৌশলের কারণে তাঁদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়। আর জনগণের কাছে মহান ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে জনগণ প্রকৃত সত্য বুঝতে পারে, এবং নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকে। বিশেষ করে বাদশাহ মামুনের অপততপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেজা (আ.) যখন দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন ইরাকের অধিকাংশ জনগণ মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। হযরত আলী(আ.)’র পবিত্র খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহি যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষ-নীতির কৌশল গ্রহণ করে। বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়েছে । বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। উল্লেখ্য যে, নবীবংশের মধ্যে ইমাম রেজা(আ.)ই প্রথম ইরান সফর করেন। যাই হোক, যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাঁকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। ইমামও নবী করিম (সা.), তাঁর আহলে বাইত ও নিষ্পাপ ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান। চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলেন, হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি , আলী বিন মূসা বিন রেজার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে , খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করবো। ইমাম, মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন। তাই তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন, তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারী না হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই। ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হতে বাধ্য করে। ইমাম রেজা (আ.) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করেন। শর্তগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ছিল এরকম-এক, তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না। দূরে থেকে তিনি খেলাফতের সম্পর্ক রক্ষা করবেন। তিনি কেন এ ধরনের শর্তারোপ করেছিলেন , তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তাঁর মোনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন - হে খোদা ! তুমি ভালো করেই জানো , আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল ( আ ) কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ছাড়া আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি, তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি। ইমাম রেজা র এই দায়িত্ব গ্রহণের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে আব্বাসীয়রা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তারা ভেবেছিল, খেলাফত বুঝি চিরদিনের জন্যে আব্বাসীয়দের হাত থেকে আলীর (আ) বংশধরদের হাতে চলে গেল। তাদের দুশ্চিন্তার জবাবে বাদশা মামুন তার আসল উদ্দেশ্যের কথা তাদেরকে খুলে বলে। তা থেকেই বোঝা যায়, যেমনটি আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ইমামকে খোরাসানে আমন্ত্রণ জানানো এবং তাঁর পরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পেছনে মামুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, শিয়াদের বৈপ্লবিক সংগ্রামকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। যাতে তাদের উত্তাল রাজনীতিতে ভাটা পড়ে যায়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি ছিল আব্বাসীয় খেলাফতকে বৈধ বলে প্রমাণ করা। তৃতীয়ত, ইমামকে উত্তরাধিকার বানানোর মাধ্যমে নিজেকে একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও মহান উদার হিসেবে প্রমাণ করা। তো মামুনের এই অশুভ উদ্দেশ্যের কথা জানার পর আব্বাসীয়রা ইমামকে বিভিন্নভাবে হেয় ও মর্যাদাহীন করে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ ইমামকে তারা কিছুতেই অপদস্থ করতে পারে নি। যেমন, বিভিন্ন ধর্মের জ্ঞানী ও পণ্ডিতদের মাধ্যমে জটিল প্রশ্নের অবতারণা করে ইমাম রেজা (আ.)-কে জব্দ করার চেষ্টা, কিংবা ক্ষরা-পীড়িত অঞ্চলে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য ইমামকে দিয়ে এই আশায় দোয়া করানো যে দোয়া কবুল না হলে ইমামের মর্যাদা ধূলিসাৎ হবে। কিন্তু ইমাম প্রতিটি জ্ঞানগত বিতর্কে বিজয়ী হতেন এবং বৃষ্টির জন্য করা তাঁর দোয়াও কবুল হয়েছিল। বাদশাহ মামুন একবার তার সাপ্তাহিক প্রশ্নোত্তরের আসরে ইমামকে আমন্ত্রণ জানালেন। সেখানে ইমাম কোনো এক প্রেক্ষাপটে মামুনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিমত দেন। এতে বাদশা ভীষণ ক্ষেপে যান এবং ইমামের বিরুদ্ধে অন্তরে ভীষণ বিদ্বেষ পোষণ করতে থাকেন। এইভাবে ইমামত, জনপ্রিয়তা, খেলাফত, আলীর বংশধর প্রভৃতি বিচিত্র কারণে বাদশাহ ইমামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে থাকে। অন্যদিকে জনগণ বুঝতে পারে যে, খেলাফতের জন্যে মামুনের চেয়ে ইমামই বেশি উপযুক্ত। ফলে ইমামের বিরুদ্ধে মামুনের ক্রোধ এবং হিংসা বাড়তেই থাকে। আর ইমামও মামুনের বিরুদ্ধে অকপট সত্য বলার ক্ষেত্রে নির্ভীক ছিলেন। কোনোভাবেই যখন ইমামকে পরাস্ত করা গেল না, তখন মার্ভ থেকে বাগদাদে ফেরার পথে ইরানের বর্তমান মাশহাদ প্রদেশের তূস নামক অঞ্চলে মামুন ইমামকে ডালিমের রস বা আঙ্গুরের সাথে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে হৃদয়-জ্বালা মেটাবার উদ্যোগ নেয়। ২০৩ হিজরির ১৭ই সফরে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। তখন ইমামের বয়স ছিল পঞ্চান্ন বছর। আসলে বিষ প্রয়োগে ইমামের সাময়িক মৃত্যু ঘটলেও আসল মৃত্যু ঘটেছিল মামুনেরই। পক্ষান্তরে ইমাম শাহাদাতের পেয়ালা পান করে যেন অমর হয়ে গেলেন চিরকালের জন্যে। তার প্রমাণ মেলে মাশহাদে তাঁর পবিত্র সমাধিস্থলে গেলে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইমামের জন্মদিনে কাতারে কাতারে মানুষ আসে তাঁর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। সোনালি রঙ্গের সমাধি-ভবনের চারপাশ জাঁকজমক আর অপূর্ব ঐশ্বর্যে কোলাহল-মুখর হয়ে ওঠে নিমেষেই। যুগ যুগ ধরে মানুষের নেক-বাসনা পূরণের উসিলা হিসেবে কিংবদন্তীতুল্য খ্যাতি রয়েছে নবীবংশের ইমামগণের। ইমাম রেজা (আ.) ও তাঁর পবিত্র মাজারও এর ব্যতিক্রম নয়। কেনো ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইমামের মাযারে এসে ভিড় জমান? এ সম্পর্কে যিয়ারতকারীগণ বিভিন্নভাবে তাঁদের আবেগ-অনুভূতি জানিয়েছেন। একজন বলেছেন, আমি যখনই বা যেখানেই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হই, তখনই ইমাম রেজা (আ.)’র মাজারে চলে আসি। এখানে এসে আল্লাহর দরবারে সমস্যার সমাধান চেয়ে দোয়া করি। আমি বহুবার লক্ষ্য করেছি , ধর্মীয় এবং পবিত্র স্থানসমূহ বিশেষ করে ইমাম রেজা (আ.)’র পবিত্র মাযারে এলে মনোবেদনা ও সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিতে অন্তর ভরে যায়। মনের ভেতর নবীন আশার আলো জেগে ওঠে। এভাবে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও আন্তরিক প্রশান্তির কথা বলেছেন। জীবিতাবস্থায় যিনি মানুষের কল্যাণে ছিলেন আত্মনিবেদিত, শহীদ হয়েও তিনি যে অমরত্মের আধ্যাত্মিক শক্তিবলে একইভাবে মানব-কল্যাণ করে যাবেন-তাতে আর বিস্ময়ের কী আছে! ইমাম রেজা (আ.)'র যুগে মুসলমানরা গ্রিক দর্শনসহ ইসলাম-বিরোধী নানা মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। এ সময় মুসলমানদের শাসক ছিলেন আব্বাসিয় খলিফা মামুন। সে ছিল আব্বাসিয় শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে ধূর্ত ও জ্ঞানী। সমসাময়িক নানা বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ছিল। আমরা আগেই বলেছি মামুন ইমাম রেজা (আ.)-কে ইরানের মার্ভ অঞ্চলে নিয়ে এসেছিলেন। মার্ভ শহর ছিল মামুনের রাজধানী। সে এই মহান ইমামের উপস্থিতিতে বিভিন্ন অঞ্চলের জ্ঞানী-গুণীদের নিয়ে জ্ঞানের নানা বিষয়ে অনেক বৈঠক করতেন। বিশেষজ্ঞ বা পণ্ডিতদের দিয়ে ইমাম রেজা (আ.)-কে জব্দ করাই ছিল এইসব বৈঠকের আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু ইমাম রেজা (আ.) নানা ধরনের কঠিন প্রশ্ন ও জটিল বিতর্কের এইসব আসরে বিজয়ী হতেন এবং বিতর্ক শেষে ওইসব পণ্ডিত ও জ্ঞানীরা ইমামের শ্রেষ্ঠত্বও অকাট্য যুক্তির কথা স্বীকার করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। খলিফা মামুন হযরত ইয়াহিয়া (আ.)'র অনুসারী হওয়ার দাবিদার তথা সাবেয়ি ধর্মের এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে একবার নিয়ে আসেন এ ধরনের এক বিতর্কের আসরে। সেখানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও অগ্নি-উপাসকদের পণ্ডিতরাও উপস্থিতি ছিল। এই আসরে ইমাম রেজা (আ.) ইসলামের বিরোধিতা সম্পর্কে কারো কোনো বক্তব্য, যুক্তি বা প্রশ্ন থাকলে তা তুলে ধরার আহ্বান জানান এবং তিনি এর জবাব দেবেন বলে ঘোষণা করেন। ইমরান নামের ওই সাবেয়ি পণ্ডিত অবজ্ঞাভরে বলল: "তুমি যদি না চাইতে তবে তোমার কাছে আমি প্রশ্ন করতাম না। আমি কুফা, বসরা, সিরিয়া ও আরব দেশে গিয়েছি এবং তাদের সব দার্শনিক বা যুক্তিবাদীদের সঙ্গে বিতর্ক করেছি। কিন্তু তাদের কেউই প্রমাণ করতে পারেনি যে আল্লাহ এক ও তিনি ছাড়া অন্য কোনো খোদা নেই এবং তিনি এই একত্বের মধ্যে বহাল রয়েছেন। এ অবস্থায় আমি কি তোমার কাছে প্রশ্ন করতে পারি? ইমাম রেজা (আ.) বললেন, যত খুশি প্রশ্ন করতে পার। ফলে সে ইমামকে বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন করে। ইমাম রেজা (আ.)ও বহু সংখ্যক পণ্ডিত ও বিপুল দর্শকদের উপস্থিতিতে একে-একে ইমরানের সব প্রশ্নের এত সুন্দর জবাব দিলেন যে ওই সাবেয়ি পণ্ডিত সেখানেই মুসলমান হয়ে যান। ইমাম রেজা (আ.) বিতর্কে অংশগ্রহণকারী পণ্ডিতদের ধর্ম-বিশ্বাস ও মতবাদে উল্লেখিত দলিল-প্রমাণের আলোকেই তাদের প্রশ্নের জবাব দিতেন। একবার খলিফা মামুন বিখ্যাত খ্রিস্টান পণ্ডিত জাসলিককে বললেন ইমাম রেজা (আ.)’র সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হতে। জাসলিক বললেন, আমি কিভাবে তাঁর সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হব যখন তাঁর ধর্মগ্রন্থ তথা কুরআন ও এর দলিল-প্রমাণের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই এবং তিনি যেই নবীর বক্তব্যকে দলিল-প্রমাণ হিসেবে পেশ করবেন তাঁর প্রতিও আমার ঈমান নেই। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, যদি ইঞ্জিল তথা বাইবেল থেকে দলিল-প্রমাণ তুলে ধরি তাহলে কি আপনি তা গ্রহণ করবেন? জাসলিক বললেন, হ্যাঁ। আসলে ইমাম উভয়-পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে জাসলিকের সঙ্গে বিতর্ক করলেন। বিতর্কে জাসলিক এতটা প্রভাবিত হলেন যে তিনি বললেন: খ্রিস্ট বা ঈসার কসম, আমি কখনও ভাবিনি যে মুসলমানদের মধ্যে আপনার মত কেউ থাকতে পারেন। ইমাম রেজা (আ.)ইহুদি সর্দার ও পণ্ডিত রাস উল জালুত-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, মুসা (আ.)’র নবী হওয়ার দলিল বা প্রমাণ কী? রাস উল জালুত বললেন, তিনি এমন মু’জিজা বা অলৌকিক নিদর্শন এনেছেন যে তাঁর আগে আর কেউই তেমনটি আনতে পারেনি। ইমাম প্রশ্ন করলেন: কেমন সেই মো’জেজা? জালুত বললেন: যেমন, সাগরকে দুই ভাগকরে মাঝখানে পথ সৃষ্টি করা, হাতের লাঠিকে সাপে পরিণত করা, পাথরে ওই লাঠি দিয়ে আঘাত করে কয়েকটি ঝর্ণা বইয়ে দেয়া, হাত সাদা করা এবং এ রকম আরো অনেক মু’জিজাবা অলৌকিক নিদর্শন; আর অন্যরা এর মোকাবেলায় কিছু করতে পারত না ও এখনও তার চেয়ে বেশি ক্ষমতা কারো নেই। জবাবে ইমাম রেজা (আ.) বললেন, এটা ঠিকই বলেছেন যে, হযরত মুসা (আ.)’র আহ্বানের সত্যতার প্রমাণ হল, তিনি এমন কিছু কাজ করেছেন যা অন্যরা করতে পারেনি; তাই কেউ যদি নবুওতের দাবিদার হনও এমন কিছু কাজ করেন যা অন্যরা করতে পারেন না, এ অবস্থায় তাঁর দাবিকে মেনে নেয়া কি আপনার জন্য ওয়াজিব বা অপরিহার্য নয়? ইহুদি আলেম বললেন: না, কারণ আল্লাহর কাছে উচ্চ অবস্থান ও নৈকট্যের দিক থেকে কেউই মুসা নবীর সমকক্ষ নয়। তাই কেউ যদি মুসা নবীর মত মু’জিজা বা অলৌকিক নিদর্শন দেখাতে না পারেন তাহলে তাকে নবী হিসেবে মেনে নেয়া আমাদের তথা ইহুদিদের জন্য ওয়াজিব নয়। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, তাহলে মুসা নবী (আ.)’র আগে যে নবী-রাসূলবৃন্দ এসেছেন তাঁদের প্রতি কিভাবে ঈমান রাখছেন? তাঁরা তো মুসা (আ.)’র অনুরূপ মু’জিজা আনেননি। রাস উল জালুত এবার বললেন, ওই নবী-রাসূলবৃন্দ যদি তাঁদের নবুওতের সপক্ষে মুসা নবীর মু’জেজার চেয়ে ভিন্ন ধরনের মু’জিজা দেখাতে পারেন তাহলে তাদের নবুওতকে স্বীকৃতি দেয়ায়ও ওয়াজিব বা জরুরি। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, তাহলে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)’র প্রতি কেন ঈমান আনছেন না? অথচ তিনি তো মৃতকে জীবিত করতে পারতেন, অন্ধকে দৃষ্টি দান করতেন, চর্ম রোগ সারিয়ে দিতেন, কাদা দিয়ে পাখি বানিয়ে তাতে ফু দিয়ে জীবন্ত পাখিতে পরিণত করতেন। রাস উল জালুত এবার বললেন, তিনি এইসব কাজ করতেন বলে বলা হয়ে থাকে, তবে আমরা তো দেখিনি। ইমাম রেজা (আ.) বললেন, আপনারা কি মুসা নবী (আ.)’রমু’জিজা দেখেছেন? এইসব মু’জিজার খবর কি আপনাদের কাছে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে পৌঁছেনি? - জি হ্যাঁ, ঠিক তাই। বললেন রাস উল জালুত - ইমাম রেজা (আ.) বললেন, "ভালো কথা, তাহলে ঈসা (আ.)’র মু’জিজাগুলোর নির্ভরযোগ্য খবরও তো আপনাদের কাছে বলা হয়েছে। কিন্তু এ অবস্থায় আপনারা মুসা নবী (আ.)-কে নবী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনলেও ঈসা (আ.)’র প্রতি ঈমান আনছেন না। "তিনি আরো বললেন, "বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র নবুওতসহ অন্যান্য নবী-রাসূলদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের নবী (সা.)র অন্যতম মু’জিজা হল এটা যে তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র ইয়াতিম ও রাখালের কাজ করে পারিশ্রমিক নিতেন। তিনি কোনো পড়াশুনা করেননি এবং কোনো শিক্ষকের কাছেও আসা-যাওয়া করেননি। কিন্তু তারপরও তিনি এমন এক বই এনেছেন যাতে রয়েছে অতীতের নবী-রাসূলদের কাহিনী ও ঘটনাগুলোর হুবহু বিবরণ। এতে রয়েছে অতীতের লোকদের খবর এবং কিয়ামত পর্যন্ত সুদূর ভবিষ্যতের খবর। এ বই অনেক নিদর্শন ও অলৌকিক ঘটনা তুলে ধরেছে।" এভাবে রাস উল জালুতের সঙ্গে ইমাম রেজা (আ.)’র আলোচনা চলতে থাকে। সংলাপ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে ইহুদি সর্দার ও পণ্ডিত রাস উল জালুত ইমাম রেজা (আ.)-কে বললেন: "আল্লাহর কসম! হে মুহাম্মদের সন্তান (বংশধর)! ইহুদি জাতির ওপর আমার নেতৃত্বের পথে যদি বাধা হয়ে না দাঁড়াত তাহলে আপনার নির্দেশই মান্য করতাম। সেই খোদার কসম দিয়ে বলছি, যে খোদা মুসার ওপর নাজেল করেছেন তাওরাত ও দাউদের ওপর নাজেল করেছি যাবুর। এমন কাউকে দেখিনি যিনি তাওরাত ও ইঞ্জিল আপনার চেয়ে ভালো তিলাওয়াত করেন এবং আপনার চেয়ে ভালোভাবে ও মধুরভাবে এইসব ধর্মগ্রন্থের তাফসির করেন।" এভাবে ইমাম রেজা (আ.) তাঁর অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে সবার জন্য সর্বোত্তম ও বোধগম্যভাবে ইসলামের বিশ্বাসগুলো তুলে ধরেছিলেন। আর তিনি এত গভীর ও ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী এবং সেসবের প্রচারক ও বিকাশক ছিলেন বলেই তাঁকে ‘আলেমে আলে মুহাম্মাদ’ বা বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের আলেম শীর্ষক উপাধি দেয়া হয়েছিল। এই মহাপুরুষের কয়েকটি বাণী শুনিয়ে ও সবাইকে আবারও শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করব তাঁর জন্মদিনের আলোচনা। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, ১."জ্ঞান ও প্রজ্ঞা হচ্ছে এমন এক গচ্ছিত সম্পদের মত যার চাবি হল, প্রশ্ন। আল্লাহর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক, কারণ প্রশ্নের মাধ্যমে চার গ্রুপ তথা প্রশ্নকারী, শিক্ষার্থী, শ্রবণকারী ও প্রশ্নের উত্তর- প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ

হরফের ভেদ ১) আলিফ= আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ:)। ২) বা= বাবে হিত্তা,বাবে হাল আতা,বায়জাতুল বলদ,বুরহানআল্লাহ আলী (আ:)। ৩) তা= আয়াতে তাতহির আলী (আ:)। ৪) ছা=ছিফওয়াতুল্লাহ,সিদ্দিকুল আকবর আলী (আ:)। ৫) জীম = জুল বারকা আলী (আ:)। ৬) হা= হায়দার আলী (আ:)। ৭) খা= খাতামুল ওয়াছিয়ান আলী (আ:)। ৮) দাল= দামাদে মোস্তফা (সা:) আলী (আ:)। ৯) জাল = জুলকারনাঈন আলী (আ:)। ১০) রা = রাহবার আলী (আ:)। ১১) জা = জাব্বাতুল জান্নাত আলী (আ:)। ১২) সীন = সাজীদ আলী (আ:)। ১৩) শীন = শায়েখুল মোহাজেরীন ওয়া আনসার আলী (আ:)। ১৪) সোয়াদ = সাফদার আলী (আ:)। ১৫) দোয়াদ = দাস্তে খোদা আলী (আ:)। ১৬) তোয়া = আত ত্বাহীর আলী (আ:)। ১৭) যোয়া = জুল উনজুলওয়ায়ী আলী (আ:)। ১৮) আঈন = আলী আলী,আঈনুল্লাহ আলী (আ:)। ১৯) গাঈন = কাবে কা গওহর আলী (আ:)। ২০) ফা = ফাত্তাহে খায়বর,ফাত্তাহে লাশকর আলী (আ:)। ২১) ক্বাফ = কাতেলুল ফাজেরাহ আলী (আ:)। ২২) কাফ = কাসিমুন্নারে ওয়াল জান্নাত আলী (আ:)। ২৩) লাম = লেসানুল্লাহ আলী (আ:)। ২৪) মীম = মাওলায়ে কায়নাত,মাওলাল মু'মিনিন,মুকিমুলহুজ্জা,মানারুল ইমান,মাহদি,মুনজেজুলওয়াদ আলী (আ:)। ২৫) নুন = নাসিরে রাসুলআল্লাহ, নফসে রাসুলআল্লাহ, নুরে খোদা আলী (আ:)। ২৬) ওয়াও = ওয়াজহুল্লাহ আলী (আ:)। ২৭) হা = আল হাদী, আলী (আ:)। ২৮) লাম আলিফ = লাফাত্তা ইল্লা আলী, আলী (আ:)। ২৯) হামজা = হুজ্জাতআল্লাহ আলী (আ:)। ৩০) ইয়া = ইয়াসুবুল মু'মিনীন,ইয়াদুল ্লাহ,ইমামুল আউলিয়া, ইমামুল বারারাহ আলী (আ:)।

গাদিরে খুমের বার্তা সর্বশেষ নবী মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ২৩ বছর ধরে নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের পর বলেছেন, 'নবুওয়তের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আর কোনো নবী আমার মতো এত কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েনি।' তিনি তার নবুওয়তের শেষ বছরে বিদায় হজ্বের সময় গাদিরে খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে নিজের স্থলাভিষিক্তের নাম ঘোষণা করেন। তিনি এমন একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্ধারণ করেন, যিনি এর আগে বহুবার কাজ-কর্ম, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও ঈমানদারিতার ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। রাসূলের পর মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন যোগ্যতম। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) মোনাফিকদের শক্তি ও ক্ষমতা এবং আলী (আ.)-র প্রতি তাদের ঈর্ষার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। এ কারণে তিনি আলী (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণার বিষয়ে শংকার মধ্যে ছিলেন। কুরানের কয়েকটি আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহতায়ালা শেষ পর্যন্ত রাসূলকে এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য করেন এবং এ কাজটি না করলে রাসূলের নবুওয়তের দায়িত্ব পরিপূর্ণ হবে না বলে জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় রাসূলে খোদা দশম হিজরির ১৮ জিলহজ্ব গাদিরে খুম নামক স্থানে আলী (আ.)-কে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন। তখন থেকেই ১৮ই জিলহজ্ব পবিত্র গাদির দিবস হিসেবে পরিচিত। সেদিন রাসূল (সা.) হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে গাদির এলাকায় তার সফরসঙ্গীদের থামতে বললেন। যেসব হাজী ওই স্থান থেকে কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেন তিনি এবং যারা পেছনে ছিলেন, তাদেরকেও সেখানে এসে সমবেত হতে বললেন। পাশাপাশি তিনি লেখকদেরকেও উপস্থিত হতে বললেন। বেশিরভাগ হাজি সেখানে এসে উপস্থিত হওয়ার পর তিনি উটের জিনকে মঞ্চের মতো করে তাতে আরোহণ করেন এবং ভাষণ দেন। ভাষণের পর হজরত আলী (আ.)-র হাত ওপরে তুলে ধরে তাকে নিজের স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি রাসূলের আহলে বাইতকে পবিত্র কুরানের সমতুল্য হিসেবে ঘোষণা করেন। কিয়ামত পর্যন্ত পবিত্র কুরান ও আহলে বাইত যে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না, তিনি সবাইকে সে কথা জানিয়ে দেন। রাসূলের এ বার্তাটি বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবো, এ প্রত্যাশা রইলো। পাশাপাশি সবার প্রতি থাকলো পবিত্র ঈদে গাদিরের শুভেচ্ছা। গাদিরে খুমের ঘটনার বর্ণনা দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-র আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'হে রাসুল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও ,যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) মদিনা, মিশর ও ইরাকের অধিবাসীদের সবাইকে জুহফা এলাকা হয়েই নিজ নিজ অঞ্চলে ফিরতে হতো। স্বাভাবিকভাবেই রাসূল (সা.)-ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে সেই পথ দিয়েই মদিনায় ফিরছিলেন। রাসূল (সা.) ও তার সফরসঙ্গীরা ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার জুহফা অঞ্চলে পৌঁছান। সেখানেই ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) ওই ওহি নিয়ে আসেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-কে এ নির্দেশও দেয়া হয় যে, হজরত আলী (আ.)-কে যেন তাঁর স্থলাভিষিক্ত তথা পরবর্তী নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং আলী (আ.)-কে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরা হয়। রাসুলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর দায়িত্বের এই বোঝা থেকে মুক্ত হতে উদ্যোগী হলেন। তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,'সব প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' এর জবাবে রাসূল (সা.) বলেন, 'এর একটি হচ্ছে পবিত্র কুরান,যা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যম। কাজেই বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পেতে কুরানকে সঠিকভাবে মেনে চলবেন। আর অন্যটি হলো, আমার আহলে বাইত। আল্লাহতায়ালা আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন যে, এ দু'টি জিনিস কখনোই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। কুরান ও আমার আহলে বাইত যাতে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, সে জন্য আমি সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। আপনারা কখনোই এ দুটি বিষয়ে অবাধ্য হবেন না এবং তা মেনে চলার বিষয়ে অবহেলা করবেন না।' এরপর আল্লাহর রাসুল ( সা.) আলী (আ.)-র হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো ।' বিশ্বনবী এসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরইমধ্যে হজরত জিব্রাইল ( আ.) আবার ওহি বা প্রত্যাদেশ বাণী নিয়ে হাজির হলেন। রাসূল (সা.) যে তাঁর দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি সে বিষয়টি রাসূলকে জানিয়ে দিলেন। আল্লাহ বললেন, 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো, তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা,তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ শেখ মুফিদ তাঁর আল-ইরশাদ বইয়ে লিখেছেন, নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে মোবাহেলার বেশ কিছু দিন পর বিদায় হজ্বের ঘটনা ঘটে। বিদায় হজ্বের কিছু দিন আগে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে ইয়েমেনে পাঠান নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিশ্রুত অর্থ ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য। রাসূল (সা.) এ কাজে আলী(আ.)-কে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেননি এবং অন্য কাউকে এ কাজের জন্য যোগ্য মনে করেননি। আলী (আ.) তখনও ইয়েমেনে অবস্থান করছিলেন। এরইমধ্যে হজ্বের সময় হয়ে গেলো। রাসূলে খোদা হজ্বব্রত পালনের জন্য ২৫শে জিলক্বাদ মদিনা ত্যাগ করেন। তিনি আলী(আ.)-র কাছে চিঠি পাঠিয়ে তাকে ইয়েমেন থেকে সরাসরি মক্কায় চলে আসতে বলেন। আলী (আ.) তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ইয়েমেন থেকে মক্কার দিকে রওনা হন। তিনি এত দ্রুত ইয়েমেন থেকে মক্কার দিকে ছুটে আসেন যে, রাসূল (সা.) মক্কায় প্রবেশের আগেই তিনি রাসূলের হজ্ব কাফেলায় যোগ দিতে সক্ষম হন। আলী (আ.)-কে দেখে রাসূল খুশি হন এবং জিজ্ঞেস করেন-আলী, তুমি কী নিয়তে ইহরাম বেধেছ? আলী (আ.) জবাবে বললেন, যেহেতু আমি জানতাম না আপনি কী নিয়ত করেছেন, সে কারণে ইহরাম বাধার সময় বলেছি, হে আল্লাহ, আপনার রাসূল যে নিয়তে ইহরাম বেধেছেন, আমিও ওই একই নিয়ত করছি। রাসূল (সা.) বললেন, 'আল্লাহু আকবার। প্রিয় আলী, তুমি হজ্ব পালন ও কুরবানি করার ক্ষেত্রে আমার অংশীদার।' এটি ছিলো রাসূলের সর্বশেষ হজ্ব। সমাজ পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব একটি অপরিহার্য বিষয়। মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম সেরা নেয়ামত হলো- নেতৃত্বের যোগ্যতা।এই যোগ্যতা, গুণ ও ক্ষমতা সীমিত সংখ্যক লোকের মধ্যেই আল্লাহ দিয়ে থাকেন। বাকীরা তাদের অনুসরণ করেন। মানব ইতিহাসের কিছু নেতা সরাসরি আল্লাহর মাধ্যমে মনোনীত। এঁরা হলেন, নবী, রাসূল ও আহলে বাইতের ইমামগণ, যারা সরাসরি আল্লাহর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। ফলে তাদের প্রতিটি কথা, কাজ ও আচরণ সব মানুষের জন্য যথাযথভাবে অনুসরণীয়। মানব সমাজের নেতৃত্বের বিষয়টি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, সে বিষয়টি পবিত্র কুরানেও উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরানের সূরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মরণ করো যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সেসব পরীক্ষায় সে পুরোপুরি উত্তীর্ন হলো। এরপর আল্লাহ বলেছিলেন "আমি তোমাকে সব মানুষের নেতার পদে অধিষ্ঠিত করবো।" ইবরাহীম আবেদন করেছিলেন- আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও ( ইমাম বা নেতা করুন)। আল্লাহ জবাব দিলেনঃ "আমার এ অঙ্গীকার জালেমদের ব্যাপারে প্রযোজন্য হবে না (কেবলমাত্র তোমার যেসব বংশধর নিষ্পাপ ও পবিত্র থাকবে,তারাই এ পদের যোগ্য হিসেবে গণ্য হবে)। হজরত মূসা (আ.)তার ভাই হারুনকে নিজের সহযোগী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য আল্লাহর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপর আল্লাহ তা কবুল করেন। সূরা ত্বাহার ৩৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: আল্লাহ বললেন, "হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেয়া হলো।' সূরা সা'দের ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা, হজরত দাউদ (আ.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'হে দাউদ ! আমি অবশ্যই তোমাকে পৃথিবীতে সৃষ্টিকূলের প্রতিনিধি করেছি। সুতারাং মানুষের মধ্যে সত্য ও [ ন্যায়ের ] ভিত্তিতে বিচার -মীমাংসা কর।' এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে,তিনিই মানব জাতির নেতা ও ইমাম নির্ধারণ করেন। ইসলাম ধর্মে নেতৃত্ব ও ইমামত কেবলমাত্র মানুষের দৈনন্দিন ও প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার জন্য নয়। ইসলাম ধর্মে একজন ইমাম বা নেতা, বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক-উভয় ক্ষেত্রের নেতা। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বলেছেন, ইসলাম ধর্মে একজন নেতা, জনগণ থেকে আলাদা নয়। গাদিরের ঘটনাকে তিনি জনগণের নেতৃত্ব ও নীতির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হিসেবে গণ্য করেন। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। তিনি আলী (আ.)-এর যোগ্যতা বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন, হে জনগণ, এমন কোনো জ্ঞান নেই, যা আল্লাহ আমাকে দেননি এবং আমিও পরহেজগারদের নেতা আলী (আ.)-কে সেই জ্ঞান শিখিয়েছি। আপনারা কেউই আলী (আ.)-র পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না। তার পথ থেকে দূরে সরে যাবেন না। তার নেতৃত্বকে অমান্য করবেন না। কারণ সে সবাইকে সত্যের পথে পরিচালিত করে এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে কাজ করে। সে অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটায় এবং নিজে অন্যায় থেকে দূরে থাকে। আলী (আ.) আল্লাহর পথে চলার ক্ষেত্রে কোনো কিছুকেই ভয় করে না। আলী (আ.) হচ্ছে প্রথম মুসলমান। রাসূলে খোদার জন্য সে তার প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সে সর্বদা রাসূলের পাশে ছিল ও আছে এবং আর কেউই তার মতো রাসূলের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে এতো বেশি আন্তরিক নয়। হে মুসলমানগণ, আলী (আ.) হচ্ছে আমার ভাই, স্থলাভিষিক্ত ও আমার শিক্ষায় শিক্ষিত। সে আমার উম্মতের নেতা-কোরানের তাফসির যার জানা। সে কোরানের দিকে আহ্বানকারী এবং কুরানের নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে। সে আল্লাহর শত্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সে আল্লাহ বিরোধীদের শত্রু এবং আল্লাহপ্রেমীদের বন্ধু। সে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে জনগণকে বিরত রাখে। রাসূলে খোদা (সা.) এর আগেও বহুবার আলী (আ.)-র বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করেছেন। ইবনে আব্বাসসহ আরো অনেকের বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলের পরে আলী (আ.)-ই ছিলেন সবচেয়ে মোত্তাকি ও সাহসী ব্যক্তি। জাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারি বলেছেন, একবার রাসূল (সা.)-র কাছে আলী (আ.) এলেন। রাসূল বললেন, আলী (আ.) ও তার অনুসারীরা কিয়ামতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত। এ সময় সূরা বাইয়ানার ৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে এবং সতকাজ করেছে, তারা আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি। এরপর থেকে রাসূলের সাহাবিরা আলী (আ.)-কে দেখলেই বলতেন, ওই যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহর নির্দেশে ১৮ই জ্বিলহজ্ব রাসূল (সা.), হজরত আলী (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করায় দিনটি হয়েছে মহিমান্বিত। এ দিনেই আল্লাহ ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুগ্রহ সম্পন্ন করেছেন। এই মহা অনুগ্রহের জন্য সব মুসলমানের উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এ কারণে যখনি ঈদে গাদির উপস্থিত হয় তখনি সব মুসলমানের উচিত এ দেয়া করা: 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি

হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফত ও তার প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রচারে আলি উন ওয়ালি উল্লাহ হিজরী ৩৫ সনের শেষ ভাগে হজরত আলী (আ.)-এর খেলাফত কাল শুরু হয়। প্রায় ৪ বছর ৫ মাস পর্যন্ত এই খেলাফত স্থায়ী ছিল। হযরত আলী (আ.) খেলাফত পরিচালনার ব্যাপারে হযরত রাসুল (সা.)-এর নীতির অনুসরণ করেন।[1] তাঁর পূর্ববর্তী খলিফাদের যুগে যেসব (ইসলামী নীতি মালার) পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল, তিনি সেগুলোকে পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। খেলাফত প্রশাসনে নিযুক্ত অযোগ্য লোকদের তিনি দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন।[2] তাঁর এসব পদক্ষেপে প্রকৃতপক্ষে এক বৈপ্লবিক আন্দেলন ছিল, যা পরবর্তিতে প্রচুর সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। হযরত ইমাম আলী (আ.) খেলাফতের প্রথম দিনে জনগণের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন সেখানে তিনি বলেনঃ হে জনগণ! জেনে রেখো নবুয়াতের যুগে যে সমস্যায় তোমরা ভুগেছিলে আজ আবার সেই সমস্যাতেই জড়িয়ে পড়লে। তোমাদের মধ্যে একটা ব্যাপক পরির্বতন ঘটবে। যে সকল মহৎ ব্যক্তিরা এতদিন পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা এখন সামনের সারিতে চলে আসবেন। একইভাবে যেসব অযোগ্য লোক এতদিন সামনের সারিতে অবস্থান নিয়েছিল আজ তারা পিছনে চলে যাবে। (সত্য ও মিথ্যা বিদ্যমান এবং এতদুভয়ের প্রত্যেকেরই অনুসারীও রয়েছে। তবে সবারই উচিত সত্যকে অনুসরণ করা) মিথ্যার পরিমাণ যদি অধিকও হয়, সেটা এমন নতুন কিছু নয়। সত্যের পরিমাণ যদি কমও হয়, হোক না! অনেক সময় কমওতো সবার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে থাকে। আর উন্নতির আশাও এতে রয়েছে। তবে এমনটি খুব কমই দেখা যায় যে, যা একবার মানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে তা পুনরায় তার কাছে ফিরে এসেছে”।[3] এ ভাবে হযরত আলী (আ.) তাঁর বৈপ্লবিক প্রশাসনকে অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বৈপ্লবিক আন্দোলনসমূহের স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে, এই আন্দোলনের ফলে যাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, তারা এ ধারার বিরোধী হয়ে ওঠে। আমরা দেখতে পাই হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের বৈপ্লবিক নীতি বহু স্বার্থোন্বেষী মহলকে আঘাত করেছিল। তাই শুরুতেই সারা দেশের যত্রতত্র থেকে আলী (আ.)-এর খেলাফতের বিরোধী সূর বেজে ওঠে। বিরোধীরা তৃতীয় খলিফার রক্তের প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র মুলক শ্লোগানের ধুঁয়ো তুলে বেশ কিছু রক্তাক্ত যুদ্ধের অবতারণা করে। এ জাতীয় গৃহযুদ্ধ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালব্যাপী অব্যাহত ছিল। শীয়াদের দৃষ্টিতে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া এসব যুদ্ধের সূচনাকারীদের অন্য কোন উদ্দেশ্যই ছিল না। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের শ্লোগান ছিল সম্পূর্ণরূপে গণপ্রতারণামূলক একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। এতে কোন ভুল বোঝা বুঝির এখানে অবকাশ নেই।[4] হযরত আলী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যা জংগে জামাল নামে পরিচিত, তা শুধুমাত্র শ্রেণী বৈষম্যগত মত পার্থক্যের জঞ্জাল বৈ আর কিছুই ছিল না। ঐ মতর্পাথক্য দ্বিতীয় খলিফার দ্বারা বাইতুল মালের অর্থ বন্টনের শ্রেণীগত বৈষম্য সৃষ্টির ফলে উদ্ভত হয়েছিল। হযরত ইমাম আলী (আ.) খলিফা হওয়ার পর ঐ সমস্যার সমাধান ঘটান এবং তিনি জনগণের মধ্যে সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে বাইতুল মালের’ অর্থের সুষম বন্টন করেন।[5] আর এটাই ছিল হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবনার্দশ। কিন্তু হযরত আলী (আ.)-এর এ পদক্ষেপ তালহা ও যুবাইরকে অত্যন্ত ক্রোধাম্বিত করেছিল। যার ফলে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীতা করতে শুরু করেন। তারা যিয়ারতের নাম করে মদীনা ছেড়ে মক্কায় গেলেন। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা তখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন। তারা এটা ভাল করেই জানতেন যে, ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে উম্মুল মুমেনীন আয়েশার সর্ম্পকের টানা পোড়ন চলছে। এ অবস্থাকে তারা আপন স্বার্থে কাজে লাগান এবং নবীপত্মী আয়েশাকে খুব সহজেই হযরত আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে নিজপক্ষে টেনে নিতে সমর্থ হন। অতঃপর তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীর শ্লোগানে আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে জংগে জামাল’ নামক এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়। ।[6] অথচ এই প্রসিদ্ধ সাহাবীদ্বয় তাল্‌হা ও যুবায়ের বিপ্লবীদের দ্বারা ওসমানের বাড়ী ঘেরাওকালীন মুহুর্তে মদীনাতেই ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় খলিফা ওসমানকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে এতটুকু সাহায্যও তারা করেননি।[7] এমনকি খলিফা ওসমান নিহত হওয়ার পর মুহাজিরদের পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম তিনিই হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর হাতে বাইয়াত’ গ্রহণ করেন।[8] ওদিকে নবীপত্নী আয়েশাও স্বয়ং ওসমানের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি ওসমানকে হত্যার ব্যাপারে সব সময়ই বিরোধীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। নবীপত্নী আয়েশা ওসমানের নিহত হওয়ার সংবাদ শোনা মাত্রই তার প্রতি অপমান সূচক শব্দ উচ্চারণ করেন এবং আনন্দ প্রকাশ করেন। তৃতীয় খলিফাকে হত্যার ব্যাপারে মূলত রাসুল (সা.)-এর সাহাবীরাই জড়িত ছিলেন। তারা মদীনার বাইরে বিভিন্ন স্থানে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে জনগণকে খলিফার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করেন। হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগে দ্বিতীয় যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল, তা হচ্ছে সিফফিনের যুদ্ধ। দীর্ঘ দেড় বছর এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। এ যুদ্ধ ছিল কেন্দ্রীয় খেলাফত প্রসাশন দখলের জন্যে মুয়াবিয়ার চরম লালসার ফসল। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের ছলনাময়ী শ্লোগানের ছত্রছায়ায় তিনি এ যুদ্ধের অবতারণা করেন। এ যুদ্ধে প্রায় এক লক্ষেরও বেশী লোক অন্যায়ভাবে নিহত হয়। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়াই ছিলেন প্রথম আক্রমনকারী। এটা কোন আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ ছিল না। বরং এটা ছিল মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে একটি আক্রমনাত্মক যুদ্ধ। কারণ, প্রতিশোধ গ্রহণমূলক যুদ্ধ কখনই আত্মরক্ষামূলক হতে পারে না। এ যুদ্ধের শ্লোগান ছিল তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ। অথচ তৃতীয় খলিফা তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অরাজকতা ও বিশৃংখলা দমনে মুয়াবিয়ার কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠান। মু য়াবিয়াও তার সেনাবাহিনীসহ সিরিয়া থেকে মদিনার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু মুয়াবিয়া উদ্দেশ্যমুলকভাবে পথিমধ্যে এত বেশী দেরী করেন যে, ততদিনে তৃতীয় খলিফা বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই মুয়াবিয়া তার বাহিনীসহ সিরিয়ায় ফিরে যান। এর পর সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে তিনি তৃতীয় খলিফার হত্যার বিচারের দাবীতে বিদ্রোহ শুরু করেন।[9] সিফ্‌ফিন’ যুদ্ধের পর নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। রাসুল (সা.)-এর বেশ কিছু সাহাবীও এ যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। একদল লোক যারা সিফফিনের’ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল, তারাই পরবর্তীতে আবার মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তারা তদানিন্তন ইসলামী খেলাফত বা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে থাকে। তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর অনুসারী বা সমর্থকদের সন্ধান পাওয়া মাত্রই তাদেরকে হত্যা করত। এমন কি গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিরে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে তাদের মাথা কেটে হত্যা করত।[10] সিফফিন যুদ্ধের পর মুয়াবিয়ার প্ররোচণায় সংঘটিত এ-বিদ্রোহও হযরত ইমাম আলী (আ.) দমন করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই একদিন কুফা শহরের এক মসজিদে নামাযরত অবস্থায় ঐসব খারেজীদের হাতেই তিনি শাহাদৎ বরণ করেন। ইমাম আলী (আ.)-এর পাঁচ বছরের খেলাফতের ফসল হযরত আলী (আ.) তাঁর ৪ বছর ৯ মাসের শাসন আমলে খেলাফত প্রশাসনের স্তুপীকৃত অরাজকতা ও বিশৃংখলাকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যদিও সমর্থ হননি তবুও এ ক্ষেত্রে তিনটি মৌলিক সাফল্য অর্জিত হয়েছিল: ১। নিজের অনুসৃত ন্যায়পরায়ণতা ভিত্তিক জীবনাদর্শের মাধ্যমে জনগণকে এবং বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র ও আকর্ষণীয় জীবনাদর্শের সাথে পরিচিত করেন। মুয়াবিয়ার চোখ ধাঁধানো রাজকীয় জীবন যাপন পদ্ধতির সমান্তরালে তিনি জনগণের মাঝে অতি দরিদ্রতম জীবন যাপন করতেন। তিনি কখনো নিজের বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনকে অন্যায়ভাবে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেননি। অথবা ধনীকে দরিদ্রের উপর বা সক্ষমকে অক্ষমের উপর কখনো তিনি অগ্রাধিকার দেননি। ২। পর্বতসম সমস্যাকীর্ণ দিনগুলো অতিবাহিত করা সত্ত্বেও জনগণের মাঝে তিনি ইসলামের সত্যিকারের অমূল্য জ্ঞান সম্ভার বা সম্পদ রেখে গেছেন। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরোধীরা বলত: ইমাম আলী (আ.) একজন মহাবীর ছিলেন। তিনি কোন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। কেননা, তিনি বিরোধীদের সাথে সাময়িক বন্ধুত স্থাপন ও তেলমর্দনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতিকে শান্ত করে, নিজের খেলাফতের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারতেন। অতঃপর সময় বুঝে তাদের দমন করতে পারতেন। কিন্তু বিরোধীরা একথাটি ভুলেগেছে যে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফত ছিল এক বৈপ্লবিক আন্দোলন। আর যে কোন বৈপ্লবিক আন্দোলনকেই সব ধরণের তৈল মর্দন ও মেকী আচরণ নীতিগুলো বর্জন করতে হয়। ঠিক একই পরিস্থিতি মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির যুগেও পরিলক্ষিত হয়। মহানবী (সা.)-কে মক্কার কাফের ও মুশরিকরা বহুবার আপোষের প্রস্তাব দিয়ে ছিল। তাদের প্রস্তাব ছিল, মহানবী (সা.) যেন তাদের খোদা গুলোর ব্যাপারে প্রকাশ্য বিরোধীতা না করেন, তাহলে তারাও মহানবী (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে কোন বাধা দেবে না। কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের এই প্রস্তাব আদৌ মেনে নেননি। অথচ নবুয়তের চরম দূর্যোগপূর্ণ সেই দিনগুলোতে তৈলমর্দন ও আপোষমুখী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারতেন। অতঃপর সময় সুযোগ মত শত্রুদের দমন করতে পারতেন। কিন্তু সত্যিকারের ইসলাম প্রচার নীতি কখনই একটি সত্যকে হত্যার মাধ্যমে অন্য একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা বা একটি মিথ্যাকে দিয়ে অন্য একটি মিথ্যাকে অপসারণ করার অনুমতি দেয় না। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াত উল্লেখযোগ্য।[11] আবার অন্য দিকে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর শত্রুরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে যে কোন ধরণের অন্যায় অপরাধ এবং ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিলংঘনের ব্যাপারেও কুন্ঠিত হয়নি। শুধু তাই নয়, নিজেদের চারিত্রিক কলঙ্কগুলোকে সাহাবী’ বা মুজতাহীদ’ (ইসলামী গবেষক) উপাধি দিয়ে আড়াল করার প্রয়াস পেয়েছেন। অথচ হযরত ইমাম আলী (আ.) সব সময়ই ইসলামী নীতিমালার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণের ব্যাপারে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর দ্বারা বর্ণিত জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রজ্ঞা এবং সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রায় এগারো হাজার অমূল্য সংক্ষিপ্ত হাদীস সংরক্ষিত হয়েছে।[12] তিনি ইসলামের সুগভীর জ্ঞানরাজীকে অত্যন্ত শুদ্ধ ও উন্নত অথচ প্রাঞ্জল ভাষার বক্তৃতামালায়[13] বর্ণনা করেছেন।[14] তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার ব্যাকারণ ও সাহিত্যের মূলনীতি রচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলামের উচ্চতর দর্শনের সুদৃঢ় ভিত্তিস্থাপন করেন এবং উন্মুক্ত যুক্তি-বিন্যাস ও যৌত্তিক প্রত্যক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামকে ব্যাখার নীতি প্রচলন করেন। সে যুগের দার্শনিকরা তখনও যেসব দার্শনিক সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়ে ছিলেন, তিনি সেসব সমস্যার সমাধান দিয়ে ছিলেন। এমন কি এ ব্যাপারে তিনি এতবেশী গুরুত্বারোপ করতেন যে, যুদ্ধের ভয়াবহ ডামাডোলের মাঝেও[15] সুযোগ মত ঐসব জ্ঞানগর্ভ মুলক পর্যালোচনার প্রয়াস পেতেন। ৩। হযরত ইমাম আলী (আ.) ব্যাপক সংখ্যক লোককে ইসলামী পন্ডিত ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলেন।[16] ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ঐসব জ্ঞানী-পন্ডিতদের মাঝে হযরত ওয়ায়েস কারানী (রা.), হযরত কুমায়েল বিন যিয়াদ (রা.), হযরত মিসাম তাম্মার (রা.) ও রশীদ হাজারীর (রা.) মত অসংখ্য সাধুপুরুষও ছিলেন। যারা ইতিহাসে ইসলামী ইরফানের (আধ্যাত্মবাদ) উৎস হিসেবে পরিচিত। ইমাম আলী (আ.)-এর শিষ্যদের মধ্যে আবার অনেকেই ইসলামী ফিকাহ (আইন শাস্ত্র), কালাম (মৌলিক বিশ্বাস সংক্রান্ত শাস্ত্র), তাফসীর, কিরাআত (কুরআনের শুদ্ধপঠন শাস্ত্র) ও অন্যান্য বিষয়ের মুল উৎস হিসেবে পরিচিত। [1] তারীখে ইয়াকুবি, ২য় খন্ড, ১৫৪ নং পৃষ্ঠা। [2] তারীখে ইয়াকুবি, ২য় খন্ড, ১৫৫ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬৪ নং পৃষ্ঠা। [3] নাহজুল বালাগা, ১৫ নং বক্তৃতা। [4] মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর হযরত আলী (আ.)-এর অনুসারী মুষ্টিমেয় কিছু সাহাবী খলিফার ‘বাইয়াত’ (আনুগত্য প্রকাশ) গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠির শীর্ষে ছিলেন হযরত সালমান ফারসী (রা.), হযরত আবুযার (রা.), হযরত মিকদাদ (রা.) এবং হযরত আম্মার (রা.)। একই ভাবে স্বয়ং হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতের সময়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কিছুলোক তার ‘বাইয়াত’ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। এ সব বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠোরপন্থীরা ছিলেন, জনাব সাইদ বিন আস, ওয়ালিদ বিন উকবা, মারওয়ান বিন হাকাম, ওমর বিন আস, বাসার বিন এরাদা, সামার নিজান্দা, মুগাইরা বিন শু’আবা ও আরো অনেকে। খেলাফতের যুগের এ দুই বিরোধী পক্ষের লোকদের সবার ব্যক্তিগত জীবনী এবং তাদের ঐতিহাসিক কার্যকলাপ যদি আমরা সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করি, তাহলে তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। প্রথম বিরোধী পক্ষের সদস্যরা সবাই ছিলেন হযরত রাসুল (সা.)-এর বিশেষ সাহাবী বৃন্দ। তাঁরা সংযম সাধনা, ইবাদত, আত্মত্যাগ, খোদা ভীরুতা, ইসলামী চেতনার দিক থেকে রাসুল (সা.) এর বিশেষ প্রিয় পাত্রদের অনর্-ভূক্ত ছিলেন। মহানবী (সা.) এঁদের সর্ম্পকে বলেছেনঃ ‘মহান আল্লাহ্‌ আমাকে অবগত করেছেন যে চারজন ব্যক্তিকে তিনি ভাল বাসেন। আর আমাকে আদেশ দিয়েছেন, আমিও যেন তাঁদেরকে ভাল বাসি”। সবাই ঐ ব্যক্তিদের নাম জিজ্ঞেস করলে, এর উত্তরে পর পর তিনবার তিনি “প্রথম আলী (আ.) অতঃপর সালমান (রা.), আবুযার (রা.) ও মিকদাদের (রা.) নাম উচ্চারণ করেন।” (সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খন্ড, ৬৬ নং পৃষ্ঠা।) হযরত আয়েশা (রা.) বলেনঃ হযরত রাসুল (সা.) বলেছেনঃ ‘‘যে দুটি বিষয় আম্মারের (রা.) প্রতি উপস্থাপিত হবে, আম্মার (রা.) অবশ্যই ঐ দু’ ক্ষেত্রে সত্যকেই বেছে নেবে।’’ (ইবনে মাজা ১ম খন্ড, ৬৬ নং পৃষ্ঠা। ) মহানবী (সা.) বলেছেনঃ ‘‘আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে আবুযারের (রা.) চেয়ে অধিকতর সত্যবাদী আর কেউ নেই।’’ (ইবনে মাজা, ১ম খন্ড, ৬৮ নং পৃষ্ঠা।) এদের কারও জীবন ইতিহাসেই শরীয়ত বিরোধী একটি কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় না। এরা কেউ অন্যায়ভাবে কোন রক্তপাত ঘটাননি। অন্যায়ভাবে কারও অধিকার কখনও হরণ করেননি। কারও অর্থসম্পদ কখনও ছিনিয়ে নেননি। জনগণের মাঝে তারা কখনই দূর্নীতি ও পথ ভ্রষ্টতার প্রসারে লিপ্ত হননি। কিন্তু দ্বিতীয় বিরোধী পক্ষের ব্যক্তিদের জঘণ্য অপরাধ ও ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডের অসংখ্য সাক্ষীতে ইতিহাস পরিপূর্ণ। ইতিহাসে অন্যায়ভাবে প্রচুর রক্তপাত তারা ঘটিয়েছেন। মুসলমানদের ধনসম্পদ লুন্ঠন করেছেন। এতসব লজ্জাকর কান্ড তারা ঘটিয়েছেন যে, তা গুনে শেষ করাও কঠিন। তাদের ঐ সব ঐতিহাসিক অপরাধের আদৌ কোন যুক্তিপূর্ণ অজুহাত খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের ঐ সব কুকর্মের মোকাবিলায় শুধুমাত্র এটা বলেই সান্তনা দেয়া হয় যে, তারা যত অপরাধই করুক না কেন, আল্লাহ্‌ তো তাদের প্রতি সন্তুষ্ট (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। কুরআন বা সুন্নায় উল্লেখিত ইসলামী আইন অন্যদের জন্য, ওসব সাহাবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়!! [5] মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬২ নং পৃষ্ঠা। নাহজুল বালাগা, ১২২ নং বক্তৃতা। তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৬০ নং পৃষ্ঠা। শারহু্‌ ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ১৮০ নং পৃষ্ঠা। [6] তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, তারীখে আবিল ফিদা, ১ম খন্ড, ১৭২ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬৬ নং পৃষ্ঠা। [7] তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৫২ নং পৃষ্ঠা। [8] মুরুযুয্‌ যাহাব, ২য় খন্ড, ৩৬২ নং পৃষ্ঠা। নাহজুল বালাগা, ১২২ নং বক্তৃতা। তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৬০ নং পৃষ্ঠা। শারহু্‌ ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ১৮০ নং পৃষ্ঠা। [9] তৃতীয় খলিফা যখন বিপ্লবীদের দ্বারা নিজ বাড়ী ঘেরাও অবস্থায় কাটাচ্ছিলেন। তখন এ অবস্থার নিরসন কল্পে সাহায্য চেয়ে তিনি মুয়াবিয়ার কাছে পত্র পাঠান। মুয়াবিয়া উক্ত পত্র পেয়ে প্রায় বারো হাজার সৈনের একটি সেনাবাহিনীকে অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত করেন। তিনি ঐ সেনাবাহিনী সহ সিরিয়া থেকে মদীনার দিকে রওনা দেন। কিন্তু এর পরই তিনি আপন সেনাবাহিনীকে সিরিয়া সীমান্তে অবস্থান করার নির্দেশ দেন। অতঃপর সেনাবাহিনী ঐ অবস্থায় রেখে তিনি একাই মদীনায় গিয়ে তৃতীয় খলিফার সাথে সাক্ষাত করেন এবং খলিফাকে সাহায্যের জন্যে তার প্রয়োজনীয় সামরিক প্রস‘তী চুড়ান্তের প্রতিবেদন পেশ করেন। তৃতীয় খলিফা এর প্রত্যুত্তরে বলেনঃ ‘তুই উদ্দেশ্য-মুলকভাবে সেনাবাহিনীর অভিযান থামিয়ে রেখে এসেছিস, যাতে করে আমি নিহত হই আর আমার হত্যার প্রতিশোধের বাহানায় তুই বিদ্রোহ করার সুযোগ পাস। তাই নয় কি? (তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খন্ড, ১৫২ নং পৃষ্ঠা। মুরুযুয যাহাব, ৩য় খন্ড ২৫ নং পৃষ্ঠা। তারীখে তাবারী, ৪০২ নং পৃষ্ঠা।’) [10] মুরুযুয যাহাব, ২য় খন্ড ৪১৫ নং পৃষ্ঠা। [11] পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ “তাদের কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি একথা বলে প্রস্থান করে যে, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের উপাস্যদের পুজায় দৃঢ় থাক।’’(-সুরা আস্‌ সোয়াদ, ৬ নং আয়াত।) আল্লাহ্‌ আরও বলেছেনঃ ‘‘আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি প্রায় কিছুটা ঝুকে পড়তেন।’’(-সুরা আল ইসরা, ৭৪ নং আয়াত।) মহান আল্লাহ্‌ বলেছেনঃ ‘‘তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও, তাহলে তারাও নমনীয় হবে।’’(সুরা আল কালাম, ৯ নং আয়াত।) উপরোক্ত আয়াত গুলোর হাদীস ভিত্তিক তাফসির দ্রষ্টব্য। [12] ‘কিতাবুল গারার ওয়াদ দারার আমাদি, ও মুতাফাররিকাতু জাওয়ামিউ হাদীস’। [13] ‘মুরুযুয্‌ যাহাব’ ২য় খন্ড, ৪৩১ নং পৃষ্ঠা। ‘শারহু ইবনি আবিল হাদীদ’ ১ম খন্ড, ১৮১ নং পৃষ্ঠা। [14] আশবাহ্‌ ও নাযাইরু সুয়ুতী ফিন্‌ নাহু ২য় খন্ড। শারহু ইবনি আবিল হাদীদ ১ম খন্ড ৬ নং পৃষ্ঠা। [15] নাহ্‌জুল বালাগা দ্রষ্টব্য। [16] শারুহু ইবনি আবিল হাদীদ, ১ম খন্ড, ৬-৯ নং পৃষ্ঠা। ‘জঙ্গে জামালের’ যুদ্ধে জনৈক বেদুইন ব্যক্তি হযরত আলী (আ.)-কে বললো: “হে আমিরুল মু’মিনীন!” আপনার দৃষ্টিতে আল্লাহ্‌ কি এক? পার্শ্বস্থ সবাই ঐ ব্যক্তিকে আক্রোমণ করে বললো:ঃ “হে বেদুইন এ দূর্যোগমুহুর্তে তুমি কি ইমাম আলী (আ.)-এর অরাজক মানসিক পরিসি‘তি লক্ষ্য করছো না! জ্ঞান চর্চার আর কোন সময় পেলে না”? ইমাম আলী (আ.) তাঁর সাথীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “ঐ ব্যক্তিকে ছেড়ে দাও। কেননা, মৌলিক বিশ্বাস ও ইসলামী মতাদর্শের সংশোধন এবং ইসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সুস্পষ্ট করার জন্যেই তো আজ আমি এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। “অতঃপর তিনি ঐ বেদুইন আরব ব্যক্তির প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহ উত্তর দিয়ে ছিলেন। (বিহারুল আনোয়ার, ২য় খন্ড, ৬৫ নং পৃষ্ঠা।)

— মুনাফিক মুসলমান এবং মসজিদ —- মসজিদ এ যেরার বা ক্ষতির মসজিদ — মহানবী (সাঃ) এর সময় মদীনার একটি বিখ্যাত ও শিক্ষনীয় ঘটনা হল , মসজিদ এ যেরার ঘটনা । কিছু মুনাফিক সাহাবী মুসলমান সিদ্বান্ত নিল যে , তারা মসজিদে কোবার পাশে আরেকটি মসজিদ তৈরী করবে । বাহ্যিকভাবে তারা প্রচার করবে যে , ইসলামের প্রচার করার জন্যই তারা এই মসজিদ তৈরী করেছে । কিন্ত তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে , এই মসজিদের নামে ধীরে ধীরে তারা এখানে আগত মুসল্লীদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভিন্ন ফেতনা ফ্যাসাদ , বিভেদ সৃষ্টি করবে এবং খুব সূক্ষভাবে ইসলামী শাসনের বিরোধীতা করবে । তারা মহানবী (সাঃ) এর নিকট আসল এবং নিজেদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে এই ভাবে ব্যাখ্যা করে বলল যে , মসজিদে নবী থেকে বনী সালিম গোত্রের বসবাস বেশ দূর হয় যায় । বয়স্ক , দূর্বল লোকদের পক্ষে মসজিদে নবীতে যাতায়াত বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায় । আমাদের ইচ্ছে যে , মূলত বয়স্ক মুরুব্বীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই নতুন মসজিদটি তৈরী করব , যাতে তারা এখানে এসে আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করতে পারেন । এছাড়াও ঝড় বৃষ্টির রাতে অনেকেরই মসজিদে নবীতে আসতে কষ্ট হয় । এ মসজিদটি তাদের নিকটে হওয়াতে এরকম বহু লোকেরই উপকার হবে । তারা নবীজী (সাঃ) এর কাছে কসম খেল যে , সৎ , নেক এবং ইসলামের খেদমত ভিন্ন তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই । দয়াল নবী (সাঃ) গায়েবী এলমে সব কিছুই জানতেন । শুধুমাত্র উম্মতকে জ্ঞান দেবার উদ্দেশ্যে ওদেরকে অনুমতি দিলেন । নবম হিজরিতে তাবুকে যুদ্বের সময় মহানবী (সাঃ) তাবুক রওয়ানা হয় গেলেন । তাবুক থেকে ফিরে আসার পথে ঐ মুনাফিকগুলো নবীজী (সাঃ) এর নিকটে নিবেদন করল যে , আপনি দয়া করে নবনির্মিত মসজিদে নামাজ পড়াবেন এবং আপনার নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে এই নতুন মসজিদটির শুভ উদ্বোধন হবে । আপনার নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে এই মসজিদটি খুব সম্মাানের সাথে বিখ্যাত একটি মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত পাবে । ঠিক ঐ মুহূর্তে হযরত জীব্রাইল (আঃ) পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে আসলেন , ‘– আর যারা একটি মসজিদকে লক্ষ্য বানিয়েছিল অন্তর্ঘাতের জন্য এবং অবাধ্যতার জন্য , এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য , এবং আচমকা আক্রমনের উদ্দেশ্যে তাদের মাধ্যমে যারা যুদ্ব করেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্বে এর আগে , তারা অবশ্যই শপথ করবে , আমরা ভাল ছাড়া অন্য কিছুই চাই নি , এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে , নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী । (তুমি) সেখানে কখনও দাঁড়িও না ! যে মসজিদ খোদা সম্পর্কে সতর্কতার উপর প্রতিষ্ঠিত প্রথম দিন থেকেই , আর যোগ্য যে তুমি তাতে ( নামাজের জন্য) দাঁড়াবে –” । সুরা – তওবা / ১০৭ , ১০৮ । সাথে সাথে মহানবী (সাঃ) নির্দেশ দিলেন যে , ফেতনা সৃষ্টিকারী মসজিদের নামে এই আস্তানাটিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবার জন্য । সে জায়গায় ময়লা আর্বজনা ফেলার স্থান তৈরী করা হল । এর ফলে মুনাফিকদের ভয়াবহ একটা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল । সুপ্রিয় পাঠক , নবীজী (সাঃ) এর জীব্বদশাতেই কিছু মুনাফিক মুসলমান মসজিদ বানিয়ে ইসলামের ক্ষতি করতে চেয়েছে । আর এখনতো ১৫০০ বছর পরের কথা । নিত্য নতুন কত টেকনিক আবিস্কৃত হয়েছে আমাকে ও আপনাকে বিভ্রান্ত করবার জন্য । কত বিশাল বিশাল টিভি চ্যানেল , কোরআন – হাদিস ফটাফট মুখস্ত ঝারছে , কত সুন্দর বেশভূষা ইত্যাদির আড়ালে মুনাফেকি কার্যকলাপ অতীতেও চলছে বর্তমানেও চলছে । সবচেয়ে বড় কথা হল , আমরা শুধু কোরআন আঁকড়ে ধরেছি । কিন্ত কোরআনের মূল চালিকা শক্তি আহলে বায়েত (আঃ) গনকে পরিত্যাগ করেছি । সুবিখ্যাত একজন বিশাল কুখ্যাত সাহাবী বলেছিলেন , ” — রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট —-“। নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গনকে পরিত্যাগ করে শুধুমাত্র কোরআনকে আঁকড়ে ধরা মুসলমান জাতি বর্তমানে পৃথিবীতে সব থেকে অসহায় , বোকা , দূর্বল , নিকৃষ্টমানের হাস্যকর জাতিতে পরিনত হয়েছে । খুব সহজেই গাদীর এ খুম পরিত্যাগকারী বৃহৎ মুসলিম জাতিকে হাজার বছর ধরে বিভ্রান্ত ও বোকা বানিয়ে রাখা সম্ভব । পাঠক , আসুন , আমরা সকলে মিলে নবীজী (সাঃ) এর পবিত্র অাহলে বায়েত (আঃ) গনকে আরও উত্তম রুপে চিনি ও জানি । যে জাতি আহলে বায়েত (আঃ) গনকে মূল্যায়ন করেছে তারা আজ সকল মুসলমানের মধ্যে জ্ঞান , বিজ্ঞানসহ সকল দিক থেকেই অগ্রগামী প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

নবী পরিবারের(আঃ) শানে পবিত্র কোরানের আয়াত সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩ “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম।“ গাদীরে খুমে যখন রাসুল(সাঃ) হযরত আলীকে খেলাফত ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃখোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন,নিজের অবদানকে সপুর্ন করিলেন।আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)। সুরা নিসা,আয়াত# ৫৪ “তাহারা কি মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে সেটারই উপর যাহা আল্লাহ পাক তাহাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করিয়াছেন।সুতরাং আমি তো ইব্রাহিমের বংশধরগনকে কিতাব ও হেকমাত দান করিয়াছি।“ আয়াশী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ইমামগন হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, তাঁহারা বলিয়াছেন,যাহাদের সংগে বিদ্বেষ পোষন করা হইয়াছে এই আয়াতে তাহারা হইলেন আমরাই।আল্লাহতায়ালা নিজের মেহেরবানীতে আমাদের ইমামতি দান করিয়াছেন।হযরত ইমাম বাকের(আ:) হইতে বর্নিত হইয়াছে যে,ইহা দ্বারা আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য এই যে, তিনি ইবারহিমের বংশধর হইতে নবীগন,রাসুলগন এবং ইমামগন(১২ ইমাম) সৃষ্টি করিয়াছেন।তাহাদের ব্যাপারে সকলের নিকট হইতে শপথ গ্রহন করাইয়াছে।তিনি বলিয়াছেন যে,হযরত মুহাম্মদের বংশধরকে যেন কেহ অস্বীকার না করে।আর বিশাল সাম্রাজ্য দ্বারা ইমামত বুঝানো হইয়াছে।ইমামের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য।আর ইমামের আদেশ অমান্য আল্লহর আদেশ অমান্যের সমতুল্য।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১০;ইয়ানাবিউল মাওয়াদ্দাহ, পৃঃ১২১;কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ২০৪;মাজমাউল বায়ান,৩য় খন্ড,পৃঃ৬১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯; শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৩;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৬৭;সাওয়েকে মুহরেকা,পৃঃ১৫০)। সুরা নিসা,আয়াত# ৮৩ “যদি তাহারা উহা রাসুল কিংবা তাহাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতার অধিকারী তাহাদের গোচরে আনিত,তবে তাহাদের মধ্যে যাহারা তথ্য অনুসন্দ্বান করে তাহারা উহার যথার্থতা নির্নয় করিতে পারিত।“ হযরত ইমাম বাকের(আঃ) ফরমাইয়াছেন যে,যাহারা বাস্তবতা জানেন আর যাহারা ক্ষমতাসম্পন্ন তাহারা হইলেন হযরত মুহাম্মাদের(সাঃ) বংশধর। আয়াশী হযরত ইমাম রেজা(আঃ) হইতে বর্ননা করিয়াছেন যে, ইহা দ্বারা হযরত নবী করিমের(সাঃ) বংশধরকে বুঝানো হইয়াছে। কারন তাহারা হইলেন ঐ সব ব্যক্তি যাঁহারা কোরানের বাস্তব তথ্য ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন।তাঁহারাই হালাল ও হারামের উপর অবগত হইয়াছেন।আর তাহারাই সৃষ্টির উপর আল্লাহতায়ালার হুজ্জাত বা অকাট্য প্রমানস্বরুপ।(সুত্রঃ তাফসীরে কুমী,১ম খন্ড,পৃঃ১৪৫;রাওয়ানে যাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৯২;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ৪০)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৫৫ “তোমাদের বন্দ্বু তো আল্লাহ,তাঁহার রাসুল ও মু’মিনগন-যাহারা সালাত কায়েম করে ও রুকুর অবস্থায় যাকাত দেয়”। হযরত আবু যর গিফারী(রাঃ) এইভাবে বর্ননা করিয়াছেনঃএকদিন আমি রাসুলের(সাঃ) সঙ্গে মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করিলাম।একজন ভিক্ষুক মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিল।কেহ তাহাকে কিছুই দিল না।ঐ ভিক্ষুক তাহার ২ হাত আকাশের দিকে উত্তোলন করিয়া বলিলঃহে ল্লাহ!আমি তোমার পয়গাম্বরের মসজিদে আসিয়া ভিক্ষা চাহিলাম,কিন্তু কেহ আমাকে কিছুই দিল না।এই সময় আলী(আঃ)সালাতে রুকুর অবস্থায় ছিলেন।তিনি নিজের আঙ্গুলের ইশারায় ভিক্ষুককে ইঙ্গিত করিলেন।হযরত আলী(আঃ)এর ডান হাতের আঙ্গুলে আংটি ছিল।ভিক্ষুকটি অগ্রসর হইয়া হযরত আলীর(আঃ) আঙ্গুলের আংটি খুলিয়া নিল।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এই ঘটনা দেখিয়া নিজের মাথা আকাশের দিকে ঘুরাইয়া বলিলেনঃহে আল্লাহ! হযরত মুসা(আঃ) আপনার প্রার্থনা করিয়াছিলেন যে,হে আল্লাহ আমার বক্ষ প্রসারিত করিয়া দাও আর আর আমার জাক আমার জন্য সহজ করিয়া দাও এবং আমার জিহবার জড়তা দূর করিয়া দাও যাহাতে লোকেরা আমার কথা বুঝিতে পারে।আর আমার বংশ হতে আমার ভাই হযরত হারুনকে(আঃ) সাহায্যকারী করিয়া দাও,যেন সে আমার শক্তিকে দৃঢ় করে।আমার কাজে আমার সঙ্গী করিয়া দাও। আল্লাহতায়ালা হযরত মুসাকে(আঃ) বলিলেন,আমি তোমার ভাই দ্বারা তোমার শক্তি তোমার শক্তিকে দৃঢ় করিয়া দিলাম।তোমাকে রাজত্ব দান করিলাম।হে আল্লাহতায়ালা!আমি মুহাম্মাদ তোমার প্রিয় রাসুল।হে আল্লাহ আমার বক্ষকে প্রসারিত করুন,আমার কাজ সহজ করুন এবং আমার বংশধরকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করুন।আমার পৃষ্টকে আলী দ্বারা শক্তিশালী করুন।হযরত আবুযর গিফারী বলিলেন যে,আল্লাহর রাসুলের(সাঃ) কথা তখনো শেষ হয় নাই ,এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাঈল(আঃ) এই আয়াতে পাক নিয়ে হুজুর (সাঃ)এর নিকট উপস্থিত হইলেন।(সুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ৭১;তাফসীরে ত্বাবারী,৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৬৫;তাফসীরে রাজী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৩১;তাফসীরে খাজিন,১ম খন্ড,পৃঃ৪৯৬;তাফসীরেআবুল বারাকাত,১ম খন্ড,পৃঃ ৪৯৬;তাফসীরে নিশাপুরী,৩য় খন্ড,পৃঃ৪৬১; আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৭ম খন্ড,পৃঃ৩৫৭;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ৩২৯;আল-গাদীর,৩য় খন্ড,পৃঃ১৫৬ ও ১৬২;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শাওয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৬১;)। সুরা মায়েদা,আয়াত# ৬৭ “হে রাসুল!পৌছাইয়া দিন যাহা কিছু আপনার প্রতি অবতীর্ন হইয়াছে আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে।যদি এমন না হয় তবে আপনি তাহার কোন সংবাদই পৌছাইলেন না।আর আল্লাহতায়ালা আপনাকে রক্ষা করিবেন মানুষের অনিষ্ট হইতে”। সমস্ত মোফাসসের এবং ঐতিহাসিকগন একমত যে,এই আয়াত গাদীরে খুম নামক স্থানে হযরত আলী(আঃ)এর শানে নাজিল হইয়াছে।রাসুল(সাঃ) উটের পালান দ্বারা একটি মিম্বর বানানোর জন্য আদেশ দিলেন এবং সেই মিম্বরের উপর দাড়াইয়া রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেন যে,আমি যাহার নেতা ,এই আলীও তাহার নেতা।(সুত্রঃআল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২১৪ ও ২২৯;জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৩৮;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;আসবাবুল নযুল,পৃঃ১৩৫;শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৮৭)। সুরা আ’রাফ,আয়াত# ১৭২ “হে নবী স্মরন করুন! যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্টদেশ হইতে তাহাদের বংশধরগনকে বাহির করিলেন”। হোযাইফা বিন ইয়ামানী বর্ননা করিয়াছেন যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃযদি মানুষ জানিত যে,আলী কখন হইতে আমিরুল মু’মিনিন,তবে কখনো তাঁহার মরযাদাকে অস্বীকার করিত না।হযরত আলী তখন থেকেই আমিরুল মু’মিনিন যখন হযরত আদমের শরীর ও আত্না মাটি ও পানির মধ্যে ছিল।আল্লাহপাক ফরমাইলেনঃযখন আদমের পৃষ্টদেশ হতে সমস্ত আত্নাকে বাহির করা হইলো,তাহাদের উপর সাক্ষী করা হইলো এবং জিজ্ঞাসা করা হইলো যে,আমি কি তাহাদের প্রভু নই?ফেরেশ্তারা বলিলঃঅবশ্যই,আমরা সাক্ষী থাকিলাম। তারপর আল্লাহতায়ালা ফরমাইলেনঃআমি তোমাদের প্রভু,মুহাম্মাদ তোমাদের রাসুল এবং আলী তোমাদের আমীর।(সুত্রঃ জাযবায়ে বেলায়েত,পৃঃ১৫৮;রাওয়ান জাভেদ,২য় খন্ড,পৃঃ৪৯১;মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৯;বয়ানুস সায়াদাহ,২য় খন্ড,পৃঃ২১৬;মানাকেবে ইবনে মাগাজেলী,পৃঃ২৭১) প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

কিছু অজ্ঞ মূর্খরা আছে যারা মনে করেন সীয়ারা আলী (রাঃ) কে মানেন তারা নাকি রাসূলকে মানেনা, সীয়া আর সুন্নীর মধ্যে পার্থক্য ওদের মত মুর্খরাই সৃষ্ট করেছে। এতই যদি জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে ভাল করে যেনে নিন আলী কে আর রাসূল কে? রাসূল (সাঃ) বলেছেন :""আমি হচ্ছে জ্ঞেনের শহর আলী তার দরজা স্বরুপ,,,, "আরো বলেন : হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও"""সহি মুসলিম দ্বিতীয় খন্ড, সহি তিরমিজি ৫খন্ড। ""মান কুন্তু মাওলা, ফাহাজা আলীউন মাওলা,, আমি যার মাওলা,আলীও তার মাওলা,,,।। হযরত মুহাম্মাদ (স:) সুতরাং, যে ব্যাক্তি মাও:আলীকে, মাওলা হিসেবে মানে না,সে ব্যাক্তি রাসুল (স:) এর হুকুম অমান্য করে,,আর যে রাসুল (স:) এর অমান্য করে সে ইসলামিক আঈন অনুযায়ী মুনাফিক,,,,।।।। রাসুল (স:) বলেন,, মুনাফিক ব্যাতিত কেউ আলীকে হিংসা করে না, আর মুমিন ব্যাতিত কেউ আলীকে মোহাব্ব্যাত করে না।

মাসুম গণ (আ.) -এর বানীতে ইমাম হোসাইন (আ.) 1. হাদীসে কুদসী : হোসাইনকে ওহীভান্ডারের রক্ষক মনোনীত করা হয়েছে এবং আমি শাহাদতের মাধ্যমে সম্মান প্রদান করেছি। আর তার শেষ পরিণতিকে চরম সফল্যমন্ডিত করেছি। তাই সে-ই হল শহীদদের শিরোমণি এবং সকলের শীর্ষে তার অবস্থান । আমি আমার র্পূণ কালিমাকে তার সাথে রেখেছি এবং আমার র্পূণনিদর্শনকেও তার কাছেই রেখেছি। আর তার বংশধারার র্নিভর করছে প্রত্যেকের প্রতিদান ও শাস্তি।[1] 2. হযরত মহানবী (স.)নি:সন্দেহে হোসেনের (আ.) শাহাদত মুমিনদের অন্তরে এমন এক উত্তাপ ও আবেগের সৃষ্টি করে যা কখনও শীতল হবে না।[2] 3. হযরত আমিরুল মুমেনিন আলী (আ.): ইমাম আলী (আ.) নিজ সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন : এ এমন এক ব্যক্তি যার স্মৃতি ও নাম স্মরণ মুমিনদের চোখে অশ্রু ঝরাতে থাকবে। হোসেন (আ.) বললেন : আপনি কি আমাকেই সম্বোধন করে বলছেন ? তিনি উত্তরে বললেন : জ্বী, আমার সন্তান।[3] 4. হযরত ফাতেমা জাহরা (আ.)আমার গর্ভাবস্থায় যখন হোসাইন (আ.)ছয় মাসে উর্ত্তীণ হল, তখন থেকে রাতের আধাঁরে আর আমার প্রদ্বীপের প্রয়োজন হয়নি আর ইবাদতের সময় ও প্রভুর সান্নিধ্য লাভের জন্য যখন র্নিজনতা অবলম্বন করতাম তখন তাঁর তাসবিহ ও তাকদীস পাঠের আওয়াজ শুনতে পেতাম।[4] 5. ইমাম হাসান (আ.) আমাকে বিষ পানে শহীদ করা হবে কিন্তু হে আবা আবদুল্লাহ্! তোমার মসিবতের দিনটির ন্যায় আর কোন মসিবতের দিন আসবে না।[5] 6. হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)আমার হত্যা ক্রোন্দনে এক মহাধারার সৃষ্টি করবে। আর কোন মুমিন ব্যক্তিই দু:খ ও অশ্রুসিক্ত চোখ না নিয়ে আমাকে স্মরণ করবে না।[6] 7. হযরত সাইয়েদুল সাজেদিন হোসাইন বিন আলী (আ.)আমি এক ব্যক্তির সন্তান যার জন্য আসমানের ফেরেস্তাগণ এবং ভূ-পৃষ্ঠে জ্বীনেরা ও পাখিরা বাতাসে শোকে শোকাহত হয়ে ক্রোন্দন করেছিল ।[7] 8. হযরত ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.)ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়ার মৃত্যুর পর আর কোন ব্যক্তির মৃত্যুতে আসমানকে কাঁদতে দেখা যায়নি একমাত্র হোসাইন ইবনে আলীর (আ.) শাহাদত ব্যতীত। তাঁর শাহাদতে চলি।লশদিন ধরে শোকে ক্রোন্দনরত ছিল।[8] 9. হযরত জাফর সাদিক (আ.) মসিবতের সময় আহাজারি ও ফরিয়াদ করে কান্নাকাটি অপছন্দনীয় তবে কেবল হোসাইন (আ.)এর শোকে ক্রোন্দন ব্যতীত। হোসাইনের (আ.) শোকে ক্রোন্দন ও আহাজারির জন্য প্রতিদান দেয়া হবে।[9] 10. হযরত মুসা ইবনে জাফর (আ.) ইমাম রেজার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন :মহররম মাস যখন শুরু হত তখন আমার পিতার মুখে আর হাসি-খুশী দেখা যেত না। তিনি যেন দু:খ ও বেদনায় ভরাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। এভাবে আশুরার দিন পযন্ত যেদিন, শোক ও দু:খে ক্রোন্দন করতেন। আর বলতেন এমন একটি দিনে হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল।[10] 11. হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা দো (আ.)হোসেনের (আ.)মসিবত আমাদের অন্তরকে আহত ও চক্ষুকে ব্যথিতকে তোলেছে। এমসিবত আমাদের অশ্রু ঝরিয়েছে আমাদের আপনজনদেরকে ঐ দুরদেশে লাঞ্চিত ও অসয়হ করেছে। সেদিনের দু:খ বেদনা এতই গভীর যে আমাদেরকে চিরদিনের জন্য শোকাহত ও ব্যথিত করেছে।[11] 12. হযরত ইমাম ত্বাকী (আ.)কোন ব্যক্তি যদি ২৩ রমজানে (যে রাতটি কদরের রাত হওয়ার সম্ভবনা আছে) ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করে তাহলে ২৪ হাজার ফেরেস্তা ও এবং স্বয়ং মহানবীও (স.)তার সাক্ষাত করেন। এরা ঐদল যারা এই রাতে ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারত করার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি আবেদন করেন।[12] 13. হযরত ইমাম আলী নকী (আ.): যে ব্যক্তি ইমাম হোসেনকে (আ.) জিয়ারতের জন্য নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে ফুরাতের নদে স্নান করবে। খোদা তার নাম সফল ব্যক্তিদের লিষ্টে লিখে দিবেন। আর যখন সে ঐ হোসেনকে সালাম করবে তখন তাকে সফলতা লাভকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিগণনা করেন। তারপর যখন সে জিয়‍ারতের নামাজ শেষ করে তখন ‍একজন ফেরেস্তা তাকে বলেন : আল্লাহর রাসুল তোমার প্রতি দরুদ পাঠিয়েছেন এবং তোমাকে বলেন তোমার গোনাহ্ সমূহ ক্ষমা করা হয়েছে। অতপর তখন তুমি আরার প্রথম অবস্থায় ফিরে গেছে।[13] 14. হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)হে আল্লাহ্ আমি তাঁর ওসিলা দিয়ে তোমার কাছে প্রাথনা করছি যে এমন একটি দিনে (৩রা শাবান) জন্ম গ্রহণ করেছিল। যার জন্মের পূর্বে তাঁর শাহাদতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যার শোকে আসমান ও আসমানবাসীরা, আর ভূ-পৃষ্ঠ ও তার অধিবাসীগণ ক্রোন্দন করছে। এটা এমন এক অবস্থায় যখন সে পৃথিবীতেই পা রাখেনি।[14] 15. হযরত ইমাম মাহদী (আ.)যদিও সময় আমাকে পিছায়ে দিয়েছে পরিণতি আপনাকে সাহায্য করা থেকে বিরত রেখেছে ফলে আপনার সাথী হয়ে দুশমনদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারিনি । তবে প্রতিটি সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি্ কাঁদছি আর আপনার স্মৃতিচারণ করে বুক ফাটা কান্নায় আর্তনাদ করছি।[15] অনুবাদ :মো. আলী নওয়াজ খান। [1] -উসুল আল কাফী, ২খন্ড, ৪৭২ পৃ. মাযাআ ফি ইসনা আশার ওয়ান নাস্ আলাইহা, অধ্যায় ৩ নম্বর হাদীস। [2] – মুস্তাদরাকুল ওসাইল ১০ম খন্ড, ৩১৮ পৃ. ৪৯তম আববাবুল মাজার মাজার অধ্যায় ১৩ নম্বর হাদীস। [3] – বিহারুল আনোয়ার ৪৪তম খন্ড, ২৮০ পৃ, ওয়া ফাজলু যিয়ারাতুল হোসায়েন (আ.) ৩৮পৃ.। . [4] – বিহারুল আনোয়ার ৪৩খন্ড, ২৭৩ পৃ,। আওয়ালেম গ্রন্থ ১৭তম খন্ড؛ ১১পৃ.। আদ্দামায়াস সাকিরাহ্ ২৫৯ পৃ. এবং খাসাইসুস হোসাইনীয়া ৩১ পৃ.।. [5] – ‌আমুলী-ই শেখ সাদুক ১১৬ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৫ খন্ড, ২১৮ পৃ, । মাসিরুল আহজান, ৯ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ১৫৪ পৃ. এবং লুহুফ ২৫ পৃ.। [6]- ‌আমুলী-ই শেখ সাদুক ১৩৭ পৃ, ।কামিরুজ জিয়ারাত, ১০৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ, । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৬ পৃ. এবং ইসবাতুল হিদাইয়া ২খন্ড, ৫৮৪ পৃ.। [7] – বিহারুল আনোয়ার ৪৫খন্ড, ১৭৪ পৃ, এবং আওয়ালেম গ্রন্থ ১৭ তম খন্ড ৪৮৫ পৃ.। [8] – কামিরুজ জিয়ারাত, ৯০ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৫ খন্ড, ২১১ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৪৬৯ পৃ.। [9] – কামিরুজ জিয়ারাত, ১০০ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৯১ পৃ,। আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৩ পৃ.। [10] -আমুলী-ই শেখ সাদুক ১২৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ,। । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৮ পৃ.। [11] -আমুলী-ই শেখ সাদুক ১২৮ পৃ, । বিহারুল আনোয়ার ৪৪ খন্ড, ২৮৪ পৃ,। । আল আওয়ালেম, ১৭ খন্ড, ৫৩৮ পৃ.। [12] – ওসাইলুশ শীয়া ১০ম খন্ড ১৭০ পৃ. ৫৩ নম্বর অধ্যায় আল আববাসুল মাজার ৫ নম্বর হাদীস। [13] – ওসাইলুশ শীয়া ১০ম খন্ড ৩৮০ পৃ. ৫৯ নম্বর অধ্যায় আববাসুল মাজার ১০ নম্বর হাদীস। কামিরুজ জিয়ারাত, ১৮৫-১৮৬ পৃ, । [14] – মিসবাহুল মুতাহাজ্জিদ, ৭৫৮ পৃ, বিহারুল আনোয়ার ৯৮ খন্ড, ৩৪৭ পৃ. মাঠাতিহুল জিনান, মহরমের তৃতীয় দিনে আমল।. [15] – বিহারুল আনোয়ার , ৯৮ খন্ড, ৩২ পৃ. প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

‘হাদি’ মুয়াবিয়া শরিয়াতের উত্তরাধিকারী নিয়ম পাল্টায় ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ও আন নিহায়া’ খণ্ড ৮ পাতা ১৪১ এ লিখেছেঃ “সুন্না হচ্ছে কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার হতে পারবে না, আর না মুসলিম কাফিরের উত্তরাধিকারী হতে পারবে, যিনি প্রথম প্রথম এটা চালূ করেন যে মুসলিম কাফিরের থেকে উত্তরাধিকার পাবে, কিন্তু কাফির মুসলিমের উত্তরাধিকার পাবে না তিনি হলেন মুয়াবিয়া, বানী উমায়া একই নিয়ম চালু রেখেছিল, উমার বিন আব্দুল আযিযের সময় তিনি সুন্নাকে ফিরিয়ে আনেন, কিন্তু হিশাম আবার মুয়াবিয়া ও বানী উমাইয়াদের নিয়মে ফিরে যান”। এখন দেখুন সাহিহ বুখারি এর হাদিস খণ্ড ৮ হাদিস নং ৭৫৬ “রসুল আল্লাহ সাঃ বলেছেন ‘একজন মুসলিম কাফেরের উত্তরাধিকারি হতে পারবে না, আর না একজন কাফের মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারবে”। প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা হাসীনে কাবা ইয়া রওনকে কাবা মাওলা হায়দার – মারহাবা মারহাবা সাইয়্যিদুল আরব – মারহাবা মারহাবা ইতিহাস চমকান বিরল তারিফে বিলাদত প্রকাশ ক্বাবা শরীফে যীনাতুল আরেফিন – মারহাবা প্রথম দীদারে নূরে হাবীবী আদবী তাবাসসুমে দেন সালামী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পালনে – মারহাবা ইমামে আউয়াল মিন আলে রছূল ধন্য লাভে তিনি প্রিতমা বতুল বাবুল ইলম মাওলা – মারহাবা যাহির বাতিনী ইলমী গৌরব ছড়ান জান্নাতী ফুলদ্বয়ের সৌরভ শাফীউল উম্মাহ আক্বা মারহাবা সীমাহীন বিরত্বে উচ্চে যুলফিকার তাগুত মিটায়ে করেন উদ্ধার উম্মাহ্’র রাহগীর আসাদুল্লাহ মারহাবা

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চেনে না প্রাণের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে পর্ব শেষ গাদীরে খুম নামক স্থানে আয়াতগুলো নাজিল হওয়া মাত্র নবী করিম (স.) থমকে দাড়িয়ে গেলেন এবং যারা বিভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিলেন সবাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য লোক পাঠালেন। সব লোক জমায়েত হওয়ার পর হামদ ও সালাত সম্পন্ন করলেন। উটের উপর যে গদি ছিলো তার উপর আরো গদি স্থাপন করেলেন যেনো উচু হয়। এরপর শিষ্যবর্গকে বললেন- মুসলমানগন তোমরা কি জনো না যে আমি মোমিনদের নিকট প্রত্যেকের নিজ নিজ আত্মা অপেক্ষাও তোমাদের হিতৈষী বন্ধু। শিষ্যগন বললেন- হে আল্লাহর হাবিব, আমাদের আত্মা অপেক্ষা অধিক প্রিয় সুহৃদ। অতঃপর তিনি তাদের বললেন- হে মুসলমানগন আল্লাহ আমাকে আহ্বান করেছেন, আমিও তার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তোমরা জানিও যে আমি তোমাদের মধ্যে দুটো সমপরিমান ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি এ দুটোকে আকড়ে ধরে থাকো তাহলে কখনোই পথভ্রষ্ট হবেনা। যদি একটিকে ছাড়ো তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। তার প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার আহলে বায়াত (আলী, ফাতেমা, হাসান, হোসাইন) এ দুটো কখনোই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবেনা যতক্ষন না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখো তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরন করবে এটা আমি দেখবো। (সিরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী নোমানী/বোখারী/মুসলিম/তিরমিজি মসনদে হাম্বল/তফসিরে কবির/হিলায়তুল আউলিয়া (১ম খন্ড) তফসিরে দোররে মনসুর/উসদুল গাবা। মোল্লাগন এই গুরুত্বপূনূ হাদিসটিকে বলে থাকেন এভাবে- একটি আল্লাহর কিতাব আরেকটি রাসুলের হাদিস। তারা তারা রাসুলের বংশধর তথা পাক পাঞ্জাতন বলতে চান না। রাসুল পাক আরো বললেন- তোমরা জেনে রাখবে খোদাতায়ালা আমার প্রভু আর আমি বিশ্ববাসীর প্রভু। পরে তিনি আলীর হস্ত ধারন করে বলতে লাগলেন- মান কুনতুম মাওলাহু ফাহাজা আলাউন মাওলাহু। আমি যার মওলা আলীও তার মওলা। হে আল্লাহ যে ব্যক্তি তাকে বন্ধু বানায় তুমিও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো এবং যে ব্যক্তি আলীর সাথে শক্রতা করে তুমিও তার সঙ্গে শত্রুতা করো। অতপর উমর (রা.) আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন ও অভিনন্দন জানালেন এবং বললেন- স্বাগতম, স্বাগতম হে আবু তালিব সন্তান, প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মওলা হিসেবে অভিনন্দিত হয়ে তুমি সকাল করবে, সন্ধ্যা করবে। (মেশতাত ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৫৪৮) ফজলুল করিম/সুসনদে আহম্মদ/তফসীরে দুররে মনসুর/জালাল উদ্দিন সিউতি ২য় খন্ড মিসর/মুসলিম/মোস্তাদরাক হাকিম। এক নরুল ইসলাম ফারুকী শহীদ হয়েছেন আরো লক্ষ লক্ষ ফারুকী মওজুদ আছে এবং থাকবে ইনশা আল্লাহ। ক্ষমতার অপব্যাবহার করে আজ এত বড় অন্যায় কাজ হাতে নিচ্ছো ইজিদি সৌদি সরকার এর পরিনাম ভয়াবহ যেনো রেখো

নিভে আসছে জীবন প্রদীপ… আর বুঝি হলোনা বেশিদিন এ ধরায় থাকা…! খুব বেশি সময় হয়তো চাহেনা মোরে নিঠুর এ ধরা…!! এ দেহ ভুবন নিস্তেজ হয়ে আসছে…হারিয়ে মনোবল…। নিষ্ঠুর এ ধরার নিষ্ঠুর সব মানুষ গুলোর নীরব ঘাত-প্রতিঘাতে…! আর কতো করবো অভিনয় খুব বেশি ভালো থাকার…?? ভেবেছিলাম প্রদীপ হয়ে দীপ্তি ছড়াবো…সৃজন করবো স্রস্টা হয়ে… মিশে রবো প্রকৃতিতে সৃষ্টির উচ্ছ্বাসে…। তা আর বুঝি তেমন হবেনা…যেমন একসময় চেয়েছিলাম। জ্বলেই গেলাম দিবা নিশি…দিবসে রবি নিশিতে হয়ে শশী..! দীপ্ততায় কতটুকু ছড়ালো তা হলোনা হিসেব নিকেশ…। এই বুঝি ফুরালো বেলা খেলা বুঝি হলো মোর শেষ…

হযরত আবু তালিব আঃ এয় সাম্প্রতিক কিছু তথ্য ইসলামে বিভ্রান্তির অন্ত নেই। যতই দিন যাচ্ছে এর শাখা প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটছে। তেমনি একটি বিভ্রান্তি আছে আমাদের সমাজের একটি অংশের ভিতর রাসূল (সাঃ) এর সম্মানিত চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) সম্পর্কে। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধবাদীরা বিশেষ করে উমাইয়া শাসকদের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অনিবার্য ফল এই বিষয়টি। কুচক্রী মহল অতি সুক্ষ্মভাবে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর বিরুদ্ধে নানা প্রকার বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং নিজেদের মনগড়া হাদীস রচনা করে তাতে ইসলামের লেবাস পরিধান করে ব্যাপকভাবে। যা আজ বিভিন্ন হাদীস হিসাবে পরিচিত দেখতে পাই। মুসলমানরা আজ তারই দুঃখজনক শিকার। যারা বলেন হযরত আবু তালিব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন নাই, তাদের নিকট ইসলাম গ্রহণের সংজ্ঞা কি অথবা কাদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় তারা বিশ্বাসী তা তলিয়ে দেখা দরকার। খতিয়ে দেখা দরকার তাদের গুরুদের ইতিহাস। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, হযরত আবু তালিব তাঁর আশি বছরের জীবনের এক মুহূর্তের জন্যও মুর্তি পূজায় অংশ নেননি। কিংবা তুচ্ছতম কোন মন্দ বা গর্হিত কাজের প্রতি তাঁর মৌন সমর্থন বা অংশগ্রহণ এর একটি উদাহরণ কেউ পেশ করতে পারবে না। বরং তাঁর জীবনেতিহাস হচ্ছে মানব কল্যাণে আত্মনিবেদিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, ভদ্রতা, নম্রতা, পরোপকারিতা, অতিথিপরায়ণতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যাবলী তাঁর মধ্যে ছিল পুর্বপুরুষদের ন্যায় বিদ্যমান। তাঁর চারিত্রিক সদগুণাবলী, দৃঢ়তা, আত্মপ্রত্যয়, বলিষ্ঠ মনোবল, অনন্য যোগ্যতা ইত্যাদি গুণ বৈশিষ্ট্যই তাঁকে সম্মানের সু উচ্চাসনে সমাসীন রেখেছিল। পক্ষান্তরে, মহানবী (সাঃ) আবির্ভূত হওয়ার পূর্বেও তিনি ছিলেন তৌহিদবাদের বিশ্বাসী একজন খাঁটি মু’মিন মুসলমান এবং পিতা আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর পর তিনি খানায়ে কা’বার মুতাওয়াল্লী বা তত্ত্বাবধায়ক মনোনিত হন। এ জন্যই মক্কাবাসীদের নিকট তিনি ছিলেন সবচাইতে সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। হযরত আবুতালিব (রাঃ) এর স্ত্রী অর্থাৎ হযরত আলী (আঃ) এর মাতার নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ)। হযরত আবু তালিব (রাঃ) ধার্মিক লোক ছিলেন এবং হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ধর্মের অনুসারী একেশ্বরবাদী ছিলেন। তিনি মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে কখনও বিশ্বাস করতেন না। (কাশফ আল জুম্মাহ, খঃ ১, পৃঃ ৬০) তিনি বিবাহের জন্য ধার্মিক মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। আবু তালিব তার চাচা আসাদ এর বাড়ী গিয়ে তার কন্যা ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চাচা প্রস্তাবে রাজী হন। হযরত আবু তালিব এবং ফাতিমা ছিলেন হাশেমী গোত্রের প্রথম যুগল যারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ফাতিমাও স্বামীর ন্যায় একেশ্বরবাদী। মুর্তি পুজা বা অংশীবাদে তিনি কখনও বিশ্বাস করতেন না। (আল ফুসুল আল মহিম্মাহ, পৃঃ ১৭২) এই বিবাহে যে শিগা পড়া হয় তা ছিল তাওহীদ বা স্রষ্টার একত্ববাদের বিস্তারিত স্বীকৃতি। যার বিস্তারিত উল্লেখ আছে বিহারুল আনোয়ার এর ৩৫ খণ্ড পৃঃ ৯৮তে। তাঁর ছেলেমেয়েরা হল হযরত আলী (আঃ), হযরত জাফর (রাঃ), হযরত আকিল (রাঃ), জুমানাহ এবং ফাখতাহ (উম্মে হানী, মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী)। (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ২২, পৃঃ ২৬) ফাতিমা বিনতে আসাদ আলী (আঃ) ইবনে আবিতালিব এর জন্ম কাবার অভ্যন্তরেই দিয়েছিলেন। (আল মুসতাদারক, খঃ ৩, পৃঃ ৪৮৩) ফাতিমা বিনতে আসাদ ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী একাদশতম ব্যক্তি। আবার হযরত খাদিজা (রাঃ) এর পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি রাসূল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। (ইবনে আবী আল হাদিদ,শারহ নাহজুল বালাগাহ, খঃ ১ পৃঃ ১৪) হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর এক পুত্র হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (রাঃ) মু’তার যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি হিসাবে অসীম বীরত্বের দৃষ্টান্ট স্থাপন করে শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর শাহাদাতের পর মহানবী (সাঃ) দীর্ঘদিন ধরে শোকাভিভূত ও বিমর্য ছিলেন। আর তাঁর দু’চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। অবশেষে হযরত জিবরাইল (আঃ) এসে মহানবী (সাঃ)কে সুসংবাদ দান করেন যে, আল্লাহপাক জাফরকে তাঁর দু’টো কর্তিত হাতের পরিবর্তে নতুন দু’টি রক্ত রাঙ্গা হাত দান করেছেন এবং তিনি জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছেন। এজন্য তাঁকে বলা হয় “জাফর-এ-তৈয়ার” বা দু’পাখার অধিকারী জাফর। ফাতিমা বিনতে আসাদ ৬০ থেকে ৬৫ বছর বেঁচে ছিলেন। হিজরতের তৃতীয় বছরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি ইনতেকাল করলে রাসুল (সাঃ) তাঁর নিজের একটি কাপড় দ্বারা ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) এর শরীর আচ্ছাদিত করেন। তিনি নিজে কবর খনন করে তাকে শায়িত করলেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন। (আল ফুসুল আল মুহিম্মাহ, পৃঃ ১৭৭)। হযরত মহানবী (সাঃ) এর বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর অভিভাবক ও পিতামহ হযরত আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করেন। দাদার মৃত্যুবরণ মহানবী (সাঃ) এর কোমল আত্মার ওপর এতটা গভীর দাগ কেটেছিল যে, দাদা আব্দুল মুত্তালিব যেদিন মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেদিন তিনি সমাধিস্থলে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা পর্যন্ত অশ্রুপাত করেছিলেন এবং তিনি কখনই পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবকে ভুলেননি। (তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭) দাদার মৃত্যুর পর তাঁর চাচা হযরত আবু তালিব (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অভিভাবকত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হযরত আবু তালিব ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর পিতা হযরত আব্দুল্লাহর সহোদর। আবদুল্লাহ ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে। আব্দুল্লাহ, যুবায়র ও আবু তালিব এই তিনজন ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের স্ত্রী ফাতিমা বিনতে আমর এর গর্ভজাত সন্তান। হযরত হামযা (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ) অন্য স্ত্রীর সন্তান। (সীরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, ইফাবা, প্রথম খঃ পৃঃ ১৫১) হযরত আবু তালিব (রাঃ) দানশীল, পরোপকার ও জনহিতকর কাজে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ কারণেই হযরত আব্দুল মুত্তালিব তাঁর অনাথ নাতির লালন পালন করার জন্য আবু তালিব (রাঃ)কে মনোনীত করেছিলেন। এ সম্পর্কে ফাতিমা বিনতে আসাদ (রাঃ) বলেন, “আবু তালিব মুহাম্মাদ (সাঃ)কে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে আসলেন। আমি তার সেবায় আত্মনিয়োগ করলাম এবং সে আমাকে ‘মা’ বলে ডাকত।” (বিহার আল আনওয়ার,খঃ ৩৫, পৃঃ ৮৩) দাদার ন্যায় মহানবী (সাঃ) সর্বদা চাচা আবু তালিব এর সাথে থাকতেন। একবার চাচা আবু তালিব কুরাইশদের শামদেশে (সিরিয়া) বাৎসরিক বাণিজ্যিক সফরে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মহানবী (সাঃ)কে মক্কায় রেখে যাওয়ার এবং কতিপয় ব্যক্তিকে তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কাফেলা রওনার পূর্বমুহূর্তে মহানবী (সাঃ) এর চোখ অশ্রুজলে সিক্ত হয়ে গেল এবং চাচা আবু তালিব এর কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও এ বিচ্ছেদ তাঁর কাছে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে হলো। মহানবী (সাঃ) এর দুঃখভারাক্রান্ত মুখমণ্ডল চাচা আবু তালিব এর অন্তরে আবেগ অনুভূতির প্রলয়ঙ্কর তুফানের সৃষ্টি করল। তিনি অবশেষে কষ্ট সংবরণ করে হলেও মহানবী (সাঃ) কে নিজের সাথে নিলেন। এই সময় মহানবী (সাঃ) এর বয়স ছিল বার বছর। (দীওয়ানে আবু তালিব, পৃঃ ৩৩) কুরাইশ নেতৃবর্গের একটি উচ্চ পর্যায়ের পরিষদবর্গ এক অঙ্গীকার পত্র বা চুক্তিনামা স্বাক্ষর করে তা কাবাগৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখেন এবং মহানবী (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদেরকে অর্থনৈতিক, ক্রয় বিক্রয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বৈবাহিকসহ সকল সম্পর্ক বয়কটের ঘোষণা করেন। মহানবী (সাঃ) এর একমাত্র সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক তাঁর পিতৃব্য হযরত আবু তালিব (রাঃ) তাঁর সকল আত্মীয়, স্বজন ও বনি হাশিম বংশের প্রতি মহানবী (সাঃ)কে সাহায্য করার আহ্বান জানান। তিনি বনি হাশিমের সবাইকে পবিত্র মক্কা নগরীর বাইরে একটি পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থান গ্রহণ করার নির্দেশ দিলে তাঁরা সবাই সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই উপত্যকাটি ‘শোবে আবুতালিব’ বা আবু তালিবের উপত্যকা নামে প্রসিদ্ধ। সেখানে তাঁদের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে, অনাহারে ও অর্ধাহারে। এমনকি অনেক সময় পাহাড়ী গাছ গাছড়ার ফলমূল, পত্র ও পল্লব ইত্যাদি আহার করে জীবন ধারণ করতে হয়েছে, তাও বাধামুক্ত ছিলনা। যিনি ছিলেন আরবের অবিসংবাদিত নেতা, খানায়ে কা’বার কর্তৃত্ব ছিল যাঁর হাতে; সব হারিয়ে সমাজচ্যুত হলেন ইসলামের জন্য। মহানবী (সাঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) ও হযরত খাদিজা (রাঃ) অবরোধ চলাকালীন সময়ে তাঁদের সকল সম্পদ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। এই বয়কট সময়কালীন সময়ে কোরাইশদের কিছু ব্যক্তি বনি হাশিম বংশের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে অতিগোপনে শোবে আবুতালিবে অবস্থানকারী মুসলমানদেরকে খাদ্যসহ কিনা কাটার সহযোগিতা করতেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইতিহাস সাক্ষী এই সময়ে ‘শোবে আবুতালিব’ এ অবস্থানকারী মুসলমানদের জন্য হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত ওমর (রাঃ) এর কোন ভূমিকা ছিল বলে জানা যায় না। তখন তাদের কি ভূমিকা ছিল? কোথায় তাদের অবস্থান ছিল এবং অনাহার মুসলমানদের এই অসহায় ও দূর্যোগমুহূর্তে কতিপয় কোরাইশদের ন্যায় খাদ্য বা অন্যকোন সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কিনা? ইতিহাসে তাও জানা যায় না। এই সময়ে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের ভূমিকা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) এর নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসের মাঝামাঝিতে এ অবরোধের অবসান হয়। এ অবরোধ পুরো তিন বছর স্থায়ী হয়েছিলো। হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালঃ হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে, আশি বছর বয়সে হযরত আবু তালিব (রা) মক্কা নগরীতে ইনতেকাল করেন। এই দিন মহানবী (সাঃ) তাঁর একমাত্র পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিরক্ষা বিধায়ককে হারান। যিনি তাঁকে ৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকতা দান ও রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পতঙ্গের মতো তাঁর অস্তিত্বে প্রদীপের চারপাশে ঘুরেছে। মহানবী (সাঃ) এর আয় উপার্জনের সক্ষম হওয়া পর্যন্ত তিনি মহানবী (সাঃ) এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেছেন এবং তাঁকে তাঁর নিজ সন্তানের উপরও অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। রাসুল (সাঃ) এবং হযরত আলী (আঃ), হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর মৃতদেহের গোসল দান, কাফন পরানো, জানাযার নামায পড়ানো, দাফন করা ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে ইসলামী নিয়মে সুসম্পন্ন করেছেন। দাফন কাজ সমাধা করে মহানবী (সাঃ) মহান আল্লাহর কাছে যে দোয়া করেছিলেন তা হলো, “হে আল্লাহ! আমার চাচা আবু তালিবের প্রতি তোমার করুণা বর্ষণ করো। যিনি আমাকে লালন পালন করেছেন। শক্রর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। সর্বদা আমাকে ছায়াদান করেছেন। এখন আর আমার এমন সাহায্যকারী অভিভাবক নেই। এখন যার যেমন ইচ্ছা আমার সাথে আচরণ করবে। হে আল্লাহ! তোমার কাছে জানাই আমার দূর্বলতা ও অক্ষমতার ফরিয়াদ। আমার প্রতি বর্ষন করো তোমার করুনা কৃপা।” (তারীখুল খামীস, পৃঃ ৩০১, সীরাতুল হালবিয়্যাহ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৭) চাচা আবু তালিব (রাঃ) এর ইনতেকালের পর থেকে প্রায়ই মহানবী (সাঃ) কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা যেতো। প্রায়শঃই তিনি বলতেন, “যত দিন আমার চাচা আবু তালিব জীবিত ছিলেন তত দিন কেউ আমাকে উত্ত্যক্ত করতে পারেনি। তাঁর মৃত্যু আমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” (সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ১ম খণ্ড, প্রঃ ১২ ইঃ ফাঃ ঢাকা) মৃত্যুকালে হযরত আবু তালিব (রাঃ) এর অসিয়ত ছিল, “হে আমার আত্মীয়স্বজনগণ! মুহম্মদের দলের বন্ধু ও সমর্থক হয়ে যাও। মহান আল্লাহর শপথ, যে কেউ তাঁর অনুসরণ করবে, তাঁর পথে চলবে, সে সুপথপ্রাপ্ত ও সৌভাগ্যমন্ডিত হবে। আমার জীবন যদি অবশিষ্ট থাকত এবং আমার মৃত্যু যদি পিছিয়ে যেত তাহলে আমি তাঁর নিকট থেকে সব ধরনের বিপদাপদ ও তিক্ত ঘটনা প্রতিহত করতাম এবং তাঁকে রক্ষা করতাম।” (সীরাতে হালাবী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৯০, তারিখে খামীস, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩৩৯) “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! তুমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও। কারণ তুমি সুউচ্চ মাকাম ও মর্যাদার অধিকারী, তোমার দলই অত্যন্ত সম্মানিত দল। তুমি সম্মানিত পিতার সন্তান। মহান আল্লাহর শপথ, যখন তোমাকে কোন কন্ঠ কষ্ট দেবে তখন অত্যন্ত ধারালো কন্ঠসমূহ তোমার পক্ষাবলম্বন করে সেই কন্ঠকেই আঘাতে জর্জরিত করে দেবে এবং ধারালো তরবারিগুলো তাদেরকে বধ করবে। মহান আল্লাহর শপথ, পশুপালকের কাছে পশুগুলো যেভাবে নত হয় ঠিক সেভাবে আরবগণ তোমার কাছে নতজানু হবে ও বশ্যতা স্বীকার করবে।” (সাইয়্যেদ ইবনে তাউস প্রণীত, আত তারায়েফ, পৃঃ ৮৫)#আল-হাসানাইন প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ) সুরা নিসা,আয়াত# ৬৯ “ এবং যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে,সুতরাং তারা সেই লোকদের সাথী হবে নবীগন,সত্যবাদীগন,শহীদ্গন এবং সতকর্মপরায়নদের মধ্য থেকে আল্লাহ যাদের নিয়ামত দান করেছেন।আর তারা কতই না উত্তম সাথী!(১)” মুলঃমাওলানা ফরমান আলীর উর্দু তাফসীর অনুবাদঃ মাওলানা শেখ সাবের রেজা সম্পাদনা ও পুনর্লিখনঃ হুজ্জাতুল ইসলাম মোঃ আনোয়ারুল কবির আরিফ(ষ্টুডেন্ট অফ পি এইচ ডি,ইরান) প্রকাশকঃঈমান ফাউন্ডেশনের পক্ষে,নুরুস সাকলায়েন জনকল্যান সংস্থা,বেগম বাজার,ঢাকা। সঠিক তাফসীর(১)ঃ এক হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,নবীগন অর্থে মহানবী(সাঃ),সত্যবাদীগন অর্থে হজরত আলী(আঃ),শহীদগন বলতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন(আঃ),সতকর্ম্পরায়ন অর্থে অবশিষ্ট ইমামগণকে বুঝান হয়েছে।আর এটা অনুমতির অনেক নিকটবর্তীও বটে।কেননা,’নাবিয়্যিন’এর উদ্দেশ্য যে মহানবী(সাঃ) তা ষ্পষ্ট,এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।‘সিদ্দিকীন’ এর উদ্দেশ্য হজরত আলী(আঃ)।কেননা ‘সিদ্দিক’ শব্দের অর্থ যদি সত্যায়নকারী ধরা হয় তবে ইতিহাসসমুহ থেকে প্রমানিত হয় যে,রাসুল(সাঃ)এর নবুওতের সর্বপ্রথম সত্যায়নকারী তিনিই।আর যদি সত্যবাদী অর্থ গ্রহন করা হয় তবুও তিনি ছাড়া অপর কেউ তাঁর দাবীদার হতে পারে না।কারন,অন্য কোন সাহাবীর মধ্যে এই বৈশিষ্ট ছিল না।কারন,তারা ২৮ থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত মুর্তির সামনে মাথা নত করেছেন ও শিরক করেছেন।পক্ষান্তরে হজরত আলী(আঃ) কখনও মুর্তির সামনে মাথা নত করেননি এবং সবসময় আল্লাহর একত্বের ঘোষনায় সত্যবাদী ছিলেন।আর ইমাম ২ ভাই ( ইমাম হসান ও ইমাম হুসাইন)আল্লাহর পথে শহীদ হওয়াও ষ্পষ্ট এবং ‘সালেহীন’ বলতে অবশিষ্ট ইমামগন উদ্দেশ্য হওয়াতে কোন মুসলমান সন্দেহ করতে পারে না।কেননা সালেহীন বলতে সৎ কর্মের ক্ষেত্রে পুর্নতম ব্যাক্তিদেরকে বুঝান হয়।আর ে বিষয়টি ষ্পষ্ট যে,প্রতি যুগে নবী বংশের পবিত্র ইমামগন সতকর্ম,পরহেজগারিতা ও অন্য বৈশিষ্টে অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ট ছিলেন। প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ মোঃ আবু তুরাব বিধি তুমার ধর্ম কি সৃষ্টির মাঝে সৃষ্টি কর্তা মোঃ জাহিদ হুসাইন

রাসুল (সা:) ইন্তেকালের পরপরই রাসুল (সা:) এর রেখে যাওয়া শূন্য আসনে খলীফা হয়ে টুপ করে বসে পড়লেন হযরত আবু বকর । উল্লেখ্য যে , রাসুল (সা:) ইন্তেকালের সংবাদ জানা সত্বেও এবং মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও হযরত আবু বকর , হযরত ওমর , হযরত ওসমান সহ বহু সংখ্যক নামকরা মোহাজের , আনসার সাহাবী রাসুল (সা:) এর জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহন করে নাই । ওনারা তখন বনু সকীফাতে বসে ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ বাটোয়ারা করে খলীফা নির্বাচন করলেন । এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে যে , হযরত আবু বকর প্রথম খলীফা হলেন - এই ঘটনাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা:)এর অনুমোদন আছে কি ? এই বিষয়টির স্বপক্ষে সহীহ সিত্তাহ হাদিস , বিখ্যাত কোন তাফসীর গ্রন্থ থেকে কোন রেফারেন্স দেখাতে পারবেন কি ? যে কোন জাল বানোয়াট হাদিস হলেও চলবে !

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ইসলামের চরম শত্রু আবু লাহাব ও উতবা প্রশ্ন: আবু লাহাব কে ? উত্তর: আবু লাহাব ছিল রাসূল (সা)-এর চাচা এবং মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় নেতা। প্রশ্ন: আবু লাহাবের স্ত্রী কে ছিল ? উত্তর: তার স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আওরায়া বিনতে হারব। তার উপনাম ছিল উম্মে জামীল। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর সাথে তার ব্যবহার কিরুপ ছিলো ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর চাচা হওয়া সত্ত্বেও সে ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু। মুসলিমদের উপর নির্যাতন তীব্রতর করার প্রস্তাব সেই রেখেছিলো। প্রশ্ন: তার স্ত্রী উম্মে জামীল (রা) রাসূল (সা)-এর সাথে কেমন আচরণ করতো ? উত্তর: স্বামীর মতো সেও রাসূল (সা) এর সাথে ঘৃণা ও শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করতো। রাসূল (সা)-কে কষ্ট দেয়ার জন্য সে রাসূল (সা)-এর বাড়ির সামনে প্রায়ই ময়লা-আবর্জনা ও কাটা বিছিয়ে রাখতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা) সম্পর্কে মানুষের কাছে আবু লাহাব কী বলত ? উত্তর: ইসলামের প্রকাশ্য দুশমন আবু লাহাব প্রকাশ্যে বলত, “ হে মানুষেরা! তোমরা তার কথা শুনবে না কারণ সে একজন মিথ্যাবাদী ও ধর্মত্যাগী”। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে আবু লাহাব কী করল? উত্তর: রাসূল (সা)কে অপমান করার জন্য সে কৌশল বের করল। সে রাসূল (সা)-কে পাথর ছুড়ে মারল, তার দুই ছেলে উতবা ও উতাইবাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুই মেয়ে রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে তালাক প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি রাসূল (সা)-এর দ্বিতীয় ছেলে ইন্তিকালে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল এবং রাসূল (সা)-কে নির্ব্বংশ বলে বেড়াতে লাগলো। প্রশ্ন: তার ছেলে উতাইবা রাসূল (সা)-এর সাথে কীরূপ ব্যবহা করেছিল ? উত্তর: একদিন উতাইবা রাসূল (সা)-এর কাছে এগিয়ে আসলো এবং কর্কশভাবে চিত্কার করে বলতে লাগলো, “আমি আপনার শিক্ষায় বিশ্বাসী নই। এরপর সে রাসূল (সা)-এর উপর হিংস্র হাত উঠাল এবং তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো। কিন্তু রাসূল (সা)-এর পবিত্র মুখে থুথু পড়েনি। তার এমন আচরণে রাসূল (সা) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ! তোমার কুকুরদের মধ্য থেকে একটি কুকুর তার উপর নাযিল কর”। প্রশ্ন: উতাইবার কী পরিণতি হয়েছিলো? উত্তর: একবার উতাইবা তার দেশের কিছু লোকের সাথে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল এবং ‘যারাকা’ নামাক স্থানে যাত্রা বিরতি করল। হঠাত একটি সিংগ তাদের কাছে এসে তাদের মাঝখান থেকে উতাইবাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল এবং তার মাথা ছিন্ন ভিন্ন করে খেয়েছিল। প্রশ্ন: উকবা বিন আবি মুয়িত কে? উত্তর : সেও মক্কার একজন নেতা যে রাসূল (সা) ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার করতো। প্রশ্ন: সে রাসূল (সা)-এর সাথে কী আচরণ করতো ? উত্তর: সে উটনীর নাড়ি-ভূড়ির ময়লা-আবর্জনা এনে রাসূল (সা)-এর উপর রাখত। এ নিকৃষ্ট কাজে কাফিরদের মধ্যে হাসির বন্যা বয়ে যেত। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এর পিঠ থেকে নোংরা আবর্জনাগুলো কে পরিস্কার করতো ? উত্তর : ফাতিমা (রা) এসে তার বাবার পিঠ থেকে এ নোংরা আবর্জনাগুলো পরিস্কার করতো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-এরপর কী করতেন ? উত্তর: তিনি উকবার উপর আল্লাহর গযবের বা আযাবের প্রার্থনা করতেন। প্রশ্ন: সালাত পড়ার সময় রাসূল (সা)-এর সাতে কী করতো ? উত্তর: একবার রাসূল (সা) সালাত পড়ছিলেন এমন সময় উকবা এসে তার গলায় পা রাখল এবং তার চোখগুলো সামনের দিকে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত ধরে রাখল। প্রশ্ন: পরবর্তীতে রাসূল (সা) যখন সালাতের সেজদায় যেতেন তখন উকবা তার মাথায় কী নিক্ষেপ করতো ? উত্তর: সে ভেড়ার নাড়ি-ভূড়ি এনে রাসূল (সা)-এর মাথায় নিক্ষেপ করত। প্রশ্ন: কে রাসূল (সা)-এর মাথা থেকে এগুলো পরিষ্কার করতেন ? উত্তর: রাসূল (সা)-এর মেয়ে ফাতিমা (রা)। প্রশ্ন: উকবার কি রাসূল (সা)-কে মারার চেষ্টা করেছিলো ? উত্তর : হ্যাঁ, সে রাসূল (সা)-এর গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মারার চেষ্টা করেছিলো। প্রশ্ন: রাসূল (সা)-কে বাঁচানোর জন্য কে এগিয়ে এসেছিলো ? উত্তর: আবু বকর (রা) রাসূলকে বাঁচাতে এলেন। তিনি উকবাকে শক্তভাবে ধরে ধাক্বা মেরে রাসূল (সা) থেকে তাকে আলাদা করে দিলেন। প্রশ্ন : আবু বকর (রা) তাকে কি বললেন ? উত্তর: তিনি বললেন, “তুমি কি এ কারণে এক ব্যক্তিকে হত্যা করবে, যে বলে তার শাসনকর্তা আল্লাহ”। প্রশ্ন: উকবার কি পরিণতি হয়েছিলো ? উত্তর: বদর যুদ্ধে তাকে বন্দী করা হয়। পরে রাসূল (সা)-এর নির্দেশে সাফরা নামক স্থানে আলী বিন আবি তালিব আঃ তাকে হত্যা করে

ইমাম আলী আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা বিশ্বজগত ও ইমাম আলীর (আঃ) দৃষ্টিভঙ্গি নাহজুল বালাগা একটি সমুদ্রের মতো। সেখান থেকে যতোই নেওয়া হোক না কেন, কমবে না। আমরা বিশাল এই সমুদ্র থেকে বিন্দুর মতো খানিকটা আহরণের চেষ্টা করবো। সুন্দর এই বিশ্বজগত আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামতে পূর্ণ। মানুষ এইসব নিয়ামত থেকে উপকৃত হয়। আমরা যদি একটু মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে,এই বিশ্বকে ঘিরে মানুষের রয়েছে বিচিত্র আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া এককথায় ব্যাপক আকর্ষণ। মানুষের ব্যাপক গবেষণার ফলে বিশ্বের সূক্ষ্ম অণূ-পরমাণু আবিস্কৃত হয়েছে। এইসব গবেষণায় পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে যে অবিশ্বাস্যরকম শৃঙ্খলা লক্ষ্য করা গেছে তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে বিশ্ব নিরর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। আর মানুষকেও খামোখাই পৃথিবীতে পাঠানো হয় নি। আলী (আঃ) বিশ্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আল্লাহর নিদর্শন বলে মনে করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর সব কিছুই মানুষের উপকারে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষের উচিত প্রকৃতির যথার্থ ব্যবহার করা। আল্লাহর অলি-আউলিয়া বা ধর্মীয় মনীষীগণও প্রাকৃতিক সম্পত তথা আল্লাহর নিয়ামতগুলোকে সৎ ও সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন। হযরত আলী (আঃ) চেষ্টা করেছেন পুকুর থেকে পানি তুলে খেজুর বাগান তৈরি করতে যাতে মানুষ সেগুলো থেকে উপকৃত হতে পারে। পৃথিবীর সাথে মানুষের সম্পর্ককে আলী (আঃ) তুলনা করেছেন একজন ব্যবসায়ীর সাথে বাজারের সম্পর্ক কিংবা একজন কৃষক এবং কৃষিক্ষেতের সম্পর্কের সাথে। একইভাবে যে ব্যক্তি এই পৃথিবীতে কাজ করবে আখেরাতে তার ফল সে পাবে। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীটা ঈমানদারদের জন্যে একটি উত্তম স্থান। তিনি মনে করেন দুনিয়া মানুষের জন্যে স্থায়ী কোনো বাসস্থান নয় বরং এটা মানুষের জন্যে একটা ক্রসিং-পয়েন্ট এবং পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে লাফ দেওয়ার মঞ্চ। নাহজুল বালাগায় আলী (আঃ) এর এই দৃষ্টিভঙ্গি কথোপকথনের ভঙ্গিতে এসেছে। সেখানে এক ব্যক্তি দুনিয়াকে ধিক্কার দেয় আর আলী (আঃ) তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেয়। কবি আত্তার এই বিষয়টিকে মুসিবাৎ নমেহ-তে কবিতার মতো করে ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবেঃ آن يكي در پيش شير دادگر ذم دنيا كرد بسياري مگر حيدرش گفتا كه دنيا نيست بد بد تويي-زيرا كه دوري از خرد ন্যায়পরায়ন সিংহ আলীর সামনে সে পৃথিবীকে দিয়েছে ধিক্কার প্রচুর, তবে তার হায়দার বলেন পৃথিবী নয় মন্দ মন্দ তো তুমি, জ্ঞান থেকে দূরে অন্ধ হযরত আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে ব্যক্তির ঈমান নেই তার জন্যে এই পৃথিবী ভয়াবহ এক নরক যা কেবল তার জন্যে ধ্বংসেরই দ্বার খুলে দেয়। এই সমস্যা এমন সময় দেখা দেয় যখন মানুষ পার্থিব এই জগতের মোহে পড়ে যায়। মানুষ যদি নিজের ব্যাপারে সতর্ক না হয় এবং এই বিশ্বজগত সম্পর্কে সচেতন না হয়, তাহলে পৃথিবীর সাথে তার সম্পর্ক ভিন্ন রূপ নেবে এবং ক্ষণিকের পথ চলার অঙ্গন এই বিশ্ব তার সামনে ভিন্ন লক্ষ্য তৈরি করবে। এরকম অবস্থায় একজন মানুষ পৃথিবীর মোহজালে আটকা পড়ে যায়। এই মোহ মানব উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। একেই বলে দুনিয়াপূজা, যার বিরুদ্ধে ইসলাম সংগ্রাম করতে বলে পরকালীন পাথেয়। আলী (আঃ) ও মানুষকে এ ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন। আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে পৃথিবীর নেতিবাচক দিকটি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো আলী (আঃ) পৃথিবীকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, উপরে ওঠার সিঁড়ি হলো পবিত্রতা, সততা ইত্যাদি গুণাবলি। কিন্তু যখনই তিনি পৃথিবীর অসুন্দর রূপ নিয়ে কথা বলেছেন তখনই মনে হয়েছে তিনি যেন এমন কোনো ঘৃণিত শত্রু সম্পর্কে কথা বলছেন যে কিনা মানুষকে সবসময় ধোকা দেয়। তিনি পৃথিবীকে এমন এক সাপের সাথে তুলনা দেন, যে সাপ দেখতে বেশ সুন্দর এবং নাদুস নুদুস অথচ তার দাঁতের নিচে আছে মারাত্মক বিষ। অন্যত্র তিনি বলেছেন-পৃথিবী তাঁর কাছে এমন একটা পাতার মতো অর্থহীন যার মুখে বসে আছে আস্ত এক ফড়িং কিংবা ছাগলের নাকের পানির মতোই তুচ্ছ ময়লা। ঘৃণিত এই পৃথিবী এমন এক জগত, যে আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং মানবিকতাকে ধ্বংস করে দেয়। আলী (আঃ) এর মতে মানুষ যদি পৃথিবীর মোহে পড়ে যায় তাহলে সে তার উন্নত সকল মূল্যবোধকে হারাতে বসে। এ কারণেই তিনি পৃথিবীর নশ্বরতা নিয়ে বারবার কথা বলেছেন। হযরত আলী (আঃ) পৃথিবীকে কঠিন ঝড়ের সাথে তুলনা করেন, যেই ঝড় সমুদ্রের বুকের নৌকায় বসবাসকারীদেরকে মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়, আবার কাউকে কাউকে সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে মারে, কেউবা ঢেউয়ের বুকে ডুবতে ডুবতে বেঁচে যায় এবং ভবঘুরে বানিয়ে ছেড়ে দেয়। পৃথিবী সম্পর্কে মানুষকে এভাবে ভীতি প্রদর্শন করানোর পর ইমাম আলী (আঃ) আল্লাহর সকল বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দেন, তারা যেন সুস্বাস্থ্য এবং সময়-সুযোগকে অমূল্য রতন ভাবে এবং মৃত্যুর বাস্তবতাকে যথার্থভাবে মেনে নিয়ে অতীতের ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন-হে আল্লাহর বান্দাগণ! সাবধান হও! তোমার মুখে ভাষা থাকতে থাকতে, তোমার শরীর সুস্থ থাকতে থাকতে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো খেদমতের জন্যে প্রস্তুত থাকতে থাকতে এবং ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত থাকতে থাকতে সাবধান হও! সুযোগ এবং সামর্থ হারাবার আগেভাগেই হুশিয়ার হও! অনিবার্য মৃত্যুর দূত তোমার দরোজায় টোকা দেওয়ার আগে ভাগেই হুশিয়ার হও! ইমাম আলী (আঃ) বোঝাতে চেয়েছেন যে শারিরীক সামর্থ থাকতে থাকতেই আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগি বেশি বেশি করে নাও! যে-কোনো সময় মৃত্যু এসে যেতে পারে কিংবা বার্ধক্যের সময় ইচ্ছা থাকলেও ইবাদাত বন্দেগি যৌবনকালের মতো করা সম্ভব হয় না। দুনিয়ার চাকচিক্য এমন যে এই মোহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্যে একটা শক্তির প্রয়োজন হয় যে শক্তি মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে। সেইসাথে এই শক্তি পৃথিবীকে নশ্বর হিসেবে সবসময় সামনে তুলে ধরে আর অবিনশ্বর পারলৌকিক জীবনের দিকে নিয়ে যায় এবং এভাবে নিজের সত্যিকারের সৌভাগ্য নিশ্চিত করে। ইমাম আলী (আঃ) পরহেজগারী এবং খোদাভীতিকেই এই শক্তি তথা মানুষের ভাগ্য নিয়ন্তা বলে বোঝাতে চেয়েছেন। যারা নিজেদেরকে আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে রজ্জুবদ্ধ করেছে এবং স্রষ্টা ও সৃষ্টিজগতের বাস্তবতার দিকে অগ্রসর হয়েছে তাদের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পরকালের শেষ বিচারের দিন কঠিন মুসবতের সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হবেন।

ওয়াহাবিরা জানে মদিনার রাসুল চিনে না প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ ) কে পর্ব ২ সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?) আপনাদেরকে বলতে চাই, হ্যালো মি. ওহাবী গং আপনারা যারা শিরক শিরক করে চিৎকার করছেন তারা তো ভয়ংকর শিরক করছেন জনাব শয়তানকেও হার মানিয়ে। শয়তানও তো এত বড় পাপ কাজ করে নাই মনে হয় যা আপনারা মি. ওহাবী গং শুরু করেছেন। যাকে সৃষ্টি না করলে কায়েনাতে একটি জলকণাও সৃষ্টির প্রশ্ন ওঠতো না সেই মহানবী হযরত আহাম্মদ মুস্তফা মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) এর সম্বন্ধে কথা বলছেন। সাবধান!! যিনি আল্লাহ সাথে স্বশীরিরে মিরাজ করেছেন। জিবরাইল (আ.)-ও যেখানে আর একটু এগুতে পারলেন না। সেই সিদরাতুল মুনতাহা, সৃষ্টির শেষ সীমানা। তখন জিবরাইল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার আর এক চুল পরিমান সামনে যাওয়ার ক্ষমতা নাই্। আমি আর এক চুল পরিমান এগুলেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। সুতরাং আপনি একাই এগিয়ে যান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করুন। নবী মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করলেন। তার সাক্ষাত ছিলো দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো একটু কাছাকাছি। দুই ধনুক বলতে আমরা বুঝি দুটি অর্থ বৃত্ত। দুটি অর্ধ বৃত্তকে একত্রিত করলে দেখা যায় একটি পূর্ন বৃত্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আর নবী মুহাম্মদ (স.) যদি একটি পূর্ন বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ হয়ে যান তখন আর ফাকা থাকলো কোথায়? কিন্তু তারপরও বলা হয়েছে দুই ধনুকের ব্যাবধান বা আরো কাছাকাছি। আল্লাহর নূরে বিলিন হয়ে গেছেন আল্লাহর হাবীব। এই সমস্ত কথা আপনারাদের কানে ঢুকবে না। কারন, আপনাদের কানগুলোকে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। কোরান পড়ুন। সুরা বাকারাতেই পাবেন আপনাদের কানের সমস্যার কথা। তিনি ওই নবী যিনি আল্লাহর মাহবুব, প্রিয় বন্ধু। যার নামের দরূদ না পাঠ করলে নামাজ পড়তে পড়তে কপালে তিন ইঞ্চি পরিমান কালো কহর ফেলে দিলেও আল্লহর কাছে গ্রহনীয় হবে না ও নামাজ। তিনি ওই রাসুল যিনি হায়াতুল মুরসালিন। তোমরা কী করে বুঝবে নবীকে। তোমরা তো নবী বংশকে ধ্বংশ করে নবীর বংশের দরূদ পাঠ করো। হোসাইন (আ.) এর মস্তক দ্বীখন্ড করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে। তোমরা তো ওই নামাজী যারা তাড়াতাড়ি আসরের নামাজ পড়ে নিলে কারন হোসেইনের মস্তক কেটে আনতে হবে। তোমাদের হৃদয়ে নবী প্রেম নাই। তাই তোমরা প্রিয় নবীর পাক রওয়ায় বোলডেজার চালাতে তোমাদের অন্তর কাপে না। তোমরা তো ইয়াজিদ, তোমরা তো হিন্দার বংশধর। তোমরা আসলে নামে মুসলমান। শুধু শিরক শিরক ধ্বনীতে ব্যবসা বানিজ্য করে যাচ্ছো। ইমাম হোসাইন শুধু কোনো মাজহাবের নাম নন, কোনো গোত্রের বা দলের নাম নন। মওলা আলী বলেছেন- আমার চোখের জ্যোতি হোসাইন। ফাতেমা যাহারা বলেছেন, আমার কলিজার টুকরা হোসাইন। আমার নবী মুস্তফা বলেছেন, আল হোসাইন মিন্নি ওয়া আনা মিনাল হোসাইন (আমি হোসাইন হতে হোসাইন আমা হতে)। সেই ইমাম হোসেইনকে আপনারা এজিদ পন্থি ওহাবী গং স্বপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করেছেন। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেইন বললেন, আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম? আমার কথা কি শুনতে পাওনা? তোমাদের মাঝে কি একটি মাত্র মুসলমানও নাই? খাজা আজমেরী (রহঃ) যেমন বলেছে, ইমাম হোসাইন আসল এবং নকলের ভাগটি পরিষ্কার করে দেখিয়ে গেলেন। সে রকম অর্থ বহন করেছে ইমামের শেষ ভাষনটিতে, কারন এজিদ সৈন্যবাহিনীতে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি অথবা অন্য কোনো ধর্মের লোক ছিলো না। সবাই মুসলমান অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, তোমাদের মাঝে কি একটি মুসলমানও নাই? অথচ এজিদের দলের সবাই ছিলো মুসলমান। কিন্তু না, একটিও সত্যকার ও আসল মুসলমান ছিলো না। যারা ছিলো সবাই ছিলো নকল মুসলমান। (বিস্তারিত দেখুন-শানে পাক পাঞ্জাতন - রেজা মাহবুব চিশতীর বইটিতে) নবী করিম (স.) বলেছেন, হে ওমর আমি তো চিন্তিত এই ভেবে যে আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে এমন এমন লোক থাকবে যারা তুমি ওমরের চেয়েও বেশি পরহেজগার দেখাবে। তাদের দাড়ি লম্বা হবে। গায়ে লম্বা জুব্বা থাকবে। কপালে নামাজের দাগ থাকবে। কিন্তু তাদের মধ্যে ইমান থাকবে না। তাদের ইমান গলার নিচে নামবে না। তারা মুখে বলবে ইমানদার কিন্তু আসলে তারা মুনাফেক। আজ সৌদি সরকার যে পায়তারা করছে আর তা শুনে আমাদের দেশের নাম-কা-ওয়াসতে মুসলমানদের খুশির বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারা তো ওই সৌদি বা ওহাবী গংদের পা চাটা কুকুর, এর চেয়ে আর বেশি সম্মান তাদেরকে দিতে পারিনা। নবীর রওজা স্থানান্তর করে যেখানেই নেক না কেনো যাদের অন্তরে নবী প্রেম আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে তাদের হৃদয়ের আগুন পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে নিভাতে পারে। তারা প্রিয় নবীর হাদিসটিতে ইচ্ছে মতো কাটছাট করে সাজিয়েছে। এবং চালিয়ে দিয়েছেন মাটির মতো সাদাসিদা মুসলমাদের কাছে। আসল ইতিহাস শুনে রাখুন- বিদায় হজ্ব শেষে মক্কা থেকে প্রিয় নবী মদিনার পথে গাদীরে খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। ইসলামের ইতিহাসে গাদীরে খুম-এর ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়, যা আজ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে সব শ্রেনীর মুসলমানদের কাছে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো ইসলামী জলসা, মাদ্রাসা, মসজিদের বয়ানে, তাফসির মাহফিলে, মৌলানাদের ওয়াজ-নসিহতে, কোথাও এর আলোচনা নেই। ধর্মপ্রান মুসলমান আজো সঠিক ভাবে জানে না গাদীরে খুম কী? এবং মওলার অভিষেক কেনো? সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি ও নবীবংশবিরোধী চক্রান্তকারীদের কারসাজিতে অনেক ঐতিহাসিক সত্য আজ ঢাকা পড়ে আছে। আবার ইসলামের নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী সমাজে প্রচলিত হয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু দলমত ও ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। তার খবর অনেকেই রাখেন না। যদিও সাধারনভাবে কোনো জাকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসায় এর কোনো আলোচনা চর্চা প্রচলিত নেই্, তবু আজও নবী এবং নবীর আহলে বায়াত (পাক পাঞ্জাতন)-এর সত্যিকার আশেক তারা ১৮ জিলহজ্ব এই দিবসটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠ খুশির দিন হিসেবে পালন করে থাকেন। যাদের অন্তরে প্রিয়নবী ও তার পবিত্র বংশধরদের প্রতি মোহাব্বত নেই তাদের ইমান আকিদা পরিশুদ্ধ নয়, এটা কোরানের কথা। সুরা শুরার ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেন- বলে দিন (হে প্রিয় রাসুল) আমি চাই না তোমাদের এই বিষয়ে (নবুয়াত) প্রচারে আমার নিকটবর্তীগনের (আহলে বায়াতের) মোয়াদ্দত (প্রাণাধিক) ভালোবাসা ব্যতীত যে ব্যক্তি এই আদেশের সদ্ব্যবহার করে আমি তার শ্রী বৃদ্ধি করে থাকি। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহপাক আহলে বায়াতের মোহাব্বত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। নবীর আহলে বায়াতের উপর ভালোবাসা উম্মতের ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হয়নি। নবী যে রিসালতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন আল্লাহ তার বান্দার কাছে থেকে তার পারিশ্রমিক বাবদ নবীর আহলে বায়াতের ভালোবাসাকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। উক্ত আয়াত নাজিল হলে সাহাবীগন জিজ্ঞাস করলেন- ইয়া আল্লাহর রাসুল (স.) কারা আপনার নিকটবর্তী যাদের ভালোবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন? উত্তরে নবী করিম (স.) বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। (তফসির করিব/তফসিরে দোররে মানসুর/তফসীর তাবারী/ইয়া নবীউল মোয়াদ্দাত/মুসনদে আহাম্মদ)

ওহাবীরা জানে মদিনার রাসুল, চিনেনা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স.)-কে পর্ব ১ এজিদের বীজ থেকে ওহাবীদের জন্ম। আসুন ভাই মুসলমানগন আপনাদেকে বলি এজিদ কে এবং ওহাবী কারা? তারা কি সত্যিই নবী প্রেমিক মুসলমান (?) সৌদি সরকার ওহাবী, মুয়াবিয়া বীজের বংশ তারা। সুতরাং আজ তারা প্রিয় নবীর রওজা পাক সরিয়ে নেয়ার যে জঘন্য কাজে এগিয়ে যাচ্ছে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ এই বংশের লোকেরা এর আগেও করে গেছেন যা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে। আসুন আমরা চিনে নেই এই সৌদি রাজ বংশ আসলে কারা। আরবের বড় বড় কাফের আবু লাহাব, আবু জেহেল, আবু সুফিয়ান ছিলো প্রিয় নবীর ঘোর শত্রু। এদের মধ্যে আবু সুফিয়ান ছিলো নবী পাক (স.)-এর জঘন্যতম শত্রু। আরেকজন ঘোরতর শত্রুর নাম ছিলো ওতবা। ওই ওতবার মেয়ের নাম ছিলো হিন্দা। পাপিষ্ঠা রাক্ষসী হিন্দা ওহুদের যুদ্ধে প্রিয় নবী (স.)-এর চাচা হামজার পেট চিরে কলিজা বের করে চিবিয়ে খায় এবং হাত ও নাক কেটে নেয় গলার অলংকার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। ওই কলিজা ভক্ষনকারীর ছেলের নাম মুয়াবিয়া। মুয়াবিয়ার পিতার নাম আবু সুফিয়ান। মহানবীর ঘোর দুশমন আবু সুফিয়ান আর হিন্দার পুত্র মুয়াবিয়া ইসলাম পরবর্তী জীবন ব্যবস্থায় গনিমতের মাল ভক্ষন ও ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা ছাড়া ইসলামের প্রতি ত্যাগ ও মোহাব্বতের একটি দৃষ্টান্তও কেউ দেখাতে পারবেন না। ঈমান (মৌখিক ঈমান) আনার পরও মহানবীর প্রতিষ্ঠিত মহান আদর্শগুলোকে একে একে হত্যা করেছে আর প্রিয় নবীর পবিত্র বংশধররা সে আদর্শ বাচিয়ে রাখার জন্য অকাতরে জীবন কোরবানি দিয়েছেন। মুয়াবিয়ার কুলাঙ্গার পুত্র ইয়াজিদ। আরেকটু জেনে রাখুন- ইতিহাসের কালপ্রবাহে বনি কুরাইশ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে যায় একটি ইমাইয়া আরেকটি হাশেমী। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর আদি পুরুষ হাশিম থেকেই এদুটি গোত্রের মধ্যে জ্ঞাতি বিদ্বেষের বিষাক্ত ধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব, যোগ্যতা ও প্রতিপত্তির কারনে তৎকালীন কুরাইশে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছিলেন। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ও যোগ্যতা তার ভ্রাতুষ্পুত্র আবদে শামসের পুত্র উমাইয়া কিছুতেই সহ্য করতে পারতো না। হযরত হাশিমের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সবসময় কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতো ক্ষমতা লোভি উমাইয়া। আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী এই শত্রুতা চলতে থাকে বংশানুক্রমিক ভাবে। হযরত উসমান (রা.) খেলাফতপ্রাপ্ত হলে উমাইয়া নেতারা একে একে খলিফার ঘরে অভ্যর্থনা জানাতে আসছিলেন। আবু সুফিয়ান তখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। পথে তিনি সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলেন- তোমাদের মধ্যে বনি উমাইয়া ছাড়া অ্ন্য কেউ নেই তো? হ্যাঁ সূচক উত্তর পাওয়ার পর আবু সুফিয়ান সঙ্গীদের বললেন- দেখো, বহু কষ্ট আর সাধনার পর ক্ষমতা আমাদের হাতে এসেছে। এটাকে বলের ন্যায় বনি উমাউয়ার এক হাত থেকে অন্য হাতে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এটা (খেলাফত) যেনো আর কোনোদিন বনি হাশিমীদের ঘরে ফিরে না যায় (রউফুল হেজাব) আবু সুফিয়ানের পুত্র আমির মুয়াবিয়া ক্ষমতা, মসনদ, ব্যক্তিস্বার্থ ও গোত্রীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করেননি। আজ চৌদ্দ শো বছর পর আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে ইসলামের ঘোর শত্রুদল। তারা নামে মুসলমান। তারা লম্বা জামা পরে। কপালে নামাজের কালো দাগ। মুখে দাড়ি আছে, মাথায় টুপি। আসলে তারা নকল মুসলমান। আজ শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয় নবীর পাক রওজাতে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত। তারা প্রায় ১০০ বছর আগে জান্নাতুল বাকীতে অবস্থিত প্রিয় নবীর আহলে বায়াতের নাম নিশানা মিটিয়ে দিয়েছে সেখানে অবস্থিত সমস্ত রওজাগুলিকে ধ্বংশের মাধ্যমে। তারা এবার প্রিয় নবীর পবিত্র রওজা শরীফের দিকে এগিয়ে আসছে বোলডেজার নিয়ে। ভাই মুসলমান, শুনে রাখুন- যাদের অন্তরে প্রিয় নবীর প্রেম মহাব্বত নেই, যারা সকলের চেয়ে প্রিয় নবীকে বেশি ভাল না বাসবে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- একটি শুচের ছিদ্র দিয়ে যদিও একটি উট প্রবেশ করতে সক্ষম হয় কিন্তু তাদের দ্বারা বেহেস্তে প্রবেশ করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় যাদের অন্তরে প্রিয় নবী মুহাম্মদ মুস্তফা (স.)-এর প্রেম ভক্তি সকল বস্তুর চেয়ে বেশি না হবে। এখন চিন্তা করে দেখুন সৌদিরা আদৌ মহানবীকে ভালবাসেন কিনা। ভালোই যদি বাসতেন তাহলে তারা শিরকের দুহাই দিয়ে প্রিয়নবীর রওজা মোবারকে বোলডেজার চালাতে প্রস্তুত হতো না। নবীর প্রতি মুসলমানদের প্রেম-ভক্তি-ভালবাসা সৌদিদের কাছে শিরক। তাহলে তারা কোন আল্লাহর ইবাদত করে একটু ভেবে দেখুন তো? যে আল্লাহ বলছেন- মুহাম্মদকে সৃ্ষ্টি না করলে এ জগতের কিছুই সৃ্ষ্টি করতাম না। যে এনেছেন নামাজ সেই নামাজ পড়ে পড়ে কপালে কালো দাগ বানিয়ে প্রিয় নবীর সাথে দুশমনি করছেন সৌদি রাজ পরিবার। তারা আবার কেমন মুসলমান (?) তারা কি আদৌ মুসলমান (?)

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ পৃথিবীতে মানুষের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো অব্যাহত কর্মচাঞ্চল্য, এটা মানুষের ব্যক্তিজীবনের অবশ্যম্ভাবী একটি প্রয়োজনীয়তা। ইমাম আলী (আঃ) মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ সম্পর্কে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখেন। এক্ষেত্রে তিনি আরেকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করেন। সেটা হলো মানুষেরজীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা। যেই শৃঙ্খলা তাকে উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়। হযরত আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার সময়ের একটা অংশ জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে ব্যয় করা এবং আরেকটি অংশ ব্যয় করা উচিত মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে। ইমাম আলী (আঃ) এর মতে মানুষের উচিত তার জীবনের একটা সময় জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যে ব্যয় করা এবং অপর একটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করার জন্যে। আর এ প্রশান্তির ব্যাপারটি একমাত্র ইবাদাত-বন্দেগী বা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হয়। মানুষের সময়ের তৃতীয় অংশটি তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি লালনের জন্যে ব্যয় করা উচিত যাতে তার জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শক্তি লাভ করতে পারে। হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেন,মুমিন জীবনের কর্মপরিকল্পনায় তিনটি সময়সুনির্দিষ্ট আছে। একটা হলো তার স্রষ্টার ইবাদাত-বন্দেগির সময়। দ্বিতীয় সময়টা হলো যখন সে তার জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় আর তৃতীয় সময়টা হলো তার সৎ আনন্দগুলো আস্বাদনের সময়। আজকের আলোচনায় আমরা ইমাম আলী (আঃ) এর বক্তব্যের তৃতীয় অংশটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবো-যেখানে তিনি জীবনের স্বাভাবিক আনন্দ ও সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষ দৈনন্দিন জীবন সমস্যায় এতো বেশি জর্জরিত যে,নিজের দিকে তাকাবার সময় খুব কমই মেলে। যার ফলে আমরা লক্ষ্য করবো যে মানুষ তার নিজের সম্পর্কে মানুষ উদাসীনতায় ভোগে। আমরা লক্ষ্য করবো যে, এই উদাসীনতার পরিণতিতে ব্যক্তির মাঝে অশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এগুলো থেকেমুক্তির জন্যে সে ভুল চিত্তবিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে-যা তার চিন্তা-চেতনায় ডেকে আনছে নিরন্তর অবক্ষয়। আলী (আঃ) মানুষের এই চিন্তা-চেতনাগত অবক্ষয় রোধকল্পে আভ্যন্তরীণ বা আত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন সুস্থ বিনোদনের জন্যে বই পড়া যেতে পারে যে বই মানুষের মনের খোরাক দেয়,আত্মিক এবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে। তিনি বলেছেন,জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় এবং নতুন অভিনতুন বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নিজেদের অন্তরগুলোকে বিনোদিত করো,কেননা মনও শরীরের মতো ক্লান্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত হলো,মানুষের জন্যে একঘেঁয়ে কাজ বা একঘেঁয়ে জীবন বিরক্তিকর এবং তা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যেই মানুষের উচিত হলো স্বাভাবিক ও একঘেঁয়ে জীবনের ছন্দে মাঝে মাঝে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্য আনা। যেমন মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপর পড়ালেখা করা। এগুলো অন্তরকে প্রশান্ত করে,সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটি বিনোদন-মাধ্যম। ইসলামে খেলাধুলার ব্যাপারে বলা হয়েছে খেলাধুলা শারীরিক শক্তি-সামর্থবৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দেরও একটি মাধ্যম। ইসলামে মানুষের সুস্থতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই লক্ষ্য করা যাবে ঐশী শিক্ষা মানুষের জন্যে প্রাণদায়ী। যেমন রোযা অসুস্থ ব্যক্তির ওপর হারাম। একইভাবে মাদক যেহেতু মানুষের শরীর মনের জন্যে খুবই ক্ষতিকর এবং জীবন চলার পথকে স্থবির কিংবা একবারে বন্ধই করে দেয় সেজন্যে ইসলাম মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে তিরষ্কৃত এমনকি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ইমাম আলী (আঃ) ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, বিমর্ষ বা মাতাল ব্যক্তিদের ওপর আস্থা রেখো না। তিনি মুমিনদেরকে সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হবার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছেন! আলী (আঃ) নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তির বাইরেও সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী। নবীজীর যে-কোনো আদেশ পালনের জন্যে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।  নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি সংকলিত হয়েছে সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনীষীদের দৃষ্টিতে যুগ যুগ ধরে সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়-বিচার এবং স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিরাপত্তা জীবনের মৌলিক দিকগুলোর একটি এবং সামজিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর মানব উন্নয়ন ও বিকাশের অনিবার্য ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী। এ কারণেই মানুষের একটি পবিত্রতম প্রত্যাশা হলো এই নিরাপত্তা। আল্লাহর পক্ষ থেকে পূণ্যবানদের সমাজের জন্যে সুসংবাদ হিসেবে নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ "তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে আল্লাহ তাদের এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে,পৃথিবীতে তিনি তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত দান করবেনই যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন। তিনি তাদের জন্যে তাঁর মনোনীত দ্বীনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেবেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে শান্তি আরনিরাপত্তামূলক অবস্থায় পরিবর্তিত করে দেবেন।" মানুষের এই প্রাচীন আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ নিরাপত্তা তার অস্তিত্বের সাথেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। জীবন যাপনের প্রয়োজনে মানুষ পরস্পরের সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে এবং এভাবেই একটি সমাজবিনির্মাণ করে। তাদের এই সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি হলো ন্যায় ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করাহযরত আলী (আঃ) নাহজুল বালাগা'য় বলেছেন ইতিহাসের কাল-পরিক্রমায় রাষ্ট্র গঠন কিংবা সরকার গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। একথা সর্বজন বিদিত যে ইমাম আলী (আঃ) ক্ষমতার মসনদ বা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেশাসনকার্য পরিচালনা করেন নি, বরং তিনি এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন যার ছত্রছায়ায় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়,অপরের অধিকার নষ্ট করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়,জনগণ নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে শত্রুদেরমোকাবেলার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চালায় হযরত আলী (আঃ) অবশ্য এই বক্তব্যটি রেখেছিলেন খারজিদের কথা মাথায় রেখে-যারা হযরত আলী (আঃ) এর হুকুমাতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। নাহজুল বালাগায় তিনি বলেছেন-"তারা বলে হুকুমাত,বিচার বা শাসন-কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ কথা সত্য। আরো সত্য যে মানুষ-চাই শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ-শাসকের মুখাপেক্ষী। মুমিন ব্যক্তিগণ হুকুমাতেরছায়ায় নিজেদের কাজে মশহুল হয় আর অমুসলিমরা তা থেকে উপকৃত হয়। হুকুমাতের কল্যাণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে হুকুমাতের মাধ্যমেই বায়তুল মাল আদায় হয়,শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হয়,রাস্তাঘাট সুরক্ষিত হয়,সবলের হাত থেকে দুর্বল তারঅধিকার রক্ষা করতে পারে। আর এগুলো সম্ভব হয় তখন যখন পুণ্যবানরা শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে জীবনযাপন করতে পারে এবং বাজে লোকদের হাত থেকে নিরাপদ থাকে। হযরত আলী (আঃ) এ কারণেই নিরাপত্ত প্রতিষ্ঠা করাকে সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকে একটি নিয়ামত হিসেবে গণ্য করতেন। তাঁর দৃষ্টিতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার মৌলিক শক্তি হলো আল্লাহ এবং ইসলামের প্রতিঈমান। নাহজুল বালাগায় এসেছে-সকল প্রশংসা আল্লাহর,যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সহজ পথের নির্দেশনা দিয়েছেন ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হবার জন্যে। তিনি ইসলামের স্তম্ভ করেছেন সুদৃঢ় যাতে কেউ একে ধ্বংস করতে না পারে। যারা ইসলামকে অবলম্বন করেছে তাদের জন্যে মহান আল্লাহ ইসলামকে করেছেন শান্তির উৎস। যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় তাদের অন্তরে দিয়েছেন বিশ্বস্ততা,যারা ইসলামের ওপর নির্ভর করতে চায় তাদের জন্যে দিয়েছেন আনন্দ। যে বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে চায় ইসলামকে তার জন্যে করেছেনঢালস্বরূপ। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে একটি দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করা উচিত যেখানে কোনো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়।তার মানে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দেশের সরকারের মৌলিক একটি দায়িত্ব। এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে হযরত আলী (আঃ) বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে আমরানাহজুল বালাগা থেকে একটি ছোট্ট উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ইমাম বলেছেন-চেষ্টা করো সততা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার। প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ত থেকো। সৎ পথ অনুসরণ করো। অহমিকা থেকে দূরে থেকো। আগ্রাসন বা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থেকো ইত্যাদি মুসলমানদের এই মহান নেতা মানুষের জান-মালের হেফাজত করা এবং সম্মান রক্ষা করাকেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অংশ বলে মনে করেন। সেজন্যে তিনি তাঁর বক্তব্যে কিংবা উপদেশে মানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালে যখন শুনতে পেলেন যে একদল লোক মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে এবং তাঁরই শাসিত এলাকার ভেতর ইহুদি এক মহিলা লাঞ্ছিত হয়েছে,তিনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন-এই ঘটনায় শোকে-দুঃখেকেউ যদি মরেও যায়,তাহলে তাকে তিরষ্কৃত করা হবে না।

আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী নাহজুল বালাগা খুৎবা তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন সব কিছুকেই। কোন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ এবং কোন পরামর্শ দাতার পরামর্শ বা কোন সাহায্যকারীর সাহায্য ছাড়াই। (খুতবা:১৫৫) পৃথিবী তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই পৃথিবীকে। তা আবার ঝুলিয়েও রেখেছেন। তা ধরে রেখেছেন কোন অবলম্বন ছাড়াই। এমনভাবে তৈরী করেছেন যা পা ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তা উঁচু করে রেখেছেন কোন খুঁটি ছাড়াই। (খুতবা:১৮৫) বাতাস তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তাঁর স্বীয় ক্ষমতায়। আর আসমান ও জমিনের মধ্যে বাতাসকে প্রবাহীত করেছেন সহানুভূতির সাথে। (খুতবা:১) চাঁদ তিনি (আল্লাহ), সজ্জিত করেছেন আসমানকে উজ্জল নক্ষত্র ও উল্কার আলোকচ্ছটা দিয়ে। এর সাথে স্থাপন করেছেন দীপ্তশালী সূর্যকে। আর স্থাপন করেছেন উজ্জল চাঁদকে, যা স্বীয় কক্ষ পথের চতুর্দিকে আবর্তন করছে। (খুতবা:১) রাত তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্য। যখন রাত্র পতিত হয় ও অন্ধকার নেমে আসে। আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁর জন্যেই। যখন নক্ষত্ররাজী ঝিকিমিকি করে এবং তা আবার ডুবেও যায়। (খুতবা:৪৮) সূর্য লক্ষ্য কর: সূর্য ও চাঁদের দিকে, ঘাষ, লতা-পাতা ও বৃহদাকার গাছগুলোর দিকে, পানি ও পাথরের দিকে, সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের দিকে, বিশাল বিশাল পর্বতশৃঙ্গ ও তার উচ্চতার দিকে। লক্ষ্য কর: ভাষার পার্থক্য ও তার বৈচিত্রতার দিকে। আরো লক্ষ্য কর রাতের পর দিন ও দিনের পরে রাতে পালাবদলের দিকে। (খুতবা:১৮৫) পিপড়া তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন পিপড়াকে। লক্ষ কর এই পিপড়ার ছোট্ট সুন্দর দেহটার দিকে। চেয়ে দেখ কেমন করে সে জমিনের উপর বুক দিকে হেটে চলে এবং কিভাবে সে জীবিকা সংগ্রহ করে, কিভাবে শষ্যদানা বহন করে নিজের ঘরে এনে সেগুলোকে আবার গুদামজাত করে। সে গরমকালে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখে শীতকালের জন্য এবং শক্তি সঞ্চয় করে রাখে ওই সময়ের জন্য যখন সে দূর্বল হয়ে পড়বে। (খুতবা:১৮৫) পদতল তিনি (আল্লাহ), সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যই। তিনি পিপড়া ও মাছির পদতল দিয়েছেন, আবার তিনিই সৃষ্টি করেছেন পিপড়া ও মাছির থেকেও বড় কিছু, আর তা হচ্ছে তিমিমাছ ও হাতি। (খুতব:১৬৫) কীট-পতঙ্গ যদি তুমি চাও, তাহলে আমি তোমাকে ওই কীট-পতঙ্গ সমন্ধে বলবো। আল্লাহ তাকে দুটি লাল চোখ দিয়েছেন, যা অনুরূপ চাঁদের মত। তাকে ছোট্ট দুটি কান দিয়েছেন, যা তার মুখমণ্ডল উপযোগী। তাকে সুতিক্ষ্ম ইন্দ্রীয় দিয়েছন ও মুখের অগ্রভাগে দুটি ধারালো দাঁত, যা দিয়ে সে বিভিন্ন কিছু কাটতে পারে। তাকে কাস্তের মত দুটি পালক দিয়েছেন, যা অনুরূপ পায়ের মত, যার সাহায্যে সে শক্তভাবে দড়াঁতে পারে। (খুতবা:১৮৫) পাঁখি পাঁখিরা আল্লাহর নির্দিশের আজ্ঞাবহ। তিনি জানেন তাদের পালকের সংখ্যা এবং তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হিসাব। আর পানি ও মাটির উপর দাড়াঁনোর জন্য তাদের পাগুলোতে শক্তি দিয়েছেন। আর তিনি জানেন তাদের সব প্রজাতির ব্যাপারে, যেমন: কাক, ঘুঘু, ঈগল ও উট পাখি। (খুতবা:১৮৫) ময়ূর তাঁর (আল্লাহর), সৃষ্টিত সব পাখির মধ্যে সর্বাধিক বিস্ময়কর হচ্ছে এই ময়ূর। যাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন অধিক সুন্দর সমতান, সূর লালিত্য দিয়ে। আর তাকে সাজিয়েছেন সুন্দর রং, বর্ণ ও রূপ দিয়ে, যা অধিক সুন্দর্জিত। তার ডানাগুলো এবং বিভিন্ন রংয়ে রঙ্গিন লম্বা লেজটি যেন একত্র নরম হাতে নিখুতভাবে বাধানো। (খুতবা:১৬৫) বাদুড় বাদুড় হচ্ছে তাঁর সুন্দর সৃষ্টির একটি দৃষ্টান্ত। এটি একটি অলৌকিক বিষয় তাঁর সৃষ্টিতে, একটি রহস্যময় নমুনা তাঁর বিজ্ঞতার। এগুলোর সবই আমরা একটি বাদুড়ের মধ্যে দেখতে পাই। যা সংকুচিত হয়ে যায় সূর্যের আলোয়। যদিও সূর্যের আলো সব কিছুকেই ততপর করে তোলে তাদের প্রয়োজনের তাগিদে। কিন্তু সে একবিন্দু পরিমাণ নড়াচড়া করে না। সে ততপর হয়ে ওঠে রাত্রে। যদিও রাতের অন্ধকার থামিয়ে অন্য সকল প্রকার জীবন্ত প্রাণীর ততপরতাকে। আল্লাহর অস্তিত্বের জীবন্ত প্রমাণ হচ্ছে এটাই। (খুতবা:১৫৫) মাছ তিনি (আল্লাহ), সৃষ্টি করেছেন মাছকে। তিনি অবগত আছেন গভীর জঙ্গলের মধ্যে পশুদের দলনেতা, গভীর সমুদ্রের তলদেশে মাছদের ঘোরা ফেরা, মানুষের নিতান্ত গোপন পাপগুলো সমন্ধে এবং আরো অবগত আছেন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে সৃষ্ট সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের মাটির বুকে আছড়ে পড়ার শব্দ সমন্ধে। (খুতবা:১৯৮) জীবিকা তিনি (আল্লহ), একমাত্র জীবিকা দানকারী। সব কিছুই তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করে আছে। তাঁর কারণেই সব কিছুর অস্তিত্ব বিরাজমান। তিনি তো সকল অসহায়ের একমাত্র অবলম্বন, সম্মানদাতা বিনয়ীদের, শক্তিদাতা শক্তিহীনদের, সান্তনাদাতা দু:খিদের। তিনি প্রতিটি বক্তার সব কথাই শ্রবণ করেন। তিনি ওই সকল ব্যক্তির গোপন চিন্তা সমন্ধে জানেন যারা নি:শ্চুপ অবস্থায় বসে আছে। তিনিই তো জীবিকা দান করেন প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীকে। আর সব কিছুই প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছে মৃত্যুর মাধ্যমে। (খুতবা:১০৯) দাউদ (আ.) তিনি ছিলেন একজন ধর্মসঙ্গীতের গ্রন্থকার (অর্থাৎ বেহেশ্তের দাওয়াত প্রদানকারী)। আর ছিলেন আবৃত্তিকারক রাজ প্রাসাদের বাসিন্দাদের (অর্থাৎ নিয়ামত আনায়নকারী সঠিক পথ গ্রহণকারীদের জন্য)। তিনি খেজুর গাছের পাতা দিয়ে ঝুড়ি বুনতেন এবং খুলে যাওয়া ঝুড়ির তলাগুলো নিজের হাতে ঠিক করতেন। তিনি একদিন তার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি বললেন: “কে আছো তোমাদের মধ্যে আমাকে সাহায্য করতে পার, এই ঝুড়িগুলো বিক্রয়ের জন্য”? তিনি যবের আটার রুটি খেয়ে জীবন-ধারণ করেছিলেন, যা ঝুড়ি বিক্রিত টাকা দিয়ে কিনতো।(খুতবা:১৬০) লতা-পাতা মুসা (আ.) বললেন: “হে আমার আল্লাহ নি:সন্দেহে তুমি যা কিছু আমার জন্য পাঠাও আমি সেগুলোর মুখাপেক্ষি”। আল্লাহর কসম, তিনি আল্লাহর কাছে শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য রুটি ছাড়া অন্য কিছুই চান নি। কেননা, তিনি খাদ্য হিসেবে মাটিতে উৎপাদিত লতা-পাতাই ব্যবহার করতেন। একারণেই শেষ পর্যায়ে লতা-পাতার সবুজ রং তার পেটের চামড়ায় প্রতিয়মান হয়ে ছিল। যার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। (খুতবা:১৬০) শীতকাল আমি তোমাদেরকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে বলবো: তিনি মারইয়াম (সা. আ.)-এর সন্তান, তার ছিল একটি পথরের বালিশ, তিনি পরিধান করতো মোটা বস্ত্র এবং মোটামুটি খাবার খেত। অন্ধকার রাতে চাঁদই ছিল তার একমাত্র আলোর উৎস। শীতকালে পৃথিবীর পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত এই বিস্তীর্ন আকাশ ছিল তার ঘরের ছাদ। মরুভূমিতে গবাদি পশুর জন্য কিছু উৎপন্ন করাই ছিল তার পছন্দের বিষয়। (খুতবা:১৬০) সুসংবাদ অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠালেন (আল্লাহ্ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করুন)। আল্লাহর সাক্ষী অনুযায়ী, নবী (সা.) একজন সুসংবাদের দুত এবং ভয় প্রদর্শন ও সতর্ককারী। তিনি শ্রেষ্ট সৃষ্টি হিসেবে একটি নি:ষ্পাপ শিশুর মত এবং মানবজাতির মধ্যে পবিত্রতম ব্যক্তি পূর্ণ বয়স্ক হিসেবে। সব কিছু পরিচালনার জন্য এমনকি সব বিষয়ে তিনি ছিলেন নি:স্কলংকের নি:স্কলংক এবং সর্বাধিক উদার ছিলেন তাদের জন্য যারা স্বীয় উদারতাকে প্রকাশ করত। (খুতবা:১০৫) আরবের অধিবাসী আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে (আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষন করুন) পাঠিয়েছেন পৃথিবীর মানুষদেরকে সতর্ককারী ও স্বীয় সত্য দ্বীন প্রকাশের তত্বাবধায়ক হিসেবে। সে সময় তোমরা ওহে আরবের অধিবাসী! কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মের অনুসারী ছিলে আর তোমাদের এলাকাটি তখন অতি খারাপ জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। তোমরা বসবাস করতে পাহাড়ের গুহার মধ্যে, যার আসে পাশে থাকতো বিষাক্ত সাপ। তোমরা পান করতে কর্দমাক্ত ঘোলা পানি এবং খেতে নিম্নমাণের খাবার। তোমরা একে অপরের রক্ত ঝরাতে এবং নষ্ট করতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক। মুর্তিগুলো তোমাদের মনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল। আর পাপগুলো তোমাদের চেপে ধরেছিল যখন তোমরা মুর্তিগুলোর দাসত্য করতে। (খুতবা:২৬ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

ইমাম আলী (আঃ) এর ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী বক্তব্যের দিক নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ) এর স্বরূপটা এমন একজন ইনসানে কামেলের মতো ফুটে ওঠে যিনি সত্ত্বার বিস্ময় ও রহস্যের গূঢ়ার্থ সচেতন এবং যিনি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যের সকল রহস্যকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুণাবলী এমন এক বিষয় যা নাহজুল বালাগায় বারবার বর্ণিত হয়েছে। আলী (আঃ) আল্লাহর বর্ণনা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহ্যভাবে দিয়ে মানুষের চিন্তা-আবেগ-অনুভূতিকে এমন এক অনন্ত সত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে তোলেন যে সত্য সম্পর্কে আমরা সবাই নিজেদের উপলব্ধি অনুযায়ী তাঁকে চিনতে পারি এবং যাঁর অপার দয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা জীবন যাপন করি ন্যায়কামী ও সত্যান্বেষী এই মহান মনীষীর অলঙ্কারপূর্ণ ও গভীর অর্থবহ বক্তব্যের আরো কিছু দিক আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো মানুষের অধিকার জাগরণের ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এর মর্যাদা অনেক উর্ধ্বে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ইসলামী শিক্ষার আলোকে আলোকিত। জুলুম-অত্যাচার,নিরাপত্তাহীনতা বা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো। আলী (আঃ) কে যে-ই চিনতে পারবে সে অবশ্যই ভালোভাবে উপলব্ধি করবে যে,অত্যাচারের মোকাবেলায় তিনি কখনোই শান্তভাবে চুপ করে বসে থাকতে পারতেন না, চেষ্টা করতেন সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার জন্যে তাঁর এই চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিষয়টি তাঁর চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা-বিবৃতি তাঁর শাসনকার্য এবং তাঁর অনুসৃত নীতি-আদর্শের মধ্যেই সুস্পষ্ট। শ্রেণী-বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে,দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে এবং শোষণ-বঞ্ছনা ও অন্যায়-জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনকালে মানুষকে ন্যায়-নীতির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যারা শাসক তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য হলো ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের জন্যে রাজনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে এমন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর মানুষই তার সুফল ভোগ করতে পারে। আসলে রাজনৈতিক নিরাপত্তার মানেই হলো এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে আপামর জনগণ নির্দ্বধায়-নিঃসঙ্কোচে,নির্ভয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার কথা বলতে পারে। আলী (আঃ) তাঁর হুকুমাতকালে রাজনীতি বা হুকুমাতের বিকৃত অর্থটিকে দূরীভূত করার চেষ্টা করেছেন। বিকৃত অর্থ মানে হুকুমাত বলতে মানুষ বুঝতো একধরনের স্বৈরশাসন বা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া জগদ্দল পাথর। আলী (আঃ) এই ধারণাটি পাল্টে দিলেন। তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে,হুকুমাত আসলে পরিচালনা,অংশঅদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সেবা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আজারবাইজানের স্বল্পকালীন গভর্নর ছিলেন আস্আস ইবনে কায়েস। ইমাম আলী (আঃ) এই আস্আসকে একটি চিঠিতে লিখেছেন-গভর্নরের পদ তোমার জন্যে মজাদার কিছু নয় বরং এটা তোমার ঘাড়ে চাপানো একটা আমানত,তাই তোমার উচিত হলো তোমার কমান্ডার এবং তোমার ইমামের আনগত্য করা। মানুষের ওপর স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড করা কিংবা আদেশ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার তোমার নেই। তোমার হাতে মহান আল্লাহর দেওয়া বহু সম্পদ রয়েছে। তুমি হচ্ছো সেইসব সম্পদের কোষাধ্যক্ষ,তোমার দায়িত্ব হলো সেইসব সম্পদ আমার কাছে সোপর্দ করা। ইমাম মনে করতেন সমাজে রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে বড়ো কারণটি হলো স্বৈরশাসন যা মানুষের অসৎ গুণাবলির মূল। সে জন্যেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যখন চিঠিপত্র লিখতেন সেখানে বলতেন তারা যেন অহমিকা না করে,শ্রেষ্ঠত্বকামী না হয়। তিনি আরো তাকিদ দিতেন যে শাসক এবং জনগণের মাঝে পারস্পরিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দেওয়া যায় তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা,শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেই সমাজের লোকজনের মাঝে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এ কারণেই ইমাম আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালের শুরু থেকেই জনগণের ওপর তাঁর কোনোরকম কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন নি যাতে মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিঘিœত হয়। এমনকি তাঁর বিরোধী ছিল যারা,তাদের কারো ওপরেও কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করা হয় নি বা তাদের নিরাপত্তা কখনোই হুমকির মুখে পড়ে নি। আলী (আঃ) জনগণকে ভালোবাসতেন এবং তাদেরকে নির্বাচনের অধিকার দিতেন। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাই দারিদ্র্যের কারণ আর দারিদ্র্য ঈমানের দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বঞ্চিত জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে তিনি মনে করেন। জনকল্যাণে তাঁর ছিল গভীর মনোযোগ। তিনি মনে করতেন তাঁর হুকুমাতের একটি লক্ষ্য হলো সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। তিনি চেষ্টা করেছেন আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি কেবল তখনই বিরোধীদের মোকাবেলা করতেন যখন একেবারেই নিরুপায় হয়ে যেতেন অর্থাৎ যখন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আর কোনো পথ খোলা না থাকতো। তিনি একটি চিঠিতে মালেক আশতারকে লিখেছিলেন, "শান্তি প্রস্তাব হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ,তাই শান্তিপ্রস্তাবকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করো না। শত্রুরা যেটুকুই পেশ করুক না কেন। যোদ্ধাদের জন্যে প্রশান্তি,নিজেদের এবং দেশের জন্যে শান্তি নিশ্চিত হয় শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। তবে শান্তিচুক্তির পর শত্রুদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। কেননা অনেক সময় শত্রুরা তোমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করার জন্যে তোমার সমীপে হাজির হবে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাপারে ত্র"টি করবে না। এভাবে হযরত আলী (আঃ) নিরাপত্তা বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক করণীয় বলে গুরুত্ব দিতেন। সত্যি বলতে কি ইমাম আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে যে সমাজে নিরাপত্তা নেই সে সমাজে সার্বিক ন্যায়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। হযরত আলী (আঃ) ৪৯ নম্বর খোৎবায় লিখেছেন,সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সকল গোপন বস্তু সম্পর্কে অবহিত এবং সত্ত্বার সকল প্রকাশ্য বস্তুই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। কখনোই কারো চোখের সামনে তিনি প্রকাশিত হন না। যে চোখ দিয়ে তাকে দেখে না, সেও তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না। যে হৃদয় তাঁকে চিনেছে সেও তাকে দেখতে পায় না। তিনি এতো মহান, মর্যাদাবান এবং উন্নত যে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। আবার তিনি সৃষ্টিকূলের এতো কাছে যে, কোনো কিছুই তাঁর চেয়ে বেশি কাছের হতে পারে না। আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে আল্লাহ হলেন সকল সত্ত্বার উৎস এবং সৃষ্টির সবকিছু তাঁর কাছ থেকেই উৎসারিত। আকাশ এবং যমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছেন। আর সৃষ্টিকূল যেহেতু তাঁর সাথেই সম্পর্কিত,সেহেতু সকল বস্তুই তাঁর মর্যাদা এবং তাঁর একত্বের লেশপ্রাপ্ত। আল্লাহর বান্দাগণ তাঁর সক্ষমতা,তাঁর কৌশল এবং তাঁর দয়অ-দিাক্ষিণ্যের কাছে অনুগত ও আত্মসমর্পিত। যদিও বান্দাদের আনুগত্যের কোনো প্রয়োজনীয়তা আল্লাহর কাছে নেই। বরং আনুগত্য বান্দার নিজের মর্যাদা বা সৌভাগ্যের জন্যেই প্রয়োজন। আলী (আঃ) জনগণের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন তারা যেন আল্লাহকে সময় এবং স্থানের সীমিত গণ্ডির মাঝে অবরুদ্ধ বলে মনে না করে কিংবা তাঁকে কেউ যেন নিজের সাথে তুলনা না করে। আল্লাহকে চেনার জন্যে তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়ের প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,বিশালত্ব এবং মহান মর্যাদার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। নাহজুল বালাগায় তিনি মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন- হে যথার্থ কাঠামোযুক্ত সৃষ্টি!হে মায়ের পেটের অন্ধকারে লালিত সত্তা! সৃষ্টির শুরুতে তুমি ছিলে কাদার তলানি। তারপর তুমি নির্দিষ্ট একটা সময় আরামের একটি জায়গায় সুরক্ষিত ছিলে। সেই মায়ের পেট থেকে তোমাকে বের করে এমন এক পৃথিবীতে আনা হয়েছে যেই পৃথিবীকে তুমি ইতোপূর্বে দেখো নি এবং লাভের পথ কোন্টা-তাও জানতে না। তাহলে চুষে চুষে মায়ের দুধ খাওয়া কে শেখালো? দরকারের সময় ডাকা বা চাওয়ার পন্থাটি তোমাকে কে শেখালো? তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার নিজের বর্ণনায় ভারসাম্য রক্ষা করতে অক্ষম সে নিঃসন্দেহে তার প্রতিপালকের প্রশংসার ক্ষেত্রে আরো বেশি অক্ষম। আলী (আঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন মানুষের সুখ-শান্তি আর সুস্থিতির মূল উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহকে খোঁজার জন্যে তাই মানুষ তার আধ্যাত্মিক শক্তি,তার জ্ঞান-বুদ্ধি,বিচার-বিবেচনাকে কাজে লাগায় যাতে খোদার প্রেমের রেকাবিতে পা রাখা যায় এবং তাঁর নিকটবর্তী হয়ে অমোঘ শক্তি লাভ করা যায়। তিনি নিজে আল্লাহর প্রেমের রশ্মিতে মহান স্রষ্টার সান্নিধ্যে এতো উর্ধ্বে পৌঁছেন যে,এই পৃথিবী এই জীবন তাঁর কাছে খুবই তুচ্ছ বিষয় ছিল এবং সবসময় আল্লাহর প্রশংসা বাণী তাঁর মুখে হৃদয়গ্রাহী শব্দে গুঞ্জরিত হতো। বলা হয় যে,রাত ঘনিয়ে আসলে কিংবা আঁধারের পর্দা নেমে আসলে প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ প্রশংসার মুহূর্ত। আসলে আলী (আঃ) আল্লাহকে এতো গভীরভাবে চিনতেন যে স্বয়ং রাসূলে খোদা (সা) তাঁর প্রশংসা করতেন। সেইসাথে রাসূল চাইতেন জনগণ যেন তাঁর ওপর কথা না বলে কেননা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রেমে বিমোহিত।

আমিরুল মোমেনিন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর বাণী ও সংক্রান্ত হাদিস পর্ব শেষ ১৮. হিকমতের অধিকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪,আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২) ১৯. একই নূর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম। তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন। তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হলো আলী। (ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০) ২০. আলী (আ.)-এর অনুরক্তরা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا مَرَرْتُ بِسَمَاءٍ إِلَّا وَ أََهْلُهَا يَشْتَاقُونَ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أََبِي طَالِبٍ، وَ مَا فِي الْجَنَّةِ نَبِيٌّ إِلَّا وَ هُوَ يَشْتَاقُ اِلَي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ. আসমানে আমি যেখানেই গেছি দেখেছি আলী ইবনে আবি তালিবের অনুরক্তরা তাকে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব,আর বেহেশতে এমন কোনো নবী নেই যিনি তার সাথে সাক্ষাত করতে উদগ্রীব নন। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯৮,যাখায়েরুল উকবা : ৯৫) ২১. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভাই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَكْتُوبٌ عَلَي بَابِ الْجَنَّةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ، عَلِيٌّ أَخُو النَّبِي، قَبْلَ أَنْ يُخْلَقَ الْخَلْقُ بِأَلْفَيْ سَنَة. বেহেশতের দরওয়াযার ওপরে লেখা রয়েছে: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল আর মানুষ সৃষ্টি হওয়ার দুই হাজার বছর আগে থেকে আলী নবীর ভাই। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১১১,মুখতাসারু তারীখে দামেস্ক– ইবনে মাঞ্জুর ১৭:৩১৫,ফাযায়েলুস সাহাবা ২: ৬৬৮/১১৪০) প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

রাসূলে পাক সাল্লালল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, " হেকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলী আঃ কে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকি এক ভাগ।" হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪। আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী :২৮৭/৩২৮।কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ রমযান মাস ছিল অন্য এক রকম রমযান। এ মাস ভিন্ন এক পবিত্রতা নিয়ে বিরাজ করছিল। আলীর পরিবারের জন্যও এ রমযান প্রথম দিক থেকেই অন্য রকম ছিল। ভয় ও শঙ্কার একটি মিশ্রিত অবস্থা বিরাজমান ছিল। ইসলামের ইতিহাসে চরমপন্থী হিসেবে বিবেচিত খাওয়ারেজ বা খারেজীরা আলী (আ.)-কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাই আলী(আ.)'র জীবনধারা এ রমযানে অতীতের রমযানগুলোর মত ছিল না। হযরত আলী(আ.)'র শক্তিমত্তার একটি বর্ণনা নাহজুল বালাগা থেকে এখানে বর্ণনা করব। তিনি বলেছেন, যখন এ আয়াত 'মানুষ কি ভেবে নিয়েছে আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না’ (আনকাবুত ১-২।) নাযিল হলো তখন বুঝতে পারলাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর পর এ উম্মতের জন্য ফেতনা ও কঠিন পরীক্ষা আসবে। فَقُلتُ:يا رَسولُ الله (ص) ماهذهِ الفتنةٌ الّتي اخبرك الله تعالى بها তখন রাসূলকে প্রশ্ন করলাম: হে আল্লাহর রাসূল! এ আয়াতে আল্লাহ যে ফেতনার কথা বলছেন সেটা কি? তিনি বললেন: يا علىُّ اِنّ امتى سيفتنونَ من بعدي হে আলী! আমার পর আমার উম্মত পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। যখন আলী শুনলেন রাসূল মৃত্যুবরণ করবেন এবং তাঁর পরে কঠিন পরীক্ষা আসবে তখন ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করে বললেন: يا رسول الله اَوَ ليسَ قد قُلتَ لى يومَ اُحدٍ حيثُ استشهدَ مَنِ استشهدَ منَ المسلمينَ و حيّزتِ عنّى الشّهادةُ ইয়া রসুলাল্লাহ্! ওহুদের দিনে যারা শহীদ হওয়ার তাঁরা শহীদ হলেন এবং শাহাদাত আমার থেকে দূরে চলে গেল, আমি এর থেকে বঞ্চিত হলাম এবং খুবই দুঃখ পেয়ে আপনাকে প্রশ্ন করলাম, কেন এ মর্যাদা আমার ভাগ্যে ঘটল না। আপনি বললেন, ابشرُ فانّ الشّهادةَ مِن ورائك “আমি তোমাকে শাহাদাতের সুসংবাদ দিচ্ছি। যদিও এখানে শহীদ হওনি কিন্তু অবশেষে শাহাদাত তোমার ভাগ্যে ঘটবে।"[আলী(আ.) এ সময় পঁচিশ বছরের যুবক ছিলেন এবং এক বছর হলো হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.)-কে বিবাহ করেছেন এবং এক সন্তানের জনক। এ বয়সের যুবক যখন জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন দেখে তখন আলী(আ.) শাহাদাতের প্রত্যাশী। উল্লেখ্য, ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সত্তর জন শহীদ হয়েছিলেন যাদের নেতা ছিলেন হযরত হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব(রা.) এবং আলী(আ.) ওহুদের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ছিলেন।] তারপর মহানবী (সা.) বললেন, انَّ ذلك لكذلك، فكيفَ صبركَ اذن অবশ্যই এমনটি হবে তখন তুমি কিভাবে ধৈর্যধারণ করবে।’ আলী তাঁর জবাবে বললেন, ‰এখানে ধৈর্যের স্থান নয়, বরং শোকর করার স্থান।' (নাহজুল বালাগাহ্, খুতবা নং ১৫৪।) রাসূল (সা.)-এর পবিত্র মুখ থেকে নিজের শাহাদাত সম্পর্কে যে খবর তিনি শুনেছিলেন সে সাথে বিভিন্ন আলামত যা তিনি দেখতেন, কখনো কখনো তা বলতেন যা তাঁর পরিবারের সদস্য এবং নিকটবর্তী শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাহাবীদের মধ্যে শঙ্কা ও কষ্ট বৃদ্ধি করত। তিনি আশ্চর্যজনক কিছু কথা বলতেন। এ রমযান মাসে নিজের ছেলে-মেয়েদের ঘরে ইফতার করতেন। প্রতি রাতে যে কোন এক ছেলে বা মেয়ের ঘরে মেহমান হতেন- কোন রাতে ইমাম হাসানের(আ.) ঘরে, কোন রাতে ইমাম হুসাইনের(আ.) ঘরে, কোন রাতে হযরত যয়নাবের(সা.) ঘরে (যিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে জা'ফরের স্ত্রী ছিলেন)। এ মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কম খাবার খেতেন। সন্তানরা এতে খুবই কষ্ট পেতেন। তাঁরা কখনো প্রশ্ন করতেন, 'বাবা, কেন এত কম খান?' তিনি বলতেন, ‰আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হতে চাই যে উদর ক্ষুধার্ত থাকে।' সন্তানরা বুঝতেন তাঁদের পিতা কিছুর জন্য যেন অপেক্ষা করছেন। কখনো কখনো তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, ‰আমার ভাই ও বন্ধু রাসূল (সা.) আমাকে যে খবর দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য। তাঁর কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। খুব শীঘ্রই তা সত্যে পরিণত হবে।' ১৩ই রমযান এমন কিছু বললেন যা অন্য সব দিনের চেয়ে পরিবেশকে বেশি ভারাক্রান্ত করে তুলল। সম্ভবত জুমআর দিন খুতবা পড়লেন। ইমাম হুসাইন (আ.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‰বাবা এ মাসের কত দিন বাকি রয়েছে?' উত্তর দিলেন, ‰হে পিতা, ১৭ দিন।' তিনি বললেন, ‰তাহলে আর দেরি নেই। এ মাথা আর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে। এ শ্মশ্রু শিগগিরই রঙ্গিন হবে।' উনিশে রমযান আলী (আ.)-এর সন্তানরা রাতের একটি অংশ তাঁর সঙ্গে কাটালেন। ইমাম হাসান(আ.) নিজের ঘরে চলে গেলেন। আলী(আ.) জায়নামাজে বসলেন। শেষ রাতে উদ্বিগ্নতার কারণে ইমাম হাসান(আ.) বাবার নামাযের স্থানে গিয়ে বসলেন(অথবা প্রতি রাতই হয়তো এ রকম করতেন)। (ইমাম হাসান-আ. ও ইমাম হুসাইন-আ. হযরত ফাতেমা যাহরা-সা.'র সন্তান বলে ইমাম আলী-আ. এঁদের প্রতি আলাদা রকম স্নেহ করতেন। কারণ এঁদের প্রতি স্নেহকে রাসূলুল্লাহ-সা. ও ফাতেমা যাহরা-সা.'র প্রতি সম্মান প্রদর্শন বলে মনে করতেন) যখন ইমাম হাসান(আ.) তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি বললেন, ملكتني عينى و انا جالسٌ فسنح لى رسول الله (ص) فقلتُ يا رسول الله ماذا لقيتُ من امّتك من الاود واللددِ فقال ادعُ عليهم فقلتُ ابدلنى الله بهم خيراً منهم و ابدلهم بى شرَّ لهم منِّي হে পুত্র, হঠাৎ স্বপ্নের মধ্যে রাসূলকে আবির্ভূত হতে দেখলাম। যখন তাঁকে দেখলাম তখন বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মতের হাতে আমার অন্তর রক্তাক্ত হয়েছে।' প্রকৃতপক্ষে তাঁর সঙ্গে মানুষের অসহযোগিতা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চলার ক্ষেত্রে তাদের অনীহা আলী (আ.)-কে তীব্র যন্ত্রণা দিয়েছে। উষ্ট্রের যুদ্ধের বায়আত ভঙ্গকারীরা, সিফফিনে মুয়াবিয়ার প্রতারণা (মুয়াবিয়া অত্যন্ত ধূর্ত ছিল, ভালোভাবেই জানত কি করলে আলীর হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করা যাবে। আর সে তা-ই করত), সবশেষে খারেজীদের রূহবিহীন আকীদা-বিশ্বাস যারা ঈমান ও এখলাছ মনে করে আলী (আ.)-কে কাফের ও ফাসেক বলত। আমরা জানি না আলী(আ.)'র সঙ্গে এরা কি আচরণ করেছে! সত্যিই আলী(আ.)'র উপর আপতিত মুসিবতগুলো দেখে কেউই বিস্মিত না হয়ে পারে না। একটি পাহাড়ও এত ব্যাপক ও কঠিন মুসিবত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। এমন অবস্থা যে, আলী (আ.) তাঁর এইসব মুসিবতের কথা কাউকে বলতেও পারেন না। এখন যখন রাসূলে আকরাম (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলেন তখন বললেন, ‰ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার এ উম্মত আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। এদের নিয়ে আমি কি করব?' তারপর ইমাম হাসানকে বললেন, 'পুত্র, তোমার নানা আমাকে নির্দেশ দিলেন এদের প্রতি অভিশাপ দিতে। আমিও স্বপ্নের মধ্যেই অভিশাপ দিয়ে বললাম: "হে আল্লাহ! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে মৃত্যু দান কর এবং এদের উপর এমন ব্যক্তিকে প্রভাব ও প্রতিপত্তি দান কর এরা যার উপযুক্ত।” বোঝা যায়, এ বাক্যের সাথে কতটা হৃদয়ের বেদনা ও দুঃখ জড়িয়ে রয়েছে! আলী (আ.) সুবহে সাদিকের সময় ঘর থেকে যখন বের হচ্ছিলেন বাড়ির হাঁসগুলো অসময়ে ডেকে উঠল। আলী বললেন, دعوهنَّ فانّهنَّ صوائحُ تتبعها نوائح এখন পাখির কান্না শোনা যাচ্ছে, বেশি দেরি নয় এরপর এখান থেকেই মানুষের কান্না শোনা যাবে।" উম্মে কুলসুম আমিরুল মুমিনীনের সামনে এসে বাধা দিলেন। তিনি বললেন, ‰বাবা, আপনাকে মসজিদে যেতে দেব না। অন্য কাউকে আজ নামায পড়াতে বলুন।' প্রথমে বললেন, '(বোনের পুত্র) জুদাহ ইবনে হুবাইরাকে বল জামাআত পড়াতে।' পরক্ষণেই আলী (আ.) বললেন, ‰না আমি নিজেই যাব।' বলা হলো, অনুমতি দিন আপনার সঙ্গে কেউ যাক। তিনি বললেন, ‰না, আমি চাই না কেউ আমার সঙ্গে যাক।' হযরত আলী(আ.)'র জন্য রাতটি ছিল অত্যন্ত পবিত্র। কেবল আল্লাহই জানেন তাঁর মধ্যে সে রাত্রে কেমন উত্তেজনা ছিল! তিনি বলছেন, 'আমি অনেক চেষ্টা করেছি এ আকস্মিক শিহরণের রহস্য উদঘাটন করব।' যদিও তাঁর ধারণা ছিল যে কোন বড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। যেমন নাহজুল বালাগায় আলী (আ.) নিজেই বলছেন, كم اطردت الايّام ابحثها عن مكنون هذا الامر فابى الله الا اخفاءهُ অনেক চেষ্টা করেছি এ রহস্যের গোপনীয়তা উদঘাটন করব, কিন্তু আল্লাহ চাননি, বরং তিনি এটা গোপন রেখেছেন। নিজেই ফজরের আজান দিতেন। সুবহে সাদিকের সময় নিজেই মুয়াজ্জিনের স্থানে দাঁড়িয়ে (আল্লাহু আকবার বলে) উচ্চৈস্বরে আজান দিলেন। সেখান থেকে নামার সময় সুবহে সাদেকের সাদা আভাকে বিদায় জানালেন। তিনি বললেন, 'হে সাদা আভা! হে শুভ্র ভোর! হে প্রভাত! যেদিন থেকে আলী এ পৃথিবীতে চোখ খুলেছিল তার পর এমন কোন ফজর কি আসবে যে, তোমার উদয় হবে আর আলী ঘুমিয়ে থাকবে? অর্থাৎ এবার আলীর চোখ চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বে।' যখন তিনি নেমে এলেন তখন বললেন, خلّوا سبيلَ المومنِ المجاهدِ في الله ذي الكتبِ و ذي المشاهدِ في الله لا يعبدُ غيرَ الواحدِ و يوقظُ النّاسَ الى المساجدِ “এই মুমিন ও মুজাহিদের (আলীর) জন্য রাস্তা খুলে দাও যে গ্রন্থ ও শাহাদাতের অধিকারী, যে একক খোদা ছাড়া আর কারো ইবাদত করেনি এবং মানুষকে মসজিদে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগাতো।" পরিবারের কাউকে অনুমতি দেননি বাইরে যাওয়ার। আলী (আ.) বলেছিলেন, ‰পাখিদের কান্নার পর মানুষের আহাজারি শুনতে পাবে।' স্বাভাবিকভাবেই হযরত যয়নাব কোবরা (আ.), উম্মে কুলসুম (আ.) ও পরিবারের বাকী সদস্যরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় ছিলেন, আজ রাতে কি ঘটতে যাচ্ছে? হঠাৎ এক প্রচণ্ড চিৎকারে সবাই ঘটনা বুঝতে পারলেন। একটি আওয়াজ চারিদিকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল- تهدّمت واللهِ اركان الهدى وانطمست اعلام التّقى و انفصمتِ العروةُ قتلَ ابنُ عمِّ المصطفى قُتِلَ الوصىُّ المجتبى قُتِلَ علىُّ المرتضى قَتَلَهُ اشقى الاشقياء ধর্ম বা দীনের স্তম্ভ ধ্বসে পড়েছে, তাকওয়ার ধ্বজা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, মজবুত বন্ধন ছিন্ন হয়ে পড়েছে, মুস্তাফা (সাঃ)'র চাচাতো ভাই ও ওয়াসীকে হত্যা করা হয়েছে, আলী মোর্তজা(আ.) নিহত হয়েছেন, তাঁকে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হত্যা করেছে। وَ لاَ حَوْلَ وَ لاَ قُوَّةَ إِلاَ بِاللهِ العَلِي الْعَظِيْمِ. প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ ....................... এই দুজনের ভিতরে কথা বার্তা আদান-প্রদান একবার নবীজী (স) মাওলা আলীকে (আ) বললেন, "হে আলী , তোমার মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে , যা অন্য কারো মধ্যে নেই , এমনকি আমার মধ্যেও নেই" তা শুনে মাওলা আলী (আ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (স), এ আপনি কি বলছেন ! এও কি সম্ভব, আপনি হলেন, সাইয়্যেদুল মুরসালীন। নবীজী (স) মৃদু হেসে তখন বললেন, "তোমার বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে, যেমন তোমার জন্ম পবিত্র কাবা ঘরের অভ্যন্তরে হয়েছে, আমার হয়নি । তোমার শ্বশুর সাইয়্যেদুল মুরসালীন, আমার নয় । তোমার শ্বাশুড়ী হযরত খাদীজাতুল কোবরা সিদ্দীকা, আমার নয় । তোমার স্ত্রী হলেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী, আমার নয় । তোমার দুই পুত্র, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার, আমার নয় । তাই তুমি কত ভাগ্যবান ও মর্যাদাবান । তবে তোমরা সবাই আমা হতে আর আমি তোমাদের থেকে" .................... হাদিসে কুদসী

আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা সম্পর্কে মহানবীর বাণী আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয়া আলে মোহাম্মদ ১. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন : أدِّبُوا أولادَكُم عَلى ثَلاثَ خِصالٍ : حُبِّ نَبِيِّكُم ، حُبِّ أهلِ بَيتِهِ و قِراءَةِ القُرآنِ ؛ তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বৈশিষ্ঠে লালন পালন কর: নবীকে ভালোবাসা, নবীর আহলে বাইতকে ভালোবাসা এবং কুরআন তেলাওয়াত করা।(কান্জুল আম্মাল,হাদীস নং 45409) ২. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: إنَّ فاطِمةَ بَضعَةٌ مِنّي و هِىَ نورُ عَيني و ثَمَرَةُ فُؤادي ؛ يَسوؤُني ما ساءَها و يَسُرُّني ما سَرَّها و إنَّها أوَّلُ مَن يَلحَقُني مِن أهلِ بَيتي ؛ ফাতেমা আমার শরীরের এক অংশ ও আমার চোখের মনি এবং আমার অন্তরের ফল স্বরূপ। যে কেউ তাকে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দিল, আর যে কেউ তাকে খুশি করে সে আমাকে খুশি করলো, ফাতেমা আমার আহলে বাইতের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। (আমলি,শেইখ সাদুক,পৃ:575) ৩. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন مَثَلُ أهلِ بَيتي مَثَلُ سَفينَةِ نوحٍ عليه السلام مَن رَكِبَ فيها نَجا و مَن تَخَلَّفَ عَنها غَرِقَ ؛ আমার আহলে বাইতের উদাহরন হযরত নুহ আ. এর নৌকার মত: যে এই নৌকায় উঠবে সে বেঁচে যাবে আর যে এই নৌকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ডুবে যাবে। (মানাকেবে আমিরাল মুমেনিন আলী রা.খ-1,পৃ-296) ৪. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: أوَّلُ مَن يَرِدَ عَلَيَّ الحَوضَ أهلُ بَيتي ومَن أحَبَّني مِن اُمَّتي সর্ব প্রথম যারা হাউজে কাওসারের পাশে আমার সাথে মিলিত হবে তারা হলো আমার আহলে বাইত এবং আমার কিছু উম্মাত যারা আমাকে ভালোবাসে। (কান্জুল আম্মাল, খ-12, পৃ-100,হাদীস নং -34178) ৫. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: إنّا أهلُ بَيتٍ قَد أذهَبَ اللّه عَنَّا الفَواحِشَ ما ظَهَرَ مِنها وما بَطَنَ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় অশ্লীলতা থেকে আহলে বাইতকে দুরে রেখেছেন। (আল ফেরদৌস, খ-1 ,পৃ-54,হাদীস নং-144) ৬. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: عاهَدَني رَبّي أن لا يَقبَلَ إيمانَ عَبدٍ إلاّ بِمَحَبَّةِ أهلِ بَيتي . আল্লাহ তাআলা আমাকে কথা দিয়েছেন যে, আহলে বাইতকে মহব্বত না করলে কোন বান্দার ঈমান কবুল করবেন না । (এহকাকুল হাক খ:9 পৃ:454) ৭. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: أوَّلُ ما يُسأَلُ عَنهُ العَبدُ حُبُّنا أهلَ البَيتِ . কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম আমার আহলে বাইতকে ভালোবাসার ব্যপারে প্রশ্ন করা হবে। (বিহারুল আনওয়ার, খ:27, পৃ:79 হাদীস নং:18) ৮. হযরত মুহাম্মাদ স. বলেছেন: لا يَتِمُّ الإِيمانُ إلاّ بِمَحَبَّتِنا أهلَ البَيتِ . আমার আহলে বাইতের ভালোবাসা ছাড়া কারও ঈমান পরিপূর্ন হবে না। ( বিহারুল আনওয়ার খ:36 পৃ:322 হাদীস নং:178) ৯. হযরত মুহাম্মাদ স.বলেছেন: مَن صَلّى صَلاةً لَم يُصَلِّ فيها عَلَيَّ ولا عَلى أهلِ بَيتي لَم تُقبَل مِنهُ যে ব্যক্তি তার নামাজে আমার উপর এবং আমার আহলে বাইতের উপর দুরূদ পাঠ করবে না আল্লাহর দরবারে তার নামাজ কবুল হবে না। (মোসতাদরাকুল অসায়েল খ:5 পৃ:15) প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

প্রশ্ন: ফাতেমার ঘরে দুশমনদের হামলার সময় কেন ফাতেমা সালামুল্লাহি আলাইহা দরজা খুলতে গেলেন? কেন আলী আ. দরজা খুললেন না? উত্তর: উৎসুক হৃদয়ের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। তবে ঐ মূহুর্তে কেন হযরত জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহা দরজা খুলতে গেলেন, এ ক্ষেত্রে মনে রাখা আবশ্যক যে, নবীর সাহাবিদের কাছে তাঁর এমন মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ছিল ঠিক যেমন তাদের কাছে নবী স. এর মর্যাদা ছিল। কারণ নবী স. বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানাভাবে এই মহিয়শি নারীর পদ-মর্যাদা তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। যে কারণে পাপিষ্ট এজিদের মত ব্যক্তিও যে কিনা ফাতেমার সন্তানকে হত্যা করার পর শাম শহরের দরবারে কথা বলার সমসয় যখন ফাতেমা আ. এর প্রসঙ্গ আসে, তখন তাকে সম্মান ও মর্যাদার সাথে শ্মরণ করেছিল। তেমনি ভাবে আজকের যুগেও এমন কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে ফাতেমাকে সম্মান দেখাবে না। অথচ ইসলামের ইতিহাসের অধিকাংশ লেখকবৃন্দ আহলে বাইতের ফজিলত বর্ণনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান নি। সারকথা হল, যে নারীকুল শিরোমনির মোকাবেলায় মহান নবী দাড়িয়ে সম্মান দেখাতো ও তাঁর হাতে চুমু খেতো, তার বিষয়ে লেখতে কলমের কালি অপারগতা প্রকাশ করে। মুসলমানদের মাঝে এহেন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থার কারণে কোন মুসলমানের মগজে এমন ধারণা জন্মাতে পারে না যে, কোন মুসলমান তাঁর বিষয়ে বিন্দুমাত্র অবজ্ঞা করবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই ফাতেমা সালামুল্লাহ আলাইহা দরজা খুলতে এসেছিলেন যাতে : ১- নিজ মর্যাদা, ব্যক্তিত্ব ও যুক্তির মাধ্যমে তাদের মন থেকে হামলা করার বাসনা দূর করে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবেন। ২- অথবা তাদের মোকাবেলায় আলীর প্রতিরক্ষায় নিজ সাহায্যর ঘোষণা করতে পারেন। যার মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারবে যে, আলীর এমন মর্যাদা ছিল যে কারণে হযরত ফাতেমা সা. সর্বশক্তি দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন। আর সে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য তাঁর এহেন আগমনটি ছিল চূড়ান্ত দলিল। যদি তখন স্বয়ং হযরত আলী দরজা খুলতে আসতেন, তবে শত্রুপক্ষ আহলে বাইতের ঘরে হামলা করতে আরো বেশি সাহস দেখাতো। আর সে ঘটনায় ফাতেমার ঘরে আগুন দিয়ে আলীকে বন্দী করার পর ওজড় দেখিয়ে বলতো যে, হযরত ফাতেমা আলীর পক্ষে ছিল না। যদি তিনি আলীকে বন্দী করতে বাধা দিতো, তবে আমরা তাকে বন্দী করতাম না। এসব বিষয় বিবেচনা করেই হযরত ফাতেমা যাহরা সা. তাদের জন্য এভাবে শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করেন। যাতে আল্লাহর দরবার ও রাসূলের কাছে জবাবদিহি করতে না হয় এমনকি ইতিহাস ও মুসলমানদের কাছে সে ঘটনায় যাতে কোন ওজড় না থাকে। তাই তিনি ব্যাক্তিগত উদ্দোগেই প্রতিরোধের ভূমিকায় নামেন যাতে তাদের বিরুদ্ধে একদিকে আল্লাহর হুজ্জাত সম্পন্ন হয় এবং অন্যদিকে আহলে বাইতের শত্রুপক্ষের নোংড়ামির চিত্র ইতিহাসে লেখা থাকে এবং বিশ্ববাসির কাছে তা সুস্পষ্ট হয় প্রচারে মোঃ আবু তুরাব

আমিরুল মোমেনীন আলী ইবনে আবি তালিব আঃ এর ফজিলত ও সংক্রান্ত হাদিস পর্ব ৩ প্রচারে নাজাতের তরি পাঞ্জাতান আঃ ৯. প্রতিপালকের প্রিয়তম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ اللهَ أَمَرَنِي بِحُبِّ أَرْبِعَةٍ، وَ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ. قِيلَ، يَا رَسُولَ اللهِ، سَمِّهِمْ لَنَا. قَالَ: عَلِيٌّ مِنْهُمْ، يَقُولُ ذَلِكَ ثَلَاثاً. এমন চার ব্যক্তি যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় মহান আল্লাহ আমাকে সে চারজনকে ভালোবাসতে নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হলো,হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! তাদের নামগুলো আমাদের জন্য বলুন। তিনি তিন বার বললেন,আলী তাদের মধ্যে। (সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৬/৩৭১৮,সুনানে ইবনে মাজাহ ১:৫৩/১৪৯,মুসনাদে আহমাদ ৫:৩৫১,আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩০) ১০. সর্বপ্রথম মুসলমান রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ أََوَّلُكُمْ وُرُوداً فِي الْحَوْضِ أََوَّلُكُمْ إِِسْلَاماً عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. তোমাদের মধ্যে সবার আগে হাউজে কাওসারে প্রবেশ করবে সেই ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আর সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব। (আল মুস্তাদরাক-হাকেম ৩:১৩৬,আল ইস্তিয়াব ৩:২৭,২৮,উসুদুল গাবাহ ৪:১৮,তারীখে বাগদাদ ২:৮১) ১১. ফাতেমা (আ.)-এর জন্য সর্বোত্তম স্বামী রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে বলেনঃ زَوَّجْتُكِ خَيْرَ أَهْلِي، أَعْلَمَهُمْ عِلْماً، وَ أَفْضَلَهُمْ حِلْماً، و أوَّلَهُمْ سِلْماً. তোমাকে আমার পরিবারের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছি। সে জ্ঞান-বিদ্যায়,ধৈর্য-সহিষ্ণুতায় ও ইসলাম গ্রহণে সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে। (মানাকিবে খারেযমী ৬৩: নাযমু দুরারিস সামতাঈন : ১২৮,কানযুল উম্মাল ১১:৬০৫/৩২৯২৬) ১২. সত্যের অগ্রদূত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ اَلسُّبْقُ ثَلَاثَةٌ: اَلسَّابِقُ إِلَي مُوْسَي يُوشَعُ بنُ نُون، وَ السَّابِقُ إِلَي عِيسَي صَاحِبُ يس، وَ السَّابِقُ إِلَي مُحَمَّدٍ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ. সত্যের অগ্রদূত তিনজন : মুসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইউশা’ ইবনে নুন,ঈসাকে মেনে নেওয়ার বেলায় ইয়া সীনের মালিক আর মুহাম্মদের সাথে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আলী ইবনে আবি তালিব। (আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ১২৫,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯: ১০২,যাখায়িরুল উকবা :৫৮,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ১১:৭৭/১১১৫২

ইমাম আলী আঃ ফজিলত ও সংক্রান্ত হাদিস প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি পর্ব ২ ৫. শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمُبارِزَةُ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ لِعَمْرِو بْنِ عَبدوُدٍّ يَوْمَ الْخَنْدَقِ، أَفْضَلُ مِنْ عَمَلِ اُمَّتِي إِلَي يَوْمِ الْقِيَامَةِ. খন্দকের যুদ্ধে আমর ইবনে আবদুউদ্দের বিরুদ্ধে আলী ইবনে আবি তালিবের যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান। (তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২) ৬. জাহান্নাম সৃষ্টি হতো না যদি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوِ اجْتَمَعَ النَّاسُ عَلي حُبِّ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، لَمَا خَلَقَ اللهُ تَعَالَي النَّارَ. যদি মানুষ আলী ইবনে আবি তালিবের ভালোবাসায় একমত হতো তাহলে মহান আল্লাহ কখনো জাহান্নামকে সৃষ্টি করতেন না। (আল ফেরদৌস ৩:৩৭৩/১৩৫,আল মানাকিব-খারেযমী ৬৭/৩৯,মাকতালুল হুসাইন (আ.)-খারেযমী ১:৩৮) ৭. সর্বোত্তম মুমিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَوْ أَََنَّ السَّمَاوَاتِ وَ الاَرْضَ وُضِعَتَا فِي كَفَّةٍ وَ إِيماَنُ عَلِيٍّ فِي كَفَّةٍ، لَرَجَحَ إيمَانُ عَلِیٍّ. যদি আসমানসমূহ এবং জমিনকে দাঁড়িপাল্লার একপাশে আর আলীর ঈমানকে আরেক পাশে রাখা হয় তাহলে আলীর ঈমানের পাল্লা ভারী হবে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:২০৬,আল ফেরদৌস ৩:৩৬৩/৫১০০,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ২: ৩৬৪/৮৭১ ও ৩৬৫/৮৭২,আল মানাকিব-খারেযমী : ৭৭-৭৮) ৮. তার গুণাবলীর উপকারিতা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ مَا اكْتَسَبَ مُكْتَسَبٌ مِثْلَ فَضْلِ عَلِيٍّ، يَهْدِي صَاحِبَهُ إِلَي الْهُدَي، وَ يَرُدُّ عَنِ الرَّدَي. আলীর ন্যায় গুণাবলী অর্জনের মতো আর কোনো অর্জন অধিক উপকারী নয়। কারণ,তার অধিকারীকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করে এবং নীচ ও হীনতা থেকে দূরে রাখে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৮৯,যাখায়িরুল উকবা :৬১)

হিকমতের অধিকারী ---- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - قُسِّمَتِ الْحِكْمَةُ عَشَرَةَ أَجْزَاءٍ، فَأُعْطِيَ عَلِيٌّ تِسْعَةَ أَجْزَاءٍ، وَ النَّاسُ جُزْءاً وَاحِداً. হিকমতকে দশ ভাগে ভাগ করা হয়েছে । আলীকে তার থেকে নয় ভাগ প্রদান করা হয়েছে আর সমস্ত মানুষকে দেয়া হয়েছে বাকী এক ভাগ । সূত্র - হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৪ / আল মানাকিব– ইবনে মাগাযেলী : ২৮৭/৩২৮ / কানযুল উম্মাল ১১:৬১৫/৩২৯৮২ । একই নূর ---- মুহাম্মাাদ (সাঃ) ও ইমাম আলী (আঃ) হলেন - একই নূর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন - كُنْتُ أَنَا وَ عَلِيٌّ نُوراً بَيْنَ يَدَيِ اللهِ تَعَالَي قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ آدَمَ بِأَرْبَعَةَ عَشَرَ أَلْفَ عَامٍ، فَلَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ قَسَّمَ ذَلِكَ النُّورَ جُزْأَيْنِ، فَجُزْءٌ أَنَا وَ جُزْءٌ عَلِيٌّ. আদমের সৃষ্টির চার হাজার বছর আগে আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি আর আলী একই নূর ছিলাম । তারপর যখন আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন সে নূরকে দুই টুকরো করলেন । তার এক টুকরো হলাম আমি আর অপর টুকরো হল আলী । সূত্র - ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৬২/১১৩০ / আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১২০ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) অাদরিকনী আদরিকনী , সালামুন আলাইকুম ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) ইবনে হাসান আসকারী (আঃ) ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাাদ ওয়া আলে মুহাম্মাাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মাাল আন কাতালাহ আমিরিল মুমিনিন (আঃ

ইমাম আলি (আ.)এর ফযিলত সংক্রান্ত হাদিস পর্ব ১ প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি ১. হেদায়াতের পতাকা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إِنَّ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ عَهِدَ إِلَيَّ عَهْداً فِي عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ ، فَقَالَ: إنَّهُ رَايَةُ الْهُدَي، وَ مَنارُ الْاِيْمَانِ، وَ اِمَامُ أَوْلِيَائِي، وَ نُورُ جَمِيعِ مَنْ أَطَاعَنِي. বিশ্ব প্রতিপালক আলীর ব্যাপারে আমার সাথে কঠিনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর আমাকে বলেছেন: নিশ্চয় আলী হলো হেদায়েতের পতাকা,ঈমানের শীর্ষচূড়া,আমার বন্ধুগণের নেতা আর আমার আনুগত্যকারী সকলের জ্যোতিস্বরূপ। (হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ১:৬৬,শারহে নাহজুল বালাগা– ইবনে আবীল হাদীদ ৯:১৬৮) ২. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তরসূরি রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لِكُلِّ نَبِيٍّ وَصِيٌّ وَ وَارِثٌ، وَ إَِنَّ عَلِيّاً وَصِيِّي وَ وَارِثِي. প্রত্যেক নবীর ওয়াসী এবং উত্তরসূরি থাকে। আর আমার ওয়াসী এবং উত্তরসূরি হলো আলী। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩৮,আল ফেরদৌস ৩:৩৩৬/৫০০৯,ইমাম আলী (আ.)– ইবনে আসাকির ৩: ৫/১০৩০-১০৩১) ৩. সত্যিকারের সৌভাগ্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ إنَّ السَّعِيدَ كُلَّ السَّعِيدِ، حَقَّ السَّعِيدِ، مَنْ أحَبَّ عَلِيّاً فِي حَيَاتِهِ وَ بَعْدَ مَوتِهِ. নিশ্চয় সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এবং সত্যিকারের সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আলীকে তার জীবদ্দশায় এবং তার মৃত্যুর পরে ভালোবাসে। (আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৯১,ফাযায়িলুস সাহাবা ২:৬৫৮/১১২১,আল মু’ জামুল কাবীর-তাবারানী ২২: ৪১৫/১০২৬,মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯:১৩২) ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহায্যকারী রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ لَمَّا عُرِجَ بِي رَأَيْتُ عَلَي سَاقِ الْعَرْشِ مَكْتُوباً: لَا إِِلَهَ إِِلَّا اللهُ، مُحَمَّدٌرَسُولُ اللهِ، أَيَّدْتُهُ بِعَلِيٍّ، نَصَرْتُهُ بِعَلِيٍّّ. যখন আমাকে মি’ রাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আরশের পায়ায় দেখলাম লেখা রয়েছে‘‘ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। আমি তাকে আলীকে দ্বারা শক্তিশালী করেছি এবং আলীকে তার সাহায্যকারী করে দিয়েছি। (তারীখে বাগদাদ ১১:১৭৩,ওয়াসীলাতুল মুতাআব্বেদীন খ:৫ আল কিসম ২:১৬৩,আর রিয়াদুন নাদরাহ ৩:১৩১,যাখায়েরুল উকবা : ৬৯)

♦♪♦♪♦♪♦♪ হযরত আবু বকর যুদ্বে গেলেন না - ইবনে আবিল হাদিদ বর্ণনা করেন - নবী করিম (সাঃ) হযরত আয়েশার বাড়িতে ছিলেন । হজরত বেলালের আজানের শব্দ নবীজী (সাঃ) এর কানে আসে । নবী করিম (সাঃ) বলেন যে , আমি অত্যন্ত দুর্বল । মসজিদে যেতে পারব না । যে কোন একজনকে নামাজ পড়াতে বল । তখন তাঁর নিকট খবর আসে যে , হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর মসজিদে আছেন । এবং হযরত আবু বকর নামাজের ইমামতি করছেন । এই খবর শুনে মহানবী (সাঃ) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন । কেননা এ সময়ে হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের মসজিদে থাকার কথা ছিল না । কারন মহানবী (সাঃ) তাদেরকে হযরত উসামার নেতৃত্বে গঠিত সেনাবাহিনীতে গিয়ে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন । অতএব হযরত আবু বকর ও হযরত ওমরের এ সময় মসজিদে থাকার অর্থ হচ্ছে নবীজী (সাঃ) এর নির্দেশকে পুরোপুরি ভাবে অমান্য করা । যারা উসামার সেনাবাহিনীতে যেতে অমান্য করেছে তাদের সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন - لَعَنَ اللَّهُ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْ جَيْشِ أُسَامَة যারা উসামার বাহিনীকে অমান্য করেছে তাদের ওপর আল্লাহর লানত বা অভিসম্পাত বর্ষিত হোক । সূত্র - শারহে নাজুল বালাগাহ , খন্ড - ৯ , পৃ - ১৯৭ , খন্ড - ১৩ , পৃ - ৩৩ । মহানবী (সাঃ) তখন আমিরুল মুমিনিন আলি (আঃ) ও ফাজল ইবনে আব্বাসকে বলেন , আমাকে এখুনি মসজিদে নিয়ে যাও । তাঁরা মহানবী (সাঃ) কে মসজিদে নিয়ে যান । মহানবী (সাঃ) মসজিদে প্রবেশ করে হযরত আবু বকরকে মেহরাব হতে সরিয়ে দেন । তিনি (সাঃ) নিজেই নামাজের ইমামতি করেন । মহানবী (সাঃ) অত্যন্ত দুর্বল থাকার কারনে বসে থেকে নামাজ পড়ান । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নামাজের পর বক্তব্য দান করেন । তিনি সাহাবাগণকে তাঁর ইন্তিকালের পর ফেতনা সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কে সাবধান করে দেন । তিনি সেখানে হাদিসে সাকালাইন পুনরায় নর্ণনা করেন - إنّي تارك فيكم الثقلين كتاب اللّه و عترتي لن تضلّوا ما إن تمسّكتم بهما অর্থাৎ আমি তোমাদের মাঝে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি , একটি হচ্ছে আল্লার কিতাব (আল কোরআন) অপরটি হচ্ছে আমার ইতরাত (আহলুল বাইত) । এই দুইটিকে যদি দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । সূত্র - আল মুরশেদ ফি ইমামাতি আলি ইবনে আবি তালেব আলাইহিস সালাম, পৃঃ ১১৬ / সহীহ তিরমিজি , খন্ড - ৬ , হাদিস - ৩৭৮৬ , ৩৭৮৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত , খন্ড - ১১ , হাদিস - ৫৮৯২ , ৫৮৯৩ (এমদাদীয়া লাইব্রেরী) / তাফসীরে মাযহারী , খন্ড - ২ , পৃষ্ঠা - ১৮১ , ৩৯৩ (ইফাঃ) / তাফসীরে

গাদিরে খুম পর্ব শেষ ঘটনা ও ভাষন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আলী আমা থেকে আর আমি আলী থেকে । আর সে আমার পরে সকল মুমিনের নেতা"। (খাসায়েসে নেসায়ী ২৩; মুসনাদে আহমাদ ৪:৪৩৮; আল মু'জামুল কাবীর-তাবরানী ১৮:১২৮/২৬৫; হিল্লিয়াতুল আউলিয়া ৬:২৯৬)। **নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, " আল্লাহ্‌র কসম যাহার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যাক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে সে জাহান্নামী'' । (সাওয়ায়েকে মোহরেকা, পৃঃ-১০৪; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮)। হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রকৃত মুমীন ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । রাসূলের (সাঃ) সাহাবাগন ইমাম আলী (আঃ) এর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরোখ করতেন । আবু যার গিফারী (রাঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ), জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ), হতে বর্ণীত যে, আমরা সাহাবাগন আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম। (সহিহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৬০ মিশর প্রিন্ট; আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭, এমদাদিয়া লাইঃ; সহী মুসলিম, ১ম খণ্ড, হাঃ-১৪৪ ইসঃ ফাঃ বাঃ; মুসনাদে হাম্বাল, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৮৪; সুনানে নাসাঈ, ৮ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ মিশর প্রিন্ট; সহিহ তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃঃ-১১৫ (মিশর); ইবনে মাজাহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫৫ (মিশর); হযরত আলী, পৃঃ-১৪, এমদাদিয়া লাইঃ)। **রাসূল (সা.) বলেছেন: আমি জ্ঞানের নগরী, আলী সেই নগরীর প্রবেশদ্বার, যে কেউ জ্ঞানের সন্ধান করে সে যেন সেই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করে । (সহীহ বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃঃ-৬৩১; সহীহ মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৩; আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, তাফসীরে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-১৭১। তাফসীরে দুররে মানসুর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৭৯; আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী তাঁর লিসান গ্রন্থে উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ' এই হাদীসের বহুবিধ সুত্র রয়েছে, হাকেম তাঁর মুস্তাদারাক গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন । তিনি এ ব্যাপারে তাঁর রায় পেশ করতে গিয়ে বলেন এ হাদীসটি বিশুদ্ধ ।' প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আব্দুল হোসাইন আহমদ আল আমিনী আন নাজাফী, তাঁর আল গাদীর গ্রন্থে উক্ত হাদীসের বরননাকারীদের একটি তালিকা দিয়েছেন যাদের সংখ্যা হচ্ছে, ১৪৩ জন। আল গাদীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৬১-৭৭)। **রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একজন উত্তরসুরী থাকে, আর "আমার উত্তরসুরী হচ্ছে, আলী ইবনে আবু তালিব।" (আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪৬; তারিখে বাগদাদ, ১১তম খণ্ড, পৃঃ-১৭৩; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৫০, কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-১৫৮; ইয়ানাবীউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৩৩, তারিখে ইবনে আশাকীর শাফায়ী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ-৫; শাওয়াহেদুত তানজিল, ২য় খণ্ড, পৃঃ-২২৩)। **হযরত আবু হুরাইরা, হযরত সালমান ফারসী থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত সালমান ফারসী বলেন, " ইয়া রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌ যে নবীকেই প্রেরন করেছেন, তাঁকেই বলে দিয়েছেন যে, কে তাঁর উত্তরসুরী হবে । তবে কি আল্লাহ্‌ আপনাকেও বলেছেন যে, কে আপনার উত্তরসুরী হবে ? " নবী করিম (সাঃ) বললেন, " আমার উত্তরসুরী, আলী ইবন আবু তালিব হবে।" (শারহে বোখারী ইবনে হাজার আসকালানী, খণ্ড-১৮, পৃঃ-১০৫)। **রাসূল (সাঃ) আলী কে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এ হলো আমার ভাই আর আমার পরে আমার উত্তরসুরী এবং তোমাদের খলিফা, তাঁর নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তাঁর আনুগত্য করো ।(তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩১; শারাহ নাহজুল বালাগা, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-২১১ (ইবনে হাদীদ), আল কামিল ফিত তারিখ, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৬৩; কানজুল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃঃ-১৩১; মায়ালিমুত তানযিল, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ-২৭৯ । **হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মান আবগাদানা আহলিল বাইতি ফা হুয়া মৃনাফিকুন । অর্থাৎ- যারা আহলে বাইতের সাথে বিদ্বেষ রাখে তারা তো কপট, মুনাফিক ।( ফাযায়িলুস সাহাবা : ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ২য় খন্ড:৬৬১, হাদিস-১১২৬; মুহিব্বে তাবারী : যখায়েরুল উকবা , পৃষ্টা-৫১; তাফসীরে আদ-দুররুল মুনসুর : আল্লামা সুয়ুতী, ৭ম:৩৪৯; শেত্ব মুক্তা নবী তনয়া ফাতেমাতুয যোহরা : শায়েখুল ইসলাম ড: তাহের আল কাদেরী, পাকিস্তান, পৃষ্টা-৪৪) **হযরত যিরর (রা:) হতে বর্নিত, হযরত আলী (আ:) বলেছেন; আমার নিকট উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া আলেহী ওয়া সাল্লামের অঙ্গীকার হচ্ছে- কেবল মুমিনই তোমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। (সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং-৫০১৭, ইসলামিক ফাঃ বাঃ) **হুজুর পাক(সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আলীকে গালী দিল, সে রাসূল (সাঃ) কে ই গালি দিল”। (বুখারী, তিরমিজি, মিশকাত ৫৮৪২ নং হাদিস) “আলী কে যারা মহব্বত করে তারা মুমিন”। (আহামদ তিরমিযী, মিশকাত ১১ তম খন্ড ১৫৬ পৃ:) “আলী এর প্রতি মহব্বত করে যারা তারা মুমিন, যারা না করে তারা মুনাফিক”। (মিশকাত ১১তম খণ্ড, পৃ: ১৫৬) 'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।' অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি।

গাদিরে খুম পর্ব ২ ঘটনা ও ভাসন মহানবীর আদেশএসব বার্তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে উপস্থিত সবার প্রতি নির্দেশ দেন। তখনও সমবেত হাজীরা ওই স্থান ত্যাগ করেননি। এরই মধ্যে হযরত জিব্রাঈল (আ.) আল্লাহর বাণী অবতির্ণ হলেন, মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন:- 'আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন বা জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।' ( সূরা মায়েদা; আয়াত-৩) এই হাদীসটি বিভিন্ন তাফসীরকারক ও মুফাসসীরগণ তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্য কিছু গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হল। সহিহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ:-৩৬২; সহিহ তিরমিযি, হাদীস নং:-৪০৭৮; মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪১২; সুনানে ইবনে মাজা, ১ম খণ্ড, পৃ:-৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১১৮; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৩; তারিখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪২৯; সুনানে নাসাই, ৫ম খণ্ড, পৃ:-১৩২; আল মুসনাদ আল-জামে, ৩য় খণ্ড, পৃ:-৯২; আল মুজাম আল-কাবির, ৪র্থ খণ্ড, পৃ:-১৬; কানজুল উম্মাল, ১৩ তম খণ্ড, পৃ:-১৬৯; তারিখে দামেশক, ২য় খণ্ড, পৃ:-৪৫। আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সা.)বলেন, 'আল্লাহু আকবার। তিনি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন, অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমার রেসালাত ও আমার পরে আলীর নেতৃত্বের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট।' এর পরপরই সবাই আলী(আ.)-কে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। সবার আগে আবু বকর ও ওমর এগিয়ে এসে বললেন, 'হে আবি তালিবের সন্তান, তোমাকে অভিনন্দন। আজ তোমার ওপর দায়িত্ব এসেছে। তুমি আমাদের এমনকি সব নারী ও পুরুষের অভিভাবক।' ইবনে আব্বাস বললেন, 'আল্লাহর কসম। আলীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া সবার জন্য ওয়াজিব।' এ অবস্থায় বিশিষ্ট কবি হিসান বিন সাবেত রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'হে রাসূলুল্লাহ। আলীর শানে একটি কবিতা বলার অনুমতি চাচ্ছি।' রাসূলের অনুমতি পাওয়ার পর হিসান তার কবিতা শুরু করেন। তার কবিতার মূল বক্তব্য ছিলো এ রকম: 'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে বলোতো,তোমাদের মওলা ও নবী কে? সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে। রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা। আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি। খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার আলী যাদের ভালোবাসা, তুমিও তাদের ভালোবেসো যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। ' গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়। রাসূল (সা.)-র ওফাতের পর শান্ত মুসলিম সমাজ যাতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ে এবং স্বার্থান্বেষীরা ওই শোকাবহ ঘটনাকে যাতে অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য রাসূল (সা.)-কে এ দায়িত্ব দেয়া হয় যে, তিনি যাতে তার পরবর্তী নেতার নাম ঘোষণা করেন। রাসূলে খোদা বিদায় হজ্বের পর এক সমাবেশে আলী(আ.)কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেনঃ هَذَا أَخِي وَ وَصِيِّي وَ خَلِيفَتِي مِنْ بَعْدِي، فَاسْمَعُوا لَهُ وَ أَطِيعُوه. এ হলো আমার ভাই, আর আমার পরে আমার ওয়াসী এবং খলীফা। তার নির্দেশের প্রতি কর্ণপাত করো এবং তার আনুগত্য করো। (তারীখে তাবারী ২:৩৩১; মাআলিমুত তানযীল ৪:২৭৯; আল কামিল ফিত তারীখ ২:৬৩, শারহে নাহজুল বালাগা – ইবনে আবিল হাদীদ ১৩:২১১; কানযুল উম্মাল ১৩:১৩১) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "আমি আর আলী একই বৃক্ষ থেকে, আর অন্যেরা (মানুষ) বিভিন্ন বৃক্ষ থেকে"। (আল মানাকিব-ইবনে মাগাযেলী ৪০০/৫৩; কানযুল উম্মাল ১১;৬০৮/৩২৯৪৩; আল ফেরদৌস ১;৪৪/১০৯, মাজমাউল যাওয়ায়েদ ৯;১০০।) **রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি আমা থেকে আর আমি তোমা থেকে"। ( সহিহ বুখারী ৪:২২, ৫:৮৭; সুনানে তিরমিযী ৫:৬৩৫/৩৭১৬; মাসাবিহুস সুন্নাহ ৪:১৭২/৪৭৬৫ ও ১৮৬/১০৪৮; তারীখে বাগদাদ ৪:১৪০)।

গাদিরে খুম পর্ব ১ ঘটনা বা ভাসষ দশম হিজরীতে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)এর আহবানে সাড়া দিয়ে লাখো মুসলমান মক্কায় হজ্বব্রত পালন করতে যান। মদিনায় হিজরতের পর এটিই ছিল রাসূলের প্রথম হজ্ব। শুধু প্রথম নয়, তাঁর শেষ হজ্বও এটি। ওই হজ্বের কিছু দিন পরই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ(সা.) ইন্তেকাল করেন। মক্কার পথে রাসূলেখোদা (সা.)-র সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক মুসলমান মদিনায় জড়ো হন। রাসূলের এ হজ্বকে নানা নামে অভিহিত করা হয়। এর মধ্যে হুজ্জাতুল বিদা, হুজ্জাতুল ইসলাম, হুজ্জাতুল বালাগ, হুজ্জাতুল কামাল ও হুজ্জাতুত তামাম অন্যতম। রাসূল (সা.) হজ্বের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গোসল করে পুত-পবিত্র হয়ে খুব সাধারণ দুই টুকরো কাপড় পরিধান করেন। এর এক টুকরো কাপড় কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পরেন ও অপর টুকরো ঘাড়ে ঝুলিয়ে নেন। মহানবী(সা.) ২৪ অথবা ২৫ শে জ্বিলকাদ শনিবার হজ্বব্রত পালনের উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে পায়ে হেঁটে মক্কার পথে রওনা হন। তিনি তার পরিবারের সব সদস্যকেও সঙ্গে নেন। নারী ও শিশুরা উটের পিঠে আর রাসূল চলেছেন পায়ে হেটে। রাসূলের নেতৃত্বাধীন ওই কাফেলায় সেদিন মুহাজির ও আনসাররাসহ বহু মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। ১৮ই জ্বিলহজ্ব বৃহস্পতিবার হজ্ব শেষে মদিনায় ফেরার পথে রাসূল (সা.) যখন জুহফা'র কাছাকাছি গ্বাদিরে খুম নামক স্থানে পৌঁছান, ঠিক তখনি রাসূলের কাছে ওহি নাজিল হয়। জিব্রাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُ 'হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি সবার কাছে পৌঁছে দাও, যদি তা না কর তাহলে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না ।' (সূরা মায়েদা: আয়াত ৬৭) রাসূলে খোদা (সা.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পর তিনি সবাইকে সমবেত হতে বললেন। চলার পথে যারা কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা পেছনে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে ছিলেন তারা এগিয়ে এসে ওই স্থানে থেমে যান। রৌদ্রস্নাত উত্তপ্ত মরু হাওয়ায় সবাই তখন ক্লান্ত অবসন্ন । তারপরও সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে অপেক্ষা করতে লাগলেন রাসূলের বক্তব্য শুনার জন্য। তারা বুঝতে পারলেন, রাসূল (সা.) মুসলমানদের জন্যে নতুন কোনো বিধান বা দিক নির্দেশনা দেবেন । ওই স্থানে পাঁচটি পুরনো গাছ ছিল। রাসূলের নির্দেশে গাছের নিচের জায়গাটুকু পরিস্কার করা হলো। এরপর সাহাবিরা সেখানে চাদোয়া টানিয়ে দিলেন। জোহরের আজান দেয়ার পর মহানবী সবাইকে নিয়ে সেখানে নামাজ আদায় করলেন। এরপর উটের জিনকে মঞ্চের মত করে তাতে আরোহণ করলেন এবং সমবেত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুর আলামিনের। আমরা তারই সাহায্য চাই ও তার ওপরই ঈমান এনেছি। তার ওপরই আমাদের ভরসা। কেবল তিনিই বিভ্রান্তদেরকে সৎ পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখেন। আর আল্লাহ যাকে দিকনির্দেশনা দেন, তিনি যেন বিভ্রান্তকারীতে পরিণত না হন। আমি এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং মুহাম্মদ হচ্ছে তার বান্দা ও প্রতিনিধি। দয়াময় ও মহাজ্ঞানী আল্লাহই আমাকে এ সংবাদ দিয়েছেন যে, আমার ইহকালীন জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে, অচিরেই আমার জীবনের অবসান ঘটবে, মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জগত ছেড়ে চলে যেতে হবে আমাকে। আমার ও আপনাদের ওপর যেসব বিষয় অর্পিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা সবাই দায়িত্বশীল। আপনাদের কি অভিমত?' এ সময় সবাই উচ্চস্বরে বলে ওঠেন, 'আমরা এ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, বার্তা পৌঁছে দেয়া, কল্যাণকামিতা তথা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনি কোনো ধরনের অবহেলা করেননি। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।' এ সময় রাসূল (সা.) বলেন, 'আপনারা কি এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে-আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং বেহেশত, দোজখ, মৃত্যু ও কিয়ামতের বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া, আল্লাহ মৃতদেরকে পুণরায় জীবিত করবেন?' উত্তরে সবাই সমস্বরে বলেন-'হ্যা আমরা এ সত্যের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি।' এরপর রাসূল (সা.) সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে বলেন, 'হে আল্লাহ আপনিতো দেখতেই পাচ্ছেন।' এরপর রাসূল (সা.) বলেন, 'আমি আপনাদের আগে হাউজে কাউসারে প্রবেশ করবো। এরপর আপনারা সেখানে প্রবেশ করবেন এবং আমার পাশে অবস্থান নেবেন। সানা ও বসরার মধ্যে যে দূরত্ব,আমার হাউজে কাউসের প্রশস্ত হবে সে পরিমাণ। সেখানে থাকবে তারকারাজি এবং রুপার পাত্র।' এরপর বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবার উদ্দেশে বলেন, 'মূল্যবান ও সম্মানিত যে দুটি জিনিস আপনাদের কাছে রেখে যাচ্ছি, আপনারা কীভাবে তা মেনে চলেন, তা আমি দেখতে চাই।' এ সময় সবাই সমস্বরে বলে ওঠেন, 'হে রাসূলুল্লাহ, ওই দু'টি মূল্যবান ও সম্মানিত জিনিস কী?' রাসূল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের জন্য অতি মূল্যবান দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আল কুরআন আর অপরটি হচ্ছে আমার পবিত্র আহলে বাইত। যদি তোমরা এ দুটোকে শক্ত করে আকড়ে ধর তবে কখনোই পথ ভ্রষ্ট হবে না। এ হাদিসটি সামান্য শব্দের তারতম্যভেদে বিভিন্ন বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে- সহিহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ:-১২২, দারুল যিল, বৈরুত; সহিহ তিরমিযি, ৫ম খণ্ড, পৃ:-৬৬৩, বৈরুত; মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪, বৈরুত; কানযুল উম্মাল, ১ম খণ্ড, পৃ:-১৮৭; মুসতাদরাকে হাকেম, ৩য় খণ্ড, পৃ:-১৪৮, বৈরুত। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)এর হাত উত্তোলন করেন। এ সময় তাদের বগলের নিচ থেকে এক ঝলক শুভ্রতা ফুটে ওঠে এবং সবাই তা দেখতে পায়। এরপর রাসূল (সা.) বলেন, “মহান আল্লাহ হচ্ছেন আমার ওলি এবং রক্ষণাবেক্ষণকারী । আমি হচ্ছি মুমিন-বিশ্বাসীদের ওলি ও অভিভাবক,আর আমি যার নেতা ও অভিভাবক, আলীও তার নেতা ও অভিভাবক।' এরপর তিনি দোয়া করেন। রাসূল (সা.) বলেন, 'হে আল্লাহ ! যে আলীকে বন্ধু মনে করে তুমি তাকে দয়া ও অনুগ্রহ করো, আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করে, তুমি তার প্রতি একই মনোভাব পোষণ করো।”

প্রশ্ন : আমরা জানি যে, নবী-রাসূলদের নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' দোয়াটি পড়া হয়। কিন্তু মুসলমানরা হযরত আলী (আঃ)সহ তাঁর বংশের অনেকের নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে আপনাদের ব্যাখ্যা জানতে চাই। ---- আবু তাহের, নওমহল, মোমেনশাহী। উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে আমরা প্রথমেই একটা বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আর তা হলো- 'আলাইহিস সালাম' যে কেবল নবী-রাসূলদের নামের শেষে ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। যেমন-আমরা হযরত লোকমান, হযরত মারিয়াম এবং ইমাম মাহদীর নামের শেষে 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি অথচ তারা কেউই নবী-রাসূল নন। শুধু তাই নয়, ফেরেশতাদের নামের সাথেও আমরা 'আলাইহিস সালাম' ব্যবহার করি। আমরা আরেকটি প্রশ্ন তুলতে পারি যে, পবিত্র কোরআন বা হাদীসের কোথাও কি এমন বর্ণনা রয়েছে যে, কোনো মুসলমানের নামের পর "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার করা যাবে না বা এ ধরনের ব্যবহার হারাম? আমাদের জানামতে কোরআন-হাদীসের কোথাও এমন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়নি কিংবা এ ধরনের ব্যবহার যে অপছন্দনীয় তাও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। বরং পবিত্র কোরআনের নানা আয়াতের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মুমিনদের, পরহিজগারদের ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিনের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ٣٦:٥٨ ‘করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।' অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে সুরা ত্বাহার ৪৭ নম্বর আয়াতে এবং সুরা আরাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে। "আলাইহিসসালাম" শব্দের অর্থ তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটি এক বিশেষ প্রার্থনা। আমরা মুসলমানরা সবাই একে-অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এবার আমরা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার যে বৈধ তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরছি: ১-সুন্নি মাজহাবের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বা নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফের " কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবেহ" অধ্যায়ের (৩৭/৬২ নম্বর অধ্যায়) "বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমাতু" শীর্ষক পর্বে (পর্ব নম্বর ৫৯/২৯) হযরত ফাতিমার নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের " বাবুল মানাক্বিবি ক্বুরাবাত্বা রাসুলুল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমাতা আলাইহিসসালাম বিনতি নাবী" শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে, যা এই শিরোনামের মধ্যেই লক্ষণীয়। ২- একই ধরনের ব্যবহার রয়েছে সুন্নি মাজহাবের আরেকটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ তিরিমিজি শরীফের হাদীসে। যেমন, কিতাবুল মানাক্বিবিত তিরমিজি'র "ফাজলি ফাতিমাত্বা বিনতি মুহাম্মাদ সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" উপপর্বে। (৫০/৬১ নম্বর অধ্যায়, অর্থাৎ কিতাব নম্বর ৫০, বাব নম্বর ৬১ ) এখানেও শিরোনামের মধ্যেই "সাল্লিল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। একই হাদীস গ্রন্থের "মানাক্বিব আল হাসান ওয়া আল হুসাইন আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম" শীর্ষক আলোচনার শিরোনামেই এই শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। এটা স্পষ্ট যে বিশিষ্ট সাহাবীদের বর্ণিত এসব হাদীসে হযরত ফাতিমা (সা.) এবং হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)'র নামের পর "আলাইহিসসালাম" ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সাহাবীরা তাঁদের বর্ণনায় কখনও এ শব্দ ব্যবহার করতেন না, বরং শুধু "রাজিয়াল্লাহু আনহু" বা এ জাতীয় অন্য কোনো শব্দ ব্যবহার করতেন। "রাজিয়াল্লাহু আনহু" শব্দের অর্থ আল্লাহ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট হোক। ৩- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইমাম ফাখরে রাজিও শিয়া মুসলমানদের ইমাম বা বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পর "আলাইহিসসালাম" দোয়াটি ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)'র আহলে বাইত (আ.) কয়েকটি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সমান সুবিধা বা সম্মানের অধিকারী। সালাম এসবের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ কোরআনে বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের প্রতি সালাম দিয়েছেন "আলে ইয়াসিনের ওপর সালাম" শব্দের মাধ্যমে। ৪- বিশিষ্ট সুন্নি মনীষী ইবনে হাজার মাক্কীও মনে করেন, কোরআনে বর্ণিত "আলে ইয়াসিন" শব্দের অর্থ আলে মুহাম্মাদ (দ:) বা মুহাহাম্মাদের বংশধর। ইয়াসিন বিশ্বনবী (সা.)-এরই অন্যতম নাম। ৫-বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিভাবে আমরা আপনার প্রতি দরুদ পাঠাব? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তোমরা বলবে " আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ"। সালামের মত দরুদ তথা সালাওয়াত পড়া বা সাল্লি আলা বলাও এক ধরনের দোয়া। এর অর্থ কল্যাণ কামনা করা। তাই এটা স্পষ্ট বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্যদের নামের পরে বা তাঁদের নামের পাশে "আলাইহিসসালাম" বা "সালাওয়াতুল্লাহ আলাইহি" বলা একটি ধর্মীয় নির্দেশ এবং রাসূলের সুন্নাত।

এরকম জালিয়াতির শেষ কোথায় আর কিভাবে এরা এত ঊর্ধ্বে স্থান পেল যারা যারা স্থান পেল জালিয়াতি করে আশ্রায় মোবাশারায় জোরপূর্বক মিথ্যা বানোয়াট তাদের উপরে বেশুমার লানত কিভাবে আশারা মোবাশশার হলেন — একখান খোলা প্রশ্ন ছিল —- মহান আল্লাহ সকল ফেরেশতাগনকে আদেশ করলেন এইমর্মে যে , হযরত আদম (আঃ) কে সেজদা কর । আদেশমত সকল ফেরেশতা সেজদা করলেন কিন্ত জনাব আযাযীল ওরফে ঈবলীশ সেজদা করল না । আল্লাহর সুস্পষ্ট আদেশ লংঘন করার জন্য ঈবলীশকে বিতাড়িত করে দেওয়া হল আল্লাহর দরবার থেকে । শুধু বিতাড়িত করা হল না , ঈবলীশকে চিরজীবনের জন্য মহালানতি এবং চিরজাহান্নামী বলে ঘোষনা দেয়া হল । এবং বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ আর কখনই মহান আল্লাহর দরবারে প্রবেশ করতে পারে নি । বিষয়টি খুবই পরিস্কার যে , আল্লাহ কতৃক যে বিতাড়িত হয় সে লানতি এবং জাহান্নামী বলে ঘোষিত হয় । উপরের বিষয়টি পবিত্র কোরআনে অনেক সুরাতেই বিস্তারিত বলা আছে । পাঠক , এবারে আসুন ইতিহাসের আরেক পর্বে । ঈবলীশ তো আল্লাহর দরবার থেকে গলা ধাক্কা খেল বা বিতাড়িত হল । ঐতিহাসিক এই ঘটনারই অনুরুপ আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল শেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মাাদ (সাঃ) এর দরবার বা গৃহে । দ্বিতীয় এই ঘটনাটি ঘটেছিল খুব সম্ভবত ২৪ শে সফর ১১ হিজরী অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে । ঘটনার সারসংক্ষেপ – ইন্তেকালের চার দিন পূর্বে রাসুল (সাঃ) ওনার গৃহে শুয়ে আছেন । শরীর খুবই অসুস্থ । গৃহে অবস্থানরত সকলেই বুঝতে পারলেন যে , রাসুল (সাঃ) এর অন্তিম সময় খুবই সন্নিকটে । যে কোন মুহূর্তে রাসুল (সাঃ) আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন না ফেরার দেশে । ঘরভর্তি লোকজন বিশেষ করে রাসুল (সাঃ) এর বিখ্যাত কয়েকজন সাহাবা উপস্থিত আছেন । রাসুল (সাঃ) তখন পরিস্কার ভাবে আদেশ দিলেন যে – ওসিয়তনামা লেখার জন্য আমাকে খাতা ও কলম দাও । তোমাদের জন্য আমি ওসিয়তনামা লিখে দিয়ে যেতে চাই যে , আমার পরে তোমরা কখনই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হবে না । — রেখে গেলাম কোরআন ও আহলে বায়েত – এই দুইটি সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকবে , তাহলে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না । মূলত এই কথাগুলি লিখিত ওসিয়তনামা করার জন্য মহানবী (সাঃ) খাতা কলম চেয়েছিলেন । সংক্ষেপে এটাকেই হাদিসে কিরতাস বলে । প্রশ্ন – ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য মহানবী (সাঃ) কে খাতা কলম দেয়া হয়েছিল ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – নবীজী (সাঃ) এর সুষ্পষ্ট আদেশের পরেও খাতা কলম দেওয়া হয় নি । প্রশ্ন – ওসিয়তনামাটি লেখার জন্য কেন কি কারনে খাতা কলম দেওয়া হয় নি ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – হযরত ওমরের প্রচন্ড বিরোধিতার জন্য খাতা কলম দেওয়া সম্ভব হয় নি । এমনকি মহানবী (সাঃ) এর মুখের সম্মুখে খাতা কলম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন হযরত ওমর । প্রশ্ন – খাতা কলম না দিয়ে হযরত ওমর তখন মহানবী (সাঃ) কে কি বলেছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – হযরত ওমরের কুখ্যাত উক্তি — রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট । প্রশ্ন – হযরত ওমরের এহেন আচরনের জন্য মহানবী (সাঃ) কি করেছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – মহানবী (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত ওমর সহ তার দলবলকে নবীগৃহ থেকে বের করে দিয়েছিলেন । প্রশ্ন – এত বড় পাপ কর্মের প্রেক্ষিতে হযরত ওমর কি নবীজী (সাঃ) এর কাছে পরে এসে মাফ চেয়েছিলেন ? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে – এত বড় পাপ কর্ম করার পরে এবং মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যু সংবাদ শোনার পরেও হযরত ওমর বনু সকীফাতে প্রায় চার দিন ব্যস্ত ছিলেন মহানবী (সাঃ) এর শূন্য আসনে কে ক্ষমতাসীন হবে – সেটা নির্ধারনে । খলীফা নির্বাচন শেষে যখন হযরত ওমর নবীগৃহে আসলেন ততদিনে মহানবী (সাঃ) না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন । অতএব হযরত ওমরের পক্ষে মহানবী (সঃ) এর নিকট মাফ চাওয়ার কোন সুযোগ ঘটে নি । তথ্য সূত্র – সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ / ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক ইত্যাদি । দয়া করে পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত মনযোগ দিয়ে পড়ুন এবং নীচে উল্লেখিত মূল প্রশ্নটি সম্পর্কে কিছুটা চিন্তা ভাবনা করুন । “ – একজন মুমিন পুরুষ এবং একজন মুমিন নারীর অধিকার নেই , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন একটি বিষয় সিদ্বান্ত নিয়েছেন , তাঁদের বিষয় অন্য কোন কিছু পছন্দ করার এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে নিঃসন্দেহে [সে] পথভ্রষ্ট হয়েছে সুস্পষ্ট ভুলের ভিতরে — “ । সুরা – আহযাব / ৩৬ । “ — রাসূল তোমাদেরকে যা দেন , তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন , তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা — “ । সূরা – হাশর / ৭ । প্রিয় পাঠক , এখন মূল প্রশ্নটা হচ্ছে যে , মহান আল্লাহর দরবার থেকে আল্লাহ কতৃক বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ চিরজাহান্নামী হয়ে গেল । তাহলে একই ঘটনার অনুরুপ ঘটনা – আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তি কিভাবে আশারা মোবশশারা , রাঃআনহু মার্কা সনদ পায় ? একই কর্মে দুই ধরনের প্রতিফল কিভাবে সম্ভব ! প্রচারে মোঃ জাহিদ হুসাইন

আসুন জেনে নিই হযরত আলী (আঃ) কিছু মহা মূল্যবান বাণী ১। লোকের যে সমস্ত দোষ ত্রুটির উপর আল্লাহ পর্দা দিয়ে রেখেছেন তা তুমি প্রকাশ করার চষ্টা করো না। ২। অজ্ঞদেরকে মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই মৃত অবস্থায় কাল যাপন করতে হয় এবং সমাধিস্থ হবার পূর্বেই তাদের শরীর কবরের আঁধারে সমাহিত; কেননা তাদের অন্তর মৃত, আর মৃতের স্থান কবর। ৩। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের অন্তরে যে বিদ্বেষাগ্নির জন্ম হয়, তা অত্যাচারীকে ভস্ম করেই ক্ষান্ত হয় না, সে আগুনের শিখায় অনেক কিছুই দগ্ধীভূত হয়। ৪। আপনার দ্বারা নেক কাজ সাধিত হলে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করুন এবং যখন অসফল হবেন তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ৫। সৎ কাজ অল্প বলে চিন্তা করো না, বরং অল্পটুকুই কবুল হওয়ার চিন্তা কর। ৬। পাপের কাজ করে লজ্জিত হলে পাপ কমে যায়, আর পুণ্য কাজ করে গর্ববোধ করলে পুণ্য বরবাদ হয়ে যায়। ৭। দুনিয়াতে সব চেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে নিজেকে সংশোধন করা আর সব চেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে অন্যের সমালোচনা করা । ৮। তুমি পানির মত হতে চেষ্টা কর, যে কিনা নিজের চলার পথ নিজেই তৈরী করে নেয় ।পাথরের মত হয়োনা, যে নিজে অন্যের পথরোধ করে | ৯। গোপন কথা যতক্ষণ তোমার কাছে আছে সে তোমার বন্দী । কিন্তু কারো নিকট তা প্রকাশ করা মাত্রই তুমি তার বন্দী হয়ে গেলে । ১০। ছোট পাপকে ছোট বলিয়া অবহেলা করিও না, ছোটদের সমষ্টিই বড় হয় । ১১। নীচ লোকের প্রধান হাতিয়ার অশ্লীল বাক্য । ১২। পুণ্য অর্জন অপেক্ষা পাপ বর্জন শ্রেষ্ঠতর । ১৩। মানুষের কিসের এত অহংকার, যার শুরু একফোটা রক্তবিন্দু দিয়ে আর শেষ হয় মৃত্তিকায় । ১৪। সবচেয়ে সাহসী ও বীর্যবান ব্যক্তি হলো সেই যে স্বীয় কামনা বাসনার খেয়াল খুশির উপর বিজয় লাভ করতে সক্ষম। ১৫। হযরত আলী (রাঃ) কোথাও যাচ্ছিলেন। পথে এক ব্যক্তি অনাহুতভাবে তাকে গালাগাল দিতে শুরু করল। হযরত আলী লোকটির কাছে গিয়ে বললেন, ভাই! তুমি আমার সম্পর্কে যা কিছু বললে তা যদি সত্য হয় তবে আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন আর যদি তোমার এই সমস্ত কথা সত্য না হয় তবে আল্লাহ পাক যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। ১৬। প্রকৃত দ্বীনদারী পার্থিব স্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমেই সম্ভব। ১৭। কারো সাথে বাক্যলাপ না হওয়া পর্যন্ত তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করোনা। ১৮। কেউ স্বীকৃতি না দিলেও তুমি তোমার সদাচরণ অব্যাহত রাখবে। ১৯। বন্ধুত্ব করার মত কোন যোগ্যলোক পাওয়া না গেলেও অযোগ্যদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যেও না। ২০। অল্প বিদ্যায় আমল বিনষ্ট হয়। শুদ্ধ জ্ঞানই আমলের পুর্ব শর্ত।

*****শানে পাক পাঞ্জাতন***** পাক পাঞ্জাতন কি..পাক মানে পবিত্র । পাঞ্জা হলো পাচ এবং ”তন” অর্থ শরীর বা দেহ । সুতরাং পাক-পাঞ্জাতন হলো পবিত্র পাঁচ দেহ মোবারক । তারা কারা.. তারা হলেন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্রাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম, মওলা আলী আলাইহিস সালাম, মা খাতুনে জান্নাত ফাতিমা আলাইহিস সালাম, ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম । সৃষ্টির আদিতে পাক পাঞ্জাতনই হলো নুরে মোহাম্মদী সাল্লাল্রাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম । আর এই নুরে মোহাম্মদী হতে পঞ্চ নুরের মাধ্যমে সারা কুল কায়েনাত সৃস্টি। বিস্তারিত….. মানুষ স্রষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব কারণ প্রত্যেক মানুষ মোহাম্মদী বোরকা/লেবাছ পরিহিত অবস্থায় পাক-পাঞ্জাতনের নুরের জ্যোতি নিয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করেছে কেউ তা উপলব্ধি করতে পারে আবার কেউ পারেনা কারণ আমি কে.. কোথায় থেকে আসলাম ..আবার কোথায় যাব.. এ প্রশ্নের উত্তর খোজে পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সৃষ্টির গোড়াতে যেতে হবে কারণ দুর থেকে গাছের গোড়ায় কি আছে তা দেখতে পারা যায় কিন্তু গভীরভাবে জানা যায়না আর গভীর ভাবে না জানতে পারলে জীবনটাই বৃথা রয়ে যায় তাই চর্ম চক্ষু বা দুনিয়ার জীবনে নবী মোহাম্মদ মোস্তফা আহম্মদ মোজতবা (সাঃ)- এর তেইশ বা তেষট্রি বৎসরের সমগ্র জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে চলে না । হযরত আদম (আঃ) এর জন্মের বা সৃষ্টির বহু পূর্বে যখন আদম (আঃ) পানি ও কাদায় ছিলেন, তখনও তিনি নবী । আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে । আমাদের এই পৃথিবী জন্মের পূর্বে আমাদের নিশ্চয়ই এক নিথুত সৃষ্টি ছিল । যে নবীর উম্মত আমরা, যাঁর নূর হতে জগতসমূহের সৃষ্টি হয়েছে, নিশ্চয়ই আমরা ঐ নূরের জন্মের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত । তা জানা কি আমাদের কর্তব্য নয় ? যে নূরের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিতে আগমন এবং যে নূরের দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন সেই উৎস পাক পাঞ্জাতনকে না জানা কত বড় মূর্খতা এবং বোকামি তা বলা অধম যোগ্য রাখেনা ।হাদিসে কুদসি থেকে জানতে পারা যায় স্রষ্টা ছাড়া যখন কোনো কিছু বিদ্যমান ছিল না অর্থাৎ আল্লাহপাক একা ছিলেন, আল্লাহ পাকের কুন বা হও আদেশবলে তাঁর নিজ নুর হতে নুরে মোহাম্মদী সৃষ্টি করেন । উক্ত নুরে মোহাম্মদীকে সৃষ্টি করে ময়ুর রুপে ( ময়ুর=রুপক শব্দ ) সাজারাতুল একিন নামক চার ডাল বিশিষ্ট একটি গাছে বসিয়ে রাখেন । উক্ত ময়ুর সত্তর হাজার বছর আল্লাহপাকের তজবিহ পাঠ করতে থাকে । সেই পিন্ডময় রূপাকৃতির প্রতি আল্লাহপাক অপলক নয়নে বহুকাল মজ মোঃ জাহিদ হুসাইন

স্রষ্টা কে পাওয়ার উপায় কি? মাথার জ্ঞান দিয়ে নয় ! মনের আলো দিয়ে তাকে পাওয়া যায়। “যাব মে না বাঁচি, না মেরা কুচ বাঁচা” ! তাহলে কিসের সাথে বন্ধন ! যে তোমাকে খোঁজে-সে তোমাকে পায়-না। আবার যে তোমাকে খোঁজেই না সে তোমাকে কখনই পাবেনা। না মসজিদে এ যাওয়ার প্রয়োজন, না কোন দরগায় ! তুমি যেখানেই আছো তোমার রব সেখানেই আছে-তুমি তোমার মনের মধ্যে বসে দেখ-তোমার রব সেখানেই আছে এবং সেখানেই বসে ইবাদত করো। কুরবানী দিতে হয় কিসের ? নিজের ভিতরের পশুত্বের ! ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসার জন্যই। “যাব মে না বাঁচি, না মেরা কুচ বাঁচা” ! বেঁচে আছে শুধুই জিকির, বেঁচে আছে শুধুই ফিকির। সেই রাতের কথা বলবো-যে রাতে পৃথিবী আর সূর্য নাচতেছিল আর আকাশের তাঁরা গুলো দেখতে ছিল! আমি আমার সূর্যের প্রদক্ষিন করতেছিলাম এবং সূর্য নিজেই নিজের প্রদক্ষিন করতেছিল । রাত যতক্ষন আছে মশাল ততক্ষন জ্বলবেই একটা মশাল নিভে গেলে আরেকটা মশাল জ্বলে উঠবেই । শেষে সকলের ভেতরে পরমাত্মাকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করছি, আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!! প্রচারে বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

"ইয়া আলী মাওলা (আ:)" আল্লাহ বলে আনা আমি মাহবুবে খোদা মোহাম্মাদ (সাঃ) বলেন আনা আমি আল্লাহ আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) আনা তাই কি আলী (আঃ) বলে আনা আনা ভাবি আমি যখনি বেহুশ হই তখনি মসজিদে কুফায় আলী (আঃ) এর বানী মনে পরে তখনি। আলী (আঃ) বলতেন আনা আনা ওয়া আবনা আনা যেখানে আল্লাহ বলে আনা মোহাম্মাদ (সাঃ) নিজেই আনা বুঝি না কি ভেদ আলী (আঃ) বলে ওয়া আবনা আনা, আনা আনা আমিই আমি শুধুই আমি। আল্লাহ বলেন লা ইসমালাহু আলী (আঃ) বলেন আনাল লা ইসমালাহু প্রমান তার জাতে জাহুরী পর্দায় আহাদ আকবরি হচ্ছে তার বাতুনি। আলী (আঃ) কেনো মরে জিতলাম আমি বলে, একদিন আলী (আঃ) মিম্বরে সালুনী শব্দের আওয়াজ ধরে বললেন মৃত্যু নামক বস্তুরে মারবো আমি নিজের ইয়াদুল্লাহি হাতে যে আলী (আঃ) মৃত্যুকে মৃত্যু দান করে সে কেমন করে মরে, ভেদ আছে কোরআনে নাহনু শব্দের ঘরে। লা শরিক যার-কায়া হয় না যে তার পর্দায় আকবরে আল্লাহু নিজেই নামাজ পরে হাসে আমার নবী (সাঃ) কায়াদারি দেখি ইশারা করিয়া আলী (আঃ) আরশে আলী ফার্সি আলী নিজেকে আল্লাহ বলেন আলী ইশারা ৯৯ নামের ভিতরি। আসমাহুল হুসনা ছলনা ধরি আল্লাহ যখন নিজেই আলী কাবার ভিতর ফার্সি আলী (আঃ) এখানে আলী ফার্সি (আঃ) ওখানে আলী আরশি দুয়ের মাঝে তাওহিদের গোল তাওহিদ বাঁচাতে আল্লাহ নিজে আলীকে কাবায় নাযিল করে তার নাম আলী (আঃ) রেখে নামে আসমা সাজিয়ে নামে আজিমি হলেন আল্লাহ নিজে আলীয়্যুল আজিম। আজিম অর্থ বড় নিজেকে আল্লাহ বল্লেন আমি আলী থেকে বড় অনুসন্ধান করো আলী আল্লাহ থেকে ছোট যদি আলী একটু বড় হতো তাহলে আলী আল্লাহ হয়ে যেতো। জিয়ন নাজাফির কালের নৌকা পালে তুলি ইতিহাসের পর্দা খুলি দিনের শেষে হিসাব কুষি যে আলী কে তোমরা ওজন করো, সে আলী (আঃ) আরশের চেয়ে বড়। লেখক বিধি তুমার ধর্ম কি

💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔💔 #উহুদের_ময়দানে #মোহাম্মদ(আ) এর দাঁতভাঙ্গার জন্য #আবু_বকর দায়ী।তাকে বলা হয়েছে যুদ্ধ শুরু করলে পিচু হটা যাবে না। বিপক্ষ দলের বিশাল শূ্ণ্য বাহীনি দেখে যুদ্ধের মাঠ থেকে #আবু_বকর #উমর #উসমান মোহাম্মাদ(আ) কে একা পেলে #পালিয়ে গিয়েছে। তখন কাফেরদের অর্তকৃত হামলায় #মোহাম্মাদ(আ) #দাঁত ভেঙ্গে যায়।

ইলমে তাসাউফ অর্জন করা এবং একজন হক্কানী শায়েখের কাছে বাইয়াত হওয়া ফরজ ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৮ ১। কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটে।” (সূরা আ’রাফ : আয়াত শরীফ ৫৬) ২। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল শায়খ বা পীর) উনার ছোহবত লাভ করতে পারে না। ৩। আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা সব আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও”। (সূরা ইমরান-৭৯) ৪। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাক-এর সূরা তওবার ১১৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও। এখানে ছাদিক্বীন বলতে ওলী-আল্লাহ গণকেই বুঝান হয়েছে। ৫। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “আল্লাহ পাক এর ও উনার রাসুলের ইত্বায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা (উলিল আমর) আদেশদাতা, তাদের অনুসরণ কর”। ৬। আল্লাহ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমাকে পাওয়ার জন্য উসিলা তালাশ কর”।( সুরা মায়িদা ৩৫)  ৭। পবিত্র কুরআন শরীফ এর ‘সূরা কাহাফ’-এর ২৮ নম্বর আয়াত শরীফ উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বল্বী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৮। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোস্ত আছে যদি সেটা শুদ্ধ হয়ে যায় তবে সমস্ত শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। আর যদি সেটা অশুদ্ধ হয় তাহলে সমস্ত শরীর বরবাদ হয়ে যায়, সাবধান ওটা হচ্ছে কলব”। (বুখারী শরীফ) ৯। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।( সুরা কাহফ ২৮) ১০। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন, “সাবধান! আল্লাহ পাকের যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”।সুরা রাদ ২৮) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের কলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাকের যিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাকের যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।  ১১। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (জরুরত আন্দাজ) ইল্ম অর্জন করা ফরয। (বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, আশয়াতুল লুময়াত) ১২। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ইল্ম দু’প্রকার- (১) ক্বল্বী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে তাছাউফ। আর এটাই মূলতঃ উপকারী ইল্ম। (২) যবানী ইল্ম অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্, যা আল্লাহ্ পাক, উনার পক্ষ হতে বান্দার জন্য দলীল। (দারিমী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, দাইলামী, বায়হাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব) সকলেই একমত যে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী ক্বল্ব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বিলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদ, উনার নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। ১৩। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ আছে যে, “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, উক্ত ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয”। ১৪। হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহর কিতাব “দুররুল মুখ্তারে উল্লেখ আছে, “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না; উক্ত ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয”। উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব, উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক, উনার যিকিরে মশগুল, উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয। ১৫। সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব) ১৬। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)। তাই, ইসলাম কখনও বলে না যে তোমরা কোন ওলী-আল্লাহর কাছে যেও না, বরং উনাদের কাছে যাওয়ার জন্যই নির্দেশ করা হয়েছে। ১৭। আল্লাহ পাক বলেন, “যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহল ৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭

সূরা আদ-দুহা (الضحى), আয়াত: ৭ وَوَجَدَكَ ضَآلًّا فَهَدَىٰ উচ্চারণঃ ওয়া ওয়াজাদাকা দাল্লান ফাহাদা-। অর্থঃ তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন

মুয়াবিয়া-পরিবার vs নবি-পরিবার" রসুলের সাহাবা বলে কথিত কুখ্যাত মুয়াবিয়া আজকের এই দিনে খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমার স্বামী, ইমাম হাসান-হোসাইনের পিতা, রসুলের স্থলাভিষিক্ত মওলা- হযরত আলী (আ.)-কে গুপ্তঘাতক দ্বারা হত্যা করেন (উল্লেখ্য যে, আঘাতের পর মাওলা প্রাণ ত্যাগ করেন ২১ রমজান) । আমরা থুতু মারি সেইসব দরবার ও পিরের মুখে- পাকপাঞ্জাতনের অন্যতম সদস্য মওলা আলীকে হত্যা করার পরেও যারা গুন্ডা মুয়াবিয়াকে সাহাবা মনে করে এবং নবি-বংশের জাত-শত্রু এই কুচক্রী পরিবারের পূজা অর্চনা করে । কোরান মতে: একজন মোমিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ করে সে কাফের; আর আলী (আ.) শুধু মোমিন নন বরং মোমিনগণের মওলা (সূত্র: হাদিস); কিন্তু এই মুয়াবিয়া সেই মওলা আলীর বিরুদ্ধেই তার বিশাল গুন্ডাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন, যা সিফফিনের যুদ্ধ বলে পরিচিত । উল্লেখ থাকে যে, মহানবি বলেগিয়েছিলেন: এই আম্মার (বেহেশত যার প্রত্যাশী) একটা বিদ্রোহী দলের হাতে শহীদ হবেন । রসুলের প্রিয় সাহাবী হযরত আম্মার মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধে শহীদ হন । মৃত্যুর সময় আম্মারকে এক ফোটা পানিও দেয়া হয় নাই । কোরান ঘোষণা করছে: শুধুমাত্র একজন মোমিনকে হত্যা করলেই অনন্তকাল তাকে জাহান্নামে থাকতে হবে এবং আল্লাহর লানত থাকবে তার উপর (৪:৯৩)। মুয়াবিয়া যে একজন নির্ভেজাল কাফের-মোনাফেক ও জাহান্নামী তা কোরান স্বাক্ষী দেবার পরেও যে সব হারামজাদারা মুয়াবিয়ার প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে- আমরা লাথি মারি তাদের মুখে । একমাত্র মুয়াবিয়ার পরিবারই নবি বংশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি শয়তানী করে; নিম্নে তাদের কু কর্মের ছোট একটি তালিকা দেয়া হলো: ১. মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান মহানবির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন । ২. মুয়াবিয়ার মা হিন্দা যুদ্ধের মাঠে রসুলের চাচা হযরত আমীর হামজার কাচা কলিজা চিবিয়ে খান । ৩. তাদেরই সুযোগ্য পুত্র কুখ্যাত মুয়াবিয়া ফাঁদ পেতে হযরত আয়েশাকে হত্যা করে মাটিতে পূতে সেখানে বৃক্ষ রোপণ করে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে আড়াল করেছিল; তাই ইতিহাসে হযরত আয়েশার কবরের কোন অস্তিত্ব নেই । ৪. হযরত উসমান হত্যার পিছনেও বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার হাত ছিল, তাই সে ইসলামী সাম্রাজ্যের সম্রাট হবার পরেও উসমান হত্যার বিচার করে নি । ৫. নবির আশেক হযরত উয়ায়েস করণীকেও বৃদ্ধ বয়সে প্রাণ দিতে হয় মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই । ৬. ছেলে ইয়াজীদের সাথে বিবাহ দেবার চুক্তির ভিত্তিতে মুয়াবিয়া জায়েদাকে দিয়ে ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে পুত্র ইয়াজীদকে গদিতে বসানোর রাস্তাকে পরিষ্কার করেন । ৭. দুর্বৃত্ত মুয়াবিয়া ইমাম হোসাইনকে হত্যার সকল ষড়যন্ত্র ও নীল নক্সা অঙ্কন করে যান, যা ইয়াজিদের প্রতি তার একটি চিঠিতে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে । ৮. বদরী সাহাবী হযরত ইবনে আদীকে তাঁর ১২ জন সঙ্গী সহ জীবন্ত কবরস্থ করেন এই মুয়াবিয়া । এ জঘন্য কু কর্মের প্রসঙ্গে ইমামুল আউলিয়া হযরত হাসান বসরী (রা:) বলেন: মুয়াবিয়ার পরকাল ধ্বংসের জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, সে রাছুল (সা:)-এর বিশিষ্ট সাহাবী হাজর বিন আদী (রা:) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে বিনা দোষে হত্যা করেছিল । ৯. মুহাম্মদ বিন আবুবকর, মালিক আশতার মুয়াবিয়ার হত্যার শিকার । দুর্বৃত্ত এই মুয়াবিয়া কত জনকে যে গুপ্ত হত্যা করিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই । ১০. নবি বিদ্বেষী পরিবারের অন্যতম সদস্য খুনি মুয়াবিয়া প্রতি জুমার দিন খুৎবায় নবি-পরিবারকে গালাগালী প্রথা চালু করেছিল; আগে খুৎবা পাঠ করা হতো নামাজের পর, সে কারণে অনেক মুসল্লীরাই গালাগালী শ্রবণ না করে চলে যেতো, তাই মুয়াবিয়া নির্দেশ দেন যেন খুৎবা নামাজের আগেই আরম্ভ করা হয় যাতে করে খুৎবায় নবি-বংশের বিরুদ্ধে গালাগালী শুনতে মুসল্লিগণ একপ্রকার বাধ্য থাকেন ।। মুয়াবিয়ার কোন পিতৃপরিচয় নেই, কারণ তার মা তাকে পেটে ধরা অবস্থায় আবু সুফিয়ানের সাথে ঘর-সংসার শুরু করে, আর বিবাহের পূর্বে হিন্দা যখন পতিতালয় পরিচালনা করতো তখনই মুয়াবিয়া তার পেটে এসেছিল । এ জন্যই বোধহয় এই কুলাঙ্গার নানা ষড়যন্ত্র করে ইসলামের বারোটা বাজিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং জন্ম দিয়ে গেছে আরেক কুলাঙ্গারের । নবি-পরিবারের প্রতি মুয়াবিয়া-পরিবারের এত শত ষড়যন্ত্রের ডকুমেন্ট থাকার পরেও যারা সেই অভিশপ্ত পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, সেই সব কুলাঙ্গারদের গোলামী করে আমরা জুতা মারি তাদের মুখে; কেননা তারা আল্লাহ ও নবির শত্রু, পাকপাঞ্জাতনের শত্রু । মোনাফেকদের সর্দার মুয়াবিয়া সম্পর্কে মুসলিম সমাজের ভুল ধারণা সমূহ অবসান হবার স্বার্থে এবং বর্ণচোরা মুয়াবিয়ার মুখোশ উন্মোচনের প্রয়াসে এই পোস্টটি সবাই শেয়ার করার মাধ্যমে সত্য প্রচারে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ রইল ।।

গাদীরে খুমের ঘটনা হিজরী দশম বছর। রাসূল (সা.) বিদায় হজ্ব সম্পন্ন করেছেন। এ নশ্বর পৃথিবী থেকে শেষ বিদায়ের জণ্যে প্রহর গুনছেন। প্রথম থেকে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এ বৎসর তিনি শেষ হজ্ব সমাপন করবেন। চতুর্দিক থেকে নবীর সাথে হজ্বে অংশগ্রহনের জন্যে অশংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিলো। ঐতিহাসকিদের মধ্যে হাজীদের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। সর্বাপরী ৯০ হাজার থেকৈ ১২৪ হাজার মানুষের সমাগম ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এ বৎসর তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দান করেন যা“ বিদায় হজ্বের ভাষণ” নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। হজ্ব সমাপ্ত করে তিনি আসহাবকে সাথে নিয়ে মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন। প্রচন্ড গরম,মাটি ফেটে চৌচির। পথিমধ্যে‘ গাদীরে খুম’ নামক চৌরাস্তায় এসে তিনি থেমে গেলেন। এখানেই ঘটেছে সেই ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ গাদীরে খুমের ঘটনা। শীয়া - সুন্নী নির্বিশেষে সকল এতিহাসিক ও হাদীস বিশারদ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তাদের স্ব - স্ব গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) তার কয়েকজন ঘনিষ্ট সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন এ স্থানে সকলকে সমবেত করতে। যারা এখনো পিছে পড়ে আছে তাদের জন্যে অপেক্ষা করতে বললেন। যারা সিরিয়া ও ইরাক অভিমুখে এ চৌরাস্তা থেকে রওয়ানা হয়ে গেছেন তাদেরকে এ স্থানে ফিরে আসার নির্দেশ দিলেন। উত্তপ্ত বালুকাময় পথঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল কিছুক্ষনের মধ্যেই। নবী (সা.)- এর জন্যে আসন প্রস্তুত করা হল। আসনের উপর সামিয়ানা টাংগানো হল। আসনটি এমন ভাবে উচু করে নির্মান করা হলো যেন বহুদূর থেকেও সকলে সুন্দরভাবে নবী করিম (সা.) কে দেখতে পায়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্যে নবী (সা.) আসহাব ও হাজীদের কষ্ট দিবেন ? গাদীরে খুমে অবস্থান এবং ভাষণ দেয়ার জন্যে আসন তৈরী করার যে কারণ নিহিত আছে তাহলো অব্যবহিত পূর্বে অবতীর্ণ হওয়া নিম্ন আয়াত يا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ অর্থাৎঃ“ হে রাসূল আপনার রবের নিকট থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌছিয়ে দিন। আর যদি এ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম না হন তা হলে রেসালাতের দাওয়াত - ই পৌছাতে পারলেন না। আল্লাহ মানুষের অনিষ্ট থেকে আপনাকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের জনগোষ্ঠিকে হেদায়েত করবেন না। (সূরা আল মায়েদা,আয়াত নং-৬৭) উপরোল্লিখিত আয়াতটিতে রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ আয়াতটি অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা শুধুমাত্র তিনি নবীকেই অবগত করিয়েছেন। আর তা এক্ষনে মানুষের সমক্ষে পেশ করতে হবে ? এমন কি আবতির্ণ করা হয়েছে যা এভাবে ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যক্ত করতে হবে ? সূরা মায়েদা হচ্ছে নবী (সা.) এর উপর অবতীর্ণ সর্বশেষ সূরা। এ সূরাটি নবীর শেষ জীবনে নাযিল হয়েছে। ইতিপূর্বে তৌহীদ,শেরক,রেসালাত,ক্বিয়ামত,নামাজ,রোজা,হজ্ব,যাকাত ইত্যাদি সব ধরণের বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল। এমন কি বিষয় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যা কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে হবে ? রাসূল (সা.) তো কোন ভীতু ব্যক্তি নন। তিনি কঠোর বিপদেও মু’ মিনদের সান্তনাকারী ছিলেন। তিনি সকল ধরণের বিপদ সংকুল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন অবশেষে তিনি মক্কা বিজয় করেছেন,বীর দর্পে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেছেন বিজয়ীর বেশে। কাবার মুর্তিগুলোকে তিনি ভেঙ্গে সেখানে নামাজ ক্বায়েম করেছেন। আল্লাহ তাকে এ আয়াতে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে দিচ্ছেন,যদি এ কাজটি আঞ্জাম দেয়া না হয় তাহলে রেসালাতের কোন কিছুই পৌছানো হলো না। এটা এমন একটা কাজ যার ফলে রেসালাত পরিপূর্ণ হবে। আর আল্লাহ রাসূলকে অভয় দিয়ে বলছেন“ আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন।” মুলতঃ একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার জন্যেই প্রিয় নবী (সা.) সবাইকে গাদীরে খুমে সমবেত হতে বলেছেন। মহানবী (সা.) তার আসন অলংকৃত করেছেন। তিনি ভাষণ দিচ্ছেনঃ “……………… হে মানব মন্ডলী। আমি কি সকল মু’ মিনদের চেয়ে সর্বোত্তম নেতানই ? … .. তোমরা কি জানোনা আমি প্রতিটি মু’ মিনের প্রানের চেয়েও প্রিয় নেতা…… ..? ” তখন সকলে সমস্বরে বলে উঠলো,জ্বি ইয়া রাসূল আল্লাহ” !… . অতঃপর তার পার্শ্বে উপবিষ্ট হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের হাত সকলের সম্মুখে উচু করে তুলে ধরলেন। ঐতিহাসিকগণ বলেন,নবী (সা.) হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের হাত এমনভাবে উচুতে তুলে ধরেছিলেন যে তাদের উভয়ের বাহুমুলদ্বয় সবাই দেখতে পেয়েছেন। অতঃপর মহানবী (সা.) বললেনঃ ” ایها الناس! الله مولای و انا مولاکم، فمن کنت مولاه فهذا علی مولاه، اللهم وال من والاه و عاد من عاداه و انصر من نصره و اخذل من خذله." অর্থাৎঃ“ হে লোকসকল ! আল্লাহ আমার প্রভূ ও নেতা,আর আমি তোমাদের নেতা বা মওলা। সুতরাং আমি যার মওলা বা অভিভাবক আলীও তার মওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ যে আলীকে ভালবাসে তুমিও তাকে ভালবাস,যে আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে তুমিও তাকে শত্রু গণ্য কর। আর যে তাকে সাহায্য করে তুমিও তাকে সহায়তা দান কর এবং যে তাকে ত্যাগ করে তুমিও তাকে পরিত্যাগ কর………… .।”

ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘আল ইসাবা’ এর খণ্ড৪ পাতা ২৮১ এ জীবনী নং ৫১৬৭ এ উল্লেখ করেছেঃ وقال بن البرقي والبغوي وغيرهما كان ممن بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقالبن يونس بايع تحت الشجرة ۔۔۔ وقال بن يونس بايع تحت الشجرة وشهد فتح مصر واختط بهاوكان من الفرسان ثم كان رئيس الخيل التي سارت من مصر إلى عثمان في الفتنة “ইবনে বারকি, আল বাগাভি এবং অন্যান্যরাবলেছেন যে সে গাছের নিচে বায়াতে অংশ গ্রহন করেছিলেন.........। ইবনে ইউনুস বলেছেনগাছের নিচে বায়েত ছিলেন, মিশরের বিজয়ে অংশ গ্রহন করেছিলেন এবং বীর যোদ্ধা ছিলেন আরসে উসমানকে আক্রমণ করা সেনা দলের প্রধান ছিল”। অনুরূপ ভাবে ইবনে হাজর আস্কালানি তার ‘তাজিলআল মানফা’ এর ৪৭১ পাতায় উল্লেখ করেছেন তিনি সাহাবী ছিল এবং অন্য সাহাবী তার থেকেবর্ণনা করেছেন। ইবনে কাসির তার ‘আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া’ এরখণ্ড ৭ পাতা ১৭৯ এ উল্লেখ করেছেনঃ “উসমানের হত্যার পরে তার কাতিলরা তার মাথা কেটেনিতে চেস্টা করছিল, মেয়েরা চিৎকার করতে শুরু করল আর মুখে চপেটাঘাত করতে লাগল (মাতম), উসমানের দুটো স্ত্রী নাইলা আর উম্মুল বানিন আর তার কন্যারা এর মধ্যে ছিল।ইবনে উদাইস বলল ‘উসমানকে ছেড়ে দাও’। ফলে তারা তাকে ছেড়ে দিল আর ঘরে যাকিছু ছিললুটে নিল”। ইবনে আসাকির তার ‘তারিখ এ দামিস্ক’ এ রেওয়াতকরেছেন। ( খন্ড ২ পাতা ৪৭২)ঃ له صحبة وهو ممن بايع تحتالشجرة “সে সাহাবী, এবং সে গাছের নিচে বায়াত কারীদেরমধ্যে ছিল”। এখানে উল্লেখ্য যে আহলে সুন্না ও নাসিবী রাসাহাবাদের মহান মর্যাদা দেখাবার জন্য গাছের নিচে বায়াত করা তথা বায়াতে রেজোয়ান এরকথা উল্লেখ করে এবং কুরআনের আয়াত পড়ে। যেবায়াত এ রেজোয়ান এর সাহাবীরা কিভাবে উসমানকে হত্যা করছে! এখন নাসিবীরা কি করবে? ৮) সাহাবী আমর বিন হামক আল খুজাই এর ভুমিকাউসমান হত্যায়। ইবনেহাজর আস্কালানি তার ‘তাকরীব আত তাহজিব’ পাতা ৪২০ এ এন্ট্রি নং ৫০১৭ “আমরবিন হামক, ইবনে কাহিল আর তাকে ইবনে কাহিন, ইবনে হাবীব আল খজাই ও বলা হয়। সাহাবী যে কুফায় থাকত তারপর মিশরে, সেমুয়াবিয়ার খেলাফাত এ মারা যায়”। ইবনে সাদ তার ‘তাবাকাত’ এ উল্লেখ করেছেন। “মিশরীয়যারা উসমানকে আক্রমণ করে ৬০০ জন ছিল আর তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আব্দুর রাহমান ইবনেউদাইস ও আমর বিন হামাক্ক আল খুজাই”। (খণ্ড ৩ পাতা ৭১) ইবনে সা’দ তার তাবাকাত এ আরও উল্লকেহকরেছেনঃ( খণ্ড ৩ পাতা ৬৫) “যখন মিশরের লোকেরা উসমানের কাছে এল, তারা দিখাসাবা তে ঘাটী গাড়লো। উসমান,মুহামামদ বিন সালামাহকে ডেকে বলল ‘যাও আর তাদেরকে আমার কাছে আসতে বিরত করো, তারাযাতে খুশি হয় সেই সব দাও, বলো যে আমি তাদের দাবী অউঞ্জাই কাজ করবো আর সমস্যা নিয়েআলোচনা করবো’। মুহাম্মাদ ইবনে সালামাহ তাদের কাছেদিখাসাবাতে গেল। জাবির বলে ‘উসমান আনসারদের মধ্যে থেকে পঞ্চাশ জন যোদ্ধা কেপাঠিয়েছিল আমি তার মধ্যে ছিলাম, আর তাদের (মিশরের থেকে আসা লোকেদের) চারজন নেতাছিল আব্দুর রহমান বিন উদাইস আল বালাভি, সাউদান বিন হিমরান, ইবনে বায়া আর আমরবিন হামক আল খুজাই”। নাসিবীদের প্রিয় আলেম ইবনে কাসির তার ‘বেদায়াআর নেহায়া’ তে উল্লেখ করেছেনঃ وفيها: كانت وفاةعمرو بن الحمق بن الكاهن الخزاعي، أسلم قبل الفتح وهاجر. وقيل: إنه إنما أسلمعام حجة الوداع. وورد في حديث أن رسول الله دعا له أن يمتعه الله بشبابه، فبقيثمانين سنة لا يُرى في لحيته شعرة بيضاء. ومع هذا كان أحد الأربعة الذين دخلواعلى عثمان “আমর বিন হামাক বিন কাহিন আল খুজাই এরমৃত্যুঃ সে ইসলামের মক্কা বিজয়ের আগে দাখিল হয়েছিল এবং হিজরত করেছিল। কেউ কেউ বলেসে বিদায় হজের সময় ইসলাম গ্রহন করেছিল। আর হাদিসে এটা এসেছে যে রাসুল সাঃ তার জন্যদোয়া করেছিল যে ‘আল্লাহ তোমাকে যুবক হিসাবে রাখুক’। ফলে সে ৮০ বছর বেঁচেছিল কিন্তুতার একটাও ছুল পাকে নি। সে ঐ চারজন লোকের মধ্যে একজজ ছিল যে উসমানের ঘরে প্রবেশকরেছিল”। (খণ্ড ৮পাতা ৪৮) ইবনে কাসীর আরও উল্লেখ করেছেনঃ “ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন আউন ইবনে কানানাথেকে যে কানানা বিন বাশার লোহাত রড দিয়ে উসমানের কপালে আর মাথায় আঘাত করে ফলে যেপড়ে যায় আর তখন সাউদান বিন হিমরান তরবারীর দ্বারা আঘাত করে এবং হত্যা করে। আমর বিনহামক তার বুকের উপর চেপে বসে আর এই সময় উসমান শেষ নিশ্বাস নিচ্ছিল, সে নবারবর্শাদিয়ে আঘাত করলো। বর্ণনা কারী বলেন যে তার মধ্যে তিনটে ফস্কিয়ে যায় আর ছ’টাতাকে আঘাত করে আর এই সময় সে মৃত আমার সামনে পড়ে ছিল”। (খণ্ড ৭ পাতা ২০৮) আহলে সুন্নার রেজাল ও হাদিস শাস্ত্রের ইমামইবনে হিব্বান তার ‘শিকাত’ ( বিশস্ত) এ উল্লখে করেছেনঃ “৭০০ লোক মিশর থেকে এলো যাদের নেতা ছিলআব্দুর রাহমান ইবনে উদাইস, আমর বিন হামক আল খুজাই, কানান বিন বাশার, সাউদান বিনহিমরান আল মুরাদি’। ( খণ্ড ২ পাতা ২৫৬)